At-Tawba • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ٱتَّخَذُوٓا۟ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَٰنَهُمْ أَرْبَابًۭا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلْمَسِيحَ ٱبْنَ مَرْيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓا۟ إِلَّا لِيَعْبُدُوٓا۟ إِلَٰهًۭا وَٰحِدًۭا ۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴾
“They have taken their rabbis and their monks-as well as the Christ, son of Mary-for their lords beside God, although they had been bidden to worship none but the One God, save whom there is no deity: the One who is utterly remote, in His limitless glory, from anything to which they may ascribe a share in His divinity!”
৩০-৩১ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতগুলোতেও মহা মহিমান্বিত আল্লাহ মুমিনদেরকে মুশরিক, কাফির, ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করছেন। মহান আল্লাহ বলেন, দেখো! আল্লাহর শত্রুরা কেমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার করছে! ইয়াহূদীরা উযায়ের (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলছে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। আল্লাহ এটা থেকে পবিত্র ও বহু ঊর্ধে যে, তার কোন পুত্র থাকবে! ঐ লোকেরা যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উযায়ের (আঃ) সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করেছিল তা এই যে, যখন আমালিকা সম্প্রদায় বানী ইসরাঈলের উপর জয়যুক্ত হয় এবং তাদের আলেমদেরকে হত্যা করে ও নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে বন্দী করে ফেলে তখন ইলম উঠে যাওয়া, কিছু সংখ্যক আলেমের নিহত হওয়া এবং বানী ইসরাঈলদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে উযায়ের (আঃ) অত্যন্ত মর্মাহত হন।তিনি এমনভাবে কাঁদতে শুরু করেন যে, তাঁর চোখের অশ্রু বন্ধই হয় না। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখের পাতাগুলোও ঝরে পড়ে। একদা এভাবে ক্রন্দনরত। অবস্থায় একটি মাঠের মধ্য দিয়ে গমন করেন। এমন সময় দেখতে পান যে, একজন মহিলা একটি কবরের পার্শ্বে বসে ক্রন্দন করছে এবং মুখে উচ্চারণ করছে- “হায়! এখন আমার খাওয়া ও পরার ব্যবস্থা কি করে হবে?” এ দেখে উযায়ের (আঃ) সেখানে দাঁড়িয়ে যান এবং মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই লোকটির পূর্বে তোমার খাওয়া ও পরার ব্যবস্থা কে করতেন?” সে উত্তরে বলেঃ “আল্লাহ তা'আলা।” তখন তিনি তাকে বলেনঃ “তাহলে আল্লাহ তাআলা তো এখনো জীবিত রয়েছেন। তার তো কখনো মৃত্যু হয় না। তার এ কথা শুনে মহিলাটি উযায়ের (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “তাহলে হে উযায়ের (আঃ)! আপনি বলুনতো- বানী ইসরাঈলের পূর্বে আলেমদেরকে বিদ্যা শিক্ষা দিতেন কে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা।” তখন মহিলাটি বলেঃ “তাহলে আপনি এভাবে কেঁদে কেটে সময় কাটাচ্ছেন কেন?” তিনি এবার বুঝে নেন যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। অতঃপর তাঁকে বলা হয়ঃ “তুমি অমুক নদীতে গিয়ে গোসল কর এবং দু'রাকআত সালাত আদায় কর । সেখানে তুমি একজন লোককে দেখতে পাবে। সে তোমাকে যা কিছু খেতে দেবে তা তুমি খেয়ে নিবে।”কথামত উযায়ের (আঃ) সেখানে গমন করেন। গোসল করে তিনি সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি সেখানে একটি লোককে দেখতে পান। লোকটি তাকে বলেনঃ “মুখ খুলুন!” তিনি মুখ খুলে দেন। তখন লোকটি পাথরের মত কি একটি জিনিস তিন বার তাঁর মুখে নিক্ষেপ করেন। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তা'আলা তাঁর বক্ষ খুলে দেন। ফলে তিনি তাওরাতের সবচেয়ে বড় আলেম হয়ে যান। তারপর তিনি বানী ইসরাঈলের কাছে গিয়ে বলেনঃ “আমি তোমাদের কাছে তাওরাত নিয়ে এসেছি।” তারা তাকে বলেঃ “হে উযায়ের (আঃ)! আপনি মিথ্যাবাদী ছিলেন না।” এরপর তিনি অঙ্গুলির সাথে কলমকে জড়িয়ে ধরেন এবং ঐ অঙ্গুলি দ্বারাই একই সময় সম্পূর্ণ তাওরাত লিখে ফেলেন। এদিকে লোকেরা যুদ্ধ হতে ফিরে আসে। তাদের সাথে তাদের আলেমগণও ফিরে আসেন। তারা উযায়ের (আঃ)-এর ব্যাপারটা জানতে পারেন। সুতরাং তারা পাহাড়ে ও গুহার মধ্যে তাওরাতের যে পুস্তিকাগুলো লুকিয়ে রেখে এসেছিলেন সেগুলো বের করে আনেন। ঐ পুস্তিকাগুলোর সাথে উযায়ের (আঃ)-এর লিখিত পুস্তিকাগুলো তারা মিলিয়ে দেখেন। দেখা যায় যে, ওগুলোর সাথে তার নুসখা সম্পূর্ণরূপে মিলে গেছে। এতে কোন কোন অজ্ঞ লোকের অন্তরে এই শয়তানী ‘ওসওয়াসা পয়দা হয়ে যায় যে, তিনি আল্লাহর পুত্র। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।খ্রীষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলতো (আমরা এর থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। তার ঘটনা তো সর্বজন বিদিত। সুতরাং এ দু'টি দলের ভুল বর্ণনা কুরআন কারীমে বর্ণিত হচ্ছে। আল্লাহ পাক বলেন, এটা তাদের মুখের কথা মাত্র। তাদের কাছে এর কোন দলীল নেই। ইতিপূর্বে তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা যেমন কুফরী ও বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত ছিল, তদ্রুপ এরাও তাদের মুরীদ ও অন্ধ বিশ্বাসী। আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করুন! হক থেকে তারা কেমন বিভ্রান্ত হচ্ছে! আদী ইবনে হাতিম (রাঃ)-এর কাছে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দ্বীন যখন পৌঁছে তখন তিনি সিরিয়ার দিকে পালিয়ে যান। অজ্ঞতার যুগেই তিনি খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখানে তার ভগ্নি ও তার দলের লোকেরা বন্দী হয়ে যায় । রাসূলুল্লাহ (সঃ) দয়া পরবশ হয়ে তার ভগ্নিকে মুক্তি দেন এবং তাকে কিছু অর্থও প্রদান করেন। সে তখন সরাসরি তার ভাই-এর কাছে চলে যায় এবং তাঁকে ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করে ও মদীনায় গমনের অনুরোধ করে। সুতরাং আদী (রাঃ) মদীনায় চলে আসেন। তিনি তার ‘তাঈ' গোত্রের নেতা ছিলেন। তাঁর পিতার দানশীলতা দুনিয়াব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর আগমনের সংবাদ অবহিত করেন। তিনি স্বয়ং তাঁর কাছে। আসেন। ঐ সময় আদী (রাঃ)-এর স্কন্ধে রৌপ্য নির্মিত ক্রুশ লটকানো ছিল । রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র মুখে (আরবী) এ আয়াতটি উচ্চারিত হচ্ছিল। তখন আদী (রাঃ) বলেনঃ “ইয়াহূদী খ্রীষ্টানরা তো তাদের আলেম ও দরবেশদের উপাসনা করেনি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “তাহলে শুন! তারা তাদের আলেম ও দরবেশদের হারামকৃত বিষয়কে হারাম বলে মেনে নেয় এবং হালালকৃত বিষয়কে হালাল বলে স্বীকার করে নেয়। এটাই তাদেরকে তাদের উপাসনা করার শামিল।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “হে আদী! আল্লাহ সবচেয়ে বড় এটা কি তুমি মেনে নিতে পার না? তোমার ধারণায় আল্লাহর চেয়ে বড় কেউ আছে কি? ‘আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কেউ নেই' এটা কি তুমি অস্বীকার করছো? তোমার মতে কি তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য আছে?” অতঃপর তিনি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আদী (রাঃ) তা ককূল করে নেন এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা মুবারক খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বলেনঃ “ইয়াহূদীদের উপর আল্লাহর ক্রোধ পতিত হয়েছে এবং খ্রীষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এ আয়াতের তাফসীর এরূপই বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হারাম ও হালালের মাসআলায় আলেম ও ইমামদের কথার প্রতি তাদের অন্ধ অনুকরণ । সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, তারা তাদের বুযুর্গদের কথা মানতে শুরু করে এবং আল্লাহর কিতাবকে এক দিকে সরিয়ে দেয়। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন, তাদেরকে তো শুধু এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না। তিনি যেটা হারাম করেছেন সেটাই হারাম এবং তিনি যেটা হালাল করেছেন সেটাই হালাল। তাঁর ফরমানই হচ্ছে শরীয়ত। তাঁর হুকুমই মান্য করার যোগ্য। তাঁরই সত্তা ইবাদতের দাবীদার। তিনি শিক ও শরীক হতে পবিত্র। তাঁর কোন শরীক, কোন নবীর ও কোন সাহায্যকারী নেই। তাঁর বিপরীতও কেউ নেই। তিনি সন্তান-সন্ততি থেকে পবিত্র। তিনি ছাড়া না আছে কোন উপাস্য, না আছে কোন প্রতিপালক।