Yunus • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَٰنِهِمْ ۖ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَٰرُ فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ﴾
“[But,] verily, as for those who have attained to faith and do righteous deeds - their Sustainer guides them aright by means of their faith. [In the life to come,] running waters will flow at their feet in gardens of bliss;”
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথ নির্দেশ করবেন [১]; নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে তাদের পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে [২]। [১] আয়াতে (بِاِیۡمَانِهِمۡ) শব্দের সাথে যে (ب) হরফটি ব্যবহৃত হয়েছে, তার দুটি অর্থ হতে পারে- (এক) কারণে। তখন আয়াতের অর্থ হবে- যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের প্রভু ঈমানের কারণে মহাপুরষ্কারের ব্যবস্থা করবেন। তিনি তাদেরকে হিদায়াত দিবেন। তিনি তাদেরকে তাদের জন্য যা উপকারী তা শিক্ষা দিবেন। হিদায়াতের কারণে তারা ভালো আমল করার তৌফিক লাভ করবেন, তারা আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে দৃষ্টি দিতে পারবেন। এ দুনিয়াতে সৎপথে পরিচালিত করবেন। হিদায়াতুল মুস্তাকীম নসীব করবেন আর আখেরাতে পুল-সিরাতের পথে তাদের পরিচালিত করবেন যাতে তারা জান্নাতে পৌছতে পারে। [সা’দী] (দুই) সাহায্যে বা দ্বারা। [কাশশাফ: ইবন কাসীর] মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ তাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করবেন ফলে তারা সে আলোকে আলোকিত হয়ে পথ চলতে পারবে। [তাবারী] অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনও তাদের আলোকিত হবে। তারা তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানা থাকার কারণে অন্ধকারে হাতিয়ে বেড়াবে না। তাদের জীবন হবে আলোকিত জীবন। [দেখুনঃ সূরা আল-আনআমঃ ১২২, সূরা আশ-শুরাঃ ৫২, সূরা আল হাদীদঃ ২৮] আর আখেরাতের জীবনেও তারা তাদের প্রভুর যাবতীয় কল্যাণ লাভে সামর্থ হবেন। পুলসিরাতেও তাদের আলোর ব্যবস্থা থাকবে। যাবতীয় সংকটময় মুহুর্তে তাদের প্রভু তাদের পথ দেখানোর ব্যবস্থা করবেন। [দেখুনঃ সূরা আল-হাদীদঃ ১৩] কাতাদা ও ইবন জুরাইজ বলেন, তার আমল তার জন্য সুন্দর সূরত ও সুগন্ধিযুক্ত বাতাসের রূপ ধারণ করে যখন সে কবর থেকে উঠবে তখন তার সম্মুখীন হয়ে তাকে যাবতীয় কল্যাণের সুসংবাদ জানাবে। সে তখন তাকে বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার আমল। তখন তার সামনে আলোর ব্যবস্থা করবে যতক্ষণ না সে জান্নাতে প্রবেশ করায়। আর এটাই এ আয়াতের অর্থ। পক্ষান্তরে কাফেরের জন্য তার আমল কুৎসিত সূরত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে আসবে এবং তার সার্বক্ষণিক সার্থী হবে যতক্ষণ না সে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাচ্ছে। [তাবারী; ইবন কাসীর] [২] যদি কেউ প্রশ্ন করে, কিভাবে বলা হল যে, তাদের নিচ দিয়ে নালাসমূহ প্রবাহিত হবে, আর আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের সবখানেই জান্নাতের এ নালাসমূহকে বাগানের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কথা জানিয়েছে, এটা তো সম্ভব শুধু এক অবস্থায়, সেটা হচ্ছে, তারা যমীনের উপরে থাকবে, আর নালাসমূহ থাকবে যমীনের নীচ দিয়ে? এটা তো জান্নাতের নালাসমূহের বৈশিষ্ট্য নয়। কারণ, সেগুলো প্রবাহিত হবে যমীনের মধ্যে কোন প্রকার গর্ত না করে? উত্তর হচ্ছে, এ অর্থ নেয়াটা শুদ্ধ নয়। বরং নিচে দিয়ে নালা প্রবাহিত হওয়ার অর্থ তাদের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হওয়া। তাদের সামনে দিয়ে নে'আমতপূর্ণ বাগানসমূহে। এর অনুরূপ কথা আল্লাহ্ তা'আলা মারইয়ামকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “অবশ্যই তোমার রব তোমার নিচ দিয়ে প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছেন" [সূরা মারইয়াম: ২৪] আর এটা জানা কথা যে, সে প্রস্রবণটি মারইয়ামের বসার নিচে ছিল না। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে যে, তার নিকটে। তার সামনে। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'আলা ফিরআউনের ভাষণ সম্পর্কে বলেছেন, সে বলেছিল: "মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? আর এ নালাসমূহ কি আমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত নয়?” [সূরা আয-যুখরুফ ৫১] এখানে নিচ দিয়ে অর্থ, কাছে বা সামনে। [তাবারী]