Hud • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ الٓر ۚ كِتَٰبٌ أُحْكِمَتْ ءَايَٰتُهُۥ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ ﴾
“Alif. Lam. Ra. A DIVINE WRIT [is this], with messages that have been made clear in and by themselves, and have been distinctly spelled out as well - [bestowed upon you] out of the grace of One who is wise, all-aware,”
আলিফ–লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট [১] , সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত [২] প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছ থেকে [৩]; সূরা সংক্রান্ত আলোচনাঃ আয়াত সংখ্যাঃ ১২৩। নাযিল হওয়ার স্থানঃ সূরা হুদ মক্কায় নাযিল হয়েছে। [ইবন কাসীর] নামকরণঃ এ সূরার নাম সূরা হুদ। একজন প্রখ্যাত রাসূলের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। তার বাহ্যিক কারণ হচ্ছে, এ সূরার ৫৩ নং আয়াতে এর উল্লেখ আছে। যেখানে হুদ আলাইহিস সালাম ও তার কাওমের মধ্যকার কথোপকথন আলোচনা করা হয়েছে। সূরা সংক্রান্ত বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ এ সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সুরা হুদ ঐসব সুরার অন্যতম যাতে পূর্ববর্তী জাতি সমুহের উপর আপতিত আল্লাহর গযব ও বিভিন্ন কঠিন আযাবের এবং পরে কেয়ামতের ভয়াবহ ঘটনাবলী এবং পুরস্কার ও শাস্তির কথা বিশেষ বর্ণনারীতির মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন দেখতে পাচ্ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেনঃ হ্যাঁ, সুরা হুদ এবং ওয়াকি'আ, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন, ইযাস-শামছু কুওওয়িরাত আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [তিরমিয়ীঃ৩২৯৭] উদ্দেশ্য এই যে, উক্ত সুরাগুলিতে বর্ণিত বিষয়বস্তু অত্যন্ত ভয়াবহ ও ভীতিপ্রদ হওয়ার কারণে এসব সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর পবিত্র চেহারায় বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দেয়। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ সূরার একটি আয়াতে এসেছে, (فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ) “যেভাবে আপনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে দৃঢ়পদ থাকুন” [সূরা হুদ - ১১২] এ নির্দেশই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [কুরতুবী]। --------------- [১] অর্থাৎ এ কিতাবে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো পাকা ও অকাট্য কথা এবং সেগুলোর কোন নড়াচড় নেই। ভালোভাবে যাচাই পর্যালোচনা করে সে কথাগুলো বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন পাকের আয়াতসমূহ সামগ্রিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত, অপরিবর্তিত। বাতিল এর কাছে প্রবেশের কোন সুযোগ পায় না [তাবারী] তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ পবিত্র কুরআন নাযিলের ফলে যেভাবে মনসূখ বা রহিত হয়েছে কুরআন পাক নাযিল হওয়ার পর যেহেতু নবীর আগমন এবং ওহীর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হয়ে গেছে সুতরাং কেয়ামত পর্যন্ত এ কিতাব আর রহিত হবে না। [কুরতুবী] এর আয়াতসমূহ শব্দের দিক থেকে মুহকাম বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও অপরিবর্তিত। হাসান ও আবুল আলীয়া বলেন, নির্দেশ ও নিষেধ দ্বারা এটাকে মজবুত করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী] [২] অর্থাৎ এ আয়াতগুলো বিস্তারিতও। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কথা খুলে খুলে ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বক্তব্য জটিল, বক্র ও অস্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কথা আলাদা আলাদা করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এর অর্থ, ওয়াদা, ধমক, সাওয়াব ও শাস্তির বিষয়াদি এতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী] কাতাদা বলেন, আল্লাহ্ এটাকে বাতিলের জন্য অপ্রতিরোধ্য করেছেন, তারপর হালাল ও হারাম সংক্রান্ত বিষয়াদি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, সামগ্রিকভাবে এটাকে মজবুত করেছেন। তারপর তাওহীদ, নবুওয়াত ও আখেরাতের পুনরুত্থানের বর্ণনা এক একটি আয়াত করে প্রদান করা হয়েছে। [কুরতুবী] সুতরাং এতে আকায়েদ, ইবাদত, লেন-দেন আচার ব্যবহার ও নীতি নৈতিকতার বিষয়বস্তুগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর আরেক অর্থ এও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তো পূর্ণ কুরআন মজীদ একসাথে লাওহে মাহফুজে উৎকীর্ণ করা হয়েছে, কিন্তু তারপর স্থান কাল পাত্র পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে, যাতে এর স্মরণ রাখা, মর্ম অনুধাবণ ক্রমানুসারে তদনুযায়ী আমল করা সহজ হয়। [কুরতুবী] অথবা এক এক আয়াত করে পর্যায়ক্রমে নাযিল করা হয়েছে যাতে এর মধ্যে চিন্তা-গবেষণা করা যায়। [কুরতুবী] [৩] অর্থাৎ এসব আয়াত এমন এক মহান সত্তার পক্ষ হতে আগত হয়েছে, যিনি তাঁর বাণীসমূহ ও বিধানসমূহে মহা প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ [ইবন কাসীর]