An-Nahl • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ وَضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا قَرْيَةًۭ كَانَتْ ءَامِنَةًۭ مُّطْمَئِنَّةًۭ يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًۭا مِّن كُلِّ مَكَانٍۢ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ ٱللَّهِ فَأَذَٰقَهَا ٱللَّهُ لِبَاسَ ٱلْجُوعِ وَٱلْخَوْفِ بِمَا كَانُوا۟ يَصْنَعُونَ ﴾
“AND GOD propounds [to you] a parable: [Imagine] a town which was [once] secure and at ease, with its sustenance coming to it abundantly from all quarters, and which thereupon blasphemously refused to show gratitude for God's blessings: and therefore God caused it to taste the all-embracing misery of hunger and fear in result of all [the evil] that its people had so persistently wrought.”
আর আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের [১] যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে তার প্রচুর জীবনোপকরণ। তারপর সে আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করল [২], ফলে তারা যা করত সে জন্য আল্লাহ্ সেটাকে আস্বাদ গ্রহন করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের [৩]। [১] এখানে যে জনপদের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে তাকে চিহ্নিত করা হয়নি। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এখানে নাম না নিয়ে মক্কাকেই দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়েছে। [তাবারী] এ প্রেক্ষিতে বিচার করলে এখানে ভীতি ও ক্ষুধা দ্বারা জনপদটির আক্রান্ত হবার যে কথা বলা হয়েছে সেটি হবে মক্কার দুর্ভিক্ষ, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর বেশ কিছুকাল পর্যন্ত মক্কাবাসীদের ওপর জেকে বসেছিল। অথচ মক্কা ছিল শান্তির নগরী, কিন্তু তাদের অপরাধের কারণেই তাদেরকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা এ ব্যাপারটি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সুন্দরভাবে বিবৃত করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আলকাসাসঃ ৫৭, সূরা ইবরাহীমঃ ২৮-২৯] তবে এ আয়াতের একটি তাফসীর উম্মুল মুমেনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি হজ্জে ছিলেন। তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মদীনায় তার গৃহাভ্যন্তরে অবরুদ্ধ ছিলেন। তিনি যাকেই পেতেন তাকেই উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। অবশেষে একদিন তিনি দু’জন সওয়ারী দেখে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, এটাই হলো সে জনপদ যার কথা আল্লাহর বাণী “আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে তার প্রচুর জীবনোপকরণ। তারপর সে আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল" এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর] [২] এখানে মূলে (كفر) শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ কুফরী আল্লাহর সাথে কুফরী ও আল্লাহর নেয়ামতের সাথে কুফরী উভয়টিই উদ্দেশ্য হতে পারে [ইবন কাসীর] কারণ, তারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছিল, তাঁর রাসূলদের সাথে কুফরি করেছিল। তাছাড়া তারা আল্লাহর নেয়ামতকেও অস্বীকার করেছিল। আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকারের উদাহরণ হিসেবে এক হাদীসেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের কুফরকে ব্যবহার করেছেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমাকে জাহান্নাম দেখানো হলো, আমি দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক। তারা কুফরী করে”। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি বললেনঃ “তারা স্বামীর প্রতি কুফর বা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যদি তুমি এক যুগ ধরে তাদের কারও উপকার কর, তারপরও সে তোমার কোন ত্রুটি দেখলে বলে, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও ভাল কিছু পাইনি"। [বুখারীঃ ২৯] [৩] এ আয়াতে ক্ষুধা ও ভীতির স্বাদ আস্বাদনের জন্য ‘লেবাস’ শব্দ ব্যবহার করে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির পোষাক আস্বাদন করানো হয়েছে। অথচ পোষাক আস্বাদন করার বস্তু নয়। কিন্তু এখানে ‘লেবাস’ শব্দটি পুরোপুরি পরিবেষ্টনকারী হওয়ার কারণে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষুধা ও ভীতি তাদের সবাইকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে নিয়েছে, যেমন পোশাক দেহের সাথে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে যায়, ক্ষুধা এবং ভীতিও তাদের উপর তেমনিভাবে চেপে বসে [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে বর্ণিত দৃষ্টান্তটি কোন কোন তাফসীরবিদের মতে একটি সাধারণ দৃষ্টান্ত। এর সম্পর্ক বিশেষ কোন জনপদের সাথে নয়। অধিকাংশ তাফসীরবিদ একে মক্কা মুকাররমার ঘটনা সাব্যস্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে ইউসুফ আলাইহিস সালামের সময়ের মত দো’আ করেছিলেন। [দেখুন, বুখারী ৪৮২১; মুসলিম: ২৭৯৮] ফলে মক্কাবাসীরা সাত বছর পর্যন্ত নিদারুণ দুর্ভিক্ষে পতিত ছিল। এমনকি, মৃত জন্তু, কুকুর ও ময়লা-আবর্জনা পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়ে পড়েছিল। এছাড়া মুসলিমদের ভয়ও তাদেরকে পেয়ে বসেছিল [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অবশেষে মক্কার সর্দাররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরয করল যে, কুফরী ও অবাধ্যতার দোষে পুরুষরা দোষী হতে পারে, কিন্তু শিশু ও মহিলারা তো নির্দোষ। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য মদীনা থেকে খাদ্যসম্ভার পাঠিয়ে দেন। আবু সুফিয়ান কাফের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে অনুরোধ করেন যে, আপনি তো আত্মীয় বাৎসল্য, দয়া-দাক্ষিণ্য ও মার্জনা শিক্ষা দেন। আপনারই স্বজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভিক্ষ দূর করে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দো’আ করুন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য দো’আ করেন এবং দূর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়। [ইবন কাসীর আস-সীরাতুন নাবওয়ীয়্যাহ, ২/৯১]