An-Nahl • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ وَٱللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَٰلًۭا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلْجِبَالِ أَكْنَٰنًۭا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَٰبِيلَ تَقِيكُمُ ٱلْحَرَّ وَسَرَٰبِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ ﴾
“And among the many objects of His creation, God has appointed for you [various] means of protection: thus, He has given you in the mountains places of shelter, and has endowed you with [the ability to make] garments to protect you from heat [and cold], as well as such garments as might protect you from your [mutual] violence. In this way does He bestow the full measure of His blessings on you, so that you might surrender yourselves unto Him.”
আর আল্লাহ্ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে [১] তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে [২] এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন [৩] যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। [১] এ আয়াতে আরও কিছু নেয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে তাবুবাসীদের বর্ণনা চলে গেছে। কিন্তু এমনও এক রয়েছে যাদের কোন তাবু নেই। তাদের পাকা ঘরের ব্যবস্থাও নেই, যার ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারে, দারিদ্রতা কিংবা অন্য কোন কারণে তখন তাকে কোন গাছ বা দেয়াল অথবা আকাশের মেঘের ছায়ায় বা অনুরূপ কিছুর নিচে থাকতে হয়, তাই আল্লাহ্ তা'আলা এদিকে দৃষ্টি দেয়ার প্রতি আহবান জানিয়ে বলছেন যে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন”। কাতাদা বলেন, এর অর্থ গাছ। [ইবন কাসীর] তবে পূর্বে উল্লেখিত সবগুলোর ছায়াই এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] তারপর মুসাফিরকে যেহেতু কখনও কখনও এমন কোন কিছুর আশ্রয় নিতে হয়, যেখানে সে অবস্থান করবে, আবার তার কাছে এমন কিছুও থাকতে হয় যা দ্বারা সে প্রচণ্ড তাপ ও খরা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ বলেন, “আর তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন”। [ফাতহুল কাদীর] পাহাড়ে তারা কিল্লা ও দূর্গ বানায় ইবন কাসীর অনুরূপভাবে সেখানে তাদের জন্য রয়েছে গিরিগুহাসমূহ যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। বিপদাপদ ও লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] আর তিনি “তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য এমন কিছু যা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। যেমন বর্ম ও লোহার অন্যান্য যুদ্ধের কাপড়। [ইবন কাসীর] [২] ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাবার কথা না বলার কারণ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ সূরার শুরুতে (لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ) বলে পোষাকের সাহায্যে শীত থেকে আত্মরক্ষা এবং উত্তাপ হাসিল করার কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল। তাই এখানে শুধু উত্তাপ প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে। অথবা একটির কথা বলায় অপরটি এমনিতেই এসে যাবে এজন্য ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অথবা, কুরআনুল কারম আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। সর্বপ্রথম এতে আরবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এতে আরবদের অভ্যাস ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বক্তব্য রাখা হয়েছে। আরব হলো গ্রীষ্মপ্রদান দেশ। সেখানে বরফ জমা ও শীতের কল্পনা করা কঠিন। তাই শুধু গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] কাতাদাহ বলেন, এ সূরাকে সূরাতুন নি’আম বা নেয়ামতের সূরা বলা হয়। আতা আল-খুরাসানী তা'আলার বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন" অথচ সমতল ভূমিতে আরও বড় ও বেশী ব্যবস্থাপনা আল্লাহ করে রেখেছেন কিন্তু সেটা উল্লেখ করেন নি। কেননা, তারা ছিল পাহাড়ী জাতি। অনুরূপভাবে তুমি দেখ না আল্লাহর বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর (ব্যবস্থা করেছেন) তাদের পশম, লোম ও চুল থেকে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহারউপকরণ" অথচ এর বাইরে আরও যে সমস্ত সামগ্ৰী তিনি মানুষের জন্য রেখেছেন তা অনেক বেশী কিন্তু তারা ছিল মেষপালক, পশমের বাড়িতে অবস্থানকারী গোষ্ঠী। তদ্রুপ তুমি কি দেখ না আল্লাহর বাণীর প্রতি, যেখানে তিনি বলেছেন, “আকাশে অবস্থিত মেঘের পাহাড়ের মধ্যস্থিত শিলাস্তুপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা" [সূরা আন-নূর:৪৩] কারণ, তারা এটা নিয়ে আশ্চর্যবোধ করে। অথচ আল্লাহ যে বরফ নাযিল করেন তা আরও বড় ব্যাপারে ও অধিকহারেই। কিন্তু তারা সেটা জানত না। সেরকমই তুমি দেখবে আল্লাহর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করলে, যেখানে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে” অথচ ঠাণ্ডার ব্যাপারে তার ব্যবস্থাপনা আরও বড় ও বেশী। কিন্তু তারা যেহেতু গরম এলাকার লোক, তাই তাদের কাছে গরমটাই উল্লেখ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর] [৩] নিয়ামত পূর্ণ বা সম্পূর্ণ করার মানে হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি সম্পূর্ণ তার রহমতের কারণে এখানে সেখানে মানুষের উপর তার নেয়ামত দিয়েই যাচ্ছেন। এভাবে তিনি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে দুনিয়া ও আখিরাতে বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করবেন। [ফাতহুল কাদীর]