Al-Israa • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ يَوْمَ نَدْعُوا۟ كُلَّ أُنَاسٍۭ بِإِمَٰمِهِمْ ۖ فَمَنْ أُوتِىَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَأُو۟لَٰٓئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَٰبَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًۭا ﴾
“[but] one Day We shall summon all human beings [and judge them] according to the conscious disposition which governed their deeds [in life]: whereupon they whose record shall be placed in their right hand -it is they who will read their record [with happiness]. Yet none shall be wronged by as much as a hair's breadth:”
স্মরণ করুন সে দিনকে, যখন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমাম [১] সহ ডাকব। অতঃপর যাদের ডান হাতে তাদের ‘আমলনামা দেয়া হবে, তারা তাদের ‘আমলনামা পড়বে এবং তাদের উপর সামান্ন পরিমাণও যুলুম করা হবে না। অষ্টম রুকূ’ [১] إمام শব্দের বিভিন্ন অর্থ করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ এখানে إمام দ্বারা গ্ৰন্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সে হিসেবে গ্ৰন্থকে ইমাম বলার কারণ এই যে, ভুলভ্রান্তি ও দ্বিমত দেখা দিলে গ্রন্থের আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন- কোন অনুসৃত ইমামের আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُّبِينٍ “আর যাবতীয় বস্তুই আমি সুস্পষ্ট গ্রন্থে গুনে রেখেছি"। [সূরা ইয়াসীনঃ ১২] এখানেও إِمَامٍ مُّبِينٍ বলে সুস্পষ্ট গ্রন্থ বুঝানো হয়েছে। তাই এ আয়াতেও তাদের বিচারের জন্য তাদের আমলনামার গ্রন্থ হাযির করার কথা বলাই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] এ অর্থের সমর্থনে কুরআনের আরো কিছু আয়াত প্রমাণ বহন করছে। যেমনঃ [সূরা কাহাফঃ ৪৯, আল-জাসিয়াঃ ২৮,২৯, আয-যুমারঃ ৬৯. আন-নিসাঃ ৪১] আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুজাহিদ থেকে এখানে ইমাম শব্দের অর্থ নেতাও বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার নাম দ্বারা ডাকা হবে এবং সবাইকে এক জায়গায় জমায়েত করা হবে। উদাহরণতঃ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী দল এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী দল। এ প্রসঙ্গে এসব অনুসারীর প্রত্যেক নেতাদের নাম নেয়াও সম্ভবপর। [ফাতহুল কাদীর] এ অর্থের সপক্ষে আরো প্রমাণ হলো, আল্লাহর বাণীঃ “প্রত্যেক জাতির জন্য আছে। একজন রাসূল এবং যখন ওদের রাসূল আসবে তখন ন্যায়বিচারের সাথে ওদের মীমাংসা করে দেয়া হবে এবং ওদের প্রতি যুলুম করা হবে না। ” [সূরা ইউনুসঃ৪৭]। তাছাড়া একই অর্থে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আরো আয়াত এসেছে। [যেমন সূরা আন-নিসাঃ ৪১, আন-নাহলঃ ৮৪, ৮৯, আল-হাজ্বঃ ৭৮, আল-কাসাসাঃ ৭৫, আয-যুমারঃ ৬৯] কোন কোন সালফে সালেহীন বলেন, এ আয়াত দ্বারা হাদীসের প্রকৃত অনুসারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রমাণিত হয়। কারণ তাদের নেতা হলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তবে আয়াতের পরবর্তী অংশ অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, এখানে إمام বলতে গ্ৰন্থই বুঝানো হয়েছে। ইবন কাসীর এ মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, “যাদের ডান হাতে তাদের ‘আমলনামা দেয়া হবে, তারা তাদের ‘আমলনামা পড়বে এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না”। অনুরূপভাবে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তখন যাকে তার "আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, ‘লও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ; আমি জানতাম যে, আমাকে আমার হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে। ' [সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৯-২০]। আর কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, “হায়! আমাকে যদি দেয়াই না হত আমার “আমলনামা, এবং আমি যদি না জানতাম আমার হিসেব!” [সূরা আল-হাক্কাহঃ ২৫-২৬] যদিও মূলতঃ উভয় তাফসীরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, তাদের আমলনামার উপর সাক্ষীস্বরূপ প্রত্যেক উম্মতের নবীদেরকে হাজির করা হবে। তারা সেগুলোর সত্যায়ন করবে। [ইবন কাসীর]