Al-Hajj • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ٱلَّذِى جَعَلْنَٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءً ٱلْعَٰكِفُ فِيهِ وَٱلْبَادِ ۚ وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍۭ بِظُلْمٍۢ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍۢ ﴾
“BEHOLD, as for those who are bent on denying the truth and bar [others] from the path of God and from the Inviolable House of Worship which We have set up for all people alike - [both] those who dwell there and those who come from abroad - and all who seek to profane it by [deliberate] evildoing: [all] such shall We cause to taste grievous suffering in the life to come.]”
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছেও মানুষকে বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ [১] থেকে ও মসজিদুল হারাম থেকে [২]। যা আমরা করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সব মানুষের জন্য সমান [৩], আর যে সেখানে অন্যায়ভাবে ‘ইলহাদ [৪]’ তথা দ্বীনবিরোধী পাপ কাজের ইচ্ছে করে তাকে আমরা আস্বাদন করাব যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [১] আল্লাহর পথ বলে ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে, তারা নিজেরা তো ইসলাম থেকে দূরে সরে আছেই; অন্যদেরকেও ইসলাম থেকে বাধা দেয়। [ফাতহুল কাদীর] [২] এটা তাদের দ্বিতীয় গোনাহ। তারা মুসলিমদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। মসজিদুল হারাম' ঐ মসজিদকে বলা হয়, যা বায়তুল্লাহর চতুস্পার্শ্বে নির্মিত হয়েছে। এটা মক্কার হারাম শরীফের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু কোন কোন সময় মসজিদুল হারাম" বলে মক্কার সম্পূর্ণ হারাম শরীফ বোঝানো হয়; যেমন হুদায়বিয়ার ঘটনাতে মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে শুধু মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়নি; বরং হারামের সীমানায় প্রবেশ করতে বাধা দান করেছিল। সহীহ হাদীস দ্বারা তা-ই প্রমাণিত রয়েছে। কুরআনুল করীম এ ঘটনায় মসজিদুল হারাম শব্দটি সাধারণ হারাম অর্থে ব্যবহার করেছে এবং বলেছেঃ وَصَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ [সূরা আল-ফাতহঃ ২৫] তাফসীরে দুররে-মানসূরে এ স্থানে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে রেওয়ায়েত বৰ্ণনা করা হয়েছে যে, আয়াতে মসজিদে হারাম বলে হারাম এলাকা বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] [৩] এখানে যারা কুফরি করেছে, আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিচ্ছে এবং মাসজিদুল হারাম থেকে বাধা দেয়। তাদের কি অবস্থা হবে সেটা উল্লেখ করা হয় নি। তবে আয়াত থেকে সেটা বুঝা যায়, আর তা হচ্ছে, তারা ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে বা ধ্বংস হবে। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে বর্ণিত সব মানুষের জন্য সমান' বলে বুঝানো হয়েছে যে, হারাম কোন ব্যক্তি, পরিবার বা গোত্রের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। বরং সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত, যার যিয়ারত থেকে বাধা দেবার অধিকার কারো নেই। মাসজিদুল হারাম ও হারাম শরীফের যে যে অংশে হজের ক্রিয়াকর্ম পালন করা হয়; যেমন- ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান, মীনার সমগ্র ময়দান, আরাফাতের সম্পূর্ণ ময়দান এবং মুযদালিফার গোটা ময়দান, এসব ভূখণ্ড সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য সাধারণ ওয়াকফ। কোন ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত মালিকানা এগুলোর উপর কখনো হয়নি এবং হতেও পারে না। এ বিষয়ে সমগ্র উম্মত ও ফেকাহবিদগণ একমত। এগুলো ছাড়া মক্কা মুকাররমার সাধারণ বাসগৃহ এবং হারামের অবশিষ্ট ভূখণ্ড সম্পর্কেও কোন কোন ফেকাহাবিদ বলেন যে, এগুলোও সাধারণ ওয়াকফ সম্পত্তি। এগুলো বিক্রয় করা ও ভাড়া দেয়া হারাম। প্রত্যেক মুসলিম যে কোন স্থানে অবস্থান করতে পারে। তবে অধিকসংখ্যক ফেকাহবিদগণের উক্তি এই যে, মক্কার বাসগৃহসমূহের উপর ব্যক্তিবিশেষের মালিকানা হতে পারে। কারণ, ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার বাসগৃহ ক্রয় করে কয়েদীদের জন্য জেলখানা নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে হারামের যে যে অংশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো সর্বাবস্থায় সাধারণ ওয়াকফ। এগুলোতে প্রবেশে বাধা দেয়া হারাম। আলোচ্য আয়াত থেকে এই অবৈধতা প্রমাণিত হয়। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] [৪] অভিধানে إلحاد এর অর্থ সরল পথ থেকে সরে যাওয়া, ঝুঁকে পড়া। অর্থাৎ কোন বড় মারাত্মক গোনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করাই ইলাহাদ। [ইবন কাসীর] তবে এখানে আল্লাহ তা’আলা যুলুমের সাথে ইলহাদের কথা বলেছেন। ইবন আব্বাস এর অর্থ করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ অপরাধ করা। ইবন আব্বাস থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, হারাম শরীফে আল্লাহ যা হারাম করেছেন যেমন, হত্যা, খারাপ আচরণ, এসবের কোন কিছুকে হালাল মনে করা। ফলে যে যুলুম করেনি তার উপর যুলুম করা, যে হত্যা করেনি তাকে হত্যা করা। সুতরাং কেউ যদি এ ধরনের কোন আচরণ করে তবে আল্লাহ তার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। অপর কারও কারও মতে, এখানে যুলুম অর্থ শির্ক। মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা। মুজাহিদ থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে যে, কোন খারাপ করাই যুলুম শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর] মোটকথা: যাবতীয় খারাপ কাজই এর মধ্যে শামিল হবে। যদিও সকল অবস্থায় খারাপ কাজ করা পাপ কিন্তু হারাম শরীফে একাজ করা আরো অনেক বেশী মারাত্মক পাপ। মুফাসসিরগণ বিনা প্রয়োজনে কসম খাওয়া কিংবা চাকরদেরকে গালি দেয়াকে পর্যন্ত হারাম শরীফের মধ্যে বেদ্বীনী গণ্য করেছেন এবং একে এ আয়াতের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এই আয়াতের তাফসীর এরূপও বর্ণিত আছে যে, হারাম শরীফ ছাড়া অন্যত্ৰ পাপ কাজের ইচ্ছা করলেই পাপ লেখা হয় না, যতক্ষণ না তা কার্যে পরিণত করা হয়। কিন্তু হারামে শুধু পাকাপোক্ত ইচ্ছা করলেই গোনাহ লেখা হয়। [ইবন কাসীর]