Al-Maaida • BN-TAFSIR-ABU-BAKR-ZAKARIA
﴿ سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحْتِ ۚ فَإِن جَآءُوكَ فَٱحْكُم بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ ۖ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًۭٔا ۖ وَإِنْ حَكَمْتَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ ﴾
“those who eagerly listen to any falsehood, greedily swallowing all that is evil! Hence, if they come to thee [for judgment], thou mayest either judge between them or leave them alone: for, if thou leave them alone, they cannot harm thee in any way. But if thou dost judge, judge between them with equity: verily, God knows those who act equitably.”
তারা মিথ্যা শুনতে খুবই আগ্রহশীল এবং অবৈধ সম্পদ খাওয়াতে অত্যন্ত আসক্ত [১]; সুতরাং তারা যদি আপনার কাছে আসে তবে তাদের বিচার নিষ্পত্তি করবেন বা তাদেরকে উপেক্ষা করবেন [২]। আপনি যদি তাদেরকে উপেক্ষা করেন তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি করেন তবে তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করবেন [৩]; নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। [১] ইয়াহুদীদের চতুর্থ বদভ্যাস হচ্ছে, উৎকোচ গ্রহণ। তারা ‘সুহত’ খাওয়ায় অভ্যস্ত। সুহতের শাব্দিক অর্থ কোন বস্তুকে মূলোৎপাটিত করে ধ্বংস করে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বলা হয়েছে, (فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍ) -অর্থাৎ “তোমরা কুকর্ম থেকে বিরত না হলে আল্লাহ্ তা’আলা আযাব দ্বারা তোমাদের মূলোৎপাটন করে দেবেন। [সূরা ত্বা-হা: ৬১] অর্থাৎ তোমাদের মূল শিকড় ধ্বংস করে দেয়া হবে। অধিকাংশ মুফাসসির এখানে সুহত এর অর্থ করেছেন, হারাম খাওয়া। [তাফসীর সা’দী, ইবন কাসীর, মুয়াসসার] এর অর্থে এক হাদীসে এসেছে, ‘নিশ্চয় বেশ্যার বেশ্যাবৃত্তির পয়সা, কুকুর-বিড়াল বিক্রির মূল্য এবং শিংগা লাগানোর বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ সুহত তথা হারাম সম্পদের অন্তর্ভুক্ত’। [সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৯৪১] তবে কোন কোন মুফাসসির বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘সুহত’ বলে উৎকোচকে বোঝানো হয়েছে। তাবারী; বাগভী; জালালাইন) উৎকোচ বা ঘুষ সমগ্র দেশ ও জাতিরও মূলোৎপাটন করে এবং জননিরাপত্তা ধ্বংস করে। যে দেশে অথবা যে বিভাগে ঘুষ চালু হয়ে পড়ে, সেখানে আইনও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ আইনের উপরই দেশ ও জাতির শান্তি নির্ভরশীল। আইন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে কারো জানমাল ও ইজ্জত-আবরু সংরক্ষিত থাকে না। ঘুষের উৎসমুখ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পদস্থ কর্মচারী ও শাসকদেরকে প্রদত্ত উপটৌকনকেও সহীহ হাদীসে ঘুষ বলে আখ্যায়িত করে হারাম করে দেয়া হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত করেন এবং ঐ ব্যক্তির প্রতিও, যে উভয়ের মধ্যে দালালী বা মধ্যস্থতা করে’। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪/১১৫, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৭৯] [২] আলোচ্য আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমতা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আপনি ইচ্ছা করলে তাদের মোকাদ্দমার ফয়সালা করুন, নতুবা নির্লিপ্ত থাকুন। আরো বলা হয়েছে যে, আপনি যদি নির্লিপ্ত থাকতে চান তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। পরে বলা হয়েছে, যদি আপনি ফয়সালাই করতে চান, তবে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার সহকারে ফয়সালা করুন। অর্থাৎ নিজ শরীআত অনুযায়ী ফয়সালা করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হওয়ার পর পূর্ববর্তী সমস্ত শরীআত রহিত হয়ে গেছে। কুরআনে যেসব আইন বহাল রাখা হয়েছে, সেগুলো অবশ্য রহিত হয়নি। [বাগভী] [৩] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ বনু-নদ্বীর এবং বনু-কুরাইযার মধ্যে যুদ্ধ হত। বনু-নদ্বীর বনু-কুরাইযা থেকে নিজেদেরকে সম্মানিত দাবী করত। বনু-কুরাইযার কোন লোক যদি বনু-নদ্বীরের কাউকে হত্যা করত তাহলে তাকেও হত্যা করা হত। কিন্তু বনু-নদ্বীর যদি বনু-কুরাইযার কাউকে হত্যা করত তাহলে এর বিনিময়ে একশ’ ওসাক খেজুর রক্তপণ হিসাবে আদায় করত। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’আলা মদীনায় পাঠালেন, তখন বনু-নদ্বীরের এক লোক বনু-কুরাইযার এক ব্যক্তিকে হত্যা করল। বনু-কুরাইযা তাদের লোকের হত্যার বিনিময়ে কেসাস দাবী করল। তারা বললঃ আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাব এবং শেষ পর্যন্ত তার কাছেই আসল। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [আবু দাউদঃ ৪৪৯৪]