slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الرعد

(Ar-Rad) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ المر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ ۗ وَالَّذِي أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 আলিফ লা-ম মী-ম রা। এগুলি কুরআনের আয়াত; যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাই সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।

سَوَاءٌ مِنْكُمْ مَنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ

📘 তোমাদের মধ্যে যে গোপনে কথা বলে এবং যে তা প্রকাশ্যে বলে, যে রাত্রে আত্মগোপন করে এবং যে দিবসে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা (আল্লাহর জ্ঞানে) সবাই সমান।

لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ

📘 মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে;[১] ওরা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।[২] আর কোন সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তাহলে তা রদ করবার কেউ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই। [১] مُعَقِّبَاتٌ শব্দটি مُعَقِّبَةٌ শব্দের বহুবচন, এর অর্থ এক অপরের পিছে আগমনকারী। অর্থাৎ ফিরিশতাবর্গ যাঁরা পালাক্রমে এক অপরের পরে আসতে থাকেন। দিনের ফিরিশতা গেলে রাতের ফিরিশতা আসেন এবং রাতের ফিরিশতা গেলে দিনের ফিরিশতা আসেন।[২] এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য দেখুন সূরা আনফালের ৮:৫৩ নং আয়াতের টীকা।

هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ

📘 তিনিই তোমাদেরকে ভয় ও আকাঙ্ক্ষা স্বরূপ বিজলী দেখান[১] এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ।[২] [১] ফলে পথচারী মুসাফির ভয় পায় এবং বাড়িতে অবস্থানকারী কৃষক-চাষী এর বরকত ও লাভের আশাবাদী হয়। [২] ঘন মেঘ অর্থাৎ, বর্ষণশীল মেঘ।

وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ

📘 বজ্রধ্বনি ও ফিরিশতাগণ সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে।[১] তিনি বজ্রসমূহ প্রেরণ করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন।[২] ওরা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে; আর তিনি মহাশক্তিশালী। [৩] [১] যেমন অন্যত্র বলেছেন, ﴿وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেক বস্তু তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে। (সূরা ইসরা ১৭:৪৪) [২] অর্থাৎ, এর মাধ্যমে যাকে চান ধংস করে দেন।[৩] مِحَال এর অর্থ শক্তি, পাকড়াও এবং পরিচালনা ইত্যাদি করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি বড্ড শক্তিমান, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব-নিকাশকারী এবং সুপরিচালক।

لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُمْ بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ

📘 সত্যের আহবান তাঁরই।[১] আর যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে আহবান করে ওরা তাদেরকে কোনই সাড়া দেয় না; তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে নিজ হস্তদ্বয় পানির দিকে প্রসারিত করে; যাতে তার মুখে পৌঁছে। অথচ তা তাতে পৌঁছবার নয়।[২] বস্তুতঃ অবিশ্বাসীদের আহবান ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।[৩] [১] অর্থাৎ ভয় এবং আশার সময় শুধু এক আল্লাহকেই ডাকা উচিত। কেননা তিনিই প্রত্যেকের ডাক শোনেন এবং কবুল করেন। অথবা দা'ওয়াত শব্দের অর্থ ইবাদত অর্থাৎ তাঁরই ইবাদত সত্য এবং শুদ্ধ, তিনি ব্যতীত কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। কেননা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও পরিচালক তিনিই। সুতরাং ইবাদতও একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। [২]অর্থাৎ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তাদের উদাহরণ এমন যেমন কোন মানুষ দূর থেকে পানির দিকে দুই হাত বাড়িয়ে পানিকে বলে যে, তুই আমার মুখ পর্যন্ত চলে আয়। স্পষ্ট কথা যে, পানি অচল (নির্জীব) বস্তু, তাকে খবরই নেই যে, হাত প্রসারণকারীর প্রয়োজন কী? আর না সে এটা জানে যে, সে মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধ করছে? আর না তার মধ্যে এই ক্ষমতাই আছে যে, সে নিজের স্থান থেকে চলে তার মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। অনুরূপ এই মুশরিকরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান করে, তারা না এটা জানে যে, তাদেরকে কেউ আহবান করছে এবং তার অমুক প্রয়োজন রয়েছে, আর না তাদের মধ্যে প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতাই আছে। [৩] এবং বেকারও বটে, কেননা এতে তাদের কোন লাভ হবে না।

وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ ۩

📘 আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়।[১] (সাজদাহ-২) [১] এতে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার কথা উল্লেখ হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্তুর উপর তাঁর আধিপত্য রয়েছে এবং প্রত্যেক বস্তু তাঁর অধীন ও তাঁর সামনে সিজদাবনত। চাহে মুমিনদের ন্যায় স্বেচ্ছায় করুক বা মুশরিকদের ন্যায় অনিচ্ছায়। তাদের ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদা করে। যেমন তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿أَوَ لَمْ يَرَوْاْ إِلَى مَا خَلَقَ اللهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلاَلُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالْشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِله وَهُمْ دَاخِرُونَ﴾ অর্থাৎ, তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি যার ছায়া বিনীতভাবে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ডানে ও বামে ঢলে পড়ে? (সূরা নাহল ১৬:৪৮) উক্ত সিজদার স্বরূপ কি? এটা মহান আল্লাহই ভাল জানেন। অথবা দ্বিতীয় অর্থ এর এই যে, কাফের সমেত সকল সৃষ্টি আল্লাহর আদেশাধীন, কারো তা লঙ্ঘন করার শক্তি নেই। আল্লাহ কাউকে সুস্থ করুন অথবা অসুস্থ, ধনী করুন অথবা কাঙ্গাল, জীবন দান করুন অথবা মৃত্যু। উক্ত সৃষ্টিমূলক নিয়মকে অমান্য করার শক্তি কোন কাফেরেরও নেই। --- (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)

قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

📘 বল, ‘কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক?’ বল, ‘তিনি আল্লাহ।’[১] বল, ‘তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে, যারা নিজেদের লাভ ও ক্ষতির মালিক নয়?’[২] বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষমান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক?’[৩] অথবা তারা কি আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যার কারণে সৃষ্টি তাদের কাছে তালগোল খেয়ে গেছে? বল, ‘আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনিই অদ্বিতীয়,[৪] পরাক্রমশালী।’ [১] এখানে নবী (সাঃ)-এর জবানে স্বীকারোক্তি রয়েছে, কিন্তু কুরআনের অন্যান্য স্থানে স্পষ্ট রয়েছে যে, মুশরিকদের জবাবও এটাই ছিল।[২] অর্থাৎ যখন তোমরা স্বীকার করছ যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি অন্যের অংশীদারিত ছাড়া সকল ক্ষমতা ও এখতিয়ারের মালিক, তাহলে এর পরও কেন তোমরা তাঁকে ছেড়ে এমন সৃষ্টিদেরকে অভিভাবক, বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক মনে করছ, যারা নিজেদের লাভ-ক্ষতিরও এখতিয়ার রাখে না।[৩] অর্থাৎ, যেমন দৃষ্টিহীন ও দৃষ্টিমান সমান হতে পারে না, তেমনি তওহীদবাদী ও মুশরিক (অংশীবাদী) সমান হতে পারে না। কেননা তওহীদবাদীর হৃদয় তওহীদের জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় থাকে, পক্ষান্তরে মুশরিক তা হতে বঞ্চিত থাকে। একত্ববাদীর দৃষ্টিশক্তি রয়েছে, সে তওহীদের জ্যোতি দেখতে পায়। পক্ষান্তরে অংশীবাদী তওহীদের জ্যোতি দেখতে পায় না, কেননা সে অন্ধ। অনুরূপ যেমন অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে না, তেমনি এক আল্লাহর ইবাদতকারী; যার হৃদয় ঈমানী জ্যোতিতে পরিপূর্ণ এবং মুশরিক; যার হৃদয় অজ্ঞতা ও কুসংস্কার তথা অলীক বিশ্বএর অন্ধকারে বিচরণ করে, উভয়ে সমান হতে পারে না।[৪] অর্থাৎ এমন কথা নয় যে, তারা তালগোল বা সন্দেহের শিকার হয়েছে, বরং তারা মানে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র মহান আল্লাহই।

أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ

📘 তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ ওদের পরিমাণ অনুসারে প্রবাহিত হয়।[১] সুতরাং স্রোত-প্রবাহ ভাসমান ফেনাকে বয়ে নিয়ে যায়।[২] অনুরূপ (ফেনার মত) আবর্জনা নির্গত হয়, যখন অলংকার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণ উদ্দেশ্যে কিছু (পদার্থ)কে অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়।[৩] এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকেন;[৪] সুতরাং যা ফেনা (বা আবর্জনা) তা উপেক্ষিত ও নিশ্চিহ্ন হয়[৫] এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা ভূমিতে থেকে যায়।[৬] এভাবেই আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন।[৭] [১] بِقَدَرِهَا (বিস্তৃতি বা পরিমাণ অনুসারে) এর অর্থ নালা অর্থাৎ উপত্যকা (দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান) সংকীর্ণ হলে অল্প, আর বিস্তৃত হলে অধিক পানি গ্রহণ করে। অর্থাৎ, পথের দিশারী ও জীবন-সংবিধান কুরআনের অবতীর্ণ হওয়াকে বৃষ্টি বর্ষণের সাথে তুলনা করেছেন। কেননা কুরআনের উপকারিতাও বৃষ্টির উপকারিতার মত সার্বিক বা ব্যাপক। আর উপত্যকাকে তুলনা করেছেন হৃদয়ের সঙ্গে। কেননা উপত্যকায় পানি গিয়ে স্থির হয়ে যায়, যেমন কুরআন ও ঈমান মুমিনের হৃদয়ে স্থির হয়ে যায়।[২] এই ফেনা --যা পানির উপরাংশে জমে ওঠে এবং যা ক্ষণকাল পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অথবা যাকে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়-- এর অর্থ কুফরী, যা ফেনার মতই উড়ে যায় এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।[৩] এটি দ্বিতীয় উদাহরণ যে, অলংকার অথবা সামগ্রী ইত্যাদি তৈরী করার জন্য তামা, পিতল, সীসা অথবা সোনা-রুপোকে আগুনে গরম করা হলে তার উপরও ফেনা (খাদ) চলে আসে। এই ফেনার অর্থ সেই আবর্জনা বা ময়লা যা উক্ত ধাতুর মধ্যে থাকে। আগুনে গরম করলে ফেনার আকারে তা উপরে চলে আসে। অতঃপর ক্ষণেকের ভিতরে উক্ত ফেনা নিশ্চিহ্ন হয়ে খাঁটি ধাতু থেকে যায়।[৪] অর্থাৎ যখন সত্য ও অসত্যের পরস্পর সংঘর্ষ হয়, তখন অসত্যের স্থায়িত্ব থাকে না; যেমন প্লাবন ধারার ফেনার পানির উপর এবং ধাতুর ফেনার --যা আগুনে গরম করা হয়-- ধাতুর উপর কোন স্থায়িত্ব থাকে না; বরং নিশ্চিহ্ন ও নষ্ট হয়ে যায়।[৫] অর্থাৎ, তার দ্বারা কোন উপকার হয় না। কেননা পানি অথবা ধাতুর সাথে ফেনা অবশিষ্টই থাকে না, বরং আস্তে আস্তে বসে যায় কিংবা বাতাস তা উড়িয়ে নিয়ে যায়, অসত্যের উদাহরণও ঠিক ফেনারই মত।[৬] অর্থাৎ, পানি এবং সোনা-রুপো, তামা, পিতল ইত্যাদি এসব জিনিস থেকে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত ও লাভবান হয়। অনুরূপ সত্য টিঁকে থাকে, যার অস্তিত্বে বিনাশ ঘটে না এবং এর উপকারিতাও স্থায়ী।[৭] অর্থাৎ, কথা বুঝাবার এবং মস্তিষ্কে বসাবার জন্য উদাহরণ পেশ করেন, যেমন এখানে দু'টি উদাহরণ পেশ করেছেন এবং অনুরূপ সূরা বাক্বারার প্রারম্ভে মুনাফিকদের জন্যে উদাহরণ পেশ করেছেন। অনুরূপ সূরা নূরের ২৪:৩৯-৪০ নং আয়াতে কাফেরদের জন্য দুটি উদাহরণ পেশ করেছেন। আর হাদীসের মধ্যেও নবী (সাঃ) অনেক কথা উপমা দিয়ে মানুষকে বুঝিয়েছেন। (বিস্তারিত জানার জন্য 'তাফসীর ইবনে কাসীর' দেখুন)।

لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

📘 যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল। আর যারা তাঁর আহবানে সাড়া দেয় না, তাদের যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সমস্তই থাকতো এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরো কিছু থাকতো, তাহলে অবশ্যই তারা মুক্তিপণ স্বরূপ তা প্রদান করতো।[১] তাদের হবে কঠোর হিসাব[২] এবং জাহান্নাম হবে তাদের আবাস। আর তা কত নিকৃষ্ট শয়নাগার। [১] এ বিষয়টি ইতিপূর্বেও দুই-তিন স্থানে উল্লিখিত হয়েছে। (দেখুনঃ সূরা আলে ইমরান ৩:৯১, সূরা মাইদাহ ৫:৩৬, সূরা যুমার ৩৯:৪৭) [২] কেননা তাদের নিকট থেকে প্রত্যেক ছোট-বড় কর্মের হিসাব নেওয়া হবে এবং তাদের ব্যাপারটা مَنْ نُوْقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ অর্থাৎ (হিসাবে যাকে জেরা করা হবে তার বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে, সে আযাবে গ্রেপ্তার হবেই) এর মত হবে। এ জন্য এর পরে বলেছেন, 'জাহান্নাম হবে তাদের আবাস।'

۞ أَفَمَنْ يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ ۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

📘 তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে সে আর অন্ধ কি সমান?[১] কেবলমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। [২] [১] অর্থাৎ, কুরআনের সঠিকতা ও সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তি এবং অন্ধ অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? এটা অস্বীকৃতিসূচক প্রশ্ন, অর্থাৎ উক্ত দুই ব্যক্তি তেমনই সমান হতে পারে না, যেমন ফেনা এবং পানি অথবা সোনা, তামা এবং ওর খাদ সমান হতে পারে না। [২] অর্থাৎ, যার কাছে নীরোগ হৃদয় ও সুস্থ বিবেক না থাকে এবং যে নিজ হৃদয়কে পাপের মরিচায় মলিন করে রাখে এবং বিবেক-বুদ্ধি বিলুপ্ত করে ফেলে, সে এই কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণই করতে পারে না।

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

📘 আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন[১] এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে।[২] তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার। [১] استَوَى عَلَى العَرش এর ভাবার্থ ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর অর্থ মহান আল্লাহর আরশে অবস্থান করা। হাদীস বিশারদদের তরীকা এটাই যে, তাঁরা আল্লাহর কোন গুণের তা'বীল (অপব্যাখ্যা) করেন না, যেমন অন্যরা মহান আল্লাহর উক্ত গুণের এবং তাঁর অন্যান্য গুণের অপব্যাখ্যা করে থাকে। হাদীস বিশারদগণ এও বলেছেন যে, তাঁর গুণাবলীর কেমনত্বও বর্ণনা করা যাবে না এবং কোন কিছুর সাথে তুলনাও করা যাবে না। তিনি বলেন: ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ﴾ অর্থ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা ৪২:১১) [২] এর একটি অর্থ এই যে, 'প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করবে।' অর্থাৎ কিয়ামত অবধি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য তার স্থির হওয়ার সময় পর্যন্ত চলছে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৮) দ্বিতীয় অর্থ এই যে, চন্দ্র এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। সূর্য নিজের চক্র এক বছরে এবং চন্দ্র এক মাসে পূর্ণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্রের জন্যে আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিনণ কক্ষপথ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৯) সাতটি বৃহৎ বৃহৎ গ্রহ রয়েছে, ওদের মধ্যে দু'টি হলো সূর্য এবং চন্দ্র। এখানে শুধু উক্ত দু'টি গ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন, কেননা এ দুটিই (মানুষের চক্ষুদৃষ্টিতে) সর্বাধিক বিশাল এবং মহত্বপূর্ণ। এ দুটিও যখন আল্লাহর নির্দেশাধীন, তাহলে অন্যগুলো নিশ্চিতরূপে তাঁর নির্দেশাধীন হবে। আর যখন এরা আল্লাহর হুকুমের অধীনে, তখন এরা মা'বূদ (উপাস্য) হতে পারে না। মা'বূদ তো তিনিই, যিনি এদেরকে অধীনস্থ করে রেখেছেন। তাই তিনি বলেন,﴿لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِله الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্র-সূর্যকে সিজদা করো না, সেই আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করতে চাও। (সূরা ফুসস্বিলাত ৪১:৩৭) অন্যত্র বলেন, ﴿وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। (সূরা আ'রাফ ৭:৫৪)

الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنْقُضُونَ الْمِيثَاقَ

📘 যারা আল্লাহকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে[১] এবং চুক্তি ভঙ্গ করে না। [২] [১] এখানে জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হচ্ছে। 'আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি' এর অর্থ, তাঁর বিধি-নিষেধ যা তারা পালন করে থাকে। অথবা সেই অঙ্গীকার যা 'আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই' অঙ্গীকার নামে পরিচিত, যার কথা সূরা আ'রাফে (৭:১৭২ নং আয়াতে) বিবৃত হয়েছে।[২] এর অর্থ সেই সন্ধি, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি যা মানুষ পরস্পর করে থাকে। অথবা যা তাদের এবং তাদের রবের মধ্যে হয়েছে।

وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ

📘 আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ´ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ´ রাখে[১] এবং ভয় করে তাদের প্রতিপালককে ও ভয় করে কঠোর হিসাবকে। [১] অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ও বন্ধন নষ্ট করে না; বরং সম্পর্ক গড়ে এবং আত্মীয়তা বন্ধন রক্ষা করে।

وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ

📘 আর যারা তাদের প্রতিপালকের মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে,[১] নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করে,[২] আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে[৩] এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে[৪] তাদের জন্য শুভ পরিণাম (পরকালের গৃহ); [৫] [১] আল্লাহর অবাধ্যতা এবং পাপ থেকে বেঁচে থাকে। এটা এক প্রকার ধৈর্য। দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে। এটা ধৈর্যের দ্বিতীয় প্রকার। জ্ঞানীরা উভয় প্রকার ধৈর্য অবলম্বন করে।[২] তার সময়-সীমা বহাল রেখে, বিনয়-নম্রতার সাথে এবং ধীর-স্থির চিত্তে, বিশুদ্ধ-চিত্তে, রসূল (সাঃ)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী; নিজের মন মত পদ্ধতিতে নয়।[৩] যখন যেখানে ব্যয় করার প্রয়োজন হয়, আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মাঝে প্রকাশ্যে ও গোপনে ব্যয় করে থাকে।[৪] অর্থাৎ তাদের সাথে কেউ অসঙ্গত ব্যবহার করলে তারা তার জবাব উত্তম পদ্ধতিতে দিয়ে থাকে, অথবা ক্ষমা করে দিয়ে ধৈর্য ধারণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন: ﴿ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾ অর্থাৎ, মন্দের জবাব উত্তম পদ্ধতিতে দাও, (যদি তোমরা এমনটি কর) তাহলে যে ব্যক্তি তোমার শত্রু, সে এমন হয়ে যাবে যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৪) [৫] অর্থাৎ যে এই উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবে এবং উল্লিখিত গুণাবলীতে গুণান্বিত হবে, তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণামের গৃহ (বেহেশত)।

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ

📘 স্থায়ী জান্নাত,[১] তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও।[২] আর ফিরিশতাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। [১] 'আদন' এর অর্থ হলো স্থায়ী অর্থাৎ চিরস্থায়ী বাগান।[২] অর্থাৎ এমনিভাবে সৎশীল (জান্নাতী) আত্মীয়দেরকে পরস্পর একত্র করে দেবেন, যাতে একে অপরকে দেখে তাদের চক্ষু শীতল হয়। এমনকি নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীদের উচ্চ শ্রেণীর মর্যাদা দান করবেন, যাতে তারা সব সব আত্মীয়ের সাথে একত্রিত হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ ﴾ অর্থাৎ, যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করব না। (সূরা ত্বূ-র ৫২:২১) এখান থেকে যেমন এটা জানা গেল যে, মহান আল্লাহ আত্মীয়দেরকে জান্নাতে একত্র করে দেবেন, তেমন এটাও জানা গেল যে, যদি কারো কাছে ঈমান ও সৎ আমলের সম্বল না থাকে তাহলে সে জান্নাতে যাবে না, যদিও তার অন্যান্য অত্যন্ত নিকটাত্মীয় জান্নাতে চলে যায়। কেননা জান্নাতে প্রবেশ জাত-কূলের ভিত্তিতে হয় না, বরং ঈমান ও সৎ আমলের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। মহানবী (সাঃ) বলেন, "যাকে তার আমল পিছে ছেড়ে দেয়, তার বংশ তাকে সামনে বাড়াবে না।" (মুসলিম)

سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

📘 (তারা বলবে,) তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম।

وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ

📘 যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ´ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস। [১] [১] এখানে সৎকর্মশীলদের সাথে অসৎকর্মশীলদের পরিণাম বর্ণনা করেছেন, যেন মানুষ এই পরিণাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে।

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

📘 আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন।[১] কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই উল্লসিত; [২] অথচ ইহজীবন তো পরজীবনের তুলনায় নগণ্য ভোগ মাত্র। [৩] [১] যখন কাফের এবং মুশরিকদের ব্যাপারে বললেন যে, তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট স্থান, তখন মস্তিষ্কে এই প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে যে, তারা তো পৃথিবীতে হরেক রকমের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করে থাকে। এ কথা খন্ডনের জন্য বললেন যে, পার্থিব উপায়-উপকরণ ও জীবিকার কম-বেশি হওয়ার এখতিয়ার আল্লাহর হাতে রয়েছে। তিনি নিজ হিকমত ও ইচ্ছা অনুযায়ী (যা শুধু তিনিই জানেন) কাউকে বেশি এবং কাউকে কম দিয়ে থাকেন। জীবিকার আধিক্য এ কথার প্রমাণ নয় যে, মহান আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট এবং কমতির অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার উপর অসন্তুষ্ট। [২] আল্লাহর অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ পার্থিব সম্পদ পায়, তাহলে তাতে আনন্দ-উল্লাসের কিছু নেই। কেননা তা আল্লাহর পক্ষ হতে অবকাশ মাত্র। কারো জানা নেই যে, অকস্মাৎ কখন এই অবকাশ সময়ের অবসান ঘটবে এবং তাঁর পাকড়াও এসে আক্রমণ করবে। [৩] হাদীসে এসেছে যে, পরকালের অপেক্ষা ইহকালের মূল্য ততটুক, যতটুক কোন ব্যক্তি তার আঙ্গুল সমুদ্রে ডুবায় অতঃপর তা বের করে দেখে যে সমুদ্রের পানির তুলনায় তার আঙ্গুলে কতটুক পরিমাণ পানি এসেছে? (মুসলিমঃ কিতাবুল জান্নাহ) অন্য এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি মৃত ছাগলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তা দেখে বললেন, আল্লাহর শপথ! দুনিয়া আল্লাহর নিকট এটির চাইতেও বেশি তুচ্ছ, যতটা এই মৃত ছাগল তার মালিকদের নিকট সেই সময় তুচ্ছ ছিল, যে সময় তারা তাকে ফেলে দিয়েছিল। (মুসলিম, কিতাবুযযুহ্দি অররিক্বা ক)

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ

📘 যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ তুমি বল, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি তাদেরকেই তাঁর পথ দেখান যারা তাঁর অভিমুখী;

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

📘 যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়। [১] [১] আল্লাহর স্মরণ বা যিকরের অর্থ তাঁর তওহীদের (একত্ববাদের) বর্ণনা, যার দ্বারা মুশরিকদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। অথবা যিকর অর্থঃ তাঁর ইবাদত, কুরআন তিলাঅত, নফল ইবাদত এবং দু'আ ও মুনাজাত; যা ঈমানদারদের মনের খোরাক। অথবা তাঁর আদেশ-নির্দেশ পালন করা; যা ব্যতিরেকে ঈমানদার ও পরহেযগারগণ অস্থির থাকেন।

الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ

📘 যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, কল্যাণ[১] ও শুভ পরিণাম তাদেরই।’ [১] طُوْبَى এর একাধিক অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে, উদাহরণ স্বরূপঃ কল্যাণ, পুণ্য, কারামত, ঈর্ষা, জান্নাতের বিশেষ গাছ অথবা বিশেষ স্থান ইত্যাদি। সবের ভাবার্থ প্রায় একই; অর্থাৎ জান্নাতে উত্তম স্থান এবং তার সুখ-সুবিধা।

وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

📘 তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন[১] এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।[২] তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। [১] পৃথিবীর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুমান করা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। উঁচু ও বিশাল পর্বতমালাকে ভূপৃষ্ঠে কীলক স্বরূপ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। নদী-নালা, সমুদ্র ও ঝর্ণাদির এমন ব্যবস্থাপনা রেখেছেন, যার দ্বারা মানুষ নিজেও উপকৃত হয় এবং ক্ষেত-বাগানও সেচন করে থাকে। ফলে বিভিন্ন প্রকারের শস্য ও ফল উৎপাদন হয়, যাদের আকার-প্রকারও ভিন্ন এবং স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। [২] এর একটি অর্থ এই যে, নর-মাদী দুটোই বানিয়েছেন, যেমনটি আধুনিক আবিষ্কর্তারাও এর সত্যায়ন করেছেন। (জোড়ায় জোড়ায়)এর দ্বিতীয় অর্থ বিপরীতমুখী, যেমনঃ মিষ্টি-টক, ঠান্ডা-গরম, কালো-সাদা এবং সুস্বাদ-বিস্বাদ, এ ধরণের পারস্পরিক বিপরীতধর্মী বস্তু সৃষ্টি করেছেন।

كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَا أُمَمٌ لِتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ

📘 এইভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে;[১] যাতে আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তাদের নিকট তা আবৃত্তি কর। তারা পরম দয়াময়কে অস্বীকার করে।[২] তুমি বল, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই।[৩] তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।’ [১] যেমন আমি তোমাকে আমার বার্তা পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করেছি, অনুরূপ তোমার পূর্ববর্তী উম্মতদের মাঝেও রসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদেরকেও তেমনই মিথ্যাজ্ঞান করা হয়েছিল যেমন তোমাকে করা হয়েছে এবং যেমন উক্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে আযাবগ্রস্ত হয়েছিল, এদেরও সেই পরিণাম থেকে নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়। [২] মক্কার মুশরিকরা 'রাহমান' শব্দে চরম চকিত হত। হুদাইবিয়া সন্ধির সময় যখন 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' এর শব্দাবলী লেখা হয়েছিল, তখন তারা বলেছিল, 'রাহমান রাহীম' কি আমরা জানি না। (ইবনে কাসীর) [৩] অর্থাৎ, 'রাহমান' আমার সেই প্রতিপালক, যিনি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই।

وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَلْ لِلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا ۗ أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنْ لَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا ۗ وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُمْ بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِنْ دَارِهِمْ حَتَّىٰ يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

📘 যদি কোন কুরআন এমন হত, যার দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত, (তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করত না)। বরং সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।[১] তবে কি যারা বিশ্বাস করেছে তাদের প্রত্যয় হয়নি যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন; যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে অথবা বিপর্যয় তাদের আশে পাশে আপতিত হতেই থাকবে;[২] যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে উপস্থিত হবে।[৩] নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। [১] ('কোন কুরআন' থেকে বুঝা যায়, কুরআন একাধিক।) ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, প্রত্যেক আসমানী গ্রন্থকে কুরআন বলা হয়। যেমন একটি হাদীসে এসেছে যে, "দাউদ (আঃ) সওয়ারী প্রস্তুত করার হুকুম দিতেন, এবং এই অবসরে কুরআনের অযীফা পড়ে নিতেন। (বুখারী, আম্বিয়া অধ্যায়) এখানে স্পষ্ট যে কুরআনের অর্থ যাবূর। আয়াতের অর্থ এই যে, যদি পূর্বে কোন আসমানী গ্রন্থ অবতীর্ণ হত, যা শুনে পাহাড় চলতে আরম্ভ করত অথবা পৃথিবীর পথ-দূরত্ব কমে আসত (অথবা ভূমি বিদীর্ণ করে নদী সৃষ্টি হত) অথবা মৃতেরা কথা বলত, তাহলে কুরআন কারীমের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য উত্তম রূপে পাওয়া যেত। কেননা কুরআন পূর্ববর্তী সমস্ত গ্রন্থের তুলনায় মু'জিযা এবং সাহিত্য-শৈলীতে উচ্চতর। কেউ কেউ এর অর্থ বলেছেন যে, যদি কুরআনের মাধ্যমে উক্ত মু'জিযাগুলি প্রকাশ পেত, তবুও এই কাফেররা ঈমান আনয়ন করত না, কেননা কারো ঈমান আনয়নের ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল; মু'জিযার উপর নয়। তাই বলেছেন, "সমস্ত বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।" [২] যা তারা দেখতে অথবা জানতে অবশ্যই পারবে, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। [৩] অর্থাৎ, কিয়ামত চলে আসবে অথবা মুসলিমরা পূর্ণ বিজয় লাভ করবে।

وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ

📘 তোমার পূর্বেও অনেক রসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। সুতরাং যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদেরকে কিছু অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম; অতএব কেমন ছিল আমার শাস্তি![১] [১] হাদীসেও এসেছে, "আল্লাহ অত্যাচারীকে ঢিল দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না।" অতঃপর নবী (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করলেন, ﴿وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ﴾ অর্থাৎ, এরূপেই তখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন, যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যাতনাদায়ক, কঠিন। (সূরা হূদ ১১:১০২) (বুখারীঃ সূরা হূদের তাফসীর, মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)

أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَمْ بِظَاهِرٍ مِنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

📘 তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক, তিনি (এদের অক্ষম উপাস্যগুলির মত)?[১] তারা আল্লাহর বহু শরীক করেছে। তুমি বল, ‘তোমরা তাদের নাম উল্লেখ কর;[২] তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ তাঁকে দিতে চাও, যা তিনি জানেন না? অথবা তা অসার উক্তি?’[৩] বরং যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের চক্রান্তকে তাদের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে[৪] এবং তাদেরকে সঠিক পথ হতে বিরত রাখা হয়েছে। আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। [৫] [১] এখানে এর জবাব ঊহ্য রয়েছে, অর্থাৎ মহান আল্লাহ এবং ঐ মিথ্যা দেবতারা কি সমান হতে পারে, এরা যাদের পূজা-অর্চনা করছে? যারা না কারো ইষ্টানিষ্ট করতে সক্ষম, না তারা দেখতে পায় আর না তারা বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী।[২] অর্থাৎ, আমাকেও বল, যেন আমি তাদেরকে চিনতে পারি, এই জন্য যে তাদের কোন বাস্তবতাই নেই। এ জন্য পরবর্তীতে বলেছেন, তোমরা কি আল্লাহকে সেসব কথার সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি পৃথিবীতে জানেন না? অর্থাৎ তাদের অস্তিত্বই নেই, কেননা পৃথিবীতে যদি তাদের অস্তিত্ব থাকত, তাহলে মহান আল্লাহ অবশ্যই জানতেন। যেহেতু তাঁর জ্ঞানে কোন কিছু গোপন নেই।[৩] এখানে ظَاهِر من القول এর অর্থ ধারণা। অর্থাৎ এগুলি কেবল তাদের ধারণাপ্রসূত কথা। অর্থ এই যে, তোমরা মূর্তিপূজা এই ধারণা নিয়ে করছ যে, তারা ইষ্টানিষ্ট করার ক্ষমতা রাখে এবং তোমরা তাদের নামও উপাস্য রেখে নিয়েছ। অথচ "এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখে দিয়েছ, যার সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে।" (সূরা নাজ্ম ৫৩:২৩) [৪] مَكْر (চক্রান্ত)এর অর্থ তাদের ঐসব ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস ও আমল, যাতে শয়তান তাদেরকে ফাঁসিয়ে রেখেছে, শয়তান ভ্রষ্টতার উপরও আকর্ষণীয় আবরণ চড়িয়ে রাখে।[৫] যেমন অন্যত্র বলেছেন, ﴿وَمَن يُرِدِ اللهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللهِ شَيْئًا﴾ অর্থাৎ, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন তার জন্যে আল্লাহর সাথে তোমার কোন জোর চলতে পারে না।" (সূরা মায়িদাহ ৫:৪১) তিনি আরো বলেন, ﴿إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾ অর্থাৎ, তুমি তাদের পথপ্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা নাহল ১৬:৩৭)

لَهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَاقٍ

📘 তাদের জন্য পার্থিব জীবনে আছে শাস্তি[১] এবং পরকালের শাস্তি তো আরো কঠোর।[২] আর আল্লাহর (শাস্তি) হতে রক্ষাকর্তা তাদের কেউ নেই। [১] এর অর্থ হত্যা ও বন্দিদশা, যা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এই কাফেরদের ভাগে আসে। [২] যেমন নবী (সাঃ) লিআনকারী ও লিআনকারিণীকে বলেছিলেন, "দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় হাল্কা ও সহজ।" (মুসলিম, কিতাবুল লিআন, লিআনের সংজ্ঞা জানতে সূরা নূর ২৪:৭নং আয়াতের টীকা দ্রঃ) এ ছাড়া দুনিয়ার শাস্তি (যেমনই হোক এবং যতই হোক তা কাফেরদের জন্য) সাময়িক ও অস্থায়ী এবং আখেরাতের শাস্তি চিরস্থায়ী, যা শেষ হবে না। তাছাড়া জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের তুলনায় ঊনসত্তর গুণ বেশি তীব্র। অনুরূপ অন্য কিছুও রয়েছে। সুতরাং শাস্তির কঠিন হওয়ার ব্যাপারে কি সন্দেহ থাকতে পারে?

۞ مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوْا ۖ وَعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ

📘 সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ এইরূপঃ ওর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ওর ফলমূলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী; যারা সাবধানী এটা তাদের পরিণাম।[১] আর অবিশ্বাসীদের পরিণাম হল জাহান্নাম। [১] কাফেরদের অশুভ পরিণামের সাথে ঈমানদারদের শুভ পরিণামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে জান্নাত লাভের প্রতি আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। এই স্থানে ইমাম ইবনে কাসীর জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিশেষ অবস্থা সংক্রান্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন, যেগুলো ওখানে দেখা যেতে পারে।

وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَنْ يُنْكِرُ بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ

📘 আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা[১] যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে আনন্দিত হয়,[২] আর কোন কোন দল ওর কতক অংশকে অস্বীকার করে।[৩] তুমি বল, ‘আমি তো কেবল আল্লাহরই ইবাদত করতে এবং তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহবান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।’ [১] এর অর্থ মুসলমান; যারা কুরআনের আদেশ মোতাবেক আমল করে। [২] অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার দলীল-প্রমাণ দেখে অধিক আনন্দিত হয়। [৩] এ থেকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, কাফের ও মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। কতিপয় উলামার নিকট কিতাবের অর্থ তাওরাত ও ইঞ্জীল। তাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা আনন্দিত হয়। অস্বীকারকারী সেই ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা, যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি।

وَكَذَٰلِكَ أَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ

📘 আর এভাবে আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় জীবন-বিধান স্বরূপ;[১] জ্ঞান প্রাপ্তির[২] পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর,[৩] তাহলে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষাকর্তা থাকবে না।[৪] [১] অর্থাৎ, যেমন তোমার পূর্ববর্তী রসূলদের প্রতি স্থানীয় ভাষায় গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছিলাম, তেমনই তোমার উপর কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করলাম। কেননা তোমার প্রথম সম্বোধিত লোকেরা আরব, যারা কেবল আরবী ভাষাই জানে। যদি এই কুরআন অন্য কোন ভাষায় অবতীর্ণ করা হত, তাহলে তারা বুঝতে সক্ষম হতো না, ফলে হিদায়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে তাদের জন্য ওজর রয়ে যেত। সুতরাং আমি আরবী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করে তাদের এই ওজর খন্ডন করে দিলাম। [২] এর অর্থ সেই জ্ঞান যা অহীর মাধ্যমে নবী (সাঃ)-কে প্রদান করা হয়েছে, যাতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের আকীদা-বিশ্বাসের বাস্তব রূপও তাঁর কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। [৩] এ থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের কতিপয় খেয়াল-খুশী ও আকাঙ্ক্ষাকে বুঝানো হয়েছে, যার সম্বন্ধে তারা চেয়েছিল যে, শেষ নবী যেন তা পূরণ করেন, যেমন; বাইতুল মাকদিসকে সর্বদা কিবলা করে রাখা এবং তাদের আকীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা না করা প্রভৃতি। [৪] এটা বাস্তবে উম্মতের উলামাদের জন্য সতর্কবাণী যে, তারা যেন পার্থিব ক্ষণস্থায়ী সুখ-স্বার্থ লাভের জন্য কুরআন ও হাদীসের মোকাবিলায় লোকেদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ না করে। যদি তারা এমনটি করে, তাহলে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ

📘 তোমার পূর্বেও আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছিলাম।[১] আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রসূলের কাজ নয়;[২] প্রত্যেক নির্ধারিত কালের লিপিবদ্ধ গ্রন্থ আছে। [৩] [১] অর্থাৎ, যত নবী ও রসূল এসেছেন সবাই মানুষই ছিলেন, তাঁদের নিজসব পরিবার, বংশ, স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি ছিল। তাঁরা না ফিরিশতা ছিলেন আর না মানব রূপে নূরের সৃষ্টি ছিলেন। বরং তারা মানবকুল থেকেই ছিলেন। কেননা যদি তাঁরা ফিরিশতা হতেন তাহলে মানুষের জন্য তাঁদের প্রকৃতির সাথে স্বাভাবিক হওয়া এবং তাঁদের কাছাকাছি হওয়া অসম্ভব ছিল, যার ফলে তাঁদেরকে প্রেরণ করার মুখ্য উদ্দেশ্যই বিফল হয়ে যেত। আর যদি উক্ত ফিরিশতাগণ মানব রূপে আসতেন তাহলে দুনিয়াতে না তাদের পরিবার ও বংশ হতো আর না স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি হতো। এ থেকে জানা গেল যে, সকল নবীগণ মানবকুল থেকেই ছিলেন, মানবরূপে ফিরিশতা অথবা কোন নূরের সৃষ্টি ছিলেন না। উল্লিখিত আয়াতে أزْوَاجًا (স্ত্রী দান করেছিলাম) থেকে বৈরাগ্য বা সন্ন্যাস্বাদ খন্ডন হয়। আর ذُرِّيَّةٌ (সন্তান-সন্ততি দান করেছিলাম) থেকে পরিবার পরিকল্পনার কথা খন্ডন হয়, কেননা ذُرِّيَّةٌ (অর্থগত) বহুবচন শব্দ; যা কমপক্ষে তিন হবে। [২] অর্থাৎ মু'জিযা (অলৌকিক ঘটনা) প্রদর্শন রসূলদের এখতিয়ারে নেই যে, যখন তাদের কাছে তলব করা হবে, তখনই তা প্রকাশ করে দেখিয়ে দেবেন, বরং এটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর এখতিয়ারে, তিনি স্বীয় হিকমত ও ইচ্ছা অনুসারে ফায়সালা করেন যে, মু'জিযার প্রয়োজন আছে না নেই। আর যদি আছে, তাহলে কি রকম এবং কখন তা দেখাবার প্রয়োজন আছে। [৩] অর্থাৎ আল্লাহ যা কিছুরই ওয়াদা করেছেন, তার একটি সময় নির্ধারিত আছে, উক্ত নির্ধারিত সময়ে তা অবশ্যই ঘটবে, কেননা আল্লাহর ওয়াদা ভঙ্গ হয় না। কেউ কেউ বলেছেন যে বাক্যে আগে-পিছে রয়েছে, মূল বাক্য এরূপ لِكُلِّ كِتَابٍ أجَلٌ অর্থাৎ প্রত্যেক সেই বিষয় যা আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তার একটা সময় নির্ধারিত আছে। অর্থাৎ বিষয়টি কাফেরদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার উপর নয়; বরং কেবল মাত্র আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

📘 (তার মধ্য হতে) আল্লাহ যা ইচ্ছা তা মুছে দেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন। আর তাঁর নিকট রয়েছে মূল গ্রন্থ।[১] [১] এর একটি অর্থ এই যে, তিনি স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক কোন হুকুমকে রহিত করেন এবং কোন হুকুমকে বহাল রাখেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তিনি যে ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাতে পরিবর্তন করতে থাকেন। কতিপয় হাদীস দ্বারা এর সমর্থন হয়, তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো, "মানুষকে পাপের কারণে রুযী থেকে বঞ্চিত করা হয়, দু'আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং আত্মীয়তা বন্ধন বজায় রাখার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পায়।" (মুসনাদ আহমাদ ৫/২৭৭) কতিপয় সাহাবা থেকে নিম্নলিখিত দু'আটি বর্ণিত হয়েছে,(اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا أشْقِيَاءَ فَامْحُنَا وَاكْتُبْنَا سُعَدَاءَ، وَإنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا سُعَدَاءَ فَأثْبِتْنَا، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ) । অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যবান বলে লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে লিখে দাও। আর যদি সৌভাগ্যবান বলে লিখেছ, তাহলে সেটাই বহাল রাখো, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ এবং তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক। উমার (রাঃ) সম্বন্ধে উল্লেখ আছে যে, তিনি তাওয়াফ কালীন সময়ে কাঁদতেন এবং এই দু'আ পড়তেন: ((اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شَقْوَةً أوْ ذَنْبًا فَامْحُهُ، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً))। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমার ব্যাপারে দুর্ভাগ্য বা পাপ লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দাও, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ, আর তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক, সুতরাং তা তুমি সৌভাগ্য ও ক্ষমায় পরিবর্তন করে দাও। (ইবনে কাসীর) এই অর্থের উপর আপত্তি আসতে পারে যে, অন্য হাদীসে তো এসেছে, (جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ) অর্থাৎ, যা কিছু ঘটবে, তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে। (বুখারী, হাদীস নং ৫০৭৬) এর জবাব এই দেয়া হয়েছে যে, এই পরিবর্তনও ভাগ্যে লিখিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল কাদীর)

وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

📘 পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূ-খন্ড;[১] ওতে আছে আঙ্গুর-কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক ফেঁকড়া-বিশিষ্ট অথবা ফেঁকড়াহীন খেজুর বৃক্ষ,[২] যা একই পানিতে সিঞ্চিত হয়ে থাকে। ফল হিসাবে ওগুলির কতককে কতকের উপর আমি উৎকৃষ্টতা দিয়ে থাকি,[৩] অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন। [১] مُتَجَاوِرَاتٌ এক অপরের নিকটবর্তী ও পাশাপাশি। অর্থাৎ, ভূখন্ডের একটি ক্ষেত্র শস্য-শ্যামল ও উর্বর, যা অত্যধিক ফসল উৎপন্ন করে। আর তারই পাশাপাশি অনুর্বর ভূমি রয়েছে যাতে কোন প্রকারের ফসল উৎপন্ন হয় না। [২] صِنْوَانٌ এর একটি অর্থ মিলিত এবং غَيْرُ صِنْوَانٍএর অর্থ পৃথক পৃথক করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, صِنْوَانٌ একটি বৃক্ষ যার শাখা ও ফেঁকড়া রয়েছে যেমন ডালিম, ডুমুর এবং কোন কোন খেজুর গাছ। আর غَيْرُ صِنْوَانٍ যা উক্ত প্রকারের নয় বরং একটিই কান্ড বিশিষ্ট (যেমনঃ খেজুর, তাল, সুপারী ইত্যাদি)। [৩] অর্থাৎ মাটিও এক, পানি ও আলো-বাতাসও এক; কিন্তু ফল ও শস্যাদি বিভিন্ন প্রকারের এবং স্বাদ ও আকার-প্রকারও এক অপর থেকে ভিন্ন।

وَإِنْ مَا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ

📘 আমি তাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিই, তার কিছু যদি তোমাকে দেখিয়ে দিই অথবা যদি এর পূর্বে তোমার মৃত্যু ঘটিয়েই দিই, তাহলে তোমার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা, আর আমার কাজ হিসাব গ্রহণ করা।

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

📘 তারা কি দেখে না যে, আমি (তাদের দেশ) পৃথিবীকে চারদিক হতে সংকুচিত করে আনছি?[১] আল্লাহ আদেশ করেন। তাঁর আদেশের সমালোচনা (পুনর্বিবেচনা) করার কেউ নেই[২] এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর। [১] অর্থাৎ, আরব ভূমি ক্রমান্বয়ে মুশরিকদের উপর সংকীর্ণ হয়ে আসছে এবং ইসলামের জয় ও উত্থান হচ্ছে। (অনেকে এই আয়াত ও সূরা আম্বিয়ার ২১:৪৪ নং আয়াত দ্বারা পৃথিবীর ভূমিক্ষয় ও তার কিছু অংশ সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া বুঝেছেন। অল্লাহু আ'লাম। -সম্পাদক) [২] অর্থাৎ, কেউ আল্লাহর আদেশাবলী রদ করতে পারে না।

وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ

📘 তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সমস্ত চক্রান্ত আল্লাহর অধীনস্থ;[১] প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন[২] এবং অবিশ্বাসীরা শীঘ্রই জানবে শুভ পরিণাম কাদের জন্য। [১] অর্থাৎ, মক্কার মুশরিকদের পূর্বেও লোকেরা রসূলদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে, কিন্তু আল্লাহর কৌশলের সামনে তাদের কোন চক্রান্ত সফল হয়নি। অনুরূপ ভবিষ্যতেও তাদের কোন চক্রান্ত আল্লাহর ইচ্ছার সামনে কৃতকার্য হতে পারবে না। [২] এবং তিনি সেই মোতাবেক প্রত্যেককে বিনিময় দান করবেন, পুণ্যবানকে তার পুণ্যের বদলা এবং পাপীকে তার পাপের শাস্তি।

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا ۚ قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ

📘 যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘তুমি আল্লাহর প্রেরিত নও।’ তুমি বল, ‘আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট[১] এবং তারা যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে।’[২] [১] সুতরাং তিনি জানেন যে, আমি তাঁর সত্য রসূল ও তাঁর বার্তা প্রচারক। আর তোমরা হলে মিথ্যাবাদী। [২] কিতাবের অর্থ কিতাবের শ্রেণীকে বুঝানো হয়েছে; উদ্দেশ্য তাওরাত ও ইঞ্জীলের জ্ঞান। অর্থাৎ ইয়াহুদ ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছে; যেমন আব্দুল্লাহ বিন সালাম, সালমান ফারসী এবং তামীম দারী ইত্যাদি (রাঃ), এরাও জানত যে, আমি আল্লাহর রসূল। আরবের মুশরিকরা বিশেষ সমস্যার সময় ইয়াহুদ ও খ্রিষ্টানদের নিকট রুজু করত এবং তাদেরকে সমাধান জিজ্ঞাসা করত। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পথ দেখালেন যে, ইয়াহুদ ও খ্রিষ্টানরা জানে, তাদেরকে তোমরা জিজ্ঞাসা করে নাও। কিছু উলামা বলেন যে, কিতাব থেকে কুরআনকে এবং কিতাবের জ্ঞানী থেকে মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কোন কোন আলেম কিতাবের অর্থ 'লাওহে মাহফূয' (সংরক্ষিত ফলক) নিয়েছেন, অর্থাৎ যার কাছে সংরক্ষিত ফলকের জ্ঞান রয়েছে অর্থাৎ মহান আল্লাহ। তবে প্রথম অর্থটাই বেশি উপযুক্ত।

۞ وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَإِذَا كُنَّا تُرَابًا أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

📘 যদি তুমি বিস্মিত হও, তাহলে বিস্ময়ের বিষয় তাদের কথা, ‘(মৃত্যুর পর) মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নতুন জীবন লাভ করব?’[১] ওরাই ওদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে এবং ওদেরই গলদেশে থাকবে বেড়ি। ওরাই হবে দোযখবাসী, সেখানে ওরা চিরস্থায়ীভাবে বাস করবে। [১] অর্থাৎ যে সত্তা প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয় বার উক্ত বস্তুর সৃজন তাঁর জন্য কঠিন কাজ নয়। কিন্তু কাফেররা আশ্চর্য কথা বলছে যে, দ্বিতীয় বার আমাদেরকে কিভাবে সৃষ্টি করা হবে?

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ ۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلْمِهِمْ ۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ

📘 মঙ্গলের পূর্বে তারা তোমাকে অমঙ্গল ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ তাদের পূর্বে এর বহু দৃষ্টান্ত গত হয়েছে।[১] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষের সীমালংঘন সত্ত্বেও তাদের প্রতি ক্ষমাশীল[২] এবং নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানেও কঠোর। [৩] [১] অর্থাৎ আল্লাহর আযাবে বহু সম্প্রদায় ও জনপদ ধ্বংসের অনেক উদাহরণ পূর্বে এসেছে, তা সত্ত্বেও তারা আযাব শীঘ্র প্রার্থনা করে? এ কথা কাফেরদের জবাবে বলা হয়েছে, যারা বলেছিল যে, হে নবী! যদি তুমি সত্য হও, তাহলে আমাদের উপর সেই আযাব আনয়ন কর, যার ভয় তুমি আমাদেরকে দেখাচ্ছ।[২] অর্থাৎ মানুষের অন্যায়-অত্যাচার ও অবাধ্যতার পরও তিনি আযাবে শীঘ্র গ্রেপ্তার না করে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কখনো কখনো আযাবের ব্যাপারটা কিয়ামত অবধি বিলম্বিত করেন। এটা তাঁর দয়া, কৃপা, করুণা ও ক্ষমাশীলতার পরিণাম। নচেৎ তিনি যদি তাদেরকে আযাবে শীঘ্রই গ্রেপ্তার করতেন, তাহলে পৃথিবীতে কোন মানুষ অবশিষ্ট থাকতো না। তিনি এরশাদ করেন, ﴿وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِن دَابَّةٍ﴾ অর্থাৎ, যদি আল্লাহ মানুষদেরকে তাদের কার্যকলাপের কারণে পাকড়াও করতেন, তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে একটি জীবকেও রেহাই দিতেন না। (সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৫)[৩] এখানে মহান আল্লাহর দ্বিতীয় গুণের কথা উল্লেখ হয়েছে, যেন মানুষ শুধু একটিই দিকের প্রতি দৃষ্টি না রাখে, বরং অন্য দিকের প্রতিও লক্ষ্য রাখে। কেননা একটিই দিকের প্রতি ধারাবাহিক দৃষ্টি রাখলে অনেক কিছু অদৃশ্য থেকে যায়। সঙ্গত কারণেই কুরআন মাজীদে যেখানে আল্লাহর করুণা ও ক্ষমাবিশিষ্ট গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তার সঙ্গে তাঁর ক্রোধ ও প্রবলতাবিশিষ্ট গুণেরও উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন এখানেও রয়েছে। যেন বান্দার মনে আশা ও ভয় দুটো দিকই সক্রিয় থাকে। কেননা আশা আর আশাই যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারে ভয়শূন্য ও দুঃসাহসিক হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যদি সব সময় মস্তিষ্কে ভয় আর ভয়ই ঢুকে থাকে, তাহলে সে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যায়। উক্ত দুটো দিকই ভুল এবং মানুষের জন্য সর্বনাশী। এই জন্য বলা হয়, الْإِيْمَانُ بَيْنَ الْخَوْفِ وَالرَّجَاءِ ঈমান ভয় ও আশার মধ্যে। অর্থাৎ, উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার নাম ঈমান। যেন মানুষ তাঁর আযাব থেকে না নির্ভয় হয় আর না তাঁর রহমত থেকে নিরাশ। (উক্ত বিষয়ের জন্য দেখুনঃ সূরা আনআম ৬:৪৭ নং আয়াত, সূরা আ'রাফ ৭:১৬৭ নং আয়াত, সূরা হিজর ১৫:৪৯-৫০ নং আয়াত।)

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ

📘 যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী।[১] আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পথ প্রদর্শক রয়েছে। [২] [১] প্রত্যেক নবীকে মহান আল্লাহ অবস্থা, প্রয়োজন এবং স্বীয় ইচ্ছা ও হিকমত মোতাবেক কিছু নিদর্শন ও মু'জিযা দান করেছেন। কিন্তু কাফেররা নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মু'জিযা তলব করতে থাকে। যেমন মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-কে বলত যে, সাফা পর্বতকে সোনার বানিয়ে দেওয়া হোক অথবা পর্বতের স্থানে নদী ও ঝর্ণা প্রবাহিত করে দেওয়া হোক ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের মন মত মু'জিযা না দেখানো হলে তারা বলতে আরম্ভ করত যে, এর উপর কোন মু'জিযা কেন অবতীর্ণ করা হলো না? মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী! তোমার কাজ শুধু সতর্ক করা এবং পৌঁছে দেওয়া। এটা তুমি করতে থাক। কেউ মানুক বা না মানুক, সেটা তোমার দেখার নয়। কেননা হিদায়াত দান করা আমার কাজ। তোমার কাজ পথ দেখানো। তাকে উক্ত পথে চালানো তোমার কাজ নয়, সে কাজ আমার।[২] প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট মহান আল্লাহ তাদের নির্দেশনার জন্য পথপ্রদর্শক অবশ্যই পাঠিয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, সম্প্রদায়ের মানুষেরা হিদায়াতের পথ অবলম্বন করল বা করল না। কিন্তু সঠিক পথ দেখাবার জন্য পয়গম্বর অবশ্যই এসেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: ﴿وَإنْ مِنْ أُمَّةٍ إلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী অবশ্যই এসেছে। (সূরা ফাতির ৩৫:২৪)

اللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنْثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ

📘 প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে[১] এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন[২] এবং তাঁর নিকটে প্রত্যেক বস্তুই নির্দিষ্ট পরিমাণে আছে। [৩] [১] মাতৃগর্ভে কি আছে; ছেলে না মেয়ে, সুশ্রী না কুশ্রী, সুজন না কুজন, দীর্ঘায়ু না অল্পায়ু? এসব শুধু মহান আল্লাহই জানেন। [২] এ থেকে উদ্দিষ্ট গর্ভের সময়কাল; যা সাধারণতঃ নয় মাস হয়ে থাকে। কিন্তু তাতে কমা-বাড়াও হয়; কখনো দশ মাস, কখনো সাত মাস, কখনো আট মাস। এর জ্ঞানও মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে নেই। [৩] অর্থাৎ কার জীবনকাল কত দিন? সে রুযীর কত অংশ পাবে? এর পূর্ণ জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে।

عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ

📘 অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সম্বন্ধে তিনি অবগত; তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ।