Al-Baqara • BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُتِبَ عَلَيْكُمُ ٱلْقِصَاصُ فِى ٱلْقَتْلَى ۖ ٱلْحُرُّ بِٱلْحُرِّ وَٱلْعَبْدُ بِٱلْعَبْدِ وَٱلْأُنثَىٰ بِٱلْأُنثَىٰ ۚ فَمَنْ عُفِىَ لَهُۥ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌۭ فَٱتِّبَاعٌۢ بِٱلْمَعْرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَٰنٍۢ ۗ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌۭ ۗ فَمَنِ ٱعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ﴾
“O YOU who have attained to faith! Just retribution is ordained for you in cases of killing: the free for the free, and the slave for the slave, and the woman for the woman. And if something [of his guilt] is remitted to a guilty person by his brother, this [remission] shall be adhered to with fairness, and restitution to his fellow-man shall be made in a goodly manner. This is an alleviation from your Sustainer, and an act of His grace. And for him who, none the less, wilfully transgresses the bounds of what is right, there is grievous suffering in store:”
হে বিশ্বাসিগণ! নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য ক্বিস্বাসের (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) বিধিবদ্ধ করা হল; স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী।[১] কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে, প্রচলিত প্রথার অনুসরণ করা ও সদয়ভাবে তার দেয় পরিশোধ করা উচিত।[২] এ তো তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ।[৩] এর পরও যে সীমালংঘন করে, তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।[৪] [১] জাহেলিয়াতের যুগে কোন আইন-কানুন ছিল না, তাই সবল গোত্রগুলো দুর্বল গোত্রগুলোর উপর যেভাবে চাইতো যুলুম-অত্যাচার করত। তাদের যুলুমের একটি প্রকার এ রকম ছিল যে, যদি সবল গোত্রের কোন পুরুষ হত্যা হয়ে যেত, তাহলে তারা কেবল হত্যাকারীকে হত্যা করার পরিবর্তে তার (হত্যাকারীর) পরিবারের কয়েকজনকে এমন কি কখনো কখনো পুরো গোত্রকে বিনাশ করার প্রচেষ্টা করত এবং মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে ও ক্রীতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত। মহান আল্লাহ এই ভেদাভেদ উচ্ছেদ করে বললেন, যে হত্যা করবে, ক্বিসাসে (প্রতিশোধ গ্রহণে) কেবল তাকেই হত্যা করা হবে। হত্যাকারী স্বাধীন ব্যক্তি হলে, বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই, ক্রীতদাস হলে, ঐ ক্রীতদাসকেই এবং মহিলা হলে, ঐ মহিলাকেই হত্যা করা হবে। ক্রীতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে, মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে অথবা একজন পুরুষের পরিবর্তে কয়েকজন পুরুষকে হত্যা করা যাবে না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, পুরুষ যদি মহিলাকে হত্যা করে, তাহলে ক্বিস্বাসে কোন মহিলাকে হত্যা করা হবে অথবা মহিলা যদি পুরুষকে হত্যা করে, তবে ক্বিস্বাসে কোন পুরুষকে হত্যা করা হবে (যেমন শব্দের বাহ্যিক ভাবার্থ থেকে এটাই ফুটে উঠছে)। বরং শব্দগুলো আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ অনুপাতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে; যার পরিষ্কার অর্থ (লক্ষ্যার্থ) হল, ক্বিস্বাসে হত্যাকারীকেই হত্যা করা হবে। তাতে সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা, সবল হোক কিংবা দুর্বল। হাদীসে এসেছে, "সমস্ত মুসলিমের রক্ত (পুরুষ হোক বা মহিলা) সমান।" (আবূ দাউদ ২৭৫১) সুতরাং, আয়াতের অর্থ হল তা-ই যা অন্য আয়াতে এসেছে, "প্রাণের বদলে প্রাণ।" (মাইদাহ ৫:৪৫ আয়াত) হানাফী উলামাগণ এই আয়াত থেকে সাব্যস্ত করেছেন যে, মুসলিমকে কাফেরের ক্বিস্বাসে হত্যা করা যাবে। কিন্তু অধিকাংশ আলেমগণ এ কথার সমর্থন করেননি। কারণ, হাদীসে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, "মুসলিমকে কাফেরের ক্বিস্বাসে হত্যা করা যাবে না।" (বুখারী ১১১নং, ফাতহুল ক্বাদীর, আরো দেখুন সূরা মাইদার ৫:৪৫ নং আয়াতের টীকা।) [২] ক্ষমা করে দেওয়ার দু'টি পদ্ধতি। যথাঃ (ক) মালের কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ক্ষমা করে দেওয়া। (খ) ক্বিসাসের পরিবর্তে মুক্তিপণ গ্রহণ করে নেওয়া। দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে মুক্তিপণের দাবীদারকে বলা হয়েছে যে, সে যেন প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করে। আর {وَاَدآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ} এ হত্যাকারীকে বলা হচ্ছে যে, সে যেন কোন সংকীর্ণতা সৃষ্টি না করে বিনিময় ভালভাবে আদায় করে দেয়। হতের আত্মীয়রা তার প্রাণ না নিয়ে তার উপর যে অনুগ্রহ করল, তার বদলাও অনুগ্রহের সাথে হওয়া দরকার।{هَلْ جَزَاءُ الْأِحْسَانِ إِلَّا الْأِحْسَانُ} (الرحمن:(৬০[৩] এই লাঘব এবং অনুগ্রহ (অর্থাৎ, ক্বিস্বাস, ক্ষমা অথবা মুক্তিপণ গ্রহণ এই তিনটি পদ্ধতিই) আল্লাহর পক্ষ থেকে খাস তোমাদের জন্যই। ইতিপূর্বে তাওরাতধারীদের জন্য কেবল ক্বিস্বাস ও ক্ষমা ছিল। মুক্তিপণ ছিল না। আর ইঞ্জীলধারীদের মাঝে কেবল ক্ষমা ছিল; ক্বিস্বাস ছিল না এবং মুক্তিপণও না। (ইবনে কাসীর) [৪] মুক্তিপণ গ্রহণ করার পর যদি আবার হত্যাকারীকে হত্যা করা হয়, তাহলে তা সীমালংঘন ও বাড়াবাড়ি হবে এবং এর শাস্তি তাকে দুনিয়াতেও ভোগ করতে হবে এবং আখেরাতেও।