🕋 تفسير سورة ص
(Sad) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ص ۚ وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ
📘 স্বা-দ, শপথ উপদেশপূর্ণ কুরআনের![১] (তুমি অবশ্যই সত্যবাদী)।
[১] যাতে তোমাদের জন্য সর্ব প্রকার নসীহত এবং এমন কথা আলোচনা হয়েছে, যার দ্বারা তোমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই শুধরে যাবে। অনেকে ذِي الذِّكر -এর অর্থঃ মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী করেছেন। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, দুটি অর্থই ঠিক। কারণ কুরআন মর্যাদারও অধিকারী এবং মু'মিন ও মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশ ও শিক্ষণীয় গ্রন্থও বটে। এখানে শপথের উত্তর ঊহ্য আছে, আর তা হল, আসল কথা তা নয় যা মক্কার কাফেররা বলে; তারা বলে মুহাম্মাদ জাদুকর, কবি বা মিথ্যুক। বরং তিনি আল্লাহর সত্য রসূল; যাঁর উপর এই মর্যাদাময় কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
أَمْ لَهُمْ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ فَلْيَرْتَقُوا فِي الْأَسْبَابِ
📘 ওদের কি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছুর (উপর) সার্বভৌমত্ব আছে? থাকলে, ওরা মাধ্যমযোগে (আকাশে) আরোহণ করুক! [১]
[১] অর্থাৎ, আকাশে উঠে সেই অহী বন্ধ করে দিক, যা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়। أسباب শব্দটি سَبَب এর বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হলঃ ঐ সকল বস্তু যার মাধ্যমে নিজ অভীষ্ট পর্যন্ত পৌঁছনো যায়, তাতে সে যে কোন বস্তুই হোক। যার ফলে তার বিভিন্ন অর্থ করা হয়েছে। (এর ব্যাপক অর্থঃ মাধ্যম।) রশি ছাড়া আর একটি দ্বিতীয় অর্থ 'দরজা'ও করা হয়েছে। যে দরজা দিয়ে ফিরিশতাগণ পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অর্থাৎ সিঁড়ির সাহায্যে আকাশের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যাও এবং অহী আসা বন্ধ করে দাও।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
جُنْدٌ مَا هُنَالِكَ مَهْزُومٌ مِنَ الْأَحْزَابِ
📘 (ওরা বড় বড়) বাহিনীর নিকটে পরাজিত একটি (ছোট) সেনাদল। [১]
[১] جُنْدٌ শব্দটি ঊহ্য মুবতাদা (উদ্দেশ্য) هم এর খবর (বিধেয়) এবং ما তাকীদ স্বরূপ অসামান্য বা সামান্য বুঝাবার জন্য ব্যবহার হয়েছে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী (সাঃ)-কে সাহায্য এবং কাফেরদের পরাজয়ের প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ কাফেরদের এই দল বাতিলপন্থী দল, এই দল বড় হোক বা ছোট আদৌ তার পরোয়া করবে না এবং তাদেরকে ভয়ও করবে না। পরাজয়ই তাদের ভাগ্যে আছে। هُنَالِكَ দ্বারা দূর স্থানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বদরের যুদ্ধ ও মক্কা বিজয়ের দিনও হতে পারে, যেখানে কাফেররা শিক্ষামূলক পরাজয়ের শিকার হয়েছিল।
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ ذُو الْأَوْتَادِ
📘 এদের পূর্বেও রসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, নূহ, আ’দ ও বহু শিবিরের অধিপতি ফিরআউন সম্প্রদায়। [১]
[১] ذو الأوتاد এর আসল অর্থঃ গোঁজ বা কীলক-ওয়ালা। এর মর্মার্থ এই যে, ফিরআউন বিশাল সংখ্যক সেনাবাহিনীর অধিপতি ছিল। যার ছিল অনেক অনেক শিবির বা তাঁবু; যা মাটিতে কীলক গেড়ে টাঙ্গানো হত। অথবা তাকে কীলকওয়ালা এই জন্য বলা হয়েছে যে, যালেম যখন কোন ব্যক্তির উপর অসন্তুষ্ট হত, তখন তার হাত-পা এবং মাথায় কীলক এঁটে দিত। অথবা এর দ্বারা তার শক্তি ও সাম্রাজ্যের সুদৃঢ়তা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, যেমন কীলক দ্বারা কোন বস্তুকে দৃঢ় করা হয় অনুরূপ তার অনুসারীরা তার সাম্রাজ্যকে শক্ত ও দৃঢ় করতে সাহায্য করত।
وَثَمُودُ وَقَوْمُ لُوطٍ وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ ۚ أُولَٰئِكَ الْأَحْزَابُ
📘 সামূদ, লূত ও আইকাবাসী (শুআইব সম্প্রদায়),[১] ওরাও ছিল এক একটি বিশাল বাহিনী।
[১] আইকাবাসী কারা ছিল, তা জানার জন্য দেখুন সূরা শুআরার ২৬:১৭৬ নং আয়াতের টীকা।
إِنْ كُلٌّ إِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ
📘 ওদের প্রত্যেকেই রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। ফলে, ওদের ক্ষেত্রে আমার শাস্তি বাস্তব হয়েছে।
وَمَا يَنْظُرُ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً مَا لَهَا مِنْ فَوَاقٍ
📘 এরা তো অপেক্ষা করছে এক মহাগর্জনের,[১] যাতে কোন বিরতি থাকবে না।[২]
[১] অর্থাৎ, শিঙ্গায় ফুৎকারের, যাতে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।
[২] দুধ দোহনকারী একবার দুধ দোহনের পর বাছুরকে উটনী, গাই বা মহিষের (অর্থাৎ তার মায়ের) নিকট ছেড়ে দেয়, যাতে তার দুধ পান করার ফলে পুনরায় স্তনে অধিক পরিমাণে দুধ এসে জমা হয়। সুতরাং কিছুক্ষণ পরে বাছুরকে জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে পুনরায় দুধ দোহন করতে আরম্ভ করে। উক্ত দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময়কে فَوَاق বলা হয়। অর্থাৎ শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার পর এতটুকুও সময় পাওয়া যাবে না, বরং শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই কিয়ামতের ভূমিকম্প আরম্ভ হয়ে যাবে।
وَقَالُوا رَبَّنَا عَجِّلْ لَنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ
📘 এরা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! বিচার দিনের পূর্বেই আমাদের প্রাপ্য আমাদেরকে সত্বর দিয়ে দাও!’ [১]
[১] قِطٌ এর অর্থ হলঃ প্রাপ্য অংশ বা ভাগ। এখানে উদ্দেশ্য হল আমলনামা বা প্রাপ্য অংশ। অর্থাৎ, আমাদের আমলনামা অনুযায়ী শাস্তি ও পুরস্কারে আমাদের যা অংশ রয়েছে, তা কিয়ামত আসার পূর্বে এখানেই আমাদেরকে দিয়ে দাও। এটা সত্যই يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ 'তারা তোমাকে শাস্তি তরান্বিত করতে বলে'এর মত কথা। এই কথাটি তারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়া অসম্ভব ভেবে ঠাট্টা ও বিদ্রূপ স্বরূপ বলে।
اصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ
📘 এরা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং স্মরণ কর আমার বলবান[১] দাস দাঊদের কথা; নিশ্চয় সে ছিল অতিশয় আল্লাহ-অভিমুখী।
[১] এখানে أَيْدٍ - يَدٌ (হাত) এর বহুবচন নয়। বরং এটা آدَ يَئِيْدُ এর মাসদার (ক্রিয়ামূল) যার অর্থ 'শক্তি ও প্রবলতা'। এ থেকেই تأييد - تقويت অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এখানে শক্তির অর্থ হল দ্বীনি শক্তি ও সুদৃঢ়তা। যেমন হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, "আল্লাহর তাআলার নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় (রাতের) নামায হল, দাউদ (আঃ)-এর নামায এবং সর্বাধিক পছন্দনীয় রোযা হল দাউদ (আঃ)-এর রোযা। তিনি অর্ধরাত্রি নিদ্রা যেতেন, অতঃপর এক তৃতীয়াংশ নামায পড়তেন এবং পুনরায় রাত্রির ষষ্ঠাংশে নিদ্রা যেতেন। আর তিনি একদিন পর পর রোযা রাখতেন এবং যুদ্ধে গিয়ে কখনও পশ্চাদপসরণ করতেন না। (বুখারী)
إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ
📘 আমি পর্বতমালাকে তার বশীভূত করেছিলাম; ঐগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত।
وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً ۖ كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ
📘 এবং (বশীভূত করেছিলাম) পক্ষীকুলকেও সমবেত অবস্থায়, সকলেই ছিল তার অনুসারী।[১]
[১] অর্থাৎ, এগুলি সবই দাঊদের অনুসারী ছিল। অথবা এগুলি সবই আল্লাহ-অভিমুখী। অর্থাৎ, সকাল-সন্ধ্যায় পর্বতমালা দাউদ (আঃ) এর সাথে তসবীহ পাঠে রত হত এবং উড়ন্ত পক্ষীকুলও যবুর পড়া শুনে শূন্যে জমায়েত হত এবং তাঁর সাথে তসবীহ পাঠ করত। 'مَحْشُوْرَة ' অর্থ 'জমায়েত অবস্থায়'।
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ
📘 কিন্তু অবিশ্বাসীরা ঔদ্ধত্য ও বিরোধিতায় ডুবে আছে। [১]
[১] অর্থাৎ, এই কুরআন অবশ্যই সন্দেহমুক্ত এবং এর দ্বারা যারা শিক্ষা অর্জন করতে চায় তাদের জন্য নসীহত। তবে এর দ্বারা কাফেরদের কোন উপকার হয় না। কারণ তাদের মনে অহংকার ও গর্ব আছে এবং অন্তরে আছে শত্রুতা ও বিরোধিতা। عِزَّة -শব্দটির অর্থ হয়ঃ সত্যের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা।
وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ
📘 আমি তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম[১] এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা[২] ও বাগ্মিতা। [৩]
[১] সর্বপ্রকার বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক মাধ্যম দ্বারা।
[২] অর্থাৎ, নবুঅত, প্রজ্ঞা, সঠিক কথা ও কর্ম।
[৩] অর্থাৎ, বিচার ও ফায়সালা করার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বুঝ শক্তি এবং প্রমাণ উপস্থাপনা করার ক্ষমতা ও বর্ণনা শক্তি।
۞ وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ
📘 তোমার নিকট বিবদমান লোকদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? যখন ওরা প্রাচীর ডিঙিয়ে উপাসনা-কক্ষে প্রবেশ করল, [১]
[১] مِحْرَابْ এর অর্থ হল কক্ষ বা কামরা (ইবাদত-খানা); যেখানে তিনি সবার থেকে পৃথক হয়ে নির্জনে একাগ্রতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতেন। দরজায় প্রহরী থাকত, যাতে কেউ ভিতরে এসে তাঁর ইবাদতে বাধা সৃষ্টি না করে। বাদী-বিবাদী পিছন দিকের প্রাচীর ডিঙিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।
إِذْ دَخَلُوا عَلَىٰ دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ خَصْمَانِ بَغَىٰ بَعْضُنَا عَلَىٰ بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَىٰ سَوَاءِ الصِّرَاطِ
📘 এবং দাউদের নিকট পৌঁছল তখন সে ভীত হয়ে পড়ল।[১] ওরা বলল, ‘ভীত হবেন না, আমরা বিবাদমান দুই ব্যক্তি; আমাদের একে অপরের উপর যুলুম (অত্যাচার) করেছে; অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করুন; অবিচার করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথনির্দেশ করুন।[২]
[১] ভীতির কারণ সুস্পষ্ট। প্রথমতঃ তারা দরজা ছেড়ে পিছন দিকের প্রাচীর ডিঙিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। দ্বিতীয়তঃ তারা এত বড় দুষ্কর্ম সাধন করতে গিয়ে সম্মুখস্থ বাদশাকে পর্যন্ত কোন প্রকার ভয় করেনি। বাহ্যিক হেতু অনুসারে কোন ভয়াবহ জিনিস দেখে ভীত হয়ে পড়া মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। এটা না নবুঅতের পরিপূর্ণতা ও তার মর্যাদার পরিপন্থী, আর না-ই তা তাওহীদের বিরোধী। তাওহীদের পরিপন্থী ভীতি হল গায়রুল্লাহর এমন ভীতি যা অহেতুক মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
[২] প্রবেশকারীগণ এই বলে সান্ত্বনা দিল যে, আপনি ঘাবড়াবেন না, আমাদের মাঝে বিবাদ বেধেছে, তাই আমরা আপনার নিকট ফায়সালা নিতে এসেছি। আপনি ন্যায় বিচার করুন এবং সরল পথ প্রদর্শন করুন।
إِنَّ هَٰذَا أَخِي لَهُ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيهَا وَعَزَّنِي فِي الْخِطَابِ
📘 এ আমার ভাই,[১] এর আছে নিরানব্বইটি দুম্বা, আর আমার আছে একটি; তবুও সে বলে, আমাকে এটি দিয়ে দাও[২] এবং তর্কে সে আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।’ [৩]
[১] এখানে ভাই বলতে দ্বীনি ভাই, একই পেশার শরীক অথবা বন্ধু। সকলের জন্য 'ভাই' শব্দ ব্যবহার করা শুদ্ধ।
[২] অর্থাৎ, (সে বলে) ঐ দুম্বাটিও আমার দুম্বাদলে শামিল করে দাও। যাতে আমিই তার মালিক হয়ে যাই।
[৩] দ্বিতীয় অনুবাদ হল, "সে কথাবার্তায় আমার উপর জয়ী হয়ে গেছে।" অর্থাৎ যেমন তার নিকট সম্পদ বেশি আছে, অনুরূপ মুখেও আমার থেকে বেশি তেজী এবং সেই তেজ ও বাগ্মিতা দ্বারা মানুষকে বশ করে নেয়।
قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَىٰ نِعَاجِهِ ۖ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَا هُمْ ۗ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ ۩
📘 দাঊদ বলল, ‘তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলির সঙ্গে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছে। যৌথ বিষয়ে অংশীদারগণ অনেকে একে অন্যের ওপর অবিচার করে থাকে;[১] করে না কেবল বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ এবং তারা সংখ্যায় স্বল্প।’[২] দাঊদ বুঝতে পারল, আমি তাকে পরীক্ষা করলাম। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়ল[৩] ও তাঁর অভিমুখী হল। [৪] সাজদাহ
[১] অর্থাৎ মানুষের মধ্যে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে যে, শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি যুলুম করে থাকে এবং অন্য শরীকের অংশ আত্মসাৎ করার প্রচেষ্টা করে থাকে।[২] বস্তুতঃ এরূপ চারিত্রিক ত্রুটি থেকে মু'মিনগণ সুরক্ষিত আছে। কারণ তাদের অন্তরে আল্লাহ-ভীতি আছে এবং তারা যথাযথ নেক আমল করে। ফলে কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করা এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করা তাদের বিবেকে গ্রাহ্য নয়। তারা প্রদান করে, গ্রহণ করে না। আর এরূপ উচ্চ চরিত্রের মানুষ খুব কমই হয়।[৩] وَخَرَّ رَاكِعًا - এর অর্থ সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।[৪] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)
فَغَفَرْنَا لَهُ ذَٰلِكَ ۖ وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ
📘 অতঃপর আমি তার অপরাধ ক্ষমা করলাম।[১] নিশ্চয় আমার নিকট তার জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম ।
[১] দাঊদ (আ)-এর এই কাজ কি ছিল, যার জন্য তাঁকে ত্রুটি স্বীকার এবং তওবা, ক্ষমাপ্রার্থনা ও অনুতাপ প্রকাশ করার অনুভূতি হল এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন। কুরআন কারীমে এর বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় না এবং কোন সহীহ হাদীসেও এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট বর্ণনা নেই। ফলে কোন কোন তফসীরবিদ ইস্রাঈলী বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এমনও কথা লিখেছেন, যাতে একজন নবীর মর্যাদাহানি হয়। কোন কোন তফসীরবিদ; যেমন ইবনে কাসীর (রঃ) এ বিষয়ে এই নীতি অবলম্বন করেছেন যে, যখন কুরআন ও হাদীস এ বিষয়ে চুপ আছে, তখন আমাদেরও এর পিছনে পড়া উচিত নয়। তফসীরবিদদের এক তৃতীয় দল, যারা উক্ত ঘটনার কিছু বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে কুরআনের অস্পষ্ট বিষয়ের কিছু ব্যাখ্যা হয়ে যায়। এর পরেও তাঁরা কোন এক রকম ব্যাখ্যায় সর্বসম্মত নন। সুতরাং কেউ কেউ বলেন যে, দাউদ (আঃ) কোন এক সৈনিককে তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার আদেশ করেছিলেন। এটা ঐ সময়ে কোন দোষের বিষয় ছিল না। দাঊদ (আঃ) সেই মহিলার গুণাবলী ও চারিত্রিক পরিপূর্ণতার কথা জানতেন। যার ফলে তাঁর মনে এই ইচ্ছার সঞ্চার হয়েছিল যে, সাধারণ নারী না থেকে তাকে একজন রাণী হওয়া দরকার। যাতে তার গুণাবলী ও চারিত্রিক পূর্ণতা দ্বারা পুরো দেশ উপকৃত হতে পারে। এ রকম ইচ্ছা যতই ভাল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে করা হোক, কিন্তু প্রথমতঃ একাধিক স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় এ কাজ এক প্রকার অশোভনীয়।
দ্বিতীয়তঃ এই কথা বাদশার পক্ষ থেকে প্রকাশ করাতে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করার শামিল হচ্ছে। ফলে দাউদ (আঃ)-কে অভিনীত ঘটনা দ্বারা তা অশোভনীয় হওয়ার উপলব্ধি প্রদান করা হল এবং সত্য-সত্যই তিনি সতর্ক হয়ে গেলেন। অনেকে বলেন, মুকাদ্দামা নিয়ে আগত ব্যক্তিদ্বয় ফিরিশতা ছিলেন, যাঁরা একটি কাল্পনিক মুকাদ্দামা নিয়ে এসেছিলেন। এখানে দাউদ (আঃ)-এর ভুল এই ছিল যে, তিনি বাদীর কথা শুনেই ফায়সালা করে দিলেন এবং বিবাদীর কথা শোনার প্রয়োজন মনে করলেন না। আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য এই রকম পরীক্ষা করলেন। এই ভুল উপলব্ধি করতে পেরেই তিনি বুঝতে পারলেন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর পরীক্ষা ছিল। অতএব তিনি আল্লাহর দরবারে মাথা নত করলেন। অনেকে বলেন যে, আগত ব্যক্তিদ্বয় ফিরিশতা নয়, মানুষ ছিল এবং এটা কাল্পনিক ঘটনা নয়, বরং সত্য ঝগড়াই ছিল; যার ফায়সালা নেওয়ার জন্য তারা এসেছিল। এইভাবে তাঁর ধৈর্য ও সহনশীলতার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কারণ উক্ত ঘটনাতে অসহনীয় ও ক্রোধ-উদ্রেককর বেশ কিছু আচরণ ছিল। প্রথমঃ অনুমতি ছাড়াই প্রাচীর ডিঙিয়ে প্রবেশ করা। দ্বিতীয়ঃ ইবাদতের বিশেষ সময়ে এসে বাধা সৃষ্টি করা। তৃতীয়ঃ তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ ভঙ্গিতে কথাবার্তা (অবিচার করবেন না ইত্যাদি) যা তাঁর বিচারীয় মর্যাদার জন্য হানিকর ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করেন, ফলে তিনি ক্রোধান্বিত না হয়ে পরিপূর্ণ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেন। কিন্তু তার অন্তরে যে প্রকৃতিগত সামান্য বিরাগ সঞ্চার হয়েছিল, তাকেই তিনি আপন ভুল ভেবেছিলেন। যেহেতু এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ছিল, সেহেতু এরূপ প্রকৃতিগত বিরাগ সঞ্চার না হওয়াই উচিত ছিল। যার জন্য তিনি আল্লাহর দিকে রুজু করেছিলেন এবং ক্ষমা প্রার্থনায় রত হয়েছিলেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ
📘 (আমি তাকে বললাম), ‘হে দাঊদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, করলে এ তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিনকে ভুলে থাকে।’
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًا ۚ ذَٰلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ
📘 আমি আকাশ, পৃথিবী এবং উভয়ের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি;[১] এ তো অবিশ্বাসীদের ধারণা। সুতরাং অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ।
[১] বরং এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছি আর তা এই যে, আমার বান্দা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে। যারা আমার ইবাদত করবে, আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব। আর যারা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করতে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি।
أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ
📘 যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে এবং যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়, আমি কি তাদেরকে সমান গণ্য করব? অথবা সাবধানিগণকে কি অপরাধিগণের সমান গণ্য করব?
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ
📘 আমি এ কল্যাণময় গ্রন্থ তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ।
كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ فَنَادَوْا وَلَاتَ حِينَ مَنَاصٍ
📘 এদের পূর্বে আমি কত জনপদ ধ্বংস করেছি;[১] তখন ওরা সাহায্যের জন্য চীৎকার করেছিল। কিন্তু ওদের পরিত্রাণের কোনই উপায় ছিল না।[২]
[১] যারা এদের থেকে অনেক পরাক্রমশালী ও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস ও অস্বীকার করার জন্য তাদেরকে মন্দ ফল ভোগ করতে হয়।
[২] অর্থাৎ, তারা আল্লাহর শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর সাহায্যের জন্য ডেকেছিল এবং তওবা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তখন না ছিল তওবা কবুল হওয়ার সময়, আর না ছিল পালানোর কোন পথ। ফলে না তাদের ঈমান উপকারে আসে, আর না পালিয়ে শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। لات শব্দটি আসলে কেবল لا এখানে ت অক্ষরটি বাড়তি সংযুক্ত হয়েছে; যেমন ثَمَّ তে যুক্ত হয়ে ثَمَّةَ বলা হয়। مَنَاص - نَاصَ يَنُوْصُ এর ক্রিয়ামূল, যার অর্থ হল পলায়ন করা ও পিছে হটা।
وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ
📘 আমি দাঊদকে (পুত্ররূপে) সুলাইমান দান করলাম। কতই না উত্তম দাস সে। নিশ্চয় সে আল্লাহ-অভিমুখী।
إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ
📘 যখন অপরাহ্নে তার সম্মুখে সুশিক্ষিত দ্রুতগামী অশ্বরাজিকে উপস্থিত করা হল,[১]
[১] صَافِنَاتٌ - صَافِنٌ বা صَافِنَاةٌ এর বহুবচন। এর মানে এমন অশ্বরাজি যা তিন পায়ে ভর করে দাঁড়ায়। جِيَادٌ جَوَادٌ এর বহুবচন। এর অর্থ দ্রুতগামী অশ্বরাজি। অর্থাৎ সুলাইমান (আঃ)-এর সামনে জিহাদের জন্য পালিত উৎকৃষ্ট (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) দ্রুতগামী অশ্বরাজি পরিদর্শনের জন্য পেশ করা হল। عَشِيٌّ যোহর বা আসর থেকে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত সময়কে বলা হয়, আমরা যাকে অপরাহণ বা বিকাল বলে থাকি।
فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ
📘 সে বলল, ‘আমি তো আমার প্রতিপালকের স্মরণের উপর সম্পদ-প্রীতিকে প্রাধান্য দিয়ে ফেলেছি --এদিকে সূর্য অস্ত গেছে;
رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ
📘 এইগুলিকে পুনরায় আমার সম্মুখে আনো।’ অতঃপর সে ওগুলির পা ও গর্দান ছেদন করতে লাগল। [১]
[১] এই অনুবাদের পরিপ্রেক্ষিতে أَحْبَبْتُ (ভালোবেসে ফেলেছি) এর অর্থ آثَرْتُ (প্রাধান্য দিয়ে ফেলেছি) আর عَنْ এখানে عَلى এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (এর দ্বিতীয় অনুবাদ হলঃ আমি তো আমার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে সম্পদ-প্রীতিতে মগ্ন হয়ে পড়েছি।) আর تَوَارَتْ এর স্ত্রীলিঙ্গ কর্তৃকারক হল شَمْسٌ (সূর্য), যা আয়াতে পূর্বে উল্লিখিত হয়নি; কিন্তু বাগধারায় তা অনুমেয়। এই তফসীরের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব আয়াতের (مَسْحًا بِالسُّوْقِ وَالْاَعْنَاقِ) এর অর্থও হবে যবেহ করা অর্থাৎ উদ্দেশ্য مَسْحًا بِالسَّيْفِ । সারমর্ম এই যে, অশ্বরাজি পরিদর্শন করতে গিয়ে সুলাইমান (আঃ) আসর নামাযের সময় অতিবাহিত করে ফেলেন অথবা তখন তিনি যে অযীফা করতেন তা ছুটে যায়। যার জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং বলতে লাগলেন যে, আমি অশ্বরাজির মহব্বতে এমন মগ্ন হয়ে গেছি যে, সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল এবং আমি আল্লাহর স্মরণ, নামায বা অযীফা থেকে অমনোযোগী হয়ে থেকে গেলাম। সুতরাং তার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তিনি সমস্ত অশ্বরাজি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করে দিয়েছিলেন। ইমাম শাওকানী ও ইবনে কাসীর (রঃ) উক্ত তফসীরকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কোন কোন তফসীরবিদ এর আলাদা তফসীর করেছেন। তাঁদের তফসীর অনুযায়ী عَنْ أَجَلٌ এর অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। ِأي: لأَجَلِ ذِكْرِ رَبِّيْ অর্থাৎ আমার পালনকর্তার স্মরণের উদ্দেশ্যেই আমি এই অশ্বরাজির প্রতি মহব্বত রাখি। কারণ তার দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ হয়। অতঃপর তিনি অশ্বরাজিকে দৌড়ালেন। সুতরাং তারা তাঁর দৃষ্টি থেকে উধাও হয়ে গেল। তিনি এগুলোকে পুনরায় সামনে উপস্থিত করার আদেশ দিলেন। তাঁর নিকট পুনরায় উপস্থিত করা হলে তিনি মহব্বতের সাথে তাদের গর্দানে ও পায়ে হাত বুলাতে লাগলেন। خَيْرٌ শব্দটি কুরআনে সম্পদের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু এখানে এই শব্দটি অশ্বরাজির অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। تَوَارَتْ শব্দের কর্তৃকারক অশ্বরাজি বলা হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর ত্বাবারী (রঃ) এই দ্বিতীয় তফসীরকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং এই তফসীরই বিভিন্ন দিক দিয়ে সহীহ মনে হচ্ছে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَأَلْقَيْنَا عَلَىٰ كُرْسِيِّهِ جَسَدًا ثُمَّ أَنَابَ
📘 আমি সুলাইমানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি দেহ; অতঃপর সুলাইমান আমার অভিমুখী হল। [১]
[১] এই পরীক্ষা কি ছিল, সিংহাসনে রাখা নিষ্প্রাণ দেহটি কিসের ছিল? তা সিংহাসনে রাখার অর্থ কি? এসব বিবরণ কুরআন পাকে বা কোন সহীহ হাদীসে বিদ্যমান নেই। তবে কোন কোন তফসীরবিদ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত একটি ঘটনাকে আলোচ্য আয়াতের তফসীর বলে সাব্যস্ত করেছেন। ঘটনার সারমর্ম হল যে, একবার সুলাইমান (আঃ) স্বীয় মনোভাব ব্যক্ত করলেন যে, আজ রাত্রে আমি আমার (৭০ বা ৯০ জন) সকল স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করব যাতে প্রত্যেকের গর্ভ থেকে এক একটি সন্তান জ্বমগ্রহণ করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। কিন্তু এ মনোভাব ব্যক্ত করার সময় তিনি 'ইনশাআল্লাহ' বলতে ভুলে গেলেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ তদবীরের উপর পূর্ণ ভরসা করে বসলেন।) যাতে ফল এই দাঁড়ালো যে, স্ত্রীগণের মধ্যে মাত্র একজন গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর গর্ভ থেকে একটি মৃত ও অসম্পূর্ণ সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। নবী (সাঃ) বলেছেন, "যদি সুলাইমান (আঃ) 'ইনশাআল্লাহ' বলতেন, তাহলে তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর গর্ভ থেকে (তাঁর আশানুরূপ এক একটি) মুজাহিদ সন্তান ভূমিষ্ঠ হত।"
(বুখারী, মুসলিম)
এই সকল তফসীরবিদদের মতে সম্ভবতঃ 'ইনশাআল্লাহ' না বলা বা শুধু নিজ তদবীরের উপর ভরসা করাটাই ফিতনা বা পরীক্ষা ছিল, যে ফিতনায় সুলাইমান (আঃ)-কে ফেলা হয়েছিল। আর সিংহাসনের উপর নিক্ষিপ্ত দেহ ঐ অসম্পূর্ণ বাচ্চা। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
📘 সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান কর, যার অধিকারী আমার পরে অন্য কেউ হতে পারবে না।[১] নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’
[১] অর্থাৎ, তোমার হিকমত ও ইচ্ছায় আমার মুজাহিদ বাহিনী জন্ম দানের আশা পূর্ণ হয়নি, কিন্তু যদি আমাকে এমন স্বচ্ছন্দ সাম্রাজ্য দান কর, যা আমি ছাড়া বা আমার পরে ঐরূপ সাম্রাজ্যের মালিক অন্য কেউ না হয়, তাহলে সন্তানের প্রয়োজনই থাকবে না। এই দু'আও আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যেই ছিল।
فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيحَ تَجْرِي بِأَمْرِهِ رُخَاءً حَيْثُ أَصَابَ
📘 তখন আমি বায়ুকে তার অধীন করে দিলাম, সে যেখানে ইচ্ছা করত সেখানে (বায়ু) মৃদু গতিতে (তাকে নিয়ে) প্রবাহিত হত। [১]
[১] অর্থাৎ, আমি সুলাইমানের দু'আ কবুল করলাম এবং তাকে এমন সাম্রাজ্য প্রদান করলাম, যাতে বাতাসও তার অনুগত ছিল। এখানে অনুগত বাতাসকে মৃদুমন্দ গতিতে প্রবহমান বলা হয়েছে, অথচ অন্য স্থানে তাকে প্রবল বলা হয়েছে। (সূরা আম্বিয়া ২১:৮১ আয়াত) এর অর্থ এই যে, বায়ু সৃষ্টিগত শক্তি অনুযায়ী প্রবল। কিন্তু সুলাইমান (আঃ)-এর জন্য তা মন্থর করে দেওয়া হয়েছিল। অথবা সুলাইমান (আঃ)-এর চাহিদা অনুযায়ী কখনো প্রবল হত, কখনো মন্থর হত।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
وَالشَّيَاطِينَ كُلَّ بَنَّاءٍ وَغَوَّاصٍ
📘 আরও অধীন করে দিলাম শয়তানদেরকে; যারা ছিল সকলেই প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী,
وَآخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ
📘 এবং আরও অন্যান্যকে; যারা শিকলে বাঁধা থাকত। [১]
[১] জ্বিনদের মধ্যে অবাধ্য বা কাফের জ্বিনকে শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হত। যাতে তারা আপন কুফরী বা অবাধ্যতার কারণে উচ্ছৃঙ্খলতা না করতে পারে।
هَٰذَا عَطَاؤُنَا فَامْنُنْ أَوْ أَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
📘 এ সব আমার দান, সুতরাং তুমি (তা হতে) অন্যকে দিতে অথবা নিজে রাখতে পার। এর জন্য তোমাকে হিসাব দিতে হবে না।[১]
[১] অর্থাৎ, তোমার দু'আ মত আমি তোমাকে বৃহৎ সাম্রাজ্য প্রদান করেছি। এখন মানুষের মধ্যে তুমি যাকে চাইবে, (দান) দেবে আর যাকে চাইবে না, দেবে না। আমি তোমার নিকট কোন হিসাব নেব না।
وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ ۖ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ
📘 এদের নিকট এদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী এল;[১] এতে এরা বিস্ময়বোধ করল এবং অবিশ্বাসীরা বলল, ‘এ তো এক যাদুকর, মিথ্যাবাদী!
[১] অর্থাৎ, তাদের মতই একজন মানুষ কিভাবে রসূল হয়ে গেলেন!
وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ
📘 আর আমার নিকট রয়েছে তার জন্য উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। [১]
[১] অর্থাৎ, পার্থিব ইজ্জত-সম্মান লাভ করার পরেও আখেরাতেও সুলাইমান (আঃ) বিশেষ নৈকট্য ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবেন।
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ
📘 স্মরণ কর, আমার দাস আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। [১]
[১] আইয়ুব (আঃ)-এর রোগ ও তাতে তাঁর ধৈর্য ধারণ করার কাহিনী একটি প্রসিদ্ধ বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ ধ্বংস করে এবং রোগ দ্বারা তাঁকে পরীক্ষা করেছিলেন। এই সময় তিনি কয়েক বছর রোগাক্রান্ত ছিলেন, এমনকি (তাঁর স্ত্রীগণও তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন) তাঁর সাথে মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন, যিনি সকাল-সন্ধ্যা তাঁর সেবা-শুশ্রূষা করতেন এবং কোথাও কাজ-কর্ম করে তাঁর জন্য কোন রকম আহারের ব্যবস্থা করতেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন বিস্তারিত রেওয়ায়াত বর্ণনা করা হয়। কিন্তু তার মধ্যে কতটা সহীহ ও কতটা সহীহ নয়, তা জানার কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। نُصُبٍ দ্বারা শারীরিক কষ্ট এবং عَذَابٍ দ্বারা ধন-সম্পদ ধ্বংস বুঝানো হয়েছে। আসলে সব কিছু করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এর পরেও তার সাথে শয়তানের সম্পর্কের কথা এই জন্য বলা হয়েছে যে, সম্ভবতঃ শয়তানের কুমন্ত্রণাই তাঁকে এমন কর্মে লিপ্ত করেছিল, যার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই পরীক্ষা এসেছিল অথবা সম্পর্কের কথা আদবের দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভালোকে আল্লাহর সাথে এবং মন্দকে নিজের বা শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
ارْكُضْ بِرِجْلِكَ ۖ هَٰذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ
📘 (আমি তাকে বললাম,) ‘তুমি তোমার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত কর, এ হল গোসলের ঠান্ডা পানি ও পানীয় পানি।’ [১]
[১] আল্লাহ তাআলা আইয়ুব (আঃ)-এর দু'আ কবুল করলেন এবং তাঁকে তাঁর পা দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে আদেশ করলেন, যাতে একটি ঝরনা নির্গত হল। সেই ঝরনার পানি পান করার ফলে আভ্যন্তরিক রোগ এবং গোসল করার ফলে বাহ্যিক রোগ দূরীভূত হল। অনেকে বলেন যে, ঝরনা দু'টি ছিল; একটিতে গোসল করেছিলেন ও অপরটির পানি পান করেছিলেন। কিন্তু কুরআনের শব্দ দ্বারা প্রথম কথারই (একটি ঝরনা) সমর্থন হয়।
وَوَهَبْنَا لَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنَّا وَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ
📘 আমি আমার অনুগ্রহস্বরূপ ও বুদ্ধিশক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্য উপদেশস্বরূপ তাকে দিলাম তার পরিজনবর্গ[১] ও তাদের মত আরও (অনেক কিছু)। [২]
[১] অনেকে বলেন যে, পূর্বে যে সকল পরিজনবর্গকে পরীক্ষাস্বরূপ ধ্বংস করা হয়েছিল, তাদেরকেই জীবিত করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের মত আরো পরিজনবর্গ দান করা হয়েছিল। কিন্তু এ কথা কোন সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। সহীহ এই যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে পূর্বের চেয়ে এত বেশি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রদান করেছিলেন, যা পূর্বের দ্বিগুণ ছিল।
[২] অর্থাৎ, আইয়ুব (আঃ)-কে যে পুনরায় এই সকল বস্তু প্রদান করলাম, এতে বিশেষ অনুগ্রহের প্রকাশ ছাড়াও দ্বিতীয় উদ্দেশ্য এই যে, যাতে এর দ্বারা জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে এবং বালা-মসীবতে তারাও আইয়ুব (আঃ)-এর মত ধৈর্য ধারণ করে।
وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلَا تَحْنَثْ ۗ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًا ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ
📘 আমি তাকে আদেশ করলাম, ‘এক মুষ্ঠি ঘাস নাও এবং তা দিয়ে আঘাত কর, আর শপথ ভঙ্গ করো না।’[১] নিশ্চয় আমি তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম দাস সে! নিশ্চয় সে ছিল আল্লাহ-অভিমুখী।
[১] অসুস্থ অবস্থায় আইয়ুব (আঃ) তাঁর শুশ্রূষাকারিণী পত্নীর প্রতি কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে একশত বেত্রাঘাত করার শপথ করে ফেলেছিলেন। রোগমুক্ত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, একশত ঘাসের গোছা বা ঝাঁটা (অথবা একশত ছড়াবিশিষ্ট খেজুর-কাঁদি) নিয়ে তাকে একবার আঘাত কর, তাহলেই তোমার কসম পূর্ণ হয়ে যাবে। উক্ত বিষয়ে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে যে, এই সুবিধা শুধু আইয়ুব (আঃ)-এর জন্য, না অন্য কেউ একশত বেত্রাঘাতের পরিবর্তে একশত কাঠির ঝাঁটা মেরে কসম ভঙ্গ করা থেকে বাঁচতে পারবে। কেউ কেউ প্রথম মতকে বেছে নিয়েছেন। আর কেউ কেউ বলেন যে, যদি কসমকারীর নিয়ত কঠিনভাবে মারার না হয়, তবে অনুরূপ আমল করা যাবে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
একটি হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, "নবী (সাঃ) একজন ওজর-ওয়ালা দুর্বল ব্যভিচারীকে একশত বেত্রাঘাতের পরিবর্তে একশত কাঠির ঝাঁটা দ্বারা মেরে শাস্তি দিয়েছিলেন।
(আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিশেষ অবস্থাতে এরূপ করা বৈধ।
وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ
📘 স্মরণ কর, আমার দাস ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা, ওরা ছিল শক্তিশালী ও বিচক্ষণ।[১]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত ও দ্বীনের সাহায্যের ব্যাপারে তাঁরা খুবই শক্তিশালী এবং ধর্মীয় জ্ঞানের দিক দিয়ে বড় বিচক্ষণ ছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, أَيْدِيْ نِعَمٌ (নিয়ামত ও অনুগ্রহ) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, এরা ঐ সকল ব্যক্তি যাদের উপর আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহ হয়েছে অথবা এরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করত।
إِنَّا أَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ
📘 আমি তাদেরকে এক বিশেষ গুণের অধিকারী করেছিলাম; তা ছিল পরকালের স্মরণ। [১]
[১] আমি তাদেরকে আখেরাত স্মরণ করার জন্য বেছে নিয়েছিলাম। সুতরাং আখেরাত সর্বদা তাঁদের সামনেই থাকত। (সর্বদা আখেরাত স্মরণে থাকা, আল্লাহর একটি বড় অনুগ্রহ এবং বিষয়-বিতৃষ্ণা ও পরহেযগারির ভিত্তি।) অথবা তাঁরা মানুষকে আখেরাত ও আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার কাজে সদা ব্যস্ত থাকতেন।
وَإِنَّهُمْ عِنْدَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْأَخْيَارِ
📘 অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত ও উত্তম দাসদের অন্তর্ভুক্ত।
وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ وَكُلٌّ مِنَ الْأَخْيَارِ
📘 স্মরণ কর, ইসমাঈল, য়্যাসা’ ও যুল-কিফলের কথা, এরা প্রত্যেকেই ছিল সজ্জন। [১]
[১] য়্যাসা' (আঃ) ইলয়্যাস (আঃ)-এর নায়েব ছিলেন, আল-য়্যাসা'তে ال নির্দিষ্টীকরণের জন্য এবং এটা একটি অনারবী নাম। যুল-কিফল সম্পর্কে জানার জন্য সূরা আম্বিয়ার ২১:৮৫ নং আয়াতের টীকা দেখুন। أَخْيَارٌ خَيْرٌ অথবা خَيَّرٌ এর বহুবচন যেমন مَيِّتٌ এর বহুবচন أَمْوَاتٌ ।
هَٰذَا ذِكْرٌ ۚ وَإِنَّ لِلْمُتَّقِينَ لَحُسْنَ مَآبٍ
📘 এ হল সুখ্যাতি। আর নিশ্চয় সাবধানীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস;
أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
📘 সে কি বহু উপাস্যের পরিবর্তে এক উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? এ তো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার।’[১]
[১] অর্থাৎ, এক আল্লাহই সারা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণকারী, তাঁর কোন অংশীদার নেই। অনুরূপ প্রার্থনা, কুরবানী, নযর-নিয়ায প্রভৃতি ইবাদতেরও অধিকারী একমাত্র তিনিই -এসব তাদের জন্য অতি আশ্চর্যের বিষয় ছিল।
جَنَّاتِ عَدْنٍ مُفَتَّحَةً لَهُمُ الْأَبْوَابُ
📘 চিরস্থায়ী জান্নাত -- যার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে তাদের জন্য।
مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ
📘 সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা যত খুশী ফলমূল ও পানীয়ের জন্য আদেশ দেবে।
۞ وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ
📘 আর তাদের পাশে থাকবে আনত নয়না সমবয়স্কা তরুণীগণ। [১]
[১] অর্থাৎ, তাদের চক্ষু আপন স্বামী থেকে অতিক্রম করবে না,أَتْرَابٌ - تِرْبٌ এর বহুবচন, অর্থ সমবয়স্কা বা অনন্ত রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ
📘 বিচার দিনের জন্য তোমাদের এরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ
📘 নিশ্চয় এটি আমার (দেওয়া) রুযী; যার কোন শেষ নেই। [১]
[১] এখানে رِزْق (রুযী) এর অর্থ দান এবং هَذَا (এটি) শব্দ দ্বারা পূর্বে বর্ণিত সকল নিয়ামত এবং খাতির-সম্মানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা জান্নাতী ব্যক্তিরা উপভোগ করবে। نفاد শব্দের অর্থ বন্ধ বা শেষ হয়ে যাওয়া। এ সকল নিয়ামতও অশেষ হবে এবং সে খাতির-সম্মানও চিরস্থায়ী হবে।
هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ
📘 এ হল (সাবধানীদের জন্য)[১] আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম; [২]
[১] এখানে هَذَا ঊহ্য মুবতাদা (উদ্দেশ্য)র খবর (বিধেয়)। অর্থাৎ, اَلْأمْرُ هَذَا অথবা هَذَا শব্দটি মুবতাদা আর তার খবর ঊহ্য আছে, অর্থাৎ هَذَا كَمَا ذُكِرَ অর্থাৎ এটা তো সাবধানীদের ব্যাপার। এর পর অপরাধীদের পরিণাম বর্ণনা করা হচ্ছে।
[২] طَاغِيْنَ (সীমালংঘনকারী) হল তারা, যারা আল্লাহর বিধান অমান্য এবং রসূলগণকে মিথ্যাজ্ঞান করে। يَصْلَوْنَ এর অর্থ হল يَدْخُلُوْنَ অর্থাৎ, প্রবেশ করবে।
جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ
📘 জাহান্নাম, সেখানে ওরা প্রবেশ করবে, সুতরাং কত নিকৃষ্ট সে শয়নাগার।
هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ
📘 এ হল ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। সুতরাং ওরা তা আস্বাদন করুক।[১]
[১] حَمِيْمٌও غَسَّاقٌ هَذَا শব্দের খবর। অর্থাৎ, هَذَا حَمِيْمٌ وَ غَسَّاقٌ فَلْيَذُوْقُوْهُ এ হল উত্তপ্ত পানি ও পুঁজ; সুতরাং তারা তা আস্বাদন করুক। حَمِيْمٌ হল ফুটন্ত গরম পানি, যা তাদের নাড়ী-ভুঁড়ি কেটে দেবে। غَسَّاقٌ হল জাহান্নামীদের চর্ম থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। অথবা এমন ঠান্ডা পানি যা পান করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
وَآخَرُ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ
📘 এ ছাড়া রয়েছে এরূপ আরও বিভিন্ন ধরনের শাস্তি। [১]
[১]شَكْلِه ِ অনুরূপ أَزْوَاجٌ বিভিন্ন ধরনের। অর্থাৎ ফুটন্ত পানি ও পুঁজের মত আরো বিভিন্ন প্রকার শাস্তি থাকবে।
هَٰذَا فَوْجٌ مُقْتَحِمٌ مَعَكُمْ ۖ لَا مَرْحَبًا بِهِمْ ۚ إِنَّهُمْ صَالُو النَّارِ
📘 (জাহান্নামীদের নেতাদেরকে বলা হবে,) ‘এ এক বাহিনী, যা তোমাদের সঙ্গে প্রবেশ করবে।’[১] (ওরা বলবে,) ‘ওদের জন্য অভিনন্দন নেই, [২] ওরা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’[৩]
[১] জাহান্নামের দরজায় দন্ডায়মান ফিরিশতাগণ, কাফেরদের দলপতিদেরকে এই কথা তখন বলবেন, যখন তাদের অনুসারীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অথবা কাফের দলপতিরা তাদের অনুসারীদের দিকে ইঙ্গিত করে নিজেদের মাঝে বলাবলি করবে।
[২] এ কথা দলপতিরা জাহান্নামে প্রবেশকারী কাফেরদের উদ্দেশ্যে ফিরিশতাদের উত্তরে বলবে। অথবা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। رَحْبَةٌ এর অর্থ প্রশস্ততা ও স্বাচ্ছন্দ্য। مَرْحَبًا শব্দটি অভিনন্দন সূচক, যা কোন আগত মেহমানকে সবাগত ও অভিনন্দন জ্ঞাপনের সময় ব্যবহার করা হয়। لاَ مَرْحَبًا তার বিপরীত শব্দ।
[৩] এটা তাদেরকে অভিনন্দন জ্ঞাপন না করার কারণ। আমাদের ও তাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই, এরাও আমাদের মতই জাহান্নামে প্রবেশ করছে এবং যেমন আমরা শাস্তিযোগ্য হয়েছি, তেমনি এরাও জাহান্নামের শাস্তিযোগ্য হয়েছে।
وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَىٰ آلِهَتِكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ
📘 ওদের প্রধানেরা এ বলে সরে পড়ল, ‘তোমরা চল এবং তোমাদের দেবতাগুলির পূজায় তোমরা অবিচলিত থাক।[১] নিশ্চয়ই এটি কোন উদ্দেশ্যমূলক। [২]
[১] অর্থাৎ, নিজের ধর্মের উপর অটল থাক এবং মূর্তিপূজা করতে থাক, মুহাম্মাদের কথায় কান দিয়ো না!
[২] অর্থাৎ, সে আসলে আমাদেরকে আমাদের উপাস্য থেকে দূরে সরিয়ে তাঁর অনুসারী বানাতে এবং নিজের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মানাতে চাচ্ছে।
قَالُوا بَلْ أَنْتُمْ لَا مَرْحَبًا بِكُمْ ۖ أَنْتُمْ قَدَّمْتُمُوهُ لَنَا ۖ فَبِئْسَ الْقَرَارُ
📘 অনুসারীরা বলবে, ‘তোমাদের জন্যও তো অভিনন্দন নেই। তোমরাই তো আমাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করেছ।[১] সুতরাং কত নিকৃষ্ট এ আবাসস্থল।’
[১] অনুসারীরা তাদের দলপতিদেরকে বলবে, তোমরাই কুফরী ও ভ্রষ্টতার রাস্তা আমাদের সামনে সুশোভিত করে পেশ করতে, সুতরাং এই জাহান্নামের শাস্তিতে ফেলার মূলে হচ্ছ তোমরাই।
قَالُوا رَبَّنَا مَنْ قَدَّمَ لَنَا هَٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِي النَّارِ
📘 ওরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যে আমাদেরকে এর সম্মুখীন করেছে[১] জাহান্নামে তার শাস্তি দ্বিগুণ বর্ধিত কর।’ [২]
[১] অর্থাৎ, যে আমাদেরকে কুফরের দাওয়াত দিয়েছিল এবং তা সত্য বলে ভরসা দিয়েছিল। অথবা যে কুফরীর দিকে দাওয়াত দিয়ে আমাদেরকে এই শাস্তির সম্মুখীন করেছে।[২] এ কথা এর পূর্বে বেশ কিছু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে, যেমন সূরা আ'রাফ ৭:৩৮, সূরা আহযাব ৩৩:৬৮ আয়াত।
وَقَالُوا مَا لَنَا لَا نَرَىٰ رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُمْ مِنَ الْأَشْرَارِ
📘 ওরা আরও বলবে, ‘আমাদের কি হল যে, আমরা যাদেরকে মন্দ বলে গণ্য করতাম, তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি না। [১]
[১] أَشْرَارٌ (মন্দ) দ্বারা গরীব-মিসকীন মু'মিনদের বুঝানো হয়েছে। যেমন; আম্মার, খাব্বাব, সুহাইব, বিলাল ও সালমান প্রভৃতি (রাঃ)। তাঁদেরকে উল্টাভাবে মক্কার দলপতিরা মন্দ লোক বলত এবং বর্তমানেও বাতিলপন্থীরা সত্যের অনুসারীদেরকে মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, চরমপন্থী ইত্যাদি 'খেতাব' দিয়ে বদনাম করে থাকে।
أَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا أَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْأَبْصَارُ
📘 তবে কি আমরা ওদেরকে অহেতুক ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র মনে করতাম,[১] নাকি আমাদের চোখ ওদেরকে দেখতে পাচ্ছে না?’[২]
[১] পৃথিবীতে, যেখানে আমরা ভুল পথে ছিলাম।
[২] অথবা তারাও এখানে কোথাও আমাদের সাথেই আছে, কিন্তু আমাদের চক্ষু তাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না।
إِنَّ ذَٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ أَهْلِ النَّارِ
📘 জাহান্নামীদের বাদ-প্রতিবাদ; অবশ্যই এ সত্য ঘটবে। [১]
[১] অর্থাৎ, তাদের পারস্পরিক বাক্-বিতন্ডা ও একে অপরকে দোষারোপ করা, একটি এমন সত্য, যা অবশ্যম্ভাবী।
قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنْذِرٌ ۖ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
📘 বল, ‘আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র[১] এবং আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই; যিনি এক, পরাক্রমশালী।
[১] অর্থাৎ, তোমরা যা ধারণা করছ, আমি তা নই। আসলে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর গজব থেকে একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
📘 যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক, যিনি পরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।’
قُلْ هُوَ نَبَأٌ عَظِيمٌ
📘 বল, ‘এ এক মহাসংবাদ। [১]
[১] অর্থাৎ, আমি তোমাদেরকে আখেরাতের যে শাস্তি থেকে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করছি এবং যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি, তা একটি মহাসংবাদ। তার ব্যাপারে উদাসীন ও বিমুখ হয়ে থেকো না। বরং তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন আছে।
أَنْتُمْ عَنْهُ مُعْرِضُونَ
📘 যা থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ।
مَا كَانَ لِيَ مِنْ عِلْمٍ بِالْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ إِذْ يَخْتَصِمُونَ
📘 ঊর্ধ্বলোকে ফিরিশতাদের বাদানুবাদ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না। [১]
[১] ملأ أعلى অর্থ ঊর্ধ্বলোকের ফিরিশতাগণ, অর্থাৎ তারা কি আলোচনা করছিলেন? আমি তা অবগত নই। সম্ভবতঃ সেই اختِصَام (বাকবিতন্ডা) অর্থঃ সেই কথোপকথন, যা আদম সৃষ্টির সময় (আল্লাহ ও ফিরিশতাগণের মধ্যে) হয়েছিল। যেমন পরবর্তীতে তার বর্ণনা আসছে।
مَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَٰذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ
📘 আমরা শেষ ধর্মাদর্শে এরূপ কথা শুনিনি;[১] এটি এক মনগড়া উক্তি। [২]
[১] শেষ বা পূর্ব ধর্মাদর্শ বলতে তাদেরই কুরাইশী ধর্মাদর্শ অথবা খ্রিষ্টান ধর্মকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মুহাম্মাদ যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছে, সে সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে অন্য কোন ধর্মে শ্রবণ করিনি।
[২] অর্থাৎ, এই প্রকার তাওহীদ তাঁর নিজের মনগড়া, তাছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মেও আল্লাহর সাথে অন্যকে উপাস্য হওয়াতে অংশীদার মানা হয়েছে।
إِنْ يُوحَىٰ إِلَيَّ إِلَّا أَنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ
📘 আমার নিকট তো ওহী (প্রত্যাদেশ) এসেছে যে, আমি একজন সতর্ককারী মাত্র।’[১]
[১] অর্থাৎ, আমার দায়িত্ব হল যে, আমি তোমাদেরকে ঐ সকল ফরয ও সুন্নত জানিয়ে দেব, যা পালন করে তোমরা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে এবং ঐ সকল হারাম বস্তু ও পাপাচরণ বর্ণনা করে দেব, যা থেকে বিরত থাকলে তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে এবং বিরত না থাকলে তাঁর ক্রোধের শিকার হবে। এটাই সেই সতর্কবাণী, যার ওহী আমাকে করা হয়।
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ
📘 স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বলেছিলেন,[১] ‘নিশ্চয় আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। [২]
[১] এ ঘটনাটি ইতিপূর্বে সূরা বাক্বারা ২:৩০-৩৪, আ'রাফ ৭:১১, হিজর ১৫:২৮-৩১, বানী ইস্রাঈল ১৭:৬১ ও কাহফ ১৮:৫০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এখানেও তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে।[২] অর্থাৎ, একটি মানুষ সৃষ্টি করব। بَشَر মানে স্পর্শ করা, মিলানো। সর্বদা ভূপৃষ্ঠের সাথে মিলিত হয়ে থাকার জন্য মানুষকে 'বাশার' বলা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর সাথেই তার সমস্ত সম্পর্ক এবং সব কিছুই সে পৃথিবীতেই করে থাকে। অথবা মানুষ হল بادى البشرة অর্থাৎ, তার দেহ বা মুখমন্ডল প্রকাশ হয়ে থাকে।
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
📘 সুতরাং যখন আমি ওকে সুঠাম করব[১] এবং ওতে আমার রূহ (জীবন)[২] সঞ্চার করব তখন তোমরা ওর প্রতি সিজদার জন্য লুটিয়ে পড়ো।’ [৩]
[১] অর্থাৎ, তাকে মানুষের রূপ দিয়ে দেব এবং তাকে পূর্ণাঙ্গ ও সৌষ্ঠবসম্পন্ন করে দেব।
[২] অর্থাৎ, সেই রূহ বা প্রাণ, যার মালিক একমাত্র আমিই। আমি ছাড়া যার ব্যাপারে কেউ কোন এখতিয়ার রাখে না এবং যা ফুঁকে দিলেই এই মাটির কলেবর জীবন, নড়া-চড়ার ক্ষমতা ও দৈহিক শক্তি অর্জন করবে। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার জন্য এ কথাই যথেষ্ট যে, তাতে সেই রূহ ফুঁকা হয়েছে, যাকে আল্লাহ তাআলা 'আমার রূহ' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
[৩] এখানে যে সিজদার কথা বলা হয়েছে তা অভিনন্দন-জ্ঞাপক বা সম্মানসূচক (তা'যীমী) সিজদা ছিল, ইবাদতের সিজদা নয়। এরূপ সম্মানসূচক সিজদা করা পূর্বে বৈধ ছিল, যার জন্য আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের আদম (আঃ)-কে সিজদা করার আদেশ দেন। বর্তমানে ইসলামী শরীয়তে কাউকে সম্মানসূচক সিজদা করা বৈধ নয়। হাদীসে পাওয়া যায়, নবী (সাঃ) বলেছেন, "যদি কাউকে সিজদা করা বৈধ হত, তবে আমি নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।"
(তিরমিযী, মিশকাত ৩২৫৫নং)
فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ
📘 তখন ফিরিশতারা সকলেই সিজদা করল--[১]
[১] এটা মানুষের জন্য দ্বিতীয় সম্মান যে, তাকে পূত-পবিত্র ফিরিশতাগণও সম্মানের জন্য সিজদা করেছেন। كُلُّهُمْ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, কোন একজন ফিরিশতাও সিজদা করতে বাদ যাননি। তার পর أَجْمَعُوْنَ বলে পরিষ্কার করে দিলেন যে, সকলে একই সময়ে সিজদা করেছিলেন, বিভিন্ন সময়ে নয়। কেউ কেউ বলেন, এখানে তাকীদের উপর তাকীদের শব্দ ব্যবহার করে ব্যাপকতার সর্বশেষ পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
📘 ইবলীস ছাড়া, সে অহংকার করল[১] এবং সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল। [২]
[১] যদি ইবলীসকে ফিরিশতার গুণে গুণান্বিত ভাবা হয় তবে এই استثناء متصل হবে। অর্থাৎ ইবলীস সিজদার ঐ আদেশের আওতাভুক্ত হবে। এ ছাড়া এটা استثناء منقطع হবে, অর্থাৎ ইবলীস সেই আদেশের আওতাভুক্ত ছিল না। কিন্তু তার আকাশে বসবাসের কারণে তাকেও উক্ত আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে অহংকারবশতঃ তা পালন করতে অস্বীকার করল।
[২] এখানে كَانَ (ছিল) صَارَ (হয়ে গেল)এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার আদেশ লঙ্ঘন ও তাঁর আনুগত্যে অহংকার প্রদর্শনের কারণে সে কাফের হয়ে গেল। অথবা আল্লাহর ইলমে সে কাফের ছিল।
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ
📘 তোমার প্রতিপালক বললেন, ‘হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ দুই হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছি[১] তাকে সিজদা করতে তোমাকে কে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন?’
[১] এ কথাও মানুষের অতিরিক্ত সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য বলা হয়েছে। সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই। কিন্তু মানুষকে তিনি নিজের দুই হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেই হাত যেমন তাঁর মহত্ত্বের জন্য শোভনীয়। সে হাতের কোন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ নেই।
قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ
📘 সে বলল, ‘আমি আদম হতে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছ, আর ওকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি হতে।’ [১]
[১] অর্থাৎ, শয়তান তার বিকৃত মস্তিষ্কে এই ধারণা করেছিল যে, তার সৃষ্টির মূল উপাদান আগুন আদমের সৃষ্টির মূল উপাদান মাটির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অথচ আগুন, মাটি ইত্যাদি সব একই শ্রেণীর উপাদান ও কাছাকাছি প্রায় সমপর্যায়ের বস্তু। এই সব বস্তুকে এক অপরের উপর তখনই প্রাধান্য দেওয়া যাবে, যখন বহিরাগত কোন অতিরিক্ত কারণ পাওয়া যাবে। আর এই বহিরাগত কারণ আগুনের পরিবর্তে মাটিই অর্জন করেছে। তা এইভাবে যে, আল্লাহ তাআলা মাটি থেকেই আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে আপন রূহ ফুঁকেছেন। এই দিক দিয়ে মাটিই আগুনের চেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করেছে। এ ছাড়াও আগুনের কাজ হল পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া, আর মাটি হল তার বিপরীত; বিভিন্ন বস্তুর উৎপাদন ক্ষেত্র।
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ
📘 তিনি বললেন, ‘তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও, কারণ নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত।
وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ
📘 এবং অবশ্যই তোমার উপর আমার এ অভিশাপ কর্মফল দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।’
قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
📘 সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাহলে তুমি আমাকে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও।’
أَأُنْزِلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ مِنْ بَيْنِنَا ۚ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِنْ ذِكْرِي ۖ بَلْ لَمَّا يَذُوقُوا عَذَابِ
📘 আমরা এত লোক থাকতে কি তারই ওপর কুরআন অবতীর্ণ করা হল?’[১] ওরা তো প্রকৃতপক্ষে আমার কুরআনে সন্দিহান,[২] ওরা এখনও আমার শাস্তি আস্বাদন করেনি। [৩]
[১] অর্থাৎ, মক্কাতে অনেক বড় বড় সর্দার ও নেতাগণ আছেন, যদি আল্লাহ কাউকে নবী বানাতে চাইতেন তবে তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নিয়ে বানাতেন। তাঁদেরকে বাদ দিয়ে অহী ও রিসালাতের জন্য মুহাম্মাদকে চয়ন করা আশ্চর্যের ব্যাপার! ঠিক যেন তারা আল্লাহর চয়নে ভুল বের করল। এটা সত্য যে, কাজের ইচ্ছা না থাকলে বিভিন্ন বাহানা দেওয়া হয়। অন্য স্থানেও এই বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুনঃ সূরা যুখরুফের ৪৩:৩১-৩২ আয়াত।[২] অর্থাৎ, তাদের অস্বীকার এই জন্য নয় যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সত্যবাদিতার জ্ঞান তাদের নিকটে ছিল না অথবা তাঁর সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির ব্যাপারে তারা সন্দিহান ছিল। বরং আসলে তারা সেই অহীর উপরে সন্দেহ পোষণ করত, যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল, যার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল তাওহীদের দাওয়াত।[৩] কারণ শাস্তি আস্বাদন করলে এমন স্পষ্ট বস্তুকে অস্বীকার ও মিথ্যা মনে করত না। আর যখন তারা সেই অস্বীকারের শাস্তি সত্যই আস্বাদন করবে, তখন এমন সময় হবে যে, না তাদের সবীকারোক্তি কাজে আসবে, আর না ঈমান কোন উপকারে আসবে।
قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ
📘 তিনি বললেন, ‘যাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে তুমি অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে--
إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ
📘 অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 সে বলল, ‘তোমার ক্ষমতার শপথ! আমি অবশ্যই ওদের সকলকেই বিভ্রান্ত করব,
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
📘 তবে ওদের মধ্যে তোমার খাঁটি দাসদেরকে নয়।’
قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ
📘 তিনি বললেন, ‘সুতরাং এ হল বাস্তব সত্য এবং আমি সত্যই বলছি যে,
لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 তোমার দ্বারা ও ওদের মধ্যে তোমার সকল অনুসারীদের দ্বারা আমি অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।’
قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ
📘 বল, ‘আমি উপদেশের জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না[১] এবং যারা মিথ্যা দাবী করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।[২]
[১] অর্থাৎ, দাওয়াত ও তাবলীগ দ্বারা আমার উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা; পার্থিব কিছু স্বার্থ অর্জন করা নয়।
[২] অর্থাৎ, নিজের পক্ষ থেকে এমন কথা, যা আল্লাহ বলেননি, তা আল্লাহ বলেছেন বলে চালিয়ে দেব। অথবা তোমাদেরকে এমন কথার দাওয়াত দেব, যার আদেশ আল্লাহ তাআলা আমাকে দেননি। বরং কোন কম-বেশি করা ছাড়াই আল্লাহর আহকাম আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিই। (تكلف হল, যা জানি কষ্টকল্পনা করে তার থেকে বেশী জ্ঞান প্রকাশ করা, যতটা খেতে বা খাওয়াতে পারি, কষ্ট করে তার থেকে বেশী উত্তম খাবার প্রকাশ করা, যতটা পরতে পারি, কষ্ট করে তার থেকে বেশী উত্তম পোশাক প্রকাশ করা ইত্যাদি।) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলতেন, 'যে ব্যক্তির কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান নেই, তার ক্ষেত্রে ألله أعلم বলা উচিত। কারণ আল্লাহ তাআলা নিজ পয়গম্বরকে বলেছেন, "বলে দাও, ( وَمَآ اَنَا مِنَ المْتَُكَلِّفِيْنَ) যারা মিথ্যা দাবী করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।"
(ইবনে কাসীর)
এ ছাড়া এতে সাধারণ জীবনেও কৃত্রিমতা ও সাধ্যের বাইরে সাধনা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, (نُهِيْنَا عَنِ التَّكَلُّفِ) "আমাদেরকে কৃত্রিমতা প্রকাশ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।"
(বুখারী ৭২৯৩নং)
সালমান (রাঃ) বলেন, (نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ أَنْ نَتَكَلَّفَ لِلضَّيْفِ) অর্থাৎ, রসূল (সাঃ) আমাদেরকে মেহমানের জন্য কৃত্রিমতা প্রকাশ করা থেকে নিষেধ করেছেন।
(সহীহুল জামে')
এতে বুঝা যায় যে, খাবার, পোশাক, বাসস্থান এবং অন্য বস্তুতে যে কৃত্রিমতা ও উন্নত জীবন যাত্রার নাম দিয়ে ধনবানদের চাল চলন অনেক ধনহীনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তা ইসলামী শিক্ষার বিপরীত। কারণ ইসলাম আমাদেরকে সাধারণ, আড়ম্বরহীন জীবন যাত্রা ও অকৃত্রিমতা অবলম্বন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ
📘 এ (কুরআন) বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র। [১]
[১] অর্থাৎ, এই কুরআন বা অহী বা ঐ দাওয়াত যা আমি পেশ করছি, তা পৃথিবীর সকল মানুষ ও জ্বিন জাতির জন্য উপদেশ স্বরূপ; এই শর্তে যে, তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينٍ
📘 এর সংবাদের সত্যতা তোমরা কিছুকাল পরে অবশ্যই জানতে পারবে।’ [১]
[১] অর্থাৎ, কুরআন যে সকল বস্তুর সংবাদ ও বর্ণনা দিয়েছে, যে পুরস্কার ও তিরস্কারের কথা বলেছে, তার সত্যতা অতি সত্বর তোমাদের সামনে এসে যাবে। সুতরাং তার কিছু সংবাদের সত্যতা বদর ও মক্কা বিজয়ের দিন প্রকাশ পেয়েছে। অথবা মৃত্যুর সময় সকলের কাছে তা প্রকাশ হয়ে যাবে।
أَمْ عِنْدَهُمْ خَزَائِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ الْعَزِيزِ الْوَهَّابِ
📘 ওদের নিকট কি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের ভান্ডার আছে, যিনি পরাক্রমশালী, মহাদাতা?[১]
[১] অতএব তারা যাকে ইচ্ছা দেবে, আর যাকে ইচ্ছা দেবে না, আর সেই ভান্ডারের একটি সম্পদ নবুঅতও? পক্ষান্তরে যদি তা না হয়, বরং প্রভুর অনুগ্রহের ভান্ডারের মালিক সেই মহাদাতা হন; যিনি অতি দানশীল, তাহলে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতকে তারা অস্বীকার করে কেন? যা সেই মহাদাতা প্রভু তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে তাঁকে দান করেছেন।