Al-Maaida • BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
﴿ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًۭا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍۢ ۚ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌۭ وَكِتَٰبٌۭ مُّبِينٌۭ ﴾
“O followers of the Bible! Now there has come unto you Our Apostle, to make clear unto you much of what you have been concealing [from yourselves) of the Bible, and to pardon much. Now there has come unto you from God a light, and a clear divine writ,”
হে ঐশীগ্রন্থধারিগণ! আমার রসূল তোমাদের নিকট এসেছে, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে, সে তার অনেক অংশ তোমাদের নিকট প্রকাশ করে[১] এবং অনেক কিছু (প্রকাশ না করে) উপেক্ষা করে থাকে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট হতে জ্যোতি ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।[২] [১] অর্থাৎ, তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের মধ্যে যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করেছে, রসূল (সাঃ) তা উদঘাটন করেছেন এবং যা তারা গোপন করেছিল, তা তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন। যেমন, বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর ছুঁড়ে মারার শাস্তিকে তারা গোপন করেছিল; যার বিস্তারিত বিবরণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।[২] (نُورٌ وَّكِتَابٌ مُبِين) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা 'নূর ও কিতাবুন মুবীন' (জ্যোতি ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ) একই সাথে উল্লেখ করেছেন এবং এই দুইয়েরই উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন কারীম। কেননা এই দুইয়ের মধ্যে وَ সংযোজক অব্যয়টি পাশাপাশি দুই বিশেষ্যের ভিন্নতা বুঝাতে ব্যবহূত হয়নি; বরং অর্থের ভিন্নতা বুঝাতে ব্যবহূত হয়েছে। এই অব্যয়টি আসলে ব্যাখ্যাকারী সংযোজক অব্যয়। যার স্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের পরবর্তী আয়াত, যেখানে বলা হচ্ছে يَهدِي بِهِ الله অর্থাৎ তার দ্বারা আল্লাহ হিদায়াত করেন বা সুপথ দেখান। যদি نور ও كتاب আলাদা আলাদা জিনিস হত, তাহলে কুরআনের এই বাক্যটি এইরূপ হত, يَهدِي بِهِمَا الله অর্থাৎ, সর্বনামটি একবচন না হয়ে দ্বিবচন হত (ه) একবচন না হয়ে هما দ্বিবচন হত এবং অনুবাদ ' এ দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন' না হয়ে) ' উভয় দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন' হত। কুরআনের এই বাক্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়ে গেল যে, 'নূর' ও 'কিতাবে মুবীন' উভয় থেকে উদ্দেশ্য 'কুরআন কারীম'। এ নয় যে, 'নূর' থেকে উদ্দেশ্য মুহাম্মাদ (সাঃ) আর 'কিতাবে মুবীন' থেকে উদ্দেশ্য কুরআন মাজীদ; যেমনটি বিদআত পন্থীদের ধারণা; যারা এই আকীদায় বিশ্বাসী যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর নূরের অংশ বিশেষ এবং যারা অস্বীকার করে যে, তিনি একজন মানুষ। (অথচ 'নূর' বলতে যে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সূরা তাগাবুনের ৬৪:৮ নং আয়াতে। সেখানে মহান আল্লাহ বলেন, {فَآمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا} অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং সেই 'নূর' বা জ্যোতির প্রতি, যা আমি অবতীর্ণ করেছি।) অনুরূপ এই মনগড়া আকীদাকে সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্যে তারা একটি হাদীসও বর্ণনা করে থাকে, "আল্লাহ সর্বপ্রথম নবী (সাঃ)-এর নূরকে সৃষ্টি করেন, তারপর তাঁর নূর থেকে সারা জগৎ সৃষ্টি করেন।" অথচ নির্ভরযোগ্য কোন হাদীসগ্রন্থে এই হাদীসটির উল্লেখ নেই। উপরন্তু এই হাদীসটি ঐ সহীহ হাদীসের পরিপন্থী, যাতে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, إن أول ماخلق الله القلم অর্থাৎ, সর্বপ্রথম আল্লাহ যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। (তিরমিযী ও আবু দাউদ) (এ যুগের শ্রেষ্ঠ) মুহাদ্দিস আল্লামা আলবানী (রঃ) বলেন, হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ এবং এটি সেই প্রসিদ্ধ হাদীস বাতিল হওয়ার প্রকাশ্য প্রমাণ, যাতে বলা হয়েছে, "আল্লাহ সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন হে জাবের!" (হাদীসটি বাতিল। দেখুনঃ তা'লীক্বাতে মিশকাত ১/৩৪ )