🕋 تفسير سورة التين
(At-Tin) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ
📘 শপথ তীন ও যাইতূনের। [১]
[১] ('তীন' ডুমুরজাতীয় এক প্রকার মিষ্টি ফল; যার গাছ ও ফল ডুমুর গাছ ও ফলের মতই দেখতে। উর্দুতে 'আনজীর' তর্জমা দেখে তা আমাদের দেশের 'পেয়ারা' 'আঞ্জীর' বা 'আমসপেরা' মনে করা ভুল। যয়তূনকে ইংরেজীতে 'অলিভ' বলা হয়। বাংলাতে এর অনুবাদ 'জলপাই' করা হয়ে থাকে।)
-সম্পাদক
وَطُورِ سِينِينَ
📘 শপথ ‘সিনাই’ পর্বতের। [১]
[১] এটা হল সেই 'ত্বূর পাহাড়' যে স্থানে আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-এর সাথে কথোপকথন করেছিলেন।
وَهَٰذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ
📘 এবং শপথ এই নিরাপদ নগরী (মক্কা)র। [১]
[১] এখানে 'নিরাপদ নগরী' বলে মক্কা নগরীকে বোঝানো হয়েছে। যেখানে কোন প্রকার যুদ্ধ বা হত্যাকান্ড বৈধ নয়। এ ছাড়াও যে ব্যক্তি এই শহরে প্রবেশ করে যাবে সেও নিরাপত্তার অধিকারী হবে। কিছু ব্যাখ্যাকারীগণ বলেছেন যে, আসলে এখানে আল্লাহ তিনটি জায়গার কসম খেয়েছেন; যে জায়গাগুলিতে সুখ্যাতিসম্পন্ন, শরীয়তপ্রাপ্ত পয়গম্বর প্রেরণ হয়েছেন। 'তীন' ও 'যায়তুন' থেকে সেই এলাকা বোঝান হয়েছে যেখানে এসব ফল (অধিকাধিক) উৎপন্ন হয়। আর সেটা হল 'বাইতুল মাকদিস' এলাকা। যেখানে ঈসা (আঃ) পয়গম্বর হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। 'ত্বুরে সীনা' অথবা সিনাই পর্বতে মূসা (আঃ)-কে নবুঅত দান করা হয়েছিল। আর মক্কা নগরীতে নবীকূল শিরোমণি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল।
(ইবনে কাসীর)
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
📘 আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। [১]
[১] এটা হল কসমের জওয়াব। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিচুমুখী করে। কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন। তাতে পশুর মত বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে উচিত ব্যবধানও রেখেছেন। তাতে বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোঝশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। যার ফলে মানুষ আসলে তাঁর কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তাঁর শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব। কিছু উলামা إن الله خلق آدم على صورته (অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।) হাদীসে উক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন।
(মুসলিম নেকী ও আত্মীয়তা এবং আদব অধ্যায়)
মানুষের সৃষ্টিতে উক্ত সকল জিনিসের ব্যবস্থা করাটাই হল 'আহসানি তাকবীম' (সুন্দরতম গঠন) যা মহান আল্লাহ তিনটি বস্তুর কসম খাওয়ার পর উল্লেখ করেছেন।
(ফাতহুল কাদীর)
ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ
📘 অতঃপর আমি তাকে হীনতার সবচেয়ে নিম্নস্তরে ফিরিয়ে দিয়েছি।[১]
[১] এখানে মানুষের স্থবিরতা ও অন্তিম আয়ুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সময়ে যুবক অবস্থা ও শক্তিমত্তার পর বার্ধক্য ও দুর্বলতা এসে পড়ে। আর তখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও বোধশক্তি শিশুদের মত হয়ে যায়। কেউ কেউ এখানে সেই হীনতার অর্থ গ্রহণ করেছেন যাতে মানুষ পতিত হয়ে অতিরিক্ত নীচতা এবং সাপ-বিছা থেকেও বেশী নিকৃষ্ট হয়ে যায়। আবার কেউ বলেন, এ আয়াত দ্বারা সেই লাঞ্ছনাকর আযাবকে বোঝানো হয়েছে যা জাহান্নামে কাফেরদের জন্য অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ, মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য না করে নিজেকে 'আহ্সানি তাক
বী
ম'-এর উচ্চ মর্যাদা থেকে জাহান্নামের নিম্নদেশে ঠেলে দেয়।
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
📘 কিন্তু তাদেরকে নয় যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য তো আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। [১]
[১] এ আয়াতটি পূর্বের আয়াতের প্রথম অর্থের বিশদ বিবরণ। অর্থাৎ, এ দিয়ে মু'মিনদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে; (তারা অন্তিম বার্ধক্যে পৌঁছলেও তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার)। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্থের দিক দিয়ে এটি পূর্বের বাক্যেরই তাকীদ। অবশ্য এই পরিণাম থেকে মু'মিনদেরকে পৃথক করা হয়েছে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّينِ
📘 সুতরাং এরপর কিসে তোমাকে (হে মানুষ) কর্মফল দিবস সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে? [১]
[১] এ দিয়ে কিয়ামতের অবিশ্বাসীদেরকে হুমকির সাথে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, আল্লাহ তোমাকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাকে তার বিপরীত হীনতার অতল তলে নিক্ষেপ করতেও সক্ষম। আর তার মানেই হল, তোমাকে পুনর্বার সৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে কোন কঠিন কাজ নয়। সুতরাং এরপরেও কি তুমি কিয়ামত ও প্রতিফল দিবসকে অবিশ্বাস করবে?
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ
📘 আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? [১]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহ কারো প্রতি অবিচার করেন না। আর তাঁর সুবিচারের দাবী এই যে, তিনি কিয়ামত সংঘটিত করবেন এবং যাদের উপর দুনিয়ায় যুলুম করা হয়েছে তাদেরকে পূর্ণ বদলা দিয়ে দেওয়া হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এই সূরার শেষে 'বালা অআনা আলা যা-লিকা মিনাশ শাহিদীন' বলার হাদীস সহীহ নয়।
(তিরমিযী)