🕋 تفسير سورة الكهف
(Al-Kahf) • المصدر: BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ۗ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
📘 ৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আদম ও আদম সন্তানের সাথে ইবলীস শয়তানের শত্র“তার সংবাদ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করার পর সকল ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্মান ও তাঁর নির্দেশ পানলার্থে আদম (عليه السلام) কে সিজদা দেয়ার জন্য। তখন সকলেই সিজদা করল কিন্তু ইবলীস করল না। এ সম্পর্কে সূরা হিজর ও সূরা আ‘রাফ- এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ ইবলীস শয়তান জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত, সে আগুনের তৈরি, সে আদম সন্তানের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সূরা আ‘রাফ ৭:১২) অর্থাৎ সে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ভঙ্গ করল, নিজের অহংকার ও বড়ত্বের কারণে সিজদা করল না। সে বলল (أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا) “আমি কি তাকে সিজদা করবো যাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?” (সূরা ইসরা ১৭:৬১)
যে শয়তান আল্লাহ তা‘আলা ও মানব জাতির পিতা আদম (عليه السلام)-এর সাথে এমন আচরণ করল তার ব্যাপারে সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা কি এ শয়তান ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নেবে? তারা তো তোমাদের শত্র“। সুতরাং এরপরেও যারা শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নেবে, এসব জালিমদের প্রতিদান কতইনা খারাপ হবে।
অতএব শয়তানকে কখনো ওলী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না এবং তার অনুসারীদেরকেও ওলী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ তারা কখনো ভাল পথ দেখায় না বরং আলোর পথ থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। (সূরা ফাতির ৩৫:৬)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শয়তানের পথ বাহ্যিকভাবে যতই ভাল হোক না কেন তার অনুসরণ করা যাবে না।
২. শয়তান মানুষের কল্যাণ চায় না, সে কল্যাণের নামে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়।
وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
📘 ৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
মানুষের কাছে সঠিক পথ তুলে ধরার জন্য কুরআনে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। কখনো ওয়াজ-নসিহত করার পথ অবলম্বন করা হয়েছে, কখনো ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে, আবার কখনো উদাহরণ বর্ণনা করা হয়েছে। উপমা একটি ভাষা অলংকার, প্রত্যেক ভাষায় উপমার ব্যবহার পাওয়া যায়। উপমার দ্বারা উপমিত বস্তু বা বিষয়কে সহজে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। তাই বলা হয়-
ضرب الامثال لتقريب الاذهان
উপমা বর্ণনা করা হয় সহজে বুঝানোর জন্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে প্রত্যেক প্রকার উপমা বর্ণনা করেছেন, যাতে মানুষ সঠিক পথ সহজে বুঝতে পেরে তার অনুসরণ করে। কুরআনে অনেক উপমা সম্বলিত আয়াত রয়েছে। যেমন- মু’মিন মুনাফিকদের উপমা সূরা বাকারার শুরুর দিকে রয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ও যারা মানুষকে দেখানোর জন্য ব্যয় করে তাদের উপমা সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে, যারা সুদ খায় তাদের উপমা সূরা বাকারার ২৭৫ নং আয়াতে, দুনিয়ার জীবনের উপমা সূরা ইউনুসের ২৪ নং আয়াতে, জান্নাতের উপমা সূরা মুহাম্মাদের ১৫ নং আয়াতে; এভাবে যারা সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত ও যারা পথভ্রষ্ট তাদের উপমা, যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে তাদের উপমা কুরআনে বর্ণিত আছে।
(وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا)
এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী (রহঃ) উল্লেখ করেন
“একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতেমা ও আলীর (রাঃ) বাড়িতে আগমন করেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: তোমরা যে শুয়ে রয়েছ, সালাত আদায় করছ না কেন? উত্তরে আলী (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের প্রাণ আল্লাহ তা‘আলার হাতে রয়েছে। যখন তিনি ইচ্ছা করেন তখনই আমাদের উঠিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীর মুখে এ কথা শুনে আর কিছু না বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন। ফেরবার পথে তিনি হাঁটুর ওপর হাত মেরে বলতে বলতে যাচ্ছিলেন: মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক করে। (মুসনাদ আহমাদ ১/১১২, সহীহ বুখারী: ৪৭২৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে বেশি বেশি তর্ক-বিতর্ক করা যাবে না।
২. কুরআনে প্রত্যেক প্রকার উপমা বর্ণনা করা হয়েছে যাতে সঠিক পথ চিনতে ভুল না হয়।