🕋 تفسير سورة طه
(Taha) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ طه
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
إِذْ رَأَىٰ نَارًا فَقَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَعَلِّي آتِيكُمْ مِنْهَا بِقَبَسٍ أَوْ أَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى
📘 ৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
এখান থেকে হযরত মূসার (আঃ) ঘটনা শুরু হচ্ছে। এটা হলো ঐ সময়ের ঘটনা যখন তিনি সেই সময়কাল পূর্ণ করেছিলেন যা তার মধ্যে তার শ্বশুর (হযরত শুআইব (আঃ) এর মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। তিনি তার পরিবারবর্গকে সঙ্গে নিয়ে দশ বছরেরও বেশী সময়ের পরে নিজের দেশ মিসর অভিমুখে রওয়ানা হয়েছিলেন। শীতের রাত্রি ছিল এবং তাঁরা পথও ভুলে গিয়েছিলেন। তারা পাহাড়ের ঘাটির মাঝে ছিলেন। অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল। আকাশে মেঘও ছিল। তিনি চকমকি পাথরের দ্বারা আগুন বের করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই আগুন বের হলো না। তিনি এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করলেন। ডানদিকের পাহাড়ের উপর তিনি কিছু আগুন দেখতে পেলেন। তখন তিনি তার স্ত্রীকে বললেনঃ “আমি যাচ্ছি এবং আগুনের কিছু অঙ্গার নিয়ে আসছি, যাতে তুমি আগুন পোহাতে পার এবং কিছু আলোরও কাজ দিতে পারে। আর এরও সম্ভাবনা আছে যে, সেখানে কেনি মানুষকে পাওয়া যাবে যে আমাদেরকে পথ বাতলিয়ে দেবে। মোট কথা, পথের ঠিকানা অথবা আগুন পাওয়া যাবেই।"
مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
📘 Please check ayah 20:101 for complete tafsir.
خَالِدِينَ فِيهِ ۖ وَسَاءَ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلًا
📘 ৯৯-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) বলছেনঃ যেমন আমি মূসার (আঃ) ঘটনাকে প্রকৃতরূপে তোমার সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি, তেমনিভাবে আরো অনেক অতীতের ঘটনা তোমার সামনে আমি হুবহু বর্ণনা করেছি। আমি তোমাকে মহান কুরআন দান করেছি। ইতিপূর্বে কোন বীকে এর চেয়ে বেশী পূর্ণতা প্রাপ্ত, বেশী অর্থবহ এবং বেশী বরকতময় কিতাব প্রদান করা হয় নাই। এই কুরআন কারীমই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী উন্নতমানের কিতাব। এর মধ্যে অতীতের ঘটনাবলী, ভবিষ্যতের কার্যাবলী এবং প্রতিটি কাজের পন্থা বর্ণিত হয়েছে। যারা এটাকে মানে না, এর থেকে বিমুখ হয়, এর আহকাম হতে পালিয়ে যায় এবং এটাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতেই হিদায়াত অনুসন্ধান করে সে পথভ্রষ্ট এবং জাহান্নামী। কিয়ামতের দিন সে নিজের বোঝা নিজেই বহন করবে এবং ওটা হবে খুবই মন্দ বোঝা। যে এর সাথে কুফরী করবে সে জাহান্নামে যাবে। কিতাবী হোক বা গায়ের কিতাবী হোক, আরবী হোক বা আজমী হোক যেই এটাকে অস্বীকার করবে সেই জাহান্নামী হবে। যেমন ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করছি এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছবে।" (৬:১৯) সুতরাং এর অনুসরণকারী হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং এর বিরোধিতাকারী পথভ্রষ্ট ও হতভাগ্য। দুনিয়াতেও সে ধ্বংস হলো এবং আখেরাতেও হবে সে জাহান্নামী। ঐ আযাব থেকে সে কখনো মুক্তি ও পরিত্রাণ ও পাবে না এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হবে না। সেই দিন তারা যে বোঝা বহন করবে তা হবে খুবই মন্দ বোঝা।
يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ ۚ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا
📘 Please check ayah 20:104 for complete tafsir.
يَتَخَافَتُونَ بَيْنَهُمْ إِنْ لَبِثْتُمْ إِلَّا عَشْرًا
📘 Please check ayah 20:104 for complete tafsir.
نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ إِذْ يَقُولُ أَمْثَلُهُمْ طَرِيقَةً إِنْ لَبِثْتُمْ إِلَّا يَوْمًا
📘 ১০২-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর:
হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয় সূর’ বা শিংগা কি জিনিস?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ওটা এমন একটা শিংগা যাতে ফুৎকার দেয়া হবে। ওর বেড় হবে আসমান ও যমীনের সমান। হযরত ইসরাফীল (আঃ) তাতে ফু দিবেন।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে অেিছ যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কিরূপে শান্তি লাভ করবো? অথচ শিংগায় ফুৎকারদানকারী শিংগায় মুখ লাগিয়ে কপাল ঝুঁকিয়ে রয়েছেন এবং আল্লাহর হুকুমের শুধু অপেক্ষায় রয়েছেন। জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! তাহলে আমরা পাঠ করবো কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ “তোমরা পড়তে থাকোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মকর্তা, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করেছি।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেই দিন আমি অপরাধীদের দৃষ্টিহীন অব স্থায় সমবেত করবো। তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবেঃ আমরা দুনিয়ায় মাত্র দশ দিন অর্থাৎ অতি অল্প সময় অবস্থান করেছি। আমি তাদের ঐ গোপন কথাবার্তাও সম্যক অবগত আছি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলবেঃ আমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলাম। মোট কথা, কাফিরদের কাছে দুনিয়ার জীবন অতি অল্প সময় বলে মনে হবে। ঐ সময় তারা শপথ করে করে বলবেঃ “আমরা তো দুনিয়ায় শুধু এক ঘন্টাকাল কাটিয়েছি। অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার মত বয়স প্রদান করেছিলাম না? তোমাদের কাছে তো ভয় প্রদর্শকও এসেছিল?” (৩৫:৩৭)আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমরা যমীনে কতকাল অব স্থান করেছিলে? (উত্তরে) তারা বলবেঃ “একদিন বা একদিনের কিছু অংশ (আমরা অবস্থান করেছিলাম। আসলে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া এরূপই বটে। কিন্তু তোমরা যদি এটা জানতে বা বুঝতে তবে এই অস্থায়ী জগতকে ঐ স্থায়ী জগতের উপর কখনো প্রাধান্য দিতে না, বরং এই দুনিয়াতেই তোমরা আখেরাতের পূজি সংগ্রহ করে নিতে।
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا
📘 Please check ayah 20:108 for complete tafsir.
فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا
📘 Please check ayah 20:108 for complete tafsir.
لَا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا
📘 Please check ayah 20:108 for complete tafsir.
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ ۖ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَٰنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
📘 ১০৫-১০৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ তোমাকে জনগণ জিজ্ঞেস করছে যে, কিয়ামতের দিন এই পাহাড়গুলি বাকী থাকবে কি না? তুমি উত্তরে তাদেরকে বলে দাও আমার প্রতিপালক ওগুলিকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। ওগুলি চলছে, ফিরছে বলে মনে হবে এবং শেষে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি ওকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে। (আরবী) শব্দের অর্থ হলো মসৃণ সমতল ময়দান এবং (আরবী) শব্দকে ওরই গুরত্বের জন্যে আনা হয়েছে। আবার (আরবী) এর অর্থ বর্ধন হীন যমীনও হয়। কিন্তু প্রথম অর্থটি উৎকৃষ্টতর। আর দ্বিতীয় অর্থটিও অপরিহার্য। না যমীনে কোন উপত্যকা থাকবে, না কোন টিলা থাকবে, না থাকবে, উঁচু-নীচু। এই ভীতিপ্রদ অবস্থার সাথে সাথেই এক শব্দকারী শব্দ করবে। সমস্ত সৃষ্টজীব ঐ শব্দের পিছনে ছুটবে। দৌড়তে দৌড়তে হুকুম অনুযায়ী একদিকে চলতে থাকবে। এদিক ওদিকও হবে না এবং বক্র পথেও চলবে না। হায়! দুনিয়ায় যদি এই ব্যবহার ও চলন থাকতো এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা হতো! কিন্তু সেই দিন এই ব্যবহার ও চালচলন কোন কাজে আসবে না। সেই দিন তো মানুষ আল্লাহ তাআলার হুকুম খুবই মান্যকারী হয়ে যাবে এবং হুকুমের সাথে সাথেই তা পালন করবে হাশরের মাঠ হবে অন্ধকার জায়গা। আকাশকে জড়িয়ে নেয়া হবে। নক্ষত্ররাজি ঝরে ঝরে পড়ে যাবে এবং সুর্য চন্দ্র নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আওয়াজ দাতার আওয়াজেই সব দাড়িয়ে যাবে। ঐ একই ময়দানে সমস্ত সৃষ্টজীব একত্রিত হবে। সেইদিন দয়াময় আল্লাহ তাআলার সামনে সকল শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। আল্লাহ তাআলার অনুমতি ক্রমে কোন কোন সময় কেউ কেউ কিছু বলবেও বটে। কিন্তু বলবে অত্যন্ত আদবের সাথে এবং চলবেও অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেই দিন তারা আমার সামনে হাজির হবে সেই দিন কারো। ক্ষমতা ও সাহস হবে না যে, আমার অনুমতি ছাড়া মুখ খুলতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য এবং কেউ হবে ভাগ্যবান।” (১১:১০৫)
يَوْمَئِذٍ لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا
📘 Please check ayah 20:112 for complete tafsir.
فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:16 for complete tafsir.
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
📘 Please check ayah 20:112 for complete tafsir.
۞ وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا
📘 Please check ayah 20:112 for complete tafsir.
وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا
📘 ১০৯-১১২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন কারো ক্ষমতা হবে না যে, সে অন্যের জন্যে সুপারিশ করে। তবে যাকে তিনি অনুমতি দিবেন সে করতে পারে। আকাশের ফেরেশতা অথবা কোন বুযুর্গ ব্যক্তিও আল্লাহ তাআলার অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে না। সবাই সেদিন তীত সন্ত্রস্ত থাকবে। অনুমতি ছাড়া কারো সুপারিশ চলবে না। ফেরেশতামণ্ডলী ও রুহ (জিবরাঈল (আঃ) সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন। আল্লাহ তাআলার অনুমতি ছাড়া কেউ যুবান খুলতে পারবে না স্বয়ং সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মহাম্মদ (সঃ) আরশের নীচে আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন। খুব বেশী তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করবেন। দীর্ঘক্ষণ তিনি সিজদায় পড়ে থাকবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! মাথা উঠাও, কথা বল, তোমার কথা শোনা হবে। শাফাআত কর, তোমার শাফাআত কবুল করা হবে। তারপর সীমা নির্ধারণ করা হবে। তিনি সুপারিশ করে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আবার তিনি ফিরে আসবেন এবং এটাই হবে। চার বার এরূপই ঘটবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং সমস্ত নবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।হাদীসে আরো আছে যে, আল্লাহ তাআলা হুকুম করবেনঃ “ঐ লোকদেরকেও জাহান্নাম হতে বের করে আনো যাদের অন্তরে এক দানা পরিমাণও ঈমান আছে।” তখন তার (ফেরেশতারা) বহু সংখ্যক লোককেজাহান্নাম হতে বের করে আনবেন। আবার তিনি বলবেনঃ “যাদের অন্তরে অর্ধদানা পরিমাণও ঈমান আছে তাদেরকেও বের করে আনো। যাদের অন্তরে অনুপরিমাণও ঈমান আছে তাদেরকেও বের করে নিয়ে এসো। যাদের অন্তরে এর চেয়েও কম ঈমান রয়েছে তাদেরকেও জাহান্নাম হতে বের করে নিয়ে এসো। এর চেয়েও কম ঈমানদারদের বের করো।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনি সমস্ত সৃষ্টজীবকে নিজের জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন, কিন্তু সৃষ্টজীব তাদের জ্ঞান দ্বারা তাকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না।" (২:২৫৫)তিনি বলেনঃ তার নিকট সবাই হবে অধোবদন এবং সেই ব্যর্থ হবে যে জুলুমের ভার বহন করবে। কেননা, তিনি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পবিত্র ও মুক্ত। তিনি চিরঞ্জীব ও চির বিদ্যমান। তিনি ঘুমও যান না এবং তাঁকে তন্দ্রাও আচ্ছন্ন করে না। তিনি নিজে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন এবং কৌশল ও ক্ষমতা বলে সবকিছুকেই প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। সবকিছুর দেখা শোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ তিনিই করে থাকেন। সবারই উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁরই মুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহর মর্জি বা ইচ্ছা ছাড়া কেউ সৃষ্টও হতে পারে না এবং বাকীও থাকতে পারে না। এখানে যে জুলুম করবে সেখানে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা, সেইদিন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকদারকে তার হক আদায় করে দিবেন। এমন কি শিং বিহীন বকরীকেও তিনি শিং বিশিষ্ট বকরী হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করাবেন।হাদীসে রয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ! আজ জালিমের জুলুম আমাকে অতিক্রম করতে পারবে না।” সহীহ্ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা জুলুম থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকাররূপে প্রকাশ পাবে। আর সেইদিন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঐ ব্যক্তি যে মুশরিক অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। কেননা, শিক হচ্ছে বড় জুলুম।"। জালিমদের পরিণাম ফল বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদানের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যারা মু'মিন অবস্থায় সকার্যাবলী সম্পাদন করে তাদের অবিচারেরও কোন আশংকা নেই এবং ক্ষতিরও কোন ভয় নেই।
وَكَذَٰلِكَ أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
📘 Please check ayah 20:114 for complete tafsir.
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۗ وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يُقْضَىٰ إِلَيْكَ وَحْيُهُ ۖ وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
📘 ১১৩-১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন অবশ্যই আসবে এবং সেইদিন ভাল ও মন্দ কাজের প্রতিফল অবশ্যই পেতে হবে, তাই আমি লোকদেরকে সতর্ক করার জন্যে সুসংবাদ দানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী আমার পবিত্র কালাম পরিষ্কার আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ বুঝতে পারে। আমি তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয় প্রদর্শন করেছি যাতে তারা পাপ থেকে বাঁচতে পারে, কল্যাণ লাভের কাজে লেগে যায়, তাদের অন্তরে চিন্তা ভাবনা ও উপদেশ এসে যায়, তারা আনুগত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং ভাল কাজের চেষ্টায় লেগে পড়ে। সুতরাং মহান ও পবিত্র ঐ আল্লাহ যিনি প্রকৃত অধিপতি। এবং ইহজগত ও পরজগতের একচ্ছত্র মালিক। তিনি স্বয়ং সত্য, তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য, তঁর ভয় প্রদর্শন সত্য, তাঁর রাসূলগণ সত্য এবং তার জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য। তাঁর ফরমান এবং তার পক্ষ হতে যা কিছু হয় সবই ন্যায় ও সত্য। তাঁর সত্ত্বা এর থেকে পবিত্র যে, তিনি পূর্বে সতর্ক না করেই কাউকেও শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি সবারই ওজরের সুযোগ কেটে দেন এবং কারো সন্দেহ তিনি বাকী রাখেন না। তিনি সত্য উদঘাটিত করেন। অতঃপর তিনি মুশরিকদেরকে ন্যায়ের সাথে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতি আমার ওয়াহী সম্পূর্ণ হবার পূর্বে কুরআন পাঠে তুমি ত্বরা করে না। প্রথমে ভাল রূপে শুনে নাও। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ত করার জন্যে তুমি তোমার জিহবা ওর সাথে সঞ্চালন করো না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।”হাদীসে আছে যে, প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈলের (আঃ) সাথে সাথেই পড়তেন। তাতে তার খুব কষ্ট হতো। যখন উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তার থেকে ঐ কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং তিনি প্রশান্তি লাভ করেন যে, আল্লাহ যতগুলিই ওয়াহী নাযিল করুন না কেন তার মুখস্থ। হবেই। একটা অক্ষরও তিনি ভুলবেন না। কেননা, আল্লাহ ওয়াদা করেছেন এবং তার ওয়াদা সত্য। এখানেও একথাই বলা হচ্ছে যে, তিনি যেন ফেরেশতার কুরআন পাঠ শ্রবণ করেন এবং তাঁর পাঠ শেষে যেন তিনি পাঠ শুরু করেন। আর তাঁর কর্তব্য হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। সুতরাং তিনি দুআ করেন এবং আল্লাহ তাআলা তার দুআ ককূল করেন। তাই, মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর ইলম বাড়তেই থাকে।হাদীসে আছে যে, বরাবরই পর্যায়ক্রমে ওয়াহী আসতে থাকে, এমনকি যেদিন তিনি দুনিয়া হতে চিরবিদায় গ্রহণ করেন সেদিনও বহু সংখ্যক ওয়াহী অবতীর্ণ হয়।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি যা আমাকে শিখিয়েছেন তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমার উপকার করে এবং আমার ইলম বৃদ্ধি করুন! আর সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। জামে তিরমিযীতেও এ হাদীসটি রয়েছে। তাতে নিম্নের কথাটুকু বেশী রয়েছে; (আরবী) অর্থাৎ “আমি জাহান্নামবাসী অবস্থা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি)
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَىٰ آدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
فَقُلْنَا يَا آدَمُ إِنَّ هَٰذَا عَدُوٌّ لَكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
📘 Please check ayah 20:16 for complete tafsir.
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ ۚ وَعَصَىٰ آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَىٰ
📘 Please check ayah 20:122 for complete tafsir.
ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَىٰ
📘 ১১৫-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবুন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ইনসান’কে (মানুষকে) ইনসান বলার কারণ এই যে, তাকে সর্বপ্রথম যে হুকুম দেয়া হয়েছিল তা সে ভুলে গিয়েছিল। হযরত মুজাহিদ (রঃ) ও হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, ঐ হুকুম হযরত আদম (আঃ) ভুলে গিয়েছিলেন। এরপর হযরত আদমের (আঃ) মর্যাদার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। সূরায়ে বাকারা সূরায়ে আরাফ, সূরায়ে হিজর এবং সূরায়ে কাফে শয়তানের (হযরত আদমকে আঃ) সিজদা না করার ঘটনার পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। সূরায়ে (আরবী) এও এর বর্ণনা আসবে ইনশা আল্লাহ। এ সব সূরায় হযরত আদমের (আঃ) জন্মবৃত্তান্ত, অতঃপর তার আভিজাত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশার্থে ফেরেশতাদেরকে তাঁর প্রতি সিজদাবনত। হওয়ার নির্দেশ দান এবং ইবলীসের গোপন শত্রুতা প্রকাশ ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। সে অহংকার করতঃ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে। ঐ সময় হযরত আদমকে বুঝানো হয়ঃ “দেখো, এই শয়তান তোমার ও তোমার স্ত্রী। হযরত হাওয়ার (আঃ) শত্রু। সে যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, অন্যথায় তোমরা বঞ্চিত হয়ে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত হবে এবং কঠিন বিপদে পড়ে যাবে। তোমাদেরকে জীবিকা অন্বেষণে মাথা ঘামাতে হবে। এখানে তো তোমরা বিনা পরিশ্রমে ও বিনা কষ্টে জীবিকা প্রাপ্ত হচ্ছে। এখানে যে তোমরা ক্ষুধার্ত থাকবে এটা অসদ্ধ এবং উলঙ্গ থাকবে এটাও অসম্ভ। এই ভিতরের ও বাইরের কষ্ট হতে এখানে বেঁচে আছ। আর এখানে না তোমরা আভ্যন্তরীণ ভাবে পিপাসার তীব্রতায় শাস্তি পাচ্ছ, না বাহ্যিকভাবে রৌদ্রের প্রখরতায় শাস্তি পাচ্ছ। যদি শয়তান তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলে তবে তোমাদের থেকে এই আরাম ও শান্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং তোমরা বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদে ও কষ্টের সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” কিন্তু শেষে তারা শয়তানের ফাদে পড়েই যান। সে তাদেরকে শপথ করে বলেঃ “আমি তোমাদের শুভাকাংখী।” পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “তোমরা জান্নাতের সব গাছেরই ফল খেতে থাকো। কিন্তু সাবধান! এই গাছটির নিকটেও যেয়ো না। কিন্তু শয়তান তাঁদেরকে মিষ্টি কথায় এমন ভাবে ভুলিয়ে দেয় যে, শেষ পর্যন্ত তারা ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। সে প্রতারণা করে তাদেরকে বলেঃ “যে এই গাছের ফল খেয়ে নেয় সেই এখানেই চিরকাল অবস্থান করে।”সত্যবাদী ও সত্যায়িত রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় আরোহী একশ’ বছর চলতে থাকবে, তথাপি তা শেষ হবে না। ঐ বৃক্ষের নাম হলো ‘শাজারাতুল খুলদ।' (এই হাদীস আবুদ দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)তারা দুজন ঐ নিষিদ্ধ গাছটির ফল খাওয়া মাত্রই তাদের পরিধেয় পোশাক খসে পড়ে ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ উলঙ্গ হয়ে যায় এবং লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে। হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত আদমকে (অঃ) গোধূম বর্ণ, দীর্ঘ দেহ এবং ঘন চুল বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছিলেন। দেহ খেজুরের গাছের সমান দীর্ঘ ছিল। নিষিদ্ধ গাছের ফল যেমনই খেয়েছেন তেমনই পরিধেয় পোশাক ছিনিয়ে নিয়েছেন। লজ্জাস্থানের দিকে নযর পড়া মাত্রই শরমে এদিক ওদিক লুকাতে থাকেন। একটি গাছে চুল জড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি চুল ছুটাবার চেষ্টা করলেন আল্লাহ তাআলা ডাক দিয়ে বলেনঃ “হে আদম (আঃ)! আমা হতে পালিয়ে যাচ্ছ?” আল্লাহর কালাম শুনে অত্যন্ত আদবের সাথে আরজ করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! লজ্জায় আমি মাথা লুকাবার চেষ্টা করছি। আচ্ছা বলুন তো, তাওবা করার পরেওকি জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারবো?” উত্তরে বলা হয়ঃ “হা।” “অতঃপর আদম (আঃ) তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বানী প্রাপ্ত হলেন আল্লাহ তাআলার এই উক্তির ভাবার্থ এটাই। (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ রিওয়াইয়াতটি মুনকাতা বা ছেদ কাটা। এর মারফু হওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা হয়েছে)যখন হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) হতে পোশাক ছিনিয়ে নেয়া হয় তখন তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদের দেহকে আবৃত করতে থাকেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ডুমুর জাতীয় গাছের পাতা দ্বারা তারা নিজেদের লজ্জা স্থান আবৃত করেন। আল্লাহ তাআলার নাফরমানীর কারণে তারা সঠিক পথ হতে সরে পড়েন। কিন্তু অবশেষে মহান আল্লাহ তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন। তিনি তাদের তওবা কবুল করে নেন এবং নিজের বিশিষ্ট বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত আদমের (আঃ) মধ্যে পরস্পর বাক্যালাপ হয়। হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আপনি তো আপনার পাপের কারণে সমস্ত মানুষকে জান্নাত হতে বের করেছেন এবং তাদেরকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন?” উত্তরে হযরত আদম (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় রিসালাত ও কালাম দ্বারা বিশিষ্ট মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আমাকে এমন কাজের সাথে দোষারোপ করছেন যা আল্লাহ তাআলা আমার জন্মের পূর্বেই আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন?" অতএব, হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসার (আঃ) অভিযোগ খণ্ডন করে বিজয়ী হলেন। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা (আঃ) হযরত আদমকে (আঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। আর আপনার সামনে তিনি তার ফেরেশতামণ্ডলীকে সিজদা করিয়েছেন। অতঃপর তিনি আপনাকে জান্নাতে। স্থান দিয়েছিলেন। তারপর আপনার পাপের কারণে মানব জাতিকে তিনি যমীনে নামিয়ে দিয়েছেন?" জবাবে হযরত আদম (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় রিসালাত ও কালামের মাধ্যমে মনোনীত করেছেন। আর আপনাকে তিনি ঐ ফলক দান করেছেন যাতে সব জিনিসেরই বর্ণনা রয়েছে এবং তিনি আপনার সাথে গোপনীয়ভাবে কথা বলে আপনাকে নিজের নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা বলুন তো, আল্লাহ তাআলা আমার জন্মের কতদিন পূর্বে তাওরাত লিখেছিলেন?" উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ চল্লিশ বছর পূর্বে।” তখন হযরত আদম (আঃ) তাকে প্রশ্ন করেনঃ “আদম (আঃ) তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করলো, ফলে সে ভ্রমে পতিত হলো একথা কি আপনি তাওরাতে লিপিবদ্ধ পেয়েছেন?” জবাবে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হা হযরত আদম (আঃ) তখন হযরত মূসাকে (আঃ) বলেনঃ “তাহলে আপনি কেন আমাকে এমন কাজের জন্যে দোষারোপ করছেন যা আল্লাহ তাআলা আমার জন্মেরও চল্লিশ বছর পূর্বে আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছিলেন?” সুতরাং এই বিতর্কে হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসার (আঃ)। উপর বিজীয় হন।
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:126 for complete tafsir.
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
📘 Please check ayah 20:126 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا
📘 Please check ayah 20:126 for complete tafsir.
قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا ۖ وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَىٰ
📘 ১২৩-১২৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআ'লা হযরত আদম (আঃ), হযরত হাওয়া (আঃ) এবং ইবলীসকে বলেনঃ “তোমরা সবাই জান্নাত হতে বেরিয়ে যাও।' সুরায়ে বাকারায় এর পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ তোমরা পরম্পর একে অপরের শত্রু। অর্থাৎ আদম সন্তনি ও ইবলীস সন্তান পরস্পর পরস্পরের শত্রু। তোমাদের কাছে আমার রাসূল ও কিতাব আসবে। যারা আমার প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করবে তারা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হবে না এবং প্রকলেও অপমানিত হবে না। আর যারা আমার হুকুমের বিরোধিতা করবে, আমার রাসূলদের প্রদর্শিত পথ পরিত্যাগ করবে এবং অন্য পথে চলবে তারা দুনিয়াতে সংকীর্ণ অবস্থায় থাকবে। তারা প্রশান্তি ও স্বচ্ছলতা লাভ করবে না। নিজেদের গুমরাহীর কারণে সংকীর্ণ অবস্থায় কালাতিপাত করবে। যদিও বা হ্যতঃ পানাহার ও পরিধানের ব্যাপারে প্রশস্ততা পরিদৃষ্ট হবে কিন্তু অন্তরে ঈমান ও হিদায়াত না থাকার কারণে সদা সর্বদা সন্দেহ সংশয় এবং সংকীর্ণতা ও স্বল্পতার মধ্যেই জড়িয়ে পড়বে। তারা হবে হতভাগ্য, আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত এবং কল্যাণ শূন্য। কেননা, তাদের মহান আল্লাহর উপর ঈমান নেই, তার প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস নেই, মৃত্যুর পরে তাঁর নিয়ামতের মধ্যে কোন অংশ নেই। আল্লাহর প্রতি তারা খারাপ ধারণা পোষণ করে, তাদের রিক অপবিত্র, আমল তাদের জঘন্য, তাদের কবর হবে সংকীর্ণ ও অন্ধকার। কবরে তাদেরকে এমন চাপ দেয়া হবে যে, তাদের ডান দিকের পাজর বাম দিকে এবং বাম দিকের পাজর ডান দিকে হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনের কবর হবে শ্যামল-সবুজ-বাগীচা। ওটা হবে সত্তর হাত প্রশস্ত। মনে হবে যেন ওর মধ্যে চন্দ্র রয়েছে। খুবই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, যেন চৌদ্দ তারিখের চাদ কিরণ দিচ্ছে। (আরবী) এই আয়াতটির শানে নুযূল তোমরা জান কি? এর দ্বারা কাফিরের তার কবরের মধ্যে শাস্তি হওয়া বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর শপথ! তার কবরে নিরানব্বইটি অজগর সাপ মোতায়েন করা হবে, যাদের প্রত্যেকের হবে সাতটি করে মাথা, যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে দংশন করতে থাকবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। কিন্তু এর মারফু হওয়া স্বীকৃত নয়। একটি উত্তম সনদেও এটা বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কবরের আযাবকেই বুঝানো হয়েছে) মহান আল্লাহ বলেন যে, তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠানো হবে। জা হান্নাম ছাড়া অন্য কিছু তার ন্যরে পড়বে না। অন্ধ করেই তাকে হাশরের মাঠে নিয়ে আসা হবে এবং জাহান্নামের সামনে দাড় করিয়ে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে মুখের ভরে অন্ধ মূক ও বধির করে হাশরের মাঠে একত্রিত করবো এবং তাদের আবাস স্থল হবে জাহান্নাম।” (১৭:৯৭)। সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উখিত করলেন? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মন? উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ ‘এইরূপই আমার আয়াত সমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেইভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। যেমন আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আজ তাদেরকে তেমনিভাবেই ভুলে যাবে যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল।”(৭:৫১) সুতরাংএটা তাদের কৃতকর্মেরই সমান প্রতিফল। যে ব্যক্তি কুরআন কারীমের উপর বিশ্বাস রাখে এবং ওর হুকুম অনুযায়ী আমলও করে, সে যদি ওর শব্দ ভুলে যায় তবে সে এই প্রতিশ্রুত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তার জন্যে অন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন হযরত সা'দ ইবনু উবাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআন পড়লো অতঃপর তা ভুলে গেল সে কুষ্ঠরোগী রূপে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ ۚ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَىٰ
📘 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যারা আল্লাহর সীমারেখার পরওয়া করে না এবং তার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপাদন করে তাকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি। অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতের আযাবে জড়িয়ে থাকি। বিশেষ করে আখেরাতের শাস্তি তো খুবই কঠিন এবং সেখানে এমন কেউ হবে না যে তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে। দুনিয়ার শাস্তি কঠোরতা ও দীর্ঘ মিয়াদী হিসেবে আখেরাতের শাস্তির সাথে তুলনীয় হতে পারে না। আখেরাতের শাস্তি চিরস্থায়ী ও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। পরস্পর পরস্পরের উপর লা’নতকারীদের বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আখেরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার শাস্তি খুবই হালকা ও অতি নগন্য।
أَفَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِأُولِي النُّهَىٰ
📘 Please check ayah 20:130 for complete tafsir.
وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَأَجَلٌ مُسَمًّى
📘 Please check ayah 20:130 for complete tafsir.
وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ
📘 Please check ayah 20:16 for complete tafsir.
فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ
📘 ১২৮-১৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যারা তোমাকে মানে না এবং তোমার শরীয়তকে অস্বীকার করে তারা কি এর দ্বারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে না যে, তাদের পূর্বে যারা এইরূপ আচরণ করেছিল, আমি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম? আজ তাদের মধ্যে চোখ দিয়ে দেখার মত, শ্বাস গ্রহণ করার মত এবং মুখে কিছু বলার মত কেউ অবশিষ্ট আছে কি? তাদের সুউচ্চ, সুদৃশ্য এবং আঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ গুলির ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে মাত্র। সেখান দিয়ে তো এরা চলা ফেরা করে থাকে। তাদের যদি জ্ঞান বুদ্ধি থাকতো তবে এর দ্বারা তারা বহু কিছু শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতো। তারা কি যমীনে ঘোরাফেরা করে আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলীর উপর চিন্তা গবেষণা করে না? কাফিরদের এ সব যন্ত্রণাদায়ক কাহিনী শুনে কি তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না? তাদের বস্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখেও কি তাদের চক্ষু খুলে না? এরা চোখের অন্ধ নয়, বরং অন্তরের অন্ধ। সূরায়ে আলিফ-লাম-মীম সিজদায়ও উপরোল্লিখিত আয়াতের মত আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের উপর একটা কাল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই কাল নির্ধারিত কাল না থাকলে তাদের প্রতি আশু শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়তো। ঐ নির্ধারিত কাল এসে গেলেই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তারা যে তোমাকে মিথ্যা প্রতিপাদন করছে তার উপর ধৈর্য ধারণ কর। জেনে রেখো যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে নয়।‘সূর্যোদয়ের পূর্বে একথা দ্বারা ফজরের নামায উদ্দেশ্য এবং সুর্যাস্তের পূর্বে একথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আসরের নামায।হযরত জারীর ইবনু আবদিল্লাহ বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট বসেছিলাম। তিনি চৌদ্দ তারিখের চাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “তোমরা সত্বরই তোমাদের প্রতিপালককে এভাবেই দেখতে পাবে যেভাবে এই চাদকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দেখতে পাচ্ছ। সুতরাং সম্ভম্ব হলে তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বের ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাযের হিফাযত করো।” অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।” (এহাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আম্মারা ইবনু রাবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “এমন কেউই কখনো জাহান্নামে যাবে না যে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামায আদায় করলো।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতী হলো ঐ ব্যক্তি যে দুই হাজার বছরের রাস্তা পর্যন্ত নিজের অধিকারভুক্ত জায়গায়ই দেখতে পাবে। সবচেয়ে দুরবর্তী জিনিস তার জন্যে এমনই হবে যেমন হবে সবচেয়ে নিকটবর্তী জিনিস। আর সবচেয়ে উচ্চমানের জান্নাতী তো প্রতি দিন দু'বার করে আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভ করবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে ও সুনান গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে)মহান আল্লাহ বলেনঃ এবং রাত্রিকালে (তোমার প্রতিপালকের) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। অর্থাৎ রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায পড়। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাগরিব ও এশার নামায। আর দিনের প্রান্ত সমূহেও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর, যাতে তার পুরস্কার ও প্রতিদান পেয়ে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। যেমন আল্লাহ তাআলা এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অচিরেই তোমার প্রতিপালক তোমাকে অনুগ্রহ দান করবেন, আর তুমি সন্তুষ্ট হবে।” (৯৩:৫) সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “হে জান্নাতবাসীরা!” তারা উত্তরে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাজির আছি।" তখন তিনি বলবেনঃ “তোমরা খুশী হয়েছে কি?” তারা জবাব দিবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা খুশী হবো না? আপনি তো আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন যা আপনার সৃষ্টজীবের আর কাউকেও দেন নি!” আল্লাহ তাআলা তখন বলবেনঃ “এগুলি অপেক্ষাও উত্তম জিনিস আমি তোমাদেরকে প্রদান করবো।" তারা উত্তরে। বলবেঃ “এর চেয়েও উত্তম জিনিস আর কি আছে?” আল্লাহ তাআলা জবাব দিবেনঃ “আমি তোমাদেরকে আমার সন্তুষ্টি প্রদান করছি। এরপরে আর কোনও দিন আমি তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবে না।” অন্য হাদীসে আছে যে, বলা হবেঃ “হে জান্নাতীরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা তিনি পূর্ণ করতে চান। তারা বলবেঃ “আল্লাহ তাআলার সব ওয়াদা তো পূর্ণ হয়েই গেছে। আমাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়েছে, আমাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হয়েছে। সুতরাং আর কিছুই তো বাকী নেই।” তৎক্ষণাৎ পর্দা উঠে যাবে এবং তারা। মহামহিমান্বিত আল্লাহকে দেখতে পাবে। আল্লাহর শপথ! এর চেয়ে উত্তম নিয়ামত আর কিছুই হবে না এটাই প্রচুর।
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:132 for complete tafsir.
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ
📘 ১৩১-১৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি কাফিরদের পার্থিব সৌন্দর্য ও সুখ ভোগের প্রতি আফসোস পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখো না। এটা তো অতি অল্প দিনের সুখ ভোগ মাত্র। তাদের রীক্ষার জন্যেই এ সব তাদেরকে দেয়া হয়েছে। আমি দেখতে চাই যে, তারা এ সব পেয়ে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে কি অকৃতজ্ঞ হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কৃতজ্ঞ বান্দাদের সংখ্যা খুবই কম। তাদের ধনীদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণে উত্তম নিয়ামত তো তোমাকে দান করা হয়েছে। আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দান করেছি যা বারবার পঠিত হয় (অর্থাৎ সূরায়ে ফাতেহা)। আর তোমাকে মর্যাদা সম্পন্ন কুরআন দান করা হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার দৃষ্টি ঐ কাফিরদের পার্থিব সৌন্দর্য ও উপভোগের উপকরণের প্রতি নিক্ষেপ করো না। অনুরূপভাবে হে নবী (সঃ) ! তোমার জন্যে তোমার প্রতিপালকের নিকট যে আতিথ্যের ব্যবস্থা রয়েছে তার কোন তুলনা নেই এবং এটা বর্ণনাতীত। তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্ত্রীদের সাথে স হবাস করা হতে বিরত থাকার শপথ করেছিলেন। তিনি একটি নির্জন কক্ষে অবস্থান করছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) সেখানে প্রবেশ করে দেখেন যে, তিনি একটি খেজুরের পাতার চাটাই এর উপর শুয়ে রয়েছেন। চামড়ার একটা টুকরা একদিকে পড়ে রয়েছে এবং কয়েকটি চামড়ার মশক লটকানো আছে। আসবাবপত্র বিহীন ঘরের এ অবস্থা দেখে তার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! (রোম সম্রাট) কায়সার এবং (পারস্যের বাদশাহ) কিসরা কত সুখে শান্তিতে ও আরাম আয়েশে জীবন যাপন করছে, অথচ আপনি সৃষ্টজীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন হওয়া সত্ত্বেও আপনার এই অবস্থা তাঁর একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে খাত্তাবের পুত্র! এখনো তো তুমি সন্দেহের মধ্যেই পড়ে রয়েছে! তারা এমন সম্প্রদায় যে, তাদের পার্থিব জীবনেই তাদেরকে তাড়তািড়ি সুখ ভোগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। (পরকালে তাদের কোনই অংশ নেই)।”। সুতরাং জানা গেল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ক্ষমতা ও সামর্থ থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ার প্রতি খুবই অনাসক্ত ছিলেন। যা কিছু হাতে আসতো তা-ই আল্লাহর ওয়াস্তে একে একে দান করে দিতেন এবং নিজের জন্যে এক পয়সাও রাখতেন না।হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ব্যাপারে ঐ সময়কেই সবচেয়ে বেশী ভয় করি যখন দুনিয়া তার সমস্ত সৌন্দর্যও আসবাবপত্র তোমাদের পদতলে নিক্ষেপ করবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “দুনিয়ার সৌন্দর্য ও আসবাবপত্রের অর্থ কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “যমীনের বরকত। (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে) মোট কথা, কাফিরদের পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্যেই দেয়া হয়।মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও যাতে তারা আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে পারে। নিজেও ওর উপর অবিচলিত থাকো। নিজেকে এবং নিজের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম হতে রক্ষা কর।হযরত উমার ফারূকের (রাঃ) অভ্যাস ছিল এই যে, রাত্রে যখন তিনি তাহাজ্জদের নামাযের জন্যে উঠতেন তখন তাঁর পরিবারবর্গকেও জাগাতেন এবং এই আয়াতটি পাঠ করতেন। আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি তোমার কাছে কোন জীবনোপকরণ চাই না। তুমি নামাযের পাবন্দী কর, আল্লাহ তোমাকে এমন জায়গা হতে রিযক দিবেন যে, তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা খোদাভীরুদেরকে মুক্তিদান করে থাকেন এবং তাদেরকে কল্পনাতীত জায়গা হতে জীবিকা প্রদান করেন।সমস্ত দানব ও মানবকে শুধুমাত্র ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। রিযুকদাতা ও ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমার কাছে রিযক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযুক দান করে থাকি।বর্ণিত আছে যে, হযরত হিশামের (রঃ) পিতা যখন আমীর-উমারার নিকট গমন করতেন এবং তাদের শান-শওকত দেখতেন তখন তিনি নিজের বাড়ীতে ফিরে এসে এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করতেন এবং বলতেনঃ “হে আমার পরিবারবর্গ! তোমরা নামাযের হিফাযত করো, নামাযের পাবন্দী করো, তা হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর দয়া করবেন।" (এটাও মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত আছে)হযরত সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সংকীর্ণতার সম্মুখীন হতেন তখন তিনি বলতেনঃ “হে আমার পরিবারবর্গ! তোমরা নামায পড় এবং নামাযকে প্রতিষ্ঠিত রাখো।” হযরত সাবিত (রাঃ) আরো বলেনঃ সমস্ত নবীরই এই নীতিই ছিল যে, কোন কারণে তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেই নামায শুরু করে দিতেন। (এটাও মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে ইবনু আদম! তুমি নিজেকে আমার ইবাদতের জন্যে মুক্ত করে দাও, আমি তোমার বক্ষকে ঐশ্বর্য ও অভাবহীনতা দ্বারা পূর্ণ করে দিবো। তোমার দারিদ্র ও অভাব দূর করে দিবো। আর যদি তা না কর তবে আমি তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দ্বারা পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো না।” (এ হাদীসটি জামে তিরমিযী ও সুনানে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত আছে)হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার সমস্ত চিন্তা ফিকির এবং ইচ্ছা ও খেয়াল একমাত্র আখেরাতের জন্যে হয় এবং তাতেই নিমগ্ন থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে রক্ষা করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়ার চিন্তায় নিমগ্ন থাকে, সে যে কোন উপত্যকায় ধ্বংস হয়ে যাক এতে আল্লাহ তাআলার কোন পরওয়া নেই।" (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, দুনিয়ার চিন্তায় নিমগ্ন ব্যক্তির সমস্ত কাজে আল্লাহ তাআলার উদ্বেগ নিক্ষেপ করেন এবং তার দারিদ্র তার চোখের সামনে করে দেন। মানুষ দুনিয়া হতে ঐ পরিমাণই প্রাপ্ত হবে যে পরিমাণ তার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ আছে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে তার কেন্দ্র স্থল বানিয়ে নেবে এবং নিজের নিয়াত শুধু ওটাই রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি কাজে প্রশান্তি আনয়ন করবেন এবং তার অন্তরকে পরিতৃপ্ত করবেন। আর দুনিয়া তার পায়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে।এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যেই। সহীহ হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আজ রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমরা যেন উকবা ইবনু রাফে’র (রাঃ) বাড়ীতে রয়েছি। সেখানে আমাদের সামনে ইবনু তাবের (রাঃ) বাগানের রসাল খেজুর পেশ করা। হয়েছে। আমি এর তা'বীর (ব্যাখ্যা) এই নিয়েছি যে, পরিণামের দিক দিয়ে দুনিয়াতেও আমাদেরই পাল্লা ভারী হবে। উচ্চতাও উন্নতি আমরাই লাভ করবো। আর আমাদের দ্বীন পাক পবিত্র এবং পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ।”
وَقَالُوا لَوْلَا يَأْتِينَا بِآيَةٍ مِنْ رَبِّهِ ۚ أَوَلَمْ تَأْتِهِمْ بَيِّنَةُ مَا فِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ
📘 Please check ayah 20:135 for complete tafsir.
وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُمْ بِعَذَابٍ مِنْ قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَذِلَّ وَنَخْزَىٰ
📘 Please check ayah 20:135 for complete tafsir.
قُلْ كُلٌّ مُتَرَبِّصٌ فَتَرَبَّصُوا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ أَصْحَابُ الصِّرَاطِ السَّوِيِّ وَمَنِ اهْتَدَىٰ
📘 ১৩৩-১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা কাফিরদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তারা বলতোঃ এই নবী (সঃ) তার সত্যবাদিতার প্রমাণ স্বরূপ কোন মু'জিযা দেখাচ্ছেন না কেন? তাদেরকে উত্তরে বলা হচ্ছেঃ এটা হচ্ছে ঐ কুরআন যা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের খবর অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী উম্মীর (সঃ) উপর অবতীর্ণ করেছেন, যিনি লেখা পড়া জানেন না। দেখো, এতে পূর্ববর্তী লোকদের অবস্থা লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং ঠিক ঐ সব কিতাব মুতাবেকই রয়েছে যেগুলি ইতিপূর্বে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছিল। কুরআন কারীম এ সবগুলোর রক্ষক। পূর্ববর্তী কিতাব গুলি হ্রাস বৃদ্ধি হতে পবিত্র নয় বলে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, যেন এটা ওগুলির শুদ্ধ ও অশুদ্ধকে পৃথক করে দেখিয়ে দেয় সূরায়ে আকাবৃতে কাফিরদের এই প্রতিবাদের জবাবে বলা হছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তুমি বলঃ নিদর্শন আল্লাহর ইচ্ছাধীন, আমি তো একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী মাত্র। এটা কি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার নিকট কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়? এতে অবশ্যই মু'মিন সম্প্রদায়ের জন্যে অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে।” (২৯:৫০-৫১)রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক নবীকে (আঃ) এমন মু'জিযা দেয়া। হয় যে, তা দেখে মানুষ তাঁর নুবওয়াতের উপর ঈমান আনয়ন করে। কিন্তু আমাকে (মু'জিযারূপে) ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন দান করেছেন। আমি আশা করি যে, কিয়ামতের দিন সমস্ত নবীর (আঃ) অনুসারী অপেক্ষা আমার অনুসারীদের সংখ্যা বেশী হবে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)এটা স্মরণীয় বিষয় যে, এখানে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সবচেয়ে বড় মুজিযা’র বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এর অর্থ এটা নয় যে, এ ছাড়া তাঁর অন্য কোন মুজিযা ছিলই না। এই পবিত্র কুরআন ছাড়াও তার মাধ্যমে বহু মু'জিযা প্রকাশ পেয়েছে যা গণনা করা যাবে না। কিন্তু ঐ অসংখ্য মুজিযার উপর সবেচেয়ে বড় মু'জিযা হলো এই কুরআন কারীম।মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি আমি এই সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন শেষ নবীকে (সঃ) প্রেরণ করার পূর্বেই এই কাফিরদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দিতাম তবে তারা ওজর পেশ করে বলতোঃ যদি আমাদের কাছে কোন নবী আসতেন এবং আল্লাহ তাআলার কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো তবে অবশ্যই আমরা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করতাম এবং তার অনুসরণ করতাম। আর তাহলে এই লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে বাঁচতে পারতাম।” এ জন্যে আমি তাদের ঐ ওজরও কেটে দিলাম। তাদের কাছে রাসূল (সঃ) পাঠালাম এবং কিতাবও অবতীর্ণ করলাম। কিন্তু তথাপি ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য তারা লাভ করলো না। আমি খুব ভালই জানি যে, একটি কেন, হাজার হাজার নিদর্শন দেখলেও তারা ঈমান আনবেন না! হাঁ,তবে যখন শাস্তি স্বচক্ষে দেখবে তখন ঈমান আনবে। কিন্তু তখন ঈমান আনা বৃথা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এই পবিত্র ও কল্যাণময় কিতাব অবতীর্ণ করেছি, সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ কর ও ভয় কর, তাহলে তোমাদের উপর করুণা বর্ষণ করা হবে।" (৬:১৫৫) তিনি আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, যদি তাদের কাছে। কোন নিদর্শন আসে তবে তারা অবশ্যই ওর উপর ঈমান আনয়ন করবে।” (৬:১০৯) এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ) ! যারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপাদন করছে, তোমার বিরুদ্ধাচরণ করছে এবং তাদের কুফরী ও হঠকারিতার উপর স্থির থাকছে তাদেরকে বলে দাওঃ প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কারা রয়েছে সরল পথে এবং কারা সৎপথ অবলম্বন করেছে।এটা আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তারা শাস্তি অবলোকন করবে তখন কারা পথভ্রষ্ট তা তারা সত্বরই জানতে পারবে।” (২৫:৪২) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আগামী কল্য তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।”(৫৪:২৬)
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
📘 Please check ayah 20:16 for complete tafsir.
إِنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ أَكَادُ أُخْفِيهَا لِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا تَسْعَىٰ
📘 Please check ayah 20:16 for complete tafsir.
فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنْهَا مَنْ لَا يُؤْمِنُ بِهَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَتَرْدَىٰ
📘 ১১-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হযরত মূসা (আঃ) যখন আগুনের কাছে পৌঁছলেন তখন ঐ বরকতময় মাঠের ডান দিকের গাছগুলির নিকট থেকে শব্দ আসলোঃ হে মূসা (আঃ)! আমি তোমার প্রতিপালক। তুমি তোমার পায়ের জুতা খুলে ফেলো। তাকে জুতা খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়ার কারণ হয়তো এই যে, তার ঐ জুতা গাধার চামড়া দ্বারা নির্মিত ছিল, কিংবা হয়তো ঐ স্থানের সম্মানের কারণেই এই নিদের্শ দেয়া হয়েছিল যেমন কাবা গৃহে প্রবেশের সময় লোকেরা জুতা খুলে নেয়। অথবা ঐ বরকতময় জায়গায় পা পড়বে বলেই তাকে এই হুকুম দেয়া হয়। আরো কারণ বর্ণনা করা হয়েছে।ঐ উপত্যকার নাম ছিল তুওয়া। কিংবা ভাবার্থ হচ্ছেঃ তুমি তোমার পা এই যমীনের সাথে মিলিয়ে নাও। অথবা ভাবার্থ হলোঃ এই যমীনকে কয়েকবার পাক করা হয়েছে এবং তাতে বরকত পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে বারবার করা হয়েছে এর পুনরাবৃতি। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তাঁর প্রতিপালক তাঁকে পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় আহবান করেন। (৭৯:১৬)মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাকে (রাসূল রূপে) মনোনীত করেছি। এই সময়ের সমস্ত লোকের উপর আমি তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছি। বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি তোমাকে সমস্ত মানুষের উপর মর্যাদা দান করে তোমার সাথে আমি কথা বলেছি এর কারণ তুমি জান কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! এর কারণ তো আমার জানা নেই। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেনঃ “এর কারণ এই যে, তোমার মত কেউ আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে নাই।” এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যা ওয়াহী প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর। আমিই তোমার মা'বূদ, আমি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। এটাই হলো তোমার প্রথম কর্তব্য যে, তুমি শুধু আমারই ইবাদত করবে। আর কারো কোন প্রকারের ইবাদত করবে না। আমাকে স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। আমাকে স্মরণ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো এটাই। অথবা এটা ভাবার্থ হবেঃ যখন আমাকে স্মরণ হবে তখন নামায কায়েম কর। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের যদি কারো ঘুম এসে যায় বা গাফেল হয়ে পড়ে তবে যখন স্মরণ হয়ে যাবে তখন যেন নামায পড়ে নেয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আমার স্মরণাথে তোমরা নামায কায়েম কর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নামায হতে ঘুমিয়ে পড়ে বা ভুলে যায় সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। তার কাফফারা এটা ছাড়া আর কিছুই নয়।" (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। এক কিরআতে (আরবী) এর পরে (আরবী) শব্দও রয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলার সত্ত্বা হতে কোন কিছু গোপন নেই। সুতরাং অর্থ হবেঃ এর জ্ঞান আমি আমা ছাড়া আর কাউকেও প্রদান করবো না। কাজেই সারা ভূ-পৃষ্ঠে এমন কেউ নেই যার কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানা আছে। এটা এমন একটা বিষয় যে, সম্ভব হলে আমি নিজ হতেও ওটাকে গোপন রাখতাম। কিন্তু আমার কাছে কোন কিছু গোপন থাকা সম্ভব নয়। এটা ফেরেশতাদের হতেও গোপন আছে এবং নবীরাও এটা জানেন না। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ (হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ ছাড়া আসমান ও যমীনবাসীদের কেউই গায়েবের খবর জানে না।" (২৭:৬৫) অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ কিয়ামত) আসমানে ও যমীনে ভারী হয়ে গেছে, ওটা তোমাদের উপর হঠাৎ এসে যাবে।” (৭:১৮৭) অর্থাৎ এর অবগতি কারো নেই। এক কিরআতে (আরবী) রয়েছে। অরফা (রঃ) বলেনঃ “আমাকে হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) এভাবেই পড়িয়েছেন। এর অর্থ হলো (আরবী) অর্থাৎ আমি “ওটাকে প্রকাশ করবো।" সেইদিন প্রত্যেক আমলকারীকে তার আমলের প্রতিদান দেয়া হবে। তা অনুপরিমাণ পুণ্যই হোক অথবা পাপই হোক। ঐদিন প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে।সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে কিয়ামতে বিশ্বাস স্থাপন হতে নিবৃত্ত না করে। যদি সে তোমাকে নিবৃত্ত করতে সক্ষম হয়ে যায় তবে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
وَمَا تِلْكَ بِيَمِينِكَ يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:21 for complete tafsir.
قَالَ هِيَ عَصَايَ أَتَوَكَّأُ عَلَيْهَا وَأَهُشُّ بِهَا عَلَىٰ غَنَمِي وَلِيَ فِيهَا مَآرِبُ أُخْرَىٰ
📘 Please check ayah 20:21 for complete tafsir.
قَالَ أَلْقِهَا يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:21 for complete tafsir.
مَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
فَأَلْقَاهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعَىٰ
📘 Please check ayah 20:21 for complete tafsir.
قَالَ خُذْهَا وَلَا تَخَفْ ۖ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا الْأُولَىٰ
📘 ১৭-২১ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে হযরত মূসার (আঃ) একটি খুবই বড় ওস্পষ্ট মু'জিযার বর্ণনা। দেয়া হচ্ছে, যা আল্লাহর ক্ষমতা ছাড়া অসম্ভম্ব এবং যা নবী ছাড়া অন্যের হাতেও সন্ত্র নয়। তূর পাহাড়ের উপর তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছেঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার ডান হাতে ওটা কি? হযরত মূসার (আঃ) ভয়-ভীতি দূর করার জন্যেই তাঁকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। একথাও বলা হয়েছে যে, এটা ছিল আলোচনা মূলক প্রশ্ন। অর্থাৎ তোমার হাতে লাঠিই আছে। এটা যে কি তা তুমি ভালরূপেই জান। এখন এটা যা হতে যাচ্ছে তা তুমি দেখে নাও।এই প্রশ্নের জবাবে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ) বলেনঃ ‘এটা আমার লাঠি। এর উপর আমি ভর দিয়ে দাড়াই। অর্থাৎ চলার সময় এটা আমার একটা আশ্রয় স্থলরূপে কাজে লাগে। এর দ্বারা আমি আমার বকরীর জন্যে গাছ হতে পাতা ঝরিয়ে থাকি।' এরূপ লাঠিতে কিছু লোহা লাগানো হয়ে থাকে। এর ফলে গাছের পাতা ও ফল সহজে ঝরানো যায় এবং লাঠি ভেঙ্গেও যায় না। তিনি বললেন যে, এই লাঠি দ্বারা তিনি আরো অনেক উপকার লাভ করে থাকেন। এই উপকার সমূহের বর্ণনায় কতকগুলি লোক একথাও বলেছেন যে, ঐ লাঠিটিই রাত্রি কালে উজ্জল প্রদীপরূপে কাজ করতো। দিনের বেলায় যখন হযরত মূসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়তেন তখন ঐ লাঠিটিই তার বকরীগুলির রাখালী করতো। কোন জায়গায় ছায়া না থাকলে তিনি লাঠি মাটিতে গেড়ে দিতেন, তখন ওটা তাঁবুর মত তাঁকে ছায়া করতো, ইত্যাদি বহু উপকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এগুলো বানী ইসরাঈলের বানানো কাহিনী। তা না হলে ঐ লাঠিকে সাপ হতে দেখে। হযরত মূসা (আঃ) এতো ভয় পাবেন কেন? উনি তো লাঠিটির বিস্ময়কর কাজ পূর্ব হতেই দেখে আসছিলেন। কারো কারো উক্তি এই যে, প্রকৃতপক্ষে ওটা ছিল হযরত আদমের (আঃ) লাঠি। কেউ কেউ বলেন যে, লাঠিটি কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দাব্বাতুল আরদ রূপে প্রকাশিত হবে। বলা হয়েছে যে, ওটার নাম ছিল মাশা। এ সব উক্তির সত্যতা কতটুকু তা আল্লাহ তাআলাই জানেন। হযরত মূসাকে (আঃ) তাঁর লাঠিটির লাঠি হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়ে তাকে সতর্ক করতঃ বলেনঃ “ওটাকে যমীনের উপর নিক্ষেপ কর।” যমীনে নিক্ষিপ্ত হওয়া মাত্র লাঠিটি বিরাট অজগর সাপে পরিণত হয় এবং এদিক ওদিক চলতে শুরু করে দেয়। ইতিপূর্বে এতো ভয়াবহ অজগর সাপ কেউ কখনোদেখে নাই। সাপটির অবস্থা তো এই ছিল যে, সামনে একটি গাছ পড়লেই তা সে খেয়ে ফেলে। পথে বড় পাথর পড়লে তা গ্রাস করে নেয়। এ অবস্থা দেখা মাত্রই হযরত মূসা (আঃ) পিছন ফিরে পালাতে শুরু করেন। শব্দ আসেঃ “হে মূসা (আঃ) ! ওটা ধরে নাও।” কিন্তু তার সাহস। হয় না। আবার আওয়াজ আসেঃ “হে মূসা (আঃ)! ভয় করো না, ধরে ফেলো।” তখন তাঁর সংশয় থেকে যায়। তৃতীয়বার বলা হয়ঃ “তুমি আমার নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। এবার তিনি হাত বাড়িয়ে ওকে ধরে নেন।বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার নির্দেশের সাথে সাথেই হযরত মূসা (আঃ) লাঠিটি মাটিতে ফেলে দেন। তারপর তার দৃষ্টি এদিক ওদিক চলে যায়। অতঃপর দেখেন যে, লাঠির পরিবর্তে একটি ভয়াবহ অজগর সাপ রয়ে গেছে এবং তা এমনভাবে চলা ফেরা করছে যে, যেন কাউকে খুঁজছে। বড় বড় পাথরকে সে খেয়ে ফেলছে এবং আকাশচুম্বী বড় বড় গাছকেও গ্রাস করে নিচ্ছে। ওর চক্ষু দুটি আগুনের অঙ্গারের মত জ্বল জ্বল করছে। ওটা এতো ভয়াবহ অজগর যে, হযরত মূসা (আঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পিছন ফিরে পালিয়ে যেতে শুরু করেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার সাথে কথা বলার বিষয়টি স্মরণ হয়ে তিনি থমকে দাড়ান। ওখানেই শব্দ আছেঃ “হে মূসা (আঃ)! ফিরে গিয়ে যেখানে ছিলে সেখানেই এসে যাও।" তিনি ফিরে আসেন, কিন্তু অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা নিদের্শ দেনঃ “তুমি ওটা তোমার ডান হাত দ্বারা ধরে নাও এবং ভয় করো না। আমি ওকে ওর আসল অবস্থায় ফিরিয়ে দেবো।” ঐ সময় হযরত মূসা (আঃ) পশমের কম্বল গায়ে জড়িয়ে ছিলেন। ওটাকে তিনি ঐ কম্বলখানা হাতে জড়িয়ে ঐ ভয়াবহ সাপটিকে ধরার ইচ্ছা করেন। তখন ফেরেশতা তাঁকে বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! যদি আল্লাহ তাআলা সাপটিকে দংশন করার হুকুম দেন তবে কি এই কম্বল আপনাকে রক্ষা করতে পারবে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “কখনো নয়। কিন্তু আমার দুর্বলতার কারণেই এ কাজ আমার দ্বারা হতে যাচ্ছিল। আমাকে খুবই দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।” অতঃপর তিনি কম্বল সরিয়ে দিয়ে সাহসিকতার সাথে সাপটির মাথা ধরে নেন। তৎক্ষণাৎ সাপটি আবার লাঠিতে পরিণত হয়ে যায়, যেমন পূর্বে ছিল। যখন তিনি পাহাড়ের মাটির উপর উঠছিলেন এবং তাঁর হাতে লাঠিটি ছিল,যার উপর তিনি ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন ঐ অবস্থাতেই তিনি লাঠিটিকে পূর্বে দেখেছিলেন। ঐ অবস্থাতেই ওটা তার হাতে লাঠির আকারে বিদ্যমান ছিল।
وَاضْمُمْ يَدَكَ إِلَىٰ جَنَاحِكَ تَخْرُجْ بَيْضَاءَ مِنْ غَيْرِ سُوءٍ آيَةً أُخْرَىٰ
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
لِنُرِيَكَ مِنْ آيَاتِنَا الْكُبْرَى
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
اذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
يَفْقَهُوا قَوْلِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
إِلَّا تَذْكِرَةً لِمَنْ يَخْشَىٰ
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
هَارُونَ أَخِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا
📘 Please check ayah 20:35 for complete tafsir.
إِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِيرًا
📘 ২২-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসাকে (আঃ) দ্বিতীয় মুজিযা দেয়া হচ্ছে। তাঁকে বলা হচ্ছেঃ ‘তোমার হাতখানা বগলে ফেলে আবার তা বের করে নাও। তুমি দেখবে যে, ওটা চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় হয়ে বেরিয়ে আসবে। এটা নয় যে, ওটা শ্বেত কুষ্ঠের শুভ্রতা হবে, বা অন্য কোন রোগ অথবা দোষের কারণে সাদা হবে।' অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) যখন বগলে হাত রেখে তা বের করে নেন তখন দেখা যায় যে, প্রদীপের ন্যায় উজ্জ্বল ও ঝকমকে হয়ে গেছে। এর ফলে তিনি যে আল্লাহ তাআলার সাথে কথা বলছেন এই বিশ্বাস তার আরো বৃদ্ধি পেলো। এ দুটো মু'জিযা তঁাকে এখানে প্রদানের কারণ এই যে, যেন তিনি আল্লাহর যবরদস্ত নিদর্শনগুলি দেখে তার অসীম ক্ষমতার প্রতি পূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন।অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) নির্দেশ দিলেনঃ ফিরাউন আমার চরম বিদ্রোহী হয়ে গেছে। তুমি তার কাছে গিয়ে তাকে বুঝাতে থাকো।হযরত অহাব (রঃ) বলেন যে, হযরত মূসাকে (আঃ) আল্লাহ তাআলা। খুবই নিকটবর্তী হওয়ার নির্দেশ দেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঐ গাছের গুঁড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে যান। তাঁর হৃদয় প্রশান্ত হয়ে যায়। ভয়-ভীতি দূরীভূত হয়। হাত দুটি স্বীয় লাঠির উপর রেখে, মাথা ঝুঁকিয়ে এবং গ্রীবা নীচু করে অত্যন্ত আদবের সাথে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা তিনি শুনতে লাগলেন। মহান আল্লাহ তাকে বললেনঃ মিসরের বাদশাহ ফিরাউনের কাছে তুমি আমার পয়গাম নিয়ে যাও। সেখান থেকে তুমি পালিয়ে এসেছিলে। তাকে তুমি বল যে, সে যেন, আমারই ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকেও শরীক না। করে। বানী ইসরাঈলের সাথে যেন সৎ ব্যবহার করে এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে। তাদেরকে যেন কষ্ট না দেয়। ফিরআউন চরম বিদ্রোহী হয়ে গেছে। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে। দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আখেরাতকে সে সম্পূর্ণরূপে ভুলে বসেছে। হে মূসা (আঃ)! তুমি আমার রিসালাত নিয়ে তার কাছে গমন কর। আমার চক্ষু ও কর্ণ তোমার সাথেই রইলো। আমি তোমাকে সদা দেখতে শুনতে থাকবো। সব সময় আমার সাহায্য তোমার সাথে থাকবে। আমার পক্ষ হতে আমি দলীল প্রমাণাদি প্রদান করেছি এবং তোমাকে দৃঢ় ও মজবুত করেছি। তুমি একাই আমার বিরাট সেনাবাহিনী। আমার এক দুর্বল বান্দার কাছে আমি তোমাকে প্রেরণ করছি। সে আমার নিয়ামত রাশি পেয়ে সবই ভুলে বসেছে। সে আমার পাকড়াওকেও বিস্মরণ হয়েছে। দুনিয়ার মোহে পড়ে সে চরম অহংকারী হয়ে বসেছে। সে আমাকে পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা এবং উপাস্য বলে স্বীকার করছে না। সে আমার দিক থেকে চক্ষু ফিরিয়ে নিয়েছে। সে আমা থেকে বিমুখ হয়েছে এবং আমার পাকড়াওকে ভুলে গেছে। আমার শাস্তি হতে সে নির্ভয় হয়েছে। আমার মর্যাদার শপথ! আমি যদি তাকে অবকাশ দিতে না চাইতাম তবে তার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়তে এবং যমীন তাকে গ্রাস করে নিতো। সমুদ্রও তাকে নিজের মধ্যে নিমজ্জিত করতো। কিন্তু আমার সাথে মুকাবিলা করার শক্তি তার নেই এবং সব সময় সে আমার ক্ষমতাধীন রয়েছে বলেই আমি তাকে ঢিল দিয়ে রেখেছি। আমি তো তাকে কোন পরওয়াই করি না। আমি সমস্ত মাখলুক হতে তো সম্পূর্ণ রূপে অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। সত্য এটাই যে, একমাত্র আমিই সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। শুধুমাত্র আমিই এইগুণের অধিকারী। হে মূসা (আঃ)! তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন কর। তুমি ফিরাউনকে আমার ইবাদতের হিদায়াত কর, তাওহীদ ও ইখলাসের দাওয়াত দাও, আমার নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দাও, আমার শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন কর এবং আমার গযব হতে সতর্ক করে দাও। আমি রাগান্বিত হলে আর পরিত্রাণ নেই। তুমি তাকে নম্রতার সাথে বুঝাতে থাকো। তাকে আমার দান এবং দয়া দাক্ষিণ্যের খবর দিয়ে দাও। তাকে জানিয়ে দাও যে, এখানে যদি সে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে তবে আমি তার সমস্ত দুষ্কর্মের পাপ মার্জনা করবো। আমার গারের উপর আমার রহমত বিজয়ী। সাবধান! তুমি তার জাকজমক ও শান শওকতের প্রভাবে পড়ে যেয়ো না। তার চুলের খোপা আমার হাতেই রয়েছে। তার মুখ চলতে পারে না, তার হাত উঠতে পারে না, তার চোখের পাতা নড়তে পারে না এবং সে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে না যে পর্যন্ত না আমি অনুমতি দিই। তাকে বুঝিয়ে বল যে, যদি সে আমাকে মেনে নেয় তবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। চারশ’ বছর ধরে সে আমার বিরুদ্ধাচরণ করতে রয়েছে। আমার বান্দাদের উপর জুলুম ও নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জনগণকে আমার ইবাদত থেকে ফিরিয়ে রাখছে, তথাপি আমি তার উপর বৃষ্টি বন্ধ করি নাই, ফসল উৎপাদন বন্ধ রাখি নাই, তাকে রোগাক্রান্ত করি নাই, বৃদ্ধ করি নাই এবং পরাভূত করি নাই। ইচ্ছা করলে আমি তাকে জুলুমের সাথে পাকড়াও করতাম। কিন্তু আমার সহনশীলতা খুব বেশী। হে মূসা (আঃ)! তুমি তোমার ভাই (হারূণ (আঃ) কে সঙ্গে নিয়ে তার কাছে। যাও এবং পূর্ণভাবে জিহাদ কর। তোমরা আমার সাহায্যের উপর ভরসা কর। আমি ইচ্ছা করলে আমার সৈন্য সামন্ত পাঠিয়ে তাকে ধ্বংস করে দিতে পারি। কিন্তু আমি তাকে দেখাতে চাই যে, আমার জামাআতের একজনও সারা ভূ পৃষ্ঠের শক্তিশালীদের উপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম। সাহায্য আমার অধিকারভূক্ত। তোমরা পার্থিব শান শওকতের। কি ওর প্রতি চোখ তুলে তাকাবেও না। আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে এতো বেশী ধন সম্পদ দিতে পারি যে, ফিরাউনের ধন সম্পদ ওর ধারে পাশেও যাবে না। কিন্তু আমি আমার বান্দাদেরকে সাধারণতঃ গরীবই রাখি যাতে তাদের পরকাল সুন্দর ও কল্যাণকর হয়। তারা গরীব বলেই যে আমার কাছে। সম্মানের পাত্র নয় এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং আমি এটা এজন্যেই করি যে, যেন তাদের দুই জাহানের নিয়ামত রাশি পরজগতে একত্রিত হয়। আমার কাছে আমার বান্দার কোন আমল এতো বেশী ওজনসই হয় না যতো ওজনসই দুনিয়ার প্রতি উদাসীনতা। আমি আমার বিশিষ্ট বান্দাদেরকে প্রশান্তি এবং বিনয় নম্রতার পোশাক পরিয়ে থাকি। তাদের মুখমণ্ডল সিজদার ঔজ্জ্বল্যের উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এরাই হয় আল্লাহর সত্যিকারের বন্ধু। তাদের সামনে সবারই আদবের সাথে অবস্থান করা উচিত। নিজের জিহ্বা ও অন্তরকে তাদের অনুগত করা দরকার। জেনে রেখো যে, যারা আমার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা রাখে তারা যেন আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। তা হলে তাদের এটা অনুধাবন করা উচিত যে, যারা আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে চায় তারা কি কখনো সফলকাম হতে পারে? কখনই না। আমি তাকে ক্রোধের দৃষ্টিতে দেখে থাকি এবং তাকে ধ্বংস ও তছনছ করে দেই। আমার শত্রু কখনো আমার উপর বিজয় লাভ করতে পারে না। আমার বিরুদ্ধবাদীরা আমার কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আমার বন্ধুদেরকে আমি নিজেই সাহায্য করে থাকি। তাদেরকে আমি শত্রুদের শিকার হতে দেই না। তাদেরকে আমি দুনিয়া ও আখেরাতে বিজয় দান করে থাকি এবং সব সময় তাদের উপর আমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।হযরত মূসা (আঃ) তার শৈশবকাল ফিরাউনের বাড়ীতেই কাটিয়েছিলেন, এমনকি তার ক্রোড়েই শৈশবাবস্থা অতিবাহিত করেছিলেন। যৌবন পর্যন্ত মিসর রাজ্যে তার প্রাসাদেই অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তার অনিচ্ছাতেই একজন কিবতী তাঁর হাতে মৃত্যু বরণ করে। ফলে তিনি সেখান থেকে পলায়ন করেন। তখন থেকে তার ভূর পাহাড়ে সময়ে আগমন পর্যন্ত তিনি আর মিসরের মুখ দেখেন নাই। ফিরাউন একজন দুশ্চরিত্র ও কঠোর হৃদয়ের লোক ছিল। গর্ব ও অহংকার তার এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, আল্লাহকে তা সে বুঝতোই না। নিজের প্রজাদেরকে সে বলে দিয়েছিলঃ “তোমাদের খোদা আমিই। ধন সম্পদে, সৈন্য সামন্তে এবং অড়িম্বর ও জাকজমকে সারা দুনিয়ায় তার সমতুল্য আর কেউই ছিল না। তাকে হিদায়াত করার জনে আল্লাহ তাআলা যখন হযরত মূসাকে (আঃ) নির্দেশ দিলেন তখন তিনি তাঁর নিকট প্রার্থনা জানালেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার বক্ষ খুলে দিন এবং আমার কাজকে সহজ করুন। আপনি আমাকে সাহায্য না করলে এতো বড় শক্ত কাজের দায়িত্ব বহন করা আমার পক্ষে সদ্য নয়। আমার জিহ্বার আড়ষ্টতা দূর করে দিন।"শৈশবাবস্থায় তাঁর সামনেখেজুর ও আগুনের অঙ্গার রাখা হয়েছিল। তিনি অঙ্গার উঠিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিয়েছিলেন বলে তাঁর জিহবায় আড়ষ্টতা এসে গিয়েছিল। তাই, তিনি প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন।" এটা হযরত মূসার (আঃ) ভদ্রতার পরিচয় যে, তিনি জিহ্বা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার জন্যে আবেদন জানাচ্ছেন না। বরং এই আবেদন করেছেন যে, যেন জিহ্বার জড়তা দূর হয়, যাতে লোকেরা তার কথা বুঝতে পারে। নবীগণ (আঃ) শুধুমাত্র প্রয়োজন পুরো করার জন্যেই প্রার্থনা করে থাকেন। এর বেশীর জন্যে তারা আবেদন জানান না। তাই হযরত মূসার (আঃ) জিহ্বায় কিছুটা জড়তা। থেকে গিয়েছিল। যেমন ফিরাউন বলেছিলঃ “আমি উত্তম, না এই ব্যক্তি? এতো গরীব ও তুচ্ছ এবং এতো পরিষ্কারভাবে কথাও বলতে পারে না।”হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ) জিহ্বার একটি গিরা খুলে দেয়ার প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। এবং তা পূর্ণ হয়েছিল। যদি তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে দেয়ার আবেদন জানাতেন তবে সেটাও পূর্ণ হতো। তিনি শুধু তার জিহ্বার ততটুকু জড়তা দূর করার প্রার্থনা করেছিলেন যাতে মানুষ তার কথা বুঝতে পারে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ হযরত মূসার (আঃ) এই ভয় ছিল যে, না জানি হয়তো ফিরআউন তার উপর হত্যার অভিযোগ এনে তাকে হত্যা করে ফেলবে। তাই, তিনি নিরাপত্তার জন্যে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তা কবুলও হয়েছিল। তার জিহবায় জড়তা ছিল তা তিনি এই পরিমাণ পরিষ্কার করে দেয়ার জন্যে প্রার্থনা করেন যাতে লোকেরা তার কথা বুঝতে পারে। তার এ দুআও কবুল হয়। তারপর তিনি দুআ করেন যে, হারূণকে যেন (আঃ) নবী করে দেয়া হয়। তাঁর এ দুআও মঞ্জুর হয়। বর্ণিত আছে যে, হযরত কাবের (রঃ) নিকট তার এক আত্মীয় এসে তাঁকে বলেঃ “এটা বড়ই লজ্জার কথা যে, আপনার মুখের কথা ত্রুটিপূর্ণ।” তখন হযরত কা'ব (রঃ) তাকে বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমার কথা কি তুমি বুঝতে পার না?” উত্তরে সে বলেঃ “হাঁ, বুঝতে পারি বটে।” হযরত কা'ব (রঃ) তখন বলেনঃ “তা হলে এই যথেষ্ট। হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে এটুকুর জন্যেই প্রার্থনা করেছিলেন।এরপর হযরত মূসা (আঃ) প্রার্থনা করেনঃ “আমার প্রকাশ্য সাহায্যকারী হিসেবে আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে একজনকে নির্বাচিত করুন, অর্থাৎ আমার ভাই হারূণকে (আঃ) আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দিন এবং তাঁকে নুবওয়াত দান করুন।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তখনই হযরত হারূণকে (আঃ) হযরত মূসার (আঃ) সাথে সাথেই নুবওয়াত দান করা হয়।হযরত উরওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত আয়েশা (রাঃ) উমরা করার উদ্দেশ্যে গমন করেন। তিনি একজন বেদুঈনের বাড়ীতে অবস্থান করেছিলেন এমন সময় তিনি শুনতে পান যে, একজন লোক প্রশ্ন করলোঃ “দুনিয়ায় কোন ভাই তার নিজের ভাইকে সবচেয়ে বেশী উপকৃত করেছিলেন?”তার এই প্রশ্ন শুনে সবাই নীরব হয়ে যায় এবং বলেঃ “আমাদের এটা জানা নেই।” ঐ লোকটি তখন বলেঃ “আল্লাহর শপথ! আমি ওটা জানি।" হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি মনে মনে বললামঃ এ লোকটি তো বৃথা সাহসীকতা প্রদর্শন করছে, ইনশা আল্লাহ না বলেই শপথ করে বসেছে!” জনগণ তখন তাকে বলেঃ “অচ্ছাি, তুমি বল দেখি?” সে উত্তরে বলেঃ “তিনি হলেন হযরত মূসা (আঃ) তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে তার ভাই হারূণের (আঃ) নুবওয়াতের মঞ্জুরী নিয়ে নেন।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি নিজেও তার এই জবাব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই এবং মনে মনে বলি যে, লোকটি তো সত্য কথাই বলেছে। বাস্তবিকই হযরত মূসা (আঃ) অপেক্ষা কোন ভাই তার ভাইকে বেশী উপকৃত করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা সত্যই বলেছেন যে, মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে বড়ই মর্যাদাবান ছিলেন। (এটা মুসনাদে ইবন আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)এই প্রার্থনার কারণ বলতে গিয়ে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “এর দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় হবে। তিনি আমরা কাজে সহায়ক ও অংশীদার হিসেবে থাকবেন। যাতে আমার আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি প্রচুর এবং আপনাকে স্মরণ করতে পারি অধিক।"হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, বান্দা আল্লাহ তাআলার অধিক যিকরকারী তখনই হয় যখন সে উঠতে, বসতে এবং শুইতে সর্বাবস্থাতেই আল্লাহর যিকরে নিমগ্ন থাকে।হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা এটা আপনার আমাদের প্রতি করুণা যে, আমাদেরকে আপনি নবীরূপে মনোনীত করেছেন এবং আপনার শত্রু ফিরাউনকে হিদায়াত করার জন্যে আমাদেরকে তার নিকট পাঠিয়েছেন। আমরা আপনারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্যেই বটে। আমাদের উপর আপনার যে নিয়ামতরাজি রয়েছে এ জন্যে আমরা আপনার নিকট বড়ই কৃতজ্ঞ।
قَالَ قَدْ أُوتِيتَ سُؤْلَكَ يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:40 for complete tafsir.
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً أُخْرَىٰ
📘 Please check ayah 20:40 for complete tafsir.
إِذْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّكَ مَا يُوحَىٰ
📘 Please check ayah 20:40 for complete tafsir.
أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِي وَعَدُوٌّ لَهُ ۚ وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِي
📘 Please check ayah 20:40 for complete tafsir.
تَنْزِيلًا مِمَّنْ خَلَقَ الْأَرْضَ وَالسَّمَاوَاتِ الْعُلَى
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
إِذْ تَمْشِي أُخْتُكَ فَتَقُولُ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ مَنْ يَكْفُلُهُ ۖ فَرَجَعْنَاكَ إِلَىٰ أُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ ۚ وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ وَفَتَنَّاكَ فُتُونًا ۚ فَلَبِثْتَ سِنِينَ فِي أَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلَىٰ قَدَرٍ يَا مُوسَىٰ
📘 ৩৬-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসার (আঃ) সমস্ত প্রার্থনা কবুল হয় এবং মহান আল্লাহ তাকে বলেনঃ তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো। এই অনুগ্রহের সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা আরো একটা অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমার প্রতি আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম। অতঃপর তিনি সংক্ষেপে ঐ ঘটনাটি তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ হে মূসা (আঃ)! আমি তোমার মাতার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছিলাম যা নির্দেশ দেয়ার ছিল। তুমি ছিলে ঐ সময় দুগ্ধ পোষ্য শিশু। তোমার মা ফিরাউন ও তার লোক লশকরকে ভয় করছিল। কেননা, ঐ বছর তারা বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করছিল। ঐ ভয়ে সে সদা প্রকম্পিতা। হচ্ছিল। তখন আমি তার কাছে ওয়াহী করলাম (ইংগিত দ্বারা নির্দেশ দিলাম) একটি সিন্দুক নির্মাণ কর। দুধপান করিয়ে শিশুকে ঐ সিন্ধুকে রেখে দাও এবং নীল নদে ওটাকে ভাসিয়ে দাও। তোমার মা তাই করে। সে একটি রজ্জ তাতে বেঁধে রাখতো যার মাথাটি ঘরের সাথে বেঁধে দিতো। একদা রঙ্কুটি সে সিন্দুকে বাধতে ছিল, কিন্তু ঘটনাক্রমে তা তার হাত থেকে ছুটে যায়। ফলে ঢেউ-এর দোলায় সিন্দুকটি ভেসে চলে যায়। এতে তোমার মা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে। সে এতো বেশী দুঃখিত হয় যে, ধৈর্যধারণ তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে রহস্য খুলেই দেয় আর কি। কিন্তু আমি তার হৃদয় শক্ত করে দিই। সিন্দুকটি ভাসতে ভাসতে ফিরাউনের প্রাসাদের পার্শ্ব দিয়ে চলতে থাকে। ফিরাউনের পরিবারের লোকেরা সিন্দুকটি উঠিয়ে নেয়। ফিরাউন যে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে চাচ্ছিল তা তার সামনেই এসে পড়ে। যার জীবন। প্রদীপ নির্বাসিত করার লক্ষ্যে সে নিস্পাপ শিশুদেরকে সাধারণ ভাবে হত্যা করছিল তা তারই তেলে তারই বাড়ীতে জুলে উঠলো। আল্লাহর ইচ্ছা বিনা বাধায় পূর্ণ হতে চললো। তার শত্রু তারই বাড়ীতে তারই তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হতে লাগলো। তার স্ত্রী যখন শিশুকে দেখলেন তখন তাঁর শিরায় শিরায় শিশুর প্রতি ভালবাসা জমে উঠলো। তাঁকে নিয়ে তিনি লালন পালন করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে নয়নের মণি মনে করলেন। অত্যন্ত আদরের সাথে তাকে তিনি প্রতিপালন করতে থাকলেন। শাহী দরবারই হয়ে গেল তাঁর অবস্থানস্থল।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালবাসা। ঢেলে দিয়েছিলাম। ফিরাউন তোমার শত্রু হলেও আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে কে? তোমার প্রতি ভালবাসা শুধু ফিরাউনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, বরং যেই দেখে সেই তোমাকে ভালবাসতে থাকে। এটা এজন্যেই ছিল যে, তোমার প্রতিপালন যেন আমার চোখের সামনে হয়। তুমি যেন শাহী খানা খেতে থাকে এবং মর্যাদার সাথে অবস্থান কর।ফিরাউনের লোকেরা সিন্দুকটি উঠিয়ে নিলো। তারা সেটা খুলে দেখলো, শিশুকে পেলো এবং লালন পালন করার ইচ্ছা করলো। কিন্তু তিনি কারো দুধ পান করলেন না। এমনকি কারো স্তনে তিনি মুখই দিলেন না। তাঁর বোন সিন্দুকটি দেখতে দেখতে নদীর তীরে ধরে আসতেছিল। সেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। সে বলে উঠলোঃ “যদি আপনারা এই শিশুটিকে প্রতিপালনের ইচ্ছা করে থাকেন এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক দেন তবে আমি একটা পরিবারের কথা আপনাদেরকে বলতে পারি যারা একে অত্যন্ত যত্নের সাথে লালন পালন করবে এবং চরম হিতাকাংখী হবে।” সবাই বলে উঠলোঃ “আমরা সম্মত আছি।" তার বোন তখন তাকে নিয়ে মায়ের নিকট হাজির হলো এবং তার কোলে রেখে দিলো। মায়ের কোলে রাখা মাত্রই তিনি দুধ পান করতে শুরু করলেন। এতে ফিরাউন ও তার লোকজনের খুশীর কোন সীমা থাকলো না। তার মাকে বহু কিছু পুরস্কার দেয়া হলো এবং বেতন নির্ধারিত হয়ে গেল। তিনি নিজেরই ছেলেকে দুধ পান করাতে থাকলেন, আবার বেতন, পুরস্কার ও মান সম্মানও লাভ করলেন। আল্লাহ তাআলার কি মহিমা! তিনি দুনিয়াও পেলেন, দ্বীনও পেলেন। এজন্যেই হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি নিজের কাজ ভাল নিয়তে সম্পাদন করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে হযরত মূসার (আঃ) মাতার মত। তিনি নিজেরই ছেলেকে দুধ পান করিয়ে পারিশ্রমিক লাভ করেছিলেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাও আমারই একটা অনুগ্রহ যে, আমি তোমাকে তোমার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যাতে তার চক্ষু ঠাণ্ডা হয় ও দুঃখ দূরীভূত হয়। অতঃপর তোমার হাতে একজন ফিরাউনী কিবতী নিহত হয়। তখনও আমি তোমাকে রক্ষা করে ছিলাম। ফিরাউনের লোকেরা তোমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং গুপ্ত কথা প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। ঐ সময় আমি তোমাকে মুক্তি দান করি এবং তুমি এখান হতে পালিয়ে যাও। মাদইয়ানের কূপের কাছে গিয়ে তুমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলো। সেখানে আমার এক সৎবান্দা তোমাকে সুসংবাদ প্রদান করে যে, তোমার আর কোন ভয় নেই। ঐ অত্যাচারীদের হাত থেকে তুমি রক্ষা পেয়েছে। পরীক্ষা হিসেবে আমি তোমাকে আরো বহু ফিৎনা বা হাঙ্গামায় ফেলেছিলাম। হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেনঃ আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ আজকে তো সূর্য অস্তমিত হতে চলেছে, ঘটনাও দীর্ঘ। অন্য সময় বলবো। আমি তখন পরের দিন সকালে আবার তাকে ঐ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ “তা হলে শুনো। ফিরাউনের দরবারে একদিন আলোচনা হয়ঃ হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সাথে আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করেছিলেন যে, তাঁর সন্তান ও বংশধরদের মধ্যে তিনি নবী ও বাদশাহ করবেন। সুতরাং বনী ইসরাঈল আজ পর্যন্ত তারই অপেক্ষায় রয়েছে এবং তাদের এ বিশ্বাস আছে যে, মিসরের রাজত্ব আবার তাদের হাতেই চলে আসবে। প্রথমে তো তাদের ধারণা ছিল যে, এই ওয়াদা হযরত ইউসুফের (আঃ) ব্যাপারে ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত যখন এই ওয়াদা পূর্ণ হলো না তখন তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, তাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা একজন নবী পাঠাবেন যার মাধ্যমে তারা মিসরের রাজত্ব লাভ করবে এবং তাদের জাতীয় ও ধর্মীয় উন্নতিও সাধিত হবে। ফিরাউনের দরবারে এটা আলোচিত হয়ে তারা পরামর্শ করে যে, কি পন্থা অবলম্বন করলে ভবিষ্যতে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে? অবশেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, একটা পুলিশ বাহিনী গঠন করা হোক। যারা শহরে চক্কর দিতে থাকবে এবং বনী ইসরাঈলের মধ্যে কারো পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করলেই তাকে তৎক্ষণাৎ সরকারের কাছে পেশ করা হবে এবং যবাহ্ করে দেয়া হবে। কিন্তু কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর তারা অনুভব করে যে, এ কাজ অব্যাহত রাখলে তো বানী ইসরাঈল সম্পূর্ণরূপেই শেষ হয়ে যাবে এবং তাদের কাছ থেকে যে লাঞ্ছনাকর সেবাকার্য আদায় করা হচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং নতুন ভাবে আবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, এক বছর তাদের পুত্র সন্তানগুলিকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং আর এক বছর তাদেরকে হত্যা করা হবে। তা হলে বর্তমানে বানী ইসরাঈলের যে সংখ্যা রয়েছে তা বেড়েও যাবে না, আবার এতো কমেও যাবে না যে, তাদের দ্বারা সেবা কার্য করিয়ে নেয়ার ব্যাপারে লোক পাওয়া যাবে না। যতটি বুড়ো দু বছরে মারা যাবে ততটি শিশু এক বছরে জন্মগ্রহণ করবে।যে বছর হত্যা কার্য বন্ধ ছিল সেই বছর হযরত হারূণ (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। আর যে বছর সাধারণ ভাবে শিশু হত্যা কার্য চালু ছিল সেই বছর হযরত মূসার (আঃ) জন্ম হয়। সেই বছর হযরত মূসার (আঃ) মায়ের ভীতি ও উদ্বেগের সীমা ছিল না। এটা ছিল প্রথম ফিৎনা। এই বিপদ ঐ সময় কেটে যায় যখন মহান আল্লাহ তার মায়ের কাছে ওয়াহী করেনঃ “তুমি ভয় করো না, তোমার শিশুকে আমি তোমার কাছেই ফিরিয়ে আনবো এবং তাকে আমার রাসূলরূপে মনোনীত করবো।” সুতরাং তিনি তাঁর শিশুপুত্রকে সিন্দুকের মধ্যে বন্ধ করে নদীতে ভাসিয়ে দেন। তখন শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে এবং তিনি মনে মনে বলেনঃ “হায়! এটাই তো ভাল ছিল যে, আমার এই পুত্র সন্তানকে আমার সামনেই হত্যা করা হতো! তাহলে আমিই তার কাফন দাফন করতাম! এখনতো আমি তাকে মাছের খদ্যি বানিয়ে দিলাম!”সিন্ধুকটি ভাসতে ভাসতে গিয়ে ফিরাউনের ঘাটে লেগে গেল। ঐ সময় সেখানে রাজপ্রাসাদের দাসীরা বিদ্যমান ছিল। তারা ঐ সিন্দুকটিকে উঠিয়ে নিয়ে খোলার ইচ্ছা করলো। কিন্তু তারা চোর সাব্যস্ত হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে তালাবদ্ধ অবস্থাতেই সিন্দুকটিকে নিয়ে গিয়ে ফিরাউনের নিকট পৌঁছিয়ে দিলো। বাদশাহ ও বেগমের সামনে সিন্দুকটি খোলা হলো। তাতে রৌপ্যজ্জ্বল একটি ছোট নিস্পাপ শিশু পাওয়া গেল। শিশুটিকে দেখা মাত্রই ফিরাউনের স্ত্রী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন এবং তাঁর অন্তরে শিশুর প্রতি চরম ভালবাসা জন্মে গেল। আর ওদিকে হযরত মূসার (আঃ) মায়ের অবস্থা ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁর অন্তরে তাঁর প্রিয় সন্তানের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যারা শিশুদেরকে হত্যা করার কাজে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োজিত ছিল তারা খবর পেয়েই তাদের ছুরিগুলি তীক্ষ্ণ করে নিয়ে হাজির হয়ে গেল এবং বেগমের কাছে দাবী জানালো যে, শিশুটিকে যেন তাদের হাতে সমর্পণ করা হয়, যাতে তারা তাকে হত্যা করতে পারে। হে ইবনু জুবাইর (রঃ)! এটা ছিল দ্বিতীয় ফিৎনা বেগম তাদেরকে বললেনঃ “থামো, আমি স্বয়ং বাদশাহর সাথে সাক্ষাৎ করছি এবং শিশুটির প্রাণ রক্ষার জন্যে প্রার্থনা জানাচ্ছি। তিনি যদি শিশুটি আমাকে দান করেন তবে তো ভাল কথা, অন্যথায় তোমাদের কর্তব্য তোমরা পালন করবে।” একথা বলে তিনি বাদশা হর কাছে গিয়ে বললেনঃ “দেখুন, এই শিশুটির মাধ্যমে আমার ও আপনার চক্ষু ঠাণ্ডা হবে।” তার একথা শুনে ঐ কুলষিত ব্যক্তি বললোঃ “এর দ্বারা তুমি তোমার নিজের চক্ষু ঠাণ্ডা কর, আমার চক্ষু ঠাণ্ডা করার কোন প্রয়োজন নেই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) শপথ করে বলেনঃ “যদি ফিরাউনও বলে দিতো যে, অবশ্যই শিশুটি তারও চক্ষু ঠাণ্ডা করবে তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তাকেও সুপথ প্রদর্শন করতেন, যেমন তার স্ত্রী সুপথ লাভ করেছিলেন। কিন্তু সে তার থেকে বঞ্চিত থাকতে চেয়েছিল, তাই তিনি তাকে বঞ্চিত করে দেন। মোট কথা, যেন তেন প্রকারে ফিরাউনকে সম্মত করে তার স্ত্রী শিশুটিকে ফিরিয়ে আনলেন এবং তাকে লালন পালন করার অনুমতি পেলেন। এখন রাজপ্রাসাদের যতগুলি ধাত্রী ছিল সবকেই তিনি একত্রিত করলেন। এক একজনের কোলের শিশুটিকে দেয়া হলো, কিন্তু মহান আল্লাহ সবারই দুধ তার জন্যে হারাম করে দিলেন। তিনি কারো স্তনে মুখ দিলেন না। এতে বেগম খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন। কারণ এ অবস্থায় তো শিশু মারা যাবে। অবশেষে চিন্তা করে তিনি শিশুটিকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং এদিক ওদিক খোজ খবর নিতে বললেন যে, যদি এই নিস্পাপ শিশু কারো দুধপান করে তবে যেন কৃতজ্ঞতার সাথে তার নিকট শিশুটিকে সমর্পণ করা হয়। বাইরে বাজার মেলার মত লোক সমাবেশ হয়ে গেল। প্রত্যেকেই নিজেকে এই সৌভাগ্যের অধিকারী বানিয়ে নিতে চাচ্ছিলো। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) কারো দুধ পান করলেন না। তাঁর মাতা তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যাকে অর্থাৎ হযরত মূসার (আঃ) বড় বোনকে কি ঘটে তা দেখবার জন্যে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঐ সমাবেশে হাজির ছিলেন এবং সবকিছু অবলোকন করছিলেন। তারা যখন সবাই অপারগ হয়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ 'যদি আপনারা চান তবে আমি এমন এক বাড়ীর মহিলার সন্ধান দিতে পারি যে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং এর হিতাকাংখী হবে।” তিনি একথা বলা মাত্রই জনগণ সন্দেহ করে বসে যে, অবশ্যই এই মেয়েটি এই শিশুর খবর রাখে এবং বাড়ীর খবরও জানে। হে ইবনু জুবাইর (রঃ) এটা ছিল তৃতীয় ফিৎনা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মেয়েটিকে হঠাৎ করে বুদ্ধিমান করেন এবং তিনি ঝট করে বলে ওঠেনঃ “আপনারা কি এটুকুও বুঝেন না যে, এমন কোন হতভাগ্য নেই যে এই শিশুর শুভাকাংখায় বা লালন পালনে কোন ত্রুটি করতে পারে? কেননা, এই শিশু তো আমাদের বেগমের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র। সত্তরাং কে চাবে না যে শিশুটি তার বাড়ীতে প্রতিপালিত হোক এবং তার বাড়ী উপটৌকন ও পুরস্কারে পরিপূর্ণ হয়ে যাক?” তাঁর এ কথা শুনে সবাই বুঝে নিলো এবং তাঁকে বললোঃ “তাহলে বল, কোন ধাত্রীর কথা তুমি বলতে চাচ্ছ?” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, আমি এখনই নিয়ে আসছি।” দৌড়িয়ে তিনি তার মায়ের কাছে গেলেন এবং তাকে সুসংবাদ শুনালেন। মা তখন বড় আগ্রহ ও আশা নিয়ে আসলেন এবং নিজের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে মুখে দুধ দিলেন। শিশু পেট পুরে দুধ পান করলেন। তৎক্ষণাৎ রাজ প্রাসাদে সুসংবাদ পৌঁছানো হলো। বেগম নির্দেশ দিলেনঃ “এখনই ঐ ধাত্রী ও শিশুকে আমার নিকট নিয়ে এসো।” যখন মাতা ও শিশু তার কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি তার সামনে দুধ পান করালেন। যখন তিনি দেখলেন যে, শিশু ভালভাবে দুধ পান করছে তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বলতে লাগলেনঃ “হে ধাত্রী আম্মা! এই শিশুর প্রতি আমার এতো ভালবাসা রয়েছে। যা দুনিয়ার অন্য কোন কিছুর উপর নেই। তুমি এই রাজপ্রাসাদেই অবস্থান কর এবং শিশুকে প্রতিপালন করতে থাকো।” কিন্তু হযরত মূসার (আঃ) মায়ের সামনে আল্লাহ তাআলার ওয়াদা ছিল এবং তার ওয়াদার প্রতি তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। এই জন্যে তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। অতঃপর বললেনঃ “আমি বাড়ীঘর ও ছেলে মেয়ে ছেড়ে এখানে থাকবো এটা সদ্য নয়। আপনি ইচ্ছা করলে শিশুটিকে আমার কাছে সমর্পণ করে দিন। আমি তাকে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছি এবং তার লালন পালনের ব্যাপারে মোটেই ত্রুটি করবো না।” বেগম সাহেবা বাধ্য হয়ে তার একথা মেনে নিলেন। সুতরাং হযরত মূসার (আঃ) মতাি সেই দিনই আনন্দিত চিত্ত্বে তাকে নিয়ে বাড়ী ফিরলেন। এই শিশুর কারণে ঐ প্রাসাদে অবস্থানরত বানী ইসরাঈলরাও ফিরাউনের লোকদের অত্যাচার হতে মুক্তি পেয়ে গেল।কিছুদিন অতিবাহিত হলে বাদশাহর বেগম নির্দেশনামা পাঠালেন যে, কোন এক দিন যেন তার বাচ্চাকে তাঁর নিকট আনয়ন করা হয়। একটা দিন নির্ধারিত হলো। উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও সভাষদবর্গকে নির্দেশ দেয়া হলোঃ “আজ আমার শিশু সন্তান আমার নিকট আসর্বে। সুতরাং আপনারা সবাই তাকে অভ্যর্থনা করবেন এবং খুবই ধূমধামের সাথে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করতে করতে আমার অন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসবেন।” সুতরাং যখন সওয়ারী রওয়ানা হয়ে গেল তখন সেখান থেকে নিয়ে হেরেম পর্যন্ত উপহার-উপটৌকন ও হাদিয়া দিতে থাকা হলো এবং অত্যন্ত মর্যাদার সাথে অন্দর মহলে নিয়ে আসা হলো। বেগম নিজেও বহু উপহার-উপঢৌকন পেশ করলেন এবং বড় আনন্দোৎসবের ব্যবস্থা করা হলো তারপর বেগম সাহেবা বলতে লাগলেনঃ “আমি নিজেই একে বাদশাহর নিকট নিয়ে যাচ্ছি। তিনিও পুরস্কার ও উপঢৌকন দিবেন।” একথা বলে তিনি শিশুকে ফিরাউনের কাছে নিয়ে গেলেন এবং তার কোলে বসিয়ে দিলেন। হযরত মূসা (আঃ) তার দাড়ী ধরে জোরে টানতে লাগলেন। এতে সে ভারী অমঙ্গলের আশংকা করলো। তার সভাষদবর্গ বলতে শুরু করল্যেঃ “এটা যে ঐ ছেলেই হবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। সুতরাং আপনি এখনই তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিন।" হে ইবনু জুবাইর (রঃ)! এটা ছিল চতুর্থ ফিত্না। বেগম ব্যাকুল হয়ে ফিরাউনকে বললেনঃ “হে বাদশাহ! আপনি কি ইচ্ছা করছেন? আপনি তো এই শিশু আমাকে দান করে দিয়েছেন এবং আমি একে নিজের পুত্র বানিয়েও নিয়েছি?” ফিরাউন বললোঃ “তোমার কথা সত্য বটে, কিন্তু তুমি তো স্বচক্ষে দেখলে যে, সে আসা মাত্রই আমার দাড়ী ধরে নিয়ে আমাকে খাটো করে দিয়েছে? এই যেন আমার পতন ঘটাবে এবং আমাকে ধ্বংস করে দেবে?” বেগম সাহেবা উত্তরে বললেনঃ “দেখুন বদিশাহ! এ শিশুর এসবের কোন জ্ঞান বুদ্ধি আছে কি? পরীক্ষা করে দেখুন, তার সামনে জ্বলন্ত আগুনের একটি অঙ্গার এবং এক খণ্ড উজ্জ্বল মুক্তা রেখে দিন। দেখা যাক কোটা সে উঠিয়ে নেয়। যদি আগুনের অঙ্গার উঠায় তবে জানবেন যে, তার জ্ঞানবুদ্ধি নেই। আর যদি মুক্তা উঠিয়ে নেয় তবে বুঝতে হবে যে, তার বুদ্ধি বিবেক আছে। সুতরাং যদি সে আগুনের অঙ্গারই ধারণ করে তবে আপনার দাড়ি ধারণ করায় এতো দীর্ঘ ধারণা করতঃ তার প্রাণ নাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কি বুদ্ধিমানের কাজ। হবে?” তা-ই করা হলো দুটি জিনিস তাঁর সামনে রেখে দেয়া হলো। তিনি জ্বলন্ত অঙ্গারই উঠিয়ে নিলেন। হাত পুড়ে যাওয়ার ভয়ে সাথে সাথে ত্য তাঁর হাত থেকে নেয়া হলো। এ দেখে ফিরাউনের ক্রোধাগ্নি প্রশমিত হয়ে গেল। এবং মত পরিবর্তন করলো। সত্য ব্যাপার তো এটাই যে, মহান আল্লাহ যে কাজ করার ইচ্ছা করেন তার সর্বপ্রকারের উপকরণ প্রস্তুত হয়েই যায়। হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের দরবারে তার খাস মহলে তার স্ত্রীর ক্রোড়েই লালিত পালিত হয়ে থাকেন। অতঃপর তিনি প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছে যান। তাঁর কারণে বানী ইসরাঈলের উপর ফিরাউনের যে অত্যাচার ও উৎপীড়ন চলতো তা কমে যায়। সবাই বেশ নিরাপদেই বসবাস করছিল। একদা হযরত মূসা (আঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে দেখেন যে, একজন কিবতী (ফিরাউনী) ও বানী ইসরাঈলের একটি লোকের মধ্যে লড়াই বেধে গেছে। ইসরাঈলী লোকটি ফিরাউনীর বিরুদ্ধে তাঁর কাছে অভিযোগ করে। তাঁর ভীষণ রাগ হয়ে যায়। কেননা, ঐ সময় ফিরাউনী ইসরাঈলীকে ঘায়েল করে ফেলেছিল। তিনি ফিরাউনীকে এক ঘুষি মারেন। সাথে সাথে সে মারা যায়। সাধারণভাবে জনগণের এটা জানা ছিল যে, হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের পক্ষপাতিত্ব করে থাকেন। তবে তারা এতো দিন পর্যন্ত এর কারণ এটাই বুঝে আসছিল যে, তিনি বানী ইসরাঈলের মধ্যে দুধ পান করেছেন বলেই তাদের পৃক্ষ লম্বন করে থাকেন। প্রকৃত রহস্যের অবগতি শুধু তাঁর মায়েরই ছিল। আর খুব সম্ব, মহান আল্লাহ হযরত মূসাকেও (আঃ) এটা জানিয়েছিলেন। মৃতদেহ দেখেই হযরত মূসা (আঃ) কেঁপে ওঠেন এবং তিনি বুঝে নেন যে, এটা শয়তানী কাজ। সে তো বিভ্রান্তকারী ও প্রকাশ্য শত্রু। তারপর তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন!” মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু। যেহেতু ওটা হত্যার ব্যাপার ছিল সেহেতু তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি সদা সজাগ দৃষ্টি রাখেন যে, না জানি কখন রহস্য উদঘাটিত হয়ে পড়ে। এদিকে ফিরাউনের কাছে অভিযোগ পেশ করা হয় যে, বানী ইসরাঈলের কোন লোক একজন কিবতীকে হত্যা করেছে। ফিরাউন হুকুম জারী করে দিলোঃ “ঘটনাটি পূর্ণরূপে তদন্ত কর এবং হত্যাকারীকে অনুসন্ধান করে ধরে আনো এবং সাক্ষীও হাজির কর। অপরাধ প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকেও হত্যা করে ফেলো।" পুলিশরা। যথারীতি তল্লাশী চালাতে থাকলো। কিন্তু হত্যাকারীর কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। ঘটনাক্রমে পরের দিনও হযরত মূসা (আঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন। দেখেন যে, গতকল্য যে ইসরাঈলীকে তিনি রক্ষা করেছিলেন তার সাথেই আর একজন কিবতীর ঝগড়া হচ্ছে। হযরত মূসাকে (আঃ) দেখা মাত্রই তার কাছে সে ফরিয়াদ করে। কিন্তু সে অনুভব করে যে, সম্বতঃ হযরত মূসা (আঃ) তার গতকল্যের কাজে লজ্জিত আছেন। তাঁকেও তার এই বারবার। ঝগড়া এবং বারবার ফরিয়াদ করন খারাপ লাগলো। তাই তিনি ইসরাঈলীকেই লক্ষ্য করে বললেনঃ “তুমিই খুব দুষ্ট লোক এবং বড়ই ঝগড়াটে।' একথা বলে তিনি কিবতীকে ধরার ইচ্ছা করলেন। কিন্তু ঐ কাপুরুষ ইসরাঈলী লোকটি মনে করলো যে, তিনি তার উপর অসন্তুষ্ট আছেন, কাজেই তাকেই হয়তো ধরতে আসছেন। অথচ ওটা ছিল তার সম্পূর্ণভীরুতা মূলক ধারণা। তিনি তো ঐ ফিরাউনীকেও ধরতে চাচ্ছিলেন। এবং তাকে বাচাবার ইচ্ছা করছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসের অবস্থায় ঐ ইসরাঈলীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়লোঃ “হে মূসা (আঃ)! যেমন আপনি গতকল্য একটি লোককে মেরে ফেলেছিলেন। তেমনই কি আজ আমাকেও মেরে ফেলতে চান?" একথা শুনে ঐ কিতবী তাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় এবং পুলিশকে ঐ খবর দিয়ে দেয়। ফিরাউনও ঘটনাটি জানতে পারে। তৎক্ষণাৎ সে জল্লাদদেরকে হুকুম দেয়ঃ “মূসাকে (আঃ) ধরে হত্যা করে দাও।" তারা তখন হযরত মূসার (আঃ) খোজে ছুটে পড়ে। এদিকে একজন বনী ইসরাঈল রাস্তা কেটে নিকট রাস্তা দিয়ে এসে হযরত মূসাকে (আঃ) এ খবর অবহিত করে। হে ইবনু জুবাইর (রঃ)! এটা তো ছিল পঞ্চম ফিৎনা। এ খবর শোনা মাত্রই হযরত মূসা (আঃ) মিসর ছেড়ে মাদইয়ানের পথে যাত্রা শুরু করে দেন। না তিনি কখনো পদব্রজে চলেছেন, না কখনো কোন বিপদে পড়েছেন। শাহজাদাদের মত অতি আদরে লালিত পালিত হয়েছেন। এই পথও ছিল তার অজানা। কোন দিন তার সফরের কোন সুযোগ আসেনি। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তার কাছে সোজা পথে চালিত হওয়ার প্রার্থনা জানিয়ে তিনি চলতে লাগলেন। অবশেষে তিনি মাদইয়ানের সীমান্তে পৌঁছে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান যে, লোকেরা তাদের জন্তু গুলিকে পানি পান করাচ্ছে। তিনি আরো দেখেন যে, দুটি মেয়ে তাদের পশুগুলিকে ধরে দাড়িয়ে আছে। তাদেরকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “লোকগুলির সাথে তোমরাও তোমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছ না কেন? কি জন্যে দুর দাড়িয়ে থেকে পশুগুলিকে পানি পানে বিরত রেখেছো?"তারা উত্তরে বললোঃ “এই ভীড় ঠেলে পশুগুলিকে পানি পান করানো আমাদের দ্বারা সম্ব হচ্ছে না। লোকেরা তাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে চলে গেলে আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে থাকি।” হযরত মূসা (আঃ) তখন সামনে অগ্রসর হয়ে তাদের জন্তুগুলিকে পানি পান করিয়ে দেন। তিনি খুব শক্তিশালী লোক ছিলেন বলে সবারই আগে তাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে দেন। মেয়ে দুটি তাদের বকরিগুলি নিয়ে তাদের বাড়ীর পথে রওয়ানা হয়ে যায়। হযরত মূসা (আঃ) একটি গাছের ছায়ায় বসে পড়েন। বসে বসে তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ“হে আল্লাহ! আমি আপনার সর্বপ্রকারের করুণার মুখাপেক্ষী।” মেয়ে দু'টি বাড়ী পৌঁছলে তাদের পিতা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আজকে তোমরা সময়ের পূর্বে কি করে আসতে পারলে এবং বকরিগুলিকেও তো পেট ভর্তি মনে হচ্ছে?” তারা উত্তরে ঘটনাটি খুলে বললো। তিনি বললেনঃ “তোমাদের একজন এখনই গিয়ে লোকটিকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।" মেয়েটি গিয়ে হযরত মূসাকে (আঃ) তার আব্বার কাছে ডেকে নিয়ে আসে। তাদের পিতা হযরত শুআইব (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। তাঁর ঘটনা শুনে হযরত শুআইব (আঃ) তাকে বলেনঃ “এখন কোন ভয়ের কারণ নেই। তুমি অত্যাচারীদের হাত হতে রক্ষা পেয়েছে। আমরা ফিরাউনের প্রজা নই এবং আমাদের উপর তার কোন অধিকারও নেই।" তৎক্ষণাৎ একটি মেয়ে তার পিতাকে বলে উঠলোঃ “আব্বা! তিনি আমাদের কাজ করে দিয়েছেন। তিনি খুব শক্তিশালী লোক এবং বড়ই বিশ্বস্তও বটে। যদি তাকে আমাদের কাজে নিযুক্ত করতেন তবে খুব ভাল হতো! তিনি মজুরীর উপর আমাদের বকরিগুলি চরাবেন।” একথা শুনে পিতা লজ্জিত হলেন এবং মেয়ের উপর তাঁর কঠিন রাগও হলো। তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি কি করে জানতে পারলে যে, সে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত?” উত্তরে মেয়েটি বললোঃ “তার শক্তির পরিচয় আমি এভাবেই পেলাম যে, তিনি আমাদের বকরিগুলিকে পানি পান করানোর জন্যে পানি ভর্তি বড় বালতি একাই বহন করেছিলেন এবং খুবই দ্রুতগতিতে কাজ করছিলেন। আর তাঁর বিশ্বস্ততার পরিচয় এভাবে পেলাম যে, আমার শব্দ শুনেই তিনি দৃষ্টি উচু করলেন এবং যখন বুঝতে পারলেন যে, আমি একজন মহিলা তখন তিনি গ্রীবা নীচ করে আমার কথা শুনতে থাকলেন। আল্লাহর কসম! আপনার পুর্ণ পয়গাম পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি দৃষ্টি উপরে উঠান নাই। তারপর তিনি আমাকে বলেনঃ “তুমি আমার পিছনে থাকো এবং দূরে থেকে আমাকে পথ বাতলিয়ে দাও। এটা তার খোদাভীতি ও বিশ্বস্ততার পরিচয় বটে।" মেয়ের এ কথা শুনে পিতার মর্যাদা রক্ষা পেলো, ক্রোধ দুরীভূত হলো এবং মেয়ের দিক থেকে তার অন্তর পরিষ্কার হলো। আর তার অন্তরে হযরত মূসার (আঃ) প্রতি ভালবাসা জমে গেল। সুতরাং তিনি হযরত মূসাকে (আঃ) বললেনঃ “আমি ইচ্ছা করছি যে, আমার এই দুটি মেয়ের মধ্যে একটির সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার বাড়ীতে কাজ করবে। আর যদি দশ বছর কাজ কর তবে আরো ভাল হয়। আমি যে লোক এটা তুমি দেখতে পাবে।” উভয়ের মধ্যে চুক্তি হয়ে গেল। হযরত মূসা (আঃ) আট বছরের পরিবর্তে দশ বছরই পূর্ণ করলেন।হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেনঃ “এটা আমার পূর্বে জানা ছিল। তাই, একজন খৃস্টান আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই। তারপর আমি হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) এটা জিজ্ঞেস করি এবং তিনি উত্তর দেন। তখন আমি ঐ খৃস্টানের নিকট এটা বর্ণনা করি। এটা শুনে সে বলেঃ “তোমার শিক্ষক বড় পণ্ডিতই বটে।” আমি বললামঃ তা তো বটেই।"হযরত মূসা (আঃ) চুক্তিকৃত সময় পূর্ণ করে স্বীয় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মাদইয়ান হতে বিদায় গ্রহণ করেন। তারপর ঐ সব ঘটনা ঘটে যার বর্ণনা এই আয়াতগুলিতে রয়েছে। তিনি আগুন দেখে সেখানে গমন করেন, মহান আল্লাহর সাথে কথা বলেন, তাঁর লাঠি সাপ হয়ে যায়, হাতে উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়, নবওয়াত লাভ করেন এবং ফিরাউনের কাছে প্রেরিত হন। অতঃপর তিনি তার একটি লোককে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে নিজে নিহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন এবং এর থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে নিজের জিহ্বার জডত্য র করার প্রার্থনা জানান। তার এই প্রার্থনাও কবুল করা হয়। তারপর তিনি তার ভাই হারূণের (আঃ) সহায়তা লাভ ও নুবওয়াত প্রাপ্তির জন্যে মহান আল্লাহর নিকট দুআ করেন। তাঁর এই দুআও মঞ্জুর করা হয়। অতঃপর তিনি লাঠি নিয়ে মিসরের বাদশাহ ফিরাউনের নিকট গমন করেন। এদিকে হযরত হারূণের (আঃ) কাছে ওয়াহী আসেঃ “তুমি তোমার ভাই মূসার (আঃ) কাজে সহায়তা কর এবং তার সঙ্গী হয়ে যাও।” এই নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা দভাই মিলিত হয়ে ফিরাউনের দরবারে উপস্থিত হন। তার কাছে তাদের প্রবেশের অনুমতি চাওয়া হলে বহু বিলম্বে তারা অনুমতি প্রাপ্ত হন। তারা তার কাছে প্রবেশ করে তাকে বলেনঃ “আমরা আল্লাহ তাআলার রাসূলরূপে তোমার নিকট আগমন করেছি। তারপর তাদের মধ্যে যে প্রশ্ন ও উত্তরের আদান-প্রদান হয় তা কুরআন কারীমে বিদ্যমান রয়েছে। ফিরাউন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলোঃ “আচ্ছা বলতো, তোমরা চাও কি?” এরপর সে হযরত মূসাকে (আঃ) তাঁর কিবতীকে হত্যার ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিলো। এর যে ওজর তিনি পেশ করলেন তা কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর তারা বললেনঃ “আমরা চাই যে, তুমি আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনবে এবং আমাদের সাথে বানী ইসরাঈলকে পাঠিয়ে দেবে।” ফিরাউন এটা অস্বীকার করলো এবং বললোঃ “যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে কোন মুজিযা’ প্রদর্শন কর। হযরত মূসা (আঃ) তৎক্ষণাৎ তার লাঠি ফেলে দেন ওটা মাটিতে পড়া মাত্রই এক বিরাট ভয়াবহ অজগর সাপ হয়ে গিয়ে হা করতঃ ফিরাউনের দিকে ধাবিত হয়। ফিরাউন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সিংহাসন হতে লাফিয়ে পড়ে এবং পালাতে পালাতে অনুনয় বিনয়ের সুরে। হযরত মূসাকে (আঃ) সম্বোধন করে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, এটাকে ধরে নাও।” হযরত মূসা (আঃ) তাতে হাত লাগানো মাত্রই ওটা পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। অতঃপর তিনি স্বীয় হাতটি বুকের দিকে প্রবেশ করিয়ে তা বের করলেন। তৎক্ষণাৎ তা কোন রোগের দাগ ছাড়াই উজ্জ্বলরূপে প্রকাশ পায়। তা দেখে ফিরাউন হতভম্ব হয়ে যায়। আবার তিনি হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বের করলে তা আসল অবস্থায় ফিরে আসে। তখন ফিরাউন তার সভাষদবর্গকে বলেঃ “তোমরা তো দেখতেই পেলে যে, এরা দু’জন যাদুকর। যাদুর জোরে তারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দেশকে দখল করে নেবে এবং তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।” অতঃপর সে তাদের দু'জনকে বললোঃ “আমরা তোমাদের নুবওয়াত স্বীকার করছি না এবং তোমাদের দাবী দাওয়াও পূর্ণ করতে সম্মত নই। বরং আমরা আমাদের যাদুকরদেরকে তোমাদের সাথে মুকাবিলা করার জন্যে আহবান করছি, যারা তোমাদের উপর জয়যুক্ত হয়ে যাবে।”সুতরাং ফিরাউনের লোকেরা এই চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগে গেল। দেশের সর্বস্থান হতে যাদুকরদেরকে অতি মর্যাদার সাথে ডেকে এনে একত্রিত করলো। তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “এদের যাদু কি প্রকারের?” ফিরাউনের লোকেরা উত্তরে বললোঃ“ লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।” যাদুকররা তখন বললোঃ “তাতে কি হলোঃ আমরা লাঠির দড়িগুলিকে এমন সাপ বানিয়ে দেবো যার মুকাবিলা ভূ-পৃষ্ঠের কেউই করতে পারে না। কিন্তু আমাদের জন্যে পুরস্কার নির্ধারণ করতে হবে।” ফিরাউন তাদেরকে কথা দিয়ে বললোঃ “পুরস্কার কি আমি তোমাদেরকে বিশিষ্ট সভাষদবর্গের অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। আর তোমরা যা চাইবে তাই দেবো।” সুতরাং তারা ঘোষণা করে দিলোঃ “ঈদের দিন কিছু। বেলা হলে অমুক জায়গায় মুকাবিলা হবে।" বর্ণিত আছে যে, তাদের ঐ ঈদের দিন ছিল আশূরার দিন (১০ই মুহররম)। ঐদিন লোকেরা সকাল সকালই প্রতিযোগিতার মাঠে পৌঁছে গেল। কে হারে ও জিতে তা তারা স্বচক্ষে দেখতে চায়। তারা বলেঃ “আমাদের যাদুকররা পূর্ণ অভিজ্ঞ। সুতরাং তারা জয়যুক্ত হবেই এবং আমরা তাদেরকেই মানবো ।” আবার মাঝে মাঝে তারা উপহাস করে বলেঃ “দেখা যাক, এই দু’জন যাদুকরই যদি বিজয়ী হয়ে। যায় তবে আমরা তাদেরই অনুগত হয়ে যাবো।”ময়দানে এসে যাদুকররা হযরত মূসাকে (আঃ) বললোঃ “তোমরাই প্রথমে তোমাদের যাদু প্রকাশ করবে, না আমরা?" উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “তোমরাই প্রথমে শুরু কর।” তখন তারা তাদের লাঠি ও দড়িগুলি মাঠে নিক্ষেপ করলো। ওগুলি সাপ হয়ে গিয়ে আল্লাহর নবীদের দিকে ধাবিত হলো। এ দেখে ভয়ে তারা পিছনে সরতে শুরু করলেন। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসার (আঃ) কাছে আল্লাহর ওয়াহী আসলোঃ “তুমি তোমার লাঠিটি মাটিতে নিক্ষেপ কর।” তিনি তাই করলেন। তখন ওটা এক ভয়াবহ বিরাট অজগর হয়ে গিয়ে তাদের সমস্ত সাপকে গ্রাস করে ফেললো। এ দেখে যাদুকররা বুঝে নিলো যে, এটা যাদু নয়। বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এটা একটা নিদর্শন। সুতরাং তারা সবাই ঈমান আনলো এবং ঘোষণা করে দিলোঃ “আমরা মূসা (আঃ) ও হারূণের (আঃ) প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম। আমরা এই দুই ভাই এর নুবওয়াতকে স্বীকার করে নিলাম। আমরা আমাদের অতীতের পাপকার্য হতে তাওবা করলাম। এর ফলে ফিরাউন ও তার লোকদের কোমর ভেঙ্গে গেল। লজ্জায় তাদের মুখ কালো হয়ে গেল। অপমানিত হয়ে তাদের মুখে কথা সরলো না। এদিকে তো এই হলো, আর ঐ দিকে ফিরাউনের স্ত্রী, যিনি হযরত মূসাকে (আঃ) নিজের পুত্ররূপে লালন পালন করেছিলেন, অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করছিলেন যে, তিনি যেন স্বীয় নবীদ্বয়কে জয়যুক্ত করেন। ফিরাউনও তাঁর এ অবস্থা লক্ষ্য করছিল। কিন্তু তার ধারণা হয়েছিল যে, পালিত পুত্রের পক্ষপাতিত্বের কারণেই তার এ অবস্থা হয়েছে।এখানে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরাউন বেঈমানীর উপর কোমর কষে নেয়। মহান আল্লাহর পক্ষ হতে হযরত মূসার (আঃ) হাতে আরো বহু মু'জিযা প্রকাশ পায়। যখনই কোন বিপদে পড়তো তখনই ফিরাউন হতবুদ্ধি হয়ে বিনীতভাবে হযরত মূসার (আঃ) কাছে আবেদন করতোঃ “হে মূসা (আঃ)! যদি এই বিপদ দূর হয়ে যায় তবে আমি বানী ইসরাঈলকে তোমাদের সাথে পাঠিয়ে দিবো।” কিন্তু যখনই বিপদ কেটে যেতো তখনই সে আবার অস্বীকার করে বসতো এবং ঔদ্ধত্যপণা শুরু করে দিতো। আর বলতোঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার প্রতিপালক কি এ ছাড়া বেশী কিছু আর করতে পারে?" সুতরাং তার উপর তূফান আসলো, ফড়িং আসলো, উকুন আসলো, ব্যাঙ আসলো, রক্ত আসলো এবং আরো বহু নিদর্শন সে স্বচক্ষে দেখলো। যখনই বিপদ আসে তখনই সে হযরত মূসার (আঃ) কাছে দৌড়িয়ে যায় এবং ওয়াদা করে। আর যখনই বিপদ দূর হয়ে যায় তখনই সে আবার ষড়যন্ত্র করতে শুরু করে। অবশেষে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ আসেঃ “হে মূসা (আঃ)! বানী ইসরাঈলকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও।"এই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) রাতারাতিই বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান। সকালে ফিরাউনের লোকেরা দেখতে পায় যে, রাত্রেই সমস্ত বানী ইসরাঈল পালিয়ে গিয়েছে। তারা ফিরাউনকে খবর দেয়। সে সারা দেশে নির্দেশনামা পাঠিয়ে চতুর্দিক থেকে সৈন্য একত্রিত করে এবং বিরাট দল নিয়ে বানী ইসরাঈলের পশ্চাদ্ধাবন করে। পথে যে নদী পড়ে তার প্রতি মহান আল্লাহর ওয়াহী প্রেরণ করেনঃ “যখন আমার বান্দা মূসার (আঃ) লাঠি তোমার উপর পড়বে তখন। তুমি তাদের জন্যে পথ করে দিয়ে। তোমার মধ্যে যেন বারোটি পথ হয়ে যায়, যাতে বানী ইসরাঈলের বারোটি গোত্র তাদের জন্যে পৃথক পৃথক পথ পেয়ে যায়। অতঃপর যখন তারা পার হয়ে যাবে এবং ফিরাউন তার লোকলস্করসহ এসে পড়বে তখন তুমি মিলে যাবে এবং ফিরাউন ও তার লোকদের একজনকেও ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে না।" হযরত মূসা (আঃ) তার লোকজনসহ নদীর তীরে পৌঁছে দেখেন যে, ওটা তরঙ্গায়িত হচ্ছে, পানি ঘুরপাক খাচ্ছে এবং ভীষণ গর্জন করছে। এতে হয়রত মূসা (আঃ) হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন এবং তাতে লাঠির আঘাত করতে ভুলে যান। এদিকে নদী এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যে, হয়তো হযরত মূসা (আঃ) কোন অংশে লাঠির আঘাত করবেন, আর সে হয়তো খরব রাখবে না, ফলে সে আল্লাহর অবাধ্যচিরণের কারণে তার শাস্তির কবলে পতিত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ফিরাউন তার লোক লস্করসহ বানী ইসরাঈলের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে। তখন তারা হতবুদ্ধি হয়ে বলেঃ “আপনার উপর আল্লাহর যে নির্দেশ রয়েছে তা পালন করুন! আল্লাহ মিথ্যাবাদী নন এবং আপনিও না।” হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা তো আমাকে নির্দেশ দিয়েছেনঃ “যখন তুমি নদীর তীরে পৌঁছবে তখন সে তোমার জন্যে বারোটি রাস্তা করে দেবে, তখন তোমরা ঐ রাস্তাগুলি ধরে পার হয়ে যাবে।” তৎক্ষণাৎ তাঁর লাঠির আঘাত করার হুকুমের কথা স্মরণ হয়ে যায়। সুতরাং তিনি লাঠির আঘাত করেন। এদিকে ফিরাউনের সেনাবাহিনীর প্রথমাংশে বানী ইসরাঈলের শেষাংশের কাছে পৌঁছেই গিয়েছিল। এমতাবস্থায় নদীর ঐপথগুলি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। হযরত মূসা (আঃ) তার লোকজনসহ নিরাপদে নদী পার হয়ে যান। যখন তারা পার হয়ে গেলেন তখন ফিরাউনও তার লোক লস্করসহ ঐ পথগুলি দিয়ে যেতে শুরু করে। যখন তারা সবাই নেমে পড়েছে তখনই নদী আল্লাহর নির্দেশক্রমে পরস্পর মিলিত হয়ে যায়। ফলে তারা সবাই নদীতে নিমজ্জিত হয়। বানী ইসরাঈল ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখছিল। তথাপি তারা বলেঃ“হে আল্লাহর রাসূল (আঃ)! ফিরাউন মরলো কি না তা আমরা কি করে জানবো?” হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করলেন, ফলে নদী ফিরাউনের মৃত দেহ তীরে নিক্ষেপ করলো। তা দেখে তার মৃত্যু সম্পর্কে বানী ইসরাঈলের দৃঢ় বিশ্বাস হলো। তারা বুঝতে পারলো যে, ফিরাউন তার লোক-লস্করসহ ধ্বংস হয়ে গেছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) সেখান থেকে যাত্রা শুরু করেন। পথে তিনি দেখতে পান যে, একটি সম্প্রদায় মূর্তি পূজায় মেতে গেছে। তখন বানী ইসরাঈল হযরত মূসাকে (আঃ) বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (আঃ)! আমাদের জন্যেও এ ধরনের কোন মা’ৰূদ নির্ধারণ করে দিন!" হযরত মূসা (আঃ) তখন তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলেনঃ “তোমরা বড়ই অজ্ঞ লোক (শেষ পর্যন্ত)।” “তোমরা এতো বড় শিক্ষামূলক নিদর্শন দেখলে এবং এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শুনলে তথাপি এখন পর্যন্ত না উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করলে, না লজ্জিত হলে। এখান থেকে সামনে আরো কিছু দূর অগ্রসর হয়ে তারা এক মঞ্জিলে অবস্থান করলেন এবং সেখানে তাঁর ভাই হারূণকে (আঃ) নিজের স্থলাভিষিক্ত করে কওমকে। বললেনঃ “আমার ফিরে আসা পর্যন্ত তোমরা এর আনুগত্য করবে। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট যাচ্ছি। তার সাথে ত্রিশ দিনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় কওম হতে পৃথক হয়ে ওয়াদার স্থানে পৌঁছে যান এবং ত্রিশ দিন রাত্রির রোযা পূর্ণ করতঃ স্বীয় প্রতিপালকের সাথে কথা বলার আকাংখা করেন। কিন্তু মনে করলেন যে, রোযা রাখার কারণে মুখ দিয়ে হয়তো, গন্ধ বের হচ্ছে, তাই অল্প কিছু ঘাস নিয়ে চর্বন করেন। আল্লাহ তাআলা জানা সত্ত্বেও তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি এরূপ করলে কেন?” তিনি জবাবে বলেনঃ “শুধু এই কারণে যে, আপনার সাথে কথা বলার সময় যেন আমার মুখ দিয়ে সুগন্ধ বের হয়। আল্লাহ তাআলা তখন তাকে বলেনঃ “তোমার কি এটা জানা নেই যে, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আমার কাছে মেস্ক আম্বারের চেয়েও বেশী সুগন্ধময়? তুমি আরো দশটি রোযা রেখে নাও, তার পরে আমার সাথে কথা বলো।”এই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) রোযা রাখতে শুরু করেন। তাঁর কওমকে তিনি যে ত্রিশ দিনের কথা বলে এসেছিলেন তা যখন অতিক্রান্ত হয়ে গেল এবং তিনি ফিরলেন না তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়লো। হযরত হারূণ (আঃ) তাদের মধ্যে ভাষণ দান কালে বললেনঃ “তোমরা যখন মিসর হতে রওয়ানা হয়ে। এসেছিলে তখন তোমাদের কাছে কিবতীদের টাকা পয়সা ছিল, কারো উপর ঋণ ছিল এবং কারো কারো কাছে তাদের আমানত ছিল। এগুলি তো আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারছি না। আবার এটাও আমরা সমীচীন মনে করছি যে, ওগুলো আমাদের মালিকানায় থেকে যাবে। সুতরাং তোমরা একটি গভীর গর্ত খনন কর এবং তোমাদের কাছে তাদের যে সব আসবাবপত্র, অলংকার এবং সোনা রূপা রয়েছে সবগুলিই তাতে নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দাও।” তাঁর কথামতই কাজ করা হলো। তাদের সাথে সামেরী নামক একটি লোক ছিল। সে গায়-বাছুর পূজারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু সে বানী ইসরাঈলের প্রতিবেশী হওয়ায় এবং ফিরাউনের কওমের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এদের সাথে সেখান থেকে চলে এসেছিল। সে কোন একটা নিদর্শনের কিছুটা মুষ্টিতে উঠিয়ে নিয়েছিল।হযরত হারূণ (আঃ) তাকে বলেনঃ “হে সামেরী! তুমিও তোমার। হাতের মধ্যকার ওটা এতে নিক্ষেপ করে দাও।" সে উত্তরে বললোঃ “এটা তো রাসূলের (আঃ) নিদর্শনেরই এক মুষ্টি যার মাধ্যমে আমাদেরকে নদী পার করিয়ে নেয়া হয়েছিল। ভাল কথা, আমি এটাকেও নিক্ষেপ করছি এই শর্তে যে, আপনি আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করবেন যেন এর দ্বারা আমি যা চাইবো তা-ই হয়ে যায়।” হযরত হারূণ দুআ করলেন এবং সে ওটা গর্তে নিক্ষেপ করে দিলো এবং বললোঃ “আমি চাই যে, এর দ্বারা যেন একটি বাছুর সৃষ্ট হয়ে যায়।” মহান আল্লাহর ক্ষমতা বলে ঐ গর্তে যা ছিল তা। একটা বাছুরের (গো-বৎসের) আকার বিশিষ্ট হয়ে যায়। ওর ভিতর ছিল শুন্য। ওতে রূহ ছিল না। কিন্তু ওর পিছনের ছিদ্র দিয়ে বায় প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতো। ফলে একটা শব্দ হতো। বানী ইসরাঈল তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ হে সামেরী! এটা কি?” ঐ বেঈমান উত্তরে বললোঃ “এটাই তোমাদের সবারই প্রতিপালক। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) পথ ভুলে গেছেন এবং অন্য জায়গায় প্রতিপালকের সন্ধানে চলে গেছেন। তার এই কাজ ও উক্তি বানী ইসরাঈলকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে দেয়। একটি দল বললোঃ “হযরত মূসা (আঃ) ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি না। যদি সত্যই এটা মাবুদ হয় তবে আমরা এর বেআদবী করি কেন। আর যদি এটা মাবুদ না হয় তবে হযরত মূসা (আঃ) ফিরে আসলেই প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়ে যাবে। অন্য একটি দল বললোঃ “এটা বাজে কথা এবং শয়তানী কাজ। আমরা এই বাজে কাজের উপর ঈমান আনতে পারি না। এটা আমাদের প্রতিপালকও নয় এবং এর উপর আমাদের ঈমানও নেই।” আর একটি দুষ্টদল আন্তরিকভাবে ওটাকে মেনে নেয় এবং সামেরীর কথার উপর ঈমান আনে। কিন্তু বাহ্যিকভাবে তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। তৎক্ষণাৎ হযরত হারূণ (আঃ) তাদের সকলকেই একত্রিত করেন এবং বলেনঃ “হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তোমাদের উপর এটা একটা পরীক্ষা। তোমরা এই ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েছো কেন? তোমাদের প্রতিপালক ও মাবুদ তো একমাত্র রহমান (আল্লাহ)। তোমরা আমার আনুগত্য কর ও আমার কথা মেনে নাও।” তারা বললোঃ হযরত মূসা (আঃ) ত্রিশ দিনের ওয়াদা করে গেলেন, আর আজ চল্লিশ দিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে তবুও তিনি ফিরলেন না এর কারণ কি?" কোন কোন নির্বোধ লোক একথাও বলে ফেললো যে, তার প্রতিপালক ভুল করেছেন। এখন তিনি তার সন্ধানেই থাকবেন। এদিকে দশটি রোযা পূর্ণ হওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথা বলার মর্যাদা লাভ করেন। তাঁকে বলা হলোঃ “তোমার এখানে আসার পর তোমার কওমের অবস্থা কি হয়েছে তার খবর রাখো কি (তারা যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে)?” একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ অবস্থায় ফিরে আসেন এবং কওমকে বহু কিছু বলেন ও শুনেন। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তিনি তার ভাই হারূণের (আঃ) মাথার চুল ধরে টানতে থাকেন। তার ক্রোধ এতো বৃদ্ধি পায় যে, পুস্তিকাটিও হাত থেকে ফেলে দেন। তারপর প্রকৃত ব্যাপার অবগত হয়ে তিনি স্বীয় ভাই এর নিকট ওজর পেশ করেন এবং তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি সামেরীকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে সামেরী! তুমি এ কাজ কেন করেছো?” উত্তরে সে বলেঃ “আল্লাহর প্রেরিত পুরুষের পায়ের নীচে থেকে এক মুষ্টি আমি। উঠিয়ে নিয়েছিলাম। এ লোকগুলি ওটা চিনতে পারে নাই, আমি চিনে। ছিলাম। আমি ঐ মুষ্টিই আগুনে নিক্ষেপ করেছিলাম। আমি এটাই পছন্দ করেছিলাম।” হযরত মূসা (আঃ) তখন তাকে বললেনঃ দূর হও। তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্যে এটাই রইলো যে, তুমি বলবেঃ আমি অস্পৃশ্য এবং তোমার জন্যে রইলো এক নির্দিষ্টকাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম। হবে না এবং তুমি তোমার সেই মা’বৃদের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুমি রত ছিলে, আমরা ওকে জ্বালিয়ে দিবই। অতঃপর ওকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই।” তিনি তাই করলেন। তখন বানী ইসরাঈলের পূর্ণ বিশ্বাস হলো যে, আসলে ওটা মাবুদ ছিল না। কাজেই তারা বড়ই লজ্জিত হয় এবং যে সব মুসলমান হযরত হারূণের আকীদার উপর ছিলেন তারা ছাড়া সবাই হযরত মূসার (আঃ) নিকট ওজর পেশ করে বলতে লাগলোঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন যেন তিনি। আমাদের জন্যে তাওবার দরজা খুলে দেন। তিনি যা বলবেন আমরা তা-ই পালন করবো যাতে আমাদের এই কঠিন অপরাধ তিনি মার্জনা করে দেন।" হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের ঐ দলের মধ্য হতে সত্তর জন লোককে বাছাই করে পৃথক করে নেন এবং তাওবার জন্যে নিয়ে যান। সেখানে যমীন ফেটে যায় এবং তার সমস্ত সঙ্গীকে ওর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। এতে হযরত মূসা (আঃ) অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, তিনি বানী ইসরাঈলকে মুখ দেখাবেন কিরূপে? তিনি কান্নাকাটি করতে শুরু করেন এবং দুআ করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে ইতিপূর্বেই আমাকে ও এদের সবাইকে ধ্বংস করে দিতে পারতেন। আমাদের নির্বোধদের পাপের কারণে আমাদেরকে আপনি ধ্বংস করবেন না।” হযরত মূসা (আঃ) তাদের বাহ্যিক দিক দেখছিলেন, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টি ছিল তাদের ভিতরের দিকে। তাদের মধ্যে এমন লোকও ছিল যারা বাহ্যিকভাবে ঈমান এনেছিল বটে, কিন্তু অন্তরে তারা ঐ বাছুরের মাবুদ হওয়াকেই বিশ্বাস করছিল। ঐ মুনাফিকদের কারণেই তাদের সকলকেই যমীনেই ধ্বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হযরত মুসার (আঃ) কান্নাকাটির কারণে আল্লাহর রহমত উথলিয়ে উঠে। তিনি তাকে জবাবে বলেনঃ “আমার রহমত তো সবারই উপর ছেয়ে আছে কিন্তু আমি এটা ওদেরই নামে দান করে থাকি যারা মুত্তাকী ও খোদাভীরু। যারা ঈমান আনে। আর আমার ঐ রাসূলের (সঃ) আনুগত্য স্বীকার কর যার গুণাবলীর বর্ণনা তারা তাদের কিতাবে অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জীলে পেয়ে থাকে।” তখন হযরত মূসা (আঃ) আরয করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার কওমের জন্যে এটা প্রার্থনা করলাম, আর আপনি উত্তরে বললেন যে, আপনার রহমত আপনি ঐ লোকদের উপর নাযিল করবেন যারা আগামীতে আসবে। তাহলে হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এই রহমত প্রাপ্ত নবীর (সাঃ) উম্মতেরই অন্তর্ভুক্ত করতেন!” বিশ্ব প্রতিপালক বললেনঃ “জেনে রেখো, এই লোকদের তাওবা কবূল হওয়ার পন্থা এই যে, তারা পরস্পর একে অপরকে হত্যা করতে শুরু করে দিবে। পুত্র পিতাকে দেখবে না এবং পিতা পুত্রকে ছাড়বে না।” বানী ইসরাঈল তা-ই করলো এবং যারা মুনাফিক ছিল তারাও সত্য অন্তরে তাওবা করলো। আল্লাহ তাআলা তাদের তওবা কবুল করলেন। যারা বাঁচলো তাদেরকেও ক্ষমা করা হলো এবং যারা নিহত হলো তাদেরকেও মাফ করা হলো।অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) এখান হতে বায়তুলমুকাদ্দাসের পথে গমন করেন। তাওরাতের ফলকটি তিনি সাথে নেন। তাদেরকে তিনি আল্লাহর আহকাম শুনিয়ে দেন। তা তাদের কাছে খুবই ভারীবোধ হয় এবং তারা পরিষ্কারভাবে তা অস্বীকার করে বসে। তখন একটি পাহাড়কে তাদের মাথার উপর উঠিয়ে খাড়া করে দেয়া হয়। ওটা সামিয়ানার মত তাদের মাথার উপর ছিল এবং তাদের মাথার উপর পড়ে যাওয়ার সদাভয় ছিল। তারা যখন তাওরাত গ্রহণ করে নিলো তখন পাহাড় সরে গেল। তারপর তাদেরকে নিয়ে তিনি পবিত্র ভূমিতে আগমন করেন। সেখানে এসে তিনি দেখতে পান যে, ওটা একটি বড় শক্তিশালী কওমের দখলে রয়েছে। তারা হযরত মূসাকে (আঃ) অত্যন্ত কাপুরুষের মত বললোঃ “এখানে তো বড় শক্তিশালী কওম রয়েছে। তাদের সাথে মুকাবিলা করার শক্তি আমাদের নেই। তারা বেরিয়ে গেলে পর আমরা ঐ শহরে প্রবেশ করবো। তারা তো এইভাবে ভীরুতা প্রদর্শন করতে থাকে। আর ওদিকে আল্লাহ তাআলার ঐ উদ্ধত ও অবাধ্য লোকদের মধ্য হতে দুই ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন। তারা শহর হতে বেরিয়ে এসে হযরত মূসার (আঃ) কওমের সাথে মিলিত হয় এবং তাদের বুঝাতে থাকে। তাদেরকে তারা বলেঃ “তোমরা তাদের দেহ ও সংখ্যা দেখে ভয় করো না। তারাবীর পুরুষ নয়। তাদের মন খুবই দুর্বল। তোমরা সামনে অগ্রসর হও। তাদের শহরের দরজায় তোমরা প্রবেশ করো, তোমরা অবশ্যই বিজয় লাভ করবে।” একথাও বলা হয়েছে যে, যে দুটি লোক বানী ইসরাঈলকে বুঝাচ্ছিল এবং তাদের সাহসী করে তুলছিল তারা বানী ইসরাঈলেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।তাদের এতো করে বুঝানো, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এবং হযরত মূসার (আঃ) ওয়াদা সত্ত্বেও তারা কাপুরুষতা পরিত্যাগ করলো না। বরং তারা স্পষ্টভাবে বলে দিলোঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত এই লোকগুলি শহরে অবস্থান করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে এক পা সামনে অগ্রসর হবো না। হে মূসা। (আঃ)! তুমি ও তোমার প্রতিপালক গিয়ে যুদ্ধ করা, আমরা এখানে বসে থাকছি।” হযরত মূসা (আঃ) আর ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন না। ঐ কাপুরুষদের বিরুদ্ধে তাঁর মুখ দিয়ে বদ দু’আ বেরিয়ে গেল এবং তিনি তাদেরকে ‘ফাসেক’ নামে অভিহিত করলেন। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেও তাদের এই নামই নির্ধারিত হয়ে গেল। তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে ঐ ময়দানেই বন্দী করে দেয়া হলো। ঐ মরুভূমিতেই তারা হতবুদ্ধি ও বিচলিতভাবে ফিরতে লাগলো। ঐ বন্দীর মাঝে তাদেরকে বরাবরই মেঘ দ্বারা ছায়া করা হয় এবং তাদের উপর মান্না ও সালওয়া অবতারিত হয়। তাদের কাপড় ছিড়তো না এবং ময়লাও হতো না। একটি চার কোণ বিশিষ্ট পাথর তাদের সাথে রাখা হয়েছিল। ওর উপর হযরত মূসা (আঃ) লাঠি মারলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়। প্রত্যেক কোণে তিনটি করে মোট বারোটি প্রস্রবণ। ঐ লোকগুলি চলতে চলতে সামনে অগ্রসর হতো। তারপর কান্ত হয়ে পড়তো এবং বিশ্রাম গ্রহণ করতো। সকালে উঠে দেখতো যে, পাথরটি গতকাল যেখানে ছিল সেখানেই রয়েছে।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ হাদীসটি মারফু’রূপে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে এই রিওয়াইয়াতটি শুনে বলেনঃ “এতে যে রয়েছে যে, ঐ ফিরাউনী লোকটি হযরত মূসার (আঃ) পূর্ব দিনের হত্যার খবর প্রচার করেছিল, এটা বুঝে আসে না। কেননা, কিবতীর হত্যার সময় ঐ কিবতীর সাথে লড়াইরত বানী ইসরাঈলের ঐ লোকটি ছাড়া আর কেউই উপস্থিত ছিল না। তার একথা শুনে হযরত ইবনু উমার (রাঃ) খুব রাগান্বিত হন এবং হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) হাত ধরে হযরত সা'দ ইবনু মালিকের (রাঃ) নিকট নিয়ে যান এবং তাকে বলেনঃ “আপনার স্মরণ আছে কি যে, একদিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে ঐ ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন যে হযরত মূসার (আঃ) হত্যার রহস্য খুলে দিয়েছিল? বলুন তো, ওটা কি বানী ইসরাঈলের লোক ছিল, না ফিরাউনী ছিল?” হযরত সা'দ (রাঃ) উত্তরে বলেন, “বানী ইসরাঈলের ঐ লোকটির মূখে ঐ ফিরাউনী লোকটি শুনেছিল, তারপর সে গিয়ে শাসন কর্তৃপক্ষকে খবর দিয়েছিল। আর সে নিজেই তার সাক্ষী হয়েছিল। (ইমাম নাসায়ী (রঃ) এটা সুনানে কুল্লায় বর্ণনা করেছেন) এই রিওয়াইয়াতটিই অন্যান্য কিতাবেও রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কালাম হতে খুব কম অংশই মারফু’রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। খুব সম্ভব তিনি বানী ইসরাঈলের কারো নিকট হতে এ রিওয়াইয়াতটি নিয়ে থাকবেন। অথবা হয়তো তিনি হযরত কাব আহব্বার (রাঃ) হতেই এই রিওয়াইয়াতটি শুনে থাকবেন। আবার অন্য কারো নিকট থেকেও শুনে থাকতে পারেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। আমি আমার উসতাদ ও শায়েখ হাফিয আবুল হাজ্জাদ মাযী (রঃ) হতেও এটাই শুনেছি।
وَاصْطَنَعْتُكَ لِنَفْسِي
📘 Please check ayah 20:44 for complete tafsir.
اذْهَبْ أَنْتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي
📘 Please check ayah 20:44 for complete tafsir.
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
📘 Please check ayah 20:44 for complete tafsir.
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
📘 ৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসাকে (আঃ) আল্লাহ তাআলা সম্বোধন করে বলেনঃ হে মূসা (আঃ)! তুমি ফিরাউনের নিকট থেকে পালিয়ে গিয়ে মাদইয়ানে পৌঁছে ছিলে। সেখানে তুমি শ্বশুরবাড়ীতে আশ্রয় পেয়েছিলে এবং শর্ত অনুযায়ী কয়েক বছর ধরে তোমার শ্বশুরের বকরী চরিয়েছিলে। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে তুমি তার কাছে পৌঁছেছে। তোমার প্রতিপালকের কোন চাহিদা পূর্ণ হতে বাকী থাকে না এবং কোন ফরমান ছুটে যায় না। তার ওয়াদা অনুযায়ী তার নির্ধারিত সময়ে তোমাদের তার কাছে পৌছা অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার ছিল। ভাবার্থ এও হতে পারেঃ তুমি তোমার মর্যাদায় পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ তুমি নবুওয়াত লাভ করেছে। আমি তোমাকে আমার মনোনীত পয়গাম্বর করেছি।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত আদম (আঃ) ও হযরত মূসার (আঃ) পরস্পর সাক্ষাৎ হয়। তখন হযরত মূসা (আঃ) হযরত আদমকে (আঃ) বলেনঃ “আপনি তো ঐ ব্যক্তি যে, আপনি মানব মণ্ডলীর ভাগ্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে বেহেশত হতে বহিস্কৃত করেছেন?' তখন হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) উত্তরে বলেনঃ “আপনি তো ঐ ব্যক্তি যে, আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় রাসূলরূপে মনোনীত করেছেন এবং নিজের জন্যে আপনাকে বেছে নিয়েছেন, আর আপনার উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন? জবাবে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “" হযরত আদম (আঃ) তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি ওটা আমার সৃষ্টির পূর্বে লিখিত পান নাই?" হযরত মূসা (আঃ) জবাব দেনঃ “ হাঁ, তা-ই পেয়েছি।" অতঃপর হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসার (আঃ) অভিযোগ খণ্ডন করে বিজয়ী হলেন।" (হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ হে মূসা (আঃ)! তুমিও তোমার ভ্রাতা আমার নিদর্শনসহ যাত্রা শুরু করো এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না। তোমরা দু’জন ফিরাউনের নিকট গমন কর, সে তো সীমালংঘন করেছে।সুতরাং তারা দু'জন ফিরাউনের সামনে আল্লাহর যিকরে লেগে থাকতেন যাতে আল্লাহর সাহায্য তঁারা লাভ করতে পারেন এবং ফিরাউনের শান শওকত নষ্ট হয়ে যায়। যেমন হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার খাটি ও সত্যবাদী বান্দা সেই যে সারা জীবন ধরে আমাকে স্মরণ করে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা ভ্রাতৃদ্বয় আমার পয়গাম নিয়ে ফিরাউনের নিটক গমন কর। সে মস্তক উঁচু করে রয়েছে এবং আমার অবাধ্যতার সীমালংঘন করেছে। আর নিজের মালিক ও সৃষ্টিকর্তাকে সে ভুলে গেছে।এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে। এই আয়াতে বড় উপদেশ ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তা এই যে, ফিরাউন হচ্ছে চরম অহংকারী ও আত্মী। পক্ষান্তরে হযরত মূসা (আঃ) হলেন অত্যন্ত ভদ্র ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী। এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা তাকে তার সাথে নম্রভাবে কথা বলার নির্দেশ দিচ্ছেন। হযরত ইয়াযীদ রাক্কাশী (রঃ) এই আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে সেই সত্ত্বা! যিনি শত্রুর সাথেও নরম ব্যবহার করে থাকেন, তাঁর ব্যবহার ঐ ব্যক্তির সাথে কিরূপ হতে পারে যে তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে ও তাকে আহ্বান করে।” হযরত অহাব (রঃ) বলেন যে, নরম কথাবার্তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাকে বলাঃ আমরি ক্রোধ গোস্বা হতে আমার ক্ষমা ও করুণা অনেক বড়। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, নরম কথা বলা দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদের দিকে দাওয়াত দেয়া বুঝানো হয়েছে যাতে সে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ' এই উক্তিকারী হয়ে যায়। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো তাকে বলাঃ তোমার প্রতিপালক রয়েছেন। তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে তাঁর ওয়াদাকৃত জায়গায় পৌঁছতে হবে, যেখানে জান্নাত ও জাহান্নাম রয়েছে। হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেনঃ এর দ্বারা বুঝানো হয়েছেঃ তুমি তাকে আমার দরার উপর এনে দাঁড় করিয়ে দাও। মোট কথা, হে মূসা (আঃ) ও হারূণ (আঃ)! তোমরা ফিরাউনের সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, এর ফলে হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের পথে হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে (মানুষকে) আহ্বান কর এবং উত্তম পন্থায় তাদেরকে বুঝাতে থাকো, যাতে তারা বুঝে এবং পথভ্রষ্টতা ও ধ্বংস হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকে। আর তাঁর আনুগত্য ও ইবাদতের দিকে ঝুঁকে পড়ে।” (১৬:১২৫) যেমন এক জায়গায় ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা উপদেশ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির জন্যে যে উপদেশ গ্রহণ করে অথবা ভয় করে।” সুতরাং উপদেশ গ্রহণ করার অর্থ হলো মন্দ কাজ ও ভয়ের জিনিস থেকে সরে যাওয়া এবং ভয় করার অর্থ হলো আনুগত্যের দিকে ঝুঁকে পড়া। হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, তার ধ্বংসের জন্যে দুআ না করা যে পর্যন্ত না তার সমস্ত ওজর শেষ হয়ে যায়। এখানে ইবনু ইসহাক (রঃ) যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়েল এবং অন্য একটি বর্ণনা মতে উমাইয়া ইবনু আবিসসালাতের নিম্ন লিখিত কবিতাংশ বর্ণনা করেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আপনি ঐ সত্ত্বা যে, আপনি স্বীয় অনুগ্রহ ও দয়ায় মূসাকে (আঃ) রাসূল ও আহ্বানকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। তাকে আপনি বলেছেনঃ তুমি ও হারূণ (আঃ) বিদ্রোহী ফিরাউনের কাছে গমন কর এবং তাকে বলোঃ তুমিই কি আকাশকে বিনা স্তম্ভে ধারণ করে রেখেছো? তুমিই কি ওটাকে এভাবে বানিয়ে ছো? তুমিই কি ওর মাঝে উজ্জ্বল সূর্য স্থাপন করেছে যা অন্ধকারকে আলোতে পরিবর্তিত করে? এদিকে সকালে ওটা উদিত হলো, ওদিকে দুনিয়া হতে অন্ধকার দূরীভূত হয়ে গেল। আচ্ছা বলতো, মাটি হতে বীজ উদগীরণকারী কে? আর কে ওর মাথায় শীষ সৃষ্টিকারী? এ সব নিদর্শন দ্বারাও কি তুমি আল্লাহকে চিনতে পারলে না?
قَالَا رَبَّنَا إِنَّنَا نَخَافُ أَنْ يَفْرُطَ عَلَيْنَا أَوْ أَنْ يَطْغَىٰ
📘 Please check ayah 20:48 for complete tafsir.
قَالَ لَا تَخَافَا ۖ إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَىٰ
📘 Please check ayah 20:48 for complete tafsir.
فَأْتِيَاهُ فَقُولَا إِنَّا رَسُولَا رَبِّكَ فَأَرْسِلْ مَعَنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا تُعَذِّبْهُمْ ۖ قَدْ جِئْنَاكَ بِآيَةٍ مِنْ رَبِّكَ ۖ وَالسَّلَامُ عَلَىٰ مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَىٰ
📘 Please check ayah 20:48 for complete tafsir.
إِنَّا قَدْ أُوحِيَ إِلَيْنَا أَنَّ الْعَذَابَ عَلَىٰ مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ
📘 ৪৫-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহর দু'জন নবী (আঃ) তার আশ্রয় প্রার্থনা করতঃ নিজেদের দুর্বলতার কথা তাঁর সামনে পেশ করছেন। তাঁরা বলেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদের ভয় হচ্ছে যে, না জানি ফিরাউন হয়তো আমাদের উপর জুলুম করবে, আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করবে, আমাদের মুখবন্ধ করার জন্যে তাড়াতাড়ি আমাদেরকে কোন বিপদে জড়িয়ে ফেলবে এবং আমাদের প্রতি অবিচার করবে। তাদের একথার জবাবে মহান আল্লাহ তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ তাকে তোমরা মোটেই ভয় করবে না। আমি স্বয়ং তোমাদের সাথে রয়েছি। আমি তোমাদের ও তার কথাবার্তা শুনতে থাকবে এবং তোমাদের কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকতে পারে না। তার চুলের ঝুঁটি আমার হাতে রয়েছে। সে আমার অনুমতি ছাড়া নিঃশ্বাসও গ্রহণ করতে পারে না। সে কখনো আমার আয়ত্বের বাইরে যেতে পারে না। আমার হিফাযত ও সাহায্য সহযোগিতা সদা তোমাদের সাথে থাকবে।হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ) মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেনঃ হে আমার প্রতিপালক! ফিরাউনের কাছে যাওয়ার সময় যা পাঠ করবো তা আমাকে শিখিয়ে দিন!" তখন আল্লাহ তাআলা তাকে নিম্নের দুআটি শিখিয়ে দেনঃ (আরবী) যার আরবী অর্থ হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ সব কিছুর পূর্বেও আমি জীবিত এবং সব কিছুর পরেও আমি জীবিত।” এরপর ফিরাউনের কাছে গিয়ে কি বলতে হবে তা আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শিখিয়ে দেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তারা গিয়ে ফিরাউনের দরযার উপর দাড়িয়ে যান। অতঃপর তারা তার নিকট প্রবেশের অনুমতি চান। বহু বিলম্বে তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়।মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) বলেন যে, তারা দু'জন দু'বছর পর্যন্ত প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় ফিরাউনের কাছে যেতেন। দারোয়ানদেরকে বলতেন যে, তারা যেন তাদের আগমন সংবাদ ফিরাউনকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু ফিরাউনের ভয়ে কেউ তাকে সংবাদ দেয় নাই। দু'বছর পর একদা ফিরাউনের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু, যে বাদশাহর সাথে কৌতুকও করতো, তাকে বলেঃ “আপনার দরার উপর একটি লোক দাড়িয়ে আছে এবং এক বিস্ময়কর মজার কথা বলছে। সে। বলছে যে, আপনি ছাড়া নাকি তার অন্য এক মাবুদ রয়েছেন যিনি তাকে। রাসূল করে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। ফিরাউন জিজ্ঞেস করেঃ “সে আমারই দরযার উপর দাড়িয়ে রয়েছে?” তার বন্ধু উত্তরে বললোঃ “হ” ফিরাউন তাকে তার কাছে ডেকে আনার নির্দেশ দিলো। সুতরাং লোক গেল এবং দু’জন নবীকে (আঃ) ফিরাউনের দরবারে হাজির করলো। হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “আমি বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল।” ফিরাউন তাকে চিনতে পেরে বলে উঠলোঃ “ আরে, এ যে মূসা (আঃ)!”সুদ্দী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) মিসরে তার নিজের বাড়ীতেই অবস্থান করেছিলেন। তাঁর মাতা ও ভাই তাঁকে প্রথমে চিনতে পারেন নাই। তাঁকে অতিথি মনে করে বাড়ীতে যা রান্না করা হয়েছিল তাই তাঁর সামনে হাজির করেন। পরে তারা তাকে চিনতে পারেন এবং সালাম দেন। হযরত মূসা (আঃ) তাঁর ভাইকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে হারূণ (আঃ)! আমার প্রতি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হয়েছে যে, আমি যেন বাদশাহ ফিরাউনকে আল্লাহর পথে আহ্বান করি। আর তোমার সম্পর্কে আমার উপর আল্লাহর নির্দেশ এই যে, তুমি আমার পৃষ্ঠপোষকতা করবে। তখন হযরত হারূণ (আঃ) তাকে বললেনঃ “তা হলে আল্লাহর নামে শুরু করে দিন।” রাত্রে তারা দু'ভাই ফিরাউনের কাছে গমন করেন। হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় লাঠি দ্বারা দরযায় করাঘাত করেন। এ দেখে ফিরাউন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে এবং বলেঃ “কার এমন দুঃসাহস যে, দরবারের আদবের বিপরীত লাঠি দ্বারা আমাকে সতর্ক করছে?” দরবারের লোকেরা জবাবে বললোঃ “হে শাহানশাহ! “ তেমন কিছু নয়, একজন পাগল লোক বলতে রয়েছেঃ “আমি একজন রাসূল।" ফিরাউন হুকুম দিলোঃ “তাকে আমার সামনে হাজির কর।” সুতরাং হযরত মূসা (আঃ) হযরত হারূণকে (আঃ) সাথে নিয়ে ফিরাউনের নিকট হাজির হলেন এবং তাকে বললেনঃ “আমরা আল্লাহর রাসূল। তুমি আমাদের সাথে বানী ইসরাঈলকে পাঠিয়ে দাও এবং তাদের প্রতি জুলুম করো না। আমরা বিশ্বপ্রতিপালকের নিকট থেকে আমাদের রিসালাতের প্রমাণাদি ও মুজিযা নিয়ে আগমন করেছি। তুমি আমাদের কথা মেনে নাও, তাহলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে পত্র রোমক সম্রাট হিরাত্মািসের নামে পাঠিয়ে ছিলেন তাতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' এরপরে লিখিত ছিলঃ “এই পত্রটি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের (সঃ) পক্ষ হতে রোমক সম্রাট হিরাকিয়াসের নামে লিখিত। যে হিদায়াতের অনুসরণ করে তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, শান্তি লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা তোমাকে দ্বিগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন।”মুসাইলামা কাযযাব সত্যবাদী ও সত্যায়িত রাসূলকে (সঃ) একটি পত্র লিখেছিলেন যাতে লিখিত ছিলঃ “এই পত্রটি আল্লাহর রাসূল মুসাইলামার পক্ষ হতে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের (সঃ) নামে লিখিত। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে শরীক করে নিয়েছি। শহর আপনার জন্যে এবং গ্রাম আমার জন্যে। এই কুরায়েশরা তো বড়ই অত্যাচারী লোক।” তার এই পত্রের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে লিখেনঃ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সঃ) পক্ষ থেকে মুসাইলামা কায্যাবের নামে। ঐ ব্যক্তির উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে হেদায়াতের অনুসরণ করে। জেনে রেখো যে, যমীনের অধিকারী হলেন আল্লাহ। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তার ওয়ারিস বানিয়ে দেন। পরিণামের দিক দিয়ে ভাল লোক তারাই যাদের অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে।মোট কথা আল্লাহর রাসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহও (আঃ) ফিরাউনকে ঐ কথাই বলেন যে, তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে সত্যের অনুসারী। অতঃপর তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআ’লর ওয়াহীর মাধ্যমে আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, আল্লাহর শাস্তির যোগ্য শুধু তারাই যারা আল্লাহর কালামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং তার কথা মানতে অস্বীকার করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ঔদ্ধত্যপনা ও হঠকারিতা করে এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়, তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম।" (৭৯:৩৭-৩৯) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “আমি তোমাদেরকে লেলিহান শিখাযুক্ত আগুন হতে ভয় প্রদর্শন করছি, যার মধ্যে শুধু ঐ হতভাগ্যই প্রবেশ করবে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর এক জায়গায় আছেঃ “সে বিশ্বাস করে নাই এবং নামায আদায় করে নাই। বরং সে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
قَالَ فَمَنْ رَبُّكُمَا يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:52 for complete tafsir.
الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ
📘 Please check ayah 20:52 for complete tafsir.
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الْأُولَىٰ
📘 Please check ayah 20:52 for complete tafsir.
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي فِي كِتَابٍ ۖ لَا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنْسَى
📘 ৪৯-৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী ফিরাউন হযরত মূসার (আঃ) মুখে আল্লাহ্ব পয়গাম শুনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করন হিসেবে তাঁকে প্রশ্ন করেঃ “তোমাকে প্রেরণকারী ও তোমার প্রতিপালক কে? আমি তো তাকে জানি না, বুঝি না এবং মানি না। বরং আমার জ্ঞানে তো তোমাদের সবারই প্রতিপালক আমি ছাড়া আর কেউ নয়। তার এ কথার জবাবে আল্লাহর রাসূল হযরত মূসা (আঃ) তাকে বলেনঃ “আমার প্রতিপালক তিনিই যিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার জোড়া দান করেছেন। যিনি মানুষকে মানুষের আকারে, গাধাকে গাধার আকারে, বকরীকে বকরীর আকারে, এভাবে প্রত্যেক প্রাণীকে পৃথক পৃথক আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন ।প্রত্যেককেওর বিশিষ্ট আকার দান করেছেন। প্রত্যেকের সৃষ্টি পৃথক গুণ বিশিষ্টরূপে সৃষ্টি করেছেন। মানব সৃষ্টির পন্থা আলাদা, চতুষ্পদ জন্তুর সৃষ্টির নিয়ম পৃথক এবং হিংস্র জন্তুর গঠন রীতি পৃথক। প্রত্যেকের জোড়ার গঠন-কৌশল স্বতন্ত্র। খাদ্য ও পানীয় এবং পানাহারের জিনিসগুলি সব পৃথক পৃথক। সবকিছুর পরিমাণ নির্ধারণ করে গঠনরীতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আমল, আযল এবং রিযক নির্ধারণ করে তারই উপর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সমস্ত মাখলুকের কারখানা সুশৃংখলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কেউই এগুলোকে এধার ওধার করতে পারে না। সৃষ্টির স্রষ্টা, তকদীর, নির্ধারণকারী এবং ইচ্ছামত সৃষ্টজীব সৃষ্টিকারীই হলেন আমার প্রতিপালক।" এ সব শুনে ঐ নির্বোধ আবার প্রশ্ন করলোঃ “আচ্ছা, যারা আমাদের পূর্বে গত হয়েছে এবং আল্লাহর ইবাদত অস্বীকার করেছে তাদের অবস্থা কি?" এই প্রশ্নটি সে খুব গুরুত্বের সাথে করলো। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) এমনভাবে এর উত্তর দিলেন যে, সে হতবাক হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ “তাদের সবারই জ্ঞান আমার প্রতিপালকের রয়েছে। তিনি লাওহে মাহফুজে তাদের আমল সমূহ লিখে রেখেছেন। পুরস্কার প্রদান ও শাস্তি দেয়ার দিন নির্ধারিত রয়েছে। তিনি ভুল করবেন না এবং ছোট বড় কেউই তার পাকড়াও হতে ছুটতে পারবে না। এমন নয় যে, ভুলে কোন অপরাধী তার শাস্তি হতে মুক্তি পেয়ে যাবে। তার জ্ঞান সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তাঁর পবিত্র সত্ত্বা ভুল ভ্রান্তি হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞান বহির্ভূত নয়। জানার পরে ভুলে যাওয়া তাঁর বিশেষণ নয়। তিনি জ্ঞানের স্বল্পতা ও ভুলে যাওয়ার ক্রটি হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْ نَبَاتٍ شَتَّىٰ
📘 Please check ayah 20:56 for complete tafsir.
كُلُوا وَارْعَوْا أَنْعَامَكُمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِأُولِي النُّهَىٰ
📘 Please check ayah 20:56 for complete tafsir.
۞ مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ
📘 Please check ayah 20:56 for complete tafsir.
وَلَقَدْ أَرَيْنَاهُ آيَاتِنَا كُلَّهَا فَكَذَّبَ وَأَبَىٰ
📘 ৫৩-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেনঃ ঐ আল্লাহই যমীনকে লোকদের জন্যে বিছানা বানিয়েছেন। (আরবী) শব্দটি অন্য কিরআতে (আরবী) ও রয়েছে ।মহান আল্লাহ যমীনকে বিছানারূপে বানিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা তার উপর স্থির থাকতে পারো এবং ওরই উপর শুইতে, বসতে ও চলা ফেরা করতে পারো। তিনি যমীনে তোমাদের চলা ফেরা ও সফর করার জন্যে পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে তোমরা পথ ভুলে না যাও এবং সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো। তিনিই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে যমীন হতে বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপন্ন করেন। তোমরা তা নিজেরা খেয়ে থাকো এবং তোমাদের গবাদি পশু গুলিকেও আহার করিয়ে থাকো। তোমাদের খাদ্য, ফল-ফলাদি এবং তোমাদের জীব জন্তুর চারা-ভূষি শুষ্ক ও সিক্ত সবকিছুই এই বৃষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা উৎপন্ন করে থাকেন। এই সব নিদর্শন দলীল হচ্ছে আল্লাহর আল্লাহ হওয়ার এবং তার একত্ব ও অস্তিত্বের উপর।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর থেকেই তোমাদের সূচনা। কেননা, তোমাদের পিতা আদমের (আঃ) সৃষ্টি এই মাটি থেকেই। এর মধ্যেই তোমাদেরকে আবার ফিরে যেতে হবে। মৃত্যুর পর তোমাদেরকে এর মধ্যেই দাফন করা হবে। অতঃপর আমি এটা হতেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করবো। আমার আহবানে সাড়া দিয়ে আমার প্রশংসা করতে করতে তোমরা উঠবে এবং বিশ্বাস করে নিবে যে, তোমরা খুব অল্প দিনই দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। অন্য আয়াতে আছেঃ “এই যমীনেই তোমাদের জীবন অতিবাহিত হবে, মৃত্যুর পরেও তোমরা এর মধ্যেই যাবে এবং এর মধ্য হতেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।” সূনানের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক মৃত ব্যক্তির দাফনের পরে তার কবরে মাটি দেয়ার সময় প্রথমবার (আরবী) বলেন, দ্বিতীয় বার (আরবী) বলেনঃ এবং তৃতীয়বার (আরবী) বলেন। মোট কথা, ফিরাউনের সামনে সমস্ত দলীল প্রমাণ এসে যায়। সে মু'জিযা ও নিদর্শনসমূহ স্বচক্ষে দেখে নেয় কিন্তু সবকিছুই সে অস্বীকার করে। এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করতেই থাকে। সে কুফরী, ঔদ্ধত্যপনা, হঠকারিতা, এবং অহংকার হতে বিরত থাকে নাই। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের অন্তর ওটা বিশ্বাস করে নেয়া সত্ত্বেও তারা যুলুম, বাড়াবাড়ি ও অস্বীকার করা হতে বিরত থাকলো না।” (২৭:১৪)
قَالَ أَجِئْتَنَا لِتُخْرِجَنَا مِنْ أَرْضِنَا بِسِحْرِكَ يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:59 for complete tafsir.
فَلَنَأْتِيَنَّكَ بِسِحْرٍ مِثْلِهِ فَاجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ مَوْعِدًا لَا نُخْلِفُهُ نَحْنُ وَلَا أَنْتَ مَكَانًا سُوًى
📘 Please check ayah 20:59 for complete tafsir.
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّينَةِ وَأَنْ يُحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
📘 ৫৭-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেন যে, হযরত মূসার (আঃ) লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া এবং হাত উজ্জ্বল হওয়া ইত্যাদি মু'জিযা দেখে ফিরাউন তাকে বললোঃ “এটা তো যাদু ছাড়া কিছুই নয়। তুমি যাদুর জোরে আমাদের রাজ্য ছিনিয়ে নিতে চাও। তুমি অহংকার করো না। আমরাও এই যাদূতে তোমার মুকাবিলা করতে পারি। দিন ও জায়গা নির্ধারণ করা হোক এবং মুকাবিলা হোক। আমরাও ঐ দিনে ঐ জায়গায় যাবো এবং তুমিও যাবে। কেউ আসবে না। এটা যেন না হয়। খোলা মাঠে সবারই সামনে হার-জিত হবে।” হযরত মূসা (আঃ) তার এ কথার জবাবে বললেনঃ “আমি এটা মেনে নিলাম। আমার মতে এর জন্যে তোমাদের ঈদের দিনটিই নির্ধারিত হওয়া উচিত। কেননা, এটা অবকাশের দিন। সেই দিন সবাই একত্রিত হতে পারবে। সুতরাং তারা দেখে শুনে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য দেখতে সক্ষম হবে। মুজিযা ও যাদু পার্থক্য সবারই উপর প্রকাশিত হয়ে পড়বে। সময়টা হতে হবে বেলা ওঠার সময়, যাতে যা কিছু ময়দানে আসবে সবাই তা দেখতে পায়।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তাদের ঐ ঈদ বা খুশীর দিনটি আশুরার দিন (১০ই মুহররম)। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এরূপ স্থলে নবীরা (আঃ) কখনো পিছনে সরে যান না। তারা এমন কাজ করেন যাতে সত্য পরিস্ফুট হয়ে ওঠে এবং সবারই উপর তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এজন্যেই তিনি প্রতিযোগিতার জন্যে তাদের ঈদের দিনটি ধার্য করেন। আর সময় নির্ধারিত করলেন বেলা ওঠার সময় এবং জায়গারূপে সমতল ভূমিকে নির্ধারণ করলেন যাতে সবাই দেখতে পায়। ফিরাউন অবকাশ চাইলো। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) অবকাশ দিতে অস্বীকার করলেন। তখন তার উপর ওয়াহী করা হলোঃ “সময় নির্ধারণ করে নাও।" ফিরাউন চল্লিশ দিনের অবকাশ চাইলো। তা মঞ্জুর করা হলো।
لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرَىٰ
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
فَتَوَلَّىٰ فِرْعَوْنُ فَجَمَعَ كَيْدَهُ ثُمَّ أَتَىٰ
📘 Please check ayah 20:64 for complete tafsir.
قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَىٰ
📘 Please check ayah 20:64 for complete tafsir.
فَتَنَازَعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ وَأَسَرُّوا النَّجْوَىٰ
📘 Please check ayah 20:64 for complete tafsir.
قَالُوا إِنْ هَٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَنْ يُخْرِجَاكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَىٰ
📘 Please check ayah 20:64 for complete tafsir.
فَأَجْمِعُوا كَيْدَكُمْ ثُمَّ ائْتُوا صَفًّا ۚ وَقَدْ أَفْلَحَ الْيَوْمَ مَنِ اسْتَعْلَىٰ
📘 ৬০-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যখন ফিরাউনের সঙ্গে হযরত মূসার (আঃ) মুকাবিলার দিন, সময় ও স্থান নির্ধারিত হয়ে গেল তখন ফিরাউন এদিক ওদিক থেকে যাদুকরদেরকে এনে একত্রিত করতে শুরু করলো। ঐ যুগে যাদুকরদের খুবই শক্তি ও প্রভাব ছিল এবং বড় বড় যাদুকর বিদ্যমান ছিল। ফিরাউন সাধারণ ভাবে নির্দেশ জারী করে দিয়েছিল যে, সমস্ত জ্ঞানী অভিজ্ঞ যাদুকরদেরকে যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সময় মত সমস্ত যাদুকর। একত্রিত হয়ে যায়। ফিরাউন ঐ মাঠেই তার সিংহাসনটি বের করে আনে এবং ওর উপর উপবেশন করে। সভাষদ ও মন্ত্রীবর্গ নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়ে। জনসাধারণও একত্রিত হয়। যাদুকরর সিংহাসনের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে যায়। ফিরাউন তাদেরকে উত্তেজিত করতে শুরু করে এবং বলেঃ “দেখো, আজ তোমাদেরকে এমন কলা-কৌশল প্রদর্শন করতে হবে যাতে তা। দুনিয়ায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকে।" যাদুকররা বললোঃ “যদি আমরা জয়যুক্ত হই তবে পুরস্কৃত হবো তো?" সে উত্তরে বলেঃ “ কেন হবে না? আমি তো তোমাদেরকে আমার দরবারের বিশিষ্ট লোক বানিয়ে নেবো।”আর এদিকে হযরত মূসা (আঃ) তাদের কাছে তাবলীগের কাজ শুরু করে দেন। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “দেখো, তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করো না, অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করে দিবেন। তোমরা মানুষের চোখে ধূলো দিয়ো না যে, আসলে কিছুই নয় অথচ যদুর মাধ্যমে তোমরা অনেক কিছু দেখবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সৃষ্টিকর্তা নেই যে বাস্তবে কিছু সষ্টি করতে পারে। জেনে রেখো যে মিথ্যা উদ্ভাবনকারীরা কখনো সফলকাম হতে পারে না।” হযরত মূসার (আঃ) এ কথা শুনে তাদের মধ্যে তাদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ বুঝে নেয় যে, এটা যাদুকরদের কথা নয়। সত সত্যই ইনি আল্লাহর রাসুল (আঃ)। আবার অন্যেরা বললো যে, তিনি যাদুকরই বটে। সুতরাং তার সাথে মুকাবিলা করতেই হবে। এসব আলাপ আলোচনা তারা অত্যন্ত সতর্কতা ও গোপনীয়তার সাথে করলো।(আরবী) এর দ্বিতীয় পঠন (আরবী) ও রয়েছে। দু'টোর ভাবার্থ একই। অতঃপর তারা সশব্দে বললোঃ “এই দু’জন অবশ্যই যাদুকর। তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থার অস্তিত্ব নাশ করতে চায়। যদি তারা আজ জয়যুক্ত হয়ে যায় তবে স্পষ্ট কথা যে, শাসন ক্ষমতা তাদের হাতেই চলে যাবে। তারা। তোমাদের হাত থেকে রাজত্ব কেড়ে নেবে এবং সাথে সাথে তোমাদের ধর্মও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। রাজত্ব আরাম-আয়েশ সবকিছুই তারা ছিনিয়ে নেবে। তোমাদের মান মর্যাদা, জ্ঞান-বিবেক, রাজত্ব ইত্যাদি সবকিছুই তাদের অধিকারভুক্ত হয়ে যাবে। তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকেরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে, বাদশাহ ফকীর হয়ে যাবে, তোমাদের জাকজমক ও শান শওকত বিনষ্ট হবে এবং এই সব কিছুই বানী ইসরাঈলের দখলে চলে যাবে যারা আজ তোমাদের দাস-দাসীরূপে জীবন যাপন করছে। অতএব, তোমরা তোমাদের যাদু ক্রিয়া সংহত কর। অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে হাজির হয়ে যাও। জেনে রেখো যে, যে আজ বিজয় লাভ করবে সেই হবে প্রকৃত পক্ষে সফলকাম। আজ যদি আমরা জয়যুক্ত হই তবে বাদশাহ আমাদেরকে তার দরবারের বিশিষ্ট লোক বানিয়ে নিবেন।”
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:70 for complete tafsir.
قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ
📘 Please check ayah 20:70 for complete tafsir.
فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:70 for complete tafsir.
قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَىٰ
📘 Please check ayah 20:70 for complete tafsir.
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
📘 Please check ayah 20:70 for complete tafsir.
وَإِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّهُ يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفَى
📘 Please check ayah 20:8 for complete tafsir.
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ هَارُونَ وَمُوسَىٰ
📘 ৬৫-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
যাদুকররা হযরত মূসাকে (আঃ) বললোঃ হে মূসা (আঃ)! তুমি কি প্রথমে তোমার যাদুর ক্রিয়াকলাপ দেখাবে, না আমরাই প্রথমে দেখাবো?” উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “তোমরাই প্রথমে দেখাও যাতে দুনিয়াবাসী দেখে নেয় যে, তোমরা কি করলে? অতঃপর আল্লাহ তাআলা তোমাদের কীর্তিকলাপকে কিরূপে মিটিয়ে দেন।” তখন যাদুকররা তাদের লাঠিগুলি ও রশিগুলি মাঠে নিক্ষেপ করলো। মনে হলো যেন ওগুলি সাপ হয়ে গিয়ে চলতে ফিরতে রয়েছে এবং ময়দানে দৌড়াতে শুরু করেছে। যাদুকররা বলতে লাগলোঃ “ফিরাউনের ভাগ্যগুণে আমরাই জয়যুক্ত হবো।" জনগণের চোখে যাদু করে তারা তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে দিলো এবং যাদুর চরম ভেল্কী প্রদর্শন করলো। তারা সংখ্যায়ও ছিল অনেক। তাদের নিক্ষিপ্ত রশি ও লাঠির মাধ্যমে সারা মাঠ সাপে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে হযরত মূসা (আঃ) আতংকিত হয়ে উঠলেন যে, না জানি হয়তো জনগণ তাদের কলাকৌশল ও নৈপুণ্য দেখে তাদেরই দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং মিথ্যার ফাঁদে আবদ্ধ হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ মহান আল্লাহ তাঁর কাছে ওয়াহী পাঠালেনঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার লাঠিখানা তুমি ময়দানে নিক্ষেপ করো এবং মোটেই ভয় করো না।” তিনি হুকুম পালন করলেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে ঐ লাঠিটি এক বিরাট অজগর সাপে রূপান্তরিত হলো। সাপটির পা, মাথা এবং দাতও ছিল। সে সবারই চোখের সামনে সারা ময়দান সাফ করে দিলো। মাঠে যাদুকরদের যাদুর যতগুলি সাপ ছিল সবকে গ্রাস করে ফেললো। এখন সবারই কাছে সত্য উদঘাটিত হয়ে গেল এবং তারা মুজিযা ও যাদুর পার্থক্য বুঝে নিলো এবং হক ও বাতিলের পরিচয় পেয়ে গেল। সবাই জানতে পারলো যে, যাদুকরদের সবকিছুই কৃত্রিম এবং তাতে বাস্তবতা কিছুই নেই। সুতরাং তারা যে পরাজিত হবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই।হযরত জুনদুব ইবনু আবদিল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যাদুকরদেরকে যেখানেই পাও মেরে ফেলো।” অতঃপর তিনি এই বাক্যটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেন) অর্থাৎ তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে নিরাপত্তা দান করা হবে না।যাদুকররা যখন এটা দেখলো তখন তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, এ কাজ মানবীয় শক্তির বাইরে। তারা ছিল যাদু বিদ্যায় পারদর্শী। প্রথম দর্শনেই তারা বুঝে নেয় যে, প্রকৃতপক্ষে এটা ঐ আল্লাহরই কাজ যার ফরমান অটল। তিনি যা কিছু চান তা তাঁর নির্দেশক্রমে হয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস এতো দৃঢ় হয় যে, তৎক্ষণাৎ ঐ ময়দানেই সবারই সামনে বাদশাহর বিদ্যমানতায় তারা আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যায় এবং বলে ওঠেঃ “আমরা হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণের (আঃ) প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম। তিনিই হলেন বিশ্বপ্রতিপালক।” সুবহানাল্লাহ! সকালে যারা ছিল কাফির ও যাদুকর, সন্ধ্যায় তারা হয়ে গেল মু'মিন ও আল্লাহর পথের শহীদ! বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল সংখ্যায় আশি হাজার। এটা মুহাম্মদ ইবনু কাবের (রাঃ) উক্তি। কাসিম ইবনু আবি বুয্যা (রাঃ) বলেন যে, তারা সংখ্যায় সত্তর হাজারের কিছু বেশী ছিল। সাওরী (রঃ) বলেন যে, ফিরাউনের যাদুকরদের সংখ্যা ছিল উনিশ হাজার। মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) বলেন যে, তারা সংখ্যায় পনরো হাজার ছিল। কাবুল আহবার (রঃ) বলেন যে, তারা ছিল বারো হাজার।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল সত্তরজন। সকালে ছিল তার যাদুকর এবং সন্ধ্যায় হয়ে গেল শহীদ। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, যখন তারা সিজদায় পড়ে যায় তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নত দেখিয়ে দেন এবং তারা জান্নাতে নিজেদের স্থান স্বচক্ষে দেখে নেয়। (এটা ইবনু আবি হাতিম ও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
قَالَ آمَنْتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ ۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ أَيُّنَا أَشَدُّ عَذَابًا وَأَبْقَىٰ
📘 Please check ayah 20:73 for complete tafsir.
قَالُوا لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَىٰ مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا ۖ فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ ۖ إِنَّمَا تَقْضِي هَٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
📘 Please check ayah 20:73 for complete tafsir.
إِنَّا آمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ ۗ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
📘 ৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:
ফিরাউন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেনঃ তার তো উচিত ছিল এই প্রতিযোগিতার পরে সঠিক পথে চলে আসা। যাদেরকে সে প্রতিযোগিতার জন্যে আহবান করেছিল তারা সাধারণ সমাবেশে পরাজিত হয়। তারা নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নেয়। তারা নিজেদের কাজকে যাদু এবং হযরত মূসার (আঃ) ক্রিয়াকলাপকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে প্রদত্ত মু'জিযা বলে মেনে নেয়। স্বয়ং তারা ঈমান আনছে যাদেরকে মুকাবিলার জন্যে আহ্বান করা হয়েছিল। সাধারণ সমাবেশে তারা জনগণের সামনে নির্দ্বিধায় সত্য ধর্ম কবুল করে নেয়। কিন্তু ফিরাউন তার শয়তানী ও ঔদ্ধত্যপনায় আরো বেড়ে যায় এবং নিজের শক্তির দাপট দেখাতে থাকে। কিন্তু সত্য পথের পথিকরা এই সব শক্তিকে কিছুই মনে করে না। প্রথমতঃ সে ঐ আত্মসমর্পনকারী যাদু করের দলটিকে বললোঃ “আমার বিনানুমতিতে তোমরা তার উপর ঈমান অনলে কেন?" অতঃপর সে এমন অপবাদমূলক কথা বললো যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সে যাদুকরদেরকে বললোঃ “মূসা (আঃ) তোমাদের উসতাদ। তার কাছেই তোমরা যাদু বিদ্যা শিক্ষা করেছো। তোমরা পরস্পর একই। আমাকে সিংহাসনচ্যুত করার মানসে তোমরা পরামর্শক্রমে পূর্বে তাকে প্রেরণ করেছিলে। তারপর তার সাথে মুকাবিলা করার জন্যে তোমরা নিজেরা এসেছে। অতঃপর নিজেদের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত মুতাবেক নিজেরা পরাজয়বরণ করলে এবং তাকে জিতিয়ে দিলে। এরপর তোমরা তার দ্বীন কবুল করে নিলে। উদ্দেশ্য এই যে, যেন তোমাদের দেখা দেখি আমার প্রজাবৰ্গও এই ফঁাদে জড়িত হয়ে পড়ে। এখন তোমরা তোমাদের এই চক্রান্তমূলক কাজের পরিণাম জানতে পারবে। আমি তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করবো এবং তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডে শুলবিদ্ধ করবো ? এমনি কঠোরতার সাথে তোমাদের প্রাণ বের করবো যাতে অন্যদের জন্যে এটা শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে যায়। এই ফিরাউনই সর্বপ্রথম এই শাস্তি প্রদান করে। সে আরো বলেঃ “তোমরা যে মনে করছে যে, তোমরা হিদায়াতের উপর রয়েছে, আর আমি ও আমার কওম ভ্রান্ত পথে রয়েছি এর অবস্থা তোমরা এখনই জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।" আল্লাহর ঐ ওয়ালীদের উপর ফিরাউনের এই হুমকীর ক্রিয়া বিপরীত হলো। এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেল এবং তারা হয়ে গেলো পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। তাই, তারা অত্যন্ত বেপরোয়া ভাবে তাকে জবাব দিলোঃ “আমরা আমাদের এই হিদায়াত ও বিশ্বাসের ফলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যা লাভ করেছি তা ছেড়ে আমরা কোন ক্রমেই তোমার ধর্ম ককূল করতে পারি না। তোমাকে আমরা আমাদের খালেক ও মালেকের সামনে কিছুই মনে করি না।” অথবা এটা শপথ সূচক বাক্য হতে পারে। অর্থাৎ “যিনি আমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহর শপথ! আমরা এই সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণের উপর তোমার গুমরাহীকে প্রাধান্য দিতে পারি না; তুমি আমাদের সাথে যে ব্যবহারই করো না কেন। ইবাদতের যোগ্য তিনিই যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তুমি নও। তুমি নিজেও তো তাঁরই সৃষ্ট। তোমার যা কিছু করবার আছে। তাতে তুমি মোটেই ত্রুটি করো না। তুমি তো আমাদেরকে ততক্ষণই শাস্তি দিতে পার যতক্ষণ আমরা এই পার্থিব জীবনে বন্দী রয়েছি। আমাদের বিশ্বাস আছে যে, এরপরে আমরা চিরস্থায়ী শান্তি ও অবিশ্বর সুখ ও আনন্দ লাভ করবো। আমরা আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি। আমরা আশা রাখি যে, তিনি আমাদের পূর্ববর্তী অপরাধসমূহ মার্জনা করবেন। বিশেষ করে ঐ অপরাধ তাঁর সত্য নবীর সাথে (আঃ) মুকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ফিরাউন বানী ইসরাঈলের মধ্য হতে চল্লিশজন ছেলে বাছাই করে নিয়ে যাদুকরদের হাতে সমর্পন করে, যেন তারা তাদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দেয়। তারা তাদেরকে যাদুবিদ্যায় এমন পারদর্শী করে তুলেছিল যে, দুনিয়ায় তাদের তুলনা ছিল না। তারাই এই উক্তি করেছিল। হযরত আবদুর রহমান ইবনু যায়েদও (রঃ) একথাই বলেছেন।তারা ফিরাউনকে আরো বললোঃ “আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তোমার তুলনায় বহু গুণে শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। তিনি আমাদেরকে চিরস্থায়ী পুণ্য দানকারী। আমাদের না আছে তোমার শাস্তির ভয় এবং না আছে তোমার পুরস্কারের লোভ। আল্লাহর সত্ত্বাই এর যোগ্য যে তারই ইবাদত করা হবে। তার শাস্তিও চিরস্থায়ী এবং অত্যন্ত ভয়াবহ যদি তাঁর নাফরমানী করা হয়।”সুতরাং ফিরাউন তাদের সাথে এই ব্যবহারই করলো যে, তাদের হাত-পা বিপরীত ভাবে কেটে নিয়ে তাদেরকে শূলে চড়িয়ে দিলো। সূর্যোদয়ের সময় যে দলটি ছিল কাফির, সূর্যাস্তের পূর্বেই ঐ দলটিই হয়ে গেল আল্লাহর পথের শহীদ! আল্লাহ তাদের সবারই উপর সন্তুষ্ট থাকুন!
إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ
📘 Please check ayah 20:76 for complete tafsir.
وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَٰئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَىٰ
📘 Please check ayah 20:76 for complete tafsir.
جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ جَزَاءُ مَنْ تَزَكَّىٰ
📘 ৭৪-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এটা প্রকাশ্যভাবে জানা যাচ্ছে যে, যাদুকররা ঈমান আনয়নের পর ফিরাউনকে যে সব উপদেশ দিয়েছিল, এই আয়াতগুলি ওরই অন্তর্ভুক্ত। তারা তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছে এবং তার নিয়ামত রাজির লোভ দেখাচ্ছে। তারা তাকে বলছে যে, জাহান্নামীদের বাসস্থান জাহান্নাম, যেখানে মৃত্যু তো কখনো হবেই না, কিন্তু জীবনও হবে খুবই কষ্টপূর্ণ, মৃত্যু অপেক্ষাও কঠিনতর। যেমন আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “না মৃত্যু আসবে, না শাস্তি হালকা করা হবে, কাফিরদেরকে আমি এরূপ ভাবেই শাস্তি দিতে থাকি।” (৩৫:৩৬) অন্য জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওটা উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে সে মরবেও না বাঁচবেও না।” (৮৭:১১-১৩) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “জাহান্নামবাসী বলবেঃ হে জাহান্নামের রক্ষক! তুমি প্রার্থনা কর যেন আল্লাহ তাআলা তাড়াতাড়ি আমাদের মৃত্যুদান করেন।” তখন তিনি উত্তরে বলবেনঃ “ না তোমরা আর মৃত্যুবরণ করবে, না এর থেকে বের হতে পারবে।”হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রকৃত জাহান্নামী তো জাহান্নামে পড়েই থাকবে। সেখান তাদের মৃত্যু হবে, না তারা সুখের জীবন লাভ করবে। তবে এমন লোকও হবে যাদেরকে তাদের পাপের প্রতিফল হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে যেখানে তারা পুড়ে কয়লার মত হয়ে যাবে। অতঃপর শাফাআ’তে অনুমতির পরে তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তারপর তাদেরকে বেহেশতের ধারে বিক্ষপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হবে। জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ “তাদের উপর পানি ঢেলে দাও।” তোমরা যেমন নদীর ধারে জমিতে বীজ অংকুরিত হতে দেখে থাকো। তেমনিভাবে তারা অংকুরিত হয়ে যাবে।” একথা শুনে একটি লোক বলে উঠলোঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) এমন উদাহরণ দিলেন যে, যেন তিনি কিছু দিন জঙ্গলে বসবাস করেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসে আছে যে, খুৎবায়। এই আয়াতটি পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথা বলেছিলেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে মু'মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তারা উঁচু প্রাসাদ বিশিষ্ট জান্নাত লাভ করবে। হযরত উবায়দা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে একশ' টি প্রকোষ্ঠ রয়েছে প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মাঝে ৩৩টা ব্যবধান রয়েছে যতটা ব্যবধান রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। সবচেয়ে উপরে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখান থেকে চারটি নহর প্রবাহিত হয়ে থাকে। ওর ছাদ হচ্ছে রহমানের (দয়াময় আল্লাহর) আরশ। তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করলে জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)ইয়াযীদ ইবনু আবি মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ “বলা হতো যে, বেহেশতে একশটি শ্রেণী রয়েছে। প্রতি দু' শ্রেণীর মাঝে এতোটা দুরত্ব রয়েছে যতটা দুরত্ব রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। তাতে ইয়াকূত, মণিমুক্তা এবং অলংকারও রয়েছে। প্রত্যেক বেহেশতে আমীর বা নেতা রয়েছে যার নেতৃত্ব অন্যেরা স্বীকার করে থাকে। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃইল্লিয়্যিনে অবস্থানকারীদের এমনই দেখা যায় যেমন তোমরা আকাশের তারকাগুলি দেখে থাকো। জনগণ বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই উঁচু শ্রেণীগুলি তো নবীদের (আঃ) জন্যেই বিশিষ্ট হবে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তারা হবে ঐ সব লোক যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নবীদেরকে (আঃ) সত্যবাদীরূপে স্বীকার করে নেয়।" সুনানের হাদীসে এও রয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ওটা হলো স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র। যারা অপবিত্রতা, পাপকার্য এবং শিরক ও কুফরী হতে দূরে থাকে। যারা এক আল্লাহরই ইবাদত করে এবং রাসূলদের (আঃ) আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। তাদেরই জন্যে রয়েছে এই লোভনীয় ও হিংসার যোগ্য বাসস্থান।
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًا فِي الْبَحْرِ يَبَسًا لَا تَخَافُ دَرَكًا وَلَا تَخْشَىٰ
📘 Please check ayah 20:79 for complete tafsir.
فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُودِهِ فَغَشِيَهُمْ مِنَ الْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ
📘 Please check ayah 20:79 for complete tafsir.
وَأَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهُ وَمَا هَدَىٰ
📘 ৭৭-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেন যে, ফিরাউন যেন বানী ইসরাঈলকে তার দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়ে মূসার (আঃ) হাতে সমর্পণ করে দেয়, মূসার (আঃ) এই কথাও ফিরাউন প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই, মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে (আঃ) নির্দেশ দেনঃ “তুমি রাত্রেই তাদের অজান্তে অতিসন্তর্পণে বানী ইসরাঈলকে নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়।”যেমন এর বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনকারীমের বহু জায়গায় রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার নির্দেশানুসারে হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে মিসর হতে হিজরত করেন। সকালে ফিরাউনের লোকেরা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যখন দেখে যে, শহরে একজনও বানী ইসরাঈল নেই তখন তারা ফিরাউনকে এ সংবাদ দেয়। এ খবর শুনে ফিরাউন ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং চতুর্দিক হতে সৈন্য এনে একত্রিত করার নির্দেশ দেয়। রাগে গরগর করে সে বলেঃ “এই সামান্য দলটি আমাদেরকে চরম ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেছে! আমি আজ তাদের সকলকেই তরবারী দ্বারা কচু কাটা করে ছাড়বো।” সূর্য উঠতে উঠতেই সেনাবাহিনী এসে একত্রিত হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ ফিরাউন স্বয়ং সমস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবনে বেরিয়ে পড়লো। বানী ইসরাঈল সমুদ্রের ধারে পৌঁছেই ফিরাউন ও তার সেনাবাহিনীকে পিছনে দেখতে পায়। হতবুদ্ধি হয়ে তারা তাদের নবীকে (আঃ) বলেঃ " জনাব! এখন উপায় কি? সামনে সমুদ্র এবং পিছনে ফিরাউনের বাহিনী!” হযরত মূসা (আঃ) উত্তরে বলেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। আমার প্রতিপালকই আমাকে সাহায্য করবেন। তিনি এখনই আমাকে পথ দেখিয়ে দিবেন।” তৎক্ষণাৎ ওয়াহী আসলোঃ “সমুদ্রে তোমার লাঠি দ্বারা আঘাত কর। ওটা সাথে সাথেই সরে গিয়ে তোমাদের জন্যে পথ করে দেবে।” হযরত মূসা (আঃ) তখন সমুদ্রে লাঠি দ্বারা আঘাত করলেন এবং বললেনঃ “আল্লাহর নির্দেশক্রমে সরে যাও।" সঙ্গে সঙ্গে ওর পানি পাথরের মত এদিকে ওদিকে জমে গেল এবং মধ্য দিয়ে পথ হয়ে গেল।এদিকে ওদিকে পানির বড় বড় পাহাড়ের মত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং প্রখর ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়ে পথকে একেবারে শুষ্ক যমীনের মত করে দিলো সুতরাং না ফিরাউনীদের হাতে ধরা পড়ার ভয় থাকলো, না সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার আশংকা রইলো। ফিরাউন ও তার সেনাবাহিনী এই অবস্থা অবলোকন করছিল। ফিরাউন তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলোঃ “তোমরাও এই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যাও।” একথা বলে স্বয়ং সে তার সেনাবাহিনীসহ ঐ পথে নেমে পড়লো। তারা নামা মাত্রই পানিকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো এবং চোখের পলকে সমস্ত ফিরাউনীকে ডুবিয়ে দেয়া হলো। সমুদ্রের তরঙ্গমালা তাদেরকে গোপন করে দিলো। এখানে যে বলা হয়েছে সমুদ্রের যে জিনিস তাদেরকে ঢেকে ফেলার ঢেকে ফেললো' একথা বলার কারণ এই যে, এটা সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত বিষয়, নাম নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ সমুদ্রের তরঙ্গ তাদেরকে ঢেকে ফেললো। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি উৎপাটিত আবাস ভূমিকে উল্টিয়ে নিক্ষেপ করেছিলেন।ওকে আচ্ছন্ন করলো কী সর্বগ্রাসী শাস্তি!" (৫৩:৫৩-৫৪) কোন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি হলাম অবুন নাজম্। আর আমার কবিতা আমার কবিতাই।” অর্থাৎ আমার কবিতা সুপরিচিত ও সুপ্রসিদ্ধ।মোট কথা, ফিরাউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ প্রদর্শন করে নাই। দুনিয়া যেমন সে আগে বেড়ে তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছিল, অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিনেও সে সামনে থেকে তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে যা অত্যন্ত জঘন্য স্থান।
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ
📘 এই সূরা মক্কায় অবতারিত। ইমামদের ইমাম হযরত মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক ইবনু খুযাইমা (রাঃ) স্বীয় কিতাব ‘আতাওহীদ’ এ হাদীস এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করার এক হাজার বছর পূর্বে সূরায়ে তা-হা ও সূরায়ে ইয়াসীন পাঠ করেন, যা শুনে ফেরেশতারা মন্তব্য করেনঃ “ঐ উম্মত বড়ই ভাগ্যবান যাদের উপর এই কালাম অবতীর্ণ হবে। নিশ্চয় ঐ ভাষা কল্যাণ ও বরকত প্রাপ্তির হকদার যা দ্বারা আল্লাহর কালামের এই শব্দগুলি আদায় করা হবে।” (এই রিওয়াইয়াতটি গারীব এবং এতে নাকারত বা অস্বীকৃতিও রয়েছে। এর কর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনু মুহাজির এবং তার শায়েখের সমালোচনা করা হয়েছে)
১-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
সূরায়ে বাকারার প্রারম্ভে হুরূফে মুকাত্তাআ’র পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। তবে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছে ‘হে ব্যক্তি! এটা মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ), আতা (রঃ), মুহাম্মদ ইবনু কাব (রঃ), আবু মালিক (রঃ), আতিয়্যা আওফী (রঃ), হাসান (রঃ), যহ্হাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং ইবনু আবাযীর (রঃ) উক্তি। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) এবং সাওরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা নাতিয়া কালেমা। এর অর্থ হচ্ছে ‘হে লোকটি!' আবু সালেহ (রঃ) বলেন যে, এটা কালেমায়ে মুরাব।হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ) যখন নামায পড়তেন তখন এক পায়ের উপর দাড়াতেন ও অপর পাটি উঠিয়ে রাখতেন। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি দু'পায়ের উপরই দাড়াও। আমি তোমাকে কেশ দিবার জন্যে তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নাই।বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ যখন কুরআন কারীমের উপর আমল শুরু করে দেন তখন মুশরিকরা বলতে লাগেঃ “এই লোকগুলি তো বেশ বিপদে পড়ে গেছে।” তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করে জানিয়ে দেন যে, কুরআন মানুষকে কষ্ট ও বিপদে ফেলার জন্যে অবতীর্ণ হয় নাই। বরং এটা সৎ লোকদের জন্যে শিক্ষনীয় বিষয়। এটা খোদায়ী জ্ঞান। যে এটা লাভ করেছে সে খুব বড় সম্পদ লাভ করেছে। যেমন হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে তিনি বোধ শক্তি দান করেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)হযরত সা'লাবা ইবনু হাকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যখন স্বীয় বান্দাদের মধ্যে ফায়সালার জন্যে কুরসীর উপর উপবেশন করবেন তখন তিনি আলেমদেরকে বলবেনঃ “আমি আমার ইলম ও হিকমত তোমাদেরকে এ জন্যেই দান করেছিলাম যে, তোমাদের পাপসমূহ আমি মার্জনা করে দেবো এবং তোমরা কি করেছে তার কোন পরওয়া করো না।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)প্রথম দিকে লোকেরা আল্লাহর ইবাদত করার সময় নিজেদেরকে রশিতে লটকিয়ে দিতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় কালাম পাকের মাধ্যমে তাদের ঐ কষ্ট দূর করে দেন এবং বলেনঃ “এই কুরআন তোমাদেরকে কষ্ট ও বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করতে চায় না। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ “যত সহজে পাঠ করা যায় সে ভাবেই তা পাঠ কর।” এ কুরআন কেশ ও কষ্টদায়ক জিনিস নয়। রং এটা হচ্ছে করুণা, জ্যোতি, দলীল এবং জান্নাত। এই কুরআন সৎ লোকদের জন্যে ও খোদাভীরু লোকদের জন্যে উপদেশ, হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ। এটা শ্রবণ করে আল্লাহ তাআলার সৎ বান্দারাহারাম ও হালাল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। ফলে তাদের উভয় জগত সুখময় হয়। হে নবী (সঃ)! এই কুরআন তোমার প্রতিপালকের কালাম এটা তারই পক্ষ হতে অবতারিত, যিনি সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা, মালিক, আহার্যদাতা এবং ব্যাপক ক্ষমতাবান। যিনি যমীনকে নীচু ও ঘন করেছেন এবং আকাশকে করেছেন উঁচু ও সূক্ষ্ম।জামে তিরমিযী প্রভৃতি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, প্রত্যেক আকাশের পুরুত্ব হচ্ছে পাঁচ শ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ হতে অপর আকাশের ব্যবধানও হলো পাঁচ শ’ বছরের রাস্তা। ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি এই আয়াতের তাফসীরেই আনয়ন করেছেন।ঐ দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন রয়েছেন। এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে আ’রাফে গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন দরকার নেই। নিরাপত্তাপূর্ণ পন্থা এটাই যে, আয়াত সমূহ ও হাদীস সমূহের সিফাতকে পূর্ব যুগীয় গুরুজনদের নীতি অনুসারেই ওগুলোর বাহ্যিক শব্দ হিসেবেই মানতে হবে। সমস্ত জিনিস আল্লাহ তাআলার অধিকারে রয়েছে। সবই তার দখল, চাহিদা,ও ইচ্ছাধীন। তিনিই সবারই সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা উপাস্য ও পালনকর্তা। কারো তার সাথে কোন প্রকারের কোন অংশ নেই। সপ্ত যমীনের নীচেও যা আছে তারও মালিক তিনিই।হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, যমীনের নীচে আছে পানি, পানির নীচে আছে যমীন, আবার যমীনের নীচে আছে পানি। এভাবে ক্রমান্বয়ে চলে গেছে। তারপর এর নীচে একটি পাথর আছে। তার নীচে এক ফেরেশতা আছেন। তাঁর নীচে একটি মাছ আছে যার দুটি ডানা আশ পর্যন্ত চলে গেছে। তার নীচে আছে বায়ু ও অন্ধকার। মানুষের জ্ঞান এখান পর্যন্তই আছে। এরপর কি আছে না আছে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। হাদীসে রয়েছে যে, প্রতি দুই যমীনের মাঝে পঁাচ শ' বছরের পথের ব্যবধান রয়েছে। সর্বোপরি যমীনটি মাছের পিঠের উপর রয়েছে, যার দুটি ডানা আসমানের সাথে মিলিত আছে। এই মাছটি আছে একটি পাথরের উপর। ঐ পাথরটি ফেরেশতার হাতে আছে। দ্বিতীয় যমীনটি হলো বায়ুর ভাণ্ডার। তৃতীয় যমীনে আছে জাহান্নামের পাথর। চতুর্থ যমীনে জাহান্নামের গন্ধক রয়েছে। পঞ্চম যমীনে আছে জাহান্নামের সর্প। ষষ্ঠ যমীনে রয়েছে জাহান্নামী বৃশ্চিক বা বিচ্ছু। সপ্তম যমীনে আছে জাহান্নাম। সেখানে ইবলীস শৃংখলিত অবস্থায় আছে। তার একটি হাত আছে সামনে এবং একটি আছে পিছনে। আল্লাহ তাআ'লাই যখন ইচ্ছা করেন তখন তাকে ছেড়ে দেন। (এ হাদীসটি খুবই গরীব। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণিত কিনা এ ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে)হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “আমরা তাবুকের যুদ্ধ শেষে ফিরে আসছিলাম। কঠিন গরম পড়ছিল। দুজন দুজন এবং চারজন চারজন করে লোক বিচ্ছিন্ন ভাবে পথ চলছিলেন। আমি সৈন্যদের শুরুতে ছিলাম। অকস্মাৎ একজন আগন্তুক এসে সালাম করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মদ (সঃ) কোন ব্যক্তি?” আমি তখন তার সঙ্গে চললাম। আমার সঙ্গী আগে বেড়ে গেল। যখন সেনাবাহিনীর মধ্যভাগ আসলো তখন দেখা গেল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ দলেই রয়েছেন। আমি ঐ আগন্তুককে বললামঃ ইনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তিনি লাল বর্ণের উস্ত্রীর উপর সওয়ার ছিলেন। রৌদ্রের কারণে তিনি মাথায় কাপড় বেঁধে ছিলেন। ঐ লোকটি তার সওয়ারীর কাছে গেলেন এবং ওর লাগাম ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনিই কি মুহাম্মদ (সঃ)?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ” লোকটি তখন তাকে বললেনঃ “আমি এমন কতকগুলি প্রশ্ন করতে চাই যার উত্তর দুনিয়াবাসীদের দু একজন ছাড়া কেউ দিতে পারে না। তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, যা প্রশ্ন করতে চান করুন। আগন্তুক বললেনঃ “নবীগণ ঘুম যান কি?" উত্তরে নবী (সঃ) বললেনঃ “তাদের চক্ষু ঘুমায় বটে, কিন্তু তাঁদের অন্তর জাগ্রত থাকে। লোকটি বললেনঃ “আপনি সঠিক উত্তরই দিয়েছেন। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ “আচ্ছা বলুন তো, শিশু কখনো পিতার সাথে সাদৃশ্য যুক্ত হয় এবং কখনো মাতার সাথে হয়, এর কারণ কি?” তিনি জবাবে বলেনঃ“জেনে রাখুন যে, পুরুষ লোকের মণি বা বীর্য সাদা ও গাঢ় হয়। আর স্ত্রী লোকের বীর্য হয় পাতলা। যার বীর্য প্রাধান্য লাভ করে, শিশু তারই সাদৃশ্যযুক্ত হয়ে থাকে। লোকটি বলেনঃ “আপনার এ উত্তরও সঠিক হয়েছে। পুণরায় লোকটি বললেনঃ “আচ্ছা বলুনতো, শিশুর কোন কোন অঙ্গ পুরুষের বীর্য দ্বারা এবং কোন কোন অঙ্গ স্ত্রীর বীর্য দ্বারা গঠিত হয়?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “পুরুষের বীর্য দ্বারা অস্থি, শিরা এবং পাছা গঠিত হয়, আর স্ত্রীর বীর্য দ্বারা গঠিত হয় গোশত, রক্ত ও চল। লোকটি বললেনঃ “এটাও সঠিক উত্তর হয়েছে।” অতঃপর বলেনঃ “বলুন তো, এই যমীনের নীচে কি আছে?” তিনি বলেনঃ “একটি মাখলুক রয়েছে। লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “তার নীচে কি আছে?” তিনি উত্তর দেনঃ “যমীন।” লোকটি জিজ্ঞেস করেনঃ “এর নীচে কি আছে?” তিনি জবাব দেনঃ “পানি। আবার লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “পানির নীচে কি আছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “অন্ধকার।" লোকটি পুণরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “এর নীচে কি আছেঃ” তিনি জবাব দেনঃ “বায়ু।” লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “বায়ুর নীচে কি আছে?" তিনি জবাবে বলেনঃ “মাটি। লোকটি জিজ্ঞেস করেনঃ “তার নীচে কি আছে?" এবার রাসূলুল্লাহর (সঃ) চক্ষু দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেনঃ “মানুষের জ্ঞান তো এখন পর্যন্ত পৌঁছেই শেষ হয়ে গেছে। এরপরে কি আছে তার জ্ঞান একমাত্র সৃষ্টিকর্তারই আছে। হে প্রশ্নকারী! এই ব্যাপারে আপনি যাকে প্রশ্ন করলেন তিনি আপনার চেয়ে তা বেশী জানে না।” আগন্তুক ব্যক্তি তার সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কে তা তোমরা জান কি?" সাহাবীগণ বললেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত জিবরাঈল (আঃ)।" (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি ইয়ালাতে বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটি খুবই গরীব। ঘটনাটি বড়ই বিস্ময়কর। এর বর্ণনাকারীদের একজন কাসেম ইবনু আবদুর রহমান রয়েছেন। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন (রঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম আবু হাতিম রাযী (রঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম ইবনু আদী (রঃ) বলেছেন যে, তিনি অপরিচিত লোক। তিনি এতে গড়বড় করে দিয়েছেন। তিনি এটা ইচ্ছা করেই করুন বা এভাবেই পেয়ে থাকুন)আল্লাহ তিনিই যিনি প্রকাশ্য, গোপনীয়, উঁচু, নীচু, ছোট ও বড় সব কিছুই জানেন। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ তিনিই এটা অবতীর্ণ করেছেন যিনি আসমান সমূহ ও যমীনের গোপন বিষয়ের খবর রাখেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”ইবনু আদম যা কিছু গোপন করে এবং স্বয়ং তার উপর যা কিছু গোপন রয়েছে, তা সবই আল্লাহ তাআলার নিকট প্রকাশমান। তার আমলকে তার জানার পূর্বেও আল্লাহ জানেন। সমস্ত অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মাখলুকের সম্পর্কে জ্ঞান তার কাছে এমনই যেমন একজন লোকের সম্পর্কে জ্ঞান। সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টি এবং তাদেরকে মেরে পুনরুজ্জীবিত করাও তাঁর কাছে একটি মানুষকে সৃষ্টি করা এবং তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করার মতই (সহজ)। মানুষের অন্তরের ধারণা ও কল্পনার খবরও তিনি রাখেন। মানুষ বড় জোর আজকের গোপন আমলের খবর রাখে। আর সে কাল কি গোপনীয় কাজ করবে সেই খবরও আল্লাহ তাআলা রাখেন। শুধু ইচ্ছা নয়, বরং কুমন্ত্রণাও তার কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। কৃতকর্ম এবং যে আমল সে পরে করবে সেটাও তাঁর কাছে প্রকাশমান। তিনি সত্য ও যোগ্য উপাস্য। সমস্ত উত্তম নাম তারই। সূরায়ে আরাফের তাফসীরের শেষে (আরবী) সম্পর্কে হাদীস সমূহ গত হয়েছে। সুতরাং প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহরই জন্যে।
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ قَدْ أَنْجَيْنَاكُمْ مِنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّورِ الْأَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ
📘 Please check ayah 20:82 for complete tafsir.
كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِي ۖ وَمَنْ يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِي فَقَدْ هَوَىٰ
📘 Please check ayah 20:82 for complete tafsir.
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ
📘 ৮০-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর যে বড় বড় ইহান করেছিলেন তাই তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ওগুলির মধ্যে একটি এই যে, তাদেরকে তিনি তাদের শত্রুদের কবল হতে মুক্তি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বরং তিনি তাদের শত্রুদেরকে তাদের চোখের সামনে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। তাদের একজনও রক্ষা পায় নাই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তোমাদের চোখের সামনে ফিরাউনীদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।" (২:৫০)সহীহ্ বুখারীতে রয়েছে যে, মদীনার ইয়াহুদীদেরকে আশূরার দিন (১০ই মহররম) রোযা রাখতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তারা উত্তরে বলেঃ “এই দিনেই আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তখন তিনি বলেনঃ “তোমাদের তুলনায় হযরত মূসা (আঃ) তো আমাদেরই বেশী নিকটে।” অতঃপর তিনি মুসলমানদেরকে ঐদিন রোযা রাখার নির্দেশ দেন।আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহকে (আঃ) তূর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি সেখানে গমন করেন। আর। এদিকে তার অনুপস্থিতির সুযোগে বনী ইসরাঈল গো-বৎসের পূজা শুরু করে দেয়। এর বর্ণনা সত্বরই সামনে আসছে ইনশা আল্লাহ! অনুরূপভাবে আল্লাহ বানী ইসরাঈলের উপর আর একটি অনুগ্রহ এই করেন যে, তাদের আহার্য হিসেবে তাদেরকে মান্না’ ও ‘সালওয়া দান করেন। সূরায়ে বাকারা প্রভৃতির তাফসীরে এর পূর্ণ বর্ণনা গত হয়েছে। মান্না ছিল এক প্রকার মিষ্ট জিনিস, যা তাদের জন্যে আকাশ হতে অবতীর্ণ হতো। আর সালওয়া ছিল এক প্রকারের পাখী, যা আল্লাহর হুকুমে তাদের সামনে এসে পড়তো। ওগুলি হতে তারা। একদিনের খাদ্য পরিমাণে গ্রহণ করতো।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমার প্রদত্ত এই আহার্য হতে ভাল ভাল বস্তু তোমরা আহার কর, কিন্তু সীমালংঘন করো না। বিনা প্রয়োজনে বা। হারাম পন্থায় তা গ্রহণ করো না। অন্যথায় আমার ক্রোধ অবতারিত হবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ অবতারিত হয়, বিশ্বাস রেখো যে, সে বড়ই হতভাগ্য।হযরত শাফী ইবনু মা’নে (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামের মধ্যে একটি উঁচু জায়গা নির্মিত আছে, যেখান হতে কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। জিঞ্জীর রাখার জায়গায় পর্যন্ত পৌঁছতে তার চল্লিশ বছর সময় লাগে। এই আয়াতের অর্থ এটাই যে, সে গর্তে পড়ে গেল।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার উপর যে তাওবা করে,ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে। বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা গো-বৎসের পূজা করেছিল, তাদের তাওবার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মোট কথা, কেউ যদি কুফরী, শিরক, পাপকার্য এবং নাফরমানী করার পর আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে অন্তরে বিশ্বাস রাখা এবং সৎ আমল করা অপরিহার্য কর্তব্য। আর থাকতে হবে সৎপথে এবং কোন সন্দেহ পোষণ করতে হবে না। সুন্নাতে রাসূল (সঃ) এবং সাহাবীদের (রাঃ) রীতি নীতির অনুসরণ করতে হবে এবং এতে সওয়াবের আশা রাখতে হবে।এখানে (আরবী) শব্দটি খবরের (বিধেয়ের) উপর বিন্যস্ত করার জন্যে আনয়ন করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী)
۞ وَمَا أَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَا مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَىٰ أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنْ بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
فَرَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا ۚ أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ أَمْ أَرَدْتُمْ أَنْ يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِنْ رَبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُمْ مَوْعِدِي
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
قَالُوا مَا أَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلَٰكِنَّا حُمِّلْنَا أَوْزَارًا مِنْ زِينَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذَٰلِكَ أَلْقَى السَّامِرِيُّ
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَٰذَا إِلَٰهُكُمْ وَإِلَٰهُ مُوسَىٰ فَنَسِيَ
📘 Please check ayah 20:89 for complete tafsir.
أَفَلَا يَرَوْنَ أَلَّا يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلًا وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
📘 ৮৩-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মূসা (আঃ) যখন বানী ইসরাঈলসহ সমুদ্র অতিক্রম করেন তখন তাদেরকে নিয়ে সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে দেন। তাদেরকে নিয়ে তিনি এমন এক জায়গায় পৌঁছেন যেখানে লোকেরা প্রতিমাসমূহের খাদেম হয়ে বসেছিল। তা দেখে বানী ইসরাঈল হযরত মূসাকে(আঃ) বলেঃ “হে মূসা(আঃ) ! এদের মত আমাদের জন্যেও আপনি কোন মাবুদ নির্ধারণ করে দিন ।!" উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা তো খুবই অজ্ঞলোক। এরা তো ধ্বংস প্রাপ্ত লোক এবং তাদের ইবাদতও বাতিল।" অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) ত্রিশ দিন রোযা রাখার নির্দেশ দেন। তারপর তা বাড়িয়ে দিয়ে চল্লিশ দিন করা হয়। তিনি দিন রাত রোযার অবস্থায় থাকতেন। অতঃপর তাড়াতাড়ি তিনি তূর পর্বতের দিকে গমন করেন এবং বানী ইসরাঈলের উপর তার ভাই হারূণকে (আঃ)। প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তোমাকে ত্বরা করতে বাধ্য করলো কিসে?" উত্তরে তিনি বললেনঃ “এই তো আমার পশ্চাতে তারা রয়েছে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এই জন্যে।" তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার চলে আসার পর আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তারা গো-বংসের পূজা শুরু করে দিয়েছে। ইসরাঈলী পুস্তক সমূহে আছে যে, সামেরীর নামও হারূণ ছিল। হযরত মূসাকে (আঃ) দান করার জন্যে তাওরাতের ফলক লিখে নেয়া হয়েছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তার জন্যে ফলকে সর্ববিষয়ের বর্ণনা এবং সবকিছুর বিস্তারিত বিবরণ লিখে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ ওটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তোমার কওমকেও বলে দাও যে, তারা যেন উত্তমরূপে ওর উপর আমল করে; আমি তোমাদেরকে সত্বরই ফাসেকদের পরিণাম প্রদর্শন করবো।" (৭:১৪৫)হযরত মূসা (আঃ) যখন স্বীয় কওমের শিকপূর্ণ কাজের খবর পেলেন তখন তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হলেন এবং ক্রোধ ও ক্ষোভের অবস্থায় সেখান থেকে ফিরে আসলেন। তিনি দেখতে চান যে, তার কওমের লোকেরা আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিয়ামত রাশি লাভ করার পরেও এরূপ কঠিন অজ্ঞতাপূর্ণ ও শিরকজনিত কাজ করেছে? অতঃপর তিনি অত্যন্ত ক্রুব্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায় তাঁর কওমের কাছে এসে বললেনঃ “হে আমার সম্প্রদায় তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেন নাই। তোমাদেরকে কি তিনি বড় বড় নিয়ামত দান করেন নাই? কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তোমরা তার নিয়ামতসমূহ ভুলে বসলে? তবে কি তোমরা চাচ্ছ যে, তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে?” তার কওম তখন তার কাছে ওজর পেশ করে বললোঃ “আমরা এই কাজ নিজেদের ইচ্ছায় করি নাই। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ফিরাউনীদের যে সব অলংকার আমাদের নিকট ছিল সেগুলি নিক্ষেপ করাই আমরা ভাল মনে করলাম। সুতরাং আমরা সবকিছুই আল্লাহর ভয়ে নিক্ষেপ করে দিলাম।”একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, স্বয়ং হযরত হারূণ (আঃ) একটি গর্ত খনন করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেন এবং বানী ইসরাঈলকে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন সমস্ত অলংকার ঐ গর্তে নিক্ষেপ করে। হযরত হারূণের (আঃ) ইচ্ছা ছিল যে, সমস্ত অলংকার এক জায়গায় জমা হয়ে যাবে এবং গলে গিয়ে একটা জমাট পাথরের রূপ ধারণ করবে। তারপর যখন হযরত মূসা (আঃ) ফিরে আসবেন তখন তিনি যা বলবেন তাই করা হবে। সামেরী তাতে ঐ মুষ্টিও নিক্ষেপ করেছিল যা সে আল্লাহর দূতের নিদর্শন হতে পূর্ণ করে নিয়েছিল এবং হযরত হারূণকে (আঃ) বলেছিলঃ “আপনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। হযরত হারূণ (আঃ) তো আর তার মনের কথা জানতেন না, তাই তিনি প্রার্থনা করেন। সে ইচ্ছা করে যে, ওর থেকে যেন একটা গো-বৎস নির্মিত হয়ে যায় এবং ওর থেকে যেন বাছুরের মত শব্দও বের হয়। ওটা তাই হয়ে যায় এবং বানী ইসরাঈলের পরীক্ষার কারণ হয়ে দাড়ায়। এ কারণেই মহান আল্লাহ বানী ইসরাঈলের কথা উদ্ধৃত করে বলেনঃ “সেিমরীও তা নিক্ষেপ করে। একবার হযরত হারূন (আঃ) সামেরীর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। ঐ সময় সে ঐ গো-বৎসটি ঠিকঠাক করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ওটা কি করছো?” সে উত্তরে বলেঃ “এমন জিনিস তৈরী করছি যা ক্ষতি সাধন করে, কিন্তু উপকার করে না। তিনি দুআ করেনঃ “হে আল্লাহ! তাকে আপনি এরূপই করে দিন।” অতঃপর তিনি সেখান হতে চলে যান। সামেরীর দুআ’য় ওটা গো-বৎস হয়ে যায় এবং ওর থেকে শব্দও বের হতে থাকে। বানী ইসরাঈল বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায়। এবং ওর পূজা করতে শুরু করে। ওর একটি শব্দের সময় তারা ওর সামনে সিজদায় পড়ে যেতো এবং আর একটি শব্দের সময় সিজদা হতে মাথা উঠাতো। এই দলটি অন্যান্য মুসলমানদেরকেও পথ ভ্রষ্ট করতে থাকে। তারা তাদেরকে বলেঃ “আসল মা’রূদ এটাই। হযরত মূসা (আঃ) ভুল করে তার অনুসন্ধানে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। তিনি এটা বলতে ভুলে গেছেন যে, এটাই তোমাদের মাবূ’দ।”এ লোকগুলি খাদেমরূপে ওর সামনে বসে পড়ে। তাদের অন্তরে এর মুহব্বত জমে ওঠে। অর্থ এও হতে পারে যে, সামেরী নিজের সত্য ও সঠিক মাবুদকে এবং নিজের পবিত্র দ্বীন ইসলামকে ভুলে বসেছিল। সে এতো নির্বোধ যে, ঐ বাছুর যে একেবারে নির্জীব এটুকুও সে বুঝতে পারে নাই। ওটা তো তাদেরকে কোন কথার জবাব দিতে পারে না এবং কিছু শুনতেও পায় না। দুনিয়া ও আখেরাতের কোন কাজের তার অধিকার নেই এবং লাভ ও ক্ষতি করারও তার কোন ক্ষমতা নেই। তার থেকে যে শব্দ বের হয় ওর একমাত্র কারণ তো এই যে, তার পিছনের ছিদ্র দিয়ে বায়ু প্রবেশ করে এবং সামনের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যায়। ওটারই শব্দ হয়। তারা ছিল কতো নির্বোধ যে, ছোট পাপ হতে বাচবার জন্যে তারা বড় পাপ করে বসলো। ফিরাউনীদের আমানত হতে মুক্ত হতে গিয়ে তারা শিরক করে বসলো। এর দৃষ্টান্ত তো এটাই হলো যে, কোন এক ইরাকবাসী হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমারকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “কাপড়ে যদি মশার রক্ত লেগে যায় তবে নামায হবে কি হবে না?” তিনি উত্তরে জনগণকে বলেনঃ “তোমরা ইরাকবাসীদের ব্যবহারের প্রতি লক্ষ্য কর, তারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) প্রিয়তমা কন্যা হযরত ফাতেমার (রাঃ) কলেজার টুকরা হযরত হুসাইনকে (রাঃ) হত্যা করেছে, অথচ আজ মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞেস করছে!”
وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَىٰ
📘 Please check ayah 20:10 for complete tafsir.
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُونُ مِنْ قَبْلُ يَا قَوْمِ إِنَّمَا فُتِنْتُمْ بِهِ ۖ وَإِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَٰنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي
📘 Please check ayah 20:91 for complete tafsir.
قَالُوا لَنْ نَبْرَحَ عَلَيْهِ عَاكِفِينَ حَتَّىٰ يَرْجِعَ إِلَيْنَا مُوسَىٰ
📘 ৯০-৯১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআ'লা খবর দিচ্ছেন যে, হযরত মূসার (আঃ) ফিরে আসার পূর্বেই হযরত হারূন (আঃ) বানী ইসরাঈলকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলেনঃ “ দেখো তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলে দেয়া হয়েছে। তোমরা দয়াময় আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে সিজদায় পতিত হয়ো না। তিনি সবকিছুরই খালেক ও মালেক। সবারই ভাগ্য নির্ধারণকারী তিনিই। মর্যাদা সম্পন্ন আরশের তিনিই মালিক। তিনি যা চান তাই করতে পারেন। তোমরা আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাদেরকে যা করতে বলি তা কর এবং যা থেকে নিষেধ করি তা হতে বিরত থাকো।” কিন্তু ঐ উদ্ধত ও হঠকারী লোকগুলি উত্তরে বললোঃ “মূসা (আঃ) ফিরে এসে আমাদেরকে নিষেধ করলে আমরা মেনে নিবে। কিন্তু তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এই বাছুর পূজা হতে বিরত হবো না।” সুতরাং তারা হযরত হারূণের কথা প্রত্যাখ্যান করলো, তার সাথে বিবাদ করলো এবং তাঁকে হত্যা করতেও প্রস্তুত হয়ে গেল।
قَالَ يَا هَارُونُ مَا مَنَعَكَ إِذْ رَأَيْتَهُمْ ضَلُّوا
📘 Please check ayah 20:94 for complete tafsir.
أَلَّا تَتَّبِعَنِ ۖ أَفَعَصَيْتَ أَمْرِي
📘 Please check ayah 20:94 for complete tafsir.
قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ۖ إِنِّي خَشِيتُ أَنْ تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي
📘 ৯২-৯৪ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসা (আঃ) ভীষণ ক্রোধ ও ক্ষোভের অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন। তাওরাত লিখিত ফলক তিনি মাটিতে নিক্ষেপ করেন এবং নিজের ভাই হারূণের (আঃ) দিকে কঠিন রাগান্বিত অবস্থায় এগিয়ে যান এবং তার মাথার চুল ধরে নিজের দিকে টানতে থাকেন। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরায়ে আ’রাফের তাফসীরে গত হয়েছে। সেখানে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে যে, শোনা খবর দেখার মত নয়। হযরত মূসা (আঃ) তাঁর ভাই ও স্থলাভিষিক্ত হযরত হারূণকে (আঃ) তিরস্কার করতে শুরু করেন যে, ঐ মূর্তি পূজা শুরু হবার সময়ই কেন তিনি তাকে খবর দেন নাই? তবে কি তিনি তাঁর আদেশ অমান্য করেছেন। তিনি তাকে আরো বলেনঃ “আমি তো তোমাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছিলাম যে, তুমি আমার কওমের মধ্যে আমার। স্থলাভিষিক্তরূপে কাজ করবে, তাদেরকে সংশোধিত করবে এবং ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের কথা মোটেই মানবে না? হযরত হারূণ (আঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আমার মায়ের পুত্র!" একথা তিনি এজন্যেই বলেছিলেন যাতে হযরত মূসার (আঃ) তাঁর উপর দয়া ও মমতা হয়। এটা নয় যে, তাদের পিতা আলাদা ছিলেন। তাদের উভয়েরই পিতাও একই এবং মাতাও একই। তারা ছিলেন একেবারে সহোদর ভাই। হযরত হারূণ (আঃ) ওজর পেশ করে বলেনঃ “আমি এটা মনেও করেছিলাম যে, আপনার কাছে গিয়ে আপনাকে এ সংবাদ অবহিত করি। কিন্তু আবার চিন্তা করলাম যে, এদেরকে এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত হবে না। কেননা, এতে আপনি হয়তো অসন্তুষ্ট হতেন এবং বলতেনঃ “কেন তুমি এদেরকে ছেড়ে গেলে? হযরত ইয়াকূবের (আঃ) সন্তানদের মধ্যে কেন তুমি বিচ্ছিন্নতা আনয়ন করলে? এবং যা আমি তোমাকে বলে গিয়েছিলাম কেন তুমি তা পালন কর নাই।" প্রকৃত ব্যাপার এই যে, হযরত হারূণ (আঃ) ছিলেন হযরত মূসার (আঃ) অত্যন্ত অনুগত। তিনি হযরত মূসাকে (আঃ) অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং তার মর্যাদার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন।
قَالَ فَمَا خَطْبُكَ يَا سَامِرِيُّ
📘 Please check ayah 20:98 for complete tafsir.
قَالَ بَصُرْتُ بِمَا لَمْ يَبْصُرُوا بِهِ فَقَبَضْتُ قَبْضَةً مِنْ أَثَرِ الرَّسُولِ فَنَبَذْتُهَا وَكَذَٰلِكَ سَوَّلَتْ لِي نَفْسِي
📘 Please check ayah 20:98 for complete tafsir.
قَالَ فَاذْهَبْ فَإِنَّ لَكَ فِي الْحَيَاةِ أَنْ تَقُولَ لَا مِسَاسَ ۖ وَإِنَّ لَكَ مَوْعِدًا لَنْ تُخْلَفَهُ ۖ وَانْظُرْ إِلَىٰ إِلَٰهِكَ الَّذِي ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًا ۖ لَنُحَرِّقَنَّهُ ثُمَّ لَنَنْسِفَنَّهُ فِي الْيَمِّ نَسْفًا
📘 Please check ayah 20:98 for complete tafsir.
إِنَّمَا إِلَٰهُكُمُ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
📘 ৯৫-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত মূসা (আঃ) সামেরীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে সামেরী! এটা করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে?" হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এ লোকটি আহলে বাজিরমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার কওম গরু-পূজারী ছিল। তার অন্তরেও গরুর মুহব্বত ঘর করে নেয়। সে বাহ্যিকভাবে বানী ইসরাঈলের সাথে ঈমান এনেছিল। তার নাম ছিল মূসা ইবনু যু। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, সে কিরমানের অধিবাসী ছিল। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তার গ্রামের নাম ছিল সামেরা। সে হযরত মূসার (আঃ) প্রশ্নের উত্তরে বলেঃ “ফিগ্রাউনকে ধ্বংস করার জন্যে যখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন তখন আমি তার ঘোড়ার খুরের নীচে হতে কিছুটা মাটি উঠিয়ে নিই।”অধিকাংশ তাফসীরকারদের মতে প্রসিদ্ধ কথা এটাই। হযরত আলী (রাঃ)। হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে যখন হযরত মূসাকে (আঃ) আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হন তখন সামেরী এটা দেখে নেয়। তাড়াতাড়ি সে তার ঘোড়ার খুরের নীচের মাটি উঠিয়ে নেয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) আকাশ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে যান। আল্লাহ তাআলা তাওরাত লিখেন। হযরত মূসা (আঃ) কলমের লিখার শব্দ শুনতে পান। কিন্তু যখন তিনি তার কওমের বিপদের অবস্থা জানতে পারেন তখন তিনি নীচে নেমে এসে ঐ বাছুরটিকে জ্বালিয়ে দেন। (এই হাদীসের সনদ দুর্বল)ঐ এক মুষ্টি মাটিকে সে বানী ইসরাঈলের জমাকৃত অলংকারের পোড়ার সময় তাতে নিক্ষেপ করে দেয়। ওটা তখন বাছুরের রূপ ধারণ করে। ওর ভিতর ফাকা ছিল বলে ওর মধ্য দিয়ে বাতাস যাওয়া-আসা করতো এবং এর ফলে একটা শব্দ বের হতো। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) দেখেই সে মনে মনে বলেঃ “আমি তার ঘোড়ার খুরের নীচে হতে মাটি উঠিয়ে নিবো। এই মাটি গর্তে নিক্ষেপ করলে আমি যা চাইবো ওটা তাই হয়ে যাবে।”ঐ সময়েই তার অঙ্গুলীগুলি শুকিয়ে গিয়েছিল। বানী ইসরাঈল যখন দেখলো যে, তাদের কাছে ফিরাউনীদের অলংকারাদি রয়ে গিয়েছে এবং তারা ধ্বংস হয়ে গেছে, সুতরাং এগুলো তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া আর সম্ভম্ব নয়। তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়লো। সামেরী বললোঃ “দেখো, এই কারণেই, তোমাদের উপর বিপদ আপতিত হয়েছে। কাজেই এগুলো জমা করে তাতে আগুন লাগিয়ে দাও।” তারা তাই করলো। যখন ওগুলো আগুনে গলে গেল তখন তার মনে হলো যে, ঐ মাটি ওতে নিক্ষেপ করবে এবং ওর দ্বারা গো বৎসের আকৃতি বানিয়ে নেবে। তাই হয়ে গেল। সে তখন বানী ইসরাঈলকে বললোঃ “এটাই তোমাদের ও মূসার (আঃ) মাবুদ।” আল্লাহ তাআলা তার এই জবাবই এখানে উদ্ধত করেছেনঃ “আমি ওটা নিক্ষেপ করেছিলাম এবং আমার মন আমার জন্যে শোভন করেছিল এইরূপ করা।” তখন হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেনঃ “দূর হও। তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্যে এটাই রইলো যে, তুমি বলবে, আমি অস্পৃশ্য এবং তোমার জন্যে রইলো এক নির্দিষ্ট কাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না। আর তুমি তোমার যে মা’দের পূজায় রত ছিলে তার প্রতি লক্ষ্য কর যে, আমরা ওকে জ্বালিয়ে দিবই, অতঃপর ওকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই।” এইরূপ করার ফলে ঐ স্বর্ণ নির্মিত বাছুরটি ঐভাবেই পুড়ে গেল। যে ভাবে রক্ত মাংসের বাছুর পুড়ে যায়। তারপর ওর ছাইকে প্রখর বাতাসের দিনে সমুদ্রে উড়িয়ে দেয়া হয়। বর্ণিত আছে যে, সামেরী তার সাধ্যমত বানী ইসরাঈলের মহিলাদের নিকট হতে অলংকারাদি গ্রহণ করেছিল এবং ওগুলি দিয়ে বাছুর তৈরী করেছিল। ওটাকেই হযরত মূসা (আঃ) জ্বালিয়ে দিয়ে ওর ভগ্ন সমুদ্রে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যেই ওর পানি পান করেছিল। তারই চেহারা হলুদে বর্ণ ধারণ করেছিল। এর মাধ্যমেই সমস্ত বাছুর পূজারীর পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। তারা তখন তাওবা করে এবং হযরত মূসাকে (আঃ) বলেঃ “আমাদের তাওবা ককূল হওয়ার উপায় কি?" তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন একে অপরকে হত্যা করে। এর পূর্ণ বর্ণনা ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “তোমাদের মাবুদ এটা নয়। ইবাদতের যোগ্য তো একমাত্র আল্লাহ। বাকী সমস্ত জগত তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তার অধীনস্থ। সব কিছুরই তাঁর অবগতি রয়েছে। তাঁর জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টজীবকে ঘিরে রেখেছে। সমস্ত জিনিসের সংখ্যা তার জানা আছে। এক অনুপরিমাণ জিনিসও তার জ্ঞানের বাইরে নেই। প্রত্যেক পাতা ও প্রত্যেক দানার তিনি খবর রাখেন। তাঁর কাছে রক্ষিত কিতাবে সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। যমীনের সমস্ত জীবকে তিনিই আহার্য দান করে থাকেন। প্রত্যেকের জায়গা তার জানা আছে। প্রকাশ্য কিতাবে সবকিছুই লিপিবদ্ধ আছে। এই ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে।
كَذَٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ ۚ وَقَدْ آتَيْنَاكَ مِنْ لَدُنَّا ذِكْرًا
📘 Please check ayah 20:101 for complete tafsir.