🕋 تفسير سورة الشعراء
(Ash-Shuara) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ طسم
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
وَإِذْ نَادَىٰ رَبُّكَ مُوسَىٰ أَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَلَا صَدِيقٍ حَمِيمٍ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
فَلَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ৯০-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর
যারা সৎ কাজ করেছিল, অসৎ কাজ হতে বিরত থেকেছিল, ঐ দিন জান্নাত তাদের পার্শ্বে ও তাদের সামনে সৌন্দর্যমণ্ডিত অবস্থায় বিদ্যমান থাকবে। পক্ষান্তরে জাহান্নাম এরূপভাবেই অসৎ লোকদের সামনে প্রকাশিত হবে। ওর মধ্য হতে একটি গ্রীবা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে, যে পাপীদের দিকে ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকাবে এবং এমনভাবে চীৎকার শুরু করবে যে, প্রাণ উড়ে যাবে। মুশরিকদেরকে অত্যন্ত ধমকের সুরে বলা হবেঃ তোমরা যেসব বাতিল মা’ৰূদের পূজা করতে তারা আজ কোথায়? তারা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে কি? অথবা তারা নিজেরাই নিজেদের কোন সাহায্য করতে সক্ষম কি? না, না। বরং উপাসক ও উপাস্য সবাইকে আজ জাহান্নামে লটকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা আজ জাহান্নামের আগুনে ভষ্মিভূত হচ্ছে। অনুসারী ও অনুসৃত সকলকে সেদিন অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর সাথে সাথে ইবলীসের সেনাবাহিনীর সবকেও অনুরূপভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।সেখানে প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত দুর্বল লোকেরা বড় লোকদের সাথে ঝগড়া করবে ও বলবেঃ “আমরা সারা জীবন তোমাদের কথামত চলেছি। সুতরাং আজ তোমরা আমাদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করছো না কেন? সত্য কথা তো এই যে, আমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিলাম। তোমাদের নির্দেশাবলীকে আমরা আল্লাহর নির্দেশাবলী মনে করে নিয়েছিলাম। বিশ্ব-প্রতিপালকের সাথে তোমাদেরও আমরা ইবাদত করেছিলাম। আমরা তোমাদেরকে যেন আমাদের প্রতিপালকের সমান মনে করেছিলাম। বড়ই দুঃখের বিষয় যে, পাপীরা আমাদেরকে ঐ ভুল ও বিপজ্জনক পথে পরিচালিত করেছিল। এখন তো আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী নেই।” তারা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “আমাদের জন্যে সুপরিশ করবে এরূপ কোন সুপারিশকারী আছে কি? অথবা আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া যেতে পারে কিন্তু সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের পূর্বকৃত আমলের বিপরীত আমল করতাম! এখানে আমাদের জন্যে সুপারিশ করতে পারে এমন কাউকেও দেখছি না এবং কোন সত্যিকারের বন্ধুও পরিলক্ষিত হচ্ছে না যে, সে আমাদের এই দুঃখের সময় সহানুভূতি জ্ঞাপন করে। কেননা তারা জানে যে, যদি কোন ভাল লোকের সাথে তাদের বন্ধুত্ব থাকতো তবে অবশ্যই তারা তাদের উপকার করতো এবং যদি তাদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকতো তবে অবশ্যই তাদের সুপরিশের জন্যে সামনে এগিয়ে যেতো। আর যদি তাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে তারা তাদের দুষ্কর্ম সংশোধন করে নিতো। কিন্তু সত্য কথা তো এই যে, পুনরায় যদি তাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়া দেয়াও হয় তবুও তারা আবার ঐ দুষ্কর্মই করতে থাকবে। যেহেতু তারা হলো চরম হতভাগ্য। সূরায়ে (আরবি) এও আল্লাহ তাআলা এই জাহান্নামীদের বিতর্কের কথা বর্ণনা করে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা নিশ্চিত সত্য জাহান্নামীদের এই বাদ-প্রতিবাদ।” (৩৮: ৬৪)।হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজের কওমের কাছে যা কিছু বর্ণনা করেছেন এবং তাদের সামনে যেসব দলীল প্রমাণ পেশ করেছেন ও তাদেরকে তাওহীদের ব্যাখ্যা শুনিয়েছেন তাতে নিশ্চিতরূপে আল্লাহর আল্লাহ হওয়ার উপর এবং তাঁর একাকীত্বের উপর স্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু তবুও অধিকাংশ লোকে ঈমান আনয়ন করে না। স্বীয় নবী (সঃ)-কে মহান আল্লাহ সম্বোধন করে বলেনঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমার প্রতিপালক মাহাপরাক্রমশালী এবং সাথে সাথে তিনি পরম দয়ালুও বটে।
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:110 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ نُوحٌ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:110 for complete tafsir.
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 Please check ayah 26:110 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:110 for complete tafsir.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:110 for complete tafsir.
قَوْمَ فِرْعَوْنَ ۚ أَلَا يَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 ১০৫-১১০ নং আয়াতের তাফসীর
ভূ-পৃষ্ঠে সর্বপ্রথম যখন মূর্তি-পূজা শুরু হয় এবং জনগণ শয়তানী পথে চলতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর স্থির প্রতিজ্ঞ নবীদের ক্রম হযরত নূহ (আঃ)-এর দ্বারা সূচনা করেন। তিনি জনগণকে আল্লাহর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন। কিন্তু তবুও তারা তাদের দুষ্কর্ম হতে বিরত হলো না। গায়রুল্লাহর ইবাদত তারা পরিত্যাগ করলো না। বরং উল্টোভাবে হযরত নূহ (আঃ)-কেই তারা মিথ্যাবাদী বললো, তাঁর শত্রু হয়ে গেল এবং তাঁকে কষ্ট দিতে থাকলো। হযরত নূহ (আঃ)-কে অবিশ্বাস করার অর্থ যেন সমস্ত নবীকেই অস্বীকার করা। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “নূহ (আঃ)-এর কওম রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা নূহ (আঃ) তাদেরকে বললো- তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আর জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের নিকট এর জন্যে কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো শুধু জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই আছে। সুতরাং তোমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং আমার আনুগত্য করা। আমার সত্যবাদিতা, আমার শুভাকাঙ্ক্ষা তোমাদের উপর উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সাথে সাথে আমার বিশ্বস্ততাও তোমাদের কাছে পূর্ণভাবে প্রকাশমান।
۞ قَالُوا أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ
📘 Please check ayah 26:115 for complete tafsir.
قَالَ وَمَا عِلْمِي بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 26:115 for complete tafsir.
إِنْ حِسَابُهُمْ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّي ۖ لَوْ تَشْعُرُونَ
📘 Please check ayah 26:115 for complete tafsir.
وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:115 for complete tafsir.
إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ
📘 ১১১-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত নূহ (আঃ)-এর কওম তাঁর পয়গামের উত্তর দেয় যে, কতকগুলো ইতর শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসারী হয়েছে, কাজেই তাঁর অনুসরণ তারা কি করে করতে পারে? তাদের একথার জবাবে আল্লহর নবী হযরত নূহ (আঃ) বলেনঃ আমার এটা দায়িত্ব নয় যে, যে আমার আহ্বানে সাড়া দেবে আমি তার পেশা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আভ্যন্তরীণ অবস্থার সংবাদ রাখা এবং হিসাব গ্রহণ আল্লাহ তা'আলারই কাজ। বড়ই দুঃখজনক ব্যাপার যে, তোমাদের বুদ্ধিটুকুও নেই! তোমাদের এ চাহিদা পূরণ করা আমার সাধ্যের অতিরিক্ত। তা এই যে, আমার মজলিস হতে আমি মিসকীনদেরকে দূরে সরিয়ে দিই। মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। আমি তো শুধুমাত্র একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। যে আমাকে মানবে সে-ই আমার লোক। আর যে আমাকে মানবে তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। যে আমার দাওয়াত কবুল করবে সে আমার এবং আমি তার, সে ইতর হোক বা ভদ্রই হোক এবং ধনী হোক বা দরিদ্রই হোক।
قَالُوا لَئِنْ لَمْ تَنْتَهِ يَا نُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّ إِنَّ قَوْمِي كَذَّبُونِ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
فَافْتَحْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَنَجِّنِي وَمَنْ مَعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
فَأَنْجَيْنَاهُ وَمَنْ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُكَذِّبُونِ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
ثُمَّ أَغْرَقْنَا بَعْدُ الْبَاقِينَ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:122 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ১১৬-১২২ নং আয়াতের তাফসীর
দীর্ঘদিন ধরে হযরত নূহ (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে অবস্থান করেন। দিন-রাত তাদেরকে তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর পথে আহ্বান করতে থাকেন। কিন্তু যতই তিনি সৎ কর্মে বেড়ে চলেন ততই তারা মন্দ কর্মে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শক্তির দাপট দেখিয়ে বলেঃ “যদি তুমি আমাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া বন্ধ না কর তবে আমরা তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করবো।” তিনিও তখন তাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অস্বীকার করছে। সুতরাং আপনি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সাথে যেসব মুমিন রয়েছে তাদেরকে রক্ষা করুন।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবুল করেন এবং মানুষ, জীবজন্তু ও আসবাবপত্রে ভরপুর নৌকায় আরোহণের নির্দেশ দেন। এরপর আসমান ও যমীন হতে প্লাবন এসে পড়ে এবং ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত কাফিরের মূলোৎপাটিত হয়। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই মুমিন নয়। আল্লাহ পরাক্রমশালী, আবার সাথে। সাথে তিনি পরম দয়ালুও বটে।
كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
أَتَبْنُونَ بِكُلِّ رِيعٍ آيَةً تَعْبَثُونَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
وَتَتَّخِذُونَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمْ تَخْلُدُونَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
وَيَضِيقُ صَدْرِي وَلَا يَنْطَلِقُ لِسَانِي فَأَرْسِلْ إِلَىٰ هَارُونَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
وَإِذَا بَطَشْتُمْ بَطَشْتُمْ جَبَّارِينَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
وَاتَّقُوا الَّذِي أَمَدَّكُمْ بِمَا تَعْلَمُونَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
أَمَدَّكُمْ بِأَنْعَامٍ وَبَنِينَ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
وَجَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 Please check ayah 26:135 for complete tafsir.
إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
📘 ১২৩-১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে হযরত হূদ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণিত হচ্ছে যে, তিনি তাঁর সম্প্রদায় আ'দ জাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেন। তারা ছিল আকাফের অধিবাসী। আহকাফ হলো ইয়ামন দেশের হাযূরা মাউতের পার্শ্ববর্তী একটি পার্বত্য অঞ্চল। হব্রত হূদ (আঃ)-এর যুগটি ছিল হযরত নূহ (আঃ)-এর পরবর্তী যুগ। সূরায়ে আব্রাফেও তাঁর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আ’দ সম্প্রদায়কে হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের স্থলাভিষিক্ত করা হয় এবং তাদেরকে বেশ স্বচ্ছলতা প্রদান করা হয়। তারা ছিল সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের ছিল প্রচুর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। জমি-জমা, বাগ্-বাগীচা, ফলমূল, নদী-প্রস্রবণ ইত্যাদির প্রাচুর্য তাদের ছিল। মোটকথা, সুখের সামগ্রী তাদের সবই ছিল। কিন্তু তারা মহান আল্লাহর নিয়ামতরাশির জন্যে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি এবং তার সাথে শরীক স্থাপন করেছিল। নবী (আঃ)-কে তারা আবিশ্বাস করেছিল। নবী তো ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি তাদেরকে বুঝিয়েছিলেন এবং আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি তাদেরকে তাঁর রাসূল হওয়ার কথা বলার পর তাঁর আনুগত্য করার এবং আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করার দাওয়াত দেন, যেমন হযরত নূহ (আঃ) দাওয়াত দিয়েছিলেন। তারা তাদের শক্তি ও ধনৈশ্বর্যের নিদর্শন রূপে উঁচু উঁচু প্রসিদ্ধ পাহাড়ের উপর উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল। হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে এভাবে মাল অপচয় করতে নিষেধ করেছিলেন। কেননা, ওটা শুধু মাল অপচয় করা, সময় নষ্ট করা এবং কষ্ট উঠানো ছাড়া কিছুই ছিল না। ওতে না ছিল দ্বীনের কোন উপকার এবং না ছিল কোন উপকার দুনিয়ার। তাদের নবী হযরত হূদ (আঃ) তাই তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে নিরর্থক স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করছো? তোমরা কি মনে করেছে যে, এখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে? দুনিয়া তোমাদেরকে আখিরাতের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। জেনে রাখো যে, তোমাদের এ মনোবাসনা নিরর্থক। দুনিয়া তো নশ্বর। তোমরা নিজেরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। একটি কিরআতে (আরবি) রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উত্মা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন মুসলমানরা গৃতায় বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করে ও সুন্দর সুন্দর বাগান তৈরী করে তখন হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) এসব দেখে মসজিদে দাঁড়িয়ে যান এবং উচ্চ স্বরে বলেনঃ “হে দামেস্কের অধিবাসী! তোমরা আমার কথা শুনো!” জনগণ সব একত্রিত হলে তিনি হামদ ও সানার পর বলেনঃ “তোমাদের কি লজ্জা হয় না, তোমরা কি এটা খেয়াল করছে না যে, তোমরা যা জমা করতে শুরু করেছে তা তোমরা খেতে পার না? তোমরা এমন ঘরবাড়ী তৈরী করতে শুরু করে দিয়েছো যেগুলো তোমাদের বসবাসের কাজে লাগবে না। তোমরা এমন দূরের আশা করতে শুরু করেছে যা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তোমরা ভুলে গেছো যে, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও বহু কিছু জমা করেছিল, বড় বড় ও উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল, বড় রকমের আশা তারা পোষণ করেছিল, কিন্তু ফল এই দাঁড়িয়েছিল যে, তারা প্রতারিত হয়েছিল, তাদের সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাদের ঘরবাড়ী, দালান-কোঠা মূলোৎপাটিত হয়েছিল। আ’দ সম্প্রদায়কে দেখো, আদৃন হতে আম্মান পর্যন্ত তাদের ঘোড়া ও উট ছিল। কিন্তু তারা আজ কোথায়? এমন কোন নির্বোধ আছে কি যে আ’দ সম্প্রদায়ের মীরাসকে মাত্র দুই দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করবে?আল্লাহ তা'আলা আ’দ সম্প্রদায়ের ধন-দৌলত ও ঘরবাড়ীর বর্ণনা দেয়ার পর তাদের বল ও শক্তির বর্ণনা দিয়েছেন যে, তারা বড়ই উদ্ধত, অহংকারী ও পাষাণ হৃদয় ছিল। আল্লাহর নবী হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখালেন এবং তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে বললেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে ঐ সব নিয়ামতের কথা স্মরণ করালেন যেগুলো মহান আল্লাহ তাদেরকে দান করেছিলেন। যেমন চতুষ্পদ জন্তু, সন্তান-সন্ততি, উদ্যান এবং প্রস্রবণ। তারপর তিনি তাদেরকে বললেন যে, তিনি তাদের জন্যে মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করেন। তিনি তাদেরকে জান্নাতের লোভ দেখান এবং জাহান্নাম হতে ভীতি প্রদর্শন করেন। কিন্তু সবই বিফলে যায়।
قَالُوا سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَوَعَظْتَ أَمْ لَمْ تَكُنْ مِنَ الْوَاعِظِينَ
📘 Please check ayah 26:140 for complete tafsir.
إِنْ هَٰذَا إِلَّا خُلُقُ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 26:140 for complete tafsir.
وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ
📘 Please check ayah 26:140 for complete tafsir.
فَكَذَّبُوهُ فَأَهْلَكْنَاهُمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:140 for complete tafsir.
وَلَهُمْ عَلَيَّ ذَنْبٌ فَأَخَافُ أَنْ يَقْتُلُونِ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ১৩৬-১৪০ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত হূদ (আঃ)-এর হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা এবং উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শনযুক্ত ভাষণ তাঁর কওমের উপর মোটেই ক্রিয়াশীল হলো না। তারা পরিষ্কারভাবে বলে দিলোঃ “(হে হৃদ আঃ)! তুমি আমাদেরকে উপদেশ দাও আর না-ই দাও, উভয়ই আমাদের জন্যে সমান। আমরা তোমার কথা মেনে নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষদের রীতি-নীতি পরিত্যাগ করতে পারি না। আমাদের ঈমান আনয়নের ব্যাপারে তোমাদের নিরাশ হয়ে যাওয়া উচিত আমরা তোমার উপর ঈমান আনবো না।” প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের অবস্থা এটাই। তাদেরকে বুঝানো ও উপদেশ দান বৃথা। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে আল্লাহ তা'আলা একথাই বলেছিলেনঃ ‘যারা কাফির হয়েছে তাদেরকে তুমি ভয় প্রদর্শন কর বা না-ই কর, উভয়ই তাদের জন্যে সমান, তারা ঈমান আনবে না।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “নিশ্চয়ই যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের কথা বাস্তবায়িত হয়েছে তারা ঈমান আনয়ন করবে না।”(আরবি)-এর দ্বিতীয় কিরআত (আরবি) ও রয়েছে। অর্থাৎ হে হৃদ (আঃ)! তুমি.যে কথা আমাদেরকে বলছো এটা তো পূর্ববর্তীদের কথিত কথা।' যেমন কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলঃ “এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী, যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তোমার সামনে পাঠ করা হয়। আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “এটা একটা মিথ্যা অপবাদ যা তুমি নিজেই গড়িয়ে নিয়েছো এবং কিছু লোককে নিজের পক্ষে করে নিয়েছো।” প্রসিদ্ধ কিরআত হিসেবে অর্থ হবেঃ “যার উপর আমরা রয়েছি ওটাই আমাদের পূর্বপুরুষদের মাযহাব। আমরা তো তাদের পথেই চলবো এবং তাদের রীতি-নীতিরই অনুসরণ করবো। আর এর উপরই আমরা মৃত্যু বরণ করবো। তুমি যা বলছে তা বাজে কথা। মৃত্যুর পরে আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে এটা ঠিক নয়। আমাদেরকে শাস্তিও দেয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধাচরণ ও অবিশ্বাস করার কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করে তাদেরকে মূলোৎপাটিত করা হয়। এরাই ছিল প্রথম আ'দ। এদেরকেই ইরামাযাতিল ইমাদ বলা হয়েছে। এরা ইরাম ইবনে সাম ইবনে নূহ (আঃ)-এর বংশধর ছিল। তারা সুউচ্চ প্রাসাদে বাস করতো। ইরাম ছিল হযরত নূহ (আঃ)-এর পৌত্রের নাম। ইরাম কোন শহরের নাম ছিল না। কেউ কেউ ইরামকে শহরের নামও বলেছেন বটে, কিন্তু এটা বানী ইসরাঈলের উক্তি। তাদের মুখ থেকে শুনে অন্যেরাও একথা বলে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এর কোন ম্যুবৃত দলীল নেই। এ কারণেই কুরআন কারীমে ইরামের উল্লেখের পরেই বলা হয়েছেঃ (আরবি) (আরবি) অর্থাৎ “যার সমতুল্য কোন শহরে সৃষ্টি করা হয়নি।” (৮৯: ৮) যদি ইরাম দ্বারা শহর উদ্দেশ্য হতো তবে বলা হতো।অর্থাৎ “কোন দেশ যার মত শহর নির্মাণ করা হয়নি।” কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আ’দ সম্প্রদায় অন্যায়ভাবে ভূ-পৃষ্ঠে অহংকার করে এবং বলে-আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী আর কে আছে? তারা কি দেখেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী? তারা তার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো।” (৪১:১৫) এটা আমরা পূর্বেই বর্ণনা করেছি যে, তাদের উপর শুধু বলদের নাক পরিমাণ বায়ু পাঠিয়েছিলেন। ঐ বায়ুই তাদের শহরগুলো এবং তাদের ঘরবাড়ীগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেখান দিয়েই ঐ বায়ু প্রবাহিত হয় সব সাফ করে দেয়। কওমের সবারই মাথা দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আল্লাহর শাস্তিকে তারা বাতাসের আকারে দেখে দূর্গে, প্রাসাদে এবং সুরক্ষিত ঘরে আশ্রয় নেয়। মাটিতে গর্ত খনন করে তারা তাদের অর্ধেক দেহকে তাতে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহর শাস্তিকে কোন কিছু বাধা দিতে পারে কি? এ শাস্তি এক মিনিটের জন্যেও কাউকেও অবকাশ দেয় না। মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদের এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “আ’দ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞাবায়ু দ্বারা, যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন সপ্তরাত্রি ও অষ্টদিবস বিরামহীনভাবে; তখন তুমি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখতে তারা সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে সারশূন্য বিক্ষিপ্ত খর্জুর কাণ্ডের ন্যায়।” মহান আল্লাহ বলেনঃ এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই ঈমানদার নয়। আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু।
كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:145 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:145 for complete tafsir.
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 Please check ayah 26:145 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:145 for complete tafsir.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 ১৪১-১৪৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত সালেহ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করছেন যে, তাঁকে তাঁর কওম সামূদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা ছিল আরবীয় লোক। তারা হিজর নামক শহরে বাস করতো। ওটা ছিল দারুল কুরা ও শাম দেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। তাদের আবির্ভাব ঘটেছিল কওমে হ্রদের (অর্থাৎ আ’দের) পরে এবং কওমে ইবরাহীমের পূর্বে। শাম অভিমুখে যাওয়ার পথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এখান দিয়ে গমন করার কথা সূরায়ে আ’রাফের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। সামূদ সম্প্রদায়কে তাদের নবী হযরত সালেহ (আঃ) আল্লাহর দিকে আহ্বান করে বলেনঃ “আমি তোমাদের নিকট এক বিশ্বস্ত রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য স্বীকার করে নাও।' কিন্তু তারা তার কথা মানতে অস্বীকার করলো এবং কুফরীর উপরই কায়েম থাকলো। তারা হযরত সালেহ (আঃ)-কে অবিশ্বাস করলো এবং তার উপদেশ সত্ত্বেও তারা পরহেযগারী অবলম্বন করলো না। বিশ্বস্ত রাসূলের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা হিদায়াতের পথে আসলো না। অথচ নবী (আঃ)। তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বললেনঃ আমি এ কাজের জন্যে তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। তারপর তিনি তাদেরকে আল্লাহর নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যেগুলো আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন
أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا آمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
قَالَ كَلَّا ۖ فَاذْهَبَا بِآيَاتِنَا ۖ إِنَّا مَعَكُمْ مُسْتَمِعُونَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ
📘 Please check ayah 26:152 for complete tafsir.
الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ
📘 ১৪৬-১৫২ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত সালেহ (আঃ) স্বীয় কওমের মধ্যে ওয়াজ করতে রয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহর নিয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখিয়ে বলেনঃ যিনি তোমাদের জীবিকায় প্রশস্ততা দান করেছেন, যিনি তোমাদের জন্যে বাগান, প্রস্রবণ, শস্যক্ষেত্র, ফলমূল ইত্যাদি সরবরাহ করেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে যিনি তোমাদের জীবনের দিনগুলো পূর্ণ করতে রয়েছেন, তোমরা তাঁর অবাধ্যাচরণ করে এসব নিয়ামত এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে কালাতিপাত করে যেতে পারবে এটা মনে করে নিয়েছো কি? আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এখন যে মৰূত দূর্গ, সুউচ্চ ও সুন্দর প্রাসাদে বাস করতে দিয়েছেন, তোমরা কি মনে করেছে যে, তাঁর নাফরমানীর পরেও এগুলোর সবই ঠিক থাকবে? বড়ই আফসোসের বিষয় যে, তোমরা আল্লাহর নিয়ামতরাজির মর্যাদা দিলে না। তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছে, কিন্তু তোমরা যে কাজ করতে রয়েছে তাতে এসব যে ধ্বংস হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এসব চাকচিক্যময় প্রাসাদ তোমরা তৈরী করছো। শুধুমাত্র তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তি প্রকাশ করার জন্যে। এতে কোনই লাভ নেই, বরং এর শাস্তি তোমাদের নিজেদেরকে ভোগ করতে হবে। সুতরাং তোমাদের আল্লাহকে ভয় করা এবং আমার আনুগত্য করা উচিত। তোমাদের উচিত তোমাদের সৃষ্টিকর্তা, আহার্যদাতা, নিয়ামতদাতা এবং অনুগ্রহকারীর ইবাদত করা এবং তার হুকুম মান্য করা ও তাঁর একত্ববাদ স্বীকার করে নেয়া। তাহলে তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সুফল প্রাপ্ত হবে। তোমাদের তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাসবীহ তাহলীল করা একান্ত কর্তব্য। সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের তাঁরই ইবাদত করা উচিত এবং তোমাদের বর্তমান নেতৃবর্গকে মান্য করা মোটেই উচিত নয়। তারা সীমালংঘন করেছে। তাওহীদের অনুসরণ করা তারা। ভুলে গেছে। তারা ভূ-পৃষ্ঠে শান্তি স্থাপন না করে শুধু অশান্তিই সৃষ্টি করছে। তারা নিজেরা নাফরমানী, পাপ ও অন্যায় কাজে লিপ্ত রয়েছে এবং অন্যদেরকেও সেদিকে আহ্বান করছে। সত্যের আনুকূল্য করে নিজেদের সংশোধিত করার চেষ্টা তারা মোটেই করছে না।
قَالُوا إِنَّمَا أَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
مَا أَنْتَ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا فَأْتِ بِآيَةٍ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
قَالَ هَٰذِهِ نَاقَةٌ لَهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَعْلُومٍ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
فَعَقَرُوهَا فَأَصْبَحُوا نَادِمِينَ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:159 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ১৫৩-১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর
সামূদ সম্প্রদায় তাদের নবীকে উত্তর দেয়ঃ ‘তোমার উপর কেউ যাদু করেছে। যদিও এর একটি অর্থ এও করা হয়েছেঃ তুমি তো সৃষ্টদের একজন এবং এর দলীল হিসেবে নিম্নের কবিতাংশটি পেশ করা হয়েছেঃ (আারবি) অর্থাৎ “তুমি যদি আমাদের সম্পর্কে প্রশ্ন কর তবে জেনে রেখো যে, আমরা এই সৃষ্ট মানব জাতির চড়ুই পাখী তুল্য।” কিন্তু প্রথম অর্থটি বেশী প্রকাশমান।এর সাথে সাথেই তারা বললোঃ “তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ, সুতরাং আমাদের মধ্যে আর কারো উপর অহী না এসে শুধু তোমার উপর অহী আসবে এটা অসম্ভব। এটা তোমার বানানো কথা ছাড়া কিছুই নয়। তুমি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছো এবং আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো। আচ্ছা, আমরা এখন বলি যে, তুমি যদি সত্যিই নবী হও তবে কোন মু'জিযা দেখাও তো দেখি?” ঐ সময় তাদের ছোট বড় সবাই একত্রিত ছিল এবং একবাক্যে তারা হযরত সালেহ (আঃ)-এর কাছে মু'জিযা দেখতে চেয়েছিল। হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কি মুজিযা দেখতে চাও?” তারা উত্তর দেয়ঃ “এই যে আমাদের সামনে বিরাট পাহাড়টি রয়েছে এটা ফাটিয়ে দিয়ে এর মধ্য হতে এরূপ এরূপ রংএর ও এরূপ আকৃতির একটি গর্ভবতী উষ্ট্ৰী বের কর।” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করি এবং তিনি তোমাদের আকাঙ্ক্ষিত মুজিযাই আমার হাত দ্বারা দেখিয়ে দেন তবে তোমরা আমাকে নবী বলে স্বীকার করবে তো?” তারা তখন তার কাছে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করলো যে, যদি তিনি এ মু'জিযা দেখাতে পারেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে নবী বলে স্বীকার করে নেবে। হযরত সালেহ (আঃ) তৎক্ষণাৎ নামায শুরু করে দিলেন এবং ঐ মু'জিযার জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট দু'আ করলেন। ঐ সময়ই ঐ পাহাড় কেটে গেল এবং ওর মধ্য হতে ঐ ধরনেরই উষ্ট্ৰী বেরিয়ে আসলো। কিছু লোক তো তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী মুমিন হয়ে গেল, কিন্তু অধিকাংশ লোকই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কাফিরই রয়ে গেল।তিনি তাদেরকে বললেনঃ “দেখো, একদিন আমার এই উষ্ট্ৰীর পানি পান করার পালা এবং অপরদিন তোমাদের জন্তুগুলোর পানি পান করার পালা থাকলো। সাবধান! তোমরা আমার এ উষ্ট্রর কোন প্রকার অনিষ্ট করবে না, নচেৎ কঠিন শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে।” কিছুদিন পর্যন্ত তারা এটা মেনে চললো। উষ্ট্রীটি তাদের মধ্যেই অবস্থান করতে থাকলো। ওটা ঘাস-পাতা খেতো এবং ওর পালার দিন পানি পান করতো। ঐদিন তারা ওর দুগ্ধ পান করে পরিতৃপ্ত হতো। কিন্তু কিছুকাল পর তাদের দুষ্কার্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তাদের এক বড় অভিশপ্ত ব্যক্তি উষ্ট্ৰীটিকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করলো এবং সমস্ত শহরবাসী তাকে সমর্থন করলো। অতঃপর ঐ দুরাচার উজ্জ্বীটির পা কেটে ফেলে ওকে হত্যা করলো। যার ফলে তাদেরকে কঠিনভাবে লজ্জিত হতে হলো। আকস্মিকভাবে তাদের উপর আল্লাহর আযাব আপতিত হলো এবং তাদেরকে গ্রাস করলো। তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের এই ধ্বংসলীলা পরবর্তী লোকদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে গেল। এরূপ বড় বড় নিদর্শন স্বচক্ষে দেখেও তাদের অধিকাংশ লোকই ঈমান আনয়ন করেনি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু।
فَأْتِيَا فِرْعَوْنَ فَقُولَا إِنَّا رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:164 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:164 for complete tafsir.
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 Please check ayah 26:164 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:164 for complete tafsir.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 ১৬০-১৬৪ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত লূত (আঃ)-এর বর্ণনা দিচ্ছেন। তাঁর নাম ছিল পূত ইবনে হারান ইবনে আষর। তিনি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জীবদ্দশাতেই আল্লাহ তাআলা হযরত লূত (আঃ)-কে অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির উম্মতের নিকট প্রেরণ করেন। ঐ লোকগুলো সাযুম এবং ওর আশে পাশে বসবাস করতো। অবশেষে তাদের দুষ্কর্মের কারণে তাদের উপরও আল্লাহর শাস্তি আপতিত হয় এবং তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের বসতিগুলোর জায়গাটি একটি ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধময় পানির বিলে পরিণত হয়েছে। ওটা এখনো বেলাদে গাওর নামে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং বেলাদে কারক ও শাওবাকের মধ্যভাগে অবস্থিত। ঐ লোকগুলোও আল্লাহর রাসূল হযরত লূত (আঃ)-কে অবিশ্বাস করে। তিনি তাদেরকে আল্লাহর নাফরমানী পরিত্যাগ করার এবং তাঁর আনুগত্য করার উপদেশ দেন। তিনি যে তাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছে তা তিনি তাদের কাছে প্রকাশ করেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে, তিনি ঐ কাজের জন্যে তাদের কাছে কোন প্রতিদান চান না। তার পুরস্কার তো রয়েছে বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর নিকট। তিনি তাদেরকে বলেন, তোমরা তোমাদের জঘন্য কাজ হতে বিরত থাকো অর্থাৎ নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষদের দ্বারা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে যেয়ো না। কিন্তু তারা তাঁর কথা মানলো না, বরং তাকে কষ্ট দিতে শুরু করলো।
أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ ۚ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
قَالُوا لَئِنْ لَمْ تَنْتَهِ يَا لُوطُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
قَالَ إِنِّي لِعَمَلِكُمْ مِنَ الْقَالِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
أَنْ أَرْسِلْ مَعَنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
إِلَّا عَجُوزًا فِي الْغَابِرِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
ثُمَّ دَمَّرْنَا الْآخَرِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَطَرًا ۖ فَسَاءَ مَطَرُ الْمُنْذَرِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:175 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ১৬৫-১৭৫ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে এই বিশেষ নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে গিয়ে বলেনঃ “তোমরা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পুষদের নিকট যেয়ো না। বরং তোমরা তোমাদের হালাল স্ত্রীদের কাছে গিয়ে তোমাদের কাম বাসনা চরিতার্থ কর, যাদেরকে মহান আল্লাহ তোমাদের জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এ কথার উত্তরে তাঁর কওমের লোকেরা তাঁকে বললোঃ ‘হে লূত (আঃ)! তুমি যদি এ কাজ হতে বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বললোঃ তোমরা লুত (আঃ) ও তার অনুসারীদেরকে তোমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার কর, তারা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়।” ২৭: ৫৬) তাদের এ অবস্থা দেখে হযরত লুত (আঃ) তাদের প্রতি অসন্তুষ্টি ও তাদের থেকে বিচ্ছিন্নতার কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন, “আমি তোমাদের এ জঘন্য কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমি এ কাজ মোটেই পছন্দ করি না। আমি মহান আল্লাহর সামনে নিজেকে এসব কাজ হতে মুক্তরূপে প্রকাশ করছি।'অতঃপর হযরত লূত (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা'আলার নিকট বদদু'আ করেন এবং নিজের ও পরিবার-পরিজনদের জন্যে মুক্তির প্রার্থনা করেন। তাঁর স্ত্রী তাঁর কওমের সাথে যোগ দিয়েছিল। তাই সেও তাদের সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যেমন সূরায়ে আ'রাফ, সূরায়ে হৃদ এবং সূরায়ে হিজরে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।হযরত লূত (আঃ) আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে ঐ জনপদ হতে সরে পড়লেন। নির্দেশ ছিল যে, তাঁদের সেখান হতে চলে যাওয়ার পরই তাঁর কওমের উপর আল্লাহর শাস্তি আপতিত হবে, ঐ সময় তাদের দিকে ফিরেও তাকানো যাবে না। অতঃপর তাদের সবারই উপর আযাব এসে পড়ে এবং তারা সব ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষিত হয়। তাদের জন্যে এই প্রস্তর বৃষ্টি ছিল কতই না নিকৃষ্ট! তাদের এ ঘটনাটিও একটি শিক্ষামূলক বিষয়। এতে সবারই জন্যে উপদেশ রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। তবে আল্লাহ যে মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু এতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।
كَذَّبَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:180 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 26:180 for complete tafsir.
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 Please check ayah 26:180 for complete tafsir.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 26:180 for complete tafsir.
قَالَ أَلَمْ نُرَبِّكَ فِينَا وَلِيدًا وَلَبِثْتَ فِينَا مِنْ عُمُرِكَ سِنِينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 ১৭৬-১৮০ নং আয়াতের তাফসীর
এ লোকগুলো মাদইয়ানের অধিবাসী ছিল। হযরত শুআইবও (আঃ) তাদেরই মধ্যে একজন ছিলেন। তাঁকে তাদের ভাই না বলার কারণ শুধু এই যে, তারা আয়কার পূজা করতো। আর এই আয়কার সাথেই তাদেরকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। আয়কা ছিল একটি গাছ। এ কারণেই অন্যান্য নবীদেরকে বংশগত সম্পর্কের কারণে যেমন তাদের উম্মতের ভাই বলা হয়েছে, হযরত শুআইব (আঃ)-কে তাঁর উম্মতের ভাই বলা হয়নি, যদিও বংশগত হিসেবে তিনিও তাদের ভাই ছিলেন। যারা এই বিন্দু পর্যন্ত পৌছতে পারেননি তারা বলেন যে, এ লোকগুলো হযরত শুআইব (আঃ)-এর কম ছিল না বলেই তাঁকে তাদের ভাই বলা হয়নি। তারা অন্য কওম ছিল। হযরত শুআইব (আঃ)-কে তাঁর নিজের কওমের নিকটও পাঠানো হয়েছিল এবং ঐ কওমের নিকটও তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। অন্য কেউ বলেন যে, তিনি তৃতীয় একটি কওমের নিকটও প্রেরিত হয়েছিলেন। যেমন হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কোন নবীকে আল্লাহ দুই বার প্রেরণ করেননি, শুধু হযরত শুআইব (আঃ)-কে ছাড়া। একবার তাকে মাদইয়ানবাসীর নিকট পাঠানো হয়। তারা তাকে অবিশ্বাস করে। তখন বিকট চীৎকার দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার তাকে প্রেরণ করা হয় আয়কাবাসীর নিকট। তারাও তাকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের উপর আল্লাহর মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি নেমে আসে এবং তারা ধ্বংস হয়ে যায় ।হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আসহাবে রস ও আসহাবে আয়কা হলো হযরত শুআইব (আঃ)-এর কওম। একজন বুযর্গ ব্যক্তির উক্তি এই যে, আসহাবে আয়কা ও আসহাবে মাদইয়ান একই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কওমে মাদইয়ান ও আসহাবে আয়কা দু’টি উম্মত, যাদের নিকট আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী হযরত শুআইব (আঃ)-কে প্রেরণ করেছিলেন।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গারীব এবং এর মারফু হওয়া সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে। খুব সম্ভব এটা মাওকুফ হাদীস) আর সঠিক কথা এই যে, দুটো একই উম্মত।
۞ أَوْفُوا الْكَيْلَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُخْسِرِينَ
📘 Please check ayah 26:184 for complete tafsir.
وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ
📘 Please check ayah 26:184 for complete tafsir.
وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
📘 Please check ayah 26:184 for complete tafsir.
وَاتَّقُوا الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالْجِبِلَّةَ الْأَوَّلِينَ
📘 ১৮১-১৮৪ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত শুআইব (আঃ) ওজন ও মাপ ঠিক করার হিদায়াত করছেন। মাপে ঘাটতি করতে তিনি নিষেধ করছেন। তিনি বলছেনঃ “যখন তোমরা কাউকে কোন জিনিস মেপে দেবে তখন পূর্ণমাত্রায় দেবে, তার প্রাপ্য হতে কম দেবে না। অনুরূপভাবে কারো নিকট থেকে যখন কোন জিনিস নেবে তখন বেশী নেয়ার চেষ্টা করো না। এটা কেমন বিচার যে, নেয়ার সময় বেশী নেবে এবং দেয়ার সময় কম দেবে? লেন-দেন ঠিকভাবে করবে। দাঁড়িপাল্লা সঠিক রাখবে যাতে ওজন সঠিক হয়। ন্যায়ের সাথে ওজন করবে, ডান্ডি মারবে না এবং কম দেবে না।কাউকেও তার জিনিস কম দেবে না। চুরি-ডাকাতি এবং লুটপাট করবে না। লোকদেরকে ভয় দেখিয়ে তাদের মাল-ধন ছিনিয়ে নেবে না। ঐ আল্লাহর শাস্তিকে তোমরা ভয় করো যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তী সমস্ত লোককে সৃষ্টি করেছেন। যিনি তোমাদের ও তোমাদের বড়দের প্রতিপালক।” এ শব্দটিই। (আরবি) (৩৬:৬২) এই আয়াতেও এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ “শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল।”
قَالُوا إِنَّمَا أَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
وَمَا أَنْتَ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا وَإِنْ نَظُنُّكَ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِنَ السَّمَاءِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّي أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
وَفَعَلْتَ فَعْلَتَكَ الَّتِي فَعَلْتَ وَأَنْتَ مِنَ الْكَافِرِينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:191 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ১৮৫-১৯১ নং আয়াতের তাফসীর
সামূদ সম্প্রদায় তাদের নবীকে যে উত্তর দিয়েছিল ঐ উত্তরই এই লোকগুলোও তাদের নবীকে দিলো। তারাও নবী (আঃ)-কে বললোঃ “তোমাকে কেউ যাদু করেছে। তোমার জ্ঞান ঠিক নেই। তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ। আর আমাদের তো বিশ্বাস যে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা'আলা তোমাকে নবীরূপে প্রেরণ করেননি। আচ্ছা, তুমি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকো তবে আকাশের একটি খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও দেখি? আসমানী শাস্তি আমাদের উপর নিয়ে এসো।” যেমন কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলঃ “আমরা তোমার উপর ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না তুমি আরবের এই বালুকাময় ভূমিতে নদী প্রবাহিত করবে।” এমনকি তারা এ কথাও বলেছিলঃ “অথবা তুমি আকাশের একটা খণ্ড আমাদের উপর নিক্ষেপ করবে যেমন তুমি ধারণা করছো অথবা আল্লাহ কিংবা ফেরেশতাদেরকে সরাসরি আমাদের সামনে নিয়ে আসবে।” অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ “তারা বলেছিল-হে আল্লাহ! যদি এটা তোমার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আকাশ হতে একটা টুকরা আমাদের উপর নিক্ষেপ কর।” অনুরূপভাবে ঐ কাফির অজ্ঞ লোকেরা বলেছিলঃ “তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও।” নবী (আঃ) উত্তরে বলেনঃ তোমরা যা কর আমার প্রতিপালক তা ভালরূপে অবগত আছেন। তোমরা যা হওয়ার যোগ্য তিনি তোমাদেরকে তাই করবেন। যদি তোমরা তাঁর কাছে আসমানী শাস্তির যোগ্য হয়ে থাকো তবে তিনি অনতিবিলম্বে তোমাদের উপর ঐ শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। শেষ পর্যন্ত যে শাস্তি তারা কামনা করেছিল সেই শাস্তিই তাদের উপর এসে পড়ে। তারা কঠিন গরম অনুভব করে। সাত দিন পর্যন্ত যমীন যেন টগবগ করে ফুটতে থাকে। কোন জায়গায়, কোন ছায়ায় ঠাণ্ডা ও শান্তি তারা প্রাপ্ত হয়নি। তারা চরম অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। সাত দিন পর তারা দেখতে পায় যে, একখণ্ড কালো মেঘ তাদের নিকট চলে আসছে। ঐ মেঘখণ্ড এসে তাদের মাথার উপর ছেয়ে যায়। তারা গরমে অস্থির হয়ে পড়েছিল। ঐ মেঘ দেখে তারা ওর নীচে বসে পড়ে। যখন সবাই ওর নীচে এসে যায় তখন ঐ মেঘ হতে অগ্নি বর্ষণ শুরু হয়ে যায়। সাথে সাথে যমীন প্রচণ্ডভাবে টান দিতে শুরু করে এবং এমন ভীষণ শব্দ করে যে, তাদের অন্তর ফেটে যায় এবং একই সাথে সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। ঐ দিনের মহাপ্লাবন তাদের একজনকেও অবশিষ্ট রাখেনি। সূরায়ে আ’রাফে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো, ফলে তাদের প্রভাত হলো নিজগৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়।” (৭: ৭৮) এটা এই কারণে যে, তারা বলেছিলঃ(আরবি) অর্থাৎ “হে শুআইব (আঃ)! তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস করেছে। ভাদেরকে আমরা জনপদ হতে বহিষ্কার করবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।” (৭: ৮৮) সূরায়ে হূদে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা সীমালংঘন করেছিল মহা-নাদ তাদেরকে আঘাত করলো।” (১১:৬৭) এটা এই কারণে যে, তারা আল্লাহর নবী (আঃ)-কে বিদ্রুপ করেছিলঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার নামায কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদত করতে আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও না? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু, সদাচারী।” (১১:৮৭)।আর এখানে রয়েছে যে, তারা বলেছিলঃ “তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের একখণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও। অতঃপর তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করলো।” সুতরাং ঐ তিন জায়গায় তিন প্রকারের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই বর্ণনা জায়গার সম্পর্কের কারণেই দেয়া হয়েছে। সূরায়ে আ’রাফে তাদের এই খিয়ানতের উল্লেখ রয়েছে যে, তারা হযরত শুআইব (আঃ)-কে ধমকের সুরে বলেছিলঃ তুমি যদি আমাদের ধর্মে না আসো তবে আমরা তোমাকে ও তোমার সহচরদেরকে আমাদের শহর হতে বের করে দিবো। যেহেতু সেখানে নবী (আঃ)-এর অন্তরকে কম্পিত করে তোলার বর্ণনা রয়েছে, সেই হেতু তাদেরকে শাস্তি দেয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ভূমিকম্প দ্বারা, যাতে তাদেরও অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। সূরায়ে হৃদে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা তাদের নবী হযরত শুআইব (আঃ)-কে উপহাস করে বলেছিলঃ তুমি তো বড় সহিষ্ণু ও ভাল লোক।' এ কথার ভাবার্থ ছিলঃ তুমি বড়ই বাজে উক্তিকারী ও দুষ্ট লোক। কাজেই সেখানে তাদের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে মহা-নাদ দ্বারা। আর এখানে যেহেতু তাদের কামনা ছিল যে, যেন তাদের প্রতি আকাশের একটি খণ্ড নিক্ষিপ্ত হয়, সেই হেতু এখানে তাদের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তাদের উপর আকাশ হতে শাস্তিমূলক প্রস্তরবৃষ্টি বর্ষিত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (লাঃ) বলেন যে, সাত দিন পর্যন্ত তাদের উপর এই প্রস্তর বর্ষিত হতে থাকে। কোন জায়গাতেই তারা একটু শান্তি ও শীতলতা লাভ করতে পারেনি। এরপর আকাশে একখণ্ড মেঘ তারা দেখতে পায়। একটি লোক ঐ মেঘের নীচে পৌঁছে এবং সেখানে শান্তি লাভ করে। তাই সে অন্যদেরকে সেখানে আহ্বান করে। যখন সবাই সেখানে একত্রিত হয়ে যায় তখন ঐ মেঘ ফেটে যায় এবং তা হতে অগ্নি বর্ষিত হয়।এও বর্ণিত আছে যে, ছায়ারূপে যে মেঘমালা ছিল তা তাদের একত্রিত হওয়া মাত্রই সরে যায় এবং সূর্য হতে তাদের উপর অগ্নি বর্ষিত হয়। ফলে তারা সবাই দগ্ধীভূত হয়। মুহাম্মাদ ইবনে কাব কুরতী (রঃ) বলেন যে, মাদইয়ানবাসীদের উপর তিনটি শাস্তিই আপতিত হয়েছিল। শহরে ভূমিকম্প শুরু হলে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শহর হতে বাইরে পালিয়ে যায় এবং বাইরে সবাই একত্রিত হয়। কিন্তু সেখানেও তাদের হতবুদ্ধিতা ও অস্বস্তিকর অবস্থা শুরু হয়ে যায়। সুতরাং আবার তারা সেখান হতে পলায়ন করে। কিন্তু শহরে প্রবেশ করতে তারা ভয় পায়। এমতাবস্থায় এক জায়গায় তারা একখণ্ড মেঘ দেখতে পায়। একটি লোক ঐ মেঘখণ্ডের নীচে যায় এবং সেখানে ঠাণ্ডা ও শান্তি অনুভব করে সকলকে সেখানে আসতে বলে। তারা এ কথা শোনা মাত্র সবাই ঐ মেঘখণ্ডের নীচে একত্রিত হয়ে যায়। এমন সময় এক ভীষণ চীৎকারের শব্দ আসে, যার ফলে তাদের কলেজা ফেটে যায় এবং সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বজ্রের ভীষণ গর্জন ও কঠিন গরম শুরু হয়, ফলে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তাদের অস্বস্তিকর অবস্থা সীমা ছাড়িয়ে যায়। হতবুদ্ধি হয়ে সবাই শহর ছেড়ে দিয়ে ময়দানে গিয়ে জমা হয়ে যায়। এখানে তারা মেঘখণ্ড দেখতে পায় এবং ঠাণ্ডা ও আরাম লাভ করার। উদ্দেশ্যে ওর নীচে সবাই একত্রিত হয়। কিন্তু সেখানে অগ্নি বর্ষিত হয় এবং তারা সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। এটা ছিল মেঘাচ্ছন্ন দিনের বড় শাস্তি যা তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।নিঃসন্দেহে এ ঘটনা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর মহাশক্তির একটি বড় নিদর্শন। তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিল না। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করার ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী। কেউই তার উপর বিজয় লাভ করতে পারে না। তিনি তাঁর সৎ বান্দাদের প্রতি পরম করুণাময়। তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নেন।
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:195 for complete tafsir.
نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ
📘 Please check ayah 26:195 for complete tafsir.
عَلَىٰ قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ
📘 Please check ayah 26:195 for complete tafsir.
بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ
📘 ১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর
সূরার শুরুতে কুরআন কারীমের বর্ণনা এসেছিল, ওরই বর্ণনা আবার বিস্তারিতভাবে দেয়া হচ্ছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন কারীম আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। রূহুল আমীন দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অহী নিয়ে আসতেন। রূহুল আমীন দ্বারা যে হযরত জিবরাঈল (আঃ) উদ্দেশ্য এটা পূর্বযুগীয় বহু গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত আতিয়্যা (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) হযরত ইবনে জুরায়েজ (রঃ) প্রমুখ। হযরত যুহরী (রঃ) বলেন যে, এটা আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবি) অর্থাৎ “বল-যে কেউ জিবরীল (আঃ)-এর শত্রু এই জন্যে যে, সে আল্লাহর নির্দেশক্রমে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌছিয়ে দিয়েছে, যা ওর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক।” (২:৯৭) এ ফেরেশতা এমন সম্মানিত যে, তাঁর শত্রু আল্লাহও শত্রু। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, রুহুল আমীন (আঃ) যার সাথে কথা বলেন তাঁকে যমীনে খায় না। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! এই বুযর্গ ও মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতা, যে ফেরেশতাদের নেতা, তোমার হৃদয়ে আল্লাহর ঐ পবিত্র ও উত্তম কথা অবতীর্ণ করে যা সর্ব প্রকারের ময়লা-মলিনতা, হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বক্রতা হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, যেন তুমি পাপীদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচাবার পথ প্রদর্শন করতে পার। আর যাতে তুমি আল্লাহর অনুগত বান্দাদের তাঁর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিতে পার। এটা সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতারিত যাতে সবাই এটা বুঝতে এবং পড়তে পারে, তাদের যেন ওজর কবার কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। আর যাতে এ কুরআন কারীম প্রত্যেকের উপর হুজ্জত হতে পারে।হযরত ইবরাহীম তাইমী (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা বাদলের দিনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীদের সাথে ছিলেন এমন সময় তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মেঘের গুণাবলী বর্ণনা করেন। তখন একজন লোক তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো সর্বাপেক্ষা বাকপটু ও প্রাঞ্জল ভাষী!” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমার ভাষা এরূপ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত এবং প্রাঞ্জল হবে না কেন? কুরআন কারীমও তো আমার ভাষাতেই অবতীর্ণ হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, অহী আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রত্যেক নবী তাঁর কওমের জন্যে তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কিয়ামতের দিন সুরইয়ানী ভাষা হবে। আর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আরবী ভাষায় কথা বলবে।
وَإِنَّهُ لَفِي زُبُرِ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 26:199 for complete tafsir.
أَوَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ آيَةً أَنْ يَعْلَمَهُ عُلَمَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ
📘 Please check ayah 26:199 for complete tafsir.
وَلَوْ نَزَّلْنَاهُ عَلَىٰ بَعْضِ الْأَعْجَمِينَ
📘 Please check ayah 26:199 for complete tafsir.
فَقَرَأَهُ عَلَيْهِمْ مَا كَانُوا بِهِ مُؤْمِنِينَ
📘 ১৯৬-১৯৯ নং আয়াতের তাফসীর
মহান আল্লাহ বলেন যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যেও এই শেষ পবিত্র কিতাব আল-কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী, এর সত্যতা এবং বিশেষণ বিদ্যমান রয়েছে। পূর্ববর্তী নবীরাও এর সুসংবাদ দিয়েছেন, এমনকি এই সব নবী (আঃ)-এর শেষ নবী, যার পরে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত আর কোন নবী ছিলেন না, অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে একত্রিত করে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলেছিলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “স্মরণ কর, যখন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) বলেছিলঃ হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমাদ (সঃ) নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা।” (৬১:৬)(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। (আরবি) হযরত দাউদ (আঃ)-এর কিতাবের নাম। (আরবি)শব্দটি এখানে কিতাবসমূহের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা যা কিছু করছে সবই কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। (৫৪: ৫২)অতঃপর বলা হচ্ছেঃ যদি তারা বুঝে ও হঠকারিতা না করে তবে এটা কি করআন কারীমের সত্যতার কম বড় দলীল যে, স্বয়ং বানী ইসরাঈলের আলেমরা এটা মেনে থাকে? যারা সত্যবাদী ও যারা হঠকারী নয় তারা তাওরাতের ঐ আয়াতগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করছে যেগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রেরিতত্ব, কুরআনের উল্লেখ এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতার সংবাদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ), হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) এবং তাদের ন্যায় সত্য উক্তিকারী মহোদয়গণ দুনিয়ার সামনে তাওরাত ও ইঞ্জীলের ঐ সমুদয় আয়াত রেখে দেন যেগুলো নবী (সঃ)-এর মাহাত্ম ও গুণাবলী প্রকাশকারী।পরবর্তী আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি যদি এই কালাম কোন আজমীর উপর অবতীর্ণ করতাম এবং সে ওটা মুশরিকদের নিকট পাঠ করতো তবে তখনো তারা এতে ঈমান আনতো না। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেছেনঃ “আমি যদি তাদের জন্যে আকাশের দরও খুলে দিতাম এবং তারা আকাশে চড়েও যেতো তবুও তারা বলতো-আমাদেরকে নেশা পান করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমাদের চোখের উপর পর্দা ফেলে দেয়া হয়েছে।” আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ “যদি তাদের কাছে ফেরেশতারাও এসে পড়তে এবং যদি মৃতরাও কথা বলে উঠতো তবুও তারা ঈমান আনতো না। তাদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তাদের জন্যে হিদায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না।
تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
قَالَ فَعَلْتُهَا إِذًا وَأَنَا مِنَ الضَّالِّينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
كَذَٰلِكَ سَلَكْنَاهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
فَيَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
فَيَقُولُوا هَلْ نَحْنُ مُنْظَرُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
أَفَرَأَيْتَ إِنْ مَتَّعْنَاهُمْ سِنِينَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
ثُمَّ جَاءَهُمْ مَا كَانُوا يُوعَدُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
مَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يُمَتَّعُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا لَهَا مُنْذِرُونَ
📘 Please check ayah 26:209 for complete tafsir.
ذِكْرَىٰ وَمَا كُنَّا ظَالِمِينَ
📘 ২০০-২০৯ নং আয়াতের তাফসীর
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অবিশ্বাস, কুফরী, অস্বীকার ও অমান্যকরণ এই অপরাধীদের অন্তরে সঞ্চার করে দেয়া হয়েছে। তারা যে পর্যন্ত না শাস্তি স্বচক্ষে দেখবে ঈমান আনবে না। ঐ সময় যদি তারা ঈমান আনয়ন করে তবে তা বিফলে যাবে। সেই সময় তারা অভিশপ্ত হয়েই যাবে। না অনুশোচনা করে কোন কাজ হবে, না ওজর করে কোন উপকার হবে। তাদের অজ্ঞাতে আকস্মিকভাবে তাদের উপর আযাব চলে আসবে। ঐ সময় তারা কামনা করবে যে, যদি তাদেরকে ক্ষণেকের জন্যে অবকাশ দেয়া হতো তবে তারা সৎ হয়ে যেতো! শুধু তারা কেন, প্রত্যেক যালিম, পাপী, ফাসেক, কাফির ও বদকার শাস্তি প্রত্যক্ষ করা মাত্রই সোজা হয়ে যাবে এবং শাস্তি হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে অনুনয় বিনয় করতে থাকবে, কিন্তু সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেই দিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, তখন যালিমরা বলবে-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিন, আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিবো এবং রাসূলদের অনুসরণ করবো। (উত্তরে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই?" (১৪:৪৪)ফিরাউনের অবস্থা দেখা যায় যে, হযরত মূসা (আঃ) তার জন্যে বদদু'আ করেন এবং তা কবূল করা হয়। আল্লাহর শাস্তি দেখে ডুবন্ত অবস্থায় সে বলেঃ “এখন আমি মুসলমান হচ্ছি।” কিন্তু উত্তরে বলা হয় যে, এখন ঈমান আনয়নে কোনই লাভ হবে না। অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যখন তারা আমার শাস্তি দেখলো তখন বললো-আমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম (শেষ পর্যন্ত)।”এরপর তাদের আর একটি দুষ্কৃতির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা তাদের নবীকে বলেছিলঃ “তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর আযাব নিয়ে এসো।' মহান আল্লাহ বলেনঃ “যদি আমি তাদেরকে দীর্ঘকাল ভোগ-বিলাসের সুযোগ দিই এবং পরে তাদের উপর আমার ওয়াদাকৃত শাস্তি এসে পড়ে তবে ঐ সময় তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ তাদের কোন কাজে আসবে কি?” ঐ সময় তো এরূপই মনে হবে যে, সে হয়তো এক সকাল বা এক সন্ধ্যাই দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। যেমন অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “তাদের একজন এটা কামনা করে যে, যদি তাকে এক হাজার বছর আয়ু দেয়া হতো! যদি তাকে এই আয়ু দেয়াও হয় তবুও তা তাকে শাস্তি হতে দূরে রাখতে পারবে না।” (২: ৯৬) এখানেও তিনি একথাই বলেন যে, তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ সেদিন তাদের কোন উপকারে আসবে না। সেই দিন যখন তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তাদের শক্তি ও দাপট সব হারিয়ে যাবে।সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন কাফিরকে আনয়ন করা হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামের আগুনে ডুবিয়ে দেয়ার পর উঠানো হবে এবং বলা হবেঃ তুমি কখনো সুখ ও নিয়ামত পেয়েছিলে কি? সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ! আমি কখনোই সুখ-শান্তি পাইনি।” অপর একটি লোককে আনয়ন করা হবে যে সারা জীবনে কখনো সুখ-শান্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পায়নি, তাকে জান্নাতের বাতাসে ভ্রমণ করানোর পর জিজ্ঞেস করা হবেঃ“তুমি জীবনে কখনো দুঃখ-কষ্ট পেয়েছিলে কি?” সে জবাবে বলবেঃ “আপনার সত্তার কসম! আমি জীবনে কখনো দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিনি।” হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নের কবিতাংশটি পাঠ করতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তুমি তোমার আকাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে গেলে তখন যেন তুমি কখনো দুঃখ-কষ্টের নামও শুননি।”এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ নিজের ন্যায়পরায়ণতার খবর দিচ্ছেন যে, তিনি। এমন কোন জনপদ ধ্বংস করেননি যার জন্যে তিনি কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেননি। তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেন, কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেন এবং সতর্ক করে থাকেন। এরপরেও যারা অমান্য করে তাদের উপর তিনি বিপদের পাহাড় চাপিয়ে দেন। এ জন্যেই তিনি বলেনঃ এরূপ কখনো হয়নি যে, নবীদেরকে প্রেরণ না করেই আমি কোন উম্মতের উপর শাস্তি পাঠিয়েছি। প্রথমে আমি ভয়-প্রদর্শক প্রেরণ করি এবং সে উম্মতকে ভয় প্রদর্শন করে ও উপদেশ দেয়। এভাবে আমি তাদের ওযর করবার কিছুই বাকী রাখি না। কিন্তু এতদসত্তেও যখন তারা তাদের নবীকে অবিশ্বাস করে তখন তাদের উপর শাস্তি আপতিত হয়।যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি শাস্তি প্রদানকারী নই যে পর্যন্ত না আমি রাসূল প্রেরণ করি।” (১৭: ১৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না যে পর্যন্ত না তিনি জনপদগুলোর মূল জনপদে কোন রাসূল প্রেরণ করেন যে তাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনায়।”
فَفَرَرْتُ مِنْكُمْ لَمَّا خِفْتُكُمْ فَوَهَبَ لِي رَبِّي حُكْمًا وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 26:22 for complete tafsir.
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِينُ
📘 Please check ayah 26:212 for complete tafsir.
وَمَا يَنْبَغِي لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيعُونَ
📘 Please check ayah 26:212 for complete tafsir.
إِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُولُونَ
📘 ২১০-২১২ নং আয়াতের তাফসীর
মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা এমন এক পবিত্র কিতাব যার আশে পাশে মিথ্যা আসতে পারে না। কিতাব (আল-কুরআন) মহাবিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতারিত। এটাকে শক্তিশালী ফেরেশতা রূহুল আমীন (হযরত জিবরাঈল আঃ) আনয়ন করেছেন, শয়তান আনয়ন করেনি।অতঃপর শয়তান যে এটা আনয়ন করেনি তার তিনটি কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে। যে, সে এর যোগ্যতাই রাখে না। তার কাজ হলো মাখলুককে পথভ্রষ্ট করা, সরল-সঠিক পথে আনয়ন করা নয়। ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ এই কিতাবের বৈশিষ্ট্য। অথচ শয়তান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এই কিতাব হলো জ্যোতি ও হিদায়াত এবং এটা হলো দলীল। আর শয়তানরা এই তিনটিরই উল্টো। তারা অন্ধকার-প্রিয়। তারা ভ্রান্তপথ প্রদর্শক এবং অজ্ঞতার পাগল। সুতরাং এই কিতাব ও শয়তানদের মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য রয়েছে। কোথায় তারা এবং কোথায় এই কিতাব! দ্বিতীয় কারণ এই যে, সে তো এটা বহন করার যোগ্যতাই রাখে না এবং তার মধ্যে এ শক্তিই নেই। এটা এমনই সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন বাণী যে, যদি এটা কোন বড় পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ হয় তবে ওকে ফাটিয়ে চৌচির করে ফেলবে। এরপর তৃতীয় কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, এই কুরআন অবতীর্ণ করার সময় শয়তানদেরকে তো সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা তো ওটা শুনতেই পায়নি। আকাশের চতুর্দিকে প্রহরী নিযুক্ত ছিল। শুনবার জন্যে যখনই তারা আকাশে উঠতে যাচ্ছিল তখনই তাদের প্রতি অগ্নি বর্ষিত হচ্ছিল। এর একটি অক্ষরও শুনবার ক্ষমতা তার ছিল না। এর ফলে আল্লাহর কালাম নিরাপদ ও সুরক্ষিত পন্থায় তাঁর নবী (সঃ)-এর নিকট পৌঁছে যায় এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর মাখলুকের কাছে এটা পৌঁছে। এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। যেমন তিনি স্বয়ং জ্বিনদের উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শুনবার জন্যে বসতাম কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্যে প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়। আমরা জানি না জগদ্বাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, না তাদের প্রতিপালক তাদের মঙ্গল চান।” (৭২: ৮-১০)
فَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَتَكُونَ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ
📘 Please check ayah 26:220 for complete tafsir.
وَتِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا عَلَيَّ أَنْ عَبَّدْتَ بَنِي إِسْرَائِيلَ
📘 ১০-২২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা এবং রাসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ)-কে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন এখানে তিনি তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। তুর পাহাড়ের ডান দিক হতে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে ডাক দেন, তাঁর সাথে কথা বলেন এবং তাকে নিজের রাসূল ও মনোনীত বান্দারূপে নির্বাচন করেন। তাঁকে তিনি ফিরাউনের নিকট প্রেরণ করেন, যে ছিল চরম অত্যাচারী বাদশাহ। তার মধ্যে আল্লাহর ভয় মোটেই ছিল না। হযরত মূসা (আঃ) মহান আল্লাহর নিকট স্বীয় দুর্বলতার কথা প্রকাশ করেন এবং তা তার পক্ষ থেকে দূর করে দেয়া হয়। যেমন সূরায়ে। তোয়-হায় তাঁর প্রার্থনার পরে বলা হয়ঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে। মূসা (আঃ)! তোমার প্রার্থিত জিনিস তোমাকে দিয়ে দেয়া হলো।” (২০: ৩৬) এখানে তিনি তাঁর ওজর বর্ণনা করে বলেনঃ “আমার হৃদয় সংকুচিত হয়ে পড়ছে, আমার জিহ্বায় জড়তা রয়েছে। সুতরাং (আমার বড় ভাই) হারুন (আঃ)-কেও আমার সাথে নবী বানিয়ে দিন। আর আমি তাদেরই মধ্য হতে একজন কিবতীকে বিনা দোষে মেরে ফেলেছিলাম। ঐ কারণে আমি মিসর ছেড়েছিলাম। তাই এখন আমার ভয় হচ্ছে যে, তারা হয়তো আমাকে হত্যা করে ফেলবে।” জবাবে মহান আল্লাহ তাঁকে বললেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। তোমার ভাইকে আমি তোমার সঙ্গী বানিয়ে দিলাম এবং তোমাদেরকে উজ্জ্বল দলীল প্রদান করলাম। সুতরাং তারা তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা জয়যুক্ত হবে। তোমরা আমার নিদর্শনগুলো নিয়ে তার কাছে যাও এবং তাকে বুঝাতে থাকো। তোমাদের সাথে আমার সাহায্য রয়েছে। তোমাদের ও তাদের সব কথাই আমি শুনতে থাকবে এবং তোমাদের সবকিছুই আমি দেখতে থাকবো। আমার হিফাযত, সাহায্য-সহানুভূতি এবং পৃষ্ঠপোষকতা তোমাদের সাথে রইলো। কাজেই তোমরা উভয়ে ফিরাউনের কাছে গিয়ে বল, আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূলরূপে তোমার নিকট প্রেরিত হয়েছি।” যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমরা দু’জন তোমার প্রতিপালকের রাসূল।” (২০: ৪৭) আল্লাহ তাদেরকে আরো বলতে বললেনঃ বানী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দাও। তারা আল্লাহর মুমিন বান্দা। তুমি তাদেরকে তোমার দাস বানিয়ে রেখেছে এবং তাদের অবস্থা করেছো অত্যন্ত শোচনীয়। তুমি তাদের দ্বারা লাঞ্ছনার সাথে সেবার কাজ করিয়ে নিচ্ছ এবং তাদেরকে বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি দিচ্ছ। এখন তুমি তাদেরকে আযাদ করে দিয়ে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দাও।হযরত মূসা (আঃ)-এর এ পয়গাম ফিরাউন অত্যন্ত তুচ্ছ জ্ঞানে শুনলো এবং তাকে ধমকের সুরে বললোঃ আমরা কি তোমাকে শৈশবে আমাদের মধ্যে প্রতিপালন করিনি? এবং তুমি তো তোমার জীবনের বহু বছর আমাদের মধ্যে কাটিয়েছে। আর তুমি আমাকে এর প্রতিদান এই দিয়েছে যে, আমাদের একটি লোককে হত্যা করেছো। তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ। তার একথার জবাবে হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেনঃ “আমি তো এটা করেছিলাম। তখন যখন আমি অজ্ঞ ছিলাম এবং ওটা ছিল আমার নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বের ঘটনা।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে(আরবি) -এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ ঐ যুগ চলে গেছে, এখন অন্য যুগ এসেছে। আল্লাহ তা'আলা আমাকে রাসূল করে তোমার নিকট পাঠিয়েছেন। এখন যদি তুমি আমার কথা মেনে নাও তবে তুমি শান্তি লাভ করবে। আর যদি আমাকে অবিশ্বাস কর তবে নিঃসন্দেহে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি যে ভুল করেছিলাম ওর পর তোমাদের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার প্রতি আল্লাহ এই অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং এখন পুরাতন কথার উল্লেখ না করে আমার দাওয়াত কবুল করে নাও। জেনে রেখো যে, তুমি আমার একার প্রতি একটা অনুগ্রহ। করেছিলে বটে, কিন্তু আমার কওমের উপর তুমি যুলুম ও বাড়াবাড়ি করেছে। তাদেরকে তুমি অন্যায়ভাবে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। আমার সাথে তুমি যে। সদাচরণ করেছে এবং আমার কওমের প্রতি যে অন্যায়াচরণ করেছো দুটো কি সমান হবে?
إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
📘 ২১৩-২২০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তুমি শুধু আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। আর যে এরূপ করবে না অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে সে অবশ্যই শাস্তির যোগ্য হবে। তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিবে যে, ঈমান ছাড়া অন্য কিছুই মুক্তিদাতা নয়।এরপর তিনি নির্দেশ দিচ্ছেনঃ একত্ববাদী ও তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হবে। আর যে কেউই আমার আদেশ ও নিষেধ অমান্য করবে সে যে-ই হোক না কেন তার সাথে কোনই সম্পর্ক রাখবে না এবং তার প্রতি স্বীয় অসন্তোষ প্রকাশ করবে।বিশেষ লোককে এই ভয় প্রদর্শন সাধারণ লোককে ভয় প্রদর্শন করার বিপরীত নয়। কেননা, এটা তার একটা অংশ। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে তারা গাফিল।” (৩৬: ৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মূল জনপদকে এবং ওর আশে পাশের লোকদেরকে।”(৭: ৪২) অন্য এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এর দ্বারা তুমি সতর্ক কর তাদেরকে যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত করা হবে।” (৬: ৫১) আরো এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ যাতে তুমি এর দ্বারা পরহেযগারদেরকে সুসংবাদ দিতে ও উদ্ধতদেরকে সতর্ক করতে পার।”(১৯:৯৭) আল্লাহ তা'আলা আরো বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাতে আমি এর দ্বারা ভয় প্রদর্শন করতে পারি তোমাদেরকে এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছে।” (৬: ১৯)সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এই উম্মতের মধ্যে যার কানে আমার খবর পৌঁছেছে, সে ইয়াহুদী হোক অথবা খৃষ্টানই হোক, অতঃপর আমার উপর সে ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে। আমরা এগুলো বর্ণনা করছিঃ
প্রথম হাদীস
ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তা'আলা (আরবি)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাফা পর্বতের উপর উঠে (আরবি) আকস্মিক কোন বিপদের সময় আরবের লোকেরা বিপদ সংকেত হিসেবে এরূপ শব্দ উচ্চারণকরতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই প্রচলিত প্রথারই অনুসরণ করেছিলেন। বলে উচ্চ স্বরে ডাক দেন। এ শব্দ শুনে লোকেরা তাঁর নিকট একত্রিত হয়ে যায়। যারা আসতে পারেনি তারা লোক পাটিয়ে দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “হে বানী আবদিল মুত্তালিব! হে বানী ফাহর! হে বানী লুওয়াই! আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, এই পাহাড়ের পিছনে তোমাদের শত্রু- সেনাবাহিনী রয়েছে এবং তারা ওঁৎ পেতে বসে আছে। সুযোগ পেলেই তোমাদেরকে হত্যা করে ফেলবে। তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি?" সবাই এক বাক্যে উত্তর দেয়ঃ “হ্যা, আমরা আপনার কথা সত্য বলেই বিশ্বাস করবো।" তিনি তখন বলেনঃ ‘তাহলে জেনে রেখো যে, সামনের কঠিন শাস্তি হতে আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শনকারী।” তাঁর একথা শুনে আবু লাহাব বলে ওঠে-“তুমি ধ্বংস হও। এটা শুনাবার জন্যেই কি তুমি আমাদেরকে ডেকেছিলে?” তার কথার প্রতিবাদে সূরায়ে তাব্বাত ইয়াদা’ অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী(রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
দ্বিতীয় হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (আরবি) অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)! হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা সুফিয়া (রাঃ)! হে বানী আবদিল মুত্তালিব! জেনে রেখো যে, আল্লাহর কাছে আমি তোমাদের জন্যে কোন (উপকারের) অধিকার রাখবো না। হ্যাঁ, তবে আমার কাছে যে মাল আছে তা হতে তোমরা যা চাইবে তা আমি তোমাদেরকে দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
তৃতীয় হাদীসঃ
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরায়েশদেরকে আহ্বান করেন। এবং এক এক করে ও সাধারণভাবে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে কুরায়েশের দল! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা কর। হে কাবের বংশধরগণ! তোমরা নিজেদের জীবনকে আগুন হতে বাঁচাও। হে হাশেমের সন্তানগণ! তোমরা নিজেদের প্রাণকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা কর। হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানরা! তোমরা আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর। হে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)! নিজের জীবনকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচিয়ে নাও। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্যে কোন কিছুরই মালিক হতে পারবো না। তবে অবশ্যই আমার সাথে তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে যার পার্থিব সর্বপ্রকারের হক আদায় করতে আমি সদা প্রস্তুত আছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ, ইমাম মুসলিম ও ইমম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারীতেও শব্দের কিছু পরিবর্তনের সাথে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ভাতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ফুফু হযরত সুফিয়া (রাঃ) এবং স্বীয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে বলেন, তোমরা দুজন নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে বাচিয়ে নাও এবং জেনে রেখো যে, (কিয়ামতের দিন) আমি আল্লাহর সামনে তোমাদের কোন কাজে লাগবো না। অতঃপর বলেনঃ “হে বানী কুসাই! হে বানী হাশিম! এবং হে আবদে মানাফ! (মনে রেখো যে) আমি হলাম সতর্ককারী, আর মৃত্যু হচ্ছে পরিবর্তন আনয়নকারী এবং কিয়ামত হলো ওয়াদার স্থান।”
চতুর্থ হাদীসঃ
হযরত কুবাইসা ইবনে মাখারিক (রাঃ) এবং হযরত যুহায়ের ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা দু'জন বলেন, যখন -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি পাহাড়ের উপর আরোহণ করেন যার চূড়ার উপর একটি পাথর ছিল। সেখান থেকে তিনি ডাক দিয়ে বলতে শুরু করেনঃ “হে বানী আবদে মানাফ! আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আমার ও তোমাদের উপমা ঐ লোকটির মত যে শত্রু দেখলো এবং দৌড়িয়ে নিজের লোকদেরকে সতর্ক করতে আসলো যাতে তারা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। দূর থেকেই সে চীকার করতে শুরু করে দিলো যাতে প্রথম থেকেই তারা সতর্ক হয়ে যেতে পারে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)
পঞ্চম হাদীসঃ
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় আহলে বায়েতকে একত্রিত করেন। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় ত্রিশজন। তাঁদের পানাহার শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “কে এমন আছে যে আমার কর্জ তার দায়িত্বে নিয়ে নেয় এবং আমার পরে আমার অঙ্গীকারসমূহ পূরণ করে, অতঃপর জান্নাতে আমার সাথী হতে পারে ও আমার আঙ্গুলের মধ্যে আমার খলীফা হতে পারে?” একটি লোক উত্তরে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো সমুদ্র (সদৃশ), সুতরাং কে আপনার সাথে দাড়াতে পারে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার তার উক্তির পুনরাবৃত্তি করেন, কিন্তু কেউই ওর জন্যে প্রস্তুত হলো না। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এজন্যে আমিই প্রস্তুত আছি। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) এক সনদে এর চেয়েও বেশী বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু আবদিল মুত্তালিবের একটি বড় দলকে একত্রিত করেন যারা বড়ই পেটুক ছিল। তাদের এক একজন একটি বকরীর বাচ্চা ও একটি বড় পিয়ালাপূর্ণ দুধ পান করে ফেলতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের জন্যে শুধু তিন পোয়া পরিমাণ খাদ্য রান্না করিয়ে নেন। কিন্তু তাতে এতো বরকত দেয়া হয় যে, সবাই পেট পুরে পানাহার করে, অথচ না খাদ্য কিছু হ্রাস পায় এবং না পানীয় কিছু কমে যায়। এরপর নবী (সঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে বানী আবদিল মুত্তালিব! আমি তোমাদের নিকট বিশিষ্টভাবে এবং সমস্ত মানুষের নিকট সাধারণভাবে নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। এই সময় তোমরা আমার একটি মুজিয়াও দেখলে। এখন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, সে আমার হাতে আমার ভাই ও সাথী হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করে?” কিন্তু মজলিসের একটি লোকও দাঁড়ালো না। (হযরত আলী রাঃ বলেনঃ) আমি তখন দাঁড়িয়ে গেলাম আর মজলিসের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে ছোট। তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি বসে পড়।” তিনি তিনবার তাদেরকে ঐ কথা বলেন কিন্তু তিনবারই আমি ছাড়া আর কেউই দাঁড়ায়নি। তৃতীয়বারে তিনি আমার বায়আত গ্রহণ করেন।”ইমাম বায়হাকী (রঃ) দালাইলুন নবুওয়াত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি আমার কওমের সামনে আমি এখনই এটা পেশ করি তবে তারা মানবে না এবং তারা এমন উত্তর দেবে যা আমার কাছে কঠিন ঠেকবে।” তাই তিনি নীরব হয়ে যান। ইতিমধ্যে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে পড়েন এবং বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনাকে যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা পালনে যদি আপনি বিলম্ব করেন তবে আপনার প্রতিপালক আপনাকে শাস্তি প্রদান করবেন।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! আমার প্রতিপালক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করি। আমি মনে করলাম যে, আমি যদি তাড়াতাড়ি এ কাজে লেগে পড়ি তবে আমার কওম আমাকে মানবে না এবং আমাকে এমন উত্তর দেবে যাতে আমি মনে ব্যথা পাবো। তাই আমি নীরবতা অবলম্বন করি। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেনঃ “আপনি যদি আপনার প্রতিপালকের আদেশ পালনে বিলম্ব করেন তবে তিনি আপনাকে শাস্তি দিবেন।” সুতরাং হে আলী (রাঃ)! তুমি একটি বকরী যবাহ কর, তিন সের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত কর এবং এক বাটি দুধও সগ্রহ কর। অতঃপর বানী আবদিল মুত্তালিবকে একত্রিত কর। হযরত আলী (রাঃ) তাই করলেন এবং সবাইকে দাওয়াত দিলেন। তারা সংখ্যায় দু’এক কমবেশী চল্লিশ জন ছিল। তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচারাও ছিলেন। তাঁরা হলেন আবু তালিব, হযরত হামযা (রাঃ) এবং হযরত আব্বাস (রাঃ)। তার কাফির ও খবীস চাচা আবু লাহাবও ছিল। হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে তরকারী পেশ করলে তিনি তা হতে এক টুকরা নিয়ে কিছু খেলেন। অতঃপর তা হাঁড়িতে রেখে দিলেন। এরপর তিনি সকলকে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু কর।” সবাই খেতে লাগলো এবং পেট পুরে খেলো। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! হাঁড়িতে যা ছিল তাই থেকে গেল। গোশতে শুধু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অঙ্গুলীর দাগ ছিল, কিন্তু গোশত এতটুকু কমেনি। অথচ তাদের এক একজনই হাঁড়িতে রাখা সব গোশত খেয়ে নিতে পারতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেনঃ “হে আলী (রাঃ)! তাদেরকে এখন দুধ পান করিয়ে দাও।” আমি তখন দুধের ঐ বাটিটি আনলাম এবং তাদেরকে পান করতে বললাম। তারা পালাক্রমে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু দুধ মোটেই কমলো না। অথচ তাদের এক একজনই ঐ বাটির সম্পূর্ণ দুধ পান করে নিতে পারতো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আবু লাহাব মজলিস হতে উঠে গেল এবং বলতে লাগলোঃ “তোমাদের এ লোকটির এ সবকিছুই যাদু।” তার দেখাদেখি সবাই মজলিস হতে উঠে গেল এবং নিজ নিজ পথ ধরলো। ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে উপদেশ দেয়ার সুযোগ পেলেন না।”পরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) পুনরায় হযরত আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আলী (রাঃ)! অনুরূপভাবে আজকেও আবার তাদেরকে দাওয়াত কর। কেননা, গতকাল তারা আমাকে কথা বলার কোন সুযোগই দেয়নি।” হযরত আলী (রাঃ) বলেন, সুতরাং আমি পুনরায় ঐ প্রকারের ব্যবস্থা করলাম। সবকে দাওয়াত দিয়ে আসলাম। ঐদিনও আবু লাহাব দাঁড়িয়ে গিয়ে পূর্বের ন্যায়ই কথা বললো এবং ঐভাবে মজলিসের লোক ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। তৃতীয় দিন আবার আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে সবকিছুরই ব্যবস্থা করলাম। খাওয়া দাওয়ার পর ঐদিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাড়াতাড়ি তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আরবের কোন যুবক তার কওমের কাছে এমন উত্তম কিছু নিয়ে আসেনি যা আমি তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ আনয়ন করেছি।”অন্য রিওয়াইয়াতে এরপর এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এখন তোমরা বল তো তোমাদের মধ্যে কে আমার আনুকূল্য করতে পারে এবং কে আমার সহচর হতে পারে? আল্লাহ তা'আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তোমাদেরকে তার দিকে আহ্বান করি। সুতরাং কে আমাকে এ কাজে সহায়তা করতে পারে এই শর্তে যে, সে আমার ভাই হয়ে যাবে এবং সে এরূপ এরূপ মর্যাদা লাভ করবে?” তাঁর একথা শুনে কওমের সবাই নীরব থাকে। এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যদিও আমি তাদের মধ্যে বয়সে ছিলাম সবচেয়ে ছোট, দুঃখময় চক্ষু বিশিষ্ট, মোটা পেট বিশিষ্ট এবং ভারী পদনালী বিশিষ্ট, তথাপি আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনার আনুকূল্য করতে প্রস্তুত আছি। তিনি তখন আমার স্কন্ধে হাত রেখে বললেনঃ “এটা আমার ভাই এবং তার এরূপ এরূপ মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার কথা শুনো এবং তার আনুগত্য কর।” তাঁর এ কথা শুনে কওমের লোকেরা উঠে গেল এবং হেসে উঠলো ও আবু তালিবকে বললোঃ “তুমিই তোমার ছেলের কথা শুনো ও তার আনুগত্য করতে থাকো (আমাদের দ্বারা এ কাজ হবে না।” কিন্তু এ হাদীসটির বর্ণনাকারী আবদুল গাফফার ইবনে কাসিব ইবনে আবি মারইয়াম পরিত্যাজ্য এবং চরম মিথ্যাবাদী। সে শিয়াও বটে, ইবনে মাদনী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, সে হাদীস নিজে বানিয়ে নিতো। হাদীসের অন্যান্য ইমামগণও তাকে দুর্বল বলেছেন।অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, এই দাওয়াতে শুধুমাত্র বকরীর একটি পায়ের গোশত ছিল। এতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ভাষণ দিতে শুরু করলেন তখন তারা হঠাৎ করে বলে ফেললোঃ “এরূপ যাদু তো ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি।” তখন তিনি নীরব হয়ে যান। তাঁর ভাষণ ছিলঃ “কে আছে, যে আমার ঋণ তার দায়িত্বে গ্রহণ করবে এবং আমার আহূলের মধ্যে খলীফা হয়ে যাবে?” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “ঐ মজলিসে হযরত আব্বাসও (রঃ) বিদ্যমান ছিলেন। শুধু মাল-ধনের কার্পণ্যের কারণে তিনিও নীরব ছিলেন।অকে নীরব থাকতে দেখে আমিও নীরব থাকলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়বারও এ ই বললেন। এবারও চতুর্দিকে নীরবতা বিরাজ করে। এবার আমি আর নীরব থাকতে পারলাম না, বরং উপরোক্ত কথা বলে ফেললাম। ঐ সময় আমি বয়সে ছিলাম সবচেয়ে ছোট এবং ছিলাম ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন, বড় পেট ও ভারী পদনালী বিশিষ্ট।" ঐ রিওয়াইয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ফরমান রয়েছেঃ “কে আমার ঋণ তার দায়িত্বে নিচ্ছে এবং আমার পর কে আমার আহলের হিফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করছে?” এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিলঃ “আমি আমার এই দ্বীনের প্রচার চারদিকে ছড়িয়ে দিবো এবং লোকদের আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করবো। ফলে সবাই আমার শত্রুতে পরিণত হয়ে যাবে এবং আমাকে হত্যা করে ফেলার চেষ্টা করবে।” এরূপ আশংকা তিনি করতে থাকেন। অবশেষে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবি)অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাকে লোকদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন।” (৫: ৬৭) এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আশংকা দূর হয়ে যায়। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি নিজের জন্যে প্রহরী নিযুক্ত রাখতেন। কিন্তু এটা অবতীর্ণ হওয়ার পর প্রহরী রাখাও তিনি বন্ধ করে দেন। বাস্তবিকই ঐ সময় বানু হাশেমের সবারই মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) অপেক্ষা বড় ঈমানদার ও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সত্যায়নকারী আর কেউ ছিল না। এজন্যেই তিনিই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সাহচর্য দান করার স্বীকারোক্তি করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাফা পর্বতের উপর উঠে জনগণকে সাধারণ দাওয়াত দেন এবং তাদেরকে খাঁটি তাওহীদের দিকে আহ্বান করেন এবং নিজের নবুওয়াতের ঘোষণা দেন।আবদুল ওয়াহিদ দেমাশকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত আবূ দারদা (রাঃ) মসজিদে বসে ওয়াজ করছিলেন এবং ফতওয়া দিচ্ছিলেন। মজলিস লোকে ভরপুর ছিল। সবারই দৃষ্টি তার চেহারার উপর ছিল এবং তারা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তার ওয়াজ শুনছিল। কিন্তু তার ছেলে এবং তার বাড়ীর লোকেরা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে নিজেদের কথায় লিপ্ত ছিল। কেউ একজন হযরত আবু দারদা (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে বলেনঃ “অন্যান্য সব লোকই তো আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে, কিন্তু আপনার বাড়ীর লোকেরা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে নিজেদের কথায় লিপ্ত রয়েছে, ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “দুনিয়া হতে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ থাকেন নবীরা এবং তাঁদের উপর সবচেয়ে বেশী কঠিন ও ভারী হয় তাঁদের পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন। এব্যাপারেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন।” এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তুমি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহর উপর নির্ভর কর। তিনিই তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী। তিনিই তোমার শক্তি যোগাবেন এবং তোমার কথাকে সমুন্নত করবেন। তাঁর দৃষ্টি সব সময় তোমার উপর রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি তোমার প্রতিপালকের হুকুমের উপর ধৈর্য ধারণ কর, তুমি তো আমার চোখের সামনেই রয়েছো।” (৫২: ৪৮) ভাবার্থ এটাওঃ যখন তুমি নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হও তখন তুমি আমার চোখের সামনে থাকো। আমি তোমার রুকু ও সিজদা দেখে থাকি। তুমি দাঁড়িয়ে থাকো বা বসে থাকো অথবা যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আমার চোখের সামনেই থাকো। অর্থাৎ তুমি একাকী নামায পড়লেও আমি দেখতে পাই এবং জামাআতে পড়লেও তুমি আমার সামনেই থাকো। ভাবার্থ এটাও যে, আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যেভাবে তাঁর সামনের জিনিসগুলো দেখাতেন তেমনিভাবে তার পিছনের মুক্তাদীরাও তাঁর দৃষ্টির সামনে থাকতো। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “তোমরা তোমাদের নামাযের সারি সোজা করে নেবে। জেনে রেখো যে, আমি তোমাদেরকে আমার পিছন হতে দেখতে পাই।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ভাবার্থ এও করেছেনঃ “তার এক নবীর পিঠ হতে অন্য নবীর পিঠের দিকে স্থানান্তরিত হওয়াকে আমি বরাবরই দেখতে রয়েছি, শেষ পর্যন্ত তিনি নবী হিসেবে দুনিয়ায় এসেছেন।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা খুবই শুনে থাকেন এবং তাদের কাজ কারবার সম্পর্কে তিনি পূর্ণ অবহিত। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি যে অবস্থায় থাকো, তুমি যে কুরআন পাঠ কর, তুমি যে আমল কর সেসব সম্পর্কে আমি পূর্ণ ওয়াকিফহাল।” (১০:৬১)
هَلْ أُنَبِّئُكُمْ عَلَىٰ مَنْ تَنَزَّلُ الشَّيَاطِينُ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
يُلْقُونَ السَّمْعَ وَأَكْثَرُهُمْ كَاذِبُونَ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
وَالشُّعَرَاءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
أَلَمْ تَرَ أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ يَهِيمُونَ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
وَأَنَّهُمْ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ
📘 Please check ayah 26:227 for complete tafsir.
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا وَانْتَصَرُوا مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا ۗ وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنْقَلَبٍ يَنْقَلِبُونَ
📘 ২২১-২২৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মুশরিকরা বলতো: রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কুরআন নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য নয়। তিনি এটা স্বয়ং রচনা করেছেন। অথবা তার কাছে জ্বিনদের নেতা এসে থাকে যে তাঁকে শিখিয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে এই আপত্তিকর কথা হতে পবিত্র করছেন এবং প্রমাণ করছেন যে, তিনি যে কুরআন আনয়ন করেছেন তা আল্লাহর কালাম এবং তাঁর নিকট হতেই এটা অবতারিত। সম্মানিত, বিশ্বস্ত ও শক্তিশালী ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আঃ) এটা আনয়ন করেছেন। এটা কোন শয়তান বা জ্বিন আনয়ন করেনি। শয়তানরা তো কুরআনের শিক্ষা হতে সম্পূর্ণ বিমুখ। তাদের শিক্ষা তো কুরআন কারীমের শিক্ষার একেবারে বিপরীত। সুতরাং কি করে তারা কুরআনের ন্যায় পবিত্র ও সুপথ প্রদর্শনকারী কালাম আনয়ন করতঃ মানুষকে সুপথ প্রদর্শন করতে পারে? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। কেননা, তারা নিজেরাও চরম মিথ্যাবাদী ও পাপী। তারা চুরি করে আকাশে যে এক আধটি কথা শুনে নেয়, ওর সাথে বহু কিছু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ যাদুকররা তখন ওর সাথে নিজেদের পক্ষ হতে আরো বহু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে লোকদের মধ্যে প্রচার করে। এখন শয়তান লুকিয়ে যে সত্য কথাটি আকাশে শুনেছিল ওটা সত্যরূপেই প্রকাশিত হয়, কিন্তু লোকেরা ঐ একটি সত্য কথার উপর ভিত্তি করে যাদুকরের আরো শত শত মিথ্যা কথাকেও সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকে। এভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একদা জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যাদুকর ও ভবিষ্যদ্বক্তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা কিছুই নয়।” জনগণ বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তারা এমনও কথা বলে যা সত্য হয়ে থাকে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, এটা ঐ কথা যা জ্বিনেরা-চুরি করে আকাশ হতে শুনে আসে এবং তা ঐ ভবিষ্যদ্বক্তার কানে পৌঁছিয়ে থাকে। অতঃপর ঐ ভবিষ্যদ্বক্তা নিজের পক্ষ হতে শতটি মিথ্যা কথা ওর সাথে মিলিয়ে বলে দেয়।” হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তা'আলা আকাশে কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আদবের সাথে নিজেদের পালক ঝুঁকিয়ে দেন। কোন কংকরময় ভূমিতে জিঞ্জীর বাজানো হলে যেরূপ শব্দ হয় ঐরূপ শব্দ ঐ সময় আসতে থাকে। যখন ঐ বিহ্বলতা বিদূরিত হয় তখন ফেরেশতারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন (কি হুকুম করেছেন)?” উত্তরে বলা হয়ঃ “তিনি সত্য বলেছেন (সঠিক হুকুম করেছেন)। তিনি সমুন্নত ও মহান।” কখনো কখনো আল্লাহ তা'আলার ঐ হুকুম চুরি করে শ্রবণকারী কোন জ্বিনের কানে পৌঁছে যায় যারা এভাবে একের উপর এক হয়ে ঐ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত সুফিয়ান (রঃ) স্বীয় হাতের অঙ্গুলীগুলো বিছিয়ে দিয়ে ওর উপর অপর হাত ঐভাবেই রেখে ওগুলোকে মিলিত করে বলেনঃ “এইভাবে।” এখন উপরের জন নীচের জনকে, সে তার নীচের জনকে ঐ কথা বলে দেয়। শেষ পর্যন্ত সর্ব নীচের জন ঐ কথা ভবিষ্যদ্বক্তা বা যাদুকরের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। কখনো কখনো এমনও হয় যে, ঐ কথা পৌঁছাবার পূর্বেই অগ্নিশিখা পৌঁছে যায়, সুতরাং শয়তান ঐ কথা পৌঁছাতে পারে না। আবার কখনো কখনো অগ্নিশিখা পৌঁছার পূর্বেই শয়তান ঐ কথা পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ কথার সাথে যাদুকর নিজের পক্ষ হতে শত শত মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে প্রচার করে দেয়। ঐ একটি কথা সত্যরূপে প্রকাশিত হওয়ায় জনগণ সবগুলোকেই সত্য মনে করে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) এই সমুদয় হাদীসের বর্ণনা (আরবি) (৩৪: ২৩) এই আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশাআল্লাহ।সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এও আছে যে, ফেরেশতারা আসমানী বিষয়ক কথাবার্তা মেঘের উপর বলে থাকেন যা শয়তান শুনে নিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। আর ঐ যাদুকর একটি সত্যের সাথে শতটি মিথ্যা মিলিয়ে দেয়। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (কাফির) কবিদের অনুসরণ বিভ্রান্ত লোকেরাই করে থাকে। আরব কবিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল যে, কারো নিন্দায় তারা কিছু বলতো। জনগণের একটি দল তাদের সাথে হয়ে যেতো এবং তাদের নিকট হতে ঐ নিন্দাসূচক কবিতা নিয়ে আসতো।একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের একটি দলকে সাথে নিয়ে আ’রজের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একজন কবির সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয় যে কবিতা পাঠ করতে করতে চলছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “তাকে ধর অথবা তাকে কবিতা পাঠ হতে বিরত রাখো। কারো রক্ত পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তুমি কি দেখো না যে, তারা উড্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? প্রত্যেক বাজে বিষয়ের মধ্যে তারা ঢুকে পড়ে। কারো প্রশংসা করতে গিয়ে তারা তাকে একেবারে আকাশে উঠিয়ে দেয়। মিথ্যা প্রশংসা করে তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তারা হয় কথার সওদাগর, কিন্তু কাজে অলস। তারা নিজেরা যা করে না তা বলে থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে দু’টি লোক একে অপরকে নিন্দা করে। তাদের একজন ছিল আনসারী এবং অপরজন ছিল অন্য গোত্রের লোক। তখন দুই গোত্রেরই বড় বড় লোকেরা তাদের সাথে যোগ দেয়। তাই এই আয়াতে এটাই রয়েছে যে, বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদেরকে অনুসরণ করে থাকে। তারা ঐ কথা বলে থাকে যা তারা নিজেরা করে না। এজন্যেই আলেমগণ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, যদি কোন কবি নিজের কবিতার মধ্যে এমন কোন পাপের কথা স্বীকার করে নেয় যার উপর শরীয়তের হদ ওয়াজিব হয়, তবে তার উপর হদ জারী করা যাবে কি যাবে না? আলেমরা দুই দিকেই গিয়েছেন। আসলে তারা ফখর ও গর্ব করে এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলেঃ “আমি এই করেছি, ঐ করেছি, অথচ আসলে তারা কিছুই করেনি এবং করতেও পারে না। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনে সা'দ (রঃ) তাবাকাতে এবং যুবায়ের ইবনে বিকার (রঃ) কিতাবুল ফুকাহাতে বর্ণনা করেছেন যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) তাঁর খিলাফতের আমলে হযরত নুমান ইবনে আদী ইবনে ফুলা (রাঃ)-কে বসরার মাইসান শহরের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি একজন কবি ছিলেন। তিনি কবিতায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সুন্দরী মহিলারা কি এ খবর পায়নি যে, তাদের প্রেমিক মাইসানে অবস্থান করছে? যেখানে সদা-সর্বদা শীশার গ্লাসে মদ্যচক্র চলছে? আর গ্রামের তরুণীরা নাচ-গানে মত্ত রয়েছে। হ্যাঁ, যদি আমার কোন বন্ধু দ্বারা এটা সম্ভব হয় তবে এর চেয়ে বড় ও পূর্ণ মদ্যের গ্লাস আমাকে পান করাতে পারে। কিন্তু ছোট গ্লাস আমার নিকট খুবই অপছন্দনীয়। আল্লাহ করুন যেন আমীরুল মুমিনীনের কাছে এ খবর না পেীছে। অন্যথায় তিনি এতে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং আমাকে শাস্তি দিবেন।” ঘটনাক্রমে সত্যিই এ কবিতাগুলো আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট পৌছে যায় এবং সাথে সাথেই তিনি লোক পাঠিয়ে তাঁকে পদচ্যুত করেন এবং তিনি একটি চিঠিও পাঠান। ঐ চিঠিতে তিনি লিখেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। হা-মীম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর, শক্তিশালী। তিনি ছাড়া কোন মা'বূদ নেই। প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট। অতঃপর আমার কাছে তোমার (কবিতার) কথা পৌঁছেছে। আল্লাহর কসম! অবশ্যই ওটা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে। তাই আমি তোমাকে পদচ্যুত করলাম।" এ চিঠি পাঠ মাত্রই হযরত নু'মান (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে যান এবং অত্যন্ত দ্রতার সাথে আরয করেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো মদ্যপানও করিনি, নাচও দেখিনি এবং গান বাজনাও করিনি। এটা তো শুধু কবিতাসূচক আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল।” তাঁর একথা শুনে আমীরুল মুমিনীন বলেনঃ “আমারও ধারণা এটাই ছিল। কিন্তু আমি তো এটা সহ্য করতে পারি না যে, এরূপ অশ্লীলভাষী কবিকে কোন পদে রেখে দিই।” তাহলে বুঝা গেল যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর মতেও কবি যদি তার কবিতার মাধ্যমে এমন কোন অপরাধের কথা ঘোষণা করে যা হদের যোগ্য, তবুও তাকে হদ মারা যাবে না। কেননা, সে বলে বটে, কিন্তু করে না। তবে নিঃসন্দেহে সে তিরস্কার ও নিন্দার যোগ্য। হাদীসে আছে যে, রক্ত, পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম। ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবিও নন, যাদুকরও নন, ভবিষ্যদ্বক্তাও নন এবং মিথ্যা আরোপকারীও নন। তাঁর বাহ্যিক অবস্থাই তাঁর এসব দোষ হতে মুক্ত হওয়ার বড় সাক্ষী। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি রাসূল (সঃ)-কে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয় নয়, এটাতো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন।” (৩৬:৬৯) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা কোন কবির রচনা নয়, তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর। এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।” (৬৯: ৪১-৪৩) অনুরূপভাবে এখানে বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আর নিশ্চয়ই এটা (আল-কুরআন) জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। জিবরাঈল (আঃ) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” (২৬:১৯২-১৯৫) এ সূরারই আর একটি জায়গায় বলেছেনঃ “শয়তানরা ওটাসহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। এর আরো কিছু পরে বলেছেনঃ “তোমাদেরকে কি আমি জানিয়ে দেবো কার কাছে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। আর কবিদেরকে অনুসরণ করে তারা যারা বিভ্রান্ত। তুমি কি দেখো না তারা। উল্লান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? এবং যা করে না তা বলে।” এরপরে যা রয়েছে তার শানে নুযূল এই যে, এর পূর্ববর্তী আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় (যাতে কবিদেরকে নিন্দে করা হয়েছে), তখন নবী (সঃ)-এর দরবারের কবিরা যেমন হযরত হাস্সান ইবনে সাবিত (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) এবং হযরত কা'ব ইবনে মালিক (রাঃ) ক্রন্দনরত অবস্থায় নবী (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে তো কবিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমরাও তো কুবি (সুতরাং আমরাও তো তাহলে নিন্দনীয়?)।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই পরবর্তী আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ঈমান আনয়নকারী ও সৎকর্মশীল তোমরাই এবং আল্লাহকে বার বার স্মরণকারীও তোমরাই। তোমরাই অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণকারী। সুতরাং তোমরা এদের হতে স্বতন্ত্র।”অন্য একটি রিওয়াইয়াতে হযরত কা'ব (রাঃ)-এর নাম নেই। একটি রিওয়াইয়াতে শুধু আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-এর কথা আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও তো কবি?” তারই একথার পরিপ্রেক্ষিতে (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরা। আর আনসার কবিরা মক্কায় ছিলেন না। তারা সবাই ছিলেন মদীনায়। কাজেই তাদের ব্যাপারে এ সূরা অবতীর্ণ হওয়া অসম্ভবই বটে। যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে ওগুলো মুরসাল। সুতরাং এগুলোর উপর ভরসা করা যায় না। তবে এ আয়াতটি যে স্বাতন্ত্রের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে তাতে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই। আর এই স্বাতন্ত্র শুধু এই আনসার কবিদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোন কবি তার অজ্ঞতার যুগে যদি ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষে কবিতা লিখে থাকে, অতঃপর মুসলমান হয়ে গিয়ে তাওবা করে থাকে এবং পূর্বের দুষ্কর্মের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বার বার আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে তবে তারাও নিন্দনীয় কবিদের হতে স্বতন্ত্র হবে। কেননা, সৎ কার্যাবলী দুষ্কর্মগুলোকে মিটিয়ে দেয়। তাহলে সে যখন কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের দুর্নাম করেছিল এবং আল্লাহর দ্বীনকে মন্দ বলেছিল তখন ওটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজই ছিল। কিন্তু পরে যখন সে মুসলমানদের ও ইসলামের প্রশংসা করলো তখন ঐ দুষ্কর্ম সকর্মে পরিবর্তিত হয়ে গেল। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাবআরী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দুর্নাম করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর বড়ই প্রশংসা করেছিলেন এবং পূর্বে যে তিনি তাঁর দুর্নাম করেছিলেন, কবিতার মাধ্যমে ওর ওজর পেশ করতে গিয়ে বলেন যে, ঐ সময় তিনি শয়তানের খপ্পরে পড়েছিলেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও তার একজন বড় শত্রু ছিলেন এবং কবিতার মাধ্যমে তাঁর খুবই দুর্নাম করতেন। কিন্তু যখন তিনি মুসলমান হলেন তখন এমন পাকা মুসলমান হলেন যে, সারা দুনিয়ায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অপেক্ষা বড় প্রিয়জন তাঁর কাছে আর কেউই ছিল না। প্রায়ই তিনি তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তার সাথে অত্যন্ত ভালবাসা রাখতেন।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব যখন মুসলমান হন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে আপনি তিনটি জিনিস দান করুন। প্রথম এই যে, আমার পুত্র মুআবিয়া (রাঃ)-কে আপনার লেখক (অর্থাৎ অহী লেখক) বানিয়ে নিন। দ্বিতীয় এই যে, আমার সাথে এক দল সৈন্য প্রেরণ করুন যাতে আমি কাফিরদের সাথে লড়তে পারি যেমন আমি মুসলমানদের সাথে লড়তাম।” তাঁর এই দু’টি আবেদনই রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবুল করে নেন। তৃতীয় আর একটি আবেদন তিনি করেন এবং সেটাও গৃহীত হয়। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) সুতরাং এই লোকদেরকে পূর্ববর্তী আয়াতের হুকুম হতে এই পরবর্তী আয়াত দ্বারা পৃথক করা হয়েছে। আল্লাহর অধিক স্মরণ তাঁরা তাঁদের কবিতার মাধ্যমেই করুন অথবা অন্য কোন প্রকারে করুন, নিশ্চিতরূপে তা তাদের পূর্ববর্তী পাপসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ তারা অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে অর্থাৎ কবিতার মাধ্যমে তারা কাফিরদের নিন্দামূলক কবিতার জবাব দিয়ে থাকেন। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ “তুমি কাফিরদের নিন্দা করে কবিতা রচনা কর, হযরত জিবরাঈল (আঃ) তোমার সাথে রয়েছেন।”হযরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি কুরআন পাকে কবিদের নিন্দা শুনেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আর্য করেনঃ “আল্লাহ তা'আলা (কবিদের সম্পর্কে) যা নাযিল করার তা তো নাযিল করেছেন (তাহলে আমিও কি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত?)।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “ (না, না, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও। জেনে রেখো যে,) মুমিন তরবারী ও জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করে থাকে। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কবিতাগুলো তো তাদেরকে (কাফিরদেরকে) মুজাহিদের তীরের ন্যায় ছিদ্র করে দিয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ অত্যাচারীদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। সেই দিন তাদের ওজর আপত্তি কোন কাজে আসবে না। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা যুলুম হতে বেঁচে থাকো। কারণ কিয়ামতের দিন যুলুম অন্ধকারের কারণ হবে।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাকের (আরবি) উক্তিটি আম বা সাধারণ, কবি হোক বা অন্য কেউ হোক, সবাই এর অন্তর্ভুক্ত।হযরত হাসান বসরী (রঃ) একজন খৃষ্টানের জানাযা যেতে দেখে এ আয়াতটিই পাঠ করেছিলেন। তিনি যখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তাঁর হেঁচকী বন্ধ হয়ে যেতো।হযরত ফুযালা ইবনে উবায়েদ (রঃ) যখন রোমে আগমন করেন তখন একটি লোক নামায পড়ছিলেন। যখন লোকটি (আরবি) আয়াতটি পাঠ করেন তখন তিনি বলেন যে, এর দ্বারা বায়তুল্লাহর ধ্বংসকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা মক্কাবাসী উদ্দেশ্য। আবার এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুশরিকরা উদ্দেশ্য। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আয়াতটি হলো সাধারণ। সুতরাং এটা সব যালিমকেই অন্তর্ভুক্তকারী।হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় মাত্র দু'টি লাইনে তাঁর অসিয়ত লিখে যান। তা ছিল নিম্নরূপঃবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবনে আবি কাহাফা (রাঃ)-এর অসিয়ত। এটা ঐ সময়ের অসিয়ত, যখন তিনি দুনিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। যে সময় কাফিরও মুমিন হয়ে যায়, পাপীও তাওবা করে এবং মিথ্যাবাদীকেও সত্যবাদী মনে করা হয়। আমি উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে তোমাদের উপর আমার খলীফা নিযুক্ত করে যাচ্ছি। সে যদি ইনসাফ করে তবে খুব ভাল কথা এবং তার সম্পর্কে আমার ধারণা এটাই আছে। আর যদি সে যুলুম করে এবং কোন পরিবর্তন আনয়ন করে তবে জেনে রেখো যে, আমি ভবিষ্যদ্রষ্টা নই। অত্যাচারীরা তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা সত্বরই জানতে পারবে।”
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:28 for complete tafsir.
قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِنْ كُنْتُمْ مُوقِنِينَ
📘 Please check ayah 26:28 for complete tafsir.
قَالَ لِمَنْ حَوْلَهُ أَلَا تَسْتَمِعُونَ
📘 Please check ayah 26:28 for complete tafsir.
قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 26:28 for complete tafsir.
قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ الَّذِي أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ لَمَجْنُونٌ
📘 Please check ayah 26:28 for complete tafsir.
قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ
📘 ২৩-২৮ নং আয়াতের তাফসীর
ফিরাউন তার প্রজাবর্গকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল এবং তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস জন্মিয়ে দিয়েছিল যে, পূজনীয় ও প্রতিপালক শুধু সেই, সে ছাড়া আর কেউই নয়। ফলে তাদের সবারই বিশ্বাস এটাই ছিল। হযরত মূসা (আঃ) যখন বললেন যে, তিনি জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল তখন সে বললোঃ “জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কি?” তার উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে, সে ছাড়া তো কোন প্রতিপালকই নেই। সুতরাং মূসা (আঃ) ভুল বলছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে মূসা (আঃ)! তোমাদের দু'জনের প্রতিপালক কে?” (২০:৪৯) উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমাদের প্রতিপালক তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথ-নির্দেশ করেছেন।” (২০: ৫০) এখানে এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, কোন কোন তর্কশাস্ত্রবিদ এখানে হোঁচট খেয়েছেন। তারা বলেছেন যে, ফিরাউনের প্রশ্ন ছিল আল্লাহ তা'আলার মূল বা প্রকৃতি সম্পর্কে। কিন্তু এটা তাদের ভুল ধারণা। কেননা, মূল সম্পর্কে সে তখনই প্রশ্ন করতে যখন আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী হতো। সে তো আল্লাহর অস্তিত্বকেই বিশ্বাস করতো না। সে তার ঐ বিশ্বাসকেই প্রকাশ করতো এবং প্রত্যেককে এই বিশ্বাসই ঢোকের ঢাকে পান করাতো যদিও ওর বিপরীত দলীল প্রমাণাদি তার সামনে খুলে গিয়েছিল। তাই সে যখন প্রশ্ন করলো যে, রাব্বল আলামীন কে? তখন তিনি উত্তর দেন যে, যিনি সবারই সৃষ্টিকর্তা, সবারই মালিক এবং যিনি সব কিছুর উপরই সক্ষম তিনিই রাব্বল আলামীন। তিনি একাই পূজনীয়, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই। ঊর্ধ্বজগত আকাশ এবং ওর সৃষ্টজীব ও সৃষ্টবস্তু নিম্নজগত পৃথিবী এবং ওর সৃষ্টজীব ও সৃষ্টবস্তু সবারই তিনি সৃষ্টিকর্তা। এতদুভয়ের মধ্যস্থিত জিনিস, যেমন বাতাস, পাখী ইত্যাদি সবই তাঁর সামনে নত এবং তাঁর ইবাদতে লিপ্ত। তিনি বলেনঃ “হে ফিরাউন! তোমার অন্তর যদি বিশ্বাসরূপ সম্পদ হতে শূন্য না হতো এবং তোমার চক্ষু যদি উজ্জ্বল হতো তবে তাঁর এসব বিশেষণ তার সত্তাকে মানবার পক্ষে যথেষ্ট হতো।” হযরত মূসা (আঃ)-এর এ কথাগুলো শুনে ফিরাউন কোন উত্তর দিতে না পেরে কথাগুলোকে হাসি-তামাশা করে উড়িয়ে দেয়ার জন্যে তার বিশ্বাসে বিশ্বাসী লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললোঃ “দেখো, এ লোকটি আমাকে ছাড়া অন্যকে মা'বূদ বলে বিশ্বাস করছে, এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে!” হযরত মূসা (আঃ) তার এ মনোযোগিতায় হতবুদ্ধি হলেন না, বরং তিনি আল্লাহর অস্তিত্বের আরো দলীল ঘমাণ বর্ণনা করতে শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ “তিনিই তোমাদের সবারই এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের মালিক ও প্রতিপালক। তিনি ফিরাউনের লোকদেরকে বললেনঃ “তোমরা যদি ফিরাউনকে খোদা বলে স্বীকার করে নাও তবে একটু চিন্তা করে দেখো তো যে, ফিরাউনের পূর্বে জগতবাসীর খোদা কে ছিল? তার অস্তিত্বের পূর্বে তো আসমান ও যমীনের অস্তিত্ব ছিল, তাহলে এগুলোর আবিষ্কারক কে ছিল? সুতরাং আল্লাহই আমার প্রতিপালক, তিনিই সারা আগতের প্রতিপালক। আমি তারই প্রেরিত রাসূল।”ফিরাউন হযরত মূসা (আঃ)-এর কথাগুলোর কোন উত্তর খুঁজে পেলো না। তাই সে মুখ না পেয়ে তার লোকদেরকে বললোঃ “তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের এ রাসূলটি তো নিশ্চয়ই পাগল। তা না হলে আমাকে ছাড়া অন্যকে কেন সে প্রতিপালক বলে স্বীকার করবে?' হযরত মূসা (আঃ) এর পরেও তাঁর দলীল বর্ণনার কাজ চালিয়ে গেলেন। তার বাজে কথায় কর্ণপাত না করে তিনি বললেনঃ “আল্লাহ পূর্ব ও পশ্চিমের এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুরই প্রতিপালক। হে ফিরাউনের লোকেরা। ফিরাউন যদি তার খোদায়ী দাবীতে সত্যবাদী হয় তবে এর বিপরীত দেখিয়ে দিক। অর্থাৎ আল্লাহ পূর্বকে পূর্ব করেছেন এবং সেখান থেকে নক্ষত্রগুলো উদিত হয়। আর পশ্চিমকে তিনি পশ্চিম করেছেন এবং সেখানে তারকারাজি অস্তমিত হয়। সুতরাং ফিরাউন এগুলোর প্রতিপালক হলে সে এর বিপরীত করে দেখাক।” একথাই আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর সময়ের বাদশাহকে তর্কে বলেছিলেন। প্রথমে তো তিনি আল্লাহর বিশেষণ বর্ণনা করেছিলেন যে, তিনি জীবিত রাখেন ও মৃত্যু দান করে থাকেন। কিন্তু ঐ নির্বোধ যখন ঐ বিশেষণকে আল্লাহর সাথে বিশিষ্ট করতে অস্বীকার করে এবং বলেঃ এ কাজ তো আমিও করতে পারি?' তখন তিনি ওর চেয়েও সুস্পষ্টতর দলীল তার সামনে পেশ করে বললেনঃ “আচ্ছা, আমার প্রতিপালক সূর্য পূর্ব দিক হতে উদিত করেন, তুমি ওটা পশ্চিম দিক হতে উদিত কর দেখি?” হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর এ কথা শুনে ঐ নির্বোধ বাদশাহ হতবাক হয়ে যায়। অনুরূপভাবে হযরত মূসা (আঃ)-এর মুখে ক্রমান্বয়ে এরূপ সুস্পষ্ট ও উজ্জ্বল দলীল শুনে ফিরাউনের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে যে, তার মত একটি লোক যদি হযরত মূসা (আঃ)-কে না মানে তবে কি আসে যায়? এসব স্পষ্ট দলীল প্রমাণ তো তার লোকদের উপর ক্রিয়াশীল হয়ে যাবে। এ জন্যেই সে নিজের কওমের প্রতি মনোযোগ দিলো এবং হযরত মূসা (সঃ)-কে ধমকাতে শুরু করলো, যেমন সামনে আসছে।
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَٰهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكَ بِشَيْءٍ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
قَالَ فَأْتِ بِهِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
قَالَ لِلْمَلَإِ حَوْلَهُ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَابْعَثْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ
📘 Please check ayah 26:37 for complete tafsir.
يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَحَّارٍ عَلِيمٍ
📘 ২৯-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর
ফিরাউন যখন বিতর্কে হেরে গেল, দলীল ও বর্ণনায় বিজয়ী হতে পারলো না, তখন সে ক্ষমতার দাপট প্রকাশ করতে লাগলো এবং গায়ের জোরে সত্যকে দাবিয়ে রাখার ইচ্ছা করলো। সে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আমাকে ছাড়া অন্যকে যদি তুমি মা'বূদ রূপে গ্রহণ কর তবে জেলখানায় আমি তোমাকে বন্দী করবো এবং সেখানেই মড়িয়ে পচিয়ে তোমার জীবন শেষ করবো।” তখন হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেনঃ “আমি তোমার নিকট স্পষ্ট কোন নিদর্শন আনয়ন করলেও কি তুমি বিশ্বাস করবে না?' ফিরাউন উত্তরে বললোঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হও তবে কোন নিদর্শন আনয়ন কর।হযরত মূসা (আঃ) তখন তাঁর হাতের লাঠিটি মাটিতে নিক্ষেপ করলেন। মাটিতে পড়া মাত্রই লাঠিটি এক বিরাটাকার অজগর হয়ে গেল। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) তাঁর হাতটি বের করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল প্রতিভাত হলো। কিন্তু ফিরাউনের ভাগ্যে ঈমান ছিল না বলে এমন উজ্জ্বল নিদর্শন দেখার পরেও হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্যপনা পরিত্যাগ করলো না। সে তার পারিষদবর্গকে বললোঃ “এ লোকটি তো এক সুদক্ষ যাদুকর। এ তোমাদেরকে তার যাদুবলে তোমাদের দেশ হতে বের করে দিতে চায়। এখন তোমরা আমাকে কি করতে বল?" আল্লাহ তা'আলার কি মাহাত্ম যে, তিনি ফিরাউনের লোকদের মুখ দিয়ে এমন কথা বের করালেন যার ফলে হযরত মূসা (আঃ) সাধারণভাবে তাবলীগের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন এবং লোকদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পথ পরিষ্কার হলো। তা হলো যাদুকরদেরকে প্রতিযোগিতার জন্যে আহ্বান করা।
فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِمِيقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُومٍ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
وَقِيلَ لِلنَّاسِ هَلْ أَنْتُمْ مُجْتَمِعُونَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
إِنْ نَشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِنَ السَّمَاءِ آيَةً فَظَلَّتْ أَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِينَ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِنْ كَانُوا هُمُ الْغَالِبِينَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالُوا لِفِرْعَوْنَ أَئِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ إِذًا لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
فَأَلْقَوْا حِبَالَهُمْ وَعِصِيَّهُمْ وَقَالُوا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ إِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُونَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
فَأَلْقَىٰ مُوسَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:48 for complete tafsir.
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
📘 ৩৮-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের মধ্যে যে মৌখিক তর্ক-বিতর্ক চলছিল তা শেষ হলো এবং এখন কার্যের বিতর্ক শুরু হলো। এই বিতর্কের আলোচনা সূরায়ে আরাফ, সূরায়ে তোয়া-হা এবং এই সূরায় রয়েছে। কিবতীদের ইচ্ছা ছিল আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করা, আর আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ছিল নূরকে ছড়িয়ে দেয়া। সুতরাং আল্লাহর ইচ্ছা বিজয় লাভ করেছে। যেখানেই ঈমান ও কফরীর মধ্যে মুকাবিলা হয়েছে সেখানেই ঈমান কুফরীর উপর বিজয়ী হয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ হককে বাতিলের উপর জয়যুক্ত করে থাকেন। বাতিলের মস্তক চূর্ণ হয় এবং লোকদের বাতিল ইচ্ছা বাতাসে উড়ে যায়। সত্য এসে পড়ে এবং মিথ্যা পালিয়ে যায়। এখানেও এটাই হলো। প্রতিটি শহরে পুলিশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। চতুর্দিক থেকে বড় বড় খ্যাতনামা যাদুকরদেরকে একত্রিত করা হয়। কথিত আছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল বারো হাজার বা পনেরো হাজার অথবা সতেরো হাজার বা ঊনিশ হাজার অথবা আশি হাজার কিংবা এর চেয়ে কিছু কম বা বেশী। সঠিক সংখ্যার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। এই যাদুকরদের গুরু ও নেতা ছিল চারজন। তাদের নাম ছিল সা’য়ূর, আয়ূর, হাতহাত এবং মুসাফা। দেশের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল বলে নির্ধারিত দিনের পূর্বেই চতুর্দিক হতে দলে দলে লোক এসে মিসরে জমা হয়ে যায়। এটা একটা সুপরিচিত নীতি যে, প্রজারা তাদের বাদশাহর মাযহাবের উপর থাকে, তাই সবারই মুখ দিয়ে একটি কথা বের হচ্ছিলঃ যাদুকরদের বিজয় লাভের পর আমরা তাদেরই অনুসারী হয়ে যাবো। এ কথা কারো মুখ দিয়ে বের হয়নিঃ ‘হক যে দিকে হবে আমরাও সেই দিকে হয়ে যাবো। যথাস্থানে ফিরাউন আমীর-ওমরাহকে সঙ্গে নিয়ে অত্যন্ত জাকজমকের সাথে গমন করলো। সাথে সৈন্য-সামন্তও ছিল। যাদুকরদেরকে সে তার সামনে ডাকিয়ে নিলো। যাদুকররা ফিরাউনকে বললোঃ “আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্যে পুরস্কার থাকবে তো?' ফিরাউন জবাবে বললোঃ “হ্যা, হ্যাঁ, শুধু পুরস্কার নয়, বরং তোমরা আমার নৈকট্য লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।তারা তখন আনন্দে আটখানা হয়ে ময়দানের দিকে চললো। সেখানে গিয়ে তারা হযরত মূসা (আঃ)-কে বললোঃ “তুমি প্রথমে উস্তাদী দেখাবে, না আমরাই প্রথমে দেখাবো?” হযরত মূসা (আঃ) উত্তরে বললেনঃ “তোমরাই প্রথমে দেখাও।” অতঃপর যাদুকররা তাদের রঞ্জু ও লাঠি নিক্ষেপ করলো এবং বললোঃ “ফিরাউনের ইযযতের শপথ! আমরাই বিজয়ী হবো।" যেমন সাধারণ অজ্ঞ লোকেরা যখন কোন কাজ করে তখন বলেঃ “এটা অমুকের পুণ্যের কারণে। হয়েছে।" সূরায়ে আ’রাফে রয়েছে যে, যাদুকররা মানুষের চোখে যাদু করে দেয় এবং তাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে ও বড় রকমের যাদু প্রকাশ করে। সূরায়ে তোয়া-হায় আছে যে, তাদের লাঠিগুলো ও তাদের রজ্জ্বগুলো তাদের যাদুর কারণে নড়ছে বলে অনুভূত হতে তাকে (শেষপর্যন্ত)।এখন হযরত মূসা (আঃ)-এর হাতে যে লাঠিটি ছিল তা তিনি ময়দানে নিক্ষেপ করেন। সাথে সাথে ওটা বিরাট অজগর হয়ে যায় এবং ময়দানে যাদুকরদের যতগুলো ন্যরবন্দীর জিনিস ছিল সবগুলোকেই খেয়ে ফেলে। সুতরাং হক বিজয়ী হয় এবং বাতিল পরাভূত হয়। যাদুকরদের সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। এ দেখে যাদুকররা সবাই মুসলমান হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে যে, একটি মাত্র লোক যাদু বিদ্যায় পারদর্শী বহু লোকের সাথে মুকাবিলা করে বিজয়ী হয়ে গেল এটা কোন সাধারণ লোক হতে পারে না। যাদু যাদুই বটে। আর এ লোকটির কাছে যা রয়েছে তা কখনো যাদু হতে পারে না, বরং এটা আল্লাহ প্রদত্ত মুজিযা। তারা সেখানেই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হয়ে পড়ে এবং সমবেত লোকদের সামনে নিজেদের আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনয়নের কথা ঘোষণা করে। করা বলেঃ “আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। অতপর নিজেদের কথাকে আরো সুস্পষ্ট করার জন্যে বলেঃ “জগতসমূহের প্রতিপালক বলতে আমরা তাঁকেই বুঝাচ্ছি যাঁকে হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ) তাঁদের প্রতিপালক বলছেন।”এতো বড় পরিবর্তন ফিরাউন স্বচক্ষে দেখলো, কিন্তু ঐ অভিশপ্তর ভাগ্যে ঈমান লিখিত ছিল না বলে তখনও তার চোখ খুললো না, বরং সে মহামহিমান্বিত আল্লাহর আরো বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ালো। স্বীয় ক্ষমতাবলে সে সত্যকে দূর করে দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গেল। সে যাদুকরদেরকে বললোঃ “আমি বুঝতে পেরেছি যে, মূসা (আঃ) তোমাদের সবারই উস্তাদ ছিল। তোমরা বুদ্ধি করে তাকে প্রথমে পাঠিয়েছিলে। তারপর বাহ্যতঃ মুকাবিলা করার জন্যে নিজেরা ময়দানে নেমেছিলে। অতঃপর গোপন পরামর্শ অনুযায়ী তার কাছে। পরাজয়বরণ করে নিলে এবং তাকে মেনে নিলে। কাজেই তোমাদের প্রতারণা আমার কাছে আর গোপন নেই।”
قَالَ آمَنْتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ فَلَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ۚ لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 26:51 for complete tafsir.
وَمَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنَ الرَّحْمَٰنِ مُحْدَثٍ إِلَّا كَانُوا عَنْهُ مُعْرِضِينَ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
قَالُوا لَا ضَيْرَ ۖ إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا مُنْقَلِبُونَ
📘 Please check ayah 26:51 for complete tafsir.
إِنَّا نَطْمَعُ أَنْ يَغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَا أَنْ كُنَّا أَوَّلَ الْمُؤْمِنِينَ
📘 ৪৯-৫১ নং আয়াতের তাফসীর
যাদুকরদের ঈমানের পরিপক্কতা দেখে বিস্মিত হতে হয়। তারা তো সবেমাত্র আল্লাহ তা'আলার উপর ঈমান আনয়ন করেছে, অথচ তাদের ধৈর্য ও অটলতা এমনই যে, ফিরাউনের মত অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর সম্রাট তাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে ধমকাচ্ছে, আর তারা নির্ভীক হয়ে তার মুখের সামনে তার ইচ্ছার বিপরীত জবাব দিচ্ছে। কফরীর পর্দা তাদের অন্তর থেকে দূর হয়ে গেছে। তাই তারা বুক ফুলিয়ে ফিরাউনের সাথে মুকাবিলায় লেগে পড়েছে। তাদের অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট আল্লাহ প্রদত্ত মুজিযা রয়েছে, এটা অর্জিত যাদু নয়। সুতরাং তারা সত্যকে কবুল করে নিয়েছে। ফিরাউন তাদের উপর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে এবং তাদেরকে বলেছেঃ “তোমরা আমাকে কিছুই মনে করলে না? বরং আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মূসা (আঃ)-কে মেনে নিলে? আমার নিকট অনুমতিও প্রার্থনা করলে না?” একথা বলার পর সে চিন্তা করলো যে, না জানি হয় তো যাদুকরদের পরাজিত হওয়া ও তাদের মুসলমান হয়ে যাওয়ার প্রভাব তথায় সমবেত লোকদের উপর পড়ে যাবে, তাই একটি কথা বানিয়ে নিয়ে বললোঃ “আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমরা সবাই মূসা (আঃ)-এর শিষ্য এবং সে তোমাদের গুরু। সেই তোমাদের সবকে যাদু শিখিয়েছে।”এটা ছিল ফিরাউনের সম্পূর্ণরূপে বে-ঈমানী ও প্রতারণামূলক কথা। ইতিপূর্বে যাদুকররা না হযরত মূসা (আঃ)-কে দেখেছিল, না হযরত মূসা (আঃ) যাদুকরদেরকে চিনতেন। আল্লাহর পয়গম্বর তো নিজেই যাদু জানতেন না, সুতরাং অপরকে তিনি তা শিখাবেন কি করে? বুদ্ধির বিপরীত একথা বলে ফিরাউন যাদুকরদের ধমকাতে শুরু করলো এবং নিজের অত্যাচারমূলক নীতিতে নেমে আসলো। সে যাদুকরদেরকে বললোঃ “আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবো। অতঃপর তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করে ছাড়বো।" যাদুকরদের সবাই সমস্বরে জবাব দিলোঃ “এতে কোন ক্ষতি নেই। তোমার যা ইচ্ছা তাই তুমি করতে পার। এটাকে আমরা মোটেই পরোয়া করি না। আমাদেরকে তো আল্লাহ তা'আলার নিকট ফিরে যেতেই হবে। আমরা তাঁরই নিকট আমাদের কাজের প্রতিদান চাই। যত কষ্ট তুমি আমাদেরকে দেবে ততই পুণ্য আমরা তাঁর নিকট লাভ করবো। সত্যের উপর বিপদ-আপদ সহ্য করা তো সাধারণ ব্যাপার, যাকে আমরা মোটেই ভয় করি না। আমাদের তো এখন কামনা এটাই যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্বের অপরাধ ক্ষমা করবেন। তাঁর নবী (আঃ)-এর সাথে যে মুকাবিলা তুমি আমাদের দ্বারা করিয়ে নিয়েছে তার শাস্তি আমাদের উপর পতিত হবে না। এ জন্যে আমাদের নিকট এছাড়া কোন মাধ্যম নেই যে, আমরা মুমিনদের মধ্যে অগ্রণী হয়েছি।” যাদুকরদের এ উত্তর শুনে ফিরাউন আরো চটে গেল এবং তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেললো।
۞ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي إِنَّكُمْ مُتَّبَعُونَ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
فَأَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَائِظُونَ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
وَإِنَّا لَجَمِيعٌ حَاذِرُونَ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
فَأَخْرَجْنَاهُمْ مِنْ جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
وَكُنُوزٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ
📘 Please check ayah 26:59 for complete tafsir.
كَذَٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَنِي إِسْرَائِيلَ
📘 ৫২-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত মূসা (আঃ) তাঁর নবুওয়াতের বহু যুগ ফিরাউন ও তার লোকদের মধ্যে কাটিয়ে দেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলী ও দলীল প্রমাণাদি তাদের উপর খুলে দেন। কিন্তু তবুও তাদের মাথা নীচু হলো না, অহংকার কমলো না এবং বদদেমাগীর মধ্যে কোনই পার্থক্য দেখা দিলো না। অতঃপর তাদের অবস্থা এমন স্তরে পৌঁছে গেল যে, তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়ার আর কিছুই বাকী থাকলো না। এমতাবস্থার মহান আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর অহী করলেনঃ “আমার নির্দেশ মোতাবেক তুমি বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রাতারাতি মিসর হতে বেরিয়ে পড়।” এই সময় বানী ইসরাঈল কিবতীদের নিকট হতে বহু অলংকার ধার স্বরূপ গ্রহণ করে এবং চাঁদ ওঠার সময় তারা চুপচাপ মিসর হতে প্রস্থান করে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ঐ রাত্রে চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল। হযরত মূসা (আঃ) পথে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কবর কোথায় আছে?” একজন বৃদ্ধা তাঁর কবরটি দেখিয়ে দেয়। হযরত মূসা (আঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর তাবূতটি (শবাধারটি) সাথে নেন। কথিত আছে যে, স্বয়ং তিনিই তাবূতটি উঠিয়ে নিয়েছিলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অসিয়ত ছিল যে, বানী ইসরাঈল এখান দিয়ে গমনের সময় যেন তাঁর তাবৃক্টটি সাথে নিয়ে যায় ।হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একজন বেদুঈনের বাড়ীতে অতিথি হন। সে তার খুব খাতির সম্মান করে। ফিরবার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “মদীনায় গেলে তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে। কিছুদিন পর ঐ বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “কিছু চাও।" সে বললোঃ “হাওদাসহ আমাকে একটি উষ্ট্র দিন এবং'দুগ্ধবতী একটি ছাগী দিন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “বড়ই আফসোস যে, তুমি বানী ইসরাঈলের বুড়ীর মত চাওনি।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! বানী ইসরাঈলের বুড়ীর ঘটনাটি কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, যখন হযরত মূসা (আঃ) বানী। ইসরাঈলকে নিয়ে পথ চলছিলেন তখন তিনি পথ ভুলে যান। বহু চেষ্টা করেও তিনি পথ ঠিক করতে পারলেন না। তিনি তখন লোকদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যাপার কি? আমরা পথ ভুল করলাম কেন? বানী ইসরাঈলের আলেমগণ তখন বললেনঃ ‘ব্যাপার এই যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, যখন আমরা মিসর হতে চলে যাবো তখন যেন তার তাতটিও (শবাধারটিও) এখান থেকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই।” হযরত মুসা (আঃ) তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কবর কোথায় আছে তা তোমাদের কার জানা আছে?” সবাই উত্তরে বললোঃ “আমরা কেউ এটা জানি না। আমাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন বুড়ী এটা জানে।” হযরত মূসা (আঃ) তখন লোক মারফত বুড়ীকে বলে পাঠালেন যে, সে যেন হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কবরটি তাঁকে দেখিয়ে দেয়। বুড়ী বললোঃ “হ্যাঁ, আমি দেখিয়ে দিতে পারি, তবে প্রথমে আমার প্রাপ্য আমাকে দিতে হবে।” হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেনঃ “তুমি কি চাও?” সে উত্তরে বললোঃ “জান্নাতে আমি আপনার সাথে থাকতে চাই।” হ্যরত মূসা (আঃ)-এর কাছে বুড়ীর এই দাবী খুবই ভারীবোধ হয়। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে অহী আসলোঃ “হে মূসা (আঃ)! তুমি ঐ বুড়ীর শর্ত মেনে নাও।” বুড়ী হযরত মূসা (আঃ)-কে একটি বিলের নিকট নিয়ে গেল যার পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। বুড়ী বললোঃ “এর পানি উঠিয়ে ফেলার নির্দেশ দিন।” তার কথামত বিলের পানি বের করে দেয়া হলে মাটি দেখা গেল। বুড়ী তখন বললোঃ “এ জায়গা খনন করতে বলন।” মাটি খনন করলে কবরটি প্রকাশিত হয়ে পড়লো। তখন হযরত মূসা (আঃ) তাবূতটি সঙ্গে নিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি পুনরায় পথ চলতে শুরু করলেন। এবার রাস্তা পরিষ্কারভাবে দেখা গেল এবং তিনি সঠিক পথ পেয়ে গেলেন।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল। সত্যের কাছাকাছি এটাই যে, হাদীসটি মাওকুফ, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথাই এটা নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)এ লোকেগুলো তো তাদের পথে চলতে থাকলো। আর ওদিকে ফিরাউন ও তার লোকেরা সকালে দেখলো যে, চৌকিদার, গোলাম ইত্যাদি কেউই নেই। সুতরাং তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল এবং রাগে লাল হয়ে গেল। যখন তারা জানতে পারলো যে, রাতে বানী ইসরাঈলের সবাই পালিয়ে গেছে তখন তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। ফিরাউন তৎক্ষণাৎ সৈন্য জমা করতে লাগলো। সকলকে একত্রিত করে সে তাদেরকে বললোঃ “বানী ইসরাঈল তো ক্ষুদ্র একটি দল। তারা অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। সদা-সর্বদা তারা আমাদেরকে দুঃখ কষ্ট দিতে রয়েছে। তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে সদা সতর্ক থাকতে হচ্ছে। (আরবি) -এর কিরআতে এই অর্থ হবে। পূর্বযুগীয় গুরুজনদের একটি দল (আরবি) পড়েছেন। তখন অর্থ হবেঃ “আমরা অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত রয়েছি এবং ইচ্ছা করেছি যে, তাদেরকে তাদের ঔদ্ধত্যপনার স্বাদ গ্রহণ করাবো। তাদের সকলকে এক সাথে ঘিরে ফেলে কচুকাটা করবো।” আল্লাহর কি মহিমা যে, এটা তাদের উপরই ফিরে আসলো। ফিরাউন তার কওম ও লোক-লকরসহ একই সময়ে ধ্বংস হয়ে গেল। (তার উপর ও তার অনুসারীদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক)।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ পরিণামে আমি ফিরাউন গোষ্ঠীকে বহিস্কৃত করলাম তাদের উদ্যানরাজি ও ধন-ভাণ্ডার হতে এবং ধন-ভাণ্ডার ও সুরম্য সৌধমালা হতে। তাদের ব্যাপারে এরূপই ঘটেছিল এবং বানী ইসরাঈলকে আমি এ সমুদয়ের অধিকারী করেছিলাম। যারা অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর লোক বলে গণ্য হতো তাদেরকে আমি চরম সম্মানিত বানিয়ে দিলাম। এরূপ করারই আমার ইচ্ছা ছিল এবং আমার ইচ্ছা আমি পূর্ণ করলাম।
فَقَدْ كَذَّبُوا فَسَيَأْتِيهِمْ أَنْبَاءُ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
فَأَتْبَعُوهُمْ مُشْرِقِينَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
فَلَمَّا تَرَاءَى الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَابُ مُوسَىٰ إِنَّا لَمُدْرَكُونَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
فَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ ۖ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
وَأَزْلَفْنَا ثَمَّ الْآخَرِينَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
وَأَنْجَيْنَا مُوسَىٰ وَمَنْ مَعَهُ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
ثُمَّ أَغْرَقْنَا الْآخَرِينَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:68 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 ৬০-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর
ফিরাউন তার সমস্ত লোক-লশকর, সমস্ত প্রজা এবং মিসরের ভিতরের ও মিসরের বাইরের লোক, নিজস্ব লোক ও নিজের কওমের লোকদেরকে নিয়ে বড়ই আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে বানী ইসরাঈলের লোকদেরকে তচনচ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল। কেউ কেউ বলেন যে, তাদের সংখ্যা লক্ষাধিক ছিল। তাদের মধ্যে এক লক্ষ তো শুধু কালো রঙের ঘোড়ার উপর সওয়ার ছিল। এটা হলো আহলে কিতাবের খবর, যে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। হযরত কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আট লক্ষ লোক এরূপ ঘোড়ার উপর সওয়ার ছিল। আমাদের ধারণা তো এই যে, এসব হলো বানী ইসরাঈলেরঅতিরঞ্জিত কথা। কুরআন কারীমে এটুকু রয়েছে যে, ফিরাউন তার গোটা দল নিয়ে রওয়ানা হয়েছিল। তাদের সংখ্যা বর্ণনা করা হয়নি। এটা জেনে আমাদের কোন লাভও নেই।সূর্য উদয়ের সময় ফিরাউন তার দলবলসহ বানী ইসরাঈলের নিকট পৌঁছে যায়। কাফিররা মুমিনদেরকে এবং মুমিনরা কাফিরদেরকে দেখতে পায়। হঠাৎ হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গীদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েঃ “হে মূসা (আঃ)! বলুন, এখন উপায় কি? আমরা তো ধরা পড়ে যাবো। সামনে রয়েছে লোহিত সাগর এবং পিছনে রয়েছে ফিরাউনের অসংখ্য সৈন্য। কাজেই আমাদের এখন উভয় সংকট!” এটা স্পষ্ট কথা যে, নবী ও গায়ের নবী কখনো সমান হয় না। হযরত মূসা (আঃ) অত্যন্ত শান্ত মনে জবাব দিলেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। তোমাদের উপর কোন বিপদ আসতে পারে না। আমি নিজের ইচ্ছায় তোমাদেরকে নিয়ে বের হইনি, বরং আহকামুল হাকিমীন আল্লাহর নির্দেশক্রমে বের হয়েছি। তিনি কখনো ওয়াদা খেলাফ করেন না। তাদের অগ্রভাগে ছিলেন হযরত হারূন (আঃ)! তার সাথেই হযরত ইউশা ইবনে নূন ছিলেন অথবা ফিরাউনের বংশের কোন একজন মুমিন লোক ছিল। আর হযরত মূসা (আঃ) সেনাবাহিনীর শেষাংশে ছিলেন। ভয় ও পথ না পাওয়ার কারণে বানী ইসরাঈলের স্বাই হতবুদ্ধি হয়ে থমকে দাঁড়ায় এবং উদ্বেগের সাথে হযরত মূসা (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “এই পথে চলারই কি আল্লাহর নির্দেশ ছিল?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ। ইতিমধ্যে ফিরাউনের সেনাবাহিনী তাদের একেবারে মাথার মছেই এসে পড়ে। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট আল্লাহর অহী আসেঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার লাঠি দ্বারা তুমি সমুদ্রে আঘাত কর। তারপর আমার ক্ষমতার নিদর্শন দেখে নাও। তিনি তখন সমুদ্রে তাঁর লাঠি দ্বারা আঘাত লেন। আঘাত করা মাত্রই আল্লাহর নির্দেশক্রমে পানি ফেটে গেল। ঐ উদ্বেগের অবস্থায় তিনি নিম্নরূপ দু'আ করেন যা মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে নিম্নের ভাষায় বর্ণিত আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে ঐ সত্তা যিনি প্রত্যেক জিনিসের পূর্বে ছিলেন এবং প্রত্যেক জিনিসের পরে থাকবেন, আমাদের জন্যে বের হওয়ার স্থান তৈরী করে দিন।হযরত মূসা (আঃ)-এর মুখে এ দু'আ উচ্চারিত হওয়া মাত্রই তার উপর সমুদ্রে লাঠি মারার অহী এসে পড়ে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ঐ রাত্রে আল্লাহ তা'আলা পূর্বেই সমুদ্রের প্রতি অহী করেছিলেনঃ “আমার নবী মূসা (আঃ) যখন আসবে এবং তোমার উপর তার লাঠি দ্বারা আঘাত করবে তখন তুমি তার কথা শুনবে ও মানবে।” ঐ রাত্রে সমুদ্রের অবস্থা ছিল অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। সমুদ্র এদিক-ওদিক তরঙ্গায়িত হচ্ছিল যে, না জানি হযরত মূসা (আঃ) কখন এবং কোন দিক হতে লাঠি মারবেন এবং সে হয়তো খবর রাখবে না ও তার নির্দেশ পালন করতে পারবে। যখন তারা একেবারে তীরে পৌঁছে যান তখন তাঁর সঙ্গী হযরত ইউশা ইবনে নন (আঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আপনার উপর আল্লাহ তাআলার কি নির্দেশ রয়েছে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমার উপর এই নির্দেশ রয়েছে যে, আমি যেন সমুদ্রের উপর আমার লাঠি দ্বারা আঘাত করি।” হযরত ইউশা (আঃ) তখন বলেনঃ “তাহলে আর বিলম্ব কেন?” তার এ কথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) সমুদ্রে লাঠি দ্বারা আঘাত করেন এবং বলেনঃ “আল্লাহর হুকুমে তুমি ফেটে যাও এবং আমার জন্যে রাস্তা করে দাও।” তৎক্ষণাৎ সমুদ্র ফেটে যায় এবং ওর মধ্য দিয়ে পরিষ্কারভাবে রাস্তা দেখা যায়। ওর আশে পাশে পাহাড়ের মত হয়ে পানি খাড়া হয়ে যায়। তাতে বারোটি পথ বের হয়। বানী ইসরাঈলও বারোটি গোত্রেই বিভক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহর কুদরতে প্রতি দু'দলের মাঝে যে পাহাড় প্রতিবন্ধকরূপে ছিল তাতে তাক বা খিলান নির্মিত হয়ে যায়, যাতে প্রত্যেকে একে অপরকে নিরাপদে আসতে যেতে দেখতে পায়। পানি প্রাচীরের মত হয়ে যায়। আর বাতাসকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, সে যেন মধ্য থেকে পানি ও মাটিকে শুকিয়ে দিয়ে পথ পরিষ্কার করে দেয়। সুতরাং ঐ শুষ্ক পথ ধরে হযরত মূসা (আঃ) তাঁর কওমসহ নির্ভয়ে চলতে শুরু করেন। তারপর ফিরাউন ও তার দলবলকে সমুদ্রের নিকটবর্তী করে দেয়া হয়। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) ও বানী ইসরাঈলকে মুক্তি দেয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফিরদের সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের একজনও ডুবে যাওয়া হতে রেহাই পায়নি।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, ফিরাউন যখন বানী ইসরাঈলের পলায়নের খবর জানতে পারে তখন সে একটি বকরী যবাহ করে এবং বলেঃ “এর চামড়া ছাড়িয়ে নেয়ার পূর্বেই আমার সামনে ছয় লক্ষ সৈন্য জমা হওয়া চাই।" হযরত মূসা (আঃ) পালিয়ে গিয়ে যখন সমুদ্রের ধারে পৌঁছেন তখন তিনি সমুদ্রকে বলেনঃ “তুমি ফেটে যাও এবং সরে গিয়ে আমাদের জন্যে জায়গা করে দাও।” সমুদ্র উত্তরে বলেঃ “আপনি যে অহংকারের ভঙ্গীতে কথা বলছেন! ইতিপূর্বে কি আমি কখনো ফেটেছি ও সরে গিয়ে কোন মানুষকে জায়গা করে দিয়েছে যে, আপনাকে জায়গা করে দেবো?” তার সাথে যে বুর্গ ব্যক্তিটি ছিলেন তিনি তাঁকে বললেনঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! এটাই কি আল্লাহর বলে দেয়া রাস্তা ও জায়গা?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যা, এটাই।” তখন ঐ বুযর্গ লোকটি বললেনঃ “আপনি মিথ্যাবাদীও নন এবং আপনাকে ভুল কথাও বলা হয়নি।” হযরত মূসা (আঃ) দ্বিতীয়বারও সমুদ্রকে ঐ কথাই বললেন, কিন্তু তখনো কিছুই হলো না। ঐ বুযর্গ লোকটি পুনরায় ঐ একই প্রশ্ন করেন, একই জবাব পান এবং তিনি আবার ঐ একই কথা বলেন। তৎক্ষণাৎ তাঁর উপর অহী করা হয়ঃ “সমুদ্রের উপর তুমি তোমার লাঠি দ্বারা আঘাত কর।” এবার তার একথা স্মরণ হয়ে যায় এবং তিনি সমুদ্রের উপর লাঠির আঘাত করেন। আঘাত করা মাত্রই সমুদ্র রাস্তা করে দেয়। বারোটি রাস্তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। প্রত্যেক দল নিজ নিজ রাস্তা চিনে নেয়। তারপর তারা নিজ নিজ পথ ধরে চলতে থাকে এবং একে অপরকে দেখতে দেখতে নিরাপদে সবাই পার হয়ে যায়।হযরত মূসা (আঃ) তো বানী ইসরাঈলকে নিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করলেন, আর ওদিকে ফিরাউন ও তার লোক-লশকর তাদের পশ্চাদ্ধাবনে সমুদ্রের মধ্যে এসে পড়লো। হঠাৎ আল্লাহর নির্দেশক্রমে সমুদ্রের পানি যেমন ছিল তেমনই হয়ে গেল এবং তারা সবাই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেল। যখন বানী ইসরাঈলের শেষ ব্যক্তি সমুদ্র হতে বের হলো এবং সর্বশেষ কিতী সমুদ্রের মধ্যে এসে পড়লো, ঠিক ঐ সময় আল্লাহ পাকের হুকুমে সমুদ্রের পানি এক হয়ে গেল এবং এক এক করে সমস্ত কিবতী পানিতে নিমজ্জিত হলো। এতে বড় রকমের নিদর্শন রয়েছে যে, কিভাবে গুনাহগার ধ্বংস হয় এবং নেককার পরিত্রাণ পায়। কিন্তু তথাপিও অধিকাংশ লোক ঈমানরূপ সম্পদ হতে বঞ্চিত হয়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ إِبْرَاهِيمَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الْأَرْضِ كَمْ أَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
أَوْ يَنْفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءَنَا كَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
قَالَ أَفَرَأَيْتُمْ مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُونَ
📘 Please check ayah 26:77 for complete tafsir.
فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ
📘 ৬৯-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন তার উম্মতের সামনে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করেন, যাতে তারা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা, তাঁর ইবাদত এবং শিরক ও মুশরিকদের প্রতি অসন্তুষ্টিতে তাঁর অনুসরণ করে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রথম দিন থেকেই আল্লাহর একত্ববাদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঐ তাওহীদের উপর কায়েম থাকেন।তিনি তাঁর পিতাকে এবং কওমকে বলেনঃ “তোমরা এসব কিসের ইবাদত কর?” তারা উত্তরে বলেঃ “আমরা তো প্রাচীন যুগ থেকেই মূর্তি-পূজা করে আসছি।” হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের ভুল নীতি তাদের কাছে প্রকাশ করে দিয়ে তাদের ভুল চাল-চলন পর্দাহীন করার জন্যে তাদের সামনে আর একটি বর্ণনা তুলে ধরে বলেনঃ “তোমরা তো তাদের কাছে প্রার্থনা করে থাকো এবং দূর থেকে ও নিকট থেকে তাদেরকে ডেকে থাকো, তারা তোমাদের ডাক শুনে থাকে কি? যখন তোমরা উপকার লাভের আশায় তাদেরকে ডাকো তখন তারা তোমাদেরকে কোন উপকার করতে পারে কি? কিংবা যদি তোমরা তাদের ইবাদত ছেড়ে দাও তবে তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে কি?"কওমের পক্ষ থেকে তিনি যে উত্তর পেলেন তাতে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। হয় যে, তাদের ঐ মা'বুদগুলো এসব কাজের কোনটাই করতে সক্ষম নয়। তারা পরিষ্কারভাবে বলে দিলো যে, তারা শুধু তাদের বড়দের অনুকরণ করছে মাত্র। তাদের এ জবাবে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের প্রতি ও তাদের বাতিল মা'বূদদের প্রতি নিজের অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেন। তিনি পরিষ্কারভাবে তাদেরকে বলে দিলেনঃ “তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা যাদের পূজা করতে রয়েছে তাদের সবারই প্রতি আমি চরম অসন্তুষ্ট। তারা সবাই আমার শত্রু। আমি শুধু জগতসমূহের সঠিক প্রতিপালকের পূজারী। আমি খাটি একত্ববাদী। যাও, তোমরা ও তোমাদের মা’রূদরা আমার যে ক্ষতি করার ইচ্ছা কর করে নাও।”হযরত নূহ (আঃ) তার কওমকে একথাই বলেছিলেনঃ “তোমরা ও তোমাদের মা'বুদরা সব মিলিত হয়ে যদি আমার কিছু ক্ষতি করতে পার তবে করে নাও।” হযরত হূদ (আঃ) বলেছিলেনঃ “আমি আল্লাহ ছাড়া সব কিছুর প্রতিই অসন্তুষ্ট। তোমরা সবাই যদি আমার কিছু ক্ষতি করতে সক্ষম হও তবে করতে পার। আমার প্রতিপালকের সত্তার উপর আমার ভরসা রয়েছে। সমস্ত প্রাণী তাঁর অধীনস্থ, তিনি সরল সোজা পথের উপর রয়েছেন। অনুরূপভাবে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ “আমি তোমাদের মাবূদদেরকে মোটই ভয় করি না। বরং তোমাদেরই তো আমার প্রতিপালককে ভয় করা উচিত। যিনি সত্য আল্লাহ।” তিনি ঘোষণা করে দিয়েছিলেনঃ “তোমাদের মধ্যে ও আমার মধ্যে শক্রতা থাকবে যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ তা'আলার উপর ঈমান আনয়ন কর। হে আমার পিতা! আমি তোমার, তোমার কওম এবং তোমার মা'বুদদের হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। আমি শুধু আমার প্রতিপালকের উপরই আশা রাখি যে, তিনি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন।” ওটাকেই অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকেই তিনি কালেমা বানিয়ে নেন।
الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ
📘 Please check ayah 26:82 for complete tafsir.
وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ
📘 Please check ayah 26:82 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 26:9 for complete tafsir.
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
📘 Please check ayah 26:82 for complete tafsir.
وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ
📘 Please check ayah 26:82 for complete tafsir.
وَالَّذِي أَطْمَعُ أَنْ يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ
📘 ৭৮-৮২ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় প্রতিপালকের গুণাবলীর বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ আমি এসব গুণে গুণান্বিত প্রতিপালকেরই ইবাদত করি। তিনি ছাড়া আর কারো আমি ইবাদত করবো না। তাঁর প্রথম গুণ এই যে, তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তাঁর দ্বিতীয় গুণ এই যে, তিনিই হলেন প্রকৃত পথ প্রদর্শক। তিনি যাকে চান তাঁর পথে পরিচালিত করেন এবং যাকে চান ভুল পথে পরিচালিত করেন। আমার প্রতিপালকের তৃতীয় গুণ এই যে, তিনি হলেন সৃষ্টজীবের আহার্যদাতা। আসমান ও যমীনের সমস্ত উপকরণ তিনিই প্রস্তুত করেছেন। মেঘ উঠানো, ছড়ানো এবং তা হতে বৃষ্টি বর্ষাননা, তা দ্বারা পৃথিবীকে সঞ্জীবিতকরণ এবং এরপর যমীন হতে ফসল উৎপাদন এসব তারই কাজ। তিনিই সুপেয় ও পিপাসা নিবারণকারী পানি আমাদেরকে দান করেন এবং তাঁর অন্যান্য সৃষ্টজীবকেও দান করে থাকেন। মোটকথা, আহার্য ও পানীয় দানকারী তিনিই। সাথে সাথে আমাদেরকে সুস্থতা দানও তারই কাজ। এখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ) পূর্ণ ভদ্রতা রক্ষা করেছেন যে, রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্বন্ধ তিনি নিজের দিকে করেছেন, আর রোগমুক্তির সম্বন্ধ করেছেন আল্লাহ তা'আলার দিকে। অথচ রোগও তো তাঁরই নির্ধারণকৃত ও তৈরীকৃত জিনিস। এই সৌন্দর্য ও নমনীয়তা সূরায়ে ফাতেহাতেও রয়েছে। ইনআম ও হিদায়াতের সম্বন্ধ রয়েছে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার দিকে। আর গযবের ফায়েল বা কর্তাকে লুপ্ত রাখা হয়েছে। সূরায়ে জ্বিনে জ্বিনদের উক্তিতেও এটাই পরিলক্ষিত হয়। এক জায়গায় তারা বলেছেঃ “আমরা জানি না জগতবাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, না তাদের প্রতিপালক তাদের মঙ্গল চান।” এখানেও মঙ্গলের নিসবত বা সম্বন্ধ প্রতিপালকের দিকে করা হয়েছে এবং অমঙ্গলের মধ্যে এই সম্বন্ধ প্রকাশ করা হয়নি। অনুরূপভাবে এই আয়াতেও রয়েছেঃ আমি রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। ওষুধের মধ্যে ক্রিয়া সৃষ্টি বা তারই হাতে। মরণ ও জীবনের উপরও ক্ষমতাবান তিনিই। প্রথম এবং শেষ তাঁরই হাতে। প্রথমবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়বার তিনিই পুনরুত্থিত করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতের পাপরাশি মার্জনা করার ক্ষমতা তারই। তিনি যা চান তাই করেন। ক্ষমাশীল ও দয়ালু তিনিই।
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
وَاجْعَلْ لِي لِسَانَ صِدْقٍ فِي الْآخِرِينَ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
وَاجْعَلْنِي مِنْ وَرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيمِ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
وَاغْفِرْ لِأَبِي إِنَّهُ كَانَ مِنَ الضَّالِّينَ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
وَلَا تُخْزِنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ
📘 Please check ayah 26:89 for complete tafsir.
إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
📘 ৮৩-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর
এটা হলো হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনা যে, তাঁর প্রতিপালক যেন তাকে হুকম দান করেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা (হু) হলো ইলম বা জ্ঞান। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, ওটা হলো আকল। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ওটা হলো কুরআন। আর সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ওটা হলো নবুওয়াত। হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ তা'আলার নিকট দু'আ করেন যে, তিনি যেন তাকে এগুলো দান করে দুনিয়া ও আখিরাতে সৎ লোকদের সাথে মিলিত করেন। যেমন নবী (সঃ) জীবনের শেষ সময়ে বলেছিলেন (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! উচ্চ ও মহান বন্ধুর সাথে আমাকে মিলিত করুন।” একথা তিনি তিন বার বলেছিলেন।”হাদীসে নিম্নরূপে দু'আও রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাকে মুসলমানরূপে জীবিত রাখুন, ইসলামের অবস্থায় মৃত্যু দান করুন এবং সৎ লোকদের সাথে মিলিত করুন, এমন অবস্থায় যে, না হয় কোন অপমান এবং না হয় কোন পরিবর্তন।”এরপর তিনি আরো দু'আ করেনঃ ‘আমাকে আমার পরবর্তীদের মধ্যে যশস্বী করুন। লোকেরা যেন আমার পরে আমাকে স্মরণ করে এবং কাজে কর্মে আমার অনুসরণ করে। সত্যি আল্লাহ তা'আলা তাঁর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে তাঁর আলোচনা বাকী রাখেন। প্রত্যেকেই তার উপর সালাম পাঠিয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর কোন সৎ বান্দার পুণ্য বৃথা যেতে দেন না। একটি জগত রয়েছে যার যবান তাঁর প্রশংসা কীর্তনে সদা সিক্ত থাকে। দুনিয়াতেও আল্লাহ তা'আলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা ও কল্যাণ দান করেন। সাধারণতঃ প্রত্যেক মাযহাব ও মিল্লাতের লোক তার সাথে মহব্বত রাখে। তিনি আরো দু'আ করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আখিরাতে আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।” তিনি আরো প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! আমার পথভ্রষ্ট পিতাকেও আপনি ক্ষমা করে দিন। পিতার জন্যে এই ক্ষমা প্রার্থনা করা তাঁর একটি ওয়াদার কারণে ছিল। কিন্তু যখন তাঁর কাছে এটা প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, তাঁর পিতা ছিল আল্লাহর শত্রু এবং সে কুফরীর উপরই মৃত্যু বরণ করেছে তখন তার প্রতি তাঁর মহব্বত দূর হয়ে যায় এবং এরপর তিনি তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করাও ছেড়ে দেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন বড়ই পরিষ্কার অন্তরের অধিকারী এবং খুবই সহনশীল। আমাদেরকেও যেখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর রীতি নীতির উপর চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেখানে এটাও বলা হয়েছে যে, এ ব্যাপারে তাঁর অনুসরণ করা চলবে না।এরপর হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রার্থনায় বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে পুনরুত্থান দিবসে লাঞ্ছিত করবেন না।” অর্থাৎ যেই দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মাখলুককে জীবিত করে একই ময়দানে দাঁড় করানো হবে সেই দিন যেন তাঁকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা না হয়।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর তাঁর পিতার সাথে সাক্ষাৎ হবে। তিনি দেখবেন যে, তাঁর পিতার চেহারা লাঞ্ছনায় ও ধূলো-বালিতে আচ্ছন্ন রয়েছে।” (ইমাম বুখারী (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে এ হাদীসটি আনয়ন করেছেন)অন্য রিওয়াইয়াতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার সাথে সাক্ষাৎ করবেন। ঐ সময় তিনি বলবেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, পুনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “জেনে রেখো যে, জান্নাত কাফিরদের জন্যে সম্পূর্ণরূপে হারাম।” আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, পিতাকে ঐ অবস্থায় দেখে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলবেনঃ “তুমি আমার নাফরমানী করো না একথা কি আমি তোমাকে বলেছিলাম না?” পিতা উত্তরে বলবেঃ “আচ্ছা, আর নাফরমানী করবো।” তখন তিনি আল্লাহ তা'আলার নিকট আরয করবেন: “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, এই দিন আমাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন না। কিন্তু আজ এর চেয়ে বড় অপমান আমার জন্যে আর কি হতে পারে যে, আমার পিতা আপনার রহমত হতে দূরে রয়েছে?” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “হে আমার বন্ধু! আমি তো জান্নাত কাফিরদের জন্যে হারাম করে দিয়েছি।” অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! দেখো তো, তোমার পায়ের নীচে কি?” তখন তিনি দেখবেন যে, এক কুৎসিত বেজি কাদাপানি মাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর পা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে ওটাই হবে তার পিতা যার ঐরূপ আকৃতি করে তার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। ঐ দিন মানুষ যদি তার ক্ষতিপূরণ মাল-ধন দ্বারা আদায় করতে চায়, এমনকি যদি দুনিয়া ভর্তি সোনাও প্রদান করে তবুও তা নিষ্ফল হবে। ঐ দিন উপকার দানকারী হবে ঈমান, আন্তরিকতা এবং শিরক ও মুশরিকদের প্রতি অসন্তুষ্টি। যাদের অন্তর পরিষ্কার হবে, অর্থাৎ অন্তর শিরক ও কুফরীর ময়লা আবর্জনা হতে পাক পবিত্র থাকবে, যারা আল্লাহ তা'আলাকে সত্য জানবে, কিয়ামতকে নিশ্চিত রূপে বিশ্বাস করবে, পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান রাখবে, আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে, যাদের অন্তর কপটতা ইত্যাদি রোগ হতে মুক্ত থাকবে ও অন্তর ঈমান, ইখলাস ও নেক আকীদায় পূর্ণ থাকবে, যারা বিদআতকে ঘৃণা করবে এবং সুন্নাতের প্রতি মহব্বত রাখবে, সেই তারাই উপকৃত হবে।
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 মালিক (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতকৃত তাফসীরে এই সূরার নাম দেয়া হয়েছে সূরায়ে জামেআহ’।
১-৯ নং আয়াতের তাফসীর
হুরূফে মুকাত্তাআতের আলোচনা সূরায়ে বাকারার তাফসীরের শুরুতে গত হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এগুলো হলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত, যা খুবই স্পষ্ট, সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং হক ও বাতিল, ভাল ও মন্দের মধ্যে ফায়সালা ও পার্থক্যকারী।মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তারা ঈমান আনয়ন করছে না বলে তুমি দুঃখ করো না এবং নিজেকে ধ্বংস করে ফেলো না। এভাবে তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা ঈমান আনয়ন করছে না বলে তুমি দুঃখ করে নিজেকে ধ্বংস করো না।” (৩৫: ৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হয়তো তাদের পিছনে পড়ে তুমি আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে।” (১৮৪৬)মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি ইচ্ছা করলে আকাশ হতে তাদের নিকট এক নিদর্শন প্রেরণ করতাম, ফলে তাদের গ্রীবা বিনত হয়ে পড়তো ওর প্রতি। অর্থাৎ তাদেরকে ঈমান আনয়নে বাধ্য করার ইচ্ছা করলে আমি এমন জিনিস আকাশ হতে অবতীর্ণ করতাম যে, তা দেখে তারা ঈমান আনতে বাধ্য হতো। কিন্তু আমি তো তাদের ঈমান আনা বা না আনা তাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছি। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সবাই অবশ্যই ঈমান আনয়ন করতো। তুমি কি লোকদেরকে বাধ্য করবে যে পর্যন্ত না তারা মুমিন হয়?” (১০: ৯৯) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন তবে তিনি সমস্ত মানুষকে একই উম্মত (দল) করতে পারতেন।” (১১:১১৮) দ্বীন ও মাযহাবের এই বিভিন্নতাও আল্লাহ তা'আলারই নির্ধারণকৃত এবং এটা তার নিপুণতা প্রকাশকারী। তিনি রাসূল পাঠিয়েছেন, কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, দলীল-প্রমাণাদি কায়েম করেছেন, অতঃপর তিনি মানুষকে ঈমান আনয়ন করা বা করার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন যে পথে ইচ্ছা সে চলতে থাকুক।মহান আল্লাহ বলেনঃ যখনই তাদের কাছে দয়াময়ের নিকট হতে নতুন। উপদেশ আসে তখনই তারা তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অর্থাৎ যখনই আকাশ হতে তাদের নিকট কোন কিতাব আসে তখনই অধিকাংশ লোক মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি লালসা করলেও অধিকাংশ লোক মুমিন নয়।” (১২:১০৩)। তিনি আরো বলেনঃঅর্থাৎ “পরিতাপ বান্দাদের জন্যে; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে। তখনই তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে।” (৩৬:৩০) আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “অতঃপর আমি পর্যায়ক্রমে রাসূল পাঠিয়েছি, কিন্তু যখনই কোন উম্মতের কাছে তাদের রাসূল এসেছে, তারা তাকে অবিশ্বাসই করেছে।” (২৩:৪৪) এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেনঃ “তারা তো অস্বীকার করেছে; সুতরাং তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো তার প্রকৃত বার্তা তাদের নিকট শীঘ্রই এসে পড়বে।” যালিমরা অতিসত্বরই জানতে পারবে যে, তাদেরকে কোন পথে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ নিজের শান-শওকত, ক্ষমতা, শ্রেষ্ঠত্ব, সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ যার কথা এবং যার দূতকে তোমরা অবিশ্বাস করছে তিনি এতো বড় ক্ষমতাবান ও চির বিরাজমান যে, তিনি একাই সারা যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রাণী ও নিষ্প্রাণ বস্তু সৃষ্টি করেছেন। ক্ষেত, ফলমূল, বাগ-বাগিচা ইত্যাদি সবই তাঁর সৃষ্ট।হযরত শা’বী (রঃ) বলেন যে, মানুষ যমীনের উৎপন্নদ্রব্য স্বরূপ। তাদের মধ্যে যারা জান্নাতী তারা শরীফ ও ভদ্র এবং যারা জাহান্নামী তারা ইতর ও ছোটলোক। এতে সৃষ্টিকর্তার বিরাট ক্ষমতার বহু নিদর্শনাবলী রয়েছে যে, তিনি বিস্তৃত যমীন ও উঁচু আসমান সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্ত্বেও অধিকাংশ লোক। ঈমান আনে না। বরং উল্টো তারা নবীদেরকে প্রতারক বলে থাকে। আল্লাহর কিতাবসমূহকে তারা স্বীকার করে না, তার হুকুমের তারা বিরোধিতা করে এবং তার নিষেধকৃত কাজ করে থাকে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। তিনি সবকিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান। তার সামনে তাঁর সৃষ্টজীব সম্পূর্ণ অপারগ ও অক্ষম। সাথে সাথে তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি বড়ই করুণাময় ও অনুগ্রহশীল। তার অবাধ্য বান্দাদেরকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে তিনি তাড়াতাড়ি করেন না, বরং শাস্তি দিতে তিনি বিলম্ব করেন, যাতে তারা সৎ পথে ফিরে আসে। কিন্তু তবুও তারা সৎ পথে ফিরে আসে না। তখন তিনি তাদেরকে অতি শক্তভাবে পাকড়াও করেন এবং তাদের থেকে পুরোপুরিভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। তবে যারা তাওবা করতঃ তার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তার অনুগত হয়ে যায়, তাদের প্রতি তিনি তাদের পিতা-মাতার চেয়েও বেশী দয়া করে থাকেন।
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَبُرِّزَتِ الْجَحِيمُ لِلْغَاوِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَقِيلَ لَهُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
مِنْ دُونِ اللَّهِ هَلْ يَنْصُرُونَكُمْ أَوْ يَنْتَصِرُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
فَكُبْكِبُوا فِيهَا هُمْ وَالْغَاوُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَجُنُودُ إِبْلِيسَ أَجْمَعُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
قَالُوا وَهُمْ فِيهَا يَخْتَصِمُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
تَاللَّهِ إِنْ كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
إِذْ نُسَوِّيكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.
وَمَا أَضَلَّنَا إِلَّا الْمُجْرِمُونَ
📘 Please check ayah 26:104 for complete tafsir.