slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة القصص

(Al-Qasas) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ طسم

📘 Please check ayah 28:6 for complete tafsir.

وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَارِغًا ۖ إِنْ كَادَتْ لَتُبْدِي بِهِ لَوْلَا أَنْ رَبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا لِتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 28:13 for complete tafsir.

وَقَالَتْ لِأُخْتِهِ قُصِّيهِ ۖ فَبَصُرَتْ بِهِ عَنْ جُنُبٍ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

📘 Please check ayah 28:13 for complete tafsir.

۞ وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ مِنْ قَبْلُ فَقَالَتْ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ أَهْلِ بَيْتٍ يَكْفُلُونَهُ لَكُمْ وَهُمْ لَهُ نَاصِحُونَ

📘 Please check ayah 28:13 for complete tafsir.

فَرَدَدْنَاهُ إِلَىٰ أُمِّهِ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ وَلِتَعْلَمَ أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

📘 ১০-১৩ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর মা যখন তাকে বাসের মধ্যে রেখে ফিরাউনের লোকজনের ভয়ে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন এবং অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েন, আর আল্লাহর রাসূল (আঃ) ও তাঁর কলিজার টুকরা হযরত মূসা (আঃ)-এর চিন্তা ছাড়া অন্য কোন খেয়াল তার অন্তরে জেগেই উঠেনি, ঐ সময় যদি মহান আল্লাহ তাঁর অন্তরকে দৃঢ় না করতেন তবে ধৈর্যহারা হয়ে গোপন রহস্য তিনি প্রকাশ করে ফেলতেন যে, এই ভাবে তাঁর পুত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার হৃদয়কে দৃঢ় করে দেন এবং তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিয়ে দেন যে, তাঁর পুত্রকে অবশ্যই তিনি ফিরে পাবেন। হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা তাঁর বড় কন্যাকে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় কন্যা! তুমি এই বাসের প্রতি দৃষ্টি রেখে সমুদ্রের তীর ধরে চলে যাও। পরিণাম কি হয় দেখা যাক? পরে তুমি আমাকে খবর জানাবে।”মায়ের কথামত হযরত মূসা (আঃ)-এর বোনটি দুর হতে বাকসের দিকে দৃষ্টি রেখে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে থাকলেন। কিন্তু এমন আনমনাভাবে তিনি চলতে লাগলেন যে, তিনি যে বাটির দিকে খেয়াল রেখে চলছেন তা কেউ টেরও পেলো না। যখন বাক্সটি ফিরাউনের প্রাসাদের নিকট পৌছলো এবং দাসীরা তা উঠিয়ে নিয়ে অন্দর মহলে প্রবেশ করলো তখন কি ঘটে তা জানবার আশায় তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। সেখানে এই ঘটলো যে, যখন হযরত আসিয়া (রাঃ) ফিরাউনকে হযরত মূসা (আঃ)-এর হত্যার আদেশ জারী করা হতে বিরত রাখলেন এবং শিশু হযরত মূসা (আঃ)-কে লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন শাহী মহলে যতগুলো ধাত্রী ছিল সবকেই শিশুটি দেয়া হলো এবং সবাই অতি আদরের সাথে শিশুটিকে দুধ পান করাতে চাইলো। কিন্তু আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে শিশু হযরত মূসা (আঃ) কারো দুধ এক ঢাকেও পান করলেন না। অবশেষে হযরত আসিয়া শিশুটিকে তাঁর দাসীদের হাতে দিয়ে তাদেরকে বাইরে পাঠালেন যে, তারা যেন ধাত্রী অনুসন্ধান করে এবং শিশুটি যার দুধ পান করবে তাকে যেন তার কাছে নিয়ে যায়।বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের ইচ্ছা ছিল এটাই যে, তাঁর নবী (আঃ) যেন স্বীয় মাতা ছাড়া আর কারো দুধ পান না করেন এবং এতে বড় যৌক্তিতা এই ছিল যে, এই বাহানায় যেন হযরত মূসা (আঃ) তাঁর মাতার নিকট পৌঁছতে পারেন। দাসীরা শিশু হযরত মূসা (আঃ)-কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। তাঁর বোন তাকে চিনে নেন। কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই প্রকাশ করলেন না এবং তারাও কিছু বুঝতে পারলো না। তাঁর মাতা প্রথমে খুবই অস্থির ও উদ্বিগ্ন ছিলেন বটে, কিন্তু পরে মহান আল্লাহ তাঁকে ধৈর্য ও স্থিরতা দান করেছিলেন। ফলে তিনি নীরব ও শান্তই ছিলেন। হযরত মূসা (আঃ)-এর বোন দাসীদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা এতো ব্যতিব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন কেন?” তারা উত্তরে বললোঃ “এই শিশুটি কারো দুধ পান করছে না। তাই আমরা এমন এক ধাত্রীর খোজে বেরিয়েছি যার দুধ এ শিশু পান করবে। তাদের একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ)-এর বোন তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা বললে আমি একজন ধাত্রীর খোঁজ দিতে পারি। সম্ভবতঃ এ শিশু তার দুধ পান করবে এবং সে একে উত্তমরূপে লালন-পালন করবে ও এর শুভাকাঙিক্ষনী হবে।” তাঁর এ কথা শুনে ঐ দাসীদের মনে কিছু সন্দেহ জাগলো যে, এ মেয়েটি শিশুটির পিতা-মাতার খবর রাখে, সুতরাং তারা তাঁকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞেস করলোঃ “তুমি কি করে জানলে যে, ঐ মহিলাটি এ শিশুর লালন-পালনের দায়িত্ব নেবে ও এর শুভাকাক্ষিনী হবে?” তিনি তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেনঃ “সুবহানাল্লাহ! কে এটা চাইবে না যে, শাহী দরবারে তার সম্মান হোক এবং পুরস্কার ও দানের খাতিরে কে এই শিশুর প্রতি সহানুভূতি না দেখাবে?” তাঁর এ জবাবে তারাও বুঝে নিলো যে, তাদের পূর্ব ধারণা ভুল ছিল, মেয়েটি সঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ “আচ্ছা, তাহলে চলো, ঐ ধাত্রীটির বাড়ী আমাদেরকে দেখিয়ে দাও।” তিনি তখন তাদেরকে নিয়ে তাদের বাড়ী গেলেন এবং তাঁর মাতার দিকে ইশারা করে বললেনঃ “একে দিয়ে দাও।” সরকারী লোকেরা শিশুটি তাঁকে প্রদান করলে তিনি তার দুধ পান করতে শুরু করলেন। সাথে সাথে এ খবর হযরত আসিয়া (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া হলো। এ খবর শুনে তিনি তো আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন। তাঁকে তিনি তাঁর প্রাসাদে ডেকে নেন এবং বহু কিছু পুরস্কার দেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, তিনিই শিশুটির মা। তিনি তাঁকে পুরস্কৃত করলেন শুধু এই কারণে যে, শিশুটি তার দুধ পান করেছে। হযরত আসিয়া (রাঃ) হযরত মূসা (আঃ)-এর মায়ের উপর অত্যন্ত খুশী হন এবং তাঁকে তাঁর রাজপ্রাসাদে থেকেই শিশুটিকে দুধ পান করাবার জন্যে অনুরোধ করেন। উত্তরে হযরত মূসা (আঃ)-এর মা বলেনঃ “এটা আমার পক্ষে। সম্ভব নয়। কেননা, আমার ছেলে মেয়ে ও স্বামী রয়েছে। আমি বরং শিশুটিকে আমার নিজ বাড়ীতেই দুধ পান করাবো, তারপর আপনার নিকট পাঠিয়ে দেবো।” শেষে এটাই মীমাংসিত হয় এবং ফিরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়াও (রাঃ) এতে সম্মত হয়ে যান। সুতরাং হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতার ভয় নিরাপত্তায়, দারিদ্র ঐশ্বর্যে, লাঞ্ছনা সম্মানে এবং ক্ষুধা পরিতৃপ্তি বা স্বচ্ছলতায় পরিবর্তিত হয়। দৈনিক তিনি বেতন ও পুরস্কার পেতে থাকলেন এবং পেতে লাগলেন খাদ্য ও পরিধেয় বস্ত্র শাহী দরবার থেকে। আর সবচেয়ে বড় সুযোগ তিনি এই পেলেন যে, নিজের ছেলেকে নিজেরই ক্রোড়ে লালন-পালন করতে থাকলেন। একই রাত্রে বা একই দিনে অথবা এক দিন রাত্রির পরেই পরম করুণাময় আল্লাহ তাঁর কষ্ট ও বিপদকে সুখ ও আরামে পরিবর্তিত করলেন। এ জন্যেই হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের কাজকর্ম করে এবং তাতে আল্লাহর ভয় ও আমার সুন্নাতের প্রতি লক্ষ্য রাখে তার উপমা হযরত মূসা (আঃ)-এর মায়ের মত। তিনি নিজের ছেলেকেই দুধ পান করাতেন, আবার মজুরীও পেতেন।”আল্লাহর সত্তা অতি পবিত্র। তাঁরই হাতে সমস্ত কাজ। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা কখনো হয় না। অবশ্য এমন প্রতিটি লোকের সাহায্য করেন। যে তার উপর ভরসা করে। তার নির্দেশাবলী পালনকারীর সহায়ক তিনিই। তিনি তাঁর সৎ বান্দাদের বিপদের সময় এগিয়ে আসেন এবং তাদের বিপদ দূর করে দেন। তাদের সংকীর্ণতাকে তিনি প্রশস্ততা ও স্বচ্ছলতায় পরিবর্তিত করেন এবং দুঃখের পরে সুখ দিয়ে থাকেন। কাজেই কতই না মহান তিনি! আমরা তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তাকে তার জননীর নিকট ফিরিয়ে দিলাম যাতে তার দ্বারা তার চক্ষু জুড়ায় এবং সে দুঃখ না করে, আর যেন বুঝতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সে যেন এটা বিশ্বাস করে নেয় যে, সে অবশ্যই নবী ও রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা মনের সুখে স্বীয় সন্তানের লালন-পালনে নিমগ্ন হলেন এবং এমনিভাবে তিনি লালিত-পালিত হলেন যেমনিভাবে একজন উচ্চমানের রাসূলকে লালন-পালন করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ তা'আলার নিপুণতা এবং তাঁর আনুগত্যের শুভ পরিণাম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে। তাই তো আল্লাহ পাক বলেনঃ কিন্তু মানুষই এটা জানে না। তারা শুধু বাহ্যিক লাভ-লোকসানের প্রতিই দৃষ্টি দিয়ে থাকে এবং দুনিয়ার প্রতিই আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে পরিত্যাগ করে। তারা এটা অনুধাবন করে না যে, যেটা তারা খারাপ মনে করছে সেটাই হয়তো তাদের জন্যে উত্তম। পক্ষান্তরে যেটাকে তারা। ভাল মনে করছে সেটাই হয়তো তাদের জন্যে খারাপ। তারা একটা কাজকে খারাপ মনে করছে, কিন্তু মহা ক্ষমতাবান আল্লাহ কি উপকার তাতে লুক্কায়িত রেখেছেন তার কোন খবরই তারা রাখে না।

وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَىٰ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

📘 Please check ayah 28:17 for complete tafsir.

وَدَخَلَ الْمَدِينَةَ عَلَىٰ حِينِ غَفْلَةٍ مِنْ أَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ هَٰذَا مِنْ شِيعَتِهِ وَهَٰذَا مِنْ عَدُوِّهِ ۖ فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِي مِنْ شِيعَتِهِ عَلَى الَّذِي مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيْهِ ۖ قَالَ هَٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّهُ عَدُوٌّ مُضِلٌّ مُبِينٌ

📘 Please check ayah 28:17 for complete tafsir.

قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 Please check ayah 28:17 for complete tafsir.

قَالَ رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِلْمُجْرِمِينَ

📘 ১৪-১৭ নং আয়াতের তাফসীর হযরত মূসা (আঃ)-এর বাল্যকালের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলা তার যৌবনের ঘটনা বর্ণনা করছেন যে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলেন অর্থাৎ তাকে নবুওয়াত দিলেন। সৎ লোকেরা এরূপই প্রতিদান পেয়ে থাকেন।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ ঐ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন যা তার মিসর ত্যাগের কারণ হয়েছিল। তিনি মিসর ছেড়ে মাদইয়ানের পথে যাত্রা শুরু করেন।ঘটনা এই যে, একদা হযরত মূসা (আঃ) নগরে বের হন মাগরিবের পরে অথবা যোহরের সময়, যখন জনগণ পানাহারে অথবা শয়নে লিপ্ত ছিল। তিনি বেশীদূর পথ অতিক্রম করেননি এমন সময় তিনি দেখতে পান যে, দু'টি লোক ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। একজন ছিল বানী ইসরাঈলের লোক এবং অপরজন ছিল কিবৃর্তীদের লোক। ইসরাঈলী তাঁর নিকট কিতীর অত্যাচারের অভিযোগ করে, যার ফলে তাঁর ক্রোধ এসে যায় এবং তিনি তাকে একটি ঘুষি মারেন। এতেই সে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। হযরত মূসা (আঃ) এতে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন এবং বলেনঃ “এটা শয়তানী কাজ এবং শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।” অতঃপর তিনি মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।এরপর হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না। এটা আমি ওয়াদা করলাম।”

فَأَصْبَحَ فِي الْمَدِينَةِ خَائِفًا يَتَرَقَّبُ فَإِذَا الَّذِي اسْتَنْصَرَهُ بِالْأَمْسِ يَسْتَصْرِخُهُ ۚ قَالَ لَهُ مُوسَىٰ إِنَّكَ لَغَوِيٌّ مُبِينٌ

📘 Please check ayah 28:19 for complete tafsir.

فَلَمَّا أَنْ أَرَادَ أَنْ يَبْطِشَ بِالَّذِي هُوَ عَدُوٌّ لَهُمَا قَالَ يَا مُوسَىٰ أَتُرِيدُ أَنْ تَقْتُلَنِي كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا بِالْأَمْسِ ۖ إِنْ تُرِيدُ إِلَّا أَنْ تَكُونَ جَبَّارًا فِي الْأَرْضِ وَمَا تُرِيدُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْمُصْلِحِينَ

📘 ১৮-১৯ নং আয়াতের তাফসীর হযরত মূসা (আঃ)-এর ঘুষিতে কিবতী মারা যায় এই কারণে তাঁর মনে ভয় ধরেছিল। তাই তিনি শহরে খুবই সতর্কতার সাথে চলাফেরা করছিলেন যে, দেখা যাক কি ঘটে! রহস্য খুলে তো যায়নি। পরের দিন আবার তিনি শহরে বের হলে দেখেন যে, গতকাল যে ইসরাঈলীকে তিনি কিন্তীর হাত হতে রক্ষা করেছিলেন সে আজ আর এক কিতীর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছে। তাঁকে দেখে আজকেও সে তাঁর নিকট ফরিয়াদ করে। তিনি তাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “তুমিই বড় দুষ্ট লোক।” তাঁর এ কথা শুনে সে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে। হযরত মূসা (আঃ) যখন ঐ যালিম কিবতীকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে তার দিকে হাত বাড়ান তখন ঐ ইসরাঈলী তার ইমি ও কাপুরুষতার কারণে মনে করে বসে যে, হযরত মূসা (আঃ) তাকে দুষ্ট বলেছেন, কাজেই তাকেই হয়তো তিনি ধরতে চাচ্ছেন। তাই সে নিজের প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে চীৎকার শুরু করে দেয় এবং তাকে লক্ষ্য করে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি গতকল্য যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাচ্ছেন?” গতকালকের ঘটনার সময় শুধু সেই উপস্থিত ছিল। এজন্যে এ পর্যন্ত কেউই জানতে পারেনি যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর দ্বারা এ কাজ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু আজ তার মুখে একথা শুনে কিনৃতী জানতে পারে যে, তিনিই এ কাজ করেছেন। ঐ ভীরু ইসরাঈলী এ কথাও তাঁকে বলেঃ “আপনি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছেন, শান্তি স্থাপন করতে আপনি চান না।” কিতী ঐ ইসরাঈলীকে ছেড়ে দিয়ে দৌড় দেয় এবং ফিরাউনের দরবারে পৌঁছে খবর দিয়ে দেয়। এ খবর শুনে ফিরাউন অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং হযরত মূসা (আঃ)-কে তাঁর নিকট ধরে আনার জন্যে পুলিশকে নির্দেশ দেয়।

تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ

📘 Please check ayah 28:6 for complete tafsir.

وَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَاخْرُجْ إِنِّي لَكَ مِنَ النَّاصِحِينَ

📘 এই আগন্তুককে (আরবি) বলা হয়েছে। আরবীতে পাকে (আরবি) বলা হয়। এ লোকটি যখন দেখলো যে, পুলিশ হযরত মূসা (আঃ)-এর পিছনে লেগে পড়েছে এবং তাঁকে ধরবার জন্যে বেরিয়ে গেছে তখন সে পায়ের ভরে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করে এবং কাছের পথ ধরে চলে অতি তাড়াতাড়ি হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছে গিয়ে তাকে এ খবর অবহিত করে। সে তাঁকে বলেঃ “পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করে ফেলার পরামর্শ করছে। সুতরাং তুমি এখান থেকে পালিয়ে যাও। আমি তো তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী। সুতরাং হে মূসা (আঃ)! আমার কথা মেনে নাও।”

فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ ۖ قَالَ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 28:24 for complete tafsir.

وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسَىٰ رَبِّي أَنْ يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ

📘 Please check ayah 28:24 for complete tafsir.

وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِنْ دُونِهِمُ امْرَأَتَيْنِ تَذُودَانِ ۖ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا ۖ قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّىٰ يُصْدِرَ الرِّعَاءُ ۖ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ

📘 Please check ayah 28:24 for complete tafsir.

فَسَقَىٰ لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّىٰ إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

📘 ২১-২৪ নং আয়াতের তাফসীর এই লোকটির মাধ্যমে হযরত মূসা (আঃ) যখন ফিরাউন ও তার লোকদের ষড়যন্ত্রের কথা অবহিত হন তখন তিনি অতি সন্তর্পণে একাকী সেখান থেকে পালিয়ে যান। ইতিপূর্বে তিনি রাজপুত্রদের মত জীবন যাপন করেছিলেন বলে এই সফর তাঁর কাছে খুবই কঠিন বোধ হয়। কিন্তু ভয় ও ত্রাসের কারণে তিনি এদিক ওদিক দেখছিলেন এবং সোজা পাড়ি দিচ্ছিলেন। আর তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি ফিরাউনের ও তার লোকদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করুন।” বর্ণিত আছে যে, হযরত মূসা (আঃ)-কে মিসরের পথ-প্রদর্শনের জন্যে আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন যিনি ঘোড়ায় চড়ে তাঁর নিকট আগমন করেন এবং তাঁকে পথ-প্রদর্শন করেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।অল্পক্ষণ পরেই তিনি বন-জঙ্গল ও মরুভূমি অতিক্রম করে মাদইয়ানের পথে পৌঁছে যান। এতে তিনি খুবই খুশী হন এবং বলে ওঠেনঃ “আমি মহান আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, তিনি আমাকে সঠিক পথে চালিত করবেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ আশাও পূরণ করেন এবং তাঁকে শুধু দুনিয়া ও আখিরাতের সঠিক পথ-প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং তাকে অন্যদের জন্যে সঠিক পথ-প্রদর্শকও বানালেন। মাদইয়ানের পার্শ্ববর্তী কূপের নিকট এসে তিনি দেখলেন যে, রাখালরা কুপ হতে পানি উঠিয়ে তাদের জন্তুগুলোকে পান করাচ্ছে। তিনি এটাও দেখতে পেলেন যে, দু’টি মহিলা তাদের বকরীগুলোকে ঐ জন্তুগুলোর সাথে পানি পান করানো হতে বিরত রয়েছে। তিনি যখন এ অবস্থা অবলোকন করলেন যে, মহিলাদ্বয় নিজেরাও তাদের বকরীগুলোকে পানি পান করাতে পারছে না এবং ঐ রাখালরাও তাদের জানোয়ারগুলোর সাথে ঐ বকরীগুলোকে পানি পান করানোর কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না তখন তার মনে করুণার উদ্রেক হলো। তাই তিনি মহিলা দুটিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা তোমাদের এ বকরীগুলোকে পানি পান করানো হতে বিরত থাকছো কেন?” তারা উত্তরে বললোঃ “আমরা বকরীগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না রাখালরা তাদের জানোয়াগুলোকে নিয়ে সরে যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ।” তাদের একথা শুনে তিনি নিজেই পানি উঠিয়ে তাদের বকরীগুলোকে পান করালেন।হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন যে, রাখালরা একটি বিরাট পাথর দ্বারা ঐ কূপটির মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল যা দশজন লোক মিলে সরাতে পারতো। অথচ হযরত মূসা (আঃ) একাকী ঐ পাথরটি সরিয়ে ফেলেন। তিনি মাত্র এক বালতি পানি উঠিয়েছিলেন যাতে মহান আল্লাহ বরকত দান করেছিলেন, ফলে ঐ মহিলাদ্বয়ের বকরীগুলো ঐ পানি পান করেই পরিতৃপ্ত হয়েছিল। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) ক্লান্ত শ্রান্ত এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় একটি গাছের ছায়ার নীচে বসে পড়েন। মিসর হতে মাদইয়ান পর্যন্ত তিনি দৌড়িয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। তাই তাঁর পায়ে ফোসকা উঠে গিয়েছিল। খাওয়ার কোন দ্রব্য তাঁর সাথে ছিল না। গাছের পাতা, ঘাস ইত্যাদি তিনি ভক্ষণ করে আসছিলেন। পেট পিঠের সাথে লেগে গিয়েছিল। ঐ সময় তিনি আধখানা খেজুরেরও মুখাপেক্ষী ছিলেন। অথচ সেই সময় সমস্ত সৃষ্টজীবের মধ্যে তিনিই ছিলেন আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও মনোনীত বান্দা! হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “দুই দিনের সফর শেষে আমি মাদইয়ানে পৌঁছি। আমি জনগণকে ঐ গাছের পরিচয় জানতে চাই যে গাছের ছায়ায় হযরত মূসা (আঃ) আশ্রয় নিয়েছিলেন। জনগণ আমাকে গাছটি দেখিয়ে দেয়। আমি দেখি যে, ওটা একটি সবুজ-শ্যামল বৃক্ষ। আমার আরোহণের পশুটি ক্ষুধার্ত ছিল। তাই সে ঐ গাছের পাতা মুখ দ্বারা ছিড়ে নেয় এবং অতি কষ্টে চিবাতে থাকে। কিন্তু শেষে সে পাতা মুখ হতে বের করে ফেলে। দেয়। আমি হযরত কালীমুল্লাহ (আঃ)-এর দু'আ করে সেখান হতে ফিরে আসি।”অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ঐ গাছটি দেখতে গিয়েছিলেন যেখান থেকে আল্লাহ তা'আলা হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছিলেন। এর বর্ণনা সত্ত্বরই আসবে ইনশাআল্লাহ!সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ওটা ছিল বাবলার গাছ। মোটকথা, হযরত মূসা (আঃ) ঐ গাছের ছায়ায় বসে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তার মুখাপেক্ষী।” হযরত আতা (রঃ) বলেন যে, ঐ মহিলাটিও তাঁর এ প্রার্থনা শুনেছিল।

فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا ۚ فَلَمَّا جَاءَهُ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ ۖ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 28:28 for complete tafsir.

قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ ۖ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ

📘 Please check ayah 28:28 for complete tafsir.

قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلَىٰ أَنْ تَأْجُرَنِي ثَمَانِيَ حِجَجٍ ۖ فَإِنْ أَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِنْدِكَ ۖ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أَشُقَّ عَلَيْكَ ۚ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ

📘 Please check ayah 28:28 for complete tafsir.

قَالَ ذَٰلِكَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ ۖ أَيَّمَا الْأَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّ ۖ وَاللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ

📘 ২৫-২৮ নং আয়াতের তাফসীর এই মেয়ে দু’টির বকরীগুলোকে যখন হযরত মূসা (আঃ) পানি পান করিয়ে দিলেন তখন তারা তাদের বকরীগুলো নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল। তাদের পিতা যখন দেখলেন যে, তাঁর মেয়েরা সময়ের পূর্বেই ঐদিন বাড়ীতে ফিরে গেছে তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ব্যাপার কি?” তারা উত্তরে সত্যভাবে ঘটনাটি বলে দিলো। তিনি তৎক্ষণাৎ তাদের একজনকে পাঠিয়ে দিলেন হযরত মূসা (আঃ)-কে ডেকে আনতে। মেয়েটি হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলো। সে আসলো সতী-সাধ্বী মেয়েরা যেভাবে পথে চলে সেই ভাবে। অর্থাৎ সে আসলো অত্যন্ত লজ্জাজড়িত চরণে চাদর দ্বারা সারা দেহ আবৃত করে। মুখমণ্ডলও সে চাদরের অঞ্চল দ্বারা ঢেকে রেখেছিল। অতঃপর তার সত্যবাদিতা ও বুদ্ধিমত্তায় বিস্মিত হতে হয় যে, সে আমার পিতা তোমাকে ডাকছেন’ একথা বললো না। কেননা, এতে সন্দেহের অবকাশ ছিল। বরং সে পরিষ্কারভাবে বললোঃ “আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্যে আমার পিতা তোমাকে ডাকছেন।" হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ) ছিলেন ক্ষুধার্ত ও অসহায়, তাই তিনি এই সুযোগকে গনীমত মনে করলেন। তার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে একজন সদাশয় ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি মনে করে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে তার কাছে তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। তাঁর ঘটনা শুনে নারীদ্বয়ের পিতা তাঁকে সহানুভূতির সুরে বললেনঃ “তোমার আর কোন ভয় নেই। ঐ অত্যাচারীদের কবল হতে তুমি রক্ষা পেয়ে গেছ। এখানে তাদের কোন শাসন কর্তৃত্ব নেই।" কোন কোন তাফসীরকার বলেন যে, এই সম্ভ্রান্ত লোকটি ছিলেন হযরত শুআ’য়েব (আঃ), যিনি মাদইয়ানবাসীর নিকট আল্লাহর নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। প্রসিদ্ধ উক্তিও এটাই বটে। ইমাম হাসান বসরী (রঃ) এবং আরো বহু আলেম একথাই বলেছেন।ইমাম তিবরানী বর্ণনা করেছেন যে, হযরত সালমা ইবনে সা’দ আলগুযযা (রাঃ) স্বীয় কওমের পক্ষ হতে দূতরূপে রাসূলুল্লাহর দরবারে হাযির হলে তিনি বলেনঃ “হযরত শুআ’য়েব (আঃ)-এর গোত্রীয় লোক এবং হযরত মূসা (আঃ)-এর শ্বশুর গোষ্ঠীর লোকের আগমন শুভ হোক! তোমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, তিনি ছিলেন হযরত শুআ'য়েব (আঃ)-এর ভ্রাতপুত্র। আবার অন্য কেউ বলেন যে, তিনি হযরত শুআ’য়েব (আঃ)-এর কওমের একজন মুমিন লোক ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, হযরত শুআ’য়েব (আঃ)-এর যুগ তো হযরত মূসা (আঃ)-এর যুগের বহু পূর্বের যুগ। কুরআন কারীমে তাঁর কওমের সামনে তাঁর উক্তি বর্ণিত হয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “হযরত লূত (আঃ)-এর কওম তোমাদের থেকে খুব দূরের নয়।” (১১:৮৯) আর কুরআন কারীম দ্বারা এটাও প্রমাণিত যে, হযরত নূত (আঃ)-এর কওম হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর যুগেই ধ্বংস হয়েছিল। আর এটা খুবই স্পষ্ট কথা যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-এর যুগের মধ্যে খুবই দীর্ঘদিনের ব্যবধান ছিল। অর্থাৎ প্রায় চারশ' বছরের ব্যবধান, যেমন অধিকাংশ ঐতিহাসিকের উক্তি রয়েছে। হ্যা, তবে কেউ কেউ এই কঠিন ব্যাপারের উত্তর এই দিয়েছেন যে, হযরত শুআ’য়েব (আঃ) দীর্ঘায়ু লাভ করেছিলেন। সম্ভবতঃ এই আপত্তিকর কথা হতে রক্ষা পাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এটাও খেয়াল করা এখানে দরকার যে, যদি এই সম্ভ্রান্ত লোকটি হযরত শুআ’য়েবই (আঃ) হতেন তবে অবশ্যই কুরআন কারীমে এই স্থলে তাঁর নাম পরিস্কারভাবে নেয়া হতো। হাঁ, তবে কোন হাদীসে এসেছে যে, তিনি হযরত শুআ’য়েব (আঃ) ছিলেন। কিন্তু এ হাদীসগুলোর সনদ বিশুদ্ধ নয়। সরই আমরা ওগুলো আনয়ন করবো ইনশাআল্লাহ। বানী ইসরাঈলের কিতাবগুলোতে তার নাম শীরূন বলা হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর পুত্র বলেন যে, শীরূন হযরত শুআ’য়েব (আঃ)-এর ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইয়াসরাবী ছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, একথা ঐ সময় সাব্যস্ত হতো যখন এ ব্যাপারে কোন খবর বর্ণিত হতো এবং এরূপ হয়নি।ঐ মেয়ে দুটির মধ্যে যে মেয়েটি হযরত মূসা (আঃ)-কে ডাকতে গিয়েছিল সে পিতাকে সম্বোধন করে বললোঃ “হে পিতা! আপনি এ লোকটিকে আমাদের বরী চরানোর কাজে নিযুক্ত করুন! কেননা, উত্তমরূপে কাজ সে-ই করতে পারে যে হয় শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।” পিতা তখন মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আমার প্রিয় কন্যা! তার মধ্যে যে এ দু’টি গুণ রয়েছে তা তুমি কি করে জানতে পারলে?” উত্তরে মেয়েটি বললোঃ “দশটি শক্তিশালী লোক মিলিতভাবে কূপের মুখের যে পাথরটি সরাতে সক্ষম হতো তা সে একাকী সরিয়ে ফেলেছে। এর দ্বারা অতি সহজেই তার শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। আর তার বিশ্বস্ততার পরিচয় আমি এইভাবে পেয়েছি যে, তাকে সাথে নিয়ে যখন আমি আপনার নিকট আসতে শুরু করি তখন সে পথ চিনে না বলে আমি আগে হই। সে তখন আমাকে বলেঃ “না, না, তুমি আমার পিছনে থাকে। যখন পথ পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে তখন ঐ দিকে তুমি একটি কংকর ছুঁড়ে ফেলবে। তাহলেই আমি বুঝতে পারবো যে, ঐ পথে আমাকে চলতে হবে।”হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তিন ব্যক্তির মত বোধশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা আর কারো মধ্যে পাওয়া যায়নি। তারা হলেনঃ (১) হযরত আবু বকর (রাঃ), তার বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় এই যে, তিনি খিলাফতের জন্যে হযরত উমার (রাঃ)-কে মনোনীত করেন। (২) মিসরের অধিবাসী হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ক্রেতা, যিনি প্রথম দৃষ্টিতেই হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মর্যাদা বুঝে নেন এবং তাঁকে বাড়ী নিয়ে গিয়ে স্বীয় স্ত্রীকে বলেনঃ “সম্মানজনকভাবে এর থাকবার ব্যবস্থা করো।” আর (৩) এই মর্যাদা সম্পন্ন ও সম্রান্ত লোকটির কন্যা, যে হযরত মূসা (আঃ)-কে তাদের কাজে নিয়োগ করার জন্যে তার পিতার নিকট সুপারিশ করেছিল।”মেয়ের কথা শোনা মাত্রই তার পিতা হযরত মূসা (আঃ)-কে বললেনঃ “আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই। এই শর্তে যে, তুমি আট বছর পর্যন্ত আমার বকরী চরাবে।” মেয়ে দু’টির নাম ছিল সাফুরইয়া এবং লিয়া। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, তাদের দুজনের নাম ছিল সাফুরইয়া ও শারফা এবং শারফাকে লিয়া বলা হতো।ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর অনুসারীগণ এ থেকেই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, যদি কোন লোক বলেঃ “আমি এই গোলাম দুটির মধ্যে একটিকে একশ’র বিনিময়ে বিক্রী করলাম এবং ক্রেতা তা স্বীকার করে নেয় তবে এই ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ঐ সম্ভ্রান্ত লোকটি আরো বললেনঃ “যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর তবে সেটা তোমার ইচ্ছা। এটা তোমার জন্যে অবশ্যকরণীয় নয়। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনে। আল্লাহ চাইলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।” ইমাম আওযায়ী (রঃ) এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, যদি কেউ বলেঃ “আমি অমুক জিনিস নগদে দশে এবং বাকীতে বিশে বিক্রী করছি। তবে এই বেচা-কেনা শুদ্ধ হবে। আর ক্রেতার এটা ইচ্ছাধীন থাকবে যে, সে ওটা নগদে দশে কিনবে অথবা বাকীতে বিশে কিনবে। তিনি ঐ হাদীসটিরও এই ভাবার্থ নিয়েছেন যাতে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি এক বেচা-কেনায় দু’টি বেচা-কেনা করবে তার জন্যে কমেরটার বেচা-কেনা হবে অথবা সুদ হবে। কিন্তু এ মাযহাবটির ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। যার বিস্তারিত বর্ণনার জায়গা এটা নয়। এসব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর অনুসারীরা এ আয়াতটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে বলেছেন যে, পানাহার ও কাপড়ের উপর কাউকেও মজুরী ও কাজে লাগানো জায়েয। এর দলীল হিসেবে সুনানে ইবনে মাজাহ্র একটি হাদীসও রয়েছে। ওটা এই ব্যাপারে যে, কোন মজুরের মজুরী এটা নির্ধারণ করা যে, সে পেটপুরে আহার করবে। এ ব্যাপারে একটি হাদীস আনয়ন করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরায়ে তোয়া-সীন পাঠ করেন। যখন তিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর বর্ণনা পর্যন্ত পৌঁছেন তখন বলেনঃ “হযরত মূসা (আঃ) নিজের পেট পূর্ণ করা ও নিজের লজ্জাস্থানকে আবৃত করার জন্যে আট বছর বা দশ বছরের জন্যে নিজেকে চাকুরীতে নিয়োগ করেছিলেন।” এই সনদে এ হাদীসটি দুর্বল। কেননা এর একজন বর্ণনাকারী হলেন মাসলামা ইবনে আলী আল খুশানী আদৃ দিমাশকী। তিনি বর্ণনাকারী হিসেবে দুর্বল। অন্য সনদেও এটা বর্ণিত আছে কিন্তু ওটাও সন্দেহমুক্ত নয়।হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ) ঐ মহানুভব ব্যক্তির ঐ শর্ত ককূল করে নেন এবং তাঁকে বলেনঃ “আপনার ও আমার মধ্যে এই চুক্তিই রইলো। এ দুটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী।” যদিও দশ বছর পূর্ণ করা আইনানুমোদিত কিন্তু ওটা অতিরিক্ত বিষয়, জরুরী নয়। জরুরী হলো আট বছর। যেমন মিনার শেষ দুই দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ রয়েছে। আর হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হামযা ইবনে আমর আসলামী (রাঃ)-কে সফরে রোযা রাখা সম্পর্কে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন এবং তিনি অধিকাংশ দিন রোযা রাখতেনঃ “সফরে রোযা রাখা ও না রাখা তোমার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা করলে রাখবে, না করলে না রাখবে।” যদিও অন্য দলীল দ্বারা রোযা রাখাই উত্তম। এখানেও এই দলীলই রয়েছে যে, হযরত মূসা (আঃ) দশ বছরই পূর্ণ করেছিলেন।হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হীরাবাসী এক ইয়াহুদী আমাকে জিজ্ঞেস করেঃ “হযরত মূসা (আঃ) আট বছর পূর্ণ করেছিলেন, দশ বছর?” আমি উত্তরে বলিঃ এটা আমার জানা নেই। অতঃপর আমি আরবের খুবই বড় আলেম হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গমন করি এবং তাকে এটা জিজ্ঞেস করি। তিনি জবাবে বলেনঃ “এ দুটোর মধ্যে যেটা। বেশী ও পবিত্র মেয়াদ সেটাই তিনি পূর্ণ করেন অর্থাৎ তিনি দশ বছর পূর্ণ করেন। আল্লাহর রাসূল যা বলেন তাই করে থাকেন।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে ফুতুনে রয়েছে যে, ঐ প্রশ্নকারী লোকটি খৃষ্টান ছিল। কিন্তু সহীহ বুখারীতে যা রয়েছে ওটাই বেশী। গ্রহণযোগ্য। এসব ব্যাপার আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমি হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করিঃ হযরত মূসা (আঃ) কোন্ সময় পূর্ণ করেছিলেন? উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “ঐ দুই সময়ের মধ্যে যেটা ছিল পরিপূর্ণ ঐ সময়ই তিনি পূর্ণ করেছিলেন।” (এ হাদীসটি ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)একটি মুরসাল হাদীসে আছে যে, কোন একজন লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এটা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেন হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেন অন্য ফেরেশতাকে, অন্য ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেন আল্লাহ তা'আলাকে এবং আল্লাহ তা'আলা জবাবে বলেনঃ “দুই সময়ের মধ্যে পবিত্র ও পূর্ণতম সময় তিনি পূর্ণ করেছিলেন অর্থাৎ দশ বছর।” একটি হাদীসে রয়েছে যে, হযরত আবু যার (রাঃ)-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ) দশ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন। এর পর তিনি একথাও বলেনঃ “যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, মেয়ে দু’টির মধ্যে কোন মেয়েটিকে হযরত মূসা (আঃ) বিয়ে করেছিলেন? তবে তুমি জবাবে বলবেঃ মেয়ে দুটির মধ্যে যে ছোট ছিল তাকেই তিনি বিয়ে করেছিলেন।”অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দীর্ঘ মেয়াদটি পূর্ণ করার কথা বলার পরে বলেন, যখন হযরত মূসা (আঃ) হযরত শুআয়েব (আঃ)-এর নিকট হতে বিদায় গ্রহণ করতে উদ্যত হন তখন স্বীয় স্ত্রীকে বলেনঃ “তোমার আব্বার নিকট হতে কিছু বকরী নিয়ে নাও, যেগুলো দ্বারা আমাদের জীবিকা নির্বাহ হবে।” তাঁর স্ত্রী তখন তার পিতার নিকট কিছু বকরীর আবেদন করেন। তাঁর পিতা ওয়াদা করেন যে, ঐ বছর যতগুলো সাদা-কালো মিশ্রিত বকরীর জন্ম হবে সবই তিনি তাদেরকে দিয়ে দিবেন। হযরত মূসা (আঃ) বকরীগুলোর পেটের উপর দিয়ে স্বীয় লাঠিখানা চালিয়ে দিলেন এবং এর ফলে প্রত্যেকটি বকরী দু'টি করে ও তিনটি করে বাচ্চা প্রসব করলো। আর সবগুলোই হলো সাদা-কালো রঙ মিশ্রিত ওগুলোর বংশ এখনও খোঁজ করলে পাওয়া যেতে পারে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত শুআ’য়েব (আঃ)-এর সমস্ত বকরী ছিল কারো রঙ এর এবং খুবই সুন্দর। ঐ বছর তার যতগুলো বীর জন্ম হয় সবই হয় খুৎবিহীন, বড় বড় স্তন বিশিষ্ট এবং বেশী দুধদানকারী। এই সমুদয় রিওয়াইয়াত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-এর উপর নির্ভরশীল, যার। স্মরণশক্তি তেমন প্রখর ছিল না এবং এগুলো মার’ না হওয়ারও আশংকা রয়েছে। যেহেতু অন্য সনদে এটা হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে মাওকূফ রূপে বর্ণিত আছে, তাতে এও রয়েছে যে, ঐ বছর একটি বকরী ছাড়া সমস্ত বকরীর বাচ্চাই হয়েছিল সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ-এর, যেগুলোর সবই হযরত মূসা (আঃ) নিয়ে গিয়েছিলেন।

۞ فَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِنْ جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَعَلِّي آتِيكُمْ مِنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ

📘 Please check ayah 28:32 for complete tafsir.

نَتْلُو عَلَيْكَ مِنْ نَبَإِ مُوسَىٰ وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 28:6 for complete tafsir.

فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَنْ يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

📘 Please check ayah 28:32 for complete tafsir.

وَأَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَلَمَّا رَآهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ وَلَّىٰ مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ ۚ يَا مُوسَىٰ أَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ ۖ إِنَّكَ مِنَ الْآمِنِينَ

📘 Please check ayah 28:32 for complete tafsir.

اسْلُكْ يَدَكَ فِي جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَاءَ مِنْ غَيْرِ سُوءٍ وَاضْمُمْ إِلَيْكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهْبِ ۖ فَذَانِكَ بُرْهَانَانِ مِنْ رَبِّكَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ

📘 ২৯-৩২ নং আয়াতের তাফসীর পূর্বেই এটা বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মূসা (আঃ) দশ বছর পূর্ণ করেছিলেন। কুরআন কারীমের (আরবি) শব্দের দ্বারাও ঐদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত মুজাহিদ (রঃ) তো বলেন যে, এই দশ বছর এবং আরো দশ বছর তিনি পূর্ণ করেছিলেন। কুরআন কারীমের শব্দ দ্বারা আমরা এই দশ বছরই বুঝছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। হযরত মূসা (আঃ)-এর মনে খেয়াল ও আগ্রহ জাগে যে, তিনি চুপে চুপে স্বদেশে চলে যাবেন এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হবেন। তাই তিনি স্বীয় স্ত্রী ও নিজের বকরীগুলো সাথে নিয়ে মাদইয়ান হতে মিসরের পথে যাত্রা শুরু করেন। রাত্রে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয় এবং ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে। চতুর্দিক অন্ধকারে ছেয়ে যায়। তিনি বারবার প্রদীপ জ্বালানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কোনক্রমেই আলো জ্বালাতে পারলেন না। তিনি খুবই বিস্মিত ও হতবাক হয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে তিনি কিছু দূরে আগুন জ্বলতে দেখতে পেলেন। তাই তিনি স্বীয় পরিজনকে বললেনঃ “তোমরা এখানে অপেক্ষা কর। ওখানে আগুন জুলতে দেখা যাচ্ছে। আমি ওখানে যাচ্ছি। সেখানে যদি কেউ থেকে থাকে তবে আমি তার কাছে রাস্তা জেনে নেবো, যেহেতু আমরা পথ ভুল করেছি এবং সেখান হতে কিছু আগুন নিয়ে আসবো যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।”যখন তিনি সেখানে পৌঁছেন তখন ঐ উপত্যকার ডান দিকের পশ্চিমা পাহাড় হতে শব্দ শুনতে পান। যেমন কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) (২৮: ৪৪)-এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, হযরত মূসা (আঃ) আগুনের উদ্দেশ্যে কিবলার দিকে গিয়েছিলেন এবং মাগরীবের পাহাড়টি তাঁর ডান দিকে ছিল। এক সবুজ-শ্যামল গাছে আগুন দেখা যাচ্ছিল। যা পাহাড় সংলগ্ন মাঠে অবস্থিত ছিল। তিনি সেখানে গিয়ে এ অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন যে, সবুজ-শ্যামল গাছ হতে অগ্নিশিখা বের হচ্ছে! অথচ কোন জিনিসে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না।!হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ “হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট যে গাছ হতে শব্দ এসেছিল আমি ঐ গাছটি দেখেছি। ওটা ডালে-পাতায় ভরা সবুজ-শ্যামল গাছ। গাছটি উজ্জ্বলতায় ঝলমল করছিল।” কেউ কেউ বলেন যে, ওটা আওসাজ বৃক্ষ। তাঁর লাঠিও ঐ গাছেরই ছিল। হযরত মূসা (আঃ) শুনতে পেলেন যে, শব্দ আসছেঃ “হে মূসা (আঃ)! আমিই আল্লাহ, জগতসমূহের প্রতিপালক। আমি যা ইচ্ছা করি তাই করতে পারি। আমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আমি ব্যতীত প্রতিপালকও কেউ নেই। আমি এক ও অদ্বিতীয়। আমি অতুলনীয়। আমার কোন অংশীদার নেই। আমার সত্তায়, আমার গুণাবলীতে, আমার কাজে এবং আমার কথায় আমার কোন শরীক ও সঙ্গী-সাথী নেই। সর্বদিক দিয়েই আমি পবিত্র। আমার কোন লয় ও ক্ষয় নেই।” এই শব্দে তাঁকে আরো বলা হলোঃ “তুমি তোমার যষ্টিটি নিক্ষেপ কর এবং আমার ক্ষমতা তুমি স্বচক্ষে দেখে নাও।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে মূসা (আঃ)! তোমার দক্ষিণ হস্তে ওটা কি? সে বললোঃ ওটা আমার লাঠি; আমি এতে ভর দিই এবং এটা দ্বারা আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ফেলে থাকি এবং এটা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে।” (২০১৭-১৮) অর্থ হলো এই যে, তোমার যে লাঠিটি তুমি চেনো, অর্থাৎ তুমি ওটাকে নিক্ষেপ কর।'(আরবি) অর্থাৎ “অতঃপর ওটা নিক্ষেপ করলো, সাথে সাথে ওটা সাপ হয়ে ছুটতে লাগলো।” (২০:২০) এটা ঐ বিষয়েরই প্রমাণ ছিল যে, শব্দকারী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলাই বটে। যিনি ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যে জিনিসকে যা বলে দেন তা টুলবার নয়। সূরায়ে তোয়া-হা-এর তাফসীরে এর বর্ণনা গত হয়েছে।এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যখন সে ওকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখলো তখন পিছনের দিকে ছুটতে লাগলো এবং পিছনের দিকে ফিরেও তাকালো না। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শব্দ আসলোঃ “হে মূসা (আঃ)! সামনে এসো, ভয় করো না; তুমি তো নিরাপদ। এ শব্দ শুনে হযরত মূসা (আঃ)-এর ভয় কেটে গেল। তিনি নির্ভয়ে শান্তভাবে নিজের স্থানে এসে আদবের সাথে দাড়িয়ে গেলেন। এই মু'জিযা দান করার পর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বলেনঃ “তোমার হাত তোমার বগলে রাখো, এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র সমুজ্জ্বল নিদোষ হয়ে।” এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ‘ভয় দূর করবার জন্যে তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চেপে ধর। যে ব্যক্তি ভয় ও সন্ত্রাসের সময় আল্লাহর এই নির্দেশ অনুযায়ী স্বীয় হাতখানা বুকের উপর রাখবে, ইনশাআল্লাহ তার ভয় দূর হয়ে যাবে।হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, প্রথম প্রথম হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে। খুব ভয় করতেন। যখন তিনি তাকে দেখতেন তখন নিম্নের দু'আটি পাঠ করতেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনাকে তার মুকাবিলায় রাখছি এবং তার অনিষ্ট হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” তখন আল্লাহ তাআলা তার অন্তর হতে ফিরাউনের ভয় দূর করে দেন এবং ফিরাউনের অন্তরে তার ভয় প্রবেশ করিয়ে দেন। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, যখনই ফিরাউন হযরত মূসা (আঃ)-কে দেখতে তখনই গাধার মত সে প্রস্রাব করে ফেলতো।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে বলেনঃ এ দুটি মু'জিযা অর্থাৎ লাঠি ও উজ্জ্বল হাত নিয়ে ফিরাউন ও তার লোকদের নিকট গমন কর এবং দলীল হিসেবে তার সামনে এ মু'জিযাগুলো পেশ কর এবং ঐ পাপাচারদেরকে আল্লাহর পথ প্রদর্শন কর।

قَالَ رَبِّ إِنِّي قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَأَخَافُ أَنْ يَقْتُلُونِ

📘 Please check ayah 28:35 for complete tafsir.

وَأَخِي هَارُونُ هُوَ أَفْصَحُ مِنِّي لِسَانًا فَأَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُصَدِّقُنِي ۖ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُكَذِّبُونِ

📘 Please check ayah 28:35 for complete tafsir.

قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ بِأَخِيكَ وَنَجْعَلُ لَكُمَا سُلْطَانًا فَلَا يَصِلُونَ إِلَيْكُمَا ۚ بِآيَاتِنَا أَنْتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الْغَالِبُونَ

📘 ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর এটা গত হয়েছে যে, হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের ভয়ে তার শহর হতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁকে সেখানে তারই কাছে নবীরূপে যেতে বললেন তখন তার সব কিছু স্মরণ হয়ে গেল এবং তিনি আরজ করলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমার ভয় হচ্ছে যে, না জানি হয় তো তার প্রতিশোধ হিসেবে তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে।শৈশবে হযরত মূসা (আঃ)-এর পরীক্ষার জন্যে তাঁর সামনে একখণ্ড জ্বলন্ত অগ্নিকাষ্ঠ এবং একটি খেজুর বা মুক্তা রাখা হয়েছিল। তখন তিনি অগ্নিকাষ্ঠ ধরে নিয়েছিলেন এবং মুখে পুরে দিয়েছিলেন। এ কারণে তাঁর যবানে কিছুটা তোতলামি এসে গিয়েছিল। আর এ কারণেই তিনি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আমার জন্যে করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে; আমার ভ্রাতা হারূনকে; তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কর্মে অংশী করুন।” (২০:২৭-৩২) এখানেও তার অনুরূপ প্রার্থনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি প্রার্থনা করেনঃ “আমার ভ্রাতা হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। সুতরাং হারূন (আঃ) আমার সাথে থাকলে সে আমার কথা জনগণকে বুঝিয়ে দেবে।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে জবাবে বললেনঃ “আমি তোমার দু'আ। ককূল করলাম। তোমার ভ্রাতার দ্বারা আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করবো এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করবো। অর্থাৎ তাকেও তোমার সাথে নবী বানিয়ে দেবো।” যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে মূসা (আঃ)! তুমি যা চেয়েছে তা তোমাকে দেয়া হলো।” (২০ ৩৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে নবীরূপে।” (১৯:৫৩) এ জন্যেই পূর্ব যুগীয় কোন কোন গুরুজন বলেছেনঃ “কোন ভাই তার ভাই এর উপর ঐরূপ অনুগ্রহ করেনি যেরূপ অনুগ্রহ করেছিলেন হযরত মূসা (আঃ) তাঁর ভাই হারূন (আঃ)-এর উপর। তিনি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করে তাকে নবী বানিয়ে নিয়েছিলেন। হযরত মূসা (আঃ) যে একজন বড় মর্যাদা সম্পন্ন নবী ছিলেন তার এটাই বড় প্রমাণ যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ দু'আও প্রত্যাখ্যান করেননি। বাস্তবিকই তিনি আল্লাহ তা'আলার নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আমি তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করবো। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছতে পারবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শন বলে তাদের উপর প্রবল হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয় তা তুমি (জনগণের নিকট পৌঁছিয়ে দাও...... আল্লাহ তোমাকে লোকদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন।” (৫:৬৭) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা আল্লাহর রিসালাত পৌঁছিয়ে দেয় ..... এবং হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (৩৩:৩৯) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনঃ আমি ও আমার রাসূলরা অবশ্যই জয়যুক্ত হবো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাবান, মহাপ্রতাপশালী।” (৫৮:২১) আর এক আয়াতে বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের ও মুমিনদেরকে সাহায্য করবো পার্থিব জীবনে (শেষপর্যন্ত)।” (৪০:৫১)ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর মতে আয়াতটির ভাবার্থ হলো: “আমার প্রদত্ত প্রাধান্য দানের কারণে ফিরাউন ও তার লোকেরা তোমাদেরকে কষ্ট দিতে সক্ষম। হবে না এবং আমার প্রদত্ত নিদর্শন বলে বিজয় শুধু তোমরাই লাভ করবে। কিন্তু পূর্বে যে অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে তার দ্বারাও এটাই সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এই ভাবার্থের কোন প্রয়োজনই নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

فَلَمَّا جَاءَهُمْ مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوا مَا هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُفْتَرًى وَمَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ

📘 Please check ayah 28:37 for complete tafsir.

وَقَالَ مُوسَىٰ رَبِّي أَعْلَمُ بِمَنْ جَاءَ بِالْهُدَىٰ مِنْ عِنْدِهِ وَمَنْ تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۖ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ

📘 ৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর হযরত মূসা (আঃ) নবুওয়াত রূপ উপহার লাভ করে এবং আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে মিসরে গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফিরাউন ও তার লোকদের সামনে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তার রিসালাতের ঘোষণা দেন এবং তাঁকে প্রদত্ত মু'জিযাগুলো তাদেরকে প্রদর্শন করেন। ফিরাউনসহ সবারই এ দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর নবী। কিন্তু সে যুগ যুগ ধরে যে অহংকার করে আসছিল তা এবং তার পুরাতন কুফরী মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তাই অন্তরের বিশ্বাসকে গোপন রেখে সে মুখে বলতে শুরু করলো: “এটা তো যাদু ছাড়া কিছুই নয়।” অতঃপর সে স্বীয় দবদবাও শক্তির দাপট দেখিয়ে সত্যের বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগে গেল এবং আল্লাহর নবী (আঃ)-এর সামনে বললো : “আমরা তো কখনো শুনিনি যে, আল্লাহ এক। শুধু আমরা কেন? আমাদের পূর্বপুরুষরাও কখনো এরূপ কথা শুনেনি। আমরা বড়, ছোট সবাই বহু খোদার উপাসনা করে আসছি। এই নবী কোথা হতে এই নতুন কথা নিয়ে এসেছে?” উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “আমাকে ও তোমাদেরকে আল্লাহ খুব ভাল রূপেই অবগত আছেন। তিনিই আমার ও তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন যে, কে সঠিক পথের উপর রয়েছে এবং আখিরাতে কার পরিণাম শুভ হবে। আল্লাহর সাহায্য কার সাথে রয়েছে তা তোমরা সত্বরই জানতে পারবে। যালিম অর্থাৎ মুশরিকদের পরিণাম কখনো শুভ হয় না। সুতরাং তারা সফলকাম হবে না।

وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرِي فَأَوْقِدْ لِي يَا هَامَانُ عَلَى الطِّينِ فَاجْعَلْ لِي صَرْحًا لَعَلِّي أَطَّلِعُ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ مِنَ الْكَاذِبِينَ

📘 Please check ayah 28:42 for complete tafsir.

وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ

📘 Please check ayah 28:42 for complete tafsir.

إِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِي الْأَرْضِ وَجَعَلَ أَهْلَهَا شِيَعًا يَسْتَضْعِفُ طَائِفَةً مِنْهُمْ يُذَبِّحُ أَبْنَاءَهُمْ وَيَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ

📘 Please check ayah 28:6 for complete tafsir.

فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 28:42 for complete tafsir.

وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُونَ

📘 Please check ayah 28:42 for complete tafsir.

وَأَتْبَعْنَاهُمْ فِي هَٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُمْ مِنَ الْمَقْبُوحِينَ

📘 ৩৮-৪২ নং আয়াতের তাফসীর এখানে ফিরাউনের ঔদ্ধত্যপনা এবং তার খোদায়ী দাবীর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যে, সে তার কওমকে নির্বোধ বানিয়ে তাদের দ্বারা তার দাবী আদায় করে। সে ঐ ইতর ও অজ্ঞদেরকে একত্রিত করে উচ্চস্বরে বলেঃ “তোমাদের রব, বা প্রতিপালক আমিই। সবচেয়ে উচ্চ ও উন্নত অস্তিত্ব আমারই।” তার এই ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তিতে পাকড়াও করেন। আর অন্যান্যদের জন্যে এটাকে শিক্ষণীয় বিষয় করেন। ঐ ইতর লোকেরা তাকে খোদা মেনে নিয়ে তার দম্ভ এত বাড়িয়ে দিয়েছিল যে, সে কালীমুল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে ধমকের সুরে বলেছিলঃ “তুমি যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকেও মাবুদ বানিয়ে নাও তবে আমি তোমাকে কয়েদখানায় বন্দী করবো।” সে ঐ নিম্নস্তরের লোকদের মধ্যে বসে তাদের দ্বারা নিজের দাবী পূরণ করে নিয়ে তারই মত ম্লেচ্ছ উযীর হামানকে বললো: “হে হামান! তুমি আমার জন্যে ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর; যেন আমি তাতে উঠে দেখতে পারি যে, সত্যি মূসা (আঃ)-এর কোন মা'বুদ আছে কি না। সে যে প্রতারক এটা তো আমার নিকট পরিষ্কার, কিন্তু আমি চাই যে, সে যে মিথ্যাবাদী এটা যেন তোমাদের সবারই নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “ফিরাউন বললো: হে হামান! আমার জন্যে তুমি নির্মাণ কর এক সুউচ্চ প্রাসাদ যাতে আমি পাই অবলম্বন-আসমানে আরোহণের অবলম্বন, যেন দেখতে পাই মূসা (আঃ)-এর মা'বুদকে; তবে তাকে তো আমি মিথ্যাবাদী মনে করি। এভাবেই ফিরাউনের নিকট শোভনীয় করা হয়েছিল তার মন্দ কর্মকে এবং তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল সরল পথ হতে এবং ফিরাউনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে।” (৪০:৩৬-৩৭) সুতরাং তার জন্যে এমন সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করা হয় যা দুনিয়ায় কখনো দেখা যায়নি। ফিরাউন যে শুধু হযরত মূসা (আঃ)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করেছিল তা নয়, বরং সেতো আল্লাহর অস্তিত্বকেই বিশ্বাস করতো না। যেহেতু সে হযরত মূসা (আঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলঃ (আরবি) অর্থাৎ “জগতসমূহের প্রতিপালক কি?” সে এও বলেছিল : “হে মূসা (আঃ)! তুমি আমাকে ছাড়া যদি অন্য কাউকেও মাবুদ মেনে থাকো তবে আমি তোমাকে বন্দী করে দেবো।”এখানে ফিরাউন তার পারিষদবর্গকে বলেছিলঃ “হে পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের জন্যে কোন মা'বুদ আছে বলে আমার জানা নেই।” যখন তার ও তার কওমের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা চরমে পৌঁছে যায়, দেশে তাদের বিপর্যয় সৃষ্টি সীমাছাড়িয়ে যায়, তাদের আকীদা অচল পয়সার মত হয়ে পড়ে এবং কিয়ামতের হিসাব কিতাবকে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে বসে তখন শেষ পর্যন্ত তাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে এবং তারা ভূ-পৃষ্ঠ হতে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। একই শাস্তি সবকে পেয়ে বসে এবং একই দিনে, একই সময়ে এবং একই সাথে তাদেরকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করা হয়। সুতরাং হে লোক সকল! তোমরা চিন্তা করে দেখো, যালিমদের পরিণাম কি হয়ে থাকে।এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তাদেরকে আমি নেতা করেছিলাম; তারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করতো। যারাই তাদের পথে চলেছে তাদেরকেই তারা জাহান্নামে নিয়ে গেছে। যারাই রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহ তা'আলাকে অমান্য করেছে তারাই তাদের পথে রয়েছে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোন সাহায্য করা হবে না। উভয় জগতেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।” (৪৭:১৩) দুনিয়াতেও এরা অভিশপ্ত হলো। তাদের উপর আল্লাহর, তার ফেরেশতাদের, তাঁর নবীদের এবং সমস্ত সৎ লোকের অভিসম্পাত। যে কোন ভাল লোক তাদের নাম শুনবে সেই তাদেরকে অভিশাপ দেবে। সুতরাং দুনিয়াতেও তারা অভিশপ্ত হলো এবং আখিরাতেও তারা হবে ঘৃণিত। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মতঃ (আরবি)অর্থাৎ “এই দুনিয়ায় তাদেরকে করা হয়েছিল অভিশাপগ্রস্ত এবং অভিশাপগ্রস্ত হবে তারা কিয়ামতের দিনেও। কত নিকৃষ্ট সেই পুরস্কার যা তারা লাভ করবে।” (১১:৯৯)

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِ مَا أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ الْأُولَىٰ بَصَائِرَ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

📘 এই আয়াতে একটি সূক্ষ্ম কথা এই যে, ধ্বংসপ্রাপ্ত ফিরাউন ও তার লোকদের পরবর্তী উম্মতরা এইভাবে আসমানী আযাবে ধ্বংস হয়নি। বরং যে উম্মত ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে তাদের ঔদ্ধত্যের শাস্তি ঐ যুগের সৎ লোকদের দ্বারাই প্রদান করেছেন। মুমিনরা মুশরিকদের সাথে জিহাদ করতে থেকেছেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “ফিরাউন, তার পূর্ববর্তীরা এবং পূত সম্প্রদায় পাপাচারে লিপ্ত ছিল। তারা তাদের প্রতিপালকের রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দিলেন-কঠোর শাস্তি।” (৬৯:৯-১০) এই দলের ধ্বংসপ্রাপ্তির পরেও আল্লাহর ইনআ’ম হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হতে থাকে। ওগুলোর মধ্যে একটি বড় ইনআমের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে। তা এই যে, তার উপর আল্লাহ তা'আলা তাওরাত অবতীর্ণ করেন। তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পর কোন কওমকে আসমান বা যমীনের সাধারণ আযাব দ্বারা ধ্বংস করা হয়নি। শুধুমাত্র ঐ লোকালয়ের কতকগুলো পাপাচারীকে তিনি শূকর ও বানর করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যারা আল্লাহ তা'আলার পবিত্র দিন শনিবারে মৎস্য শিকার করেছিল, অথচ সেই দিন মৎস্য শিকার তাদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। এটা অবশ্যই হযরত মূসা (আঃ)-এর পরের ঘটনা। যেমন হযরত আবু সাঈদ খুদ্ৰী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এরপরেই তিনি তাঁর উক্তির সত্যতার প্রমাণ হিসেবে (আরবি)-এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।একটি মারফু হাদীসেও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত মূসা (আঃ)-এর পরে আল্লাহ তা'আলা কোন কওমকে আসমানী বা যমীনী আযাব দ্বারা ধ্বংস করেননি। এরূপ আযাব যত এসেছে সবই তার পূর্বেই এসেছে।” অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন। এরপর তাওরাতের বিশেষণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, এটা জনগণকে অন্ধত্ব ও পথভ্রষ্টতা হতে বেরকারী ছিল, প্রতিপালকের দয়া স্বরূপ ছিল, তাদের জন্যে ছিল জ্ঞানবর্তিকা এবং পথ-নির্দেশ, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَىٰ مُوسَى الْأَمْرَ وَمَا كُنْتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ

📘 Please check ayah 28:47 for complete tafsir.

وَلَٰكِنَّا أَنْشَأْنَا قُرُونًا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ ۚ وَمَا كُنْتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَلَٰكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

📘 Please check ayah 28:47 for complete tafsir.

وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِنْ رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا أَتَاهُمْ مِنْ نَذِيرٍ مِنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

📘 Please check ayah 28:47 for complete tafsir.

وَلَوْلَا أَنْ تُصِيبَهُمْ مُصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

📘 ৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় শেষ নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের দলীল দিচ্ছেন যে, তিনি এমন একজন লোক যার কোন আক্ষরিক জ্ঞান নেই, যিনি একটি অক্ষরও কারো কাছে শিক্ষা করেননি, পূর্ববর্তী কিতাবগুলো যাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত, যার কওমের সবাই বিদ্যাচর্চা ও অতীতের ইতিহাস হতে সম্পূর্ণ বে-খবর, তিনি স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে এবং পূর্ণ বাকপটুতার সাথে ও সঠিকভাবে অতীতের ঘটনাবলী এমনভাবে বর্ণনা করছেন যে, যেন তিনি সেগুলো স্বচক্ষে দর্শন করেছেন এবং তিনি যেন সেগুলো সংঘটিত হওয়ার সময় তথায় বিদ্যমান ছিলেন। এটা কি একথার প্রমাণ নয় যে, তাঁকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে শিক্ষাদান করা হয়েছে, স্বয়ং আল্লাহ অহীর মাধ্যমে ওগুলো তাকে জানিয়ে দিয়েছেন? হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়েও এটা পেশ করেছেন এবং বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! মারইয়াম (আঃ)-এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে এর জন্যে যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তুমি তখন তাদের নিকট ছিলে না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না।” (৩:৪৪) সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিদ্যমান না থাকা এবং অবহিত থাকা সত্ত্বেও এ ঘটনাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যেন তিনি তথায় বিদ্যমান ছিলেন এবং তাঁর সামনেই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, এটা তাঁর নবুওয়াতের স্পষ্ট দলীল ও পরিষ্কার নিদর্শন যে, তিনি অহীর মাধ্যমে এগুলোর খবর দিয়েছেন। অনুরূপভাবে হযরত নূহ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এগুলো অদৃশ্যের সংবাদ যেগুলো আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, ইতিপূর্বে এগুলো না তুমি জানতে, না তোমার কওম জানতো, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং জেনে রেখো যে, শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদেরই।” (১১:৪৯) সূরায়ে ইউসুফেরও শেষে ইরশাদ হয়েছে (আরবি) অর্থাৎ “এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহীর দ্বারা অবহিত করছি; ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌছেছিল, তখন তুমি তাদের সাথে ছিলে না।” (১২:১০২) সূরায়ে তোয়াহা-তে রয়েছে (আরবি) অর্থাৎ “পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এইভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি।” (২০:৯৯) অনুরূপভাবে এখানেও হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম, নবুওয়াতের সূচনা ইত্যাদি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বলেনঃ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) যখন আমি মূসা (আঃ)-কে বিধান দিয়েছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না। বস্তুতঃ আমি অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; অতঃপর তাদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না তাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করবার জন্যে। আমিই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী। আর হে নবী (সঃ)! যখন আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম তখন তুমি তূর পর্বত পার্শ্বে হাযির ছিলে না।”হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আওয়ায দেয়া হয়ঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মত! তোমাদের চাওয়ার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি এবং তোমরা দু'আ করবে তার পূর্বেই আমি ককূল করে নিয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আবদুর রহমান আন নাসাঈ (রঃ) তার সুনান গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন)হযরত মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমরা যখন তাদের বাপ-দাদাদের পৃষ্ঠদেশে ছিলে তখনই আমি তাদেরকে ডাক দিয়েছিলাম যে, আমি যখন তোমাকে নবী করে প্রেরণ করবো তখন তারা তোমার অনুসরণ করবে।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো: “আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম। এটাই বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা, উপরেও এরই বর্ণনা রয়েছে। উপরে সাধারণভাবে বর্ণনা ছিল এবং এখানে বিশিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যখন তোমার প্রতিপালক মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করলেন।” (২৬:১০) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তার প্রতিপালক যখন তাকে পবিত্র ভূর উপত্যকায় আহ্বান করেন।” (৭৯:১৬) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর একটি আয়াতে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাকে আমি আহ্বান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।” (১৯:৫২)মহান আল্লাহ বলেনঃ এগুলোর মধ্যে একটি ঘটনাও তোমার উপস্থিতকালে এবং তোমার চোখের সামনে সংঘটিত হয়নি, বরং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে দয়া স্বরূপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। এটা এ জন্যেও যে, তাদের কাছে যেন কোন দলীল বাকী না থাকে এবং ওর করারও কিছু না থাকে যে, তাদের কাছে কোন রাসূল আসেননি এবং তাদেরকে কেউ সুপথ প্রদর্শন করেননি, করলে অবশ্যই তারা আল্লাহর নিদর্শন মেনে চলতো এবং তারা মুমিন হতো।যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় স্বীয় পবিত্র কিতাব কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করার পর বলেনঃ “এটা এই জন্যে যে, তোমরা যেন বলতে না পারকিতাব তো আমাদের পূর্বে দুটি দলের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা তো এর পাঠ ও শিক্ষাদান হতে ছিলাম সম্পূর্ণ উদাসীন। যদি এ কিতাব আমাদের উপর অবতীর্ণ করা হতো তবে অবশ্যই আমরা তাদের চেয়ে বেশী সুপথগামী হতাম। এখন জেনে রেখো যে, তোমাদের কাছেও তোমাদের প্রতিপালকের দলীল, হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে। অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ “এরা হলো সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী রাসূল যাতে লোকদের জন্যে রাসূলদের পরে কোন হুজ্জত বাকী না থাকে। আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে রাসূলশূন্য যুগে আমার রাসূল এসে গেছে যে তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে তোমরা বলতে না পার- আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি, কারণ এখন তো তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী এসে গেছে।” (৫:১৯) এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে।

فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِنْدِنَا قَالُوا لَوْلَا أُوتِيَ مِثْلَ مَا أُوتِيَ مُوسَىٰ ۚ أَوَلَمْ يَكْفُرُوا بِمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ مِنْ قَبْلُ ۖ قَالُوا سِحْرَانِ تَظَاهَرَا وَقَالُوا إِنَّا بِكُلٍّ كَافِرُونَ

📘 Please check ayah 28:51 for complete tafsir.

قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَىٰ مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

📘 Please check ayah 28:51 for complete tafsir.

وَنُرِيدُ أَنْ نَمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ

📘 Please check ayah 28:6 for complete tafsir.

فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 28:51 for complete tafsir.

۞ وَلَقَدْ وَصَّلْنَا لَهُمُ الْقَوْلَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

📘 ৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর ইতিপূর্বে আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করেছেনঃ যদি নবীদেরকে প্রেরণ করার পূর্বে আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করতাম তবে তাদের একথা বলার অধিকার থাকতো যে, তাদের কাছে নবী আগমন করলে তবে অবশ্যই তারা তাদেরকে মেনে চলতো। এজন্যেই আমি রাসূল প্রেরণ করেছি। বিশেষ করে আমি শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে পাঠিয়েছি। যখন তিনি জনগণের নিকট আগমন করেন তখন তারা চক্ষু ফিরিয়ে নেয়, মুখ ঘুরিয়ে নেয় এবং অত্যন্ত দর্পভরে বলেঃ হযরত মূসা (আঃ)-কে যেমন বহু মুজিযা দেয়া হয়েছিল যথা-লাঠি, হাতের ঔজ্জ্বল্য, তুফান, ফড়িং, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত এবং শস্য ও ফলের হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি, যেগুলো দেখে আল্লাহর শত্রুরা বিচলিত হয়ে পড়ে এবং সমুদ্রকে বিভক্ত করা, মেঘ দ্বারা ছায়া করা ও মান্না-সালওয়া অবতীর্ণ হওয়া ইত্যাদি, যেগুলো ছিল বড় বড় মুজিযা, তেমনিভাবে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে কেন দেয়া হয় না? তাদের একথার জবাবে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এ লোকগুলো যে ঘটনাকে উদাহরণ রূপে পেশ করছে এবং যেসব মুজিযা দেখতে চাচ্ছে এসব মু'জিযা হযরত মূসা (আঃ)-এর থাকা সত্ত্বেও কয়জন লোক তার উপর ঈমান এনেছিল? তারা তো পরিষ্কারভাবে বলেছিলঃ “মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) এ দুই ভাই যাদুকর ছাড়া কিছুই নয়। তারা আমাদের হতে শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে চায়। সুতরাং আমরা কখনো তাদের কথা মানতে পারি না। এভাবে তারা ঐ দুই নবী (আঃ)-কে অবিশ্বাস করে, ফলে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা বলেছিল, “এই দুই ভাই যাদুকর, তারা একত্রিত হয়ে আমাদেরকে খাটো করার জন্যে ও নিজেদেরকে বড় মানিয়ে নেয়ার জন্যেই এসেছে। আমরা তাদের প্রত্যেককেই প্রত্যাখ্যান করি।”এখানে শুধু হযরত মূসা (আঃ)-এর উল্লেখ রয়েছে বটে, কিন্তু তারা দু ভাই এমনভাবে মিলে গিয়েছিলেন যে, যেন তারা দুজন এক। এ জন্যে একজনের উল্লেখই অপরজনের জন্যে যথেষ্ট মনে করা হয়। যেমন কবি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন আমি কোন জায়গার ইচ্ছা করি তখন সেখানে আমার লাভ হবে কি ক্ষতি হবে তা আমি জানি না। এখানে কবি শুধু লাভের কথা উল্লেখ করেছেন, ক্ষতির কথা উল্লেখ করেননি। কেননা, লাভ ও ক্ষতি, ভাল ও মন্দ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটির সাথে অপরটি থাকা অপরিহার্য। এজন্যেই কবি শুধু কল্যাণের উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন, অনিষ্টের উল্লেখ তিনি করেননি।মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ইয়াহূদীরা কুরায়েশদেরকে বলে যে, তারা যেন মুহাম্মাদ (সঃ)-কে এ কথা বলে। তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের কথার প্রতিবাদে বলেনঃ পূর্বে মূসা (আঃ)-কে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিলঃ উভয়ই যাদু, একে অপরকে সমর্থন করে, অর্থাৎ হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)। তারা এই উত্তর পেয়ে নীরব হয়ে যায়। একটি উক্তি এও আছে যে, দু’জন যাদুকর দ্বারা হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। আর একটি উক্তি এটাও যে, দু’জন যাদুকর দ্বারা হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় উক্তি অপেক্ষা প্রথম উক্তিটিই বেশী দৃঢ় ও উত্তম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। (আরবি) এর কিরআতের উপর এই ভাবার্থ। আর (আরবি) যাদের কিরআত তারা বলেন যে, এর দ্বারা তাওরাত ও কুরআন উদ্দেশ্য। এ দু’টি একটি অপরটির সত্যতা প্রতিপাদনকারী। কারো কারো মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাওরাত ও ইঞ্জীল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা ইঞ্জীল ও কুরআন উদ্দেশ্য। কোনটি সঠিক কথা তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে এই কিরআতেও যাহেরী তাওরাত ও কুরআনের অর্থ সঠিক। কেননা এর পরেই আল্লাহ পাকের উক্তি রয়েছেঃ “তোমরাই তাহলে এ দু’টো অপেক্ষা বেশী হিদায়াত দানকারী কোন কিতাব আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে নিয়ে এসো, যার আনুগত্য আমি করবো?” কুরআন কারীমে তাওরাত ও কুরআনকে অধিকাংশ জায়গায় একই সাথে আনয়ন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি বল- কে ঐ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা নিয়ে মূসা (আঃ) এসেছিল, যা লোকদের জন্যে জ্যোতি ও হিদায়াত স্বরূপ?” (৬:৯২) এর পরেই তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এই কিতাবকেও (কুরআনকেও) আমি বরকতময় ও কল্যাণময় রূপে অবতীর্ণ করেছি। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা আমার অবতারিত এই কল্যাণময় কিতাবের অনুসরণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তোমাদের উপর দয়া করা হবে।” (৬:১৫৬) জ্বিনেরা বলেছিলঃ “আমরা এমন এক কিতাব শ্রবণ করেছি যা মূসা (আঃ)-এর পরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা ওর পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যতা প্রতিপাদনকারী।” অরাকা ইবনে নওফল (রাঃ) বলেছিলেনঃ “এটা আল্লাহর রহস্যবিদ যাকে হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল।” চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় শাস্ত্রে গভীরভাবে মনোনিবেশকারী ব্যক্তির কাছে এটা স্পষ্ট যে, আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এই কুরআন মজীদ ও ফুরকান হামীদই বটে। এটা প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় দয়ালু নবী (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। এরপর তাওরাত শরীফের মর্যাদা, যাতে নূর ও হিদায়াত ছিল, যা অনুসারে নবীরা ও তাদের অনুসারীরা হুকুম জারী করতেন। ইঞ্জীল তো শুধু তাওরাতকে পূর্ণকারী এবং কোন কোন হারামকে হালালকারী ছিল। এজন্যেই এখানে বলা হয়েছেঃ তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহর নিকট হতে এক কিতাব আনয়ন কর, যা পথ-নির্দেশে এতদুভয় হতে উৎকৃষ্টতর হবে; আমি সে কিতাব অনুসরণ করবো। অতঃপর হে নবী (সঃ)! তারা যদি এতে অপারগ হওয়া সত্ত্বেও তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে যে, তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর পথ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? এভাবে যারা নিজেদের নফসের উপর যুলুম করে সে শেষ পর্যন্ত সঠিক পথ লাভে বঞ্চিত হয়। আমি তো তাদের কাছে বিস্তারিতভাবে আমার বাণী পৌছিয়ে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। তাদের দ্বারা বলতে মুজাহিদ (রঃ) ও অন্যান্যদের মতে কুরায়েশদেরকে বুঝানো হয়েছে। স্পষ্ট ও প্রকাশমান কথা এটাই। কারো কারো মতে এদের দ্বারা রিফাআহ্ ও তার সঙ্গী নয়জন লোককে বুঝানো হয়েছে। রিফাআহ্ ছিল হযরত সুফিয়া বিন্তে হুইয়াই (রাঃ)-এর মামা, যে তামীমাহ্ বিতে অহাবকে তালাক প্রদান করেছিল, যার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল আবদুর রহমান ইবনে যুবায়েরের সাথে।

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِهِ هُمْ بِهِ يُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 28:55 for complete tafsir.

وَإِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 28:55 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

📘 Please check ayah 28:55 for complete tafsir.

وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ

📘 ৫২-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর আহলে কিতাবের আলেমগণ, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রিয়পাত্র ছিলেন, তাঁদের গুণাবলী বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা কুরআনকে মেনে চলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি তারা ওটাকে সঠিকভাবে পাঠ করে থাকে, তারা ওর উপর ঈমান আনয়ন করে।” (২:১২১) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আহলে কিতাবের মধ্যে অবশ্যই এমন লোকও আছে যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনয়ন করে এবং তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তাদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, এসবগুলোর উপরই বিশ্বাস স্থাপন করে, আর তারা আল্লাহর নিকট বিনীত হয়।” (৩:১৯৯) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকটে যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। আর বলে- আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে।” (১৭:১০৭-১০৮) আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব হিসেবে সমস্ত লোক হতে বেশী নিকটতম ঐ লোকদেরকে তুমি পাবে যারা বলে- আমরা নাসারা, এটা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে আলেম ও বিবেকবান লোকেরা রয়েছে, তারা অহংকার ও দাম্ভিকতা শূন্য এবং তারা কুরআন শুনে কেঁদে ফেলে ও বলে ওঠেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং (ঈমানের) সাক্ষ্যদাতাদের সাথে আমাদের নাম লিখে নিন।” (৫:৮২-৮৩)।হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যাদের ব্যাপারে এটা অবতীর্ণ হয়েছে তাঁরা ছিলেন সত্তরজন খৃষ্টান আলেম। তারা আবিসিনিয়ার বাদশাহ্ নাজ্জাশী কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধি ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে সূরায়ে ‘ইয়াসীন’ শুনিয়ে দেন। শোনা মাত্রই তাঁরা কান্নায় ফেটে পড়েন এবং সাথে সাথেই মুসলমান হয়ে যান। তাঁদের ব্যাপারেই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এখানে তাদেরই প্রশংসা করা হয় যে, আয়াতগুলো শোনা মাত্রই তাঁরা। নিজেদেরকে খাটি একত্ববাদী ঘোষণা করেন এবং ইসলাম কবূল করে মুমিন ও মুসলমান হয়ে যান। তাঁদের ব্যাপারেই আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। প্রথম পুরস্কার তাঁদের নিজেদের কিতাবের উপর ঈমান আনয়নের কারণে এবং দ্বিতীয় পুরস্কার কুরআনকে বিশ্বাস করে নেয়ার কারণে। তাঁরা সত্যের অনুসরণে অটল থাকেন, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বড় কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।সহীহ্ হাদীসে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোককে দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া হবে। প্রথম হলো ঐ আহলে কিতাব যে নিজের নবীকে মেনে নেয়ার পর আমার উপরও ঈমান আনে। দ্বিতীয় হলো ঐ গোলাম যে নিজের পার্থিব মনিবের আনুগত্য করার পর আল্লাহর হকও আদায় করে। তৃতীয় হলো ঐ ব্যক্তি, যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। তাকে আদব ও বিদ্যা শিক্ষা দেয়। অতঃপর তাকে আযাদ করে দিয়ে বিয়ে করে নেয়।”হযরত কাসেম ইবনে আবি উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সওয়ারীর সাথে ছিলাম এবং তাঁর খুবই নিকটে ছিলাম। তিনি খুবই ভাল ভাল কথা বলেন। সেদিন তিনি একথাও বলেনঃ “ইয়াহুদী ও নাসারার মধ্যে যে মুসলমান হয়ে যায় তার জন্যে দ্বিগুণ পুরস্কার। তার জন্যে আমাদের সমান (অর্থাৎ সাধারণ মুসলমানের সমান অধিকার রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাঁদের গুণ বর্ণনা করছেন যে, তারা মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা গ্রহণ করেন না, বরং ক্ষমা করে দেন। তাঁদের সাথে যারা মন্দ ব্যবহার করে তাদের সাথে তারা উত্তম ব্যবহারই করে থাকেন। তাদের হালাল ও পবিত্র জীবিকা হতে তারা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকেন, নিজেদের সন্তানদেরকেও লালন পালন করেন, দান-খয়রাত করার ব্যাপারেও তারা কার্পণ্য করেন না এবং বাজে ও অসার কার্যকলাপ হতে তারা দূরে থাকেন। যারা অসার কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে তাদের সাথে তারা বন্ধুত্ব করেন না। তাদের মজলিস হতে তারা দূরে থাকেন। ঘটনাক্রমে সেখান দিয়ে হঠাৎ গমন করলে ভদ্রভাবে তারা সেখান হতে সরে পড়েন। এইরূপ লোকদের সাথে তারা মেলামেশা করেন না এবং তাদের সাথে ভালবাসাও রাখেন না। পরিষ্কারভাবে তাদেরকে বলে দেনঃ “আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্যে এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্যে। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।” অর্থাৎ তারা অজ্ঞদের কঠোর ভাষাও সহ্য করে নেন। তাদেরকে এমন জবাব দেন না যাতে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। বরং তারা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে থাকেন। যেহেতু তারা নিজেরা পাক-পবিত্র, সেহেতু মুখ দিয়ে পবিত্র কথাই বের করে থাকেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, আবিসিনিয়া হতে প্রায় বিশ জন খৃষ্টান রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন এবং তাঁর সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করেন। ঐ সময় কুরায়েশরা নিজ নিজ মজলিসে কাবা ঘরের চতুর্দিকে বসেছিল। ঐ খৃষ্টান আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পেয়ে যান। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং কুরআন কারীম পাঠ করে শুনিয়ে দেন। তাঁরা ছিলেন শিক্ষিত ও ভদ্র এবং তাঁদের মস্তিষ্ক ছিল প্রখর। তাই কুরআন কারীম তাঁদের মনকে আকৃষ্ট করলো এবং তাদের চক্ষুগুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তারা দ্বীন ইসলাম কবুল করে নিলেন। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করলেন। কেননা, আসমানী কিতাবসমূহে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যেসব বিশেষণ তারা পড়েছিলেন সেগুলোর সবই তার মধ্যে বিদ্যমান পেয়েছিলেন। যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করেন তখন অভিশপ্ত আবূ জেহেল তার লোকজনসহ পথে তাদের সাথে মিলিত হয় এবং তাদেরকে বিদ্রুপ করতে থাকে। তারা তাদেরকে বলেঃ “তোমাদের ন্যায় জঘন্যতম প্রতিনিধি আমরা কখনো কোন কওমের মধ্যে দেখিনি। তোমাদের কওম তোমাদেরকে এই লোকটির (হযরত মুহাম্মদের সঃ) অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে এখানে পাঠিয়েছিলেন। এখানে এসেই তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে দিলে এবং এই লোকটির প্রভাব তোমাদের উপর এমনভাবে পড়ে যায় যে, অল্পক্ষণের মধ্যেই তোমরা তোমাদের নিজেদের ধর্ম পরিত্যাগ করে তার ধর্ম গ্রহণ করে বসলে। সুতরাং তোমাদের চেয়ে বড় আহমক আর কেউ আছে কি?” তারা ঠাণ্ডা মনে তাদের কথাগুলো শুনলেন এবং উত্তরে বললেনঃ “আমরা তোমাদের সাথে অজ্ঞতামূলক আলোচনা করতে চাই না। আমাদের ধর্ম আমাদের সাথে এবং তোমাদের ধর্ম তোমাদের সাথে। আমরা যে কথার মধ্যে আমাদের কল্যাণ নিহিত পেয়েছি সেটাই আমরা কবুল করে নিয়েছি।” একথাও বলা হয়েছে যে, তাঁরা ছিলেন নাজরানের খৃষ্টান প্রতিনিধি। এই ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। এটাও বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতগুলো তাদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত যুহরী (রঃ)-কে এ আয়াতগুলোর শানে নুযূল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি তো আমার আলেমদের থেকে শুনে আসছি যে, এ আয়াতগুলো নাজ্জাশী ও তাঁর সাথীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে এবং সূরায়ে মায়েদার (আরবি) হতে (আরবি) (৫:৮২-৮৩) পর্যন্ত এই আয়াতগুলোও তাঁদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۚ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

📘 Please check ayah 28:57 for complete tafsir.

وَقَالُوا إِنْ نَتَّبِعِ الْهُدَىٰ مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ أَرْضِنَا ۚ أَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَهُمْ حَرَمًا آمِنًا يُجْبَىٰ إِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِزْقًا مِنْ لَدُنَّا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

📘 ৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! কাউকে হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত করা তোমার শক্তির বাইরে। তোমার দায়িত্ব শুধু আমার বাণী জনগণের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। হিদায়াতের মালিক আমি। আমি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত কবূল করার তাওফীক দান করে থাকি। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ তাদেরকে হিদায়াত করার দায়িত্ব তোমার নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করে থাকেন।” (২:২৭২) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার লিলা থাকলেও অধিকাংশ লোক মুমিন নয়।” (১২:১০৩) হিদায়াত লাভের হকদার কে এবং কে পথভ্রষ্ট হবার হকদার এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে।সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে রয়েছে যে, এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচা আবু তালিবের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যিনি তাঁকে খুবই সাহায্য সহানুভূতি করেছিলেন। সর্বক্ষেত্রেই তিনি তার সহযোগিতা করে এসেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে তাকে ভালবাসতেন। কিন্তু তার এ ভালবাসা ছিল আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিগত। এ ভালবাসা শরীয়তগত ছিল না। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি তাকে ঈমান আনয়নের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। কিন্তু তাঁর তকদীরের লিখন এবং আল্লাহ পাকের ইচ্ছা জয়যুক্ত হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং কুফরীর উপরই অটল থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার মৃত্যুর সময় তাঁর নিকট আগমন করেন। আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও তাঁর পাশে উপবিষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় চাচা! আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করুন। এই কারণে আমি আল্লাহর নিকট আপনার জন্যে সুপারিশ করবো।” তখন আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁকে বলেঃ “হে আবু তালিব! তুমি কি তোমার পিতা আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে?” এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বুঝাতে থাকেন এবং তারা দু'জন তাকে ফিরাতে থাকে। অবশেষে তার মুখ দিয়ে শেষ কথা বের হয়ঃ “আমি এ কালেমা পাঠ করবো না, আমি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপরই থাকলাম।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আচ্ছা, আমি আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা। করতে থাকবো। তবে যদি আল্লাহ আমাকে এর থেকে বিরত রাখেন এবং নিষেধ। করে দেন তাহলে অন্য কথা।” তৎক্ষণাৎ এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবি) অর্থাৎ “নবী (সঃ) ও মুমিনদের জন্যে মোটেই উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে যদিও তারা তাদের নিকটতম আত্মীয় হয়।” (৯:১১৩) আর আবূ তালিবের ব্যাপারে (আরবি) এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে চাচা! লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করুন, আমি কিয়ামতের দিন এর সাক্ষ্য দান করবো।” উত্তরে আবূ তালিব বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমার যদি আমার বংশ কুরায়েশদের বিদ্রুপ বলে ভয় না থাকতো যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে এ কালেমা পাঠ করছি তবে অবশ্যই আমি এটা পাঠ করতাম। আর এভাবে তোমার চক্ষু ঠাণ্ডা করতাম।” ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা .. (আরবি)-এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেন)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, শেষ পর্যন্ত তিনি কালেমা পড়তে অস্বীকার করেন এবং পরিষ্কারভাবে বলে দেন- “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমি তো আমার বড়দের ধর্মের উপর রয়েছি।” তাঁর মৃত্যু একথারই উপর হয় যে, তিনি আবদুল মুত্তালিবের মাযহাবের উপর রয়েছেন।হযরত সাঈদ ইবনে আবি রাশেদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রোমক সম্রাট কায়সারের দূত যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয় এবং কায়সারের পত্রখানা নবী (সঃ)-এর সামনে পেশ করে তখন নবী (সঃ) তা নিজের ক্রোড়ে রেখে দেন। অতঃপর দূতকে বলেনঃ “তুমি কোন গোত্রের লোক?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি তানূখ গোত্রের লোক।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি কি চাও যে, তুমি তোমার পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের উপর এসে যাবে?” জবাবে সে বলেঃ “আমি যে কওমের দূত, যে পর্যন্ত না আমি তাদের পয়গামের জবাব তাদের কাছে পৌছাতে পারবো, তাদের মাযহাব পরিত্যাগ করতে পারবো না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুচকি হেসে তার সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে (আরবি) এই আয়াতটিই পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মুশরিকরা তাদের ঈমান আনয়ন না করার একটি কারণ এও বর্ণনা করতো যে, তারা যদি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক আনীত হিদায়াত মেনে নেয় তবে তাদের ভয় হচ্ছে যে, এই ধর্মের বিরোধী লোকেরা যে তাদের চতুর্দিকে রয়েছে তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে, তাদেরকে কষ্ট দেবে এবং তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, এটাও তাদের ভুল কৌশল। আল্লাহ পাক তো তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে অর্থাৎ মক্কা শরীফে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যেখানে দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নিরাপত্তা বিরাজ করছে। তাহলে কুফরীর অবস্থায় যখন তারা সেখানে নিরাপত্তা লাভ করছে, তখন আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করলে কি করে ঐ নিরাপত্তা উঠে যেতে পারে? এটাতো ঐ শহর যেখানে তায়েফ ইত্যাদি বিভিন্ন শহর হতে ফলমূল, ব্যবসার মাল ইত্যাদি বহুল পরিমাণে আমদানী হয়ে থাকে। সমস্ত জিনিস এখানে অতি সহজে চলে আসে এবং এভাবে মহান আল্লাহ তাদেরকে রিযক পৌঁছিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা জানে না। এজন্যেই তারা এরূপ বাজে ওর পেশ করে থাকে। বর্ণিত আছে যে, এ কথা যে বলেছিল তার নাম ছিল হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফিল।

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا ۖ فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَنْ مِنْ بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ

📘 Please check ayah 28:59 for complete tafsir.

وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَىٰ حَتَّىٰ يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولًا يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا ۚ وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَىٰ إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ

📘 ৫৮-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, যারা আল্লাহ তা'আলার বহু নিয়ামত লাভ করে ভোগ সম্পদের দম্ভ করতো এবং হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্যপনা প্রকাশ করতো, আল্লাহ ও তাঁর নবীদেরকে (আঃ) অমান্য ও অস্বীকার করতো এবং আল্লাহর রিযক ভক্ষণ করে নিমকহারামী করতো, তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন যে, আজ তাদের নাম নেয়ারও কেউ নেই। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত। অর্থাৎ “আল্লাহ একটি গ্রামের (লোকদের) উপমা বর্ণনা করেছেন যারা (পার্থিব বিপদ-আপদ হতে) নিরাপদে ছিল এবং তাদের মধ্যে শান্তি বিরাজ করছিল, সব জায়গা থেকে তাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে রিক আসততা ......... অতঃপর তাদের যুলুম করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে পেয়ে বসে।" (১৬:১১২-১১৩) এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ সম্পদের গর্ব করতো! এইতো তাদের ঘরবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে; তাদের পর এগুলোতে লোকজন খুব কমই বসবাস করেছে। আমিই তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত কা'ব (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে হযরত সুলাইমান (আঃ) পেঁচাকে বলেনঃ “তুমি ক্ষেতের ফসল খাও না কেন? সে উত্তরে বলেঃ “এই কারণেই তো হযরত আদম (আঃ)-কে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হয়েছিল। এজন্যেই আমি তা খাই না।” আবার তিনি প্রশ্ন করেনঃ “তুমি পানি পান কর না কেন?" জবাবে সে বলেঃ “কারণ এই যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর কওমকে এই পানিতেই ডুবিয়ে দেয়া হয়।” পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি তাঁবুতে বাস কর কেন?” সে উত্তর দেয়ঃ “কেননা, ওটা আল্লাহর মীরাস।” অতঃপর হযরত কা'ব (রাঃ) (আরবি) আয়াতটি পাঠ করেন। এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় আদল ও ইনসাফের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি কাউকেও যুলুম করে ধ্বংস করেন না। প্রথমে তিনি তাদের সামনে তার হুজ্জত ও দলীল প্রমাণ পেশ করেন এবং তাদের ওযর উঠিয়ে দেন। রাসূলদেরকে প্রেরণ করে তিনি তাদের কাছে নিজের বাণী পৌঁছিয়ে দেন।এই আয়াত দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নবুওয়াত ছিল সাধারণ। তিনি উম্মুল কুরা বা জনপদের কেন্দ্রে প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁকে সারা আরব-আজমের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছিল। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেন তুমি মক্কাবাসীকে এবং ওর চতুষ্পর্শ্বের লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন। কর।” (৪২ ৪৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সবারই নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।” (৭:১৫৮) অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “যাতে আমি এই কুরআন দ্বারা তোমাদেরকে ভয়-প্রদর্শন করি এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছে যাবে।" (৬:১৯) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “দুনিয়াবাসীদের মধ্যে যে কেউ এই কুরআনকে অস্বীকার করবে তার ওয়াদার স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।” (১১:১৭) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “সমস্ত জনপদকে আমি কিয়ামতের পূর্বে ধ্বংসকারী অথবা কঠিন শাস্তি প্রদানকারী।” (১৭:৫৮) সুতরাং আল্লাহ তা'আলা খবর দিলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে তিনি সত্বরই প্রত্যেক জনপদকে ধ্বংস করবেন। আর এক জায়গায় মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি শাস্তি প্রদানকারী নই যে পর্যন্ত না আমি রাসূল প্রেরণ করি।” (১৭:১৫) সুতরাং আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রিসালাত বা প্রেরিতত্বকে সাধারণ করেছেন এবং সারা দুনিয়ার কেন্দ্রস্থল মক্কাভূমিতে তাঁকে প্রেরণ করে বিশ্বজাহানের উপর স্বীয় হুজ্জত খতম করে দেন।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি প্রত্যেক লাল-কালোর নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। এ জন্যেই তাঁর উপরই নবুওয়াতকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। তার পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না। বলা হয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা আসল এবং বড় গ্রাম বা শহর উদ্দেশ্য।

وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُمْ مَا كَانُوا يَحْذَرُونَ

📘 হযরত মা’দীকাৱাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে তার কাছে আবেদন জানালাম যে, তিনি যেন আমাদেরকে (আরবি) দুশ বার পাঠ করে শুনিয়ে দেন। তখন তিনি বললেনঃ “এটা আমার মুখস্থ নেই, তোমরা বরং হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত্ত (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তার থেকে এটা শ্রবণ কর। কেননা, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে এটা শিখিয়েছেন। সুতরাং আমরা হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত্ত (রাঃ)-এর নিকট গমন করলে তিনি আমাদেরকে সূরাটি পড়ে শুনিয়ে দেন। (এটা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ১-৬ নং আয়াতের তাফসীর (আারবি)-এর বর্ণনা ইতিপূর্বে গত হয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন যে, এই আয়াতগুলো হলো সুস্পষ্ট কিতাবের অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের। সমস্ত কাজের মূল এবং অতীতের ও ভবিষ্যতের সমস্ত খবর এই কিতাবের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমি তোমার নিকট মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। যেমন অন্য এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আারবি) অর্থাৎ “আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি।” (১২: ৩) তার সামনে এটা এমনভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তিনি যেন ঐ সময় তথায় বিদ্যমান ছিলেন। ফিরাউন একজন অহংকারী, উদ্ধত ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল। সে জনগণের উপর জঘন্যভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সে তাদেরকে পরস্পরে লড়িয়ে দিয়ে, তাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে তাদেরকে দুর্বল করে দিয়ে স্বয়ং তাদের উপর জোরপূর্বক প্রভুত্ব চালাতে থাকে। বিশেষ করে বানী ইসরাঈলকে তো সে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। অথচ মাযহাবী হিসেবে সেই যুগে তারাই ছিল সর্বোত্তম। ফিরাউন তাদেরকে খুবই নিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছিল। সে সমস্ত ঘৃণ্য কাজ তাদের দ্বারা করিয়ে নিতো। এতে করেও তার প্রাণ ভরেনি। সে তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে তারা শক্তিশালী হতে না পারে। তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করার একটি বড় কারণ এই ছিল যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন মিসর দেশের মধ্য দিয়ে স্বীয় স্ত্রী হযরত সারা (রাঃ) সহ গমন করছিলেন এবং তথাকার উদ্ধত বাদশাহ হযরত সারা (রাঃ)-কে নিজের দাসী বানিয়ে নেয়ার জন্যে তাঁর নিকট হতে ছিনিয়ে নিয়েছিল, যাকে আল্লাহ ঐ কাফির থেকে রক্ষা করেছিলেন, তখন তিনি হযরত সারা (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ “তোমার সন্তানদের মধ্য হতে একটি সন্তানের হাতে এই মিসরের শাসন ক্ষমতা এই কওম হতে খতম হয়ে যাবে এবং এর বাদশাহ তার সামনে অতি লাঞ্ছিতভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।” বানী ইসরাঈলের মধ্যে এ রিওয়াইয়াতটি চলে আসছিল এবং তাদের পাঠ্যের মধ্যেও এটা ছিল বলে ফিরাউনের কওম কিবতীরাও এটা শুনেছিল। সুতরাং তারা এটা ফিরাউনের কানে পৌছিয়ে দিয়েছিল। তাই ফিরাউন এই আইন জারী করে দিলো যে, বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করে দেয়া হবে ও কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখা হবে। এতো বড় অত্যাচারমূলক কাজ করতে সে মোটেই দ্বিধাবোধ করলো না। কিন্তু মহামহিমান্বিত ও প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই হয়ে থাকে। হযরত মূসা (আঃ) জীবিত রয়ে গেলেন এবং আল্লাহ তা'আলা ঐ উদ্ধত কওমকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করতঃ ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সুতরাং সমুদয় প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। এ জন্যেই তো আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আারবি)(আারবি) হতে (আারবি) পযন্ত। অর্থ্যৎ“আমি ইচ্ছা করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে ও দেশের অধিকারী করতে। আর তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট তারা আকাক্ষা করতো। এটা প্রকাশমান কথা যে, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েই থাকে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আারবি)অর্থাৎ “যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হতো তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি, এবং বানী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি।” (৭:১৩৭) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ (আারবি) অর্থাৎ “এভাবেই আমি বানী ইসরাঈলকে ওর উত্তরাধিকারী বানিয়েছি।” (২৬:৫৯)। ফিরাউন তার সর্বশক্তি প্রকাশ করেছিল, কিন্তু আল্লাহর শক্তি সে অনুমানও করতে পারেনি। শেষে আল্লাহর ইচ্ছাই পূর্ণ হয় এবং যে শিশুর কারণে সে হাজার হাজার নিস্পাপ শিশুর রক্ত প্রবাহিত করেছিল তাঁকেই তিনি তারই ক্রোড়ে লালন-পালন করিয়ে নেন, আর তারই হাতে তিনি তাকে ও তার লোক-লস্করকে ধ্বংস করিয়ে দেন, যাতে সে জেনে ও বুঝে নেয় যে, সে আল্লাহ তাআলার এক লাঞ্ছিত ও অসহায় দাস ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবার ক্ষমতা কারো নেই। হযরত মূসা (আঃ)-কে ও তাঁর কওমকে আল্লাহ তা'আলা মিসরের রাজত্ব দান করলেন এবং ফিরাউন যাকে ভয় করছিল তিনিই সামনে এসে গেলেন এবং সে ধ্বংস হয়ে গেল। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে।

وَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا ۚ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

📘 Please check ayah 28:61 for complete tafsir.

أَفَمَنْ وَعَدْنَاهُ وَعْدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيهِ كَمَنْ مَتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِينَ

📘 ৬০-৬১ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার তুচ্ছতা, ওর জাকজমকের নগণ্যতা এবং অস্থায়িত্ব ও নশ্বরতার বর্ণনা দিচ্ছেন এবং অপরপক্ষে আখিরাতের নিয়ামতরাজির স্থায়িত্ব ও উৎকৃষ্টতার বর্ণনা দিচ্ছেন। যেমন তিনি বলেনঃ অর্থাৎ “তোমাদের কাছে যা আছে তা শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা তা বাকী থাকবে।” (১৬:৯৬) আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহর নিকট যা রয়েছে সৎলোকদের জন্যে তা অতি উত্তম।” (৩:১৯৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) ভোগ-বিলাস ছাড়া কিছুই নয়।” (৫৭:২০) অন্যত্র বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্টতর ও স্থায়ী।” (৮৭:১৬-১৭)।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর শপথ! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া এমনই যেমন কেউ সমুদ্রের পানিতে তার অঙ্গুলী ডুবিয়ে দেয়, অতঃপর তা উঠিয়ে নিলে দেখতে পায় যে, তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগে যতটুকু পানি উঠেছে তা সমুদ্রের পানির তুলনায় কতটুকু। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ যারা আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে তারা কি মোটেই জ্ঞান রাখে না?মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাই বলেনঃ যাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে সে কি কখনো ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, অতঃপর যাকে কিয়ামতের দিন হাযির করা হবে (ও খুঁটিনাটিভাবে হিসাব নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে)? বর্ণিত আছে যে, এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং অভিশপ্ত আবু জেহেলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। একটি উক্তি এও আছে যে, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় হযরত হামযা (রাঃ) ও আবু জেহেলের ব্যাপারে। এটা প্রকাশমান যে, আয়াতটি সাধারণভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, জান্নাতী মুমিন জান্নাত হতে ঝুঁকে দেখবে এবং জাহান্নামীকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে দেখতে পেয়ে বলবেঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকলে আমিও তো আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শামিল হতাম।” (৩৭:৫৭) অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “জ্বিনেরা জানে যে, তাদেরকে অবশ্যই হাযির করা হবে।” (৩৭:১৫৮) ৬২। আর সেই দিন তিনি তাদেরকে আহ্বান করে বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার শরীক গণ্য করতে তারা কোথায়?

وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ

📘 Please check ayah 28:67 for complete tafsir.

قَالَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَغْوَيْنَا أَغْوَيْنَاهُمْ كَمَا غَوَيْنَا ۖ تَبَرَّأْنَا إِلَيْكَ ۖ مَا كَانُوا إِيَّانَا يَعْبُدُونَ

📘 Please check ayah 28:67 for complete tafsir.

وَقِيلَ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ ۚ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا يَهْتَدُونَ

📘 Please check ayah 28:67 for complete tafsir.

وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِينَ

📘 Please check ayah 28:67 for complete tafsir.

فَعَمِيَتْ عَلَيْهِمُ الْأَنْبَاءُ يَوْمَئِذٍ فَهُمْ لَا يَتَسَاءَلُونَ

📘 Please check ayah 28:67 for complete tafsir.

فَأَمَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسَىٰ أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُفْلِحِينَ

📘 ৬২-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে ডেকে সামনে দাঁড় করাবেন এবং বলবেনঃ “আমি ছাড়া যেসব প্রতিমা ও পাথরের তোমরা পূজা করতে সেগুলো আজ কোথায়? তাদেরকে আজ ডাকো এবং দেখো যে, তারা তোমাদের কোন সাহায্য করতে বা তাদের নিজেদেরই কোন সাহায্য করতে পারে কি না?” এ কথা তাদেরকে শুধু ধমক হিসেবেই বলা হবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “অবশ্যই তোমরা আমার কাছে এককভাবে এসেছে যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। আর যা কিছু আমি তোমাদেরকে। দিয়েছিলাম সেগুলোর সবই তোমরা পিছনে ছেড়ে এসেছো। আজ তো আমি তোমাদের সাথে কোন সুপারিশকারীকে দেখছি না যাদেরকে তোমরা আল্লাহর অংশীদার মনে করতে? তাদের সাথে আজ তোমাদের কোনই সম্পর্ক নেই, তোমরা যা ধারণা করতে তার সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারা আজ সবাই তোমাদের থেকে দূরে সরে পড়েছে।” (৬:৯৪) মহান আল্লাহর উক্তিঃ যাদের জন্যে শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবে অর্থাৎ শয়তান, উদ্ধত এবং শিক্ ও কুফরীর দিকে আহ্বানকারীরা সেদিন বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম এবং তারা আমাদের। শুনেছিল ও মেনে নিয়েছিল। আমরা নিজেরাও ছিলাম পথভ্রষ্ট এবং তাদেরকেও করেছিলাম পথভ্রষ্ট। আজ আমরা আপনার সামনে তাদের ইবাদতের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য মা'বুদ গ্রহণ করে এই জন্যে যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়, তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।" (১৯:৮১-৮২) আল্লাহ তা'আলা আর এক আয়াতে বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে আহ্বান করে যারা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের ডাকে সাড়া দিতে পারবে না এবং তারা তাদের ডাক হতে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন?" (৪৬:৫) তিনি আরো বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “(কিয়ামতের দিন) যখন লোকেরা একত্রিত হবে তখন তারা (উপাস্যরা) তাদের (উপাসকদের) শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (৪৬:৬)হ্যরত (ইবরাহীম) খলীলুল্লাহ (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা যে প্রতিমাগুলোর উপাসনা করছে তাদের সাথে তোমাদের শুধু দুনিয়াতেই বন্ধুত্ব থাকছে, কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরের প্রতি লা'নত বর্ষণ করবে।” মহান আল্লাহ অন্য এক আয়াতে বলেনঃ “যখন অনুসৃতরা অনুসারীদের থেকে নিজেদেরকে দায়িত্বমুক্ত বলে ঘোষণা করবে এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে.... তারা (জাহান্নামের) আগুন হতে বের হতে পারবে না। তাদেরকে বলা হবেঃ “দুনিয়ায় যাদের তোমরা পূজা-অর্চনা করতে এখন তাদেরকে ডাকছো না কেন?” তখন তারা ডাকতে শুরু করবে, কিন্তু কোন জবাব তারা পাবে না। তখন তাদের বিশ্বাস হয়ে যাবে যে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে যেতেই হবে। ঐ সময় তারা আকাঙ্ক্ষা করবে যে, হায়! তারা যদি সৎপথ অনুসরণ করতো! যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আর সেই দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন তিনি বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে আহ্বান কর। তারা তখন তাদেরকে আহ্বান করবে কিন্তু তারা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে না এবং তাদের উভয়ের মধ্যস্থলে রেখে দেবো এক ধ্বংস গহ্বর। অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝবে যে, তারা তথায় পতিত হচ্ছে এবং তারা এটা হতে কোন পরিত্রাণস্থল। পাবে না।” (১৮:৫২-৫৩)এই কিয়ামতের দিনেই তাদের সবকে শুনিয়ে একটা প্রশ্ন এও করা হবেঃ “তোমরা নবীদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে এবং তাদেরকে কতদূর সাহায্য সহযোগিতা করেছিলে?” প্রথমে তাওহীদ সম্পর্কে প্রশ্ন ও বিচার-বিশ্লেষণের আলোচনা ছিল। এখন রিসালাত সম্পর্কে সওয়াল-জবাবের আলোচনা হচ্ছে। অনুরূপভাবে কবরেও প্রশ্ন হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে? তোমার নবী কে? এবং তোমার দ্বীন কি?" মুমিন উত্তর দেয়ঃ “আমার প্রতিপালক ও মাবুদ আল্লাহ, আমার রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ), যিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ছিলেন এবং আমার দ্বীন হলো ইসলাম।” তবে কাফির কোন উত্তর দিতে পারে না। ভীত-সন্ত্রস্ত ও হতভম্ব হয়ে বলেঃ “আমি এসব জানি না।” সে অন্ধ ও বধির হয়ে যায়। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যে এই দুনিয়ায় অন্ধ সে পরকালেও অন্ধ এবং সে চরম পথভ্রষ্ট।” (১৭:৭২) সমস্ত দলীল প্রমাণ তার দৃষ্টি হতে সরে যাবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। বংশ তালিকার কোন প্রশ্ন করা হবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে সে অবশ্যই সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এখানে (আরবি) শব্দটি (আরবি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ মুমিন অবশ্যই কৃতকার্য ও সফলকাম হবে।

وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ ۗ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

📘 Please check ayah 28:70 for complete tafsir.

وَرَبُّكَ يَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُورُهُمْ وَمَا يُعْلِنُونَ

📘 Please check ayah 28:70 for complete tafsir.

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي ۖ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ

📘 Please check ayah 28:9 for complete tafsir.

وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَىٰ وَالْآخِرَةِ ۖ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

📘 ৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, একমাত্র তিনিই সৃষ্টিকর্তা এবং সমস্ত আধিপত্য তাঁরই। না তার সাথে কেউ বিতর্কে লিপ্ত হতে পারে, না কেউ তাঁর শরীক হতে পারে। তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করে থাকেন এবং যাকে চান নিজের বিশিষ্ট বান্দা বানিয়ে নেন। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। ভাল ও মন্দ সবই তাঁরই হাতে। সবকেই তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। কারো কোন অধিকার নেই। শব্দের অর্থ এটাই। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিনা নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।” (৩৩:৩৬)সঠিক দু’টি উক্তিতেই (আরবি) শব্দটি (আরবি) বা নেতিবাচক রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ইবনে জারীর (রঃ) বলেছেন যে, (আরবি) এখানে ব্যবহৃত হয়েছে (আরবি) অর্থে। অর্থাৎ আল্লাহ ওটাই পছন্দ করেন যাতে তাদের মঙ্গল রয়েছে। কিন্তু সঠিক কথা এটাই যে, এখানে (আরবি) ব্যবহৃত হয়েছে (আরবি) অর্থে। যেমন এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে। এ আয়াতটি এই বর্ণনাতেই রয়েছে যে, মাখলুককে সৃষ্টি করা, তকদীর নির্ধারণ করা ইত্যাদি সবকিছুর অধিকার একমাত্র আল্লাহর। তিনি অতুলনীয়। এজন্যেই এ আয়াতের শেষে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক জানেন তাদের অন্তরে যা গোপন রয়েছে এবং তারা যা প্রকাশ করে। হে মানুষ! তোমরা যা গোপন কর বা প্রকাশ কর, সবকিছুই তাঁর কাছে প্রকাশমান, তিনি সবই জানেন। দিবসে ও রজনীতে যা কিছু ঘটছে, কিছুই তার কাছে গোপন থাকে না। মা'বুদ হওয়ার ব্যাপারেও তিনি একক। দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই, তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। তার হুকুম কেউই রদ করতে পারে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন। এমন কেউ নেই যে তার ইচ্ছা থেকে তাঁকে ফিরাতে পারে। হিকমত ও রহমত তারই পবিত্র সত্তায় রয়েছে। কিয়ামতের দিন তোমরা তারই নিকট ফিরে যাবে। তিনি। তোমাদের সকলকেই তোমাদের আমলের প্রতিদান প্রদান করবেন। তার কাছে তোমাদের কোন কাজই গোপন নেই। তিনি সেই দিন সৎ লোকদেরকে পুরস্কার ও অসৎ লোলেদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। ঐ দিন তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে পূর্ণ ফায়সালা করে দিবেন।

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ ۖ أَفَلَا تَسْمَعُونَ

📘 Please check ayah 28:73 for complete tafsir.

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ

📘 Please check ayah 28:73 for complete tafsir.

وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

📘 ৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা একটু চিন্তা করে দেখো তো, তিনি তোমাদের কোন চেষ্টা তদবীর ছাড়াই বরাবরই দিবস ও রজনীকে আনয়ন করতে রয়েছেন। যদি শুধু রাত্রিই থেকে যায় তবে তোমরা। কঠিন অসুবিধার মধ্যে পড়ে যাবে, তোমাদের কাজ-কর্ম হয়ে যাবে বন্ধ এবং তোমাদের জীবন যাপন করা অত্যন্ত কষ্টকর হবে। এমতাবস্থায় তোমরা এমন কাউকেও পাবে কি, যে তোমাদের জন্যে দিন আনয়ন করতে পারে? যার ফলে তোমরা আলোকের মধ্যে চলতে পার? অতঃপর নিজেদের কাজ-কর্মে লেগে যেতে পার? বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, তোমরা আল্লাহর কথায় মোটেই কর্ণপাত কর না। অনুরূপভাবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ যদি শুধু দিনই রেখে দেন তাহলেও তোমাদের জীবন তিক্ত ও দুঃখময় হয়ে যাবে। তোমরা হয়ে পড়বে ক্লান্ত, শ্রান্ত। বিশ্রামের কোন সুযোগ তোমরা পাবে না। এমতাবস্থায় এমন কেউ আছে কি, যে তোমাদেরকে রাত্রি এনে দিতে পারে? যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? কিন্তু তোমাদের চক্ষু থাকা সত্ত্বেও তোমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর দয়াপূর্ণ কাজগুলো দেখে কিছুই চিন্তা ভাবনা কর না, এটা বড়ই দুঃখপূর্ণ ব্যাপারই বটে।এটা একমাত্র আল্লাহ তাআলারই মেহেরবানী যে, তিনি তোমাদের জন্যে। দিবস ও রজনী দু’টোরই ব্যবস্থা রেখেছেন, যাতে তোমরা রাত্রে বিশ্রাম করতে পার এবং দিনে কাজ-কর্মে ও ব্যবসা বাণিজ্যে লিপ্ত থাকতে পার। আর যিনি তোমাদের প্রকৃত মালিক, যিনি ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী তার অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ

📘 Please check ayah 28:75 for complete tafsir.

وَنَزَعْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا فَقُلْنَا هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ فَعَلِمُوا أَنَّ الْحَقَّ لِلَّهِ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ

📘 ৭৪-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর মুশরিকদেরকে দ্বিতীয়বার ধমক দিয়ে বলা হবেঃ দুনিয়ায় যাদেরকে তোমরা আমার শরীক বলে গণ্য করতে তারা আজ কোথায়? প্রত্যেক উম্মতের মধ্য হতে একজন সাক্ষী অর্থাৎ ঐ উম্মতের পয়গম্বর মনোনীত করা হবে এবং মুশরিকদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের শিক্মকের কোন দলীল তোমরা পেশ কর এবং ঐ সময় তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যাবে যে, প্রকৃতপক্ষেই ইবাদতের যোগ্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নয়। সুতরাং তারা কোন জবাব দিতে পারবে না। তাই তারা খুবই বিচলিত হয়ে পড়বে এবং তারা আল্লাহ তা'আলার উপর যা কিছু মিথ্যা আরোপ করেছিল সবই ভুলে যাবে।

۞ إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ ۖ وَآتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ

📘 Please check ayah 28:77 for complete tafsir.

وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ

📘 ৭৬-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কারূন ছিল হযরত মূসা (আঃ)-এর চাচাতো ভাই। ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বলেন যে, তার নসবনামা (বংশ তালিকা) হলো: কারূন ইবনে ইয়াসহাব ইবনে কাহিস। ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর মতে কারূন ছিল হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ)-এর চাচা। কিন্তু অধিকাংশ আলেম তাকে তার চাচাতো ভাই বলে থাকেন। কারূনের গলার স্বর ছিল খুবই সুমিষ্ট। সুমিষ্ট সুরে তাওরাত পাঠ করতো। কিন্তু সামেরী যেমন মুনাফিক ছিল, অনুরূপভাবে আল্লাহর এই শত্রুও মুনাফিক হয়ে গিয়েছিল। সে বড় সম্পদশালী ছিল বলে সম্পদের গর্বে গর্বিত হয়েছিল এবং আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল। তার কওমের মধ্যে সাধারণভাবে যে পোশাক প্রচলিত ছিল, সে ওর চেয়ে অর্ধহাত নীচু করে বানিয়েছিল, যাতে তার গর্ব ও ঐশ্বর্য প্রকাশ পায়। তার এতো বেশী ধন-সম্পদ ছিল যে, তার কোষাগারের চাবিগুলো উঠাবার জন্যে শক্তিশালী লোকদের একটি দল নিযুক্ত ছিল। তার অনেকগুলো কোষাগার ছিল এবং প্রত্যেক কোষাগারের চাবি ছিল পৃথক পৃথক, যা ছিল অর্ধহাত করে লম্বা। যখন ঐ চাবিগুলো তার সওয়ারীর সাথে খচ্চরগুলোর উপর বোঝাই করা হতো তখন এর জন্যে কপাল ও চারটি পা সাদা চিহ্নযুক্ত ষাটটি খচ্চর নির্ধারিত থাকতো। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। তার কওমের সম্মানিত, সৎ ও আলেম লোকেরা যখন তার দম্ভ এবং ঔদ্ধত্য চরম সীমায় পৌঁছতে দেখলেন তখন তারা তাকে উপদেশ দিলেনঃ “এতো দাম্ভিকতা প্রকাশ করো না, আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা হয়ো না, অন্যথায় তুমি তার কোপানলে পতিত হবে। জেনে রেখো যে, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না।” উপদেশদাতাগণ তাকে আরো বলতেনঃ “আল্লাহর দেয়া নিয়ামত যে তোমার নিকট রয়েছে। তদৃদ্বারা তার সন্তুষ্টি অনুসন্ধান কর এবং তার পথে ওগুলো হতে কিছু কিছু খরচ কর যাতে তুমি আখিরাতের অংশও লাভ করতে পার। আমরা একথা বলছি না যে, দুনিয়ায় তুমি সুখ ভোগ মোটেই করবে না। বরং আমরা বলি যে, তুমি দুনিয়াতেও ভাল খাও, ভাল পান কর, ভাল পোশাক পরিধান কর, বৈধ নিয়ামত দ্বারা উপকৃত হও এবং ভাল বিবাহ দ্বারা যৌন ক্ষুধা নিবারণ কর। কিন্তু নিজের চাহিদা পূরণ করার সাথে সাথে তুমি আল্লাহর হক ভুলে যেয়ো না। তিনি যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমি তাঁর সৃষ্টজীবের প্রতি অনুগ্রহ করো। জেনে রেখো যে, তোমার সম্পদে দরিদ্রদেরও হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক হকদারের হক তুমি আদায় করতে থাকো। আর তুমি পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। মানুষকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকো এবং জেনে রেখো যে, যারা আল্লাহর মাখলুককে কষ্ট দেয় এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন না।”

قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَىٰ عِلْمٍ عِنْدِي ۚ أَوَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهِ مِنَ الْقُرُونِ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَأَكْثَرُ جَمْعًا ۚ وَلَا يُسْأَلُ عَنْ ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ

📘 কওমের আলেমদের উপদেশবাণী শুনে কারূন যে জবাব দিয়েছিল তারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, সে বলেছিলঃ “তোমাদের উপদেশ তোমরা রেখে দাও। আমি খুব ভাল জানি যে, আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন আমি তার যথাযোগ্য হকদার। আর আল্লাহ এটা জানেন বলেই আমাকে এই সব দান করেছেন।” যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যখন মানুষকে কোন কষ্ট পৌঁছে তখন বড়ই বিনয়ের সাথে আমাকে ডাকতে থাকে, অতঃপর যখন আমি কোন নিয়ামত ও শান্তি তাকে প্রদান করি তখন সে বলে ফেলেঃ এটা আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি।” (৩৯:৪৯) তিনি আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “কষ্ট ও বিপদের পর যদি আমি তাকে আমার করুণার স্বাদ গ্রহণ করাই তখন সে অবশ্যই বলে ওঠে- এটা আমার জন্যেই অর্থাৎ আমি এর হকদার ছিলাম।” (৪১:৫০) কেউ কেউ বলেন যে, কারূন কিমিয়া শাস্ত্রবিদ ছিল। যে লোহা, পিতল ইত্যাদিকে স্বর্ণে পরিণত করার কৌশল জানে। কিন্তু এটা খুবই দুর্বল উক্তি। কিমিয়ার জ্ঞান আসলে কারো নেই। কেননা, কোন জিনিসের মূলকে বদলিয়ে দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। এর ক্ষমতা আর কেউই রাখে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে লোক সকল! একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হচ্ছে, তোমরা মনোেযোগ দিয়ে শ্রবণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা ডাকছো তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা তার জন্যে একত্রিত হয়।” (২২:৭৩)সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় অত্যাচারী আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির মত সৃষ্টি করার চেষ্টা করে? তাহলে সে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু বা একটি জব সৃষ্টি করুক তো দেখি?” এই হাদীসটি ঐ লোকদের ব্যাপারে প্রযোজ্য যারা ফটো বা ছবি উঠায় এবং শুধু বাহ্যিক আকৃতি নকল করে থাকে। এরপরেও যে ব্যক্তি দাবী করে যে, সে কিমিয়ার জ্ঞান রাখে, একটি জিনিসকে অপর জিনিসে রূপান্তরিত করতে পারে, যেমন লোহাকে সোনায় পরিণত করা ইত্যাদি, সে মিথ্যাবাদী ছাড়া কিছুই নয়। তবে রঙ ইত্যাদিকে বদলিয়ে দিয়ে ধোকাবাজী করা অন্য কথা। কিন্তু প্রকৃতভাবে এটা অসম্ভব। যারা এই কিমিয়ার দাবী করে তারা শুধু মিথ্যাবাদী, অজ্ঞ, ফাসেক ও অপবাদদাতা। এরূপ দাবী করে তারা শুধু মানুষকে প্রতারিত করে থাকে। হ্যাঁ, তবে আল্লাহ তাআলার কোন কোন ওলী হতে যে কোন কোন কারামত প্রকাশ পায় এবং কোন কোন জিনিস পরিবর্তিত হয়ে থাকে আমরা তা অস্বীকার করি না। এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের উপর বিশেষ অনুগ্রহ। এটা তাদের নিজেদের কোন ক্ষমতার কাজ নয়। এটা আল্লাহর হুকুমের ফল ছাড়া কিছুই নয়। এটা আল্লাহ তা'আলা তাঁর সৎ বান্দাদের মাধ্যমে স্বীয় মাখলুককে প্রদর্শন করে থাকেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত হায়ওয়াহ্ ইবনে শুরাইহ মিসরী (রঃ)-এর নিকট একদা একজন ভিক্ষুক এসে কিছু ভিক্ষা চায়। ঘটনাক্রমে ঐ সময় তাঁর কাছে দেয়ার মত কিছুই ছিল না। তার দুঃখ-দুর্দশা দেখে তিনি ব্যথিত হন। তিনি মাটি হতে একটি কংকর উঠিয়ে নেন এবং হাতে নাড়াচাড়া করে ঐ ভিক্ষুকের ঝুলিতে ফেলে দেন। সাথে সাথে ঐ কংকরটি লাল স্বর্ণে পরিণত হয়। হাদীস ও আসারে মু'জিযা ও কারামাতের আরো বহু ঘটনা রয়েছে, এখানে ওগুলো বর্ণনা করলে এ কিতাবের কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় বর্ণনা করা সম্ভব হলো না।কারো কারো উক্তি এই যে, কারূন ইসমে আযম জানতো, যা পাঠ করে সে দু'আ করেছিল। ফলে সে এতো বড় ধনী হয়েছিল। কারূনের এ উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ কারূনের এটা ভুল কথা। আল্লাহ তা'আলা যার প্রতি সদয় হন তাকেই তিনি সম্পদশালী করে থাকেন এটা মোটেই ঠিক নয়। তার পূর্বে তিনি তার চেয়ে বেশী শক্তিশালী ও প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাহলে বুঝা গেল যে, মানুষের সম্পদশালী হওয়া তার প্রতি আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শন নয়। যে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় এবং কুফরীর উপর অটল থাকে তার পরিণাম মন্দ হয়ে থাকে। পাপীদেরকে তাদের পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোন প্রয়োজন হবে না। তার আমলনামাই তার হিসাব গ্রহণের জন্যে যথেষ্ট হবে। কারূনের ধারণা ছিল যে, তার মধ্যে মঙ্গল ও সততা রয়েছে বলেই আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তার বিশ্বাস ছিল যে, সে ধনী হওয়ার যোগ্য। তার মতে তাকে আল্লাহ তাআলা ভাল না বাসলে এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকলে তাকে এ নিয়ামত প্রদান করতেন না।

فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ ۖ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ

📘 Please check ayah 28:80 for complete tafsir.

فَالْتَقَطَهُ آلُ فِرْعَوْنَ لِيَكُونَ لَهُمْ عَدُوًّا وَحَزَنًا ۗ إِنَّ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا كَانُوا خَاطِئِينَ

📘 Please check ayah 28:9 for complete tafsir.

وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَلَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ

📘 ৭৯-৮০ নং আয়াতের তাফসীর একদা কারূন অতি মূল্যবান পোশাক পরিহিত হয়ে, অত্যন্ত জাঁকজমক সহকারে উত্তম সওয়ারীতে আরোহণ করে, স্বীয় গোলামদের মূল্যবান পোশাক পরিয়ে সামনে ও পিছনে নিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বের হলো। তার এই জাকজমক ও শান-শওকত দেখে দুনিয়াদারদের মুখ পানিতে ভরে গেল এবং তারা বলতে লাগলো: আহা! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকে যদি তা দেয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান। আলেমরা তাদের মুখে একথা শুনে তাদেরকে এই ধারণা হতে বিরত রাখতে চাইলেন এবং বুঝাতে লাগলেনঃ “দেখো, আল্লাহ। তা'আলা তাঁর সৎ ও মুমিন বান্দাদের জন্যে নিজের কাছে যা কিছু তৈরী করে রেখেছেন তা এর চেয়ে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীলগণ ছাড়া কেউ এটা লাভ করতে পারে না।” ভাবার্থ এটাও যে, এরূপ পবিত্র কথা ধৈর্যশীলদের মুখ দিয়েই বের হয়। যারা দুনিয়ার আকর্ষণ হতে দূরে থাকে এবং পরকালের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই অবস্থায় খুব সম্ভব এই কথা ঐ আলেমদের নয়, বরং তাদের প্রশংসায় এই পরবর্তী কথা আল্লাহর পক্ষ হতেই এসে থাকবে।

فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ

📘 Please check ayah 28:82 for complete tafsir.

وَأَصْبَحَ الَّذِينَ تَمَنَّوْا مَكَانَهُ بِالْأَمْسِ يَقُولُونَ وَيْكَأَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ ۖ لَوْلَا أَنْ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَا ۖ وَيْكَأَنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ

📘 ৮১-৮২ নং আয়াতের তাফসীর উপরে কারূনের ঔদ্ধত্য ও বেঈমানীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে তার পরিণামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।হযরত সালিম (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “একটি লোক তার লুঙ্গী লটকিয়ে গর্বভরে চলছিল, এমতাবস্থায় তাকে ভূ-গর্ভে প্রোথিত করা হয়। কিয়ামত পর্যন্ত সে প্রোথিত হতেই থাকবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বে একটি লোক দু’টি সবুজ চাদরে নিজেকে আবৃত করে দম্ভভরে চলছিল, এমতাবস্থায় আল্লাহ তা'আলা যমীনকে নির্দেশ দিলেনঃ তাকে গিলে ফেল।” (এ রিওয়াইয়াতটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হাফিয মুহাম্মাদ ইবনে মুনযির (রঃ) তাঁর কিতাবুল আজায়েবে বর্ণনা করেছেন যে, নওফল ইবনে মাসাহিক (রঃ) বলেন, নাজরানের মসজিদে আমি এক যুবককে দেখতে পাই। আমি তার দিকে চেয়ে থাকি এবং তার দেহের দৈর্ঘ্য, পূর্ণতা এবং সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেঃ “আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন?” আমি উত্তরে বলিঃ তোমার সৌন্দর্য ও পূর্ণতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। সে তখন বলেঃ “স্বয়ং আল্লাহও আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। তার মুখের কথা মুখেই আছে, হঠাৎ সে ছোট হতে শুরু করে এবং ছোট ও খাটো হতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত সে কনিষ্ঠাঙ্গুলী বরাবর হয়ে যায়। তখন তার একজন আত্মীয় তাকে ধরে তার জামার আস্তীনে ভরে নিয়ে চলে যায়।” এটাও বর্ণিত আছে যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর বদ দু'আর কারণেই কারূন ধ্বংস হয়েছিল। তার ধ্বংসের কারণের ব্যাপারে বহু মতভেদ রয়েছে।একটি কারণ এরূপ বর্ণিত আছে যে, অভিশপ্ত কারূন এক ব্যভিচারিণী নারীকে বহু মালধন দিয়ে এই কাজে উত্তেজিত করে যে, যখন মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের জামাআতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা'আলার কিতাব পাঠ করতে শুরু করবেন ঠিক ঐ সময়ে যেন সে জনসম্মুখে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! তুমি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছো।” কারূনের এই কথামত ঐ স্ত্রীলোকটি তা-ই করে। অর্থাৎ কারূনের শিখানো কথাই বলে। তার একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) কেঁপে উঠেন এবং তৎক্ষণাৎ দু'রাকআত নামায আদায় করে ঐ স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেনঃ “আমি তোমাকে ঐ আল্লাহর কসম দিচ্ছি যিনি সমুদ্রের মধ্যে রাস্তা করে দিয়েছিলেন, তোমার কওমকে ফিরাউনের অত্যাচার হতে রক্ষা করেছেন এবং আরো বহু অনুগ্রহ করেছেন, সত্য ঘটনা যা কিছু রয়েছে সবই তুমি খুলে বল।” স্ত্রীলোকটি তখন বললো: “হে মূসা (আঃ)! আপনি যখন আমাকে আল্লাহর কসমই দিলেন তখন আমি সত্য কথাই বলছি। কারূন আমাকে বহু টাকা-পয়সা দিয়েছে এই শর্তে যে, আমি যেন বলি আপনি আমার সাথে এরূপ এরূপ কাজ করেছেন। আমি আপনাকে তা-ই বলেছি। এজন্যে আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে তাওবা করছি।” তার এ কথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) পুনরায় সিজদায় পড়ে যান এবং কারূনের শাস্তি প্রার্থনা করেন। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাঁর নিকট অহী আসেঃ “আমি যমীনকে তোমার বাধ্য করে দিলাম।” হযরত মূসা (আঃ) তখন সিজদা হতে মাথা উঠিয়ে যীমনকে বলেনঃ “তুমি কারূন ও তার প্রাসাদকে গিলে ফেল।” যমীন তা-ই করে।। কারূনের ধ্বংসের এ কারণটি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত সুদ্দী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় কারণ এই বলা হয়েছে যে, একদা কারূনের সওয়ারী অতি জাঁকজমকের সাথে চলতে শুরু করে। সে অত্যন্ত মূল্যবান পোশাক পরিহিত হয়ে একটি অতি মূল্যবান সাদা খচ্চরের উপর আরোহণ করে চলছিল। তার সাথে তার গোলামগুলোও ছিল, যারা সবাই রেশমী পোশাক পরিহিত ছিল। এইভাবে সে চলতেছিল। আর ওদিকে হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। যখন কারূন তার দলবলসহ ঐ জনসমাবেশের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে তখন হযরত মূসা (আঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে কারূন! আজ এমন শান-শওকতের সাথে গমনের কারণ কি?” সে উত্তরে বলেঃ “ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তোমাকে একটি ফযীলত দান করেছেন এবং আমাকেও তিনি একটি ফযীলত দান করেছেন। যদি তিনি তোমাকে নবুওয়াত দান করে থাকেন তবে আমাকে তিনি দান করেছেন ধন-দৌলত ও মান-মর্যাদা। যদি আমার মর্যাদা সম্পর্কে তুমি সন্দেহ পোষণ করে থাকো তবে আমি প্রস্তুত আছি যে, চল, আমরা দু’জন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, দেখা যাক আল্লাহ কার দু'আ কবুল করেন?” হযরত মূসা (আঃ) কারূনের এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে যান এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হন। অতঃপর তিনি তাকে বলেনঃ “হে কারূন! আমি প্রথমে প্রার্থনা করবো, না তুমি প্রথমে করবে?” সে জবাবে বলেঃ “আমিই প্রথমে দুআ করবো।” একথা বলে সে দু'আ করতে শুরু করে এবং শেষও করে দেয়। কিন্তু তার দু'আ কবূল হলো না। হযরত মূসা (আঃ) তখন তাকে বললেনঃ “তাহলে আমি এখন দু'আ করি?” সে উত্তরে বলেঃ “হ্যা, কর।” অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তা'আলার নিকট দু'আ করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি যমীনকে নির্দেশ দিন যে, আমি তাকে যে হুকুম করবো তাই যেন সে পালন করে।” আল্লাহ তা'আলা তাঁর দু'আ কবুল করেন এবং তাঁর নিকট অহী অবতীর্ণ করেনঃ “হে মূসা (আঃ)! যমীনকে আমি তোমার হুকুম পালনের নির্দেশ দিলাম।” হযরত মূসা (আঃ) তখন যমীনকে বললেনঃ “হে যমীন! তুমি কারূন ও তার লোকদেরকে ধরে ফেল।” তাঁর একথা বলা মাত্রই তাদের পাগুলো যমীনে প্রোথিত হয়। তিনি আবার বলেনঃ “আরো ধরো।” তখন তাদের হাঁটু পর্যন্ত প্রোথিত হয়ে যায়। পুনরায় তিনি বলেনঃ “আরো পাকড়াও কর।” ফলে তাদের কাঁধ পর্যন্ত প্রোথিত হয়। তারপর তিনি যমীনকে বলেনঃ “তার মাল ও তার কোষাগারও পুঁতে ফেলো।” তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত ধন-ভাণ্ডার ও সম্পদ এসে গেল। কারূন সবগুলোই স্বচক্ষে দেখে নিলো। অতঃপর তিনি যমীনকে ইঙ্গিত করলেনঃ “এগুলোসহ তাদেরকে তোমার ভিতরে করে নাও।” সাথে সাথে কারূন তার দলবল, প্রাসাদ, ধন-দৌলত এবং কোষাগারসহ যমীনে প্রোথিত হয়ে গেল। এভাবে তার ধ্বংস সাধিত হলো। যমীন যেমন ছিল তেমনই হয়ে গেল। বর্ণিত আছে যে, সপ্ত যমীন পর্যন্ত তারা প্রোথিত হয়। একটি বর্ণনা এও আছে। যে, প্রত্যহ তারা এক মানুষ বরাবর নীচের দিকে প্রোথিত হতে রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা এই শাস্তির মধ্যেই থাকবে। এখানে বানী ইসরাঈলের আরো বহু রিওয়াইয়াত রয়েছে। কিন্তু আমরা ওগুলো ছেড়ে দিলাম। কারূনের স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারতো এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। সে ধ্বংস হয়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং তার মূলোৎপাটন করা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ পূর্বদিন যারা তার মত হবার কামনা করেছিল তারা তার শোচনীয় অবস্থা দেখে বলতে লাগলো: আমরা ভুল বুঝেছিলাম। সত্যি ধন-দৌলত আল্লাহর সন্তুষ্টির নিদর্শন নয়। এটা তো আল্লাহর হিকমত বা নৈপুণ্য, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্যে ইচ্ছা তার রিযক বর্ধিত করেন এবং যার জন্যে ইচ্ছা হ্রাস করেন। তাঁর হিকমত তিনিই জানেন। যেমন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের মধ্যে চরিত্রকে ঐভাবে বন্টন করেছেন, যেমনিভাবে তোমাদের মধ্যে। রিযক বন্টন করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকেও দুনিয়া (অর্থাৎ ধন-দৌলত) দান করেন এবং যাকে ভালবাসেন না তাকেও দান করেন। আর দ্বীন একমাত্র ঐ ব্যক্তিকে দান করেন যাকে তিনি ভালবাসেন।”কারূনের মত হওয়ার বাসনাকারীরা আরো বললো: যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরও তিনি ভূ-গর্ভে প্রোথিত করতেন। সত্যি, কাফিররা কখনো সফলকাম হয় না। না তারা দুনিয়ায় কৃতকার্য হয়, না আখিরাতে তারা পরিত্রাণ পাবে।(আরবি)-এর অর্থ নিয়ে আরবী ব্যাকরণবিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এটা (আরবি)-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এটাকে(আরবি) বা হালকা করে (আরবি) রয়ে গেছে এবং (আরবি)-এর যবরটি শব্দ। বা উহ্য থাকার প্রতি ইঙ্গিত বহন করছে। কিন্তু এই উক্তিটিকে ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) দুর্বল বলেছেন। কিন্তু আমি বলি যে, এটাকে দুর্বল বলা ঠিক নয়। কুরআন কারীমে এর লিখন এক সাথে হওয়া ওর দুর্বল হওয়ার কারণ হতে পারে না। কেননা, (আরবি)বা লিখনের পদ্ধতি তো পারিভাষিক আদেশ। যা প্রচলিত হয় তাই ধর্তব্য হয়ে থাকে। এর দ্বারা অর্থের উপর কোন ক্রিয়া হয় না। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।অন্য উক্তি এই যে, এটা (আরবি)-এর অর্থে ব্যবহৃত। আর একটি বর্ণনা এও আছে যে, এখানে দুটি শব্দ রয়েছে অর্থাৎ (আরবি) এবং (আরবি) শব্দটি বিস্ময় প্রকাশের জন্যে অথবা সতর্কতা প্রকাশের জন্যে। আর (আরবি) শব্দটি (আরবি) (আমি ধারণা করি)-এর অর্থে ব্যবহৃত। এসব উক্তির মধ্যে সবল উক্তি হলো এটাই যে, (আরবি) এর অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ তুমি কি দেখনি? যেমন এটা হযরত কাতাদা (রঃ)-এর উক্তি। আরবী কবিতাতেও এই অর্থই নেয়া হয়েছে।

تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا ۚ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

📘 Please check ayah 28:84 for complete tafsir.

مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ خَيْرٌ مِنْهَا ۖ وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِينَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 ৮৩-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, জান্নাত ও আখিরাতের নিয়ামত শুধু তারাই লাভ করবে যাদের অন্তর সদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে এবং যারা পার্থিব জীবন বিনয়, নম্রতা ও উত্তম চরিত্রের সাথে অতিবাহিত করে এবং নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় ও উচ্চ মনে করে না। যারা ভূ-পৃষ্ঠে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করে না। যারা কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে না এবং পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে না। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার চামড়া তার সঙ্গীর জুতার চামড়া অপেক্ষা ভালো হোক সে-ই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা উদ্দেশ্যে এই যে, যখন সে গর্ব ও অহংকার করবে। আর যদি উদ্দেশ্য শুধু সৌন্দর্য প্রকাশ হয় তবে তাতে কোন দোষ নেই। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, একটি লোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো এতে সন্তুষ্ট থাকি যে, আমার চাদর ভাল হালে, আমার জুতা সুন্দর হালে, এটাও কি অহংকার হিসেবে গণ্য হবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “না, না। এটা তো সৌন্দর্য। আর আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করে থাকেন।এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ যে কেউ সৎ কর্ম করে সে তার কর্ম অপেক্ষা উত্তম ফল পাবে। পক্ষান্তরে যে মন্দ কর্ম করে সে শাস্তি পাবে শুধু তার কর্ম অনুপাতে। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে মন্দ কাজ করবে তাকে উল্টোমুখে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।” (২৭:৯০) এরপরে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে যা তোমরা আমল করতে।” (২৭:৯০) আর এটা হলো অতিরিক্ত প্রদান ও ন্যায় বিচারের স্থান।

إِنَّ الَّذِي فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لَرَادُّكَ إِلَىٰ مَعَادٍ ۚ قُلْ رَبِّي أَعْلَمُ مَنْ جَاءَ بِالْهُدَىٰ وَمَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

📘 Please check ayah 28:88 for complete tafsir.

وَمَا كُنْتَ تَرْجُو أَنْ يُلْقَىٰ إِلَيْكَ الْكِتَابُ إِلَّا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ ظَهِيرًا لِلْكَافِرِينَ

📘 Please check ayah 28:88 for complete tafsir.

وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ آيَاتِ اللَّهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ إِلَيْكَ ۖ وَادْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

📘 Please check ayah 28:88 for complete tafsir.

وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۘ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ ۚ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

📘 ৮৫-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহর তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তুমি তোমার রিসালাতের তাবলীগ করতে থাকো, মানুষকে আল্লাহর কালাম শুনিয়ে যাও, আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে কিয়ামতের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। অতঃপর সেখানে তোমাকে নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “অবশ্যই আমি জিজ্ঞাসাবাদ করবো যাদের নিকট রাসূল পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে এবং অবশ্যই আমি প্রশ্ন করবো রাসূলদেরকে।” (৭:৬) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “ঐদিন রাসূলদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করা হবে তোমাদেরকে কি জবাব দেয়া হয়েছিল?” (৫:১০৯) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আনয়ন করা হবে নবীগণকে এবং সাক্ষীদেরকে।”সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, (আরবি) দ্বারা জান্নাতও উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার মৃত্যুও হতে পারে এবং পুনরুত্থানও অর্থ হতে পারে। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জীবিত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা মক্কাকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মক্কা যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্মভূমি ছিল।যহাক (রঃ) বলেন যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা হতে বের হন এবং জুহফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছেন তখন মক্কার আকাঙ্ক্ষা তাঁর অন্তরে জেগে ওঠে, ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। তার সাথে ওয়াদা করা হয় যে, তাঁকে মক্কায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। এর দ্বারা এটাও বের হচ্ছে যে, এটা মাদানী আয়াত। অথচ পুরো সূরাটি মক্কী। এও বলা হয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসকে বুঝানো হয়েছে। যিনি এই মত পোষণ করেছেন, সম্ভবতঃ কিয়ামতই তার উদ্দেশ্য। কেননা, বায়তুল মুকাদ্দাসই হাশরের ময়দান হবে। এই সমুদয় উক্তিকে একত্রিত করার উপায় এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কখনো তাফসীর করেছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মক্কায় ফিরে যাওয়ার দ্বারা, যা মক্কা বিজয় দ্বারা পূর্ণ হয়। আর এটা রাসূলল্লাহ (সঃ)-এর বয়স পূর্ণ হয়ে যাওয়ার একটি বড় নিদর্শন ছিল। যেমন তিনি সূরায়ে (আরবি) এর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। হযরত উমার (রাঃ) তার অনুকূলেই মত দিয়েছিলেন। তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ “এ ব্যাপারে আপনি যা জানেন, আমিও তাই জানি।” এটা একই কারণ যে, তার থেকেই এই আয়াত দ্বারা যেখানে মক্কা’ বর্ণিত আছে সেখানেই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তেকাল’ও বর্ণিত আছে। আবার তিনি কখনো জান্নাত’ তাফসীর করেছেন, যেটা তাঁর আবাসস্থল এবং তাঁর তাবলীগে রিসালাতের প্রতিদান যে, তিনি দানব ও মানবকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান করেছেন। আর তিনি ছিলেন সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বাকপটু ও উত্তম।এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি তোমার বিরুদ্ধাচারীদেরকে ও তোমাকে অবিশ্বাসকারীদেরকে বলে দাও- কে সৎ পথের নির্দেশ এনেছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে তা আমার প্রতিপালক খুব ভাল জানেন।আল্লাহ তা'আলা তাঁর আর একটি বড় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অহী অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আশা করেননি যে, তার উপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হবে। এটা তো শুধু তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং কাফিরদের সহায়ক হওয়া তাঁর জন্যে মোটেই সমীচীন নয়। তাদের থেকে পৃথক থাকাই তার উচিত। তাঁর এই ঘোষণা দেয়া উচিত যে, তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণকারী ।অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর এই কাফিররা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলো থেকে বিমুখ না করে। অর্থাৎ এই লোকগুলো যে তোমার ও দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণ করছে এবং তোমার অনুসরণ হতে জনগণকে ফিরিয়ে রাখছে এতে তুমি যেন মনঃক্ষুন্ন হয়ে তোমার কাজ থেকে বিরত না হও। বরং তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। আল্লাহ তোমার কালেমাকে পুরোকারী, তোমার দ্বীনের পৃষ্ঠপোষকতাকারী, তোমার রিসালাতকে জয়যুক্তকারী এবং তোমার দ্বীনকে সমস্ত দ্বীনের উপর বুলন্দকারী। সুতরাং তুমি জনগণকে তোমার প্রতিপালকের ইবাদতের দিকে আহ্বান করতে থাকো, যিনি এক ও শরীকবিহীন। তোমার জন্যে এটা উচিত নয় যে, তুমি কাফিরদের সহায়তা করবে। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও আহ্বান করো না। ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই। উলুহিয়্যাতের যোগ্য একমাত্র তাঁরই বিরাট সত্তা। তিনিই চিরস্থায়ী ও সদা বিরাজমান। সমস্ত সৃষ্টজীব মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু তাঁর মৃত্যু নেই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে যত কিছু আছে সবই নশ্বর, অবিনশ্বর শুধু তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমময়, মহানুভব।” (৫৫:২৬-২৭) দ্বারা আল্লাহর সত্তাকে বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “কবি লাবীদ একটি চরম সত্য কথা বলেছে। সে বলেছেঃ (আরবি) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই বাতিল বা অসার।” মুজাহিদ (রঃ) এবং সাওরী (রঃ) বনে যে,(আরবি)-এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ সবকিছুই ধ্বংসশীল, কিন্তু শুধু ঐ কাজ যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়। কবিদের কবিতাতেও শব্দটি এই ভাবার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন কোন কবি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যে আল্লাহ সমস্ত বান্দার প্রতিপালক, যার দিকে মনোযোগ ও বাসনা, যার জন্যে আমল, তার নিকট আমি আমার এমন পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যা আমি গণনা করে শেষ করতে পারবো না।” এই উক্তি পূর্বের উক্তির বিপরীত নয়। এটাও নিজের জায়গায় ঠিক আছে যে, মানুষের সব কাজই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, শুধুমাত্র ঐ কাজের পুণ্য সে লাভ করবে যা একমাত্র তারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সে করেছে। আর প্রথম উক্তিটির ভাবার্থও সম্পূর্ণরূপে সঠিক যে, সমস্ত প্রাণী ধ্বংস ও নষ্ট হয়ে যাবে, শুধুমাত্র আল্লাহর সত্তা বাকী থাকবে যা ধ্বংস ও নষ্ট হওয়া থেকে বহু ঊর্ধ্বে। তিনিই প্রথম, তিনিই। শেষ। সবকিছুর পূর্বেও তিনি ছিলেন এবং সবকিছুর পরেও তিনি থাকবেন।বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত ইবনে উমার (রাঃ) নিজের অন্তরকে দৃঢ় করতে চাইতেন তখন তিনি জঙ্গলে চলে যেতেন এবং কোন ভগ্নাবশেষের সামনে দাড়িয়ে ব্যথিত সুরে বলতেনঃ “তোমার পরিবারবর্গ কোথায়?” অতঃপর স্বয়ং এর উত্তরে তিনি। (আরবি)এই আয়াতটিই পাঠ করতেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। তিনি প্রত্যেককেই পুণ্য ও পাপের প্রতিদান প্রদান করবেন। তিনি পুণ্যের পুরস্কার ও পাপের শাস্তি দিবেন।

وَقَالَتِ امْرَأَتُ فِرْعَوْنَ قُرَّتُ عَيْنٍ لِي وَلَكَ ۖ لَا تَقْتُلُوهُ عَسَىٰ أَنْ يَنْفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

📘 ৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর বর্ণিত আছে যে, যখন বানী ইসরাঈলের হাজার হাজার পুত্র সন্তানকে হত্যা করে দেয়া হয় তখন কিবতীদের এই আশংকা হয় যে, এভাবে যদি বানী ইসরাঈলকে খতম করে দেয়া হয় তবে যেসব জঘন্য ও নিকৃষ্ট কাজ হুকুমতের পক্ষ হতে তাদের দ্বারা করিয়ে নেয়া হচ্ছে সেগুলো হয়তো তাদেরই দ্বারা করিয়ে নেয়া হবে। তাই দরবারে তারা মিটিং ডাকলো এবং মিটিং এ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে এক বছর হত্যা করা হবে এবং পরের বছর হত্যা করা হবে না। ঘটনাক্রমে যে বছর হযরত হারূন (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন সেই বছর ছিল হত্যা বন্ধ রাখার বছর। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) ঐ বছর জন্মগ্রহণ করেন যে বছর বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে সাধারণভাবে হত্যা করা হচ্ছিল। স্ত্রী লোকেরা চক্কর লাগিয়ে গর্ভবতী নারীদের খোঁজ খবর নিচ্ছিল এবং তাদের নামগুলো তালিকাভুক্ত করছিল। গর্ভপাতের সময় ঐ মহিলাগুলো হাযির হয়ে যেতো। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তারা ফিরে যেতো। আর পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা সাথে সাথে জল্লাদদেরকে খবর দিয়ে দিতে এবং তৎক্ষণাৎ জল্লাদেরা দৌড়ে এসে পিতা-মাতার সামনে তাদের ঐ পুত্র সন্তানকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে চলে যেতো।হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা যখন তাকে গর্ভে ধারণ করেন তখন সাধারণ গর্ভধারণের মত তার গর্ভ প্রকাশ পায়নি। তাই যেসব নারী ও ধাত্রী গর্ভের সত্যতা নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিতা ছিল তারা তার গর্ভবতী হওয়া টের পায়নি। অবশেষে হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। তাঁর মাতা অত্যন্ত আতংকিত হয়ে পড়েন। তাঁর প্রতি তাঁর মাতার স্নেহ-মমতা এতো বেশী ছিল যা সাধারণতঃ অন্যান্য নারীদের থাকে না। মহান আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর চেহারা এমনই মায়াময় করেছিলেন যে, শুধু তার মা কেন, যেই তাঁর দিকে একবার তাকাতো তারই অন্তরে তার প্রতি মহব্বত জমে যেতো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম।” (২০:৩৯)হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা যখন তার ব্যাপারে সদা আতংকিতা ও উৎকণ্ঠিতা থাকেন তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁকে ইঙ্গিতে নির্দেশ দেনঃ “তুমি শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাকো। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশংকা করবে তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং তুমি ভয় করো না, দুঃখ করো না; আমি তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দিবো এবং তাকে রাসূলদের একজন করবো।” তার বাড়ী নীল দরিয়ার তীরেই অবস্থিত ছিল। আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা একটি বাক্স বানিয়ে নিলেন এবং তাকে ঐ বাসের মধ্যে রেখে দিলেন। তাঁর মাতা তাঁকে দুধ পান করিয়ে দিয়ে ঐ বাকসের মধ্যে শুইয়ে দিতেন। আতংকের অবস্থায় ঐ বাক্সটিকে তিনি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতেন এবং একটি দড়ি দ্বারা বাক্সটিকে বেঁধে রাখতেন। ভয় কেটে যাওয়ার পর ওটা আবার টেনে নিতেন।একদিন এমন একটি লোকে তার বাড়ীতে আসলো যাকে তিনি অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি তিনি শিশুকে বাসে রেখে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। কিন্তু ভয়ে তাড়াতাড়ি এ কাজ করার কারণে তিনি দড়ি দ্বারা বাক্সটিকে বেঁধে রাখতে ভুলে গেলেন। বাসটি পানির তরঙ্গের সাথে জোরে প্রবাহিত হতে লাগলো এবং ভাসতে ভাসতে ফিরাউনের প্রাসাদের পার্শ্ব দিয়ে চলতে থাকলো। এ দেখে দাসীরা ওটা উঠিয়ে নিয়ে ফিরাউনের স্ত্রীর কাছে গেল। পথে তারা এই ভয়ে বাত্সটি খুলেনি যে, হয়তো বা তাদের উপর কোন অপবাদ দেয়া হবে। ফিরাউনের স্ত্রীর নিকট বাটি খোলা হলে দেখা গেল যে, ওর মধ্যে একটি নূরানী চেহারার অত্যন্ত সুন্দর সুস্থ শিশু শায়িত রয়েছে। শিশুটিকে দেখা মাত্রই তার অন্তর তার প্রতি মহব্বতে পূর্ণ হয়ে গেল। আর তার প্রিয় রূপ তার অন্তরে ঘর করে নিলো। এতে প্রতিপালকের যুক্তি এই ছিল যে, তিনি ফিরাউনের স্ত্রীকে সুপথ প্রদর্শন করলেন এবং ফিরাউনের সামনে তার ভয় আনয়ন করলেন এবং তাকে ও তার দর্পকে চূর্ণ করে দিলেন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘ফিরাউনের লোকেরা তাকে (শিশুকে) উঠিয়ে নিলো। এর পরিণাম তো এই ছিল যে, সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে। এতে একটি মজার কথা এও আছে যে, যার থেকে তারা বাঁচতে চেয়েছিল তিনিই তাদের মাথার উপর চড়ে বসলেন। এজন্যেই এর পরই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনী ছিল অপরাধী।বর্ণিত আছে যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) এমন এক কওমের নিকট চিঠি লিখেন যারা তকদীরকে বিশ্বাস করে না, তিনি চিঠিতে লিখেনঃ “আল্লাহ তাআলার পূর্ব ইমেই হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের শত্রু ও তার দুঃখের কারণ ছিলেন, যেমন আল্লাহ পাক (আরবি)-এই আয়াতে বলেছেন। অথচ তোমরা বলে থাকে যে, ফিরাউন যদি ইচ্ছা করতো তবে সে হযরত মূসা (আঃ)-এর বন্ধু ও সাহায্যকারী হতে পারতো?”শিশুটিকে দেখা মাত্রই ফিরাউন চমকে উঠলো এই ভেবে যে, হয়তো বানী ইসরাঈলের কোন মহিলা শিশুটিকে নদীতে নিক্ষেপ করেছে এবং হতে পারে যে, এটা ঐ শিশুই হবে যাকে হত্যা করার জন্যেই সে হাজার হাজার শিশুকে হত্যা করেছে, এটা চিন্তা করে সে ঐ শিশুকেও হত্যা করে ফেলার ইচ্ছা করলো। তখন তার স্ত্রী হযরত আসিয়া (রাঃ) শিশুটির প্রাণ রক্ষার জন্যে ফিরাউনের নিকট সুপারিশ করে বললোঃ এই শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্রীতিকর। তাকে হত্যা করো না। সে আমাদের উপকারে আসতে পারে, আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।' উত্তরে ফিরাউন বলেছিলঃ “সে তোমার জন্যে নয়ন-প্রীতিকর হতে পারে। কিন্তু আমার জন্যে নয়ন-প্রীতিকর হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহর কি মাহাত্ম্য যে, এটাই হলো। তিনি হযরত আসিয়া (রাঃ)-কে স্বীয় দ্বীন লাভের সৌভাগ্য দান করলেন এবং হযরত মূসা (আঃ)-এর কারণে তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তা হলেন। আর ঐ অহংকারী ফিরাউনকে তিনি স্বীয় নবী (আঃ)-এর মাধ্যমে ধ্বংস করে দিলেন। ইমাম নাসাঈ (রঃ) প্রমুখের উদ্ধৃতি দ্বারা সূরায়ে ‘তোয়া-হা’-এর তাফসীরে হাদীসে ফুতুনের মধ্যে এই ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।হযরত আসিয়া (রাঃ) বলেছিলেনঃ “সে আমাদের উপকারে আসতে পারে।” আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ আশা পূর্ণ করেন। হযরত মূসা (আঃ) দুনিয়ায় তার হিদায়াত লাভের মাধ্যম হন এবং আখিরাতে জান্নাত লাভের মাধ্যম হয়ে যান।হযরত আসিয়া (রাঃ) আরো বলেনঃ “আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।” তাদের কোন সন্তান ছিল না। তাই হযরত আসিয়া (রাঃ) শিশু হযরত মূসা (আঃ)-কে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার ইচ্ছা করলেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ কিভাবে গোপনে গোপনে স্বীয় ইচ্ছা পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন তা তারা বুঝতে পারেনি।