🕋 تفسير سورة الصافات
(As-Saffat) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَالصَّافَّاتِ صَفًّا
📘 Please check ayah 37:5 for complete tafsir.
إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
📘 ৬-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, দুনিয়ার আকাশকে তারকামণ্ডলী দ্বারা তিনি সুশোভিত করেছেন। (আরবী) ও (আরবী) উভয়ভাবেই পড়া হয়েছে। উভয় অবস্থাতেই একই অর্থ হবে। আকাশের নক্ষত্ররাজি এবং ওর সূর্যের কিরণ যমীনকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।” (৬৭:৫) আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশে রাশিচক্র বানিয়েছি এবং ওকে দর্শকদের চোখে সৌন্দর্যময় জিনিস করেছি। প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান হতে ওকে রক্ষিত রেখেছি। যে কেউ কোন কথা চুরি করে শুনবার চেষ্টা করে তার পশ্চাদ্ধাবন করে এক তীক্ষ্ণ অগ্নিশিখা।” (১৫:১৬-১৮) মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আসমানকে হিফাযত করেছি প্রত্যেক দুষ্ট ও উদ্ধত শয়তান হতে। ফলে তারা উধ্বজগতের কিছু শ্রবণ করতে পারে না। চুরি করে শুনবার চেষ্টা করলে এবং হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে তাদেরকে তাড়ানোর জন্যে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। তারা আকাশ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারে না। আল্লাহ্ শরীয়ত ও তকদীর বিষয়ের কোন আলাপ-আলোচনা তারা শুনতেই পারে না। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলো আমরা ... (আরবী) (৩৪:২৩) এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করে দিয়েছি।মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ যেই দিক থেকে তারা আকাশে উঠতে চায় সেই দিক থেকেই তাদের উপর অগ্নি নিক্ষেপ করা হয়। তাদেরকে বিতাড়িত ও লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে বাধা দেয়া ও আসতে না দেয়ার জন্যে এই শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তাদের জন্যে পরকালের স্থায়ী শাস্তি তো বাকী রয়েছেই যা হবে খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।”(৬৭:৫)প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হ্যা, তবে যদি কোন জ্বিন ফেরেশতাদের কোন কথা শুনে তার নীচের কাউকেও বলে দেয় তবে দ্বিতীয়জন তার নীচের অপরজনকে তা বলার পূর্বেই জ্বলন্ত অগ্নি তার পিছনে ধাবিত হয়। আর কখনো কখনো তারা সে কথা অপরের কানে পৌছিয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং এ কথাই যাদুকররা বর্ণনা করে থাকে।(আরবী) শব্দের অর্থ অত্যন্ত তে এবং অত্যধিক উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, পূর্বে শয়তানরা আকাশে গিয়ে বসতো এবং অহী শুনতো। ঐ সময় তাদের উপর তারকা নিক্ষিপ্ত হতো না। সেখানকার কথা নিয়ে তারা একের জায়গায় দশটি কথা বেশী করে বানিয়ে নিয়ে যাদুকরদেরকে বলে দিতো। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) নবুওয়াত লাভ করলেন তখন তাদের আকাশে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তখন থেকে তারা সেখানে গিয়ে কান পাতলে তাদের উপর অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হতো। যখন তারা এই নতুন ঘটনা অভিশপ্ত ইবলীসকে জানালো তখন সে বললোঃ “নতুন বিশেষ কোন জরুরী ব্যাপারে এরূপ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সুতরাং সংবাদ জানার জন্যে সে তার দলবলকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলো। ঐ দলটি হিজাযের দিকে গেল। তারা দেখলো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নাখলার দু'টি পাহাড়ের মাঝে নামাযে রত আছেন। তারা এ খবর ইবলীস শয়তানকে জানালে সে বললোঃ “এই কারণেই তোমাদের আসমানে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।” এর পূর্ণ বিবরণ ইনশাআল্লাহ্ নিম্নের আয়াতগুলোর তাফসীরে আসবে যেগুলোতে জ্বিনদের উক্তি উদ্ধৃত হয়েছ। আয়াতগুলো হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে; কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শুনার জন্যে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়। আমরা জানি না যে, জগতবাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, না তাদের প্রতিপালক তাদের মঙ্গল চান।”(৭২:৮-১০)
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَىٰ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَىٰ ۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۖ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
فَاسْتَفْتِهِمْ أَهُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمْ مَنْ خَلَقْنَا ۚ إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِنْ طِينٍ لَازِبٍ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِينَ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَىٰ إِسْحَاقَ ۚ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِنَفْسِهِ مُبِينٌ
📘 ৯৯-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ প্রদান করছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমান আনয়ন হতে নিরাশ হয়ে গেলেন, কারণ তারা আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশক বহু নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনলো না, তখন তিনি সেখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে ইচ্ছা করে প্রকাশ্যভাবে তাদেরকে বললেনঃ “আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম। তিনি অবশ্যই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আর তিনি প্রার্থনা করলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন!” অর্থাৎ ঐ সন্তান যেন একত্ববাদে তাঁর সঙ্গী হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।” ইনিই ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথম সন্তান। বিশ্ব মুসলিম এর ঐকমত্যে তিনি হযরত ইসহাক (আঃ)-এর বড় ছিলেন। একথা আহলে কিতাবও মেনে থাকে। এমনকি তাদের কিতাবেও লিখিত আছে যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্মের সময়। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল ছিয়াশি বছর। আর হযরত ইসহাক (আঃ)-এর যখন জন্ম হয় তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স নিরানব্বই বছরে পৌঁছেছিল। তাদেরই গ্রন্থে একথাও লিখিত রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে তার একমাত্র সন্তানকে কুরবানী করার হুকুম হয়েছিল। কিন্তু ইয়াহুদীরা হযরত ইসহাক (আঃ)-এর বংশধর এবং আরবরা হলো হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর, শুধু এই কারণেই তারা কুরবানীর মর্যাদা হযরত ইসমাঈল (আঃ) হতে সরিয়ে হযরত ইসহাক (আঃ)-কে প্রদান করেছে। আর অনর্থক ব্যাখ্যা করে আল্লাহর বাণীর পরিবর্তন সাধন করেছে। তারা একথাও বলেছেঃ “আমাদের কিতাবে (আরবী) শব্দ রয়েছে, যার অর্থ একমাত্র সন্তান নয়, বরং এর অর্থ হলোঃ “যে তোমার নিকট বর্তমানে একাকী রয়েছে। এটা এজন্যেই যে, ঐ সময় হযরত ইসমাঈল (আঃ) মক্কায় তাঁর মায়ের কাছে ছিলেন এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট শুধুমাত্র হযরত ইসহাক (আঃ) ছিলেন।কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল কথা। কেননা, ওকেই বলে যে একমাত্র সন্তান, যার আর কোন ভাই নেই। আর একথাও সত্য যে, যার একটি মাত্র সন্তান, আর তার পরে কোন সন্তান নেই তার প্রতি স্বাভাবিকভাবে মমতা বেশীই হয়ে থাকে। এজন্যে তাকে কুরবানী করার আদেশ দান পরীক্ষা করার একটি বিরাট হাতিয়ার। পূর্বযুগীয় কতক গুরুজন এমনকি কতক সাহাবীও (রাঃ) যে এ মত পোষণ করতেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসহাক (আঃ), এটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু এটা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (সঃ)-এর সুন্নাত সম্মত নয়। বরং এরূপ ধারণা করা যায় যে, তাঁরা বানী ইসরাঈলের কথাকে বিনা প্রমাণেই মেনে নিয়েছেন, এর পিছনে কোন যুক্তি তাঁরা অন্বেষণ করেননি। আমরা আল্লাহর কালাম দ্বারাই প্রমাণ করবো যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন যাবীহুল্লাহ। সুসংবাদে বলা হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ সহনশীল সন্তান। অতঃপর কুরবানীর উল্লেখ রয়েছে। এসব বর্ণনা সমাপ্ত করার পর সৎ নবী হযরত ইসহাক (আঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ রয়েছে এবং তাঁর সম্পর্কে ফেরেশতারা (আরবী) বা বিজ্ঞ সন্তান বলেছেন। তারপর তার সুসংবাদের সাথে ইরশাদ হয়েছেঃ (আরবী) (১১:৭১) অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জীবদ্দশাতেই হযরত ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব (আঃ) জন্মগ্রহণ করবেন। আর এভাবেই তাঁর বংশ বৃদ্ধির সংবাদ প্রথমেই জানানো হয়। তাহলে তাঁকে যবেহ করার আদেশ কি প্রকারে সম্ভব হতে পারে? এটা আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি। অবশ্য এখানে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে ধৈর্যশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তা যবেহ করার কাজের সাথে অতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।এখন হযরত ইসমাঈল (আঃ) বড় হলেন। এখন তিনি পিতার সাথে চলাফেরা করতে পারেন। ঐ সময় তিনি তাঁর মাতার সাথে ফারান নামক এলাকায় থাকতেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রায়ই সেখানে যাতায়াত করতেন। এ কথাও বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) তথায় বুরাক নামক যানে যাওয়া আসা করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলৈনঃ এই বাক্যের অর্থ এও হতে পারে যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) ঐ সময় প্রায় যৌবনে পদার্পণ করেছিলেন এবং পিতার ন্যায় চলাফেরা করা ও কাজকর্ম করার যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানকে কুরবানী করছেন। হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রাঃ) বলেন যে, নবীদের স্বপ্ন হলো অহী। অতঃপর তিনি। (আরবী)-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। একটি মার’ হাদীসেও এটা রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঘুমে নবীদের (আঃ) স্বপ্ন হলো অহী।” (এহানসটি মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে)আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সন্তানের পরীক্ষার জন্যে এবং এজন্যেও যে, হঠাৎ কুরবানীর কথা শুনে তিনি যেন হতবুদ্ধি না হয়ে পড়েন, নিজের মত ও সত্য স্বপ্ন তার সামনে প্রকাশ করলেন। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান উত্তর দিলেনঃ “পিতঃ! বিলম্ব করছেন কেন? একথা কি জিজ্ঞেস করতে হয়? যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন তা সত্বর করে ফেলুন। ইনশাআল্লাহ আমি ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আপনার বাসনা চরিতার্থ করবো।” তিনি যা বললেন তাই করে দেখালেন এবং তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী রূপে প্রমাণিত হলেন। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “স্মরণ কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইসমাঈল (আঃ)-এর কথা, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী, এবং সে ছিল রাসূল, নবী। সে তার পরিজনবর্গকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতো এবং সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষজন।”(১৯:৫৪-৫৫)পিতা-পুত্র উভয়ে যখন একমত হলেন তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে মাটিতে কাত করে শায়িত করলেন বা অধোমুখে মাটিতে ফেলে দিলেন, যাতে যবেহ করার সময় প্রাণপ্রিয় সন্তানের মুখমণ্ডল দেখে মায়ার উদ্রেক না হয়। মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে একট বর্ণনা রয়েছে যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সন্তানকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান সামনে এসে হাযির হলো। কিন্তু তিনি শয়তানকে পিছনে ফেলে অগ্রসর হলেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) সহ, জামরায়ে অকাবায় উপস্থিত হলেন। এখানেও শয়তান সামনে আসলে তার দিকে তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি জামরায়ে উসতার নিকট এসে পুনরায় শয়তানের দিকে সাতটি কংকর ছুঁড়লেন। অতঃপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে ছেলেকে মাটিতে শায়িত করলেন। ঐ সময় ছেলের গায়ে সাদা রঙ-এর চাদর ছিল। তিনি পিতাকে চাদরটি খুলে নিতে বললেন, যাতে ঐ চাদর দ্বারা তাঁর কাফনের কাজ হয়। এহেন অবস্থায় পিতা হয়ে পুত্রের দেহ অনাবৃত করা অতি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। এমন সময় শব্দ এলোঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! তুমি তো স্বপ্নদেশ সত্যিই পালন করলে। তখন তিনি পিছনে ফিরে একটি দুম্বা দেখতে পেলেন, যার শিং ছিল বড় বড় এবং চক্ষুদ্বয় ছিল অতি সুন্দর।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “এ জন্যেই আমরা কুরবানীর জন্যে এই প্রকারের দুম্বা মনোনীত করে থাকি।" হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর অপর এক বর্ণনায় হযরত ইসহাক (আঃ)-এর নাম উল্লিখিত রয়েছে। ফলে তাঁর বর্ণনায় দু’জনের নাম পাওয়া যায়। সুতরাং প্রথমটিই গ্রহণযোগ্য। ইনশাআল্লাহ এর প্রমাণ পেশ করা হবে।আল্লাহ তা'আলা কুরবানীর জন্যে একটি দুম্বা দান করলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা জান্নাতের দুম্বা ছিল। চল্লিশ বছর ধরে সেখানে পালিত হয়েছিল। এটা দেখে হযরত ইবরহীম (আঃ) পুত্রকে ছেড়ে দিয়ে সেই দিকে অগ্রসর হলেন। প্রথম জামরায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে জামরায়ে উসতায় আসলো। সেখানেও তিনি সাতটি কংকর হুঁড়লেন। আবার প্রথম জামরায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। সেখান হতে যবেহের স্থানে এসে দুষাটি কুরবানী করলেন। এটার মাথাসহ শিং কা’বার দেয়ালে লটকানো ছিল। পরে ওটা শুকিয়ে যায় এবং ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত সেখানেই বিদ্যমান ছিল। বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ও হযরত কা'ব (রাঃ) একত্রিত হন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সঃ) হতে হাদীস বর্ণনা করছিলেন এবং হযরত কা'ব (রাঃ) আল্লাহর কিতাব হতে ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক নবী (আঃ)-এর জন্যে একটি ককূলকৃত দুআ রয়েছে। আমার এই কবুলকৃত দু'আ আমি আমার উম্মতের শাফাআতের জন্যে গোপন রেখেছি যা কিয়ামতের দিন হবে।” হযরত কা'ব (রাঃ) তখন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে বলেনঃ “তুমি কি স্বয়ং এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছো?” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, আমি নিজেই শুনেছি।” তখন হযরত কা'ব (রাঃ) খুব খুশী হন এবং বলেনঃ “তোমার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গকৃত হোক অথবা নবী (সঃ)-এর উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গকৃত হোক।” অতঃপর হযরত কা'ব (রাঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘটনা শুনালেন। তিনি বর্ণনা করলেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) হযরত ইসহাক (আঃ)-কে যবেহ করার জন্যে প্রস্তুত হলেন তখন শয়তান (মনে মনে) বললোঃ “আমি যদি এ সময়ে এ কাজ থেকে তাঁকে টলাতে না পারি তবে আমাকে এ জন্যে সারা জীবন নিরাশ থাকতে হবে। প্রথমে সে হযরত সারার নিকট গেল এবং তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “তোমার স্বামী তোমার পুত্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা জান কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হয়তো নিজের কোন কাজের জন্যে। নিয়ে যাচ্ছেন।” সে বললোঃ “না, না, বরং তাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন।” হযরত সারা বললেন:“তিনি নিজের পুত্রকে যবেহ করবেন এটা কি সম্ভব?” অভিশপ্ত শয়তান জবাব দিলোঃ “তোমার স্বামী বলেন কি জান? তাঁকে নাকি আল্লাহ এই নির্দেশ দিয়েছেন!” হযরত সারা তখন বললেনঃ “তাকে যদি আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে তিনি ঠিকই করছেন। আল্লাহর হুকুম পালন করে তিনি ফিরে আসবেন।” সে এখানে ব্যর্থ হয়ে হযরত ইসহাক (আঃ)-এর নিকট গেল এবং তাকে বললোঃ “তোমাকে তোমার আব্বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা জান কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হয়তো কোন কাজের জন্যে কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।” শয়তান বললোঃ “না, বরং তোমাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন।” হযরত ইসহাক (আঃ) বললেনঃ “এটা কি করে সম্ভব?” শয়তান। বললোঃ “তোমাকে যবেহ করতে নাকি আল্লাহ তাকে আদেশ করেছেন।” তখন হযরত ইসহাক (আঃ) বললেনঃ “আল্লাহর কসম! যদি সত্যি আল্লাহ আমাকে যবেহ করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে তো তাড়াতাড়ি তার এ কাজ করা উচিত।”শয়তান এখানেও নিরাশ হয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গিয়ে বললোঃ “ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছি।” শয়তান বললোঃ “না, তা নয়। বরং তাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছে।” হযরত ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ “তাকে আমি কেন যবেহ করবো?” শয়তান জবাব দিলোঃ “হয়তো আপনার প্রতিপালক আপনাকে এ কাজে আদেশ করেছেন। তিনি তখন বললেনঃ “আমার প্রতিপালক যদি আমাকে আদেশ করেই থাকেন তবে আমি তা করবোই।" ফলে শয়তান এখানেও নিরাশ হয়ে গেল। অপর এক বর্ণনায় বলা হয় যে, এই সব ঘটনার পর মহান আল্লাহ হযরত ইসহাক (আঃ)-কে বললেনঃ “তুমি আমার নিকট যে দু'আ করবে আমি তা ককূল করবো।” হযরত ইসহাক (আঃ) তখন দু'আ করলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! যারা আপনার সাথে কোন শরীক স্থাপন করবে না তাদেরকে আপনি জান্নাত দান করুন!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বর্ণনা করেনঃ “দু'টি বিষয় আমার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একটি হলো এই যে, আমার অর্ধেক উম্মতকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর দ্বিতীয় হলো এই যে, আমাকে শাফাআত করার অধিকার দেয়া হবে। অমি শাফাআত করাকেই প্রাধান্য দিলাম, এই আশায় যে, ওটা সাধারণ হবে। হ্যা, তবে একটি দু'আ ছিল যে, আমি ওটাই করতাম। কিন্তু আমার পূর্বেই আল্লাহর এক সৎ বান্দা তা করে ফেলেছেন। ঘটনা এই যে, যখন হযরত ইসহাক (আঃ) যবেহ-এর বিপদ হতে মুক্তি পেলেন তখন তাঁকে বলা হলোঃ “আমার নিকট চাও, যা চাইবে তাই আমি দিবো।” তখন হযরত ইসহাক (আঃ) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! শয়তান ধোকা দেয়ার পূর্বেই আমি তা চাইবো। হে আল্লাহ! যে আপনার সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে তাকে আপনি জান্নাতে প্রবিষ্ট করুন!” (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। এর সনদ গারীব ও মুনকার। আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম নামক এর একজন বর্ণনাকারী দুর্বল। আর আমার তো এই ভয়ও হয় যে, “যখন আল্লাহ হযরত ইসহাক (আঃ)-কে বললেন ... শেষ পর্যন্ত এ কথাগুলো তার নিজের কথা, যেগুলো তিনি হাদীসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যাবীহুল্লাহ তো ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ) এবং যবেহ-এর স্থান তো মিনা, যা মক্কায় অবস্থিত এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ) মক্কাতেই ছিলেন, হযরত ইসহাক (আঃ) নন, তিনি তো ছিলেন সিরিয়ার কিন’আন শহরে)মহান আল্লাহ বলেনঃ “যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র (ইসমাঈল আঃ)-কে কাত করে শায়িত করলেন তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললামঃ হে ইবরাহীম (আঃ)! তুমি তো স্বপ্নদেশ সত্যিই পালন করলে!” হযরত সুদ্দী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর গলায় ছুরি চালাতে শুরু করলেন তখন গলা তামা হয়ে গেল, ফলে ছুরি চললো না ও গলা কাটলো না। ঐ সময় (আরবী) এই শব্দ আসলো।আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ “এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। অর্থাৎ তাদেরকে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করে থাকি। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পরিত্রাণের উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযক দান করে থাকেন যে, ওটা তার ধারণা বা কল্পনাও থাকে না। আল্লাহর উপর ভরসাকারীর জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পুরো করেই থাকেন এবং প্রত্যেক জিনিসেরই তিনি পরিমাপ নির্ধারণ করে রেখেছেন।”(৬৫:২-৩)এই আয়াত দ্বারা আলেমগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কাজের উপর ক্ষমতা লাভের পূর্বেই হুকুম রহিত হয়ে যায়। অবশ্য মু'তাযিলা সম্প্রদায় এটা মানে না। দলীল গ্রহণের কারণ প্রকাশমান। কেননা, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তিনি যেন তার পুত্রকে কুরবানী করেন। অতঃপর যবেহ করার। পূর্বেই ফিদিয়ার মাধ্যমে এ হুকুম রহিত করে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে, তাকে ধৈর্য ও আদিষ্ট কাজ প্রতিপালনে সদা প্রস্তুত থাকার উপর বিনিময় প্রদান করা হবে। এজন্যেই ইরশাদ হয়েছেঃ “নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। একদিকে হুকুম এবং অপরদিকে তা প্রতিপালন। এজন্যেই মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রশংসায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ ইবরাহীম (আঃ), যে পালন করেছিল তার দায়িত্ব।”(৫৩:৩৭)হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, যে ফিদিয়া দান করা হয়েছিল তার রঙ ছিল সাদা, চক্ষু বড় এবং বড় শিং বিশিষ্ট উৎকৃষ্ট খাদ্যে প্রতিপালিত ভেড়া। যা সাবীর’ নামক স্থানে বাবুল বৃক্ষে বাঁধা ছিল। ওটা জান্নাতে চল্লিশ বছর ধরে ছিল। মিনাতে সাবীরের নিকট ওটাকে যবেহ করা হয়। এটা সেই ভেড়া যাকে হাবীল কুরবানী করেছিলেন। হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, ঐ ভেড়াটির নাম ছিল জারীর। ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বলেন যে, ওটাকে মাকামে ইবরাহীমে যবেহ করা হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ওটাকে মিনার নহরের স্থানে যবেহ করা হয়। বর্ণিত আছে যে, একটি লোক নিজেকে কুরবানী করার মানত মানে এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁর কাছে ফতওয়া জিজ্ঞেস করে। তিনি তাকে একশটি উট কুরবানী করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি বলতেনঃ “তাকে যদি আমি একটি মাত্র ভেড়া কুরবানী করতে বলতাম তাহলেও যথেষ্ট হতো। কেননা কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ (আঃ)-এর ফিদিয়া ওটা দ্বারাই দেয়া হয়েছিল।”কেউ কেউ বলেন যে, ওটা পাহাড়ী ছাগল ছিল। কারো কারো মতে ওটা ছিল হরিণ।মুনসাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উসমান ইবনে তালহা (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “কা’বা ঘরে প্রবেশ করে আমি ভেড়ার শিং দেখেছি। কিন্তু ওটা তোমাকে ঢেকে রাখতে বলার কথা আমি ভুলে গেছি। যাও, ওটা ঢেকে দাও। কাবা ঘরে এমন কোন জিনিস থাকা ঠিক নয় যাতে নামাযীর নামাযে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।” সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, ওটা কা'বা ঘরেই ছিল। পরবর্তীকালে কা'বা ঘরে আগুন লাগায় ওটা পুড়ে যায়। এর দ্বারাও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর কুরবানী হওয়ার প্রমাণ মিলে। কেননা, উক্ত শিং তখন থেকে নিয়ে ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত কুরায়েশদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে রক্ষিত ছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
অধ্যায়:
প্রকৃত যাবীহ কে ছিলেন সে সম্পর্কে পূর্বযুগীয় গুরুজন হতে যেসব ‘আসার’ এসেছে সেগুলোর বর্ণনাঃ যারা দাবী করেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসহাক (আঃ), তাঁদের যুক্তি, যথাঃ হযরত আবু মায়সারা (রঃ) বলেন যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) মিসরের বাদশাহকে বলেনঃ “আপনি কি আমার সাথে খেতে চান? আমি হলাম ইউসুফ ইবনে ইয়াকূব ইবনে ইসহাক যাবীহুল্লাহ ইবনে ইবরাহীম খালীলুল্লাহ (আঃ)।”হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! মানুষরা মুখে মুখে হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ) এবং হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর মা’রূদের শপথ করে থাকে। এর কারণ কি?" উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “কারণ এই যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ইসহাক (আঃ) আমার পথে কুরবানী হওয়ার জন্যে নিজেকে আমার হাতে সমর্পণ করে। আর ইয়াকূব (আঃ)-কে আমি যতই বিপদাপদে নিপতিত করি, তার শুভ ধারণা ততই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।”হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর সামনে একদা এক ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষের গৌরবের কথা বলাবলি করছিল। তিনি তাকে বললেনঃ “প্রকৃত গৌরবের অধিকারী হওয়ার যোগ্য হযরত ইউসুফ (আঃ)। কেননা, তিনি হচ্ছেন ইয়াকূব (আঃ) ইবনে ইসহাক যাবীহুল্লাহ (আঃ) ইবনে ইবরাহীম খালীলুল্লাহ (আঃ)-এর বংশধর।”ইকরামা (রঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), আব্বাস (রাঃ), আলী (রাঃ), যায়েদ ইবনে জুবায়ের (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), শাবী (রঃ), উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রঃ), যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রঃ), কাসিম ইবনে আবি বুরযা (রঃ), মাকহুল (রঃ), উসমান ইবনে আবি হাযির (রঃ), সুদ্দী (রঃ), হাসান (রঃ), কাতাদা (রঃ), আবূ হুয়েল (রঃ), ইবনে সাবিত (রঃ), কাবুল আহবার (রঃ) প্রমুখ গুরুজন এই মত পোষণ করেন যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসহাকই (আঃ) ছিলেন। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এই মত গ্রহণ করেছেন। সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই আছে। তবে বাহ্যতঃ এটা জানা যায় যে, উক্ত মনীষীবৃন্দের উস্তাদ ছিলেন হযরত কা'বুল আহবার (রঃ)। তিনি হযরত উমার ফারূক (রাঃ)-এর খিলাফতের যুগে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে প্রাচীন কিতাবগুলোর ঘটনা শুনাতেন। জনগণের মধ্যেও তিনি ঐ সব কথা বলতেন। তখন শুদ্ধ ও অশুদ্ধের পার্থক্য উঠে যায়। সঠিক কথা তো এই যে, এই জাতির জন্যে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের একটি কথারও প্রয়োজন নেই। ইমাম বাগাবী (রঃ) আরো কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীর নাম সংযোজন করেছেন যাঁরা সবাই হযরত ইসহাক (আঃ)-কে যাবীহুল্লাহ বলতেন। একটি মারফু হাদীসেও এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু হাদীসটি সহীহ হলে তো বিবাদের মীমাংসা হয়েই যেতো। আসলে হাদীসটি সহীহ নয়। কেননা, এর সনদে দুজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন। হাসান ইবনে দীনার পরিত্যক্ত এবং আলী ইবনে যায়েদ মুনকারুল হাদীস। আর সৰ্বাধিক সঠিক কথা এই যে, হাদীসটি মাওকুফ। কেননা, অন্য এক সনদে একথা হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই বেশী সঠিক কথা। তবে সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।এখন ঐ সব ‘আসার’ বর্ণনা করা হচ্ছে যেগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। আর এটাই অকাট্যরূপে সত্য।হযরত ইবনে আব্বাস বলেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। ইয়াহূদীরা যে হযরত ইসহাক (আঃ)-কে যাবীহুল্লাহ বলেছে তা তারা ভুল বলেছে। হযরত ইবনে উমার (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), শা'বী (রঃ), হাসান বসরী (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব কারাযী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন মত প্রকাশ করেন যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন। হযরত শাবী (রঃ) বলেনঃ ‘যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ) এবং আমি কা'বা গৃহে ভেড়ার শিং দেখেছি।”মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ) বলেন যে, মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। উক্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাক (আঃ)-এর, সে ছিল এক নবী, সৎকর্মশীলদের অন্যতম।” হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর জন্ম হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং এর সাথে আরো বলা হয়েছে। যে, হযরত ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব (আঃ) জন্ম লাভ করবেন। সুতরাং হযরত ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর জন্মগ্রহণের পূর্বে তাঁকে কুরবানী করার হুকুম দেয়া কি করে সম্ভব? কেননা, এটা আল্লাহ তাআলার ওয়াদা যে, হযরত ইসহাক (আঃ)-এর ঔরষে হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর জন্ম হবে। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কেই কুরবানী দেয়ার হুকুম হয়েছিল, হযরত ইসহাক (আঃ)-কে নয়।হযরত ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেনঃ একথা আমি বহু লোককে বলতে শুনেছি। এ প্রসঙ্গে হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) বর্ণনা করেনঃ “এটা অতি পরিষ্কার প্রমাণ। আমিও জানতাম যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈলই (আঃ) ছিলেন। অতঃপর তিনি সিরিয়ার একজন ইয়াহূদী আলেমকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যিনি মুসলমান হয়েছিলেন। উত্তরে ঐ আলেম বলেছিলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! সত্য কথা এটাই যে, যাকে কুরবানী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। কিন্তু যেহেতু আরবরা ছিল তাঁর বংশধর, তাই এই মর্যাদা তাদের দিকেই, প্রত্যাবর্তিত হয়। এতে ইয়াহূদীরা হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর নাম পরিবর্তন করে হযরত ইসহাক (আঃ)-এর নাম প্রবিষ্ট করে। এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। আমাদের ঈমান রয়েছে যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) ও হযরত ইসহাক (আঃ) উভয়েই ছিলেন সৎ, পবিত্র ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং আল্লাহর খাটি অনুগত বান্দা। কিতাবুয যুহদে বর্ণিত আছে যে, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-কে তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ্ (রঃ) এই মাসআলা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “যাবীহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)।” হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে উমার (রাঃ), আবু তোফায়েল (রঃ), সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ), হাসান (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), শা’বী (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে আলী (রঃ), আবূ সালেহ (রঃ) প্রমুখ মনীষীবৃন্দ হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম বাগাবী (রঃ) আরো কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীর নাম উল্লেখ করেছেন। এর স্বপক্ষে একটি গারীব বা দুর্বল হাদীসও রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, সিরিয়ায় আমীর মু'আবিয়া (রাঃ)-এর সামনে যাবীহুল্লাহ কে ছিলেন এ প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তিনি জবাবে বলেন, আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি এটা অবগত আছি। শুনুন, আমি একদা নবী (সঃ)-এর নিকটে ছিলাম এমন সময় একজন লোক এসে বলতে শুরু করলোঃ “হে আল্লাহর পথে উৎসর্গীকৃত দুই ব্যক্তির বংশের রাসূল (সঃ)! আমাকেও গানীমাতের মাল হতে কিছু প্রদান করুন!” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুচকি হাসলেন। হযরত মু'আবিয়া (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ যাবীহদ্বয় কারা?” তিনি জবাবে বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব যখন যমযম কূপ খনন করেন তখন তিনি নযর মেনেছিলেন যে, যদি কাজটি সহজভাবে সমাপ্ত হয় তবে তিনি তাঁর একটি ছেলেকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন। কাজটি সহজভাবে সমাপ্ত হলো। তখন কোন ছেলেকে কুরবানী করা যায় এটা নির্ণয় করার জন্যে তিনি লটারী করেন। লটারীতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিতা আবদুল্লাহর নাম উঠে। এ দেখে তাঁর নানারা এ কাজ করতে তাঁকে নিষেধ করলো এবং বললোঃ “তার বিনিময়ে একশটি উট কুরবানী করে দাও।” তিনি তাই করলেন। আর দ্বিতীয় যাবীহ হলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), যা সর্বজন বিদিত।" তাফসীরে ইবনে জারীর ও মাগাযী উমুবীতে এ রিওয়াইয়াতটি বিদ্যমান রয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হযরত ইসহাক (আঃ) যাবীহুল্লাহ হওয়ার একটি দলীল এই পেশ করেছেন যে, যে (আরবী) বা সহনশীল ছেলের সুসংবাদের উল্লেখ রয়েছে তার দ্বারা হযরত ইসহাককেই (আঃ) বুঝানো হয়েছে। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় (আরবী) অর্থাৎ “তারা তাকে এক জ্ঞানী ও বিজ্ঞ সন্তানের সুসংবাদ দিলো।”(৫১:২৮) আর হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর সুসংবাদের জবাব এই দিয়েছেন যে, তিনি তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর সম্ভবতঃ হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর সাথেই আরো সন্তানও থেকে থাকবে। কা'বা ঘরে শিং থাকার ব্যাপারে বলেছেন। যে, ওটা কিনআন শহর হতে এনে এখানে রেখে দেয়া হয়েছে। কোন কোন লোক হযরত ইসহাক (আঃ)-এর কথা খোলাখুলিভাবেই বলেছেন। কিন্তু এসব কথা বাস্তবতা শূন্য। অবশ্য হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর যাবীহুল্লাহ হওয়ার ব্যাপারে মুহাম্মাদ ইবনে কাব কারাযীর (রঃ) প্রমাণ খুব স্পষ্ট ও সবল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। প্রথমে যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্ম লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং এরপর তাঁর ভাই হযরত ইসহাক (আঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। সূরায়ে হৃদ ও সূরায়ে হিজরে এর বর্ণনা গত হয়েছে।(আরবী) শব্দটি হয়েছে, অর্থাৎ তিনি নবী হবেন সৎ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যাবীহ ছিলেন হযরত ইসহাক (আঃ) এবং এখানে নবুওয়াত হলো হযরত ইসহাক (আঃ)-এর সুসংবাদ। যেমন হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে নবীরূপে।"(১৯:৫৩) প্রকৃতপক্ষে হযরত হারূন (আঃ) হযরত মূসা (আঃ)-এর চেয়ে বড় ছিলেন। এখানে তাঁর নবুওয়াতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখানেও সুসংবাদ ঐ সময় দেয়া হয় যখন তিনি যবেহ-এর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল প্রমাণিত হয়েছিলেন। এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এ সুসংবাদ দুইবার প্রদান করা হয়েছে। প্রথমবার জন্মের পূর্বে এবং দ্বিতীয়বার নবুওয়াতের কিছু পূর্বে। এটা হযরত কাতাদা (রঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও (আঃ), তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বলা হলো- হে নূহ (আঃ)! অবতরণ কর আমার দেয়া শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যেসব সম্প্রদায় তোমার সাথে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ; অপর সম্প্রদায়সমূহকে জীবন উপভোগ করতে দিবো, পরে আমা হতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে।"(১১:৪৮)
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
وَنَجَّيْنَاهُمَا وَقَوْمَهُمَا مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
وَنَصَرْنَاهُمْ فَكَانُوا هُمُ الْغَالِبِينَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
وَآتَيْنَاهُمَا الْكِتَابَ الْمُسْتَبِينَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
وَهَدَيْنَاهُمَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِمَا فِي الْآخِرِينَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
بَلْ عَجِبْتَ وَيَسْخَرُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
📘 Please check ayah 37:122 for complete tafsir.
إِنَّهُمَا مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ
📘 ১১৪-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)-এর প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁদেরকে ও যেসব লোক তাঁদের সাথে ঈমান এনেছিল তাদেরকে ফিরাউনের ন্যায় শক্তিশালী শত্রুর কবল হতে মুক্তি দেয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। সে তাদেরকে জঘন্যভাবে অবনমিত করতো এবং তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করতো ও কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো। ফিরাউন তাদের দ্বারা নিকৃষ্ট ও নিম্ন পর্যায়ের সেবা গ্রহণ করতো। এরূপ নিকৃষ্টতম শত্রুকে আল্লাহ তাদের চোখের সামনে ধ্বংস করে দেন এবং হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)-এর কওমকে বিজয় দান করেন। ফিরাউন ও তার লোকদের ভূসম্পত্তি ও ধন-দৌলতের মালিক তাদেরকে বানিয়ে দেন যেগুলো তারা যুগ যুগ ধরে জমা করে রেখেছিল।অতঃপর মহান আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে অতি স্পষ্ট, সত্য ও প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ তাওরাত দান করেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-কে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী কিতাব (তাওরাত) দান করেছিলাম, যা ছিল হিদায়াত ও জ্যোতি স্বরূপ।”(২১:৪৮)।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি উভয়কে দিয়েছিলাম বিশদ কিতাব এবং তাদেরকে পরিচালিত করেছিলাম সরল পথে অর্থাৎ কথায় ও কাজে। আর আমি তাদের উভয়কে পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। অর্থাৎ তাদের পরবর্তী লোকেরা তাঁদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে থাকবে। এর ব্যাখ্যায় মহান আল্লাহ বলেনঃ সবাই তাদের উপর সালাম বর্ষণ করে থাকে।এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরক পুরস্কৃত করে থাকি। তারা উভয়েই ছিল আমার মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
وَإِنَّ إِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَلَا تَتَّقُونَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
اللَّهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
فَكَذَّبُوهُ فَإِنَّهُمْ لَمُحْضَرُونَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
وَإِذَا ذُكِّرُوا لَا يَذْكُرُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
📘 Please check ayah 37:132 for complete tafsir.
إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ
📘 ১২৩-১৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত কাতাদা (রঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (র) বলেনঃ “বলা হয় যে, ইলিয়াস ছিল হযরত ইদরীস (আঃ)-এর নাম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, ইলিয়াসই ছিলেন ইদরীস (আঃ)। যহাক (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত হাকীল নবী (আঃ)-এর পরে তাঁকে বানী ইসরাঈলের মধ্যে প্রেরণ করেন। বানী ইসরাঈল ঐ সময় ‘বা'আল’ নামক মূর্তির পূজা। করতো। হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপাসনা করতে নিষেধ করলেন। তাদের বাদশাহ তা কবুল করে নেয়। কিন্তু পরে সে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যায়। অতঃপর তারা সবাই ভ্রান্ত পথেই রয়ে যায়। তাদের কেউই তার উপর ঈমান আনলো না। আল্লাহর নবী (আঃ) তাদের উপর বদ দূআ করেন। ফলে তিন বছর ধরে সেখানে বৃষ্টিপাত বন্ধ তাকে। তখন তারা সবাই হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর কাছে এসে বলেঃ “আপনি দুআ করুন! আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হলেই আমরা কসম করে বলছি যে, আমরা ঈমান আনয়ন করবো।” হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর দু'আর ফলে আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। কিন্তু এর পরেও তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কুফরীর উপরই অটল থেকে গেল। তাদের এ আচরণ দেখে হযরত ইলিয়াস (আঃ) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন যে, তাঁকে যেন আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। হযরত ইয়াসা ইবনে উখতূব (আঃ) তাঁর নিকটই লালিত পালিত হয়েছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর এই দু’আর পর তাকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তিনি যেন অমুক নির্দিষ্ট স্থানে গমন করেন এবং সেখানে যে যানবাহন পাবেন তাতেই যেন আরোহণ করেন। যথাস্থানে পৌঁছে তিনি নূরের একটি ঘোড়া দেখতে পান এবং তাতেই আরোহণ করেন। আল্লাহ তাকেও জ্যোতির্ময় করলেন এবং পাখা প্রদান করলেন। তিনি ফেরেশতাদের সাথে স্বীয় পাখার উপর ভর করে উড়তে লাগলেন। এই ভাবে একজন মানুষ আসমানী ও যমীনী ফেরেশতায় পরিণত হয়ে গেলেন। (অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ) আহলে কিতাব হতে এটা বর্ণনা করেছেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ)মহান আল্লাহ বলেন যে, ইলিয়াস (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ “তোমরা কি আল্লাহকে ভয় কর না যে, তাকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা কর?” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) অর্থ হলো ‘রব’ বা প্রতিপালক। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এটা ইয়ামনীদের ভাষা। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এটা ইযদ শানুআদের ভাষা। ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন:“আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, তারা একটি মহিলার মূর্তির পূজা করতো। তার নাম ছিল বা'আল। আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, ওটা একটা মূর্তি ছিল। শহরবাসীরা ওর পূজা করতো। ঐ শহরের নামও ছিল বাআলাক'। হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা সকলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়েছে? অথচ আল্লাহ তো তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রতিপালক। একমাত্র তিনিই তো ইবাদতের যোগ্য।" প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, কাজেই তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির জন্যে উপস্থিত করা হবে। তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র ।” তাদেরকে তিনি রক্ষা করবেন। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আমি ইলিয়াস (আঃ)-এর জন্যে পরবর্তী লোকদের উত্তম প্রশংসা প্রচলিত রেখেছি যে, প্রত্যেক মুসলমান তার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করে থাকে।(আরবী) শব্দের দ্বিতীয় রূপ (আরবী) রয়েছে। যেমন (আরবী) কে (আরবী) বলা হয়। এটা বানু আসাদ গোত্রের ভাষা। অনুরূপভাবে (আরবী) -কে (আরবী) এবং (আরবী) কে (আরবী) বলা হয়ে থাকে। ফল কথা, এটা আরবে সুপ্রচলিত শব্দ। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর এক কিরআতে (আরবী) পড়া হয়েছে। অর্থাৎ (আরবী) বা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধর। মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই ভাবে আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই সে ছিল আমার মুমিন বান্দাদের অন্যতম।” এর তাফসীর পূর্বেই গত হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
وَإِنَّ لُوطًا لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 37:138 for complete tafsir.
إِذْ نَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 37:138 for complete tafsir.
إِلَّا عَجُوزًا فِي الْغَابِرِينَ
📘 Please check ayah 37:138 for complete tafsir.
ثُمَّ دَمَّرْنَا الْآخَرِينَ
📘 Please check ayah 37:138 for complete tafsir.
وَإِنَّكُمْ لَتَمُرُّونَ عَلَيْهِمْ مُصْبِحِينَ
📘 Please check ayah 37:138 for complete tafsir.
وَبِاللَّيْلِ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
📘 ১৩৩-১৩৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল হযরত লূত (আঃ)-এর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তাঁকে তাঁর কওমের নিকট প্রেরণ করা হলে তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ও তার পরিবারবর্গকে তার শাস্তি থেকে রক্ষা করলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী তাঁর জাতির সাথেই ধ্বংস হয়ে গেল। বিভিন্ন প্রকার আযাব তাদের উপর আপতিত হয় এবং যেখানে তারা অবস্থান করতো সেই স্থানটি এক দুর্গন্ধময় বিলে পরিণত হয়। ওর পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও বিবর্ণ ছিল। বিলটি মানুষের চলাচলের রাস্তার ধারেই পড়ে। ভ্রমণকারীরা দিনরাত সদা-সর্বদা ঐ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতো এবং সকাল-সন্ধ্যা উক্ত দৃশ্য দেখতো। এই জন্যে আল্লাহ বলেনঃ এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? অর্থাৎ তোমরা কি অনুধাবন কর না যে, কিভাবে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন? এরূপ যেন না হয় যে, এই শাস্তিই তোমাদের উপরও এসে পড়ে।
وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
وَإِذَا رَأَوْا آيَةً يَسْتَسْخِرُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
إِذْ أَبَقَ إِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِينَ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
فَالْتَقَمَهُ الْحُوتُ وَهُوَ مُلِيمٌ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
۞ فَنَبَذْنَاهُ بِالْعَرَاءِ وَهُوَ سَقِيمٌ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
وَأَنْبَتْنَا عَلَيْهِ شَجَرَةً مِنْ يَقْطِينٍ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
وَأَرْسَلْنَاهُ إِلَىٰ مِائَةِ أَلْفٍ أَوْ يَزِيدُونَ
📘 Please check ayah 37:148 for complete tafsir.
فَآمَنُوا فَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
📘 ১৩৯-১৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইউনুস (আঃ)-এর ঘটনা সূরায়ে ইউনুসে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কারো একথা বলা উচিত নয় যে, সে হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা (আঃ) হতে উত্তম।” মাত্তা সম্ভবতঃ হযরত ইউনুস (আঃ)-এর মাতার নাম। আর এটা তাঁর পিতার নামও হতে পারে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ স্মরণ কর, যখন সে পলায়ন করে বোঝাই নৌযানে পৌঁছলো। অর্থাৎ যখন তিনি পালিয়ে গিয়ে মালভর্তি জাহাজে আরোহণ করেন তখন জাহাজ চলতে শুরু করা মাত্রই ঝড় এসে গেল এবং চারদিক থেকে ঢেউ উঠতে লাগলো এবং জাহাজ দোল খেয়ে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। অবস্থা এমনই দাড়িয়ে গেল যে, সবাই মৃত্যুর আশংকা করতে লাগলো।(আরবী) অর্থাৎ লটারী করা হলো এবং তিনি পরাজিত হলেন। আরোহীরা বললোঃ যাকে লটারীতে পাওয়া গেল তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর তাহলেই জাহাজঝটিকা মুক্ত হবে। তিনবার লটারী করা হলো এবং প্রতিবারই নবী (আঃ)-এর নাম উঠলো। তবে আরোহীরা তাঁকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে ইতস্ততঃ করছিল। কিন্তু নিজেই তিনি কাপড় চোপড় ছেড়ে সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়লেন। মহান আল্লাহ সবুজ সাগরের (সবুজ সাগর বলতে আরবরা আরব উপকূল হতে ভারতের মধ্যবর্তী জলরাশিকে বুঝে) এক বৃহৎ মাছকে আদেশ করলেন যে, সে যেন নবী (আঃ)-কে গলাধঃকরণ করে। উক্ত মাছটি তাঁকে গিলে ফেলে। তবে এতে নবী (আঃ)-এর দেহে কোন আঘাত লাগেনি। মাছটি সমুদ্রে চলাফেরা করতে লাগলো। যখন হযরত ইউনুস (আঃ) সম্পূর্ণরূপে মাছের পেটের মধ্য চলে গেলেন তখন তিনি মনে করলেন যে, তিনি মরে গেছেন। কিন্তু মাথা, হাত, পা প্রভৃতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোকে নড়তে দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি বেঁচে আছেন। তখন তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে দেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার জন্যে এমন এক স্থানে আমি মসজিদ বানিয়েছি যেখানে কেউই কখনো পৌঁছবে না।” তিনি কত দিন মাছের পেটে ছিলেন এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেন তিন দিন, কেউ বলেন সাত দিন, কেউ বলেন চল্লিশ দিন এবং কেউ বলেন এক দিনেরও কিছু কম অথবা শুধুমাত্র এক রাত মাছের পেটের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন। এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন একমাত্র আল্লাহ। কবি উমাইয়া ইবনে আবিস সালাতের কবিতায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আপনি (আল্লাহ) স্বীয় অনুগ্রহে ইউনুস (আঃ)-কে মুক্তি দিয়েছেন যিনি কতিপয় রাত্রি মাছের পেটে যাপন করেছিলেন।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “সে যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করতো।” অর্থাৎ যখন তিনি সুখ সুবিধা ও স্বচ্ছলতার মধ্যে ছিলেন তখন যদি তিনি সৎ কাজ না করে থাকতেন তাহলে তাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত থাকতে হতো ওর উদরে।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আরাম-আয়েশ ও সুখ ভোগের সময় আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করো, তাহলে ক্লেশে ও চিন্তাক্লিষ্ট সময়ে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন।” একথাও বলা হয় যে, যদি তিনি নামাযের নিয়মানুবর্তী না হতেন বা মাছের পেটে নামায না পড়তেন অথবা (আরবী) (২১:৮৭)-এ কালেমাটি পাঠ না করতেন (তবে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটের মধ্যেই থাকতেন)। মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় এ কথাই বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে অন্ধকারে ডাক দিয়ে বলেঃ আপনি ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, আপনি মহান ও পবিত্র এবং নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুঃখ-দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দিলাম আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।”(২১:৮৭-৮৮) হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যখন (আরবী) এ কালেমা পাঠে রত ছিলেন তখন এই কালেমা আল্লাহর আরশের আশে পাশে ঘুরতে থাকে। তা শুনে ফেরেশতারা বলেনঃ “হে আল্লাহ! এটা তো বহু দূরের শব্দ, কিন্তু এটা তো আমাদের নিকট পরিচিত বলে মনে হচ্ছে (ব্যাপার কিঃ)” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলেন:“বলতো এটা কার শব্দ?” ফেরেশতারা জবাব দিলেনঃ “তা তো বলতে পারছি না!” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “এটা আমার বান্দা ইউনুস (আঃ)-এর শব্দ।" ফেরেশতারা একথা শুনে আরয করলেনঃ “তাহলে কি তিনি ঐ ইউনুস যার সকার্যাবলী এবং প্রার্থনা সদা আকাশ মার্গে উঠে থাকতো! হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাঁর প্রতি করুণা বর্ষণ করুন! তার প্রার্থনা কবুল করুন। তিনি তো সুখ স্বচ্ছন্দের সময়ও আপনার নাম নিতেন। সুতরাং তাকে এই বিপদ হতে মুক্তি দান করুন!" হান আল্লাহ বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই আমি তাকে মুক্তি দান করবো। অতঃপর তিনি মাছকে নির্দেশ দিলেন এবং সে তাকে এক তৃণহীন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলো। সেখানে মহান আল্লাহ হযরত ইউনুস (আঃ)-এর অসুস্থতা ও দুর্বলতার কারণে তার উপর এক লাউ গাছ উদাত করলেন। একটি বন্য গাভী বা হরিণী সকাল-সন্ধ্যা তাঁর নিকট এসে তাঁকে দুধ পান করাতো। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আমরা ইতিপূর্বে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি সূরায়ে আম্বিয়ার তাফসীরে লিপিবদ্ধ করেছি। দজলার তীরে অথবা ইয়ামনের সুজলা, সুফলা ও শস্য-শ্যামলা ভূমিতে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ঐ সময় তিনি পাখীর ছানার ন্যায় অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। তাঁর শুধু নিঃশ্বাসটুকু বের হচ্ছিল। সম্পূর্ণরূপে চলৎশক্তি রহিত ছিলেন।(আরবী) শব্দের অর্থ হলো কদুর গাছের লতা অথবা সেই গাছ যার শাখা হয়। এছাড়া ঐ সব গাছকেও (আরবী) বলা হয় যেগুলোর বয়স এক বছরের বেশী হয় না। এ গাছ তাড়াতাড়ি জন্মে এবং পাতা ঘন ছায়াযুক্ত হয়। তাতে মাছি বসে না। এটা খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। উপরের ছালসহ খাওয়া চলে। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) লাউ বা কদু খেতে খুবই ভালবাসতেন এবং পাত্র থেকে বেছে বেছে নিয়ে তা খেতেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাকে আমি লক্ষ বা ততোধিক লোকের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইতিপূর্বে হযরত ইউনুস (আঃ) নবী ছিলেন না। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মাছের পেটে যাওয়ার পূর্ব হতেই তিনি নবী ছিলেন। এই দ্বিমতের সমাধান এভাবে হতে পারে যে, প্রথমে তাকে তাদের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছিল। এখন দ্বিতীয়বার আবার তাঁকে তাদেরই প্রতি প্রেরণ করা হয় এবং তারা সবাই ঈমান আনে ও তাঁর সত্যতা স্বীকার করে। বাগাবী (রঃ) বলেন যে, মাছের পেট হতে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি অন্য কওমের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। এখানে শব্দটি বরং অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ত্রিশ হাজার বা এর চেয়েও কিছু বেশী বা সত্তর হাজারের বেশী অথবা এক লক্ষ দশ হাজার। একটি মারফু’ হাদীসের বর্ণনা হিসেবে তাদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ বিশ হাজার। এ ভাবার্থও বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষের অনুমান এক লক্ষের অধিকই ছিল। ইবনে জারীর (রঃ)-এর মত এটাই। অন্য আয়াতসমূহে যে (আরবী) রয়েছে, এগুলোর ক্ষেত্রেও তার ঐ একই মত। অর্থাৎ এর চেয়ে কম নয়, বরং বেশী। মোটকথা, হয়রত ইউনুস (আঃ)-এর কওমের সবাই আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে এবং তাকে সত্য নবী বলে স্বীকার করে নেয়।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদেরকে কিছু কালের জন্যে অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের জন্যে পার্থিব জীবনোপভোগ করতে দিলাম। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কোন গ্রামবাসীর উপর আযাব এসে যাওয়ার পর তাদের ঈমান আনয়ন তাদের কোন উপকারে আসেনি, ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছাড়া, তারা যখন ঈমান আনলো তখন আমি তাদের থেকে লাঞ্ছনাজনক আযাব উঠিয়ে নিলাম এবং কিছু কালের জন্যে তাদেরকে জীবনোপভোগ করতে দিলাম।" (১০:৯৮)
فَاسْتَفْتِهِمْ أَلِرَبِّكَ الْبَنَاتُ وَلَهُمُ الْبَنُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
وَقَالُوا إِنْ هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
أَمْ خَلَقْنَا الْمَلَائِكَةَ إِنَاثًا وَهُمْ شَاهِدُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
أَلَا إِنَّهُمْ مِنْ إِفْكِهِمْ لَيَقُولُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
وَلَدَ اللَّهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
أَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِينَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
أَمْ لَكُمْ سُلْطَانٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
فَأْتُوا بِكِتَابِكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
وَجَعَلُوا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَبًا ۚ وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ
📘 Please check ayah 37:160 for complete tafsir.
أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ
📘 ১৪৯-১৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের অহমিকার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা নিজেদের জন্যে তো পুত্র সন্তান পছন্দ করছে, আর আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করছে কন্যা সন্তান। তাদের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে শুনলে তাদের মুখ কালো হয়ে যায়, অথচ তারা আল্লাহর জন্যে ওটাই সাব্যস্ত করে। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে জিজ্ঞেস কর তো যে, এটা কি ধরনের বন্টন যে, তোমাদের জন্যে তো পুত্র সন্তান, আর আল্লাহর জন্যেই রয়েছে কন্যা সন্তান?এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি কি ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছিলাম, আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে? যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা ঐ ফেরেশতাদেরকে নারী রূপে সাব্যস্ত করেছে যারা রহমানের (আল্লাহর) বান্দা, তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? সত্বরই তাদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তারা জিজ্ঞাসিত হবে।”(৪৩:১৯) প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের মিথ্যা উক্তি মাত্র যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে, অথচ তিনি সন্তান থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। এর ফলে তাদের তিনটি মিথ্যা ও তিনটি কুফরী পরিলক্ষিত হয়। (এক) ফেরেশতারা আল্লাহর সন্তান। (দুই) তারা আবার কন্যা। (তিন) তারা নিজেরাই ফেরেশতাদের পূজা করে। পরিশেষে এমন কোন জিনিস আল্লাহকে বাধ্য করেছে যে, তিনি নিজের জন্যে পুত্র গ্রহণ করেননি, বরং গ্রহণ করেছেন কন্যা? অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তোমাদেরকে তিনি দান করেছেন পুত্র আর নিজের জন্যে ফেরেশতাদেরকে গ্রহণ করেছেন কন্যারূপে? এটা তো তোমাদের অতি নিম্ন পর্যায়ের বাজে ও ভিত্তিহীন কথা!” আরো বলা হয়েছেঃ “তোমাদের কি বিবেক বুদ্ধি নেই যে, তোমরা যুক্তিহীন কথা বলছো? তোমরা কি বুঝ না যে, আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা খুবই বড় অপরাধ? তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তোমাদের কি সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ আছে? যদি থেকে থাকে তবে তা পেশ কর? অথবা তোমাদের কাছে যদি কোন ঐশী বাণী থাকে তবে তাই আনয়ন কর? এটা এমনই এক বাজে কথা যে, এর স্বপক্ষে কোন জ্ঞানসম্মত ও শরীয়ত সম্মত দলীল প্রমাণ নেই। থাকতেই পারে না। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা আল্লাহ ও জ্বিন জাতির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থির করেছে। অথচ জ্বিনেরা জানে যে, তাদেরকেও শাস্তির জন্যে উপস্থিত করা হবে।‘ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা' মুশরিকদের এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রশ্ন করেনঃ “তাহলে তাদের মাতা কারা?” উত্তরে তারা বলেঃ “জ্বিন প্রধানদের কন্যারা।” অথচ অবস্থা এই যে, স্বয়ং জ্বিনেরা জানে এবং বিশ্বাস করে যে, যারা এই রূপ বলে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। তাদের মধ্যে আল্লাহর কতক শত্রু এমনই চরম পরিচয় দেয় যে, শয়তানকে তারা আল্লাহর ভাই বলে থাকে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা) আল্লাহ তাআলা এ থেকে আমাদেরকে নিরাপদে রাখুন! তারা যা বলে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও বহু ঊর্ধে রয়েছেন। পরে যে ইসতিসনা বা স্বতন্ত্র করা। হয়েছে তা হলো ইসতিসনা মুনকাতি এবং তা (আরবী)-এর সাথে করা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় (আরবী) ক্রিয়া পদটির সর্বনামে সমগ্র মানব জাতিকে বুঝাবে। এতে ঐ সব লোককে পৃথক করা হবে, যারা সত্যের অনুগত এবং সমস্ত নবী রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এই ইসতিসনা হচ্ছে (আরবী)-এর জন্যে অর্থাৎ তাদের সকলকেই আযাবে পতিত হতে হবে, কিন্তু তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। এ উক্তিটির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
فَإِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ بِفَاتِنِينَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
إِلَّا مَنْ هُوَ صَالِ الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
وَمَا مِنَّا إِلَّا لَهُ مَقَامٌ مَعْلُومٌ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
وَإِنَّا لَنَحْنُ الصَّافُّونَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
وَإِنَّا لَنَحْنُ الْمُسَبِّحُونَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
وَإِنْ كَانُوا لَيَقُولُونَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
لَوْ أَنَّ عِنْدَنَا ذِكْرًا مِنَ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
لَكُنَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ
📘 Please check ayah 37:170 for complete tafsir.
أَوَآبَاؤُنَا الْأَوَّلُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
فَكَفَرُوا بِهِ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
📘 ১৬১-১৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদেরকে জানাচ্ছেনঃ তোমাদের পথভ্রষ্টতা ও অংশীবাদী শিক্ষা শুধু তারাই গ্রহণ করবে যাদেরকে জাহান্নামের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা অন্তর থাকা সত্ত্বেও বুঝে না, চক্ষু থাকা সত্ত্বেও দেখে না এবং কান থাকা সত্ত্বেও শুনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট এবং তারা বেখেয়াল।” অপর জায়গায় বলা হয়েছেঃ “তাতে তারাই পথভ্রষ্ট হয় যাদের বোধশক্তি রহিত ও যারা মিথ্যার বেশাতি চড়ায়।”অতঃপর মহান আল্লাহ্ ফেরেশতাদের নিষ্কলুষিতা, তাদের আত্মসমর্পণ, ঈমানে সন্তুষ্টি এবং আনুগত্যের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা নিজেরাই বলেঃ আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই নির্ধারিত স্থান রয়েছে এবং ইবাদতের জন্যে বিশেষ জায়গা আছে। সেখান থেকে আমরা সরতে পারি না বা কমবেশীও করতে পারি না।'হযরত সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) একদা তাঁর সাথীদেরকে বলেনঃ “আসমান চড় চড় শব্দ করছে এবং প্রকৃতপক্ষে ওর এরূপ শব্দ করাই উচিত। কেননা, ওর এমন কোন স্থান ফাকা নেই যেখানে ফেরেশতাদের কেউ না কেউ রুকূ' বা সিজদার অবস্থায় থাকেন না।” অতঃপর তিনি (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াত তিনটি তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়ার আকাশে এমন কোন স্থান নেই যেখানে কোন ফেরেশতা সিজদারত বা দণ্ডায়মান অবস্থায় না রয়েছেন।”হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, প্রথমে নারী-পুরুষ সবাই মিলে একত্রে নামায পড়তো। অতঃপর (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর পুরুষদেরকে সামনে বাড়িয়ে দেয়া হলো এবং নারীদেরকে পিছনে সরিয়ে দেয়া হলো।“আমরা সব ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আল্লাহর ইবাদত করে থাকি” এর বর্ণনা (আরবী)-এর তাফসীরে গত হয়েছে।অলীদ ইবনে আবদিল্লাহ (রঃ) বলেনঃ এই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে নামাযের সারি ছিল না। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সারিবদ্ধভাবে নামায পড়া শুরু হয়। হযরত উমার (রাঃ) ইকামতের পর মানুষের দিকে মুখ করে বলতেনঃ “সারি ঠিক ও সোজা করে নাও এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও। আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাদের মত তোমাদেরকেও সারিবদ্ধ দেখতে চান। যেমন তারা বলেনঃ “আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হই। হে অমুক! তুমি সামনে বেড়ে যাও এবং হে অমুক! তুমি পিছনে সরে যাও।” অতঃপর তিনি সম্মুখে অগ্রসর হয়ে নামায শুরু করতেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে লোকদের উপর (অন্যান্য উম্মতের উপর) ফযীলত বা মর্যাদা দান করা হয়েছে। যেমনঃ আমাদের (নামাযের) সারিসমূহ ফেরেশ্তাদের সারির ন্যায় করা হয়েছে, আমাদের জন্যে সমগ্র যমীনকে সিজদার স্থান বানানো হয়েছে এবং ওর মাটিকে আমাদের জন্যে পবিত্র করা হয়েছে।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাদের উক্তি উদ্ধৃত করেনঃ “আমরা অবশ্যই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী। আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে থাকি। আমরা স্বীকার করি যে, তিনি সর্বপ্রকারের ক্ষয়-ক্ষতি হতে পবিত্র। আমরা সকল ফেরেশতা তাঁর আজ্ঞাবহ এবং তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর সামনে আমরা আমাদের নম্রতা ও অপারগতা প্রকাশ করে থাকি।” এই তিনটি হলো ফেরেশতাদের বিশেষণ। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তাসবীহ্ পাঠের অর্থ হচ্ছে নামায আদায় করা। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কাফিররা বলেঃ আল্লাহর সন্তান রয়েছে, অথচ তিনি তা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র, অবশ্য ফেরেশতারা তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা তাঁর আজ্ঞাবহ। তার হুকুমের উপর তারা আমল করে থাকে। তিনি তাদের সামনের ও পিছনের খবর রাখেন। তারা কারো জন্যে সুপারিশ করারও অধিকার রাখে না। তবে তিনি সম্মত হয়ে যাকে অনুমতি দেন সেটা স্বতন্ত্র কথা। তারা আল্লাহ্ ভয়ে সদা প্রকম্পিত থাকে। তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ছাড়া নিজেদেরকে ইবাদতের যোগ্য মনে করবে, আমি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবো। এভাবেই আমি যালিম ও সীমালংঘন কারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।”(২১:২৬-২৯) প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ তারাই তো বলে এসেছে যে, পূর্ববর্তীদের কিতাবের মত যদি তাদের কোন কিতাব থাকতো তবে অবশ্যই তারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হয়ে যেতো। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা খুব কঠিন শপথ করে করে বলতোঃ যদি আমাদের বিদ্যমানতায় আল্লাহর কোন নবী এসে পড়েন তবে আমরা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নেবো এবং হিদায়াতের পথে সর্বাগ্রে দৌড়িয়ে যাবো। কিন্তু যখন আল্লাহর নবী এসে গেলেন তখন তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পেলো।”(৬:১০৯) এখানে বলা হয়েছে যে, যখন তাদের এ আকাঙ্ক্ষা পুরো করা হলো তখন তারা কুফরী করতে লাগলো। আল্লাহর সাথে কুফরী করা এবং নবী (সঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণতি কি তা তারা অতি সত্বরই জানতে পারবে।'
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُورُونَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
فَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتَّىٰ حِينٍ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
وَأَبْصِرْهُمْ فَسَوْفَ يُبْصِرُونَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُونَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
فَإِذَا نَزَلَ بِسَاحَتِهِمْ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
وَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتَّىٰ حِينٍ
📘 Please check ayah 37:179 for complete tafsir.
وَأَبْصِرْ فَسَوْفَ يُبْصِرُونَ
📘 ১৭১-১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ আমি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও লিপিবদ্ধ করেছি এবং পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) মাধ্যমেও দুনিয়াবাসীকে শুনিয়ে দিয়েছি যে, দুনিয়া ও আখিরাতে আমার রাসূল ও তাদের অনুসারীদের পরিণামই হবে উত্তম। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ্ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনঃ অবশ্যই আমি ও আমার রাসূলরাই জয়যুক্ত থাকবো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিশালী ও মহা পরাক্রমশালী ।”(৫৮:২১) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মুমিনদেরকে সাহায্য করবো পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীরা দণ্ডায়মান হবে।” (৪০:৫১) এখানেও মহান আল্লাহ্ ঐ কথাই বলেনঃ আমার রাসূলদের সাথে আমার এই ওয়াদা হয়ে গেছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আমি নিজেই তাদেরকে সাহায্য করবো। তুমি তো জান যে, কিভাবে তাদের শত্রুদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। তুমি মনে রেখো যে, আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী। তুমি একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে তাদের ব্যাপারটা দেখতে থাকো। তাদের দেয়া কষ্ট সহ্য করে যাও। তুমি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকো যে, কিভাবে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করবেন এবং কিভাবে তারা হবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত! তারা নিজেরাও শীঘ্রই তা প্রত্যক্ষ করবে।বড়ই বিস্ময়ের ব্যাপার যে, তারা বিভিন্ন প্রকারের ছোট ছোট আযাবের শিকার হওয়া সত্ত্বেও এখনো বড় আযাবকে অসম্ভব মনে করতে রয়েছে! আর বলছে যে, ঐ আযাব কখন আসবে? তাই তাদেরকে জবাবে বলা হচ্ছেঃ তাদের আঙিনায় যখন শাস্তি নেমে আসবে ওটা তাদের জন্যে খুবই কঠিন দিন হবে। তাদেরকে সেদিন সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে।সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) অতি প্রত্যুষে খায়বারের মাঠে উপস্থিত হন। জনগণ অভ্যাসমত চাষের যন্ত্রপাতি নিয়ে শহর হতে বের হয়েছে। হঠাৎ তারা আল্লাহর সেনাবাহিনী দেখে পালিয়ে যায় এবং শহরবাসীকে খবর দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলে ওঠেনঃ “আল্লাহ্ বড়ই মহান। খায়বারবাসীর জন্যে বড়ই বিপদ। যখন আমরা কোন কওমের ময়দানে অবতরণ করি তখন ঐ সতর্কিকৃতদের বড়ই দুর্গতি হয়ে থাকে।”পুনরায় মহান আল্লাহ্ স্বীয় নবী (সঃ)-কে জোর দিয়ে বলেনঃ হে নবী (সাঃ)! কিছুকালের জন্যে তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করতে থাকো এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করে যাও। শীঘ্রই তারা নিজেরাও (তাদের দুর্গতি) প্রত্যক্ষ করবে।
قُلْ نَعَمْ وَأَنْتُمْ دَاخِرُونَ
📘 Please check ayah 37:19 for complete tafsir.
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ
📘 Please check ayah 37:182 for complete tafsir.
وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 37:182 for complete tafsir.
وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 ১৮০-১৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ্ তা'আলা সেই সমুদয় বিষয় হতে নিজের পবিত্রতা বর্ণনা করছেন যেগুলো যালিম ও মিথ্যাবাদী মুশরিকরা তাঁর প্রতি আরোপ করে থাকে। যেমন তারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান আছে ইত্যাদি। আল্লাহ্ তা'আলা অতি মহান এবং এমন মর্যাদার অধিকারী যা কখনো নষ্ট হবার নয়। ঐ মিথ্যাবাদী ও মিথ্যারোপকারী মুশরিকদের অপবাদ হতে তিনি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। আল্লাহর রাসূলদের (আঃ) প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা, তাঁদের কথাগুলো ঐসব দোষ হতে মুক্ত যেসব দোষ মুশরিকদের কথাগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। নবীরা যেসব কথা বলেন এবং তারা মহান আল্লাহর সত্তার যে শাবলী বর্ণনা করে থাকেন সেগুলো সবই সঠিক ও সত্য। তাঁর সত্তার জন্যেই প্রশংসা শোভনীয়। দুনিয়া ও আখিরাতে শুরুতে ও শেষে প্রশংসা একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। সর্বাবস্থায়ই প্রশংসা প্রাপ্তির যোগ্য শুধুমাত্র তিনিই। তাঁর মহিমা ঘোষণা দ্বারা সর্ব প্রকারের ক্ষতি তাঁর পবিত্র সত্তা হতে দূর প্রমাণিত হয়। তাহলে এটা অতি আবশ্যকীয় যে, সর্বপ্রকারের পূর্ণতা তাঁর একক সত্তার মধ্যে থাকবে। এটাকেই পরিষ্কার ভাষায় হামদ বা প্রশংসা দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়েছে, যাতে ক্ষতিসমূহ না সূচক হয় এবং পূর্ণতা হ্যা সূচক হয়। কুরআন কারীমের বহু আয়াতে তাসবীহ্ ও হামদের একই সাথে বর্ণনা দেয়া হয়েছে।হযরত কাতাদা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আমার উপর সালাম পাঠাবে তখন অন্যান্য নবীদের উপরও সালাম পাঠাবে। কেননা, তাঁদেরই মধ্যে আমিও একজন নবী।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদেও এটা বর্ণিত আছে)হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) যখন সালামের ইচ্ছা করতেন তখন এই আয়াত তিনটি পড়ে সালাম করতেন। (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর ইসনাদ দুর্বল)হযরত শা’বী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন পরিমাপ যন্ত্র ভর্তি পুণ্য লাভ করতে চায় সে যেন কোন মজলিস হতে উঠে যাওয়ার সময় এই আয়াত তিনটি পাঠ করে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদে এ রিওয়াইয়াতটি হযরত আলী (রাঃ) হতে মাওকুফরূপে বর্ণিত হয়েছে)ইমাম তিবরানী (রঃ)-এর হাদীস গ্রন্থে হযরত আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে এ আয়াত তিনটি তিনবার পাঠ করবে সে পরিমাপ যন্ত্র ভরে ভরে পুণ্য লাভ করবে।”মজলিসের কাফফারার ব্যাপারে বহু হাদীসে নিম্নোক্ত কালেমাটি পাঠ করার কথা এসেছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আপনার নিকট আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও আপনার নিকট তাওবা করছি।” এই মাসআলার উপর আমি একটি স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছি।
فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ فَإِذَا هُمْ يَنْظُرُونَ
📘 ১১-১৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আলাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তুমি কিয়ামত অস্বীকার কারীদেরকে প্রশ্ন করঃ আল্লাহ্ তা'আলার কাছে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন, না আসমান, যমীন, ফেরেশতা, জ্বিন ইত্যাদি সৃষ্টি করা কঠিন? হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। ভাবার্থ এই যে, তারা তো এসবের সত্যতা স্বীকার করে, তবে মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে তারা কেন অস্বীকার করে? অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করা মানব সৃষ্টি করা অপেক্ষা কঠিনতর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।”(৪০:৫৭)।অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আমি তাদেরকে আঠাল মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) বলেন। যে, মানুষকে এমন মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে যা হাতের মাঝে আঠালভাবে লেগে যায়।আল্লাহ পাকের উক্তিঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তো বিস্ময়বোধ করছে আর তারা বিদ্রুপ করছে। কারণ তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে, আর তুমি তাতে দৃঢ় বিশ্বাসী। আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মানুষের মৃত্যুর পর তাদের গলিত দেহ পুনর্গঠন করা হবে, এ শুনে তারা তামাশা করছে। আর যখন কোন প্রকাশ্য প্রমাণ তাদের সামনে পেশ করা হয় তখন তারা বিদ্রুপ করে বলে যে, এটা তো নিচক যাদুর খেলা। তারা বলেঃ মৃত্যুর পর আমরা মাটিতে মিশে যাবো এবং এরপর পুনরুজ্জীবিত হবো, এমন কি আমাদের পূর্বপুরুষদেরও পুনরায় জীবিত করা হবে, এ কথা তো আমরা কখনো মানতে পারি না। তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা যে অবস্থাতেই থাকো না কেন তোমাদেরকে অবশ্যই পুনর্জীবিত করা হবে। কারণ তোমরা সবাই আল্লাহর ক্ষমতাধীন। তাঁর সামনে কারো কোন অস্তিত্ব নেই। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকেই তাঁর কাছে লাঞ্ছিত অবস্থায় আসবে।”(২৭:৮৭) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করবে, সত্বরই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”(৪০:৬০)এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ এটা তো একটিমাত্র প্রচণ্ড শব্দ, আর তখনই তারা প্রত্যক্ষ করবে। অর্থাৎ যেটাকে তোমরা খুবই কঠিন মনে করছো তা আল্লাহর কাছে মোটেই কঠিন নয়, বরং খুবই সহজ। একটিমাত্র প্রচণ্ড শব্দ হবে, আর তখনই সবাই কবর হতে বের হয়ে কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا
📘 Please check ayah 37:5 for complete tafsir.
وَقَالُوا يَا وَيْلَنَا هَٰذَا يَوْمُ الدِّينِ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
هَٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِ الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
۞ احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
مِنْ دُونِ اللَّهِ فَاهْدُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
وَقِفُوهُمْ ۖ إِنَّهُمْ مَسْئُولُونَ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُونَ
📘 Please check ayah 37:26 for complete tafsir.
بَلْ هُمُ الْيَوْمَ مُسْتَسْلِمُونَ
📘 ২০-২৬ নং আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামত অস্বীকারকারীরা বলবেঃ হায়, দুর্ভোগ আমাদের! এটাই তো প্রতিফল দিবস! মুমিন ও ফেরেশতারা তাদের লজ্জা আরো বাড়ানোর জন্যে বলবেনঃ হ্যা, এটাই ফায়সালার দিন যা তোমরা অবিশ্বাস করতে।অতঃপর ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা নির্দেশ দিবেনঃ তোমরা তাদের সহচরদেরকে, তাদের ভাই বন্ধুদেরকে এবং তাদের অনুরূপ ব্যক্তিবর্গকে এক জায়গায় একত্রিত কর। যেমন ব্যভিচারীকে ব্যভিচারীর সাথে, সুদখোরকে সুদখোরের সাথে, মদ্যপায়ীকে মদ্যপায়ীর সাথে ইত্যাদি। একটি উক্তি এও আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যালিমদেরকে ও তাদের স্ত্রীদেরকে একত্রিত কর। কিন্তু এটা খুবই দুর্বল উক্তি। সঠিক ভাবার্থ এটাই তাদের অনুরূপ লোকদেরকে এবং তাদের সাথে তাদের উপাস্যদেরকে একত্রিত কর যাদেরকে আল্লাহর শরীক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত কর। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে কিয়ামতের দিন মুখের ভরে অন্ধ, মূক ও বধির করে একত্রিত করবো। তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম, যার আগুন যখনই কিছুটা হালকা হবে তখনই আমি ঐ আগুনকে আরো বেশী প্রজ্বলিত করে দিবো।”(১৭:৯৭) আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে আরো বলবেনঃ তাদেরকে জাহান্নামের নিকট কিছু সময়ের জন্যে দণ্ডায়মান রাখো। কেননা, আমি তাদেরকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং তাদের হিসাব নিবো।হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে কোন জিনিসের দিকে ডাকবে, কিয়ামতের দিন তাকে তারই সাথে খাড়া করা হবে, বিশ্বাসঘাতকতাও হবে না এবং বিচ্ছিন্নতাও হবে না, যদিও একজন লোক একজন লোককেও ডেকে থাকে।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত উসমান ইবনে যায়েদাহ (রাঃ) বলেন যে, মানুষকে সর্বপ্রথম তার সঙ্গীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারপর তাকে প্রশ্ন করা হবেঃ আজ কেন একে অপরকে সাহায্য করছো না? অথচ তোমরা দুনিয়ায় বলে বেড়াতে আমরা সবাই একত্রে রয়েছি এবং আমরা পরস্পরকে সাহায্য করবো? কিন্তু আজ তো তারা অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে দিয়ে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। না আজ তারা তার কোন বিরুদ্ধাচরণ করবে, না তারা তাঁর আযাব থেকে বাঁচতে পারবে, না পালাতে পারবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
قَالُوا إِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
قَالُوا بَلْ لَمْ تَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا
📘 Please check ayah 37:5 for complete tafsir.
وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ ۖ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِينَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَا ۖ إِنَّا لَذَائِقُونَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
فَأَغْوَيْنَاكُمْ إِنَّا كُنَّا غَاوِينَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
فَإِنَّهُمْ يَوْمَئِذٍ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
إِنَّا كَذَٰلِكَ نَفْعَلُ بِالْمُجْرِمِينَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ
📘 Please check ayah 37:37 for complete tafsir.
بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ
📘 ২৭-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করছেন যে, কাফিররা জাহান্নামের মধ্যে যেভাবে জ্বলতে থাকবে ও পরস্পর দ্বন্দ্বে ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে ঠিক তেমনিভাবে তারা কিয়ামতের মাঠে একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “দুর্বলরা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম, সুতরাং আজ কি তোমরা আমাদেরকে শাস্তির কিছু অংশ থেকে রক্ষা করবে না? ক্ষমতাদপীরা উত্তরে বলবেঃ আমরা নিজেরাও তো তোমাদের সাথে জাহান্নামে রয়েছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্যে প্রকৃত ফায়সালা করেছেন।”(৪০:৪৭-৪৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হায়! যদি তুমি দেখতে যালিমদেরকে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ লুতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম। যারা ক্ষমতাদর্পী ছিল তারা যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের নিকট সৎ পথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে ওটা হতে নিবৃত্ত করেছিলাম? বস্তুতঃ তোমরাই তো ছিলে অপরাধী। যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যে, যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তার শরীক স্থাপন করি। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলদেশে শৃংখল পরাবো। তাদেরকে তারা যা করতো তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”(৩৪:৩১-৩৩) অনুরূপ বর্ণনা এখানেও রয়েছে যে, তারা তাদের নেতৃবর্গকে বলবেঃ তোমরা আমাদের ডান দিকে ছিলে। অর্থাৎ যেহেতু আমরা তোমাদের চেয়ে কম শক্তি সম্পন্ন ছিলাম এবং তোমরা আমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিলে সেই হেতু তোমরা আমাদেরকে জোরপূর্বক ন্যায় হতে অন্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিতে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কাফিররা এ কথা শয়তানদেরকে বলবে।কাতাদা (রঃ) বলেন যে, একথা মানুষ জ্বিনদেরকে বলবে। মানুষ তাদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদেরকে ভাল কাজ হতে ফিরিয়ে মন্দ কাজ করতে উত্তেজিত করতে, পাপের কাজকে আমাদের চোখে সুন্দর করে দেখাতে এবং ভাল ও পুণ্যের কাজকে কঠিন ও মরূপে প্রদর্শন করতে। হক হতে ফিরিয়ে দিতে এবং বাতিলের প্রতি আমাদেরকে প্রভাবিত করতে। কোন কোন সময় যখন আমাদের মনে পুণ্য কাজের প্রতি খেয়াল জাগতো তখন তোমরা প্রতারণা করে আমাদেরকে তা হতে সরিয়ে দিতে। ইসলাম, ঈমান এবং পুণ্য লাভ হতে তোমরা আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে, তাওহীদ হতে আমাদেরকে বহু দূরে তোমরা নিক্ষেপ করেছো। তোমাদেরকে আমাদের মঙ্গলকামী ও শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করে আমরা তোমাদেরকে আমাদের সব গোপন কথা বলেছিলাম ও তোমাদেরকে বিশ্বস্ত ভেবেছিলাম। তোমাদের কথা আমরা মেনে চলতাম এবং তোমাদেরকে ভাল মানুষ মনে করতাম।মহান আল্লাহ শক্তিশালী নেতৃবৃন্দের উক্তি উদ্ধৃত করেনঃ বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। অর্থাৎ দুর্বলদের অভিযোগ শুনে জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিল তারা ঐ দুর্বলদেরকে উত্তরে বলবেঃ আমাদের কোন দোষ নেই। তোমরা নিজেরাই তো অন্যায়কারী ছিলে। তোমাদের অন্তর ঈমান হতে দূরে ছিল। কুফরী ও পাপের কাজে তোমরা সদা লিপ্ত থাকতে।তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্ব ছিল না। বস্তুতঃ তোমরাই ছিলে সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। তোমাদের মনের মধ্যে অবাধ্যতা ও দুষ্টামি ছিল। তাই তোমরা আমাদের কথা মান্য করেছিলে এবং নবীদের আনয়নকৃত সত্যকে পরিত্যাগ করেছিলে। তারা যা নিয়ে এসেছিলেন তার স্বপক্ষে তারা প্রমাণও পেশ করেছিলেন। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাদের বিরোধিতা করেছিলে। তাই আমাদের সবারই উপর আল্লাহর আযাবের বাণী সত্যভাবে স্থির হয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছিলাম ও বিভ্রান্ত করেছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাও ছিলাম বিভ্রান্ত।মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ তারা সবাই সেই দিন শাস্তিতে শরীক হবে। অর্থাৎ নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী সবাই জাহান্নামী। আর অপরাধীদের প্রতি আমি এরূপই করে থাকি। যখন তাদেরকে বলা হতো যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তখন তারা গর্বভরে বলতোঃ আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের মা’বৃদদেরকে বর্জন করবো? অর্থাৎ তারা অহংকার ভরে তাওহীদের বাণী উচ্চারণ করতো না, যে বাণী মুমিনরা উচ্চারণ করতো। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি মানব জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই সে ইসলামের হক ছাড়া তার মাল ও জান আমা হতে বাঁচিয়ে নিবে এবং তার হিসাব মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এ বিষয়টিই আল্লাহর কিতাবেও রয়েছে এবং এক অহংকারী সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, তারা এ কালেমা উচ্চারণ করতে গর্বভরে অস্বীকার করছিল। আবুল আ'লা (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন ইয়াহূদীদেরকে আনয়ন করা হবে, অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা দুনিয়াতে কার ইবাদত করতে?” উত্তরে তারা বলবেঃ “আমরা আল্লাহর এবং উযায়ের (আঃ)-এর ইবাদত কাম।” তখন তাদেরকে বাম পাশে রাখার নির্দেশ দেয়া হবে। তারপর খৃষ্টানদেরকে এনে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তোমরা কার ইবাদত করতে?” তারা উত্তর দিবেঃ “আমরা আল্লাহর ও ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করতাম।” এদেরকেও বাম পাশে রাখার হুকুম করা হবে। এরপর মুশরিকদেরকে আনয়ন করে বলা হবেঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই।” তখন তারা অহংকার করবে। তিনবার তাদেরকে এ কথা বলা হবে এবং তিনবারই তারা অহংকার প্রকাশ করবে। তাদেরকেও বাম দিকে রাখার নির্দেশ দেয়া হবে। আবু নাযা (রাঃ) বলেন যে, তাদেরকে পাখীর চেয়েও বেশী দ্রুতগতিতে নিয়ে যাওয়া হবে। আবুল আ'লা (রাঃ) বলেন যে, এরপর মুসলিমদের আনয়ন করা হবে এবং তাদেরকে প্রশ্ন করা হবেঃ “তোমরা কার ইবাদত করতে?” তারা জবাবে বলবেঃ “আমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তোমরা তাঁকে দেখলে চিনতে পারবে কি?" তারা উত্তর দিবেঃ “হ্যা পারবো।” আবার তাদেরকে প্রশ্ন করা হবেঃ “তোমরা তো তাঁকে দেখোনি, সুতরাং কি করে তাঁকে চিনতে পারবে?” তারা উত্তর দিবেঃ “আমরা জানি যে, কেউই তার সমকক্ষ নয়।” তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাদেরকে স্বীয় পরিচয় প্রদান করবেন এবং তাদেরকে মুক্তি দিবেন। কাফির ও মুশরিকরা কালেমায়ে তাওহীদ শুনে উত্তর দিতোঃ “আমরা কি একজন কবি ও পাগলের কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করবো?” অর্থাৎ তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কবি ও পাগল বলে আখ্যায়িত করতো। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করতঃ তাদের মত খণ্ডন করে বলেনঃ “বরং এই নবী (সঃ) সত্য নিয়ে এসেছে এবং সমস্ত রাসূলকে সে সত্য বলে স্বীকার করেছে। অন্যান্য নবীরা (আঃ) ইতিপূর্বে এই নবী (সঃ) সম্বন্ধে যে গুণাবলী ও পবিত্রতার বর্ণনা দিয়েছিলেন যেসবের সঠিক প্রমাণ তিনি নিজেই। পূর্ববর্তী নবীগণ (আঃ) যেসব হুকুম বর্ণনা করেছেন, তিনিও সেসবেরই বর্ণনা দিয়ে থাকেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমাকে ঐ কথাই বলা হচ্ছে যা তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে (আঃ) বলা হয়েছিল।”(৪১:৪৩)
إِنَّكُمْ لَذَائِقُو الْعَذَابِ الْأَلِيمِ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
وَمَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
إِنَّ إِلَٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ
📘 Please check ayah 37:5 for complete tafsir.
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
أُولَٰئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
فَوَاكِهُ ۖ وَهُمْ مُكْرَمُونَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
عَلَىٰ سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِكَأْسٍ مِنْ مَعِينٍ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
لَا فِيهَا غَوْلٌ وَلَا هُمْ عَنْهَا يُنْزَفُونَ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِينٌ
📘 Please check ayah 37:49 for complete tafsir.
كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَكْنُونٌ
📘 ৩৮-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা লোকদেরকে সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা অবশ্যই বেদনাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করবে এবং তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে। এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় মনোনীত বান্দাদের এর থেকে পৃথক করে নিচ্ছেন যে, তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মহাকাশের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।”(১০৫: ১-৩) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে। অতঃপর আমি তাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি, কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ।”(৯৬:৪-৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের প্রত্যেকেই ওটা (জাহান্নাম) অতিক্রম করবে, এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাকীদেরকে উদ্ধার করবো এবং যালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দিবো।”(১৯:৭১-৭২) অন্য এক জায়গায় প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ, তবে দক্ষিণ পার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা নয়।”(৭৪:৩৮-৩৯)এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে বলেনঃ “তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা।” বেদনাদায়ক শাস্তিতে পতিত ব্যক্তিদের হতে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে পৃথক করে নিয়েছেন যাতে তারা কঠিন শা হিসাব-নিকাশের ভীষণ বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। তাদেরকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে দূরে রাখা হবে। আর ঐ সব বান্দার নেক আমলগুলোকে একটির বদলে দশগুণ তা হতে সাতশগুণ এমনকি আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছানুযায়ী আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে ।আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ তাদের জন্যে আছে নির্ধারিত রিযক। কাতাদা (রাঃ) ও সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে। তা হবে নানা প্রকারের ফলে পরিপূর্ণ। সেখানে তারা হবে মহাসম্মানের অধিকারী। সুখদ কাননে তারা মুখোমুখি হয়ে আসনে সমাসীন থাকবে। মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ তারা এমনভাবে বসে থাকবে যে, কারো পৃষ্ঠ দেশ কেউ দেখতে পাবে না। হযরত যায়েদ ইবনে আবি আওফা (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট হাযির হয়ে (আরবী)-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “প্রত্যেকে এমনভাবে সামনা সামনি হয়ে বসে থাকবে যে, তাদের দৃষ্টি পরস্পরের মুখমণ্ডলের উপর পতিত হবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গারীব)মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্র। প্রবাহিত শরাব হতে পূর্ণ পেয়ালা তাদের মধ্যে পরিবেশিত হবে। তা হবে ধবধবে সাদা ও সুমিষ্ট। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির কিশোরেরা পানপাত্র, কুজা প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে , তারা জ্ঞান হারাও হবে না।”(৫৬:১৭-১৯) দুনিয়ার মদে এই ক্ষতি রয়েছে। যে, এটা পান করলে পেটে অসুখ হয়, মাথা ব্যথা হয় এবং জ্ঞান লোপ পায়। কিন্তু জান্নাতের সুরার মধ্যে এসব মন্দ গুণ কিছুই নেই। এর রঙ সুদৃশ্য এবং পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু। এর উল্টো হচ্ছে দুনিয়ার মদ। তাতে দুর্গন্ধ বিদ্যমান এবং রঙ দেখতেও ঘৃণাবোধ হয়। এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাতের শরাব সম্পর্কে বলেনঃ তাতে ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না। এবং তাতে তারা মাতালও হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের মতে (আরবী) শব্দ দ্বারা পেটের ব্যথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়ার মদ্যপানে যেমন পেটের ব্যথা হয় জান্নাতের মদ্য পানে তা হবে না। কেউ কেউ বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ হলো শিরঃপীড়া। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ঐ সুরা পানে জ্ঞান লোপ পাবে না। সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, তাতে কোন ঘৃণার বস্তু থাকবে না এবং কোন কষ্টও হবে না। তবে হযরত মুজাহিদ প্রমুখ গুরুজনের উক্তিটিই সঠিক যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা পেটের ব্যথাকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাতে তারা মাতালও হবে না।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, শরাবে চারটি মন্দ গুণ রয়েছে। যেমন- মাতলামী, মাথা ব্যথা, বমন এবং মূত্র দোষ। মহামহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাতের শরাবের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তাতে উক্ত দোষগুলোর একটিও থাকবে না।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদের সঙ্গে থাকবে আনত নয়না, আয়ত লোচনা হুরীগণ। তারা নিজেদের স্বামীদের ছাড়া আর কারো চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজন এই মত পোষণ করেন। (আরবী) অর্থ সুলোচনা। কেউ কেউ বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বড় চক্ষু। আর একটি অর্থ হলো আনত নয়না। অবশ্য এটা সৌন্দর্যের চরম বিকাশ ও উত্তম চরিত্রের পরিচায়ক। জুলাইখা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মধ্যে এই উভয়বিধ সৌন্দর্য দেখেছিলেন। একদা জুলাইখা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে উত্তমরূপে সাজিয়ে মিসরের ভদ্র মহিলাদের সামনে হাযির করেন। তারা নবী (আঃ)-এর রূপ ও চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে বলে উঠেছিলঃ “অদ্ভূত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা?” জুলাইখা তখন বলেছিলেনঃ “এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দে করেছে। আমি তো তা হতে অসঙ্কর্ম কামনা করেছি, কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে।” তিনি বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও বহাল রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন অতি সৎ, পবিত্র, বিশ্বস্ত, পুণ্যবান এবং আল্লাহভীরু। জান্নাতী হুরীরাও ঠিক অনুরূপ। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব। তারা সুন্দর তনুধারিণী উজ্জ্বল গৌর বর্ণের সঙ্গিনী। আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ “যেন তারা রক্ষিত মুক্তা।” এর স্বপক্ষে কবি আবু দুহায়েলের কাসীদা হতে একটি পংক্তি এখানে উদ্ধৃত হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “মহিলাটি ডুবুরীর ঐ মুক্তার ন্যায় পরমা সুন্দরী, যাকে সুরক্ষিত জওহর হতে পৃথক করা হয়েছে।” হাসান (রঃ), সুদ্দী (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) প্রমুখ মনীষীবর্গ বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে ঐ সুরক্ষিত মুক্তা যেখানে কারো হাত পৌছেনি এবং যাকে ঝিনুক থেকে বের করা হয়নি। ওটা যেন ডিম্বের উপরের পরদার মাঝে সুরক্ষিত অংশ বিশেষ, যা কেউ স্পর্শ করেনি। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর (আরবী)-এর ভাবার্থ বুঝিয়ে দিন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “এর ভাবার্থ হলো- বড় চক্ষু ও কালো পলক বিশিষ্ট হর।" আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) (আরবী)-এর ভাবার্থ কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ “ডিম্বের মধ্যস্থিত সাদা ঝিল্লীর মত তাদের দেহ।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন লোকদেরকে কবর হতে উঠানো হবে তখন সর্বপ্রথম আমিই দণ্ডায়মান হবে। যখন সকলকে প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহর নিকট হাযির করা হবে তখন আমিই হলো তাদের খতীব বা ভাষণদানকারী। যখন তারা চিন্তাযুক্ত থাকবে তখন আমিই তাদেরকে সুসংবাদ দান করবো। যখন তারা বন্দী অবস্থায় থাকবে তখন আমিই তাদের জন্যে সুপারিশ করবো। সেই দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আদম সন্তানের মধ্যে সেই দিন আমিই হবো সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। এটা আমি অহংকার করে বলছি না। কিয়ামতের দিন আমার সামনে ও পিছনে এক হাজার খাদেম ঘুরাঘুরি করবে যারা রক্ষিত ডিম্ব বা এমন মুক্তার মত হবে যেগুলোকে স্পর্শ করা হয়নি। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ
📘 হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে হালকাভাবে নামায পড়ার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি সূরায়ে সাফফাত পড়ে আমাদের ইমামতি করতেন।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
১-৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, এই তিন শপথের দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য গুরুজনদেরও এটাই উক্তি। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ফেরেশতাদের সারি আকাশের উপরে রয়েছে।হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সমস্ত মানুষের উপর তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাদের সারিকে ফেরেশতাদের সারির মত করা হয়েছে, সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্যে মসজিদ বানানো হয়েছে এবং পানি না পাওয়া অবস্থায় মাটিকে আমাদের জন্যে অযুর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ফেরেশতারা তাঁদের প্রতিপালকের সামনে যেভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দণ্ডায়মান হন সেই ভাবে তোমরা সারিবদ্ধ হওনা কেন?” সাহাবীগণ (রাঃ) আর করলেনঃ “ফেরেশতারা কিভাবে তাদের প্রতিপালকের সামনে কাতারবন্দী হন?” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “তারা প্রথম সারিকে পূরণ করে নেন এবং অন্যান্য সারিগুলোকেও সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে নেন। (ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)(আরবী) (যারা কঠোর পরিচালক) এ আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন মেঘ-বৃষ্টিকে একদিক থেকে অন্যদিকে ধমক দিয়ে পরিচালনকারী ফেরেশতার দল অর্থে এটা ব্যবহৃত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। রাবী ইবনে আনাস (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, উক্ত আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ কুরআন কারীম যে জিনিস হতে বাধা প্রদান করেছে তা থেকে তারা এক পদও অগ্রসর হন না।(আরবী) (যারা যিকর আবৃত্তিতে রত), সুদ্দী (রঃ)-এর মতে এঁরা হলেন ঐ ফেরেশতা যারা আল্লাহ্ পয়গাম বান্দাদের নিকট আনয়ন করে থাকেন। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং (শপথ তাদের) যারা মানুষের হৃদয়ে পৌছিয়ে দেয় উপদেশঅনুশোচনা স্বরূপ বা সতর্কতা স্বরূপ।”এই শপথসমূহের পর এখন যে বিষয়ের উপর শপথ করা হয়েছে তার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে ও তোমাদের সবারই সত্য ও সঠিক মা'বুদ একমাত্র আল্লাহ। যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের অন্তর্বর্তী সব কিছুর প্রতিপালক, এবং প্রতিপালক সকল উদয়স্থলের। তিনিই আকাশের উপর তারকারাজি, চন্দ্র এবং সূর্যকে কাজে নিয়োজিত রেখেছেন, যেগুলো পূর্ব দিকে উদিত হয় ও পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। মাশরিকের উল্লেখ করে মাগরিবের ইঙ্গিত থাকার কারণে ওর উল্লেখ করা হয়নি। অন্য আয়াতে উল্লেখ করাও হয়েছে। যেমন ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনিই দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের নিয়ন্তা।”(৫৫:১৭) অর্থাৎ শীতকালের ও গ্রীষ্মকালের উদয় ও অস্তের স্থানের প্রতিপালক তিনিই।
فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
قَالَ قَائِلٌ مِنْهُمْ إِنِّي كَانَ لِي قَرِينٌ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
يَقُولُ أَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِينَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَدِينُونَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
قَالَ هَلْ أَنْتُمْ مُطَّلِعُونَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
فَاطَّلَعَ فَرَآهُ فِي سَوَاءِ الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
قَالَ تَاللَّهِ إِنْ كِدْتَ لَتُرْدِينِ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنْتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
أَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِينَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
إِلَّا مَوْتَتَنَا الْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
📘 Please check ayah 37:10 for complete tafsir.
إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
📘 Please check ayah 37:61 for complete tafsir.
لِمِثْلِ هَٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ
📘 ৫০-৬১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, জান্নাতবাসীরা একে অপরের সামনা সামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। অর্থাৎ তারা দুনিয়ার মাঝে কে কেমন অবস্থায় ছিল এবং সেখানে তাদের দিনগুলো কিভাবে অতিবাহিত হয়েছিল সে সম্বন্ধে একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। চৌকির উপর পরস্পর তারা হেলান দিয়ে বসে থাকবে। শত শত সুদৃশ্য পরি-চেহারার সেবক তাদের হুকুমের অপেক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকবে। ঐ জান্নাতীরা বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য ও পানীয় এবং রঙ বেরঙ-এর পোশাকের মধ্যে ডুবে থাকবে। তাদের মধ্যে সুরা পরিবেশিত হবে। এবং তারা এমন সব সুখের সামগ্রী লাভ করবে যা কোন কানও শুনেনি, চক্ষুও অবলোকন করেনি এবং হৃদয়ও কল্পনা করেনি। কথা প্রসঙ্গে তাদের একজন বলবেঃ দুনিয়ায় আমার এক বন্ধু ছিল। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ শয়তান। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সে এক মুশরিক ব্যক্তি। দুনিয়াতে মুমিনদের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। এ দু’জন মনীষীর কথার মধ্যে বৈপরীত্য কিছুই নেই। কেননা, শয়তান জ্বিনদের মধ্য থেকেও হয়ে থাকে এবং সে অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক করে। আর মানুষের মধ্যেও শয়তান থাকে, সেও গোপনে কথা বলে যা কান শ্রবণ করে। এই উভয় প্রকার মত একে অপরের পরিপূরক। এই উভয় প্রকারের শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি) আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জ্বিনের মধ্য হতে অথবা মানুষের মধ্য হতে।”(১১৪:৪-৬) এ জন্যেই ঘোষিত হয়েছেঃ “তাদের কেউ বলেআমার ছিল (দুনিয়ায়) এক সঙ্গী। সে আমাকে বলতো ? তুমি কি এতে বিশ্বাসী যে, আমরা যখন মরে যাবো এবং আমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হবো তখনো কি আমাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে?” অর্থাৎ আমার ঐ বন্ধুটি আমাকে বলতোঃ তুমি কি কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ ও প্রতিফল দিবসে বিশ্বাসী? এটা সে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করতো। কেননা, সে তো অবিশ্বাস করতো। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, -এর অর্থ হলো হিসাব গ্রহণ করা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব আল ফারাযী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলো আমল অনুযায়ী প্রতিফল প্রদান করা। উভয় মতই ঠিক।মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা কি প্রত্যক্ষ করতে চাও?' মুমিন ব্যক্তি তার জান্নাতী বন্ধু ও সহচরকে পৃথিবীর ঐ বন্ধুর কথা বলবে। (আরবী) অর্থাৎ ‘অতঃপর সে ঝুঁকে দেখবে এবং তাকে দেখতে পাবে জাহান্নামের মধ্যস্থলে।' ইবনে আব্বাস (রাঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ), খালীদুল আসরী (রঃ), কাতাদা (রঃ), সুদ্দী (রঃ), আতাউল খুরাসানী (রঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলো জাহান্নামের মধ্যস্থল। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, সেই মুমিন ব্যক্তি তার বন্ধুটিকে মস্তক গলা অবস্থায় জাহান্নামের মধ্যে দেখতে পাবে। কা'ব (রঃ) বলেন যে, জান্নাতে জানালা রয়েছে। সুতরাং কেউ তার শত্রুদেরকে দেখতে ইচ্ছা করলে উঁকি দিলেই দেখতে পাবে। ফলে সে খুব বেশী বেশী আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। জান্নাতী ব্যক্তি তাকে দেখেই বলবেঃ তুমি আমার জন্যে এমন ফাঁদ পেতেছিলে যাতে আমাকে ধ্বংস করেই ছাড়তে। কিন্তু মহান আল্লাহর শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে তোমার খপ্পর থেকে রক্ষা করেছেন। যদি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ না হতো তবে আমি বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতাম। তোমার মত আমাকে জাহান্নামে জ্বলতে হতো। আল্লাহ আমাকে সুপথ প্রদর্শন করে একত্ববাদের দিকে ধাবিত করেছেন। “আমাদের তো মৃত্যু হবে না প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তিও দেয়া হবে না।" এটা মুমিন বান্দাদের কথা, যাতে তাদের আনন্দ ও সাফল্যের সংবাদ রয়েছে। জান্নাতে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। সেখানে না আছে মৃত্যু, না আছে ভয় এবং না আছে শাস্তির কোন সম্ভাবনা। এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ এটা তো মহা সাফল্য।' হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের আমলের বিনিময়ে খুব আনন্দের সাথে পানাহার করতে থাকো। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ এখানে ঐ কথারই ইঙ্গিত রয়েছে যে, জান্নাতীরা জান্নাতে কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। তখন তারা জিজ্ঞেস করবেঃ “আমাদের আর মৃত্যু তো হবে না, তবে কখনো শাস্তি দেয়া হবে কি?” উত্তরে বলা হবেঃ “না।” হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, প্রত্যেক নিয়ামত মৃত্যুর দ্বারা লয়প্রাপ্ত হয়।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “এরূপ সাফল্যের জন্যে সাধকদের উচিত সাধনা করা।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এটা জান্নাতীদের কথা। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এটা মহান আল্লাহর উক্তি। অর্থাৎ এরূপ রহমত ও নিয়ামত লাভ করার জন্যে মানুষের পূর্ণ আগ্রহের সাথে দুনিয়ায় কাজ করা উচিত যাতে পরকালে উক্ত নিয়ামত তারা লাভ করতে পারে। এই আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কাহিনী রয়েছে যা নিম্নে বর্ণিত হলোঃবানী ইসরাঈলের দু’জন লোক যৌথভাবে ব্যবসা করতো। তাদের নিকট আট হাজার স্বর্ণমুদ্রা মজুদ ছিল। তাদের একজন ব্যবসায়ের কৌশল ভাল জানতো এবং অপরজন ব্যবসা তেমন বুঝতো না। তাই অভিজ্ঞ লোকটি তার সঙ্গীকে বললো যে, সে যেন তার অংশ নিয়ে পৃথক হয়ে যায়। সুতরাং উভয়ে ভিন্ন হয়ে গেল। অতঃপর ঐ অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী দেশের বাদশাহর মৃত্যুর পর তার। রাজপ্রাসাদ এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ক্রয় করে নিলো এবং তার ঐ সঙ্গীটিকে ডেকে বললোঃ “দেখতো বন্ধু, আমি কেমন জিনিস ক্রয় করেছি?” সঙ্গীটি তার খুব প্রশংসা করলো। তারপর সে সেখান হতে বিদায় হয়ে গেল। অতঃপর সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলোঃ “হে আল্লাহ! আমার এ সঙ্গী লোকটি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রায় পার্থিব প্রাসাদ ক্রয় করেছে। আমি আপনার নিকট জানাতে একটি ঘরের আবেদন জানাচ্ছি। আমি এক হাজার স্বর্ণমুদা আপনার মিসকীন বান্দাদের মধ্যে দান করে দিচ্ছি।” অতঃপর সে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা সাদকা করে দিলো। কিছুকাল পর ঐ অভিজ্ঞ লোকটি এক হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) খরচ করে বিয়ে করলো। বিয়েতে সে তার ঐ পুরাতন বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করে আনলো এবং বললোঃ “বন্ধু! আমি এক হাজার দীনার খরচ করে ঐ সুন্দরী মহিলাটিকে বিয়ে করে ঘরে আনলাম।” এবারও সে তার খুব। বাইরে এসে সে মহান আল্লাহর পথে এক হাজার দীনার দান করে দিলো এবং তার নিকট প্রার্থনা করলোঃ “হে আল্লাহ! আমার এ বন্ধুটি এ পরিমানই টাকা খরচ করে এই দুনিয়ার একটি স্ত্রী লাভ করলো। আর আমি এর দ্বারা আপনার নিকট আয়ত লোচনা হুরী কামনা করছি।” আরো কিছুকাল পর ঐ দুনিয়াদার লোকটি এ লোকটিকে ডেকে নিয়ে বললোঃ “বন্ধু! আমি দুই হাজার দীনার খরচ করে দু'টি ফলের বাগান ক্রয় করেছি। দেখো তো কেমন হয়েছে?” এ লোকটি তার বাগান দুটি দেখে খুব প্রশংসা করলো এবং বাইরে এসে স্বীয় অভ্যাস মত আল্লাহ তা'আলার দরবারে আরয করলোঃ “হে আল্লাহ! আমার এ বন্ধু দু’হাজার দীনারের বিনিময়ে দু’টি বাগান ক্রয় করেছে। আমি আপনার নিকট জান্নাতে দু’টি বাগানের জন্যে আবেদন করছি। আর এই দু’হাজার দীনার আমি আপনার নামে সাদকা করছি।” অতঃপর সে দু'হাজার দীনার সাদকা করে দিলো। তারপর যখন তাদের দু'জনের মৃত্যু হয়ে গেল তখন ঐ সাদকা প্রদানকারীকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয়া হলো। সেখানে সে এক অতি পরমা সুন্দরী রমণী লাভ করলো এবং দু'টি সুন্দর বাগান প্রাপ্ত হলো। এ ছাড়া আরো এমন বহু নিয়ামত সে লাভ করলো যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। ঐ সময় তার পার্থিব ঐ সঙ্গীর কথা মনে পড়লো। ফেরেশতারা তাকে বললেনঃ “সে তো জাহান্নামে রয়েছে। তুমি ইচ্ছে করলে উঁকি মেরে তাকে দেখতে পার।” সে তখন উঁকি দিয়ে দেখলো যে, তার ঐ সঙ্গীটি জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে। সে তখন তাকে সম্বোধন করে বললোঃ “তুমি তো আমাকেও প্রায় তোমার ফাঁদে ফেলে দিয়েছিলে। এটা আমার প্রতি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) এটা তাশদীদ দিয়ে পড়াই অধিক সঙ্গত। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আবু হাফস (রঃ) ইসমাঈল সুদ্দী (রঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এটা তোমাকে কে বলেছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি এইমাত্র এটা পড়লাম। আমি আপনার নিকট হতে এটা জেনে নিতে চাই।” তখন তিনি বলেনঃ তবে শুননা ও স্মরণ রেখো। বানী ইসরাঈলের মধ্যে দুই জন অংশীদার ছিল। একজন ছিল মুমিন এবং অপরজন ছিল কাফির। তারা ছয় হাজার দীনার তিন হাজার করে ভাগ করে নিয়ে পৃথক হয়ে গেল। তারপর কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। একদা দু’জনের সাক্ষাৎ হলো। কাফির লোকটি মুমিন লোকটিকে বললোঃ “তোমার মাল-ধন তুমি কি করেছো? তা দিয়ে কোন কাজ করেছো, না ব্যবসায়ে লাগিয়েছো?” মুমিন লোকটি উত্তরে বললোঃ “আমি কিছুই করিনি। তুমি তোমার সম্পদ দিয়ে কি করেছো তাই বল।” কাফির লোকটি তখন বললোঃ “এক হাজার দীনার দিয়ে আমি জমি, খেজুরের বাগান ও নদী ক্রয় করেছি।” মুমিন লোকটি বললোঃ “সত্যিই কি তাই করেছো?” উত্তরে কাফির লোকটি বললোঃ “হ্যা, সত্যিই।” অতঃপর মুমিন লোকটি ফিরে আসলো। রাত্রি হলে সে আল্লাহর ইচ্ছা মত নামায পড়লো। নামায শেষে এক হাজার দীনার সামনে রেখে সে বললোঃ “হে আল্লাহ! ঐ কাফির এক হাজার দীনারের বিনিময়ে জমি, বাগান ও নহর ক্রয় করেছে। আগামীকাল তার মৃত্যু হলে সবই সে ছেড়ে যাবে। আমি এই এক হাজার দীনারের বিনিময়ে জান্নাতের জমি, বাগান ও নহর ক্রয় করতে চাই।" অতঃপর সকালে সে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিলো। এরপর আরো কিছুকাল অতিবাহিত হলো। হঠাৎ একদিন উভয়ের সাক্ষাৎ হয়ে গেল। কাফির তার মুমিন সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলোঃ “তোমার সম্পদ কি করেছো? কোন ব্যবসায়ে লাগিয়েছ কি?" মুমিন জবাবে বললো:“না। তবে তোমার সম্পদ তুমি কি করেছো তাই বল?” জিজ্ঞেস করলো মুমিন কাফিরকে। উত্তরে কাফির বললোঃ “হাজার দীনারের বিনিময়ে কিছু সঙ্গিনী ক্রয় করেছি। তারা আমার জন্যে সদা প্রস্তুত থাকে এবং আমার হুকুমের তাবেদারী করে।" মুমিন লোকটি তাকে বললোঃ “সত্যিই কি তুমি এ কাজ করেছো?” সে জবাব দিলো:“হ্যা, সত্যিই।" তারপর মুমিন লোকটি সেখান হতে চলে এসে রাত্রে আল্লাহর ইচ্ছা মত নামায আদায় করলো এবং নামায শেষে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা সামনে রেখে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করতে লাগলোঃ “হে আল্লাহ! আমার ঐ সাথীটি দুনিয়ার সঙ্গিনী ক্রয় করেছে। সে যদি মারা যায় তবে এ সবই রেখে যাবে অথবা তারা মারা গেলে একে তারা ছেড়ে যাবে। হে আল্লাহ! আমি এ দীনার দিয়ে জান্নাতের সঙ্গিনী ক্রয় করতে চাই।” অতঃপর সকালে সে ঐ এক হাজার দীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দিলো। তারপর আরো কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। আবার একদিন উভয় বন্ধুর সাক্ষাৎ ঘটলো। তাদের মধ্যে আলাপ হতে লাগলো। মুমিন ব্যক্তির এক প্রশ্নের উত্তরে কাফির ব্যক্তি বললোঃ “আমার মনের যত বাসনা ছিল সবই প্রায় পূর্ণ হয়েছে। এখন শুধু একটি কাজ হাতে রয়েছে। তাহলো এই যে, একটি মহিলার স্বামী মারা গেছে। আমি তাকে এক হাজার দীনার উপঢৌকন রূপে পাঠিয়েছিলাম। সে ওর দ্বিগুণ দীনার নিয়ে আমার কাছে এসেছে।" মুমিন বললোঃ “তুমি তাহলে এ কাজ করেছো?” সে উত্তরে বললোঃ “হ্যা।” তারপর মুমিন লোকটি সেখান হতে ফিরে এলো এবং রাত্রে আল্লাহ যা চাইলেন সেই মত সে নামায আদায় করলো। এরপর সে অবশিষ্ট এক হাজার দীনার হাতে নিয়ে প্রার্থনা শুরু করলোঃ “হে আল্লাহ! আমার ঐ কাফির সঙ্গীটি দুনিয়ার রমণীর মধ্যে একটি রমণীকে হাজার দীনারের বিনিমেয় বিয়ে করেছে। আগামীকাল এ খ্রীকে রেখে সে মারা যেতে পারে অথবা তার এ স্ত্রীটিও তাকে রেখে মৃত্যুবরণ করতে পারে। আমি এই দীনারের বিনিময়ে আপনার নিকট জান্নাতী আয়ত নয়না হুরীর প্রস্তাব রাখলাম।” অতঃপর সকালে সে ঐ দীনারগুলো মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিলো। বলা বাহুল্য যে, মুমিন লোকটির নিকট আর কোন অর্থই অবশিষ্ট থাকলো না। এবার সে সূতার তৈরী সাধারণ জামা গায়ে দিয়ে একটি কম্বল হাতে নিয়ে এবং একটি কোদাল কাঁধে করে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো। পথে এক ব্যক্তি তাকে দেখে বললোঃ “তুমি আমার গবাদি পশুর দেখা শুনা করবে এবং গোবর উঠাবে আর এর বিনিময়ে আমি তোমার পানাহারের ব্যবস্থা করবো। এতে তুমি সম্মত আছ কি?” মুমিন লোকটি এতে সম্মত হয়ে গেল এবং কাজ করতে শুরু করলো। ঐ মালিকটি ছিল অত্যন্ত নির্দয় ও কঠোর হৃদয়ের লোক। কোন পশুকে দুর্বল ও অসুস্থ দেখলে সে মনে করতো যে, ঐ সহিস তার পশুর খাদ্য চুরি করে। এই বদ ধারণার বশবর্তী হয়ে সে ঐ মুমিন লোকটিকে নির্মমভাবে প্রহার করতো। তার এরূপ অত্যাচারে সে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লো এবং তার ঐ কাফির সঙ্গীটিকে স্মরণ করলো যে, তারই ক্ষেত-খামারে সে কাজ করবে। এর বিনিময়ে হয়তো সে তাকে খেতে-পরতে দিবে এবং এটাই তার জন্যে যথেষ্ট। এই ভরসায় সে রওয়ানা হয়ে গেল। তার দরযার সামনে এসে বিরাট গগনচুম্বী প্রাসাদ দেখে তো তার চক্ষু স্থির। দেওড়ীতে পাহারাদার! তাদের নিকট সে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলো এবং বললোঃ “আমার নাম শুনলেই এ বাড়ীর মালিক খুশী হয়ে আমাকে প্রবেশের অনুমতি দিবে।” প্রহরীরা বললোঃ “তোমার কথা যদি সত্য হয় তবে এই এক কোণে চুপ করে পড়ে থাকো। সকাল হলে তার সামনে নিজেই গিয়ে পরিচয় দান করবে।” সে তাই করলো। এক পাশে গিয়ে কম্বলের অর্ধেকটি বিছিয়ে দিলো এবং বাকী অর্ধেক গায়ে দিয়ে রাত্রি কাটিয়ে দিলো।সকাল বেলা তার ঐ কাফির সঙ্গীটি ঘোড়ায় চড়ে প্রাতঃ ভ্রমণে বের হয়েছে এমন সময় মুমিন লোকটি তার সামনে হাযির হলো। তার এই দুরবস্থা দেখে সে অত্যন্ত বিস্মিত হলো এবং জিজ্ঞেস করলোঃ “তোমার এ অবস্থা কেন? টাকা পয়সা কি করেছো?” উত্তরে মুমিন ব্যক্তি বললোঃ “ওটা আর জিজ্ঞেস করো না ভাই। বরং আমাকে তোমার ক্ষেত-খামারের কাজে নিয়োগ কর। মজুরী কিছু লাগবে না, শুধু দু' বেলা খেতে দিলেই চলবে। আর যখন আমার পরনের এ বস্ত্রগুলো পুরোনো হয়ে যাবে তখন নতুন কাপড় কিনে দিবে আর কি?” সে উত্তরে বললোঃ “আরে, অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন, আমি বরং এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা তোমার জন্যে করে দিবো। এখন তুমি বল তোমার মাল-ধন কি করেছো? সে উত্তর দিলোঃ “একজনকে কর্জ দিয়েছি।” জিজ্ঞেস করলোঃ “কাকে কর্জ দিয়েছো?” উত্তর হলোঃ “এমন একজনকে কর্জ দিয়েছি যিনি তা অস্বীকার করবেন না এবং নষ্ট হতেও দিবেন না। তিনি আমার প্রতিপালক মহান আল্লাহ!” একথা শুনে কাফির লোকটি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললোঃ “তুমি তো দেখি বড় নির্বোধ! আমরা পচে গলে মাটিতে পরিণত হবো, অতঃপর পুনরুজ্জীবিত হবো ও প্রতিদান পাবো এতে তুমি বিশ্বাসী! তোমার যখন এমন বিশ্বাস তখন তুমি চলে যাও, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” এই বলে সে চলে গেল। মুমিন লোকটি সেখান থেকে বিদায় হলো এবং অতি কষ্টে জীবন যাপন করতে লাগলো। আর ঐ কাফির পরম সুখে দিন যাপন করতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত উভয়েই মৃত্যুমুখে পতিত হলো। তারপর মুমিন লোকটিকে জান্নাত দান করা হলো। সে বিরাট ময়দান, খুরমা-খেজুরের বাগান ও প্রবাহিত নদী দেখে অত্যন্ত বিস্ময়বোধ করলো এবং ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করলোঃ “এগুলো কার জন্যে?" তারা উত্তর দিলোঃ “এগুলো সবই তোমার ।" তারপর আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলো যে, অসংখ্য দাস-দাসী অপেক্ষমান রয়েছে। জিজ্ঞেস করলোঃ “এগুলো কার জন্যে?” উত্তর হলোঃ “এগুলোও তোমারই জন্যে।" সে বললোঃ “সুবহানাল্লাহ! এটাতো আমার প্রতি আল্লাহর বড়ই মেহেরবানী।” আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখতে পেলো যে, ইয়াকুত পাথরের তৈরী এক মহল রয়েছে এবং ওর মধ্যে আনত নয়না ও আয়ত লোচনা হরীরা অবস্থান করছে। প্রশ্ন করে জানতে পারলো যে, এগুলো তারই জন্যে। এসব দেখে তো তার চক্ষু স্থির! অতঃপর তার ঐ কাফির সাথীর কথা তার মনে পড়লো। আল্লাহ তা'আলা তাকে দেখাবেন যে, সে জাহান্নামে জ্বলতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ঐ সব কথোপকথন হবে যার বর্ণনা এখানে দেয়া হয়েছে। মুমিনের উপর দুনিয়ায় যে বিপদাপদ এসেছিল তা সে স্মরণ করবে। তখন মৃত্যু অপেক্ষা কঠিন বিপদ আর কিছুই তার কাছে অনুভূত হবে না।
أَذَٰلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِينَ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
فَإِنَّهُمْ لَآكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
إِنَّهُمْ أَلْفَوْا آبَاءَهُمْ ضَالِّينَ
📘 Please check ayah 37:70 for complete tafsir.
وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ
📘 Please check ayah 37:10 for complete tafsir.
فَهُمْ عَلَىٰ آثَارِهِمْ يُهْرَعُونَ
📘 ৬২-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা জান্নাতের বিভিন্ন নিয়ামতের বর্ণনা দেয়ার পর বলেনঃ জান্নাতের এসব নিয়ামত উত্তম, না ‘যাককূম’ নামীয় বৃক্ষ? অর্থাৎ যা জাহান্নামে রয়েছে। এর অর্থ নিকৃষ্ট একটি গাছ হতে পারে যা জাহান্নামের সকল প্রকোষ্ঠে প্রসারিত। যেমন ‘বা' নামক একটি গাছ, যার শাখা জান্নাতের প্রতিটি কামরায় প্রবিষ্ট রয়েছে। এও হতে পার যে, ওটা যাকূম জাতীয় গাছ। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যা আবোপকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকূম বৃক্ষ হতে।”(৫৬:৫১-৫২)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি এটা যালিমদের জন্যে সৃষ্টি করেছি পরীক্ষা স্বরূপ।' কাতাদা (রঃ) বলেন যে, যাকূম গাছের উল্লেখ পথভ্রষ্টদের জন্যে ফিত্না হয়ে গেছে। তারা বলেঃ “আরে দেখো, দেখো। এ নবী বলে কি শুন! আগুনে নাকি গাছ হবে? আগুনতো গাছকে জ্বালিয়ে দেয়। সুতরাং এটা কোন ধরনের কথা?” তাদের একথা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “নিশ্চয়ই এ বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে।' হ্যা, এই গাছ আগুন থেকেই জন্মে এবং আগুনই ওর খাদ্য। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, অভিশপ্ত আবু জেহেল এ কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়তো এবং বলতোঃ “আমি তো মজা করে খেজুর ও মাখন বাবো এবং এরই নাম যাকূম। মোটকথা এটাও একটা পরীক্ষা। ভাল লোকেরা এতে ভয়ে আঁৎকে উঠে, আর মন্দ লোকেরা একে হেসে উড়িয়ে দেয়। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিও শুধু মানুষের জন্যে। আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি, কিন্তু এটা তাদের ঘোর অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে।”(১৭:৬০)আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ওর মোচা যেন শয়তানের মাথা।' এ কথা দ্বারা উক্ত গাছের কদর্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ) বলেন যে, শয়তানের মস্তক আকাশে প্রতিষ্ঠিত। এ গাছের মোচাকে শয়তানের মস্তকের সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য শুধু এটাই যে, যদিও কেউ কখনো শয়তানকে দেখেনি, তবুও তার নাম শুনামাত্রই তার জঘন্য রূপের ছবি মানুষের মানসপটে ভেসে ওঠে। উক্ত গাছেরও অবস্থা এইরূপ। এর ভিতর ও বাহির উভয়ই খারাপ। একথাও বলা হয়েছে যে, এটা এক প্রকার সর্প বিশেষ যার মস্তক অত্যন্ত ভয়ংকর। একটি উক্তি এও আছে যে, ওটা এক প্রকার উদ্ভিদ, যা অত্যন্ত জঘন্যভাবে বর্ধিত ও বিস্তৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এ দুটি সম্ভাবনা সঠিক নয়। সঠিক ওটাই যা আমরা বর্ণনা করলাম। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা এটা হতে ভক্ষণ করবে এবং উদর পূর্ণ করবে এর দ্বারা। সেই দুর্গন্ধময় তীব্র তিক্ত তরু জোরপূর্বক তাদেরকে খাওয়ানো হবে। আর এটা তারা খেতেও বাধ্য হবে। এটাও এক প্রকারের শাস্তি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের জন্যে খাদ্য থাকবে না যারী [(আরবী) আরব দেশের এক প্রকার গুল্ম। এটা যখন সবুজ থাকে তখন একে (আরবী) (শিবরাক) বলা হয়। আর যখন শুকিয়ে যায় তখন একে (আরবী) (যারী) বলা হয়। এটা খুব বিষাক্ত এবং কোন জন্তুই এটা খায় না] ব্যতীত। যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তও করবে না।” (৮৮:৬-৭) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “যদি যাকূম বৃক্ষের এক ফোঁটা রস দুনিয়ার সমুদ্রে পতিত হয় তবে সারা বিশ্ববাসীর সমস্ত খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে যার খাদ্য এটাই হবে তার কি অবস্থা হবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ তদুপরি তাদের জন্যে থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ।' অথবা ভাবার্থ হচ্ছেঃ ঐ জাহান্নামী গাছকে জাহান্নামী পানির সাথে মিশিয়ে তাদেরকে পান করানো হবে। আর এই গরম পানি ওটাই হবে যা জাহান্নামীদের ক্ষতস্থান হতে রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি আকারে বের হয়ে আসবে এবং তাদের চক্ষু হতে ও গুপ্তাঙ্গ হতে বেরিয়ে আসবে। হযরত আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “যখন এই পানি তাদের সামনে ধরা হবে তখন তা তাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে। আর যখন তা তাদের চেহারার সামনে তুলে ধরা হবে তখন ওর তাপে তাদের চেহারা ঝলসে যাবে। আর যখন তারা ওটা পান করবে তখন তাদের নাড়িভূড়ী কেটে নিম্ন রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামীরা যখন ক্ষুধার কথা বলবে তখন তাদেরকে যাকূম খাওয়ানো হবে। ফলে তাদের মুখের চামড়া সম্পূর্ণ খসে পড়বে। এমনকি কোন পরিচিত ব্যক্তি সেই মুখের চামড়া দেখেই তাদেরকে চিনে নিবে। তারপর পিপাসায় ছটফট করে যখন পানি চাইবে তখন গলিত তামার ন্যায় গরম পানি তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে। ওটা চেহারার সামনে আসা মাত্রই চেহারার গোশত ঝলসিয়ে দিবে এবং সমস্ত গোশত খসে পড়বে। আর পেটে গিয়ে ওটা নাড়িভূড়ি বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং উপর থেকে লোহার হাতুড়ী দ্বারা প্রহার করা হবে। ফলে দেহের এক একটি অংশ পৃথক। পৃথক হয়ে যাবে। তখন তারা মৃত্যু কামনা করতে থাকবে। প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্বলিত অগ্নির দিকে। সেখানে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি হতে থাকবে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে।”(৫৫:৪৪) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! দুপুরের পূর্বেই জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে পৌঁছে যাবে। আর সেখানেই তারা দুপুরের বিশ্রাম করবে।” অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই দিন হবে জান্নাতবাসীদের বাসস্থান উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল মনোরম।”(২৫-২৪) মোটকথা কায়লুলার (দুপুরের বিশ্রামের) সময় উভয় দল নিজ নিজ ঠিকানায় অবস্থান করবে। এই অর্থের জন্যে (আরবী) শব্দটি (আরবী)-এর উপর (আরবী)-এর (আরবী)-এর জন্যে হবে। এটা ওরই প্রতিফল যে, তারা তাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছিল বিপথগামী এবং তারা তাদের পদাংক অনুসরণে ধাবিত হয়েছিল। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, বাধ্য হয়ে এবং সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বলেন যে, নির্বোধ হিসেবে তাদের পদাংক অনুসরণ করেছিল।
وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 37:74 for complete tafsir.
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا فِيهِمْ مُنْذِرِينَ
📘 Please check ayah 37:74 for complete tafsir.
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِينَ
📘 Please check ayah 37:74 for complete tafsir.
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ
📘 ৭১-৭৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা পূর্বযুগের উম্মতদের সংবাদ প্রদান করছেন যে, তাদের অধিকাংশই ছিল পথহারা। তারা আল্লাহ তা'আলার অংশী স্থাপন করতো। তাদের নিকট আল্লাহর নবী এসে তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ভয় দেখিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, অংশী স্থাপন করা, কুফরী করা এবং নবীদেরকে (আঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করা প্রভৃতি কাজে আল্লাহ চরম রাগান্বিত হন। এগুলো হতে বিরত না হলে তাদের উপর আল্লাহর গযব নেমে আসবে। এতদসত্ত্বেও তারা রাসূলদের বিরোধিতা করেছে ও তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী জেনেছে। ফলে তাদের পরিণাম হয়েছে অত্যন্ত শোচনীয়। অবশ্য আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং জয়যুক্ত করে সম্মানিত করেছেন।
وَلَقَدْ نَادَانَا نُوحٌ فَلَنِعْمَ الْمُجِيبُونَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
وَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِينَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ
📘 Please check ayah 37:10 for complete tafsir.
إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ
📘 Please check ayah 37:82 for complete tafsir.
ثُمَّ أَغْرَقْنَا الْآخَرِينَ
📘 ৭৫-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে পূর্বযুগের মানুষের পথভ্রষ্টতার কথা সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা'আলা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন। হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুদীর্ঘ নয় শত পঞ্চাশ বছর অবস্থান করেছিলেন। তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের লোককে সদা-সর্বদা উপদেশ দিতেন ও বুঝাতেন। এতদসত্ত্বেও তারা পথভ্রষ্টতার মধ্যেই ডুবে ছিল। শুধুমাত্র গুটিকতক লোক তার উপর ঈমান এনেছিল। জাতির যখন এহেন অবস্থা চলতে থাকলো এবং নবী (আঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করতে লাগলো তখন হযরত নূহ (আঃ) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানালেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি তো অসহায়, অতএব আপনি প্রতিবিধান করুন।” তখন আল্লাহর ক্রোধ তাদের উপর পতিত হলো। সমস্ত কাফির পানিতে ডুবে মরলো। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ নূহ (আঃ) আমাকে আহ্বান করেছিল, আর আমি কত উত্তম সাড়াদানকারী।' অর্থাৎ আমি তার আহ্বানে উত্তমরূপে সাড়া দিয়েছিলাম। তাকে ও তার পরিবার পরিজনকে বিপদ থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলাম। আর তার বংশধরদেরকেই আমি বিদ্যমান রেখেছি বংশ পরম্পরায়। কেননা, তারাই তো শুধু অবশিষ্ট ছিল। হযরত আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) বলেন যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর সন্তানরা ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, সমগ্র মানব জাতি হযরত নূহ (আঃ)-এর সন্তানদের থেকেই হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, সাম, হাম ও ইয়াফাসের সন্তানরা দুনিয়াতে বিস্তার লাভ করে ও অবশিষ্ট থাকে। ইমাম আহমাদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন যে, সাম সমগ্র আরব জাতির পিতা, হাম সমগ্র হাবশের পিতা এবং ইয়াফাস সমগ্র রোমের পিতা। এই হাদীসে রোম দ্বারা প্রথম রোম অর্থাৎ ইউনানকে বুঝানো হয়েছে যা রোমী লায়তী ইবনে ইউনান ইবনে ইয়াফাস ইবনে নূহ (আঃ)-এর দিকে সমন্ধযুক্ত। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর এক পুত্র সামের সন্তান হলো আরব, ফারেস ও রোমীরা। ইয়াফাসের সস্তান হলো তুর্কী, সাকালিয়া এবং ইয়াজুজ ও মাজুজ। আর হামের সন্তান হচ্ছে কিবতী, সুদানী ও বার্বারীরা। হযরত নূহ (আঃ)-এর সততা এবং তাঁর উত্তম স্বরণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাঁর পরবর্তী লোকদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে। সমস্ত নবী (আঃ)-এর সত্যবাদিতার ফল এটাই হয় যে, জনগণ সদা-সর্বদা তাদের উপর সালাম পাঠিয়ে থাকেন এবং তাঁদের প্রশংসা করে থাকেন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহ (আঃ)-এর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!' এটা যেন পূর্ববর্তী বাক্যেরই ব্যাখ্যা। অর্থাৎ তার যিকর উত্তমরূপে অবশিষ্ট থাকার অর্থ এই যে, প্রত্যেক উম্মত তার উপর সালাম বর্ষণ করতে থাকবে।মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমার নীতি এই যে, যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আমার ইবাদত ও আনুগত্যে লেগে থাকে, তাকে এই ভাবেই আমি পুরস্কৃত করে থাকি। অর্থাৎ পরবর্তীদের মধ্যে তার উত্তম যিকর সদা-সর্বদার জন্যে বাকী রেখে থাকি।' আল্লাহ তা'আলার উক্তি:নূহ (আঃ) ছিল আমার মুমিন বান্দাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন বিশ্বাসী ও তাওহীদের উপর অটল। তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের পরিণাম ভাল হয়েছিল এবং বিরুদ্ধবাদীদেরকে ধ্বংস ও নিমজ্জিত করে দেয়া হয়েছিল। চোখের পলক ফেলে এমনও একজন তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। এমনকি তাদের কোন চিহ্ন পর্যন্ত বাকী ছিল না। হ্যা, তবে তাদের কলংকময় কার্যকলাপ মানুষের মাঝে প্রাচীন ঘটনা হিসেবে আলোচিত হতে থাকলো।
۞ وَإِنَّ مِنْ شِيعَتِهِ لَإِبْرَاهِيمَ
📘 Please check ayah 37:87 for complete tafsir.
إِذْ جَاءَ رَبَّهُ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
📘 Please check ayah 37:87 for complete tafsir.
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَاذَا تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 37:87 for complete tafsir.
أَئِفْكًا آلِهَةً دُونَ اللَّهِ تُرِيدُونَ
📘 Please check ayah 37:87 for complete tafsir.
فَمَا ظَنُّكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 ৮৩-৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবরাহীম (আঃ) হযরত নূহ (আঃ)-এর ধর্মমতের উপরই ছিলেন। তিনি তাঁরই রীতি-নীতি ও চাল-চলনের উপর ছিলেন। তিনি তার প্রতিপালকের নিকট হাযির হয়েছিলেন বিশুদ্ধ চিত্তে। অর্থাৎ তিনি একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আল্লাহকে সত্য বলে বিশ্বাস করতেন। কিয়ামত যে একদিন সংঘটিত হবে তা তিনি স্বীকার করতেন। মৃতকে যে পুনরুজ্জীবিত করা হবে সেটাও তিনি বিশ্বাস করতেন। শিরক ও কুফরীর তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি অপরকে তিরস্কারকারী ছিলেন না। মহান আল্লাহ বলেন, যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিলঃ “তোমরা কিসের পূজা করছো?” অর্থাৎ তিনি মূর্তিপূজা ও অন্যান্য দেবদেবীর পূজার বিরোধিতা করলেন এবং সব কিছুকেই ঘৃণার চোখে দেখলেন। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা কি তাহলে আল্লাহর পরিবর্তে অসত্য উপাস্য কামনা করছো, অতঃপর বিশ্বপ্রতিপালকের সম্বন্ধে তোমরা কিরূপ ধারণা পোষণ করছো?” অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের উপাসনা পরিত্যাগ কর এবং নিজেদের মিথ্যা ও অলীক মা’ৰূদদের ইচ্ছার কথা ছেড়ে দাও। অন্যথায় জেনে রেখো যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন।
فَنَظَرَ نَظْرَةً فِي النُّجُومِ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
فَقَالَ إِنِّي سَقِيمٌ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ
📘 Please check ayah 37:10 for complete tafsir.
فَتَوَلَّوْا عَنْهُ مُدْبِرِينَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
فَرَاغَ إِلَىٰ آلِهَتِهِمْ فَقَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
مَا لَكُمْ لَا تَنْطِقُونَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
فَرَاغَ عَلَيْهِمْ ضَرْبًا بِالْيَمِينِ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
فَأَقْبَلُوا إِلَيْهِ يَزِفُّونَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
قَالَ أَتَعْبُدُونَ مَا تَنْحِتُونَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
قَالُوا ابْنُوا لَهُ بُنْيَانًا فَأَلْقُوهُ فِي الْجَحِيمِ
📘 Please check ayah 37:98 for complete tafsir.
فَأَرَادُوا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَسْفَلِينَ
📘 ৮৮-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে এই কথা এ জন্যেই বললেন যে, যখন তারা তাদের মেলায় বের হয়ে যাবে তখন তিনি যেন শহরে একাই থেকে যেতে পারেন এবং তাদের মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করার সুযোগ পান। এই জন্যে তিনি এমন কথা বললেন যা প্রকৃত প্রস্তাবে সত্য ছিল। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে অসুস্থ ভেবেছিল। তাই তাকে রেখেই তারা বের হয়েছিল। আর এরই মাঝে তিনি দ্বীনী খিদমত করেছিলেন। কাতাদাও (রঃ) বলেন যে, যখন কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তখন আরবীয়রা বলেঃ “তিনি নক্ষত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন।” অর্থ হচ্ছে এই যে, চিন্তিতভাবে নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা এবং অনুধাবন করা যে, কিভাবে ওর প্রভাবমুক্ত হওয়া যাবে? হযরত ইবরাহীম (আঃ) চিন্তা-ভাবনা করে বললেন যে, তিনি পীড়িত অর্থাৎ দুর্বল। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইবরহীম (আঃ) তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এর মধ্যে দু’বার আল্লাহর দ্বীনের জন্যে মিথ্যা বলেছিলেন। যথা (আরবী) (আমি অসুস্থ)। অপর স্থানে বলেছিলেনঃ (আরবী) (২১:৬৩) (বরং তাদের এই বড় প্রতিমাটি এ কাজ করেছে অর্থাৎ মূর্তিগুলো ভেঙ্গেছে)। আর একবার তিনি স্বীয় স্ত্রী হযরত সারাকে তার বোন বলেছিলেন। একথা স্মরণযোগ্য যে, এগুলোর একটিও আসল বা প্রকৃত মিথ্যা ছিল না। এখানে রূপক অর্থে মিথ্যা বলা হয়েছে। সুতরাং তাকে তিরস্কার করা চলবে না। কথার মাঝে কোন শরয়ী উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এরূপ বাহানা করা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়।হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ঐ তিনটি কথার মধ্যে একটিও এমন ছিল না যার কর্ম-কৌশলের সাথে আল্লাহর দ্বীনের কল্যাণ সাধন উদ্দেশ্য ছিল না।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সুফিয়ান (রঃ) বলেন যে, “আমি অসুস্থ” এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “আমি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়েছি।” আর ঐ লোকগুলো এরূপ রোগাক্রান্ত ব্যক্তি হতে পালিয়ে যেতো। হযরত সাঈদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর দ্বীন প্রচার এবং তাদের মিথ্যা উপাস্যদের অসারতা প্রমাণের জন্যেই হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর এটা একটি কর্মকৌশল ছিল যে, তিনি নক্ষত্র উদিত হতে দেখে বলেছিলেনঃ “আমি অসুস্থ।” এ কথাও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “আমি রোগাক্রান্ত হবো” অর্থাৎ একবার মৃত্যুর রোগ আসবেই। একটা উক্তি এও রয়েছে যে, তার এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিলঃ “আমার হৃদয় তোমাদের দেব-দেবীর উপাসনা করাতে অসুস্থ।”হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সম্প্রদায় মেলাতে যাচ্ছিল তখন তাকেও তারা তাদের সাথে যেতে বাধ্য করছিল। তখন তিনি “আমি অসুস্থ” একথা বলে সরে পড়েন এবং একটি নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। যখন তারা সবাই মেলায় চলে যায় তখন তিনি অতি সন্তর্পণে তাদের দেবতাগুলোর নিকট গমন করেন এবং বলেনঃ “তোমরা খাদ্য গ্রহণ করছো না কেন?” হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের মন্দিরে গিয়ে দেখেন যে, তারা তাদের দেবতাগুলোর সামনে যে নৈবেদ্য বা প্রসাদ রেখেছিল সেগুলো সবই পড়ে রয়েছে। তারা বরকতের আশায় যেসব উৎসর্গ রেখেছিল সেগুলো হতে তাদের দেবতাগুলো কিছুই খায়নি। মন্দিরটি ছিল অত্যন্ত প্রশস্ত ও কারুকার্য খচিত। দরযার নিকটেই এক প্রকাণ্ড মূর্তি ছিল। তার পাশে ছিল অনেকগুলো ছোট ছোট মূর্তি। মন্দিরটি মূর্তিতে পরিপূর্ণ ছিল। তাদের সামনে নানা জাতের উপাদেয় খাদ্য রাখা ছিল। তাদের এ বিশ্বাস ছিল যে, খাদ্যগুলো বরকতময় হবে এবং তারা মেলা হতে ফিরে এসে ওগুলো ভক্ষণ করবে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) মূর্তিগুলোর মুখ হতে তার কথার কোন জবাব না পেয়ে আবার বললেনঃ “তোমাদের হয়েছে কি, কথা বলছো না কেন?” অতঃপর তিনি তাদের নিকটবর্তী হয়ে ডান হাত দ্বারা তাদেরকে আঘাত করেন। কাতাদা (রঃ) ও জওহারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) তখন মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলেন এবং ডান হাত দ্বারা আঘাত করতে শুরু করলেন। কেননা ঐগুলো ছিল খুব শক্ত। তিনি সবগুলোকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় মূর্তিটিকে তিনি বহাল রেখে দিলেন, ভেঙ্গে ফেললেন না। যাতে ওর উপরই মন্দ ধারণা জন্মে, যেমন সূরায়ে আম্বিয়ায় বর্ণিত হয়েছে এবং সেখানে এর পূর্ণ তাফসীরও বর্ণনা করা হয়েছে।মূর্তিপূজকরা মেলা হতে ফিরে এসে যখন তাদের মন্দিরে প্রবেশ করলো তখন দেখলো যে, মূর্তিগুলো ভাঙ্গা অবস্থায় বিশৃংখলভাবে পড়ে রয়েছে। কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো মাথা এবং কারো কারো পূর্ণ দেহটিই নেই। তারা বিস্মিত হলো যে, ব্যাপার কি!মহান আল্লাহর উক্তিঃ “তখন ঐ লোকগুলো তার দিকে ছুটে আসলো।” অর্থাৎ বহু চিন্তা-ভাবনা করে, আলাপ আলোচনা করে তারা বুঝলো যে, হয় না হয় এটা ইবরাহীমেরই (আঃ) কাজ। তাই তারা দ্রুতগতিতে তাঁর দিকে ধাবিত হয়েছিল। এখানে ঘটনাটি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। সূরায়ে আম্বিয়ায় এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের সকলকে এক সাথে পেয়ে তাবলীগ করার বড় সুযোগ লাভ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা নিজেরা যাদেরকে খোদাই করে নির্মাণ কর তাদেরই কি তোমরা পূজা করে থাকো? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরী কর সেগুলোকেও।” এই আয়াতে (আরবী) অক্ষরটি সম্ভবতঃ (আরবী) হিসেবে এসেছে এবং এও হতে পারে যে, এটা (আরবী)-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে প্রথমটিই বেশী সুস্পষ্ট। হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতে মারফু রূপে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ প্রত্যেক শিল্পী ও তার শিল্পকে সৃষ্টি করেন। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) কিতাবু আফআলিল ইবাদ’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন) কেউ কেউ এ আয়াতটি (আরবী) এরূপ পড়েছেন। যেহেতু এমন সুস্পষ্ট উক্তির উত্তর তাদের নিকট ছিল না সেই হেতু তারা নবী (আঃ)-এর শত্রুতায় উঠে পড়ে লেগে গেল। তারা বললোঃ “তার জন্যে একটি ইমারত (চতুর্দিকে পাকা প্রাচীরযুক্ত ইমারত যাতে অগ্নি প্রজ্বলিত করা হয়েছিল) তৈরী কর, অতঃপর তাকে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর।” মহান আল্লাহ স্বীয় বন্ধুকে এই জ্বলন্ত অগ্নি হতে রক্ষা করেন। তাঁকেই তিনি বিজয় মাল্যে ভূষিত করেন ও সাহায্য দান করেন। আর তাদেরকে করেন অতিশয় হেয় ও অপমানিত। এর পূর্ণ বর্ণনা ও পুরোপুরি তাফসীর সূরায়ে আম্বিয়ায় গত হয়েছে। এ জন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে অতিশয় হেয় করে দিলাম।”
وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهْدِينِ
📘 Please check ayah 37:113 for complete tafsir.