🕋 تفسير سورة الزخرف
(Az-Zukhruf) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَجَعَلَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
📘 Please check ayah 43:14 for complete tafsir.
وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَنْشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ تُخْرَجُونَ
📘 Please check ayah 43:14 for complete tafsir.
وَالَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ
📘 Please check ayah 43:14 for complete tafsir.
لِتَسْتَوُوا عَلَىٰ ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ
📘 Please check ayah 43:14 for complete tafsir.
وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
📘 ৯-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি যদি এই মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তবে অবশ্যই তারা উত্তরে বলবে যে, পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহই এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তারা তাঁর একত্বকে স্বীকার করে নেয়া সত্ত্বেও তার সাথে ইবাদতে অন্যদেরকেও শরীক করছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা এবং ওতে করেছি তোমাদের চলার পথ যাতে তোমরা সঠিক পথে চলতে পার। অর্থাৎ যমীনকে আমি স্থির ও মযবুত বানিয়েছি, যাতে তোমরা এর উপর উঠা-বসা ও চলা-ফেরা করতে পার এবং শুতে ও জাগতে পার। অথচ স্বয়ং এ যমীন পানির উপর রয়েছে, কিন্তু মযবূত পর্বতমালা এতে স্থাপন করে দিয়ে একে হেলা-দোলা ও নড়াচড়া করা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে। এতে রাস্তা বানিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে তোমরা এক শহর হতে অন্য শহরে এবং এক দেশ হতে অন্য দেশে গমনাগমন করতে পার। তিনি আকাশ হতে এমন পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে, তা জমির জন্যে যথেষ্ট হয়। এর ফলে ভূমি শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। এই পানি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু পানও করে থাকে। এই বৃষ্টির দ্বারা মৃত ও শুষ্ক জমিকে সজীব করে তোলা হয়। শুষ্কতা সিক্ততায় পরিবর্তিত হয়। জঙ্গল ও মাঠ-ময়দান সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে এবং গাছপালা ফুলে ফলে পূর্ণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর ও সুস্বাদু ফল-মূল উৎপন্ন হয়। এটাকেই আল্লাহ তা'আলা মৃতকে পুনর্জীবিত করার দলীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ ‘এই ভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।'মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনি যুগলসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন। তিনি শস্য, ফলমূল, শাক-সবজী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের জিনিস সৃষ্টি করেছেন। মানুষের উপকারের জন্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন নানা প্রকারের জীবজন্তু। সামুদ্রিক সফরের জন্যে তিনি নৌযানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং স্থল ভাগের সফরের জন্যে তিনি সরবরাহ করেছেন চতুষ্পদ জন্তু। এগুলোর মধ্যে মানুষ কতকগুলোর গোত ভক্ষণ করে থাকে এবং কতকগুলো তাদেরকে দুধ দিয়ে থাকে। আর কতকগুলো তাদের সওয়ারীর কাজে ব্যবহৃত হয়। তারা ঐগুলোর উপর তাদের বোঝা চাপিয়ে দেয় এবং নিজেরাও সওয়ার হয়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের উচিত যে, সওয়ার হওয়ার পর আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে বলবেঃ পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে। আর আমরা (মৃত্যুর পর) আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করবো। এই আগমন ও প্রস্থান এবং এই সংক্ষিপ্ত সফরের মাধ্যমে আখিরাতের সফরকে স্মরণ কর।” যেমন দুনিয়ার পাথেয়ের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলা আখিরাতের পাথেয়ের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা পাথেয় গ্রহণ কর, তবে আখিরাতের পাথেয়ই হলো উত্তম পাথেয়।”(২:১৯৭) অনুরূপভাবে পার্থিব পোশাকের বর্ণনা দেয়ার পর পারলৌকিক পোশাকের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেনঃ “তাকওয়ার পোশাকই হলো উত্তম পোশাক।”
সওয়ারীর উপর সওয়ার হওয়ার সময় দু'আ পাঠের হাদীসসমূহঃআমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)-এর হাদীসঃ
হযরত আলী ইবনে রাবীআহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত আলী (রাঃ)-কে তাঁর সওয়ারীর উপর সওয়ার হওয়ার সময় পা-দানীতে পা রাখা অবস্থাতেই (আরবী) পড়তে শুনেছেন। যখন ঠিকভাবে সওয়ার হয়ে যান তখন পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য, পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এটাকে আমাদের বশীভূত করেছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না একে বশীভূত করতে। আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করবো।” অতঃপর তিনি তিনবার (আরবী) এবং তিন বার (আরবী) বলেন। তারপর পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনি ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, আমি আমার উপর যুলুম করেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। তারপর তিনি হেসে উঠেন। হযরত আলী ইবনে রাবীআহ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি হাসলেন কেন?” তিনি উত্তরে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এই প্রশ্নই করেছিলাম। তিনি জবাবে বলেছিলেন, আল্লাহ তা'আলা যখন স্বীয় বান্দার মুখে (আরবী) (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন!) শুনতে পান তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং বলেনঃ “আমার বান্দা জানে যে, আমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে তাঁর সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নেন। ঠিকঠাকভাবে বসে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার তিনবার এবং তিনবার পাঠ করেন। অতঃপর একবার পড়েন। তারপর সওয়ারীর উপর চিত হয়ে শয়নের মত হন এবং এরপর হেসে ওঠেন। অতঃপর তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন জানোয়ারের উপর সওয়ার হয়ে আমি যেমন করলাম এরূপ করে, তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার প্রতি মনোযোগী হয়ে এই ভাবে হেসে ওঠেন যেভাবে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখনই স্বীয় সওয়ারীর উপর আরোহণ করতেন তখনই তিনি তিনবার তাকবীর পাঠ করে কুরআন কারীমের (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াত দু’টি পাঠ করতেন। অতঃপর বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আমার এই সফরে আপনার নিকট কল্যাণ ও তাকওয়া প্রার্থনা করছি এবং ঐ আমল কামনা করছি যাতে আপনি সন্তুষ্ট। হে আল্লাহ! আমাদের উপর সফরকে হালকা করে দিন এবং আমাদের জন্যে দূরত্বকে জড়িয়ে নিন। হে আল্লাহ! আপনিই সফরে সাথী এবং পরিবার পরিজনের রক্ষক। হে আল্লাহ! আপনি সফরে আমাদের সাথী হয়ে যান এবং বাড়ীতে আমাদের পরিবার পরিজনের রক্ষক হয়ে যান। আর যখন তিনি সফর হতে বাড়ী অভিমুখে ফিরতেন তখন বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী ইনশাআল্লাহ প্রতিপালকের ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু লাস খুযায়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে সাদকার একটি উট দান করেন যেন আমরা ওর উপর সওয়ার হয়ে হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আমরা তো এটা দেখতে পারি না যে, আপনি আমাদেরকে এর উপর সওয়ার করিয়ে দিবেন! তিনি তখন বললেনঃ “জেনে রেখো যে, প্রত্যেক উটে উপর শয়তান থাকে। তোমরা যখন এর উপর সওয়ার হবে তখন আমি তোমাদেরকে যে নির্দেশ দিচ্ছি তাই করবে। প্রথমে আল্লাহর নাম স্মরণ করবে, তারপর একে নিজের খাদেম বানাবে। মনে রেখো যে, আল্লাহ তাআলাই সওয়ার করিয়ে থাকেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবূ লাস (রাঃ)-এর নাম মুহাম্মাদ ইবনে আসওয়াদ ইবনে খালফ (রাঃ) মুসনাদের অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক উটের পিঠের উপর শয়তান থাকে। সুতরাং যখন তোমরা ওর উপর সওয়ার হবে তখন আল্লাহর নাম নাও, অতঃপর প্রয়োজন সংক্ষেপ করো না বা প্রয়োজন পূরণে ত্রুটি করো না।"
وَجَعَلُوا لَهُ مِنْ عِبَادِهِ جُزْءًا ۚ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَكَفُورٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 43:20 for complete tafsir.
أَمِ اتَّخَذَ مِمَّا يَخْلُقُ بَنَاتٍ وَأَصْفَاكُمْ بِالْبَنِينَ
📘 Please check ayah 43:20 for complete tafsir.
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمَٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ
📘 Please check ayah 43:20 for complete tafsir.
أَوَمَنْ يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ وَهُوَ فِي الْخِصَامِ غَيْرُ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 43:20 for complete tafsir.
وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَٰنِ إِنَاثًا ۚ أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ ۚ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ
📘 Please check ayah 43:20 for complete tafsir.
وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
وَقَالُوا لَوْ شَاءَ الرَّحْمَٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ ۗ مَا لَهُمْ بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
📘 ১৫-২০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ঐ অপবাদ ও মিথ্যার খবর দিচ্ছেন যা তারা তাঁর উপর আরোপ করেছিল, যার বর্ণনা সূরায়ে আন'আমের নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলেঃ এটা আল্লাহর জন্যে এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্যে। যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌছে; তারা যা মীমাংসা করে তা নিকৃষ্ট।”(৬:১৩৬) অনুরূপভাবে মুশরিকরা ছেলে ও মেয়েদের ভাগ বন্টন করে মেয়েদেরকে সাব্যস্ত করতো আল্লাহর জন্যে, যারা তাদের ধারণায় ঘৃণ্য ছিল, আর ছেলেদেরকে নিজেদের জন্যে পছন্দ করতো। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এই প্রকার বন্টন তো অসংগত।”(৫৩:২১-২২)এখানেও আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে তার অংশ সাব্যস্ত করেছে। মানুষ তো স্পষ্টই অকৃতজ্ঞ।”এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তিনি কি তাঁর সৃষ্টি হতে নিজের জন্যে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্র সন্তান দ্বারা?” এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের উক্তিকে চরমভাবে অস্বীকার করেছেন। তারপর পূর্ণভাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেনঃ দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে তাদের কাউকেও সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার চেহারা লজ্জায় কালো হয়ে যায়। শরমে সে মানুষকে মুখ দেখায় না। এটা যেন তার কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার। অথচ সে নিজের পূর্ণ নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করে বলে যে, আল্লাহর কন্যা রয়েছে। এটা কতই না বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তারা নিজেদের জন্যে যা পছন্দ করে না তাই আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করছে!অতঃপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে এমন সন্তান, যে অলংকারে মণ্ডিত হয়ে লালিত পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ক কালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ? অর্থাৎ যে কন্যা সন্তানদেরকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয় এবং অলংকারে মণ্ডিত করে যাদের এ অসম্পূর্ণতাকে ঢাকা দেয়া হয় এবং বাল্যাবস্থা হতে মৃত্যু পর্যন্ত যারা সাজ সজ্জারই মুখাপেক্ষী থেকে যায়, আবার ঝগড়া-বিবাদ এবং তর্ক-বিতর্কের সময় যাদের কথাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় না, এদেরকেই মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করা হচ্ছে। যাদের বাহির ও ভিতর ত্রুটিপূর্ণ, যাদের বাহ্যিক ক্রটিকে অলংকারের দ্বারা দূর করার চেষ্টা করা হয়, তাদেরকেই সম্পর্কযুক্ত করা হয় আল্লাহর সাথে। মেয়েদের বাহ্যিক ত্রুটিকে ঢাকা দেয়ার জন্যে অলংকার দ্বারা যে তাদেরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয় এটা আরব কবিদের কবিতার মধ্যেও পাওয়া যায়। যেমন কোন আরব কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৌন্দর্যের ক্রটি দূর করার জন্যেই অলংকারের প্রয়োজন হয়, সুতরাং পূর্ণ সৌন্দর্যের জন্যে অলংকারের কি প্রয়োজন?”মেয়েদের আভ্যন্তরীণ ক্রটিও রয়েছে, যেমন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে না। না মুখের দ্বারা পারে, না সাহসিকতার দ্বারা পারে। কোন একজন আরববাসী এটাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে শুধু কান্নাকাটির দ্বারা সাহায্য করতে পারে এবং শুধু গোপনে কোন কল্যাণের কার্য করতে পারে।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে।' অর্থাৎ তারা এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে। মহান আল্লাহ তাদের এই উক্তিকে অস্বীকার করে বলেনঃ ‘এদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছে?' অর্থাৎ আল্লাহ যে ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছেন এটা কি তারা দেখেছে? এরপর তিনি বলেনঃ ‘তাদের এই উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর দ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে।এরপর তাদের আরো নির্বুদ্ধিতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না।' অর্থাৎ “আমরা ফেরেশতাদেরকে নারী মনে করে ওদের মূর্তি বানিয়েছি এবং ওদের পূজা করছি, এটা যদি আল্লাহর ইচ্ছা না থাকতো তবে তিনি আমাদের এবং ওদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতেন এবং তখন আমরা এদের আর পূজা করতে পারতাম না। সুতরাং আমরা যখন এদের পূজা করছি এবং তিনি আমাদের ও এদের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি তখন এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমরা ভুল করছি না, বরং ঠিকই করছি।” সুতরাং তাদের প্রথম ভুল এই যে, তারা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করেছে। তাদের দ্বিতীয় ভুল হলো এই যে, তারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করেছে। আর তাদের তৃতীয় ভুল হচ্ছে এই যে, তারা ফেরেশতাদের পূজা শুরু করে দিয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। তারা শুধু তাদের পূর্বপুরুষদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করছে। তাদের চতুর্থ ভুল এই যে, তারা এটাকে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত বলছে এবং এর কারণ এই বের করেছে যে, যদি আল্লাহ তাদের এই কাজে অসন্তুষ্ট থাকতেন তবে তাদের জন্যে এদের পূজা করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এটা তাদের সরাসরি মূর্খতা ও অবাধ্যতা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাদের এ কাজে চরম অসন্তুষ্ট। এক একজন নবী (আঃ) এটা খণ্ডন করে গেছেন এবং এক একটি কিতাব এর নিকৃষ্টতা বর্ণনা করেছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (একথা বলাবার জন্যে) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাগূতের (শয়তানের বা অন্যান্যদের) ইবাদত হতে দূরে থাকো, অতঃপর তাদের মধ্যে কতক এমন বের হয় যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেন এবং তাদের মধ্যে কতক এমনও বের হয় যাদের উপর পথভ্রষ্টতা বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ কর এবং দেখো যে, অবিশ্বাসকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল।”(১৬:৩৬) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে (রাসূলরূপে) প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস করঃ আমি কি তাদেরকে রহমান (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্যদের ইবাদত করার অনুমতি দিয়েছিলাম? (কখনো নয়)।'(৪৩:৪৫) এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা সবকিছুই নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে। অর্থাৎ তাদের আল্লাহর কুদরত বা ক্ষমতা সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নেই।
أَمْ آتَيْنَاهُمْ كِتَابًا مِنْ قَبْلِهِ فَهُمْ بِهِ مُسْتَمْسِكُونَ
📘 Please check ayah 43:25 for complete tafsir.
بَلْ قَالُوا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِمْ مُهْتَدُونَ
📘 Please check ayah 43:25 for complete tafsir.
وَكَذَٰلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ
📘 Please check ayah 43:25 for complete tafsir.
۞ قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَىٰ مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ ۖ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ
📘 Please check ayah 43:25 for complete tafsir.
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
📘 ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, যে লোকেরা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের ইবাদত করে তাদের কাছে এ ব্যাপারে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। তাই তিনি বলেনঃ “আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাব দান করেছি যা তারা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে? অর্থাৎ তাদের কাছে কি তাদের শিরকের দলীল স্বরূপ কোন কিতাব বিদ্যমান রয়েছে? অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে এরূপ দলীল সম্বলিত কোন কিতাব তাদের কাছে নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তাদের উপর এমন সুলতান অবতীর্ণ করেছি যে তাদেরকে শিরক করতে বলে?”(৩০:৩৫) অর্থাৎ এই রূপ নয়।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘বরং তারা বলে- আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করছি।' অর্থাৎ শিরকের কোন দলীল তাদের কাছে নেই, শুধুমাত্র দলীল এটাই যে, তাদের পূর্বপুরুষরা এরূপ করতো। তাদেরকেই তারা অনুসরণ করছে। এখানে উম্মত’ দ্বারা দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে।মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ “এই ভাবে আমি তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন ওর শক্তিশালী ব্যক্তিরা বলতো- আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করছি।' যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের পূর্ববর্তীদের নিকটও রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে যাদুকর ও পাগল বলেছিল।”(৫১:৫২) সুতরাং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবারই মুখে এই একই কথা ছিল। প্রকৃতপক্ষে ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতায় এরা সবাই সমান।ঐ সতর্ককারী তাদেরকে বলতেনঃ তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছো, আমি যদি তোমাদের জন্যে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশ আনয়ন করি, তবুও কি তোমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করবে? উত্তরে তারা বলতোঃ ‘তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।' অর্থাৎ তারা যদিও জানতো যে, নবীদের শিক্ষা তাদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ হতে বহুগুণে শ্রেয়, তথাপি তাদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা তাদেরকে সত্য কল করতে দেয়নি। তাই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দিলাম। দেখো, মিথ্যাচারীদের পরিণাম কি হয়েছে! অর্থাৎ কাফিরদেরকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং কিভাবে মুমিনরা মুক্তি পেয়েছে তা তুমি লক্ষ্য কর।
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
وَجَعَلَهَا كَلِمَةً بَاقِيَةً فِي عَقِبِهِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
بَلْ مَتَّعْتُ هَٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْحَقُّ وَرَسُولٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
وَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ وَإِنَّا بِهِ كَافِرُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَٰذَا الْقُرْآنُ عَلَىٰ رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ ۚ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا ۗ وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَٰنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ
📘 Please check ayah 43:35 for complete tafsir.
وَزُخْرُفًا ۚ وَإِنْ كُلُّ ذَٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ
📘 ২৬-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
কুরায়েশ কাফিররা বংশ ও দ্বীনের দিক দিয়ে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল বলে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সুন্নাতকে তাদের সামনে রেখে বলেনঃ “দেখো, যে ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন তাঁর পরবর্তী সমস্ত নবী (আঃ)-এর পিতা, আল্লাহর রাসূল এবং একত্ববাদীদের ইমাম, তিনিই স্পষ্ট ভাষায় শুধু নিজের কওমকে নয়, বরং স্বয়ং নিজের পিতাকেও বলেনঃ তোমরা যাদের পূজা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার সম্পর্ক আছে শুধু ঐ আল্লাহর সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আমি তোমাদের এসব মাবুদ হতে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ। এদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই।আল্লাহ তাআলাও তাঁকে তাঁর হক কথা বলার সাহসিকতা ও একত্ববাদের প্রতি আবেগ ও উত্তেজনার প্রতিদান প্রদান করেন যে, তিনি তাঁর সন্তানদের মধ্যে কালেমায়ে তাওহীদ চিরদিনের জন্যে বাকী রেখে দেন। তাঁর সন্তানরা এই পবিত্র কালেমার উক্তিকারী হবেন না এটা অসম্ভব। তাঁর সন্তানরাই এই তাওহীদী কালেমার প্রচার করবেন এবং দিকে দিকে ছড়িয়ে দিবেন। ভাগ্যবান ও সৎ লোকেরা এই বংশের লোকদের নিকট হতেই তাওহীদের শিক্ষা গ্রহণ করবে। মোটকথা, ইসলাম ও তাওহীদের শিক্ষক রূপে মনোনয়ন পেয়েছেন এই বংশের লোকেরাই।প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমিই এই কাফিরদেরকে এবং এদের পূর্বপুরুষদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম ভোগের, অবশেষে তাদের নিকট আসলো সত্য ও স্পষ্ট প্রচারক রাসূল। যখন তাদের নিকট সত্য আসলো তখন তারা বললোঃ এটা তো যাদু এবং আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করি। জিদ ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে তারা সত্যকে অস্বীকার করে বসলো এবং কুরআনের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে গেল এবং বলে উঠলো- সত্যিই যদি এটা আল্লাহর কালাম হয়ে থাকে তবে কেন এটা মক্কা ও তায়েফের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হলো না?প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি দ্বারা তারা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা, উরওয়া ইবনে মাসঊদ সাকাফী, উমায়ের ইবনে আমর, উবা ইবনে রাবীআহ, হাবীব ইবনে আমর ইবনে উমায়ের সাকাফী, ইবনে আবদে ইয়ালীল, কিনানাহ ইবনে আমর প্রমুখ ব্যক্তিদেরকে বুঝিয়েছিল। তাদের মতে এই দুই জনপদের কোন উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া উচিত ছিল।তাদের এই প্রতিবাদের জবাবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এরা কি তোমার প্রতিপালকের করুণার মালিক যে, এরাই তা বন্টন করতে বসেছে? আমার জিনিস আমারই অধিকারভুক্ত। আমি যাকে ইচ্ছা তাকেই তা প্রদান করে থাকি। কোথায় আমার জ্ঞান এবং কোথায় তাদের জ্ঞান! রিসালাতের সঠিক হকদার কে তা আমিই জানি। এই নিয়ামত তাকেই দেয়া হয় যে সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, যার আত্মা পবিত্র, যার বংশ সবচেয়ে বেশী সম্ভ্রান্ত এবং যে মূলগতভাবেও সর্বাপেক্ষা পবিত্র।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর করুণা যারা বন্টন করতে চাচ্ছে তাদের জীবনোপকরণও তো তাদের অধিকারভুক্ত নয়। আমিই তাদের মধ্যে জীবিকা বন্টন করি তাদের পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করি যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। আমি যাকে যা ইচ্ছা এবং যখন ইচ্ছা দিয়ে থাকি এবং যখন যা ইচ্ছা ছিনিয়ে নিই। জ্ঞান, বিবেক, ক্ষমতা ইত্যাদিও আমারই দেয়া এবং এতেও আমি পার্থক্য রেখেছি। এগুলো সবাইকে আমি সমান দিইনি। এর হিকমত এই যে, এর ফলে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। এর ওর প্রয়োজন হয় এবং ওর এর প্রয়োজন হয়। সুতরাং একে অপরের অধীনস্থ থাকে।অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর।মহামহিমান্বিত আল্লাহ এরপর বলেনঃ আমি যদি এই আশংকা না করতাম যে, মানুষ মাল-ধনকে আমার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির প্রমাণ মনে করে নিয়ে সত্য প্রত্যাখ্যানে এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, তবে আমি কাফিরদেরকে এতো বেশী মাল-ধন দিতাম যে, তাদের গৃহের ছাদ রৌপ্য নির্মিত হতো, এমনকি ঐ সিঁড়িও হতো রৌপ্য নির্মিত যাতে তারা আরোহণ করে। আর তাদের গৃহের জন্যে দিতাম রৌপ্য নির্মিত দরযা এবং বিশ্রামের জন্যে দিতাম রৌপ্য ও স্বর্ণ নির্মিত পালংক। তবে এ সবই শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার। এগুলো ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল এবং আখিরাতের নিয়ামতরাশির তুলনায় এগুলো অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। আর আখিরাতের এই নিয়ামত ও কল্যাণ রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যে। দুনিয়া লোভীরা এখানে ভোগ-সম্ভার ও সুখ-সামগ্রী কিছুটা লাভ করবে বটে কিন্তু আখিরাতে তারা হবে একেবারে শূন্য হস্ত। সেখানে তাদের কাছে একটাও পুণ্য থাকবে না। যার বিনিময়ে তারা মহান আল্লাহর নিকট হতে কিছু লাভ করতে পারে, যেমন সহীহ হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। অন্য হাদীসে রয়েছেঃ “আল্লাহর কাছে যদি এই দুনিয়ার মূল্য একটি মশার ডানার পরিমাণও হতো তবে তিনি এখানে কোন কাফিরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না।”মহান আল্লাহ বলেন যে, পরকালের কল্যাণ শুধু ঐ লোকদের জন্যেই রয়েছে। যারা দুনিয়ায় সদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। পরকালে এরাই মহান প্রতিপালকের বিশিষ্ট নিয়ামত ও রহমত লাভ করবে, যাতে অন্য কেউ তাদের শরীক হবে না। একদা হযরত উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীতে আগমন করেন, ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় স্ত্রীদের হতে ঈলা কিছু দিনের জন্যে স্ত্রীদের সংসর্গ ত্যাগ করার শপথ করাকে শরীয়তের পরিভাষায় ঈলা বলা হয়) করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) একাকী ছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তিনি একখণ্ড চাটাই এর উপর শুয়ে রয়েছেন এবং তাঁর দেহে চাটাই এর দাগ পড়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে হযরত উমার (রাঃ) কেঁদে ফেলেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! রোমক সম্রাট কায়সার এবং পারস্য সম্রাট কিসরা কত শান-শওকতের সাথে আরাম-আয়েশে দিন যাপন করছে! আর আপনি আল্লাহর প্রিয় ও মনোনীত বান্দা হওয়া সত্ত্বেও আপনার এই (শশাচনীয়) অবস্থা!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেলান লাগিয়ে ছিলেন, হযরত উমার (রাঃ)-এর একথা শুনে তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ “হে উমার (রাঃ)! তুমি কি সন্দেহের মধ্যে রয়েছো?” অতঃপর তিনি বলেনঃ “এরা হলো ঐ সব লোক যারা তাদের পার্থিব জীবনেই তাড়াতাড়ি তাদের ভোগ্য বস্তু পেয়ে গেছে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি বলেনঃ “তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তাদের জন্যে দুনিয়া এবং আমাদের জন্যে আখিরাত?”সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থসমূহে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করো না এবং এগুলোর থালায় আহার করো না, কেননা, এগুলো দুনিয়ায় তাদের (কাফিরদের) জন্যে এবং আখিরাতে আমাদের জন্যে।” আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিতে দুনিয়া খুবই ঘৃণ্য ও তুচ্ছ। হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলার নিকট দুনিয়ার মূল্য যদি একটি মশার ডানার সমানও হতো তবে তিনি কোন কাফিরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
حَتَّىٰ إِذَا جَاءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِينُ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
وَلَنْ يَنْفَعَكُمُ الْيَوْمَ إِذْ ظَلَمْتُمْ أَنَّكُمْ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
وَإِنَّهُ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيمٌ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
أَفَأَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ أَوْ تَهْدِي الْعُمْيَ وَمَنْ كَانَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
فَإِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَإِنَّا مِنْهُمْ مُنْتَقِمُونَ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
أَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِي وَعَدْنَاهُمْ فَإِنَّا عَلَيْهِمْ مُقْتَدِرُونَ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَكَ وَلِقَوْمِكَ ۖ وَسَوْفَ تُسْأَلُونَ
📘 Please check ayah 43:45 for complete tafsir.
وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ
📘 ৩৬-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
ইরশাদ হচ্ছেঃ যে দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় ও অবহেলা প্রদর্শন করে তার উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করে এবং তার সাথী হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াকে আরবী ভাষায় (আরবী) বলা হয়ে থাকে। এই বিষয়টিই কুরআন কারীমের আরো বহু আয়াতে রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হিদায়াত প্রকাশিত হবার পরেও যে ব্যক্তি রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথের অনুসরণ করে, আমি তাকে সেখানেই ছেড়ে দিবো এবং জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবো যা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।”(৪:১১৫) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর তারা যখন বক্রপথ অবলম্বন করলো তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।”(৬১:৫) অন্য একটি আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদের জন্যে এমন সাথী নিয়োজিত করি যারা তাদের সামনের ও পিছনের জিনিসগুলোকে তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে।”(৪১:২৫)এখানে মহান আল্লাহ বলেন যে, এরূপ গাফেল লোকের উপর শয়তান ক্ষমতা লাভ করে এবং তাকে সৎপথ হতে বিরত রাখে। আর সে তার অন্তরে এ ধারণা সৃষ্টি করে যে, তার নীতি খুব ভাল এবং সে সম্পূর্ণ সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কিয়ামতের দিন যখন সে আল্লাহর সামনে হাযির হবে এবং প্রকৃত তথ্য খুলে যাবে তখন সে তার ঐ সাথী শয়তানকে বলবেঃ ‘হায়! আজ যদি আমার ও তোমার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকতো।এখানে (আরবী) দ্বারা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী জায়গাকে বুঝানো হয়েছে। এখানে প্রভাব হিসেবে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন সূর্য ও চন্দ্রকে (আরবী) বলা হয় এবং পিতা-মাতাকে (আরবী) বলা হয়ে থাকে। এক কিরআতে (আরবী) রয়েছে। অর্থাৎ যখন শয়তান ও এই গাফেল ব্যক্তি আমার (আল্লাহর) নিকট আসবে।হযরত সাঈদ জারীরী (রঃ) বলেন যে, কাফির তার কবর হতে উঠা মাত্রই শয়তান এসে তার হাতের সাথে হাত মিলিয়ে নিবে। অতঃপর তার থেকে পৃথক হবে না। যে পর্যন্ত না দু’জনকেই এক সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আজ তোমাদের এই অনুতাপ তোমাদের কোন কাজে আসবে না, যেহেতু তোমরা সীমালংঘন করেছিলে, তোমরা তো সবাই শাস্তিতে শরীক। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি কি বধিরকে শুনাতে পারবে? অথবা যে অন্ধ ও যে ব্যক্তি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে, তাকে তুমি কি পারবে সৎপথে পরিচালিত করতে? অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! আমার পক্ষ হতে তোমার উপর এ দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়নি যে, তাদের সবাইকে মুসলমান করতেই হবে। হিদায়াত তোমার অধিকারভুক্ত জিনিস নয়। যে ব্যক্তি সত্য কথার দিকে কানই দেয় না এবং সরল-সোজা পথের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েও দেখে না, যে বিভ্রান্ত হয় এবং তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তুমি তাদের সম্পর্কে এতো চিন্তা করছো কেন? তোমার কর্তব্য হলো শুধু তাবলীগ করা অর্থাৎ আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। পথ দেখানো ও পথভ্রষ্ট করা আমার কাজ। আমি ন্যায়বিচারক ও বিজ্ঞানময়। আমি যা চাইবো তাই করবো। তুমি মন সংকীর্ণ করো না। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমি যদি তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদেরকে শাস্তি দিবই। অথবা আমি তাদেরকে যে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে তাদের উপর আমার তো পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দিতে অপারগ নই। মোটকথা, এই ভাবে এবং ঐ ভাবে দুই ভাবেই আল্লাহ কাফিরদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করতে সক্ষম, কিন্তু ঐ অবস্থাকে পছন্দ করা হয়েছে যাতে নবী (সঃ)-এর মর্যাদা বেশী প্রকাশ পায়। অর্থাৎ নবী (সঃ)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়া হয়নি যে পর্যন্ত না তার শত্রুদের উপর তাকে বিজয় দান করা হয় এবং তাদের জান ও মালের তিনি অধিকারী হন। এইরূপ তাফসীর করেছেন হযরত সুদ্দী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন। কিন্তু হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, নবী (সঃ)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়া হয়, কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণের কাজ বাকী থেকে যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জীবদ্দশায় তাঁর উম্মতের মধ্যে এমন ব্যাপার ঘটাননি যা তিনি অপছন্দ করতেন। তিনি ছাড়া অন্যান্য সমস্ত নবী (আঃ)-এর চোখের সামনে তাদের উম্মতদের উপর আল্লাহর আযাব এসেছিল। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “আমাদের কাছে এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর উম্মতের উপর কি কি শাস্তি আপতিত হবে তা যখন তাঁকে জানানো হয়, তখন ঐ সময় থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে কখনো খিল খিল করে হাসতে দেখা যায়নি।” হযরত হাসান (রঃ) হতেও ঐ ধরনের একটি রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে। একটি হাদীসে আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ নক্ষত্ররাজি হলো আকাশের রক্ষার কারণ, যখনই নক্ষত্রগুলো ছিটকে পড়বে তখনই আকাশের উপর বিপদ নেমে আসবে। আমি আমার সাহাবীদের (রাঃ) জন্যে নিরাপত্তার মাধ্যম। আমি যখন চলে যাবো (ইন্তেকাল করবো) তখন তাদের উপর ঐ সব বিপদ-আপদ আসবে যেগুলোর ওয়াদা দেয়া হচ্ছে।” এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতি যে অহী করা হয়েছে অর্থাৎ কুরআন, যা সত্য ও নির্ভুল, যা সত্যের সোজা ও স্পষ্ট পথ প্রদর্শন করে, তুমি তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। এটাই সুখময় জান্নাতের সরল পথ-প্রদর্শক। যারা এর উপর চলে এবং এর আহকামের উপর আমল করে সে কখনো পথভ্রষ্ট হতে পারে না। এটা তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্যে যিকর অর্থাৎ সম্মানের বস্তু।হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “নিশ্চয়ই এই আমর (অর্থাৎ খিলাফত ও ইমামত) কুরায়েশদের মধ্যেই থাকবে। যে তাদের সাথে ঝগড়া করবে এবং এটা ছিনিয়ে নিবে আল্লাহ তাকে উল্টো মুখে নিক্ষেপ করবেন, যতদিন তারা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এতেও তার জাতীয় আভিজাত্য রয়েছে যে, কুরআন কারীম তাঁরই ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে, কুরায়েশের পরিভাষাতেই নাযিল হয়েছে। সুতরাং এটা প্রকাশমান যে, কুরআন এরাই সবচেয়ে বেশী বুঝবে। সুতরাং এই কুরায়েশদের উচিত সবচেয়ে বেশী দৃঢ়তার সাথে এর উপর আমল করতে থাকা। এতে বিশেষ করে ঐ মহান মুহাজিরদের বড় বুযুর্গী ও আভিজাত্য রয়েছে যারা সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং হিজরতও করেছেন সবারই পূর্বে। আর যারা এঁদের পদাংক অনুসরণ করেছেন তাদেরও এ মর্যাদা রয়েছে।(আরবী)-এর অর্থ উপদেশও নেয়া হয়েছে। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কওমের জন্যে উপদেশ হওয়ার অর্থ এটা নয় যে, অন্যদের জন্যে এটা উপদেশ নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে, তোমরা কি বুঝ না?”(২১:১০) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর।”(২৬:২১৪) মোটকথা, কুরআনের উপদেশ এবং নবী (সঃ)-এর রিসালাত সাধারণ। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়-স্বজন, কওম এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষ এর অন্তর্ভুক্ত। এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ ‘তোমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।' অর্থাৎ তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে যে, তোমরা আল্লাহর এই কালামের উপর কি পরিমাণ আমল করেছে এবং কতখানি মেনে চলেছো? মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন দেবতা স্থির করেছিলাম যার ইবাদত করা যায়?” অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! সমস্ত রাসূল নিজ নিজ উম্মতকে ঐ দাওয়াতই দিয়েছে যে দাওয়াত তুমি তোমার উম্মতকে দিচ্ছ। প্রত্যেক নবী (আঃ)-এর দাওয়াতের সারমর্ম এই ছিল যে, তারা তাওহীদ ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং শিরকের মূলোৎপাটন করেছেন। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি রাসূল পাঠিয়েছি (একথা বলার জন্যে) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাগূত (শয়তান) হতে দূরে থাকো।”(১৬:৩৬) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কিরআতে নিম্নরূপ রয়েছেঃ (আরবী) এটা মিসাল তাফসীরের জন্যে, তিলাওয়াতের জন্যে নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। তখন অর্থ হবেঃ “তোমার পূর্বে রাসূলদেরকে আমি যাদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।” আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হলোঃ তুমি নবীদেরকে জিজ্ঞেস কর, অর্থাৎ মিরাজের রাত্রে, যখন সমস্ত নবী (আঃ) তাঁর সামনে একত্রিত ছিলেন। জিজ্ঞেস করলেই তিনি জানতে পারবেন যে, তাঁরা প্রত্যেকেই তাওহীদ শিক্ষা এবং শিরক মিটানোর শিক্ষা নিয়েই আল্লাহর নিকট হতে প্রেরিত হয়েছিলেন।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَقَالَ إِنِّي رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 43:50 for complete tafsir.
فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِآيَاتِنَا إِذَا هُمْ مِنْهَا يَضْحَكُونَ
📘 Please check ayah 43:50 for complete tafsir.
وَمَا نُرِيهِمْ مِنْ آيَةٍ إِلَّا هِيَ أَكْبَرُ مِنْ أُخْتِهَا ۖ وَأَخَذْنَاهُمْ بِالْعَذَابِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
📘 Please check ayah 43:50 for complete tafsir.
وَقَالُوا يَا أَيُّهَ السَّاحِرُ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِنْدَكَ إِنَّنَا لَمُهْتَدُونَ
📘 Please check ayah 43:50 for complete tafsir.
أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَنْ كُنْتُمْ قَوْمًا مُسْرِفِينَ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِذَا هُمْ يَنْكُثُونَ
📘 ৪৬-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ)-কে স্বীয় রাসূল করে ফিরাউন, তার সভাষদবর্গ, তার প্রজা কিবতী এবং বানী ইসরাঈলের নিকট প্রেরণ করেন, যাতে তিনি তাদেরকে তাওহীদ শিক্ষা দেন এবং শিরক হতে রক্ষা করেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বড় বড় মু'জিযাও দান করেন। যেমন হাত উজ্জ্বল হওয়া, লাঠি সর্প হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু ফিরাউন ও তার লোকেরা তাঁর কোন মর্যাদা দিলো না। বরং তাঁকে অবিশ্বাস করলো এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে উড়িয়ে দিলো। তখন তাদের উপর আল্লাহর আযাব আসলো যাতে তাদের শিক্ষা লাভ হয় এবং হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর দলীলও হয়। তুফান আসলো, ফড়িং আসলো, উকুন আসলো, ব্যাঙ আসলো, শস্য, মাল, ফল ইত্যাদি কমতে শুরু করলো। যখনই কোন আযাব আসতো তখনই তারা অস্থির হয়ে উঠতো এবং হযরত মূসা (আঃ)-কে অনুনয় বিনয় করে বলতো যে, তিনি যেন ঐ আযাব সরিয়ে নেয়ার জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট দু'আ করেন। এবার আযাব সরে গেলেই তারা ম্মান আনবে। এই ভাবে তারা ওয়াদা-অঙ্গীকার করতো। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ)-এর দু'আর ফলে যখন আযাব সরে যেতো তখন আবার তারা হঠকারিতায় লেগে পড়তো। আবার আযাব আসতো এবং তারা ঐরূপ করতো।(আরবী) অর্থাৎ যাদুকর দ্বারা তারা খুব বড় আলেমকে বুঝাতো। তাদের যুগের আলেমদের উপাধি এটাই ছিল। তাদের যুগের লোকদের মধ্যে এটা একটা ইলম বলৈ গণ্য হতো এবং তাদের যুগে এটা নিন্দনীয় ছিল না। বরং এটা খুব মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হতো। সুতরাং তাদের হযরত মূসা (আঃ)-কে ‘হে যাদুকর’ বলে সম্বোধন করা সম্মানের জন্যে ছিল, প্রতিবাদ হিসেবে ছিল না। কেননা, তাদের কাজ তো চলেই যেতো। প্রত্যেকবার তারা মুসলমান হয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করতো এবং একথাও বলতো যে, তারা বানী ইসরাঈলকে তাঁর সাথে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু যখনই আযাব সরে যেতো তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করতো এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দিতো। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর আমি তাদেরকে পাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এগুলো স্পষ্ট নিদর্শন, কিন্তু তারা দাম্ভিকই রয়ে গেল, আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়। যখন তাদের উপর শাস্তি আসতো তখন তারা বলতোঃ হে মূসা (আঃ)! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্যে প্রার্থনা কর তোমার সাথে তার যে অঙ্গীকার রয়েছে তদনুযায়ী, যদি তুমি আমাদের উপর হতে শাস্তি অপসারিত কর তবে আমরা তো তোমাকে বিশ্বাস করবোই এবং বানী ইসরাঈলকেও তোমার সাথে যেতে দিবো। অতঃপর যখনই আমি তাদের উপর হতে শাস্তি অপসারিত করতাম এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তারা তখনই তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করতো।”(৭:১৩৩-১৩৫)।
وَنَادَىٰ فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَٰذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِنْ تَحْتِي ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
📘 Please check ayah 43:56 for complete tafsir.
أَمْ أَنَا خَيْرٌ مِنْ هَٰذَا الَّذِي هُوَ مَهِينٌ وَلَا يَكَادُ يُبِينُ
📘 Please check ayah 43:56 for complete tafsir.
فَلَوْلَا أُلْقِيَ عَلَيْهِ أَسْوِرَةٌ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ جَاءَ مَعَهُ الْمَلَائِكَةُ مُقْتَرِنِينَ
📘 Please check ayah 43:56 for complete tafsir.
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ
📘 Please check ayah 43:56 for complete tafsir.
فَلَمَّا آسَفُونَا انْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 43:56 for complete tafsir.
فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلًا لِلْآخِرِينَ
📘 ৫১-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা ফিরাউনের ঔদ্ধত্য ও আমিত্বের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সে তার কওমকে একত্রিত করে ঘোষণা করলোঃ আমি কি একাই মিসরের বাদশাহ নই? আমার বাগ-বাগীচায় ও প্রাসাদে কি নদীগুলো প্রবাহিত নয়। তোমরা কি আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও সাম্রাজ্য দেখতে পাচ্ছ না? আর মূসা (আঃ) এবং তার সঙ্গীদেরকে দেখো তো যে, তারা কেমন দুর্বল ও দরিদ্র! যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে সবকে একত্রিত করে বললোঃ আমিই তোমাদের বড় প্রভু। ফলে, আল্লাহ তাকে আখিরাত ও দুনিয়ার শাস্তিতে গ্রেফতার করলেন।”(৭৯:২৩-২৫)এখানে (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন কোন কারীর কিরআতে (আরবী) এরূপও রয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, যদি এই কিরআত শুদ্ধ ও সঠিক হয় তবে অর্থ সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু এই কিরআত সমস্ত শহরের কিরআতের বিপরীত। সব জায়গারই কিরআতে (আরবী) শব্দটি (আরবী) বা প্রশ্নবোধক রূপে রয়েছে। মোটকথা, অভিশপ্ত ফিরাউন নিজেকে হযরত মূসা (আঃ) অপেক্ষা উত্তম ও ভাল মনে করলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার এটা মিথ্যা দাবী।(আরবী) শব্দের অর্থ হলো ঘৃণ্য, দুর্বল, নির্ধন ও মান-সম্মানহীন। ফিরাউন বললো যে, মূসা (আঃ) ভালরূপে কথা বলতে জানেন না, তাঁর ভাষা অলংকার পূর্ণ নয় এবং তিনি বাকপট নন। তিনি তাঁর মনের কথা প্রকাশ করতে পারেন না।কেউ কেউ বলেন যে, বাল্যকালে হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় মুখে আগুনের অঙ্গার পুরে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি তোতলা হয়ে গিয়েছিলেন।আসলে এটাও ফিরাউনের প্রতারণামূলক ও মিথ্যা কথা। হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন বাকপটু। তাঁর ভাষা ছিল অলংকারপূর্ণ। তিনি উচ্চ মান-মর্যাদার অধিকারী ও প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু অভিশপ্ত ফিরাউন আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আঃ)-কে কুফরীর চোখে দেখতো বলে তাকে ঐরূপ দেখতো। প্রকৃতপক্ষে সে। নিজেই ছিল ঘৃণ্য ও লাঞ্ছিত। বাল্যকালে হযরত মূসা (আঃ) তার মুখে আগুনের অঙ্গার পুরে দেয়ার কারণে তাঁর কথা যদিও তোতলা হতো, কিন্তু তার তোতলামি যেন দূর হয়ে যায় এজন্যে তিনি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। ফলে মহান আল্লাহর দয়ায় তাঁর ঐ তোতলামি ছুটে গিয়েছিল। কাজেই পরে তিনি সুন্দরভাবে তাঁর বক্তব্য জনগণের সামনে পেশ করতে পারতেন এবং তারা তাঁর কথা ভালভাবে বুঝতে পারতো। আর যদি এটা মেনে নেয়াও হয় যে, এরপরেও তাঁর যবানের কিছুটা ত্রুটি রয়ে গিয়েছিল, কেননা তিনি প্রার্থনায় শুধু এটুকুই বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার জিহ্বার জড়তা আপনি দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে, তবুও এটা কোন দোষের কথা নয়। আল্লাহ তা'আলা যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেন সে সেভাবেই হয়ে থাকে, এতে দোষের এমন কি আছে? আসলে ফিরাউন একটা কথা বানিয়ে নিয়ে তার মূখ প্রজাদেরকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। যেমন সে বলেছিলঃ মূসা (আঃ)-কে কেন দেয়া হলো না স্বর্ণ-বলয় অথবা তার সাথে কেন আসলো না ফেরেশতারা দলবদ্ধভাবে?' মোটকথা, সে বহু রকম চেষ্টা চালিয়ে তার প্রজাবর্গকে নির্বোধ বানিয়ে নেয় এবং তাদেরকে তারই মতাবলম্বী করে নেয়। সে নিজেই ছিল পাপী, অপরাধী ও লম্পট।যখন সে মন খুলে আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করেই চললো এবং আল্লাহ তার প্রতি চরমভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন তখন তার পিঠের উপর আল্লাহর চাবুক পড়লো। প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ তাকে তার সমুদয় কৃতকর্মের ফল প্রদান করলেন। তাকে সদলবলে সমুদ্রে নিমজ্জিত করা হলো। আর পরকালে সে জাহান্নামে জ্বলতে থাকবে। হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তুমি দেখো যে, আল্লাহ কোন মানুষকে ইচ্ছামত দিতে রয়েছেন, আর সে তার অবাধ্যাচরণ করতে রয়েছে তখন তুমি বুঝবে যে, আল্লাহ তাকে অবকাশ দিয়েছেন।” অতঃপর তিনি (আরবী) এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সামনে হঠাৎ মৃত্যুর আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ “মুমিনের উপর এটা খুব সহজ, কিন্তু কাফিরের উপর এটা দুঃখজনক।” তারপর এ আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন।হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) বলেন যে, গাফলতি বা অমনোযোগিতার সাথে শাস্তি রয়েছে। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তৎপর পরবর্তীদের জন্যে আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। অর্থাৎ পরবর্তী লোকেরা যেন তাদের পরিণাম দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং নিজেদের পরিত্রাণ লাভের উপায় অনুসন্ধান করে।
۞ وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ ۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِبَنِي إِسْرَائِيلَ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
وَكَمْ أَرْسَلْنَا مِنْ نَبِيٍّ فِي الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
وَلَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَا مِنْكُمْ مَلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ يَخْلُفُونَ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
وَلَمَّا جَاءَ عِيسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُمْ بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
إِنَّ اللَّهَ هُوَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ
📘 Please check ayah 43:65 for complete tafsir.
فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِنْ بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ
📘 ৫৭-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ) এবং হযরত যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলোঃ “তারা হাসতে লাগলো।' অর্থাৎ এতে তারা বিস্ময়বোধ করলো। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “তারা হতবুদ্ধি হলো এবং হাসতে লাগলো। ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো।' ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) তাঁর ‘সীরাত গ্রন্থে এর যে কারণ বর্ণনা করেছেন তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা প্রমুখ কুরায়েশদের নিকট আগমন করেন। সেখানে নযর ইবনে হারিসও এসে পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করে। সে যুক্তি-তর্কে টিকতে না পেরে লা-জবাব বা নিরুত্তর হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই তোমরা ও তোমাদের মা’বৃদরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে।”(২১:৯৮) তারপর তিনি সেখান হতে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে যাবআলী তামীমী আগমন করে। তখন ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা তাকে বলেঃ “নযর ইবনে হারিস তো আবদুল মুত্তালিবের সন্তানের (পৌত্রের) নিকট হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত সে তো আমাদেরকে ও আমাদের মা'বূদদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন বলে দিয়ে চলে গেল।” সে তখন বললোঃ “আমি থাকলে সে নিজেই নিরুত্তর হয়ে যেতো। যাও, তোমরা গিয়ে তাকে প্রশ্ন করঃ আমরা এবং আমাদের সমস্ত মা’রূদ যখন জাহান্নামী তখন এটা অপরিহার্য যে, ফেরেশতারা, হযরত উযায়ের (আঃ) এবং ঈসা (আঃ)ও জাহান্নামী হবেন? কেননা, আমরা ফেরেশতাদের উপাসনা করে থাকি, ইয়াহূদীরা হযরত উযায়ের (আঃ)-এর উপাসনা করে এবং খৃষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে?” তার একথা শুনে মজলিসের লোকেরা সবাই খুব খুশী হলো এবং বললো যে, এটাই সঠিক কথা। নবী (সঃ)-এর কানে যখন এ সংবাদ পৌঁছলো তখন তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে এবং প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে খুশী মনে নিজেদের ইবাদত করিয়ে নেয়, এরূপ উপাসক ও উপাস্য উভয়েই জাহান্নামী। ফেরেশতারা এবং নবীরা (আঃ) না নিজেদের ইবাদত করার জন্যে কাউকেও নির্দেশ দিয়েছেন, না তারা তাতে সন্তুষ্ট। তাদের নামে আসলে এরা শয়তানের উপাসনা করে। সেই তাদেরকে শিরকের হুকুম দিয়ে থাকে। আর তারা তার সেই হুকুম পালন করে।” তখন .... (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ) এবং এঁদের ছাড়া অন্যান্য যেসব আলেম ও ধর্ম যাজকদের এরা উপাসনা করে, যারা নিজেরা আল্লাহর আনুগত্যের উপর কায়েম ছিলেন এবং শিরকের প্রতি অসন্তুষ্ট ও তা হতে বাধাদানকারী ছিলেন, তাঁদের মৃত্যুর পরে এই পথভ্রষ্ট অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে মা'বুদ বানিয়ে নেয়, তারা সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ ।আর ফেরেশতাদেরকে যে মুশরিকরা আল্লাহর কন্যা বিশ্বাস করে নিয়ে তাদের উপাসনা করতো তা খণ্ডন করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা বলে যে, দয়াময় (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ তিনি। তা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র, বরং তারা (ফেরেশতারা) তো তার সম্মানিত বান্দা।”(২১:২৬) এর দ্বারা তাদের এই বাতিল আকীদাকে খণ্ডন করা হয়। আর হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যখন মরিয়ম (আঃ)-এর পুত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার সম্প্রদায় শশারগোল শুরু করে দেয়। এরপর মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “সে তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্যে দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতের নিদর্শন।” অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাধ্যমে আমি যেসব মু’জিয়া দুনিয়াবাসীকে দেখিয়েছি, যেমন মৃতকে জীবিত করা, কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করা ইত্যাদি, এগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দলীল হিসেবে যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমাকেই অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে তাদের মা’ৰূদদের জাহান্নামী হওয়ার কথা শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ইবনে মরিয়ম (আঃ) সম্পর্কে আপনি কি বলেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।” তারা কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে বললো, “আল্লাহর শপথ! এ ব্যক্তি তো শুধু এটাই চায় যে, আমরা যেন তাকে প্রভু বানিয়ে নিই যেমন খৃষ্টানরা হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “এরা তো শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদা বলেনঃ “কুরআন কারীমের মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যার তাফসীর কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। আমি জানি না যে, সবাই কি এর তাফসীর জানে, না না জেনেও জানার চেষ্টা করে না?” তারপর তিনি মজলিসে অন্য কিছুর বর্ণনা দিতে থাকলেন, অবশেষে মজলিস শেষ হয়ে গেল এবং তিনি উঠে চলে গেলেন। তার সঙ্গীগণ তাঁকে আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করার জন্যে খুব আফসোস করতে লাগলেন। তখন ইবনে আকীল আনসারী (রাঃ)-এর মাওলা আবু ইয়াহইয়া (রঃ) বললেনঃ “আচ্ছা, আগামী কাল সকালে তিনি আগমন করলে আমি তাকে আয়াতটির তাফসীর জিজ্ঞেস করবো।” পরদিন তিনি আগমন করলে হযরত আবু ইয়াহইয়া (রাঃ) পূর্ব দিনের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ঐ আয়াতটি কি?” উত্তরে তিনি বললেন, শুনো, কুরায়েশদেরকে একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেন:“কেউ এমন নেই, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা যেতে পারে এবং তাতে কল্যাণ থাকতে পারে।” তখন কুরায়েশরা বললোঃ “খৃষ্টানরা কি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে না? আপনি কি হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর নবী এবং তার মনোনীত বান্দা মনে করেন না? তাহলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই একথা বলার অর্থ কি হতে পারে?” তখন ... (আরবী)-এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ “যখন হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর বর্ণনা আসলো তখন এ লোকগুলো হাসতে শুরু করলো।” আর ঈসা (আঃ) কিয়ামতের নিদর্শন’ এর ভাবার্থ এই যে, হযরত ঈসা (আঃ) কিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবেন।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এ রিওয়াইয়াতটি পরবর্তী বাক্যটি ছাড়া ইমাম ইবনে আবি হাতিমও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আমাদের দেবতাগুলো ভাল, না এই ব্যক্তি? তাদের এই উক্তির ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমাদের মা'বুদ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) হতে উত্তম।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে। অর্থাৎ তাদের এটা বিনা দলীল-প্রমাণে ঝগড়া। মিথ্যার উপরই তারা তর্ক-বিতর্ক করছে। তারা নিজেরাও জানে যে, তারা যেটা বলছে ভাবার্থ সেটা নয় এবং তাদের প্রতিবাদ ও আপত্তি নিরর্থক। কেননা, প্রথমতঃ আয়াতে (আরবী) শব্দ রয়েছে, যা জ্ঞান-বিবেকহীনের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয়তঃ আয়াতে কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যারা মূর্তি, প্রতিমা, পাথর ইত্যাদির পূজা করতো। তারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর পূজারী ছিল না। সুতরাং নবী (সঃ)-কে তারা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই এ কথা বলে। অর্থাৎ তারা যে কথা বলে সেটা যে বাকপটুত্ব শূন্য তা তারা নিজেরাও জানে। হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন কওম হিদায়াতের উপর থাকার পর কখনো পথভ্রষ্ট হয় না যে পর্যন্ত না তাদের মধ্যে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ার রীতি চলে আসে।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম ইবনে জারীর (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে এ হাদীসেরই শুরুতে রয়েছেঃ “নবীর আগমনের পর কোন উম্মত পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রথম কারণ হলো তকদীরকে অবিশ্বাস করা। আর নবীর আগমনের পর কোন কওম পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তখনই পথভ্রষ্ট হয়েছে যখন তাদের মধ্যে কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়ার রীতি চালু হয়েছে।”হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সাহাবীদের মধ্যে এমন সময় আগমন করেন যখন তারা কুরআন কারীমের আয়াতগুলো নিয়ে পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের উপর ভীষণ রাগান্বিত হন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তোমরা এভাবে আল্লাহর কিতাবের আয়াতগুলোর একটির সাথে অপরটির টক্কর লাগিয়ে দিয়ো না। জেনে রেখো যে, এই পারস্পরিক বাক-বিতণ্ডার অভ্যাসই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ঈসা (আঃ) তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন বানিয়ে বানী ইসরাঈলের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। যেন তারা জানতে পারে যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করার তিনি ক্ষমতা রাখেন।এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো।কিংবা এর অর্থ হচ্ছেঃ যেমনভাবে তোমরা একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছ তেমনিভাবে তাদেরকেও করে দিতাম। দুই অবস্থাতেই ভাবার্থ একই।মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমাদের পরিবর্তে তাদের দ্বারা দুনিয়া আবাদ করতাম।মহান আল্লাহ বলেনঃ “ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতের নিদর্শন।' এর ভাবার্থ ইবনে ইসহাক (রঃ) যা বর্ণনা করেছেন তা কিছুই নয়। আর এর চেয়েও বেশী দূরের কথা হচ্ছে ওটা যা কাতাদা (রঃ), হাসান বসরী (রঃ) এবং সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেছেন। তা এই যে, (আরবী) সর্বনামটি ফিরেছে কুরআনের দিকে। এই দু'টি উক্তিই ভুল। বরং সঠিক কথা এই যে, (আরবী) সর্বনামটি ফিরেছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর দিকে অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) কিয়ামতের একটি নিদর্শন। কেননা, উপর হতে তারই আলোচনা চলে আসছে। আর এটা স্পষ্ট কথা যে, এখানে হযরত ঈসা (আঃ)-এর কিয়ামতের পূর্বে নাযিল হওয়াকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তার মৃত্যুর পূর্বে (হযরত ঈসা আঃ-এর মৃত্যুর পূর্বে) প্রত্যেক আহলে কিতাব তার উপর ঈমান আনবে। তারপর কিয়ামতের দিন সে তাদের উপর সাক্ষী হবে।”(৪:১৫৯)। এই ভাবার্থ পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় এই আয়াতেরই দ্বিতীয় পঠনে, যাতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই সে (হযরত ঈসা আঃ) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আলামত বা লক্ষণ।” হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এটা হলো কিয়ামতের লক্ষণ, অর্থাৎ হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর কিয়ামতের পূর্বে আগমন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আবুল আলিয়া (রঃ), আৰূ মালিক (রঃ), ইকরামা (রাঃ), হাসান (রঃ), কাতাদা (রঃ) যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও অনুরূপই বর্ণিত আছে।মুতাওয়াতির হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খবর দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিনের পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ) ন্যায়পরায়ণ ইমাম ও ইনসাফকারী হাকিম রূপে অবতীর্ণ হবেন। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না, বরং এটাকে নিশ্চিত রূপে বিশ্বাস কর এবং আমি তোমাদেরকে যে খবর দিচ্ছি তাতে তোমরা আমার অনুসরণ কর, এটাই সরল পথ। শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আমার এই সরল সঠিক পথ হতে নিবৃত্ত না করে। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ হে আমার কওম! আমি তোমাদের নিকট এসেছি হিকমত অর্থাৎ নবুওয়াত নিয়ে এবং দ্বীনী বিষয়ে তোমরা যে মতভেদ করছো তা স্পষ্ট করে দিবার জন্যে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাই বলেন। এই উক্তিটিই উত্তম ও পাকাপোক্ত। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ঐ লোকদের উক্তিকে খণ্ডন করেছেন যারা বলেন যে, (আরবী) (কতক) শব্দটি এখানে (আরবী) (সমস্ত) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন যে, হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমকে আরো বলেনঃ “সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমারই অনুসরণ কর। আল্লাহই তো আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। মনে রেখো যে, তোমরা সবাই এবং আমি নিজেও তার গোলাম এবং তাঁর মুখাপেক্ষী। আমরা তার দরবার ফকীর। সুতরাং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা আমাদের সবারই একান্ত কর্তব্য। তিনি এক ও অংশী বিহীন। এটাই হলো তাওহীদের পথ, এটাই সরল সঠিক পথ।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। কেউ কেউ তো হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলেই স্বীকার করলো এবং এরাই ছিল সত্যপন্থী দল। আবার কেউ কেউ তাঁর সম্পর্কে দাবী করলো যে, তিনি আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ)। আর কেউ কেউ তাকেই আল্লাহ বললো (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা)। আল্লাহ তা'আলা তাদের দুই দাবী হতেই মুক্ত ও পবিত্র। তিনি সর্বোচ্চ, সমুন্নত ও মহান। এ জন্যেই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ দুর্ভোগ এই যালিমদের জন্যে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে।
هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
وَمَا يَأْتِيهِمْ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
📘 Please check ayah 43:8 for complete tafsir.
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنْتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِنْ ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ ۖ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
📘 Please check ayah 43:73 for complete tafsir.
لَكُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ مِنْهَا تَأْكُلُونَ
📘 ৬৬-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ দেখো, এই মুশরিকরা কিয়ামতের অপেক্ষা করছে, কিন্তু এতে কোন লাভ নেই, কেননা এটা তাদের অজ্ঞাতসারে আকস্মিকভাবে এসে পড়বে। কারণ এটা সংঘটিত হওয়ার সঠিক সময় তো কারো জানা নেই। হঠাৎ করে যখন এটা এসে পড়বে তখন এরা লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলেও কোন উপকার হবে না। এরা যদিও এই কিয়ামতকে অসম্ভব মনে করছে, কিন্তু এটা শুধু সম্ভবই নয়, বরং নিশ্চিত। ঐ সময় বা ঐ সময়ের পরের আমল কোন কাজে আসবে না। দুনিয়ায় যাদের বন্ধুত্ব গায়রুল্লাহর জন্যে রয়েছে ঐ দিন সেটা শত্রুতায় পরিবর্তিত হবে। হ্যা, তবে যে বন্ধুত্ব শুধু আল্লাহর জন্যে রয়েছে তা বাকী ও চিরস্থায়ী থাকবে। যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহ ছাড়া প্রতিমাগুলোর সাথে পার্থিব জীবনে যে বন্ধুত্ব স্থাপন করে রেখেছে তা শুধু পার্থিব জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করবে এবং তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম, আর তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী হবে না।”(২৯:২৫)।হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ দুই জন মুমিন যারা দুনিয়ায় পরস্পর বন্ধু হয়, যখন তাদের একজনের মৃত্যু হয় এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে সে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয় তখন সে তার ঐ দুনিয়ার বন্ধুকে স্মরণ করে এবং বলেঃ “হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। সে আমাকে আপনার এবং আপনার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যের নির্দেশ দিতো। আমাকে সে ভাল কাজের আদেশ করতো এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখতো। আমাকে সে বিশ্বাস করাতো যে, একদিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। সুতরাং হে আল্লাহ! তাকে আপনি সত্য পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং শেষে তাকে ওটাই দেখিয়ে দিবেন যা আমাকে দেখিয়েছেন এবং তার উপর ঐরূপই সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন যেমন সন্তুষ্ট আমার উপর হয়েছেন।” তখন আল্লাহ তাআলা তাকে জবাবে বলেনঃ “তুমি সন্তুষ্ট চিত্তে চলে যাও। আমি তার জন্যে যা কিছু প্রস্তুত রেখেছি তা যদি তুমি দেখতে তবে খুব হাসতে এবং মোটেই দুঃখিত হতে না।” অতঃপর যখন তার ঐ বন্ধু মারা যায় এবং দুই বন্ধুর রূহ মিলিত হয় তখন তাদেরকে বলা হয়ঃ “তোমরা তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বর্ণনা দাও।” তখন একজন অপরজনকে বলেঃ “তুমি আমার খুব ভাল বন্ধু ছিলে ও অত্যন্ত সৎ সঙ্গী ছিলে এবং ছিলে অতি উত্তম দোস্ত। পক্ষান্তরে, দুইজন কাফির, যারা দুনিয়ায় পরস্পর বন্ধু হয়, যখন তাদের একজন মারা যায় এবং তাকে জাহান্নামের দুঃসংবাদ দেয়া। হয় তখন দুনিয়ার ঐ বন্ধুর কথা তার স্মরণ হয় এবং সে বলেঃ “হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমার বন্ধু ছিল। সে আমাকে আপনার ও আপনার নবী (সঃ)-এর অবাধ্যাচরণের নির্দেশ দিতো। সে আমাকে মন্দ কাজে উৎসাহিত করতো এবং ভাল কাজ হতে বিরত রাখতো। আর আমার মনে সে এই বিশ্বাস জন্মাতো যে, আপনার সাথে সাক্ষাৎ হবে না। সুতরাং আপনি তাকে সুপথ প্রদর্শন করবেন না যাতে সেও যেন ওটাই দেখতে পায় যা আমাকে দেখানো হয়েছে এবং আপনি তার উপর ঐরূপই অসন্তুষ্ট থাকবেন যেরূপ আমার উপর অসন্তুষ্ট রয়েছেন।” তারপর যখন ঐ দ্বিতীয় বন্ধু মারা যায় এবং উভয়ের রূহ একত্রিত হয় তখন তাদেরকে বলা হয়ঃ “তোমরা একে অপরের গুণাগুণ বর্ণনা কর।” প্রত্যেকেই তখন অপরকে বলেঃ “তুমি আমার খুবই মন্দ ভাই ছিলে, ছিলে খারাপ সঙ্গী ও নিকৃষ্ট বন্ধু।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিবর্তিত হয়ে যাবে। তবে আল্লাহভীরুদের বন্ধুত্ব তা হবে না। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসে, যাদের একজন রয়েছে পূর্ব দিকে এবং অপরজন রয়েছে পশ্চিম দিকে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের দুজনকেই একত্রিত করে প্রত্যেককেই বলবেনঃ “এ হলো ঐ ব্যক্তি যাকে তুমি আমারই জন্যে ভালবাসতে।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)ইরশাদ হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন মুত্তাকীদেরকে বলা হবেঃ হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিল এবং আত্মসমর্পণ করেছিল তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। এটা হলো তোমাদের . ঈমান ও ইসলামের প্রতিদান। অর্থাৎ ভিতরে বিশ্বাস ও পূর্ণ প্রত্যয়, আর বাইরে শরীয়তের উপর আমল। মু’তামার ইবনে সুলাইমান (রাঃ) স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন মানুষ নিজ নিজ কবর হতে উথিত হবে তখন সবাই অশান্তি ও সন্ত্রাসের মধ্যে থাকবে। তখন একজন ঘোষক (আল্লাহর বাণী) ঘোষণা করবেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং দুঃখিতও হবে না তোমরা।' এ ঘোষণা শুনে সবাই খুশী হয়ে যাবে, কারণ তারা এটাকে সাধারণ ঘোষণা মনে করবে (অর্থাৎ তারা মনে করবে যে এ ঘোষণা সবারই জন্যে)। এরপর আবার ঘোষণা করা হবেঃ ‘যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিল এবং আত্মসমর্পণ করেছিল। এ ঘোষণা শুনে খাটি ও পাকা মুসলমান ছাড়া অন্যান্য সবাই নিরাশ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীরা সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।' সূরায়ে রূমে-এর তাফসীর গত হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে। সেখানে সবকিছু রয়েছে অন্তর যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।(আরবী) এবং (আরবী) এই দুই কিরআতই রয়েছে। অর্থাৎ সেখানে তাদের জন্যে সুস্বাদু, সুগন্ধময় এবং সুন্দর রঙ এর খাবার রয়েছে যা মনে চায়।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘সর্বাপেক্ষা নিম্নশ্রেণীর জান্নাতী, যে সর্বশেষ জান্নাতে যাবে, তার দৃষ্টি শত বছরের পথের দূরত্ব পর্যন্ত যাবে, আর তত দূর পর্যন্ত সে শুধু নিজেরই ডেরা, . তাঁবু এবং স্বর্ণ ও পান্না নির্মিত প্রাসাদ দেখতে পাবে। ঐগুলো সবই বিভিন্ন প্রকারের ও রঙ বেরঙ এর আসবাবপত্রে ভরপুর থাকবে। সকাল-সন্ধ্যায় বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যে পরিপূর্ণ সত্তর হাজার করে রেকাবী ও পেয়ালা তার সামনে পেশ করা হবে। ঐগুলোর প্রত্যেকটি তার মনের চাহিদা মুতাবিক হবে। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত তার চাহিদা একই রকম থাকবে। যদি সে সারা দুনিয়ার লোককে যিয়াফত দেয় তবে তাদের সবারই জন্যে ঐ খাদ্যগুলো যথেষ্ট হবে। অথচ ওগুলোর কিছুই কমবে না।” (এ হাদীসটি আবদুর রাযযাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জান্নাতের। বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “যার হাতে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রাণ রয়েছে তাঁর। শপথ! জান্নাতী খাবারের একটি গ্রাস উঠাবে এবং তার মনে খেয়াল জাগবে যে, অমুক প্রকারের খাদ্য হলে খুবই ভাল হতো! তখন ঐ গ্রাস তার মুখে ঐ জিনিসই হয়ে যাবে যার সে আকাঙ্ক্ষা করেছিল।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বনিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর সাত তলা প্রাসাদ হবে। সে ষষ্ঠ তলায় অবস্থান করবে এবং সপ্তম তলাটি তার উপরে থাকবে। তার ত্রিশজন খাদেম থাকবে যারা সকাল-সন্ধ্যায় স্বর্ণ নির্মিত তিনশটি পাত্রে তার জন্যে খাদ্য পরিবেশন করবে। প্রত্যেকটিতে পৃথক পৃথক খাদ্য থাকবে এবং ওগুলো হবে খুবই সুন্দর ও সুস্বাদু। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত তার খাওয়ার চাহিদা একই রূপ থাকবে। অনুরূপভাবে তাকে তিন শ’টি সোনার পেয়ালা, পানপাত্র ও গ্লাসে পানীয় জিনিস দেয়া হবে। ওগুলোও পৃথক পৃথক জিনিস হবে। সে তখন বলবেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুমতি দিলে আমি সমস্ত জান্নাতীকে দাওয়াত দিতাম। সবাই যদি আমার এখানে খায় তবুও আমার খাদ্য মোটেই হ্রাস পাবে না।” আয়ত চক্ষু বিশিষ্ট হ্রদের মধ্য হতে তার বাহাত্তরটি স্ত্রী থাকবে এবং দুনিয়ার স্ত্রী পৃথকভাবে থাকবে। তাদের মধ্যে এক একজন এক এক মাইল জায়গার মধ্যে বসে থাকবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সাথে সাথে তাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের এই নিয়ামত চিরস্থায়ী থাকবে। আর তোমরাও হবে এখানে স্থায়ী। অর্থাৎ কখনো এখান হতে বের হবে না এবং এটা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না। এরপর মহান আল্লাহ তাদের উপর নিজের অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন:“এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কর্মের ফল স্বরূপ।” অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে এটা দান করেছি আমার প্রশস্ত রহমতের গুণে। কেননা, কোন ব্যক্তিই আল্লাহর রহমত ছাড়া শুধু নিজের কর্মের বলে জান্নাতে যেতে পারে না। হ্যা, তবে অবশ্যই জান্নাতের শেণীভেদ যে হবে তা সৎ কার্যাবলীর পার্থক্যের কারণেই হবে।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নামী তার জান্নাতের জায়গা জাহান্নামের মধ্যে দেখতে পাবে এবং দেখে দুঃখ ও আফসোস করে বলবে যে, যদি আল্লাহ তাকে হিদায়াত দান করতেন তবে সেও মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতো। আর প্রত্যেক জান্নাতী তার জাহান্নামের জায়গা জান্নাতের মধ্যে দেখতে পাবে এবং ওটা দেখে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্বক বলবে:“আল্লাহ তা'আলা আমাকে সুপথ প্রদর্শন না করলে আমি সুপথ লাভে সক্ষম হতাম না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বলেনঃ “প্রত্যেক লোকেরই একটি স্থান জান্নাতে রয়েছে এবং একটি স্থান জাহান্নামে রয়েছে। সুতরাং কাফির মুমিনের জাহান্নামের জায়গার ওয়ারিস হবে এবং মুমিন কাফিরের জান্নাতের জায়গার ওয়ারিস হবে। আল্লাহ তা'আলার ‘এটাই জান্নাত, যার অধিকারী তোমাদেরকে করা হয়েছে তোমাদের কর্মের ফল স্বরূপ এই উক্তির দ্বারা এটাকেই বুঝানো হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)খাদ্য ও পানীয়ের বর্ণনা দেয়ার পর মহান আল্লাহ জান্নাতের ফলমূল ও তরিতরকারীর বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সেখানে জান্নাতীদের জন্যে রয়েছে প্রচুর ফলমূল, তারা সেগুলো হতে আহার করবে। মোটকথা, তারা ভরপুর নিয়ামতরাজিসহ মহান আল্লাহর পছন্দনীয় ঘরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَٰكِنْ كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
لَقَدْ جِئْنَاكُمْ بِالْحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ
📘 Please check ayah 43:80 for complete tafsir.
فَأَهْلَكْنَا أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَمَضَىٰ مَثَلُ الْأَوَّلِينَ
📘 ১-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা কুরআন কারীমের শপথ করেছেন যা সুস্পষ্ট, যার অর্থ জাজ্বল্যমান এবং যার শব্দগুলো উজ্জ্বল। যা সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও অলংকারপূর্ণ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটা এই জন্যে যে, যেন লোকজন জানে, বুঝে ও উপদেশ গ্রহণ করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি।' যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এই কুরআনকে স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি।”(২৬:১৯৫)মহান আল্লাহ বলেনঃ “এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে, এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ। উম্মুল কিতাব অর্থ লাওহে মাহফু। (আরবী) অর্থ আমার নিকট। (আরবী) অর্থ মরতবা, ইযযত, শরাফত ও ফযীলত। (আরবী) অর্থ দৃঢ়, মযবূত, বাতিলের সাথে মিলিত হওয়া এবং অন্যায়ের সাথে মিশ্রিত হওয়া হতে পবিত্র। অন্য জায়গায় এই পবিত্র কালামের বুযুর্গীর বর্ণনা নিম্নরূপে দেয়া হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, যারা পূত পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ স্পর্শ করে না। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।”(৫৬:৭৭-৮০) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “না, এই আচরণ অনুচিত, এটা তো উপদেশ বাণী; যে ইচ্ছা করবে সে এটা স্মরণ রাখবে, ওটা আছে মহান লিপিসমূহে, যা উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন, পবিত্র, মহান, পূত চরিত্র লিপিকর-হস্তে লিপিবদ্ধ ।”(৮০:১১-১৬) সুতরাং এই আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে আলেমগণ বলেন যে, অযু বিহীন অবস্থায় কুরআন কারীমকে হাতে নেয়া উচিত নয়, যেমন একটি হাদীসেও এসেছে, যদি তা সত্য হয়। কেননা, ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতারা ঐ কিতাবের ইযযত ও সম্মান করে থাকেন যাতে এই কুরআন লিখিত আছে। সুতরাং এই পার্থিব জগতে আমাদের তো আরো বেশী এর সম্মান করা উচিত। কেননা, এটা যমীনবাসীর নিকটই তো প্রেরণ করা হয়েছে। এটা দ্বারা তো তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। অতএব, এই পৃথিবীবাসীর এর খুব সম্মান ও আদব করা উচিত। কেননা, মহান আল্লাহ বলেনঃ “এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে, এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ।এর পরবর্তী আয়াতের একটি অর্থ এই করা হয়েছেঃ “তোমরা কি এটা মনে করে নিয়েছে যে, তোমাদের আনুগত্য না করা এবং আদেশ নিষেধ মান্য না করা সত্ত্বেও আমি তোমাদেরকে ছেড়ে দিবো? এবং তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবো না?” আর একটি অর্থ এই করা হয়েছেঃ “এই উম্মতের পূর্ববর্তী লোকেরা যখন এই কুরআনকে অবিশ্বাস করেছিল তখনই যদি এটাকে উঠিয়ে নেয়া হতো তবে গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়া হতো। কিন্তু আল্লাহর প্রশস্ত রহমত এটা পছন্দ করেনি এবং বিশের অধিক বছর ধরে এ কুরআন অবতীর্ণ হতে থাকে। এ উক্তির ভাবার্থ হচ্ছেঃ “এটা আল্লাহ তা'আলার স্নেহ ও দয়া যে, অস্বীকারকারী ও দুষ্টমতি লোকদের দুষ্টামির কারণে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত ও উপদেশ দান পরিত্যাগ করা হয়নি যাতে তাদের সৎ লোকেরা সংশোধিত হয়ে যায় এবং সংশোধন হতে অনিচ্ছুক লোকদের উপর যুক্তি-প্রমাণ সমাপ্ত হয়ে যায়।”এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমাকে তোমার কওম যে অবিশ্বাস করছে এতে তুমি দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না, বরং ধৈর্যধারণ কর। এদের পূর্ববর্তী কওমদের নিকটেও নবী রাসূলগণ এসেছিল, তখন তারাও তাদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করেছিল।”অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ‘তাদের মধ্যে যারা এদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। আর এই ভাবে চলে আসছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখতো এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল! পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে প্রবলতর।” (৪০:৮২) এই বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত গত হয়েছে অর্থাৎ তাদের রীতি-নীতি, শাস্তি ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা তাদের পরিণামকে পরবর্তীদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশের বিষয় করেছেন। যেমন তিনি এই সূরার শেষের দিকে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তৎপর পরবর্তীদের জন্যে আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত।” অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর নিয়ম তাঁর বান্দাদের মধ্যে গত হয়েছে।”(৪০:৮৫) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি আল্লাহর নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না।”(৩৩:৬২)
أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ ۚ بَلَىٰ وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ
📘 ৭৪-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:
উপরে সৎ লোকদের বর্ণনা দেয়া হয়েছিল এ জন্যে এখানে মন্দ ও অসৎ লোকদের অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, পাপীরা স্থায়ীভাবে জাহান্নামের আযাব। ভোগ করতে থাকবে। এক ঘন্টার জন্যেও তাদের ঐ শাস্তি হালকা করা হবে না। জাহান্নামে সে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে। সর্বপ্রকারের কল্যাণ হতে সে। নিরাশ হয়ে যাবে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের প্রতি যুলুম করিনি, বরং তারা নিজেরাই ছিল যালিম। দুষ্কর্যের মাধ্যমে তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করেছে। আমি রাসূল পাঠিয়েছিলাম, কিতাব নাযিল করেছিলাম এবং যুক্তি-প্রমাণ কায়েম করেছিলাম। কিন্তু তারা তাদের হঠকারিতা, অবাধ্যতা এবং সীমালংঘন হতে বিরত হয়নি। ফলে আমি তাদেরকে এর প্রতিফল প্রদান করেছি। এটা আমার তাদের প্রতি যুলুম নয়, আমি তো আমার বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করি না। জাহান্নামীরা জাহান্নামের রক্ষক মালিককে চীৎকার করে ডাক দিয়ে বলবেঃ ‘তোমার প্রতিপালক যেন আমাদেরকে নিঃশেষ করে দেন। সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে হযরত ইয়ালা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মিম্বরের উপর এ আয়াতটি পড়তে শুনেন, অতঃপর তিনি বলেন যে, জাহান্নামীরা মৃত্যু কামনা করবে যাতে শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে এটা ফায়সালা হয়ে গেছে যে, না তাদের মৃত্যু হবে এবং না তাদের শাস্তি হালকা করা হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের উপর এ সিদ্ধান্ত নেই যে, তারা মৃত্যু বরণ করবে, আর তাদের হতে শাস্তি হালকা করা হবে না।” (৩৫:৩৬) আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওটা (উপদেশ) উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগা, যে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে, অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।” (৮৭:১১-১৩)।যখন জাহান্নামীরা জাহান্নামের রক্ষক মালিকের কাছে আবেদন করবে যে, আল্লাহ তাআলা যেন তাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন, তখন মালিক উত্তরে বলবেঃ ‘তোমরা এখানে এভাবেই থাকবে, তোমাদের আর মৃত্যু হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হলো এক হাজার বছর। অর্থাৎ তোমরা মরবেও না, মুক্তিও পাবে না এবং এখান হতে পালাতেও পারবে না। এরপর মহান আল্লাহ তাদের দুস্কার্যের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যখন তিনি তাদের সামনে সত্যকে পেশ করেন অর্থাৎ তাদের সামনে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেন। তখন তারা তা মেনে নেয়া তো দূরের কথা, ওর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতঃ মুখ ফিরিয়ে নেয়। ওটা তাদের মনেই চায় না। তাই তারা হকপন্থীদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে। তারা অসত্য ও অন্যায়ের দিকেই ঝুঁকে থাকে এবং অসৎপন্থীদের সাথেই তাদের খুব মিল মহব্বত। সুতরাং তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা আজ নিজেদেরকেই ভৎসনা কর এবং নিজেদের উপরই দুঃখ আফসোস কর। কিন্তু সেদিন তাদের আফসোসেও কোন উপকার হবে না।এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ “তারা জঘন্য চক্রান্তের ইচ্ছা করেছিল, তখন আমিও কৌশল করেছিলাম।' মুজাহিদ (রঃ) এটার এই তাফসীর করেছেন এবং এর স্বপক্ষে আল্লাহ্ পাকের নিম্নের উক্তিটি রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এমন কৌশল করেছিলাম যে, তারা বুঝতেই পারে না।” (২৭:৫০) মুশরিকরা সত্যকে এড়িয়ে চলার জন্যে নানা প্রকারের কৌশল অবলম্বন করতো। আল্লাহ তাআলাও তখন তাদেরকে ধোকার মধ্যেই রেখে দেন এবং তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি তাদের মাথার উপর এসে না পড়া পর্যন্ত তাদের চক্ষু খুললো না। এ জন্যেই এর পরেই প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না? তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি অবশ্যই তাদের সমস্ত গোপন বিষয় অবগত রয়েছি। আর আমার ফেরেশতারা তো তাদের নিকট থেকে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে। অর্থাৎ আমি নিজেই তো তাদের সমস্ত গোপন বিষয়ের খবর রাখি, তদুপরি আমার নির্ধারিত ফেরেশতারা তাদের ছোট বড় সব আমলই লিপিবদ্ধ করে রাখছে।
قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
سُبْحَانَ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
وَتَبَارَكَ الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
وَقِيلِهِ يَا رَبِّ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ قَوْمٌ لَا يُؤْمِنُونَ
📘 Please check ayah 43:89 for complete tafsir.
فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
📘 ৮১-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাও- যদি এটা মেনে নেয়া হয় যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে তবে আমার মাথা নোয়াতে চিন্তা কি? না আমি তার কোন আদেশ অমান্য করি এবং না তার হুকুম হতে বিমুখ হই। যদি এরূপই হতো তবে আমি তো সর্বপ্রথম এটা স্বীকার করে নিতাম। কিন্তু মহান আল্লাহর সত্তা এরূপ নয় যে, কেউ তার সমান ও সমকক্ষ হতে পারে। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, শর্তরূপে যে বাক্য আনয়ন করা হয় তা পূর্ণ হয়ে যাওয়া জরুরী নয়। এমন কি ওর সম্ভাবনাও জরুরী নয়। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন। পবিত্র ও মহান তিনি। তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল পরাক্রমশালী।”(৩৯:৪)।কোন কোন তাফসীরকার (আরবী)-এর অর্থ ‘অস্বীকারকারী’ও করেছেন। যেমন হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) তাঁদের মধ্যে একজন। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, এখানে (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ অস্বীকারকারীদের অগ্রণী। আর এটা (আরবী) হবে, এবং যেটা ইবাদতের অর্থে হবে সেটা (আরবী) হবে। এর প্রমাণ হিসেবে এই ঘটনাটি রয়েছে যে, একটি মহিলা বিবাহের ছয় মাস পরেই সন্তান প্রসব করে। তখন হযরত উসমান (রাঃ) মহিলাটিকে রজম করার বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) প্রতিবাদ করে বলেন যে, আল্লাহ তা'আলার কিতাবে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সন্তানের গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল হচ্ছে ত্রিশ মাস।”(৪৬:১৫) আর অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তার (সন্তানের) দুই বছরে দুধ ছাড়ানো হয়। বর্ণনাকারী বলেন যে, হযরত আলী (রাঃ) যখন এই দলীল পেশ করলেন, (আরবী) অর্থাৎ “তখন হযরত উসমান (রাঃ) এটা অস্বীকার করতে পারলেন না। সুতরাং তিনি মহিলাটিকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন। এখানেও (আরবী) শব্দ রয়েছে। কিন্তু এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, শর্তের জবাবে এ অর্থ ঠিকভাবে বসে না। এটা মেনে নিলে অর্থ দাঁড়াবে ? যদি রহমানের (আল্লাহর) সন্তান থাকে তবে আমিই হলাম প্রথম অস্বীকারকারী। কিন্তু এই কালামে কোন সৌন্দর্য থাকছে না। হ্যা, তবে শুধু এটুকু বলা যেতে পারে যে, এখানে (আরবী) শব্দটি শর্তের জন্যে নয়, বরং নাফী বা নেতিবাচক হিসেবে এসেছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। তখন বাক্যটির অর্থ হবেঃ রহমান বা দয়াময় আল্লাহর কোন সন্তান নেই এবং আমিই তার প্রথম সাক্ষী।' হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এটা হলো এমন কালাম যা আরবদের পরিভাষায় রয়েছে। অর্থাৎ না আল্লাহর সন্তান আছে এবং না আমি তার উক্তিকারী। আবু সাখর (রঃ) বলেন যে, উক্তিটির ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘আমি তো প্রথম হতেই তাঁর ইবাদতকারী এবং এটা ঘোষণাকারী যে, তাঁর কোন সন্তান নেই এবং আমি তার তাওহীদকে স্বীকার করে নেয়ার ব্যাপারেও অগ্রণী। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘আমিই তাঁর প্রথম ইবাদতকারী এবং একত্ববাদী, আর তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, এর অর্থ হলোঃ ‘আমিই প্রথম অস্বীকারকারী। অভিধানে এ দুটিই রয়েছে, অর্থাৎ (আরবী), তবে প্রথমটিই নিকটতর। কেননা, এটা শর্ত ও জাযা হয়েছে। কিন্তু এটা অসম্ভব। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ যদি তাঁর সন্তান হতো তবে আমিই সর্বপ্রথম তা স্বীকার করে নিতাম। কিন্তু তা হতে তিনি পবিত্র ও মুক্ত। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ উক্তিটিই পছন্দ করেছেন এবং যারা (আরবী) শব্দটিকে (আরবী) বা নেতিবাচক বলেছেন তিনি তাঁদের এ উক্তি খণ্ডন করেছেন। আর এজন্যে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তারা যা আরোপ করে তা হতে পবিত্র ও মহান, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অধিপতি এবং আরশের অধিকারী। তিনি তো এক, অভাবমুক্ত। তাঁর কোন নীর, সমকক্ষ ও সন্তান নেই।মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তাদেরকে যে দিবসের কথা বলা হয়েছে তার সম্মুখীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে তুমি বাক-বিতণ্ডা ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে দাও। তারা এসব খেল-তামাশা ও ক্রীড়া-কৌতুকে লিপ্ত থাকবে এমতাবস্থায়ই তাদের উপর কিয়ামত এসে পড়বে। ঐ সময় তারা তাদের পরিণাম জানতে পারবে। এরপর মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও বুযুর্গীর আরো বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, যমীন ও আসমানের সমস্ত মাখলুক তার ইবাদতে লিপ্ত রয়েছে এবং সবাই তাঁর সামনে অপারগ ও শক্তিহীন। তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনিই আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে, তিনি তোমাদের গোপনীয় ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা উপার্জন কর সেটাও তিনি জানেন।”(৬:৩) কত মহান তিনি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছুর সার্বভৌম অধিপতি! তিনি সর্বপ্রকারের দোষ হতে পবিত্র ও মুক্ত। তিনি সবারই অধিকর্তা। তিনি সর্বোচ্চ, সমুন্নত ও মহান। এমন কেউ নেই যে তার কোন হুকুম টলাতে পারে। কেউ এমন নেই যে তাঁর মজীর পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সবকিছুই তার অধিকারভুক্ত। সবকিছুই তার ক্ষমতাধীন। কিয়ামতের জ্ঞান শুধু তারই আছে। তিনি ছাড়া কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সঠিক সময়ের জ্ঞান কারো নেই। তাঁর নিকট সবাই প্রত্যাবর্তিত হবে। প্রত্যেককেই তিনি তার কৃতকর্মের প্রতিফল প্রদান করবেন।অতঃপর আল্লাহ পাক বলেনঃ আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, সুপারিশের ক্ষমতা তাদের নেই। অর্থাৎ কাফিররা তাদের যেসব বাতিল মাবুদকে তাদের সুপারিশকারী মনে করে রেখেছে, তাদের কেউই সুপারিশের জন্যে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কারো সুপারিশে তাদের কোন উপকার হবে না। এরপরে ইসতিসনা মুনকাতা রয়েছে অর্থাৎ তবে তারা ব্যতীত যারা সত্য উপলব্ধি করে ওর সাক্ষ্য দেয়। আর তারা নিজেরাও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। আল্লাহ তা'আলা সৎ লোকদেরকে তাদের জন্যে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন এবং সেই সুপারিশ তিনি কবুল করবেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি যদি এই কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তবে তারা জবাবে অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ। তবুও তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?' অর্থাৎ এটা বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তারা আল্লাহ তা'আলাকে এককভাবে সৃষ্টিকর্তা মেনে নেয়ার পরেও অন্যদেরও তারা উপাসনা করছে যারা সম্পূর্ণরূপে শক্তিহীন! তারা একটুও চিন্তা করে দেখে না যে, সৃষ্টি যখন একজনই করেছেন তখন অন্যদের ইবাদত করা যায় কি করে? তাদের অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা এতো বেশী বেড়ে গেছে যে, এই সহজ সরল কথাটি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তও তারা বুঝতে পারে না। আর বুঝালেও তারা বুঝে না। তাই তো মহান আল্লাহ বিস্ময় প্রকাশ পূর্বক বলেনঃ ‘তবুও তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে! ইরশাদ হচ্ছেঃ মুহাম্মাদ (সঃ) নিজের এ বক্তব্য বললেন অর্থাৎ স্বীয় প্রতিপালকের নিকট স্বীয় কওমের অবিশ্বাসকরণের অভিযোগ করলেন এবং বললেন যে, তারা ঈমান আনবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “রাসূল বললো- হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার কওম এই কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।”(২৫:৩০) ইমাম ইবনে জারীরও (রাঃ) এই তাফসীরই করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, ইবনে মাসউদ (রঃ)-এর কিরআত (আরবী) (৪৩:৮৮) এই রূপ রয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-এর উক্তির উদ্ধৃতি দিয়েছেন। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “এটা তোমাদের নবী (সঃ)-এর উক্তি, তিনি স্বীয় প্রতিপালকের সামনে স্বীয় কওমের অভিযোগ করেন।” ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) (আরবী)-এর দ্বিতীয় কিরআত (আরবী)-এর উপর যবর দিয়েও বর্ণনা করেছেন। আর তিনি এর দু'টি তালিকা বর্ণনা করেছেন। একটি এই যে, এটা (আরবী)-এর উপর হয়েছে। দ্বিতীয় এই যে, এখানে। ক্রিয়া পদটি উহ্য মেনে নেয়া হবে। আর যখন (আরবী)-এর নীচে (আরবী) দিয়ে পড়া হবে তখন এটা (আরবী)-এর উপর (আরবী) হবে। তখন অর্থ হবেঃ কিয়ামতের জ্ঞান এবং এই উক্তির জ্ঞান তাঁরই রয়েছে। সূরার শেষে ইরশাদ হচ্ছেঃ “(হে নবী সঃ)! সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর এবং বলঃ সালাম; শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।' অর্থাৎ নবী (সঃ) যেন এ কাফিরদের মন্দ কথার জবাব মন্দ কথা দ্বারা না দেন, বরং তাদের মন জয়ের জন্যে কথায় ও কাজে উভয় ক্ষেত্রেই যেন নম্রতা ও কোমলতা অবলম্বন করেন এবং 'সালাম' (শান্তি) একথা বলেন। সত্বরই তারা প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে। এর দ্বারা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে মুশরিকদেরকে কঠিনভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। আর এটা হয়েও গেল যে, তাদের উপর এমন শাস্তি আপতিত হলো যা টলবার নয়। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় দ্বীনকে সমুন্নত করলেন এবং স্বীয় কালেমাকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিলেন। তিনি তার মুমিন ও মুসলিম বান্দাদেরকে শক্তিশালী করলেন। অতঃপর তাদেরকে জিহাদ ও নির্বাসনের হুকুম দিয়ে দুনিয়ায় এমনভাবে জয়যুক্ত করলেন যে, আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে অসংখ্য লোক প্রবেশ করলো এবং প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো। সুতরাং প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য। আর তিনিই সর্বাপেক্ষা ভাল জ্ঞান রাখেন।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ
📘 Please check ayah 43:14 for complete tafsir.