slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة المزمل

(Al-Muzzammil) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

وَذَرْنِي وَالْمُكَذِّبِينَ أُولِي النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيلًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

إِنَّ لَدَيْنَا أَنْكَالًا وَجَحِيمًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَهِيلًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

إِنَّا أَرْسَلْنَا إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَاهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَا أَرْسَلْنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

فَعَصَىٰ فِرْعَوْنُ الرَّسُولَ فَأَخَذْنَاهُ أَخْذًا وَبِيلًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا

📘 Please check ayah 73:18 for complete tafsir.

السَّمَاءُ مُنْفَطِرٌ بِهِ ۚ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولًا

📘 ১০-১৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে কাফিরদের বিদ্রুপাত্মক কথার উপর ধৈর্য ধারণের হিদায়াত করছেন এবং বলছেনঃ তাদেরকে কোন তিরস্কার ধমক ছাড়াই তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। আমি স্বয়ং তাদেরকে দেখে নিবো। আমার গজব ও ক্রোধের সময় দেখবো কি করে তারা মুক্তি পেতে পারে। তাদের মধ্যে যারা সম্পদশালী ও স্বচ্ছল লোক, যারা তোমাকে নানা প্রকারে কষ্ট দিচ্ছে, যাদের উপর দ্বিগুণ প্রাপ্য রয়েছে, এক জানের আর এক মালের, আর তারা কোনটাই আদায় করছে না, তাদের সাথে তুমি সম্পর্ক ছিন্ন করে দাও, তারপর দেখে নিয়ো, আমি তাদের সাথে কি ব্যবহার করি। অল্প দিন তারা দুনিয়ায় ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকুক, পরিণামে তারা কঠিন শাস্তির মধ্যে পতিত হবে। কেমন আযাব? এমন কঠিন আযাব যে, তাদেরকে শৃংখল পরিয়ে জাহান্নামের প্রজ্বলিত অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। আর তাদেরকে এমন খাদ্য খেতে দেয়া হবে যা কণ্ঠ নালীতে আটকে যাবে। নীচেও নামবে না এবং উপরেও উঠবে না। আরো নানা প্রকারের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে দেয়া হবে। এমন এক সময়ও হবে যখন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে। পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হয়ে যাবে। যে বালুকারাশিকে বাতাস এদিক-ওদিক উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কারো কোন নাম-নিশানাও বাকী থাকবে না। যমীন এক সমতল ভূমিতে পরিণত হবে, যেখানে কোন উঁচু-নীচু পরিলক্ষিত হবে না। এরপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ হে লোক সকল এবং বিশেষ করে হে কাফিরদের দল! আমি তোমাদের নিকট তোমাদের জন্যে সাক্ষী স্বরূপ এক রাসূল (সঃ) পাঠিয়েছি, যে রাসূল সত্যবাদী ও সত্যায়িত, যেমন আমি ফিরাউনের নিকট আমার আহকাম পৌঁছাবার জন্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরাউন যখন তাকে অমান্য করলো তখন আমি তাকে কিরূপ কঠিন শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম তা তো তোমাদের জানা আছে। সুতরাং আমার এই নবী (সঃ)-কে যদি তোমরা অমান্য কর তবে তোমাদেরও পরিণাম ভাল হবে না। তোমাদের উপরও আল্লাহর আযাব এসে পড়বে এবং তোমাদেরকে তচনচ করে দেয়া হবে। কেন না এই রাসূল (সঃ) সমস্ত রাসূলের নেতা। সুতরাং তাকে অমান্য করার শাস্তিও হবে অন্যান্য শাস্তি অপেক্ষা বড়। এর পরবর্তী আয়াতের দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হলোঃ যদি তোমরা কুফরী কর তবে বল তো ঐ দিনের শাস্তি হতে তোমরা কিরূপে মুক্তি পেতে পার যে দিনের ভয়াবহতা কিশোরকে বৃদ্ধে পরিণত করবে? দ্বিতীয় অর্থ হলোঃ তোমরা যদি এতো বড় ভয়াবহ দিনকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস কর তবে তোমরা, তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় কিরূপে লাভ করতে পার? এই উভয় অর্থই উত্তম হলেও প্রথম অর্থটিই বেশী উত্তম! এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “এটা হলো কিয়ামতের দিন যেই দিন আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ)-কে বলবেনঃ ‘উঠো এবং তোমার সন্তানদের মধ্য হতে জাহান্নামীদেরকে পৃথক কর।' তখন হযরত আদম (আঃ) বলবেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কতজনের মধ্য হতে কতজন? আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ প্রতি হাজারের মধ্য হতে নয়শ নিরানব্বই জনকে।' এ কথা শুনে মুসলমানদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল এবং তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-ও তাদের চেহারা দেখে তা বুঝে নিলেন। সুতরাং তিনি তাদেরকে সান্ত্বনার সুরে বললেনঃ জেনে রেখো যে, হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তান অনেক। ইয়াজুজ ও মাজুজও হযরত আদম (আঃ)-এরই সন্তান। তারা এক একজন নিজের পিছনে এক হাজার করে সন্তান ছেড়ে যায়। সুতরাং তারা এবং তাদের মত লোক মিলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে। সুতরাং ঘাবড়াবার কিছুই নেই। জান্নাত তোমাদের জন্যে এবং তোমরা জান্নাতের জন্যে।” (ইমাম তিবরানী (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এটা গারীব হাদীস) সূরা হজ্বের শুরুতে এরকম হাদীস সমূহের বর্ণনা গত হয়েছে।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ঐ দিনের ভয়াবহতার কারণে আকাশও বিদীর্ণ হয়ে যাবে। কেউ কেউ (আরবি)-এর (আরবি) সর্বনামটি আল্লাহর দিকে ফিরিয়েছেন। কিন্তু এটা সবল নয়। কেননা এখানে তাঁর যিকিরই নেই।মহান আল্লাহ বলেনঃ ঐদিনের ওয়াদা নিশ্চিতরূপে সত্য। ওটা সংঘটিত হবেই। ঐ দিনের আগমনে কোন সন্দেহই নেই।

إِنَّ هَٰذِهِ تَذْكِرَةٌ ۖ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَىٰ رَبِّهِ سَبِيلًا

📘 Please check ayah 73:20 for complete tafsir.

قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

۞ إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِنَ الَّذِينَ مَعَكَ ۚ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ۚ عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۖ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ ۚ عَلِمَ أَنْ سَيَكُونُ مِنْكُمْ مَرْضَىٰ ۙ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ ۙ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ۚ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا ۚ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

📘 ১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, এই সূরাটি জ্ঞানীদের জন্যে সরাসরি উপদেশ ও শিক্ষণীয় বিষয়। যে কেউ হিদায়াত প্রার্থী হবে সেই প্রতিপালকের মর্জি হিসেবে হিদায়াতের পথ পেয়ে যাবে এবং তাঁর কাছে পৌঁছে যাওয়ার ওয়াসীলা লাভ করবে। যেমন অন্য সূরায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (৭৬:৩০)।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এবং তোমার সাহাবীদের একটি দল যে কখনো কখনো দুই তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত কিয়াম কর, কখনো কখনো অর্ধেক রাত্রি পর্যন্ত এবং কখনো কখনো এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত কিয়াম করে থাকে এবং তাহাজ্জুদের নামাযে কাটিয়ে দাও তা আল্লাহ খুব ভালই জানেন। অবশ্য তোমরা এর সঠিক হিসাব রাখতে পার না। কেননা এটা খুবই কঠিন কাজ। দিবস ও রজনীর সঠিক পরিমাণ একমাত্র আল্লাহই নির্ধারণ করে থাকেন। কারণ কখনো দিন ও রাত উভয়ই সমান সমান হয়ে থাকে, কখনো রাত ছোট হয় ও দিন বড় হয় এবং কখনো দিন ছোট হয় ও রাত বড় হয়। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা জানেন যে, এটা পালন করার শক্তি তোমাদের নেই। সুতরাং এখন থেকে তোমরা রাত্রির নামায ততটাই পড় যতটা তোমাদের জন্যে সহজ। কোন সময় নির্দিষ্ট থাকলো না যে, এতোটা সময় কাটানো ফরয। এখানে কিরআত দ্বারা নামায অর্থ নেয়া হয়েছে। যেমন সূরা বানী ইসরাইল রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি তোমার কিরআত খুব উচ্চ স্বরেও পড়ো না এবং খুব নিম্ন স্বরেও না।” এখানে (আরবি) দ্বারা কিরআতকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)-এর সাথীগণ এ আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া বাধ্যতামূলক নয়। সূরা ফাতিহাকে পড়া যাবে এবং অন্য কোন জায়গা হতেও পড়া চলবে। একটি আয়াত পড়াও যথেষ্ট হবে। আবার এই মাসআলার দৃঢ়তা ঐ হাদীস দ্বারা করেছেন যাতে রয়েছে যে, তাড়াতাড়ি করে নামায আদায়কারীকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “কুরআনের যে অংশ তোমার নিকট সহজ তা দ্বারা নামায পড়।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) এ মাযহাব জমহূরের বিপরীত। জমহূর তাদেরকে এ জবাব দেন যে, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করলো না তার নামায হলো না।”সহীহ মুসলিমে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ নামায, যাতে উম্মুল কুরআন (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা) পাঠ করা হয় না তা অকেজো, তা অকেজো, তা অকেজো ও অসম্পূর্ণ।”ইবনে খুযাইমার (রঃ) সহীহ গ্রন্থে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফূ’রূপে বর্ণিত আছেঃ “ঐ ব্যক্তির নামায হয় না যে নামাযে উম্মুল কুরআন পাঠ করে না।”মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে। এ আয়াতটি, বরং পুরো সূরাটি মাক্কী। এটা মক্কা শরীফে অবতীর্ণ হয়েছে। ঐ সময় জিহাদ ছিল না, বরং মুসলমানরা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ছিলেন। এরপরও গায়েবের এ খবর দেয়া এবং কার্যতঃ ওটা প্রকাশ পাওয়া যে, মুসলমানরা পরবর্তীকালে পুরোপুরিভাবে জিহাদে লিপ্ত হয়েছেন, সুতরাং এটা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নবুওয়াতের একটা বড় ও স্পষ্ট নির্দশন। উপরোক্ত ওযরগুলোর কারণে মুসলমানরা রাত্রির কিয়ামের দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে যায়।হযরত আবূ রাজা’ মুহাম্মাদ (রঃ) হযরত হাসান (রঃ)-কে প্রশ্ন করেনঃ “হে আবূ সাঈদ (রঃ)! যে ব্যক্তি পূর্ণ কুরআনের হাফিয হয়েও তাহাজ্জুদের নামায পড়ে না, শুধু ফরয নামায আদায় করে, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “সে তো কুরআনকে বালিশ বানিয়ে নিয়েছে। তার উপর আল্লাহর অভিশাপ! আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে বলেনঃ সে ঐ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল যে, আমি তাকে শিখিয়ে ছিলাম। আরো বলেনঃ তোমাদেরকে ওটা শিখানো হয়েছে যা তোমরা নিজেরা জানতে না এবং তোমাদের বাপ দাদারাও জানতো না।” তখন আবূ রাজা' (রঃ) তাঁকে আবার বলেনঃ “হে আবূ সাঈদ (রঃ)! আল্লাহ তা’আলা তো বলেছেনঃ কুরআন হতে তোমরা যা সহজভাবে পড়তে পার পড়।” হযরত হাসান (রঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, তা ঠিক বটে। পাঁচটি আয়াত হলেও পড়।” সুতরাং বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, কুরআনের হাফিযের রাত্রের নামাযে কিছু না কিছু কিয়াম করা হযরত ইমাম হাসান বসরী (রঃ)-এর মাযহাবে ওয়াজিব ছিল। একটি হাদীসও এর প্রমাণ দিচ্ছে, যাতে রয়েছে যে, সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে এমন একটি লোক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “এটা হলো ঐ ব্যক্তি যার কারণে শয়তান প্রস্রাব করে থাকে। এর এক ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে এশার ফরয নামাযও পড়ে না। এটাও বলা হয়েছে যে, রাত্রে নফল হিসেবে কিয়াম করে না।সুনানে রয়েছেঃ “হে কুরআন ওয়ালাগণ! তোমরা বিতর পড়তে থাকো।” অন্য এক হাদীসে আছেঃ “যে ব্যক্তি বিতর পড়ে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।” হাসান বসরী (রঃ)-এর উক্তি হতেও বেশী গরীব হলো আবূ বকর ইবনে আবদিল আযীয হাম্বেলীর (রঃ) উক্তি, যিনি বলেন যে, রমযান মাসের কিয়াম ফরয। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।মু’জামে তিবরানীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ “ওটা একশটি আয়াত। (এটা অত্যন্ত গারীব হাদীস। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনঃ আমি শুধু এটা মুজামে তিবরানীতেই পেয়েছি)আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তোমরা নামায কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর। অর্থাৎ তোমরা ফরয নামাযের হিফাজত কর এবং ফরয যাকাত আদায় কর। এ আয়াতটি ঐ গুরুজনদের দলীল যারা বলেন যে, মক্কা শরীফেই যাকাত ফরয হওয়ার হুকুম নাযিল হয়েছে। তবে কি পরিমাণ বের করা হবে, নেসাব কি ইত্যাদির বর্ণনা মদীনা শরীফে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত হাসান (রঃ), হযরত কাতাদাহ (রঃ) প্রমুখ পূর্বযুগীয় মনীষীদের উক্তি এই যে, এই আয়াত পূর্ববর্তী রাত্রির কিয়ামের হুকুম সম্বলিত আয়াতকে মানসূখ বা রহিত করে দিয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে বলেনঃ "দিন-রাত্রে পাচঁ ওয়াক্ত নামায ফরয।” লোকটি প্রশ্ন করেঃ “এ ছাড়া কি অন্য কোন নামায আমার উপর ফরয আছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, তবে তুমি নফল হিসেবে পড়তে পার।”মহান আল্লাহর উক্তিঃ তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করতে থাকো, যার উপর আল্লাহ তোমাদেরকে খুবই উত্তম ও পুরোপুরি বিনিময় প্রদান করবেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্যে এটা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।”(২:২৪৫) আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্যে ভাল কাজ যা কিছু অগ্রীম প্রেরণ করবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর নিকট। ওটা উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর।হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের মধ্যে কে নিজের সম্পদের চেয়ে (নিজের) উত্তরাধিকারীর সম্পদকে বেশী ভালবাসে?” সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজের সম্পদের চেয়ে উত্তরাধিকারীদের সম্পদকে বেশী ভালবাসে।” তিনি বললেনঃ “যা বলছো চিন্তা করে বল।” তাঁরা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা তো এটা ছাড়া অন্য কিছু জানি না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “যে ব্যক্তি যা (আল্লাহর পথে) খরচ করবে তাই শুধু তার নিজের সম্পদ, আর যা সে রেখে যাবে তাই তার উত্তরাধিকারীদের সম্পদ।” (এ হাদীসটি হাফিয আকূল ইয়ালা মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সুনানে নাসাঈতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। অর্থাৎ খুব বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তোমাদের সমস্ত কার্যে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ঐ ব্যক্তির উপর যে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।

نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا

📘 Please check ayah 73:9 for complete tafsir.

رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلًا

📘 মুসনাদে বাযযারে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশরা দারুণ নদুওয়াতে একত্রিত হয়ে পরস্পর বলাবলি করলোঃ এসো, আমরা এই ব্যক্তির (হযরত মুহাম্মাদ সঃ)-এর এমন এক নাম স্থির করি যে, সবারই মুখ দিয়ে এই নামই বের হবে, যাতে বাইরের লোকেরা একই আওয়ায শুনে যায়। তখন কেউ কেউ বললো যে, তার নাম ‘কাহিন' বা গণক রাখা হোক। একথা শুনে অন্যেরা বললো যে, প্রকৃতপক্ষে সে তো ‘কাহিন’ বা গণক নয়। আর একটি প্রস্তাব উঠলো যে, তাহলে এর নাম ‘মাজনুন' বা পাগল রাখা হোক। এর উপরও অন্যেরা আপত্তি উঠালো যে, সে পাগলও নয়। এরপর প্রস্তাব রাখা হলো যে, এর নাম ‘সাহির’ বা যাদুকর রাখা হোক। কিন্তু এ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যাত হলো। কারণ বলা হলো যে, সে ‘সাহির’ বা যাদুকরও নয়। মোটকথা তারা তাঁর এমন কোন খারাপ নাম স্থির করতে পারলো না যাতে সবাই একমত হতে পারে। এভাবেই ঐ মজলিস ভেঙ্গে গেল। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর নিকট আসলেন এবং “হে বস্ত্রাবৃত' বলে তাঁকে সম্বোধন করলেন। (এই বর্ণনার একজন বর্ণনাকারী মুআল্লা ইবনে আবদির রহমানের নিকট হতে যদিও আহলে ইলমের একটি দল রিওয়াইয়াত নিয়ে থাকেন এবং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করে থাকেন, কিন্তু তাঁর রিওয়াইয়াত সমূহের মধ্যে এমন বহু হাদীস রয়েছে যেগুলোর উপর তাঁর অনুসরণ করা যায় না) ১-৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন রাত্রিকালে কাপড় জড়িয়ে শয়ন করা পরিত্যাগ করেন এবং তাহাজ্জুদের নামাযে দাঁড়িয়ে থাকার কাজ অবলম্বন করেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশংকায়, আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা হতে তারা ব্যয় করে।” (৩২:১৬) রাসূলুল্লাহ (সঃ) সারা জীবন এ হুকুম পালন করে গেছেন। তাহাজ্জুদের নামায শুধু তাঁর উপর ফরয ছিল। অর্থাৎ এ নামায তাঁর উম্মতের উপর ওয়াজিব নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “এবং তুমি রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে; এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।” (১৭:৭৯) এই হুকুমের সাথে সাথে পরিমাণও বর্ণনা করে দিলেন যে, অর্ধেক রাত্রি বা কিছু কম-বেশী।(আরবি) বলা হয় শয়নকারী ও বস্ত্রাবৃত ব্যক্তিকে। আবার এ অর্থও করা হয়েছেঃ হে কুরআনকে উত্তম রূপে গ্রহণকারী! তুমি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাযে মগ্ন থাকো। অথবা কিছু কম বেশী করো। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে, যাতে ভালভাবে বুঝতে পারা যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ হুকুম ও বরাবর পালন করে এসেছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরআন কারীম খুবই ধীরে ধীরে ও থেমে থেমে পাঠ করতেন। ফলে খুব দেরীতে সূরা শেষ হতো। ছোট সূরাও যেন বড় হয়ে যেতো। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত আনাস (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কিরআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুব টেনে টেনে পাঠ করতেন।” তারপর তিনি (আরবি) পাঠ করে শুনিয়ে দেন, যাতে তিনি (আরবি) এবং (আরবি) শব্দের উপর মদ করেন অর্থাৎ ওগুলো দীর্ঘ করে পড়েন।ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কিরআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেকটি আয়াতের উপর পূর্ণ ওয়াকফ করতেন বা থামতেন। যেমন (আরবি)পড়ে থামতেন, (আরবি) পড়ে থামতেন (আরবি) এর উপর ওয়াফ করতেন এবং (আরবি) পড়ে থামতেন। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবী দাউদ এবং ‘জামে’ তিরমিযীতেও রয়েছে)মুসনাদে আহমাদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কুরআনের পাঠককে কিয়ামতের দিন বলা হবেঃ ‘পড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে ও স্পষ্টভাবে পড়তে থাকো যেমন দুনিয়ায় পড়তে। তোমার মনযিল ও মরতবা হলো ওটা যেখানে তোমার আখিরী আয়াত শেষ হয়। (এ হাদীসটি সুনানে আবী দাউদ, জামে তিরমিযী ও সুনানে নাসাঈতেও রয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন) আমরা এই তাফসীরের শুরুতে ঐ সব হাদীস আনয়ন করেছি যেগুলো ধীরে ধীরে পাঠ মুস্তাহাব হওয়া এবং ভাল ও মিষ্টি সুরে কুরআন পাঠ করার কথা বলে দেয়। যেমন এ হাদীসটি, যাতে রয়েছেঃ কুরআনকে স্বীয় সুর দ্বারা সৌন্দৰ্য্য মণ্ডিত কর এবং ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে মিষ্টি সুরে কুরআন পাঠ করে না। আর হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ কথা বলাঃ “তাকে হযরত দাউদ (আঃ)-এর বংশধর এর মধুর সুর দান করা হয়েছে এবং হযরত আবূ মূসা (রাঃ)-এর একথা বলাঃ “আমি যদি জানতাম যে, আপনি আমার কুরআন পাঠ শুনছেন তবে আমি আরো উত্তম ও মধুর সুরে পড়তাম।" আর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর এ কথা বলাঃ “বালুকার মত কুরআনকে ছড়িয়ে দিয়ো না এবং কবিতার মত কুরআনকে অভদ্রতার সাথে। পড়ো না, ওর চমৎকারিত্বের প্রতি খেয়াল রেখো এবং অন্তরে তা ক্রিয়াশীল করো। আর সূরা তাড়াতাড়ি শেষ করার পিছনে লেগে পড়ো না।” (এটা ইমাম বাগাভী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) একটি লোক এসে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললোঃ “আমি মুফাসসালের সমস্ত সূরা আজ রাত্রে একই রাকআতে পাঠ করে ফেলেছি।" তার একথা শুনে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাকে বললেনঃ “তা হলে সম্ভবতঃ তুমি কবিতার মত তাড়াতাড়ি করে পাঠ করে থাকবে। ঐ সূরাগুলো আমার বেশ মুখস্থ আছে যেগুলি রাসুলুল্লাহ (সঃ) মিলিয়ে পড়তেন। তারপর তিনি মুফাসসাল সূরাগুলোর মধ্যে বিশিষ্ট সূরার নাম লিখেন যেগুলোর দু’টি করে সূরা মিলিত করে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক এক রাকআতে পাঠ করতেন।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করছি গুরুভার বাণী। অর্থাৎ তা আমল করতেও ভারী হবে এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও বৃহত্তের কারণে অবতীর্ণ হওয়ার সময়েও খুবই কষ্টদায়ক হবে। যেমন হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তার উরু আমার উরুর উপর ছিল। তখন ওহীর বোঝা আমার উপর এমন ভারীবোধ হলো যে, আমার ভয় হলো না জানি হয়তো আমার উরু ভেঙ্গেই যাবে।মুসনাদে আহমাদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় আপনি কিছু অনুভব করেন কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “আমি এমন শব্দ শুনতে পাই যেমন কোন জিঞ্জীরের শব্দ হয়। আমি নিঃশব্দ হয়ে পড়ি। যখনই ওহী অবতীর্ণ হয় তখন তা আমার উপর এমন বোঝা স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় যে, আমার মনে হয় যেন আমার প্রাণই বেরিয়ে পড়বে।” হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার কাছে ওহী কিভাবে আসে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “কখনো কখনো খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও ওহী অবতীর্ণ হওয়ার পর্যায় শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওহী আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো ফেরেশতা মানুষের রূপ ধরে আগমন করে ও ওহী অবতীর্ণ করেন। তিনি কথা বলতে থাকেন এবং আমি তা মুখস্থ করতে থাকি।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি একবার নবী (সঃ)-কে এমন অবস্থায় দেখেছি যে, তার উপর ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তখন শীতকাল ছিল। এতদসত্ত্বেও তাঁর ললাট ঘর্মাক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ঘর্ম টপ টপ করে পড়ছিল।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে)মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন কোন সময় উষ্ট্রীর উপর সওয়ার থাকতেন এবং ঐ অবস্থাতেই তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হতো। তখন উন্ত্রী ওহীর ভারে ঝুঁকে পড়তো। তাফসীরে ইবনে জারীরে এও রয়েছে যে, অতঃপর যে পর্যন্ত ওহী বন্ধ না হতো উষ্ট্ৰী নড়তে পারতো না এবং তার গর্দান উঁচু হতো না। ভাবার্থ এই যে, স্বয়ং ওহীর ভার বহন করা কঠিন ছিল। এবং আহকাম পালন করাও ছিল অনুরূপ কঠিন। হযরত ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি এটাই। হযরত আবদুর রহমান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, দুনিয়াতে যেমন এটা ভারী কাজ, তেমনই আখিরাতেও এর প্রতিদান ও পুরস্কার ভারী হবে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ অবশ্য রাত্রিকালের উত্থান দলনে প্রবলতর এবং বাক্য স্ফুরণে সঠিক। আবিসিনীয় ভাষায় (আরবি) শব্দের অর্থ হলো দাঁড়িয়ে থাকা। সারা রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকলে (আরবি) বলা হয়। তাহাজ্জুদের নামাযের উৎকৃষ্টতা এই যে, এর ফলে অন্তর ও রসনা এক হয়ে যায়। তিলাওয়াতের যে শব্দগুলো মুখ দিয়ে বের হয় তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। দিনের তুলনায় রাত্রির নির্জনতায় অর্থ ও ভাব অন্তরে ভালভাবে গেঁথে যায়। কেননা দিবস হলো কোলাহল ও অর্থোপার্জনের সময়।হযরত আনাস (রাঃ) (আরবি) কে (আরবি) পড়লে জনগণ বলে ওঠেঃ আমরাতো (আরবি) পড়ে (আরবি) থাকি? উত্তরে তিনি বলেনঃ (আরবি) এবং একই অর্থবোধক শব্দ।ইরশাদ হচ্ছেঃ (হে নবী সঃ)! দিবাভাগে তোমার জন্যে রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি শুয়ে-বসে থাকতে পার, বিশ্রাম করতে পার, বেশী বেশী নফল আদায় করতে পার এবং তোমার পার্থিব কাজ-কাম সম্পন্ন করতে পার। অতএব রাত্রিকে তুমি তোমার আখিরাতের কাজের জন্যে নির্দিষ্ট করে নাও। এ হুকুম ঐ সময় ছিল যখন রাত্রির নামায ফরয ছিল। তারপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় বান্দাদের উপর অনুগ্রহ করেন এবং হালকাকরণের জন্যে রাত্রির কিয়ামের সময় হ্রাস করে দেন এবং বলেনঃ তোমরা রাত্রির অল্প সময় কিয়াম কর। এই ফরমানের পর হযরত আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত পাঠ করলেন। তাঁর এ উক্তিটি সঠিকও বটে। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত সাঈদ ইবনে হিশাম (রঃ) তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন এবং মদীনার পথে যাত্রা শুরু করেন। উদ্দেশ্য এই যে, তিনি তাঁর সেখানকার ঘরবাড়ী বিক্রি করে ফেলবেন এবং ওর মূল্য দিয়ে অস্ত্র-শস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করে জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি রোমকদের সাথে লড়াই করতে থাকবেন। অতঃপর হয় রোম বিজিত হবে, না হয় তিনি শাহাদাত বরণ করবেন। মদীনায় পৌঁছে তিনি তাঁর কওমের লোকদের সাথে মিলিত হন। এবং তাঁদের কাছে স্বীয় উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন। তাঁর এই সংকল্পের কথা শুনে তাঁরা বললেনঃ তাহলে শুনুন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবদ্দশায় আপনারই কওমের ছয়জন লোক এটাই সংকল্প করেছিল যে, তারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিবে এবং ঘরবাড়ী ইত্যাদি বেচে দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্যে দাঁড়িয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ খবর পেয়ে তাদেরকে ডেকে বললেনঃ “আমি কি তোমাদের জন্যে উত্তম আদর্শ নই? খবরদার! এ কাজ করো না।” এভাবে তিনি তাদেরকে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। এ হাদীস শুনে হযরত সাঈদ (রাঃ) তাঁর ঐ সংকল্প ত্যাগ করেন এবং সেখানেই তাঁর কওমের লোকদেরকে বললেনঃ “তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলাম। তারপর তিনি সেখান হতে বিদায় নিয়ে স্বস্থানে চলে আসলেন। স্বীয় জামাআতের সাথে মিলিত হয়ে তিনি তাদেরকে বললেনঃ আমি এখান থেকে যাওয়ার পর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গমন করি এবং তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিতর নামায পড়ার পদ্ধতি জিজ্ঞেস করি। তিনি উত্তরে বলেনঃ এ মাসআলাটি হযরত আয়েশা (রাঃ) সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। সুতরাং তুমি সেখানে গিয়ে তাঁকেই জিজ্ঞেস করো। তুমি তাঁর কাছে যা শুনবে তা আমাকেও বলে যেয়ো। আমি তখন হযরত হাকীম ইবনে আফলাহ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং তাকে বললাম আমাকে একটু হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে নিয়ে চলুন। তিনি প্রথমে যেতে অস্বীকার করলেও আমার পীড়াপীড়িতে শেষে যেতে সম্মত হলেন। সুতরাং আমরা উভয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত হাকীম (রাঃ)-এর গলার স্বর শুনেই তাঁকে চিনতে পারলেন এবং বললেন “কে, হাকীম?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যাঁ, আমি হাকীম ইবনে আফলাহ (রাঃ)। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার সাথে ওটা কে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “এটা সাঈদ ইবনে হিশাম (রাঃ)।” তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কোন হিশাম? আমিরের ছেলে হিশাম কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হ্যাঁ, আমিরের ছেলে হিশামই বটে।” এ কথা শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর হযরত আমির (রাঃ)-এর জন্যে রহমতের দু’আ করলেন এবং বললেনঃ “আমির (রাঃ) খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন।” আমি তখন আরয করলামঃ হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চরিত্র কেমন ছিল তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তুমি কি কুরআন পড়নি?” আমি উত্তর দিলাম ও হ্যাঁ, পড়েছি বটে। তিনি তখন বললেনঃ “কুরআনই তার চরিত্র।” আমি তখন তাঁর নিকট হতে বিদায় গ্রহণের অনুমতি চাওয়ার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার মনে পড়লো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) রাত্রির নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করা দরকার। আমার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেনঃ “তুমি কি সূরা মুযযাম্মিল পড়নি?” আমি জবাব দিলামঃ হ্যাঁ, অবশ্যই পড়েছি। তিনি বললেনঃ “তাহলে শুনো। সূরার এই প্রথম ভাগে রাত্রির কিয়াম (দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদের নামায পড়া) ফরয করা হয় এবং এক বছর পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ তাহাজ্জুদের নামায ফরয হিসেবে আদায় করতেন। এমন কি তাঁদের পা ফুলে যেতো। বারো মাস পরে এই সূরার শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং মহান আল্লাহ ভার লাঘব করে দেন। তাহাজ্জুদের নামাযকে তিনি ফরয হিসেবে না রেখে নফল হিসেবে রেখে দেন।” এবার আমি বিদায় গ্রহণের ইচ্ছা করলাম। কিন্তু বিতর নামাযের মাসআলাটি জিজ্ঞেস করার কথা মনে পড়ে গেল। তাই আমি বললামঃ হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিতর নামাযের পদ্ধতিও আমাকে জানিয়ে দিন। তিনি তখন বললেনঃ শুননা, (রাত্রে) আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে মিসওয়াক, অযুর পানি ইত্যাদি ঠিক করে একদিকে রেখে দিতাম। যখনই আল্লাহর ইচ্ছা হতো তিনি চক্ষু খুলতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক করতেন ও অযু করতেন এবং আট রাকআত নামায পড়তেন। মধ্যে তাশাহহুদে মোটেই বসতেন না। আট রাকআত পূর্ণ করার পর তিনি আত্তাহিয়্যাতুতে বসতেন, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার যিকির করতেন, দু'আ করতেন এবং সালাম না ফিরিয়েই উঠে পড়তেন। আর নবম রাকআত পড়ে যিকির ও দুআ করতেন এবং উচ্চ শব্দে সালাম ফিরাতেন। এ শব্দ আমরাও শুনতে পেতাম। তারপর বসে বসেই দুই রাকআত নামায পড়তেন। হে আমার প্রিয় পুত্র! সব মিলিয়ে মোট এগারো রাকআত হলো। অতঃপর যখন তাঁর বয়স বেশী হয় এবং দেহ ভারী হয়ে যায় তখন থেকে তিনি সাত রাকআত বিতর পড়ে সালাম ফিরাতেন এবং পরে বসে বসে দুই রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং হে প্রিয় বৎস! এটা নয় রাকআত হলো। আর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, যখন তিনি কোন নামায পড়তে শুরু করতেন তখন তা চিরস্থায়ীভাবে পড়তে থাকতেন। তবে হ্যাঁ, কোন ব্যবস্থা বা ঘুম অথবা দুঃখ কষ্টের কারণে কিংবা রোগের কারণে রাত্রে ঐ নামায পড়তে না পারলে দিনের বেলায় বারো রাকআত পড়ে নিতেন। আমার জানা নেই যে, তিনি গোটা কুরআন রাত থেকে নিয়ে সকাল পর্যন্ত পড়ে শেষ করেছেন এবং রমযান ছাড়া অন্য কোন পুরো মাসই রোযা রেখেছেন।” অতঃপর আমি উম্মুল মু'মিনিন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট হতে বিদায় নিয়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁর সামনে সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তরের পুনরাবৃত্তি করলাম। তিনি সবটারই সত্যতা স্বীকার করলেন এবং বললেনঃ “আমিও যদি তাঁর কাছে যাতায়াত করতে পারতাম তবে আমি নিজের কানে শুনে আসতাম।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে মাদুর বিছিয়ে রাখতাম যার উপর তিনি তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন। লোকেরা এ খবর জানতে পেরে রাত্রির নামাযেও তাঁর ইকতিদা করার জন্যে এসে পড়ে। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) রাগান্বিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। উম্মতের প্রতি তিনি বড়ই মেহেরবান ছিলেন এবং সাথে সাথে এ ভয়ও করতেন যে, হয়তো এ নামায ফরয হয়ে যাবে, তাই তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ “হে লোক সকল! ঐ সব আমলের উপরই কষ্ট স্বীকার কর যেগুলো পালনের তোমাদের শক্তি রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা পুণ্যদানে অপারগ হবেন না। বরং তোমরাই আমলে অপারগ হয়ে যাবে। ঐ আমলই সর্বাপেক্ষা উত্তম যার উপর চিরস্থায়ীভাবে থাকা হয়। এদিকে কুরআন কারীমে এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং সাহাবীগণ রাত্রির কিয়াম শুরু করে দেন এবং ঘুম যেন না আসে এ জন্যে তারা রশি বেঁধে লটকিতে লাগলেন। আট মাস এই ভাবেই কেটে গেল। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁদের এ চেষ্টা দেখে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করলেন এবং রাত্রির কিয়ামকে এশার ফরয নামাযের দিকে ফিরিয়ে দিলেন। আর রাত্রির কিয়াম ছেড়ে দিলেন। (এ রিওয়াইয়াতটি মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমেও রয়েছে। কিন্তু এর বর্ণনাকারী মূসা ইবনে উবাইদাহ যুবাইদী দুর্বল। আসল হাদীস সূরা মুয্যাম্মিলের নাযিল হওয়ার উল্লেখ ছাড়া সহীহ গ্রন্থেও রয়েছে) এই হাদীসের শব্দাবলীর ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, এটা মাদানী সূরা, অথচ প্রকৃতপক্ষে এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। অনুরূপভাবে এ রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, আর্ট মাস পরে এর শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এই উক্তিটিও দুর্বল। সহীহ ওটাই যা মুসনাদের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক বছর পরে শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরা মুযযাম্মিলের প্রাথমিক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) রমযান শরীফের রাত্রির কিয়ামের মতই কিয়াম করতে শুরু করেন। আর এ সূরার প্রাথমিক ও শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার মাঝে প্রায় এক বছরের ব্যবধান ছিল। তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত আবূ উমামাহ (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। হযরত আবূ আবদির রহমান (রঃ) বলেন যে, প্রাথমিক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবীগণ (রাঃ) এক বছর পর্যন্ত কিয়াম করেন, এমন কি তাদের পা ও পদনালী ফুলে যায়। অতঃপর (আরবি) অবতীর্ণ হয় এবং তাঁরা শান্তি পান। হযরত হাসান বসরী (রঃ) হযরত সুদ্দীরও (রঃ) উক্তি এটাই। মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে এ রিওয়াইয়াতটি হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে ষোল মাসের সময়কালের সাথে বর্ণিত আছে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, সাহাবীগণ (রাঃ) এক বছর বা দু’বছর পর্যন্ত কিয়াম করতে থাকেন। তাঁদের পা ও পদনালী ফুলে যায়। তারপর সূরার শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং তাঁদের ভার লাঘব হয়ে যায়। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) দশ বছরের মেয়াদের কথা বলেন। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রাথমিক আয়াতগুলোর হুকুম অনুযায়ী মুমিনগণ রাত্রির কিয়াম শুরু করেন, কিন্তু তাঁদের খুবই কষ্ট হয়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি দয়া করেন এবং (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন এভাবে তাঁদের প্রতি প্রশস্ততা আনয়ন করেন এবং সংকীর্ণতা দূরীভূত করেন। সুতরাং আল্লাহ তা’আলারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁতে মগ্ন হও। অর্থাৎ দুনিয়ার কাজ-কারবার হতে অবসর লাভ করে প্রশান্তির সাথে খুব বেশী বেশী তার যিকির করতে থাকো, তার দিকে ঝুঁকে পড়ে তাঁর প্রতি মনোনিবেশ কর। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “অতএব যখনই অবসর পাও সাবধান করো।” একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) অর্থাৎ স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং দুনিয়া ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন। এখানে ভাবার্থ হচ্ছেঃ হে নবী (সঃ)! পার্থিব সৃষ্টিকূল হতে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করার একটা সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট করে নাও। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহই হলেন মালিক ও ব্যবস্থাপক। পূর্ব ও পশ্চিম সবই তাঁর অধিকারভুক্ত। তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তুমি যেমন এই আল্লাহরই ইবাদত করছো, তেমনই একমাত্র তার উপরই নির্ভরশীল হয়ে যাও। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ তারই ইবাদত কর এবং তার উপর ভরসা কর।” এই বিষয়টিই নিম্নের আয়াতেও রয়েছেঃ(আরবি) অর্থাৎ “আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।” এই অর্থের আরো বহু আয়াত রয়েছে যে, ইবাদত, আনুগত্য এবং ভরসা করার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ।