slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة السجدة

(As-Sajda) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الم

📘 আলিফ, লাম, মীম;

وَقَالُوا أَإِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۚ بَلْ هُمْ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ كَافِرُونَ

📘 ওরা বলে, ‘আমরা মাটিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও কি আমাদেরকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে?’ [১] আসলে ওরা ওদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে। [১] যখন এক বস্তুর উপর অন্য এক বস্তু প্রভাবশালী হয় এবং পূর্বের সমস্ত চিহ্নকে মিটিয়ে দেয়, তখন তাকে ضلالة (নিশ্চিহ্ন হওয়া) বলা হয়। এখানে (ضَلَلْنَا فِي الأَرْضِ) এর অর্থ হবে, মাটিতে মিশে আমাদের দেহ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও কি---।

۞ قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ

📘 বল, ‘মৃত্যুর ফিরিশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে, যাকে তোমাদের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।[১] অবশেষে তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে আনা হবে।’ [১] অর্থাৎ, তাঁর কাজই এই যে, যখন তোমাদের মৃত্যুর সময় হবে, তখন সে এসে আত্মা হরণ করবে।

وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ

📘 যদি তুমি দেখতে! অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে[১] বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; [২] এখন তুমি আমাদের পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করব। নিশ্চয়ই আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী।’ [৩] [১] অর্থাৎ, নিজেদের কুফরী, শিরক এবং অবাধ্যতা দরুন লজ্জিত হওয়ার কারণে। [২] অর্থাৎ, যা মিথ্যা মনে করতাম, তা দেখলাম এবং যা অস্বীকার করতাম, তা শুনলাম। অথবা তোমার শাস্তির হুমকির সত্যতা দেখলাম এবং পয়গম্বরগণের সত্যতা শুনলাম। কিন্তু সেই সময়কার দেখা ও শোনা কোন কাজে আসবে না। [৩] এখন দৃঢ় বিশ্বাস করলেও লাভ কি? এখন তো আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে, যা ভোগ করতেই হবে।

وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

📘 আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎপথে পরিচালিত করতাম।[১] কিন্তু আমার এ কথা যথার্থ সত্য যে, আমি নিশ্চয়ই মানব ও দানব উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব। [২] [১] অর্থাৎ, পৃথিবীতে; কিন্তু সে হিদায়াত (সৎপথে পরিচালনা) জোরপূর্বক হতো, যাতে পরীক্ষার সুযোগ হতো না। [২] অর্থাৎ, মানুষ ও জিনের মধ্যে যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করার ব্যাপারে আমার কথার সত্যতা প্রমাণ হয়ে গেছে।

فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ ۖ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

📘 সুতরাং (ওদেরকে বলা হবে,) তোমরা শাস্তি আস্বাদন কর। কারণ, আজকের এ সাক্ষাতের কথা তোমরা ভুলে গিয়েছিলে। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেছি।[১] তোমরা যা করতে তার জন্য তোমরা চিরকালের শাস্তি ভোগ করতে থাক। [১] অর্থাৎ, যেমন তোমরা পৃথিবীতে আমাকে ভুলে ছিলে, তেমনি আজ আমি তোমাদের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করব। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কিছু ভুলেন না।

إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ ۩

📘 কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে,[১] যাদেরকে ওর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে[২] এবং তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে[৩] এবং অহংকার করে না। [৪] [১] অর্থাৎ, তা সত্য বলে মানে ও তার দ্বারা উপকৃত হয়।[২] অর্থাৎ আল্লাহর আয়াতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাঁর প্রতাপ ও শাস্তিকে ভয় করে।[৩] অর্থাৎ, প্রতিপালককে ঐ সকল জিনিস থেকে পবিত্র ঘোষণা করে, যা তাঁর সত্তার জন্য শোভনীয় নয় এবং তার সাথে সাথে তাঁর নিয়ামতের উপর তাঁর প্রশংসা বর্ণনা করে থাকে; যার মধ্যে সর্ববৃহৎ ও পূর্ণাঙ্গ নিয়ামত হল ঈমানের প্রতি হিদায়াত। অর্থাৎ তারা সিজদাতে (سُبحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه) (سُبحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِه) ইত্যাদি পড়ে।[৪] অর্থাৎ, আনুগত্য ও মান্য করার পথ অবলম্বন করে; মূর্খ ও কাফেরদের মত অহংকার করে না। কারণ আল্লাহর ইবাদত থেকে অহংকারবশতঃ বিরত থাকা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ) অর্থাৎ, যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু'মিন ৪০:৬০ আয়াত) যার ফলে ঈমানদারগণের অবস্থা তাদের বিপরীত হয়ে থাকে; তাঁরা আল্লাহর সামনে সর্বাবস্থায় নিজেকে নগণ্য, ছোট, মিসকীন ও বিনয়ী প্রকাশ করে। ---- (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)

تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

📘 তারা শয্যা ত্যাগ করে[১] আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে[২] এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। [৩] [১] অর্থাৎ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে, তওবা ও ইস্তিগফার করে, আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা এবং দু'আ ও রোদন করে। [২] অর্থাৎ, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের আশাও রাখে এবং তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির ব্যাপারে ভীত-শঙ্কিতও হয়। শুধু আশা আর আশা রাখে না যে, আমলই ত্যাগ করে বসে। (যেমন যারা আমল করে না এবং যারা নোংরা আমল করে তাদের অভ্যাস।) আর তাঁর শাস্তিকে এমন ভয় করে না যে, আল্লাহর রহমত থেকে একেবারে নিরাশ হয়ে যায়। কারণ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াও কুফরী ও ভ্রষ্টতা। [৩] 'দান করে' বলতে ওয়াজিব স্বাদকা (যাকাত) এবং সাধারণ দান উভয়ই শামিল। ঈমানদারগণ নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী উভয়কেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ[১] নয়ন-প্রীতিকর কি (পুরস্কার) লুকিয়ে রাখা হয়েছে।[২] [১] এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহর রহমতের অধিকারী হতে হলে নেক আমল অপরিহার্য। [২] نفسٌ শব্দটি 'নাকিরাহ' যাতে ব্যাপকতার অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ঐ সকল নিয়ামত যা আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত মু'মিনদের জন্য লুক্কায়িত রেখেছেন, যা দেখে তাঁদের চোখ জুড়িয়ে যাবে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। এর ব্যাখ্যা নবী (সাঃ) হাদীসে কুদসীতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, "আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য ঐ সকল বস্তু প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের কল্পনায়ও তা আসেনি।" (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা সিজদাহ)

أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا ۚ لَا يَسْتَوُونَ

📘 বিশ্বাসী কি সত্যত্যাগীর মতই? [১] ওরা কখনও সমান হতে পারে না। [১] এটা অস্বীকৃতি বাচক জিজ্ঞাসা। অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট বিশ্বাসী মু'মিন ও সত্যত্যাগী কাফের সমান নয়; বরং তাদের উভয়ের মাঝে বিরাট পার্থক্য ও ব্যবধান হবে। মু'মিন আল্লাহর মেহমান হয়ে সম্মানের পাত্র হবে। আর ফাসেক ও কাফের শাস্তির শিকলে বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে জ্বলতে থাকবে। এ মর্মে অন্য স্থানেও বর্ণনা রয়েছে। যেমন সূরা জাসিয়া ৪৫:১২, সূরা স্বাদ ৩৮:২৮, সূরা হাশর ৫৯:২০ আয়াত ইত্যাদি।

أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَىٰ نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 যারা বিশ্বাস করে সৎকাজ করে, তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য জান্নাত হবে তাদের বাসস্থান।

تَنْزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ

📘 বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট হতে এ গ্রন্থ অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।[১] [১] উদ্দেশ্য এই যে, এই কুরআন মিথ্যা কথা, যাদুকর বা গণৎকারের কথা অথবা মনগড়া কল্পনাপ্রসূত কোন গল্প-কাহিনীর গ্রন্থ নয়; বরং তা সৃষ্টি জগতের পালনকর্তার পক্ষ হতে পথপ্রদর্শক গ্রন্থ।

وَأَمَّا الَّذِينَ فَسَقُوا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۖ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا أُعِيدُوا فِيهَا وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ

📘 আর যারা সত্যত্যাগ করেছে, তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম; যখনই ওরা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই ওদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে[১] এবং ওদেরকে বলা হবে,[২] ‘যে অগ্নি-শাস্তিকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে তোমরা তা আস্বাদন কর।’ [১] অর্থাৎ, দোযখের শাস্তির কঠিনতা ও ভয়াবহতা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইবে। তখন দোযখের ফিরিশতাগণ তাদেরকে পুনরায় দোযখের গভীরতায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবেন। [২] এটা ফিরিশতাগণ বলবেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে আওয়াজ আসবে। সে যাই হোক, সেখানে মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার যে ব্যবস্থা আছে, তা অস্পষ্ট নয়।

وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَىٰ دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

📘 গুরু শাস্তির পূর্বে ওদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি[১] আস্বাদন করাব, যাতে ওরা (আমার পথে) ফিরে আসে। [২] [১] العَذَاب الأَدنَى (ছোট, লঘু বা নিকটতম শাস্তি) বলে ইহলৌকিক শাস্তি বা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যাধিকে বুঝানো হয়েছে। অনেকের নিকট এর অর্থ হল, বদর যুদ্ধে কাফেররা হত্যার মাধ্যমে যে কষ্ট পেয়েছিল সেই শাস্তি। অথবা মক্কাবাসীদের উপর যে দুর্ভিক্ষ এসেছিল তা উদ্দেশ্য। অথবা কবরের আযাবকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম শওকানী (রঃ) বলেন, উল্লিখিত সব অর্থই উদ্দেশ্য হতে পারে। [২] পারলৌকিক বৃহত্তম শাস্তির পূর্বে ক্ষুদ্রতম বা লঘু শাস্তি প্রেরণ করার কারণ হল, সম্ভবতঃ তারা কুফর ও শিরক এবং আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করা থেকে বিরত হবে।

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا ۚ إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ

📘 যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ প্রাপ্ত হয় অতঃপর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে?[১] আমি অবশ্যই অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব। [১] অর্থাৎ, আল্লাহর যে আয়াত শ্রবণ করে তার প্রতি ঈমান আনা ও তার অনুসরণ করা ওয়াজেব, সে আয়াত থেকে যে বৈমুখ হয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে? অর্থাৎ সেই সব থেকে বড় যালেম।

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَائِهِ ۖ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ

📘 আমি তো মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ বিষয়ে সন্দেহ করো না।[১] আমি একে[২] বনী ইস্রাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম। [১] বলা হয় যে, এটা মি'রাজের রাত্রে মূসা (আঃ)-এর সাথে নবী (সাঃ)-এর যে সাক্ষাৎ হয়েছিল তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সাক্ষাতে মূসা (আঃ) নামায কম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। [২] 'একে' বলতে তাওরাত বা মূসা (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

📘 ওরা যেহেতু ধৈর্যশীল ছিল তার জন্য আমি ওদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত। ওরা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী। [১] [১] এই আয়াত দ্বারা 'সবর' বা ধৈর্যের ফযীলত পরিষ্ফুটিত হয়। সবরের অর্থ হল, আল্লাহর আদেশ পালন করতে ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে এবং আল্লাহর রসূলদেরকে সত্য মনে করে তাঁদের অনুসরণ করাতে যে কষ্ট আসে তা হাসিমুখে বরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের ধৈর্য ও আল্লাহর আয়াতের উপর দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে আমি তাদেরকে দ্বীনী নেতৃত্ব পদের জন্য মনোনীত করেছিলাম। কিন্তু যখন তারা তার বিপরীত (আল্লাহর কিতাবে) পরিবর্তন ও হেরফের করতে আরম্ভ করল, তখন তাদের এই সম্মান কেড়ে নেওয়া হল। সুতরাং এর পর তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল। অতঃপর না তাদের নেক আমল রইল, আর না রইল তাদের সঠিক বিশ্বাস।

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

📘 ওরা নিজেদের মধ্যে যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, অবশ্যই তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন তার ফায়সালা করে দেবেন।[১] [১] এখানে মতবিরোধ বলতে আহলে কিতাবদের নিজেদের মাঝের মতবিরোধকে বুঝানো হয়েছে। এর মধ্যে মু'মিন ও কাফের, হকপন্থী ও বাতিলপন্থী, তাওহীদবাদী ও অংশীবাদীদের মাঝে পৃথিবীতে যে মতভেদ ছিল ও আছে, তাও আনুষঙ্গিকভাবে এসে যায়। যেহেতু পৃথিবীতে প্রত্যেক দল নিজ যুক্তি-প্রমাণের উপর তুষ্ট এবং নিজ রাস্তার উপর অবিচল থাকে, সেহেতু এই মতভেদসমূহের ফায়সালা আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন করবেন। যার উদ্দেশ্য হল, তিনি হকপন্থীকে জান্নাতে এবং কুফরী ও বাতিলপন্থীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।

أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ ۖ أَفَلَا يَسْمَعُونَ

📘 এ কথা কি তাদেরকে পথনির্দেশ করে না যে, আমি তো এদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি, যাদের বাসভূমিতে এরা বিচরণ করে থাকে,[১] এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি এরা শুনবে না? [১] অর্থাৎ, পূর্ববর্তী উম্মত যারা মিথ্যাজ্ঞান করা ও ঈমান না আনার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এরা কি দেখে না যে, পৃথিবীতে আজ তাদের অস্তিত্বই নেই। অবশ্য তাদের জমি-জায়গাসমূহ আছে, যার তারা ওয়ারেস হয়ে আছে। উদ্দেশ্য মক্কাবাসীদেরকে এই সতর্ক করা যে, যদি তোমরা ঈমান না আনো, তাহলে তোমাদেরও অবস্থা অনুরূপ হবে।

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاءَ إِلَى الْأَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنْفُسُهُمْ ۖ أَفَلَا يُبْصِرُونَ

📘 ওরা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উদ্ভিদশূন্য ভূমির উপর পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে ফসল উদগত করি, যা থেকে ওদের জীবজন্তুসমূহ এবং ওরা নিজেরাও আহার্য গ্রহণ করে।[১] ওরা কি তবুও লক্ষ্য করবে না? [১] পানি থেকে উদ্দেশ্য হল আকাশের পানি, নদী-নালা, ঝরনা ও উপত্যকার পানি। যা আল্লাহ তাআলা অনাবাদ ভূমির দিকে প্রবাহিত করে নিয়ে যান, ফলে তাতে ঘাস ও ফল-ফসল উৎপন্ন হয়; যা মানুষ ভক্ষণ করে এবং তা তাদের পশুখাদ্যও হয়। এখানে কোন নির্দিষ্ট এলাকা বা ভূমি উদ্দেশ্য নয়। বরং তা সাধারণ (অর্থে ব্যবহার হয়েছে)। যাতে সকল অনাবাদ ও অনুর্বর ভূমি এবং মরুভূমি শামিল আছে।

وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا الْفَتْحُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

📘 ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, এ বিচার-ফায়সালা কবে হবে?’[১] [১] উক্ত ফায়সালা বলতে উদ্দেশ্য, আল্লাহর ঐ শাস্তি যা মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-এর নিকট চাইত এবং (বিদ্রূপ করে) বলত, ওহে মুহাম্মাদ! তোমার আল্লাহর সাহায্য তোমার জন্য কখন আসবে; যে বিষয়ে তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ? বর্তমানে আমরা তো দেখছি, তোমার প্রতি ঈমান আনয়নকারিগণ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে!

قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنْفَعُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِيمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ

📘 বল, ‘বিচার-ফায়সালার দিনে অবিশ্বাসীদের বিশ্বাস ওদের কোন কাজে আসবে না, এবং ওদের অবকাশও দেওয়া হবে না।’ [১] [১] يوم الفتح এর অর্থ হল শেষ ফায়সালার দিন, কিয়ামতের দিন। যেদিন না ঈমান গ্রহণ করা হবে, না কোন অবকাশ দেওয়া হবে। এখানে 'ফাতহে মক্কা' (মক্কা বিজয়ে)র দিন উদ্দেশ্য নয়। কারণ সেদিন ক্ষমাপ্রাপ্ত মুক্ত মানুষদের ইসলাম গ্রহণ করে নেওয়া হয়েছিল; যারা গণনায় দুই হাজারের মত ছিল। (ইবনে কাসীর) ক্ষমাপ্রাপ্ত মুক্ত মানুষ হল ঐ সকল মক্কাবাসী, যাদেরকে মহানবী (সাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং এই কথা বলে তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন যে, আজ তোমাদের পূর্বকৃত যুলমের কোন প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। সুতরাং তাদের অধিকাংশই মুসলমান হয়ে গিয়েছিল।

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۚ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا أَتَاهُمْ مِنْ نَذِيرٍ مِنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ

📘 তবে কি ওরা বলে, এ তো তার নিজের রচনা?[১] বরং এ তোমার প্রতিপালক হতে আগত সত্য; যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি।[২] হয়তো ওরা সৎপথে চলবে। [১] এটা ধমক ও তিরস্কার স্বরূপ বলা হয়েছে যে, সৃষ্টি জগতের পালনকর্তার অবতীর্ণকৃত সাহিত্য-অলঙ্কারপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ওরা বলে, তা মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই রচনা করেছে?! [২] এটা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য। এখান হতে বুঝা যায় যে, (যেমন পূর্বে আলোচনা হয়েছে) আরবদের নিকট তিনি প্রথম নবী ছিলেন, অনেকে শুআইব (আঃ)-কেও আরবদের নিকট প্রেরিত নবী বলেছেন। এই মর্মে আল্লাহই ভাল জানেন। এই হিসাবে 'সম্প্রদায়' বলে কুরাইশ সম্প্রদায় ধরা হবে, যাদের নিকট মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পূর্বে কোন নবী আসেননি।

فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانْتَظِرْ إِنَّهُمْ مُنْتَظِرُونَ

📘 অতএব তুমি ওদেরকে উপেক্ষা কর[১] এবং অপেক্ষা কর।[২] নিশ্চয় ওরাও অপেক্ষা করছে।[৩] [১] অর্থাৎ, সেই মুশরিকদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং দাওয়াত ও তবলীগের কাজ আপন গতিতে চালাতে থাক। যে অহী তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। যেমন দ্বিতীয় স্থানে বলা হয়েছে, (اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ) অর্থাৎ, তোমার নিকট তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করা হয়েছে, তুমি তারই অনুসরণ করে চল। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সূরা আন্আম ৬:১০৬ আয়াত) [২] অর্থাৎ, অপেক্ষা কর যে, আল্লাহর ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে এবং তিনি তোমার বিরোধীদের উপর তোমাকে বিজয়ী করবেন। তা নিঃসন্দেহে পূর্ণ হবেই।[৩] অর্থাৎ, এই সকল কাফেররা অপেক্ষায় আছে যে, সম্ভবতঃ পয়গম্বর (সাঃ) নিজেই মুসীবতের শিকার হবেন ও তাঁর দাওয়াত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবী দেখে নিয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সাঃ)-এর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করেছেন এবং তাঁর উপর মুসীবতের অপেক্ষমাণ বিরোধীদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন কিংবা তাদেরকে তাঁর দাস বানিয়ে দিয়েছেন।

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ ۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

📘 আল্লাহ; যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।[১] তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের কোন অভিভাবক অথবা সুপারিশকারী নেই;[২] তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?[৩] [১] এ ব্যাপারে সূরা আ'রাফের ৭:৫৪ নং আয়াতের টীকা দেখুন। এখানে উক্ত বিষয়কে পুনরায় উক্ত করার উদ্দেশ্য এই হতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা ও বিস্ময়কর সৃষ্টির কথা শুনে হয়তো বা তারা কুরআন শ্রবণ করবে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।[২] অর্থাৎ সেখানে এমন কোন বন্ধু হবে না, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারবে ও তোমাদের নিকট থেকে আল্লাহর শাস্তিকে দূর করতে পারবে এবং সেখানে এমন কোন সুপারিশকারীও হবে না, যে তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারবে।[৩] অর্থাৎ, হে গায়রুল্লাহর পূজারী ও আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের উপর ভরসা স্থাপনকারী! তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ

📘 তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন,[১] অতঃপর সমস্ত কিছুই তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে -- যা তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।[২] [১] 'আকাশ হতে' যেখানে আল্লাহর আরশ ও 'লাওহে মাহফূয' আছে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে নির্দেশাবলী অবতীর্ণ করেন; অর্থাৎ বিশ্ব পরিচালনা করেন এবং পৃথিবীতে তাঁর হুকুম বাস্তবায়িত হয়। যেমন জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, চাওয়া-পাওয়া, ধনবত্তা-দরিদ্রতা, যুদ্ধ-সন্ধি, সম্মান-অসম্মান ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা আরশের উপর থেকে তাঁর লিখিত ভাগ্য অনুযায়ী এ সব কিছুর তদবীর ও ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।[২] অর্থাৎ, তাঁর ঐ সকল ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশাবলী তাঁর নিকট একই দিনে ফিরে আসে যা ফিরিশতাগণ নিয়ে অবতীর্ণ হন। তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হতে যে সময় লাগে তা ফিরিশতা ছাড়া অন্যদের জন্য এক হাজার বছর হবে। অথবা এর অর্থ হল, "অতঃপর একদিন সমস্ত কিছুই (বিচারের জন্য) প্রত্যাবর্তিত হবে-- যে দিনের দৈর্ঘ্য হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।" উদ্দেশ্য হল কিয়ামতের দিন; যেদিন মানুষের সকল আমল আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। উক্ত 'দিন' কোন্ দিন তা নির্দিষ্ট করে বলতে ও ব্যাখ্যা করতে মুফাসসিরগণের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাওকানী (রঃ) এই বিষয়ে ১৫/১৬ টি মত উল্লেখ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে নীরব থাকতে পছন্দ করেছেন এবং তার প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আয়সারুত তাফাসীরের লেখক বলেন, এ কথা কুরআন মাজীদের তিন জায়গায় এসেছে এবং তিন জায়গাতেই আলাদা আলাদা দিনের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। সূরা হজ্জের ২২:৪৭ নং আয়াতে 'দিন' বলতে আল্লাহর নিকট যে সময় তা বুঝানো হয়েছে এবং সূরা মাআরিজের ৭০:৪ নং আয়াতে দিনের দৈর্ঘ্য পঞ্চাশ হাজার বছর বলা হয়েছে। তার উদ্দেশ্য কিয়ামত দিবস। আর এখানে 'দিন' বলতে উদ্দেশ্য হল, দুনিয়ার শেষ দিন; যখন দুনিয়ার সকল ব্যাপার নিঃশেষ হয়ে আল্লাহর নিকট ফিরে যাবে। (অল্লাহু আ'লাম)

ذَٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

📘 তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ ۖ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ

📘 যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন[১] এবং মাটি হতে মানব-সৃষ্টির সূচনা করেছেন।[২] [১] অর্থাৎ, যা কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা যেহেতু আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছা অনুযায়ী সেহেতু প্রতিটি বস্তুতেই এক বিশেষ সৌন্দর্য ও উৎকৃষ্টতা আছে। বলা বাহুল্য, তাঁর সৃষ্টির সকল জিনিসই সুন্দর। অনেকে أَحسَنَ শব্দটিকে أَتقَنَ ও أحكَمَ এর অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ তিনি যাবতীয় বস্তুকে সুনিপুণ ও মজবুত করে সৃষ্টি করেছেন। অনেকে তাকে أَلهَمَ এর অর্থে মনে করেছেন। অর্থাৎ যাবতীয় সৃষ্টিকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ইলহাম (জ্ঞানসঞ্চার) করেছেন। [২] অর্থাৎ, সর্বপ্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যাঁর নিকট থেকে মানব জন্মের সূচনা হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে তাঁর বাম পার্শেবর অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন; তা হাদীস দ্বারা বুঝা যায়।

ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ

📘 অতঃপর তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে[১] তার বংশ উৎপন্ন করেছেন। [১] অর্থাৎ বীর্য হতে। উদ্দেশ্য হল যে, মানুষের জোড়া তৈরী করার পর তার বংশ বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ এই নিয়ম নির্ধারণ করেছেন যে, পুরুষ ও নারী উভয়ে বিবাহ করবে, অতঃপর তাদের মিলনের ফলে পুরুষের বীর্যের যে ফোঁটা নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করবে তার দ্বারা তিনি সুন্দর অবয়বে মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবেন।

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُوحِهِ ۖ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ

📘 পরে তিনি ওকে সুঠাম করেছেন এবং তাঁর নিকট হতে ওতে জীবন সঞ্চার করেছেন[১] এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন চোখ, কান ও অন্তর।[২] তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[৩] [১] অর্থাৎ, মায়ের পেটে ভ্রূণকে বড় করে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরী করে, অতঃপর তাতে রূহ দান করেন। [২] অর্থাৎ, এই সকল কিছু তিনি তার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাঁর সৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ লাভ করে এবং তোমরা সকল শ্রাব্য শব্দ শ্রবণ করতে পার, দৃশ্য বস্তু দর্শন করতে পার এবং বোধ্য বস্তু বোধ করতে পার। [৩] অর্থাৎ, এত অনুগ্রহ দানের পরেও মানুষ এমন অকৃতজ্ঞ যে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা অতি অল্প মাত্রায় স্বীকার করে অথবা কৃতজ্ঞ ব্যক্তি অতি নগণ্য।