🕋 تفسير سورة الدخان
(Ad-Dukhan) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم
📘 হা-মীম,
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ
📘 অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধূমাচ্ছন্ন হবে। [১]
[১] এতে কাফেরদেরকে ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ঠিক আছে (হে নবী) তুমি ঐ দিনের অপেক্ষা কর, যখন আকাশে ধোঁয়ার আবির্ভাব ঘটবে। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, মক্কাবাসীদের বিদ্বেষমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে নবী করীম (সাঃ) তাদের উপর অনাবৃষ্টির বদ্দুআ করলেন। যার ফলে তাদের উপর অনাবৃষ্টির শাস্তি নেমে এল। এমন কি খাদ্যাভাবে তারা হাড়, চামড়া এবং মৃত ইত্যাদি খেতে বাধ্য হয়ে পড়ল। আকাশের দিকে তাকালে কঠিন ক্ষুধা ও দুর্বলতার কারণে তারা কেবল ধোঁয়া দেখত। পরিশেষে অতিষ্ঠ হয়ে তারা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আযাব দূরীভূত হলে ঈমান আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এই অবস্থা দূর হয়ে গেলে তারা পুনরায় কুফরী ও অবাধ্যতায় ফিরে আসে। তাই তো বদর যুদ্ধে তাদেরকে আবার কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়।
(বুখারীঃ তাফসীর অধ্যায়)
কেউ কেউ বলেন, কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার দশটি বড় বড় নিদর্শনাবলীর একটি নিদর্শন ধোঁয়াও। চল্লিশ দিন যাবৎ এ ধোঁয়া বিদ্যমান থেকে কাফেরদের শ্বাসরোধ করবে। আর মু'মিনদের অবস্থা সর্দি লাগার মত হবে। আয়াতে এই ধোঁয়ার কথাই বলা হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এই নিদর্শন কিয়ামতের নিকটতম পূর্ব সময়ে প্রকাশ হবে। আর প্রথম ব্যাখার ভিত্তিতে এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, উভয় ব্যাখ্যাই স্ব-স্ব স্থানে সঠিক। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে, যা সঠিক সূত্রে প্রমাণিত। এ দিকে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের যে তালিকা বহু সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তাতেও এই ধোঁয়ার কথা উল্লেখ আছে। কাজেই ওটাও এর পরিপন্থী নয়, বরং তখনও তার আবির্ভাব ঘটবে।
يَغْشَى النَّاسَ ۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌ
📘 এবং মানবজাতিকে তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এ হবে মর্মান্তিক শাস্তি।
رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
📘 তখন ওরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর হতে শাস্তি দূর কর, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করব।’ [১]
[১] প্রথম ব্যাখ্যা অনুপাতে এ কথা মক্কার কাফেররা বলেছে। আর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুপাতে এ কথা কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ের কাফেররা বলবে।
أَنَّىٰ لَهُمُ الذِّكْرَىٰ وَقَدْ جَاءَهُمْ رَسُولٌ مُبِينٌ
📘 ওরা উপদেশ গ্রহণ করবে কি করে? ওদের নিকট তো স্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা এক রসূল এসেছিল।
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوا مُعَلَّمٌ مَجْنُونٌ
📘 অতঃপর ওরা তাকে অমান্য করে বলেছিল, ‘(সে তো) শিক্ষণপ্রাপ্ত একজন পাগল।’
إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيلًا ۚ إِنَّكُمْ عَائِدُونَ
📘 আমি তোমাদের শাস্তি কিছু কালের জন্য দূর করলে, তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় আবার ফিরে যাবে।
يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرَىٰ إِنَّا مُنْتَقِمُونَ
📘 যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব[১] (সেদিন) আমি অবশ্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করব।
[১] এখানে পাকড়াও বলতে বদর যুদ্ধের দিন পাকড়াও করার কথা বলা হয়েছে। সেদিন ৭০ জন কাফের মারা গিয়েছিল এবং ৭০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুপাতে কঠোরভাবে এই পাকড়াও কিয়ামতের দিন করা হবে। ইমাম শাওকানী বলেন, এখানে সেই পাকড়াও এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা বদর যুদ্ধে হয়েছিল। কেননা, কুরাইশ প্রসঙ্গের আলোচনাতেই এর উল্লেখ আছে। যদিও কিয়ামতের দিনেও মহান আল্লাহ কঠোরভাবে পাকড়াও করবেন। তবে সে পাকড়াও এত ব্যাপক হবে যে, তাতে সকল শ্রেণীর অবাধ্য শামিল থাকবে।
۞ وَلَقَدْ فَتَنَّا قَبْلَهُمْ قَوْمَ فِرْعَوْنَ وَجَاءَهُمْ رَسُولٌ كَرِيمٌ
📘 এদের পূর্বে আমি তো ফিরআউন সম্প্রদায়কেও পরীক্ষা করেছিলাম[১] এবং ওদের নিকট এক মহান রসূল (মূসা) এসেছিল।
[১] পরীক্ষা করার অর্থ হল, আমি তাদেরকে পার্থিব সুখ-শান্তি, এবং স্বাচ্ছন্দ্য দানে ধন্য করেছিলাম এবং আমার এক সম্মানিত নবীকে তাদের প্রতি প্রেরণ করলাম। কিন্তু তারা না তাদের প্রতিপালকের নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল, আর না নবীর উপর ঈমান আনল।
أَنْ أَدُّوا إِلَيَّ عِبَادَ اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
📘 (সে বলল,) আল্লাহর দাসদের (বনী ইস্রাঈলদের)কে আমার নিকট ফিরিয়ে দাও।[১] নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রসূল। [২]
[১] عِبَادَ اللهِ থেকে এখানে মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায় বানী-ইস্রাঈলকে বুঝানো হয়েছে; যাদেরকে ফিরআউন দাস বানিয়ে রেখেছিল। মূসা (আঃ) নিজ জাতির স্বাধীনতা দাবী করল।
[২] আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর ব্যাপারে আমি বিশ্বস্ত।
وَأَنْ لَا تَعْلُوا عَلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي آتِيكُمْ بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ
📘 এবং তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে উদ্ধত হয়ো না,[১] আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করছি। [২]
[১] অর্থাৎ, তাঁর রসূলের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে আল্লাহর সামনে তোমরা ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতা প্রকাশ করো না।
[২] এটা হল পূর্বোক্ত কথার কারণ। অর্থাৎ, আল্লাহর বিরুদ্ধে উদ্ধত হয়ো না। কারণ আমি এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি, যাকে অস্বীকার করার কোনই অবকাশ নেই।
وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ
📘 সুস্পষ্ট গ্রন্থের শপথ!
وَإِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ أَنْ تَرْجُمُونِ
📘 তোমরা যাতে আমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা না করতে পার, তার জন্য আমি আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [১]
[১] এই দাওয়াত ও তবলীগের উত্তরে ফিরআউন মূসা (আঃ)-কে হত্যা করার হুমকি দেয়। তাই তিনি নিজ প্রতিপালকের কাছে আশ্রয় কামনা করেন।
وَإِنْ لَمْ تُؤْمِنُوا لِي فَاعْتَزِلُونِ
📘 যদি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না কর, তবে তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও। [১]
[১] অর্থাৎ, যদি আমার প্রতি ঈমান না আনো, তো ঠিক আছে আনতে হবে না, তবে আমাকে হত্যা করার অথবা কোন কষ্ট দেওয়ার প্রচেষ্টা করো না।
فَدَعَا رَبَّهُ أَنَّ هَٰؤُلَاءِ قَوْمٌ مُجْرِمُونَ
📘 অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট নিবেদন করল, নিশ্চয় ওরা এক অপরাধী সম্প্রদায়।[১]
[১] অর্থাৎ, যখন তিনি দেখলেন যে, দাওয়াতের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ছে না, বরং তাদের কুফরী ও ধৃষ্টতা আরো বেড়ে যাচ্ছে, তখন তিনি আল্লাহর দরবারে তাদের অবস্থা জানিয়ে দু'আ করলেন।
فَأَسْرِ بِعِبَادِي لَيْلًا إِنَّكُمْ مُتَّبَعُونَ
📘 সুতরাং (আমি বললাম,) তুমি আমার দাসদেরকে নিয়ে রাতারাতি বের হয়ে পড়, তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে। [১]
[১] আল্লাহ তাঁর দু'আ কবুল করলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, বানী-ইস্রাঈলদেরকে নিয়ে রাতারাতি এখান থেকে বেরিয়ে পড়। আর হ্যাঁ, ভয় পেয়ো না, ওরা তোমাদের পিছে ধাওয়া করবে।
وَاتْرُكِ الْبَحْرَ رَهْوًا ۖ إِنَّهُمْ جُنْدٌ مُغْرَقُونَ
📘 সমুদ্রকে শান্ত থাকতে দাও,[১] ওরা এমন এক বাহিনী যা ডুবে মরবে।
[১] رَهْوًا এর অর্থ স্থির, শান্ত অথবা শুষ্ক। অর্থাৎ, তোমার লাঠি মারলে সমুদ্র অলৌকিকভাবে স্থির বা শুকনো হয়ে যাবে এবং তাতে পথের সৃষ্টি হবে। অতঃপর তোমরা সমুদ্র পার হয়ে যাওয়ার পর তাকে ঐ অবস্থাতেই ছেড়ে দেবে, যাতে ফিরআউন ও তার সৈন্যরা সমুদ্র পার হওয়ার জন্য তাতে প্রবেশ করে এবং আমি তাদেরকে ওখানেই ডুবিয়ে দিই। আর হলও তাই; যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। (সূরা ক্বাস্বাস ২৮:৪০ নং আয়াত দ্রঃ)
كَمْ تَرَكُوا مِنْ جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 ওরা পশ্চাতে রেখে গিয়েছিল কত বাগান ও ঝরনা, [১]
[১] كَمْ 'খাবরিয়্যাহ' (খবরসূচক) যা আধিক্য বুঝাতে ব্যবহার হয়। নীল-নদের উভয় পাশের্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে বাগান, ক্ষেত এবং উঁচু উঁচু অট্টালিকা ও প্রতিপত্তির বহু নিদর্শন ছিল। সব কিছুই এই দুনিয়াতেই থেকে গেল এবং শিক্ষা ও উপদেশ স্বরূপ কেবল ফিরআউন ও তার জাতির নাম রয়ে গেল।
وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ
📘 কত শস্যক্ষেত ও সুরম্য প্রাসাদ,
وَنَعْمَةٍ كَانُوا فِيهَا فَاكِهِينَ
📘 কত বিলাস-সামগ্রী, যাতে ওরা আনন্দিত ছিল!
كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ
📘 এরূপই ঘটেছিল[১] এবং আমি এ সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকারী করলাম ভিন্ন সম্প্রদায়কে। [২]
[১] كذلك অর্থাৎ, এ ব্যাপারটা ঐভাবেই ঘটেছে, যেভাবে বর্ণনা করা হল।
[২] কারো কারো নিকট এ থেকে লক্ষ্য হল বানী-ইস্রাঈল। তবে কারো কারো নিকট বানী-ইস্রাঈলের পুনরায় মিশর ফিরে আসার কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়। অতএব মিশর রাজ্যের উত্তরাধিকারী অন্য কোন জাতি হয়ে থাকবে, বানী-ইস্রাঈল নয়।
فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ
📘 আকাশ ও পৃথিবী কেউই ওদের জন্যে অশ্রুপাত করেনি[১] এবং ওদেরকে অবকাশও দেওয়া হয়নি।
[১] অর্থাৎ, এই ফিরআউনীদের কোন নেক আমলই ছিল না যে, তা আকাশে চড়ত এবং তার ধারাবাহিকতা ছিন্ন হওয়ার ফলে আকাশ কাঁদত। আর না তারা পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদত করেছে যে, তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে পৃথিবী কাঁদত। অর্থাৎ, তাদের ধ্বংসের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে কাঁদার কেউ ছিল না।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ
📘 নিশ্চয় আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় (আশিসপূত শবেকদর) রাতে;[১] নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। [২]
[১] (لَيْلَةٌ مُبَارَكَةٌ) বরকতময় বা আশিসপূত রাত বলতে (لَيْلَةُ الْقَدْرِ) কদরের রাত (শবেক্বদরকে) বুঝানো হয়েছে। যেমন, অন্যত্র পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, {اِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ} অর্থাৎ, আমি এ কুরআন শবেক্বদরে (মহিয়সী রাতে) অবতীর্ণ করেছি।
(সূরা কদর)
আর এই শবেক্বদর রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোন একটি রাত; যেমন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হয় রমযান মাসে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, {شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ} অর্থাৎ, রমযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।
(সূরা বাক্বারাহ ২:১৮৫)
এই আয়াতে কদরের এই রাতকে বরকতময় রাত গণ্য করা হয়েছে। আর এই বরকতময় হওয়াতে সন্দেহই বা কি? প্রথমতঃ এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এ রাতে বহু ফিরিশতা সহ জিবরীল আমীনও অবতরণ করেন। তৃতীয়তঃ সারা বছরে সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলীর ফায়সালা করা হয়। (যে কথা পরে আসছে।) চতুর্থতঃ এই রাতের ইবাদত হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) এর ইবাদতের থেকেও উত্তম। শবেকদর বা বরকতময় রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হল, এই রাত থেকে নবী (সাঃ)-এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয়। অর্থাৎ, সর্বপ্রথম এই রাতেই তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অথবা অর্থ হল, এই রাতে 'লাওহে মাহফুয' থেকে কুরআনকে 'বায়তুল ইয্যাহ'তে অবতীর্ণ করা হয়, যা নিকটতম আসমানে অবস্থিত। অতঃপর সেখান থেকে প্রয়োজন ও ঘটনাঘটনের চাহিদা অনুযায়ী ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে নবী করীম (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়। কেউ কেউ لَيلَة مُبارَكَة 'বরকতময় রাত' বলতে শা'বান মাসের ১৫ তারীখের রাত (শবেবরাত)-কে বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। যখন কুরআনের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা এ কথা সুসাব্যস্ত যে, কুরআন শবেক্বদরে অবতীর্ণ হয়েছে, তখন এ থেকে শবেবরাত অর্থ নেওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। তাছাড়া শবেবরাত (শা'বান মাসের ১৫ তারীখের রাত) এর ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা এসেছে, যাতে এ রাতের মাহাত্ম্য ও ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে অথবা যাতে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলা হয়েছে, সে সমস্ত বর্ণনাগুলো সনদের দিক দিয়ে জাল অথবা দুর্বল। অতএব সে (বর্ণনা)গুলো কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনার মোকাবেলা কিভাবে করতে পারে?[২] অর্থাৎ, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে শরয়ী উপকার-অপকার সম্পর্কে অবহিত ও সতর্ক করা, যাতে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে যায়।
وَلَقَدْ نَجَّيْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنَ الْعَذَابِ الْمُهِينِ
📘 নিশ্চয় আমি উদ্ধার করেছিলাম বনী-ইস্রাঈলকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হতে,
مِنْ فِرْعَوْنَ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَالِيًا مِنَ الْمُسْرِفِينَ
📘 (উদ্ধার করেছিলাম) ফিরআউন হতে; নিশ্চয় সে ছিল সীমালংঘনকারীদের মধ্যে উদ্ধত।
وَلَقَدِ اخْتَرْنَاهُمْ عَلَىٰ عِلْمٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
📘 আমি জেনে-শুনেই ওদেরকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম, [১]
[১] বিশ্ব বলতে বানী-ইস্রাঈলের যুগের বিশ্বকে বুঝানো হয়েছে। সাধারণভাবে সর্ব যুগের বিশ্ব নয়। কারণ, কুরআনে উম্মতে মুহাম্মাদকে كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ (সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি) উপাধি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বানী-ইস্রাঈলকে তাদের যুগের বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। তাদেরকে এই শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য কি কারণে দেওয়া হয়েছিল, তা কেবল আল্লাহই জানেন।
وَآتَيْنَاهُمْ مِنَ الْآيَاتِ مَا فِيهِ بَلَاءٌ مُبِينٌ
📘 এবং ওদেরকে দিয়েছিলাম নিদর্শনাবলী; যাতে ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা। [১]
[১] নিদর্শনাবলী বলতে, সেই মু'জিযাসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা মূসা (আঃ)-কে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোতে পরীক্ষার দিক এই ছিল যে, মহান আল্লাহ দেখতে চেয়েছিলেন, তারা কিভাবে আমল করে? অথবা নিদর্শনাবলী বলতে সেই সব অনুগ্রহকে বুঝানো হয়েছে, যা মহান আল্লাহ তাদের প্রতি করেছিলেন। যেমন, ফিরআউনীদেরকে ডুবিয়ে মেরে তাদেরকে রক্ষা করা, তাদের জন্য সমুদ্র চিরে পথ বানিয়ে দেওয়া, মেঘ দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করা, মান্ন ও সালওয়া অবতরণ করা ইত্যাদি। এতে পরীক্ষা এই ছিল যে, এই জাতি এইসব অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করছে, নাকি তার অকৃতজ্ঞতা করে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার রাস্তা অবলম্বন করছে --তা দেখা।
إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَيَقُولُونَ
📘 নিশ্চয় ওরা বলে থাকে, [১]
[১] এ ইঙ্গিত মক্কার কাফেরদের প্রতি। কারণ, আলোচনার প্রসঙ্গ তাদের সাথেই সম্পৃক্ত। মধ্যভাগে ফিরআউনের ঘটনা তাদেরকে এই কথার উপর সতর্ক করার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফিরআউনও তাদের মত কুফরীতে অটল ছিল। তাদের দেখা উচিত, তার কি পরিণাম হয়েছে। যদি তারাও কুফরী ও শিরকের উপর অটল থাকে, তবে তাদেরও পরিণাম ফিরআউন ও তার অনুসারীদের থেকে ভিন্ন হবে না।
إِنْ هِيَ إِلَّا مَوْتَتُنَا الْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِينَ
📘 ‘আমাদের প্রথম মৃত্যুই একমাত্র মৃত্যু এবং আমরা আর পুনরুত্থিত হবো না। [১]
[১] অর্থাৎ, পার্থিব এই জীবনই শেষ জীবন। এর পর পুনরায় জীবিত হওয়া এবং হিসাব-নিকাশ হওয়া সম্ভবই নয়।
فَأْتُوا بِآبَائِنَا إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
📘 অতএব তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে উপস্থিত কর।’ [১]
[১] এ কথা নবী (সাঃ) ও মুসলিমদেরকে কাফেরদের পক্ষ হতে বলা হচ্ছে যে, যদি তোমাদের এই বিশ্বাস বাস্তবেই সঠিক হয় যে, পুনরায় জীবিত হতে হবে, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে জীবিত করে দেখিয়ে দাও। এটা ছিল তাদের অমূলক তর্ক ও অসার কথাবার্তা। কেননা, পুনরায় জীবিত হওয়ার আকীদা ও বিশ্বাস হল কিয়ামতের সাথে সম্পৃক্ত। কিয়ামত ঘটার পূর্বেই দুনিয়াতে জীবিত হওয়া বা করার ব্যাপার নয়।
أَهُمْ خَيْرٌ أَمْ قَوْمُ تُبَّعٍ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ أَهْلَكْنَاهُمْ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ
📘 ওরা কি শ্রেষ্ঠ, না তুব্বা’ সম্প্রদায় ও তাদের পূর্ববর্তীরা; আমি ওদেরকে ধ্বংস করেছিলাম, নিশ্চয় ওরা ছিল অপরাধী। [১]
[১] অর্থাৎ, মক্কার এই কাফেররা তুববা' এবং তাদের পূর্বের সম্প্রদায় আ'দ ও সামুদ ইত্যাদিদের থেকেও বেশী শ্রেষ্ঠ নাকি? যখন আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে এদের থেকেও বেশী শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও ধ্বংস করে দিয়েছি, তখন এরা আবার কি এমন মর্যাদা রাখে? তুব্বা' বলতে সাবা' সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। সাবা'য় হিময়ার নামক এক গোত্র ছিল। এরা তাদের বাদশাহকে তুব্বা' বলত। যেমন, রোমক রাজাদেরকে কায়সার, পারস্যের রাজাদেরকে কিসরা, মিশরের শাসকদেরকে ফিরআউন এবং হাবশার রাজাদেরকে নাজাশী বলা হত। ঐতিহাসিকগণ এ ব্যাপারে একমত যে, তুব্বা'দের মধ্যে কোন কোন তুব্বা' বড় বিজয়-আধিপত্য অর্জন করে। কোন কোন ঐতিহাসিক তো এতদূর পর্যন্ত বলেছেন যে, তারা দেশসমূহ জয় করতে করতে সমরকন্দ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এইভাবে আরো কয়েকজন প্রতাপশালী বাদশাহ এই জাতির মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে এবং তারা তাদের যুগের এক বৃহত্তম সম্প্রদায় ছিল; যারা শক্তি-ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিক দিয়ে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। কিন্তু যখন এ জাতিও নবীদেরকে মিথ্যাজ্ঞান করল, তখন তাদেরকেও ধ্বংস করে শেষ করে দেওয়া হল।
(বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্য, সূরা সাবা'র এ ব্যাপারে আলোচনার আয়াতসমূহ)
হাদীসে এক তুব্বা'র ব্যাপারে এসেছে যে, সে মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। তাকে গালিগালাজ করো না।
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮
/
১৪৫, সহীহুল জা'মে ১৩১৯নং
) তবে তাদের অধিকাংশরাই ছিল অবাধ্য; যার ফলে তাদের ভাগ্যে নেমে এসেছিল ধ্বংস।
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ
📘 আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং ওদের মধ্যে কোন কিছুই খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি; [১]
[১] এই বিষয়টাই ইতিপূর্বে সূরা স্বাদ-এর ৩৮:২৭ নং, সূরা মু'মিনূন ২৩:১১৫-১১৬ নং এবং সূরা হিজর ১৫:৮৫ নং ইত্যাদি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
📘 আমি এ দুটিকে যথার্থরূপেই সৃষ্টি করেছি; [১] কিন্তু ওদের অধিকাংশই তা জানে না। [২]
[১] যথাযথ বা যথার্থ উদ্দেশ্য এটাই যে, মানুষকে পরীক্ষা করা হবে এবং সৎলোকদেরকে তাদের সৎকর্মের প্রতিদান এবং অসৎ লোকদেরকে তাদের অসৎ কর্মের শাস্তি দেওয়া হবে।
[২] অর্থাৎ, এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে তারা উদাসীন ও বেখবর। যার কারণে আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার ব্যাপারে বেপরোয়া এবং পার্থিব সুখ-সামগ্রীর খোঁজেই সদা ব্যস্ত।
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
📘 এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। [১]
[১] يُفْرَقُ، يُفَصَلُ وَيُبَيَّنُ ফায়সালা করা হয় এবং এ কাজকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ফিরিশতাকে সোপর্দ করে দেওয়া হয়। حَكِيْمٍ হিকমতে পরিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রতিটি কাজই হিকমতে পরিপূর্ণ হয়। অথবা অর্থ, مُحْكَمٍ (মজবুত, পাকাপোক্ত) যাতে কোন পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। সাহাবা ও তাবেঈন থেকে এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে, এই রাতে আগামী বছরের জীবন-মরণ ও জীবিকার উপায়-উপকরণের ফায়সালা লাওহে মাহফূয থেকে অবতীর্ণ করে ফিরিশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়।
(ইবনে কাসীর)
إِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ مِيقَاتُهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 সকলের জন্য ওদের বিচার দিন নির্ধারিত রয়েছে। [১]
[১] এটাই হল সেই আসল উদ্দেশ্য, যার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকেও।
يَوْمَ لَا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ
📘 সেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং ওরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। [১]
[১] যেমন অন্যত্র বলেছেন, ﴿فَإِذَ نُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَلآ أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ﴾ অর্থাৎ, যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবরও নিবে না।
(সূরা মু'মিনূন ২৩:১০১)
তিনি আরো বলেছেন, ﴿وَلاَ يُسْئَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا﴾ অর্থাৎ, সুহূদ সৃহূদের খবর নিবে না।
(সূরা মাআরিজ ৭০:১০ আয়াত)
إِلَّا مَنْ رَحِمَ اللَّهُ ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
📘 তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন, তার কথা স্বতন্ত্র। নিশ্চয়, আল্লাহ পরাক্রমশালী, দয়াময়।
إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ
📘 নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে
طَعَامُ الْأَثِيمِ
📘 পাপীর খাদ্য;
كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ
📘 গলিত তামার মত[১] তা পেটের ভিতর ফুটতে থাকবে,
[১] مُهْلٌ গলিত তামা, আগুনে গলিত জিনিস। অথবা তৈলকিট্ট; যা তেলপাত্রের তলে ঘোলাটে মাটির মত পড়ে থাকে।
كَغَلْيِ الْحَمِيمِ
📘 গরম পানি ফুটার মত। [১]
[১] সেই যাক্কুম খাদ্য ফুটন্ত পানির মত পেটে ফুটতে থাকবে।
خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَاءِ الْجَحِيمِ
📘 (আমি বলব,) ওকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। [১]
[১] এ কথা জাহান্নামে নিযুক্ত ফিরিশতাকে বলা হবে। سواء অর্থ মধ্যস্থলে।
ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ
📘 অতঃপর ওর মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও--
ذُقْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ
📘 (এবং বল,) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত। [১]
[১] অর্থাৎ, দুনিয়াতে তুমি নিজেকে বড়ই ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী ভেবে ঘোরাফেরা করতে এবং ঈমানদারদেরকে তুচ্ছজ্ঞান করতে।
أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ
📘 আমার আদেশক্রমে, [১] আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি।
[১] অর্থাৎ, সমস্ত ফায়সালা আমার নির্দেশ, অনুমতি এবং আমার নির্ধারিত ভাগ্য ও ইচ্ছা অনুসারে হয়।
إِنَّ هَٰذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ
📘 এটা তো সেই (শাস্তি) যার সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করতে।
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ
📘 নিশ্চয় সাবধানীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে--
فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 বাগানসমূহে ও ঝরনারাজিতে,
يَلْبَسُونَ مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ
📘 ওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। [১]
[১] কাফের ও ফাসেক লোকদের মোকাবেলায় ঈমানদার ও আল্লাহভীরুদের মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। যাঁরা তাদের নিজেদেরকে কুফরী ও পাপাচার থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। أمِين এমন স্থানকে বলা হয়, যেখানে সর্বপ্রকার ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকা যায়।
كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ
📘 এরূপই ঘটবে ওদের;[১] আর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। [২]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহভীরুদের সাথে অবশ্যই এই ধরনের আচরণ করা হবে।
[২] حُوْرٌ হল حَوْرَآءُ এর বহুবচন। এর উৎপত্তি حَوَرٌ থেকে। যার অর্থ, চোখের সাদা অংশের অত্যধিক সাদা এবং কালো অংশের অত্যধিক কালো হওয়া। حَوْرَآءُ (হুর) এই জন্য বলা হয় যে, দৃষ্টি তাদের রূপ ও সৌন্দর্যকে দেখে হয়রান (মুগ্ধ) হয়ে যাবে। عَيْنٌ হল, عَيْنَآءُ এর বহুবচন। আয়তলোচনঃ প্রশস্ত বা ডাগর চোখ; যেমন হয় হরিণের চোখ। পূর্বেই আলোচনা হয়েছে যে, প্রত্যেক জান্নাতী কমসে কম দু'টি হুর অবশ্যই পাবে। যারা রূপ ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে যেন চাঁদ ও সূর্যের মত উজ্জ্বল হবে। অবশ্য তিরমিযীর একটি সহীহ বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক শহীদ বিশেষ করে ৭২টি করে হুর পাবেন।
(জিহাদের ফযীলতের পরিচ্ছেদসমূহ)
يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ
📘 সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। [১]
[১] آمِنِيْنَ (নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে) এর অর্থ হল, না তা শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে, আর না তা খেয়ে কোন রোগ ইত্যাদি হওয়ার ভয় থাকবে। অথবা না মৃত্যু, ক্লান্তি এবং শয়তানের কোন ভয় থাকবে।
لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَىٰ ۖ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
📘 (ইহকালে) প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।[১] আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন।
[১] অর্থাৎ, দুনিয়াতে তাদের যে মৃত্যু এসেছে, সেই মৃত্যুর পর তাদেরকে আর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে যে, "মৃত্যুকে একটি ভেড়ার আকৃতিতে এনে জাহান্নাম এবং জান্নাতের মাঝখানে জবাই করে দেওয়া হবে এবং ঘোষণা করা হবে যে, হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের জন্য জান্নাতের জীবন হল চিরন্তন। আর তোমাদের মৃত্যু আসবে না। এবং হে জাহান্নামীরা, তোমাদের জন্য জাহান্নামের জীবন হল চিরন্তন। আর মৃত্যু নেই।"
(বুখারীঃ তাফসীর সূরা মারয়্যাম, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়)
অপর হাদীসের শব্দে এসেছে, "হে জান্নাতবাসীগণ! তোমরা এবার সব সময় সুস্থ-সবল থাকবে, কখনোও অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন শুধু জীবন আর জীবন, আর মৃত্যু নেই। তোমাদের জন্য কেবল নিয়ামত আর নিয়ামত, এতে কোন কমতি হবে না। আর তোমরা সদা যুবক থাকবে, কখনোও বৃদ্ধ হবে না।"
(বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক)
فَضْلًا مِنْ رَبِّكَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
📘 (এ প্রতিদান) তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহস্বরূপ।[১] এটিই তো মহাসাফল্য।
[১] যেমন হাদীসেও আছে, রসূল (সাঃ) বলেছেন, "এ কথা জেনে নাও যে, তোমাদের মধ্যে কাউকেও তার আমল জান্নাতে নিয়ে যাবে না।" সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকেও? বললেন, "হ্যাঁ, আমাকেও। তবে আল্লাহ আমাকে তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায় আচ্ছাদিত করে নিবেন।"
(বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক, মুসলিম)
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
📘 আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।
فَارْتَقِبْ إِنَّهُمْ مُرْتَقِبُونَ
📘 সুতরাং তুমি প্রতীক্ষা কর, নিশ্চয় ওরাও প্রতীক্ষা করছে।[১]
[১] যদি এরা ঈমান না আনে, তবে তুমি আল্লাহর আযাবের অপেক্ষা কর। এরা তো এই অপেক্ষায় আছে যে, হতে পারে ইসলামের জয়লাভ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির পূর্বেই তোমার মৃত্যু হয়ে যাবে।
رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
📘 এ তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে করুণা;[১] নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[১] অর্থাৎ, গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করার সাথে সাথে রসূলগণকে প্রেরণ করা আমার করুণা ও রহমতেরই একটি অংশ। যাতে তারা আমার অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে এবং আমার যাবতীয় বিধি-বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। এইভাবে মানুষের আধিভৌতিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করার সাথে সাথে আমি আমার রহমতে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন পূরণ হওয়ারও সুব্যবস্থা করেছি।
رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِنْ كُنْتُمْ مُوقِنِينَ
📘 আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালকের নিকট হতে। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
📘 তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিপালক। [১]
[১] এই আয়াতগুলোও সূরা আ'রাফ ৭:১৫৮নং আয়াতের মত {قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ اِنِّي رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِ وَيُمِيْتُ}
بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ يَلْعَبُونَ
📘 বস্তুতঃ ওরা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খেল-তামাশা করছে। [১]
[১] অর্থাৎ, সত্য ও তার দলীলসমূহ তাদের কাছে এসে গেছে, কিন্তু তারা তার উপর ঈমান আনার পরিবর্তে সন্দেহে পড়ে রয়েছে এবং এই সন্দেহের সাথে সাথে বিদ্রূপ করায় ও খেল-তামাশায় মত্ত রয়েছে।