🕋 تفسير سورة الشرح
(Ash-Sharh) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
📘 আমি কি তোমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিইনি? [১]
[১] পূর্বের সূরায় (মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি) তিনটি নিয়ামত বা অনুগ্রহের কথা আলোচনা হয়েছে। এ সূরাতেও মহান আল্লাহ আরো তিনটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন। তার মধ্যে তাঁর 'বক্ষ প্রশস্ত' করে দেওয়া হল প্রথম অনুগ্রহ। এর অর্থ হল, বক্ষ আলোকিত এবং উদার হওয়া; যাতে সত্য স্পষ্ট হয়ে যায় এবং তার জন্য হৃদয় সংকুলান হয়। একই অর্থে কুরআন কারীমের এই আয়াতওঃ {فَمَن يُرِدِ اللهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ} অর্থাৎ, "আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন।"
(সূরা আনআম ৬:১২৫ আয়াত)
অর্থাৎ, সে ইসলামকে সত্য দ্বীন বলে জেনে নেয় এবং তা গ্রহণ করে নেয়। এই 'বক্ষ প্রশস্ত'-এর অর্থে সেই 'বক্ষ বিদীর্ণ' (সিনাচাক)ও এসে যায়; যা বিশুদ্ধ হাদীসানুযায়ী নবী (সাঃ)-এর দু'-দু' বার ঘটেছিলঃ একবার বাল্যকালে যখন তাঁর বয়স ৪ বছর। একদা জিবরীল (আঃ) এলেন এবং নবী (সাঃ)-এর বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তাঁর হৃদয়ের ভিতর থেকে শয়তানী রক্তপিন্ডকে বের করে দিয়েছিলেন যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে এবং হৃদয় ধৌত করে পুনরায় তা ভরে দিয়ে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন।
(সহীহ মুসলিম ঈমান অধ্যায়, ইসরা পরিচ্ছেদ)
আর একবার তা মি'রাজের সময় ঘটেছিল; জিবরীল (আঃ) তাঁর মুবারক বুকটাকে চিরে তাঁর অন্তরটাকে বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে পুনরায় স্বস্থানে রেখে দিলেন এবং তা ঈমান ও হিকমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিলেন।
(সহীহাইন মি'রাজ পরিচ্ছেদ এবং নামায অধ্যায়)
وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ
📘 আমি তোমার উপর হতে অপসারণ করেছি তোমার সেই ভার; [১]
[১] এই ভার বা বোঝা নবুঅতের পূর্বে তাঁর চল্লিশ বছর বয়সকালের সাথে সম্পৃক্ত। এই জীবনে যদিও আল্লাহ তাঁকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন; সুতরাং তিনি কোন মূর্তির সামনে মাথা ঝুঁকাননি, কখনো মদ্য পান করেননি এবং এ ছাড়া অন্যান্য পাপাচরণ থেকেও তিনি সুদূরে ছিলেন। তবুও প্রসিদ্ধ অর্থে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য সম্পর্কে তিনি জানতেন না; আর না তিনি তা করেছেন। এই জন্য বিগত চল্লিশ বছরে ইবাদত ও আনুগত্য না করার বোঝ তাঁর হৃদয় ও মস্তিষ্কে সওয়ার ছিল; যা সত্যিকারে কোন বোঝ ছিল না। কিন্তু তাঁর অনুভূতি ও উপলব্ধি তা বোঝ বানিয়ে রেখেছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁর সেই বোঝকে নামিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করলেন। এটা {لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ} আয়াতের অর্থের মত।
(সূরা ফাত্হ ৪৮:২ আয়াত)
কোন কোন আলেমগণ বলেন, এটা নবুঅতের বোঝ ছিল যেটাকে আল্লাহ হালকা করে দিলেন। অর্থাৎ, আল্লাহ এই রাস্তায় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ বৃদ্ধি এবং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সরলতা সৃষ্টি করলেন।
الَّذِي أَنْقَضَ ظَهْرَكَ
📘 যা তোমার পিঠকে করে রেখেছিল ভারাক্রান্ত।
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
📘 আর আমি তোমার খ্যাতিকে সমুচ্চ করেছি। [১]
[১] অর্থাৎ, যেখানে আল্লাহর নাম আসে সেখানে তাঁরও (নবীর) নাম আসে। যেমন, আযান, নামায এবং আরো অন্যান্য বহু জায়গায়। (এই হিসাবে সারা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তেই লক্ষবার তাঁর নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে।) পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে নবী (সাঃ)-এর নাম এবং গুণ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা হয়েছে। ফিরিশতাদের মাঝেও তাঁর সুনাম উল্লেখ করা হয়। নবী (সাঃ)-এর আনুগত্যকেও মহান আল্লাহ নিজের আনুগত্যরূপে শামিল করেছেন এবং নিজের আদেশ পালন করার সাথে সাথে তাঁর আদেশও পালন করতে মানব সম্প্রদায়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
📘 নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি।
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
📘 নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি। [১]
[১] এ হল নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণের জন্য শুভসংবাদ যে, তোমরা ইসলামের পথে যা কিছু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করছ এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই; যেহেতু এর পরেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য অবসর ও স্বস্তি এনে দেবেন। সুতরাং এইরূপই হয়েছিল; যা সারা পৃথিবীর লোকেরা অবগত।
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ
📘 অতএব যখনই অবসর পাও, তখনই (আল্লাহর ইবাদতে) সচেষ্ট হও।[১]
[১] অর্থাৎ, নামায, তাবলীগ, অথবা জিহাদ থেকে যখনই অবসর পাও তখনই ইবাদত (দু'আ ও যিকরে)র জন্য সচেষ্ট হও। (যেহেতু ইবাদতের পর যিকরই বিধেয়।) অথবা এত বেশী আল্লাহর ইবাদত কর, যাতে তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়।
وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَارْغَبْ
📘 আর তোমার প্রতিপালকের প্রতিই মনোনিবেশ কর। [১]
[১] অর্থাৎ, তাঁর কাছেই তুমি জান্নাতের আশা রাখ। তাঁর কাছেই তুমি নিজের প্রয়োজন ভিক্ষা কর এবং সর্ববিষয়ে তাঁরই উপর নির্ভর কর ও ভরসা রাখ।