🕋 تفسير سورة الرعد
(Ar-Rad) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ المر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ ۗ وَالَّذِي أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ
📘 সূরার শুরুতে যে (আরবি) এসে থাকে সেগুলির পূর্ণ ব্যাখ্যা সুরায়ে বাকারার তাফসীরের শুরুতে লিখিত হয়েছে এবং সেখানে এ কথাও বলা হয়েছে যে, যে সূরাগুলির প্রথমে এই অক্ষরগুলি এসেছে সেখানে সাধারণভাবে এই বর্ণনাই হয়েছে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম। এতে সন্দেহ ও সংশয়ের লেশ মাত্র নেই। এগুলি হচ্ছে কিতাব অর্থাৎ কুরআনের আয়াতসমূহ।এই নীতি অনুসারে এখানেও এই অক্ষরগুলির পরে আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ এগুলি হলো কিতাব অর্থাৎ কুরআনের আয়াতসমূহ। কেউ কেউ বলেছেন যে, কিতাব দ্বারা তাওরাত ও ইঞ্জিলকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক কথা নয়। এরপর এর উপরই সংযোগ স্থাপন করে এই কিতাবের অন্যান্য বিশেষণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য এবং আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) উপর এটা অবতীর্ণ করা হয়েছে।(আরবি) হচ্ছে (আরবি) বা বিধেয়। এর (আরবি) বা উদ্দেশ্য পূর্বে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ (আরবি) এই অংশটুকু। কিন্তু ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) পছন্দনীয় উক্তি এটাই যে, (আরবি) অক্ষরটি (আরবি) (অতিরিক্ত) অথবা (আরবি) (সংযোগ স্থাপনকারী) এবং এখানে (আরবি) এর সংযোগ (আরবি) এর উপর হয়েছে, যেমন আমরা ইতিপূর্বে বর্ণনা করেছি। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) তাঁর উক্তির সমর্থনে কোন এক কবির কবিতাংশকে প্রমাণ হিসেবে আনয়ন করেছেন। কবিতাংশটি নিম্নরূপঃ (আরবি)অর্থাৎ কওমের বাদশাহ, ইবনুল হাম্মামও জনতার মধ্যে কুতাইবার সিংহের নিকট। এখানে কওমের বাদশাহ, ইবনুল হাম্মাম এবং কুতাইবার সিংহ একই ব্যক্তি। সুতরাং এখানে (আরবি) টি অতিরিক্ত বা (আরবি) এর উপর (আরবি) এর (আরবি) বা সংযোগ হয়েছে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা সত্য হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ লোক এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না। অর্থাৎ এর সত্যতা স্পষ্ট ও সমুজ্জল। কিন্তু মানুষের অবাধ্যতা, হঠকারিতা এবং একগুঁয়েমী তাদেরকে ঈমানের দিকে মুখ করতে দেয় না।
سَوَاءٌ مِنْكُمْ مَنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ
📘 Please check ayah 13:11 for complete tafsir.
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ
📘 ১০-১১ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর জ্ঞান সমস্ত মাখলুককে ঘিরে রয়েছে। কোন জিনিসই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই। তিনি নিম্ন ও উচ্চ শব্দ শুনতে পান। তিনি প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব কিছুই জানেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি যদি কথাকে প্রকাশ কর তবে জেনে রেখোঁরেখো যে, তিনি (ওটা তো জানতে পারেনই, এমন কি) অতি গোপনীয় কথাও জানেন।” (২০: ৭)আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু গোপন কর এবং যা কিছু প্রকাশ কর তিনি তা জানেন।” (২৭: ২৫)হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “ঐ আল্লাহ পবিত্র যাঁর শ্রবণ সমস্ত শব্দকে ঘিরে রয়েছে। আল্লাহর শপথ! নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী একজন মহিলা রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করে তাঁর সাথে এমন আস্তে আস্তে কথা বলে যে, আমি পার্শ্বেই অথচ ভালরূপে তার কথা আমার কর্ণগোচর হয় নাই। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ (হে রাসূল (সঃ)!) আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকটও ফরিয়াদ করছে; আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (৫৮: ১)যে ব্যক্তি তার ঘরের কোণায় রাত্রির অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে সে এবং যে ব্যক্তি দিনের বেলায় প্রকাশ্যভাবে জনবহুল পথে চলাচল করে, অল্লাহর অবগতিতে এরা দু’জন সমান। যেমন তিনি (আরবি) এই আয়াতে বলেছেন। (১১: ৫) মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি যে কোন কর্মে রত হও এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন হতে যা আবৃত্তি কর এবং তোমরা যে কোন কার্য কর, আমি তোমাদের পরিদর্শক, যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও; আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং ওটা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই সুষ্পষ্ট কিতাবে নেই।” (১০: ৬১)আল্লাহ তাআ’লার উক্তি : (আরবি) অর্থাৎ “মানুষের জন্যে তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; ওরা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।” অর্থাৎ মানুষের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে তাদের চতুর্দিকে ফেরেশতাদেরকে মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। তারা মানুষকে কষ্ট ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন। যেমন তাদের কার্যাবলী পরিদর্শন করার জন্যে ফেরেশতাদের অন্য দল রয়েছে। যারা পর্যায়ক্রমে একের পর এক আসা যাওয়া করে থাকেন। রাত্রিকালের জন্যে পৃথক ফেরেশতা আছেন এবং দিবা ভাগের জন্যেও পৃথক ফেরেশতা রয়েছেন। যেমন মানুষের ডানে ও বামে দু’জন ফেরেশতা মানুষের আমল লিখবার জন্যে নিযুক্ত রয়েছেন। ডান দিকের ফেরেশতা পূণ্য লিখেন এবং বাম দিকের ফেরেশতা পাপ লিখেন। অনুরূপভাবে তার সামনে ও পেছনে দু’জন ফেরেশতা রয়েছেন যারা তার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ চারজন ফেরেশতার মধ্যে অবস্থান করে। দু’জন আমল লেখক ডানে ও বামে এবং দু’জন রক্ষণাবেক্ষণকারী সামনে ও পেছনে। তারপর রাত্রির পৃথক ও দিবসের পৃথক। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “তোমাদের কাছে ফেরেশতারা পালাক্রমে আগমন করে থাকেন দিবসে ও রজনীতে। ফজর ও আসরের নামাযে উভয় দলের মিলন ঘটে। রাত্রে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ রাত্রি শেষে আকাশে উঠে যান। বান্দাদের অবস্থা অবগত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআ’লা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছো?” তারা উত্তরে বলেনঃ “আমরা তাদের কাছে আগমনের সময় নামাযের অবস্থায় তাদেরকে পেয়েছি এবং বিদায়ের সময়ও তাদেরকে নামাযের অবস্থায় ছেড়ে এসেছি।”অন্য হাদীসে এসেছেঃ “তোমাদের সাথে তাঁরা রয়েছেন যাঁরা তোমাদের পায়খানা ও সহবাসের সময় ছাড়া কোন অবস্থাতেই তোমাদের থেকে পৃথক হন না। সুতরাং তোমাদের উচিত তাদের থেকে লজ্জা করা ও তাদেরকে সম্মান করা।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা যখন বান্দার কোন ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেন তখন রক্ষক ফেরেশতা তা হতে দেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক বান্দার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতা থাকেন যিনি তাকে ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় দানব, মানব, বিষধর প্রাণী এবং সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে পার্থিব বাদশাহ ও আমীরদের আলোচনা যারা প্রহরাধীনে অবস্থান করে থাকেন। যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, সম্রাট বা শাহান্শাহ আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে থাকেন আল্লাহর আমর হতে এবং তারা হচ্ছে আলুশ শিরক ও আহলুয যাহির। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।সম্ভবতঃ এই উক্তির উদ্দেশ্য এই যে, বাদশাহ ও আমীরদেরকে যেমন সৈন্য প্রহরীরা পাহারা দিয়ে থাকে তেমনিভাবে আল্লাহ তাআ’লার বান্দাদেরকে পাহারা দিয়ে থাকেন তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত ফেরেশতাগণ।তাফসীরে ইবনু জারীরে একটি দুর্বল রিওয়াইয়াতে এসেছে যে, একদা হযরত উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! বান্দার সাথে কতজন ফেরেশতা থাকেন?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “একজন ডান দিকে থাকেন, যিনি পূণ্য লিখেন এবং তিনি বামদিকে অবস্থানকারী পাপ লেখক ফেরেশতার উপর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। যখন তুমি কোন পূণ্যের কাজ কর তখন ঐ পূণ্য লেখক ফেরেশতা একটির বিনিময়ে দশটি পূণ্য লিখে ফেলেন। পক্ষান্তরে যখন তুমি কোন পাপকার্য কর তখন বাম দিকের ফেরেশতা তা লিখবার জন্যে ডানদিকের ফেরেশতার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। ডান দিকের ফেরেশতা তখন তাকে বলেনঃ “কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, হয়তো সে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করবে।” তিন বার তিনি অনুমতি চান। তখন পর্যন্তই যদি সে তওবা না করে তখন ঐ পূণ্য লেখক ফেরেশতা পাপ লেখক ফেরেশতাকে বলেনঃ “এখন লিখে নাও। আল্লাহ তার থেকে আমাদেরকে আরাম দান করুন। সে কতই না নিকৃষ্ট সঙ্গী। সে আল্লাহ তাআ’লার প্রতি খেয়াল রাখে না এবং আমাদের থেকে লজ্জা করে না।” আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” (৫০: ১৮) আর দু’জন ফেরেশতা তোমার সামনে ও পেছনে রয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “মানুষের সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে।” আর একজন ফেরেশতা তোমার মাথার চুল ধরে রয়েছেন। যখন তুমি আল্লাহর সামনে বিনয় ও নীচতা প্রকাশ কর তখন তিনি তোমার মর্যাদা উচ্চ করে দেন। আর যখন তুমি আল্লাহর সামনে অবাধ্যতা ও অহংকার প্রকাশ কর তখন তিনি তোমার মর্যাদা নিচু করে দেন এবং তোমাকে অপারগ ও অক্ষম করেন। দু’জন ফেরেশতা তোমার ওষ্ঠের উপর রয়েছেন। তুমি যে দরূদ আমার উপর পাঠ করে থাকো তিনি তা হিফাযত করেন। একজন ফেরেশতা তোমার মুখের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যেন সর্প ইত্যাদির ন্যায় কোন কিছু গলায় চলে না যায়। দু’জন ফেরেশতা তোমার চোখের উপর রয়েছেন। অতএব এই দশজন ফেরেশতা প্রত্যেক বনী আদমের সাথে রয়েছেন। দিনের ফেরেশতা আলাদা এবং রাতের ফেরেশতা আলাদা। এভাবে প্রত্যেক লোকের সাথে আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে বিশজন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। আর এদিকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে সারা দিন ইবলীস কর্মব্যস্ত থাকে এবং রাত্রে এ কাজে লেগে থাকে তার সন্তানেরা।” (এ হাদীসটি তাফসীরে ইবনে জারীরে কিনানা’ আল আদাভী (রঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই গারীব বা দুর্বল) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকের সাথে ভারপ্রাপ্ত সঙ্গী হিসেবে রয়েছে একজন জ্বিন ও একজন ফেরেশতা।” জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার সাথেও কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমার সাথেও রয়েছে। তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর সাহায্য করেছেন। সে আমাকে ভাল ছাড়া কিছুই হুকুম করে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম একাকী এটা তাখরীজ করেছেন) আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি) (তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে) কোন কোন কিরআতে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। হযরত কা’ব (রঃ) বলেন যে, বনী আদমের জন্যে যদি প্রত্যেক নরম ও শক্ত খুলে যায় তবে অবশ্যই প্রতিটি জিনিস সে নিজেই দেখতে পাবে। আর যদি আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে এই রক্ষক ফেরেশতাগুলি নিযুক্ত না থাকেন যারা পানাহার ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করে থাকেন তবে আল্লাহর শপথ! তোমাদেরকে অবশ্যই ছিনিয়ে নেয়া হবে। আবু উমামা (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক মানুষের সাথে রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা রয়েছেন যারা ভাগ্যে লিখিত ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বিপদ-আপদ তার থেকে দূর করে থাকে। আবু মাজায (রঃ) বলেন যে, মুরাদ গোত্রের একটি লোক হযরত আলীর (রাঃ) নিকট আগমন করে তাঁকে নামাযে মশগুল দেখতে পান। অতঃপর তাঁকে তিনি বলেনঃ “মুরাদ গোত্রের লোক আপনাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সুতরাং আপনি প্রহরী নিযুক্ত করুন।” এ কথা শুনে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে তার হিফাযতের জন্যে দু’জন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তকদীরে লিপিবদ্ধ ছাড়া কোন বিপদাপদ তারা তাঁর প্রতি আপতিত হতে দেন না। জেনে রেখোঁরেখো যে, ‘আজল’ একটা মযবুত দুর্গ ও উত্তম ঢাল স্বরূপ।” কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবি) এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তারা আল্লাহর নির্দেশক্রমে তাকে তাঁর আমর থেকে হিফাযত করে থাকে। যেমন হাদীস শরীফে এসেছেঃ জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা যে ঝাড় ফুঁক করে থাকি তা কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরের পরিবর্তন ঘটাতে পারে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ওটা স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।” ইবরাহীম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বনী ইসরাঈলের কোন এক নবীর কাছে আল্লাহ তাআ’লা ওয়াহী করেনঃ “তোমার কওমকে বলে দাওঃ যে গ্রামবাসী বা যে গৃহবাসী আল্লাহর আনুগত্য করতে করতে তাঁর অবাধ্য হতে শুরু করে, আল্লাহ তাদের আরামের জিনিস গুলিকে তাদের থেকে দূর করে দিয়ে ঐ জিনিসগুলি তাদের কাছে আনয়ন করেন যেগুলি তাদের কষ্টের ও দুঃখের কারণ হয়।” (এটা ইবনু আবি হা’তিম (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু আবি শায়বার (রঃ) “সিফাতুল আর্শ' নামক গ্রন্থে এই রিওয়াইয়াতটি মার’ রূপেও এসেছে)আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ (আরবি) (নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে) এই আয়াত দ্বারা এ কথার সত্যতা স্বীকৃত হয়।উমাইর ইবনু আবদিল মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা কূফার (মসজিদের) মিম্বরের উপর হতে হযরত আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে নীরবতা অবলম্বন করলে তিনি কথা বলতে শুরু করতেন। আর আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি তার উত্তর দিতেন। এক দিন তিনি আমাকে বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “আমার ইযযত ও জালাল এবং আমার আর্শের উচ্চতার শপথ! যে গ্রামবাসী বা যে গৃহবাসী আমার নাফরমানীতে জড়িয়ে পড়ার পর তা পরিত্যাগ করতঃ আমার আনুগত্যের কাজে লেগে পড়ে, আমি তখন আমার শাস্তি ও কষ্ট তাদের থেকে সরিয়ে নিয়ে আমার রহমত ও সুখ তাদের উপর অবতীর্ণ করে থাকি।” (এ হাদীসটি গারীব- এর সনদে একজন বর্ণনাকারী অপরিচিত)
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
📘 Please check ayah 13:13 for complete tafsir.
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
📘 ১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, বিদ্যুৎও তারই নির্দেশাধীন। একটি লোক হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) বিদ্যুৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে তাকে বলেনঃ “বিদ্যুৎ হচ্ছে পানি।” পথিক ওটা দেখে কষ্ট ও বিপদের ভয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। আর বাড়ীতে অবস্থানকারী ব্যক্তি বরকত ও উপকার লাভের আশায় জীবিকার আধিক্যের লোভ করে। ওটাই ঘন মেঘ সৃষ্টি করে থাকে যা পানির ভারে যমীনের নিকটবর্তী হয়ে যায়। ওটা পানিতে বোঝা স্বরূপ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ বজ্রও তাঁর প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “প্রত্যেক জিনিসই আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকে।” বানু গিফার গোত্রের একজন শায়েখ নবীকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা মেঘ সৃষ্টি করেন যা উত্তমরূপে কথা বলে ও হাস্য করে। (এটা ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম বুখারী (রঃ) এটাকে কিতাবুল আদাবে রিওয়াইয়াত করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) স্বীয় মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)সম্ভবতঃ কথা বলা দ্বারা গর্জন করা এবং হাস্য করা দ্বারা বিদ্যুৎ চমকানো উদ্দেশ্য। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। সা'দ ইবনু ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা মেঘ প্রেরণ করেন এবং ওটা অপেক্ষা উত্তম কথক ও উত্তম হাস্যকারী আর কিছুই নেই। ওর হাসি হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং কথা হচ্ছে বজ্র। মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম (রঃ) বলেন “আমরা খবর পেয়েছি যে, বিদ্যুৎ হচ্ছে একজন ফেরেশতা যার চারটি মুখ রয়েছে। একটি মানুষের মত, একটি বলদের মত, একটি গাধার মত এবং একটি সিংহের মত। সে যখন লেজ নাড়ে তখন বিদ্যুৎ চমকে ওঠে।”সা’লিম (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন বজ্র ধ্বনি শুনতেন তখন তিনি নিম্নের দু'আটি পাঠ করতেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার গযব দ্বারা নিপাত করবেন না এবং আপনার আযাব দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। এবং এর পূর্বেই আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)অন্য রিওয়াইয়াতে নিম্নের দু'আটি রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি ঐ সত্ত্বার পবিত্রতা বর্ণনা করছি যাঁর প্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকে বজ্ৰ।” হযরত আলী (রাঃ) বজ্ৰ ধ্বণি শুনে পাঠ করতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি যার তুমি পবিত্রতা বর্ণনা করলে।” ইবনু আবি যাকারিয়া (রাঃ) বলেন যে, বজ্র ধ্বনি শুনে যে ব্যক্তি (আরবি) পাঠ করে তার উপর বিদ্যুৎ পতিত হয় না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বজ্র ধ্বনি শুনে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং পাঠ করতেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি ঐ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি; বজ্রনির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ সভয়ে যাঁর প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে থাকে।” আর তিনি বলতেন যে, এই শব্দে দুনিয়াবাসীর জন্যে বড় সন্ত্রাসের ব্যাপার রয়েছে। (এটা ইমাম মা’লিক (রঃ) তার মুআত্তা এবং ইমাম বুখারী (রঃ) কিতাবুল আদাবে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের মহা মহিমান্বিত প্রতিপালক বলেনঃ ‘যদি আমার বান্দারা পূর্ণমাত্রায় আমার আনুগত্য করতো তবে আমি অবশ্যই তাদের উপর রাত্রিকালে বৃষ্টি বর্ষণ করতাম এবং দিনের বেলায় তাদের উপর সূর্য প্রকাশমান রাখতাম, আর বজ্রের ধ্বনি পর্যন্ত তাদেরকে শুনাতাম না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ বজ্র ধ্বনি শুনে তোমরা আল্লাহর যিকর করবে। কেননা, আল্লাহর কসম! আল্লাহর যিকরকারীর উপর বস্ত্র পতিত হয় না। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)“তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন।” এ জন্যেই শেষ যুগে খুব বেশি বিজলী পতিত হবে। যেমন হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় খুব বেশি বিজলী পড়বে। এমনকি কোন লোক তাদের কওমের কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেঃ “সকালে কার উপর বিজলী পড়েছে?” তারা উত্তরে বলবেঃ “অমুকের উপর অমুকের উপর, এবং অমুকের উপর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এই আয়াতের শানে নুযূলে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে একবার আরবের এক অহংকারী সরদারকে ডেকে আনার জন্যে প্রেরণ করেন। লোকটি তখন তার নিকট গমন করে এবং তাকে বলেঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। সে একথা শুনে লোকটিকে বলেঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে? এবং আল্লাহ কে? তিনি কি সোনার, না রূপার, না তামার (তৈরী)?” দূতটি তখন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে ফিরে আসলো এবং বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো আপনাকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, সে একজন অহংকারী লোক! সে আমাকে এরূপ, এরূপ বলেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তুমি তার কাছে দ্বিতীয়বার যাও।” সে গেল এবং সে তাকে ঐ কথাই বললো। সুতরাং সে এবারও রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট ফিরে আসলো এবং বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো আপনাকে খবর দিয়েছিলাম যে, সে এর থেকে বেপরোয়া”। রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তুমি তার কাছে আবার ফিরে যাও এবং ডেকে আন।” সুতরাং সে তৃতীয়বার তার কাছে ফিরে গেল। এবারও লোকটি পয়গাম শুনে ঐ উত্তরই দিতে শুরু করলো। এমন সময় এক খন্ড মেঘ তার মাথার উপর এসে গেল। বজ্ৰ ধ্বনি হলো এবং তার উপর বিজলী পড়ে গেল। ফলে তার মাথার খুলী (মাথার উপরিভাগ উড়ে) গেল। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা আল মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একজন ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বলেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ) ! আমাকে আপনার প্রতিপালক সম্পর্কে খবর দিন! তিনি কিসের তৈরী? তিনি কি তামার তৈরী, না মুক্তার তৈরী, না ইয়াকূতের তৈরী?” তার প্রশ্ন তখনও পূর্ণ হয়নি অকস্মাৎ আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পতিত হলো এবং সে ধ্বংস হয়ে গেল। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো।কাতাদা’ (রঃ) বলেনঃ বর্ণিত আছে যে, একটি লোক কুরআন কারীমকে। মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) নুবওয়াতকে অস্বীকার করে। ঐ সময়ই আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পতিত হয় এবং সে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।এই আয়াতের শানে নুযূলে আ’মির ইবনু তুফাইল ও আরবাদ ইবনু রাবী’আ’র কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে। এ লোক দু’টি আরবের নেতৃস্থানীয় লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তারা মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট হাযির হয় এবং বলেঃ “আমরা এই শর্তে আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নিতে পারি যে, আপনি আমাদেরকে আপনার কাজের (নুবওয়াতের) অর্ধেক শরীক করবেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং তারা নিরাশ হয়ে যায়। তখন অভিশপ্ত আমির বলেঃ “আল্লাহর কসম! আমি সারা আরবকে সৈন্য দ্বারা ভর্তি করে দেবো।” তার একথার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে এ সময় দিবেন না।” অতঃপর তারা দু’জন মদীনায় অবস্থান করতে থাকলো, উদ্দেশ্য এই যে, সুযোগ পেলেই রাসূলুল্লাহকে (সঃ) হত্যা করে ফেলবে। ঘটনাক্রমে একদিন তারা সুযোগ পেয়ে গেল। একজন সামনে থেকে তার সাথে কথাবার্তা বলতে লাগলো। অন্য জন তরবারী নিয়ে পেছনে এসে গেল। কিন্তু সেই প্রকৃত রক্ষক তাঁকে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন। তখন তারা এখান থেকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে চলে গেল। তারা হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলো। আরববাসীকে তারা তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে শুরু করলো। ঐ অবস্থাতেই আরবদের উপর আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পড়ে তাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দিলো। আর আমির প্লেগরোগে আক্রান্ত হলো এবং তাতেই সে মারা গেল। এই ধরনের লোকদের ব্যাপারেই আল্লাহ তাআ’লা (আরবি) (অর্থাৎ তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহর সম্বন্ধে বিতন্ডা করে) এই আয়াত অবতীর্ণ করেন।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরবাদের ভাই লাবীদ ইবনু রাবী’আ' নিম্নের পংক্তিতে শোকগাথা গেয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “আরবাদের ব্যাপারে আমি মৃত্যুকে ভয় করছি, তবে আমি তার ব্যাপারে সিমাক ও আসাদ তারকা দ্বয়ের কুলক্ষণকে ভয় করি না। যুদ্ধের দিনের বাহাদুর ঘোড় সওয়ারের ব্যাপারে বজ্র ও বিদ্যুই আমাকে ব্যথিত করেছে।”অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, আ’মির বলেছিলঃ “যদি আমি মুসলমান হই তবে কি পাবো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি মুসলমান হলে অন্যান্য মুসলমানদের যে অবস্থা হয়েছে তোমারও সেই অবস্থাই হবে।" সে তখন বলেঃ “তা হলে আমি মুসলমান হবে না। যদি আমি আপনার পরে এই আমরের (নুবওয়াতের) অধিকারী হই তবেই আমি এই দ্বীন (ইসলাম) কবুল করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “এটা তোমার জন্যেও হতে পারে না এবং তোমার কওমের জন্যেও হতে পারে না। হ্যাঁ, তবে তুমি ইসলাম কবুল করলে আমার অশ্বারোহী বাহিনী তোমাকে সাহায্য করবে।” একথা শুনে সে বলেঃ “আমার এর প্রয়োজন নেই। এখনও নজদের অশ্বারোহী বাহিনী আমার আশ্রয় স্থল হিসেবে রয়েছে। আমাকে আপনি যদি কাঁচা পাকার মালিক করে দেন তবে আমি ইসলাম কবুল করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “না (তা হবে না)।” সুতরাং তারা দু’জন তাঁর নিকট হতে চলে গেল। আ’মির বলতে লাগলো: “আল্লাহর কসম! আমি মদীনার চতুর্দিক সেনাবাহিনী দ্বারা অবরোধ করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা তোমার এইচ্ছা পূর্ণ হতে দেবেন না।” এখন তারা দুজনে পরামর্শ করলো যে, তাদের একজন রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথাবার্তা বলতে থাকবে এবং অপরজন এই সুযোগে তাঁকে তরবারী দ্বারা হত্যা করে ফেলবে। তারপর তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর কে খুব বেশী হলে এটাই হবে যে, তাদেরকে রক্তপণ দিতে হবে। এই পরামর্শের পর আবার তারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে। আমি তাঁকে বলেঃ আপনি এখানে একটু আসুন। আপনার সাথে আমি কিছু আলাপ করতে চাই।” তার একথা শুনে তিনি তার কাছে উঠে আসলেন এবং তার সাথে চললেন। এক প্রাচীরের পাদদেশে সে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথা বলতে শুরু করে। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কথা শুনতে থাকেন। সুযোগ পেয়ে আরবাদ তরবারীর উপর হাত রাখে। ওটাকে কোষ হতে বের করার ইচ্ছা করে। কিন্তু আল্লাহ তাআ’লা তার হাত অবশ করে দেন। কোন ক্রমেই সে কোষ হতে তরবারী বের করতে পারলো না। যখন বেশ দেরী হয়ে গেল এবং পিছন দিকে ফিরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ অবস্থা দেখতে পেলেন তখন তিনি সেখান থেকে সরে আসলেন। অতঃপর তারা দু'জন মদীনা হতে প্রস্থান করে এবং ‘হাররা রা’কিম’ স্থানে পৌঁছে থেমে যায়। কিন্তু হযরত সা’দ ইবনু মুআ’য (রাঃ) এবং হযরত উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) সেখানে পৌঁছেন এবং তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেন। তারা সেখান হতে বের হয়ে ‘রকম’ নামক স্থানে পৌছা মাত্রই আরবাদের উপর আকাশ থেকে বিজলী পড়ে যায় এবং সেখানেই তার জীবন লীলা শেষ হয়ে যায়। আ’মির সেখান থেকে পলায়ণ করে। ‘খুৱায়েম' নামক স্থানে পৌছা মাত্রই সে প্লেগের ফেঁড়ায় আক্রান্ত হয়। বানু সালুল গোত্রের এক মহিলার ঘরে সে রাত্রি যাপন করে। কখনো কখনো সে তার ঘাড়ের ফোঁড়া স্পর্শ করতো এবং সবিস্ময়ে বলতো: “এটা তো সেই ফোড়া যা উটের হয়ে থাকে! হায় আফসোস! আমি সালুল গোত্রের এক মহিলার ঘরে মারা যাবো! যদি আমি নিজ বাড়ীতে থাকতাম তবে কতই না ভাল হতো।” শেষ পর্যন্ত সে সেখানে থাকতে পারলো না। তার ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সে সেখান থেকে বিদায় নিলো। কিন্তু পথেই সে ধ্বংস হয়ে গেলো। তাদের ব্যাপারেই আল্লাহ তাআ’লা(আরবি) (১৩: ৮-১১) পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন। এতে হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) হিফাযত করার বর্ণনাও রয়েছে এবং আরবাদের উপর বিজলী পতিত হওয়ার বর্ণনাও রয়েছে।এরপর আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ তারা আল্লাহর ব্যাপারে বাক বিতন্ডা করে। তারা তার মর্যাদা ও একত্ববাদকে স্বীকার করে না। অথচ আল্লাহ তাআ’লা তার বিরোধী ও অস্বীকারকারীদের কঠিন ও অসহনীয় শাস্তি প্রদানকারী। সুতরাং এই আয়াতটি নিম্নের আয়াতটির মতই। (আরবি) অর্থাৎ “তারা চরমভাবে চক্রান্ত করলো এবং আমিও উত্তম কৌশল করলাম, অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারলো না। সুতরাং তুমি লক্ষ্য কর, তাদের চক্রান্তের ফল কি দাঁড়ালো! আমি তাদেরকে এবং তাদের সমস্ত কওমকে ধ্বংস করে দিলাম।” (২৭: ৫০) (আরবি) এর ভাবার্থ হযরত আলীর (রাঃ) মতেঃ “তিনি কঠিনভাবে পাকড়াওকারী।” আর হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “তিনি ভীষণ শক্তিশালী।
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُمْ بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ
📘 হযরত আলী ইবনু আবি তা’লিব (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর জন্যে সত্য আহবান। এর দ্বারা একত্ববাদকে বুঝানো হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা (আরবি) উদ্দেশ্য। এরপর মুশরিক ও কাফিরদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যেমন কোন লোক পানির দিকে হস্ত প্রসারিত করে থাকে এই উদ্দেশ্যে যে, পানি নিজে নিজেই তার মুখে পেঁছৈ যাবে। কিন্তু এরূপ কখনো হতে পারে না। অনুরূপভাবে এই মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আহ্বান করছে এবং তাদের কাছে আশা রাখছে, তাদের আশা তারা পূর্ণ করতে পারবে না। আবার ভাবার্থ এও হতে পারে যে, যেমন কেউ যদি তার হস্তের মুষ্ঠিতে পানি আটকে রাখে তবে ঐ পানি তার মুষ্ঠির মধ্যে আটকে থাকবে না। সুতরাং (আরবি) এর অর্থ (আরবি) হবে। যেমন কোন কবি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় আমি ও তোমরা এবং তোমাদের প্রতি ভালবাসা স্থাপন হস্ত মুষ্ঠিতে পানি আটককারীর মতো, তার অঙ্গুলিগুলি তাকে পানি পান করায় না।” অন্য একজন বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমার মধ্যে ও তার মধ্যে যে প্রেম-প্রীতি ছিল তা হয়ে গেল হাতে পানি আটককারীর মত।” সুতরাং যেমন মুষ্ঠিতে পানি বন্ধকারী এবং যেমন পানির দিকে হস্ত প্রসারিতকারী পানি থেকে বঞ্চিত থাকে, তেমনই এই মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আহবান করছে বটে, কিন্তু তারা বঞ্চিতই থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কোনই উপকার লাভ করতে পারবে না। সুতরাং তাদেরকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ ۩
📘 আল্লাহ তাআ’লা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের সংবাদ দিচ্ছেন যে, সমস্ত কিছু তাঁর সামনে বিনয়াবনত। তাঁর সামনে সবাই বিনয় ও নীচতা প্রকাশ করে। মু’মিনরা খুশী মনে এবং কাফিররা বাধ্য হয়ে তাঁর সামনে সিজদায় পতিত হয়। তাদের ছায়াগুলি সকাল সন্ধ্যায় তার সামনে ঝুঁকে পড়ে।(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে দিনের শেষ ভাগ। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা কি দেখে নাই যে, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর ছায়া ডানে, বামে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে সিজদা করে এবং নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করে?” (১৬: ৪৮)।
قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
📘 আল্লাহ তাআ’লা ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। এই মুশরিকরাও এর স্বীকারুক্তিকারী যে, যমীন ও আসমানের প্রতিপালক ও পরিচালক আল্লাহ তাআ’লাই বটে। এতদসত্ত্বেও তারা তাঁকে ছেড়ে অন্যান্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছে এবং তাদের উপাসনায় লেগে পড়েছে। অথচ তারা সবাই আল্লাহ তাআ’লার অক্ষম বান্দা। তারা এতো অক্ষম যে, নিজেদেরই লাভ ও ক্ষতির মালিক তারা নয়। সুতরাং এই মুশরিকরা এবং আল্লাহর উপাসক বান্দা এক সমান হতে পারে না। এরা তো অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে। আর আল্লাহর এই খাঁটি বান্দারা রয়েছে আলোর মধ্যে। যতটা পার্থক্য রয়েছে অন্ধ ও চক্ষুষ্মনের মধ্যে এবং অন্ধকার ও আলোর মধ্যে, ততটা পার্থক্য রয়েছে এই দু'দলের মধ্যে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই মুশরিকদের নির্ধারিত শরীকরা কি তাদের কাছে কোন জিনিসের সৃষ্টিকর্তা? যার ফলে তাদের কাছে কঠিন হয়ে গেছে যে, কোনটার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, আর কোনটার সৃষ্টিকর্তা তাদের এই উপাস্যেরা? অথচ এইরূপতো মোটেই নয়। আল্লাহর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত, তার সমকক্ষ এবং তাঁর মত কেউই নেই। তিনি উযীর, শরীক, সন্তানাদি এবং স্ত্রী থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। এসব থেকে তাঁর সত্ত্বা বহু উর্ধ্বে। এটা তো মুশরিকদের চরম নির্বুদ্ধিতা যে, তারা তাদের ছোট উপাস্যদেরকে আল্লাহ তাআ’লার সৃষ্ট দাস মনে করা সত্ত্বেও তাদের উপাসনা করতে রয়েছে। (হজ্জের সময়) ‘লাব্বায়েক’ শব্দ উচ্চারণ করতে করতে বলেঃ “হে আল্লাহ! আমরা হাযির আছি। আপনার কোন অংশীদার নেই, কিন্তু শুধুমাত্র ঐ অংশীদার যারা স্বয়ং আপনারই অধিকারীত্বে রয়েছে। আর যে জিনিসের তারা মালিক সে জিনিসেরও প্রকৃত অধিকারী আপনিই।” কুরআন কারীমের অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমরা শুধু মাত্র এ জন্যেই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাবে।” (৩৯: ৩) তাদের এই বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে ইরশাদ হচ্ছেঃ “তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কেউই তার কাছে মুখ খুলতে পারবে না। আকাশের ফেরেশতা মন্ডলীও তাঁর অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে কোন সুপারিশ করতে পারবে না।”কুরআন পাকের এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন এবং কিয়ামতের দিন ওদের সকলেই তাঁর নিকট একাকী অবস্থায় আসবে। (১৯: ৯৩-৯৫) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লার বান্দা ও গোলাম হওয়ার দিক দিয়ে সবাই যখন সমান, তখন একে অপরের ইবাদত করা চরম নির্বুদ্ধিতা ও স্পষ্ট অন্যায় হবে না তো কি হবে? আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়ার শুরু থেকেই রাসূলদের ক্রম পরম্পরা জারী রেখেছেন। সবাই মানুষকে প্রথম শিক্ষা এই দিয়েছেন যে, আল্লাহর এক এবং ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউই উপাসনার যোগ্য নয়। কিন্তু মানুষ তাদেরকে অবিশ্বাস করেছে এবং তাঁদের বিরোধিতায় লেগে পড়েছে। ফলে তাদের উপর শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা কিন্তু আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে যুলুম নয়। তিনি কারো প্রতি যুলুম করেন না।
أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ
📘 এখানে সত্য ও মিথ্যা, আসল ও নকল, আসলের স্থায়ীত্ব এবং নকলের অস্থায়ীত্বের দু’টি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছেঃ আল্লাহ তাআ’লা মেঘ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ঝরণা, নদী, নালা ইত্যাদির মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়। কোনটায় কম এবং কোনটায় বেশি। কোনটা ছোট এবং কোনটা বড়। এটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে অন্তরসমূহের ও ওগুলির তারতম্যের। কোনটা আসমানী জ্ঞান বেশী রাখে এবং কোনটা কম রাখে। পানির স্রোতের মুখে ফেনা উখিত হয়। এটা হচ্ছে একটি দৃষ্টান্ত। দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সোনা, রূপা, লৌহ এবং তামার। এগুলিকে আগুনে তাপ দেয়া হয়। এগুলিতে তাপ দিয়ে স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা অলংকার তৈরী করা হয় এবং লোহা ও তামা দ্বারা বরতন, ভাঁড় ইত্যাদি তৈরী করা হয়। আগুনে তাপ দেয়ার সময় এগুলিতেও ফেনা জাতীয় জিনিস উথিত হয়। যেমন এ দু’টি জিনিসের ফেনা দূর হয়ে যায়, তেমনিভাবে বাতিল, যা কখনো কখনো হকের উপর ছেয়ে যায়, অবশেষে তা ছাটাঁই হয়ে যায় এবং হক পৃথকভাবে থেকে যায়। যেমন, পানি থেকে ফেনা দূর হয়ে গেলে তা পরিষ্কার হয়ে থেকে যায় এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যকে যেমন আগুনে তাপ দিয়ে তার থেকে খুট বা জালকে পৃথক করে দেয়া হয়, তখন সোনা, রূপা, পানি ইত্যাদি দ্বারা দুনিয়াবাসী উপকার লাভ করে থাকে এবং ওগুলির উপর যে খুট ও ফেনা এসেছিল তার কোন নাম নিশানাও আর বাকী থাকে না। আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে বুঝবার জন্যে কতই না পরিষ্কার ও স্পষ্ট দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। যেন মানুষ চিন্তা করে ও অনুধাবন করতে পারে। যেমন তিনি বলেনঃ “এই সব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্যে বর্ণনা করে থাকি। কিন্তু জ্ঞানীগণ ছাড়া কেউই তা অনুধাবন করে না।”পূর্ববর্তী কোন গুরুজন যখন কোন দৃষ্টান্ত বুঝতে অসমর্থ হতেন তখন তারা কাঁদতে শুরু করতেন। কেননা, তা বুঝতে না পারা শুধুমাত্র জ্ঞানশূন্য লোকদের জন্যেই শোভা পায়।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রথম দৃষ্টান্তে ঐ লোকদের বর্ণনা রয়েছে যাদের অন্তর বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর জ্ঞান বহনকারী। কতকগুলি অন্তর এমনও আছে যেগুলিতে সন্দেহ বাকী থেকে যায়। সুতরাং সন্দেহের সাথে আমল নিরর্থক। পূর্ণ বিশ্বাসই পুরোপুরিভাবে উপকার পৌঁছিয়ে থাকে।(আরবি) শব্দ দ্বারা সন্দেহকে বুঝানো হয়েছে, যা নিরর্থক ও বাজে জিনিষ। বিশ্বাসই ফলদায়ক জিনিষ। এটা চিরস্থায়ী হয়। যেমন অলংকারকে আগুনে তাপ দিলে খুট বা নকল জিনিষ পুড়ে যায় এবং খাঁটি জিনিষ বাকী থেকে যায়, তেমনই আল্লাহ তাআ’লার কাছে বিশ্বাস গ্রহণীয় এবং সন্দেহ প্রত্যাখাত। সুতরাং যেমনভাবে পানি থেকে যায় এবং তা পান ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং যেমনভাবে খাঁটি সোনা, রূপা ইত্যাদি থেকে যায় এবং অলংকার ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং যেমনভাবে তামা, লোহা ইত্যাদি থেকে যায় এবং তার থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র নির্মিত হয়, তেমনিভাবে ভাল ও খাঁটি আমলও আমলকারীকে উপকার পৌঁছিয়ে থাকে এবং তা চিরস্থায়ী থাকে। হিদায়াত ও হকের উপর যে আমল করে সেই লাভবান হয়। যেমন আগুনে তাপ দেয়া ছাড়া লোহা দ্বারা ছুরি, তরবারী ইত্যাদি তৈরি করা যায় না অনুরূপভাবে মিথ্যা, সন্দেহ এবং লোক দেখানোযুক্ত আমল মহান আল্লাহর কাছে ফলদায়ক হতে পারে না। কিয়ামতের দিন বাতিল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং হকের উপর আমলকারী লাভবান হবে। সূরায়ে বাকারার প্রারম্ভে মহামহিমান্বিত আল্লাহ মুনাফিকদের দু’টি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। একটি পানির এবং একটি আগুনের। সূরায়ে নূরে কাফিরদের দু’টি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। একটি মরিচীকার এবং আর একটি সমূদ্রের তলদেশের অন্ধকারের। গ্রীষ্মকালে দূর থেকে মরুভূমির বালুকারাশিকে তরঙ্গায়িত সমূদ্রের পানি বলে মনে হয়। এ জন্যেই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এসেছেঃ “কিয়ামতের দিন ইয়াহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তোমরা কি চাও?” উত্তরে তারা বলবেঃ “আমরা অত্যন্ত পিপাসার্ত হয়ে পড়েছি। সুতরাং আমরা পানি চাই।” তখন তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা ফিরে যাচ্ছ না কেন?” এ কথা শুনে তারা জাহান্নামের দিকে ফিরে যাবে এবং দুনিয়ায় যেমন দূর থেকে মরুভূমির বালুকারাশিকে পানি বলে মনে হয় তদ্রুপ তারা সেখানে দেখতে পাবে (এবং পানি মনে করে দৌড়িয়ে যাবে, কিন্তু গিয়ে দেখবে যে, ওগুলো পানি নয়, বরং বালু। তখন তারা নিরাশ হয়ে ফিরে আসবে)।” দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ ‘অথবা গভীর সমুদ্র তলের অন্ধকার সদৃশ।” (২৪: ৪০) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু মুসা আশআ’রী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে হিদায়াত ও জ্ঞানসহ আল্লাহ তাআ’লা আমাকে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত ঐ বৃষ্টির ন্যায় যা যমীনের উপর বর্ষিত হয়েছে। যমীনের এক অংশ পানি গ্রহন করে নিয়েছে, ফলে তাতে প্রচুর পরিমাণে তৃণলতা ও উদ্ভিদ জন্মেছে। দ্বিতীয় প্রকারের যমীন হচ্ছে শোষণ যোগ্য, যা পানি আটকিয়ে রাখে। এর দ্বারা আল্লাহ তাআ’লা জনগণের উপকার সাধন করেন। তারা ঐ পানি নিজেরা পান করে, জীবজন্তুকে পান করায় এবং জমিতে সেচন করে ফসল ফলায়। তৃতীয় প্রকার হচ্ছে কংকরময় ভূমি। না তাতে পানি জমে থাকে, না কোন ফসল উৎপন্ন হয়। এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করেছে এবং আমাকে পাঠানোর মাধ্যমে আল্লাহ তার উপকার সাধন করেছেন। সে নিজে ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে এ জন্যে মাথাও ঘামায়নি এবং যে হিদায়াতসহ আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন তা কবুলও করেনি। সুতরাং সে হচ্ছে ঐ কংকরময় ভূমির ন্যায়।”হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো। আগুন যখন ওর আশেপাশের জায়গাগুলিকে আলোকিত করলো তখন পতঙ্গগুলি ঐ আগুনে পড়তে শুরু করলো এবং এভাবে তাদের জীবন শেষ হতে লাগলো। লোকটি বারবার ওগুলিকে আগুনে পড়া হতে বাধা দিতে থাকলো, কিন্তু এতদসত্ত্বেও ওগুলি আগুনে পড়তেই থাকলো। ঠিক এরূপই দৃষ্টান্ত আমার ও তোমাদের। আমি তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছি এবং বলছি যে, আগুণ থেকে দূরে সরে যাও। কিন্তু তোমরা আমার কথা মানছেনা। বরং আমার নিকট থেকে ছুটে গিয়ে আগুনেই ঝাপ দিচ্ছ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এই দু’জনও তাদের সহীহ' গ্রন্থে এটা তাখরীজ করেছেন। এভাবে হাদীসেও আগুন ও পানি এ দু’টির দৃষ্টান্ত এসে গেল)
لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
📘 আল্লাহ তাআ’লা পূণ্যবান ও পাপিষ্ঠদের পরিণামের খবর দিচ্ছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (সঃ) মান্যকারী, তাঁদের আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী আমলকারী, অতীত খবরগুলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী উত্তম প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা যুলকারনাইন সম্পর্কে খবর দেন যে, তিনি বলেছেনঃ “যুলুমকারীকে আমরা সত্ত্বরই শাস্তি প্রদান করবো, অতঃপর তাকে তার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তিনি তাকে জঘন্য শাস্তি প্রদান করবেন। আর যে ভাল কাজ করবে, তার জন্যে রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং আমরাও তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবো।” আল্লাহ তাআ’লা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যারা ভাল কাজ করেছে তাদের জন্যে উত্তম বিনিময় রয়েছে এবং অতিরিক্তও রয়েছে।” আর এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ “যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয় না অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে না, তারা কিয়ামতের দিন এমন শাস্তি দেখবে যে, যদি তাদের কাছে পৃথিবীপূর্ণ সোনা থাকে তাহলে তারা তাদের মুক্তিপণ হিসেবে তা দিতেও প্রস্তুত থাকবে, এমন কি যদি আরো ঐ পরিমাণ হয় তবুও, কিন্তু কিয়ামতের দিন না মুক্তিপণের ব্যবস্থা থাকবে, না বিনিময় গ্রহণ করা হবে। সেদিন তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিচার করা হবে। একটা ছাল বা বাকল এবং একটা শস্যেরও হিসাব নেয়া হবে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “জাহান্নাম হবে তাদের আবাস এবং ওটা কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয় স্থল!”
۞ أَفَمَنْ يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ ۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সরাসরি সত্য বলে জানে বা বিশ্বাস করে, তাতে তার কোন সংশয় ও সন্দেহ থাকে না, সে একটিকে আর একটির সত্যতা প্রতিপাদনকারী ও আনুকূল্যকারী মনে করে, সব খবরকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে, তোমার সত্যবাদিতার কথা অকপটে স্বীকার করে, আর দ্বিতীয় আর একটি ব্যক্তি, অন্তর্চক্ষু অন্ধ, মঙ্গল বুঝেই না এবং বুঝলেও মানে না ও বিশ্বাস করে না, এ দু’জন কি কখনও সমান হতে পারে? কখনো না। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।” এই ঘোষনা এখানেও দেয়া হয়েছে যে, এ দু'জন সমান নয়। কথা এই যে, বুদ্ধিমান ও বিবেকশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ
📘 আল্লাহ তাআ’লা নিজের ক্ষমতার পূর্ণতা এবং সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের খবর দিচ্ছেন যে, তিনি বিনা স্তম্ভে আকাশকে উর্ধে স্থাপন করেছেন। আকাশকে তিনি যমীন হতে কতই না উঁচুতে রেখেছেন! শুধু নিজের আদেশে ওটাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন যার শেষ সীমারেখার খবর কেউ রাখে না। দুনিয়ার আকাশ সারা যমীন এবং ওর চার পাশে পানি, বাতাস ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে রয়েছে। সব দিক থেকেই আসমান যমীন হতে সমানভাবে উঁচু রয়েছে। যমীন হতে আসমানের দুরত্ব হচ্ছে পাঁচ শ’ বছরের পথ। সবদিকেই ওটা এতোটা উঁচু। ওর পুরু ও ঘনত্বও পাঁচ শ' বছরের ব্যবধানে আছে। আবার দ্বিতীয় আকাশ এই দুনিয়ার আকাশকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। প্রথম আকাশ হতে দ্বিতীয় আকাশের ব্যবধানও পাঁচ শ' বছরের পথ। অনুরূপভাবে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আকাশও একে অপর হতে পাঁচ শ’ বছরের পথের দূরত্বে অবস্থিত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ এমন যিনি সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপ সংখ্যক যমীনও রয়েছে।” (৬৫: ১২)। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, সাতটি আকাশ এবং ওগুলির মাঝে যা কিছু রয়েছে সেগুলি কুরসীর তুলনায় এইরূপ যেইরূপ কোন প্রশস্ত ও বিরাট ময়দানে কোন একটা বৃত্ত। আর কুরসী আর্শের তুলনায় তদ্রুপ। আর্শের পরিমাপ মহা মহিমান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের বর্ণনা রয়েছে যে, আর্শ হতে যমীনের দূরত্ব পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ।কোন কোন মুফাসসির বলেন যে, আকাশের স্তম্ভ রয়েছে বটে, কিন্তু তা দেখা যায় না। কিন্তু আইয়াস ইবনু মুআ’বিয়া (রঃ) বলেন, আসমান যমীনের উপর গম্বুজের ন্যায় রয়েছে। অর্থাৎ তাতে কোন স্তম্ভ নেই। এই উক্তিটিই কুরআন কারীমের বাকরীতিরও যোগ্য বটে। এবং (আরবি) (২২: ৪ ৬৫) এই আয়াত দ্বারাও এটাই প্রতীয়মান হয়। সুতরাং (আরবি) এই কথা দ্বারা আকাশে স্তম্ভ না থাকার প্রতিই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আসমান বিনা স্তম্ভে এই পরিমাণ উঁচুতে রয়েছে এবং তোমরা তা স্বচক্ষে অবলোকন করছে। এটা হচ্ছে মহামহিমান্বিত আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতারই একটি নিদর্শন। উমাইয়া ইবনু সালাতের নিম্নের কবিতায় রয়েছে, যার কবিতা সম্পর্কে হাদীসে আছে, “তার কবিতা ঈমান এনেছে এবং তার অন্তর কুফরী করছে” আবার একথা ও বলা হয়েছে যে, এগুলি হচ্ছে হযরত যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফাইলের (রাঃ) কবিতা। কবিতাগুলি নিম্নরূপঃ (আরবি)অর্থাৎ “আপনি সেই আল্লাহ যিনি স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে স্বীয় নবী মূসাকে (আঃ) হারুণ (আঃ) সহ রাসূল করে ফিরাউনের নিকট পাঠিয়েছিলেন। আপনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা যাও এবং অবাধ্য ফিরাউনকে আল্লাহর দিকে আহবান করো এবং তাকে বললাঃ তুমি কি এই উঁচু আকাশকে বিনা স্তম্ভে নির্মাণ করেছো? তাতে সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি কি তুমিই সৃষ্টি করেছো? আর মাটি হতে ফসল উৎপাদনকারী এবং গাছে ফল সৃষ্টিকারী কি তুমি? ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআ’লার এই বিরাট বিরাট নিদর্শনাবলী কি গভীরভাবে চিন্তাকারী মানুষের জন্যে তার অস্তিত্বের দলীল নয়?” ‘অতঃপর আল্লাহ আর্শের উপর সমাসীন হলেন’ এর তাফসীর সুরায়ে আরাফে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যেভাবে আছেন সে ভাবেই থাকবেন। অবস্থা, তুলনা, সাদৃশ্য ইত্যাদি থেকে আল্লাহর সত্ত্বা পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে। সূর্য ও চন্দ্র তাঁরই নির্দেশক্রমে আবর্তিত হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত এরূপ ভাবেই আবর্তিত হতে থাকবে। যেমন-আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ‘প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে।’ বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ এ দু'টো এদের শেষ সময় পর্যন্ত অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে।” (৩৬: ৩৮) বলা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট গন্তব্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্শের নীচে যা যমীনের নিম্নদেশের সাথে অন্য দিক থেকে মিলিত আছে। এটা এবং সমস্ত তারকা এখান পর্যন্ত পৌঁছে আর্শ থেকে আরো দূরে হয়ে যায়। কেননা, সঠিক কথা, যার উপর বহু দলীল প্রমাণ রয়েছে তা এই যে, ওটা গম্বুজ। পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত অবশিষ্ট আসমানের মতো ওটা পরিবেষ্টনকারী। কেননা ওর পায়া আছে এবং ওকে বহনকারী রয়েছেন। ঘূর্ণায়মান আকাশের ব্যাপারে এটা কল্পনায় আসতে পারে না। যে কেউই চিন্তা গবেষণা করবে সেই এটাকে সত্য বলে মেনে নেবে। কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান যাদের রয়েছে তাঁরা এই ফলাফলেই পৌঁছবেন। আল্লাহ তাআ’লার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।এখানে শুধুমাত্র সূর্য ও চন্দ্রের উল্লেখ করার কারণ এই যে, চলমান ৭ (সাতটি) গ্রহের মধ্যে এ দুটোই বড় ও উজ্জ্বল। সুতরাং এ দুটোই যখন নিয়মাধীন তখন অন্যগুলো তো নিয়মাধীন হওয়া স্বাভাবিক। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না। এর দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ তোমরা অন্যান্য নক্ষত্রগুলোকেও সিজদা করো না। অন্য জায়গায় বিস্তারিত ভাবেও রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের বাধ্য। সৃষ্টি ও হুকুম তাঁরই, তিনিই কল্যাণময় এবং তিনিই বিশ্বপ্রতিপালক।” (৭ :৫৪)। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “তিনি নিদর্শন সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।' অর্থাৎ মানুষ যেন এ সব নির্দশন দেখে নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করতে পারে যে, আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর পুনরায় জীবিত করবেন এবং তাঁর কাছে তাদেরকে একত্রিত করা হবে।
الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنْقُضُونَ الْمِيثَاقَ
📘 Please check ayah 13:24 for complete tafsir.
وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ
📘 Please check ayah 13:24 for complete tafsir.
وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
📘 Please check ayah 13:24 for complete tafsir.
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ
📘 Please check ayah 13:24 for complete tafsir.
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
📘 ২০-২৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা ঐ মহান ব্যক্তিদের প্রশংসনীয় গুণাবলীর বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁদের ভাল পরিণামের খবর দিচ্ছেন যারা আখেরাতে বেহেশতের মালিক হবেন এবং দুনিয়াতেও যাদের পরিণাম হবে অতি উত্তম। তাঁরা মুনাফিকদের মত নন যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করে। এটা মুনাফিকদেরই স্বভাব যে, তারা কোন ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করবে, ঝগড়ায় কটু বাক্য প্রয়োগ করবে, কথা মিথ্যা বলবে এবং আমানতে খিয়ানত করবে। আর ঐ উত্তম গুণের অধিকারী মুমিনমু’মিনদের স্বভাব এই যে, তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখেন, তাদের সাথে সদাচরণ করেন, অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র লোকদেরকে দান করেন এবং সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ ক্রমেই এগুলো করে থাকেন।আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ ‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে’ অর্থাৎ তারা সৎ কাজ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করে এবং অসৎ কার্য পরিত্যাগ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করেই। তাঁরা আখেরাতের কঠোর হিসাবকে ভয় করেন। এ জন্যেই তারা মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকেন, সৎ কার্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন, মধ্যম পথকে তারা কোন সময়ই পরিত্যাগ করেন না। সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তাআ’লার প্রতি লক্ষ্য রাখেন। হারাম কাজ এবং আল্লাহর নাফরমানীর দিকে প্রবৃত্তি তাদেরকে আকর্ষণ করলেও তারা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আখেরাতের সওয়াবের কথা স্মরণ করে এবং আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত থাকেন। তারা নামাযের পূর্ণরূপে হিফাযত করেন। রুকু ও সিজদার সময় শরীয়ত অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে থাকেন। আল্লাহ যাদেরকে দান করতে বলেছেন তাদেরকে তারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে দান করে থাকেন। দরিদ্র, অভাবী ও মিসকীন নিজেদের মধ্যকার হোক বা দূর সম্পৰ্কীয় হোক, তাদের বরকত থেকে তারা বঞ্চিত হন না। গোপনে ও প্রকাশ্যে, সময়ে-অসময়ে তারা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকেন। তারা মন্দকে ভাল দ্বারা এবং শক্রতাকে বন্ধুত্ব দ্বারা দূরীভূত করে থাকেন। কেউ তাঁদের সাথে অসদাচরণ করলে তারা তার সাথে সদাচরণ করেন। তাঁদের সামনে কেউ মস্তক উত্তোলন করলে তারা মস্তক অবনত করেন। তাঁরা অন্যদের যুলুম সহ্য করে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করেন। কুরআন কারীমের শিক্ষা হচ্ছেঃ “মন্দকে ভাল দ্বারা দূরীভূত কর, তাহলে তোমার মধ্যে ও তার মধ্যে যে শত্রুতা ছিল তা দূর হয়ে গিয়ে এমন হবে যে, সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ধৈর্যশীল ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিই এই মর্যাদা লাভ করে থাকে।” এই রূপ লোকদের জন্যেই উত্তম পরিণাম রয়েছে।সেই উত্তম পরিণাম এবং উত্তম ঘর হচ্ছে জান্নাত, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জান্নাতের একটি প্রাসাদের নাম ‘আদন’। তাতে মিনার ও কক্ষ রয়েছে। তাতে রয়েছে পাঁচ হাজার দরজা। প্রত্যেক দরজার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা রয়েছেন। ঐ প্রাসাদটি নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের জন্যে নির্দিষ্ট। যহাক (রঃ) বলেন যে, এটা জান্নাতের শহর। এতে থাকবেন নবীগণ, শহীদগণ এবং হিদায়াতের ইমামগণ। তাদের আশে পাশে অন্যান্য লোকেরা থাকবেন। ওর চতুর্দিকে অন্যান্য বেহেশত রয়েছে। ওখানে তারা তাঁদের প্রিয়জনকেও তাদের সাথে দেখতে পাবেন। তাদের সাথে থাকবেন তাঁদের মুমিনমু’মিন পিতা, পিতামহ, পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ইত্যাদি আত্মীয় স্বজন। তারা সুখে শান্তিতে অবস্থান করবেন এবং তাঁদের চক্ষুগুলি ঠাণ্ডা হবে। এমন কি তাদের মধ্যে কারো কারো আমল যদি তাকে ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌছাবার যোগ্যতা নাও রাখে, তবুও আল্লাহ তাআ’লা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে” এবং তাদের সন্তানরা ঈমানের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তানদেরকে মিলিত করবো।” (৫২: ২১)।তাঁদেরকে মুবারকবাদ ও সালাম জ্ঞাপনের জন্যে সদাসর্বদা প্রত্যেকটি দরজা দিয়ে ফেরেশতাগণ যাতায়াত করবেন। এটাও আল্লাহ তাআ’লার একটি নিয়ামত। এর ফলে তাঁরা সব সময় খুশী থাকবেন এবং সুসংবাদ শুনবেন। এটা ফেরেশতাদের সৌভাগ্যের কারণ যে, তাঁরা শান্তির ঘরে নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সংস্পর্শে থাকতে পাবেন। এতে তারা নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম কে জান্নাতে যাবে তা তোমরা জান কি?” সাহাবীগণ উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) ভাল জানেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আল্লাহও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে যাবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যারা দুনিয়ার ভোগ বিলাস হতে দূরে ছিল, কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতো। যাদের মনের বাসনা মনেই রয়ে গিয়েছিল এমতাবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেছিল। রহমতের ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ “যাও, তাদেরকে মুবারকবাদ দাও।” ফেরেশতাগণ বলবেনঃ “হে আল্লাহ! আমরা আপনার আকাশের অধিবাসী উত্তম মাখলুক। আপনি কি আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমরা গিয়ে তাদেরকে সালাম করবো এবং মুবারকবাদ জানাবো?” উত্তরে আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ “এরা হচ্ছে আমার সেই বান্দা যারা শুধু আমারই ইবাদত করতো, আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করে নাই, পার্থিব সুখ-সম্ভোগ হতে বঞ্চিত ছিল এবং কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করেছিল। তাদের কোন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় নাই। এতত্সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছে ও কৃতজ্ঞ থেকেছে।” তখন ফেরেশতারা তাড়াতাড়ি অতি আগ্রহের সাথে তাদের দিকে দৌড় দিবেন। এদিক ওদিকের প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং সালাম করে তাদেরকে মুবারকবাদ জানাবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বপ্রথম যে সব লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে তারা হচ্ছে দরিদ্র মুহাজিররা। তারা কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে পতিত ছিল। যখনই তাদেরকে যে হুকুম করা হয়েছে তখনই তারা তা পালন করেছে। বাদশাহদের কাছে তাদের প্রয়োজন হতো। কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাদের প্রয়োজন পুরা হয় নাই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা জান্নাতকে সামনে আসতে বলবেন। জান্নাত তখন সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআ’লার সামনে হাজির হবে। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা ঘোষণা করবেনঃ “আমার যে সব বান্দা আমার পথে জিহাদ করতো, আমার পথে যাদেরকে কষ্ট দেয়া হতো তারা আজ কোথায়? তোমরা এসো, বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাও।” ঐ সময় ফেরেশতারা আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন এবং আরয করবেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরা কারা যাদেরকে আপনি আমাদের উপরও ফযীলত দান করলেন?” মহামহিমান্বিত আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ “এরা আমার ঐ বান্দা যারা আমার পথে জিহাদ করেছে এবং আমার পথে কষ্ট সহ্য করেছে।” ফেরেশতারা তখন তড়িৎ গতিতে এদিকে ওদিকের দরজা দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যাবেন, তাদেরকে সালাম করবেন এবং মুবারকবাদ জানিয়ে বলবেনঃ “আপনারা আপনাদের ধৈর্য ধারনের কতই না উত্তম বিনিময় লাভ করেছেন।” আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ “মু'মিন বেহেশতের মধ্যে নিজের আসনের উপর আরামে অত্যন্ত শান শওকতের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। সেবক দল সারি সারি ভাবে এদিকে ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকবে। যে দরজার খাদেমের কাছে ফেরেশতা অনুমতি চাইবেন, তিনি তাঁর পার্শ্ববর্তী খাদেমকে বলবেন। তিনি আবার অন্যকে বলবেন এবং তিনি আবার অপরকে বলবেন। শেষ পর্যন্ত মুমিনমু’মিনকে জিজ্ঞেস করা হবে। মুমিনমু’মিন আসার অনুমতি দেবে। এইভাবে একে অপরের কাছে পয়গাম পৌছাবে এবং সর্বশেষ খাদেম ফেরেশতাকে অনুমতি দেবে ও দরজা খুলে দেবে। ফেরেশতা তখন প্রবেশ করে সালাম করতঃ চলে যাবেন।অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক বছরের মাথায় শহীদদের কবরের কাছে আসতেন এবং বলতেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছে বলে তোমাদের প্রতি শান্তি, কতই উত্তম এই পরিণাম।” এইরূপই হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উসমান (রাঃ) করতেন।
وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ
📘 মুমিনমু’মিনদের গুণাবলী উপরে বর্ণনা করার পর এখানে ঐ হতভাগ্যদের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে, যারা মুমিনমু’মিনদের বিপরীত স্বভাব বিশিষ্ট। তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদার প্রতি না কোন ভ্রুক্ষেপ করতো, না তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতো, না আল্লাহ তাআ’লার আদেশ নিষেধের প্রতি কোন খেয়াল রাখতো। এরা হচ্ছে অভিশপ্ত দল এবং এদের পরিণাম বড়ই মন্দ। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন তারা কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন কোন ওয়াদা করে তখন খেলাফ করে এবং যখন তাদের কাছে কোন আমানত রাখা হয় তখন তারা খেয়ানত করে।” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছেঃ “যখন কোন চুক্তি করে তখন তা ভঙ্গ করে, যখন ঝগড়া করে তখন কটু ও অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ করে।” এই শ্রেণীর লোক আল্লাহ তাআ’লার করুণা লাভ করবে না। এবং এদের পরিণাম হবে খুবই মন্দ। এরা হচ্ছে জাহান্নামী দল।(আরবি) এই আয়াতের ব্যাপারে আবুল আ’লিয়া (রঃ) বলেন যে, মুনাফিকদের মধ্যে ছ'টি অভ্যাস প্রকাশ পায় যখন তারা বিজয়ী হয়। অভ্যাসগুলি হচ্ছেঃ মিথ্যা কথা বলা,ওয়াদা খেলাফ করা, আমানতের খিয়ানত করা, আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করা, আল্লাহ তাআ’লা যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন তা অক্ষুন্ন না রাখা এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিশৃংখলা ও অশান্তি ছড়িয়ে দেয়া। আর যখন তারা বিজিত হয় তখন তাদের তিনটি স্বভাব প্রকাশ পায়ঃ যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।
اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ
📘 এখানে আল্লাহ তাআ’লা বর্ণনা করেছেন যে, যার জীবিকায় তিনি প্রশস্ত করার ইচ্ছা করেন তা তিনি করতে পারেন। আবার যার জীবিকা সংকীর্ণ করার ইচ্ছা করেন সেটাতেও তিনি সক্ষম। এই সব কিছু হিকমত ও ইনসাফের সাথেই হচ্ছে। কাফিররা দুনিয়াকেই আশ্রয় স্থল মনে করে নিয়েছে। তাই তারা আখেরাত থেকে রয়েছে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা মনে করে নিয়েছে যে, এখানকার সুখ স্বাচ্ছন্দ্যই আসল ও ভাল। অথচ প্রকৃত পক্ষে এখানে তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে মাত্র এবং ধীরে ধীরে তাদেরকে পাকড়াও করারই সূচনা হচ্ছে। কিন্তু তাদের কোন অনুভূতিই নেই। মু'মিনরা যে আখেরাত লাভ করবে তার তুলনায় এই দুনিয়া উল্লেখ যোগ্যই নয়। এটা খুবই অস্থায়ী ও নগণ্য জিনিষ। পক্ষান্তরে আখেরাত চিরস্থায়ী ও উত্তম জিনিষ। কিন্তু সাধারণতঃ মানুষ আখেরাতের উপর দুনিয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বানু ফাহর গোত্রের লোক মুসতাওরিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াটা ঠিক এই রূপ যেমন তোমাদের কেউ এই অঙ্গুলীটি সমুদ্রের পানিতে ডুবিয়ে দেয়, অতঃপর ঐ অঙ্গুলীতে কতটুকু পানি উঠেছে তা তো সে দেখতেই পায়।” ঐ সময় তিনি তাঁর শাহাদত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেছিলেন। (অর্থাৎ তার অঙ্গুলীর পানিটুকু সমুদ্রের পানির তুলনায় যেমন, দুনিয়াও আখেরাতের তুলনায় তেমন)। (ইমাম মুসলিম (রঃ এ হাদীসটি স্বীয় ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, একদা পথে একটি ছোট কান বিশিষ্ট মৃত ছাগলের বাচ্চাকে পড়ে থাকতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মন্তব্য করেনঃ “এই বকরীর বাচ্চাটি যাদের ছিল তাদের কাছে এর মূল্য যেমন, আল্লাহ তাআ’লার কাছে এই দুনিয়াটার মূল্য এর চেয়েও বেশি নগণ্য।”
وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ
📘 Please check ayah 13:29 for complete tafsir.
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
📘 Please check ayah 13:29 for complete tafsir.
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ
📘 ২৭-২৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা মুশরিকদের উক্তি সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তারা বলেঃ পূর্ববর্তী নবীদের মত এই নবী (হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আমাদের কথা মত কোন মুজিযা উপস্থাপন করেন না কেন? এ সম্পর্কে পূর্ণ আলোচনা ইতিপূর্বে কয়েকবার হয়ে গেছে যে, আল্লাহর এ ক্ষমতা তো আছেই, কিন্তু এর পরেও যদি এরা ঈমান না আনে তবে তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।হাদীসে এসেছেঃ মক্কার লোকেরা যখন হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) বললো যে, যদি তিনি সাফা পাহাড়কে সোনায় পরিণত করতে পারেন, মক্কা ভূমিতে নদী প্রবাহিত করতে পারেন এবং পাহাড়ী যমীনকে চাষযোগ্য জমিতে পরিবর্তিত করতে পারেন তবে তারা ঈমান আনবে। তখন আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীর (সঃ) কাছে ওয়াহী পাঠালেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমি তাদেরকে এগুলো প্রদান করবো, কিন্তু এরপরেও যদি তারা ঈমান না আনে তবে আমি তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করবো যা ইতিপূর্বে কারো উপর প্রদান করি নাই। যদি তুমি চাও তবে এটাই করি, নচেৎ তুমি তাদের জন্যে তাওবা ও রহমতের দরজা খোলা রাখতে পার।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয় পন্থাটি পছন্দ করলেন।এটা সত্য কথাই যে, পথ প্রদর্শন করা ও পথ ভ্রষ্ট করা আল্লাহ তাআ’লারই কাজ। ওটা কোন মু'জিযা দেখার উপর নির্ভরশীল নয়। বেঈমানদের জন্যে মু’জিযা দেখানো ও ভয় প্রদর্শন করা অর্থহীন। যার উপর শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে, সে সমস্ত নিদর্শন দেখালেও ঈমান আনবেনা। তবে শাস্তি দেখে নেয়ার পর তো পুরোপুরি ঈমানদার হয়ে যাবে, কিন্তু তখনকার ঈমান আনয়ন নিষ্ফল হবে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি আমি তাদের উপর ফেরেশতা অবতীর্ণ করতাম এবং তাদের সাথে মৃতেরা কথা বলতে, আর তাদের কাছে আমি সমস্ত গুপ্ত জিনিস প্রকাশ করে দিতাম তবুও তারা ঈমান আনতো না, তবে আল্লাহ যাকে চান সেটা অন্য কথা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।” এ জন্যেই আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তাদেরকেই সুপথ প্রদর্শন করেন যারা তাঁর অভিমুখী। যাদের অন্তরে ঈমান জমজমাট হয়ে গেছে, যাদের অন্তর আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে, তারা তাঁর যিকর দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে থাকে, তারা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। বাস্তবিকই আল্লাহর যিকর মনের প্রশান্তির কারণই বটে। এটা ঈমানদার ও সৎ লোকদের জন্যে খুশী ও চক্ষু ঠাণ্ডা হওয়ার কারণ। তাদের পরিণাম ভাল। তারা মুবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (আরবি) হাবশী ভাষায় জান্নাতের ভূমিকে বলে। আর সাঈদ ইবনু মাসজু’ (রঃ) বলেন যে, হিন্দী ভাষায় (আরবি) হচ্ছে একটি জান্নাতের নাম। অনুরূপভাবে সুদ্দী (রঃ) ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (আরবি) হচ্ছে জান্নাত। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা যখন জান্নাত সৃষ্টি করেন এবং তার থেকে ফারেগ হন তখন তিনি (আরবি) এই কথাটি বলেন।শাহ্র ইবনু হাউশির (রঃ) বলেন যে, জান্নাতের মধ্যে একটি গাছের নামও তূবা। সমস্ত জান্নাতে এর শাখা গুলি ছড়িয়ে রয়েছে। প্রত্যেক ঘরে এর শাখা বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা এটাকে নিজের হাতে রোপণ করেছেন। মুক্তার দানা দিয়ে তিনি ওটা জন্মিয়েছেন এবং আল্লাহর হুকুমেই ওটা বর্ধিত হয়েছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে। ওরই মূল হতে জান্নাতী মধু, সূরা, পানি এবং দুধের নহর প্রবাহিত হয়। (এটা ইবন্য জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীর বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে মারফূ’ রূপে বর্ণিত আছে যে, জান্নাতে তূবা বা নামক একটি বৃক্ষ রয়েছে যা একশ’ বছরের পথের দুরত্ব ব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এরই গুচ্ছ হতে জান্নাতীদের পোষাক বের হয়ে থাকে।হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলেঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যে আপনাকে দেখেছে এবং আপনার উপর ঈমান এনেছে তাকে মুবারকবাদ।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, তাকে মুবারকবাদ তো বটেই, তবে দ্বিগুণ মুবারকবাদ ঐ ব্যক্তিকে যে আমাকে দেখে নাই, অথচ আমার উপর ঈমান এনেছে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)একটি লোক জিজ্ঞেস করলো: “তূবা কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তূবা হচ্ছে একটি জান্নাতী গাছ যা একশ’ বছরের পথ পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। জান্নাতীদের পোষাক ওরই শাখা থেকে বের হয়ে থাকে।” হযরত সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতের মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যে, সওয়ার একশ’ বছর পর্যন্ত ওর ছায়ায় চলতে থাকবে তবুও তা শেষ হবে না।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, চলার গতিও দ্রুত এবং সওয়ারীও দ্রুতগামী। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারীতে (আরবি) (এবং সম্প্রসারিত ছায়া) এই আয়াতের তাফসীরেও এটাই রয়েছে। অন্য হাদীসে আছে সত্তর বছর বা একশ’ বছর।ঐ গাছটির নাম হচ্ছে ‘শাজারাতুল খুলদ’ (চিরস্থায়ী গাছ)। সিদরাতুল মুনতাহার আলোচনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ওর একটি শাখার ছায়ায় একজন সওয়ার একশ’ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং শত শত আরোহী ওর একটি শাখার নীচে অবস্থান করতে পারে। তাতে সোনার ফড়িং রয়েছে। ওর ফলগুলি বড় বড় মটকা বা মৃৎ পাত্রের সমান।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবু উমামা আল বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের যে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে তাকেই ‘তূবা’ বা বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তার জন্যে ওর শাখাগুলি খুলে দেয়া হবে। সে তখন ওগুলির যেটা ইচ্ছা সেটাই গ্রহণ করবে। ইচ্ছা করলে সাদাটা নিবে, ইচ্ছা করলে নিবে লালটা, ইচ্ছা করলে হলদেটা নিবে এবং ইচ্ছা হলে কালোটা নিবে। ওগুলি হবে অত্যন্ত সুন্দর, নরম ও উত্তম।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা তৃবা গাছকে হুকুম করবেনঃ “আমার বান্দাদের জন্যে তুমি উত্তম জিনিসগুলি ফেলতে থাকো”। তখন তা হতে ঘোড়া ও উট বর্ষিত হতে শুরু করবে। ওগুলি সুন্দর সুন্দর সাজে সজ্জিত থাকবে, জ্বিন, লাগাম কষা থাকবে ইত্যাদি।ইবনু জারীর (রঃ) এখানে অহাব ইবনু মুনাব্বাহ (রঃ) প্রমুখাৎ একটি অতি বিস্ময়কর ও অদ্ভূদ ‘আসর' এনেছেন। অহাব ইবনু মুনাববাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জান্নাতে তূবা বা নামক একটি গাছ রয়েছে যার ছায়ায় আরোহী একশ’ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে, তবুও তা শেষ হবে না। তার সতেজতা ও শ্যামলতা উন্মুক্ত বাগানের ন্যায়। ওর পাতাগুলি অতি চমৎকার। ওর শাখা গুলি আম্বর, ওর কঙ্করগুলি ইয়াকূত, ওর মাটি কপূর, ওর কাদা মিশক। ওর মূল হতে মদ্যের, দুধের এবং মধুর নহর প্রবাহিত হচ্ছে। ওর নীচে জান্নাতীদের মজলিস অনুষ্ঠিত হবে। জান্নাতীরা ওর নীচে উপবিষ্ট থাকবে এমতাবস্থায় ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উষ্ট্রীর পাল নিয়ে আগমন করবেন। উষ্ট্ৰীসমূহের যিঞ্জীরগুলি সোনা দ্বারা নির্মিত হবে। ওগুলির চেহারা প্রদীপের ন্যায় উজ্জ্বল হবে। ওদের ললাম রেশমের মত নরম হবে। ওদের উপর ইয়াকূতের মত গদি থাকবে যাতে সোনা জড়ানো থাকবে। ওর উপর রেশমের ঝুল থাকবে। ফেরেশতাগন ঐ উষ্ট্রীগুলি ঐ জান্নাতী লোকদের সামনে পেশ করবেন এবং বলবেনঃ “এই সওয়ারীগুলি আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহ আপনাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তারা তখন ঐ উষ্ট্ৰীগুলির উপর সওয়ার হয়ে যাবে। উষ্ট্রীগুলির চলন গতি হবে পক্ষীর ন্যায় দ্রুত। জান্নাতীরা একে অপরের সাথে মিলিতভাবে চলবে এবং পরস্পর কথা বলতে বলতে যাবে। এক উন্ত্রীর কানের সাথে অপর উন্ত্রীর কান মিলিত হবে না। উষ্ট্ৰীগুলি পূর্ণ আনুগত্যের সাথে চলবে। পথে যে গাছ পড়বে তা আপনা আপনি সরে যাবে, যেন কেউ তার সাথী থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে। এই ভাবে তারা পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তাআ’লা নিজের চেহারার উপর হতে পর্দা সরিয়ে ফেলবেন। তারা (জান্নাতীরা) তাদের প্রতিপালকের চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি এবং মহিমা ও মর্যাদা আপনারই প্রাপ্য। তাদের এই কথার উত্তরে আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি শান্তি, আমার থেকেই শান্তি এবং আমার করুণা ও প্রেম তোমাদের প্রাপ্য হয়ে গেছে। আমার ঐ বান্দাদেরকে মুবারকবাদ, যারা আমাকে না দেখেই ভয় করেছে এবং আমার নির্দেশ মেনে চলেছে।” জান্নাতীরা তখন বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার যথাযোগ্য ইবাদত করতে পারিনি এবং পুরোপুরিভাবে আপনাকে মর্যাদা দিতে পারিনি। সুতরাং আমাদেরকে আপনার সামনে সিজদা করার অনুমতি দিন।” আল্লাহ তাআ’লা তাদের একথার জবাবে বলবেনঃ “এটা পরিশ্রমের জায়গা নয় এবং ইবাদতেরও জায়গা নয়। এটা তো শুধু সুখ শান্তি ও ভোগ বিলাসের জায়গা। ইবাদতের কষ্ট শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু মজা উপভোগ ও আমোদ প্রমোদের দিন এসেছে। যা ইচ্ছা চাও, পাবে। তোমাদের যে-ই যা চাইবে তাকে আমি তাই প্রদান করবো।” সুতরাং তারা চাইবে। যে সবচেয়ে কম চাইবে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি দুনিয়ায় যা সৃষ্টি করেছিলেন, যাতে আপনার বান্দা হায় হায় করেছিল, আমি চাই যে, দুনিয়ার সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত দুনিয়ায় আপনি যত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন আমাকে তা সবই প্রদান করুন। আল্লাহ তাআ’লা তখন বলবেনঃ তুমি কিছুই চাও নাই। নিজের মর্যাদার তুলনায় তুমি খুবই কম চেয়েছ। আমার দানের কোন কমি আছে কি? আচ্ছা, তুমি যা চাইলে তাই দিচ্ছি।” তারপর তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেনঃ “আমার বান্দাদের মনে যে জিনিষের কোন দিন কোন আকাখাও জাগেনি এবং তারা কখনো কল্পনাও করেনি, তাদেরকে তাই প্রদান কর।” তখন তাদেরকে তা দেয়া হবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়ে যাবে। তারা সেখানে যা পাবে তা হচ্ছেঃ দ্রুতগামী ঘোড়া, প্রতি চার জনের জন্যে মণিমাণিক্যের আসন, প্রতি আসনের উপর সোনার একটা ডেরা এবং প্রতিটি ডেরায় জান্নাতী বিছানা। বিছানায় বড় বড় চক্ষু বিশিষ্টা দুটো করে হূর থাকবে। প্রত্যেক হুর জান্নাতী পোষাক পরিধান করে থাকবে। তাতে জান্নাতের সমস্ত রং থাকবে এবং সমস্ত সুগন্ধি থাকবে। ঐ ডেরা বা তাঁবুর বাহির থেকে তাদের চেহারা এতো উজ্জ্বল দেখাবে যে, যেন তারা বাইরেই বসে আছে। তাদের পায়ের গোছার ভিতরের মজ্জা বাহির হতে দেখতে পাওয়া যাবে। মনে হবে যেন লাল মাণিক্যের ডোরা পরিয়ে দেয়া হয়েছে, তা উপর থেকে দেখা যাবে। প্রত্যেকে একে অপরের উপর নিজের মর্যাদা এইরূপ মনে করবে যেই রূপ সূর্যের মর্যাদা থাকে পাথরের উপর। জান্নাতীরা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের সাথে প্রেমালাপে লিপ্ত হয়ে পড়বে। তারা দুজন তাকে দেখে বলবেঃ “আল্লাহর শপথ! আমরা কল্পনাও করি নাই যে, তিনি আমাদেরকে আপনার মত স্বামী দান করবেন। এরপর আল্লাহ তাআ’লার নির্দেশক্রমে ঐরূপ সারিবদ্ধভাবে সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে তারা ফিরে যাবে এবং নিজ নিজ মনযিলে পৌঁছে যাবে। সুবহানাল্লাহ! পরম দয়ালু, দাতা আল্লাহ তাআ’লা তাদের জন্যে কতইনা নিয়ামত মওজুদ করে রেখেছেন।সেখানে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে উঁচু উঁচু অট্টালিকা থাকবে, ওগুলি নির্মিত হবে খাঁটি মণি মুক্তা দ্বারা। দরজাগুলি হবে সোনার তৈরী। ওর মধ্যেকার আসনগুলি হবে মণিমাণিক্য দ্বারা নির্মিত, বিছানাগুলি হবে নরম ও মোটা রেশমের তৈরী। ওর মিম্বরগুলি হবে নূরের তৈরী যার ঔজ্জ্বল্য সূর্যের ঔজ্জ্বল্যকেও হার মানাবে। তাদের প্রাসাদ থাকবে ইল্লীনের উপর। তা নির্মিত হবে মণিমাণিক্য দ্বারা তা এতো উজ্জ্বল হবে যে, ওর ঔজ্জ্বল্যে চক্ষু ঝলসে যাবে। কিন্তু আল্লাহর করুণার কারণে চোখের জন্যে তা সহনীয় হয়ে যাবে। যে প্রাসাদগুলি লাল ইয়াকূতের হবে সেগুলিতে সবুজ রেশমী বিছানা বিছানো থাকবে। আর যেগুলি হলদে ইয়াকূতের হবে ওগুলির বিছানা হবে লাল মখমল, যাতে পান্না ও সোনা জড়ানো থাকবে। ওর আসনগুলির পায়া হবে মণিমুক্তার। ওর উপর মুক্তারই ছাদ হবে। ওর শিখর হবে প্রবালের। তাদের সেখানে পৌছার পূর্বেই আল্লাহর প্রদত্ত উপঢৌকন তথায় পৌঁছে যাবে। সাদা ইয়াকূতী ঘোড়া সেবকদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, যাদের সামনে রৌপ্য বসানো থাকবে। তাদের আসনের উপর উচ্চমানের নরম ও মোটা রেশমের গদি বিছানো থাকবে। তারা এই সব ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে আড়ম্বরের সাথে বেহেশতের দিকে রওয়ানা হবে এবং গিয়ে দেখবে যে, তাদের ঘরের পার্শ্বে আলোকময় মিম্বরগুলির উপর ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনার জন্যে বসে রয়েছেন। তাঁরা তাদেরকে আঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা করবেন এবং মুবারকবাদ জানাবেন। আর তাদের সাথে করমর্দন করবেন। তারপর তারা নিজেদের ঘরে প্রবেশ করবে এবং সেখানে আল্লাহর নিয়ামতরাশি বিদ্যমান পাবে। নিজেদের প্রাসাদের পার্শ্বে তারা সুদৃশ্য দু’টি জান্নাত দেখতে পাবে এবং ও দু’টি ফলে ফুলে ভরপুর থাকবে। ঐ দু'টি জান্নাতে দু’টি নহর পূর্ণ গতিতে প্রবাহিত হবে। সেখানে সর্ব প্রকারের সুস্বাদু ফল থাকবে এবং তাঁবুতে পবিত্ৰাত্মা সুদৃশ্য পর্দানশীন হুর থাকবে। যখন এই জান্নাতীরা সেখানে পৌঁছে সুখে শান্তিতে অবস্থান করবে তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদেরকে সম্বোধন করে বলবেনঃ “হে আমার প্রিয় বান্দাগণ! তোমরা আমার ওয়াদা সত্যরূপে পেয়েছ কি? তোমরা আমার পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হয়ে খুশী হয়েছ কি?” তারা উত্তরে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! হাঁ, আমরা খুশী হয়েছি। আমাদের খুশীর কোন ইয়ত্তা নেই। আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।” আল্লাহ তাআ’লা তখন বলবেনঃ “যদি আমার সন্তুষ্টি না থাকতো তবে আমি আমার এই মেহমান খানায় তোমাদেরকে কি করে প্রবেশ করিয়েছি? কি করে আমি তোমাদেরকে আমার দর্শন দান করেছি। আমার ফেরেশতারা তোমাদের সাথে করমর্দন করেছে কেন? তোমরা সন্তুষ্ট থাকো। সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস কর। আমি তোমাদেরকে মুবারকবাদ জানাই। তোমরা আরাম আয়েশ, সুখ শান্তি ও ভোগ-বিলাসে লিপ্ত থাকো। আমার নিয়ামতরাজি কমে যাওয়া ও শেষ হওয়ার নয়।” তখন তারা বলবেঃ “একমাত্র আল্লাহ তাআ’লাই প্রশংসার যোগ্য, তিনি আমাদের দুঃখ ও চিন্তা দূর করে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে এমন জায়গায় পৌঁছিয়েছেন যেখানে আমাদের দুঃখ ও কষ্ট বলতে কিছুই নেই। এটা তারই অনুগ্রহ। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (এ আর টি বড়ই বিস্ময়কর এবং খুবই গরীবও বটে। তবে এর কিছু শাহেদও বিদ্যমান রয়েছে। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের আসটি বর্ণিত হলো)সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সর্বশেষে জান্নাতে যাবে তাকে আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ “আমার কাছে চাও।” সে চাইতে থাকবে এবং আল্লাহ তাআ’লা দিতে থাকবেন। শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থনা পূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার কোন চাহিদাই আর বাকী থাকবে না। তখন আল্লাহ নিজেই তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেনঃ “এটা চাও, ওটা চাও।” সে তখন চাইবে ও পাবে। তখন আল্লাহ তাআ’লা তাকে বলবেনঃ “এ সব কিছু আমি তোমাকে দিয়েছি এবং এই পরিমাণই আরো দশবার দিয়েছি।”হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষ এবং জ্বিন সবাই যদি একটি ময়দানে দাঁড়িয়ে যায় এবং আমার কাছে প্রার্থনা করে ও চায়, আর আমি প্রত্যেকেরই সমস্ত চাহিদা পূরণ করে দিই, তবে আমার সাম্রাজ্যের ততটুকুই কমবে যতটুকু সমুদ্রের পানি কমে যখন তাতে সুঁই ডুবিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। (অর্থাৎ সমুদ্রের পানিতে পুঁই ডুবিয়ে উঠিয়ে নিলে তার অগ্রভাগে যেটুকু পানি উঠে, তাতে সমুদ্রের যেটুকু পানি কমে, আল্লাহ তাআ’লার ধনভান্ডারের ততটুকুই কমে অর্থাৎ কিছুই কমে না)।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে দীর্ঘভাবে বর্ণিত হয়েছে)খা’লিদ ইবনু মা’দান (রঃ) বলেনঃ জান্নাতের একটি গাছের নাম তূবা। তাতে স্তন রয়েছে, যা থেকে জান্নাতীদের শিশুরা দুধ পান করে থাকে। যে গর্ভবতী নারীর পেটের সন্তান অপূর্ণ অবস্থায় পড়ে গিয়েছে সেই সন্তান কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত জান্নাতের নহরে অবস্থান করে। অতঃপর তাকে চল্লিশ বছর বয়স্ক করে উঠানো হবে এবং সে পিতা মাতার সাথে বেহেশতে থাকবে। (এটা ইবনু আবি হা’তিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)
وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
📘 Please check ayah 13:4 for complete tafsir.
كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَا أُمَمٌ لِتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ হে মুহাম্মদ! যেমন আমি তোমাকে এই উম্মতের নিকট পাঠিয়েছি যে, তুমি তাদেরকে আমার কালাম পাঠ করে শুনাবে, তেমনই তোমার পূর্বে অন্যান্য রাসূলদেরকেও আমি পূর্ববর্তী উম্মতদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তারাও নিজ নিজ উম্মতের কাছে আমার পয়গাম পেীছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। অনুরূপভাবে তোমাকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। সুতরাং তোমার মন খারাপ করা উচিত নয়। হাঁ, তবে এই মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের উচিত তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণামের প্রতি লক্ষ্য করা যে, কিভাবে আল্লাহ তাদেরকে তছনছ করে দিয়েছিলেন! আর তোমাকে অবিশ্বাস করা তো আমার কাছে তাদেরকে অবিশ্বাস করা অপেক্ষা বেশী অপছন্দনীয়। এখন তাদের উপর কিরূপ শাস্তি বর্ষিত হয় তা তারা দেখতেই পাবে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি) (১৬: ৬৩) এবং আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ (হে নবী, সঃ)! তোমার পূর্বে রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল, অতঃপর তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও কষ্ট দেয়ার উপর, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার সাহায্য এসে গিয়েছিল, আর (জেনে রেখোঁরেখো যে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন নেই এবং অবশ্যই তোমার কাছে রাসূলের খবর এসে গেছে।” (৬: ৩৪) ভাবার্থ হচ্ছেঃ তাদের এটা লক্ষ্য করা উচিত যে, কিভাবে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর অনুগত লোকদেরকে সাহায্য করেছিলেন এবং কি ভাবে তাদেরকে জয়যুক্ত করেছিলেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার কওমের প্রতি লক্ষ্য কর যে, তারা রহমানকে (দয়াময় আল্লাহকে) অস্বীকার করছে। তারা আল্লাহর এই বিশেষণ ও নামকে মানছেই না। হুদায়বিয়ার সন্ধিপত্র লিখবার সময় মুশরিকরা বাধা দিয়ে বলেঃ “আমরা (আরবি) লিখতে দিবো না। রহমান এবং রাহীম কি তা আমরা জানি না।” পূর্ণ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা আল্লাহ বলে তাঁকে ডাকো অথবা রহমান বলে ডাকো, তিনি সমস্ত উত্তম নামের অধিকারী।” (১৭: ১১০)হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা যে দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছো তিনিই আমার প্রতিপালক। তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি। আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ এর হকদার নয়।
وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَلْ لِلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا ۗ أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنْ لَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا ۗ وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُمْ بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِنْ دَارِهِمْ حَتَّىٰ يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
📘 এখানে আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের প্রশংসা করছেন যে, যদি পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের কোনটার সাথে পাহাড় স্বীয় স্থান থেকে সরে গিয়ে থাকতো, যমীন বিদীর্ণ হয়ে থাকতো এবং মৃত কথা বলে থাকতো, তবে এই কুরআনই তো এ কাজের বেশী যোগ্য ছিল। কেননা, এটা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এতে তো এই মু’জিযা রয়েছে যে, সমস্ত দানব ও মানব মিলিত হয়েও এর সূরার মত একটি সূরাও রচনা করতে পারে নাই। তথাপি মুশরিকরা এই কুরআনকেও অস্বীকার করছে। তা হলে সব দায়িত্ব আল্লাহ তাআ’লার উপরই অর্পন করে দাও। তিনি সবকিছুরই ম’লিক। সবই তাঁর ইখতিয়ারভুক্ত। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। তিনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। এটা স্মরনযোগ্য বিষয় যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলির উপরও কুরআনের প্রয়োগ হয়ে থাকে। কেননা, এটা সবটা থেকেই মুশতাক বা নির্গত। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত দাউদের (আঃ) উপর কুরআনকে এতো সহজ করে দেয়া হয়েছিল যে, তাঁর নির্দেশক্রমে সওয়ারী কষা হতো এবং ওটা প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তিনি কুরআন খতম করে ফেলতেন। তিনি স্ব হস্তের উপার্জন ছাড়া কিছুই খেতেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) একাকী তাখরীজ করেছেন)সুতরাং এখানে কুরআন দ্বারা যাবুরকে বুঝানো হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ তবে কি মুমিনমু’মিনদের এখনও এ বিশ্বাস হয়নি যে, সমস্ত মানুষ ঈমান আনবে না? তাদের কি এ বিশ্বাসও হয়নি যে, আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছা হলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ঈমান আনয়ন করতো। তারা আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে কি? এই কুরআনের পরে আর কোন মু’জিযার প্রয়োজন আছে কি? এর চেয়ে উত্তম, এর চেয়ে স্পষ্ট, এর চেয়ে পরিষ্কার এবং এর চেয়ে বেশি মনকে আকর্ষণকারী আর কোন কালাম হবে? এটা এমনই এক গ্রন্থ যে, যদি এটা বড় বড় পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ হতো তবে সেগুলি আল্লাহর ভয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতো। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক নবীকে এইরূপ জিনিস দেয়া হয়েছে যে, লোকেরা ওর উপর ঈমান এনেছে। আমার এই রূপ জিনিস হচ্ছে সেই ওয়াহী যা আল্লাহ তাআ’লা আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা রাখি যে, সমস্ত নবী অপেক্ষা আমার অনুগামী বেশি হবে।” ভাবার্থ এই যে, সমস্ত নবীর মু'জিযা তাঁদের বিদায়ের সাথে সাথেই বিদায় হয়ে গেছে। কিন্তু তার মু'জিযা তত দিন শেষ হবে না যতদিন দুনিয়া থাকবে। না এর বিষ্ময়কর বিষয়গুলি শেষ হবে, অধিক পঠনের কারণে এটা (কুরআন কারীম) পুরানো হবে, না এর থেকে আলেমদের চাহিদা মিটে যাবে বা তাদের পেট পূর্ণ হয়ে যাবে। নিশ্চয় এটা মীমাংসাকারী বাণী এবং এটা নিরর্থক নয়। যে অবাধ্য একে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে ধ্বংস করবেন। যে এটা ছাড়া অন্য কিছুতে হিদায়াত অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাফিররা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলেঃ “যদি আপনি পাহাড়কে এখান থেকে সরিয়ে দেন এবং এখানকার ভূমিকে ফসল উৎপাদনের যোগ্য করে দিতে পারেন, অথবা যেমনভাবে হযরত সুলাইমান (আঃ) বাতাস দ্বারা তার কওমের জন্যে মাটি কাটতেন তেমনিভাবে যদি আপনি আমাদের জন্যে মাটি কাটতে পারেন, অথবা যদি আপনি আমাদের জন্যে মৃতকে জীবিত করেন যেমন হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমের জন্যে করতেন (তবে আমরা ঈমান আনবো)।” তখন আল্লাহ তাআ’লা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি কোন কুরআনের সাথে এসব বিষয় প্রকাশ পেতো তবে তোমাদের কুরআনের সাথেও পেতো। সব কিছুই তাঁর অধিকারে রয়েছে। কিন্তু তিনি এরূপ করেন না। কারণ তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা যে, তোমরা নিজেদের ইচ্ছায় ঈমান আন কি আন না।আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “তবে কি ঈমানদারদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন? অন্য জায়গায় (আরবি) এর (আরবি) স্থলে ও রয়েছে। মু'মিনরা ঐ কাফিরদের হিদায়াত থেকে নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। হাঁ, তবে আল্লাহ তাআ’লার ইখতিয়ারের ব্যাপারে কারো কিছু বলার নাই। ইচ্ছা করলে তিনি সকলকেই সুপথ প্রদর্শন করতে পারেন। এটা কাফিররা বরাবর লক্ষ্য করে। এসেছে যে, তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আল্লাহ তাআ’লা বরাবরই তাদের উপর শাস্তি আপতিত করতে থেকেছেন বা তাদের আশে পাশেই বিপর্যয় আপতিত করতেই থেকেছেন। তবুও তারা কেন উপদেশ গ্রহণ করছে না? যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ অবশ্যই আমি তোমাদের চতুষ্পর্শ্বের বহু গ্রামবাসীকে তাদের দুষ্কর্মের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং আমার বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শনাবলী প্রকাশ করেছি যে, হয়তো তারা দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকবে।” (৪৬: ২৭) আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা কি দেখে নাই যে, আমি যমীনকে কমিয়ে দিয়ে আসছি, তবুও কি এখনও তারা নিজেদেরকেই বিজয়ী মনে করবে?” (২১: ৪৪)(আরবি) এর (আরবি) বা কর্তা হচ্ছে শব্দটি। এটাই প্রকাশমান এবং বাকরীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ কাফিরদের কর্মফলের কারণে তাদের কাছে পৌঁছে যাবে ক্ষুদ্র ইসলামী সেনাবাহিনী অথবা তুমি (মুহাম্মদ সঃ) নিজেই তাদের শহরের নিটকবর্তী স্থানে অবতরণ করবে যতক্ষণ না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়ে। এর দ্বারা মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আসমানী শাস্তি এবং আশে পাশে অবতরণ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) তাঁর সেনাবাহিনীসহ তাদের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে যাওয়া এবং তাদের সাথে জিহাদ করা। মুজাহিদ (রঃ), কাতাদা’ (রঃ), ইকরামা (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনও একথাই বলেছেন। তাঁদের সবারই উক্তি এটাই যে, এখানে আল্লাহর ওয়াদা দ্বারা মক্কা বিজয়কেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কিয়ামতের দিন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে স্বীয় রাসূলদেরকে সাহায্য করা। এর ব্যতিক্রম হবার নয়। তাঁরা এবং তাঁদের অনুসারীরা অবশ্য অবশ্যই উর্ধে থাকবেন। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আল্লাহ তাঁর রাসূলদের সাথে কৃত ওয়াদার খেলাফ করবেন তা তুমি ধারণা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, দণ্ডদাতা।” (১৪:৪৭)
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) সান্ত্বনা দিয়ে বলছেনঃ তোমার কওম যে তোমাকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এতে তুমি মোটেই দুঃখ ও চিন্তা করো না। তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকেও ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছিল। আমি ঐ কাফিরদেরকেও কিছুকাল ঢিল দিয়েছিলাম। শেষে তাদেরকে আমি মারাত্মকভাবে পাকড়াও করেছিলাম। আমার শাস্তির ধরণ কেমন ছিল তা তোমার জানা আছে কি? আর তাদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল সে সম্পর্কেও তুমি জ্ঞাত আছ কি? যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “বহু গ্রামবাসীকে আমি তাদের জুলুম সত্ত্বেও ঢিল দিয়েছিলাম, কিন্তু শেষে তাদের দুষ্কর্মের প্রতিফল হিসেবে তাদেরকে আমি আমার শাস্তির শিকারে পরিণত করেছিলাম।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন, অতঃপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন সেই যালিম একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) (১১ :১০২) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।
أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَمْ بِظَاهِرٍ مِنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
📘 আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ আল্লাহ তাআ’লা প্রত্যেক মানুষের আমলের রক্ষক। প্রত্যেকের আমল সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। প্রত্যেক নফসের উপর তিনি প্রহরী। প্রত্যেক অমলকারীর ভাল ও মন্দ আমল তিনি সম্যক অবগত। কোন জিনিসই তার থেকে গোপনীয় নয়। তাঁর অজান্তে কোন কাজই হয় না। প্রত্যেক অবস্থা তাঁর অবগতিতে রয়েছে। প্রত্যেক আমলের উপর তিনি বিদ্যমান রয়েছেন। প্রতিটি পাতা ঝরে পড়ারও খবর তিনি রাখেন। প্রত্যেক প্রাণীর আহারের দায়িত্ব আল্লাহ তাআ’লার উপর রয়েছে। প্রত্যেকের ঠিকানা তিনি জানেন। সমস্ত কিছু তাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সমস্ত বিষয়ই তিনি জানেন। তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেখানেই আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি তোমাদের আমলগুলি দেখতে আছেন। এই সব গুণের অধিকারী আল্লাহ কি তোমাদের এইসব মিথ্যা উপাস্যের মত? যারা শুনেও না, দেখেও না? না তারা কোন জিনিসের মালিক, না অন্য কারো লাভ ও ক্ষতির তাদের কোন ইখতিয়ার রয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবকে উহ্য রাখা হয়েছে। কেননা, কালামের ইঙ্গিত এখানে বিদ্যমান রয়েছে এবং তা হচ্ছে (আরবি) আল্লাহ তাআ’লার এই উক্তিটি। অর্থাৎ “তারা আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক বানিয়ে নিয়েছে এবং তাদের ইবাদত করতে শুরু করেছে। তোমরা তাদের নাম তো বল এবং তাদের অবস্থা তো বর্ণনা কর, যাতে দুনিয়া জেনে নেয় যে, তাদের কোন অস্তিত্বই নেই। তোমরা কি যমীনের ঐ জিনিসগুলোর খবর আল্লাহকে দিচ্ছ যা তিনি জানেন না? অর্থাৎ যাদের কোন অস্তিত্বই নেই? কেননা, যদি ওগুলির কোন অস্তিত্ব থাকতো তবে সেগুলি আল্লাহ তাআ’লার অবগতির বাইরে থাকতো না। কেননা, তাঁর কাছে কোন গোপন হতে গোপনতম জিনিষও প্রকৃত পক্ষে গোপন নেই। তোমরা শুধু একটা আজগুবী কথা বানিয়ে নিয়েছে এবং আবোল তাবোল বকছো। তোমরা নিজেরাই তাদের নামগুলি বানিয়ে নিয়েছে। তোমরাই তাদেরকে লাভ ও ক্ষতির মালিক বলে ঘোষণা করছে এবং তাদের উপাসনা শুরু করে দিয়েছে। এগুলি সবই তোমাদের মনগড়া। তোমাদের হাতে কোন খোদায়ী দলিলও নেই এবং অন্য কোন দলিলও নেই। এগুলি তোমরা শুধু ধারণা ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই করছে। আল্লাহর পক্ষ হতে হিদায়াত নাযিল হয়েছে। কাফিরদের চক্রান্ত ও ছলনা তাদের কাছে শোভনীয় প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা তাদের কুফরী ও শিরকের উপর গর্ববোধ করছে। দিনরাত তারা তাতেই মগ্ন রয়েছে। আর অন্যদেরকেও তারা ঐ দিকেই আহবান করছে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “শয়তানরা তাদের সামনে তাদের দুষ্কার্যকে শোভনীয় করে তুলেছে। তাদেরকে আল্লাহর পথ ও হিদায়াতের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এক কিরআতে (আরবি) ও রয়েছে। অর্থাৎ তারা ওটাকে ভাল মনে করে অন্যদেরকে ওর ফাঁদে ফেলতে শুরু করেছে এবং রাসূলদের (সঃ) পথ। হতে জনগণকে ফিরিয়ে রাখছে।আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।” যেমন আল্লাহ তাআ’লা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ)! আল্লাহ যাকে ফিৎনায় ফেলার ইচ্ছা করেন, তুমি তার জন্যে আল্লাহর কাছে কখনো কোন কিছুরই অধিকার রাখবে না।” (৫: ৪১) অন্য স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যদিও তুমি তাদের হিদায়াত প্রাপ্তির জন্যে লালায়িত, কিন্তু নিশ্চয় আল্লাহ পথভ্রষ্টদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।” (১৬: ৩৭)
لَهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَاقٍ
📘 Please check ayah 13:35 for complete tafsir.
۞ مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوْا ۖ وَعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ
📘 ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা কাফিরদের শাস্তি এবং সৎলোকদের পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি কাফিরদের কুফরী ও শিরকের বর্ণনা দেয়ার পর তাদের শাস্তির বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা মুমিনমু’মিনদের হাতে নিহত ও ধ্বংস হবে। এর সাথে সাথেই তারা আখেরাতের কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার হবে, যা তাদের দুনিয়ার শাস্তি অপেক্ষা বহুগুণে কঠিন। পরস্পর লা'নতকারী স্বামী স্ত্রীকে যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “নিশ্চয় দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় খুবই সহজ।” ওটা ঐরূপ যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এখানকার অর্থাৎ দুনিয়ার শাস্তি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু পরকালের শাস্তি চিরস্থায়ী এবং তথাকার আগুনের তেজ এখানকার আগুন অপেক্ষা সত্তর গুণ বেশী এবং তথাকার পাকড়াও ও বন্ধন এতো শক্ত যা কল্পনা করা যায় না। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “সেই দিন তাঁর শাস্তির শাস্তি কেউ দিতে পারবে না। এবং বন্ধনের মত বন্ধন কেউ করতে পারবে না।” (৮৯: ২৫-২৬) আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তাদের জন্যে আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। দূর হতে অগ্নি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে ওর ক্রুদ্ধ গর্জন ও চীৎকার। আর যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে। তাদেরকে বলা হবেঃ আজ তোমরা একবারের জন্যে ধ্বংস কামনা করো না, বহুবার ধ্বংস হবার কামনা করতে থাকো। তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ এটাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে? এটাই তো তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তন স্থল।” এরপর পূণ্যবান লোকদের পরিণামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছেঃ যাদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার একটি গুণ তো এই যে, তার চারদিকে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তারা যেখান থেকে ইচ্ছা পানি নিয়ে যাবে। সেই পানি নষ্ট হবে না। আবার সেখানে দুধের নহর রয়েছে। দুধও এমন যে, যার স্বাদ কখনো নষ্ট হবে না। সেখানে সূরার নহরও রয়েছে। এতে শুধু সুস্বাদই রয়েছে। এটা কখনো বিস্বাদ হবেনা এবং এতে কখনো নেশাও ধরবে না। তথায় স্বচ্ছ মধুর নহরও রয়েছে এবং সেখানে সর্বপ্রকারের ফলমূল রয়েছে। এবং এর সাথে সাথে রয়েছে প্রতিপালকের করুণা এবং তার ক্ষমা। তথাকার ফল চিরস্থায়ী সেখানকার খাদ্য ও পানীয় কখনো শেষ হবার নয়।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কসূফের (সূর্যগ্রহণের) নামায পড়ছিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনাকে দেখলাম যে, আপনি যেন কোন জিনিষ পাবার ইচ্ছা করেছিলেন। তারপর আমরা দেখলাম যে, আপনি পশ্চাদপদে পিছনে সরতে লাগলেন, এর কারণ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমি জান্নাত দেখেছিলাম এবং একটা (ফলের) গুচ্ছ ভেঙ্গে নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। যদি আমি তা নিতাম তবে যতদিন এ দুনিয়া থাকতো ততদিন তা থাকতো এবং তোমরা তা খেতে থাকতে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমরা যুহরের নামাযে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন আমরাও এগিয়ে গেলাম। অতঃপর আমরা দেখলাম যে, তিনি যেন কোন জিনিষ নেয়ার ইচ্ছা করলেন। আবার তিনি পিছনে সরে আসলেন। নামায শেষে হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ আমরা আপনাকে এমন একটা কাজ করতে দেখলাম যা ইতিপূর্বে কখনো দেখি নাই (এর কারণ কি?)।” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমার সামনে জান্নাতকে পেশ করা হয়েছিল, যা ছিল তরুতাজা ও সুগন্ধময়। আমি ওর মধ্য থেকে একগুচ্ছ আঙ্গুর ভেঙ্গে নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আমার ও ওর মধ্যে আড় করে দেয়া হয়। যদি আমি ওটা ভেঙ্গে আনতাম তবে দুনিয়া থাকা পর্যন্ত সারা দুনিয়াবাসী ওটা খেতো, অথচ ওটা কিছুই কমতো না।” (এ হাদীসটি হা’ফিয আবু ইয়া’লা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উৎবা' ইবনু আবদিস সালামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন নবীকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “জান্নাতে আঙ্গুর থাকবে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ।” সে পুনরায় জিজ্ঞেস করেঃ “ওর গুচ্ছ কত বড় হবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “এতো বড় যে, যদি কোন কালো কাক এক মাস ধরে ওর উপর দিয়ে উড়তে থাকে তবুও ওটা অতিক্রম করতে পারবে না।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসী যখন কোন ফল ভাঙ্গবে তখন আর একটি ফল ঐ স্থানে এসে লেগে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত জা’বির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসী খুব খাবে এবং পান করবে, কিন্তু তাদের থুথু আসবে না, নাকে শ্লেষ্ম আসবে না এবং প্রস্রাব ও পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের শরীর দিয়ে মিশক আম্বরের মত সুগন্ধময় ঘর্ম বের হবে এবং তাতেই খাদ্য হজম হয়ে যাবে। আর যেমন ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চলে, তেমনি ভাবে নফসের উপর তসবীহ পাঠ ও আল্লাহ তাআ’লার পবিত্রতা বর্ণনার ইলহাম করা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আহলে কিতাবের একজন লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বলেঃ “হে আবুল কা’সিম (সঃ)! আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, জান্নাতবাসী খাবে ও পান করবে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, যার হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এখানকার একশ’ জন লোকের পানাহার ও সহবাসের শক্তি সেখানকার একজন লোককে দেয়া হবে।” সে তখন বলেঃ “নিশ্চয় যে খাবে ও পান করবে তার তো পায়খানা ও প্রস্রাবের প্রয়োজন অবশ্যই হবে, অথচ জান্নাতে তো আবর্জনা ও মালিন্য থাকতে পারে না?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, বরং ঘর্মের মাধ্যমে সমস্ত হজম হয়ে যাবে এবং ঐ ঘর্মের সুগন্ধ মিশক আম্বরের মত।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে যে পাখীর দিকে তুমি (ওর গোশত খাবার ইচ্ছার) দৃষ্টিপাত করবে তৎক্ষণাৎ ওটা ভাজা হয়ে তোমার সামনে চলে আসবে।” কোন কোন রিওয়াইয়াতে আছে যে, আবার ঐ পাখী আল্লাহর হুকুমে অনুরূপভাবে জীবিত হয়ে উঠে যাবে।'আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “ (জান্নাতে রয়েছে) প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না ও নিষিদ্ধও হবে না।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “সন্নিহিত বৃক্ষ ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে।” অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যারা ঈমান আনয়ন করে ও ভাল কাজ করে তাদেরকে দাখিল করবো এমন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্যে পবিত্র সঙ্গী থাকবে এবং তাদেরকে আমি চির স্নিগ্ধ ছায়ায় দাখিল করবো।” ইতিপূর্বে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, জান্নাতের একটি গাছের ছায়াতলে দ্রুতগামী সওয়ারীর আরোহী এক শ' বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে তথাপি ওর ছায়া শেষ হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) (এবং সম্প্রসারিত ছায়া) (৫৬: ৩০) কুরআন কারীমের এই অংশটুকু পাঠ করেন।কুরাআন কারীমে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা এক সাথে এসেছে যাতে মানুষের মধ্যে জান্নাতের আগ্রহ ও জাহান্নামের ভয় জন্মে। এখানেও আল্লাহ তাআ’লা জান্নাত ও তথাকার কতকগুলি নিয়মতের বর্ণনা দেয়ার পর বলেছেন যে, এটা পরিণাম হচ্ছে খোদাভীরু লোকদের। পক্ষান্তরে কাফিরদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়, জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।”দামেস্কের খুৎবা পাঠক হযরত বিলাল ইবনু সা'দ (রঃ) জনগণকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কোন আমল কবুল হওয়া এবং কোন পাপ মোচন হয়ে যাওয়ার কোন সনদ তোমাদের কারো কাছে এসেছে কি? তোমরা কি ধারণা করেছে যে, তোমাদেরকে অযথা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তোমরা আল্লাহ তাআ’লার আয়ত্তের মধ্যে আসবে না ? আল্লাহর শপথ! তাঁর আনুগত্যের প্রতিদান যদি দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হতো তবে তোমরা সবাই পুণ্য কাজের উপর একত্রিত হয়ে পড়তে। তোমরা কি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে গেলে? তোমরা কি ওরই পিছনে পড়ে থাকবে? তোমাদের কি জান্নাত লাভের আগ্রহ হয় না, যার ফল এবং ছায়া চিরস্থায়ী?” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَنْ يُنْكِرُ بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ
📘 Please check ayah 13:37 for complete tafsir.
وَكَذَٰلِكَ أَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ
📘 ৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ এর পূর্বে যাদেরকে (আসমানী) কিতাব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ওর উপর আমলকারী, তারা তোমার উপর কুরআন কারীম অবতীর্ণ হওয়ায় খুশী হচ্ছে। কেননা, স্বয়ং তাদের কিতাবে এর সুসংবাদ ও সত্যতা বিদ্যমান রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তারা ওটাকে যথাযোগ্য পাঠ করে, তারা এই শেষ কিতাবের (কুরআনের) উপরও ঈমান আনয়ন করে।” (২: ১২১) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তোমরা ঈমান আন আর নাই আন, পূর্ববর্তী কিতাবধারীরা তো এর সত্য অনুসারী হয়েছে। কেননা, তাদের কিতাবগুলিতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) রিসালাতের খবর রয়েছে। আর তারা ঐ ওয়াদাকে পূর্ণ হতে দেখে সন্তুষ্ট চিত্তে এটাকে মেনে নিয়েছে। আল্লাহ তাআ’লার প্রতিশ্রুতি যে ভুল হবে এর থেকে তিনি পবিত্র এবং এর থেকেও তিনি পবিত্র যে, তার ফরমান সঠিকরূপে প্রমাণিত হবে না ।সুতরাং তারা খুশী মনে আল্লাহর সামনে সিজদায় পতিত হয়। হাঁ, তবে ঐ দলগুলির মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা এই কুরআনের কতকগুলি কথাকে স্বীকার করে না। মোট কথা, আহলে কিতাবের মধ্যে কতকগুলি লোক মুসলমান এবং কতকগুলি মুসলমান নয়।অতএব, হে নবী (সঃ)! তুমি জনগণের সামনে ঘোষণা করে দাওঃ আমাকে শুধু এক আল্লাহর উপাসনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমাকে এই আদেশও করা হয়েছে যে, আমি যেন তাঁর সাথে অন্য কাউকেও শরীক না করি এবং একমাত্র তাঁরই একত্ববাদ প্রকাশ করি। এই নির্দেশই আমার পূর্ববতী সমস্ত নবী ও রাসূলকে দেয়া হয়েছিল। আমি ঐ পথের দিকেই, ঐ আল্লাহরই ইবাদতের দিকে সকলকে আহবান করছি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁর কাছেই।আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যেমন আমি তোমার পূর্বে নবী রাসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের উপর আমার কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছিলাম, অনুরূপভাবে এই কুরআন, যা সুরক্ষিত ও মজবুত, তোমার ও তোমার কওমের মাতৃভাষা আরবীতে তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি। এটাও তোমার প্রতি একটা বিশেষ অনুগ্রহ যে, এই প্রকাশ্য, বিশ্লেষিত এবং সুরক্ষিত কিতাবসহ তোমাকে আমি প্রেরণ করেছি। এর সামনে থেকে বা পিছন থেকে কোন বাতিল এসে এর সাথে মিলিত হতে পারে না এটা বিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও আসমানী ওয়াহী এসে গেছে। সুতরাং এখনও যদি তুমি এই কাফিরদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তবে জেনে রেখোঁরেখো যে, তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এবং তোমার সাহায্যের জন্যে কেউই এগিয়ে আসবে না। নবীর (সঃ) সুন্নাত এবং তাঁর পন্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভের পরেও যে সব আলেম পথভ্রষ্টদের পন্থা অবলম্বন করে তাদেরকে এই আয়াত দ্বারা ভীষণ ভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ
📘 Please check ayah 13:39 for complete tafsir.
يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ
📘 ৩৮-৩৯ আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! যেমন তুমি মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল। অনুরূপভাবে তোমার পূর্ববর্তী সমস্ত রাসূলও মানুষই ছিল। তারা খাদ্য খেতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো। তাদের স্ত্রী এবং সন্তান সন্ততিও ছিল। এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূলকে (সঃ) সম্বোধন করে বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি বলঃ আমি তোমাদের মতই মানুষ, আমার উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ওয়াহী করা হয়ে থাকে মাত্র।” (১৮: ১১০)সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি (নফল) রোযাও রাখি এবং (সময়ে) পরিত্যাগও করি আমি (রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাযের জন্যে) দাঁড়িয়েও থাকি আবার (সময়ে) নিদ্রাও যাই, আমি গোশত ভক্ষণ করি, এবং নারীদেরকে বিয়েও করি। (জেনে রেখোঁরেখো যে,) যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমার মধ্যে নয়।”হযরত আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “চারটি জিনিষ রাসূলদের সুন্নাত (১) সুগন্ধি ব্যবহার করা। (২) বিবাহ করা। (৩) মেসওয়াক (দাঁতুন) করা এবং (৪) মেহেন্দী লাগানো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। এটা হচ্ছে আল্লাহ তাআ’লার অধিকার ভুক্ত জিনিষ। তিনি যা চান তাই করেন, যা ইচ্ছা হুকুম করেন। প্রত্যেক নির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদ কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রত্যেক জিনিষেরই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা জানেন যা কিছু আকাশে ও পৃথিবীতে রয়েছে। এই সব কিছু কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে এবং এটা তো আল্লাহ তাআ’লার কাছে খুবই সহজ।(আরবি) আল্লাহ তাআ’লার এই উক্তি সম্পর্কে যহ্হাক ইবনু মাযাহিম (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আসমান হতে অবতারিত প্রত্যেক কিতাবের একটি নির্দিষ্ট সময় এবং একটি নির্ধারিত মেয়াদ রয়েছে। ওগুলির মধ্যে যেটাকে চান আল্লাহ তাআ’লা মানসূখ বা রহিত করে থাকেন এবং যেটাকে চান ঠিক রাখেন। সুতরাং তিনি স্বীয় রাসূল হযরত মুহাম্মদের (সঃ) যে এই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এর দ্বারা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহ যা ইচ্ছা উঠিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা বাকী রাখেন। বছরের বিষয়গুলি তিনি নির্ধারিত করে থাকেন। কিন্তু সেগুলি তাঁর ইচ্ছাধীন। এবং যেটা ইচ্ছা বদলিয়ে দেন। তবে দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য এবং জীবন ও মৃত্যুর উপর এটা প্রযোজ্য নয়, বরং এগুলি এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এগুলিতে কোন পরিবর্তন নেই। মানসূর (রঃ) বলেনঃ “আমি হযরত মুজাহিদকে (রঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ আমাদের কারো নিম্নরূপ দুআ’ করা কি ধরনের হবে? “হে আল্লাহ! যদি আমার নাম পূণ্যবানদের তালিকায় লিপিবদ্ধ থাকে তবে তা বাকী রাখুন। আর যদি পাপিষ্ঠদের তালিকাভুক্ত থাকে তবে তা উঠিয়ে দিন এবং পুণ্যবানদের অন্তর্ভূক্ত করুণ।” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এটা তো খুব উত্তম দুআ’!” এক বছর বা তারও কিছু বেশী দিন পর তাঁর সাথে পুনরায় আমার সাক্ষাৎ হলে আবার আমি তাকে উপরোক্ত প্রশ্ন করি। এবার তিনি (আরবি) (৪৪: ৩) হতে দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন “কদরের রাত্রে এক বছরের জীবিকা, বিপদ-আপদ নির্ধারিত হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ তাআ’লা যা চান আগাপাছা করে থাকেন। হাঁ, তবে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের লিখন পরিবর্তন হয় না।”হযরত শাকীক ইবনু সালমা (রঃ) প্রায়ই নিম্নের দুআ’টি করতেনঃ “হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাকে হতভাগ্য ও পাপিষ্ঠদের তালিকাভুক্ত করে থাকেন তবে তা মুছে ফেলুন এবং পুণ্যবান ও সৌভাগ্যবানদের তালিকাভূক্ত করে দিন। যদি আপনি আমার নামটি সৎ লোকদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে থাকেন তবে তা বাকী রাখুন। আপনি যা ইচ্ছা মিটিয়ে থাকেন এবং যা ইচ্ছা বাকী রাখেন। প্রকৃত লিখন আপনার কাছেই রয়েছে।”হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার সময় ক্রন্দনরত অবস্থায় নিম্নরূপ দুআ’ করতেনঃ “হে আল্লাহ! যদি আপনি আমার উপর পাপ লিখে থাকেন তবে তা মিটিয়ে দিন। আপনি যা চান মিটিয়ে থাকেন এবং যা চান বাকী রাখেন। কিতাবের মূল আপনার কাছেই রয়েছে। আপনি ওটাকে সৌভাগ্য রহমত করে দিন!” হযরত ইবনু মাসউদও (রাঃ) অনুরূপ দুআ’ করতেন। হযরত কা'ব (রাঃ) আমীরুল মুমিনীন হযরত উমারকে (রাঃ) বলেনঃ “যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতো তবে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে সবই আমি আপনাকে বলে দিতাম।” তখন হযরত উমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ঐ আয়াতটি কি?” উত্তরে তিনি আল্লাহ আআ’লার (আরবি) এই উক্তিটিই পাঠ করেন। এইসব উক্তির ভাবার্থ এই যে, তকদীরের পরিবর্তন আল্লাহ তাআ’লার ইখতিয়ারের বিষয়। এ ব্যাপারে হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন কোন পাপের কারণে মানুষকে রূযী থেকে বঞ্চিত করে দেয়া হয়, আর তকদীরকে দুআ’ ছাড়া অন্য কিছুতে পরিবর্তন করতে পারে না এবং পূণ্য ছাড়া অন্য কিছুতে আয়ু বেশী করতে পারে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসায়ী (রঃ) ও ইমাম ইবনু মাজাহও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আত্মীয়তা সম্পর্ক যুক্ত করণ আয়ু বৃদ্ধি করে থাকে। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, দুআ’ ও তকদীরের সাক্ষাৎ ঘটে, আসমান ও যমীনের মাঝে।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মহা মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে লাওহে মাহফুয রয়েছে যা পাঁচ শ' বছরের পথের জিনিষ। ওটা সাদা মুক্তা দ্বারা নির্মিত। ওতে মনি মাণিক্যের দু’টি আবরণী রয়েছে। প্রত্যই আল্লাহ তাআ’লা তিনশ ষাট বার করে ওর প্রতি দৃষ্টি দেন। যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন। উম্মুল কিতাব তাঁরই কাছেই রয়েছে। (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রাত্রির তিন ঘণ্টা বাকী থাকতে যিকর খোলা হয়। প্রথম ঘণ্টায় ঐ যিকরের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয় যা আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখে না। সুতরাং তিনি যা চান মিটিয়ে দেন এবং যা চান ঠিক রাখেন (এবং এরপর পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন)। (এ হাদীসটিও ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)কালবী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা জীবিকা বৃদ্ধি করা ও হ্রাস করা এবং আয়ু বৃদ্ধি করা ও হ্রাস করা বুঝানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “এ কথা আপনার নিকট কে বর্ণনা করেছেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমার কাছে বর্ণনা করেছেন আৰ সা’লেহ (রঃ), তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু রাবাব (রাঃ) এবং তার কাছে বর্ণনা করেছেন নবী (সঃ)।” অতঃপর তাঁকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “সমস্ত কথাই লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর বৃহস্পতিবার ঐ সব কথা বের করে দেয়া হয় যেগুলি পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান থেকে শূন্য (অর্থাৎ যার জন্যে) পুরস্কারও দেয়া হয় না এবং শাস্তিও প্রদান করা হয় না। যেমন তোমার উক্তিঃ ‘আমি খেয়েছি, আমি পান করেছি, আমি এসেছি, আমি গিয়েছি ইত্যাদি। এগুলি সত্যকথা বটে, অথচ পুরষ্কার ও শাস্তি প্রদানের বিষয় নয়। আর যে গুলি সাওয়াব ও আযাবের বিষয় সেগুলি লিখে নেয়া হয়।” হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি এই যে, দু’টি কিতাব রয়েছে। একটি হতে তিনি যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন এবং তাঁর কাছে থাকে আসল কিতাব। তিনি আরো বলেন যে, এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে এক যুগ পর্যন্ত আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লেগে থাকলো। অতঃপর তার অবাধ্যতার কাজে লেগে গেল এবং ওর উপরই মারা গেল। সুতরাং তার পূণ্য মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যার জন্যে ঠিক রাখা হয় সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে এখন তো নাফরমানীর কাজে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে তার জন্যে তার বাধ্য ও অনুগত থাকা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। কাজেই শেষ সময়ে সে ভাল কাজে লেগে পড়ে এবং এর উপরই মারা যায়। এটাই হচ্ছে ঠিক রাখা।হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন না। হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি হচ্ছেঃ তিনি যা চান মানসূখ বা রহিত করে দেন এবং যা চান পরিবর্তন করেন না। রহিতকারীও তাঁর হাতে এবং পরিবর্তনও তাঁরই হাতে। কাতাদা’র (রঃ) উক্তি অনুসারে এই আয়াতটি হচ্ছেঃ (আরবি) এই আয়াতের মতই। অর্থাৎ “আমি যা ইচ্ছা মানসূখ বা রহিত করি এবং যা ইচ্ছা বাকী ও চালু রাখি।” (২: ১০৬)। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যখন “আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন রাসূল কোন মু’জিযা দেখাতে পারেন না।” এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন কুরায়েশদের কাফিররা বলেঃ “তাহলে তো মুহাম্মদ (সঃ) সম্পূর্ণ শক্তিহীন, কাজ থেকে তো অবকাশ লাভ করা হয়েছে!” তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ আমি যা ইচ্ছা করি তার জন্যে আমার নতুন কিছু সৃষ্টি করে থাকি। প্রত্যেক রমযান মাসে নবায়ন হয়ে থাকে (প্রত্যেক রমযান মাসে আমি তার কাছে বর্ণনা করে থাকি), অতঃপর আল্লাহ তাআ’লা যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন মানুষের জীবিকা, তাদের বিপদ-আপদ, আর তিনি তাদেরকে যা প্রদান করেন এবং তাদের জন্যে যা বণ্টন করেন।হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যার মৃত্যু এসে যায় সে চলে যায়, আর যে জীবিত থাকে সে দুনিয়ায় থেকে যায়, যে পর্যন্ত না সে তার দিন পুরো করে নেয়। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এই উক্তিটি পছন্দ করেছেন। হালাল, হারাম তার কাছে রয়েছে এবং কিতাবের মূল তাঁরই হাতে আছে। কিতাব স্বয়ং বিশ্বপ্রতিপালকের কাছেই রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হযরত কা'বকে (রাঃ) উম্মুল কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা তার মাখলুককে এবং তাদের আমলকে জেনে নেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “কিতাবের আকার বিশিষ্ট হয়ে যাও।” তখন তা হয়ে যায়। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, উম্মুল কিতাব দ্বারা যিকরকে বুঝানো হয়েছে।
وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
📘 ৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর
উর্ধ্বজগতের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআ’লা এখানে নিম্ন জগতের বর্ণনা দিয়েছেন। যমীনকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করে আল্লাহ তাআ’লাই এটাকে বিছিয়ে দিয়েছেন। এতে দৃঢ় পাহাড় তিনিই স্থাপন করেছেন। এতে নদ-নদী ও প্রস্রবণ তিনিই প্রবাহিত করেছেন। এর ফলে বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন রং এর এবং বিভিন্ন স্বাদের ফল মূলের বৃক্ষাদি সিঞ্চিত হয়ে থাকে। জোড়ায় জোড়ায় ফলমূল তিনিই সৃষ্টি করেছেন। ওগুলির মধ্যে কোনটি মিষ্টি এবং কোনটি টক। দিবস ও রজনী পর্যায়ক্রমে আসা যাওয়া করছে। একটির আগমন ঘটছে এবং অপরটির প্রস্থান হচ্ছে। এইসব ব্যবস্থাপনা সেই ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহর দ্বারাই হচ্ছে। আল্লাহ তাআ’লার এইসব নিদর্শন, নিপুণতা এবং প্রমাণাদির উপর যে ব্যক্তি চিন্তাপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে সে অবশ্যই সুপথ প্রাপ্ত হবে। যমীনের খণ্ডগুলি মিলিতভাবে রয়েছে। মহান আল্লাহর শক্তি দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, পৃথিবীর এক খণ্ডে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়, আবার আর একখণ্ডে কিছুই জন্মে না। কোন জায়গার মাটি লাল, কোন জায়গার মাটি সাদা, কোন মাটি কালো, কোনটি কংকরময়, কোনটা নরম, কোনটা শক্ত, কোনটা মিষ্টি, কোনটা তিক্ত, কোনটা বালুকাময় এবং কোনটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মোট কথা, এটাও সৃষ্টিকর্তার মহা শক্তির নিদর্শন, যা বলে দিচ্ছে যে, কার্য্য সম্পাদনকারী, স্বেচ্ছাচারী এবং সারা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন সেই একক, অদ্বিতীয় এবং অংশীবিহীন আল্লাহ। তিনিই হচ্ছেন সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কেউ মা'বুদ নেই এবং কোন প্রতিপালকও নেই।(আরবি) শব্দদ্বয়কে যদি (আরবি) শব্দের উপর বা সংযোগ ধরা হয় তবে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। আর যদি (আরবি) শব্দের উপর সংযোগ ধরা হয় তবে (আরবি) ধরে যের দিয়ে পড়তে হবে। ইমামদের দল দু’ভাবেই পড়েছেন। (আরবি) বলা হয় ঐ গাছকে যার কয়েকটি গুঁড়ি ও শাখা হয়। যেমন ডালিম ডুমুর, এবং কোন কোন খেজুর গাছ। (আরবি) বলা হয় ঐ গাছকে যা এইরূপ হয় না বরং যার একটি মাত্র গুঁড়ি থাকে। এর থেকেই চাচাকে (আরবি) বলা হয়। হাদীসেও এটা এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উমারকে (রাঃ) বলেনঃ “তোমার কি জানা নেই যে, চাচা পিতার মতই।”হযরত বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি মূল অর্থাৎ একটি গুঁড়ির মধ্যে কয়েকটি শাখা বিশিষ্ট খেজুরের গাছ থাকে, আবার একটি গুঁড়িতে একটিই থাকে। এটাই হচ্ছে (আরবি) ও (আরবি)। অন্যান্য গুরুজনদেরও এটাই উক্তি। সবগুলির জন্যে একই পানি। অর্থাৎ বর্ষার পানি। অথচ স্বাদের দিক দিয়ে এবং ছোট ও বড় হওয়ার দিক থেকে ফলের মধ্যে বড়ই পার্থক্য রয়েছে। কোনটা মিষ্টি ও কোনটা টক। জামে তিরমিযীর হাদীসেও এই ব্যাখ্যা রয়েছে। মোট কথা, বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য আছে। যেমন প্রকারে পার্থক্য, রকমে পার্থক্য, রং এ পার্থক্য, গন্ধে পার্থক্য, স্বাদে পার্থক্য, পাতায় পার্থক্য এবং তরুতাজায় পার্থক্য। কোনটা অতি মিষ্টি এবং কোনটা অতি তিক্ত। কোনটি খুবই সুস্বাদু, আবার কোনটি অত্যন্ত বিস্বাদ। রং-এও পার্থক্য রয়েছে। কোনটা লাল, কোনটা সাদা এবং কোনটা কালো। অনুরূপভাবে সতেজতার দিক দিয়েও পার্থক্য রয়েছে। অথচ খাদ্য হিসেবে সবই এক। ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআ’লার এগুলি অলৌকিক শক্তি। সুতরাং বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্যে এগুলি শিক্ষণীয় বিষয়। এগুলি স্বেচ্ছাচারী আল্লাহ তাআ’লার মহাশক্তির পরিচয় বহন করে এবং এটাই ঘোষণা করে যে, তিনি যা চান তাই হয়। জ্ঞানীদের জন্যে এই নিদর্শনগুলিই যথেষ্ট।
وَإِنْ مَا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
📘 Please check ayah 13:41 for complete tafsir.
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
📘 ৪০-৪১ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রাসূলকে (সঃ) বলছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তোমার শত্রুদের উপর আমার শাস্তি যে আসবে তা আমি তোমার জীবদ্দশাতেই আনি বা তোমার মৃত্যুর পরই আনয়ন করি তাতে তোমার কি হয়েছে? তোমার কাজ তো শুধু আমার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। আর তা তো তুমি করেছে। তাদের হিসাব গ্রহণ এবং তাদেরকে বিনিময় প্রদানের দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকো। তুমি তাদের উপর দারোগা বা রক্ষক নও। যে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং কুফরী করবে, তাদেরকে আল্লাহ স্বয়ং শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করবেন। তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে এবং তাদের হিসাব নিকাশ গ্রহণের দায়িত্বও আমার। তারা কি দেখে নাই যে, আমি যমীনকে তোমার দখলে আনয়ন করেছি। তারা দেখে না যে, জনবহুল স্থান ও সুউচ্চ অট্টালিকা ধ্বংসাবশেষ ও বিজনে পরিণত হচ্ছে? তারা কি লক্ষ্য করে না যে, মুসলমানরা কাফিরদের উপর আধিপত্য লাভ করছে। তারা অবলোকন করছে না যে, দিন দিন বরকত উঠে যাচ্ছে এবং মন্দ ও অকল্যাণ আসতে রয়েছে। মানুষ মরতে আছে এবং যমীন শ্মশানে পরিণত হচ্ছে? যদি স্বয়ং যমীনকে সংকীর্ণ করে দেয়া হতো তবে এর উপর মানুষের কুঁড়ে ঘর নির্মাণ করাও অসম্ভব হয়ে পড়তো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দিন দিন মানুষ এবং মানুষও গাছপালা কমতে থাকা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য যমীনের সংকীর্ণতা নয়, বরং মানুষ মরে যাওয়া। বিদ্বান মণ্ডলী, ধর্মশাস্ত্রবিধ এবং ভাল লোকদের মৃত্যুও হচ্ছে যমীনের ধ্বংস হওয়া। এ ব্যাপারে একজন আরব কৰি নিম্নরূপ কবিতা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ভূমিতে কোন (দ্বীনের) আলেম জীবন যাপন করেন সেই ভূমি জীবন্তরূপ লাভ করে, আর যখন আলেম মৃত্যু মুখে পতিত হন তখন সেই ভূমিও মরে যায় অর্থাৎ বিজনে পরিণত হয়। যেমন, যখন ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হয় তখন তা সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে, কিন্তু যদি তাতে বৃষ্টিপাত না হয় তবে তা শুকিয়ে যায় এবং অনুর্বর হয়ে পড়ে।” সুতরাং এই আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে ইসলাম শিরকের উপর জয়যুক্ত হওয়া যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “অবশ্যই আমি তোমাদের চতুষ্পর্শ্বের গ্রামগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছি।” (৪৬: ২৭) এটা ইমাম ইবনু জারীরেরও (রঃ) পছন্দনীয় উক্তি।
وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ পূর্ববর্তী কাফিররাও তাদের নবীদের সাথে চক্রান্ত করেছিল, তাদেরকে বের করে দিতে চেয়েছিল। আল্লাহ তাআ’লা তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। হে নবী (সঃ)! এর পূর্বে তোমার যুগের কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা তোমাকে বন্দী করা, বা হত্যা করা অথবা দেশ হতে বের করে দেয়ার পরমার্শ করছিল। তারা চক্রান্ত করছিল, আর আল্লাহ তাআ’লা তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করতে চেয়েছিলেন। আচ্ছা বলতো, আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম গোপন তদবীর আর কার হতে পারে? তাদের চক্রান্তের প্রতিফল প্রদান হিসেবে আমিও তাই করেছিলাম। তারা ছিল সম্পূর্ণরূপে বেখবর। তাদের ষড়যন্ত্রের পরিণাম কি হলো তা তো তুমি দেখতেই পেলে। তা এই যে, আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের সমস্ত কওম বরবাদ হয়ে গেল। তাদের অত্যাচারের সাক্ষী হিসেবে তাদের জনশূন্য বস্তির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। প্রত্যেকের প্রত্যেক আমল সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা পূর্ণ ওয়াকিফহাল। গোপন আমল, মনের সংশয় প্রভৃতি সবই তাঁর কাছে প্রকাশমান। তিনি প্রত্যেক আমলকারীকে তার আমলের প্রতিদান প্রদান করবেন।(আরবি) এর কিরআত (আরবি) ও রয়েছে। এই কাফিররা এখনই জানতে পারবে যে, পরিণাম ভাল কাদের? তাদের, না মুসলমানদের?সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআ’লারই যে, তিনি সর্বদা হক পন্থীদেরকেই বিজয়ী রেখেছেন। সব সময় এদেরই পরিণাম ভাল হয়েছে। এদেরই দুনিয়া ও আখেরাত সৌন্দর্য মণ্ডিত।
وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا ۚ قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ (হে নবী (সঃ)! কাফিরগণ তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও অবিশ্বাস করছে এবং তোমার রিসালতকে অস্বীকার করছে, এতে তুমি দুঃখ ও চিন্তা করো না। তাদেরকে বলে দাওঃ আল্লাহ তাআ’লার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। তিনি স্বয়ং আমার নুবওয়াতের সাক্ষী। আমার তাবলীগ এবং তোমাদের অবিশ্বাসের উপর তিনিই সাক্ষ্য দানকারী। আমার সত্যবাদিতা এবং তোমাদের অপবাদ তিনি দেখতে রয়েছেন। ‘যার নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে’ এর দ্বারা আবদুল্লাহ ইবনু সালামকে (রাঃ) বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই দুর্বল উক্তি। কেননা, এ আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে, আর হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তো হিজরতের পরে মদীনায় মুসলমান হয়েছিলেন। এর চেয়ে বেশী প্রকাশমান উক্তি হচ্ছে হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তিটি। তা এই যে, এর দ্বারা ইয়াহুদী ও নাসারাদের সত্যপন্থী আলেমদের বুঝানো হয়েছে। হাঁ, তবে এঁদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালামও (রাঃ) রয়েছেন এবং আরও রয়েছেন হযরত সালমান (রাঃ), হযরত তামীম দারী (রাঃ) প্রভৃতি সাহাবীগণ। হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে একটি রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারাও স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লাই উদ্দেশ্য। এর দ্বারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) উদ্দেশ্য হওয়াকে হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করেছেন। কেননা, এইটি মক্কী আয়াত। আর তিনি (আরবি) পড়তেন। এই কিরআতই হযরত মুজাহিদ (রঃ) ও হযরত হাসান বসরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। একটি মারফূ’ হাদীসেও এই কিরআতই রয়েছে। কিন্তু এটা প্রামাণ্য হাদীস নয়। সঠিক কথা এটাই যে, এটা ইসমে জিনস বা জাতি বাচক বিশেষ্য। এর দ্বারা প্রত্যেক ঐ আলেমকে বুঝানো হয়েছে যিনি পূর্ববর্তী কিতাবের আলেম। তাঁদের কিতাবে রাসূলুল্লাহর (সঃ) গুণাবলী এবং আগমনের সুসংবাদ বিদ্যমান ছিল। তাদের নবীগণ তাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমার রহমত সমস্ত জিনিষকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে, আমি ওটাকে লিপিবদ্ধ করে রাখবো যারা পরহেযগার, যাকাত আদায়কারী এবং আমার আয়াত সমূহের উপর ঈমান আনয়নকারী তাদের জন্যে। যারা সেই রাসূলের অনুসরণ করে যে উম্মী নবী, তারা তাকে লিখিত পেয়ে থাকে তাদের গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জিলে।” (৭: ১৫৬-১৫৭) আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “তাদের জন্যে কি এটা একটা নিদর্শন নয় যে, তার সত্যতা সম্পর্কে বাণী ইসরাঈলের আলেমদেরও অবগতি রয়েছে?” একটি খুবই দুর্বল হাদীসে আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ইয়াহুদী আলেমদেরকে বলেনঃ “আমি ইচ্ছা করছি যে, আমার পিতা ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈলের (আঃ) মসজিদে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করি।” সুতরাং তিনি মক্কায় গমন করেন। হজ্জ পর্ব সমাপ্তির পর ফিরবার সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট গমন করেন। সেই সময় তিনি মক্কাতেই অবস্থান করছিলেন। মিনায় তিনি রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাক্ষাৎ পান। ঐ সময় জনগণ তাঁর চতুম্পার্শ্বে ছিল। লোকদের সাথে তিনিও দাঁড়িয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ “তুমি কি আবদুল্লাহ ইবনু সালাম?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “জি, হাঁ।” তিনি তখন তাঁকে বলেনঃ “নিকটে এসো।” তিনি নিকটে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “হে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)! আল্লাহর কসম দিয়ে আমি তোমাকে বলছিঃ তুমি কি তাওরাতে আমাকে আল্লাহর রাসূল হিসেবে পাও না?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আপনি আমার সামনে আমাদের প্রতিপালকের গুণাবলী বর্ণনা করুন।” তৎক্ষণাৎ হযরত জিবরাঈল (আঃ) গিয়ে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর তাকে বললেন: (আরবি)অর্থাৎ “আপনি বলুনঃ তিনি আল্লাহ এক। তিনি অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত।” (১১২: ১-২) তখনই হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) মুসলমান হয়ে যান এবং মদীনায় ফিরে আসেন। কিন্তু মদীনায় তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হিজরত করে মদীনায় আগম করেন সেই সময় তিনি খেজুরের একটি গাছে উঠে খেজুর ভাঙ্গছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সঃ) আগমন সংবাদ শ্রবণ মাত্রই তিনি তখনই গাছ হতে লাফিয়ে পড়েন। তার মা তখন তাকে বলেঃ “যদি হযরত মুসা (আঃ) এসে পড়তেন তবুও তো তুমি গাছ হতে লাফিয়ে পড়তে না কারণ কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “মা! হযরত মূসার (আঃ) নুবওয়াতের চাইতেও আমি বেশী খুশী ইয়েছি শেষ নবীর (সঃ) এখানে আগমনে।”
۞ وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَإِذَا كُنَّا تُرَابًا أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূল মুহাম্মদকে (সঃ) বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! এই কাফিররা যে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলছে ও অবিশ্বাস করছে এতে তোমার বিস্মিত হবার কিছু নেই। এদের স্বভাব ও আচরণ এইরূপই যে, তারা এতো এতো নিদর্শন দেখছে, আল্লাহর বিরাট ক্ষমতার প্রমাণ তারা প্রত্যক্ষ করছে এবং এটা স্বীকারও করছে যে, সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ, এতদসত্বেও তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে বসছে। তারা স্বচক্ষে দেখছে যে, দুনিয়ায় যা কিছু ঘটছে আল্লাহর হুকুমেই ঘটছে, তথাপি তারা ঈমান আনছে না। প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তিই এটা জানতে সক্ষম যে, যমীন ও আসমানের সৃষ্টি মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা বহুগুণে গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করা অপেক্ষা অনেক সহজ। যেমন আল্লাহ তাআ’লা এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ তারা কি দেখে নাই যে, সেই আল্লাহ যিনি আকাশসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন অথচ তিনি ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান।” (৪৬: ৩৩) তাই আল্লাহ তাআ’লা বর্ণনা করছেন যে, এরা কাফির। কিয়ামতের দিন তাদের গ্রীবাদেশে শৃঙ্খল থাকবে। তারা নরকবাসী। তারা নরকে চিরকাল অবস্থান করবে।
وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ ۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلْمِهِمْ ۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ
📘 আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতকে অস্বীকারকারীরা তোমাকে বলছেঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আল্লাহর শান্তি আনয়ন করছে না কেন? যেমন আল্লাহ তাআ’লা তাদের সম্পর্কে খবর দিয়েছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা বলেঃ হে সেই ব্যক্তি, যে দাবী করছো যে, তোমার উপর আল্লাহর যিকর অবতীর্ণ করা হয়, নিশ্চয় তুমি তো পাগল। যদি তুমি সত্যবাদীও হও তবে তুমি আমাদের কাছে আযাবের ফেরেশতাকে আনছো না কেন? (এর উত্তরে তাদেরকে বলা হয়) ফেরেশতাদেরকে আমি সত্য ও ফায়সালার সাথেই অবতীর্ণ করে থাকি, যখন তারা এসেই পড়বে তখন তাদেরকে (তাওবা’ করার ও ঈমান আনয়নের) বিন্দুমাত্র অবকাশ দেয়া হবে না।” (১৫: ৬-৮) আল্লাহ তাআ’লা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) (২৯:৫৩) (দু’আয়াত পর্যন্ত)। আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এক ব্যক্তি চাইলো সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত।” (৭০ :১) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “যারা ঈমান আনয়ন করে না তারা ওটাকে (শাস্তিকে) তাড়াতাড়ি চাচ্ছে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা এটাকে ভয় করছে এবং ওটাকে সত্য বলে জানছে।” (৪২ :১৮) আরো এক জায়গায় বলেছেনঃ “তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের শাস্তি ও হিসেবের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করুন।” আর এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যখন তারা বলতো: হে আল্লাহ! যদি এটা আপনার পক্ষ থেকে সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষণ করুন অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নাযিল করুন।” (৮:৩২) ভাবার্থ এই যে, কুফরী ও অস্বীকারের কারণে আল্লাহর শান্তি নেমে আসা অসম্ভব মনে করে এতে তারা নির্ভয় হয়ে যায় যে, শাস্তি নেমে আসার তারা আকাঙ্খ করে বসে। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের পূর্ববর্তী এইরূপ লোকদের দৃষ্টান্ত তাদের সামনে রয়েছে। তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল বলে তাদেরকে তাঁর আযাবের দ্বারা পাকড়াও করা হয়। এটা আল্লাহ তাআ’লার দয়া ও সহিষ্ণুতা যে, তিনি পাপকার্য করতে দেখেন অথচ সাথে সাথে পাকড়াও করেন না। নতূবা ভূ-পৃষ্ঠে কাউকেও তিনি চলতে ফিরতে দিতেন না। দিনরাত তিনি পাপ করতে দেখছেন এবং ক্ষমা করে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর আযাবও বড় বিপজ্জনক, অত্যন্ত কঠিন এবং বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তুমি বলে দাও তোমাদের প্রতিপালক বড়ই করুণাময়, আর তার শাস্তি পাপাচারী কওম হতে ফিরানো হয় না।” (৬: ১৪৭) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক তাড়াতাড়ি হিসাব গ্রহণকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু”। (৬: ১৬৫) আরো বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমার বান্দাদেরকে খবর দিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, দয়ালু আর নিশ্চয় আমার শাস্তি হচ্ছে বড়ই যন্ত্রণাদায়ক।” (১৫: ৪৯-৫০) এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে যাতে একই সাথে আশা প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে।হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি আল্লাহ তাআ’লা বান্দাকে ক্ষমা না করতেন তবে কেউই জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করতে পারতো না এবং যদি তিনি ধমক ও শাস্তি প্রদান না করতেন তবে বান্দা অত্যাচার ও সীমালংঘনের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তো।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হা’তিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসান ইবনু উসমান আবু হাসান রামাদী (মক্কী নুসখাতে যিয়াদী রয়েছে) স্বপ্নে মহামহিমান্বিত আল্লাহর দর্শন লাভ করেন। তিনি দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআ’লার সামনে দাঁড়িয়ে তার একজন উম্মতের জন্যে সুপারিশ করছেন। তখন আল্লাহ তাআ’লা তাকে বলেনঃ “তোমাদের জন্যে কি সুরায়ে রাদ এর (আরবি) এ আয়াতটি যথেষ্ট নয়?” হযরত আবু হাসান (রাঃ) বলেনঃ “এরপর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি।” (এটা হা-ফিজ ইবনু আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ
📘 মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলছেনঃ তারা অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমী ভাব নিয়ে বলেঃ পূর্ববর্তী নবীগণ যেমনভাবে মু'জিযা নিয়ে এসেছিলেন তেমনিভাবে এই নবী অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোন মু’জিযা নিয়ে আগমন করেন নাই কেন? যেমন সাফা পাহাড়কে সোনা বানিয়ে দেয়া, আরবের পাহাড়কে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা, আরব ভূমি সবুজ শ্যামল করে তোলা, এখানে নদী প্রবাহিত করা ইত্যাদি। তাদের এ কথার উত্তরে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ মু’জিযা’ প্রেরণ করা হতে আমাকে এ জিনিসই বিরত রেখেছে যে, পুর্ববর্তীরা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।” মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি মুশরিকদের এসব কথায় মোটেই দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না। তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। তুমি হিদায়াতকারী নও। তারা না মানলে তোমাকে পাকড়াও করা হবে না। হিদায়াত করার হাত আল্লাহ তাআ’লার। এ কাজ তোমার ক্ষমতার বাইরে। প্রত্যেক কওমের জন্যেই পথ প্রদর্শক ও আহবানকারী রয়েছে।’ অথবা ভাবার্থ হবেঃ ‘হিদায়াতকারী আমি এবং ভয় প্রদর্শনকারী তুমি।' অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে ভয় প্রদর্শনকারী অতিবাহিত হয়েছেন।” (৩৫:২৪) এখানে (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নবী। সুতরাং প্রত্যেক দলের মধ্যেই পথ প্রদর্শক থাকেন। তাঁর ইলম ও আমল দ্বারা অন্যান্যেরা পথ পেয়ে থাকে। এই উম্মতের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন হয়রত মুহাম্মদ (সঃ)। একটি অত্যন্ত অস্বীকৃত রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় বক্ষে হাত রেখে বলেনঃ “ভয় প্রদর্শনকারী আমি এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একজন হাদী বা পথ প্রদর্শক রয়েছে।” ঐ সময় তিনি হযরত আলীর (রাঃ) স্কন্ধের দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! তুমি হাদী। আমার পরে তোমার দ্বারা মানুষ হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।” (এ হাদীসটি আবু জাফর ইবনু জারীর (রাঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এতে ভীষণ অস্বীকৃতি রয়েছে)হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ‘হাদী’ দ্বারা কুরায়েশের একজন লোককে বুঝানো হয়েছে। হযরত জুনাইদ (রাঃ) বলেন যে, লোকটি হচ্ছেন স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)। ইবনু জারীর (রঃ) হযরত আলীর (রাঃ) হাদী হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। (কিন্তু এতেও কঠিন নাকারাত বা অস্বীকৃতি রয়েছে)
اللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنْثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ
📘 Please check ayah 13:9 for complete tafsir.
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ
📘 ৮-৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, কোন জিনিসই তাঁর অগোচরে নেই। সমস্ত মাদীরা, স্ত্রী লিঙ্গ জন্তুই হোক অথবা মানুষই হোক, ওদের পেটের বা গর্ভের বাচ্চা সম্পর্কে জ্ঞান বা অবগতি আল্লাহ তাআ’লার রয়েছে। পেটে কি আছে তা তিনি ভালরূপেই জানেন। অর্থাৎ পুংলিঙ্গ কি স্ত্রী লিঙ্গ, ভাল কি মন্দ, বেশী বয়স পাবে কি কম বয়স পাবে এ সব খবর তিনি রাখেন। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “তিনি ভালরূপেই জানেন যখন তিনি তোমাদেরকে যমীন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যখন তোমাদের মাতাদের পেটে লুকায়িত থাকো (শেষ পর্যন্ত)।” (৫৩: ৩২) অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেটে সৃষ্টি করেন, এক সৃষ্টির পরে আর এক সৃষ্টি, তিন অন্ধকারের মধ্যে (শেষ পর্যন্ত)।” (৩৯: ৬) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি ওকে শুক্র বিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। পরে আমি শুক্র বিন্দুকে পরিণত করি রক্ত পিন্ডে, অতঃপর রক্ত পিন্ডকে পরিণত করি মাংস পিন্ডে এবং মাংস পিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে, অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা, অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্ঠি রূপে; অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।” (২৩:১২-১৪) হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা হতে থাকে। অতঃপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত ওটা জমাট রক্তের আকারে থাকে। তারপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত ওটা মাংস পিন্ড রূপে থাকে। এরপর আল্লাহ তাআ’লা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন, যাকে চারটি কথা লিখে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওগুলি হচ্ছেঃ তার রিয্ক, তার বয়স, এবং তার ভাল ও মন্দ হওয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অন্য হাদীসে আছে যে, ঐ সময় ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! সে নর হবে, না নারী হবে? হতভাগ্য হবে, না সৌভাগ্যবান। হবে? তার জীবিকা কি হবে? তার বয়স কত হবে?” আল্লাহ তাআ’লা তখন বলে দেন এবং তিনি লিখে নেন। হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অদৃশ্যের পাঁচটি চাবী রয়েছে যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। (১) আগামীকল্যের খবর আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়। (২) জরায়ুতে যা কিছু কমে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। (৩) বৃষ্টি কখন হবে তার অবগতিও শুধুমাত্র আল্লাহরই আছে। (৪) কে কোথায় মারা যাবে এ খবরও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এবং (৫) কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে এ খবরও একমাত্র আল্লাহই রাখেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ‘জরায়ুতে যা কিছু কমে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভ পড়ে যাওয়া। আর ‘জরায়ুতে যা কিছু বাড়ে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ কিভাবে তা পূর্ণ হয় এ খবরও আল্লাহ তাআ’লাই রাখেন। দেখা যায় যে, কোন কোন নারী গর্ভ ধারণ করে থাকে পূর্ণ দশ মাস। আবার কেউ ধারণ করেন ন'মাস। কারো গর্ভ বাড়ে এবং কারো কমে। ন'মাস থেকে কমে যাওয়া এবং নমাস থেকে বেড়ে যাওয়া আল্লাহ তাআ’লার অবগতিতে রয়েছে। হযরত যহহাক (রঃ) বলেনঃ “আমি দু’বছর মায়ের পেটে থেকেছি। আমি যখন ভূমিষ্ঠ হই তখন আমার সামনে দু’টি দাঁত বেরিয়ে পড়েছিল।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, গর্ভধারণের শেষ সময়কাল হচ্ছে দু’বছর। কমে যাওয়া দ্বারা কারো কারো মতে উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভধারণের সময়কালের মধ্যে রক্ত আসা। আর বেড়ে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভধারণের সময়কাল ন'মাসের বেশী হওয়া। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ন’মাসের পূর্বে যদি স্ত্রীলোক রক্ত দেখে তবে গর্ভ ন'মাস ছাড়িয়ে যায় হায়েযের সময়কালের মত। রক্ত ঝরলে শিশু ভাল হয় এবং রক্ত না ঝরলে শিশু পূর্ণ ও বড় হয়। হযরত মাকহুল (রঃ) বলেনঃ “মায়ের পেটে শিশু সম্পূর্ণরূপে শান্তি ও আরামে থাকে। তার কোনই কষ্ট হয় না। তার মায়ের হায়েযের রক্ত তার খাদ্য হয়ে থাকে। তা অতি সহজে তার কাছে পৌঁছে থাকে। এ কারণেই গর্ভ ধারণের সময়কালে মায়ের হায়েয বা ঋতু হয় না। যখন সন্তান ভূমিষ্টি হয় তখন মাটিতে পড়া মাত্রই চীৎকার করে ওঠে। ঐ অপরিচিত জায়গায় সে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। যখন তার নাভি কেটে দেয়া হয় তখন তার খাদ্য আল্লাহ তাআ’লা তার মায়ের বক্ষে পৌঁছিয়ে দেন। তখনও বিনা সন্ধানে, বিনা চাওয়ায়, বিনা কষ্টে এবং বিনা চিন্তায় সে খাদ্য পেয়ে থাকে। তারপর কিছুটা বড় হলে সে নিজের হাতে পানাহার করতে শুরু করে। কিন্তু বালেগ হওয়া মাত্রই জীবিকার জন্যে সে হা-হুতাশ করতে থাকে। মরে যাওয়া এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত রুযী লাভের সম্ভাবনা থাকলে তখনও তাতে সে কোন দ্বিধাবোধ করে না। আফসোস। হে বনি আদম (আঃ)! তোমাকে দেখে বিস্মিত হতে হয়! যিনি তোমাকে তোমার মায়ের পেটে আহার্য দিলেন, যিনি তোমাকে তোমার মায়ের কোলে আহার্য দিলেন, যিনি তোমাকে তোমার বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত খেতে দিলেন, এখন তুমি বয়োঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান হয়ে (তাকে ভুলে গেলে এবং) বলতে শুরু করলেঃ হায়! কোথা থেকে খেতে পাবো? আমার মরণ হোক বা আমি নিহত হই।” অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন (আরবি) (এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে)। এ সম্পর্কে কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তাঁর বিধানে প্রত্যেকেরই অয়ু, রিযক ইত্যাদি নির্ধারিত রয়েছে।সহীহ হাদীসে আছে যে, নবীর (সঃ) এক কন্যা তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে খবর দেন যে, তাঁর এক ছেলে মৃত্যু শিয়রে দণ্ডায়মান। সুতরাং তিনি তাঁর উপস্থিতি কামনা করেন। এ খবর শুনে নবী (সঃ) তাঁর মেয়ের কাছে সংবাদ পাঠানঃ “আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁরই। তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুরই একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।” (অতঃপর তিনি জনগণকে বলেনঃ) “তোমরা তাকে নির্দেশ দাও যে, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা রাখে।”আল্লাহ তাআ’লা ঐ সব কিছুই জানেন যা তাঁর বান্দাদের থেকে গোপনীয় রয়েছে এবং যা তাদের কাছে প্রকাশমান আছে। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। তিনি সর্বাপেক্ষা বড়। তিনি সবচেয়ে উচ্চ। সবকিছুই তাঁর অবগতিতে রয়েছে। সমস্ত মাখলুক তার কাছে বিনীত ও অবনত। এটা ইচ্ছায়ই হোক বা বাধ্য হয়েই হোক।