slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة فصلت

(Fussilat) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم

📘 Please check ayah 41:5 for complete tafsir.

وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ

📘 Please check ayah 41:12 for complete tafsir.

ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ

📘 Please check ayah 41:12 for complete tafsir.

فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

📘 ৯-১২ নং আয়াতের তাফসীর: সবারই সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা, শাসনকর্তা এবং পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ। সবারই উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান একমাত্র তিনিই। যমীনের ন্যায় প্রশস্ত সৃষ্ট জিনিসকে তিনি স্বীয় পূর্ণ ক্ষমতাবলে মাত্র দুই দিনে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের তার সাথে কুফরী করাও উচিত নয় এবং শির্ক করাও না। তিনিই যেমন সবারই সৃষ্টিকর্তা তেমনই তিনিই সবারই পালনকর্তা। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, অন্যান্য আয়াতে যমীন ও আসমানকে ছয় দিনে সৃষ্টি করার কথা বর্ণিত হয়েছে, আর এখানে এগুলোকে সৃষ্টি করার সময় পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং জানা গেল যে, প্রথমে যমীনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অট্টালিকা নির্মাণ করারও পদ্ধতি এটাই যে, প্রথমে ভিত্তি ও নীচের অংশ নির্মাণ করা হয়। তারপর উপরের অংশ ও ছাদ নির্মাণ করা হয়ে থাকে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তৎপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং ওকে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন।”(২:২৯) আর আল্লাহ তাআলা যে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই এটা নির্মাণ করেছেন; তিনি এটাকে সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং প্রকাশ করেছেন সূর্যালোক; এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন। তিনি ওটা হতে বহির্গত করেছেন ওর পানি ও তৃণ, এবং পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন। এসব তোমাদের ও তোমাদের (গৃহপালিত) চতুষ্পদ জন্তুর ভোগের জন্যে।”(৭৯ ২৭-৩৩) এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আসমানকে প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যমীনকে এর পরে বিছানো হয়েছে; কিন্তু এর দ্বারা ভাবার্থ এই যে, পরে যমীন হতে পানি, চারা বের করা হয়েছে এবং পাহাড়কে গেড়ে দেয়া হয়েছে। যেমন এর পরেই রয়েছেঃ “তিনি ওটা হতে বের করেছেন ওর পানি ও তৃণ।” তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে ঠিকঠাক করেছেন। সুতরাং দু’টি আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলেনঃ “কুরআন কারীমের কতকগুলো আয়াতের মধ্যে আমি কিছুটা অনৈক্য দেখতে পাচ্ছি। যেমন একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ দিন তাদের মধ্যে কোন বংশ সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।”(২৩:১০১) অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করবে।”(৫২:২৫) এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা আল্লাহর কাছে কোন কথা গোপন করবে না।”(৪:৪২) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না।”(৬:২৩) এ আয়াতে রয়েছে যে, তারা গোপন করবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই এটা সৃষ্টি করেছেন।...... এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন।”(৭৯:২৭-৩০) এখানে মহান আল্লাহ্ আকাশ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন যমীনের পূর্বে। আর এখানে (সূরায়ে হা-মীম, আস্ সাজদায়) বলেছেনঃ (আরবী) এখানে তিনি যমীন সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করেছেন আকাশ সৃষ্টির পূর্বে। আর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী) তাহলে কি আল্লাহ্ এরূপ ছিলেন, তারপর গত হয়ে গেছেন? দয়া করে এগুলোর সঠিক অর্থ বুঝিয়ে দিন, যাতে অনৈক্য দূর হয়ে যায়। লোকটির এসব প্রশ্নের উত্তরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “যে দু’টি আয়াতের একটির মধ্যে পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে এবং অন্যটিতে তা অস্বীকার করা হয়েছে। এটা দুই সময়ের কথা। শিংগায় দুটি ফুকার দেয়া হবে। প্রথম ফুৎকারের সময় পরস্পরের মধ্যে কোন জিজ্ঞাসাবাদ হবে না। দ্বিতীয় ফুঙ্কারের সময় পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ হবে। যে দুটি আয়াতের একটির মধ্যে কোন কথা গোপন না করার এবং অন্য আয়াতে গোপন করার কথা রয়েছে। এরও স্থল দু’টি। যখন মুশরিকরা দেখবে যে, একত্ববাদীদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে তখন তারা বলবেঃ “আমরা মুশরিক ছিলাম না। কিন্তু যখন তাদের মুখে মোহর লেগে যাবে এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সাক্ষ্য দিতে শুরু করবে তখন আর কিছুই গোপন থাকবে না এবং তাদের কৃতকর্মের স্বীকারুক্তি হয়ে যাবে। তখন তারা বলবেঃ “হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম।”আসমান এবং যমীনের সৃষ্টির ক্রম পর্যায়ের ব্যাপারেও কোন অনৈক্য নেই। প্রথমে দুই দিনে যমীনকে সৃষ্টি করা হয়। তারপর দুই দিনে আসমানকে সৃষ্টি করা হয়। অতঃপর যমীনের জিনিসগুলো, যেমন পানি, চারা, পাহাড়-পর্বত, প্রস্তরাদি, জড় পদার্থ ইত্যাদি দুই দিনে সৃষ্টি করেন। (আরবী)-এর অর্থ এটাই। সুতরাং যমীনের পূর্ণ সৃষ্টিকার্য চার দিনে হয়েছে। আর আসমান সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে।যে নামগুলো আল্লাহ তা'আলা নিজের জন্যে নির্ধারণ করেছেন ওগুলোর তিনি বর্ণনা দিয়েছেন যে, সদা-সর্বদা তিনি ঐরূপই থাকবেন। আল্লাহ তা'আলার কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকে না। সুতরাং কুরআন কারীমের মধ্যে মোটেই অনৈক্য নেই এবং এর আয়াতগুলো পরস্পর বিরোধী নয়। এর এক একটি শব্দ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার পক্ষ হতে এসেছে। যমীনকে আল্লাহ তা'আলা দুই দিনে সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ রবিবার ও সোমবারে। আর যমীনের উপর পাহাড়-পর্বত বানিয়েছেন। যমীনকে তিনি বরকতময় করেছেন। মানুষ এতে বীজ বপন করে এবং তা হতে গাছ, ফলমূল ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। পৃথিবীবাসীর যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার সবই যমীনেই উৎপন্ন হয়। ক্ষেত এবং বাগানের স্থানও তিনি বানিয়ে দিয়েছেন। যমীনের এই ঠিক-ঠাককরণ মঙ্গল ও বুধবারে হয়। চার দিনে যমীনের সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত হয়। যে লোকগুলো এর জ্ঞান লাভ করতে চাচ্ছিল তারা পূর্ণ জবাব পেয়ে যায়। সুতরাং এ বিষয়ে তারা জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়। যমীনের প্রতিটি অংশে মহান আল্লাহ ঐ জিনিস সরবরাহ করেছেন যা তথাকার বাসিন্দার জন্যে উপযোগী। যেমন ইয়ামনে আসব’, সাকূরে ‘সাকূরী’ এবং রাষ্ট্র এ তায়ালিসা’। আয়াতের শেষ বাক্যের ভাবার্থ এটাই। এটাও বলা। হয়েছে যে, যার যা প্রয়োজন ছিল, আল্লাহ তা'আলা তার জন্যে তা সরবরাহ করেছেন। এ অর্থটি আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির সহিত সাদৃশ্যপূর্ণঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু চেয়েছে, তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে তার সবই দিয়েছেন।”(১৪:৩৪) এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। আল্লাহ একে এবং পৃথিবীকে বললেনঃ তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। অর্থাৎ আমার হুকুম মেনে নিয়ে আমি যা বলি তাই হয়ে যাও, খুশী মনে অথবা বাধ্য হয়ে।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যেমন আকাশকে হুকুম করা হলো সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি উদিত করার। আর যমীনকে হুকুম করা হলো পানির নহর জারী করার এবং ফল-মূল উৎপন্ন করার ইত্যাদি। উভয়েই খুশী মনে হুকুম মেনে নিতে সম্মত হয়ে গেল এবং বললোঃ “আমরা আসলাম অনুগত হয়ে। কথিত আছে যে, এদুটোকে কথোপকথনকারীদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। একথাও। বলা হয়েছে যে, যমীনের ঐ অংশ কথা বলেছিল যেখানে কাবা ঘর নির্মিত হয়েছে। আর আসমানের ঐ অংশ কথা বলেছিল যা ঠিক এর উপরে রয়েছে। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।ইমাম হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যদি আসমান ও যমীন আনুগত্য স্বীকার না করতো তবে ওদেরকে শাস্তি দেয়া হতো, যে শাস্তির যন্ত্রণা তারা অনুভব করতো।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আকাশমণ্ডলকে দুই দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে। প্রত্যেক আকাশে তিনি ইচ্ছামত জিনিস ও ফেরেশতামণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত ও নিয়োজিত করে দেন। দুনিয়ার আকাশকে তিনি তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেন যেগুলো যমীনে আলো বিচ্ছুরিত করে এবং ঐ শয়তানদের প্রতি ওরা সজাগ দৃষ্টি রাখে যারা উর্ধ জগতের কিছু শুনবার উদ্দেশ্য উপরে উঠার ইচ্ছা করে এবং ওগুলো সব দিক হতে ঐ শয়তানদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা, যিনি সবারই উপর বিজয়ী, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিটি অংশের সমস্ত প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয়ের খবর রাখেন।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকার্য সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা রবিবার ও সোমবারে যমীন সৃষ্টি করেন। পাহাড় পর্বত এবং সমুদয় উপকারী বস্তুকে সৃষ্টি করেন মঙ্গলবারে। বুধবারে গাছ-পালা, পানি, শহর এবং আবাদী ও অনাবাদি অর্থাৎ জনপদ ও মরু প্রান্তর সৃষ্টি করেন। সুতরাং এটা হলো চার দিন।” এটা বর্ণনা করার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ আয়াতটিই পাঠ করেন। অতঃপর বলেনঃ “বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তা'আলা আসমান সৃষ্টি করেন এবং শুক্রবারে তিন ঘন্টা বাকী থাকা পর্যন্ত নক্ষত্ররাজি, সূর্য, চন্দ্র এবং ফেরেশতামণ্ডলী সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় ঘন্টায় প্রত্যেকটি জিনিসের উপর বিপদ আপতিত করেন যার থেকে লোক উপকার লাভ করে থাকে। তৃতীয় ঘন্টায় তিনি হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন, তাঁকে বেহেশতে প্রতিষ্ঠিত করেন, ইবলীসকে হুকুম করেন হযরত আদম (আঃ)-কে সিজদা করার এবং পরিশেষে তাকে সেখান হতে বের করে দেন।” ইয়াহূদীরা বললোঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এরপর কি হলো?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তারা বললোঃ “আপনি সবই ঠিক বলেছেন, কিন্তু শেষ কথাটি বলেননি। তা হলো এই যে, অতঃপর তিনি আরাম গ্রহণ করেন। তাদের একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) রাগান্বিত হলেন। তখন নিম্নলিখিত আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে; আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। অতএব, তারা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর।”(৫০:৩৮-৩৯) (এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি গারীব) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরে বললেনঃ “আল্লাহ তা'আলা মাটিকে শনিবারের দিন সৃষ্টি করেন। তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেন রবিবারে। বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন সোমবারে। অপ্রীতিকর জিনিস সৃষ্টি করেন মঙ্গলবারে। আলো সৃষ্টি করেন বুধবারে। জীব-জন্তু যমীনে ছড়িয়ে দেন বৃহস্পতিবারে। আর শুক্রবারের দিন আসরের এবং রাত্রির মাঝামাঝি সময়ে, দিনের শেষ ভাগে হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন এবং এভাবে সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত করেন।” (এ হাদীসটি ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বর্ণনা করেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটাও গারীব হাদীস। ইমাম বুখারী (রঃ) এটাকে মুআল্লাল বলেছেন এবং বলেছেন যে, কেউ কেউ এটাকে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে এবং হযরত হুরাইরা (রাঃ) কা'ব আহবার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এটাই সঠিকতম)

فَإِنْ أَعْرَضُوا فَقُلْ أَنْذَرْتُكُمْ صَاعِقَةً مِثْلَ صَاعِقَةِ عَادٍ وَثَمُودَ

📘 Please check ayah 41:18 for complete tafsir.

إِذْ جَاءَتْهُمُ الرُّسُلُ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۖ قَالُوا لَوْ شَاءَ رَبُّنَا لَأَنْزَلَ مَلَائِكَةً فَإِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ

📘 Please check ayah 41:18 for complete tafsir.

فَأَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوا مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً ۖ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَهُمْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ

📘 Please check ayah 41:18 for complete tafsir.

فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا فِي أَيَّامٍ نَحِسَاتٍ لِنُذِيقَهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَخْزَىٰ ۖ وَهُمْ لَا يُنْصَرُونَ

📘 Please check ayah 41:18 for complete tafsir.

وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمَىٰ عَلَى الْهُدَىٰ فَأَخَذَتْهُمْ صَاعِقَةُ الْعَذَابِ الْهُونِ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

📘 Please check ayah 41:18 for complete tafsir.

وَنَجَّيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ

📘 ১৩-১৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমাকে যারা অবিশ্বাস করছে। এবং আল্লাহর সাথে কুফরী করছে তাদেরকে বলে দাও- তোমরা যদি শিক্ষা ও উপদেশমূলক কথা হতে মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তোমাদের পরিণাম ভাল হবে না। জেনে রেখো যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা তাদের নবীদেরকে (আঃ) অমান্য করার কারণে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে, তোমাদের কৃতকর্ম যেন তোমাদেরকে তাদের মত না করে দেয়। আ’দ, সামূদ এবং তাদের মত অন্যান্য সম্প্রদায়ের অবস্থা তোমাদের সামনে রয়েছে। তাদের কাছে পর্যায়ক্রমে রাসূলদের আগমন ঘটেছিল। তারা এই গ্রামে, ঐ গ্রামে, এই বস্তীতে, সেই বস্তীতে এসে তাদেরকে আল্লাহর বাণী শুনাতে থাকতেন। কিন্তু তারা গর্বভরে তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করে। তারা রাসূলদেরকে (আঃ) বলেঃ আমাদের প্রতিপালকের এইরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা প্রেরণ করতেন। অতএব, তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করলাম। আ’দ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করতো। ভূ-পৃষ্ঠে তারা বিপর্যয় সৃষ্টি করতো। তাদের গর্ব ও হঠকারিতা চরমে পৌঁছে। গিয়েছিল। তাদের ঔদ্ধত্য ও অগ্রাহ্যতা এমন শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, তারা বলে উঠেছিলঃ “আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী আর কে আছে?” অর্থাৎ আমাদের মত শক্তিশালী, দৃঢ় ও মযবূত আর কেউ নেই। সুতরাং আল্লাহর আযাব আমাদের কি ক্ষতি করতে পারে?তারা এতো বেশী ফুলে উঠে যে, আল্লাহকে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়। তারা কি তবে লক্ষ্য করেনি যে, আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি তাদের চেয়ে বহু গুণে শক্তিশালী? তার শক্তির অনুমানও করা যায় না। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আমার হাতে আকাশ সৃষ্টি করেছি এবং আমি ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী।”(৫১:৪৭)।প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞাবায়ু অশুভ দিনে, যাতে তাদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায় এবং তারা সমূলে ধ্বংস হয়।(আরবী) বলা হয় ভীষণ শব্দ বিশিষ্ট বায়ুকে। পূর্বদিকে একটি নদী রয়েছে, যা ভীষণ শব্দ করে প্রবাহিত হয়। এ জন্যে আরববাসী ওটাকেও (আরবী) বলে থাকে। দ্বারা পর্যায়ক্রমে বা অনবরত চলা বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(ঐ ঝঞাবায়ু তাদের উপর) সপ্তরাত্রি ও অষ্টদিবস বিরামহীন ভাবে (প্রবাহিত হয়েছিল)।”(৬৯:৭) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(তাদের উপর আমি প্রেরণ করেছিলাম ঝঞাবায়ু) নিরবচ্ছিন্ন দুর্ভাগ্যের দিনে।”(৫৪:১৯) যে শাস্তি তাদের উপর আপতিত হয়েছিল সাত রাত এবং আট দিন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে ছিল। ফলে সবাই তারা ধ্বংসের ঘাটে এসে পতিত হয়েছিল এবং তাদের বীজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আর পরকালের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। না দুনিয়ায় কেউ তাদের সাহায্য করতে পারলো, না পরকালে কেউ তাদের সাহায্য করতে পারবে। উভয় জগতেই তারা বন্ধনহীন রয়ে গেল। প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ-নির্দেশ করেছিলাম। হিদায়াত তাদের কাছে খুলে দিয়েছিলাম এবং তাদেরকে সৎপথে আহ্বান করেছিলাম। হযরত সালেহ (আঃ) তাদের কাছে সত্যকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা বিরোধিতা ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং হযরত সালেহ (আঃ)-এর সত্যবাদিতার। প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ্ তা'আলা যে উষ্ট্ৰীটি পাঠিয়েছিলেন তারা তার পা কেটে ফেলে। ফলে তাদের উপরও আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে। তাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আঘাত হানলো, অর্থাৎ তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হলো এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা। এটা ছিল তাদের কৃতকর্মেরই প্রতিফল।তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান এনেছিল এবং নবীদের (আঃ) সত্যতা স্বীকার করেছিল এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখতো তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা বাঁচিয়ে নেন। তাদের মোটেই কষ্ট হয়নি। তারা তাদের নবী (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ তা'আলার লাঞ্ছনাজনক শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভ করে।

وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءُ اللَّهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوزَعُونَ

📘 Please check ayah 41:24 for complete tafsir.

تَنْزِيلٌ مِنَ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

📘 Please check ayah 41:5 for complete tafsir.

حَتَّىٰ إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 Please check ayah 41:24 for complete tafsir.

وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا ۖ قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

📘 Please check ayah 41:24 for complete tafsir.

وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُونَ أَنْ يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَا أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُودُكُمْ وَلَٰكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللَّهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيرًا مِمَّا تَعْمَلُونَ

📘 Please check ayah 41:24 for complete tafsir.

وَذَٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِي ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ أَرْدَاكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ مِنَ الْخَاسِرِينَ

📘 Please check ayah 41:24 for complete tafsir.

فَإِنْ يَصْبِرُوا فَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ ۖ وَإِنْ يَسْتَعْتِبُوا فَمَا هُمْ مِنَ الْمُعْتَبِينَ

📘 ১৯-২৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এই মুশরিকদেরকে বলে দাও- কিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নাম অভিমুখে সমবেত করা হবে এবং জাহান্নামের রক্ষক তাদেরকে একত্রিত করবেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি অপরাধীদেরকে জাহান্নামের দিকে কঠিন পিপাসার্ত অবস্থায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাবো।”(১৯:৮৬) তাদেরকে জাহান্নামের ধারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, দেহ, কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তাদের আমলগুলোর সাক্ষ্য প্রদান করবে। তাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত দোষ প্রকাশিত হয়ে পড়বে। দেহের প্রতিটি অঙ্গ বলে উঠবেঃ “সে আমার দ্বারা এই গুনাহ করেছে।” তখন সে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে ভৎসনা করে বলবেঃ “কেন তোমরা আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করছো?” তারা উত্তরে বলবেঃ “আমরা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করছি মাত্র। তিনি আমাদেরকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন। সুতরাং আমরা সত্য সত্য কথা শুনিয়ে দিয়েছি। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টিকারী। তিনিই সবকিছুকে বাকশক্তি দান করেছেন। সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধাচরণ এবং তার হুকুমের অবাধ্যাচরণ কে করতে পারে?হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেসে উঠেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আমি কেন হাসলাম তা তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করলে না যে?” সাহাবীগণ (রাঃ) তখন বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি হাসলেন কেন?" উত্তরে তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন বান্দার তার প্রতিপালকের সাথে ঝগড়ার কথা মনে করে আমি বিস্ময়বোধ করছি। বান্দা বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেননি যে, আপনি আমার উপর যুলুম করবেন না?আল্লাহ তা'আলা জবাবে বলবেনঃ “হ্যা (অবশ্যই করেছিলাম)।” সে বলবেঃ “আমি তো আমার আমলের উপর আমার নিজের ছাড়া আর কারো সাক্ষ্য কবুল করবে না। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “আমি এবং আমার সম্মানিত ফেরেশতারা কি সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে যথেষ্ট নই?" কিন্তু সে বারবার তার একথাই বলতে থাকবে। তখন আল্লাহ তা'আলা সমস্ত জ্জতের জন্যে তার মুখে মোহর লাগিয়ে দিবেন এবং তার। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বলা হবেঃ “সে যা কিছু করেছে তার সাক্ষ্য তোমরা প্রদান কর।” তারা তখন পরিষ্কারভাবে সত্য সাক্ষ্য দিয়ে দিবে। সে তখন। তাদেরকে তিরস্কার করে বলবেঃ “আমি তো তোমাদেরকেই রক্ষা করার জন্যে তর্ক করছিলাম।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযায় (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন) হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) বলেনঃ “কাফির এবং মুনাফিকদেরকে হিসাবের জন্যে ডাক দেয়া হবে। তিনি তাদের প্রত্যেকের সামনে তার কৃতকর্ম পেশ করবেন। তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি শপথ করে করে নিজের কৃতকর্ম অস্বীকার করবে এবং বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার ফেরেশতারা এমন কিছু লিখে রেখেছেন যা আমি কখনো করিনি। ফেরেশতারা বলবেনঃ “তুমি কি অমুক দিন অমুক জায়গায় অমুক আমল করনি?” সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার মর্যাদার শপথ! আমি এ কাজ কখনো করিনি।” অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে। সর্বপ্রথম তার ডান উরু কথা বলবে।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন কাফিরের সামনে তার কৃত মন্দ আমলগুলো পেশ করা হবে। সে তখন ওগুলো অস্বীকার করবে এবং তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিবে। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “এই যে তোমার প্রতিবেশীরা তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে?” সে বলবেঃ “তারা মিথ্যা বলছে।” মহান আল্লাহ বলবেনঃ “এই যে এরা তোমার পরিবারবর্গ, এরা সাক্ষ্য দিচ্ছে? সে উত্তর দিবেঃ “এরাও সবাই মিথ্যাবাদী।” আল্লাহ তা'আলা তখন তাদেরকে শপথ করাবেন। তখন তারা শপথ করবে। তথাপি সে অস্বীকারই করবে। আল্লাহ তাআলা তখন তাদেরকে নীরব করবেন এবং স্বয়ং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে এবং তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুল আরাক (রঃ)-কে বলেনঃ “কিয়ামতের দিন একটি সময় তো এমন হবে যে, কাউকেও কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে না এবং কোন ওযর-আপত্তিও শুনা হবে না। অতঃপর যখন কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে তখন বান্দা ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্ক করতে শুরু করবে এবং স্বীয় কৃতকর্মকে অস্বীকার করে বসবে। তারা মিথ্যা শপথ করবে। অবশেষে তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তাদের ত্বক, চক্ষু, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে। অতঃপর তাদের মুখ খুলে দেয়া হবে। তখন তারা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার কারণে তিরস্কার করবে। তারা তখন বলবেঃ “আল্লাহ, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন তিনি। আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার এবং তাঁর নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।' তখন মুখও স্বীকার করে নিবে।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত রাফে আবুল হাসান (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, স্বীয় কৃতকর্ম অস্বীকার করার কারণে তার জিহ্বা এতো মোটা করে দেয়া হবে যে, ওটা একটা কথাও বলতে পারবে না। তখন দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সাক্ষ্য দিতে বলা হবে। তারা প্রত্যেকেই তখন নিজ নিজ আমলের কথা বলে দিবে। কর্ণ, চক্ষু, ত্বক, লজ্জাস্থান, হাত, পা ইত্যাদি সবাই সাক্ষ্য দিবে। (এটাও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এর অনুরূপ আরো বহু হাদীস ও আসার সূরায়ে ইয়াসীনের নিম্নের আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। আয়াতটি হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আজ তাদের মুখ মোহর করে দিবো, তাদের হস্ত কথা বলবে আমার সাথে এবং তাদের চরণ সাক্ষ্য দিবে তাদের কৃতকর্মের।”(৩৬:৬৫)।হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমরা সমুদ্রের হিজরত হতে ফিরে আসি তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা আমাদেরকে বললেনঃ “তোমরা হাবশা দেশে (আবিসিনিয়ায়) বিস্ময়কর ঘটনা কিছু দেখে থাকলে বর্ণনা কর।” তখন একজন যুবক বললোঃ “একদা আমরা সেখানে বসে আছি এমন সময় তাদের আলেমদের একজন বৃদ্ধা মহিলা মাথায় একটি কলসি নিয়ে আমাদের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তাদের একজন যুবক তাকে ধাক্কা দেয়। ফলে সে পড়ে যায় এবং কলসিটি ভেঙ্গে যায়। তখন ঐ বৃদ্ধা মহিলাটি উঠে ঐ যুবকটির দিকে দৃষ্টিপাত করে বললোঃ “ওরে প্রতারক! তুই এর পরিণাম তখনই জানতে পারবি যখন আল্লাহ তাআলা স্বীয় কুরসীর উপর সমাসীন হবেন এবং তার বান্দাদেরকে একত্রিত করবেন। ঐ সময় তাদের হাত, পা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং প্রত্যেকের প্রত্যেকটি আমল প্রকাশিত হয়ে পড়বে। ঐদিন তোর এবং আমার মধ্যে ফায়সালা হয়ে যাবে।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “বৃদ্ধা মহিলাটি সত্য কথাই বলেছে, আল্লাহ তা'আলা ঐ সম্প্রদায়কে কিভাবে পবিত্র করবেন যাদের দুর্বলদের প্রতিশোধ সবলদের হতে গ্রহণ না করবেন?” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা এই সনদে গারীব)ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) এই রিওয়াইয়াতটিই অন্য সনদে বর্ণনা করেছেন। যখন বান্দা স্বীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দানের কারণে ভসনা। করবে তখন তারা উত্তর দিতে গিয়ে এ কথাও বলবেঃ “তোমাদের আমলগুলো আসলে গোপন ছিল না। আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টির সামনে তোমরা কুফরী ও অবাধ্যাচরণের কাজে লিপ্ত থাকতে এবং কিছুই পরোয়া করতে না। কেননা, তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের বহু কাজ আল্লাহর নিকট গোপন থাকছে। এই মিথ্যা ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই আজ তোমরা ধ্বংস হয়ে গেছে।” হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমি কাবা শরীফের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। এমতাবস্থায় তথায় তিনজন লোক আসলো, যাদের পেট ছিল বড় এবং জ্ঞান ছিল কম। তাদের একজন বললোঃ “আচ্ছা বলতো, আমরা যে কথা বলছি তা কি আল্লাহ শুনতে পাচ্ছেন?” দ্বিতীয়জন বললোঃ “আমরা উচ্চস্বরে কথা বললে তিনি শুনতে পান এবং নিম্ন স্বরে কথা বললে তিনি শুনতে পান না।” তৃতীয় জন বললোঃ “তিনি কিছু শুনতে পেলে সবই শুনতে পান।” আমি এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না .......... ফলে তোমরা হয়েছে ক্ষগ্রিস্ত।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত বাহ্য ইবনে হাকীম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, তোমাদের মুখের উপর মোহর মারা থাকবে। তোমাদের মধ্যে কারো আমল সর্বপ্রথম যে (অঙ্গ) প্রকাশ করবে তা হবে তার উরু ও স্কন্ধ।” (এ হাদীসটি আবদুর রাযযাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মা’মার (রঃ) বলেন যে, হযরত হাসান (রঃ) (আরবী) পাঠ করার পরে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে, আমি তার সাথে ঐ ব্যবহারই করে থাকি। আর যখন সে আমাকে ডাকে আমি তখন তার সাথেই থাকি।” হযরত হাসান (রঃ) এটুকু বলার পর কিছুক্ষণ চিন্তা করে আবার বলতে শুরু করেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে যে ব্যক্তি যে ধরিণা করে তার আমলও ঐরূপই হয়ে থাকে। মুমিন আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা রাখে বলে তার আমলও ভাল হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে কাফির ও মুনাফিক আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে বলে তার আমলও মন্দ হয়। অতঃপর তিনি বলেন যে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না ........ তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের এই ধারণাই তোমাদের ধ্বংস এনেছে। ফলে তোমরা ধ্বংস হয়েছে।”হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন এই অবস্থা ছাড়া মৃত্যু বরণ না করে যে, আল্লাহর প্রতি তার ধারণা ভাল রয়েছে। কারণ যে সম্প্রদায় আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা রেখেছে (আরবী) আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।” অতঃপর তিনি ... (আরবী)-এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এখন তারা ধৈর্যধারণ করলেও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস এবং তারা অনুগ্রহ চাইলেও তারা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবে না। অর্থাৎ জাহান্নামীদের জাহান্নামের মধ্যে ধৈর্যধারণ করা বা না করা সমান। তাদের কোন ওযর-আপত্তিও গ্রহণ করা হবে না এবং তাদের পাপও ক্ষমা করা হবে না। তাদের জন্যে দুনিয়ায় পুনরায় প্রত্যাবর্তনের পথও বন্ধ। এটা আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মতঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা বলবে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর আমাদের। দুর্ভাগ্য ছেয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এর থেকে বের করে নিন, যদি আমরা পুনরায় এ কাজই করি তবে তো আমরা অবশ্যই যালিম হবো। আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ তোমরা এর মধ্যেই পড়ে থাকো এবং আমার সাথে কথা বলে না।”(২৩:১০৬-১০৮)

۞ وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَاءَ فَزَيَّنُوا لَهُمْ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا خَاسِرِينَ

📘 Please check ayah 41:29 for complete tafsir.

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَٰذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ

📘 Please check ayah 41:29 for complete tafsir.

فَلَنُذِيقَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا عَذَابًا شَدِيدًا وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَسْوَأَ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 Please check ayah 41:29 for complete tafsir.

ذَٰلِكَ جَزَاءُ أَعْدَاءِ اللَّهِ النَّارُ ۖ لَهُمْ فِيهَا دَارُ الْخُلْدِ ۖ جَزَاءً بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ

📘 Please check ayah 41:29 for complete tafsir.

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ

📘 ২৫-২৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি মুশরিকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছেন। এটা তাঁর ইচ্ছা এবং ক্ষমতা। তিনি তার সমুদয় কাজে নিপুণ। তাঁর প্রতিটি কাজ হিকমত ও নিপুণতা পূর্ণ। তিনি কতকগুলো দানব ও মানবকে মুশরিকদের সাথী করে দেন। তারা তাদের মন্দ আমলগুলোও তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখায়। তারা দূর অতীতের দিক দিয়ে এবং ভবিষ্যৎ কালের দিক দিয়েও তাদের আমলগুলোকে ভাল মনে করে থাকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্যে নিয়োজিত করি শয়তান, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে পরিচালিত হচ্ছে।”(৪৩:৩৬-৩৭)।তাদের উপর আল্লাহর শাস্তির কথা বাস্তব হয়েছে, যেমন তাদের পূর্ববর্তী দানব ও মানবদের উপর শাস্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল। তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এরাও তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এবং এরা সমান হয়ে গেছে।কাফিররা পারস্পরিক পরামর্শক্রমে এই ঐকমত্যে পৌঁছেছিল যে, তারা আল্লাহর কালামকে মানবে না এবং এর হুকুমের আনুগত্য করবে না। বরং তারা একে অপরকে বলে দেয় যে, যখন কুরআন পাঠ করা হবে তখন যেন শোরগোল ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়া হয়। যেমন হাততালি দেয়া, বাঁশী বাজানো এবং চিৎকার করা। কুরায়েশরা তাই করতো। তারা দোষারোপ করতো, অস্বীকার করতো, শত্রুতা করতো এবং এটাকে নিজেদের বিজয় লাভের কারণ মনে করতো। প্রত্যেক অজ্ঞ, মূর্খ কাফিরের এই একই অবস্থা যে, তার কুরআন শুনতে ভাল লাগে না। এজন্যেই এর বিপরীত করতে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা তা শুনো ও চুপ থাকো, যাতে তোমাদের উপর দয়া করা হয়।”(৭:২০৪)।ঐ কাফিরদেরকে ধমকানো হচ্ছে যে, কুরআন কারীমের বিরোধিতা করার কারণে তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। আর অবশ্যই তারা তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি আস্বাদন করবে। আল্লাহর এই শত্রুদের বিনিময় হলো জাহান্নামের আগুন। এর মধ্যেই রয়েছে তাদের জন্যে স্থায়ী আবাস, আল্লাহর নিদর্শনাবলী অস্বীকৃতির প্রতিফল স্বরূপ।এর পরবর্তী আয়াতের ভাবার্থ হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ‘জ্বিন’ দ্বারা ইবলীস এবং ইনস’ (মানুষ) দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-এর ঐ সন্তানকে বুঝানো হয়েছে যে তার ভাইকে হত্যা করেছিল।অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ইবলীস তো প্রত্যেক মুশরিককে ডাক দিবে, আর হযরত আদম (আঃ)-এর এই সন্তানটি প্রত্যেক কাবীরা গুনাহকারীকে ডাক দিবে। সুতরাং ইবলীস শিরক এবং সমস্ত পাপকার্যের দিকে মানুষকে আহ্বানকারী এবং প্রথম রাসূল হযরত আদম (আঃ)-এর যে ছেলেটি তার ভাইকে হত্যা করেছিল সেও এই কাজে শরীক রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “ভূ-পৃষ্ঠে যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটতে আছে এর প্রত্যেকটার পাপ হযরত আদম (আঃ)-এর এই প্রথম ছেলের উপরও চেপে থাকে। কেননা, সে-ই প্রথম হত্যাকাস্ত্রে সূচনাকারী।”সুতরাং কিয়ামতের দিন কাফিররা তাদেরকে পথভ্রষ্টকারী দানব ও মানবদেরকে নিম্নস্তরের জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাতে চাইবে, যাতে তাদের শাস্তি কঠিন হয় এবং তারা অত্যন্ত লাঞ্ছিত হয়। মোটকথা, তাদের চেয়ে ওদের শাস্তি যেন বহুগুণে বেশী হয় এটাই তারা কামনা করবে। যেমন সূরায়ে আ'রাফে এ বর্ণনা গত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনুসারীরা অনুসৃতদের দ্বিগুণ শাস্তির জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট আবেদন করবে, তখন উত্তরে বলা হবেঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জান না।”(৭:৩৮) অর্থাৎ প্রত্যেককেই তার আমল অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছে, তাদেরকে আমি তাদের বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করবো।” (১৬:৮৮)

كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 41:5 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ

📘 Please check ayah 41:32 for complete tafsir.

نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ

📘 Please check ayah 41:32 for complete tafsir.

نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ

📘 ৩০-৩২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, যারা মুখে আল্লাহ তাআলাকে প্রতিপালক বলে মেনে নিয়েছে অর্থাৎ তার একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েছে, অতঃপর এর উপর অটল থেকেছে, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছে, তাদের কোন ভয় ও চিন্তা নেই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেনঃ “বহু লোক আল্লাহ তাআলাকে প্রতিপালক মেনে নেয়ার পর আবার কুফরী করে থাকে (তারা এদের অন্তর্ভুক্ত নয়), যারা এটা বলে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে (তারাই এই সুসংবাদ প্রাপ্তির যোগ্য)।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসাঈতেও এটা বর্ণিত হয়েছে)হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াতটি যখন তিলাওয়াত করা হতো তখন তিনি বলতেন যে, এর দ্বারা ঐ লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা কালেমা পড়ে আর কখনো শিরক করে না।আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একদা হযরত আবু বকর (রাঃ) জনগণকে এই আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তরে বলেনঃ “এখানে ইসতিকামাত বা প্রতিষ্ঠিত থাকার অর্থ হচ্ছে আর গুনাহ না করা।” তিনি তখন বলেনঃ “তোমরা ভুল বুঝেছে। এর ভাবার্থ হলো- আল্লাহর একত্বকে স্বীকার করে নিয়ে আবার অন্যের দিকে কখনো ভ্রুক্ষেপ না করা।”হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার কিতাবে (হুকুম ও প্রতিদানের দিক দিয়ে) সবচেয়ে সহজ আয়াত কোনটি? তিনি উত্তরে (আরবী)-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেন যে, আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের উপর আমরণ প্রতিষ্ঠিত থাকা। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উমার (রাঃ) মিম্বরের উপর এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেনঃ “আল্লাহর কসম! এর দ্বারা ঐ লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং খেক শিয়ালের চলন গতির মত এদিক ওদিক চলে না।” (এটা ইমাম যুহরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে,। -এর অর্থ হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর (আদিষ্ট) ফরযগুলো আদায় করে থাকে। কাতাদাও (রঃ) এ কথা বলেন। হযরত হাসান (রঃ) দুআ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রতিপালক। আপনি আমাদেরকে অটলতা ও পক্কতা দান করুন।" আবুল আলিয়া (রঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলোঃ তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আমল করা।সুফিয়ান সাকাফী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে ইসলামের এমন একটি বিষয় বলে দিন যা অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করার আমার প্রয়োজন না হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “তুমি বলঃ আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম। অতঃপর ওর উপর অটল থাকো।" লোকটি বললোঃ “এতো আমল হলো। আমি বেঁচে থাকবো কি হতে তা আমাকে বলে দিন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিহ্বার দিকে ইশারা করলেন এবং বললেনঃ “এটা হতে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)তাদের কাছে তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা আগমন করেন এবং তাদেরকে সুসংবাদ শুনাতে গিয়ে বলেনঃ “তোমরা এখন আখিরাতের মনযিলের দিকে যাচ্ছি। তোমরা নির্ভয়ে থাকো। সেখানে তোমাদের কোন ভয় নেই।তোমাদের পিছনে তোমরা যে দুনিয়া ছেড়ে এসেছে সে ব্যাপারেও তোমরা নিশ্চিন্ত থাকো। তোমার পরিবারবর্গের, সম্পদ ও আসবাবপত্রের এবং দ্বীন ও আমানতের হিফাযতের দায়িত্ব আমাদের যিম্মায় রয়েছে। আমরা তোমাদের প্রতিনিধি। আমরা তোমাদেরকে সুসংবাদ শুনাচ্ছি যে, তোমরা জান্নাতী। তোমাদেরকে সঠিক ও সত্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তা পূর্ণ হবেই।”সুতরাং তারা তাদের মৃত্যুর সময় খুশী হয়ে যায় যে, তারা সমস্ত অকল্যাণ হতে বেঁচে গেছে এবং সর্বপ্রকারের কল্যাণ লাভ করেছে।হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, মুমিনের রূহকে সম্বোধন করে ফেরেশতারা বলেনঃ “হে পবিত্র রূহ, যে পবিত্র দেহে ছিলে, চলো, আল্লাহর ক্ষমা, ইনআম এবং নিয়ামতের দিকে। চলো, ঐ আল্লাহর দিকে যিনি তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন।”এটাও বর্ণিত আছে যে, মুমিনরা যখন তাদের কবর হতে উঠবে তখনই ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবেন এবং সুসংবাদ শুনাবেন। হযরত সাবিত (রাঃ) এই সূরাটি পড়তে পড়তে যখন ... (আরবী)-এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন তখন থেমে যান, অতঃপর বলেন, আমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে যে, মুমিন বান্দা যখন কবর হতে উঠবে তখন ঐ দু’জন ফেরেশতা তার কাছে আসবেন যারা দুনিয়ায় তার সাথে থাকতেন, এসে তাকে বলবেনঃ “ভয় করো না, হতবুদ্ধি হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। তুমি জান্নাতী। তুমি খুশী হয়ে যাও। তোমার সাথে আল্লাহ তা'আলার যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা পূর্ণ হবেই।" মোটকথা, ভয় নিরাপত্তায় পরিবর্তিত হবে, চক্ষু ঠাণ্ডা হবে এবং অন্তর প্রশান্ত থাকবে। কিয়ামতের সমস্ত ভয় ও সন্ত্রাস দূরীভূত হবে। ভাল কাজের বিনিময় স্বচক্ষে দেখবে এবং খুশী হয়ে যাবে। মোটকথা, মৃত্যুর সময়, কবরে এবং কবর হতে উঠবার সময়, সর্বাবস্থাতেই রহমতের ফেরেশতারা মুমিনের সাথে থাকবেন। সদা-সর্বদা তাকে সুসংবাদ শুনাতে থাকবেন। ফেরেশতাগণ মুমিনদেরকে একথাও বলবেনঃ “পার্থিব জীবনেও আমরা তোমাদের সাথে তোমাদের বন্ধু হিসেবে ছিলাম, তোমাদেরকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করতাম, কল্যাণের পথ দেখাতাম এবং তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতাম। অনুরূপভাবে আখিরাতেও তোমাদের সাথে থাকবো, তোমাদের ভয়-ভীতি দূর করে দিবো, কবরে, হাশরে, কিয়ামতের মাঠে, পুলসিরাতের উপর, মোটকথা, সব জায়গাতেই তোমাদের বন্ধু ও সঙ্গী হিসেবে থাকবো। সুখময় জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা তোমাদের থেকে পৃথক হবে না। জান্নাতে পৌঁছে তোমরা যা কিছু চাইবে তা পাবে। তোমাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়ে যাবে। এটা হবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। তাঁর স্নেহ, মেহেরবানী, ক্ষমা, দান সীমাহীন ও খুবই প্রশস্ত। ()হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) এবং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর একবার পরস্পর সাক্ষাৎ ঘটলো। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের উভয়কে জান্নাতের বাজারে মিলিত করেন এই দুআ করি।” তখন হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “জান্নাতের মধ্যেও কি বাজার আছে?” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা! রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে যাবে এবং নিজ নিজ আমলের মর্যাদা অনুযায়ী (জান্নাতের) শ্ৰেণী লাভ করবে তখন দুনিয়ার অনুমানে জুমআর দিন তাদের সবাইকে এক জায়গায় জমা হবার অনুমতি দেয়া হবে। যখন তারা সবাই একত্রিত হয়ে যাবে তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদের উপর স্বীয় ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করবেন। তাঁর আরশ প্রকাশিত হবে। তারা সবাই জান্নাতের বাগানে নূর, মণি-মাণিক্য, ইয়াকূত, যবরজদ এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের মিম্বরের উপর সমাসীন থাকবে। তাদের কেউ কেউ, যারা পুণ্যের দিক দিয়ে কম মর্যাদা বিশিষ্ট হবে, কিন্তু জান্নাতী হওয়ার দিক দিয়ে কারো অপেক্ষা কম মর্যাদা সম্পন্ন হবে না, তারা মিশক আম্বর এবং কপূরের টিলার উপর অবস্থান করবে। কিন্তু তারা নিজেদের এ জায়গাতেই এমন খুশী থাকবে যে, কুরসীর উপর উপবিষ্টদেরকে তাদের চেয়ে মর্যাদাবান মনে করবে না। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবো? উত্তরে তিনি বললেনঃ “হঁ্যা, হঁ্যা, অবশ্যই দেখতে পাবে। অর্ধ দিনের সূর্য এবং চৌদ্দ তারিখের চন্দ্রকে যেভাবে দেখে থাকো তেমনি ভাবেই আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবে।” ঐ মজলিসে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের সাথে কথা বলবেন। এমন কি কোন কোনজনকে তিনি জিজ্ঞেস করবেনঃ “অমুক জায়গায় তুমি আমার অমুক বিরোধিতা করেছিলে তা তোমার স্মরণ আছে কি?” সে উত্তরে বলবেঃ “হে আল্লাহ্ ! আপনি ওটা সম্মন্ধে কেন প্রশ্ন করছেন? ওটা তো আপনি ক্ষমা করে দিয়েছেন!” আল্লাহ তাআলা তখন বলবেনঃ “হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছো। আমার এই অসীম ক্ষমার কারণেই তো তুমি এত বড় মর্যাদার অধিকারী হয়েছে।” তারা ঐ অবস্থাতেই থাকবে। এমন সময় এক মেঘখণ্ড তাদেরকে ঢেকে ফেলবে এবং তা হতে এমন সুগন্ধি বর্ষিত হবে যার মত সুঘ্রাণ কেউ কখনো গ্রহণ করেনি। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদেরকে বলবেনঃ “তোমরা উঠো এবং আমি তোমাদের জন্যে যে পুরস্কার ও পারিতোষিক প্রস্তুত রেখেছি তা গ্রহণ কর?” তারপর বাজারে পৌঁছবে যা ফেরেশতারা চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে থাকবেন। সেখানে তারা এমন সব জিনিস দেখতে পাবে যা কখনো দেখেনি, শুনেনি এবং অন্তরেও খেয়াল জাগেনি। যে ব্যক্তি যে জিনিস চাইবে নিয়ে নিবে। সেখানে ক্রয়-বিক্রয় হবে না, বরং পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে। সেখানে সমস্ত জান্নাতবাসী একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করবে। একজন নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতী উচ্চ শ্রেণীর জান্নাতীর সাথে মোলাকাত করবে। তখন দেখবে যে, তার দেহে সুন্দর সুন্দর পোশাক রয়েছে। তার মনে ওগুলোর খেয়াল জাগা মাত্রই সে তার নিজের দেহের দিকে চেয়ে দেখবে যে, সে ওগুলোর চেয়েও সুন্দর পোশাক পরিহিত রয়েছে। কেননা, সেখানে কারো মনে কোন দুঃখ-চিন্তা থাকবে না। অতঃপর তারা সবাই নিজ নিজ বাসভবনে ফিরে যাবে। সেখানে প্রত্যেককে তার স্ত্রী মারহাবা বলে সাদর সম্ভাষণ জানাবে। অতঃপর বলবেঃ “এখান থেকে যাবার সময় তো আপনার মধ্যে এইরূপ সজীবতা ও ঔজ্বল্য ছিল না, কিন্তু এখন তো সৌন্দর্য, লাবণ্য এবং সুগন্ধ খুব বেশী হয়ে গেছে, এর কারণ কি?” সে উত্তরে বলবেঃ “হ্যা, ঠিকই বটে। আজ আমরা আল্লাহ্ তা'আলার মজলিসে ছিলাম। ফলে আমাদের এই অবস্থা হয়েছে।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহ তাআলাও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎকে মন্দ মনে করে, তিনিও তার সাথে সাক্ষাৎ করা অপছন্দ করেন।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি?” জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “এর অর্থ মৃত্যুকে অপছন্দ করা নয়। বরং মৃত্যুর যন্ত্রণার সময় তার কাছে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে সুসংবাদ আসে, যা শুনে তার কাছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ ছাড়া অধিক প্রিয় আর কিছুই থাকে না। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর পাপী এবং কাফিরের মৃত্যু-যন্ত্রণার সময় যখন তাকে দুঃসংবাদ শুনানো হয় যা তার উপর পতিত হবে, তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহ তা'আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে ঘৃণা করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ। এর বহু সনদ রয়েছে)

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 41:36 for complete tafsir.

وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

📘 Please check ayah 41:36 for complete tafsir.

وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ

📘 Please check ayah 41:36 for complete tafsir.

وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

📘 ৩৩-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাঁর পথে আহ্বান করে। এবং নিজেও সকর্মশীল হয় ও ইসলাম গ্রহণ করে, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? এ হলো সেই ব্যক্তি যে নিজেরও উপকার সাধন করেছে এবং আল্লাহর সৃষ্টজীবেরও উপকার করেছে। ঐ ব্যক্তি এর মত নয় যে মুখে বড় বড় কথা বলে, কিন্তু নিজেই তা পালন করে না। পক্ষান্তরে, এ লোকটি তো নিজেও ভাল কাজ করে এবং অন্যদেরকেও ভাল কাজ করতে বলে।এ আয়াতটি আম বা সাধারণ। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-ই সর্বোত্তমরূপে এর আওতায় পড়েন। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা মুআযযিনকে বুঝানো হয়েছে যিনি সকর্মশীলও বটে। যেমন সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “কিয়ামতের দিন মুআযযিনগণ সমস্ত লোকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উচ্চ গ্রীবা বিশিষ্ট হবে।” সুনানে মারফু’রূপে বর্ণিত আছেঃ “ইমাম যামিন এবং মুআযিন আমানতদার। আল্লাহ ইমামদেরকে সুপথ প্রদর্শন করুন এবং মুআযযিনদেরকে ক্ষমা করে দিন!” হযরত সা’দ ইবনে আবি অক্কাস (রাঃ) বলেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার নিকট মুআযিনদের অংশ তাঁর পথে জিহাদকারীদের অংশের মত হবে। আযান ও ইকামতের মধ্যভাগে মুআযযিনদের অবস্থা ঐরূপ, যেমন কোন মুজাহিদ আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে রক্তে রঞ্জিত হয়।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আমি যদি মুআযযিন হতাম তবে আমি হজ্ব, উমরা ও জিহাদকে এতো বেশী পরোয়া করতাম না।”হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “আমি যদি মুআখ্যাযিন হতাম তবে আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হতো এবং আমি রাত্রে দাঁড়িয়ে নফল ইবাদত এবং দিবসের নফল রোযার প্রতি এতো বেশী গুরুত্ব দিতাম না। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্! আপনি মুআযযিনদেরকে ক্ষমা করুন!” এটা তিনবার বলেন। আমি তখন বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি দু'আতে আমাদের কথা উল্লেখ করলেন না? অথচ আমরা আপনার হুকুম পাওয়া মাত্র তরবারী টেনে নেই (অর্থাৎ আল্লাহর পথে জিহাদের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাই)!” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, তা ঠিকই বটে। কিন্তু হে উমার (রাঃ)! এমন এক যুগ আসবে যখন আযান দেয়ার কাজটি শুধুমাত্র গরীব-মিসকীনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। হে উমার (রাঃ)! জেনে রেখো যে, যেসব লোকের দেহের গোশত জাহান্নামের উপর হারাম, মুআযিনরাও তাদের অন্তর্ভুক্ত।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, ... (আরবী)-এ আয়াতে মুআযিনেরই প্রশংসা করা হয়েছে। তার (আরবী) বলাটাই আল্লাহর পথে আহ্বান করা বুঝায়। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) ও হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি মুআযযিনদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর এখানে যে বলা হয়েছে এবং সে ভাল কাজ করে। এর দ্বারা আযান ও ইকামতের মাঝে দুই রাকআত নামায পড়াকে বুঝানো হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক দুই আযানের (আযান ও ইকামতের) মাঝে নামায রয়েছে।” তৃতীয়বারে তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি (দুই রাকআত নামায পড়ার) ইচ্ছা করে।” একটি হাদীসে আছে যে, আযান ও ইকামতের মধ্যভাগের দু'আ প্রত্যাখ্যাত হয় না।সঠিক কথা এটাই যে, আয়াতটি সাধারণ হওয়ার দিক দিয়ে মুআযযিন ও গায়ের মুআযিন সবকেই শামিল করে। যে কেউই আল্লাহর পথে ডাক দেয় সেই এর অন্তর্ভুক্ত।এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় আযান দেয়ার প্রচলনই হয়নি। কেননা, এ আয়াত অবতীর্ণ হয় মক্কায়। আর আযান দেয়ার পদ্ধতি শুরু হয় মদীনায় হিজরতের পর, যখন আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়েদ আবদি রাব্বিহ্ (রাঃ) স্বপ্নে আযান দিতে দেখেন ও শুনেন এবং তা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “আযানের শব্দগুলো হযরত বিলাল (রাঃ)-কে শিখিয়ে দাও, কেননা তার কণ্ঠস্বর উচ্চ।” অতএব, সঠিক কথা এই যে, আয়াতটি আম বা সাধারণ এবং মুআযযিনও এর অন্তর্ভুক্ত।হযরত হাসান বসরী (রঃ) এই আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “এই লোকগুলোই আল্লাহর বন্ধু। এরাই আল্লাহর আউলিয়া। আল্লাহ্ তা'আলার নিকট এরাই সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় এবং সবচেয়ে বেশী প্রিয়। কেননা, তারা নিজেরা আল্লাহর কথা মেনে নেয় এবং অন্যদেরকেও মানাবার চেষ্টা করে। আর সাথে সাথে তারা নিজেরা ভাল কাজ করে এবং ঘোষণা করে যে, তারা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এরাই আল্লাহর প্রতিনিধি।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না, বরং এ দু’য়ের মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে। যে তোমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে তুমি তার সাথে ভাল ব্যবহার কর। এভাবে মন্দকে ভাল দ্বারা প্রতিহত কর। হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “তোমার ব্যাপারে যে আল্লাহর অবাধ্যচরণ করে, তার ব্যাপারে তুমি আল্লাহর আনুগত্য কর। এর চেয়ে বড় জিনিস আর কিছুই নেই।” মহান আল্লাহ্ বলেনঃ এর ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল এবং এই গুণের অধিকারী শুধু তাদেরকেই করা হয় যারা মহা ভাগ্যবান।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ মুমিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, তারা যেন ক্রোধের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং অন্যদের অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার উপর নিজেদের সহনশীলতার পরিচয় দেয়। তারা যেন অপরের অপরাধকে ক্ষমার চোখে দেখে। এরূপ লোককে আল্লাহ তাআলা শয়তানের আক্রমণ হতে রক্ষা করে থাকেন এবং তাদের শত্রুরা তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। এতো হলো মানবীয় অনিষ্ট হতে বাঁচবার পন্থা। এখন মহান আল্লাহ্ শয়তানী অনিষ্ট হতে বাঁচবার পন্থা বলে দিচ্ছেনঃ যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর শরণাপন্ন হবে এবং তার দিকে ঝুঁকে পড়বে। তিনিই শয়তানকে শক্তি দিয়ে রেখেছেন যে, সে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিবে। তার অনিষ্ট হতে রক্ষা করার ক্ষমতা তাঁরই রয়েছে। আল্লাহর নবী (সঃ) নামাযে বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা, ফুকার এবং অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”আমরা পূর্বেই বর্ণনা করেছি যে, কুরআন কারীমের মধ্যে এই স্থানের সাথে তুলনীয় সূরায়ে আরাফের একটি স্থান এবং সূরায়ে মুমিনূনের একটি স্থান ছাড়া আর কোন স্থান নেই। সূরায়ে আ'রাফের স্থানটি হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার নিম্নের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে উপেক্ষা কর। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর শরণ নিবে, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”(৭:১৯৯-২০০) সূরায়ে মুমিনূনের স্থানটি হলো মহান আল্লাহর নিম্নের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “মন্দের মুকাবিলা কর যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। বলঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে। হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতে।”(২৩:৯৬-৯৮)

وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

📘 Please check ayah 41:39 for complete tafsir.

فَإِنِ اسْتَكْبَرُوا فَالَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ يُسَبِّحُونَ لَهُ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُمْ لَا يَسْأَمُونَ ۩

📘 Please check ayah 41:39 for complete tafsir.

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنَّكَ تَرَى الْأَرْضَ خَاشِعَةً فَإِذَا أَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ ۚ إِنَّ الَّذِي أَحْيَاهَا لَمُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۚ إِنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 ৩৭-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় ব্যাপক শক্তি এবং অতুলনীয় ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি যা করার ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন। সূর্য, চন্দ্র এবং দিবস ও রজনী তাঁর পূর্ণ ক্ষমতার নিদর্শন। রাতকে তিনি অন্ধকারময় এবং দিনকে আলোকময় বানিয়েছেন। এগুলো একটির পিছনে আর একটি এসে থাকে। সূর্য এবং ওর রশ্মি ও ঔজ্জ্বল্য এবং চন্দ্র ও ওর জ্যোতি দেখে বিস্মিত হতে হয়। আকাশে এগুলোর কক্ষপথও আল্লাহ্ তা'আলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলোর উদয় ও অস্তের কারণে দিবস ও রজনীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। মাস ও বছরের গণনা করা যায়, যার ফলে ইবাদত-বন্দেগী, পারস্পরিক লেন-দেন ও প্রাপ্য নিয়মিতভাবে আদায় করা সম্ভব হয়। আসমান ও যমীনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও উজ্জ্বল ছিল সূর্য ও চন্দ্র, এজন্যেই এই দুটোকে মাখলুক বলা হয়েছে এবং আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ তোমরা যদি আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকো তবে সূর্য ও চন্দ্রের সামনে তোমরা মাথা নত করো না, কেননা এ দুটো তো মাখলুক বা সৃষ্ট। সৃষ্ট কখনো সিজদার যোগ্য হতে পারে না। সিজদার যোগ্য একমাত্র তিনি যিনি সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা'আলারই ইবাদত করতে থাকো। কিন্তু যদি তোমরা আল্লাহ ছাড়া তার কোন মাখলুকেরও ইবাদত কর তবে তোমরা তাঁর রহমতের দৃষ্টি হতে সরে যাবে এবং তিনি তোমাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। যারা শুধু আল্লাহরই ইবাদত করে না, বরং তার সাথে অন্যেরও ইবাদত করে তারা যেন এটা ধারণা না করে যে, তারাই শুধু আল্লাহর ইবাদতকারী। সুতরাং তারা যদি তার ইবাদত ছেড়ে দেয় তবে তাঁর কেউ ইবাদতকারী থাকবে না। কখনো নয়। আল্লাহ তাআলা তাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন। তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী দিবস ও রজনীতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে রয়েছে এবং তারা ক্লান্তিবোধ করে না। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি এরা কুফরী করে তবে আমি এমন সম্প্রদায়ও ঠিক করে রেখেছি যারা কুফরী করবে না।” (৬:৮৯) হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা রাত্রি ও দিবসকে, সূর্য ও চন্দ্রকে এবং বাতাসকে মন্দ বলো না। কেননা, এগুলো কতক লোকের জন্যে রহমত স্বরূপ এবং কতক লোকের জন্যে শাস্তি স্বরূপ হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি হাফিয আবূ ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তার ক্ষমতার একটি নিদর্শন অর্থাৎ তিনি যে মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম তার একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক, উষর, অতঃপর আমি তাতে বারি বর্ষণ করলে তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। যিনি এই মৃত যমীনকে জীবিত করেন তিনিই মৃতের জীবনদানকারী। তিনি তো সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

بَشِيرًا وَنَذِيرًا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ

📘 Please check ayah 41:5 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي آيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَا ۗ أَفَمَنْ يُلْقَىٰ فِي النَّارِ خَيْرٌ أَمْ مَنْ يَأْتِي آمِنًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ ۖ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

📘 Please check ayah 41:43 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ

📘 Please check ayah 41:43 for complete tafsir.

لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ ۖ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ

📘 Please check ayah 41:43 for complete tafsir.

مَا يُقَالُ لَكَ إِلَّا مَا قَدْ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ وَذُو عِقَابٍ أَلِيمٍ

📘 ৪০-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনামতে শব্দের অর্থ হলো কালামকে ওর জায়গা হতে সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে দেয়া। আর কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন এর অর্থ করেছেন কুফরী ও হঠকারিতা। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। যারা আমার নাম ও গুণাবলীকে এদিক হতে ওদিকে করে দেয় তারা আমার দৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে। তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি প্রদান করবো। যারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং যারা ভয়-ভীতি ও বিপদাপদ হতে নিরাপদে থাকবে তারা কি কখনো সমান হতে পারে? কখনো নয়। পাপী, দূরাচার এবং কাফিররা যা ইচ্ছা আমল করে যাক। তাদের কোন আমলই আল্লাহ তা'আলার নিকট গোপন নেই। ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিসও তার চক্ষু এড়ায় না। তারা যা কিছু করে তিনি তার দ্রষ্টা। যহহাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ)-এর উক্তি এই যে, এখানে যিকর দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। এটা ইযযত ও মর্যাদাসম্পন্ন কিতাব। কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করবে না, অগ্র হতেও নয়, পশ্চাত হতেও নয়। কারো কালাম এর সমতুল্য হতে পারে না। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতারিত। যিনি তাঁর কথায় ও কাজে বিজ্ঞানময় ও নিপুণ। তাঁর সমুদয় হুকুম উত্তম ফলদায়ক।মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তোমার যুগের কাফিররা তোমাকে ঐ কথাই বলে যা তোমার পূর্ববর্তী যুগের কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল। ঐ নবীরা যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল তেমনই তুমিও ধৈর্যধারণ কর। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে ফিরে, আল্লাহ তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। পক্ষান্তরে যে আল্লাহ হতে বিমুখ হয়, কুফরী ও হঠকারিতার উপর অটল থাকে, সত্যের বিরোধিতা এবং রাসূল (সঃ)-কে অবিশ্বাস করা হতে বিরত থাকে না তাকে তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি আল্লাহ তা'আলার মার্জনা ও ক্ষমা না থাকতো তবে একটি প্রাণীও বাঁচতো না। পক্ষান্তরে, যদি আল্লাহ তা'আলার পাকড়াও ও শাস্তি না হতো তবে প্রত্যেকেই প্রশান্তভাবে হেলান লাগিয়ে নির্ভয় হয়ে যেতো।" (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ

📘 Please check ayah 41:45 for complete tafsir.

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ ۗ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ

📘 ৪৪-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা কুরআন কারীমের বাকপটুত্ব, শব্দালংকার এবং এর শাব্দিক ও মৌলিক উপকারের বর্ণনা দেয়ার পর এর উপর যারা ঈমান আনেনি তাদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আমি এটা কোন আজমীর উপর অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর সে তাদের কাছে এটা পাঠ করতো, তবে এর উপর তারা ঈমান আনতো না।” (২৬:১৯৮-১৯৯) ভাবার্থ এই যে, অমান্যকারীদের টালবাহানার কোন শেষ নেই। তাদের না আছে এতে শান্তি এবং না আছে ওতে শান্তি। তাই এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি যদি আজমী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলতোঃ “এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, এর ভাষা আজমী, অথচ রাসূল আরবীয়।” আবার যদি আরবী ভাষায় এবং কিছু অন্য ভাষায় হতো তবুও এই প্রতিবাদই করতো যে, এর কারণ কি?” হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াবও (রঃ) এ ভাবার্থই বর্ণনা করেছেন। এর দ্বারা তাদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা জানা যাচ্ছে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ মুমিনদের জন্যে এই কুরআন পথ-নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার। অর্থাৎ এটা তাদের অন্তরের ব্যাধি দূরকারী। এর মাধ্যমে তাদের সমস্ত সন্দেহ দূর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাসী তাদের অন্তরে বধিরতা রয়েছে। কুরআন হবে এদের জন্যে অন্ধত্ব। এরা এমন যে, যেন এদেরকে আহ্বান করা হয় বহু দূর হতে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি অবতীর্ণ করেছি কুরআন, যা মুমিনদের জন্যে আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু এটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।”(১৭-৮২) তাদের দৃষ্টান্ত এমনই যে, যেন তাদেরকে আহ্বান করা হচ্ছে বহুদূর হতে। তাদের কানে যেন কুরআনের শব্দ পৌঁছেই না। সে সঠিকভাবে কুরআনের অর্থ অনুধাবনই করতে পারে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কাফিরদের উপমা ঐ ব্যক্তির মত যে ডাক দেয়, কিন্তু শব্দ এবং ডাক ছাড়া কিছুই তার কানে পৌছে না, সে বধির, মূক এবং অন্ধ, সুতরাং সে বুঝে ।”(২:১৭১)যহাক (রঃ) এই ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের ঘৃণ্য নাম দ্বারা ডাক দেয়া হবে।সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) একজন মুসলমানের পার্শ্বে বসেছিলেন। হঠাৎ সে লাব্বায়েক বলে ডাক দিলো। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি কি কাউকেও দেখেছো, না কেউ তোমাকে ডাকছে?” লোকটি উত্তরে বললোঃ “হ্যা, সমুদ্রের ঐ প্রান্ত হতে কে একজন ডাকছে।” তখন হযরত উমার (রাঃ) (আরবী)-এই বাক্যটি পাঠ করলেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তো মূসা (আঃ)-কে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। অর্থাৎ তাকেও অবিশ্বাস করা হয়েছিল এবং কষ্ট দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সে যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল, তদ্রুপ তোমাকেও ধৈর্যধারণ করতে হবে। তোমার প্রতিপালক পূর্ব হতেই এটার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত এদের উপর হতে শাস্তি সরিয়ে রাখবেন। এ জন্যেই তিনি এদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত হয়ে না থাকলে এদের মীমাংসা হয়েই যেতো। অর্থাৎ এখনই এদের উপর শাস্তি আপতিত হতো। এরা অবশ্যই এর সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে। অর্থাৎ এরা যে অবিশ্বাস করছে এটা কোন বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়, বরং এরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে পড়ে রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا ۗ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ

📘 এই আয়াতের ভাবার্থ খুবই পরিষ্কার। যে ব্যক্তি ভাল কাজ করে তার সুফল সেই লাভ করে। পক্ষান্তরে, যে মন্দ কাজ করে, ওর কুফলও তাকেই ভোগ করতে হয়। মহান প্রতিপালক আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না। যুলুম করা হতে তাঁর সত্তা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। একজনের পাপের কারণে তিনি অন্যজনকে কখনো পাকড়াও করেন না। যে পাপ করে না তাকে তিনি কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। প্রথমে তিনি রাসূল প্রেরণ করেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেন। এভাবে তিনি স্বীয় যুক্তি-প্রমাণ শেষ করে দেন। সবারই কাছে তিনি নিজের বাণী পৌঁছিয়ে থাকেন। এর পরেও যারা মানে না তারাই শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়।

۞ إِلَيْهِ يُرَدُّ عِلْمُ السَّاعَةِ ۚ وَمَا تَخْرُجُ مِنْ ثَمَرَاتٍ مِنْ أَكْمَامِهَا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِ ۚ وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ أَيْنَ شُرَكَائِي قَالُوا آذَنَّاكَ مَا مِنَّا مِنْ شَهِيدٍ

📘 Please check ayah 41:48 for complete tafsir.

وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَدْعُونَ مِنْ قَبْلُ ۖ وَظَنُّوا مَا لَهُمْ مِنْ مَحِيصٍ

📘 ৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। যেমন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে যখন ফেরেশতাদের নেতা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে তা জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন তিনি সমস্ত মানুষের নেতা হওয়া সত্ত্বেও উত্তরে বলেছিলেনঃ “জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন না।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এর চরম জ্ঞান আছে। তোমার প্রতিপালকেরই নিকট।”(৭৯:৪৪) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এর সময় তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রকাশমান নয়।”(৭:১৮৭) ভাবার্থ এটাই যে, কিয়ামত সংঘটনের সময় আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ প্রত্যেক জিনিসকে তার জ্ঞান পরিবেষ্টন করে রয়েছে। এমনকি যে ফল ওর আবরণ হতে বের হয়, যে নারী গর্ভধারণ করে এবং সন্তান প্রসব করে, এ সবই তাঁর গোচরে থাকে। যমীন ও আসমানের একটি অণুপরিমাণ জিনিসও তার ব্যাপক জ্ঞানের বাইরে নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে পাতা ঝরে পড়ে সেটাও তিনি জানেন।”(৬:৫৯) মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ। আছে।” (১৩:৮) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বয়স যে বাড়ে ও কমে এটাও কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এটা আল্লাহর নিকট সহজ।”(৩৫:১১)কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের বলবেনঃ যাদেরকে তোমরা আমার সাথে ইবাদতে শরীক করতে তারা আজ কোথায়? তারা উত্তরে বলবেঃ আমরা তো আপনার নিকট নিবেদন করেছি যে, এই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। সেই দিন তাদের বাতিল মা’বৃদরা সবাই হারিয়ে যাবে। এমন কাউকেও তারা দেখতে পাবে না যে তার কোন উপকার করতে পারে। তারা নিজেরাও জানতে পারবে যে, তাদের নিষ্কৃতির কোন উপায় নেই।এখানে (আরবী) শব্দটি (আরবী) বা দৃঢ় বিশ্বাস’ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং অপরাধীরা জাহান্নাম দেখে নিবে এবং দৃঢ় বিশ্বাস করবে যে, তাদেরকে জাহান্নামে পতিত হতেই হবে এবং তারা তা হতে বাঁচবার কোন পথ পাবে না।”(১৮:৫৩)।

لَا يَسْأَمُ الْإِنْسَانُ مِنْ دُعَاءِ الْخَيْرِ وَإِنْ مَسَّهُ الشَّرُّ فَيَئُوسٌ قَنُوطٌ

📘 Please check ayah 41:51 for complete tafsir.

وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ وَمِنْ بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌ فَاعْمَلْ إِنَّنَا عَامِلُونَ

📘 ১-৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, আরবী ভাষার এই কুরআন পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বল- এটা (আল-কুরআন) তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে পবিত্র আত্মা (হযরত জিবরাঈল আঃ) সত্যের সাথে অবতীর্ণ করেছেন।”(১৬:১০২) আর এ জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। এটা বিশ্বস্ত আত্মা (হযরত জিবরাঈল আঃ) তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছে যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”(২৬:১৯২-১৯৪) মহান আল্লাহ বলেনঃ এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বিবৃত। এর অর্থ প্রকাশমান এবং আহকাম মযবূত। এর শব্দগুলোও স্পষ্ট এবং পাঠ করতে সহজ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) (১০:১) অর্থাৎ “এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহ দৃঢ় ও সুরক্ষিত, অতঃপর ওগুলো বিশদভাবে বিবৃত, এটা হচ্ছে ঐ আল্লাহর কালাম যিনি বিজ্ঞানময় এবং যিনি সবকিছুরই খবর রাখেন। অর্থাৎ এটা শব্দ ও অর্থের দিক দিয়ে অলৌকিক। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওর কাছে ওর সামনে এবং ওর পিছন হতে বাতিল আসতে পারে না। এটা বিজ্ঞানময় প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতারিত।” (৪১:৪২) আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ “জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে।” অর্থাৎ এই বর্ণনা ও বিশদ ব্যাখ্যা জ্ঞানী সম্প্রদায়ই অনুধাবন করে থাকে। এই কুরআন একদিকে মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় এবং অপরদিকে কাফিরদেরকে ভয় প্রদর্শন করে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদের অধিকাংশই বিমুখ হয়েছে। সুতরাং তারা শুনবে না। অর্থাৎ কুরআন কারীমের এমন গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ কুরায়েশ এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা বলেঃ তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহ্বান করছে সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণ-আচ্ছাদিত এবং আমাদের কর্ণে আছে বধিরতা, আর তোমার ও আমাদের মধ্যে আছে অন্তরাল। সুতরাং তুমি যা বলছে তার কিছুই আমাদের বোধগম্য হয় না। সুতরাং তুমি তোমার কাজ কর এবং আমরা আমাদের কাজ করি। অর্থাৎ তোমার পন্থায় তুমি কাজ করে যাও এবং আমরা আমাদের পন্থায় কাজ করে যাই। আমরা কখনো আমাদের নীতি পরিত্যাগ করে তোমার নীতি গ্রহণ করতে পারি না।হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা কুরায়েশরা সমবেত হয়ে পরস্পর পরামর্শ করলোঃ “যে ব্যক্তি যাদু ও কাব্য কবিতায় সবচেয়ে বেশি পারদর্শী, চল আমরা তাকে নিয়ে ঐ লোকটির নিকট অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নিকট গমন করি, যে আমাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন ধরিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের সমস্ত কাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছে। ও আমাদের দ্বীনের উপর দোষারোপ করতে শুরু করেছে। একে যেন ঐ ব্যক্তি বিভিন্ন প্রশ্ন করে নিরুত্তর করে দিতে পারে। তারা সবাই বললোঃ “আমাদের মধ্যে উবা ইবনে রাবীআ' ছাড়া এরূপ লোক আর কেউ নেই। সুতরাং তারা উবার নিকট গেল এবং তার সামনে তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করলো। সে তার কওমের কথা মেনে নিলো এবং প্রস্তুতি নিয়ে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নিকট গমন করলো। অতঃপর সে তাকে বললোঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আচ্ছা, বলতোঃ তুমি ভাল, না আবদুল্লাহ (তার পিতা) ভাল?” তিনি কোন উত্তর দিলেন না। সে আবার প্রশ্ন করলোঃ “তুমি ভাল, না (তোমার দাদা) আবদুল মুত্তালিব ভাল?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও নীরব থাকলেন। তখন সে বললোঃ “দেখো, তুমি যদি তোমার বাপ-দাদাকে ভাল মনে করে থাকো তবে জেনে নাও যে, তারা ঐ সব মা'বুদেরই পূজা করতেন যেগুলোর পূজা আমরা করে থাকি, আর তুমি সেগুলোর উপর দোষারোপ করে থাকো। আর যদি তুমি নিজেকে তাঁদের চেয়ে ভাল মনে করে থাকো তবে তুমি তোমার কথা বলঃ আমরা শুনি। আল্লাহর শপথ! দুনিয়ায় কোন কওমের জন্যে তোমার চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক মানুষ সৃষ্ট হয়নি। তুমি আমাদের জামাআতের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে এবং আমাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরিয়েছো। তুমি আমাদের দ্বীন সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছো। সারা আরবের মধ্যে তুমি আমাদের বদনাম করেছে এবং আমাদেরকে অপদস্থ করেছে। এখন তো সব জায়গাতেই এই আলোচনা চলছে যে, কুরায়েশদের মধ্যে একজন যাদুকর রয়েছে, একজন গণক রয়েছে। এখন শুধু এটুকুই বাকী রয়েছে যে, আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি এবং একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করি। এই ভাবে আমাদেরকে পরস্পরে লড়িয়ে দিয়ে তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে চাও। শুন, তোমার ধন-মালের প্রতি যদি লোভ থাকে তবে বল, আমরা সবাই মিলে তোমাকে এমন ধন-দৌলতের মালিক করে দিবো যে, সারা আরবে তোমার চেয়ে বড় ধনী আর কেউ থাকবে না। আর যদি তুমি স্ত্রী লোকদের সাথে কাম-বাসনা চরিতার্থ করতে চাও তবে বল, আমাদের মধ্যে যার মেয়ে তোমার পছন্দ হয়, আমরা একটা কেন, তোমার দশটা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “তোমার কথা বলা শেষ হয়েছে কি?” উত্তরে সে বললোঃ “হ্যা।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ (আরবী) অবশেষে তিনি নিম্নের আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবুও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল- আমি তো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক ধ্বংসকর শাস্তির, আ’দ ও সামূদের শাস্তির অনুরূপ।” এটুকু শুনেই উৎবা বলে উঠলোঃ “আচ্ছা, থামো। তোমার কাছে তাহলে এ ছাড়া আর কিছুই নেই?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তর দিলেনঃ “না।” তখন সে সেখান হতে চলে গেল। কুরায়েশরা তো তার জন্যে অধীরভাবে অপেক্ষা করছিল। তাদের কাছে সে পৌঁছা মাত্রই তারা তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ব্যাপার কি, তাড়াতাড়ি বল।” সে উত্তর দিলোঃ “দেখো, তোমরা সবাই মিলে তাকে যত কিছু বলতে পারতে আমি একাই তার সবই বলেছি। তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “সে তোমার কথার উত্তরে কিছু বলেছে কি?” উবা জবাবে বললোঃ “হ্যা, সে জবাব দিয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি তার কথার একটি অক্ষরও বুঝতে পারিনি। শুধু এটুকু বুঝেছি যে, সে আমাদেরকে আসমানী আযাব হতে সতর্ক করছে যে আযাব আ’দ ও সামূদ জাতির উপর আপতিত হয়েছিল। তারা তখন তাকে বললোঃ তোমার অকল্যাণ হোক! একটি লোক তোমার সাথে তোমার নিজেরই ভাষা আরবীতে কথা বলছে অথচ তুমি বলছো যে, তুমি তার কথার একটি অক্ষরও বুঝতে পারনি?” উৎবা উত্তরে বললোঃ “আমি সত্যিই বলছি যে, শাস্তির বর্ণনা ছাড়া আমি আর কিছুই বুঝিনি।” (এটা ইমাম আব ইবনে হুমায়েদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)ইমাম বাগাভীও (রঃ) এ রিওয়াইয়াতটি আনয়ন করেছেন, তাতে এও রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আয়াতগুলো পাঠ করতে করতে ... (আরবী)-এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন উবা তাঁর পবিত্র মুখের উপর হাত রেখে দিলো এবং তাঁকে আল্লাহর কসম দিতে ও আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করাতে লাগলো। অতঃপর সে সেখান হতে সরাসরি বাড়ীতে ফিরে গেল এবং বাড়ীতেই থাকতে লাগলো ও কুরায়েশদের সমাবেশে উঠাবসা ও যাতায়াত পরিত্যাগ করলো। এ দেখে আবু জেহেল কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করে বললোঃ “হে কুরায়েশদের দল! আমার ধারণা যে, উত্বও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং তথাকার পানাহারে মজে গেছে। সে তো অভাবীও ছিল। চলো, আমরা তার কাছে যাই।” অতঃপর তারা তার কাছে গমন করলো। আবু জেহেল তাকে বললোঃ “তুমি যে আমাদের কাছে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছো এর কারণ কি? আমার মনে হয় এর কারণ শুধু একটিই। তা এই যে, মুহাম্মাদ (সঃ)-এর দস্তরখানা তোমার পছন্দ হয়ে গেছে এবং তুমিও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। অভাব খুবই খারাপ জিনিস। আমি মনে করছি যে, আমরা পরস্পরের মধ্যে চাঁদা উঠিয়ে তোমার আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল করে দিবো, যাতে তুমি এই বিপদ ও লাঞ্ছনা হতে মুক্তি পেতে পারো এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর ও তার নতুন মাযহাবের তোমার কোন প্রয়োজন না হয়। তার একথা শুনে উবা ভীষণ রাগান্বিত হয় এবং বলে ওঠেঃ “মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আমার কি প্রয়োজন? আল্লাহর শপথ! আমি তার সাথে আর কখনো কথা বলতে যাবো না। তুমি আমার সম্পর্কে এমন অপমানকর মন্তব্য করলে? অথচ তুমি তো জান যে, কুরায়েশদের মধ্যে আমার চেয়ে বড় ধনী আর কেউ নেই! ব্যাপার এই যে, তোমাদের সবারই কথায় আমি তার কাছে গিয়েছিলাম এবং সব ঘটনা খুলে বলেছিলাম। আমার কথার জবাবে সে যে কালাম পাঠ করেছে, আল্লাহর কসম! তা কবিতা নয়, গণকের কথা নয় এবং যাদু ইত্যাদিও নয়। যখন সে পড়তে পড়তে ... (আরবী) পর্যন্ত পৌঁছে তখন আমি তার মুখে হাত রেখে দিই এবং তাকে আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে থেমে যেতে বলি। আমার ভয় হয় যে, না জানি হয়তো তখনই আমার উপর ঐ শাস্তি আপতিত হয় যে শাস্তি আ’দ ও সামূদ সম্প্রদায়ের উপর আপতিত হয়েছিল। আর এটা সর্বজন বিদিত যে, মুহাম্মাদ (সঃ) মিথ্যাবাদী নয়।” সীরাতে আবি ইসহাক গ্রন্থে এ ঘটনাটি অন্য ধারায় রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, একদা কুরয়েশরা এক জায়গায় একত্রিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) খানায়ে কা’বার এক প্রান্তে বসেছিলেন। উত্বা কুরায়েশদেরকে বললোঃ “তোমাদের পরামর্শ হলে আমি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নিকট গমন করবো। তাকে বুঝাবো এবং কিছু লোভ দেখাবো। যদি সে লোভের বশবর্তী হয়ে কিছু চেয়ে বসে তবে আমরা তাকে তা দিয়ে দিবো এবং তার এ কাজ হতে তাকে বিরত রাখবো।” এটা হলো ঐ সময়ের ঘটনা, যখন হযরত হামযা (রাঃ) মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন এবং মুসলমানদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছিল ও দিন দিন বাড়তেই ছিল। উবার কথায় কুরায়েশরা সম্মত হয়ে যায়। সুতরাং সে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট এসে বলতে শুরু করেঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। তুমি আমাদেরই একজন। তুমি হলে আমাদের চোখের তারা এবং আমাদের কলিজার টুকরা। বড়ই দুঃখের বিষয় যে, তুমি তোমার কওমের কাছে একটি নতুন বিস্ময়কর জিনিস আনয়ন করেছে এবং তাদের দলে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিয়েছে। তাদের জ্ঞানীদেরকে নির্বোধ বলছে, তাদের মা’বৃদদের প্রতি দোষারোপ করছে এবং তাদের দ্বীনকে খারাপ বলতে শুরু করেছে। আর তাদের বুড়োদেরকে কাফির বলছো। এখন জেনে রেখো যে, আজ আমি তোমার কাছে একটা শেষ ফায়সালার জন্যে এসেছি। তোমার কাছে আমি কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এগুলোর মধ্যে যেটা ইচ্ছা তুমি গ্রহণ কর এবং আল্লাহর ওয়াস্তে এই হাঙ্গামার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দাও।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেন:“তুমি যা বলতে চাও বল, আমি শুনছি।” সে বলতে শুরু করলোঃ “দেখো, তোমার এই চাল দ্বারা যদি মাল জমা করার ইচ্ছা থাকে তবে আমরা সবাই মিলে তোমার জন্যে এতো বেশী মাল জমা করে দিচ্ছি যে, সমস্ত কুরায়েশের মধ্যে তোমার চেয়ে বড় মালদার আর কেউ হবে না। আর যদি নেতৃত্বের ইচ্ছা করে থাকো তবে আমরা সবাই মিলে তোমার নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছি। যদি তোমার বাদশাহ্ হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে সারা রাজ্য আমরা তোমাকে সমর্পণ করছি এবং আমরা সবাই তোমার প্রজা হয়ে যাচ্ছি। আর যদি তোমাকে জ্বিনে ধরে থাকে তবে আমরা আমাদের মাল খরচ করে বড় বড় ডাক্তার ও ঝাড়-ফুককারীদের ডেকে তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। অনেক সময় এমন ঘটে থাকে যে, অনুগত জ্বিন তার আমলকারীর উপর বিজয়ী হয়ে যায়। তখন এই ভাবে তার থেকে মুক্তি লাভ করতে হয়।”অতঃপর উত্বা নীরব হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “তোমার কথা বলা শেষ হয়েছে কি?” সে জবাব দিলোঃ “হ্যা।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “তাহলে এখন আমার কথা শুন।” সে তাঁর কথায় কান লাগিয়ে দিলো। তিনি (আরবী) বলে এই সূরাটি তিলাওয়াত শুরু করলেন এবং উত্বা আদবের সাথে শুনতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত তিনি সিজদার আয়াত পাঠ করলেন এবং সিজদা করলেন। অতঃপর বললেনঃ “হে আবুল ওয়ালীদ।আমার যা বলার ছিল তা আমি বললাম। এখন তোমার মনে যা হয় তাই তুমি কর।” উবা সেখান হতে উঠে তার সাথীদের কাছে চলে গেল। তারা তার চেহারা দেখেই বলতে লাগলো যে, উহ্বার অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ব্যাপার কি?” উত্তরে সে বললোঃ “আল্লাহর শপথ! আমি এমন কথা শুনেছি যা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। কসম আল্লাহর! ওটা যাদুও নয়, কবিতাও নয় এবং গণকদের কথাও নয়। হে কুরায়েশদের দল! শুনো, তোমরা আমার কথা মেনে নাও। তাকে তার ধারণার উপর ছেড়ে দাও। তার আনুকূল্যও করো না এবং বিরোধিতাও করো না। সে যা কিছু বলছে ও দাবী করছে সে ব্যাপারে সারা আরব তার বিরোধী হয়ে গেছে। তারা তার বিরুদ্ধে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। তারা যদি তার উপর বিজয় লাভ করে তবে তো। সহজেই তোমরা তার থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। আর যদি সে-ই তাদের উপর। বিজয়ী হয়ে যায় তবে তার রাজ্যকে তোমাদেরই রাজ্য বলা হবে এবং তার মর্যাদা হবে তোমাদেরই মর্যাদা। আর তোমরাই হবে তার নিকট সবেচেয়ে বেশী গৃহীত।” তার এই কথা শুনে কুরায়েশরা বললোঃ “হে আবুল ওয়ালীদ! আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সঃ) তোমার উপর যাদু করে ফেলেছে।” সে জবাব দিলোঃ “দেখো, আমার অভিমত আমি তোমাদের নিকট পেশ করে দিলাম। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা হয় তা-ই কর।”

وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ رَحْمَةً مِنَّا مِنْ بَعْدِ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ هَٰذَا لِي وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُجِعْتُ إِلَىٰ رَبِّي إِنَّ لِي عِنْدَهُ لَلْحُسْنَىٰ ۚ فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِمَا عَمِلُوا وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ

📘 Please check ayah 41:51 for complete tafsir.

وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَىٰ بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ

📘 ৪৯-৫১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা বলেন যে, মালধন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি কল্যাণের প্রার্থনা হতে মানুষ ক্লান্ত হয় না। কিন্তু যদি তার উপর বিপদ-আপদ এসে পড়ে তখন সে এতো বেশী হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়ে যে, যেন আর কখনো সে কোন কল্যাণের মুখ দেখতেই পাবে না। আবার যদি কোন বিপদ ও কাঠিন্যের পর সে কোন কল্যাণ ও সুখ লাভ করে তখন সে বলে বসেঃ “আল্লাহ তা'আলার উপর তো আমার এটা হক বা প্রাপ্যই ছিল। আমি এর যোগ্যই ছিলাম। এখন সে এই নিয়ামত লাভ করে ফুলে উঠে এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসে। মহান আল্লাহকে বিস্মরণ হয়ে যায় এবং পরিষ্কারভাবে তাকে অস্বীকার করে ফেলে। কিয়ামতের সংঘটনকে স্পষ্টভাবে অবিশ্বাস করে বসে। ধন-দৌলত এবং আরাম ও আয়েশ তার কুফরীর কারণ হয়ে দাড়ায়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বস্তুতঃ মানুষ তো সীমালংঘন করেই থাকে, কারণ সে নিজেকে অভাব মুক্ত মনে করে।”(৯৬:৬-৭) তাই সে মস্তক উঁচু করে হঠকারিতা করতে শুরু করে দেয়।মহান আল্লাহ বলেন যে, শুধু এটুকুই নয়, বরং এই দুষ্কর্যের উপর সে ভাল আশাও রাখে এবং বলেঃ যদি কিয়ামত সংঘটিত হয়েও যায় এবং আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রত্যাবর্তিতও হই, তবে যেমন আমি এখানে সুখ-স্বচ্ছন্দে রয়েছি, অনুরূপভাবে সেখানেও অর্থাৎ পরকালেও সুখেই থাকবো। মোটকথা, সে কিয়ামতকে অস্বীকারও করে, মৃত্যুর পর পুনজীবনকে মানেও না, আবার বড় বড় আশাও পোষণ করে যে, দুনিয়ায় যেমন সুখে রয়েছে, আখিরাতেও তেমনি সুখেই থাকবে।যাদের আমল ও বিশ্বাস এইরূপ তাদেরকে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা ভয় প্রদর্শন করে বলেনঃ “আমি এই কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করবো এবং তাদেরকে আস্বাদন করাবো কঠোর শাস্তি। মহামহিমান্বিত আল্লাহ মানুষের স্বভাব ও আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ ‘যখন আমি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন (গর্বভরে) মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনায় রত হয়। (আরবী) ওকেই বলা হয় যার শব্দ বেশী এবং অর্থ কম হয়। আর যে কালাম বা কথা এর বিপরীত হয় অর্থাৎ শব্দ কম ও অর্থ বেশী, ওকে (আরবী) বলা হয়ে থাকে। এই বিষয়টিই অন্য জায়গায় নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “মানুষকে যখন কষ্ট ও বিপদ স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে এবং দাড়িয়ে আমাকে আহ্বান করে থাকে, অতঃপর যখন আমি ঐ কষ্ট ও বিপদ দূরীভূত করি তখন সে এমন বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে ফিরে যায় যে, যেন সে বিপদের সময় আমাকে আহ্বান করেইনি।” (১০:১২)

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ ثُمَّ كَفَرْتُمْ بِهِ مَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ هُوَ فِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ

📘 Please check ayah 41:54 for complete tafsir.

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

📘 Please check ayah 41:54 for complete tafsir.

أَلَا إِنَّهُمْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَاءِ رَبِّهِمْ ۗ أَلَا إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ

📘 ৫২-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেনঃ তুমি কুরআন অমান্যকারী মুশরিকদেরকে বলে দাওঃ এই কুরআন সত্য সত্যই আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে, অথচ তোমরা একে অবিশ্বাস করছো! তাহলে আল্লাহ তাআলার নিকট তোমাদের কি অবস্থা হবে! যে ব্যক্তি স্বীয় কুফরী ও বিরোধিতার কারণে সত্য পথ হতে বহু দূরে সরে পড়েছে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে আছে?এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের জন্যে আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করবো বিশ্ব জগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ইসলামপন্থীদেরকে আমি বিজয় দান করবো। তারা সাম্রাজ্যসমূহের সম্রাট হয়ে যাবে। সমস্ত দ্বীনের উপর দ্বীনে ইসলামের প্রাধান্য থাকবে।বদর ও মক্কা বিজয়ের নিদর্শন স্বয়ং মুশরিকদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে যে, তারা সংখ্যায় অধিক হওয়া সত্ত্বেও অল্প সংখ্যক মুসলমানের নিকট লাঞ্ছনাজনক পরাজয় বরণ করে। ভাবার্থ এও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলার হাজার হাজার নিদর্শন স্বয়ং মানব জাতির নিজেদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। তাদের সষ্টি ও গঠন কৌশল, তাদের স্বভাব-প্রকৃতি, তাদের পৃথক পৃথক চরিত্র, পৃথক পৃথক রূপ ও রং ইত্যাদি তাদের সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি নৈপুণ্য এবং শিল্প চাতুর্যেরই পরিচায়ক, যেগুলো সদা তাদের চোখের সামনে রয়েছে, এমন কি স্বয়ং তাদের নিজেদের সত্তার মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় ও অবস্থা, যেমন বাল্যকাল, যৌবন, বার্ধক্য, তাদের রুগ্নতা ও সুস্থতা, দারিদ্র্য ও স্বচ্ছলতা, সুখ ও দুঃখ ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে তাদের উপর প্রকাশমান। মোটকথা, আল্লাহ তাআলার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নিদর্শনাবলী এতো অধিক রয়েছে যে, মানুষ এগুলো দেখে তাঁর কথার সত্যতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। আল্লাহ তা'আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট এবং তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা ও কাজ সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি যখন বলছেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) একজন সত্য নবী, তখন মানুষের এটা স্বীকার করে নিতে বাধা কিসের? যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, যা তিনি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছেন তা তিনি তাঁর জ্ঞানের সাথেই অবতীর্ণ করেছেন।” (৪:১৬৬) অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ জেনে রেখো যে, এরা এদের। প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাঙ্কারে সন্দিহান অর্থাৎ কিয়ামত যে সংঘটিত হবে এটা তারা বিশ্বাসই করে না, আর এ কারণেই তারা নিশ্চিন্ত রয়েছে, পুণ্য অর্জনে রয়েছে উদাসীন এবং পাপ কার্য হতে বিরত থাকছে না। অথচ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।হযরত সাঈদ আনসারী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) একদা মিম্বরের উপর উঠে আল্লাহ তা'আলার হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! আমি তোমাদেরকে কোন নতুন কথা বলার জন্যে একত্রিত করিনি, বরং এজন্যেই তোমাদেরকে আমি একত্রিত করেছি যে, বিচার দিবসের ব্যাপারে আমি খুব চিন্তা-ভাবনা করেছি, এতে আমি যা বুঝেছি তা তোমাদেরকে শুনাতে চাই। তা এই যে, যারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে তারা নির্বোধ এবং যারা এটাকে মিথ্যা মনে করে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত।” অতঃপর তিনি মিম্বর হতে নেমে পড়লেন। তাঁর যারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে তারা নির্বোধ’ একথার ভাবার্থ এই যে, তারা এটাকে সত্য মনে করছে অথচ এর জন্যে কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে না। এর অন্তর প্রকম্পিতকারী ও ভয়াবহ অবস্থা হতে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন থাকছে, একে ভয় করে এমন আমল করে না যা তাকে ঐদিনের ভীতি হতে নিরাপত্তা দান করতে পারে। ঐ ব্যক্তি নিজেকে ওর সংঘটনের সত্যতা স্বীকারকারীও বলছে, আবার খেল-তামাশা, অবহেলা, কুপ্রবৃত্তি, পাপ এবং নির্বুদ্ধিতার মধ্যে নিমজ্জিত থাকছে, আর এদিকে কিয়ামত নিকটে চলে আসছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন ।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় পূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সবকিছুকে তিনি পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। কিয়ামত ঘটানো তাঁর কাছে খুবই সহজ কাজ। সমস্ত সৃষ্টজীব ও সৃষ্ট বস্তু তাঁর অধিকারে রয়েছে। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন। কেউই তাঁর হাত ধরে রাখতে পারে না। তিনি যা চেয়েছেন তা হয়েছে এবং যা চাইবেন তা অবশ্যই হবে। তিনি ছাড়া প্রকৃত হুকুমদাতা আর কেউ নেই। তিনি ছাড়া অন্য কারো সত্তা কোন প্রকারের ইবাদতের যোগ্য নয়।

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ ۗ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ

📘 Please check ayah 41:8 for complete tafsir.

الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ

📘 Please check ayah 41:8 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ

📘 ৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এই মিথ্যা প্রশ্নকারী মুশরিকদেরকে বলে দাও- আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমাকে অহীর মাধ্যমে বলে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের সবারই মা'বুদ এক আল্লাহ। তোমরা যে কতকগুলো মা'বূদ বানিয়ে নিয়েছো এটা সরাসরি বিভ্রান্তিকর পন্থা। তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত কর এবং ঠিক ঐভাবে কর যেভাবে তোমরা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর মাধ্যমে জানতে পেরেছে। আর তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী গুনাহ্ হতে তাওবা কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। বিশ্বাস রেখো যে, আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপনকারীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ যারা যাকাত প্রদান করে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতে এর ভাবার্থ হলোঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই’ এই সাক্ষ্য যারা প্রদান করে না। ইকরামাও (রঃ) এ কথাই বলেন। এই উক্তিটি আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলার নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সেই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।”(৯২:৯-১০) নিমের উক্তিটিও অনুরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামায পড়ে।”(৮৭:১৪-১৫) আল্লাহ্ তাআলার নিম্নের এ উক্তিটিও ঐরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার পবিত্রতা অর্জন করার খেয়াল আছে কি?”(৭৯:১৮) এ আয়াতগুলোতে যাকাত অর্থাৎ পবিত্রতা দ্বারা নফকে বাজে চরিত্র হতে মুক্ত রাখা উদ্দেশ্য। আর এর সবচেয়ে বড় ও প্রথম প্রকার হচ্ছে শিরূক হতে পবিত্র হওয়া। অনুরূপভাবে উপরোক্ত আয়াতে যাকাত না দেয়া দ্বারা তাওহীদকে অমান্য করা বুঝানো হয়েছে। মালের যাকাতকে যাকাত বলার কারণ এই যে, এটা মালকে অবৈধতা হতে পবিত্র করে এবং মালের বৃদ্ধি ও বরকতের কারণ হয়। আর আল্লাহর পথে ঐ মাল হতে কিছু খরচ করার তাওফীক লাভ হয়। কিন্তু ইমাম সুদ্দী (রঃ), মুআবিয়া ইবনে কুরুরা (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং অন্যান্য তাফসীরকারগণ এর অর্থ করেছেন মালের যাকাত না দেয়া এবং বাহ্যতঃ এটাই বুঝা যাচ্ছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-ও এটাকেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু এ উক্তিটির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, যাকাত ফরয হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর মদীনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। আর এ আয়াত অবতীর্ণ হয় মক্কায়। বড় জোর এই তাফসীরকে মেনে নিয়ে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, সাদকা ও যাকাতের আসল হুকুম তো নবুওয়াতের শুরুতেই ছিল। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ফসল কাটার দিন তোমরা তার হক দিয়ে দাও।”(৬:১৪১) হ্যা, তবে ঐ যাকাত, যার নিসাব ও পরিমাণ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে নির্ধারিত হয় তা হয় মদীনায়। এটি এমন একটি উক্তি যে, এর দ্বারা দু’টি উক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য এসে যায়।নামাযের ব্যাপারেও এটা দেখা যায় যে, নামায সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে নবুওয়াতের শুরুতেই ফরয হয়েছিল। কিন্তু মিরাজের রাত্রে হিজরতের দেড় বছর পূর্বে পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে শর্ত ও আরকানসহ নির্ধারিত হয়। আর ধীরে ধীরে এর সমুদয় সম্পর্কিত বিষয় পুরো করে দেয়া হয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” এটা কখনো শেষ হবার নয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী।”(১৮:৩) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদেরকে যে ইনআ'ম দেয়া হবে তা কখনো ভাঙ্গবার বা শেষ হবার নয়, বরং অনবরতই থাকবে।”(১১:১০৮) সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, তাদেরকে যেন এটা তাদের প্রাপ্য হিসেবে দেয়া হবে, অনুগ্রহ হিসেবে নয়। কিন্তু কতক ইমাম তাঁর এ উক্তি খণ্ডন করেছেন। কেননা, জান্নাতবাসীর উপরও নিশ্চিতরূপে আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে, এ কথা বলতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বরং আল্লাহ্ই ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন বা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।”(৪৯:১৭) জান্নাতবাসীদের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ্ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন।”(৫২:২৭) রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ কিন্তু এই যে, আল্লাহ্ আমাকে স্বীয় রহমত, অনুগ্রহ ও ইহসানের মধ্যে নিয়ে নিবেন।

۞ قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ

📘 Please check ayah 41:12 for complete tafsir.