🕋 تفسير سورة القارعة
(Al-Qaria) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الْقَارِعَةُ
📘 ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়)। [১]
[১] এটাও কিয়ামতের নামাবলীর অন্যতম। যেমন এর পূর্বে কিয়ামতের বিভিন্ন নাম উল্লিখিত হয়েছে। উদাহরণ সবরূপঃ الحاقَّة (হা-ক্ক্বাহ), الطَّامَّة (মহাসংকট), الصَّاخَّة (ধ্বংস-ধ্বনি), الغَاشِيَة (সমাচ্ছন্নকারী), السَّاعَة (মহাকাল), الوَاقِعَة (সংঘটন) প্রভৃতি। القَارِعَة (ঠক্ঠক্কারী) এ জন্য বলা হয়েছে যে, কিয়ামত নিজ ভয়াবহতায় মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করে তুলবে এবং আল্লাহর দুশমনদেরকে আযাব সম্পর্কে অবহিত করবে। যেমন দরজায় করাঘাতকারী ঠক্ঠক্ শব্দ করে গৃহবাসীকে সতর্ক করে থাকে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ
📘 কিসে তোমাকে জানাল, তা কি? [১]
[১] এখানে জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং আযাবের কঠিনতাকে বোঝানোর জন্য প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তা মানুষের কল্পনা ও ধারণার বাইরে। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান তা আয়ত্ত করতে এবং তার প্রকৃতত্বকে জানতে অক্ষম।
نَارٌ حَامِيَةٌ
📘 তা অতি উত্তপ্ত অগ্নি।[১]
[১] যেমন হাদীস শরীফে আছে যে, দুনিয়াতে মানুষ যে আগুন ব্যবহার করে থাকে, তা জাহান্নামের ৭০ ভাগের এক ভাগ। জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুন হতে উষ্ণতার দিক দিয়ে ৬৯ গুণ বেশী।
(সহীহ বুখারী মখলুক সৃষ্টি অধ্যায়, জাহান্নামের বিবরণ পরিচ্ছেদ, মুসলিম জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়, জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতা বিবরণ পরিচ্ছেদ)
এক অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামের আগুন আল্লাহর নিকট অভিযোগ করে বলল যে, 'আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে।' তখন আল্লাহ জাহান্নামকে দুটি নিঃশ্বাস নিতে আদেশ করলেন। প্রথম নিঃশ্বাস হল গরমকালে। আর দ্বিতীয় নিঃশ্বাস হল শীতকালে। সুতরাং শীতকালে যে প্রচন্ড শীত অনুভব হয়, তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারণে। আর গ্রীষ্মকালে যে প্রচন্ড গরম পড়ে, তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের ফলে।
(বুখারী, উল্লিখিত বাবে)
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে, "গরম যখন প্রচন্ড হয়, তখন নামায ঠান্ডা করে পড়। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তেজনা থেকে হয়।"
(প্রমাণ পূর্বে উল্লিখিত, মুসলিম মাসজিদ অধ্যায়)
مَا الْقَارِعَةُ
📘 ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়) কি?
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ
📘 কিসে তোমাকে জানাল, ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়) কি?
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ
📘 সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। [১]
[১] فِرَاش মশা ও আলোর কাছে ঘুরে বেড়ায় এমন পতঙ্গকে বলা হয়। مَبثُوث মানে হল বিক্ষিপ্ত। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায় ছুটাছুটি করতে থাকবে।
وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ
📘 এবং পর্বতসমূহ হবে ধূনিত রঙ্গিন পশমের ন্যায়। [১]
[১] عِهن সেই পশমকে বলা হয় যা নানান রঙে রঞ্জিত হয়। مَنفُوش অর্থ হল ধূনিত। এতে পাহাড়ের সেই অবস্থাকে বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিয়ামতের দিন তার ঘটবে। কুরআন কারীমে পাহাড়ের উক্ত অবস্থা নানানভাবে বিভিন্ন স্থানে উল্লিখিত হয়েছে; যার বিস্তারিত বিবরণ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। এরপর সেই দুই দলের কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হচ্ছে, যারা কিয়ামতের দিন নিজ নিজ আমলানুযায়ী বিভক্ত হবে।
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ
📘 তখন যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, [১]
[১] مَوَازِين হল مِيزَان শব্দের বহুবচন। এর অর্থ দাঁড়িপাল্লা; যার দ্বারা (কিয়ামতে) মানুষের আমলনামা ওজন করা হবে। এ ব্যাপারে সূরা আ'রাফ ৭:৮, সূরা কাহফ ১৮:১০৫ ও সূরা আম্বিয়া ২১:৪৭ আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। কিছু কিছু উলামা বলেন যে, এখানে مَوَازِين হল مِيزَان শব্দের বহুবচন নয়; বরং তা مَوزُون শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ এমন আমল যা আল্লাহর নিকট বিশেষ গুরুত্ব ও ওজন রাখে (তা ভারী অথবা হাল্কা হবে)।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
কিন্তু প্রথম অর্থই বলিষ্ঠ ও সঠিক। উদ্দেশ্য হল, যার নেকী বেশী হবে এবং আমল ওজন হবার সময় তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ
📘 সে তো সন্তোষময় জীবনে (সুখে) থাকবে। [১]
[১] অর্থাৎ, এমন (সুখের) জীবন; যা সে পছন্দ করবে এবং যা পেয়ে সে সন্তুষ্ট হবে।
وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ
📘 কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, [১]
[১] অর্থাৎ, যার নেকীর তুলনায় বদীর পরিমাণ বেশী হবে, ফলে পাপের পাল্লা ভারী হবে এবং পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে।
فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ
📘 তার স্থান হবে হাবিয়াহ। [১]
[১] هَاوِيَة জাহান্নামের একটি নাম। তাকে হাবিয়াহ এই জন্য বলা হয় যে, জাহান্নামী তার গভীর গর্তে গিয়ে পড়বে। স্থান বুঝাতে أُمّ (মা) শব্দ এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যে, যেমন মানুষের জন্য 'মা' আশ্রয়স্থল হয়, তেমনি জাহান্নামীদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। কোন কোন আলেম বলেন, এখানে 'উম্ম' (মা) অর্থ হল দেমাগ বা মস্তিষ্ক। যেহেতু জাহান্নামী তার মাথার উপর ভর করে হাবিয়াহ দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে।
(ইবনে কাসীর)