slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الحجر

(Al-Hijr) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُبِينٍ

📘 আলিফ লা-ম রা। এগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের। [১] [১] মহাগ্রন্থ এবং সুস্পষ্ট কুরআন থেকে নবী (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে, যেমন ﴿قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ﴾ (১৫) سورة المائدة এ নূর (আলো) এবং কিতাব উভয় থেকে কুরআন কারীমকেই বুঝানো হয়েছে। কুরআনের মর্যাদা বর্ধনের উদ্দেশ্যে কুরআনকে নাকেরা (অনির্দিষ্ট বিশেষ্য) রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই কুরআন সম্পূর্ণ এবং অত্যন্ত মর্যাদা ও মাহাত্ম্যপূর্ণ।

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ

📘 অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রসূল পাঠিয়েছিলাম।

وَمَا يَأْتِيهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ

📘 তাদের নিকট এমন কোন রসূল আসেনি, যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত না। [১] [১] এখানে নবী (সাঃ)-কে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, এরা শুধু তোমাকেই মিথ্যাবাদী বলছে তা নয়; বরং প্রত্যেক নবীর সাথেই এরূপ আচরণ করা হয়েছে।

كَذَٰلِكَ نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ

📘 এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি। [১] [১] অর্থাৎ, কুফরী ও রসুলদেরকে বিদ্রূপ করা আমি তাদের অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। এখানে এই কর্মের সম্পর্ক মহান আল্লাহ নিজের দিকে করেছেন যেহেতু প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিকর্তা তিনিই। অতএব তাদের এই কর্ম তাদের ক্রমাগত পাপের পরিণতিতে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়েছে।

لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ

📘 তারা কুরআনে বিশ্বাস করবে না। আর অবশ্যই পূর্ববর্তিগণের রীতি গত হয়েছে। [১] [১] অর্থাৎ, তাদেরকে ধ্বংস করার রীতি তাই, যা মহান আল্লাহ প্রথম থেকেই নির্ধারিত করে রেখেছেন, আর তা হল মিথ্যাজ্ঞান ও বিদ্রূপ করার পর তাদেরকে ধ্বংস করা।

وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ

📘 যদি তাদের জন্য আমি আকাশের কোন দুয়ার খুলে দিই এবং তারা তাতে চড়তেও থাকে।

لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ

📘 তবুও তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটানো হয়েছে; বরং আমরা এক যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।’ [১] [১] তাদের কুফরী ও বিরুদ্ধাচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, ফিরিশতা অবতীর্ণ হওয়া তো দূরের কথা, যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং তারা সেই দরজা দিয়ে আকাশে যাওয়া-আসা শুরু করে, তবুও তাদের চক্ষুতে বিশ্বাস হবে না এবং রসূলগণকে সত্যবাদী বলে মেনে নেবে না। বরং তারা বলবে, আমাদের চোখে বা আমাদের উপর যাদু করা হয়েছে, যার কারণে আমাদেরকে এরকম মনে হচ্ছে যে, আমরা আকাশে আসা যাওয়া করছি; অথচ এমনটি নয়!

وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ

📘 আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি[১] এবং ওকে করেছি দর্শকদের জন্য সুশোভিত। [১] بروج শব্দটি برج এর বহুবচন। যার অর্থ প্রকাশ হওয়া। আর এর থেকেই تبرج শব্দের উৎপত্তি; যার অর্থ মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা। এখানে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রকে بروج বলা হয়েছে, কারণ সেগুলি বড় উঁচুতে প্রকাশমান। কেউ কেউ বলেন, بروج বলতে সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহের কক্ষপথসমূহকে বুঝানো হয়েছে যা তাদের জন্য নির্দিষ্ট। আর তা হল বারটি; মেষরাশি, বৃষরাশি, মিথুনরাশি, কর্কটরাশি, সিংহরাশি, কন্যারাশি, তুলারাশি, বৃশ্চিকরাশি, ধনুঃরাশি, মকররাশি, কুম্ভরাশি ও মীনরাশি। আরবের লোকেরা এই সকল রাশিচক্র দ্বারা আবহাওয়ার অবস্থা জানার চেষ্টা করত। অবশ্য এতে কোন দোষ নেই, দোষ হল তার দ্বারা কোন পরিবর্তমান সংঘটিতব্য ঘটনা জানার দাবি করা, যেমন আজকাল কিছু অজ্ঞ মানুষদের মধ্যে তার প্রচলন রয়েছে; যাদের মাধ্যমে অনেকে নিজেদের ভূত-ভবিষ্যৎ ও ভাগ্য পরীক্ষা করে ও জেনে থাকে। অথচ পৃথিবীতে সংঘটিতব্য ঘটনা ও মঙ্গলামঙ্গলের সাথে এ সবের কোন সম্পর্ক নেই। যা কিছু হয় তা একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। এখানে মহান আল্লাহ ঐ সকল গ্রহ-নক্ষত্রের কথা উল্লেখ নিজ অসীম ক্ষমতা ও অনন্য সৃষ্টিকৌশল প্রকাশ করার জন্য করেছেন। এ ছাড়া তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এ সকল আকাশের সৌন্দর্য স্বরূপ সৃষ্ট। (আরো দ্রষ্টব্য সূরা ফুরক্বানের ২৫:৬১ নং আয়াতের টীকা)

وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ

📘 প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান হতে আমি ওকে নিরাপদ রেখেছি। [১] [১] رجيم শব্দটি مرجوم এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। رجم (রজম)এর অর্থ পাথর ছুঁড়ে মারা। শয়তানকে 'রাজীম' এই জন্য বলা হয় যে, সে যখন আকাশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাকে আকাশ থেকে জ্বলন্ত শিখা (উল্কা) ছুঁড়ে মারা হয়। রাজীম অভিশপ্ত ও বিতাড়িত অর্থেও ব্যবহার হয়। কারণ যাকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয় তাকে চতুর্দিক থেকে অভিসম্পাত করা হয়। এখানে মহান আল্লাহ এ কথাই বলেছেন যে, আমি আকাশকে প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করে থাকি ঐ সকল গ্রহ-নক্ষত্র দ্বারা, যা আঘাত হেনে শয়তানকে পালাতে বাধ্য করে।

إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُبِينٌ

📘 আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত উল্কা। [১] [১] এর অর্থ এই যে, শয়তানেরা আকাশে কথা শোনার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে তাদের উপর জলন্ত উল্কা এসে পড়ে। যার কারণে কেউ মারা যায়, কেউ পালাতে সক্ষম হয়, আবার কেউ কিছু শুনে ফেলে। এর ব্যাখ্যা হাদীসে এভাবে এসেছে; নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন মহান আল্লাহ আকাশে কোন কিছুর ফায়সালা করেন, তখন তা শুনে ফিরিশতাগণ অক্ষমতা ও দুর্বলতা প্রকাশ স্বরূপ ডানা নাড়তে শুরু করেন, যেন তা লোহার শিকল দ্বারা কোন পাথরের উপর মারার শব্দ। অতপর যখন তাদের মন থেকে আল্লাহর ভয় কিছুটা কমে আসে তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমাদের প্রভু কি বললেন? তাঁরা বলেন, তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন এবং তিনি সুমহান ও সুউচ্চ। তারপর সেই ফায়সালার কথা ঊর্ধ্ব থেকে নিম্ন আসমান পর্যন্ত ফিরিশতাবর্গ পরস্পর শোনাশুনি করেন। এই সময় শয়তানরাও তা শোনার জন্য চুপি চুপি গিয়ে কান পাতে এবং তারাও এক অপরের একটু দূরে থেকে তা শোনার চেষ্টা করে এবং কেউ কেউ এক আধটি শব্দ শুনে ফেলে ও পরে তা কোন গণকের কানে পৌঁছে দেয়। গণক সেই কথার সাথে আরও একশত মিথ্যা কথা মিলিয়ে মানুষের কাছে বর্ণনা করে। (সংক্ষেপে সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা হিজর)

وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْزُونٍ

📘 পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং ওতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; আমি ওতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করেছি সুপরিমিতভাবে। [১] [১] موزون শব্দটি معلوم এর অর্থে ব্যবহূত, অথবা এর অর্থ, পরিমিত বা প্রয়োজন মত।

رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ

📘 কোন এক সময় অবিশ্বাসীরা আকাঙ্ক্ষা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হত! [১] [১] এই আকাঙ্ক্ষা কখন করবে? মৃত্যুর সময় যখন ফিরিশতারা জাহান্নামের আগুন দেখাবেন তখন, নাকি যখন জাহান্নামে চলে যাবে তখন। অথবা যখন গোনাহগার মু'মিনদেরকে কিছুদিন জাহান্নামে শাস্তি স্বরূপ রাখার পর বের করে নেওয়া হবে তখন, নাকি যখন হাশরের মাঠে বিচার চলবে আর কাফেররা দেখবে যে, মু'মিনরা জান্নাতে যাচ্ছে তখন কাফেররা আকাঙ্ক্ষা করবে, হায় তারাও যদি মুসলমান হতো। ربما অধিকাংশ 'অধিক' অর্থে ব্যবহার হয়, তবে কখনো কখনো 'অল্প' অর্থেও ব্যবহার হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন, তারা এই আকাঙ্ক্ষা সর্ব অবস্থায় করবে কিন্তু তাদের এই আকাঙ্ক্ষা কোন কাজে লাগবে না।

وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ

📘 আর আমি ওতে জীবিকার অনেক ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য[১] আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্যেও। [২] [১] معايش শব্দটি معيشة এর বহুবচন, অর্থ তোমাদের জন্য পৃথিবীতে জীবিকার অসংখ্য পথ ও উপায় সৃষ্টি করেছি। [২] অর্থাৎ, দাস-দাসী চাকর-ভৃত্য ও জীবজন্তু। অর্থাৎ, পশুকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছি, যাকে তোমরা বাহনরূপে ব্যবহার কর, যার উপর মালপত্র বহন কর এবং কিছুকে তোমরা ভক্ষণও কর। দাস-দাসী থেকে তোমরা তোমাদের কাজ নিয়ে থাক। যদিও এরা তোমাদের অধীনস্থ, তোমরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে থাক, কিন্তু তাদের আসল জীবিকা নির্বাহকারী আমিই। তোমরা এটা মনে করো না যে, তোমরাই তাদের রুযীদাতা, তোমরা তাদেরকে খেতে না দিলে তারা মারা যাবে।

وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ

📘 আমারই কাছে আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার[১] এবং আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। [১] কেউ কেউ خزائن (ভান্ডার) থেকে বৃষ্টি অর্থ নিয়েছেন। কারণ বৃষ্টিই শস্য উৎপাদনের মূল উপাদান। কিন্তু এখানে সঠিক অর্থে পৃথিবীর সকল ভান্ডারকে বুঝানো হয়েছে। যে সবকে মহান আল্লাহ নিজ ইচ্ছানুসারে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিতত্ত্ব দান করেন।

وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ

📘 আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি[১] অতঃপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদেরকে পান করাই এবং ওর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই। [২] [১] لواقح বৃষ্টিগর্ভ, বৃষ্টিবাহী বা ভারী বায়ু এই জন্য বলা হয়েছে, যেহেতু বায়ু বৃষ্টি ভর্তি মেঘমালাকে বহন করে। যেমন لقحة এমন গাভীন উটনীকে বলা হয়, যে তার পেটে বাচ্চা বহন করে। [২] এই বৃষ্টি যা আমি বর্ষণ করি, তাকে তোমরা জমা করে রাখতে সক্ষম নও। এটি আমারই কুদরত ও অনুগ্রহ যে আমি তাকে ঝর্ণা, কূপ ও নদী-নালার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে থাকি। তাছাড়া আমি চাইলে পানিকে এত নীচে পৌছে দিতে পারি যে, ঝর্ণা ও কূপ হতে পানি সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। যেমন কখনও কখনও কোন কোন এলাকায় মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতের কিছু কিছু নমুনা দেখিয়ে থাকেন। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।)

وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ

📘 নিশ্চয় আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِينَ

📘 অবশ্যই আমি তোমাদের অগ্রগামীদেরকে জানি এবং অবশ্যই জানি তোমাদের পশ্চাতগামীদেরকেও।

وَإِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ ۚ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ

📘 নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ

📘 নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে।[১] [১] মাটির বিভিন্ন অবস্থার কারণে বিভিন্ন নামে নামকরণ হয়ে থাকে। শুকনো মাটিকে تراب, ভিজে মাটিকে طين, দুর্গন্ধযুক্ত পচা কাদা মাটিকে حمأ مسنون বলা হয়। যেমন তা শুকিয়ে গিয়ে তা থেকে ঠনঠন্ শব্দ বের হলে তাকে صلصال এবং আগুনে পোড়ালে فخَّار বলা হয়। এখানে মহান আল্লাহ মানুষের সৃষ্টির কথা যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে মনে হয় যে, আদমের দেহ প্রথমে দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং যখন তা শুকিয়ে তা থেকে ঠনঠন্ শব্দ বের হতে শুরু করল, তখন তার মধ্যে জীবন দান করেছিলেন। এই صلصال কে কুরআনের অন্যত্র كالفخّار বলা হয়েছে। (সূরা রাহমান ৫৫:১৪ আয়াত দ্রঃ)

وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ

📘 আর এর পূর্বে জীনকে সৃষ্টি করেছি ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে।[১] [১] جن মানে ঢাকা। জীনকে জীন এই কারণেই বলা হয়, যেহেতু তারা মানুষের চোখে অদৃশ্য থাকে। সূরা রাহমান ৫৫:১৫ নং আয়াতে জিনের সৃষ্টি অগ্নিশিখা থেকে বলা হয়েছে এবং সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসেও ঐ একই কথাই বলা হয়েছে। এই হিসাবে অগ্নিশিখা ও ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি থেকে উদ্দেশ্য একই হবে।

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ

📘 স্মরণ কর; যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বললেন, ‘আমি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।

فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ

📘 যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।’ [১] [১] সিজদার আদেশ আদমের সম্মানের জন্য ছিল, ইবাদতের জন্য ছিল না। আর যেহেতু এটি ছিল আল্লাহর আদেশ, সেহেতু তার আবশ্যকতায় কোন সন্দেহ নেই। তবে এখন শরীয়তে কারও জন্য সিজদা বৈধ নয়।

ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

📘 তাদেরকে ছেড়ে দাও তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা ওদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখুক, পরিণামে তারা বুঝবে। [১] [১] এটি তিরঙ্কার ও ধমক, যদি কাফের ও মুশরিকরা কুফরী ও শিরক থেকে ফিরে না আসে, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। তারা ভোগ বিলাসে ডুবে থাকুক, আশা করতে থাকুক, অচিরেই তারা তাদের কুফরী ও শিরকের পরিণাম বুঝতে পারবে।

فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ

📘 তখন ফিরিশতাগণ সবাই একত্রে সিজদা করল।

إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَنْ يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ

📘 কিন্তু ইবলীস করল না। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ

📘 তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হে ইবলীস! তোমার কি হল যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?’

قَالَ لَمْ أَكُنْ لِأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ

📘 সে (উত্তরে) বলল, ‘কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে যে মানুষ তুমি সৃষ্টি করেছ, আমি তাকে সিজদা করবার নই।’ [১] [১] শয়তান তার সিজদা করতে অস্বীকার করার কারণ দর্শাল যে, আদম মাটির তৈরী মানুষ। যার অর্থ মানুষকে মানুষ হিসাবে তুচ্ছজ্ঞান করা হল শয়তানী দর্শন; যা হকপন্থীদের আকীদা হতে পারে না। এই জন্য হকপন্থীগণ নবীগণের মানুষ হওয়ার কথা অস্বীকার করেন না। কারণ তাঁদের মানুষ হওয়ার কথা কুরআন পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছে। তাছাড়া তাদের মানুষ হওয়াতে তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় না এবং সম্মানে কোন পার্থক্যও আসে না।

قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ

📘 তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘তাহলে তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও। কারণ, নিশ্চয়ই তুমি অভিশপ্ত।

وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ

📘 কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল অভিশাপ।’

قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

📘 সে (ইবলীস) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও।’

قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ

📘 তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘যাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে।

إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ

📘 অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যে আমাকে বিপদগামী করলে তার জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপ কর্মকে অবশ্যই শোভনীয় করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকে অবশ্যই বিপথগামী করে ছাড়ব।

وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَعْلُومٌ

📘 আমি কোন জনপদকে তার নির্দিষ্টকাল পূর্ণ না হলে ধ্বংস করিনি।

إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

📘 তবে তাদের মধ্যে তোমার একনিষ্ঠ বান্দাগণ ছাড়া।’

قَالَ هَٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ

📘 তিনি বললেন, ‘এটাই আমার নিকট পৌঁছনোর সরল পথ। ( )

إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ

📘 বিভ্রান্তদের মধ্য হতে যারা তোমার অনুসরণ করবে, তারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।[১] [১] অর্থাৎ, আমার নেক বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব চলবে না। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের দ্বারা কোন পাপ হবে না। বরং এর উদ্দেশ্য হল, তারা এমন কোন পাপ করবে না, যার পর তারা লজ্জিত হবে না বা তওবা করবে না। কারণ সেই পাপই মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়, যার পর মানুষ অনুতপ্ত হয় না এবং তওবার সাথে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে না। আর এরূপ পাপের পরই মানুষ একের পর এক পাপ করতে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত ধ্বংসই তার ভাগ্যে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে মু'মিনদের গুণ হল তারা পাপের পর পাপ করতে থাকে না, বরং তারা সত্ত্বর তওবা করে এবং ভবিষ্যতে আর দ্বিতীয়বার তা না করতে দৃঢ়সংকল্প হয়।

وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 অবশ্যই (তোমার অনুসারীদের) তাদের সবারই প্রতিশ্রুত স্থান হবে জাহান্নাম।’ [১] [১] যত লোক তোমার অনুসরণ করবে তাদের সকলের স্থান হবে জাহান্নাম।

لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ

📘 ওর সাতটি দরজা আছে; প্রত্যেক দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে পৃথক পৃথক দল আছে। [১] [১] অর্থাৎ, প্রত্যেক দরজা এক এক ধরনের বিশেষ লোকেদের জন্য নিদিষ্ট হবে। যেমন একটি হবে মুশরিকদের জন্য, একটি হবে নাস্তিকদের জন্য, একটি হবে ধর্মদ্রোহীদের জন্য, একটি ব্যভিচারী, সুদখোর ও চোর-ডাকাত ইত্যাদিদের জন্য হবে আলাদা আলাদা। অথবা সাতটি দরজা বলতে জাহান্নামের সাতটি স্তরকে বুঝানো হয়েছে। প্রথমটির নাম জাহান্নাম, তারপর লাযা, তারপর হুত্বামাহ, তারপর সায়ীর, তারপর সাক্বার, তারপর জাহীম, তারপর হা বি য়াহ। সবার উপরের স্তরটি আল্লাহর একতত্ত্ববাদে বিশ্বাসীদের জন্য হবে। তাদেরকে (পাপ অনুপাতে) কিছুদিন শাস্তি দেওয়ার পর অথবা কারো সুপারিশের পর বের করে নেওয়া হবে। দ্বিতীয়টিতে ইয়াহুদী, তৃতীয়টিতে খ্রিষ্টান, চতুর্থটিতে সবী, পঞ্চমটিতে অগ্নিপূজক, ষষ্ঠটিতে মুশরিক এবং (সর্বনিম্ন স্তর) সপ্তমটিতে মুনাফিকরা থাকবে। সবচেয়ে উপরের স্তরটির নাম জাহান্নাম তার পর পর্যায়ক্রমে যেমন উল্লেখ হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর)

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ

📘 নিশ্চয় সাবধানীরা বাস করবে উদ্যান ও প্রস্রবণসমূহে। [১] [১] জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসীদের পর জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে, যাতে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে মানুষ উৎসাহিত হয়। মুত্তাকীন (সাবধানী) বলতে শিরক হতে পবিত্র তওহীদবাদীদের বুঝানো হয়েছে। আবার কারো নিকট এমন মু'মিনদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা সকল পাপ হতে পবিত্র ছিল। جنة বলতে উদ্যান বা বাগান ও عيون বলতে ঝর্ণাকে বুঝানো হয়েছে। এই বাগান ও ঝর্ণায় সকল জান্নাতীর শরীকানাভুক্ত হবে। অথবা প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক একাধিক বাগান ও ঝর্ণা হবে, অথবা একটি করে বাগান ও একটি করে ঝর্ণা হবে।

ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آمِنِينَ

📘 (তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর।’ [১] [১] শান্তি সকল বিপদাপদ হতে এবং নিরাপত্তা সকল প্রকার ভয় হতে। অথবা এর অর্থ এক মুসলিম অপর মুসলিমকে বা ফিরিশতাগণ জান্নাতীদেরকে শান্তির দু'আ দেবে। অথবা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাদের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তির ঘোষণা দেওয়া হবে।

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ

📘 আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেব;[১] তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। [১] পৃথিবীতে তাদের মধ্যে যে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা বা শত্রুতা ছিল, তা তাদের হৃদয় থেকে বের করে নেওয়া হবে। যার ফলে তাদের অন্তর হবে এক অপরের জন্য আয়নার মত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার।

لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ

📘 সেথায় তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেথা হতে বহিষ্কৃতও হবে না।

۞ نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ

📘 কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে তরান্বিত করতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না।[১] [১] যখন কোন জনপদকে তাদের পাপের জন্য ধ্বংস করি, তখন হঠাৎ করি না; বরং তাদের জন্য একটা সময় নিদিষ্ট করে থাকি, সেই সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময় এসে গেলেই তাদেরকে ধ্বংস করে দিই। সুতরাং সেই সময়কে তাদের জন্য আগা-পিছা করা হয় না।

وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ

📘 এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।’

وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ

📘 আর তাদেরকে জানিয়ে দাও ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা।

إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ إِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُونَ

📘 যখন তারা (ফিরিশতারা) তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন সে বলেছিল, ‘আমরা তোমাদের আগমনে ভীত-সন্ত্রস্ত।’ [১] [১] ইবরাহীম (আঃ) ফিরিশতাগণ থেকে এই জন্যই ভয় পেয়েছিলেন, যেহেতু তাঁরা তাঁর পেশকৃত বাছুরের ভুনা গোশত ভক্ষণ করেননি। যেমন সূরা হূদে (১১:৬৯-৭০ আয়াতে) বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এর থেকে এ কথা পরিষ্কার যে আল্লাহর সম্মানিত রসূলগণও গায়বের খবর জানতেন না। যদি নবীগণ গায়েব জানতেন তাহলে ইবরাহীম (আঃ) বুঝতে পারতেন যে, আগত অতিথিগণ ফিরিশতা, যাঁদের জন্য খাবার প্রস্তুত করার প্রয়োজন নেই। কারণ ফিরিশতাগণ মানুষের মত পানাহারের মুখাপেক্ষী নন।

قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ

📘 তারা বলল, ‘ভয় করো না। আমরা তোমাকে একজন জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।’

قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَنْ مَسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ

📘 সে বলল, ‘আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ? তোমরা কিসের সুসংবাদ দিচ্ছ?’

قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِنَ الْقَانِطِينَ

📘 তারা বলল, ‘আমরা তোমাকে সত্য সংবাদ দিচ্ছি; সুতরাং তুমি আদৌ নিরাশ হয়ো না।’ [১] [১] এটি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, যা অন্যথা হবার কথা নয়। তাছাড়া তিনি সকল কাজে ক্ষমতাবান। তাঁর জন্য কোন কাজই অসম্ভব নয়।

قَالَ وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ

📘 সে বলল, ‘পথভ্রষ্টরা ব্যতীত আর কে নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়?’ [১] [১] অর্থাৎ, সন্তানের সুসংবাদে আমি আশ্চর্য হচ্ছি, বিমূঢ়তা প্রকাশ করছি তা একমাত্র আমার বৃদ্ধ হওয়ার কারণে। এমন নয় যে, আমি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ। আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া পথভ্রষ্ট লোকেদের কাজ।

قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ

📘 সে বলল, ‘হে প্রেরিত (ফিরিশতা)গণ! তোমাদের ব্যাপার কি?’ [১] [১] ইবরাহীম (আঃ) ফিরিশতাদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা শুধু সন্তানের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসেননি, বরং তাঁদের আগমনের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য কিছু। সেই জন্য তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।

قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُجْرِمِينَ

📘 তারা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।

إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই তাদের সকলকে রক্ষা করব।

وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ

📘 তারা বলে, ‘ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।

إِلَّا امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا ۙ إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ

📘 কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়; আমরা স্থির করেছি যে, সে অবশ্যই পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

فَلَمَّا جَاءَ آلَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ

📘 অতঃপর ফিরিশতাগণ যখন লূত পরিবারের নিকট এল,

قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ

📘 তখন লূত বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক।’ [১] [১] ঐ সকল ফিরিশতা সুদর্শন যুবকের বেশে এসেছিলেন এবং লূত (আঃ)-এর জন্য তাঁরা ছিলেন সম্পুর্ণ অপরিচিত। সেই জন্য তিনি তাঁদের সামনে পরিচয়হীনতার কথা প্রকাশ করলেন।

قَالُوا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوا فِيهِ يَمْتَرُونَ

📘 তারা বলল, ‘না, বরং তারা যে বিষয়ে সন্দিহান ছিল আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি। [১] [১] অর্থাৎ আল্লাহর আযাব। যার ব্যাপারে তোমার জাতির সন্দেহ হয় যে, তা কী আসতে পারে?

وَأَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ

📘 আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। [১] [১] এখানেও الحق (সত্য) বলতে আযাবকেই বুঝানো হয়েছে; যার জন্য তাঁরা প্রেরিত হয়েছিলেন। সেই জন্য তাঁরা বললেন যে, আমরা সত্যবাদী। অর্থাৎ যে আযাবের কথা আমরা বলছি, তাতে আমরা সত্যবাদী। এখন এই জাতির ধ্বংসের সময়কাল অতি নিকটবর্তী।

فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ

📘 সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তুমি তাদের পশ্চাতে চল।[১] আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পিছনের দিকে না তাকায়। তোমাদেরকে যেথায় যেতে আদেশ করা হচ্ছে তোমরা সেথায় চলে যাও।’ [১] যাতে কোন মু'মিন পিছনে পড়ে না থাকে; থাকলে তুমি তাদেরকে সামনে চলতে বলবে।

وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ

📘 আমি তাকে (লূতকে) এ বিষয়ে অবহিত করলাম যে, প্রত্যূষে তাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে। [১] [১] লূতকে অহী দ্বারা জানিয়ে দেওয়া হল যে, সকাল হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করা হবে। অথবা دابر এর অর্থ হল, সর্বশেষ মানুষ, যে অবশিষ্ট থাকবে। অর্থাৎ, তাকেও সকাল পর্যন্ত ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ

📘 নগরবাসিগণ উল্লাসিত হয়ে উপস্থিত হল। [১] [১] এক দিকে লূত (আঃ)-এর বাড়িতে জাতির ধ্বংসের ফায়সালা হচ্ছে, আর অন্য দিকে লূত-সম্প্রদায় জানতে পারে যে, লূতের বাড়িতে কিছু সুদর্শন যুবক অতিথি এসেছে। তারা সমকামিতার অভ্যাস দরুন খুব খুশি হলো এবং খুশি খুশি লূত (আঃ)-এর নিকট এসে দাবি করল যে, ঐসব যুবকদেরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। যাতে তারা তাদের সাথে কুকর্ম করে নিজেদের যৌনক্ষুধা মিটাতে পারে!

قَالَ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ ضَيْفِي فَلَا تَفْضَحُونِ

📘 সে বলল, ‘নিশ্চয় এরা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইজ্জত করো না। [১] [১] লূত (আঃ) তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে, এরা আমার অতিথি। কি করে তাদেরকে আমি তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারি? এ তো আমার জন্য অপমান ও লজ্জার বিষয়।

وَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ

📘 তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে লাঞ্ছিত করো না।’

لَوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَائِكَةِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

📘 তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের নিকট ফিরিশতাবর্গ হাযির করছ না কেন?’ [১] [১] এটি কাফেরদের কুফরী ও বিরূদ্ধাচরণের বর্ণনা। তারা নবী (সাঃ)-কে পাগল বলত। আর বলত যে, তুমি যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তুমি তোমার আল্লাহকে বল, তিনি কোন ফিরিশতা পাঠান, যিনি তোমার রিসালতের সত্যতা বর্ণনা করবেন অথবা আমাদেরকে ধ্বংস করবেন।

قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ

📘 তারা বলল, ‘আমরা কি দুনিয়ার লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’ [১] [১] তারা ধৃষ্টতা ও অসভ্য আচরণ প্রকাশ করে বলল যে, হে লূত! এই সকল অপরিচিত যুবকদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক? তুমি কেন তাদের পক্ষ অবলম্বন করছ? আমরা কি তোমাকে অপরিচিতদের পক্ষ অবলম্বন করতে নিষেধ করিনি? অথবা তাদেরকে অতিথি হিসাবে বাড়িতে আশ্রয় দিতে নিষেধ করিনি? এই কথা যখন হচ্ছিল তখনও লূত (আঃ) জানতেন না যে, অভ্যাগত অতিথিগণ আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতা, যাঁরা এই অধম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য উপস্থিত হয়েছেন, যে জাতি ওই সকল ফিরিশতাদের সাথে কুকর্ম করার জন্য অনড় ছিলো। যেমন সূরা হূদে (১১:৭৯ আয়াতে) বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এখানে তাঁদের ফিরিশতা হওয়ার কথাটা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে।

قَالَ هَٰؤُلَاءِ بَنَاتِي إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ

📘 লূত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও, তবে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে।’ [১] [১] অর্থাৎ, তোমরা এদেরকে বিবাহ করে নাও। তিনি নিজ জাতির মহিলাদেরকে নিজের কন্যা বললেন। উদ্দেশ্য, তোমরা মেয়েদেরকে বিবাহ কর অথবা যাদের স্ত্রী আছে তারা তাদের নিকট নিজ নিজ যৌনকামনা পূর্ণ কর।

لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ

📘 (হে নবী!) তোমার আয়ুর শপথ! অবশ্যই ওরা নিজেদের মত্ততায় বিমূঢ় ছিল। [১] [১] মহান আল্লাহ নবী (সাঃ)-কে সম্বোধন করে নবীর জীবনের শপথ করছেন; যাতে তাঁর সম্মান ও ফযীলত সুস্পষ্ট। তবে অন্য কারো জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো শপথ করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ হচ্ছেন একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি যার ইচ্ছা শপথ করতে পারেন, তাকে বাধা দেওয়ার কে আছে? মহান আল্লাহ বলেন, যেরূপ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি নেশা করার ফলে জ্ঞানশূন্য হয়ে যায় এবং ভালোমন্দ কিছু বুঝে আসে না, অনুরূপ এরাও কুকর্মের নেশার ঘোরে ও ভ্রষ্টতায় এমনভাবে বিভোল ছিল যে, লূত (আঃ)-এর এমন যুক্তিগ্রাহ্য ও নৈতিকতাপূর্ণ কথা তাদের বুঝে এলো না।

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ

📘 অতঃপর সূর্যোদয়ের সময়ে বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল। [১] [১] সূর্য উদয়ের সময় এক বিকট আওয়াজ এসে তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলল। কেউ কেউ বলেন, এই বিকট শব্দ ছিল জিবরীল (আঃ)-এর।

فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ

📘 সুতরাং আমি (তাদের) জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম[১] এবং তাদের উপর ঝামা পাথর নিক্ষেপ করলাম।[২] [১] কথিত আছে যে, তাদের জনপদকে শূন্যে তোলা হয়, তারপর সেখান থেকে উল্টিয়ে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়। এভাবে উপরকে নীচে আর নীচেকে উপর করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এও বলা হয় যে, তাদের ঘরের ছাদ সহ তাদেরকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। [২] তারপর তাদের উপর এক বিশেষ ধরনের পাথর বর্ষণ করা হয়। এভাবে তাদেরকে তিন প্রকার আযাব দিয়ে পৃথিবীর মানুষের জন্য এক নিদর্শন বানিয়ে দেওয়া হয়।

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِلْمُتَوَسِّمِينَ

📘 অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে সূক্ষ্ণদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য। [১] [১] গভীরভাবে সমীক্ষা ও চিন্তা-ভাবনাকারীদের متوسمون বলা হয়। এদের জন্য এই ঘটনায় শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُقِيمٍ

📘 নিশ্চয় তা (ঐ জনপদের ধ্বংসস্তূপ) চালু পথের পাশে বিদ্যমান। [১] [১] অর্থাৎ, চলাচলের সাধারণ রাস্তার ধারে। লূত-সম্প্রদায়ের জনপদ মদীনা হতে সিরিয়া যাওয়ার পথে পড়ে। প্রত্যেক যাতায়াতকারীকে তাদের জনপদের উপর দিয়েই পার হতে হয়। বলা হয় যে, তাদের মোট পাঁচটি জনবসতি ছিল। সাদুম, এটিই ছিল সবের কেন্দ্রস্থল, স্বাবাহ, সা'ওয়াহ, আসরাহ ও দূমা। বলা হয় যে, জিব্রীল (আঃ) নিজ বাহুতে ঐ সকল জনপদকে নিয়ে আকাশে চড়েন, এমনকি আসমানবাসিগণ তাদের কুকুর ও মোরগের আওয়াজ শুনতে পান। তারপর সেই জনপদকে (উষ্ট্রী দিয়ে) পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়। (ইবনে কাসীর) তবে এ কথার কোন সূত্র নেই।

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِلْمُؤْمِنِينَ

📘 অবশ্যই এতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।

وَإِنْ كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ

📘 আর আয়কাবাসীরাও তো ছিল সীমালংঘনকারী। [১] [১] أيكة ঘন গাছপালাকে বলা হয়। এ জনপদে ঘন গাছপালা ছিল বলে তার বাসিন্দাদেরকে আয়কাবাসী বলা হয়েছে। এ থেকে শুআইব (আঃ)-এর জাতিকে বুঝানো হয়েছে। তাঁর নবুঅতের সময়কাল লূত (আঃ)-এর পর এবং তাঁর এলাকা ছিল হিজায ও সিরিয়ার মাঝে লূত-সম্প্রদায়ের জনপদের সন্নিকটে; যাকে মাদয়্যান বলা হয়। এটি ছিল ইবরাহীমের পুত্রের বা পৌত্রের নাম, যাঁর নামে সেই এলাকার নামকরণ হয়। তাদের পাপ ছিল, তারা আল্লাহর সাথে শিরক করত, রাহাজানি তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আর ওজনে কম দেওয়া ছিল তাদের মজ্জাগত ব্যাপার। মেঘের ছায়ারূপে তাদের উপর আযাব এলো। তারপর এক বিকট শব্দ ও ভূমিকম্প এসে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিল।

فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ

📘 সুতরাং আমি তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি; ওদের উভয়ই তো প্রকাশ্য পথপাশে অবস্থিত।[১] [১] إمام مبين (প্রকাশ্য পথ)এর অর্থও আম রাস্তা, যে রাস্তা দিয়ে লোক দিনরাত্রি যাওয়া-আসা করে। উভয় শহর বলতে লূত সম্প্রদায়ের শহর ও শুআইব জাতির বসতি মাদয়্যানকে বুঝানো হয়েছে। এই দুই শহর ছিল একে অপরের সন্নিকটে।

مَا نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُنْظَرِينَ

📘 আমি ফিরিশতাদেরকে যথার্থ কারণ ব্যতীত অবতীর্ণ করি না; আর (ফিরিশতা অবতীর্ণ করলে) তখন তারা অবকাশ পাবে না। [১] [১] মহান আল্লাহ বলেন, আমি ফিরিশতা যথার্থ কারণে পাঠিয়ে থাকি। অর্থাৎ যখন আমার ইচ্ছা ও হিকমত আযাব পাঠানোর হয়, তখন ফিরিশতা অবতীর্ণ করে থাকি, আর তখন অবকাশ দেওয়া হয় না বরং ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ

📘 হিজরবাসিগণও রসূলদেরকে মিথ্যা মনে করেছিল। [১] [১] হিজর সালেহ (আঃ)-এর জাতি সামূদের জনবসতির নাম। এদেরকে أصحاب الحجر বলা হয়েছে। এ জনবসতি মদীনা ও তাবুকের মাঝে অবস্থিত ছিল। সেখানকার অধিবাসীরা তাদের নবী সালেহ (আঃ)-কে মিথ্যা মনে করেছিল। কিন্তু এখানে মহান আল্লাহ (বহুবচন শব্দ ব্যবহার করে) বলেছেন, তারা রসূলদেরকে মিথ্যা মনে করেছিল। কারণ একজন নবীকে মিথ্যা মনে করার অর্থ হল, সকল নবীদেরকে মিথ্যা মনে করা।

وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ

📘 আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল। [১] [১] তাদের নির্দশনের মধ্যে ছিল সেই উটনী, যা তাদের দাবী অনুসারে এক পাথর হতে মু'জিযা স্বরূপ বের করা হয়েছিল। কিন্তু যালিমরা সেটিকেও হত্যা করে ফেলে।

وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ

📘 তারা নিশ্চিন্তে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। [১] [১] অর্থাৎ, বিনা প্রয়োজনে ও নির্ভয়ে তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত। নবম হিজরীতে তাবুক যাওয়ার পথে যখন নবী (সাঃ) তাদের সেই জনপদের উপর দিয়ে পার হলেন, তখন তিনি মাথায় কাপড় জড়িয়ে নিলেন, নিজের সওয়ারীর গতি বাড়িয়ে দিলেন এবং সাহাবাগণকে বললেন, তোমরা কান্নারত অবস্থায় ও আল্লাহর আযাবকে স্মরণ করে এই এলাকা অতিক্রম কর। (ইবনে কাসীর, বুখারী ৪৩৩, মুসলিম ২২৮৫ নং)

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ

📘 অতঃপর প্রভাতকালে বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল। [১] [১] সালেহ (আঃ) বললেন যে, তোমাদের উপর তিনদিন পর আল্লাহর আযাব আসবে। সুতরাং চতুর্থ দিনে তাদের উপর এই আযাব এসে পড়ল।

فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

📘 সুতরাং তারা যা অর্জন করত তা তাদের কোন কাজে আসেনি।

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَإِنَّ السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ ۖ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এই দুয়ের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি।[১] আর কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী; সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর। [১] এখানে হক (অযথা নয়) বলতে উপকার ও কল্যাণ, যার উদ্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি। অথবা হক বলতে সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের প্রতিদান ও অসৎকর্মশীলদের পাপের বদলা দেওয়া। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, "আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার।" (সূরা নাজম ৫৩:৩১)

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ

📘 নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী।

وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ

📘 অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত[১] এবং মহা কুরআন। [১] سبع مثاني (পুনঃপুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত) থেকে উদ্দেশ্য কি? এ সর্ম্পকে মুফাসসিরীনদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এর উদ্দেশ্য সূরা ফাতেহা এটাই সঠিক। যেহেতু এটি সাত আয়াতবিশিষ্ট এবং তা প্রত্যেক নামাযে বার বার পাঠ করা হয়। (মাসানীর অর্থ একাধিকবার পড়া।) হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। সুতরাং একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেন, "আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ-লামীন। এটি সাবএ মাসানী ও কুরআন আযীম, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে।" (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হিজ্র) অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, "উম্মুল কুরআনই হল সাবএ মাসানী ও কুরআনে আযীম।" (ঐ) সূরা ফাতেহা কুরআনের একটি অংশ, সেই জন্য সাথে সাথে কুরআন আযীমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ

📘 আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য তুমি ক্ষোভ করো না। আর বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।[১] [১] অর্থাৎ, আমি তোমাকে মহা কুরআন সূরা ফাতিহার মত নিয়ামত দান করেছি, সেই কারণে পৃথিবী ও তার ভোগ-বিলাসের শোভা-সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন শ্রেণীর দুনিয়াদারদের প্রতি তুমি দৃকপাত করবে না, আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের বিলাস-উপকরণ। আর যারা তোমাকে মিথ্যা ভাবছে তাদের ব্যাপারে দুঃখ করো না। মু'মিনদের জন্য তোমার বাহুকে অবনমিত রাখো। অর্থাৎ তাদের জন্য নমনীয়তা ও ভালবাসা প্রকাশ করো। (বাহু অবনমিত রাখা) এই পরিভাষার মূল হল, পাখি যখন তার বাচ্চাদেরকে স্নেহ-ছায়ায় স্থান দিতে চায়, তখন সে তাদেরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেয়। সেই জন্য এই পরিভাষা স্নেহ-ভালবাসা ও মায়া-মমতা প্রকাশের অর্থে প্রয়োগ হয়ে থাকে।

وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ

📘 আর তুমি বল, ‘আমি তো প্রকাশ্য সতর্ককারী।’

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

📘 নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই ওর সংরক্ষক।[১] [১] অর্থাৎ কুরআনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, বিকৃতি সাধন ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অতএব কুরআন সেইভাবেই আজও সুরক্ষিত আছে, যেভাবে তা অবতীর্ণ হয়েছিল। ভ্রষ্ট ফির্কাগুলো নিজ নিজ আকীদার সর্মথনে কুরআনের আয়াতের আর্থিক বিকৃতি ঘটিয়েছে এবং আজও ঘটাচ্ছে। তবে শাব্দিক বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে তা এখনও সুরক্ষিত। এ ছাড়াও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দল আর্থিক বিকৃতির পর্দা ছিঁড়ে ফেলার জন্য সর্বকালেই বিদ্যমান, যারা তাদের আকীদার ও তাদের ভুল দলীল-প্রমাণাদির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং আজও তাঁরা সেই কাজে সচেষ্ট। তাছাড়া কুরআনকে এখানে যিকর (উপদেশ) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে, যাতে বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনাদর্শ ও তাঁর অমিয় বাণীকে সুরক্ষিত করে কুরআন কারীমের বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ হওয়ার দিকটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত করা হয়েছে। অতএব কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পথ সর্বকালের জন্য খোলা রয়েছে। উক্ত মর্যাদা ও সুরক্ষার বৈশিষ্ট্য পূর্বের কোন নবী বা কিতাবকে দেওয়া হয়নি।

كَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ

📘 যেভাবে আমি অবতীর্ণ করেছি বিভক্তকারীদের উপর। [১] [১] কিছু ব্যখ্যাকারীদের নিকট أنزلنا ক্রিয়ার কর্মকারক العذابَ ঊহ্য আছে। যার অর্থ হল, আমি তোমাদেরকে সেইরূপ আযাব হতে প্রকাশ্য সতর্ককারী; যেরূপ আযাব মহান আল্লাহ বিভক্তকারীদের উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। এই বিভক্তকারী কারা? যারা কুরআনকে বিভক্ত করে নিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, তারা কুরায়েশ, যারা আল্লাহর কিতাবকে বিভক্ত করেছিল। তার কিছু অংশকে বলত যাদু, কিছু অংশকে বলত গণকের কথা, আবার কিছু অংশকে বলত উপকথা। পক্ষান্তরে কিছু মুফাসসিরীন বলেন, বিভক্তকারী বলতে আহলে কিতাব এবং কুরআন বলতে তাওরাত ও ইঞ্জীলকে বুঝানো হয়েছে। তারা ঐ সকল কিতাবকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করে রেখেছিল। আবার কেউ বলেন, এর অর্থ আপোসে শপথ বা প্রতিজ্ঞা গ্রহণকারী; এখানে সালেহ (আঃ)-এর জাতিকে বুঝানো হয়েছে, যারা আপোসে শপথ করেছিল যে, সালেহ ও তার পরিবারের সকলকে রাত্রির অন্ধকারে হত্যা করে ফেলবে। {قَالُوا تَقَاسَمُوا بِاللهِ لَنُبَيِّتَنَّهُ وَأَهْلَهُ} আর তারা আসমানী কিতাবকে টুকরো টুকরোও করেছিল। (সূরা নামল ২৭:৪৯) عضين এর একটি অর্থ কিছু গ্রহণ করা ও কিছু বর্জন করা। কিতাবের কিছু অংশকে বিশক্ষাস ও কিছুকে অস্বীকার করা।

الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ

📘 যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে।

فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 সুতরাং তোমার প্রতিপালকের শপথ! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই।

عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 সেই বিষয়ে যা তারা করত।

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ

📘 অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর[১] এবং অংশীবাদীদেরকে উপেক্ষা কর। [১] اصدع এর অর্থ প্রকাশ্যে প্রচার কর, এর পূর্বে তিনি গোপনভাবে তাবলীগ করতেন। এই আয়াত অবতীর্ণ হবার পর প্রকাশ্যে প্রচার শুরু করেন।

إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ

📘 বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে আমিই তোমার জন্য যথেষ্ট।

الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

📘 যারা আল্লাহর সাথে অপর উপাস্য প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।

وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ

📘 আমি তো অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার হৃদয় সংকুচিত হয়।

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ

📘 সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ

📘 আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর। [১] [১] মুশরিকরা নবী (সাঃ)-কে যাদুকর, পাগল, গণক ইত্যাদি বলত। আর মানুষ হওয়ার কারণে তিনি এ সব কথায় দুঃখ পেতেন। মহান আল্লাহ সান্তনা দিয়ে বললেন, তুমি প্রশংসা কর, নামায পড় এবং নিজ আল্লাহর এবাদত কর। যাতে তোমার অন্তর শান্তি লাভ করবে এবং আল্লাহর সাহায্য আসবে। সিজদাকারী বলতে নামাযী ও ইয়াকীন বলতে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে।