slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الشورى

(Ash-Shura) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم

📘 হা-মীম।

وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ

📘 তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন -- ওর মীমাংসা তো আল্লাহরই নিকট।[১] বল, ‘তিনিই আল্লাহ -- আমার প্রতিপালক; আমি ভরসা রাখি তাঁরই ওপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।’ [১] এখানে 'মতভেদ' বলতে দ্বীনের মতভেদ বুঝানো হয়েছে। যেভাবে ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান, ইসলাম ইত্যাদি ধর্মের মধ্যে পরস্পর বহু বিরোধ রয়েছে এবং সকল ধর্মের অনুসারীরা দাবী করে যে, তাদের ধর্মই সত্য। অথচ সমস্ত ধর্ম একই সময়ে সত্য হতে পারে না। সত্য ধর্ম তো কেবল একটা এবং একটাই হতে পারে। দুনিয়াতে সত্য দ্বীন এবং সত্য পথ চেনার জন্য মহান আল্লাহর বাণী কুরআন বিদ্যমান। কিন্তু দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর সেই বাণীকে নিজের বিচারক এবং সালিস মানতে প্রস্তুত নয়। তাই পরিশেষে কিয়ামতের দিনই থেকে যায়, যেদিনে মহান আল্লাহ যাবতীয় মতবিরোধের ফায়সালা করবেন এবং সত্যাশ্রয়ীদেরকে জান্নাতে ও অন্যদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

📘 তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন[১] এবং পশুদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন পশুদের জোড়া;[২] এভাবে তিনি ওতে তোমাদের বংশ বিস্তার করেন।[৩] কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।[৪] তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা । [১] অর্থাৎ, এটা তাঁর অনুগ্রহ যে, তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন। কারণ, তোমাদের স্ত্রীদেরকে যদি মানুষের মধ্য থেকে না বানিয়ে অন্য কোন সৃষ্টি থেকে বানানো হত, তবে তোমরা এই প্রশান্তি লাভ করতে পারতে না, যা নিজেদের মধ্য থেকে এবং নিজেদের মতনই হওয়ার কারণে পারছ।[২] অর্থাৎ, এই জোড়া (নর-নারী) বানানোর ধারা চতুষ্পদ জীব-জন্তুর মধ্যেও রেখেছি। আর চতুষ্পদ জন্তু বলতে সেই আট প্রকার নর ও মাদী জন্তু; যার উল্লেখ সূরা আনআমে করা হয়েছে।[৩] يَذْرَؤُكُمْ এর অর্থ, বিস্তার করা অথবা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ, তিনি অধিকহারে তোমাদেরকে বিস্তার করছেন। অথবা বংশ পরম্পরায় সৃষ্টি করছেন। মানববংশ এবং চতুষ্পদ জীব-জন্তুর বংশকেও। فِيْهِ অর্থাৎ, فِي ذَلِكَ الْخَلْقِ عَلىَ هَذِه الصِّفَةِ সৃষ্টি করার এই পদ্ধতিতে তোমাদেরকে তিনি প্রথম থেকেই সৃষ্টি করে আসছেন। অথবা فِيْهِ এর অর্থ, গর্ভাশয়ে কিংবা পেটে। বা فِيْهِ এখানে بِهِ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, তোমাদেরকে জোড়া জোড়া বানানোর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করছেন অথবা বিস্তার করছেন। কারণ, এই জোড়াই হল বংশ বৃদ্ধির একমাত্র উপায়। (ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর) [৪] না তাঁর সত্তায় এবং না তাঁর গুণাবলীতে। তাঁর সদৃশ তিনিই। তিনি অতুল, অনুপম, একক ও অমুখাপেক্ষী।

لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবি তাঁরই নিকট।[১] তিনি যার প্রতি ইচ্ছা তার রুযী বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত। [১] مَقَالِيْدٌ হল, مِقْلِيْدٌ এবং مِقْلاَد এর বহুবচন। এর অর্থঃ ধন-ভান্ডারসমূহ অথবা চাবিসমূহ।

۞ شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ

📘 তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন ধর্ম; যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে[১] এই বলে যে, তোমরা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত কর[২] এবং ওতে মতভেদ করো না।[৩] তুমি অংশীবাদীদের যার প্রতি আহবান করছ, তা তাদের নিকট দুর্বহ মনে হয়।[৪] আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেন[৫] এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে ধর্মের দিকে পরিচালিত করেন।[৬] [১] شَرَعَ অর্থ, বর্ণনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন এবং নির্দিষ্ট করেছেন। لَكُمْ (তোমাদের জন্য) এ সম্বোধন করা হয়েছে উম্মতে মুহাম্মাদীকে। অর্থাৎ, তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই নির্ধারিত করেছেন যার অসিয়ত পূর্বের নবীদেরকে করে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু মর্যাদাসম্পন্ন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন।[২] الدِّيْنِ বলতে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, রসূলের আনুগত্য করা এবং তাওহীদ (একত্ব) ও শরীয়তকে মেনে নেওয়া। এটাই ছিল প্রত্যেক নবীর দ্বীন। এরই প্রতি তাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে আহবান করেছেন। যদিও প্রত্যেক নবীর শরীয়ত ও নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে আংশিক পার্থক্য ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, {لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا} অর্থাৎ, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এক একটি শরীয়ত (আইন) ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। (সূরা মাইদাহ ৫:৪৮ আয়াত) কিন্তু উল্লিখিত মৌলিক বিষয়ে সবাই শরীক ছিলেন। এই কথাটাকেই নবী (সাঃ) তাঁর এই ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, "আমরা নবীরা হলাম বৈমাত্রেয় ভাইস্বরূপ। আমাদের সকলের দ্বীন একটাই।" (সহীহ বুখারী ইত্যাদি) আর সেই একটি দ্বীন হল তাওহীদ (একত্ব) ও রসূলের আনুগত্যের নাম। অর্থাৎ, এঁদের (ঐক্যের) সম্পর্ক এমন আংশিক মসলা-মাসায়েলের সাথে নয়, যে ব্যাপারসমূহে দলীলাদির পরস্পর বিরোধ থাকে। অথবা যে ব্যাপারগুলোতে বুঝার মধ্যে কখনো তারতম্য ও তফাৎ থাকে। কেননা, এগুলোর ব্যাপারে নিজ নিজ ইজতিহাদী দ্বিমত অথবা মতবিরোধ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে এই শ্রেণীর গৌণ বিষয়াবলী ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং হতে পারে। কিন্তু তাওহীদ ও আনুগত্য (দ্বীনের) কোন আংশিক বিষয় না, বরং তা হল (দ্বীনের) মৌলিক বিষয় যার উপর কুফরী ও ঈমানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।[৩] কেবল এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর আনুগত্য (অথবা তাঁর রসূলের আনুগত্য যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য) করাই হল ঐক্যের ও ভ্রাতৃত্বের মূল। আর তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য থেকে বিমুখতা অথবা এতে অন্যকে শরীক করা হল বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্যের শিকড়। যাকে মহান আল্লাহ 'মতভেদ করো না' বলে নিষেধ করেছেন।[৪] আর তা হল সেই তাওহীদ এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য।[৫] অর্থাৎ, যাকে হিদায়াত পাওয়ার যোগ্য মনে করেন, তাকে হিদায়াতের জন্য নির্বাচন করে নেন।[৬] অর্থাৎ, আল্লাহর দ্বীন অবলম্বন করার এবং তাঁরই জন্য ইবাদতকে বিশুদ্ধ করার তাওফীক তাকেই দান করেন, যে তাঁর আনুগত্য ও ইবাদতের প্রতি প্রত্যাবর্তিত হয়।

وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ

📘 ওদের নিকট জ্ঞান আসার পরই পারস্পরিক বিদ্বেষবশতঃ ওরা নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘটায়।[১] এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অব্যাহতি সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের পূর্ব ঘোষণা না থাকলে ওদের বিষয়ে ফায়সালা হয়েই যেত।[২] ওদের পর যারা গ্রন্থের উত্তরাধিকারী হয়েছে, নিশ্চয় তারা এ (কুরআন) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে। [৩] [১] অর্থাৎ, জ্ঞান অর্থাৎ হিদায়াত আসার এবং হুজ্জত কায়েম হওয়ার পর তারা মতবিরোধ ও অনৈক্যের পথ অবলম্বন করেছে। অথচ তখন মতবিরোধ করার কোনই বৈধতা অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু কেবল বিদ্বেষ, শত্রুতা এবং জিদ ও হিংসাবশতঃ তারা এ কাজ করেছে। এ থেকে কেউ কেউ ইয়াহুদী এবং কেউ কেউ মক্কার কুরাইশদেরকে বুঝিয়েছেন। [২] অর্থাৎ, তাদের শাস্তি দানের ব্যাপারে বিলম্ব করার ফায়সালা যদি পূর্বে থেকেই হয়ে না থাকত, তবে সত্বর আযাব প্রেরণ করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হত। [৩] এ থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদেরকে তাদের পূর্বেকার ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের পর তাওরাত ও ইঞ্জীলের উত্তরাধিকারী বানানো হয়। অথবা আরবদেরকে বুঝানো হয়েছে; যাদের মাঝে আল্লাহ কুরআন অবতীর্ণ করেন এবং তাদেরকে কুরআনের উত্তরাধিকারী বানান। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে, الكتاب (গ্রন্থ) বলতে, তাওরাত ও ইঞ্জীল এবং দ্বিতীয় অর্থের দিক দিয়ে তা হবে, কুরআন।

فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ۖ وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ ۖ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ۖ لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ ۖ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ

📘 সুতরাং এ জন্য[১] তুমি আহবান কর এবং তোমাকে যেভাবে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত থাকতে বলা হয়েছে, সেভাবে তুমি প্রতিষ্ঠিত থাক। আর ওদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না।[২] বল, ‘আল্লাহ যে গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি এবং তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি।[৩] আল্লাহই আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই।[৪] আল্লাহই আমাদেরকে একত্রিত করবেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন।’ [১] অর্থাৎ, তাদের ঐ অনৈক্য ও সন্দেহের জন্য যার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তুমি তাদেরকে তাওহীদের প্রতি আহবান কর এবং এর উপর অটল থাক। [২] অর্থাৎ, তারা তাদের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে যে জিনিসগুলো গড়ে নিয়েছে যেমন, মূর্তিপূজা ইত্যাদি, তাতে তুমি তাদের অনুসরণ করো না। [৩] অর্থাৎ, যখনই তোমরা নিজেদের কোন বিবাদ নিয়ে আমার কাছে আসবে, তখনই আমি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ইনসাফের সাথে তার ফায়সালা করব। [৪] অর্থাৎ, কোন ঝগড়া নেই। কারণ, সত্য সুস্পষ্টরূপে বিকশিত হয়ে গেছে।

وَالَّذِينَ يُحَاجُّونَ فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا اسْتُجِيبَ لَهُ حُجَّتُهُمْ دَاحِضَةٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ

📘 আল্লাহকে মেনে নেওয়ার পর যারা তাঁর সম্পর্কে বিতর্ক করে[১] তাদের যুক্তিতর্ক তাদের প্রতিপালকের দৃষ্টিতে অসার।[২] ওরা তাঁর ক্রোধের পাত্র এবং ওদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। [১] অর্থাৎ, এই মুশরিকরা মুসলিমদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে নিয়েছে। যাতে তাদেরকে পুনরায় সত্য পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়। অথবা এর লক্ষ্য হল, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা। যারা মুসলিমদের সাথে তর্ক করত এবং বলত, আমাদের ধর্ম তোমাদের ধর্মের চেয়েও উত্তম এবং আমাদের নবী হলেন তোমাদের নবীর পূর্বে, অতএব আমরা তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। [২] دَاحِضَةٌ এর অর্থ, দুর্বল, বাতিল, অসার, ভিত্তিহীন।

اللَّهُ الَّذِي أَنْزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَانَ ۗ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ قَرِيبٌ

📘 আল্লাহই সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন এবং (অবতীর্ণ করেছেন) তুলাদন্ড।[১] আর তুমি কি জান, সম্ভবতঃ কিয়ামত আসন্ন? [২] [১] الْكِتَابَ বলতে সকল কিতাব। অর্থাৎ, সমস্ত নবীদের উপর যত কিতাবই অবতীর্ণ হয়েছে, সে সবই ছিল সত্য। অথবা বিশেষভাবে কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে এবং তার সত্যতাকে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা হয়েছে। 'মীযান' (তুলাদন্ড বা দাঁড়িপাল্লা)র অর্থ, ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার। ইনসাফকে দাঁড়িপাল্লা বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, তা হল সমতা ও সুবিচারের যন্ত্র। এর মাধ্যমেই মানুষের মাঝে সমতা বজায় রাখা সম্ভব। এরই সমর্থক হল (নিম্নের) এই আয়াতগুলো, {لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمْ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسِ} অর্থাৎ, আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব এবং মীযান, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।" (সূরা হাদীদ ৫৭:২৫ আয়াত) {وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ المِيْزَانَ، اَلاَّ تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ، وَأَقِيْمُوْا الْوَزَْنَ بِالْقِسْطِ وَلاَ تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ} অর্থাৎ, তিনি আকাশকে সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড। যাতে তোমরা সীমলঙ্ঘন না কর তুলাদন্ডে। তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।" (সূরা রহমান ৫৫:৭-৯ আয়াত) [২] قريب 'মুযাক্কার' (পুংলিঙ্গ) এবং 'মুআন্নাষ' (স্ত্রীলিঙ্গ) উভয়েরই 'সিফাত' (বিশেষণ) হিসাবে ব্যবহার হয়; বিশেষ করে 'মউসুফ' (বিশেষ্য) যদি কোন প্রাণী না হয়। যেমনঃ {اِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ} (ফাতহুল ক্বাদীর)

يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِهَا ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا مُشْفِقُونَ مِنْهَا وَيَعْلَمُونَ أَنَّهَا الْحَقُّ ۗ أَلَا إِنَّ الَّذِينَ يُمَارُونَ فِي السَّاعَةِ لَفِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ

📘 যারা এ বিশ্বাস করে না, তারাই এ তরান্বিত করতে চায়,[১] কিন্তু যারা বিশ্বাসী, তারা ওকে ভয় করে[২] এবং জানে তা সত্য। জেনে রাখ, কিয়ামত সম্পর্কে যারা বাক্-বিতন্ডা করে[৩] তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে।[৪] [১] অর্থাৎ, বিদ্রূপ স্বরূপ এই মনে করে যে, তা কি আর আসবে নাকি? তাই বলে, 'কিয়ামত সত্বর আসুক।'[২] প্রথম কারণঃ তারা এর সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাসী। দ্বিতীয় কারণঃ তারা ভয় পায় যে, সেদিন ন্যায় বিচার হবে, অতএব তারাও আবার আল্লাহর পাকড়াও-এর আওতায় এসে পড়বে কি না। যেমন, অন্যত্র এসেছে, {وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ} অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে --এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। (সূরা মু'মিনূন ২৩:৬০ আয়াত) [৩] يُمَارُوْنَ এর উৎপত্তি হল, مِرَاء ধাতু থেকে; যার অর্থ হল, তর্ক-ঝগড়া। অথবা এর উৎপত্তি হল, مِرْيَةٌ ধাতু থেকে; যার অর্থ, সন্দেহ-সংশয়। অর্থাৎ, কিয়ামত সম্পর্কে যারা সন্দেহ পোষণ করে--।[৪] কেননা, তারা এই দলীলগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না, যা তাদের ঈমান আনার কারণ হতে পারে। অথচ এই দলীলগুলো দিবারাত্রি তারা পরিদর্শন করছে। তা তাদের চোখের সামনে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে এবং তা তাদের জ্ঞান-বিবেকে আসতে পারে। তাই তারা সত্য থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে।

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ ۖ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ

📘 আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি অতি স্নেহশীল; তিনি যাকে ইচ্ছা রুযী দান করেন। আর তিনিই প্রবল, পরাক্রমশালী।

عسق

📘 আইন-সীন-ক্বাফ।

مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ ۖ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ

📘 যে ব্যক্তি পরলোকের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য পরলোকের ফসল বর্ধিত করে দিই[১] এবং যে কেউ ইহলোকের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তারই কিছু দিই,[২] আর পরলোকে এদের জন্য কোন অংশ থাকবে না। [৩] [১] حَرْثٌ এর অর্থ বীজ বপন অথবা ফসল। এখানে রূপকার্থে আমলের ফলাফল এবং তার উপকারিতার জন্য তা ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত আমল ও চেষ্টা-চরিত্র দ্বারা আখেরাতের নেকী ও সওয়াব লাভের আশা করবে, তার আখেরাতের ফসলকে আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। একটি নেকীর প্রতিদান দশ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত বরং তার থেকেও বেশী গুণ দান করবেন।[২] অর্থাৎ, দুনিয়া কামনাকারী দুনিয়া তো পায়। তবে ততটা নয়, যতটা সে চায়; বরং ততটা, যতটা আল্লাহ চান ও তাঁর লিখিত তকদীরে নির্ধারিত থাকে।[৩] এটা সেই বিষয়ই যা সূরা বানী ইসরাঈলের ১৭:১৮ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, দুনিয়া তো আল্লাহ প্রত্যেককেই ততটা অবশ্যই দেন, যতটা তিনি তার ভাগ্যে নির্ধারিত করে রেখেছেন; যে দুনিয়া চায় তাকেও এবং যে আখেরাত চায় তাকেও। কেননা, তিনিই সকলের রুযীর দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন। তবে যে আখেরাত কামনা করে অর্থাৎ, আখেরাতের জন্য পরিশ্রম ও মেহনত করে, তাকে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً (বহুগুণ) নেকী ও সওয়াব দান করবেন। পক্ষান্তরে দুনিয়া কামনাকারীর জন্য আখেরাতে জাহান্নামের আযাব ব্যতীত কিছুই থাকবে না। এখন মানুষের চিন্তা-ভাবনা করে দেখা দরকার যে, তার লাভ দুনিয়া কামনা করাতে, না আখেরাত কামনা করাতে।

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 এদের কি এমন কতকগুলি অংশী (উপাস্য) আছে যারা এদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন ধর্মের, যার অনুমতি আল্লাহ এদেরকে দেননি?[১] চূড়ান্ত ঘোষণা না থাকলে এদের বিষয়ে তো ফায়সালা হয়েই যেত। নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারীদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে। [১] অর্থাৎ, শিরক ও পাপাচরণ; যার নির্দেশ আল্লাহ দেননি। তাদের মনগড়া শরীকরা তাদেরকে এই পথে লাগিয়ে দিয়েছে।

تَرَى الظَّالِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا كَسَبُوا وَهُوَ وَاقِعٌ بِهِمْ ۗ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِي رَوْضَاتِ الْجَنَّاتِ ۖ لَهُمْ مَا يَشَاءُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيرُ

📘 তুমি সীমালংঘনকারীদেরকে ওদের কৃতকমের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবে;[১] অথচ ওদের ওপর আপতিত হবে তা(র শাস্তি)।[২] যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তারা জান্নাতের বাগানসমূহে প্রবেশ করবে, তারা যা কিছু চাইবে, তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাই পাবে। এটিই তো মহা অনুগ্রহ। [১] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন। [২] ভয় করায় কোন লাভ হবে না। কেননা, নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি তো তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।

ذَٰلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۗ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَنْ يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ

📘 আল্লাহ এ সুসংবাদই তাঁর দাসদেরকে দেন, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে। বল, ‘আমি আমার আহবানের জন্য তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।’[১] আর যে উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করি।[২] নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতীব গুণগ্রাহী।[৩] [১] কুরাইশ গোত্রগুলো এবং নবী (সাঃ)-এর মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আয়াতের অর্থ একেবারে পরিষ্কার যে, আমি ওয়ায-নসীহত এবং দ্বীনের দাওয়াতের কোন পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে চাই না। তবে একটি জিনিস অবশ্যই চাই যে, আমার ও তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তা আছে, তার খেয়াল কর। আমার দাওয়াতকে তোমরা মেনে নিচ্ছ না, তো নিয়ো না। এটা তোমাদের ইচ্ছার ব্যাপার। কিন্তু আমার অনিষ্ট করা হতে তো বিরত থাক। তোমরা আমার বন্ধু ও সহায়ক হতে না পারলেও আত্মীয়তার খাতিরে আমাকে কষ্ট দিয়ো না এবং আমার পথে বাধা হয়ো না, যাতে আমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করতে পারি। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর অর্থ করেছেন, আমার ও তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তা আছে, তা বজায় রাখ। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আশ্-শুরা) নবী (সাঃ)-এর বংশ অবশ্যই মর্যাদা-সম্মানের দিক দিয়ে দুনিয়ার সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত বংশ। এই বংশের প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা রাখা এবং তাঁদেরকে ইজ্জত ও সম্মান দান করা, ঈমানের অংশ। কেননা, নবী (সাঃ) বহু হাদীসে তাঁদেরকে সম্মান ও হিফাযত করার ব্যাপারে তাকীদ করেছেন। পক্ষান্তরে এই আয়াতের কোনই সম্পর্ক সে বিষয়ের সাথে নেই, যে বিষয়কে শিয়ারা প্রমাণ করতে চেয়েছে। তারা টেনে-হেঁচড়ে এই আয়াতকে নবী-বংশের প্রতি ভালবাসার সাথে জুড়ে দেয়। আর এই বংশের আওতায় কারা পড়ে তার ব্যক্তিত্বও তারা আলী, ফাতিমা এবং হাসান-হুসাইন (রাযিবয়াল্লাহ আনহুম) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। অনুরূপ তাঁদেরকে ভালবাসার অর্থ তাদের কাছে এই যে, তাঁদেরকে নিষ্পাপ এবং ইলাহী এখতিয়ারের মালিক মনে করতে হবে। অন্য দিকে মক্কার কাফেরদের কাছে তবলীগের বিনিময় স্বরূপ স্বীয় বংশীয় ভালবাসা প্রার্থনা অতীব বিস্ময়কর ব্যাপার; যা নবী (সাঃ)-এর সুউচ্চ মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নতর। তাঁর তবলীগকে গ্রহণ না করা সত্ত্বেও তাঁর দাবী কেবল এই ছিল যে, আত্মীয়তার ভিত্তিতে ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত রাখা হোক। তাছাড়া এই আয়াত ও সূরাটি হল মক্কী। তখন আলী ও ফাতিমা (রাযিআল্লাহু আনহুমা)র মধ্যে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ, তখনও পর্যন্ত এ বংশ অস্তিত্বে আসেনি, যার প্রতি মনগড়া ভালবাসা রাখার প্রমাণ এই আয়াত থেকে করা হয়।[২] অর্থাৎ, নেকী ও সওয়াবে বৃদ্ধি দান করি। অথবা নেকীর পর তার প্রতিদানে আরো নেকী করার তাওফীক দান করি। যেমন, পাপের প্রতিফল স্বরূপ অনেকে আরো অধিক পাপে লিপ্ত হয়ে থাকে।[৩] এই জন্য তিনি গোপন করেন ও ক্ষমা করে দেন এবং বেশী বেশী করে নেকী দান করেন।

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۖ فَإِنْ يَشَإِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَىٰ قَلْبِكَ ۗ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

📘 ওরা কি বলতে চায় যে, ‘সে (মুহাম্মাদ) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে’? (যদি তাই হত) তাহলে (হে মুহাম্মাদ!) আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয়ে মোহর করে দিতেন।[১] আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন[২] এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহে সবিশেষ অবহিত। [১] অর্থাৎ, এই অপবাদে যদি সত্যতা থাকত, তবে আমি তোমার অন্তরে মোহর মেরে দিতাম। যার ফলে সেই কুরআনই মিটে যেত, যা তোমার নিজের মনগড়া বলে দাবী করা হয়। অর্থাৎ, আমি তোমাকে এর কঠিন শাস্তি দিতাম। [২] এই কুরআনও যদি বাতিল হত (যা মিথ্যুকদের দাবী), তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ একেও মিটিয়ে দিতেন। কারণ, এটাই (বাতিলকে মিটিয়ে দেওয়া হল) তাঁর নীতি।

وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

📘 তিনিই তাঁর দাসদের তওবা কবুল করেন[১] এবং পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন। [১] তওবার অর্থ হল, পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং আগামীতে তা আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কেবল মুখে 'তওবা-তওবা' করা অথবা গুনাহ বা পাপ ত্যাগ না করে তাওবা প্রকাশ করে গেলেই তাওবা হয় না। এটা তো ঠাট্টা ও বিদ্রূপ করা হয়। নিষ্ঠাপূর্ণ ও সত্যিকার তাওবা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন।

وَيَسْتَجِيبُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيدُهُمْ مِنْ فَضْلِهِ ۚ وَالْكَافِرُونَ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ

📘 তিনি বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের আহবানে সাড়া দেন[১] এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন; আর অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। [১] অর্থাৎ, তাদের দু'আ ও প্রার্থনা শোনেন এবং তাদের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন। তবে শর্ত হল, দু'আর আদবসমূহ ও তার শর্তাবলীর প্রতি পূর্ণ যত্নবান হতে হবে। আর হাদীসে এসেছে যে, "মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যার সওয়ারী মরুপ্রান্তরে খানা-পানিসহ নিখোঁজ হয়ে যায় এবং সে নিরাশ হয়ে কোন গাছের ছায়ায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর (ঘুম থেকে উঠে) হঠাৎ সে তার সাওয়ারী পেয়ে যায় এবং আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, 'হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু।' অর্থাৎ, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভুল বলে ফেলে।" (মুসলিম, কিতাবুত্ তাওবাহ)

۞ وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلَٰكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيرٌ بَصِيرٌ

📘 আল্লাহ তাঁর সকল দাসকে রুযীতে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত;[১] কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর দাসদেরকে সম্যক জানেন এবং দেখেন। [১] অর্থাৎ, যদি মহান আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমানভাবে প্রয়োজনেরও বেশী রুযীর উপায়-উপকরণসমূহ দান করতেন, তবে তার ফল এই হত যে, কেউ কারো পরাধীনতা স্বীকার করত না। প্রত্যেক ব্যক্তি ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি এবং সীমালঙ্ঘন করার ব্যাপারে অন্যের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকত। আর এইভাবে পৃথিবী বিপর্যয়ে ভরে যেত।

وَهُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ بَعْدِ مَا قَنَطُوا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهُ ۚ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ

📘 ওদের হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন[১] এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই তো অভিভাবক, প্রশংসার্হ। [২] [১] যা বিভিন্ন প্রকারের রুযী উৎপাদনের ব্যাপারে সর্বাধিক উপকারী এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টি যখন হতাশার পর হয়, তখনই এই নিয়ামতের প্রতি সঠিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর মহান আল্লাহর এ রকম করার কৌশলও হল এটাই, যাতে বান্দা আল্লাহর নিয়ামতের কদর করে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। [২] তিনি সমস্ত কৃতিত্বের মালিক। তিনিই তাঁর নেক বান্দাদের আহারের ব্যবস্থা করেন। সর্বপ্রকার উপকারী জিনিস দানে ধন্য করেন। যাবতীয় অনিষ্টকর এবং ক্ষতিকর জিনিস হতে তাদেরকে হিফাযত করেন। তিনি তাঁর অসংখ্য নিয়ামত এবং সীমাহীন অনুগ্রহের দরুন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِنْ دَابَّةٍ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَاءُ قَدِيرٌ

📘 তাঁর অন্যতম নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দুয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলি; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই ওদেরকে সমবেত করতে সক্ষম।[১] [১] دَابَّةٌ (যমীনে বিচরণশীল জীব) একটি ব্যাপক শব্দ; যাতে মানুষ ও জ্বিন ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত জীব-জন্তু শামিল। যাদের আকৃতি, রঙ, ভাষা, স্বভাব ও রুচি এবং প্রকার ও শ্রেণী একে অপর থেকে অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন। আর তারা পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের সকলকেই মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন একই ময়দানে একত্রিত করবেন।

كَذَٰلِكَ يُوحِي إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

📘 পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবে তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ করে থাকেন।[১] [১] অর্থাৎ, যেভাবে এই কুরআন তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, অনুরূপ তোমার পূর্বের নবীদের প্রতিও সহীফা ও গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে। 'অহী' হল আল্লাহর সেই বাণী, যা তিনি ফিরিশতার মাধ্যমে পয়গম্বরদের কাছে পাঠিয়েছেন। একজন সাহাবী রসূল (সাঃ)-এর কাছে অহীর ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কোন সময় এটা আমার কাছে ঘণ্টার শব্দের মত আসে; আর এই অবস্থা আমার কাছে অতীব কঠিন হয়। যখন এই অবস্থা শেষ হয়ে যায়, তখন আমার সব কিছু মুখস্থ হয়ে যায়। আবার কখনও ফিরিশতা মানুষের রূপ ধরে আসেন এবং আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যে, অহীর অবতরণের ভাব কেটে গেলে তিনি কঠিন ঠান্ডার দিনেও ঘামে ভিজে যেতেন এবং তাঁর কপাল থেকে ঘামের ফোঁটা পড়তে থাকত। (বুখারীঃ অহী পরিচ্ছেদ)

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

📘 তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। [১] [১] এ থেকে উদ্দেশ্য যদি ঈমানদাররা হয়, তবে অর্থ হবে, তোমাদের কোন কোন পাপের কাফফারা সেই বিপদাপদ হয়, যা তোমাদের গুনাহের কারণে তোমাদের উপর আপতিত হয় এবং কিছু গুনাহ মহান আল্লাহ তো এমনিই ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর সত্তা বড়ই দয়ালু। ক্ষমা করে দেওয়ার পর আখেরাতে এর জন্য আর পাকড়াও করবেন না, হাদীসে এসেছে যে, "মু'মিন যে কোন কষ্ট এবং দুশ্চিন্তা ও দুঃখের শিকার হয়; এমনকি তার পায়ে কাঁটাও যদি ঢুকে যায়, তাহলে তার ফলে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।" (বুখারীঃ কিতাবুল মারয্বা, মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র) পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য ও সম্বোধন যদি ব্যাপক ও সাধারণ হয়, তাহলে অর্থ হবে, দুনিয়াতে যে বিপদাপদের তোমরা সম্মুখীন হও, এ সবই তোমাদের পাপের ফল। অথচ মহান আল্লাহ অনেক পাপ তো এমনিই মাফ করে দেন। অর্থাৎ, হয় চিরদিনকার জন্য মাফ করে দেন। অথবা পাপের শাস্তি সত্বর দেন না। (আর শাস্তি দানে বিলম্ব করাও এক প্রকার ক্ষমাশীলতা) যেমন, অন্যত্র বলেছেন, {وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوْا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِنْ دَآبَّةٍ} অর্থাৎ, আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভূপৃষ্ঠে চলমান কাউকে ছেড়ে দিতেন না।" (সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৫ আয়াত, সূরা নাহল ১৬:৬১ নং আয়াতও এই অর্থেরই।)

وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ ۖ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

📘 তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহর ইচ্ছাকে) ব্যর্থ করতে পারবে না।[১] আর তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই। [১] অর্থাৎ, তোমরা পালিয়ে কোন এমন স্থানে যেতে পারবে না, যেখানে তোমরা আমার পাকড়াও থেকে রেহাই পেতে পার অথবা যে বিপদ আমি তোমাদের উপর প্রেরণ করতে চাই, তা থেকে তোমরা বেঁচে যাও।

وَمِنْ آيَاتِهِ الْجَوَارِ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ

📘 তাঁর অন্যতম নিদর্শন সমুদ্রগামী পাহাড় তুল্য নৌযানসমূহ।[১] [১] الجَوَارِ অথবা الجَوَارِيْ হল, جَارِيَةٌ (চলমান)এর বহুবচন। অর্থ, নৌকা ও পানিজাহাজসমূহ। এগুলো মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ শক্তির নিদর্শন। সমুদ্রে ভাসমান পাহাড়সম নৌযান ও জাহাজসমূহ তাঁরই নির্দেশে চলমান। তিনি নির্দেশ দিলে এগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে নিশ্চল হয়ে পড়বে।

إِنْ يَشَأْ يُسْكِنِ الرِّيحَ فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلَىٰ ظَهْرِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ

📘 তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন; ফলে নৌযানসমূহ সমুদ্রের বুকে নিশ্চল হয়ে পড়বে। নিশ্চয়ই এতে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।

أَوْ يُوبِقْهُنَّ بِمَا كَسَبُوا وَيَعْفُ عَنْ كَثِيرٍ

📘 তিনি তাদের (আরোহীদের) কৃতকর্মের জন্য নৌযানগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারেন[১] এবং অনেককে তিনি ক্ষমাও করেন।[২] [১] অর্থাৎ, সমুদ্রকে নির্দেশ দিলে তাতে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে এবং তারা তাতে ডুবে যাবে। [২] তা না হলে সমুদ্রে সফরকারীদের কেউ নিরাপদে ফিরে আসত না।

وَيَعْلَمَ الَّذِينَ يُجَادِلُونَ فِي آيَاتِنَا مَا لَهُمْ مِنْ مَحِيصٍ

📘 যাতে আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে যারা বিতর্ক করে[১] তারা জানতে পারে যে, তাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।[২] [১] অর্থাৎ, তা অস্বীকার করে। [২] অর্থাৎ, পালিয়ে আল্লাহর আযাব থেকে তারা নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে না।

فَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

📘 বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ;[১] কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে, তা উত্তম ও চিরস্থায়ী[২] তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। [১] যা সামান্য এবং তুচ্ছ। যদিও কারূনের ধনভান্ডারও হয় (তবুও)। কাজেই তা পেয়ে ধোঁকায় পতিত হয়ো না। কেননা, তা হল ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। [২] অর্থাৎ, যাবতীয় নেক কাজের যে প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে, তা পার্থিব ধন-সম্পদ থেকে অনেক গুণ বেশী উত্তম এবং চিরস্থায়ী। কারণ, তা নষ্টযোগ্য ও ধ্বংসশীল নয়। অতএব ইহকালকে পরকালের উপরে প্রাধান্য দিও না। এ রকম করলে অনুতপ্ত হতে হবে।

وَالَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ يَغْفِرُونَ

📘 এবং যারা মহাপাপ ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়।[১] [১] অর্থাৎ, মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া হল তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবের অংশ; প্রতিশোধ গ্রহণ করা নয়। যেমন, রসূল (সাঃ)-এর সম্পর্কে এসেছে যে, (مَا انْتَقَمَ لِنَفْسِهِ قَطُّ إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرُمَاتُ اللهِ) "তিনি নিজের জন্য কোন দিন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হলে, তার ব্যাপার হত ভিন্ন। (অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর নিমিত্তে তার প্রতিশোধ নিতেন)।" (বুখারীঃ আদব অধ্যায়)

وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

📘 এবং যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়,[১] নামায প্রতিষ্ঠা করে,[২] আপোসে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে[৩] এবং তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। [১] অর্থাৎ, তারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ মান্য করে, তাঁর রসূলের অনুসরণ করে এবং যে কাজ করলে তাঁর তিরস্কারের শিকার হতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে।[২] এখানে নামাযের যত্ন নেওয়া এবং তা কায়েম ও প্রতিষ্ঠা করার কথা বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, যাবতীয় ইবাদতের মধ্যে তাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।[৩] شُوْرَى শব্দ ذِكْرَى এবং بُشْرَى শব্দের মত 'মুফাআলা' থেকে 'ইসমে মাসদার' (ক্রিয়া বিশেষ্য)। অর্থাৎ, ঈমানদাররা প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপোসে পরামর্শ করে করে। নিজের মতকেই শেষ মত ভাবে না। নবী করীম (সাঃ)-কেও মহান আল্লাহ নির্দেশ দেন যে, মুসলিমদের সাথে পরামর্শ কর। (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৫৯) তাই তিনি যুদ্ধ সংক্রান্ত ব্যাপারে এবং অন্যান্য সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপে পরামর্শ করার প্রতি চরম যত্ন নিতেন। এ থেকে মুসলিমদের মনে উৎসাহ সৃষ্টি হত এবং বিষয়সমূহের বিভিন্ন দিক পরিষ্কার হয়ে যেত। উমার (রাঃ) যখন বল্লমের আঘাতে আহত হয়ে গেলেন এবং জীবনের কোন আশাই অবশিষ্ট থাকল না, তখন তিনি খেলাফতের ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য ছয়জনের নাম নিলেন; উসমান, আলী, ত্বালহা, যুবায়ের, সা'দ এবং আব্দুর রাহমান বিন আউফ (রাঃ)। তাঁরা আপোসে পরামর্শ করলেন এবং অন্যান্য লোকদের সাথেও পরামর্শ করলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ)-কে খেলাফতের জন্য নির্বাচন করলেন। কেউ কেউ পরামর্শ করার এই নির্দেশ ও তাকীদকে দলীল বানিয়ে রাজতন্ত্র খন্ডন করেন এবং গণতন্ত্র সাব্যস্ত করেন। অথচ পরামর্শ করার যত্ন রাজতন্ত্রেও নেওয়া হয়। বাদশাহরও পরামর্শসভা হয়। যে সভায় প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়। তাই এই আয়াত দ্বারা রাজতন্ত্রের অস্বীকৃতি অবশ্যই হয় না। এ ছাড়া গণতন্ত্র ও পরামর্শ করার অর্থ একই মনে করাও একেবারে ভুল। পরামর্শ যে কোন লোক দ্বারা হয় না, আর না যেনতেন লোকের নিকট থেকে তার প্রয়োজন হয়। পরামর্শ করার অর্থ, এমন লোকদের সাথে পরামর্শ করা, যারা সেই বিষয়ের স্পর্শকাতরতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝে, যে বিষয়ে পরামর্শ করার দরকার হয়। যেমন, কোন বাড়ী বা ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ করার জন্য কোন ঘোড়ার গাড়ি- চালক, দর্জি অথবা রিক্সা-চালকের সাথে নয়, বরং ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কোন রোগ ও চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ করার প্রয়োজন হলে ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সাথে করতে হবে (কসাই ও কামারের সাথে নয়)। গণতন্ত্রে কিন্তু এর বিপরীতই হয়। প্রত্যেক সাবালককে পরামর্শদানের যোগ্য মনে করা হয়। তাতে সে যদি মূর্খ, নিরক্ষর, নির্বোধ এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ও সঙ্কটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে একেবারে অনভিজ্ঞ হয়, তবুও। কাজেই 'পরামর্শ' শব্দ দ্বারা গণতন্ত্র সাব্যস্ত ও প্রমাণ করা গা-জোরামি ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। আর যেমন সমাজতন্ত্রের সাথে 'ইসলামী' শব্দ জুড়ে দিলেই সমাজতন্ত্র ইসলামের সম্মানে সম্মানিত হয়ে যায় না, অনুরূপ গণতন্ত্রের সাথে 'ইসলামী' তালি লাগিয়ে দিলেও পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের লেবাসের উপর ইসলামী খেলাফতের শেরোয়ানী শোভনীয় হবে না। পাশ্চাত্যের এ বীজ ইসলামের মাটিতে অঙ্কুরিত হওয়া সম্ভব নয়।

وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ

📘 এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।[১] [১] অর্থাৎ, তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে অপারগ নয়। প্রতিশোধ নিতে চাইলে নিতে পারে। কিন্তু শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা ক্ষমা করে দেওয়াকে প্রাধান্য দেয়। যেমন, নবী করীম (সাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন এমন লোকদের ব্যাপারে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন, যারা ছিল তাঁর রক্তপিপাসু। হুদাইবিয়ার সন্ধির দিন তিনি সেই ৮০জন লোককে মাফ করে দিয়েছিলেন, যারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। লাবীদ ইবনে আ'স্বাম ইয়াহুদীর কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যে তাঁকে যাদু করেছিল। সেই ইয়াহুদী মহিলাকেও তিনি মাফ করে দিয়েছিলেন, যে তাঁর খাদ্যে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল। যার কষ্ট তিনি জীবনের শেষে মরণ-মুহূর্তেও অনুভব করেছিলেন। (ইবনে কাসীর) (অবশ্য পরবর্তীতে তারই বিষে এক সাহাবীর মৃত্যু হলে তার খুনের বদলে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।)

لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। তিনি সমুন্নত, সুমহান।

وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا ۖ فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

📘 মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।[১] আর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস-নিস্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [১] এটা হল 'কেসাস' (অনুরূপ প্রতিশোধ নেওয়া)এর অনুমতি। মন্দের বদলা যদিও মন্দ নয়, তবুও (শব্দে ও কর্মে) সাদৃশ্য বর্তমান থাকার কারণে এটাকেও মন্দ বলা হয়েছে।

وَلَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُولَٰئِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِنْ سَبِيلٍ

📘 তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।

إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

📘 অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।

وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ وَلِيٍّ مِنْ بَعْدِهِ ۗ وَتَرَى الظَّالِمِينَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ يَقُولُونَ هَلْ إِلَىٰ مَرَدٍّ مِنْ سَبِيلٍ

📘 আল্লাহ কাউকেও পথভ্রষ্ট করলে তার জন্য তিনি ব্যতীত কোন অভিভাবক নেই। আর সীমালংঘনকারীরা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তুমি ওদেরকে বলতে শুনবে, আমাদের কি ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই?

وَتَرَاهُمْ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا خَاشِعِينَ مِنَ الذُّلِّ يَنْظُرُونَ مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ ۗ وَقَالَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا إِنَّ الظَّالِمِينَ فِي عَذَابٍ مُقِيمٍ

📘 জাহান্নামের নিকট উপস্থিত করা হলে তুমি ওদেরকে দেখতে পাবে অপমানে অবনত হয়ে ওরা চোরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আর যারা বিশ্বাস করেছে, তারা বলবে, ‘আসল ক্ষতিগ্রস্ত তো তারাই; যারা কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিজনবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জেনে রেখো, সীমালংঘনকারীরা অবশ্যই স্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে।’[১] [১] অর্থাৎ, দুনিয়াতে কাফেররা আমাদেরকে বোকা, অনুন্নত ও ক্ষতিগ্রস্ত মনে করত। অথচ আমরা তো দুনিয়াতে আখেরাতকে প্রাধান্য দিতাম এবং পার্থিব ক্ষতির কোনই গুরুত্ব দিতাম না। আজ দেখে নাও, প্রকৃত ক্ষতির শিকার কারা হয়েছে; যারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ক্ষতির কোনই পরোয়া করেনি এবং আজ যারা জান্নাতের সুখভোগ করছে তারা, নাকি তারা যারা দুনিয়াকেই সব কিছু ভেবে নিয়েছিল এবং আজ জাহান্নামের আযাবে পরিবেষ্টিত হয়েছে, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভ সম্ভবই নয়?

وَمَا كَانَ لَهُمْ مِنْ أَوْلِيَاءَ يَنْصُرُونَهُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ ۗ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ سَبِيلٍ

📘 আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে ওদের সাহায্য করার জন্য ওদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং আল্লাহ কাকেও পথভ্রষ্ট করলে তার কোন গতি নেই।

اسْتَجِيبُوا لِرَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا مَرَدَّ لَهُ مِنَ اللَّهِ ۚ مَا لَكُمْ مِنْ مَلْجَإٍ يَوْمَئِذٍ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَكِيرٍ

📘 আল্লাহর নির্ধারিত সেই দিন আসার পূর্বে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও, যা রদ্দ হবার নয়।[১] সেদিন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং লুকিয়ে নিখোঁজ হওয়ার স্থানও না। [২] [১] অর্থাৎ, যাকে রোধ করার এবং রদ্দ করার শক্তি কারো নেই।[২] অর্থাৎ, তোমাদের জন্য কোন এমন স্থান হবে না, যেখানে তোমরা লুকিয়ে নিখোঁজ ও পরিচয়হীন হয়ে যাবে অথবা দৃষ্টিগোচর হবে না। যেমন অন্যত্র বলেন, {يَقُوْلُ الْإِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ اَيْنَ الْمَفَرُّ، كَلاَّ لاَ وَزَرَ، إِلَى رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمُسْتَقَرّ}ُ অর্থাৎ, সেদিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়? না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। তোমার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ ৭৫:১০-১২) অথবা نَكِير অর্থ, ইনকার (অস্বীকার) করা। অর্থাৎ, তোমরা নিজেদের পাপসমূহকে অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ, প্রথমতঃ সবকিছুই লিখিত থাকবে। দ্বিতীয়তঃ স্বয়ং মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সাক্ষ্য দেবে। কিংবা যে আযাব তোমাদেরকে তোমাদের পাপের কারণে দেওয়া হবে, তোমরা সেই আযাবকে অস্বীকার করতে পারবে না। কেননা, পাপ স্বীকার করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

فَإِنْ أَعْرَضُوا فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ۖ إِنْ عَلَيْكَ إِلَّا الْبَلَاغُ ۗ وَإِنَّا إِذَا أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَا ۖ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَإِنَّ الْإِنْسَانَ كَفُورٌ

📘 ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, (হে মুহাম্মাদ!) তাহলে তোমাকে তো আমি ওদের রক্ষক করে পাঠাইনি।[১] তোমার কাজ তো কেবল প্রচার করে যাওয়া। আর আমি মানুষকে যখন আমার তরফ থেকে অনুগ্রহ[২] আস্বাদন করাই, তখন সে এতে উৎফুল্ল হয়[৩] এবং যখন ওদের কৃতকর্মের জন্য ওদের বিপদ-আপদ[৪] ঘটে, তখন মানুষ হয়ে পড়ে অকৃতজ্ঞ। [৫] [১] যেমন, অন্যত্র বলেছেন,{لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَاءُ} (البقرة: ২৭২) তিনি আরো বলেন, {فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلاَغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ} (الرعد: ৪০) {فَذَكِّرْ اِنَّمَا اَنْتَ مُذَكِّرٌ، لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِر}ٍ (الغاشية: ২১-২২) এ সব আয়াতের অর্থ হল, তোমার দায়িত্ব কেবল আল্লাহর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মেনে নিক, আর না নিক এ ব্যাপারে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। কারণ, হিদায়াত দেওয়া তোমার এখতিয়ারে নেই। এটা কেবল আল্লাহরই এখতিয়ারাধীন। [২] অর্থাৎ, রুযী লাভের উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য, শারীরিক সুস্থতা ও রোগশূন্যতা, সন্তান-সন্ততির আধিক্য এবং মর্যাদা-সম্মান ইত্যাদি। [৩] অর্থাৎ, অহংকার ও গর্ব প্রদর্শন করে। নচেৎ আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ পেয়ে আনন্দিত হওয়া অথবা খুশী প্রকাশ করা অপছন্দনীয় ব্যাপার নয়। কিন্তু তা হতে হবে নিয়ামতের বর্ণনা এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ; অহংকার, গর্ব এবং লোকপ্রদর্শনের জন্য যেন না হয়। [৪] অভাব-অনটন, অসুস্থতা, সন্তানহীনতা ইত্যাদি। [৫] অর্থাৎ, সত্বর নিয়ামতসমূহ ভুলে যায় এবং নিয়ামত-দাতাকেও। এটা অধিকাংশ মানুষের অবস্থা অনুপাতে বলা হয়েছে, যাতে দুর্বল ঈমানের লোকেরাও শামিল। তবে আল্লাহর নেক বান্দা এবং পূর্ণ ঈমানের অধিকারী লোকদের অবস্থা এ রকম নয়। যেহেতু তারা কষ্টের সময় ধৈর্য ধরে এবং নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। যেমন, রসূল (সাঃ) বলেছেন, "মুমিনের ব্যাপারটাই বিস্ময়কর! যদি তার কোন মঙ্গল আসে, তাহলে তাতে সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা করে। আর তা তার জন্য মঙ্গলময়। আবার যদি তার কোন অমঙ্গল আসে, তাহলে তাতে সে ধৈর্য ধরে। আর তাও তার জন্য মঙ্গলময়। এ মঙ্গল মু'মিন ছাড়া আর কারো জন্য নয়। (মুসলিম)

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন;[১] তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। [১] অর্থাৎ, বিশ্বজাহানে কেবল আল্লাহরই ইচ্ছা এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণ চলে। তিনি যা চান, তা-ই হয় এবং যা চান না, তা হয় না। অন্য কেউ এতে হস্তক্ষেপ করার শক্তি ও এখতিয়ার রাখে না।

تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْ فَوْقِهِنَّ ۚ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 আকাশমন্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়[১] এবং ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং পৃথিবীর বাসিন্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।[২] জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[৩] [১] আল্লাহর মহত্ত্ব ও তাঁর প্রতাপের কারণে।[২] এ বিষয়টি সূরা মুমিনের ৪০:৭ নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।[৩] তাঁর বন্ধুদের এবং তাঁর অনুগতদের অথবা তাঁর সকল বান্দাদের জন্য। কেননা, কাফের ও অবাধ্যজনদেরকে সত্বর পাকড়াও না করে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেওয়াটাও তাঁর এক প্রকার দয়া ও ক্ষমা।

أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

📘 অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই[১] এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান। [১] অর্থাৎ, যাকে চান পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। এখানে মহান আল্লাহ চার প্রকার মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। (ক) যারা কেবল পুত্র সন্তান লাভ করে। (খ) যারা কেবল কন্যা সন্তান লাভ করে। (গ) যারা পুত্র ও কন্যা উভয় সন্তান লাভ করে। (ঘ) বন্ধ্যা; যারা না পুত্র সন্তান পায়, আর না কন্যা সন্তান। মানুষের মাঝে এই পার্থক্য ও তফাৎ আল্লাহ তাআলার মহাশক্তির নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ কর্তৃক জারী এই তফাৎকে পৃথিবীর কোন শক্তি পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে না। এই পার্থক্য তো জাতকের দিক দিয়ে। জনকের দিক দিয়েও মানুষ চার প্রকার। যথাঃ (ক) আদম (আঃ)-কে কেবল মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর না বাপ আছেন, আর না মা। (খ) হাওয়া (আলাইহাস সালাম)-কে আদম (আঃ) হতে; অর্থাৎ পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর মা নেই। (গ) ঈসা (আঃ)-কে কেবল নারীর গর্ভ থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর বাপ নেই। (ঘ) অবশিষ্ট সকল মানুষকে নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। তাদের জনক আছে এবং জননীও। فَسُبْحَانَ اللهِ الْعَلِيْمِ الْقَدِيْرِ (ইবনে কাসীর)

۞ وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ

📘 কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন;[১] নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়। [১] এই আয়াতে অহীর তিনটি প্রকারের কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রথমঃ অন্তরে কোন কথা প্রক্ষিপ্ত করা (ঢুকিয়ে দেওয়া) অথবা স্বপ্নে বলে দেওয়া এই প্রত্যয়ের সাথে যে, তা আল্লাহরই পক্ষ হতে। দ্বিতীয়ঃ অদৃশ্য থেকে সরাসরি কথা বলা। যেমন, মূসা (আঃ)-এর সাথে ত্বুর পাহাড়ে বলা হয়েছিল। তৃতীয়ঃ ফিরিশতার মাধ্যমে স্বীয় অহী প্রেরণ করা। যেমন, জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে আগমন করতেন এবং নবীদেরকে শুনাতেন।

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا ۚ مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ وَلَٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُورًا نَهْدِي بِهِ مَنْ نَشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا ۚ وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

📘 এভাবে আমি নিজ নির্দেশে তোমার প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) করেছি আত্মা।[১] তুমি তো জানতে না গ্রন্থ কি, ঈমান (বিশ্বাস) কি।[২] পক্ষান্তরে আমি একে করেছি এমন আলো, যার দ্বারা আমি আমার দাসদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করি।[৩] আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথ প্রদর্শন কর-- [১] رُوْحٌ (রূহ বা আত্মা)এর অর্থ এখানে কুরআন। অর্থাৎ, যেভাবে আমি তোমার পূর্বে অন্যান্য নবীদের প্রতি অহী প্রেরণ করেছি, অনুরূপ আমি তোমার প্রতি কুরআন অহী করেছি। কুরআনকে روح (আত্মা) বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, কুরআন দ্বারা অন্তঃকরণের জীবন লাভ হয়। যেমন, আত্মার মধ্যে মানুষের জীবন রহস্য লুক্কায়িত।[২] 'গ্রন্থ' বা 'কিতাব' বলতে কুরআন। অর্থাৎ, নবুঅতের পূর্বে কুরআনের কোন জ্ঞান তোমার ছিল না। অনুরূপ ঈমানের বিস্তারিত জ্ঞানও তোমার ছিল না, যা শরীয়তে বাঞ্ছিত।[৩] অর্থাৎ, কুরআনকে নূর (জ্যোতি) বানিয়েছি। এর দ্বারা আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে চাই হিদায়াত দানে ধন্য করি। অর্থাৎ, কুরআন দ্বারা হিদায়াত কেবল তারাই পায়, যাদের মধ্যে ঈমানের খোঁজ ও তার প্রতি তীব্র আগ্রহ থাকে। তারা এটাকে হিদায়াত লাভের নিয়তে পড়ে, শোনে এবং চিন্তা-গবেষণা করে। তাই আল্লাহ এদের সাহায্য করেন এবং এদের জন্য হিদায়াতের পথ সুগম করে দেন। এই পথের উপরেই এরা চলতে থাকে। কিন্তু যারা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় ও কানে ছিপি লাগিয়ে নেয় এবং জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না, তারা হিদায়াত কিভাবে পেতে পারে? যেমন মহান আল্লাহ বলেন,{ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوا هُدىً وَّشِفَاءٌ وَالَّذِيْنَ لاَيُؤْمِنُوْنَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمىً اُولَئِكَ يُنَادُوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيْدٍ} অর্থাৎ, বল, বিশ্বাসীদের জন্য এ পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে এদের জন্য অন্ধকারস্বরূপ। এরা এমন যে, যেন এদের বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হামীম সাজদাহ ৩২:৪৪ আয়াত)

صِرَاطِ اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ أَلَا إِلَى اللَّهِ تَصِيرُ الْأُمُورُ

📘 সেই আল্লাহর পথ[১] যাঁর মালিকানায় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই। জেনে রেখো, সকল পরিণাম আল্লাহরই নিকট প্রত্যাবর্তন করে।[২] [১] এই সঠিক ও সরল 'পথ' হল ইসলাম। এটাকে মহান আল্লাহর নিজের প্রতি সম্পৃক্ত করে এ পথের মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন এবং এতে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, এটাই একমাত্র মুক্তির পথ। [২] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন যাবতীয় ব্যাপারের ফায়সালা আল্লাহরই হাতে হবে। এতে রয়েছে কঠোর ধমক যা প্রতিফল (বদলা ও শাস্তি)-কে অনিবার্য করে।

وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ اللَّهُ حَفِيظٌ عَلَيْهِمْ وَمَا أَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيلٍ

📘 যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টি রাখেন।[১] আর তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও। [২] [১] অর্থাৎ, তাদের আমলগুলো পর্যবেক্ষণ করে সুরক্ষিত করে রাখেন, যাতে তাদেরকে তার প্রতিফল দান করেন। [২] অর্থাৎ, তোমার এ দায়িত্ব নয় যে, তুমি তাদেরকে সৎপথে পৌঁছে দেবে অথবা তাদের পাপের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করবে। বরং এ কাজ কেবল আমার। তোমার কাজ শুধু পৌঁছে দেওয়া।

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ

📘 এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অহী করেছি;[১] যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কাবাসীদেরকে এবং ওর আশেপাশের বাসিন্দাকে,[২] আর সতর্ক করতে পার জমায়েত হওয়ার দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই;[৩] সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল প্রবেশ করবে জাহান্নামে। [৪] [১] অর্থাৎ, যেমন প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, অনুরূপ আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি। কারণ, তোমার জাতি এই ভাষাতেই কথা বলে ও বুঝে। [২] أُمُّ الْقُرَى (সমস্ত নগরের জননী) মক্কার অপর একটি নাম। এ নামকরণ এই জন্য হয়েছে যে, এটা হল আরবের অতীব পুরাতন বসতি। অর্থাৎ, যেন এটা সমস্ত গ্রাম-শহরের মা। অন্যান্য গ্রাম-শহরগুলো এর থেকেই জন্মলাভ করেছে। আর এ থেকে মক্কাবাসীদের বুঝানো হয়েছে। وَمَنْ حَوْلَهَا এর মধ্যে মক্কার পার্শ্বস্থ সমস্ত অঞ্চল শামিল। এদেরকে সতর্ক কর যে, এরা যদি কুফরী ও শিরক থেকে তওবা না করে, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে। [৩] কিয়ামতের দিনকে জমায়েত বা একত্রিত হওয়ার দিন এই জন্য বলা হয়েছে যে, সেদিন পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে। অনুরূপ অত্যাচারী, অত্যাচারিত এবং মু'মিন ও কাফের সকলে জমা হবে। আর সকলেই নিজের নিজের আমল অনুযায়ী প্রতিদান ও শাস্তি লাভ করবে। [৪] যে আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করবে, তাঁর যাবতীয় নিষিদ্ধ ও হারাম বস্তুসমূহ থেকে দূরে থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে তাঁর অবাধ্যজন এবং হারাম কার্যাদি সম্পাদনকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এই দুটো দলই হবে; তৃতীয় আর কোন দল হবে না।

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَهُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَٰكِنْ يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِهِ ۚ وَالظَّالِمُونَ مَا لَهُمْ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

📘 আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই জাতিভুক্ত (একই মতাদর্শের অনুসারী) করতে পারতেন;[১] কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করে থাকেন। আর সীমালংঘনকারীদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই। [১] এই অবস্থায় কিয়ামতের দিন কেবল একটাই দল হত। অর্থাৎ, ঈমানদার জান্নাতীদের। কিন্তু আল্লাহর সুকৌশল ও ইচ্ছা এই বাধ্যকরণকে পছন্দ করেনি। বরং মানুষদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদেরকে (করা না করার) ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দান করেছেন। যে এই স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করে, সে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়ে যায়। আর যে তার অপব্যবহার করে, সে প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে আল্লাহর দেওয়া স্বাধীনতা ও এখতিয়ারকে আল্লাহরই অবাধ্যতায় ব্যবহার করে। সুতরাং কিয়ামতের দিন এ রকম অন্যায়কারী যালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।

أَمِ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۖ فَاللَّهُ هُوَ الْوَلِيُّ وَهُوَ يُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 ওরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ, অভিভাবক তো তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। [১] [১] ব্যাপার যখন এ রকমই, তখন মহান আল্লাহই এই অধিকার রাখেন যে, তাঁকেই ওলী, অভিভাবক, মদদগার ও সাহায্যকারী মনে করা হোক; তাদেরকে নয়, যাদের হাতে কোন এখতিয়ার নেই এবং যারা না কিছু শোনার ও উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, আর না উপকার ও অপকার করার কোন যোগ্যতা রাখে।