slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة المجادلة

(Al-Mujadila) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ

📘 (হে রসূল!) অবশ্যই আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন।[১] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [১] এখানে খাওলা বিনতে মালেক বিন সা'লাবা (রাঃ) র ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাঁর স্বামী তাঁর সাথে 'যিহার' করেছিল। 'যিহার' মানে স্ত্রীকে এই বলা যে, 'তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের মত।' জাহেলী যুগে যিহারকে তালাক গণ্য করা হত। সুতরাং খাওলা (রাঃ) বড়ই অস্থির হয়ে পড়েন। আর তখন যিহারের ব্যাপারে কোন বিধান অবতীর্ণ হয়নি। ফলে তিনি রসূল (সাঃ)-এর কাছে এলেন। তিনিও এ ব্যাপারে একটু নীরবতা অবলম্বন করলেন এবং খাওলা (রাঃ) তাঁর সাথে বাদানুবাদ করেই যাচ্ছিলেন। ঠিক এ সময়ই এই আয়াতগুলো নাযিল হয়। এতে যিহারের মাসআলা, তার বিধান এবং তার কাফফারার কথা বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। (আবূ দাউদ তালাক অধ্যায়ঃ যিহার পরিচ্ছেদ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ কিভাবে মানুষের কথা শুনে থাকেন যে, একটি মহিলা রসূল (সাঃ)-এর সাথে বাদানুবাদ করছিল এবং তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করছিল। আমি তার কথা শুনতে পাইনি, কিন্তু মহান আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে তার কথা শুনে নিয়েছেন। (ইবনে মাজাহঃ ভূমিকা, বুখারীতেও বিনা সনদে সংক্ষিপ্তভাবে তাওহীদ অধ্যায়ে এ বর্ণনা রয়েছে)

إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

📘 এই গোপন পরামর্শ তো শয়তানেরই প্ররোচনা, যাতে বিশ্বাসীরা দুঃখ পায়।[১] তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শয়তান তাদের সামান্যতমও ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়। আর বিশ্বাসীদের কর্তব্য আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। [২] [১] অর্থাৎ, পাপাচার, সীমালঙ্ঘন এবং রসূল (সাঃ)-এর অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করা হল শয়তানের কাজ। কারণ, শয়তানই এ কাজ করতে উস্কানি দেয় এবং এর মাধ্যমে সে মু'মিনদেরকে মনঃকষ্ট ও দুশ্চিন্তায় ফেলতে চায়। [২] তবে এ সব কানাকানি এবং শয়তানী কার্যকলাপ মু'মিনদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, যদি আল্লাহর ইচ্ছা না থাকে। কাজেই তোমরা শত্রুদের এই নিকৃষ্ট আচরণে চিন্তিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। কেননা, যাবতীয় বিষয়ের একচ্ছত্র এখতিয়ার ও ক্ষমতা কেবল তাঁরই হাতে এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। ইয়াহুদী এবং মুনাফিকদের হাতে কিছুই নেই; যারা তোমাদের সর্বনাশ করতে চায়। কানাকানি করার ব্যাপারেই মুসলিমদেরকে একটি নৈতিক শিক্ষা এও দেওয়া হয়েছে যে, যখন তোমরা তিনজন একত্রে থাকবে, তখন তোমাদের মধ্য থেকে একজনকে বাদ দিয়ে দু'জনে আপোসে কানাকানি করবে না। কারণ, এ কাজ ঐ একজনের মনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করবে। (বুখারীঃ অনুমতি অধ্যায়, মুসলিমঃ সালাম অধ্যায়) অবশ্য তার সম্মতি ও অনুমতি থাকলে এমন করা জায়েয হবে। কেননা, এই ক্ষেত্রে দুই ব্যক্তির কানাকানি করা কারো জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَإِذَا قِيلَ انْشُزُوا فَانْشُزُوا يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

📘 হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান প্রশস্ত কর’, [১] তখন তোমরা প্রশস্ত করে দাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রশস্ততা দেবেন। [২] আর যখন বলা হয়, ‘উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাও। [৩] তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। [৪] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। [১] এখানে মুসলিমদেরকে মজলিসের আদব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মজলিস একটি সাধারণ শব্দ যা এমন সকল মজলিসকেই বুঝানো হয়েছে, যেখানে মুসলিম কল্যাণ ও পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। তাতে তা ওয়ায-নসীহতের মজলিস (জলসা) হোক বা জুমআর মজলিস। (তাফসীর ক্বুরত্বুবী) 'প্রশস্ত কর' মানে (নড়ে-সরে বসে) মজলিসের জায়গা প্রশস্ত কর, যাতে পরে আগত ব্যক্তিদের জন্য বসার জায়গা থাকে। মজলিসের জায়গা এমন সংকীর্ণ করে রেখো না, যাতে পরে আগত ব্যক্তিদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অথবা কোন বসা মানুষকে উঠিয়ে বসতে হয়। আর এ দু'টি জিনিসই নৈতিকতার বিপরীত। যেহেতু রসূল (সাঃ) বলেছেন, "কোন ব্যক্তি যেন অন্য ব্যক্তিকে তার স্থান থেকে উঠিয়ে সেখানে না বসে। বরং মজলিসের জায়গাকে প্রশস্ত করে নাও।" (বুখারীঃ জুমুআহ অধ্যায়, মুসলিমঃ সালাম অধ্যায়) [২] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ এর প্রতিদান স্বরূপ তোমাদেরকে জান্নাতে অতীব প্রশস্ত স্থান দান করবেন অথবা যেখানেই তোমরা প্রশস্ততা কামনা করবে, সেখানেই তিনি তা দান করবেন। যেমন, বাড়ীতে প্রশস্ততা, রুযীতে প্রশস্ততা এবং কবরে প্রশস্ততা। সব জায়গাতেই তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন। [৩] অর্থাৎ, জিহাদের জন্য, নামাযের জন্য অথবা যে কোন ভাল কাজের জন্য। অথবা অর্থ হল, যখন মজলিস থেকে উঠে চলে যেতে বলা হবে, তখন সত্বর উঠে চলে যাও। মুসলিমদেরকে এ নির্দেশ এ জন্য দেওয়া হল যে, সাহাবায়ে কেরাম নবী (সাঃ)-এর মজলিস থেকে উঠে যাওয়া পছন্দ করতেন না। আর এতে এমন লোকদের অসুবিধা হত, যাঁরা নবী (সাঃ)-এর সাথে নির্জনে কোন কথা বলতে চাইতেন। [৪] অর্থাৎ, ঈমানদারদের মর্যাদা বেঈমানদারদের উপরে এবং (ঈমানদার) শিক্ষিতদের মর্যাদা (অশিক্ষিত) সাধারণ ঈমানদারদের থেকে অনেক উচ্চ করবেন। যার অর্থ হল, ঈমানের সাথে দ্বীনী জ্ঞান ও শিক্ষা থাকা অধিক মর্যাদা লাভের কারণ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُولَ فَقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ لَكُمْ وَأَطْهَرُ ۚ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

📘 হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা রসূলের সাথে চুপিচুপি কথা বলতে চাইলে তার পূর্বে কিছু সাদকা প্রদান কর।[১] এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় ও পবিত্রতর;[২] যদি তাতে অক্ষম হও, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [১] প্রত্যেক মুসলিম নবী (সাঃ)-এর সাথে নির্জনে কথা বলার আশা রাখত। এতে রসূল (সাঃ)-এর বেশ কষ্ট হত। কেউ কেউ বলেন, মুনাফিকবরা খামখা নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে চুপিচুপি কথোপকথনে ব্যস্ত থাকত; যাতে মুসলিমরা কষ্ট অনুভব করতেন। এই জন্য মহান আল্লাহ এই নির্দেশ অবতীর্ণ করলেন। যাতে নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে চুপিচুপি কথা বলার প্রবণতা শেষ হয়ে যায়। [২] শ্রেয় ও উত্তম এই জন্য যে, সাদকায় তোমাদেরই অন্যান্য গরীব মুসলিম ভাইদের উপকার হয়। আর পবিত্রতর এই জন্য যে, এটা হল এক সৎকর্ম এবং আল্লাহর আনুগত্য, যার দ্বারা মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। এ থেকে এটাও জানা গেল যে, এ নির্দেশ ছিল 'মুস্তাহাব' (যা করা ভাল, না করলে কোন দোষ হয় না)এর পর্যায়ভুক্ত, ওয়াজেব ছিল না।

أَأَشْفَقْتُمْ أَنْ تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍ ۚ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا وَتَابَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

📘 তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার পূর্বে সাদকা প্রদানকে কষ্টকর মনে কর? যখন তোমরা তা পারলে না, আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন; [১] তখন তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর। [২] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সম্যক অবগত। [১] এই নির্দেশ 'মুস্তাহাব'-এর পর্যায়ভুক্ত হলেও তা মুসলিমদের জন্য কষ্টকর ছিল। তাই মহান আল্লাহ সত্বর এটাকে রহিত করে দিলেন। [২] অর্থাৎ, ফরয কাজগুলো আদায় করলে এবং সমস্ত বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান হলে এটাই সেই সাদাকার পরিবর্তে যথেষ্ট হয়ে যাবে, যাকে আল্লাহ তোমাদের কষ্ট হবে বলে মাফ করে দিয়েছেন।

۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ تَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مَا هُمْ مِنْكُمْ وَلَا مِنْهُمْ وَيَحْلِفُونَ عَلَى الْكَذِبِ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

📘 তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা সেই সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে, যাদের প্রতি আল্লাহ রাগান্বিতত?[১] তারা (মুনাফিকগণ) তোমাদের দলভুক্ত নয়, তাদেরও দলভুক্ত নয়।[২] আর তারা জেনে-শুনে মিথ্যা শপথ করে।[৩] [১] 'যাদের প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত' কুরআনের স্পষ্ট উক্তি মুতাবেক তারা হল ইয়াহুদী। আর তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করেছিল, তারা ছিল মুনাফিক। এই আয়াতগুলি সেই সময় নাযিল হয়, যখন মদীনাতে মুনাফিকদেরও বড় দাপট ছিল এবং ইয়াহুীদের ষড়যন্ত্রও বহু শীর্ষে উঠেছিল। আর তখনও তাদেরকে (মদীনা থেকে) বহিষ্কার করা হয়নি। [২] অর্থাৎ, মুনাফিকবরা না মুসলিম ছিল, আর না ধর্মের দিক দিয়ে তারা ইয়াহুদী ছিল। তা সত্ত্বেও তারা ইয়াহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব কেন করত? শুধু এই কারণে যে, তারা নবী করীম (সাঃ) এবং ইসলামের সাথে শত্রুতা করার ব্যাপারে ইয়াহুদীদের সমানভাবে শরীক ছিল। [৩] অর্থাৎ, কসম খেয়ে মুসলিমদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, আমরাও তোমাদের মত মুসলিম। অথবা (বুঝাতে চায় যে,) ইয়াহুদীদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি। [১] নিশ্চয় তারা যা করে, তা মন্দ! [১] অর্থাৎ, ইয়াহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক রাখার এবং মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে।

اتَّخَذُوا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ

📘 তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে, [১] (এভাবে) তারা আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে।[২] সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। [১] أَيْمَانٌ হল يَمِيْنٌ এর বহুবচন। অর্থ, কসম। অর্থাৎ, যেভাবে ঢাল দ্বারা শত্রুর আক্রমণকে রোধ করে নিজেকে বাঁচিয়ে নেওয়া হয়, অনুরূপ তারাও নিজেদের কসমকে মুসলিমদের তরবারির আঘাত থেকে বাঁচার জন্য ঢাল বানিয়ে রেখেছিল। [২] অর্থাৎ, মিথ্যা কসম খেয়ে এরা নিজেদেরকে মুসলমান প্রকাশ করে। ফলে বহু মানুষ তাদের প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অবহিত হতে না পারার কারণে তাদের ধোঁকার জালে বন্দী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করা হতে বঞ্চিত থেকে যায়। আর এইভাবে তারা মানুষকে আল্লাহর পথে বাধা দেওয়ার অপরাধ করে।

لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

📘 আল্লাহর শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজে আসবে না, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيَحْلِفُونَ لَهُ كَمَا يَحْلِفُونَ لَكُمْ ۖ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ عَلَىٰ شَيْءٍ ۚ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ

📘 যেদিন আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন তাদের সকলকে, সেদিন তারা তাঁর নিকট সেইরূপ শপথ করবে, যেরূপ শপথ তোমাদের নিকট করে[১] এবং তারা মনে করবে যে, তারা কোন (দলীলের) উপর প্রতিষ্ঠিত।[২] জেনে রেখো যে, নিশ্চয় তারাই হল মিথ্যাবাদী। [১] অর্থাৎ, তারা এত বড় হতভাগা ও কঠোর-হৃদয় যে, কিয়ামতের দিন যেখানে কোন জিনিস গুপ্ত থাকবে না, সেখানেও আল্লাহর সামনে মিথ্যা কসম খাওয়ার লজ্জাহীন দুঃসাহস প্রদর্শন করবে। [২] অর্থাৎ, যেভাবে তারা মিথ্যা কসম খেয়ে দুনিয়াতে সাময়িকভাবে কিছু উপকৃত হয়েছে, সেখানেও মনে করবে যে, তাদের এই মিথ্যা কসমগুলো তাদের জন্য ফলপ্রসূ হবে।

اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ

📘 শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করেছে,[১] ফলে তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ।[২] তারা হল শয়তানের দল। জেনে রেখো যে, নিশ্চয় শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। [৩] [১] اسْتَحْوَذَ এর অর্থ হল, ঘিরে নিয়েছে, বেষ্টন করে নিয়েছে, একত্রিত করে নিয়েছে। এই জন্য এর অনুবাদ করা হয় প্রভুত্ব বা আধিপত্য বিস্তার করেছে। কারণ, এর মধ্যে সব অর্থই চলে আসে। [২] অর্থাৎ, তিনি তাদেরকে যেসব কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা থেকে শয়তান তাদেরকে উদাসীন করে দেয় এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, সে কাজগুলো শয়তান তাদের দিয়ে করিয়ে নেয়। কাজগুলো তাদের সামনে সুশোভিত রূপে তুলে ধরে অথবা তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে কিংবা বহু আশা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পতিত করে (এ সব কাজ করিয়ে নেয়)। [৩] অর্থাৎ, পরিপূর্ণ ক্ষতি তাদের ভাগ্যেই জুটবে। যেন অন্যরা তাদের তুলনায় কোন ক্ষতির মধ্যেই নেই। কারণ, তারা জান্নাতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে মিথ্যা কসম খেয়েছে।

الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ

📘 তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে (তারা জেনে রাখুক যে,) তাদের স্ত্রীরা তাদের মাতা নয়; যারা তাদেরকে জন্মদান করে, শুধু তারাই তাদের মাতা,[১] তারা তো অসঙ্গত ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপমোচনকারী, পরম ক্ষমাশীল। [২] [১] এখানে যিহারের বিধান এই বর্ণনা হল যে, মুখে 'মা' বলে দিলেই স্ত্রী মা হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে যদি কেউ তার স্ত্রীকে মায়ের পরিবর্তে নিজের মেয়ে অথবা নিজের বোনের পিঠের মত বলে দেয়, তাহলে তা যিহার গণ্য হবে কি না? ইমাম মালিক এবং ইমামা আবূ হানীফা (রঃ) এটাকেও যিহার গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য উলামাগণ এটাকে যিহার গণ্য করেন না। (প্রথম উক্তিটাই বেশী সঠিক মনে হচ্ছে।) অনুরূপভাবে এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে যে, যদি কেউ বলে যে, 'তুমি আমার মায়ের মত' এবং পিঠের কথা উল্লেখই না করে। তাহলে এ ব্যাপারে আলেমগণ বলেন, যদি যিহারের নিয়তে উক্ত শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে তা যিহার হবে, অন্যথা হবে না। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) বলেন, যদি এমন কোন অঙ্গের সাথে তুলনা করে, যা দেখা জায়েয, তবে তা যিহার হবে না। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)র কথা হল, কেবল পিঠের সাথে তুলনা করলে যিহার হবে (নচেৎ না)। (ফাতহুল ক্বাদীর) [২] এই জন্যই তিনি ঐ গর্হিত ও মিথ্যা কথার পাপ থেকে ক্ষমা লাভের উপায়স্বরূপ কাফফারার (প্রায়শ্চিত্ত ও জরিমানার) বিধান দিয়েছেন।

إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَٰئِكَ فِي الْأَذَلِّينَ

📘 নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে,[১] তারা হবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।[২] [১] مُحَادَّةٌ এমন কঠিন বিরোধিতা, বিদ্বেষ এবং ঝগড়াকে বলা হয়, যাতে বিবদমান উভয় গোষ্ঠীর আপোসে মিলন বড়ই কঠিন হয়। যেন পরস্পর বিরোধী দু'টি দল দুই হদ্দ্ (প্রান্ত বা সীমানায়) থাকে। আর এ থেকে এটা 'বারণ' অর্থেও ব্যবহার হয়। আর এই জন্যই দারোয়ান ও প্রহরীকেও 'হাদ্দাদ' বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) [২] অর্থাৎ, যেভাবে অতীত উম্মতের মধ্য থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধীদেরকে লাঞ্ছিত ও ধ্বংস করা হয়েছে, সেইভাবে এরাও ঐ লাঞ্ছিতদের দলভুক্ত হবে এবং এদের ভাগ্যেও দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছনা ও অপমান ব্যতীত কিছুই জুটবে না।

كَتَبَ اللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ

📘 আল্লাহ লিপিবদ্ধ করেছেন[১] যে, আমি এবং আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। [২] [১] অর্থাৎ, তকদীর ও লওহে মাহফূযে; যাতে কোন পরিবর্তন হতে পারে না। এ বিষয়টি সূরা মু'মিন ৪০:৫১-৫২ নং আয়াতেও আলোচিত হয়েছে।[২] এ কথার লেখক যখন শক্তিমান পরাক্রমশালী, তখন অন্য আবার কে আছে যে এই ফয়সালা পরিবর্তন করতে পারবে?

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

📘 তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবে না,[১] যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে; হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জাতি-গোত্র।[২] তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন[৩] এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ হতে রূহ (জ্যোতি ও বিজয়) দ্বারা।[৪] তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।[৫] তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো যে, আল্লাহর দলই সফলকাম। [৬] [১] এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমানে এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসে পরিপূর্ণ হয়, সে আল্লাহ এবং রসূলের শত্রুদের সাথে ভালবাসা এবং আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। অর্থাৎ, ঈমান এবং আল্লাহ ও রসূল (সাঃ)-এর শত্রুদের প্রতি ভালবাসা ও সহযোগিতা কোন একটি অন্তরে একত্রিত হতে পারে না। এই বিষয়টিকে কুরআন মাজীদের আরো কয়েকটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সূরা আলে ইমরান ৩:২৮ ও সূরা তওবার ৯:২৪ নং আয়াত ইত্যাদিতে।[২] কারণ, এদের ঈমান এদেরকে তাদের সাথে ভালবাসা রাখতে বাধা দেয়। আর ঈমানের প্রতি যত্ন, মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং ভাই-বোন ও জাতি-গোত্রের ভালবাসা ও যত্ন অপেক্ষা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম বাস্তবে তা করে দেখিয়েছেন। একজন মুসলিম সাহাবী তাঁর নিজের বাপ, বেটা, ভাই, চাচা এবং মামা ও অন্যান্য আত্মীয়দেরকে হত্যা করতে পিছপা হননি, যখন তারা কুফরীর সমর্থনে কাফেরদের স্বপক্ষে যুদ্ধে শামিল হয়েছে। এই ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে বদর যুদ্ধের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য; যখন যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ হল যে, তাদেরকে বিনিময় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে, না হত্যা করা হবে? তখন উমার (রাঃ)-এর পরামর্শ ছিল যে, কাফের বন্দীদের মধ্য হতে প্রত্যেক বন্দীকে তার আত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক, সে নিজ হাতে তাকে হত্যা করবে। আর মহান আল্লাহ উমার (রাঃ)-এর পরামর্শকেই পছন্দ করেছিলেন। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ সূরা আনফাল ৮:৬৭ নং আয়াতের টীকা) [৩] অর্থাৎ, মজবুত ও সুদৃঢ় করেছেন।[৪] 'রূহ' অর্থ তাঁর বিশেষ সাহায্য অথবা ঈমানের জ্যোতি যা তাঁরা তাদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের বদৌলতে লাভ করেছেন।[৫] অর্থাৎ, যখন অগ্রণী মুসলিমগণ, সাহাবা (রাঃ)গণ ঈমানের ভিত্তিতে নিজেদের প্রিয়জন এবং আত্মীয়-স্বজন থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, এমন কি তাদেরকে নিজ হাতে হত্যা করতেও কোন দ্বিধা করেননি, তখন এরই প্রতিদান স্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি দানে ধন্য করলেন এবং তাঁদেরকে এমনভাবে পুরস্কৃত করলেন যে, তাঁরা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। এই জন্য আয়াতে বর্ণিত ﴿ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ﴾ এই সম্মান বিশেষ করে সাহাবাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ না হলেও তাঁরাই সর্বপ্রথম ও পরিপূর্ণরূপে এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কাজেই এর ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত প্রত্যেক মুসলিমই رَضِيَ اللهُ عَنه দু'আ লাভের যোগ্য হতে পারে। যেমন, ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের ক্ষেত্রে عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ (দু'আর বাক্যস্বরূপ ) বলা যেতে পারে। তবে আহলে-সুন্নাহ এর ভাষাগত অর্থকে দৃষ্টিচ্যুত করে (বিশেষ পরিভাষারূপে) তা (রায্বিয়াল্লাহু আনহু এবং আলাইহিসসালাম) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম) ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে বলা ও লেখা বৈধ গণ্য করেননি। অর্থাৎ, এটা যেন তাঁদের একটি প্রতীক বা নিদর্শনে পরিণত হয়ে গেছে; رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ সাহাবাদের ক্ষেত্রে এবং عَلَيْهِمُ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ নবীদের ক্ষেত্রে। এটা ঠিক ঐ রকম, যে রকম رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ (তাঁর উপর আল্লাহর রহমত হোক অথবা আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) এর ব্যবহার ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে জীবিত এবং মৃত উভয়ের জন্য হতে পারে। কেননা, এটা একটি দু'আর বাক্য। এর মুখাপেক্ষী জীবিত এবং মৃত উভয়েই। কিন্তু এর ব্যবহার মৃতদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছে, তাই এটাকে জীবিতদের জন্য ব্যবহার করা হয় না।[৬] অর্থাৎ, মু'মিনদের এই দলই সাফল্য লাভ করবে। এঁদের তুলনায় অন্যদের অবস্থা এমন হবে যে, যেন তারা সাফল্য লাভ হতে একেবারে বঞ্চিত। আর আখেরাতে বাস্তবিকই তারা সাফল্য লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।

وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

📘 যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে,[১] তাহলে (এর প্রায়শ্চিত্ত) একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে[২] একটি দাসের মুক্তিদান। এর দ্বারা তোমাদেরকে সদুপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন। [১] এখন এই বিধানকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে। রুজু' বা প্রত্যাহার করা মানেঃ স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চাওয়া। [২] অর্থাৎ, সহবাস করার পূর্বে কাফফারা আদায় করবে। (ক) একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে। (খ) তা না পারলে লাগাতার কোন বিরতি ছাড়াই দু' মাস রোযা রাখবে। যদি রাখতে রাখতে মধ্যখানে কোন শরীয়তী কারণ ছাড়াই রোযা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পুনরায় আবার নতুনভাবে প্রথম থেকে দু' মাসের রোযা পূর্ণ করতে হবে। আর শরীয়তী কারণ বলতে যেমন, অসুস্থতা বা সফরে যাওয়া ইত্যাদি। (গ) যদি লাগাতার দু'মাস রোযা রাখতে না পারে, তবে ষাটজন মিসকীনকে (এক বেলা) আহার করাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রত্যেক মিসকীনকে দুই মুদ্দ (অর্ধসা' অর্থাৎ, সওয়া এক কিলো), আবার কেউ বলেন, এক মুদ্দ (গম বা চাল) দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে কুরআনের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খাবার পেটপুরে খাওয়াতে হবে অথবা পেট ভরে যায় এতটা পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ সকল মিসকীনকে একই সাথে খাওয়ানোও জরুরী নয়, বরং একাধিক কিস্তীর মাধ্যমে এ সংখ্যা পূরণ করা যেতে পারে। (ফাতহুল ক্বাদীর) তবে এটা জরুরী যে, যতক্ষণ না নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে সহবাস করা জায়েয হবে না।

فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ۖ فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۗ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 কিন্তু যার এ সামর্থ্য থাকবে না, (তার প্রায়শ্চিত্ত) একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা পালন। যে তাতেও অসমর্থ হবে, সে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে খাওয়াবে। এটা এই জন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন কর। এ হল আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি-বিধান। আর অবিশ্বাসীদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ كُبِتُوا كَمَا كُبِتَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ وَقَدْ أَنْزَلْنَا آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۚ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُهِينٌ

📘 যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদেরকে অপদস্থ করা হবে,[১] যেমন অপদস্থ করা হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে।[২] অবশ্যই আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছি। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। [১] كُبِتُوا কর্মবাচ্যসূচক ক্রিয়াপদ। ভবিষ্যতে ঘটবে এমন ঘটনাবলীকে অতীত কালের ক্রিয়া দ্বারা বর্ণনা করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, তার ঘটা ও বাস্তবায়ন এত সুনিশ্চিত যে, যেন তা হয়েই গেছে। বাস্তবে হলও তাই। মক্কার এই মুশরিকরা বদরের দিন লাঞ্ছিত হল। কিছুকে হত্যা এবং কিছুকে বন্দী করা হল। মুসলিমরা তাদের উপর জয়লাভ করলেন। মুসলিমদের বিজয়ই ছিল তাদের জন্য বড় লাঞ্ছনাদায়ক ব্যাপার। [২] অর্থাৎ অতীতের উম্মতদেরকে এই বিরোধিতার কারণেই অপদস্থ, লাঞ্ছিত ও ধ্বংস করা হয়েছে।

يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا ۚ أَحْصَاهُ اللَّهُ وَنَسُوهُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

📘 যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন এবং তাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তারা করত; আল্লাহ ওর হিসাব রেখেছেন, আর তারা তা ভুলে গেছে। [১] আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। [২] [১] এটা মস্তিষ্কে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান। অর্থাৎ, পাপ এত প্রচুর এবং এত প্রকারের যে, তা গণনা করা বাহ্যিকভাবে অসম্ভব মনে হচ্ছে। মহান আল্লাহ বললেন, তোমাদের জন্য তা অবশ্যই অসম্ভব, বরং তোমাদের তো নিজেদের কৃতকর্মও স্মরণে থাকবে না। কিন্তু আল্লাহর জন্য এটা কোন সমস্যার ব্যাপার নয়। তিনি প্রত্যেকের আমলকে হিসাব করে সুরক্ষিত রেখেছেন। [২] তাঁর কাছে কোন জিনিস গুপ্ত নয়। পরের আয়াতে এ কথার আরো তাকীদ স্বরূপ বলা হয়েছে যে, তিনি সব কিছুই জানেন।

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَىٰ ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَىٰ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

📘 তুমি কি অনুধাবন কর না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না, যাতে চতুর্থজন হিসাবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে ষষ্ঠজন হিসাবে তিনি থাকেন না; তারা এ অপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক[১] এবং যেখানেই থাকুক না কেন,[২] তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন জানিয়ে দেবেন তারা যা করে।[৩] নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। [১] অর্থাৎ, উক্ত সংখ্যাগুলোকে বিশেষ করে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, তার থেকে কম বা তার থেকে বেশী সংখ্যক লোকের মাঝে হওয়া কথাবার্তা তিনি জানতে পারেন না, বরং এ সংখ্যা কেবল দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হল এ কথা জানিয়ে দেওয়া যে, সংখ্যা কম হোক অথবা বেশী, তিনি সকলের সাথে আছেন এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রতিটি কথার খবর রাখেন। [২] নির্জন স্থানে হোক অথবা লোকালয়ে, শহরে হোক অথবা জঙ্গল-মরুভূমিতে, আবাদ-জনপদে হোক অথবা জনশূন্য পাহাড়, প্রান্তর বা গুহাতে, যেখানেই হোক না কেন তাঁর দৃষ্টি ও জ্ঞান থেকে গোপন থাকতে পারবে না। [৩] অর্থাৎ, সেই অনুযায়ী প্রত্যেককে প্রতিদান দেবেন। নেককারদেরকে তাদের নেকীর প্রতিদান এবং বদকারদেরকে তাদের বদীর প্রতিফল দেবেন।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ نُهُوا عَنِ النَّجْوَىٰ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَيَتَنَاجَوْنَ بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَإِذَا جَاءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ اللَّهُ وَيَقُولُونَ فِي أَنْفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا اللَّهُ بِمَا نَقُولُ ۚ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا ۖ فَبِئْسَ الْمَصِيرُ

📘 তুমি কি তাদেরকে লক্ষ্য কর না, যাদেরকে গোপন পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল; অতঃপর তারা যা নিষিদ্ধ তারই পুনরাবৃত্তি করে[১] এবং পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্য কানাকানি করে।[২] তারা যখন তোমাকে এমন শব্দ দ্বারা অভিবাদন জানায়, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন জানাননি।[৩] তারা মনে মনে বলে, ‘আমরা যা বলি তার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেয় না কেন?’[৪] জাহান্নামই তাদের উপযুক্ত শাস্তি; সেখানে তারা প্রবেশ করবে। [৫] সুতরাং কত নিকৃষ্ট সেই আবাস! [১] এ থেকে উদ্দেশ্য মদীনার ইয়াহুদী এবং মুনাফিকবরা। যখন মুসলিমরা তাদের পাশ দিয়ে পেরিয়ে যেতেন, তখন তারা আপোসে মাথায় মাথা লাগিয়ে এমনভাবে চুপে চুপে কানাকানি করত যে, মুসলিমরা মনে করতেন তারা মনে হয় তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছে অথবা মুসলিমদের কোন সৈন্য দলের উপর শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে তাদের ক্ষতি সাধন করেছে, যার খবর এদের কাছে পৌঁঁছে গেছে। এতে মুসলিমরা ভয় পেয়ে যেতেন। তাই রসূল (সাঃ) তাদেরকে কানাকানি করতে নিষেধ করে দিলেন। কিন্তু কিছু দিন পর তারা পুনরায় এই নিন্দনীয় কাজের পুনরাবৃত্তি করল। আয়াতে তাদের এই নিন্দনীয় কাজের কথাই বর্ণনা করা হচ্ছে। [২] অর্থাৎ, তাদের কানাকানি কোন সৎকর্ম বা আল্লাহভীরুতার ব্যাপারে হত না; বরং তা হত পাপ, সীমালঙ্ঘন ও রসূল (সাঃ)-এর অবাধ্যতামূলক কাজে। যেমন, কারো গীবত করা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, অশ্লীল কথা-বার্তা এবং একে অপরকে রসূল (সাঃ)-এর অবাধ্যতা করার উপর উস্কানি দেওয়া ইত্যাদি। [৩] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা অভিবাদন জানানো বা সালাম দেওয়ার তরীকা এইভাবে শিখিয়েছেন যে, তোমরা বলবে, السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ কিন্তু এই ইয়াহুদীরা নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উক্ত সালামের পরিবর্তে বলত, السَّامُ عَلَيْكُمْ অথবা السَّامُ عَلَيْكَ (তোমার উপর মৃত্যু আসুক)। তাই রসূল (সাঃ) তাদের সালামের উত্তরে কেবল বলতেন, وَعَلَيْكُمْ অথবা وَعَلَيْكَ (আর তোমারদের উপরেও) এবং মুসলিমদেরকেও তাকীদ করলেন যে, আহলে কিতাবদের কেউ তোমাদেরকে সালাম করলে, তোমরা উত্তরে কেবল বলবে, وَعَلَيْكَ। (মুসলিম, আদব অধ্যায়) [৪] অর্থাৎ, তারা আপোসে অথবা মনে মনে বলত যে, যদি মুহাম্মাদ সত্য নবী হত, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের এই জঘন্য আচরণের কারণে আমাদেরকে অবশ্যই পাকড়াও করত। [৫] আল্লাহ বলেন, যদি আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা ও পূর্ণ কৌশলের ভিত্তিতে দুনিয়াতে তাদেরকে সত্বর পাকড়াও না করেন, এ জন্য কি তারা জাহান্নামের আযাব থেকেও বেঁচে যাবে? না, কক্ষনো না। জাহান্নাম তাদের অপেক্ষায় আছে, যাতে তারা প্রবেশ করবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

📘 হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ কর, সে পরামর্শ যেন পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রসূলের বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কে না হয়।[১] তোমরা কল্যাণমূলক কাজ ও আল্লাহভীরুতা অবলম্বনের পরামর্শ কর।[২] আর সেই আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নিকট তোমরা সমবেত হবে। [১] যেমন ইয়াহুদী এবং মুনাফিকদের স্বভাব। এটা ঈমানদারদেরকে তরবিয়ত দান ও তাঁদের চরিত্র গঠনের জন্য বলা হচ্ছে যে, যদি তোমরা তোমাদের ঈমানের দাবীতে সত্য হও, তাহলে তোমাদের কানাকানি ইয়াহুদী এবং মুনাফিকদের মত পাপ ও অন্যায়ের জন্য হওয়া উচিত নয়। [২] অর্থাৎ, যে কাজে মঙ্গলই মঙ্গল আছে, যার বুনিয়াদ হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের উপর। কেননা, এটাই হল কল্যাণমূলক ও আল্লাহভীরুতার কাজ।