🕋 تفسير سورة المطففين
(Al-Mutaffifin) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ
📘 ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়,
وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ
📘 সেদিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যাচারীদের।
الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ
📘 যারা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা মনে করে।
وَمَا يُكَذِّبُ بِهِ إِلَّا كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ
📘 আর সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠ ব্যতীত কেউই ওকে মিথ্যা মনে করে না।
إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ آيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
📘 তার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে সে বলে, এটা তো পূর্বকালীন উপকথা! [১]
[১] অর্থাৎ, তাদের পাপকর্মে অবিচলতা ও সীমালংঘন এত বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে যে, আল্লাহর আয়াত শুনে তার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে তাকে 'পূর্বযুগের উপকথা' বলে থাকে।
كَلَّا ۖ بَلْ ۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
📘 না এটা সত্য নয়; [১] বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে জং ধরিয়ে দিয়েছে। [২]
[১] অর্থাৎ, এই কুরআন কোন কেচ্ছা-কাহিনী নয়; যেমন কাফেররা বলে থাকে। বরং এটা হল আল্লাহর বাণী এবং তাঁর প্রত্যাদেশ যা তদীয় রসূল (সাঃ)-এর উপর জিবরীল (আঃ) মারফৎ অবতীর্ণ করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ, তারা এই কুরআন এবং আল্লাহর অহীর প্রতি ঈমান এই জন্য আনে না যে, গোনাহ করার দরুন তাদের অন্তরে পর্দা পড়ে গেছে এবং জং ধরে গেছে। رين গোনাহর সেই কালিমাকে বলা হয়, যা একাধারে পাপাচরণ করার কারণে অন্তরে ছেয়ে যায়। হাদীসে এসেছে যে, বান্দাহ যখন পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে যায়। যদি সে পাপ থেকে তওবা করে, তাহলে সেই কালো বিন্দু পরিষ্কার হয়ে যায়। আর তওবার পরিবর্তে যদি পাপের পর পাপ করেই যায়, তাহলে সেই কালো বিন্দুটি আরো বৃহৎ আকার ধারণ করে। এমনকি তা তার গোটা অন্তরে ছেয়ে যায়। এটাই হল সেই 'রাইন' যার কথা কুরআন মাজীদে এসেছে।
(তিরমিযী সূরা মুতাফফিফীনের তফসীর পরিচ্ছেদ, ইবনে মাজাহ যুহদ অধ্যায় গোনাহ প্রসঙ্গ পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমাদ ২/২৯৪ )
كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
📘 কক্ষনো না, অবশ্যই তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে। [১]
[১] আর এর বিপরীত ঈমানদারগণ আল্লাহর দর্শন লাভ করবে।
ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِ
📘 অতঃপর নিশ্চয়ই তারা জাহীম (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে;
ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ
📘 তারপর বলা হবে, এটাই তা, যা তোমরা মিথ্যাজ্ঞান করতে।
كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْأَبْرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ
📘 অবশ্যই পুণ্যবানদের আমলনামা ইল্লিয়্যীনে থাকবে। [১]
[১] عليين (ইল্লিয়্যীন) শব্দটি علو থেকে এসেছে। (যার অর্থ মহা উচ্চ।) এটা হল 'সিজ্জীন' শব্দের বিপরীত। এটা আসমানে অথবা জান্নাতে কিংবা সিদরাতুল মুন্তাহায় কিংবা আরশের নিকটবর্তী এক স্থান। যেখানে নেক লোকদের আত্মা এবং তাদের আমল-নামা সংরক্ষিত আছে। যার নিকটে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা উপস্থিত হন।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا عِلِّيُّونَ
📘 কিসে তোমাকে জানাল, ইল্লিয়্যীন কি?
الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ
📘 যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে।
كِتَابٌ مَرْقُومٌ
📘 (তা হচ্ছে) লিপিবদ্ধ পুস্তক।
يَشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُونَ
📘 আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত (ফিরিশতা)গণ তা প্রত্যক্ষ করে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ
📘 পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে ।
عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ
📘 তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে।
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ
📘 তুমি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবে। [১]
[১] যেমন দুনিয়ার ধনবান সুখী ব্যক্তিদের মুখমন্ডলে সাধারণতঃ খুশীর আভা ও সজীবতা প্রকাশ পায়; যা তাদের আরাম, আয়েশ এবং পার্থিব সম্পদ লাভের কারণে হয়ে থাকে এবং যা তাদের মাল-ধনের আধিক্যের ফলেই অর্জন হয়। অনুরূপ জান্নাতে জান্নাতীদের জন্য সম্মান, মর্যাদা এবং নানা প্রকার সুখ-সম্পদের যে আধিক্য হবে তার কারণে তাদের মুখমন্ডলেও তা প্রকাশ পাবে। তাদেরকে তাদের রূপ-সৌন্দর্য, লাবণ্য এবং ঔজ্জ্বল্যে চেনা যাবে যে, তারা জান্নাতী ব্যক্তি।
يُسْقَوْنَ مِنْ رَحِيقٍ مَخْتُومٍ
📘 তাদেরকে মোহর অাঁটা বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে।[১]
[১] رحيق (রাহীক) পরিস্কার, নির্মল ও বিশুদ্ধ শারাবকে বলা হয়; যাতে কোন প্রকার ভেজাল মিশ্রিত থাকবে না। مختوم (মাখতূম) 'মোহরাঙ্কিত' বলে তার বিশুদ্ধতাকে আরো স্পষ্ট করে বয়ান করা হয়েছে। অনেকের নিকট মাখতূমের অর্থ হল মিশ্রিত। অর্থাৎ, শারাবে কস্তুরী মিশানো থাকবে। যার কারণে তার স্বাদে ও গন্ধে অতিরিক্ত উৎকৃষ্টতা ও আমেজ বৃদ্ধি পাবে। কেউ কেউ বলেন, এটি 'খতম' শব্দ হতে এসেছে। অর্থাৎ, তার শেষ ঢোকটি হবে কস্তুরীর সুগন্ধিযুক্ত। কিছু ব্যাখ্যাতা 'খিতাম'-এর অর্থ সুগন্ধি করেছেন। অর্থাৎ, এমন শারাব যার সুগন্ধি হবে কস্তুরীর মত।
(ইবনে কাসীর)
হাদীসেও 'আর-রাহীক্বুল মাখতূম' শব্দ এসেছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, "যে মু'মিন ব্যক্তি কোন পিপাসিত মু'মিনকে (দুনিয়াতে) এক ঢোক পানি পান করাবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে 'আর-রাহীক্বুল মাখতূম' (মোহরাঙ্কিত বিশুদ্ধ শারাব) পান করাবেন। যে কোন ক্ষুধার্ত মু'মিনকে খাবার খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল-মূল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন বিবস্ত্র মু'মিনকে বস্ত্র পরিধান করাবে, তাকে আল্লাহ জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন।
(মুসনাদে আহমাদ ৩/ ১৩-১৪) (হাদীসটি যয়ীফ-সম্পাদক)
خِتَامُهُ مِسْكٌ ۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ
📘 এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। [১]
[১] অর্থাৎ, আমলকারীদেরকে এমন আমলে প্রতিযোগিতা করা উচিত, যার দ্বারা জান্নাত এবং তার নিয়ামত লাভ হয়। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন "এমন সাফল্যের জন্য পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত।"
(সূরা সাফফাত ৩৭:৬১ আয়াত)
وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيمٍ
📘 এর মিশ্রণ হবে তাসনীমের (পানির)। [১]
[১] 'তাসনীম' শব্দের অর্থ হল উচ্চতা। উটের কুঁজ তার শরীর থেকে উঁচু, তাই তাকে 'সিনাম' বলা হয়। কবর উঁচু করাকেও 'তাসনীমুল ক্বুবূর' বলা হয়। ভাবার্থ এটাই হল যে, উক্ত মদিরায় তাসনীম শারাবের মিশ্রণ থাকবে; যা জান্নাতের উঁচু এলাকার এক ঝরনা থেকে প্রবাহিত হবে। আর এটা জান্নাতের সবচেয়ে উত্তম ও উচ্চ পর্যায়ের বিশুদ্ধ শারাব হবে।
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ
📘 এটা একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে।
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا يَضْحَكُونَ
📘 নিশ্চয় যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে নিয়ে উপহাস করত।[১]
[১] অর্থাৎ, পাপীরা তাদেরকে তুচ্ছ ভেবে তাদের সাথে ঠাট্টা-ব্যঙ্গ করত।
وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ
📘 এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। [১]
[১] নেওয়া-দেওয়ার জন্য পৃথক পৃথক মাপার পাত্র রাখা এবং দাঁড়ি মেরে ওজনে কম করা হল বড় জঘন্য একটি চারিত্রিক ব্যাধি। যার পরিণাম দ্বীনে এবং আখেরাতে বরবাদী ছাড়া কিছু নয়। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে, সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে।
(ইবনে মাজাহ ৫০১৯নং, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৬নং)
وَإِذَا مَرُّوا بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ
📘 এবং তারা যখন মুমিনদের নিকট দিয়ে যেত, তখন চোখ টিপে ইশারা করত। [১]
[১] غمز শব্দের অর্থ হল চোখের পলক এবং ভ্রূ দ্বারা ইঙ্গিত করা। অর্থাৎ একে অপরকে নিজ পলক ও ভ্রূ দ্বারা ইঙ্গিত করে তাদেরকে অবজ্ঞা করত এবং তাদের দ্বীনের ব্যাপারে খোঁটা দিত।
وَإِذَا انْقَلَبُوا إِلَىٰ أَهْلِهِمُ انْقَلَبُوا فَكِهِينَ
📘 এবং যখন তারা আপনজনের নিকট ফিরে আসত, তখন তারা ফিরত উৎফুল্ল হয়ে। [১]
[১] অর্থাৎ, ঈমানদারদের কথা উল্লেখ করে খুশীর সাথে মজা নিত এবং আমোদ করত। দ্বিতীয় মর্মার্থ এটাও হতে পারে যে, যখন তারা গৃহে ফিরত, তখন স্বাচ্ছন্দ্য ও অবসর তাদেরকে স্বাগত জানাত এবং যা চাইত, তারা তাই পেয়ে যেত। এ সত্ত্বেও তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ হয়নি; বরং ঈমানদারদের প্রতি ঘৃণাপোষণ এবং হিংসা করাতে অবিচল ছিল।
(ইবনে কাসীর)
وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ
📘 এবং যখন তাদেরকে দেখত, তখন বলত, এরাই তো পথভ্রষ্ট। [১]
[১] তওহীদবাদীরা মুশরিকদের দৃষ্টিতে এবং ঈমানদাররা কাফেরদের দৃষ্টিতে ভ্রষ্ট বলে পরিচিত। এই অবস্থা আজও বিদ্যমান রয়েছে। ভ্রষ্ট বাতিলপন্থীরা নিজেদেরকে হকপন্থী ভাবে এবং আসল হকপন্থীদেরকে ভ্রষ্ট মনে করে। এমনকি পরিপূর্ণরূপে বাতিল ফির্কাও নিজেদের ছাড়া কাউকে মু'মিন বলে না এবং ভাবেও না। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে হিদায়াত করুন।
وَمَا أُرْسِلُوا عَلَيْهِمْ حَافِظِينَ
📘 অথচ তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি! [১]
[১] অর্থাৎ, এই কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর পাহারাদার হিসাবে পাঠানো হয়নি যে, তারা সব সময় মুসলিমদের আমল ও অবস্থা দেখে বেড়াবে এবং তাদের সমালোচনা করতে থাকবে। মোট কথা, তারা যখন এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়, তখন তারা কেন এমন ব্যবহার করে?
فَالْيَوْمَ الَّذِينَ آمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ
📘 আজ তাই মুমিনগণ উপহাস করবে কাফিরদেরকে নিয়ে। [১]
[১] অর্থাৎ, যেমন দুনিয়াতে কাফেররা মুসলিমদেরকে নিয়ে হাসি-মজাক ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তেমনি কিয়ামতের দিন যখন তারা আল্লাহর কবলে এসে যাবে, তখন মু'মিনরা তাদেরকে নিয়ে হাসতে থাকবে। তাদের হাসি এই জন্য হবে যে, এরা নিজেরা ভ্রষ্ট হওয়ার সত্ত্বেও আমাদের ভ্রষ্ট বলত এবং উপহাস করত। এখন তারা বুঝে নিয়েছে যে, কারা ভ্রষ্ট ছিল? আর কারা উপহাসের পাত্র ছিল?
عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ
📘 সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে।
هَلْ ثُوِّبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
📘 কাফিররা যা করত, তার ফল তারা পেল তো? [১]
[১] أثيب ثوِّب এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে, তার মানেঃ প্রতিফল দেওয়া হল। অর্থাৎ, কাফেররা যা করত, তার প্রতিফল তাদেরকে দেওয়া হল তো?
أَلَا يَظُنُّ أُولَٰئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوثُونَ
📘 তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।
لِيَوْمٍ عَظِيمٍ
📘 এক মহা দিবসে;
يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
📘 যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের সম্মুখে।[১]
[১] যারা দাঁড়ি মারে তারা কি ভয় করে না যে, একদিন ভয়ঙ্কর দিন আপতিত হবে। যেদিন সমস্ত মানুষ সারা জাহানের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে; যিনি সমস্ত গোপন কথা সম্পর্কে অবগত আছেন? অর্থ এই দাঁড়াল যে, এ কর্ম সেই লোকেরাই করে থাকে, যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও কিয়ামতের শঙ্কা নেই। একাধিক হাদীসে এসেছে যে, যখন মানুষ প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে, তখন তাদের ঘাম অর্ধেক কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
(সহীহ বুখারী মুত্বাফফিফীনের তাফসীর পরিচ্ছেদ)
এক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, কিয়ামতের দিন সূর্য সৃষ্টির এত নিকটবর্তী হবে যে, মাত্র এক মীল দূরত্বে থাকবে। হাদীসের বর্ণনাকারী সুলাইম বিন আমের (রাঃ) বলেন, 'আমি জানি না যে, নবী (সাঃ) 'মীল' বলে রাস্তার পরিমাপ বুঝিয়েছেন, নাকি সুর্মাকাঠি, যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয় তা বুঝিয়েছেন।' মোট কথা, মানুষ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবে থাকবে। এই ঘাম কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত পৌঁছবে। আবার কারো জন্য তা লাগাম হবে; অর্থাৎ, তার মুখমন্ডল পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে যাবে।
(সহীহ মুসলিম কিয়ামত ও জান্নাতের বিবরণ অধ্যায় কিয়ামতের বিবরণ পরিচ্ছেদ)
كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ
📘 না, কখনই না, পাপাচারীদের আমলনামা নিশ্চয়ই সিজ্জীনে থাকবে। [১]
[১] سجين (সিজ্জীন): কেউ কেউ বলেন, এর উৎপত্তি سجن শব্দ থেকে; যার মানে জেলখানা। উদ্দেশ্য হল, জেলখানার মত একটি অতি সংকীর্ণ জায়গা। আর কেউ কেউ বলেন, এটি ভূগর্ভের সব থেকে নিচের অংশে একটি জায়গার নাম; যেখানে কাফের, অত্যাচারী এবং মুশরিকদের আত্মা এবং তাদের আমল-নামা জমা ও সংরক্ষিত থাকে। এই জন্য তাকে 'লিপিবদ্ধ পুস্তক' বলে অভিহিত করা হয়েছে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا سِجِّينٌ
📘 কিসে তোমাকে জানাল, সিজ্জীন কি?
كِتَابٌ مَرْقُومٌ
📘 ওটা হচ্ছে লিপিবদ্ধ পুস্তক।