slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الأحزاب

(Al-Ahzab) • المصدر: BN-TAFISR-FATHUL-MAJID

إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

📘 ৩৫ নং আয়াতের তাফসীর: শানে নযূল: উম্মে আম্মারাহ আল আনসারী (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন: (কুরআনে) যা কিছু বলা হয় শুধুমাত্র পুরুষদের সম্পর্কেই বলা হয় মহিলাদের উদ্দেশ্যে কিছুই বলা হয় না বা আলোচনা করা হয় না। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়। (তিরমিযী হা: ৩২১১, সহীহ) উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামাহ (رضي الله عنها) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদের কথা উলে¬খ করেছেন, আর আমাদের কথা আলোচনা করা হয়নি কেন? উম্মে সালামাহ (رضي الله عنها) বলেন: একদিন আমি আমার ঘরে বসে থাকা অবস্থায় মিম্বর হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শব্দ শুনতে পেলাম। ঐ সময় তিনি মিম্বরে এ আয়াতটি পাঠ করলেন অর্থাৎ এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (নাসায়ী হা: ১১৪০৫) এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের ১১টি গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। যারা এসব গুণে গুণান্বিত হবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। ইসলাম নারীদের সৎ আমল ও পুরুষের সৎ আমলের প্রতিদানের মাঝে কোন পার্থক্য করেনি। বরং উভয়ের প্রতিদান সমান করে দিয়েছেন। الْقَانِتِيْنَ শব্দের অর্থ হল শান্তভাবে আনুগত্য করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَا۬ءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا يَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَيَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّه۪ ط قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ ط إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُوا الْأَلْبَابِ)‏ “তারা কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে ব্যক্তি রাতে সিজদারত অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে ‘ইবাদত করে’ আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে? তুমি বল! যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? জ্ঞানবান লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা যুমার ৩৯:৯) “صادقين” অর্থাৎ কথা বলার সময় সত্য কথা বলা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা অবশ্যই সত্য কথা বলবে: কেননা সত্য কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন করে। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে পথ প্রদর্শন করে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬০৭) (وَالذّٰكِرِيْنَ اللّٰهَ كَثِيْرًا) অধিক পরিমাণে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করার নির্দেশ এবং তার যৌক্তিকতা ও তাৎপর্য: কুরআনুল কারীমের একাধিক স্থানে আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের কথা বলা হয়েছে। কখনো যিকিরের নির্দেশ, কখনো উৎসাহ, কখনো যিকিরকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন, কখনো আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে স্মরণ করেন বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; সর্বোত্তম সম্পদ হলন কৃতজ্ঞ আত্মা, আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে এমন জিহ্বা এবং এমন মু’মিন স্ত্রী যে ঈমানে সহযোগিতা করে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২৩৯২) তাছাড়া যাবতীয় ইবাদতের মধ্যে যিকির অধিকতর সহজ। এটা আদায় করতে অন্যান্য ইবাদতের মত শরীয়ত তেমন কোন শর্তারোপ করেনি। অযুসহ বা বিনা অযুতে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে সব সময় আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে পারা যায়। তবে কিভাবে করতে হবে তা সূরা সামনে বর্ণনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং প্রত্যেক মু’মিনের এসব গুণে গুণান্বিত হওয়া উচিত। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলেই সমান, কারো মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

📘 ৩৬ নং আয়াতের তাফসীর: শানে নুযূল: ইবনে জারীর আত-তাবারী সহীহ সনদে কাতাদাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যয়নব বিনতে জাহশ -কে যায়েদ বিন হারেসা (রাঃ)-এর জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন: আমি মনে করলাম যে, তিনি তাকে তাঁর নিজের বিবাহের জন্য প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু যয়নব যখন জানতে পারলেন যে, যায়েদের জন্য এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তখন যয়নব (রাঃ) এ প্রস্তাব অস্বীকার করলেন। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়। (কুরতুবী, লুবানুন নুকুল ফী আসবাবে নুযুল:পৃঃ ২২২) এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলছেন, তারা কখনো আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলের ফয়সালার অবাধ্য হয় না এবং এটা তাদের উচিতও না। আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিধান পাওয়া মাত্রই সাথে সাথে তা আমলে পরিণত করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰي يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْٓ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا) “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবদমান বিষয়াদির বিচারভার তোমার ওপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে তা মেনে না নেয়।” (সূরা নিসা ৪:৬৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: (فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِه۪ٓ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ) “সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের ওপর পতিত হবে অথবা পতিত হবে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি‎।” (সূরা নূর ২৪:৬৩) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি যা নিয়ে এসেছি তার প্রবৃত্তি সে অনুগামী হয়।” (সরহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা: ১৬৭) সুতরাং দল, তরীকা ও মাযহাবের দোহাই দিয়ে কোন অবস্থাতেই আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ফয়সালার অবাধ্য হওয়া যাবে না। বরং প্রত্যেক মু’মিন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের ফয়সালা মাথা পেতে মেনে নিবে এবং সাথে সাথে তা পালন করবে। কারণ যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অমান্য করবে তারা প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলের বিধান ও ফয়সালা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে। ২. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের ওপর কোন কথা বলা যাবে না। ৩. আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশের অবাধ্য হওয়া সুস্পষ্ট কুফরী।

وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا

📘 ৩৭ নং আয়াতের তাফসীর: শানে নুযূল: আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত (وَتُخْفِيْ فِيْ نَفْسِكَ مَا اللّٰهُ مُبْدِيْهِ) -এ আয়াতটি যয়নব বিনতে জাহাশ ও যায়েদ বিন হারেসার ব্যাপারে নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮৭, সহীহ মুসলিম হা: ৮৬, ১৪২৮) উক্ত আয়াতে “যার প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও অনুগ্রহ করেছেন” বলে উল্লেখ করা হয়েছে সে ব্যক্তিটি হল রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পালক পুত্র যায়েদ বিন হারেসা। সেই অনুগ্রহ ছিল এই যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দীন ইসলাম গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। তার প্রতি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুগ্রহ ছিল এই যে, তিনি তাকে দীনি তরবিয়ত দান করেন ও তাকে স্বাধীন করে পুত্র বানিয়ে নেন এবং আপন ফুফু উমাইয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিবের মেয়ের সাথে বিবাহ দেন। “مبديه” যে বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন সেটি হল, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যয়নবকে পুনরায় বিবাহ দেবেন। (فَلَمَّا قَضٰي زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا....) যখন যয়নবের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিলেন। হাদীসে এসেছে, আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন যয়নব তার ইদ্দত পূর্ণ করল তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়েদ বিন হারেসাকে বললেন: তুমি যাও এবং তাকে আমার ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দাও অর্থাৎ আমার বিবাহের প্রস্তাব পৌঁছে দাও যায়েদ তার নিকট গেল, যখন তিনি আটা খামীর করছিলেন। যায়েদ বলেন: যখন আমি তাকে দেখলাম তখন তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আমার ওপর এমনভাবে প্রাধান্য পেয়ে গেল যে, আমি তার দিকে তাকিয়ে কথা বলব, এমন সামর্থ্য ছিল না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। বরং আমি মুখ ফিরিয়ে বসলাম এবং তাকে বললাম, তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন। যয়নব বলল: আমি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ছাড়া কিছুই করব না। তখন তিনি সালাতে দাঁড়ালেন, এদিকে কুরআন নাযিল হয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গৃহে তার অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করলেন। (মুসনাদ আহমাদ হা: ১৯৫-১৯৬, নাসায়ী হা: ১১৪১০, সহীহ) অন্য এক হাদীসে রয়েছে যে, আনাস হতে বর্ণিত, যয়নব (رضي الله عنها) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্যান্য স্ত্রীদের কাছে গর্ব করে বলতেন, তোমাদের বিবাহ দিয়েছেন তোমাদের পরিবার। আর আমার বিবাহ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা সপ্তম আকাশের ওপর থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪২০) এ বিবাহ দেয়ার সবচেয়ে বড় একটি কারণ আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, যাতে করে মানুষেরা এটা মনে করা থেকে বিরত থাকে যে, পোষ্য-পুত্রদের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয়। যেমনটি জাহেলী যুগে চালু ছিল। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেন যে, পোষ্য-পুত্রদের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা বৈধ, এরা আপন ছেলেদের মত নয়। আল্লাহ তা‘আলা: (وَحَلَآئِلُ أَبْنَآئِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ لا وَأَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ط إِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا)‏ “তোমাদের ঔরসজাত পুত্রবধুকে এবং দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করাও হারাম করা হয়েছে। তবে আগে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।” (সূরা নিসা ৪:২৩) আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. মানুষের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করতে হবে, কঠোর হওয়া যাবে না। তবে কারণবশত সেটি ভিন্ন কথা। ২. সদা-সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকেই ভয় করা উচিত। আর আল্লাহ তা‘আলাই এ ব্যাপারে অধিক হকদার। ৩. ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কোন তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে বিবাহ করা যাবে না। ৪. পোষ্যপুত্রদের স্ত্রীদের বিবাহ করা বৈধ, তাই তাদের সাথে পর্দা করে চলা ওয়াজিব।

مَا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِنْ حَرَجٍ فِيمَا فَرَضَ اللَّهُ لَهُ ۖ سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَقْدُورًا

📘 ৩৮ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতে মূলত মুনাফিকদের কথার উত্তর দেয়া হয়েছে যে, তারা বলত: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পোষ্যপুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন। তাদের এ কথার প্রতিবাদ স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, এতে কোনই দোষ নেই বরং এটি আল্লাহ তা‘আলার একটি বিধান। এ বিধান পূর্বের নাবীদের ওপরও ছিল।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا ۖ فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا

📘 ৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বে যায়েদ কর্তৃক যায়নাবকে তালাক দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যায়েদ ও যায়নাবের দৈহিক মিলন হয়েছিল। যায়নাবের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ আয়াতে বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রীর বিধান কী হবে সে কথাই আলোচনা করা হয়েছে। বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালন করতে হবে না। সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে যে শ্রেণির তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালনের কথা বলা হয়েছে তা থেকে এ শ্রেণির নারী ভিন্ন। যা এ আয়াত থেকে স্পষ্টই বুঝা যায়। এমতাবস্থায় সে চাইলে কোন প্রকার ইদ্দত ছাড়াই অন্য স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে যদি বিবাহের পর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে ঐ স্ত্রীকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতেই হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّعَشْرًا) “আর তোমাদের মধ্যে স্ত্রী রেখে যারা মারা যায় তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৪) এক্ষেত্রে আরো একটি বিধান হল যে, বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দেয় তাহলে স্ত্রী তার নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَإِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّآ أَنْ يَّعْفُوْنَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِيْ بِيَدِه۪ عُقْدَةُ النِّكَاحِ) “আর যদি তোমরা তাদের মাহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও তবে যা নির্ধারণ করেছ তার অর্ধেক (স্ত্রী) পাবে। তবে যদি তারা ক্ষমা করে অথবা যার হাতে বিয়ের বন্ধন সে ক্ষমা করে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৭) আর যদি মাহর নির্ধারণ না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধ্যানুসারে তাদেরকে কিছু অর্থ সামগ্রী দিয়ে দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (لَا جُنَاحَ عَلَیْکُمْ اِنْ طَلَّقْتُمُ النِّسَا۬ئَ مَا لَمْ تَمَسُّوْھُنَّ اَوْ تَفْرِضُوْا لَھُنَّ فَرِیْضَةًﺊ وَّمَتِّعُوْھُنَّﺆ عَلَی الْمُوْسِعِ قَدَرُھ۫ وَعَلَی الْمُقْتِرِ قَدَرُھ۫ﺆ مَتَاعًۭا بِالْمَعْرُوْفِﺆ حَقًّا عَلَی الْمُحْسِنِیْنَﰻ) “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করার আগে এবং তাদের জন্য মাহর ধার্য করার আেেগ যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমরা তাদের কিছু খরচ দেবে, ধনীরা তাদের সাধ্যমত দেবে এবং গরীবরাও তাদের সাধ্য অনুযায়ী দেবে। ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ প্রদান করা সৎ কর্মশীলদের ওপর দায়িত্ব।” (সূরা বাকারাহ ২:২৩৬) হাদীসে এসেছে, সাহল বিন সা‘দ ও আবী উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমুনাহ বিনতে শারাহীল -কে বিবাহ করলেন। অতঃপর সে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল তখন তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। কিন্তু সে যেন এটা অপছন্দ করল। তখন তিনি আবূ উসাইদ (রাঃ)-কে হুকুম করলেন যে, তার বিদায়ের সামান তৈরী করে দেয়া হোক এবং মূল্যবান দু‘খানা কাপড় তাকে পরিয়ে দেয়া হোক। (সহীহ বুখারী হা: ৫২৫৬-৭) কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে, ইজ্জত ও সম্মানের সাথে কিছু দিয়ে বিদায় করে দেয়াটাই হচ্ছে সৌজন্যর সাথে বিদায় করে দেয়া। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না, তবে যদি স্বামী মারা যায় তাহলে চার মাস দশদিন তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। ২. দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রী নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে। আর যদি মাহর নির্ধারিত না হয় তাহলে সাধ্যানুসারে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়ে দেবে।

لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِنْ بَعْدُ وَلَا أَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَقِيبًا

📘 ৫২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের মাঝে পালা ভাগ না করার এখতিয়ার দেয়ার পর যখন তাঁর স্ত্রীরা দুনিয়াবী সকল প্রকার আরাম-আয়েশের পরিবর্তে সন্তুষ্ট চিত্তে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বসবাস করাকে পছন্দ করেছিলেন তখন তাদের এ কর্মের বদৌলতে তাদের মর্যাদা এভাবে দিলেন যে, অত্র আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদ্যমান স্ত্রীগণ ছাড়া অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করা বা তাদের কাউকে তালাক দিয়ে তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিবাহ করতে নিষেধ করে দিলেন। অবশ্য পরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আর কোন বিবাহ করেননি (ইবনে কাসীর)। তবে দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। তিনি চাইলে আরো দাসী গ্রহণ করতে পারেন। এ ব্যাপারে তাঁকে নিষেধ করা হয়নি। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর সন্তুষ্ট হলে উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়।

لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ ۗ وَاتَّقِينَ اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا

📘 ৫৫ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বে পর্দার বিধান আলোচনা করার পর এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদের সাথে দেখা করা শরীয়তসম্মত। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর মু’মিন নারীদেরকে বল:‎ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী (সংযত) করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা মুক্ত নিষ্কাম পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদ না ফেলে। হে মু’মিগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সূরা নূর ২৪:৩১) যখন পর্দার আয়াত নাযিল হয় তখন বাবা, সন্তান ও নিকটাত্মীয়গণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন আমাদেরও কি পর্দার আড়াল থেকে কথা বলতে হবে? তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (কুরতুবী) আয়াতে যে সকল পুরুষদের সাথে দেখা করা বৈধ তাদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু তাতে চাচা ও খালুর কথা উল্লেখ করা হয়নি। উত্তর হল চাচা ও খালুর বিধান পিতার মতই, তাই উল্লেখ করা হয়নি। এ সম্পর্কে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

📘 ৫৬ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঐ সম্মান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে যা আসমানে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ফেরেশতাদের নিকট বিদ্যমান। তা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের নিকট নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মান ও প্রশংসা করেন এবং তাঁর ওপর রহমত বর্ষণ করেন। আর ফেরেশতাগণও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদার জন্য দু‘আ করেন। তার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ববাসীকে আদেশ করছেন তারাও যেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে। যাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রশংসায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয় জগৎ একত্রিত হয়ে যায়। আবুল আলিয়া  বলেন: (নাবীর প্রতি) আল্লাহ তা‘আলার সালাত হলো: ফেরেশতাদের কাছে তাঁর প্রশংসা করা। আর ফেরেশতাদের সালাত হলো: নাবীর জন্য দু’আ করা। (সহীহ বূখারী, অত্র আয়াতের তাফসীর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পড়ার জন্য উম্মাতের প্রতি তাঁর নির্দেশ ও পদ্ধতি: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতকে দরূদ পড়ার ব্যাপারে অনেক জায়গায় নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে মুতাওতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো কা‘ব বিন উজরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: বলা হলো হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! আপনাকে কিভাবে সালাম দেব তা জানতে পারলাম। কিন্তু সালাত কিভাবে পড়ব? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরূদে ইবরাহীমের কথা বললেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৯৭) এছাড়াও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাতে শব্দের একটু ভিন্নতা পাওয়া যায়। তবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার উত্তম শব্দ ও দরূদ হলো দরূদে ইবরাহীম। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কিছু দরূদ পাওয়া যায় যেমন ’’يا نبي سلام عليك يا حبيب سلام عليك‘‘ এগুলোর কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নেই। এগুলো একশ্রেণির নামধারী তথাকথিত আলেম নামক ধর্মব্যবসায়ীদের তৈরি করা কথা। তাই চার রাকাতবিশিষ্ট সালাতের উভয় বৈঠকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) তাছাড়া আযান শেষে, মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পূর্বে, জানাযার সালাতে, ঈদের সালাতে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে কিছু চেয়ে দু‘আ করার শেষে ও কবর যিয়ারতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার পদ্ধতি: পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা যায় এবং সে দরূদ আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছে দেন। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ; তোমরা আমার কবরকে অনুষ্ঠানের জায়গা বানিয়ে নিও না এবং তোমাদের বাড়ি ঘরকে কবর বানিয়ে নিও না, আর তোমরা আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ কর। তোমরা যেখান থেকেই আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। (আবূ দাঊদ হা: ২০৪২, সনদ সহীহ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জমিনে আল্লাহ তা‘আলার কতগুলো ভ্রাম্যমান ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেয়। (আহমাদ ১/৪৪১, নাসায়ী হা: ১২৮১, সনদ সহীহ) অতএব নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম ও তাঁর প্রতি দরূদ প্রেরণের জন্য পাখি হয়ে মদীনাতে যেতে হবে না এবং কোন হাজী সাহেবকেও বলে দিতে হবে না যে, আমার সালাম নাবীর রওজায় পৌঁছে দেবেন। বরং পৃথিবীর যেখান থেকেই দরূদ পাঠ করা হোক না কেন তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছে যাবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার ফযীলত ও না পাঠ করলে অপরাধ: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। (সহীহ মুসলিম ১/৩০৬, আবূ দাঊদ হা: ১৫৩০) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোয় ধূসরিত হোক, যে ব্যক্তির নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: الْبَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ، ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ সে ব্যক্তি কৃপণ যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ১৭৩৬, সহীহ) সুতরাং যে কোন আমল সুন্নাতী তরীকায় আদায় করলে তার নেকীর আশা করা যায়, অন্যথায় তার কোন নেকী পাওয়ার আশা করা যায় না বরং পাপের ভাগী হতে হবে। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে জানা গেল। ২. স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা এবং ফেরেশতারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করেন। ৩. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করে না সে হল বড় কৃপণ। ৪. সুন্নাতী দরূদ পাঠ করতে হবে, কোন প্রকার বিদ‘আতী দরূপ পাঠ করা যাবে না।

النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ ۖ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ۗ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ إِلَّا أَنْ تَفْعَلُوا إِلَىٰ أَوْلِيَائِكُمْ مَعْرُوفًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا

📘 ৬ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা দিচ্ছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’মিনদের নিজেদের অপেক্ষা তাদের নিকট অধিক ঘনিষ্ঠতর। তাদের নিজেদের চেয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জন্য অধিক কল্যাণকামী, এবং তাদের প্রতি স্নেহপরায়ণ। মানুষ নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমার ও আমার উম্মাতের দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির ন্যায়-যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল, ফলে কীট-পতঙ্গ তাতে এসে পড়তে লাগল, তোমরাও আগুনে পড়তেছিলে, আর আমি তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছিলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪২৭, সহীহ মুসলিম হা: ২২৮৪) সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন বিষয়ে তাদেরকে যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই তাদেরকে মনে নিতে হবে। কোন প্রকার দ্বিমত পোষণ করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰي يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْٓ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا)‏ “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের মধ্যে বিবদমান বিষয়ের বিচারভার তোমার ওপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে তা মেনে না নেয়।” (সূরা নিসা ৪:৬৫) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার নিজের থেকে, তার সম্পদ থেকে, তার সন্তান-সন্ততি থেকে এবং সমস্ত জিনিস থেকে অধিক প্রিয় না হই। (সহীহ বুখারী হা: ১৫) উমার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ তা‘আলার শপথ আপনি আমার নিকট সকল জিনিস থেকে বেশি প্রিয়। কিন্তু নিজের জীবনের চেয়ে বেশি নন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হে উমার! তোমরা জীবন থেকেও আমাকে বেশি না ভালবাসা পর্যন্ত তুমি মু’মিন হতে পারবে ন। তখন উমার (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আমার নিকট সকল জিনিস থেকে প্রিয় এমনকি নিজের জীবন থেকেও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এখন তুমি মু’মিন হয়েছো। (সহীহ বুখারী হা: ৬৬৩২) ইমাম বুখারী (رحمه الله) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন: আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দুনিয়া ও পরকালে সমস্ত মানুষের চেয়ে মু’মিনের জন্য আমিই ঘনিষ্ঠতম। তোমরা ইচ্ছা করলে: (اَلنَّبِيُّ أَوْلٰي بِالْمُؤْمِنِيْنَ) এ আয়াতটি পড়তে পার। সুতরাং কোন মু’মিন ব্যক্তি যদি সম্পদ রেখে মৃত্যু বরণ করে তাহলে তার হকদার হবে তার উত্তরাধিকারীরা। আর যদি কোন মু’মিন ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তানাদি রেখে মারা যায় তাহলে সে যেন আমার কাছেই আসে, আমি তার অভিভাবক। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮১, সহীহ মুসলিম হা: ১৬১৯) এরপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের বিধান দিয়ে বলেন, নাবীপত্মীগণ মু’মিনদের মাতৃতুল্য। আর এ মাতৃতুল্য হল হুরমাত ও সম্মানের ক্ষেত্রে; জন্মদাতা মাতা হিসেবে নয়, তাদেরকে বিবাহ করা হারাম এবং তাদের সাথে পর্দা করা ওয়াজিব যেমন অত্র সূরার ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’মিনদের পিতৃতুল্য। যেমন হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি তোমাদের জন্য তোমাদের পিতাদের স্থলাভিষিক্ত আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছি যে, তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে কিবলার দিকে যেন মুখ এবং পিঠ না করে বসে। ডান হাতে যেন ঢিলা ব্যবহার না করে এবং ডান হাতে যেন ইসতিনজাও না করে। (আবূ দাঊদ হা: ৮, নাসায়ী হা: ৪০, ইবনু মাযাহ হা: ৩১৩, সহীহ) তবে এ পিতা ধর্মীয় দিক দিয়ে পিতা, জন্মদাতা হিসেবে নয়। কেননা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন পুরুষের পিতা নন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ ط وَكَانَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا) “মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং তিনি আল্লহর রাসূল এবং সর্বশেষ নাবী। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব ৩৩:৪০) সুতরাং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধর্মীয় দিক দিয়ে মু’মিনদের পিতা এবং তাঁর স্ত্রীগণ হলেন মাতা। তারা প্রকৃত জন্মদাতা পিতা-মাতা নন। তাই তাদের কন্যাদেরকে বিবাহ করা বৈধ। (وَأُولُوا الْأَرْحَامِ) এখানে মূলত ইসলামের প্রথম যুগে যে বিধান কার্যকর ছিল সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মুহাজিরগণ কোন প্রকার বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিরেকেই আনসারদের মৃত্যুর পর তাদের সম্পত্তির ওয়ারিশ হত। আর এদিক দিয়ে তারা ছিল একে অপরের খুবই নিকটাত্মীয়। কিন্তু পরবর্তীতে মিরাসের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর এ বিধান বাতিল হয়ে যায়। তবে একটি পথ খোলা থাকে, তা হল কেউ যদি কাউকে সাহায্য, অনুগ্রহ বা সহযোগিতা, সদাচরণবশত কিছু দিতে চায় তাহলে অসিয়তের মাধ্যমে দিতে পারবে। এ সম্পর্কে সূরা আনফালের শেষ আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সকল জিনিস থেকে এমনকি নিজের জীবন থেকেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বেশি ভালবাসতে হবে। অন্যথায় মু’মিন হওয়া যাবে না। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা। ২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে মায়ের মত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ৪. কেউ যদি কাউকে সাহায্য করণার্থে তার সম্পত্তি থেকে কিছু দিতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে ওয়ারিশ ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে অসিয়ত করতে পারবে। কিন্তু ওয়ারীশদের ক্ষেত্রে অসিয়ত গ্রহণ যোগ্য হবে না। ৫. একজন মু’মিন ব্যক্তি অন্য মু’মিনকে নিজের নিকটাত্মীয়দের মত এমনকি নিজের ভাইয়ের মত মনে করতে হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَىٰ فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا ۚ وَكَانَ عِنْدَ اللَّهِ وَجِيهًا

📘 ৬৯ নং আয়াতের তাফসীর: কাফির-মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে যেভাবে কষ্ট দিত আল্লাহ তা‘আলা মুু‘মিনদেরকে নিষেধ করছেন তারাও যেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট না দেয়। তারা মূসা (عليه السلام)-কে কষ্ট দিয়েছিল, তোমরাও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দিওনা। মূসা (عليه السلام)-এর উম্মাতেরা যেভাবে তাকে কষ্ট দিয়েছিল তার বর্ণনা হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মূসা (عليه السلام) ছিলেন একজন লজ্জাশীল লোক। তাঁর লজ্জার কারণে তাঁর শরীরের কোন অংশ কারো সামনে খুলতেন না। ফলে বানী ইসরাঈলের লোকেরা তাকে কষ্ট দিতে লাগল। তারা বলল: সম্ভবত তাঁর শরীরে ধবল রোগ বা ঐ ধরনের কোন খুঁত আছে, তাঁর অন্ডকোষদ্বয় বড় ইত্যাদি। তখন আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলেন তাঁকে এ সকল দোষ থেকে মুক্ত করবেন যা তারা মূসার ব্যাপারে বলছিল। একদা মূসা (عليه السلام) নির্জনে কাপড় খুলে পাথরের ওপর রেখে একাকী গোসল করতে লাগলেন। গোসল শেষে মূসা কাপড় নেয়ার জন্য আসলেন, এদিকে পাথর তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা তাঁর লাঠি নিয়ে পাথরের পিছন পিছন ছুটলেন এবং তিনি কাপড় কাপড় বলে পাথরকে ডাকতে লাগলেন। অবশেষে পাথর বানী ইসরাঈলের এক জনসভায় এসে থামল। তারা মূসা (عليه السلام)-কে উলঙ্গ অবস্থায় দেখল এবং তারা যে সন্দেহ করেছিল তা হতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে মুক্ত করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪০৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৫৬)