🕋 تفسير سورة إبراهيم
(Ibrahim) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
📘 Please check ayah 14:3 for complete tafsir.
۞ قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِي اللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى ۚ قَالُوا إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا تُرِيدُونَ أَنْ تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 14:12 for complete tafsir.
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِنْ نَحْنُ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَمَا كَانَ لَنَا أَنْ نَأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
📘 Please check ayah 14:12 for complete tafsir.
وَمَا لَنَا أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا ۚ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَىٰ مَا آذَيْتُمُونَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ
📘 ১০-১২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা এখানে রাসূলদের এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের কাফিরদের কথাবার্তা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন। তাঁদের কওম আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবাদে রাসূলগণ তাদেরকে বলেনঃ ‘আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে সন্দেহ? অর্থাৎ তার অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ কেমন? স্বভাব ও প্রকৃতি তো তার অস্তিত্বের ন্যায় সাক্ষী! মানুষের বুনিয়াদের মধ্যে তার অস্তিত্বের স্বীকারোক্তি বিদ্যমান। সুস্থির বিবেক তার অস্তিত্ব মানতে বাধ্য। আচ্ছা, যদি দলীল ছাড়া শান্তি না পাও তবে চিন্তা করে দেখ তো এই আসমান ও যমীন কিরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোন কিছুর অস্তিত্বের জন্যে ওকে অস্তিত্বে আনয়নকারী মওজুদ থাকা জরুরী। তাহলে যিনি এই আসমান ও যমীনকে বিনা নমুনায় সৃষ্টি করেছেন তিনিই হচ্ছেন এক ও অংশীবিহীন আল্লাহ। এই জগতটা নতুন, অনুগত ও সৃষ্ট হওয়া প্রকাশমান। এর দ্বারা কি এই মোটা ও সহজ কথাটি বুঝে আসে না যে, এর কারিগর এবং এর সৃষ্টিকর্তা একজন রয়েছেন? আর তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। তিনিই হচ্ছেন প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিকর্তা মালিক ও প্রকৃত উপাস্য। তাঁর উলুহিয়্যাত ও একত্ববাদে তোমাদের সন্দেহ রয়েছে কি? যখন সমস্ত প্রাণী, জীবজন্তু এবং বস্তুর সৃষ্টিকর্তা ও আবিস্কারক তিনিই, তখন একমাত্র তিনিই ইবাদতের যোগ্য হবেন না কেন? অধিকাংশ উম্মতই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বীকারকারী ছিল। তারা অন্যদের যে, ইবাদত করতো তা শুধু মাধ্যম মনে করে যে, তাদের মাধ্যমেই তারা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করবে। এ জন্যে আল্লাহর রাসূলগণ তাদেরকে ঐ সব দেবতার ইবাদত করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাঁর দিকে আহবান করছেন যে, তিনি পরকালে তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ। দিবেন। প্রত্যেক মর্যাদাবানকে তিনি মর্যাদা দান করবেন।” তখন তাঁদের উম্মতগণ প্রথম পর্যায়টা মেনে নেয়ার পর জবাব দেয়ঃ “আমরা তোমাদের রিসালতকে কি করে মেনে নিতে পারি? তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ। আচ্ছা,যদি তোমরা তোমাদের কথায় সত্যবাদীই হও তবে বড় রকমের মু'জিযা আমাদের সামনে পেশ কর যা মানবীয় শক্তির বাইরে?” তাদের এ কথার জবাবে রাসূলগণ বললেনঃ “এ কথা তো সত্যই যে, আমরা তোমাদের মতই মানুষ। তবে রিসালাত ও নুবওয়ত আল্লাহর একটা দান। তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করে থাকেন। মানুষ হওয়াটা রিসালতের প্রতিকূল নয়। আর যে জিনিস তোমরা আমাদের কাছে দেখতে চাচ্ছ সে সম্পর্কেও জেনে রেখো যে, ওটা আমাদের অধিকার বা ক্ষমতার জিনিস নয়। তবে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো। যদি তিনি আমাদের প্রার্থনা কবুল করেন তবে আমরা অবশ্যই তা তোমাদের দেখাবো। মুমিনরা তো প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলার উপরই ভরসা করে থাকে। আর বিশেষ করে আমরা তাঁর উপর খুব বেশী ভরসা করি। কেননা, তিনি আমাদেরকে সমস্ত পথের মধ্যে সর্বোত্তম পথের সন্ধান দিয়েছেন। তোমরা যত পার আমাদেরকে কষ্ট দিতে থাকো, কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমাদের হাত থেকে ভরসার অঞ্চল ছুটে যাবে না। ভরসাকারী দলের জন্যে আল্লাহ তাআলার ভরসাই যথেষ্ট।”
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا ۖ فَأَوْحَىٰ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ
📘 Please check ayah 14:17 for complete tafsir.
وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِهِمْ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِي وَخَافَ وَعِيدِ
📘 Please check ayah 14:17 for complete tafsir.
وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
📘 Please check ayah 14:17 for complete tafsir.
مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ
📘 Please check ayah 14:17 for complete tafsir.
يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
📘 ১৩-১৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল তখন নবীদেরকে ধমক দিতে ও ভয় দেখাতে লাগলো যে, তাদেরকে তারা দেশ থেকে তাড়িয়ে দিবে। হযরত শুআইবের (আঃ) কওমও তাদের নবী ও মুমিনদের এ কথাই বলেছিলঃ “আমরা তোমাদের বাসভূমি হতে বের করে দিবো।' হযরত লূতের (আঃ) সম্প্রদায়ও অনুরূপ কথাই বলেছিলঃ ‘নূত (আঃ) ও তার অনুসারীদেরকে তোমাদের গ্রাম থেকে বের করে দাও। কুরাইশ মুশরিকরাও এইরূপই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং বলেছিলঃ ‘তাকে বন্দীকর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে বের করে দাও। তাদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করবার চুড়ান্ত চেষ্টা করেছিল তোমাকে সেথা হতে বহিষ্কার করবার জন্যে; তা হলে তোমার পর তারাও সেথায় অল্পকাল টিকে থাকতো।” (১৭:৭৪)।আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন কাফিরগণ চক্রান্ত করে তোমাকে বন্দী করার অথবা হত্যা করার এবং দেশে হতে) বের করে দেয়ার, তারা চক্রান্ত করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেন আর আল্লাহ চক্রান্তের উত্তম প্রতিফল প্রদানকারী।” (৮:৩০) তিনি স্বীয় নবীকে (সঃ) নিরাপদে মক্কায় পৌছিয়ে দিলেন। মদীনাবাসীকে তাঁর আনসার বা সাহায্যকারী বানিয়ে দিলেন। তাঁরা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তভূক্ত হয়ে তাঁর পতাকা তলে এসে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে উন্নতি দান করেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কাও জয় করে নেন। ফলে এখন দ্বীনের দুশমনদের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায় এবং তাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে যায়। লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং আল্লাহর কালেমা এবং তার দ্বীন অল্প সময়ের মধ্যে পূর্বে ও পশ্চিমে সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “রাসূলদের কাছে তাদের প্রতিপালক ওয়াহী করলেনঃ যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করবো। আর তাদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করবই। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থিরহয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে। বিজয়ী।” (৩৮:১৭১-৭৩) মহান আল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনঃ অবশ্যই আমি এবং আমার রাসূলগণ জয়যুক্ত হবো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।” (৫৮:২১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছিঃ আমার যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (২১:১০৫)হযরত মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয় যমীন আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান যমীনের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং ভাল পরিণাম খোদাভীরুদের জন্যেই।” আর এক জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছেঃ “দুর্বল লোকদেরকে আমি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ারিস বানিয়ে দিয়েছি, যেখানে আমি বানী ইসরাঈলের ধৈর্য ধারণের কারণে আমার উত্তম ওয়াদা পুরণার্থে বরকত দান করেছিলাম; আর তাদের শত্রু ফিরাউন ও তার কওমের শিল্প এবং তাদের নির্মিত প্রাসাদসমূহ ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।”ঘোষিত হয়েছেঃ “যমীন তোমাদের অধিকারে চলে আসবে, এই ওয়াদা ঐ লোকদের জন্যে যারা কিয়ামতের দিন আমার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে।” যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি সীমা লংঘন করলো ও পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিলো, তার বাসস্থান জাহান্নাম।” (৭৯:৩৭-৩৯) তিনি আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান।” (৫৫:৪৬) রাসূলগণ তাঁদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য, বিজয় ও ফায়সালা প্রার্থনা করলেন অথবা তাদের কওম এইরূপ প্রার্থনা করলো। রাসূলদের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি। আর তাঁর কওমের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলামের (রঃ) উক্তি। যেমন মক্কার মুশরিক কুরায়েশরা বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! যদি এটা সত্য হয় তবে তুমি আকাশ হতে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ কর অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আমাদের উপর নাযিল করো।” আবার এও হতে পারে যে, এদিকে কাফিররা এটা প্রার্থনা করলো, আর ওদিকে রাসূলগণও দুআ করলেন। যেমন বদরের যুদ্ধের দিন ঘটেছিল যে, একদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট কাতর কণ্ঠে দুআ করেছিলেন, আর অপরদিকে কাফির নেতৃবর্গই প্রার্থনা করছিলঃ “হে আল্লাহ! আজ তুমি হক বা সত্যকে জয়যুক্ত কর।” হয়েছিলও তাই। মুমিনরা হক পথে ছিলেন, কাজেই তাঁরাই বিজয়ী হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বলেছিলেনঃ “তোমরা বিজয় প্রার্থনা করছিলে, তাতো এসে গেছে এবং এখনও যদি তোমরা (দুষ্কর্ম থেকে) বিরত থাক তবে এটাই হবে তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।” এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান এক মাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।মহান আল্লাহর উক্তিঃ “উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ মনোরথ হলো।” যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেনঃ “(আদেশ করা হবে) নিক্ষেপ কর, নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা'বুদ গ্রহণ করতো তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” হাদীসেও রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে, তখন সে সমস্ত মাখলুককে ডাক দিয়ে বলবেঃ “আমি প্রত্যেক অহংকারী ও হঠকারীর জন্যে নির্ধারিত রয়েছি।” সেই দিন এ মন্দলোকদের কতইনা দূরাবস্থা হবে যেই দিন নবীগণ পর্যন্ত মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ তাআলার সামনে কড়জোড়ে দাড়িয়ে থাকবেন।এখানে (আরবি) শব্দটি (আরবি) (সামনে) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে নৌকা সকল ছিনিয়ে নিতো।” (১৮:৭১) হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কিরআত (আরবি) এইরূপই রয়েছে। মোটকথা, সামনে জাহান্নাম তার অপেক্ষায় থাকবে, যেখানে প্রবেশ করার পর আর বের হতে হবে না। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তো জাহান্নাম সকাল-সন্ধ্যায় সামনে আসতেই থাকবে। তারপর ওটাই স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থান হয়ে যাবে। অতঃপর সেখানে তার জন্যে পানির পরিবর্তে আগুনের মত পুঁজ রয়েছে এবং সীমাহীন ঠাণ্ডা এবং দুর্গন্ধময় পানি রয়েছে, যা জাহান্নামীদের ক্ষতস্থান হতে নির্গত হয়ে আসবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা হচ্ছে ফুটন্ত পানি ও পূজ সুতরাং এটার যেন তারা স্বাদ গ্রহণ করে।” (৩৮:৫৭)(আরবি) বলা হয় পুঁজ ও রক্তকে যা জাহান্নামীদের গোশতও চামড়া থেকে বয়ে আসবে। এটাকেই (আরবি) ও বলা হয়ে থাকে। এটা কাতাদা’র (রঃ) উক্তি। হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) (আরবি) (গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে) এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেন যে, যখন তার কাছে তা নিয়ে যাওয়া হবে তখন তার খুব কষ্ট হবে। মুখের কাছে পৌছা মাত্রই সমস্ত চেহারার চামড়া ঝলসে গিয়ে তাতে পড়ে যাবে। এক চুমুক নেয়া মাত্রই পেটের নাড়িভূড়ি পায়খানার দ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ি কেটে দিবে। আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “প্রার্থনাকারীর চাহিদা গলিত তামার ন্যায় ফুটন্ত গরম পানি দ্বারা মেটানো হবে যা তার চেহারা দগ্ধিভূত করবে।” অতিকষ্টে সে চুক চুক করে গলাধঃকরণ করবে। ফেরেশতারা লোহার ঘন মেরে মেরে পান করাবে। বিস্বাদ, দুর্গন্ধ, গরমের তীব্রতা বা ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে গলা থেকে নামা অসম্ভব হয়ে যাবে। দেহে, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, জোড়ে জোড়ে ব্যথা ও কষ্ট হবে। মনে হবে যেন মৃত্যু চলে আসছে। কিন্তু মৃত্যু হবে না। শিরায় শিরায় শাস্তি দেয়া হবে, কিন্তু প্রাণ বের হবে না। এক একটি পশম অসহনীয় শাস্তিতে পতিত, কিন্তু আত্মাদেহ হতে বের হতে পারবে না। সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে হতে যেন মৃত্যু চলে আসছে, কিন্তু এসে পড়ছে না। বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি, জাহান্নামের আগুন পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কিন্তু মৃত্যুকে ডেকেও আসে না। মৃত্যুও আসে না, শাস্তিও সরে না, যেন সার্বক্ষণিক শাস্তি হতে থাকে। প্রত্যেক শাস্তি এমন যে, তা মৃত্যুর জন্যে যথেষ্ট হওয়ার চাইতেও বেশী। কিন্তু সেখানে তো মৃত্যুও হয়ে যাবে। এসব শাস্তির সাথে আরো কঠিন ও বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা যাককুম বৃক্ষ সম্বন্ধে বলেছেনঃ “এই বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে। এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। তারা এটা হতে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদরপূর্ণ করবে। তদুপরি তাদের জন্যে থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্জ্বলিত অগ্নির দিকে।” মোট কথা, কখনো যাককুম খাওয়া, কখনো গরম ফুটন্ত পানি পান করা, কখনো আগুনে পোড়ানো, কখনো পুঁজ পান করানো ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্তি তাদেরকে দেয়া হবে। আমরা এর থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অনুরূপ আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটাই সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা অবিশ্বাস করে। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে” (৫৫:৪৩-৪৪) প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই যাকুম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য। গলিত তারে মত, ওটা তার উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত। (ফেরেস্তাদেরকে বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও। আর বলা হবেঃ আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। এটাতো ওটাই, যে বিষয়ে তুমি সন্দেহ করতে।” তিনি আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “এটাই, আর সীমালংঘনকারীদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্টতম পরিণাম জাহান্নাম, সেথায় তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল। এটা সীমালংঘনকারীদের জন্যে, সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পূজ। আরো আছে এইরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।” এমন আরো বহু শাস্তি রয়েছে যা মহা মহিমান্বিত ও প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করেন না।” (৪১:৪৬)
مَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ ۖ لَا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا عَلَىٰ شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيدُ
📘 এটা একটা দৃষ্টান্ত যা আল্লাহ তাআলা এ সব কাফিরের আমলের ব্যাপারে পেশ করেছেন যারা তাঁর সাথে অন্যের উপাসনা করে, রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং যাদের আমলগুলি পায়াহীন বা ভিত্তিহীন অট্টালিকার মত। এর পরিণাম এই দাড়ালো যে, প্রয়োজনের সময় শূন্য হস্ত হয়ে গেল। তাই, মহান আল্লাহ বলেন, কাফিরদের অর্থাৎ আমলগুলির দৃষ্টান্ত কিয়ামতের দিন, যখন তারা সম্পূর্ণরূপে মুখাপেক্ষী থাকবে সাওয়াবের এবং মনে করতে থাকবে যে, হয়তো তারা তাদের সৎ কার্যাবলীর বিনিময় লাভ করবে, কিন্তু আসলে কিছুই পাবে না, বরং নিরাশ হয়ে শুধু হায়, হায় করবে, যেমন ঝড়ের দিন বায়ু প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হয়ে ভস্ম উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং এদিকে ওদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়, এই ছাই এর যেমন কোন মূল্য নেই, তেমনই এই কাফিরদের কার্যাবলী মূল্যহীন ও নিষ্ফল হবে। এই ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ছাইগুলি একত্রিত করা যেমন অসম্ভব অনুরূপভাবে তাদের কার্যাবলীর বিনিময় লাভও অসম্ভব। যেমন আল্লাহ তাআলা এক জায়গায় বলেছেনঃ “এই পার্থিব জীবনে যা তারা ব্যয় করে তার দৃষ্টান্ত হিমশীতল বায়ু, যা যে জাতি নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে তাদের শস্য ক্ষেত্রকে আঘাত করে ও বিনষ্ট করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেন নাই,তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে।” অন্য এক স্থানে রয়েছেঃ “হে মুমিনগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং ক্লেশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করো না। যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্যে ব্যয় করে থাকে, এবং আল্লাহ ও পরকালের বিশ্বাস করে না; তার উপমা একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে,অতঃপর তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিষ্কার করে রেখে দেয়; যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না; আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।”এখানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি।” তাদের চেষ্টা। ও কাজ পায়াহীন এবং অস্থির। কঠিন প্রয়োজনের সময় তারা তাদের এসব কাজের কোনই বিনিময় পাবে না। এটাই হচ্ছে বড়ই দুর্ভাগ্য।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ إِنْ يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ
📘 Please check ayah 14:20 for complete tafsir.
اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَوَيْلٌ لِلْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
📘 Please check ayah 14:3 for complete tafsir.
وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ
📘 ১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করতে আমি সক্ষম। আমি যখন আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করেছি তখন মানুষকে সৃষ্টি করা আমার কাছে মোটেই কঠিন নয়। আকাশের উচ্চতা, প্রশস্ততা, বিরাটত্ব, অতঃপর তাতে স্থির ও চলমান নক্ষত্ররাজি আর এই যমীন, পর্বতরাজি, বন জঙ্গল, গাছ-পালা এবং জীবজন্তু সবই তাঁর সৃষ্ট। যিনি এগুলো সৃষ্টি করতে অপারগ হননি, তিনি কি মৃতদেরকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন না? অবশ্যই এতে ক্ষমতাবান। মহান আল্লাহ বলেনঃ “মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্র বিন্দু হতে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিত কিারী আর সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। বলেঃ অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন তা পচে গলে যাবে? বলঃ “ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। তিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ হতে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা দ্বারা প্রজ্জ্বলিত কর।”যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি ওগুলির অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যা, নিশ্চয়ই তিনি মহা স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন ওকে তিনি বলেনঃ ‘হও। ফলে তা হয়ে যায়।“অতএব পবিত্র ও মহান তিনি যাঁর হস্তে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”আল্লাহ পাক বলেনঃ “তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অস্তিত্ব আনতে পারেন। আর এটা আল্লাহর জন্যে মোটেই কঠিন নয়। তোমরা যদি তার বিরুদ্ধাচরণ কর তবে এরূপই হবে।” যেমন তিনি আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত এবং তিনি হচ্ছেন অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিবেন এবং তোমাদের স্থলে) নতুন সৃষ্টি আনয়ন করবেন এবং আল্লাহর কাছে এটা মোটেই কঠিন নয়।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য কওম আনয়ন করবেন, যারা তোমাদের মত হবে।” তিনি আরো বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে (তবে তার জেনে রাখা উচিত যে,), সত্বই আল্লাহ এমন কওম আনয়ন করবেন। যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিবেন এবং অন্যদেরকে আনায়ন করবেন এবং আল্লাহ এর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।”
وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۚ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ ۖ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَحِيصٍ
📘 আল্লাহ তাআলা বলেন, পরিস্কার সমতল ভূমিতে ভাল ও মন্দ এবং পূণ্যবান ও পাপী সমস্ত মাখলুককে আল্লাহর সামনে একত্রিত করা হবে। এ সময় অধীনস্থ লোকেরা নৈতৃস্থানীয় লোকদেরকে, যারা তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত এবং রাসূলের আনুগত্য হতে বিরত রাখতো, বলবেঃ “আমরা তোমাদের অনুগত ছিলাম। আমাদেরকে তোমরা যা হুকুম করতে তা আমরা মেনে চলতাম। সুতরাং আমাদেরকে তোমরা তো বহু কিছু আশা দিয়ে রেখেছিলে, আজ কি তাহলে আল্লাহর আযাব আমাদের থেকে সরাতে পারবে?” তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে নেতা ও সর্দারগণ বলবেঃ “আমরা নিজেরাই তো সুপথ প্রাপ্ত ছিলাম না। কাজেই তোমাদেরকে আমরা পথ দেখাতাম কিরূপে? বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তির কথা আমাদের সবারই উপর বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা সবাই শাস্তিরযোগ্য হয়ে গেছি। অতএব, এখন আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি অথবা ধৈর্য ধারণ করি একই কথা। শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার সমস্ত উপায় এখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।”আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) বলেন জাহান্নামবাসীরা একে অপরকে বলবেঃ “দেখো, এই জান্নাতবাসীরা জান্নাত লাভ করেছে এই কারণে যে, তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে অত্যন্ত কান্নাকাটি করেছে। এবং কাতর প্রার্থনা করেছে। সুতরাং এসো, আমরাও তাঁর সামনে খুবই কান্নাকাটি করি এবং আকুল আবেদন জানাই।” সুতরাং তারা কান্নায় ফেটে পড়বে এবং করজোড়ে নিবেদন করবে। কিন্তু সবই নিষ্ফল হয়ে যাবে। তখন আবার তারা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “জান্নাতবাসীরা ধৈর্যধারণ করেছিল বলেই আজ তারা জান্নাত লাভ করেছে। অতএব, এসো, আমরাও আজ নীরবতা ও ধৈর্য অবলম্বন করি।” এভাবে তারা এমন ধৈর্য অবলম্বন করবে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। কিন্তু এটাও বৃথা যাবে। তখন তারা বলবেঃ “হায়, হায়! সবরও বিফলে গেল এবং অনুনয় বিনয়ও কোন কাজে আসলো।” আমি বলিঃ প্রকাশ্য ব্যাপার তো এই যে, নেতা ও অনুগতদের এই কথাবার্তা হবে জাহান্নামে যাওয়ার পর। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যখন তারা জাহান্নামে ঝগড়া ও তর্কবিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারী লোকদের বলবেঃ “আমরা তো তোমাদের অনুগত ও হুকুমের বাধ্য ছিলাম, সুতরাং আজ তোমরা কি আমাদের উপর হতে জাহান্নামের শাস্তির কিছু অংশ সরাতে পারবে?” এ সময় অহংকারী লোকেরা বলবেঃ “আমরা সবাই তো জাহান্নামের মধ্যে রয়েছি! নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানব দলগত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা অগ্নিতে প্রবেশ করো; যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ। অগ্নিশাস্তি দিন! আল্লাহ বলবেনঃ প্রত্যেকের জন্যে দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জ্ঞাত নও।” তাদের পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদেরকে বলবেঃ “আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ কর।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “জাহান্নামীদের অধীনস্থরা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আনুগত্য করেছিলাম আমাদের নেতাদের ও বড়দের, তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদের উপর বড় রকমের অভিসম্পাত নাযিল করুন।”হাশরের ময়দানে তাদের ঝগড়া ও তর্ক বিতর্কের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হায়! তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে যখন তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে তখন তারা পরস্পর বাদ প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম।”যারা ক্ষমতাদপী ছিল তারা, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসবার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বস্তুতঃ তোমরাই তো ছিলে অপরাধী।”যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি; যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলদেশে শৃংখল পরিয়ে দিবো; তাদেরকে তারা যা করতো তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي ۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ ۖ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ ۖ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ ۗ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
📘 Please check ayah 14:23 for complete tafsir.
وَأُدْخِلَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ ۖ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ
📘 ২২-২৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যখন তিনি বান্দাদের ফায়সালার কাজ শেষ করবেন এবং মুমিনরা জান্নাতে ও কাফিররা জাহান্নামে চলে যাবে, ঐ সময় অভিশপ্ত ইবলীস জাহান্নামের উপর দাঁড়িয়ে জাহান্নামীদেরকে সম্বোধন করে বলবেঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে যে ওয়াদা অঙ্গীকার করেছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণরূপে সত্য। রাসূলদের অনুসরণ ও আনুগত্যই ছিল মুক্তি ও শান্তির পথ। আর আমার ওয়াদা তো ছিল প্রতারণা মাত্র। আমার কথা ছিল দলীল-প্রমাণহীন। তোমাদের উপর আমার কোন জোর যবরদস্তি ও আধিপত্য তো ছিল না। তোমরা অযথা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। আমি তোমাদেরকে যে হুকুম করেছিলাম তা তোমরা মেনে নিয়েছিলে। রাসূলদের সত্য প্রতিশ্রুতি, তাদের দলীল ও যুক্তিপূর্ণ কথা তোমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলে। তাঁদের তোমরা বিরোধিতা করেছিলে, আমার কথামত চলেছিলে। এর পরিণাম তোমরা আজ স্বচক্ষে দেখতে পেলে। এটা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। সুতরাং আজ তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজেদেরকেই দোষারোপ করো। পাপ তোমরা নিজেরাই করেছিল। দলীল-প্রমাণগুলি তোমরা ত্যাগ। করেছিলে। আমার কথাই তোমরা মেনে চলেছিলে। আজকে আমি তোমাদের কোনই কাজে আসবো না। না আজ আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারবো, না তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো। আমি তোমাদের শিরকের কারণে তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমি আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি যে, আমি আল্লাহর শরীক নই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আহবান করে, যারা কিয়ামতের দিন তাদের আহবানে সাড়া দিতে পারবে না? বরং তারা তাদের আহবান হতে উদাসীন ও অমনোযোগী থাকবে। কিয়ামতের দিন তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (৪৬:৫) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তারা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের শত্রু হয়ে যাবে, তারা অত্যাচারী লোক কেন না তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, বাতিলের অনুসারী হয়েছে এইরূপ অত্যাচারীদের জন্যে বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (১৯:৮২)।অতএব, এটা প্রকাশ্য কথা যে, জাহান্নামীদের সাথে ইবলীসের এই কথাবার্তা হবে জাহান্নামে প্রবেশের পর, যাতে তাদের আফসোস ও দুঃখ খুব বেশী হয়। কিন্তু হযরত উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদেরকে আল্লাহ তাআলা একত্রিত করবেন এবং তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন তখন একটা সাধারণ ভয় ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি হবে।” মু'মিনগণ বলবেঃ “আমাদের ফায়সালা হতে যাচ্ছে, এখন আমাদের সুপারিশের জন্যে দাঁড়াবে কে?” অতঃপর তারা হযরত আদম (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসার (আঃ) কাছে যাবে। হযরত ঈসা (আঃ) বলবেনঃ “তোমরা নবী উম্মীর (সঃ) কাছে গমন কর।” তখন আল্লাহ তাআলা আমাকে। দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি দিবেন। তৎক্ষণাৎ আমার মজলিস হতে পবিত্র এবং উত্তম সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়বে, যার মত উত্তম সুগন্ধি ইতিপূর্বে কেউ কখনো শুকেনি। সুতরাং আমি তখন বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আগমন করবো, আমার মাথার চুল থেকে নিয়ে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী পর্যন্ত সারাদেহ আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে। অতঃপর আমি সুপারিশ করবো এবং মহা কল্যাণময় আল্লাহ আমার সুপারিশ কবুল করবেন। এটা দেখে কাফিররা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “চলো, আমরাও কাউকে আমাদের সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়ে তাকে আমাদের জন্যে সুপারিশ করতে বলি। আর এ কাজের জন্যে আমাদের কাছে ইবলীস ছাড়া আর কে আছে? সে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল। সুতরাং চল, আমরা তার কাছেই যাই এবং আর করি।” অতঃপর তারা ইবলীসের কাছে। গিয়ে বলবেঃ “মুমিনরা সুপারিশকারী পেয়ে গেছে, তুমি আমাদের জন্যে সুপারিশকারী হয়ে যাও। কারণ, তুমিই তো আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলে।” একথা শুনে ঐ অভিশপ্ত শয়তান দাঁড়িয়ে যাবে। তার মজলিস হতে এমন দুর্গন্ধ বের হবে যে, ইতিপূর্বে কারো নাকে এমন জঘন্য দুর্গন্ধ কখনো পৌঁছে নাই।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তারপর সে যা বলবে তাতো উপরে বর্ণিত হলো।মুহাম্মদ ইবনু কা'ব কারাযী (রঃ) বলেন, জাহান্নামীরা যখন বলবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এখন আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটুক বা আমরা ধৈর্যশীল হয়ে যাই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।” (১৪:২১) ঐ সময় ইবলীস তাদেরকে উপরোক্ত কথা বলবে। যখন তারা ইবলীসদের উপরোক্ত বক্তব্য শুনবে তখন তারা নিজেদের জীবনের উপরও ক্রোধান্বিত হয়ে যাবে। তখন তাদেরকে ডাক দিয়ে বলা হবেঃ “তোমরা আজ নিজেদের জীবনের উপর যেমন রাগান্বিত হয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশী রাগান্বিত হয়েছিলেন আল্লাহ তাআলা ঐ সময়, যে সময় তোমাদেরকে ঈমানের দিকে ডাক দেয়া হয়েছিল, আর তোমরা সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলে” ।হযরত আমির শাবী (রঃ) বলেন, (কিয়ামতের দিন) সমস্ত মানুষের সামনে দু’জন বক্তা বক্তৃতা দেয়ার জন্যে দাঁড়াবে। হযরত ঈসা ইবনু মারইয়ামকে (আঃ) বলবেনঃ তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলেঃ “তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে মা’রূদ রূপে গ্রহণ করো? এই আয়াত থেকে নিয়ে (আরবি) (আল্লাহ বলবেনঃ “এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণ তাদের সত্যতার জন্যে উপকৃত হবে)। (৫:১১৯) এই আয়াত পর্যন্ত এই বর্ণনাই রয়েছে। আর অভিশপ্ত ইবলীস দাঁড়িয়ে বলবেঃ “আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে (শেষ পর্যন্ত)।”দুষ্ট ও পাপী লোকদের পরিণাম ও তাদের দুঃখ-বেদনা এবং ইবলীসের উত্তরের বর্ণনা দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখন সৎ ও পূণ্যবান লোকদের পরিণামের বর্ণনা দিচ্ছেন। মমিন ও সৎকর্মশীল লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তারা যথেচ্ছা গমনাগমন করবে, চলবে, ফিরবে এবং পানাহার করবে। চিরদিনের জন্যে তারা সেখানে অবস্থান করবে। সেখানে না তারা। চিন্তিত ও দুঃখিত হবে, না তাদের মন খারাপ হবে, না অস্বস্তি বোধ করবে, না মারা যাবে, না বহিষ্কৃত হবে, না নিয়ামত কমে যাবে। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’ আর ‘সালাম’। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও ওর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি সালাম।” (৩৯:৭৩) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) “প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেস্তারা তাদের কাছে প্রবেশ করবে এবং বলবেঃ “তোমাদের প্রতি সালাম।” আর এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদেরকে সেথায় অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।” (২৬:২২) আল্লাহ তাআলা আর এক স্থানে বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সেথায় তাদের ধ্বনি হবেঃ হে আল্লাহ! তুমি মহান! তুমি পবিত্র! এবং সেথায় তাদের অভিবাদন হবে, ‘সালাম এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।” (১০:১০)
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ
📘 Please check ayah 14:26 for complete tafsir.
تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
📘 Please check ayah 14:26 for complete tafsir.
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِنْ فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قَرَارٍ
📘 ২৪-২৬ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, লা ইলালাহ ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই) এর সাক্ষ্য দেয়াই বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে তায়্যেবা দ্বারা। আর উত্তম ও পবিত্র বৃক্ষ দ্বারা মুমিনকে বুঝানো হয়েছে। এর মূল দৃঢ়, অর্থাৎ মুমিনের অন্তরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রয়েছে। এর শাখা রয়েছে ঊর্ধ্বে অর্থাৎ মুমিনের তাওহীদ বা একত্ববাদের কালেমার কারণে তার আমলগুলি আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। আরো বহু মুফাসির হতে এটাই বর্ণিত হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুমিনের আমল, কথা ও সৎ কার্যাবলী। মুমিন খেজুর বৃক্ষের ন্যায়। প্রত্যেক দিন সকালে ও সন্ধ্যায় তার আমলগুলি আকাশে উঠে যায়।হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে একটি খেজুর গুচ্ছ আনয়ন করা হলে তিনি (আরবি) এই অংশটুকু পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ওটা খেজুর বৃক্ষ।”হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা (একদা) রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে বলেনঃ “ওটা কোন্ গাছ যা মুসলমানের মত, যার পাতা ঝরে পড়ে না, গ্রীষ্ম কালেও না শীতকালেও না; যা সব মওসুমেই ফল ধারণ করে থাকে?” হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ “আমি মনে মনে বললাম যে, বলে দিইঃ ওটা খেজুর গাছ। কিন্তু আমি দেখলাম যে, মজলিসে হযরত আবু বকর (রাঃ) , হযরত উমার (রাঃ) রয়েছেন। এবং তাঁরা নীরব আছেন, কাজেই আমিও নীরব থাকলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “ওটা হচ্ছে খেজুরের গাছ।” এখান থেকে বিদায় হয়ে আমি আমার পিতা হযরত উমারকে (রাঃ) এটা বললে তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! যদি তুমি এই উত্তর দিয়ে দিতে তবে এটা আমার কাছে সমস্ত কিছু পেয়ে যাওয়ার অপেক্ষাও প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিল।” (এ হাদিসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “আমি মদীনায় হযরত ইবনু উমারের (রাঃ) সঙ্গ লাভ করি। আমি তাঁকে একটি মাত্র হাদীস ছাড়া কোন হাদীস রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করতে শুনি নাই। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে বসেছিলাম, এমন সময় তাঁর কাছে খেজুর গাছের ভিতরের মজ্জা আনয়ন করা হয়। তখন তিনি বলেনঃ “গাছের মধ্যে এমন এক গাছ রয়েছে যা মুসলমানের মত।” আমি তখন বলবার ইচ্ছা করলাম যে, আমিই হলাম কওমের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ (তাই, আমি বললাম না)। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “ওটা হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ।” অন্য রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, ঐ সময় উত্তরদাতাদের খেয়াল বন্য গাছ পালার দিকে গিয়েছিল।হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সম্পদশালী লোকেরা তো মর্যাদায় খুব বেড়ে গেল!” যদি দুনিয়ার সমস্ত কিছু নিয়ে স্কুপ করে দেয়া হয় তবুও কি তা আকাশ পর্যন্ত পেঁৗছতে পারবে? (কখনই না) তোমাকে কি এমন আমলের কথা বলবো যার মূল দৃঢ় এবং শাখা গুলি আকাশে (চলে গেছে)?” সে জিজ্ঞেস করলোঃ “ওটা কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ এবং আলহামদু লিল্লাহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর দশ বার করে পাঠ করো তা হলেই এটা হবে এমন আমল যার মূল মযবুত এবং শাখা আকাশে।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন ঐ পবিত্র গাছ জান্নাতে রয়েছে। আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ওটা প্রত্যেক মওসূমে ফলদান করে অর্থাৎ-সকাল-সন্ধ্যায় প্রতি মাসে বা প্রতি দু’মাসে অথবা প্রতি ছ’মাসে বা প্রতি সাত মাসে অথবা প্রতি বছরে। কিন্তু শব্দগুলির বাহ্যিক ভাবার্থ তো হচ্ছেঃ “মুমিনের দৃষ্টান্ত ঐ বৃক্ষের মত যার ফল সব সময় শীতে, গ্রীষ্মে, দিনে, রাতে নেমে থাকে। অনুরূপভাবে মু'মিনের নেক আমল দিনরাত সব সময় আকাশে উঠে থাকে।”আল্লাহ তাআলা মানুষের শিক্ষা, উপদেশ ও অনুধাবনের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকেন।অতঃপর আল্লাহ তাআলা মন্দ কালেমা অর্থাৎ কাফিরের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছেন, যার কোন মূল নেই এবং যা দৃঢ় নয়। এর দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে ‘হানযাল গাছের সাথে, যাকে ‘শারইয়ান' বলা হয়। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওটা হান্যাল গাছ। এই রিওয়াইয়াতটি মার’ রূপেও এসেছে। এর মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন যার কোন স্থায়িত্ব নেই। অনুরূপভাবে কুফরী মূলহীন ও শাখাহীন। কাফিরের কোন ভাল কাজ উপরে উঠে না এবং তার থেকে কিছু কবুলও হয় না।
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
📘 সহীহ বুখারীতে হযরত বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুসলমানকে যখন তার কবরে প্রশ্ন করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল। এই আয়াত দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে।”মুসনাদে আহমদে হযরত বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “একজন আনসারীর জানাযায় আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে বের হই এবং গোরস্তানে পৌছি। তখন পর্যন্ত কবর তৈরীর কাজ শেষ হয় নাই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বসে পড়লেন এবং আমরাও তাঁর পাশে এমনভাবে বসে পড়লাম যে, যেন আমাদের মাথার উপর পাখী রয়েছে। তাঁর হাতে যে খড়িটি ছিল তা দিয়ে তিনি মাটিতে রেখা টানছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা উঠিয়ে দু তিন বার বললেনঃ “কবরের শাস্তি হতে তোমরা আশ্রয় প্রার্থনা কর। বান্দা যখন দুনিয়ার শেষ এবং আখেরাতের প্রথম মুহুর্তে অবস্থান করে তখন তার কাছে আকাশ হতে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাগণ আগমন করেন, যেন তাঁদের চেহারাগুলি সূর্য। তাদের সাথে থাকে জান্নাতী কাফন ও জান্নাতী সুগন্ধি। তার পাশে তাঁরা এতো দূর নিয়ে বসে যান যত দূর তার দৃষ্টি যায়। এরপর মালাকুল মাওত (মৃত্যুর ফেরেশতা) এসে তার শিয়রে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “হে পবিত্র রূহ! আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর সন্তুষ্টির দিকে চল।” তখন রূহ এমন সহজে বেরিয়ে আসে যেমন কোন মশক থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা হয়ে এসে থাকে। চক্ষুর পলক ফেলার সময় পর্যন্তই ঐ রূহকে ফেরেশতাগণ। তাঁর হাতে থাকতে দেন না,বরং তৎক্ষণাৎ তাঁর হাত থেকে নিয়ে নেন এবং জান্নাতী কাফন ও জান্নাতী সুগন্ধির মধ্যে রেখে দেন। স্বয়ং ঐ রূহ থেকেও মিশ আম্বরের চাইতেও বেশী সুগন্ধ বের হয়, যার চাইতে উত্তম সুগন্ধি দুনিয়ায় কখনো শুকা হয় নাই। তাঁরা ঐ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে উঠে যান। ফেরেশতাদের যে দলের পার্শ্ব দিয়ে তাঁরা গমন করেন তাঁরা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই পবিত্র রূহ কোন ব্যক্তির?” তারা তখন তার যে উত্তম নামে সে পরিচিত ছিল সেই নাম বলে দেন এবং তার পিতার নামও বলেন। দুনিয়ার আকাশে পৌছে তাঁরা আকাশের দরজা খুলে দিতে বলেন। তখন আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং সেখান হতে ফেরেশতাগণ ঐ রূহকে নিয়ে দ্বিতীয় অকাশে, দ্বিতীয় আকাশ হতে তৃতীয় আকাশে এবং এইভাবে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যান। মহামহিমান্বিত আল্লাহ তখন বলেনঃ “আমার বান্দার কিতাব ইল্লীনে লিখে নাও এবং তাকে যমীনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমি তাকে ওটা থেকেই সৃষ্টি করেছি এবং ওটা থেকেই দ্বিতীয় বার বের করবো।” অতঃপর তার রূহ তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার কাছে দ’জন ফেরেশতা আগমন করেন। তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার প্রতিপালক কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ।” আবার তারা প্রশ্ন করেনঃ “তোমার দ্বীন কি?” সে জবাবে বলেঃ “আমার দ্বীন ইসলাম।” আবার তারা প্রশ্ন করেনঃ “যে ব্যক্তিকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে?” সে উত্তর দেয়ঃ “তিনি আল্লাহর রাসূল (সঃ)।” তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কিরূপে জেনেছো?” সে জবাব দেয়ঃ “আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছিলাম ও ওর উপর ঈমান এনেছিলাম এবং ওটাকে সত্য বলে জেনেছিলাম।” ঐ সময়েই আকাশ থেকে একজন আহবানকারী ডাক দিয়ে বলেনঃ “আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্যে জান্নাতী বিছানা। বিছেয়ে দাও, জান্নাতী পোষাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের দিকের দরজাটি খুলে দাও।” তখন জান্নাত থেকে সুগন্ধপূর্ণ বাতাস তার কবরে আসতে থাকে। যতদূর পর্যন্ত তার দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তার কবরটি প্রশস্ত করে দেয়া হয়। তার কাছে একজন নূরানী চেহারা বিশিষ্ট সুন্দর লোক আগমন করে এবং তাকে বলেঃ “তুমি খুশী হয়ে যাও। এই দিনেরই ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল।” সে তখন তাকে জিজ্ঞেস করেঃ তুমি কে? তোমার চেহারায় তো শুধু ভালই পরিলক্ষিতহচ্ছে।” সে উত্তরে বলেঃ “আমি তোমার সৎ আমল।” ঐ সময় ঐ মুসলমান ব্যক্তি বলেঃ “হে আমার প্রতিপালক! সত্বরই কিয়ামত সংঘটিত করে দিন, যাতে আমি আমার পরিবার বর্গ ও ধনমালের দিকে ফিরে যেতে পারি।”পক্ষান্তরে কাফির বান্দা যখন দুনিয়ার শেষ সময় ও আখেরাতের প্রথম সময়ে অবস্থান করে তখন তার কাছে কালো ও কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট আসমানী ফেরেশতাগণ আগমন করেন এবং তাঁদের সাথে থাকে জাহান্নামী চট। যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তাঁরা বসে পড়েন। তারপর মালাকুল মাউত এসে তার শিয়রে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “হে কলুষিত রূহ! আল্লাহর গযব ও ক্রোধের দিকে চল” তার রূহ দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যাকে অতি কষ্টে বের করে আনা হয়। তৎক্ষণাৎ চোখের পলকে ঐ ফেরেশতাগণ রূহকে তাঁর হাত হতে নিয়ে নেন এবং জাহান্নামী ছালায় জড়িয়ে নেন। তার থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হয় যে, ভূ-পৃষ্ঠে এর চেয়ে বেশী দুর্গন্ধময় জিনিস কখনো পাওয়া যায় নাই। তাঁরা ওটা নিয়ে আকাশে উঠে যান। ফেরেশতাদের যে দলের পার্শ্ব দিয়ে তাঁরা গমন করেন তাঁরা জিজ্ঞেস করেনঃ “এই কলুষিত রূহ কোন ব্যক্তির?” দুনিয়ায় তার যে খারাপ নামটি ছিল তারা তার সেই নাম বলে দেন। তার পিতার নামও বলেন। দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত দরজা খুলে দিতে বলেন। কিন্তু দরজা খোলা হয় না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। অর্থাৎ “তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না। এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। যতক্ষণ না সূচের ছিদ্র পথে উষ্ট্র প্রবেশ করে।” (৭:৪০) আল্লাহ তাআলা তখন বলেনঃ “তার কিতাব সিজ্জীনে লিখে নাও, যা যমীনের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে।” তার রূহকে তখন তথায় নিক্ষেপ করা হয়। তারপর তিনি (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন (আরবি) অর্থাৎ-যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল, হয় পাখি তাকে ছো মেরে নিয়ে যাবে অথবা ধুলি ঘূর্ণি ঝঞ্জা তাকে কোন দুরের গর্তে নিক্ষেপ করবে।” (২২:৩১) অতঃপর তার রূহ দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার কাছে দু'জন ফেরেশতা আগমন করেন। তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার প্রতিপালক কে?” সে উত্তরে বলেঃ “হায়, হায়! আমি তো জানি না!” আবার তাঁরা জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার দ্বীন কি?” এবারও সে জবাব দেয়ঃ হায়, হায়! আমি তো এটাও অবগত নই।” পুনরায় তারা প্রশ্ন করেনঃ “তোমাদের কাছে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে?” সে জবাবে বলেঃ “হায়, হায়! এ খবরও আমার জানা নেই!” ঐ সময়েই আকাশ থেকে ঘোষণাকারীর ঘোষণা শোনা যায়ঃ “আমার বান্দা মিথ্যাবাদী। তার জন্যে জাহান্নামের আগুনে বিছানা বিছিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দাও।” সেখান থেকে তার কাছে জাহান্নামের বাতাস ও বাম্প আসতে থাকে। তার কবর এতো সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার দেহের এক পাঁজর অপর পাঁজরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বড় জঘন্য ও ভয়ানক আকৃতির এবং ময়লাযুক্ত খারাপ পোশাক পরিধানকারী অত্যন্ত দুর্গন্ধ বিশিষ্ট একটি লোক তার কাছে আসে এবং বলেঃ “এখন তুমি দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ে যাও। এই দিনের তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।” সে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “তুমি কে? তোমার চেহারায় শুধু মন্দই পরিলক্ষিত হচ্ছে।” সে উত্তর দেয় “আমি তোমার খারাপ আমলেরই আকৃতি বা রূপ।” সে তখন প্রার্থনা করেঃ “হে আমার প্রতিপালক! (দয়া করে) কিয়ামত সংঘটিত করবেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম নাসায়ী (রঃ) এবং ইমাম ইবনু মাজাহও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে আহমদে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, সবান্দার রূহ বহির্গত হওয়ার সময় আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী জায়গায় ফেরেশতাগণ এবং আকাশের সমস্ত ফেরেশতা তার উপর করুণা বর্ষণ করে। আর আকাশের দরজা তার জন্যে খুলে যায়। প্রত্যেক দরজার ফেরেশতাগণ প্রার্থনা করেন যে, তার রূহ যেন তাদেরই দরজা দিয়ে উপরে উঠে যায়। (শেষ পর্যন্ত) ।আর খারাপ লোকের ব্যাপারে রয়েছে যে, তার কবরে একজন অন্ধ, বধির ও বোবা ফেরেশতাকে নিয়োজিত করা হয়। তাঁর হাতে এমন একটা লোহার হাতুড়ি থাকে যে, যদি তা দিয়ে কোন এক বিরাট পর্বতে আঘাত করা হয় তবে তা মাটি হয়ে যাবে। এ হাতুড়ি দ্বারা ঐ ফেরেশতা তাকে প্রহার করেন। তখন সে মাটি হয়ে যায়। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আবার তাকে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। ফেরেশতা আবার তাঁকে ঐ হাতুড়ি দ্বারা মারেন। সে তখন এমন জোরে চীৎকার করে যে, তার চীৎকার ধ্বনি মানব ও দানব ছাড়া সবাই শুনতে পায়। হযরত বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) এই আয়াত দ্বারাই কবরের আযাব প্রমাণিত হয়। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) এই আয়াতেরই তাফসীরে বলেন যে, এর দ্বারা কবরের প্রশ্নের উত্তরে মুমিনের প্রতিষ্ঠিত থাকা বুঝানো হয়েছে। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন বান্দাকে তার কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা (তাকে সমাধিস্থ করে) চলে যায়, আর তাদের চলে যাবার সময় তাদের জুতোর শব্দ তার কানে আসতে থাকে এমতাবস্থায়ই দু’জন ফেরেশতা তার কাছে পৌছে যান এবং তাকে উঠিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই লোকটি সম্পর্কে তোমার বক্তব্য কি?” সে মু'মিন হলে বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” তখন তাকে বলা হয়ঃ “দেখো, জাহান্নামে এটা তোমার বাসস্থান ছিল। কিন্তু আল্লাহ এটাকে পরিবর্তন করে জান্নাতের এই বাসস্থানটি তোমাকে দান করেছেন। সে তখন দুটি জায়গায়ই দেখতে পায়।” (এ হাদীসটি আবদ ইবনু হামীদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছন)হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন, তার কবর সত্তরগজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা সবুজ শ্যামলে ভরপুর থাকে। হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “কবরে এই উম্মতের পূরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। যখন মু'মিনকে তার কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা সেখান থেকে প্রস্থান করে তখন একজন কঠিন ভয়ানক আকৃতির ফেরেশতা তার কাছে আগমন করেন। তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বলতে?” তখন সেই মুমিন উত্তরে বলেঃ “তিনি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বান্দা (সঃ)।” তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “তোমার ঐ বাসস্থানটি দেখে যা জাহান্নামে তোমার জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুক্তি দান করেছেন এবং তোমার এই বাসস্থানের পরিবর্তে তিনি তোমাকে জান্নাতের ঐ বাসস্থানটি দান করেছেন। সে তখন দু'টোই দেখতে পায়। ঐ মু'মিন তখন বলেঃ “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আমার পরিবার বর্গকে এই সুসংবাদ প্রদান করি।” তাকে বলা হয়ঃ “থামো (এবং এখানেই অবস্থান কর)।” আর মুনাফিককে উঠিয়ে বসানো হয় যখন তার নিকট থেকে। তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন বিদায় গ্রহণ করে। অতঃপর তাকে বলাহয়ঃ “তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বলতে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি জানি না, লোকেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম।” তাকে তখন বলা হয় “তুমি জান নাই। এটা জান্নাতে তোমার বাসস্থান ছিল, কিন্তু তা পরিবর্তন করে জাহান্নামে তোমার বাসস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।” হযরত জাবির (রাঃ) বলেনঃ “আমি নবীকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “কবরে প্রত্যেক বান্দাকে সেই ভাবেই উঠানো হয় যে ভাবে সে মৃত্যু বরণ করে। মু'মিনকে তার ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে তার নিফাকের উপর। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ ইমাম মুসলিমের (রঃ) শর্তের উপর সহীহ। তারা দু'জন এটা তাখরীজ করেন নি)হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে এক জানাযায় হাযির হই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! নিশ্চয় এই উম্মতকে কবরে পরীক্ষা করা হয়। যখন মানুষকে দাফন করা হয় এবং তার সঙ্গীরা তার থেকে পৃথক হয়ে পড়ে তখন তার কাছে একজন ফেরেশতা আসেন যার হাতে থাকে লোহার হাতুড়ি। তাকে তিনি বসিয়ে দিয়ে বলেনঃ “তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বল!” যদি সে মু'মিন হয় তবে বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” তখন তিনি তাকে বলেঃ “তুমি সত্য বলেছো।” অতঃপর তার জন্যে জাহান্নামের দর খুলে দেয়া হয়। এ সময় ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “এটাই হতো তোমার বাসস্থান যদি তুমি তোমার প্রতিপালকের সাথে কুফরী করতে। কিন্তু তুমি ঈমান এনেছো বলেই এটা হয়েছে তোমার বাসভবন।” অতঃপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। সে তখন ওর মধ্যে প্রবেশের ইচ্ছা করে। তখন তাকে বলা হয়ঃ “এখন এখানেই থাকো।” তারপর তার কবরের দিকে ওটা খুলে দেয়া হয়। আর যদি সে কাফির বা মুনাফিক হয়, তবে যখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বল?” সে উত্তরে বলেঃ “তাঁর সম্পর্কে আমি লোকদেরকে কিছু বলতে শুনতাম।” তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “তুমি জান নাই এবং পড় নাই, আর হিদায়াতও লাভ কর নাই।” তারপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “এটাই তো তোমার বাসস্থান যদি তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে। কিন্তু তুমি কুফরী করেছে বলে মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ ঘরের পরিবর্তে এই ঘরকে তোমার জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এরপর তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়াহয়। তারপর ফেরেশতা তাকে হাতুড়ি দ্বারা প্রহার করতে থাকেন। তখন সে এতো জোরে চীৎকার করে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ যত কিছু সৃষ্টি করেছেন সবাই তার চীৎকার শুনতে পায়, শুধুমাত্র মানব ও দানব ব্যতীত। তখন কওমের কেউ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কারো সামনে যদি ফেরেশতা হাতে হাতুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে কি তার স্বাভাবিক জ্ঞান থাকে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরআন কারীমের (আরবি) এই আয়াতটিই পড়ে শুনান। অর্থাৎ “যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহজীবনে ও পরজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তার কাছে ফেরেশতাগণ হাযির হন। সে সৎ লোক হলে তাঁরা বলেনঃ “(হে পবিত্র রূহ! তুমি পবিত্র দেহের মধ্যে ছিলে, প্রশংসিত হয়ে বেরিয়ে এসো আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ এবং পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর করুণাসহ।” তাকে এটা বলা হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত রূহ বেরিয়ে আসে। তখন তারা তাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যান। আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “এটা কে?” উত্তরে বলা হয়ঃ “অমুক।” তখন ফেরেস্তারা বলেনঃ “বাহঃ! বাহঃ! এটা হচ্ছে পবিত্র রূহ যা পবিত্র দেহের মধ্যে ছিল। তুমি প্রশংসিত অবস্থায় প্রবেশ কর এবং আরাম, জীবনোপকরণ এবং রাহীম ও কারীম আল্লাহর রহমত নিয়ে খুশী হয়ে যাও।” আর যদি দুষ্ট ও পাপী লোক হয় তবে ফেরেশতাগণ বলেনঃ “হে কলুষিত নফস! তুমি কলুষিত দেহের ভিতরে ছিলে। তুমি নিন্দনীয় অবস্থায় বেরিয়ে এসো এবং ফুটন্ত গরম, রক্ত পুঁজ খাওয়ার জন্যে এবং এ ধরনের আরো বহু শাস্তি গ্রহণের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও।” এরূপ কথা তাকে বলা হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত সে বেরিয়ে আসে। তারপর তাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “এটা কে?” উত্তরে বলা হয়ঃ “অমুক।” তখন বলা হয়ঃ “কলুষিত দেহের মধ্যে ছিল। তুমি নিন্দনীয় হয়ে ফিরে যাও। তোমার জন্যে আসমানের দরজা খোলা হবে না।” অতঃপর তাকে আকাশ থেকে নীচে নামিয়ে দেয়া হয় এবং কবরে নিয়ে আসা হয়। সৎ ব্যক্তি (কবরের মধ্যে) বসে পড়ে। তখন তাকে ঐ সব কথা জিজ্ঞেস করা হয় যা প্রথম হাদীসে বলা হয়েছে। পাপী লোকও উঠে বসে এবং তাকেও ঐ কথা জিজ্ঞেস করা হয় যা প্রথম হাদীসে বলা হয়েছে। (এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, আকাশের ফেরেশতা পবিত্র রূহকে বলেনঃ “আল্লাহ তোমার উপর করুণা বর্ষণ করুন! আর ঐ দেহের উপরও যার মধ্যে তুমি ছিলে। শেষ পর্যন্ত তারা ঐ রূহকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর কাছে পৌছিয়ে দেন। সেখান হতে ইরশাদ হয়ঃ “তাকে শেষ মুদ্দত পর্যন্ত সময়ের জন্যে নিয়ে যাও।” তাতে রয়েছে যে, কাফিরের রূহের দুর্গন্ধের বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁর চাদর খানা তার নাকের উপর রাখেন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনের রূহ্ যখন কব করা হয় তখন তার কাছে রহমতের ফেরেশতাগণ জান্নাতী সাদা রেশম নিয়ে আগমন করেন। অতঃপর তারা বলেনঃ “আল্লাহর আরাম ও শান্তির দিকে বেরিয়ে এসো।” তখন মিস্ক আম্বরের মত অতি উত্তম সুগন্ধিরূপে ওটা বেরিয়ে আসে। এমনকি ফেরেশতাগণ একে অপরের নিকট হতে নেয়ার ইচ্ছা করেন। যখন এটা পূর্ববর্তী মু'মিনদের রূহের সথে মিলিত হয় তখন যেমন কোন নতুন লোক সফর থেকে আসলে তার পরিবারের লোকেরা খুবই খুশী হয়, ঐ রূহগুলি এই রূহের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কারণে তাদের চাইতেও বেশী খুশী হয়। তারপর পূর্বের রূহগুলি এই রূহকে জিজ্ঞেস করেঃ “অমুকের অবস্থা কি?” কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেঃ “এখন ওকে প্রশ্ন করো না। ওকে কিছু বিশ্রাম তো। গ্রহণ করতে দাও। এতো দুঃখ-কষ্ট হতে সবে মাত্র মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এই রূহ জবাব দেয়ঃ “সে তো মারা গেছে। সে কি তোমাদের কাছে পৌছে নাই?” তারা তখন বলেঃ “সে তা হলে তার স্থান জাহান্নামে চলে গেছে। আর কাফিরের রূহকে যখন যমীনের দরজার কাছে আনয়ন করা হয় তখন সেখানকার দারোগা ফেরেশতা তার দুর্গন্ধে খুবই অস্বস্তিবোধ করেন। অবশেষে তাকে যমীনের সর্বনিম্নস্তরে পেীছিয়ে দেয়া হয়।হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মু'মিনদের রূহগুলি জাবেঈনে একত্রিত করা হয়। আর কাফিরদের রূহগুলি হা মাউতের বারহৃত নামক জেলখানায় জমা করা হয়। তার কবর খুবই সংকীর্ণ হয়ে যায়।হযরত আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন তার কাছে কালো রঙ ও কড়া চক্ষু বিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আগমন করেন। একজনের নাম মুনকির এবং অপরজনের নাম নাকীর। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই লোকটি সম্পর্কে তুমি কি বলতে?” জবাবে সে বলবে যা সে বলতোঃ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” এ জবাব শুনে তাঁরা বলেনঃ “তুমি যে এটাই বলবে তা আমরা জানতাম।” অতঃপর তার কবর সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং তা আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায়। আর তাকে বলা হয়ঃ “তুমি ঘুমিয়ে যাও।” সে তখন বলেঃ “আমি আমার পরিবার বর্গের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে এ খবর দিতে চাই।” তাঁরা বলেনঃ “তুমি সেই নব বধুর ন্যায় ঘুমিয়ে থাকো যাকে তার পরিবারের সেই জায়গায় যে তার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। এভাবেই সে ঘুমিয়ে থাকে যে। পর্যন্ত না আল্লাহ নিজেই তাকে ঐ ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন।” আর মুনাফিক ফেরেস্তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেঃ “মানুষেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম। কিন্তু আমি কিছুই জানি না।” ফেরেশতারা তখন বলবেনঃ “তুমি যে এই উত্তর দেবে তা আমরা জানতাম।” তৎক্ষণাৎ যমীনকে হুকুম দেয়া হয়ঃ “সংকীর্ণ হয়ে যাও।” তখন যমীন এমনভাবে সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার এক পাঁজর অপর পাঁজরের সাথে মিশে যায়। অতঃপর তার উপর শাস্তি হতে থাকে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলা কিয়ামত সংঘটিত করেন এবং তাকে তার কবর থেকে উথিত করেন। (এ হাদীসী ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল)অন্য একটি হাদীসে আছে যে, কবরে মু’মিনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবীকে?” তখন উত্তরে সে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। তিনি আমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে দলীল-প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন। আমি তার উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর সত্যতা স্বীকার করেছি।” তাকে তখন বলা হয়ঃ “তুমি সত্য বলেছো। তুমি এরই উপর জীবিত থেকেছো, এরই উপর মৃত্যুবরণ করেছে এবং এরই উপর তোমাকে উঠানো হবে। (এই হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে ফিরে আসো তখন সে তোমাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। যদি সে মমিন হয়ে মরে থাকে তবে নামায় তার শিয়রে থাকে, যাকাত থাকে ডান পার্শ্বে, রোযা থাকে বাম পার্শ্বে আর অন্যান্য পুণ্য কাজ যেমন দান-খয়রাত, আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত করণ, লোকদের সাথে সদাচরণ ইত্যাদি থাকে তার পায়ের দিকে। যখন তার মাথার দিক থেকে কেউ আসে তখন নামায বলেঃ “এখান দিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই।” ডান দিক থেকে বাধা দেয় যাকাত, বাম দিক থেকে বাধা দান করে রোযা এবং পায়ের দিক থেকে বাধা দেয় অন্যান্য পূণ্যের কাজ। অতঃপর তাকে বলা হয়ঃ “বসে যাও।” সে তখন বসে পড়ে এবং তার মনে হয় যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছে। ফেরেশতারা বলেনঃ “আমরা তোমাকে যে সব প্রশ্ন করবো তোমাকে উত্তর দিতে হবে।” সে বলেঃ “থামো, আমি আগে নামায আদায় করে নিই।” তাঁরা বলেনঃ “নামায তো আদায় করবেই, তবে আগে আমাদের প্রশ্নগুলির জবাব দাও।” সে তখন বলেঃ “আচ্ছা ঠিক আছে, কি প্রশ্ন করতে চাও, কর।” তাঁরা প্রশ্ন করেনঃ “এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলছো এবং কি সাক্ষ্য দিচ্ছ?” সে জিজ্ঞেস করেঃ “হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে বলছো কি?” তারা উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, তাঁর সম্পর্কেই বটে।” সে তখন বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। তিনি আমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার নিকট হতে দলীল নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছি।” তখন তাকে বলা হয়ঃ “তুমি এর উপরই জীবিত থেকেছে এবং এর উপরই মরেছো। আর এর উপরই ইনশা-আল্লাহ পুনরুত্থিত হবে।” অতঃপর তার কবরটি সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং তা আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায়। আর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “দেখো, এটাই তোমার প্রকৃত বাসস্থান। সেখানে শুধু সুখ আর সুখ।” অতঃপর তার রূহ অন্যান্য পবিত্র রূহগুলির সাথে সবুজ রঙ এর পাখীর দেহে রেখে দেয়া হয় যা জান্নাতের গাছে রয়েছে। আর তার দেহ সেখানেই ফিরিয়ে দেয়া হয় যেখান থেকে তার সূচনা হয়েছে অর্থাৎ মাটিতে। এই আয়াতের ভাবার্থ এটাই। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মৃত্যুর সময়ের শান্তি ও নূর দেখে। মুমিন তার রূহ বের হয়ে যাওয়ার আকাংখা করে থাকে এবং আল্লাহ তাআলার কাছেও তার সাক্ষাৎ প্রিয় ও পছন্দনীয় হয়। যখন তার রূহ আকাশে উঠে যায় তখন তার কাছে মু'মিনদের রূহগুলি আগমন করে এবং তাদের পরিচিত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। যদি সে বলে যে, অমুক ব্যক্তি জীবিত আছে তবে তো ভালই, আর যদি বলে যে, অমুক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে তবে তারা অসন্তষ্ট হয় এই কারণে যে, তার রূহ তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় নাই।মুমিনকে তার কবরে বসিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে?” উত্তরে সে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ।” আবার জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তোমার নবী কে?” জবাবে সে বলেঃ “আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।” ফেরেশতা পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার দ্বীন কি?” সে উত্তর দেয়ঃ “আমার দ্বীন ইসলাম।” তাতেই রয়েছে যে, আল্লাহর শত্রুর যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং তাঁর অসন্তুষ্টির লক্ষণগুলি সে দেখে নেয় তখন তার রূহ বের হোক এটা সে চায় না। আল্লাহ তাআলাও তার সাক্ষাতে অসন্তুষ্ট হন। এই রিওয়াইয়াতে আরো রয়েছে যে, তার প্রশ্ন-উত্তর এবং মারপিটের পর তাকে বলা হয়ঃ “কর্তিত সাপের মত ঘুমিয়ে থাকো।” (এ হাদীসটি বাযাহ্ (রঃ) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু কাছীরের মতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এটা সম্ভবতঃ মারফুরূপেই বর্ণনা করেছেন)আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যখন মু'মিন রাসূলুল্লাহর (সঃ) রিসালাতের সাক্ষ্য দেয় তখন ফেরেশতা বলেনঃ “তুমি এটা কি করে জেনেছো? তুমি কি তাঁর যুগ পেয়েছিলে?” তাতে এটাও রয়েছে যে, কাফিরের কবরে শাস্তি দাতা ফেরেশতা এমন বধির হন যে, তিনি কখনো শুনতেও পান না এবং কখনো দয়াও করেন না।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের ব্যাপারে তিনি বলেনঃ মুমিনের যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয় তখন তার কাছে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন এবং তাঁকে সালাম দিয়ে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন। যখন সে মারা যায় তখন তারা তার জানাযার সাথে চলেন এবং লোকদের সাথে তারাও তার জানাযার নামায় পড়েন। অতঃপর যখন তাকে দাফন করা হয় তখন তাকে তার কবরে উঠিয়ে বসানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা। হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে?” সে জবাবে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ।” আবার তাকে প্রশ্ন করা হয়ঃ “তোমার রাসূল কে?” উত্তরে সে বলেঃ “মুহাম্মদ (সঃ)।” সে জবাব দেয়ঃ “তোমার সাক্ষ্য কি?” সে জবাব দেয়ঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।” তখন যতদূর তার দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফিরের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ। অবতরণ করেন। তারা তাদের হাত বিছিয়ে দেন অর্থাৎ প্রহার করেন। তারা প্রহার করেন তার চেহারা ও নিতম্বের উপর তার মৃত্যুর সময়। অতঃপর যখন তাকে তার কবরে রাখা হয় তখন তাকে উঠিয়ে বসানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে?” সে তাদেরকে কোন উত্তর দিতে পারে না। আল্লাহ ওটা তাকে বিস্মরণ করে দেন। যখন তাকে বলা হয়ঃ “তোমার কাছে যে রাসূলকে (সঃ) পাঠানো হয়েছিল তিনি কে?” সে এরও কোন উত্তর দিতে সক্ষম হয় না। এ ভাবেই আল্লাহ তাআলা যালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করে থাকেন।হযরত আবু কাতাদা’ আনসারী (রঃ) হতেও এই রূপই বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, মু'মিন বলেঃ “আমার নবী মুহাম্মদ (সঃ) ।” কয়েকবার তাকে প্রশ্ন করা হয় এবং সে এই জবাবই দেয়। তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে দিয়ে বলা হয়ঃ “তুমি বাঁকা পথে চললে এটাই তোমার ঠিকানাহতো। আবার জান্নাতের ঠিকানা দেখিয়ে বলা হয়ঃ “তোমার তাওবার কারণে এটা তোমার বাসস্থান হয়েছে।” আর যখন কাফির মারা যায় তখন কবরে তাকে উঠিয়ে বসানো হয়। অতঃপর তাকে বলা হয়ঃ “তোমার প্রতিপালক কে? তোমার নবী কে?” সে উত্তর দেয়ঃ “আমি জানি না, তবে লোকদের আমি বলতে শুনতাম।” তখন বলা হয়ঃ “তুমি জান নাই।” তারপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে বলা হয়ঃ “তুমি চেয়ে দেখো, সুপথে প্রতিষ্ঠিত থাকলে তোমার বাসস্থান এটাই হতো।” তারপর তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “তুমি বক্র পথে চলে ছিলে বলে তোমার বাসস্থান।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত তাউস (রঃ) বলেন, দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত থাকা দ্বারা কালেমায়ে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা বুঝানো হয়েছে। আর আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকার অর্থ হচ্ছে মুনকির ও নাকীরের প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা। কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, পার্থিব জীবনে প্রতিষ্ঠিত রাখার অর্থ হচ্ছে কল্যাণ ও উত্তম কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখা। আর পরকালে প্রতিষ্ঠিত রাখার অর্থ হচ্ছে কবরে প্রতিষ্ঠিত রাখা। হযরত আবদুর রহমান ইবনু সামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের কাছে বেরিয়ে আসলেন। ঐ সময় আমরা মদীনার মসজিদে অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেন, “গত রাত্রে আমি কয়েকটি বিস্ময়কর ঘটনা দেখেছি। দেখলাম যে, আমার এক উম্মতকে কবরের শাস্তি পরিবেষ্টন করে রেখেছে। অতঃপর তার অযু এসে তাকে তা থেকে ছাড়িয়ে নিলো। আমার উম্মতের আর একজন লোককে দেখলাম যে, শয়তান তাকে ভীতি বিহবল করে রেখেছে, কিন্তু আল্লাহর যিকর এসে তাকে এর থেকে মুক্তি দিলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখি যে, শাস্তির ফেরেশতাগণ তাকে ঘিরে রেখেছেন, অতঃপর তার নামায এসে তাকে বাঁচিয়ে নিলো। আমার উম্মতের আর একজন লোককে দেখি যে, সে পিপাসায় ছটফট করছে। যখন সে হাউযের উপর যাচ্ছে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার রোযা এসে তাকে পানি পান করিয়ে দিলো এবং পরিতুষ্ট করলো। আমি আমার আর একজন উম্মতকে দেখি যে, নবীগণ বৃত্তাকারে বসে আছেন। এই লোকটি যে বৃত্তের কাছেই বসতে যাচ্ছে সেখান থেকেই তারা তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তৎক্ষণাৎ তার অপবিত্রতার গোসল আসলো এবং তাকেহাত ধরে নিয়ে এসে আমার পার্শ্বে বসিয়ে দিলো। আমার আরো একজন উম্মতকে দেখলাম যে, তার চার দিকে থেকে অন্ধকার ছেয়ে গেছে এবং উপরেও নীচেও। সে ওরই মধ্যে পরিবেষ্টিত রয়েছে। এমতাবস্থায় তার হজ্জ ও উমরা আসলো এবং তাকে ঐ অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে পৌছিয়ে দিলো। আর একটি উম্মতকে দেখলাম যে, সে মুমিনদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু তারা তার সাথে কথা বলছে না। ঐ সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক আসলো এবং তাদেরকে বললোঃ এর সাথে আপনারা কথা বলুন।” তারা তখন তার সাথে কথাবার্তা বলতে থাকলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখলাম যে, সে তার মুখের উপর হতে অগ্নিশিখা দূর করার জন্যে । হাত বাড়াচ্ছে, ইতিমধ্যে তার দান খায়রাত আসলো এবং তার মুখের উপর পর্দা এবং মাথার উপর ছায়া হয়ে গেল। আমার উম্মতের আরো একটি মানুষকে দেখলাম যে, শাস্তির ফেরেশতাগণ তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছেন। কিন্তু এ সময় তার ভাল কাজের আদেশকরণ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধকরণ (এই পূর্ণকর্ম) আসলো এবং তাকে শাস্তির ফেরেশতাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রহমতের ফেরেশতাদের মধ্যে দাখিল করে দিলো। আমার উম্মতের আর একটা লোককে দেখলাম যে, সে হাঁটুর ভরে পড়ে আছে এবং আল্লাহ ও তার মধ্যে পর্দা রয়েছে। এমন সময় তার সৎ চরিত্র আসলো এবং তার হাত ধরে নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছিয়ে দিলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখি যে, তার আমল নামা তার বাম দিক থেকে আসছে, কিন্তু তার আল্লাহ ভীতি ওটাকে তার সামনে করে দিলো। আমার উম্মতের আর একটি মানুষকে দেখি যে, সে জাহান্নামের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ তার আল্লাহ থেকে কম্পিত হওন আসলো ও তা থেকে তাকে বাঁচিয়ে নিলো এবং সে চলে গেল। আর একটি লোককে দেখলাম যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার উপক্রম হচ্ছে এমন সময় আল্লাহর ভয়ে তার ক্রন্ধন করণ আসলো এবং ঐ অঞই তাকে তা থেকে বাঁচিয়ে নিলো। আর একজন। মানুষকে দেখলাম যে, পুলসিরাতের উপর সে নড়বড় ও হাড় বড় করছে, (এবং পুল সিরাতের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে), এমন সময় আমার উপর তার দরূদ পাঠ আসলো এবং তার হাত ধরে নিয়ে পার করে দিলো। আর একজন কে দেখলাম যে, সে জান্নাতের দরজার কাছে পৌছেছে, কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ তার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' -এর সাক্ষ্য প্রদান পৌছলো এবং দরজা খুলিয়ে দিয়ে জান্নাতে প্রবিষ্ট করলো। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) তাঁর নাওয়াদিরুল উসূল’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কুরতুবী (রঃ) এ হাদীসটি আনয়ন করে বলেন যে, এটা খুব বড় হাদীস। এতে বিশেষ বিশেষ আমলগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুলি বিশেষ বিশেষ বিপদের সময় মুক্তিদানের কারণ হয়ে থাকে। (তাযকিরা) )তামীমুদ্দারী (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ মালাকুল মাউত (মৃত্যুর ফেরেশতা) কে বলেনঃ “তুমি আমার বন্ধুর কাছে যাও, আমি তাকে সর্ব প্রকারের আসমানী বিপদ আপদ দ্বারা পরীক্ষা করেছি। সর্বাবস্থায় আমি তাকে আমার সন্তুষ্টিতেই সন্তুষ্ট পেয়েছি। তুমি যাও এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে সর্বপ্রকারের আরাম ও শান্তি দান করবো। মালাকুল মাউত পাঁচশ’ ফেরেতাকে সাথে নিয়ে গমন করেন। তাঁদের কাছে থাকে জান্নাতী কাফন, খুশবু এবং সুগন্ধময় ফুল। ওর মাথার উপর থাকে বিশটি রং। প্রত্যেক রং-এর সুগন্ধ পৃথক পৃথক। সাদা রেশমী কাপড়ে উচ্চাঙ্গের মিল্ক আম্বর জড়ানো থাকে। এঁরা সব আসনে এবং মালাকুল মাউত (আঃ) তার শিয়রে বসে পড়েন। প্রত্যেকের সাথে যে জান্নাতী উপহার থাকে তা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর রেখে দেয়া হয়। আর সাদা রেশম, মিশক ও সুগন্ধ তার থুথনীর নীচে রাখা হয়। তার জন্যে বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হয়। তার রূহকে কখনো জান্নাতী ফুলের দ্বারা, কখনো জান্নাতী পোশাকের দ্বারা এবং জান্নাতী ফলের দ্বারা এমনিভাবে আপ্যায়িত করা হয় যেমনিভাবে ক্রন্দনরত শিশুকে লোক আপ্যায়িত করে থাকে। ঐ সময় তার হুরগুলি তাকে লাভ করার আকাংখা করবে। রূহ এই দৃশ্য দেখে খুব তাড়াতাড়ি দৈহিক বন্দীত্ব থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করে। মৃত্যুর ফেরেশতা বলেনঃ “হাঁ, হে পবিত্র রূহ! কন্টকহীন কুলবৃক্ষ, কাঁদিভরা কদলী বক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানির দিকে চল।” আল্লাহর কসম! মা যতটা শিশুকে স্নেহ ও মমতা করে থাকে, মৃত্যুর ফেরেশতা ঐ রূহের উপর তার চেয়েও বেশী স্নেহশীল ও মমতাময় হয়ে থাকেন। কেননা, তিনি জানেন যে, ঐ রূহ আল্লাহ তাআলার নিকট খুবই প্রিয়। তিনি মনে করেন যে, যদি ঐ রূহের উপর সামান্য পরিমাণও কষ্ট হয় তবে তাঁর প্রতিপালক তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে এ রূহকে দেহ হতে পৃথক করে নেন যেমন ভাবে খামীরকৃত আটা হতে চুল বের করে নেয়া হয়। এ ব্যাপারেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “পবিত্র ফেরেশতারা তাদের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।” তিনি আরো বলেনঃ “যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়, তার জন্যে রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় উদ্যান।” মৃত্যুর ফেরেশতা রূহ কবয করা মাত্রই রূহ দেহকে বলেঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন! আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে তমি তাড়াতাড়ি করেছে এবং তাঁর অবাধ্যতার ব্যাপারে বিলম্ব করেছে। সুতরাং তুমি নিজেও মুক্তি পেয়েছে এবং আমাকেও মুক্তি দানের ব্যবস্থা করেছে।” শরীর ও রূহকে এইরূপই জবাব দেয়। যমীনের যে সব অংশে সে আল্লাহর ইবাদত করতো, তার মৃত্যুর কারণে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ঐগুলি ক্রন্দন করে। অনুরূপভাবে আসমানের যে সব দরজা দিয়ে তার সৎ কার্যাবলী উত্থিত হতো এবং যেখান দিয়ে তার জীবিকা অবতীর্ণ হতো ওগুলিও কাঁদতে থাকে। তৎক্ষণাৎ ঐ পাঁচশ ফেরেশতা ঐ দেহের চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে যান এবং তাকে গোসল দেয়ার কাজে অংশ গ্রহণ করেন। মানুষ তার পার্শ্ব পরিবর্তন করার পূর্বেই তারা ঐ মৃত দেহের পার্শ্ব পরিবর্তন করে দেন এবং তাকে গোসল দেয়া শেষ করে মানুষ তাকে কাফন পরাবার পূর্বে ফেরেশতাগণ তাদের সাথে আনিত কাফন তাকে পরিয়ে দেন। মানুষের খুশ লাগানোর পূর্বেই তাঁরা খুশবু লাগিয়ে দেন। আর তার বাড়ী থেকে নিয়ে তার কবর পর্যন্ত ফেরেশতাগণ দু’দিকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে যান এবং তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করেন। ঐ সময় শয়তান অত্যন্ত দুঃখের স্বরে এমন ভীষণ জোরে চীৎকার করে উঠে যে, যেন তার দেহের অস্থি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর সে তার সেনাবাহিনীকে সম্বোধন করে বলেঃ “এ ব্যক্তি তোমাদের হাত থেকে কি করে রক্ষা পেলো?” তারা উত্তর দেয়ঃ “এটা তো নিস্পাপ লোক ছিল।” তার রূহ নিয়ে তখন মৃত্যুর ফেরেশতা উপরে উঠে যান তখন সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়ে হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার অভ্যর্থনা করেন। তাদের প্রত্যেকেই তাকে পৃথক পৃথক ভাবে আল্লাহর সুসংবাদ শুনিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত তার রূহ আল্লাহর আরশের কাছে পৌঁছে যায়। সেখানে পৌছা মাত্রই ঐ রূহ সিজদায় পতিত হয়। এ সময় মহামহিমান্বিত আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ “তাকে কন্টকহীন কুল বৃক্ষ, কাঁদিভরা কদলী বৃক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানির নিকট স্থান দাও।”অতঃপর যখন তাকে কবরে রাখা হয় তখন ডান দিকে নামায দাঁড়িয়ে যায়, বাম দিকে দাঁড়ায় রোযা, কুরআন কারীম দাঁড়ায় মাথার কাছে এবং নামাযের উদ্দেশ্যে তার পথ চলা (এরা পূণ্য) তার পায়ের দিকে দাঁড়ায়। আর তার ধৈর্য দাঁড়ায় এক পার্শ্বে। আল্লাহ তাআলার প্রেরিত শাস্তি তার দিকে ধাবিত হলে ডান দিক থেকে নামায বাধা দেয় এবং বলেঃ “আল্লাহর কসম! এ ব্যক্তি সারা জীবন নামাযে কাটিয়েছে। এখন কবরে এসে তো কিছুটা আরাম পেয়েছে।” শাস্তি তখন বাম দিক থেকে আসে। রোযা অনুরূপ কথা বলেই তাকে ফিরিয়ে দেয়। শিয়রের দিক থেকে আসলে কুরআন ও যিকর এ কথা বলেই তার জন্যে পর্দা হয়ে যায়। শাস্তি বাম দিক থেকে আসতে থাকলে তার নামাযের জন্যে গমন তাকে বাধা দেয়। মোট কথা, আল্লাহর প্রিয় বান্দার জন্যে শাস্তির ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং কোন দিক থেকে শাস্তি তার কাছে আসার পথ পায়। সুতরাং সে ফিরে যায়। সেই সময় সবর বা ধৈর্য ঐ আমলগুলিকে বলে? “আমি তোমাদের কার্যকলাপ পরিদর্শন করছিলাম যে, যদি তোমাদের দ্বারাই শাস্তি দূর হয়ে যায় তবে আমার আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কি? তোমাদের দ্বারা শাস্তি সরানোর সম্ভব না হলে আমিও তার সাহায্যার্থে এগিয়ে যেতাম। (তোমাদের দ্বারাই যখন সমস্যার সমাধান হয়ে গেল তখন আমি পুলসিরাতের উপর এবং মীযানের (পাপ-পুণ্য ওজন করার যন্ত্রের) ক্ষেত্রে তার কাজে আসবো।” অতঃপর দু’জন ফেরশতাকে কবরে পাঠানো হয়। একজনকে মুনকির ও অপরজনকে নাকীর বলা হয়। তাঁদের চক্ষুগুলি দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয় এইরূপ বিদ্যুতের মত এবং তাদের শব্দ বজ্রের গর্জনের মত। তাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাসে অগ্নিশিখা বের হয়। তাঁদের চুল পায়ের তলা পর্যন্ত লটকে থাকে। তাঁদের দুকাধের মাঝে এতো এতো দূরের ব্যবধান থাকে। তাঁদের অন্তর কোমলতা ও করুণা হতে সম্পূর্ণরূপে শূন্য। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে এতো ভারী হাতুড়ী থাকে যে, রাবী গোত্র ও মুযার গোত্র একত্রিত হয়ে ওটা উঠাতে চাইলে তাদের দ্বারা তা উঠানো সম্ভব হবে না। তাঁরা এসেই বলেনঃ “উঠে বসো।” সে তখন সোজা হয়ে উঠে বসে। তার কাফন তার পার্শ্বদেশে এসে যায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে?” সাহাবীগণ আর থামতে পারলেন না। তাঁরা প্রশ্ন করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এতো ভয়বিহ ফেরেস্তাদের প্রশ্নের জবাব কে দিতে পারবে?” ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের প্রশ্নের জবাবে (আরবি) এই আয়াতটি তিলায়ওয়াত করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ সে (কবরে শায়িত মৃত মু'মিন) বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, আর আমার দ্বীন ইসলাম যা ফেরেশতাদেরও দ্বীন এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যিনি সর্বশেষ নবী।” তখন তাঁরা (ফেরেশতাদ্বয়) বলেনঃ “তুমি সঠিক উত্তর দিয়েছে।” অতঃপর তারা তার কবরকে তার ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে, সামনের দিক থেকে, পেছনের দিক থেকে, মাথার দিক থেকে এবং পায়ের দিক থেকে চল্লিশ হাত করে প্রশস্ত করে দেন। সুতরাং তারা তার কবরকে দু’শ হাত প্রশস্ত করে দেন। বুরসানী (রঃ) বলেনঃ “ আমি ধারণা করি যে, চল্লিশ হাতের বেড়া করে দেয়া হয়। তারপর তারা তাকে বলেনঃ “উপরের দিকে দৃষ্টিপাত কর।” সে তাকিয়ে দেখতে পায় যে, জান্নাতের দরজা খোলা রয়েছে। তাঁরা তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর বন্ধু! তুমি তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছিলে বলে এটা তোমার বাস ভবন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যাঁর হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! ঐ সময় তার অন্তরে যে খুশী ও আনন্দ আসে তা কখনো শেষ হবার নয়।” এরপর তাকে বলা হয়ঃ “তোমার নীচের দিকে দৃষ্টিপাত কর।” সে তাকিয়ে দেখে যে, জাহান্নামের দরজা খোলা রয়েছে। ফেরেশতারা তাকে বলেনঃ “দেখো! এর থেকে আল্লাহ তোমাকে চিরদিনের জন্যে মুক্তি দান করেছেন।” রাসূলুল্লাহ বলেনঃ “ঐ সময় অন্তরে এমন আনন্দ লাভ করে যা কখনো দূর হবার নয়।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, তার জন্যে জান্নাতের সাতাত্তরটি দরজা খুলে দেয়া হয় যেগুলি দিয়ে জান্নাতের সুগন্ধ ও শীতলতা তার কাছে আসতে থাকে যে পর্যন্ত না মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে পুনরুত্থিত করেন।এই সনদেই নবী (সঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর ফেরেশতাকে বলেনঃ “তুমি যাও এবং আমার ঐ শত্রুকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তার রুজীতে বরকত দিয়েছিলাম এবং আমার নিয়ামতসমূহ তাকে দান করেছিলাম। কিন্তু তবুও আমার নাফরমানীহতে সে বিরত থাকে নাই। তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তার নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।” তৎক্ষণাৎ মালাকুল মাউত অত্যন্ত কুৎসিত ও ভয়াবহ আকৃতিতে তার নিকট হাযির হন, এইরূপ ভয়ানক আকৃতি কেউ কখনো দেখেনি। তাঁর থাকে বারোটি চক্ষু এবং তিনি পরিধান করে থাকেন জাহান্নামের কন্টকযুক্ত পোশাক। তাঁর সঙ্গে থাকেন পাঁচশ’ জন ফেরেশতা। তারা সাথে করে নিয়ে আসেন আগুনের অঙ্গার এবং আগুনের চাবুক। মালাকুল মাউত জাহান্নামের আগুনের ঐ কন্টকযুক্ত পোশাক দ্বারা তার দেহের উপর প্রহার করেন। তার প্রতিটি লোমকূপে ঐ কাটা প্রবেশ করে যায়। তারপর এমনভাবে ওগুলি ঘুরতে থাকে যে, তার জোড়াগুলি আগাহয়ে যায়। অতঃপর তার রূহ তার পায়ের নখ দিয়ে টেনে বের করা হয় এবং তা তার পায়ের গোড়ালীর উপর নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় আল্লাহ তাআলার ঐ দুশমন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাউত (আঃ) তাকে উঠিয়ে নেন। ফেরেশতারা তাদের জাহান্নামী চাবুক তার চেহারা ও পিঠের উপর মারেন। তখন তাকে শক্ত করে বাঁধেন এবং তার রূহ তার পায়ের গোড়ালীর দিক থেকে টেনে বের করে নেন এবং তার হাঁটুর উপর নিক্ষেপ করেন। আবার আল্লাহর ঐ দুশমন বেহুশ হয়ে যায়। মাউতের ফেরেশতা পুনরায় তাঁকে উঠায় এবং ফেরেস্তারা আবার তার চেহারা ও কোমরের উপর চাবুক মারতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত রূহ তার বক্ষের উপর উঠে যায়, তারপর গলার উপর চলে যায়। অতঃপর ফেরেশতারা তাদের সাথে আনিত ঐ জাহান্নামী তামা ও জাহান্নামী অঙ্গার তার থুথীর নীচে রেখে দেন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা বলেনঃ “হে অভিশপ্ত রূহ! বের হয়ে চলো কৃষ্ণবর্ণ ধূমের ছায়ার দিকে, যা শীতল, আরাম দায়কও নয়।” অতঃপর যখন ঐ রূহ কব করা হয়ে যায় তখন ওটা দেহকে বলেঃ “আমার পক্ষ থেকে আল্লাহ তোমাকে মন্দ বিনিময় প্রদান করুন! তুমি আমাকে আল্লাহর নাফরমানীর কাজে চালিত করেছিলে। সুতরাং তুমি নিজেও ধ্বংস হলে এবং আমাকেও ধ্বংস করলে।” দেহও রূহকে অনুরূপ কথাই বলে। ভূ-পৃষ্ঠের যে সব জায়গায় সে আল্লাহর নাফরমানী করতো, সবগুলিই তার উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করে। শয়তানের সেনাবাহিনী দৌড়তে দৌড়তে তার কাছে হাযির হয় এবং বলেঃ “আজ একজনকে আমরা জাহান্নামে পৌছিয়ে দিয়েছি।” তার কবর এমন সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যে, তার ডান পাঁজর বাম পাঁজরে এবং বাম পাঁজর ডান পাঁজরে প্রবেশ হয়ে যায়। তার কবরে উটের স্কন্ধের মত সর্প প্রেরণ করা হয়, যে তাকে তার কান ও পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী থেকে কামড়াতে শুরু করে এবং ক্রমে ক্রমে উপরের দিকে চড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার দেহের মধ্য ভাগে পৌঁছে যায়। তার কাছে দু’জন ফেরেশতাকে পাঠানো হয়; যাঁদের চক্ষুগুলি গতিশীল বিদ্যুতের মত, কণ্ঠস্বর বজ্রের গর্জনের মত, দাতগুলি হিংস্র জন্তুর মত, শ্বাস-প্রশ্বাস অগ্নি শিখার মত এবং চুলগুলি পায়ের নীচ পর্যন্ত লটকানো। তাঁদের দু’কাঁধের মাঝে এরূপ এরূপ দূরত্বের ব্যবধান রয়েছে। তাঁদের অন্তরে দয়া ও করুণার লেশমাত্র নেই। তাঁদের নামই হচ্ছে মুনকির ও নাকীর। তাঁদের হাতে এতো বড় হাতুড়ী রয়েছে যে, যা রাবীআ’ও মুযার গোত্রদ্বয় একত্রিত হয়েও উঠাতে সক্ষম নয়। তাঁরা তাকে বলেনঃ “উঠে বসো।” সে তখন সোজাহয়ে উঠে বসে এবং তার লুঙ্গী বাঁধার জায়গায় তার কাফন চলে আসে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি তো কিছুই জানি না। তারা তখন বলেনঃ “তুমি জান নাই এবং পড়ও নাই।” অতঃপর তারা তাকে হাতুড়ী দ্বারা এতো জোরে মারেন যে, ওর অগ্নি স্ফুলিঙ্গ তার কবরকে পরিপূর্ণ করে দেয়। আবার তারা ফিরে গিয়ে বলেনঃ “তোমার উপরের দিকে তাকাও।” সে তাকিয়ে একটা খোলা দরজা দেখতে পায়। তারা বলেনঃ “ওরে আল্লাহর দুশমন! তুই যদি আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করতি তবে এটাই তোর মনযিল হতো।”রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! এ সময় তার অন্তরে অত্যন্ত দুঃখ ও আফসোস হবে যা কখনো দূর হবার নয়। তার জন্যে জাহান্নামের সাতাত্তরটি দরজা খুলে দেয়া হয়। কিয়ামত পর্যন্ত ঐ গুলি হতে গরম বাতাস ও বাষ্প সব সময় তার কবরে আসতে থাকবে। (এ হাদীসটি খুবই গারীব বা দুর্বল এবং খুবই বিস্ময়করও বটে। এ হাদীসে হযরত আনাসের (রাঃ) নিম্নের বর্ণনাকারী ইয়াযীদ রিকাশীর অস্বীকার্য বহু বর্ণনা রয়েছে এবং আমাদের নিকট তার বর্ণনা অত্যন্ত দুর্বল। এই সব ব্যাপার আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কোন মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য শেষ করতেন তখন তিনি তথায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং বলতেনঃ “তোমাদের এই ভাই এর জন্যে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকো এবং কবরে তার অটল ও স্থির থাকার জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা কর। এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হাফিয আবু বকর ইবনু মারদুওয়াই (রঃ) আল্লাহ তাআলার (আরবি) (৬:৯৪) এই উক্তির তাফসীরে একটি দীর্ঘ হাদীস আনয়ন করেছেন। ওটা খুবই গরীব, বিস্ময়কর ও দুর্বল হাদীস।
۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ
📘 Please check ayah 14:30 for complete tafsir.
جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا ۖ وَبِئْسَ الْقَرَارُ
📘 Please check ayah 14:30 for complete tafsir.
الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا ۚ أُولَٰئِكَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ
📘 ১-৩ নং আয়াতের তাফসীর
‘হুরূফে মুকাত্তাআ’হ’ যা সূরাসমূহের শুরুতে এসে থাকে ওগুলির বর্ণনা পূর্বেই গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এরপর আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! এই ব্যাপক মর্যাদা সম্পন্ন কিতাবটি আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি। এই কিতাবটি অন্যান্য সমূদয় আসমানী কিতাব হতে বেশী উন্নত মানের এবং রাসূলও (সঃ) অন্যান্য সমস্ত রাসূল হতে শ্রেষ্ঠ। যে জায়গায় এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেই জায়গাটিও দুনিয়ার সমস্ত জায়গা হতে উত্তম-এর প্রথম গুণ এই যে, তুমি এর মাধ্যমে জনগণকে অজ্ঞতার অন্ধকার হতে জ্ঞানের আলোকের দিকে নিয়ে আসবে। তোমার প্রথম কাজ এই যে, তুমি পথ ভ্রষ্টতাকে হিদায়াত এবং মন্দকে ভালোর দ্বারা পরিবর্তন ঘটাবে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন মুমিনদের সহায়ক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের সঙ্গী হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ, যা তাদেরকে আলো থেকে সরিয়ে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। প্রকৃত হিদায়াতকারী আল্লাহ তাআ’লাই। রাসূলদের মাধ্যমে যাদের হিদায়াতের তিনি ইচ্ছা করেন তারাই সুপথ প্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং তারাই অপরাজেয়, বিজয়ী এবং সব কিছুর বাদশাহ বনে যায় এবং সর্বাবস্থায় প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে পরিচালিত হয়।(আরবি) শব্দটির অন্য কিরআত (আরবি) ও রয়েছে। প্রথমটি (আরবি) হিসেবে এবং দ্বিতীয়টি নতুন বাক্য হিসেবে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে নবী, সঃ) তুমি বলঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের নিকট সেই আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি যার জন্যে রয়েছে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব।” (৭:১৫৮)আল্লাহপাক বলেনঃ কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ কাফিরদের জন্যে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারা পার্থিব জীবনকে পারলৌকিক জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তারা দুনিয়া লাভের জন্যে পুরো মাত্রায় চেষ্টা-তদবীর করে এবং আখেরাত হতে থাকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। তারা রাসূলদের আনুগত্য হতে অন্যদেরকেও বিরত রাখে। আল্লাহর পথ হচ্ছে সোজা ও পরিষ্কার, তারা সেই পথকে বক্র করতে চায়। তারাই অজ্ঞতা ও ঘোর বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর পথ বক্র হয়ও নি এবং হবেও না। সুতরাং এ অবস্থায় তাদের সংশোধন সুদূর পরাহত।
وَجَعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِهِ ۗ قُلْ تَمَتَّعُوا فَإِنَّ مَصِيرَكُمْ إِلَى النَّارِ
📘 ২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, (আরবি) ব্যবহৃত হয়েছে (আরবি) এর অর্থে। অর্থাৎ তুমি কি জান না? (আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে ধ্বংস (আরবি) হতেই (আরবি) এর অর্থ হয়েছে ধ্বংস প্রাপ্ত কওম। ‘যারা অনুগ্রহের বিনিময়ে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে’-এর দ্বারা হযরত ইবনু। আব্বাসের (রাঃ) মতে মক্কাবাসী কাফিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাঁর আর একটি উক্তি রয়েছে যে, এর দ্বারা জিবিল্লা’ ইবনু আইহাম এবং তার ঐ আরব অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা রোমকদের সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) প্রথম উক্তিটিই প্রসিদ্ধ ও সঠিকতর। তবে শব্দগুলি সাধারণ হিসেবে সমস্ত কাফিরকেই এর অন্তর্ভূক্ত করে।আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) সারা বিশ্বের জন্যে রহমত করে এবং সমস্ত মানুষের জন্যে নিয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই রহমতের ও নিয়ামতের মর্যাদা রক্ষা করেছে সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তি এর মর্যাদা নষ্ট করেছে সে জাহান্নামী। হযরত আলী (রাঃ) হতে ও হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) প্রথম উক্তির সাথে সাদৃশ্য যুক্ত একটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে। ইবনুল কাওয়ার (রাঃ) প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথাই বলেছিলেন যে, এর দ্বারা বদরের দিনের কুরায়েশ কাফিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, এর দ্বারা কুরায়েশ মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একবার হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “কেউ আমাকে কুরআন কারীমের কোন কথা জিজ্ঞেস করবে না কি? আল্লাহর শপথ! আজ যদি কারো কুরআন কারীমের জ্ঞান আমার চেয়ে বেশী থাকতো তবে সমুদ্র পার হলেও আমি তার কাছে অবশ্যই যেতাম।” তার একথা শুনেহযরত আবদুল্লাহ ইবনু কাওয়া’ (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমীরুল মু'মিনীন! আচ্ছা বলুন তো, (আরবি) এটা কাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা হচ্ছে মক্কার কুরায়েশ গোত্র। তাদের কাছে আল্লাহ তাআলার ঈমানরূপ নিয়ামত পৌছেছিল, কিন্তু তারা এ নিয়ামতকে কুফরী দ্বারা বদলিয়ে দিয়েছিল। আর একটি রিওয়াইয়াতে তার থেকে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কুরায়েশদের দু'জন। পাপাচারকে বুঝানো হয়েছে। তারা হচ্ছে বানু উমাইয়া ও বানু মুগীরা। বানু মুগীরা বদরের দিন নিজের কওমকে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন এবং তাদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। আর বানু উমাইয়া নিজের লোকদেরকে উহুদের দিন ধ্বংস করেছিল। বদরের দিন ছিল আবু জেহেল এবং উহুদের দিন ছিলেন আবু সুফিয়ান (রাঃ) । ধ্বংসের ঘর দ্বারা জাহান্নামকে বুঝানো হয়েছে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, বানু মুগীরা তো বদরের দিন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, আর বানু উমাইয়া কিছু কালের জন্যে অবকাশ পেয়েছিলেন।হযরত উমার (রাঃ) হতেও এই আয়াতের তাফসীরে এইরূপই বর্ণিত আছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন তখন তিনি বলেনঃ “এরা দু'জন হচ্ছে কুরায়েশের মন্দ প্রকৃতির লোক। আমার মামারা তো বদরের দিন ধ্বংস হয়ে গেছে, আর তোমার চাচাদেরকে আল্লাহ তাআলা কিছুদিনের জন্যে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন। এরা জাহান্নামে যাবে, যা অত্যন্ত নিকৃষ্টস্থান। তারা নিজেরা শিরক করেছে এবং অন্যদেরকে শিরকের দিকে আহবান করেছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি এদেরকে বলে দাওঃ দুনিয়ায় কিছু দিন ভোগ বিলাসে লিপ্ত থেকে নাও, তোমাদের শেষ ঠিকানা জাহান্নাম।” যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “আমি অল্প কিছুদিন তাদেরকে সুখ ভোগ করতে দেবো, অতঃপর কঠিন শাস্তিতে আসতে তাদেরকে বাধ্য করবো।” তিনি আরো বলেনঃ “পার্থিব জগতে তারা কিছুকাল সুখ ভোগ করবে বটে। কিন্তু এরপর আমার কাছেই তাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর তাদের কৃত কুফরীর কারণে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।”
قُلْ لِعِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا يُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خِلَالٌ
📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা, তার হক মেনে নেয়া এবং তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি ইহসান ও সৎ ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি হুকুম করছেন যে, তারা যেন নামায কায়েম করে যা হচ্ছে এক ও অংশী বিহীন আল্লাহর ইবাদত এবং তারা যেন অবশ্যই আত্মীয় ও অনাত্মীয় সকলকেই যাকাত (এর মাল) দিতে থাকে। নামায কায়েম করা দ্বারা সময় সীমা, বিনয় এবং রূক ও সিজদার হিফাযত করা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দেয়া সম্পদ হতে তাঁর পথে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু কিছু অবশ্যই ব্যয় করতে হবে, যাতে এমন এক দিনে মুক্তি লাভ করা যায় যেই দিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব-ভালবাসা কিছুই থাকবে না। সেদিন কেউ মুক্তিপণ দিয়ে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে চাইলে তা মোটেই সম্ভব হবে না। ওটা হচ্ছে কিয়ামতের দিন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আজ তোমাদের ও কাফিরদের নিকট থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না।” (৫৭:১৫) সেই দিন থাকবেনা বন্ধুত্ব এই উক্তি সম্পর্কে ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, সেখানে কোন বন্ধুর বন্ধুত্বের কারণে কেউ মুক্তি পাবে না, বরং সেদিন ন্যায় বিচারই করা হবে।(আরবি) শব্দটি (আরবি) বা ক্রিয়ামূল। যেমন উক্তিকারীর উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছি, সুতরাং আমি তার সাথে উত্তমরূপে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছি। ইমরুল কায়েসের কবিতায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ-অশ্লীলতার ভয়ে আমি তাদের থেকে প্রবৃত্তিকে ফিরিয়ে নিয়েছি, আর আমি বন্ধুত্ব ও শত্রুতার লক্ষ্য স্থল নই। অর্থাৎ-আমি এমন কাজ করি না। যাতে বন্ধু খুশী হয় এবং শত্রু দুঃখিত হয়।”কাতাদা (রঃ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জানেন যে, দুনিয়ায় ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব-ভালবাসা চলে থাকে। দুনিয়ায় তারা পরস্পর বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে থাকে। সুতরাং মানুষের দেখা উচিত যে, সে কোন লোকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে এবং কিসের উপর ভিত্তি করে করছে। যদি এটা আল্লাহর জন্যে হয় তবে যেন এটা স্থায়ীভাবে রাখে। আর যদি গায়রুল্লাহর জন্যে হয় তবে যেন তা ছিন্ন করে। আমি (ইবনু জারীর (রঃ) বলিঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ “আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, সেখানে ক্রয়-বিক্রয় ও মুক্তিপণ কারো কোন উপকারে আসবে না। সেদিন যদি কেউ পৃথিবীপূর্ণ সোনাও মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চায় তবুও তা গৃহীত হবে না। সেদিন কারো বন্ধুত্ব কোন উপকারে আসবে না এবং কারো সুপারিশও কোন কাজে লাগবে যদি কাফির অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা এমন দিনকে ভয় কর যেই দিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না, কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, সুপারিশ কোন কাজে লাগবে না এবং সাহায্যকৃত হবে না।” (২:১২৩) আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে জীবিকা দান করেছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ কর এমন দিন আসার পূর্বে যেই দিন ক্রয় বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না, আর কাফিররাই হচ্ছে অত্যাচারী।” (২৪:২৫৪)
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْأَنْهَارَ
📘 Please check ayah 14:34 for complete tafsir.
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
📘 Please check ayah 14:34 for complete tafsir.
وَآتَاكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ ۚ وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
📘 ৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা তাঁর অসংখ্য নিয়ামতের কথা বলছেন যা তাঁর মাখলুকাতের উপর রয়েছে। আকাশকে তিনি একটি সুরক্ষিত ছাদ বানিয়ে রেখেছেন। যমীনকে উত্তম বিছানারূপে বিছিয়ে রেখেছেন। আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে যমীন থেকে সুস্বাদু ফল মূল, ফসলের ক্ষেত এবং বাগ-বাগিচা তৈরী করে দিয়েছেন। তাঁরই নির্দেশক্রমে নৌকাসমূহ পানির উপর ভাসমান অবস্থায় চলাফেরা করছে এবং মানুষকে নদীর এক পার থেকে আর এক পারে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষ এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণ করছে। তারা এক জায়গার মাল অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে এবং এইভাবে বেশ লাভবানহচ্ছে। আর এইভাবে তাদের অভিজ্ঞতাও বাড়ছে। নদীগুলিকেও তিনি তাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন। তারা এর পানি নিজেরা পান করছে, অপরকে পান করাচ্ছে, জমিতে সেচন করছে, গোসল করছে, কাপড় চোপড় ধৌত করছে। এবং এই ধরনের বিভিন্ন প্রকারের উপকার লাভ করছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী। অর্থাৎ তারা দিন রাত্রি অবিরাম গতিতে চলতে রয়েছে, অথচ ক্লান্ত হচ্ছে না। আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষ পথে সন্তরণ করে।” (৩২:৪০)আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি অধীন হয়েছে তাঁরই বিধানে, জেনে রেখো যে, সৃষ্টি ও বিধান তাঁরই, বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ কতই না মহান।” তিনি আরো বলেনঃ “তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন, আর সূর্য ও চন্দ্রকে করেছেন তিনি নিয়মাধীন; প্রত্যেকেই পরিভ্রমণ করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত; জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”মহান আল্লাহর উক্তিঃ তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর কাছে যা কিছু চেয়েছে তা হতে।' অর্থাৎ হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে যে সব জিনিসের মুখাপেক্ষী ছিলে তিনি তোমাদেরকে তা সব কিছুই দিয়েছেন। তিনি চাইলেও দেন, না চাইলেও দেন। তাঁর দানের হাত কখনো বন্ধ থাকে না। সুতরাং তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারবে কি? তোমরা যদি তার নিয়ামতগুলি এক এক করে গণনা করতে শুরু কর তবে। গুণে শেষ করতে পারবে না।তালাক ইবনু হাবীব (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআলার হক এর চেয়ে অনেক বেশী যে, বান্দা তা আদায় করতে পারে। আর তাঁর নিয়ামত এর চেয়ে অনেক বেশী যে, বান্দা তা গণনা করতে পারে। সুতরাং হে লোক সকল! সকাল-সন্ধ্যায় তোমরা তার কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকো।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা ও গুণগান আপনারই জন্যে। আমাদের প্রশংসা মোটেই যথেষ্ট নয় এবং তা পূর্ণ ও বেপরোয়াকারীও নয়। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক! (আমাদের অপারগতার জন্যে আমাদেরকে ক্ষমা করুন)”হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের জন্যে তিনটি রেজিস্টার বই বের হবে। একটিতে লিখা থাকবে পুণ্য, একটিতে পাপ এবং তৃতীয়টিতে লিখিত থাকবে আল্লাহ তাআলার নিয়ামত সমূহ। আল্লাহ পাক স্বীয় নিয়ামত সমূহের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা ছোট নিয়ামতকে বলবেনঃ “ওঠো এবং তোমার প্রতিদান তার নেক আমল সমূহ হতে নিয়ে নাও।” এতে তার সমস্ত আমল শেষ হয়ে যাবে, অথচ ঐ ছোট নিয়ামতটি সেখান হতে সরে গিয়ে বলবেঃ “(হে আল্লাহ!) আপনার মর্যাদার শপথ! আমার পূণ্যমূল্য এখনো আমি পাইনি।”এখন পাপসমূহের রেজিস্টার বহি অবশিষ্ট থাকবে, আর ওদিকে নিয়ামতরাজির বহি বাকী থাকবে। অতঃপর যদি বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার করুণা হয় তবে তিনি তার পূণ্য বাড়িয়ে দিবেন পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। আর বলবেনঃ “আমি তোমাকে আমার নিয়ামতরাজির বিনিময় ছাড়াই দান করলাম।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছে। কিন্তু এর সনদ দুর্বল)বর্ণিত আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবো? শুকর করাও তো আপনার একটা নিয়মিত।” উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে দাউদ (আঃ) । এখন তো তুমি আমার শুকরিয়া করেই ফেললে। কেননা, তুমি জানতে পারলে এবং স্বীকার করলে যে, তুমি আমার নিয়ামতসমূহের শুকরিয়া আদায় করতে অপারগ।”ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে, যার অসংখ্য নিয়ামতরাজির মধ্যে একটি নিয়ামতের শুকরও নতুন একটি নিয়ামত ছাড়া আমরা আদায় করতে পারি না। ঐ নতুন নিয়ামতের উপর আবার একটা শুকর ওয়াজিব হয়ে যায়। আবার ঐ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক লাভের উপর আর একটি নিয়ামত লভি হয় যার উপর আবার শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। একজন কবি এই বিষয়টিকেই নিজের কবিতার মধ্যে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি আমার দেহের প্রতিটি লোমের ভাষা থাকতো এবং আপনার নিয়ামতরাজির শুকরিয়া আদায় করতো তবুও তা শেষ হতো না, বরং নিয়ামত আরো বেড়েই যেতো। আপনার ইহসান ও নিয়ামত অসংখ্য।”
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ
📘 Please check ayah 14:36 for complete tafsir.
رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ ۖ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
📘 ৩৫-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর
এই স্থলে আল্লাহ তাআলা আরবের মুশরিকদের বিরুদ্ধে হুজ্জত হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন শহর মক্কা প্রথম সূচনাতেই আল্লাহ তাআলার তাওহীদ বা একত্ববাদের উপরেই নির্মাণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ এটা নির্মাণের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এই যে, এখানে শুধুমাত্র একক ও শরীকহীন আল্লাহরই ইবাদত করা হবে। এর প্রথম নির্মাতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ ছাড়া অন্যদের উপাসনাকারীদের থেকে ছিলেন সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত ও পৃথক। এটা যেন নিরাপদ শহর হয় এজন্যে তিনি আল্লাহ তাআলা নিকট প্রার্থনা করেছিলেন এবং তিনি তাঁর প্রার্থনা কবুল করেছিলেন। সর্বপ্রথম বরকত ও হিদায়াতপূর্ণ আল্লাহর যে ঘর তা মক্কার এই ঘরটিই বটে। সেখানে অন্যান্য বহু নিদর্শন ছাড়াও মাকামে ইবরাহীম (আঃ) রয়েছে। এই শহরে যে পৌছবে। সে নিরাপত্তা লাভ করবে। এই শহরটি বানানোর পর হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ) প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! এটাকে আপনি নিরাপত্তাপূর্ণ শহর বানিয়ে দিন। এ জন্যেই তিনি বলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাককে (আঃ) দান করেছেন।” হযরত ইসমাঈল (আঃ) বয়সে হযরত ইসহাক (আঃ) অপেক্ষা তের বছরের বড় ছিলেন। দুগ্ধপোষ্য শিশু অবস্থায় যখনহযরত ইসমাঈলকে (আঃ) তাঁর মাতাসহ হযরত ইবরাহীম (আঃ) এখানে এনেছিলেন তার পূর্বেও তিনি এটা নিরাপত্তাপূর্ণ শহর হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু ঐ সময় প্রার্থনার শব্দগুলি ছিল নিম্নরূপঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি এটাকে নিরাপদ শহর করে দিন।” এই দুআ’য় (আরবি) ও (আরবি) নেই। কেননা, এই প্রার্থনা ছিল এই শহরটি জনবসতিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে। আর এর পর শহরটি আবাদ হয়ে গিয়েছিল বলে । শব্দকে আনা হয়েছে। সূরায়ে বাকারায় আমরা এগুলি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় দুআ’য় তিনি তাঁর সন্তানদেরকেও শরীক করেন। অতঃপর তিনি প্রতিমাগুলির পথভ্রষ্টতা ও ওগুলির ফিৎনা অধিকাংশ লোককে বিভ্রান্ত করার কথা বর্ণনা করতঃ তাদের প্রতি (অর্থাৎ প্রতিমা পূজকদের প্রতি) নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং তাদেরকে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন। যেমন হযরত ঈসা (আঃ) বলেছিলেনঃ “যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, এটা শুধু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করা মাত্র। এটা নয় যে, ওটা সংঘটিতহওয়াকে বৈধ মনে করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবরাহীমের (আঃ) (আরবি) এই উক্তিটি এবং হযরত ঈসার (আঃ) (আরবি) (৫:১২৮) এই উক্তিটি পাঠ করেন। অতঃপর হাত উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মত (এর কি হবে!)” এটা তিনি তিনবার বলেন। এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তাঁর কাছে পাঠিয়ে তাঁকে তাঁর কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করতে বললেন। তিনি তখন হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তাঁর কাঁদার কারণ বললেন। তখন আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) হুকুম করলেনঃ “তুমি মুহাম্মদের (সঃ) কাছে গিয়ে বলঃ “আমি (আল্লাহ) তাকে তার উম্মতের ব্যাপারে খুশী করবো, অসন্তুষ্ট করবো না।”
رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
📘 এটা হচ্ছে দ্বিতীয় দুআ। তাঁর প্রথম দুআ হচ্ছে তখনকার দুআ’টি যখন তিনি এই শহরটি আবাদ হওয়ার পূর্বে হযরত ইসমাঈলকে (আঃ) তাঁর মা সহ এখানে ছেড়ে এসেছিলেন। আর এটা হচ্ছে এ শহরটি আবাদ হওয়ার পরের দুআ’। এ জন্যেই তিনি (আরবি) (আপনার পবিত্র গৃহের নিকট) বলেছেন। আর তিনি নামায কায়েম করার কথাও উল্লেখ করেছেন।ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন, যে এটা (আরবি) শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ এটাকে মর্যাদা সম্পন্ন রূপে এজন্যেই বানানো হয়েছে যে, যেন এখানকার লোকেরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে এখানে নামায আদায় করতে পারে। এখানে একথাটিও স্মরণ যোগ্য যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ “কিছু লোকের অন্তর এর প্রতি অনুরাগী করে দিন।” যদি তিনি সমস্ত লোকের অন্তর এর প্রতি অনুরাগী করে দেয়ার প্রার্থনা করতেন তবে পারসিক, রোমক, ইয়াহুদী, খৃস্টান, মোট কথা দুনিয়ার সমস্ত লোক এখানে এসে ভীড় জমাতো। তিনি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যে এই প্রার্থনা করেছিলেন। আর প্রার্থনায় তিনি বললেনঃ “ফলাদির দ্বারা তাদের রিকের ব্যবস্থা করুন।” অথচ এই যমীন ফল উৎপাদনের যোগ্যই নয়। এটা তো অনুর্বর ভূমি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর এই দুআ’ও কবুল করেন। ইরশাদহচ্ছেঃ “আমি কি তাদেরকে মর্যাদা সম্পন্ন নিরাপদ শহর দান করি নাই, যেখানে সর্বপ্রকারের ফল পূর্ণভাবে আমদানি হয়ে থাকে? এই রিকের ব্যবস্থা খাস করে আমার নিকট থেকেই করা হয়েছে।” সুতরাং এটা আল্লাহ তাআলার একটা বিশেষ দান ও রহমত যে, এই শহরে কোন কিছুই জন্মে না, অথচ চতুর্দিক থেকে নানা প্রকারের ফল এখানে পূর্ণ মাত্রায় আমদানিহচ্ছে। এটা হচ্ছে হযরত ইবরাহীম খালীলুল্লাহরই (আঃ) দুআ’র বরকত।
رَبَّنَا إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِي وَمَا نُعْلِنُ ۗ وَمَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
📘 Please check ayah 14:41 for complete tafsir.
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ
📘 Please check ayah 14:41 for complete tafsir.
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
📘 এটা আল্লাহ তাআলার অসীম মেহেরবানী যে, তিনি প্রত্যেক নবীকে তাঁর কওমের ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন। যাতে বুঝতে ও বুঝাতে সহজ হয়। হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তাঁর কওমের ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তাদের উপর সত্য তো উদভাসিত হয়েই যায়, কিন্তু হিদায়াত ও গুমরাহী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ হতে পারে না। তিনি জয়যুক্ত। তাঁর প্রতিটি কাজ নিপুণতায় পরিপূর্ণ। পথভ্রষ্ট সেই হয় যে ওর যোগ্য। আবার হিদায়াত লাভ সেই করে যে ওর উপযুক্ত পাত্র। যেহেতু প্রত্যেক নবী শুধুমাত্র নিজ নিজ কওমের নিকট প্রেরিত হতেন, সেহেতু তিনি তাঁর কওমের ভাষাতেই কিতাব লাভ করতেন এবং তিনিও সেই ভাষারই লোক হতেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইবনু আবদুল্লাহর রিসালত ছিল সাধারণ। তিনি ছিলেন সারা দুনিয়ার সমস্ত কওমের জন্যে রাসূল। যেমন হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে।যেগুলি আমার পূর্ববর্তী নবীদের কাউকেও দেয়া হয়নি। ১. আমাকে এক মাসের পথের দূরত্বের প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। (এক মাসের পথের দূরত্ব থেকে শত্রুরা আমার নামে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে) । ২, আমার জন্যে (সমস্ত) যমীনকে সিজদা’র স্থান ও পবিত্র বানানো হয়েছে। ৩. আমার জন্যে গনীমতের মালকে হালাল করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কারো জন্যে হালাল ছিল না। ৪. আমার জন্যে শাফায়াত করার অনুমতি রয়েছে। ৫. প্রত্যেক নবীকে শুধুমাত্র তাঁর কওমের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। আর আমি সমস্ত মানুষের নিকট প্রেরিত হয়েছি। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)এর আরো বহু সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এখানে ঘোষণা করেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ হে জনমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।”
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
📘 Please check ayah 14:41 for complete tafsir.
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
📘 ৩৮-৪১ নং আয়াতের তাফসীর
ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ এখানে আল্লাহ তাআলা স্বীয় বন্ধু ইবরাহীম খালীলের (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার ইচ্ছা ও মনের বাসনা আমার চেয়ে আপনিই ভাল জানেন। আমি চাই যে, এখানকার অধিবাসীরা যেন আপনার সন্তুষ্টি কামনাকারী হয় এবং শুধুমাত্র আপনারই প্রতি অনুরাগী হয়। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই আপনার কাছে পূর্ণরূপে জ্বাজ্জল্যমান। যমীন ও আসমানের প্রতিটি জিনিসের অবস্থা সম্পর্কে আপনি ওয়াকিফহাল। এটা আমার প্রতি আপনার বড় অনুগ্রহ যে, এই বৃদ্ধ বয়সেও আপনি আমাকে ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাকের (আঃ) । নয় দু’টি সুসন্তান দান করেছেন। আপনি প্রার্থনা কবুলকারী বটে। আমি চেয়েছি আর আপনি দিয়েছেন। সুতরাং হে আমার প্রতিপালক! এজন্যে আমি আপনার নিকট বড়ই কৃতজ্ঞ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি নামায প্রতিষ্ঠিতকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্যেও এই সিলসিলা বা ক্ৰম কায়েম রাখুন! আমার সমস্ত প্রার্থনা কবুল করুন।” (আরবি) এই কিরআতটি কেউ কেউ (আরবি) এইরূপও করেছেন। এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে, তাঁর পিতা যে আল্লাহর শত্রুতার উপর মারা গিয়েছিল এটা জানতে পারার পূর্বে তিনি এই দুআ করে ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি এটা জানতে পারেন তখন তিনি এর থেকে বিরত থাকেন। এখানে তিনি তাঁর পিতামাতা এবং সমস্ত মুমিনের পাপের জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন যে, আমলের হিসাব গ্রহণ ও বিনিময় প্রদানের দিন যেন তাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয়।
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ
📘 Please check ayah 14:43 for complete tafsir.
مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ ۖ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ
📘 ৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “কেউ যেন এটা মনে না করে যে, যারা অসৎকর্ম করে তাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা উদাসীন, তিনি কোন খবর রাখেন, এজন্যেই তারা দুনিয়ায় সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। বরং আল্লাহ তাআলা এক একজনের এক এক মুহূর্তের ভালমন্দ কাজ সম্পর্কে পুর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি ইচ্ছা করেই তাদেরকে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, উদ্দেশ্য এই যে, হয় তারা দুষ্কর্ম হতে বিরত থাকবে, না হয় তাদের পাপের বোঝা আরো ভারী হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত কিয়ামতের দিন এসে যাবে, যেই দিনের ভয়াবহতায় তাদের চক্ষুগুলিহয়ে যাবে স্থির ও বিস্ফারিত, ভীত বিহ্বল চিত্তে দৃষ্টি উপরের দিকে উঠিয়ে তারা আহ্বানকারীর শব্দের দিকে ছুটাছুটি করবে।” এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষের কবর হতে পুনরুত্থিত হওয়া ও হাশরের মাঠে দাঁড়াবার জন্যে তাড়াহুড়া করার অবস্থা বর্ণনা করছেন।এ দিন তারা সরাসরি ঐ দিকেই দৌড় দেবে এবং সবাই সেদিন সম্পূর্ণরূপে অনুগত হয়ে যাবে। সেখানে হাজিরহওয়ার জন্যে তারা ব্যাকুল হয়ে ফিরবে। চক্ষ তাদের নীচের দিকে ঝুঁকবে না। ভয় ও ত্রাসের কারণে তাদের চোখে পলক পড়বে না। অন্তরের অবস্থা এমন হবে যে, যেন তা উড়ে যাচ্ছে এবং শূন্য পড়ে আছে। ভয় ও আতংক ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। প্রাণ হয়ে পড়বে কণ্ঠাগত। ভীষণ ভয়ের কারণে তা নিজ স্থান থেকে সরে পড়বে এবং অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাবে।
وَأَنْذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُولُ الَّذِينَ ظَلَمُوا رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ نُجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ ۗ أَوَلَمْ تَكُونُوا أَقْسَمْتُمْ مِنْ قَبْلُ مَا لَكُمْ مِنْ زَوَالٍ
📘 Please check ayah 14:46 for complete tafsir.
وَسَكَنْتُمْ فِي مَسَاكِنِ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ وَتَبَيَّنَ لَكُمْ كَيْفَ فَعَلْنَا بِهِمْ وَضَرَبْنَا لَكُمُ الْأَمْثَالَ
📘 Please check ayah 14:46 for complete tafsir.
وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ
📘 ৪৪-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর
যারা নিজেদের নফসের উপর যুলুম করেছে তারা শাস্তি অবলোকন করার পর যা বলবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন। তারা ঐ সময় বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিন, এবার আমরা আপনার ডাকে সাড়া দিবো এবং রাসূলদেরও অনুগত থাকবো।” যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “শেষ পর্যন্ত যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে পড়ে তখন বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আবার ফিরিয়ে দিন।” (২৩:৯৯)আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে-যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।আমি তোমাদেরকে যে রিস্ক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিলে আমি সাকা দিতাম এবং সৎকর্মপরায়ণ হতাম।” কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, কখনো কাউকেও অবকাশ দিবেন। না; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” তাদেরহাশরের মাঠের অবস্থার খবর দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হায়, তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে অধোবদনহয়ে বলবেঃ“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করুন। আমরা সৎকর্ম করবো, আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী।” আর এক আয়াতে রয়েছেঃ “হায়, তুমি যদি দেখতে! যখন তাদেরকে জাহান্নামের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবেঃ “হায়! যদি আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) (৩৫:৩৭) এই আয়াতেও এই ধরনেরই কথা রয়েছে। এখানে তাদের এই কথার জবাবে বলা হয়েছেঃ “তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই কিয়ামত বলতে কিছুই নেই, মৃত্যুর পরে আর পুনরুত্থান হবে না? এখন ওর স্বাদ গ্রহণ কর।” অন্যত্র রয়েছেঃ “তারা খুব দৃঢ় শপথ করে অন্যদেরকেও বিশ্বাস করাতো যে, মৃতদেরকে আল্লাহ তাআ'লা পুনরায় জীবিত করবেন না।”এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা বসবাস করতে তাদের বাসভূমিতে যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কি করেছিলাম তাও তোমাদের নিকট অবিদিত ছিল না, আর তোমাদের নিকট আমি তাদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছো না এবং সতর্ক হচ্ছ না। তারা যতই চতুর হোক না কেন, আল্লাহর সামনে তাদের কোন চালাকী খাটবে না।। আবদুর রহমান ইবনু রাবার (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) এই আয়াত সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল সে গৃধিনীর দুটি বাচ্চা নিয়ে পুষতে থাকে। যখন ওদুটি বড় হয়ে শক্তিশালী হয় তখন ঐ ব্যক্তি ওদের একটিকে একটি ছোট চৌকির একটি পায়ার সাথে বেঁধে দেয় এবং অপরটিকে বাঁধে আর একটি পায়ার সাথে। ওদেরকে কিছুই খেতে দেয় না। অতঃপর সে তার এক সঙ্গীকে নিয়ে এ চৌকির উপর বসে যায় এবং একটি লাঠির মাথায় একখণ্ড গোশত বেধে দিয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে রাখে। ক্ষুধার্ত গৃধিনী দুটি ঐ গোশত খণ্ড খাওয়ার লোভে উপরের দিকে উড়তে শুরু করে এবং এতো শক্তির সাথে উড়ে যে চৌকিটিও ওদের সাথে উপরে উঠে যায়। যখন তারা এতো উপরে উঠেছে যে, সেখান থেকে ঐ লোক দুটি নীচের জিনিসগুলিকে মাছির মত দেখে তখন তারা ঐ লাঠি নীচের দিকে ঝুকিয়ে দেয়। ফলে গৃধিনী দ্বয় গোশত খণ্ড নীচের দিকে দেখতে পায়। সুতরাং তারা পালক সামটে নিয়ে গোশত খণ্ড ধরার লোভে নীচের দিকে নামতে থাকে। কাজেই চৌকিও নামতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত যমীনে নেমে পড়ে। সুতরাং এটাই হচ্ছে সেই চক্রান্ত যার ফলে পাহাড়ও টলে যাওয়া সম্ভব। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) কিরআতে (আরবি) রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) , হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) এবং হযরত উমারেরও (রাঃ) কিরআত এটাই। এই ঘটনা হচ্ছে নমরূদের, যে কিনআ’নের বাদশাহ ছিল। সে এই চক্রান্তের মাধ্যমে আকাশকে দখল করতে। চেয়েছিল। তার পর কির্তীদের বাদশাহ ফিরাউনও এই রূপ বোকামী করেছিল। সে একটি উঁচু স্তম্ভ তৈরী করেছিল। কিন্তু উভয়ের মধ্যেই দুর্বলতা ও অপারগতা প্রকাশ পেয়েছিল এবং তারা পরাজিত, লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত হয়েছিল।”কথিত আছে যে, বাখতে না এই কৌশলে যখন নিজের চৌকিটি অনেক উর্ধ্বে নিয়ে যায়, এমনকি যমীন ও যমীনের অধিবাসী তার দৃষ্টি হতে অদৃশ্য হয়ে যায় তখন তার কাছে এক কুদতরী শব্দ আসেঃ “ওরে অবাধ্য ও বিদ্রোহী! তোর ইচ্ছা কি?” এই শব্দ শুনেই তো তার আক্কেল গুড়ুম। কিছুক্ষণ পর পুনরায় ঐ একই শব্দ তার কানে ভেসে আসে। তখন তো তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি সে তার বর্শা ঝুকিয়ে দিয়ে নীচের দিকে নামতে শুরু করে দেয়।হযরত মুজাহিদের (রঃ) কিরআতে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আরবি) কে (আরবি) নেতিবাচক ধরতেন। অর্থাৎ তাদের চক্রান্ত পর্বত সমূহকে টলাতে পারে না। হযরত হাসান বসরী (রাঃ) এটাই বলেন। ইবনু জারীর (রাঃ) এর ব্যাখ্যা এই দিয়েছেন যে, তাদের শিরক ও কুফরী পর্বতরাজি ইত্যাদিকে সরাতে পারে না এবং কোন ক্ষতি করতে পারে না। এই অপকর্মের বোঝা তাদের নিজেদেরকে বহন করতে হবে। আমি (ইবনু কাসীর (রাঃ) বলি যে, এর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তিটিঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি পৃথিবীতে উদ্যতভাবে বিচরণ করো না, না তুমি যমীনকে। ফেড়ে ওর মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে, পর্বত সমূহের চূড়ায় পৌঁছতে পারবে।” (১৭:৩৭) হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) দ্বিতীয় উক্তি এই যে, তাদের শিরক পর্বত সমূহকে টলিয়ে দেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাতে আকাশ সমূহ বিদীর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়।” (১৯:৯০)। যহাক (রঃ) এবং কাতাদা’র (রঃ) উক্তিও এটাই।
فَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
📘 Please check ayah 14:48 for complete tafsir.
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
📘 ৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা নিজের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিষ্ঠিত ও দৃঢ় করছেন যে, দুনিয়া ও আখেরাতে স্বীয় রাসূলদেরকে সাহায্য করার তিনি যে ওয়াদা করেছেন তার তিনি কখনো ব্যতিক্রম করবেন না। তাঁর উপর কেউ জয়যুক্ত নয়, তিনি সবার উপর জয়যুক্ত। তাঁর ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা হয়েই যায়, তিনি কাফিরদের উপর তাদের কুফরীর প্রতিশোধ গ্রহণ অবশ্যই করবেন। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দুঃখ ও আফসোস করতে হবে। সে দিন যমীন হবে বটে, কিন্তু এটা নয়, বরং অন্যটা। অনুরূপভাবে আসমানও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। হযরত সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এমন সাদা পরিষ্কার যমীনের উপর হাশর করা হবে যেমন ময়দার সাদা রুটী যার উপর কোন দাগ বা চিহ্ন থাকবে না। ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনিই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহকে (সঃ) এই আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ “আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে দিন লোকেরা কোথায় থাকবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “(তারা সেদিন) পুলসিরাতের উপর থাকবে।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশাকে (রাঃ) তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেনঃ “তুমি আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে যা আমার উম্মতের অন্য কেউ জিজ্ঞেস করেনি। (জেনে রেখো যে, ঐ দিন লোকেরা পুলসিরাতের উপর থাকবে।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) (আরবি) (৩৯:৬৭) এই আয়াতের ব্যাপারেও প্রশ্ন করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসুল! সেই দিন লোকেরা কোথায় থাকবে?” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “সেদিন তারা জাহান্নামের পিঠের উপর (অর্থাৎ পুলসিরাতের উপর) থাকবে।” রাসূলুল্লাহর (সঃ) আযাদকৃত ক্রীতদাস হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট দাড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন ইয়াহুদী লেম আগমন করে এবং বলেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আসসালামু আলাইকা (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) ।” আমি তখন তাকে এতো জোরে ধাক্কা মারি যে, সে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন সে আমাকে বলেঃ “আমাকে ধাক্কা মারলে কেন?” আমি উত্তরে বলিঃ বে আদব! ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) না বলে তার নাম নিলে? সে বললোঃ “তাঁর পরিবারের লোক তার যে নাম রেখেছে আমরা তো তাকে সেই নামেই ডাকবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমার পরিবারের লোক আমার নাম মুহাম্মদই (সঃ) রেখেছে বটে।” ইয়াহূদী বললোঃ “আমি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেনঃ “আমার জবাবে তোমার কোন উপকার হবে কি?” সে উত্তরে বলেঃ “শুনে তো নিই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) হাতের যে একটি কুটা (খড়কুটা) ছিল তা মাটিতে ঘুরতে। ঘুরাতে তিনি বলেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে, জিজ্ঞেস কর।” সে জিজ্ঞেস করলোঃ যখন আকাশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে তখন লোকেরা কোথায় থাকবে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “পুলসিরাতের নিকট অন্ধকারের মধ্যে।” সে আবার জিজ্ঞেস করলো “সর্বপ্রথম পুলসিরাত দিয়ে পার হবে কে?” তিনি উত্তর দেনঃ “দরিদ্র মুহাজিরগণ।” সে পুনরায় প্রশ্ন করেঃ “তাদেরকে সর্বপ্রথম কি উপটৌকন দেয়া হবে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “অধিক পরিমাণে মাছের কলিজা।” সে আবার জিজ্ঞেস করেঃ “এরপর তারা কি খাদ্য পাবে?” তিনি উত্তর দেনঃ “জান্নাতী বলদ যবাহ করা হবে, যেগুলি জান্নাতের আশে পাশে চরতো।” সে পুনরায় জিজ্ঞেস করেঃ “তারা পান করার জন্যে কি পাবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “সালসাবীল নামক জান্নাতী নহরের পানি।” ইয়াহুদী তখন বললোঃ “আপনার সমস্ত জবাবই সঠিক। আচ্ছা, আপনাকে আমি আর একটি কথা জিজ্ঞেস করবো যা শুধুমাত্র নবী জানেন এবং দুনিয়ার আর দু'একজন লোকে জানে।” তিনি বললেনঃ “আমার জবাব তোমার কোন উপকারে আসবে কি?” সে জবাবে বললোঃ “কানে শুনে তো নিবো।” অতঃপর সে বললোঃ “সন্তান (পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান) সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? (অর্থাৎ কখনো পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এবং কখন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে)?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “পুরুষের বিশেষ পানি (বীর্য) সাদা বর্ণের হয় এবং নারীর বিশেষ পানি (বীর্য) হলদে রং এর হয়। যখন এই দু’পানি একত্রিত হয় তখন যদি পুরুষের পানি (বীর্য) অধিক হয় তবে আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে থাকে। আর যদি নারীর পানি বেশী হয় তবে আল্লাহ তাআলার হুকুমে কন্যা সন্তান জন্মে।” এই উত্তর শুনে ইয়াহুদী বলে উঠলোঃ “নিশ্চয় আপনি সত্য কথা বলেছেন এবং অবশ্যই আপনি নবী।” অতঃপর ইয়াহূদী চলে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন এই ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করে তখন আমার উত্তর জানা ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সাথে সাথে আমাকে উত্তর জানিয়ে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন ইয়াহূদী আলেম রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “আচ্ছা বলুন তো, আল্লাহ তাআলা যে তার কিতাবে বলেন (আরবি) (অর্থাৎ যে দিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও), তাহলে সারা মাখলুকাত ঐ সময় কোথায় থাকবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ঐ সময় সারা মাখলুকাত আল্লাহর মেহমান বা অতিথি হবে। সুতরাং তার কাছে যা কিছু রয়েছে তা তাদেরকে তাঁকে অসমর্থ করবে না (অর্থাৎ) তাঁর কোন কিছুরই অভাব হবে না।” (এ হাদীসটি আবু জাফর ইবনু জারীর তাবারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আমর ইবনু মায়মূন (রাঃ) বলেন, এই যমীন পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তা হবে সাদা রূপার মত, যাতে থাকবে না কোন রক্তারক্তি এবং থাকবে কোন পাপ কর্ম। চক্ষুগুলি তেজ হবে এবং আহ্বানকারীর শব্দ তাদের কানে অসিবে। সবাই তারা শূন্য পায়ে ও উলঙ্গ দেহে দাঁড়িয়ে থাকবে যেমনভাবে তারা সৃষ্ট হয়েছিল এবং তাদের দেহের ঘর্ম বগার মত হয়ে যাবে (অর্থাৎ তাদের নাক পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।” (এ টা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। একটি মার’ হাদীসে আছে যে, ঐ যমীন সাদা রং -এর হবে। তাতে খুনাখুনি ও কোন পাপের কাজ হবে না। (এ হাদীসকে মারফু’কারী মাত্র একজন বর্ণনাকারী, অর্থাৎ জারীর ইবনু আইয়্যব (রাঃ) তিনি সবল বর্ণনাকারীগণ)হযরত যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইয়াহদীদের কাছে তোক প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি তাদের কাছে কেন লোক পাঠালাম তা তোমরা জান কি?” উত্তরে তারা বলেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন।” তিনি তখন বললেনঃ “আমি তাদেরকে আল্লাহ পাকের (আরবি) এই উক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে তাদের কাছে লোক পাঠালাম। জেনে রেখো যে, সেদিন যমীন রৌপ্যের ন্যায় সাদা বর্ণ ধারণ করবে।” অতঃপর তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তরে বলেঃ ঐ দিন যমীন ময়দার ন্যায় সাদা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। পূর্ববর্তী গুরুজনদের আরো কয়েকজন হতে অনুরূপ রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, সেদিন যমীন হবে রৌপ্যের)হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, সেই দিন যমীন হবে রৌপ্যের এবং আসমান হবে স্বর্ণের। হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেন, সেই দিন আসমান বাগান হয়ে থাকবে। মুহাম্মদ ইবনু কায়েস (রঃ) বলেন, ঐ দিন যমীন রুটী হয়ে যাবে এবং মুমিনরা তাদের পায়ের নীচেই ওকে খাদ্য হিসেবে পাবে। হযরত সাঈদ ইবনু জবাইর (রঃ) অনরূপই বলেন যে, সেদিন যমীন রুটী হয়ে থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন সারা যমীন আগুন হয়ে যাবে। এর পিছনে থাকবে জান্নাত, যার নিয়ামতরাশি বাইরে থেকেই দেখা যাবে। জনগণ ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। তখন পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ শুরু হয়নি। সেই দিনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মানুষ এতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে যে, তাদের দেহের ঘাম প্রথমতঃ তাদের পায়ে থাকবে, অতঃপর ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে পেতে তাদের নাক পর্যন্ত পৌছে যাবে। হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন, আসমান (সে দিন বাগানে রূপান্তরিত হবে, সমুদ্র আগুন হয়ে যাবে এবং যমীনও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সুনানে আবি দাউদে রয়েছেঃ “সমুদ্রের সফর যেন শুধু মাত্র গাজী, হাজী এবং উমরাকারীই করে। কেননা, সমুদ্রের নীচে আগুন রয়েছে এবং আগুনের নীচে সমুদ্র রয়েছে।” সূরের (শিঙ্গার) মাশহুর হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যমীনকে সমতল করে উকাযী চামড়ার মত টানবেন যাতে কোন উঁচু নীচু থাকবে না। তারপর একটি মাত্র আওয়াজের সাথে সাথে সমস্ত মাখলুক ঐ নতুন যমীনে ছড়িয়ে পড়বে।ইরশাদ হচ্ছেঃ “সমস্ত মাখলূক (কবর থেকে বেরিয়ে) আল্লাহর সামনে হাযির হয়ে যাবে, যিনি এক ও পরাক্রমশালী। সবারই স্কন্ধ তাঁর সামনে অবনত থাকে এবং সবাই হয়ে যায় তাঁর অনুগত ও বাধ্য।
وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ
📘 Please check ayah 14:51 for complete tafsir.
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
📘 আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! যেমন আমি তোমাকে আমার রাসূল করে পাঠিয়েছি এবং তোমার উপর আমার কিতাব নাযিল করেছি, উদ্দেশ্য এই যে, তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসবে, অনুরূপ ভাবে আমি মূসাকে (আঃ) রাসুল করে বাণী ইসরাঈলের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তাকে অনেক নিদর্শনও দিয়েছিলাম, যার বর্ণনা (আরবি) (১৭:১০১) এই আয়াতে রয়েছে, তাকেই ঐ একই নির্দেশ দিয়েছিলামঃ লোকদেরকে ভাল কাজের দিকে আহবান করো। তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে এবং অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে সরিয়ে হিদায়াতের দিকে নিয়ে এসো। তাদেরকে (বানী ইসরাঈলকে) আল্লাহর ইহসান সমূহের কথাস্মরণ করিয়ে দাও। সেগুলি হচ্ছেঃ তিনি তাদেরকে ফিরাউনের ন্যায় যালিমের গোলামী থেকে মুক্ত করেছেন, তাদের জন্যে নদীকে খাড়া করে দিয়েছেন, মেঘ দ্বারা তাদের উপর ছায়া করেছেন, ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ নামক খাবার তাদের উপর অবতীর্ণ করেছেন ইত্যাদি বহু নিয়ামত তাদেরকে দান করেছেন। এটা মুজাহিদ (রঃ) কাতাদা (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন বর্ণনা করেছেন।এ সম্পর্কে একটি ‘মরিফু হাদীস এসেছে যা ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বলের (রঃ) পুত্র আবদুল্লাহ (রঃ) তাঁর পিতার মুসনাদে হযরত উবাই ইবনু কাব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) (আরবি) এর তাফসীর করেছেন (আরবি) অর্থাৎ তাদেরকে আল্লাহর নিয়ামত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দাও।' এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এবং ইমাম ইবনু আবিহাতিম (রঃ) মুহাম্মদ ইবন আব্বানের (রঃ) হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন। এটাই অধিকতর সঠিক তাফসীর। আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ এতে তো নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে। অর্থাৎ আমি আমার বান্দা বানী ইসরাঈলের উপর যে ইহসান করেছি, তাদেরকে ফিরাউন ও তার কঠিন লাঞ্ছনা জনক শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছি এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে শিক্ষা ও উপদেশ রয়েছে, যারা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং সুখের সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যেমন কাতাদা (রঃ) বলেন, উত্তম বান্দা হচ্ছে সেই বান্দা, যে বিপদের (পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং সুখের সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।অনুরূপ ভাবে সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনের প্রত্যেক কাজই বিস্ময়কর। আল্লাহ তার জন্যে যে ফায়সালা করেন। সেটাই তার জন্যে কল্যাণকর হয়। যখন তার উপর কোন বিপদ পৌছে তখন সে ধৈর্য ধারণ করে এবং ওটাই তার পক্ষে হয় কল্যাণকর। পক্ষান্তরে যদি সে সুখ শান্তি লাভ করে তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ওটার পরিণামও তার জন্যে কল্যাণকরই হয়ে থাকে।”
سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَىٰ وُجُوهَهُمُ النَّارُ
📘 Please check ayah 14:51 for complete tafsir.
لِيَجْزِيَ اللَّهُ كُلَّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
📘 ৪৯-৫১ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ “কিয়ামতের দিন যমীন ও আসমান তো পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সমস্ত মাখলূক আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। হে নবী (সঃ)! ঐ দিন তুমি পাপী ও অপরাধীদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় দেখতে পাবে। সর্বপ্রকারের গুনাহগার পরস্পরের সাথে মিলিতভাবে থাকবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন (আরবি) অর্থাৎ “একত্রিত কর যালিম ও ওদের সহচরদেরকে।” (৩৭:২২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “দেহে যখন আত্মা পুনঃসংযোজিত হবে।” (৮১:৭) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আর যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় ওর কোন সংকীর্ণ স্থানে। নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে।” (২৫:১৩) আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ এবং শয়তানদেরকে যারা সবাই ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী। আর শৃংখলে আবদ্ধ আরো অনেক কে।” (৩৮:৩৭-৩৮) (আরবি) বলা হয়। বন্দীত্বের শৃংখলকে। ইবনু কুলসুমের কবিতায় (আরবি) এর অর্থ করা হয়েছে শৃংখলে আবদ্ধ বন্দী তাদেরকে যে কাপড় পরিধান করানো হবে তাহবে গন্ধক বা আলকাতরা দ্বারা তৈরী, যা উঁটকে লাগানো হয়। তাতে তাড়াতাড়ি আগুন ধরে যায়। এ শব্দটি (আরবি) ও (আরবি) আছে এবং ও আছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, গলিত তামাকে ‘কাতরান’ বলে। ঐ কঠিন গরম আগুনের মত তামা জাহান্নামীদের পোষাক হবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করবে। মাথা থেকে অগ্নিশিখা উপরের দিকে উঠতে থাকবে। চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে। হযরত আবু মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের মধ্যে এমন চারটি কাজ রয়েছে যা তারা পরিত্যাগ করবে না। ১, আভিজাত্যের গৌরব করা, ২, অন্যের বংশকে বিদ্রুপ করা, ৩. নক্ষত্রের মাধ্যমে পানি চাওয়া, ৪. মৃতের উপর বিলাপ করা। জেনে রেখো যে, মৃতের উপর বিলাপকারিণী মহিলা যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার জামা ও খোস পাচড়ার দোপাট্টা (উত্তরীয়) পরানো হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বিলাপকারিণী যদি তাওবা না করেন তবে তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে দাঁড় করানো হবে, আর তাকে পরানো হবে আলকাতরার জামা এবং অগ্নি তার মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করবে।”মহান আল্লাহর উক্তিঃ “এটা এই জন্যে যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন) প্রত্যেকের কৃতকর্মের প্রতিফল দিবেন। মন্দ লোকদের মন্দ কর্ম তাদের সামনে এসে যাবে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর সত্বরই তিনি তাদের হিসাব গ্রহণ পর্ব শেষ করবেন।” সম্ভবতঃ এটা আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবি) অর্থাৎ “মানুষের হিসাব নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” (২১:১) আবার এরও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটা বান্দার হিসাব গ্রহণের সময়ের বর্ণনা অর্থাৎ তাড়াতাড়ি হিসাব গ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে যাবে। কেন না, তিনি সব কিছুই জানেন এবং তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। সারা মাখলুককে সৃষ্টি করা ও তাদের মৃত্যু ঘটিয়ে পুনরুত্থান করা তাঁর কাছে একজনের মতই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান আমার কাছে এমনই (সহজ) যেমন তোমাদের একজনকে মারা ও জীবিত করা।” (৩১:২৮) হযরত মুজাহিদের (রঃ) উক্তির অর্থ এটাই যে, হিসাব গ্রহণে আল্লাহ তাআ’লা খুবই তাড়াতাড়িকারী। আবার অর্থ দু'টোই হতে পারে। অর্থাৎ হিসাবের সময়ও নিকটবর্তী এবং হিসাবে আল্লাহ তাআলার বিলম্বও নেই। এদিকে শুরু হলো এবং ওদিকে শেষ হয়ে গেল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
هَٰذَا بَلَاغٌ لِلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ
📘 আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এই কুরআন কারীম দুনিয়ায় মহান আল্লাহর স্পষ্ট পয়গাম। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেমন আমি (মুহাম্মদ (সঃ)-এই কুরআনের মাধ্যমে তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌছে।” (৬:১৯) অর্থাৎ সমস্ত মানব ও দানবকে। যেমন এই সূরারই প্রারম্ভে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আলিফ লাম রা, এই কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানব জাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পার (অজ্ঞতার অন্ধকার হতে (হিদায়াতের আলোকের দিকে।” (১৪:১) এই কুরআন কারীমের উদ্দেশ্য এই যে, এর দ্বারা মানব জাতিকে সতর্ক করা ও ভয় প্রদর্শন করা হবে এবং তারা যেন এর হুজ্জত ও দলীল প্রমাণাদি দেখে, পড়ে এবং পড়িয়ে যথার্থভাবে অবহিত হতে পারে যে, আল্লাহ তাআ'লাই একমাত্র উপাসনার যোগ্য। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। ও বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা এটা অনুধাবন করতঃ এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ أَنْجَاكُمْ مِنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُمْ بَلَاءٌ مِنْ رَبِّكُمْ عَظِيمٌ
📘 Please check ayah 14:8 for complete tafsir.
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
📘 Please check ayah 14:8 for complete tafsir.
وَقَالَ مُوسَىٰ إِنْ تَكْفُرُوا أَنْتُمْ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ
📘 ৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় কওমকে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যেমন ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল হতে তাদেরকে রক্ষা করা, যারা তাদেরকে শক্তিহীন করে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকারের উৎপীড়ন চালাতো, এমনকি তাদের সমস্ত পুত্র সন্তানদেরক হত্যা করতো এবং কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত ছাড়তো। হযরত মূসা (আঃ) তাই স্বীয় কওমকে বলছেনঃ এটা তোমাদের উপর আল্লাহর তাআলার এত বড় নিয়ামত যে, এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তোমাদের ক্ষমতার বাইরে। এই বাক্যটির ভাবার্থ এরূপও হতে পারেঃ ফিরাআউনীদের কষ্ট প্রদান প্রকৃতপক্ষে তোমাদের উপর একটা মহাপরীক্ষা ছিল। আবার সম্ভাবনা এও রয়েছে যে, অর্থ দুটোই হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। যেমন আল্লাহ তাআলার বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে ভাল ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা ফিরে আসে।” (৭:১৬৮) মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবি) “যখন তোমাদের প্রতিপালক। তোমাদেরকে অবহিত করলেন। আবার এরূপ অর্থও হতে পারেঃ ‘যখন তোমাদের প্রতিপালক তার মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিরাটত্বে কসম খেলেন। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎঃ “যখন তোমার প্রতিপালক শপথ করে বললেন যে, অবশ্যই তিনি তাদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত পাঠাতে থাকবেন।” (৭:১৬৭)সুতরাং আল্লাহ তাআলার অলংঘনীয় ওয়াদা এবং তাঁর ঘোষণাও বটে যে, তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দিবেন এবং অকৃতজ্ঞ ও নিয়ামত অস্বীকারকারী ও গোপনকারীদের নিয়ামত সমূহ ছিনিয়ে নিবেন, আর তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। হাদীসে এসেছেঃ “বান্দা পাপের কারণে আল্লাহর রুজী থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।” বর্ণিত আছে যে, একজন ভিক্ষুক রাসূলুল্লাহর (সঃ) পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তিনি তাকে একটি খেজুর দেন। সে তাতে রাগান্বিত হয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর অন্য একজন ভিক্ষুক তাঁর পার্শ্ব দিয়ে গেলে তিনি তাকেও একটি খেজুর দেন। সে খুশী হয়ে তা গ্রহণ করে এবং বলেঃ “এটা হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের (সঃ) দানা” এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে চল্লিশ দিরহাম প্রদানের হুকুম দেন।অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাসীকে বলেনঃ “লোকটিকে উম্মে সালমার (রাঃ) নিকট নিয়ে যাও এবং তার কাছে যে। চল্লিশটি দিরহাম রয়েছে তা নিয়ে একে দিয়ে দাও।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে বলেনঃ “তোমরা ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত লোকও যদি আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও তবে তাঁর কি ক্ষতি হবে? তিনি তো তাঁর বান্দাদের হতে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হতে সম্পূর্ণরূপে বেপরোয়া। তিনি তাদের মোটেই মুখাপেক্ষী নন। একমাত্র তিনিই প্রশংসার যোগ্য। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে (জেনে রেখো যে, আল্লাহ। তোমাদের হতে বেপরোয়া।” (৩৯:৭) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা অকৃতজ্ঞ হলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো, আর আল্লাহ তাদের থেকে বেপরোয়া হয়ে গেলেন, আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত, প্রশংসাৰ্য।” (৬৪:৬)হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ। তাআলার উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেঃ “হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম এবং শেষ মানব ও দানব সবাই মিলিতভাবে পরহেযগারহয়ে যায় তবুও আমার রাজ্যের একটুও বৃদ্ধি পাবে না। পক্ষান্তরে হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানব এবং দানব সবাই যদি পাপিষ্ঠ হয়ে যায় তবুও এই কারণে আমার রাজ্য অনুপরিমাণ ও হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রথম এবং শেষ মানব ও দানব সবাই যদি একত্রিত ভাবে একটা ময়দানে দাঁড়িয়ে যায়, অতঃপর আমার কাছে চাইতে থাকে, আর আমি প্রত্যেকের চাহিদা পূর্ণ করে দিই তবুও আমার ভাণ্ডার হতে এই পরিমাণ কমবে যে পরিমাণ পানি সমুদ্র হতে কমে যায় যখন তাতে সুঁই ডুবিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) সুতরাং আল্লাহ তাআলা পবিত্র অভাব মুক্ত এবং প্রশংসাৰ্হ।
أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ ۛ وَالَّذِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ ۛ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا اللَّهُ ۚ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوا أَيْدِيَهُمْ فِي أَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوا إِنَّا كَفَرْنَا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ وَإِنَّا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَنَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ
📘 ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন, এখানে হযরত মূসার (আঃ) অবশিষ্ট ওয়াযের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে কতই না কঠিন শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং কিভাবেই না তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” ইবনু জারীরের (রঃ) এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বাহ্যিক ভাবে তো এটা জানা যাচ্ছে যে, হযরত মূসার (আঃ) ঐ ওয়ায শেষ হয়ে গেছে এবং এখন কুরআন কারীমের নতুন বর্ণনা শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে যে, আ’দ ও সামূদের ঘটনা তাওরাতে ছিলই না। তা হলে এই কথাগুলিও যদি হযরত মূসারই (আঃ) কথা ধরে নেয়া হয় তবে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের ঘটনাবলী ইয়াহূদীদের সামনে বর্ণিত হয়েছিল এবং এ দুটো ঘটনাও তাওরাতে। ছিল। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। মোট কথা, ঐ লোকদের এবং ওদের মত আরো বহু লোকের ঘটনাবলী কুরআন কারীমে আমাদের সামনে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের কাছে আল্লাহর নবীগণ তাঁর নিদর্শনাবলী এবং তাঁর প্রদত্ত মু'জিযা সমূহ নিয়ে আগমন করেছিলেন। তাদের সংখ্যার জ্ঞান মহা মহিমান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। হযরত আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, বংশক্রম বর্ণনাকারীরা ভুল কথক। এমনও বহু উম্মত গত হয়েছে। যাদের সম্পর্কে অবগতি আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নেই। উরওয়া ইবনু যুহাইর (রঃ) বলেন, সা’দ ইবনু আদনানের পরবর্তী নসব নামা সঠিকভাবে কেউ জানে না। তিনি নিজের হাত খানা মুখের উপর নিয়ে গিয়ে বলেনঃ “একটি অর্থ এটা যে, তারা রাসূলদের মুখ বন্ধ করতে শুরু করে। আর এক অর্থ এটাও যে, তারা তাদের নিজেদেরহাত নিজেদের মুখের উপর রেখে বলেঃ রাসূল যা বলছেন তা সব মিথ্যা। এও এক অর্থ হতে পারে যে, তারা নিজেদের মুখে তাঁদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে। এটাও একটা অর্থ হতে পারে যে, তারা রাসূলদের কথার জবাব দিতে না পেরে নীরবতা অবলম্বন করতঃ অঙ্গুলীগুলি মুখের উপর রেখে দেয়। আবার এ অর্থ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এখানে শব্দটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকেঃ (আরবি) এবং তারা (আরবি) দ্বারা (আরবি) অর্থ নিয়ে থাকে। কবিদের কবিতাতেও এর প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন একজন কবি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি ওর ব্যাপারে লাকীত ও তার দল হতে বিমুখ হচ্ছি কিন্তু আমি সানবাস হতে বিমুখ হচ্ছি না।”আর মুজাহিদের (রঃ) উক্তি অনুসারে এর পরবর্তী বাক্যটি ওরই তাফসীর বা ব্যাখ্যা। এ কথাও বলা হয়েছে যে, তারা রাসূলের উপর ক্রোধে তাদের অঙ্গুলিগুলি তাদের মুখে পুরে দেয়। যেমন এক জায়গায় মুনাফিকদের সম্পর্কে অল্লিাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা নিভৃতে থাকে তখন তোমাদের উপর ক্রোধে তাদের। অঙ্গুলির অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে।” (৩:১১৯) এই অর্থও হবে যে, আল্লাহর কালাম শুনে বিস্মিত হয়ে তারা তাদের হাতগুলি তাদের মুখে রেখে দেয় এবং বলেঃ “আমরা তো তোমার রিসালাত অস্বীকারকারী। আমরা তোমাকে সত্যবাদী মনে করি না। বরং আমরা কঠিন সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।”