slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الروم

(Ar-Rum) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الم

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

ثُمَّ كَانَ عَاقِبَةَ الَّذِينَ أَسَاءُوا السُّوأَىٰ أَنْ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَكَانُوا بِهَا يَسْتَهْزِئُونَ

📘 ৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর যেহেতু এ সৃষ্টি জগতের অণু-পরমাণু আল্লাহ তা'আলার অসীম ক্ষমতার প্রকাশ এবং তার আধিপত্য ও সার্বভৌম ক্ষমতার নিদর্শন, সেহেতু ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা সমগ্র সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা কর। আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নিদর্শনসমূহ দেখে তাঁর পরিচয় লাভ কর এবং তাঁর মহাশক্তির মর্যাদা দাও। কখনো কখনো ঊর্ধাকাশের সৃষ্টি নৈপুণ্যের প্রতি লক্ষ্য কর এবং কখনো কখনো যমীনের সৃষ্টিতত্ত্বের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। এসব বৃথা বা বিনা কারণে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এগুলোকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসীম ক্ষমতার নিদর্শনরূপে। প্রত্যেক জিনিসের একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে। কিয়ামতেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, যা অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করে না।এরপর নবীদের সত্যবাদিতা প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ চেয়ে দেখো, তাঁদের বিরুদ্ধবাদীদের পরিণাম হয়েছে কত মন্দ! পক্ষান্তরে যারা তাদেরকে মেনে নিয়েছে, উভয় জগতে তাদের কি ধরনের মর্যাদা ও সম্মান লাভ হয়েছে! তোমরা সারা পৃথিবী পরিভ্রমণ করে দেখো, তোমাদের পূর্বের ঘটনাবলীর নিদর্শন দেখতে পাবে। তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিল। তোমাদের অপেক্ষা ধন-দৌলত তাদের বেশী ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যও তারা তোমাদের চেয়ে বেশী করতো। জমি-জমা ও ক্ষেত-খামারও ছিল তাদের তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী। তাদের কাছে রাসূলগণ মু'জিযা ও দলীল প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ঐ হতভাগ্যেরা তাদেরকে মেনে নেয়নি, বরং তাঁদেরকে তারা অবিশ্বাস করেছিল। তারা নানা প্রকারের মন্দকার্যে লিপ্ত থাকতো। অবশেষে আল্লাহর গযব তাদের উপর পতিত হলো। ঐ সময় তাদেরকে উদ্ধার করে এমন কেউ ছিল না। এটা তাদের প্রতি আল্লাহর যুলুম ছিল না। তিনি তাদের মন্দ কর্মের পরিণতি হিসেবেই তাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করেছিলেন। আল্লাহর আয়াতসমূহকে তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো, তাঁর কথায় তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ তাদের বে-ঈমানীর কারণে আমি তাদের অন্তর ও দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিই এবং তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়ে বেড়াতে ছেড়ে দিই।” (৬:১১১) আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা বক্রপথ অবলম্বন করলো তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।” (৬১:৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যদি তারা বিমুখ হয়ে যায় তবে জেনে রেখো যে, তাদের কতক পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করতে চান।" (৫:৪৯) এর উপর ভিত্তি করে শব্দটি (আরবি) বা (আরবি) যবরযুক্ত হবে (আরবি) ক্রিয়ার বা কর্ম হয়ে। এটাও একটা উক্তি যে, (আরবি) এখানে এভাবেই পতিত হয়েছে যে, তাদের পরিণাম মন্দ হয়েছে, কেননা তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। এই হিসেবে এই শব্দটি যবরযুক্ত হবে (আরবি)-এর (আরবি) বা বিধেয় হয়ে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এই ব্যাখ্যাই করেছেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত কাতাদা (রঃ) হতে কথাটা বর্ণনাও করেছেন। যহহাকও (রঃ) একথাই বলেন এবং প্রকৃত ব্যাপারও তাই। কেননা, এরপরেই আছেঃ(আরবি) েঅর্থাৎ “তা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো।”

اللَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

📘 Please check ayah 30:16 for complete tafsir.

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ

📘 Please check ayah 30:16 for complete tafsir.

وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ مِنْ شُرَكَائِهِمْ شُفَعَاءُ وَكَانُوا بِشُرَكَائِهِمْ كَافِرِينَ

📘 Please check ayah 30:16 for complete tafsir.

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ

📘 Please check ayah 30:16 for complete tafsir.

فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ

📘 Please check ayah 30:16 for complete tafsir.

وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ فَأُولَٰئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُونَ

📘 ১১-১৬ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি প্রথমে যেমন সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন, যেভাবে তিনি প্রথমে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার পর পুনরায় সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম হবেন। সবকেই কিয়ামতের দিন তার সামনে হাযির করা হবে। সেখানে তিনি প্রত্যেককে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল প্রদান করবেন। আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের উপাসনা করেছে, তাদের কেউই সেদিন তাদের সুপারিশের জন্যে এগিয়ে আসবে না। কিয়ামতের দিন পাপী ও অপরাধীরা অত্যন্ত অপদস্থ ও একেবারে নির্বাক হয়ে যাবে। যখন তারা সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে যাবে তখন তাদের মিথ্যা ও বাতিল উপাস্যরা তাদের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এই বাতিল উপাস্যদের অবস্থাও তাদের মতই হবে। তারা পরিষ্কারভাবে তাদের উপাসকদেরকে বলে দেবে যে, তাদের সাথে তাদের কোনই সম্পর্ক নেই। কিয়ামত সংঘটিত হবার সাথে সাথেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। তারপর আর তাদের মধ্যে কোন দেখা সাক্ষাৎ হবে না। সৎকর্মশীলরা ইল্লীঈনে চলে যাবে এবং পাপী ও অপরাধীরা চলে যাবে সিজ্জীনে। ওরা সবচেয়ে উঁচু স্থানে অতি উৎকৃষ্ট অবস্থায় অবস্থান করবে। আর এরা সর্বনিম্ন স্থানে অতি নিকৃষ্ট অবস্থায় থাকবে। আল্লাহ তা'আলা এখানে একথাই বলছেন যে, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে আনন্দে থাকবে এবং যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও পরলোকের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করেছে, তারাই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ

📘 Please check ayah 30:19 for complete tafsir.

وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ

📘 Please check ayah 30:19 for complete tafsir.

يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ وَكَذَٰلِكَ تُخْرَجُونَ

📘 ১৭-১৯ নং আয়াতের তাফসীর সেই আল্লাহ তাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য এবং সার্বভৌম ও সীমাহীন রাজত্বের প্রকাশ ঘটবে তার তাসবীহ পাঠ ও প্রশংসা কীর্তনের মাধ্যমে। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদেরকে সে দিকেই পথ নির্দেশ করেছেন। তিনি যে মহান ও পবিত্র এবং তিনি যে প্রশংসার যোগ্য তারই বর্ণনা তিনি দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় যখন ঘনঘটা অন্ধকার বয়ে আনে তখন এরপর দিন জ্যোতির্ময় আলোক নিয়ে হাযির হয়। এতোটুকু বর্ণনা করার পর তার পরবর্তী বাক্য বর্ণনা করার আগেই এ কথাগুলো প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, দুনিয়া ও আসমানে প্রশংসার যোগ্য একমাত্র তিনিই। তাঁর সৃষ্টিই স্বয়ং তার মর্যাদার ও বুযুর্গীর দলীল। সকাল ও সন্ধ্যার তাসবীহ পাঠের কথা বলার পর এশা ও যোহরের সময়ের কথা তিনি জুড়ে দিয়েছেন। রাত্রি হলো কঠিন অন্ধকারের সময় এবং এশা ও যোহর হলো পূর্ণ অন্ধকার ও আলোকোজ্জ্বলের সময়। নিশ্চয়ই সমস্ত পবিত্রতা ও মহিমা তাঁরই জন্যে শোভনীয় যিনি রাত্রির অন্ধকার ও দিনের ঔজ্জ্বল্য সষ্টিকারী। তিনিই সকালকে প্রকাশকারী ও রাত্রিকে বিশ্রামের জন্যে সৃষ্টিকারী। এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “শপথ দিবসের, যখন ওটা (সূর্য) ওকে প্রকাশ করে এবং শপথ রজনীর, যখন ওটা ওকে আচ্ছাদিত করে।" (৯১:৩-৪) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “শপথ পূর্বাহের এবং শপথ রজনীর যখন ওটা হয় নিঝুম।” (৯৩:১-২)।হযরত মুআয ইবনে আনাস আলজুহনী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে বিশ্বস্ত বন্ধু আখ্যায় কেন আখ্যায়িত করেছেন এ খবর কি দেবো না? কারণ এই যে, সকালে ও সন্ধ্যায় তিনি এই কালেমাগুলো পাঠ করতেন।” অতঃপর তিনি(আরবি) হতে পর্যন্ত দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার দিন-রাতের যা কিছু নষ্ট হয়েছে তা ফিরে পাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তিনিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটিয়ে থাকেন। প্রত্যেক জিনিসের উপর এবং ওর উল্টোর উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি বীজ হতে গাছ, গাছ। হতে বীজ, মুরগী হতে ডিম, ডিম হতে মুরগী, বীর্য হতে মানুষ ও মানুষ হতে বীর্য, মুমিন হতে কাফির ও কাফির হতে মুমিন বের করে থাকেন। মোটকথা, তিনি প্রত্যেক বিষয় ও তার প্রতিপক্ষ বিষয়ের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন। শুষ্ক মাটিতে তিনি আর্দ্রতা আনয়ন করেন এবং অনুর্বর ভূমি থেকেও তিনি ফসল উৎপাদন করেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি এবং যা হতে উৎপন্ন করি শস্য যা তারা ভক্ষণ করে। তাতে আমি সৃষ্টি করি খর্জুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্রবণ।" (৩৬:৩৩-৩৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, অতঃপর তাতে আমি বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ ...... যারা কবরে আছে তাদেরকে আল্লাহ নিশ্চয়ই পুনরুত্থিত করবেন।” (২২:৫-৭) আরো বহু জায়গায় এ ধরনের আয়াত কোথাও সংক্ষিপ্ত আবার কোথাও বিস্তারিতভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন। এখানে আল্লাহ পাক বলেনঃ এভাবেই তোমরাও সবাই মৃত্যুর পরে (কবর হতে) উথিত হবে।

غُلِبَتِ الرُّومُ

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا أَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُونَ

📘 Please check ayah 30:21 for complete tafsir.

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

📘 ২০-২১ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আর সমগ্র মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু অপবিত্র পানি (বীর্য) দ্বারা। অতঃপর মানুষকে তিনি খুবই সুদর্শন করে তুলেছেন। শুক্রকে তিনি জমাট রক্তে, অতঃপর গোশতে পরিণত করেছেন ও তার উপর অস্থি তৈরী করেছেন। আর অস্থিগুলোকে তিনি গোশতের আবরণ দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। তারপর তিনি তাতে রূহ ফুকে দিয়েছেন। এরপর নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু সৃষ্টি করেছেন এবং মায়ের পেট হতে নিরাপদে বের করে এনেছেন। অতঃপর দুর্বলতা দূর করে দিয়ে সবলতা প্রদান করেছেন। দিন দিন শক্তিকে আরো মযবূত করেছেন। বেশ ক্ষমতাবান করে গড়ে তুলেছেন। আয়ু দান করেছেন এবং নড়াচড়া করার ও আরামের শক্তি দিয়েছেন। নানা প্রকার উপকরণ ও শারীরিক কলকজা দান করেছেন। তাদেরকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা করেছেন। এখান থেকে সেখানে এবং সেখান থেকে এখানে আসার শক্তি যুগিয়েছেন।সাগরের পানিতে, মাটির উপরে ঘুরে বেড়াবার জন্যে নানা প্রকার। আরোহণযোগ্য যন্ত্র ও জন্তুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, প্রচেষ্টা চালাবার ক্ষমতা, ধ্যান, গবেষণা ইত্যাদির জন্যে মস্তিষ্ক দান করেছেন। তিনি পার্থিব কাজ কারবার বুঝবার ক্ষমতা দিয়েছেন। আখিরাতে পরিত্রাণ লাভের জ্ঞান দান করেছেন এবং আমল শিখিয়েছেন। পবিত্রময় ঐ আল্লাহ যিনি মানব জাতিকে প্রত্যেক কাজের অনুমান করার শক্তি দিয়েছেন, প্রত্যেককে এক এক মর্যাদায় রেখেছেন। দৈহিক গঠন ও আকৃতি, কথাবার্তা, ধনী-নির্ধন, জ্ঞানী-অজ্ঞান, ভাল-মন্দ নির্বাচন শক্তি, দয়া-দাক্ষিণ্য, দানশীলতা ও কার্পণ্য ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে প্রত্যেককে পৃথক পৃথক করেছেন। যাতে প্রত্যেকে মহান প্রতিপালকের বহু নিদর্শন নিজের মধ্যে ও অন্যের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে দেখে নিতে পারে।হযরত আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা সমগ্র পৃথিবী হতে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তা দিয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মাটির রঙ এর ন্যায় মানুষের রঙ হয়ে থাকে। কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ লাল, কেউ অত্যন্ত খারাপ স্বভাবের, কেউ অত্যন্ত ভাল স্বভাবের, কেউ খুব মিশুক, কেউ বদমেজাযী ইত্যাদি নানা প্রকারের হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এও রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “আল্লাহ তিনিই যিনি তোমাদেরকে একই নফস হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।”আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ)-এর বাম দিকের ক্ষুদ্র বক্ষাস্থি হতে হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব এটা চিন্তার বিষয় যে, যদি মহান আল্লাহ মানুষের সঙ্গিনী মানুষ হতে সৃষ্টি না করে অন্য প্রাণী হতে সৃষ্টি করতেন তবে মানুষ এখন যেমন স্ত্রী নিয়ে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা লাভ করে থাকে তা কখনো লাভ করতে পারতো না। প্রেম ও ভালবাসা শুধুমাত্র একই প্রকারের মৌলিক বস্তু হতে লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ পাক স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। স্বামী তো ভালবাসার কারণেই স্ত্রীর দেখা শোনা করে থাকে, তার প্রতি দয়া করে এবং তাকে সদা খেয়ালে রাখে। কারণ তার থেকে তার সন্তান জন্মেছে। তাদের দেখা শোনা তাদের উভয়ের মেলামেশার উপর নির্ভরশীল। মোটকথা, আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্যে অনেক কারণ এনে দিয়েছেন যার ফলে তাদের মধ্যে প্রেম-প্রীতি দৃঢ় হয়েছে। এ কারণেই মানুষ নিজ নিজ জীবন-সঙ্গিনী নিয়ে আরাম ও সুখে জীবন যাপন করছে। এগুলোও রাম্বুল আলামীনের একটা মেহেরবানী এবং তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতার একটা বড় নিদর্শন। সামান্য চিন্তা করলেই এ মহান কীর্তি-কলাপ মানুষের চরম জ্ঞানের মূল দেশে পৌঁছে যায়।

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ

📘 Please check ayah 30:23 for complete tafsir.

وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُمْ مِنْ فَضْلِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

📘 ২২-২৩ নং আয়াতের তাফসীর এখানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর মহাশক্তির নিদর্শন বর্ণনা করছেন। এ মহা প্রশস্ত আকাশের সৃষ্টি এবং তা তারকামণ্ডলী দ্বারা সুসজ্জিতকরণ, এগুলোর চাকচিক্য, এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আবর্তনশীল, কোন কোনটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে থাকে, পৃথিবীকে একটি মযবূত রূপদান করে সৃষ্টি করা, তাতে ঘনঘন বৃক্ষরাজি সষ্টি করা, তাতে পাহাড়-পর্বত, প্রশস্ত মাঠ, বন-জঙ্গল, নদ-নদী, সাগর-উপসাগর, উঁচু উঁচু টিলা, পাথর, বড় বড় গাছ ইত্যাদি সৃষ্টি করা, মানুষের ভাষা ও রং-এর বিভিন্নতা, আরবের ভাষা তাতারীরা বুঝে না, কুর্দিদের ভাষা রোমকরা বুঝে না, ইংরেজদের ভাষা তুর্কিরা বুঝে না, বার্বারদের ভাষা হাবশীরা বুঝতে পারে না, ভারতীয়দের ভাষা ইরাকীরা বুঝে না, ইনতাকালিয়া, আরমানিয়া, জাযীরিয়া ইত্যাদি, আল্লাহ জানেন আরো কত ভাষা আছে যা আদম সন্তানরা বলে থাকে। এগুলো বিশ্ব প্রতিপালকের মহাশক্তির নিদর্শন নয় কি?” ভাষার বিভিন্নতার পরে আসে রঙ-এর পার্থক্য। এগুলো নিঃসন্দেহে আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতার বিকাশ ও অসীম শক্তির নিদর্শন।একটু চিন্তা-গবেষণা করলেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়তে হবে যে, কোথাও হয়তো লক্ষ লক্ষ লোক একত্রিত হলো। সবাই একই বংশের, একই গোত্রের, একই দেশের এবং একই ভাষাভাষী লোক হতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন দিক দিয়েই কোন পার্থক্য থাকবে না এটা সম্ভব নয়। অথচ মানবীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিসেবে তাদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। সবারই দু’টি চক্ষু, দু’টি পলক, একটি নাক, দু’টি কান, একটি কপাল, একটি মুখ, দু’টি ঠোট, দু’টি গণ্ড ইত্যাদি রয়েছে। এতদসত্ত্বেও একজন অপরজন হতে পৃথক। কোন না কোন এমন গুণ বা বিশেষণ রয়েছে যদ্দ্বারা একজনকে অপরজন হতে অবশ্যই পৃথক করা যাবে। যেমন গাম্ভীর্য, স্বভাব-চরিত্র, কথাবার্তা বলার ভঙ্গিমা ইত্যাদি সবারই একরূপ নয়। যদিও তা কোন কোন সময় গুপ্ত ও হালকা হয়ে থাকে। কেউ খুবই সুন্দর, কেউ বদমেজাযী, সুতরাং রূপ ও আকারে একই মনে হলেও ভালভাবে লক্ষ্য করলে পার্থক্য পরিলক্ষিত হবেই। হয়তো প্রত্যেকেই জ্ঞানী, বড় শক্তিশালী, বড় কারিগর, কিন্তু এতদসত্ত্বেও তাদের কীর্তিকলাপের মাধ্যমে তাদেরকে পৃথক করা যাবেই। নিদ্রা কুদরতের একটি নিদর্শন। এর দ্বারা মানুষ তার ক্লান্তি দূর করে থাকে। এবং আরাম ও শান্তি লাভ করে। এজন্যেই পরম করুণাময় আল্লাহ রাত্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আবার কাজ কামের জন্যে, দুনিয়ার লাভালাভের জন্যে, আয়-উপার্জনের, জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে মহামহিমান্বিত আল্লাহ দিবস বানিয়েছেন। দিবস রজনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। অবশ্যই জ্ঞানী-বুদ্ধিমানদের জন্যে এগুলো আল্লাহ তা'আলার পূর্ণ ক্ষমতার বড় নিদর্শন। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাত্রে আমার ঘুম হতো না। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এটা বললাম। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি নিম্নের দু'আটি পাঠ করবেঃ (আরবি) আমি দুআটি পড়তে থাকলাম। তখন আমার অসুখ সেরে গেলো এবং নিদ্রা হতে লাগলো।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

وَمِنْ آيَاتِهِ يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

📘 Please check ayah 30:25 for complete tafsir.

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ تَقُومَ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ بِأَمْرِهِ ۚ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً مِنَ الْأَرْضِ إِذَا أَنْتُمْ تَخْرُجُونَ

📘 ২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলার বিরাট সত্তার দলীল স্বরূপ এখানে আর একটি নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। আকাশে তাঁরই আদেশে বিদ্যুৎ চমকায়। তা দেখে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয় যে, না জানি হয়তো বিদ্যুতের ঝটকা তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। তাই তারা কামনা করে যে, বিদ্যুৎ যেন তাদের উপর পতিত না হয়। আবার মানুষ কখনো আশান্বিত হয় যে, ভালই হয়েছে, এখন বৃষ্টি হবে এবং পানি থৈ থৈ করবে, চারদিকে পানি বয়ে চলবে ইত্যাদি ধরনের আশায় আশান্বিত হয়ে থাকে।আল্লাহ তা'আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এর ফলে যে ভূমি শুষ্ক হয়ে পড়েছিল, যাতে মোটেই রস ছিল না, ওকে তিনি পুনর্জীবিত করে তোলেন। কচি ঘাস জমিতে ঢেউ খেলে যায়। জমিতে নানাবিধ ফসল উৎপন্ন হতে শুরু করে। এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে আল্লাহর অসীম শক্তির নিদর্শন রয়েছে।তাঁর আর একটি নিদর্শন এই যে, যমীন ও আসমান তাঁরই হুকুমে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি আকাশকে পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়তে দেন না। আসমান যমীনকে ধরে আছে এবং ওকে ধ্বংস হতে রক্ষা করছে।হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) যখন কোন কিছু বিশ্বাস করানোর জন্যে শপথ করতেন তখন বলতেনঃ “সেই আল্লাহর কসম, যিনি আসমান ও যমীনকে ধারণ করে আছেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন যমীন ও আসমানকে পরিবর্তন করে দিবেন। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “অতঃপর যখন তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে উঠবার জন্যে একবার আহ্বান করবেন তখন তোমরা উঠে আসবে।” যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যেই দিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন, অতঃপর তাঁর প্রশংসা করতঃ তোমরা সাড়া দেবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, অতি অল্প সময়ই তোমরা অবস্থান করেছিলে।” (১৭:৫২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “এটা তো শুধু এক বিকট শব্দ, তখনই ময়দানে তাদের অবির্ভাব হবে।” (৭৯:১৩-১৪) আরো এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “এটা তো শুধু একটা মহানাদ, তখনই তাদের সবকে হাযির করা হবে আমার সামনে।” (৩৬:৫৩)।

وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ كُلٌّ لَهُ قَانِتُونَ

📘 Please check ayah 30:27 for complete tafsir.

وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ ۚ وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

📘 ২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আসমান ও যমীনের যাবতীয় সৃষ্টবস্তুর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। সবাই তার দাসী অথবা দাস। সবকিছুর অধিপতি একমাত্র তিনিই। তাঁর সামনে সবকিছুই অসহায়।হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে মারফু’রূপে বর্ণিত আছেঃ “কুরআন কারীমে যেখানে কুনূতের উল্লেখ আছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আনুগত্য।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর তিনি এটাকে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন।” পুনর্বারের সৃষ্টি সাধারণতঃ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা সহজতর হয়ে থাকে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ তা করা তাদের উচিত নয়। তারা আমাকে গালি দেয়, অথচ এটা তাদের জন্যে মোটই সমীচীন নয়। তাদের আমাকে মিথা প্রতিপন্ন করা এই যে, তারা বলে‘আল্লাহ তা'আলা যেভাবে আমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা দ্বিতীয়বারের সৃষ্টি সহজতর। আর তাদের আমাকে গালি দেয়া এই যে, তারা বলে- ‘আল্লাহর সন্তান আছে। অথচ আল্লাহ এক ও অভাব মুক্ত। তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন এবং তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মোটকথা, উভয় সৃষ্টিই তার কর্তৃত্বাধীন ও আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। কোন কাজই তার জন্যে কঠিন নয় বা তার শক্তি বহির্ভূত নয়) এটাও হতে পারে যে, সর্বনামটি (আরবি)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। এখানে (আরবি) দ্বারা আল্লাহ তা'আলার তাওহীদে উলুহিয়্যাত ও তাওহীদে রুবুবিয়্যাত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মা’রূদ হিসেবে তিনি একক এবং প্রতিপালক হিসেবেও তিনি একক। এখানে (আরবি) দ্বারা (আরবি) বা তুলনা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা'আলা তো অতুলনীয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেন (আরবি) অর্থাৎ “তাঁর মত বা তাঁর সাথে তুলনীয় কোন কিছুই নেই।” (৪২:১১)এই আয়াতটি বর্ণনা করার সময় কোন কোন তাফসীরকার আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে নিম্নের কবিতাটি রচনা করেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি পুকুরে জমা থাকে ও প্রাতঃসমীরণ ঐ পানিকে আন্দোলিত না করে তবে তাতে আকাশের প্রতিচ্ছবি পরিষ্কারভাবে পরিলক্ষিত হবে এবং সূর্য ও তারকাগুলোকেও ওর মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তরও ঠিক তদ্রুপ যে, তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহিমা ও মর্যাদা সদা অন্তর্চক্ষু দিয়ে দেখতে পান।”এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তাঁর উপর কারো অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সবাই তার অধীনস্থ। প্রত্যেকেই তাঁর সামনে শক্তিহীন ও অসহায়। তার শক্তি ও সার্বভৌম রাজত্ব সমুদয় বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তাঁর কথায়, তাঁর কর্মে, তাঁর আইনে, তাঁর নির্বাচনে, এক কথায় সর্বক্ষেত্রেই তিনি একচ্ছত্র অধিপতি। মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রঃ) বলেছেন যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো। (আরবি) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।

ضَرَبَ لَكُمْ مَثَلًا مِنْ أَنْفُسِكُمْ ۖ هَلْ لَكُمْ مِنْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ شُرَكَاءَ فِي مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنْتُمْ فِيهِ سَوَاءٌ تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنْفُسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

📘 Please check ayah 30:29 for complete tafsir.

بَلِ اتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَهْوَاءَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۖ فَمَنْ يَهْدِي مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ ۖ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ

📘 ২৮-২৯ নং আয়াতের তাফসীর মক্কার কুরায়েশরা ও মুশরিকরা তাদের বুযর্গদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতো। সেই সাথে তারা এটাও বিশ্বাস করতো যে, এরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও তার অধীনস্থ। সুতরাং তারা হজ্ব ও উমরার সময় (আরবি) বলার সাথে সাথে বলতোঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি আপনার নিকট হাযির আছি, আপনার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, কিন্তু এই শরীক যে নিজে এবং যে জিনিসের সে মালিক, সবই আপনার অধিকারভুক্ত।” অর্থাৎ শরীকরা এবং তারা যা কিছুর মালিক তার সব কিছুর মালিক আপনিই। সুতরাং তাদেরকে এমন এক দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যা তারা স্বয়ং নিজেদেরই মধ্যে পেয়ে থাকে এবং যেন তারা একথাটা নিয়ে ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখতে পারে। তাদেরকে বলা হচ্ছে- যা তোমরা বলছো তাতে তোমরা নিজেরাই কি সম্মত হবে? মালিকের ধন-সম্পদের উপর তার গোলাম কি সমানভাবে মালিক হয়? আর সব সময় কি তার এ উৎকণ্ঠা থাকে যে, তার গোলামরা তার ধন-সম্পদ বন্টন করে নিয়ে যাবে? না, তা কখনোই নয়। তাই তাদেরকে বলা হচ্ছে- যখন তোমরা নিজেদের জন্যে এটা পছন্দ কর না যে, গোলামরা তোমাদের ধন-সম্পদের অংশীদার হয়ে যাক, তখন আল্লাহ তা'আলার জন্যে তা পছন্দ করতে পার কি করে? যেমন গোলাম মালিকের সমকক্ষ হতে পারে না, তেমনই আল্লাহর কোন বান্দা তার শরীক ও সমকক্ষ হতে পারে না। সত্যিই এ ধরনের কথা অতি বিস্ময়কর ও বে-ইনসাফি বটে। কি করে মানুষ আল্লাহর জন্যে এমন কিছু প্রমাণ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে যেতে পারে যা তারা নিজেদের জন্যে চিন্তা করতে কষ্ট পায়। নিজেদের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে শুনলেই তারা দুঃখিত হয় এবং মুখ কালো করেফেলে। তারাই আবার আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাদেরকে তাঁর কন্যা। বলে থাকে। এটা অতি অবিচারমূলক কথা নয় কি? অনুরূপভাবে নিজেদের গোলামদেরকে যারা নিজেদের শরীক মনে করতে কখনই পারে না, তারাই আবার কি করে আল্লাহর বান্দা বা দাসকে তার শরীক মনে করে? এগুলো চরম অবিচারমূলক কথা।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাফিররা লাব্বায়েক বলতো এবং লা শারীকা লাকা বলে আল্লাহর অংশীদার উড়িয়ে দিতো। তারাই আবার পরক্ষণে তার শরীক সাব্যস্ত করে তার আনুগত্য স্বীকার করে নিতো। এ কারণেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। বলা হয়েছেঃ তুমি যখন নিজ গোলামকে শরীক স্বীকার করতে পার না তখন আল্লাহর বান্দাকে তার শরীক মনে কর কোন বিচারে? এ পরিষ্কার কথাটা বলার পর ইরশাদ হচ্ছে- এভাবেই আমি বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের নিকট নিদর্শনাবলী বিবৃত করি।' মুশরিকদের কাছে জ্ঞান সম্মত ও শরীয়ত সম্মত কোনই দলীল নেই। তারা যা কিছু বলছে সবই অজ্ঞতা ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই বলছে। যখন তারা হক পথ হতে সরে গেছে তখন তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া কেউই হক পথে আনতে পারবে না। তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। কে আছে যে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঠোট হেলাতে পারে? কে আছে যে তার উপর দয়া করতে পারে যার উপর আল্লাহ দয়া না করেন? তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না।

فِي أَدْنَى الْأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 30:32 for complete tafsir.

۞ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

📘 Please check ayah 30:32 for complete tafsir.

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

📘 ৩০-৩২ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমরা একনিষ্ঠ হয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও, যে দ্বীনকে আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। হে নবী (সঃ)! যে দ্বীনকে আল্লাহ তোমার হাতে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। প্রতিপালকের শান্তিপূর্ণ প্রকৃতির উপর তারাই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যারা এই দ্বীনে ইসলামের অনুসারী। এরই উপর অর্থাৎ তাওহীদের উপর আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রোজে আযলের উপর সকলকে অঙ্গীকারাবদ্ধ করেছেন। তিনি সেই দিন বলেছিলেনঃ “আমি কি তোমাদের সবারই প্রতিপালক নই?" তখন সবাই সমস্বরে উত্তর দিয়েছিলঃ “হ্যা, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক।” হাদীসটি ইনশাআল্লাহ সত্বরই বর্ণনা করা হবে।আল্লাহ তা'আলা সমগ্র সৃষ্টিকে নিজ দ্বীনের উপর সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী সময়ে লোকেরা কেউ ইয়াহূদিয়্যাৎ কেউ নাসরানিয়্যাৎ ককূল করে নিয়েছে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। ইমাম বুখারী (রঃ) এ অর্থই করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির অর্থ দ্বীন ও ফিতরাতে ইসলাম।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু ফিত্রাত বা প্রকৃতির উপর ভূমিষ্ট হয়ে থাকে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও মাজুসী করে গড়ে তোলে। যেমন বকরীর নিখুঁত বাচ্চা পয়দা হয়। অতঃপর বকরীর মালিক ওর কান কেটে দেয়। তারপর তিনি (আরবি) এ আয়াতটি, তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আসওয়াদ ইবনে সারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করি ও তাঁর সাথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আল্লাহর ফলে আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করি। সেদিন মুসলমানরা বহু কাফিরকে হত্যা করে, এমনকি ছোট ছোট শিশুদের উপরও তারা হস্তক্ষেপ করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জানতে পেরে খুব অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! এটা কেমন ধারা হলো যে, তোমরা সীমালংঘন করলে? কি করে আজ ছোট ছোট শিশুদেরকে হত্যা করা হলো?" কোন এক ব্যক্তি উত্তরে বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তারাও তো কাফিরদের সন্তান?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বললেনঃ “না! না জেনে রেখো যে, কাফিরদের শিশুরা তোমাদের অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম। সাবধান! শিশুদেরকে কখনো হত্যা করো না। যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকবে। প্রত্যেক শিশু ফিত্রাতের উপর পয়দা হয়। তারা যা বলে তা ফিত্রাত মুতাবেকই বলে। তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে ইয়াহূদী ও নাসরানী করে গড়ে তোলো।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশুই ফিত্রাতের উপর জন্মগ্রহণ করে, অতঃপর তারা কথা বলতে শিখে। তারপর সে হয়তো অকৃতজ্ঞ (কাফির) হয়ে যায় অথবা কৃতজ্ঞ (মুসলমান) হয়ে যায়।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “যখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেন তখন হতেই তিনি জানেন যে, তারা বড় হলে কি আমল করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার উপর এমন এক যুগ এসেছে যে, আমি বলতাম, মুসলমানদের সন্তানরা মুসলমানদের সাথে এবং মুশরিকদের সন্তানরা মুশরিকদের সাথে হবে। শেষ পর্যন্ত অমুক ব্যক্তি আমাকে অমুক ব্যক্তি হতে শুনালো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেনঃ “তারা বড় হলে কি ধরনের কাজ করবে ও কি মতামত গ্রহণ করবে তা আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আইয়াম ইবনে হিমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ভাষণে বলেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে আদেশ করেছেন যে, আজ তিনি আমাকে যা শিখিয়েছেন এবং তোমরা যা হতে অজ্ঞ রয়েছ, আমি যেন তা তোমাদেরকে শিখিয়ে দিই। আল্লাহ বলেছেনঃ “আমি আমার বান্দাদেরকে যা, দিয়েছি তা তাদের জন্যে হালাল করেছি। আমি আমার সমস্ত বান্দাকে একনিষ্ঠ খাটি ধর্মের অনুসারী করেছি। শয়তান তাদে থেকে বিভ্রান্ত করে দেয়। হালাল বস্তুকে তাদের জন্যে হারাম করে এবং আমার সাথে শরীক স্থাপন করার জন্যে তাদেরকে প্ররোচিত করে। সে এমন কথা বলে যার কোন দলীল প্রমাণ নেই।" আল্লাহ তাআলা দুনিয়াবাসীর প্রতি লক্ষ্য করেছেন এবং আরব আজম সকলকে তিনি অপছন্দ করেছেন। শুধু গুটিকতক আহলে কিতাবকে তিনি পছন্দ করেছেন। তিনি আমাকে বলেনঃ “আমি তোমাকে শুধু পরীক্ষার জন্যে পাঠিয়েছি। তোমারও পরীক্ষা নেয়া হবে এবং তোমার কারণে সবারই পরীক্ষা নেয়া হবে। আমি তোমার উপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করবো যা পানি দিয়ে ধৌত করা যাবে না। তুমি ওটা উঠতে বসতে পাঠ করতে থাকবে।” অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন যে, আমি যেন কুরায়েশদেরকে সাবধান করে দিই। আমি আশংকা প্রকাশ করলাম যে, তারা হয়তো আমার মস্তক খুলে নিয়ে রুটি বানিয়ে নেবে। তখন আমার প্রতিপালক আমাকে বললেনঃ “জেনে রেখো যে, তাদেরকে আমি বের করে দেবো। যেমন তারা তোমাকে বের করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তুমি যুদ্ধ কর, আমি তোমাকে সাহায্য করবো। তুমি খরচ কর, তোমার উপর খরচ করা হবে। তুমি সৈন্য পাঠিয়ে দাও, আমি আরো পাঁচগুণ সৈন্য পাঠিয়ে দেবো। তুমি তোমার অনুগতদেরকে সাথে নিয়ে নাফরমানদের উপর আক্রমণ চালিয়ে দাও।" জান্নাতীরা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথম প্রকার হলো ন্যায় বিচারক বাদশাহ, যাকে সঙ্কর্মের তাওফীক দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার হলো এমন মেহেরবান সহৃদয় লোক যে প্রত্যেক আত্মীয়ের জন্যেই কোমল। তৃতীয় প্রকার হলো ঐ পাকদামান মুসলমান যে ভিক্ষা বৃত্তি হতে বেঁচে থাকে। অথচ পরিবারস্থ বহু লোকের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত। আর জাহান্নামীরা পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথম প্রকার হলো ঐ দুর্বল ব্যক্তি যার আকল বা জ্ঞান নেই, সে তোমাদের মধ্যে তোমাদের অনুসারী বা তাবে’ স্বরূপ। তারা (হালাল) স্ত্রী ও (হালাল) মাল তালাশ করে না। দ্বিতীয় প্রকার হলো এমন খিয়ানতকারী যার কোন লাভ তার জন্যে লুক্কায়িত থাকে না, যদিও ছোট হয়, কিন্তু সে খিয়ানত করবেই। তৃতীয় প্রকার হলো ঐ ব্যক্তি যে সকাল বিকাল তোমাকে তোমার পরিবার ও মাল হতে ধোকা দেয়। তারপর তিনি কৃপণতা ও মিথ্যার এবং বদখাসলত অশ্লীলভাষীর উল্লেখ করেন। (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাই সরল দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। তারা অজ্ঞানতার কারণেই আল্লাহর পবিত্র দ্বীন হতে দূরে সরে যায়, ফলে দ্বীন হতে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার লালসা থাকলেও অধিকাংশ লোক ঈমানদার নয়।” (১২:১০৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তুমি ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানরত অধিকাংশের অনুসারী হও তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে ভ্রষ্ট করে ফেলবে।” (৬:১১৭)মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তার অভিমুখী হয়ে তাঁকে ভয় কর, তাঁরই দিকে ঝুঁকে থাকে এবং তাঁরই দিকে মনোনিবেশ কর। তোমরা নামায কায়েম কর যা সব থেকে বড় ইবাদত এবং সবচেয়ে বড় আনুগত্য। তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। তোমরা নিখুঁতভাবে তার একত্বে বিশ্বাসী হও। তাকে ছেড়ে তোমার মনোবাসনা অন্যের কাছে পূরণের আশা করো না।হযরত মুআয (রাঃ)-এর কাছে হযরত উমার (রাঃ) এ আয়াতের অর্থ জানতে চাইলে তিনি বলেনঃ “এগুলো তিনটি জিনিস এবং এগুলোই নাজাতের উপায়। প্রথম হলো আন্তরিকতা, যা হলো ফিত্রাত বা প্রকৃতি, যার উপর আল্লাহ তা'আলা সমগ্র সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয় হলো নামায। প্রকৃতপক্ষে এটাই দ্বীন। তৃতীয় হলো ইতাআত বা আনুগত্য। এটাই হলো মানুষের জন্যে রক্ষাকবচ।” একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আপনি ঠিকই বলেছেন। তাহলে তো আপনাকে মুশরিকদের সাথে মেলামেশা করতে হবে না এবং তাদের কোন কাজে সাহায্য করা চলবে না। তাদের মত কোন কাজই করা যাবে না।"মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা ঐ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে না যারা নিজেদের দ্বীনকে বদল করে দিয়েছে, কোন কোন কথা মেনে নিয়েছে এবং কোন কোন কথা অস্বীকার করেছে।(আরবি)-এর দ্বিতীয় পঠন রয়েছে। (আরবি) অর্থাৎ তারা দ্বীনকে ছেড়ে দিয়েছে। যেমন ইয়াহুদী, নাসারা, অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক ও অন্যান্য বাতিল পন্থীরা কার্যতঃ তাদের দ্বীনকে ছেড়ে দিয়েছিল। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “যারা নিজেদের দ্বীনে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছে ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও, তাদের বিষয়টি আল্লাহর প্রতি অর্পিত।” (৬:১৫৯)উম্মতে মুহাম্মদী (সঃ)-এর পূর্বে যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল তারা সবাই বাতিল দ্বীনকে ধারণ করে নিয়েছিল। প্রত্যেক দলই দাবী করতো যে, তারা সত্য দ্বীনের উপর রয়েছে এবং অন্যান্য সব দলই বিপথে আছে। আসলে হক বা সত্য তাদের সব দল হতেই লোপ পেয়েছিল। এই উম্মতের মধ্যেও বিভিন্ন দল সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে একটি দল সত্যের উপর রয়েছে এবং অন্যান্য সব দলই বিভ্রান্ত। এই সত্যপন্থী দলটি হলো আত্মলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, যারা আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল (সঃ)-কে ম্যবৃতভাবে ধারণ করে রয়েছে যার উপর সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও মুসলিম ইমামগণ ছিলেন। পূর্বযুগেও এবং এখনও। যেমন মুসতাদরাকে হাকিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মুক্তিপ্রাপ্ত দলটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দল ঐটি যারা ওরই অনুসরণ করবে যার উপর আজ আমি ও আমার সাহাবীগণ রয়েছি।”

وَإِذَا مَسَّ النَّاسَ ضُرٌّ دَعَوْا رَبَّهُمْ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا أَذَاقَهُمْ مِنْهُ رَحْمَةً إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ

📘 Please check ayah 30:37 for complete tafsir.

لِيَكْفُرُوا بِمَا آتَيْنَاهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 30:37 for complete tafsir.

أَمْ أَنْزَلْنَا عَلَيْهِمْ سُلْطَانًا فَهُوَ يَتَكَلَّمُ بِمَا كَانُوا بِهِ يُشْرِكُونَ

📘 Please check ayah 30:37 for complete tafsir.

وَإِذَا أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوا بِهَا ۖ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ إِذَا هُمْ يَقْنَطُونَ

📘 Please check ayah 30:37 for complete tafsir.

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

📘 ৩৩-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাব ও অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন যে, যখন তাদের। উপর দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ আপতিত হয় তখন অংশীবিহীন আল্লাহর কাছে তারা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কষ্ট ও বিপদ হতে মুক্তিলাভের জন্যে প্রার্থনা করে। তারপর যখন আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নিয়ামত তাদের উপর বর্ষণ করেন তখন তারা তার সাথে শিরক করতে শুরু করে দেয়।(আরবি)-এর (আরবি)-কে কেউ কেউ (আরবি) বলেন, আবার কেউ কেউ। (আরবি) বলেন। এখানে (আরবি) ই এ বাক্যের জন্যে উত্তম বলে মনে হচ্ছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা এটা তাদের জন্যে নির্ধারণ করেছেন, অতঃপর তাদেরকে ধমক দিচ্ছেন যে, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।কোন কোন বুযুর্গ ব্যক্তি বলেনঃ “যদি পুলিশ কাউকে ভয় দেখায় ও ধমক দেয় তবে সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাহলে এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, ঐ সত্তার ধমকে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হই না যার অধিকারে সব কিছুই রয়েছে এবং কোন কিছু করার জন্যে হও’ বলাই যার জন্যে যথেষ্ট।”অতঃপর মুশরিকদের নিকট কোন দলীল প্রমাণ না থাকার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি তাদের শিরকের কোন দলীল অবতীর্ণ করিনি। এরপর অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী মানুষের একটি বদ-স্বভাবের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। অতি অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া সব মানুষই সুখের সময় আল্লাহকে ভুলে যায়।আর বিপদে পড়লে একেবারে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং বলেঃ হায়! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল। আমার সুখ-শান্তির আর কোন আশা নেই। কিন্তু মুমিনরা বিপদে পড়লে ধৈর্যধারণ করে এবং সুখের সময় ভাল কাজ করে থাকে। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “মুমিনের জন্যে বিস্ময় যে, আল্লাহ তার জন্যে যা ফায়সালা করেন তা তার জন্যে মঙ্গল ও কল্যাণকরই হয়। যদি তার উপর সুখ-শান্তি আপতিত হয় এবং এজন্যে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তবে সেটাও হয় তার জন্যে কল্যাণকর। আর যদি তাকে বিপদ ও দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে এবং সে ধৈর্যধারণ করে তবে সেটাও হয় তার জন্যে মঙ্গলজনক।”এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা তার রিযক প্রশস্ত করেন অথবা সীমিত করেন? তিনিই মালিক মুখতার। তিনি স্বীয় কৌশল অনুযায়ী দুনিয়াকে সাজিয়েছেন। তিনি কাউকে প্রচুর রিযক দান করেন এবং কাউকে অভাব-অনটনে রাখেন। কেউ অভাবের জীবন বয়ে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, আবার কেউ প্রাচুর্যের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে অবশ্যই মুমিনদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

فَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

📘 Please check ayah 30:40 for complete tafsir.

وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِبًا لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ ۖ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

📘 Please check ayah 30:40 for complete tafsir.

فِي بِضْعِ سِنِينَ ۗ لِلَّهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْ بَعْدُ ۚ وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ۖ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَفْعَلُ مِنْ ذَٰلِكُمْ مِنْ شَيْءٍ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

📘 ৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সম্পর্ক যুক্ত রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। মিসকীন তাকে বলা হয় যার কাছে কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু তা তার প্রয়োজনের পক্ষে যথেষ্ট হয় না। তাদের সাথেও সদ্ব্যবহারের ও তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শনের আদেশ করা হয়েছে। যে মুসাফির বিদেশে গিয়ে খরচ পরিমাণ পয়সার অভাবে পড়েছে তার প্রতিও দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এগুলো তার জন্যে উত্তম কাজ যে আশা পোষণ করে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ লাভ ঘটবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জন্যে এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কিছুই নেই। এ ধরনের লোকই দুনিয়া ও আখিরাতে নাজাত পাবে। দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), যহহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন লোক এ নিয়ত করে দান করে যে, লোকেরা তাকে তার চেয়ে বেশী দান করবে, এ নিয়তে দান করা জায়েয হলেও তাতে তার কোন সওয়াব হবে না। আল্লাহ তা'আলার কাছে তার জন্যে এর কোনই বিনিময় নেই। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে এর থেকেও নিষেধ করেছেন। এ অর্থে এ আদেশ রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর জন্যেই নির্দিষ্ট হবে। যহহাক (রঃ) আল্লাহ তা'আলার উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “বেশী প্রাপ্তির নিয়তে কারো প্রতি অনুগ্রহ করো না।" (৭৪:৬)। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, সুদ দুই প্রকারের রয়েছে। এক হলো ব্যবসায় সুদ। এটা তো হারাম। দ্বিতীয় সুদ হলো এই যে, বেশী পাওয়ার নিয়তে কাউকে কিছু দান করা। এটা বৈধ। অতঃপর তিনি (আরবি) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেন যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে যাকাত আদায়ের সওয়াব তো আছেই। যাকাত প্রদানকারীকে খুবই বরকত দেয়া হয়। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো তা-ই বৃদ্ধি পায় ও তারাই সমৃদ্ধশালী।” অর্থাৎ তাদের জন্যে সওয়াব ও প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছেঃ “হালাল উপার্জন দ্বারা একটি মাত্র খেজর সাদকা করা হলে আল্লাহ রাহমানুর রাহীম স্বীয় দক্ষিণ হস্তে তা গ্রহণ করেন এবং তা এমনভাবে প্রতিপালন করেন ও বাড়িয়ে দেন, যেমনভাবে তোমাদের কেউ ঘোড়া বা উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে থাকে, এমনকি শেষ পর্যন্ত একটি খেজুর উহুদ পাহাড় অপেক্ষাও বড় হয়ে যায়।” আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, আহারদাতা। মানুষ মায়ের পেট হতে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় উলঙ্গ, অজ্ঞ, শ্রবণশক্তিহীন, দৃষ্টিশক্তিহীন, শারীরিক শক্তিহীন অবস্থায় থাকে। আল্লাহ তাআলা তাকে এ সবকিছু দান করেন। ধন-দৌলত দেন, মালিকানা দেন, উপার্জনক্ষম করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করার বুদ্ধি দান করেন। মোটকথা, অসংখ্য নিয়ামত দান করেন।হযরত খালেদ (রাঃ)-এর দুই পুত্র হযরত হাব্বাহ (রাঃ) ও হযরত সাওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তারা বলেন, আমরা একদা নবী (সঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। ঐ সময় তিনি কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা তাঁকে তাঁর কাজে সাহায্য করলাম। তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো, তোমরা রিযক থেকে নিরাশ হয়ো না যে পর্যন্ত তোমাদের মাথা নড়তে থাকে (অর্থাৎ তোমরা জীবিত থাকো)। মানুষ উলঙ্গ ও অভুক্ত অবস্থায় দুনিয়ায় আসে। একটি ছাল বা বাকলও তার পরনে থাকে না। কিন্তু মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে রিযিক দান করেন।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনি এই জীবনের অবসানের পর তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত করবেন। তোমাদের দেব-দেবীগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোন একটিও করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান। তাঁর মহান পবিত্রতম সত্তা এসব হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তাঁর শরীক হালে এ হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। অথবা তার সমকক্ষ কেউ হালে, তার সন্তানাদি ও পিতা-মাতা থাক, তা হতে তিনি বহু ঊর্ধে। তিনি একক, তিনি অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। তার সমকক্ষ কেউই নেই।

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

📘 Please check ayah 30:42 for complete tafsir.

قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلُ ۚ كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُشْرِكِينَ

📘 ৪১-৪২ নং আয়াতের তাফসীর ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইকরামা (রঃ), যহহাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ) প্রমুখ। গুরুজন বলেন যে, এখানে (আরবি) দ্বারা জঙ্গল ও মরু প্রান্তরকে বুঝানো হয়েছে। আর (আরবি) দ্বারা বুঝানো হয়েছে শহর ও গ্রামকে। অন্যেরা বলেন যে, দ্বারা মানুষের সুপরিচিত স্থল ভাগকে বুঝানো হয়েছে এবং (আরবি) দ্বারা বুঝানো হয়েছে। সমুদ্রকে যা মানুষের নিকট পরিচিত।স্থল ভাগের বিপর্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া, ফসল ও ফল-মূল পয়দা না হওয়া এবং দুর্ভিক্ষ হওয়া। আর সমুদ্রের বিপর্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বৃষ্টি না হওয়া, জলজন্তুগুলো অন্ধ হয়ে যাওয়া। মানব হত্যা এবং জলযান জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে জল ও স্থলভাগের বিপর্যয়। এখানে (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দ্বীপসমূহ এবং (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শহর, লোকালয় ইত্যাদি। কিন্তু প্রথম বর্ণিত ব্যাখ্যাটি বেশী প্রকাশমান। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর এ বর্ণনাটিও এর পৃষ্ঠপোষকতা করে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আয়লার বাদশাহর সাথে সন্ধি করেন, তাতে তিনি তার বাহর অর্থাৎ শহরের নাম উল্লেখ করলেন।।ফল বা খাদ্যশস্যের ক্ষতি মানুষের পাপের কারণে হয়ে থাকে। যারা আল্লাহর অবাধ্য তারাই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। আসমান ও যমীনের শুদ্ধি আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের দ্বারা হয়ে থাকে। সুনানে আবি দাউদে হাদীস আছেঃ “যমীনে একটি হদ (পাপের শাস্তি) কায়েম হওয়া যমীনবাসীর পক্ষে চল্লিশ দিনের বৃষ্টি অপেক্ষা উত্তম।” এটা এই কারণে যে, "হদ কায়েম হলে পাপীরা পাপকার্য হতে বিরত থাকবে। আর দুনিয়ায় যখন পাপকার্য বন্ধ হয়ে যাবে তখন দুনিয়াবাসী আসমান ও যমীনের বরকত লাভ করবে। শেষ যুগে যখন হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) পৃথিবীতে নাযিল হবেন। ও পবিত্র শরীয়ত মুতাবেক ফায়সালা দিতে থাকবেন, যেমন শূকরের হত্যা, ক্রুসের পরাজয়, জিযিয়া বন্ধ অর্থাৎ হয় ইসলামের কবুলিয়ত, না হয় যুদ্ধ। তারপর তাঁর সময় দাজ্জাল ও তার অনুসারীদের পতন ও ইয়াজুজ-মাজুজের ধ্বংস সাধন হয়ে যাবে, তখন যমীনকে বলা হবেঃ “তোমার বরকত ফিরিয়ে আন।” সেই দিন একটি ডালিম ফল একটি বড় দলের (খাদ্য হিসেবে) যথেষ্ট হবে। এ ডালিম এতো বড় হবে যে, ওর ছালের নীচে এসব লোক ছায়া গ্রহণ করতে পারবে। একটি উষ্ট্রীর দুগ্ধ একটি গোত্রের জন্যে যথেষ্ট হবে। এসব বরকত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর শরীয়ত জারীকরণের ফলে হবে। তার দেয়া শরীয়ত বিধি যেমন বাড়তে থাকবে এ বরকতের পরিমাণও তেমন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অপরপক্ষে, ফাজের বা পাপাচারী লোকের ব্যাপারে হাদীস শরীফে উল্লিখিত হয়েছে যে, তার মৃত্যুর কারণে শহরের লোকজন, গাছপালা, জীবজন্তু ইত্যাদি সবাই শান্তিলাভ করে থাকে।মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, যিয়াদের আমলে একটি থলে পাওয়া গিয়েছিল যাতে খেজুরের বড় আঁটির মত গমের দানা ছিল। তাতে লিখা ছিলঃ “এটা ঐ সময় উৎপন্ন হতো যখন ন্যায়-নীতিকে কাজে লাগানো হতো।”যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ফাসাদ দ্বারা শিরক উদ্দেশ্য। কিন্তু এ উক্তিটির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে।এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এর ফলে তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করি যাতে তারা ফিরে আসে।” (৭:১৬৮) মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখো, তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে! তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। সেগুলো দেখে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ الْقَيِّمِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا مَرَدَّ لَهُ مِنَ اللَّهِ ۖ يَوْمَئِذٍ يَصَّدَّعُونَ

📘 Please check ayah 30:45 for complete tafsir.

مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهُ ۖ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِأَنْفُسِهِمْ يَمْهَدُونَ

📘 Please check ayah 30:45 for complete tafsir.

لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْ فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ

📘 ৪৩-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর এখানে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদেরকে সরল সঠিক দ্বীনের উপর দৃঢ় থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর ইবাদত করার হিদায়াত করছেন। তিনি বলেনঃ জান-মাল দিয়ে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড় কিয়ামত আসার পূর্বে। যখন কিয়ামত সংঘটনের আদেশ হয়ে যাবে তখন ঐ সময়কে কেউই বন্ধ করতে পারবে না। সেদিন ভাল ও মন্দ পৃথক হয়ে যাবে। একদল তো যাবে এবং আর একদল জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। কাফির তার কুফরীর বোঝার নীচে চাপা পড়ে যাবে। সৎলোকেরা তাদের কৃত সক্কর্মের কারণে উত্তম ও সুখময় স্থানে অবস্থান করবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের পুণ্য। অনেকগুণে বাড়িয়ে দিবেন এবং এভাবে তাদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদান করবেন। তাদের এক একটি পুণ্য দশগুণ হতে বাড়াতে বাড়াতে সাতশ গুণ পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়া হবে। এভাবে আল্লাহ পাক তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। কাফিরদেরকে আল্লাহ তা'আলা ভালবাসেন না। তা সত্ত্বেও তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে।

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ يُرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَلِيُذِيقَكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِأَمْرِهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

📘 Please check ayah 30:47 for complete tafsir.

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَاءُوهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَانْتَقَمْنَا مِنَ الَّذِينَ أَجْرَمُوا ۖ وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ

📘 ৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, বৃষ্টি শুরু হবার পূর্বে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত করে জনগণকে বৃষ্টির আশায় আশান্বিত করা তাঁরই কাজ। তারপর বৃষ্টি প্রদান করে থাকেন তিনিই, যাতে লোকবসতি আবাদ হয়, জীবজন্তু জীবিত থাকে এবং সাগরে জাহাজ চলতে পারে। জাহাজ চলাও আবার বায়ুর উপর নির্ভরশীল। তখন মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও রুজী-রোজগারের জন্যে. এখানে চলাফেরা করতে পারে। অতএব মানুষের উচিত আল্লাহর অসংখ্যা নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।এরপর মহান আল্লাহ প্রিয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেনঃ যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে জানবে যে, এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকেও তাদের উম্মতরা বাঁকা বাঁকা কথা বলেছিল। তাদের কাছে তারাও উজ্জ্বল দলীল প্রমাণ আনয়ন করেছিল এবং মু'জিযা দেখিয়েছিল। অবশেষে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের আল্লাহর আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। মুমিনরা ঐ আযাব থেকে মুক্তি পেয়েছিল। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা নিজ ফযল ও করমে স্বীয় সৎ বান্দাদেরকে সাহায্য করা নিজের উপর অবশ্যকর্তব্য করে নিয়েছেন।হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যদি কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানের ইজ্জত রক্ষা করে তবে আল্লাহর উপর এটা হক যে, তিনি তাকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন।” অতঃপর তিনি (আরবি)-এ আয়াতাংশটি পাঠকরেন। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ ۖ فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ

📘 Please check ayah 30:51 for complete tafsir.

وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلِ أَنْ يُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمُبْلِسِينَ

📘 Please check ayah 30:51 for complete tafsir.

بِنَصْرِ اللَّهِ ۚ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

فَانْظُرْ إِلَىٰ آثَارِ رَحْمَتِ اللَّهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 Please check ayah 30:51 for complete tafsir.

وَلَئِنْ أَرْسَلْنَا رِيحًا فَرَأَوْهُ مُصْفَرًّا لَظَلُّوا مِنْ بَعْدِهِ يَكْفُرُونَ

📘 ৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা এখানে বলছেন যে, তিনি বায়ু পাঠিয়ে দেন, আর তা মেঘমালাকে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। হয়তো সাগর থেকে অথবা অন্য যেখান থেকে ইচ্ছা সেখান থেকে হুকুম করে মেঘমালা আনয়ন করেন। অতঃপর রাব্দুল আলামীন মেঘকে আকাশে ছড়িয়ে দেন, বিস্তার করেন এবং অল্প থেকে বেশী করেন। এটা ঘটে থাকে যে, এক হাত বা দু’হাত মেঘ দেখা গেল, তারপর তা আকাশের চতুর্দিককে আচ্ছন্ন করে ফেললো। এও দেখা যায় যে, সাগর হতে মেঘ উথিত হচ্ছে। এ বিষয়টিকেই এ আয়াতে (আরবি) এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর ঐ মেঘকে খণ্ড খণ্ড করে স্তরে স্তরে সাজানো হয়। এবং পানিতে তা কালো হয়ে যায়। তারপর তা মাটির নিকটবর্তী হয়ে যায়। অতঃপর ঐ মেঘ হতে পানি বর্ষিত হয়। যেখানে বৃষ্টি বর্ষিত হয় সেখানকার লোকের ফসল ফলে যায়। তাই তো আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এরাই বৃষ্টি হতে। নিরাশ হয়ে পড়েছিল। পূর্ণ নৈরাশ্যের সময়, বরং নৈরাশ্যের পর তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং স্থলভাগ জলময় হয়ে ওঠে। এখানে তাকীদ বা গুরুত্ব বুঝাবার জন্যেই শব্দটিকে দুইবার আনা হয়েছে সর্বনামটি -এর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। এও হতে পারে যে, বাক্যের প্রতিষ্ঠার দৃঢ়তার উদ্দেশ্যে আনয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণের পূর্বে তারা বৃষ্টির চরম মুখাপেক্ষী ছিল। এবার তাদের আশা পূর্ণ হয়ে গেল।পূর্বে তারা সময়মত বৃষ্টি বর্ষিত না হওয়ার কারণে নিরাশ হয়ে পড়েছিল। এই নৈরাশ্যের মধ্যে হঠাৎ মেঘ উঠলো ও বৃষ্টি বর্ষিত হলো। বৃষ্টির পানি চারদিকে জমে গেল এবং তাদের শুষ্ক ভূমি সিক্ত হয়ে উঠলো। দুর্ভিক্ষ প্রাচুর্যে পরিবর্তিত হলো। অথবা মাঠ শুষ্ক ছিল, ফসলবিহীন ছিল, এখন বৃষ্টি বর্ষণের ফলে চতুর্দিকে সবুজ ফসল দেখা যেতে লাগলো। তাই তো আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর অনুগ্রহের ফল সম্বন্ধে চিন্তা কর, কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনর্জীবিত করেন। এভাবেই তিনি মৃতকে জীবিত করবেন। কারণ তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।এরপর তিনি বলেনঃ যদি আমি এমন বায় প্রেরণ করি যার ফলে তারা দেখতে পায় যে, তাদের শস্য পীত বর্ণ ধারণ করেছে তখন তো তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছো কি? তোমরা কি ওকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে ওকে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে তোমরা। বলবেঃ আমাদের তো সর্বনাশ হয়েছে! আমরা হৃতসর্বস্ব হয়ে পড়েছি।” (৫৬:৬৩-৬৭) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, বাতাস আট প্রকারের হয়ে থাকে। চারটি রহমতের ও চারটি যহমতের। রহমতের চারটি বাতাসের নাম হলো: নাশেরাত, মুবাশশারাত, মুরসালাত ও যারইয়াত। আর যহমত বা শাস্তির চারটি বাতাসের নাম হলো: আকীম, সারসার, আসেফ ও কাসেফ। এগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি বাতাস শুষ্ক অঞ্চল হতে প্রবাহিত হয়, দ্বিতীয় দুটি প্রবাহিত হয় সামুদ্রিক অঞ্চল হতে।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বাতাস অন্যের মুখাপেক্ষী। অর্থাৎ তা উখিত হয় অন্য যমীন হতে। যখন আল্লাহ তা'আলা আদ জাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি বাতাসের দায়িত্বে নিয়োজিত দারোগাকে এই আদেশ করলেন। দারোগা বললো: “হে আমার প্রতিপালক! আমি কি বায়ুমণ্ডলের ভাণ্ডারের এতোটা ছিদ্র করে দিবো যে পরিমাণ ছিদ্র বলদের নাকের হয়?” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ “না, না তাহলে তো সমগ্র পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যাবে। তাতো নয়, বরং অল্প একটু ছেড়ে দাও, আংটি পরিমাণ হবে।” ঐটুকু পরিমাণ বাতাস যখন ছাড়া হলো ও বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করলো তখন যেখানে ওর ধাক্কা লাগলো সেখানকার সবকিছু ভূমি বরাবর হয়ে গেল। যে অঞ্চলের উপর দিয়ে ঐ বায়ু প্রবাহিত হলো ওর নাম নিশানা মিটিয়ে দিলো। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি গারীব। এর মারফু হওয়া অস্বীকৃত। সম্ববতঃ এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিজস্ব কথা হবে)

فَإِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَىٰ وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ

📘 Please check ayah 30:53 for complete tafsir.

وَمَا أَنْتَ بِهَادِ الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْ ۖ إِنْ تُسْمِعُ إِلَّا مَنْ يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا فَهُمْ مُسْلِمُونَ

📘 ৫২-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! কবরের মৃত ব্যক্তিদেরকে কিছু শুনানো তোমার সাধ্যের অতীত। মৃত ব্যক্তি, যারা কবরে আছে, তাদেরকে তোমার কথা শুনানো যেমন অসম্ভব, তেমনিই কানে যারা বধির, যারা শুনেও শুনে না, যারা তোমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদেরকেও তুমি তোমার কথা শুনাতে পারবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি হক হতে অন্ধ হয়ে গেছে তাকে তুমি পথ দেখাতে ও হিদায়াত করতে পারবে না। হ্যা, আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। যদি তিনি চান তবে মৃতকে জীবিতদের কথা শুনাতে পারেন। সুপথ দেখানো ও পথভ্রষ্ট করা তাঁরই কাজ। তুমি তো শুধু তাকেই শুনাতে পার যে ঈমানের নিকটবর্তী, আল্লাহর কাছে নতশির হতে প্রস্তুত ও তাঁর ফরমাবরদার বা বাধ্য। এরা হক কথা শুনে এবং মানে। এগুলো তো হলো মুসলমানদের অবস্থা। আর পূর্বে যেগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো সেগুলো কাফিরদের অবস্থা। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারাই আহ্বানে সাড়া দেবে যারা কান লাগিয়ে (আল্লাহর কালাম) শুনে এবং মৃতদেরকে আল্লাহ পুনরুজ্জীবিত করবেন, অতঃপর তারই নিকট তারা প্রত্যাবর্তিত হবে।” (৬:৩৬)একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, বদরের যুদ্ধে যেসব মুশরিক মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছিল এবং যাদেরকে বদরের উপত্যকায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাদের মৃত্যুর তিন দিন পরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদেরকে সম্বোধন করে ধমকের সুরে লজ্জিত করছিলেন তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁর নিকট আর করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যারা মরে গেছে তাদেরকে আপনার এভাবে সম্বোধন করার কারণ কি (তারা কি শুনতে পাচ্ছে)?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম! আমি তাদেরকে যা বলছি তা তোমরা ততোটা শুনতে পাও না যতোটা তারা শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারছে না।হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর মুখে এ ঘটনা শুনে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরূপ বলেছিলেনঃ “তারা এখন খুব ভালরূপেই জানছে যে, আমি তাদেরকে যা কিছু বলতাম সবই সত্য ছিল।” অতঃপর হযরত আয়েশা (রাঃ) মৃত ব্যক্তিদের শুনতে পাওয়ার দলীল -(আরবি)-এই আয়াত দ্বারা গ্রহণ করেছেন। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জীবিত করে দিয়েছিলেন। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথা শুনতে পেয়েছিল, যেন তারা যথেষ্ট লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর এ হাদীসকে সবাই সহীহ বলেছেন। কারণ এ হাদীসের বহু সাক্ষী রয়েছেন। ইবনে আবদিল বার (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু’রূপে একটি সহীহ রিওয়াইয়াত উল্লেখ করেছেন যে, যখন কোন লোক তার ভাই-এর কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে যাকে সে দুনিয়ায় চিনতো ও সালাম করতো, তখন আল্লাহ তা'অলা তার রূহকে ফিরিয়ে দেন, যেন সে তার সালামের উত্তর দিতে পারে।

۞ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۖ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ

📘 আল্লাহ তা'আলা মানুষকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন মানুষের উন্নতি অবনতির প্রতি লক্ষ্য করে। মানুষের উৎস তো মাটি। এর থেকেই শুক্রের উৎপত্তি। এরপর জমাট রক্ত। তারপর গোশত, এরপর অস্থি, অস্থির উপর গোশত এবং অবশেষে তাতে রূহ ঠুকে দেয়া হয়। তারপর মায়ের পেট হতে পাতলা ও দুর্বল হয়ে বের হয়ে আসে। আবার ধীরে ধীরে বড় হয়, শক্তি সঞ্চয় করে ও মযবূত হয়। তারপর বাল্যকালের বসন্তকাল দেখে। এরপর যৌবনে পদার্পণ করে। অতঃপর তাকে বার্ধক্য পেয়ে বসে এবং সে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। শক্তিশালী হওয়ার পর মানুষের এই দুর্বলতা তার একটি শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপার। তার চলাফেরা, উঠা-বসা, নাচন-কুদন, মোটকথা তার সমস্ত শক্তি লোপ পায়। শরীরের চামড়া কুঁচকিয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়, গাল বসে যায় এবং চুল সাদা হয়ে যায়। আল্লাহ যা চান তাই করেন। সৃষ্টি ও ধ্বংস তার সীমাহীন শক্তির সামান্যতম বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ সবই তাঁর দান। তিনি সবকিছুরই মালিক। সবকিছুই তার জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে। না তাঁর মত কারো জ্ঞান আছে, না তাঁর মত কারো শক্তি আছে। হযরত আতিয়্যাহ আওফী (রঃ) বলেন, আমি হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর সামনে এই আয়াতটি (আরবি) পর্যন্ত পাঠ করলে তিনিও তা তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “আমিও এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পাঠ করেছিলাম যেমন তুমি আমার সামনে পাঠ করলে। তখন তিনিও এটা পাঠ করেন যেমন আমি তোমার পাঠের পর এটা পাঠ করলাম।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُوا غَيْرَ سَاعَةٍ ۚ كَذَٰلِكَ كَانُوا يُؤْفَكُونَ

📘 Please check ayah 30:57 for complete tafsir.

وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَالْإِيمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِلَىٰ يَوْمِ الْبَعْثِ ۖ فَهَٰذَا يَوْمُ الْبَعْثِ وَلَٰكِنَّكُمْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 30:57 for complete tafsir.

فَيَوْمَئِذٍ لَا يَنْفَعُ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ

📘 ৫৫-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, কাফিররা দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে একেবারেই মূখ। তাদের মূর্খতা এভাবেই প্রকাশ পায় যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। পরকালেও তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করে বলবেঃ আমরা দুনিয়ায় মাত্র এক ঘন্টাকাল অবস্থান করেছি।' একথা বলে তারা প্রমাণ করতে চাইবে যে, এতো কম সময়ের কারণে তাদের উপর কোন দাবী প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমার্হ মনে করা হালে। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, এভাবেই দুনিয়ায় তারা সত্যভ্রষ্ট হতো।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে। তারা (এই অজ্ঞ কাফিরদেরকে) বলবেঃ তোমরা তো আল্লাহর বিধানে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছে। আর এটাই তো পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না। তাই তোমরা অজ্ঞই থেকে গেলে।।সুতরাং কিয়ামতের দিন এই সীমালংঘনকারীদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তাদের ওযর আপত্তি তাদের কোনই উপকারে আসবে না। তাদেরকে আর দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তারা দুনিয়ায় ফিরে আসতে চায় তবে তারা ফিরে আসতে পারবে না।” (৪১:২৪)

وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَلَئِنْ جِئْتَهُمْ بِآيَةٍ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا مُبْطِلُونَ

📘 Please check ayah 30:60 for complete tafsir.

كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 30:60 for complete tafsir.

وَعْدَ اللَّهِ ۖ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ وَعْدَهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 30:7 for complete tafsir.

فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ

📘 ৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সত্যকে আমি এই পাক কালামে পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ও দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছি যাতে সত্য তাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর যেন তারা তাঁর আনুগত্যে আত্মনিয়োগ করে। তাদের কাছে যে কোন মুজিযাই আসুক না কেন, সত্যের নিদর্শন তারা যতই দেখুক না কেন, কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই তারা অবশ্যই বলবেঃ তোমরা তো মিথ্যাশ্রয়ী। এটা যাদু, বাতিল ও মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের কথা বাস্তবায়িত হয়েছে তারা সমস্ত নিদর্শন দেখলেও ঈমান আনয়ন করবে না যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (১০:৯৬-৯৭)তাই এখানে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যাদের জ্ঞান নেই আল্লাহ এইভাবে তাদের অন্তরে মোহর করে দেন। হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের বিরুদ্ধাচরণ ও শত্রুতার উপর ধৈর্যধারণ কর। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। অবশ্যই তিনি একদিন তোমাকে তাদের উপর জয়যুক্ত করবেন এবং তোমাকে সাহায্য করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে তিনি তোমাকে ও তোমার অনুসারীদেরকে বিরুদ্ধাচরণকারীদের উপর বিজয় দান করবেন। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও, কাজের উপর দৃঢ় থাকো। তোমার কাজ হতে এক ইঞ্চি পরিমাণও এদিক-ওদিক হয়ো না। এরই মধ্যে সমস্ত হিদায়াত লুক্কায়িত আছে, বাকীগুলো সবই বাতিলের। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) ফজরের নামায পড়ছিলেন এমন সময় একজন খারেজী তার নাম ধরে নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে অহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক কর তবে অবশ্যই তোমার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (৩৯:৬৫)এটা শুনে হযরত আলী (রাঃ) নীরব হলেন এবং সে যা বললো তা বুঝলেন অতঃপর নামাযের মধ্যেই তিনি জবাবে (আরবি)-এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করলেন। অর্থাৎ “তুমি ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদও সুন্দর এবং মতনও উত্তম)এই পবিত্র সূরাটির ফযীলত এবং ফজরের নামাযে এটা পড়া মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নে দেয়া হল :নবী (সঃ)-এর সহাবীদের এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ছিলেন। এই নামাযে তিনি এই সূরায়ে রূম তিলাওয়াত করেন। ইত্যবসরে কিরআতে তাঁর মনে সংশয় সৃষ্টি হয়। নামায শেষে তিনি সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে এমনও কতকগুলো লোক আমাদের সাথে নামাযে শামিল হয়ে যায় যারা ভালভাবেও নিয়মিত অযু করে না। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা নামাযে দাঁড়াবে তারা যেন উত্তমরূপে অযু করে নেয়। এই হাদীসটি দ্বারা একটি বিস্ময়কর রহস্য উদঘাটিত হলো এবং একটি বড় খবর এই পাওয়া গেল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুক্তাদীদের অযু সম্পূর্ণরূপে ঠিক হওয়ার ক্রিয়া বা প্রভাব তার উপরও পড়েছিল। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, ইমামের নামাযের সাথে মুক্তাদীদের নামাযও মুআল্লাক বা দোদুল্যমান।

يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُونَ

📘 ১-৭ নং আয়াতের তাফসীর এই আয়াতগুলো ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন পারস্য সম্রাট সাবুর সিরিয়া রাজ্য ও জযীরার আশে পাশের শহরগুলোর উপর বিজয় লাভ করে এবং রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস পরাজিত হয়ে কনস্টান্টিনোপলে অবরুদ্ধ হন। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চলতে থাকে। পরিশেষে পরিবর্তন হয় এবং হিরাক্লিয়াসের বিজয় লাভ হয়। বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসছে। এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রোমকদেরকে পরাজয়ের উপর পরাজয় বরণ করতে হয় এবং এতে মুশরিকরা খুবই আনন্দিত হয়। কেননা, তাদের মত পারস্যবাসীরাও ছিল মূর্তিপূজক। আর মুসলমানরা কামনা করতো যে, যেন রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। কেননা, কমপক্ষে তারা আহলে কিতাব তো ছিল।হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ ঘটনাটি বর্ণনা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “রোমকরা সত্বরই বিজয় লাভ করবে।” হযরত আবু বকর (রাঃ) এ খবর মুশরিকদের নিকট পৌছালে তারা বলেঃ “এসো, একটি সময়কাল নির্ধারণ কর। যদি এই সময়ের মধ্যে রোমকরা বিজয় লাভ না করে তবে তোমরা আমাদেরকে এতো এতো দিবে। আর যদি তোমাদের কথা সত্যে পরিণত হয় তবে আমরা তোমাদেরকে এতো এতো দিবো।” সুতরাং পাঁচ বছরের মেয়াদ নির্ধারিত হলো। এই মেয়াদও পূর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু রোমকরা বিজয় লাভে সমর্থ হলো না। হযরত আবু বকর (রাঃ) নবী (সঃ)-এর খিদমতে এ খবরও পৌঁছিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ “দশ বছরের মেয়াদ কেন নির্ধারণ করনি?”হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, কুরআন কারীমে মেয়াদের জন্যে (আরবি) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার প্রয়োগ হয়ে থাকে দশ হতে কমের উপর। হয়েছিলও তাই। দশ বছরের মধ্যেই রোমকরা জয়যুক্ত হয়েছিল। এরই কারণ এ আয়াতে রয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে দুর্বল বলেছেন)হযরত সুফইয়ান (রঃ) বলেন যে, বদরের যুদ্ধের পর রোমকরাও পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, পাঁচটি জিনিস গত হয়ে গেছে। (আরবি) ধোয়া, (আরবি) শাস্তি, (আরবি) আক্রমণ, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, এবং (আরবি) রোমকদের বিজয়। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর শর্ত ছিল সাত বছর। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “(আরবি) শব্দের অর্থ তোমাদের কাছে কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ ‘দশের কম।' রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তখন বললেনঃ “যাও, সময় আরো দু বছর বাড়িয়ে নাও।” সুতরাং ঐ সময়ে রোমকরা বিজয় মাল্যে ভূষিত হয়। ফলে মুসলমানরা আনন্দে মেতে ওঠে। এ আয়াতে এগুলোই উল্লিখিত হয়েছে।অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, মুশরিকরা এ আয়াত শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “এ ব্যাপারেও কি তুমি তোমাদের নবী (সঃ)-কে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস কর?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, তিনি সত্য কথাই বলেছেন।” অতঃপর শর্ত করা হলো এবং মেয়াদ নির্ধারিত হলো। এরপর মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু রোমকরা বিজয় লাভ করতে পারলো না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই শর্তের কথা জানতে পেরে মনঃক্ষুন্ন হন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বলেনঃ “তুমি কেন এ কাজ করতে গেলে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সত্যবাদিতার উপর ভরসা করেই আমি একাজ করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “যাও, সময় বাড়িয়ে দশ বছর করে নাও। যদি তাতে শর্তের মূল্য বাড়াতে হয় তবুও।” তিনি গেলেন। মুশরিকরা তা মেনে নিলো এবং সময় বাড়িয়ে দশ বছর করে দিলো। অতঃপর দশ বছর পূর্ণ না হতেই রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করলো। মাদায়েন পর্যন্ত তাদের সেনাবাহিনী পৌঁছে গেল। সেখানে তারা তাদের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিলো।হযরত আবু বকর (রাঃ) কুরায়েশদের নিকট হতে শর্তের সম্পদ নিয়ে রাসুলল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে ঐ সম্পদ সাদকা করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, এটা বাজি ধরা হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। এতে ছয় বছর সময় ধার্য করা হয়েছিল। এতে আরো আছে যে, যখন এ ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয় তখন বহু মুশিরক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এটা জামেউত তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে।ইমাম সুনায়েদ ইবনে দাউদ (রঃ) স্বীয় তাফসীরে একটি অতি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি এই যে, হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেনঃ পারস্যে একটি স্ত্রীলোক ছিল যার পুত্রেরা ছিল বড় বড় বীরপুরুষ। তারা যেন দেশের বাদশাহই ছিল। কোন এক সময় পারস্য সম্রাট কিসরা স্ত্রীলোকটিকে ডেকে পাঠিয়ে বলেঃ “আমি রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানের ইচ্ছা করেছি এবং তোমার পুত্রদের কোন একজনকে আমার সেনাবাহিনীতে সেনাপতি করতে চাচ্ছি। এখন কাকে সেনাপতি করা যায় তা তুমিই বলে দাও।” একথা শুনে স্ত্রীলোকটি বললো: “আমার অমুক ছেলেটি তো শৃগাল অপেক্ষা বেশী ধোঁকাবাজ এবং শিকারী বাজপাখী হতে বেশী বুদ্ধিমান। আমার এই দ্বিতীয় ছেলেটির নাম ফারখান। সে ধনুকের তীরের ন্যায় ক্ষুরধার। আমার তৃতীয় ছেলেটি হলো শহরবারায। সে আমার তিনটি ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ধৈর্যশীল। এখন আপনি যাকে ইচ্ছা সেনাপতি নিযুক্ত করতে পারেন। বাদশাহ বহুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর শহরবারাযকে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন।সে সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল এবং রোমকদের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করে জয়লাভ করলো। শত্রু পক্ষীয় সৈন্যরা নিহত হলো এবং শহর একেবারে জনশূন্য হয়ে গেল। তাদের ফলবান বৃক্ষাদি ধ্বংস করে দেয়া হলো এবং তাদের সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামল দেশ বিজনে পরিণত হলো। আযরেআ’ত ও বসরাতে যে দুটি শহর ছিল তা আরব-এলাকা সংলগ্ন ছিল। সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হলো এবং পারসিকরা রোমকদের উপর জয়লাভ করলো। এতে কুরায়েশরা খুবই আনন্দ উপভোগ করতে লাগলো। মুসলমানরা। এতে দুঃখিত হলো। কুরায়েশরা মুসলমানদেরকে ঠাট্ট-বিদ্রুপ করতে লাগলো। তারা মুসলমানদেরকে বলতে লাগলো: “তোমরা ও খৃষ্টানরা আহলে কিতাব, আর আমরা ও পারসিকরা অজ্ঞ, মূখ। আমাদের লোকেরা তোমাদের লোকদের উপর জয়লাভ করেছে। এভাবে আমরাও তোমাদের উপর জয়লাভ করবে। এখন যদি আবার যুদ্ধ বেঁধে যায় তাহলে আমরা পারসিকদের ন্যায় জিতে যাবো এবং তোমরা রোমকদের ন্যায় হবে পরাজিত।” এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনের (আরবি) এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) মুশরিকদের নিকট গমন করেন এবং তাদেরকে বলেনঃ “এ বিজয়ে গর্ব করো না, অতিসত্বরই এ বিজয় পরাজয়ে পরিবর্তিত হবে। আমাদের ভাই আহলে কিতাবরা তোমাদের ভাইদের উপর জয়লাভ করবে। আমার এ কথাগুলো তোমরা বিশ্বাস করে নাও, যেহেতু এগুলো আমার কথা নয়, বরং এগুলো হলো আমাদের নবী (সঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী।” তাঁর একথা শুনে উবাই ইবনে খালফ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো: “হে আবুল ফযল (রাঃ)! তুমি মিথ্যা বলছো।” হযরত আবু বকর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তরে বললেনঃ “রে আল্লাহর দুশমন! আমি আমার একথার উপর দশটি উষ্ট্রী বাজি রাখলাম। যদি তিন বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভে সমর্থ না হয় তবে আমি এ দশটি উষ্ট্রী তোমাদেরকে দিয়ে দিবে। আর যদি তারা জয়লাভ করে তবে তোমাদেরকে দশটি উষ্ট্ৰী দিতে হবে। উভয়ের মধ্যে এ শর্ত হয়ে গেল। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এ ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আমি তো তোমাকে তিন বছরের কথা বলিনি। কুরআন কারীমে (আরবি) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার দ্বারা তিন হতে নয় বছর সময়কে বুঝায়। সুতরাং যাও, ফিরে যাও। উন্ত্রীর সংখ্যাও বাড়িয়ে দাও এবং সময়ও কিছু বাড়িয়ে নাও।”হযরত আবু বকর (রাঃ) তখন উবাই-এর কাছে গেলেন। উবাই তাঁকে বললো: “সম্ভবত তুমি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়েছে।” তিনি বললেনঃ “না, বরং আমি পূর্বের চেয়ে আরো শক্ত মন নিয়ে এসেছি।” এসো, সময়ও কিছু বাড়িয়ে নেয়া যাক এবং বাজির মালের পরিমাণও কিছু বাড়িয়ে দেয়া হালে।” সুতরাং বাজির মালের সংখ্যা নির্ধারিত হলো একশটি উট এবং সময়কাল নির্ধারিত হলো ৯ (নয় বছর)। ঐ সময়ের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর জয়লাভ করলো। ফলে মুসলমানরা মুশরিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেললেন। রোমকদের বিজয় লাভের ঘটনা এই যে, পারসিকরা যখন রোমকদের উপর জয়লাভ করে তখন শহর বারাযের ভাই ফারখান মদ্যপানরত অবস্থায় বলেঃ “আমি দেখি যে, আমি যেন কিসরার সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়েছি এবং পারস্যের বাদশাহ হয়ে গেছি।” এ খবর পারস্য সম্রাট কিসরার নিকট পৌছা মাত্রই সে শহরবারাযের কাছে চিঠি লিখলো: “আমার এ পত্র পাওয়া মাত্রই তুমি তোমার ভাই ফারখানের মাথা কেটে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে।” শহরবারা উত্তরে কিসরাকে লিখলো: “হে বাদশাহ! এতো তাড়াতাড়ি করবেন না। ফারখানের মত এতো বড় সাহসী পুরুষ এবং শত্রুবাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ার মত শক্তিশালী যুবক আর কেউই নেই।” সম্রাট পুনরায় লিখলো: “ফারখানের ন্যায় সাহসী বীর পুরুষ আমার দরবারে আরো বহু রয়েছে। এজন্যে তোমাকে চিন্তা করতে হবে। আমার আদেশ তাড়াতাড়ি কার্যকর কর।” শহরবরায আবার উত্তর দিলো এবং সম্রাটকে বুঝালো। এতে সম্রাট ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলো। সে ঘোষণা করলো: “শহরবারাযকে সেনাপতির পদ হতে বরখাস্ত করা হলো এবং তার স্থলে তার ভাই ফারখানকে সেনাপতি নিযুক্ত করা হলো। এভাবে একটি পত্র লিখে দূত মারফত তা শহরবারাযের নিকট পাঠিয়ে দিলো এবং তাকে বলা হলো: “তুমি আজ থেকে সেনাপতির পদ হতে অপসারিত হলে। তুমি তোমার দায়িত্ব ফারখানকে বুঝিয়ে দাও।” সম্রাট এর সাথে আর একটি গোপনীয় পত্র দূতের হাতে দিয়ে বলেছিল যে, শহরবারা যখন তার দায়িত্ব ফারখানকে বুঝিয়ে দেবে তখন এই গোপনীয় পত্রটি যেন সে তার হাতে দিয়ে দেয়।শহরবারা পত্র পাওয়া মাত্রই সম্রাটের আদেশ মেনে নিলো এবং ফারখানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলো। অতঃপর ফারখান সেনাপতির দায়িত্ব নিলো। তারপর দূত দ্বিতীয় পত্রটি ফারখানের হাতে দিলো। ঐ পত্রে শহরবারাযকে হত্যা করে তার মাথা শাহী দরবারে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ ছিল। পত্র পড়ে ফারখান শহরবারাযকে ডেকে নিলো এবং তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলো। শহরবারা তাকে বললো: “এতো তাড়াতাড়ি করো না, আমাকে একটু সময় দাও। কমপক্ষে অসিয়তের সময়টুকু তো দেবে?” ফারখান তার আবেদন মঞ্জুর করলো এবং তাকে কিছু সময় দিলো। অতঃপর শহরবারায় তার পুরাতন কাগজ-পত্রগুলো আনিয়ে নিলো যেগুলো কিসরা (পারস্য সম্রাট) তার কাছে পাঠিয়েছিল এবং যেগুলোতে ফারখানকে হত্যা করার নির্দেশ ছিল। কাগজগুলো ফারখানের সামনে রেখে দিলো এবং বললো: “দেখো, তোমার ব্যাপারে ম্রাটের সাথে আমার কত কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু আমি আমার জ্ঞানের সাহায্য নিয়েছি, তাড়াতাড়ি করিনি। আর তুমি একটিমাত্র পত্র পেয়েই আমাকে হত্যা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গেলে? এ পত্রগুলো দেখে একটু চিন্তা-ভাবনা কর।” পত্রগুলো দেখে ফারখানের চোখ খুলে গেল। সে সাথে সাথে সেনাপতির পদ হতে নেমে গেল। এবং পুনরায় শহরবারাযকে সেনাপতির পদে অধিষ্ঠিত করলো।শহরবারা তৎক্ষণাৎ রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে পত্র লিখে তার সাথে গোপন সাক্ষাতের আবেদন জানালো। সে সম্রাটকে জানালো যে, তার সাথে তার একটি বিশেষ কাজের জন্য পরামর্শের প্রয়োজন আছে। একথাগুলো কোন দূত মারফত বলা সম্ভব নয়। তাই সে কথাগুলো মৌখিকভাবে তাঁর কাছে পেশ করতে চায়। সে আরো লিখলো: “পঞ্চাশটি লোক সাথে নিয়ে আপনি স্বয়ং চলে আসুন, আর পঞ্চাশজন লোক আমার সাথে থাকবে।” রোমক সম্রাট কায়সারের কাছে যখন এ খবর পৌছলো তখন তিনি তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। কিন্তু সতর্কতা হিসেবে তিনি নিজের সাতে পাঁচ হাজার লোক নিলেন। পূর্বেই তিনি গুপ্তচরদেরকে পাঠিয়ে দিলেন যাতে ভিতরে কোন প্রতারণা বা ষড়যন্ত্র থাকলে তা ধরা পড়ে যায়। গুপ্তচররা গেল এবং রিপোর্ট দিলো যে, ভয়ের কোন কারণ নেই। শহরবারায় মাত্র পঞ্চাশজন সওয়ার নিয়ে যথাস্থানে হাযির হলো। তার সাথে অন্য কেউ থাকলো না। সুতরাং রোমক সম্রাট নিশ্চিন্ত হয়ে অতিরিক্ত ঘোড় সওয়ারদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। সাথে পঞ্চাশজন মাত্র লোক রাখলেন। অতঃপর তিনি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছলেন। সেখানে একটি রেশমী মঞ্চ ছিল। উভয়ের পঞ্চাশ পঞ্চাশজন লোককে পৃথক পৃথক করে দেয়া হলো। উভয় দলই সেখানে নিরস্ত্র অবস্থায় ছিল। সাথে থাকলো ছুরি চাকু। অতঃপর শহরবারায় বললো: “হে রোমক সম্রাট! আপনার দেশকে বিরান এবং আপনার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছি আমরা দু’ভাই। আমরা দু'ভাই চতুরতা ও বীরত্বের মাধ্যমে আপনার দেশকে জয় করেছি। কিন্তু আমাদের সম্রাট কিসরা আমাদের প্রতি হিংসা পোষণ করতে শুরু করেছে। সে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আমার কাছে সে আমার ভাইকে হত্যা করার ফরমান পাঠিয়েছে। এ ফরমান আমি অমান্য করলে এরই অপরাধে সে চালাকী করে আমার ভাই-এর কাছে আমাকে হত্যা করার ফরমান পাঠিয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দু’ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা আপনার বাহিনীভুক্ত হয়ে কিসরার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো।” রোমক সম্রাট তার এ প্রস্তাব সানন্দে সমর্থন করলেন। অতঃপর দু’জনের মধ্যে ইঙ্গিত ইশারায় কিছু কথাবার্তা হলো। আর এর অর্থ হলো এই যে, দু’জন দোভাষীকে হত্যা করে দেয়া হালে, যাতে এ দু’জনের কারণে এ গোপন তথ্য প্রকাশ না হয়ে পড়ে। কারণ দুয়ের পর তিনের কানে কোন কথা গেলে তা প্রকাশ হয়েই যায়। উভয়ে একথায় একমত হলো এবং দু’জন, দাঁড়িয়ে নিজ নিজ দোভাষীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ফেললো। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা কিসরাকে খতম করে দিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কানে এ সংবাদ পৌঁছলো। তাঁর সঙ্গীরা এ সংবাদে খুবই আনন্দিত হলেন। এ ঘটনাটি সত্যিই বিস্ময়করই বটে।এখন আয়াতের শব্দগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। হুরূফে মুকাত্তাআ'ত যেগুলো সূরার প্রথমে এসে থাকে, এগুলো সম্পর্কে আমি সূরায়ে বাকারার তাফসীরের শুরুতে আলোচনা করেছি। রোমকরা সবাই আয়স ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত। এরা বানী ইসরাঈলের চাচাতো ভাই। রোমকদেরকে বানু আসফারও বলা হয়। এরা ইউনানীয়দের মাযহাবের উপর ছিল। ইউনানীরা ছিল ইয়াফাস ইবনে নূহ (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। এরা তুর্কীদের চাচাতো ভাই। এরা ছিল তারকার পূজারী। সাতটি তারকার উপাসনা করতো। এদেরকে মুতাহাইয়ারাহও বলা হয়। এরা উত্তরমুখী হয়ে নামায পড়তো। এদের দ্বারাই দামেশক শহরের পত্তন হয়েছিল। তারা সেখানে উপাসনালয় তৈরী করে। ওর মেহরাব উত্তরমুখী আছে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর নবুওয়াতের পর তিন বছর পর্যন্ত রোমকরা তাদের পূর্ব মতবাদে অটল ছিল। তাদের মধ্যে যে কেউই সিরিয়া অথবা জযীরার (উপদ্বীপের) বাদশাহ হতো তাকেই কায়সার বলা হতো। সর্বপ্রথম রোমকদের বাদশাহ কুতুনতীন ইবনে কিসতাস খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। তার মাতা ছিল মারইয়াম হাইলানিয়্যাহ গানদাকানিয়্যাহ। সে ছিল হিরানের অধিবাসিনী। সেই সর্বপ্রথম খষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার কথায় তার ছেলেও এই মাযহাব অবলম্বন করে। এ লোকটিও ছিল বড় দার্শনিক, বুদ্ধিমান ও প্রতারক। এ কথাও প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যে, সে আসলে আন্তরিকতার সাথে এ ধর্ম গ্রহণ করেনি।একদা বহু খৃষ্টান তার দরবারে একত্রিত হয়। তাদের পরস্পরের মধ্যে ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনা-সমালোচনা, মতানৈক্য এবং তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আরইউসের সাথে বড় মুনাযারা ও তর্ক-বিতর্ক হয়। ফলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তা এমন চরমে পৌঁছে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ৩১৮ জন পাদরী মিলিতভাবে একখানা পুস্তক রচনা করেন যা বাদশাহুকে প্রদান করা হয়। এতে বাদশাহর আকীদা ও মতাদর্শকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটাকে আমানতে কুবরা বা বৃহত্তম আমানত বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা খিয়ানতে হাকীরাহ (ঘৃণ্য খিয়ানত)। এ সময় তাদের ফিকহর কিতাব লিখা হয় এবং তাতে হারাম হালালের মাসআলা বর্ণনা করা হয়। তাদের আলেমরা মনের আনন্দে যা খুশী তাই লিখেছে। দ্বীনে মসীহকে তারা মন খুলে কম বেশী করেছে। আসল দ্বীন পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত ও পরিকল্পিত হয়ে গেছে। তারা পূর্বদিকে মুখ করে নামায পড়া শুরু করে দেয়। শনিবারের পরিবর্তে রবিবারকে তারা বড় দিন ধার্য করে। তারা ক্রুসের উপাসনা শুরু করে। শূকরকে তারা হালাল করে নেয়। বহু নতুন নতুন উৎসব তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে। যেমন ঈদ, ক্রুশ, ঈদে কাদাসন, ঈদে গাতাস ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর ঐ আলেমদের মর্যাদার স্তর তারা নির্ধারণ করে নিয়েছে। একজন বড় পাদরী হয়ে থাকে। তার অধীনে ছোট ছোট পাদরীদের ক্রমিক পর্যায়ে মর্যাদার স্তর বন্টন করে দেয়া হয়। তারা রুহবানিয়্যাত ও বৈরাগ্যের নতুন বিদআত আবিষ্কার করে নিয়েছে। বহু সংখ্যক গীর্জা ও মন্দির তারা তৈরী করে নিয়েছে। কুসতুনতুনিয়া শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বাদশাহর নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। বাদশাহ সেখানে বারো হাজার গীর্জা নির্মাণ করিয়েছে। বায়তে-লাহমে তিনটি মেহরাব তৈরী করা হয়েছে। তার মাতাও কামাকিমা তৈরী করে দিয়েছে। এই লোকদেরকে মালেকিয়্যাহ বলা হয়। কেননা, তারা বাদশাহর দ্বীনের উপর ছিল। তারপর আসে ইয়াকুবিয়্যাহ ও নাসরিয়্যাহ। এরা সব নাসরের অনুসারী ছিল। তাদের বহু দল সৃষ্টি হয়েছিল। এদের ছিল ৭২টি ফিরকা। তাদের রাজত্ব ও আধিপত্য বরাবর চলে আসছিল। একের পর এক কায়সার হতো। শেষ পর্যন্ত হিরাক্লিয়াস কায়সার হন। ইনিই ছিলেন সমস্ত বাদশাহর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক বুদ্ধিমান। তিনি একজন বড় আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন বড় জ্ঞান ও দূরদর্শী লোক। এ ব্যাপারে তাঁর কোন জোড়া ছিল না। তাঁর রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পারস্য সম্রাট কিসরা উঠে পড়ে লাগে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোও তার সাথে মিলিত হয়। তার রাজ্য কায়সারের রাজ্য অপেক্ষাও বড় ছিল। সে ছিল অগ্নি উপাসক। উপরে বর্ণিত রিওয়াইয়াত দ্বারা জানা যায় যে, তার সেনাপতি কায়সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। কিন্তু বাস্তব কথা এই যে, স্বয়ং কিসরা কায়সারের মুকাবিলা করেছিল। কায়সার যুদ্ধে পরাজিত হলেন। এমনকি তিনি কুসতুনতুনিয়ায় অবরুদ্ধ হলেন। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চলতে থাকলো। খৃষ্টানরা তার খুব সম্মান করতো। বহু দিন অবরোধ করে রাখার পরেও তারা রাজধানী দখল করতে পারলো না। কারণ এই শহরের অর্ধাংশ সমুদ্রের দিকে ছিল। আর বাকী অংশ ছিল স্থলভাগ সংলগ্ন। সামুদ্রিক পথে খাদ্য ও রসদ কায়সারের নিকট বরাবরই পৌঁছতে থাকে। অবশেষে কায়সার এক কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি কিসরাকে বলে পাঠালেনঃ “আপনি যা ইচ্ছা আমার নিকট হতে গ্রহণ করুন এবং যে শর্তের উপর ইচ্ছা সন্ধি করুন। আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি।” কিসরা এ প্রস্তাবে সানন্দে সম্মত হলো। অতঃপর সে এতো বেশী মাল চেয়ে বসলো যে, এ দুই বাদশাহ মিলে চেষ্টা করলেও তা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কায়সার এটাও মেনে নিলেন। কারণ এর দ্বারা তিনি কিসরার নির্বুদ্ধিতার পরিচয় পেলেন। তিনি ভালরূপেই বুঝতে পারলেন যে, কিসরা অত্যন্ত নির্বোধ বাদশাহ। সে যে মাল চেয়েছে তা কোন দুনিয়াবাসীর পক্ষে জমা করা সম্ভব নয়। তিনি তার কাছে আবেদন করলেন যে, সে যেন তাঁকে সিরিয়া গিয়ে সময় মত এ মাল আদায় করে দেয়ার ব্যাপারে সুযোগ দেয়।কিসরা তাঁর এই আবেদন মঞ্জুর করে। সুতরাং রোমক সম্রাট তথায় গিয়ে এক বিরাট বাহিনী গঠন করলেন এবং বললেনঃ “আমি আমার কতিপয় বিশিষ্ট বন্ধুর সাথে কোথাও যাচ্ছি। যদি আমি এক বছরের মধ্যে ফিরে আসি তবে এদেশ আমার। আর যদি এক বছরের মধ্যে ফিরে আসতে না পারি তবে তোমরা যাকে খুশী বাদশাহ নির্বাচিত করবে।” তাঁর প্রজাবর্গ উত্তরে বললো: “আমাদের বাদশাহ তো আপনিই। দশ বছর যাবতও যদি আপনি ফিরে না আসেন তাহলেও আপনিই আমাদের বাদশাহ থাকবেন।” প্রাণ নিয়ে খেলা করে এরূপ অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন। গোপন রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে অতি সপ্তর্পণে পারস্যের শহরে পৌঁছে গেলেন এবং আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে বসলেন। সেখানকার সৈন্যরা সব রোম চলে গিয়েছিল বলে জনগণ বেশীক্ষণ মুকাবিলা করতে সক্ষম ছিল না। কায়সারী সৈন্যরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে দিলো। যে সামনে পড়ে তাকেই শেষ করে দেয়। কায়সার সামনের দিকে এগিয়েই চললেন। অবশেষে তিনি মাদায়েনে পৌঁছে গেলেন। সেখানে কিসরার সিংহাসন অবস্থিত ছিল। তথাকার রক্ষীবাহিনীর উপর জয়লাভ করলেন এবং চারদিক হতে ধন-দৌলত সংগ্রহ করতে লাগলেন। তথাকার সমস্ত মহিলাকে বন্দী করলেন এবং যুদ্ধপপাযোগী লোকদেরকে হত্যা করে ফেললেন। কিসরার ছেলেকে জীবন্ত বন্দী করলেন। অন্দরবাসিনী মহিলাদের পাকড়াও করলেন। তার ছেলের মস্তক মুণ্ডন করে গাধায় চড়িয়ে মহিলাদেরসহ কিসরার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যখন এ দলটি কিসরার কাছে পৌঁছলো তখন সে অত্যন্ত মর্মাহত হলো। তখনো সে কুসতুনতুনিয়া অবরোধ করেই আছে ও কায়সারের ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। এমতাবস্থায় তার পরিবারবর্গ ও অন্যান্য লোকেরা অত্যন্ত অপমানজনক অবস্থায় তার কাছে পৌঁছলো। সে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলো ও কঠিনভাবে আক্রমণ করে বসলো। কিন্তু সে কৃতকার্য হতে পারলো না। তখন সে জীজু নদীর দিকে অগ্রসর হলো। কেননা, এটাই ছিল কুসতুনতুনিয়া যাবার পথ। এ পথে কায়সার বাহিনীকে বাধা দেয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য। কায়সার এটা জানতে পেরে পূর্বেই বড় রকমের কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি তাঁর কিছু সংখ্যক সৈন্যকে নদীর মোহনায় মোতায়েন করেন এবং বাকীগুলোকে নিয়ে নদীর চড়াও-এ চলে যান। প্রায় এক দিন এক রাত চলার পর তিনি নিজের সাথে যে খড়কুটা, জন্তুর গোবর ইত্যাদি এনেছিলেন সবই পানিতে ভাসিয়ে দিলেন। এগুলো ভাসতে ভাসতে কিসরার সেনাবাহিনীর সম্মুখ দিয়ে চলতে লাগলো। তখন তারা বুঝতে পারলো যে, কায়সার এখান থেকে চলে গিয়েছেন। কারণ, সে বুঝতে পারলো যে, এগুলো কায়সারের জন্তুর খাদ্য, গোবর ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ। অতঃপর কায়সার আবার তার সেনাবাহিনীর নিকট ফিরে আসলেন। এদিকে কিসরা তাঁর সন্ধানে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কায়সার জীজু নদী অতিক্রম করে পথ পরিবর্তন করতঃ কুসতুনতুনিয়ায় পৌঁছে গেলেন। যেদিন তিনি রাজধানীতে পৌঁছলেন সেই দিন খৃষ্টানরা অত্যন্ত আনন্দোৎসবে মেতে উঠলো। কিসরা যখন এ খবর জানতে পারলো তখন তার বিস্ময়কর অবস্থা হলো। বসার জায়গাটুকুও চলে গেল এবং চলার স্থানটুকুও শেষ হয়ে গেল। না রোম বিজিত হলো, না পারস্য টিকে থাকলো। সুতরাং সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। রোমকরা জয়লাভ করলো। পারস্যের নারীরা এবং ধন-সম্পদ তাদের অধিকারে এসে গেল। এসব ঘটনা নয় বছরের মধ্যে সংঘটিত হলো। রোমকরা তাদের হারানো দেশ পারসিকদের হাত হতে পুনরুদ্ধার করে নিলো। পরাজয়ের পর পুনরায় তারা বিজয় মাল্যে ভূষিত হলো। আরেআত ও বসরার যুদ্ধে পারসিকরা জয়লাভ করেছিল। এটা সিরিয়ার ঐ অংশ ছিল যা হিজাযের সাথে মিলিত ছিল। এটাও উক্তি আছে যে, জযীরায় এ পরাজয় ঘটেছিল যা রোমকদের সীমান্তে অবস্থিত ছিল এবং পারস্যের সাথে মিলিত ছিল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।মোটকথা, ৯ বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। কুরআন কারীমের (আরবি) শব্দ রয়েছে। এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় তিন হতে নয় বছর মেয়াদের জন্যে। জামেউত তিরমিযী ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর তাফসীরে বর্ণিত হাদীসে এই তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ “সতর্কতার জন্যে এই বাজি তোমার রাখা উচিত ছিল দশ বছরের জন্যে। কেননা, (আরবি) শব্দের প্রয়োগ হয় তিন হতে নয় বছরের উপর।” তারপর (আরবি) ও (আরবি) ইযাফাতের পেশ উড়িয়ে দেয়ার কারণে তার পরের ও আগের হুকুম আল্লাহর মর্জির উপর ন্যস্ত। মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর সেই দিন মুমিনরা হর্ষোৎফুল্ল হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।”অধিকাংশ আলেমের মতে বদরের যুদ্ধের দিন রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ), সুদ্দী (রঃ), সাওরী (রঃ) এবং আবু সাঈদ (রঃ) একথাই বলেন। অন্য একটি দলের মত এই যে, এ বিজয়হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন সংঘটিত হয়েছিল। ইকরামা (রঃ), যুহরী (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ)-এর উক্তি এটাই। অন্যান্যরা বলেছেনঃ রোমক সম্রাট কায়সার মানত করেছিলেন যে, যদি তিনি পারস্য জয় করতে পারেন তবে তিনি পায়ে হেঁটে বায়তুল মুকাদ্দাস যিয়ারত করবেন। সুতরাং তিনি তাঁর এ মানত পূর্ণ করেছিলেন। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে সেখানেই আছেন এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র পত্র তাঁর হাতে আসে, যা তিনি দাহ্ইয়া কালবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে বসরার শাসনকর্তার নিকট পাঠিয়েছিলেন এবং সে তা সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছিল। পত্রটি তাঁর হস্তগত হওয়া মাত্রই তিনি ঐ সময় সিরিয়ায় অবস্থানরত হিজাযী আরবদেরকে তাঁর কাছে ডেকে পাঠান। তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব উমুভীও ছিলেন। কুরায়েশদের অন্যান্য বড় বড় নেতৃবর্গও হাযির ছিল। সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাদের সবকেই নিজের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের মধ্যে তাঁর (রাসূলুল্লাহর সঃ) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় কে আছে?” আবু সুফিয়ান (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ ‘নবুওয়াতের দাবীদারের আমিই সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়।” সম্রাট তখন তাঁকে সামনে বসালেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে তার পিছনে বসিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ “আমি একে নবুওয়াতের দাবীদার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করবো। সে যদি উত্তরে কোন মিথ্যা কথা বলে তবে তোমরা সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করবে।” আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলেনঃ “আমার যদি এ ভয় না থাকতো যে, আমি মিথ্যা বললে এরা তা ধরিয়ে দেবে এবং মিথ্যাগুলো আমার গাড়ে চাপিয়ে দেবে তবে আমি অবশ্যই মিথ্যা কথা বলতাম।” হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বংশ ও স্বভাব চরিত্র ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন করেন,। প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি প্রশ্ন এও ছিলঃ “তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন কি?” উত্তরে আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলেনঃ “আজ পর্যন্ত তো তিনি কখনো চুক্তিভঙ্গ, ওয়াদা খেলাফী, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি করেননি। বর্তমানে আমাদের সাথে তাঁর একটি চুক্তি রয়েছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তিনি কি করেন?” আবু সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর এ কথার দ্বারা হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এই সন্ধির একটি শর্ত ছিল এই যে, দশ বছর পর্যন্ত কুরায়েশ ও নবী (সঃ)-এর মধ্যে কোন যুদ্ধ হবে না। এ ঘটনাটি এই কথারই বড় দলীল যে, রোমকরা পারসিকদের উপর হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর জয়লাভ করেছিল। কেননা, কায়সার হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে তাঁর মানত পূর্ণ করেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। কিন্তু যারা বলে যে, রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল বদরের যুদ্ধের বছর, তারা জবাবে এ কথা বলতে পারে যে, যেহেতু রোমের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল এবং উৎপাদন হ্রাস ও অনাবাদ বেড়ে গিয়েছিল, সেই হেতু হিরাক্লিয়াস দেশের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চার বছর পর্যন্ত তাঁর পূর্ণ চেষ্টা ও মনোযোগ কাজে লাগিয়ে ছিলেন। এর পর দেশের সুখ-শান্তি ফিরে আসলে তিনি তার মানত পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। এ মতানৈক্য এমন বড় কথা কিছু নয়। অবশ্যই রোমকদের বিজয়ে মুসলমানরা খুশী হয়েছিলেন। কেননা, আর যাই হালে না কেন তারা আহলে কিতাব তো ছিল। পক্ষান্তরে তাদের প্রতিপক্ষ পারসিকরা ছিল অগ্নি উপাসক। কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। কাজেই মুসলমানরা যে পারসিকদের বিজয় লাভে অসন্তুষ্ট হবেন এবং রোমকদের বিজয় লাভে খুশী হবেন এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “অবশ্য মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে এবং যারা বলে, আমরা খৃষ্টান, মানুষের মধ্যে তাদেরকেই তুমি মুমিনদের নিকটতর বন্ধুরূপে দেখবে, কারণ তাদের মধ্যে বহু পণ্ডিত ও সংসারবিরাগী আছে, আর তারা অহংকারও করে। রাসূল (সঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শ্রবণ করে তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্যে তুমি তাদের চক্ষু অশ্রু বিগলিত দেখবে। তারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত করুন।” (৫:৮২-৮৩) তাই মহান আল্লাহ এখানে বলেছেনঃ সেই দিন মুমিনরা হর্ষোৎফুল্ল হবে আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, দয়ালু।হযরত যুবায়ের কালাবী (রাঃ) বলেনঃ “আমি রোমকদের উপর পারসিকদের বিজয়, আবার পারসিকদের উপর রোমকদের বিজয়, অতঃপর রোমক ও পারসিক উভয়ের উপর মুসলমানদের বিজয় মাত্র পনেরো বছরের মধ্যে সংঘটিত হতে স্বচক্ষে দেখেছি।”এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরাক্রমশালী এবং প্রিয় বান্দাদের ভুল-ভ্রান্তিকে উপেক্ষা করার ব্যাপারে পরম দয়ালু।মুসলমানদেরকে খবর দেয়া হয়েছে যে, রোমকরা সত্বরই পারসিকদের উপর জয়লাভ করবে, এটা আল্লাহ প্রদত্ত খবর ও ওয়াদা। এটা আল্লাহর ফায়সালা। এটা মিথ্যা হওয়া অসম্ভব। যারা হকের নিকটবর্তী, তাদেরকে আল্লাহ হক হতে দূরে অবস্থানকারীদের উপর সাহায্য দান করে থাকেন। অবশ্য আল্লাহর কর্মপন্থা মানুষ স্বল্প জ্ঞানে বুঝতে পারে না। অনেক লোলে আছে যারা বৈষয়িক জ্ঞান খুব ভাল রাখে। এক মিনিটেই সে সবকিছু হৃদয়ঙ্গম করে নেয়। আবার তা নিয়ে গবেষণা করে, ওর ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান ভালরূপে উপলব্ধি করে। এক নজরে ওর উঁচু-নীচু দেখে নিতে পারে। দুনিয়ার কাজ-কারবার ও হিসাব-নিকাশ খুব ভাল করে দেখে নেয়। কিন্তু তারা দ্বীনী কাজে এবং আখিরাতের কাজে অত্যন্ত বোেকা ও মূর্খ হয়ে থাকে। সহজ সরল হলেও তা তার বুঝে আসে না। আখিরাত সম্পর্কে না সে চিন্তা ভাবনা করে, না তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অভ্যাস করে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেছেন যে, অনেক লোক আছে যারা ঠিকমত নামাযও পড়তে পারে না, অথচ টাকা পয়সা হাতে নেয়া মাত্র ওজন বলে দিতে পারে।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি)-এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ কাফিররা দুনিয়ার সমৃদ্ধি ও আঁকজমক সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে, কিন্তু দ্বীন সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ এবং আখিরাত হতে উদাসীন।

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنْفُسِهِمْ ۗ مَا خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُونَ

📘 Please check ayah 30:10 for complete tafsir.

أَوَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ كَانُوا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَأَثَارُوا الْأَرْضَ وَعَمَرُوهَا أَكْثَرَ مِمَّا عَمَرُوهَا وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ ۖ فَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَٰكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

📘 Please check ayah 30:10 for complete tafsir.