slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة ص

(Sad) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ص ۚ وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ

📘 Please check ayah 38:3 for complete tafsir.

أَمْ لَهُمْ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ فَلْيَرْتَقُوا فِي الْأَسْبَابِ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

جُنْدٌ مَا هُنَالِكَ مَهْزُومٌ مِنَ الْأَحْزَابِ

📘 ৪-১১ নং আয়াতের তাফসীর: মুশরিকরা যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রিসালাতের উপর নির্বুদ্ধিতামূলক বিস্ময় প্রকাশ করেছিল এখানে আল্লাহ তা'আলা তারই খবর দিচ্ছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা কি লোকদের জন্যে বিস্ময়ের ব্যাপার হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একটি লোকের উপর এই অহী করেছি যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে এবং মুমিনদেরকে এই সুসংবাদ দিবে যে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের নিকট উত্তম প্রস্তুতি রয়েছে? আর কাফিররা তো বলতে শুরু করেছে যে, এটা স্পষ্ট যাদুকর।” (১০:২) এখানে রয়েছেঃ “তারা বিস্ময়বোধ করছে যে, তাদের নিকট তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আসলো এবং কাফিররা বলে উঠলোঃ এতো এক যাদুকর, মিথ্যাবাদী।” রাসূল (সঃ)-এর রিসালাতের উপর বিস্ময়ের সাথে সাথে আল্লাহর একত্বের উপরও তারা বিস্ময়বোধ করেছে এবং বলতে শুরু করেছেঃ “দেখো, এ লোকটি এতোগুলো মা’রূদের পরিবর্তে বলছে যে, আল্লাহ একমাত্র মা’রূদ এবং তার কোন প্রকারের কোন শরীকই নেই।” ঐ নির্বোধদের তাদের বড়দের দেখাদেখি যে শিরক ও কুফরীর অভ্যাস ছিল, তার বিপরীত শব্দ শুনে তাদের অন্তরে আঘাত লাগে। তারা তাওহীদকে একটি অদ্ভুত ও অজানা বিষয় মনে করে বসে। তাদের বড় ও প্রধানরা গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের অধীনস্থদের সামনে ঘোষণা করে ? “তোমরা তোমাদের প্রাচীন মাযহাবের উপর অটল থাকো। এ ব্যক্তির কথা শুনো না। তোমরা তোমাদের মা’রূদগুলোর ইবাদত করতে থাকো। এ লোকটি তো শুধু নিজের মতলব ও স্বার্থের কথা বলছে। এর মাধ্যমে সে তোমাদের উপর কর্তৃত্ব করতে চায়। তোমরা তার অধীনস্থ হয়ে থাকো এটাই তার বাসনা।”এ আয়াতগুলোর শানে নুযূল এই যে, একবার কুরায়েশদের সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা একত্রিত হয়। তাদের মধ্যে আবু জেহেল ইবনে হিশাম, আ’স ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিব, আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগ্স প্রমুখও ছিল। তারা সবাই একথার উপর একমত হয় যে, তারা আবূ তালিবের কাছে গিয়ে একটা ফায়সালা করিয়ে নিবে। তিনি ইনসাফের সাথে একটা যিম্মাদারী তাদের উপর দিবেন এবং একটা যিম্মাদারী স্বীয় ভ্রাতুস্পুত্রের (মুহাম্মাদ সঃ-এর) উপর দিবেন। কেননা, তিনি এখন বয়সের শেষ সীমায় পৌঁছে | গেছেন। তিনি এখন ভোরের প্রদীপের ন্যায় হয়েছেন। অর্থাৎ তার জীবন প্রদীপ নির্বাপিত প্রায়। যদি তিনি মারা যান এবং তার পরে তারা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর কোন বিপদ চাপিয়ে দেয় তবে আরবরা তাদেরকে ভৎসনা করবে যে, আবূ তালিবের মৃত্যুর পর তাদের সাহস বেড়ে গেছে। তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ভ্রাতুস্পুত্রের কোন ক্ষতি করার সাহস তাদের হয়নি। অতঃপর তারা আবু তালিবের বাড়ীর উদ্দেশ্যে গমন করলো। লোক পাঠিয়ে আবু তালিবের বাড়ীতে প্রবেশের অনুমিত চাইলো। অনুমতি পেয়ে তারা সবাই তার বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করলো এবং তাকে বললোঃ “দেখুন জনাব, আপনার ভ্রাতুস্পুত্রের জ্বালাতন এখন আমাদের নিকট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আপনি ইনসাফের সাথে আমাদের ও তার মধ্যে ফায়সালা করে দিন। আমরা আপনার নিকট ইনসাফ কামনা করছি। সে যেন আমাদের মা’বৃদদেরকে মন্দ না বলে। তাহলে তাকে আমরা কিছুই বলবো না। সে যার ইচ্ছা তারই ইবাদত করুক। আমাদের কিছুই বলার নেই। কিন্তু শর্ত হলো যে, সে আমাদের উপাস্যদেরকে খারাপ বলতে পারবে না।” আবু তালিব তখন তোক পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ডেকে আনালেন। তিনি আসলে আবু তালিব তাকে বললেনঃ “হে আমার প্রিয় ভ্রাতুস্পুত্র! দেখতেই তো পাচ্ছ যে, তোমার কওমের সম্মানিত ও নেতৃস্থানীয় লোকগুলো একত্রিত হয়েছেন এবং তাঁরা তোমার নিকট শুধু এটুকুই কামনা করেন যে, তুমি তাদের উপাস্যদেরকে খারাপ বলবে না। আর দ্বীনের ব্যাপারে তারা তোমাকে স্বাধীনতা দিচ্ছেন। তুমি যে দ্বীনের উপর রয়েছে ওর উপরই থাকো। এতে তাদের কোন আপত্তি নেই।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ “প্রিয় চাচাজান! আমি কি তাদেরকে বড় কল্যাণের দিকে ডাকবো না?” আবু তালিব বললেনঃ “তা কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “তারা শুধু একটি কালেমা পাঠ করবে। শুধু এটা পাঠ করার কারণে সারা আরব তাদের বশীভূত হয়ে যাবে।” অভিশপ্ত আবু জেহেল বললোঃ “বল, ঐ কালেমাটি কি? একটি কেন, আমরা দশটি কালেমা পড়তে প্রস্তুত আছি।” তিনি বললেনঃ “কালেমাটি হলো (আরবী) লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।” তার একথা শোনা মাত্রই সেখানে শশারগোল শুরু হয়ে গেল। আৰূ জেহেল বললোঃ “এটা ছাড়া যা চাইবে আমরা তা দিতে প্রস্তুত আছি।” তিনি বললেনঃ “তোমরা যদি আমার হাতে সূর্যও এনে দাও তবুও আমি এই কালেমা ছাড়া তোমাদের কাছে আর কিছুই চাইবো না।” তাঁর এ কথা শুনে তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো এবং উঠে গিয়ে বললোঃ “অবশ্যই আমরা তোমার ঐ মাবুদকে গালি দিবো যে তোমাকে এর নির্দেশ দিয়েছে।” অতঃপর তারা বিদায় হয়ে গেল এবং তাদের নেতা তাদেরকে বললোঃ “যাও, তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপর এবং তোমাদের মাবুদগুলোর ইবাদতের উপর স্থির ও অটল থাকো। জানাই যাচ্ছে যে, এ ব্যক্তির উদ্দেশ্যই আলাদা। সে তোমাদের মধ্যে বড় ও প্রধান হয়ে থাকতে চায়।” (এটা সুদ্দী (রঃ), ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এবং ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করছেন)একটি রিওয়াইয়াতে এটাও আছে যে, ঐ কুরায়েশ প্রধানদের চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় চাচাকে বলেনঃ “আপনিই এই কালেমাটি পাঠ করুন!” উত্তরে তার চাচা আবূ তালিব বলেনঃ “না, বরং আমি আমার পূর্বপুরুষদের দ্বীনের উপরই থাকতে চাই।” তখন (আরবী) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াতের উপর আনতে পার না।" (২৮:৫৬) আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ সময় আবু তালিব রুগ্ন ছিলেন এবং এই রোগেই তিনি মারাও গিয়েছিলেন। যে সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হন ঐ সময় তাঁর পার্শ্বে একজন লোক বসার মত জায়গা ফাঁকা ছিল। বাকী সব জায়গা-ই লোকে পরিপূর্ণ ছিল। দূরাচার আবু জেহেল মনে করলো যে, যদি মুহাম্মাদ (সঃ) তার চাচার পার্শ্বে বসতে পারেন তবে তার উপর তিনি প্রভাব বিস্তার করে ফেলবেন এবং আবু তালিব তার উপর হয়তো আকৃষ্ট হয়ে পড়বেন। তাই সে ঐ ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে গেল। ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দরবার পার্শ্বেই বসতে হলো। তিনি একটি কালেমা পাঠ করতে বললে সবাই উত্তর দিলোঃ “একটি কেন, আমরা দশটি কালেমা পড়তে প্রস্তুত আছি। বল, কালেমাটি কি?" যখন তারা কালেমায়ে তাওহীদ তার মুখে শুনলো তখন ক্রোধে ফেটে পড়লো এবং কাপড় ঝেড়ে উঠে গেল। বিদায়ের সময় তাদের নেতা তাদেরকে বললোঃ “দেখো, এ লোকটি বহু মা’দের পরিবর্তে এক মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে। এটা তো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার!” তখন (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা . করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান বলেছেন)তারা বললোঃ “আমরা তো অন্য ধর্মাদর্শে এরূপ কথা শুনিনি। এটা এক মনগড়া উক্তি মাত্র। সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা কথা এটা। কতই না বিস্ময়কর কথা এটা যে, আল্লাহকে দেখাই গেল না, আর তিনি এ ব্যক্তির উপর কুরআন নাযিল করে দিলেন!” যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কেন এ কুরআন এই দুই শহরের মধ্যকার কোন একজন বড় লোকের উপর অবতীর্ণ করা হয়নি?” (৪৩:৩১) তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা কি আল্লাহর রহমত বন্টনকারী? এরা তো এমনই মুখাপেক্ষী যে, স্বয়ং তাদেরও জীবিকা ও মান-মর্যাদা আমিই বন্টন করে থাকি।” মোটকথা, এই প্রতিবাদও তাদের বোকামি ও নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক ছিল। প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ প্রকৃতপক্ষে তারা তো আমার কুরআনে সন্দিহান। তারা এখানে আমার শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করেনি। কাল কিয়ামতের দিন যখন তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তাদের ঔদ্ধত্যপনা ও হঠকারিতার শাস্তি আস্বাদন করবে।এরপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ক্ষমতা প্রকাশ করছেন যে, তিনি যা চান তাই করেন। তিনি যাকে যা কিছু দেয়ার ইচ্ছা করেন তা-ই দিয়ে থাকেন। সম্মান দান ও লাঞ্ছিতকরণ তাঁরই হাতে। হিদায়াত দান ও বিভ্রান্তকরণ তাঁর পক্ষ থেকেই। হয়ে থাকে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যার উপর ইচ্ছা করেন অহী অবতীর্ণ করে থাকেন। তিনি যার অন্তরে চান মোহর মেরে দেন। মানুষের অধিকারে কিছুই নেই। তারা সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাহীন, নিরুপায় ও বাধ্য। এ জন্যেই তো মহান আল্লাহ বলেনঃ “তাদের কাছে কি আছে অনুগ্রহের ভাণ্ডার, তোমার প্রতিপালকের, যিনি পরাক্রমশালী, মহান দাতা?” অর্থাৎ নেই। মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি রাজশক্তিতে তাদের কোন অংশ আছে? সে ক্ষেত্রেও তো তারা কাউকেও এক কপর্দকও দিবে না। অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সে জন্যে কি তারা তাদের ঈর্ষা করে? ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরকেও তো আমি কিতাব ও হিকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজ্য দান করেছিলাম। অতঃপর তাদের কতক তাতে বিশ্বাস করেছিল এবং কতক তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। দগ্ধ করার জন্যে জাহান্নামই যথেষ্ট।”(৪:৫৩-৫৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বলঃ যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভাণ্ডারের অধিকারী হতে, তবুও ব্যয় হয়ে যাবে এই আশংকায় তোমরা ওটা ধরে রাখতে। মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।” (১৭:১০০)হযরত সালেহ (আঃ)-কেও তাঁর কওম বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে? না, সে তো একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক। আগামীকাল তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।” (৫৪:২৫-২৬)। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তাদের কি সার্বভৌমত্ব আছে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুর উপর? থাকলে তারা সিঁড়ি বেয়ে আরোহণ করুক। বহু দলের এই বাহিনীও সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে। যেমন ইতিপূর্বে সত্য হতে বিমুখ বড় বড় দল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি বলেঃ আমরা এক সংঘবদ্ধ অপরাজেয় দল?"(৫৪:৪৪) এর পরে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এই দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে।” (৫৪:৪৫) এর পরে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অধিকন্তু কিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর।”(৫৪:৪৬)

كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ ذُو الْأَوْتَادِ

📘 Please check ayah 38:16 for complete tafsir.

وَثَمُودُ وَقَوْمُ لُوطٍ وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ ۚ أُولَٰئِكَ الْأَحْزَابُ

📘 Please check ayah 38:16 for complete tafsir.

إِنْ كُلٌّ إِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ

📘 Please check ayah 38:16 for complete tafsir.

وَمَا يَنْظُرُ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً مَا لَهَا مِنْ فَوَاقٍ

📘 Please check ayah 38:16 for complete tafsir.

وَقَالُوا رَبَّنَا عَجِّلْ لَنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ

📘 ১২-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বযুগীয় এসব কাফিরের ঘটনা বেশ কয়েক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের পাপের কারণে কিভাবে তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসেছিল এবং তারা সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পূর্বযুগের ঐ সব কাফিরের দল ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে এবং শক্তি-সামর্থে এ যুগের এসব কাফিরের অপেক্ষা বহুগুণে অগ্রবর্তী ছিল। এদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং শক্তি-সামর্থ্য তাদের তুলনায় অতি নগণ্য। এতদসত্ত্বেও আল্লাহর শাস্তি এসে যাবার পর এগুলো তাদের কোনই উপকারে আসেনি।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা অতীত যুগের ঐ সব কাফির দলের ধ্বংসের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তাদের প্রত্যেকেই রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তারা ছিল রাসূলদের চরম শত্রু।মহান আল্লাহ বলেনঃ এরা তো অপেক্ষা করছে একটি মাত্র প্রচণ্ড নিনাদের, যাতে কোন বিরাম থাকবে না। আর এতেও কোন বিলম্ব নেই। একটি মাত্র প্রচণ্ড শব্দ হবে এবং তা কানে আসা মাত্রই সবাই অজ্ঞান ও প্রাণহীন হয়ে পড়বে। ঐ লোকগুলো এর অন্তর্ভুক্ত হবে না যাদেরকে আল্লাহ স্বতন্ত্র করে নিবেন।(আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে অংশ। এখানে এর দ্বারা মুশরিকদের নির্বুদ্ধিতা এবং তাদের আল্লাহর আযাবকে অসম্ভব মনে করতঃ নির্ভয় হয়ে আযাব চাওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের উক্তি উদ্ধৃতি করেছেনঃ (আরবী) অথাৎ “হে আল্লাহ! যদি এটা আপনার নিকট হতে সত্য হয়ে থাকে তবে আকাশ হতে আমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করুন অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আমাদের উপর নাযিল করুন।” (৮:৩২)।একথাও বলা হয়েছে যে, তারা তাদের জান্নাতের অংশ এখানে চেয়েছিল। তারা যা কিছু বলেছিল সবই ওটা মিথ্যা ও অসম্ভব মনে করার কারণেই ছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি এই যে, দুনিয়ায় তারা যে ভাল ও মন্দের দাবীদার ছিল তা তারা তাড়াতাড়ি চেয়েছিল। এ উক্তিটিই সঠিক। যহ্হাক (রঃ) ও ইসমাঈল (রঃ)-এর তাফসীরের সারমর্ম এটাই। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে তাদের স্ক্রিপের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের উপদেশ দিচ্ছেন।

اصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ

📘 Please check ayah 38:20 for complete tafsir.

إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ

📘 Please check ayah 38:20 for complete tafsir.

وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً ۖ كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ

📘 Please check ayah 38:20 for complete tafsir.

بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ

📘 Please check ayah 38:3 for complete tafsir.

وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ

📘 ১৭-২০ নং আয়াতের তাফসীর: (আরবী) দ্বারা জ্ঞান ও আমল সম্পর্কীয় শক্তি বুঝানো হয়েছে এবং শুধু শক্তিও অর্থ হয়ে থাকে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এখানে আনুগত্যের শক্তি উদ্দেশ্য। হযরত দাউদ (আঃ)-কে ইবাদতের শক্তি এবং ইসলামের বোধশক্তি দান করা হয়েছিল। এটা উল্লিখিত আছে যে, তিনি রাত্রির এক তৃতীয়াংশ সময় তাহাজ্জুদ নামাযে কাটিয়ে দিতেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নামায হলো হযরত দাউদ (আঃ)-এর রাত্রির নামায এবং সবচেয়ে পছন্দনীয় রোযা হলো হযরত দাউদ (আঃ)-এর দিনের রোযা। হযরত দাউদ (আঃ) অর্ধরাত্রি শুয়ে থাকতেন এবং এক তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত নামায পড়তেন। তারপর এক ষষ্ঠাংশ রাত পর্যন্ত আবার ঘুমিয়ে থাকতেন। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন রোযাহীন অবস্থায় থাকতেন। আর দ্বীনের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কখনো পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতেন না। আর সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলার প্রতি আকৃষ্ট হতেন এবং তাঁর দিকে রুজু করতেন।” মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি নিয়োজিত করেছিলাম পর্বতমালাকে, এরা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে পর্বতমালা! তোমরা দাউদ (আঃ)-এর সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকুলকেও।” (৩৪:১০) আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত দাউদ (আঃ)-এর সাথে পর্বতমালা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। অনুরূপভাবে পক্ষীকুলও তার শব্দ শুনে তাঁর সাথে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করতে শুরু করতো। উড়ন্ত পাখী তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করতো। ঐ সময় তিনি তাওরাত পাঠ করলে তার সাথে পাখীরাও তাওরাত পাঠে নিমগ্ন হয়ে পড়তো এবং উড়া বন্ধ করে বসে যেতো।রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের সময় হযরত উম্মে হানী (রাঃ)-এর ঘরে আট রাকআত নামায পড়েন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা এই যে, এটাও নামাযের সময়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা তার সাথে সকাল-সন্ধ্যায় আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো।”আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে নাওফিল (রাঃ) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) চাশতের নামায পড়তেন না। আমি একদা তাঁকে হযরত উম্মে হানী (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে গেলাম এবং তাকে বললামঃ একে আপনি ঐ হাদীসটি শুনিয়ে দেন যা আমাকে শুনিয়েছিলেন। তখন হযরত উম্মে হানী (রাঃ) বললেনঃ “মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার বাড়ীতে আমার কাছে আসলেন এবং এসে একটি বরতনে পানি ভর্তি করিয়ে নিলেন। অতঃপর কাপড়ের পর্দা করে নিয়ে গোসল করতে বসলেন। এরপর ঘরের এক কোণে পানি ছিটিয়ে দিয়ে চাশতের আট রাকআত নামায আদায় করলেন। এতে তার কিয়াম, রুকূ', সিজদা এবং উপবেশন প্রায় সমান ছিল।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হাদীসটি শুনে যখন সেখান হতে বেরিয়ে আসলেন তখন তিনি বলতে লাগলেনঃ “আমি কুরআন কারীম সম্পূর্ণটাই পাঠ করেছি, কিন্তু চাশতের নামায কি তা আমি জানতাম না। আজ জানলাম যে, এটা (আরবী)-এই আয়াতের মধ্যেই রয়েছে। ইশরাক দ্বারা চাশতকে বুঝানো হয়েছে। এরপর তিনি তাঁর পূর্ব উক্তি হতে ফিরে আসেন।মহান আল্লাহ বলেন যে, পক্ষীকুলও হযরত দাউদ (আঃ)-এর সাথে আল্লাহর তাসবীহ পাঠে অংশ নিতো। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি দাউদ (আঃ)-এর রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম। বাদশাহদের যতগুলো জিনিসের প্রয়োজন সবই তাঁকে দেয়া হয়েছিল। প্রত্যহ চার হাজার রক্ষী বাহিনী তার পাহারায় নিযুক্ত থাকতো। পূর্বযুগীয় কোন কোন। গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, পালাক্রমে প্রতি রাত্রে তেত্রিশ হাজার প্রহরী পাহারা দিতো এবং এক রাত্রে যারা পাহারা দিতো, এক বছর পর্যন্ত তাদের আর পালা আসতো না। চল্লিশ হাজার লোক সর্বক্ষণ তার খিদমতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় প্রস্তুত থাকতো।একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ)-এর যুগে বানী ইসরাঈলের দু’জন লোকের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। একজন অপরজনকে এই অপবাদ দেয় যে, সে তার গরু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে। অপর ব্যক্তি এ অপরাধ অস্বীকার করে। হযরত দাউদ (আঃ) বাদীর নিকট প্রমাণ তলব করেন। কিন্তু সে প্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হয়। হযরত দাউদ (আঃ) তখন তাদেরকে বললেনঃ “আগামীকাল তোমাদের বিচার মীমাংসা করা হবে।" রাত্রে হযরত দাউদ (আঃ)-কে স্বপ্নে হুকুম দেয়া হয় যে, তিনি যেন বাদী লোকটিকে হত্যা করেন। সকালে তোক দু'টিকে ডাকিয়ে নিয়ে হযরত দাউদ (আঃ) বাদীকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন। তখন বাদী লোকটি বলেঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আপনি আমাকেই হত্যা করার নির্দেশ দিলেন, অথচ এ লোকটি আমার গরু গসব করে নিয়েছে।” তখন তিনি বললেনঃ “দেখো, এটা আমার হুকুম নয়, বরং আল্লাহর ফায়সালা। সুতরাং এ হুকুম টলতে পারে না। অতএব তুমি প্রস্তুত হয়ে যাও।" সে তখন বললোঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আল্লাহর শপথ! আমি যা দাবী করেছি সেই কারণে আল্লাহ আমাকে হত্যা করার নির্দেশ আপনাকে দেননি। এবং সে যে আমার গরু গসব করে নিয়েছে এ দাবীতে আমি অবশ্যই সত্যবাদী। বরং আমাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার কারণ শুধু আমিই জানি। ব্যাপার এই। যে, আজ রাত্রে আমি এ লোকটির পিতাকে প্রতারিত করে হত্যা করেছি এবং এটা আমি ছাড়া আর কেউই জানে না। এরই প্রতিশোধ হিসেবে আল্লাহ আপনাকে আমাকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তাকে হত্যা করে দেয়া হলো। এ ঘটনার পর প্রত্যেকের অন্তরে হযরত দাউদ (আঃ)-এর ভীতি স্থাপিত হলো। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে হিকমত দিয়েছিলাম। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এখানে হিকমত অর্থ বোধশক্তি, জ্ঞান ও নিপুণতা। মুররাহ (রঃ) বলেন যে, এখানে হিকমত অর্থ ন্যায়পরায়ণতা ও সঠিকতা। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর-অর্থ হলো আল্লাহর কিতাব এবং তাতে যা রয়েছে। তার অনুসরণ। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এখানে হিকমতের অর্থ হলো নবুওয়াত।মহান আল্লাহর উক্তিঃ আর আমি তাকে দিয়েছিলাম ফায়সালাকারী বাগ্মিতা অর্থাৎ বিবাদ মীমাংসার সুন্দর নীতি। যেমন সাক্ষী নেয়া, কসম খাওয়ানো। অর্থাৎ বাদীর নিকট সাক্ষ্য-প্রমাণ চাওয়া এবং বিবাদীর নিকট হতে শপথ নেয়া। ফায়সালার জন্যে নবীদের (আঃ) ও সৎ লোকদের পন্থা এটাই ছিল। এই উম্মতের মধ্যেও এই পন্থাই চালু আছে। হযরত দাউদ (আঃ) মুকদ্দমার গভীরে পৌঁছে যেতেন এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারতেন। তাঁর মুখের ভাষাও খুব পরিষ্কার ছিল এবং তিনি হুকুমও দিতেন ইনসাফ মুত্যবিক। তিনিই (আরবী) কথার সূচনা করেন এবং (আরবী) ঐ দিকেই ইঙ্গিত করছে।

۞ وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ

📘 Please check ayah 38:25 for complete tafsir.

إِذْ دَخَلُوا عَلَىٰ دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ خَصْمَانِ بَغَىٰ بَعْضُنَا عَلَىٰ بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَىٰ سَوَاءِ الصِّرَاطِ

📘 Please check ayah 38:25 for complete tafsir.

إِنَّ هَٰذَا أَخِي لَهُ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيهَا وَعَزَّنِي فِي الْخِطَابِ

📘 Please check ayah 38:25 for complete tafsir.

قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَىٰ نِعَاجِهِ ۖ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَا هُمْ ۗ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ ۩

📘 Please check ayah 38:25 for complete tafsir.

فَغَفَرْنَا لَهُ ذَٰلِكَ ۖ وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ

📘 ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর: তাফসীরকারগণ এখানে একটি গল্প বর্ণনা করেছেন যার অধিকাংশই বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াত হতে নেয়া হয়েছে। এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে একটি হাদীস রয়েছে বটে, কিন্তু ওটাও সঠিক নয়। কেননা, ইয়াযীদ রাকাশী নামক এর একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি খুব সৎ লোক হলেও নিঃসন্দেহে দুর্বল। সুতরাং উত্তম কথা এই যে, কুরআন কারীমে যা আছে তা-ই সত্য এবং যা কিছু অন্তর্ভুক্ত করেছে তা-ই সঠিক। দু’জন লোককে ঘরের মধ্যে দেখে হযরত দাউদ (আঃ)-এর ভীত হওয়ার কারণ এই যে, তিনি নির্জন কক্ষে একাকী অবস্থান করছিলেন এবং প্রহরীদেরকে ঘরের মধ্যে সেই দিন কাউকেও প্রবেশ করতে দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও এই দু’জনকে ঘরে আকস্মিকভাবে প্রবেশ করতে দেখে তিনি ভীত হয়ে পড়েছিলেন।(আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ কথা-বার্তায় সে আমার উপর জয়লাভ করেছে এবং আমার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। অর্থাৎ কথায় সে আমার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করেছে। হযরত দাউদ (আঃ) বুঝে ফেলেন যে, এটা তাঁর উপর মহান আল্লাহর পরীক্ষা। সুতরাং তিনি রুকু ও সিজদা করতঃ আল্লাহ তাআলার দিকে ঝুঁকে পড়েন। বর্ণিত আছে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি সিজদা হতে মাথা উঠাননি।মহান আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তার ত্রুটি ক্ষমা করলাম। এটা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, যে কাজ সাধারণের জন্যে পুণ্যের হয় সেই কাজটিই বিশিষ্ট লোকদের জন্যে পাপের হয়ে থাকে।এটা সিজদার আয়াত কি-না এ বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর নতুন মাযহাব এই যে, এখানে সিজদা জরুরী নয়। এটা তো সিজদায়ে শুক্র। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, (আরবী)-এর মধ্যে সিজদা বাধ্যতামূলক নয়। তিনি বলেনঃ “তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এতে সিজদা করতে দেখেছি।" (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সুনানে নাসাঈতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এখানে সিজদা করার পর বলেনঃ “হযরত দাউদ (আঃ)-এর জন্যে এই সিজদা ছিল তাওবার এবং আমাদের জন্যে এ সিজদা হলো শোকরের।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সঃ)-এর কাছে একটি লোক এসে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি যেন একটি গাছের পিছনে নামায পড়ছি এবং নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করছি ও সিজদা করছি। তখন আমার সাথে গাছটিও সিজদা করলো এবং আমি গাছটিকে নিম্নলিখিত দুআ পড়তে শুনলামঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমার এই সিজদাকে আমার জন্যে আপনার নিকট পুণ্য ও যখীরার কারণ বানিয়ে দিন, আর এর মাধ্যমে আমার পাপের বোঝা হালকা করে দিন এবং এটা কবুল করে নিন, যেমন কবুল করেছিলেন আপনার বান্দা হযরত দাউদ (আঃ)-এর সিজদাকে। তখন আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে নামায আদায় করলেন এবং সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদা করলেন। ঐ সিজদায় তিনি ঐ দুআই পড়লেন যে দুআটির কথা লোকটি গাছটির দু'আ বলে বর্ণনা করেছিল।” (এ হাদীসটি জামেউত তিরমিযী ও সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের সিজদার উপর দলীল পেশ করেছেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত ছিল দাউদ (আঃ) ও সুলাইমান (আঃ), যাদেরকে আমি হিদায়াত দান করেছিলাম। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের হিদায়াতের অনুসরণ কর। তাহলে বুঝা গেল যে, তাঁদের অনুসরণ করতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আদিষ্ট ছিলেন। আর এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হযরত দাউদ (আঃ) সিজদা করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহও (সঃ) এই সিজদা করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি যেন সূরায়ে সোয়দি লিখছেন এটা তিনি স্বপ্নে দেখতে পান। যখন তিনি সিজদার আয়াতে পৌঁছেন তখন দেখেন যে, কলম, দোয়াত ও আশে পাশের সবকিছুই সিজদা করলো। তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। এরপর থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াত পাঠ করে বরাবরই সিজদা করতেন। (এ হদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা মিম্বরের উপর সূরায়ে সোয়াদ পাঠ করেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করেন ও সিজদা করেন। তার সাথে অন্যান্য সবাই সিজদা করেন। অন্য একদিন মিম্বরের উপর তিনি এই সূরাটি পাঠ করেন। যখন তিনি সিজদার আয়াতে পৌঁছেন তখন জনগণ সিজদার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এ দেখে তিনি বলেনঃ “এটা তো ছিল হযরত দাউদ (আঃ)-এর তাওবার সিজদা। আর আমি দেখি যে, তোমরাও সিজদার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেছো?” অতঃপর তিনি মিম্বর হতে নেমে সিজদা করেন। (এ হদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমার নিকট দাউদ (আঃ)-এর জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। কিয়ামতের দিন তিনি জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। কেননা, তিনি স্বীয় রাজ্যে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছেঃ “সুবিচারক ও ন্যায়পরায়ণ লোকেরা নূরের মিম্বরের উপর রহমানের (আল্লাহর) ডানদিকে অবস্থান করবে, আল্লাহর উভয় হস্তই ডান, তারা ঐ সব সুবিচারক যারা তাদের পরিবার পরিজন ও যাদের তারা মালিক তাদের মধ্যে সুবিচার করে থাকে।” হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় এবং সবচেয়ে বেশী তাঁর নৈকট্যলাভকারী বান্দা হবে ন্যায়-বিচারক বাদশাহ। আর কিয়ামতের দিন আল্লাহর সবচেয়ে বড় শত্রু ও কঠিন আযাব প্রাপ্ত ব্যক্তি হবে অত্যাচারী বাদশাহ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মালিক ইবনে দীনার (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন হযরত দাউদ (আঃ)-কে আরশের পায়ার নিকট দাঁড় করানো হবে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বলবেনঃ “হে দাউদ (আঃ)! তুমি দুনিয়ায় যে মিষ্টি ও করুণ সুরে আমার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে সেভাবে এখনো কর।” তিনি উত্তরে বলবেনঃ “হে আল্লাহ! এখন ঐ সুর ও আওয়াজ কোথায়?” জবাবে আল্লাহ পাক বলবেনঃ “আজও আমি তোমাকে ঐ সুর ও শব্দ দান করলাম।” তখন হযরত দাউদ (আঃ) তাঁর মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আল্লাহর প্রশংসাগীতি গাইবেন। এটা শুনে জান্নাতীরা অন্য সব নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে। তার এই সুমিষ্ট সুর এবং জ্যোতির্ময় কণ্ঠের মাধ্যমে সব কিছুকে ভুলিয়ে দিয়ে তাদেরকে তিনি নিজের দিকে আকৃষ্ট করবেন।

يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ

📘 এই আয়াতে বাদশাহ ও শাসন ক্ষমতার অধিকারী লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, তারা যেন ন্যায় ও ইনসাফের সাথে কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী ফায়সালা করে। তারা যেন খেয়াল খুশীর অনুসরণ না করে। কেননা এটা তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করবে তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।হযরত আবু যার'আ (রঃ)-কে তৎকালীন বাদশাহ ওয়ালীদ ইবনে আবদিল মালিক একবার প্রশ্ন করেনঃ “এ সময়ের খলীফাকেও কি আল্লাহ তাআলার নিকট হিসাব দিতে হবে?” উত্তরে হযরত আবু যার'আ (রঃ) বলেনঃ “সত্য কথা বলবো কি?” খলীফা জবাব দিলেনঃ “হ্যা, অবশ্যই সত্য কথা বলুন, আপনাকে সর্বপ্রকারের নিরাপত্তা দান করা হলো।” তখন হযরত আবু যার'আ (রঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! হযরত দাউদ (আঃ)-এর মর্যাদা আপনার চেয়ে বহুগুণে বেশী ছিল। আল্লাহ তা'আলা তাকে খিলাফতের সাথে সাথে নবুওয়াতও দান করেছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আল্লাহর কিতাবে তাঁকে ধমকের সুরে বলা হয়েছেঃ “হে দাউদ (আঃ)! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা এটা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। আর জেনে রেখো যে, যারা আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করে তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।”(আরবী) ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এখানে পরের কথাটিকে পূর্বে এবং পূর্বের কথাটিকে পরে আনা হয়েছে। ভাবার্থ হলোঃ তারা হিসাবের দিনকে ভুলে গেছে বলে তাদের জন্যে কঠিন শাস্তি রয়েছে। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো তাদের জন্যে কঠিন শাস্তি রয়েছে এই কারণে যে, তারা হিসাবের দিনের জন্যে আমল জমা করেনি। আয়াতের শব্দগুলোর সাথে এই উক্তিটিরই বেশী সম্বন্ধ রয়েছে। এসব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই সঠিক জ্ঞান রাখেন।

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًا ۚ ذَٰلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ

📘 Please check ayah 38:29 for complete tafsir.

أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ

📘 Please check ayah 38:29 for complete tafsir.

كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ

📘 ২৭-২৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, সৃষ্টিকুলের সৃষ্টি বৃথা ও অনর্থক নয়। এগুলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর এমন একদিন আসছে যেই দিন মান্যকারীদের মাথা উঁচু হবে এবং অমান্যকারীদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।মহান আল্লাহ বলেনঃ কাফিরদের ধারণা এই যে, আমি তাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তাদের ধারণা আখিরাত ও পারলৌকিক জীবন কিছুই নয়। কিন্তু তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কিয়ামতের দিনটি তাদের জন্যে হবে বড়ই ভয়াবহ। কেননা, ঐ আগুনে তাদেরকে জ্বলতে হবে যে আগুনকে আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের ফুক দ্বারা প্রজ্বলিত রেখেছেন। আল্লাহ তা'আলা ঈমানদার ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং আল্লাহভীরু ও অপরাধীকে এক জায়গায় রাখবেন এটা অসম্ভব। যদি কিয়ামতই না হতো তবে তো এদের উভয়ের ফলাফল একই হতো। কিন্তু এটা তো অবিচারমূলক কথা। কিয়ামত অবশ্যই হবে। সৎকর্মশীলরা জান্নাতে যাবে এবং পাপীরা যাবে জাহান্নামে। সুতরাং জ্ঞানের চাহিদাও এটাই যে, কিয়ামত সংঘটিত হোক। আমরা দেখি যে, একজন যালিম পাপী গর্বভরে আল্লাহ্ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দুনিয়ায় সে বেশ সুখে-শান্তিতে বাস করছে। ধন-মাল, সন্তান-সন্ততি, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা ইত্যাদি সবই তার রয়েছে। পক্ষান্তরে একজন মুমিন আল্লাহভীরু, সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি একটি পয়সার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে, সুখ-শান্তি তার ভাগ্যে জুটে না। তখন মহাবিজ্ঞ, মহাজ্ঞানী ও সুবিচারক আল্লাহর চাহিদা এটাই যে, এমন এক সময়ও আসবে যখন এই নেমকহারাম ও অকৃতজ্ঞকে তার দুষ্কর্মের পুরোপুরি প্রতিফল দেয়া হবে এবং ঐ ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ও অনুগত ব্যক্তিকেও তার সৎকর্মের পূর্ণ পুরস্কার দেয়া হবে। আর পরকাল এটাই। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, এই জগতের পর আর একটি জগত অবশ্যই রয়েছে। এই পবিত্র শিক্ষা কুর'আন কারীম হতে লাভ করা যায় এবং এটাই মানুষের সৎপথের দিশারী, এজন্যেই এর পরেই বলা হয়েছেঃ এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে।হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করেছে, কিন্তু কুরআনের উপর আমল করেনি এবং কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণাও করেনি, তার কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করাতে কোনই লাভ নেই। লোকেরা বলেঃ “আমরা কুর'আন সম্পূর্ণরূপে পড়েছি।” কিন্তু কুরআনের একটি উপদেশ এবং কুরআনের একটি হুকুমের নমুনা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। এরূপ হওয়া মোটেই উচিত নয়। আসল জিনিস হলো চিন্তা-গবেষণা করা, শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা এবং আমল করা।

كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ فَنَادَوْا وَلَاتَ حِينَ مَنَاصٍ

📘 ১-৩ নং আয়াতের তাফসীর: হুরফে মুকাত্তা'আত যেগুলো সূরাসমূহের শুরুতে এসে থাকে, ওগুলোর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বাকারার শুরুতে গত হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ কুরআন কারীমের শপথ করেছেন এবং ওকে শিক্ষা ও উপদেশপূর্ণ বলেছেন। কেননা এর কথার উপর আমলকারীদের দ্বীন ও দুনিয়া সুন্দর ও কল্যাণময় হয়ে থাকে। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আমি তোমাদের উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।”(২১:১০) ভাবার্থ এটাও যে, কুরআন ইযযত, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। কারো কারো মতে কসমের উত্তর হলো ... (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকেই রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।” (৩৮:১৪) কেউ কেউ বলেন যে, কসমের জবাব হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই ওটা সত্য।” (৩৮:৬৪) কিন্তু এটা খুব সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর জবাব হলো এর পরবর্তী আয়াতটি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। কোন কোন আরবী ভাষাবিদ বলেছেন যে, এই কসমের জবাব হলো (আরবী) এবং এর অর্থ হলো সভ্যতা। একটি উক্তি এও আছে যে, সম্পূর্ণ সূরাটির সারমর্মই হলো এই কসমের জবাব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই কুরআন তো হলো সরাসরি শিক্ষা ও উপদেশ। কিন্তু এর দ্বারা উপকার শুধু সেই লাভ করতে পারে যার অন্তরে ঈমান রয়েছে। কাফির লোকেরা এটা হতে উপকার লাভে বঞ্চিত থাকে। কেননা, তারা অহংকারী এবং এর চরম বিরোধী। তাদের উচিত তাদের ন্যায় পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম চিন্তা করা এবং নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা। পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে এরূপই অপরাধের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর আযাব এসে যাওয়ার পর তারা খুব কান্নাকাটি করেছিল। কিন্তু ঐ সময় সবই বৃথা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ .... (আরবী) অর্থাৎ “যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো তখন তা থেকে বাঁচতে ও পালাতে ইচ্ছা করলো, কিন্তু তা কিরূপে সম্ভব ছিল?” (২১:১২) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখন পালাবারও সময় নয় এবং ফরিয়াদেরও সময় নয়। তখন ফরিয়াদ কেউ শুনবে না এবং কিছু উপকারও করতে পারবে না। যতই কান্নাকাটি ও চীৎকার করুক না কেন সবই বিফল হবে। ঐ সময় তাওহীদকে স্বীকার করলেও কোন লাভ হবে না এবং তাওবা করেও কোন উপকার হবে না। এটা হবে অসময়ের চীৎকার ও কান্না। এখানে (আরবী) শব্দটি (আরবী)-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে (আরবী) টি অতিরিক্ত। যেমন (আরবী) কে (আরবী) এবং (আরবী) কে বলা হয়ে থাকে। এই দুই স্থানেও (আরবী) টি অতিরিক্ত।ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি এই যে, এই (আরবী) টি (আরবী)-এর সাথে মিলিত রয়েছে। অর্থাৎ (আরবী) হবে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সমধিক খ্যাত। জমহুর (আরবী)-কে যবরের সাথে পড়েছেন। ভাবার্থ হলোঃ এটা আক্ষেপ ও হা-হুতাশ করার সময় নয়। কেউ কেউ (আরবী)-কে যের দিয়ে পড়াকেও বৈধ বলেছেন। ভাষাবিদরা বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলো পিছনে সরে আসা এবং (আরবী) বলা হয় সম্মুখে অগ্রসর হওয়াকে। সুতরাং অর্থ হলোঃ এটা পালাবার ও বের হয়ে যাবার সময় নয়। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।

وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ

📘 Please check ayah 38:33 for complete tafsir.

إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ

📘 Please check ayah 38:33 for complete tafsir.

فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ

📘 Please check ayah 38:33 for complete tafsir.

رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ

📘 ৩০-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা হযরত দাউদ (আঃ)-কে যে একটি বড় নিয়ামত দান করেছিলেন এখানে তারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তিনি হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে তাঁর নবুওয়াতের উত্তরাধিকারী করেছিলেন। এজন্যেই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর উল্লেখ করা হয়েছে। নচেৎ হযরত দাউদ (আঃ)-এর তো। আরো বহু সন্তান ছিল। দাসীরা ছাড়াও তার একশজন স্ত্রী ছিল। সুতরাং হযরত সুলাইমান (আঃ) হযরত দাউদ (আঃ)-এর নবুওয়াতের ওয়ারিশ হয়েছিলেন। যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুলাইমান (আঃ) দাউদ (আঃ)-এর ওয়ারিশ হলো।” (২৭:১৬) অর্থাৎ নবুওয়াতের ওয়ারিশ হলেন। হযরত দাউদ (আঃ)-এর পর হযরত সুলাইমান (আঃ) নবুওয়াত লাভ করেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সে ছিল উত্তম বান্দা এবং অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। অর্থাৎ তিনি বড়ই ইবাদতগুয়ার ছিলেন এবং খুব বেশী আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।হযরত মাকহুল (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন আল্লাহ তা'আলা হযরত দাউদ (আঃ)-কে দান করলেন সুলাইমান (আঃ)-কে তখন হযরত দাউদ (আঃ) হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে প্রশ্ন করলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! আচ্ছা বল তোঃ সবচেয়ে উত্তম জিনিস কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “আল্লাহর পক্ষ হতে আগত চিত্ত-প্রশান্তি এবং ঈমান।” আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “সবচেয়ে মন্দ জিনিস কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “ঈমানের পর কুফরী।” পুনরার প্রশ্ন করলেনঃ “সবচেয়ে মিষ্টি জিনিস কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “আল্লাহর রহমত বা করুণা।" আবার প্রশ্ন করলেনঃ “সবচেয়ে শীতল জিনিস কি?” তিনি জবাবে বললেনঃ “আল্লাহ তা'আলার মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া এবং মানুষের একে অপরকে মাফ করা।” তখন হযরত দাউদ (আঃ) হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে বললেনঃ “তাহলে তুমি নবী।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর রাজত্বের আমলে তাঁর সামনে তার ঘোড়াগুলো হাযির করা হয় যেগুলো ছিল খুবই দ্রুতগামী এবং ওগুলো তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো। একটি উক্তি এও আছে যে, এগুলো ছিল উড়ন্ত ঘোড়া, যেগুলোর সংখ্যা ছিল বিশ। ইবরাহীম তাইমী (রঃ) ঘোড়াগুলোর সংখ্যা বিশ হাজার বলেছেন। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।সুনানে আবি দাউদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাবুক অথবা খায়বারের যুদ্ধ হতে ফিরে এসেছিলেন। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করেছেন এমন সময় প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করে। ফলে ঘরের এক কোণের পর্দা সরে যায়। ঐ জায়গায় হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর খেলনার পুতুলগুলো রাখা ছিল। ওগুলোর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দৃষ্টি পড়লে তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ওগুলো কি?” তিনি জবাবে বললেনঃ “ওগুলো আমার পুতুল।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) দেখতে পান যে, মধ্যভাগে একটি ঘোড়ার মত কি যেন বানানো রয়েছে যাতে কাপড়ের তৈরী দুটি ডানাও লাগানো আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এটা কি?" উত্তরে হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ “এটা ঘোড়া। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কাপড়ের তৈরী ওর উপরে দুই দিকে ও দুটো কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “এ দুটো ওর ডানা।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “ঘোড়াও ভাল এবং ডানা দুটিও উত্তম।” তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ “আপনি কি শুনেননি যে, হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর ডানা বিশিষ্ট ঘোড়া ছিল?" একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেসে উঠলেন। এমনকি তাঁর শেষ দাঁতটিও দেখা গেল।হযরত সুলাইমান (আঃ) ঘোড়াগুলোর দেখা শোনায় এমন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে, তাঁর আসরের নামাযের খেয়ালই থাকলো না। নামাযের কথা তিনি সম্পূর্ণরূপে বিস্মরণ হয়ে গেলেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) খন্দকের যুদ্ধের সময় একদিন যুদ্ধে মগ্ন থাকার কারণে আসরের নামায পড়তে পারেননি। মাগরিবের নামাযের পর ঐ নামায আদায় করেন।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, সূর্য ডুবে যাওয়ার পর হযরত উমার (রাঃ) কুরায়েশ কাফিরদেরকে মন্দ বলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আসলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো আসরের নামায পড়তে পারিনি?" রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “এখন পর্যন্ত আমিও নামায আদায় করতে সক্ষম হইনি।” অতঃপর তারা বাতহান নামক স্থানে গিয়ে অযু করলেন এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আসরের নামায আদায় করলেন এবং পরে মাগরিবের নামায পড়লেন। এটাও হতে পারে যে, হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দ্বীনে যুদ্ধ-ব্যস্ততার কারণে নামাযকে বিলম্বে আদায় করা জায়েয ছিল। তাঁর ঘোড়াগুলো হয়তো যুদ্ধের ঘোড়া ছিল যেগুলোকে একমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই রাখা হয়েছিল। যেমন কোন কোন আলেম একথাও বলেছেন যে, সালাতে খাওফ (ভয়ের সময়ের নামায) জারী হওযার পূর্বে এই অবস্থাই ছিল। যখন তরবারী চৰ্চ করে ওঠে এবং শত্রু সৈন্য এসে ভিড়ে যায়, আর নামাযের জন্যে রুকু-সিজদা করার সুযোগই হয় না তখন এই হুকুম রয়েছে। যেমন সাহাবীগণ (রাঃ) তাসতির’ বিজয়ের সময় এরূপ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের প্রথম উক্তিটিই সঠিক। কেননা, এরপরেই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর এই ঘোড়াগুলোকে পুনরায় তলব করা ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। তিনি ওগুলোকে কেটে ফেলার নির্দেশ দেন এবং বলেনঃ “এগুলো তো আমাকে আমার প্রতিপালকের ইবাদত হতে উদাসীন করে ফেলেছে। সুতরাং এগুলো রাখা চলবে না।" অতঃপর ঐ ঘোড়াগুলোর পা ও গলদেশ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) শুধু ঘোড়াগুলোর কপালের লোমগুলো ইত্যাদির উপর হাত ফিরিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এই উক্তিটি গ্রহণ করেছেন যে, বিনা কারণে জন্তুকে কষ্ট দেয়া অবৈধ। ঐ জন্তুগুলোর কোনই দোষ ছিল না যে, তিনি ওগুলো কেটে ফেলবেন। কিন্তু আমি বলি যে, হয়তো তাদের শরীয়তে এ কাজ বৈধ ছিল, বিশেষ করে ঐ সময়, যখন ঐগুলো আল্লাহর স্মরণে বাধা সৃষ্টি করলো এবং নামাযের ওয়াক্ত সম্পূর্ণরূপে চলেই গেল। তাহলে তার ঐ ক্রোধ আল্লাহর জন্যেই ছিল। আর এর ফলে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে ওগুলোর চেয়ে দ্রুতগামী ও হালকা জিনিস দান করেছিলেন। অর্থাৎ বাতাসকে তিনি তার অনুগত করে দিয়েছিলেন।হ্যরত কাতাদা (রঃ) ও হযরত আবুদ দাহমা (রঃ) প্রায়ই হজ্ব করতেন। তারা বলেন, একবার এক গ্রামে একজন বেদুইনের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। সে বলে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরে আমাকে বহু কিছু দ্বীনী শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাতে এও ছিলঃ “তুমি আল্লাহকে ভয় করে যে জিনিস ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তদপেক্ষা উত্তম জিনিস দান করবেন।" (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَأَلْقَيْنَا عَلَىٰ كُرْسِيِّهِ جَسَدًا ثُمَّ أَنَابَ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيحَ تَجْرِي بِأَمْرِهِ رُخَاءً حَيْثُ أَصَابَ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

وَالشَّيَاطِينَ كُلَّ بَنَّاءٍ وَغَوَّاصٍ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

وَآخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

هَٰذَا عَطَاؤُنَا فَامْنُنْ أَوْ أَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

📘 Please check ayah 38:40 for complete tafsir.

وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ ۖ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ

📘 ৩৪-৪০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি সুলাইমান (আঃ)-এর পরীক্ষা নিয়েছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর একটি দেহ নিক্ষেপ করেছিলাম অর্থাৎ শয়তানকে। তারপর সে তার সিংহাসনের নিকট ফিরে আসলো। ঐ শয়তানের নাম ছিল সখর বা আসিফ অথবা আসরিওয়া কিংবা হাকীক। এ ঘটনাটি অধিকাংশ মুফাসসির বর্ণনা করেছেন। কেউ বর্ণনা করেছেন বিস্তারিতভাবে এবং কেউ বর্ণনা করেছেন সংক্ষেপে। হযরত কাতাদা (রঃ) ঘটনাটি নিম্নরূপে বর্ণনা করেছেনঃ হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করার হুকুম দেয়া হয় এবং তাঁকে বলে দেয়া হয় যে, তিনি যেন ওটা এমনভাবে নির্মাণ করেন যাতে লোহার শব্দও শোনা না যায়। হযরত সুলাইমান (আঃ) সদা চেষ্টা তদবীর চালাতে থাকেন, কিন্তু কারিগর খুঁজে পান না। অতঃপর তিনি শুনতে পান যে, সমুদ্রে একটি শয়তান রয়েছে যার নাম সখর। সে অবশ্যই এর নির্মাণ প্রণালী বলে দিতে পারবে। তিনি নির্দেশ দিলেন যে, যেভাবেই হোক তাকে আমার কাছে হাযির করা চাই। সমুদ্রে একটি প্রস্রবণ ছিল। প্রতি সপ্তাহে এক দিন তাতে পানি উচ্ছসিত হয়ে আসতো। ঐ শয়তান এই পানিই পান করতো। ঐ প্রস্রবণের পানি বের করে নেয়া হলো এবং ওটা সম্পূর্ণ খালি করে দিয়ে পানি আসার মুখ বন্ধ করে দেয়া হলো। অতঃপর ঐ শয়তানের আগমনের নির্দিষ্ট দিনে ওটা মদে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। ঐ শয়তান এসে অবস্থা দেখে বললোঃ “এতো মজার জিনিসই বটে, কিন্তু এটা হলো জ্ঞানের শত্রু। এর দ্বারা অজ্ঞতার উন্নতি হয়।” সুতরাং সে পান না করেই চলে গেল। কিন্তু যখন কঠিনভাবে পিপাসার্ত হলো তখন এসব কিছু বলা সত্ত্বেও তাকে তা পান করতেই হলো। পান করা মাত্রই তার জ্ঞান লোপ পেয়ে গেল এবং তাকে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর আংটি দেখানো হলো অথবা তার দুই কাঁধের মাঝে মোহর লাগিয়ে দেয়া হলো। সুতরাং সে শক্তিহীন হয়ে পড়লো। * হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর রাজত্বের মূলে ছিল এই আংটি। এই আংটির বলেই তিনি রাজ্য শাসন করতেন। এ শয়তানকে তার দরবারে হাযির করা হলে তিনি তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের নির্মাণ কার্য পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। শয়তান এ কাজে বের হলো এবং হুদহুদ পাখীর ডিমগুলো এনে জমা করলো। অতঃপর ডিমগুলোর উপর শীশা রেখে দিলো। হুদহুদ এসে ডিমগুলো দেখলো এবং চার পাশে ঘুরলো। কিন্তু দেখলো যে, ওগুলো উদ্ধার করা যাবে না। তখন সে উড়ে চলে গেল ও হীরা এনে তা শীশার উপর রেখে শীশাকে কাটতে শুরু করলো। অবশেষে শীশা কেটে গেল এবং সে তার ডিমগুলো নিয়ে চলে গেল। ঐ হীরা নিয়ে নেয়া হলো এবং তা দিয়ে পাথর কেটে কেটে বায়তুল মুকাদ্দাসের নির্মাণ কার্য শুরু করে দেয়া হলো। হযরত সুলাইমান (আঃ) যখন পায়খানা বা গোসলখানায় যেতেন তখন তিনি তার আংটি খুলে রেখে যেতেন। একদিন তিনি গোসলখানায় যাচ্ছিলেন এবং ঐ শয়তান তার সাথে ছিল। ঐ সময় তিনি যাচ্ছিলেন ফরয গোসলের জন্যে। আংটিটা তিনি ঐ শয়তানের কাছেই রেখে দেন। শয়তান তখন ঐ আংটি সমুদে। নিক্ষেপ করে এবং ঐ শয়তান হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর রূপ ধারণ করে তার সিংহাসনে এসে বসে যায়। সব জিনিসের উপর ঐ শয়তানের আধিপত্য লাভ হয়। শুধুমাত্র হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর স্ত্রীদের উপর সে কোন ক্ষমতা লাভ করতে পারেনি। এখন ঐ শয়তানের শাসনামলে বহু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে থাকে। ঐ যুগে সেখানে হযরত উমার (রাঃ)-এর ন্যায় একজন অতি বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি বাস করতেন। তিনি বললেনঃ “এ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা দরকার। আমার মনে হচ্ছে যে, এ ব্যক্তি হযরত সুলাইমান (আঃ) নয়।” সুতরাং তিনি একদিন হযরত সুলাইমান রূপী ঐ শয়তানকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আচ্ছা জনাব! যদি কোন লোক রাত্রে অপবিত্র হয়ে যায় এবং ঠাণ্ডার কারণে সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল না করে তবে বুঝি কোন দোষ নেই?” সে উত্তরে বললোঃ “কখনো না।” চল্লিশ দিন পর্যন্ত সে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর সিংহাসনের উপর উপবিষ্ট ছিল। অতঃপর সুলাইমান (আঃ) মাছের পেটে তার আংটি প্রাপ্ত হন। আংটি রামাত্রই সব কিছুই তার অনুগত হয়ে যায়। এরই বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে।হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেনঃ হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর একশ’টি স্ত্রী ছিল। তাদের মধ্যে একজনের উপর তার খুব বিশ্বাস ও আস্থা ছিল যার নাম ছিল জারাদাহ। যখন তিনি অপবিত্র হতেন বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করতে যেতেন তখন ঐ আংটি তিনি তার ঐ স্ত্রীর কাছে রেখে যেতেন। একদিন তিনি আংটিটা তার ঐ স্ত্রীর কাছে রেখে পায়খানায় গিয়েছেন, পিছন হতে একটি শয়তান তাঁরই রূপ ধরে এসে তার স্ত্রীর কাছে আংটিটা চায়। তিনি তাকে তা দিয়ে দেন। শয়তান আংটিটা নিয়েই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর সিংহাসনে গিয়ে বসে পড়ে। তখন হযরত সুলামাইন (আঃ) পায়খানা হতে এসে স্ত্রীর কাছে আংটি চাইলে তিনি বলেনঃ “এখনই তো আপনি আংটি নিয়ে গেলেন।” স্ত্রীর কথা শুনে হযরত সুলাইমান (আঃ) বুঝে ফেললেন যে, এটা তার উপর আল্লাহর পরীক্ষা।সুতরাং তিনি অত্যন্ত হতবুদ্ধি ও চিন্তিত অবস্থায় প্রাসাদ হতে বেরিয়ে পড়লেন। শয়তান চল্লিশ দিন পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে। কিন্তু হুকুমের পরিবর্তন দেখে আলেমগণ হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট আসলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ “ব্যাপার কি?" হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর সত্তা সম্পর্কে আমরা সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছি। যদি ইনি প্রকৃতই সুলাইমান হন তবে বুঝতে হবে যে, তার জ্ঞান লোপ পেয়েছে, অথবা ইনি হযরত সুলাইমান (আঃ) নন। ইনি প্রকৃত সুলাইমান হলে কখনো এরূপ শরীয়ত বিরোধী আহকাম জারী করতেন না। তাদের একথা শুনে তাঁর স্ত্রীরা কাঁদতে লাগলেন। ঐ আলেমগণ সেখান হতে ফিরে এসে সিংহাসনের চারদিকে ঐ শয়তানকে ঘিরে বসে পড়লেন এবং তাওরাত খুলে পড়তে শুরু করলেন। আল্লাহর কালাম শুনে ঐ পাপিষ্ঠ শয়তান পালিয়ে গেল এবং ঐ আংটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করলো। ঐ আংটি একটি মাছ গিলে ফেললো।হযরত সুলাইমান (আঃ) তাঁর ঐ অবস্থাতেই কালাতিপাত করছিলেন। একদা তিনি সমুদ্রের ধারে গমন করেন। তিনি ক্ষুধার জ্বালায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন। জেলেদেরকে মাছ ধরতে দেখে তিনি তাদের কাছে একটি মাছ চাইলেন এবং নিজের নামও বললেন। তাকে তার নাম বলতে শুনে জেলেদের একজন ভীষণ রাগান্বিত হয় এবং বলেঃ দেখো, এ ভিক্ষা চাচ্ছে, আবার নাম বলছে ‘সুলাইমান’! এ বলে সে তাকে মারতে মারতে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো। আহত হয়ে তিনি সমুদ্রের এক কিনারায় গিয়ে নিজের ক্ষত স্থানের রক্ত ধুতে লাগলেন। জেলেদের কারো কারো মনে দয়ার সঞ্চার হলো। তারা বললোঃ “কেন তুমি ভিক্ষুক বেচারাকে মারলে? যাও, মাছ দুটি তাকে দিয়ে এসো। সে ক্ষুধার্ত, ভেজে খাবে।” সুতরাং তারা দুটো মাছ তাঁকে দিলো। মাছ দুটো পেয়ে তিনি রক্ত ও যখমের কথা ভুলে গেলেন এবং তাড়াতাড়ি মাছ দুটো কাটতে বসলেন। আল্লাহর কি মহিমা! মাছের পেটে তিনি তাঁর ঐ আংটি পেয়ে গেলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং অঙ্গুলিতে ঐ আংটি পরে নিলেন। তৎক্ষণাৎ পক্ষীকুল এসে তাঁকে ছায়া করলো এবং ঐ লোকগুলো তাকে চিনে ফেললো। তারা তাঁর সাথে যে দুর্ব্যবহার করেছে সে জন্যে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলো। তিনি বললেনঃ “এ সবই আল্লাহর কাজ। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উপর এক পরীক্ষা ছিল।” অতঃপর তিনি গিয়ে স্বীয় সিংহাসনে উপবেশন করলেন এবং নির্দেশ দিলেনঃ “ঐ শয়তানকে যেখানেই পাও সেখান থেকেই ধরে এনে বন্দী করে দাও।” সুতরাং তাকে বন্দী করে দেয়া হলো। তিনি তাকে লোহার একটি সিন্দুকে ভরে তাতে তালা লাগিয়ে দিয়ে ওর উপর মোহর লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর ঐ সিন্দুককে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। সে কিয়ামত পর্যন্ত সেখানেই বন্দী থাকবে। তার নাম ছিল হাকীক।হযরত সুলাইমান (আঃ) দুআ করেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন এক রাজ্য দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া কেউ না হয়। তার এ দু'আও কবুল করা হয় এবং বাতাসকে তাঁর অনুগত করে দেয়া হয়। হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আসিফ নামক শয়তানকে হযরত সুলাইমান (আঃ) একবার জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কিভাবে মানুষকে ফিত্রায় ফেলে থাকো?” সে আরয করলোঃ “আমাকে একটু আপনার আংটিটা দিন আমি আপনাকে এখনই তা দেখিয়ে দিচ্ছি।” তিনি তখন তাকে তার আংটিটা দিলেন। সে আংটিটা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলো এবং নিজে সে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর মুকুট ও সিংহাসনের মালিক হয়ে গেল এবং তাঁর পোশাক পরিহিত হয়ে জনগণকে আল্লাহর পথ হতে সরাতে লাগলো (শেষপর্যন্ত)। এটা মনে রাখা দরকার যে, এ সবগুলো হলো বানী ইসরাঈলের বর্ণিত ঘটনা। এগুলোর সবচেয়ে বেশী মুনকার বা অস্বীকার্য ঘটনা হলো ঐটি যা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা। করেছেন এবং যা উপরে বর্ণিত হলো। যাতে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর স্ত্রী হযরত জারাদার বর্ণনা রয়েছে। তাতে এও আছে যে, এর শেষটা এমন পর্যায়ে। পৌঁছে গিয়েছিল যে, হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে তার ছেলেরা পাথর মারতো। আলেমগণ তাঁর স্ত্রীদের কাছে তার সম্পর্কে অনুসন্ধান নিতে গেলে তারা বলেনঃ “হ্যা, আমরাও বুঝেছি যে, এটা সুলাইমান নয়। কেননা, সে হায়েযের অবস্থায় আমাদের নিকট এসে থাকে। শয়তান যখন জানতে পারলো যে রহস্য খুলে গেছে। তখন সে জাদু ও কুফরীর বইগুলো লিখিয়ে নিয়ে সিংহাসনের নীচে পুঁতে দিলো। অতঃপর জনগণের সামনে ঐগুলো বের করিয়ে নিয়ে তাদেরকে বললোঃ “দেখো, এই কিতাবগুলোর বদৌলতেই সুলাইমান (আঃ) শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।” তখন জনগণ হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে কাফির বলতে শুরু করে। হযরত সুলাইমান (আঃ) সমুদ্রের ধারে মজুরী করতেন। একবার একটি লোক অনেকগুলো মাছ ক্রয় করে। সে মজুরকে ডাকে। হযরত সুলাইমান (আঃ) সেখানে পৌঁছলে লোকটি তাকে বলেঃ “মাছগুলো উঠিয়ে নিয়ে চল।” তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “মজুরী কত দিবে?" উত্তরে সে বললোঃ “একটি মাছ। তোমাকে দিয়ে দিবো।” তিনি তখন মাছের ঝুড়িটি মাথায় উঠিয়ে নিয়ে লোকটির বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিলেন। লোকটি তাঁকে একটি মাছ দিয়ে দিলো।তিনি মাছটি গ্রহণ করলেন এবং ওর পেট কেটে দিলেন। পেট কাটা মাত্রই ঐ আংটিটি বেরিয়ে আসলো। ওটা অঙ্গুলিতে পরা মাত্রই সমস্ত শয়তান, দানব ও মানব তার অনুগত ও বশীভূত হয়ে গেল এবং দলবদ্ধ হয়ে তার সামনে হাযির হয়ে গেল। তিনি রাজ্যের উপর আধিপত্য লাভ করলেন এবং ঐ শয়তানকে তিনি কঠিন শাস্তি দিলেন। এর ইসনাদ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) পর্যন্ত রয়েছে। এর সনদ সবল বটে, কিন্তু এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) আহলে কিতাব হতে গ্রহণ করেছেন। এটাও ঐ সময় বলা হবে যখন আমরা মেনে নিবো যে, এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি। আহলে কিতাবের একটি দল হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে নবী বলে স্বীকার করতো না। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এই জঘন্য কাহিনী ঐ ভ্রষ্ট দলটিই বানিয়ে নিয়েছে। এতে তো ঐ সব কথাও রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণরূপেই মুনকার বা অস্বীকার্য। বিশেষ করে ঐ শয়তানের হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট যাওয়া কোনক্রমেই স্বীকার করা যেতে পারে না। অন্যান্য ইমামরাও এ ধরনেরই কাহিনী বর্ণনা করেছেন বটে, কিন্তু এটাকে সবাই অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, জ্বিন হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট যেতে পারেনি এবং নবীর ঘরের স্ত্রীদের পবিত্রতা, নিষ্কলুষতা ও সতীত্বের চাহিদাও এটাই। আরো বহু লোক এই ঘটনাকে খুবই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সবারই মূল এটাই যে, ওগুলো বানী ইসরাঈল ও আহলে কিতাব হতে নেয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।ইয়াহইয়া ইবনে আবি উরূবা শায়বানী (রঃ) বলেন যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) তাঁর আংটিটি আসকালান নামক স্থানে পেয়েছিলেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত তিনি বিনীতভাবে পদব্রজে গিয়েছিলেন।ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর কুরসী সম্বন্ধে হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) হতে একটি বিস্ময়কর খবর পরিবেশন করেছেন। আবু ইসহাক মিসরী (রঃ) বলেন যে, যখন হযরত কাব আহবার (রাঃ) ইরামু যাতিল ইমাদ এর ঘটনার বর্ণনা শেষ করেন তখন হযরত মুআবিয়া (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আবু ইসহাক (রাঃ)! হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর কুরসীর বর্ণনাও একটু করুন।” তখন তিনি বলেনঃ “ওটা হাতীর দাঁতের তৈরী ছিল। তাতে মণি, ইয়াকূত, যবরজদ এবং মুক্তা বসানো ছিল। ওর চতুর্দিকে সোনার খেজুর গাছ বানানো ছিল এবং ওর গুচ্ছগুলোও ছিল মুক্তার তৈরী। কুরসীর ডান দিকে যে খেজুর গাছগুলো ছিল ওগুলোর মাথার উপর সোনার ময়ূর নির্মিত ছিল এবং বাম দিকের খেজুর গাছের মাথায় ছিল গৃধিনী এবং ওটাও ছিল সোনার তৈরী। ঐ কুরসীর প্রথম সোপানের ডান দিকে সোনার দুটি সানুবর বৃক্ষ ছিল এবং বাম দিকে সোনার দু'টি সিংহ নির্মিত ছিল। সিংহ দুটির মাথার উপর যবরজদ পাথরের দুটি স্তম্ভ ছিল এবং কুরসীর দুই দিকে সোনার তৈরী দু’টি আঙ্গুর গাছ ছিল যেগুলো কুরসীকে ছায়া করতো। ওর গুচ্ছও ছিল লাল মুক্তার তৈরী। আর কুরসীর সর্বোচ্চ সোপানের উপর স্বর্ণ নির্মিত বড় বড় দু’টি সিংহ ছিল। সিংহ দু’টির পেট মিশক ও আম্বর দ্বারা পূর্ণ করা থাকতো। যখন হযরত সুলাইমান (আঃ) কুরসীর উপর আরোহণের ইচ্ছা করতেন তখন সিংহ দু’টি কিছুক্ষণ ধরে ঘুরতে শুরু করতো। ফলে ওগুলোর পেটের মধ্যস্থিত মিশক আম্বরগুলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো। তারপর স্বর্ণ নির্মিত দু'টি মিম্বর রেখে দেয়া হতো। একটি মন্ত্রীর জন্যে এবং অপরটি সেই সময়ের সবচেয়ে বড় আলেমের জন্যে অতঃপর কুরসীর সামনে স্বর্ণ নির্মিত আরো সত্তরটি মিম্বর বিছিয়ে দেয়া হতো, যেগুলোর উপর বানী ইসরাঈলের কাযী, তাদের আলেমগণ এবং প্রধানগণ বসতেন। ঐগুলোর পিছনে স্বর্ণ নির্মিত আরো পঁয়ত্রিশটি মিম্বর রাখা হতো যেগুলো খালি থাকতো। হযরত সুলাইমান (আঃ) প্রথম সোপানে পা রাখা মাত্রই কুরসী এই সমুদয় জিনিসসহ ঘুরতে থাকতো। সিংহ তার ডান পা সামনে বাড়িয়ে দিতো এবং গধিনী তার বাম পা বিস্তার করতো। তিনি যখন দ্বিতীয় সোপানে পা রাখতেন। তখন সিংহ তার বাম পা বিস্তার করতো এবং গৃধিনী বিস্তার করতো তার ডান পা। যখন তিনি তৃতীয় সোপানে চড়তেন এবং কুরসীর উপর বসে যেতেন তখন একটা বড় গৃধিনী তাঁর মুকুটটি নিয়ে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিতো। অতঃপর কুরসী দ্রুতগতিতে ঘুরতে থাকতো। মুআবিয়া (রাঃ) প্রশ্ন করলেন:“হে আবূ ইসহাক (রাঃ)! এভাবে ঘুরার কারণ কি?” জবাবে তিনি বললেন:“ওটা একটা সোনার স্তম্ভের উপর ছিল। সখর নামক জ্বিন ওটা বানিয়েছিল। ওটা ঘুরে উঠতেই নীচের ময়ূর, গৃধিনী ইত্যাদি সবই উপরে এসে যেতো এবং মাথা ঝুঁকাতো ও পাখা নাড়তো। ফলে তার দেহের উপর মিক-আম্বর বিচ্ছুরিত হতো। তারপর একটি কবুতর তাওরাত উঠিয়ে তার হাতে দিতো যা তিনি পাঠ করতেন।” কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটি খুবই গরীব বা দুর্বল।হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দু'আর উদ্দেশ্য ছিলঃ “হে আল্লাহ! আমাকে আপনি এমন রাজ্য দান করুন যা অন্য কেউ আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নিতে না পারে। যেমন এই দেহের ঘটনা যা তার কুরসীর উপর রেখে দেয়া হয়েছিল।এটা অর্থ নয় যে, অন্যকে যেন তাঁর মত রাজ্য দান করা না হয় এটা তাঁর দু'আ ছিল। কিন্তু যে লোকগুলো এই অর্থ নিয়েছেন তা সঠিক বলে মনে হয় না। বরং সহীহ মতলব এটাই যে, তাঁর মত রাজ্য যেন অন্য কোন মানুষকে দেয়া না হয় এটাই তার প্রার্থনা ছিল। আয়াতের শব্দ দ্বারা এটাই জানা যাচ্ছে এবং হাদীসসমূহ দ্বারাও এটাই প্রমাণিত হচ্ছে।সহীহ বুখারীতে এই আয়াতের তাফসীরে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এক দুষ্ট জ্বিন গত রাত্রে আমার উপর বাড়াবাড়ি করেছিল এবং আমার নামায নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার উপর ক্ষমতা দান করেছিলেন এবং ইচ্ছা করেছিলাম যে, মসজিদের স্তম্ভের সাথে তাকে বেঁধে রাখবো, যাতে সকালে তোমরা তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আমার ভাই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দু'আর কথা আমার মনে হয়ে গেল। হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত রাওহ (রাঃ) বলেন যে, এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ দুষ্ট জ্বিনকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে ছেড়ে দেন।হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলতে শুনলামঃ (আরবী) (আমি তোমা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি) তারপর তিনি বলেনঃ (আরবী) (তোমার উপর আমি আল্লাহর লা'নত বর্ষণ করছি)। একথা তিনি তিনবার বলেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে স্বীয় হাত প্রসারিত করেন যে, যেন কোন জিনিস তিনি নিতে চাচ্ছেন। তাঁর নামায শেষ হলে আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা নামাযে আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনলাম যা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। আর আপনাকে হাত প্রসারিত করতে দেখলাম (ব্যাপার কি?)। তিনি উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহর শত্রু ইবলীস জ্বলন্ত অগ্নি নিয়ে আমার মুখে নিক্ষেপ করার জন্যে এসেছিল। তাই আমি তিনবার (আরবী) বলেছি। তারপর তিনবার তার উপর আল্লাহর লা'নত বর্ষণ করেছি। কিন্তু তখনও সে সরেনি। সুতরাং আমি তাকে বেঁধে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম যাতে সকালে মদীনার ছেলেরা তাকে নিয়ে খেলতে পারে। যদি আমার ভাই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দু'আ না থাকতো তবে আমি তাই করতাম।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আতা ইবনে ইয়াযীদ লাইসী (রঃ) নামায পড়ছিলেন। আবু উবায়েদ (রঃ) তাঁর সামনে দিয়ে গমনের ইচ্ছা করলে তিনি তাকে হাত দ্বারা বাধা দেন। অতঃপর বলেন যে, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন এবং আমিও তার পিছনে ছিলাম। তার কিরআত গড়বড় হয়ে যায়। নামায শেষে তিনি বলেনঃ “যদি তোমরা দেখতে যে, আমি ইবলীসকে ধরে ফেলেছিলাম এবং এমনভাবে তার গলা টিপে ধরেছিলাম যে, তার মুখের ফেনা আমার শাহাদাত ও মধ্যমা অঙ্গুলির উপর পড়েছিল! যদি আমার ভাই হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দু'আ না থাকতো (যে, তাঁর মত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অন্য কাউকেও যেন না দেয়া হয়) তবে তাকে সকালে মসজিদের স্তম্ভের সাথে বাধা অবস্থায় পাওয়া যেতো এবং মদীনার বালকেরা তার নাকে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে বেড়াতো। তোমরা যথা সম্ভব এই খেয়াল রাখবে যে, নামাযের অবস্থায় কেউ যেন তোমাদের সামনে দিয়ে গমন করতে না পারে।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)হযরত রাবী'আহ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আবদিল্লাহ দাইলামী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হই। ঐ সময় তিনি তাঁর ‘অহত' নামক বাগানে অবস্থান করছিলেন এবং একজন কুরায়েশ যুবককে ঘিরে রয়েছিলেন যে ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী ছিল। আমি তাকে বললামঃ আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি নাকি নিম্নের হাদীসটি বর্ণনা করে থাকেনঃ “যে ব্যক্তি এক চুমুক মদ্যপান করবে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তার তাওবা কল করবেন না এবং দুরাচার ব্যক্তি সে-ই যে মায়ের পেটেই দুরাচার হয়। আর যে ব্যক্তি শুধু নামাযের নিয়তে বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে গমন করে সে পাপ থেকে এমন পবিত্র হয় যে, যেন সে আজই জন্মগ্রহণ করেছে। যে মদ্যপায়ী যুবকটিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) ধরে রয়েছিলেন সে মদ্যপানের কথা শুনেই তো হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পগারপার হয়ে গেল। অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বললেন, কারো এ অধিকার নেই যে, সে এমন কথার দিকে আমাকে সম্বন্ধযুক্ত করে যা আমি বলিনি। প্রকৃতপক্ষে আমি তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে নিম্নরূপ শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি এক চুমুক মদ্যপান করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায ককূল হয় না। সে যদি তাওবা করে তবে আল্লাহ তা'আলা তার তাওবা কল করে থাকেন। পুনরায় যদি সে পান করে তবে আবার চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবূল হয় না। আবার যদি তাওবা করে তবে তার তাওবা কবুল হয়। আমার মনে নেই যে, তৃতীয় কি চতুর্থ বারে তিনি বলেছিলেনঃ “আবারও যদি মদ্যপান করে তবে এটা নিশ্চিত যে, তাকে জাহান্নামীদের দেহের রক্ত, পুঁজ, প্রস্রাব ইত্যাদি কিয়ামতের দিন পান করানো হবে।” আর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় মাখলুককে অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের উপর নিজের নূর নিক্ষেপ করেছেন। ঐ দিন যার উপর ঐ নূর পতিত হয়েছে সে তো হিদায়াত প্রাপ্ত হয়েছে। আর যার উপর নূর পড়েনি সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। এ জন্যেই আমি বলি যে, আল্লাহর ইলম অনুযায়ী কলম চলা শেষ হয়ে গেছে বা কলম শুকিয়ে গেছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে আরো শুনেছি:“হযরত সুলাইমান (আঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট তিনটি প্রার্থনা করেন। তন্মধ্যে দুটি তিনি পেয়ে গেছেন এবং আমরা আশা করি যে, তৃতীয়টি আমাদের জন্যে রয়েছে। তার প্রথম প্রার্থনা ছিল যে, তার হুকুম যেন আল্লাহর হুকুমের অনুকূলে হয়। এটা আল্লাহ তা'আলা তাকে প্রদান করেন। তাঁর দ্বিতীয় প্রার্থনা ছিল এই যে, আল্লাহ পাক যেন এমন রাজ্য তাকে দান করেন যার অধিকারী তিনি ছাড়া আর কেউ না হয়। মহান আল্লাহ এটাও তাঁকে দেন। তাঁর তৃতীয় প্রার্থনা ছিল এই যে, যে ব্যক্তি শুধু এই মসজিদে নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই নিজের ঘর হতে বের হয়, সে যখন ফিরে আসে তখন যেন এমন হয়ে যায় যে, তার মা যেন তাকে আজই প্রসব করেছে। আমরা আশা রাখি যে, এটা আমাদের জন্যে আল্লাহ পাক দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত রাফে ইবনে উমায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা নিজের জন্যে হযরত দাউদ (আঃ)-কে একটি ঘর নির্মাণ করতে বলেন। হযরত দাউদ (আঃ) প্রথমে নিজের ঘর বানিয়ে নেন। তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিকট অহী করেনঃ “হে দাউদ (আঃ)! আমার ঘর নির্মাণ করার পূর্বেই তুমি তোমার ঘর বানিয়ে নিলে?” হযরত দাউদ (আঃ) উত্তরে বললেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এটাই ফায়সালা করা হয়েছিল।” অতঃপর তিনি মসজিদের নির্মাণ কার্য শুরু করেন। দেয়াল গাঁথা সমাপ্ত হলে ঘটনাক্রমে দেয়ালের এক তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে পড়ে যায়। তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট এ জন্যে অভিযোগ জানালে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তুমি আমার ঘর তৈরী করতে পারবে না।” হযরত দাউদ (আঃ) তখন। জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কেন?” উত্তরে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ “কেননা, তোমার হাত দ্বারা রক্ত প্রবাহিত হয়েছে।” তিনি আরয করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এটাও তো আপনার ইচ্ছা ও ভালবাসার জন্যেই?” মহান আল্লাহ জবাবে বলেনঃ “হ্যা, তা সত্য বটে, কিন্তু তারা আমার বান্দা এবং আমি তাদের উপর দয়া করে থাকি।” আল্লাহ তাআলার এ কথা হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর খুব কঠিন ঠেকে। অতঃপর তার উপর অহী করা হয়ঃ “হে দাউদ (আঃ)! তুমি দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না। আমি এ মসজিদের নির্মাণ কার্য তোমার পুত্র সুলাইমান (আঃ)-এর দ্বারা সমাপ্ত করাবো।” সুতরাং হযরত দাউদ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র হযরত সুলাইমান (আঃ) মসজিদের নির্মাণ কার্যে হাত দেন। নির্মাণ কার্য সমাপ্ত হলে তিনি বড় বড় কুরবানী করেন, কুরবানীর পশু যবেহ করেন এবং বানী ইসরাঈলকে একত্রিত করে তাদেরকে পানাহারে পরিতৃপ্ত করেন। সুতরাং অহী অবতীর্ণ হলোঃ “হে সুলাইমান (আঃ)! তুমি এগুলো করেছো আমাকে সন্তুষ্ট ও খুশী করার জন্যে। সুতরাং তুমি আমার কাছে চাও। যা চাইবে তা-ই পাবে।” হযরত সুলাইমান (আঃ) তখন বললেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার তিনটি আবেদন আছে। প্রথমঃ আমাকে এমন ফায়সালা বুঝিয়ে দিন যা আপনার মর্জি অনুযায়ী হয়। দ্বিতীয়ঃ আমাকে এমন রাজ্য দান করুন আমার পরে যেন অন্য কেউ এর যোগ্য না হয়। তৃতীয়ঃ এই ঘরে যে শুধু নামাযের নিয়তে আসবে সে যেন এমনভাবে পাপমুক্ত হয় যেন আজই তার মা তাকে প্রসব করেছে। এ তিনটির মধ্যে তো দু'টি আল্লাহ তাকে দান করেছেন এবং আমি আশা করি যে, তৃতীয়টিও দেয়া হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দুআর শুরুতে বলতে শুনেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আমার মহান, পরম দানশীল আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর আল্লাহ তা'আলা তাঁর পুত্র হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট অহী করেনঃ “আমার কাছে তুমি তোমার প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা কর।” তখন তিনি বললেনঃ “আমাকে এমন অন্তর দান করুন যে আল্লাহকে ভয় করে, যেমন আমার পিতার অন্তর ছিল। আর আমার অন্তরকে এমন করে দিন যেন সে আপনাকে মহব্বত করে যেমন আমার পিতার অন্তর ছিল।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমার বান্দার কাছে আমি ওয়াহী করলাম এবং তাকে আমার কাছে তার প্রয়োজন পূরণের জন্যে প্রার্থনা করতে বললাম, তখন সে তার প্রয়োজনের কথা এই বললো যে, আমি যেন তাকে এমন অন্তর প্রদান করি যে আমাকে ভয় করে এবং আমি যেন তার অন্তরে আমার ভালবাসা সৃষ্টি করে দিই। সুতরাং আমি তাকে এমন রাজ্য দান করবো যার যোগ্য তার পরে অন্য কেউ হবে না।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতএব আমি তার অধীন করে দিলাম বায়ুকে, যা তার আদেশে, সে যেখানে ইচ্ছা করতো সেখানে মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত হতো।” আল্লাহ তাআলা তাকে যা দেয়ার তা দিলেন এবং আখিরাতে তাঁর কোন হিসাব নেই। (এভাবে আবুল কাসেম ইবনে আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে আনয়ন করেছেন)পূর্বযুগীয় কোন একজন মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁর নিকট হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে খবর পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার মা'বুদ। আমার উপর যেমন আপনি (দয়ালু ও স্নেহশীল) রয়েছেন তেমনই (আমার পুত্র) সুলাইমানের উপরও হয়ে যান।”তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিকট অহী করেনঃ “তুমি (তোমার পুত্র) সুলাইমান (আঃ)-কে বলে দাও যে, সে যেন আমারই হয়ে যায় যেমন তুমি আমারই রয়েছে, তাহলে আমি তারই হয়ে যাবো, যেমন আমি তোমারই রয়েছি।”এরপর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, যখন হযরত সুলাইমান (আঃ) আল্লাহর প্রেম ও মহব্বতে পড়ে ঐ সুন্দর, প্রিয়, বিশ্বস্ত ও দ্রুতগামী ঘোড়াগুলোকে কেটে ফেললেন তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাঁকে এগুলো অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম জিনিস দান করলেন। অর্থাৎ বায়ুকে তিনি তাঁর অনুগত করে দিলেন, যে বায়ু তার এক মাসের পথ তাঁকে সকালের এক ঘন্টায় অতিক্রম করিয়ে দিতো। অনুরূপভাবে সন্ধ্যায় তিনি এক মাসের পথ অতি অল্প সময়ে অতিক্রম করতেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সুলাইমান (আঃ)-এর অধীন করে দিয়েছিলাম বায়ুকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ অতিক্রম করতো এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করতো।” (৩৪:১২)।মহান আল্লাহ বলেনঃ “শয়তানদেরকেও তার অধীনস্থ করে দিয়েছিলাম, যারা সবাই ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী। তারা বড় বড় উঁচু উঁচু ও লম্বা লম্বা পাকা প্রাসাদ নির্মাণ করতে যা মানবীয় শক্তি বহিভূর্ত ছিল। আর তাদের মধ্যে অনেকে ডুবুরীর কাজ করতো। তারা ডুব দিয়ে সমুদ্রের গভীর তলদেশ হতে মণি-মুক্তা, জওহর ইত্যাদি মহামূল্যবান জিনিস নিয়ে আসতো। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা সুলাইমান (আঃ)-এর ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, মূর্তি, হাওদা সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত বৃহদাকার ডেগ নির্মাণ করতো।” (৩৪:১৩)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘শৃংখলে আবদ্ধ আরো অনেককে তার অধীন করে দিয়েছিলাম। এরা হয়তো তারাই ছিল যারা হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করতো কিংবা কাজ কামে অবহেলা করতো অথবা মানুষকে জ্বালাতন করতো ও কষ্ট দিতো।মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘এগুলো হলো আমার অনুগ্রহ, এটা হতে তুমি অন্যকে দিতে অথবা নিজে রাখতে পার। এর জন্যে তোমাকে হিসাব দিতে হবে না।' অর্থাৎ এই যে আমি তোমাকে পূর্ণ সাম্রাজ্য এবং ব্যাপক ক্ষমতা ও আধিপত্য দান করেছি যেমন তুমি প্রার্থনা করেছিলে, সুতরাং তুমি এখন যাকে ইচ্ছা দাও ও যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত কর, তোমাকে কোন হিসাব দিতে হবে না। অর্থাৎ তুমি যা করবে তাই তোমার জন্যে বৈধ। তুমি যা চাও তাই ফায়সালা কর, ওটাই সঠিক। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অধিকার ও স্বাধীনতা দেয়া হলো বান্দা ও রাসূল হওয়ার অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তিনি বন্টন করবেন ও এভাবে তার আদেশ পালন করে যাবেন অথবা তিনি নবী ও বাদশাহ হয়ে যাবেন। যাকে ইচ্ছা প্রদান করবেন এবং যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করবেন। তাঁর কোন হিসাব নেই। এ দু'টোর যে কোন একটি তিনি গ্রহণ করতে পারেন। তখন তিনি হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে পরামর্শ করেন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে প্রথমটিই গ্রহণ করেন। কেননা মর্যাদার দিক দিয়ে এটাই উত্তম, যদিও নবুওয়াত ও রাজত্ব বড় জিনিসই বটে। এজন্যে আল্লাহ তা'আলা হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর পার্থিব মান-মর্যাদার কথা বর্ণনা করার পরই বলেনঃ আর (আখিরাতে) আমার নিকট তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম।

وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ

📘 Please check ayah 38:44 for complete tafsir.

ارْكُضْ بِرِجْلِكَ ۖ هَٰذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ

📘 Please check ayah 38:44 for complete tafsir.

وَوَهَبْنَا لَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنَّا وَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ

📘 Please check ayah 38:44 for complete tafsir.

وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلَا تَحْنَثْ ۗ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًا ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ

📘 ৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁর চরম ধৈর্য ও কঠিন পরীক্ষায় পাশের প্রশংসা করছেন। তার ধন-মাল ধ্বংস হয়ে যায় এবং সন্তান-সন্ততি মৃত্যুবরণ করে। তার দেহে রোগ দেখা দেয়। এমনকি তার দেহে সূচের ছিদ্রের পরিমাণ এমন জায়গাও বাকী ছিল না যেখানে রোগ দেখা দেয়নি। তার অন্তরে শুধু প্রশান্তি বিরাজমান ছিল। আর তাঁর দারিদ্রের অবস্থা এই ছিল যে, এক সন্ধ্যার খাবারও কাছে ছিল না। ঐ অবস্থায় তাঁর কাছে এমন কোন লোক ছিল না যে তার খবরাখবর নেয়। শুধুমাত্র তার এক স্ত্রী তাঁর কাছে থাকতেন ও তাঁর সেবা করতেন যার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও স্বামী প্রেম বিদ্যমান ছিল। তিনি লোকদের কাজ কাম করে যা কিছু পেতেন তা দ্বারাই নিজের ও স্বামীর আহারের ব্যবস্থা করতেন। সুদীর্ঘ আট বছর পর্যন্ত এ অবস্থাই থাকে। অথচ ইতিপূর্বে তাঁর ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য ছিল। এতে তাঁর সমকক্ষ আর কেউই ছিল না। দুনিয়ার সুখ-শান্তির উপকরণ সবই তাঁর ছিল। কিন্তু সবই ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গায় তাঁকে রেখে আসা হয়। এ অবস্থায় একদিন দু’দিন নয় এবং এক বছর দু'বছর নয়, বরং দীর্ঘ আটটি বছর অতিবাহিত হয়। আপন ও পর সবাই তার থেকে বিমুখ হয়ে যায়। এমন কেউ ছিল না যে তাঁর অবস্থার কথা তাঁকে জিজ্ঞেস করে। শুধু তার কাছে তাঁর এই পত্নীটিই ছিলেন যিনি সব সময় তার সেবায় লেগে থাকতেন। শুধুমাত্র উভয়ের পেট পালনের জন্যে তাঁকে পরিশ্রম ও মজুরীতে যে সময়টুকু ব্যয় করতে হতো ঐ সময়টুকুই বাধ্য হয়ে তিনি স্বামী হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটাতেন। অবশেষে হযরত আইয়ূব (আঃ)-এর পরীক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। আল্লাহ পাকের এই মনোনীত বান্দা তাঁর দরবারে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তো কষ্ট ও বিপদ স্পর্শ করেছে এবং আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” বলা হয়েছে যে, তিনি এ প্রার্থনায় তার শারীরিক দুঃখ কষ্ট এবং মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দুঃখ-কষ্ট দূর করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তৎক্ষণাৎ পরম দয়ালু আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং বলেনঃ “তুমি তোমার পদ দ্বারা ভূমিতে আঘাত কর, এই তো গোসলের সুশীতল পানি ও পানীয়।” পা দ্বারা ভূমিতে আঘাত করা মাত্রই সেখানে একটি প্রস্রবণ উথলিয়ে উঠলো। আল্লাহ তাআলার নির্দেশানুসারে তিনি ঐ পানিতে গোসল করলেন। ফলে তার দেহের সব রোগ দূর হয়ে গেল এবং এমনভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন যে, যেন তাঁর দেহে কোন রোগ ছিল না। আবার অন্য জায়গায় তাকে ভুমিতে পা দ্বারা আঘাত করতে বলা হয়। আঘাত করা মাত্রই আর একটি প্রস্রবণ জারী হয়ে যায় এবং তাকে ঐ পানি পান করতে বলা হয়। ঐ পানি পান করা মাত্রই আভ্যন্তরীণ রোগও দূর হয়ে যায়। এই ভাবে বাহির ও ভিতরের পূর্ণ সুস্থতা তিনি লাভ করেন।হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর নবী হযরত আইয়ূব (আঃ) আঠারো বছর পর্যন্ত এই দুঃখ কষ্টের মধ্যে জড়িত ছিলেন। তাঁর আপন ও পর সবাই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুধুমাত্র তাঁর দু’জন অন্তরঙ্গ বন্ধু সকাল-সন্ধ্যায় তাঁকে দেখতে আসতো। একদিন তাদের একজন অপরজনকে বললোঃ “আমার মনে হয় যে, হযরত আইয়ুব (আঃ) এমন কোন পাপ করেছেন যে পাপ দুনিয়ার আর কেউই করেনি। কারণ, তিনি দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে এ রোগে ভুগছেন, অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করছেন না!” সন্ধ্যার সময় দ্বিতীয় ঐ লোকটি প্রথম ঐ লোকটির এ কথা হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে বলে দেয়। এ কথা শুনে হযরত আইয়ুব (আঃ) খুবই দুঃখিত হন এবং বলেনঃ “কেন সে একথা বললো? অথচ আল্লাহ খুব ভাল জানেন যে, আমি যখন কোন দুই ব্যক্তিকে পরস্পর ঝগড়া করতে ' দেখতাম এবং দু’জনই আল্লাহর নাম নিতো আমি তখন বাড়ী গিয়ে তাদের দু’জনের পক্ষ হতে কাফফারা আদায় করে তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দিতাম। কেননা, আমি এটা পছন্দ করতাম না যে, সত্য ব্যাপার ছাড়া আল্লাহর নাম নেয়া হোক (কেননা, এতে আল্লাহর নামে বেয়াদবী করা হয় এবং এটা আমার নিকট অসহনীয় ব্যাপার)।”ঐ সময় হযরত আইয়ুব (আঃ) একাকী চলাফেরা এমন কি উঠা-বসাও করতে পারতেন না। তাঁর স্ত্রী তাঁকে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজনে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন ও আসতেন। একদা তাঁর ঐ স্ত্রী হাযির ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছিলেন। ঐ সময় তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে তার শারীরিক সুস্থতার জন্যে প্রার্থনা করেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট অহী করেনঃ “তুমি তোমার পদ দ্বারা ভূমিতে আঘাত কর, এই তো গোসলের সুশীলত পানি আর পানীয়।” অতঃপর তিনি সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন। দীর্ঘক্ষণ পর তার স্ত্রী ফিরে এসে দেখেন যে, তাঁর রুগ্ন স্বামী তো নেই, বরং তার স্থানে একজন উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট সুস্থ মানুষ বসে আছেন। তিনি তাকে চিনতে পারলেন না। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! এখানে একজন আল্লাহর নবী রুগ্ন অবস্থায় ছিলেন তাঁকে দেখেছেন কি? আল্লাহর কসম! তিনি যখন সুস্থ ছিলেন তখন তার যেমন চেহারা ছিল, ঐ চেহারার সাথে আপনার চেহারার খুবই সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি দেখতে যেন প্রায় আপনার মতই ছিলেন।” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমিই সেই ব্যক্তি।” বর্ণনাকারী বলেন যে, হযরত আইয়ূব (আঃ)-এর দুটি গোলা ছিল। একটিতে গম রাখা হতো এবং অপরটিতে রাখা হতো যব। আল্লাহ তা'আলা দুই খণ্ড মেঘ পাঠিয়ে দেন। এক মেঘখণ্ড হতে সোনা বর্ষিত হয় এবং ঐ সোনা দ্বারা একটি গোলা ভর্তি হয়ে যায়। তারপর দ্বিতীয় মেঘখণ্ড হতেও সোনা বর্ষিত হয় এবং তা দ্বারা অপর গোলাটি ভর্তি করা হয়।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত আইয়ুব (আঃ) উলঙ্গ হয়ে গোসল করছিলেন এমন সময় আকাশ হতে সোনার ফড়িং বর্ষিতে শুরু হয়। হযরত আইয়ুব (আঃ) তাড়াতাড়ি ওগুলো স্বীয় কাপড়ে জড়িয়ে নিতে শুরু করেন। তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে ডাক দিয়ে বলেনঃ “হে আইয়ূব (আঃ)! তুমি যা দেখছো তা থেকে কি আমি তোমাকে বেপরোয়া ও অভাবমুক্ত করে রাখিনি?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! হ্যা, সত্যিই আপনি আমাকে এসব হতে বেপরোয়া ও অভাবমুক্ত রেখেছেন। কিন্তু আপনার রহমত হতে আমি বেপরোয়া ও অমুখাপেক্ষী নই।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) এককভাবে এটা তাখরীজ করেছেন)সুতরাং মহান আল্লাহ তাঁর এই ধৈর্যশীল বান্দাকে ভাল প্রতিদান ও উত্তম পুরস্কার প্রদান করেন। তাকে তিনি তাঁর সন্তানগুলোও দান করেন এবং অনুরূপ সংখ্যক আরো বেশী দেন। এমনকি হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ্ তাঁর মৃত সন্তানগুলোকেও পুনর্জীবিত করেন এবং অনুরূপ সংখ্যক আরো বেশী দান করেন। এটা ছিল আল্লাহর রহমত যা তিনি হযরত আইয়ূব (আঃ)-কে তার ধৈর্য, স্বৈর্য, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন এবং বিনয় ও নম্রতার প্রতিদান হিসেবে দান করেছিলেন। এটা বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ যে, ধৈর্যশীল লোকেরা পরিণামে এভাবেই স্বচ্ছলতা ও সুখ-শান্তি লাভ করে থাকে।কোন কোন লোক হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আইয়ুব (আঃ) তাঁর স্ত্রীর কোন এক কাজের কারণে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, তাঁর স্ত্রী তার চুলের খোপা বিক্রি করে তাঁদের খাদ্য এনেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। ঐ সময় তিনি কসম করেছিলেন যে, আরোগ্য লাভ করার পর তিনি তাঁর স্ত্রীকে একশ’ চাবুক মারবেন। অন্যেরা তার অসন্তুষ্টির অন্য কারণ বর্ণনা করেছেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি তাঁর কসম পুরো করার ইচ্ছা করেন। কিন্তু যে শাস্তি দেয়ার শপথ তিনি করেছিলেন তার সতী-সধ্বী স্ত্রীর জন্যে মোটেই তা যোগ্য ছিল না। কারণ তিনি এমন সময় স্বামীর সেবায় সদা লেগে থাকেন যখন তার সেবা করার আর কেউই ছিল না। এ জন্যে বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক পরম দয়ালু আল্লাহ তাঁর প্রতি সদয় হন এবং স্বীয় নবী (আঃ)-কে হুকুম করেন যে, তিনি যেন এক মুষ্টি তৃণ নেন (যাতে একশ’টি তৃণ থাকবে) এবং তা দ্বারা তাঁর স্ত্রীকে আঘাত করেন এবং এভাবেই যেন নিজের কসম পুরো করেন। এতে তাঁর কসমও পুরো হয়ে যাবে, আবার ঐ সতী-সাধ্বী ধৈর্যশীলা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারিণীর কোন কষ্ট হবে না। আল্লাহ তাআলার নীতি এই যে, তাঁর যেসব সৎ বান্দা তাকে ভয় করে তাদেরকে তিনি দুঃখ-কষ্ট ও অশান্তি হতে রক্ষা করে থাকেন।এরপর মহান আল্লাহ হযরত আইয়ূব (আঃ)-এর প্রশংসা করছেন যে, তিনি তাঁকে ধৈর্যশীল পেলেন। তিনি তাঁর কতই না উত্তম বান্দা ছিলেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর অভিমুখী। তার অন্তরে আল্লাহর খাঁটি প্রেম ছিল। তিনি তার দিকেই সদা ঝুঁকে থাকতেন। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযক। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ্ সমস্ত জিনিসের জন্যে স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।” (৬৫:২-৩) জ্ঞানী আলেমগণ এ আয়াত হতে বহু ঈমানী ইত্যাদি মাসআলা গ্রহণ করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ

📘 Please check ayah 38:49 for complete tafsir.

إِنَّا أَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ

📘 Please check ayah 38:49 for complete tafsir.

وَإِنَّهُمْ عِنْدَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْأَخْيَارِ

📘 Please check ayah 38:49 for complete tafsir.

وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ وَكُلٌّ مِنَ الْأَخْيَارِ

📘 Please check ayah 38:49 for complete tafsir.

هَٰذَا ذِكْرٌ ۚ وَإِنَّ لِلْمُتَّقِينَ لَحُسْنَ مَآبٍ

📘 ৪৫-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূলদের (আঃ) ফযীলতের বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁদের সংখ্যা গণনা করছেন যে, তাঁরা হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ) এবং হযরত ইয়াকূব (আঃ)। তিনি বলেন যে, তাঁদের আমল খুবই উত্তম ছিল এবং তারা ছিলেন সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। তাঁরা আল্লাহর ইবাদতে খুব মযবূত ছিলেন এবং মহাশক্তিশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে দুরদর্শিতা ও অন্তদৃষ্টি দান করা হয়েছিল। তাদের দ্বীনের বোধশক্তি ছিল, আল্লাহর আনুগত্যে তারাই ছিলেন অটল এবং সত্যকে তাঁরা দর্শনকারী ছিলেন। তাঁদের কাছে দুনিয়ার কোন গুরুত্ব ছিল না। তারা শুধু আখিরাতের প্রতি খেয়াল রাখতেন। দুনিয়ার প্রতি তাদের কোন ভালবাসা ছিল না এবং সদা-সর্বদা তাঁরা আখিরাতের যিকরে মগ্ন থাকতেন। তাঁরা ঐ সব কাজ করে চলতেন যেগুলো জান্নাতের হকদার বানিয়ে দেয়। জনগণকেও তারা ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করতেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কিয়ামতের দিন উত্তম পুরস্কার ও ভাল স্থান প্রদান করবেন। আল্লাহর দ্বীনের এই বুযর্গ ব্যক্তিরা আল্লাহর খাঁটি ও বিশিষ্ট বান্দা। হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইয়াসাআ (আঃ) এবং হযরত যুলকিফলও (আঃ) আল্লাহর মনোনীত ও বিশিষ্ট বান্দা ছিলেন। তাদের অবস্থাবলী সূরায়ে আম্বিয়ায় গত হয়েছে। এজন্যে এখানে বর্ণনা করা হলো না। তাদের ফযীলত বর্ণনায় তাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে যারা উপদেশ লাভ ও গ্রহণ করতে অভ্যস্ত। আর ভাবার্থ এটাও যে, কুরআন হলো যিকর অর্থাৎ নসীহত বা উপদেশ।

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

جَنَّاتِ عَدْنٍ مُفَتَّحَةً لَهُمُ الْأَبْوَابُ

📘 Please check ayah 38:54 for complete tafsir.

مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ

📘 Please check ayah 38:54 for complete tafsir.

۞ وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ

📘 Please check ayah 38:54 for complete tafsir.

هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ

📘 Please check ayah 38:54 for complete tafsir.

إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ

📘 ৫০-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা তাঁর সৎ বান্দাদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তাদের জন্যে পরকালে উত্তম পুরস্কার ও সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে এবং রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। জান্নাতের দরগুলো তাদের জন্যে বন্ধ থাকবে না, বরং সব সময় খোলা থাকবে। দরযা খুলবার কষ্টটুকুও তাদেরকে করতে হবে না।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতের মধ্যে আদন নামক একটি প্রাসাদ রয়েছে, যার আশে পাশে মিনার রয়েছে। ওর পাঁচ হাজার দর আছে এবং প্রত্যেক দরযার উপর পাঁচ হাজার চাদর রয়েছে। তাতে শুধু নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহগণ অবস্থান করবেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আর এটা তো বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত যে, জান্নাতের আটটি দরযা রয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ সেথায় তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে। নিশ্চিন্তভাবে অতি আরামে চার জানু হয়ে তারা বসে থাকবে। আর সেথায় তারা বহুবিধ ফল মূল ও পানীয়ের জন্যে আদেশ দিবে। অর্থাৎ যে ফল অথবা যে সুরা পানাহারের তাদের ইচ্ছা হবে, হুকুমের সাথে সাথে পরিচারকের দল সেগুলো এনে তাদের কাছে হাযির করে দিবে। সেথায় তাদের পার্শ্বে থাকবে আনত নয়না সমবয়স্কা তরুণীগণ। তারা হবে অতি পবিত্র। তারা চক্ষু নীচু করে থাকবে এবং জান্নাতীদের প্রতি তারা চরমভাবে আসক্তা থাকবে। তাদের চক্ষু কখনো অন্যের দিকে উঠবে না এবং উঠতে পারে না। তারা হবে সমবয়স্কা।মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাই হিসাব দিবসের জন্যে তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ এসব গুণ বিশিষ্ট জান্নাতের ওয়াদা আল্লাহ তাআলা তাঁর ঐ বান্দাদের সাথে করেছেন যারা তাকে ভয় করে। তারা কবর হতে উঠে, জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি পেয়ে এবং হিসাব হতে অবকাশ প্রাপ্ত হয়ে এই জান্নাতে গিয়ে পরম সুখে বসবাস করবে।অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, এটাই তার দেয়া রিযক যা কখনো নিঃশেষ হবে না। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের কাছে যা আছে তা শেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা বাকী থাকবে (কখনো নিঃশেষ হবে না)।” (১৬:৯৬)আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের জন্যে রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।”(৮৪:২৫) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওর ফলমূল ও পানাহারের জিনিস এবং ওর ছায়া চিরস্থায়ী, পরহেযগারদের পরিণাম ফল এটাই। আর কাফিরদের পরিণাম ফল জাহান্নাম।” (১৩:৩৫) এ বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে।

هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

وَآخَرُ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

هَٰذَا فَوْجٌ مُقْتَحِمٌ مَعَكُمْ ۖ لَا مَرْحَبًا بِهِمْ ۚ إِنَّهُمْ صَالُو النَّارِ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَىٰ آلِهَتِكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

قَالُوا بَلْ أَنْتُمْ لَا مَرْحَبًا بِكُمْ ۖ أَنْتُمْ قَدَّمْتُمُوهُ لَنَا ۖ فَبِئْسَ الْقَرَارُ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

قَالُوا رَبَّنَا مَنْ قَدَّمَ لَنَا هَٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِي النَّارِ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

وَقَالُوا مَا لَنَا لَا نَرَىٰ رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُمْ مِنَ الْأَشْرَارِ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

أَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا أَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْأَبْصَارُ

📘 Please check ayah 38:64 for complete tafsir.

إِنَّ ذَٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ أَهْلِ النَّارِ

📘 ৫৫-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে সৎলোকদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি অসৎ ও পাপী লোকদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করতো। তিনি বলেন যে, এই সব সীমালংঘনকারীর জন্যে রয়েছে জাহান্নাম এবং তা অতি নিকৃষ্টতম স্থান। সেখানে তাদেরকে আগুন চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করবে। সুতরাং ওটা খুবই নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল।(আরবী) ঐ পানিকে বলা হয় যার উষ্ণতা ও তাপ শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। আর (আরবী) হলো এর বিপরীত। অর্থাৎ যার শীতলতা চরমে পৌঁছে গেছে। সুতরাং একদিকে আগুনের তাপের শাস্তি এবং অন্য দিকে শীতলতার শাস্তি! এই ধরনের নানা প্রকারের জোড়া জোড়া শাস্তি তারা ভোগ করবে যা একে অপরের বিপরীত হবে।হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যদি এক বালতি গাসসাক দুনিয়ায় বইয়ে দেয়া হয় তবে সমস্ত দুনিয়াবাসী দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে।”( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) বলেন যে, গাসসাক নামক জাহান্নামে একটি নহর রয়েছে যাতে সর্প, বৃশ্চিক ইত্যাদির বিষ জমা হয় এবং ওগুলো গরম করা হয়। ওর মধ্যে জাহান্নামীদের ডুব দেয়ানো হবে। ফলে তাদের দেহের সমস্ত চামড়া ও গোশত অস্থি হতে খসে পড়বে এবং পদনালী পর্যন্ত লটকে যাবে। তারা তাদের ঐ চামড়া ও গোশতগুলোকে এমনভাবে হেঁচড়িয়ে টানতে থাকবে যেমনভাবে কেউ তার কাপড়কে হেঁচড়িয়ে টেনে থাকে। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মোটকথা ঠাণ্ডার শাস্তি আলাদাভাবে হবে এবং গরমের শাস্তি আলাদাভাবে হবে। কখনো গরম পানি পান করানো হবে এবং কখনো যাককুম বৃক্ষ ভক্ষণ করানো হবে। কখনো আগুনের পাহাড়ের উপর চড়ানো হবে, আবার কখনো আগুনের গর্তে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামীদের পরস্পর ঝগড়া করার বর্ণনা দিচ্ছেন যে তারা একে অপরকে খারাপ বলবে ও তিরস্কার করবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ... (আরবী) অর্থাৎ যখনই কোন দল জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন অপর দলকে তারা সালামের পরিবর্তে লানত দিবে। (৭:৩৮) এইভাবে এক দল অন্য দলের উপর দোষ চাপাবে। যে দলটি প্রথমে জাহান্নামে চলে গেছে ঐ দলটি দ্বিতীয় দলকে জাহান্নামের দারোগার সাথে আসতে দেখে দারোগাকে বলবেঃ “তোমাদের সাথে যে দলটি রয়েছে তাদের জন্যে অভিনন্দন নেই, তারা তো জাহান্নামে জ্বলবে। তখন আগমনকারী অনুসারীরা বলবেঃ “তোমাদের জন্যেও তো অভিনন্দন নেই। তোমরাই তো আমাদেরকে মন্দ কাজের দিকে আহ্বান করতে, যার ফল এই দাড়ালো? কত নিকৃষ্ট এই আবাসস্থল!'তারা আরো বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! যে এটা আমাদের সম্মুখীন করেছে জাহান্নামে, তার শাস্তি আপনি দ্বিগুণ বর্ধিত করুন!' যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পরের দুষ্কর্মশীলরা পূর্বের দুষ্কর্মশীলদের সম্পর্কে আরয করবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, সুতরাং আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন! আল্লাহ্ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ প্রত্যেকের জন্যে দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না।” (৭:৩৮)কাফিররা জাহান্নামে মুমিনদেরকে দেখতে না পেয়ে পরস্পর বলাবলি করবেঃ ‘আমাদের কি হলো যে, আমরা যেসব লোককে মন্দ বলে গণ্য করতাম তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি না?' হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আবু জেহেল বলবেঃ “বিলাল (রাঃ), আম্মার (রাঃ), সুহায়েব (রাঃ) প্রমুখ লোকগুলো কোথায়? তাদেরকে তো দেখতে পাচ্ছি না?” মোটকথা, প্রত্যেক কাফির এ কথাই বলবেঃ “আমাদের কি হলো যে, আমরা যাদেরকে মন্দ বলে গণ্য করতাম তাদেরকে দেখছি না? তবে কি আমরা তাদেরকে অহেতুক ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র মনে করতাম? না, বরং তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটেছে। তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা ঠিকই ছিল। তারা জাহান্নামের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এমন কোন দিকে রয়েছে যেখানে আমাদের দৃষ্টি পড়ছে না।” তৎক্ষণাৎ জান্নাতীদের পক্ষ থেকে উত্তর আসবে, যেমন মহা মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “জান্নাতবাসীরা জাহান্নামীদেরকে সম্বোধন করে বলবেঃ আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছে। কি? তারা বলবেঃ হ্যা। অতঃপর জনৈক ঘোষণাকারী তাদের মধ্যে ঘোষণা করবেঃ আল্লাহর লানত যালিমদের উপর। (৭:৪৪-৪৯) এরপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হে নবী (সাঃ)! আমি যে তোমাকে খবর দিচ্ছি যে, জাহান্নামীরা পরস্পর ঝগড়া ও বাদ-প্রতিবাদ করবে এটা নিশ্চিত সত্য। এতে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।

قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنْذِرٌ ۖ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

📘 Please check ayah 38:70 for complete tafsir.

رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

📘 Please check ayah 38:70 for complete tafsir.

قُلْ هُوَ نَبَأٌ عَظِيمٌ

📘 Please check ayah 38:70 for complete tafsir.

أَنْتُمْ عَنْهُ مُعْرِضُونَ

📘 Please check ayah 38:70 for complete tafsir.

مَا كَانَ لِيَ مِنْ عِلْمٍ بِالْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ إِذْ يَخْتَصِمُونَ

📘 Please check ayah 38:70 for complete tafsir.

مَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَٰذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

إِنْ يُوحَىٰ إِلَيَّ إِلَّا أَنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ

📘 ৬৫-৭০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন কাফির ও মূশরিকদেরকে বলেনঃ আমার সম্পর্কে তোমাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি তো তোমাদেরকে শুধু সতর্ককারী। আল্লাহ্, যিনি এক ও শরীক বিহীন, তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউই নেই। তিনি একক। তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান। সব কিছুই তার অধীনস্থ। তিনি যমীন, আসমান এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সব জিনিসেরই মালিক। সমস্ত ব্যবস্থাপনা তাঁরই হাতে। তিনি বড় মর্যাদাবান এবং মহা পরাক্রমশালী। তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব এবং মহাপরাক্রম সত্ত্বেও তিনি মহা ক্ষমাশীলও বটে।মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলঃ এটা এক মহা সংবাদ। তা হলো আল্লাহ্ তা'আলার আমাকে তোমাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করা। কিন্তু হে উদাসীনের দল! এরপরেও তোমরা আমার বর্ণনাকৃত প্রকৃত ও সত্য বিষয়গুলো হতে বিমুখ হয়ে রয়েছো! এটাও বলা হয়েছে যে, “এটা বড় জিনিস” দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেন, হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে আরো বলঃ “হযরত আদম (আঃ)-এর ব্যাপারে ফেরেশতাদের মধ্যে যে বাদানুবাদ হয়েছিল, যদি আমার কাছে অহী না আসতো তবে সে ব্যাপারে আমি কিছু জানতে পারতাম কি? ইবলীসের হযরত আদম (আঃ)-কে সিজদা না করা, মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে শয়তানের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং নিজেকে বড় মনে করা ইত্যাদির খবর আমি কি করে দিতে পারতাম?”হযরত মুআয (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ফজরের নামাযে আসতে খুবই বিলম্ব করেন। এমনকি সূর্যোদয়ের প্রায় সময় হয়ে আসে। অতঃপর তিনি খুব তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে আসেন। নামাযের ইকামত দেয়া হয় এবং তিনি খুব হালকাভাবে নামায পড়িয়ে দেন। সালাম ফিরানোর পর বলেনঃ “তোমরা যেভাবে আছ ঐ ভাবেই বসে থাকো।” তারপর আমাদের দিকে মুখ করে তিনি বলেনঃ “রাত্রে আমি তাহাজ্জুদের নামাযের জন্যে উঠেছিলাম। নামায পড়তে পড়তে আমাকে তন্দ্রা পেয়ে বসে। শেষ পর্যন্ত আমি জেগে উঠি এবং আমার প্রতিপালককে সুন্দর আকৃতিতে দেখতে পাই। তিনি আমাকে বলেন, “ঊর্ধ্বলোকে ফেরেশতারা এ সময় কি নিয়ে বাদানুবাদ করছে তা জান কি?” আমি উত্তর দিলামঃ হে আমার প্রতিপালক! না, আমি জানি না। এভাবে তিনবার প্রশ্ন ও উত্তর হলো। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমার দুই কাঁধের মাঝে হাত রাখলেন। এমন কি আমি তাঁর অঙ্গুলীসমূহের শীতলতা অনুভব করলাম এবং এরপর আমার কাছে সব কিছু উজ্জ্বল হয়ে গেল। আবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আচ্ছা, এখন বলতো, ঊর্ধ্বলোকে কি নিয়ে বাদানুবাদ হচ্ছে?” আমি উত্তরে বললামঃ গুনাহর কাফফারা সম্বন্ধে আলাপ আলোচনা চলছে। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “বলতো কাফফারা (পাপ মোচনের পন্থা) কি কি?” আমি জবাব দিলামঃ জামাআতে নামায পড়ার জন্যে পা উঠিয়ে চলা, নামাযের পরে মসজিদে বসে থাকা এবং মনে না চাওয়া সত্ত্বেও পূর্ণভাবে অযু করা। মহান আল্লাহ্ আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কিভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়?” আমি উত্তরে বললামঃ (দরিদ্রদেরকে) খাদ্য খেতে দেয়া, নম্রভাবে কথা বলা এবং রাত্রে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে নামায পড়া। তখন আমার প্রতিপালক আমাকে বললেনঃ “কি চাইবে চাও।” আমি বললামঃ আমি আপনার কাছে ভাল কাজ করার, মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার এবং দরিদ্রদেরকে ভালবাসার তাওফীক প্রার্থনা করছি। আর এই প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার প্রতি সদয় হবেন এবং যখন কোন কওমকে ফিত্নায় ফেলার ইচ্ছা করবেন, ঐ ফিতায় আমাকে না ফেলেই উঠিয়ে নিবেন। আর আমি আপনার কাছে আপনার মহব্বত, যে আপনাকে মহব্বত করে তার মহব্বত এবং এমন কাজের মহব্বত প্রার্থনা করছি যা আমাকে আপনার মহব্বতের নিকটবর্তী করে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য। এটা তোমরা নিজেরা পড়বে ও অন্যদেরকে শিখাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা বিখ্যাত স্বপ্নের হাদীস। কেউ কেউ বলেন যে, এটা জাগ্রত অবস্থার ঘটনা। কিন্তু এটা ভুল কথা। সঠিক কথা এই যে, এটা স্বপ্নের ঘটনা)

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

أَأُنْزِلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ مِنْ بَيْنِنَا ۚ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِنْ ذِكْرِي ۖ بَلْ لَمَّا يَذُوقُوا عَذَابِ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.

قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ

📘 Please check ayah 38:85 for complete tafsir.

لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ

📘 ৭১-৮৫ নং আয়াতের তাফসীর: এ ঘটনাটি সূরায়ে বাকারা, সূরায়ে আ'রাফ, সূরায়ে হিজ্বর, সূরায়ে সুবহান, সূরায়ে কাহাফ এবং সূরায়ে সোয়াদে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহ্ ফেরেশতাদেরকে নিজের ইচ্ছার কথা বলেন যে, তিনি মাটি দ্বারা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করবেন। তিনি তাদেরকে এ কথাও বললেন যে, যখন তিনি আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করবেন তখন যেন তারা তাকে সিজদা করেন, যাতে আল্লাহর আদেশ পালনের সাথে সাথে আদম (আঃ)-এরও আভিজাত্য প্রকাশ পায়। ফেরেশতারা সাথে সাথে আল্লাহর আদেশ পালন করেন। কিন্তু ইবলীস এ আদেশ পালনে বিরত থাকে। সে ফেরেশতাদের শ্রেণীভুক্ত ছিল না। বরং সে ছিল জ্বিনদের অন্তর্ভুক্ত। তার প্রকৃতিগত অশ্লীলতা এবং স্বভাবগত ঔদ্ধত্যপনা প্রকাশ পেয়ে গেল। মহান আল্লাহ্ তাকে প্রশ্ন করলেনঃ “হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে। তোমাকে কিসে বাধা দিলো? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?” সে উত্তরে বললোঃ “আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কেননা, আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন হতে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে। সুতরাং মর্যাদার দিক দিয়ে আমি তার চেয়ে বহুগুণে উচ্চ।” ঐ পাপী শয়তান হযরত আদিম (আঃ)-কে বুঝতে ভুল করলো এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিলো। আল্লাহ্ তা'আলা তাকে বললেন:“তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত। তুমি আমার রহমত হতে দূর হয়ে গেলে। তোমার উপর আমার লা'নত কর্মফল দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।” সে বললোঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।” মহান ও সহনশীল আল্লাহ্, যিনি স্বীয় মাখলুককে তাদের পাপের কারণে তাড়াতাড়ি পাকড়াও করেন না, ইবলীসের এ প্রার্থনাও কবুল করলেন এবং তিনি তাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিলেন। অতঃপর সে বললোঃ “আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি আদম (আঃ)-এর সমস্ত সন্তানকে পথভ্রষ্ট করবো, তবে তাদেরকে নয় যারা তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দা।” যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে ইবলীসের উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাকে যে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করলেন, কেন? কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরদেরকে কর্তৃত্ত্বাধীন করে ফেলবো।” (১৭:৬২) এই স্বতন্ত্ৰকৃতদের কথা আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।” (১৭:৬৫)(আরবী) এখানে (আরবী) শব্দকে মুজাহিদ (রঃ) পেশ দিয়ে পড়েছেন এবং ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন যে, এর অর্থ হলোঃ “আমি স্বয়ং সত্য এবং আমার কথাও সত্য হয়ে থাকে।” হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতেই আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, এর অর্থ হলোঃ “সত্য আমার পক্ষ হতে হয় এবং আমি সত্যই বলে থাকি।” অন্যেরা (আরবী) শব্দ দুটোকেই যবর দিয়ে পড়ে থাকেন। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এটা হলো কসম, যার দ্বারা আল্লাহ কসম খেয়েছেন। আমি (ইবনে কাসীর রঃ) বলি যে, এ আয়াতটি আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মতঃ (আরবী) অর্থাৎ “কিন্তু আমার এ কথা অবশ্যই সত্যঃ আমি নিশ্চয়ই জ্বিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো।” (৩২:১৩) আর এক জায়গায় মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ বললেনঃ যাও, তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, জাহান্নামই তোমাদের সকলের শাস্তি- পূর্ণ শাস্তি।” (১৭:৬৩)।

قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ

📘 Please check ayah 38:88 for complete tafsir.

إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ

📘 Please check ayah 38:88 for complete tafsir.

وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينٍ

📘 ৮৬-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর: মহান আল্লাহ বলেন, হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি জনগণের মধ্যে ঘোষণা করে দাওঃ আমি দ্বীনের তবলীগ এবং কুরআনের আহকামের উপর তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাচ্ছি না। এর দ্বারা পার্থিব কোন লাভ আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি এরূপও নই যে, আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ করেননি অথচ আমি নিজের পক্ষ হতে তা রচনা করবো। বরং আল্লাহ্ তা'আলা আমার কাছে যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তা-ই আমি তোমাদের নিকট পৌছিয়ে দিচ্ছি। তাতে আমি সামান্য পরিমাণও কম-বেশী করি না। এর দ্বারা আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করি। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হে লোক সকল! যে ব্যক্তি কোন মাসআলা জানে সে যেন জনগণের সামনে তা বর্ণনা করে দেয়। আর যা জানে না সে সম্বন্ধে যেন বলেঃ “আল্লাহই ভাল জানেন।' দেখো, আল্লাহ তাআলা স্বীয়। নবীকেও (আঃ) এ কথাই বলতে বলছেনঃ “যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। এটা তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ মাত্র। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেন আমি তোমাদেরকে ও যাদের কাছে এটা পৌছে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি।” (৬:১৯) অন্য এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “দলসমূহের যে কুফরী করবে তার সাথে জাহান্নামের ওয়াদা রয়েছে। (অর্থাৎ সে জাহান্নামী)।” (১১:১৭) মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিয়ৎকাল পরে। অর্থাৎ আল্লাহর কথার সত্যতা মানুষ সত্বই জানতে পারবে। অর্থাৎ তারা এটা মৃত্যুর পরই এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়া মাত্রই জানতে পারবে। এ সবকিছু মানুষ মৃত্যুর সময় বিশ্বাস করবে এবং কিয়ামতের দিন স্বচক্ষে সবই দেখতে পাবে।

أَمْ عِنْدَهُمْ خَزَائِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ الْعَزِيزِ الْوَهَّابِ

📘 Please check ayah 38:11 for complete tafsir.