slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة المؤمنون

(Al-Muminun) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ

📘 অবশ্যই বিশ্বাসীগণ সফলকাম হয়েছে। [১] [১] فَلاح শব্দের আভিধানিক অর্থ হল চিরা, বিদীর্ণ করা, কাটা। চাষীকে فَلاَّح বলা হয়, যেহেতু সেও মাটি চিরে ওর মধ্যে বীজ বপন করে থাকে। مُفلِح (সফলকাম)ও সে হয়, যে অনেক কষ্ট ও সংকটের বুক চিরে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। অথবা তার জন্য সাফল্যের পথ খুলে যায়; তার জন্য সে পথ বন্ধ হয় না। শরীয়তের দৃষ্টিতে সফলকাম সেই ব্যক্তি, যে ধূলির ধরায় বাস করে নিজ প্রভুকে সন্তুষ্ট করে নেয় এবং তার বিনিময়ে আখেরাতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার অধিকারী বিবেচিত হয়। আর সেই সাথে যদি পার্থিব সুখ-শান্তি লাভ হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তবে সত্যিকার সফলতা পরকালের সফলতা; যদিও দুনিয়ার মানুষ এর বিপরীত দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও সুখ-সম্পদকে আসল সফলতা মনে করে। আয়াতে সেই সব মু'মিনদেরকে সফলতার সুসংবাদ শোনানো হয়েছে, যাঁদের মধ্যে উক্ত গুণাবলী বিদ্যমান আছে।

أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ

📘 তারাই হবে উত্তরাধিকারী।

لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

📘 যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’[১] না, এটা হবার নয়;[২] এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র;[৩] তাদের সামনে ‘বারযাখ’ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।[৪] [১] এই কামনা প্রতিটি কাফের মৃত্যুর সময়, পুনর্জীবিত হওয়ার সময়, আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার সময় এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ হওয়ার সময় করে থাকে ও করবে। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। কুরআন কারীমে এ বিষয়টিকে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ সূরা মুনাফিকূন ৬৩:১০-১১, ইবরাহীম ১৪:৪৪, আ'রাফ ৭:৫৩, সাজদাহ ৩২:১২, আনআম ৬:২৭-২৮, শূরা ৪২:৪৪, মু'মিন ৪০:১১-১২, ফাত্বির ৩৫:৩৭ আয়াত ইত্যাদি।[২] كَلا শব্দটি ধমকরূপে প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ রকম কখনই হবে না যে, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেয়া হবে।[৩] এর একটি অর্থ এই যে, এ রকম কথা তো প্রত্যেক কাফের তার মৃত্যুর সময় বলে থাকে। দ্বিতীয় অর্থ হল, এটা শুধু তাদের মুখের কথা; যা কাজে পরিণত হওয়ার নয়। অর্থাৎ, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তাদের এ কথা কথাই থেকে যাবে; সৎকাজের সুমতি তাদের হবে না। যেমন, এক জায়গায় বলা হয়েছে "যদি তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা তাই করবে।" (সূরা আনআম ৬:২৮) ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, কাফেরদের এই কামনায় আমাদের জন্য বড় শিক্ষা রয়েছে। কাফের নিজ বংশে ও গোত্রে ফিরে যাওয়ার কামনা করবে না। বরং পৃথিবীতে সৎকর্ম করার কামনা করবে। সেই জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করে অধিকাধিক সৎকর্ম করা উচিত। যাতে কাল কিয়ামত দিবসে এ রকম কামনা করার প্রয়োজন না হয়। (ইবনে কাসীর) [৪] দুই জিনিসের মধ্যেকার পর্দা ও আড়ালকে 'বারযাখ' বলে। ইহকাল ও পরকাল জীবনের মধ্যকার যে একটি জীবন রয়েছে, তাকেই 'বারযাখ' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ, মৃত্যুর পরপরই পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। আর আখেরাতের জীবন তখন শুরু হবে, যখন সমস্ত মানুষকে পুনর্বার জীবিত করা হবে। এর মধ্যকার জীবন যা কবরে বা পশু-পক্ষীর পেটে কিংবা পুড়িয়ে ছাই করে দিলে শেষ পর্যন্ত মাটির ধূলিকণা আকারে অতিবাহিত হয়, তাকে 'বারযাখী জীবন' বলে। মানুষের এই অস্তিত্ব যেখানেই থাক আর যেভাবেই থাক, শেষ পর্যন্ত মাটিতে মিশে মাটিতে পরিণত হবে অথবা ছাই হয়ে হাওয়ায় উড়ে যাবে, অথবা সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হবে অথবা কোন জন্তুর খাদ্যে পরিণত হবে। পরিশেষে মহান আল্লাহ সকলকে এক নতুন অস্তিত্ব দান করে হাশরের মাঠে জমা করবেন।

فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ

📘 যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নেবে না। [১] [১] হাশরের ভয়াবহতার ফলে শুরুতে এ রকম হবে। কিন্তু পরে এক অপরকে চিনতে পারবে ও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

📘 সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম।

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ

📘 আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।

تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ

📘 আগুন তাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করবে[১] এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।[২] [১] মুখমন্ডলের কথা এই জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ মানব দেহে সবচেয়ে গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ অঙ্গ হল মুখমন্ডল। নচেৎ পুরো দেহটাই তো জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে। [২] শব্দের অর্থ হল, ঠোঁট জড়ো হয়ে দাঁত বেরিয়ে যাওয়া। ঠোঁট যেন দাঁতের পোশাক। যখন জাহান্নামের আগুনে ঠোঁট সংকুচিত ও জড়ো হয়ে যাবে, তখন দাঁতগুলি প্রকাশ পাবে এবং তার ফলে মানুষের চেহারা হবে বীভৎস ও ভয়ানক।

أَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ

📘 তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো না? অথচ তোমরা সেগুলিকে মিথ্যা মনে করতে।

قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ

📘 তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল[১] এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। [১] আত্মতৃপ্তি ও কামনা-বাসনা বা কুপ্রবৃত্তি যা মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তাকে এখানে দুর্ভাগ্য বলা হয়েছে। কারণ, এর পরিণাম সর্বদা দুর্ভাগ্যই হবে।

رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ

📘 হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন হতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; অতঃপর আমরা যদি পুনরায় অবিশ্বাস করি, তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালংঘনকারী হব।’

قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ

📘 আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।

إِنَّهُ كَانَ فَرِيقٌ مِنْ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

📘 আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও ও আমাদের উপর দয়া কর, তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।

الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

📘 উত্তরাধিকারী হবে ফিরদাউসের; যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। [১] [১] উক্ত গুণাবলীর অধিকারী মু'মিনই কেবলমাত্র সফলতা অর্জন করতে পারবে, যে জান্নাতের উত্তরাধিকারী ও হকদার বিবেচিত হবে। কেবল সাধারণ জান্নাতই নয়; বরং জান্নাতুল ফিরদাউস যা আটটি জান্নাতের সর্বোচ্চ জান্নাত; যেখান হতে জান্নাতের নদীমালা প্রবাহিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী জিহাদ অধ্যায়, তাওহীদ অধ্যায়)

فَاتَّخَذْتُمُوهُمْ سِخْرِيًّا حَتَّىٰ أَنْسَوْكُمْ ذِكْرِي وَكُنْتُمْ مِنْهُمْ تَضْحَكُونَ

📘 কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে।

إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ

📘 আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’ [১] [১] পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের ধৈর্য-পরীক্ষার একটি পর্যায় এমনও আসে যে, যখন তারা বিশ্বাস ও ঈমানের চাহিদানুসারে সৎকর্ম সম্পাদন করে, তখন দ্বীনের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ও ঈমানের ব্যাপারে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে উপহাসের পাত্র বানায়। অনেক দুর্বল ঈমানের মালিক সেই সব উপহাস ও ভৎর্সনার ভয়ে আল্লাহর আদেশের উপর আমল ছেড়ে দেয়। যেমন দাড়ি রাখা, শরয়ী পর্দা করা, বিবাহ-শাদীতে বিধর্মীদের রীতি-নীতি হতে দূরে থাকা ইত্যাদি। সৌভাগ্যের অধিকারী তারাই, যারা কোন প্রকার ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকে পরোয়া করে না এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহ তথা রসূলের আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় না। আল্লাহর প্রিয়পাত্রের একটি গুণ এই যে, 'তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না।' আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেবেন এবং তাদেরকে সফলতা দানে সম্মানিত করবেন; যেমন এই আয়াতে সে কথা ব্যক্ত হয়েছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো। আমীন।

قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ

📘 তিনি বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’

قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِّينَ

📘 তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ [১] [১] 'গণনাকারী'র অর্থঃ ফিরিশতাগণ, যাঁরা মানুষের কর্ম ও আয়ু লেখার কাজে নিযুক্ত আছেন। অথবা উদ্দেশ্য সেই সকল মানুষও হতে পারে, যাদের হিসাব-নিকাশে দক্ষতা আছে। কিয়ামতের ভয়াবহতা তাদের মস্তিষ্ক হতে পৃথিবীতে বসবাস ও অবস্থানের কথা বিস্মৃত করে ফেলবে এবং পার্থিব জীবন এমন মনে হবে যেমন একদিন বা অর্ধেক দিন। সেই জন্য তারা বলবে, আমরা পৃথিবীতে একদিন বা তা হতে অল্প কিছু সময় ছিলাম। তুমি অবশ্যই ফিরিশতাদেরকে কিম্বা হিসাবকারীদেরকে জিজ্ঞাসা করে নাও।

قَالَ إِنْ لَبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

📘 তিনি বলবেন, ‘তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে। [১] [১] এর অর্থ এই যে, আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের তুলনায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সময় সত্যই খুবই স্বল্প। কিন্তু ব্যাপারটি তোমরা পৃথিবীতে বুঝতে পারনি। যদি তোমরা পৃথিবীতে এই বাস্তবিকতা তথা পৃথিবীর ক্ষণস্থায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক হতে, তাহলে আজ তোমরাও ঈমানদারদের মত সফল ও সৌভাগ্যবান হতে পারতে।

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

📘 তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?

فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

📘 মহিমার্নিত আল্লাহ; যিনি প্রকৃত মালিক,[১] তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সম্মানিত আরশের অধিপতি তিনি।’ [২] [১] অর্থাৎ, তিনি এর থেকে অনেক ঊর্ধ্বে যে, তিনি তোমাদেরকে বিনা কোন উদ্দেশ্যে, খেলার ছলে বেকার সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা যা ইচ্ছা তাই করবে, সে ব্যাপারে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। বরং তিনি বিশেষ এক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। সেই জন্য পরবর্তীতে বলেছেন যে, তিনিই একমাত্র উপাস্য; তিনি ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই। [২] এখানে আরশের বিশেষণ (গুণ) স্বরূপ 'কারীম' বলা হয়েছে। যার অর্থ সম্মানিত। যেহেতু তার অধিপতি সম্মানিত। অথবা তার অর্থঃ মহানুভব; কারণ, সেখান হতেই রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য মতান্তরে এটি অধিপতি (রবে)র বিশেষণ।

وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ

📘 যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করে, (অথচ) ঐ বিষয়ে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই; তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয়ই অবিশ্বাসীরা সফলকাম হবে না।[১] [১] এখান হতে বুঝা যায় যে, প্রকৃত সফলতা ও কৃতকার্যতা হল আখেরাতে আল্লাহর আযাব হতে বেঁচে যাওয়া। শুধুমাত্র পৃথিবীর ধন-দৌলত ও বিলাসসামগ্রীর পর্যাপ্তিই সফলতা নয়। এ সব তো পৃথিবীতে কাফেররাও অর্জন করে থাকে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের সফলতার কথা নাকচ করেছেন। যার পরিষ্কার অর্থ হল, আসল সফলতা পরকালের সফলতা; যা একমাত্র ঈমানদাররাই লাভ করবে। পৃথিবীর ধন-সম্পদের আধিক্য নয়; যা বিনা কোন পার্থক্যে মুসলমান ও কাফেরদল সকলেই পেয়ে থাকে।

وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

📘 বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা কর ও দয়া কর, দয়ালুদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ

📘 নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে। [১] [১] মাটির উপাদান হতে সৃষ্টি করার অর্থ সর্বপ্রথম মানুষ আদি পিতা আদমকে মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা মানুষ যা কিছু খাদ্য হিসাবে ভক্ষণ করে থাকে (এবং তার ফলে বীর্য তৈরী হয়), তা মাটি হতেই উৎপন্ন, সেই হিসাবে শুক্রবিন্দুর মৌলিক উপাদান; যা মানুষ সৃষ্টির কারণ, তা হল মাটি।

ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ

📘 অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে (জরায়ুতে)। [১] [১] নিরাপরাধ আধার বা স্থান বলতে মায়ের গর্ভাশয় বা জরায়ু, যেখানে বাচ্চা প্রায় ৯ মাস নিরাপদে লালিত-পালিত হয়ে থাকে।

ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

📘 পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি গোশতপিন্ডে এবং গোশতপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা;[১] অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে; [২] অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! [৩] [১] এর কিছু বিবরণ সূরা হজ্জের শুরুতে (২২:৫ নং আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে। এখানে আবার বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও ওখানে مُخَلَّقَة (পূর্ণাকৃতি)এর যে বর্ণনা ছিল এখানে তা স্পষ্ট করা হয়েছে এভাবে যে, مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থি বা হাড়ে পরিণত করা হয়, অতঃপর তার উপর গোশত চড়িয়ে দেওয়া হয়। مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থিতে পরিণত করার উদ্দেশ্য মানুষের কাঠামোকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো। কারণ, শুধু মাংসের মধ্যে শক্তি ও কঠিনতা নেই। আবার যদি কেবলমাত্র অস্থি-পঞ্জরের খাঁচা (কঙ্কাল)টা রাখা হত, তাহলে মানুষের সেই শোভা ও সৌন্দর্য প্রকাশ পেত না, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। সেই কারণে সেই হাড়ের উপর এক বিশেষ নিয়মে ও প্রয়োজন মাফিক গোশত চড়ানো হয়েছে; কোথাও কম, কোথাও বেশি। যাতে মানুষের দৈহিক গঠনে কোন ধরনের অসামঞ্জস্য ও অসৌন্দর্য প্রকাশ না পায়; বরং সে রূপ ও সৌন্দর্যের এক সুশোভন অবয়ব এবং আল্লাহর সৃষ্টির এক সুন্দর নমুনা হয়। এই কথাটিই কুরআনের এক জায়গায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে, 'নিশ্চয় আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।' (সূরা তীন ৯৫:৪ নং আয়াত) [২] এর অর্থ সেই কচি শিশু, যে ৯ মাস পর এক বিশেষ রূপ নিয়ে মায়ের পেট হতে বের হয়ে ভুমিষ্ট হয় এবং সাথে সাথে নড়া চড়া শোনা, দেখা ও অনুভব করার শক্তিসমুহ তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।[৩] خَالِقِين (স্রষ্টাদল) বলতে সেই সমস্ত কারিগরদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা পরিমাণ ও পরিমাপ অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসকে জোড়া লাগিয়ে কোন নতুন জিনিস তৈরী করে থাকে। অর্থাৎ, সেই সকল কারিগরদের মধ্যে আল্লাহর সমতুল্য কারিগর আর কে আছে, যে এই শ্রেণীর কারিগরির নমুনা পেশ করতে পারে, যা আল্লাহ মানুষের সুন্দর অবয়ব রূপে পেশ করেছেন? অতএব সবার চেয়ে বড় কল্যাণময় সেই আল্লাহ যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা ও সর্বশ্রেষ্ঠ কারিগর।

ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ

📘 এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে।

ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ

📘 অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করা হবে।

وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَائِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ

📘 নিশ্চয় আমি তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্ত স্তর[১] এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই। [২] [১] طَرائِق শব্দটি طَرِيقَة এর বহুবচন। যার ভাবার্থঃ আকাশ। আরবের লোকেরা উপরের জিনিসকে طَرِيقَة বলে থাকে। আর আকাশ যেহেতু উপরে সেই জন্য তাকেও طَرائِق বলা হয়েছে। অথবা طَرِيقَة এর অর্থ পথ। যেহেতু আকাশ ফিরিশতাদের যাতায়াতের পথ বা গ্রহ-নক্ষত্রের গমনাগমনের পথ (ছায়াপথ)। সেই জন্য তাকে طَرائِق বলে অভিহিত করা হয়েছে। [২] خَلق (সৃষ্টি) থেকে উদ্দেশ্য مَخلُوق (সৃষ্ট)। অর্থাৎ, আসমান সৃষ্টি করার পর পৃথিবীর সৃষ্টি বিষয়ে উদাসীন হয়ে যাইনি। বরং আমি আসমানকে যমীনের উপর ভেঙ্গে পড়া হতে সুরক্ষিত রেখেছি; যাতে সৃষ্টিজগৎ ধ্বংস হয়ে না যায়। অথবা অর্থ এই যে, আমি সৃষ্টি জগতের কল্যাণ ও প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে উদাসীন নই; বরং আমি তার ব্যবস্থা করে থাকি। (ফাতহুল কাদীর) আবার কেউ বলেন যে, এর অর্থ হল পৃথিবী হতে যা কিছু উদগত হয় বা যা কিছু তাতে প্রবেশ করে এবং এমনিভাবে আকাশ হতে যা কিছু অবতীর্ণ হয় এবং যা কিছু উপরে চড়ে সব কিছুর জ্ঞান আল্লাহর রয়েছে। প্রতিটি জিনিস তিনি প্রত্যক্ষ করছেন এবং নিজ জ্ঞান দ্বারা সর্বত্র তোমাদের সাথে রয়েছেন। (ইবনে কাসীর)

وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ ۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ

📘 আমি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে,[১] অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি।[২] আর আমি ওকে অপসারিত করতেও নিশ্চিতভাবে সক্ষম। [৩] [১] অর্থাৎ, না এত বেশী যাতে বন্যা সৃষ্টি হয়ে ধ্বংসলীলা না ঘটে আর না এত অল্প যাতে ফসল উৎপন্ন ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট না হয়। [২] আমি এ ব্যবস্থাও করেছি যে, পানি বর্ষণের পর যাতে বয়ে গিয়ে শেষ হয়ে না যায়; সুতরাং আমি ঝরনা, নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর ও কূপের সাহায্যে সংরক্ষণ করেছি। (কারণ এসবের আসল আকাশের পানিই।) যাতে সেই সময় যখন আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায় বা যেখানে বৃষ্টি অল্প হয় এবং পানির প্রয়োজন বেশি হয়, তখন সেখানে তা কাজে আসে। [৩] অর্থাৎ, যেমন আমি নিজ অনুগ্রহে ও কৃপায় পানির এ হেন সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছি, তেমনি আমি পানিকে এমন গভীর জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম যে, সেখান হতে তা বের করে আনা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

فَأَنْشَأْنَا لَكُمْ بِهِ جَنَّاتٍ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ لَكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

📘 অতঃপর আমি ওটা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। [১] [১] অর্থাৎ বাগানে আঙ্গুর ও খেজুর ছাড়া আরো অন্যান্য ফল ফলে থাকে; যা তোমরা মজার সাথে খেয়ে থাকো।

الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ

📘 যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র। [১] [১] خُشُوع অর্থ আন্তরিক ও বাহ্যিক (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে) একাগ্রতা ও নিবিষ্টতা। অন্তরের একাগ্রতা হল, নামাযের অবস্থায় ইচ্ছাকৃত খেয়াল, কল্পনাবিহার ও যাবতীয় চিন্তা (সুচিন্তা, কুচিন্তা ও দুশ্চিন্তা) হতে হৃদয়কে মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর মহত্ত্ব ও মহিমা তাতে চিত্রিত করার চেষ্ট করা। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের একাগ্রতা হল এদিক ওদিক না তাকানো, মুদ্রাদোষজনিত কোন ফালতু নড়া-চড়া না করা, চুল-কাপড় ঠিক-ঠাক না করা। বরং এমন ভয়-ভীতি, কাকুতি-মিনতি ও বিনয়ের এমন ভাব প্রকাশ পাওয়া উচিত, যেমন কোন রাজা-বাদশা বা মহান কোন ব্যক্তিত্বের নিকট গিয়ে প্রকাশ হয়ে থাকে।

وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُورِ سَيْنَاءَ تَنْبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِلْآكِلِينَ

📘 এবং সৃষ্টি করি এক গাছ যা জন্মে সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও তরকারী। [১] [১] সে গাছ হল যায়তুনের গাছ। যার ফল পিষে তেল বের করা হয় এবং তা খাওয়ানো ও জ্বালানো হয়। যায়তুন ফলও তরকারী বা আচার রূপে ব্যাবহার করা হয়। তরকারিকেصبغ (রং) বলা হয়েছে। যেহেতু রুটিকে তার তরকারিতে ডুবিয়ে রাঙ্গানো হয় তাই। সিনাই পর্বত ও তার আশেপাশের এলাকা বিশেষ করে উক্ত গাছের জন্য বড় উৎকৃষ্ট ভুমি।

وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُسْقِيكُمْ مِمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

📘 আর তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে; তোমাদেরকে আমি পান করাই ওগুলোর উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্যে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা; তোমরা তা হতে ভক্ষণ করে থাক।

وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ

📘 এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। [১] [১] অর্থাৎ প্রভুর সেই সমস্ত অনুগ্রহ হতে তোমরা উপকৃত হও। তাহলে তিনি কি এর উপযুক্ত নন যে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা আদায় কর এবং তাঁরই উপাসনা ও আনুগত্য কর?

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ

📘 আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট, সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’

فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُرِيدُ أَنْ يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَنْزَلَ مَلَائِكَةً مَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ

📘 তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, ‘এ তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ, এ তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে।[১] আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফিরিশতাই পাঠাতেন;[২] আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এরূপ ঘটেছে বলে তো আমরা শুনিনি। [৩] [১] অর্থাৎ, এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। অতএব কেমন করে সে রসূল বা নবী হতে পারে? আর যদি সে নবুঅত ও রিসালতের দাবী করে, তাহলে তার একমাত্র উদ্দেশ্য তোমাদের উপর প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এবং নিজেকে বড় বলে প্রকাশ করা। [২] যদি সত্যই মহান আল্লাহ তাঁর রসূল দ্বারা আমাদেরকে বুঝাতে চাইতেন যে, ইবাদতের একমাত্র যোগ্য তিনিই। তাহলে এ কাজের জন্য কোন ফিরিশতাকে রসূল বানিয়ে পাঠাতেন; কোন মানুষকে নয়। তিনি আমাদেরকে তাঁর একত্ববাদের জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। [৩] অর্থাৎ তাওহিদের আহবান এক অদ্ভুত আহবান। ইতিপূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগেও তা ছিল কি না, তা আমরা শুনিইনি।

إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ بِهِ جِنَّةٌ فَتَرَبَّصُوا بِهِ حَتَّىٰ حِينٍ

📘 এ তো এমন লোক যাকে উন্মুক্ততা পেয়ে বসেছে; সুতরাং এর সম্পর্কে তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা কর।’ [১] [১] এ ব্যাক্তি আমাদের পিতৃপুরুষদের দেবদেবীর পূজা করার জন্য বোকা ও বেকুফ মনে করে, বরং মনে হচ্ছে সে নিজেই পাগল। এর দাওয়াতও শেষ হয়ে যাবে। বা তার পাগলামি দূর হয়ে যাবে ও দাওয়াতের কাজ নিজেই ছেড়ে দেবে।

قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ

📘 নূহ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।’ [১] [১] ৯৫০ বছর দাওয়াত ও তবলীগের পর শেষ পর্যন্ত প্রভুর নিকট প্রার্থনা জানালেন, 'আমি অসহায় অতএব তুমি আমার সাহায্য কর।' (সূরা কামার ৫৪:১০ আয়াত) মহান আল্লাহ তাঁর দু'আ কবুল করলেন এবং নিজ তত্বাবধানে ও নির্দেশ অনুযায়ী একটি কিশ্তী নির্মাণ করতে আদেশ দিলেন।

فَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ أَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا فَإِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ ۙ فَاسْلُكْ فِيهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ ۖ وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا ۖ إِنَّهُمْ مُغْرَقُونَ

📘 অতঃপর আমি তার কাছে অহী (প্রত্যাদেশ) করলাম, তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার অহী অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ কর। অতঃপর যখন আমার আদেশ আসবে[১] ও উনুন উথলে উঠবে[২] তখন উঠিয়ে নিয়ো প্রত্যেক যুগল (জীবের) এক এক জোড়া[৩] এবং তোমার পরিবার পরিজনকে; তবে তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব-সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তারা ব্যতীত।[৪] আর যারা সীমালংঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না, তারা অবশ্যই ডুবে মরবে। [৫] [১] অর্থাৎ যখন তাদের ধ্বংসের আদেশ এসে যাবে। [২] تَنُّور (উনুন) এর ব্যাখ্যা সূরা হূদে করা হয়েছে। সঠিক কথা হল 'উনুন' বলতে আমাদের পরিচিত উনুন বা চুলো নয় যার উপর রান্না করা হয়; বরং এ থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ বুঝানো হয়েছে। কারণ, সারা পৃথিবী ঝরনায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবীর তলদেশ হতে ঝরনার ন্যায় পানি বের হয়েছিল। নূহ (আঃ)-কে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, যখন মাটি হতে পানি বের হতে শুরু করবে তখন---। [৩] অর্থাৎ, জীবজন্তু, গাছ-পালা হতে প্রত্যেকের এক একটি জোড়া (নর-মাদী) কিশ্তীতে তুলে নাও; যাতে সকলের বংশ বাকী থাকে। (যুগল জীবের এক এক জোড়া বলতে যেসব প্রাণী স্ত্রী-পুরুষের মিলনে বংশ বিস্তার করে এবং পানির মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে না কেবল তাদেরকেই জাহাজে উঠানো হয়েছিল।) [৪] অর্থাৎ, যাদের কুফরীর ও সীমালংঘনের ফলে ধ্বংসের ফায়সালা করা হয়েছে; যেমন নূহ (আঃ)-এর স্ত্রী ও তাঁর পুত্র। [৫] অর্থাৎ, তুফানের আযাব যখন শুরু হবে, তখন ঐ যালেমদের কারো প্রতি দয়াপ্রদর্শনের কোন প্রয়োজন নেই। অতএব তুমি তাদের কারো জন্য আমার কাছে সুপারিশ করো না। কেননা, তাদের ডুবে মরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

فَإِذَا اسْتَوَيْتَ أَنْتَ وَمَنْ مَعَكَ عَلَى الْفُلْكِ فَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 অতঃপর যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আরোহণ করবে, তখন বলো, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন যালেম সম্প্রদায় হতে।’

وَقُلْ رَبِّ أَنْزِلْنِي مُنْزَلًا مُبَارَكًا وَأَنْتَ خَيْرُ الْمُنْزِلِينَ

📘 আরো বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক![১] আমাকে এমনভাবে অবতারণ কর, যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।’[২] [১] কিশ্তীতে বসে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, যেহেতু তিনি যালেমদেরকে শেষ পর্যন্ত ডুবিয়ে মেরে তাদের হাত হতে তোমাকে পরিত্রাণ দিলেন। আর কিশ্তী নিরাপদে তীরে ভিড়ার জন্যও দু'আ করবে ও বলবে, 'আমাকে এমনভাবে অবতারণ কর, যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।' [২] এই সঙ্গে সেই দু'আও পাঠ করা উচিত, যা নবী (সাঃ) যানবাহনে আরোহণ করার সময় পড়তেন। 'আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাযী সাখখারালানা হাযা অমা কুন্না লাহু মুকরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন।' (সূরা যুখরুফ ৪৩:১৩-১৪ আয়াত)

وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ

📘 যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে। [১] [১] لَغو (অসার ক্রিয়া-কলাপ) সেই প্রত্যেক কাজ ও কথা, যাতে কোন উপকার নেই অথবা যাতে দ্বীন বা দুনিয়ার কোন প্রকার ক্ষতি আছে। সে সব থেকে বিরত থাকার অর্থঃ সে সবের প্রতি ভ্রূক্ষেপ পর্যন্তও না করা; সে সব বাস্তবে রূপ দেওয়া তো দূরের কথা।

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ وَإِنْ كُنَّا لَمُبْتَلِينَ

📘 এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে; [১] আমি তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। [২] [১] নূহ (আঃ)-এর এই ঘটনায় মু'মিনদের পরিত্রাণ ও কাফেরদের ধ্বংসের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। আর তা এই যে, আম্বিয়াগণ যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে আসেন, তাতে তাঁরা সত্য। আর এটাও যে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। হক ও বাতিলের সংঘর্ষের ব্যাপারে তিনি পূর্ণ অবগত থাকেন এবং যথাসময়ে তিনি তার প্রতিকার করেন। অতঃপর বাতিলপন্থীদেরকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, তাঁর কবল হতে তাদের বাঁচার কোন পথ থাকে না। [২] আর আমি নবী-রসূলগণ দ্বারা এভাবেই যুগে যুগে মানুষের পরীক্ষা নিয়েছি।

ثُمَّ أَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ

📘 অতঃপর তাদের পর আমি অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম। [১] [১] অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট নূহ (আঃ)-এর জাতির পর যে জাতির পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে ও তাদের মধ্যে আল্লাহ রসূল প্রেরণ করেন, তারা হল আদ জাতি। কারণ, অধিকাংশ স্থানে নূহ (আঃ)-এর জাতির স্থলাভিষিক্ত হিসাবে আদ জাতিরই নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, তারা হল সামূদ জাতি। কারণ তাদের ধ্বংসের বর্ণনায় বলা হয়েছে صَيحَة (বিকট শব্দ) তাদেরকে আঘাত করেছিল। আর এ আযাব সামূদ জাতিকেই দেওয়া হয়েছিল। পক্ষান্তরে অন্য অনেকে বলেন, তারা ছিল শুআইব (আঃ)-এর জাতি মাদয়্যানবাসী। কারণ তাদেরকেও বিকট শব্দ দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।

فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ

📘 এরপর তাদেরই একজনকে তাদের নিকট রসূল করে পাঠিয়েছিলাম;[১] সে বলেছিল, ‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই,[২] তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’ [১] আমি সে রাসুল তাদের মধ্যে হতেই প্রেরণ করেছি, যিনি তাদের মাঝেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং যাকে তারা ভালভাবেই চিনত; তার বংশ, বারি-ঘর ও জন্ম সম্পর্কে তারা সম্যক অবগত ছিল। [২] তিনি সর্বপ্রথম তাওহিদের দাওয়াত দিলেন। আর এই তাওহীদই ছিল সমস্ত নবী রাসুলদের দাওয়াতের শিরোনাম।

وَقَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِلِقَاءِ الْآخِرَةِ وَأَتْرَفْنَاهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُونَ

📘 তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ,[১] যারা অবিশ্বাস করেছিল ও পরকালের সাক্ষাৎকে মিথ্যাজ্ঞান করেছিল এবং যাদেরকে আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার,[২] তারা বলেছিল, ‘এ তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ; তোমরা যা আহার কর, সেও তো তা-ই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে।[৩] [১] জাতির নেতারাই প্রতি যুগে নবী-রসূল ও সত্যপন্থীদেরকে মিথ্যাজ্ঞান করায় সক্রিয় থেকেছে। যার কারণে জাতির অধিকাংশ মানুষই ঈমান গ্রহণে বঞ্চিত থেকেছে। কারণ, তারাই হল প্রভাবশালী ও জাতির মাথা, জাতি তাদের পিছনে পিছনে চলতে থাকে। [২] পরকালে বিশ্বাস না করা ও পার্থিব সুখ-বিলাসের আতিশয্য -- এই দু'টি ছিল রসূলের উপর ঈমান না আনার মূল কারণ। আজও বাতিলপন্থীরা উক্ত দুই কারণে হকপন্থীদের বিরোধিতা ও সত্যের দাওয়াত হতে বিমুখতা অবলম্বন করে। [৩] তারাও কেবল এই বলে অস্বীকার করল যে, এওতো আমাদের মতই খায়-পান করে। অতএব এ রাসুল কিভাবে হতে পারে! যেমন আজও ইসলামের বহু দাবিদার 'রাসুল (সাঃ) মানুষ ছিলেন' একথা স্বীকার করতে চায় না।

وَلَئِنْ أَطَعْتُمْ بَشَرًا مِثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَخَاسِرُونَ

📘 যদি তোমরা তোমাদেরই মত এক জন মানুষের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [১] [১] তা ক্ষতির কথাই বটে যে, নিজেদেরই মত একজন মানুষকে রসূল মেনে নিয়ে তোমরা তার মর্যাদা ও বড়ত্বকে মেনে নেবে। অথচ একজন মানুষ অপর মানুষ হতে উত্তম কি করে হতে পারে? এই সেই ভ্রান্তি; যা আল্লাহর রসূলকে মানুষ হিসাবে অস্বীকারকারীদের মাথায় ঢুকে আছে। অথচ আল্লাহ যে মানুষকে রিসালাতের (রসূল হওয়ার) জন্য নির্বাচন করেন, তিনি রিসালাত ও অহীর কারণে অন্য সমস্ত সাধারণ মানুষ অপেক্ষা সম্মানিত, উত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হন।

أَيَعِدُكُمْ أَنَّكُمْ إِذَا مِتُّمْ وَكُنْتُمْ تُرَابًا وَعِظَامًا أَنَّكُمْ مُخْرَجُونَ

📘 সে কি তোমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, তোমাদের মৃত্যু হলে এবং তোমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে?

۞ هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوعَدُونَ

📘 অসম্ভব, তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতিই দেয়া হয়েছে তা অসম্ভব। [১] [১] هَيهَات এর অর্থ হয় দূর। দুইবার তাকিদের জন্য এসেছে। (অর্থাৎ দুর-দুর! সে প্রতিশ্রুতি মিথ্যা)

إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ

📘 একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি-বাঁচি এখানেই এবং আমরা পুনরুত্থিত হব না?

إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا وَمَا نَحْنُ لَهُ بِمُؤْمِنِينَ

📘 সে তো এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে[১] এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করবার নই।’ [১] অর্থাৎ পুনর্বার জীবিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি হল একটি গড়া মিথ্যা, যা এই ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি আরোপ করেছে।

قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ

📘 সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সাহায্য কর; কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে।’[১] [১] শেষ পর্যন্ত নূহ (আঃ)-এর মত নবীও আল্লাহর নিকট সাহায্যের জন্য দু'আ করলেন।

وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ

📘 যারা যাকাত দানে সক্রিয় । [১] [১] زَكاة এর অর্থ কারো কারো নিকটে ফরয যাকাত (যার বিস্তারিত বর্ণনা অর্থাৎ, তার নিসাব, হকদার প্রভৃতির বিশদ বিবরণ মদীনায় দেওয়া হয়েছে। পরন্তু) তার আদেশ মক্কাতেই দেওয়া হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ এমন কাজকর্ম ও আচরণ অবলম্বন করা, যাতে আত্মার পবিত্রতা ও চরিত্রের সংশোধন সাধন হয়।

قَالَ عَمَّا قَلِيلٍ لَيُصْبِحُنَّ نَادِمِينَ

📘 আল্লাহ বললেন, ‘অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে।’ [১] [১] عَمَّا এ ما হরফটি অতিরিক্ত ব্যবহার হয়েছে। সময়ের সামান্যতা বুঝাতে তাকীদের জন্য তা ব্যবহার হয়েছে। যেমন, {فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ} (সূরা আলে ইমরান ৩:১৫৯ আয়াত) এখানেও فَبِمَا তে مَا হরফটি অতিরিক্ত। অর্থ হল, অচিরেই, অতি সামান্য সময়ের ভিতর খুব শীঘ্রই আযাব আসবে। আর তখন তারা আফসোস করবে, কিন্তু সে আফসোস তাদের কোন কাজে আসবে না।

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَاءً ۚ فَبُعْدًا لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 অতঃপর সত্যসত্যই এক বিকট শব্দ[১] তাদেরকে পাকড়াও করল এবং আমি তাদেরকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম;[২] সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল যালেম সম্প্রদায়। [১] এই বিকট শব্দের ব্যাপারে বলা হয় যে, এটি জিবরীল (আঃ)-এর শব্দ ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি এমনিই একটি বিকট শব্দ ছিল, যার সঙ্গে ছিল প্রচন্ড ঝড়। এই দুয়ে মিলে তাদেরকে এক নিমেষে ধ্বংস করে ফেলল। [২] غُثَاء হল সেই পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনা; যাতে গাছের ছাল-পাতা, শুকনো ডাল-পালা, খড়কুটো ইত্যাদি জিনিস থাকে। আর যখন পানির স্রোত কমে যায়, তখন এগুলো শুকনো অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ঠিক এই অবস্থাই হল এই সব অহংকারী মিথ্যাজ্ঞানকারিদের।

ثُمَّ أَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قُرُونًا آخَرِينَ

📘 অতঃপর তাদের পরে আমি বহু জাতি সৃষ্টি করলাম। [১] [১] এর অর্থ সালেহ, লূত ও শুআইব ('আলাইহিমুস সালাম)-এর জাতি। কেননা, সূরা আ'রাফ ও সূরা হূদে অনুরূপ পর্যায়ক্রমে এদের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। আবার কারো কারো নিকট এর অর্থঃ বানী ইস্রাঈল জাতি। قرون শব্দটি قَرن (শতাব্দী) এর বহুবচন, এখানে 'জাতি' অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ

📘 কোন জাতিই তার নির্ধারিত কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না। [১] [১] অর্থাৎ, সকল জাতিই নূহ ও আদ জাতির মত ধ্বংসের নির্দিষ্ট সময় আসার সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল; এক সেকেন্ড্ও এদিক ওদিক হয়নি। {لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذَا جَاء أَجَلُهُمْ فَلاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ} অর্থাৎ, প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে; যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পৌঁছে যাবে, তখন তারা মুহূর্তকাল না বিলম্ব করতে পারবে, আর না ত্বরা করতে পারবে। (সূরা ইউনুস ১০:৪৯ আয়াত)

ثُمَّ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرَىٰ ۖ كُلَّ مَا جَاءَ أُمَّةً رَسُولُهَا كَذَّبُوهُ ۚ فَأَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ ۚ فَبُعْدًا لِقَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 অতঃপর আমি একের পর এক[১] আমার রসূলগণকে প্রেরণ করলাম; যখনই কোন জাতির নিকট তার রসূল এল, তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর আমি তাদের একের পর এককে ধ্বংস করলাম[২] এবং আমি তাদেরকে কাহিনীতে[৩] পরিণত করলাম; সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা। [১] এর অর্থ একের পর এক, পর্যায়ক্রমে, ক্রমাগত ইত্যাদি। [২] অর্থাৎ, যেমন একের পর এক রাসুল এসেছেন, তেমনি রাসুলদের মিথ্যাজ্ঞান করার জন্য একের পর এক ঐ সকল জাতি আযাব ভোগ করে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। [৩] যেমন أعَاجِيب শব্দটি أُعجُوبة এর বহুবচন, অনুরূপ أَحَادِيث শব্দটি أُحدُوثَة এর বহুবচন। যার অর্থ কাহিনী ও গল্প।

ثُمَّ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ وَأَخَاهُ هَارُونَ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ

📘 অতঃপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ[১] মূসা ও তার ভাই হারূনকে পাঠালাম; [১] নিদর্শন বলতে সেই নয়টি নিদর্শন যার কথা সুরা আ'রাফে উল্লেখ হয়েছে এবং সেখানে তার ব্যাখ্যাও উল্লেখ হয়েছে। 'সুস্পষ্ট প্রমান' বলতে অতিশয় জাজ্বল্যমান প্রমান ও দেদীপ্যমান দলিলকে বুঝানো হয়েছে। যার জবাব ফিরআউন ও তার সভাসদরা কেউ দিতে পারেনি।

إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا عَالِينَ

📘 ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গের নিকট; কিন্তু তারা অহংকার করল। তারা ছিল উদ্ধত সম্প্রদায়।[১] [১] অহংকার ও নিজকে বড় মনে করার মূল কারণও ঐ পরকালে অবিশ্বাস ও পার্থিব বিলাস-সামগ্রির অতিশয্য ছিল। যার বর্ণনা পূর্ববর্তী জাতির ঘটনায় উল্লেখ হয়েছে।

فَقَالُوا أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُونَ

📘 তারা বলল, ‘আমরা কি আমাদেরই মত দু’ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব; অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে।’ [১] [১] এখানে নবুঅত অস্বীকার করার জন্য তারা দলিল সরূপ মুসা এবং হারুন (আলাইহিমাস সালাম) এর মানুষ হওয়ার কথা পেশ করল। তারা তাদের কথাকে আরাও দৃঢ় করার জন্য বলল, এরা দু'জন তো ঐ জাতিরই সদস্য, যারা আমাদের দাস।

فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُوا مِنَ الْمُهْلَكِينَ

📘 সুতরাং তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হল।

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ

📘 আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম; যাতে তারা সৎপথ পায়। [১] [১] ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন, মূসাকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল ফিরআউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মারার পর এবং তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ কোন জাতিকে সামগ্রিকভাবে ধ্বংস করেননি। বরং মু'মিনদেরকে এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে।

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ

📘 যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।

وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَىٰ رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ

📘 এবং আমি মারয়্যাম তনয় (ঈসা) ও তার জননীকে করেছিলাম এক নিদর্শন,[১] তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে।[২] [১] কারণ ঈসা (আঃ) এর জন্ম হয়েছিল বিনা পিতায় যা আল্লাহর ক্ষমতার এক নিদর্শন। যেমন আদম (আঃ) কে পিতা মাতা ছাড়া, হাওয়া (আঃ) কে নারী ছাড়া আদম হতে এবং অন্য সকল মানুষকে পিতা মাতার মাধ্যমে সৃষ্টি করাও আল্লাহর নিদর্শন। [২] رَبوَة (উচ্চ ভূমি) বলতে বায়তুল মুকাদ্দাস, আর مَعِين (প্রস্রবণ) বলতে সেই ঝরনাকে বুঝানো হয়েছে যা (এক মতানুসারে) মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর জন্মের সময় মারয়্যামের পদতলে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত করছিলেন। যেমন, সূরা মারয়্যামে এ কথা বর্ণিত হয়েছে।

يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ۖ إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

📘 হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর;[১] তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত। [১] طَيِّبَات বলতে পবিত্র, উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী। আবার কেউ কেউ এর অনুবাদ করেছেন, হালাল খাদ্যসমূহ। উভয় অনুবাদই সঠিক। কারণ, প্রত্যেক পবিত্র জিনিসকেই আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন। আর প্রতিটি হালাল জিনিসই পবিত্র ও সুসবাদু। আল্লাহ তাআলা অপবিত্র বস্তুকে এই জন্য হারাম করেছেন, যেহেতু প্রভাব ও পরিণামের দিক দিয়ে তা অপবিত্র; যদিও অপবিত্র ভক্ষণকারীদেরকে নিজেদের পরিবেশ ও অভ্যাসের কারণে তা সুস্বাদু বলে মনে হয়। আর সৎকর্ম হল সেই সব কর্ম যা শরীয়ত তথা কুরআন ও (সহীহ) হাদীস সম্মত হয়। প্রত্যেক সেই কাজই সৎ বা ভালো নয়, যা পরিবেশের লোকজন সৎ বা ভাল মনে করে। কারণ, বিদআতী লোকদের কাছে বিদআতও বড় ভালো কাজ মনে হয়। বরং তাদের নিকট বিদআতের যে গুরুত্ব মর্যাদা আছে, শরীয়তের ফরয, সুন্নত ও মুস্তাহাবের সে গুরুত্ব ও মর্যাদা নেই। পবিত্র বস্তু পানাহার করার সাথে সাথে সৎকর্মের তাকীদ থেকে জানা যায় যে, একটির অপরটির সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং একটি অপরটির সহযোগী। যেহেতু হালাল খেয়ে নেক আমল সহজ হয়। আর নেক আমল মানুষকে হালাল খেতে উৎসাহিত করে এবং তাই খেয়ে সন্তুষ্ট থাকার কথা শিক্ষা দেয়। এই জন্যই মহান আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রসূলকে উক্ত দুটি কর্মের আদেশ করেছেন। সুতরাং প্রত্যেক নবী-রসূল পরিশ্রম করে হালাল রুযী উপার্জন ও ভক্ষণ করতে যত্নবান হতেন। যেমন, দাউদ (আঃ)-এর ব্যাপারে এসেছে যে, তিনি নিজ হাতে পরিশ্রমের উপার্জন ভক্ষণ করতেন। (সহীহ বুখারী ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়) আর মহানবী (সাঃ) বলেছেন, "প্রত্যেক নবী ছাগল চরিয়েছেন। আমিও সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি। (সহীহ বুখারী ইজারা অধ্যায়) বর্তমানে কালোবাজারী, চোরাই চালান, পণ্য পাচার, ঘুসখোরী, সূদখোরী ছাড়াও অন্যান্য অবৈধ উপায়ে হারাম ভক্ষণকারীরা পরিশ্রম করে হালাল ভক্ষণকারীদেরকে নীচ ও নিমনশ্রেণীভুক্ত গণ্য করে রেখেছে; যদিও বাস্তব অবস্থা তার পূর্ণ বিপরীত। মুসলিম সমাজে একজন হারামখোরের কোন সম্মান ও স্থান নেই; যদিও সে কারূনের সমতুল্য ধনশালী ব্যক্তি হোক না কেন। সম্মান ও ইজ্জতের অধিকারী একমাত্র তারাই, যারা পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন খায়; যদিও তা লবণ-ভাত হোক না কেন। কারণ নবী (সাঃ) এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন ও বলেছেন যে, মহান আল্লাহ হারাম উপার্জনকারীর না তো সাদকাহ কবুল করেন, আর না দু'আ। (সহীহ মুসলিম যাকাত অধ্যায়)

وَإِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ

📘 নিশ্চয় তোমাদের এই জাতি একই জাতি[১] এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর। [১] أمَّة (জাতি) বলতে দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আর জাতি বা দ্বীন এক হওয়ার অর্থ সমস্ত নবীগণ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার আহবান করে গেছেন। কিন্তু মানুষ তাওহীদ (এক আল্লাহর ইবাদত করার) পথ ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন দল, জাতি ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দল নিজ নিজ বিশ্বাস ও কর্ম নিয়ে আনন্দিত; যদিও সে সত্য হতে অনেক দূরে অবস্থান করছে।

فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

📘 কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহু ভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে, তা নিয়েই আনন্দিত।

فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّىٰ حِينٍ

📘 সুতরাং তুমি কিছুকালের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও। [১] [১] غَمرَة প্রচুর পানিকে বলা হয় যা মাটিকে ঢেকে রাখে। ভ্রষ্টতার অন্ধকারও এত গভীর হয় যে, তাতে নিমজ্জিত ব্যক্তির সত্য দৃষ্টিগোচর হয় না। এখানে غَمرَة এর অর্থঃ বিমুঢ়তা, গাফলতি, উদাসীনতা, বিভ্রান্তি। আয়াতে ধমক স্বরূপ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে থাকতে দেওয়া বা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য উপদেশ ও নসীহত করা হতে বাধা প্রদান নয়।

أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ

📘 তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি তার দ্বারা,

نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ۚ بَلْ لَا يَشْعُرُونَ

📘 তাদের জন্যে সর্বপ্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? বরং তারা বুঝে না ।

إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ

📘 নিঃসন্দেহে যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত,

وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ

📘 যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাসী,

وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ

📘 যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না।

إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ

📘 নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।

وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ

📘 আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। [১] [১] অর্থাৎ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, কিন্তু এ আশঙ্কাও করে যে, কোন ত্রুটির কারণে আমাদের আমল বা সাদকা যেন অগ্রাহ্য না হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, 'ভীত-কম্পিত কে? যে মদ্য পান করে, ব্যভিচার করে ও চুরি করে?' নবী (সাঃ) বললেন, "না বরং তারা, যারা নামায আদায় করে, রোযা পালন করে, সাদকাহ করে; কিন্তু ভয় করে যে, এসব যেন অগ্রহণযোগ্য না হয়ে যায়।" (তিরমিযীঃ সূরা মুমিনের ব্যাখ্যা, আহমাদ ৬/১৬০, ১৯৫)

أُولَٰئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ

📘 তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারাই তার প্রতি অগ্রগামী হয়।

وَلَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۖ وَلَدَيْنَا كِتَابٌ يَنْطِقُ بِالْحَقِّ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

📘 আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করি না[১] এবং আমার নিকট আছে এক গ্রন্থ; যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না । [১] এই ধরনের অর্থ সুরা বাকারার শেষ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

بَلْ قُلُوبُهُمْ فِي غَمْرَةٍ مِنْ هَٰذَا وَلَهُمْ أَعْمَالٌ مِنْ دُونِ ذَٰلِكَ هُمْ لَهَا عَامِلُونَ

📘 বরং এই বিষয়ে তাদের অন্তর অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এ ছাড়া আরো (মন্দ) কাজ আছে[১] যা তারা করে থাকে। [১] অর্থাৎ শিরক ছাড়া অন্যান্য বড় পাপ। অথবা সেই সমস্ত কর্ম যা (আল্লাহর ভয়, তাওহিদের প্রতি ঈমান ইত্যাদি) মুমিনদের কর্মের বিপরীত। তবে উভয়ের অর্থ একই।

حَتَّىٰ إِذَا أَخَذْنَا مُتْرَفِيهِمْ بِالْعَذَابِ إِذَا هُمْ يَجْأَرُونَ

📘 পরিশেষে আমি যখন তাদের ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব[১] তখনই তারা আর্তনাদ করে উঠবে। [১] مُترَفِين (ঐশ্বর্যশালী)। আযাব ঐশ্বর্যশালী ও অনৈশ্বর্যশালী উভয় শ্রেণীর লোকেদের জন্য আসে। কিন্তু এখানে ঐশ্বর্যশালীদের নাম বিশেষভাবে নেওয়া হয়েছে। কারণ, সাধারণতঃ সমাজের নেতৃত্ব এদের হাতেই থাকে। এরা যেভাবে চায় জাতির মুখ ফেরাতে পারে। যদি তারা আল্লাহর অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করে ও তার উপর অবিচল থাকে, তাহলে তাদের দেখা-দেখি সমাজের মানুষও তাদের একটু এদিক-ওদিক করে না এবং তওবা ও অনুশোচনার পথ ধরে না। এখানে 'ঐশ্বর্যশালী' বলতে সেই সব কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদেরকে ধন-দৌলতের প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করে অবকাশ দেওয়া হয়েছে। যেমন এই শ্রেণীর কিছু আয়াত পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে। অথবা নেতা ও মোড়ল-মাতব্বর শ্রেণীর লোকদের বোঝানো হয়েছে। আর আযাব বা শাস্তি বলতে যদি পৃথিবীর আযাব উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বদরের যুদ্ধে মক্কার কিছু কাফেররা যে ধ্বংস হল এবং নবী (সাঃ)-এর অভিশাপের ফলে দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির যে আযাব তাদের উপর এসেছিল তাই উদ্দেশ্য। অথবা আযাব বলতে আখেরাতের আযাবও হতে পারে। তবে তা আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

لَا تَجْأَرُوا الْيَوْمَ ۖ إِنَّكُمْ مِنَّا لَا تُنْصَرُونَ

📘 (তাদেরকে বলা হবে,) আজ আর্তনাদ করো না। নিশ্চয় তোমরা আমার তরফ থেকে সাহায্য পাবে না। [১] [১] অর্থাৎ, পৃথিবীতে আল্লাহর আযাবে আচ্ছন্ন হওয়ার পর কোন কান্নাকাটি ও আর্তনাদ আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচাতে পারবে না। অনুরূপ আখেরাতের শাস্তি হতেও বাঁচানোর বা সাহায্য করার কেউ থাকবে না।

قَدْ كَانَتْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُونَ

📘 আমার আয়াত[১] তো তোমাদের কাছে আবৃত্তি করা হতো, কিন্তু তোমরা পিছন পায়ে ফিরে সরে পড়তে; [২] [১] অর্থাৎ কুরআন মাজীদ বা আল্লাহর হুকুম আহকাম; যাতে নবী (সাঃ) এর বানীও শামিল। [২] نُكُوص এর অর্থ পিছন পায়ে ফিরে সরে পড়া। কিন্তু রূপকভাবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা বৈমুখ হওয়ার অর্থে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর আয়াত ও হুকুম-আহকাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিতে ও সরে পড়তে।

مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ سَامِرًا تَهْجُرُونَ

📘 দম্ভভরে[১] এই নিয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে করতে। [২] [১] بِه (এই) সর্বনামের সম্পর্ক অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতে البَيتُ العَتِيق (কা'বাগৃহ) বা হারাম শরীফের সঙ্গে। অর্থাৎ, কা'বার দায়িত্বশীল ও তার সেবক-রক্ষক হওয়ার ফলে ওদের যে গর্ব ছিল সেই গর্ব করেই তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল। আবার কেউ কেউ (এই) সর্বনামের সম্পর্ক কুরআনের সাথে বলেছেন। এ অবস্থায় অর্থ হবে কুরআন শ্রবণ করে তাদের অন্তরে গর্ব ও অহংকার সৃষ্টি হত, যা কুরআনের প্রতি ঈমান আনতে বাধা সৃষ্টি করত। [২] سَمَر এর অর্থ হল রাত্রে গল্প করা। এখানে এর অর্থ বিশেষভাবে এমন কথাবার্তা বলা, যা কুরআন কারীম ও রসূল করীম (সাঃ)-এর বিরোধী। এই বিরুদ্ধ কথাবার্তা ও সমালোচনার ফলে তারা হক কথা শুনতে ও তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করত। هجر এর অর্থঃ বর্জন করা। অর্থাৎ, তারা হক বর্জন করত। আবার কেউ কেউ এর অর্থ বলেছেন, অসার বাক্য ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা। অর্থাৎ, রাত্রের কথাবার্তায় তারা কুরআনের ব্যাপারে অশ্লীল ও অসভ্য ধরনের বাজে কথাবার্তা বলত। (ফাতহুল কাদীর, আয়সারুত্ তাফাসীর)

أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُمْ مَا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِينَ

📘 তবে কি তারা এই বাণী অনুধাবন করে না?[১] অথবা তাদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি?[২] [১] 'বাণী' বলতে উদ্দেশ্য কুরআন। অর্থাৎ, এ বাণী নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করলে তাদের ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ হত।[২] এখানে أَم হরফটি 'অথবা' 'কিংবা' 'বরং' এর অর্থে ব্যাবহার হয়েছে। অর্থাৎ, বরং ওদের নিকট এমন শরীয়ত এসেছে, যা থেকে তাদের পিতৃপুরুষরা জাহেলী যুগে বঞ্চিত ছিল। যার উপর তাদের আল্লাহর কৃতজ্ঞতা করা এবং ইসলাম গ্রহন করা উচিত ছিল।

أَمْ لَمْ يَعْرِفُوا رَسُولَهُمْ فَهُمْ لَهُ مُنْكِرُونَ

📘 অথবা তারা কি তাদের রসূলকে চিনে না বলে তাকে অস্বীকার করে? [১] [১] এটি তিরস্কারস্বরূপ বলা হয়েছে। কারণ তারা নবীর বংশ, গোত্র এবং অনুরূপভাবে তাঁর সততা, আমানতদারী, সত্যবাদিতা, সুন্দর আচার-ব্যবহার ও মহান চরিত্র সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত ছিল এবং তারা তা স্বীকারও করত।

فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ

📘 সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী। [১] [১] এখান থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে 'মুত্আর' (কিছু টাকা-কড়ি দিয়ে কোন মহিলাকে সাময়িকভাবে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার, অনুরূপ হস্তমৈথুন করার) কোন অনুমতি নেই। যৌন বাসনা পূর্ণ করার রাস্তা মাত্র দুটি; স্ত্রী-সঙ্গম অথবা ক্রীতদাসীর সাথে মিলন। বরং বর্তমানে এ বাসনা পূরণের জন্য কেবল স্ত্রীই রয়ে গেছে। কারণ, অধিকারভুক্ত যুদ্ধবন্দিনী বা ক্রীতদাসীর অস্তিত্ব বর্তমানে বিলুপ্ত। কিন্তু যদি কখনও এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়, যখন ক্রীতদাসী বিদ্যমান থাকবে, তখন তাদের সাথে স্ত্রীর মতই মিলন বৈধ হবে।

أَمْ يَقُولُونَ بِهِ جِنَّةٌ ۚ بَلْ جَاءَهُمْ بِالْحَقِّ وَأَكْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ

📘 অথবা তারা কি বলে যে, সে পাগল?[১] বস্তুতঃ সে তাদের নিকট সত্য এনেছে। আর তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।[২] [১] এটিও তিরস্কার ও ধমক স্বরূপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, এই পয়গম্বর এমন একটি কুরআন তাদের সামনে পেশ করলেন যার অনুরূপ (একটি সূরা) রচনা করতেও পৃথিবীর মানুষ অপারগ। অনুরূপ তাঁর শিক্ষাও মনুষ্য জাতির জন্য করুণা ও শান্তিস্বরূপ। এমন কুরআন ও এমন শিক্ষা কি এমন এক ব্যক্তি পেশ করতে পারে, যে পাগল ও উন্মাদ? [২] অর্থাৎ, তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও অহংকার করার আসল কারণ সত্যকে অপছন্দ করা, যা দীর্ঘ দিন অসত্যকে পোষণ করার ফলে তাদের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে।

وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ۚ بَلْ أَتَيْنَاهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُعْرِضُونَ

📘 সত্য যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতো, তাহলে বিশৃংখল হয়ে পড়ত আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের মধ্যবর্তী সবকিছুই;[১] পক্ষান্তরে আমি তাদেরকে দিয়েছি উপদেশ, কিন্তু তারা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [১] সত্য বলতে দ্বীন ও শরীয়তকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, দ্বীন বা ধর্ম যদি তাদের ইচ্ছানুসারে অবতীর্ণ হত, তাহলে এ কথা স্পষ্ট যে, পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। যেমন তাদের ইচ্ছা এক উপাস্যের পরিবর্তে অনেক উপাস্য হোক। যদি সত্যই এ রকম হত, তাহলে কি বিশ্ব-জাহানের নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক থাকত? অনুরূপ তাদের অন্যান্য ইচ্ছা ও বাসনাও রয়েছে।

أَمْ تَسْأَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

📘 অথবা তুমি কি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রুযীদাতা।

وَإِنَّكَ لَتَدْعُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

📘 অবশ্যই তুমি তো তাদেরকে সরল পথের দিকে আহবান করছ।

وَإِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُونَ

📘 যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা অবশ্যই সরল পথ হতে বিচ্যুত। [১] [১] অর্থাৎ, সরল পথ হতে বিচ্যুত হওয়ার একমাত্র কারণ হল, পরকালে অবিশ্বাস।

۞ وَلَوْ رَحِمْنَاهُمْ وَكَشَفْنَا مَا بِهِمْ مِنْ ضُرٍّ لَلَجُّوا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

📘 আমি তাদের উপর দয়া করলেও এবং তাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করলেও তারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরতে থাকবে। [১] [১] ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অন্তরে যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল এবং কুফরী ও শিরকের নর্দমার মধ্যে যেভাবে তারা হাবুডুবু খাচ্ছিল এখানে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُمْ بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ

📘 আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়ী হল না এবং সকাতর প্রার্থনাও করল না। [১] [১] এখানে শাস্তি আযাব বলতে বদরের যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের পরাজয়কে বুঝানো হয়েছে। যাতে তাদের ৭০ জন ব্যক্তি মারা পড়েছিল। অথবা সেই দুর্ভিক্ষের বছরকে বুঝানো হয়েছে যা নবী (সাঃ)-এর বদ্দুআর ফলে তাদের উপর এসেছিল। নবী (সাঃ) বদ্দুআ করেছিলেন, "হে আল্লাহ! ইউসুফ (আঃ)-এর যুগের ৭ বছর দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষে পীড়িত করে তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।" (বুখারীঃ দু'আ অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়।) যার ফলে মক্কার কাফেররা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। অতঃপর আবু সুফিয়ান নবী (সাঃ)-এর নিকট আসেন এবং আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে বললেন যে, 'এখন আমরা জীব-জন্তুর চামড়া ও রক্ত পর্যন্ত ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছি।' এই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।

حَتَّىٰ إِذَا فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِيدٍ إِذَا هُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ

📘 অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দ্বার খুলে দিলাম। তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ল। [১] [১] এ থেকে পার্থিব শাস্তি উদ্দেশ্য হতে পারে এবং আখেরাতের শাস্তিও উদ্দেশ্য হতে পারে; যেখানে সমস্ত রকমের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য হতে বঞ্চিত হবে এবং সমস্ত প্রকার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিন্ন হয়ে যাবে।

وَهُوَ الَّذِي أَنْشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ

📘 তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। [১] [১] অর্থাৎ, তিনি মানুষকে জ্ঞান-বুদ্ধি এবং শ্রবণ ও দর্শন শক্তি এই জন্য দান করেছেন, যাতে তার দ্বারা সত্যকে চিনতে, শুনতে ও দেখতে এবং গ্রহণ করতে পারে। আর এটাই হল এই সমস্ত অনুগ্রহের উপর সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। কিন্তু কৃতজ্ঞ অর্থাৎ সত্যগ্রহণকারী মানুষ অতি অল্প।

وَهُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

📘 তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্রিত করা হবে। [১] [১] এখানে মহান আল্লাহ নিজ মহাশক্তির কথা বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদেরকে সৃষ্টি করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তোমাদের রূপ-রঙও এক অপর হতে ভিন্নতর। ভাষাও ভিন্ন, আচার-আচরণও ভিন্ন। পুনরায় এক সময় এমন আসবে, যখন তোমাদের সকলকে জীবিত করে নিজের কাছে একত্রিত করবেন।

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ

📘 এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। [১] [১] 'আমানত রক্ষা করা' বলতে অর্পিত কর্তব্য পালন করা, গুপ্ত কথা ও মালের আমানতের হিফাযত করা। আর 'প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা' বলতে আল্লাহর সঙ্গে কৃত ও মানুষের সঙ্গে কৃত ওয়াদা, অঙ্গীকার ও চুক্তি পূরণ সবই শামিল।

وَهُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ وَلَهُ اخْتِلَافُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

📘 তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তাঁরই অধিকারে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তন;[১] তবুও কি তোমরা বুঝবে না?[২] [১] রাত্রির পর দিন ও দিনের পর রাত্রির আগমন এবং সেই সাথে দিন-রাত্রির ছোট বড় হওয়া তাঁরই নিয়ন্ত্রণভুক্ত। [২] তবুও কি তোমরা বুঝবে না যে, এ সমস্ত কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘটছে। যিনি প্রতিটি জিনিসের উপর ক্ষমতাবান নিয়ন্তা এবং তাঁর সামনে প্রতিটি জিনিসই অবনত মস্তক।

بَلْ قَالُوا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُونَ

📘 বরং পূর্ববর্তীগণ যেমন বলেছিল, তেমনি তারাও বলে।

قَالُوا أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ

📘 তারা বলে, ‘আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?

لَقَدْ وُعِدْنَا نَحْنُ وَآبَاؤُنَا هَٰذَا مِنْ قَبْلُ إِنْ هَٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ

📘 আমাদেরকে তো এ বিষয়েরই প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে এবং অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকেও; এ তো পূর্বকালের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ [১] [১] أَسَاطِير শব্দটি أُسطُورِة এর বহুবচন। যা مَكتُوبَة مُسَطَّرَة অর্থে ব্যবহার হয়েছে; অর্থাৎ, লিখিত উপকথা ও কাহিনীসমূহ। অর্থাৎ, তারা বলে, পুনর্বার জীবিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি কোন্ যুগ হতে চলে আসছে, সেই আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগ হতে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবে ঘটেনি। যার পরিষ্কার অর্থ হল এ সব উপকথা মাত্র; যা পূর্বপুরুষরা নিজেদের পুঁথিপত্রে লিখেছিলেন, আর যা নকল হতে হতে চলে আসছে, যার কোন বাস্তবতা নেই!

قُلْ لِمَنِ الْأَرْضُ وَمَنْ فِيهَا إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

📘 জিজ্ঞেস কর, এই পৃথিবী এবং এতে যা আছে তা কার, যদি তোমরা জানো?

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

📘 তারা ত্বরিৎ বলবে, ‘তা আল্লাহর।’ বল, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’

قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

📘 জিজ্ঞেস কর, ‘কে সপ্তাকাশ ও মহা আরশের অধিপতি?’

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ

📘 তারা বলবে, ‘আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না।’ [১] [১] অর্থাৎ, যখন তোমরা স্বীকার করছ যে, পৃথিবী ও তার ভিতরের সমস্ত কিছুর স্রষ্টা একমাত্র মহান আল্লাহ এবং আকাশমন্ডলী ও মহা আরশের মালিকও তিনিই। তাহলে তোমাদের এ কথা স্বীকার করতে দ্বীধা কেন যে, উপাসনার যোগ্যও কেবলমাত্র আল্লাহই? অতঃপর তাঁর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে তাঁর আযাব হতে বাঁচার প্রয়াস করছ না কেন?

قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

📘 জিজ্ঞেস কর, ‘সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন[১] এবং যাঁর বিরুদ্ধে কোন আশ্রয়দাতা নেই,[২] যদি তোমরা জানো?’ [১] অর্থাৎ যাকে তিনি রক্ষা করতে চান ও নিজ আশ্রয়ে স্থান দেন, তার কি কেউ কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে? [২] অর্থাৎ তিনি যার ক্ষতি করতে চান, আল্লাহ্ ব্যাতিত পৃথিবীতে এমন কোন শক্ত আছে কি যে তাকে খতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে? বা তাকে আশ্রয় দিতে পারে?

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ فَأَنَّىٰ تُسْحَرُونَ

📘 তারা বলবে, ‘আল্লাহর।’ বল, ‘তবুও তোমরা কেমন করে বিভ্রান্ত হচ্ছ?’ [১] [১] অর্থাৎ, তাহলে তোমাদের জ্ঞানের কি হয়েছে যে, এই স্বীকারোক্তি ও অবগতির পরও অন্যকে আল্লাহর উপাসনায় অংশীদার করছ? কুরআনের এই স্পষ্ট উক্তি হতে পরিষ্কার জানা যায় যে, মক্কার মুশরিকরা মহান আল্লাহ প্রতিপালক, স্রষ্টা, মালিক ও রুযীদাতা হওয়ার কথা (অর্থাৎ তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহর কথা) অস্বীকার করত না; বরং এ সব কথাই তারা বিশ্বাস করত। তারা শুধু 'তাওহীদুল উলূহিয়্যায়' (আল্লাহর একত্ববাদ)-কে অস্বীকার করত। অর্থাৎ, ইবাদত ও উপাসনা কেবলমাত্র এক আল্লাহর করত না; বরং তাঁর সঙ্গে অন্যকেও অংশীদার বানাত। এই জন্য নয় যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে বা তাঁর পরিচালনায় অন্য কেউ অংশীদার আছে; বরং কেবলমাত্র এই বিভ্রান্তির শিকার হয়ে যে, এঁরাও আল্লাহর নেক বান্দা ছিলেন। তাঁদেরকেও আল্লাহ কিছু এখতিয়ার দিয়ে রেখেছেন। তাই তাঁদের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই। বর্তমান যুগের কবরপূজারী বিদআতীরাও ঠিক এই বিভ্রান্তির শিকার। যার কারণে সমাধিস্থ মৃত ব্যক্তিদেরকে সাহায্য, সমৃদ্ধি ও সন্তান লাভের আশায় আহবান করে, তাদের নামে নযর মানে, নিয়ায পেশ করে এবং তাদেরকে আল্লাহর (উক্ত) ইবাদতসমূহে শরীক করে নেয়! অথচ মহান আল্লাহ এ কথা কোথাও বলেননি যে, আমি কোন পরলোকগত বুযুর্গ, অলী বা নবীকে কোন এখতিয়ার বা শক্তি দিয়ে রেখেছি। অতএব তোমরা তাদের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ কর। অথবা তাদেরকে সাহায্যের জন্য আহবান জানাও। অথবা তাদের নামে নযর-নিয়ায, মানত কর। এই কারণেই আল্লাহ পরবর্তীতে বলেছেন, আমি তাদের নিকট সত্য পৌঁছিয়ে দিয়েছি। অর্থাৎ তিনি এ কথা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আর এরা যদি আল্লাহর ইবাদতে অন্যকে শরীক করছে, তাহলে এই জন্য নয় যে, তাদের নিকট এ ব্যাপারে কোন দলীল আছে। কক্ষনো না; বরং এ কাজ তারা কেবল একে অন্যের দেখাদেখি এবং পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ করে তাদেরকে তাঁর সঙ্গে শরীক করছে। বরং বাস্তবে এরা সম্পূর্ণ মিথ্যুক। যেহেতু না তাঁর কোন সন্তান আছে, আর না কোন শরীক। যদি তা হতো, তাহলে প্রত্যেক শরীক নিজের ভাগের সৃষ্টির সুব্যবস্থা নিজের ইচ্ছামত করে নিত এবং প্রত্যেক শরীক অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করত। আর যখন এরূপ কোন কিছু নয় ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকারের টানাপড়েন নেই, তাহলে এ কথা ধ্রুব সত্য যে, আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত কথা হতে পাক-পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে, যা মুশরিকরা তাঁর সম্পর্কে বলে থাকে।

وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ

📘 আর যারা নিজেদের নামাযে যত্নবান থাকে। [১] [১] পরিশেষে আবার নামাযে যত্নবান হওয়া সফলতার জন্য জরুরী বলা হয়েছে। যাতে নামাযের গুরুত্ব ও মর্যাদা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় যে, আজকাল মুসলিমদের নিকট অন্যান্য নেক আমলের মত নামাযেরও কোন গুরুত্ব নেই। সুতরাং ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন!

بَلْ أَتَيْنَاهُمْ بِالْحَقِّ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

📘 বরং আমি তো তাদের নিকট সত্য পৌঁছিয়েছি, কিন্তু নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।

مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِنْ وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَٰهٍ ۚ إِذًا لَذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ

📘 আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন উপাস্য নেই; যদি থাকত, তাহলে প্রত্যেক উপাস্য স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা হতে আল্লাহ কত পবিত্র!

عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

📘 তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তারা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।

قُلْ رَبِّ إِمَّا تُرِيَنِّي مَا يُوعَدُونَ

📘 বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হচ্ছে, তা যদি তুমি আমাকে দেখাতে।

رَبِّ فَلَا تَجْعَلْنِي فِي الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না।’ [১] [১] সুতরাং হাদিসে এসেছে যে, নাবী (সাঃ) এই বলে দুয়া করতেন, 'হে আল্লাহ্! যখন তুমি কোন জাতিকে ফিতনায় ফেলার ইচ্ছা কর তখন তার পূর্বেই তুমি আমাকে (পৃথিবী হতে) তোমার নিকট ফিতনামুক্ত অবস্থায় তুলে নিও।' (তিরমিজিঃ তাফসীর সুরা সা-দ, আহমাদ ৫/২৪৩)

وَإِنَّا عَلَىٰ أَنْ نُرِيَكَ مَا نَعِدُهُمْ لَقَادِرُونَ

📘 আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি, আমি তা তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ

📘 তুমি ভালো দ্বারা মন্দের মুকাবিলা কর।[১] তারা যা বলে, আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। [১] যেমন অন্যত্রে বলেছেন, "উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যার সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।" (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৪ আয়াত)

وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ

📘 আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানদের প্ররোচনা হতে।[১] [১] সূতরাং নাবী (সাঃ) শাইত্বান হতে এই বলে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, "আউযু বিল্লাহিস সামীইল আ'লীম মিনাশ শাইত্বানির রজীম, মিন হামযিহী অনাফখিহী ওয়া নাফসিহ।" অর্থাৎ, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শাইত্বান হতে তার প্ররোচনা ও ফুৎকার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদঃ নামায অধ্যায়, তিরমিজি)

وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ

📘 হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট ওদের (শয়তানদের) উপস্থিতি হতে।’[১] [১] এই কারণে নবী (সাঃ) প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার পূর্বে আল্লাহর নাম নিতেন; অর্থাৎ, 'বিসমিল্লাহ' বলে শুরু করতেন। কারণ, আল্লাহর স্মরণ শয়তান বিতাড়িত করে। সেই জন্য তিনি এই দু'আও করতেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দেওয়াল চাপা পড়া, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, পানিতে ডুবে যাওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং বার্ধক্যের স্থবিরতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, যাতে আমার মৃত্যুর সময় শয়তান আমাকে স্পর্শ না করে, আমি যেন তোমার পথে (জিহাদে) পলায়ন অবস্থায় না মরি এবং সর্প দংশনেও যেন আমার মৃত্যু না হয়। (আবূ দাউদঃ বিতর অধ্যায়) ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে তিনি এই দু'আটি পাঠ করতেন, أَعُوْذُ بِكَلمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيْطَانِ وَأَنْ يَحْضُرُوْنَ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অসীলায় তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, শয়তানের প্ররোচনাদি এবং আমার নিকট ওদের হাজির হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আহমাদ ২/১৮১, আবু দাউদঃ চিকিৎসা অধ্যায়, তিরমিযীঃ দু ' আ অধ্যায়)

حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ

📘 যখন তাদের (অবিশ্বাসী ও পাপীদের) কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) প্রেরণ কর।