slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الرحمن

(Ar-Rahman) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الرَّحْمَٰنُ

📘 অনন্ত করুণাময় (আল্লাহ);

وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ

📘 তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য।

فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ

📘 এতে রয়েছে ফলমূল এবং মোচাযুক্ত খেজুর বৃক্ষ।[১] [১] أَكْمَامٌ হল كِمٌّ এর বহুবচন। وِعَاءُ التَّمْرِ কচি খেজুরের উপরের আবরণ (মোচা)।

وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ

📘 এবং খোসাবিশিষ্ট শস্যদানা[১] ও সুগন্ধ ফুল।[২] [১] حَبٌّ বলতে এমন সব শস্য যা খাদ্যরূপে পরিগণিত। শস্য শুকিয়ে ভুসি হয়ে যায়, যা পশুতে ভক্ষণ করে। [২] আরবে তুলসী গাছকে 'রাইহান' বলা হয়।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব (হে মানুষ ও জ্বিন সম্প্রদায়!) তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?[১] [১] এ সম্বোধন মানুষ ও জ্বিন উভয়কেই করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর নিয়ামতসমূহ গনিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করছেন। আর এর বারবার পুনরাবৃত্তির ব্যাপারটা এমন ব্যক্তির মত, যে কারো প্রতি অব্যাহতভাবে অনুগ্রহ করে; কিন্তু সে তা অস্বীকার করে। যেমন বলে, আমি তোমার অমুক কাজটা করে দিয়েছি, তুমি কি তা অস্বীকার করছ? অমুক জিনিসটা তোমাকে দিয়েছি, তোমার কি স্মরণে নেই? অমুক অনুগ্রহটা তোমার প্রতি আমি করেছি, তোমার কি আমার ব্যাপারে একটুও খেয়াল নেই? (ফাতহুল ক্বাদীর)

خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ

📘 মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুষ্ক মাটি থেকে। [১] [১] صَلْصَالٍ শুকনো মাটি যাতে শব্দ হয়। فَخَّارٌ আগুনে পোড়ানো মাটি যাকে খোলামকুচি বলে। এখানে মানুষ বলতে আদম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। যাঁর প্রথমে মাটি থেকে (মানুষের) আকার তৈরী করা হয়। অতঃপর আল্লাহ তাতে 'রূহ' ফুঁকেন (আত্মাদান করেন)। তারপর আদম (আঃ)-এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেন এবং এর পর থেকে তাঁদের উভয়ের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টির ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।

وَخَلَقَ الْجَانَّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ

📘 এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। [১] [১] এ থেকে উদ্দেশ্য সর্বপ্রথম জ্বিন। সে হল আবুল জ্বিন তথা জ্বিনদের (আদি) পিতা। অথবা জ্বিন এখানে 'জিন্স' (জাতি) হিসাবে ব্যবহূত হয়েছে। যেমন অনুবাদও 'জাতি' অর্থে করা হয়েছে। مَارِجٍ বলা হয়, আগুন থেকে উঁচু হয়ে ওঠা শিখাকে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] অর্থাৎ, তোমাদের এই সৃষ্টিও এবং তোমাদের ঔরসে অতিরিক্ত আরো বংশধরদের সৃষ্টিও আল্লাহর নিয়ামতেরই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা কি এই নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?

رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ

📘 তিনিই দুই উদায়াচল ও দুই অস্তাচলের প্রতিপালক। [১] [১] একটি হল গ্রীষ্মকালের উদয়াচল এবং দ্বিতীয়টি হল শীতকালের উদয়াচল। অস্তাচলের ব্যাপারটাও অনুরূপ। এই কারণে উভয়কে দ্বিবচন শব্দে উল্লেখ করেছেন। ঋতু অনুযায়ী উদয়াচল ও অস্তাচলের ভিন্নতায় মানুষ ও জ্বিনদের জন্য রয়েছে বহু উপকারিতা। তাই এটাকেও নিয়ামত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ

📘 তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া যারা পরস্পর মিলিত হয়,

عَلَّمَ الْقُرْآنَ

📘 তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। [১] [১] বলা হয় যে, এটা মক্কাবাসীদের সেই কথার উত্তর, যাতে তারা বলত যে, এই কুরআন মুহাম্মাদকে কোন মানুষ শিক্ষা দেয়। কেউ কেউ বলেছেন, এটা তাদের 'রহমান আবার কি?' কথার উত্তর। কুরআন শিখানোর অর্থঃ তা সহজ করে দিয়েছেন। অথবা আল্লাহ তাঁর নবীকে শিখিয়েছেন এবং নবী তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন। এই সূরায় মহান আল্লাহ তাঁর বহু নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে মান-মর্যাদা, গুরুত্ব ও উপকারিতার দিক দিয়ে কুরআনের শিক্ষাদান যেহেতু সর্বাধিক প্রকট, তাই প্রথমে এই নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)

بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ

📘 (কিন্তু) ওদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা ওরা অতিক্রম করতে পারে না। [১] [১] مَرَجَ অর্থ, أَرْسَلَ প্রবাহিত করেন। এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা ফুরক্বানের ২৫:৫৩ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। যার সার কথা হল, দুই সমুদ্র থেকে কেউ কেউ তাদের পৃথক পৃথক অস্তিত্বকে বুঝিয়েছেন। যেমন, মিষ্টি পানির সমুদ্র আছে যার দ্বারা কৃষিক্ষেত সেচন করা হয় এবং মানুষ তার পানি নিজেদের অন্যান্য প্রয়োজনেও ব্যবহার করে। দ্বিতীয় প্রকার সমুদ্রের পানি হল লবণাক্ত। তারও ভিন্ন কিছু উপকারিতা আছে। এরা উভয়ে আপোসে একে অপরের সাথে মিলে না। কেউ কেউ এর অর্থ বর্ণনা করেছেন, লোনা পানির সমুদ্রেই মিঠা পানিরও ঢেউ চলে এবং উভয় পানির ঢেউ একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয় না। বরং একে অপর থেকে পৃথকই থাকে। এর একটি ধরন হল এই যে, মহান আল্লাহ লোনা পানির সমুদ্রেই কয়েক স্থানে মিঠা পানির তরঙ্গও প্রবাহিত করে রেখেছেন এবং তা লোনা পানি হতে পৃথক থাকে। দ্বিতীয় ধরন এমনও হতে পারে যে, উপরে লোনা পানি আছে এবং তার তলদেশে আছে মিঠা পানির ঝর্ণা। যেমন বাস্তবেই কোন কোন স্থানে এ রকম আছে। তৃতীয় ধরন হল, যে জায়গায় নদীর মিঠা পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, সেখানে বহু লোকের চাক্ষুষ প্রমাণ যে, উভয় পানিই কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত এমনভাবে পাশাপাশি প্রবাহিত হয় যে, একদিকে নদীর মিঠা পানি এবং অন্য দিকে বিশাল সুপ্রসারিত সমুদ্রের লোনা পানি। এদের মাঝে যদিও কোন আড়াল নেই, তবুও তারা আপোসে একে অপরের সাথে মিলে না। উভয়ের মধ্যে সেই আড়াল আছে, যা আল্লাহ রেখেছেন। উভয়ে তা অতিক্রম করে না।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

📘 উভয় দরিয়া হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। [১] [১] مَرْجَانٌ থেকে ক্ষুদ্র মোতি বা প্রবাল বুঝানো হয়েছে। বলা হয় যে, আসমান থেকে যখন বৃষ্টি হয়, তখন ঝিনুকগুলো তাদের মুখ খুলে দেয়। পানির যে ফোঁটা তাদের মুখের ভিতরে পড়ে সেটাই মোতি হয়ে যায়। এটাই প্রসিদ্ধ আছে যে, মোতি ইত্যাদি মিঠা পানির সমুদ্র থেকে বের হয় না, বরং তা কেবল লোনা পানির সমুদ্র থেকেই বের হয়। কিন্তু কুরআন সর্বনাম দ্বিবচন ব্যবহার করেছে; যাতে বুঝা যায় যে, উভয় পানির সমুদ্র থেকেই মোতি বের হয়। তবে মোতি যেহেতু অধিকহারে লোনা পানির সমুদ্র থেকেই বের হয়, তাই তা বেশী প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে মিঠা পানির সমুদ্র থেকে তার বের হওয়ার কথা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বরং সম্প্রতি কালের পরীক্ষাদি দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, মিঠা পানির সমুদ্রেও মোতি থাকে। অবশ্য এর পানি অব্যাহতভাবে প্রবাহিত থাকার কারণে এই দরিয়াগুলো থেকে মোতি বের করা বড়ই কঠিন ব্যাপার হয়। কেউ কেউ বলেছেন, (দ্বিবচন থেকে) উদ্দেশ্য সমষ্টি। এগুলোর মধ্যে কোন একটি থেকেও মোতি বের হয়ে থাকলে তার জন্য দ্বিবচন শব্দ প্রয়োগ করা সঠিক। কেউ বলেছেন, মিঠা পানির নদীও সাধারণতঃ সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকেই মোতি বের করা হয়। কাজেই লোনা পানির সমুদ্রই হল (মোতি বের হওয়ার) কেন্দ্রস্থল। কিন্তু অন্যান্য দরিয়ার অংশও তাতে শামিল আছে। তবে বর্তমান যুগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসব ব্যাখ্যা ও কষ্টকল্পনার কোন প্রয়োজন নেই। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] এই মণি-মাণিক্য ও মুক্তা-প্রবাল হল শোভা-সৌন্দর্য ও রূপ-শ্রী বর্ধনের বস্তু। বিলাসী ও বিত্তশালীরা তাদের সৌন্দর্য-পিপাসা মিটানোর জন্য এবং নিজেদের শোভা-সৌন্দর্যকে আরো বর্ধিত করার জন্য এ সব ব্যবহার করে থাকে। কাজেই এগুলোর নিয়ামত হওয়ার কথা সুস্পষ্ট।

وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنْشَآتُ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ

📘 সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বত প্রমাণ সুউচ্চ (জাহাজসমূহ) তাঁরই (নিয়ন্ত্রণাধীন)। [১] [১] الجَوَارِ হল جَارِيَةٌ এর বহুবচন এবং এটা ঊহ্য মাউসূফ (বিশেষ্য) (السُّفُنُ) এর 'সিফাত' (বিশেষণ)। এর অর্থ বিচরণশীল। مُنْشَآتٌ এর অর্থ সুউচ্চ। আর এ থেকে বুঝানো হয়েছে নৌকার সেই পালকে, যা পালতোলা নৌকার উপর পতাকার মত উঠিয়ে রাখা হয়। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, নির্মিত। অর্থাৎ, আল্লাহর তৈরীকৃত সমুদ্রে বিচরণশীল।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] এ (পানির জাহাজ)গুলোর মাধ্যমে ভারবহন ও যাতায়াতের যে সব সুবিধা রয়েছে, তার বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। অতএব এও আল্লাহর নিয়ামত।

كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ

📘 ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর।

وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

📘 অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা)।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর প্রতিদান ও শাস্তি; অর্থাৎ, সুবিচার প্রতিষ্ঠার উপর যত্ন নেওয়া হবে। কাজেই এটাও এমন এক মহা অনুগ্রহ, যার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা ওয়াজেব।

يَسْأَلُهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে, সবাই তাঁর নিকট প্রার্থনা করে,[১] তিনি প্রত্যহ এক এক ব্যাপারে রত। [২] [১] অর্থাৎ, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তাঁর দ্বারের ভিখারী। [২] প্রত্যহ বা প্রতিদিনের অর্থ সব সময়। شان'শা'ন' অর্থমবিষয় বা ব্যাপার। অর্থাৎ, সব সময় তিনি কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাউকে রোগী বানাচ্ছেন, কাউকে রোগ থেকে মুক্ত করছেন। কাউকে ধনী করছেন, আবার কোন ধনীকে দরিদ্র করছেন, কোন ভিখারীকে রাজা বানাচ্ছেন, কোন রাজাকে বানাচ্ছেন ভিখারী, কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করছেন, আবার কাউকে অধঃপতনে পাতিত করছেন। কাউকে অস্তি থেকে নাস্তি এবং নাস্তি থেকে অস্তি করছেন ইত্যাদি। মোট কথা বিশ্বজাহানে এ সব কিছু হচ্ছে তাঁরই নির্দেশ ও ইচ্ছায়। দিবারাত্রির কোন মুহূর্ত এমন নেই, যা তাঁর কর্ম সম্পাদন থেকে খালি থাকে। {هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ}

خَلَقَ الْإِنْسَانَ

📘 তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। [১] [১] অর্থাৎ, এরা বানর ইত্যাদি জীব-জন্তু থেকে অভিব্যক্তি বা ক্রমবিকাশ লাভ করতে করতে মানুষ হয়ে যায়নি; যেমন মিষ্টার ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিউরীতে বলা হয়েছে। বরং মানুষকে এই আকার-আকৃতিতেই শুরু থেকেই মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন যা পশুদের থেকে ভিন্ন এক স্বতন্ত্র সৃষ্টি। এখানে 'মানুষ' শব্দটি 'জিনস' তথা জাতি হিসাবে ব্যবহার হয়েছে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] আর অতি মহান এই সত্তার প্রতিমুহূর্তে বান্দাদের যাবতীয় কার্যকলাপের ব্যবস্থাপনা করতে থাকা তাঁর একটি বড় অনুগ্রহ।

سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَ الثَّقَلَانِ

📘 হে মানুষ ও জ্বিন! আমি শীঘ্রই তোমাদের (হিসাব-নিকাশের) জন্য অবসর গ্রহণ করব। [১] [১] এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর অবসর বা অবকাশ নেই। বরং (মানুষের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী) এটা একটি কথার কথা বলা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য ধমক ও ভীতি-প্রদর্শন; অর্থঃ মনোনিবেশ করব। ثَقَلاَنِ (মানুষ ও জ্বিনকে) এই কারণে বলা হয়েছে যে, তাদের উপর শরীয়তের সমস্ত কিছুর ভার ও দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। পক্ষান্তরে এই ভার ও বোঝ থেকে অন্য সৃষ্টি মুক্ত।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوا ۚ لَا تَنْفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ

📘 হে জ্বিন ও মানুষ সম্প্রদায়! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, তাহলে অতিক্রম কর,[১] কিন্তু কোন শক্তি ব্যতিরেকে তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না। [২] [১] এই হুমকিও একটি অনুগ্রহ। কেননা, এর ফলে অবাধ্যজন অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে এবং সৎ লোকেরা আরো সৎকর্ম করে। [২] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও ফায়সালা থেকে পালিয়ে কোথাও যেতে পারলে চলে যাও। কিন্তু এ সাধ্য ও শক্তি কার আছে? আর পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? কোন্ জায়গা এমন আছে, যা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে? এটাও হুমকি যা পূর্বের হুমকির ন্যায় নিয়ামতও বটে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা হাশরের ময়দানে বলা হবে। যেখানে ফিরিশতারা চতুর্দিক থেকে মানুষকে ঘিরে থাকবেন। উভয় অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِنْ نَارٍ وَنُحَاسٌ فَلَا تَنْتَصِرَانِ

📘 তোমাদের উভয়ের প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধূম্রপুঞ্জ (অথবা গলিত তামা),[১] তখন তোমরা প্রতিরোধ করতে পারবে না। [২] [১] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন যদি তোমরা কোথাও পালিয়েও যাও, তবে ফিরিশতাগণ অগ্নিশিখা ও ধূম্রপুঞ্জ তোমাদের উপর নিক্ষেপ করে অথবা গলিত তামা তোমাদের মাথায় ঢেলে তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন। نُحَاسٌ এর দ্বিতীয় অর্থ গলিত তামা করা হয়েছে। [২] অর্থাৎ, আল্লাহর শাস্তিকে প্রতিহত করা তোমাদের সাধ্য হবে না।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فَإِذَا انْشَقَّتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ

📘 যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সেদিন ওটা (লাল চামড়া বা) তেলের মত লাল (গোলাপের) রূপ ধারণ করবে।[১] [১] কিয়ামতের দিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে পড়বে। ফিরিশতাগণ পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সেই দিন আকাশ জাহান্নামের আগুনের প্রচন্ড তাপের কারণে গলে রঙানো চামড়ায় মত লাল হয়ে যাবে। دِهَانٌ তেল অথবা লাল চামড়া।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فَيَوْمَئِذٍ لَا يُسْأَلُ عَنْ ذَنْبِهِ إِنْسٌ وَلَا جَانٌّ

📘 সেদিন না মানুষকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে, না জ্বিনকে? [১] [১] অর্থাৎ, যে সময় তারা কবর থেকে বের হবে। তাছাড়া পরে তো হিসাবের ময়দানে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ অবশ্যই করা হবে। কেউ কেউ এর অর্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, গোনাহ সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। কারণ, তাদের তো সম্পূর্ণ কর্মবিবরণী ফিরিশতাদের কাছেও থাকবে এবং আল্লাহর জ্ঞানেও। অবশ্য এ কথা জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমরা এ কাজ কেন করেছিলে? অথবা অর্থ হল, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না, বরং মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্বয়ং সমস্ত কিছু বলে দেবে।

عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

📘 তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। [১] [১] এখানে 'ভাব প্রকাশ' বলতে প্রত্যেক ব্যক্তির মাতৃভাষাকে বুঝানো হয়েছে, যা বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজেই বলতে পারে এবং এতে নিজের মনের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে। এমন কি যে শিশুর কোন জ্ঞান ও বোধশক্তি থাকে না, সেও বলতে পারে। এটা আল্লাহর এই শিক্ষার ফল, যার উল্লেখ এই আয়াতে হয়েছে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

يُعْرَفُ الْمُجْرِمُونَ بِسِيمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ

📘 অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের হুলিয়া দ্বারা,[১] সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করা হবে পা ও মাথার ঝুঁটি ধরে। [২] [১] অর্থাৎ, যেভাবে ঈমানদারদের হুলিয়া ও চিহ্ন হবে, আর তা হল, তাদের ওযূর স্থানগুলো উজ্জ্বল হবে, অনুরূপভাবে পাপীদের চেহারা কালো ও চোখ নীলবর্ণ হবে। আর তারা আতঙ্কগ্রস্ত থাকবে। [২] ফিরিশতারা তাদের ললাট ও পা এক সাথে মিলিয়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। অথবা কখনো কারো কপালে ধরবেন, আবার কখনো কারো পায়ে ধরবেন।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

هَٰذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ

📘 এটাই সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা মনে করত।

يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ

📘 তারা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে। [১] [১] অর্থাৎ, কখনো তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে, আবার কখনো مَاءٌ حَمِيْمٌ 'ফুটন্ত পানি' পান করার শাস্তি দেওয়া হবে। آنٍ গরম অর্থাৎ, অতীব গরম ফুটন্ত পানি। যে পানি তাদের নাড়ীভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهَا

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ

📘 আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান। [১] [১] যেমন হাদীসে আছে যে, "দু'টি জান্নাত রূপার হবে। যার প্লেট এবং তাতে বিদ্যমান সব কিছুই রূপার হবে। দু'টি জান্নাত সোনার হবে। তার প্লেট এবং তাতে বিদ্যমান সব কিছুই সোনার হবে।" (বুখারীঃ তাফসীর সূরা রাহমান) কোন কোন উক্তিতে এসেছে যে, সোনার বাগান বিশিষ্ট মু'মিন مُقَرَّبِيْنَ তথা নৈকট্যপ্রাপ্তদের জন্য হবে এবং রূপার বাগান হবে সাধারণ মু'মিন যথা, أَصْحَابُ الْيَمِيْنِ ডান দিকের অধিকারীদের জন্য।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

ذَوَاتَا أَفْنَانٍ

📘 উভয়ই বহু ডালপালাবিশিষ্ট (গাছে পরিপূর্ণ)। [১] [১] এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তাতে ছায়া হবে ঘন ও সুনিবিড়। অনুরূপ ফলও হবে অধিকহারে। কেননা, প্রতিটি ডাল ফলে পরিপূর্ণ থাকবে। (ইবেন কাষীর)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ

📘 সূর্য ও চন্দ্র রয়েছে (নির্ধারিত) হিসাবে। [১] [১] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী নিজ নিজ কক্ষপথে চলমান আছে; যা হতে বিচ্যুত হয় না।

فِيهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ

📘 উভয় (বাগানে) রয়েছে প্রবহমান দুই প্রস্রবণ। [১] [১] একটির নাম হল 'তাসনীম' আর দ্বিতীয়টির নাম হল 'সালসাবীল'।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فِيهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ

📘 উভয় (বাগানে) রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার। [১] [১] অর্থাৎ, স্বাদ ও মজার দিক দিয়ে প্রতিটি ফল হবে দুই প্রকার। আর তা হবে বিশেষ অনুগ্রহের অতিরিক্ত একটি চিত্র। কেউ কেউ বলেছেন, এক প্রকার হবে শুকনো ফলের এবং অপরটি হবে টাটকা ফলের মজা।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ

📘 সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়,[১] দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। [২] [১] অর্থাৎ, উপরের কাপড়টা সর্বদাই (ভিতরে ব্যবহূত) আস্তরের তুলনায় উত্তম ও সুন্দর হয়। এখানে শুধু আস্তরের আলোচনা করা হয়েছে। তার মানে হল, উপরের কাপড়টা এর চাইতে আরো অনেক অনেক উত্তম হবে। [২] ফল এত নিকটবর্তী হবে যে, বসে বসে এমন কি শুয়ে শুয়েও তা পাড়তে পারবে। {قُطُوْفُهَا دَانِيَةٌ} (الحاقة ২৩)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ

📘 সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না;[১] যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। [২] [১] যাদের চোখের দৃষ্টি তাদের নিজ নিজ স্বামী ছাড়া অন্য কারো উপর পড়বে না এবং তাদেরকে নিজ নিজ স্বামীই সর্বাধিক উত্তম ও সুন্দর লাগবে। [২] অর্থাৎ, কুমারী ও নব-যুবতী ও অবিবাহিতা হবে। এই আয়াত ও এর পূর্বের কিছু আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, যে জ্বিনরা মু'মিন হবে, তারাও মু'মিন মানুষদের মত জান্নাতে যাবে এবং তাদের জন্য সেখানে তা-ই থাকবে, যা অন্যান্য ঈমানদারদের জন্য থাকবে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ

📘 তারা (সৌন্দর্যে) যেন পদ্মরাগ ও প্রবালসদৃশ। [১] [১] অর্থাৎ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে পদ্মরাগ এবং শুভ্রতামিশ্রিত রক্তবর্ণের দিক দিয়ে হবে প্রবালের মত। যেমন অনেক সহীহ হাদীসেও তাদের স্বচ্ছ রূপ-সৌন্দর্যের কথা এই ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে, يَُرَى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَرَآءِ الْعَظْمِ وَاللَّحْمِ "তাদের দেহের রূপ-স্বচ্ছতার কারণে তাদের পদনালীর মজ্জা হাড় ও মাংসের বাহির থেকে পরিদৃষ্ট হবে।" (বুখারীঃ সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়) অপর আর একটি বর্ণনায় এসেছে (রসূল (সাঃ) বলেছেন,) "জান্নাতের স্ত্রীরা এত সুন্দরী ও সুদর্শনা হবে যে, যদি তাদের মধ্যে কোন একজন পৃথিবীবাসীদের প্রতি উঁকি দেয়, তবে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলের সম্পূর্ণ অংশটা উজ্জ্বল হয়ে যাবে এবং সুগন্ধিতে ভরে যাবে। আর তাদের মাথার ওড়না এত মূল্যবান হবে যে, তা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার থেকেও শ্রেয় হবে।" (বুখারীঃ জিহাদ অধ্যায়)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ

📘 তৃণলতা (বা নক্ষত্র) ও বৃক্ষাদি সিজদা করে। [১] [১] যেমন, অন্যত্র বলেন, {أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ} (অর্থাৎ, তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে; সিজদা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমন্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু, এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে---। (সূরা হাজ্জ ২২:১৮)

هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ

📘 উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে? [১] [১] প্রথম إحسان 'ইহ্সান' এর অর্থ, সৎকর্ম ও আল্লাহর আনুগত্য। আর দ্বিতীয় إحسان 'ইহসান'এর অর্থ, তার প্রতিদান। অর্থাৎ, জান্নাত ও তার নিয়ামতসমূহ।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

وَمِنْ دُونِهِمَا جَنَّتَانِ

📘 এই জান্নাত দুটি ছাড়া আরো দু’টি জান্নাত রয়েছে। [১] [১] دُوْنِهِمَا থেকে এ কথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, এই বাগান দু'টো মর্যাদা ও ফযীলতের দিক দিয়ে পূর্বের সেই বাগান দু'টির চেয়ে কম হবে, ৪৬নং আয়াতে যার কথা উল্লিখিত হয়েছে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

مُدْهَامَّتَانِ

📘 কৃষ্ণবরণ ঘন সবুজ এ (জান্নাতের) বাগান দুটি; [১] [১] অত্যধিক সতেজ ও ঘন সবুজ হওয়ার কারণে তা কালো মত দেখাবে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فِيهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ

📘 উভয় বাগানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ; [১] [১] এই (نَضّاخَتَانِ) (উচ্ছলিত) গুণটি تَجْرِيَانِ (প্রবহমান)এর তুলনায় কিছুটা হালকা। যেহেতু প্রবাহিত হওয়ার শক্তি উচ্ছলিত হওয়ার (উথলে ওঠা বা উপচে পড়ার) চাইতে বেশী। (ইবনে কাসীর)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ

📘 সেখানে রয়েছে ফলমূল খেজুর ও ডালিম। [১] [১] প্রথমোক্ত দুই বাগানের বিশেষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি ফল দু'প্রকারের হবে। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, তাতে মর্যাদা বৈশিষ্ট্যের যে আধিক্য রয়েছে, তা শেষোক্ত দুই বাগানের ক্ষেত্রে নেই।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيزَانَ

📘 তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড, [১] [১] অর্থাৎ, পৃথিবীতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষকেও তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন , {لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ} অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড (ন্যায়-নীতি); যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদীদ ৫৭:২৫)

فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ

📘 সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের সুন্দরীগণ। [১] [১] خَيْرَاتٌ থেকে উদ্দিষ্ট, চারিত্রিক ও আচার-আচরণের উৎকৃষ্টতা। আর حِسَانٌ এর অর্থ, রূপ-লাবণ্যের অপূর্বতা।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতি-পালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

حُورٌ مَقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ

📘 তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর।[১] [১] হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "জান্নাতে মোতির তাঁবু হবে। তার প্রস্থ হবে ৬০ মাইল। তার প্রতি কোণে থাকবে জান্নাতীর (সুন্দরী) স্ত্রী। যাকে অপর কোণের লোকেরা দেখতে পাবে না। মু'মিন তাতে বিচরণ করবে।" (বুখারীঃ সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতি-পালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ

📘 তাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতি-পালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ

📘 তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ বালিশে ও সুন্দর গালিচার উপরে। [১] [১] رَفْرَفٍ মসনদ, বালিশ, গালিচা অথবা এই ধরনের উৎকৃষ্ট বিছানা। عَبْقَرِيٍّ প্রত্যেক উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান জিনিসকে বলা হয়। নবী করীম (সাঃ) উমার (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। (فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِياًّ يَفْرِيْ فَرْيَهُ) "আমি কোন প্রতিভাশালী ব্যক্তি এমন দেখি নি, যে উমারের মত কাজ করতে পারে।" (বুখারীঃ মানাক্বিব) এখানে উদ্দেশ্য, অত্যন্ত সৌন্দর্যময় গালিচা। অর্থাৎ, জান্নাতীরা এমন আসনে হেলান দিয়ে উপবেশন করবে, যার উপর সবুজ রঙের মসনদ, গালিচা এবং কারুকার্য-খচিত উৎকৃষ্টমানের বিছানা বিছানো থাকবে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

📘 অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১] [১] এই আয়াতটি এই সূরার মধ্যে একত্রিশ বার এসেছে। মহান আল্লাহ এই সূরায় তাঁর বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন এবং প্রত্যেক নিয়ামত বা কয়েকটি নিয়ামত উল্লেখ করার পর মানব-দানবকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। এমন কি হাশরের মাঠের ভয়াবহতা এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করার পরও এই জিজ্ঞাসার পুনরাবৃত্তি করেছেন। যার অর্থ এই যে, পরকাল সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেওয়াও অতি বড় নিয়ামত। যাতে পরকালের শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে আগ্রহীরা তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার প্রচেষ্টা করে। দ্বিতীয় কথা এটাও জানা গেল যে, জ্বিনরাও মানুষদের মত আল্লাহর একটি সৃষ্টি। বরং মানুষের পর জ্বিনরাই হল দ্বিতীয় এমন সৃষ্টি, যাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দানে ধন্য করা হয়েছে। আর এর বিনিময়ে তাদের নিকট কেবল এতটুকু চাওয়া হয়েছে যে, তারা যেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। তাঁর সাথে যেন অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন না করে। সৃষ্টিকুলের এই উভয় সম্প্রদায়ই এমন, যাদের উপর শরীয়তের বিধি-বিধান এবং তার ফরয কার্যাদির ভার আরোপ করা হয়েছে। আর এরই জন্য তাদেরকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে; যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়। তৃতীয়তঃ নিয়ামতসমূহের বর্ণনা থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নিয়ামতসমূহ দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ ও মুস্তাহাব। এটা বিষয়-বিরাগ, পরহেযগারী ও আল্লাহভীরুতার বিপরীতও নয় এবং আল্লাহর প্রতি আস্থার পরিপন্থীও নয়। যেমন কোন কোন সূফীবাদীরা এ শ্রেণীর ধারণা পোষণ করে বা করায়। চতুর্থতঃ বারংবার এ প্রশ্ন যে, "তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে বা অস্বীকার করবে?" এটা ধমক ও হুমকি প্রদর্শন স্বরূপ। যার উদ্দেশ্য হল সেই আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা, যিনি এ সমস্ত নিয়ামত সৃষ্টি ও সুলভ করেছেন। তাই নবী কারীম (সাঃ) উক্ত জিজ্ঞাসার উত্তরে (নিম্নের) এই দু'আটি পড়া পছন্দ করেছেন। (لاَ بِشَيْءٍ مِّنْ نِّعَمِِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ فَلَكَ الْحَمْدُ) "হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমার কোন নিয়ামতকে মিথ্যা মনে করি না। সুতরাং তোমারই সমস্ত প্রশংসা।" (তিরমিযী, সিলসিলাহ সাহীহাহ আলবানী) তবে নামাযের মধ্যে (ইমাম সুযোগ না দিলে অথবা উচ্চস্বরে) দু'আটি পাঠ করা বিধেয় নয়।

تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

📘 কত মহান তোমার মহিমময়, [১] মহানুভব প্রতিপালকের নাম! [১] تَبَارَكَ শব্দটি بركة থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ, চিরত্ব ও স্থায়িত্ব। অর্থাৎ, তাঁর নাম চিরন্তন ও চিরস্থায়ী। অথবা তাঁর নিকট সর্বদাই বরকত ও কল্যাণের ভান্ডার বিদ্যমান। কেউ কেউ তার অর্থ করেছেন, আল্লাহর মহিমা, গৌরব ও মর্যাদার উচ্চতা। আর যাঁর নাম এত বরকতময় তথা এত কল্যাণ ও উচ্চতার অধিকারী, তখন তাঁর সত্তা কতই না কল্যাণময় এবং কতই না বড়ত্ব ও উচ্চতার অধিকারী।

أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ

📘 যাতে তোমরা ওজনে সীমালংঘন না কর। [১] [১] অর্থাৎ, ওজনে ন্যায়পরায়ণতার গন্ডি অতিক্রম না কর।

وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ

📘 ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।