🕋 تفسير سورة القلم
(Al-Qalam) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ن ۚ وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ
📘 নূন,[১] শপথ কলমের[২] এবং ওরা (ফিরিশতাগণ) যা লিপিবদ্ধ করে তার।[৩]
[১] نَ অক্ষরটি ঐ শ্রেণীর বিচ্ছিন্ন অক্ষরমালার অন্তর্ভুক্ত যা পূর্বে বহু সূরায় অতিবাহিত হয়েছে। যেমন, ص، ق (স্বাদ, ক্বাফ) ইত্যাদি।
[২] আল্লাহ তাআলা কলমের কসম খেয়েছেন। আর কলমের একটি গুরুত্ব এই কারণে রয়েছে যে, তার দ্বারা বর্ণনা ও মনের ভাবপ্রকাশের কাজ সম্পাদিত হয়। কেউ কেউ বলেন, এ থেকে সেই নির্দিষ্ট কলমকে বুঝানো হয়েছে, যেটাকে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে ভাগ্য লেখার আদেশ করেছিলেন এবং সে শেষ পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, তা সবই লিখেছিল।
(তিরমিযী, তাফসীর সূরা নূন)
[৩] يَسْطُرُوْنَ ক্রিয়ার কর্তা হল সেই কলমওলারা, যা কলম শব্দ দ্বারা প্রমাণিত হয়। কেননা, লেখনীর উল্লেখ স্বাভাবিকভাবে লেখকের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। অর্থ হল, তারও শপথ যা লেখকরা লিখে। অথবা ঐ ক্রিয়ার কর্তা হলেন ফিরিশতাগণ, যেমন অনুবাদে ফুটে উঠেছে।
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ
📘 এবং অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত।
هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيمٍ
📘 পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়।
مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ
📘 যে কল্যাণের কাজে বাধাদান করে, যে সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ।
عُتُلٍّ بَعْدَ ذَٰلِكَ زَنِيمٍ
📘 রূঢ় স্বভাব এবং তার উপর গোত্রহীন; [১]
[১] এখানে কাফেরদের চারিত্রিক অবনতির কথা বলা হচ্ছে, যার কারণে নবী (সাঃ)-কে শিথিলতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এই মন্দ গুণগুলো নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির বর্ণনা করা হয়েছে, না সাধারণভাবে সকল কাফেরের? প্রথমটির সমর্থন কোন কোন বর্ণনায় থাকলেও তা প্রামাণিক নয়। সুতরাং উদ্দেশ্য ব্যাপক। অর্থাৎ, এমন সকল ব্যক্তিই উদ্দেশ্য, যার মধ্যে উক্ত (মন্দ) গুণগুলো পাওয়া যাবে। زَنِيْمٌ অবৈধ সন্তান (জারজ, গোত্রহীন) অথবা প্রসিদ্ধ ও কুখ্যাত।
أَنْ كَانَ ذَا مَالٍ وَبَنِينَ
📘 (এ জন্য যে) সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধিশালী।[১]
[১] অর্থাৎ, উল্লিখিত মন্দ চরিত্রের শিকার সে এই জন্য হয় যে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততির নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন। অর্থাৎ, সে নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে অকৃতজ্ঞ হয়। কেউ কেউ বলেন, এর সম্পর্ক হল, ولا تُطِعْ (আনুগত্য করো না) কথার সাথে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির মধ্যে এইসব মন্দ গুণ বিদ্যমান থাকে, তার কথা কেবল এই জন্য মেনে নেওয়া হয় যে, তার আছে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি।
إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ آيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
📘 তার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে সে বলে, এটা তো সেকালের উপকথা মাত্র।
سَنَسِمُهُ عَلَى الْخُرْطُومِ
📘 আমি তার শুঁড় (নাক) দাগিয়ে দেব। [১]
[১] কারো নিকটে এর সম্বন্ধ হল দুনিয়ার সাথে। যেমন বলা হয় যে, বদর যুদ্ধে কাফেরদের নাককে তলোয়ারের নিশানা বানানো হয়েছিল। আবার কেউ বলেন, এটা কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের নিদর্শন হবে; তাদের নাকে দেগে চিহ্নিত করা হবে। অথবা অর্থ হল মুখমন্ডলের কালিমা। যেমন, কাফেরদের মুখমন্ডল সেদিন কালো হয়ে যাবে। কেউ বলেন, কাফেরদের এই পরিণতি দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জায়গাতেই সম্ভব।
إِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ إِذْ أَقْسَمُوا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِينَ
📘 আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি,[১] যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে,[২] যখন তারা শপথ করল যে, তারা ভোর-সকালে তুলে আনবে বাগানের ফল, [৩]
[১] 'তাদেরকে' বলতে মক্কাবাসীকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আমি তাদেরকে ধন-মাল দান করেছিলাম। যাতে তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, কুফরী ও অহংকার করার জন্য নয়। কিন্তু তারা কুফরী এবং অহংকারের পথ অবলম্বন করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি দিয়ে পরীক্ষা করি। নবী (সাঃ)-এর অভিশাপের কারণে তাতে তারা কিছু দিন ভুগেছিল।
[২] বাগানওয়ালাদের ঘটনা আরবদের মাঝে প্রসিদ্ধ ছিল। এই বাগানটি (ইয়ামানের) সানআ' থেকে দুই ফারসাখ (৬ মাইল) দূরত্বে অবস্থিত ছিল। বাগানের মালিক তা হতে উৎপন্ন ফল-মূল থেকে গরীব মিসকীনদের উপরও খরচ করত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর যখন তার সন্তানরা তার উত্তরাধিকারী হল, তখন তারা বলল যে, এ থেকে আমাদের সংসারের খরচই তো কোন রকম বের হয়। তাই আমরা বাগানের উপার্জিত ফসল হতে গরীব ও অভাবীদেরকে কিরূপে দান করব? সুতরাং মহান আল্লাহ সেই বাগানটিকে ধ্বংস করে দিলেন। বলা হয় যে, এই ঘটনা ঈসা (সাঃ)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার কিছু দিন পর ঘটেছিল।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
বিস্তারিত এই আলোচনা তফসীর গ্রন্থের বর্ণনার ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয়।
[৩] صَرْمٌ এর অর্থ হল ফল তোলা, ফসল কাটা। مُصْبِحِيْنَ শব্দটি হল হাল (ক্রিয়া বিশেষণ)। অর্থাৎ, ভোর-সকালেই ফল তুলে ফেলব এবং ফসলাদি কেটে নেব।
وَلَا يَسْتَثْنُونَ
📘 এবং তারা ‘ইন শাআল্লাহ’ বলল না।
فَطَافَ عَلَيْهَا طَائِفٌ مِنْ رَبِّكَ وَهُمْ نَائِمُونَ
📘 অতঃপর সেই বাগানে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক বিপর্যয় হানা দিল, যখন তারা ঘুমিয়ে ছিল। [১]
[১] কেউ কেউ বলেন, বাগানে রাতারাতিই আগুন লেগে গিয়েছিল। আর কেউ বলেন, জিবরীল (আঃ) এসে বাগানটিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন।
مَا أَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍ
📘 তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে পাগল নও। [১]
[১] এটা হল কসমের জওয়াব। এতে কাফেরদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে পাগল বলত। {يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ} অর্থাৎ, (তারা বলল,) হে ঐ ব্যক্তি! যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে, তুমি তো একটা পাগল।
(সূরা হিজর ১৫:৬ আয়াত)
فَأَصْبَحَتْ كَالصَّرِيمِ
📘 ফলে তা ফসল-কাটা ক্ষেতের মত হয়ে গেল। [১]
[১] অর্থাৎ, যেভাবে ফসলাদি কেটে নেওয়ার পর ক্ষেত শুকিয়ে যায়, ঠিক এইভাবে পুরো বাগানটাই ধ্বংস হয়ে গেল। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন যে, বাগানটি পুড়ে কালো রাতের মত হয়ে গেল।
فَتَنَادَوْا مُصْبِحِينَ
📘 ভোর-সকালে তারা একে অপরকে ডাকাডাকি করে বলল,
أَنِ اغْدُوا عَلَىٰ حَرْثِكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَارِمِينَ
📘 ‘তোমরা যদি ফল তুলতে চাও, তাহলে সকাল সকাল বাগানে চল।’
فَانْطَلَقُوا وَهُمْ يَتَخَافَتُونَ
📘 অতঃপর তারা চুপিসারে কথা বলতে বলতে (পথ) চলতে শুরু করল, [১]
[১] অর্থাৎ, প্রথমতঃ তারা অতি সকালে বাগানের দিকে যাত্রা করল। দ্বিতীয়তঃ আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল, যাতে তাদের বাগানে যাওয়ার কথা কেউ টের না পায় ।
أَنْ لَا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِسْكِينٌ
📘 ‘আজ যেন সেখানে তোমাদের নিকটে কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে।’ [১]
[১] অর্থাৎ, তারা একে অপরকে বলছিল যে, আজ বাগানে এসে কেউ যেন কিছু চাইতে না পারে। যেমন, আমাদের বাপের যামানায় লোকেরা এসে নিজেদের অংশ নিয়ে যেত।
وَغَدَوْا عَلَىٰ حَرْدٍ قَادِرِينَ
📘 অতঃপর তারা (অভাবীদেরকে) নিবৃত্ত করতে সক্ষম --এই বিশ্বাস নিয়ে প্রভাতকালে বাগানে গেল। [১]
[১] حَرْدٍ শব্দের একটি অর্থ শক্তি ও কঠোরতা করা হয়েছে। কেউ কেউ এর অর্থ করেছে, রাগ ও হিংসা। অর্থাৎ, ফকীর ও মিসকীনদের প্রতি ক্রোধ অথবা হিংসা প্রকাশ করে। قَادِرِيْنَ শব্দটি হাল (ক্রিয়া-বিশেষণ)। অর্থাৎ, নিজেদের ব্যাপারে তারা অনুমান করে নিয়েছিল অথবা তাদের ধারণা ছিল যে, নিজেদের বাগানকে তারা আয়াত্তে করে নিয়েছে অথবা অর্থ হল, মিসকীনদেরকে তারা নিজেদের কাবুতে করতে সক্ষম।
فَلَمَّا رَأَوْهَا قَالُوا إِنَّا لَضَالُّونَ
📘 অতঃপর তারা যখন বাগানের অবস্থা প্রত্যক্ষ করল,[১] তখন তারা বলল, ‘আমরা তো পথ হারিয়ে ফেলেছি। [২]
[১] অর্থাৎ, বাগানের জায়গাকে ছায়ের স্তূপ অথবা ধ্বংস-স্তূপরূপে দেখতে পেল।
[২] প্রথমে তারা পরস্পরকে এ কথাই বলেছিল।
بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُونَ
📘 বরং আমরা তো বঞ্চিত!’ [১]
[১] অতঃপর যখন তারা চিন্তা-ভাবনা করল, তখন জানতে পারল যে, বিপদগ্রস্ত এবং বিনাশিত এই বাগানই হল আমাদের বাগান। যাকে মহান আল্লাহ আমাদের কর্মদোষে এ রকম করে দিয়েছেন। আর অবশ্যই এটা আমাদের বঞ্চনা-ভাগ্য।
قَالَ أَوْسَطُهُمْ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُونَ
📘 তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি? তোমরা (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছ না কেন?’ [১]
[১] কেউ কেউ এখানে 'তাসবীহ' (আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা) করা বলতে 'ইন শাআল্লাহ' বলা বুঝিয়েছেন।
قَالُوا سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ
📘 তারা বলল, ‘আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, নিশ্চয় আমরা তো সীমালংঘনকারী ছিলাম।’[১]
[১] অর্থাৎ, এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে, পিতা যে নিয়মে কাজ করেছেন তার বিপরীত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা বড়ই ভুল করেছি। যার শাস্তি আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন। এ থেকে এও বোঝা গেল যে, গোনাহ করার দৃঢ় সংকল্প করা ও তার প্রতি প্রাথমিক পদক্ষেপও গোনাহ করার মতই অপরাধ। এতে পাকড়াও হতে পারে। (যেমন হাদীসে এসেছে, দুই মুসলিম খুনাখুনি করলে খুনী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই দোযখে যাবে। কারণ নিহত ব্যক্তিরও তার সঙ্গীকে খুন করার দৃঢ় সংকল্প ছিল।) শুধুমাত্র সেই পাপ-ইচ্ছা ক্ষমার যোগ্য, যা মনের খেয়াল ও কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
وَإِنَّ لَكَ لَأَجْرًا غَيْرَ مَمْنُونٍ
📘 তোমার জন্য অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। [১]
[১] নবুঅতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যত কষ্ট তুমি সহ্য করেছ এবং শত্রুদের (ব্যথাদায়ক) যত কথা তুমি শুনেছ, সে সবের বিনিময়ে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে অশেষ প্রতিদান তুমি লাভ করবে। مَنٌّ এর অর্থ বিচ্ছিন্ন করা। غَير مَمنُون অর্থঃ নিরবচ্ছিন্ন, অশেষ।
فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَلَاوَمُونَ
📘 অতঃপর তারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল।
قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا طَاغِينَ
📘 তারা বলল, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! নিশ্চয় আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম।
عَسَىٰ رَبُّنَا أَنْ يُبْدِلَنَا خَيْرًا مِنْهَا إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا رَاغِبُونَ
📘 আমরা আশা রাখি যে, আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদেরকে উৎকৃষ্ট বাগান দেবেন; আমরা আমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হলাম।’ [১]
[১] বলা হয় যে, তারা আপোসে অঙ্গীকারবদ্ধ হল যে, আল্লাহ যদি পুনরায় আমাদেরকে মাল-ধন দান করেন, তাহলে আমরা পিতার মতই তা হতে গরীবদের অধিকার আদায় করব। আর এই জন্যই তারা লজ্জিত হয়ে তওবা করে প্রতিপালকের নিকট আশার কথাও ব্যক্ত করল।
كَذَٰلِكَ الْعَذَابُ ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
📘 শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে।[১] আর পরকালের শাস্তি কঠিনতর; যদি তারা জানত। [২]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহর আদেশের যারা বিরোধিতা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত মাল ব্যয় করার ব্যাপারে কৃপণতা করে, তাদেরকে আমি এইভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি। (যদি আমার ইচ্ছা হয় তাহলে।)
[২] কিন্তু বড় অনুতাপের বিষয় যে, তারা এই বাস্তবিকতাকে বুঝে না, যার কারণে কোন পরোয়াও করে না।
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ
📘 আল্লাহভীরুদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই ভোগ-বিলাসপূর্ণ জান্নাত রয়েছে।
أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ
📘 আমি কি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দেরকে অপরাধীদের মত গণ্য করব?[১]
[১] মক্কার মুশরিকরা বলত যে, যদি কিয়ামত হয়, তাহলে সেখানেও আমরা মুসলিমদের থেকে উত্তম অবস্থায় থাকব। যেমন, দুনিয়াতে আমরা মুসলিমদের চেয়ে বেশী সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। আল্লাহ তাআলা তাদের উত্তরে বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, আমি মুসলিমদের অর্থাৎ আমার আনুগত্যশীলদেরকে পাপিষ্ঠদের, অর্থাৎ আমার অবাধ্যজনদের মত গণ্য করব? অর্থাৎ, এটা কোন দিন হতে পারে না যে, আল্লাহ তাআলা ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের বিপরীত করে উভয়কে এক সমান গণ্য করবেন।
مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
📘 তোমাদের কি হয়েছে? তোমাদের এ কেমন সিদ্ধান্ত?
أَمْ لَكُمْ كِتَابٌ فِيهِ تَدْرُسُونَ
📘 তোমাদের নিকট কি কোন কিতাব আছে,[১] যা তোমরা অধ্যয়ন কর?
[১] যাতে এ কথা লেখা আছে, যার তোমরা দাবী করছ যে, সেখানেও তোমাদের জন্য তোমাদের পছন্দ মত সব কিছুই থাকবে?
إِنَّ لَكُمْ فِيهِ لَمَا تَخَيَّرُونَ
📘 নিশ্চয় তোমাদের জন্য ওতে রয়েছে, যা তোমরা পছন্দ কর?
أَمْ لَكُمْ أَيْمَانٌ عَلَيْنَا بَالِغَةٌ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ۙ إِنَّ لَكُمْ لَمَا تَحْكُمُونَ
📘 আমি কি তোমাদের সাথে কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ এমন কোন প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ আছি যে, তোমরা নিজেদের জন্য যা স্থির করবে তাই পাবে? [১]
[১] অর্থাৎ, কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত এমন কোন পাক্কা অঙ্গীকার আমি তোমাদের সাথে করেছি নাকি যে, তোমরা নিজেদের ব্যাপারে যা ফায়সালা করবে, তা-ই তোমাদের জন্য হবে?
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
📘 তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। [১]
[১] خُلُقٍ عَظِيْمٍ থেকে ইসলাম, দ্বীন অথবা কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ হল, তুমি ঐ মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যার আদেশ মহান আল্লাহ তোমাকে কুরআনে অথবা ইসলামে দিয়েছেন। অথবা এর অর্থ হল, এমন শিষ্টাচার, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিশ্বস্ততা, সততা, সহিষ্ণুতা এবং দানশীলতা ইত্যাদি সহ অন্য যাবতীয় চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলী যার অধিকারী তিনি নবুঅতের পূর্বেও ছিলেন এবং নবুঅতের পর যা আরো উন্নত হয় ও সৌন্দর্য-সমৃদ্ধ হয়। আর এই কারণেই যখন আয়েশা (রাঃ) কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, كَانَ خُلُقُهُ القُرْآنَ অর্থাৎ, তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন।
(মুসলিমঃ মুসাফিরীন অধ্যায়)
মা আয়েশার এই উত্তর خُلُقٍ عَظِيْمٍ এর উল্লিখিত উভয় অর্থেই শামিল।
سَلْهُمْ أَيُّهُمْ بِذَٰلِكَ زَعِيمٌ
📘 তুমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ওদের মধ্যে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কে? [১]
[১] যে কিয়ামতের দিন তাদের জন্য তাই ফায়সালা করাবে যা মুসলিমদের জন্য আল্লাহ করবেন।
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ فَلْيَأْتُوا بِشُرَكَائِهِمْ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
📘 তাদের কি কোন শরীক উপাস্য আছে? থাকলে তারা তাদের শরীক উপাস্যগুলোকে উপস্থিত করুক; যদি তারা সত্যবাদী হয়।[১]
[১] কিংবা যাদেরকে তারা শরীক বানিয়েছে, তারা তাদের সাহায্য করে তাদেরকে উত্তম স্থান দান করবে? যদি তাদের শরীক এইরূপ ক্ষমতাবান হয়, তাহলে তাদেরকে সামনে উপস্থিত করা হোক, যাতে তাদের সত্যতা স্পষ্ট হয়ে যায়।
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ
📘 (স্মরণ কর,) যেদিন পদনালী উন্মোচন করা হবে এবং তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান করা হবে; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। [১]
[১] কেউ কেউ পায়ের রলা, গোছা বা পদনালী খোলা থেকে কিয়ামতের দিনের কঠোরতা ও ভয়াবহতা বুঝিয়েছেন। কিন্তু একটি সহীহ হাদীসে এর ব্যাখ্যা এইরূপ বর্ণনা হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা নিজ পদনালী উন্মোচন করবেন (যেভাবে উন্মোচন করা তাঁর সত্তার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ)। তখন প্রতিটি মু'মিন নর-নারী তাঁর সামনে সিজদায় পড়ে যাবে। তবে তারা সিজদা করতে পারবে না, যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো বা সুনাম লাভের জন্য সিজদা করত। তারা সিজদা করতে চাইবে; কিন্তু তাদের পিঠ পাটার মত এমন শক্ত হয়ে যাবে যে, তা ঝুঁকানো সম্ভব হবে না।
(বুখারীঃ সূরা ক্বালামের ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ)
মহান আল্লাহর পায়ের গোছা কেমন? তা কিভাবে তিনি খুলবেন? এর প্রকৃত রূপ আমরা জানিও না এবং এ ব্যাপারে কিছু বলতেও পারব না। কাজেই যেরূপ আমরা কোন ধরন-গঠন ও সাদৃশ্য আরোপ না করে তাঁর হাত, পা ইত্যাদির উপর ঈমান রাখি, অনুরূপ তাঁর পায়ের গোছার কথা যেহেতু কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, বিধায় কোন অপব্যাখ্যা ও কোন ধরন-গঠন জানার চেষ্টা ছাড়াই তার উপরও ঈমান রাখা আবশ্যক। সালফে স্বালেহীন এবং মুহাদ্দিসগণের এটাই মত ও বিশ্বাস।
خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ
📘 তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে[১] অথচ যখন তারা সুস্থ ছিল, তখন তো তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হত। [২]
[১] অর্থাৎ, তাদের অবস্থা হবে দুনিয়ার বিপরীত। দুনিয়াতে তো অহংকার ও ঔদ্ধত্যের কারণে তাদের গর্দান উঁচু হয়ে থাকত।
[২] অর্থাৎ, সুস্থ-সবল ও মোটা-তাজা ছিল। আল্লাহর ইবাদত সম্পাদনে কোন জিনিস তাদের জন্য বাধা ছিল না। কিন্তু পৃথিবীতে তারা আল্লাহর ইবাদত করা হতে দূরে থাকত। (আযান ও ইকামতের মাধ্যমে তাদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা হত, কিন্তু সুস্থ-সবল থাকা সত্ত্বেও তারা নামাযে আসত না। বলা বাহুল্য, যারা ইহকালে নামাযের মাধ্যমে আল্লাহকে সিজদাহ করে না, তারা পরকালে তাঁকে স্বচক্ষে দেখেও সিজদাহ করতে সক্ষম হবে না। -সম্পাদক)
فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَٰذَا الْحَدِيثِ ۖ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ
📘 সুতরাং তুমি আমাকে এবং এই বাণীকে যারা মিথ্যাজ্ঞান করে, তাদেরকে ছেড়ে দাও,[১] আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা জানতে পারবে না। [২]
[১] অর্থাৎ, আমিই তাদের সাথে বুঝাপড়া করে নেব। তুমি এ ব্যাপারে কোন চিন্তা করো না।
[২] এখানে সেই অবকাশ ও ঢিল দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে, যা কুরআনে আরো কয়েকটি স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং হাদীসেও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর অবাধ্যতা সত্ত্বেও পার্থিব সম্পদ লাভ এবং বিলাস-সামগ্রীর প্রাচুর্য (তাদের উপর) আল্লাহর অনুগ্রহ নয়, বরং এটা তাঁর অবকাশ ও ঢিল দেওয়ার নীতি অনুসারে তাদের প্রাপ্ত সত্বর ফল। পরে যখন তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন, তখন কেউ বাঁচাতে পারবে না।
وَأُمْلِي لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ
📘 আর আমি তাদেরকে ঢিল দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। [১]
[১] এটা পূর্বোক্ত বিষয়ের তাকীদস্বরূপ। كَيْدٌ গোপন কৌশল ও চক্রান্তকে বলা হয়। এটা সৎ উদ্দেশ্য হলে, তা কোন দোষের নয়। এটাকে যেন উর্দু ভাষায় ব্যবহূত 'কায়দ' মনে না করা হয়; যার মধ্যে কেবল মন্দ অর্থই পাওয়া যায়।
أَمْ تَسْأَلُهُمْ أَجْرًا فَهُمْ مِنْ مَغْرَمٍ مُثْقَلُونَ
📘 তুমি কি তাদের নিকট পারিশ্রমিক চাচ্ছ যে, তারা একে একটি দুর্বহ দন্ড মনে করবে? [১]
[১] এখানে সম্বোধন নবী (সাঃ)-কে করা হয়েছে, কিন্তু ধমক তাদেরকে দেওয়া হয়েছে, যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি।
أَمْ عِنْدَهُمُ الْغَيْبُ فَهُمْ يَكْتُبُونَ
📘 তাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, তারা লিখে রাখে? [১]
[১] অর্থাৎ, তারা অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত নাকি? 'লাওহে মাহফূয' তাদের আয়ত্তে নাকি যে, সেখান থেকে যে কথা তারা চায়, তা সংগ্রহ করে নেয় (লিখে নেয়)? এই জন্য তারা তোমার আনুগত্য করার এবং তোমার উপর ঈমান আনার কোন প্রয়োজন মনে করে না। এর জওয়াব হল, না, এমন কক্ষনো নয়।
فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُنْ كَصَاحِبِ الْحُوتِ إِذْ نَادَىٰ وَهُوَ مَكْظُومٌ
📘 অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়,[১] তুমি তিমি-ওয়ালা[২] (ইউনুস)এর মত অধৈর্য হয়ো না, যখন সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল। [৩]
[১] فَاصْبِر এ 'ফা' হরফটি তাফরী'র (পরবর্তী বাক্যকে পূর্বোক্ত বাক্যের শাখাস্বরূপ সংযুক্ত করার) জন্য ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, যখন ঘটনা এইরূপ নয়, তখন হে নবী! তুমি তোমার রিসালতের দায়িত্ব পালন করে যাও এবং মিথ্যাজ্ঞানকারীদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষা কর।
[২] যে নিজের জাতির নিকট মিথ্যাজ্ঞানের আচরণ লক্ষ্য করে তাড়াহুড়া করেছিল এবং স্বীয় প্রতিপালকের ফায়সালা ও অনুমতি ছাড়াই নিজের জাতিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
[৩] যার কারণে তাঁকে দুঃখাকুল অবস্থায় স্বীয় প্রতিপালককে সাহায্যের জন্য ডাকতে হয়েছিল। (এর বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।)
لَوْلَا أَنْ تَدَارَكَهُ نِعْمَةٌ مِنْ رَبِّهِ لَنُبِذَ بِالْعَرَاءِ وَهُوَ مَذْمُومٌ
📘 তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ তার নিকট না পৌঁছলে, সে নিন্দিত হয়ে নিক্ষিপ্ত হত গাছ-পালাহীন সৈকতে। [১]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যদি অনুগ্রহপূর্বক তাকে তওবা ও মুনাজাতের তওফীক দান না করতেন এবং তার প্রার্থনা মঞ্জুর না করতেন, তাহলে তাকে সমুদ্র তীরে নিক্ষেপ করতেন না; যেখানে তার ছায়ার ও খোরাকের জন্য লতাবিশিষ্ট গাছ উৎপন্ন করে দিয়েছিলেন। বরং (তিমি মাছের পেটেই রেখে দিতেন অথবা) কোন গাছ-পালাহীন তীরে নিক্ষেপ করতেন এবং সে আল্লাহর নিকট নিন্দিতই থাকত। পক্ষান্তরে দু'আ মঞ্জুর হওয়ার পর সে প্রশংসিত বিবেচিত হল।
فَسَتُبْصِرُ وَيُبْصِرُونَ
📘 শীঘ্রই তুমি দেখবে এবং তারাও দেখবে। [১]
[১] অর্থাৎ, যখন সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবে এবং কোন কিছুই গোপন থাকবে না। আর এটা হবে কিয়ামতের দিন। কেউ কেউ বলেছেন, এ কথার সম্পর্ক বদর যুদ্ধের সাথে।
فَاجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَجَعَلَهُ مِنَ الصَّالِحِينَ
📘 পুনরায় তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন[১] এবং তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করলেন।[২]
[১] এর অর্থ হল, তাঁকে সুস্থ ও সবল করে তুলে পুনরায় রিসালাত দানে ধন্য করে তাঁর জাতির নিকট প্রেরণ করা হল। যেমন, সূরা সাফফাত ৩৭:১৪৬ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।[২] এই জন্য নবী (সাঃ) বলেছেন যে, "কোন ব্যক্তি যেন এ কথা না বলে যে, আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা থেকেও উত্তম।"
(মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়)
অধিক দ্রষ্টব্যঃ সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৩ নং আয়াতের টীকা।
وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ
📘 অবিশ্বাসীরা যখন উপদেশবাণী (কুরআন) শ্রবণ করে, তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দেয়,[১] এবং বলে, ‘এ তো এক পাগল।’ [২]
[১] অর্থাৎ, যদি তোমার জন্য আল্লাহর প্রতিরোধ, প্রতিরক্ষা ও হিফাযত না হত, তাহলে কাফেরদের হিংসা দৃষ্টির কারণে তুমি বদ নজরের শিকার হয়ে পড়তে। অর্থাৎ, তাদের কুদৃষ্টি তোমাকে লেগে যেত। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) এর এই অর্থই বলেছেন। তিনি আরো লিখেছেন যে, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বদনজর লেগে যাওয়া এবং আল্লাহর হুকুমে অন্যের উপর তার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া সত্য। যেমন, অনেক হাদীস থেকেও তা প্রমাণিত। যেমন অনেক হাদীসে এ থেকে বাঁচার জন্য দু'আও বর্ণিত হয়েছে। আর তাকীদ করে বলা হয়েছে যে, যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস ভাল লাগবে, তখন 'মা শা-আল্লাহ' অথবা 'বা-রাকাল্লাহ' বলবে। যাতে সে জিনিসে যেন বদনজর না লাগে যায়। অনুরূপ কাউকে যদি কারো বদনজর লেগে যায়, তাহলে তাকে গোসল করিয়ে তার পানি ঐ ব্যক্তির উপর ঢালতে হবে, যাকে তার বদনজর লেগেছে।
(বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ তফসীর ইবনে কাসীর এবং অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ)
কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, ওরা তোমাকে রিসালাতের প্রচার-প্রসার থেকে ফিরিয়ে দিত।
[২] অর্থাৎ, হিংসার কারণে এবং এই উদ্দেশ্যেও যাতে লোকেরা এই কুরআন দ্বারা প্রভাবিত না হয়; বরং এ থেকে দূরে থাকে। অর্থাৎ, চক্ষু দ্বারাও কাফেররা নবী (সাঃ)-এর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করত, জিহ্বা দ্বারাও তাঁকে কষ্ট দিত এবং তাঁর অন্তরকে ব্যথিত করত।
وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ
📘 অথচ তা তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশই। [১]
[১] যখন প্রকৃত ব্যাপার হল এই যে, এ কুরআন মানব-দানবের জন্য হিদায়াত ও পথপ্রদর্শক স্বরূপ এসেছে, তখন তাকে যে নিয়ে এসেছে এবং তার যে বর্ণনাকারী সে পাগল কিভাবে হতে পারে?
بِأَيْيِكُمُ الْمَفْتُونُ
📘 তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
📘 নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অধিক অবগত আছেন যে, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি অধিক জানেন, কারা সৎপথপ্রাপ্ত।
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِينَ
📘 সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের আনুগত্য করো না। [১]
[১] এখানে আনুগত্যের অর্থ এমন নমনীয়তা, যার প্রকাশ মানুষ তার বিবেক না চাইলেও করে থাকে। অর্থাৎ, মুশরিকদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া ও নমনীয়তা প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।
وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ
📘 তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও। তাহলে তারাও নমনীয় হবে।[১]
[১] অর্থাৎ, তারা তো এটাই চায় যে, তুমি তাদের উপাস্যগুলোর ব্যাপারে একটু নম্র ভাব প্রকাশ কর, তাহলে তারাও তোমার ব্যাপারে নম্র ভাব অবলম্বন করবে। কিন্তু বাতিলের ব্যাপারে শিথিলতার ফল এই হবে যে, বাতিল পন্থীরা তাদের বাতিলের পূজা ছাড়তে ঢিলেমি করবে। কাজেই সত্যের ব্যাপারে শিথিলতা (দ্বীন) প্রচারের কৌশল এবং নবুঅতের দায়িত্ব পালনের কাজের জন্য বড়ই ক্ষতিকর।