🕋 تفسير سورة الإنفطار
(Al-Infitar) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ
📘 আকাশ যখন বিদীর্ণ হবে। [১]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহর আদেশ এবং তাঁর ভয়ে (আসমান) ফেটে যাবে এবং ফিরিশতাগণ নিচে অবতরণ করবেন।
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ
📘 অবশ্যই তোমাদের উপর (নিযুক্ত আছে) সংরক্ষকগণ;
كِرَامًا كَاتِبِينَ
📘 সম্মানিত (আমল) লেখকবর্গ (ফিরিশতা);
يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
📘 তারা জানে, যা তোমরা করে থাক। [১]
[১] অর্থাৎ, তোমরা তো প্রতিদান ও শাস্তিকে অস্বীকার কর। কিন্তু তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, তোমাদের প্রতিটি কথা ও কর্মকে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। আল্লাহর তরফ হতে তোমাদের জন্য ফিরিশতা প্রহরী হিসাবে নিযুক্ত আছে; যারা তোমাদের প্রতিটি কথাকে জানে, যা তোমরা করছ। এটা হল মানুষের জন্য সতর্কবার্তা যে, প্রত্যেক কর্ম করা ও প্রত্যেক কথা বলার পূর্বে চিন্তা-ভাবনা করে দেখ, এটা ভুল নয় তো। আর এটি হল সেই কথা, যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে, (عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْد، مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلاَّ لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْد) অর্থাৎ, এক ফিরিশতা (মানুষের) ডাইনে ও অন্য এক ফিরিশতা (তার) বামে বসে আছে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, (তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য) তার কাছে তৎপর প্রহরী প্রস্তুত রয়েছে।
(সূরা ক্বাফ ৫০:১৭-১৮ নং)
অর্থাৎ, লিখার জন্য বলা হয়, একজন ফিরিশতা নেকী ও অন্য একজন ফিরিশতা বদী লিখে থাকেন। আর হাদীস ও আসার দ্বারা বোঝা যায় যে, দিনে তার জন্য দুই ফিরিশতা এবং রাত্রে দুই ফিরিশতা পৃথক পৃথক নির্দিষ্ট থাকেন। পরবর্তীতে নেকী এবং বদী উভয়ের উল্লেখ করা হচ্ছে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ
📘 পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে;
وَإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ
📘 এবং পাপাচারীরা থাকবে (জাহীম) জাহান্নামে; [১]
[১] যেমন, অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"
(সূরা শূরা ৪২:৭ নং আয়াত)
يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ الدِّينِ
📘 তারা বিচার দিবসে সেখানে প্রবেশ করবে।[১]
[১] অর্থাৎ, যে প্রতিদান ও শাস্তির দিনকে তারা অবিশ্বাস করত, সেই দিনেই নিজ নিজ আমলের প্রতিদান হিসাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَائِبِينَ
📘 এবং তারা সেখান হতে অন্তর্হিত (বের) হতে পারবে না।[১]
[১] অর্থাৎ, কখনো তা থেকে পৃথক হবে না। বরং তারা তাতে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ
📘 কিসে তোমাকে জানাল, বিচার দিবস কি?
ثُمَّ مَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ
📘 আবার বলি, কিসে তোমাকে জানাল বিচার দিবস কি? [১]
[১] একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে, ঐ দিনের বিশালত্ব ও ভয়াবহতাকে স্পষ্ট করার জন্য।
يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئًا ۖ وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِلَّهِ
📘 সেদিন কেউই কারোর জন্য কিছু করবার সামর্থ্য রাখবে না; আর সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব হবে (একমাত্র) আল্লাহর। [১]
[১] অর্থাৎ, দুনিয়াতে তো আল্লাহ তাআলা অস্থায়ীভাবে পরীক্ষা করার জন্য মানুষকে কম-বেশী কিছু পার্থক্যের সাথে অধিকার বা এখতিয়ার দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কিয়ামতের দিন সমস্ত এখতিয়ার পূর্ণরূপে কেবল মাত্র আল্লাহরই হাতে থাকবে। যেমন তিনি বলেন "আজ রাজত্ব কার? একক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর।"
(সূরা মু'মিন ৪০:১৬ আয়াত)
বলা বাহুল্য, মহানবী (সাঃ) নিজ ফুফুজান সাফিয়া (রাঃ) ও স্বীয় কন্যা ফাতেমাকে বলেছিলেন, "আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন প্রকার উপকার করতে পারব না।"
(সহীহ মুসলিম ঈমান অধ্যায়)
আর বনী হাশেম ও বনী আব্দুল মুত্তালিবকেও সতর্ক করে বলেছিলেন, "তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন প্রকার উপকার করতে পারব না।"
(মুসলিম ঐ, বুখারী সূরা শুআরার ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ)
وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
📘 যখন নক্ষত্ররাজি বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে,
وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
📘 যখন সমুদ্রগুলি উদ্বেলিত হবে, [১]
[১] আর সমস্ত সমুদ্রের পানি একটি সমুদ্রে জমা হয়ে যাবে। (অথবা সমস্ত সমুদ্র একটি সমুদ্রে পরিণত হবে। লোনা-মিঠা এক হয়ে যাবে।) তারপর আল্লাহ তাআলা পশ্চিমী হাওয়া প্রেরণ করবেন, যা তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেবে, যার ফলে আকাশ-ছোঁয়া আগুনের শিখা উঠতে থাকবে।
وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ
📘 এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে; [১]
[১] অর্থাৎ, কবর থেকে মৃতরা জীবন্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে। بُعثِرَت এর অর্থ হল, উৎপাটিত হবে অথবা তার মাটিকে উলট-পালট করে দেওয়া হবে।
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ
📘 তখন প্রত্যেকেই জানতে পারবে সে পূর্বে যা প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে কি ছেড়ে এসেছে।[১]
[১] অর্থাৎ, যখন এই উল্লিখিত বিষয়গুলি সংঘটিত হবে, তখন মানুষের কৃত আমল প্রকাশ পেয়ে যাবে। যা কিছু সে ভাল-মন্দ আমল করেছে, তা সামনে উপস্থিত পাবে। পশ্চাতে ছাড়া আমল বলতে উদ্দেশ্য হল, নিজের চাল-চলন এবং আমলের ভাল অথবা মন্দ নমুনা (আদর্শ) যা মানুষ দুনিয়ায় ছেড়ে যায় এবং লোকেরা সেই আদর্শের উপর আমল করে। এবার যদি তার আদর্শ ভাল হয় এবং তার মৃত্যুর পরেও লোকেরা তার আদর্শ অনুসারে আমল করে, তাহলে সেই সওয়াবও তার কাছে পৌঁছতে থাকে। আর যদি সে মন্দ আদর্শ ছেড়ে যায় এবং সেই আদর্শ অনুযায়ী লোকেরা আমল করে, তাহলে সেই পাপের ভাগী সেও হয়।
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
📘 হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম প্রতিপালক হতে প্রতারিত করল?[১]
[১] অর্থাৎ, কোন্ বস্তু তোমাকে ধোঁকা ও প্রতারণায় ফেলে রেখেছে? যার কারণে তুমি সেই প্রভুকে অস্বীকার করেছ; যিনি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাকে অস্তিত্ব প্রদান করেছেন, তোমাকে জ্ঞান ও সমঝ-বোঝ দান করেছেন, জীবন-যাপন করার জন্য নানান উপকরণ দিয়েছেন।
الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ
📘 যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, [১] অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন [২] এবং তারপর সুসমঞ্জস করেছেন। [৩]
[১] অর্থাৎ, নিকৃষ্ট বীর্যবিন্দু থেকে, অথচ ইতিপূর্বে তোমার কোন অস্তিত্বই ছিল না।
[২] অর্থাৎ, তোমাকে একটি পূর্ণাঙ্গ মানবরূপে সৃষ্টি করেছেন। তুমি শ্রবণ করতে, দর্শন করতে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পার।
[৩] তোমাকে মাঝারি গড়নের, লম্বালম্বি সোজা, সুশ্রী ও সুদর্শনময় বানিয়েছেন। অথবা তোমার দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি হাত, দুটি পা (এবং অন্য সকল অঙ্গকে) সুসমঞ্জস যথোপযুক্ত আকৃতি দান করেছেন। যদি তোমার এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সামঞ্জস্যময় না হত, তাহলে তোমার অস্তিত্বে সুশ্রীময়তা প্রকাশ না পেয়ে কুশ্রীময়তা প্রকাশ পেত। এইরূপ সৃষ্টিকেই অন্য স্থানে 'আহসানে তাক্ব
বী
ম' (সুন্দরতম গঠন) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। (لَقَدْ خَلَقْنَا الإنْسَانَ فِيْ أَحْسَنِ تَقْوِيْم)
فِي أَيِّ صُورَةٍ مَا شَاءَ رَكَّبَكَ
📘 যে আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে গঠন করেছেন। [১]
[১] এর একটা অর্থ এই যে, আল্লাহ ভ্রূণকে যার মত ইচ্ছা তার রূপ ও আকারে সৃষ্টি করেন; তার চেহারা পিতা, মাতা, মামা অথবা চাচাদের মত করেন। দ্বিতীয় অর্থ হল যে, তিনি যার আকার ও আকৃতিতে চান, তার ছাঁচে ঢেলে দেন। এমনকি নিকৃষ্টরূপ জন্তুর আকৃতিতেও পয়দা করতে পারেন। কিন্তু তাঁর অনুগ্রহ, দয়া ও মেহেরবানী এই যে, তিনি তা করেন না; বরং তিনি সুন্দর অবয়ব দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেন।
كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِالدِّينِ
📘 না কখনই না, বরং তোমরা শেষ বিচারকে মিথ্যা মনে করে থাক;[১]
[১] এখানে كلا শব্দটি حقًا শব্দের অর্থেও হতে পারে। (অর্থাৎ, সত্যপক্ষে তোমরা শেষ বিচারকে মিথ্যা মনে করে থাক।) এখানে কাফেরদের সেই আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির খন্ডন করা হয়েছে, যা দয়াবান আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের ব্যাপারে ধোঁকায় মগ্ন থাকার ফলে সংঘটিত হয়েছে। অর্থাৎ, এই প্রবৃত্তির প্রতারণায় পড়ার কোন কারণ নেই। বরং আসল কথা হল যে, তোমাদের হৃদয়ে এ কথার প্রত্যয় নেই যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং সেখানে প্রতিদান ও শাস্তি দেওয়া হবে।