🕋 تفسير سورة الانشقاق
(Al-Inshiqaq) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ
📘 যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে। [১]
[১] অর্থাৎ, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে।
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ
📘 পক্ষান্তরে যাকে তার আমলনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেওয়া হবে,
فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا
📘 অচিরেই সে মৃত্যুকে আহবান করবে। [১]
[১] ثبور অর্থ হল ধ্বংস ও ক্ষতি। অর্থাৎ, সে চিল্লাবে ও চিৎকার করবে, 'আমি মরে গেলাম, ধ্বংস হয়ে গেলাম' বলে আর্তনাদ করতে থাকবে।
وَيَصْلَىٰ سَعِيرًا
📘 এবং সে জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।
إِنَّهُ كَانَ فِي أَهْلِهِ مَسْرُورًا
📘 কেননা, সে তার স্বজনদের মধ্যে আনন্দে মত্ত ছিল।[১]
[১] অর্থাৎ, দুনিয়ায় নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা মিটাতে মগ্ন এবং আপন পরিবারের মাঝে বড় আনন্দিত ছিল।
إِنَّهُ ظَنَّ أَنْ لَنْ يَحُورَ
📘 যেহেতু সে ভাবতো যে, সে কখনই প্রত্যাবর্তিত হবে না।[১]
[১] এটা ছিল তার আনন্দিত হওয়ার কারণ। অর্থাৎ, আখেরাতের প্রতি তার বিশ্বাসই ছিল না। حور শব্দের অর্থ হল ফিরে যাওয়া। যেমন, নবী (সাঃ) এ দু'আ করতেন, 'আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল হাওরি বা'দাল কাওর।'
(সহীহ মুসলিম হজ্জ্ব অধ্যায়, তিরিমিযী, ইবনে মাজাহ)
মুসলিম শরীফে 'বা'দাল কাওন' শব্দ এসেছে। উদ্দেশ্য হল যে, এ সকল কথা হতে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যাতে আমি ঈমানের পর কুফরী, আনুগত্যের পর অবাধ্যতা অথবা ভালর পর মন্দের দিকে ফিরে না যাই।
بَلَىٰ إِنَّ رَبَّهُ كَانَ بِهِ بَصِيرًا
📘 অবশ্যই (সে প্রত্যাবর্তিত হবে)।[১] নিশ্চয়ই তার প্রতিপালক তার উপর সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন। [২]
[১] একটা অর্থ এটাও হতে পারে যে, এটা কি করে সম্ভব হতে পারে যে, সে ফিরে আসবে না এবং পুনর্বার জীবিত হবে না? অথবা 'অবশ্যই', 'কেন নয়', সে অবশ্যই আল্লাহর নিকট ফিরে আসবে।
[২] অর্থাৎ, তার আমল আল্লাহর নিকট কোন রকমের গুপ্ত ছিল না।
فَلَا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ
📘 আমি শপথ করি অস্তরাগের [১]
[১] شفق (অস্তরাগ) সেই লালবর্ণের আভাকে বলা হয় যা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে প্রকাশ পায় এবং তা এশার ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।
وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
📘 এবং রজনীর আর তাতে যা কিছুর সমাবেশ ঘটে [১] তার শপথ।
[১] অন্ধকার নেমে আসতেই প্রতিটি বস্তু নিজ নিজ বাসা ও বাসস্থানে জমা ও সমাবিষ্ট হয়। অর্থাৎ, রাতের অন্ধকার যে সকল বস্তুকে নিজের আঁচল দ্বারা ঢেকে নেয়।
وَالْقَمَرِ إِذَا اتَّسَقَ
📘 এবং শপথ চন্দ্রের যখন তা পরিপূর্ণ হয়। [১]
[১] إذا اتسق এর অর্থ হল, যখন সে পূর্ণিমাতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। যেমন ১৩ তারীখের রাত্রি থেকে নিয়ে ১৬ তারীখের রাত্রি পর্যন্ত তার উক্ত অবস্থা বিদ্যমান থাকে।
لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ
📘 নিশ্চয়ই তোমরা এক পর্যায় হতে অন্য পর্যায়ে আরোহণ করবে। [১]
[১] طبق শব্দের মূল অর্থ হল কঠিনতা। এখানে সেই কঠিনতাকে বোঝানো হয়েছে যা কিয়ামতের দিন দেখা দেবে। সেদিন এক থেকে আর এক গুরুতর ভীষণ অবস্থা সৃষ্টি হবে।
(ফাতহুল বারী, সূরা ইনশিক্বাক তাফসীর পরিচ্ছেদ)
আর এটা হল কসমের জওয়াব।
وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
📘 এবং তা স্বীয় প্রতিপালকের আদেশে কর্ণপাত করবে।[১] আর এটিই তার কর্তব্য। [২]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে ফেটে যাওয়ার যে আদেশ করবেন, তা সে শুনবে ও পালন করবে।
[২] অর্থাৎ, তার জন্য এটা কর্তব্য যে, সে শ্রবণ করে এবং আনুগত্য করে। এই জন্য যে, তিনি হলেন সবারই উপর প্রভাবশালী এবং সবাই তাঁর আয়ত্তে। কে আছে, যে তাঁর হুকুম অমান্য করতে পারে?
فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
📘 সুতরাং তাদের কি হল যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না?
وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ ۩
📘 এবং তাদের নিকট কুরআন পঠিত হলে তারা সিজদাহ করে না? [১] সাজদাহ
[১] হাদীসসমূহ থেকে এখানে নবী (সাঃ) এবং সাহাবীগণের সিজদা করার কথা প্রমাণিত আছে। (অতএব এ আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُكَذِّبُونَ
📘 বরং কাফেররা মিথ্যা মনে করে। [১]
[১] অর্থাৎ, ঈমান আনার (বিশ্বাস করার) পরিবর্তে মিথ্যা মনে করে।
وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوعُونَ
📘 (অথচ) তারা (মনে মনে) যা পোষণ করে থাকে, আল্লাহ তা সবিশেষ পরিজ্ঞাত। [১]
[১] অর্থাৎ, তাদের মিথ্যা জানা অথবা যে সব কর্ম তারা গোপনে করে আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।
فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
📘 সুতরাং তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
📘 কিন্তু যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।
وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ
📘 এবং পৃথিবীকে যখন সম্প্রসারিত করা হবে। [১]
[১] অর্থাৎ, পৃথিবীকে অধিকভাবে লম্বা-চওড়া করে দেওয়া হবে। অথবা উদ্দেশ্য এটা যে, তার উপরে যে পাহাড় ইত্যাদি রয়েছে সমস্তকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে তাকে পরিষ্কার-পরিছন্ন এবং সমতল করে বিছিয়ে দেওয়া হবে। তাতে কোন রকমের উঁচু-নিচু থাকবে না।
وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
📘 এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে এবং খালি হয়ে যাবে। [১]
[১] অর্থাৎ, তাতে যেসব মুর্দা দাফন থাকবে, সমস্ত জীবিত হয়ে বের হয়ে আসবে। আর যেসব গুপ্ত ধন (খনিজ পদার্থ) তার গর্ভে মজুদ রয়েছে, তা বের করে ফেলবে। আর সে একেবারে খালি হয়ে যাবে।
وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
📘 এবং তার প্রতিপালকের আদেশে কর্ণপাত করবে।[১] আর এটিই তার কর্তব্য।
[১] অর্থাৎ, তাকে বের করে এবং খালি করে দেওয়ার যে আদেশ করা হবে, তা সে শ্রবণ ও পালন করবে।
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ
📘 হে মানব! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত যে কঠোর সাধনা করে থাকো তা তুমি দেখতে পাবে।[১]
[১] এখানে 'মানব' শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। যাতে মু'মিন এবং কাফের উভয় শামিল। كدح কঠোর সাধনা বা পরিশ্রম করাকে বলা হয়; চাহে সে সাধনা বা পরিশ্রম ভালো কাজের জন্য হোক অথবা মন্দ কাজের জন্য। উদ্দেশ্য হল যে, যখন উল্লিখিত বস্তুসমূহ প্রকাশ পাবে; অর্থাৎ কিয়ামত আসবে তখন হে মানুষ! তুমি ভাল-মন্দ যা করেছ তা নিজ সম্মুখে দেখতে পাবে এবং সেই অনুযায়ী তোমাকে ভাল-মন্দ বদলা দেওয়া হবে। সামনে এর বিস্তারিত বর্ণনা আসছে।
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
📘 সুতরাং যাকে তার ডান হাতে নিজ আমলনামা (কর্মলিপি) দেওয়া হবে,
فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
📘 তার হিসাব নেওয়া হবে সহজভাবে। [১]
[১] সহজ হিসাব এই যে, মুমিনের আমল-নামা পেশ করা হবে। তার ভুল-ত্রুটিও সামনে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা নিজের রহমত এবং অনুগ্রহে তাদেরকে মার্জনা করে দেবেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, রসূল (সাঃ) বলেছেন, "যার হিসাব নেওয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন, আল্লাহ তাআলা কি এ কথা বলেননি যে, যার ডান হাতে আমল-নামা দেওয়া হবে তার হিসাব সহজ হবে?" (মা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য ছিল যে, এই আয়াত অনুপাতে হিসাব তো মু'মিনদেরও হবে কিন্তু সে ধ্বংসগ্রস্ত হবে না।) তিনি (সাঃ) স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বললেন যে, "পেশ করা হবে মাত্র।" (অর্থাৎ, মুমিনের সাথে হিসাবের ব্যাপার হবে না বরং নামমাত্র পেশ করা হবে।) মু'মিনদেরকে আল্লাহর সম্মুখে পেশ করা হবে। কিন্তু যাকে জেরা করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
(সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা ইনশিক্বাক পরিচ্ছেদ)
وَيَنْقَلِبُ إِلَىٰ أَهْلِهِ مَسْرُورًا
📘 এবং সে তার স্বজনদের নিকট প্রফুল্লচিত্তে ফিরে যাবে।[১]
[১] স্বজন বলতে তার পরিবারের মধ্যে থেকে যারা জান্নাতী হবে তারা অথবা এ হতে উদ্দেশ্য হল, সেই সমস্ত বেহেশ্তী হুর ও গিলমান, যা জান্নাতীগণ লাভ করবে।