🕋 تفسير سورة الأعلى
(Al-Ala) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
📘 তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। [১]
[১] ঐ সব জিনিস থেকে পবিত্র যা তাঁর জন্য শোভনীয় বা উপযুক্ত নয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সাঃ) এই সূরাটির প্রথম আয়াতের জওয়াবে 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলতেন।
(মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ নামায অধ্যায়, নামাযে দু
'
আর পরিচ্ছেদ শায়খ আলবানী এটাকে সহীহ বলেছেন।)
سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَىٰ
📘 যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে। [১]
[১] অর্থাৎ, তোমার উপদেশ নিশ্চয় ঐ সমস্ত লোকেরা গ্রহণ করবে, যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে। আর তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আল্লাহ-ভীতি ও নিজেদের সংস্কার-প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পাবে।
وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقَى
📘 আর নিতান্ত হতভাগ্য তা উপেক্ষা করবে। [১]
[১] অর্থাৎ, সেই উপদেশ দ্বারা তারা উপকৃত হবে না। কেননা, কুফরীতে অবিচলতা ও আল্লাহর অবাধ্যাচরণ তাদের মাঝে অব্যাহত থাকে।
الَّذِي يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرَىٰ
📘 সে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ
📘 অতঃপর সে সেখানে মরবেও না, [১] বাঁচবেও না।
[১] এর বিপরীতে এক শ্রেণীর (তওহীদবাদী) জাহান্নামী এমনও হবে, যারা শুধু নিজেদের কৃতপাপের শাস্তি ভোগার জন্য কিছুকাল সাময়িকভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এক প্রকার মৃত্যু দেবেন। এমনকি তারা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে। তারপর মহান আল্লাহ নবীগণের সুপারিশে তাদেরকে একদল একদল করে বের করা হবে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের (হায়াত) নহরে নিক্ষেপ করা হবে। জান্নাতীগণও তাদের উপর পানি ঢালবেন। তখন তারা এতে এমন সজীব হয়ে উঠবে যেমন শস্যদানা স্রোতবাহিত আবর্জনার উপর অঙ্কুরিত হয়ে উদগত হয়।
(সহীহ মুসলিম ঈমান অধ্যায়, শাফাআত প্রমাণ এবং জাহান্নাম থেকে একত্ববাদীদের বের হওয়া পরিচ্ছেদ।
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّىٰ
📘 নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।[১]
[১] অর্থাৎ, যে নিজের আত্মাকে নোংরা আচরণ থেকে এবং অন্তরকে শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে।
وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ
📘 এবং নিজ প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামায আদায় করে।
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
📘 বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক।
وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
📘 অথচ পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। [১]
[১] কেননা, পৃথিবী এবং তার সমস্ত বস্তু ধ্বংসশীল। পক্ষান্তরে পরকালের জীবনই হল চিরস্থায়ী জীবন। বলা বাহুল্য, জ্ঞানী ব্যক্তি কোন দিন চিরস্থায়ী বস্তুর উপর ধ্বংসশীল ক্ষণস্থায়ী বস্তুকে অগ্রাধিকার দেয় না।
إِنَّ هَٰذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ
📘 নিশ্চয়ই এটা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে (বিদ্যমান) আছে।
صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ
📘 ইব্রাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।
الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ
📘 যিনি সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সুসমঞ্জস করেছেন। [১]
[১] এ ব্যাপারে দেখুন সূরা ইনফিত্বার ৮২:৭ নং আয়াতের টীকা।
وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ
📘 এবং যিনি তকদীর (নিয়তি) নির্ধারণ করেছেন। তারপর পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। [১]
[১] অর্থাৎ, নেকী এবং বদীর। অনুরূপ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুর পথ তিনি দেখিয়েছেন। এই পথনির্দেশ পশু-পক্ষীকেও করা হয়েছে। قدَّر শব্দের অর্থ হল প্রত্যেক বস্তুর শ্রেণী ও তার প্রকারভেদ, গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে মানুষকেও তার প্রতি তিনি পথ প্রদর্শন করেছেন, যাতে মানুষ উপকৃত হতে পারে।
وَالَّذِي أَخْرَجَ الْمَرْعَىٰ
📘 এবং যিনি (চারণ-ভূমির) তৃণাদি উদ্গত করেছেন। [১]
[১] যাতে চতুষ্পদ জন্তুরা চরে বেড়ায়।
فَجَعَلَهُ غُثَاءً أَحْوَىٰ
📘 পরে ওকে শুষ্ক খড়-কুটায় পরিণত করেছেন। [১]
[১] ঘাস শুকিয়ে গেলে তাকে غُثاء বলা হয়। أحوَى শব্দের অর্থ হল কালো করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, তাজা-সবুজ ঘাসকে শুকিয়ে কালো করে দিয়েছেন।
سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَىٰ
📘 অচিরেই আমি তোমাকে পাঠ করাব, ফলে তুমি ভুলবে না।[১]
[১] জিবরীল (আঃ) যখন অহী (আল্লাহর প্রত্যাদেশ) নিয়ে আসতেন, তখন তা রসূল (সাঃ) তাড়াতাড়ি পড়তে শুরু করতেন; যাতে করে ভুলে না যান। আল্লাহ তাআলা বললেন, এত তাড়াতাড়ি করার প্রয়োজন নেই। অবতীর্ণকৃত অহী তোমাকে পাঠ করাবার দায়িত্ব আমার। অর্থাৎ, তোমার মুখে তা সঞ্চালিত করব; ফলে তুমি তা ভুলবে না। তবে আল্লাহ যা চাইবেন, তা ভুলে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এইরূপ চাননি। এই জন্য তাঁর সমস্ত মুখস্থ ছিল। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল এই যে, যা আল্লাহ মনসূখ (রহিত) করতে চাইবেন, তা তোমাকে ভুলিয়ে দিবেন।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ إِنَّهُ يَعْلَمُ الْجَهْرَ وَمَا يَخْفَىٰ
📘 আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তা ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি ব্যক্ত ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন। [১]
[১] এ কথাটি ব্যাপক। 'ব্যক্ত' কুরআনের ঐ অংশকেও বলা যায়; যা নবী (সাঃ) মুখস্থ করে নেন। আর যা তাঁর অন্তর থেকে মুছে দেওয়া হয়, তা হল 'গুপ্ত' বিষয়। অনুরূপভাবে যা সশব্দে পড়া হয়, তা 'ব্যক্ত' এবং যা নিঃশব্দে পড়া হয়, তা 'গুপ্ত' এবং যে কাজ প্রকাশ্যে করা হয় তা 'ব্যক্ত' এবং যে কাজ গোপনে করা হয়, তা 'গুপ্ত' এ সকল বিষয়ের খবর আল্লাহ রাখেন।
وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرَىٰ
📘 আমি তোমার জন্য (কল্যাণের পথকে) সহজ করে দেব। [১]
[১] এ কথাটিও ব্যাপক। যেমন, আমি তোমার জন্য অহীকে সহজ করে দেব, যাতে তা মুখস্থ করা এবং তার উপর আমল করা সহজ হয়ে যায়। তোমাকে সেই পথ প্রদর্শন করব, যা হবে সরল। যে আমল জান্নাতে নিয়ে যাবে, আমি তোমার জন্য সেই আমল সহজ করে দেব। আমি তোমার জন্য ঐ সমস্ত কর্ম ও কথাকে সহজ করে দেব, যাতে মঙ্গল নিহিত আছে এবং আমি তোমার জন্য এমন শরীয়ত নির্ধারণ করব, যা সহজ, সরল এবং মধ্যপন্থী হবে; যার মধ্যে কোন প্রকার বক্রতা, কঠিনতা ও সংকীর্ণতা নেই।
فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَىٰ
📘 অতএব উপদেশ দাও; যদি উপদেশ ফলপ্রসূ হয়। [১]
[১] অর্থাৎ, সেখানে ওয়ায-নসীহত কর, যেখানে অনুমান হয় যে, তা উপকারী হবে। এই আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ওয়ায-নসীহত এবং শিক্ষাদানের একটি নীতি ও আদর্শ বর্ণনা করেছেন।
(ইবনে কাসীর)
ইমাম শওকানী (রঃ)এর নিকট এর অর্থ হল এই যে, 'তুমি উপদেশ দাও; যদি উপদেশ ফলপ্রসূ হয় অথবা না হয়।' কেননা, সতর্কীকরণ ও তবলীগ উভয় অবস্থাতেই তাঁর জন্য জরুরী ছিল। অর্থাৎ (শওকানীর মতে), أو لم تنفع বাক্য এখানে উহ্য আছে।