🕋 تفسير سورة العلق
(Al-Alaq) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
📘 তুমি পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। [১]
[১] এটাই সর্বপ্রথম অহী যা নবী (সাঃ)-এর উপর ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন তিনি হিরা গুহায় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। ফিরিশতা (জিবরীল) তাঁর নিকট এসে বললেন, 'পড়।' তিনি বললেন, 'আমি তো পড়তে জানি না।' ফিরিশতা তাঁকে জড়িয়ে ধরে শক্তভাবে চেপে ধরলেন এবং বললেন, 'পড়।' তিনি পুনর্বার একই উত্তর দিলেন। এইভাবে ফিরিশতা তিনবার করলেন।
(এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুনঃ সহীহ বুখারী অহী অধ্যায়, মুসলিম ঈমান অধ্যায় ও অহীর প্রারম্ভিক সূচনার পরিচ্ছেদ।)
اِقْرَأْ অর্থাৎ, যা আপনার প্রতি অহী করা হয়েছে তা পড়। خَلَق শব্দের অর্থ হল যিনি সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন।
عَبْدًا إِذَا صَلَّىٰ
📘 এক বান্দা (রসূলুল্লাহ)কে যখন সে নামায আদায় করে? [১]
[১] ব্যাখ্যাতাগণ বলেছেন, বারণকারী বলতে আবু জাহলকে বোঝানো হয়েছে, যে ইসলামের চরম শত্রু ছিল। আর 'বান্দা' বলতে নবী (সাঃ)-কে বোঝানো হয়েছে।
أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ عَلَى الْهُدَىٰ
📘 তুমি কি মনে কর, যদি সে সৎপথে থাকে। [১]
[১] অর্থাৎ, যাকে নামায পড়া হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত।
أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوَىٰ
📘 অথবা তাকওয়া (আল্লাহভীতি)র নির্দেশ দেয়। [১]
[১] অর্থাৎ, ইখলাস, তাওহীদ এবং নেক আমলের শিক্ষা দেয়; যাতে মানুষ জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। তাহলে এই (নামায পড়া এবং তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নির্দেশ দেওয়ার) কাজ কি এমন আচরণ যার বিরোধিতা করা হবে এবং তার জন্য হুমকি ও ধমকি দেওয়া হবে?
أَرَأَيْتَ إِنْ كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ
📘 তুমি লক্ষ্য করেছ কি, যদি সে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়? [১]
[১] অর্থাৎ, আবু জাহল আল্লাহর পয়গম্বরকে মিথ্যা ভাবে এবং ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এখানে أرَأيتَ (তুমি লক্ষ্য করেছ কি)-এর মানে أَخبِرنِي (আমাকে বল।)
أَلَمْ يَعْلَمْ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَىٰ
📘 তবে কি সে অবগত নয় যে, আল্লাহ (তার সবকিছু) দেখছেন? [১]
[১] এর মতলব হল যে, এই ব্যক্তি (আবু জাহল) যে এইরূপ আচরণ করছে সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখছেন? এবং তিনি তাকে এর প্রতিফল ভোগাবেন। অর্থাৎ, أَلَم تَعلَم হল পূর্বে উল্লিখিত إن كَانَ علَى الهُدَى، إن كَذَّبَ وتَوَلَّى শর্ত বাক্যের পরিপূরক।
كَلَّا لَئِنْ لَمْ يَنْتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ
📘 সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয় তাহলে আমি (তাকে) অবশ্যই টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাব, মাথার সামনের চুলের ঝুঁটি ধরে। [১]
[১] অর্থাৎ, নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ ও দুশমনী করা হতে এবং তাঁকে নামায পড়া থেকে বাধা দেওয়া হতে বিরত না হয়, তাহলে আমি তার কপালে উপরিভাগের কেশগুচ্ছ ধরে টান দেব। হাদীসে বর্ণিত যে, একদা আবু জাহল বলেছিল যে, 'যদি মুহাম্মাদ কা'বার নিকট নামায পড়া হতে বিরত না হয়, তাহলে আমি তার গর্দানে পা রেখে দেব।' অর্থাৎ, তাকে পদদলিত করব এবং দস্তরমত লাঞ্ছিত করব। নবী (সাঃ) এর কানে এ কথা পৌঁছলে তিনি বললেন, "যদি সে তা করত, তাহলে ফিরিশতা তাকে ধরে ফেলতেন।"
(সহীহ বুখারী তাফসীর সূরা আলাক ৯৬ পরিচ্ছেদ।)
نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ
📘 যা মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ চুলের ঝুঁটি। [১]
[১] চুলের ঝুঁটির উক্ত গুণ রূপক হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। (আসলে এ গুণ ঐ চুলের ঝুঁটি-ওয়ালার। যে) মিথ্যাবাদী নিজের কথায় ও পাপাচারী নিজের কর্মে।
فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ
📘 অতএব সে তার পারিষদবর্গকে আহবান করুক।
سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ
📘 আমিও অচিরে আহবান করব (জাহান্নামের) প্রহরীবর্গকে।[১]
[১] হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী (সাঃ) কা'বাগৃহের পাশে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় আবু জাহল তাঁর পাশ দিয়ে পার হয়ে বলল, 'ওহে মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে নামায পড়া হতে নিষেধ করিনি?' অনুরূপ সে আরো তাঁর সাথে কঠিনভাবে ধমক দিয়ে কথা বলল। নবী (সাঃ) তার কথার কড়া জওয়াব দিলেন। তখন সে বলল, 'হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম! এই উপত্যকায় সব থেকে আমার পারিষদ ও পৃষ্ঠপোষক বেশী আছে।' তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি আবু জাহল নিজের পারিষদবর্গকে আহবান করত, তাহলে তাদেরকে তখনই শাস্তিদাতা ফিরিশতাগণ পাকড়াও করতেন।
(তিরমিযী, তাফসীর সূরা ইকরা পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমাদ ১/৩২৯ ও তাফসীর ইবনে জারীর)
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এইভাবে রয়েছে যে, সে অগ্রসর হয়ে তাঁর গর্দানে পা রাখার মনস্থ করেছিল। ইতি অবসরে সে উল্টা পা ফিরে গেল এবং নিজ হাত দ্বারা নিজেকে বাঁচাতে লাগল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি ব্যাপার? সে বলল, 'আমার ও মুহাম্মাদের মাঝে আগুনের পরিখা, ভয়ংকর দৃশ্য এবং বহু পাখা দেখলাম!' রসূল (সাঃ) বললেন, "যদি সে আমার নিকটবর্তী হত, তাহলে ফিরিশতাগণ তার এক একটা অঙ্গকে নুচে নিত।"
(কিয়ামতের বিবরণ অধ্যায়)
الزَّبَانِية শব্দের অর্থ হল দারোগা এবং পুলিশ (বা প্রহরী)। অর্থাৎ, এমন শক্তিশালী সৈন্য যার কেউ মুকাবিলা করতে পারে না।
كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ ۩
📘 সাবধান! তুমি তার অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা কর ও আমার নিকটবর্তী হও। [১]
[১] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
📘 সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। [১]
[১] এই আয়াতে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ করে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ হয়েছে; যাতে মানুষের মর্যাদা স্পষ্ট।
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ
📘 তুমি পড়। আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। [১]
[১] এ বাক্যটি তাকীদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ দ্বারা বড় অলঙ্কারপূর্ণ ভঙ্গিমায় নবী (সাঃ) এর ওযরের জওয়াব দেওয়া হয়েছে, যা তিনি 'আমি পড়তে জানি না' বলে পেশ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, আল্লাহ মহামহিমান্বিত; তুমি পড়। অর্থাৎ, মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা তাঁর বিশেষ গুণ।
الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ
📘 যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। [১]
[১] قَلم অর্থ হল কাটা, চাঁছা বা ছিলা। পূর্ব যুগে লোকেরা কেটে বা চেঁছে কলম তৈরী করত। এই জন্য লেখার যন্ত্রকে কলম বলা হয়। কিছু ইলম (জ্ঞান) তো মানুষের স্মৃতিতে থাকে, কিছু আবার জিহবা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আর কিছু ইলম মানুষ কলম দ্বারা কাগজে লিখে হিফাযত করে থাকে। মস্তিষ্ক ও স্মৃতিতে যা থাকে তা মানুষের সাথে চলে যায়। জিহ্বা দ্বারা যা প্রকাশ করা হয়, তাও সংরক্ষিত
عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
📘 তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَىٰ
📘 বস্তুত মানুষ তো সীমালংঘন করেই থাকে।
أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَىٰ
📘 কারণ সে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে।
إِنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الرُّجْعَىٰ
📘 সুনিশ্চিতভাবে তোমার প্রতিপালকের দিকেই প্রত্যাবর্তন।
أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَىٰ
📘 তুমি কি তাকে দেখেছ, যে বারণ করে--