🕋 تفسير سورة الحجر
(Al-Hijr) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُبِينٍ
📘 Please check ayah 15:3 for complete tafsir.
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ
📘 Please check ayah 15:13 for complete tafsir.
وَمَا يَأْتِيهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
📘 Please check ayah 15:13 for complete tafsir.
كَذَٰلِكَ نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ
📘 Please check ayah 15:13 for complete tafsir.
لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ
📘 ১০-১৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সান্তনা দিয়ে বলছেনঃ “হে নবী (সঃ)! মানুষ তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই কারণ, তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকেও অনুরূপভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাহয়েছিল। প্রত্যেক রাসূলকেই তার উম্মতের লোক মিথ্যাবাদী বলেছিল এবং সে তাদের কাছে উপহাসের পাত্র হয়েছিল।মহান আল্লাহ বলেনঃ হঠকারিতা ও অহংকারের কারণে আমি অপরাধ ও পাপীদের অন্তরে রাসূলদের অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার খেয়াল জাগিয়ে তুলি। তাতেই তখন তারা মজা ও আনন্দ উপভোগ করে। এখানে মুজরিম বা অপরাধীদের দ্বারা মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে। তারা সত্যকে বিশ্বাস করতেই চায় না। আল্লাহ পাক বলেন যে, পূর্ববর্তীদের আচরণ তাদের মধ্যে এসে গেছে। সুতরাং তাদের পরিণাম তাদের পূর্ববর্তীদের মতই হবে। যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের নবীরা মুক্তি পেয়েছিলেন ও মু'মিনরা নিরাপত্তা লাভ করেছিল, তেমনই অবস্থা এদেরও হবে এটা তাদের স্মরণ রাখা উচিত। নবীর (সঃ) অনুসরণেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, আর তাঁর বিরুদ্ধাচরণেই রয়েছে উভয় জগতে লাঞ্ছণা ও অপমান।
وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ
📘 Please check ayah 15:15 for complete tafsir.
لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ
📘 ১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা তাদের অবাধ্যতা, হঠকারিতা এবং আত্মগর্বের খবর দিতে গিয়ে বলেন যে, যদি তাদের জন্যে আকাশের দরজা খুলে দেয়াও হয় এবং সেখানে তাদেরকে চড়িয়ে দেয়াও হয় তবুও তারা সত্যকে সত্য বলেস্বীকার করবে না। বরং তখনও তারা চীৎকার করে বলবে যে, তাদের ন্যরবন্দী করা হয়েছে, চক্ষুগুলি সম্মোহিত করা হয়েছে, যাদু করা হয়েছে, প্রতারিত করা হয়েছে এবং বোকা বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
📘 Please check ayah 15:20 for complete tafsir.
وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ
📘 Please check ayah 15:20 for complete tafsir.
إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُبِينٌ
📘 Please check ayah 15:20 for complete tafsir.
وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْزُونٍ
📘 Please check ayah 15:20 for complete tafsir.
رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ
📘 Please check ayah 15:3 for complete tafsir.
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ
📘 ১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, এই উঁচু আকাশকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন যা স্থিতিশীল রয়েছে এবং আবর্তনকারী নক্ষত্ররাজি দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত রয়েছে। যে কেউই এটাকে চিন্তা ও গবেষণার দৃষ্টিতে দেখবে সেই মহা শক্তিশালী আল্লাহর বহু বিস্ময়কর কাজ এবং শিক্ষণীয় বহু নিদর্শন দেখতে পাবে। বুরূজ’ দ্বারা এখানে নক্ষত্ররাজিকে বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “কত মহান তিনি যিনি নভোমণ্ডলে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতিময় চন্দ্র।” (২৫:৬৯) আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, এর দ্বারা সূর্য ও চন্দ্রের মযিলকে বুঝানো হয়েছে। আতিয়্যা’ (রঃ) বলেন, বুরূজ হচ্ছে ঐ স্থানসমূহ যেখানে প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে, যেখান থেকে দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানদেরকে প্রহার করা হয়, যাতে তারা ঊর্ধ্ব জগতের কোন কথা শুনতে না পারে। যে সামনে বেড়ে যায় তার দিকে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড বেগে ধাবিত হয়। কখনো তো নিম্নবর্তীর কানে ঐ কথা পৌছিয়ে দেয়ার পূর্বেই তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। কোন কোন সময় এর বিপরীতও হয়ে থাকে। যেমন এই আয়াতের তাফসীরে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তাআলা আকাশে কোন বিষয় সম্পর্কে ফায়সালা করেন তখন ফেরেশতামণ্ডলী অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নিজেদের ডানা ঝুঁকাতে থাকেন, যেন তা পাথরের উপর যিঞ্জীর। অতঃপর যখন তাঁদের অন্তর প্রশান্ত হয়ে যায় তখন তারা (পরম্পর) বলাবলি করেনঃ “তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন?” উত্তরে বলা হয়ঃ “তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন এবং তিনি হচ্ছেন সর্বোচ্চ ও মহান।” ফেরেশতাদের কথাগুলি গুপ্তভাবে শুনবার উদ্দেশ্যে জ্বিনরা উপরে উঠে যায় এবং এইভাবে তারা একের উপর এক থাকে। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত সাফওয়ান (রাঃ) তাঁর হাতের ইশারায় এইভাবে বলেন যে, ডান হাতের অঙ্গুলীগুলি প্রশস্ত করে একটিকে অপরটির উপর রেখে দেন। ঐ শ্রবণকারী জ্বিনটির কাজতো কখনো কখনো ঐ জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড খতম করে দেয় তার নীচের সঙ্গীর কানে সেই কথা পৌছানোর পূর্বেই। তৎক্ষণাৎ সে জুলে-পুড়ে যায়। আবার কোন কোন সময়। এমনও হয় যে, সে তার পরবর্তীকে এবং তার পরবর্তী তার পরবতীকে ক্রমান্বয়ে পৌঁছে থাকে এবং এইভাবে ঐ কথা যমীন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অতঃপর তা গণক ও যাদুকরদের কানে এসে পড়ে। তারপর তারা এর সাথে শতটা মিথ্যা কথা জুড়ে দিয়ে জনগণের মধ্যে প্রচার করে। যখন তাদের কারো দু'একটি কথা যা ঘটনাক্রমে আকাশ থেকে তার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল, সঠিকরূপে প্রকাশিত হয় তখন লোকদের মধ্যে তার বুদ্ধি ও জ্ঞান গরিমার আলোচনা হতে থাকে। তারা বলাবলি করেঃ “দেখো, অমুক লোক অমুক দিন এই কথা বলেছিল, তা সম্পূর্ণ সঠিক ও সত্যরূপে প্রকাশিত হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)এরপর আল্লাহ তাআলা যমীনের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনিই ওকে সৃষ্টি করেছেন, সম্প্রসারিত করেছেন, ওতে পাহাড় পর্বত বানিয়েছেন, বন-জঙ্গল ও মাঠ-ময়দান প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ক্ষেতখামার ও বাগ-বাগিচা তৈরী করেছেন। এবং সমস্ত বস্তুকে সুপরিমিত ভাবে সৃষ্টি করেছেন। এগুলো হচ্ছেহাট-বাজারের সৌন্দর্য এবং মানবমণ্ডলীর জন্যে সুদৃশ্য।মহান আল্লাহ বলেনঃ “যমীনে আমি নানা প্রকারের জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর আমি ঐ সবগুলোও সৃষ্টি করেছি যাদের জীবিকার ব্যবস্থা তোমরা কর না, বরং আমিই করি। অর্থাৎ চতুষ্পদ জন্তু, দাস দাসী ইত্যাদি। সুতরাং আমি বিভিন্ন প্রকারের জিনিস, নানা প্রকারের উপকরণ এবং হরেক রকমের শান্তি ও আরামের ব্যবস্থা তোমাদের জন্যে করেছি। আমি তোমাদেরকে আয় উপার্জনের পন্থা শিখিয়েছি। জন্তুগুলিকে আমি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছি। তোমরা ওগুলির গোশত ভক্ষণ করে থাকো এবং পিঠে সওয়ারও হয়ে থাকো। তোমাদের সুখ শান্তির প্রতি লক্ষ্য রেখে আমি তোমাদের জন্যে দাস দাসীরও ব্যবস্থা করেছি। এদের জীবিকার ভার কিন্তু তোমাদের উপর ন্যস্ত নেই। বরং তাদের রুজী দাতাও আমি। আমি বিশ্বজগতের সবারই আহার্যদাতা। তাহলে একটু চিন্তা করে দেখো তো, লাভ ও উপকার ভোগ করছো তোমরা, আর আহার্য দিচ্ছি আমি। অতএব, তিনি (আল্লাহ) কতই না মহান।
وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
📘 Please check ayah 15:25 for complete tafsir.
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ
📘 Please check ayah 15:25 for complete tafsir.
وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ
📘 Please check ayah 15:25 for complete tafsir.
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِينَ
📘 Please check ayah 15:25 for complete tafsir.
وَإِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ ۚ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
📘 ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, সমস্ত জিনিসের তিনি একাই মালিক। প্রত্যেক কাজই তাঁর কাছে সহজ। সমস্ত কিছুর ভাণ্ডার তাঁর কাছে বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে যখন যতটা ইচ্ছা তিনি অবতীর্ণ করে থাকেন। তাঁর হিকমত ও নিপুণতা তিনিই জানেন। বান্দার কল্যাণ সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। এটা একমাত্র তাঁর মেহেরবানী, নচেৎ এমন কে আছে যে তাকে বাধ্য করতে বা তার উপর জোর খাটাতে পারে? হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টি বরাবর বর্ষিত হতেই আছে। হাঁ, তবে বন্টন আল্লাহ তাআলার হাতে রয়েছে। অতঃপর তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেন। হাকীম ইবনু উয়াইনা (রঃ) হতেও এই উক্তিই বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ “বৃষ্টির সাথে এতো ফেরেস্তা অবতীর্ণ হন যাদের সংখ্যা সমস্ত মানবও দানব অপেক্ষা বেশী। তাঁরা বৃষ্টির এক একটি ফোঁটার খেয়াল রাখেন যে, ওটা কোথায় বর্ষিত হচ্ছে এবং তা থেকে কি উৎপন্ন হচ্ছে।”হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলার ভাণ্ডার হচ্ছে কালাম বা কথা মাত্র। সুতরাং যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন বলেনঃ ‘হও, তখন হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি বাযয়ার (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন আগনাব। তিনি খুব বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারী নন)মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি মেঘমালাকে বৃষ্টি দ্বারা ভারী করে দিই। তখন তার থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। এই বাতাসই প্রবাহিত হয়ে গাছপালাকে সিক্ত করে দেয়। ফলে ওগুলিতে পাতা ও কুঁড়ি ফুটে ওঠে।” এটাও লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, এখানে (আরবি) বলা হয়েছে অর্থাৎ এর বিশেষণকে বহু বচন ব্যবহার করা হয়েছে। আর বৃষ্টি শূন্য বায়ুকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ (আরবি) এর বিশেষণকে একবচন রূপে ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি পূর্ণ বায়ুর বিশেষণকে বহু বচনরূপে ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেশী ফলদায়ক হওয়া। বৃষ্টি বহন কম পক্ষে দুটি জিনিস ছাড়া সম্ভব নয়। বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তা আকাশ থেকে পানি উঠিয়ে নেয়, আর মেঘমালাকে পরিপূর্ণ করে দেয়। এক বায়ু এমন হয় যা যমীনের উৎপাদন শক্তি সৃষ্টি করে। আর এক বায়ু। মেঘমালাকে এদিকে ওদিকে চালিয়ে নিয়ে যায়। আর এক বায়ু ওগুলিকে একত্রিত করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে নেয়। আর এক বায়ু ওগুলিকে পানি দ্বারা ভারী করে দেয়। আর এক বায়ু এমন হয় যে, তা গাছপালা ও বৃক্ষরাজিকে ফলদানকারী হওয়ার যোগ্য করে তোলে।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দক্ষিণা বায়ু জান্নাত হতে প্রবাহিত হয়ে থাকে এবং তাতে জনগণের উপকার লাভ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বনুজারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ দুর্বল)হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বাতাস সৃষ্টির সাত বছর পরে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে এক বায়ু সৃষ্টি করেছেন যা একটি দরজা দ্বারা বন্ধ করা আছে। ঐ দরজা দ্বারাই তোমাদের কাছে বায়ু পৌছে থাকে। যদি ঐ দরজাটি খুলে দেয়া হয় তবে যমীন ও আসমানের সমস্ত জিনিস ওলট পালট হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে ওর নাম হচ্ছে আযইয়াব। তোমরা ওকে দক্ষিণা বায়ু বলে থাকো।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর আল হুমাইদী (রঃ) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে তা পান করতে দিই।' অর্থাৎ আমি তোমাদের উপর মিষ্টি পানি বর্ষণ করি, যাতে তোমরা তা পান করতে পার এবং অন্য কাজে লাগাতে পার। আমি ইচ্ছা করলে ওকে তিক্ত ও লবণাক্ত করে দিতে পারি। যেমন সূরায়ে ওয়াকিয়ার আয়াতে রয়েছেঃ “তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছো? তোমরাই কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি, তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; তাতে তোমাদের জন্যে রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মে উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাকো ।”(আরবি) (ওর ভাণ্ডার তোমাদের কাছে নেই)। সুফইয়ান সাওয়ারী (রঃ) এর ভাবার্থ করেছেনঃ “তোমরা ওকে আবদ্ধকারী নও।” আর এর ভাবার্থ এও হতে পারে। “তোমরা ওর রক্ষক নও। বরং আমিই তা বর্ষণ করি ও রক্ষা করে থাকি। আমি ইচ্ছা করলে ওটা যমীনে ঢুকিয়ে দিতে পারি। এটা শুধু মাত্র আমার করুণা যে, আমি ওকে বর্ষণ করি, রক্ষা করি, মিষ্ট করি এবং স্বচ্ছ ও নির্মল করি, যেমন তোমরা নিজেরা পান কর এবং তোমাদের জন্তু গুলিকে পান করাও। আর তা জমিতে সেচন কর, বাগান তৈরী কর এবং অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার কর।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনা আমিই করেছি এবং পুনরায় সৃষ্টি করতে আমিই সক্ষম। আমিই সব কিছু অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছি। আবার সবকে আমি অস্তিত্বহীন করে দেবো। এরপর কিয়ামতের দিন সবকে উঠাবো। যমীন ও যমীনবাসীদের ওয়ারিস আমিই। সবকে-ই আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। আমার জ্ঞানের কোন শেষ নেই। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবারই খবর আমি রাখি।পূর্ববর্তীদের দ্বারা এই যামানার পূর্ববর্তী সকল লোককেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত সবাই। আর পরবর্তীদের দ্বারা এই যুগ এবং এই যুগের পরবর্তী সমস্ত যুগের লোককে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যত লোক আসবে সবাই। ইকরামা (রাঃ) , মুজাহিদ (রঃ), যাহহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) মুহাম্মদ ইবনু কা'ব (রঃ), শাবী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন হতে এইরূপ বর্ণিত আছে। এটাই ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) পছন্দনীয় মত মারওয়ান ইবনুল হাকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কতকগুলি লোক (নামাযে) স্ত্রী লোকদের কারণে পিছনের কাতারে থাকতো। তখন আল্লাহ তাআ’লা (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এটা ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরের বর্ণনা করেছেন)এ সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “একটি অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা নবীর (সঃ) পিছনে নামায পড়তে আসতো।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি ওর মত (সুন্দরী মহিলা কখনো দেখি নাই। কতকগুলি মুসলমান নামায পড়ার সময় এই উদ্দেশ্যে সামনে বেড়ে যেতেন যে, যেন তাকে (মহিলাটিকে দেখতে না পান। আর কতকগুলি লোক পিছনে সরে আসতো। অতঃপর যখন তারা সিজদা করতো তখন তাদের হাতের নীচে দিয়ে তার দিকে তাকাতো।” ঐ সময় আল্লাহ তাআলা (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এটা ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে, ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে, ইবনু আবি হাতিম (রঃ) স্বীয় তাফসীরে, এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) তাঁদের সুনান গ্রন্থের কিতাবুত তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। তবে এতে কঠিন নাকারাত বা অস্বীকৃতি রয়েছে)এই আয়াতের ব্যাপারে আবুল জাওযার (রঃ) -এর উক্তি বর্ণিত আছে যে, এরা হচ্ছে ওরাই যারা নামাযের কাতারসমূহে আগে বেড়ে যায় এবং পিছনে সরে আসে। (এটা আবদুর রায্যাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এটা শুধু মাত্র আবুল জাওযার (রঃ)-এর উক্তি। এতে হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কোন উল্লেখ নেই। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেন, এটাই বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।মুহাম্মদ ইবনু কা'বের (রঃ) সামনে আউন ইবনু আবদিল্লাহ (রঃ) এই ভাবার্থ বর্ণনা করলে তিনি বলেনঃ “ভাবার্থ এটা নয়। বরং অগ্রবর্তীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে এ লোকদেরকে যারা মৃত্যুবরণ করেছে। আর পরবর্তীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে তাদেরকে যারা এখন সৃষ্ট হয়েছে এবং পরে সৃষ্ট হবে। আর তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।” এ কথা শুনে হযরত আউন (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনু কা'বকে (রঃ) লক্ষ্য করে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক ও জাযায়ে খায়ের দান করুন।”
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
📘 Please check ayah 15:27 for complete tafsir.
وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ
📘 ২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন, এখানে দ্বারা শুষ্ক মাটিকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুষ্ক মৃত্তিকা হতে। আর তিনি জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন নিধূম অগ্নি শিখা হতে।” (৫৫:১৪-১৫) মুজাহিদ (রঃ)হতে এটাও বর্ণিত আছে, গন্ধযুক্ত (আরবি) মাটিকে বলাহয়। (আরবি) বলা হয় মসৃণকে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে সিক্ত মাটি। অন্যান্যেরা বলেন, ওটা হচ্ছে গন্ধযুক্ত ও ঠাসা মাটি।মহান আল্লাহ বলেনঃ “মানুষের পূর্বে আমি জ্বিনকে প্রখর শিখাযুক্ত অগ্নি থেকে সৃষ্টি করেছি।” (আরবি) বলা হয় আগুনের গরম তাপকে এবং (আরবি) বলা হয় দিনের গরমকে। এটাও বর্ণিত আছে যে, জ্বিনকে যে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে তার সত্তর ভাগের একভাগ হচ্ছে দুনিয়ার আগুনের তেজ। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, জ্বিনকে আগুনের হল্কা বা শিখা হতে অর্থাৎ অতি উত্তম আগুন হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমর ইবনু দীনার (রঃ) বলেন, জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে সূর্যের আগুন থেকে। সহীহ হাদীসে এসেছেঃ “ফেরেশতাদেরকে নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শিখাযুক্ত অগ্নি হতে, আর আদমকে (আঃ) তা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা তোমাদের সামনে বর্ণিত হয়েছে।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে ও মুসনাদে আহমাদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে) এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত আদমের (আঃ) ফযীলত ও শরাফত এবং তাঁর সৃষ্টির উপাদানের পবিত্রতার বর্ণনা দেয়া।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
📘 Please check ayah 15:33 for complete tafsir.
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
📘 Please check ayah 15:33 for complete tafsir.
ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
📘 ১-৩ নং আয়াতের তাফসীর
সূরা সমূহের শুরুতে যে হুরূফে মুকাত্তাআ’ত এসেছে সেগুলির বর্ণনা ইতিপূর্বেই গত হয়েছে। এ আয়াতে কুরআন কারীম একখানা সুস্পষ্ট আসমানী গ্রন্থ হওয়া এবং প্রত্যেকের অনুধাবন যোগ্য হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।কাফিররা তাদের কুফরীর কারণে সত্বরই লজ্জিত হবে। তারা মুসলমানরূপে জীবন যাপন করার আকাংখা করবে। তারা কামনা করবে যে, দুনিয়ায় যদি তারা মুসলিমরূপে থাকতো, তবে কতই না ভাল হতো! হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রভৃতি সাহাবীবর্গ হতে বর্ণিত আছে যে, কুরাইশ কাফিরদেরকে যখন জাহান্নামের সামনে পেশ করাহবে, তখন তারা আকাংখা করবে যে, যদি তারা দুনিয়ায় মুমিন হয়ে থাকতো! এটাও রয়েছে যে, প্রত্যেক কাফির তার মৃত্যু দেখে নিজের মুসলমান হওয়ার আকাংখা করে থাকে। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিনও প্রত্যেক কাফির এই আকাংখাই করবে। জাহান্নামের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে তারা বলবেঃ “যদি আমরা পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম তবে আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকারও করতাম না এবং ঈমানও পরিত্যাগ করতাম না।” জাহান্নামী লোকেরা অন্যদেরকে জাহান্নাম থেকে বের হতে দেখেও নিজেদের ঈমানদার হওয়ার কামনা করবে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন যে, পাপী মুসলমানদেরকে আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে আটক করে দিবেন। তখন মুশরিকরা ঐ মুসলমানদেরকে বলবেঃ “দুনিয়ায় যে আল্লাহর তোমরা ইবাদত করতে তিনি তোমাদের আজ কি উপকার করলেন?” তাদের এ কথা শুনে আল্লাহর রহমত উথলিয়ে উঠবে এবং তিনি মুসলমানদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে নিবেন। তখন কাফিররা আকাংখা করবে যে, তারাও যদি মুসলমান হতো (তবে কতভাল হতো)! অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মুসলমানদের প্রতি মুশরিকদের এই ভৎসনা শুনে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিবেনঃ ‘যার অন্তরে অনুপরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের করে নাও। ঐ সময় কাফিররা কামনা করবে যে, যদি তারাও মুসলমান হতো!হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যারা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলেছে তাদের মধ্যে কতক লোক পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে। তখন লাত ও উয্যার পূজারীরা তাদেরকে বলবেঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলায় তোমাদের কি উপকার হলো? তোমরা তো আমাদের সাথেই জাহান্নামে পুড়ছো?” তাদের এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলার করুণা উথলিয়ে উঠবে। তিনি তাদের সকলকেই সেখান থেকে বের করিয়ে আনবেন এবং জীবন নহরে তাদেরকে নিক্ষেপ করবেন। তখন তাদেরকে এমনই দেখা যাবে যেমন চন্দ্রকে ওর গ্রহণের পরে দেখা যায়। অতঃপর তারা সবাই জান্নাতে যাবে।” এ হাদীসটি শুনে কেউ একজন হযরত আনাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি এটা রাসুলুল্লাহর (সঃ) মুখ থেকে শুনেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “জেনে রেখো যে, আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে (অর্থাৎ আমি বলি নাই, অথচ আমার উদ্ধৃতি দেয়), সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান বানিয়ে নেয়।” এতদসত্ত্বেও আমি বলছি যে, আমি এ হাদীস স্বয়ং রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখ থেকে শুনেছি।” (এ হাদীসটি হাফিজ আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নামবাসী যখন জাহান্নামে একত্রিত হবে এবং তাদের সাথে। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু আহলে কিবলাও থাকবে তখন কাফিররা ঐ মুসলমানদেরকে বলবেঃ “তোমরা কি মুসলমান ছিলে না?” তারা উত্তরে বলবেঃ “হা।” তারা তখন বলবেঃ “ইসলাম তো তোমাদের কোন উপকারে আসলো না, তোমরা আমাদের সাথেই তো জাহান্নামে রয়েছো?” তারা এ কথা শুনে বলবেঃ “আমাদের গুনাহ ছিল বলে আমাদেরকে পাকড়াও করা হয়েছে।” আল্লাহ তাআলা তাদের কথা শুনার পর হুকুম করবেনঃ “জাহান্নামে যত আহলে কিবলা রয়েছে তাদের সকলকেই বের করে আন।” এ অবস্থা দেখে জাহান্নামে অবস্থানরত কাফিররা বলবেঃ “হায়! আমরা যদি মুসলমান হতাম তবে আমরাও (জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যেতাম যেমন এরা বের হয়ে গেল।” বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আলিফ-লাম- রা, এগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের। কখনো কখনো কাফিররা আকাংখা করবে, যে, তারা যদি মুসলিম হতো!” (এ হাদীসটিও হাফি আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “কতকগুলি মু'মিনকে পাপের কারণে পাকড়াও করতঃ জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তা হতে বের করবেন। যখন তিনি তাদেরকে মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবেন। তখন মুশরিকরা তাদেরকে বলবেঃ “তোমরা তো দুনিয়ায় ধারণা করতে যে, তোমরা আল্লাহর বন্ধু, অথচ আজ আমাদের সাথে এখানে কেন?” একথা শুনে আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে সুপারিশের অনুমতি দিবেন। তখন ফেরেশতামণ্ডলী, নবীগণ ও মু'মিনরা তাদের জন্যে সুপারিশ করবেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিতে থাকবেন। এ সময় মুশরিকরা বলবেঃ “হায়! আমরা যদি এদের মত (মুমিন) হতাম তবে আমাদের জন্যেও সুপারিশ করা হতো এবং আমরাও এদের সাথে বের হতে. পারতাম।” আল্লাহ পাকের (আরবি) এ উক্তির ভাবার্থ এটাই। এই লোকগুলি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদের চেহারায় কিছুটা কালিমা থেকে যাবে। কাজেই তাদেরকে জাহান্নামী বলা হবে। অতঃপর তারা প্রার্থনা করবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এ নামটিও বা উপাধিটিও আমাদের থেকে দূর করে দিন।” তখন তাদেরকে জান্নাতের একটি নহরে গোসল করতে বলা হবে এবং এরপর ঐ উপাধিও দূর করে দেয়া হবে।” (এটাও তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মুহাম্মদ ইবনু আলী (রঃ) তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(জাহান্নামের) আগুণ তাদের কারো কারো হাঁটু পর্যন্ত ধরবে, কারো ধরবে কোমর পর্যন্ত এবং কারো ধরবে স্কন্ধ পর্যন্ত। এটা হবে পাপ ও আমল অনুযায়ী। কেউ কেউ এক মাস শাস্তি ভোগের পর বেরিয়ে আসবে। আবার কেউ কেউ বেরিয়ে আসবে এক বছর শাস্তি ভোগের পর। দীর্ঘ মেয়াদী শাস্তি ঐ ব্যক্তির হবে, যে দুনিয়ার সময় কাল পর্যন্ত জাহান্নামে থাকবে। অর্থাৎ দুনিয়ার প্রথম দিন থেকে নিয়ে শেষ দিন পর্যন্ত সময়। যখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন তখন ইয়াহুদী, নাসারা ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জাহান্নামীরা ঐ (পাপী) একত্ববাদীদেরকে বলবেঃ “তোমরা তো আল্লাহর উপর তাঁর কিতাবসমূহের উপর তাঁর রাসূলদের উপর ঈমান এনেছিলে, তথাপি আজ আমরা ও তোমরা জাহান্নামে সমান (ভাবে শাস্তি ভোগ করছি)।” তাদের এই কথায় আল্লাহ তাআলা এতো বেশী রাগান্বিত হবেন যে, আর কোন কথায় তিনি এতো রাগান্বিত হবেন না। অতপর তিনি এ সময় একত্ববাদীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার নির্দেশ দিবেন। তখন তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতের নহরের নিকট নিয়ে যাওয়া হবে।” (আরবি) এর ভাবার্থ। এটাই।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)পরিশেষে আল্লাহ তাআ'লা ধমকের সুরে বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা খেতে (পরতে) থাকুক, ভোগ বিলাস করতে থাকুক এবং আশা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক, পরিণামে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাদেরকে তাদের বহু দূরের আকাংখা কামনা ও বাসনা তাওবা করা ও আল্লাহ তাআলার দিকে ঝুঁকে পড়া হতে উদাসীন ও ভুলিয়ে রাখবে। সত্বরই প্রকৃত অবস্থা খুলে যাবে।
فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ
📘 Please check ayah 15:33 for complete tafsir.
إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَنْ يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ
📘 Please check ayah 15:33 for complete tafsir.
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ
📘 Please check ayah 15:33 for complete tafsir.
قَالَ لَمْ أَكُنْ لِأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
📘 ২৮-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলছেন, হযরত আদমের (আঃ) সৃষ্টির পূর্বে ফেরেস্তাদের সামনে তিনি তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করেন। অতঃপর তাকে সৃষ্টি করতঃ তাঁদের সামনে তাঁর মর্য- একাশ করেন এবং তাঁদেরকে তাকে সিজদা করার নির্দেশ দেন। ইবলীস ছাড়া সবাই তাঁর এ নির্দেশ মেনে নেন। অভিশপ্ত ইবলীস তাঁকে সিজদা করতে অস্বীকার করে। সে কুফরী, হিংসা এবং অহংকার করে। সে স্পষ্টভাবে বলে দেয়ঃ “আমি হলাম আগুনের তৈরী এবং আদম (আঃ) হলো মাটির তৈরী। কাজেই আমি তার চেয়ে উত্তম। সুতরাং আপনি আমার উপর তাকে মর্যাদা দিলেও আমি তাকে সিজদা করতে পারি না। জেনে রাখুন যে, আমি তাকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করে ছাড়বো।”ইবনু জারীর (রঃ) এখানে একটি অতি বিস্ময়কর হাদীস বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করার পর তাদেরকে বলেনঃ “মাটি দ্বারা আমি মানুষ সৃষ্টি করবো। যখন আমি তাকে সুঠাম করবো এবং তাতে আমার রূহ্ সঞ্চার করবো তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।” তারা বললোঃ “আমরা এরূপ করবো না।” তৎক্ষণাৎ তিনি তাদের কাছে আগুনকে পাঠিয়ে দেন এবং তা তাদেরকে জ্বালিয়ে দেয়। তারপর তিনি অন্য ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন এবং তাদেরকেও অনুরূপ কথা বলেন। তাঁরা জবাবে বলেনঃ “আমরা শুনলাম ও মানলাম।” কিন্তু ইবলীস প্রথম অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল এবং সে অস্বীকার করেই রইলো।” কিন্তু এটা হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হওয়া প্রমাণিত নয়। স্পষ্টতঃ এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এটা ইসরাঈলী রিওয়াইয়াত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ
📘 Please check ayah 15:38 for complete tafsir.
وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ
📘 Please check ayah 15:38 for complete tafsir.
قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
📘 Please check ayah 15:38 for complete tafsir.
قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ
📘 Please check ayah 15:38 for complete tafsir.
إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ
📘 অতঃপর আল্লাহ তাআলা নিজের শাসনের নির্দেশ জারী করলেন যা কখনো টলতে পারে না। তিনি ইবলীসকে নির্দেশ দিলেনঃ ‘তুমি এই উত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন দল থেকে দূর হয়ে যাও। তুমি অভিশপ্ত হয়ে গেলে। কিয়ামত পর্যন্ত তোমার উপর সব সময় লানত বর্ষিত হতে থাকবে। বর্ণিত আছে যে, তৎক্ষণাৎ তার আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং সে বিলাপ করতে শুরু করে। দুনিয়ার সমস্ত শোক ও বিলাপের সূচনা হয়েছে ইবলীসের ঐ বিলাপ থেকেই। সে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত হয়ে ফিরতে থাকে এবং হিংসার আগুনে দগ্ধিভূত হয়ে আকাংখা প্রকাশ করে যে, তাকে যেন কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হয়। এটাকেই পুনরুত্থান দিবস বলা হয়েছে। তার আবেদন কবুল করা হয়। এবং তাকে অবকাশ দেয়া হয়।
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 15:44 for complete tafsir.
وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَعْلُومٌ
📘 Please check ayah 15:5 for complete tafsir.
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
📘 Please check ayah 15:44 for complete tafsir.
قَالَ هَٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ
📘 Please check ayah 15:44 for complete tafsir.
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ
📘 Please check ayah 15:44 for complete tafsir.
وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 15:44 for complete tafsir.
لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ
📘 ৩৯-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা ইবলীসের অবাধ্যতা ও হঠকারিতার খবর দিতে গিয়ে। বলছেন যে, সে শপথ করে বলেঃ “হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু আপনি আমাকে বিপথগামী করলেন সে হেতু আমি পৃথিবীতে বনি আদমের নিকট আপনার বিরোধিতা ও অবাধ্যতামূলক কাজকে শোভনীয় করে তুলবো এবং তাদেরকে উৎসাহিত করে আপনার বিরুদ্ধাচরণে জড়িয়ে ফেলবো। সকলকেই পথ ভষ্ট করতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তবে হ্যা যারা আপনার খাটি ও একনিষ্ট বান্দা তাদের উপর আমার কোন হাত থাকবে না। যেমন অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ ইবলীসের উক্তি উদ্ধৃত করেনঃ “বলুন, তাকে (আদম, আঃ কে) যে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করলেন, কেন? কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তা হলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরদেরকে কর্তৃত্বাধীন করে ফেলবো।” উত্তরে আল্লাহ তাআলা তাকে ধমকের সুরে বলেনঃ “এটাই আমার নিকট পৌছার সরল পথ। অর্থাৎ তোমাদের সকলকে আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের বিনিময় প্রদান করবো। ভাল হলে ভাল বিনিময় হবে এবং মন্দ হলে মন্দ বিনিময় হবে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তি রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (৮৯:১৪)।(আরবি) শব্দটি একটি কিরআতে (আরবি) ও রয়েছে। যেমন অন্য একটি আয়াতে আছেঃ (আরবি) (৪৩:১৪) তখন এর অর্থ হবে বুলন্দ বা উচ্চ। কিন্তু প্রথম কিরআতটিই প্রসিদ্ধতর।ঘোষিত হচ্ছেঃ ‘বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না। এটা হচ্ছে ‘ইসতিসনা মুনকাতা। ইয়াযীদ ইবনু কুসাইত (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবীদের মসজিদ তাঁদের গ্রামের বাইরে থাকতো যখন তারা তাঁদের প্রতিপালকের নিকট থেকে কোন বিশেষ বিষয় জানতে চাইতেন তখন সেখানে গিয়ে তাঁরা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারণকৃত নামায আদায় করতেন। অতঃপর প্রার্থনা জানাতেন। একদিন একজন নবী তাঁর মসজিদে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় আল্লাহর শত্রু অর্থাৎ ইবলীস তাঁর ও তাঁর কিবলার মাঝে বসে পড়ে। তখন ঐ নবী তিন বার বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।” তখন আল্লাহর শত্রু নবীকে বলেঃ “কি করে আপনি আমার (অনিষ্ট) থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন। সেই খবর আমাকে দিন।” নবী (আঃ) তখন তাকে বলেনঃ “তুমি বরং আমাকে খবর দাও কিভাবে তুমি বণী আদমের উপর জয়যুক্ত হয়ে থাকো।” শেষ পর্যন্ত একে অপরকে সঠিক খবর বলে দেয়ার চুক্তি হয়ে যায়। নবী (আঃ) তাকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “নিশ্চয় বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তত্ব থাকবে না।” তখন আল্লাহর দুশমন (ইবলীস) বলেঃ “এটা তো আমি আপনার জন্মেরও পূর্ব হতে জানি।” তার এ কথা শুনে নবী (আঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর শরণাপন্ন হবে, তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল্লাহর শপথ! তোমার আগমনের আভাস পাওয়া মাত্রই আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকি।” আল্লাহর শত্রু তখন বলেঃ “আপনি সত্য বলেছেন। এর দ্বারাই আপনি আমার (কুমন্ত্রণা) হতে। মুক্তি পেয়ে থাকেন।” অতঃপর নবী (আঃ) তাকে বলেনঃ “এবার কিভাবে তুমি বনী আদমের উপর জয়যুক্ত হয়ে থাকো। সেই খবর আমাকে প্রদান। করো।” সে বলেঃ “আমি ক্রোধ ও কুপ্রবৃত্তির সময় তাকে পাকড়াও করে থাকি।” (এটা ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ পাক বলেনঃ “অবশ্যই তোমার অনুসারীদের সবারই নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম। যেমন কুরআন কারীমে এ সম্পর্কে রয়েছেঃ “দলসমূহের কেউ এটাকে অমান্য করলে তার নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম।”এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ওর (জাহান্নামের) সাতটি দরজা রয়েছে। নিজ নিজ প্রত্যেক দরজার জন্যে পৃথক পৃথক দল আছে। প্রত্যেক দরজা দিয়ে গমনকারী ইবলীসী দল নির্ধারিত রয়েছে নিজ নিজ আমল অনুযায়ী তাদের জন্যে দরজা বন্টন করা আছে।হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) তাঁর এক ভাষণে বলেনঃ “জাহান্নামের দরজাগুলি এইভাবে রয়েছে অর্থাৎ একের উপর একটি। ঐ গুলি রয়েছে সাতটি। একটির পর একটি করে সাতটি দরজা পূর্ণ হয়ে যাবে।” হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, সাতটি স্তর রয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) সাতটি দরজার নিম্নরূপ নাম বলেছেনঃ (১) জাহান্নাম, (২) লাযা, (৩) হুতামাহ (৪) সাঈর, (৫) সাকার, (৬) জাহীম এবং (৭) হাবীয়াহ। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। কাতাদা (রঃ) বলেন, এগুলি হবে আমল হিসেবে মনযিল। যেমন একটি দরজা ইয়াহূদীদের, একটি খৃস্টানদের, একটি সাবেঈদের, একটি মাজুসদের, একটি মুশরিকদের, একটি কাফিরদের, একটি মুনাফিকদের এবং একটি একত্ববাদীদের। কিন্তু একত্ববাদীদের মুক্তি লাভের আশা রয়েছে। আর বাকী সব নিরাশ হয়ে যাবে।হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। ওগুলির মধ্যে একটি দরজা ঐ লোকদের জন্যে যারা আমার উম্মতের বিরুদ্ধে তরবারী ধারণ করেছে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “আগুন জাহান্নামবাসীদের কারো কারো হাঁটু পর্যন্ত ধরবে, কারো ধরবে কোমর পর্যন্ত এবং কারো ধরবে কাঁধ পর্যন্ত। মোট কথা, এ সব তাদের আমল অনুপাতে হবে।
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
📘 Please check ayah 15:50 for complete tafsir.
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آمِنِينَ
📘 Please check ayah 15:50 for complete tafsir.
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ
📘 Please check ayah 15:50 for complete tafsir.
لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ
📘 Please check ayah 15:50 for complete tafsir.
۞ نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
📘 Please check ayah 15:50 for complete tafsir.
مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ
📘 ৪-৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি কোন জনপদকে ধ্বংস করেন নাই। যে পর্যন্ত না সেখানে দলীল কায়েম করেছেন এবং নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। হাঁ, তবে যখন নির্ধারিত সময় এসে যায় তখন এক মুহূর্ত কালও ত্বরান্বিত ও বিলম্বিত করা হয় না। এতে মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে তারা শিরক ধর্মদ্রোহীতা ও রাসূলের (সঃ) বিরুদ্ধাচরণ হতে বিরত থাকে এবং ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য না হয়।
وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ
📘 ৪৫-৫০ নং আয়াতের তাফসীর
জাহান্নামবাসীদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখানে জান্নাতবাসীদের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, জান্নাতবাসীরা এমন বাগানে অবস্থান করবে যেখানে প্রস্রবণ ও নদী প্রবাহিত হবে। সেখানে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে বলা হবেঃ “এখন তোমরা সমস্ত বিপদ আপদ থেকে বেঁচে গেছো। তোমরা সর্বপ্রকারের ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তা থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছে। এখানে না আছে নিয়ামত নষ্ট হওয়ার ভয়, না আছে এখান থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আশংকা এবং না আছে কিছু কমে যাওয়ার ও ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদের হতে ঈর্ষা দূর করবো। তার ভ্রাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে। আবু উমামা (রাঃ) বলেন, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তর হতে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দিবেন।হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মু'মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দানের পর জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে অবস্থিত পুলের উপর আটক করা হবে এবং দুনিয়ায় যে তারা একে অপরের উপর যুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ তারা একে অপর হতে গ্রহণ করবে। অতঃপর তারা যখন হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।”ইবনু সীরীন (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আশতারা (নামক একটি লোক) হযরত আলীর (রাঃ) নিকট প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা করে। এ সময় তাঁর নিকট হযরত তালহার (রাঃ) পুত্র বসে ছিলেন। তাই কিছুক্ষণ বিলম্বের পর তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। তাঁর কাছে প্রবেশের পর সে বলেঃ “এঁর কারণেই বুঝি আমাকে আপনি আপনার নিকট প্রবেশের অনুমতি দানে বিলম্ব করেছেন।” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হা (এ কথা সত্য বটে)।” সে পুনরায় বলেঃ “আমার মনে হয় যদি আপনার কাছে হযরত উসমানের (রাঃ) পুত্র থাকতেন। তবে তাঁর কারণেও আমাকে আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি দান করতে অবশ্যই বিলম্ব করতেন?” হযরত আলী (রাঃ) জবাবে বলেনঃ “হাঁ, অবশ্যই। আমি তো আশা রাখি যে, আমি এবং হযরত উসমান (রাঃ) ঐ লোকদেরই অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করবো। তারা ভ্রাতৃভাবে পরপর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে। (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অন্য আর একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, ইমারান ইবনু তালহা (রাঃ) উষ্ট্রির যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের থেকে মুক্ত হয়ে হযরত আলীর (রাঃ) নিকট আগমন করেন। হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং বলেনঃ “আমি আশা রাখি যে, আমি এবং তোমার আব্বা ঐ লোকদেরই অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করবো। তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।” অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, তাঁকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার ন্যায় বিচার-এর চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে যে, যাকে আপনি কাল হত্যা করলেন তাঁরই আপনি ভাই হয়ে যাবেন।” হযরত আলী (রাঃ) তখন রাগান্বিত হয়ে বলেনঃ “এই আয়াত দ্বারা যদি আমার ও তালহার (রাঃ) মত লোককে বুঝানো হয়ে না থাকে তবে আর কাদেরকে বুঝানো হবে?”অন্য একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, হামাদান গোত্রের একটি লোক উপরোক্ত উক্তি করেছিল এবং হযরত আলী (রাঃ) তাকে এত জোরে ধমক দিয়েছিলেন যে, প্রাসাদ নড়ে উঠেছিল। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ঐ উক্তিকারীর নাম ছিল হারিস আওয়ার এবং হযরত আলী (রাঃ) তার একথায় ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর হাতে যা ছিল তা দিয়ে তিনি তাকে মাথায় আঘাত করেছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর উপরোক্ত উক্তি করেছিলেন। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত যুবাইর (রাঃ) ইবনু জারমুয হযরত আলীর (রাঃ) দরবারে উপস্থিত হলে দীর্ঘ ক্ষণ পর তিনি তাকে তার কাছে যাওয়ার অনুমতি দেন। তাঁর কাছে এসে সে হযরত যুবাইর (রাঃ) ও তাঁর সাথীদের সম্পর্কে ‘বালওয়াঈ’ বলে কটুক্তি করলে তিনি তাকে। বলেনঃ “তোমার মুখে মাটি পড়ুক। আমি, তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ) তো ইনশাআল্লাহ ঐ লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর উক্তি রয়েছেঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করে দেবো। তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।”অনুরূপভাবে হযরত হাসান বসরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! (আরবি) এই আয়াতটি আমাদের বদরী সাহাবীদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে।”কাসীরুন্নাওয়া বলেনঃ “আমি আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনু আলীর (রাঃ) । নিকট গমন করি এবং বলিঃ “আমার বন্ধু আপনারও বন্ধু, আমার সাথে মেলামেশাকারী আপনার সাথেও মেলামেশাকারী, আমার শত্রু আপনারও শত্রু এবং আমার সাথে যুদ্ধকারী আপনার সাথেই যুদ্ধকারী। আল্লাহর কসম! আমি হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ) হতে মুক্ত। আমার এ কথা শুনে তিনি বলেনঃ “যদি আমি এরূপ করি তবে আমার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট অরি কেউই থাকবে না। এ অবস্থায় আমার হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। হে কাসীর! তুমি এই দুব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমারের (রাঃ) প্রতি ভালবাসা রাখবে, এতে যদি পাপ হয় তবে, আমিই তা বহন করবো।” অতঃপর তিনি এই আয়াতের (আরবি) এ অংশটুকু পাঠ করলেন এবং বলেনঃ “এই আয়াতটি নিম্ন লিখিত দশজন লোকের ব্যাপারে অবর্তীণ হয়েছেঃ ১, “হযরত আবু বকর (রাঃ), ২. হযরত উমার (রাঃ), ৩. হযরত উসমান (রাঃ), ৪.হযরত আলী (রাঃ), ৫. হযরত তালহা (রাঃ), ৬. হযরত যুবাইর (রাঃ), ৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ), (৮, হযরত সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) , ৯. হযরত সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) এবং ১০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ”। এঁরা মুখোমুখি হয়ে বসবেন যাতে কারো দিকে কারো পিঠ না হয়। এ ব্যাপারে মারফু হাদীস রয়েছে। হযরত যায়েদ ইবনু আবি আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট বের হয়ে এসে (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ একে অপরের দিকে তাকাতে থাকবে। সেখানে তাদের কোন দুঃখ-কষ্ট হবে না। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন হযরত খাদীজা’কে (রাঃ) বেহেশতের সোনার একটি ঘরের সুসংবাদ প্রদান করি যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন দুঃখ-কষ্টও থাকবে না।” এই জান্নাতীদেরকে জান্নাত থেকে বের করা হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ “হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না; সর্বদা জীবিত থাকবে, কখনো মৃত্যু বরণ করবে না, সর্বদা যুবকই থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না, চিরকাল এখানেই অবস্থান করবে, কখনো এখান হতে বের হবে না।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে, স্থান পরিবর্তনের আকাংখা তারা করবে না।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! আমার বান্দাদেরকে খবর দিয়ে দাওঃ “নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আবার আমার শাস্তি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিও বটে।” এই ধরনের আরো আয়াত ইতিপূর্বে গত হয়েছে। এগুলি দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, মুমিনদেরকে (জান্নাতের শান্তির) আশার সাথে সাথে (জাহান্নামের শাস্তির) ভয়ও রাখতে হবে। হযরত মুসআব ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেনঃ “(একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর সাহাবীদের এমন এক দল লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যারা হাসতে ছিলেন। তখন তিনি তাঁদেরকে বললেনঃ “তোমরা জান্নাত ও জাহান্নামকে স্মরণ করো।” ঐ সময় উপরোক্ত আয়াত অর্থাৎ - অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা মুরসাল)ইবনু আবি রাবাহ (রাঃ) নবীর (সঃ) সাহাবীদের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু শায়বার দরজা দিয়ে আমাদের নিকট আত্মপ্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “আমি তো তোমাদেরকে হাসতে দেখছি।” এ কথা বলেই তিনি ফিরে যান এবং হাতীমের নিকট থেকে পুনরায় আমাদের নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ “যখন আমি বের হয়েছি তখনই হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার বান্দাদেরকে নিরাশ করছো কেন? আমার বান্দাদের সংবাদ দিয়ে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আবার আমার শাস্তিও বেদনাদায়ক শাস্তি বটে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর বর্ণনা করেছেন)অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যদি আল্লাহ তাআলার ক্ষমার পরিমাণ অবগত হতো তবে সে হারাম থেকে বেঁচে থাকা পরিত্যাগ করতো। পক্ষান্তরে যদি সে আল্লাহর শাস্তির পরিণাম অবগত হতো তবে সে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলতো।”
وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ
📘 Please check ayah 15:56 for complete tafsir.
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ إِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُونَ
📘 Please check ayah 15:56 for complete tafsir.
قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
📘 Please check ayah 15:56 for complete tafsir.
قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَنْ مَسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ
📘 Please check ayah 15:56 for complete tafsir.
قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِنَ الْقَانِطِينَ
📘 Please check ayah 15:56 for complete tafsir.
قَالَ وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ
📘 ৫১-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি তাদেরকে ইবরাহীমের (আঃ) অতিথিদের সম্পর্কে খবর দিয়ে দাও।' (আরবি) শব্দটিকে একবচন ও বহুবচন উভয়ের উপরই প্রয়োগ করা হয়, যেমন (আরবি) ও (আরবি) শব্দদ্বয়। এই অতিথিগণ ছিলেন ফেরেস্তা, যারা মানুষের রূপধরে সালাম করতঃ হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) নিকট হাযির হয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁদের জন্যে গো-বৎস যবাহ করেন এবং গোশত ভেজে তাঁদের সামনে পেশ করেন। কিন্তু যখন তিনি দেখেন যে, তাঁরা হাত বাড়াচ্ছেন না তখন তাঁর মনে ভয়ের সঞ্চার হয় এবং বলেনঃ “আমি তো আপনাদেরকে ভয় করছি।” ফেরেশতাগণ তখন তাঁকে নিরাপত্তা দান করে বলেনঃ “আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই।” অতঃপর তারা তাকে হযরত ইসহাকের (আঃ) জন্ম লাভের শুভ সংবাদ দান করেন। যেমন সূরায়ে হুদে বর্ণিত হয়েছে। তখন তিনি তাঁর নিজের ও তাঁর স্ত্রীর বার্ধক্যকে সামনে রেখে স্বীয় বিস্ময় দূরীকরণার্থে এবং ওয়াদাকে দৃঢ় করানোর লক্ষ্যে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই (বার্ধক্যের) অবস্থায়ও কি আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করবে।” ফেরেশতাগণ উত্তরে দৃঢ়তার সাথে ওয়াদার পুনরাবৃত্তি করেন আর তাঁকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দেন। তখন তিনি নিজের মনের বিশ্বাসকে প্রকাশ করতঃ বলেনঃ “আমি নিরাশ হই নাই। বরং আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ এর চেয়েও বড় কাজের ক্ষমতা রাখেন।
قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ
📘 Please check ayah 15:60 for complete tafsir.
قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُجْرِمِينَ
📘 Please check ayah 15:60 for complete tafsir.
إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 15:60 for complete tafsir.
وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
📘 Please check ayah 15:9 for complete tafsir.
إِلَّا امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا ۙ إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ
📘 আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, যখন তাঁর ভয় দূর হয়ে গেল এবং সুসংবাদও প্রাপ্ত হলেন তখন তিনি ফেরেশতাদেরকে তাদের আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা উত্তরে বললেনঃ “আমরা হযরত লুতের (আঃ) কওমের বস্তি উলটিয়ে দেয়ার জন্যে এসেছি। কিন্তু হযরত লুতের (আঃ) পরিবারবর্গ রক্ষা পাবে। তবে তাঁর স্ত্রী রক্ষা পাবে না। সে কওমের সঙ্গেই রয়ে যাবে এবং তাদের সাথেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
فَلَمَّا جَاءَ آلَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ
📘 Please check ayah 15:64 for complete tafsir.
قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ
📘 Please check ayah 15:64 for complete tafsir.
قَالُوا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوا فِيهِ يَمْتَرُونَ
📘 Please check ayah 15:64 for complete tafsir.
وَأَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
📘 ৬১-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা হযরত লূত (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, যখন ফেরেশতাগণ তার কাছে তরুণ সুদর্শন যুবকের রূপ ধরে অগিমন করেন তখন। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “আপনারা তো সম্পূর্ণ অপরিচিত লোক।” তখন ফেরেশতাগণ গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে বলেনঃ “যা আপনার কওম অস্বীকার করছিল এবং যার আগমন সম্পর্কে তারা সন্ধিগ্ধ ছিল, আমরা সেই সত্য বিষয় ও অকাট্য হুকুম নিয়ে আগমন করেছি। আর ফেরেশতারা সত্য বিষয় সহই আগমন করে থাকে এবং আমরাও সত্যবাদী। যে খবর আমরা আপনাকে দিচ্ছি তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আপনি (সপরিবারে) রক্ষা পেয়ে যাবেন, আর আপনার এই কাফির কওম ধ্বংস হয়ে যাবে।”
فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ
📘 Please check ayah 15:66 for complete tafsir.
وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ
📘 ৬৫-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, ফেরেস্তাগণ হযরত নূতকে (আঃ) বলেনঃ “রাত্রির কিছু অংশ কেটে গেলেই আপনি আপনার নিজের লোকজনকে নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়বেন। আপনি স্বয়ং তাদের পিছনে থাকবেন যাতে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ভালভাবে করতে পারেন।” রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই নিয়মই ছিল যে, তিনি সেনাবাহিনীর পিছনে পিছনে চলতেন যাতে দুর্বল ও পতিত লোকদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন।এরপর হযরত নূতকে (আঃ) বলা হচ্ছেঃ “যখন তোমার কওমের উপর শাস্তি নেমে আসবে এবং তাদের চীৎকার ধ্বনী শুনা যাবে তখন কখনই তাদের দিকে ফিরে তাকাবে না। তাদেরকে এ শাস্তির অবস্থায় ফেলে দিয়েই তোমাদেরকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কোন দ্বিধা-সংকোচ না করেই চলে যাবে।” সম্ভবতঃ তাঁদের সাথে কেউ ছিলেন, যিনি তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “নূতকে (আঃ) আমি পূর্বেই বলে দিয়েছিলাম যে, ঐ লোকগুলিকে সকালেই ধ্বংস করে দেয়া হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের (শাস্তি দানের) প্রতিশ্রুত সময় হচ্ছে সকাল বেলা, সকাল কি নিকটবর্তী নয়?” (১১:৮১)
وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ
📘 Please check ayah 15:72 for complete tafsir.
قَالَ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ ضَيْفِي فَلَا تَفْضَحُونِ
📘 Please check ayah 15:72 for complete tafsir.
وَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ
📘 Please check ayah 15:72 for complete tafsir.
لَوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَائِكَةِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
📘 Please check ayah 15:9 for complete tafsir.
قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ
📘 Please check ayah 15:72 for complete tafsir.
قَالَ هَٰؤُلَاءِ بَنَاتِي إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ
📘 Please check ayah 15:72 for complete tafsir.
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
📘 ৬৭-৭২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, হযরত লূতের (আঃ) বাড়ীতে সুদর্শন তরুণ যুবকগণ অতিথি হিসেবে আগমন করেছেন। এ খবর যখন তাঁর কওমের লোকেরী পেলো তখন তারা তাদের খারাপ উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় তার বাড়ীতে দৌড়িয়ে আসলো। আল্লাহর নবী হযরত লুত (আঃ) তাদেরকে বুঝাতে লাগলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আমার অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো।” স্বয়ং হযরত লুত (আঃ) জানতেন না যে, তার অতিথিগণ আল্লাহর ফেরে, যেমন সূরায়ে হুদে রয়েছে। যদিও এরও বর্ণনা এখানে পরে হয়েছে এবং ফেরেশতাদের প্রকাশিত হয়ে পড়ার বর্ণনা পূর্বে হয়েছে; কিন্তু এর দ্বারা ক্রম পর্যায় উদ্দেশ্য নয়। আর (আরবি) অক্ষরটি তারতীব বা ক্রম বিন্যাসের জন্যে আসেও না, বিশেষ করে এমন ক্ষেত্রে যেখানে ওর বিপরীত দলীল বিদ্যমান থাকে। হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ “আমাকে তোমরা অপদস্থ করো না।” তারা উত্তরে বলেঃ “আপনার যখন এটা খেয়াল ছিল তখন আপনি এদেরকে অতিথি হিসেবে আপনার বাড়ীতে স্থান দিয়েছেন কেন? আমরা তো। আপনাকে পূর্বেই নিষেধ করেছিলাম।” তখন তিনি তাদেরকে আরো বুঝিয়ে বললেনঃ “তোমাদের স্ত্রীগণ, যারা আমার কন্যাতুল্য, তারাই তোমাদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার পাত্র, এরা নয়।”এর পূর্ণ বিবরণ আমরা বিস্তারিতভাবে ইতিপূর্বে দিয়ে এসেছি। সুতরাং এর পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। যেহেতু ঐ লোকগুলি কাম-বাসনায় উন্নত্ত ছিল এবং আল্লাহর শাস্তির যে ফায়সালা তাদের মস্তকোপরি ঝুলছিল, তা থেকে তারা ছিল সম্পূর্ণরূপে উদাসীন, সেই হেতু আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীর (সঃ) জীবনের শপথ করে তাদের এই অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) অত্যধিক মর্যাদা প্রকাশিত হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর যতগুলি মাখলুক সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান আর কেউই নেই। মহান আল্লাহ একমাত্র তাঁরই জীবনে শপথ ছাড়া আর কারো জীবনের শপথ করেন নাই। (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা। তাতেই তারা উদভ্রান্ত হয়ে ফিরছে।
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ
📘 Please check ayah 15:77 for complete tafsir.
فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ
📘 Please check ayah 15:77 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِلْمُتَوَسِّمِينَ
📘 Please check ayah 15:77 for complete tafsir.
وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُقِيمٍ
📘 Please check ayah 15:77 for complete tafsir.
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِلْمُؤْمِنِينَ
📘 ৭৩-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “সূর্যোদয়ের সময় এক ভীষণ শব্দ আসলো এবং সাথে সাথে তাদের বস্তীগুলি উর্ধ্বে উথিত হলো আকাশের নিকটে পৌছে সেখান থেকে ওগুলিকে উলটিয়ে দেয়া হলো, উপরের অংশ নীচে এবং নীচের অংশ উপরে হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিতে শুরু করলো। সূরায়ে হূদে এটা বিস্তারিতরূপে বর্ণিত হয়েছে।যাদের পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অন্তদৃষ্টি রয়েছে তাদের জন্যে এই বস্তিগুলির ধ্বংসের মধ্যে বড় বড় নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। এই ধরনের লোকেরাই এ সব বিষয় থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। তারা অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে এগুলির প্রতি লক্ষ্য করে থাকে এবং চিন্তা গবেষণা করে নিজেদের অবস্থা সুন্দর করে নেয়।হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা মু'মিনের বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার প্রতি লক্ষ্য রেখো, সে আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) এবং ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন) অতপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, সে আল্লাহর নূর ও তার তাওফীকের সাহায্যে দেখে থাকে। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর কতকগুলি বান্দা এমন রয়েছে যারা মানুষকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারে।”মহান আল্লাহ বলেনঃ 'ওটা লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। অর্থাৎ হযরত লুতের (আঃ) কওমের যে বস্তির উপর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ শাস্তি নেমে এসেছিল এবং ওটাকে উলটিয়ে দেয়া হয়েছিল তা আজও একটা নিদর্শন রূপে বিদ্যমান রয়েছে। তোমরা রাতদিন সেখান দিয়ে চলাচল করে থাকো। বড়ই বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এখনও তোমরা তার থেকে শিক্ষা গ্রহ করছো না! মোট কথা, প্রকাশ্যভাবে লোক চলাচলের পথে ঐ বস্তির গ্নাবশেষ আজও বিদ্যমান আছে। অর্থ এও হতে পারেঃ “প্রকাশ্য কিতাবে টো বিদ্যমান রয়েছে।” কিন্তু এ অর্থটি এখানে ঠিকভাবে বসছে না। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।আল্লাহ পাক বলেনঃ “অবশ্যই এতে মু'মিনদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।” অর্থাৎ কিভাবে আল্লাহ তাআলা নিজের লোকদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং স্বীয় শত্রুদেরকে ধ্বংস করেন, এটা তার একটা স্পষ্ট নিদর্শন।
وَإِنْ كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ
📘 Please check ayah 15:79 for complete tafsir.
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ
📘 ৭৮-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর
“আসহাবে আয়কা’ দ্বারা হযরত শু’আইবের (আঃ) কওমকে বুঝানো হয়েছে। “আয়কা' বলা হয় গাছের ঝাড়কে। শিরক, ও কুফরী ছাড়াও তাদের অত্যাচারমূলক কাজ ছিল এই যে, তারা লুণ্ঠন করতো এবং মাপে ও ওজনে কম করতো। তাদের বস্তিটি হযরত লুতের (আঃ) কওমের বস্তির নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। তাদের যুগটিও ছিল নূতীয়দের যুগের নিকটতম যুগ। তাঁদের দুষ্কর্ম এবং অবাধ্যতার কারণে তাদের উপরও আল্লাহর শাস্তি নেমে এসেছিল। এই উভয় বস্তিই লোক চলাচলের পথে অবস্থিত ছিল। হযরত শুআইব (আঃ) স্বীয় কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে গিয়ে বলেছিলেনঃ “তের (আঃ) কওমের যুগ তো তোমাদের যুগ হতে বেশী দূরের যুগ নয়।”
مَا نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُنْظَرِينَ
📘 Please check ayah 15:9 for complete tafsir.
وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ
📘 Please check ayah 15:84 for complete tafsir.
وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ
📘 Please check ayah 15:84 for complete tafsir.
وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ
📘 Please check ayah 15:84 for complete tafsir.
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ
📘 Please check ayah 15:84 for complete tafsir.
فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
📘 ৮০-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর
“আসহাবুল হি’ দ্বারা সামূদ সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। যারা তাদের নবী হযরত সালেহকে (আঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। এটা স্পষ্ট কথা যে, একজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা যেন সমস্ত নবীকেই মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। এ জন্যেই বলা হয়েছে, তারা রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। তাদের কাছে এমন মু'জিযা' এসে পড়ে যার দ্বারা হযরত সা'লেহের (আঃ) সত্যবাদিতা তাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যেমন একটি কঠিন পাথরের পাহাড়ের মধ্য থেকে একটি উষ্ট্ৰী বের হওয়া, যা তাদের শহরে বিচরণ করতো। একদিন ওটা পানি পান করতো, আর পরের দিন ঐ শহরবাসীদের জন্তুগুলি পানি পান করতো। তথাপি ঐ লোকগুলি বাঁকা পথেই চলতে থাকে, এমনকি তারা ঐ উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করে ফেলে। ঐ সময় হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “জেনে রেখো যে, তিন দিনের মধ্যেই তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসবে। এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য ও সঠিক। ওয়াদা।”ঐ লোকগুলি তখনও আল্লাহর প্রদর্শিত পথের উপর নিজেদের অন্ধত্বকেই প্রাধান্য দেয়। তারা শুধু মাত্র নিজেদের শক্তি ও বাহাদুরী প্রদর্শন এবং গর্ব ও অহংকারের বশবর্তী হয়েই পাহাড় কেটে কেটে তাদের গৃহ নির্মাণ। করেছিল, প্রয়োজনের তাগিদে নয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাবুকে যাওয়ার পথে। যখন ঐ লোকদের বাসভূমি অতিক্রম করেন তখন তিনি মাথায় কাপড় বেঁধে নেন এবং স্বীয় সওয়ারীকে দ্রুত বেগে চালিত করেন। আর স্বীয় সহচরদেরকে বলেনঃ “যাদের উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের বস্তিগুলি ক্রন্দনরত অবস্থায় অতিক্রম করো। কান্না না আসলেও কান্নার ভান করো। না জানি হয়তো তোমরাও ঐ শাস্তির শিকারে পরিণত হয়ে যাও না কি।” যা হোক, শেষ পর্যন্ত ঠিক চতুর্থ দিনের সকালে আল্লাহর শাস্তি ভীষণ শব্দের রূপ নিয়ে তাদের উপর এসে পড়লো। ঐ সময় তাদের উপার্জিত। ধন-সম্পদ তাদের কোনই কাজে আসে নাই। যে সব শস্যক্ষেত্র ও ফলমূলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে এবং ওগুলিকে বৃদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে ঐ উষ্ট্ৰীটির পানি পান অপছন্দ করতঃ ওকে তারা হত্যা করে ফেলে ছিল তা সেই দিন নিষ্ফল প্রমাণিত হয়ে যায় এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহর নির্দেশ কার্যকরী হয়েই পড়ে।
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَإِنَّ السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ ۖ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ
📘 Please check ayah 15:86 for complete tafsir.
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ
📘 ৮৫-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘আমি সমস্ত মাখলুককে ন্যায়ের সাথে সৃষ্টি করেছি। কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। মন্দলোকেরা মন্দ প্রতিদান এবং ভাল লোকেরা ভাল প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। মাখলুককে বৃথা সৃষ্টি করা হয় নাই। এইরূপ ধারণা কাফিররাই করে থাকে এবং তাদের জন্যে অয়েল নামক জাহান্নাম রয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না? মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই; সম্মানিত আরশের তিনি অধিপতি।”অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন পরম সৌজন্যের সাথে মুশরিকদেরকে ক্ষমা করে দেন। আর তিনি যেন তাদের দেয়া কষ্ট এবং তাদের মিথ্যা প্রতিপন্নকরণ সহ্য করে নেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তাদেরকে সৌজন্যের সাথে ক্ষমা করে দাও এবং সালাম বলো, তারা সত্বরই জানতে পারবে।” এই নির্দেশ জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বে ছিল। এটা হচ্ছে মক্কী আয়াত আর জিহাদ ফরজ হয়েছে মদীনায় হিজরতের পর।মহান আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী। ইতস্ততঃ ছড়িয়ে পড়া অনু পরমাণুকেও তিনি একত্রিত করতঃ তাতে জীবন দানে সক্ষম।” যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি সেগুলির অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যা, নিশ্চয়ই তিনি মহা স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপারে শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি ওকে বলেনঃ ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়। অতএব পবিত্র ও মহান তিনি যার হস্তে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিতহবে।” (৩৬:৮১-৮৩)
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
📘 Please check ayah 15:88 for complete tafsir.
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
📘 ৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ “হে নবী (সঃ)! আমি যখন তোমাকে কুরআন কারীমের ন্যায় অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী সম্পদ দান করেছি। তখন তোমার জন্যে মোটেই শোভনীয় নয় যে, তুমি কাফিরদের পার্থিব ধনসম্পদের প্রতি লোভনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। এ সব কিছু তো ক্ষণস্থায়ী মাত্র। শুধু পরীক্ষা স্বরূপ কয়েকদিনের জন্যে মাত্র তাদেরকে এগুলি দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে তোমার পক্ষে এটাও সমীচীন নয় যে, তুমি তাদের ঈমান না আনার কারণে দুঃখিত, হবে। হ্যা, তবে তোমার উচিত যে, তুমি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত নম্র ও কোমল হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে লোক সকল! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল আগমন করেছে, যার কাছে তোমাদের কষ্ট প্রদান কঠিন ঠেকে, যে তোমাদের শুভাকাংখী এবং যে মুমিনদের উপর অত্যন্ত দয়ালু।”(আরবি) সম্পর্কে একটি উক্তি তো এই যে, এর দ্বারা কুরআন কারীমের প্রথম দিকের দীর্ঘ ৭(সাত)টি সূরাকে বুঝানো হয়েছে। সূরা গুলিহচ্ছেঃ বাকারা, আল-ইমরান, নিসা, মায়েদাহ, আনআম, ‘আরাফ এবং ইউসুফ। কেননা, এই সূরাগুলিতে ফারায়িয, হুদূদ, ঘটনাবলী এবং নির্দেশনাবলী বিশেষ পন্থায় বর্ণনা রয়েছে। অনুরূপভাবে দৃষ্টান্তসমূহ, খবরসমূহ এবং উপদেশাবলীও বহুল পরিমাণে রয়েছে। কেউ কেউ সূরায়ে ‘আরাফ পর্যন্ত ছ’টি সূরা গণনা করে সূরায়ে আনফাল ও তাওবা’কে সপ্তম সূরা বলেছেন। তাঁদের মতে এই দু'টি সূরা মিলিতভাবে একটি সূরাই বটে।হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি এই যে, একমাত্র হযরত মূসা (আঃ) এগুলির মধ্যে দু'টি সূরা লাভ করেছিলেন। আর আমাদের নবী (সঃ) ছাড়া বাকী অন্যান্য নবীদের কেউই এগুলি প্রাপ্ত হন নাই। একটা উক্তি রয়েছে যে, প্রথমতঃ হযরত মূসা (আঃ) ছ'টি লাভ করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি তার প্রতি অবতারিত লিখিত ফলকগুলি ছুঁড়ে ফেলেছিলেন তখন দুটি উঠে। গিয়েছিল এবং চারটি রয়েছিল। একটি উক্তি এই আছে যে, “কুরআন আযীম দ্বারাও এটাই উদ্দেশ্য।যিয়াদ (রঃ) বলেনঃ “এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি তোমাকে সাতটি অংশ দিয়েছি।” সেগুলি হচ্ছেঃ “আদেশ, নিষেধ, শুভসংবাদ, ভয়, দৃষ্টান্ত, নিয়ামত রাশির হিসাব এবং কুরআনিক খবরসমূহ”। (আরবি) দ্বিতীয় উক্তি এই যে, দ্বারা সূরায়ে ফাতেহা’কে বুঝানো হয়েছে, যার সাতটি আয়াত রয়েছে। বিসমিল্লাহসহ এই সাতটি আয়াত। সুতরাং ভাবার্থ হচ্ছেঃ “এগুলি দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাকে বিশিষ্ট করেছেন। এটা দ্বারা কিতাবকে শুরু করা হয়েছে এবং প্রত্যেক রাকআতে এটা পঠিত হয়, তা ফরয, নফল ইত্যাদি যেই নামাযই হোক না কেন।” ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) এই উক্তিটিই পছন্দ করেছেন এবং এই ব্যাপারে যে হাদীসগুলি বর্ণিত হয়েছে সেগুলিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমরা ঐ সমূদয় হাদীস সূরায়ে ফাতেহার ফযীলতের বর্ণনায় এই তাফসীরের শুরুতে লিখে দিয়েছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যেই।এই জায়গায় ইমাম বুখারী (রাঃ) দুটি হাদীস এনেছেন। একটি হাদীসে হযরত আবু সাঈদ মুআল্লা (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমি নামায পড়ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে আমাকে ডাক দেন। কিন্তু আমি (নামাযে ছিলাম বলে) তাঁর কাছে গেলাম না। নামায শেষে যখন আমি তাঁর কাছে হাজির হই তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ঐ সময়েই তুমি আমার কাছে আস নাই কেন?” আমি উত্তরে বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি নামাযে ছিলাম।” তিনি বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা কি (আরবি) (হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যখন তোমাদেরকে ডাক দেন তখন তোমরা তাদের তাকে সাড়া দাও) (৮:২৪) এ কথা বলেন নাই? জেনে রেখো যে, মসজিদ হতে বের হওয়ার পূর্বেই আমি তোমাকে কুরআন। কারীমের একটি খুব বড় সূরার কথা বলবো।” কিছুক্ষণ পর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মসজিদ থেকে বের হতে উদ্যত হলেন, তখন আমি তাঁকে ঐ ওয়াদাটি স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি তখন বললেনঃ “ওটা হচ্ছে (আরবি) এই সূরাটি। এটাই হচ্ছে (আরবি) এবং এটাই বড় কুরআন যা আমাকে প্রদান করা হয়েছে।”অন্য হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরায়ে ফাতেহাই হলো (আরবি) এবং এটাই কুরআনে আযীম। সুতরাং এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, (আরবি) এবং (আরবি) দ্বারা সূরায়ে ফাতেহাকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটাও মনে রাখা উচিত যে, এটা ছাড়া অন্যটাও উদ্দেশ্য হতে পারে এবং এহাদীসগুলি ওর বিপরীত নয়, যখন অন্যগুলোতেও এই মূল তত্ত্ব পাওয়া যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃপুনঃ আবৃত্তি করা হয়।” (৩৯:২৩) সুতরাং এই আয়াতে সম্পূর্ণ কুরআনকে বলা হয়েছে এবং ও বলা হয়েছে। কাজেই এটা এক দিক দিয়ে এবং অন্য দিক দিয়ে হলো। আর কুরআন আযীমও এটাই। যেমন নিম্নের রিওয়াইয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়ঃ রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপিত ওটা কোন্ মসজিদ?” উত্তরে তিনি নিজের মসজিদের (মসজিদে নববী) দিকে ইশারা করেন। অথচ এটাও প্রমাণিত বিষয় যে, ঐ আয়াতটি কুবার মসজিদ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং নিয়ম এই যে, কোন জিনিসের উল্লেখ অন্য জিনিসকে অস্বীকার করে না, যদি ওর মধ্যেও ঐরূপ গুণ থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে কুরআন পেয়ে নিজেকে অন্য কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে না।” এই হাদীসের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কুরআন পেলো অথচ এটা ছাড়া অন্য কিছু থেকে বেপরোয়া হলো না সে মুসলমান নয়। এই তাফসীর সম্পূর্ণরূপে সঠিক বটে, কিন্তু এই হাদীসের দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয়। এ হাদীসের সঠিক ভাব ও উদ্দেশ্য আমরা আমাদের এই তাফসীরের শুরুতে বর্ণনা করেছি।হযরত আবু রাফে’ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) বাড়ীতে এক মেহমান আগমন করে। ঐ দিন তার বাড়ীতে কিছুই ছিল না। তিনি রজব মাসে পরিশোধের অঙ্গীকারে একজন ইয়াহূদীর কাছে কিছু আটা ধার চাইতে পাঠান। কিন্তু ইয়াহূদী বলেঃ “আমার কাছে কোন জিনিস বন্ধক রাখা ছাড়া আমি ধার দেবো না।” ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমি আকাশবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমানতদার এবং যমীনবাসীদের মধ্যেও। সে যদি আমাকে ধার দিতো অথবা বিক্রী করতো তবে আমি অবশ্য অবশ্যই ওটা আদায় করে দিতাম।” তখন (আরবি) এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তাঁকে যেন পার্থিব জগতের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে। হযরত ইবনু আ স (রাঃ) বলেনঃ “মানুষের জন্যে এটা নিষিদ্ধ যে, সে কারো ধন-সম্পদের প্রতি লোভের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ পাক যে বলেছেনঃ “আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি এর দ্বারা সম্পদশালী কাফিরদেরকে বুঝানো হয়েছে”।
وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ
📘 Please check ayah 15:93 for complete tafsir.
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
📘 ৬-৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা এখানে কাফিরদের কুফরী, অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্যপনা, অহংকার এবং হঠকারিতার সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা বিদ্রুপ করে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতোঃ ‘হে সেই ব্যক্তি যে তার উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার দাবী করছে অর্থাৎ-হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমরা তো দেখছি যে, তুমি একটা আস্ত পাগল, তাই তুমি আমাদেরকে তোমার অনুসরণ করার জন্যে আহ্বান করছে। এবং আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছ যে, আমরা যেন আমাদের বাপদাদা ও পূর্ব পুরুষদের ধর্ম পরিত্যাগ করি। যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো তবে আমাদের কাছে ফেরেস্তাদেরকে আনয়ন করছো না কেন? তাহলে তারা এসে আমাদের কাছে তোমার সত্যবাদিতার বর্ণনা দেবে?’ ফিরাউনও যেমন বলেছিলঃ (আরবি) অর্থাৎ “তার উপর সোনার কংকন কেন নিক্ষেপ করা হয়নি, অথবা ফেরেশতারা তার সাথে মিলিত হয়ে কেন আসেনি?” (৪৩:৫৩) অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “যারা আমার সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা। বলেঃ “আমাদের নিকট ফেরেস্তা অবতীর্ণ করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন? তারা তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং তারা সীমালংঘন করেছে গুরুতর রূপে।যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে সেদিন অপরাধীদের জন্যে সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবেঃ “রক্ষা কর, রক্ষা কর।” অনুরূপ অত্র আয়াতে বলেনঃ “আমি ফেরেশতাদেরকে যথার্থ কারণ ব্যতীত প্রেরণ করি না; ফেরেস্তারা হাযির হলে তারা অবকাশ পাবে না।”মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই যিকর অর্থাৎ কুরআন কারীম আমি অবতীর্ণ করেছি, আর এর সংরক্ষণের দায়িত্বশীল আমিই। আমিই এটাকে সর্বক্ষণের জন্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে রক্ষা করবো। কেউ কেউ বলেন যে, এর। সর্বনামটি নবীর (সঃ) দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন আল্লাহ কর্তৃকই অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং নবীর (সঃ) রক্ষক তিনিই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) আল্লাহ তোমাকে মানুষের উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করবেন।” (৫:৬৭) তবে প্রথম অর্থটিই সঠিকতর। রচনা ভংগীও এটাকেই প্রাধান্য দেয়।
كَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ
📘 Please check ayah 15:93 for complete tafsir.
الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ
📘 Please check ayah 15:93 for complete tafsir.
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
📘 Please check ayah 15:93 for complete tafsir.
عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
📘 ৮৯-৯৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি। জনগণের সামনে ঘোষণা করে দাওঃ আমি সমস্ত মানুষকে আল্লাহর শাস্তি হতে প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শক। জেনে রেখো যে, আমার উপর মিথ্যারোপ কারীরা পূর্ববর্তী নবীদের উপর মিথ্যারোপ কারীদের মতই আল্লাহর আযারের শিকার হয়ে যাবে। (আরবি) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে শপথকারীগণ, যারা নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং তাঁদেরকে কষ্ট দেয়ার উপর পরম্পর শপথ গ্রহণ করতো। যেমন হযরত সালেহের (আঃ) কওমের বর্ণনা কুরআন কারীমে রয়েছে যে, তারা শপথ করে বলেছিলঃ রাতারাতি আমরা সালেহ (আঃ) ও তার পরিবার বর্গকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবো।” অনুরূপ ভাবে কুরআনপাকে রয়েছে যে, তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলেছিলঃ “যে মরে গেছে তাকে আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন না। অন্য জায়গায় এই ব্যাপারে শপথ করার উল্লেখ আছে যে, মুসলমানরা কখনো কোন করুণা লাভ করতে পারে না। মোট কথা, যেটা তারা স্বীকার করতো না ওর উপর শপথ করার তাদের অভ্যাস ছিল। হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমার এবং যে হিদায়াতসহ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত, যে তার কওমের নিকট এসে বললোঃ হে লোক সকল! আমি শত্রু সেনাবাহিনী স্বচক্ষে দেখে এলাম। সুতরাং তোমরা সাবধান হয়ে যাও এবং মুক্তি লাভের জন্যে প্রস্তুত হও। এখন কিছু লোক তার কথা বিশ্বাস করলো এবং তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে সরে পড়লো। ফলে তারা শত্রুর আক্রমণ থেকে বেঁচে গেল। পক্ষান্তরে কিছু লোক তার কথা অবিশ্বাস করলো এবং সেখানেই নিশ্চিন্তভাবে রয়ে গেল। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ শত্রু সেনাবাহিনী এসে পড়লো এবং তাদেরকে পরিবেষ্টন করতঃ ধ্বংস করে দিলো। সুতরাং আমাকে মান্যকারী ও অমান্যকারীদের দৃষ্টান্ত এটাই।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ঘোষণা করা হচ্ছেঃ “তারা তাদের উপর অবতারিত আল্লাহর কিতাবগুলিকে টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল। যে মাস্আলাকে ইচ্ছা করতো মানতে এবং যেটা মন মত হতো না তা পরিত্যাগ করতো।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা আহলে কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। তারা কিতাবের কিছু অংশ মানতো এবং কিছু অংশ মানতো না। এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কাফিরদের উক্তিকে বুঝানো হয়েছে। তারা কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে বলতোঃ “এটা যাদু, ভবিষ্যৎ কথন এবং পূর্ববর্তীতের কাহিনী। আর এর কথক হচ্ছে যাদকুর, পাগল, ভবিষ্যদ্বক্তা ইত্যাদি।”‘সীরাতে ইবনু ইসহাক’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, একবার কুরআনের নেতৃবর্গ ওয়ালীদ ইবনু মুগীরার নিকট একত্রিত হয়। হজ্বের মওসুম নিকটবর্তী ছিল। ওয়ালীদ ইবনু মুগীরাকে তাদের মধ্যে খুবই সম্ভ্রান্ত ও বুদ্ধিমান লোক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সে সকলকে সম্বোধন করে বললোঃ “দেখো, হজ্জ্ব উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে আরবের বহু লোক এখানে সমবেত হবে। তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছি যে, এই লোকটি (নবী, সঃ) বড়ই হাঙ্গামা সৃষ্টি করে রেখেছে। এর সম্পর্কে ঐ বহিরাগত লোকদেরকে কি বলা যায়? কোন একটি কথার উপর সবাই একমত হয়ে যাও। কেউ এক কথা বলবে এবং অন্য জন অন্য কথা বলবে। এরূপ যেন না হয়। বরং সবাই এক কথাই বলবে এক একজন এক এক কথা বললে তোমাদের উপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। এ বিদেশীরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করবে।” তখন বললোঃ “হে আবদে শামস্! আপনিই কোন একটি প্রস্তাব পেশ করুন।” সে বললোঃ “তোমরাই আগে বল, তাহলে আমি চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ পাবো।” তারা তখন বললোঃ “আমাদের মতে সবাই তাকে ভবিষ্যদ্বক্তা বলবে।” সে বললোঃ “না, এটা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত কথা।” সে বললোঃ “এটাও ভুল।” তারা বললোঃ “তা হলে কবি?” সে উত্তরে বললোঃ “সে তো কবিতা জানেই না।” তারা বললোঃ “তাকে আমরা যাদুকর বলবো কি?” সে উত্তর দিলোঃ না, সে যাদুকরও নয়।” তারা বললোঃ “তা হলে আমরা তাকে কি বলবো?” সে বললোঃ “জেনে রেখো যে, তোমরা তাকে যাই বল না কেন, দুনিয়াবাসী জেনে। নেবে যে, সবই ভুল। তার কথাগুলি মিষ্টি মাখানো। কাজেই আমাদের কোন কথাই টিকবে না। তবুও কিছু বলতেই হবে। তোমরা তাকে যাদুকরই বলবে।”সবাই এতে একমত হয়ে গেল। এই আয়াতগুলিতে এরই আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ “তোমার প্রতিপালকের শপথ! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই সেই বিষয়ে যা তারা করে। অর্থাৎ কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ “যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই তাঁর শপথ! তোমাদের প্রত্যেকটি লোক কিয়ামতের দিন এককভাবে আল্লাহর সামনে হাজির হবে, যেমন প্রত্যেক ব্যক্তি এককভাবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদ দেখে থাকে।” আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আদম সন্তান! আমার ব্যাপারে কিসে তোমাকে গর্বিত করে তুলেছিল? হে আদমের (আঃ) পুত্র! যা তুমি শিক্ষা করেছিলে তার থেকে কি আমল করেছিলেঃ হে আদম সন্তান! আমার রাসূলদেরকে তুমি কি জবাব দিয়েছিলে?” আবুল আলিয়া (রঃ) বলেন, প্রত্যেককে দুটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রথম প্রশ্ন হবেঃ “তুমি কাকে মাবুদ বানিয়েছিলে”? দ্বিতীয় প্রশ্ন হবেঃ “তুমি রাসূলের (সঃ) আনুগত্য স্বীকার করেছিলে কি কর নাই”? ইবনু উইয়াইনা (রঃ) বলেন, আমল এবং মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হে মুআয (রাঃ)! মানুষকে কিয়ামতের দিন তার সমস্ত আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। হে মুআয (রাঃ)! দেখো, যেন কিয়ামতের দিন এরূপ না হয় যে, তুমি আল্লাহর নিয়ামত কম খেয়ালকারী রয়ে যাও।”এই আয়াতে তো রয়েছে যে, প্রত্যেককে তার আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আর সূরায়ে আর-রাহমানে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ মানব এবং দানবকে তার গুনাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না। (৫৫:৩৯) এই দুই আয়াতের মধ্যে হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি অনুযায়ী সামঞ্জস্যের উপায় এই যে, “তুমি কি এই আমল করেছিলে? এ কথা জিজ্ঞেস করা হবে না। বরং জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তুমি এই কাজ কেন করেছিলে?
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
📘 Please check ayah 15:99 for complete tafsir.
إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ
📘 Please check ayah 15:99 for complete tafsir.
الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
📘 Please check ayah 15:99 for complete tafsir.
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
📘 Please check ayah 15:99 for complete tafsir.
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ
📘 Please check ayah 15:99 for complete tafsir.
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
📘 ৯৪-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তুমি জনগণের কাছে আমার বাণী স্পষ্টভাবে পৌছিয়ে দাও। এ ব্যাপারে কোনই ভয় করবে না। মুশরিকদের কাছে তুমি একত্ববাদ খোলাখুলি ভাবে প্রচার করো। নামাযে কুরআন কারীম উচ্চ স্বরে পাঠ করো।এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোপনীয় ভাবে প্রচার কার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি এবং তার সাহাবীগণ প্রকাশ্য ভাবে তাবলীগের কাজ চালিয়ে যেতে শুরু করেন।আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! এ কাজে মুশরিকদের ঠাট্টা বিদ্রুপকে। তুমি উপেক্ষা করো। বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্যে আমিই যথেষ্ট। প্রচার কার্যে তুমি মোটেই অবহেলা প্রদর্শন করো না। এরা তো চায় যে, তুমি তাবলীগের কাজে অমনোযোগী হয়ে যাও। সুতরাং তোমার কর্তব্য হচ্ছে দ্বিধাসংকোচহীন ভাবে পুরোমাত্রায় প্রচারকার্য চালিয়ে যাওয়া এবং তাদেরকে মোটেই ভয় না করা। আমি আল্লাহ স্বয়ং তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী। আমিই তোমাকে তাদের ক্ষতি ও দুষ্টামি থেকে রক্ষা করবো। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তুমি পৌছিয়ে দাও, আর তা যদি তুমি না কর তাহলে তুমি তাঁর রিসালাতকে পৌছিয়ে দিলে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ (এর অনিষ্ট) থেকে রক্ষা করবেন।”হযরত আনাস (রাঃ) (আরবি) আয়াত সম্পর্কে বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পথ দিয়ে গমন করছিলেন। এমতাবস্থায় মুশরিকরা তাঁকে জ্বালাতন করে। তখন তার রক্ষক হিসেবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং তাদেরকে চওকা মারেন। ফলে তাদের দেহ এমন ক্ষত বিক্ষত হয় যে, যেন তাতে বর্শা দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। তাতেই তারা মৃত্যু মুখে পতিত হয়। তারা ছিল মুশরিকদের বড় বড় নেতা। তারা ছিল বেশ বয়স্ক লোক এবং তাদেরকে খুবই সম্ভ্রান্ত মনে করা হতো। আসওয়াদ ইবনু আবদিল মুত্তালিব আবু যামআ ছিল বানু আসাদ গোত্রভূক্ত। সে ছিল রাসূলুল্লাহর (সঃ) চরমতম শত্রু। সে তাঁকে খুবই দুঃখ-কষ্ট দিতো এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। তিনি অসহ্য হয়ে তার জন্যে বদদুআ’ও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি তাকে অন্ধ ও সন্তানহীন করে দিন।” আসওয়াদ ছিল বানু যাহরার অন্তর্ভূক্ত। বানু মাখযুম গোত্রভূক্ত ছিল ওয়ালীদ। আস ইবনু ওয়ায়েল ছিল বানু সাহমের অন্তর্ভূক্ত। হারিস ছিল খুযাআ গোত্রভূক্ত। এই লোকগুলি সদা সর্বদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) ক্ষতি করতেই থাকতো। তারা জনগণকেও তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতো। যতদূর কষ্ট দেয়ার শক্তি তাদের ছিল তাতে তারা মোটেই ত্রুটি করতো না। তাদের উৎপীড়ন যখন চরম পর্যায়ে পৌছে গেল এবং কথায় কথায় রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বিদ্রুপ করতে থাকলো তখন আল্লাহ তাআলা (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াত নাযিল করলেন। (এটা হাফিয আবু বকর আল বায্যার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যান। এমন সময় আসওয়াদ ইবনু আবদে ইয়াছ তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার পেটের দিকে ইশার করেন। এর ফলে তার পেটের অসুখ হয়ে যায় এবং তাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ইতিমধ্যে ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা গমন করে। খোযা’ গোত্ৰীয় একটি লোকের তীরের ফলকের সামান্য আঘাতে তার পায়ের গোড়ালী কিছুটা আহত হয়েছিল। এরপর সুদীর্ঘ দু' বছর কেটে গিয়েছিল। হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঐ দিকেই ইশারা করেন। এর ফলে ঐ ক্ষতস্থানটুকু ফুলে যায় ও পেকে ওঠে এবং তাতেই সে মৃত্যু বরণ করে। এরপর গমন করে আস ইবনু ওয়ায়েল। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার পায়ের পাতার দিকে ইশারা করেন। কিছু দিন আগে তায়েফ গমনের উদ্দেশ্য সে তার গাধার উপর আরোহণ করে। পথে সে গাধার পিঠ থেকে পড়ে যায় এবং তার পায়ের পাতায় কাটা ঢুকে যায়। তাতেই তার জীবন লীলা শেষ হয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) হারিছের মাথার দিকে ইশারা করেন। এর ফলে তার মাথা দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাতেই তার মৃত্যু হয়। এই সব কষ্টদাতাদের নেতা ছিল ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা। সেই তাদেরকে একত্রিত করেছিল। তারা ছিল সংখ্যায় পাঁচ জন বা সাতজন। তারাই ছিল প্রধান এবং তাদের ইঙ্গিতেই ইতর লোকেরা ইতরামি করতো। এই লোকগুলি এই সব বাজে ও জঘন্য ব্যবহারের সাথে সাথে একাজও করতো যে, তারা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যদেরকে শরীক করতো। তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি এখনই ভোগ করতে হবে। আরো যারা রাসূলের (সঃ) বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করবে তাদেরও অবস্থা অনুরূপই হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ) আমি তো জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়। কিন্তু তুমি তাদের কথার প্রতি মোটেই ভ্রুক্ষেপ করো না। আমি তোমার সাহায্যকারী। তুমি তোমার প্রতিপালকের যিকর, পবিত্রতা ঘোষণা এবং গুণকীর্তনে লেগে থাকো। মন ভরে তাঁর ইবাদত কর, নামাযের খেয়াল রেখো এবং সিজদাকারীদের সঙ্গ লাভ কর।”হযরত নাঈম ইবনু আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! তুমি দিনের প্রথমভাগে চার রাকআত নামায হতে অপারগ হয়ো না, তা হলে আমি তোমার জন্যে ওর শেষ ভাগ যথেষ্ট করবো।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এজন্যেই রাসূলুল্লাহর (সঃ) অভ্যাস ছিল এই যে, যখন তিনি কোন ব্যাপারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়তেন তখন নামায শুরু করে দিতেন।এই শেষ আয়াতে (আরবি) শব্দ দ্বারা মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। এর দলীল হচ্ছে সূরায়ে (আরবি) এর ঐ আয়াতগুলি যেগুলিতে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামীরা নিজেদের অপরাধ বর্ণনা করতে গিয়ে বলবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা বলবেঃ আমরা নামাযীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না। আর আমরা আলোচনাকারীদের সাথে। আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। আমরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন পর্যন্ত।” (৭৪:৪৩-৪৭) এখানেও এর স্থলে (আরবি) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।একটি সহীহ, হাদীসেও রয়েছে যে, হযরত উসমান ইবনু মাঊনের (রাঃ) মৃত্যুর পর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নিকট গমন করেন তখন উম্মুল আ’লা (রাঃ) নাম্নী আনসারের একটি মহিলা বলেনঃ “হে আবুস সায়েব (রাঃ) । আপনার উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে সম্মান দান করেছেন।” তাঁর একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মান দান করেছেন?” উত্তরে মহিলাটি বলেনঃ “আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উৎসর্গিত হোক! তার উপর আল্লাহ তাআলা দয়া না করলে আর কার উপর করবেন?” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, তার মৃত্যু হয়ে গেছে এবং আমি তার মঙ্গলেরই আশা রাখি।” এই হাদীসেও (আরবি) এর স্থলে (আরবি) শব্দ রয়েছে।এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের জ্ঞান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত নামায ইত্যাদি ইবাদত তার উপর ফরয। তার অবস্থা যেমন থাকবে সেই অনুযায়ী সে নামায আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসে পড়তে না পারলে শুয়ে শুয়েই পড়বে।” এর দ্বারা বদমাযহাবীরা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির লক্ষ্যে একটি কথা বানিয়ে নিয়েছে। তা এই যে, তাদের মতে মানুষ যে পর্যন্ত পূর্ণতার পর্যায়ে না পৌছে সেই পর্যন্ত তার উপর ইবাদত ফরয থাকে। কিন্তু যখনই সে মারেফাতে মনযিলগুলো অতিক্রম করে ফেলে তখন তার উপর থেকে ইবাদতের কষ্ট লোপ পেয়ে যায়। এটা সরাসরি বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতামূলক কথা। এই লোকগুলি কি এটুকুও বুঝে না যে, নবীগণ, বিশেষ করে নবীকূল শিরমণি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীবর্গ মারেফাতের সমস্ত মনযিল অতিক্রম করেছিলেন এবং তারা খোদায়ী বিদ্যা এবং পরিচিতির ক্ষেত্রে সারা দুনিয়া অপেক্ষা পূর্ণতম ছিলেন। মহান আল্লাহর গুণাবলী এবং তাঁর পবিত্র সত্তা সম্পর্কে তাঁরাই সবচেয়ে বেশী জ্ঞান রাখতেন। এতত্সত্ত্বেও তারা সকলের চেয়ে বেশী ইবাদত করতেন এবং দুনিয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাতেই লেগে রয়েছিলেন। তাঁরা মহান প্রতিপালকের আনুগত্যের কাজে সমস্ত দুনিয়া হতে বেশী নিমগ্ন ছিলেন। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, এখানে (আরবি) দ্বারা (আরবি) উদ্দেশ্য। সমস্ত মুফাসির, সাহাবী, তাবিঈ প্রভৃতির এটাই মাযহাব। অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে, তিনি আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। আমরা তার কাছে ভাল কাজে সাহায্য চাচ্ছি। তার পবিত্র সত্তার উপরই আমাদের ভরসা। আমরা সেই মালিক ও হাকিমের কাছে এই প্রার্থনা জানাই যে, তিনি যেন আমাদেরকে পূর্ণ ইসলাম ও ঈমান এবং পুণ্য কাজের উপর আমাদের মৃত্যু ঘটান। তিনি বড় দাতা এবং পরম দয়ালু।