slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الأنفال

(Al-Anfal) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ ۖ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ ۖ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

📘 হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ‘আনফাল গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদকে বলা হয়। তিনি আরও বলেন যে, সূরায়ে আনফাল বদর যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেনঃ “আনফাল হচ্ছে ঐ গনীমতের মাল যাতে একমাত্র নবী (সঃ) ছাড়া আর কারও অধিকার নেই। তিনি বলেন যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে যখন কোন কথা জিজ্ঞেস করা হতো তখন তিনি বলতেনঃ “আমি অনুমতিও দিচ্ছি না এবং নিষেধও করছি না।” অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাআলা নবী (সঃ)-কে নিষেধকারী, আদেশকারী এবং হারাম ও হালালের ব্যাখ্যাদানকারী রূপে প্রেরণ করেছেন।” কাসিম (রঃ) বলেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে একটি লোক এসে তাঁকে আনফাল’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন তিনি উত্তরে বলেনঃ “আনফাল এই যে, একটি লোক যুদ্ধে অপর একটি লোককে হত্যা করে তার ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্র গনীমতের মাল হিসেবে নিয়ে নিলো। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো। তিনি ঐ উত্তরই দিলেন। সে আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে ওঠেন এবং তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “এ লোকটির দৃষ্টান্ত তো ঐ ব্যক্তির মত যাকে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) প্রহার করেছিলেন, এমন কি তার দেহের রক্ত তার পায়ের গোড়ালি দিয়ে বইতে শুরু করেছিল।” তখন লোকটি তাঁকে বলে, “আপনি কি ঐ ব্যক্তি নন যে, আল্লাহ উমার (রাঃ)-এর প্রতিশোধ আপনার দ্বারা গ্রহণ করেছেন?” এই ইসনাদটি বিশুদ্ধ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নফলের তাফসীর ঐ গনীমতের মাল দ্বারা করেছেন যা যুদ্ধে ছিনিয়ে নেয়া হয়। আর ইমাম কোন কোন লোককে মূল গনীমত বন্টনের পরে আরও কিছু বেশী প্রদান করেন। অধিকাংশ ফকীহও ‘আনফাল’ -এর ভাবার্থ এটাই গ্রহণ করেছেন। জনগণ নবী (সঃ)-কে ঐ পঞ্চমাংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে যা চার অংশ বের করার পরে অবশিষ্ট থেকে যায়। তখন (আরবী)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং মাসরূক (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের প্রয়োগ যুদ্ধ দিবসে। ছিনিয়ে নেয়া সম্পদের উপর নয়, বরং যুদ্ধের ব্যুহ রচনা করার পূর্বে হয়ে থাকে। কেননা, ওটাও তো এক প্রকারের বাড়াবাড়ি। ইবনে মুবারক (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে নবী (সঃ) ! তোমাকে মানুষ ঐ ক্রীতদাসী, ক্রীতদাস, সওয়ারী, আসবাবপত্র ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে যেগুলো বিনা যুদ্ধে মুসলমানরা মুশরিকদের নিকট থেকে লাভ করেছে। সুতরাং এর উত্তর এই যে, এ সবকিছুর অধিকারী হচ্ছেন নবী (সঃ) ! তিনি নিজের ইচ্ছামত ওগুলো বিলি বন্টন করতে পারেন। এর দ্বারা এই ফল বের হলো যে, তিনি মালে ফাই’কে (আরবী) মনে করতেন। আর মালে ফাই’ ঐ মালকে বলা হয় যা বিনা যুদ্ধে কাফিরদের নিকট থেকে লাভ করা যায়। আর অন্যদের মত এই যে, সারিয়ার মাধ্যমে যে মাল মুসলমানদের হস্তগত হয় সেটাই আনফাল। অর্থাৎ মুসলমানগণ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে গিয়েছেন এবং কাফিরগণ যুদ্ধ না করেই নিজেদের সম্পদ ও আসবাবপত্র ছেড়ে পালিয়ে গেল। আর সেই সম্পদ মুসলমানদের হাতে আসলো এবং নবী (সঃ) ঐ সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হচ্ছে- মুসলিম সেনাবাহিনীর কোন অংশবিশেষকে সেই সময়ের ইমাম তাদের কর্মনৈপুণ্য ও উচ্চমনার প্রতিদান হিসেবে সাধারণ বন্টনের পরেও কিছু বেশী প্রদান করে থাকেন।সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেনঃ বদরের যুদ্ধে আমার ভাই উমাইর নিহত হয়। তখন আমিও সাঈদ ইবনুল আসকে হত্যা করে ফেলি এবং তার যুলকুইফা নামক তরবারী খানা নিয়ে নিই। ওটা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে নিয়ে আসলে তিনি আমাকে বলেনঃ “ওটা অধিকৃত মালের স্তুপের মধ্যে রেখে দাও।” আমি তখন ওটা তাতে রেখে দেয়ার জন্যে যাচ্ছিলাম। ঐ সময় আমার মনের অবস্থা কিরূপ ছিল তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। এক তো ভাই-এর হত্যা, দ্বিতীয়তঃ আমি যা কিছু ছিনিয়ে নিয়েছিলাম সেটাও আমাকে জমা দিতে হচ্ছে! কিন্তু আমি অল্প দূর গিয়েছি এমন সময় সূরায়ে আনফালের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ডেকে নিয়ে বলেনঃ “যাও, তুমি তোমার ছিনিয়ে নেয়া মাল নিয়ে নাও।” সা’দ ইবনে মালিক হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত সা'দ (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ আজ আমাকে মুশরিকদের নিকট পরাজিত হওয়ার গ্লানি থেকে রক্ষা করেছেন। সুতরাং এখন এ তরবারী খানা আমাকে দান করুন। তখন তিনি বললেনঃ “এ তরবারী তোমারও নয় আমারও নয়। কাজেই ওটা রেখে দাও।” আমি তখন ওটা রেখে দিয়ে ফিরে আসলাম। আর আমি মনে মনে বললাম, আমি যদি এটা না পাই তবে কেউ অবশ্যই পেয়ে যাবে যে আমার মত এর হকদার নয় এবং আমার ন্যায় বিপদ আপদও সহ্য করেনি। এমন সময় কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি নবী (সঃ)-এর কাছে গেলাম এবং আরয করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন অহী অবতীর্ণ হয়েছে কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “তুমি আমার কাছে তরবারী চেয়েছিলে । কিন্তু ওটা আমার ছিল না যে, তোমাকে দিতাম। এখন আল্লাহ পাক (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। এ আয়াতের মাধ্যমে তিনি আমাকে ওটা প্রদান করেছেন। আমি এখন ওটা তোমাকে দিয়ে দিলাম”।”সা'দ (রাঃ) বলেনঃ আমার ব্যাপারে চারটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। (১) বদরের যুদ্ধে একটি তরবারীর উপর আমি অধিকার লাভ করেছিলাম। আমি নবী। (সঃ)-এর কাছে এসে বললাম, এ তরবারীটি আমাকে দান করুন। তিনি বললেনঃ “যেখান থেকে ওটা গ্রহণ করেছে। ওখানেই রেখে দাও।” তিনি দু'বার এ কথা বললেন। পুনরায় আমি আবেদন জানালে তিনি ঐ কথাই বলেন। সেই সময় সূরায়ে আনফালের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (২) আমার ব্যাপারে দ্বিতীয় যে আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তা হচ্ছে- (আরবী) (৪৬:১৫) -এই আয়াতটি। (৩) তৃতীয় হচ্ছে -(আরবী) (৫:৯০) -এই আয়াতটি এবং (৪) চতুর্থ হচ্ছে অসিয়তের আয়াত।”মালিক ইবনে রাবীআ (রাঃ) বলেনঃ “বদরের যুদ্ধে ইবনে আ’ইযের বরযুবান’ নামক তরবারীটি আমার হস্তগত হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন নির্দেশ দেন যে, প্রত্যেকে যেন নিজ লুটের মাল জমা দিয়ে দেয়, তখন আমিও এই তরবারীটি জমা দিয়ে দেই। আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, কেউ তাঁর কাছে কোন কিছু চাইলে তাকে তিনি বঞ্চিত করতেন না। আরকাম (রাঃ) এই তরবারীটি দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর কাছে তা চেয়ে বসেন। ফলে তিনি তাঁকে তা দিয়ে দেন।” আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার দ্বিতীয় কারণঃ আবূ উমামা (রাঃ) বলেনঃ আনফাল সম্পর্কে আমি আবূ উবাদা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমাদের সাথে বদরের মুজাহিদগণও ছিলেন। আর আনফালের আয়াত ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন আনফালের জন্যে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় এবং আমরা পরস্পর উচ্চবাচ্য করতে শুরু করি। তখন আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারটা আমাদের হাত থেকে নিয়ে নেন এবং নবী (সঃ)-কে প্রদান করেন। এখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই গনীমতের মাল মুসলমানদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করে দেন।” উবাদা ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ “আমি বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে শরীক হয়েছিলাম। আল্লাহ শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। এখন একটি দল শক্রদের পশ্চাদ্ধাবন করলো এবং পলাতকদের হত্যা করলো। আর একদল সৈন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং তাদেরকে পরিবেষ্টন করলো। আর একটি দল নবী (সঃ)-কে ঘিরে রেখে তার হিফাযত করতে থাকলো যেন শত্রুরা তার কোন ক্ষতি করতে না পারে। যখন রাত্রি হলো এবং তিনি গনীমতের মাল বন্টন করতে শুরু করলেন তখন যারা গনীমতের মাল একত্রিত করে রক্ষিত রেখেছিল তারা বলতে লাগলোঃ “এর হকদার একমাত্র আমরাই।” যারা শত্রুর পশ্চাদ্ধাবন করেছিল তারা বললোঃ “শত্রুকে পরাজিত করার কারণ আমরাই। কাজেই এর হকদার শুধু আমরাই।” আর যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রক্ষণাবেক্ষণ করছিল তারা। বললোঃ “আমাদের এই আশংকা ছিল যে, না জানি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন বিপদে পতিত হন। সুতরাং আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিলাম।”তখন (আরবী) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এর পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) গনীমতের মাল মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, তিনি শক্রদের মধ্যে অবস্থানকালেই গনীমতের এক চতুর্থাংশ বন্টন করে দিতেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতে ফিরে আসার পর এক তৃতীয়াংশ বন্টন করতেন। আর ওটা নিজের জন্যে গ্রহণ করা তিনি সমীচীন মনে করতেন না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরের যুদ্ধের দিন বলেছিলেনঃ “যে ব্যক্তি এমন এমন কাজ করবে তার জন্যে তাকে এরূপ এরূপ পুরস্কার দেয়া হবে।” এ কথা শুনে যুবকদের দল বীরত্ব প্রমাণ করার জন্যে উঠে পড়ে লাগলেন। আর বৃদ্ধের দল মরিচা রক্ষা ও পতাকা ধারণ করে থাকলেন। অতঃপর যখন গনীমতের মাল আসলো তখন যার জন্যে যা ওয়াদা করা হয়েছিল তা নেয়ার জন্যে তিনি হাযির হন। বুদ্ধগণ বললেনঃ “আমাদের উপর তোমাদের প্রাধান্য হতে পারে না। আমরা তোমাদের পিছনে আশ্রয়স্থল হিসেবে ছিলাম। যদি তোমাদের পরাজয় ঘটতো তবে তোমরা আমাদের কাছেই আশ্রয় লাভ করতে।” এভাবে তাদের। মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে থাকলো। তখন সূরায়ে আনফালের এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘোষণা করেনঃ “যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে তাকে নিহত ব্যক্তির মাল থেকে এই এই পুরস্কার দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি কাউকে বন্দী করেছে তার জন্যে এই এই পুরস্কার রয়েছে। সুতরাং আবুল ইয়াসার দুজন বন্দীকে নিয়ে এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি যা ওয়াদা করেছিলেন তা পূরণ করুন!” এ কথা শুনে হযরত সা'দ ইবনে উবাদা (রাঃ) বলে উঠলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আপনি এভাবে দিতে থাকেন তবে আপনার অন্যান্য সাহাবীদের জন্যে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আমরা যে যুদ্ধক্ষেত্রে অটল থেকেছি তার কারণ এটা ছিল না যে, আমাদের মাল বা অন্য কিছু পাওয়ার লোভ ছিল এবং কারণ এটাও ছিল না যে, আমরা শত্রু দেখে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম। আমরা তো এখানে শুধুমাত্র এ জন্যেই স্থির রয়েছিলাম যে, আপনার উপর যেন পিছন থেকে আক্রমণ না করা হয়। স্থায়ী হিফাযতেরও অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।” মোটকথা, এ ধরনের কথা কাটাকাটি ও বচসা হয়ে গেল এবং এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী)অর্থাৎ “জেনে রেখো যে, তোমরা যে গনীমতের মাল লাভ করছে তার এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহর জন্যে।” (৮:৪১) ইমাম আবু উবাইদিল্লাহ (রঃ) তাঁর (আরবী) নামক পুস্তকে লিখেছেন যে, গনীমতের মালকে আনফাল বলা হয় এবং ঐসব মালকে আনফাল বলা হয় যা মুসলমানরা অমুসলিম রাষ্ট্রের কাফিরদের নিকট থেকে লাভ করে থাকে। আনফালের উপর সর্বপ্রথম রাসূল (সঃ)-এর হক রয়েছে যেমন আল্লাহ তা'আলা কুরআন পাকে বলে দিয়েছেন। বদরের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) গনীমতের মাল আল্লাহ তা'আলার হিদায়াত অনুযায়ী এক পঞ্চমাংশ বের না করেই বন্টন করেছিলেন। যেমন আমরা সা’দ (রাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখ করেছি। এরপর এক পঞ্চমাংশ বের করে দেয়ার আয়াত অতীর্ণ হয়। তখন পূর্ব আয়াত মানসূখ বা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু যায়েদের বর্ণনা রয়েছে যে, পূর্ব আয়াত মানসূখ হয়নি, বরং ওটাও ঠিকই রয়েছে। আবু উবাইদাহ বলেন যে, এ ব্যাপারে আরও হাদীস রয়েছে। জমাকৃত আনফাল গনীমতের মালকে বলা হয়। কিন্তু এর এক পঞ্চমাংশ নবী (সঃ)-এর পরিবারবর্গের জন্যে নির্দিষ্ট, যেমন কুরআন পাকে ও হাদীস শরীফে রয়েছে। আরবের পরিভাষায় আনফাল ঐ ইহসানকে বলা হয় যা শুধুমাত্র সৎ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে, ইহসান তার উপর ওয়াজিব থাকে না। এটাই হচ্ছে ঐ গনীমতের মাল যা আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্যে হালাল করেছেন এবং এটা ঐ জিনিস যা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যেই নির্দিষ্ট। মুসলমানদের পূর্বে অন্য কোন উম্মতের জন্যে এটা হালাল ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমাকে এক পঞ্চমাংশের অধিকারী বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমার পূর্বে আর কাউকেও এর অধিকারী করা হয়নি।” আবু উবাইদাহ্ বলেন যে, যদি নেতা সেনাদলের কাউকে কোন পুরস্কার প্রদান করেন যা তার নির্দিষ্ট অংশ হতে অতিরিক্ত তবে ওটাকে নফল বা আনফাল বলা হয়। আর এটা তার কর্মনৈপুণ্য এবং শত্রুদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হয়ে থাকে। এই নফল, যা নেতার পক্ষ থেকে কারও কর্মকুশলতার কারণে দেয়া হয় তা চার পন্থায় হয়ে থাকে এবং প্রত্যেক পন্থা আপন স্থানে অন্য পন্থা হতে পৃথক। প্রথম হচ্ছে নিহত ব্যক্তির লুট করা মাল ও আসবাবপত্র। এটা হতে এক পঞ্চমাংশ বের করা হয় না। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ নফল যা পঞ্চমাংশ পৃথক করার পর দেয়া হয়ে থাকে। যেমন নেতা কোন ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীকে শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলেন! তারা গনীমতের মাল নিয়ে ফিরে আসলো। তখন নেতা ঐ সেনাদলকে এর থেকে চতুর্থাংশ বা তৃতীয়াংশ বন্টন করে দিলেন। তৃতীয় হচ্ছে এক পঞ্চমাংশ বের করার পর বাকীটা বন্টন করা হয়ে থাকে। এর মধ্য থেকে নেতা কাউকে তার কর্মতৎপরতা বিবেচনা করে যা দেয়া সমীচীন মনে করেন তা দিয়ে দেন। তারপর বাকীটা বন্টন করে দেন। চতুর্থ পন্থা এই যে, এক পঞ্চমাংশ বের করার। পূর্বেই সমস্ত গনীমত থেকে অতিরিক্ত প্রদান করা হয়ে থাকে। আর এটা হচ্ছে পানি বহনকারী, রাখাল, সহিস ও অন্যান্য মজুরদের হক। মোটকথা, এটা কয়েকভাবে বন্টন করা হয়।ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেন যে, গনীমতের মালের মধ্য থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার পূর্বে মুজাহিদগণকে নিহতদের যে আসবাবপত্র ও মালধন প্রদান করা হয় ওটা আনফালের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় কারণ এই যে, পাঁচ অংশের মধ্য থেকে যে এক পঞ্চমাংশ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে নির্ধারিত থাকতো তা থেকে তিনি যাকে যতটুকু দেয়ার ইচ্ছা করতেন তা দিয়ে দিতেন সেটাও নফল। সুতরাং নেতার উচিত যে, তিনি যেন শত্রুদের সংখ্যাধিক্য ও মুসলমানদের সংখ্যার স্বল্পতা প্রভৃতি জরুরী বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সুন্নাত পন্থার অনুসরণ করেন। যদি এ ধরনের যৌক্তিকতার আবির্ভাব না ঘটে তবে নফল বের করা জরুরী নয়।তৃতীয় কারণ এই যে, নেতা একটি দলকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে প্রেরণ করলেন এবং তাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, যে কেউ যা কিছু লাভ করবে তা থেকে যেন এক পঞ্চমাংশ পৃথক করে দিয়ে অবশিষ্ট গ্রহণ করে। আর এটা যুদ্ধে গমনের পূর্বেই পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে মীমাংসিত হয়। কিন্তু তাঁদের এই বর্ণনায় যে বলা হয়েছে- ‘বদরের গনীমত হতে এক পঞ্চমাংশ বের করা হয়নি', এতে প্রতিবাদের অবকাশ রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেছিলেনঃ “এ উট দুটি সেই উট যা আমরা বদরের দিন পাঁচ অংশের মধ্য থেকে লাভ করেছিলাম।” আমি কিতাবুস সীরাহ্’ এর মধ্যে এটা পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছি।(আরবী) অর্থাৎ তোমরা এ ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পর মিলেমিশে বাস কর। একে অপরের উপর অত্যাচার করো না এবং পরস্পর শত্রু হয়ে যেয়ো না। আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে যে হিদায়াত ও জ্ঞান দান করেছেন তা কি এই মাল হতে উত্তম নয় যার জন্যে তোমরা যুদ্ধ করছো? তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর অনুগত হয়ে যাও। নবী (সঃ) যে ভাগ বন্টন করছেন তা তিনি আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই করছেন। তাঁর ভাগ বন্টন ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে- তোমরা পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করো না এবং গালাগালিও করো না। আনাস (রাঃ) বলেনঃ একদা আমরা নবী (সঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি মুচকি হাসতে রয়েছেন। এ দেখে হযরত উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার হাসির কারণ কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ আমার উম্মতের দু’জন লোক আল্লাহর সামনে জানুর উপর ভর করে দাড়িয়ে গেছে। একজন আল্লাহকে বলছে- “হে আমার প্রভু! এ লোকটি আমার উপর অত্যাচার করেছে। আমি এর প্রতিশোধ চাই।” আল্লাহ পাক তখন তাকে বলছেনঃ “এ লোকটিকে অত্যাচারের বদলা দিয়ে দাও।” অত্যাচারী উত্তরে বলছে, “হে আমার প্রভু! এখন আমার কোন পুণ্য অবশিষ্ট নেই যে, আমি একে অত্যাচারের বিনিময়ে তা প্রদান করতে পারি।” তখন ঐ অত্যাচারিত ব্যক্তি বলছে- “হে আল্লাহ! আমার পাপের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দিন।” এ কথা বলতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কেঁদে ফেললেন এবং তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেনঃ ওটা বড়ই কঠিন দিন হবে। তাক এর প্রয়োজন বোধ করবে যে, সে তার পাপের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়। তখন আল্লাহ পাক প্রতিশোধ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলবেনঃ “তুমি মাথা উঠিয়ে জান্নাতের প্রতি লক্ষ্য কর!” সে তখন মাথা উঠিয়ে জান্নাতের দিকে তাকাবে এবং আরয করবেঃ “হে আমার প্রভু! এখানে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং মণি-মুক্তার তৈরী অট্টালিকা রয়েছে! হে আল্লাহ! এ অট্টালিকা কোন নবী, সিদ্দীক ও শহীদের কি?” আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ “যে কেউ এর মূল্য আদায় করবে তাকেই এটা দিয়ে দেয়া হবে।” সে বলবেঃ “হে আমার প্রভু! কে এর মূল্য আদায় করতে সক্ষম হবে?” আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “এর মূল্য তুমিই আদায় করতে পার।” তখন সে আরয করবেঃ “হে আল্লাহ! কিভাবে আমি এর মূল্য আদায় করতে পারি?” মহা মহিমান্বিত আল্লাহ তখন বলবেনঃ “এটা এভাবে যে, তুমি তোমার ভাইকে ক্ষমা করে দেবে।” সে বলবেঃ “হে আমার প্রভু! ঠিক আছে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” তখন। আল্লাহ পাক বলবেনঃ “এখন তোমরা উভয়ে একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ কর!” এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরের মধ্যে সন্ধি ও মিল প্রতিষ্ঠিত কর। কেননা, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলাও মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে সন্ধি করিয়ে দিবেন।”

وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ ۚ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

📘 ৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের দিন নবী (সঃ) স্বীয় সহচরদেরকে গণনা করে দেখলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ’র কিছু বেশী। আর মুশরিকদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি অনুমান করলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও অধিক। নবী (সঃ) কিবলামুখী হয়ে দুআ করতে লাগলেন। তার গায়ে একখানা চাদর ছিল এবং তিনি লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আজ পুরো করুন। যদি আপনি মুসলমানদের এই ছোট দলটিকে আজ ধ্বংস করে দেন তবে দুনিয়ার বুকে আপনার ইবাদত করার কেউই থাকবে না এবং তাওহীদের নাম ও চিহ্নটুকুও মুছে যাবে।” তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিলেন ও প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন, এমন কি তাঁর কাঁধ থেকে চাদরখানা পড়ে যাচ্ছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে চাদরখানা তার কাঁধে উঠিয়ে দিলেন এবং তার পিছনে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর কাছে আপনার প্রার্থনা যথেষ্ট হয়েছে। তিনি স্বীয় ওয়াদা পূর্ণ করবেন।” তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করছিলে, আর তিনি সেই প্রার্থনা কবুল করেছিলেন, (এবং তিনি বলেছিলেন) আমি তোমাদেরকে এক সহস্র ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবো, যারা একের পর এক আসবে।” সুতরাং যখন যুদ্ধ সংঘটিত হলো তখন আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের পরাজয় ঘটালেন। তাদের সত্তরজন। নিহত হলো এবং সত্তরজন বন্দী হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর সঙ্গে বন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা তো আপনার চাচাতো ভাই এবং আপনার গোত্রীয় ও বংশীয় লোক। সুতরাং এদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিন। মুক্তিপণের অর্থের মাধ্যমে আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে এবং কাফিরদের উপর জয়যুক্ত হওয়ার শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, আল্লাহ তাআলা হয়তো তাদেরকে হিদায়াত দান করবেন। অতঃপর এরাই আমাদের শক্তি বাড়িয়ে দিবে।” এর পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে উমার (রাঃ)! এ ব্যাপারে তোমার মত কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! হযরত আবু বকর (রাঃ) যে মত পোষণ করেছেন আমি ঐ মত পোষণ করি না। আপনি আমাকে নির্দেশ দিন, আমি আমার আত্মীয় কাফিরদেরকে হত্যা করি এবং আলী (রাঃ)-কে হুকুম দিন তিনি যেন তাঁর ভাই আকীলের গর্দান উড়িয়ে দেন। আর হামযা (রাঃ) যেন তাঁর অমুক ভাইয়ের দেহ দ্বিখণ্ডিত করেন, যাতে আমরা আল্লাহর কাছে এটা প্রমাণ করতে পারি যে, মুশরিকদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন করুণা নেই। এই বন্দী মুশরিকরা তো কাফিরদের নেতৃস্থানীয় লোক।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিন্তু হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর মতকেই প্রাধান্য দেন এবং ঐ মুশরিক বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন। হযরত উমার (রাঃ) বলেন, পরদিন সকালে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীতে হাযির হয়ে দেখি যে, তিনি এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) ক্রন্দন করছেন। আমি আরয করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার ও আপনার সঙ্গীর কাঁদার কারণ কি? যদি কান্না আসে তবে আমিও কাঁদবো, আর যদি কান্না না আসে তবে কান্নার ভান করবো, যাতে আপনাদের কান্নায় শরীক হতে পারি। নবী (সঃ) তখন বললেনঃ “এটা হচ্ছে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কারণে কান্না। আমি এই ভুলের কারণে ঐ শাস্তি প্রত্যক্ষ করছি যা এতো নিকটে রয়েছে যতো নিকটে রয়েছে এই গাছটি।” সেই সময় নবী (সঃ)-এর সম্মুখে একটি গাছ ছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ করেন- (আরবী) পর্যন্ত। (৮:৬৭-৬৯) সুতরাংগনীমত হালাল করে দেয়া হয়। অতঃপর পরবর্তী বছর যখন উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন আল্লাহ তা'আলা বদরের দিনের ভুলের প্রতিশোধ এভাবে গ্রহণ করেন যে, মুক্তিপণ নিয়ে সত্তরজন কাফির বন্দীকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে উহুদের যুদ্ধে সত্তরজন মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীগণ তাকে ছেড়ে পলায়ন করেন। তাঁর সামনের চারটি দাত ভেঙ্গে যায় এবং শিরস্ত্রাণ মাথার মধ্যে ঢুকে যায়। তাঁর চেহারা মুবারকের উপর রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ “তোমাদের উপর যখন বিপদ পৌছালো তখন তোমরা বলতে শুরু করলে- এ বিপদ কোথা থেকে আসলো? (হে নবী সঃ)! তুমি বলে দাও- এটা তোমাদের নিজেদের কর্মের ফল অর্থাৎ তোমাদের ফিদইয়া গ্রহণের কারণেই তোমরা এই বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের উপরই ক্ষমতাবান।” (এটা ইমাম আহমাদ (রাঃ) উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এটাকে ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) তাখরীজ করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রার্থনা করাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, বদরের দিন নবী (সঃ) অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করছিলেন। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বললেনঃ “আপনি দুআ’কে সংক্ষিপ্ত করুন। আল্লাহ তা'আলা আপনার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা তিনি অবশ্যই পূর্ণ করবেন।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বদরের দিন নবী (সঃ) প্রার্থনায় বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ? আপনার অঙ্গীকার পূর্ণ করার দিকে আমি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি। নতুবা হে আল্লাহ! আপনার ইবাদতকারী আর কেউ থাকবে না।” তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর হাত ধরে নিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যথেষ্ট হয়েছে।” অতঃপর নবী (সঃ) দাড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কাফিররা পরাজিত হয়ে যাবে এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করবে।” (আরবী) অর্থাৎ ফেরেশতাদের সারি একের পিছনে এক মিলিতভাবে ছিল। আবার (আরবী)-এর অর্থ সাহায্যও হতে পারে। অর্থাৎ ফেরেশতারা সাহায্যের উপর ছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “হযরত জিবরাঈল (আঃ) হাজার ফেরেশতাসহ নবী (সঃ)-এর ডান দিকে ছিলেন, যেদিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন। আর হ্যরত মীকাঈল (আঃ) হাজার ফেরেশতাসহ নবী (সঃ)-এর বাম দিকে ছিলেন, যেদিকে আমি ছিলাম।” এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাজারের সাহায্যের উপর অপর হাজারও ছিলেন। এ জন্যেই কেউ কেউ (আরবী) অর্থাৎ (আরবী)-কে যবর দিয়ে পড়েছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবার এটাও বর্ণিত আছে যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে ছিলেন পাঁচশ জন ফেরে । হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, একজন মুসলমান একজন মুশরিকের পিছনে লেগে ছিলেন। উপর হতে মুশরিকের মাথায় একটি চাবুক মারার শব্দ শোনা গেল এবং একজন অশ্বারোহীরও পদক্ষেপের শব্দ শ্রুত হলো। তখন দেখা গেলো। যে, মুশরিক মাটিতে পড়ে গেলো। চাবুকের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেলো। অথচ কোন মানুষ তাকে লাঠির আঘাত করেনি। যখন পিছনের আনসারী এই সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট পৌছিয়ে দিলো। তখন তিনি বললেনঃ “তুমি সত্য বলেছ। এটা ছিল আসমানী সাহায্য।” এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ঐ যুদ্ধে সত্তরজন কাফির নিহত হলো এবং সত্তরজন বন্দী হলো। (এটা ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) তাখরীজ করেছেন) হযরত রাফি (রাঃ) বদরী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন যে, একদা হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি বদরী সাহাবীদেরকে কি মনে করেন?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “বদরী সাহাবীরা মুসলমানদের মধ্যে সর্বোত্তম।” তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “বদরের যুদ্ধে যেসব ফেরেশতা মুসলমানদের সাহায্যের জন্যে এসেছিলেন তাদেরকেও অন্যান্য ফেরেশতাদের অপেক্ষা উত্তম মনে করা হয়।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত উমার (রাঃ) যখন হাতিব ইবনে আবি বুলতা (রাঃ)-কে হত্যা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তখন নবী (সঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ এই হাতিব (রাঃ) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আর তুমি কি এই খবর রাখো যে, সম্ভবতঃ আল্লাহ তা'আলা বদরী সাহাবীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন? কেননা, তিনি বলেছেনঃ “তোমরা যা ইচ্ছা তাই আমল কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” (আরবী) অর্থাৎ ফেরেশতাদেরকে পাঠানো শুধু তোমাদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এবং তোমাদের মনে প্রশান্তি আনয়নের জন্যে নতুবা আল্লাহ তা'আলা তো সর্বপ্রকারেই তোমাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। সাহায্যের ব্যাপারে তিনি ফেরেশতাদের মুখাপেক্ষী মোটেই নন। এ সাহায্য তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই সাহায্য ছিল। ফেরেস্তারা ছিল সাহায্যের বাহ্যিক রূপ । যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যখন তোমরা কাফিরদের সম্মুখীন হও, তখন তাদের গর্দানে আঘাত করতে থাক (তাদেরকে হত্যা করতে থাক) এমন কি যখন তাদের রক্তস্রোত বইয়ে দিবে তখন তাদেরকে (বন্দী করে) দৃঢ় রূপে বেঁধে ফেলো, তখন হয়তো বা কোন মুক্তিপণ ছাড়াই তাদেরকে ছেড়ে দেবে, কিংবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেবে, যে পর্যন্ত না তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করে, তোমরা এই নির্দেশ পালন করবে, আর যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তাদের থেকে (যুদ্ধ ছাড়াই) প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন, কিন্তু (যুদ্ধের হুকুম এ কারণেই যে,) যেন তিনি তোমাদের একের দ্বারা অন্যের পরীক্ষা করেন, আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, আল্লাহ তাদের আমল কখনো বিনষ্ট করবেন না। তিনি তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ঠিক রাখবেন। আর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তিনি ওটা তাদেরকে চিনিয়ে দেবেন।” আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা তো কালের উত্থান ও পতন মাত্র, যাকে আমি মানবমণ্ডলীর মধ্যে আবর্তিত করে থাকি, যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে কতিপয় লোককে শহীদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন, আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে মোটেই পছন্দ করেন না। আর যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে (গুনাহ থেকে) পাক-পবিত্র করেন এবং কাফিরদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস করে দেন।” (৩:১৪০-১৪১) জিহাদের শরঈ দর্শন এটাই যে, আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে একত্ববাদীদের হাতে শাস্তি প্রদান করেন। ইতিপূর্বে তাদেরকে সাধারণ আসমানী শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হতো। যেমন হযরত নূহ (আঃ)-এর কওমের উপর তুফান এসেছিল, প্রথম আ’দ সম্প্রদায় ঘূর্ণি বাত্যায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং লূত (আঃ)-এর কওমকে পাথর বর্ষিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। হযরত শুআইব (আঃ)-এর কওমের মাথার উপর পাহাড়কে লটকিয়ে দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন এবং তার শত্রু ফিরাউনকে ধ্বংস করেছিলেন, আর তার কওমকে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত অবতীর্ণ করে কাফিরদেরকে হত্যা করা ফরয করে দেয়া হয়েছিল এবং এই নির্দেশই অন্যান্য শরীয়তের মধ্যেও কায়েম রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে ধ্বংস করার পর মূসা (আঃ)-কে কিতাব প্রদান করেছিলাম, এতে লোকদের জন্যে বাসীরাত রয়েছে (অর্থাৎ এর মাধ্যমে মানুষের অন্তদৃষ্টি খুলে যাবে)।”মুমিনদের কাফিরদেরকেও বন্দী করার পরিবর্তে হত্যা করে দেয়া ঐ কাফিরদের কঠিন লাঞ্ছনার বিষয় ছিল। এতে মুমিনদের অন্তরেও প্রশান্তি নেমে আসতো। যেমন এই উম্মতের মুমিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলঃ “ঐ কাফিরদেরকে হত্যাই করে দাও। আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে অপদস্ত করতে ও শাস্তি দিতে চান এবং এ জন্যেও যে, এর ফলে তোমাদের অন্তর ঠাণ্ডা হবে। কেননা, এই অহংকারী কুরায়েশ নেতৃবর্গ মুসলমানদেরকে অত্যন্ত ঘৃণার চক্ষে দেখতো এবং তাদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিতো। সুতরাং যদি এরা নিহত হয়ে লাঞ্ছিত হয় তবে তাদের থেকে এই প্রতিশোধ গ্রহণের ফলে মুসলমানদের অন্তর কতই না ঠাণ্ডা হয়! তাই আবূ জেহেল যখন যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেল তখন তার মৃতদেহের বড়ই অবমাননা হলো। যদি বাড়ীতে বিছানায় মরতো তবে তার এই লাঞ্ছনা ও অবমাননা হতো না। অথবা যেমন, আবু লাহাব যখন মারা গেল তখন তার মৃতদেহ এমনভাবে সড়ে পচে গেল যে, তার নিকটতম আত্মীয়েরাও তার মৃতদেহের কাছে আসতে পারছিল না। তারা তাকে গোসল দেয়ার পরিবর্তে দূর থেকে তার মৃতদেহের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়েছিল এবং এক গর্তে তাকে দাফন করে ফেলেছিল। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) (নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী)। অর্থাৎ সম্মান ও মর্যাদা কাফিরদের জন্যে নয়, বরং দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা আল্লাহর জন্যে, তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্যে এবং মুমিনদের জন্যে। তিনি আরো বলেনঃ “আমি পার্থিব জীবনে এবং কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে সাহায্য করবো।” কাফিরদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার মধ্যেও মহান আল্লাহর বিশেষ নৈপুণ্য রয়েছে। নতুবা তিনি তো স্বীয় ক্ষমতা বলেই তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারেন।

إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَىٰ قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ

📘 Please check ayah 8:14 for complete tafsir.

إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا ۚ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

📘 Please check ayah 8:14 for complete tafsir.

ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَمَنْ يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

📘 Please check ayah 8:14 for complete tafsir.

ذَٰلِكُمْ فَذُوقُوهُ وَأَنَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابَ النَّارِ

📘 ১১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে স্বীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, যুদ্ধের সময় তিনি তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের প্রতি ইহসান করেছেন। নিজেদের সংখ্যার স্বল্পতা এবং শত্রুদের সংখ্যাধিক্যের অনুভূতি তাদের মনে জেগেছিল বলে তারা কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছিল। তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের মনে প্রশান্তি আনয়ন করেন। এরূপ তিনি উহুদের যুদ্ধেও করেছিলেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অনন্তর আল্লাহ সেই দুঃখের পর তোমাদের প্রতি নাযিল করলেন শান্তি অর্থাৎ তন্দ্রা যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল।” (৩:১৫৪) হযরত আবু তালহা (রাঃ) বলেনঃ “উহুদের যুদ্ধের দিন আমারও তন্দ্রা এসেছিল এবং আমার হাত থেকে তরবারী পড়ে যাচ্ছিল। আমি তা উঠিয়ে নিচ্ছিলাম। আমি জনগণকেও দেখছিলাম যে, তারা ঢাল মাথার উপর করে তন্দ্রায় ঢলে পড়ছে।” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “বদরের দিন হযরত মিকদাদ (রাঃ) ছাড়া আর কারো কাছে সওয়ারী ছিল না। আমরা সবাই নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি গাছের নীচে সকাল পর্যন্ত নামায পড়ছিলেন এবং আল্লাহর সামনে কান্নাকাটি করছিলেন।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, যুদ্ধের দিন এই তন্দ্রা যেন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এক প্রকার শান্তি ও নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু নামাযে এই তন্দ্রাই আবার শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তন্দ্রা মাথায় হয় এবং ঘুম অন্তরে হয়। আমি বলি উহুদের যুদ্ধে মুমিনদেরকে তন্দ্রা আচ্ছন্ন করেছিল। আর এ খবর তো খুবই সাধারণ ও প্রসিদ্ধ। কিন্তু এখানে এই আয়াতে কারীমার সম্পর্ক রয়েছে বদরের ঘটনার সাথে। আর এ আয়াতটি এটা প্রমাণ করে যে, বদরের যুদ্ধেও মুমিনদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করা হয়েছিল এবং কঠিন যুদ্ধের সময় এভাবে মুমিনদের উপর তন্দ্রা ছেয়ে যেতো, যাতে তাদের অন্তর আল্লাহ তাআলার সাহায্যে প্রশান্ত ও নিরাপদ থাকে। আর মুমিনদের উপর এটা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা । যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই বর্তমান মুশকিলসমূহের সাথেই আসানী রয়েছে। এ জন্যেই সহীহ হাদীসে এসেছে যে, বদরের দিন নবী (সঃ) তাঁর জন্যে নির্মিত কুটিরে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে অবস্থান করছিলেন। ইতিমধ্যে নবী (সঃ)-এর উপর তন্দ্রা ছেয়ে যায়। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে তন্দ্রার ভাব কাটিয়ে উঠেন এবং বলেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)! সুসংবাদ গ্রহণ কর। ঐ দেখ, জিবরাঈল (আঃ) ধূলিমলিন বেশে রয়েছেন!” অতঃপর তিনি কুটির হতে বেরিয়ে আসলেন এবং পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শত্রুদের পরাজয় ঘটেছে এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করবে।” (৫৪:৪৫) ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন।” আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, বদরে যেখানে নবী (সঃ) অবতরণ করেছিলেন সেখানে মুশরিকরা বদর ময়দানের পানি দখল করে নিয়েছিল এবং মুসলমান ও পানির মাঝখানে তারা প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়েছিল। মুসলমানরা দুর্বলতাপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। ঐ সময় শয়তান মুসলমানদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে দেয়। সে তাদেরকে বলে- “তোমরা তো নিজেদেরকে বড়ই আল্লাহওয়ালা মনে করছে। আর তোমাদের মধ্যে স্বয়ং রাসূল (সঃ) বিদ্যমান রয়েছেন। পানির উপর দখল তো মুশরিকদের রয়েছে। আর তোমরা পানি থেকে এমনভাবে বঞ্চিত রয়েছে যে, নাপাক অবস্থাতেই নামায আদায় করছো!” তখন আল্লাহ তাআলা প্রচুর পানি বর্ষণ করলেন। মুসলমানরা পানি পান করলেন এবং পবিত্রতাও অর্জন করলেন। মহান আল্লাহ শয়তানের কুমন্ত্রণাও খাটো করে দিলেন। পানির কারণে মুসলমানদের দিকের বালু জমে শক্ত হয়ে গেল। ফলে জনগণের ও জানোয়ারগুলোর চলাফেরার সুবিধা হলো। আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ) ও মুমিনদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করলেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) একদিকে পাঁচশ' ফেরেশতা নিয়ে বিদ্যমান ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মুশরিক কুরায়েশরা যখন আবু সুফিয়ানের কাফেলাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসে তখন তারা বদর কূপের উপর এসে শিবির স্থাপন করে। আর মুসলমানরা পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। পিপাসায় তারা ছটফট করে । নামাযও তারা নাপাকী এবং হাদাসের অবস্থায় পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে বিভিন্ন প্রকারের খেয়াল চেপে বসে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাঠে পানি বইতে শুরু করে। মুসলমানেরা পানিতে পাত্র ভর্তি করে নেয় এবং জানোয়ারগুলোকে পানি পান করায়। তাতে তারা গোসলও করে। এভাবে তারা পবিত্রতা লাভ করে। এর ফলে তাদের পাগুলোও অটল ও স্থির থাকে। (অনুরূপ বর্ণনা কাতাদা (রঃ) ও যহাক (রঃ) হতে বর্ণিত আছে) মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্য ভাগে বালুকারাশি ছিল। বৃষ্টি বর্ষণের ফলে বালু জমে শক্ত হয়ে যায়। কাজেই মুসলমানদের চলাফেরার সুবিধা হয়।প্রসিদ্ধ ঘটনা এই যে, নবী (সঃ) বদর অভিমুখে রওয়ানা হয়ে পানির নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করেন। হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আপনি যে এ স্থানে অবতরণ করেছেন এটা কি আল্লাহর নির্দেশক্রমে, যার বিরোধিতা করা যাবে না, না যুদ্ধের পক্ষে এটাকে উপযুক্ত স্থান মনে করেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যুদ্ধের জন্যে উপযুক্ত স্থান হিসেবেই আমি এখানে অবস্থান করেছি।” তখন হযরত হাবাব (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে আরও সামনে অগ্রসর হোন এবং পানির শেষাংশ পর্যন্ত দখল করে নিন। ওখানে হাউয তৈরী করে এখানকার সমস্ত পানি জমা করুন। তাহলে পানির উপর অধিকার আমাদেরই থাকবে এবং শক্রদের পানির উপর কোন দখল থাকবে না।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সামনে বেড়ে যান এবং ঐ কাজই করেন।বর্ণিত আছে যে, হাবাব (রাঃ) যখন এই পরামর্শ দেন তখন ঐ সময়ে একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। ঐ ফেরেশতা বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আল্লাহ তা'আলা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ)-এর পরামর্শ আপনার জন্যে সঠিক পরামর্শই বটে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি এই ফেরেশতাকে চিনেন কি?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে দেখে বলেন, আমি সমস্ত ফেরেশতাকে চিনি না বটে, তবে এটা যে একজন ফেরেশতা এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা শয়তান অবশ্যই নয়। হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে নবী (সঃ)-এর দিকের ভূমি জমে গিয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং ওর উপর চলতে সুবিধা হয়। পক্ষান্তরে কাফিরদের দিকের ভূমি নীচু ছিল। কাজেই ওখানকার মাটি দলদলে হয়ে যায়। ফলে তাদের পক্ষে ঐ মাটিতে চলাফেরা কষ্টকর হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি তার দ্বারা ইহসান করার পূর্বে বৃষ্টি বর্ষিয়ে ইহসান করেছিলেন। ধূলাবালি জমে গিয়েছিল এবং মাটি শক্ত হয়েছিল। সুতরাং মুসলমানরা খুব খুশী হয়েছিলেন এবং তাদের পায়ের স্থিরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। অতঃপর তাদের চোখে তন্দ্রা নেমে আসে। তাদের মন মগজ তাজা হয়ে যায়। সকালে যুদ্ধ। রাত্রে হালকা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আমরা গাছের নীচে গিয়ে বৃষ্টি থেকে আশ্রয় গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে থেকে জনগণের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন।”(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা হাদাসে আসগার (অযু না থাকা অবস্থা) এবং হাদাসে আকবার (গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা) থেকে পবিত্র করার জন্যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যেন তিনি তোমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণার পর পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। এটা ছিল অন্তরের পবিত্রতা। যেমন জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ “পরিধানের জন্যে তাদেরকে রেশমী কাপড় দেয়া হবে, আর দেয়া হবে তাদেরকে সোনা ও রূপার অলংকার।” এটা হচ্ছে বাহ্যিক সৌন্দর্য। আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পবিত্র সুরা পান করাবেন এবং হিংসা বিদ্বেষ থেকে তাদেরকে পাক-পবিত্র করবেন। এটা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য। বৃষ্টি বর্ষণ করার এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের অন্তরে প্রশান্তি আনয়ন করে তোমাদেরকে ধৈর্যশীল করবেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদেরকে অটল রাখবেন। এই ধৈর্য ও মনের স্থিরতা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ বীরত্ব এবং যুদ্ধে অটল থাকা হচ্ছে বাহ্যিক বীরত্ব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। মহান আল্লাহর উক্তি-(আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! ঐ সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের কাছে অহী করলেন আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং তোমরা ঈমানদারদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অবিচল রাখো। এটা হচ্ছে গোপন নিয়ামত যা আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদের উপর প্রকাশ করছেন, যেন তারা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। তিনি হচ্ছেন কল্যাণময় ও মহান। তিনি ফেরেশতাদেরকে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁরা যেন নবী (সঃ)-কে, নবী (সঃ)-এর দ্বীনকে এবং মুসলিম জামাআতকে সাহায্য করেন। যাতে তাদের মন ভেঙ্গে না যায় এবং তারা সাহস হারা না হয়। সুতরাং হে ফেরেশতার দল! তোমরাও ঐ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর। কথিত আছে যে, ফেরেশতা কোন মুসলমানের কাছে আসতেন এবং বলতেন, আমি এই কওমকে অর্থাৎ মুশরিকদেরকে বলতে শুনেছি- “যদি মুসলমানরা আমাদেরকে আক্রমণ করে তবে আমরা যুদ্ধের মাঠে টিকতে পারবো না।” এভাবে কথাটি এক মুখ হতে আর এক মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সাহাবীদের মনোবল বাড়তে থাকে এবং তাঁরা বুঝতে পারেন যে, মুশরিকদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি কাফিরদের হৃদয়ে ভীতি সৃষ্টি করে দেবো।” অর্থাৎ হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা মুমিনদেরকে অটল ও স্থির রাখে এবং তাদের হৃদয়কে দৃঢ় কর।(আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাদের স্কন্ধে আঘাত হাননা।' (আরবী) অর্থাৎ ‘তোমরা আঘাত হাননা তাদের অঙ্গুলিসমূহের প্রতিটি জোড়ায় জোড়ায়।' মুফাসসিরগণ (আরবী)-এর অর্থের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মাথায় মারা অর্থ নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ অর্থ নিয়েছেন গর্দানে মারা। এই অর্থের সাক্ষ্য নিম্নের আয়াতে পাওয়া যায়ঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে তখন তাদের গর্দানে মারবে, শেষ পর্যন্ত যখন তাদেরকে খুব বেশী হত্যা করে ফেলবে তখন (হত্যা করা বন্ধ করে অবশিষ্টদেরকে) দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলবে।” (৪৭:৪) হযরত কাসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর শাস্তিতে জড়িত করার জন্যে প্রেরিত হইনি। (অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত শাস্তি, যেমন পূর্ববর্তী উম্মতবর্গের উপর অবতীর্ণ হতো), বরং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি তাদের গর্দান উড়িয়ে দেবো এবং তাদেরকে শক্তভাবে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করবো এ জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি।” ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা গর্দানে আঘাত করা ও মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়া বুঝানো হয়েছে। মাগাযী উমভী’তে রয়েছে যে, বদরের যুদ্ধের দিন নবী (সঃ) নিহতদের পার্শ্ব দিয়ে গমনের সময় বলছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মাথা কর্তিত অবস্থায় পড়ে আছে।' তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ কথার সাথেই ছন্দ মিলিয়ে দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এমন লোকদের মাথাগুলো কর্তিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যারা আমাদের উপর অহংকার প্রকাশ করতো। কেননা, তারা ছিল বড় অত্যাচারী ও অবাধ্য।” এখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ছন্দের প্রাথমিক দু'টি শব্দ উচ্চারণ করলেন এবং অপেক্ষমান থাকলেন যে, আবু বকর (রাঃ) একে কবিতা বানিয়ে ছন্দ পূর্ণ করে দিবেন। কেননা, কবি রূপে পরিচিত হওয়া তাঁর জন্যে শোভনীয় ছিল না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং এটা তার জন্যে উপযুক্তও নয়।” (৩৬:৬৯) বদরের দিন জনগণ ঐ নিহত ব্যক্তিদেরকে চিনতে পারতো যাদেরকে ফেরেশতাগণ হত্যা করেছিলেন। কেননা ঐ নিহতদের যখম ঘাড়ের উপর থাকতো বা জোড়ের উপর থাকতো। আর ঐ যখম এমনভাবে চিহ্নিত হয়ে যেতে যেন আগুনে দগ্ধ করা হয়েছে।(আরবী) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের শত্রুদেরকে তাদের জোড়ের উপর আঘাত কর, যেন তাদের হাত-পা ভেঙ্গে যায়। (আরবী) শব্দটি হচ্ছে শব্দের বহুবচন। প্রত্যেক জোড়কে (আরবী) বলা হয়। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা ঐ কাফিরদের চেহারা ও চোখের উপর আঘাত কর এবং এমনভাবে আহত করে দাও যে, যেন ওগুলোকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দ্বারা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর কোন কাফিরকে বন্দী করে নেয়ার পর হত্যা করা জায়েয নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বদরের ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, অবুি জেহেল বলেছিলঃ “তোমরা মুসলমানদেরকে হত্যা করার পরিবর্তে জীবিত ধরে রাখো, যেন তোমরা তাদেরকে আমাদের ধর্মকে মন্দ বলা, আমাদেরকে বিদ্রুপ করা এবং লতি' ও উ’কে অমান্য করার স্বাদ গ্রহণ করাতে পার।” তাই আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। তোমরা মুমিনদেরকে অটল রাখো। আমি কাফিরদের অন্তরে মুসলমানদের আতঙ্ক সৃষ্টি করবো। তোমরা তাদের গর্দানে ও জোড়ে জোড়ে মারবে। বদরের নিহতদের মধ্যে আবু জেহেল ৬৯ (উনসত্তর) নম্বরে ছিল। অতঃপর উকবা ইবনে আবি মুঈতকে বন্দী করে হত্যা করে দেয়া হয় এবং এভাবে ৭০ (সত্তর) পূর্ণ হয়।(আরবী) -এর কারণ এই ছিল যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং শরীয়ত ও ঈমান পরিহারের নীতি অবলম্বন করেছিল। (আরবী) শব্দটি (আরবী) থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ “সে লাঠিকে দু'টুকরো করেছে।” ইরশাদ হচ্ছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা করে, তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর হস্ত । তিনি কোন কিছুই ভুলে যাবেন না। তাঁর গযবের মুকাবিলা কেউই করতে পারে না।”(আরবী) এটাই হচ্ছে তোমাদের শাস্তি, সুতরাং তোমরা এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, তোমাদের জানা উচিত যে, সত্য অস্বীকারকারীদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শাস্তি। এখানে এ কথা কাফিরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা দুনিয়াতে এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর এবং জেনে রেখো যে, কাফিরদের জন্যে আখিরাতেও জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ

📘 Please check ayah 8:16 for complete tafsir.

وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

📘 ১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে জিহাদের মাঠ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কারীদেরকে ধমক দেয়া হচ্ছে। ঘোষণা করা হচ্ছে- হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধের মুখখামুখী হবে তখন তোমাদের সাথীদের ছেড়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবে না। হ্যা, তবে যদি কেউ চতুরতা করে পালিয়ে যায় যে, যেন ভয় পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আর এ ধারণা করে শত্রু তার পশ্চাদ্ধাবন করলো, তখন সে ঐ শত্রুকে একাকী পেয়ে তার দিকে ফিরে গেল এবং তাকে আক্রমণ করতঃ হত্যা করে দিলো। এই যৌক্তিকতায় পলায়ন করলে কোন দোষ নেই। (এটা সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং সুদ্দীর (রঃ) উক্তি) অথবা এই উদ্দেশ্যে পলায়ন করে যে, সে মুসলমানদের অন্য দলের সাথে মিলিত হবে এবং তাদেরকে সাহায্য করবে অথবা তারাই তাকে সাহায্য করবে। এই পলায়নও জায়েয। কেননা, সে স্বীয় ইমামের আশ্রয়ে যেতে চাচ্ছে।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক প্রেরিত একটি ছোট সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক ছিলাম। লোকদের মধ্যে পলায়নের হিড়িক পড়ে যায়। আমিও পালিয়ে যাই। অতঃপর আমরা অনুভব করি যে, আমরা যুদ্ধ হতে পলায়নকারী। সুতরাং আমরা আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়েছি। এখন আমরা কি করবো? আমরা পরামর্শক্রমে ঠিক করলাম যে, মদীনায় গিয়ে আমরা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করবো। যদি তিনি আমাদের তাওবা কবুল করে নেন তবে তো ভাল কথা, নচেৎ আমরা দু'চোখ যেখানে যাবে সেখানেই চলে যাবো এবং কাউকেও মুখ দেখাবো না। অতএব আমরা ফজরের নামাযের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা কারা?” আমরা উত্তরে বললাম, আমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়নকারী। তখন তিনি বললেনঃ “না, না বরং তোমরা নিজেদের কেন্দ্রস্থলে আগমনকারী। আমি তোমাদের ও তোমাদের মুমিন দলের বন্ধন।” এ কথা শুনে আমরা এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর হস্ত চুম্বন করলাম।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এটুকু বেশী বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেই সময় (আরবী)-এ আয়াতটিও পাঠ করেন। আলেমগণ (আরবী) শব্দের অর্থ (আরবী) বা দূরদর্শী বলেছেন।হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) ইরানের একটি পুলের উপর নিহত হন। তখন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “চতুরতা অবলম্বন করে তিনি পালিয়ে আসতে পারতেন। আমি তাঁর আমীর ও বন্ধন রূপে ছিলাম। তিনি আমার কাছে। চলে আসলেই হতো!” অতঃপর তিনি বলেনঃ “হে লোক সকল! এ আয়াতটিকে কেন্দ্র করে তোমরা ভুল ধারণায় পতিত হয়ো না। এটা বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে ছিল। এই সময় আমি প্রত্যেক মুসলমানের জামাআত বা দল!" হযরত নাফে’ (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ “শত্রুদের সাথে যুদ্ধের সময় আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে অটল থাকতে পারি না। আর আমাদের কেন্দ্র কোটা তা আমরা জানি না। অর্থাৎ ইমাম আমাদের কেন্দ্র কি সেনাবাহিনী কেন্দ্র তা আমাদের জানা। নেই।” তখন তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ), আমাদের কেন্দ্র।” আমি বললাম যে, আল্লাহ পাক ....... (আরবী)-এ আয়াত যে নাযিল করেছেন! তখন তিনি বলেনঃ “এ আয়াতটি বদরের দিনের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা বদরের পূর্বের সময়ের জন্যেও নয়, এর পরবর্তী সময়ের জন্যেও নয়।” -এর অর্থ হচ্ছে নবী (সঃ)-এর নিকট আশ্রয় গ্রহণকারী। অনুরূপভাবে এখনও কোন লোক তার আমীরের কাছে বা সঙ্গীদের কাছে আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু যদি এই পলায়ন এই কারণ ছাড়া অন্য কারণে হয় তবে তা হারাম এবং গুনাহে কাবীরার মধ্যে গণ্য হবে।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাকো। (১) আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করা, (২) জাদু করা, (৩) কাউকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করা, (৪) সুদ ভক্ষণ করা, (৫) ইয়াতীমের মাল খেয়ে নেয়া, (৬) যুদ্ধক্ষেত্র হতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সতী সাধ্বী সরলা মুমিনা নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন) এ কথাটি আরও কয়েকভাবে প্রমাণিত আছে যে, এ আয়াতটি বদর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যে পালিয়ে যাবে সে আল্লাহর গযবে পরিবেষ্টিত হবে এবং তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর জাহান্নাম কতইনা নিকৃষ্ট স্থান!”বাশীর ইবনে মা’বদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইআত গ্রহণের জন্যে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করলাম। তখন তিনি বাইআতের ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত আরোপ করলেন। তিনি বললেনঃ “তুমি সাক্ষ্য দেবে যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। নামায আদায় করবে। যাকাত প্রদান করবে। হজ্ব করবে। রমযানের রোযা রাখবে। আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।” আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এগুলোর মধ্যে দুটি কাজ আমার কাছে কঠিন বোধ হচ্ছে। প্রথম হচ্ছে জিহাদ যে, যদি জিহাদের অবস্থায় কেউ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যায় তবে আল্লাহর গযব তার উপর পতিত হবে এবং আমার ভয় হচ্ছে যে, না জানি আমি হয়তো মৃত্যুর ভয়ে এই পাপে জড়িয়ে পড়বো। দ্বিতীয় হচ্ছে সাদকা। আল্লাহর শপথ! গনীমত ছাড়া আমার আর কোন আয়-উপার্জন নেই। আর আমার কাছে দশটি উষ্ট্রী রয়েছে যেগুলোকে দোহন করে দুধ আমি পান করি এবং পরিবারের লোকদেরকে পান করিয়ে থাকি। আর ওগুলোর উপর আরোহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন আমার হাত চেপে ধরলেন এবং হাতকে আন্দোলিত করে বললেনঃ “তুমি জিহাদও করবে না এবং দান খায়রাতও করবে না, তাহলে জান্নাত লাভ করবে কিরূপে?” আমি জবাবে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি মেনে নিলাম এবং প্রত্যেক শর্তের উপরই দীক্ষা গ্রহণ করলাম। এ হাদীসটি গারীব। ছ’খানা সহীহ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে এটা বর্ণিত হয়নি। হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তিনটি জিনিসের অভাবে কোন সৎ আমলও ফলদায়ক হয় না। (১) আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করা, (২) পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং (৩) যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা।” এ হাদীসটিও গারীব।হযরত জাদী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বলে- (আরবী) অর্থাৎ “আমি ঐ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি তার কাছে তাওবা করছি।” তার পাপরাশি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার পাপও করে থাকে। এ হাদীসটিও গারীব বা দুর্বল। নবী (সঃ)-এর খাদেম হযরত যায়েদ (রাঃ) এ হাদীসটি ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করেননি। কেউ কেউ এই হুকুম লাগিয়েছেন যে, জিহাদের মাঠ থেকে পলায়ন করা সাহাবীদের উপর হারাম ছিল। কেননা, ঐ সময় তাঁদের উপর জিহাদ ফরয ছিল। কেউ কেউ বলেছেন যে, জিহাদ শুধুমাত্র আনসারদের উপর ফরয ছিল। কেননা, তারা কষ্ট ও আরাম সর্বাবস্থায় নবী (সঃ)-এর নির্দেশ পালনের উপর দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই হুকুম শুধু আহলে বদরের সাথে নির্দিষ্ট। (এটা আমর (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবু হুরাইরা (রাঃ), আবু সাঈদ (রাঃ), নাফে' (রঃ), হাসান বসরী (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ), ইকরামা (রাঃ), কাতাদা (রাঃ), যহহাক (রাঃ) প্রমুখ হতে বর্ণিত আছে) এর উপর এই দলীল পেশ করা হয়েছে যে, ঐ সময় পর্যন্ত মুসলমানদের কোন নিয়মিত শান শওকতযুক্ত দল ছিলেনই না। যা কিছু ছিলেন এই মুষ্টিপূর্ণ লোকই ছিলেন। এ জন্যে এইরূপ হুকুমের খুবই প্রয়োজন ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের হাদীসটি এই অবস্থার উপরই আলোকপাত করেঃ “হে আল্লাহ! যদি আপনি এই মুষ্টিপূর্ণ দলটিকেও ধ্বংস করে দেন তবে দুনিয়ায় আপনার ইবাদত করার কেউই থাকবে না!” হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা বদরের দিন জরুরী ছিল। কিন্তু এখন যদি কেউ স্বীয় ইমাম বা স্বীয় দুর্গের কাছে আশ্রয় নেয় তবে কোন দোষ হবে না। কেননা, বদরের দিন পলায়নকারীদের জন্যে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বাসস্থান করেছেন বটে, কিন্তু ঐ পলায়নকারীদেরকে তিনি এই হুকুমের বহির্ভূত করেছেন যারা শত্রুদেরকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় বা নিজেদের দলে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসে! এর পরে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হলে আল্লাহ তাআলা (আরবী) (৩:১৫৫) -এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এর সাত বছর পর হুনায়েনের যুদ্ধ সংঘটিত হলে তিনি (আরবী) (৯:২৫) এবং (আরবী) (৯:২৭) এ কথাগুলো বলেন। আর এখানে (আরবী)-এ কথা বলেছেন। এ আয়াতটি আহলে বদরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এসব ব্যাখ্যায় এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, আহলে বদর ছাড়া অন্যেরাও যদি জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে তবে ওটাও হারাম হওয়া উচিত। যদিও এই আয়াত বদরের যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল তথাপি যখন এটাকে সাতটি ধ্বংসকারী জিনিসের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে তখন এটা হারাম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ ۚ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ رَمَىٰ ۚ وَلِيُبْلِيَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْهُ بَلَاءً حَسَنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

📘 Please check ayah 8:18 for complete tafsir.

ذَٰلِكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ مُوهِنُ كَيْدِ الْكَافِرِينَ

📘 ১৭-১৮ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে এই কথার উপর আলোকপাত করা হচ্ছে যে, বান্দাদের কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। যে সৎ কাজ বান্দা হতে প্রকাশিত হয় তা আল্লাহই সৎ বানিয়ে থাকেন। কেননা, সেই কাজ করার ক্ষমতা তিনিই প্রদান করেছেন। ঐ কাজ করার সাহস ও শক্তি তিনিই যুগিয়েছেন। এ জন্যেই ইরশাদ হচ্ছে- ঐ কাফিরদেরকে তোমরা হত্যা করনি, বরং আল্লাহই হত্যা করেছেন। তোমাদের এ শক্তি কি করে হতো যে, তোমাদের সংখ্যা এতো কম হওয়া সত্ত্বেও তোমরা এতো অধিক সংখ্যক শত্রুকে পরাজিত করে দিলে? এই সফলতা আল্লাহই তোমাদেরকে প্রদান করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বদরে তোমাদের সংখ্যা কম থাকা অবস্থাতেও আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন (এবং শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করেছেন)।” (৩:১২৩) আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ অধিকাংশ স্থানে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন, হুনায়েনের যুদ্ধের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে অহংকারী করেছিল, কিন্তু ঐ সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনই উপকারে আসেনি, যমীন এতো প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের উপর তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল এবং তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।” (৯:২৫) আল্লাহ জানেন যে, যুদ্ধে বিজয় লাভ ও সফলতা সংখ্যাধিক্যের উপর নির্ভর করে না এবং অস্ত্রশস্ত্রের প্রাচুর্যের উপরও নয়। বরং কৃতকার্যতা ও সফলতা আল্লাহর পক্ষ থেকেই লাভ হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ(আরবী) অর্থাৎ “অনেক সময় এরূপ ঘটে থাকে যে, ছোট দল বৃহৎ দলের উপর জয়যুক্ত হয়।” (২৪ ২৪৯)।(আরবী) ঐ মুষ্টিপূর্ণ মাটি সম্পর্কে আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেন যে মাটি তিনি বদরের যুদ্ধে কাফিরদের মুখের উপর নিক্ষেপ করেছিলেন। ঘটনা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যুদ্ধক্ষেত্রের কুটির থেকে বেরিয়ে এসে অত্যন্ত বিনীতভাবে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তিনি এক মুষ্টি মাটি কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “তোমাদের চেহারা নষ্ট হাক।” তারপর তিনি সাহাবীদেরকে মুশরিকদের উপর হামলা করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর হুকুমে এই মাটি ও কংকর মুশরিকদের চোখে গিয়ে পড়ে। এমন কেউ অবশিষ্ট থাকলো না যার চোখে তা পড়েনি এবং তাকে যুদ্ধ করতে অপারগ করেনি। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যখন তুমি (ধুলাবালি) নিক্ষেপ করছিলে তখন প্রকৃতপক্ষে তুমি তা নিক্ষেপ করনি, বরং আল্লাহই তা নিক্ষেপ করেছিলেন।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরের দিন স্বীয় হাত দুটি উঠিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! যদি এই মুষ্টিপূর্ণ লোকগুলো মরে যায় তবে আপনার নাম নেয়ার আর কে থাকবে?” তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার কাছে হাযির হয়ে বললেনঃ “মুষ্টিপূর্ণ মাটি এই কাফিরদের প্রতি নিক্ষেপ করুন!” তিনি ঐরূপই করেন। এর ফলে কাফিরদের নাক, মুখ ও চোখ মাটিতে ভরে যায় এবং তারা ঐ ধূলিঝড়ে আতংকিত হয়ে পশ্চাদপদে পালিয়ে যায়। এইভাবে তাদের পরাজয় ঘটে। মুসলমানরা তাদেরকে হত্যা করতে করতে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং বন্দী করে ফেলেন। কাফিরদের এই পরাজয় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুজিযার কারণেই ঘটেছিল।আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনটি কংকর নিয়েছিলেন। একটি তিনি সামনে নিক্ষেপ করেছিলেন, একটি নিক্ষেপ করেছিলেন শত্রুদের ডান দিকে এবং একটি বাম দিকে। এটা হচ্ছে বদরের দিনের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরূপ কাজ হুনায়েনের যুদ্ধেও করেছিলেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের দিন আমরা আকাশ থেকে একটা শব্দ পতিত হতে শুনতে পাই, মনে হচ্ছিল যেন ওটা থালায় কংকর পতনের শব্দ। ওটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুষ্টি হতে কংকর নিক্ষেপের শব্দ। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের পরাজয় ঘটে।” এখানে আরো দু’টি উক্তি রয়েছে যা অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল। উক্তি দু’টি নিম্নে দেয়া হলোঃ(১) আব্দুর রহমান ইবনে জুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি কামান আনতে বলেন। কামানটি ছিল খুবই লম্বা। অতঃপর তিনি আরেকটি কামান আনবার নির্দেশ দেন। তখন অন্য একটি কামান আনয়ন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওটার মাধ্যমে দুর্গের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করেন । তীরটি ঘুরতে ঘুরতে চললো এবং গোত্রপতি ইবনে আবি হাকীকের গায়ে লেগে গেল। সেই সময় সে দুর্গের মধ্যে বিছানায় শায়িত ছিল। এটাকে ভিত্তি করেই আল্লাহ পাক...(আরবী)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। এ হাদীসটি অতি দুর্বল। হয়তো বর্ণনাকারী সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছেন, অথবা ভাবার্থ এই যে, এই আয়াতটি সাধারণ এবং এই ঘটনাটিও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তা না হলে এটা তো স্পষ্ট কথা যে, সূরা আনফালের এ আয়াতটির মধ্যে বদরের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। তাহলে এই ঘটনাটি ঐ বদর যুদ্ধের ঘটনাই হবে। আর এটা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার কথা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। (২) সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) এবং যুহরী (রঃ) বলেন যে, উহুদ যুদ্ধের দিন উবাই ইবনে খালফকে লক্ষ্য করে নবী (সঃ) একটি বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন। লোকটি লৌহবর্ম পরিহিত ছিল। কিন্তু বর্শা ফলকটি তার তালুতে বিধে যায় এবং এর ফলে সে অশ্বপৃষ্ঠ হতে পড়ে যায়। এর কয়েকদিন পরেই সে ঐ ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে মারা যায়। সে এই পার্থিক শাস্তি ছাড়াও পারলৌকিক শাস্তিরও যোগ্য হয়ে গেল। এই দুই ইমাম হতে এ ধরনের বর্ণনা খুবই গরীব বা দুর্বল। সম্ভবতঃ এই দুই মনীষীর উদ্দেশ্য এই হবে যে, আয়াতটি সাধারণ, কোন নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে এটা সম্পর্কযুক্তই নয়। বরং প্রত্যেক ঘটনাই এই আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।(আরবী) অর্থাৎ যেন মুমিনরা আল্লাহর এই নিয়ামত সম্পর্কে অবহিত হয় যে, শত্রুদের সংখ্যা তাদের চেয়ে বহু বেশী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাদেরকে শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করলেন এবং এরপর হয়তো তারা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। হাদীসে রয়েছে- “আল্লাহ আমাদেরকে উত্তমরূপে পরীক্ষা করেছেন।”(আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ (প্রার্থনা) শ্রবণকারী এবং (কে তাঁর সাহায্য পাওয়ার যোগ্য এবং কে নয় এ) সবকিছু জানেন। (আরবী) আর এমনিভাবেই আল্লাহ কাফিরদের চক্রান্ত দুর্বল ও নস্যাকারী। এটা হচ্ছে সাহায্য লাভের দ্বিতীয় সুসংবাদ। আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি কাফিরদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থতায় পর্যবসিতকারী। আর ভবিষ্যতেও তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং ধ্বংস করে দিবেন।

إِنْ تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِنْ تَنْتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ ۖ وَإِنْ تَعُودُوا نَعُدْ وَلَنْ تُغْنِيَ عَنْكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ

📘 এখানে আল্লাহ তাআলা কাফিরদেরকে সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা তো এটাই চাচ্ছিলে যে, আল্লাহ তাআলা যেন তোমাদের মধ্যে ও মুসলমানদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন। সুতরাং তোমরা যা প্রার্থনা করছিলে তাই হয়েছে। আবু জেহেল বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! যারা আমাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং আমাদের সামনে এমন কথা পেশ করেছে যা আমাদের জানা নেই, আগামীকাল সকালে আপনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন!” তখন (আরবী)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম হাকিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এবং বলেছেন যে, ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) -এর শর্তের উপর এটা সহীহ। তারা দুজন এটাকে তাখরীজ করেননি) সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, মুশরিকরা বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে কাবা ঘরের গেলাফ ধরে প্রার্থনা করে- “হে আল্লাহ! এই দুই দলের মধ্যে (মুসলিম দল ও কাফির দল) যে দলটি আপনার নিকট উত্তম এবং যে দলের কিবলা হচ্ছে উত্তম কিবলা, সেই দলকে আপনি সাহায্য করুন!” তাই, আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা যা বলেছিলে আমি তাই করেছি। আমি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর দলকে সাহায্য করেছি। এটাই আমার কাছে উত্তম দল।” অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যদি তোমরা (মুসলমানদের ক্ষতি করা হতে বিরত থাকো তবে তা তোমাদের পক্ষেই কল্যাণকর হবে। আর যদি পুনরায় তোমরা এ হেন কাজ কর তবে আমিও তোমাদেরকে পুনরায় শাস্তি প্রদান করবো, আর জেনে রেখো যে, তোমাদের বিরাট বাহিনী তোমাদের কোনই উপকার করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ যাকে সাহায্য করেন তার উপর কে জয়যুক্ত হতে পারে?(আরবী) নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের সাথেই রয়েছেন। আর এটাই হচ্ছে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)-এর দল।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

📘 Please check ayah 8:4 for complete tafsir.

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُونَ

📘 Please check ayah 8:23 for complete tafsir.

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ قَالُوا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ

📘 Please check ayah 8:23 for complete tafsir.

۞ إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ

📘 Please check ayah 8:23 for complete tafsir.

وَلَوْ عَلِمَ اللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لَأَسْمَعَهُمْ ۖ وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّوْا وَهُمْ مُعْرِضُونَ

📘 ২০-২৩ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করার এবং বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আর তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন না করে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাঁর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।(আরবী) অর্থাৎ অথচ তোমরা জানছো যে, নবী (সঃ) তোমাদেরকে কোন্ কথার দিকে আহ্বান করছেন। আর তোমরা ঐ লোকদের মত হয়ো না যারা বলে আমরা আপনার কথা শুনলাম, অথচ কার্যতঃ তারা কিছুই শোনে না। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাদের রীতিনীতি এই ছিল যে, তারা মুখে বলতো- আমরা শুনলাম ও কবুল করলাম । কিন্তু আসলে তারা কিছুই শুনতো না।এরপর জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই প্রকারের আদম সন্তানরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম জীব। চতুষ্পদ জন্তু ও প্রাণীদের মধ্যে ওরাই হচ্ছে নিকৃষ্টতম যারা সত্য কথা শোনার ব্যাপারে বধির ও সত্য কথা বলার ব্যাপারে মূক। তারা কোন জ্ঞানই রাখে না। কেননা, তারা সত্য কথা মোটেই বুঝে না। এরা নিকৃষ্টতম প্রাণী, এরাই কাফির। চতুষ্পদ জন্তু যে প্রকৃতিতে সৃষ্ট হয়েছে ওরা ঐ ভাবেই চলাফেরা করে, কাজেই তারা যেন আল্লাহর অনুগত। কিন্তু মানুষ তো প্রকৃতিগতভাবে ইবাদতের জন্যে সৃষ্ট হয়েছে, অথচ তারা কুফরী করতে রয়েছে। অতএব প্রকৃতির বিপরীতরূপে চলার কারণে তারা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এ জন্যেই তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “কাফিরদের দৃষ্টান্ত ঐ জানোয়ারগুলোর মত যারা আহ্বানকারীদের উদ্দেশ্য কিছুই বুঝে না, শুধু শব্দ শুনে থাকে।” আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “বরং এই কাফিররা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট, এরাই হচ্ছে সীমাহীন গাফেল।” বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা কুরায়েশের বানু আবদিদ দারের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারো কারো ধারণায় এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফিকরা। কিন্তু মুশরিক ও মুনাফিকদের পার্থক্য কিছুই নেই। কেননা, এই দু'দলই হচ্ছে জ্ঞানবিবেকহীন লোক। ভাল কাজ করার মত কোন যোগ্যতাই তাদের মধ্যে নেই। এরপর ইরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কল্যাণকর কিছু নিহিত রয়েছে তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনবার (ও বুঝবার) তাওফীক দিতেন।” অন্তর্নিহিত কথা এই যে, যেহেতু তাদের মধ্যে কোন মঙ্গলই নিহিত নেই সেহেতু তারা কিছুই বুঝে না। আর যদি মহান আল্লাহ তাদেরকে শুনানও তবুও এই হতভাগারা সরল সোজা পথ অবলম্বন করবে না বরং তখনো তারা উপেক্ষা করতঃ মুখ ফিরিয়ে নিবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

📘 আল্লাহ পাক বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমাদেরই সংশোধনের উদ্দেশ্যে যখন নবী (সঃ) তোমাদেরকে আহ্বান করেন তখন তোমরা অতিসত্বর সাড়া দাও এবং হুকুম পালন কর। আবু সাঈদ ইবনে মাআ’ল্লা (রাঃ) বলেন, আমি একদা নামায পড়ছিলাম, এমন সময় নবী (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। তিনি আমাকে ডাক দেন, কিন্তু আমি নামাযে থাকায় সাথে সাথে তাঁর কাছে যেতে পারলাম না। নামায শেষে তাঁর কাছে পৌছলে তিনি আমাকে বলেন, তুমি এতক্ষণ আসনি কেন? আল্লাহ কি তোমাদেরকে বলেননি- “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর হুকুম পালন কর যখন রাসূল (সঃ) তোমাদেরকে তোমাদের জীবন সঞ্চারক বস্তুর দিকে আহ্বান করে?” অতঃপর তিনি আমাকে বলেনঃ “আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পূর্বে তোমাকে কুরআনের একটি মহা সম্মানিত সূরা শিখিয়ে দেবো।” এর পর তিনি যাওয়ার উদ্যোগ করলে আমি তাঁকে ঐ কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম।” মোটকথা, এখানে আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর নির্দেশ সত্বর পালনের হুকুম দেয়া হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এটা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন যে, ঐ সূরাটি হচ্ছে সূরায়ে ফাতেহা । অতঃপর তিনি বলেনঃ “এটাই হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ সাতটি আয়াত যা নামাযে সদা পুনরাবৃত্তি করা হয়। এই হাদীসের বর্ণনা সূরায়ে ফাতেহার তাফসীরে দেয়া হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে ‘সত্যের খাতিরে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এটাই হচ্ছে কুরআন যাতে মুক্তি, স্থায়িত্ব এবং জীবন রয়েছে। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ইসলাম গ্রহণের মধ্যেই জীবন রয়েছে এবং কুফরীর মধ্যে রয়েছে মৃত্যু। অথবা ভাবার্থ হচ্ছে- যখন নবী (সঃ) তোমাদেরকে সেই জিহাদের দিকে আহ্বান করেন। যার মাধ্যমে তোমরা মর্যাদা লাভ করেছো, অথচ এর পূর্বে তোমরা দুর্বল ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে শক্তিশালী করেছেন এবং তোমরা কাফিরদের কাছে পরাজিত হয়েছিলে, যার পর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করেছেন, তখন তোমরা তাড়াতাড়ি তার ডাকে সাড়া দাও এবং হুকুম পালন কর।আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ জেনে রেখো যে, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে আড়াল হয়ে রয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি আড়াল হয়ে আছেন মুমিন ও কুফরীর মাঝে এবং কাফির ও ঈমানের মাঝে। মুমিনকে তিনি কুফরী করতে দেন না এবং কাফিরকে ঈমান আনতে দেন না। (এটাই হচ্ছে মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), যহহাক (রঃ), আতিয়্যা এবং মুকাতিল (রঃ)-এরও উক্তি। মুজাহিদ (রঃ)-এর এক রিওয়ায়াতে আছে যে, (আরবী) অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত তিনি তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেন যে, সে কিছুই বুঝতে পারে না) সুদ্দী (রঃ) বলেনঃ “এর অর্থ হচ্ছেকেউই এই ক্ষমতা রাখে না যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া ঈমান আনে কুফরী করে।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি (৫০:১৬) -এই আয়াতটির মতই। এর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত বহু হাদীস রয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন-(আরবী) অর্থাৎ “হে অন্তরকে পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন!" (হযরত আনাস রাঃ তখন বলেন) আমরা বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনার উপর এবং কুরআনের উপর ঈমান এনেছি। আমাদের ব্যাপারে আপনার কোন সন্দেহ রয়েছে কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা কেননা এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, তোমাদের পরিবর্তন ঘটে যাবে। কারণ, মানুষের অন্তর আল্লাহ তাআলার দু’ অঙ্গুলির মাঝে রয়েছে। তিনি যখন ইচ্ছা করবেন তখন বদলিয়ে দিবেন।”হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন- “প্রত্যেক অন্তর আল্লাহর দু’টি অঙ্গুলির মধ্যভাগে রয়েছে। আল্লাহ যখন ওটাকে সোজা রাখার ইচ্ছা করেন তখন তা সোজা থাকে। আর যখন বাঁকা করে দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন তা বাঁকা হয়ে যায়।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “মীযান আল্লাহর হাতে রয়েছে। ইচ্ছা করলে তিনি ওকে হালকা করে দিবেন এবং ইচ্ছা করলে ভারী করবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উম্মু সালমা (রাঃ) বলেনঃ “আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অন্তর কি পরিবর্তিত হয়?” তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের অন্তর সোজা রাখেন এবং ইচ্ছা করলে বাকা করে দেন। এ জন্যেই আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- (আরবী) অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরগুলোকে বাঁকা করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি বড় দাতা।” (৩:৮) আমি বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন যার মাধ্যমে আমি নিজের জন্যে প্রার্থনা করবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতিপালক! আমার গুনাহ মার্জনা করুন, আমার অন্তরের ক্রোধ দূরীভূত করুন এবং যতদিন আমাকে জীবিত রাখবেন ততদিন আমাকে বিভ্রান্তিকর ফিত্না হতে বাঁচিয়ে রাখুন!”হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “বানী আদমের অন্তরগুলো আল্লাহর দু'টি অঙ্গুলির মাঝে একটি অন্তরের ন্যায়। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই ওগুলোকে ফিরিয়ে থাকেন।” অতঃপর তিনি বলেনঃ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে অন্তরগুলোকে পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরগুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দিন।”

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

📘 এখানে মুমিনদেরকে পরীক্ষা থেকে ভয় প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, আল্লাহর পরীক্ষা পাপী ও নেককার সবারই উপর পতিত হবে। এই পরীক্ষা শুধু পাপীদের উপর নির্দিষ্ট নয়। হযরত যুবাইর (রাঃ)-কে বলা হয়েছিল- “হে আবু আব্দিল্লাহ (রাঃ)! আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান (রাঃ)-কে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে আপনারা তাঁকে হারিয়ে ফেলেছেন। অতঃপর এখন তার খুনের দাবীদার হচ্ছেন! খুনের যদি দাবীদারই হবেন তবে তাঁকে নিহত হতে দিলেন কেন?” হযরত যুবাইর (রাঃ) উত্তরে বলেছিলেনঃ “এটা ছিল আল্লাহর পরীক্ষা যার মধ্যে আমরা জড়িয়ে পড়েছি। আমরা নবী (সঃ), আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ)-এর যমানায় কুরআন কারীমের (আরবী) -এ আয়াতটি পাঠ করতাম। কিন্তু তখন আমাদের ধারণাও ছিল না যে, আমরাও এর মধ্যে পতিত হবো। শেষ পর্যন্ত ঐ পরীক্ষা আমাদের উপর এসে পড়েছে এবং মুসলমানদের দু’টি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকে কেন্দ্র করেই এই পরীক্ষার সূচনা হয়েছে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) ও বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতটি হযরত আলী (রাঃ), হযরত আম্মার (রাঃ), হযরত তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ)-এর। ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত যুবাইর (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমরা সদা সর্বদা এ আয়াতটি পাঠ করতাম। কিন্তু এটা যে আমাদের উপরই সত্যরূপে প্রমাণিত হবে তা আমরা জানতাম না।” সুদ্দী (রঃ)-এর ধারণা এই যে, এ আয়াতটি বিশেষভাবে আহলে বদরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। উষ্ট্রের যুদ্ধে তাদের উপরই এটা সত্যরূপে প্রমাণিত হয় এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর ধারণা মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু নবী (সঃ)-এর সাহাবীবর্গ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “মুমিনদের উপর নির্দেশ রয়েছে- পাপর্কে তোমরা নিজেদের মধ্যে আসতে দিয়ো না। যেখানেই কাউকেও কোন অসৎ কার্যে লিপ্ত দেখতে পাও, সত্বরই তাকে তা থেকে বিরত রাখো। নতুবা শাস্তি সবার উপরই আসবে।” এটাই উত্তম তাফসীর। মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “এ হুকুম তোমাদের জন্যেও বটে।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই এই পরীক্ষায় পতিত হবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই তোমাদের মালধন ও সন্তান সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষা।” (৬৪:১৫) সুতরাং তোমাদের সকলেরই ফির বিভ্রান্তি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। কেননা, এই ভয় প্রদর্শন সাহাবা ও গায়ের সাহাবা সবার উপরই রয়েছে। তবে এটা সঠিক কথা যে, এর দ্বারা সাহাবীদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। এই হাদীসটি ফিত্না ও পরীক্ষাকে ভয় করার কথাই প্রমাণ করছে। এগুলো ইনশাআল্লাহ পৃথক পুস্তকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, যেমন ইমামগণও পৃথক পুস্তকের আকারে এই কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে যেটা আলোচনা করা হয়েছে তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ বিশেষ বিশেষ লোকের আমলের কারণে সর্বসাধারণের উপর শাস্তি নাযিল করেন না। কিন্তু যখন বিশিষ্ট লোকগুলো কওমের মধ্যে গর্হিত কাজকর্ম ছড়ানো অবস্থায় দেখতে পায় এবং ওগুলো বন্ধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করে না এবং লোকদেরকে ঐসব কাজ করতে বাধা দেয় না তখন শাস্তি সাধারণভাবে এসে পড়ে এবং বিশিষ্ট ও সাধারণ সবাই ঐ শাস্তির শিকারে পরিণত হয়।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, সুনানের কিতাবগুলোতে কেউই এটাকে তাখরীজ করেননি)রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর শপথ! যে পর্যন্ত তোমরা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে থাকবে সেই পর্যন্ত তোমাদের উপর শাস্তি আসবে না। আর যখন তোমরা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ছেড়ে দেবে এবং ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান থেকে বিরত থাকবে তখন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর কঠিনতম শাস্তি অবতীর্ণ করতে পারেন। অতঃপর তোমরা লক্ষবার দুআ করলেও সেই দুআ কবুল হবে না। অথবা আল্লাহ তোমাদের উপর অন্য কওমকে বিজয়ী করবেন। এরপর তোমাদের সমস্ত দুআ বিফল হয়ে যাবে।” (এ হাদীস দুটি হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) এবং হযরত ইসমাঈল ইবনে জাফর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)আবু রাকাদ (রঃ) বলেন, আমি আমার এক গোলামকে হযরত হুযাইফা (রাঃ)-এর নিকট পাঠালাম। সেই সময় তিনি বলেছিলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে কেউ এ ধরনের একটি মাত্র কথা বললেও তাকে মুনাফিক মনে করা হতো। কিন্তু আজ এক মজলিসে তোমাদের কোন একজনের মুখ থেকে আমি এরূপ চারটি কপটতাপূর্ণ কথা শুনতে পাচ্ছি! তোমাদের পক্ষে উচিত এই যে, তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজ থেকে সত্বর বাধা দিবে এবং মানুষকে ভাল কাজে উৎসাহিত করবে। নতুবা তোমরা সবাই শাস্তিতে গ্রেফতার হয়ে যাবে অথবা এই ধরনের শাস্তি হবে যে, দুষ্ট লোককে তোমাদের উপর শাসনকর্তা বানিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর ভাল লোকেরা লাখবার দুআ করলেও তা বিফলে যাবে।হযরত আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ)-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, তিনি নিজের দু’টি অঙ্গলি দ্বারা নিজের কানের দিকে ইশারা করছিলেন এবং বলছিলেন- আল্লাহর হুদূদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি এবং আল্লাহর হুদূদকে লংঘনকারী অথবা তাতে অবহেলা প্রদর্শনকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এইরূপ যে, কতকগুলো তাক নৌকায় চড়ে আছে। উপরের লোকেরা নীচের লোকদের কষ্টের কারণ হয়ে গেছে এবং নীচের লোকেরা উপরের লোকদেরকে কষ্ট দিচ্ছে। অর্থাৎ নীচের লোকদের পানির প্রয়োজন হওয়ায় তারা পানি আনার জন্যে উপরে গেল। কিন্তু এর ফলে উপরের লোকদের কষ্ট হতে লাগলো। তাই ঐ নীচের লোকেরা বলাবলি করলো- যদি আমরা নৌকার নীচের দিক থেকেই কোন তক্তা সরিয়ে দিয়ে পানির পথ করে দেই তবে উপরের লোকদের কোন কষ্ট হবে না। এর ফল তো জানা কথা যে, নৌকায় পানি উঠার কারণে নৌকার আরোহীরা সবাই ডুবে মরবে। সুতরাং নৌকায় ছিদ্র করা থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া উচিত। অনুরূপভাবে এই পাপীদেরকে যদি তোমরা পাপকাজে বাধা না দিয়ে ঐ অবস্থাতেই ছেড়ে দাও তবে নৌকায় আরোহীদের মত তোমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে, যদিও নৌকার উপরের আরোহীদের মত তোমাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু এটা এরই শাস্তি যে, তোমরা পাপ কাজ থেকে বাধা প্রদান করনি। (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে বলতে শুনেছি- “আমার উম্মতের মধ্যে পাপ যখন সাধারণভাবে প্রকাশ পাবে তখন আল্লাহ সাধারণভাবে শাস্তি পাঠাবেন।” তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদের মধ্যে সৎ লোক থাকলেও কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, তারাও শাস্তিতে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু (মৃত্যুর পর) তারা আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ করবে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি বর্ণনায় আছে- “কোন কওম পাপ কাজ করতে রয়েছে, আর তাদের মধ্যে কতকগুলো এমন লোকও রয়েছে যারা সম্ভ্রান্ত, তারা নিজেরা সেই পাপকার্যে লিপ্ত নয় বটে, কিন্তু তারা সেই কাজে বাধা প্রদান করে না, তখন আল্লাহ তাদের উপর সাধারণভাবে শাস্তি দিয়ে থাকেন।”হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন“যখন ভূ-পৃষ্ঠে পাপকার্য প্রকাশ পাবে তখন আল্লাহ দুনিয়াবাসীর উপর তার শাস্তি নাযিল করবেন।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাদের মধ্যে আল্লাহর অনুগত বান্দারাও থাকবে কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, তবে (মৃত্যুর পর) তারা আল্লাহর করুণা লাভ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) তাখরীজ করেছেন)

وَاذْكُرُوا إِذْ أَنْتُمْ قَلِيلٌ مُسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَنْ يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآوَاكُمْ وَأَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

📘 আল্লাহ তা'আলা ঐ নিয়ামতরাজির কথা বলেছেন যা মুমিনদের উপর করা হয়েছে যে, তারা সংখ্যায় কম ছিল, তাদের সংখ্যা তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা দুর্বল ছিল ও ভীত সন্ত্রস্ত ছিল, তিনি তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তাদের ভয়ের কারণগুলো দূর করে দিয়েছেন। তারা গরীব ও ফকির ছিল, তিনি তাদেরকে পবিত্র জীবিকা দান করেছেন। তাদেরকে তিনি কৃতজ্ঞ বান্দা বানিয়েছেন। তারা অনুগত বান্দারূপে পরিগণিত হয়েছে। প্রতিটি কাজে তারা বাধ্য ও অনুগত হয়ে গেছে। এই ছিল মুমিনদের অবস্থা, যখন তারা মক্কায় ছিল এবং সংখ্যায় খুবই কম ছিল। তারা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। মুশরিক, মাজুসী, রুমী সবাই তাদেরকে তাদের সংখ্যার স্বল্পতা ও শক্তিহীনতার কারণে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। সব সময় তাদের এই ভয় ছিল যে, আকস্মিকভাবে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। কিছুকাল পর্যন্ত তাদের এই অবস্থাই ছিল। অতঃপর তাদেরকে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। সেখানে তারা আশ্রয় লাভ করে । মদীনার ললাকেরা তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে তাদের সাথে অংশগ্রহণ করে। জান ও মাল তাদের উপর কুরবান করে দেয়। কেননা, তারা চাচ্ছিল আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করতে।(আরবী) -এ সম্পর্কে কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আরবে এই লোকগুলো অত্যন্ত লাঞ্ছিত অবস্থায় ছিল। তাদের জীবন ছিল অত্যন্ত দুর্বিসহ। তাদের পেটে খাবার ছিল না, পরনে কাপড় ছিল না। সুপথ থেকেও তারা ছিল ভ্রষ্ট। তারা ছিল খুবই হতভাগা। তারা খাবার পেতো না, বরং তাদেরকেই খেয়ে নেয়া হচ্ছিল। দুনিয়ায় যে তাদের অপেক্ষা বেশী লাঞ্ছিত ও অপমানিত আর কেউ ছিল তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু ইসলাম আনয়নের পর এই লাঞ্ছিত লোকেরাই দেশের পর দেশ দখল করে নেয় এবং আমীর ও বাদশাহ বনে যায়। রাজা বাদশাহদের উপরও হুকুম চালাতে থাকে। ঢেরি ঢেরি খাবার তারা পেতে শুরু করে। আল্লাহ তাদেরকে সব কিছুই দান করেন যা তোমরা আজ স্বচক্ষে দেখছো। সুতরাং এখন তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত নিয়ামত দাতা। কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তাদের ধন-সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 8:28 for complete tafsir.

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

📘 ২৭-২৮ নং আয়াতের তাফসীর: এই আয়াতটি আবু লুবাবাহ ইবনে আবদিল মুনযির (রাঃ)-এর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে ইয়াহূদী বানু কুরাইযার নিকট প্রেরণ করেন যেন তারা রাসূল (সঃ)-এর হুকুমের শর্ত মেনে নিয়ে দুর্গ খালি করে দেয়। তারা তখন আবু লুবাবাহর কাছেই পরামর্শ চায়। তখন তিনি তাদেরকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেন এবং তিনি স্বীয় হাত দ্বারা স্বীয় গলার প্রতি ইশারা করেন অর্থাৎ ওটা হচ্ছে যবেহ্ বা হত্যা। এরপর আবু লুবাবাহ্ (রাঃ) বুঝতে পারেন যে, তিনি আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অতঃপর তিনি শপথ করে বসেন যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর তাওবা কবুল না করা পর্যন্ত তিনি মরে যাবেন সেও ভাল কিন্তু খাদ্য খাবেন না। এরপর তিনি মদীনার মসজিদে এসে থামের সাথে নিজেকে বেঁধে ফেলেন। নয় দিন এভাবেই কেটে যায়। ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত রাসূল (সঃ) -এর উপর আল্লাহ তা'আলা তার তাওবা কবুলের আয়াত নাযিল করেন। জনগণ তঁাকে এই সুসংবাদ দেয়ার জন্যে তার কাছে আসে এবং থামের বন্ধন খুলে দেয়ার ইচ্ছা করেন। আবু লুবাবাহ (রাঃ) বলেনঃ “আমার বন্ধন শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুলতে পারেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজে তার বন্ধন খুলে। দেন। ঐ সময় তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ সাদকা করে দিলাম।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমার জন্যে এক তৃতীয়াংশ সাদকা করাই যথেষ্ট হবে।” (এটা আব্দুর রাযযাক ইবনে আবি কাতাদা (রঃ) ও যুহরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত মুগীরা ইবনে শু'বা (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। কেননা ফিত্না-ফাসাদ সষ্টি করে হত্যা করে দেয়া হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা।হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আবু সুফিয়ান (রাঃ) মক্কা থেকে বের হন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সংবাদ দেন যে, আবু সুফিয়ান (রাঃ) অমুক জায়গায় রয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “আবু সুফিয়ান অমুক জায়গায় রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করার জন্যে বেরিয়ে পড়। কিন্তু এ কথা সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখতে হবে।” কিন্তু একজন মুনাফিক আবু সুফিয়ানকে লিখে পাঠায়ঃ, “মুহাম্মাদ (সঃ) ধরতে যাচ্ছেন, সুতরাং সাবধান হয়ে যাও।” তখন (আরবী) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল। আয়াতের ধরন হিসেবেও এটা প্রমাণিত হয় না। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হাতিব ইবনে আবি বুলতাআ’র (রাঃ) ঘটনা নিম্নরূপ বর্ণিত আছেঃ তিনি কুরায়েশ কাফিরদেরকে নবী (সঃ)-এর পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে পত্র লিখেছিলেন। এটা ছিল মক্কা বিজয়ের সময়ের ঘটনা। আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে এ সংবাদ জানিয়ে দেন। সুতরাং তিনি পত্র বাহকের পিছনে লোক পাঠিয়ে দেন এবং ঐ পত্র ধরা পড়ে যায়। হাতিব (রাঃ)-কে ডাকা হয়। তিনি স্বীয় অপরাধ স্বীকার করেন। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলে উঠেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এর গর্দান উড়িয়ে দিন। কেননা, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ হে উমার (রাঃ)! যেতে দাও। কেননা, এ ব্যক্তি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তোমার কি জানা নেই যে, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন- “তোমরা যা চাও তাই আমল কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।” মোটকথা, সঠিক ব্যাপার এই যে, আয়াতটি সাধারণ। যদিও এটা সঠিক যে, আয়াতটির শানে নুকূল একটি বিশেষ কারণ। আর জমহুর আলেমের মতে শব্দের সাধারণত্বের দ্বারা উক্তি করা যেতে পারে, বিশেষ কারণ না থাকলে কোন আসে যায় না। খিয়ানতের সংজ্ঞার মধ্যে ছোট, বড়, সকর্মক ও অকর্মক সমস্ত পাপই মিলিত রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে আমানত’ শব্দ দ্বারা ঐ সব আমলকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলোকে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর ফরয করে রেখেছেন। ভাবার্থ হচ্ছে- ফরয ভেঙ্গে দিয়ো না, সুন্নাত তরক করো না এবং পাপকার্য থেকে দূরে থাকো।উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছে- এমন কাজ করো না যে, সামনে তো কারো মর্জি মুতাবেক কথা বলবে, কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে তার দুর্নাম করবে বা তার বিরোধিতা করবে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত খিয়ানত। আমানত এর দ্বারাই শেষ হয়ে যায়। সুদ্দী বলেনঃ আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর খিয়ানত এটাই যে, মানুষ পরস্পরের সাথে খিয়ানত করে। জনগণ নবী (সঃ)-এর কথা শুনতো এবং তা অন্যদেরকে বলে দিতো। এর ফলে ঐ সংবাদ মুশরিকদের কানেও পৌঁছে যেতো। এ জন্যেই নবী (সঃ) বলেছিলেন- “দু’জনের মধ্যকার কথা একটা আমানত। কথা যেখানে শুনবে সেখানেই রেখে দেয়া উচিত। কারো সামনে কারো কথার পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়, যদিও সে নিষেধ না করে থাকে।”(আরবী) ফিৎনার অর্থ হচ্ছে আযমায়েশ বা পরীক্ষা। আল্লাহ সন্তান দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন যে, সন্তান পেয়ে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে কি-না এবং সন্তানদের দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করছে। কি-না। কিংবা হয়তো সন্তানের প্রতি ভালবাসার কারণে আল্লাহ থেকে গাফেল থাকছে। যদি মানুষ এই পরীক্ষায় পূর্ণভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে তবে আল্লাহর কাছে তাদের জন্যে বড় পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে অকল্যাণ ও কল্যাণ দ্বারা পরীক্ষা করবো।” আর এক জায়গায় বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে যেন তোমাদের মালধন ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে না রাখে, আর যারা এরূপ করবে তারা হবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত।” আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীরা এবং তোমাদের সন্তানরা তোমাদের শত্রু, সুতরাং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহর নিকটে যে সাওয়াব ও জান্নাত রয়েছে তা এই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হতে বহুগুণে উত্তম। এগুলো শক্রদের মত ক্ষতিকারক এবং এগুলোর অধিকাংশই মানুষের জন্যে কল্যাণকর নয়। আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক। কিয়ামতের দিন তাঁর কাছে মহা পুরস্কার রয়েছে। হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! তুমি আমাকে খোঁজ কর, পেয়ে যাবে। তুমি যদি আমাকে পেয়ে যাও তবে জানবে যে, সবকিছুই পেয়ে গেছে । আর যদি আমাকে হারিয়ে দাও তবে সবকিছুই হারিয়ে দিয়েছো। তোমার কাছে আমিই সর্বাপেক্ষা বেশী প্রিয় হওয়া উচিত।”সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে সে ঈমানের আস্বাদ পেয়েছে। (১) যার কাছে সমস্ত জিনিস থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) প্রিয়। (২) যে ব্যক্তি কোন লোককে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই ভালবাসে। (৩) যে ব্যক্তির কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াও অধিক পছন্দনীয় সেই কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া অপেক্ষা যা থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন) বরং সে রাসূল (সঃ)-এর মহব্বতকে ধনমাল ও সন্তান-সন্ততির উপরেও প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যেমন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কেউই (পূর্ণ) মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে তার নফস্ হতে, তার পরিবারবর্গ হতে, তার মাল হতে এবং সমস্ত লোক হতে বেশী প্রিয় হই।”

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

📘 ইবনে আব্বাস (রাঃ), সুদ্দী (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ) যহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন। যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ বের হওয়ার স্থান। মুজাহিদ (রঃ) (আরবী)-এটুকু বেশী করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে অর্থাৎ মুক্তি। তাঁর আর একটি বর্ণনায় (আরবী) অর্থাৎ সাহায্য রয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেছেন যে, (আরবী) দ্বারা (আরবী) অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ফায়সালা বুঝানো হয়েছে। ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর এই তাফসীর পূর্ববর্তী তাফসীরগুলো হতে বেশী সাধারণ। কেননা, যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে থাকবে সে সত্য ও মিথ্যার পরিচয় লাভের তাওফীক প্রাপ্ত হবে। এটা হবে তার মুক্তি ও সাহায্য লাভের কারণ। তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা'আলা গাফফার (বড় ক্ষমাশীল) এবং সাত্তার (দোষত্রুটি গোপনকারী) হয়ে যাবেন। আল্লাহর কাছে বড় পুরস্কার পাওয়ার সে হকদার হয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমত দ্বিগুণ প্রদান করবেন এবং তোমাদের জন্যে এমন নূরের ব্যবস্থা করে দিবেন যার আলোকে তোমরা পথ চলতে পারবে, আর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন, তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

📘 Please check ayah 8:4 for complete tafsir.

وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ

📘 হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে কয়েদ বা বন্দী করা । আতা (রঃ) এবং ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে হাস্ বা অবরোধ করা। আর সুদ্দী (রঃ) বলেন। যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) ও (আরবী) অর্থাৎ অবরোধ করা ও বেঁধে ফেলা। এর মধ্যে সবগুলো অর্থই রয়েছে। ভাবার্থ হচ্ছে- তারা তোমার সাথে কোন মন্দ ব্যবহারের ইচ্ছা পোষণ করে। আতা (রঃ) বলেনঃ “আমি উবায়েদ ইবনে উমায়েরকে বলতে শুনেছি যে, যখন কাফিররা নবী (সঃ)-কে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা দেশান্তরিত করার ষড়যন্ত্র করে তখন তাকে তার চাচা আবু তালিব জিজ্ঞেস করেন, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করেছে তা তুমি জান কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা আমাকে বন্দী করতে বা হত্যা করতে অথবা নির্বাসিত করতে চায়।” আবু তালিব আবার জিজ্ঞেস করেন, এ সংবাদ তোমাকে কে জানিয়েছে? তিনি জবাব দেনঃ “আমার প্রতিপালক আমাকে এ সংবাদ জানিয়েছেন।” আবু তালিব তখন বলেন, তোমার প্রতিপালক খুবই উত্তম প্রতিপালক। তার কাছে উত্তম উপদেশ প্রার্থনা কর। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “আমি তার কাছে উত্তম উপদেশই চাচ্ছি এবং তিনি সদা আমাকে উত্তম উপদেশই প্রদান করবেন।” সত্য কথা তো এই যে, এখানে আবু তালিবের আলোচনা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার এমন কি প্রত্যাখ্যান যোগ্য। কেননা, এটা হচ্ছে মাদানী আয়াত। আর এই ঘটনা এবং কুরায়েশদের এভাবে পরামর্শকরণ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের রাত্রে। অথচ আবু তালিবের মৃত্যু ঘটেছিল এর তিন বছর পূর্বে। আবূ তালিবের মৃত্যুর কারণেই তো কাফিররা এতোটা দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল। কেননা, আবু তালিব সদা সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাজে সাহায্য ও সহায়তা করতেন এবং তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে কুরায়েশদের সাথে মুকাবিলা করতেন।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশ নেতৃবর্গের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে একটি পরামর্শ সভায় মিলিত হয়। ঐ সভায় ইবলীসও একজন মর্যাদা সম্পন্ন বৃদ্ধের বেশে উপস্থিত হয়। জনগণ তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “আপনি কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি নাজদবাসী একজন শায়েখ । আপনারা পরামর্শ সভা আহ্বান করেছেন। জেনে আমিও সভায় হাযির হয়েছি, যেন আপনারা আমার উপদেশ ও সৎ পরামর্শ থেকে বঞ্চিত না হন।" তখন কুরায়েশ নেতৃবর্গ তাকে অভিনন্দন জানালো। সে তাদেরকে বললোঃ “আপনারা এই লোকটির (মুহাম্মাদ সঃ-এর) ব্যাপারে অত্যন্ত চিন্তাভাবনা ও তদবীরের সাথে কাজ করুন। নতুবা খুব সম্ভব সে আপনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে বসবে।” সুতরাং একজন মত প্রকাশ করলোঃ “তাকে বন্দী করা হাক, শেষ পর্যন্ত সে বন্দী অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন ইতিপূর্বে কবি যুহাইর ও নাবেগাকে বন্দী করা হয়েছিল এবং ঐ অবস্থাতেই তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। এও তো একজন কবি।” এ কথা শুনে ঐ নাজদী বৃদ্ধ চীৎকার করে বলে উঠলোঃ “আমি এতে কখনই একমত নই। আল্লাহর শপথ! তার প্রভু তাকে সেখান থেকে বের করে নেবে। ফলে সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে যাবে। অতঃপর সে তোমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তোমাদের সবকিছু ছিনিয়ে নেবে এবং তোমাদেরকে তোমাদের শহর থেকে বের করে দেবে।” লোকেরা তার এ কথা শুনে বললোঃ “শায়েখ সত্য কথা বলেছেন। অন্য মত পেশ করা হাক।” অন্য একজন তখন বললোঃ “তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হাক, তা হলেই তোমরা শান্তি পাবে। সে যখন এখানে থাকবেই না, তখন তোমাদের আর ভয় কিসের? তার সম্পর্ক তোমাদের ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকবে। এতে তোমাদের কি হবে?” তার এ কথা শুনে ঐ বৃদ্ধ বললোঃ “আল্লাহর কসম! এ মতও সঠিক নয়। সে যে মিষ্টভাষী তা কি তোমাদের জানা নেই। সে মধু মাখানো কথা দ্বারা মানুষের মন জয় করে নেবে। তোমরা যদি এই কাজ কর তাহলে সে আরবের বাইরে গিয়ে সারা আরববাসীকে একত্রিত করবে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে তোমাদের উপর হামলা করে বসবে এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে। আর তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে হত্যা করে ফেলবে।” লোকেরা বললোঃ “শায়েখ সাহেব ঠিক কথাই বলেছেন। অন্য একটি মত পেশ করা হাক।” তখন আবু জেহেল বললোঃ “আমি একটা পরামর্শ দিচ্ছি । তোমরা চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবে যে, এর চেয়ে উত্তম মত আর হতে পারে না। প্রত্যেক গোত্র থেকে তোমরা একজন করে যুবক বেছে নাও যারা হবে বীর পুরুষ ও সম্ভ্রান্ত। সবারই কাছে তরবারী থাকবে। সবাই সম্মিলিতভাবে হঠাৎ করে তাকে তরবারীর আঘাত করবে। যখন সে নিহত হয়ে। যাবে তখন তার রক্ত সকল গোত্রের মধ্যে বণ্টিত হয়ে যাবে। এটা কখনও সম্ভব নয় যে, বানু হাশিমের একটি গোত্র সমস্ত গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বাধ্য হয়ে বানু হাশিমকে রক্তপণ গ্রহণ করতে হবে। আমরা তাদেরকে রক্তপণ দিয়ে দিবো এবং শান্তি লাভ করবো।” তার এ কথা শুনে নাজদী বৃদ্ধ বললোঃ “আল্লাহর কসম! এটাই হচ্ছে সঠিকতম মত। এর চেয়ে উত্তম মত আর হতে পারে না।” সুতরাং সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল এবং এরপর সভা ভঙ্গ হলো। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “আজকে রাত্রে আপনি বিছানায় শয়ন করবেন না।” এ কথা বলে তিনি তাকে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কথা অবহিত করলেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ রাত্রে নিজের বিছানায় শয়ন করলেন না এবং তখনই আল্লাহ তা'আলা তাঁকে হিজরতের নির্দেশ দিলেন। মদীনায় আগমনের পর আল্লাহ পাক তার উপর সূরায়ে আনফাল অবতীর্ণ করলেন। স্বীয় নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং আল্লাহ তা'আলাও (স্বীয় নবীকে সঃ রক্ষা করার) তদবীর ও ফিকির করতে থাকেন, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাধিক উত্তম তদবীরকারক।” তাদের উক্তি ছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “তার ব্যাপারে তোমরা মৃত্যু ঘটবার অপেক্ষা কর, শেষ পর্যন্ত সে ধ্বংস হয়ে যাবে।” ঐ দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঅর্থাৎ “তারা কি বলে- এ ব্যক্তি কবি, আমরা তার ব্যাপারে মৃত্যু ঘটারই অপেক্ষা করছি।” (৫২:৩০) তাই ঐ দিনের নামই রেখে দেয়া হয় অর্থাৎ “দুঃখ-বেদনার দিন।” কেননা, ঐ দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তাদের সেই দুরভিসন্ধির আলোচনা নিম্নের আয়াতে রয়েছে-(আরবী) অর্থাৎ “তারা এই ভূমি হতে তোমাকে উৎখাত করতে উদ্যত হয়েছিল, যেন তোমাকে তথা হতে বের করে দেয়, আর যদি এরূপ ঘটে যেতো তবে তারাও তোমার পর (এখানে) অতি অল্প সময় টিকে থাকতে পারতো।” (১৭:৭৬) নবী (সঃ) আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। যখন কুরায়েশরা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিলো তখন হযরত আলী (রাঃ)-কে ডেকে তিনি নির্দেশ দিলেনঃ “তুমি আমার বিছানায় শুয়ে পড়।" হযরত আলী (রাঃ) তখন সবুজ চাদর গায়ে দিয়ে তার বিছানায় শুয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাইরে বের হলেন। লোকদেরকে তিনি দরজার উপর দেখতে পেলেন। তিনি এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ফলে তাদের চক্ষু নবী (সঃ)-এর দিক থেকে ফিরে গেল। তিনি সূরায়ে ইয়াসীনের (আরবী) হতে (আরবী) (৩৬:১-৯) পর্যন্ত আয়াতগুলো পাঠ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে নবী (সঃ)-এর কাছে আসলেন। তিনি তাকে কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি না কেঁদে পারি কি? কুরায়েশের লোকেরা লাত উযযার নামে শপথ করে বলেছে যে, আপনাকে দেখা মাত্রই আক্রমণ চালিয়ে তারা হত্যা করে ফেলবে এবং তাদের প্রত্যেকেই আপনার হত্যায় অংশগ্রহণ করতে চায়।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আমার প্রিয় কন্যা! আমার জন্যে অযুর পানি নিয়ে এসো।” তিনি অযু করে বায়তুল্লাহর দিকে চললেন। কুরায়েশরা তাঁকে দেখেই বলে উঠলোঃ “এই যে তিনি।” কিন্তু সাথে সাথেই তাদের মাথাগুলো নীচের দিকে ঝুঁকে পড়লো এবং গর্দানগুলো বাঁকা হয়ে গেল। তারা তাদের চক্ষুগুলো উঠাতে পারলো না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “চেহারাগুলো নষ্ট হয়ে যাক।” যার গায়েই এই কংকর লেগেছিল সে-ই বদরের যুদ্ধে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছিল। (হাকিম (রঃ) বলেনঃ “এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর সহীহ। তারা দুজন এটা তাখরীজ করেননি এবং এর কোন দোষ-ত্রুটি আমার জানা নেই।”) মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হিজরত করে (সওরের) গুহায় পৌছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) সাথে ছিলেন। মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ী অবরোধ করে থাকে। হযরত আলী (রাঃ)-কেই তারা মুহাম্মাদ (সঃ) মনে করতে থাকে। সকাল হলে তারা তার ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ঘরে হযরত আলী (রাঃ)-কে দেখতে পায়। এভাবে আল্লাহ তাদের সমস্ত অভিসন্ধি নস্যাৎ করে দেন। তারা হযরত আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “মুহাম্মাদ (সঃ) কোথায়?" তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি তার কোন খবর জানি না। তারা তখন তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলতে থাকে। পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। সুতরাং তারা পাহাড়ের উপর উঠে পড়ে। গুহার সামনে দিয়ে চলার সময় তারা দেখতে পায় যে, গুহার মুখে মাকড়সায় জাল বুনিয়ে রেখেছে। তাই তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “গুহার মধ্যে মানুষ প্রবেশ করলে ওর মুখে কখনো মাকড়সার এত বড় জাল ঠিক থাকতো না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ গুহার মধ্যে তিনদিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং আল্লাহ তা'আলাও (স্বীয় নবীকে সঃ রক্ষা করার) তদবীর করতে থাকেন, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাধিক উত্তম তদবীরকারক।” অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি লক্ষ্য কর যে, কিভাবে তদবীর করে আমি তোমাকে ঐসব কাফিরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছি।

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا قَالُوا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَاءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هَٰذَا ۙ إِنْ هَٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ

📘 Please check ayah 8:33 for complete tafsir.

وَإِذْ قَالُوا اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ هَٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِنَ السَّمَاءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

📘 Please check ayah 8:33 for complete tafsir.

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

📘 ৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তা'আলা কুরায়েশদের কুফরী ও একগুঁয়েমীর সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা কুরআন কারীম শ্রবণ করে কিরূপ মিথ্যা দাবী করছে। তারা বলছে“আমরা যে কুরআন শুনলাম, ইচ্ছা করলে আমরাও এরূপ বলতে পারি।” তাদের এ দাবী একেবারে ভিত্তিহীন এবং এটা হচ্ছে কার্যবিহীন কথা। কেননা, এ ব্যাপারে কুরআন পাকে বার বার চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে যে, তারা কুরআনের সূরার মত একটি সূরা আনয়ন করুক তো? কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি। এরূপ কথা বলে তারা নিজেদেরকে প্রতারিত করছে, আর প্রতারিত করছে। তাদের বাতিলের অনুসারীদেরকে। কথিত আছে যে, এই উক্তি করেছিল নাযার ইবনে হারিস। ঐ বেদ্বীন ব্যক্তি পারস্যে গিয়েছিল এবং তথাকার ইরানী বাদশাহ রুস্তম ও ইসফিনদিয়ারের কাহিনী পড়েছিল। যখন সে সেখান থেকে ফিরে আসে তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রিসালাত প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জনগণকে কুরআন কারীম পাঠ করে শুনাতেন। যখন তিনি মজলিস শেষ করতেন তখন ঐ দুরাচার নাযার ইবনে হারিস বসে পড়তে এবং ইরানী বাদশাহদের ইতিহাস বর্ণনা করে বলতোঃ “আচ্ছা বলতো, উত্তম-গল্পকথক কে? আমি, না মুহাম্মাদ (সঃ)?” অতঃপর বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে যখন বিজয় দান করলেন এবং মক্কার কতগুলো মুশরিক বন্দী হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে হত্যাযযাগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাকে হত্যা করে দেয়া হয়। হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ) তাকে বন্দী করেছিলেন। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন যে, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনজন বন্দীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা হচ্ছে- (১) উকবা ইবনে আবি মুঈত, (২) তাঈমা ইবনে আদী এবং (৩) নাযার ইবনে হারিস। নাযার ছিল হযরত মিকদাদ (রাঃ)-এর বন্দী। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তার হত্যার নির্দেশ দেন তখন হযরত মিকদাদ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা তো আমার বন্দী। সুতরাং একে তো আমারই পাওয়া উচিত।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সে আল্লাহর কিতাবের উপর বিরূপ মন্তব্য করেছে। সুতরাং তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” হযরত মিকদাদ (রাঃ) স্বীয় কয়েদীর দিকে পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে তিনি প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি স্বীয় অনুগ্রহে মিকদাদ (রাঃ)-কে বহু কিছু প্রদান করুন!” তখন হযরত মিকদাদ (রাঃ) বলে উঠলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! জিদ করে চাওয়ার উদ্দেশ্য এটাই ছিল যে, আপনি আমার জন্যে প্রার্থনা করবেন।” এই নাযারের ব্যাপারেই (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) তাঈমার স্থলে মুঈম ইবনে আদীর নাম বলেছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা, বদরের দিন মুতঈম ইবনে আদী জীবিতই ছিল না। এ জন্যেই সেই দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আজ যদি মুতঈম ইবনে আদী জীবিত থাকতো এবং এই নিহতদের মধ্যকার কারো জন্যে প্রার্থনা করতো তবে আমি তাকে এই কয়েদী দিয়ে দিতাম।” তাঁর এ কথা বলার কারণ ছিল এই যে, সে তাঁকে ঐ সময় রক্ষা করেছিল যখন তিনি তায়েফের অত্যাচারীদের পিছু ছেড়ে দিয়ে মক্কার পথে ফিরে আসছিলেন। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ ঐ সব পুস্তক ও সংকলন যেগুলো শিক্ষা করে জনগণকে শুনানো হয়ে থাকে। আর এগুলো হচ্ছে শুধু কিস্সা ও কাহিনী। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা (কাফিররা) বলে- এই কুরআন তো পূর্ববর্তীদের মিথ্যা কাহিনী মাত্র যেগুলোকে লিখে নেয়া হয়েছে এবং দিন-রাত্রি পাঠ করে শুনানো হচ্ছে। হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও- এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশসমূহের ও পৃথিবীর গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন, আর তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (২৫:৫-৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তাদের তাওবা ককূল করতঃ তাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। ঘোষিত হচ্ছে- “যখন তারা (কাফিররা) বলেছিল- হে আল্লাহ! এটা (এই কুরআন ও নবুওয়াত) যদি আপনার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করুন অথবা আমাদের উপর কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এনে দিন।” এই প্রার্থনা ছিল তাদের পূর্ণ অজ্ঞতা, মূখতা এবং বিরোধিতার কারণে। তাদের এই নির্বুদ্ধিতার কারণেই তাদের দুর্নাম হচ্ছে। তাদের তো নিম্নরূপ প্রার্থনা করা উচিত ছিলঃ “হে আল্লাহ! এই কুরআন যদি আপনার পক্ষ থেকেই এসে থাকে তবে ওর অনুসরণ করার তাওফীক আমাদেরকে দান করুন!” কিন্তু তারা নিজেদের জীবনের উপর শাস্তি কিনে নেয় এবং শাস্তির জন্যে তাড়াহুড়া করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী সঃ!) তারা তোমার কাছে শাস্তির জন্যে তাড়াহুড়া করছে, যদি এর জন্যে একটা দিন নির্দিষ্ট না থাকতো তবে হঠাৎ করেই তাদের উপর শাস্তি এসে পড়তো এবং তারা কিছু বুঝতেই পারতো না।” আল্লাহ তা'আলা তাদের কথা আরো বলেনঃ (আরবী) (৩৮:১৬)এবং আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এক আবেদনকারী সেই আযাব সম্বন্ধে আবেদন করে যা সংঘটিত হবে কাফিরদের উপর, যার কোন প্রতিরোধকারী নেই। যা আল্লাহর তরফ হতে ঘটবে, যিনি ধাপসমূহের (আসমান সমূহের) অধিপতি।” (৭০:১-৩) পূর্ব যুগীয় উম্মতদের মূর্খ ও অজ্ঞ লোকেরাও অনুরূপ কথাই বলেছিল। হযরত শুআইব (আঃ)-এর কওম তাকে বলেছিলঃ “হে শুআইব (আঃ)! যদি তুমি সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আকাশ নিক্ষেপ কর।” অথবা “হে আল্লাহ! যদি এটা আপনার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষণ করুন!” আবু জেহেল ইবনে হিশামও এ কথাই বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! এটা যদি আপনার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ করুন অথবা আমাদের কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এনে দিন!” তখন (আরবী)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে তাখরীজ করেছেন) অর্থাৎ (হে নবী সঃ!) তুমি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এটা আল্লাহর অভিপ্রায় নয়, আর আল্লাহ এটাও চান না যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।” অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ . . . (আরবী) অর্থাৎ “আমার কাছে তোমরা একা একা আসবে যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম।” (৬:৯৪) আতা (রঃ) বলেন যে, এই বিষয়ের দশটি আয়াত কুরআন পাকে রয়েছে। হযরত বুরাইদা (রাঃ) বলেনঃ উহুদের যুদ্ধে আমি দেখেছি যে, হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) ঘোড়ার উপর সওয়ার অবস্থায় বলতে রয়েছেন- “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সঃ) যা বলেছেন তা যদি সত্য হয় তবে ঘোড়াসহ আমাকে যমীনে ধ্বংসিয়ে দিন।” (এটা ঐ সময়ের কথা যখন আমর ইবনুল আস (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেননি)এই উম্মতের মূখ লোকদেরও এরূপ উক্তিই ছিল। আল্লাহ পাক স্বীয় আয়াতের পুনরাবৃত্তি করছেন এবং তাদের উপর তার রহমতের কথা উল্লেখ করছেনঃ “হে নবী! তুমি তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এটা আল্লাহর অভিপ্রায় নয় এবং আল্লাহ এটাও চান না যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।” মুশরিকরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় বলতো- (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আপনার নিকট হাযির আছি, হে আল্লাহ! আপনার নিকট আমরা হাযির আছি। আপনার কোন অংশীদার নেই। আমরা আপনার নিকট উপস্থিত আছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলতেনঃ “এখানেই ক্ষান্ত হও, আর কিছুই বলল না।” কিন্তু ঐ মুশরিকরা সাথে সাথেই বলে উঠতো- (আরবী) অর্থাৎ “আপনার একজন শরীকও রয়েছে, আপনি তারো মালিক এবং সে যা কিছুর মালিক, তারো মালিক আপনি।” এর সাথেই তারা বলতো- (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।” তখন আল্লাহ তা'আলা আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তারা দু’টি কারণে নিরাপত্তা লাভ করেছিল। প্রথম হচ্ছে নবী (সঃ)-এর বিদ্যমানতা এবং দ্বিতীয় হচ্ছে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা। এখন নবী (সঃ) তো বিদায় গ্রহণ করেছেন। কাজেই বাকী আছে শুধু ক্ষমা প্রার্থনা। (এটা ইবনে আবি হাতিম তাখরীজ করেছেন) কুরায়েশরা পরস্পর বলাবলি করতো- “আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সঃ)-কে আমাদের মধ্যে মর্যাদাবান বানিয়েছেন। দিনের বেলায় তারা আল্লাহর ব্যাপারে ঔদ্ধত্যপনা প্রকাশ করতো এবং রাত্রিকালে অনুতপ্ত হয়ে বলতো-(আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে ক্ষমা করুন!” তখন আল্লাহ তা'আলা (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। নবীরা যে পর্যন্ত জনপদ হতে বেরিয়ে না যান সেই পর্যন্ত কওমের উপর শাস্তি আসে না। তাদের মধ্যে কতকগুলো লোক এমনও ছিল যারা পূর্ব থেকেই ঈমান আনয়ন করেছিলেন। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং নামায পড়তেন। তারা ছিলেন মুসলমান। নবী (সঃ)-এর হিজরতের পরেও তারা মক্কাতেই রয়ে গিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কার জনপদ পরিত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরেও যে মক্কাবাসীর উপর আল্লাহর আযাব নাযিল হয়নি তার কারণ ছিল এই যে, তখনও কতক মুসলমান মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তাঁরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ফলে মক্কাবাসী শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ আমার উম্মতের জন্যে নিরাপত্তার দু’টি কারণ রেখেছেন। প্রথম হচ্ছে তাদের মধ্যে আমার উপস্থিতি। আর দ্বিতীয় হচ্ছে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা। সুতরাং আমার দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের পরেও ক্ষমা প্রার্থনা কিয়ামত পর্যন্ত লোকদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে থাকবে। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন) হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ শয়তান বলেছিল- “হে আল্লাহ! আপনার মর্যাদার কসম! যে পর্যন্ত আপনার বান্দাদের দেহে রূহ থাকবে সেই পর্যন্ত আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে থাকবো।” তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার ইস্যুতের কসম! যে পর্যন্ত তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে সেই পর্যন্ত আমিও তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকবো।”

وَمَا لَهُمْ أَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوا أَوْلِيَاءَهُ ۚ إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 8:35 for complete tafsir.

وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً ۚ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ

📘 ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মক্কাবাসী মুশরিকরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য তো অবশ্যই ছিল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বরকতে শাস্তি থেকে বেঁচে যায় । এজন্যে যখন তিনি মক্কা ছেড়ে চলে যান তখন বদরের দিন তাদের উপর শাস্তি নেমে আসে। তাদের নেতারা নিহত এবং বড় বড় লোক বন্দী হয়। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলে দেন, কিন্তু ওর সাথে তারা শিরক ও ফাসাদকেও মিলিয়ে দেয়। কাতাদা (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এই নিহত কুরায়েশরা ক্ষমা প্রার্থনা করতো না। যদি তারা তা করে থাকতো তবে আল্লাহ তাআলা বদরের যুদ্ধে তাদেরকে লাঞ্ছনার মৃত্যু দিতেন না। আর যদি এই দুর্বল মুসলমানরা মক্কায় অবস্থান করে ক্ষমা প্রার্থনা না করতেন তবে মক্কাবাসীর উপর এমন বিপদ এসে পড়তে যা কোনক্রমেই দূর করা যেতো না। ক্ষমা প্রার্থনার বরকতেই মক্কায় শাস্তি নাযিল হওয়া থেকে কুরায়েশরা রক্ষা পেয়েছে এবং মক্কার মুসলমানদের মাধ্যমেই তারা কিছুকাল পর্যন্ত আযাব থেকে মাহফুয থেকেছে। হুদায়বিয়ার দিন আল্লাহ পাক আয়াত নাযিল করেছিলেন- (আরবী) অর্থাৎ “এরা ঐ লোক যারা কুফরী করেছে এবং তোমাদেরকে মসজিদে হারাম হতে প্রতিরোধ করেছে এবং প্রতিরুদ্ধ কুরবানীর জন্তুগুলো ওদের নির্দিষ্ট স্থানে হাযির করা হতে বাধাদান করেছে, আর যদি বহু মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী না থাকতো যাদের সম্বন্ধে তোমরা কিছুই জানতে না, অর্থাৎ তাদের নিষ্পেষিত হওয়ার আশংকা না থাকতো, যদ্দরুন তাদের কারণে অজ্ঞাতসারে তোমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে, তবে সমস্ত ব্যাপারই চুকিয়ে দেয়া হতো, কিন্তু তা এ জন্যে করা হয়নি, যেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজ রহমতে দাখিল করেন, যদি তারা (ঐ মুসলমানরা মক্কা হতে) সরে পড়তো তবে আমি তাদের মধ্যকার কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করতাম।” (৪৮:২৫) নবী (সঃ)-এর অবস্থানের সময় আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বলেছিলেনঃ “তোমার অবস্থানকালীন সময়ে আমি তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবো না।” অতঃপর যখন নবী (সঃ) মদীনায় চলে যান তখন আল্লাহ পাক তাঁকে বলেনঃ “তোমার স্থলবর্তীরা এখনও মক্কায় রয়েছে, সুতরাং এখনও আমি আযাব নাযিল করবো না।” তারপর যখন মুসলমানরাও মক্কা থেকে বেরিয়ে আসে তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এখন তাদেরকে কেন শাস্তি দেয়া হবে না? তারা তো তোমাদেরকে বায়তুল্লাহতে আসতে বাধা দিয়েছে, অথচ তারা তো আল্লাহর বন্ধু ছিল না?” অতএব আল্লাহ তাদের উপর মক্কা বিজয়ের শাস্তি অবতীর্ণ করেন। এ আয়াতটি-(আরবী)-এই আয়াতটিকে রহিতকারী। ইকরামা (রাঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, সূরায়ে আনফালের ... (আরবী) আয়াতটিকে ওর পরবর্তী ... (আরবী)-এই আয়াতটি মানসূখ বা রহিতকারী। তাই তিনি .... (আরবী) বলেছেন। সুতরাং দেখা যায় যে, মক্কাবাসীদের সাথে যুদ্ধ হয় এবং তারা ক্ষুধা ও ক্ষয়ক্ষতির শাস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে শাস্তি প্রাপক হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং বলেছেনঃ “এখন তাদের কি বলবার আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তারা মসজিদুল হারামের পথরোধ করেছে?” অথচ তারা মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধায়ক নয়, মুত্তাকী লোকেরাই হলো ওর তত্ত্বাবধায়ক, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক এটা অবগত নয়। অথচ যাদেরকে কাবা ঘরে যেতে দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে তারাই এর বেশী হকদার যে, তারা ওর মধ্যে নামায পড়বে এবং ওর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করবে। আর এই কাফিরদেরই মসজিদুল হারামে যাওয়ার অধিকার নেই। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “মুশরিকদের এই অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদ সমূহকে আবাদ করে, যে অবস্থায় তারা নিজেদের কুফরীর স্বীকারোক্তি করেছে, তাদের সমস্ত (সৎ) কাজ বিফল হয়ে গেল, আর তারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে। হ্যা, আল্লাহর মসজিদগুলো আবাদ করা তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামতের দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করে না, বস্তৃতঃ এই সকল লোক সম্বন্ধে আশা যে, তারা নিজেদের লক্ষ্যস্থলে পৌছে যাবে।” আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর পথ থেকে বাধা প্রদান করা, তাঁর সাথে কুফরী করা, মসজিদুল হারাম হতে বাধা দেয়া ও মক্কার অধিবাসীকে মক্কা থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট বড় রকমের পাপ বলে গণ্য।” (২:২১৭) হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “আপনার বন্ধু কারা?" উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “প্রত্যেক মুত্তাকী ব্যক্তি (আমার বন্ধু)।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। ইমাম হাকিম (রঃ) স্বীয় মুসতাদরিক” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরায়েশদেরকে একত্রিত করেন। অতঃপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের মধ্যে তোমাদের (কুরায়েশ) ছাড়া আর কেউ আছে কি?” তারা উত্তরে বলেঃ “(আমরা ছাড়া) আমাদের মধ্যে রয়েছে আমাদের ভাগিনেয়, আমাদের মিত্র এবং আমাদের গোলাম।” তখন তিনি বললেনঃ “মিত্র, ভাগিনেয় এবং গোলাম একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়ে থাকে। তোমাদের মধ্যে যারা মুত্তাকী তারাই আমার বন্ধু।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা জিহাদকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে, তারা যারাই হন বা যেখানেই থাকুন না কেন। অতঃপর এই আলোচনা করা হয়েছে যে, ঐ লোকগুলো মসজিদুল হারামে কি কাজ করতো? আল্লাহ পাক ঘোষণা করছেন- “কা'বা ঘরের কাছে তাদের নামায হলো শিস ও করতালি প্রদান।” তারা উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতো, মুখে অঙ্গুলি ভরে দিয়ে বাশির মত শব্দ বের করতো, মুখ কুঁকাতো এবং তালি বাজাতো। আর এটাকেই তারা ইবাদত মনে করতো। বাম দিক থেকে তারা তাওয়াফ করতো। এর দ্বারা মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়াই হতো তাদের উদ্দেশ্য। এইভাবে তারা মুসলমানদেরকে ঠাট্টা ও উপহাস করতো। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঁশি বাজানো। (এটা হচ্ছে ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ)-এর উক্তি) আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করা।(আরবী) সুতরাং এখন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। এই শাস্তি এই যে, বদরের যুদ্ধে তারা নিহতও হয়েছিল এবং বন্দীও হয়েছিল। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, স্বীকারোক্তিকারীদের শাস্তি তরবারী দ্বারা হয়ে থাকে এবং মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের শাস্তি বিকট চীৎকার ও ভূমিকম্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ

📘 Please check ayah 8:37 for complete tafsir.

لِيَمِيزَ اللَّهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَىٰ بَعْضٍ فَيَرْكُمَهُ جَمِيعًا فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

📘 ৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর: বদরের যুদ্ধে কুরায়েশদের উপর যখন বিপদ পৌঁছে এবং তারা মক্কা প্রত্যাবর্তন করে, আর আবূ সুফিয়ানও কাফেলাসহ মক্কা ফিরে যান তখন আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবিআহ, ইকরামা ইবনে আবি জেহেল, সাফওয়ান। ইবনে উমাইয়া এবং কুরায়েশদের আরো কয়েকজন লোক, যাদের পিতা, পুত্র এবং ভাই যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তারা আবু সুফিয়ানকে বললো এবং ঐ লোকদেরকেও বললো যাদের ব্যবসায়ের মাল ঐ কাফেলায় ছিলঃ “হে কুরায়েশের দল! মুহাম্মাদ (সঃ) তোমাদেরকে নীচে ফেলে দিয়েছে এবং তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে হত্যা করেছে। তার সাথে পুনরায় যুদ্ধ করার জন্যে তোমরা এই কাফেলার সমস্ত মাল দিয়ে দাও, যেন আমরা এর মাধ্যমে তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি।” সুতরাং তারা তাদের সমস্ত মাল দিয়ে দিলো। এ ব্যাপারেই আল্লাহ তা'আলা ... (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। অর্থাৎ কাফিররা আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের মাল-ধন ব্যয় করে। তারা তাদের মাল-ধন ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর ওটাই তাদের জন্যে দুঃখ ও আফসোসের কারণ হবে এবং তারা পুনরায় পরাজিত হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে । যাহহাক (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আবু সুফিয়ান এবং কুরায়েশদের মাল-ধন খরচ করার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়নি, বরং আহলে বদরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। মোটকথা, যে ব্যাপারেই অবতীর্ণ হাক না কেন আয়াতটি সাধারণ, যদিও এর শানে নুযূল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, সত্যের পথ অনুসরণকারীদেরকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে কাফিররা তাদের ধন-দৌলত ব্যয় করে থাকে। কিন্তু তাদের এই সমুদয় মাল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিণামে তাদেরকে আফসোস করতে হবে। তারা আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ চান তার নূরকে পূর্ণ করতে-যদিও এটা কাফিরদের কাছে অপছন্দনীয় হয়। আল্লাহ স্বীয় দ্বীনের সাহায্যকারী ও স্বীয় কালেমাকে জয়যুক্তকারী থাকবেন। কাফিরদের জন্যে দুনিয়ায় রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে জীবিত ফিরেছে তারা তাদের লজ্জাজনক পরিণাম স্বচক্ষে অবলোকন করেছে। আর যারা নিহত হয়েছে তারা তো চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে গেছে।(আরবী) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- যেন আল্লাহ ভাগ্যবানদের থেকে হতভাগাদেরকে পৃথক করে দেন। অর্থাৎ যেন মুমিনরা কাফিরদের থেকে পৃথক হয়ে যায়। আবার এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এই পৃথককরণ দ্বারা আখিরাতের পৃথককরণ বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি মুশরিকদেরকে বলবো- তোমরা ও তোমাদের শরীকরা তোমাদের স্থানে অবস্থান কর, আমি তাদের মাঝে স্বাতন্ত্র্য আনয়ন করবো।” অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ ' “সেই দিন তারা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে অপরাধীরা! আজ তোমরা (মুমিনদের হতে) পৃথক হয়ে যাও।” অথবা এর দ্বারা দুনিয়াতেই পৃথক হওয়া উদ্দেশ্য। তা এভাবে যে, মুমিনদের আমল আলাদা এবং কাফিরদের আমল আলাদা। আর (আরবী)-এর (আরবী) টি বা কারণ সম্পৰ্কীয় হতে পারে। অর্থাৎ পাপ কার্যের উপর মাল খরচ করার কারণে আল্লাহ তা'আলা ভাল হতে মন্দকে পৃথক করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এই স্বাতন্ত্র্য আনয়নের জন্যে যে, কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে কে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করছে এবং কে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাপী হয়ে যাচ্ছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ দুটো সেনাবাহিনী মুখোমুখী হওয়ার সময় তোমাদের উপর যা কিছু পৌঁছেছিল তা আল্লাহর হুকুমেই ছিল, যেন তিনি মুমিনদেরকেও দেখে নেন। আর ঐ লোকদেরকেও দেখে নেন যারা কপটতাপূর্ণ কাজ করেছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শত্রুদের প্রতিরোধকারী হয়ে যাও। তারা বললো- “যদি আমরা কোন নিয়মিত যুদ্ধ দেখতাম তবে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গী হয়ে যেতাম।” আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখন পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে তো দেখেই নেননি যারা তোমাদের মধ্যে জিহাদ করেছে এবং তাদেরকেও দেখেননি যারা জিহাদে দৃঢ়পদ থাকে।” মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ আল্লাহ মুমিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না যে অবস্থায় তোমরা এখন রয়েছে, যে পর্যন্ত না তিনি অপবিত্রকে পবিত্র হতে পৃথক করেন এবং আল্লাহ এরূপ অদৃশ্য বিষয় তোমাদেরকে অবহিত করেন না।” এর দৃষ্টান্ত সূরায়ে বারাআতেও রয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে- আমি তোমাদেরকে কাফিরদের সাথে ভিড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা করবো। তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের ধন-মাল খরচ করবে। এটা শুধু এই পৃথককরণের জন্যে যে, অপবিত্র কারা এবং পবিত্র কারা (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে একটা জিনিসের উপর একটা জিনিসকে একত্রিত করা। যেমন মেঘ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর ঐ মেঘকে তিনি স্তরে স্তরে সাজিয়ে দেন।” (২৪:৪৩) (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর তিনি তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন, ঐসব লোকই হচ্ছে চরম ক্ষতিগ্রস্ত লোক।"

قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ وَإِنْ يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّتُ الْأَوَّلِينَ

📘 Please check ayah 8:40 for complete tafsir.

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

📘 Please check ayah 8:40 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

📘 ২-৪ নং আয়াতের তাফসীর: মুনাফিকরা যখন নামায আদায় করে তখন কুরআন কারীমের আয়াতসমূহ তাদের অন্তরে মোটেই ক্রিয়াশীল হয় না । না তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, না আল্লাহর উপর ভরসা করে। যখন তারা বাড়ীতে অবস্থান করে তখন নামায আদায় করে না। আর তারা যাকাতও দেয় না। আল্লাহ পাক এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মুমিন কখনও এরূপ হয় না। এখানে মুমিনদের গুণাবলী এভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যখন তারা কুরআন পাঠ করে তখন ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা ওগুলো বিশ্বাস করে বলে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারও উপর ভরসা করে না। মুমিনের প্রকৃত পরিচয় এই যে, কোন ব্যাপারে মধ্যভাগে আল্লাহর নাম এসে গেলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। তারা তাঁর নির্দেশ পালন করে থাকে এবং তাঁর নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা এমন লোক যে, যখন তারা এমন কাজ করে বসে যাতে অন্যায় হয় অথবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে বসে তখন আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর নিজেদের পাপরাশির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে, আর আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে পাপসমূহ ক্ষমা করবে? আর তারা নিজেদের (মন্দ কর্মে) হঠকারিতা করে না এবং তারা অবগত।” অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার যাদের ভয় রয়েছে এবং যারা কুপ্রবৃত্তিকে অন্যায় ও অবৈধভাবে পূর্ণ করা থেকে বিরত থাকে, প্রকৃতপক্ষে তারাই জান্নাতের হকদার।”সুদ্দী (রঃ) মুমিন ব্যক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ “সে ঐ ব্যক্তি যে পাপ কার্যের ইচ্ছা করে, কিন্তু যখন তাকে বলা হয়- ‘আল্লাহকে ভয় কর তখন তার অন্তর কেঁপে ওঠে।”উম্মু দারদা (রাঃ) বলেন, যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে শুরু করে এবং দেহে এমন এক জ্বালার সৃষ্টি হয় যে, লোম খাড়া হয়ে যায়। যখন এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যাবে তখন বান্দার উচিত যে, সে যেন সেই সময় স্বীয় মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। কেননা, ঐ সময় দুআ কবূল হয়ে থাকে।ইরশাদ হচ্ছে- কুরআন শুনে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। যেমন তিনি বলেনঃ যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন কেউ বলে, এই আয়াত দ্বারা তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে কথা এই যে, ঐ ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যে পূর্ব থেকেই মুমিন। আর জান্নাতের সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্যেই। ইমাম বুখারী (রঃ) এবং অন্যান্য ইমামগণ এই প্রকারের আয়াতসমূহ দ্বারাই এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ঈমানের মধ্যে হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। জমহুর ইমামদের মাযহাব এটাই। এমন কি বলা হয়েছে যে, বহু ইমামের এর উপরই ইজমা রয়েছে। যেমন ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম আবু উবাইদ (রঃ)। আমরা এটা শরহে বুখারীতে বর্ণনা করেছি।(আরবী) অর্থাৎ তারা তিনি ছাড়া আর কারো কাছে কোন আশাই করে না, আশ্রয়দাতা একমাত্র তাঁকেই মনে করে থাকে। কিছু চাইলে তার কাছেই চেয়ে থাকে। প্রতিটি কাজে তার দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তারা জানে যে, তিনি (আল্লাহ) যা চাইবেন তাই হবে এবং যা চাইবেন না তা হবে না। তিনি একক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। সব কিছুরই মালিক একমাত্র তিনিই। তাঁর হুকুমের পর আর কারও হুকুম চলতে পারে না। তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর উপর ভরসা হচ্ছে ঈমানের বন্ধন।(আরবী) মুমিনদের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করার পর তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পাক সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা নামায পড়ে এবং তাদের প্রদত্ত মাল থেকে গরীব দুঃখীদেরকে দান করে থাকে। এ কাজ দু’টি এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্ত মঙ্গলজনক কাজ এ দু'টি কাজের অন্তর্ভুক্ত। নামায প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আল্লাহর হকসমূহের মধ্যে একটি হক। ইকামাতে সালাতের অর্থ হচ্ছে নামাযকে সময়মত আদায় করা, অযু করার সময় ভালরূপে হাত মুখ ধৌত করা, রুকু-সিজদায় তাড়াহুড়া না করা এবং আদব সহকারে কুরআন মাজীদ পাঠ করা এবং নবী (সঃ)-এর উপর তাশাহ্হুদ ও দরূদ পাঠ করা। এটাই ইকামাতে সালাত এবং (আরবী) দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে। আর (আরবী) -এর ভাবার্থ এই যে, যা কিছু আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন তা যদি যাকাতের নেসাবে পৌছে যায় তবে যাকাত প্রদান করবে এবং যা কিছু রয়েছে তা থেকেই মানুষকে দান করতে থাকবে। বান্দাদের ওয়াজিব ও মুসতাহাব আর্থিক হক আদায় করবে। আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদ হতে সকল বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবে। কেননা, সমস্ত লোকই আল্লাহর পরিবার ও সন্তান সন্ততি। আল্লাহ তা'আলার নিকট ঐ বান্দা সবচেয়ে বেশী স্বীকৃত যে তার সৃষ্টজীবের বেশী উপকার সাধন করে থাকে। তোমাদের মালধন আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যেন আমানত স্বরূপ। অতিসত্বরই তোমাদের মাল তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। সুতরাং ওর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়।(আরবী) এসব গুণে যারা গুণান্বিত তারাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন। হারিস ইবনে মালিক (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আগমন করলে তিনি তাকে বলেনঃ “হে হারিস (রাঃ)! সকাল বেলা তোমার কিভাবে কেটেছে?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “খুব চিন্তা করে কথা বল। প্রত্যেক জিনিসেরই একটা হাকীকত বা মূলতত্ত্ব রয়েছে। বল তো, তোমার ঈমানের হাকীকত কি?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “আমি দুনিয়ার মহব্বত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, রাত্রে জেগে জেগে ইবাদত করি, দিনে রোযার কারণে পিপাসার্ত থাকি এবং নিজেকে এরূপ পাই যে, যেন আমার সামনে আল্লাহর আরশ খোলা রয়েছে, আমি যেন জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পর মিলিত হতে দেখছি এবং জাহান্নামবাসীদেরকে দেখছি যে, তারা কষ্ট ও বিপদে পতিত হয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, হে হারিস (রাঃ)! তাহলে তুমি ঈমানের হাকীকতে পৌছে গেছে। এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার চেষ্টা কর।” একথা তিনি তিনবার বললেন।কুরআন কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং (আরবী) শব্দটি সাহিত্যিক মর্যাদা রাখে। যেমন বলা হয়ে থাকে (আরবী) অর্থাৎ ‘অমুক ব্যক্তি প্রকৃত সরদার’, যদিও কওমের মধ্যে অন্যান্য সরদারও রয়েছে। আরও বলা হয়- ‘অমুক প্রকৃত ব্যবসিক’, যদিও অন্যান্য ব্যবসিকও রয়েছে। অমুক ব্যক্তি প্রকৃত কবি', যদিও আরও বহু কবি রয়েছে।(আরবী) অর্থাৎ জান্নাতে তারা বড় বড় পদ লাভ করবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহর কাছে তাদের জন্যে বড় পদমর্যাদা রয়েছে এবং তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তা সম্যক অবগত আছেন। আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাদের পুণ্যগুলো কবূল করবেন।” জান্নাতবাসীরা একে অপরের অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে। কিন্তু উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন লোকদেরকে দেখে অহংকার করবে না এবং নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা উচ্চ শ্রেণীর লোকদেরকে দেখে হিংসাও করবে না।সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “উপরের লোকদেরকে নীচের লোকেরা এরূপভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশ প্রান্তে তারকারাজি দেখে থাক।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি নবীদের মযিল, যা অন্য কেউ লাভ করবে না?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “কেন লাভ করবে না? আল্লাহর শপথ! যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং রাসলদেরকে সত্য জেনেছে তারাও এর অধিকারী হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতবাসীরা উপরের জান্নাতবাসীদেরকে এরূপ দেখবে যেমন আকাশের উপর তারকারাজি দেখা যায়। আবু বকর (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। তারাও এই মর্যাদা লাভ করবে।”

وَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَوْلَاكُمْ ۚ نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ

📘 ৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন, তুমি কাফিরদেরকে বলে দাও- তোমরা যদি কুফরী ও বিরুদ্ধাচরণ হতে বিরত থেকে ইসলাম গ্রহণ করতঃ ক্ষমা প্রার্থনা কর তবে কুফরীর যুগে যেসব গুনাহ তোমরা করেছো সবই আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। যেমন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল কাজ করলো তাকে অজ্ঞতা যুগের কার্যাবলী সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে আসার পরেও খারাপ কাজ করতে থাকলো তাকে দু' যুগেরই আমল সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” সহীহ হাদীসে আরো রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলাম পূর্ববর্তী পাপরাশির জন্যে তাওবা স্বরূপ এবং এই তাওবা পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়। কিন্তু হে নবী (সঃ)! তারা যদি তাদের পূর্বের অবস্থার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং কুফরী ও বিরোধিতা পরিত্যাগ না করে তবে পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম কি হয়েছিল তা কি তারা জানে না? জেনে রেখো যে, শাস্তিই হবে এর চিকিৎসা। (আরবী) দ্বারা মুজাহিদ (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) “বদরের দিন” উদ্দেশ্য নিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- তোমরা কাফিরদের সাথে খুব বেশী যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না ফিত্না দূর হয় এবং দ্বীন আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়।হযরত নাফে' (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ হে আবদুর রহমান (রাঃ)! আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যদি মুমিনদের দুটি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয় .....।' এরূপ দুটি জামাআতের উল্লেখ যখন কুরআন কারীমে রয়েছে তখন আপনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ। করছেন না কেন? উত্তরে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করা অপেক্ষা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ভৎসনা সহ্য করা আমার পক্ষে অধিক সহজ। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করবে .....।” (৪:৯৩) হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে আমাদের অবস্থা এরূপই ছিল । ইসলামে লোকদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। দ্বীনের ব্যাপারে লোকেরা পরীক্ষার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। তাদেরকে হত্যা করে দেয়া হতো অথবা বন্দী করা হতো। এভাবে তারা কঠিন বিপদের মধ্যে পতিত হয়েছিল। অতঃপর যখন ইসলামের উন্নতি লাভ হলো তখন ফিত্ন আর বাকী থাকলো না।” মোটকথা, ঐ আপত্তিকারী লোকটির মতের সাথে যখন হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর মতের মিল খেলো না তখন সে কথার মোড় ফিরিয়ে দিয়ে বললোঃ “হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?”উত্তরে তিনি বললেনঃ “হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে বলতে গেলে তো এটাই বলতে হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, অথচ তোমরা তাঁকে ক্ষমা করে দেয়াকে অপছন্দ করছে। আর হযরত আলী (রাঃ) তো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।" অতঃপর তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ “আর ঐ দেখো, ওখানে রয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কন্যা (হযরত ফাতিমা রাঃ)।”হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) আমাদের কাছে আগমন করেন এবং বলেনঃ “ফিত্নার যুদ্ধের ব্যাপারে তোমাদের অভিমত কি? আর ফিত্না কাকে বলে? নবী (সঃ) যেই সময় মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করতেন সেই সময় ফিত্না আত্মপ্রকাশ করেছিল। আর তোমাদের যুদ্ধ তো শুধু আধিপত্য ও ক্ষমতা লাভের জন্যেই চলছে।” হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ)-এর ফিত্নার ব্যাপারে দু’টি লোক তার কাছে আসে এবং বলে- “লোকেরা যেসব আমল করছে তা আপনার অজানা নয়। আপনি হযরত উমারের ছেলে এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহাবী। সুতরাং এ ব্যাপারে বের হতে আপনাকে কিসে বাধা দিচ্ছে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমাকে এটাই বাধা দিচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা এক মুসলমানের রক্ত তার অপর মুসলমান ভাই-এর উপর হারাম করেছেন।” তখন জনগণ জিজ্ঞেস করেঃ “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিত্রার অবসান হয় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়” -একথা কি আল্লাহ তা'আলা বলেননি? উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমরা তো ফিত্নাকে মিটিয়ে দেয়ার জন্যে বহু যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত ফিত্না দূর হয়ে গেছে। আর তোমরা মুসলমানদের দু’টি দল এ কারণে যুদ্ধ করতে চাচ্ছ যে, যেন ফিত্না সৃষ্টি হয়ে যায় এবং দ্বীন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্যে হয়ে যায়।” হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি (আরবী) বলেছে, আমি তো তাকে কখনো হত্যা করবো না।” তখন সা’দ ইবনে মালিকও (রাঃ) ঐ কথাই বলেন। তখন একটি লোক (আরবী) আয়াতটি পাঠ করলেন। তখন তারা দু’জন বললেনঃ “ফিতনা অবসানের জন্যে আমরা যুদ্ধ করেছি এবং ফিত্নার অবসান ঘটেছে, আর দ্বীন একমাত্র আল্লাহর জন্যে হয়ে গেছে।”(আরবী) দ্বারা খাটি বা নির্ভেজাল তাওহীদ বুঝানো হয়েছে, যার মধ্যে শিরকের কোনই মিশ্রণ থাকবে না এবং আল্লাহর ক্ষমতায় কাউকে শরীক বানানো হবে না। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে দ্বীনে ইসলামের বিদ্যমানতায় কুফরী অবশিষ্ট থাকবে না। এর সত্যতা এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা (আরবী) বলে। যদি তারা তা বলে তবে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা এসে যাবে, তবে কোন কারণে কিসাস গ্রহণ হিসেবে তাকে হত্যা করা যেতে পারে এবং তার হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে। হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, একটি লোক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, যে লোকটি স্বীয় বীরত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছে বা গোত্র ও বংশের স্বার্থ রক্ষার্থে জিহাদ করেছে অথবা খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছে, এগুলোর মধ্যে আল্লাহর পথে জিহাদ কোন্টি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমা সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে সেই শুধু আল্লাহর পথে জিহাদকারী রূপে পরিগণিত।”(আরবী) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তারা ভিতরে কুফরী রেখেই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকে তবে তোমরাও হাত উঠিয়ে নাও। কেননা, তোমরা তাদের অন্তরের কথা অবগত নও। তাদের অন্তরের কথা একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন। তিনি তাদেরকে সব সময় দেখতে রয়েছেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তারা তাওবা করে, নামায প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত দেয় তবে তোমরা তাদের পথ ছেড়ে দাও (অর্থাৎ তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনই প্রয়োজন নেই)।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “ফিত্নার অবসান না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর যেন দ্বীন আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়, অতঃপর তারা যদি বিরত থাকে তবে (যুদ্ধের আর প্রয়োজন নেই) বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘনের অনুমতি শুধু অত্যাচারীদের ব্যাপারে রয়েছে।” সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, হযরত উসামা (রাঃ) একটি লোককে তলোয়ার মারতে উদ্যত হলে লোকটি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পাঠ করে। তবুও হযরত উসামা (রাঃ) তাকে তরবারী দ্বারা হত্যা করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি হযরত উসামা (রাঃ)-কে বলেনঃ “সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করেছে এর পরও তুমি তাকে হত্যা করেছো কেন? কিয়ামতের দিন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ব্যাপারে তুমি কি করবে?” উত্তরে হযরত উসামা (রাঃ) আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে শুধু প্রাণ বাঁচানোর জন্যে এ কথা বলেছিল।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি কি তার অন্তর ফেডে দেখেছিলে?” অতঃপর ‘কিয়ামতের দিন তুমি কি করবে’ -এ কথা তিনি তাকে বার বার বলতে থাকেন। হযরত উসামা (রাঃ) তখন বলেনঃ “আমি আকাঙ্খা করতে লাগলাম যে, আমি যদি সে দিনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ না করে থাকতাম (তবে ইসলামের ধারণায় তাকে হত্যা করতাম না)!”আল্লাহ পাক বলেন, তারা যদি তোমাকে না-ই মানে ও দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রেখো যে, আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক ও বন্ধু, তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক ও কতই না উত্তম সাহায্যকারী! অর্থাৎ যদি তাদের স্বভাবের কোন পরিবর্তন না ঘটে এবং তারা তোমাদের বিরোধিতায় লেগেই থাকে তবে জেনে রেখো যে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহই তোমাদের সাহায্যকারী।আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান উরওয়া (রাঃ)-কে একটি পত্র লিখেন এবং তাতে তিনি তাঁকে কতগুলো কথা জিজ্ঞেস করেন। তখন হযরত উরওয়া (রাঃ) তাকে উত্তরে লিখেনঃ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হাক। প্রথমে আমি এক আল্লাহর প্রশংসা করছি। অতঃপর, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের ঘটনাবলী আপনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। আমি আপনাকে জানাচ্ছি যে, ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই নেই। মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নবুওয়াত দান করেছিলেন। তিনি কতই না ভাল নবী ও কতই না ভাল নেতা ছিলেন! আল্লাহ তাকে উত্তম পুরস্কার প্রদান করুন, জান্নাতে তাঁর চেহারা দর্শনের আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, আমাদেরকে তারই দ্বীন ও মিল্লাতের উপর জীবিত রাখুন, তারই দ্বীনের উপর মৃত্যু দান করুন এবং তারই সাথে আমাদের পুনরুত্থান ঘটিয়ে দিন। তিনি যখন জনগণকে হিদায়াত ও ইসলামের আলোকের দিকে আহ্বান করেন তখন তারা তার সেই তাবলীগের প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়নি। তারা তার উপর অবতারিত অহীও শুনতো। যখন তিনি তাদের মূর্তিগুলোর সমালোচনা শুরু করলেন তখন তায়েফ থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তনকারী ধনী কুরায়েশদের অধিকাংশ লোক তাঁর তাবলীগের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলো এবং তার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলো। যে কেউই মুসলমান হতো তাকেই তারা বিভ্রান্ত করতে থাকতো। সুতরাং ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট সাধারণ লোকদেরও আর আকর্ষণ থাকলো না। তথাপি কতক লোক তাদের মতের উপর দৃঢ় থাকলো এবং তাদের ধারণা ও চিন্তাধারা ইসলামের দিক থেকে বিক্ষিপ্ত হলো না। তখন কুরায়েশ নেতৃবর্গ পরস্পর পরামর্শ করলো যে, ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর কঠোরতা অবলম্বন করা হাক। এই ফিত্রা ছিল একটা ভীষণ ভূ-কম্পন। যারা এই ফিত্যায় জড়িয়ে পড়ার ছিল তারা তাতে জড়িয়ে পড়লো এবং যাদেরকে আল্লাহ তা থেকে নিরাপদে রাখলেন তারা নিরাপদে থাকলো । মুসলমানদের উপর কুরায়েশদের অত্যাচার যখন চরমে উঠলো তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার পরামর্শ দিলেন। আবিসিনিয়ার বাদশাহ্ ছিলেন একজন সৎ লোক যার নাম ছিল নাজ্জাশী। তিনি অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন না। চতুর্দিকেই তাঁর প্রশংসা করা হচ্ছিল। আবিসিনিয়া ছিল কুরায়েশদের ব্যবসা কেন্দ্র এবং ব্যবসায়ী কুরায়েশদের সেখানে ঘড়বাড়ীও ছিল। সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য করে তারা প্রচুর ধন-সম্পদ লাভ করেছিল এবং তাদের ব্যবসা ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে কুরায়েশদের অত্যাচারে জর্জরিত সাধারণ মুসলমানরা আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন। কেননা, মক্কায় তাদের প্রাণের ভয় ছিল। আবিসিনিয়ায় তাঁরা চিরকাল অবস্থান করেননি, বরং শুধু কয়েক বছর তারা সেখানে বসবাস করেছিলেন। সেখানেও মুসলমানরা ইসলাম ছড়িয়ে দেন। সেখানকার সম্ভ্রান্ত লোকেরাও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। কুরায়েশরা যখন দেখলো যে, মুসলমানদের উপর অত্যাচার করার ফলে তারা আবিসিনিয়ায় চলে যাচ্ছে এবং তথাকার নেতৃবর্গকে নিজেদের লোক বানিয়ে নিচ্ছে তখন তারা মুসলমানদের উপর নরম ব্যবহার করাই যুক্তিসঙ্গত মনে করলো। সুতরাং তারা নবী (সঃ) ও সাহাবীদের সাথে নরম ব্যবহার করতে শুরু করলো। কাজেই মুসলমানদের প্রথম পরীক্ষা ছিল এটাই যা তাঁদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিল।যখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলো এবং যে ফিৎনার ভূ-কম্পন মুসলমান সাহাবীদেরকে মাতৃভূমি ছেড়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিল, সেই ফিত্রা কিছুটা প্রশমিত হওয়ার সংবাদ আবিসিনিয়ার মুহাজির মুসলমানদেরকে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসতে উত্তেজিত করলো। সুতরাং কম বেশী তারা যতজন আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন সবাই মক্কায় ফিরে আসলেন।এদিকে মদীনার আনসারগণ মুসলমান হতে থাকেন এবং মদীনাতেও ইসলামের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। মদীনার লোকদের মক্কায় যাতায়াত শুরু হয়ে যায়। এতে মক্কাবাসী আরো চটে যায় এবং পুনরায় মুসলমানদের উপর কঠোরতা অবলম্বনের পরামর্শ গ্রহণ করে। সুতরাং মুসলমানদের উপর সাধারণভাবে অত্যাচার শুরু হয়ে যায়। মুসলমানরা ভীষণ অত্যাচারের শিকারে পরিণত হন। এটা ছিল মুসলমানদের দ্বিতীয় ফিত্ন ও পরীক্ষা। প্রথম ফিত্না তো ওটাই যে, মুসলমানদেরকে আবিসিনিয়ায় পালাতে হয়। আর দ্বিতীয় ফিত্না হচ্ছে- সেখান থেকে মুসলমানদের ফিরে আসার পর যখন মক্কাবাসী দেখলো যে, মদীনার লোক মক্কার সাথে যোগাযোগ করছে এবং মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। একবার মদীনা থেকে সত্তরজন লোক মক্কা আসলেন, যারা ছিলেন গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয় লোক। তারা সবাই মুসলমান হয়ে যান। তাঁরা হজ্ব পৰ্ব পালন করেন, ‘আকাবা’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হাতে দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং অঙ্গীকার করে বলেনঃ “আমরা আপনার হয়ে থাকবো এবং আপনি আমাদের হয়ে থাকবেন। যদি আপনার সাহাবীরা আমাদের শহরে গমন করেন বা আপনি আমাদের ওখানে তাশরীফ আনয়ন করেন তবে আমরা আপনার ও আপনার সাহাবীবর্গের এমনভাবে পণ্ঠপোষকতা করবো যেমনভাবে নিজেদের লোকদের করে থাকি।” কুরায়েশরা এই অঙ্গীকারের কথা শুনতে পেয়ে মুসলমানদের উপর আরো বেশী কঠোরতা শুরু করে দিলো। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দিলেন। এটা ছিল দ্বিতীয় ফিত্না, যা নবী (সঃ)-কে এবং তাঁর সহচরদেরকে মক্কা থেকে বের করে দিলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তোমরা সদা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিত্নার অবসান হয় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়।” হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এই চিঠিটি তিনি আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানকে লিখেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন।

۞ وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 এখানে আল্লাহ তা'আলা গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ মালের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যা তিনি বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার জন্যেই হালাল করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যে এটা হারাম ছিল। গনীমত ঐ মালকে বলা হয় যা কাফিরদের উপর আক্রমণ চালানোর পর লাভ করা হয়। আর ফাই' হচ্ছে ঐ মাল যা যুদ্ধ না করেই লাভ করা হয়। যেমন তাদের সাথে সন্ধি করে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কিছু আদায় করা হয় বা ঐ মাল যার কোন উত্তরাধিকারী নেই অথবা যে মাল জিযিয়া, খিরাজ ইত্যাদি হিসাবে পাওয়া যায়। ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মাশায়েখদের একটি জামা'আতের অভিমত এটাই। কিন্তু কোন কোন আলেম গনীমতের প্রয়োগ ফাই-এর উপর এবং ফাই-এর প্রয়োগ গনীমতের উপর করে থাকেন। এ জন্যেই কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এই আয়াত দ্বারা সূরায়ে হাশরের (আরবী) (৫৯:৭)-এই আয়াতটিকে রহিত করা হয়েছে। আর এভাবে গনীমতের মালের পাঁচ অংশের মধ্য হতে চার অংশ তো মুজাহিদদের মধ্যে বন্টিত হবে এবং এক অংশ তাদেরকে দেয়া হবে যাদের বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে। কিন্তু এই উক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, এই আয়াতটি বদর যুদ্ধের পরে অবতীর্ণ হয়, আর ঐ আয়াতটি ইয়াহদ বানী নাযীরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর জীবনী লেখক ও ইতিহাস লেখক আলেমদের কারো এ ব্যাপারে দ্বি-মত নেই যে, বানী নাযীরের ব্যাপারটি হচ্ছে বদর যুদ্ধের পরের ঘটনা। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু যারা গনীমত' ও ফাই’-এর মধ্যে পার্থক্য আনয়ন করে থাকেন তাঁরা বলেন যে, ঐ আয়াতটি ফাই’ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় এবং এই আয়াতটি গনীমত সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। আবার কতক লোক ‘ফাই’ ও ‘গনীমত'-এর ব্যাপারটিকে ইমামের মতের উপর নির্ভরশীল বলে মনে করেন । ইমাম ঐ ব্যাপারে নিজের মর্জি মোতাবেক কাজ করবেন। এভাবেই এই দু'টি আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য এসে যায়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এই আয়াতে বর্ণনা রয়েছে যে, গনীমতের মাল হতে এক পঞ্চমাংশ বের করে নিতে হবে, তা কমই হাক আর বেশীই হাক। তা সূচই হাক বা সূতাই হোক না কেন। বিশ্ব প্রতিপালক ঘোষণা করছেন যে, যে খিয়ানত করবে সে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাযির হবে এবং প্রত্যেককেই তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। কারো উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবে না। বলা হয়েছে যে, এক পঞ্চমাংশ হতে আল্লাহ তাআলার অংশ কা'বা ঘরে দাখিল করা হবে। আবুল আলিয়া রাবাহী (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যুদ্ধলব্ধ মালকে পাঁচ ভাগ করতেন। চার ভাগ তিনি মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। তারপর এক পঞ্চমাংশ হতে মুষ্টি ভরে বের করতেন এবং তা কা'বা ঘরে দাখিল করে দিতেন। অতঃপর অবশিষ্টাংশকে আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ তার, দ্বিতীয় ভাগ আত্মীয়দের, তৃতীয় ভাগ ইয়াতীমদের, চতুর্থ ভাগ মিসকীনদের এবং পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এখানে আল্লাহর অংশের নাম শুধুমাত্র বরকতের জন্যে নেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অংশ থেকেই যেন। বর্ণনা শুরু হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কোন সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন এবং গনীমতের মাল লাভ করতেন তখন তিনি ওটাকে প্রথমে পাঁচ ভাগে ভাগ করতেন। তারপর পঞ্চমাংশকে আবার পাঁচ অংশে বিভক্ত করতেন। অতঃপর তিনি এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। সুতরাং (আরবী) এটা শুধু বাক্যের শুরুর জন্যে বলা হয়েছে। আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তো আল্লাহর। কাজেই এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এরই প্রাপ্য। বহু মনীষী ও গুরুজনের এটাই উক্তি যে, আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর একটাই অংশ। (এটা নাখঈ (রঃ), হাসান বসরী (র), শাবী (রঃ), আতা (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) প্রমুখ মনীষীয়উক্তি) সহীহ সনদে বর্ণিত নিম্নের হাদীসটি এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক (রঃ) একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, ওয়াদীল কুরায় আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) গনীমতের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? নবী (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “ওর এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহর জন্যে এবং বাকী চার অংশ হচ্ছে মুজাহিদদের জন্যে।” আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কারো উপর কারো কি অধিক হক নেই? তিনি জবাব দিলেন- “না, এমন কি তুমি তোমার বন্ধুর দেহ থেকে যে তীরটি বের করবে সেই তীরটিও তুমি তোমার সেই মুসলিম ভাই এর চেয়ে বেশী নেয়ার হকদার নও।” (এ হাদীসটি ইমাম হাফিয আবু বকর আল-বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হাসান (রাঃ) স্বীয় মাল হতে এক পঞ্চমাংশের অসিয়ত করেন এবং বলেনঃ “আমি কি নিজের জন্যে ঐ অংশের উপর সম্মত হবো না যা আল্লাহ স্বয়ং নিজের জন্যে নির্ধারণ করেছেন?”ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, গনীমতের মালকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হতো। চার ভাগ ঐ সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো যারা ঐ যুদ্ধে শরীক থাকতেন। আর পঞ্চম ভাগটি থাকতো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্যে। এটাকে আবার চারভাগে ভাগ করা হতো। এর এক চতুর্থাংশের প্রাপক হতেন আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)। আল্লাহ ও তার র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)। আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ)-এর প্রাপ্য এই অংশটি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হতো। এক পঞ্চমাংশ থেকে নবী (সঃ) নিজে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর অংশ হচ্ছে তাঁর নবী (সঃ)-এর অংশ এবং নবী (সঃ)-এর অংশ তাঁর স্ত্রীদের প্রাপ্য। আতা ইবনে আবি রাবাহ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর যেটা অংশ সেটা শুধু রাসূল (সঃ)-এরই অংশ। ওটা তার ইচ্ছাধীন, তিনি যে কোন কাজে তা ব্যয় করতে পারেন । মিকদাদ ইবনে মা’দীকারাব (রাঃ) একদা উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ), আবু দারদা (রাঃ) এবং হারিস ইবনে মুআবিয়া কান্দীর (রাঃ) সাথে বসেছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হাদীসগুলোর আলোচনা করছিলেন। আবূ দারদা (রাঃ) উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “অমুক অমুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক পঞ্চমাংশের ব্যাপারে কি কথা বলেছিলেন?” উত্তরে উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক যুদ্ধে গনীমতের এক পঞ্চমাংশের একটি উটের পিছনে সাহাবীদেরকে নামায পড়ান। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং ঐ উটটির কিছু পশম হাতে নিয়ে বলেন- “গনীমতের এই উটটির এই পশমগুলোও গনীমতের মালেরই অন্তর্ভুক্ত। এ মাল আমার নয়। আমার অংশ তো তোমাদেরই সাথে এক পঞ্চমাংশ মাত্র। এটাও আবার তোমাদেরকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং সুঁচ, সূতা এবং ওর চেয়ে বড় ও ছোট প্রত্যেক জিনিসই পৌছিয়ে দাও। খিয়ানত করো না। খিয়ানত বড়ই দূষণীয় কাজ এবং খিয়ানতকারীর জন্যে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই আগুন রয়েছে। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী লোকদের সাথে আল্লাহর পথে জিহাদ জারী রাখো । শরীয়তের কাজে ভৎসনাকারীর ভৎসনার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করো না। স্বদেশে এবং বিদেশে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ জারী করতে থাকো। আল্লাহর ব্যাপারে জিহাদ করতে থাকো। জিহাদ হচ্ছে জান্নাতের বড় বড় দরজাসমূহের মধ্যে একটি দরজা। এই জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলা দুঃখ ও চিন্তা হতে মুক্তি দিয়ে থাকেন।” (ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন, এটা হচ্ছে অতি উত্তম হাদীস। আমি এটা এভাবে ছয়টি গ্রন্থে দেখিনি। তবে এর পক্ষে বহু সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে)আমর ইবনে আনবাসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে নিয়ে গনীমতের একটি উটের কাছে নামায পড়েন। সালাম ফিরানোর পর তিনি ঐ উটের কিছু পশম নিয়ে বলেনঃ “তোমাদের গনীমতের মালের মধ্য হতে আমার জন্যে এক পঞ্চমাংশ ছাড়া এই পশম পরিমাণও হালাল নয়। আর এই পঞ্চমাংশও তোমাদেরকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এই অংশের মধ্য হতে কিছুটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের জন্যেও নির্দিষ্ট করতেন। যেমন দাস, দাসী, তরবারী, ঘোড়া ইত্যাদি। এটা মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ), আমির শা'বী (রঃ) এবং অধিকাংশ আলেম বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, যুলফিকার’ তরবারীটি বদর যুদ্ধের গনীমতেরই অন্তর্ভুক্ত, যা নবী (সঃ)-এর কাছে ছিল এবং যার ব্যাপারে তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন স্বপ্ন দেখেছিলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, সাফিয়া (রাঃ) এভাবেই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হস্তগত হয়েছিলেন। (ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এটা স্বীয় সুনানে বর্ণনা করেছেন)ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একটা বেড়ার মধ্যে বসেছিলাম এমন সময় একটি লোক আমাদের কাছে আসলেন। তার হাতে এক খণ্ড চামড়া ছিল। তাতে যা লিখিত ছিল আমরা তা পড়তে লাগলাম। তাতে লিখিত ছিল- “এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পক্ষ হতে যুহাইর ইবনে আকীশের নিকট প্রেরিত। যদি তোমরা আল্লাহর একত্র ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান কর, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দাও, যুদ্ধলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ আদায় কর এবং নবী (সঃ)-এর অংশ ও উৎকৃষ্ট অংশ আদায় করতে থাকো তবে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর নিরাপত্তার মধ্যে থাকবে।” (বর্ণনাকারী বলেনঃ) আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ “এটা কে লিখেছেন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “(এটা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) (লিখেছেন)।” (এটা ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সুতরাং এসব বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হচ্ছে এবং এ জন্যেই অধিকাংশ গুরুজন এটাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিশিষ্টতার মধ্যে গণ্য করেছেন।কেউ কেউ বলেন যে, এক পঞ্চমাংশ গনীমতের ব্যাপারে তৎকালীন সময়ের শাসনকর্তার স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি মুসলমানদের কল্যাণার্থে তা ইচ্ছামত ব্যয় করতে পারেন। যেমন ফাই’-এর মালের ব্যাপারে তার সব কিছু করার অধিকার রয়েছে। শায়েখ আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রঃ) বলেন যে, ইমাম মালিক (রঃ)-এর এটাই উক্তি। অধিকাংশ গুরুজনেরও উক্তি এটাই এবং এটাই সর্বাধিক সঠিক উক্তি। এটা যখন প্রমাণিত হয়ে গেল এবং জানাও হলো তখন এও মনে রাখা দরকার যে, পঞ্চমাংশ যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অংশ ছিল, এখন তার পরে ওটা কি করতে হবে? এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেন যে, এখন এটা সমকালীন ইমাম অর্থাৎ খলীফাতুল মুসলিমীনের অধিকারে থাকবে। আবু বকর (রাঃ), আলী (রাঃ), কাতাদা (রঃ) এবং একটি জামা'আতের এটাই উক্তি। আর এ ব্যাপারে একটি মারফু হাদীসও এসেছে। অন্যান্যেরা বলেন যে, এটা মুসলমানদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। অন্য একটি উক্তি রয়েছে যে, এটাও অবশিষ্ট অন্যান্য শ্রেণীর মধ্যে খরচ করা হবে অর্থাৎ আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের মধ্যে বণ্টিত হবে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাই পছন্দ করেছেন। অন্যান্য বুযুর্গদের নির্দেশ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অংশ ও তার আত্মীয়দের অংশ ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। ইরাকবাসী একটি দলের এটাই উক্তি। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, পঞ্চমাংশের এই পঞ্চমাংশ সবই আত্মীয়দের প্রাপ্য। যেমন ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মিনহাল ইবনে আমর (রঃ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী (রঃ)-কে এবং আলী ইবনে হুসাইন (রঃ)-কে এক পঞ্চমাংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেনঃ “এটা আমাদেরই প্রাপ্য।” আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আয়াতে ইয়াতীম ও মিসকীনদের বর্ণনাও ততা রয়েছে? উত্তরে তাঁরা দু’জন বললেনঃ “এর দ্বারাও আমাদেরই ইয়াতীম ও মিসকীনদেরকে বুঝানো হয়েছে।” ইমাম হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়্যাহ (রঃ)-কে (আরবী)-এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “বাক্যটি এভাবে শুরু করা হয়েছে মাত্র, নচেৎ দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছুই তো আল্লাহরই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পরে এ দুটো অংশ কে পাবেন এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অংশ তাঁর খলীফাগণ পাবেন। কারো কারো মতে এটা তাঁর আত্মীয়েরা পাবেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ওটা খলীফার আত্মীয়েরা পাবেন। সম্মিলিতভাবে তাঁদের মত এই যে, এই অংশ দুটোকেই ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্রের কাজে লাগানো হবে। আবু বকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ)-এর খিলাফতের যুগে এরূপই করা হয়েছিল। ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, আবু বকর (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অংশটি জিহাদের কাজে খরচ করতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আলী (রাঃ) এ ব্যাপারে কি করতেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এ ব্যাপারে তিনি সর্বাপেক্ষা কঠিন ছিলেন।” অধিকাংশ আলেমের এটাই উক্তি। হ্যাঁ, তবে আত্মীয়দের অংশটির প্রাপক আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানরা । কেননা, তাঁরাই অজ্ঞতার যুগে এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে হাশিমের সন্তানদের সাথে সহযোগিতা করেছিল এবং তাদের সাথে তারা ঘাঁটিতে বন্দী জীবন যাপনকেও স্বীকার করে নিয়েছিল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যাচারিত হচ্ছিলেন বলে এ লোকগুলো রাগান্বিত হয়েছিল এবং তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল। মুসলমানরা তাকে সাহায্য করেছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যের কারণে। আর এই কাফিররা তাকে সাহায্য করেছিল বংশীয় পক্ষপাতিত্ব এবং আত্মীয়তার খাতিরে । কিন্তু বানু আবদে শামস্ ও বানু নাওফিল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচাতো ভাই হলেও তার সাথে সহযোগিতা করেনি, বরং বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং তাঁকে পৃথক করে দিয়েছিল। তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং বলেছিল যে, কুরায়েশের অন্যান্য সমস্ত গোত্রই তাঁর বিরোধী। এ জন্যেই আবু তালিব তাঁর ভৎসনামূলক ও নিন্দাসূচক কবিতায় তাদেরকে বহু তিরস্কার ও নিন্দে করেছেন। কেননা, তারা ছিল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকটতম আত্মীয়। তিনি বলেছেনঃ “অতিসত্বরই তারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের অপকর্মের পূর্ণ বদলা পেয়ে যাবে। এই নির্বোধরা নিজের লোক হয়েও এবং একই বংশ ও রক্তের লোক হয়েও আমাদের দিক থেকে চক্ষু ফিরিয়ে নিচ্ছে!” ইত্যাদি। জুবাইর ইবনে মুতঈম ইবনে আদী ইবনে নওফেল (রাঃ) বলেন, আমি এবং উসমান ইবনে আফফান ইবনে আবিল আস ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদে শামস্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি খায়বারের যুদ্ধলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ হতে বানু আবদিল মুত্তালিবকে দিলেন, কিন্তু আমাদেরকে ছেড়ে দিলেন। অথচ আপনার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের দিক দিয়ে আমরা ও তারা সমান! তখন তিনি বললেনঃ “বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব তো একই জিনিস।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) কয়েকটি বাবে বা অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন) কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, তাঁরা বলেনঃ “তারা তো অজ্ঞতার যুগেও আমাদের থেকে পৃথক হয়নি এবং ইসলামের যুগেও না।” এটা হচ্ছে জমহুর উলামার উক্তি যে, তারা হলো বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব। কেউ কেউ বলেন যে, এরা হচ্ছে শুধু বানু হাশিম। মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা জানতেন যে, বানু হাশিমের মধ্যে দরিদ্র লোক রয়েছে। তাই সাদকার স্থলে গনীমতের মালে তাদের অংশ নির্ধারিত করেছেন। এরা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ আত্মীয় যাদের জন্যে সাদকা হারাম।” আলী ইবনে হুসাইন (রঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। কেউ কেউ বলেন যে, এরা সবাই কুরায়েশ। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “যাবীল কুরবা কারা?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন- “আমরা তো বলতাম যে, আমরাই। কিন্তু আমাদের কওম তা স্বীকার করে না। তারা বলে যে, সমস্ত কুরায়েশই যাবিল কুরবা।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে রয়েছে) কোন কোন রিওয়াইয়াতে শুধু প্রথম বাক্যটিই রয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যটির বর্ণনাকারী হচ্ছে আবু মাশার নাজীহ্ ইবনে আবদির রহমান মাদানী। তার বর্ণনাতেই এই বাক্যটি রয়েছে। তারা বলে যে, সমস্ত কুরায়েশই যাবীল কুরবা'। এতে দুর্বলতাও রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের জন্যে লোকদের ময়লা থেকে আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। তোমাদের জন্যে এক পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশই যথেষ্ট।” (ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এটা বড়ই উত্তম হাদীস। এর বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনে মাহদীকে ইমাম আবু হাতিম (রঃ) বিশ্বাসযোগ্য বলেছেন) এই আয়াতে ইয়াতীমদের উল্লেখ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, ইয়াতীমরা যদি দরিদ্র হয় তবে তারা হকদার হবে। আবার অন্য কেউ বলেন যে, ধনী দরিদ্র সব ইয়াতীমই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। মিসকীন শব্দ দ্বারা ঐ অভাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদের কাছে এই পরিমাণ মাল নেই যে, তা দ্বারা তাদের দারিদ্রতা ও অভাব দূর হতে পারে এবং তা তাদের জন্যে যথেষ্ট হয়। ইবনুস সাবীল দ্বারা ঐ মুসাফিরকে বুঝানো হয়েছে যে দেশ থেকে বের হয়ে এতো দূরে যাচ্ছে যেখানে পৌছলে তার জন্যে নামায কসর করা জায়েয হবে এবং সফরের যথেষ্ট খরচ তার কাছে নেই। এর তাফসীর সূরায়ে বারাআতের। (আরবী) (৯:৬০) এই আয়াতে ইনশাআল্লাহ আসবে। আল্লাহ তা'আলার উপরই আমাদের ভরসা এবং তাঁরই কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করছি। (আরবী) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর উপর এবং তাঁর বান্দার প্রতি নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান এনে থাকো তবে তিনি যা আদেশ করেছেন তা পালন কর। অর্থাৎ, যুদ্ধলব্ধ মাল হতে এক পঞ্চমাংশ পৃথক করে দাও। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবদে কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদলকে বলেছিলেনঃ “আমি তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিচ্ছি। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি তা কি তোমরা জান? তা হচ্ছে সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর রাসূল। আর নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করা, যাকাত দেয়া এবং গনীমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ আদায় করা”। সুতরাং এক পঞ্চমাংশ আদায় করাও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় কিতাব সহীহ বুখারীতে একটি বাব বা অনুচ্ছেদ বেঁধেছেন যে, ‘খুমুস বা এক পঞ্চমাংশ বের করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি ঐ হাদীস আনয়ন করেছেন। আমরা শারহে সহীহ বুখারীর মধ্যে এর পূর্ণ ভাবার্থ আলোচনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর একটা ইহসান ও ইনআমের কথা বর্ণনা করছেন যে, তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য আনয়ন করেছেন। তিনি স্বীয় দ্বীনকে জয়যুক্ত করেছেন, স্বীয় নবী (সঃ) ও তার সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছেন এবং বদরের যুদ্ধে তাদেরকে জয়যুক্ত করেছেন। তিনি ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর উঠিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ কুফরীর কালেমা ঈমানের কালেমার নীচে পড়ে গেছে। সুতরাং (আরবী) দ্বারা বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে, যেই দিন হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়েছে। বহু গুরুজন হতে এর তাফসীর এরূপই বর্ণিত হয়েছে। এটাই ছিল প্রথম যুদ্ধ। মুশরিক সেনাদলের নেতা ছিল উবা ইবনে রাবীআ'। ঐ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৭ই বা ১৯শে রমযান, রোজ শুক্রবার। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীবর্গের সংখ্যা ছিল তিন শ'র কিছু বেশী। আর মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। এতদ্সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের পরাজয় ঘটিয়ে দেন। তাদের সত্তরজনেরও অধিক নিহত হয় এবং ততজনই বন্দী হয়।মুসতাদরিকে হাকিমে রয়েছে যে, ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা একাদশ রাত্রিতেই লায়লাতুল কদরকে নিশ্চিতরূপে অনুসন্ধান কর। কেননা, ওর সকালই ছিল বদরের যুদ্ধের দিন।” হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন যে, লায়লাতুল ফুরকান, যেইদিন উভয় দলে ভীষণ ও ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ওটা ছিল রমযান মাসের সতের তারিখ এবং রাত্রিটিও ছিল জুমআ’র রাত্রি। ধর্মযুদ্ধ ও জীবনী গ্রন্থের লেখকদের মতে এটাই সঠিক কথা। তবে ইয়াযীদ ইবনে জাআ'দ (রঃ), যিনি তার যুগের মিশরীয় এলাকার একজন ইমাম ছিলেন, তিনি বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিনটি ছিল সোমবার। কিন্তু অন্য কেউই তাঁর অনুসরণ করেননি এবং জমহুরের উক্তিটিই নিশ্চিতরূপে তার এই উক্তির উপর প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।

إِذْ أَنْتُمْ بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُمْ بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَىٰ وَالرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنْكُمْ ۚ وَلَوْ تَوَاعَدْتُمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِي الْمِيعَادِ ۙ وَلَٰكِنْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ بَيِّنَةٍ وَيَحْيَىٰ مَنْ حَيَّ عَنْ بَيِّنَةٍ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَسَمِيعٌ عَلِيمٌ

📘 (আরবী) সম্পর্কে সংবাদ দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ঐ দিন তোমরা ওয়াদী দুনিয়ায় ছিলে যা মদীনার নিকটবর্তী একটি জায়গা। আর মুশরিকরা মক্কার দিকে এবং মদীনার দূরবর্তী উপত্যকায় অবস্থান করছিল। এদিকে আবু সুফিয়ান ও তার বাণিজ্যিক কাফেলা ব্যবসার মাল সম্ভারসহ নীচের দিকে সমুদ্রের ধারে ছিল। হে মুমিনরা! যদি তোমরা ও কাফির কুরায়েশরা প্রথম থেকেই যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করতে তবে যুদ্ধ কোথায় সংঘটিত হবে এ নিয়ে তোমাদের মধ্যে অবশ্যই মতানৈক্য সৃষ্টি হতো।” ভাবার্থ নিম্নরূপও বর্ণনা করা হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা যদি পরস্পরের সিদ্ধান্তক্রমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে তবে তোমরা মুশরিক সৈন্যদের আধিক্য ও তাদের রণ সম্ভারের আধিক্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর খুব সম্ভব হতোদ্যম হয়ে পড়তে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ কোন পূর্ব সিদ্ধান্ত ছাড়াই দু’টি দলকে আকস্মিকভাবে একত্রে মিলিয়ে দিলেন যাতে আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যায় এবং ইসলাম ও মুসলিমদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং মুশরিকদের হীনতা ও নীচতা প্রকাশ পায়। সুতরাং আল্লাহ পাক যা করতে চেয়েছিলেন তা তিনি করেই ফেললেন।” কাব ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও মুসলমানরা একমাত্র কাফেলার উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিলেন। কোন তারিখ নির্ধারণ ও কোন যুদ্ধ প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি মুসলমানদেরকে কাফিরদের সাথে মিলিয়ে দিলেন। আবু সুফিয়ান (রাঃ) সিরিয়া হতে কাফেলাসহ ফিরছিলেন। এদিকে আবু জেহেল কাফেলাকে মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। বাণিজ্যিক কাফেলা অন্য পথ ধরে আসছিল। অতঃপর মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেল। এর পূর্বে উভয় দল একে অপর থেকে সম্পূর্ণরূপে বে-খবর ছিল । পানি নেয়ার জন্যে আগমনকারীদেরকে দেখে এক দল অপর দলের অবস্থা অবগত হয়। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর ‘সীরাত' গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চলছিলেন। সাফরা নামক স্থানের নিকটবর্তী হয়ে বাসবাস ইবনে আমর (রাঃ) ও আদী ইবনে আবু যা’বা জুহনী (রাঃ)-কে আবু সুফিয়ান (রাঃ)-এর গতিবিধি লক্ষ্য করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। তারা দু'জন বদর প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে বাতহার একটি টিলার উপর নিজেদের সওয়ারীকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তারা পানি নেয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে তাঁরা দুটি মেয়েকে পরস্পর ঝগড়া করতে দেখতে পান। একজন অপরজনকে বলছিলঃ “তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করছে না কেন?” অপর মেয়েটি উত্তরে বললোঃ “এতো তাড়াহুড়া করো না। আগামীকাল অথবা। পরশু এখানে বাণিজ্যিক কাফেলার আগমন ঘটবে। আমি তখন তোমাকে তোমার প্রাপ্য দিয়ে দেবো।” মাজদা ইবনে আমর নামক একটি লোক মধ্য থেকে বলে উঠলোঃ “এ মেয়েটি সঠিক কথাই বলেছে।” ঐ সাহাবী দু’জন তাদের কথাগুলো শুনে নেন এবং তৎক্ষণাৎ উটের উপর সওয়ার হয়ে নবী (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে যান ও তাঁর কাছে ঐ সংবাদ পরিবেশন করেন। ওদিকে আবু সুফিয়ান (রাঃ) কাফেলার পূর্বে একাকীই ঐ জায়গায় পৌঁছেন এবং মাজদা ইবনে আমরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই কূপের কাছে তুমি কাউকে দেখেছিলে কি?” সে উত্তরে বললোঃ “অবশ্যই দু’জন উষ্ট্রারোহী এসেছিল। তারা তাদের উট দু'টি ঐ টিলার উপর বসিয়ে রেখে এখানে এসে মশকে পানি ভর্তি করে নিয়ে চলে গেছে। এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান (রাঃ) ঐ পাহাড়ের উপর গমন করেন এবং উটের গোবর নিয়ে ভেঙ্গে দেখেন যে, ওর মধ্যে খেজুরের আঁটি রয়েছে। ঐ আঁটি দেখে তিনি বলে ওঠেনঃ “আল্লাহর শপথ! এরা মদীনারই লোক।” সেখান থেকে তিনি কাফেলার কাছে ফিরে যান এবং পথ পরিবর্তন করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে থাকেন। সুতরাং এদিক থেকে তিনি আস্বস্ত হলেন এবং তাদের রক্ষার্থে আগমনকারী কুরায়েশদেরকে দূত মারফত জানিয়ে দিলেনঃ “আল্লাহ তোমাদের বাণিজ্যিক কাফেলা ও মালধন রক্ষা করেছেন, সুতরাং তোমরা ফিরে যাও।” এ কথা শুনে আবূ জেহেল বলেঃ “না, এত দূর যখন এসেই গেছি তখন বদর পর্যন্ত অবশ্যই যাবো।” ওখানে একটি বাজার বসতো।তাই সে বললোঃ “ওখানে আমরা তিনদিন অবস্থান করবো এবং উট যবেহ করবো, মদ পান করবো এবং গোশতের কাবাব তৈরী করবো যাতে সারা আরবে আমাদের ধুমধামের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং আমাদের বীরত্বপনার সংবাদ সবারই কানে পৌছে যায়। ফলে যেন তারা সদা সর্বদা আমাদের নামে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।” কিন্তু আখনাস ইবনে শুরাইক নামক একটি লোক বললোঃ “হে বানী যুহরা গোত্রের ললাকেরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাল রক্ষা করেছেন। সুতরাং তোমাদের ফিরে যাওয়াই উচিত।” ঐ গোত্রের লোকেরা তার কথা মেনে। নিলো এবং ফিরে গেল। তাদের সাথে বানু আদী গোত্রের লোকেরাও ফিরে গেল। এদিকে বদরের নিকটবর্তী হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ), সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) এবং যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ)-কে খবর নেয়ার জন্যে পাঠিয়ে দেন। আরো কয়েকজন সাহাবীকেও তাদের সঙ্গী করে দেন। তাঁরা বানু সাঈদ ইবনে আস ও বানু হাজ্জাজের গোলামদ্বয়কে কূয়ার ধারে পেয়ে যান। দু’জনকেই গ্রেফতার করে তাঁরা নবী (সঃ)-এর খিদমতে হাযির করেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায পড়ছিলেন। তারা তাদেরকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তারা প্রশ্ন করলেনঃ “তোমরা কে?” তারা উত্তরে বললোঃ “আমরা কুরায়েশদের পানি বহনকারী। তারা আমাদেরকে পানি নিতে পাঠিয়েছিল।” সাহাবীদের ধারণা ছিল যে, তারা আবু সুফিয়ানের লোক। এ জন্যে তারা তাদের প্রতি কঠোর হয়ে উঠলেন। তারা ভয় পেয়ে বলে উঠলো যে, তারা আবূ সুফিয়ানের কাফেলার লোক। তখন তারা তাদেরকে ছেড়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক রাকাআত নামায পড়ে নিয়ে সালাম ফিরিয়ে দেন এবং সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তারা যখন সত্য কথা বললো তখন তোমরা তাদেরকে মারধর করলে, আর যখন তারা মিথ্যা কথা বললো তখন তোমরা তাদেরকে ছেড়ে দিলে? আল্লাহর কসম! এরা পূর্বে সত্য কথাই বলেছিল। এরা কুরায়েশেরই গোলাম।” অতঃপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আচ্ছা বলতো, কুরায়েশদের সেনাবাহিনী কোথায় রয়েছে?” তারা উত্তরে বললোঃ “কুসওয়া উপত্যকার ঐ দিকের ঐ পাহাড়ের পিছনে রয়েছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “সংখ্যায় তারা কত হতে পারে?” তারা জবাব দিলোঃ “সংখ্যায় তারা অনেক।” তিনি বললেনঃ “সংখ্যায় তারা কত হতে পারে?” তারা বললোঃ “সংখ্যা তো আমাদের জানা নেই।” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, দৈনিক তারা কয়টা উট যবেহ করে থাকে তা তোমরা বলতে পার কি?” উত্তরে তারা বললোঃ “কোনদিন নয়টি এবং কোন দিন দশটি।” তিনি তখন মন্তব্য করলেনঃ “তাহলে সংখ্যায় তারা নয় হাজার থেকে দশ হাজার হবে। তারপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাদের মধ্যে কুরায়েশ নেতৃবর্গের কে কে আছে?” তারা উত্তর দিলোঃ “তারা হচ্ছে উত্যা ইবনে রাবীআ’, সায়বা ইবনে রাবীআ’, আবুল বাখতারী ইবনে হিশাম, হাকীম ইবনে হিশাম, নাওফেল ইবনে খুয়াইলিদ, হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফেল, তায়ীমা ইবনে আদী, নাযার ইবনে হারিস, যামআ ইবনে আসওয়াদ, আবূ জেহেল ইবনে হিশাম, উমাইয়া ইবনে খালফ, নাবীহ ইবনে হাজ্জাজ, মুনাব্বাহ্ ইবনে হাজ্জাজ, সালাহ ইবনে আমর এবং আমর ইবনে আবদূদ।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গকে বললেনঃ “জেনে রেখো যে, মক্কা নগরী ওর কলিজার টুকরোগুলোকে তোমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে।”বদরের দিন দু’ দলের মধ্যে যখন মুকাবিলা শুরু হয়ে গেল তখন সা’দ ইবনে মুআয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আপনার জন্যে একটা কুটির নির্মাণ করে দেই। সেখানে আপনি অবস্থান করবেন। আর আমরা আমাদের জন্তুগুলো এখানে বসিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করবো। যদি আমরা জয়যুক্ত হই তবে তো আলহামদুলিল্লাহ, এটাই আমাদের কাম্য। আর যদি আল্লাহ না করুন, অন্য কিছু ঘটে যায় তবে আপনি আমাদের জানোয়ারগুলোর উপর সওয়ার হয়ে ওগুলোকে সাথে নিয়ে আমাদের কওমের ঐ মহান ব্যক্তিদের কাছে যাবেন যারা মদীনায় রয়েছেন। আপনার প্রতি তাদের ভালবাসা আমাদের চেয়ে বেশী রয়েছে। এখানে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হবে এটা তাঁদের অজানা ছিল। তা না হলে তারা কখনো আপনার সঙ্গ ছাড়তেন না। আপনার সাহায্যার্থে অবশ্যই তারা বেরিয়ে আসতেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এ পরামর্শ মেনে নিলেন এবং তার জন্যে দুআ করলেন। অতঃপর তিনি ঐ তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করলেন। তার সাথে আবু বকর (রাঃ) ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। সকাল হতেই কুরায়েশ সেনাবাহিনীকে পাহাড়ের পিছন দিক থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। তাদেরকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! এ লোকগুলো গর্বের সাথে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ও আপনার রাসূল (সঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন। করার মানসে এগিয়ে আসছে। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করুন।ইবনে ইসহাকের সীরাতের মধ্যে এই আয়াতের শেষ বাক্যটির তাফসীর নিম্নরূপ এসেছেঃ “এটা এ কারণে যে, যেন কাফিররা কুফরীর উপর থেকেও আল্লাহর দলীল প্রমাণ দেখে নেয় এবং মুমিনরাও দলীল দেখেই ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। অর্থাৎ কোন উত্তেজনা, শর্ত ও দিন নির্ধারণ ছাড়াই আকস্মিকভাবে আল্লাহ তা'আলা এখানে মুমিন ও কাফিরদেরকে মুকাবিলা করে দিলেন, উদ্দেশ্য এই যে, তিনি সত্যকে মিথ্যার উপর জয়যুক্ত করে সত্যকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করবেন, এভাবে যেন কারো মনে কোন সংশয় ও সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে। এখন যে কুফরীর উপর থাকবে সে কুফরীকে কুফরী মনে করেই থাকবে। আর যে মুমিন হবে সে দলীল প্রমাণ দেখেই ঈমানের উপর কায়েম থাকবে। ঈমানই হচ্ছে অন্তরের জীবন এবং কুফরীই হচ্ছে প্রকৃত ধ্বংস।" যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি, যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং আমি তার জন্যে একটা নূর বানিয়েছি। সে ঐ নূরের মাধ্যমে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করছে।" (৬:১২২) তুহমাত বা অপবাদের ঘটনায় আয়েশা (রাঃ)-এর কথাগুলো ছিলঃ “ যে ধ্বংস হওয়ার ছিল সে ধ্বংস হলো।” অর্থাৎ অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে সে অংশ নিলো।(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের বিনয়, প্রার্থনা, ইতিগফার, ফরিয়াদ, মুনাজাত ইত্যাদি সবই শ্রবণকারী। (আরবী) অর্থাৎ তোমরা যে আহলে হক, তোমরা যে সাহায্য পাওয়ার যোগ্য এবং তোমরা এরও যোগ্য যে, তোমাদেরকে কাফির ও মুশরিকদের উপর জয়যুক্ত করা উচিত, এসব বিষয় আল্লাহ ভালভাবে অবগত আছেন।

إِذْ يُرِيكَهُمُ اللَّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلًا ۖ وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ سَلَّمَ ۗ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

📘 Please check ayah 8:44 for complete tafsir.

وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِي أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًا وَيُقَلِّلُكُمْ فِي أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا ۗ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ

📘 ৪৩-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর: মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে স্বপ্নে মুশরিকদের সংখ্যা খুবই কম দেখান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীবর্গের নিকট তা বর্ণনা করেন। এটা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাগুলো অটল থাকার কারণ হয়ে যায়। কোন কোন বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন যে, মুশরিকদের সংখ্যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ চোখে কম দেখানো হয় যে চোখে তিনি দ্রিা যেতেন। কিন্তু এটা গারীব বা দুর্বল কথা। কেননা, কুরআন কারীমে যখন (আরবী) শব্দ রয়েছে তখন বিনা দলীলে ওর এরূপ ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন কি? সম্ভাবনা ছিল যে, মুশরিকদের সংখ্যাধিক্য মুসলমানদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করতো এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন কি করবেন না এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হতো। আল্লাহ তা'আলা এটা থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলেন এবং মুশরিকদের সংখ্যা কম দেখালেন। আল্লাহ পাক অন্তরের গুপ্ত কথা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত। তিনি চক্ষুর খিয়ানত ও অন্তরের গুপ্ত রহস্য জানেন। তিনি এই দয়াও দেখালেন যে, মুসলমানদের দৃষ্টিতে যুদ্ধের সময়েও মুশরিকদের সংখ্যা কম দেখালেন, যাতে তারা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেন। এবং তাদেরকে খুবই নগণ্য মনে করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি আমার সঙ্গীকে মুশরিকদের আনুমানিক সংখ্যা বললাম যে, তারা প্রায় ৭০ (সত্তর) জন হবে। আমার সাথী তখন পূর্ণভাবে অনুমান করে বললেনঃ “না, তারা প্রায় ১০০ (একশ') জন হবে।” অতঃপর তাদের একজন লোক আমাদের হাতে বন্দী হয়। তাকে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কতজন রয়েছে? সে উত্তরে বললোঃ “আমাদের সৈন্যসংখ্যা এক হাজার।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ও ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

📘 Please check ayah 8:46 for complete tafsir.

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

📘 ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে যুদ্ধের কৌশল এবং শত্রুদের সাথে মুকাবিলার সময় বীরত্ব প্রকাশ করার কথা শিক্ষা দিচ্ছেন। এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূর্য পশ্চিম গগণে ঢলে পড়ার পর দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “হে লোকসকল! যুদ্ধে শত্রুদের সম্মুখীন হওয়ার আশা করো না। আল্লাহর নিকট নিরাপত্তার প্রার্থনা কর। কিন্তু যখন শত্রুদের সাথে মুকাবিলা হয়ে যাবে তখন যুদ্ধক্ষেত্রে অটল থাকো এবং বিশ্বাস রাখো যে, জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে রয়েছে। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে গিয়ে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে কিতাব অবতীর্ণকারী আল্লাহ! হে মেঘমালাকে চালনাকারী আল্লাহ! হে সেনাবাহিনীকে পরাজিতকারী আল্লাহ! এই কাফিরদেরকে পরাজিত করুন এবং তাদের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) আবদুল্লাহ ইবনে আবি আউফা (রাঃ) হতে মারফুরূপে তাখরীজ করেছেন)আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করার আকাঙ্ক্ষা করো না এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তার প্রার্থনা করো। আর তাদের সাথে মুকাবিলার সময় স্থির পদে থাকো ও বীরত্ব প্রদর্শন করো এবং আল্লাহকে স্মরণ করো। তারা যদিও হৈ হুল্লোড় ও চিৎকার করে তবে তোমরা নীরবতা অবলম্বন করো।” তিবরানীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, “রাসূল(সঃ) বলেছেন, তিন সময় আল্লাহ তা'আলা নীরবতা পছন্দ করেন(১) কুরআন কারীম পাঠের সময়, (২) যুদ্ধের সময় এবং (৩) জানাযার সময়।” অন্য একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার কামেল বান্দা হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে শত্রুর সাথে মুকাবিলার সময়েও আমার যিক্র করে অর্থাৎ ঐ অবস্থাতেও আমার যি করতে, আমার কাছে প্রার্থনা জানাতে এবং আমার নিকট ফরিয়াদ করতে অমনোযোগী হয় না।" কাতাদা (রঃ) বলেন যে, পূর্ণ ব্যস্ততার সময়েও অর্থাৎ যখন তরবারী চলতে থাকে তখনও আল্লাহ তা'আলা তাঁর যির ফরয করেছেন। আতা (রঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, যুদ্ধের সময়েও নীরবতা অবলম্বন করা এবং আল্লাহ তা'আলার যিক্র করা ওয়াজিব। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। তখন জুরাইজ (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহ তা'আলার যি কি উচ্চ শব্দে করতে হবে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা।" কা'ব ইবনে আহবার (রঃ) বলেনঃ “কুরআন কারীমের তিলাওয়াত এবং আল্লাহ তা'আলার যিক্র হতে বেশী প্রিয় আল্লাহ পাকের নিকট আর কিছুই নেই। এর মধ্যে আবার ওটাই উত্তম যার হুকুম মানুষকে সালাতের মধ্যে ও জিহাদে দেয়া হয়েছে। তোমরা কি দেখছো না যে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা জিহাদের সময়েও তাঁর যিক্র করার হুকুম করেছেন?” তারপর তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেন। কোন কবি বলেনঃ “ঠিক যুদ্ধ ও লড়াইয়ের সময়েও আমার অন্তরে আপনার (আল্লাহর) স্মরণ হয়ে থাকে।” আনতারা বলেনঃ “বর্শা ও তরবারীর কাজ চালু থাকা অবস্থাতেও আমি আপনাকে (আল্লাহকে) স্মরণ করতে থাকি। সুতরাং এই আয়াতে মহান আল্লাহ শত্রুদের সাথে মুকাবিলার সময় যুদ্ধক্ষেত্রে অটল থাকার ও ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা (মুমিনরা) যেন ভীরুতা প্রদর্শন না করে এবং ভয় না পায়। আল্লাহর উপরই যেন ভরসা করে এবং তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তারা যেন সর্বদা আল্লাহকেই স্মরণ করে, কখনও যেন তাকে ভুলে না যায়। এটাই হচ্ছে সফলতার উপায় । আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য পরিত্যাগ না করে। তারা যা বলেন তা-ই যেন পালন করে এবং যা করতে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকে। পরস্পর যেন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয় এবং মতানৈক্য সৃষ্টি না করে। নতুবা তারা লাঞ্ছিত হয়ে যাবে, তাদেরকে কাপুরুষতায় ঘিরে ফেলবে এবং তারা শক্তিহীন হয়ে পড়বে। এর ফলে তাদের অগ্রযাত্রায় বাধা পড়বে। তারা ধৈর্যের অঞ্চল যেন ছেড়ে না দেয় এবং তারা যেন বিশ্বাস রাখে ধৈর্যশীলদের সাথে স্বয়ং আল্লাহ রয়েছেন। সাহাবায়ে কিরাম এই হুকুম এমন পুরোপুরিভাবে পালন করেছিলেন যে, তাদের তুলনা পূর্বেও ছিল না এবং পরবর্তীদের মধ্যে তো তুলনার কোন কথাই উঠতে পারে না। এই বীরত্ব, এই রাসূল (সঃ)-এর প্রতি আনুগত্য এবং এই ধৈর্য ও সহ্যই ছিল আল্লাহ তা'আলার সাহায্য লাভের কারণ। আর এর ফলেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে সংখ্যার স্বল্পতা এবং যুদ্ধাস্ত্রের নগণ্যতা সত্ত্বেও মুসলিমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলো জয় করে নেন। তারা শুধুমাত্র বিজিত দেশগুলোর অধিপতিই হননি। বরং অধিবাসীদের অন্তরও জয় করে ফেলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসেন। রোমক, পারসিক, তুর্কী, সাকালিয়া, বার্বারী, হাবশী, সুদানী এবং কিবতীদেরকে তথা দুনিয়ার সমস্ত গৌর ও কৃষ্ণ বর্ণের লোককে বশীভূত করে ফেলেন। এভাবে তারা আল্লাহর কালেমাকে সমুচ্চ করেন, সত্য দ্বীনকে ছড়িয়ে দেন এবং ইসলামী হুকুমত বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছিয়ে দেন। মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদেরকেও সন্তুষ্ট রাখুন। দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, তাঁরা ত্রিশ বছরের মধ্যে দুনিয়ার মানচিত্র পরিবর্তন করে দেন এবং ইতিহাসের পৃষ্ঠা পরিবর্তিত করেন। আল্লাহ আমাদেরকেও তাঁদেরই দলভুক্ত করুন। তিনি পরমদাতা ও করুণাময়।

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ

📘 Please check ayah 8:49 for complete tafsir.

وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ

📘 Please check ayah 8:49 for complete tafsir.

إِذْ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ غَرَّ هَٰؤُلَاءِ دِينُهُمْ ۗ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

📘 ৪৭-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: জিহাদে অটল থাকা, ভাল নিয়ত রাখা এবং খুব বেশী বেশী আল্লাহর যি করার উপদেশ দানের পর আল্লাহ তাআলা এখানে মুসলিমদেরকে মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত হতে নিষেধ করছেন। তিনি বলেন, মুশরিকরা যেমন সত্যকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া এবং জনগণের মধ্যে নিজেদের বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যে গর্বভরে চলছে, তোমরা তদ্রপ করো না। আবু জেহেলকে যখন বলা হয়েছিল“বাণিজ্যিক কাফেলাতো রক্ষা পেয়েছে, সুতরাং চলো, আমরা এখান থেকেই ফিরে যাই।” তখন সেই অভিশপ্ত লোকটি উত্তরে বলেছিলঃ “না, আল্লাহর কসম! আমরা ফিরে যাবো না। বরং আমরা বদরের পানির কাছে অবতরণ করবো, সেখানে মদ পান করবো, কাবাব খাবো এবং গান শুনবো, যেন জনগণের মাঝে আমাদের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাদের বাসনার উল্টো অবস্থা ঘটিয়ে দিলেন। ওখানেই তাদের মৃতদেহ পড়ে রইলো এবং সেখানেই লাঞ্ছনা ও অপমানের সাথে তাদের মৃতদেহগুলো গর্তের মধ্যে নিক্ষেপ করে দেয়া হলো। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ তাদের কার্যাবলী পরিবেষ্টনকারী।” তাদের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য তাঁর কাছে প্রকাশমান। এজন্যেই তিনি তাদেরকে জঘন্য প্রতিদান প্রদান করলেন। সুতরাং এখানে ঐ মুশরিকদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যারা আল্লাহর রাসূল (সঃ) ও রাসূলদের মাথার মুকুটের সাথে বদর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। (এটা কাতাদা (রঃ), যহহাক (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) প্রমুখ গুরুজনদের উক্তি) তাদের সাথে গায়িকা মেয়েরাও ছিল এবং তারা গানবাজনাও করেছিল। অভিশপ্ত শয়তান তাদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল। সে তাদেরকে মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলাচ্ছিল এবং তাদের কার্যাবলী তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল। তাদের কানে কানে সে বলছিলোঃ “তোমাদেরকে কে পরাজিত করতে পারে? আমি তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছি। তাদের অন্তর থেকে সে বানু বকরের মক্কার উপর আক্রমণ করার ভয় দূর করছিল এবং সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুলুমের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলঃ “আমি তো ঐ এলাকার সরদার। বানু মুদলিজ গোত্রের লোকেরা সবাই আমার অনুগত। আমি তোমাদের সহায়তাকারী। সুতরাং তোমরা নিশ্চিন্ত থাকো।” শয়তানের কাজই তো হলো এটা যে, মিথ্যা অঙ্গীকার সে করে থাকে। পূরণ হবে না এমন আশা সে প্রদান করে এবং মানুষকে সে প্রতারণার জালে আটকিয়ে দেয়। বদরের দিন সে স্বীয় পতাকা ও সেনাবাহিনী নিয়ে মুশরিকদের দলে যোগদান করেছিল এবং তাদের অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দিয়েছিল যে, কেউই তাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। সে তাদেরকে আরো বলেছিলঃ “তোমাদের কোনই ভয় নেই, আমি তোমাদের সাহায্যার্থে সর্বদা তোমাদের সাথেই থাকবো। কিন্তু যখন উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এবং সেই পাপাচার শয়তান ফেরেশতাদেরকে মুসলিমদের সাহায্যার্থে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতে দেখলো তখন সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে শুরু করলো এবং বলতে লাগলোঃ “আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বদরের দিন ইবলীস স্বীয় পতাকা উঁচু করে মুদলিজ গোত্রের একটি লোকের রূপ ধারণ করতঃ তার সেনাবাহিনীসহ উপস্থিত হয়। সে সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুসুমের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করে এবং মুশরিকদের অন্তরে সাহস ও উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতে থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন উভয় বাহিনী কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক মুষ্টি মাটি নিয়ে মুশরিকদের চেহারায় নিক্ষেপ করেন। সাথে সাথে তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং পলায়নের হিড়িক পড়ে যায়। জিবরাঈল (আঃ) শয়তানের দিকে অগ্রসর হন। ঐ সময় সে একজন মুশরিকের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিল। জিবরাঈল (আঃ)-কে দেখা মাত্রই সে লোকটির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের সেনাবাহিনীসহ পালাতে শুরু করলো । ঐ লোকটি তখন তাকে বললোঃ “হে সুরাকা! তুমি তো বলেছিলে যে, আমাদের সাহায্যার্থে তুমি আমাদের সাথেই থাকবে, কিন্তু এখন এ করছে কি?” ঐ অভিশপ্ত যেহেতু ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাচ্ছিল তাই সে বললোঃ “আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাচ্ছ না। আমি তো আল্লাহকে ভয় করছি। আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠোর।” অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে। যে, শয়তানকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতে দেখে হারিস ইবনে হিশাম তাকে ধরে ফেললো । সে তখন তার গালে এমন জোরে একটা চড় মেরে দিলো যার ফলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। তখন অন্যান্যেরা তাকে বললোঃ “হে সুরাকা! তুমি এই অবস্থায় আমাদেররকে অপদস্থ করছে এবং আমাদেরকে ধোকা দিচ্ছ?” সে উত্তরে বললোঃ “হ্যা, হ্যাঁ, তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি তাদেরকে দেখছি যাদেরকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ক্ষণিকের জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক প্রকারের আত্মভোলা হয়ে পড়েন। অতঃপর তিনি সতর্ক হয়ে গিয়ে বলেনঃ “হে আমার সাহাবীর দল! তোমরা আনন্দিত হয়ে যাও যে, তোমাদের ডানদিকে রয়েছেন জিবরাঈল (আঃ) এবং বামদিকে রয়েছেন মীকাঈল (আঃ), আর এই যে ইস্রাফীল (আঃ)। এঁরা তিনজনই নিজ নিজ সেনাবাহিনীসহ বিদ্যমান রয়েছেন।” ইবলীস সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুসুম মুদলিজীর আকৃতিতে মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করছিল। তাদের অন্তরে সে সাহস দিচ্ছিল এবং ভবিষ্যদ্বাণী করছিল- “তোমরা নিশ্চিন্ত থাকো, আজ তোমাদেরকে কেউই পরাজিত করতে পারবে না।" কিন্তু ফেরেশতাদের সেনাবাহিনীকে দেখা মাত্রই সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং “তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই, আমি তাদেরকে দেখছি যাদেরকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ না” একথা বলতে বলতে পালিয়ে যায়। হারিস ইবনে হিশাম তাকে সুরাকা ভেবেই তার হাত ধরে ফেললো। তখন শয়তান তার বক্ষে এতো জোরে ঘুষি মারে যে, সে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। অতঃপর শয়তান পালিয়ে গিয়ে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে এবং নিজের কাপড় উঁচু করে ধরে বলতে থাকেঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনাকে আপনার ঐ ওয়াদার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যা আপনি আমার সাথে করেছিলেন। তিবরানীতে রিফাআহ ইবনে রাফি (রাঃ) হতেও এরই কাছাকাছি বর্ণিত আছে।উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন যে, যখন কুরায়েশরা মক্কা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করে তখন তাদের বানু বকরের যুদ্ধের কথা স্মরণ হয়ে যায় যে, হয়তো তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে তারা মক্কার উপর আক্রমণ করে বসবে। কাজেই তারা তাদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে উদ্যত হয়েছিল । ঐ সময়েই অভিশপ্ত ইবলীস সুরাকার রূপ ধারণ করে তাদের কাছে আসে। ঐ সুরাকা ছিল বানু কিনানা গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোক। এই সুরাকার রূপ ধারণকারী শয়তান করায়েশদেরকে বলতে শুরু করলোঃ “আমার কওমের দায়িত আমি নিচ্ছি। তোমরা তাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে এবং মুসলমানদের সাথে মুকাবিলার জন্যে পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে যাও।” এ কথা বলে সেও তাদের সাথে চললো। প্রতিটি মনজিলেই কুরায়েশরা সুরাকারূপী শয়তানকে দেখতে পাচ্ছিল। তাদের সবারই মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, সুরাকা স্বয়ং তাদের সাথে থাকবে। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। তখন সেই বিতাড়িত শয়তান পলায়ন করলো। হারিস ইবনে হিশাম অথবা উমাইর ইবনে অহাব তাকে যেতে দেখে চেঁচিয়ে বললোঃ “হে সুরাকা! তুমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছ?” সুরাকারূপী শয়তান তাকে মৃত্যু ও জাহান্নামের মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়েই গেল। কেননা, সে আল্লাহর সৈনিক ফেরেশতাদেরকে মুসলমানদের সাহায্যার্থে আসতে দেখেছিল। পালাবার সময় সে স্পষ্টভাবে বলে গেলঃ “তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।” ঐ কথায় নিঃসন্দেহে সে সত্যবাদী ছিল। তারপর সে বললোঃ “আমি আল্লাহকে ভয় করছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।" সে জিবরাঈল (আঃ)-কে ফেরেশতাদের সাথে অবতীর্ণ হতে দেখে বুঝতেই পেরেছিল যে, তাদের সাথে মুকাবিলা করার শক্তি তার নিজেরও নেই এবং মুশরিকদেরও নেই। সে যে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলেছিল তাতে সে মিথ্যাবাদী ছিল। ওটা ছিল শুধু তার মুখের কথা। প্রকৃতপক্ষে তার মুকাবিলা করার শক্তিই ছিল না।এটাই হচ্ছে আল্লাহর এই শত্রুর অভ্যাস যে, সে মানুষকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করে এবং সত্যের মুকাবিলায় এনে দাঁড় করে দেয়। অতঃপর সে গা ঢাকা দেয়।কুরআন কারীম ঘোষণা করছে- “শয়তান মানুষকে বলে, তুমি কুফরী কর, অতঃপর যখন সে কুফরী করে বসে তখন সে বলে, তোমার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই, আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহকে ভয় করি।” অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “যখন সমস্ত মুকদ্দমা মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে-আল্লাহ তোমাদের সাথে সত্য ওয়াদা করেছিলেন, আর আমিও কিছু ওয়াদা করেছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা খেলাফ করেছিলাম, আর তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্যও ছিল না, শুধু এইটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছিলাম, তখন তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছিলে। অতএব তোমরা আমার উপর (সমস্ত) দোষ চাপিয়ে দিয়ো না, বরং দোষ নিজেদের উপরই আরোপ কর; আমি না তোমাদের সাহায্যকারী হতে পারি; না তোমরা আমার সাহায্যকারী হতে পার; আমি নিজেও তোমাদের এ কাজে অসন্তুষ্ট যে, তোমরা ইতিপূর্বে আমাকে (আল্লাহর) অংশ সাব্যস্ত করতে; নিশ্চয়ই যালিমদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” আবু উসাইদ মালিক ইবনে রাবীআ (রাঃ) তার চক্ষু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বলেনঃ “এখনও যদি আমি তোমাদের সাথে বদর প্রান্তরে থাকতাম এবং আমার চক্ষু ঠিক থাকতো তবে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই ঐ ঘাটির খবর দিতে পারতাম যেখান দিয়ে ফেরেশতাগণ বের হয়ে এসেছিলেন। ঐ ঘাঁটি অবশ্যই আমার চেনা আছে। তাঁদেরকে ইবলীস দেখেছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যেন মুসলমানদের যুদ্ধক্ষেত্রে স্থির ও অটল রাখেন। তারা মুসলমানদের পরিচিত লোকদের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা আনন্দিত হও। এ কাফিররা কিছুই নয়। তোমাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে। নির্ভীকভাবে সিংহের ন্যায় আক্রমণ চালাও।” এ দেখে ইবলীস পগার পার হয়ে গেল। এতক্ষণ সে সুরাকার রূপ ধরে কাফিরদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। আবু জেহেল এ অবস্থা দেখে স্বীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে চক্কর দিতে শুরু করলো এবং তাদেরকে বলতে থাকলোঃ “তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। সুরাকা পালিয়ে গেছে বলে মন খারাপ করো না। সে তো মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নিকট থেকে কুপরামর্শ শিখে এসেছিল যে, সুযোগ বুঝে তোমাদের মন ভেঙ্গে দেবে। ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। লাত ও উযযার শপথ! আজ আমরা মুসলমানদেরকে এবং তাদের নবীকে গ্রেফতার করে ফেলবো। সুতরাং ভীরুতা প্রদর্শন করো না, বরং মনোবল বৃদ্ধি কর। কঠিন আক্রমণ চালাও। সাবধান! তাদেরকে হত্যা করো না, বরং জীবিত ধরে রাখো যেন তাদেরকে মন খুলে শাস্তি দেয়া যায়। এ লোকটাও (আবূ জেহেল) ছিল সে যুগের ফিরআউন। যাদুকরগণ ঈমান এনেছিল বলে সেও তাদেরকে বলেছিলঃ “এটা তো শুধু তোমাদের একটা চক্রান্ত ছিল যে, তোমরা আমাদেরকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেবে।” সেও যাদুকরদেরকে বলেছিলঃ “এই মূসা (আঃ) তোমাদের ওস্তাদ।" অথচ ওটা ছিল তার একটা প্রতারণা মাত্র। এই উম্মতের ফিরআউন আবূ জেহেলও এ ধরনের কথাই বলেছিল।আবদুল্লাহ ইবনে কুরায়েয (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আরাফার দিন ইবলীস যত লাঞ্ছিত, অপদস্থ ও লজ্জিত হয়েছিল, আর কোন দিন এতটা হতে দেখা যায়নি। কেননা সে দেখছিল যে, আল্লাহ তা'আলার সাধারণ ক্ষমা ও সাধারণ রহমত বর্ষিত হচ্ছে। প্রত্যেকের গুনাহ প্রায়ই মাফ হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, তবে বদরের দিনে তার লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হওয়ার কথা জিজ্ঞেস করো না, যখন সে দেখলো যে, ফেরেশতাদের সেনাবাহিনী জিবরাঈল (আঃ)-এর নেতৃত্বে আসতে শুরু করেছেন সেইদিন সে সবচেয়ে বেশী লজ্জিত ও অপমানিত হয়েছিল।”(আরবী) এ আয়াত সম্পর্কে আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, উভয় সেনাবাহিনী যখন কাতারবন্দী হয়ে মুখোমুখী দাঁড়িয়ে যায় তখন আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে মুশরিকদের চক্ষে কম দেখান। তখন মুশরিকরা মুসলমানদের সম্পর্কে বিদ্রুপ করে বলেঃ “এদের দ্বীন এদেরকে প্রতারিত করেছে। তাদের একথা বলার কারণ ছিল এই যে, তারা মুসলমানদের সংখ্যা তাদের চোখে খুবই কম দেখছিল। তাই তারা ধারণা করছিল যে, নিঃসন্দেহে তারা মুসলমানদেরকে পরাজিত করবে। তারা পরস্পর বলাবলি করছিলঃ “দেখো, মুসলমানরা কত ধর্মের পাগল। মুষ্টিমেয় কয়েকটি লোক এক হাজার সৈন্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। প্রথম আক্রমণেই তারা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলেন যে, এরা হচ্ছে ভরসাকারী দল। তাদের ভরসা এমন সত্তার উপর রয়েছে যিনি বিজয়ের মালিক এবং হিকমতের মালিক। মুসলিমদের মধ্যে আল্লাহর দ্বীনের উপর দৃঢ়তা অনুভব করেই মুশরিকদের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল যে, তারা দ্বীনের পাগল । আল্লাহর শত্রু অভিশপ্ত আবু জেহেল পাহাড়ের উপর থেকে অবজ্ঞাভরে মুসলিমদের সংখ্যার স্বল্পতা ও অস্ত্র-শস্ত্রের নগণ্যতা লক্ষ্য করতঃ গাধার মত ফুলে উঠলো এবং বলতে লাগলঃ “আল্লাহর কসম! আজ থেকে আল্লাহর ইবাদতকারী হতে জমিনকে শূন্য দেখা যাবে। এখনই আমরা তাদের এক একজনকে দু' টুকরো করে রেখে দিবো।” ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বলেন যে, মুসলিমদের ধর্মের প্রতি বিদ্রুপকারী ছিল মক্কার মুনাফেকরা। আমীর (রঃ) বলেন যে, এরা ছিল কতকগুলো লোক যারা শুধু মুখে মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু বদরের প্রান্তরে তারা মুশরিকদের সাথে যোগ দিয়েছিল। মুসলিমদের সংখ্যার স্বল্পতা ও তাদের দুর্বলতা দেখে বিস্মিত হয়েছিল এবং বলেছিলঃ “এ লোকগুলো ধর্মের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এটা ছিল কুরায়েশদের একটি দল। তারা হচ্ছে কায়েস ইবনে অলীদ ইবনে মুগীরা, আবুল কায়েস ইবনে ফাকাহ্ ইবনে মুগীরা, হারিস ইবনে যামআ, আসওয়াদ ইবনে আবদিল মুত্তালিব, আলী ইবনে উমাইয়া ইবনে খাল্ফ এবং আস ইবনে মুনাব্বাহ ইবনে হাজ্জাজ। এ লোকগুলো কুরায়েশদের সাথে ছিল। কিন্তু তারা সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছিল এবং তাদের সন্দেহ তাদেরকে আবদ্ধ রেখেছিল। এখানে মুসলিমদের অবস্থা দেখে তারা বলতে শুরু করেঃ “এ লোকগুলো তো শুধু ধর্মীয় পাগল! নতুবা এই মুষ্টিমেয় রসদ ও হাতিয়ার বিহীন লোক এত শান-শওকতপূর্ণ বিরাট সেনাদলের সাথে কিভাবে যুদ্ধ করতে পারে? হাসান (রঃ) বলেন যে, এই লোকগুলো বদরের যুদ্ধে আগমন করেনি। তাদের নাম মুনাফিক রাখা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, তারা মুখে ইসলামের স্বীকারোক্তি করেছিল এবং তারা মক্কাতে ছিল। মুশরিকদের সাথে তারা বদর অভিমুখে রওয়ানা হয়েছিল। যখন তারা মুসলিমদের সংখ্যা খুবই কম দেখলো তখন বলতে লাগলো, এদের ধর্ম এদেরকে প্রতারিত করেছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন যে, যারা এই মালিকুল মুলকের (আল্লাহর) উপর ভরসা করে তিনি তাদেরকে মর্যাদার অধিকারী বানিয়ে দেন। কেননা সম্মান ও মর্যাদা দানের মালিক একমাত্র তিনিই। বিজয় দান তাঁরই হাতে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত এবং মহনি বাদশাহ। তিনি মহান বিজ্ঞানময়। তার সমস্ত কাজ হিকমতে পরিপূর্ণ। প্রত্যেক জিনিসকে তিনি যথাযোগ্য স্থানে রেখে থাকেন। যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই তিনি সাহায্য করে থাকেন। আর যারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার যোগ্য তাদেরকে তিনি লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন।

كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ بَيْتِكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ

📘 Please check ayah 8:8 for complete tafsir.

وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا ۙ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ

📘 Please check ayah 8:51 for complete tafsir.

ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ

📘 ৫০-৫১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! ফেরেশতারা কত জঘন্যভাবে কাফিরদের রূহ কবয করে থাকে তা যদি তুমি দেখতে! তারা ঐ সময় কাফিরদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে মারতে থাকে এবং বলে-“নিজেদের দুষ্কার্যের প্রতিফল হিসেবে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।” এর এক ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এটাও বদরের দিনেরই ঘটনা। সামনের দিক থেকেই সেইদিন ঐ কাফিরদের চেহারায় তরবারীর আঘাত লাগছিল এবং যখন তারা পলায়ন করছিল তখন তাদের পিঠের উপর তলোয়ার পড়ছিল।হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আবু জেহেলের পিঠে কাঁটাসমূহের চিহ্ন দেখেছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এটা ফেরেশতাদের মারের চিহ্ন।” আসল কথা এই যে, এই আয়াতটি বদরের সাথে নির্দিষ্ট নয়। শব্দগুলো সাধারণ। প্রত্যেক কাফিরেরই অবস্থা এরূপ হয়ে থাকে। সূরায়ে কিতালের মধ্যেও এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এবং সূরায়ে আনআমের .... (আরবী) (৬:৯৩)-এই আয়াতের মধ্যেও এর বর্ণনা তাফসীরসহ বর্ণিত হয়েছে। যেহেতু তারা ছিল নাফরমান লোক, সেহেতু তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের দ্বারা তাদেরকে খুবই কষ্ট দেয়া হয়। তাদের দুঙ্কার্যের কারণে তাদের রূহসমূহ তাদের দেহের মধ্যে লুকিয়ে যায়। সুতরাং ফেরেশতাগণ ওগুলো জোরপূর্বক বের করেন এবং বলেনঃ “তোমার জন্যে আল্লাহর গজব রয়েছে। যেমন বারা’ (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে যে, মৃত্যুর যাতনার সময় ঐ অশুভ অবস্থায় মৃত্যুর ফেরেশতা কাফিরের কাছে এসে বলেনঃ “হে কলুষিত আত্মা! গরম বাতাস, গরম পানি এবং গরম ছায়ার দিকে চল।” তখন ঐ আত্মা দেহের মধ্যে লুকাতে থাকে। অবশেষে ফেরেশতা কোন জীবিত মানুষের গায়ের চামড়া খুলে নেয়ার মত ঐ আত্মাকে জোরপূর্বক টেনে বের করেন এবং সাথে সাথে শিরা উপশিরাও বেরিয়ে আসে। ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “এখন দহনের স্বাদ গ্রহণ কর। এটা তোমার পার্থিব দুষ্ককার্যাবলীর শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উপর মোটেই অত্যাচার করেন না। তিনি তো ন্যায়পরায়ণ হাকিম। তিনি কল্যাণময়, সর্বোচ্চ, অমুখাপেক্ষী, পবিত্র, মহামর্যাদা সম্পন্ন এবং প্রশংসিত। এজন্যেই সহীহ মুসলিমে আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের উপর অত্যাচার হারাম করে দিয়েছি এবং তোমাদের উপরও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর একে অপরের উপর অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! আমি তো শুধু তোমাদের কত আমলগুলোকে পরিবেষ্টন করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণ প্রাপ্ত হবে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু প্রাপ্ত হবে সে যেন নিজেকেই ভৎসনা করে।”

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ ۙ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ شَدِيدُ الْعِقَابِ

📘 আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এই মুশারিকরা তোমার সাথে ঐ ব্যবহারই করছে যে ব্যবহার তাদের পূর্ববর্তী কাফির ও মুশরিকরা তাদের নবীদের সাথে করেছিল। সুতরাং আমিও এদের সাথে ঐ ব্যবহারই করেছি যে ব্যবহার এদের পূর্ববর্তীদের সাথে করেছিলাম, যারা এদের মতই ছিল। যেমন ফিরআউনের বংশ ও তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল। এই কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন। সমস্ত শক্তির মালিক আল্লাহ এবং তার শাস্তিও খুবই কঠিন। এমন কেউ নেই যে তাঁর উপর জয়যুক্ত হতে পারে এবং এমন কেউ নেই যে তার নিকট থেকে পলায়ন করতে পারে।

ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

📘 Please check ayah 8:54 for complete tafsir.

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ ۙ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ ۚ وَكُلٌّ كَانُوا ظَالِمِينَ

📘 ৫৩-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তা'আলার আদল ও ইনসাফের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তিনি তার দেয়া নিয়ামতরাশি পাপকার্যের পূর্বে তাঁর বান্দাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেন না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে- “আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যে পর্যন্ত না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন কওমের প্রতি (তাদের পাপের কারণে) অমঙ্গল পৌছানোর ইচ্ছা করেন তখন কেউই তাঁর সেই ইচ্ছাকে রদ করতে পারে না এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।”আল্লাহ তা'আলা ফিরআউনের বংশধর এবং তাদের মত স্বভাব বিশিষ্ট তাদের পূর্ববর্তীদের সাথে এরূপ ব্যবহারই করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে নিয়ামতরাজি দান করেছিলেন। কিন্তু তারা দুঙ্কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে তিনি তাদেরকে প্রদত্ত বাগান, প্রস্রবণ, ক্ষেত-খামার, কোষাগার, অট্টালিকা এবং অন্যান্য নিয়ামত যা তারা উপভোগ করছিল সবই তাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তারা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি মোটেই অত্যাচার করেননি।

إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 8:57 for complete tafsir.

الَّذِينَ عَاهَدْتَ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنْقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِي كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ

📘 Please check ayah 8:57 for complete tafsir.

فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

📘 ৫৫-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন- ভূ-পৃষ্ঠে যত প্রাণী চলাফেরা করছে ওদের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই যারা বেঈমান ও কাফির, যারা চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে দেয়। এদিকে একটি কথা দিলো, আর ওদিকে তা থেকে ফিরে গেল। এদিকে শপথ করলো, ওদিকে তা ভেঙ্গে দিলো। তাদের না আছে আল্লাহর কোন ভয় এবং না আছে কৃত পাপের কোন পরওয়া। সুতরাং হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যখন তুমি যুদ্ধে তাদের উপর জয়যুক্ত হবে তখন তাদেরকে এমন শাস্তি দিবে যে, যেন তাদের পরবর্তী লোকেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তারাও যেন ভয় পেয়ে যায়। তাহলে হয়তো তারা তাদের পূর্ববর্তীদের কৃত দুষ্কার্য থেকে বিরত থাকবে। [এ কথা বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), হাসান বসরী (রঃ), যহহাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ), আতা খুরাসানী (রঃ) এবং ইবনে উয়াইনা (রঃ)]

وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন- হে নবী! যদি কারো সাথে তোমার চুক্তি হয় এবং তোমার ভয় হয় যে, তারা এই চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তবে তোমাকে এ অধিকার দেয়া হচ্ছে যে, তুমি সমতা রক্ষা করে সেই চুক্তিনামা রদ করে দিবে। এ সংবাদ তাদের কানে পৌছিয়ে দিতে হবে, যেন তারাও সন্ধির ধারণা ত্যাগ করে। কিছুদিন পূর্বেই তাদেরকে এটা অবশ্যই জানাতে হবে। জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা বিশ্বাস ভঙ্গ করা পছন্দ করেন না। সুতরাং কাফিরদের সাথেও তুমি খিয়ানত করো না।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, আমীর মুআবিয়া (রাঃ) স্বীয় সেনাবাহিনী রোম সীমান্তে পাঠাতে শুরু করেন, যেন সন্ধিকাল শেষ হওয়া মাত্রই আকস্মিকভাবে তাদের উপর আক্রমণ চালানো যায়। তখন একজন বৃদ্ধ স্বীয় সওয়ারীতে আরোহিত অবস্থায় বলতে বলতে আসলেন-আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। ওয়াদা-অঙ্গীকার পুরো করুন, বিশ্বাস ভঙ্গ করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন কোন কওমের সাথে চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে যাবে তখন কোন গিরা খুলো না ও বেঁধো না যে পর্যন্ত না চুক্তিকাল শেষ হয় কিংবা তাদেরকে জানিয়ে দিয়ে অঙ্গীকার ও চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলা হয়। এ খবর মুআবিয়া (রাঃ)-এর কানে পৌছা মাত্রই তিনি সেনাবাহিনীকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। এই বৃদ্ধ লোকটি ছিলেন আমর ইবনে আমবাসা (রাঃ)। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) ও ইবনে হিব্বান (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)সালমান ফারসী (রাঃ) একটি শহরের দুর্গের নিকট পৌছে স্বীয় সঙ্গীদেরকে বলেনঃ “আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন, আমি ওদেরকে (ইসলামের) দাওয়াত দেবো, যেমন আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দাওয়াত দিতে দেখেছি। অতঃপর তিনি তাদেরকে বললেনঃ “দেখো, আমি তোমাদের মধ্যকারই একজন ছিলাম। অতঃপর মহা মহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করেছেন। যদি তোমরাও মুসলমান হয়ে যাও তবে আমাদের যে হক রয়েছে তোমাদেরও সেই হক হয়ে যাবে এবং আমাদের উপর যা রয়েছে তোমাদের উপরও তাই থাকবে । আর যদি তোমরা এটা স্বীকার না কর তবে লাঞ্ছনার সাথে তোমাদেরকে জিযিয়া কর প্রদান করতে হবে। যদি তোমরা এটাও না মান তবে আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবো এ কথা তোমাদেরকে এখন থেকেই জানিয়ে দিচ্ছি। এখন আমরা ও তোমরা সমান অবস্থায় রয়েছি। আল্লাহ তা'আলা খিয়ানতকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” তিন দিন পর্যন্ত তাদেরকে এভাবেই দাওয়াত দিতে থাকেন। অবশেষে চতুর্থ দিন সকাল হওয়া মাত্রই তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে দেন। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে স্বীয় সাহায্যের মাধ্যমে জয়যুক্ত করেন।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَبَقُوا ۚ إِنَّهُمْ لَا يُعْجِزُونَ

📘 Please check ayah 8:60 for complete tafsir.

يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنْظُرُونَ

📘 Please check ayah 8:8 for complete tafsir.

وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ

📘 ৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কাফিররা আমার হাত ছাড়া হয়ে যাবে এবং আমি তাদেরকে ধরতে সক্ষম নই এরূপ ধারণা যেন তারা না করে। বরং তারা সব সময় আমার ক্ষমতা ও আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। তারা আমাকে হারাতে পারবে না। অন্য আয়াতে রয়েছে- “যারা দুস্কার্যে লিপ্ত রয়েছে তারা কি ধারণা করেছে যে, তারা আমাকে এড়িয়ে যাবে? তারা যা ধারণা করেছে তা কতই না জঘন্য!” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “তুমি এ ধারণা করো না যে, কাফিররা ভূ-পৃষ্ঠে (লুকিয়ে থেকে) আমাকে পরাভূত করবে, তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম এবং এটা খুবই নিকৃষ্ট স্থান।” অন্য স্থানে আল্লাহ পাক বলেনঃ “কাফিরদের শহরে (জাকজমকের সাথে) ঘুরাফিরা যেন তোমাকে প্রতারিত না করে, এটা অল্প কয়েকদিনের উপভোগ মাত্র, অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং ওটা অতি নিকৃষ্ট বিছানা।”এরপর আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন- “তোমরা তোমাদের শক্তি মোতাবেক সদা সর্বদা ঐ কাফিরদের মুকাবিলার জন্যে প্রস্তুত থাকো। যারা যুদ্ধের ঘোড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম তারা তা মওজুদ রাখো।" মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মিম্বরে আরোহিত অবস্থায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্যে যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত রাখো।” এরপর তিনি বলেনঃ “জেনে রেখো যে, এই শক্তি হচ্ছে তীরন্দাজী, এই শক্তি হচ্ছে তীরন্দাজী।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) এবং ইমাম আবু দাউদ (রঃ) তাখরীজ করেছেন) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা তীরন্দাজী কর এবং ঘোড়ায় সওয়ার হও (ও যুদ্ধ কর), আর তীরন্দাজী করা ঘোড়ায় সওয়ার হওয়া অপেক্ষা উত্তম।”আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঘোড়া পালনকারী তিন প্রকারের। প্রথম হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে ঘোড়া পালন করার কারণে সওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে ওর কারণে পুণ্যও লাভ করে না এবং তার পাপও হয় না। তৃতীয় হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে ঘোড়া পালন করার কারণে পাপের অধিকারী হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়া পালন করে, তার ঘোড়াটি যে চরে ফিরে খায়, এর উপর তাকে সওয়াব দেয়া হয়। এমন কি যদি ঐ ঘোড়াটি রশি ছিড়ে পালিয়ে যায় তবে ওর পদ চিহ্নের বিনিময়ে এবং ওর লাদ বা মলের বিনিময়েও সে সওয়াব প্রাপ্ত হয়। যদি ঘোড়াটি কোন নদীর পার্শ্ব দিয়ে গমনের সময় পানি পান করে নেয় তবে এ কারণেও মুজাহিদ ব্যক্তি সওয়াব প্রাপ্ত হয়, যদিও সে ওকে পানি পান করাবার ইচ্ছাও না করে থাকে। সুতরাং এ ঘোড়াটি ঐ মুজাহিদের জন্যে সওয়াব বা পুণ্য লাভের কারণ। আর যে ব্যক্তি ঘোড়া পালন করে অন্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী থাকার জন্যে, অতঃপর সে ওর ঘাড় ও সওয়ারীর ব্যাপারে আল্লাহর হকের কথা ভুলে না যায় তবে ওটা তার জন্যে পর্দা স্বরূপ। অর্থাৎ সে ওর কারণে নেকীও পাবে না। এবং তার গুনাহও হবে না। আর যে ব্যক্তি অহংকার ও রিয়া প্রকাশের উদ্দেশ্যে ঘোড়া পালন করে যে, সে মুসলমানদের সাথে মুকাবিলা করবে, ওটা তার জন্যে পাপের বোঝা স্বরূপ।”রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা এ সম্পর্কে নিম্নের আয়াতটি ছাড়া আর কিছুই অবতীর্ণ করেননি। আয়াতটি হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) অণু পরিমাণ নেক কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে, আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ বদ কাজ করবে সে তা তথায় দেখতে পাবে।” (৯৯:৭-৮) (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম মালিক (রঃ) তাখরীজ করেছেন) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঘোড়া তিন প্রকারের রয়েছে। (১) রাহমানের (আল্লাহর) ঘোড়া, (২) শয়তানের ঘোড়া এবং (৩) মানুষের ঘোড়া। রাহমানের ঘোড়া হচ্ছে ঐ ঘোড়া যাকে আল্লাহর পথে বেঁধে রাখা হয়। সুতরাং ওর খড়, ওর গোবর, ওর প্রস্রাব এবং আল্লাহ যা চাইলেন তা তিনি বর্ণনা করলেন (অর্থাৎ সবগুলো আল্লাহর পথে)। আর শয়তানের ঘোড়া হচ্ছে ঐ ঘোড়া যাকে ঘোড় দৌড় ও জুয়াবাজীর উদ্দেশ্যে রাখা হয়। মানুষের ঘোড়া হচ্ছে ঐ ঘোড়া যাকে মানুষ শুধুমাত্র ওর পেটের উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে। সুতরাং ওটা হচ্ছে তার পক্ষে দারিদ্রের মুকাবিলায় পর্দা স্বরূপ।” অধিকাংশ আলেমের উক্তি এই যে, তীরন্দাজ যোদ্ধা অশ্বারোহী সৈনিক হতে উত্তম। ইমাম মালিক (রঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেন। কিন্তু জমহুর উলামার উক্তিটিই দৃঢ়তম। কেননা, হাদীসেও এসেছে যে, মুআবিয়া ইবনে জুরাইজ (রাঃ) আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। সেই সময় তিনি তাঁর ঘোড়ার খিদমত করছিলেন। মুআবিয়া (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এ ঘোড়ার দ্বারা কি কাজ করা হয়? উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমার ধারণা, আমার পক্ষে এই ঘোড়াটির দুআ কবুল হয়েছে।” মুআবিয়া (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করলেন, পশুর দুআ' আবার কি? তিনি জবাবে বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! প্রতিটি ঘোড়া প্রত্যহ সকালে দুআ করে থাকে। দুআ’য় সে বলে- “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার এক বান্দার হাতে সমর্পণ করেছেন। সুতরাং আমাকে তার কাছে তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির চেয়ে প্রিয়তম করুন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বাঁধা থাকবে। ঘোড়া পালনকারী আল্লাহ তা'আলার সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছে। যে ব্যক্তি ভাল নিয়তে জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়া লালন। পালন করে সে ঐ ব্যক্তির মত যে সদা সর্বদা হাত বাড়িয়ে দান খয়রাত করে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) সাহল ইবনে হানলিয়্যাহ (রঃ) হতে তাখরীজ করেছেন) এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস রয়েছে। সহীহ বুখারীতে ঘোড়ার কল্যাণের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, ওটা হচ্ছে সওয়াব ও গনীমত। (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে- তোমরা ভয় প্রদর্শন করবে। (আরবী) আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রু অর্থাৎ কাফিরগণ।(আরবী) মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ইয়াহুদী বানু কুরাইযাকে বুঝানো হয়েছে। সুদ্দী (রঃ) এর দ্বারা পারস্যবাসীকে বুঝিয়েছেন। আর সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, এরা হচ্ছে ঘরের মধ্যে অবস্থানকারী শয়তান। একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, এর দ্বারা জ্বিনদেরকে বুঝানো হয়েছে। একটি মুনকার হাদীসে রয়েছে যে, যে ঘরে কোন আযাদ ঘোড়া রয়েছে সেই ঘর কখনো বদনসীব বা হতভাগ্য হয় না। কিন্তু এ হাদীসটির সনদও ঠিক নয় এবং এটা বিশুদ্ধও নয়। এর অর্থ মুনাফিকও নেয়া হয়েছে। আর এ উক্তিটি সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্যও বটে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের চতুর্দিকে গ্রাম্য ও শহুরে মুনাফিক রয়েছে এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেহ কেহ মুনাফেকীতে অনঢ়, যাদেরকে তোমরা জান না বটে, কিন্তু আমি তাদেরকে ভালরূপেই জানি।” (৯:১০১)ইরশাদ হচ্ছে- জিহাদে তোমরা যা কিছু খরচ করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ খরচ করে, তাদের খরচ করা ধন-সম্পদের অবস্থা এইরূপ যে, যেমন একটি শস্য-বীজ, যা হতে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, প্রতিটি শীষের মধ্যে একশ’টি দানা হয়, আর এই বৃদ্ধি আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন, আল্লাহ হচ্ছেন প্রশস্ততার মালিক, মহাজ্ঞানী।” (২:২৬১)।ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রথমে রাসূলুল্লাহ (সঃ) শুধুমাত্র মুসলমানদেরকেই সদকার মাল প্রদানের নির্দেশ দিতেন। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলা (আরবী)- এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন তখন তিনি বলেনঃ “যে কোন ধর্মের লোক হাক না কেন সে তোমার কাছে চাইলে তুমি তাকে প্রদান কর।” এ রিওয়াইয়াতটি গারীব । ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন।

۞ وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

📘 Please check ayah 8:63 for complete tafsir.

وَإِنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ ۚ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 8:63 for complete tafsir.

وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

📘 ৬১-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ “হে নবী! যদি তোমার মুশরিক ও কাফিরদের খিয়ানতের ভয় হয় তবে সমতা রক্ষা করে তাদেরকে চুক্তি ও সন্ধিপত্র বাতিল করে দেয়ার সংবাদ অবহিত করতঃ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দাও। অতঃপর তারা যদি যুদ্ধের প্রতি উত্তেজনা প্রকাশ করে তবে আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা করতঃ যুদ্ধ শুরু করে দাও। আর যদি আবার তারা সন্ধির প্রস্তাব দেয় তবে পুনরায় সন্ধি করে নাও।” এই আয়াতের উপর আমল করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হুদায়বিয়ায় মক্কার কুরায়েশদের সাথে কয়েকটি শর্তের উপর নয় বছরের মেয়াদে সন্ধি করেন। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্বরই মতভেদ সৃষ্টি হবে বা অন্য কোন ব্যাপার ঘটবে। সুতরাং পারলে সন্ধিই করে নাও।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে রয়েছে)মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি বানু কুরাইযার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এতে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এ সমুদয় হচ্ছে বদরের ঘটনা। ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ), আতা খুরাসানী (রঃ), ইকরামা (রাঃ), হাসান (রাঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি সূরায়ে বারাআতের সাঈফ'-এর (আরবী) (৯:২৯) এই আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এটাও চিন্তার বিষয়। কেননা, এই আয়াতে শক্তি ও সাধ্যের উপর জিহাদের হুকুম রয়েছে। কিন্তু শক্রদের সংখ্যাধিক্যের সময় তাদের সাথে সন্ধি করে নেয়া নিঃসন্দেহে জায়েয, যেমন এই আয়াতে কারীমায় রয়েছে এবং যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হুদায়বিয়ার দিন করেছিলেন। সুতরাং কোন বৈপরীত্য, কোন বিশেষত্ব এবং কোন রহিতকরণ নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী, আল্লাহর উপর ভরসা কর, তিনিই তোমার জন্যে যথেষ্ট। তিনিই তোমার সাহায্যকারী। যদি এ মুশরিকরা তোমার সাথে প্রতারণা করে এই সন্ধির মধ্যে নিজেদের শান শওকত ও যুদ্ধাস্ত্র বৃদ্ধি করে তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকবে। আল্লাহ তোমার পক্ষ অবলম্বন করবেন। তোমার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কেউই নেই।”এরপর আল্লাহ তা'আলা নিজের বড় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন- “আমি স্বীয় ফল ও করমে মুহাজির ও আনসারদের মাধ্যমে তোমার সাহায্য করেছি। তাদেরকে তোমার প্রতি ঈমান আনার ও তোমার আনুগত্য করার তাওফীক দান করেছি। তুমি যদি সারা দুনিয়ার ধন ভাণ্ডারও ব্যয় করে দিতে তবুও তাদের মধ্যে সেই প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতে না যা আল্লাহ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের পুরাতন শক্রতা দূর করে দিয়েছেন। আউস ও খাযরাজ নামক আনসারদের দু'টি গোত্রের মধ্যে অজ্ঞতার যুগে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তারা সবসময় কাটাকাটি মারামারি করতো। ঈমানের আলো তাদের সেই শক্রতাকে বন্ধুত্বে পরিণত করে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা আল্লাহর ঐ নিয়ামতের কথা স্মরণ কর যা তোমাদের উপর রয়েছে, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গিয়েছে, আর তোমরা জাহান্নামের গর্তের তীরে ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন, এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় বিধানসমূহ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা (সঠিক) পথে থাকো।”সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হুনায়েনের যুদ্ধলব্ধ মাল বন্টন করার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) আনসারদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আনসারের দল! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট অবস্থায় পেয়ে আল্লাহর অনুগ্রহে। সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করিনি? তোমরা দরিদ্র ছিলে, অতঃপর আমার মাধ্যমে আল্লাহ কি তোমাদেরকে সম্পদশালী করেননি? তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলে, তারপর আমার মাধ্যমে কি আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে মিলন ঘটাননি? “এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে আনসারগণ বলতেছিলেনঃ “নিশ্চয়ই আমাদের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর ইহসান এর চেয়েও বেশী রয়েছে। মোটকথা, আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইনআ'ম ও ইকরামের বর্ণনা দেয়ার পর তাঁর মর্যাদা ও নৈপুণ্যের বর্ণনা দিয়েছেন যে, তিনি মহান ও সর্বোচ্চ এবং যে ব্যক্তি তার রহমতের আশা রাখে সে নিরাশ হয় না। যে তাঁর উপর ভরসা করে তার ইহজীবন ও পরজীবন সুখময় হয়। তিনি স্বীয় কাজেকর্মে ও হুকুম দানে মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হয় এবং নিয়ামতের প্রতিও কৃতঘ্নতা দেখা যায়, কিন্তু অন্তরের মিল মহব্বতের মত আর কিছুই দেখা যায়নি। আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী! তুমি যদি দুনিয়ার ধনভাণ্ডারও শেষ করতে তবুও তোমার এ শক্তি ছিল না যে, তুমি তাদের অন্তরে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করবে।” কবি বলেনঃ “তোমাকে প্রতারণাকারী এবং তোমার প্রতি অশ্রুক্ষেপকারী তোমার আত্মীয় নয়, বরং তোমার প্রকৃত আত্মীয় হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে তোমার আহ্বানে সাভা দেয় এবং তোমার শত্রুকে দমন করার কাজে তোমাকে সহায়তা করে।” অনুরূপভাবে অন্য এক কবি বলেনঃ “আমি লোকদের সাথে মেলামেশা করে তাদেরকে পরীক্ষা করেছি এবং বুঝেছি যে, অন্তরের মিল আত্মীয়তার চেয়েও বড়।” ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেনঃ “এসব উক্তি ইবনে আব্বাসেরই (রাঃ) না কি তাঁর পরবর্তী অন্য কোন বর্ণনাকারীর তা আমার জানা নেই।” ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, তাদের এ মহব্বত ছিল আল্লাহর পথে এবং সেটা ছিল তাওহীদ ও সুন্নাহর ভিত্তির উপর। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যায় এবং ইহসানেরও না শুকরী করা হয়, কিন্তু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অন্তরকে যে মিলিয়ে দেয়া হয় তা কেউই পৃথক করতে পারে না। অতঃপর তিনি .... (আরবী)-এই আয়াতটি পাঠ করেন।আবদা ইবনে আবি লুবাবা (রঃ) বলেন, একদা মুজাহিদ (রঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার সাথে মুসাফাহা (কর মর্দন) করে বলেনঃ “আল্লাহর পথে মহব্বতকারী দু'টি লোক যখন পরস্পর মিলিত হয় এবং হাসিমুখে একে অপরের হাতে হাত মিলায়, তখন গাছের শুষ্ক পাতা ঝরে পড়ার মত তাদের উভয়ের পাপরাশি ঝরে পড়ে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম, এটা তো খুবই সহজ কাজ। তখন তিনি বললেন, এ কথা বলো না। এটা হচ্ছে সেই মহব্বত যে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী)! তুমি যদি সারা দুনিয়ার ধন ভাণ্ডারও খরচ করে দাও তবুও তোমার সাধ্য নেই যে, তুমি তাদের অন্তরে মহব্বত বা প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি করতে পার।” তাঁর এ কথা শুনে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেল যে, তিনি আমার চেয়ে অনেক বেশী বুদ্ধিমান। ওয়ালীদ ইবনে আবি মুগীস (রঃ) বলেনঃ “আমি মুজাহিদ (রঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যখন দু’জন মুসলমান পরস্পর মিলিত হয় ও মুসাফাহা করে তখন তাদের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি- শুধু মুসাফাহা করলেই কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ “তুমি কি আল্লাহর এই কথা শুননি?” অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। তখন আমি বলি, আপনি আমার চেয়ে বড় আলেম। উমাইর ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, মানুষের মধ্য থেকে প্রথম যে জিনিস উঠে যাবে তা হচ্ছে মহব্বত বা ভালবাসা। তিবরানী (রঃ)-এর হাদীস গ্রন্থে সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন কোন মুসলমান তার কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে মিলিত হয়, অতঃপর তার সাথে মুসাফাহা করে তখন তাদের দুজনের গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়ে যেমনভাবে প্রবল বাতাসের দিনে গাছের শুষ্ক পাতাগুলো ঝরে যায়। তাদের সমস্ত গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয় যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমানও হয়।”

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 8:66 for complete tafsir.

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ۚ إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ

📘 Please check ayah 8:66 for complete tafsir.

الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا ۚ فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ

📘 ৬৪-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ) ও মুসলিমদেরকে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করছেন এবং তাদের অন্তরে প্রশান্তি দান করছেন যে, তিনি তাদেরকে শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করবেন, যদিও তারা সংখ্যায় অধিক ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও বেশী, আর মুসলিমরা সংখ্যায় কম এবং তাদের যুদ্ধাস্ত্রও নগণ্য। মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ “আল্লাহই তোমার জন্যে যথেষ্ট এবং যে স্বল্প সংখ্যক মুসলিম তোমার সাথে রয়েছে তাদের দ্বারাই তুমি সফলতা লাভ করবে। এরপর আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন- “তুমি মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উৎসাহ দান করতে থাক।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করার সময় এবং মুকাবিলার সময় সৈন্যবাহিনীর মনে উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাতে থেকেছেন। বদর যুদ্ধের দিন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “উঠো, ঐ জান্নাত লাভ কর যার প্রস্থ হচ্ছে আসমান ও যমীনের সমান।” এ কথা শুনে উমায়ের ইবনে হামাম (রাঃ) বলেনঃ “প্রস্থ এতো বেশী?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ হ্যা, এতোটাই বটে।” তখন তিনি বলেনঃ “বাঃ! বাঃ!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এ কথা শুনে বলেনঃ “এ কথা তুমি কি উদ্দেশ্যে বললে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি একথা এ আশায় বললাম যে, আল্লাহ তা'আলা আমাকেও জান্নাত দান করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, তুমি সত্যিই জান্নাত লাভ করবে।” তিনি তখন উঠে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তরবারীর কোষ ভেঙ্গে দিলেন। অতঃপর তাঁর কাছে যা কিছু খেজুর ছিল তা খেতে শুরু করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “এগুলো খাওয়া পর্যন্ত আমি বিলম্ব করতে পারি না। সুতরাং তিনি ওগুলো হাত থেকে ফেলে দিলেন এবং আক্রমণে উদ্যত হয়ে সিংহের ন্যায় শত্রুদের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লেন, আর সুতীক্ষ তরবারী দ্বারা কাফিরদেরকে হত্যা করতে করতে নিজেও শহীদ হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাঁকেও সন্তুষ্ট করুন!ইবনুল মুসাইয়া (রাঃ) এবং সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াত উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের সময় অবতীর্ণ হয়। ঐ সময় মুসলিমদের সংখ্যা মোট চল্লিশজন হয়েছিল। কিন্তু এ কথায় চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মাদানী আয়াত । অথচ উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ হচ্ছে মক্কার ঘটনা। এটা হচ্ছে আবিসিনিয়ার হিজরতের পরের এবং মদীনায় হিজরতের পূর্বের ঘটনা। এসব বিষয় আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান পূর্বক নির্দেশ দিচ্ছেন- “তোমাদের বিশজন কাফিরদের দু’শজনের উপর বিজয়ী হবে এবং একশজন এক হাজারের উপর জয়যুক্ত হবে। মোটকথা একজন মুসলিম দশজন কাফিরের উপর বিজয় লাভ করবে। অতঃপর এ হুকুম মানসূখ বা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু সুসংবাদ বাকী রয়েছে। যখন মুসলিমদের এটা কঠিন ঠেকলো তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর হুকুম হালকা করে দিলেন এবং বললেন যে, আল্লাহ তা'আলা বোঝা হালকা করে দিলেন। কিন্তু সংখ্যা যতটা কম হয়ে গেল সেই পরিমাণ ধৈর্যও কম হলো। পূর্বে হুকুম ছিল যে, বিশজন মুসলিম যেন দু’শজন কাফির থেকে পিছে না সরে। এখন এই হুকুম হলো যে, তাদের দ্বিগুণ সংখ্যা অর্থাৎ একশজন মুসলিম যেন দু’শজন কাফির থেকে পলায়ন না করে । সুতরাং পূর্বের হুকুম মুমিনদের কাছে কঠিন হওয়ার কারণে তাদের দুর্বলতা ককূল করতঃ আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর হুকুম হালকা করে দেন। অতএব যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়া অবস্থায় মুসলিমদের পিছনে সরে যাওয়া উচিত নয়। হ্যা, তবে তাদের সংখ্যা মুসলিমদের দ্বিগুণের বেশী হলে তাদের সাথে যুদ্ধ করা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব নয় এবং ঐ অবস্থায় তাদের পিছনে সরে যাওয়া জায়েয। (মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), হাসান (রঃ), যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে এরূপই বর্ণিত হয়েছে) ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাহাবীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “পূর্বের হুকুমটি উঠে গেছে।”

مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَىٰ حَتَّىٰ يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ ۚ تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللَّهُ يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

📘 Please check ayah 8:69 for complete tafsir.

لَوْلَا كِتَابٌ مِنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

📘 Please check ayah 8:69 for complete tafsir.

فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

📘 ৬৭-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর: মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, বদরের বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গের সাথে পরামর্শ করেন। তিনি তাদের বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা এই বন্দীদেরকে তোমাদের অধিকারে দিয়েছেন। বল, তোমাদের ইচ্ছা কি?” উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদেরকে হত্যা করা হাক।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, এরা কাল পর্যন্তও তোমাদের ভাইই ছিলো।” উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে তাঁর উত্তরের পুনরাবৃত্তি করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং পুনরায় ঐ কথা বললেন। এবার আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) দাড়িয়ে গিয়ে আরয করলেন- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার মত এই যে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করুন।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা থেকে চিন্তার লক্ষণ, দূরীভূত হয়। তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই মুক্ত করে দেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এই সূরারই শুরুতে ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমেও এরূপ একটি হাদীস আছে যে, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেনঃ “এই বন্দীদের ব্যাপারে তোমরা কি চাও?” আবু বকর (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা তো আপনার কওমের লোক এবং আপনার পরিবারেরই মানুষ। সুতরাং এদেরকে জীবিতই ছেড়ে দেয়া হাক এবং তাওবা করিয়ে নেয়া যাক। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, হয়তো কাল আল্লাহ এদের উপর দয়া করবেন।” কিন্তু উমার (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী এবং আপনাকে দেশ থেকে বিতাড়নকারী। সুতরাং এদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দান করুন।” আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ মাঠে বহু খড়ি রয়েছে। এগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিন এবং এদেরকে এ আগুনে ফেলে দিয়ে জ্বালিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এদের কথা শুনে নীরব হয়ে যান। কাউকেও কোন জবাব না দিয়ে উঠে চলে গেলেন। এই তিন মহান ব্যক্তিরই পক্ষ অবলম্বনকারী লোক জুটে গেলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে বলতে লাগলেনঃ কারও কারও অন্তর দুধের চেয়েও নরম হয়ে গেছে এবং কারও কারও হৃদয় পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ)-এর মত। তিনি আল্লাহর নিকট আরয করেছিলেনঃ “যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা তো আমারই লোক, আর যারা আমার অবাধ্য হয়েছে তাদের ব্যাপারেও আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা (আঃ)-এর দৃষ্টান্তের ন্যায়ও বটে। যিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনার বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” হে উমার! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে মূসা (আঃ)-এর ন্যায়। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং তাদের অন্তর কঠোর করে দিন, সুতরাং তারা ঈমান আনবে না যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।হে আব্দুল্লাহ! তোমার দৃষ্টান্ত নূহ (আঃ)-এর ন্যায়ও বটে। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! আপনি কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না।” দেখো, তোমরা এখন দারিদ্রপীড়িত। সুতরাং এই বন্দীদের। কেউই ফিদইয়া প্রদান ছাড়া মুক্তি পেতে পারে না। আর ফিদইয়া না দিলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এদের থেকে সাহল ইবনে বায়যাকে বিশিষ্ট করে নিন। কেননা, সে ইসলামের আলোচনা করে থাকে।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব হয়ে যান। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি সারা দিন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকলাম যে, না জানি আমার উপর আকাশ থেকে পাথরই বর্ষিত হয়। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সাহীল ইবনে বায়যা ব্যতীত।” তখন আল্লাহ তা'আলা... (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) এটাকে তাঁর মুসতাদরিক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর বলেছেন যে, এর ইসনাদ বিশুদ্ধ এবং তারা দুজন এটাকে তাখরীজ করেননি) এই কয়েদীদের মধ্যে আব্বাস (রাঃ) ছিলেন। তাঁকে একজন আনসারী গ্রেফতার করেছিলেন। এই আনসারীর ধরণা ছিল যে, তাঁকে হত্যা করা হবে। রাসূলুল্লাহও (সঃ) এ অবস্থা অবগত ছিলেন। তিনি বলেনঃ “এই চিন্তায় রাত্রে আমার ঘুম হয়নি।” উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনার অনুমতি হলে আমি এ ব্যাপারে আনসারদের নিকট গমন করি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং উমার (রাঃ) আনসারদের নিকট গমন করে বললেনঃ “আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দিন। তারা বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আমরা তাকে ছাড়বো না।” তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ “এতেই যদি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টি নিহিত থাকে তবুও কি ছাড়বেন না?” তারা তখন বললেনঃ “যদি এটাই হয় তবে আপনি তাঁকে নিয়ে যান। আমরা খুশী মনে তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।” উমার (রাঃ) আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আব্বাস (রাঃ)! আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে। আমার পিতার ইসলাম গ্রহণের চাইতেও বেশী আনন্দের কারণ হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আপনার ইসলাম গ্রহণে খুশী হবেন।” এই সব কয়েদীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলেন। তখন তিনি বললেনঃ “এরা তো আমাদের গোত্রেরই লোক। সুতরাং এদেরকে ছেড়ে দিন।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) উমার (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলে তিনি বললেনঃ “এদের সকলকেই হত্যা করে দিন।” শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বন্দীদের কাছে মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই ছেড়ে দেন। আলী (রাঃ) বলেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! আপনার সাহাবীদেরকে ইখতিয়ার দিন যে, তারা দুটোর মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারেন। হয় তাঁরা মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীদেরকে ছেড়ে দিবেন, না হয় তাদেরকে হত্যা করে ফেলবেন। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হলে আগামী বছর বন্দীদের সমান সংখ্যক মুসলমান শহীদ হয়ে যাবেন।” সাহাবীগণ বলেন যে, তারা প্রথমটিই গ্রহণ করলেন এবং বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিবেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি অত্যন্ত গারীব ও দুর্বল)এই বদরী বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ হে সাহাবীর দল! যদি চাও তবে মুক্তিপণ আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দাও। অথবা ইচ্ছা করলে হত্যা করে দাও। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে তাদের সমান সংখ্যক তোমাদের লোক শহীদ হয়ে যাবে।” এই সত্তরজন শহীদের মধ্যে সর্বশেষ শহীদ হচ্ছেন সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ), যিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এই রিওয়ায়াতটি মুরসালরূপে উবাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকের জ্ঞানই সবচেয়ে বেশী।মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর কিতাবে প্রথম থেকেই যদি তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল রূপে লিপিবদ্ধ না করা হতো এবং বর্ণনা করে দেয়ার পূর্বে আমি শাস্তি প্রদান করি না- এটা যদি আমার নীতি না হতো তবে যে ফিদইয়া বা মুক্তিপণ তোমরা গ্রহণ করেছে তার কারণে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করতাম। এভাবেই আল্লাহ তা'আলা ফায়সালা করে রেখেছিলেন যে, কোন বদরী সাহাবীকে তিনি শাস্তি দিবেন না। তাদের জন্যে ক্ষমা লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। উম্মুল কিতাবে তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল বলে লিখে দেয়া হয়েছে। সুতরাং গনীমতের মাল তোমাদের জন্যে হালাল ও পবিত্র। ইচ্ছামত তোমরা তা খাও, পান কর এবং নিজেদের কাজে লাগাও।" পূর্বেই এটা লিখে দেয়া হয়েছিল যে, এই উম্মতের জন্যে এটা হালাল। এটাই ইবনে জারীর (রঃ)-এর নিকট পছন্দনীয় উক্তি। আর সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এর সাক্ষ্য মিলে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে অন্য কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। (১) এক মাসের পথ পর্যন্ত ভয় ও প্রভাব দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) যমীনকে আমার জন্যে মসজিদ ও পবিত্র বানানো হয়েছে। (৩) গনীমতের মাল আমার জন্যে হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কারো জন্যে হালাল ছিল না। (৪) আমাকে শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। (৫) প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তাঁর নিজের কওমের কাছে প্রেরণ করা হতো। কিন্তু আমি সাধারণভাবে সকল মানবের নিকট প্রেরিত হয়েছি।”আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের ছাড়া কোন কালো মাথা বিশিষ্ট মানুষের জন্যে গনীমতের মাল হালাল করা হয়নি। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “তোমরা যে গনীমতের মাল লাভ করেছো তা হালাল ও পবিত্ররূপে ভক্ষণ কর।” সাহাবীগণ কয়েদীদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছিলেন । সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, প্রত্যেকের নিকট থেকে চারশ করে আদায় করা হয়েছিল। সুতরাং জমহুরে উলামার মতে প্রতি যুগের ইমামের এ ইখতিয়ার রয়েছে যে, তিনি ইচ্ছা করলে বন্দী কাফিরদেরকে হত্যা করতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু কুরাইযার বন্দীদেরকে হত্যা করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরী বন্দীদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে আযাদ করে দিয়েছিলেন। আবার ইচ্ছা করলে মুসলমান বন্দীদের বিনিময়ে মুক্ত করে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাসলামা ইবনে আকওয়া গোত্রের একটি স্ত্রীলোক ও তার মেয়েকে মুশরিকদের নিকট বন্দী মুসলমানদের বিনিময়ে তাদেরকে প্রদান করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে ঐ বন্দীদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে পারে। এটাই ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও উলামায়ে কিরামের একটি দলের মাযহাব, যদিও অন্যেরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এখানে এর বিস্তারিত আলোচনা করার তেমন কোন সুযোগ নেই।

وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ

📘 Please check ayah 8:8 for complete tafsir.

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِمَنْ فِي أَيْدِيكُمْ مِنَ الْأَسْرَىٰ إِنْ يَعْلَمِ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِمَّا أُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

📘 Please check ayah 8:71 for complete tafsir.

وَإِنْ يُرِيدُوا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللَّهَ مِنْ قَبْلُ فَأَمْكَنَ مِنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

📘 ৭০-৭১ নং আয়াতের তাফসীর: ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরের দিন বলেছিলেনঃ “নিশ্চিতরূপে আমি অবগত আছি যে, কোন কোন বানু হাশিমকে জোরপূর্বক এই যুদ্ধে বের করে আনা হয়েছে। আমাদের সাথে যুদ্ধ করার তাদের মোটেই ইচ্ছা ছিল না। সুতরাং বানু হাশিমকে হত্যা করো না, আবুল বাখতারী ইবনে হিশামকেও মেরে ফেলো না এবং আব্বাস ইবনে মুত্তালিবকেও হত্যা করো না। লোকেরা তাদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের সাথে টেনে এনেছে।” তখন আবূ হুযাইফা ইবনে উত্মা (রাঃ) বলেনঃ “আমরা আমাদের বাপদাদাদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের ভাইদেরকে এবং আমাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে হত্যা করবো, আর আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দেবো? আল্লাহর কসম! যদি আমি তাকে পেয়ে যাই তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেবো।” একথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কানে পৌছলে তিনি বলেন “হে আবু হাফস!” (উমার (রাঃ)-এর কুনিয়াত বা উপনাম) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচার মুখে কি তরবারীর আঘাত করা হবে?” উমার ফারূক (রাঃ) বলেনঃ “এটাই ছিল প্রথম দিন যেই দিন রাসূলুল্লাহ আমাকে আমার কুনিয়াত দ্বারা সম্বোধন করেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অনুমতি হলে আমি আবূ হুযাইফা (রাঃ)-এর গর্দান উড়িয়ে দেবো। আল্লাহর কসম! সে মুনাফিক হয়ে গেছে।” আবু হুযাইফা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমার সেই দিনের কথার খটকা আজ পর্যন্তও রয়েছে। ঐ কথার জন্যে আমি আজও ভীত আছি। আমি তো ঐ দিনই শান্তি লাভ করবো যেই দিন আমার এই কথার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। আর সেই কাফফারা হচ্ছে এই যে, আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাবো।” অতঃপর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করুন! ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যেই দিন বদরী বন্দীরা গ্রেফতার হয়ে আসে সেই রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর ঘুম হয়নি। সাহাবীগণ কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এই কয়েদীদের মধ্য থেকে আমার চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর কান্নাকাটির শব্দ আমার কানে আসছে।” তখন সাহাবীরা তাঁর বন্ধন খুলে দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘুম হয়। আব্বাস (রাঃ)-কে একজন আনসারী সাহাবী গ্রেফতার করেছিলেন। তিনি খুব ধনী ছিলেন। মুক্তিপণ হিসেবে তিনি একশ আওকিয়া (এক আওকিয়ার ওজন হচ্ছে এক তোলা সাত মাশা) সোনা প্রদান করেছিলেন। কোন কোন আনসারী নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “আমরা আপনার চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দিতে চাই।” কিন্তু সমতা কায়েমকারী নবী (সঃ) বলেনঃ “না, আল্লাহর কসম! তোমরা এক দিরহাম কম করো না। বরং পূর্ণ মুক্তিপণ আদায় করো।” কুরায়েশরা মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে তাক পাঠিয়েছিল। প্রত্যেকই ধার্যকৃত অর্থ দিয়ে। নিজ নিজ কয়েদীকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মুসলমানই ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আপনার ইসলাম গ্রহণের বিষয় আমি অবগত আছি। যদি আপনার কথা সত্য হয় তবে আল্লাহ আপনাকে এর বিনিময় প্রদান করবেন। কিন্তু আহকাম বাহ্যিকের উপর জারী হয়ে থাকে বলে আপনাকে আপনার মুক্তিপণ আদায় করতেই হবে। তাছাড়া আপনার দু'ভ্রাতুস্পুত্র নওফেল ইবনে হারিস ইবনে আবদিল মুত্তালিব ও আকীল ইবনে আবি তালিব ইবনে আবদিল মুত্তালিবের মুক্তিপণ আপনাকে আদায় করতে হবে। আরো আদায় করতে হবে আপনার মিত্র উৎবা ইবনে আমরের মুক্তিপণ, যে বানু হারিস ইবনে ফাহরের গোত্রভুক্ত।” তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কাছে তো এতো মাল নেই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেন, আপনার ঐ মাল কোথায় গেল যা আপনি ও উম্মুল ফযল যমীনে পুঁতে রেখেছেন আর বলেছেন, “আমি যদি এই সফরে সফলকাম হই তবে এই মাল হবে বানুল ফযল, আবদুল্লাহ এবং কাসামের।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর একথা শুনে আব্বাস (রাঃ) স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল। আমার এই মাল পুঁতে রাখার ঘটনা আমি ও উম্মুল ফযল (তার স্ত্রী) ছাড়া আর কেউই জানে না! আচ্ছা, এ কাজ করুন যে, আমার নিকট থেকে আপনার সেনাবাহিনী বিশ আওকিয়া সোনা প্রাপ্ত হয়েছে, ওটাকেই আমার মুক্তিপণ হিসেবে গণ্য করা হাক।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “কখনও নয়। ওটা তো আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন। সুতরাং আব্বাস (রাঃ) নিজের, তাঁর দুই ভাতুস্পুত্রের এবং তাঁর মিত্রের মুক্তিপণ নিজের পক্ষ হতে আদায় করলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তোমাদের অন্তরে কল্যাণকর কিছু রয়েছে তা যদি আল্লাহ অবগত হন তবে তোমাদের হতে (মুক্তিপণরূপে) যা কিছু নেয়া হয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম কিছু দান করবেন।” আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলার এই ঘোষণা কার্যকরী হয়েছে । আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে আমার এই বিশ আওকিয়ার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে এমন বিশটি গোলাম দান করেছেন যারা সবাই ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী । সাথে সাথে আমি এ আশাও করছি যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।” তিনি বলেনঃ ‘‘আমার ব্যাপারেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে আমার ইসলাম গ্রহণের খবর দিলাম এবং বললাম, আমার বিশ আওকিয়ার বিনিময় আমাকে দেয়া হাক। তিনি তা অস্বীকার করলেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যে, তিনি আমাকে আমার এই বিশ আওকিয়ার বিনিময়ে এমন বিশটি গোলাম দান করেন যারা সবাই ব্যবসায়ী।” তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলেনঃ “আমরা তো আপনার অহীর উপর ঈমান এনেছি, আপনার রিসালাতের আমরা সাক্ষ্য দান করছি এবং আমাদের কওমের মধ্যে আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করেছি।” তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “সারা দুনিয়া লাভ করলেও আমি ততে খুশী হতাম না যতো খুশী হয়েছিলাম এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণে। আল্লাহর কসম! আমার নিকট থেকে মুক্তিপণ হিসেবে যা নেয়া হয়েছিল তার চেয়ে একশ গুণ বেশী আল্লাহ আমাকে প্রদান করেছেন এবং এটাও আশা করছি। যে, আমার পাপগুলোও মাফ করে দেয়া হবে।” এ আয়াতের তাফসীরে কাতাদা (রঃ) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা। হয়েছে যে, বাহরাইন থেকে যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আশি হাজার পরিমাণ মাল এসে পৌঁছে তখন তিনি যোহরের সালাতের জন্যে অযু করছিলেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেক অভিযোগকারীকেই সেই দিন ঐ মাল থেকে প্রদান করেন। এবং কোন প্রার্থনাকারীকেই বঞ্চিত করেননি। সেইদিন তিনি (যোহরের) সালাতের পূর্বেই সমস্ত মাল আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেন। আব্বাস (রাঃ)-কে তিনি ঐ মাল থেকে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন এবং বোঝা বেঁধে নিতে বলেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমার থেকে যা নেয়া হয়েছিল তার থেকে এটা বহুগুণে উত্তম এবং আমি আশা করছি যে, আমার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে।”হামীদ ইবনে হিলাল (রাঃ) বলেন যে, এই মাল ইবনে হাযরামী বাহরাইন থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। এতো মাল নবী (সঃ)-এর নিকট এর পূর্বে এবং পরে কখনো আসেনি। এ মালের পরিমাণ ছিল আশি হাজার। এ মাল চাটাইর উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়। অতঃপর নামাযের জন্যে আযান দেয়া হয়। রাসলুল্লাহ (সঃ) আগমন করেন এবং মালের কাছে দাঁড়িয়ে যান। মসজিদের নামাযীরাও এসে পড়েন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেককে দিতে শুরু করেন। সেইদিন কোন ওজনও ছিল না এবং গণনাও ছিল না। যে আসে সেই নিয়ে যায়। তারা সবাই ইচ্ছামত নিয়ে যায়। আব্বাস (রাঃ) এসে তো চাদরের বোঝা বাঁধেন। কিন্তু উঠাতে সক্ষম না হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! একটু উঠিয়ে দিন। এতে নবী (সঃ) হেসে উঠেন, এমন কি তাঁর দাঁতের ঔজ্জ্বল্য পরিলক্ষিত হয়। তিনি তাকে বলেনঃ “কিছু কম নিন। যা উঠাতে পারবেন তাই নিন।” সুতরাং তিনি কিছু কমিয়ে নিলেন এবং তা উঠিয়ে নিয়ে বলতে বলতে গেলেনঃ “আল্লাহ তা'আলার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। তাঁর একটি কথা তো পূর্ণ হলো। তার দ্বিতীয় ওয়াদাও ইনশাআল্লাহ পূর্ণ হয়ে যাবে (অর্থাৎ তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন)। আমার নিকট থেকে মুক্তিপণ হিসেবে যা। নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে এটা বহুগুণে উত্তম।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ মাল বন্টন করতেই থাকেন। শেষ পর্যন্ত ঐ মালের কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। তিনি ঐ মাল থেকে নিজের পরিবার-পরিজনকে একটি কানাকড়িও প্রদান করলেন না। অতঃপর তিনি নামাযের জন্যে সামনে এগিয়ে যান এবং নামায পড়িয়ে দেন।এ ব্যাপারে অন্য একটি হাদীস আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বাহরাইন হতে মাল আসে। তিনি সাহাবীদেরকে বলেনঃ “এগুলো আমার মসজিদে ছড়িয়ে দাও।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অন্য সময় যে মাল এসেছিল, ওগুলোর চেয়ে এটাই ছিল অধিক মাল অর্থাৎ এর পূর্বে বা পরে এতো অধিক মাল তাঁর কাছে আসেনি। অতঃপর তিনি নামাযের জন্যে বেরিয়ে আসেন। কারো দিকে তিনি ফিরে তাকালেন না। নামায পড়িয়ে দিয়ে তিনি বসে পড়লেন। অতঃপর তিনি যাকেই দেখলেন তাকেই দিলেন। ইতিমধ্যে আব্বাস (রাঃ) এসে গেলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকেও প্রদান করুন। আমি আমার নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনি নিজের হাতেই নিয়ে নিন।" তিনি চাদরে পুটলি বাঁধলেন। কিন্তু ওটা ওজনে ভারী হয়ে যাওয়ার কারণে উঠাতে পারলেন না। সুতরাং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাউকে এটা আমার কাঁধে উঠিয়ে দিতে বলুন।” নবী (সঃ) বললেনঃ “কাউকে আমি এটা উঠিয়ে দিতে বলবো না।” তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে আপনিই উঠিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও অস্বীকৃতি জানালেন। কাজেই বাধ্য হয়ে তাকে কিছু কম করতেই হলো। অতঃপর তিনি ওটা কাঁধে উঠিয়ে চলতে শুরু করলেন। তাঁর এ লোভ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর দিকে চেয়েই থাকলেন যে পর্যন্ত না তিনি তাঁর দৃষ্টির অন্তরাল হলেন। যখন সমস্ত মাল বন্টিত হয়ে গেল এবং একটা কড়িও বাকী থাকলো না তখন তিনি ওখান থেকে উঠলেন। ইমাম বুখারীও (রঃ) স্বীয় কিতাব সহীহ বুখারীর মধ্যে এ বর্ণনাটিকে কয়েক জায়গায় এনেছেন।আল্লাহ পাক বলেনঃ এ লোকগুলো যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে এটা কোন নতুন কথা নয়। এর পূর্বে তারা আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সুতরাং তাদের দ্বারা এটাও সম্ভব যে, এখন মুখে তারা যা প্রকাশ করছে, অন্তরে হয়তো এর বিপরীত কিছু গোপন করছে। এতে ঘাবড়াবার কিছুই নেই। এখন যেমন আল্লাহ তা'আলা এদেরকে তোমার ক্ষমতাধীনে রেখেছেন, এরূপই তিনি সব সময়েই করতে সক্ষম। আল্লাহর কোন কাজই কোন জ্ঞান ও হিকমত থেকে শূন্য নয়। এদের সাথে এবং সমস্ত মাখলুকের সাথে তিনি যা কিছু করেন তা নিজের চিরন্তন পূর্ণ জ্ঞান ও পূর্ণ নিপুণতার সাথেই করে থাকেন।কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি লেখক আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ। এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়েছিল। আতা খুরাসানী (রঃ) বলেন যে, এটা আব্বাস (রাঃ) এবং তাঁর সাথীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যখন তারা বলেছিলেনঃ “আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করতে থাকবো।” সুদ্দী (রঃ) বলেন, এটা সাধারণ এবং সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। এটা সঠিকও বটে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُمْ مِنْ وَلَايَتِهِمْ مِنْ شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا ۚ وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

📘 এখানে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের প্রকারভেদ বর্ণনা করেছেন। প্রথম হলেন মুহাজির যারা আল্লাহর নামে স্বদেশ ত্যাগ করেছেন। তারা একমাত্র আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘরবাড়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য, আত্মীয়-স্বজন এবং দোস্ত বন্ধুদের পরিত্যাগ করেছেন। তারা জীবনকে জীবন মনে করেননি এবং মালকে মাল মনে করেননি। দ্বিতীয় হলেন মদীনার আনসারগণ, যারা মুহাজিরদেরকে নিজেদের কাছে আশ্রয় দিয়েছেন, তাঁদের সম্পদের অংশ দিয়েছেন এবং তাঁদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁরা সব পরস্পর একই। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। একজন মুহাজিরকে একজন আনসারীর ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন। এই বানানো ভাই আত্মীয়তাকেও হার মানিয়েছিল। তারা একে অপরের উত্তরাধিকারী হয়ে যেতেন। পরে এটা মানসূখ (রহিত) হয়ে যায়। ইবনে আবদিল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুহাজির ও আনসার একে অপরের ওলী এবং মক্কা বিজয়ের আযাদকৃত কুরায়েশ ও আযাদকৃত বানু সাকীফ কিয়ামত পর্যন্ত একে অপরের ওলী। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রাঃ) জারীর ইবনে আবদিল্লাহ বাজালী (রঃ) হতে তাখরীজ করেছেন এবং হাফিজ আবূ ইয়ালা (রঃ) এটা ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন) অন্য রিওয়ায়াতে আছে যে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে একে অপরের ওলী। মুহাজি ও আনসারের প্রশংসায় আরো বহু আয়াত রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পূর্ববর্তী (আল্লাহর) নৈকট্য লাভকারীরা হচ্ছে মুহাজির ও আনসার এবং ইহসানের সাথে যারা তাদের অনুসরণ করেছে, তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তিনি তাদের জন্যে এমন জান্নাতসমূহ তৈরী করে রেখেছেন যেগুলোর নীচ দিয়ে ঝণাসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।” (৯:১০০) অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেন : (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ নবী (সঃ)-এর উপর এবং ঐ সব মুহাজির ও আনসারের উপর রহমতের দৃষ্টি নিক্ষে করেছেন যারা কঠিন ও সংকটময় মুহূর্তেও তাঁর অনুসরণ পরিত্যাগ করেনি।” (৯:১১৭) আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(শুভ সংবাদ রয়েছে) ঐ দরিদ্র মুহাজিরদের জন্যে যাদেরকে তাদের মালধন থেকে এবং দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে থাকে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাহায্যের কাজে লেগে রয়েছে, এরাই হচ্ছে সত্যবাদী। আর যারা তাদেরকে স্থান দিয়েছে, তাদের প্রতি ভালবাসা রেখেছে, প্রশস্ত অন্তর দিয়ে তাদেরকে দান করেছে, এমন কি নিজেদের প্রয়োজনের উপর তাদের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়েছে অর্থাৎ যে হিজরতের ফযীলত আল্লাহ মুহাজিরদেরকে প্রদান করেছেন তার উপর তারা হিংসা করে না।” (৫৯৪ ৮-৯) এসব আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আনসারদের উপর মুহাজিরদের প্রাধান্য রয়েছে। মুসনাদে বাযযারে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হুযাইফা (রাঃ)-কে ‘হিজরত’ ও ‘নুসরত’ এ দু’টির যে কোন একটিকে গ্রহণ করার ইখতিয়ার প্রদান করেন। তখন হুযাইফা (রাঃ) হিজরতকেই পছন্দ করেন।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যারা ঈমান এনেছে, কিন্তু হিজরত করেনি, তারা হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকত্বের কোন দায়িত্ব তোমাদের নেই।” এটা হচ্ছে মুমিনদের তৃতীয় প্রকার। এরা হচ্ছে ওরাই যারা নিজেদের জায়গাতেই অবস্থানরত ছিল। গনীমতের মালে তাদের কোন অংশ ছিল না এবং এক পঞ্চমাংশেও ছিল না। হ্যা, তবে তারা কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে সেটা অন্য কথা ।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কাউকে কোন সেনাবাহিনীর সেনাপতি করে পাঠাতেন তখন তিনি তাঁকে উপদেশ দিতেনঃ “দেখো, অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখবে এবং মুসলমানদের সাথে সদা শুভাকাঙক্ষামূলক ব্যবহার করবে। যাও, আল্লাহর নাম নিয়ে তার পথে জিহাদ কর, আল্লাহর সাথে কুফরীকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। তোমাদের শত্রু মুশরিকদের। সামনে তিনটি প্রস্তাব পেশ কর। এ তিনটির যে কোন একটি গ্রহণ করার তাদের ইখতিয়ার রয়েছে। প্রথমে তাদের সামনে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদের থেকে বিরত থাকবে এবং তাদের ইসলাম গ্রহণকে স্বীকার করে নেবে। অতঃপর তাদেরকে বলবে যে, তারা যেন কাফিরদের দেশ ত্যাগ করে মুহাজিরদের দেশে চলে যায়। যদি তারা এ কাজ করে তবে মুহাজিরদের জন্যে যেসব হক রয়েছে, তাদের জন্যেও সেই সব হক প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মুহাজিরদের উপর যা রয়েছে তাদের উপরও তা-ই থাকবে। অন্যথায় এরা গ্রামাঞ্চলের অন্যান্য মুসলমানদের মত হয়ে যাবে। ঈমানের আহকাম তাদের উপর জারী হবে। 'ফাই' ও গনীমতের মালে তাদের কোন অংশ থাকবে না। হ্যা তবে যদি তারা কোন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তবে সেটা অন্য কথা। আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণে সম্মত না হয় তবে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানে বাধ্য করবে। যদি তারা এটা মেনে নেয় তবে যুদ্ধ। থেকে বিরত থাকবে এবং তাদের নিকট থেকে জিযিয়া আদায় করবে। যদি তারা এ দুটোই অস্বীকার করে তবে আল্লাহর সাহায্যের উপর ভরসা রেখে এবং সেই সাহায্য তার কাছে প্রার্থনা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দাও। যে গ্রাম্য মুসলিমরা তাদের জায়গাতেই মুকীম রয়েছে এবং হিজরত করেনি, তারা যদি কোন সময় তোমাদের কাছে দ্বীনের দুশমনের বিরুদ্ধে সাহায্যের প্রত্যাশী হয় তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের উপর ওয়াজিব। কিন্তু যদি তারা এমন জাতির মুকাবিলায় তোমাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে যে জাতির ও তোমাদের মধ্যে চুক্তি রয়েছে, তবে সাবধান! তোমরা বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং কসমও ভেঙ্গে দিয়ো না।”

وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ

📘 উপরে আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করলেন যে, মুমিনরা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু । আর এখানে তিনি বর্ণনা করছেন যে, কাফিররা একে অপরের বন্ধু এবং তিনি মুসলমান ও কাফিরের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেন। যেমন মুসতাদরিকে হাকিমে উসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ ‘দু’টি ভিন্ন মাযহাবের লোক একে অপরের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। না পারে মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হতে এবং না পারে কাফির মুসলিমের ওয়ারিস হতে।” অতঃপর এ আয়াতটিই পাঠ করেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুসলিম কাফিরের এবং কাফির মুসলিমের ওয়ারিস হতে পারে না।” মুসনদি ও সুনান গ্রন্থে রয়েছে যে, দুটি ভিন্ন মাযহাবের লোক একে অপরের ওয়ারিস হয় না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আসহাবুস সুনান তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন) আবু জাফর ইবনে জারীর (রঃ) যুহরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একজন নবদীক্ষিত মুসলমানের নিকট অঙ্গীকার গ্রহণ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্ব করবে, রমযানুল মুবারাকের রোযা রাখবে এবং যেখানে শিরকের আগুন জ্বলে উঠবে সেখানে তুমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।" এ হাদীসটি মুরসাল। বিস্তারিত বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এমন মুসলমান হতে দায়িত্বমুক্ত যে মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করে। দু'ধারে প্রজ্বলিত আগুন কি সে দেখতে পায় না?” (এ হাদীসটিকে ইবনে জারীর (রঃ) মুরসাল ও মুত্তাসিলরূপে তাখরীজ করেছেন) সুনানে আবি দাউদে সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের মধ্যে অবস্থান করে সে তারই মত।” হাফিয আবু বকর ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) আবূ হাতিম আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন এমন ব্যক্তি তোমাদের কাছে আগমন করে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তোমরা তার বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তোমরা এ কাজ না কর তবে ভূ-পৃষ্ঠে ফিত্না ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “তার মধ্যে যদি কিছু থাকে?” তিনি পুনরায় বললেনঃ “যদি তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তির বাগদান আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তার বিয়ে দিয়ে দাও।” এ কথা তিনি তিনবার বললেন। আয়াতের এই শব্দগুলোর ভাবার্থ হচ্ছে- তোমরা যদি মুশরিকদের থেকে দূরে না থাকো এবং মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না কর তবে ভীষণ ফিত্না সৃষ্টি হয়ে যাবে। কাফিরদের সাথে মুসলমানদের এই মেলামেশা খারাপ পরিণতি টেনে আনবে এবং ভূ-পৃষ্ঠে মহা বিপর্যয় দেখা দেবে।

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

📘 Please check ayah 8:75 for complete tafsir.

وَالَّذِينَ آمَنُوا مِنْ بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَٰئِكَ مِنْكُمْ ۚ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

📘 ৭৪-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের পার্থিব হুকুম বর্ণনা করার পর আখিরাতে তাদের জন্যে কি রয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি তাদের ঈমানের সত্যতা প্রকাশ করছেন। যেমন এই সূরার প্রথম দিকে এ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা দান প্রাপ্ত হবে, তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তারা সম্মানজনক জীবিকা লাভ করবে, যা হবে চিরস্থায়ী এবং পাক ও পবিত্র। সেগুলো হবে বিভিন্ন প্রকারের উপাদেয় খাদ্য এবং সেগুলো কখনো নিঃশেষ হবে না। তাদের যারা অনুসারী এবং ঈমানে ও ভাল আমলে তাদের সাথে অংশগ্রহণকারী তারা আখিরাতেও সমমর্যাদা লাভ করবে। যেমন আল্লাহ পাক (আরবী) (৯:১০০) এবং (আরবী) (৫৯:১০) বলেছেন। এটা সর্বসম্মত মত এমন কি মুতাওয়াতির হাদীসেও রয়েছে যে, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালবাসে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে ভালবাসা রাখে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, তার হাশরও ওদের সাথেই হবে। মুসনাদে আহমাদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাজির ও আনসার একে অপরের ওলী বা অভিভাবক। মক্কা বিজয়ের পরের মুসলমান কুরায়েশী এবং সাকীফের আযাদকৃত ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত একে অপরের অভিভাবক।এরপর উলুল আরহামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এখানে উলুল আরহাম দ্বারা ঐ আত্মীয়দের উদ্দেশ্য করা হয়নি যাদেরকে ফারায়েয শাস্ত্রবিদদের পরিভাষায় উলুল আরহাম বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যাদের কোন অংশ নির্ধারিত নেই এবং যারা আসাবাও (আল্লাহ তাআলার কিতাবে যেসব ওয়ারিসের অংশ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে অংশ দেয়ার পর বাকী অংশ যেসব ওয়ারিস পেয়ে থাকে তাদেরকে ফারায়েযের পরিভাষায় আসাবা বলা) নয়। যেমন মামা, খালা, ফুফু, কন্যার ছেলেমেয়ে, বোনের ছেলেমেয়ে ইত্যাদি। কারো কারো মতে এখানে উলুল আরহাম দ্বারা এদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তারা এ আয়াতটিকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এই ব্যাপারে তাকে স্পষ্টভাবে ওলী বলে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। বরং সঠিক কথা এই যে, এ আয়াতটি আম বা সাধারণ। এটা সমস্ত আত্মীয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), হাসান (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, মিত্রদের পরস্পর ওয়ারিশ হওয়া এবং বানানো ভাইদের পরস্পর ওয়ারিশ হওয়া, যা পূর্বে প্রথা ছিল, এ আয়াতটি এটাকে মানসূখ বা রহিতকারী। সুতরাং এটা বিশেষ নামের সাথে ফারায়েযের আলেমদের যাবিল আরহামকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আর যারা এদেরকে ওয়ারিস বলেন না তাদের কয়েকটি দলীল রয়েছে। তাদের সবচেয়ে মজবুত দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসটিঃ“নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিসের জন্যে অসিয়ত নেই।” তারা বলেন যে, এরা যদি হকদার হতো তবে আল্লাহর কিতাবে এদেরও হক নির্ধারিত হতো। কিন্তু তা যখন নেই তখন তারা ওয়ারিসও নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

📘 ৫-৮ নং আয়াতের তাফসীর: (আরবী) -এর মধ্যে (আরবী) শব্দটি আনার কারণ কি এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা পরহেজগারী ও রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যের ব্যাপারে মুমিনদের পারস্পরিক সন্ধি স্থাপনের সাথে সাদৃশ্য প্রতিপাদন করা হয়েছে। সুতরাং কথার ধরন হচ্ছে- যেমন তোমরা গনীমতের। মালের ব্যাপারে মতভেদ করেছিলে এবং তোমাদের মধ্যে বিবাদের সূচনা হয়েছিল, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিয়েছিলেন এবং ঐ মাল বন্টনের হক তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে প্রদান করেছিলেন, আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাদের মধ্যে ওটা ইনসাফ ও সমতার সাথে বন্টন করে দিয়েছিলেন, এ সবগুলোই ছিল তোমাদের পূর্ণ কল্যাণের নিমিত্ত। দ্রুপ এই স্থলে যখন তোমাদেরকে শত্রুদের সাথে মুকাবিলার জন্যে মদীনা থেকে বের হতে হয়েছিল তখন সেই শান শওকত বিশিষ্ট বিরাট সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়া তোমাদের জন্যে অপছন্দনীয় ছিল অর্থাৎ তাদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হতে তোমাদের মন চাচ্ছিল না। এই বিরাট সেনাবাহিনী ওরাই ছিল যারা তাদের স্বধর্মীয় কাফিরদের ব্যবসায়ের মাল হিফাযত করার জন্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, যে কাফিররা ব্যবসা। উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেছিল। এই যুদ্ধকে অপছন্দ করার ফল এই দাঁড়ালো যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে তোমাদেরকে বাধ্য করলেন এবং পরিণামে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করলেন, আর তোমাদেরকে সাহায্য করতঃ তাদের উপর জয়যুক্ত করলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হচ্ছে, আর এটা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। অথচ যা তোমরা অপছন্দ কর, খুব সম্ভব তাতেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পক্ষান্তরে তোমরা কোন কাজকে পছন্দ কর, অথচ হয়তো তাতেই তোমাদের অমঙ্গল নিহিত আছে। কোনটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর তা আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। কেউ কেউ এই সাদৃশ্য প্রতিপাদনের অর্থ বলেছেনযেমনভাবে তোমাদের প্রভু সত্যরূপে তোমাদেরকে মদীনার বাইরে আসায় সফলকাম করেছেন, অথচ কোন কোন মুমিন এই বের হওয়াতে অসম্মত ছিল, কিন্তু তাদেরকে বের হতেই হয়, অনুরূপভাবে তারা যুদ্ধ থেকে দূরে থাকতে চায় এবং তোমাদের সাথে মতবিরোধ করে, অথচ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মতের সত্যতা তাদের উপর প্রকাশিতই ছিল। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেযেমনভাবে তোমরা বাধ্য হয়ে মদীনা হতে বের হয়েছে, তেমনিভাবে সত্যের বিষয়ে রাসূল (সঃ)-এর সাথে ঝগড়া করছে। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি বদরের যুদ্ধে বের হওয়ার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। (আরবী) সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে নবী (সঃ)! এই মুমিনরা তোমার সাথে ঝগড়া করার নিয়তে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করছে, যেমনভাবে বদর দিবসেও তারা তোমার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছিল এবং বলেছিলঃ “আপনি তো আমাদেরকে যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যে বের করেছিলেন। আমাদের ধারণাও ছিল না যে, আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং আমরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেও বাড়ী থেকে বের হইনি।” আমি বলি যে, নবী (সঃ) আবু সুফিয়ানের যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যেই মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন। কেননা, তার জানা ছিল যে, এই যাত্রীদল কুরায়েশের জন্যে প্রচুর মাল সম্ভার নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কার পথে ফিরে আসছিল। সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করেন এবং তিনশ’ দশের কিছু অধিক লোক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তিনি বদর কূপের পথে উপকূলের দিকে রওয়ানা হন। ঐ যাত্রীদলের নেতা আবু সুফিয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই উদ্দেশ্যের সংবাদ পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যমযম ইবনে আমরকে মক্কা পাঠিয়ে মক্কাবাসীকে মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে দেন। কাজেই মক্কাবাসীরা এক হাজার লোক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আবু সুফিয়ান (রাঃ) যাত্রীদলকে নিয়ে সাইফুল বাহারের দিক দিয়ে আসছিলেন। সুতরাং সেই যাত্রীদল মুসলমানদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। এখন মক্কার ঐ এক হাজার সৈন্য সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা বদর কূপের নিকটে এসে শিবির স্থাপন করে। এখন পূর্বের কোন দিন তারিখ ঘোষণা ছাড়াই মুসলমান ও কাফির সৈন্যদল পরস্পর যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন এবং হক ও বাতিলের মধ্যে ফায়সালাকারী যুদ্ধ ঘটিয়ে দেয়ার তার ইচ্ছা ছিল। যেমন এর বর্ণনা শীঘ্রই আসছে। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন এ সংবাদ অবহিত হন যে, মক্কা থেকে এক বিরাট সেনাবাহিনী তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে এগিয়ে আসছে তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে অহী পাঠালেনঃ “দুটোর মধ্যে একটা জিনিস তোমরা লাভ করবে। হয় তোমরা যাত্রীদলের মাল লুটে নিবে, না হয় ঐ সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবে। দুটোই লাভ করতে পারবে না। সুতরাং যে কোন একটি গ্রহণ করে সফলকাম হয়ে যাও।” মুসলমানদের অধিকাংশের মত ছিল এই যে, তাঁরা যাত্রীদলকে আক্রমণ করবেন এবং বিনা যুদ্ধেই প্রচুর মাল তাঁদের হাতে এসে যাবে। যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেনঃ “স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তোমাদের কাছে অঙ্গীকার করেন- দু'দলের এক দল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। কিন্তু নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হওয়া তোমরা পছন্দ করছিলে, আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কাফিরদের মূল শিকড়কে (মূলশক্তিকে) কেটে দিতে।”হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ আমরা মদীনায় ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন- “আমি সংবাদ পেয়েছি যে, আবু সুফিয়ান (রাঃ) যাত্রীদল নিয়ে আসতে রয়েছে। তোমাদের মত কি? আমরা কি এই যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যে বেরিয়ে পড়বো? সম্ভবতঃ এতে তোমরা বহু কিছু মালধন লাভ করতে পারবে?” আমরা আরয করলাম, আমরা অবশ্যই বের হতে চাই। সুতরাং আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমরা দু'একদিন চলতে থাকলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আচ্ছা বল তো, এসব কাফিরের সাথে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি? তারা সংবাদ পেয়ে গেছে যে, তোমরা যাত্রীদলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছো!” মুসলমানরা উত্তরে বললোঃ “আল্লাহর কসম! শত্রুদের এতো বড় সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। আমরা তো শুধু যাত্রীদলের মালধন লুটবার জন্যে বের হয়েছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়বার এ প্রশ্নই করেন। আমরা এবারও এ উত্তরই দিলাম। তখন হযরত মিকদাদ ইবনে আমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা এ স্থলে এমন কথা বলবো না যেমন কথা হযরত মূসা (আঃ)-কে তাঁর উম্মতরা বলেছিল। তারা তাকে বলেছিল, “হে মূসা (আঃ)! আপনি ও আপনার প্রভু যান এবং শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকছি।” আমরা আনসার দল আশা পোষণ করলাম এবং বললামঃ হযরত মিকদাদ (রাঃ) যে কথা বললেন, আমরাও যদি ঐ কথাই বলতাম তবে এই যাত্রীদলের প্রচুর মাল লুট করা অপেক্ষা ওটাই আমাদের জন্যে অধিক পছন্দনীয় হতো! তখন (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।” ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে নিয়ে বদর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন এবং রাওহা নামক স্থানে পৌছে লোকদের সামনে ভাষণ দান করেন। তিনি বলেনঃ “তোমাদের মত কি?” তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, কাফিররা এই এই স্থান পর্যন্ত পৌছে গেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) পুনরায় বলেনঃ “তোমাদের মত কি?” এবার হযরত উমার (রাঃ) হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর মতই জবাব দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৃতীয়বার এই প্রশ্ন করেন। তখন হযরত সা'দ ইবনে মুআয (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাদেরকে লক্ষ্য করেই বলছেন! তাহলে শুনুন! যিনি আপনাকে মর্যাদা দান করেছেন এবং আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাঁর শপথ! আমরা না কখনও বারকুল গামাদ’ গিয়েছি, না ওর পথ আমাদের জানা আছে। কিন্তু তবুও যদি আপনি ইমায়ন থেকে হাবশের (আবিসিনিয়ার) বারকুল গামাদ পর্যন্তও গমন করেন তবে আমরাও আপনার সাথে গমন করবো এবং মূসা (আঃ)-এর উম্মতের মত বলবো নাঃ আপনি ও আপনার প্রভু যান ও যুদ্ধ করেন, আমরা এখানেই বসে থাকছি। হয়তো আপনি বের হবার সময় একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বের হচ্ছেন, অতঃপর আল্লাহ অন্য অবস্থার সৃষ্টি করছেন। তখন আপনি যেটা ইচ্ছা সেটাই গ্রহণ করুন। যে আপনার সাথে থাকতে চায় থাকবে, যে সরে পড়তে চায় সে সরে পড়বে। যে আপনার বিরোধিতা করতে চায় সে বিরোধিতা করুক এবং যে সন্ধি করতে চায় সে সন্ধি করুক। আমাদের যা কিছু মাল রয়েছে তা আপনি নিয়ে নিতে পারেন।” হযরত সা’দ (রাঃ)-এর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আলকামা ইবনে আবি অক্কালসি লাইসীর (রঃ) হাদীস হতে তাখরীজ করেছেন। আবু লাইস (রঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নবী (সঃ) বদর যুদ্ধের ব্যাপারে পরামর্শ করেন, তারপর কুরায়েশের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন, তখন এই যুদ্ধ মুসলমানদের কাছে অপছন্দনীয় মনে হয়েছিল। এ জন্যেই (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ “মুমিনদের একদল একে পছন্দ করতে পারেনি। তাদের কাছে এটা খুবই দুঃসহ ছিল। সত্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ হওয়ার পর তারা তোমার সাথে তর্ক করছিল। তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে এবং তারা তা প্রত্যক্ষ করছে।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা (আরবী) বুঝানো হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা অপছন্দীয় হওয়া। সুন্দী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে- তোমরা আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে আর কোন কিছুকেই অগ্রাধিকার দেবে না এটা প্রকাশিত হয়ে যাবার পরেও আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর মতের বিরোধিতা করছো! ইবনে যায়েদ (রঃ) (আরবী)-এর সম্পর্কে বলেন যে, এর দ্বারা। মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এই মুশরিকরা সত্যের ব্যাপারে তর্ক করছে, যেন তাদেরকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। কারণ এই যে, মুমিনরা এরূপ নিন্দনীয় বিশেষণে ভূষিত হতে পারে না। এই বিশেষণ একমাত্র কাফিরদেরই হতে পারে। ইবনে জারীর (রঃ)-এর এই কথার উপর আপত্তি রয়েছে। তাঁর মতে ইবনে যায়েদ (রঃ)-এর এই উক্তির কোন গুরুত্ব নেই। কেননা, (আরবী)-এই শব্দগুলোর পূর্বে ইবারতের ধারা মুমিনদের সম্পর্কেই রয়েছে। সুতরাং যে। শব্দগুলো এর পরে রয়েছে তার এরই হওয়া প্রকাশমান। সত্য ব্যাপার তো এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তিই সঠিক। তা এই যে, এর দ্বারা মুমিনদেরকেই বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এই উক্তিরই পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এটাই সত্য এবং কালামের ধারা এরই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সফলতার সাথে বদর যুদ্ধ হতে অবকাশ লাভ করেন তখন তাকে বলা হয়ঃ “এখন আপনি মালধন আনয়নকারী যাত্রীদলের উপরও আক্রমণ চালিয়ে দিন। এখন তো আর কোন বাধা নেই।” তখন যুদ্ধবন্দীদের একজন হযরত আব্বাস বলেনঃ “এটা কখনও উচিত হবে না। কেননা, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ পাক তো আপনার সাথে দুটোর যে কোন একটার ওয়াদা করেছেন। আর একটা তো আপনি লাভ করেছেন। সুতরাং দ্বিতীয়টি লাভ করার আর কোন অধিকার নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) তাখরীজ করেছেন। ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এর ইসনাদ উত্তম। সিহাহ সিত্তাহর কোনটিতেই এটা তাখরীজ করা হয়নি)(আরবী) অর্থাৎ তোমাদের অভিপ্রায় এই ছিল যে, যেন নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তে এসে পড়ে। তাহলে কেউ প্রতিরোধ করবে না এবং যুদ্ধ করারও প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ আবু সুফিয়ানের যাত্রীদলকে লুটে নেয়া। কিন্তু আল্লাহ চাচ্ছিলেন তোমাদেরকে এমন এক দলের সাথে ভিড়িয়ে দিতে যাৱা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, যেন তিনি স্বীয় নির্দেশাবলী দ্বারা সত্যকে সত্যরূপে প্রতিপন্ন করে দেন এবং সেই কাফিরদের মূলকে কর্তন করে ফেলেন। আল্লাহ ছাড়া কাজের পরিণাম সম্পর্কে কেউই অবহিত নয়। উত্তম তদবীরের তদবীরকারী একমাত্র তিনিই, যদিও মানুষ ঐ তদবীরের বিপরীত কামনা করে। যেমন তিনি বলেনঃ “তোমাদের উপর ফরয় করা হয়েছে আর ওটা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়, কিন্তু খুব সম্ভব তোমরা যা অপছন্দ কর ওতেই তোমাদের মঙ্গল নিহিত রয়েছে এবং তোমরা যা পছন্দ কর বা ভালবাস তাতেই তোমাদের অকল্যাণ নিহিত রয়েছে। নিম্নের হাদীসটিও বদর সম্পর্কীয় হাদীস যে, নবী (সঃ) যখন সিরিয়া হতে আবু সুফিয়ানের ফিরে আসার সংবাদ পেলেন তখন তিনি মুসলমানদেরকে ডেকে বললেনঃ “কুরায়েশের এই যাত্রীদলের সাথে প্রচুর মালপত্র রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে আক্রমণ কর। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের গনীমতের মাল তোমাদেরকে প্রদান করবেন।” তাঁর এ কথা শুনে সাহাবীগণ রওয়ানা হয়ে গেলেন। তাঁদের কেউ কেউ হালকা অস্ত্র নিলেন এবং কেউ কেউ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিলেন। তাঁদের এ ধারণা ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যুদ্ধ করবেন। আবু সুফিয়ান যখন হিজাযের। নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি গুপ্তচর ছেড়ে ছিলেন এবং প্রত্যেক গমনাগমন কারীদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সংবাদ জিজ্ঞেস করতে থাকলেন। অবশেষে তিনি জানতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যাত্রীদলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ যমযম ইবনে আমর গিফারীকে মক্কা পাঠিয়ে দিলেন যে, সে যেন কুরায়েশদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে অবস্থা অবহিত করতঃ যাত্রীদলের হিফাযতের ব্যবস্থা করে আসে। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যাত্রীদলকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাথীদেরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন এবং যাফরান’ উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে অবস্থান করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সংবাদ পেলেন যে, কুরায়েশরা যাত্রীদলের হিফাযত ও মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেছে। সুতরাং তিনি সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং উত্তম কথা বললেন। অতঃপর হযরত উমারও (রাঃ) দাঁড়িয়ে ভাল কথা বললেন। তারপর হযরত মিকদাদ ইবনে আমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ আপনাকে যে আদেশ করেছেন তা আপনি পালন করুন। আমরা আপনার সাথেই রয়েছি। আল্লাহর শপথ! বানী ইসরাঈল যে কথা হযরত মূসা (আঃ)-কে বলেছিল সে কথা আমরা আপনাকে বলবো না। তারা মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি ও আপনার প্রভু গমন করুন এবং যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকছি।” আপনি যদি আমাদেরকে হাবশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান তবে যে পর্যন্ত আপনি সেখানে না পৌছবেন সেই পর্যন্ত আমরা আপনার সাথ ছাড়বো না। হযরত মিকদাদ (রাঃ)-এর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কল্যাণের জন্যে দুআ করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা আমাকে পরামর্শ দান কর।” এ কথা তিনি আনসারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। একটা কারণ তো এই যে, আনসারগণ সংখ্যায় বেশী ছিলেন। দ্বিতীয় কারণ ছিল এটাও যে, আকাবায় যখন আনসারগণ বায়আত গ্রহণ করেন তখন তারা নিম্নরূপ কথার উপর তা গ্রহণ করেছিলেনঃ “যখন আপনি মক্কা ছেড়ে মদীনায় পৌছবেন তখন সর্বাবস্থাতেই আমরা আপনার সাথে থাকবো। অর্থাৎ যদি শত্রুরা আপনার উপর আক্রমণ চালায় তবে আমরা তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।” যেহেতু তাঁদের বায়আত গ্রহণের সময় এ কথা ছিল না যে, মুসলমানদের অগ্রগতির সময়ও তারা তাদের সাথে থাকবেন, সেই হেতু রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরও মত জানতে চাচ্ছিলেন, যেন তাঁদের নিকট থেকেও অঙ্গীকার নিয়ে তাঁদেরও সাহায্য সহানুভূতি লাভ করতে পারেন। হযরত সা'দ (রাঃ) বললেনঃ “সম্ভবতঃ আপনি আমাদের উদ্দেশ্যেই বলছেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যাঁ, আমি তোমাদেরকে উদ্দেশ্য করেই বললাম।” তখন হযরত সা'দ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। আপনার আদেশ-নিষেধ মান্য করার বায়আত আমরা আপনার হাতে গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমরা কোন অবস্থাতেই আপনার হাত ছাড়বো না। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি সমুদ্র তীরে দাড়িয়ে তাতে ঘোড়াকে নামিয়ে দেন তাহলে আমরাও সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়বো। আমাদের মধ্যে কেউই এতে মোটেই দ্বিধাবোধ করবে না। যুদ্ধে আমরা বীরত্ব প্রদর্শনকারী এবং কঠিন বিপদ আপদে সাহায্যকারী । ইনশাআল্লাহ আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।” এই উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত খুশী হন। তৎক্ষণাৎ তিনি যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দেন এবং বলেনঃ “আল্লাহ আমার সাথে দুটোর মধ্যে একটার ওয়াদা করেছেন এবং এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, ঐ একটি এই যুদ্ধই বটে। আমি যেন মুশরিকদের বধ্যভূমি এখান থেকেই স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।”

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ

📘 Please check ayah 8:10 for complete tafsir.