🕋 تفسير سورة الغاشية
(Al-Ghashiya) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ
📘 তোমার কাছে কি সমাচ্ছন্নকারী (কিয়ামতে)র সংবাদ এসেছে? [১]
[১] هَل শব্দটি قَد শব্দের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (অর্থাৎ, অবশ্যই তোমার কাছে সমাচ্ছন্নকারী কিয়ামতের সংবাদ এসেছে।) غاشِيَة (সমাচ্ছন্নকারী) বলে কিয়ামতকে বোঝানো হয়েছে। এই জন্য যে, তার ভয়াবহতা সারা সৃষ্টিকে সমাচ্ছন্ন করে ফেলবে।
فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
📘 (তারা স্থান পাবে) সমুন্নত জান্নাতে।
لَا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً
📘 সেখানে তারা কোন অসার বাক্য শুনবে না।
فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ
📘 সেখানে আছে প্রবহমান ঝরনা।
فِيهَا سُرُرٌ مَرْفُوعَةٌ
📘 সেখানে রয়েছে সমুচ্চ বহু খাট-পালঙ্ক।
وَأَكْوَابٌ مَوْضُوعَةٌ
📘 এবং সদা প্রস্তুত পান পাত্রসমূহ।
وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ
📘 ও সারি সারি বালিশসমূহ।
وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَةٌ
📘 এবং বিছানো গালিচাসমূহ। [১]
[১] এখান থেকে জান্নাতীদের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। যারা জাহান্নামীদের বিপরীত অত্যন্ত সুখময় অবস্থা এবং নানান ধরনের আরাম-আয়েশে পরিপূর্ণ জীবন লাভ করবে। عَين শব্দটি হল শ্রেণীবাচক। অর্থাৎ, (একটি নয় বরং) একাধিক ঝরনা হবে। نَمَارِق অর্থ হল বালিশ। زَرَابي মানে আসন, গালিচা, গদি ও বিছানা। مَبثُوثَة মানে বিছানো বা ছড়ানো। অর্থাৎ, এ সব আসন বিভিন্ন জায়গায় বিছানো থাকবে। জান্নাতীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে আরাম করতে পারবে।
أَفَلَا يَنْظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ
📘 তবে কি তারা উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে? [১]
[১] উট আরব দেশে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। আরবের অধিকাংশ যানবাহন ছিল এই উট। এই জন্য আল্লাহ তাআলা তার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, এই জন্তুর সৃষ্টি-বৈচিত্র্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর। তাকে কত বৃহৎ আকারের দেহ দান করেছি। আর কত শক্তি তার মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা তোমাদের জন্য নম্র ও তোমাদের অনুগত। তোমরা তার উপর যত চাও বোঝা রাখ, সে তা বহন করতে অস্বীকার করে না; তোমাদের অধীনস্থই থাকে। এ ছাড়াও তার গোশত খাবার ও তার দুধ পান করার কাজে আসে এবং তার পশম দ্বারা গরমের পোশাক প্রস্তুত হয়ে থাকে।
وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ
📘 এবং আকাশের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করা হয়েছে? [১]
[১] অর্থাৎ, আকাশকে বহু উঁচুতে রাখা হয়েছে। পাঁচশত বছরের দূরত্বের পথ; তা বিনা খুঁটিতে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে কোন ফাটল ও বক্রতা নেই। পরন্তু তাকে আমি নক্ষত্র দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি।
وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ
📘 এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে? [১]
[১] অর্থাৎ, কেমনভাবে তাকে পৃথিবীর উপর পেরেক স্বরূপ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে পৃথিবী নড়া-চড়া না করতে পারে। এ ছাড়া এতে আছে খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য উপকারিতা।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ
📘 সেদিন বহু মুখমন্ডল হবে লাঞ্ছিত; [১]
[১] অর্থাৎ, কাফেরদের মুখমন্ডল। خَاشِعَة অর্থ হল অবনত, বিনীত বা লাঞ্ছিত। যেমন, নামাযী নামাযের অবস্থায় আল্লাহর সামনে মিনতির সাথে বিনীত থাকে।
وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
📘 এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?[১]
[১] কেমনভাবে তাকে সমতল বানিয়ে মানুষের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। তাতে মানুষ চলা-ফেরা ও কাজ-কারবার করে এবং আকাশ-চুম্বি উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করে থাকে।
فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنْتَ مُذَكِّرٌ
📘 অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক; তুমি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র। [১]
[১] অর্থাৎ, আপনার দায়িত্ব হল কেবলমাত্র স্মরণ করানো, উপদেশ দেওয়া, তবলীগ করা ও দাওয়াত দেওয়া। এর অতিরিক্ত অন্য কিছু নয়।
لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِرٍ
📘 তুমি তাদের কর্মনিয়ন্ত্রক নও। [১]
[১] সুতরাং ঈমান আনার জন্য তাদেরকে বাধ্য করতে পার না। কোন কোন উলামাগণ বলেন যে, এটা হল হিজরতের পূর্বেকার নির্দেশ; যা জিহাদের আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে। কেননা, এর পর নবী (সাঃ) বলেছেন, "আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে, লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা 'আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেই' বলে সাক্ষ্য দেয়। অতএব যখন তারা তা বলবে, তখন তারা আমার হাত হতে ইসলামী হক ছাড়া তাদের জান-মালকে বাঁচিয়ে নেবে। আর (যে ব্যাপারে আমাদের অজানা সে ব্যাপারে) তাদের হিসাব আল্লাহর উপর।
(সহীহ বুখারী যাকাত ওয়াজেব হওয়ার পরিচ্ছেদ, মুসলিম ঈমান অধ্যায়)
إِلَّا مَنْ تَوَلَّىٰ وَكَفَرَ
📘 তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও অবিশ্বাস করলে;
فَيُعَذِّبُهُ اللَّهُ الْعَذَابَ الْأَكْبَرَ
📘 আল্লাহ তাকে কঠোর দন্ডে দন্ডিত করবেন। [১]
[১] আর তা হল, জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব।
إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ
📘 নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
📘 অতঃপর তাদের হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমারই উপর। [১]
[১] প্রসিদ্ধি যে, এই সূরার জওয়াবে 'আল্লাহুম্মা হা-সিবনা হিসা-বাঁই য়্যাসীরা' দু'আ পড়া হয়। এই দু'আটি নবী (সাঃ) কর্তৃক পড়ার কথা প্রমাণ আছে, যা তিনি কোন কোন নামাযে পড়তেন। যেমন, সূরা ইনশিক্বাকে এটা পড়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু এই সূরাটির (শেষ আয়াতের) জওয়াবে এই দু'আটি পড়ার কথা নবী (সাঃ) থেকে প্রমাণিত নয়।
عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ
📘 কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত। [১]
[১] ناصِبَة ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। অর্থাৎ, তাদের আযাব এমন কষ্টদায়ক হবে যে, তাতে তাদের অবস্থা খুবই করুণ হবে। এর দ্বিতীয় অর্থ এটাও নেওয়া যেতে পারে যে, দুনিয়াতে আমল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ, তারা অনেক অনেক আমল করেছে। কিন্তু সে সব আমল বাতিল ধর্ম অনুযায়ী অথবা বিদআত ভিত্তিক হবে। আর এ জন্যই 'ইবাদত' ও 'ক্লান্তকর আমল' মওজুদ থাকা সত্ত্বেও তারা জাহান্নামে যাবে। এই অর্থানুযায়ী ইবনে আব্বাস (রাঃ) عامِلَة نَاصِبَة শব্দ থেকে উদ্দেশ্য 'খ্রিষ্টান' বুঝিয়েছেন।
(সহীহ বুখারী সূরা গাশিয়ার ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ)
تَصْلَىٰ نَارًا حَامِيَةً
📘 তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত অগ্নিতে।
تُسْقَىٰ مِنْ عَيْنٍ آنِيَةٍ
📘 তাদেরকে উত্তপ্ত প্রস্রবণ হতে (পানি) পান করানো হবে। [১]
[১] এখানে 'উত্তপ্ত পানি' বলে অত্যন্ত গরম ফুটন্ত পানিকে বোঝানো হয়েছে, যার উষ্ণতা শেষ পর্যায়ে পৌঁছে থাকে।
(ফতহুল ক্বাদীর)
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ
📘 তাদের জন্য বিষাক্ত কণ্টক ব্যতীত কোন খাদ্য নেই। [১]
[১] ضَرِيع এক প্রকার কাঁটাদার বৃক্ষ যা শুকিয়ে গেলে পশুরাও ভক্ষণ করতে অপছন্দ করে। মোট কথা, এটাও যাক্কুমের মত এক প্রকার অতি তিক্ত, বদমজাদার এবং অতি অপবিত্র নোংরা খাবার হবে। যা ভক্ষণ করলে জাহান্নামীদের না শরীর পুষ্ট হবে, আর না তাদের ক্ষুধা নিবারণ হবে ।
لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ
📘 যা পুষ্ট করে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করে না।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاعِمَةٌ
📘 (পক্ষান্তরে) বহু মুখমন্ডল হবে সেদিন আনন্দোজ্জ্বল।
لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ
📘 নিজেদের কর্মসাফল্যে পরিতুষ্ট।