slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الكهف

(Al-Kahf) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَىٰ عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَهُ عِوَجًا ۜ

📘 Please check ayah 18:5 for complete tafsir.

إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

📘 Please check ayah 18:12 for complete tafsir.

وَعَرَضْنَا جَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لِلْكَافِرِينَ عَرْضًا

📘 Please check ayah 18:102 for complete tafsir.

الَّذِينَ كَانَتْ أَعْيُنُهُمْ فِي غِطَاءٍ عَنْ ذِكْرِي وَكَانُوا لَا يَسْتَطِيعُونَ سَمْعًا

📘 Please check ayah 18:102 for complete tafsir.

أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِنْ دُونِي أَوْلِيَاءَ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا

📘 ১০০-১০২ নং আয়াতের তাফসীর: কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ব্যাপারে কি করবেন এখানে তিনি তারই খবর দিচ্ছেন যে, তারা জাহান্নামে যাওয়ার পূর্বেই জাহান্নাম এবং ওর শাস্তি অবলোকন করবে। তাদেরকে ঐ জাহান্নামের মধ্যে প্রবিষ্ট করা হবেই এই বিশ্বাস রেখে ওর মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বেই তারা চরমভাবে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে হেঁচড়িয়ে টেনে আনা হবে। ওর সত্তর হাজার লাগাম হবে। প্রত্যেকটি লাগামের উপর সত্তর হাজার করে ফেরেশতা থাকবে।এই কাফিররা পার্থিব সারা জীবনে নিজেদের চক্ষু ও কর্ণকে বেকার করে রেখেছে। না তারা সত্যকে দেখেছে ও শুনেছে এবং না আমল করেছে। তারা শয়তানের সঙ্গী হয়েছে এবং রহমানের (আল্লাহর) স্মরণ থেকে উদাসীন রয়েছে। তারা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের বাতিল মা'বূদরাই তাদের পুরো মাত্রায় উপকার করবে। আর তাদের সমস্ত বিপদ-আপদ দূর করে দেবে। এটা কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং তারা তাদের ইবাদতকেও অস্বীকার করে বসবে। সেইদিন (কিয়ামতের দিন) তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে। এই কাফিরদের বাসস্থান তো জাহান্নাম। এই জাহান্নাম এখনও প্রস্তুত রয়েছে।

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا

📘 Please check ayah 18:106 for complete tafsir.

الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا

📘 Please check ayah 18:106 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا

📘 Please check ayah 18:106 for complete tafsir.

ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا

📘 ১০৩-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত মুসআব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি আমার পিতা অর্থাৎ হযরত সা'দ ইবনু আবি ওয়াক্কাসকে (রাঃ) আল্লাহ তাআলার (আরবী) এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, এর দ্বারা কি হারুরিয়্যা বা খারেজীদেরকে বুঝানো হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “না, বরং এর দ্বারা ইয়াহুদী ও খৃস্টানরা উদ্দেশ্য। ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আর খৃস্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, সেখানে খাদ্য ও পানীয় কিছুই নেই। হাঁ তবে খারেজীরা আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়তার পর ভঙ্গ করে দিয়েছে।" (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত সা'দ (রাঃ)। খারেজীদেরকে ফাসেক বলতেন। হযরত আলী (রাঃ) প্রভৃতি সাহাবীদের মতে এর দ্বারা খারেজীরাই উদ্দেশ্য। ভাবার্থ এই যে, এই আয়াত দ্বারা যেমন ইয়াহুদী ও খৃস্টানরা উদ্দেশ্য, অনুরূপভাবে খারেজীরাও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, আয়াতটি সাধারণ। যে কেউই আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও আনুগত্য ঐ পন্থায় করবে, যে পন্থা আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় নয়, তারা সবাই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। যদিও তারা নিজেদের আমলে খুশী হয় এবং মনে করে নেয় যে, তারা আখেরাতের পাথেয় অনেক কিছু সংগ্রহ করে নিয়েছে এবং তাদের নেক আমল আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় ও তাদের সৎ আমলের বিনিময় তারা অবশ্যই লাভ করবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের আমল আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহনীয় নয়, বরং বর্জনীয়। তার ভুল ধারণাকারী লোক।এটা মক্কায় অবতারিত আয়াত। আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, মক্কায় অবতারিত আয়াতগুলি দ্বারা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে সম্বোধন করা হয় নাই এবং তখন পর্যন্ত খারেজীদের তো কোন অস্তিত্বই ছিল না। সুতরাং ঐ গুরুজনদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আয়াতের সাধারণ শব্দগুলি এদের সবাইকে এবং এদের মত অন্য যারা রয়েছে তাদের সবাইকে এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন সূরায়ে গাশিয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “বহু মুখমণ্ডল সেই দিন লাঞ্ছিত, কষ্টভোগী (এবং কষ্টভোগের দরুন) কাতর হবে। (তারা) দগ্ধকারী অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” (৮৮:২-৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সামনে বেড়ে গিয়ে আমি তাদের কৃত সমস্ত আমলকে বেকার ও মূল্যহীন করে দিবো।” (২৫:২৩) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা কাফির, তাদের আমলসমূহ যেন একটি মরুভূমির মরিচিকা, পিপাসার্ত লোক যাকে পানি বলে মনে করে; শেষ পর্যন্ত যখন ওর নিকট পৌঁছে তখন ওকে কিছুই পায় না।” (২৪:৩৯)এরা ঐ সব লোক যারা নিজেদের পন্থায় ইবাদত ও আমল তো করে এবং মনেও করে যে, তারা অনেক কিছু পূণ্যময় কাজ করলো এবং সেগুলো আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণীয় ও পছন্দনীয়। কিন্তু তাদের ঐ আমলগুলো আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পন্থায় ছিল না এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) নির্দেশ মুতাবেকও ছিল না বলে সেগুলো গ্রহণীয় হওয়ার পরিবর্তে বর্জনীয় হয়ে। গেলো এবং প্রিয় হওয়ার পরিবর্তে অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় হয়ে গেলো। কেননা, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো। আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) রিসালাতের সমস্ত প্রমাণ তাদের সামনে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তারা ওগুলি হতে চক্ষু বন্ধ করে নেয় এবং মেনে নেয়ার পরেও অমান্য করে। তাদের পুণ্যের পাল্লা সম্পূর্ণ শূন্য থাকবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন একটি মোটা তাজা ও ভারী ওযনের লোককে আনয়ন করা হবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে তার ওজন একটি মশার পাখার সমানও হবে না।" তারপর তিনি বলেনঃ “তোমরা ইচ্ছা করলে- (আরবী) এই আয়াতটি পাঠ করে নাও।" (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমের রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, খুব বেশী পানা হারকারী মোটা তাজা লোককে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে। হাজির করা হবে। কিন্ত তার ওজন শস্যের দানার সমানও হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতটি পাঠ করেন।মসনাদে বায়্যারে রয়েছে যে, একজন কুরায়েশী হুল্লা (লম্বা পোষাক বিশেষ) পরিধান করে অহংকার ভরে রাসুলুল্লাহর (সঃ) পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত বুরাইদাকে (রাঃ) বলেনঃ “এই লোকটি ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদের আল্লাহ তাআলার নিকট কিয়ামতের দিন কোনই ওজন হবে না।” মারফু হাদীসের মত হযরত কা'বের (রাঃ) উক্তিও বর্ণিত আছে। এটা হচ্ছে তাদের কুফরী, সত্যকে প্রত্যাখ্যান এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর রাসূলদেরকে বিদ্রুপের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করারই প্রতিফল।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا

📘 Please check ayah 18:108 for complete tafsir.

خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا

📘 ১০৭-১০৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা তার সৎকর্মশীল বান্দাদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন। তারা হচ্ছে, ওরাই যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে, তাঁর রাসূলদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করে এবং তাদের কথা ও নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। তাদের জন্যে রয়েছে ফিরদাউসের উদ্যান। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হচ্ছে রোমীয় বাগান। কা'ব (রাঃ) সুদ্দী (রঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) বলেন, যে, ওটা হলো এমন বাগান যাতে আঙ্গুরের গাছ রয়েছে। আবূ উমামা (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হলো বেহেশতের নাভী স্বরূপ। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হলো সর্বোত্তম জান্নাত। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করবে, তখন তাঁর কাছে ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করো। কেননা, ওটাই সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম জান্নাত। ওখান হতেই জান্নাতের নহরগুলি প্রবাহিত হয়।”এটাই হবে তাদের অতিথিশালা। সেখানে তারা অতিথি হিসেবে চিরকাল অবস্থান করবে। সেখান থেকে তাদেরকে বের করা হবে না এবং বের হবার তারা কামনাও করবে না। কেননা, ওর চেয়ে সুখময় স্থান আর নেই। সেখানে সর্বপ্রকারের উচ্চমানের জীবনোপকরণের সুব্যবস্থা রয়েছে। কোন কিছুরই অভাব নেই। একের পর এক রহমত আসতেই থাকবে। সুতরাং দৈনন্দিন আগ্রহ, প্রেম-প্রীতি এবং আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। মনে কোন বিরক্তি আসবে না বরং ওরই প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেন, তারা এর পরিবর্তে অন্য স্থান কামনা করবে না। অর্থাৎ তারা এটা ছাড়া অন্যটা পছন্দ করবে না এবং এটা ব্যতীত অন্য কিছু ভালবাসবে না। এখান ছেড়ে অন্য কোন জায়গায় তারা যেতেও চাবে না।

قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝবার জন্যে দুনিয়ায় ঘোষণা করে দাওঃ যদি ভূ-পৃষ্ঠের সমুদ্র সমূহের সমস্ত পানিকে কালি বানানো হয়, অতঃপর আল্লাহর গুণাবলীর বাক্যসমূহ তার ক্ষমতার প্রকাশ, তার গুণাবলীর কথা এবং তার নিপুণতার কথা লিখতে শুরু করা হয়, তবে এই সমুদয় কালি শেষ হয়ে যাবে, তথাপি তার প্রশংসা ও গুণাবলীর বর্ণনা শেষ হবে না। যদিও আবার আরো এইরূপ সমুদ্র আনয়ন করা হয়, এরপর আবারও আনয়ন করা হয় তবুও সন্ত্র নয় যে, আল্লাহর ক্ষমতা, তার নৈপুণ্য এবং তার দলীল প্রমাণাদির বর্ণনা শেষ হবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী)অর্থাৎ সমগ্র জগতে যত বৃক্ষ রয়েছে, যদি তা সমস্তই কলম হয় আর এই যে সমুদ্র রয়েছে, তা ব্যতীত এইরূপ আরো সাতটি সমুদ্র (কালির স্থল) হয়, তবুও আল্লাহর (গুণাবলীর) বাক্যসমূহ সমাপ্ত হবে না; নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।" (৩১:২৭)।সমস্ত মানুষের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু, যতটুকু সমুদ্রের পানির একটি ফোটা ওর সমস্ত পানির তুলনায়। সমস্ত গাছের কলমগুলি লিখতে লিখতে শেষ হয়ে যাবে, সমুদ্রের পানির সমস্ত কালি নিঃশেষ হয়ে যাবে, তথাপি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণাবলীর বাক্য সমূহ তেমনই থেকে যাবে যেমন ছিল। তাঁর গুণাবলী ও প্রশংসা অপরিমিত ও অসংখ্য। কে এমন আছে যে, আল্লাহর সঠিক ও পূর্ণ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে পারে? এমন কে আছে যে, তার পূর্ণ প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে পারে? নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালক ঐরূপই যেরূপ তিনি নিজে বলেছেন। আমরা তার যতই প্রশংসা করি না কেন তিনি তার বহু উর্ধ্বে। এটা স্মরণ রাখার দরকার যে, সারা দুনিয়ার তুলনায় একটি সরিষার দানী যেমন, জান্নাত ও আখেরাতের নিয়ামতরাজির তুলনায় সারা দুনিয়ার নিয়ামত ঠিক তেমনই।

فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا

📘 Please check ayah 18:12 for complete tafsir.

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

📘 হযরত মুআবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান (রাঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে সর্বশেষ আয়াত যা রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপর অবতীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি জনগণের সামনে ঘোষণা করে দাওঃ আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। যদি তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে করে থাকো তবে এই কুরআনের মত একটি কুরআন তোমরাও আনয়ন কর। দেখো, আমি কোন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা তো নই। তোমরা আমাকে যুলকারনাইনের ঘটনা জিজ্ঞেস করেছে এবং গুহাবাসীদের ঘটনা সম্পর্কেও প্রশ্ন করেছে। আমি তাদের সঠিক ঘটনা তোমাদের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি যা প্রকৃত ঘটনার সাথে সম্পূর্ণরূপে মিলে গেছে। যদি আমার কাছে আল্লাহর ওয়াহী না আসতো, তবে আমি এসব অতীতের ঘটনা সঠিকভাবে কি করে তোমাদের সামনে বর্ণনা করতে পারতাম? জেনে রেখো যে, সমস্ত ওয়াহীর সারমর্ম হচ্ছেঃ তোমরা একত্ববাদী হয়ে যাও, শিরক পরিত্যাগ কর, আমার দাওয়াত এটাই। তোমাদের যে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে বিনিময় ও পুরস্কার পেতে চায়, সে যেন শরীয়ত অনুযায়ী আমল করে এবং শিককে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে। এ দুটো রুকন ছাড়া কোন আমলই আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আমলে আন্তরিকতা থাকতে হবে এবং সুন্নাতের মুতাবেক হতে হবে।হযরত তাউস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করলোঃ“হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি এমন অনেক ভাল কাজ করি যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করি এবং সাথে সাথে এটাও চাই যে, লোকেরা আমার আমল দেখুক (ও আমার সুনাম করুক! আমার এ ব্যাপারে হুকুম কি?)।”রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার একথার কোন জবাব দিলেন না। তখন (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি মুরসাল) বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত উবাদা ইবনু সামিতকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “একটি লোক নামায পড়ে, রোযা রাখে, দান খয়রাত করে এবং হজ্ব করে, আর এগুলি দ্বারা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং এটাও চায় যে, তার প্রশংসা করা হোক (তার ব্যাপারে হুকুম কি?)।” উত্তরে হযরত উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) বলেনঃ “তার এই সমুদয় ইবাদতই বৃথা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার কোন শরীক নেই। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করে, তার সমুদয় ইবাদত তারই জন্যে। তাতে আমার কোনই প্রয়োজন নেই।"হযরত আবু সাঈদ খদুরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা পালাক্রমে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আসতাম এবং রাত্রি যাপন করতাম। তার কোন কাজ থাকলে তিনি বলে দিতেন। এরূপ লোকের সংখ্যা অনেক ছিল। একদা রাত্রে আমরা পরস্পর আলাপ আলোচনা করছিলাম এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট আগমন করেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা এ সব কি সলা পরামর্শ করছো?” উত্তরে আমরা বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা তাওবা করছি, আমরা মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম এবং আমাদের হৃদয় ভয়ে প্রকম্পিত হচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও বেশী ভয়াবহ বিষয়ের খবর দেবো? সেটা হচ্ছে গোপন শিক যে, মানুষ অন্য মানুষকে দেখাবার জন্যে নামায পড়ে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)ইবনু গানাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি ও হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) জাবিয়ার মসজিদে গমন করি। সেখানে হযরত উবাদা ইবনু সামিতের (রাঃ) সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। তিনি তাঁর বাম হাত দ্বারা আমার ডান হাত ধারণ করেন এবং তার ডান হাত দ্বারা হযরত আবুদ দারদার (রাঃ) বাম হাত ধরেন এবং এইভাবে আমরা তিনজন কথা বলতে বলতে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ি। অতঃপর তিনি আমাদের দুজনকে সম্বোধন করে বললেনঃ “দেখুন! যদি আপনাদের কোন একজন অথবা দু'জনই কিছুদিন বয়স পান তবে খুব সম্ভব যে, আপনারা ঐ সময়কেও দেখতে পাবেন যে, যারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) যবনি থেকে কুরআন শিক্ষা করেছেন এরূপ ভাল লোক হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জেনে প্রত্যেক হুকুমকে যথাস্থানে রেখেছেন, তারা আগমন করবেন এবং জনগণের মধ্যে তাদের কদর ও মর্যাদা এমনই হবে যেমন মৃতগাধার মাথা। আমাদের মধ্যে এইরূপ কথাবার্তা চলছিল এমন সময় হযরত শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) ও হযরত আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদের কাছে এসে পড়লেন এবং বসে গিয়েই হযরত শাদ্দাদ (রাঃ) বললেনঃ “হে লোক সকল! আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ওটারই ভয় করছি যা রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখে শুনেছি। অর্থাৎ গোপন প্রবৃত্তি ও শিক।" একথা শুনে হযরত উবাদা (রাঃ) ও হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ ক্ষমা করুন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে বলেছিলেনঃ “এই আরব উপদ্বীপে শয়তানের উপাসনা করা হবে এর থেকে সে নিরাশ হয়ে গেছে। তবে গোপন কুপ্রবৃত্তি ও কামভাব, এটা আমাদের জানা আছে। এটা হচ্ছে দুনিয়া ও স্ত্রী লোকদের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি। কিন্তু হে শাদ্দাদ (রাঃ) ! এই শিরক আমাদের বোধগম্য হয় না যা থেকে আপনি আমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করেছেন।” তখন শাদ্দাদ (রাঃ) বলতে লাগলেনঃ “আচ্ছা বলুন তো, একটি লোক অন্যদেরকে দেখাবার জন্যে নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং দান খায়রাত করে, আপনার মতে তার হুকুম কি? সে শিরক করলো কি?" সবাই সমস্বরে বলে উঠলেনঃ “হাঁ, অবশ্যই ঐ ব্যক্তি মুশরিক। তিনি তখন বললেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি দুনিয়াকে দেখাবার জন্যে রোযা রাখে সে মুশরিক এবং যে ব্যক্তি জনগণের মধ্যে নিজেকে দাতা হিসেবে পরিচিত করার জন্যে দান খায়রাত করে সেও মুশরিক।" একথা শুনে হযরত আউস ইবনু মালিক (রাঃ) বললেনঃ “এটা হতে পারে না যে, যে আমল আল্লাহ তাআলার জন্যে হবে তা তিনি কবুল করবেন এবং যা অন্যের জন্যে তা তিনি বর্জন করবেন।” হযরত শাদ্দাদ (রাঃ) তখন বলেনঃ এটা কখনো হতে পারে না। আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি সবচেয়ে বড় অংশীদার। যে কেউ আমার সাথে কোন আমলে অন্যকে শরীক করে, আমি তখন আমার অংশও ঐ অন্যকেই প্রদান করি। আর আমি অত্যন্ত বেপরোয়া ভাবেই আংশিক ও পূর্ণ সব কিছুই পরিত্যাগ করি। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, একদা হযরত শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) ক্রন্দন করতে শুরু করেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “আপনাকে কিসে কঁদালো?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “একটি হাদীস আমার স্মরণ হয়েছে এবং ওটাই আমাকে কাঁদিয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে শিক ও গোপন কুপ্রবৃত্তিকেই সবচেয়ে বেশী ভয় করি।” তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! আপনার পরে কি আপনার উম্মত শিক করবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হাঁ, শুনো! তারা সূর্য, চন্দ্র, পাথর এবং মূর্তির পূজা করবে না বটে, কিন্তু তারা আমলে রিয়াকরী করবে (লোক দেখানো আমল করবে)। গোপন কামভাব এই যে, সকালে রোযা রাখলো এবং যখন প্রবৃত্রি চাহিদার কোন কিছু সামনে আসলো তখন রোযা ছেড়ে দিলো।” (এ হাদীসটি সুনানে ইবনু মাজাহ্ ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেনঃ “আমি হলাম সবচেয়ে উত্তম শরীক। আমার সাথে যে কেউ অন্যকে শরীক করে, আমি আমার নিজের অংশটাও ঐ শরীককে প্রদান করি।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি হলাম শরীকদের মধ্যে সর্বোত্তম শরীক। যে। ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্যকে মিলিত করে, আমি তার থেকে মুক্ত এবং তার ঐ সমস্ত আমল ঐ অন্যের জন্যেই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শির্ককেই সবচেয়ে বেশী ভয় করছি।" সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! ছোট শিরক কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “রিয়া (লোক দেখানো কাজ)। কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের আমলের প্রতিদান দেয়ার সময় আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “যাও, যাদের জন্যে তোমরা আমল করতে তাদের কাছেই প্রতিদান প্রার্থনা করো। দেখোতো, তাদের কাছে প্রতিদান বা পুরস্কার পাবে কি?" (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছে)আবু সাঈদ ইবনু আবি ফুযালা' আনসারী (রাঃ) যিনি সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “যখন আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্তকে জমা করবেন এমন একদিন যেই দিন সম্পর্কে কোনই সন্দেহ নেই, সেই দিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেনঃ “যে ব্যক্তি তার কোন আমলে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও মিলিয়ে নিয়েছে, সে যেন তার ঐ আমলের বিনিময় অন্যের কাছেই চেয়ে নেয়। কেননা, আল্লাহ তাআ'লা শরীকদের শিক থেকে সম্পূর্ণরূপে বেপরোয়া।" (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) এটাকে মুহাম্মদের (রঃ) হাদীস হতে তাখরীজ করেছেন)হযরত আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মানুষকে দেখাবার জন্যে আমল করেছে, লোকদেরকে দেখিয়েই তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের আমলের কথা লোকদেরকে শুনিয়েছে (এবং এভাবে প্রশংসা লাভ করেছে), তাকে শাস্তিও মানুষকে শুনিয়েই দেয়া হবে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতেও অনুরূপ রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে।হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সৎ আমল করে গর্ব প্রকাশকারীকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন, তার চরিত্র নষ্ট করবেন এবং সে জনগণের দৃষ্টিতে হেয় ও লাঞ্ছিত হবে।”এটা বর্ণনা করার পর হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন মানুষের সৎ কার্যাবলীর মোহর লাগানো পুস্তিকা আল্লাহ তাআলার সামনে পেশ করা হবে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “ওটা নিক্ষেপ কর, এটা কবুল কর। ওটা কবুল কর এবং এটা নিক্ষেপ কর।"ঐ সময় ফেরেশতাগণ আর করবেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এই লোকটির আমলসমূহ তো আমরা ভাল বলেই জানি!” উত্তরে মহান আল্লাহ বলবেনঃ “যে আমলগুলি আমি নিক্ষেপ করতে বলেছি সেগুলি শুধু আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং তাতে রিয়াকারী বা লোক দেখানো উদ্দেশ্যও ছিল। আজ আমি শুধু ঐ আমলগুলিই কবুল করবো যেগুলি একমাত্র আমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছিল। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস খুযায়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে মানুষকে দেখাবার ও শুনবার জন্যে দণ্ডায়মান হয় সে আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে থাকে যে পর্যন্ত না সে বসে পড়ে।”হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মানুষের দেখা অবস্থায় ধীরে সুস্থে ভালভাবে নামায পড়ে এবং একাকী পড়ার সময় অমনোযোগের সাথে তাড়াহুড়া করে। নামায শেষ করে ফেলে, সে তার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত আল্লাহকে হেয় প্রতিপন্ন করে। (এ হাদীসটি আবূ ইয়ালা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আমীর মুআবিয়া (রাঃ) এই আয়াতটিকে কুরআনের শেষ আয়াত বলেছেন। কিন্তু তার এই উক্তিটি জটিলতা মুক্ত নয়। কেননা, সূরায়ে কাহফ পুরোপুরি ভাবে মক্কা শরীফেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটা প্রকাশ্য ব্যাপার যে, এরপর মদিনায় রাবরই দশ বছর পর্যন্ত কুরআন কারীম অবতীর্ণ হতে থাকে। তাহলে বুঝা যায় যে, এর দ্বারা হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ এইটি শেষ আয়াত এই হিসেবে যে, এটা অন্য কোন আয়াত দ্বারা মানুসূখ হয় নাই এবং ওর হুকুমেরও কোন পরিবর্তন ঘটে নাই। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ।একটি খুবই গরীব হাদীস হাফিয আবু বকর বায্যার (রঃ) স্বীয় কিতাবে আনয়ন করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি (আরবী) এই আয়াতটি রাত্রিকালে পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে এতো বড় নূর (জ্যোতি) দান করবেন যা আদন হতে মক্কা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।”

ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَىٰ لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا

📘 ৯-১২ নং আয়াতের তাফসীর: আসহাবে কাহফের ঘটনা প্রথমে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হচ্ছে, পরে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হবে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আসহাবে কাহফের এই ঘটনাটি আমার ক্ষমতা প্রকাশের অসংখ্য ঘটনাবলীর মধ্যে একটি সাধারণ ঘটনা মাত্র। এর চেয়ে বড় বড় ঘটনা দৈনন্দিন তোমাদের চোখের সামনে ঘটতে রয়েছে। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, দিবস ও রজনীর পরিবর্তন, সূর্য ও চন্দ্রের আনুগত্য ইত্যাদি হচ্ছে মহা ক্ষমতাবানের ক্ষমতার নিদর্শনসমূহ, যেগুলি এটাই প্রকাশ করছে যে, আল্লাহ তাআলা সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান। তার কাছে কোন কিছুই কঠিন নয়। অসহাবে কাহফের চেয়ে তো বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনা তোমাদের সামনেই বিদ্যমান রয়েছে। হে নবী (সঃ)! কিতাব ও সুন্নাহর যে জ্ঞান আমি তোমাকে দান করেছি তার গুরুত্ব আসহাবে কাহফের ঘটনা অপেক্ষা অনেক বেশী। অনেক হুজ্জত ও প্রমাণ আমি বান্দাদের উপর খুলে দিয়েছি যা আসহাবে কাহফের ঘটনা অপেক্ষা বেশী প্রকাশমান।কাহফ বলা হয় পাহাড়ের গর্তকে। সেখানে এই যুবকরা লুকিয়ে গিয়েছিলেন। রাকীম’ হয় ঈলা পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী একটি উপত্যকার নাম, না হয় ঐ জায়গায় একটি অট্টালিকার নাম, কিংবা কোন জনপদের নাম অথবা ঐ পাহাড়ের নাম। ঐ পাহাড়ের নাম নাজলুসও বলা হয়েছে এবং গুহার নাম বলা হয়েছে হায়রূম। ঐ যুবকদের কুকুরটির নাম হামরান বলা হয়েছে।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “সমস্ত কুরআন আমার জানা আছে, কিন্তু ‘হানান’ বা ‘আওয়াহ এবং রাকীম’ শব্দ সম্পর্কে আমার অবগতি নেই। আমার জানা নেই যে, রাকীম' কিতাবের নাম কি ঐ ভিত্তির নাম। তার থেকে আর একটি রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে যে, রাকীম' হচ্ছে কিতাব। সাঈদ (রঃ) বলেন যে, ওটা পাথরের একটি ফলক ছিল যার উপর আসহাবে কাফের ঘটনা লিখে ঐ গুহার দরজার উপর লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, কুরআন কারীমে (আরবী) রয়েছে অর্থাৎ চিহ্নিত লিখিত কিতাব। সুতরাং আয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা এরই পৃষ্ঠ পোষকতা করা হচ্ছে। আর এটাই ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) পছন্দনীয় উক্তি (আরবী) এর ওযনে (আরবী) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনঃ (আরবী) এবং (আরবী) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই যুবকরা তাদের দ্বীনকে রক্ষা করার জন্যে নিজেদের কওমের নিকট থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ভয় ছিল যে, না জানি তারা তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিভ্রান্ত করে ফেলে। পালিয়ে গিয়ে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার পক্ষ থেকে আমাদের উপর রহমত নাযিল করুন। আমাদেরকে আমাদের কওম হতে লুকিয়ে রাখুন এবং আমাদের এই কাজের পরিণতি ভাল করুন।” হাদীসে একটি দুআ’য় রয়েছে “হে আল্লাহ! আমাদের ব্যাপারে আপনি যে ফায়সালা করবেন তার পরিণাম অমাদের জন্যে ভাল করুন।” মুসনাদে আহমাদে রয়েছে। যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর প্রার্থনায় আরজ করতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সমস্ত কাজের পরিণাম ভাল করুন! আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিন।ঐ গুহায় প্রবেশ করে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুমের মধ্যেই বহু বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাগ্রত করেন। তাদের মধ্যে একজন দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) নিয়ে সওদা খরিদের উদ্দেশ্যে বাজাব্বে দিকে রওয়ানা হন, যেমন সামনে আসছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ“পরে আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম এটা জানবার জন্যে যে, দুই দলের। মধ্যে কোন্টি তাদের অবস্থিতিকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে।(আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে, সংখ্যা ব্য গণনা। আবার এই কথাও বলা হয়েছে যে, এই শব্দটি (আরবী) (শেষ সীমা)-এর অর্থেও এসে থাকে। আরব কবিরা তাদের কবিতার মধ্যেও এটাকে' (আরবী) এর অর্থেই প্রয়োগ করেছেন।

نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُمْ بِالْحَقِّ ۚ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى

📘 Please check ayah 18:16 for complete tafsir.

وَرَبَطْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَنْ نَدْعُوَ مِنْ دُونِهِ إِلَٰهًا ۖ لَقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا

📘 Please check ayah 18:16 for complete tafsir.

هَٰؤُلَاءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ آلِهَةً ۖ لَوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ ۖ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا

📘 Please check ayah 18:16 for complete tafsir.

وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرْفَقًا

📘 ১৩-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: এখান থেকে আল্লাহ তাআলা আসহাবে কাহফের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা শুরু করেছেন। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা সত্য দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং হিদায়াত লাভ করে। কুরায়েশদের মধ্যেও এটাই ঘটেছিল যে, যবুকরা তো সত্যের আহবানে সাড়া দিয়েছিল, কিন্তু বুড়োদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সবাই ইসলাম থেকে সরে পড়ে ছিল।বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল খোদাভীরু, মুমিন এবং সুপথপ্রাপ্ত যুবকদের একটি দল। তারা তাদের প্রতিপালকের একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারা তার তাওহীদের উক্তিকারী ছিল। দৈনন্দিন তাদের ঈমান ও হিদায়াত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই ধরণের আরো আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা দলীল গ্রহণ করে ইমাম বুখারী (রঃ) প্রভৃতি সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ বলেন যে, ঈমান বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এর স্তরে হ্রাস বৃদ্ধি হতে থাকে। এখানে রয়েছেঃ “আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম।" অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হিদায়াত প্রাপ্তদের হিদায়াত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।" (৪৭:১৭) অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়।" (৯:১২৪) অন্য এক স্থানে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান আরো বেড়ে নেয়।” (৪৮:৪) কুরআন কারীমের এই বিষয়ের উপর আরো বহু আয়াত রয়েছে। বর্ণিত আছে যে, এই লোকগুলি হযরত ঈসা ইবনু মরিয়মের (আঃ) দ্বীনের উপর ছিলেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। তবে বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এটা হযরত ঈসার (আঃ) পূর্বযুগের ঘটনা। এর একটি দলীল এটাও যে, যদি ঐ লোকগুলি খৃস্টান হতেন, তবে ইয়াহূদীরা এতো মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে তাদের অবস্থাবলী অবহিত হতো না এবং অন্যদেরকে অবহিত করারও চেষ্টা করতো না। অথচ ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কার কুরায়েশরা তাদের দু'জন প্রতিনিধিকে ইয়াহূদী আলেমদের কাছে পাঠিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ইয়াহুদী আলেমরা যেন তাদেরকে এমন কতকগুলি কথা বলে দেয় যা তারা মুহাম্মদকে (সঃ) জিজ্ঞেস করবে। তখন ইয়াহুদী আলেমরা প্রতিনিধিদ্বয়কে বলেছিলঃ “তোমরা তাঁকে গুহাবাসীদের ঘটনা ও যুলকারনাইনের ঘটনা জিজ্ঞেস করবে এবং রূহ সম্পর্কেও প্রশ্ন করবে। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, ইয়াহুদীদের কিতাবে এর বর্ণনা ছিল এবং এই ঘটনা তারা জানতো। এটা যখন প্রমাণিত হয়ে গেল। তখন এটা স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে যে, ইয়াহূদীদের কিতাব তো খৃস্টানদের কিতাবের পূর্বেকার। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদেরকে তাদের কওমের বিরোধিতার উপর ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেছিলাম। তারা তাদের কওমের কোনই পরওয়া করে নাই। বরং তারা নিজেদের দেশ ত্যাগ করে এবং আরাম ও শান্তি সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দেয়।”পূর্ব যুগীয় কতকগুলি মনীষীর বর্ণনা রয়েছে যে, এই লোকগুলি রোমক ম্রাটের বংশধর এবং রোমের নেতৃস্থানীয় লোক ছিলেন। একবার তাঁরা তাদের কওমের সাথে উৎসব উদ্যাপন করতে গিয়ে ছিলেন। ঐ যুগের বাদশাহর নাম ছিল দাইয়ানুস। সে অত্যন্ত উদ্ধত ও কঠোর প্রকৃতির লোক ছিল। সে সকলকে শিরকের শিক্ষা দিতো এবং মূর্তি পূজা করাতো। এই যুবকগণও তাদের বাপ-দাদাদের সাথে এই উৎসব মেলায় গিয়েছিলেন। তথাকার তামাশা দেখে তাদের মনে ধারণা জন্মে যে, মূর্তি পূজা নিছক বাজে কাজ। ইবাদত-বন্দেগী ও উৎসর্গ এক মাত্র ঐ আল্লাহর জন্যেই হওয়া উচিত যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। সুতরাং এই লোকগুলি এক এক করে সেখান থেকে সরে পড়েন। তাদের একজন গিয়ে এক গাছের নীচে বসে পড়েন। পরে দ্বিতীয় জন, তৃতীয়জন, চতুর্থজন তথায় যান। মোট কথা, এক এক করে সবাই ঐ গাছের নীচে জমা হয়ে যান। অথচ একের অপরের সাথে কোন পরিচয় ছিল না। শুধু ঈমানের জ্যোতি তাদেরকে এক জায়গায় মিলিত করে। হাদীসে রয়েছে যে, রূহসমূহও একটা একত্রিত সেনাবাহিনী। রোযে আযলে যাদের পরস্পরের মধ্যে পরিচয় ঘটেছিল, দুনিয়াতেও তারা মিলে মিশে থাকছে। আর সেই দিন যারা পরস্পর অপরিচিত ছিল, দুনিয়াতে এসেও তাদের মধ্যে মতানৈক্য থেকে যাচ্ছে। (এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে) আরববাসীরা বলে যে, এক জাতিত্ব হচ্ছে মিলজুলের কারণ।গাছের নীচে উপবিষ্ট ঐ যুবকগণ নীরব ছিলেন। তাদের একের অপর হতে ভয় ছিল যে, যদি তিনি মনের কথা বলে দেন তবে তার সঙ্গী তার শক্ত হয়ে যাবেন। কারোই কারো সম্পর্কে কোন খবর ছিল না। তাঁরা জানতেন না যে, তাদের প্রত্যেকেই নিজের কওমের অজ্ঞতাপূর্ণ ও শিরকপূর্ণ কাজে অসন্তুষ্ট। অবশেষে তাদের মধ্যে একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী যুবক সকলকে সম্বোধন করে বললেনঃ “ভাইসব! আপনারা সবাই যে, সাধারণ ব্যস্ততপূর্ণ জনসমাবেশ ছেড়ে এখানে এসে বসেছেন। আমি চাই যে, প্রত্যেকেই এর কারণ প্রকাশ করবেন যে কারণে তিনি স্বীয় কওমকে ছেড়ে এসেছেন।” তখন একজন বলে উঠলেনঃ “আমাকে তো আমার কওমের প্রথা, চাল-চলন ও রীতি-নীতি মোটেই ভাল লাগে না। আসমান ও যমীনের এবং আমাদের ও আপনাদের সৃষ্টিকর্তা যখন একমাত্র আল্লাহ তখন আমরা তাকে ছাড়া অন্যের ইবাদত কেন করবো?” তার এই কথা শুনে দ্বিতীয়জন বললেনঃ “আল্লাহর কসম! এই ঘৃণাই আমাকে এখানে এনেছে।" তৃতীয়জনও একথাই বললেন। যখন সবাই এই একই কারণ বর্ণনা করলেন, তখন সবার অন্তরেই প্রেমের এক ঢেউ খেলে গেল। একত্ববাদের আলোকে আলোকিত প্রাণ এই যুবকবৃন্দ পরস্পর সত্য ও খাটি বন্ধুতে পরিণত হয়ে গেলেন এবং তারা সহোদর ভাইদের চেয়েও বেশী একে অপরের শুভাকাংখী হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ইত্তেহাদ ও ইত্তেফাক হয়ে যায়। তারা তখন একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নেন এবং সেখানে এক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন। ক্রমে ক্রমে তাদের কওমের কাছেও তাদের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ে। সুতরাং তাদেরকে ধরে ঐ অত্যাচারী বাদশাহর নিকট নিয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। বাদশাহ্ এ সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে নিজেদের একত্ববাদ ও মাযহাবের বর্ণনা দেন। এমন কি, স্বয়ং বাদশাহ্ তার ভাষদবর্গ এবং সারা দুনিয়াকে এর দাওয়াত দেন। তারা মন শক্ত করে নেন এবং পরিষ্কারভাবে বলে দেনঃ “আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। তাকে ছাড়া অন্য কাউকেও মাবুদ বানিয়ে নেয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভ। আমাদের দ্বারা এটা কখনো হতে পারে না যে, তাকে ছাড়া অন্য কাউকেও আহবান করবো। কেননা, শিরক একেবারেই বাজে কাজ। আমরা এই কাজ কখনো করতে পারবো না। এটা অত্যন্ত বাজে ব্যাপার, অনর্থক কাজ ও বক্র পথ। আমাদের এই কওম মুশরিক। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে আহবান করছে এবং তাদের ইবাদতে নিমগ্ন রয়েছে। এর কোন দলীল প্রমাণ তারা পেশ করতে পারবে না। সুতরাং তারা মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী।” বর্ণিত আছে যে, তাদের স্পষ্টবাদিতায় বাদশাহ অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং তাদেরকে শাসান-গর্জন ও ভয় প্রদর্শন করে। সে নির্দেশ দেয়ঃ “তাদের পোষাক খুলে নাও। এরপরেও যদি তারা বিরত না হয়, তবে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবো।”বাদশাহর এই কথায় তাদের অন্তর আরো দৃঢ় হয়ে যায়, কিন্তু তারা এটা অবগত হয়ে যান যে, এখানে থেকে তারা দ্বীনদারীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। তাই, তারা কওম, দেশ এবং আত্মীয়স্বজন সবকে ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় সংকল্প করেন। এই হুকুমও রয়েছে যে, মানুষ যেন দ্বীনের ভয়ের সময় হিজরত করে। হাদীসে রয়েছে যে, খুব সন্ত্র মানুষের উত্তম মাল হবে বীর পাল, যেগুলি নিয়ে সে পাহাড়ে-পর্বতে ও মরুপ্রান্তরে বসবাস করবে এবং স্বীয় দ্বীনকে রক্ষার জন্যে পালিয়ে বেড়াবে। সুতরাং এইরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা শরীয়ত সম্মত। হাঁ, তবে যদি পরিস্থিতি এরূপ না হয় এবং দ্বীন নষ্ট হওয়ার ভয় না থাকে, তাহলে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা, এমতাবস্থায় জুমআ ও জামাআতের ফজীলত হাত ছাড়া হয়ে যাবে। যখন এই লোকগুলি দ্বীন রক্ষার জন্যে এতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসর্গে উদ্যত হন, তখন তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ “ঠিক আছে, তোমরা যখন তাদের দ্বীন থেকে পৃথক হয়ে গেছে তখন দেহ হতেও পৃথক হয়ে পড়। যাও তোমরা কোন গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের উপর তোমাদের প্রতিপালকের করুণা বর্ষিত হবে। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুদের দৃষ্টির অগোচরে রাখবেন। তোমাদের কাজ তিনি সহজ করে দিবেন এবং তোমাদের শান্তির ব্যবস্থা করবেন।" সুতরাং এই লোকগুলি সুযোগ বুঝে এখান থেকে পালিয়ে যান এবং পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। দেখতে পাচ্ছিলেনা, অবশেষে তিনি কাফিরদের কালেমা নীচু করে দেন এবং নিজের কালেমা সুউচ্চ করেন। আল্লাহ মর্যাদাবান ও বিজ্ঞানময়।" সত্য তো এটাই যে, এই ঘটনাটি গুহাবাসীদের ঘটনা হতেও বেশী বিস্ময়কর ও অসাধারণ। একটি উক্তি এও আছে যে, কওম ও বাদশাহ ঐ যুবকদেরকে পেয়ে গিয়েছিল। যখন তারা তাদেরকে গুহায় দেখতে পায়, তখন তারা বলে ওঠেঃ “বাঃ! আমরা তো এটাই চাচ্ছিলাম।” অতঃপর তারা ঐ গুহার মুখটি একটি প্রাচীর দ্বারা বন্ধ করে দেয়, যাতে তারা ওর মধ্যেই মারা যান। কিন্তু এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, কুরআন কারীমে রয়েছে যে, সকাল-সন্ধ্যায় তাদের উপর সূর্যের আলো যাওয়া-আসা করতো ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

۞ وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِنْهُ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ۗ مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا

📘 এটা হচ্ছে ঐ বিষয়ের দলীল যে, ঐ গুহাটির মুখ ছিল উত্তর দিকে। সূর্য উদয়ের সময় ওর ডান দিকে রৌদ্রের ছায়া প্রবেশ করতো। সুতরাং দুপুরের সময় সেখানে রৌদ্র মোটেই থাকতো না। সূর্য উপরে উঠার সাথে সাথে এরূপ জায়গা হতে রৌদ্রের আলো কমে যায় এবং সূর্যাস্তের সময় তাদের গুহার দিকে ওর দরজার উত্তর দিক থেকে রৌদ্র প্রবেশ করে থাকে। জ্যোতিষ্ক বিদ্যায় পারদর্শী লোকেরা এটা খুব ভালভাবে বুঝতে পারেন, যাদের সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজির চলন গতি সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। যদি গুহার দরজাটি পূর্ব মুখী হতো তবে সূর্যাস্তের সময় সেখানে রৌদ্র মোটেই যেতো না আর যদি কিবলামুখী হতো তবে সূর্যোদয়ের সময়ও সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছতো না। এবং সূর্যাস্তের সময়ও না এবং সূর্যের ছায়া ডান বামেও ঝুঁকে পড়তো না আর যদি দরজাপশ্চিমমুখী হতো তবে তখনো সুর্যোদয়ের সময় ভিতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতো না, বরং সূর্য হেলে পড়ার পরে আলো ভিতরে প্রবেশ করতো। তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত বরবারই আলো থাকতো। সুতরাং আমরা যা বর্ণনা করলাম সঠিক কথা ওটাই। অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আরবী) এর অর্থ করেছেন ছেড়ে দেয়া ও পরিত্যাগ করা। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাদেরকে এটা জানিয়ে দিলেন যাতে আমরা চিন্তা করি ও বুঝি। ঐ গুহাটি কোন শহরের কোন পাহাড়ে রয়েছে, তা তিনি বলে দেন নাই। কারণ, এটা জেনে আমাদের কোনই উপকার নাই। এর দ্বারা শরীয়তের কোন উদ্দেশ্যই লাভ হয় না। তবুও কোন কোন তাফসীরকার এ ব্যাপারে কষ্ট করেছেন। কেউ কেউ বলেন যে, ওটা ঈলার নিকটবর্তী জায়গায় অবস্থিত, কেউ বলেন যে, ওটা নীনওয়ার পাশে রয়েছে। কেউ বলেন যে, রোমের মধ্যে রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, ওটা রয়েছে বালকাতে। ওটা যে কোথায় রয়েছে এর প্রকৃত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই আছে। যদি এতে আমাদের কোন দ্বীনী বা মাযহাবী উপকার থাকতো তবে অবশ্যই তিনি তা আমাদেরকে তার নবীর (সঃ) মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে যে কাজ ও জিনিস তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী ও জাহান্নাম হতে দূরে করে থাকে ওগুলির একটিও না ছেড়ে সবই আমি বর্ণনা করে দিয়েছি।” সুতরাং আল্লাহ তাআলা ওর বিশেষ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ওর জায়গার উল্লেখ করেন নাই। তিনি বলেন যে, সূর্যোদয়ের সময় তাদের গুহা হতে ওটা ডানে-বামে ঝুঁকে পড়ে এবং সূর্যাস্তের সময় তাদেরকে বাম দিকে ছেড়ে দেয়। তারা প্রশস্ততার মধ্যে রয়েছে। সুতরাং তাদের উপর সূর্যের তাপ পোঁছে না। অন্যথায় তাদের দেহ ও কাপড় পুড়ে যেতো। এটা আল্লাহ তাআলার একটা নিদর্শন যে, তিনি তাদেরকে ঐগুহায় পৌঁছিয়েছেন, যেখানে তাদেরকে জীবিত রেখেছেন। সেখানে রৌদ্রও পৌঁছেছে, বাতাসও পৌঁছেছে এবং চন্দ্রালোকও প্রবেশ করেছে; যাতে তাদের নিদ্রার কোন ব্যাঘাত না ঘটে, না কোন ক্ষতি হয়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এটাও একটা পূর্ণক্ষমতার নিদর্শন। ঐ একত্ববাদী যুবকদেরকে হিদায়াত স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই দান করেছিলেন। কারো ক্ষমতা ছিল না যে, তাদের পথভ্রষ্ট করে। পক্ষান্তরে তিনি যাদেরকে হিদায়াত দান করেন না, তাদেরকে হিদায়াত করার ক্ষমতা কারো নেই।

وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ ۚ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ ۖ وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ ۚ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا

📘 মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা শুয়ে আছে, কিন্তু দর্শকরা তাদেরকে জাগ্রত মনে করে। কেননা তাদের চক্ষু খুলে রয়েছে। বর্ণিত আছে যে, নেকড়ে বাঘ যখন ঘুমায় তখন সে একটি চক্ষু বন্ধ করে ও আর একটি চুক্ষ খুলে রাখে। আবার ওটাকে বন্ধ করে এবং অন্যটিকে খুলে রাখে। যেমন কোন কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ সে তার দুই চক্ষুর একটি দ্বারা ঘুমায় এবং অপরটি দ্বারা জেগে থাকে। সে নিজেকে রক্ষা করে। সুতরাং একই সময় সে জাগ্রত ও ঘুমন্ত উভয়ই।"জীব-জন্তু ও পোকামাকড় ও শত্রু হতে রক্ষা করার জন্যে নিদ্রিত অবস্থায়ও তাদের চুক্ষ খুলে রাখেন এবং মাটিতে যেন খেয়ে না ফেলে এজন্যে তিনি তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করাতে থাকেন। বর্ণিত আছে যে, বছরে দু'বার করে। তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করানো হতো। তাদের কুকুরটিও তাদের পাহারাদার হিসেবে দরজার পার্শ্বে চৌকাঠের নিকটবর্তী জায়গায় মাটিতে তার সামনের পা দুটি প্রসারিত করে বসেছিল। কুকুরটির দরজার বাইরে থাকার কারণ এই যে, যে ঘরে কুকুর, ছবি, অপবিত্র ব্যক্তি এবং কাফের ব্যক্তি থাকে সেই ঘরে ফেরেশতা যান না। যেমন একটি হাসান হাদীসে এসেছে। ঐকুকুরটিও ঐ অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ে। এটা সত্য কথাই যে, ভাল লোকের সংস্পর্শে আসলে ভাল হওয়া যায়। এরই প্রমাণ হিসেবে দেখা যায় ঐ কুকুরটি এমন মর্যাদা লাভ করে যার ফলে আল্লাহর কিতাবে ওরও বর্ণনা দেয়া হয়। বর্ণিত আছে যে, ঐ কুকুরটি তাদেরই কোন একজনের পালিত শিকারী কুকুর ছিল। একটা উক্তি এও আছে যে, ওটা ছিল বাদশাহর বাবুর্চীর কুকুর। সেও ছিল ঐ যুবকদেরই মাযহাবপন্থী। সেও তাদের সাথে হিজরত করেছিল। তখন তার কুকুরটিও তাদের পিছনে পিছনে চলে গিয়েছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীমের (আঃ) হাতে হযরত যাবীহুল্লাহর (আঃ) পরিবর্তে যে ভেড়াটি যবাহকৃত হয়েছিল তার নাম ছিল জারীর। হযরত সুলাইমানকে (আঃ) যে হুদহুদ পাখিটি সাবার দেশের রাণী খবর এনে দিয়েছিল তার নাম ছিল আনফায। গুহাবাসীদের ঐ কুকুরটির নাম ছিল ‘কিমীর। বাণী ইসরাঈল যে বাছুরটির পূজা শুরু করেছিল তার নাম ছিল বাহমূত’। হযরত আদম (আঃ) জান্নাত থেকে ভারতে নেমেছিলেন।, হযরত হাওয়া (আঃ) নেমেছিলেন জিদ্দায়, ইবলীস নেমেছিল দাশতে বীসানে এবং সাপ পড়েছিল ইসফাহানে।একটি উক্তি আছে যে, ঐ কুকুরটির নাম ছিল হামরান। কুকুরটির রঙ সম্পর্কেও অনেকগুলি উক্তি রয়েছে। কিন্তু আমরা বিস্মিত হই যে, এতে লাভ কি? এর প্রয়োজনীয়তাই বা কি? বরং এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক নিষিদ্ধ। কেননা এতো হচ্ছে চক্ষু বন্ধ করে প্রস্তর নিক্ষেপ করা এবং বিনা দলীলে কথা বলা!এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদেরকে এমন প্রভাব দিয়েছিলাম যে, কেউই তাদের দিকে তাকাতে পারতো না। এটা এই কারণে যে, লোকেরা যেন তাদেরকে তামাশার পাত্র বানিয়ে না নেয়, কেউ বীরত্বপনা দেখিয়ে তাদের কাছে চলে না যায়, কেউ তাদের উপর হাত উঠাতে না পারে। যেন তারা ঐ সময় পর্যন্ত আরাম ও শান্তিতে ঘুমাতে পারে যত দিন পর্যন্ত তাদের ঘুমানো আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করেন। যারাই তাদের দিকে তাকায়, তাদের প্রভাবে তারা থর থর কাঁপতে থাকে। তৎক্ষণাৎ তারা উল্টো পায়ে ফিরে যায়। তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করাও প্রত্যেকের জন্যে অসম্ভ।

وَكَذَٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءَلُوا بَيْنَهُمْ ۚ قَالَ قَائِلٌ مِنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ ۖ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۚ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُمْ بِوَرِقِكُمْ هَٰذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنْظُرْ أَيُّهَا أَزْكَىٰ طَعَامًا فَلْيَأْتِكُمْ بِرِزْقٍ مِنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا

📘 Please check ayah 18:20 for complete tafsir.

قَيِّمًا لِيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِنْ لَدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا

📘 Please check ayah 18:5 for complete tafsir.

إِنَّهُمْ إِنْ يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا

📘 ১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ “যেমনভাবে আমি তাদেরকে আমার পূর্ণ ক্ষমতার মাধ্যমে নিদ্রিত করে ছিলাম, তেমনিভাবেই ঐ ক্ষমতার বলেই তাদেরকে জাগ্রত করলাম। তারা তিনশ’ ন বছর ধরে ঘুমিয়েছিল। কিন্তু যখন জেগে ওঠে, তখন ঠিক ঐরূপই ছিল যেইরূপ ছিল ঘুমাবার সময়। দেহ, চুল, চামড়া সবই ঐ আসল অবস্থাতেই ছিল, যেমন শোবার সময় ছিল। মোট কথা, তাদের মধ্যে কোন প্রকারেরই পার্থক্য সৃষ্টি হয় নাই।” তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “আচ্ছা বলতো, আমরা কতকাল ঘুমিয়ে ছিলাম?” উত্তরে বলা হয়ঃ “একদিন বা একদিনেরও কিছু কম। কেননা, সকালে তাঁরা ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন, আর যখন জেগে ওঠেন তখন ছিল সন্ধ্যাকাল। এজন্যে তাঁদের ধারণা এটাই হয়। তারপর তাদের নিজেদের মনে ধারণা জন্মে যে, এরূপ তো নয়। এজন্যে তারা আর মস্তিষ্ক চালনা না করে মীমাংসিত কথা বলে দেন যে, এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই আছে। তাদের ক্ষুধার উদ্রেক হয়েছিল বলে তারা বাজার হতে সওদা আনয়নের পরামর্শ করেন। তাঁদের কাছে টাকা পয়সা ছিল। পথে কিছু খরচ করেছিলেন এবং কিছু তাদের সাথেই ছিল। তারা একে অপরকে বললেনঃ “কাউকে মূল্য দিয়ে এই শহরে পাঠিয়ে দাও। সেখান থেকে সে কিছু উত্তম খাদ্য ক্রয় করে আনুক অর্থাৎ উত্তম ও পবিত্র জিনিস।” যেমন অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তবে তোমাদের কেউই পাক হতো না।" (২৪:২১) আর এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সফলকাম হয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে পবিত্রতা লাভ করছে।" (৮৭ঃ১৪). যাকাতকে যাকাত এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, ওটা মালকে পাক পবিত্র করে থাকে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর দ্বারা অনেক খাদ্য আনয়ন বুঝানো। হয়েছে। যেমন শস্যক্ষেত্র বেড়ে যাওয়ার সময় আরববাসী বলে থাকে? (আরবী) অর্থাৎ শস্যক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। কবির কবিতাতেও রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের গোত্র সাত এবং তোমরা তিন, আর সাত তিন হতে বেশী ও উত্তম।” সুতরাং এখানেও (আরবী) শব্দটি ‘বেশী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতর। কেননা, গুহাবাসীদের এর দ্বারা। উদ্দেশ্য ছিল হালাল ও পবিত্র জিনিস আনয়ন। তা বেশী হোক, আর কমই হোক। তাঁরা বলেনঃ “খাদ্য আনয়নকারীকে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যতদূর সম্ব জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে হবে, যাতে কেউ আমাদের খবর জানতে না পারে। যদি তারা কোন রকমে জেনে ফেলে, তবে মঙ্গলের কোনই আশা নেই। দাইয়ান্স বাদশাহর লোকেরা যদি আমাদের এই জায়গার খবর পেয়ে যায় তবে তারা আমাদেরকে নানা প্রকারের কঠিন শাস্তি দেবে। অথবা হয়তো আমরা তাদের ভয়ে এই সত্য দ্বীনকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় কাফির হয়ে যাবে। অথবা তারা হয়তো আমাদেরকে একেবারে হত্যা করেই ফেলবে। যদি আমরা তাদের ধর্মে ফিরে যাই, তবে আমাদের মুক্তির কোন আশা নেই। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের পরিত্রাণ লাভ অসম্ব। হয়ে পড়বে।”

وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ ۖ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِمْ بُنْيَانًا ۖ رَبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَىٰ أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ مَسْجِدًا

📘 আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “এভাবেই আমি স্বীয় ক্ষমতা বলে মানুষকে গুহাবাসীদের অবস্থা অবহিত করলাম, যাতে তাঁর ওয়াদা এবং কিয়ামত সংঘটি হওয়ার সত্যতার জ্ঞান লাভ করে।” বর্ণিত আছে যে, ঐ যুগে তথাকার লোকদের কিয়ামত সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে কিছু সন্দেহ হয়েছিল। একটি দল তো বলছিল যে, শুধু আত্মার পুনরুত্থান হবে-দেহের নয়। তাই, আল্লাহ তাআলা কয়েক শতাব্দীর পর গুহাবাসীদেরকে জাগিয়ে দিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার এবং দেহের পুনরুত্থান হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ কায়েম করলেন।বর্ণিত আছে যে, গুহাবাসীদের একজন যখন টাকা নিয়ে সওদা ক্রয় করার উদ্দেশ্য গুহা হতে বের হন, তখন লক্ষ্য করেন যে, তাঁর পূর্বের দেখা একটা জিনিসও নেই। সমস্ত চিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। ঐ শহরের নাম ছিল আফমূস। যুগের পরিবর্তনে বস্তীগুলোর পরিবর্তন ঘটেছিল। ইতিমধ্যে কয়েক শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ঐ গুহাবাসীর তো ধারণা তা ছিল না। তার ধারণায় সেখানে পৌঁছার পর এক আধ-দিন মাত্র অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু আসলে কয়েক শতাব্দী অতীত হওয়ার কারণে সব কিছু বদলে গিয়েছিল। যেমন কোন কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঘরগুলিতো তাদের ঘরগুলির মতই রয়েছে, কিন্তু আমি গোত্রের লোকগুলিকে দেখছি যে, তারা ঐ সব লোক নয়।"ঐগুহাবাসী লোকটি দেখেন যে, না তো শহরের কোন জিনিস স্বীয় অবস্থায় রয়েছে, না শহরের পরিচিত একটা লোকও আছে। তিনিও কাউকেও চিনছেন ন এবং তাঁকেও কেউ চিনছে না। তিনি মনে মনে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। কারণ, তিনি মনে মনে বলছিলেনঃ “এইতো কাল সন্ধ্যায় আমি এই শহর ছেড়ে গিয়েছি, তারপর হঠাৎ এ হলো কি! সব সময় তিনি চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুই বুঝে আসছে না। অবশেষে তিনি ধারণা করলেন যে, তিনি পাগল হয়ে গেছেন বা তার স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পেয়েছে, অথবা তাকে কোন রোগে ধরেছে, কিংবা তিনি স্বপ্ন দেখছেন! তবে বোধগম্য কিছুই হয় না। এইঙ্কারণে তিনি ইচ্ছা করলেন যে, সওদা কিনে নিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁর এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়াই উচিত। অতঃপর তিনি একটি দোকানে গিয়ে দোকানদারকে পয়সা দেন ও আহার্য দ্রব্য চান। দোকানদার ঐ মুদ্রা দেখে কঠিন বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং ওটা তার প্রতিবেশীকে দেখতে দেয়। বলেঃ “ভাই, দেখো তো! এই মুদ্রাটি কেমন? এটা কখনকার ও কোন যুগের মুদ্রা?” সে আবার অন্য দোকানদারকে দেখায়, সে আবার অন্যকে দেয়। এভাবে মুদ্রাটি হাত ফের হতে থাকে। মোট কথা, গুহাবাসী লোকটি একটা তামাশার পাত্র হয়ে যান। সবার মুখ দিয়ে একথা বের হয় যে, সে কোন প্রাচীন যুগের ধনভাণ্ডার লাভ করেছে। তার থেকেই এটা নিয়ে এসেছে। সুতরাং তাকে জিজ্ঞেস করা হোক যে, সে কোথাকার লোক, সে কে এবং এই মুদ্রা সে কোথায় পেলো? অতঃপর তারা তাঁর চুতুর্দিকে জমায়েত হয়ে দাড়িয়ে গেল এবং তাকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করতে শুরু করলো। তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি তো ভাই এই শহরেরই অধিবাসী। গত কাল সন্ধ্যায় আমি এখান থেকে গিয়েছি। এখানকার বাদশাহ হচ্ছে দাকইয়ান্স।” তাঁর একথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো এবং বললোঃ “এতো কোন্ পাগল লোক! অবশেষে তারা তাকে নিয়ে গিয়ে বাদশাহর সামনে হাজির করে দিলো। বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে সমস্ত ঘটনা শুনিয়ে দিলেন। এখন একদিকে বাদশাহ্ ও অপরদিকে জনতা বিস্মিত ও হতভম্ব! আর একদিকে গুহাবাসী লোকটিও হতভম্ব! পরিশেষে সমস্ত লোক তার সঙ্গী হয়ে গিয়ে বললোঃ “আচ্ছ, আমাদেরকে তোমার সঙ্গীদের কাছে নিয়ে চল এবং তোমাদের গুহাটিও দেখিয়ে দাও।" গুহাবাসী লোকটি তখন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চললেন।। গুহার কাছে পৌঁছে তাদেরকে বললেনঃ “আপনারা এখানে একটু অপেক্ষা করুন, আমি প্রথমে আমার সঙ্গীদেরকে খবর দিয়ে আসি।” এই গুহাবাসী লোকটি জনতা থেকে পৃথক হওয়া মাত্রই আল্লাহ তাআলা তাদের উপর বে-খবরীর পর্দা নিক্ষেপ করলেন। তারা জানতেই পারলো না যে, তিনি কোথায় গেলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঐ রহস্য গোপন করলেন।আর একটি রিওয়াইয়াতে এও আছে যে, বাদশাহসহ ঐ লোকগুলি তথায় গিয়েছিলেন। গুহাবাসীদের সাথে তাদের সালাম, কালাম ও আলিঙ্গন হয়। এই বাদশাহ স্বয়ং মুসলমান ছিলেন। গুহাবাসীরা তাঁর সাথে মিলিত হয়ে খুবই সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং অত্যন্ত মুহব্বতের সাথে কথা-বার্তা বলেন। তারপর তারা ফিরে গিয়ে নিজনিজ জায়গায় শুয়ে পড়েন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মৃত্যুদান করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সবারই উপর সদয় হোন! এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞান রাখেন।বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হযরত মাসলামার (রাঃ) সাথে এক যুদ্ধে ছিলেন। সেখানে তাঁরা রোমের শহরের মধ্যে একটি গুহা দেখতে পান, যার মধ্যে অস্থিসমূহ বিদ্যমান ছিল। জনগণ বললো যে, ঐগুলি আসহাবে কাহফের অস্থি। একথা শুনে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ “তাদের অস্থিগুলি তো মাটিতে পরিণত হয়ে গেছে। কারণ, তাদের উপর দিয়ে সুদীর্ঘ তিন শ' বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। (এই রিওয়াইয়াতটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)তাই, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যেমনিভাবে আমি গুহাবাসীদের সুদীর্ঘ তিন শ' বছর পরে একেবারে অস্বাভাবিক ভাবে পুনর্জাগরিত করেছি, তেমনিভাবে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিকরূপে ঐ শহরবাসীকে তাদের অবস্থা অবহিত করেছি, যেন তাদের এই জ্ঞান লাভ হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারেও যেন তাদের কোন সন্দেহ না থাকে। ঐ সময় ঐ শহরবাসী লোকেরা কিয়ামতের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করতো। কেউ কেউ কিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল এবং কেউ কেউ অস্বীকার করতো। সুতরাং আসহাবে কাহফের প্রকাশ অস্বীকারকারীদের উপর হুজ্জত এবং বিশ্বাসীদের জন্যে দলীল হয়ে গেল।এখন ঐ এলাকার লোকদের ইচ্ছা হলো যে, গুহাবাসীদের গুহা মুখ বন্ধ করে দেয়া হোক এবং তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেয়া হোক। কাজের উপর যাদের প্রাধান্য লাভ ছিল তারা বললোঃ “আমরা তাদের আশে পাশে মসজিদ নির্মাণ করবো।" ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) ঐ লোকদের ব্যাপারে দু'টি উক্তি বর্ণনা করেছেন। একটি এই যে, তাদের মধ্যে মুসলমানরা একথা বলে ছিল, আর দ্বিতীয় উক্তি হচ্ছে এই যে, ঐ উক্তিটি ছিল কাফিরদের। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। কিন্তু বাহ্যতঃ এটাই জানা যাচ্ছে যে, এই উক্তিকারীরা ছিল মুসলমান। তবে তাদের একথা বলা ভাল ছিল, কি মন্দ ছিল সেটা অন্য কথা। এই ব্যাপারে তো পরিষ্কার হাদীস বিদ্যমান রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ'লা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের উপর লানত বর্ষণ করুন যে, তারা তাদের নবী ও ওয়ালীদের কবরগুলিকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। তারা যা করতো তা থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় উম্মতকে বাঁচাতে চাইতেন। এজন্যেই আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতের যামানায় যখন ইরাকে হযরত দানইয়ালের (রাঃ) কবরের সন্ধান পান, তখন তা গোপন করে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং সে লিপি প্রাপ্ত হন, যাতে কোন কোন যুদ্ধ ইত্যাদির বর্ণনা ছিল, তা পুঁতে ফেলার আদেশ করেন।

سَيَقُولُونَ ثَلَاثَةٌ رَابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ وَيَقُولُونَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا بِالْغَيْبِ ۖ وَيَقُولُونَ سَبْعَةٌ وَثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ ۚ قُلْ رَبِّي أَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ ۗ فَلَا تُمَارِ فِيهِمْ إِلَّا مِرَاءً ظَاهِرًا وَلَا تَسْتَفْتِ فِيهِمْ مِنْهُمْ أَحَدًا

📘 জনগণ গুহাবাসীদের সংখ্যার ব্যাপারে কিছু কিছু বলাবলি করতো। তার তিন প্রকারের লোক ছিল। চতুর্থটি গণনা করা হয়নি। প্রথম দুটি উক্তিকে দুর্বল বলা হয়েছে। তারা অনুমানের তীর মেরেছে। তবে আল্লাহ তাআলা তৃতীয় উক্তিটি বর্ণনা করার পর নীরবতা অবলম্বন করেছেন। এটা তিনি খণ্ডন করেন নাই। অর্থাৎ সাতজন এবং অস্টম ছিল তাদের কুকুরটি। এর দ্বারা অনুমিত হচ্ছে যে, এটা সঠিক কথা এবং প্রকৃতপক্ষে এটাই সঠিকও বটে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই রূপ স্থলে উত্তমপন্থা হচ্ছে এর জ্ঞান। আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়া। এসব ব্যাপারে কোন সঠিক জ্ঞান না থাকা সত্তেও এর পিছনে লেগে থেকে চিন্তা করা ও সন্ধান চালানো বৃথা। সে সম্পর্কে যা জানা থাকবে তা মুখে প্রকাশ করতে হবে। আর যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই সেখানে নীরবতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। তাদের সংখ্যার সঠিক জ্ঞান খুব কম লোকেরই রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “যাদের এর সঠিক জ্ঞান আছে আমি তাঁদের মধ্যে একজন। আমি জানি যে, তাঁরা। সাতজন ছিলেন। হযরত আতা' খুরাসানীরও (রঃ) উক্তি এটাই আমরা পূর্বে লিখেছিলাম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো খুবই অল্প বয়সের ছিলেন, সবে মাত্র যৌবনে পদার্পন করেছিলেন। তারা দিনরাত আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। তারা ক্রন্দন করতেন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ফরিয়াদ করতেন। বর্ণিত আছে যে, তারা ন’জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় ছিলেন তাঁর নাম ছিল মিকলমীন। তিনিই বাদশাহর সাথে কথা বলেছিলেন এবং তাকে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছিলেন। অবিশষ্টদের নাম হচ্ছে নিম্নরূপঃ ২. ফাহাশালমীন, ৩. তামলীখ, ৪. মারনিস, ৫, কাশতুনিস, ৬. বাইরূনিস, ৭. দানীমুস, ৮. বাতৃনিস, ৯. কাবৃস। তবে হযরত ইবনু আব্বাসের (রঃ) সঠিক রিওয়াইয়াত এটাই যে, তারা ছিলেন সাতজন। আয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা এটাই জানা যাচ্ছে। শুআইব জীবাঈ (রঃ) বলেন যে, তাঁদের কুকুরটির নাম ছিল হামরান। কিন্তু তাঁদের এই নামগুলির সঠিকতার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। এগুলোর অনেকটাই আহলে কিতাবের নিকট হতে নেয়া হয়েছে। এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি এই ব্যাপারে বেশী তর্ক-বিতর্ক করবে না। এটা নিতান্ত ছোট কাজ। এতে বড় কোন উপকার নেই। এই সম্পর্কে তুমি কাউকেও জিজ্ঞাসাবাদও করো না। কেননা, সবাই অনুমানে কথা বলবে এবং নিজেদের পক্ষ থেকে বানিয়েসানিয়ে কিছু বলে দেবে। কোন সঠিক ও সত্য দলীল তাদের কাছে নেই।আর আল্লাহ তাআলা তোমার সামনে যা কিছু বর্ণনা করছেন, তা মিথ্যা হতে পবিত্র, সম্পূর্ণরূপে সন্দেহমুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য। এটাই সত্য এবং সর্বাপেক্ষা অগ্রগণ্য।

وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَٰلِكَ غَدًا

📘 Please check ayah 18:24 for complete tafsir.

إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ ۚ وَاذْكُرْ رَبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَىٰ أَنْ يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَٰذَا رَشَدًا

📘 ২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর: মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ যে কাজ তুমি কাল করতে চাও ঐ ব্যাপারে তুমি বলো না? আমি কাল এটা করবো। বরং এর সাথে ইনশা আল্লাহ বলো। কেননা, কাল কি হবে, তার জ্ঞান শুধু আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। একমাত্র তিনিই ভবিষ্যতের খবর রাখেন এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান একমাত্র তিনিই। সুতরাং তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত সুলাইমান ইবনু দাউদের (আঃ) নব্বইটি স্ত্রী ছিল। একটি রিওয়াইয়াতে একশ' টি এবং অন্য একটি রিওয়াইয়াতে বাহাত্তরটির কথা রয়েছে। তিনি একদা বলেনঃ “আজ রাত্রে আমি আমার সমস্ত স্ত্রীর কাছে যাবো (তাদের সাথে সহবাস করবো) প্রত্যেক স্ত্রীর সন্তান হবে এবং তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।” ঐ সময় ফেরেশতা তাঁকে বলেছিলেনঃ “ইনশা আল্লাহ বলুন।” কিন্তু তিনি তা না বলে নিজের ইচ্ছানুযায়ী ঐ সব স্ত্রীর নিকট গমন করেন। কিন্তু একটি স্ত্রী ছাড়া আর কারো সন্তান হয় নাই। যার সন্তান হয় সেই সন্তানটিও আবার অর্ধ দেহ বিশিষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি হযরত সুলাইমান (আঃ) ঐ সময় “ইনশা আল্লাহ' বলতেন, তবে তাঁর মনোবাসনাপূর্ণ হতো এবং তার প্রয়োজনও পুরো হয়ে যেতো। তাঁর ঐ সব সন্তান যুবক হয়ে আল্লাহর পথের মুজাহিদ হয়ে যেতো।" (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)এই সূরার তাফসীরের শুরুতেই এই আয়াতের শানে নুযুল বর্ণিত হয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) আসহাবে কাহফের ঘটনা জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “আগামীকাল আমি তোমাদেরকে এর উত্তর দেবো।” কিন্তু তিনি ইনশা আল্লাহ বলেন নাই। এরপর পনেরো দিন পর্যন্ত তার উপর কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয় নাই। এই হাদীসটিকে আমরা এই সূরার তাফসীরের শুরুতে পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “যখন তুমি ভুলে যাবে তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে। অর্থাৎ যদি যথাস্থানে ইনশা আল্লাহ বলতে ভুলে যাও তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই ইনশা আল্লাহ বলবে।”হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কেউ যদি কোন বিষয়ে শপথ। করার সময় ইনশা আল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে পরেও তার ইনশা আল্লাহ বলে নেয়ার অধিকার রয়েছে। যদিও এক বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। ভাবার্থ এই যে, কেউ যদি তার কথায় বা কসমে ইনশা আল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই ইনশা আল্লাহ বলে নেবে; যদিও বহু দিন অতীত হয়ে যায় বা এর বিপরীতও ঘটে যায়। এর ভাবার্থ এটা নয় যে, তখন তার কসমের কাফফারা থাকবে না এবং তার ঐ কসম ভেঙ্গে দেয়ার অধিকার থাকবে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই উক্তির ভাবার্থ এটাই বর্ণনা করেছেন এবং এটা সঠিকও বটে। এরই উপর হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি স্থাপন করা যেতে পারে। তার থেকে এবং মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা ইনশা আল্লাহ বলতে ভুলে যাওয়াই বুঝানো হয়েছে। অন্য রিওয়াইয়াতে এরপরে এও রয়েছে যে, এটা রাসুলুল্লাহর (সঃ) সাথেই। খস। অন্য কেউ যদি তার কসমের সাথে ইনশা আল্লাহ বলে তবেই সেটা ধর্তব্য হবে। এর এটাও একটা ভাবার্থঃ যদি কোন কথা ভুলে যাও তবে আল্লাহকে স্মরণ করো। কেননা, ভুলে যাওয়া শয়তানী ক্রিয়া, আর আল্লাহর যির স্মরণে আসার মাধ্যম। তারপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমাকে যদি এমন কোন প্রশ্ন করা হয়, যা তোমার জানা নেই, তবে তুমি তা আল্লাহকেই জিজ্ঞেস করো এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ কর, যাতে তিনি তোমাকে সঠিক কথা বলে দেন এবং হিদায়াত লাভের পথ বাতলিয়ে দেন। এ ব্যাপারে আরো বহু উক্তি রয়েছে। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا

📘 Please check ayah 18:26 for complete tafsir.

قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا ۖ لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ ۚ مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

📘 ২৫-২৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) ঐ সময়কালের খবর দিচ্ছেন, যে সময়কাল পর্যন্ত গুহাবাসীরা তাদের গুহার মধ্যে নিদ্রিত অবস্থায় অবস্থান করে ছিলেন। ঐ সময়কাল ছিল সূর্যের হিসেবে তিন শ' বছর এবং চন্দ্রের হিসেবে তিনি শ’ নয় বছর। প্রকৃতপক্ষে শামসী ও কামরী বছরের মধ্যে প্রতি একশ বছরের তিন বছরের পৃথকভাবে বর্ণনা করার পর নয় বছর আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন।এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ “হে বী (সঃ)! যদি তোমাকে গুহাবাসীদের শয়নকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তোমার এর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকে এবং আল্লাহ তাআলাও তোমাকে তা জানিয়ে না থাকেন, তবে তুমি সামনে বেড়ে যেয়ো না এবং এরূপ স্থলে উত্তর দাওঃ এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর রয়েছে। আসমান ও যমীনের গায়েবের খবর তিনিই রাখেন। তবে তিনি যাকে জানিয়ে দেন সে জানতে পারে।”কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তারা গুহায় তিন শ’ বছর ছিলেন এটা আহলে কিতাবের উক্তি। আল্লাহ তাআলা এই উক্তিটি খণ্ডন করেছেন এবং বলেছেনঃ এরপূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)। হতেও এই অর্থের কিরআত বর্ণিত আছে। কিন্তু কাতাদার (রঃ) উক্তিটি বিবেচনাধীন। কেননা, আহলে কিতাবের মধ্যে শামসী বছরের প্রচলন রয়েছে। এবং তারা গুহাবাসীদের অবস্থানের সময়কাল তিন শ’বছর মেনে থাকে। তিন শ’ নয় বছর তাদের উক্তি নয়। যদি এটা তাদেরই উক্তি হতো, তবে আল্লাহ তাআলা একথা বলতেন না যে, তারা তিনশ’ বছর ঘুমিয়েছিল এবং আরো নয় বছর বেশী করেছিল। বাহ্যতঃ তো এটাই ঠিক মনে হচ্ছে যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এটার খবর দিচ্ছেন, কারো উক্তি তিনি বর্ণনা করছেন না। এটাই ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) গ্রহণ করেছেন। কাতাদার (রাঃ) রিওয়াইয়াত এবং হযরত ইবনু মাসউদের (রঃ) কিরআত দু'টোই ছেদ কাটা এবং অতি বিরলও বটে জমহূরের কিরআত ওটাই যা কুরআনে রয়েছে। তিনি বিরল দলীলের পক্ষপাতি নন।আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে খুবই দেখতে রয়েছেন এবং তাদের কথাও তিনি বেশ শুনতে রয়েছেন। এই দু'টি শব্দে প্রশংসার আধিক্য রয়েছে। অর্থাৎ “খুব বেশী শ্রোতা ও খুব বেশী দ্রষ্টা। প্রত্যেক বিদ্যমান জিনিস তিনি দেখতে রয়েছেন এবং সমস্ত কথা তিনি শুনতে রয়েছেন। কোন কাজ ও কোন কথা তার কাছে গোপন নেই। তাঁর চেয়ে বেশী কেউ শ্রবণকারীও নেই এবং দর্শনকারীও নেই। প্রত্যেকের আমল তিনি দেখতে রয়েছেন এবং প্রত্যেকের কথা তিনি শুনতে রয়েছেন। সৃষ্টির স্রষ্টা এবং হুকুমের মালিক তিনিই। কেউ তার আদেশকে প্রতিরোধ করতে পারে না। তার কোন উযীর ও সাহায্যকারী নেই। তাঁর কোন অংশীদারও নেই এবং কোন পরামর্শদাতাও নেই। তিনি এই সমূদয় অভাব হতে মুক্ত ও পবিত্র। এই সব ত্রুটি হতে তিনি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।

وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ ۖ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُونِهِ مُلْتَحَدًا

📘 Please check ayah 18:28 for complete tafsir.

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا

📘 ২৭-২৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নিজের কালাম পাঠ ও ওর তাবলীগের কাজে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। তার কথাগুলি কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না, মুলতুবী রাখতে সক্ষম হবে না এবং এদিক ওদিক করার ক্ষমতা রাখবে না। তুমি জেনে নাও যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো কাছে তুমি আশ্রয় পাবে না। সুতরাং যদি তুমি তিলাওয়াত ও তাবলীগের কাজ ছেড়ে দাও, তবে তোমার রক্ষার কোন পথ নেই। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তুমি তা প্রচার করতে থাকো; যদি তুমি তা ন্য কর, তবে তাঁর রিসালাতের হক আদায় করলে না। আল্লাহ তোমাকে লোকদের অন্যায় থেকে রক্ষা করবেন। আর এক আয়াতে আছেঃঅর্থাৎ “যিনি তোমার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন। তিনি তোমাকে অবশ্যই স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন।” (২৮:৮৫) সুতরাং তুমি আল্লাহর যিকর, তাসবীহ, প্রশংস্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনাকারীদের পার্শ্বে উঠা বসা করতে থাকো, যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকরে লেগে থাকে। তারা ফকীর হোক বা আমীরই হোক, ইতর হোক বা ভদ্রই হোক এবং সবল হোক বা, দুর্বলই হোক না কেন। কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আবেদন করেছিলঃ “আপনি ছোট লোকদের মজলিসে উঠা-বসা করবেন না, যেমন হযরত বিলাল (রাঃ), হযরত আম্মার (রাঃ), হযরত সুহাইব (রাঃ), হযরত খাব্বাব (রাঃ), হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গ। বরং আপনি আমাদের মজলিসে উঠাবসা করবেন।” তখন আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করার নিদের্শ দেন। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি ঐ লোকদেরকে তোমার মজলিস হতে সরিয়ে দিয়ো না যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকে।” (৬:৫২)।সাহাবীগণ বলেনঃ “আমরা ছয়জন গরীব শ্রেণীর লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) মজলিসে বসে ছিলাম। যেমন হযরত সা'দ ইবনু আবি আক্কাস (রাঃ),হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) এবং আর দু’টি লোক। এমন সময় সেখানে সম্রান্ত মুশরিকরা আগমন করে এবং বলেঃ “এসব লোককে এরূপ সাহসিকতার সাথে আপনার মজলিসে বসতে দিবেন না। এতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মনোভাব কি হয়েছিল তা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তবে তৎক্ষণাৎ (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন বক্তা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তথায় আগমন করেন, তখন তিনি নীরব হয়ে যান। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি বক্তৃতা চালিয়ে যাও। আমি ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই মজলিসেই বসে থাকলে তো আমার জন্যে এটাকে চারটি গোলাম আযাদ করার চাইতেও উত্তম মনে করি।”একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর যিরে নিমগ্ন ব্যক্তিদের সাথে ফজরের নামায থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যাওয়া আমার কাছে সারা দুনিয়া হতেও বেশী প্রিয়। আর আসরের নামাযের পর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করা আমার নিকট অটিটি গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশী প্রিয়। যদিও ঐ গোলাম গুলি হযরত ইসমাঈলের (আঃ) সন্তানদের চাইতেও বেশী মূল্যবান হয় এবং যদিও তাদের এক একজনের মুক্তিপণ বার হাজার হয়।” (এই রিওয়াইয়াতটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তাহলে মোট মূল্য ছিয়ানব্বই হাজারে দাঁড়ায়। কেউ কেউ চারজন গোলামের কথা বলে থাকেন। কিন্তু হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সঃ) আট জন গোলামের কথাই বলেছেন।বর্ণিত আছে যে, একটি লোক সূরায়ে কাহফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখানে এসে পড়েন। তাঁকে দেখে লোকটি পড়া বন্ধ করে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এটাই ঐলোকদের মজলিস যেখানে অবস্থান করার নির্দেশ আমার প্রতিপালক আমাকে প্রদান করেছেন। (এটা মুসনাদে বাযারে বর্ণিত আছে)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, লোকটি সূরায়ে হজ্জ অথবা সূরায়ে কাহফ পাঠ করছিলেন।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যিরুল্লাহর জন্যে যে মজলিস অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ মজলিসে উপস্থিত লোকদের নিয়ত ভাল হয়, তবে আকাশ থেকে ঘোষণাকারী ঘোষণা করেনঃ “ওঠো, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তোমাদের মন্দ কাজ ভাল কাজে পরিবর্তিত হয়েছে।” ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এইরূপ লোকদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। এমন কতকগুলি লোককে তিনি যিরুল্লাহতে নিমগ্ন দেখতে পেলেন যাদের চুল ছিল এলোমেলো এবং দেহের চামড়া ছিল শুষ্ক। বহু কষ্টে তারা এক একটি কাপড় সংগ্রহ করেছিল। তখনই তিনি ঐ মজলিসে বসে পড়েন এবং বলতে থাকেনঃ “আমি মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোক রেখেছেন যাদের মজলিসে বসার আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) উপদেশ দিচ্ছেনঃ “তুমি তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আল্লাহর যিকরকারীদেরকে ছেড়ে দিয়ে ঐ সম্পদশালীদের খোজে লেগে থেকো না। যারা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত হতে দূরে সরে রয়েছে, যাদের পাপকার্য বেড়ে চলেছে এবং যাদের আমলগুলি নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ। তুমি তাদের অনুসরণ করো না, তাদের রীতিনীতি পছন্দ করো না এবং তাদের সম্পদের প্রতি হিংসাপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না আর তাদের সুখ সম্ভোগের প্রতি লালসাপূর্ণ দেখে না; যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি যে তাদেরকে পার্থিব সুখ শান্তি দিয়ে রেখেছি,এটা শুধু তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে; সুতরাং তুমি লালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে দেখো না, প্রকৃতপক্ষে তোমার প্রতিপালকের কাছে যে জীবনোপকরণ রয়েছে। তা অতি উত্তম ও চিরস্থায়ী।” (২০:১৩১)

وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেন যে, তিনি যেন জনগণকে বলে দেনঃ আমি আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা কিছু আনয়ন করছি তাই হক ও সত্য। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এখন যার ইচ্ছা হবে, সে মানবে এবং যার মন চাইবে না সে মানবে না। যারা মানবে না, তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রয়েছে। ওর চার প্রাচীরের জেলখানার মধ্যে তারা সম্পূর্ণ শক্তিহীনভাবে অবস্থান করবে। হাদীসে আছে যে, জাহান্নামের চার প্রাচীরের প্রশস্ততা চল্লিশ বছরের পথ। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) আর ঐ প্রাচীরগুলিও আগুনের তৈরী। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, সমুদ্রও জাহান্নাম। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। তারপর তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কসম! জীবিত থাকা। পর্যন্ত আমি সেখানে যাবে না এবং না ওর কোন ফোটা আমার কাছে পৌঁছবে।” (আরবী) বলা হয় মোটা পানিকে। যেমন যায়তুন তেলের তলানি এবং যেমন রক্ত ও পূজ, যা অত্যন্ত গরম। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ)। একবার সোনা গলিয়ে দেন। যখন ওটা পানির মত হয়ে যায় ও ফুটতে থাকে তখন তিনি বলেনঃ (আরবী) এর সাদৃশ্য এতে রয়েছে।” জাহান্নামের পানিও কালো, জাহান্নাম নিজেও কালো এবং জাহান্নামীও কালো। (আরবী) হলো কালো রঙ বিশিষ্ট। দুর্গন্ধময় মোটা মালিন্য কঠিন গরম জিনিস। চেহারার কাছে যাওয়া মাত্রই চেহারা দগ্ধিভূত করে, মুখ পুড়িয়ে দেয়। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, ওটা কাফিরের মুখের কাছে যাওয়া মাত্রই তার চেহারা পুড়িয়ে দিয়ে তার মধ্যে এসে পড়বে। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “তাদেরকে পুঁজ পান করানো হবে। অতি কষ্টে ওটা তাদের গলা থেকে নামবে। চেহারার কাছে। আসা মাত্রই চামড়া পুড়ে গিয়ে খসে পড়বে। ওটা পান করা মাত্রই নাড়ি কুঁড়ি ছিড়ে ফেটে যাবে। তারা তখন হায়! হায়! করে চীকার করতে থাকবে। তখন তাদেরকে এই পানি পান করতে দেয়া হবে। ক্ষুধার অভিযোগের সময় তাদেরকে যাককুম গাছ খেতে দেয়া হবে। এর ফলে তাদের দেহের চামড়া দেহ থেকে এমনভাবে ছুটে পড়বে যে, তাদের পরিচিত লোকেরা ঐ চামড়াগুলি দেখেও তাদেরকে চিনে ফেলবে। পিপাসার অভিযোগে তাদেরকে কঠিন গরম উত্তপ্ত পানি পান করতে দেয়া হবে, যা তাদের মুখের কাছে পৌঁছা মাত্রই গোশত পুড়িয়ে ভেজে দেবে। হায়! কি জঘন্য পানি! তাদেরকে ঐ গরম পানি পান করতে দেয়া হবে যা তাদের নাড়িভূড়ি কেটে ছিড়ে ফেলবে। কঠিন গরম প্রবাহিত নালা হতে তাদেরকে পানি পান করানো হবে। তাদের ঠিকানা, তাদের ঘর, তাদের বাসস্থান এবং তাদের বিশ্রাম স্থলও অতি জঘন্য।" যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয় ওটা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে কতই না নিকৃষ্ট।" (২৫:৬৬)

مَاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا

📘 Please check ayah 18:5 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا

📘 Please check ayah 18:31 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ۚ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا

📘 ৩০-৩১ নং আয়াতের তাফসীর: পাপীদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করার পর এখানে মহান আল্লাহ পুণ্যবানদের পরিণামের বর্ণনা দিচ্ছেন। এরা আল্লাহ ও তার রাসূলকে (সঃ) মান্যকারী এবং তাদের কিতাবকেও মান্যকারী। তারা সকার্যাবলী সম্পাদনকারী। সূতরাং তাদের জন্যে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। এই জান্নাতের প্রাসাদ ও বাগ-বাগিচার নিম্নদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত রয়েছে। তাদেরকে অলংকার, বিশেষ করে সোনা কংকনও পরানো হবে। ঐ পোষাকগুলির কোনটি হবে নরম পাতলা এবং কোনটি হবে নরম মোটা। সেখানে তারা গদির আসনে হেলান লাগিয়ে অত্যন্ত শানশওকতের সাথে পরম সুখে বসবাস করবে। বলা হয়েছে যে, চার জানু হয়ে বসাকেও (আরবী) বলে। খুব সম্ভব এখানে অর্থ এটাই হবে। যেমন হাদীসে রয়েছে যে, (আরবী) করে অর্থাৎ চার জানু হয়ে বসে খানা খাওয়া ঠিক নয়। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। এর অর্থ হচ্ছে চৌকি, ছাপর খাট ইত্যাদি।মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদের পুরস্কার কতই না উত্তম এবং ওটা কতই না আরামদায়ক জায়গা! এটা জাহান্নামীদের বিপরীত। তাদেরকে সেখানে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদের বাসস্থান কতই না জঘন্য ও নিকৃষ্ট! সূরায়ে ফুরকানেও এই দুই দলের বর্ণনা এ রকমই পরস্পর বিরোধী রূপে দেয়া হয়েছে।

۞ وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلًا رَجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا

📘 Please check ayah 18:36 for complete tafsir.

كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِمْ مِنْهُ شَيْئًا ۚ وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا

📘 Please check ayah 18:36 for complete tafsir.

وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنْكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا

📘 Please check ayah 18:36 for complete tafsir.

وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَنْ تَبِيدَ هَٰذِهِ أَبَدًا

📘 Please check ayah 18:36 for complete tafsir.

وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُدِدْتُ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِنْهَا مُنْقَلَبًا

📘 ৩২-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বে দরিদ্র মুসলমান ও সম্পদশালী কাফিরের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে তাদের একটি দৃষ্টান্ত আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন। দুটি লোকছিল, তাদের একজন ছিল সম্পদশালী। তার ছিল আঙ্গুর ও খেজুরের বাগান এবং এই দুয়ের মাঝে ছিল শস্যক্ষেত্র। বাগান ছিল ফলে ফুলে ভরপুর এবং শস্যক্ষেত্র ছিল শ্যামল-সবুজ। ক্ষতির কোন আশংকা ছিল না। এদিকে ওদিকে নদীনালা প্রবাহিত ছিল। তার কাছে সব সময় নানা প্রকারের শস্য ও ফলমল বিদ্যমান থাকতো। এরকম ছিল সে সম্পদশালী (আরবী) শব্দটির দ্বিতীয় পঠন (আরবী) ও রয়েছে। এটা (আরবী) শব্দের বহুবচন। যেমন (আরবী) শব্দের বহু বচন (আরবী) সে থাকে।মোট কথা, এই ধনী লোকটি একদিন তার এক বন্ধুকে ফখর ও গর্ব করে বললোঃ “আমি ধন-সম্পদে, মান-সম্মানে, সন্তান-সন্ততিতে, জায়গাজমিতে এবং চাকর-বাকরে তোমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” পাপাচারী ব্যক্তির আশা। আকাংখা এইরূপই হয়ে থাকে যে, দুনিয়ার এই জিনিসগুলি যেন তার কাছে প্রচুর পরিমাণে থাকে। একদা সে নিজের বাগানে গেল এভাবে নিজের উপর যুলুমকৃত অবস্থায়। অর্থাৎ সে গর্ব ও অহংকার, কিয়ামতকে অস্বীকার এবং কুফরী করার কাজে এতো মত্ত ছিল যে, তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলঃ “আমার এই সবজ-শ্যামল শস্য ক্ষেত্র, ফলফলে ভরপর বাগান এবং প্রবাহিত নদীনালা যে কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে এটা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল তার নির্বুদ্ধিতা, বেঈমানী, দুনিয়ার প্রতি কঠিন আকর্ষণ এবং আল্লাহর সাথে কুফরী করারই কারণ। এই জন্যেই সে বলে ফেললোঃ “আমার ধারণা তো কিয়ামত সংঘটিত হবেই না। আর যদি হয়ও বা তবে এটা তো স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান যে, আমি আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা। তা না হলে তিনি আমাকে এতে বেশী ধন-সম্পদ দান করলেন কি রূপে? কাজেই তিনি পরকালেও আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আমি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই, তবে সেখানে আমার জন্যে উত্তম ব্যবস্থা থাকবে।" (৪১:৫০) আর এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি কি তাকে দেখেছো, যে আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা সত্ত্বেও সে বলেঃ কিয়ামতের দিনেও আমাকে প্রচুর ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে?” (১৯:৭৭) সে আল্লাহ তাআলার সামনে বীরত্বপনা প্রকাশ করছে এবং তার পক্ষ থেকে বানিয়ে কথা বলছে, অর্থাৎ আল্লাহ বলেন নাই, অথচ সে আল্লাহর নাম দিয়ে কথা বলছে। এই আয়াতটি আস ইবনু ওয়ায়েলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা যথা স্থানে বর্ণিত হবে ইনশা আল্লাহ।

قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا

📘 Please check ayah 18:41 for complete tafsir.

لَٰكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا

📘 Please check ayah 18:41 for complete tafsir.

وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِنْ تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنْكَ مَالًا وَوَلَدًا

📘 Please check ayah 18:41 for complete tafsir.

وَيُنْذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا

📘 Please check ayah 18:5 for complete tafsir.

فَعَسَىٰ رَبِّي أَنْ يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِنْ جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِنَ السَّمَاءِ فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا

📘 Please check ayah 18:41 for complete tafsir.

أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَنْ تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا

📘 ৩৭-৪১ নং আয়াতের তাফসীর: ঐ সম্পদশালী কাফির ব্যক্তিকে তার বন্ধু দরিদ্র মুসলমানটি যে উত্তর দিয়েছিল, আল্লাহ তাআলা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। সে তাকে বহু উপদেশ দেয় এবং তাকে ঈমান ও বিশ্বাসের হিদায়াত করে এবং বিভ্রান্তি ও অহংকার হতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। তাকে বলেঃ “যে আল্লাহ মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি দ্বারা এবং এরপর শুক্রের মাধ্যমে বংশ ক্রম চালু রেখেছেন, তুমি তাঁর সাথে কুফরী করছো?" যেমন আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ কেমন করে তোমরা আল্লাহর না-শুকরী করছো? অথচ তোমরা ছিলে নির্জীব, তৎপর তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করলেন।” (২:২৮) কি করে তুমি এই মহান প্রতিপালকের সত্ত্বা ও তার নিয়ামতরাজিকে অস্বীকার করছো? তার নিয়ামতসমূহ ও তাঁর মহাশক্তির অসংখ্য নমুনা স্বয়ং তোমার মধ্যে ও তোমার উপরে বিদ্যমান রয়েছে। কোন্ অজ্ঞ এমন আছে যে, পূর্বে সে কিছুই ছিল না, আল্লাহই তাকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন, এটা সে জানে না? নিজে নিজেই হয়ে যাবার ক্ষমতা তার ছিল না। আল্লাহ তাআলাই তাকে সৃষ্টি করেছেন। সে আল্লাহ অস্বীকারের যোগ্য কেমন করে হয়ে গেলেন? তার একত্ব। ও আল্লাহত্ব কে অস্বীকার করতে পারে?মুসলমানটি তাকে আরো বললোঃ “আমি তোমার সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলছি যে, ঐ আল্লাহই আমার প্রতিপালক। তিনি এক ও অংশী বিহীন। আমার প্রতিপালকের সাথে শরীক স্থাপন করাকে আমি অপছন্দ করি। এরপর তাকে সে কল্যাণের প্রতি উৎসাহিত করার জন্যে বলেঃ “তুমি তোমার সবুজ শ্যামল শস্য ক্ষেত্র এবং ফল-মূলে পরিপূর্ণ বাগান দেখে মহান প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছো না কেন? কেন তুমি (আরবী) বলছো না?" অর্থাৎ “আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।” এই আয়াতকে সামনে রেখেই পূর্বযুগীয় কোন কোন গুরুজন বলেছেন যে, যে ব্যক্তি তার সন্তান-সন্ততি বা ধন সম্পদ অথবা অবস্থা দেখে আনন্দিত। হয়, তার এই কালেমাটি পড়ে নেয়া উচিত। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা তাঁর যে বান্দাকে কোন নিয়ামত দান করেন, পরিবারবর্গ হোক বা ধন-সম্পদ হোক অথবা পুত্র-সন্তান হোক, যদি সে উপরোক্ত কালেমাটি পাঠ করে নেয় তবে ওগুলির উপর কোন বিপদআপদ আসবে না মৃত্যু ছাড়া। (এ হাদীসটি আবু ইয়ালা মৃসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাফিয আবুল ফাতাহ (রঃ) বলেছেন যে, এই হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়) আর একটি হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের একটি কোষাগারের কথা বলবো? ঐ কোষাগার হচ্ছে (আরবী) এই কালেমাটি পাঠ করা।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে) আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এই বান্দা আমাকে মেনেছে ও আমার উপর সমর্পণ করেছে। হযরত আবু হুরাইরাকে (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “শুধমাত্র (আরবী) নয়, বরং ওটাই যা সূরায়ে কাফে রয়েছে। অর্থাৎ (আরবী) এই কালেমাটি।” এরপর মহান আল্লাহ বলেন যে, ঐ সৎ লোকটি ঐ কাফির ধনী লোকটিকে বললোঃ “আল্লাহ তাআলার কাছে আমি আশা রাখি যে, তিনি আমাকে আখেরাতের উত্তম নিয়ামত দান করবেন। আর তোমার এই বাগানটিকে তিনি ধ্বংস করে দিবেন যা তুমি চিরস্থায়ী মনে করে নিয়েছে। তিনি আকাশ হতে ওর উপর শাস্তি পাঠিয়ে দিবেন। আকাশ হতে তিনি অগ্নি বর্ষণ করবেন যার ফলে ওটা উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাবে। অথবা তিনি ওর পানি ভূ-গর্ভে অন্তর্হিত করবেন এবং তুমি কখনো ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। (আরবী) শব্দটি (আরবী) যা (আরবী) অর্থাৎ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থের আধিক্য বুঝানোর জন্যে এটাকে আনয়ন করা হয়েছে।

وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَىٰ مَا أَنْفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا

📘 Please check ayah 18:44 for complete tafsir.

وَلَمْ تَكُنْ لَهُ فِئَةٌ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مُنْتَصِرًا

📘 Please check ayah 18:44 for complete tafsir.

هُنَالِكَ الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ ۚ هُوَ خَيْرٌ ثَوَابًا وَخَيْرٌ عُقْبًا

📘 ৪২-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর: ঐ লোকটির সমস্ত মাল ধ্বংস হয়ে গেল। ঐ মু'মিন লোকটি তাকে যা থেকে ভয় প্রদর্শন করছিল তা হয়েই গেল। ধন-মাল ধ্বংস হয়ে যাবার পর সে দুঃখে হাত মলতে লাগলো এবং অকাংখা করে বললোঃ হায়! যদি আমি আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক না করতাম তবে কতই না ভাল হতো!' যেগুলির উপর সে গর্ব করতো সেগুলি ঐ সময় তার কোনই কাজে আসলো না। সন্তান-সন্ততি, কবীলা-গোত্র সব থেকে গেল। কেউই তাকে সাহায্য করতে পারলো না। তার গর্ব অহংকার মাটির সাথে মিশে গেল। না কেউ তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলো, না সে নিজে প্রতিকারে সমর্থ হলো। কেউ কেউ (আরবী) এর উপর (আরবী) বা বিরতি মেনে থাকেন এবং প্রথম বাক্যটিকে ওর সাথে মিলিয়ে নেন। অর্থাৎ সেখানে সে প্রতিশোধ নিতে পারলো না। আবার কেউ কেউ (আরবী) এর উপর আয়াত শেষ করে পর থেকে নতুন বাক্য। শুরু করেন (আরবী) শব্দটি দ্বিতীয় পঠনে (আরবী) ও রয়েছে। প্রথম পঠনে ভাবার্থ হবেঃ প্রত্যেক মু'মিন ও কাফির আল্লাহ তাআলার নিকটই প্রত্যাবর্তনকারী, তাঁর নিকট ছাড়া আর কোন আশ্রয় স্থল নেই। শাস্তির সময় তিনি ছাড়া অন্য কেউই কাজে আসবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা আমার শাস্তি দেখে বলতে লাগলোঃ আমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনছি।” (৪০:৮৪) যেমন ফিরাউন ডুবে যাওয়ার সময় বলেছিলঃ “আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনছি যার উপর বাণী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি।” ঐ সময় উত্তরে বলা হয়েছিলঃ “এখন তুমি ঈমান আনছো? অথচ ইতিপূর্বে তুমি নাফরমান ছিলে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত রয়ে গিয়েছিলে।”(আরবী) এ যের দেয়া অবস্থায় অর্থ হবেঃ ‘সেখানে সঠিকভাবে হুকুম আল্লাহর জন্যেই।' এর দ্বিতীয় কিরআত এর উপর পেশ দিয়ে রয়েছে। কেননা, এটা এর বা বিশেষণ। যেমন (আরবী) (২৫:২৬)এই জায়গায় রয়েছে। আবার কেউ কেউ (আরবী) কে যের সহ পড়ে থাকেন। তাদের মতে এটা (আরবী) এর (আরবী) বা বিশেষণ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ অর্থাৎ (আরবী) (৬:৬২) “অতঃপর তাদেরকে সেই আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি তাদের প্রকৃত ও সত্য মাওলা।"এজন্যেই আবার তিনি বলেনঃ যে আমল শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যেই হয় তার পুণ্য খুব বেশী হয় এবং পরিণাম হিসেবেও হয় খুবই উত্তম।

وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُقْتَدِرًا

📘 Please check ayah 18:46 for complete tafsir.

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا

📘 ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর: দুনিয়া নষ্ট, ধ্বংস ও শেষ হওয়ার দিক দিয়ে আকাশের বৃমিত। এই বৃষ্টি যমীনের বীজ ইত্যাদির সাথে মিলিত হয়, ফলে হাজার হাজার চারা গাছ সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে। প্রত্যেক জিনিসের উপর সজীবতার চিহ্ন পরিস্ফুট হয়, কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরই সব শুকিয়ে যায় এবং এমন চূর্ণবিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওগুলিকে ডানে বামে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। পূর্বের ঐ অবস্থার উপর যিনি সক্ষম ছিলেন, তিনি এই অবস্থার উপরও সক্ষম। সাধাণতঃ দুনিয়ার দৃষ্টান্ত বৃষ্টির সাথেই দেয়া হয়ে থাকে। যেমন সূরায়ে ইউনূসের এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত বৃষ্টিন্যায় যা আমি আকাশ হতে বর্ষণ করি।” (১০:২৪) সূরায়ে যুমারে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি কি এর প্রতি লক্ষ্য কর নাই যে, আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেছেন।" (২২:৬৩) সূরায়ে হাদীদে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা জেনে রেখো যে, (পরলোকের তুলনায়) পার্থিব জীবন তো কখনও বাঞ্ছিত হওয়ার যোগ্য নয়। কেননা, এটা তো শুধু খেলা ও তামাশা এবং (একটা বাহ্যিক) জাকজমক এবং পরস্পর একে অন্যের প্রতি আত্মগর্ব করা, আর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি সম্বন্ধে একে অন্য অপেক্ষা প্রাচুর্য বর্ণনা করা মাত্র; যেমন বৃষ্টি (বর্ষিত) হলে ওর উৎপন্ন ফল কৃষকদের ভালবোধ হয়।” (৫৭:২০)সহীহ হাদীসে আছে যে, দুনিয়ার সবুজ রঙ মিষ্ট (শেষ পর্যন্ত)।” এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুশোভিত মনে হয় মানুষের নিকট লোভনীয় বস্তুর মুহব্বত, রমণী হোক, সন্তান-সন্ততি হোক, পুঞ্জীভূত স্বর্ণ এবং রৌপ্য হোক।" (৩:১৪)। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমাদের মাল ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা স্বরূপ, আর আল্লাহ তাআলার নিকটই বড় পুরস্কার রয়েছে।” (৬৪:১৫) অর্থাৎ তারই দিকে ঝুঁকে পড়া এবং তারই ইবাদতে নিমগ্ন থাকা দুনিয়া অনুসন্ধান হতে উত্তম। এজন্যে এখানেও আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “চিরবিদ্যমান পুণ্যগুলি সবদিক দিয়েই উত্তম। যেমন পাচ ওয়াক্তের নামায (আরবী) এবং (আরবী) মুসনাদে আহমাদে রয়েছেঃ হযরত উছমানের (রাঃ) গোলাম বর্ণনা করেছে। যে, একদা হযরত উছমান (রাঃ) তাঁর সঙ্গীদের সাথে বসেছিলেন। এমন সময় মুআযযিন হাজির হন। হযরত উছমান (রাঃ) তখন পানি চেয়ে পাঠান। তখন তার কাছে একটি বরতনে তিন পোয়ামত পানি আনয়ন করা হয়। তিনি ঐ পানিতে অযু করে বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার এই অযুর মত অযু করে বলেছিলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এই অযুর মত অযু করে যুহরের নামায আদায় করবে, ফজর থেকে নিয়ে যুহর পর্যন্ত তার যত গুনাহ্ ছিল সব মাফ হয়ে যাবে। তারপর এইভাবে আসরের নামায পড়লে যুহর হতে আসার পর্যন্ত যত পাপ সব। মাফ হয়ে যাবে। এরপর অনুরূপভাবে মাগরিবের নামায পড়লে আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তারপর ঐভাবেই যদি সে এশার নামায আদায় করে, তবে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। অতঃপর রাত্রে ঘুমিয়ে যাবার পর ভোরে উঠে ফজরের নামায যদি সে পড়ে নেয় তবে এশা থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত মধ্যবর্তী সমস্ত গুনাহ তার ক্ষমা করে দেয়া হবে।" এটাই হচ্ছে এমন পুণ্য যা পাপসমূহ দূর করে দেয়।" জনগণ জিজ্ঞেস করলোঃ “হে উছমান (রাঃ)! এগুলি তো হলো পুণ্য, এখন (আরবী) কি তা আমাদেরকে বলে দিন!" তিনি উত্তরে বললেন- (আরবী) হচ্ছে নিম্ন লিখিত কালেমাগুলি পাঠ করাঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহান, আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই, যে আল্লাহ উচ্চ ও মহান।"হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়া (রঃ) বলেন যে, (আরবী) হচ্ছে হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়াব তার ছাত্র হযরত আম্মারা’কে (রঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আচ্ছা, বল তো, (আরবী) কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ “নামায ও রোযা।” হযরত সাঈদ (রঃ) তখন বলেনঃ “তোমার জবাব সঠিক হয় নাই।" তাঁর ছাত্র বললেনঃ “যাকাত ও হজ্ব।” তিনি বললেনঃ “উত্তর এখনও ঠিক হয় নাই। শুনো, ওটা হচ্ছে নীচের পাঁচটি কালেমঃ (আরবী) হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি (আরবী) ছাড়া বাকী চারটি কালেমার কথা বলেন। হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত কাদাতাও (রঃ) এই চারটি কালেমাকেই (আরবী) বলেছেন। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) হচ্ছে এই কালেমাগুলি।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জনগণকে বলেনঃ তোমরা। বেশী করো।” তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! (আরবী) কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ (আরবী) হযরত সালিম ইবনু আবদিল্লাহর (রঃ) গোলাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আবদির রহমান (রঃ) বলেনঃ আমাকে হযরত সা'লিম (রঃ) হযরত মুহাম্মদ ইবনু কা'ব কারাযীর (রঃ) কাছে কোন একটি কার্য উপলক্ষে প্রেরণ করেন। তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি সালিমকে (রঃ) বলে দেবে যে, তিনি যেন অমুক কবরের পার্শ্বে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার সাথে আমার কিছু কথা আছে। সেখানে ঐ দুজনের সাক্ষাৎ হয়। সালাম বিনিময়ের পর হযরত সালিম (রঃ) হযরত মুহাম্মদ ইবনু কা'ব কারাযীকে (রঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনার মতে (আরবী) কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ (আরবী) “হচ্ছে এই কালেমাগুলি।” হযরত সালিম (রঃ) তখন তাকে বললেনঃ “এই শেষের কালেমাটি আপনি কখন থেকে বাড়িয়ে দিয়েছেন?" উত্তরে হযরত কারাযী (রঃ) বলেনঃ “সব সময়ই আমি এই কালেমাকে গণনা করে থাকি।” দু'বার বা তিনবার এই প্রশ্ন ও উত্তরের আদান-প্রদান হয়। অবশেষে হযরত মুহাম্মদ ইবনু কা'ব (রঃ) হযরত সালিমকে (রঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি এই কালেমাটিকে অস্বীকার করছেন?" জবাবে হযরত সা'লিম (রঃ) বলেনঃ “হাঁ, আমি অস্বীকারই করছি বটে।” তখন তিনি বলেনঃ হলে শুনুন! আমি হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর (রাঃ) নিকট থেকে শুনেছি এবং তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “যখন আমাকে মি'রাজ করানো হয় তখন আমি অকিাশে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) দেখতে পাই। তিনি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনার সাথে ইনি কে? তিনি জবাবে বলেনঃ “ইনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। তিনি তখন আমাকে মারহাবা বলে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং আমাকে বললেনঃ “আপনি আপনার উম্মতকে বলুন যে, তারা যেন জান্নাতে নিজেদের জন্যে বহু কিছুর বাগান তৈরী করেন। ওর মাটি পবিত্র এবং ওর যমীন খুবই প্রশস্ত।” আমি প্রশ্ন করলামঃ সেখানে বাগান তৈরীর উপায় কি?" জবাবে তিনি বললেনঃ “তারা যেন (আরবী) এই কালেমাটি খুব বেশী বেশী করে পাঠ করে।” হযরত নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাত্রে এশার নামাযের পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট আগমন করেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি দৃষ্টি নীচের দিকে নামিয়ে দেন। আমরা ধারণা করলাম যে, হয়তো আকাশে নতুন কিছু ঘটেছে। অতঃপর তিনি বলেনঃ “আমার পরে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী বাদশাহদের আবির্ভাব ঘটবে। যারা তাদের মিথ্যাকে সত্যায়িত করবে এবং তাদের জুলুমের কাজে তাদের পক্ষপাতিত্ব করবে তারা আমার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। আর যারা তাদের মিথ্যাকে সত্যায়িত করবে না এবং তাদের জুলুমের কাজে তাদের পক্ষপাতিত্ব করবে না তারা আমার অন্তর্ভুক্ত এবং আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। হে জনমণ্ডলী! তোমরা জেনে রেখো যে, (আরবী) এই কালেমাগুলি হলো অর্থাৎ চিরস্থায়ী ও চির বিদ্যমান পুণ্য। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বাঃ! বাঃ! এমন পাঁচটি কালেমা রয়েছে যেগুলি মীযানে বা দাড়িপাল্লায় খুবই ওজন সই হবে। সেগুলি হচ্ছেঃ (আরবী) এবং ঐ শিশু যার মৃত্যুতে তার পিতা ধৈর্য ধারণ করেছে ও পুরস্কার কামনা করেছে। বাঃ! বাঃ! পাঁচটি জিনিস এমন রয়েছে যে, যারা ঐ গুলির উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করবে তারা নিঃসন্দেহে জান্নাতী। সেগুলি হচ্ছে এই যে, তারা বিশ্বাস রাখবে কিয়ামত দিবসের উপর, জান্নাতের উপর, জাহান্নামের উপর, মৃত্যুর পর পুনর্জীবনের উপর এবং হিসাবের উপর।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, হযরত শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) এক সফরে ছিলেন। কোন এক জায়গায় অবতরণ করে স্বীয় গোলামকে বলেনঃ “ছুরি আন, খেলা করি।”হাসান ইবনু আতিয়া (রাঃ) বলেনঃ আমি তখন বললামঃ আপনি এটা কি কথা বললেন? জবাবে তিনি বললেনঃ “সত্যিই, আমি এটা ভুলই করেছি। জেনে রেখো, যে ইসলাম গ্রহণের পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আমার মুখ দিয়ে এমন কোন একটি কথা বের করি নাই যা আমার জন্যে লাগাম হয়ে যায়, শুধু এই একটি কথা ছাড়া। সুতরাং তোমরা এটা মন থেকে মুছে ফেল এবং আমি এখন যা বলছি তা মনে রেখো। আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “যখন মানুষ স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করতে উঠেপড়ে লেগে যাবে; তখন তোমরা নিম্নের কালেমাগুলি খুব বেশী পাঠ করবেঃঅর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিজের কাজের উপর স্থিরতা, পুণ্য কাজের প্রতি দৃঢ় সংকল্প ও আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক প্রার্থনা করছি এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করার তাওফীক কামনা করছি। আপনার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে প্রশান্ত অন্তর ও সত্যবাদী যবান দান করুন! আপনার জ্ঞানে যা ভাল আমি তাই কামনা করছি এবং আপনার জ্ঞানে যা মন্দ তার থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি এমন মন্দ হতে আপনার নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি যা আপনি মন্দ বলে জানেন, নিশ্চয় আপনি অদৃশ্যের খবর খুব ভালভাবেই জানেন।” (এটাও ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত সা'দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বলেনঃ “আহলে তায়েফের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি নবীর (সঃ) খিদমতে হাযির হই। আমার বাড়ী হতে আমি সকাল সকালই বেরিয়ে পড়ি এবং আসরের সময় মিনায় পৌছে যাই। পাহাড়ের উপর চড়ি এবং নেমে আসি। তারপর রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট হাযির হই এবং ইসলাম গ্রহণ করি। তিনি আমাকে সুরায়ে (আরবী) ও (আরবী) শিখিয়ে দেন এবং নিম্নের কালেমা গুলির তালীম দেনঃ (আরবী) এবং বলেনঃ “এগুলো হলো চিরস্থায়ী পুণ্য।” এই সনদেই বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি রাত্রে উঠে অযু করে, কুল্লী করে, অতঃপর এক শ বার (আরবী) পাঠ করে তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। শুধু কাউকে হত্যা করার অপরাধ মাফ হয় না। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) হলো আল্লাহ তাআলার যিক্র এবং নিম্নের কালেমাগুলিঃ (আরবী) আর রোযা, নামায, হজ্ব, সাদা গোলাম আযাদ করা, জিহাদ করা, সিলারহমী করা এবং সমস্ত পুণ্যের কাজ হচ্ছে (আরবী) বা চিরস্থায়ী পূণ্য। এগুলির সওয়াব জান্নাতবাসীদেরকে তাদের দুনিয়ায় জীবিত থাকা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা পৌঁছাতে থাকবেন। বলা হয়েছে যে, পবিত্র কথাও এর অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, সমস্ত সৎকাজই এর অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন।

وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا

📘 Please check ayah 18:49 for complete tafsir.

وَعُرِضُوا عَلَىٰ رَبِّكَ صَفًّا لَقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّنْ نَجْعَلَ لَكُمْ مَوْعِدًا

📘 Please check ayah 18:49 for complete tafsir.

وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

📘 ৪৭-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন। সেই দিন যে সব বিস্ময়কর বড় বড় কাজ সংঘটিত হবে, তিনি সেগুলি বর্ণনা করছেন। সেই দিন আকাশ ফেটে যাবে এবং পাহাড়-পর্বত উড়তে থাকবে যদিও তোমরা একে জমাটবদ্ধ দেখতে পাচ্ছ, কিন্তু ঐ দিন তা মেঘমালার মত দ্রুতবেগে চলতে থাকবে এবং ধূনো তুলোর মত হয়ে যাবে। যমীন সম্পূর্ণরূপে সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। তাতে কোন উঁচু-নীচু থাকবে না। এই যমীনে না থাকবে কোন বাড়ীঘর, না থাকবে কোন ছাউনি। কোন আড়াল ছাড়াই সমস্ত সৃষ্টজীব মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে হয়ে যাবে। কেউই তার থেকে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। কোথাও কোন আশ্রয়স্থল ও মাথা লুকানোর জায়গা থাকবে না। কোন গাছ-পালা, পাথর ও তৃণ-লতা দেখা যাবে না। প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত যত লোক রয়েছে সবাই একত্রিত। হবে। ছোট বড় কেউই অনুপস্থিত থাকবে না। সমস্ত লোক আল্লাহ তাআলার সামনে সাবিরুদ্ধভাবে দাড়িয়ে যাবে। রূহ ও ফেরেশতামণ্ডলী কাতারবন্দি হয়ে দাড়াবেন। কারো কোন কথা বলার সাহস হবে না। একমাত্র তারাই কথা বলতে পারবেন যাদেরকে আল্লাহ কথা বলার অনুমতি দান করবেন এবং তারাও সঠিক কথাই বলবেন। সেদিন সমস্ত মানুষের সারি একটি হবে অথবা তারা কয়েকটি সারিতে বিভক্ত হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক আসবেন এবং ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে আসবে।” কিয়ামতকে যারা অস্বীকার করতো তাদেরকে সেইদিন ধমকের সূরে বলা হবেঃ দেখো, যেমন ভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, তেমনিভাবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করে আমার সামনে দাড় করিয়েছি। তোমরা তো এটা অস্বীকার করতে? আমলনামা তাদের সামনে হাজির করে দেয়া হবে, যাতে ছোট বড়, প্রকাশ্য ও গোপনীয় সমস্ত আমল লিপিবদ্ধ থাকবে। পাপীরা তাদের দুষ্কর্মগুলি দেখে ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে এবং অত্যন্ত আফসোস করে বলবেঃ হায়! আমরা আমাদের জীবন ও আয়ুকে কি অবহেলায় না কাটিয়ে দিয়েছিলাম। বড়ই অনুতাপ যে, আমরা দুনিয়ায় শুধু দুষ্কার্যেই লিপ্ত থাকতাম। দেখো, এমন কোন কাজ নেই যা এই কিতাবে (আমলনামায়) লিখা পড়ে নাই। বরং ছোট-বড় সমস্ত গুনাহর কাজ এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ বলেনঃ “হুনায়েনের যুদ্ধ শেষে আমরা। মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলাম। পথিমধ্যে এক ময়দানে আমরা সওয়ারী হতে অবতরণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে বলেনঃ “যাও লাকড়ি, খড়ি, ডাল-পাতা, কঞ্চি, ছিটকি যা পাবে কুড়িয়ে নিয়ে এসো।” আমরা এদিক ওদিক ছুটে পড়লাম এবং ডাল, পাতা, কাঁটা খোচ, লাকড়ি, যা কিছু কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম এবং এগুলোর একটি বড় ঢেরি হয়ে গেল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এই ভাবেই গুনাহ্ জমা হয়ে ঢেরি হয়ে যায়। আল্লাহকে তোমরা ভয় করতে থাকো এবং ছোট বড় গুনাহ হতে পরহেয করো। সবই লিখে নেয়া হচ্ছে ও গণনা করা হচ্ছে। ভাল মন্দ যে যা কিছু করেছে তা সে বিদ্যমান পাবে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) যেমন (আরবী) ও (আরবী) এসব আয়াতে রয়েছে। অর্থাৎ সেই দিন গোপনীয় সবকিছুই প্রকাশিত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে কিয়ামতের দিন একটি পতাকা থাকবে। এই পতাকা হবে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা অনুযায়ী, এর দ্বারা তারা পরিচিত হবে। অন্য হাদীসে আছে যে, ঐ ঝাণ্ডাটি তার উরুর পার্শ্বে থাকবে এবং ঘোষণা করা হবেঃ “এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা।মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি জুলুম করেন না। ক্ষমা ও মাফ করে দেয়া তার বিশেষণ। হাঁ, তবে পাপী ও অপরাধীদেরকে তিনি স্বীয় ক্ষমতা, নিপুণতা এবং আদল ও ইনসাফের সাথে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।” অপরাধী ও অবাধ্য লোকদের দ্বারা জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর কাফির ও মুশরিকরা ছাড়া মু'মিনরা পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা এক অনু পরিমাণও অন্যায় করেন না। তিনি পুণ্যকে বৃদ্ধি করে দেন এবং পাপকে সমান রাখেন। ন্যায়ের দাড়িপাল্লা সেদিন সামনে থাকবে। কারো সাথে কোন দুর্ব্যবহার করা হবে না।হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে একটি হাদীস শুনেছেন এই খবর অামার কাছে পৌঁছে। ঐ হাদীসটি আমি স্বয়ং তার মুখে শুনবার উদ্দেশ্য একটি উট ক্রয় করি এবং ওর উপর আসবাবপত্র উঠিয়ে নিয়ে সফরে বেরিয়ে পড়ি। সুদীর্ঘ এক মাসের ভ্রমণের পর সন্ধ্যার সময় আমি তাঁর কাছে পৌঁছি। সেখানে পৌঁছে জানতে পারি যে, তিনি হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উনায়েস (রাঃ)। আমি দারওয়ানকে বললামঃ যাও, তাকে খবর দাও যে, যাবির (রাঃ) দরবার উপর পঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি খবর পেয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “জাবির ইবনু আবদিল্লাহ কি?” আমি উত্তরে বললামঃ জ্বি, হাঁ। এটা শোনা মাত্রই তিনি গায়ের চাদর ঠিক করতে করতে তড়িৎ গতিতে আমার কাছে ছুটে আসলেন। এসেই তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মুআনাকার (কাধে কাধ মেলানোর পর আমি তাকে বললামঃ “আমি খবর পেয়েছি যে, আপনি কিসাসের ব্যাপারে কোন একটি হাদীস রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছেন। আমি স্বয়ং আপনার মুখে ঐ হাদীসটি শুনবার উদ্দেশ্য এখানে এসেছি এবং খবর শোনা মাত্রই আমি সফর শুরু করেছি এই ভয়ে যে, এই হাদীসটি শুনবার পূর্বেই হয়তো আমি মৃত্যুবরণ করি অথবা আপনার মৃত্যু হয়ে যায়। এখন আপনি আমাকে ঐ হাদীসটি শুনিয়ে দিন। তিনি তখন বলতে শুরু করলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার সমস্ত বান্দাকে তার সামনে একত্রিত করবেন। ঐ সময় তারা উলঙ্গ দেহ ও খৎনাহীন অবস্থায় থাকবে। তাদের কাছে কোনই আসবাবপত্র থাকবে না। তারপর তাদের সামনে ঘোষণা করা হবে যে, ঘোষণা নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবাই সমানভাবে শুনতে পাবে। মহান আল্লাহ বলবেনঃ “আমি মালিক। আমি বিনিময় প্রদানকারী। ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাহান্নামী জাহান্নামে যাবে না যতক্ষণ না আমি তার ঐ হক আদায় করে না দেবো যা কোন জান্নাতীর জিম্মায় রয়েছে। আর কোন জান্নাতীও জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার ঐ প্রাপ্য আদায় করে দেবো যা কোন জাহান্নামীর যিম্মায় রয়েছে। ঐ হক বা প্রাপ্য যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন।" আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা সবাই তো সেদিন উলঙ্গ দেহ ও মালধন শূন্য অবস্থায় থাকবে, এ অবস্থায় কেমন করে প্রাপ্য আদায় করা। হবে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ (যেভাবেই হোক না কেন), সেই দিন পুণ্যবান ও পাপীদের নিকট থেকে হক বা প্রাপ্য আদায় করে নেয়া হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন শিং বিহীন বকরীকে যদি কোন শিং বিশিষ্ট বকরী শিং দ্বারা গুঁতো মেরে থাকে তবে তার থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করিয়ে দেয়া হবে। এর আরো বহু প্রমাণ রয়েছে। যেগুলি আমরা (আরবী) (২১:৪৭) এই আয়াতের তাফসীরে এবং (আরবী) (৬:৩৮) এই আয়াতের তাফসীরে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।

مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا

📘 সূরার ফজীলত বিশেষ করে প্রথম দশটি আয়াতের ফজীলতের বর্ণনা এবং সূরাটি যে দাজ্জালের ফিৎনা হতে রক্ষাকারী তার বর্ণনা।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন সাহাবী এই সূরাটি পাঠ করতে শুরু করেন। তাঁর বাড়ীতে একটি জন্তু ছিল, সে লাফাতে শুরু করে। সাহাবী গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করে সামিয়ানার মত এক খণ্ড মেঘ দেখতে পান যা তাঁর উপর ছায়া করে রয়েছে। তিনি এটা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি এটা পাঠ করতে থাকো। এটা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে ঐ ‘সাকীনা' যা কুরআন পাঠের সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এই রিওয়াইয়াতটি রয়েছে। এই সাহাবী ছিলেন হযরত উসায়েদ ইবনু হুযায়ের (রাঃ), যেমন সূরায়ে বাকারার তাফসীরে আমরা বর্ণনা করেছি।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সূরায়ে কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ, করে তাকে দাজ্জালের ফিত্রা হতে রক্ষা করা হয়; জামে তিরমিযীতে তিনটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে শেষ দশটি আয়াতের বর্ণনা আছে। সুনানে নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সূরায়ে কাহফের প্রথম ও শেষ আয়াত পাঠ করে, তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত নূর হবে। আর যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ সূরাটি পড়বে সে যমীন হতে আসমান পর্যন্ত নূর লাভ করবে। একটি গারীব বা দুর্বল সনদে ইবনু মীরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জুমআর দিন যে ব্যক্তি সূরায়ে কাহফ পাঠ করবে সে তার পায়ের নীচ থেকে নিয়ে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর লাভ করবে। ওটা কিয়ামতের দিন খুবই উজ্জ্বল হবে এবং পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এই হাদীসের মর’ হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এর মাওকুফ হওয়টাই সঠিক কথা।হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরায়ে কাহফ পাঠ করে তার পার্শ্ব থেকে নিয়ে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যায়।মুসতাদরিকে হাকিমে মারফু রূপে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরায়ে কাহফ পড়ে তার জন্যে দুই জুমআর মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে থাকে।ইমাম বায়হাকীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সূরায়ে কাফকে ঐ ভাবে পড়বে যেভাবে তা নাযিল হয়েছে, তার জন্যে কিয়ামতের দিন জ্যোতি হয়ে যাবে।হাফিয যিআ' মুকাদ্দাসীর (রঃ) কিতাবুল মুখতারা’ গ্রন্থে আছে যে, যেই ব্যক্তি জুমআর দিন সূরায়ে কাহফ পাঠ করবে সে আট দিন পর্যন্ত সমস্ত ফিৎনা ফাসাদ হতে নিরপিত্তা লাভ করবে। এমন কি যদি এই সময়ের মধ্যে দাজ্জালও এসে পড়ে তবে তারও ফিন্যা হতে তাকে রক্ষা করা হবে। ১-৫ নং আয়াতের তাফসীর: আমরা পূর্বেই এটা বর্ণনা করে দিয়েছি যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ের শুরুতে ও শেষে তার প্রশংসা করে থাকেন। সর্বাবস্থাতেই তিনি তা’রীফ ও প্রশংসার যোগ্য। প্রথমে ও শেষে প্রশংসার যোগ্য একমাত্র তিনিই। তিনি স্বীয় নবীর (সঃ) উপর কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন যা তার একটি বড় নিয়ামত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সমস্ত বান্দা অন্ধকার হতে। বেরিয়ে আলোকের দিকে আসতে পারে। এই কিতাবকে তিনি ঠিকঠাক, সোজা ও সঠিক রেখেছেন। এতে কোনই বক্রতা নেই এবং নেই কোন ত্রুটি। এটা যে সরল ও সঠিক পথ প্রদর্শন করে এটা স্পষ্ট, পরিষ্কার ও প্রকাশমান। এই কিতাব অসৎ লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন করে এবং সৎলোকদেরকে শুভসংবাদ দেয়। এটা বিরুদ্ধাচরণকারী ও প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে ভয়াবহ শাস্তির খবর দেয়, যে শাস্তি আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে। দুনিয়াতেও হবে এবং আখেরাতেও হবে। এমন শাস্তি যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। যারা এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, ঈমান আনবে এবং আমল করবে, এই কিতাব তাদেরকে মহাপুরস্কারের সুসংবাদ শুনাচ্ছে। যে পুরস্কার হলো চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর, যা তারা জান্নাতে প্রাপ্ত হবে, যা কখনো ধ্বংস হবে না এবং যার নিয়ামতরাশি চিরকাল থাকবে।এই কিতাব ঐ লোকদেরকে ভীষণ শাস্তি হতে সর্তক করছে যারা বলছে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে। যেমন মক্কার মুশরিকরা বলতো যে, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা (নাউযু বিল্লাহি মিন্যালিকা)। না জেনে শুনেই তারা মুখ দিয়ে একথা বলে ফেলতো। তারা তো দূরের কথা, তাদের বড়রাও এরূপ কথা বলতে থেকেছে।(আরবী) শব্দের উপর যবর দেয়া হিসেবে (আরবী)। বাকপদ্ধতির গঠন হবে (আরবী) এইরূপ। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, শব্দের দেয়া হয়েছে হিসেবে। তখন ইবারতের গঠন হবে (আরবী) এইরূপ। যেমন বলা হয় (আরবী) অর্থাৎ যায়েদ মানুষ হিসেবে কতই না সম্মানিত। বসরাবাসী কারো কারো উক্তি এই যে, কোন কোন কারী এটাকে (আরবী) পড়েছেন। যেমন-বলা হয় (আরবী) অর্থাৎ তোমার কথা বিরাট হয়েছে এবং তোমার শান শওকত বড় হয়েছে। জমহুরের কিরআতে তো অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশমান যে, তাদের কথা যে খুবই মন্দ ও জঘন্য, তারই এখানে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যা মিথ্যা ও অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। এজন্যেই বলা হয়েছে। যে, তারা শুধু মিথ্যা বলে।এই সূরার শানে নুযূল এই যে, কুরায়েশরা নাযার ইবনু হারিস ও উকবা’ ইবনু মুঈতকে মদীনার ইয়াহুদী আলেমদের নিকট পাঠিয়ে দেয় এবং তাদেরকে বলেঃ “তোমরা তাদের কাছে গিয়ে তাদের সামনে মুহাম্মদের (সঃ) সমস্ত অবস্থা বর্ণনা করবে। পূর্ববর্তী নবীদের সম্পর্কে তাদের জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে তাদের মতামত কি তা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে।” এই দু’জন তখন মদীনার ইয়াহূদী আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাদের সামনে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) অবস্থা ও গুণাবলী বর্ণনা করে, তারা এদেরকে বলেঃ “দেখো, আমরা তোমাদেরকে একটা মীমাংসাযুক্ত কথা বলছি। তোমরা ফিরে গিয়ে তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করবে। যদি তিনি উত্তর দিতে পারেন, তবে তিনি যে সত্য নবী এতে কোন সন্দেহ নেই। আর যদি উত্তর দিতে না পারেন, তবে তার মিথ্যাবাদী হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকবে না। তখন তোমরা তার ব্যাপারে যা ইচ্ছা করতে পার।” তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ “পূর্বযুগে যে যুবকগণ বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন তো? এটা একটা বিস্ময়কর ঘটনা তারপর তাকে ঐ ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস করবে যিনি সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি পূর্ব প্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে এসেছিলেন। আর তাকে তোমরা রূহের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি তিনি এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারেন, তবে তোমরা তাকে নবী বলে স্বীকার করে নিয়ে তার অনুসরণ করবে। আর যদি উত্তর দিতে না পারেন তবে জানবে যে, তিনি মিথ্যাবাদী। সুতরাং যা ইচ্ছা তা-ই করবে।" এরা দু’জন মক্কায় ফিরে গিয়ে কুরায়েশদেরকে বলেঃ“শেষ ফায়সালার কথা ইয়াহূদী আলেমগণ বলে দিয়েছেন। সুতরাং চল আমরা তাকে প্রশ্নগুলি করি।” অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে এবং তাঁকে ঐ তিনটি প্রশ্ন করে। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা আগামী কাল এসো, আমি তোমাদের এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিবো।” কিন্তু তিনি ইনশা আল্লাহ (আল্লাহ চান তো) বলতে ভুলে যান। এরপর পনেরো। দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, কিন্তু তাঁর কাছে না কোন ওয়াহী আসে, না আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁকে এই প্রশ্নগুলির জবাব জানিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে মক্কাবাসী ফুলে ওঠে এবং পরস্পর বলাবলি করেঃ “দেখো, কালকার ওয়াদা ছিল, আর আজ পনেরো দিন কেটে গেল, তবুও সে জবাব। দিতে পারলো না।" এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিগুণ দুঃখে জর্জরিত হতে লাগলেন। একতো কুরায়েশদেরকে জবাব দিতে না পারায় তাদের কথা শুনতে হচ্ছে, দ্বিতীয়তঃ ওয়াহী আসা বন্ধ হয়েছে। এরপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং সূরায়ে কাহফ অবতীর্ণ হয়। এতেই ইনশা আল্লাহ না বলায় তাঁকে ধমকানো হয়, ঐ যুবকদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়, ঐ ভ্রমণকারীর বর্ণনা দেয়া হয় এবং রূহের ব্যাপারে জবাব দেয়া হয়।

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ۗ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا

📘 মহান আল্লাহ বলছেনঃ ইবলীস তোমাদের এমনকি তোমাদের মূল পিতা হযরত আদমেরও (আঃ) প্রাচীন শত্রু। সুতরাং নিজেদের সৃষ্টিকর্তা ও মালিককে ছেড়ে তার অনুসরণ করা তোমাদের জন্যে মোটেই সমীচীন নয়। আল্লাহর অনুগ্রহ, দয়া ও স্নেহ-মমতার প্রতি লক্ষ্য কর যে, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে প্রতিপালন করেছেন। সুতরাং তাকে ছেড়ে তার এবং তোমাদের নিজেদেরও শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা কত সাংঘাতিক ও মারাত্মক ভুল! এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বাকারার শুরুতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রকাশার্থে সমস্ত ফেরেশতাকে তার সামনে সিজদাবনত হওয়ার নির্দেশ দেন। সবাই হুকুম পালন করে কিন্তু ইবলীসের মূল ছিল খারাপ, তাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই সে মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং পাপাচারী হয়ে যায়। ফেরেশতাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয় নূর (জ্যোতি) থেকে, ইবলীস সৃষ্ট হয় অগ্নিশিখা হতে, আর আদমকে (আঃ) যা থেকে সৃষ্টি করা হয় তার বর্ণনা তোমাদের সামনে পেশ করে দেয়া হয়েছে। এটা প্রকাশ্য ব্যাপার যে, প্রত্যেক জিনিসই তার মূলের উপর এসে থাকে। ইবলীস যদিও ফেরেশতাদের মতই আমল করছিল এবং তাদের সাথেই সাদৃশ্যযুক্ত ছিল আর আল্লাহর ইবাদতের কাজে দিনরাত নিমগ্ন ছিল, কিন্তু আল্লাহর ঐ নির্দেশ শোনা মাত্রই তার আসল রূপ ফুটে উঠলো। সুতরাং সে অহংকার করলো এবং পরিষ্কারভাবে আল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করে বসলো। তার সৃষ্টিই তো ছিল আগুন থেকে। যেমন সে নিজেই বলেছেঃ “আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।” ইবলীস কখনই ফেরশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে হচ্ছে জ্বিনদের মূল, যেমন হযরত আদম (আঃ) হলেন মানুষের মূল।এটাও বর্ণিত আছে যে, এই জ্বিনেরাও ছিল ফেরেশতাদের একটি শ্রেণী, যাদেরকে তেজ আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইবলীসের নাম ছিল হারত। সে ছিল জান্নাতের দারোগা। এই দলটি ছাড়া অন্যান্য ফেরেশতারা ছিল নূরী (জ্যোতির্ময়)। জ্বিনের অগ্নিশিখা দ্বারা সৃষ্ট ছিল।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইবলীস সম্রান্ত ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সে ছিল সম্রান্ত গোত্রভুক্ত। জান্নাত সমূহের সে দারোগা ছিল। সে ছিল দুনিয়ার আকাশের বাদশাহ। যমীনেরও সম্রাট সে-ই ছিল। এ কারণেই তার মনে অহংকার এসে গিয়েছিল যে, সে সমস্ত আকাশবাসী হতে শ্রেষ্ঠ। তার সেই অহংকার বেড়েই চলছিল। এর সঠিক পরিমাণ আল্লাহ তাআলাই জানতেন। সুতরাং এটা প্রকাশকরণার্থেই তিনি হযরত আদমকে (আঃ) সিজ্বদা করার তাকে নির্দেশ দেন। সাথে সাথেই তার অহংকার প্রকাশ পেয়ে যায়। অহংকার বশতঃই সে স্পষ্টভাবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে এবং কাফির হয়ে যায়। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সে জ্বিন ছিল এবং জান্নাতের দারোগা ছিল; যেমন লোকদেরকে শহরের দিকে সম্পর্ক লাগিয়ে বলা হয়-মক্কী, মাদানী, বসরী, কূফী ইত্যাদি। সে জান্নাতের খাজাঞ্চি ছিল। সে ছিল দুনিয়ার আকাশের কামান বাহক। এখানকার ফেরেশতাদের সে ছিল নেতা। এই অবাধ্যাচরণের পূর্বে সে ফেরেশতাদের • অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু থাকতো সে যমীনে। সমস্ত ফেরেশতা অপেক্ষা সে ছিল। বেশী ইবাদতকারী এবং সবচেয়ে বড় আলেম। একারণেই সে গর্বে ফুলে উঠেছিল। তার গোত্রের নাম ছিল জুিন। আসমান ও যমীনের মাঝে সে চলাফেরা করতো। প্রতিপালকের নাফরমানীর কারণে সে তার রোষানলে পতিত হয়। ফলে সে বিতাড়িত শয়তান হয়ে যায় এবং অভিশপ্ত হয়। সুতরাং অহংকারীর তাওবার কোন আশা নেই। তবে, যদি সে অহংকারী না হয় এবং তার দ্বারা কোন পাপকার্য হয়ে যায় তা হলে তার নিরাশ হওয়া উচিত নয়।বর্ণিত আছে যে, যারা জান্নাতের মধ্যে কাজকাম করতো, এই ইবলীস ছিল তাদের দলভুক্ত। পূর্বযুগীয় গুরুজন হতে এ ব্যাপারে আরো বহু ‘আছার’ বর্ণিত আছে। কিন্তু এগুলির অধিকাংশই বানী ইসরাঈলী ‘আছার’। এর অধিকাংশের সঠিক অবস্থা আল্লাহ তাআলাই অবগত রয়েছেন। এটা সত্য কথা যে, বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াতগুলি সম্পূর্ণরূপে খণ্ডন ও পরিত্যাগ যোগ্য হবে যদি ওগুলি আমাদের কাছে বিদ্যমান দলীলগুলির বিপরীত হয়। কথা এই যে, আমাদের জন্যে তো কুরআনই যথেষ্ট। পূর্বের কিতাবগুলি আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। আমরা ওগুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে অভাবমুক্ত। কেননা ওগুলি পরিবর্তন ও পরিবর্ধন মুক্ত নয়। বহু বানানো কথা ওগুলির মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে এমন কোন লোক পাওয়া যায় না, যারা উচ্চমানের হাফিয, যারা ঐ সব কিতাবকে দোষমুক্ত করতে পারে। পক্ষান্তরে মহামহিমান্বিত আল্লাহ এই উম্মতের মধ্যে স্বীয় ফল ও করমে এমন ইমাম, আলেম, বুযুর্গ, খোদাভীরু ও হাফিযের জন্ম দিয়েছেন যারা হাদীসগুলিকে জমা করে লিপিবদ্ধ করেছেন। তারা সহীহ হাসান, যঈফ, মুনকার, মাতরূক, মাওযূ' ইত্যাদি সবগুলিকেই পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। তারা তাদেরকেও ছাটাই করে পৃথক করে দিয়েছেন। যারা নিজেরাই কথা বানিয়ে নিয়ে হাদীস নামে প্রচার করেছে। যাতে নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফার (সঃ) পবিত্র ও বরকতময় কথাগুলি রক্ষিত হয় এবং মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকে। কারো যেন সাধ্য না হয় মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করে দেয়। আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন এই শ্রেণীর সমস্ত লোকের উপর স্বীয় করুণা বর্ষণ করেন এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন ও তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখেন! আমীন, আমীন! আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন! আর তারা নিঃসন্দেহে এরই যোগ্য বটে। সুতরাং তিনি তাদের প্রতি খুশী থাকুন ও তাদেরকে খুশী করুন!মোট কথা, ইবলীস আল্লাহর আনুগত্য হতে বেরিয়ে গেল। সুতরাং হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো না এবং আমাকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিয়ো না। অত্যাচারী ও সীমালংঘনকারীরা মন্দ প্রতিফল পাবে। এটা ঠিক ঐরূপ যেইরূপভাবে সূরায়ে ইয়াসীনে কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের এবং পাপী ও পুণ্যবানদের পরিণাম বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবী) “হে অপরাধীরা আজ তোমরা (মু'মিনগণ হতে) পৃথক হয়ে যাও।” (৩৬:৫৯)

۞ مَا أَشْهَدْتُهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنْفُسِهِمْ وَمَا كُنْتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا

📘 মহান আল্লাহ মানবমণ্ডলীকে সম্বোধন করে বলছেনঃ আল্লাহ ছাড়া যাকে যাকে তোমরা তোমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা তোমাদের মতই আমার গোলাম। তাদের কোন কিছুরই মালিকানা নেই। আকাশমণ্ডলী ও পথিবীর সষ্টিকালে আমি তাদেরকে আহবান করি নাই। বরং তারা নিজেরাই সেই সময় বিদ্যমান ছিল না; সমস্ত কিছু একমাত্র আমিই সৃষ্টি করেছি। সবকেই আমিই পরিচালনা করে থাকি। আমার কোন অংশীদার, উযীর ও পরামর্শদাতা নেই। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যাদেরকে তোমরা নিজেদের ধারণায় কিছু একটা মনে করে রেখেছে তাদের সকলকেই আল্লাহ ব্যতীত ডেকে দেখো। জেনে রেখো যে, আসমান ও যমীনে তাদের কারো এক অনুপরিমাণও অধিকার ও মালিকানা নেই, না তাদের কেউ আল্লাহর অংশীদার, না তাঁরা সাহায্যকারী, না তাদের কেউ আল্লাহর কাছে তার অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে শাফাআত করতে পারে।" (৩৪:২২) মহান আল্লাহ বলেনঃ আমার জন্যে এটা শোভনীয়ও নয় এবং আমার কোন প্রয়োজনও নেই যে, তাদেরকে এবং বিশেষ করে বিভ্রান্তকারীদেরকে নিজের বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।

وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا

📘 Please check ayah 18:53 for complete tafsir.

وَرَأَى الْمُجْرِمُونَ النَّارَ فَظَنُّوا أَنَّهُمْ مُوَاقِعُوهَا وَلَمْ يَجِدُوا عَنْهَا مَصْرِفًا

📘 ৫২-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর: সমস্ত মুশরিককে কিয়ামতের দিন লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে সবারই সামনে বলা হবেঃ আজ তোমরা তোমাদের ঐ শরীকদেরকে আহবান কর যাদেরকে দুনিয়ায় আহবান করতে, যাতে তারা তোমাদেরকে আজকের বিপদ হতে রক্ষা করে। তারা তখন আহবান করবে, কিন্তু কোন সাড়া পাবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এভাবে তোমাদেরকে একক ভাবে এনেছি যেমন ভাবে তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। দুনিয়ায় আমি তোমাদেরকে যা কিছু দিয়ে রেখেছিলাম সে সবগুলি তোমরা তোমাদের পিছনে ছেড়ে এসেছে। আজ তো আমি তোমাদের সাথে তোমাদের ঐ সব শরীককে দেখছি না যাদেরকে তোমরা আল্লাহর শরীক বানিয়ে রেখেছিলে এবং বিশ্বাস রেখেছিলে যে, তারা তোমাদের জন্যে শাফাআত করবে। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে।” (৬:৯৪) অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “বলা হবে তোমাদের দেবতাগুলিকে আহ্বান কর। তারা তখন আহ্বান করবে কিন্তু তারা তাদের আহ্বানে কোন সাড়া দেবে।” (২৮ :৬৪) এই বিষয়েরই আয়াত। হতে দু’আয়াত পর্যন্ত। সূরায়ে মারইয়ামে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা। আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ গ্রহণ করে নিয়েছে এই জন্যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয় না, এই ধারণা অবাস্তব, তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে ও তাদের বাতিল মাবুদের মধ্যে পর্দা ও ধ্বংসের গর্ত বানিয়ে দেবো; যেন তারা পরস্পর মিলিত হতে না পারে। যেন সুপথ প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্টরা পৃথক পৃথক ভাবে থাকে। জাহান্নামের এই উপত্যকা তাদেরকে পরস্পরে মিলিত হতে দেবে না। বর্ণিত আছে যে, এটা হবে রক্ত ও পূজের উপত্যকা। তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা হয়ে যাবে। বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এর দ্বারা ধ্বংস উদ্দেশ্য। আবার এটাও হতে পারে যে, এর দ্বারা জাহান্নামের কোন উপত্যকাকে বুঝানো হয়েছে। কিংবা প্রভেদ ও ব্যবধান সষ্টিকারী অন্য কোন উপত্যকা হবে। উদ্দেশ্য এই যে, ঐ উপাস্যরা ঐ উপাসকদেরকে জবাব পর্যন্ত দিবে না। তাদের পরস্পরের মধ্যে মিলনও ঘটবে না। কেননা, তাদের মাঝে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি ঐ মুশরিক ও মুসলমানদের মাঝে আড়াল করে দেবে। যেমন- (আরবী) (৩০:১৪) (আরবী) ও (৩০:৪৩) এবং (আরবী) ইত্যাদি আয়াতসমূহে রয়েছে। এই পাপী ও অপরাধীরা এমন অবস্থায় জাহান্নাম দেখবে যে, সত্তর হাজার লাগামে তারা আবদ্ধ থাকবে। প্রত্যেক লাগামের উপর সত্তর হাযার করে ফেরেশতা থাকবে। দেখেই তারা বুঝতে পারবে যে, ওটাই তাদের কয়েদখানা। জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বেই তাদের উপর কঠিন বিপদ, দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে। এগুলো হবে প্রকৃত শাস্তির পর্বের শাস্তি। কিন্তু তারা তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। হাদীস শরীফে আছে যে, পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত কাফিররা ঐ ভয়াবহ ও কম্পমান অবস্থাতেই থাকবে যে, তাদের সামনেই রয়েছে জাহান্নাম, আর ওর পূর্বেই তারা ঐরূপ শাস্তি ভোগ করতে রয়েছে।

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মানুষের জন্যে আমি আমার কিতাবে সমস্ত কথা খুলে খুলে বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে মানুষ সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে না পড়ে এবং হিদায়াতের পথ হতে সরে না যায়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও মুষ্টিমেয় কিছুলোক ছাড়া সবাই মুক্তির পথ থেকে সরে পড়ে। মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত আছে যে, একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলীর (রাঃ) বাড়ীতে আগমন করেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা যে শুয়ে রয়েছে, নামায পড়ছো না কেন?" উত্তরে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের প্রাণ আল্লাহ তাআলার হাতে রয়েছে। যখন তিনি ইচ্ছা করেন তখনই আমাদের উঠিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলীর (রাঃ) মুখে একথা শুনে আর কিছু না বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন। ফিরবার পথে তিনি হাঁটুর উপর হাত মেরে বলতে বলতে যাচ্ছিলেনঃ “মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশী বিতর্ক প্রিয়।"

وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلًا

📘 Please check ayah 18:56 for complete tafsir.

وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ ۚ وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ ۖ وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَمَا أُنْذِرُوا هُزُوًا

📘 আল্লাহ তাআলা পূর্ব যুগের ও বর্তমান সময়ের কাফিরদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরেও তারা তা হতে দূরে সরে থাকছে। তারা আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখে নেয়া কামনা করছে। কেউ কেউ আকাংখা করছে যে, তাদের উপর যেন আকাশ ফেটে পড়ে যায়। তাদের কেউ কেউ বলেঃ যদি শাস্তি আনতে পার নিয়ে এসো। কুরায়েশরাও প্রার্থনা করে বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! এটা যদি সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ করুন কিংবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শান্তি আমাদের উপর নাযিল করুন!” তারা এও বলেছিলঃ “হে নবী (সঃ)! আমরা তো তোমাকে পাগল মনে করছি। যদি তুমি প্রকৃতই সত্য নবী হও তবে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে কেন আনছো না?” ইত্যাদি ইত্যাদি। সূতরাং তারা আল্লাহ তাআলার শাস্তির অপেক্ষায় থাকছে এবং তা দেখতে চাচ্ছে। রাসূলদের কাজ তো শুধু মু'মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়া এবং কাফিরদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা মিথ্যা অবলম্বনে বিতণ্ডা করে তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে চায় এবং দূর করে দেয়ার ইচ্ছা করে। কিন্তু তাদের এই মনোবাঞ্ছা তো কখনও পূর্ণ হবার নয়। হক তাদের মিথ্যা কথায় দমে যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ এই লোকগুলি আমার নিদর্শনাবলীকে এবং যদ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলিকে বিদ্রুপের বিষয়রূপে গ্রহণ করছে এবং নিজেদের বেঈমানীতে আরো বেড়ে চলছে।

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ۚ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۖ وَإِنْ تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ فَلَنْ يَهْتَدُوا إِذًا أَبَدًا

📘 Please check ayah 18:59 for complete tafsir.

وَرَبُّكَ الْغَفُورُ ذُو الرَّحْمَةِ ۖ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ ۚ بَلْ لَهُمْ مَوْعِدٌ لَنْ يَجِدُوا مِنْ دُونِهِ مَوْئِلًا

📘 Please check ayah 18:59 for complete tafsir.

وَتِلْكَ الْقُرَىٰ أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِمْ مَوْعِدًا

📘 ৫৭-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর: মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় পাপী ও অপরাধী আর কে হতে পারে? যার সামনে তার প্রতিপালকের কালাম যখন পাঠ করা হয় তখন সে ওর প্রতি ক্ষেপও করে না এবং ওর প্রতি আকৃষ্টও হয় না, বরং মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পূর্বে যে সব দুষ্কর্ম করেছে সেগুলি সবই ভুলে যায়? তার এই দুর্ব্যবহারের শাস্তি এই হয় যে, তার অন্তরের উপর পর্দা পড়ে যায়। ফলে ভাল কাজের প্রতি তার কোন মনোযোগই থাকে না এবং করআন বুঝতে পারে না। তার কানেও বধিরতা এসে যায়। সুতরাং তাকে হিদায়াতের প্রতি লাখো লাখো দাওয়াত দেয়া যাক না কেন সুপথ প্রাপ্তি তার জন্যে অসম্ভব। হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক বড়ই দয়াবান। তিনি উচ্চ মানের করুণার অধিকারী। যদি তিনি পাপীদেরকে তাড়াতাড়ি শাস্তি দিয়ে দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে কোন প্রাণী আজ বাকী থাকতো না। তিনি লোকদের অত্যাচার ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন ও ক্ষমা করে থাকেন। কিন্তু এর দ্বারা এটা মনে করা চলবে না যে, তিনি পাকড়াও করবেনই না। জেনে রেখো যে, তিনি কঠিন শাস্তি দাতা। এটা তো শুধু তার সহনশীলতা, গোপনতার রক্ষণ ও ক্ষমা, যাতে পথভ্রষ্টরা পথে ফিরে আসে এবং পাপীরা তাওবা করতঃ তাঁর করুণার অঞ্চল ধরে নেয়। কিন্তু যারা তার এই সহনশীলতা দ্বারা উপকার লাভ করবে না এবং নিজেদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তাদের এটা জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর পাকড়াও করার দিন অতি নিকটবর্তী। ওটা এমন কঠিন দিন যে, শিশু বুড়ো হয়ে যাবে এবং গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। ঐ দিন কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না এবং পরিত্রাণেরও কোন উপায় দেখা যাবে না। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতেরাও তোমাদের মতই আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং কুফরীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। শেষে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং দুনিয়ার বুক থেকে তাদের নাম ও নিশানা মুছে ফেলেছি। তাদের ধ্বংস হওয়ার নির্ধারিত সময় এসে পড়ায় তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। সুতরাং হে মুশরিকদের দল! তোমরাও আমার শাস্তির ভয় করো। তোমরা শ্রেষ্ঠ নবীকে (সঃ) কষ্ট দিচ্ছ এবং তাঁর প্রতি অত্যাচার করছো! তাঁকে অবিশ্বাস করছে। অথচ পূর্ববর্তী কাফিরদের তুলনায় তোমাদের শক্তি ও সাজ সরঞ্জাম খুবই কম। সুতরাং তোমরা সবসময় আমার শাস্তির ভয় রেখো এবং উপদেশ গ্রহণ করো।

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا

📘 Please check ayah 18:8 for complete tafsir.

وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّىٰ أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا

📘 Please check ayah 18:65 for complete tafsir.

فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا

📘 Please check ayah 18:65 for complete tafsir.

فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ آتِنَا غَدَاءَنَا لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَٰذَا نَصَبًا

📘 Please check ayah 18:65 for complete tafsir.

قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهُ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ ۚ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا

📘 Please check ayah 18:65 for complete tafsir.

قَالَ ذَٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ ۚ فَارْتَدَّا عَلَىٰ آثَارِهِمَا قَصَصًا

📘 Please check ayah 18:65 for complete tafsir.

فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا

📘 ৬০-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত মুসাকে (আঃ) বলা হয় যে, দই সমুদ্রের মিলন স্থলের (মোহনার) পার্শ্বে আল্লাহ তাআলার এমন এক বান্দা রয়েছে তার ঐ জ্ঞান রয়েছে যেই জ্ঞান হযরত মূসার (আঃ) নেই। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসা (আঃ) তার সাথে সাক্ষাৎ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। সুতরাং তিনি তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ “আমি তো সেখানে না পৌঁছা পর্যন্ত থামবো না এবং বিশ্রাম গ্রহণ করবো না, বরং যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবো।” বর্ণিত আছে যে, ঐ দুটি সমুদ্রের একটি হচ্ছে পূর্ব পারস্য উপসাগর এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে পশ্চিম রোম সাগর। এই স্থানটি তানজা'র পার্শ্বে পশ্চিমা শহরগুলির শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আমাকে যদি যুগ যুগ ধরেও চলতে হয় তবুও কোন ক্ষতি নেই। বলা হয়েছে যে, কায়েসের অভিধানে (আরবী) বছরকে বলা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা আশি বছর বুঝানো হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) সত্তর বছর বলেছেন। হযরত ইবুন আব্বাস (রাঃ) এর অর্থ যুগ বলেছেন। হযরত মূসাকে (আঃ) আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছিলেনঃ তুমি লবন মাখানো একটি (মর) মাছ সাথে নিবে। যেখানে ঐ মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানে তুমি আমার ঐ বান্দার সাক্ষাৎ পাবে। মাছ সঙ্গে নিয়ে তাঁরা দুজন চলতে শুরু করেন এবং চলতে চলতে দুই সমদ্রের মিলন স্থলে পৌঁছে গেলেন। সেখানে নহরে হায়াত ছিল। সেখানে তারা দুজন শুয়ে পড়ায় মাছটি নড়ে ওঠে। মাছটি তার সঙ্গী হযরত ইউশার (আঃ) থলেতে রাখা ছিল। ওটা সমুদ্রের ধারেই ছিল। মাছটি সমুদ্রে লাফিয়ে পড়বার জন্যে ছটফট করতে থাকে। তখন হযরত ইউশা (আঃ) জেগে ওঠেন। মাছটি তার চোখের সামনে দিয়ে পানিতে নেমে যায় এবং পানিতে সোজাসুজিভাবে সুড়ঙ্গ হতে থাকে। স্থলে যেমনভাবে সুড়ঙ্গ হয় ঠিক তেমনিভাবে মাছটির গমনের পথে সুড়ঙ্গ হয়ে যায়। পানি এদিক-ওদিক খাড়া হয়ে যায় এবং ঐ সুড়ঙ্গটি সম্পূর্ণরূপে খোলা থাকে। পাথরের মত পারি মধ্যে ছিদ্র হয়ে যায়। মাছটি যেখান দিয়ে গিয়েছে তথাকার পানি পাথরের মত হয়ে গেছে এবং সুড়ঙ্গ হয়ে গেছে। মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) মারফুরূপে হাদীস এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া সৃষ্টির প্রথম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত পানি এভাবে জমাট হয়ে যায় নাই। যেমন ভাবে জমাট হয়েছিল ঐ মাছটির গমন পথের আশে পাশের পানি।” স্থল ভাগের সুড়ঙ্গের মতই পানির এই সুড়ঙ্গের চিহ্ন হযরত মূসার (আঃ) সেখানে ফিরে আসা পর্যন্ত বাকী থেকে যায়। ঐ চিহ্ন দেখেই হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আমরা তো এরই সন্ধানেই ছিলাম।” মাছটির কথা ভুলে গিয়ে তাঁরা দুজন সামনের দিকে এগিয়ে যান। এখানে একথাটি স্মরণ রাখার বিষয় যে, একটি কাজ দু’জনের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হয়েছে। মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলেন শুধু হযরত ইউশা (আঃ) অথচ বলা হয়েছে যে, তারা দু'জন ভুলে গেলেন। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এ দু’টি সমুদ্রের মধ্য হতে মুক্তা ও প্রবাল-রত্মসমূহ বের হয়ে থাকে।" (৫৫:২২) অথচ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, মণিমুক্তা শুধু লবণাক্ত পানির সমুদ্র হতেই বের হয়।কিছু পথ অতিক্রম করার পর হযরত মূসা (আঃ) তার সঙ্গীকে বললেনঃ “আমাদের প্রাতঃরাশ নিয়ে এসো। আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারা এই ক্লান্তি অনুভব করেছিলেন তাদের গন্তব্য স্থান অতিক্রম করার পর। গন্তব্য স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাঁরা কোন কান্তি অনুভব করেন নাই। ঐ সময় তাঁর সঙ্গীর মাছের কথা মনে পড়ে যায়। তাই, তিনি হযরত মূসাকে (আঃ) বলেনঃ “যখন আমরা শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তখন আমি মাছের ঐ কথা বর্ণনা করতে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নিয়ে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল। হযরত ইবনু মাসউদের (রাঃ) কিরআতে (আরবী) রয়েছে। হযরত ইউশার (আঃ) একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আমরা তো ঐস্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম।” অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্যে একজন বান্দার সাক্ষাৎ পেলো, যাকে আমি আমার নিকট থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং আমার নিকট হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। আল্লাহ তাআলার এই বান্দা হলেন হযরত খিযুর (আঃ)। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) হরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) বলেনঃ “নাউফ নামক লোকটির ধরণা এই যে, হযরত খিযুরের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎকারী মূসা বানী ইসরাঈলের মূসা (আঃ) ছিলেন না।” একথা শুনে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর ঐ শত্রু মিথ্যাবাদী। আমি হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “একদা হযরত মূসা (আঃ) বাণী ইসরাঈলের মধ্যে খুৎবা দিচ্ছিলেন। ঐ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়ঃ ‘সবচেয়ে বড় আলেম কে?" তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমি।” তিনি জবাবে “আল্লাহ জানেন” একথা না বলায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর কাছে ওয়াহী নাযিল করেনঃ “আমার এমন এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়েও বড় আলেম।” তখন হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি তার কাছে কিরূপে পৌছতে পারি?” উত্তরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দেনঃ “তুমি একটি মাছ সঙ্গে নাও এবং ওটা থলেতে রেখে দাও। যেখানে এ মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই তুমি আমার ঐ বান্দার সাক্ষাৎ লাভ করবে। এই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) হযরত ইউশা ইবনু নূনকে (আঃ) সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। একটি শিলাখণ্ডের পাশে গিয়ে মাথাটি ওর উপর রেখে কিছুক্ষণের জন্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এদিকে থলের মধ্যে মাছটি লাফাতে শুরু করে এবং এমনভাবে সমুদ্রে নেমে যায় যেমন কেউ সুড়ঙ্গ দিয়ে যমীনের মধ্যে নেমে থাকে। আল্লাহ তাআলা পানির প্রবাহ ও চলাচল বন্ধ করে দেন এবং তাকের মত সমুদ্রের মধ্যে ঐ সুড়ঙ্গটি বাকী থেকে যায়। তিনি জেগে উঠলে তার সঙ্গী হযরত ইউশা (আঃ) তাঁকে মাছের ঐ ঘটনাটি বলতে ভুলে যান। অতঃপর তারা সেখান থেকে চলতে শুরু করেন। দিন শেষে সারা রাত্রি তাঁরা চলতে থাকেন। হযরত মূসা (আঃ) ক্লান্তি ও ক্ষুধ্য অনুভব করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেখানে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই জায়গা অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ক্লান্তি মোটেই অনুভব করেন নাই। তিনি তার সঙ্গীর কাছে নাশতা চান এবং ক্লান্তির কথা বলেন। তখন তাঁর সঙ্গী তাকে বলেনঃ “যখন আমরা পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এবং ঐ সময় আমি মাছটিকে ভুলে গিয়েছিলাম এবং ঐ কথা আপনার কাছে বর্ণনা করতে শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। সেখানে মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়ে তাতে নেমে গিয়েছিল। সমুদ্রে তার জন্যে সুড়ঙ্গ হয়ে গিয়েছিল।” তখন হযরত মূসা (আঃ) তাকে বলেনঃ “আমরা ঐ স্থানটিরই সন্ধানে ছিলাম।” অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। ঐ পাথরটির নিকট পৌঁছে দেখেন সেখানে একটি লোক কাপড় জড়িয়ে বসে রয়েছেন। হযরত মূসা (আঃ) তাকে সালাম দেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেনঃ “এই ভূখণ্ডে এই সালাম কেমন?" তিনি বলেনঃ আমি হলাম মুসা (আঃ)। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “বানী ইসরাঈলের মূসা (আঃ)?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হাঁ, আমি আপনার কাছে এই জন্যেই এসেছি যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে আপনি যেসব ভাল কথা শিখেছেন তা আমাকে শিখিয়ে দিবেন।” তিনি বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। কারণ, আমার যে জ্ঞান রয়েছে আপনার তা নেই এবং আপনার যে জ্ঞান রয়েছে তা আমার নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের দু’জনকে পৃথক পৃথক জ্ঞান দান করেছেন।” তখন হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “ইনশাআল্লাহ আপনি দেখবেন যে, আমি ধৈর্য ধারণ করবো। আপনার কোন কাজেরই আমি বিরুদ্ধাচরণ করবো না।” হযরত খিয়র (আঃ) তখন তাকে বললেনঃ “ আচ্ছা, আপনি যদি আমার সাথে থাকতেই চান, তবে আমাকে নিজে কোন কথা জিজ্ঞেস করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি আপনাকে জানিয়ে দেই। এভাবে কথা করে নিয়ে তারা দুজন চলতে শুরু করলেন। নদীর তীরে একটি নৌকা ছিল। মাঝিকে হযরত খিয়র (আঃ) তাঁদেরকে নৌকায় নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। মাঝি হযরত খিরকে (আঃ) চিনে নেয় এবং বিনা ভাড়াতেই তাদেরকে নৌকায় উঠিয়ে নেয়। নৌকায় চড়ে তারা কিছু দূর গিয়েছেন এমতাবস্থায় হযরত মূসা (আঃ) দেখেন যে, হযরত খিষ্যর (আঃ) নীরবে কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা ফাড়তে রয়েছেন। এ দেখেই হযরত মূসা (আঃ) তাকে বললেনঃ “আপনি এ করেন কি? মাঝি তো আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছে যে, আমাদেরকে বিনা ভাড়ায় নৌকায় উঠিয়েছে। অরি আপনি তার নৌকা ছিদ্র করতে রয়েছেন! এর ফলে তো নৌকার সব আরোহী ডুবে যাবে। এতো বড়ই অন্যায় কাজ।” জবাবে হযরত খ্যির (আঃ) তাকে বললেনঃ “দেখুন ! আমি তো আপনাকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না?” হযরত মূসা (আঃ) তখন ওযর পেশ করে বললেনঃ “ আমার ত্রুটি হয়ে গেছে। ভুল বশতঃ আমি প্রশ্ন করে বসেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি কঠোর হবেন না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ সত্যিই তাঁর প্রথম ত্রুটিটি ভুল বশতঃই ছিল। বর্ণিত আছে যে, ঐ নৌকাটির একটি তক্তার উপর একটি পাখি এসে বসে এবং পানিতে চঞ্চ ডুবিয়ে পানি নিয়ে উড়ে যায়। ঐ সময়। হযরত খিযুর (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) বলেনঃ “হে মূসা (আঃ) আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞান ততটুকু, এইপাখীটির চঞ্চুতে ওঠা পানিটুকু সমুদ্রের সমস্ত পানির তুলনায় যতটুকু।" অতঃপর নৌকাটি তীরে লেগে যায়। নৌকা থেকে নেমে তাঁরা চলতে থাকেন। পথে কতকগুলি শিশু খেলা করছিল। হযরত খি (আঃ) ওদের একজনকে ধরে এমনভাবে তার গলা মোচড় দেন যে, সাথে সাথেই সে মারা যায়। এতে হযরত মূসা (আঃ) হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন এবং তাকে বলে ফেলেনঃ “করলেন কি? অন্যায়ভাবে আপনি এই শিশুটিকে মেরে ফেললেনঃ আপনি বড়ই অপরাধমূলক কাজ করলেন?” উত্তরে হযরত খ্যির (আঃ) তাকে বললেনঃ “আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না?' এবার হযরত খ্যির (আঃ) পূর্বাপেক্ষা বেশী কঠোর হলেন। তখন হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “আচ্ছা, এরপরে যদি আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে আপনার সঙ্গে রাখবেন না এ অধিকার আমি আপনাকে দিলাম। আমার ওযর আপত্তির চূড়ান্ত হয়েছে।” আবার তারা চলতে থাকেন। তারা এক গ্রামে গিয়ে পৌঁছেন। তাঁরা ঐ গ্রামবাসীর কাছে খেতে চাইলে তারা তাদের আতিথেয়তা করতে পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করে। অতঃপর তারা তথায় এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পান।। হযরত খিযর (আঃ) ওটাকে সুদৃঢ় করে দেন। হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আমরা তাদের অতিথি হতে চাইলাম, কিন্তু তারা আমাদের আতিথেয়তা করলো না। এর পরেও যখন আপনি তাদের এই কাজটি করে দিলেন তখন এর জন্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন?" হযরত খির (আঃ) তখন বললেনঃ “এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো। যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারনে নাই আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ যদি হযরত মূসা ধৈর্য অবলম্বন করতেন, তবে আল্লাহ তাদের দুজনের আরো বহু কথা আমাদের সামনে বর্ণনা করতেন।" হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কিরআতে (আরবী) এর স্থলে (আরবী) রয়েছে এবং (আরবী) এর পরে (আরবী) শব্দটিও রয়েছে। আর (আরবী) এরপরে (আরবী) শব্দও আছে। অন্য সনদেও এই হাদীসটি বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, ঐ পাথরটির কাছে হযরত মূসা (আঃ) থেমে যান। সেখানে একটি প্রস্রোবণ ছিল যার নাম ছিল নহরে হায়াত। ওর পানি যার উপর পড়তো সে জীবিত হয়ে যেতো। তাতে ঐ পাখিটির পানি নেয়ার পর হযরত খিযরের (আঃ) নিম্নের উক্তিটিও বর্ণিত আছে। তিনি বলেছিলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আমার, আপনার এবং সমস্ত মাখলুকের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় ততুটুকু, এই পাখিটির চঞ্চুর পানি এই সমুদ্রের তুলনায় যতটুকু (শেষ পর্যন্ত)।"সহীহ বুখারীর আর একটি হাদীসে আছে যে, হযরত সাঈদ জুবাইর (রাঃ) বলেনঃ একদা আমি হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) বাড়ীতে তার কাছে ছিলাম। তিনি বলেনঃ “কারো কিছু প্রশ্ন করার থাকলে আমাকে করতে পারো। আমি বললামঃ আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কুফার একজন বক্তা আছে যার নাম নাউফ। তারপর পূর্ণ হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসটির মতই বর্ণনা করা হয়। তাতে রয়েছে যে, হযরত মূসার (আঃ) ঐভাষণে চক্ষুগুলি অশ্রুসিক্ত হয়েছিল এবং অন্তরগুলি কোমল হয়ে পড়েছিল। তাঁর বিদায় বেলায় একটি লোক তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “সারা ভূ-পৃষ্ঠে আপনার চেয়ে বড় আলেম আর কেউ আছে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “না।” তাঁর এই জবাবে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। কেননা, তিনি এর সঠিক জ্ঞান আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরিয়ে দেন নাই। তাতে রয়েছে যে, হযরত মূসা (আঃ) লক্ষণ দেখতে চাইলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেনঃ “একটি মরা মাছ তোমার সাথে রাখো। যেখানে মাছটি জীবিত হয়ে যাবে সেখানে তুমি ঐ জ্ঞানী ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে।” মহান আল্লাহর এই নিদের্শ অনুযায়ী তিনি একটি মরা মাছ নিয়ে থলেতে রেখে দেন এবং স্বীয় সঙ্গীকে বলেনঃ “তোমার কাছে শুধু এটুকুই যে, যেখানে এই মাছটি তোমার নিকট থেকে চলে যাবে সেখানে আমাকে খবর দেবে।" তাঁর সঙ্গী বললেনঃ “এতো খুবই সহজ কাজ।” তাঁর নাম ছিল ইউশা ইবনু নূন (আঃ)। (আরবী) দ্বারা তাঁকেই বুঝানো হয়েছে।ঐ দুই বুযর্গ ব্যক্তি একটি গাছের নীচে সিক্ত জায়গায় অবস্থান করছিলেন। হযরত মূসাকে (আঃ) ঘূমে ধরে বসে এবং হযরত ইউশা (আঃ) জেগে থাকেন। এমন সময় মাছটি লাফিয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন যে, এখন তাকে জাগানো ঠিক নয়। ঐ হাদীসে এও রয়েছে যে, মাছটি পানিতে নেমে যাওয়ার সময় পানিতে যে সুড়ঙ্গ হয়েছিল সেটাকে হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আমর (রাঃ) নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও ওর পার্শ্ববর্তী দু’টি অঙ্গুলীকে বৃত্ত করে দেখিয়ে দেনঃ এই ভাবে হয়েছিল যেভাবে পাথরে হয়ে থাকে। ফিরবার পথে সমুদ্র তীরে বিছানো সবুজগদীর উপর হযরত খিয়রকে (আঃ) তিনি দেখতে পান। ঐ সময় তিনি গায়ে চাদর জড়িয়ে ছিলেন। হযরত মূসার (আঃ) সালামের পর তিনি কথা বলেন। ঐ হাদীসে এও রয়েছে যে, হযরত খ্যির (আঃ)। হযরত মূসাকে (আঃ) বলেছিলেনঃ “আপনার কাছে তো তাওরাত বিদ্যমান। রয়েছে এবং আকাশ থেকে আপনার নিকট ওয়াহী আসছে, এটা কি যথেষ্ট নয়? আমার জ্ঞান তো আপনার জন্যে উপযুক্ত নয় এবং আপনাকে জ্ঞান দত্রে যোগ্যতাও আমার নেই। তাতে আছে যে, নৌকাটির তক্তা ভেঙ্গে নিয়ে তাতে তিনি একটি তাঁত বেঁধে দেন। প্রথম বারের প্রশ্নটি হযরত মূসার (হঃ) ভুল বশতঃই ছিল। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল শর্ত হিসেবে। আর তৃতীয় প্রশ্নটি তিনি পৃথক হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করেই করেছিলেন। তাতে আছ যে, যে ছেলেগুলি খেলা করছিল তাদের মধ্যে একটি ছেলে ছিল কাফির ও বুদ্ধিমান। তাকে হযরত খিযুর (আঃ) লটকিয়ে দিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। একটি কিরআতে (আরবী) ও রয়েছে। (আরবী) এর স্থলে (আরবী) ও আছে। ঐ অত্যাচারী বাদশাহর নাম ছিল হাদাদ ইবনু বাদাদ। যে ছেলেটিকে হত্যা করা হয়েছিল তার নাম ছিল হায়সূর। বর্ণিত আছে যে, ঐ ছেলেটির বিনিময়ে একটি মেয়ে দান করা হয়। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা (আঃ) ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেনঃ “আল্লাহ তাআলাকে ও তাঁর আমরকে আমার চেয়ে বেশী কেউ জানে না (শেষ পর্যন্ত)।”ঐ নাউফ ছিল হযরত কাবের (রাঃ) স্ত্রীর (পূর্ব স্বামীর) ছেলে। তার উক্তি এই যে, এই আয়াতে যে মূসার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তিনি ছিলেন মূসা ইবনু মীশা। আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা (আঃ) মহান আল্লাহ্ব নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্যে আমার চেয়ে বড় আলেম কেউ যদি থেকে থাকেন তবে আমাকে অবহিত করুন।” ঐ। হাদীসে আছে যে, লবণ মাখানো মাছ তিনি নিজের সঙ্গে রেখেছিলেন। তাতে রয়েছে যে, হযরত খির (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) বলেছিলেনঃ “আপনি এখানে কেন এসেছেন? বাণী ইসরাঈলের ব্যাপারেই তো আপনার ব্যস্ততা রয়েছে?” তাতে আছে যে, গুপ্ত কথা হযরত খিয়রকে (আঃ) জানানো হতো। তাই, তিনি হযরত মূসাকে (আঃ) বলেছিলেনঃ “আপনি আমার কাছে থাকতে পারেন না। কেননা, আপনি তো বাহ্যিক বিষয় দেখেই ফায়সালা করবেন। আর আমি গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অবহিত রয়েছি।” সুতরাং তিনি হযরত মূসার (আঃ) সঙ্গে শর্ত করলেনঃ “উল্টো যা কিছুই আপনি দেখুন না কেন, কিছুই বলতে পারেন না যে পর্যন্ত না আমি বলে দেই।” বর্ণিত আছে যে, যে নৌকায় তারা আরোহণ করেছিলেন ঐ নৌকাটি ছিল সবচেয়ে দৃঢ়, উত্তম ও সুন্দর। যে শিশুটিকে তিনি হত্যা করেছিলেন সে ছিল অতুলনীয় শিশু। দেখতে ছিল খুবই সুন্দর এবং খুবই বুদ্ধিমানও ছিল। হযরত খ্যির (আঃ) তাকে ধরে পাথরে তার মাথা কুচলিয়ে দিয়ে হত্যা করেন। এ দেখে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হন যে, এমন একটি নিস্পাপ শিশুকে বিনা কারণে হযরত খি (আঃ) নির্মমভাবে হত্যা করলেন। পতনোন্মুখ প্রাচীরটিকে দেখে হযরত খির (আঃ) থমকে দাড়ান। প্রথমে ওটাকে নিয়মিতভাবে ফেলে দেন। তারপর সুন্দরভাবে ওটাকে তৈরী করে দেন। এতে হযরত মূসা (আঃ) বিরক্তি প্রকাশ করেন, এই ভেবে যে, এটা যেন নিজের খেয়ে অপরের মহিষ চরানোরই নামান্তর। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐ দেয়ালের নীচের গুপ্তধন ছিল শুধু ইলম।আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যখন হযরত মূসা (আঃ) ও তার কওম মিসরের উপর জয়যুক্ত হন তখন তারা এখানে এসে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। তখন হযরত মূসাকে (আঃ) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেনঃ “তোমার কওমকে আল্লাহর নিয়ামত সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও।" এই নিদের্শ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) ভাষণ দেয়ার জন্যে দাড়িয়ে যান এবং তাঁর কওমের সামনে মহান আল্লাহর নিয়ামতরাজির বর্ণনা শুরু করে দেন। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “ আল্লাহ তাআ'লা তোমাদেরকে এই নিয়ামত দান করেছেন। ফিরাউন ও তার লোক লস্কর থেকে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন এবং তোমাদের ঐ শত্রুদেরকে পানিতে নিমজ্জিত করেছেন। তরিপর তোমাদেরকে তাদের যমীনের মালিক বানিয়েছেন। তোমাদের বীর সাথে তিনি কথা বলেছেন এবং তাঁকে নিজের জন্যে পছন্দ করেছেন। তিনি তোমাদের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়েছেন। তোমাদের নবী সমস্ত দুনিয়াবাসী। হতে উত্তম।" মোট কথা, বেশ জোরে শোরে আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতরাজি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। তখন বাণী ইসরাঈলের একজন লোক তাকে বলেঃ “আপনি সবই সত্য কথাই বললেন। হে নবী (আঃ)! দুনিয়ায় আপনার চেয়ে বড় আলেম আর কেউ আছে কি?” তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ফেলেনঃ “না।” তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন এবং তার মাধ্যমে বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আমি আমার ইলম কোথায় কোথায় রাখি তা তুমি জান কি? নিশ্চয়ই সমুদ্রের ধারে একজন লোক রয়েছে যে তোমার চেয়েও বড় আলেম।" হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এর দ্বারা হযরত খিকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। হযরত মূসা (আঃ) তখন আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ আমি তাকে দেখতে চাই।" তার কাছে ওয়াহী আসলোঃ “তুমি সমুদ্রের ধারে চলে যাও। সেখানে একটা মাছ পাবে তা তুমি নিয়ে নেবে। ঐ মাছটি তুমি তোমার সঙ্গীর কাছে সমর্পণ করবে। তারপর সমুদ্রের ধার দিয়ে চলতে থাকবে। যেখানে তুমি মাছটিকে ভুলে যাবে এবং ওটা তোমার নিকট থেকে হারিয়ে যাবে সেখানে তুমি আমার ঐ বান্দাকে পাবে।” হযরত মূসা (আঃ) চলতে চলতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন তখন তিনি তার গোলাম সঙ্গীটিকে মাছের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। সে উত্তরে বললোঃ “যে পথরের কাছে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেখানে আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম এবং আপনার কাছে ওটা বর্ণনা করা হতেও শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। আমি দেখলাম যে, মাছটি যেন সুড়ঙ্গ বানিয়ে নিয়ে সমুদ্রে গমন করছিল।" হযরত মূসা (আঃ) একথা শুনে খুবই বিস্মিত হন। ফিরে গিয়ে যখন সেখানে পৌঁছেন তখন দেখতে পান যে, মাছটি পানির মধ্যে যেতে শুরু করেছে। হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় লাঠি দ্বারা পানি ফেড়ে ফেড়ে মাছটির পিছনে পিছনে চলতে থাকেন। মাছটি যেখান দিয়ে যাচ্ছিল সেখানকার দুদিকের পানি পাথরে পরিণত হচ্ছিল। এটা দেখেও আল্লাহর নবী (আঃ) অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হন। মাছটি তাকে একটি উপদ্বীপে নিয়ে যায় (শেষ পর্যন্ত)।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও হুররা ইবনু কায়েসের মধ্যে মতানৈক্য ছিল যে, মূসার (আঃ) ঐ (শিক্ষাদাতা) সঙ্গীটি কে ছিলেন?" হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন যে, তিনি ছিলেন হযরত খিষ্যর (আঃ)। ঐ সময়েই হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) তাঁর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে নিয়ে তাদের মতানৈক্যের কথা বলেন। তিনি তখন রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখে শোনা হাদীসটি বর্ণনা করেন যা উপরে বর্ণিত হাদীসটির প্রায় অনুরূপ। তাতে প্রশ্নকারী লোকটির প্রশ্নের ধারা ছিল নিম্নরূপঃ “ঐ ব্যক্তির অস্তিত্বও কি আপনার জানা আছে যে আপনার চেয়েও বেশী জ্ঞানী?”

قَالَ لَهُ مُوسَىٰ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰ أَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا

📘 Please check ayah 18:70 for complete tafsir.

قَالَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا

📘 Please check ayah 18:70 for complete tafsir.

وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَىٰ مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا

📘 Please check ayah 18:70 for complete tafsir.

قَالَ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا

📘 Please check ayah 18:70 for complete tafsir.

إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا

📘 Please check ayah 18:8 for complete tafsir.

قَالَ فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلَا تَسْأَلْنِي عَنْ شَيْءٍ حَتَّىٰ أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا

📘 ৬৬-৭০ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে ঐ কথোপকথনের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যা হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিযুরের (আঃ) মধ্যে হয়েছিল। হযরত খির (আঃ) ঐ বিদ্যার সাথে বিশিষ্ট ছিলেন যে বিদ্যা হযরত মূসার (আঃ) ছিল না। আর হযরত মূসার (আঃ) ঐ বিদ্যা জানা ছিল যা হযরত খিযুরের (আঃ) জানা ছিল না। হযরত মূসা (আঃ) আদবের সাথে হ্যরত খিরের (আঃ) কাছে আবেদন জানাচ্ছেন যাতে তাঁর প্রতি তিনি দয়া প্রদর্শন করেন। শিক্ষককে এইভাবে আদবের সাথে প্রশ্ন করাই ছাত্রের উচিত। হযরত মূসা (আঃ) হযরত খিযুরের (আঃ) কাছে আবেদন করছেনঃ “আপনার অনুমতি হলে আমি আপনার কাছে থাকবো ও আপনার খিদমত করবো এবং আপনার কাছে জ্ঞান লাভ করবে যার দ্বারা আমি উপকৃত হবো। আর এর ফলে আমার আমল ভাল হবে।” জবাবে হযরত খির (আঃ) তাকে বলেনঃ “আপনি আমার কাছে থেকে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আমার কাজকর্ম আপনার জ্ঞানের বিপরীত মনে হবে। আমার জ্ঞান আপনার নেই এবং আপনার জ্ঞান আমার নেই। আমি একটি পৃথক খিদমতের কাজে লেগে রয়েছি এবং আপনিও একটা পৃথক খিদমতের কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। আপনার যে জ্ঞান আছে তার বিপরীত কাজ দেখে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন এটা অসম্ভব। আর ঐ অবস্থা আপনি ক্ষমাই বলে বিবেচিত হবেন। কেননাঃ বাতেনী ও গুপ্ত নিপুণতা ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান নেই। আর আল্লাহ আমাকে ঐ জ্ঞান দান করেছেন। তার এ কথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি যা কিছু করবেন আমি তা দেখে সহ্য করে নেবো। কোন ব্যাপারেই আমি আপনার বিরুদ্ধাচরণ করবো না।” তখন হযরত খিষ্যর (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনি যদি একান্তই আমার সাথে থাকতে চান তবে শর্ত এই যে, কোন কিছুর ব্যাপারে আপনি আমাকে কোন প্রশ্ন করবেন না। আমি যা বলবো তাই শুনবেন এবং যা করবো তা নীরবে দেখে যাবেন। নিজের পক্ষ থেকে আপনি কোন প্রশ্নের সূচনা করবেন না।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মূসা (আঃ) মহামহিমান্বিত আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনার সমস্ত বান্দার মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় পত্রি কে?" উত্তরে মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে সব সময় আমাকে স্মরণ করে, কখনও আমা হতে বিস্মরণ হয় না। আবার তিনি প্রশ্ন করেনঃ “ আপনার সমস্ত বান্দার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ফায়সালাকারী কে?" জবাবে তিনি বলেনঃ “যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে না।" পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করেন “সবচেয়ে বড় আলেম কে?” উত্তরে আল্লাহ পাক বলেনঃ “যে আলেম সব সময় ইলমের সন্ধানে থাকে, প্রত্যেকের কাছেই শিখতে চায় এই আশায় যে, কোন হিদায়াতের কথা সে পেয়ে যাবে এবং হয়তো কোন বিভ্রান্তিমূলক কথা থেকে দূরে দূরে সরে থাকতে পারবে।” এরপর হযরত মূসা (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “এই ভূ-পৃষ্ঠে আপনার কোন বান্দা আমার চেয়েও বড় আলেম আছে কি?” জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হাঁ, আছে।" তিনি প্রশ্ন করেনঃ “তিনি কে?” আল্লাহ তাআলা উত্তরে বলেনঃ “খির (আঃ)।” তিনি আরয করেনঃ “আমি তাকে কোথায় খোজ করবো? আল্লাহ তাআলা জবাবে বলেনঃ “ সমুদ্রের তীরে পাথরের পার্শ্বে, যেখান থেকে মাছ পালিয়ে যাবে। তখন হযরত মূসা (আঃ) তার খোঁজে যাত্রা শুরু করে দেন। তারপর ঐ সব ঘটনা ঘটলো। যার বর্ণনা কুরআন কারীমে বিদ্যমান রয়েছে। ঐ পাথরের কাছে তাদের দু'জনের সাক্ষাৎ হয়। এই রিওয়াইয়াতে এও রয়েছে যে, ওটা হচ্ছে দুই সমুদ্রের মিলন স্থল, যেখানকার চেয়ে বেশী পানি অন্য কোথাও নেই, পাখী তার চঞ্চুতে পানি নিয়েছিল। (শেষ পর্যন্ত)।

فَانْطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا رَكِبَا فِي السَّفِينَةِ خَرَقَهَا ۖ قَالَ أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا

📘 Please check ayah 18:73 for complete tafsir.

قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا

📘 Please check ayah 18:73 for complete tafsir.

قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا

📘 ৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেনঃ দু'জনের মধ্যে যখন শর্ত মীমাংসিত হয়ে গেল যে, হযরত মূসা (আঃ) নিজ থেকে কোন প্রশ্ন করবেন না যে পর্যন্ত না ওর হিকমত ও যৌক্তিকতা তার উপর প্রকাশিত হয়ে পড়বে, তখন উভয়ে যাত্রা শুরু করে দেন। পূর্বে বিস্তারিত রিওয়াইয়াতগুলি গত হয়েছে যে, নৌকার মালিকরা হযরত খিয়রকে (আঃ) চিনে নিয়ে বিনা ভাড়াতেই তাদেরকে নৌকায় উঠিয়ে নিয়েছিল। নৌকাটি চলতে চলতে যখন সমুদ্রের মধ্যভাগে পৌঁছে তখন হযরত খির (আঃ) নৌকাটির একটি তক্তা উপড়িয়ে ফেলেন এবং উপর থেকেই জোড় লাগিয়ে দেন। এ দেখে হযরত মূসা (আঃ) ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন না। শর্তের কথা তিনি ভুলে গেলেন এবং হঠাৎ করে বলে ফেললেনঃ “আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।”(আরবী) এর (আরবী) টি (আরবী) বা পরিণামের (আরবী) এটা (আরবী) বা কারণ সম্বন্ধীয় (আরবী) নয়। যেমন কোন কবির নিম্নের কবিতাংশে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৃষ্ট প্রত্যেক প্রাণীর পরিণাম হচ্ছে মৃত্যু এবং নির্মিত প্রত্যেক প্রাসাদের পরিণাম হচ্ছে ধ্বংস।" (আরবী) শব্দের অর্থ হলো অন্যায়, অপছন্দনীয় ও বিস্ময়কর।হযরত খিষ্যর (আঃ) তখন হযরত মূসাকে (আঃ) তার ওয়াদা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেনঃ “আপনি শর্তের উল্টো করেছেন। আমি তো আপনাকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, আপনি এসব বিষয় অবগত নন এবং এগুলোর জ্ঞান আপনার নেই। সুতরাং চুপ থাকবেন, কোন প্রশ্ন করবেন না। এ সব কাজের যোক্তিকতা ও হিকমত আল্লাহ তাআলা আমাকে জানিয়েছেন, আর আপনার কাছে এগুলি গুপ্ত রয়েছে।” হযরত মূসা (আঃ) তখন হযরত খিরকে (আঃ) বললেনঃ “আমার এই ভুলের জন্যে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।” পূর্বে বিস্তারিত ঘটনার যে দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তাতে রয়েছে যে, এই প্রথম প্রশ্নটি বাস্তবিকই ভুল বশতঃই ছিল।

فَانْطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُكْرًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেন যে, এরপর তাঁরা এক সাথে চলতে চলতে এক গ্রামে কতকগুলি বালককে খেলারত অবস্থায় দেখতে পান। তাদের মধ্যে একটি বালক ছিল খুবই সুশ্রী ও বুদ্ধিমান। হযরত খিযুর (আঃ) বালকটিকে ধরে মাথা ভেঙ্গে দেন অথবা পাথর দ্বারা বা হাত দ্বারা তার গলা মোচড়িয়ে দেন। সাথে সাথে বালকটি মারা যায়। এ দেখে হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি এটা কি কাজ করলেন? এক নিস্পাপ ছোট ছেলেকে কোন শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়াই মেরে ফেললেন! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন!

۞ قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا

📘 Please check ayah 18:76 for complete tafsir.

قَالَ إِنْ سَأَلْتُكَ عَنْ شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِي ۖ قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَدُنِّي عُذْرًا

📘 ৭৫-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেন যে, হযরত খিয়র (আঃ) দ্বিতীয়বার হযরত মূসাকে (আঃ) তাঁর স্বীকারকৃত শর্তের বিপরীত করার কারণে তিরস্কার করেন। এ কারণেই হযরত মূসা (আঃ) এইবার অন্য এক পন্থা অবলম্বন করে বলেনঃ “আচ্ছা, এবারও আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর যদি আমি আপনার কোন প্রতিবাদ করি, তবে আপনি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন না। সত্যিই আপনি বারবার আমাকে সতর্ক করে আসছেন। এ ব্যাপারে আপনি মোটেই ত্রুটি করেন নাই। এখন যদি আমি ভুল করি, তবে এর শাস্তি আমাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সঃ) অভ্যাস ছিল এই যে, যখন তাঁর কারো কথা স্মরণ হয়ে যেতো এবং তিনি তার জন্যে দুআ করতেন, তখন প্রথমে নিজের জন্যে দুআ করতেন। একদা তিনি বলেনঃ “আল্লাহ আমার উপর দয়া করুন! এবং হযরত মূসার (আঃ) উপরও দয়া করুন! যদি তিনি স্বীয় সঙ্গীর সাথে (হযরত খিযুরের (আঃ) আরো অনেকক্ষণ অবস্থান করতেন এবং ধৈর্য ধরতেন, তবে আরো বহু বিস্ময়কর বিষয় আমরা অবগত হতাম। কিন্তু তিনি তো বলে ফেললেনঃ এখন আমার ওযর-আপত্তি চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে। সুতরাং আর আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনে। একথা বলে তিনি তার থেকে পৃথক হয়ে গেলেন।" (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

فَانْطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ ۖ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا

📘 Please check ayah 18:78 for complete tafsir.

قَالَ هَٰذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ ۚ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا

📘 ৭৭-৭৮ নং আয়াতের তাফসীর: মহান আল্লাহ বলেন যে, দু'বারের দুটি ঘটনার পর আবার তাঁরা দুজন চলতে শুরু করেন। চলতে চলতে তারা একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছেন। বর্ণিত আছে যে, ঐ গ্রামটির নাম ছিল ঈকা। তথাকার লোকেরা ছিল খুবই কৃপণ। তারা দু’জন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি তাদের কাছে খেতে চাইলে তারা পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করে। তারা সেখানে দেখতে পান যে, একটি দেয়াল পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ওটা স্বস্থান ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়েছে। দেয়ালটিকে ঐ অবস্থায় দেখা মাত্রই হযরত খিয়র (আঃ) কোমর কষে নিয়ে ওটা সুদৃঢ় করে দেন এবং ওটা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়।পূর্বে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত খিয়র (আঃ) পতনোন্মুখ দেয়ালটিকে স্বহস্তে ঠিক করে দেন এবং তা সুদৃঢ় হয়ে যায়। ঐ সময় হযরত মূসা কালীমূল্লাহ (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “সুবহানাল্লাহ! এ গ্রামের লোকেরা তো আমাদেরকে খাওয়া দাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলোই না, এমন কি আমরা তাদের কাছে খাবার চাওয়ার পরেও তারা আমাদেরকে খেতে দিতে অস্বীকার করলো। অথচ আপনি বিনা পারিশ্রমিকেই তাদের দেয়াল ঠিক করে দিলেন। আপনি ইচ্ছা করলে তো পারিশ্রমিক চাইতে পারতেন? এটা তো আপনার ন্যায্য পাওনা?” তার এই প্রশ্নের জবাবে হযরত খির (আঃ) তাকে বললেনঃ “দেখুন! এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে গেলো। কেননা, শিশুটিকে হত্যা করার সময় আপনি আমার ঐ কাজের প্রতিবাদ করলে আমি আপনাকে ভৎসনা করেছিলাম। ঐ সময় আপনি নিজেই বলেছিলেনঃ “এর পর যদি আমি আপনার কোন কাজের প্রতিবাদ করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না, বরং আমাকে পৃথক করে দিবেন। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেন নাই আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।”

أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي الْبَحْرِ فَأَرَدْتُ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا

📘 Please check ayah 18:81 for complete tafsir.

وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا

📘 ৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে সম্বোধন করে বলছেনঃ “হে নবী (সঃ)! মুশরিকরা যে তোমার নিকট থেকে পালিয়ে যাচ্ছে এবং ঈমান আনয়ন করছে না এতে তুমি মোটেই দুঃখ করো না।" এভাবে মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) সান্ত্বনা দিচ্ছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তুমি তাদের কারণে এতো দুঃখ আফসোস করো না।” অন্য জায়গায় আছেঃ “তুমি তাদের কারণে এতো বেশী দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ে পড়ো না।” আর এক আয়াতে আছেঃ “তাদের ঈমান না আনার কারণে তুমি নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না।”এখানেও তিনি বলেনঃ “তারা এই বাণী বিশ্বাস করছে না বলে তার পিছনে পড়ে তুমি দুঃখে আত্মবিনাশী হয়ে পড়ো না। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। তাবলীগের কাজে অবহেলা করো না। যে সুপথ প্রাপ্ত হবে সে নিজেরই মঙ্গল সাধন করবে। আর যে পথভ্রষ্ট হবে সেও নিজেরই ক্ষতি করবে। প্রত্যেকের আমল তার সাথেই রয়েছে।" এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “দুনিয়া ধ্বংসশীল। এর শোভা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর আখেরাত বাকী থাকবে। এর নিয়ামত চিরস্থায়ী।”রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া হচ্ছে মিষ্ট, সবুজ রঙ বিশিষ্ট। আল্লাহ তাতে তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানিয়ে দেখতে চান, তোমরা কেমন আমল কর। সুতরাং তোমরা দুনিয়া হতে ও স্ত্রীলোকদের হতে বেঁচে থাকো।" বান্ ইসরাঈলের সর্বপ্রথম ফিত্রা ছিল নারীদের ফিত্না। এই দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে এবং নষ্ট হয়ে যাবে। দনিয়ার ধ্বংস অনিবার্য। যমীন পতিত পড়ে থাকবে। তাতে কোন প্রকারের উদ্ভিদ থাকবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি অনাবাদী পতিত ভূমিতে পানি জমিয়ে থাকি? অতঃপর তা থেকে তারা ভূমিতে সেচন করে থাকে, তারা নিজেরা পান করে এবং তাদের পশুগুলিকে পান করিয়ে থাকে? তবুওকি তাদের চক্ষু খুলবে না?” যমীন ও যমীনে যা কিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সবকেই প্রকৃত মালিকের সামনে হাযির করা হবে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের কাছে যা-ই শুননা কেন এবং তাদেরকে যে কোন অবস্থায় দেখো না কেন, মোটেই দুঃখ ও আফসোস করো না।

وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَنْ يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا

📘 Please check ayah 18:81 for complete tafsir.

فَأَرَدْنَا أَنْ يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا

📘 ৭৯-৮১ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যুবকটির নাম ছিল হায়সূর। হাদীসে রয়েছে যে, তার প্রকৃতিতে কুফরী ছিল। হযরত খিয়র (আঃ) বলেন যে, খুব সম্ব ঐ ছেলের মুহব্বত তার পিতা-মাতাকেও কুফরীর দিকে টেনে নিয়ে যেতো। হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, তার জন্মের কারণে তার পিতা-মাতা খুবই আনন্দিত হয়েছিল এবং তার ধ্বংস দেখে তারা খুবই দুঃখিত হয়, অথচ তার জীবন তাদের জন্যে ধ্বংসাত্মক ছিল। সুতরাং আল্লাহ তাআলার মীমাংসার উপরই মানুষের সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। আমাদের প্রতিপালক আমাদের পরিণাম সম্যকরূপে অবগত। আর আমরা তার থেকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। মমিন তার নিজের জন্যে যা পছন্দ করে, তার চেয়ে ওটাই বেশী উত্তম যা আল্লাহ তার জন্যে পছন্দ করেন। সহীহ্ হাদীসে রয়েছে যে, মুমিনের জন্যে আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করেন তা সরাসরি উত্তমই হয়ে থাকে। কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “খুব সম্ভব যে, তোমরা কোন কিছু নিজেদের জন্যে অপছন্দনীয় ও ক্ষতিকর মনে করবে, অথচ ওটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর ও উপকারী।” (২:২১৬) হযরত খিয়র (আঃ) বলেনঃ “আমি চেয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাদেরকে এই ছেলের বিনিময়ে এমন ছেলে দান করবেন-যে হবে খোদাভীরু এবং পিতা-মাতার নিকট হবে অত্যন্ত প্রিয়। অথবা সেই ছেলে তার পিতামাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করবে।' পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, ঐ ছেলের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার পিতা-মাতাকে একটি মেয়ে দান করেছিলেন। বর্ণিত আছে যে, ঐ ছেলেটি নিহত হওয়ার সময় তার মাতা গর্ভবতী ছিল এবং তার গর্ভাশয়ে একটি মুসলমান বাচ্চা ছিল।

وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنْزٌ لَهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَنْ يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ ۚ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي ۚ ذَٰلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا

📘 এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, বড় শহরের উপরও গ্রামের প্রয়োগ হয়ে থাকে। কেননা, পূর্বে মহান আল্লাহ। বলেছেন। অর্থাৎ “যখন তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছলো।” আর এখানে বা ‘শহর’ বলেছেন। অনুরূপভাবে মক্কা শরীফকেই “গ্রাম’ বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বহু এমন গ্রাম ছিল যা তোমার ঐ গ্রাম অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল যেখান থেকে তোমাকে বের করে দিয়েছে।” (৪৭:১৩) অন্য জায়গায় মক্কা ও তায়েফ উভয় শহরকেই গ্রাম বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কেন এই কুরআন দুই গ্রামের একজন বড় লোকের উপর অবতীর্ণ করা হয় নাই?” (৪৩:৩১)(আরবী) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেনঃ এই দেয়ালটিকে ঠিক করে দেয়ার মধ্যে যৌক্তিকতা এই ছিল যে, এটা ছিল ঐ শহরের দুটি পিতৃহীন বালকের অধিকারভুক্ত। ওর নীচে তাদের মাল প্রোথিত ছিল। সঠিক তাফসীর তো এটাই। তবে এটাও বর্ণিত আছে যে, ওটা ছিল জ্ঞান ভাণ্ডার। এমনকি একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, কুরআন কারীমে যে গুপ্ত ধনের উল্লেখ আছে তা ছিল খাটি সোনার ফালি। তাতে লিখিত ছিলঃ “বিস্মিত হতে হয় ঐ ব্যক্তিকে দেখে যে তাকদীরকে বিশ্বাস করে, অথচ স্বীয় প্রাণকে পরিশ্রম ও কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে এবং দুঃখ ও চিন্তার মধ্যে পড়ে থাকছে! আশ্চর্যের বিষয় যে, জাহান্নামের শাস্তির কথা স্বীকার করেও হাসি-তামাশার মধ্যে লিপ্ত হয়েছে! বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, মৃত্যুকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও গাফেল ও উদাসীনভাবে জীবন যাপন করছে।” ঐ ফালির উপর 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) লিখিত ছিল। (এর একজন বর্ণনাকারী হলেন বাশর ইবনু মুনযির। কথিত আছে যে, তিনি মূসাইসিয়ার কাষী ছিলেন। তাঁর হাদীস সন্দেহজনক) পূর্ব যুগীয় গুরুজন হতেও এই ব্যাপারে কিছু হাদীস বর্ণিত আছে।হযরত হাসান বসীর (রঃ) বলেন যে, ওটা ছিল সোনার ফালি। তাতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম’ এর পরে প্রায় উপরে উল্লিখিত উপদেশাবলী লিখিত ছিল এবং শেষে কালেমায়ে তাইয়্যেবাহ লিপিবদ্ধ ছিল। জাফর ইবনু মুহাম্মদ (রঃ) বলেন যে, ঐ ফালিতে আড়াই লাইন লিখিত ছিল, পূর্ণ তিন লাইন নয় (শেষ পর্যন্ত)। বর্ণিত আছে যে, এই দুই ইয়াতীম তাদের সপ্তম পুরুষের পুণ্যের বরকতে রক্ষিত হয়েছিল। যে মনীষীরা এই ব্যাখ্যা করেছেন তাদের এই তাফসীরও পূর্বের তাফসীরের বিপরীত নয়। কেননা, এতেও রয়েছে যে, এই জ্ঞান ও উপদেশপূর্ণ কথাগুলি সোনার ফালির উপর লিখিত ছিল আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, সোনার ফালি নিজেই মাল এবং অতি মূল্যবান সম্পদ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এই আয়াত দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হয় যে, মানুষের পুণ্যের কারণে তার সন্তান সন্ততিরাও দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর মেহেরবানী লাভ করে থাকে। এটা কুরআন ও হাদীসে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত আছে। দেখা যায় যে, এই আয়াতে ঐ ইয়াতীম ছেলে দু’টির কোন প্রশংসা বর্ণনা করা হয় নাই, বরং তাদের পিতার সততা ও সৎকর্মশীলতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর এটা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, পিতার বরকতের কারণে তাদের হিফাযত করা হয়েছিল। সে ছিল তাদের সপ্তম পুরুষ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ'লাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। এ আয়াতে রয়েছেঃ “তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলেন এখানে ইচ্ছার সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার সাথে স্থাপন করার কারণ এই যে, যৌবনে পৌঁছাতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই সক্ষম নয়। দেখা যায় যে, শিল্প ব্যাপারে ও নৌকার ব্যাপারে ইচ্ছার সম্পর্ক আল্লাহ তাআলা নিজের দিকে। লাগিয়েছেন। যেমন বলেছেনঃ (আরবী) (আমি ইচ্ছা করলাম) এবং (আরবী) (আমি ইচ্ছা করলাম)। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।অতঃপর হযরত খিয়র (আঃ) হযরত মূসাকে (আঃ) বললেনঃ “যে তিনটি ঘটনাকে আপনি বিপজ্জনক মনে করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তা ছিল আল্লাহর রহমত। নৌকার মালিকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটে। কিন্তু তা ত্রুটিযুক্ত করার ফলে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পেয়েছে। শিশুটির হত্যার ফলে তার পিতা-মাতা সাময়িকভাবে দুঃখ পেলেও চিরদিনের দুঃখ ও আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে গেছে। এরপরে তারা সুসন্তান লাভ করেছে। আর দেয়াল ঠিক করে দেয়ার ফলে ঐ সৎকর্মশীল লোকটির সন্তানদ্বয়ের গুপ্তধন রক্ষিত হয়। এই কাজগুলি আমি আমার খেয়াল খুশীমত করি নাই বরং আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করেছি মাত্র। এর দ্বারা কেউ কেউ হযরত খিযরের নবুওয়াতের উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। ইতিপূর্বে এর উপর পূর্ণভাবে আলোচনা সমালোচনা হয়ে গেছে। কারো কারো মতে তিনি রাসূল ছিলেন। একটি উক্তি আছে যে, তিনি ফেরেশতা ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ গুরুজনের মতে তিনি আল্লাহর ওয়ালী ছিলেন। ইমাম ইবনু কুতায়বা (রঃ) মাআরিফ' গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত খিযুরের (আঃ) নাম ছিল বালিয়া ইবনু মালকান ইবনু ফালেগ, ইবনু আবির ইবনু শানিখ ইবনু আরফাখশাদ ইবনু সাম ইবনু নূহ (আঃ)। তাঁর কুনিয়াত (পিতৃ পদবীযুক্ত নমি) আবুল আব্বাস এবং উপাধী খিযুর (আঃ)। ইমাম নাওয়াতী (রঃ) তাহযীবুল আসমা গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত খিয়র (আঃ) একজন শাহযাদা ছিলেন। তিনি (নাওয়াভী (রঃ)) এবং ইবনু সালাহ্ (রঃ) তো উক্তি করেছেন যে, তিনি এখন পর্যন্ত জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। আর কোন কোন হাদীসেও এর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ওগুলির একটিও বিশুদ্ধ নয়। এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী মাশহুর হলো ঐ হাদীসটি যাতে আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সাঃ) প্রতি সমবেদনা প্রকাশের জন্যেই তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু এর সনদও দুর্বল। অধিকাংশ মুহাদ্দিস এর বিপরীত মতপোষণ করেছেন এবং আজ পর্যন্ত হযরত খিযুরের (আঃ) জীবিত থাকাকেও স্বীকার করেন না। তাদের একটি দলীল হচ্ছে নিম্নের আয়াতটিঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)) তোমার পূর্বে কাউকেও আমি চিরস্থায়ী জীবন। দান করি নাই।” (২১৪ ৩৪) আর একটি দলীল হলো বদরের যুদ্ধের দিন নবীর (সঃ) নিম্নরূপ প্রার্থনাঃ “হে আল্লাহ! যদি আমার জামাআতটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে যমীনে আপনার ইবাদত করার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে ন্য।” অন্য একটি দলীল এটাও যে, যদি হযরত খি (আঃ) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি অবশ্যই রাসূলুল্লাহর (সঃ) খিদমতে হাযির হতেন এবং ইসলাম কবুল করতেন ও তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত হতেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সমস্ত দানব ও মানবের নিকট রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তো একথাও বলেছিলেনঃ “যদি আজ হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) জীবিত থাকতেন, তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া উপায় ছিল না। তিনি তার মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে বলেছিলেনঃ “এখন যারা দুনিয়ার বুকে রয়েছে, আজ থেকে নিয়ে একশ’ বছরের মধ্যে তাদের কেউই অবশিষ্ট থাকবে না। এ ছাড়া আরো বহু দলীল রয়েছে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত খিরকে (আঃ) খ্যির বলার কারণ এই যে, তিনি সাদা বর্ণের শুষ্ক ঘাসের উপর বসেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ওর নীচে থেকে সবুজ বর্ণের ঘাস উদগত হয়েছিল। সম্বতঃ ভাবার্থ এই যে, তিনি শুষ্ক ঘাসের উপর বসেছিলেন, অতঃপর তা সবুজ বর্ণ ধারণ করেছিল। মোট কথা, হযরত খ্যির (আঃ) যখন হযরত মূসাকে (আঃ) প্রকৃত রহস্য ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন এবং তার কাছে নিজের কাজের যোক্তিকতা বিশ্লেষণ করেন তখন বলেনঃ “এটাই ছিল গুপ্ত রহস্য যা উদঘাটন করানোর জন্যে আপনি তাড়াহুড়া করছিলেন।” পূর্বে হযরত মূসার (আঃ) আগ্রহ ও কাঠিন্য বেশী ছিল বলে মহান আল্লাহ (আরবী) শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর হযরত খিয়র (আঃ) যখন রহস্য খুলে দিলেন তখন আর কাঠিন্য থাকলো না, কাজেই শব্দ নিয়ে আসলেন। এই সিফাত বা বিশেষণ নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এর পর ইয়াজুজ ও মাজুজ ঐ প্রাচীর অতিক্রম করতে পারলো না, বা ভেদ করতেও পারলো না।” ভেদ করার তুলনায় অতিক্রম করা সহজ বলে (আরবী) বা ভারীর মুকাবিলা ভারীর দ্বারা করা হয়েছে এবং (আরবী) বা হালকার মুকাবিলা করা হয়েছে হালকা দ্বারা। এইভাবে শাব্দিক ও মৌলিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে।হযরত মূসার (আঃ) সঙ্গীর আলোচনা ঘটনার শুরুতে ছিল। কিন্তু পরে আর তার আলোচনা করা হয়নি। কেননা, হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিরের (আঃ) ঘটনা বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য। হাদীসে আছে যে, হযরত মূসার (আঃ) এই সাথী ছিলেন হযরত ইউশা ইবনু নূন (আঃ)। তাঁকেই হযরত মূসার (আঃ) পরে বাণী ইসরাঈলের ওয়ালী বানানো হয়েছিল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি আবে হায়াত পান করে ছিলেন। এজন্যে তাকে একটি নৌকায় বসিয়ে দিয়ে সমুদ্রের মধ্যভাগে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ঐ নৌকাটি এভাবেই চিরদিনের জন্যে সমুদ্রের তরঙ্গের মধ্যে চলতে রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এটা খুবই দুর্বল উক্তি। কেননা এই ঘটনার বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন রয়েছেন হাসান নামক ব্যক্তি। তার বর্ণনা পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয় বর্ণনাকারী হলেন তাঁর পিতা, যিনি অপরিচিত। সনদ হিসেবেও এ ঘটনা ঠিক নয়।

وَيَسْأَلُونَكَ عَنْ ذِي الْقَرْنَيْنِ ۖ قُلْ سَأَتْلُو عَلَيْكُمْ مِنْهُ ذِكْرًا

📘 Please check ayah 18:84 for complete tafsir.

إِنَّا مَكَّنَّا لَهُ فِي الْأَرْضِ وَآتَيْنَاهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا

📘 ৮৩-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। একথা পূর্বেই গত হয়েছে যে, মক্কার কাফিররা আহলে কিতাবকে জিজ্ঞেস করেছিলঃ “আমাদেরকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমরা মুহাম্মদকে (সঃ) জিজ্ঞেস করবো এবং তিনি তার উত্তর দিতে পারবেন না।” তখন তারা তাদেরকে বলৈছিলঃ “প্রথম প্রশ্ন তোমরা তাকে ঐ ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, যিনি সারা ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করেছিলেন। তোমরা তাঁকে দ্বিতীয় প্রশ্ন ঐ যুবকদের সম্পর্কে করবে, যারা সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। আর তৃতীয় প্রশ্ন করবে রূহ্ সম্পর্কে। তাদের এই প্রশ্নগুলির উত্তরে এই সূরায়ে কাহ্ফ অবতীর্ণ হয়। রিওয়াইয়াতে এটাও আছে যে, ইয়াহূদীদের একটি দল রাসূলুল্লাহকে (সঃ) যুলকারনাইনের ঘটনা জিজ্ঞেস করতে এসেছিল। তিনি তাদেরকে দেখেই বলেনঃ “তোমরা এই ঘটনা জিজ্ঞেস করতে এসেছে।” অতঃপর তিনি তাদের কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে যে, তিনি রোমের একজন যুবক ছিলেন। তিনিই ইসকানদারিয়া শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাকে একজন ফেরেশতা আকাশ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এমন কতকগুলি লোককে দেখেছিলেন, যাদের মুখ ছিল কুকুরের মত। কিন্তু এতে বড়ই দীর্ঘসূতিকা, অস্বীকৃতি ও দুর্বলতা রয়েছে। এর মারফু হওয়া প্রমাণিত নয়। প্রকৃতপক্ষে এটা বাণী ইসরাঈলের রিওয়াইয়তি। এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, আবু যার আ’রাযীর (রঃ) মত একজন আল্লামা স্বীয় গ্রন্থ দালাইলুন নবুওয়ার মধ্যে এটা আনয়ন করেছেন। এরূপ বর্ণনা তার ন্যায় একজন মনীষীর পক্ষে অতি বিস্ময়করই বটে। এটাও ঠিক নয়। দ্বিতীয় ইসকান্দার ছিলেন রোমক। তিনি হলেন ইসকান্দার ইবনু ফায়লীস আল মাকদূনী আল ইউনানী। তাঁর উযীর ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক য়্যারিষ্টটল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। তার দ্বারাই রোমের ইতিহাস শুরু হয়। তিনি ছিলেন হযরত ঈসার (আঃ) তিনশ বছর পূর্বে। আর প্রথম ইসকান্দার যার বর্ণনা কুরআনে কারীমে দেয়া হয়েছে, তিনি তো ছিলেন হযরত ইবরাহীম খলীলের (আঃ) যামানার লোক। যেমন আযরাকী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলের (আঃ) সাথে বায়তুল্লাহ শরীফের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এরপর ওর তাওয়াফ করেন। তার উপর তিনি ঈমান আনয়ন করেন এবং তাঁর অনুসারী হন। আল্লাহ তাআলার ফলে তাঁর বহু ঘটনা আল বিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়ার মধ্যে বর্ণনা করে দিয়েছি। ওহাব ইবনু মুনাব্বাহ (রঃ) বলেন যে, তিনি বাদশাহ ছিলেন। তার মাথার দুদিকে তামা থাকতো বলে তাঁকে যুলকারনাইন (দুটি শিং বিশিষ্ট) বলা হতো। কারণ এটাও বলা হয়েছে যে, তিনি রোম ও পারস্যের বাদশাহ ছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, আসলেই তার মাথার দুদিকে শিং-এর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত কিছু ছিল। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ তাঁর এই নামের কারণ এই যে, তিনি ছিলেন আল্লাহ তাআলার একজন সৎ বান্দা। তিনি স্বীয় কওমকে আল্লাহর পথে আহবান করেন। লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায় এবং তার মাথার এক দিকে এমনভাবে আঘাত করে যে, তিনি শহীদ হয়ে যান। আল্লাহ তাআ'লা তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আবার লোকেরা তার মাথার অন্য দিকে আঘাত করে। ফলে, পুনরায় মৃত্যু বরণ করেন। এজন্যেই তাকে যুলকারনাইন বলা হয়। একথাও বলা হয়েছে যে, পূর্ব ও পশ্চিম পর্যন্ত ভ্রমণ করেন বলে তাঁকে যুলকারনাইন বলা হয়।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম। সাথে সাথে আমি তাকে সামরিক শক্তি ও যুদ্ধাস্ত্রও দান করেছিলাম। পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। আরব অনারব সবাই তাঁর কর্তৃত্বাধীন ছিল। আমি তাকে প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলাম। তিনি সমস্ত ভাষা জানতেন। যে কওমের সাথে তাঁর যুদ্ধ হতো তিনি তাদের ভাষাতেই কথা বলতেন। একদা হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হযরত কা'ব আহরকে (রাঃ) বলেনঃ “আপনি কি বলেন যে, যুলকারনাইন তাঁর ঘোড়াটি সারিয়ার (তারকা) সাথে বাঁধতেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আপনি যখন এটা বললেন তখন শুনুন! আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাকে জিনিসের সব সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র দান করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে এই অস্বীকারের ব্যাপারে সত্য হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) সাথেই ছিল। এজন্যেও যে, হযরত কা'ব (রাঃ) লিখিত যা কিছু যেখানেই পেতেন বর্ণনা করে দিতেন। যদিও তা মিথ্যা হতো। এজন্যেই তিনি বলতেনঃ “কাবের মিথ্যা তো বার বার সামনে এসেছে।” অর্থাৎ তিনি নিজে তো মিথ্যা বানিয়ে নিতেন না বটে, কিন্তু তিনি যে রিওয়াইয়াতই পেতেন তা সনদহীন হলেও বর্ণনা করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। আর এটা তো স্পষ্ট কথা যে, বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াত মিথ্যা, অশ্লীল কথন এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে রক্ষিত নয়। তা ছাড়া বানী ইসরাঈলের কথার প্রতি ভ্রক্ষেপ করারও আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, আমাদের হাতে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের (সঃ) বিশুদ্ধ হাদীস সমূহ বিদ্যমান রয়েছে। বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এই বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াতগুলি মুসলমানদের মধ্যে অনেক অকল্যাণ ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং বড় রকমের ফাসাদ ছড়িয়ে দিয়েছে। হযরত কা'ব (রাঃ) এই বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াতকে প্রমাণ করতে গিয়ে কুরআন কারীমের এই আয়াতের যে শেষাংশ পেশ করেছেন এটাও ঠিক নয়। কেননা, এটাতো সম্পূর্ণরূপে প্রকাশমান যে, কোন মানুষকেই আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর ও সারিয়ার উপর পৌছবার ক্ষমতা দেন নাই। বিলকীস সম্পর্কেও কুরআন কারীমে এই শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ (আরবী) (২৭:২৩) অর্থাৎ “তাকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, বাদশাহদের কাছে সাধারণতঃ যা কিছু থাকে ঐ সবই তার নিকট বিদ্যমান ছিল। অনুরূপ ভাবে হযরত যুলকারনাইনকে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলেন। উদ্দেশ্য এই যে, যেন তিনি ব্যাপকভাবে বিজয় লাভ করে যেতে পারেন এবং যমীনকে যেন মুশরিক ও কাফিরদের থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র করতে পারেন। আর যেন আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের সাথে একত্ববাদীদের রাজত্ব ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দুনিয়ায় আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সব কাজে যে সব আসবাব ও সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়ে থাকে ঐ সব কিছুই মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত যুলকারনাইনকে প্রদান করেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। হযরত আলীকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করা। হয়েছিলঃ “মাশরিক ও মাগরিব পর্যন্ত তিনি কি রূপে পৌঁছে ছিলেন?" উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “সুবহানাল্লাহ! মেঘমালাকে আল্লাহ তাআ'লা তাঁর অনুগত করে দিয়েছিলেন এবং তার জন্যে সমস্ত আসবাবপত্রের ব্যবস্থা। করেছিলেন ও সর্ব প্রকারের শক্তি তাকে প্রদান করেছিলেন।

فَأَتْبَعَ سَبَبًا

📘 Please check ayah 18:88 for complete tafsir.

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَنْ تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَنْ تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا

📘 Please check ayah 18:88 for complete tafsir.

قَالَ أَمَّا مَنْ ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهُ ثُمَّ يُرَدُّ إِلَىٰ رَبِّهِ فَيُعَذِّبُهُ عَذَابًا نُكْرًا

📘 Please check ayah 18:88 for complete tafsir.

وَأَمَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُ جَزَاءً الْحُسْنَىٰ ۖ وَسَنَقُولُ لَهُ مِنْ أَمْرِنَا يُسْرًا

📘 ৮৫-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর: যুলকারনাইন একটি পথ ধরে চলতে শুরু করলেন। যমীনের একটি দিক অর্থাৎ পশ্চিম দিকে যাত্রা শুরু করে দিলেন। যমীনের উপর যে সব নিদর্শন ছিল ওগুলিকে অবলম্বন করে তিনি চলতে লাগলেন। পশ্চিম দিকে যতদূর পারলেন চলতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছে গেলেন। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এর দ্বারা আকাশের ঐ অংশকে বুঝানো। হয় নাই যেখানে সূর্য অস্তমিত হয়। কেননা, সেখান পর্যন্ত পৌছা কারো। পক্ষেই সম্ভবপর নয়। বরং তিনি ওর ঐ পার্শ্ব পর্যন্ত পৌঁছেন যে পর্যন্ত পৌঁছা। মানুষের পক্ষে সম্ব। কতকগুলি কাহিনী যে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যে, তিনি সূর্য অস্তগমনের স্থান অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং সূর্য তার পেছনে অস্তমিত হতো এটা একেবারে ভিত্তিহীন কথা। অনুমিত হয় যে, এটা আহলে কিতাবের অশ্লীল কথন। তাদের এটা মনগড়া কথা। মোট কথা, যখন তিনি পশ্চিম দিকের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যান তখন এরূপ মনে হলো যে, যেন। সূর্য প্রশান্ত মহাসাগরে অস্ত যাচ্ছে। কেউ যদি সমুদ্রের তীরে দাড়িয়ে সূর্যকে অস্ত যেতে দেখে তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার এরূপই মনে হবে যে, ওটা যেন পানির মধ্যেই ডুবে যাচ্ছে। অথচ সূর্য চতুর্থ আকাশে রয়েছে এবং ওর থেকে কখনো পৃথক হয় না।(আরবী) শব্দ হতে বের হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে মসৃণ কাদা মাটি। কুরআন কারীমের (আরবী) (১৫:২৮) (নিশ্চয় আমি মানুষকে খনখনে মাটি দ্বারা যা পচা কাদা হতে তৈরী করে সৃষ্টি করেছি) এই আয়াতের তাফসীরে এটা গত হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে এই অর্থ শুনে হযরত নাফে' (রঃ) শুনেন যে, হযরত কা'ব আহবার (রঃ) জিজ্ঞাসার সুরে বলেছিলেনঃ “আপনারা আমার চেয়ে কুরআন বেশী জানেন। কিন্তু আমি তো কিতাবে পাচ্ছি যে, ওটা কালো বর্ণের মাটিতে ডুবে যায়?” একটি কিরআতে (আরবী) রয়েছে। অর্থাৎ সূর্য গরম জলাশয়ে অস্তমিত হয়। এই দুটি কিরআত প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে এবং দুটোই সঠিক। সুতরাং যে কোন একটি পড়া যাবে এবং এ দুটোর অর্থেও কোন বৈপরীত্ব নেই। কেননা, সূর্য নিকটে থাকার কারণে পানি গরম ও কালো হয় এবং তথাকার মাটি কালো বর্ণের হওয়ার কারণেঐ পানির কাদা ঐ বর্ণেরই হয়।হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখে বলেনঃ “আল্লাহর উত্তেজনাপূর্ণ জ্বলন্ত অগ্নিতে (অস্তমিত হচ্ছে), যদি আল্লাহর হুকুমে এর উত্তেজনা কমে না যেতো। তবে এটা যমীনের সমস্ত কিছু দগ্ধ করে ফেলতো। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এর মারফু হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। হতে পারে যে, এটা আবদুল্লাহ ইবনু আমরের (রঃ) নিজস্ব কথা। আল্লাহই ভাল জানেন)বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত মুআবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান (রাঃ) সূরায়ে কাহফের এই আয়াতটি পাঠ করেন। তিনি (আরবী) পাঠ করনে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমরা তো (আরবী) পড়ে থাকি।' একথা শুনে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমরকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কিরূপ পড়েন?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “আপনি যেভাবে পড়লেন আমিও সেই ভাবে পড়ে থাকি।” তখন হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমাদের ঘরেই কুরআন কারীম অবতীর্ণ হয়েছে।” হযরত মুআবিয়া (রাঃ) তখন লোক পাঠিয়ে হযরত কা’বকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “তাওরাতে আপনি সূর্য অস্তমিত হওয়ার স্থান কোথায় পেয়ে থাকেন?” উত্তরে হযরত কাব (রাঃ) বলেনঃ এ ব্যাপারে আহলুল আরাবিয়্যাহকে জিজ্ঞেস করুন। এ বিষয়ে তাঁরাই ভাল জ্ঞান রাখেন। আমি তাওরাতে পাই যে, সূর্য মাটি ও কাদার মধ্যে অস্তমিত হয়।” ঐ সময় তিনি স্বীয় হস্ত দ্বারা পশ্চিম দিকে ইশারা করেন। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এসব ঘটনা শুনে ইবন। হাযির (রঃ) বলেনঃ আমি ঐ সময় বিদ্যমান থাকলে হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) পৃষ্ঠপোষকতায় তু’র নিম্নের দু’টি ছন্দ পাঠ করতাম যা তিনি যুলকারনাইনের আলোচনায় বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি মাশরিক ও মাগরিব পর্যন্ত পৌঁছে যান। কেননা, বিজ্ঞানময় ও পথ প্রদর্শক (আল্লাহ) তাকে সর্বপ্রকারের আসবাব ও সরঞ্জাম প্রদান করেছিলেন। তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় দেখতে পান যে, ওটা কালো বর্ণের কাদা মাটিতে অস্তমিত হচ্ছে।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ (আরবী) এর অর্থ কি?” উত্তরে বলা হয়ঃ “মাটি।" তিনি প্রশ্ন করেনঃ (আরবী) কি?” জবাবে বলা হয়ঃ “কাদা।” তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ (আরবী) কি?" উত্তর আসে “কালো।" তৎক্ষণাৎ হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) একটি লোককে বা তার গোলামকে বলেনঃ “এই লোকটি যা বলছে তা লিখে নাও।” হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূরায়ে কাহফ পাঠ করেন। যখন তিনি (আরবী) এইরূপ পাঠ করেন তখন হযরত কা'ব (রাঃ) বলে ওঠেনঃ “যার হাতে কাবের (রাঃ) প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তাওরাতে এরূপই রয়েছে। একমাত্র হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) ছাড়া আর কাউকেও আমি এরূপভাবে পড়তে শুনি নাই। তাওরাতেও এটাই রয়েছে যে, সূর্য কালো বর্ণের কাদায় অস্তমিত হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যুলকারনাইন তথায় একটা সম্প্রদায়কে দেখতে পান। সেখানে। একটি বড় শহর ছিল যার ছিল বারো হাজার দরজা। সেখানে কোন গোলমাল ও শোরগোল না হলে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সময় তথাকার লোকদের সূর্য অস্ত যাওয়ার শব্দ শুনতে পাওয়াও মোটেই বিস্ময়কর নয়। সেখানে যুলকারনাইন একটি বড় সম্প্রদায়কে বসবাস করতে দেখতে পান। আল্লাহ তাআলা তাদের উপরও তাকে বিজয় দান করেন। এখন এটা তার ইচ্ছাধীন ছিল যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করবেন। তিনি আদল ও ঈমানের উপরই থাকলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ “যারা এখনও কুফরী ও শিরকের উপরই রয়ে যাবে তাদেরকে আমি শাস্তি দেবো, হত্যা ও ধ্বংস দ্বারা অথবা তামার পাত্রকে কঠিনভাবে গরম করে তাদেরকে ওর উপর নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা গলে যাবে। কিংবা সেনাবাহিনীর হাতে তাদেরকে অপমানজনক শাস্তি প্রদান করা হবে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। অতঃপর যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হবে তখন তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করবেন। এর দ্বারা কিয়ামতের দিনও প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনবে ও সৎকার্যাবলী সম্পাদন করবে তাদের জন্যে প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তার প্রতি ব্যবহারে আমি নম্র কথা বলবো।"

ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا

📘 Please check ayah 18:91 for complete tafsir.

أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا

📘 Please check ayah 18:12 for complete tafsir.

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلَىٰ قَوْمٍ لَمْ نَجْعَلْ لَهُمْ مِنْ دُونِهَا سِتْرًا

📘 Please check ayah 18:91 for complete tafsir.

كَذَٰلِكَ وَقَدْ أَحَطْنَا بِمَا لَدَيْهِ خُبْرًا

📘 ৮৯-৯১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেন যে, যুলকারনাইন পশ্চিম দিক থেকে ফিরে এসে পূর্ব দিকে চলতে শুরু করেন। পথে যে সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ হতো, তাদেরকে তিনি আল্লাহর ইবাদত ও তার একত্ববাদের দাওয়াত দিতেন। তারা স্বীকার করলে তো ভালই, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন। আল্লাহর ফজলে তাদের উপর বিজয় লাভ করে তিনি তাদেরকে নিজের। অধীনস্থ করতঃ তথাকার ধন-সম্পদ, গৃহ পালিত পশু, খাদেম প্রভৃতি নিয়ে সামনে অগ্রসর হতেন। বাণী ইসরাঈলের খবরে রয়েছে যে, তিনি একহাজার ছয় শ' বছর জীবিত ছিলেন এবং বরাবরই ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহর দ্বীনের তবলীগের কাজ চালিয়ে যান। সাথে সাথে তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তনও বিস্তৃত হয়। সূর্য উদিত হওয়ার স্থানে যখন তিনি পৌঁছেন তখন সেখানে দেখতে পান যে, একটি জনবসতি রয়েছে। কিন্তু তথাকার লোকেরা প্রায় চতুষ্পদ জন্তুর মত ছিল। না তারা ঘরবাড়ী তৈরী করে, না তথায় কোন গাছপালা রয়েছে, না রৌদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন কিছু সেখানে বিদ্যমান রয়েছে। তাদের দেহের রঙ ছিল লাল এবং তারা বেঁটে আকৃতির লোক ছিল। তাদের সাধারণ খাদ্য ছিল মাছ। সূর্য উদিত হওয়ার সময় তারা পানিতে নেমে যেতো এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর তারা চতুষ্পদ জুলুর মত এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তো। এটা হযরত হাসানের (রাঃ) উক্তি। হযরত কাতাদার (রঃ) উক্তি এই যে, সেখানে কিছুই উৎপন্ন হতো না। সূর্য উদিত হওয়ার সময় তারা পানিতে চলে যেতো এবং সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার পর তারা তাদের দূরবর্তী ক্ষেত খামারের দিকে ছড়িয়ে পড়তো। সালমার (রঃ) উক্তি এই যে, তাদের কান ছিল বড় বড়। একটা কান দ্বারা নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করতো আর একটি বিছিয়ে দিতো। কাতাদা (রঃ) বলেন, তারা ছিল অসভ্য ও বর্বর। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, সেখানে কখনো কোন ঘরবাড়ী এবং প্রাচীর নির্মিত হয় নাই। সূর্যোদয়ের সময় ঐ লোকগুলি পানিতে নেমে যেতো। সেখানে কোন পাহাড় পর্বতও নেই। অতীতে কোন এক সময় তাদের কাছে এক সেনাবাহিনী আগমন করে। তারা তথাকার লোকদেরকে বলেঃ “দেখো, তোমরা সূর্যোদয়ের সময় বাইরে চলে যেয়ো না।" তারা বললোঃ “না, এটা হতে পারে না, আমরা বরং রাতে রাতেই এখান থেকে চলে যাবো।” তখন ঐ সেনাবাহিনী তাদেরকে বললোঃ “আচ্ছা বলতো, এই চকচকে হাড়গুলির ঢেরীটা কিরূপ?” উত্তরে তারা বললোঃ “পূর্বে এখানে এক সেনাবাহিনী এসেছিল। সূর্যোদয়ের সময় তারা এখানেই অবস্থান করেছিল। ফলে তারা সবাই মৃত্যুবরণ করেছিল। এগুলি তাদেরই অস্থি।” একথা শোনা মাত্রই এই সেনাবাহিনী সেখান থেকে বিদায় গ্রহণ করে।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘প্রকৃত ঘটনা এটাই, তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।' তাঁর ও তাঁর সঙ্গীদের কোন কাজ, কোন কথা এবং কোন চালচলন আল্লাহ তাআলার অজানা ছিল না। যদিও তাঁর সৈন্য সংখ্যা অনেক ছিল এবং যমীনের প্রতিটি অংশে তারা ছড়িয়ে পড়েছিলেন, তবুও কোন কিছুই মহান আল্লাহর অগোচরে ছিল না। তার জ্ঞান যমীন ও আসমানের সব কিছুকেই পরিবেষ্টনকারী। তাঁর কাছে কিছুই গোপন নেই।

ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا

📘 Please check ayah 18:96 for complete tafsir.

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُونِهِمَا قَوْمًا لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا

📘 Please check ayah 18:96 for complete tafsir.

قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَىٰ أَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا

📘 Please check ayah 18:96 for complete tafsir.

قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا

📘 Please check ayah 18:96 for complete tafsir.

آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا سَاوَىٰ بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا

📘 ৯২-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিতে গিয়ে বলেন যে, যুলকারনাইন পূর্ব দিকে সফর শেষ করে একপথ ধরে চলতে থাকেন। চলতে চলতে দেখতে পান যে, দু'টি পাহাড় পরস্পর মিলিতভাবে রয়েছে কিন্তু ঐ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে একটি ঘাঁটি রয়েছে, যেখান দিয়ে ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হয়ে তুর্কীদের উপর ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে থাকে। তারা তাদেরকে হত্যা করে, তাদের বাগান ও ক্ষেত খামার নষ্ট করে, শিশুদেরকেও মেরে ফেলে এবং সবদিক দিয়েই তাদের সর্বনাশ সাধন করে। ইয়াজুজ মাজুজও মানুষ, যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত আদমকে (আঃ) বলবেনঃ “হে আদম (আঃ) !” তিনি তখন বলবেনঃ “লাব্বায়কা ওয়া সা’দাইকা (এই তো আমি হাযির আছি)। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “আগুনের অংশ পৃথক কর।”তিনি বলবেনঃ “কতটা অংশ পৃথক করবো?” জবাবে মহান আল্লাহ বলবেনঃ “প্রতি হাযার হতে নয়শ’ নিরানব্বই জনকে পৃথক কর (অর্থাৎ হাযারের মধ্যে নয়শ’ নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং একজন জান্নাতী)।” এটা ঐ সময় হবে যখন শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে দুটি দল এমন রয়েছে যে, তারা যার মধ্যে থাকবে তাকে বেশী করে দিবে। অর্থাৎ ইয়াজুজ ও মাজুজ।” ইমাম নওয়াভী (রঃ) সহীহ মুসলিমের শরাহতে এক অতি বিস্ময়কর কথা লিখেছেন যে, হযরত আদমের (আঃ) বিশেষ শুক্রের (বীর্যের কয়েক ফোঁটা যা মাটিতে পড়েছিল তা থেকেই ইয়াজুজমাজুজকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ঐ শুক্রের সাথে হযরত হাওয়ার (আঃ) শুক্র মিশ্রিত হয় নাই। কিন্তু এটা স্মরণ রাখার যোগ্য যে, এই উক্তিটি খুবই গরীব বা দুর্বল। এর উপর আলী (জ্ঞান সম্পর্কীয়) ও নকলী (শরীয়ত সম্পৰ্কীয়) কোনই দলীল নেই। আহলে কিতাব হতে এরূপ কথা এসেছে যা মানার যোগ্য মোটেই নয়। তারা এ ধরণের কথা নিজেরাই বানিয়ে নিয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।হযরত সুমরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত নূহের (আঃ) তিনটি পুত্র ছিল। সাম, হা’ম এবং ইয়াফিস। সমস্ত আরব সা’মের বংশধর। সমস্ত হাবশী হা’মের বংশধর। সমস্ত তূর্কী ইয়াফিসের বংশধর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদের (রঃ) মুসনাদে বর্ণিত হয়েছে)কোন কোন আলেমের উক্তি এই যে, ইয়াজুজ-মাজুজ তূর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিসের সন্তানদেরই অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে তুর্কী বলার কারণ এই যে, তাদের ফাসাদ ও দুষ্টামির কারণে তাদেরকে মানুষের জনবসতির পিছনে পাহাড়ের আড়ালে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) যুলকারনাইনের সফর সম্পর্কে, ঐ প্রাচীর নির্মাণ সম্পর্কে এবং ইয়াজুজ-মাজুজের দেহাকৃতি ও কান ইত্যাদি সম্পর্কে ওহাব ইবন মনাবাহ (রঃ) হতে একটি অতিলম্বা চওড়া ঘটনা স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ওটা বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক হওয়া ছাড়াও বিশুদ্ধতা হতে বহু দূরে রয়েছে। মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমেও এ ধরনের বহু ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু ঐ গুলিও গারীব ও বেঠিক। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। যুলকারনাইন যখন পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছলেন তখন তিনি তথায় এমন এক সম্প্রদায়কে পেলেন যারা দুনিয়ার অন্যান্য লোকদের হতে বহু দূরে অবস্থান করার কারণে এবং তাদের একটা নির্দিষ্ট ভাষা হওয়ার কারণে অন্যদের ভাষা প্রায়ই বুঝতে পারতো না। ঐ লোকগুলি যুলকারনাইনের শক্তি সামর্থ এবং জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে তার নিকট আবেদন জানিয়ে বলেঃ “যদি আপনি সম্মত হন তবে আমরা কর হিসেবে আপনার জন্যে বহু মালধন ও আসবাবপত্র জমা করবো এবং এর বিনিময়ে আপনি ঐ পর্বত দ্বয়ের মধ্যবর্তী ঘাটিকে কোন সুদৃঢ় প্রাচীর দ্বারা বন্ধ করে দিবেন, যাতে আমরা ঐ বিবাদ ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের প্রতি দিনের অত্যাচার হতে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারি। তাদের একথার জবাবে হযরত যুলকারনাইন বললেনঃ “তোমাদের মাল ধনের আমার কোনই প্রয়োজন নেই। আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দান করেছেন তা তোমাদের ধন দৌলত অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম ও উৎকৃষ্ট।" যেমন হযরত সুলাইমান (আঃ) সাবা দেশের রানীর দূতদেরকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কি আমাকে ধন সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে শ্রেষ্ঠ।” (২৭:৩৬) অতঃপর যুলকারনাইন ঐ লোকদেরকে বললেনঃ “তোমরা আমাকে তোমাদের দৈহিক শক্তি ও শ্রম দ্বারা সাহায্য কর। তাহলে আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দিচ্ছি।” (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হলো খণ্ড। যুলকারনাইন তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা আমার নিকট লৌহখণ্ডসমূহ নিয়ে এসো।” তখন তারা তার কাছে ওগুলি আনয়ন করলো। তখন তিনি প্রাচীর নির্মাণ কার্যে লেগে। পড়লেন। ওটা দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে এমন হলো যে, সমস্ত জায়গাকে ঘিরে ফেললো এবং পর্বত শিখর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। প্রাচীরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্বের বর্ণনায় বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। যখন প্রাচীরটির নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়ে গেল তখন তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেনঃ “এখন তোমরা এই প্রাচীরের চতুষ্পর্শ্বে আগুন জ্বালিয়ে দাও এবং হাঁপরে দম দিয়ে থাকো।” যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত ' হলো তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ “এখন তোমরা গলিত তাম্র আনয়ন কর এবং ওর চতুর্দিকে সম্পূর্ণরূপে বহিয়ে দাও।" এ কাজও করা হলো। সুতরাং ঠাণ্ডা হওয়ার পর প্রাচীরটি অত্যন্ত মযবুত হয়ে গেল। প্রাচীরটি দেখে মনে হলো যেন তা রেখা যুক্ত চাদর।বর্ণিত আছে যে, একজন সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) খিদমতে আর করেনঃ “আমি ঐ প্রাচীরটি দেখেছি। তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে প্রশ্ন করেনঃ “ওটা কিরূপ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যেন তা রেখাযুক্ত চাদর, যাতে লাল ও কালো রেখা রয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি ঠিকই বলেছো।”। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটি মুরসাল)খলীফা ওয়াসিক স্বীয় খিলাফত কালে তার কোন এক আমীর বা সভাষদকে এক সেনাবাহিনী ও বহু সাজ-সরঞ্জামসহ এই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন যে, তারা যেন ঐ প্রাচীরটি দেখে এসে তাঁর নিকট ওর বর্ণনা দেন ঐ সেনাবাহিনী দুই বছরেরও অধিক কাল সফর করেন এবং তাঁরা ঐ প্রাচীরের নিকট পৌঁছে যান। তারা দেখতে পান যে, প্রাচীরটি লৌহ ও তাম্র দ্বারা নির্মিত। তাতে একটি বিরাট দর রয়েছে এবং তাতে একটি বৃহৎ তালা লাগানো আছে। প্রাচীরটির নির্মাণ কার্য শেষ করার পর যে মসল্লা অবশিষ্ট ছিল তা একটি বুরুজে রক্ষিত আছে। সেখানে প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে। প্রাচীর অত্যন্ত উচ্চ। যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ওর উপরে আরোহন করা সম্ভম্বপর নয়। ওর সাথে মিলিত পাহাডগুলি দু”দিক দিয়ে বরাবর চলে গিয়ে তারা আরো বহু বিস্ময়কর জিনিস অবলোকন করেন এবং ফিরে এসে খলীফার নিকট সব বিবরণ বর্ণনা করেন।

فَمَا اسْطَاعُوا أَنْ يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا

📘 Please check ayah 18:99 for complete tafsir.

قَالَ هَٰذَا رَحْمَةٌ مِنْ رَبِّي ۖ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاءَ ۖ وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا

📘 Please check ayah 18:99 for complete tafsir.

۞ وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ ۖ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا

📘 ৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআ’লী খবর দিতে গিয়ে বলছেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের ক্ষমতা নেই যে, তারা ঐ প্রাচীরের উপর উঠে তা অতিক্রম করতে পারে এবং এই শক্তিও নেই যে, তাতে ছিদ্র করে ওর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। উপরে চড়া তা ভেঙ্গে দেয়া তুলনায় সহজ বলে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে (আরবী) শব্দ আনয়ন করা হয়েছে। মোট কথা, তারা ঐ প্রাচীরের উপর উঠতেও পারে না এবং ওতে ছিদ্র করতেও সক্ষম নয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ ও মাজুজ প্রত্যহ প্রাচীরটিকে খনন। করতে থাকে এবং এই পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তারা যেন সূর্যের আলো দেখেই ফেলবে। তারপর দিন অতিবাহিত হয়ে যায় এবং তাদের নেতা তাদেরকে হুকুম করেঃ “আজকের মত এখানেই শেষ কর, আগামীকাল এসে আবার ভাঙ্গা যাবে। কিন্তু পরের দিন এসে তারা ওটাকে পূর্বাপেক্ষা বেশী শক্ত পায়। কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় যখন তাদের বের হওয়া আল্লাহ চাবেন, তখন তারা ওটা খনন করতে করতে চোকলা বা বাকলের মত করে ফেলবে। ঐ সময় তাদের নেতা তাদেরকে বলবেঃ “এখন ছেড়ে দাও, আগামীকাল ইনশা আল্লাহ আমরা এটা ভেঙ্গে ফেলবো।" সুতরাং ইশাআল্লাহ বলার বরকতে পরের দিন যখন তারা আসবে, তখন ওটাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিল ঐ অবস্থাতেই পাবে। ফলে, তৎক্ষণাৎ তারা ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলবে ও বাইরে বেরিয়ে পড়বে। বেরিয়ে এসেই তারা সমস্ত পানি অবলেহন করবে। জনগণ ব্রিত হয়ে দূর্গে আশ্রয় নেবে। তারা তাদের তীরগুলি আকাশের দিকে ছুড়বে। তীরগুলি রক্ত মাখানো অবস্থায় তাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারা তখন বলবেঃ আকাশবাসীদের উপরও আমরা বিজয় লাভ করেছি। অতঃপর তাদের ঘাড়ে গুটি বের হবে এবং সবাই আল্লাহর হুকুমে ঐ প্লেগেই ধ্বংস হয়ে যাবে। যার হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তাদের দেহ ও রক্ত হবে জন্তুরখাদ্য, যার ফলে তারা খুব মোটা তাজা হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনু মাজাহতেও এ রিওয়াইয়াতটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযীও (রঃ) এটা আনয়ন করেছেন এবং বলেছেন যে, এ রিওয়াইয়াতটি গারীব। এর সনদ খুব মজবুত)কা’ব আহ্বার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজ দৈনিক প্রাচীরটিকে চাটতে থাকে এবং ওটাকে একেবারে ছালের মত করে দেয়। তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “আজ চলো, আগামীকাল এটা ভেঙ্গে দেবো।" কিন্তু পরের দিন এসে দেখতে পায় যে, ওটা পূর্বে যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে অর্থাৎ আসল অবস্থাতেই ফিরে গেছে। অবশেষে তাদের উপর আল্লাহর ইলহাম হবে এবং তারা যাওয়ার সময় ইনশা-আল্লাহ বলে ফেলবে। সুতরাং তারা ওটাকে গত দিন যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিল ঐ অবস্থাতেই পাবে। কাজেই তারা ওটা ভেঙ্গে ফেলবে। (খুব সম্ভব এই কা'ব (রাঃ) থেকেই হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এটা শুনে থাকবেন এবং তা বর্ণনা করে থাকবেন। তারপর কোন বর্ণনাকারী ধারণা বশতঃ এটাকে রাসূলুল্লাহর (সঃ) উক্তি মনে করে মারফুরূপে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী) আমরা যে এটা বর্ণনা করলাম এর পৃষ্ঠপোষকতা ঐ হাদীস দ্বারাও হয় যা মুসনাদে আহমাদে রয়েছে। হাদীসটি হলোঃ নবীর (সঃ) স্ত্রী হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একদা নবী (সঃ) ঘুম হতে জাগ্রত। হন। তাঁর চেহারা মুবারক রক্তিম বর্ণ ধারণ করছিল এবং তিনি বলতে ছিলেনঃ “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ! আরবের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার সময় নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে এই পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গেছে।” অতঃপর তিনি স্বীয় অঙ্গুলীগুলি দ্বারা বৃত্ত করে তা দেখিয়ে দিলেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আমাদের মত ভাল লোকগুলি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি ধ্বংস করে দেয়া হবে?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “হাঁ যখন খারাপ ও কলুষিত লোকদের সংখ্যা বেশী হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থেই এটা বর্ণিত হয়েছে। তবে সহীহ বুখারীতে বর্ণনাকারীদের তালিকায় হযরত উম্মে হাবীবার (রাঃ) উল্লেখ নেই। শুধু সহীহ মুসলিমে রয়েছে। এর সনদে এ ধরনের আরো অনেক কথা রয়েছে যা খুবই কম পাওয়া গেছে। যেমন যুহরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন উরওয়া (রাঃ) হতে। অথচ এ দুজন মনীষী হলেন তাবেয়ী। আবার চারজন মহিলা একে অপর হতে বর্ণনা করেছেন এবং তারা চারজনই সাহাবিয়্যাহ (রাঃ)। তাঁদের মধ্যে দুজন আবার নবীর (সঃ) স্ত্রীর কন্যা এবং বাকী দু’জন তার স্ত্রী! মুসনাদে বায্যারেও এই রিওয়াইয়াতটি হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে) ঐ প্রাচীরের নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করে ফুলকারনাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এবং মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যে, তিনি দুষ্টদের দুষ্টামী হতে সৃষ্টজীবকে নিরাপত্তা দান করলেন। তবে যখন তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তিনি ওকে চুর্ণবিচর্ণ করে ফেলবেন। তখন এর দৃঢ়তা কোনই কাজে আসবে না। উষ্টীর ঔজ যখন ওর পিঠের সাথে সমানভাবে মিলে থাকে, উঁচু হয়ে থাকে না তখন আরববাসী ওকে (আরবী) বলে থাকে। অন্য আয়াতে রয়েছে যে, যখন হযরত মূসার (আঃ) সামনে আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের উপর ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করেন তখন ঐ পাহাড় যমীনের সমান হয়ে যায়। সেখানেও শব্দ রয়েছে। সুতরাং কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঐ প্রাচীরটিও চূর্ণ বিচূর্ণ। হয়ে যাবে এবং ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হবার পথ বেরিয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআ'লার ওয়াদা অটল ও সত্য। কিয়ামতের আগমনও সত্য। ঐ প্রাচীর ভাঙ্গা মাত্রই ইয়াজুজ-মাজুজ বেরিয়ে পড়বে এবং জনগণের মধ্যে ঢুকে পড়বে। আপন পরের কোন পার্থক্য থাকবে না। এই ঘটনা দাজ্জালের আগমনের পর কিয়ামত সংঘটনের পূর্বে ঘটবে। এর পূর্ণ বর্ণনা (আরবী) (২১:৯৬)এই আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশা আল্লাহ। এরপরে শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং সবাই একত্রিত হয়ে যাবে। একথাও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ কিয়ামতের দিন মানব ও দানব সবাই মিশ্রিত হয়ে যাবে। তাফসীরে ইবনু জারীরে বানু খুযায়া গোত্রের একজন শায়েখের বর্ণনা রয়েছে যে, দানব ও মানব যখন পরস্পর মিলিত হয়ে যাবে, তখন ইবলীস বলবেঃ “আমি যাচ্ছি এবং ব্যাপার কি তা জেনে আসছি।” অতঃপর সে পূর্ব দিকে পালাবে। কিন্তু সেখানে ফেরেশতাদের দল দেখে সে থমকে দাড়াবে এবং ফিরে গিয়ে পশ্চিম দিকে যাবে। সেখানেও ঐ একই অবস্থা দেখে ডানে-বামে পালাবে। কিন্তু চতুর্দিকেই ফেরেশতাদের পরিবেষ্টন দেখে নিরাশ হয়ে গিয়ে চীৎকার শুরু করে দেবে। অকস্মাৎ একটা ছোট রাস্তা তার দৃষ্টি গোচর হবে। তখন সে তার সমস্ত সন্তানদেরকে নিয়ে ঐ পথ ধরে চলতে থাকবে। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখবে যে, দুযখের অগ্নি প্রজ্জ্বলিত রয়েছে। জাহান্নামের একজন দারোগা তাকে বলবেঃ “ওরে কষ্টদায়ক কলুষিত শয়তান! আল্লাহ তাআলা কি তোর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন না? তুই কি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলি ?” সে উত্তরে বলবেঃ “আজ শাসন-গর্জন করছো কেন? আজ পরিত্রাণের পথ বাতলিয়ে দাও। আমি আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্যে প্রস্তুত রয়েছি। যদি আল্লাহর হুকুম হয় তবে আমি এমন ইবাদত করবো যা ভূ-পৃষ্ঠে কেউ কখনো করে নাই।” তরি এ কথা শুনে দারোগা বলবেনঃ “আল্লাহ তাআলা তোর জন্যে একটা নির্দেশনামা নির্ধারণ করছেন।”সে তখন খুশী হয়ে বলবেঃ “ আমি তার হুকুম পালনের জন্যে সর্বপ্রকারের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।” তখন হুকুম দেয়া হবেঃ “ঐ নির্দেশনামা এটাই যে, তোরা সবাই জাহান্নামে চলে যা।” এই কলুষিত শয়তান তখন হতভম্ব হয়ে পড়বে। সেখানে ফেরেশতা নিজের পালক দ্বারা তাকে ও তার সন্তানদেরকে ছেচড়াতে ছেচড়াতে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। জাহান্নাম তাদেরকে নিয়ে এমনভাবে তর্জন গর্জন করতে থাকবে যে, সমস্ত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতা, সমস্ত রাসূল হাঁটুর ভরে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর সামনে পড়ে যাবেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ-মাজুজ হযরত আদমের (আঃ) বংশধর। যদি তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে তারা মানুষের জীবিকার উপর ফাসাদ সৃষ্টি করবে। তাদের এক একজন নিজের পিছনে হাজার জন ছেড়ে মারা যায়, বরং এর চেয়েও বেশী। এদের ছাড়া আরো তিনটি দল রয়েছে। তারা হলোঃ তাভীল, তায়েস ও মানসক।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা গারীব এমন কি অস্বীকার্য ও দুর্বল)আউস ইবনু আবি আউস (রাঃ) হতে মার’ রূপে বর্ণিত আছে যে, ইয়াজুজ ও মাজুজের স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। এক একজন নিজের পিছনে হাজার বা তারও বেশী রেখে মারা যায়। (এ হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে)মহান আল্লাহ বলেনঃ শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। হাদীসে আছে যে, ওটা একটা যুগ যাতে শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফুকারদাতা হবেন হযরত ইসরাফীল (আঃ)। যেমন এটা প্রমাণিত। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কি করে আমি শান্তিতে ও আরামে বসে থাকতে পারি? অথচ শিংগার অধিকারী ফেরেশতা শিংগা মুখে লাগিয়ে, কপাল কুঁকিয়ে এবং কান খাড়া করে বসে রয়েছেন যে, কখন আল্লাহর নির্দেশ হবে এবং তিনি শিংগায় ফুৎকার দিবেন।” জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাহলে আমরা কি বলবো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তোমরা বলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতইনা উত্তম কার্য নির্বাহক! আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করেছি।”মহান আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করবো। অর্থাৎ তিনি সকলকেই হিসাবের জন্যে জমা করবেন। সবারই হাশর তাঁর সামনে হবে। যেমন সূরায়ে ওয়াকেআ’য় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)!) তুমি বলে দাওঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ, সকলকে সমবেত করা হবে, এক স্থীরিকৃত দিবসে নির্দিষ্ট সময়ে।” (৫৬:৪৯) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সকলকেই একত্রিত করবো এবং তাদের একজনকেও অবশিষ্ট ছেড়ে দেবো না।" (১৮:৪৭)