🕋 تفسير سورة الإسراء
(Al-Isra) • المصدر: BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
📘 নামকরণ:
উক্ত সূরাতে ‘বানী ইসরাঈল’-এর সম্পর্কে আলোচনা থাকার কারণে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। একে ‘সূরাতুস সুবহান’-ও বলা হয়। কেননা সূরার শুরুতে ‘সুবহান’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। আবার একে ‘সূরা ইসরা’-ও বলা হয়। যা অত্র সূরার প্রথম আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করে বলেন: সূরা কাহফ, মারইয়াম এবং বানী ইসরাঈল হল সে পুরাতন সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত যেগুলো মক্কায় প্রথম প্রথম নাযিল হয় এবং যেগুলো আমার পুরাতন হিফযকৃত সূরা। (সহীহ বুখারী হা: ৪৯৯৪) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা বানী ইসরাঈল এবং সূরা যুমার তেলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। (তিরমিযী হা: ৩৪০৫, সহীহ)
সূরা বানী ইসরাঈল মক্কায় অবতীর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, সূরার শুরুতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্যতম একটি বড় মু‘জিযাহ ইসরা ও মি‘রাজের আলোচনা করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উম্মাত বানী ইসরাঈলদের বিবরণ, কুরআনের মর্যাদা, মানুষের আমল লিপিবদ্ধকরণ, যারা কেবল দুনিয়ার জন্য আমল করে তাদের পরিণতি, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ এবং ৩১-৩৮ নং আয়াত পর্যন্ত কয়েকটি বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার শেষের দিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা, রূহ সম্পর্কে ইয়াহূদীদের উত্তর, মক্কার মুশরিকদের দাবী খণ্ডন, সর্বশেষ আল্লাহ তা‘আলার একত্ব ও গুণাবলীর কথা বলে ইতি করা হয়েছে।
১ নং আয়াতের তাফসীর:
سُبْحَانَ শব্দটি ক্রিয়ামূল, অর্থ হল
انزه الله تنزيهاً
অর্থাৎ আমি সকল দোষ-ত্র“টি থেকে আল্লাহ তা‘আলাকে পবিত্র ও মহান ঘোষণা করছি। সাধারণত সুবহানাল্লাহ এর ব্যবহার তখন হয় যখন অতীব কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করা হয়। উদ্দেশ্য হল বাহ্যিক উপায় উপকরণের দিক দিয়ে মানুষের কাছে এ ঘটনা অসম্ভব মনে হলেও আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কেননা তিনি কোন উপায় উপকরণের মুখাপেক্ষী নন। তিনি কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে ‘হও’ বললে হয়ে যায়। সুতরাং সকল অক্ষমতা, দুর্বলতা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে আল্লাহ তা‘আলা র পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
ইসরা ও মি‘রাজের পরিচয়: ইসরা অর্থ রাতের বেলা ভ্রমণ করা। পরে لَيْلًا উল্লেখ করে রাতের স্বল্পতার কথা পরিস্কার করা হয়েছে। আর এর জন্যই لَيْلًا শব্দকে অনির্দিষ্ট নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ রাতের এক অংশে বা সামান্য সময়ে। চল্লিশ রাতের এ সুদীর্ঘ সফর করতে সম্পূর্ণ রাত লাগেনি বরং রাতের এক সমান্য অংশে সম্পন্ন হয়ে গেছে।
ইসলামের পরিভাষায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষ মু‘জিযাহস্বরূপ তাঁকে মাসজিদে হারাম এর চত্বর থেকে মাসজিদে আকসা পর্যন্ত রাত্রিকালে জিবরীলের সাথে বিশেষ বাহনে জাগ্রতাবস্থায় যে ভ্রমণ করানো হয়, তাকে ইসরা বলা হয়।
আর মি‘রাজ হল ঊর্ধ্বগমনের মাধ্যম, যা ঊর্ধ্বগমন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ইসলামী পরিভাষায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আকসা হতে সপ্ত আকাশ ও তদুর্ধ্বে স্ব-শরীরে জাগ্রতাবস্থায় বিভিন্ন নিদর্শন পরিদর্শন করার যে মু‘জিযাহ লাভ করেন তাকেই মি‘রাজ বলা হয়। (শরহু আকীদাহ তাহাবীয়্যাহ ২২৩ পৃ:)
ইসরা ও মি‘রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে بِعَبْدِه۪ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন আর بِعَبْدِه۪ দ্বারা শরীর ও রূহ উভয়টিই অন্তর্ভুক্ত করে। শুধু রূহ নয় বা শুধু শরীর নয়।
ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নুবওয়াত লাভের পর স্ব-শরীরে আত্মা ও দেহসহ জাগ্রতাবস্থায় একই রাতে ইসরা ও মি‘রাজ সংঘটিত হয়। এটাই অধিকাংশ ইসলামী মনীষীদের মত এবং সঠিক মত। (ফাতহুল বারী ১৫/৪৪)
মি‘রাজের দিন-তারিখ: মি‘রাজ একটি সত্য ও সুপ্রসিদ্ধ ঘটনা যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত। কিন্তু এ ইসরা ও মি‘রাজ সংঘটিত হওয়ার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ কুরআন ও সুন্নায় উল্লেখ না থাকায় বিদ্বানগণ অনেক মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দশটি মত আল ইয়ালা গ্রন্থের ৩৫৯-৩৬০, আর রাহীকুল মাখতুম প্রন্থের ১৩৭ এবং আল বিদাআল হাওলিয়া গ্রন্থের ২৭০-২৭৪ নং পৃষ্ঠায় আলোচনা করেছেন। এসব মতামত পর্যালোচনা করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইসরা ও মি‘রাজের নির্দিষ্ট কোন দিন-তারিখ জানা নেই। ইমাম ইবনু কাসীর বলেন: যে হাদীসে বলা হয়েছে ইসরা ও মি‘রাজ রজব মাসের ২৭শে রাত্রিতে সংঘটিত হয়েছে সে হাদীস সঠিক নয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ ৩/১০৭)
ইমাম আবূ শামাহ বলেন: অনেক আলোচক বলে থাকেন যে, ইসরা ও মি‘রাজ রজব মাসে সংঘটিত হয়েছে। মূলত এটা হাদীস শাস্ত্রের পণ্ডিতদের কাছে এক ডাহা মিথ্যা কথা। (আল বায়েস ফী ইনাকারিল বিদা পৃ: ৭১)
ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: মি‘রাজ সংঘটিত হওয়ার মাস, দশক বা নির্ধারিত দিনের কোন অকাট্য প্রমাণ নেই। (যাদুল মা‘আদ ১/৫৭)
উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় ইসরা ও মি‘রাজ ২৭শে রজব হয়নি। তাছাড়া সবার জানা মি‘রাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হয়। খাদিজা (রাঃ) মারা যান নবুওয়াতের ১০ম বছর রমযান মাসে। তখনও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয পাননি। তাহলে কিভাবে সে রমযান মাসের দু’মাস আগে রজব মাসে মি‘রাজ হতে পারে? সুতরাং প্রচলিত সমাজে শবে মি‘রাজ উদ্যাপনের রাত বা মাসটি কুরআন, সহীহ হাদীস ও বাস্তব ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী এক বানোয়াট মিথ্যা তারিখ ছাড়া কিছুই নয়। তাই এ রাতকে কেন্দ্র করে সালাতুর রাগাইব, বিশেষ সিয়াম পালন, রাত ভর সবাই মিলে ইবাদত করা, সিন্নী বিতরণ ও আনন্দ উৎসব করার কোন প্রমাণ নেই। এ সবই বিদআত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে, কোন সাহাবী ও তাবেয়ী এবং প্রসিদ্ধ ইমামগণ করেননি।
ইসরা ও মি‘রাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতী কাজ শুরু করেন তখন কাফির-মুশরিকদের থেকে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি আসে এবং নানা নির্যাতনের শিকার হন। এতদসত্ত্বেও তিনি দাওয়াতী কাজ করেই যেতেন। নিজের দুঃখ-কষ্ট প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজার সাথে ভাগ করে নিতেন, সাথে দাওয়াতী কাজের বাধা-বিপত্তিতে সাহায্য করতেন প্রাণপ্রিয় চাচা আবূ তালেব। কিন্তু নবুওয়াতের দশম বছরের রজব মাসে চাচা আবূ তালেব মারা যান, চাচা আবূ তালেবের মৃত্যুর তিন দিন, মতান্তরে দু’মাস পর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাও মারা যান। এখন মক্কাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আশ্রয়স্থল বলতে কোন জায়গা রইল না। (আর-রাহীকুল মাখতুম ) তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মনবেদনাকে দূর করে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা মি‘রাজের ব্যবস্থা করেন।
অন্য আরেকটি উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআনেই উল্লেখ করেছেন, তা হল “যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই।” এছাড়াও রাসূলের মু’জিযাহ, সালাত ফরযসহ বিভিন্ন বিধান প্রদানের উদ্দেশ্যেই মি‘রাজ হয়।
মি‘রাজে বিভিন্ন নিদর্শন দর্শন:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে হারামের চত্বর হতে বোরাক নামক (খচ্চর আর গাধার মাঝারি সাইজের) একটি প্রাণীতে আরোহণপূর্বক মাসজিদে আকসা (জেরুযালেম) পর্যন্ত রাতে আগমন করেন। সেখানে সকল নাবীদের ইমামতি করেন (এ ইমামতি যাওয়ার পথে করেছেন, না আসার পথে করেছেন তা নিয়ে ইমাম ইবনু কাসীর ও ইবনু হাজার আসকালানী ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন)। অতঃপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি আকাশে অবস্থানরত নাবীর সাথে দেখা করেন এবং পরিচয় হয়। তারপর সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন। সেখানে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা হয়, কিন্তু দেখা হয়নি। আয়েশা (রাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি বলবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন সে মিথ্যা বলবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৮৫৫) তারপর জান্নাত জাহান্নাম দেখেন, অধিকাংশ জান্নাতী দরিদ্র গরীব লোকেরা আর অধিকাংশ জাহান্নামী মহিলা দেখতে পেলেন।
এ আয়াতের তাফসীরে ঈমাম বুখারী (عليه السلام) তার সহীহুল বুখারী গ্রন্থে উল্লেখ করেন। আবু হুরাইরা < বলেন, মি‘রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দুটো পাত্র পেশ করা হল। একটি ছিল মদের আর অপরটি ছিল দুধের। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় পাত্র দেখলেন, অতঃপর দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলেন। তখন জিবরীল (عليه السلام) বললেন: সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার, যিনি আপনাকে সঠিক পথের হেদায়েত দিয়েছেন। যদি আপনি মদের পাত্র গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে যেত। (সহীহ বুখারী: ৪৭০৯, সহীহ মুসলিম: ১৬৮-১৭২)
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, “জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, যখন কুরাইশরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে লাগল তখন আমি একটি পাথরের ওপর উঠে দাঁড়ালাম। আর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য বাইতুল মাকদাস উন্মুক্ত করে দিলেন। আমি তা দেখছিলাম এবং তাঁর নিদর্শন সম্পর্কে তাদেরকে সংবাদ দিচ্ছিলাম।” (সহীহ বুখারী: ৪৭১০) এছাড়াও অনেক নিদর্শন রয়েছে যা বিস্তারিত হাদীস গ্রন্থে বিদ্যমান।
(الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَه)
এখানে বায়তুল মাকদাস এর মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তার চতুর্দিক দিয়ে বরকতে ভরপুর। তা হল গাছ-গাছালি, নদ-নদী, ফল-মূল, শস্য ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَنَجَّيْنٰهُ وَلُوْطًا إِلَي الْأَرْضِ الَّتِيْ بٰرَكْنَا فِيْهَا لِلْعٰلَمِيْنَ)
“এবং আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সে দেশে, যেথায় আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য। ”(সূরা আম্বিয়া ২১:৭১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(وَلِسُلَيْمٰنَ الرِّيْحَ عَاصِفَةً تَجْرِيْ بِأَمْرِه۪ٓ إِلَي الْأَرْضِ الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَا ط وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عٰلِمِيْنَ)
“এবং সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম প্রচণ্ড বায়ূকে; সে বায়ু তার আদেশত্র“মে প্রবাহিত হতো সে দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৮১)
সুতরাং প্রত্যেক মু’মিনের বিশ্বাস করতে হবে ইসরা ও মি‘রাজ সত্য, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ব-শরীরে হয়েছিল, কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানা নেই। এ মি‘রাজকে কেন্দ্র করে কোন বিশেষ ইবাদত শরীয়তসম্মত নয়। তাই এসব থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসরা ও মি‘রাজ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি বড় মু‘জিযাহ।
২. মি‘রাজ স্বশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে ।
৩. বায়তুল মাকদাস এর মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হলাম।
৪. মি‘রাজের রাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার বড় বড় নিদর্শন দেখেছেন।
৫. মি‘রাজ এর অন্যতম শিক্ষা হল আল্লাহ তা‘আলা ঊর্ধ্বে রয়েছেন, তিনি স্বসত্ত্বায় সর্বত্র বিরাজমান নন। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঊর্ধ্বগমন ছাড়া পৃথিবীতে কখনো তাঁর কাছে যেতে পারেননি।
৬. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের রাতে আল্লাহ তা‘আলাকে স্বচক্ষে দেখেননি।
قُلْ لَوْ أَنْتُمْ تَمْلِكُونَ خَزَائِنَ رَحْمَةِ رَبِّي إِذًا لَأَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْإِنْفَاقِ ۚ وَكَانَ الْإِنْسَانُ قَتُورًا
📘 ১০০ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অধিকাংশ মানুষের একটি বদ-অভ্যাসের কথা বর্ণনা করছেন। মানুষ মনে করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ধন সম্পদের অভাব নেই, তিনি তো আমাদেরকে অঢেল সম্পদ দিলেই পারেন। আমাদের দূরবস্থা ও অভাব অনটনে থাকতে হতো না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার কাছে ধন-সম্পদের যে ভাণ্ডার রয়েছে যা কখনো ফুরিয়ে যাবে না, তা যদি তোমাদেরকে দেয়া হয় তাহলে তোমরা এ কথা জানা সত্ত্বেও মানুষকে দান করবে না এ আশংকায় যে, যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে আমরা অভাবে পড়ে যাব। অথচ আমি সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে ধন-সম্পদ ও নেয়ামত দান করেই আসছি।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يَدُ اللّٰهِ مَلْأَي لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ، وَقَالَ: أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ
আল্লাহ তা‘আলার হাত ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ, দিন-রাত ব্যয় করাতেও তা কমে না। তোমরা কি লক্ষ্য করেছ, আকাশ-জমিন সৃষ্টির পর থেকে কত ব্যয় করে আসছেন, কিন্তু তার পরেও তাঁর হাতে যা রয়েছে তা কমে না। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭১১) কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা পরিমিতভাবে দিয়ে থাকেন। অধিক দিলে ফাসাদ সৃষ্টি হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ بَسَطَ اللہُ الرِّزْقَ لِعِبَادِھ۪ لَبَغَوْا فِی الْاَرْضِ وَلٰکِنْ یُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا یَشَا۬ئُ اِنَّھ۫ بِعِبَادِھ۪ خَبِیْرٌۭ بَصِیْرٌ)
“আল্লাহ তাঁর (সকল) বান্দাদের রুযী বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছামত পরিমাণেই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক জানেন ও দেখেন।” (সূরা শুরা ৪২:২৭)
(خَشْيَةَ الْإِنْفَاقِ) অর্থ- خشية ان ينفقوا فيفتقروا
অর্থাৎ এ ভয়ে যে, দান করলে ধন শেষ হয়ে যাবে, ফলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে। মানুষ সংকীর্ণ চিত্তের অধিকারী হওয়ায় কার্পণ্য করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ لَهُمْ نَصِيْبٌ مِّنَ الْمُلْكِ فَإِذًا لَّا يُؤْتُوْنَ النَّاسَ نَقِيْرًا )
“তাদের কি রাজত্বে কোন অংশ আছে? যদি তাদের কোন অংশ থাকত তাহলে লোকদের তিল পরিমাণও দিত না।” (সূরা নিসা ৪:৫৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ الْإِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوْعًا لا إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوْعًا لا وَّإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوْعًا )
“নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থিরমনা রূপে; যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তখন সে হয় অতি কৃপণ।” (সূরা মাআ‘রিজ ৭০:১৯-২১)
সুতরাং আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আগে নিজের অবস্থানের দিকে লক্ষ্য করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দান করার ব্যাপারে কোন কৃপণতা করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু দিবেন তা থেকে সাধ্যমত দান করতে হবে।
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا
📘 ১২ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মাত্র দুটি নিদর্শন বর্ণনা করছেন যা প্রমাণ করে যে, একমাত্র তিনিই রব এবং তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য, তাঁর কোনই শরীক নেই এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের হকদার নয়। এ নিদর্শন দু’টি হল রাত আর দিন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ اٰيٰتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ)
“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রজনী ও দিবস, সূর্য ও চন্দ্র।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ)
“নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৯০)
এ ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত কুরআনে বিদ্যমান। যেমন সূরা ফুসসিলাত ৩৭ নং, সূরা ইউনুস ৬ নং সূরা মুমিনূনের ৮০ নং আয়াত।
তিনি দিবসকে করেছেন আলোকিত, যাতে করে মানুষ জমিনে বিচরণ করে তাদের জীবিকা উপার্জন করতে পারে, কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন যাতে তারা দিবসের ক্লান্তির পর বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। যদি সর্বদা দিন তথা আলোকোজ্জ্বল থাকত তাহলে মানুষ বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারত না, দিবসে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যেত। আর যদি শুধু রাত্রি থাকত তাহলে তাদের একই অবস্থা হত। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বল: ‘তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন মা‘বূদ আছে, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বল: ‘তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন মা‘বূদ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৭১-৭৩) আর এ দিন-রাত পরিবর্তনের মাঝে আরেকটি উপকারিতা হল দিন, সপ্তাহ, মাস ও বৎসর গণনা করে তারিখ নির্ধারণ করা। যদি সর্বদা দিন বা রাত থাকত তাহলে এ হিসাব-নিকাশ করা যেত না। কেননা মাস ও বৎসরের হিসাবের সাথে দুনিয়াবী ও ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান জড়িত। সুতরাং এ সব বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়াটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও রহমত। এ সম্পর্কেও সূরা ইউনূস এ আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দিন-রাত দুটি নিদর্শন যা প্রমাণ করে আল্লাহ তা‘আলা একক ও সত্য মা‘বূদ।
২. দিন-রাতের পরিবর্তনের মাঝে মানুষের অনেক উপকার নিহিত রয়েছে।
৩. দিন-রাতের পরিবর্তনের সাথে ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান সম্পৃক্ত।
مَنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا
📘 ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি সৎ পথের অনুসরণ করবে, তাঁর উত্তম প্রতিদান নিজেই ভোগ করবে। আর যে অসৎ পথের অনুসরণ করলে সে নিজেকেই পথভ্রষ্ট করল এবং জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিল, এতে অন্য কেউ দায়ী নয়। নিজের পাপের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে, অন্য কেউ বহন করবে না। এরূপ অনেক আয়াত রয়েছে, যেমন সূরা ফাতিরের ১৮ নং, সূরা আন‘আমের ১৬৪ নং এবং সূরা বাকারাহর ১৩৪ নং আয়াত। তবে যে নিজে পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যকেও ভ্রষ্ট করে সে তার নিজের ভ্রষ্টতার বোঝা বহন করবে এবং যাদেরকে ভ্রষ্ট করেছে তাদের গুনাহর বোঝাও (তাদের গুনাহর কোন কমতি না করেই) তাকে বহন করতে হবে। এ কথাও কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لِيَحْمِلُوْآ أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيٰمَةِ لا وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ ط أَلَا سَا۬ءَ مَا يَزِرُوْنَ)
“ফলে কিয়ামত দিবসে তারা বহন করবে তাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা অজ্ঞতাহেতু পথভ্রষ্ট করেছে। দেখ, তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট!” (সূরা নাহল ১৬:২৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
مَنْ دَعَا إِلَي هُدًي، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَي ضَلَالَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا
যে ব্যক্তি সৎ পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করবে সে ব্যক্তি তেমন প্রতিদান পাবে যেমন প্রতিদান সে সৎপথের অনুসরণকারী পাবে, তাদের কারো প্রতিদান কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে সে ব্যক্তি তেমন গুনাহগার হবে যেমন গুনাহগার হবে সে ভ্রষ্টতার অনুসারী ব্যক্তি, তাদের কারো গুনাহ কমিয়ে দেয়া হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৪)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি তাঁর একটি রহমতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি রাসূল প্রেরণ করে সত্য-মিথ্যা ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত না করা পর্যন্ত কোন জাতিকে ধ্বংস করেন না।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (رُسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَي اللّٰهِ حُجَّةٌۭ بَعْدَ الرُّسُلِ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا) “সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নিসা ৪:১৬৫)
যারাই জাহান্নামে যাবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কাছে কি কোন রাসূল আগমন করেনি? সবাই স্বীকার করবে,
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
(کُلَّمَآ اُلْقِیَ فِیْھَا فَوْجٌ سَاَلَھُمْ خَزَنَتُھَآ اَلَمْ یَاْتِکُمْ نَذِیْرٌﭗ قَالُوْا بَلٰی قَدْ جَا۬ءَنَا نَذِیْرٌﺃ فَکَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللہُ مِنْ شَیْءٍﺊ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ کَبِیْرٍﭘ)
“যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখনই তাদেরকে জাহান্নামের রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি? তারা উত্তরে বলবে: হ্যাঁ আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলাম এবং বলেছিলাম: আল্লাহ কিছুই নাযিল করেনি, তোমরা তো মহা গুমরাহীতে রয়েছ।” (সূরা মুলক ৬৭:৮-৯)
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল প্রেরণ ও কিতাব অবতরণ ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে আযাব দিবেন না। তবে যদি কোন্ জাতি বা কোন্ ব্যক্তির কাছে তাঁর বার্তা না পৌঁছে, সে ফায়সালা কিয়ামতের দিন তিনিই করবেন। সেখানে অবশ্যই কারো সাথে অবিচার করা হবে না। বধির, পাগল, নির্বোধ এবং দু’নাবীর মধ্যবর্তী যুগে মৃত্যুবরণকারী (যাদের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে নাই) ব্যক্তিদের ব্যাপারও। এদের ব্যাপারে কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি ফেরেশতা প্রেরণ করবেন এবং ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেন যে, জাহান্নামে প্রবেশ কর। অতএব তারা যদি আল্লাহ তা‘আলার এ নির্দেশ মেনে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করে তাহলে জাহান্নাম তাদের জন্য ফুল বাগান হয়ে যাবে। অন্যথায় তাদেরকে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহুল জামে হা: ৮৮১, ইবনু হিব্বান ৯/২২৬)
মুসলিম শিশুরা জান্নাতে যাবে তবে কাফির-মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে মতামত রয়েছে। কেউ বলেছেন, জান্নাতে যাবে; কেউ বলেছেন জাহান্নামে যাবে। ইমাম ইবনু কাসীর বলেন: হাশরের মাঠে তাদের পরীক্ষা করা হবে, যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের আনুগত্য করবে তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামে যাবে। (ইবনু কাসীর) ইমাম বুখারী যে বর্ণনা নিয়ে এসেছেন তাতে বুঝা যায় কাফির-মুশরিকদের শিশুরাও জাহ্ন্নাামে যাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পাপ বহন করবে। কেউ কারো পাপ বহন করবে না, তবে অন্যকে পাপের দিকে আহ্বান করলে অনুসারী ব্যক্তির সমান পাপের ভার বহন করতে হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সতর্ক না করা পর্যন্ত শাস্তি দেন না।
৩. আল্লাহ তা‘আলার দয়া/রহমত নামে একটি সিফাত আছে তা জানা গেল।
رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا
📘 ২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, মানুষ অন্তরে যা কিছু গোপন করে সেগুলো তিনি অধিক জানেন। কোন কাজ প্রকাশ্যে করা হোক, অপ্রকাশ্যে করা হোক, আলোতে করা হোক আর অন্ধকারে করা হোক, মানুষ দেখুক আর না-ই দেখুক, সব খবর তিনি রাখেন। তাঁর জ্ঞান থেকে কোন কিছু লুকানোর সুযোগ নেই।
অন্যত্র তিনি বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط إِنَّه۫ عَلِيْمٌۭ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় অদৃশ্য বিষয় পরিজ্ঞাত। অন্তরে যা কিছু রয়েছে সে সম্বন্ধেও তিনি সবকিছু অবগত।” (সূরা ফাতির ৩৫:৩৮)
اوابِيْنَ শব্দের অর্থ: অভিমুখী হওয়া, ফিরে আসা।
কেউ কেউ বলেন, اوابِيْنَ বলা ঐ সমস্ত সৎ লোকদেরকে যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল সালাত পড়ে।
কারো মতে, যারা চাশ্তের সালাত আদায় করে তাদেরকেই اوابِيْنَ বলা হয়।
অন্য একদল বলেন, যারা প্রত্যেক পাপ কার্যের পর তাওবা করে তাড়াতাড়ি মঙ্গলের দিকে ফিরে আসে এবং নির্জনে নিজেদের পাপের কথা স্মরণ করে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে اوابِيْنَ বলা হয়।
উবায়েদ (রহঃ) বলেন যে, اوابِيْنَ হচ্ছে তারাই যারা বারবারই কোন মজলিস হতে ওঠার পর এই দু‘আ পাঠ করে:
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا أَصَبْتُ فِيْ مَجْلِسِيْ هَذَا
হে আল্লাহ এ মজলিসে যা ভুল করেছি তা ক্ষমা করে দাও।
ইমাম ইবনে জারীর (রহঃ) বলেন, সঠিক উক্তি হচ্ছে, যারা গুণাহ হতে তাওবা করে অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে যা ঘৃণ্য তা ছেড়ে দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টিমূলক কাজ করে তারাই হল اوابِيْنَ । (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
এখান থেকেই চাশতের সালাতকে আওয়াবিনের সালাত বলা হয়। কারণ এ সময় মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে আসে, যে সময় সাধারণত সকলে কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকে। (সহীহ মুসলিম হা: ৭৪৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
(১) আল্লাহ তা‘আলা মানুষের বাহ্যিক জিনিস দেখে বিচার করেন না বরং তার নিয়তের প্রতি লক্ষ্য করেন।
(২) মানুষের অন্তরের খবরও আল্লাহ তা‘আলা রাখেন, তিনি অন্তরযামী।
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
📘 ৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
قفا-يقفو এর অর্থ পেছনে পড়া। অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার পেছনে পড়ো না, আন্দাজে কথা বলো না। ইবনু আব্বাস ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: যা দেখনি বলো না, দেখেছি। যা শোননি বলো না, শুনেছি। আর যা জান না বলো না, জানি। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন: এমন কাউকে তিরস্কার করো না যার ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলা, যা সঠিকভাবে শোনা নেই তা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ। তা দুনিয়ার কোন ব্যাপারে হোক আর ধর্মীয় কোন ব্যাপারে হোক। ধর্মীয় ব্যাপারে আরো কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
كَفَي بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
একজন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যতেষ্ট যে, সে যা শুনবে (যাচাই বাছাই না করে) তাই বলে বেড়ায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ ز إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ)
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বিরত থাক। কারণ, কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ।” (সূরা হুজরাত ৪৯:১২)
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, ধারণা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যা কথা। (সহীহ বুখারী হা: ৫১৪৩, সহীহ মুসলিম হা: ১৪১৩)
কারণ কিয়ামতের দিন মানুষের চক্ষু, কর্ণ ও অন্তরকে জিজ্ঞেস করা হবে। চক্ষুকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী দেখেছিল, কর্ণকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী শুনেছিল, আর অন্তরকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী চিন্তা ভাবনা করেছে। কিয়ামতের দিন এদের বাকশক্তি দেয়া হবে আর এরা তখন স্বাক্ষী দেবে। এ আয়াত থেকে অনেক বিদ্বানগণ তাকলীদ করা নিষেধ করেছেন, কারণ যিনি তাকলীদ করেন তিনি বিনা জ্ঞানে যার তাকলীদ করা হয় তার অনুসরণ করে থাকেন। অথচ যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমল করতে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন। (আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অতএব কোন কিছু বলার পূর্বে আমাদের ভেবেচিন্তে বলা উচিত, যা বলছি তা কি আমি সঠিকভাবে জানি? যদি না জানা থাকে তাহলে বিরত থাকাই কল্যাণকর।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।
২. ধারণা করে কথা বলা একটি জঘন্যতম পাপ।
৩. চক্ষু, কর্ণ, অন্তর এদের জবান কিয়ামতের দিন খুলে দেয়া হবে আর এরা তখন সাক্ষ্য দেবে।
وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآيَاتِ إِلَّا أَنْ كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ ۚ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا ۚ وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا
📘 ৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: মক্কাবাসী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করল সাফা পাহাড় তাদের জন্য স্বর্ণে পরিণত করে দেয়ার জন্য এবং মক্কা থেকে পাহাড়-পর্বত সরিয়ে দেয়ার জন্য, তারা সেখানে আবাদ করবে। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহী আসল। এতে তাকে বলা হল, আপনি যদি তাদেরকে অবকাশ দেন তাহলে অবকাশ দেয়া হবে আর যদি তারা যা চায় তা দিতে বলেন, তাহলে তা-ই দেব কিন্তু এর পরেও যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে তারা তাদের পূর্ববর্তী জাতির মত ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অবকাশ দেয়ার কথা বললেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (আহমাদ হা: ২৫৮, বাইহাক্বী ফিল কুবরা হা: ৩৮০) (লুবাবুন নুকুল ফি আসবাবিন নুযূল-পৃ.১৭০)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নিদর্শন প্রেরণ করা আল্লাহ তা‘আলার জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে বিরত থাকেন এ জন্য যে, পূর্বের জাতিরাও এরূপ নিদর্শন দাবী করেছিল তাদের তা দেয়ার পর তারা তাতে ঈমান আনার বিপরীতে কুফরী করল। ফলে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তাদেরকেও যদি তিনি নিদর্শন দিয়ে দেন আর তারা তাতে কুফরী করে তাহলে তাদেরকেও ধ্বংস করা হবে। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ইচ্ছানুযায়ী নিদর্শন অবতীর্ণ করেন না। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতির কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের দাবী অনুযায়ী দশমাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিদর্শন পাওয়ার পরেও নাবীর প্রতি ঈমান না আনা ও আল্লাহ তা‘আলার এ নিদর্শনকে হত্যার কারণে ভীষণ ভূমিকম্প এবং ওপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন দ্বারা তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়। ফলে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হল (সূরা আ‘রাফ ৭:৭৮, হূদ ১১::৬৭-৬৮) এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হল এমনভাবে, যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি। এদের সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ নং আয়াতের আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিদর্শন প্রেরণ করার একমাত্র উদ্দেশ্য হল মানুষকে সতর্ক করা।
২. নিদর্শন প্রেরণ করা আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন কঠিন কাজ নয়।
৩. নিদর্শন অমান্য করলে সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসে যায়।
وَإِذْ قُلْنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِالنَّاسِ ۚ وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا
📘 ৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি সমস্ত মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। সুতরাং কোন মানুষ তাঁর রাসূলের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন।
(وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِيْٓ أَرَيْنٰكَ.... )
এখানে أَرَيْنٰكَ বলতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মি‘রাজের রাত্রিতে যা দেখানো হয়েছিল তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
(وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُوْنَةَ)
বলতে যাক্কুম বৃক্ষকে বুঝানো হয়েছে।
(اَذٰلِکَ خَیْرٌ نُّزُلًا اَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّوْمِﮍاِنَّا جَعَلْنٰھَا فِتْنَةً لِّلظّٰلِمِیْنَﮎاِنَّھَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِیْٓ اَصْلِ الْجَحِیْمِﮏﺫ)
“এ সকল আপ্যায়ন উত্তম, নাকি যাক্কুম গাছ? আমি তা সৃষ্টি করেছি জালিমদের জন্য শাস্তিস্বরূপ। এটি এমন বৃক্ষ, যা উৎপন্ন হয় দোযখের তলদেশ থেকে।” (সূরা স্বফ্ফাত ৩৭:৬২-৬৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জাহান্নাম থেকে যে বৃক্ষ উৎগত হয় সে সম্পর্কে জানলাম।