slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة النجم

(An-Najm) • المصدر: BN-TAFSIR-AHSANUL-BAYAAN

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَىٰ

📘 শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়। [১] [১] মুফাসসিরদের কেউ কেউ 'নক্ষত্র' বলতে কৃত্তিকা নক্ষত্রকে বুঝিয়েছেন। আবার কেউ কেউ শুকতারাকে বুঝিয়েছেন। অন্যরা সমস্ত তারাকেই বুঝিয়েছেন। هَوَى উপর থেকে নীচে পড়া। অর্থাৎ, যখন তা রাতের শেষে ফজরের সময় পতিত (অদৃশ্য) হয়। অথবা শয়তানদেরকে মারার জন্য তাদের উপর পতিত হয়। অথবা অন্যদের উক্তি অনুযায়ী, কিয়ামতের দিন পতিত হবে।

فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ

📘 তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা অহী করার তা অহী করলেন। [১] [১] এর দ্বিতীয় অর্থঃ জিবরীল (আঃ) আল্লাহর বান্দা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্য যে অহী অথবা বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, সেটা তিনি তাঁর কাছে পৌঁছে দিলেন।

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ

📘 যা সে দেখেছে তার হৃদয় তা অস্বীকার করেনি। [১] [১] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন যে, তাঁর ছয়শত ডানা রয়েছে। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের (আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল। এ দর্শনকে নবী করীম (সাঃ)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি। বরং আল্লাহর এই বিশাল ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিয়েছে।

أَفَتُمَارُونَهُ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ

📘 সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ

📘 নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।

عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَىٰ

📘 সিদরাতুল মুনতাহার নিকট।[১] [১] এটা হল মি'রাজের রাতে যে জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন, তারই বর্ণনা। এই 'সিদরাতুল মুন্তাহা' হল ষষ্ঠ বা সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি কুল (বরই) গাছ। আর এটাই শেষ সীমা। এর উপরে কোন ফিরিশতা যেতে পারেন না। ফিরিশতাকুল আল্লাহর বিধানাদিও এখান থেকেই গ্রহণ করেন।

عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ

📘 যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মা’ওয়া) বাসোদ্যান। [১] [১] এটাকে 'জান্নাতুল মা'ওয়া' এই কারণে বলা হয় যে, এটাই ছিল আদম (আঃ)-এর আশ্রয়স্থল ও বাসস্থান। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আত্মাসমূহ এখানে এসে জমায়েত হয়। (ফাতহুল কাদীর)

إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ

📘 যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, [১] [১] এখানে 'সিদরাতুল মুন্তাহা'র সেই দৃশ্য ও অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যা নবী করীম (সাঃ) মি'রাজের রাতে দর্শন করেছিলেন। সোনার প্রজাপতি তার চতুস্পার্শেব উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফিরিশতামন্ডলীও সে বৃক্ষকে ঘিরে রেখেছিলেন এবং মহান প্রভুর জ্যোতির দৃশ্যও ছিল সেখানে। (ইবনে কাসীর প্রভৃতি) এই স্থানেই নবী করীম (সাঃ)-কে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়। আর তা হল, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সূরা বাক্বারার শেষের আয়াতগুলো এবং সেই মুসলিমের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি, যে শিরকের মলিনতা থেকে পবিত্র থাকবে। (মুসলিমঃ কিতাবুল ঈমান, সিদরাতুল মুন্তাহা পরিচ্ছেদ)

مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ

📘 তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। [১] [১] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর দৃষ্টি ডানে-বামে হয়নি এবং সেই সীমা অতিক্রমও করেনি, যা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। (আইসারুত তাফাসীর)

لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ

📘 নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। [১] [১] যেগুলোর মধ্যে জিবরীল (আঃ)-এর আসল আকৃতি, 'সিদরাতুল মুন্তাহা' ও প্রতিপালকের অন্যান্য মহাশক্তির কিছু নিদর্শন। যার বিস্তারিত আলোচনা মি'রাজ সংক্রান্ত হাদীসমূহে করা হয়েছে।

أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّىٰ

📘 তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্বন্ধে

مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَىٰ

📘 তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়। [১] [১] এটা হল কসমের জওয়াব। صَاحِبُكُمْ (তোমাদের সঙ্গী) বলে এখানে নবী করীম (সাঃ)-এর সত্যতাকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, নবুঅতের পূর্বে তিনি চল্লিশ বছর তোমাদের সঙ্গে এবং তোমাদের মাঝে কাটিয়েছেন। তাঁর দিবা-রাত্রির কার্যকলাপ ও আচার-আচরণ তোমাদের সামনে বিদ্যমান। তাঁর চরিত্র ও নৈতিকতা তোমাদের জানা ও চেনা। সততা ও বিশ্বস্ততা ছাড়া তোমরা তাঁর আচরণে অন্য কিছু কি দেখেছ? এখন চল্লিশ বছর পর যখন তিনি নবুঅতের দাবী করছেন, তখন একটু ভেবে দেখ যে, তিনি কি মিথ্যাবাদী হতে পারেন? অতএব, বাস্তব এটাই যে, তিনি পথভ্রষ্টও নন এবং বিপথগামীও নন। ضَلالة বলা হয়, অজ্ঞতার কারণে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়াকে। আর غَوى বলা হয়, এমন বক্রতাকে, যা জেনে-বুঝে সত্যকে বর্জন করে অবলম্বন করা হয়। মহান আল্লাহ এই উভয় ভ্রষ্টতা থেকে তাঁর নবীকে পাক-পবিত্র ঘোষণা করেছেন।

وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَىٰ

📘 এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে? [১] [১] এ কথা মুশরিকদেরকে তিরস্কার করে বলা হচ্ছে যে, এই হল আল্লাহর মাহাত্ম্য, যা উল্লেখ হয়েছে। তিনি হলেন জিবরীল (আঃ)-এর মত মহান ফিরিশতার স্রষ্টা। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটি হল তাঁর রসূল। তাঁকে তিনি আসমানে ডেকে নিয়ে স্বীয় বড় বড় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন। তাঁর উপর অহীও অবতীর্ণ করেন। বল তো, তোমরা যেসব উপাস্যের উপাসনা কর, তাদের মধ্যেও কি এই বা এই ধরনের গুণাবলী আছে? এই কথার ভিত্তিতে আরবের প্রসিদ্ধ তিনটি প্রতিমার নাম উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন। لاَتٌ (লাত) কারো কারো নিকট এটা الله থেকে উদ্ভূত। আবার কারো নিকট এটা لاَتَ يَلِيْتُ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ফিরানো। পূজারীরা তাদের গর্দান তার দিকে ফিরাতো এবং তার তাওয়াফ করত তাই তার এই নাম হয়ে যায়। কেউ বলেন যে, لات এর تا অক্ষরটি তাশদীদ (ّ ) যুক্ত। لَتَّ يَلُتُّ থেকে 'ইস্ম ফায়েল' বা কর্তৃকারকপদ (যে ছাতু ঘুলে)। সে একজন নেক মানুষ ছিল। হাজীদেরকে ছাতু ঘুলে ঘুলে খাওয়াতো। যখন সে মারা গেল, তখন লোকেরা তার কবরকে ইবাদতগাহ বানিয়ে নিল। তারপর তার মূর্তি তৈরী করা হল। এটা ত্বায়েফের বানূ সাক্বীফ গোত্রের সব চাইতে বড় প্রতিমা ছিল। عُزَّى সম্পর্কে বলা হয় যে, এটা আল্লাহর গুণবাচক নাম عَزِيْزٌ থেকে উদ্ভূত। আর এটা أَعَزَّ এর স্ত্রীলিঙ্গ। যার অর্থ, عَزِيْزَةٌ (প্রিয়তমা)। কেউ কেউ বলেছেন, এটা গাত্বফানে একটি গাছ ছিল, যার পূজা করা হত। কেউ বলেছেন, এটি শয়তান জিন্নী (পেতনী) ছিল, যা কোন কোন গাছে দেখা দিত। আবার কারো মতে এটি একটি সাদা পাথর ছিল, লোকেরা যার পূজা করত। এটি কুরাইশ ও বনী কিনানাহ গোত্রের লোকদের নিজসব উপাস্য ছিল। مَنَاةٌ হল, مَنَى يَمْنِى ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, صَبَّ (বহানো)। এর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য লোকেরা তার নিকট প্রচুর পরিমাণে পশু জবাই করত এবং তাদের রক্ত বহাতো। এটা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত একটি মূর্তি। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই মূর্তিটি 'কুদাইদ'এর সামনে 'মুশাল্লাল' নামক স্থানে স্থাপিত ছিল। বনী খুযাআহ গোত্রের লোকেদের এটি নিজস্ব মূর্তি ছিল। জাহেলিয়্যাতের যুগে 'আউস ও খাযরাজ' গোত্রের লোকেরা এখান থেকেই ইহরাম বাঁধত এবং ঐ মূর্তির তাওয়াফও করত। (আয়সারুত তাফাসীর ও ইবনে কাসীর) এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন স্থানে বহু প্রতিমা ও প্রতিমালয় স্থাপিত ছিল। মক্কা বিজয়ের পর এবং আরো অন্যান্য সময়-সুযোগে নবী করীম (সাঃ) ঐ সমস্ত মূর্তিসহ আরো অন্যান্য সকল মূর্তির মূলোৎপাটন করেন। ঐগুলোর উপর নির্মিত গম্বুজ ও গৃহাদি ভেঙ্গে ফেলান। যে গাছগুলোর তা'যীম (সম্মান প্রদর্শন) করা হত, সেগুলো সব কেটে ফেলান এবং মূর্তিপূজার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন মিটিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। আর এ কাজের জন্য তিনি খালেদ, আলী, আমর ইবনে আস এবং জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-দের সেই সেই স্থানে প্রেরণ করেন, যেখানে এ মূর্তিগুলো স্থাপিত ছিল। তাঁরা সেখানে গিয়ে সেসব ভেঙ্গে ফেলে আরব ভূভাগ থেকে শিরকের নাম পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দেন। (ইবনে কাসীর) প্রথম শতাব্দীর বহু পরে আরবের মাটিতে আবার একবার উক্ত শ্রেণীর শিরকীয় কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে ওঠে। এ সময় মহান আল্লাহ দাওয়াতের পতাকাবাহী শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল অহ্হাব নামক একজন সংস্কারক আলেমকে তওফীক দেন। তিনি 'দিরইয়্যাহ'র শাসকের সহযোগিতায় শাসন ও ক্ষমতা বলে শিরকের এই সমস্ত কার্যকলাপের পরিসমাপ্তি ঘটান। তারপর বাদশাহ আব্দুল আযীয; নাজদ ও হিজাযের শাসক (বর্তমান সউদী শাসকবর্গের পিতা ও এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা) তাঁর সেই দাওয়াত পুনরায় নবায়ন ও সংস্কার করেন। তিনি সমস্ত পাকা কবর ও গম্বুজকে ভেঙ্গে ফেলে নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেন। এইভাবেই আল-হামদুলিল্লাহ বর্তমানে পূরো সঊদী আরবে ইসলামী বিধি-বিধান অনুসারে না কোন পাকা কবর আছে, আর না কোন মাযার।

أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثَىٰ

📘 পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্য এবং কন্যা-সন্তান তাঁর জন্য?[১] [১] মক্কার মুশরিকরা ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর বেটি গণ্য করত। এখানে তারই খন্ডন করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন স্থানে এই বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে।

تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَىٰ

📘 তাহলে এ তো অন্যায্য বণ্টন। [১] [১] ضِيْزَى এর অর্থ হল, অন্যায্য; ন্যায় ও সঠিকতা থেকে দূরে।

إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاءٌ سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ۚ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنْفُسُ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مِنْ رَبِّهِمُ الْهُدَىٰ

📘 এগুলো কতক নাম মাত্র যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখে নিয়েছ; যার সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং মনের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে, অথচ অবশ্যই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের তরফ হতে পথ-নির্দেশ এসেছে।

أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ

📘 মানুষ যা আশা করে, তাই কি সে পায়? [১] [১] অর্থাৎ, এরা যে চায়, এদের এই উপাস্যগুলো এদের উপকার করুক এবং এদের হয়ে সুপারিশ করুক, এটা কখনোই সম্ভব নয়।

فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ

📘 বস্তুতঃ ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই। [১] [১] সুতরাং হবে তা-ই যা তিনি চাইবেন। কেননা, সমস্ত কিছুই তাঁরই এখতিয়ারাধীন।

۞ وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ

📘 আকাশমন্ডলীতে কত ফিরিশতা রয়েছে তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না, যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। [১] [১] অর্থাৎ, ফিরিশতাগণ যাঁরা আল্লাহর অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সৃষ্টি, তাঁদেরকেও সুপারিশ করার অধিকার কেবলমাত্র তাদেরই জন্য দেওয়া হবে, যাদের জন্য আল্লাহ পছন্দ করবেন। ব্যাপার যদি এই হয়, তবে পাথরের মূর্তিগুলো কারো জন্য সুপারিশ কিভাবে করবে, যার আশায় তোমরা বসে আছ? অনুরূপ মহান আল্লাহ মুশরিকদের জন্য সুপারিশ করার অধিকার কাকেই বা কখন দেবেন? তাঁর কাছে তো শিরকের পাপ ক্ষমার্হই নয়।

إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ لَيُسَمُّونَ الْمَلَائِكَةَ تَسْمِيَةَ الْأُنْثَىٰ

📘 যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারাই ফিরিশতাদেরকে নারী-বাচক নাম দিয়ে থাকে।

وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ ۖ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا

📘 অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে। আর সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই।

فَأَعْرِضْ عَنْ مَنْ تَوَلَّىٰ عَنْ ذِكْرِنَا وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا

📘 অতএব তাকে উপেক্ষা করে চল, যে আমার স্মরণে বিমুখ এবং যে শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে।

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ

📘 এবং সে মনগড়া কথাও বলে না।

ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُمْ مِنَ الْعِلْمِ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ

📘 তাদের জ্ঞানের দৌড় এই পর্যন্ত। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই ভাল জানেন, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন, কে সৎপথ প্রাপ্ত।

وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ أَسَاءُوا بِمَا عَمِلُوا وَيَجْزِيَ الَّذِينَ أَحْسَنُوا بِالْحُسْنَى

📘 আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার। [১] [১] অর্থাৎ, হিদায়াত ও ভ্রষ্টতা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে চান হিদায়াত দানে ধন্য করেন এবং যাকে চান তাকে ভ্রষ্টতার গহ্বরে পতিত করেন। আর এটা এই জন্য, যাতে তিনি সৎ লোকদেরকে তাদের সৎকর্মের এবং অসৎ লোকদেরকে তাদের অসৎকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল দেন। (فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأرضِ وَللهِ مَا) এই বাক্যটি পূর্বাপরের সাথে সম্পর্কহীন পৃথক বাক্য (জুমলাহ মু'তারিযাহ) এবং لِيَجْزِيَ এর সম্পর্ক পূর্বে আলোচিত কথার সাথে। (ফাতহুল কাদীর)

الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ۚ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنْتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ ۖ فَلَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ

📘 যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া[১] গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকে।[২] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর।[৩] অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না।[৪] তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে। [১] لَمَمٌ এর আভিধানিক অর্থ অল্প ও ছোট হওয়া। আর এ থেকেই বলা হয়, أَلَمَّ بالمكان অর্থাৎ, গৃহে অল্পক্ষণ ছিল। ألَمَّ بالطَّعَام অল্প একটু খেয়েছে। অনুরূপ কোন জিনিসকে কেবল স্পর্শ করা বা তার নিকটবর্তী হওয়া অথবা কোন কাজকে লাগাতার নয়; বরং কেবল এক বা দু'বার করা কিংবা অন্তরে কেবল খেয়ালের উদয় হওয়া, এ সবকেই لمم বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) لمم এর এই ভাষাগত প্রয়োগ ও তার অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই তার অর্থ করা হয় 'সাগীরা গুনাহ' (ছোট-খাট পাপ)। অর্থাৎ, কোন বড় পাপের প্রাথমিক পর্যায়ের জিনিস করে ফেলা। তবে বড় পাপ থেকে বিরত থাকা অথবা কোন পাপ এক-দু'বার করে ফেলা অতঃপর চিরতরে তা বর্জন করা কিংবা কোন পাপ করার কথা কেবল মনে ভেবে নেওয়া; কিন্তু কার্যতঃ তার ধারে-পাশেও না যাওয়া। এগুলো ছোট গুনাহ বলে গণ্য হবে। যেগুলো মহান আল্লাহ বড় পাপ থেকে বিরত থাকার কারণে ক্ষমা করে দিবেন।[২] كَبَائِر হল كَبِيْرَةٌ এর বহুবচন। কাবীরা গোনাহ, গুরুতর পাপ তথা মহাপাপের সংজ্ঞায় মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে এমন সব পাপকে কাবীরা তথা মহাপাপ বলা হয়, যার উপর জাহান্নামের হুমকি এসেছে অথবা যে পাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিন্দাবাদ কুরআন ও হাদীসে আলোচিত হয়েছে (অথবা যে পাপের কারণে পাপীকে অভিশাপ করা হয়েছে)। অনুরূপ উলামাগণ এ কথাও বলেছেন যে, অব্যাহতভাবে কোন ছোট পাপ করতে থাকলে তা মহাপাপে পরিণত হয়ে যায়। এ ছাড়া 'কাবীরা' গুনাহের অর্থ ও তার প্রকৃতত্বে যেমন মতভেদ রয়েছে, অনুরূপ মতভেদ তার সংখ্যার ব্যাপারেও রয়েছে। কোন কোন আলেম ঐ মহাপাপসমূহকে একটি পুস্তিকার মধ্যে একত্রিতও করেছেন। যেমন, ইমাম যাহাবী (রঃ) রচিত 'কিতাবুল কাবাইর' এবং ফকীহ হাইতামী রচিত 'আয্-যাওয়াজির' প্রভৃতি। فَوَاحِشُ হল فَاحِشَةٌ এর বহুবচন। অশ্লীল কাজ। যেমন, ব্যভিচার, সমলিঙ্গী ব্যভিচার ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেছেন, যেসব পাপের জন্য দন্ডবিধি আছে, সেগুলো সব فواحش এর অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি অশ্লীলতার দৃশ্যাদি যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সেহেতু আধুনিক সভ্যতায় এটাকেই সভ্যতা ও ফ্যাশন মনে করা হচ্ছে। এমন কি মুসলিমরাও ঐ অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার এই সভ্যতাকে লাফ দিয়ে লুফে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, আজ তাদের ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, ভিসিপি, ভিসিডি ইত্যাদি ব্যাপক হয়ে পড়েছে। মহিলারা কেবল পর্দা ত্যাগ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং সুন্দরভাবে সাজগোজ করে (অর্ধনগ্নাবস্থায়) রূপ-সৌন্দর্য বিতরণ করতে করতে বাইরে বেড়ানোটাকে নিজেদের একটা ফ্যাশন ও অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের যৌথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যৌথ অফিস-আদালত, যৌথ সভাসমিতি এবং (পার্ক, সমুদ্র-সৈকত প্রভৃতি) আরো বিভিন্ন স্থানে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা ও দ্বিধা-সংকোচহীন সংলাপ দিনের দিন বেড়ে চলেছে। (বেড়ে চলেছে অবৈধ ভালবাসা ও তথাকথিত পছন্দ করে বিয়ে করার নামে 'লাভম্যারেজ' ও 'লিভ টুগ্যাদার'।) অথচ এ সবই 'ফাওয়াহিশ' (অশ্লীলতা)এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে যাদের ক্ষমা করার কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তারা মহাপাপ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে; তাতে তারা লিপ্ত থাকবে না।[৩] أ جِنَّةٌহল جَنِيْنٌ এর বহুবচন। (এর মূল অর্থঃ গুপ্ত) গর্ভস্থ ভ্রূণকে جَنِيْنٌ বলা হয়। কারণ, তা লোক চক্ষু থেকে গোপনে থাকে।[৪] অর্থাৎ, তাঁর নিকট যখন তোমাদের কোন অবস্থা ও আচরণ লুক্কায়িত নেই; এমনকি তোমরা যখন মাতৃগর্ভে ছিলে, যেখানে তোমাদেরকে দেখার কারো সাধ্য ছিল না, সেখানেও তিনি তোমাদের যাবতীয় অবস্থা ও খবরাখবর সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তখন আত্মপ্রশংসা করার এবং নিজেদের মুখে নিজেদের সততার বর্ণনা দেওয়ার দরকার কি? অর্থাৎ, এ রকম করো না। যাতে লোক দেখানো কাজ থেকে তোমরা বাঁচতে পার।

أَفَرَأَيْتَ الَّذِي تَوَلَّىٰ

📘 তুমি কি দেখেছ সে ব্যক্তিকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়;

وَأَعْطَىٰ قَلِيلًا وَأَكْدَىٰ

📘 এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়? [১] [১] অর্থাৎ, অল্প দিয়ে হাত টেনে নিল অথবা অল্প কিছু আনুগত্য করে পিছে সরে পড়ল। أَكْدَى এর মূল অর্থ হল, মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শক্ত কোন পাথর এসে পড়লে আর খোঁড়া সম্ভব না হওয়া, পরিশেষে খোঁড়ার কাজ ছেড়ে দিলে বলা হয়, أَكْدَى এখান থেকেই তার ব্যবহার এমন ব্যক্তির ব্যাপারে হতে লাগল, যে কাউকে কিছু দেয়, কিন্তু পূর্ণরূপে দেয় না। অনুরূপ কোন কাজ আরম্ভ করে, কিন্তু তা সমাপ্ত করে না।

أَعِنْدَهُ عِلْمُ الْغَيْبِ فَهُوَ يَرَىٰ

📘 তার কি অদৃশ্যে জ্ঞান আছে যে, সে (সবকিছু) দেখতে পাচ্ছে? [১] [১] অর্থাৎ, সে কি দেখতে পাচ্ছে যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করলে তার ধন-সম্পদ শেষ হয়ে যাবে? না, অদৃশ্যের এই জ্ঞান তার নেই। বরং আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকার কারণ কেবলমাত্র কৃপণতা, বিষয়াসক্তি ও পরকালের প্রতি অবিশ্বাস। আর আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতার কারণও এগুলোই।

أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَىٰ

📘 তাকে কি অবগত করা হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে,

وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّىٰ

📘 এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে পালন করেছিল তার দায়িত্ব?

أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ

📘 তা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না।

وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ

📘 আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। [১] [১] অর্থাৎ, যেরূপ কেউ কারো পাপের জন্য দায়ী হবে না, অনুরূপ পরকালে প্রতিদানও সে সেই জিনিসের পাবে, যাতে থাকবে তার নিজস্ব মেহনত ও পরিশ্রম। প্রকাশ থাকে যে, এই প্রতিদানের সম্পর্ক পরকালের সাথে, দুনিয়ার সাথে নয়। যেমন, কিছু সমাজবাদী শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ এই অর্থ বুঝিয়ে বলে থাকেন যে, কেউ অপর ব্যক্তিকে জমি চাষ করিয়ে উপার্জন করতে পারবে না। অনুরূপ অপর ব্যক্তিকে ঘর ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। (অথবা সেবাপার্জিত সম্পদ ছাড়া অন্য সম্পদে তার অধিকার নেই। অথচ উত্তরাধিকারসূত্রে তারাও সম্পদের মালিক হয়ে ও করে থাকেন।) পক্ষান্তরে এই আয়াতকে দলীল বানিয়ে যে উলামাগণ বলেছেন যে, কুরআন-খানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে না, তাঁদের কথা ঠিক। কারণ, এ আমল না মৃত ব্যক্তি করে, আর না এতে তার কোন পরিশ্রম থাকে। আর এই জন্য নবী করীম (সাঃ) তাঁর উম্মতকে মৃতদের জন্য কুরআন-খানী করার প্রতি না কোন উৎসাহ দান করেছেন, আর না সুস্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট কোন উক্তির মাধ্যমে এর প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন। অনুরূপ সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-দের থেকেও এ কাজ বিধেয় হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এ কাজ কোন ভাল কাজ হলে, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণ তা অবশ্যই অবলম্বন করতেন। পক্ষান্তরে যাবতীয় ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত কাজ আছে, তার জন্য সুস্পষ্ট দলীল থাকা অত্যাবশ্যক। এ সবে (ব্যক্তিগত) মত ও অনুমান চলে না। হ্যাঁ দু'আ ও দান-খয়রাতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে। এ ব্যাপারে সকল উলামা একমত। কেননা, এটা বিধানদাতার পক্ষ থেকে সুসাব্যস্ত। আর যে হাদীসে মৃত্যুর পর তিনটি জিনিসের নেকী অব্যাহত থাকার কথা এসেছে, তো সেটাও প্রকৃতপক্ষে মানুষের নিজেরই আমল যা কোন না কোনভাবে তার মৃত্যুর পরেও জারী বা চালু থাকে। সন্তানদেরকে নবী করীম (সাঃ) মানুষের নিজস্ব উপার্জন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। (সুনানে নাসাঈ, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়) 'সাদকায়ে জারিয়াহ' (প্রবহমান দান) ওয়াকফের ন্যায় মানুষের নিজস্ব কীর্তিসমূহ। আল্লাহ বলেন,(وَنَكتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُم) "আমিই তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি।" অনুরূপ মানুষের মাঝে যে জ্ঞানের সে প্রচার-প্রসার করেছে এবং মানুষ যার অনুসরণ করেছে, সেটাও তার প্রচেষ্টা ও তারই আমল। আর নবী করীম (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করে, তার জন্য রয়েছে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব। এতে তাদের কারো সওয়াব এতটুকু পরিমাণও হ্রাস করা হয় না।" (মুসলিম, আবূ দাঊদ) কাজেই এই হাদীস আয়াতের পরিপন্থী বা বিরোধী নয়। (ইবনে কাসীর)

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ

📘 তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। [১] [১] অর্থাৎ, তিনি পথভ্রষ্ট বা বিপথগামী কি করে হতে পারেন?! তিনি তো আল্লাহর প্রত্যাদেশ ছাড়া মুখই খুলেন না। এমনকি রহস্য ও হাসি-ঠাট্টার সময়ও তাঁর পবিত্র জবান থেকে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না (তিরমিযীঃ বির্র্ অধ্যায়) অনুরূপ ক্রোধের সময়ও তাঁর স্বীয় আবেগ ও উত্তেজনার উপর এত নিয়ন্ত্রণ ছিল যে, তাঁর জবান থেকে কোন কথা বাস্তবের বিপরীত বের হয়নি। (আবূ দাউদঃ শিক্ষা অধ্যায়)

وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَىٰ

📘 আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই তাকে দেখানো হবে। [১] [১] অর্থাৎ, দুনিয়াতে সে ভাল-মন্দ যাই করেছে; গোপনে করে থাকুক বা প্রকাশ্যে, কিয়ামতের দিন তা সব সামনে এসে যাবে এবং তার উপর তাকে পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে।

ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَاءَ الْأَوْفَىٰ

📘 অতঃপর তাকে দেওয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান।

وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الْمُنْتَهَىٰ

📘 আর এই যে, সবকিছুর সমাপ্তি তো তোমার প্রতিপালকের নিকট।

وَأَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَىٰ

📘 আর এই যে, তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান।

وَأَنَّهُ هُوَ أَمَاتَ وَأَحْيَا

📘 এবং এই যে, তিনিই মারেন, তিনিই বাঁচান।

وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَىٰ

📘 আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী--

مِنْ نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ

📘 শুক্রবিন্দু হতে যখন তা স্খলিত হয়।

وَأَنَّ عَلَيْهِ النَّشْأَةَ الْأُخْرَىٰ

📘 আর এই যে, পুনরুত্থান ঘটাবার দায়িত্ব তাঁরই।

وَأَنَّهُ هُوَ أَغْنَىٰ وَأَقْنَىٰ

📘 আর এই যে, তিনিই অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেন, [১] [১] অর্থাৎ, কাউকে এত ধন-সম্পদ দান করেন যে, সে কারো মুখাপেক্ষী হয় না এবং তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়। আর কাউকে এত সম্পদ দেন যে, তার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেঁচে যায় এবং সে তা সংরক্ষিত রাখে।

وَأَنَّهُ هُوَ رَبُّ الشِّعْرَىٰ

📘 আর এই যে, তিনি লুব্ধক নক্ষত্রের প্রতিপালক।[১] [১]( (লুব্ধক বা সিরিয়াস নক্ষত্র।) রব্ব তথা প্রতিপালক তো তিনিই সকল বস্তুর। এখানে এই তারার নাম এই জন্য উল্লেখ করেছেন যে, আরবের কোন কোন গোত্র তার পূজা করত।

عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَىٰ

📘 তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী, (ফিরিশতা জিবরীল)।

وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ

📘 আর এই যে, তিনিই প্রথম আ’দ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন। [১] [১] এখানে আ'দ জাতিকে প্রথম এই জন্য বলা হয়েছে যে, এদের ধ্বংস সামূদ জাতির পূর্বে হয়েছে। অথবা এই কারণে যে, নূহ (আঃ)-এর জাতির পর সর্বপ্রথম এদেরকেই ধ্বংস করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, আ'দ নামে দু'টি জাতি গত হয়েছে। এরা ছিল প্রথম, যাদেরকে প্রচন্ড বায়ু দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি কালচক্রের সাথে বিভিন্ন নামে নামান্তরিত হয়ে চলতে থাকে এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান থাকে।

وَثَمُودَ فَمَا أَبْقَىٰ

📘 এবং সামূদ সম্প্রদায়কেও, সুতরাং কাউকেও তিনি বাকী রাখেননি।

وَقَوْمَ نُوحٍ مِنْ قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا هُمْ أَظْلَمَ وَأَطْغَىٰ

📘 আর এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও, তারা ছিল অতিশয় যালিম ও অবাধ্য।

وَالْمُؤْتَفِكَةَ أَهْوَىٰ

📘 তিনি উৎপাটিত (মু’তাফিকা) আবাস ভূমিকে উল্টিয়ে দিয়েছিলেন। [১] [১] এ থেকে লূত (আঃ)-এর সেই জনপদকে বুঝানো হয়েছে, যা তাদের উপর উল্টে দেওয়া হয়েছিল।

فَغَشَّاهَا مَا غَشَّىٰ

📘 তারপর ওকে আচ্ছন্ন করল যা আচ্ছন্ন করার। [১] [১] অর্থাৎ, তারপর তাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكَ تَتَمَارَىٰ

📘 সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে? [১] [১] বা বিতর্ক করবে ও সেগুলোকে মিথ্যা মনে করবে? কারণ, সেগুলো এত ব্যাপক ও সুস্পষ্ট যে, না সেগুলো অস্বীকার করা সম্ভব, আর না গোপন করা।

هَٰذَا نَذِيرٌ مِنَ النُّذُرِ الْأُولَىٰ

📘 অতীতের সতর্ককারীদের ন্যায় এও একজন সতর্ককারী।

أَزِفَتِ الْآزِفَةُ

📘 কিয়ামত আসন্ন।

لَيْسَ لَهَا مِنْ دُونِ اللَّهِ كَاشِفَةٌ

📘 আল্লাহ ছাড়া কেউই তা ব্যক্ত করতে সক্ষম নয়।

أَفَمِنْ هَٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ

📘 তোমরা কি এই কথায় বিস্ময়বোধ করছ? [১] [১] এখানে 'কথা' বলতে কুরআন মাজীদের বাণীকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, এর ব্যাপারে তোমরা আশ্চর্যান্বিত হও ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ কর, অথচ এতে না কোন আশ্চর্য হওয়ার কথা আছে, আর না কোন মিথ্যা ও হাস্যকর বিষয়।

ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَىٰ

📘 প্রজ্ঞাসম্পন্ন,[১] সে (জিবরীল নিজ আকৃতিতে) স্থির হয়েছিল, [১] এর দ্বিতীয় অর্থঃ বলবান। এ থেকে ফিরিশতা জিবরীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে; যিনি প্রচন্ড দৈহিক শক্তির অধিকারী। এই ফিরিশতাই নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট অহী নিয়ে এসেছেন এবং তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।

وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ

📘 এবং হাসি-ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ না?

وَأَنْتُمْ سَامِدُونَ

📘 তোমরা তো উদাসীন।

فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا ۩

📘 অতএব তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর। [১] [১] মুশরিক ও (কুরআনকে) মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে তিরস্কার করার জন্য এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের আচরণ যখন এই যে, তারা কুরআনকে সত্য মানার পরিবর্তে তার মান খাটো ও তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে এবং আমার নবীর উপদেশ ও নসীহতের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ছে না, তখন তোমরা হে মুসলিমগণ! আল্লাহর সমীপে নত হয়ে ও তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য প্রদর্শন করে পবিত্র কুরআনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা কর। সুতরাং এই আদেশ পালন করার জন্য নবী করীম (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) সিজদা করেন। এমনকি সেখানে সভায় উপস্থিত কাফেররাও সিজদা করে। যে কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন।)

وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَىٰ

📘 তখন সে ঊর্ধ্বদিগন্তে। [১] [১] অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ)। অর্থাৎ, অহী শিক্ষা দেওয়ার পর আকাশের দিগন্তে গিয়ে দাঁড়ালেন।

ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ

📘 অতঃপর সে তার (রসূল)এর নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। [১] [১] অর্থাৎ, অতঃপর যমীনে অবতরণ করলেন এবং ধীরে ধীরে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকটবর্তী হলেন।

فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَىٰ

📘 ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। [১] [১] কেউ কেউ অনুবাদ করেছেন দুই হাত পরিমাণ। এখানে নবী করীম (সাঃ) এবং জিবরীল (আঃ)-এর পারস্পরিক নিকটবর্তিতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ এবং নবী করীম (সাঃ)-এর কাছাকাছি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। যেমন কেউ কেউ এটাই বুঝাতে চেষ্টা করেন। আয়াতগুলোর প্রাসঙ্গিক আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, এতে কেবল জিবরীল এবং নবী করীম (সাঃ)-এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই নিকটবর্তিতার সময়ই নবী করীম (সাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন। আর এটা হল নবুঅত প্রাপ্তির প্রথম দিকের সেই ঘটনা, যার আলোচনা এই আয়াতগুলোতে করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার আসল আকৃতিতে দর্শন করেন মি'রাজের রাতে।