slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة يونس

(Yunus) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ

📘 Please check ayah 10:2 for complete tafsir.

دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ۚ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

📘 ৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে ঐ ভাগ্যবানদের খবর দেয়া হচ্ছে যারা ঈমান এনেছে, নবী রাসূলদের সত্যতা স্বীকার করেছে, আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর অনুগত হয়েছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের ব্যাপারে এই ওয়াদা করা হয়েছে যে, তাদের নেক আমলের বিনিময়ে তাদেরকে হিদায়াত দান করা হবে। এখানে :এর । অক্ষরটি (কারণবোধক) হতে পারে। অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের ঈমান আনয়নের কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সরল সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। শেষ পর্যন্ত তারা সেই পথ অতিক্রম করে নেবে এবং জান্নাত পর্যন্ত পৌছে যাবে। আবার এই অক্ষরটি (সাহায্যবোধক) হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন মুজাহিদ (রঃ) বলেছেন যে, তাদের সাথে একটা নূর (আলো) থাকবে যার সাহায্যে তারা পথ চলতে থাকবে। ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি এই যে, তাদের আমলগুলো একটি সুন্দর প্রতিকৃতি ও সুগন্ধময় হাওয়ার আকার বিশিষ্ট হবে এবং তারা যখন কবর হতে উঠবে তখন এই সুন্দর প্রতিকৃতি তাদের আগে আগে চলবে এবং তাদেরকে সর্বপ্রকারের সুসংবাদ দিতে থাকবে । যখন সেই নেককার ব্যক্তি ঐ প্রতিকৃতিকে জিজ্ঞেস করবেঃ “তুমি কে?" সে উত্তরে বলবেঃ “আমি তোমার নেক আমল।” সে আলোকবর্তিকারূপে তার আগে আগে চলবে, এবং তাকে জান্নাত পর্যন্ত পৌছিয়ে দেবে। এজন্যেই আল্লাহ পাক (আরবী)-এ কথা বলেছেন। পক্ষান্তরে কাফিরের আমলগুলো অত্যন্ত কুৎসিত প্রতিকৃতির আকারে হবে এবং দুর্গন্ধময় হাওয়ার দেহ ধারণ করবে। সে তার সঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে থাকবে এবং জাহান্নামে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেবে। কাতাদা (রঃ)-এরও উক্তি এটাই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।জান্নাতবাসীদের অবস্থা এই হবে যে, (আরবী) হবে তাদের সম্বোধন। ইবনে জুরাইজ (রঃ) বলেন যে, যখন তাদের পার্শ্ব দিয়ে এমন পাখী উড়ে যাবে যার চাহিদা তাদের মনে জেগে উঠবে তখন উল্লিখিত কালেমা তাদের মুখে উচ্চারিত হবে। তথায় এটাই হবে তাদের উক্তি। তখন একজন ফিরিশতা তাদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু নিয়ে হাযির হয়ে তাদেরকে সালাম করবেন। তারা সালামের জবাব দেবে। তাই আল্লাহ তাআলা (আরবী) -এ কথা বলেছেন। তারা ঐ খাদ্য খাওয়ার পর আল্লাহর শাকর ও প্রশংসা করবেন। এ জন্যেই মহান আল্লাহ (আরবী)-এই উক্তি করেছেন। মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) বলেন যে, জান্নাতবাসী যখন কোন খাবার চেয়ে নেয়ার ইচ্ছে করবে তখন (আরবী) বলবে। তখন তার কাছে দশ হাজার খাদেম একটি সোনার খাঞ্জা নিয়ে হাযির হয়ে যাবে। প্রত্যেক খাঞ্জায় এমন নতুন খাদ্য থাকবে যা অন্য খাঞ্জায় থাকবে না। জান্নাতবাসী তখন প্রত্যেক খাঞ্জা হতেই কিছু না কিছু খাবে। সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, যখন কোন লোক কোন জিনিস চাইবে তখন (আরবী) বলবে। এই আয়াতটি (আরবী) (৩৩:৪৪) এবং (আরবী) (৫৬:২৫-২৬) ইত্যাদি আয়াতগুলোর সহিত সাদৃশ্যযুক্ত। এগুলো একথাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ পাক সদা সর্বদাই প্রশংসিত এবং সর্বদাই পূজনীয়। এজন্যেই সৃষ্টির শুরুতেও তিনি স্বীয় সত্তার প্রশংসা করেছেন এবং অবতারণের শুরুতেও। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) (১৮:১) আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) ইত্যাদি। (৬:১)তিনি প্রথমেও প্রশংসিত এবং শেষেও প্রশংসিত, হয় দুনিয়াই হাক বা দ্বীনই হাক। এজন্যেই হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতবাসীকে তাসবীহ ও তাহমীদ শেখানো হয়েছে, যেমন নফসের কামনা ও বাসনাও তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহর নিয়ামতরাজী তাদের উপর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তেমন তার তাহমীদ ও তাবীও বর্ধিত হতে থাকে। তা কখনও শেষ হবার নয়। আল্লাহ ছাড়া কোন মা’রূদ ও প্রতিপালক নেই।

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ

📘 ৯৯-১০০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যদি আল্লাহ চাইতেন তবে দুনিয়ার সমস্ত মানুষই ঈমান আনতো। কিন্তু তিনি যা কিছু করেন তাতে নিপুণতা রয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা হলে সবাই এক খেয়ালেরই হতো। কিন্তু পৃথিবীতে বিভিন্ন মতের লোক রয়েছে। সঠিক মতের উপর তারাই রয়েছে যাদের উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হয়েছে। আর তাদের স্বভাবও এভাবেই বানানো হয়েছে। হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের এ কথাটি পূর্ণ হয়েই থাকবে। তা হচ্ছে এই যে, তিনি বলেনঃ “আমি অবশ্যই জাহান্নামকে দানব ও মানব উভয় জাতি দ্বারা পূর্ণ করবো।” যদি সকলকেই আল্লাহ হিদায়াত করতেন, তবে কি ঈমান অর্থহীন হয়ে যেতো না? তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী (সঃ)! তুমি কি জোর করে তাদেরকে মুমিন বানাতে চাও? না, এটা তোমার জন্যে শোভনীয় নয় এবং ওয়াজিবও নয়। আল্লাহই যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। তুমি তাদের জন্যে আফসোস করে করে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না এই মনে করে যে, তারা ঈমান আনছে না। আল্লাহ পাক এক জায়গায় বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি যাকে ভালবাস তাকে হিদায়াত দান। করতে পার না।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার দায়িত্ব। হচ্ছে শুধু পৌছিয়ে দেয়া, আর হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি শুধু উপদেশ দিতে থাকো, কেননা, তুমি তো শুধু উপদেষ্টা মাত্র। তুমি তাদের উপর দায়গ্রস্ত অধিকারী নও।” এ আয়াতগুলো এটাই প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না। জ্ঞান ও বিবেক দ্বারা যে কাজ করে না তাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়া হয়। হিদায়াত করা ও না করার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা ন্যায়পরায়ণ।

قُلِ انْظُرُوا مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا تُغْنِي الْآيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 10:103 for complete tafsir.

فَهَلْ يَنْتَظِرُونَ إِلَّا مِثْلَ أَيَّامِ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ قُلْ فَانْتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُمْ مِنَ الْمُنْتَظِرِينَ

📘 Please check ayah 10:103 for complete tafsir.

ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا ۚ كَذَٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ

📘 ১০১-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বন্দাদেরকে অন্তদৃষ্টি প্রসারিত করার উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন- সারা বিশ্বে আমার যেসব নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, যেমন আকাশের তারকারাজি, নক্ষত্র, সূর্য, চন্দ্র, রাত, দিন ইত্যাদি, এগুলোর প্রতি তোমরা তোমাদের অন্তর্দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখো যে, কিভাবে রাত্রির মধ্যে দিবসকে এবং দিবসের মধ্যে রাত্রিকে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে! কখনো দিন বড় হচ্ছে, আবার কখনো রাত বড় হচ্ছে। আর আকাশের উচ্চতা ও প্রশস্ততা, তারকারাজি দ্বারা তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা, আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ, যমীন শুষ্ক হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় তাকে সঞ্জীবিত ও সবুজ-শ্যামল করা, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজিতে ফল, ফুল ও পাঁপড়ি সৃষ্টি করা, বিভিন্ন প্রকারের তরুলতা উৎপন্ন করা, বিভিন্ন প্রকারের জীব-জন্তু সৃষ্টি করা, এগুলোর আকৃতি, রং, উপকারিতা ও অপকারিতা পৃথক হওয়া, পাহাড়, মরুভূমি, বন-জঙ্গল, বাগবাগিচা, আবাদী ও পতিত ভূমি, সমুদ্র, তার তলদেশের বিস্ময়কর বস্তুরাজি, তরঙ্গমালা, জোয়ার-ভাটা, এতদসত্ত্বেও ভ্রমণকারীদের ওর উপর দিয়ে নৌকা, জাহাজ ইত্যাদি যোগে ভ্রমণ করা, এ সবগুলো হচ্ছে মহাশক্তিশালী আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনসমূহ, যিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, এসব নিদর্শন কাফিরদের চিন্তা ও গবেষণার কোনই কারণ হচ্ছে না। আল্লাহর দলীল সাব্যস্ত হয়ে গেছে, এরা ঈমান আনছে না এবং আনবেও না। এ লোকগুলো তো ঐ শাস্তির দিনগুলোরও অপেক্ষা করছে, যার সম্মুখীন হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তী কওমগুলো। আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তাদেরকে বলে দাও- তোমরা সময়ের জন্যে অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা। করছি। অবশেষে যখন অপেক্ষার সময় শেষ হয়ে শাস্তি এসেই পড়বে তখন আমি রাসূলদেরকে এবং তাদের উম্মতদেরকে বাঁচিয়ে নিব। আর যারা রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল তাদেরকে ধ্বংস করে দিব। মুমিনদেরকে রক্ষা করার যিম্মা মহান আল্লাহ গ্রহণ করেছেন, যেমন তিনি সকর্মশীলদের উপর করুণা বর্ষণ নিজের যিম্মায় নিয়েছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহর কিতাব লাওহে মাহফুজে, যা আরশের উপর রয়েছে, তাতে লিখিত আছেঃ “আমার রহমত আমার গযবের উপর জয়যুক্ত।”

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي شَكٍّ مِنْ دِينِي فَلَا أَعْبُدُ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِنْ أَعْبُدُ اللَّهَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 10:107 for complete tafsir.

وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

📘 Please check ayah 10:107 for complete tafsir.

وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 10:107 for complete tafsir.

وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ ۚ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 ১০৪-১০৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি বলে দাও-- হে লোক সকল! আমি যে দ্বীনে হানীফ (একনিষ্ঠ ধর্ম) নিয়ে এসেছি, যার অহী আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে, যদি এর সঠিকতা ও সত্যতার ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ হয়ে থাকে তবে জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের উপাস্যদের কখনো উপাসনা করবো না। আমি এক ও অংশীবিহীন আল্লাহরই বান্দা, যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন এবং যিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। নিঃসন্দেহে তোমাদের সকলকেই তারই নিকট ফিরে যেতে হবে। আচ্ছা, যদি ধরে নেয়া হয় যে, তোমাদের মা’রূদ সত্য, তবে তাদেরকে আমার কোন ক্ষতি করতে বলতো? জেনে রেখো যে, তাদের কারো লাভ বা ক্ষতি করার কোনই ক্ষমতা নেই। লাভ ও ক্ষতি করার হাত তো শরীকবিহীন আল্লাহর। হে নবী (সঃ)! তুমি কাফিরদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদতে লেগে যাও। শিরকের দিকে একটুও ঝুঁকে পড়ো না। যদি আল্লাহ তোমাকে ক্ষতির মধ্যে পরিবেষ্টন করেন, তবে কে এমন আছে যে, তোমাকে তা থেকে বের করতে পারে? লাভ ও ক্ষতি, কল্যাণ ও অকল্যাণ তো তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সারা জীবন কল্যাণ অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর নিয়ামতসমূহ কামনা কর। আল্লাহর করুণার হাওয়া যে সৌভাগ্যবানকে স্পর্শ করেছে সে ভাগ্যবান। বটে। তিনি যাকে চান তার উপর নিজের করুণা বর্ষণ করেন। আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন তোমাদের দোষত্রুটি গোপন রাখেন এবং তোমাদেরকে যুগের বিপদাপদ এবং নফসের বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তোমাদের যত বড়ই পাপ হাক না কেন, যদি তাওবা করে নাও, তবে তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন। এমন কি শিরক করেও যদি তাওবা কর, তবে তাও তিনি ক্ষমা করবেন।

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ فَمَنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۖ وَمَا أَنَا عَلَيْكُمْ بِوَكِيلٍ

📘 Please check ayah 10:109 for complete tafsir.

وَاتَّبِعْ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتَّىٰ يَحْكُمَ اللَّهُ ۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ

📘 ১০৮-১০৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন- হে নবী (সঃ)! তুমি লোকদেরকে বলে দাও যে, আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে যেসব অহী এসেছে তা সত্য। তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যে ব্যক্তি হিদায়াত প্রাপ্ত হয়েছে এবং তার অনুসরণ করেছে, তার উপকার সে নিজেই লাভ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হিদায়াত লাভ করেনি, তার কুফল তাকেই ভোগ করতে হবে। আমি আল্লাহর ফৌজদার নই যে, তোমাদেরকে জোরপূর্বক মুমিন বানিয়ে দিব। আমি তো শুধু তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শনকারী। হিদায়াত দান করার কাজ একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ পাক বলেন- হে নবী (সঃ)! তুমি নিজেই অহীর অনুসরণ কর এবং তাকে শক্ত করে ধরে থাক। যারা তোমার বিরোধিতা করছে ওর উপর ধৈর্যধারণ কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহর ফায়সালা চলে আসে। তিনি উত্তম ফায়সালাকারী। অর্থাৎ স্বীয় ইনসাফ ও হিকমতের মাধ্যমে তিনি উত্তম মীমাংসাকারী।

۞ وَلَوْ يُعَجِّلُ اللَّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ ۖ فَنَذَرُ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের উপর নিজের স্নেহ ও সহনশীলতার সংবাদ দিচ্ছেন যে, মানুষ যদি তার সংকীর্ণমনা ও ক্রোধের কারণে নিজের জান, মাল ও সন্তানদের উপর বদ দুআ করে তবে তিনি তার সেই বদ দুআ কবূল করেন না। কেননা তিনি জানেন যে, এটা তার আন্তরিক ইচ্ছায় নয়। এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ দয়া ও মেহেরবানীর দাবী। কিন্তু যদি মানুষ তার নিজের জন্যে এবং তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির পক্ষে দুআ করে তবে আল্লাহ সেই দুআ ককূল করে থাকেন। এজন্যেই তিনি বলেন-মানুষ যেমন তার কল্যাণের জন্যে তাড়াহুড়ো করে তেমনি যদি আল্লাহ তা'আলা তার উপর বিপদ-আপদ পৌছানোর ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতেন তবে তো তার অকাল মৃত্যু ঘটে যেতো। তবে মানুষের জন্যে এটা কখনই শোভনীয় নয় যে, সে বারবার এরূপ বলতে থাকে এবং বদ দুআ করার অভ্যাস করে ফেলে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা নিজেদের উপর, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির উপর বদ দূআ’ করো না, কেননা কোন কোন সময় দুআ কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং যদি সেই সময় বদ দুআ মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে তবে তা কবূল হয়েই যাবে।” (এ হাদীসটি হাফিজ আবু বকর আল বাযযার (রঃ) স্বীয় মুসনাদে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)মুজাহিদ (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, এই বদ দুআ' মানুষের একটা উক্তি যা সে ক্রোধের সময় নিজের উপর, নিজের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির উপর করে থাকে। এই সময় উচিত যে, সে যেন তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! এ কথায় আপনি বরকত দান। করবেন না।" নচেৎ তার এই বদ দুআ কবুল হয়েই যাবে এবং এর ফলে তার সর্বনাশ হবে।

وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَىٰ ضُرٍّ مَسَّهُ ۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, মানুষ যখন কোন বিপদের সম্মুখীন হয় তখন সম্পূর্ণরূপে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দুআ করতে শুরু করে।” (৪১:৫১) পূর্ববর্তী আয়াত এবং এই আয়াতের অর্থ একই। কেননা, যখন তার উপর বিপদ পৌছে তখন সে ব্যাকুল ও অধৈর্য হয়ে পড়ে । উঠতে, বসতে, শুইতে, জাগতে সর্বাবস্থাতেই বিপদের বৃষ্টি দূর হওয়ার জন্যে প্রার্থনা করতে শুরু করে। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক সেই বিপদ সরিয়ে দেন তখন সে আল্লাহকে এড়িয়ে চলে এবং পরামুখ হয়ে যায়। তার ভাব দেখে মনে হয় যে, তার উপর ইতিপূর্বে কোন বিপদই পৌছেনি। মহান আল্লাহ এই অভ্যাসের নিন্দে করে বলেন- এরূপ ব্যবহার তো পাপী ও বদকারদের জন্যেই শোভা পায়। আল্লাহ তা'আলা যাকে হিদায়াত ও তাওফীক দান করেন সে এর থেকে স্বতন্ত্র। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্তি রয়েছেঃ “মুমিনের কাজ। কারবার তো খুবই বিস্ময়কর। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তার উপর যা কিছু এসে পড়ে তা তার জন্যে কল্যাণকরই হয়ে থাকে। যদি তার উপর কোন বিপদ আপদ পৌঁছে এবং তাতে সে ধৈর্যধারণ করে তবে সে তার প্রতিদান লাভ করে থাকে। আর যদি সুখ শান্তি প্রাপ্ত হয় এবং তাতে সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তবে তাতেও পুণ্য লাভ করে। আল্লাহর এই দয়া ও করুণা শুধু মুমিনের জন্যেই বিশিষ্ট, আর কারো জন্যে নয়।

وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُوا ۙ وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ وَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ

📘 Please check ayah 10:14 for complete tafsir.

ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِنْ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

📘 ১৩-১৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, পূর্ববর্তী রাসূলগণ যখন ঐ সময়ের কাফিরদের নিকট আগমন করেছিলেন এবং তাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছিলেন তখন তারা তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করায় তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাদের পর আল্লাহ তা'আলা এই কওমকে সৃষ্টি করলেন এবং তাদের কাছে তার একজন রাসূলকে পাঠালেন। তিনি দেখতে চান যে, তারা তাঁর এই রাসূল (সঃ)-এর কথা মানছে কি না। সহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়াটা (বাহ্যিকভাবে) খুবই মিষ্ট ও সবুজ শ্যামল। এখন আল্লাহ তোমাদেরকে পূর্ববতী কওমদের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন। তিনি দেখতে চান যে, তোমরা কিরূপ আমল করছো । তোমাদের উচিত যে, তোমরা দুনিয়ার অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে দূরে থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, তোমরা স্ত্রীলোকদের থেকে খুবই সতর্ক থাকবে। কেননা বানী ইসরাঈলের উপর প্রথম যে ফিত্না এসেছিল তা ছিল এই স্ত্রীলোকদেরই ফিত্না।” একবার আউফ ইবনে মালিক (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে নিজের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন যে, যেন আকাশ থেকে একটি রঞ্জু লটকে আছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) রঙ্কুটি টানলেন। আবার ওটা আকাশের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে গেল। তখন আবু বকর (রাঃ) ওটা টানলেন। তারপর জনগণ মিম্বরের চার দিকে ওটাকে মাপতে লাগলেন। উমার (রাঃ)-এর মাপে ওটা মিম্বর থেকে তিন হাত লম্বা হলো। সেখানে উমার (রাঃ) বিদ্যমান ছিলেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা শুনে বললেনঃ “রেখে দাও তোমার স্বপ্ন। এর সাথে আমাদের কি সম্পর্ক? কোথাকার কি স্বপ্ন!” কিন্তু যখন উমার (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হলেন তখন আউফ (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ “হে আউফ (রাঃ)! আপনার স্বপ্নের বৃত্তান্ত আমাকে শুনিয়ে দিন।” তখন আউফ (রাঃ) বললেনঃ “এখন স্বপ্ন শ্রবণের কি প্রয়োজন পড়েছে? আপনি তো ঐ সময় আমাকে ধমক দিয়েছিলেন। তার এই কথা শুনে উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! আমি এটা কখনো চাচ্ছিলাম না যে, আপনি রাসূল (সঃ)-এর খলীফা নফসে সিদ্দীক (রাঃ)-এর মৃত্যুর সংবাদ শোনাবেন।” অতঃপর আউফ (রাঃ) তাঁর স্বপ্নের বর্ণনা দিলেন। যখন তিনি এই পর্যন্ত পৌছলেন যে, জনগণ ওটাকে মিম্বর পর্যন্ত তিন তিন হাত মাপলেন, তখন উমার (রাঃ) বলে উঠলেনঃ “এই তিনের মধ্যে একজন ছিলেন খলীফা অর্থাৎ আবু বকর (রাঃ)। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহর ব্যাপারে কারো তিরস্কার ও অসন্তুষ্টির কোনই পরওয়া করেন না। আর তৃতীয় হাতের উপর সমাপ্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, তিনি শহীদ হবেন।” উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর আমি তাদের স্থলে তোমাদেরকে তাদের পর ভূ-পৃষ্ঠে আবাদ করলাম, আমি দেখতে চাই যে, তোমরা কিরূপ কাজ কর।” সুতরাং হে উমার (রাঃ)! তুমি এখন খলীফা নির্বাচিত হয়েছে। কাজেই তুমি কাজ করার সময় চিন্তা করো যে, তুমি কি কাজ করছে। উমার (রাঃ) যে তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় না করার কথা বললেন ওটা ছিল আল্লাহর আহকামের ব্যাপারে। আর (আরবী) শব্দ দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তিনি শহীদ হবেন! আর ওটা ঐ সময় হবে যখন সমস্ত লোক তার অনুগত হয়ে যাবে।

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ ۙ قَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَٰذَا أَوْ بَدِّلْهُ ۚ قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِي ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ ۖ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

📘 Please check ayah 10:16 for complete tafsir.

قُلْ لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلَا أَدْرَاكُمْ بِهِ ۖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِنْ قَبْلِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

📘 ১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: মুশরিক কুরায়েশদের মধ্যে যারা উদ্ধত কাফির ছিল এবং যারা সব কথাই অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করতো, আল্লাহ তা'আলা তাদেরই সংবাদ দিচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদেরকে আল্লাহর কিতাব শুনিয়ে দেন এবং তাদের সামনে সুস্পষ্ট দলীল পেশ করেন তখন তারা বলে- এই কুরআন ছাড়া অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো, যা অন্য ধারায় লিখিত। এখন আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে ইরশাদ করছেন- তুমি তাদেরকে বলে দাও, আচ্ছা বলতো আমার কি অধিকার আছে যে, আমি নিজের পক্ষ থেকে কুরআনকে পরিবর্তন করতে পারি? আমি তো শুধু আল্লাহর একজন আদিষ্ট বান্দা এবং তার বার্তাবাহক। এসব যা কিছু আমি তোমাদের সামনে পেশ করছি, সব কিছুই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে। আমার উপর যা কিছু অহী করা হচ্ছে, আমি শুধু ওগুলোই বলছি। আমি যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাই তবে আমি কিয়ামতের কঠিন শাস্তির ভয় করি। এগুলো যে আমার নিজের রচিত নয়, তার স্পষ্ট প্রমাণ এই যে, আমি যদি এটা (এই কুরআন) রচনা করতে পারতাম তবে তোমরাও পারতে। কিন্তু তোমরা তো রচনা করতে সক্ষম নও। তাহলে আমি কিরূপে সক্ষম হতে পারি? সুতরাং এটা সুস্পষ্ট কথা যে, এটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কালাম হতে পারে না। তাছাড়া তোমরা আমার সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার কথা তখন থেকে অবগত আছ যখন থেকে আমি তোমাদেরই কওমের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি। আর যখন থেকে আমি তোমাদের কাছে রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি তখন থেকেও তোমরা আমার সত্যবাদিতা ও ঈমানদারীর উপর কোন কটাক্ষ করতে পার না। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও আমি এক দীর্ঘজীবন তোমাদের সাথে অতিবাহিত করেছি। তোমাদের কি এতটুকুও জ্ঞান নেই যে, তোমরা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পার? এজন্যেই যখন রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ান (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে নতুন নবী (সঃ)-এর অবস্থা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে প্রশ্ন করেনঃ “তোমাদের কাছে তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেছেন এরূপ কোন প্রমাণ আছে কি?" আবু সুফিয়ান উত্তরে বলেনঃ “না।” আবু সুফিয়ান (রাঃ) তো ঐ সময় কাফিরদের সরদার ও মুশরিকদের নেতা ছিলেন । তথাপি তাঁকে এই নবী (সঃ)-এর সত্যবাদিতার কথা স্বীকার করতেই হয়। সে সময় হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করেছিলেনঃ “মানুষের ব্যাপারে যিনি কখনও মিথ্যা কথা বলেননি, আল্লাহর ব্যাপারে কিরূপে তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন।জা'ফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীর সামনে বলেছিলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আমাদের নিকট এমন একজন রাসূল (সঃ) পাঠিয়েছেন যার স্বভাবগত সত্যবাদিতা, বংশগত মর্যাদা এবং আমানতদারী। সম্পর্কে আমরা পূর্ণ ওয়াকিফহাল। নবুওয়াতের পূর্বে সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর তিনি আমাদের সাথে অবস্থান করেছেন।” সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রাঃ) তেতাল্লিশ বছর পর্যন্ত বলেছেন। তবে প্রথম উক্তিটিই সঠিকতর।

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْمُجْرِمُونَ

📘 আল্লাহ তা'আলা বলেন, ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় অত্যাচারী ও অবাধ্য আর কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে এবং ঝুটমুট এই দাবী করে বসে যে, সে আল্লাহ হতে প্রেরিত? এই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় অপরাধী ও গুনাহগার আর কেউ হতে পারে কি? এ কথা তো কোন স্থূলবুদ্ধি সম্পন্ন ও বোকা লোকের কাছেও গোপনীয় নয়। তাহলে বুদ্ধিমান ও নবীদের কাছে কিভাবে এটা গোপন থাকতে পারে। যে ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করে সে সত্যবাদী হাক বা মিথ্যাবাদী হাক, আল্লাহ তার সুকর্ম ও কুকর্মের উপর দলীল কায়েম করে থাকেন যা সূর্যের চেয়েও অধিক প্রকাশমান। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) ও মুসাইলামা কাযযাবকে দেখেছে সে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য ঠিক এভাবেই করতে পারবে যেভাবে দিনের আলো ও রাত্রির অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। এখন দু’জনের স্বভাব-চরিত্র, কার্যাবলী এবং কথাবার্তার মধ্যে তুলনা করলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে যে, মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কথা ও কাজের মধ্যে কি পরিমাণ সততা ও সত্যবাদিতা ছিল, আর মুসাইলামা কাযযাব সাজাহ এবং আসওয়াদ আনসারীর মধ্যে কি পরিমাণ মিথ্যা ও বেঈমানী ছিল।আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন জনগণ তার আগমনে খুবই খুশী ছিল। তার আগমনে যারা খুশী হয়েছিল আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে একজন। আমি যখন প্রথমবার তাঁকে দেখি তখনই আমার অন্তর এই সাক্ষ্য দেয় যে, কোন মিথ্যাবাদী লোকের চেহারা এমন নূরানী (আলোকময়) কখনই হতে পারে না। আমি সর্বপ্রথম তার মুখে যে কথা শুনি তা ছিল নিম্নরূপঃ“হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর একে অপরকে সালাম করবে, তার সফলতার জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, গরীব ও ক্ষুধার্তদেরকে পেট পুরে খাওয়াবে, আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখবে এবং রাত্রে উঠে সালাত আদায় করবে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে তোমরা নিঃসন্দেহে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”যমান ইবনে সা'লাবা (রাঃ) তাঁর গোত্র বানু সাদ ইবনে বকরের পক্ষ হতে প্রতিনিধি হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন এবং তাকে বলেনঃ “আচ্ছা বলুন তো, এই আকাশকে কে এমন উঁচু করে সৃষ্টি করেছেন?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ।” এরপর লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “ কে এই পাহাড়কে এমনভাবে যমীনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন?” উত্তরে নবী (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ।” লোকটি আবার প্রশ্ন করেনঃ “এই যমীনকে কে বিছিয়ে রেখেছেন?” নবী (সঃ) জবাবে বলেনঃ “আল্লাহ।” লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করেনঃ “আপনাকে ঐ সত্তার কসম দিয়ে বলছি যিনি ঐ উঁচু আকাশ বানিয়েছেন, এই বড় বড় পাহাড়গুলো যমীনে গেড়ে দিয়েছেন এবং এতো বড় ও প্রশস্ত যমীন ছড়িয়ে দিয়েছেন, তিনিই কি আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্যে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, ঐ আল্লাহরই কসম যে, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন।” অতঃপর লোকটি নবী (সঃ)-কে আল্লাহর কসম দিয়ে সালাত, যাকাত, হজ্ব এবং সাওমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং নবীও (সঃ) আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে উত্তর দিতে থাকেন। তখন লোকটি নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “আপনি সত্য বলেছেন। যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম করে বলছি যে, আমি এর উপর বেশীও করবো না কমও করবো না। বরং সঠিকভাবে এর উপরই আমল করবো।” সুতরাং এই পরিমাণ আমলই তার জন্যে যথেষ্ট হয়ে যায় এবং তিনি নবী (সঃ)-এর সত্যতার উপর ঈমান আনয়ন করেন। কেননা, তিনি দলীল প্রমাণাদি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাসসান ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যদি তাঁর কাছে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদি নাও থাকতো তথাপি তার চেহারার পবিত্রতা, সরলতা এবং অকপটতা স্বয়ং তাঁর সততা ও সত্যবাদিতার দলীল ছিল।” কিন্তু মুসাইলামা কাযাবকে চক্ষুষ্মনদের যে কেউ দেখেছেন, তিনিই তার অশ্লীল কথন, দুষ্কার্য এবং তার নবুওয়াতের দাবীর ভন্ডামি দেখে যা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে, এই ফলাফল পেয়ে গেছেন যে, সে কিরূপ নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার ছিল! আল্লাহ তা'আলার এই উক্তি (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ (এইরূপ যে) তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই; তিনি চিরঞ্জীব, সংরক্ষণকারী । না তন্দ্রা তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারে, আর না নিদ্রা।” (২:২৫৫) আর মুসাইলামার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে ব্যাঙসমূহের সন্তান ব্যাঙ! তুমি আর কত ঘেনর ঘেনর করবে? তুমি এর দ্বারা পানিও ঘোলা করতে পারবে না এবং পানি পানকারীও পান করা থেকে বিরত থাকবে না।” ঐ যালিমের আর একটা অহী হচ্ছে, (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা গর্ভবতী নারীর উপর বড় রকমের ইহসান করেছেন যে, অন্ত্রের মধ্য হতে একটি জীবন্ত আত্মা বের করেছেন। তার আরো উক্তি হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ “হাতী, হাতী কি? তুমি কি জান হাতী কি? ওর রয়েছে ছোট লেজ ও লম্বা শুড়। আরো বলেছে- (আরবী) অর্থাৎ “আটা খমীরকারিণীদের শপথ! রুটী তৈরীকারিণীদের শপথ! তরকারী ও ঘিয়ে খাবারের গ্রাস ডুবিয়ে ভক্ষণকারিণীদের শপথ! কুরায়েশরা খুবই সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। এখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র অহী এবং ঐ মিথ্যাবাদীর বাজে ও অশ্লীল কথার প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, শিশুরাও তার কথা শুনে বিদ্রুপ করবে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা তাকে লাঞ্ছিত করেছেন এবং হাদীকার দিন তাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার সঙ্গী সাথীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং তার উপর লা'নত বর্ষিত হয়। তার লোকেরা তাওবা করে সিদ্দীকে আকবর (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে এবং ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করে। ঐ সময় তিনি তাদেরকে বলেনঃ “মুসাইলামার কোন কুরআন শুনাও তো দেখি।” তখন তারা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু তিনি নাছোড় হয়ে যান এবং তাদেরকে বলেনঃ “অবশ্যই তোমাদেরকে শোনাতে হবে, যাতে অন্যেরাও শুনে নেয় এবং তারা এই কথাগুলো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অহীর সাথে তুলনা করে অহীর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে।” তখন তারা মুসাইলামার ঐ কথাগুলো শুনিয়ে দেয় যা আমরা উপরে নকল করেছি। তখন আবু বকর (রাঃ) তাদেরকে বলেনঃ “ওরে হতভাগ্যের দল! তোমাদের জ্ঞান ও বিবেক কোন দিকে গিয়েছিল? আল্লাহর শপথ! এরূপ কথা তো কোন নির্বোধের মুখ দিয়েও বের হবে না।”কথিত আছে যে, অজ্ঞতার যুগে আমর ইবনুল আস (রাঃ) মুসাইলামার নিকট গমন করেন। সে তার বন্ধু ছিল। তখন পর্যন্ত আমর ইবনুল আস (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেননি। মুসাইলামা তাঁকে জিজ্ঞেস করেঃ “হে আমর! আপনাদের লোকের উপর (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সঃ-এর উপর) এখন কি অহী অবতীর্ণ হয়েছে?” উত্তরে ইবনুল আস (রাঃ) বলেনঃ “আমি তাঁর সঙ্গীদেরকে এক ব্যাপক অথচ সংক্ষিপ্ত সূরা পাঠ করতে শুনেছি।” সে জিজ্ঞেস করলোঃ “ সেটা কি?” আমর (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ (আরবী) (শেষ পর্যন্ত)! মুসাইলামা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললোঃ “আমার উপরও এমনি এক অহী অবতীর্ণ হয়েছে।” আমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘সেটা কি? সে জবাবে বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে অবর, হে অবর (এক প্রকার জন্তু) তোমার দু'টি কান ও একটি বক্ষ প্রতীয়মান হচ্ছে, এ ছাড়া তোমার সারা দেহই বাজে।" অতঃপর সে আমার (রাঃ)-কে বললোঃ “হে আমর (রাঃ)! আমার অহী কেমন মনে হলো?" আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আপনিতো নিজেও জানছেন যে, আপনার অহী যে মিথ্যা এতে আমার কোনই সন্দেহ নেই।" যখন একজন মুশরিকেরও এই অবস্থা যে, নবী (সঃ)-এর সত্যবাদী হওয়া ও মুসাইলামার মিথ্যাবাদী হওয়া তার কাছেও গোপনীয় নয়, তখন চক্ষুষ্মনদের কাছে এটা কিরূপে গোপন থাকতে পারে? তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলে- আমার উপর অহী করা হয়েছে, অথচ তার উপর কিছুই অহী করা হয়নি, আর বলে- আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন অনুরূপ আমিও অবতীর্ণ করতে পারি?" (৬:৯৩) আর এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুতরাং ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী কে হবে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে, অথবা তার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিশ্চয়ই এমন পাপাচারীদের কিছুতেই মঙ্গল হবে না। অনুরূপভাবে ঐ ব্যক্তিও বড় অত্যাচারী যে ব্যক্তি ঐ সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, যে সত্য রাসূলগণ আনয়ন করেছেন এবং ওর উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বড় যালিম ও দুর্ভাগা যে ব্যক্তি কোন নবীকে হত্যা করেছে অথবা কোন নবী তাকে হত্যা করেছেন।”

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

📘 Please check ayah 10:19 for complete tafsir.

وَمَا كَانَ النَّاسُ إِلَّا أُمَّةً وَاحِدَةً فَاخْتَلَفُوا ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيمَا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

📘 (আরবী) আল্লাহ পাকের এই উক্তির ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা কাউকেও শাস্তি দেন না যে পর্যন্ত তিনি তার কাছে নবী পাঠিয়ে দলীল ও হুজ্জত কায়েম করেন। আল্লাহ তা'আলা তো মাখলুককে একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবিত রেখে পরে মৃত্যু দান করে থাকেন। আর যে ব্যাপারে তারা পরস্পর মতভেদ করছিল, কিয়ামতের দিন তিনি তার ফায়সালা করে দিবেন। সেই দিনই মুমিনরা সফলকাম হবে, আর কাফিররা হবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ أَنْذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۗ قَالَ الْكَافِرُونَ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ مُبِينٌ

📘 ১-২ নং আয়াতের তাফসীর: যেগুলো সূরাসমূহের শুরুতে এসে থাকে সেগুলোর উপর আলোচনা ইতিপূর্বে হয়ে গেছে এবং সূরায়ে বাকারায় এর পুরোপুরি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আবু যুহা (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (আরবী) আল্লাহ তা'আলার এই উক্তির ভাবার্থ হচ্ছে (আরবী)অর্থাৎ আমি আল্লাহ, আমি সব কিছু দেখতে রয়েছি। যহ্হাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এ কথাই বলেছেন।এটা হচ্ছে অতি সূক্ষ্ম তত্ত্বপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ। মুজাহিদ (রঃ)-এরও এটাই উক্তি। হাসান (রঃ) বলেন যে, কিতাব দ্বারা তাওরাত ও যনূরকে বুঝানো হয়েছে। কাতাদা (রঃ)-এর ধারণা এই যে, কিতাব দ্বারা কুরআনের পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর এ ধারণা ভিত্তিহীন। আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ কাফিরদের বিস্ময়ের প্রতি লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক বলেন, মানুষের মধ্য হতেই যদি রাসূল নির্বাচিত হয়। তাতে বিস্ময়ের কি আছে? যেমন মহান আল্লাহ অতীত যুগের কাফিরদের উক্তি নকল করে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কোন মানুষ কি আমাদেরকে হিদায়াত করবে?” (৬৪:৬) এখানে কাফিররা হুদ (আঃ) ও সালিহ (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করে ঐ কথা বলেছিল । হুদ (আঃ) ও সালিহ (আঃ) তাদের কওমকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ “তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তির উপর তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অহী অবতীর্ণ করা হয়েছে এতে কি তোমরা বিস্মিত হয়েছো?”কুরায়েশ কাফিরদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “(কাফিররা বলে) সে (মুহাম্মাদ সঃ) কি এতগুলো উপাস্যের স্থলে মাত্র একজন উপাস্য করে দিলো? বাস্তবিকই এটা তো বড় বিস্ময়কর ব্যাপার বটে!”যহহাক (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা যখন মুহাম্মাদ (সঃ)-কে রাসূল করে পাঠালেন তখন আরবরা তাঁকে অস্বীকার করে বসলো এবং বলতে লাগলো- আল্লাহ তো এর চেয়ে অনেক বড় যে তিনি মুহাম্মাদের ন্যায় মানুষকে রাসূল করে পাঠাবেন। তখন আল্লাহ তা'আলা বললেন যে, এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই।(আরবী) এই উক্তির ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথম বর্ণনাতেই সত্যতা স্বীকার করে নেয়া এবং সৌভাগ্য লাভ করা। আর নিজের আমলের উত্তম প্রতিদান লাভ করা। এটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তা'আলার (আরবী) (১৮:২) এই উক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত অর্থাৎ “যেন তিনি তাদেরকে যুদ্ধ ও কঠিন শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করেন।” (আরবী) (আরবী) -এর ব্যাপারে মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উত্তম আমল বুঝানো হয়েছে। যেমন সালাত, সিয়াম, সাদকা, তাসবীহ এবং রাসূল (সঃ)-এর শাফাআত। যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) এরূপই বলেছেন। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা (আরবী) উদ্দেশ্য। ইবনে জারীর (রঃ) মুজাহিদ (রঃ)-এর অভিমত সমর্থন করে এর দ্বারা (আরবী) ‘উত্তম আমল’ ভাবার্থ নিয়েছেন। যেমন (আরবী) এ কথা বলা হয়। যেমন হাসসান (রাঃ)-এর কবিতায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের আমল এবং আমাদের রীতিনীতি আপনার সাথে সত্য ও সঠিকভাবে রয়েছে, আর আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে আমাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের অনুসারী। আল্লাহপাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ যদিও আমি তাদেরই মধ্য হতে একজন লোককে সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি তবুও ঐ কাফিররা বলে-এই ব্যক্তি তো অবশ্যই একজন প্রকাশ্য যাদুকর। এই ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাবাদী।

وَيَقُولُونَ لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۖ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلَّهِ فَانْتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُمْ مِنَ الْمُنْتَظِرِينَ

📘 এই মিথ্যাবাদী কাফিররা বলে যে, মুহাম্মাদ (সঃ)-কেও কেন এমন (নবুওয়াতের) নিদর্শন দেয়া হয়নি, যেমন সামূদ সম্প্রদায়কে উষ্ট্ৰী দেয়া হয়েছিল? অথবা সাফা পাহাড় কেন সোনা হয়ে যায় না? অথবা কেন মক্কার পাহাড় মক্কা হতে সরে যায় না এবং ঐ জায়গায় বাগান ও নদী কেন হয় না? আল্লাহ যখন মহা শক্তিশালী তখন এরূপ হওয়া উচিত ছিল ইত্যাদি। কিন্তু সঠিক কথা তো এই যে, আল্লাহ তাআলা নিজের কাজে বড়ই ক্ষমতাবান ও মহাবিজ্ঞ। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই সত্তা অতি মহান, যিনি ইচ্ছে করলে তোমাকে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট বস্তু প্রদান করবেন অর্থাৎ উদ্যানসমূহ- যার নিম্নদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে এবং তোমাকে বহু বালাখানাও দিবেন। বরং তারা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করেছে, আর আমি এইরূপ লোকদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছি যারা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করেছে।” (২৫:১০-১১) অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাকে এটা ছাড়া অন্য কিছুই নিদর্শন পাঠানো হতে বিরত রাখেনি যে, পূর্ববর্তী লোকেরা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।” (১৭:৫৯)। আল্লাহ তা'আলা বলেন, মাখলুকের ব্যাপারে আমার নীতি এই যে, তারা মুজিযা চায়, আর আমি তাদেরকে তা দিয়ে থাকি। এখন তারা যদি মু'জিযা দেখে আমার উপর ঈমান আনে তবে তো ভালই নচেৎ সত্ত্বরই আমি তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করে থাকি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আর অবকাশ দেই না। এ জন্যেই আল্লাহ পাক যখন স্বীয় নবী (সঃ)-কে স্বাধীনতা দিয়ে বললেনঃ “দু'টির যে কোন একটি গ্রহণ কর। প্রথম হলো এই যে, তাদের আবেদন অনুযায়ী আমি তাদেরকে মু'জিযা দিচ্ছি। যতি তারা মু'জিযা দেখে ঈমান আনয়ন করে তবে তো ভালই। নতুবা আমি তাদেরকে অতি তাড়াতাড়ি শাস্তি প্রদান করবো। আর দ্বিতীয় হলো- আমি তাদেরকে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত অবকাশ দেবো, যাতে তারা সংশোধিত হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় উম্মতের জন্যে দ্বিতীয়টিই গ্রহণ করলেন। যেমন ঐ কাফিরদের ব্যাপারে বহুবার তাঁর ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রমাণিত হয়েছে।আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেন, তুমি বলে দাও- সব কিছুই আল্লাহর অধিকারে রয়েছে। কাজের পরিণতি সম্পর্কে তিনিই পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তোমরা যদি চোখে না দেখা পর্যন্ত ঈমান আনতে না চাও তবে আমার ও তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা কর। তারা তো নবী (সঃ)-এর এমন কতগুলো মু'জিযাও দেখেছিল যেগুলো তাদের আকাঙিক্ষত মু'জিযার চেয়ে বড় ছিল । যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের চোখের সামনে চৌদ্দ তারিখের চাদকে অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন এবং সাথে সাথে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। এটা তো যমীনে প্রকাশিত মু'জিযা হতে বহুগুণে বড় ছিল। আর জিজ্ঞাসিত ও অজিজ্ঞাসিত সমস্ত নিদর্শন অপেক্ষা উত্তম ছিল। এখনও যদি আল্লাহ তা'আলা জানতেন যে, তারা কোন মু'জিযা সুপথ প্রাপ্তির ইচ্ছায় দেখতে চাচ্ছে তবে তিনি অবশ্যই তা দেখাতেন। কিন্তু তিনি জানেন যে, তারা জিদ ও অবাধ্যতার মন নিয়েই মু'জিযা দেখতে চাচ্ছে। তাই তাদের আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে না। মহান আল্লাহ এটা জ্ঞাত ছিলেন যে, এখনও তারা ঈমান আনবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের দলীল অবধারিত হয়ে গেছে, তাদের উপর যতই নিদর্শন পেশ করা হাক না কেন তারা ঈমান আনবে না।" (১০:৯৬) অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃঅর্থাৎ “যদি আমি তাদের কাছে ফেরেশতাও অবতীর্ণ করি এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বলতেও শুরু করে দেয়, আর সমস্ত জিনিস তাদের কাছে জমা করে দেয়াও হয় এবং প্রত্যেকটা মু'জিযাও দেখানো হয় তথাপি তারা কখনো ঈমান আনবে না।” (৬:১১১) কেননা শুধু জিদ করাই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। যেমন তিনি বলেনঃ ... (আরবী) (১৫:১৪) আরো বলেনঃ (আরবী) (৫২:৪৪) এবং আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আমি তাদের উপর আসমানের দরজাও খুলে দেই বা তারা আকাশের একটা টুকরা খসে পড়তেও দেখে নেয় এবং তাদের উপর যদি আমি এমন কোন আসমানী কিতাবও অবতীর্ণ করি যা কাগজে লিখিত অবস্থায় থাকে, অতঃপর তারা তা তাদের হাত দ্বারা স্পর্শও করে, তবুও সেই কাফিররা অবশ্যই বলবে- এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।” (৬:৭) সুতরাং তাদেরকে কাম্য বস্তু প্রদান করে লাভ কি? কেননা তারা যা কিছুই দেখতে চাচ্ছে তা শুধু জিদের বশবর্তী হয়ে। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ “অতএব তোমরাও প্রতীক্ষায় থাকো, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম।”

وَإِذَا أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً مِنْ بَعْدِ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُمْ إِذَا لَهُمْ مَكْرٌ فِي آيَاتِنَا ۚ قُلِ اللَّهُ أَسْرَعُ مَكْرًا ۚ إِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُونَ مَا تَمْكُرُونَ

📘 Please check ayah 10:23 for complete tafsir.

هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا كُنْتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِمْ بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنْجَيْتَنَا مِنْ هَٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ

📘 Please check ayah 10:23 for complete tafsir.

فَلَمَّا أَنْجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ ۖ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

📘 ২১-২৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন-বিপদ আপদের স্বাদ গ্রহণ করার পর মানুষ যখন আমার রহমত প্রাপ্ত হয়, যেমন দারিদ্রের পরে স্বচ্ছলতা, দুর্ভিক্ষের পরে উত্তম উৎপাদন, মুষলধারে বৃষ্টি ইত্যাদি, তখন সে হাসি-তামাশা করতে শুরু করে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর যখন মানুষকে বিপদ আপদে ঘিরে ফেলে তখন সে উঠতে, বসতে, শুইতে, জাগতে সর্বাবস্থাতেই প্রার্থনায় লেগে পড়ে। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা ফজরের সালাত পড়ান। বর্ষার রাত্রি ছিল। তিনি বললেনঃ “আজকে রাত্রে আল্লাহ তা'আলা কি বলেছেন তা তোমরা জান কি?" সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) খুব ভাল জানেন।” তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “আজ আমার মুমিন বান্দাও সকাল করেছে এবং কাফির বান্দাও সকাল করেছে (অর্থাৎ সবাই সকালে উঠেছে)। কিন্তু যে বান্দা বলেছে যে, এই বৃষ্টির কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ ও করুণা, সে আমার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী এবং তারকার প্রভাবকে অস্বীকারকারী। পক্ষান্তরে যে বান্দা এই বিশ্বাস রাখে যে, এই বৃষ্টির কারণ হচ্ছে নক্ষত্রের প্রভাব, সে আমাকে অস্বীকারকারী এবং নক্ষত্রের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী।” আল্লাহপাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ হে রাসূল (সঃ)! তুমি এই। কাফিরদেরকে বলে দাও আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার কর্মকৌশল বড়ই কার্যকরী হয়ে থাকে। হে পাপীদের দল! তোমরা কি ধারণা করছো যে, তোমাদেরকে তোমাদের কুফরীর কারণে কোন শাস্তি দেয়া হবে না? প্রকৃতপক্ষে তোমাদেরকে ঢিল দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর যখন তোমাদের উদাসীনতা শেষ সীমায় পৌছে যাবে তখন আকস্মিকভাবে তোমাদেরকে পাকড়াও করা হবে।আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমার ফেরেশতারা তাদের কাজ কর্ম লিখতে থাকে। অতঃপর তারা তা আলেমুল গায়েব আল্লাহর নিকট পেশ করে তাকে। তারপর তিনি প্রত্যেক বড় ও ছোট পাপের শাস্তি প্রদান করেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্যে স্থলভাগ ও জলভাগের ভ্রমণ সহজ করে দিয়েছেন এবং পানির মধ্যেও তিনি তোমাদেরকে তার আশ্রয় ও হিফাজতে নিয়ে নিয়েছেন। যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ কর এবং বাতাস নৌকা চালাতে শুরু করে, তখন তোমরা বাতাসের নিম্নগতি ও দ্রুত চালিত হওয়ার কারণে খুবই খুশী হয়ে থাকো। হঠাৎ তোমাদের উপর এক প্রচণ্ড ও প্রতিকূল বাতাস এসে পড়ে এবং প্রত্যেক দিক থেকে তোমাদের উপর তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে। ঐ সময় তোমাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় তোমরা খাটি বিশ্বাসের সাথে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে থাকো। ঐ সময় না তোমাদের কোন প্রতিমার কথা স্মরণ হয়, না স্মরণ হয় লাত, হুবল ইত্যাদি কোন মূর্তির কথা। বরং তখন শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই সম্বোধন করে থাকো। অতঃপর মহান আল্লাহ যখন তোমাদেরকে নিরাপদে সমুদ্রের তীরে পৌছিয়ে দেন তখন পুনরায় তোমরা তার থেকে বিমুখ হয়ে যাও। সত্যি, মানুষ কতই না অকৃতজ্ঞ!এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা বড়ই আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ তা'আলাকে ডেকে বলে- হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাদেরকে এই বিপদ হতে রক্ষা করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ হয়ে যাবো। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন তখন তারা দেশে অন্যায় ও অবিচার করতে শুরু করে দেয়। দেখে মনে হয় যেন তারা কখনও বিপদে পড়েইনি। ইরশাদ হচ্ছে ..... (আরবী) অর্থাৎ “হে লোক। সকল! জেনে রেখো যে, তোমাদের বিদ্রোহাচরণ তোমাদেরই প্রাণের জন্যে বিপদের কারণ হবে, এতে অন্য কারো ক্ষতি হবে না। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “(আল্লাহর বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ঘোষণা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ, এ দুটো এমনই পাপ যে, এ কারণে পরকালে শাস্তি হবেই, এমনকি দুনিয়াতেও সত্বর এর শাস্তি হয়ে যাবে।” আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ... (আরবী) অর্থাৎ “এই পার্থিব জগতে তোমরা কিছুকাল সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করবে বটে, কিন্তু এর পরেই তোমাদেরকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে তখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের সমস্ত আমল সম্পর্কে অবহিত করবো এবং ওগুলোর পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে।” যে ভাল প্রতিদান পাবে সে তত মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর যে শাস্তি পাবে সে নিজের নফসের উপর ভৎসনা করবে।

إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

📘 Please check ayah 10:25 for complete tafsir.

وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

📘 ২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্য, সজীবতা এবং এরপর ওর সত্বরই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ঐ লতাপাতা ও উদ্ভিদের সাথে যাকে তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে যমীন থেকে বের করে থাকেন। এগুলো মানুষ খেয়ে থাকে। যেমন খাদ্যশস্য এবং বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল। এগুলো শুধু মানুষেরই খাদ্য নয়, বরং চতুষ্পদ জন্তুগুলোও এর নাড়া খেয়ে থাকে। যখন যমীনের এই ধ্বংসশীল সৌন্দর্য বসন্তকালে দেখা দেয় এবং বিভিন্ন রূপের ও বর্ণের সবজিগুলো পূর্ণ সজীবতায় এসে পড়ে, তখন কৃষক ধারণা করে যে, ফসল কেটে নেবে এবং ফল পেড়ে নেবে। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ ওর উপর বিদ্যুৎ অথবা ঘূর্ণিঝড় এসে গেল। ফলে গাছের সমস্ত পাতা শুকিয়ে জ্বলে গেল এবং ফুল-ফল যত কিছু ছিল সমস্তই ধ্বংস হয়ে গেল। আর ওর সজীবতা ও শ্যামলতার পরে ওটা শুষ্ক কাঠের ঢেরিতে পরিণত হলো। মনে হলো যেন ওটা কখনো সজীব ও সবুজ শ্যামল ছিলই না এবং কৃষককে এরূপ নিয়ামত কখনো দেয়াই হয়নি। এ জন্যেই হাদীসে এসেছে- দুনিয়াবাসীকে নিয়ামত দান করা হয়ে থাকে । অতঃপর তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তুমি কখনো শান্তি লাভ করেছিলে কি?” সে উত্তরে বলেঃ “না, কখনই না।” অন্য একটি লোক এমন হয় যে, সে দুনিয়ায় বড়ই শাস্তি ও কষ্ট ভোগ করেছে। অতঃপর তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তুমি কখনো কোন কষ্ট ভোগ করেছিলে কি?” সে জবাবে বলেঃ “না, কখনই না। আল্লাহ পাক ঐ ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সম্পর্কে বলেনঃ “তারা তাদের বাসভূমিতে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে যে, তারা যেন সেখানে কখনো বাসই করেনি।” ইরশাদ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ এই ভাবেই আমি আয়াতগুলোকে বিশদরূপে বর্ণনা করি এমন লোকদের জন্যে যারা চিন্তা ভাবনা করে থাকে। মানুষ যেন এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে যে, দুনিয়া খুবই তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার উপর ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়া তার সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়, দুনিয়া তার থেকে পলায়ন করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়ার দিক থেকে পলায়ন করে, দুনিয়া তার পায়ের উপর এসে পতিত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা দুনিয়ার দৃষ্টান্ত উদ্ভিদের সাথে কুরআন কারীমের অন্য জায়গাতেও দিয়েছেন। সূরায়ে কাহাফে তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি তাদের কাছে পার্থিব জীবনের অবস্থা বর্ণনা কর যে, তা এরূপযেমন, আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি তৎপর তার সাহায্যে যমীনের উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবেশিত হয়ে যায়, অতঃপর তা (শুকিয়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় যে, বায়ু তা উড়িয়ে নিয়ে ফিরে (দুনিয়ার অবস্থাও দ্রুপ)। আর আল্লাহ্ প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (১৮:৪৫) অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা সূরায়ে যুমারে ও সূরায়ে হাদীদে পার্থিব দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ওরই সাথে প্রদান করেছেন। হারিস ইবনে হিশাম (রঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি মারওয়ান ইবনে হাকাম (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর পড়তে শুনেছিঃ (আরবী) অর্থাৎ “তা (যমীন) শোভনীয় হয়ে উঠলো, আর এর মালিকরা মনে করলো যে, তারা এখন এর উপর পূর্ণ অধিকার লাভ করেছে, (এমন সময় সারা ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেল) শুধু এর মালিকদের পাপের কারণেই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যা পাঠ করলাম তা কিন্তু মাসহাফে নেই। তখন আব্বাস ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন যে, ঐ রূপই। ইবনে আব্বাস (রাঃ) পাঠ করে থাকেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট লোক। পাঠিয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) আমাকে এরূপই পড়িয়েছেন।” এ কিরআতটি গারীবই বটে। মনে হয়। এটা যেন তাফসীরে বেশী করে দেয়া হয়েছে। (এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)(আরবী) আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার নশ্বরতা ও জান্নাতের প্রতি উৎসাহ প্রদানের বর্ণনার পর এখন জান্নাতের দিকে আহ্বান করছেন এবং ওটাকে ‘দারুস সালাম' বলে আখ্যায়িত করছেন। অর্থাৎ জান্নাত হচ্ছে সমস্ত বিপদ-আপদ ও ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আশ্রয় লাভের স্থান।আবূ কালাবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে বলা হয়- আপনার চক্ষু যেন ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর যেন (জেগে জেগে) বুঝতে থাকে এবং কর্ণ যেন শ্রবণ করতে থাকে। সুতরাং আমার চক্ষু ঘুমিয়ে গেল, আমার অন্তর বুঝতে থাকলো এবং আমার কর্ণ শুনতে থাকলো। অতঃপর আমাকে বলা হলোঃ (আপনার দৃষ্টান্ত এইরূপ) যেমন একজন নেতা একটা ঘর নির্মাণ করলো ও ওর মধ্যে ভোজের ব্যবস্থা করলো। তারপর (লোকদেরকে দাওয়াত করার জন্যে) একজন দাওয়াতকারীকে পাঠালো। অতএব, যে ব্যক্তি তার দাওয়াত কবুল করলো সে ঘরে প্রবেশ করে খাদ্য গ্রহণ করলো এবং নেতা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করলো না সে ঘরেও প্রবেশ করলো না ও খাবারও খেলো না এবং নেতা তার উপর সন্তুষ্টও হলো না। নেতা হলেন আল্লাহ, ঘর হলো ইসলাম, খাদ্য হলো জান্নাত এবং দাওয়াতকারী হলেন মুহাম্মাদ (সঃ)।” এ হাদীসটি মুরসাল। (হাদীসের বর্ণনাকারী কোন তাবেয়ী যদি সাহাবীকে বাদ দিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তবে ঐ হাদীসকে মুরসাল বলে) জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ “আমি স্বপ্নে দেখি যে, জিবরাঈল (আঃ) আমার মাথার কাছে রয়েছেন এবং মীকাঈল (আঃ) রয়েছেন আমার পায়ের কাছে। তাদের একজন স্বীয় সাথীকে বলছেন- এই (ঘুমন্ত ব্যক্তির একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন।' তখন তিনি বললেন- “(হে ঘুমন্ত ব্যক্তি!) আপনি শ্রবণ করুন! আপনার কান শুনছে, আপনার অন্তর (জেগে জেগে) অনুধাবন করছে। আপনার দৃষ্টান্ত ও আপনার উম্মতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একজন বাদশাহ্র দৃষ্টান্তের মত, যিনি একটি ঘর বানিয়েছেন এবং তাতে একটি বড় কক্ষ তৈরী করেছেন। আর তাতে বিছিয়ে দিয়েছেন (খাদ্যের) দস্তরখানা। তারপর তার খাদ্য খাওয়াবার জন্যে একজন দূতকে পাঠিয়ে দিয়েছেন লোকজনকে ডেকে আনতে। সুতরাং কেউ কেউ ঐ দূতের আহ্বানে সাড়া দিলো এবং কেউ কেউ সাড়া দিলো না, বরং তা প্রত্যাখ্যান করলো। বাদশাহ হচ্ছেন আল্লাহ, ঘর হচ্ছে ইসলাম, কক্ষ হচ্ছে জান্নাত এবং হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনি হচ্ছেন দূত। অতএব, যে ব্যক্তি আপনার আহ্বানে সাড়া দিলো সে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলো। আর যে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং যে জান্নাতে প্রবেশ করলো সে ওর থেকে (খাদ্য) ভক্ষণ করলো।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবু দারদা (রাঃ) হতে মারফু' রূপে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন সূর্য উদিত হয় তখনই ওর দু’দিকে দু’জন ফিরিশতা থাকেন এবং তারা উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে থাকেন, যে ডাক দানব ও মানব ছাড়া সবাই শুনতে পায়। তারা ডাক দিয়ে বলেন- হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও। যদি কম পাওয়া যায় এবং তা যথেষ্ট মনে করা হয় তবে ঐ কম ঐ বেশী অপেক্ষা উত্তম যা (আল্লাহর স্মরণ থেকে) ভুলিয়ে রাখে।”

۞ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

📘 আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি ভাল কাজ করলো সে পরকালে উত্তম প্রতিদান পাবে। কেননা, পুণ্যের বিনিময়ে পুণ্য পাওয়া যায়। বরং আরো কিছু বেশী পাওয়া যাবে। অর্থাৎ কমপক্ষে দশগুণ এমন কি সাতশ' গুণ পর্যন্ত প্রাপ্ত হবে, বরং এর চেয়েও কিছু বেশী, যেগুলো আল্লাহ তা'আলার অন্যান্য দানের অন্তর্ভুক্ত। যেমন জান্নাতে সে পাবে হুর ও প্রাসাদ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এমন মনোমুগ্ধকর জিনিস যা এই পর্যন্ত তার কাছে অজানা রয়েছে। কিন্তু সর্বোপরি নিয়ামত হচ্ছে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ। এটা হবে সমস্ত করুণার মধ্যে বড় করুণা। কেননা, সে তার আমলের কারণে এর যোগ্য হবে না, বরং এটা হবে একমাত্র আল্লাহ পাকের সীমাহীন দয়ার কারণে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিভিন্ন মনীষী হতে (আরবী) শব্দের যে তাফসীর বর্ণিত হয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ পাকের পবিত্র চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাত। ঐ মনীষীগণ হচ্ছেন আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনে আবি লাইলা (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনে সাবিত (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), আমির ইবনে সাদ (রঃ), আতা (রঃ), যহ্হাক (রঃ), হাসান (রঃ), কাতাদা (রঃ), সুদ্দী (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) প্রমুখ। এই মতের সমর্থনে নবী (সঃ) হতে বহু হাদীসও বর্ণিত আছে। সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী)-এই আয়াতটি পাঠ করে বলেন, যখন জান্নাতবাসী জান্নাতে এবং জাহান্নামবাসী জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেনঃ “হে জান্নাতবাসীরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা তিনি পূরণ করতে চান।” তখন জান্নাতবাসীরা বলবেঃ “সেই ওয়াদা কি? দাঁড়িপাল্লায় আমাদের (পুণ্যের) ওজন ভারী হয়েছে, আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করা হয়েছে, আমরা জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছি। (সুতরাং আল্লাহ পাকের ওয়াদা পূরণ হতে আর বাকী থাকলো কি?)।" এমন সময় হঠাৎ তাদের উপর থেকে পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে এবং তাদের দষ্টি আল্লাহ তা'আলার উপর পড়ে যাবে। আল্লাহর শপথ! জান্নাতীদের জন্যে এর চেয়ে বড় দান আর কিছুই হবে না। এটাই হবে সবচেয়ে বেশী চক্ষু ঠান্ডাকারী ও মনে শান্তিদায়ক। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মোটকথা, বিভিন্ন হাদীসে রয়েছে যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার দর্শন বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ হাশরের ময়দানে জান্নাতাবাসীদের মুখমণ্ডল মলিন ও কালিমাময় হবে না। পক্ষান্তরে কাফিরদের চেহারা হবে ধূলিমলিন ও কালিমাযুক্ত। জান্নাতীরা কোনক্রমেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে না, প্রকাশ্যেও না, অপ্রকাশ্যেও না। বরং আল্লাহ পাক তো এই জান্নাতীদের সম্পর্কেই বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ তাদেরকে ঐ দিবসের কঠোরতা হতে নিরাপদে রাখবেন এবং তাদেরকে স্ফুর্তি ও আনন্দ দান করবেন।” (৭৬:১১) আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে এই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন।

وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَاءُ سَيِّئَةٍ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ مَا لَهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ ۖ كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

📘 আল্লাহ তা'আলা যখন সৌভাগ্যবানদের সম্পর্কে খবর দিলেন যে, তাদের পুণ্যের বিনিময় বহুগুণ দেয়া হয়ে থাকে তখন এখানে তিনি হতভাগ্য, পাপী ও মুশরিকদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে। আর তা হলো এই যে, তাদের পাপ ও অপরাধের শাস্তি দ্বিগুণ, চারগুণ দেয়া হবে না, বরং সমান সমান দেয়া হবে। আল্লাহ পাক বলেন- যখন ঐ পাপীদেরকে পেশ করা হবে তখন তোমরা তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় দেখতে পাবে। তোমরা এটা ধারণা করো না যে, আল্লাহ তা'আলা ঐ সব যালিমের আমল থেকে উদাসীন ও অমনোযোগী রয়েছেন। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের শাস্তি বিলম্বিত করা হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে কেউ বাচাতেও পারবে না এবং তাদের জন্যে কোন সুপারিশকারীও হবে না। সেই দিন মানুষ বলবে- পালাবার স্থান কোথায়? কখনও সম্ভব নয়, কোথাও আশ্রয়ের স্থান নেই। সেই দিন শুধুমাত্র তোমার প্রতিপালকের সমীপেই ঠিকানা আছে। তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাযির হতেই হবে। ঐ দিন তাদের মুখমণ্ডল এতো কালো হবে যে, যেন তাদের চেহারার উপর রাত্রির অন্ধকারের চাদর চড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেই দিন কতকগুলো মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল, আর কতকগুলো চেহারা হবে কালো ও মলিন । যাদের চেহারা মলিন হবে তাদেরকে বলা হবে- তোমরাই কি ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছিলে? তাহলে এখন কুফরীর স্বাদ গ্রহণ কর। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহর করুণার মধ্যে থাকবে এবং ঐ করুণার মধ্যে তারা চিরকালই থাকবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে- “কতকগুলো চেহারা হবে উজ্জ্বল ও হাস্যময় এবং তারা থাকবে সদা প্রফুল্ল। আর কতকগুলো চেহারার উপর মলিনতা হেঁয়ে যাবে (অর্থাৎ কতকগুলো লোকের মুখমণ্ডল রাত্রির অন্ধকারের মত কালো দেখাবে)।”

وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا مَكَانَكُمْ أَنْتُمْ وَشُرَكَاؤُكُمْ ۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ ۖ وَقَالَ شُرَكَاؤُهُمْ مَا كُنْتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ

📘 Please check ayah 10:30 for complete tafsir.

فَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِينَ

📘 Please check ayah 10:30 for complete tafsir.

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۖ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

📘 আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। বলা হয়েছে যে, এই দিন আমাদের দিনের মতই ছিল। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, হাজার বছরের একটি দিন ছিল, যার বর্ণনা সামনে আসবে । তারপর তিনি বড় আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন। আরশ হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টবস্তুর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৃষ্টবস্তু। ওটা লাল ইয়াকুতের তৈরী । অথবা এটাও হচ্ছে আল্লাহর একটি নূর। আল্লাহ তা'আলা হচ্ছেন সারা মাখলুকের পরিচালক, অভিভাবক এবং যামানতদার। তার রক্ষণাবেক্ষণ হতে যমীন ও আসমানের অণু পরিমাণ জিনিসও বাদ পড়ে না। তাঁর একদিকের মনোযোগ অন্য দিকের মনোযোগ থেকে বিরত রাখতে পারে না। তাঁর জন্যে কোন একটা ব্যাপার ভুলবশতঃ বাকী থাকতে পারে না। পাহাড়ে, সাগরে, লোকালয়ে এবং জঙ্গলে কোথাও কোন বড় তদবীর কোন ছোট তদবীরকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না । ভূ-পৃষ্ঠে এমন কোন প্রাণী নেই যার আহারের দায়িত্ব আল্লাহ তা'আলার উপর অর্পিত নয়। কোন কিছু নড়লে বা কোন একটা পাতা ঝরলে তারও খবর তিনি রাখেন। যমীনের অন্ধকারে কোন অণু পরিমাণ জিনিসও এমন নেই বা সিক্ত এবং শুষ্ক এমন কিছু নেই যে তাঁর লাওহে মাহফুষে বা ইলমের কিতাবে বিদ্যমান নেই। যখন (আরবী) -এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন এমন এক বিরাট যাত্রীদল মুসলিমদের দৃষ্টিগোচর হয় যাদেরকে বেদুঈন মনে করা হয়েছিল। জনগণ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ “তোমরা কে?” তারা উত্তরে বলেঃ “আমরা জ্বিন জাতি। এই আয়াতের কারণে আমরা শহর হতে বেরিয়ে পড়েছি।" আল্লাহ পাকের (আরবী) এই উক্তিটি তাঁর (আরবী) (২:২৫৫) ও (আরবী) (৫৩:২৬) এবং (আরবী) (৩৪:২৩) এই উক্তিগুলোর মতই।(আরবী) অর্থাৎ ঐ লোকগুলো ইবাদতের জন্যে আল্লাহ তা'আলাকেই বিশিষ্ট করে নিয়েছে। আর হে মুশরিকরা! তোমরা ইবাদতে আল্লাহর সাথে তোমাদের অন্যান্য দেবতাদেরকেও শরীক করে নিচ্ছ! অথচ তোমরা ভালরূপেই জান যে, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কারো উপাসনা করা যেতে পারে না। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে। তবে (উত্তরে) অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহ (তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন)।" (৪৩৪ ৮৭) আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বল (অর্থাৎ তুমি জিজ্ঞেস কর) সাতটি আকাশ ও বিরাট আরশের প্রতিপালক কে? (তবে উত্তরে) অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহই (এগুলোর প্রতিপালক), তুমি বলে দাও- তবুও কি তোমরা ভয় করছো না?” (২৩:৮৬-৮৭) এরূপ আরও আয়াত এর পূর্বেও আছে এবং পরেও আছে।

هُنَالِكَ تَبْلُو كُلُّ نَفْسٍ مَا أَسْلَفَتْ ۚ وَرُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ ۖ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ

📘 ২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেনঃ দানব ও মানব এবং ভাল ও মন্দ সকলকেই আমি কিয়ামতের দিন হাযির করবো। কাউকে ছাড়া হবে না। মুশরিকদেরকে বলা হবে-তোমরা ও তোমাদের শরীকরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর এবং মুমিনদের হতে পৃথক থাকো। যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন এই দু'শ্রেণীর মানুষ পৃথক পৃথকভাবে অবস্থান করবে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।” (৩৬:৫৯) আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন তারা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে।" (৩০:১৪) এটা ঐ সময় হবে যখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা মুকদ্দমার ফায়সালা করার ইচ্ছা করবেন। এজন্যেই বলা হয়েছে যে, মুমিনরা আল্লাহ তা'আলার কাছে আবেদন করবে- হে আল্লাহ! তাড়াতাড়ি মুকদ্দমার ফায়সালা করুন এবং আমাদেরকে এই স্থান হতে মুক্তিদান করুন।হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমরা অন্যান্য লোকদের চেয়ে উঁচু জায়গায় থাকবো। এই আয়াতে আল্লাহ তা'আলা এই খবর দিচ্ছেন যে, ঐদিন তিনি বলবেন, হে মুশরিকদের দল! তোমরা এবং তোমাদের শরীকরা স্ব-স্ব স্থানে পৃথক পৃথকভাবে অবস্থান কর। এভাবে আল্লাহ পাক তাদের পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন এবং তাদের শরীকরা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করে ফেলবে। মহান আল্লাহ তাই বলছেন যে, এই মুশরিকরা যাদের অনুসরণ করতো এবং এর উপর ভিত্তি করেই তাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক মনে করে নিয়েছিল, তারাই ঐ দিন এদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ঐ লোকদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে, যারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন সব মা’দকে আহ্বান করছে যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয় এবং তারা তাদের আহ্বান থেকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। আর যখন লোকদেরকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে তখন ওরা (শরীকরা) তাদেরই ইবাদতকারীদের শত্রু হয়ে যাবে এবং বলবে- তোমরা যে আমাদের ইবাদত করতে তাতো আমাদের জানা নেই। তোমরা আমাদের উপাসনা এমনভাবে করতে যে, আমরা নিজেরা তা মোটেই অবগত নই! স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষী রয়েছেন যে, আমরা কখনো তোমাদেরকে আমাদের ইবাদত করার জন্যে ডাকিনি, তোমাদেরকে নির্দেশও দেইনি এবং এই ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি সন্তুষ্টও নই। এভাবে মুশরিকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদত করছে যারা শুনেও না, দেখেও না, তাদের কোন উপকারও করতে পারে না, তাদেরকে এর নির্দেশও দেয়নি এবং এতে তাদের সম্মতিও ছিল না । বরং তারা ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তারা এমন প্রতিপালকের ইবাদত পরিত্যাগ করেছে যিনি চিরঞ্জীব ও চিরবিরাজমান। যিনি সবকিছু শ্রবণকারী, সবকিছু দর্শনকারী ও যিনি সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। যিনি তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন এই উদ্দেশ্যে যে, যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হয় এবং তিনি ছাড়া অন্যদের ইবাদত পরিত্যাগ করা হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি (এবং বলতে বলেছি) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাগুত (শয়তান) থেকে দূরে থাকবে, সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সুপথ পাওয়ার তারা সুপথ প্রাপ্ত হলো এবং যারা পথভ্রষ্ট হওয়ার তারা পথভ্রষ্ট হলো।” আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তার কাছেই অহী করেছি। আমি ছাড়া কেউ উপাস্য নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো।” আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে আমি জিজ্ঞেস করবো-তোমরা কি মানুষকে এই আদেশ করেছিলে যে, রাহমান (আল্লাহ)-কে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মা’ৰূদগুলোর ইবাদত করবে?”মুশরিকদের অনেক প্রকার রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় কিতাবে তাদেরকে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের কথা ও অবস্থা বর্ণনা করে তাদের সবকিছু খণ্ডন করেছেন। ঘোষণা করা হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন হিসাবের জন্যে দাড়াবার স্থানে প্রত্যেকের পরীক্ষা হয়ে যাবে এবং ভাল ও মন্দ যা কিছু আমল করেছে তা সামনে হাযির করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “সেই দিন সকলের গুপ্ত বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “সেই দিন মানুষকে তার সমস্ত পূর্বকৃত ও পরে কৃত কার্যাবলী জানিয়ে দেয়া হবে।” আল্লাহ তা'আলা অন্য এক জায়গায় বলেনঃ “কিয়ামতের দিন আমি তার আমলনামা তার জন্যে বের করে তার সামনে হাযির করবো, যা সে উন্মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাবে । (বলা হবে) তোমার আমলনামা পাঠ কর; আজ তোমার হিসাব গ্রহণকারীরূপে তুমি নিজেই যথেষ্ট।” কেউ কেউ (আরবী) এরূপ পড়েছেন। অর্থাৎ -এর স্থলে পড়েছেন, যার অর্থ হবে পাঠ করা। কেউ কেউ এর তাফসীর করেছেন- ভাল বা মন্দ কাজ যা সে করেছে তার ফল সে ভোগ করবে। যেমন হাদীসে রয়েছে- “প্রত্যেক উম্মত নিজ নিজ মা’ৰূদের পিছনে থাকবে। সূর্যপূজক থাকবে সূর্যের পিছনে, চন্দ্রপূজক থাকবে চন্দ্রের পিছনে এবং মূর্তিপূজক থাকবে মূর্তির পিছনে।আল্লাহ পাকের উক্তি (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহরই কাছে। প্রত্যাবর্তিত হবে। শুধু তারা কেন, বরং সবকিছুই আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর তিনি ফায়সালা করে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবেন। আর পথভ্রষ্ট লোকেরা নিজেদের পক্ষ হতে যেসব কপোলকল্পিত মাবুদ বানিয়ে নিয়েছিল তারা সব বাতাসের মত উড়ে যাবে।

قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ ۚ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ

📘 Please check ayah 10:33 for complete tafsir.

فَذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ ۖ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ ۖ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ

📘 Please check ayah 10:33 for complete tafsir.

كَذَٰلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى الَّذِينَ فَسَقُوا أَنَّهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 ৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের উপর হুজ্জত পেশ করছেন যে, তাদেরকে তাঁর প্রভুত্ব ও একত্ব স্বীকার করতেই হবে। অর্থাৎ (হে নবী সঃ)! মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ হতে যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন তিনি কে? যিনি নিজের ক্ষমতাবলে যমীনের মধ্য থেকে আঙ্গুর, নাশপাতি, যায়তুন, খেজুর, ঘন ঘন বাগান এবং গুচ্ছযুক্ত ফল সৃষ্টি করে থাকেন, তার সাথে অন্য কোন মাবুদ আছে। কি? উত্তরে তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে যে, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহরই কাজ। যদি তিনি তার রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে এমন আছে যে তা খুলতে পারে? যিনি এই শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছেন এবং ইচ্ছা করলে যিনি এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, তিনি কে? যিনি স্বীয় বিরাট ক্ষমতাবলে জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত হতে, তিনি কে? এরূপ প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই জবাব দিতে বাধ্য হবে যে, এগুলো করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আল্লাহর। তিনিই এসব কাজ করে থাকেন। এই আয়াতের ব্যাপারে মতভেদ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে এবং এটা সাধারণ ও সবকেই পরিবেষ্টনকারী। সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপনা আল্লাহ পাকেরই দায়িত্বে রয়েছে। যা কিছু হচ্ছে সকলই তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে। তিনিই সকলকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কাউকেও আশ্রয় দিতে পারে না। সবারই উপর তিনি হাকিম। তাঁর হুকুমের পর কারো হুকুমের কোনই মূল্য নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন, কিন্তু তাঁকে কেউই কোন প্রশ্ন করতে পারে না । আসমান ও যমীনের সমস্ত মাখলুক তাঁরই রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সব সময়েই তিনি একাই সব। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত রাজত্ব তারই। ফিরিশতা, দানব ও মানব তাঁরই মুখাপেক্ষী এবং তাঁরই দাস। তাঁর কাছে সবারই জবাব এটাই যে, এ সমুদয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার মধ্যেই রয়েছে। কাফির ও মুশরিকরাও এটা জানে এবং স্বীকারও করে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! (তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ) আচ্ছা! তাহলে তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করছো না কেন? কেন অজ্ঞতা প্রকাশ করতঃ তাঁকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা করছো? প্রকৃত মা'বূদ তো সেই আল্লাহ যাকে তোমরাও স্বীকার করছো। অতএব, একমাত্র তিনিই তো ইবাদতের হকদার। সত্য ও সঠিক কথা বুঝে নেয়ার পরেও এরূপ ভ্রষ্টতার অর্থ কি? তিনি ছাড়া সমস্ত মাবুদই মিথ্যা ও বাতিল। প্রকৃত মাবুদের ইবাদত ছেড়ে কোন দিকে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছো?আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “এইভাবে সমস্ত অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল।” অর্থাৎ যেমনভাবে এই মুশরিকরা কুফরী করেছে এবং কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তেমনিভাবে তারা এ কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যে, আল্লাহই হচ্ছেন মহান ও পবিত্র প্রতিপালক, তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা, সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপক তিনি একাই এবং তিনি রাসূলদেরকে তাওহীদসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং এই অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, তারা জাহান্নামী । যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “(রাসূলগণ তাদের কাছে এসেছিলেন কি-না, আল্লাহ তাআলার এই প্রশ্নের উত্তরে) তারা বলবেঃ হ্যা (এসেছিলেন), কিন্তু (আমরা অমান্য করেছিলাম, ফলে) কাফিরদের জন্যে আযাবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে রইলো।” (৩৯:৭১)

قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۚ قُلِ اللَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ

📘 Please check ayah 10:36 for complete tafsir.

قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ ۚ قُلِ اللَّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ ۗ أَفَمَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَنْ يُتَّبَعَ أَمَّنْ لَا يَهِدِّي إِلَّا أَنْ يُهْدَىٰ ۖ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ

📘 Please check ayah 10:36 for complete tafsir.

وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا ۚ إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ

📘 ৩৪-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর: মুশরিকরা যে আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহকে মিলিয়ে দিয়েছে এবং প্রতিমা পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে, এটা যে বাতিল পন্থা, এ কথাই এখানে আল্লাহ পাক বলেছেন। তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন- হে নবী! তুমি এই মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস করঃ “হে মুশরিকদের দল! আচ্ছা বলতো, তোমাদের নিরূপিত শরীকদের মধ্যে এমন কি কেউ আছে, যে আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছে? অতঃপর এতে যে মাখলুকাত রয়েছে ওগুলোকে অস্তিত্বে এনেছে? আকাশে যা কিছু রয়েছে ওগুলোকে অস্তিত্বে এনেছে? আকাশে যা কিছু রয়েছে। ওগুলোকে তারা স্ব স্ব স্থান থেকে সরাতে পারবে কি? বা ওগুলোর কোন পরিবর্তনে সক্ষম হবে কি? অথবা ওগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে পুনরায় নতুন মাখলুক সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে কি? হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বল যে, তারা এরূপ কাউকেও পেশ করতে পারবে না। এটা তো একমাত্র আল্লাহরই কাজ। এটা জানা সত্ত্বেও কেন তোমরা সঠিক পথ ছেড়ে ভুল পথের দিকে ঝুঁকে পড়ছো? সত্য পথের সন্ধান দেয় এমন কেউ আছে কি? এরূপ পথ প্রদর্শন তো করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ। এটা তোমরা নিজেরাও জান যে, তোমাদের শরীকরা একজনকেও ভ্রান্ত পথ হতে সঠিক পথে আনতে পারে না। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই পথভ্রষ্টকে সুপথ প্রদর্শন করতে সক্ষম। তিনি ভ্রান্ত পথ হতে সঠিক পথের দিকে মানুষের মনকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। সত্য পথের পথিকের যে অনুসরণ করে এবং যার অন্তদৃষ্টি রয়েছে সেই ভাল, না ঐ ব্যক্তি ভাল, যে একটু হিদায়াতও করতে পারে না, বরং নিজের অন্ধত্বের কারণে এরই মুখাপেক্ষী যে, কেউ যেন তারই হাত ধরে নিয়ে চলে? ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পিতাকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ “হে পিতঃ! আপনি অন্ধ ও বধির মাবুদের উপাসনা করছেন কেন, যে আপনার কোনই উপকারে আসে না?” স্বীয় কওমকেও তিনি লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ “তোমরা তোমাদের নিজেদেরই নির্মিত বস্তুর ইবাদত করছো! অথচ তোমাদেরকে ও তোমাদের মাবুদদেরকে আল্লাহ তা'আলাই সৃষ্টি করেছেন! তোমাদের সিদ্ধান্ত কতই না ভুল সিদ্ধান্ত! তোমাদের জ্ঞান লোপ পেয়ে গেছে। তোমরা কি করে আল্লাহকে ও তার মাখলুককে সমান করে দিলে? একেও মানছো, তাকেও মানছো! অতঃপর আল্লাহ থেকে সরে গিয়ে তোমাদের শরীকদের দিকে তোমরা ঝুঁকে পড়ছো? মহামর্যাদাপূর্ণ প্রতিপালক আল্লাহকেই কেন তোমরা ইবাদতের জন্যে বিশিষ্ট করে নিচ্ছ না? একমাত্র তাঁরই ইবাদত করলেই তো তোমরা বিভ্রান্ত পথ থেকে ফিরে আসতে পারতে! আর বিশেষ করে আল্লাহর কাছেই কেন প্রার্থনা করছো না?” এ লোকগুলো কোন দলীলকেই কাজে লাগাচ্ছে না। বিশ্বাস ছাড়াই শুধু কল্পনার উপরেই তারা প্রতিমা পূজার ভিত্তি স্থাপন করেছে। কিন্তু এতে তাদের কোনই লাভ হবে না। আল্লাহ তাআলা তাদের সমস্ত কাজ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। এটা এই কাফিরদের জন্যে হুমকি ও কঠিন ভয় প্রদর্শন। কেননা, তিনি সংবাদ দিচ্ছেন যে, সত্বরই তারা তাদের এই বোকামির শাস্তি পাবে।

وَمَا كَانَ هَٰذَا الْقُرْآنُ أَنْ يُفْتَرَىٰ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ

📘 Please check ayah 10:40 for complete tafsir.

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

📘 Please check ayah 10:40 for complete tafsir.

بَلْ كَذَّبُوا بِمَا لَمْ يُحِيطُوا بِعِلْمِهِ وَلَمَّا يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 10:40 for complete tafsir.

إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا ۖ وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا ۚ إِنَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ بِالْقِسْطِ ۚ وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ شَرَابٌ مِنْ حَمِيمٍ وَعَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ

📘 আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টজীব তার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। তাঁর সৃষ্ট সমস্ত প্রাণীকে অবশ্যই অবশ্যই তার কাছে ফিরে যেতে হবে। কেননা, যেমন তিনি তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তেমনিই তিনি দ্বিতীয়বারও তাদেরকে সৃষ্টি করতে সক্ষম। আল্লাহ তা'আলা আদল ও ইনসাফের সাথে আমলের প্রতিদান প্রদান করবেন। একটুও কম করবেন না। আর কাফিরদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কিয়ামতের দিন বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হবে। যেমন প্রচণ্ড লু হাওয়া, গরম পানি এবং এই ধরনের আরও শাস্তি। এই কাফিররা যে জাহান্নামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে তার মধ্যেই তাদেরকে চিরকাল বসবাস করতে হবে এবং সেখানে পাবে তারা তামার ন্যায় গলানো গরম পানি।

وَمِنْهُمْ مَنْ يُؤْمِنُ بِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ لَا يُؤْمِنُ بِهِ ۚ وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِينَ

📘 ৩৭-৪০ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে কুরআন কারীমের অলৌকিকতার উপর আলোকপাত করা হয়েছে যে, এই কুরআনের মত কিতাব পেশ করে এমন যোগ্যতা কোন মানুষেরই নেই। শুধু তাই নয়, বরং এর উপরও সক্ষম নয় যে, এর সূরার ন্যায় একটি সূরা আনয়ন করে। এটা পবিত্র কুরআনের ভাষার অলংকার ও বাকপটুতার দাবীর ভিত্তিতে বলা হয়েছে। কুরআন কারীমের ভাষা সংক্ষিপ্ত, অথচ ভাবার্থ খুবই ব্যাপক এবং শ্রুতিমধুর । এটা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্যে বড়ই উপকারী। অন্য কোন পুস্তক এসব গুণের অধিকারী হতে পারে না। কেননা, এটা হচ্ছে মহান। আল্লাহর পক্ষ হতে আগত গ্রন্থ। ঐ আল্লাহর যিনি স্বীয় সত্তা, গুণাবলী এবং কাজে ও কথায় সম্পূর্ণ একক, মাখলুকের কালাম তাঁর কালামের সাথে কিরূপে সাদৃশ্যযুক্ত হতে পারে? এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এর সাথে মানুষের কথার একটুও মিল থাকতে পারে না। আবার এই কুরআন ঐ কথাই বলে যে কথা এর পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলো বলেছে। তবে পূর্ববর্তী এই ইলহামী কিতাবগুলোর মধ্যে যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে তা লোপ করে দেয়া হয়েছে এবং হালাল ও হারামের বিধানগুলো পূর্ণভাবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে এটা অবতারিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে না। এতে অতীত যুগের সংবাদও রয়েছে এবং আগামী যুগের ভবিষ্যদ্বাণীও এতে বিদ্যমান। অতীত ও ভবিষ্যৎ সব কথার উপরই এতে আলোকপাত করা হয়েছে এবং লোকদেরকে ঐ পথে চালিত করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ সঠিক ও আল্লাহ তা'আলার নিকট পছন্দনীয়।আল্লাহ পাক বলেনঃ এই কিতাব আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতারিত হওয়ার ব্যাপারে যদি তোমাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় এবং তোমাদের মনে যদি এ ধারণা জন্মে তাকে যে, মুহাম্মাদ (সঃ) এটা নিজেই রচনা করেছেন, তবে তিনিও তো তোমাদের মতই মানুষ। তিনি যদি এরূপ কুরআন রচনা করতে পারেন তবে তোমাদের মধ্যকার কোন সুযোগ্য ব্যক্তি এরূপ কিতাব রচনা করতে পারে ন কেন? অতএব, তোমরা তোমাদের দাবীর সত্যতা প্রমাণ করার জন্যে এই কুরআনের সূরার মত একটি সূরাই আনয়ন কর; যার ভাষা হবে অলংকারপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক অর্থবোধক। মুহাম্মাদ (সঃ) তো একা। এখন তোমরা দুনিয়ার সমস্ত মানব ও দানব একত্রিত হয়ে চেষ্টা করে দেখো তো। এভাবে মহান আল্লাহ তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলেন যে, যদি তারা তাদের এই দাবীতে সত্যবাদী হয় যে, এটা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর রচিত, তাহলে তারা এই চ্যালেঞ্জ কবুল করুক। শুধু তারা নয়, বরং হাজার হাজার ও কোটি কোটি লোক মিলিত হয়েই করুক। এর পরেও আল্লাহ্ তা'আলা বিরাট দাবী করে বললেনঃ জেনে রেখো যে, তোমরা কখনই এ কাজ করতে সক্ষম হবে না।আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তুমি বলে দাও- যদি মানব ও দানব এজন্যে একত্রিত হয় যে, তারা এই কুরআনের মত কিতাব আনয়ন করবে, তবে তারা এর মত কিতাব আনতে পারবে না, যদি তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়ে যায়। এর পরেও তিনি আরো নীচে নামিয়ে দিয়ে বলেন যে, সম্পূর্ণ কুরআন নয় বরং এর মত দশটি সূরাই আনয়ন করুক। যেমন মহান আল্লাহ সূরা হুদে বলেনঃ “ তবে কি তারা এইরূপ বলে যে, সে (নবী সঃ) নিজেই এটা রচনা করেছে? তুমি বলে দাও তাহলে তোমরাও তার অনুরূপ রচিত করা দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (নিজেদের সাহায্যার্থে) যেই গায়রুল্লাহকে ডাকতে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” আর এই সূরায় আরো নীচে নামিয়ে দিয়ে বলেনঃ “যদি মুহাম্মাদ (সঃ) এটা নিজেই রচনা করে থাকে তবে বেশী নয়, বরং অনুরূপ একটি সূরাই আনয়ন কর।” মদীনায় অবতারিত সূরায়ে বাকারায়ও একটি সূরা আনয়নের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে এবং খবর দেয়া হয়েছে যে, তারা কখনো তা আনতে সক্ষম হবে না। সেখানে বলা হয়েছে- “অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা করতে পারবে না; তবে আত্মরক্ষা করো জাহান্নাম হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, (ওটা) প্রস্তুত রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্যে।” অথচ বাক্যালংকার ও বাকপটুতা ছিল আরবদের প্রকৃতিগত গুণ । তাদের যেসব কবিতা কাবা ঘরের দরযায় লটকিয়ে দেয়া হতো তা তাদের পূর্ণ বাক্যালংকার ও বাকপটুতারই পরিচায়ক। কিন্তু মহান আল্লাহ যে কুরআন পেশ করলেন, কোন বাক্যালংকার ও বাকপটুতা ওর কাছেই যেতে পারলো না। কুরআন কারীমের বাক্যালংকার, শ্রুতিমধুরতা, সংক্ষেপণ, গভীরতা ও পূর্ণতা দেখে যারা ঈমান আনবার তারা ঈমান আনলো। কেননা আরবে সে সময় এমন বাগ্মী ব্যক্তিও বিদ্যমান ছিলেন যারা কুরআন কারীমের ভাষার অলংকার, সংক্ষেপণ ও ভাবের গভীরতা উপলব্ধি করে ওর সামনে নিজেদের মস্তক অবনত করেছিলেন। তাঁরা নিঃসংকোচে স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, এটা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কালাম হতে পারে না। যেমন মূসা (আঃ)-এর যুগের যাদুকররা, যারা ছিল সেই যুগের সেরা যাদুকর, তারা মূসা (আঃ)-এর ক্রিয়াকলাপ দেখে সমস্বরে বলে উঠেছিল যে, মূসা (আঃ)-এর লাঠির সাথে যাদুর কোনই সম্পর্ক নেই। এটা একমাত্র আল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেই সম্ভব। সুতরাং মূসা (আঃ) যে আল্লাহর নবী তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে ব্যক্তি যে বিষয়ে পারদর্শী সেই ঐ বিষয়ের পরিপূর্ণতা উপলব্ধি করতে পারে । অনুরূপভাবে ঈসা (আঃ) এমন যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যে যুগে চিকিৎসা বিদ্যা উন্নতির উচ্চতম শিখরে আরোহণ করেছিল। ঐ যুগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসায় পূর্ণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করছিল। এইরূপ সময়ে ঈসা (আঃ)-এর জন্মান্ধ ও শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে ভাল করে দেয়া, এমন কি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশক্রমে মৃতকেও জীবিত করে তোলা এমনই এক চিকিত্সা ছিল, যার সামনে অন্যান্য চিকিৎসা ও ওষুধ ছিল মূল্যহীন। সুতরাং বুদ্ধিমানরা বুঝে নিলেন যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক নবীকেই কোন না কোন মুজিযা দেয়া হয়েছিল যা দেখে মানুষ ঈমান আনতো। আর আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে অহী (কুরআন), যে অহী আল্লাহ আমার নিকট পাঠিয়েছেন। সুতরাং আমি আশা করি যে, এর মাধ্যমে আমার অনুসারী তাঁদের অপেক্ষা বেশী হবে।” আল্লাহপাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ বরং তাদের মধ্যে কতকগুলো লোক, যারা কুরআন কারীম সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখে না, ওকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে দেয় । কিন্তু তারা কোন দলীল আনতে পারেনি। এটা হচ্ছে তাদের মূর্খতা ও বোকামির কারণ। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতেরাও এইরূপভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল । অতএব হে নবী (সঃ)! তুমি দেখো, সেই অত্যাচারীদের পরিণাম কি হলো! তারা শুধুমাত্র বিরুদ্ধাচরণের মনোভাব নিয়ে এবং একগুয়েমীর বশবর্তী হয়েই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। সুতরাং হে অস্বীকারকারী কুরায়েশরা! তোমরা এখন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম চিন্তা করে শিক্ষা গ্রহণ কর। সেই যুগেও কিছু লোক ঈমান আনয়ন করেছিল এবং কুরআন কারীম দ্বারা উপকৃত হয়েছিল। পক্ষান্তরে, কতক লোক ঈমান আনেনি এবং তারা কুফরীর মৃত্যুবরণ করেছিল। আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! কে হিদায়াত লাভের যোগ্য এবং কে পথভ্রষ্ট হওয়ার যোগ্য তা তোমার প্রতিপালক ভালরূপেই অবগত আছেন। সুতরাং যে হিদায়াত লাভের যোগ্য তাকে তিনি হিদায়াত দান করবেন, আর যে পথভ্রষ্ট হওয়ার যোগ্য তাকে তিনি পথভ্রষ্ট করবেন। এই কাজে তিনি অতি ন্যায়পরায়ণ। তিনি মোটেই অত্যাচারী নন।

وَإِنْ كَذَّبُوكَ فَقُلْ لِي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ۖ أَنْتُمْ بَرِيئُونَ مِمَّا أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تَعْمَلُونَ

📘 Please check ayah 10:44 for complete tafsir.

وَمِنْهُمْ مَنْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ

📘 Please check ayah 10:44 for complete tafsir.

وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْظُرُ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنْتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ

📘 Please check ayah 10:44 for complete tafsir.

إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَلَٰكِنَّ النَّاسَ أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

📘 ৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেন-যদি এই মুশরিকরা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তুমিও তাদের প্রতি ও তাদের কার্যকলাপের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ কর এবং স্পষ্টভাবে বলে দাও আমার আমল আমার জন্যে এবং তোমাদের আমল তোমাদের জন্যে । আমি তোমাদের মা'বুদগুলোকে কখনই স্বীকার করবো না।ইবরাহীম খলীল (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা তাদের মুশরিক কওমকে বলেছিলেনঃ “আমরা তোমাদের হতে এবং তোমাদের মা’রূদগণ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।” মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (আঃ)-কে আরো বলেন-কুরায়েশদের মধ্যেই কতক লোক এমনও রয়েছে যে, তারা তোমার উত্তম কথা ও পবিত্র কুরআন শুনে থাকে এবং তা তাদের হৃদয়গ্রাহী হয়। এটাই ছিল তাদের জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু এর পরেও তারা সঠিক পথে আসে না। এতে তোমার কোনই ত্রুটি নেই। কেননা, তুমি বধিরদেরকে শুনাতে সক্ষম নও এবং তাদেরকে হিদায়াত করারও শক্তি তোমার নেই, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করার ইচ্ছা করেন। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা গভীর দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকাতে থাকে। তোমার নির্মল নিষ্কলুষ চরিত্র, সুন্দর অবয়ব এবং নবুওয়াতের প্রমাণাদি (যার মাধ্যমে চক্ষুষ্মন লোকেরা উপকৃত হতে পারে) স্বচক্ষে অবলোকন করে। কিন্তু এরপরেও কুরআনের হিদায়াত দ্বারা মোটেই উপকৃত হয় না, যেমন বিদ্বান ও অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপকার লাভ করে থাকে। এরূপ মুমিন লোকেরা যখন তোমার দিকে তাকায় তখন তারা অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে তাকায়। পক্ষান্তরে যখন কাফিররা তোমার দিকে তাকায় তখন তারা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারা তোমাকে দেখে উপহাস করে।আল্লাহ তা'আলা কারো উপর বিন্দুমাত্র অত্যাচার করেন না। কেউ শুনে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়। আবার অন্য কেউ শুনে, দেখে, অথচ অন্ধ ও বধির হয়ে যায় । সে চোখ থাকতেও অন্ধ এবং কান থাকতেও বধির। তার অন্তঃকরণ রয়েছে, কিন্তু তা মৃত। কেউ লাভবান হলো, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তা সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি সবারই কাছে পুংখানুপুংখরূপে হিসাব গ্রহণ করবেন, কিন্তু তাঁর কাছে কেউ কোন হিসাব চাইতে পারে না। আল্লাহ তো বান্দার উপর যুলুম করেন না। কিন্তু বান্দা নিজেই নিজের উপর যুলুম করে থাকে। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে আমার বান্দারা! আমি নিজের উপর যুলুম করাকে হারাম করেছি এবং তোমাদের উপরও এটা হারাম করে দিলাম। সুতরাং তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করবে না। তোমাদের কার্যাবলী আমি দেখে যাচ্ছি। আমি তোমাদের প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবো। যে ভাল প্রতিদান প্রাপ্ত হবে সে যেন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি শাস্তি প্রাপ্ত হবে সে যেন নিজেকেই ভৎসনা করে।"

وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَنْ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُونَ بَيْنَهُمْ ۚ قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ

📘 আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং লোকেরা নিজ নিজ কবর থেকে উঠে হাশরের মাঠে একত্রিত হবে, সেটা হবে খুবই ভয়াবহ দিন। সেই দিন মানুষ মনে করবে যে, দুনিয়ায় তারা একটি দিনের কিছু অংশ মাত্র অবস্থান করেছিল। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “যেই দিন তারা ওটা দেখতে পাবে, তখন এইরূপ মনে করবে যে, তারা শুধুমাত্র একদিনের শেষাংশ অথবা প্রথমাংশে অবস্থান করেছিল। অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “যেই দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেই দিন পাপীরা দলে দলে উদ্বিগ্ন অবস্থায় হাশরের মাঠের দিকে বের হয়ে আসবে। তারা পরস্পরের মধ্যে চুপেচুপে বলাবলি করবে-আমরা দুনিয়ায় দশ দিনের বেশী অবস্থান করিনি। তাদের তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তি সম্পন্ন লোক বলবে- তোমরা এক দিনের বেশী অবস্থান করনি।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেই দিন পাপীরা শপথ করে করে বলবে যে, তারা এক ঘন্টা ছাড়া (দুনিয়ায়) অবস্থান করেনি।” এতে একথাই প্রমাণ করে যে, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন কতই না ঘৃণ্য ও তুচ্ছ! আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ ‘জিজ্ঞেস করা হবে-আচ্ছা বলতো, তোমরা দুনিয়ায় কত বছর অবস্থান করেছিলে? তারা উত্তরে বলবে- এক দিন বা একদিনের কিছু অংশ । তখন স্মরণশক্তি সম্পন্ন লোকদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলবে-তোমরা যদি জানতে যে, তোমরা কতই না অল্প সময় অবস্থান করেছিলে!” আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা পরস্পর একে অপরকে চিনবে। পিতামাতা ছেলেকে চিনবে এবং ছেলে পিতামাতাকে চিনবে। আত্মীয়-স্বজন নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পারবে। কিন্তু প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিপদ আপদ বা নিজ নিজ সুখ শান্তির মধ্যে নিমগ্ন থাকবে। কোন প্রিয়জন নিজ প্রিয়জনকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না।আল্লাহ তাআলার (আরবী) এই উক্তিটি তার (আরবী) (অবিশ্বাসীদের বড় সর্বনাশ হবে) এই উক্তির মতই। কেননা তারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর চেয়ে বড় সর্বনাশ ও ক্ষতি আর কি হতে পারে যে, তারা কিয়ামতের দিন নিজেদের সঙ্গী সাথীদের সামনে লজ্জিত ও অপমানিত হবে এবং তাদের থেকে পৃথক থাকবে?

وَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ اللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا يَفْعَلُونَ

📘 Please check ayah 10:47 for complete tafsir.

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَسُولٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ رَسُولُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

📘 ৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন-হে রাসূল (সঃ)! তোমার মনে শান্তি আনয়নের জন্যে যদি তোমার জীবদ্দশাতেই তাদের (কাফিরদের) উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করি, অথবা তোমার মৃত্যু ঘটিয়ে দেই, তবে জেনে রেখো যে, সর্বাবস্থাতেই তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে হবে। যদি তুমি। দুনিয়ায় বেঁচে না-ও থাকো, তবুও তোমার পরে তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী আমি নিজেই হয়ে যাবো। হুযাইফা ইবনে উসায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “গতরাত্রে আমার সামনে আমার প্রথম ও শেষের উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল।” একটি লোক তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার প্রথম উম্মতকে আপনার সামনে পেশ করা হয়েছিল এটা তো বুঝলাম। কিন্তু শেষের উম্মতকে কিরূপে পেশ করা হলো?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাদেরকে ‘খাকী’ (মেটো) আকারে আমার সামনে পেশ করা হয়। তোমাদের কোন লোক যেমন তার সঙ্গীকে চিনতে পারে, এর চেয়ে বেশী আমি তাদেরকে চিনতে পারবো।” (এই হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এক একজন রাসূল রয়েছে, যখন তাদের কাছে তাদের রাসূল এসে যায় তখন ন্যায়ভাবে তাদের মীমাংসা করা হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা কিয়ামতের দিনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যমীন আল্লাহর নূরের ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। প্রত্যেক উম্মতকে তাদের নবীর বিদ্যমান অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে পেশ করা হয়। তাদের সাথে থাকে তাদের ভাল বা মন্দ কাজের আমলনামা। এটা তাদের সাক্ষীরূপে কাজ করে। ফিরিশতাগণও সাক্ষী হন যাদেরকে তাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল। একের পর এক প্রত্যেক উম্মতকে পেশ করা হবে। এই উম্মত আখেরী উম্মত হলেও কিয়ামতের দিন এরাই প্রথম উম্মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম এদের ফায়সালাই করবেন। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যদিও আমরা সকলের শেষে এসেছি, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সর্বপ্রথম হবো। সমস্ত মাখলুকের পূর্বে আমাদেরই হিসাব নেয়া হবে।” এই উম্মত এই মর্যাদা লাভ করেছে একমাত্র তাদের রাসূল (সঃ)-এর বরকতে। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক!

وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

📘 Please check ayah 10:52 for complete tafsir.

قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۚ إِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ

📘 Please check ayah 10:52 for complete tafsir.

هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 10:6 for complete tafsir.

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُهُ بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا مَاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُونَ

📘 Please check ayah 10:52 for complete tafsir.

أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ آمَنْتُمْ بِهِ ۚ آلْآنَ وَقَدْ كُنْتُمْ بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ

📘 Please check ayah 10:52 for complete tafsir.

ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ

📘 ৪৮-৫২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন- এই মুশরিকরা শাস্তির জন্যে তাড়াতাড়ি করছে এবং সময় আসার পূর্বেই যাজ্ঞা করছে। এতে তাদের জন্যে কোনই মঙ্গল নেই। কাফিররা তো শাস্তির জন্যে তাড়াতাড়ি করছে, কিন্তু মুমিনরা এর থেকে ভয় করছে। তারা বিশ্বাস রাখছে যে, শাস্তি অবশ্য অবশ্যই আসবে, যদিও এর নির্দিষ্ট সময় জানা নেই। এ জন্যেই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে শিখিয়ে দিচ্ছেন- হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও, আমি নিজের জীবনেরও লাভ ও ক্ষতির মালিক নই। আমি শুধু ঐটুকু বলি যেটুকু আমাকে বলে দেয়া হয়েছে। যদি আমি কিছু পাওয়ার ইচ্ছে করি, তবে আমি ওর উপর সক্ষম নই, যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাকে তা প্রদান করেন। আমি তো শুধু তার একজন বান্দা এবং তোমাদের কাছে প্রেরিত একজন দূত। আমি তোমাদেরকে সংবাদ প্রদান করেছি যে, কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। কিন্তু এর সময় আমার জানা নেই। কারণ এটা আমাকে বলে দেয়া হয়নি। প্রত্যেক কওমের জন্য (শাস্তির) একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে। যখন ঐ সময় এসে যাবে তখন আর মুহূর্তকালও তারা পিছনে সরতে পারবে না এবং সামনেও অগ্রসর হতে পারবে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ কাউকেও কোন অবকাশ দেন না, যখন তার নির্দিষ্ট সময় এসে পড়ে।” (৬৩:১১) কাফিরদের উপর আল্লাহর শাস্তি অকস্মাৎ এসে যাবে। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কেই তাদেরকে বলেছেন- যদি রাত্রিকালে বা দিবাভাগে কোন এক সময় আকস্মিকভাবে তোমাদের উপর শাস্তি এসে পড়ে, তখন কি করবে? কাজেই তাড়াতাড়ি করছো কেন? যদি শাস্তি এসেই পড়ে, তবে কি তখন ঈমান আনবে? তখন আর ঈমান আনয়নের সময় কোথায়? ঐ সময় তাদেরকে বলা হবে- যে শাস্তির জন্যে তোমরা তাড়াতাড়ি করছিলে, এখন এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। ঐ সময় তারা বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমরা দেখলাম ও শুনলাম ।শাস্তি এসে পড়লেই তারা বলে উঠবেঃ “এখন আমরা এক আল্লাহকে মানছি এবং অন্যান্য সমস্ত মা'বুদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।” কিন্তু ঐ সময়ের ঈমান কোনই কাজে আসবে না। বান্দাদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি তো এরূপই চলে আসছে।এ যালিমদেরকে বলা হবে- “এখন তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।” এইভাবে তাদেরকে খুব ধমক দিয়ে এ কথা বলা হবে। জাহান্নামের যে শাস্তির কথা তারা অস্বীকার করতো ঐ শাস্তির মধ্যে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফেলে দেয়া হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ঐ দিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে। (বলা হবেঃ) এটা হচ্ছে ঐ আগুন যা তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। এটাই কি যাদু? না, বরং তোমরা দেখছো না (অনুধাবন করছো না)। তোমরা (এখন) জাহান্নামে প্রবেশ কর। তোমরা ধৈর্যধারণ কর আর নাই কর, এটা সমান কথা, তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিদান অবশ্যই প্রাপ্ত হবে।”

۞ وَيَسْتَنْبِئُونَكَ أَحَقٌّ هُوَ ۖ قُلْ إِي وَرَبِّي إِنَّهُ لَحَقٌّ ۖ وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ

📘 Please check ayah 10:54 for complete tafsir.

وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ ۗ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

📘 ৫৩-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেনঃ “লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে যে, দেহ মাটিতে পরিণত হওয়ার পর কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান কি সত্য? তুমি তাদেরকে বলে দাও- হ্যা! আল্লাহর কসম! এটা সত্য। তোমাদের মাটি হয়ে যাওয়া এবং এরপর তোমাদেরকে পুনরায় পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমার প্রতিপালকের কাছে খুবই সহজ কাজ। তিনি যখন কোন কাজের ইচ্ছা। করেন, তখন শুধু ‘হও' বললেই তা হয়ে যায়।" এইরূপ কসমযুক্ত আয়াত কুরআন কারীমের মধ্যে আর মাত্র দুই জায়গায় রয়েছে। এতে আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে হুকুম করেছেন যে, পুনরুত্থান ও পুনর্জীবনকে যারা অস্বীকার করে, তাদের কাছে তিনি যেন কসম দিয়ে বর্ণনা করেন। সূরায়ে সাবায় রয়েছেঃ “কাফির লোকেরা বলে, আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না; তুমি বলে দাও(কেন আসবে না?) হ্যা, আমার প্রতিপালকের কসম! অবশ্যই ওটা তোমাদের উপর আসবে।” সূরায়ে তাগাবুনে রয়েছেঃ “কাফিররা এই দাবী করে যে, তাদেরকে কখনো পুনরুজ্জীবিত করা হবে না; তুমি বলে দাও- (কেন করা হবে না?) হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে, অনন্তর, তোমরা যা কিছু করেছে, সমস্তই তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে; আর এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।” এরপর আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন কাফিররা কামনা করবে যে, যদি যমীন ভর্তি সোনার বিনিময়ে হলেও তারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পেতো! কিন্তু এটা কখনই হতে পারবে না। আর যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন নিজেদের মনস্তাপকে গোপন রাখবে। তবে তাদের সাথে যে ব্যবহার করা হবে তা ইনসাফের সাথেই করা হবে। তাদের প্রতি মোটেই কোন অবিচার করা হবে না।

أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 10:56 for complete tafsir.

هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

📘 ৫৫-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনিই আকাশসমূহের ও পৃথিবীর মালিক। তার অঙ্গীকার অবশ্য অবশ্যই পূর্ণ হবে। তিনিই জীবন দান করে থাকেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন। তারই কাছে সকলকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনি এর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান যে, সমুদ্রে, প্রান্তরে এবং বিশ্বের সর্বত্র তাদের মাটি হয়ে যাওয়া দেহের প্রতিটি অণু পরমাণুকে পুনরায় একত্রিত করবেন এবং জীবিত দেহ তৈরী করবেন।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 10:58 for complete tafsir.

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

📘 ৫৭-৫৮ নং আয়াতের তাফসীর: বান্দার উপর স্বীয় ইহসানের বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন- হে লোক সকল! তোমাদেরকে যে পবিত্র গ্রন্থটি (কুরআন কারীম) দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে নসীহতের একটি দফতর, যা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা তোমাদের অন্তরের সমস্ত রোগের আরোগ্যদানকারী। অর্থাৎ এটা তোমাদের অন্তরের সন্দেহ, সংশয়, কালিমা ও অপবিত্রতা দূরকারী। এর মাধ্যমে তোমরা মহান আল্লাহর হিদায়াত ও রহমত লাভ করতে পারবে । কিন্তু এটা লাভ করবে একমাত্র তারাই যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখে। কুরআনকে আমি মুমিনদের জন্যে শিফা ও রহমতরূপে অবতীর্ণ করেছি। কিন্তু পাপীদের জন্যে এটা ধ্বংস ও ক্ষতি আনয়নকারী। হে নবী (সঃ)! তুমি জনগণকে বলে দাও- এই কুরআন হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা । সুতরাং এটা নিয়ে তোমরা খুশী হয়ে যাও। আর দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী যেসব ভোগ্য বস্তু তোমরা লাভ করেছে, সেগুলো অপেক্ষা কুরআনই হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ও উৎকৃষ্টতম বস্তু।উমার (রাঃ)-এর নিকট ইরাকের খেরাজ আসলে তিনি তা দেখার জন্যে বেরিয়ে আসেন। তাঁর সাথে তার খাদেমও ছিল। উমার (রাঃ) খেরাজে আগত উটগুলো গণনা করতে শুরু করেন। কিন্তু শেষে গণনায় অপারগ হয়ে বলে ওঠেনঃ “আমি মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।” এ দেখে তার খাদেমটি বলেঃ “আল্লাহর কসম! এটাও আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত।” তখন। উমার (রাঃ) বলেনঃ “না, এটা নয়। বরং আল্লাহ তা'আলা (আরবী) বলে কুরআন ও ওর দ্বারা উপকার গ্রহণ বুঝিয়েছেন। সুতরাং এই খেরাজের সম্পদগুলোকে আল্লাহর ফযল ও রহমত মনে না করে বরং এটাকে (আরবী) মনে করাই উচিত। কেননা, এগুলো তো হচ্ছে আমাদের জমাকৃত সম্পদ। ফযল' ও 'রহমত' তো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাহাত্ম্য অত্যন্ত বেশী।” (ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে এটা বর্ণনা করেছেন)

قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ رِزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِنْهُ حَرَامًا وَحَلَالًا قُلْ آللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ أَمْ عَلَى اللَّهِ تَفْتَرُونَ

📘 Please check ayah 10:60 for complete tafsir.

إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ

📘 ৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার ক্ষমতার পূর্ণতা এবং তার সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের প্রমাণস্বরূপ বহু নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। সূর্যের কিরণ হতে বিচ্ছুরিত আলোকমালাকে তিনি তোমাদের জন্যে দীপ্তি বানিয়েছেন। আর চন্দ্রের কিরণকে তোমাদের জন্যে নূর বানিয়েছেন। সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্য রকম। একই আলো, অথচ দুটোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। একটির কিরণ অপরটির সঙ্গে মোটেই খাপ খায় না বা একটির কিরণের সাথে অপরটির কিরণ মিলিত হয় না। দিবসে সূর্যের রাজত্ব আর রাত্রে চন্দ্রের কর্তৃত্ব। দুটোই আসমানী আলোকবর্তিকা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সূর্যের মঞ্জিল নির্ধারণ করেননি, অথচ চন্দ্রের মঞ্জিল তিনি নির্ধারণ করেছেন। প্রথম তারিখের চাঁদ অতি ক্ষুদ্ররূপে প্রকাশিত হয়। তারপর ওর কিরণও বাড়ে এবং আয়তনও বেড়ে যায় ।শেষ পর্যন্ত ওটা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং গোল বৃত্তের আকার ধারণ করে। এরপর আবার কমতে শুরু করে এবং পূর্ণ একমাস পর প্রথম অবস্থায় এসে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি চন্দ্রের জন্যে মঞ্জিলসমূহ নির্ণিত করে রেখেছি (এবং ওটা তা অতিক্রম করছে), এমন কি ওটা (অতিক্রম শেষে ক্ষীণ হয়ে) এইরূপ হয়ে যায়, যেন খেজুরের পুরাতন শাখা । সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে গিয়ে ধরবে, আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে; এবং উভয়ে এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করছে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “সূর্য ও চন্দ্রের নিজ নিজ হিসাব রয়েছে। এই আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে যে, সূর্যের মাধ্যমে দিনের পরিচয় পাওয়া যায়, আর চন্দ্রের আবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া যায় মাস ও বছরের হিসাব। আল্লাহ এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। বরং জগত সৃষ্টি মহান আল্লাহর বিরাট নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে এবং এটা তার ব্যাপক ক্ষমতার যে স্পষ্ট প্রমাণ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশ, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে এগুলোকে বৃথা সৃষ্টি করিনি, এটা হচ্ছে কাফিরদের ধারণা, সুতরাং কাফিরদের জন্যে রয়েছে (জাহান্নামের আগুনের শাস্তি।” (৩৮:২৭) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি তোমরা এই ধারণা করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। আর এটাও (ধারণা করেছিলে) যে, তোমাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না? অতএব আল্লাহ অতি উচ্চ মর্যাদাবান, তিনি প্রকৃত বাদশাহ, তিনি ছাড়া কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়, তিনি মহান আরশের মালিক।” (২৩:১১৫-১১৬) আয়াতগুলোর ভাবার্থ হচ্ছে- আমি দলীল প্রমাণাদি খুলে খুলে বর্ণনা করছি যাতে অনুধাবনকারীরা অনুধাবন করতে পারে।(আরবী) এর ভাবার্থ এই যে, দিন গেলে রাত্রি আসে এবং রাত্রি গেলে দিনের আগমন ঘটে। একে অপরের উপর জয়যুক্ত হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “রাত দিনের উপর ছেয়ে যায় এবং দিন রাতের উপর ছেয়ে যায়, কিন্তু এটা সম্ভব নয় যে, সূর্য চন্দ্রের সাথে টক্কর খায়।” মহান আল্লাহ বলেনঃ “সকাল হয়ে যায় এবং রাত্রি নির্বিঘ্নে অতিক্রান্ত হয়।আল্লাহ আসমান ও যমীনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, তার ক্ষমতা কতই না ব্যাপক। যেমন তিনি বলেনঃ “আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে আল্লাহর কতই না নিদর্শন রয়েছে।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “তুমি বলে দাও- তোমরা লক্ষ্য কর যে, আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে কতই না নিদর্শন রয়েছে এবং যারা ঈমানদার নয় তাদেরকে সতর্ককারী নিদর্শনের কোনই অভাব নেই। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ “তারা কি আকাশ ও পৃথিবীতে তাদের সামনে ও পিছনে দৃষ্টিপাত করে না?” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃজনে এবং পর্যায়ক্রমে দিবা ও রাত্রির গমনাগমনে নিদর্শনসমূহ রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে। আর এখানে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই নিদর্শনসমূহ রয়েছে ঐ লোকদের জন্যে যারা (আল্লাহর শাস্তির) ভয় করে।”

وَمَا ظَنُّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ

📘 ৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর: ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), যহ্হাক (রঃ), কাতাদা (রঃ), আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, মুশরিকরা কতকগুলো জন্তুকে ‘বাহায়ের ‘সাওয়ায়েব' এবং ‘আসায়েল’ নামে নামকরণ করে কোনটাকে নিজেদের উপর হালাল এবং কোনটাকে হারাম করে নিতো, এখানে এটাকেই খণ্ডন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “জমি হতে যা উৎপন্ন হয় এবং যেসব পশুর জন্ম হয়, তা থেকে তারা একটা অংশ আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করে।” আবুল আহওয়াস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি হচ্ছেন আউফ ইবনে মালিক ইবনে নালা, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করি। ঐ সময় আকৃতি ও পোশাক পরিচ্ছদের দিক দিয়ে আমার অবস্থা ভাল ছিল না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার কি কোন ধন-সম্পদ নেই?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা আছে। তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেনঃ “কি মাল আছে?” আমি জবাব দিলামঃ সর্বপ্রকারের মাল রয়েছে। যেমন, উট, দাসদাসী, ঘোড়া এবং বকরী। তখন তিনি বলেনঃ “যখন তিনি তোমাকে মালধন দান করেছেন, তখন তিনি তার নিদর্শন তোমার উপর দেখতে চান।" অতঃপর তিনি বললেনঃ “তোমাদের উস্ত্রীর বাচ্চা হয়। ওর সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভাল ও নিখুঁত হয়। কিন্তু তোমরাই ক্ষুর উঠিয়ে নিয়ে ওর কান কেটে দিয়ে থাকো। আর এটাকে বলে থাকো ‘বাহায়ের'? তোমরা ওর চামড়া চিরে দাও এবং ওকে বলে থাকো সরম। তোমরা এগুলো নিজেদের উপরও হারাম করে নাও এবং পরিবারবর্গের জন্যেও। এটা সত্য নয় কি?” আমি বললামঃ হ্যাঁ, সত্য। এরপর তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, তা সর্বসময়ের জন্যে হালাল। কখনও তা হারাম হতে পারে না। আল্লাহর হাত তোমাদের হাত অপেক্ষা অনেক বেশী শক্তিশালী। আল্লাহর চাকু তোমাদের চাকু অপেক্ষা বহুগুণে তীক্ষ্ণ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদের প্রতি নিজের কঠিন অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করছেন, যারা তাঁর হালালকে নিজেদের উপর হারাম করে নেয় এবং তাঁর হারামকে নিজেদের জন্যে হালাল বানিয়ে নেয়। আর এটা শুধু নিজেদের ব্যক্তিগত মত ও প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করেই করে থাকে, যার কোন দলীল নেই।এরপর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে কিয়ামত দিবসের শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছেন। তিনি বলছেন, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবো এ সম্পর্কে তাদের ধারণা কি?(আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ লোকদের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এটা ছেড়ে দেয়ার মধ্যে যেন দুনিয়াতেই তাদেরকে শাস্তি দিয়ে চিকিৎসা করা উদ্দেশ্য। আমি বলি- এটাও উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা লোকদের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল। কেননা, তিনি দুনিয়ায় তাদের জন্যে এমন বহু জিনিস হালাল করেছেন, যেগুলো পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তাদের জন্যে সেগুলো উপকারী। পক্ষান্তরে তিনি মানুষের জন্যে এমন জিনিস হারাম করেছেন, যেগুলো তাদের জন্যে সরাসরি ক্ষতিকর ছিল। এটা হয় দ্বীনের দিক দিয়েই হাক, না হয় দুনিয়ার দিক দিয়েই হাক। কিন্তু অধিকাংশ লোকই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অর্থাৎ তারা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলো নিজেদের উপর হারাম করে নিচ্ছে এবং নফসের উপর সংকীর্ণতা আনয়ন করছে। এটা এইরূপে যে, নিজেদের পক্ষ থেকে কোন জিনিস হালাল করছে এবং কোন জিনিস হারাম করছে। মুশরিকরা এটাকে নিজেদের মধ্যে বহুল পরিমাণে প্রকাশ করেছে এবং একরূপ পন্থাই বানিয়ে নিয়েছে। যদিও আহলে কিতাবের মধ্যে এটা ছিল না, কিন্তু এখন তারাও এই বিদআত চালু করে দিয়েছে। মূসা ইবনে সাবাহ হতে, (আরবী) -এই উক্তির ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন তিন প্রকারের আল্লাহওয়ালা লোককে পেশ করা হবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্যে প্রথম প্রকারের লোককে জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! কি উদ্দেশ্যে তুমি ভাল কাজ করেছিলে?" উত্তরে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি জান্নাত তৈরী করেছেন এবং তার মধ্যে বাগান, ফলমূল, বৃক্ষলতা, নদ-নদী, হুর ও প্রাসাদ এবং অনুগত বান্দাদের জন্যে সর্বপ্রকারের নিয়ামত সরবরাহ করে রেখেছেন। ঐগুলো লাভ করার আশাতেই আমি রাত্রি জেগে জেগে আপনার ইবাদত করেছি ও সারা দিন রোযা রেখেছি।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “তুমি যখন জান্নাত লাভের আশাতেই এসব আমল করেছো, তখন যাও, জান্নাতই তোমার ঠিকানা। কিন্তু এটা তোমার আমলের বিনিময়ে নয়। আমি তোমাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিলাম। এটা আমার অনুগ্রহ। আর তোমাকে আমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করছি আর এটাও আমার অনুগ্রহ।” তখন সে এবং তার সঙ্গীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর দ্বিতীয় প্রকারের লোককে হাযির করা হবে। তাকে আল্লাহ তা'আলা জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! তুমি কেন ভাল কাজ করেছিলে?” উত্তরে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি জাহান্নাম তৈরী করেছেন এবং তার মধ্যে রেখেছেন জিঞ্জির, লু-হাওয়া ও গরম পানি। নাফরমান বান্দাদের জন্যে সেখানে সর্বপ্রকারের শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি এই জাহান্নাম হতে রক্ষা পাওয়ার আশাতেই রাত্রি জেগে জেগে ইবাদত করেছি এবং সারা দিন রোযা রেখেছি।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “তুমি যখন জাহান্নামের ভয়ে ভাল কাজ করেছে, তখন আমি তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলাম। তারপর এটা অতিরিক্ত অনুগ্রহ যে, তোমাকে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার পর জান্নাতও দান করলাম।” সুতরাং সে এবং তার সাথীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর তৃতীয় প্রকারের লোককে পেশ করা হবে। তাকেও আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! তুমি কেন ভাল কাজ করেছিলে।” সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি শুধু আপনার প্রতি প্রেম ও মহব্বতের কারণে আপনার ইবাদত করেছি। আমি রাত জেগে জেগে ইবাদত করেছি এবং ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করে সারা দিন রোযা রেখেছি একমাত্র আপনার সাথে সাক্ষাৎ লাভের আশায় এবং আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।” তখন মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ “তুমি যখন আমার মহব্বতে ও আমার সাথে সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে এরূপ করেছে, তখন আমি তোমার সামনে আমার ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করছি। তুমি এখন আমাকে মন ভরে দেখে নাও এবং চক্ষু জুড়িয়ে নাও। তুমি সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ লাভ করলে।” এরপর তিনি তাকে বলবেনঃ “আমি আমার অনুগ্রহের বদৌলতে তোমাকে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি দিচ্ছি এবং জান্নাতেও প্রবিষ্ট করছি। আমার ফিরিশতামণ্ডলী তোমার পাশে হাযির থাকবে এবং আমি স্বয়ং তোমার উপর আমার শান্তি বর্ষণ করতে থাকবো।” সুতরাং সে ও তার সঙ্গীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে আবি হাতিমই (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে এটা বর্ণনা করেছেন)

وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِنْ قُرْآنٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ ۚ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَبِّكَ مِنْ مِثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرَ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সংবাদ দিচ্ছেন- আল্লাহ তাআলা তোমার উম্মত এবং সমস্ত মাখলুকের সমুদয় অবস্থা সম্পর্কে সব সময় অবহিত রয়েছেন। যমীন ও আসমানের অণু পরিমাণ জিনিসও, তা যতই নগণ্য হাক না কেন, কিতাবে মুবীন অর্থাৎ ইলমে ইলাহীতে বিদ্যমান রয়েছে। কিছুই তাঁর দৃষ্টির অগোচরে নেই। অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই রয়েছে। জল ও স্থলের অদৃশ্যের খবর তিনি ছাড়া আর কেউই জানে না। গাছের একটা পাতাও যে ঝরে পড়ে, রাতের অন্ধকারে কোন জায়গায় কোন অণু পরিমাণ জিনিসও যে পড়ে থাকে, যে কোন জিনিস, তা সিক্ত হাক বা শুষ্কই হাক, ভাল হাক বা মন্দই হাক, সব কিছুরই জ্ঞান একমাত্র তাঁরই আছে। বৃক্ষ, জড় পদার্থ এবং প্রাণীসমূহের গতির খবর তিনিই রাখেন। যমীনে যত প্রাণী রয়েছে, শূন্যে যত পাখী উড়ছে, এসবও তোমাদের মত দলে দলে রয়েছে। প্রতিটি প্রাণীর জীবিকার জামিন তিনিই।এ সমুদয় বস্তুর গতিরও জ্ঞান যখন তার রয়েছে, তখন যে মানুষ মুকাল্লাফ ও ইবাদতের জন্যে আদিষ্ট, তাদের গতি ও আমলের জ্ঞান তাঁর কেন থাকবে না? যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী যত প্রাণী রয়েছে এবং যেসব পাখী দু'ডানার সাহায্যে উড়ে বেড়ায়, সবই তোমাদের ন্যায় এক একটি জাতি বা সম্প্রদায়।” অন্যত্র তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যে, তার রিযক আল্লাহর যিম্মায় না রয়েছে।” (১১:৬) তাহলে বুঝা গেল যে, পৃথিবীতে বিচরণকারী সমুদয় প্রাণীরই খবর যখন তিনি রাখেন, তখন তাঁর ইবাদতের জন্যে আদিষ্ট মানুষের খবর যে তিনি রাখবেন, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই? যেমন তিনি বলেনঃ “তুমি মহা প্রতাপশালী ও দয়ালুর উপর (আল্লাহর উপর ভরসা রাখো, যিনি তোমাকে তোমার দণ্ডায়মান অবস্থায়ও দেখেন এবং যখন তুমি সিজদা কর তখনও তোমাকে দেখতে পান।" এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে অবস্থাতে তোমরা থাক, কুরআন পাঠ কর, কিংবা অন্য যে কোন কাজ কর, আমি তোমাদেরকে দেখছি এবং সবকিছুই শুনছি।" এ কারণেই যখন জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ইহসান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তখন তিনি বলেনঃ “(ইহসানের অর্থ এই যে) এমনভাবে তুমি আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছো, এটা না হলে কমপক্ষে এটা হওয়া উচিত যে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন (এরূপ বিশ্বাস রাখবে)।”

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

📘 Please check ayah 10:64 for complete tafsir.

الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ

📘 Please check ayah 10:64 for complete tafsir.

لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

📘 ৬২-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর বন্ধু হচ্ছে ঐ লোকগুলো যারা ঈমান আনয়নের পর পরহেযগারীও অবলম্বন করে থাকে। সুতরাং যারা আল্লাহভীরু তারাই আল্লাহর বন্ধু । যখন তারা পারলৌকিক অবস্থার সম্মুখীন হবে তখন তারা মোটেই ভয় পাবে না। আর দুনিয়াতেও তারা কোন দুঃখ ও চিন্তায় পরিবেষ্টিত হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর অলী হচ্ছে ঐ লোকেরা যারা সদা-সর্বদা তাঁর স্মরণ ও চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর অলী কারা?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তারা হচ্ছে। ওরাই যাদেরকে তুমি দেখতে পাও যে, তারা আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন রয়েছে।” আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও রয়েছে যারা নবীও নয় এবং শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের উপর রিশক (আকাক্ষা) করবেন।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! তারা কারা?" উত্তরে তিনি বললেনঃ “তারা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে (ভালবেসেছে)। তাদের মধ্যে নেই কোন মালের সম্পর্ক এবং নেই কোন বংশের সম্পর্ক। তাদের চেহারা হবে নূরানী (উজ্জ্বল) এবং তারা নূরের মিম্বরের উপর থাকবে। যখন মানুষ ভয় পাবে, তখন তাদের কোন ভয় হবে না এবং মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখনও তাদের কোন দুঃখ ও চিন্তা থাকবে না।” অতঃপর তিনি পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর অলীদের জন্যে কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।”আবৃ মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ লোকদের মধ্য হতে ও বিভিন্ন গোত্র হতে এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাদের পরস্পরের মধ্যে নেই কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক, তারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসবে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে আন্তরিকতাপূর্ণ প্রেম প্রীতি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে নূরের মিম্বর স্থাপন করবেন, যার উপর তারা উপবেশন করবে। মানুষ সেই দিন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকবে। কিন্তু এরা থাকবে সম্পূর্ণ শান্ত ও নিশ্চিন্ত; আল্লাহর অলী এসব লোকই বটে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবু দারদা (রাঃ)-কে একটি লোক জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) -এই আয়াতের কিরূপ ব্যাখ্যা করেছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটা হচ্ছে ভাল স্বপ্ন যা কোন মুসলিম দেখে থাকে বা অন্য কোন মুসলিমকে তার সম্পর্কে ঐ স্বপ্ন দেখানো হয়।" আবু দারদা (রাঃ)। লোকটিকে বলেনঃ “তুমি আমাকে এই প্রশ্ন করলে, ইতিপূর্বে শুধু একবার একটি লোক নবী (সঃ)-কে এই প্রশ্ন করেছিল। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এটা হচ্ছে সঠিক ও সত্য স্বপ্ন যা কোন মুসলিম দেখে থাকে বা তার পক্ষে অন্য কাউকেও দেখানো হয়। এটা পার্থিব জীবনেও তার জন্যে শুভ সংবাদ এবং পরকালেও তার জন্যে জান্নাতের সুসংবাদ।” (এ হাদীসটি ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথাই বলেছিলেন- “তোমার পূর্বে কেউ আমাকে এ প্রশ্ন করেনি। (আরবী) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাল স্বপ্ন।” ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “এই আয়াতে আখিরাতের সুসংবাদ তো হচ্ছে জান্নাত, কিন্তু দুনিয়ার সুসংবাদ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “সত্য সপ্ন, যে স্বপ্ন কেউ দেখে বা তার সম্পর্কে কাউকে স্বপ্ন দেখানো হয়। আর এই সত্য স্বপ্নও হচ্ছে নবুওয়াতের সত্তর বা চুয়াল্লিশটি অংশের একটি অংশ।”আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মানুষ ভাল কাজ করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে (এটা কিরূপ?)।” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটা যেন মুমিনের জন্যে দুনিয়াতেই জান্নাতের শুভ সংবাদ। আর এটা নবুওয়াতের উনপঞ্চাশটি অংশের একটি অংশ। সুতরাং যে ব্যক্তি ভাল স্বপ্ন দেখবে সে যেন জনগণের সামনে তা বর্ণনা করে দেয়। আর যে খারাপ স্বপ্ন দেখবে, তার এটা জেনে রাখা উচিত যে, ওটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। সে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্যেই এরূপ করে। সুতরাং তখন ঐ ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে ও তাকবীর পাঠ করে এবং জনগণের সামনে তা প্রকাশ না করে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)অন্য এক জায়গায় নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, উত্তম স্বপ্ন হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত শুভ সংবাদ। কথিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- মুমিনের মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ তাকে জান্নাত ও মাগফিরাতের শুভ সংবাদ দিয়ে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “নিশ্চয়ই যারা বলেছে-আমাদের প্রতিপালক (হচ্ছেন একমাত্র) আল্লাহ অতঃপর তারা (ওর উপর) অটল রয়েছে, তাদের প্রতি (সুসংবাদ নিয়ে) ফিরিশতারা অবতীর্ণ হবে, (এবং বলবে যে,) তোমরা (আখিরাতের। বিপদসমূহের) ভয় করো না এবং (দুনিয়া ত্যাগের জন্যে) দুঃখও করো না, আর তোমরা সেই জান্নাতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে প্রদান। করা হতো। আমি পার্থিব জীবনেও তোমাদের সঙ্গী ছিলাম এবং পরলোকেও থাকবো, আর যা কিছু তোমাদের বাসনা হবে, তোমাদের জন্যে তাতে তা বিদ্যমান আছে, আর যা কিছু তোমরা চাবে, তাও তোমাদের জন্যে তাতে রয়েছে। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের সন্নিধান হতে মেহমানদারী।”বারা’র হাদীসে রয়েছে যে, যখন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন উজ্জ্বল চেহারা ও সাদা পোশাক বিশিষ্ট ফিরিশতা তার কাছে আগমন করেন এবং বলেনঃ “হে পবিত্র আত্মা! তার মুখ দিয়ে এমনভাবে বেরিয়ে যাও যেমনভাবে মশকের মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “কিয়ামতের আতংক তাদেরকে হতবুদ্ধি করবে না, ফিরিশতারা তাদেরকে বলবে- এটা হচ্ছে ঐদিন, তোমাদের সাথে যেই দিনের ওয়াদা করা হয়েছে। আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “সেই দিন তুমি মুমিন পুরুষ এবং মুমিনা নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের সামনের দিকে এবং ডান দিকে নূর (আলো) চলছে, (বলা হবে) আজ তোমাদেরকে ঐ জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে, যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।”

وَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ ۘ إِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ۚ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

📘 Please check ayah 10:67 for complete tafsir.

أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ ۗ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ شُرَكَاءَ ۚ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ

📘 Please check ayah 10:67 for complete tafsir.

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

📘 ৬৫-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলছেন- মুশরিকদের কথা যেন তোমাকে দুঃখিত না করে। তাদের উপর জয়যুক্ত হওয়ার জন্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাঁরই উপর নির্ভরশীল হও। সর্বপ্রকারের সম্মান ও বিজয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সঃ) এবং মুমিনদের জন্যে। মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের কথা শুনে থাকেন এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই। মুশরিকরা যে প্রতিমাগুলোর পূজা করছে সেগুলো তাদের ক্ষতি ও লাভ কিছুই করতে সক্ষম নয়। আর তাদের কাছে এর যুক্তিসম্মত কোন দলীলও নেই। এই মুশরিকরা তো শুধু মিথ্যা, অযৌক্তিক ও অনুমানপ্রসূত মতেরই অনুসরণ করছে।এরপর ইরশাদ হচ্ছে- আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদের জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন, যেন তারা সারা দিনের শ্রান্তি ও ক্লান্তির পর আরাম ও শান্তি লাভ করতে পারে। আর তিনি দিবসকে জীবিকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল করেছেন। তারা দিনে সফর করে থাকে এবং আলোকের মধ্যে তাদের জন্যে আরো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দলীল প্রমাণাদি দেখে ও শুনে যারা উপদেশ ও শিক্ষা লাভ করে থাকে তাদের জন্যে এই আয়াতগুলোর মধ্যে নিদর্শনসমূহ রয়েছে। এগুলো সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।

قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ الْغَنِيُّ ۖ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنْ عِنْدَكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ بِهَٰذَا ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

📘 Please check ayah 10:70 for complete tafsir.

قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ

📘 Please check ayah 10:70 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ

📘 Please check ayah 10:8 for complete tafsir.

مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ

📘 ৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তা'আলা ঐ লোকদের কথা খণ্ডন করছেন যারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। তিনি এসব থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। সন্তান কি, বরং তিনি সমস্ত জিনিস থেকেই অমুখাপেক্ষী। দুনিয়ায় যত কিছু বিদ্যমান রয়েছে, সবকিছুই তার অনুগ্রহ ও দয়ার কাঙ্গাল ও একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী। যমীন, আসমান ও এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবই তার অধিকারভুক্ত। তাহলে তিনি নিজেরই বান্দা বা দাসকে কিরূপে সন্তান বানাতে পারেন? হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে তো এর দলীল রয়েছে, কিন্তু এই কাফির ও মুশরিকদের কাছে এই মিথ্যা ও অপবাদমূলক কথার কোনই প্রমাণ নেই। তারা জানে না কিছুই অথচ অনেক কিছু দাবী করছে। এটা মুশরিকদের জন্যে কঠিন সতর্কতামূলক উক্তি। এই কাফিরগণ বলে যে, আল্লাহরও একটি পুত্র রয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। এটা এমনই এক কঠিন অপবাদমূলক কথা যে, তা শুনে যদি আকাশ ফেটে পড়ে, যমীন ধ্বসে যায় এবং পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে, তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। আল্লাহ তা'আলার সন্তান হওয়া কিরূপে শোভা পাবে? যমীন ও আসমানের সমুদয় জিনিস তো তারই অনুগৃহীত এবং তাঁরই দাস! সবই তাঁর গণনার মধ্যে রয়েছে। এগুলোর সংখ্যা তার জানা আছে। কিয়ামতের দিন সবাই এককভাবে তার কাছে হাযির হবে। এরপর মহান আল্লাহ এই অপবাদ প্রদানকারী কাফিরদেরকে ধমকের সুরে বলছেন যে, তারা দ্বীন ও দুনিয়া কোথায়ও মুক্তি পাবে না। কিন্তু দুনিয়াতে যে তাদেরকে কিছু ভোগ্য বস্তু প্রদান করা হচ্ছে তা এই জন্যে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ঢিল দিয়ে রেখেছেন, যেন তারা দুনিয়ার নগণ্য ভোগ্য বস্তু দ্বারা কিছুটা উপকার লাভ করে। অতঃপর তাদেরকে ভীষণ শাস্তির শিকারে পরিণত করা হবে। এই দুনিয়াটা তো তাদের জন্যে অল্প কয়েক দিনের সুখের জায়গা। এরপর তাদেরকে আল্লাহ পাকের কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেখানে তাদেরকে গ্রহণ করতে হবে কঠিন শাস্তির স্বাদ। এটা হবে তাদের মিথ্যা অপবাদ এবং কুফরীর কারণে।

۞ وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُونِ

📘 Please check ayah 10:73 for complete tafsir.

فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُمْ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 10:73 for complete tafsir.

فَكَذَّبُوهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَمَنْ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَائِفَ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِينَ

📘 ৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেন- হে নবী (সঃ)! মক্কার কাফিরদেরকে, যারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এবং তোমার বিরোধিতা করছে তাদেরকে নূহ (আঃ) এবং তার কওমের ঘটনা শুনিয়ে দাও। তারা তাদের নবীকে অবিশ্বাস করেছিল, ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে কিভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং তাদের সকলকে কিভাবে পানিতে ডুবিয়ে দেন! যাতে পূর্ববর্তীদের এই ভয়াবহ পরিণাম দেখে এ লোকগুলো সতর্ক হয়ে যায় যে, না জানি তাদেরকেও ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হয়। ঘটনা এই যে, নূহ (আঃ) যখন তার কওমকে বললেনঃ “যদি তোমাদের কাছে আমার ঘোরাফেরা এবং সঠিক পথে আনয়নের জন্যে তোমাদেরকে উপদেশ দান তোমাদের নিকট ভারী বোধ হয়, তবে জেনে রেখো যে, আমি এটাকে মোটেই গ্রাহ্য করি না। আমি শুধু আল্লাহর উপর নির্ভর করেছি। তোমাদের কাছে কঠিন বোধ হাক বা নাই হাক, আমি কিন্তু প্রচার কার্য থেকে বিরত থাকতে পারি না। আচ্ছা, তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়ে নিয়েছে, অর্থাৎ তোমাদের উপাস্য প্রতিমাগুলো, সবাই একমত হয়ে যাও এবং নিজেদের চেষ্টার কোনই ক্রটি না করে সবদিক দিয়ে নিজেদেরকে দৃঢ় করে নাও। অতঃপর তোমাদের যদি বিশ্বাস থাকে যে, তোমরাই হক পথে রয়েছে, তবে আমার ব্যাপারে তোমাদের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করে ফেলো এবং আমাকে এক ঘন্টাকালও অবকাশ দিও না। সাধ্যমত তোমরা সবকিছুই করতে পার। তথাপি জেনে রেখো যে, তোমাদেরকে আমি পরওয়া করি না এবং ভীতও নই। কেননা, আমি জানি যে, তোমাদের অনুমানের ভিত্তি কোন কিছুরই উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।”হুদ (আঃ) স্বীয় কওমকে এরূপই বলেছিলেনঃ “আমিও আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাকো যে, তোমরা যে আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিগুলোকে তাঁর শরীক বানিয়ে নিচ্ছ, আমি এ ব্যাপারে তোমাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এখন তোমরা যত পার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকো এবং আমাকে মুহূর্তকালও অবকাশ দিয়ো না। আমার ভরসাস্থল একমাত্র আল্লাহ, যিনি তোমাদেরও প্রতিপালক এবং আমারও প্রতিপালক । যদি তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করতঃ আমার দিক থেকে সরে পড়, তবে এতে আমার কি হবে? এমন তো নয় যে, তোমাদের কাছে আমার কিছু পাওয়ার আশা ছিল, যা নষ্ট হওয়ার কারণে আমার দুঃখ হবে? আমি যে তোমাদের কল্যাণ কামনা করছি তার তো কোন বিনিময় তোমাদের কাছে চাচ্ছি না। আমাকে তো বিনিময় প্রদান করবেন আল্লাহ। আমার প্রতি এই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, আমি যেন সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করি। আর আমার জন্যে এটা অবশ্য কর্তব্য যে, আমি যেন ইসলামের আহকাম কার্যকর করি। কেননা, প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নবীর দ্বীন ইসলামই বটে। নীতি ও পন্থা পৃথক হলেও কোন ক্ষতি নেই। তাওহীদের শিক্ষা তো একই।” আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “তোমাদের প্রত্যেকের জন্যে আমি এক একটি শরীয়ত এবং পৃথক পৃথক নীতি ও পন্থা বানিয়েছি। এই নূহ (আঃ) বলেনঃ “আমাকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই।”ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “যখন তার প্রতিপালক তাকে বললেন, ঈমান আনয়ন কর, তখন সে তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো- আমি ঈমান আনলাম বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি। আর এই হুকুম করে গেছে ইবরাহীম (আঃ) নিজ সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুব (আঃ), হে আমার সন্তানগণ! আল্লাহ এই দ্বীনকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন, সুতরাং তোমরা ইসলাম ছাড়া আর কোন অবস্থায় মরো না।”ইউসুফও (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে রাজত্বের বিরাট অংশ দান করেছেন এবং আমাকে স্বপ্নফল বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন, হে আসমানসমূহের ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা! আপনি আমার কার্য নির্বাহক, দুনিয়াতেও এবং আখিরাতেও, আমাকে পূর্ণ আনুগত্যের অবস্থায় দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিন এবং আমাকে বিশিষ্ট নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”মূসা (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে লোক সকল! যদি তোমরা মুসলিম হও, তবে আল্লাহর উপরই ভরসা কর এবং তাঁরই উপর ঈমান আনয়ন কর।” মূসা (আঃ)-এর যুগের যাদুকরগণ বলেছিলঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যে ধৈর্য আনয়ন করুন এবং ইসলামের অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিন!বিলকিস বলেছিলঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের উপর যুলুম। করেছি এবং সুলাইমান (আঃ)-এর বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।"ইরশাদ হচ্ছে- “আমি যে তাওরাত অবতীর্ণ করেছি তা হচ্ছে হিদায়াত ও নূর। নবী এর মাধ্যমে মুসলিমদের উপর হুকুম কায়েম করে থাকে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি যখন (ঈসার আঃ) হাওয়ারীদের উপর অহী করেছিলাম- তোমরা আমার উপর ও আমার রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন কর, তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।” সর্বশেষ নবী, মানব নেতা মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন এবং আমার মরণ সমস্তই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যেই। তার কোনই অংশীদার নেই, আমি এ কাজেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই হলাম প্রথম মুসলিম।” তিনি বলেনঃ “আমরা নবীদের দল যেন বৈমাত্রেয় ভাই। আমাদের সবারই পিতা একজন এবং মাতা পৃথক পৃথক। অর্থাৎ আমাদের সবারই দ্বীন একই। আর সেটা হচ্ছে এক আল্লাহর ইবাদত করা, যদিও আমাদের শরীয়ত পৃথক পৃথক।”আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “আমি নূহ (আঃ)-কে এবং তার অনুসারীদেরকে নৌকার উপর উঠিয়ে মুক্তি দিয়েছিলাম এবং তাদেরকে যমীনের উপর প্রতিনিধি বানিয়েছিলাম। পক্ষান্তরে যারা তাকে (নূহ আঃ-কে) অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। দেখো, হতভাগ্যদের পরিণাম কি হয়েছিল! হে মুহাম্মাদ (সঃ)! দেখো, আমি মুমিনদেরকে কিরূপে মুক্তি দিয়েছি এবং নাফরমানদেরকে কিভাবে ধ্বংস করেছি!”

ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ بَعْدِهِ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَاءُوهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا بِمَا كَذَّبُوا بِهِ مِنْ قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ نَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِ الْمُعْتَدِينَ

📘 আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নূহ (আঃ)-এর পরে অন্যান্য রাসুলদেরকেও তাদের কওমের নিকট দলীল প্রমাণাদি ও মু'জিযাসহ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পূর্বে যেভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, ওর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকলো। তারা পূর্ববর্তী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে গুনাহগার তো হয়েছিলই, তদুপরি এই রাসূলদের উপরও ঈমান আনলো না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর ও চক্ষুসমূহ হতে বুঝবার ও শুনবার যোগ্যতাই বের করে নিলাম।”আল্লাহ্ পাকের উক্তিঃ “এভাবেই আল্লাহ কাফিরদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দেন।” অর্থাৎ যেমন পূর্ববর্তী উম্মতেরা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছিলাম, অনুরূপভাবে ঐ পথভ্রষ্টদের অনুসরণকারীদের অন্তরসমূহের উপরও আমি মোহর লাগিয়ে দিয়েছি। যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তির শিকারে পরিণত হবে, বিশ্বাস স্থাপন করবে না। ভাবার্থ এই যে, রাসূলদেরকে অস্বীকারকারী উম্মতদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং যারা তাদের উপর ঈমান এনেছে তাদেরকে তিনি মুক্তি দিয়েছেন। এটা নূহ (আঃ)-এর পরবর্তী লোকদের বর্ণনা। আসলে আদম (আঃ)-এর পরের যুগের লোকেরা তো ইসলামের উপরই কায়েম ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে প্রতিমা-পূজার প্রচলন হয়ে যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা তাদের নিকট নূহ (আঃ)-কে প্রেরণ করেন। এ কারণেই তো কিয়ামতের দিন মুমিনরা নূহ (আঃ)-কে বলবেঃ ‘আপনি হচ্ছেন দুনিয়ায় প্রেরিত প্রথম নবী। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর মাঝে দশ শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছিল। তারা সবাই ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “নূহ (আঃ)-এর পরে আমি কতইনা যুগ খতম করেছি!” উপরোল্লিখিত আয়াত দ্বারা আরবের সেই মুশরিকদের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, যারা সর্বশেষ নবী (সঃ)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করছিল। পূর্ববর্তী নবীদেরকে অবিশ্বাসকারীদের শাস্তির কথা যখন আল্লাহ তাআলা এইভাবে উল্লেখ করলেন, তখন কুরায়েশরা যে নবী (সঃ)-কে অবিশ্বাস করছে, এ ব্যাপারে বাস্তবিকই চিন্তা করা উচিত যে, তারা তো আরো বেশী পাপে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ তিনি তো হচ্ছেন সর্বশেষ নবী (সঃ)! তার পরে আর কোন নবী আসবেন না যে, তারা হিদায়াত লাভের আর কোন সুযোগ পাবে।

ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ مُوسَىٰ وَهَارُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ بِآيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُجْرِمِينَ

📘 Please check ayah 10:78 for complete tafsir.

فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِنْدِنَا قَالُوا إِنَّ هَٰذَا لَسِحْرٌ مُبِينٌ

📘 Please check ayah 10:78 for complete tafsir.

قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ

📘 Please check ayah 10:78 for complete tafsir.

قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِينَ

📘 ৭৫-৭৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন, এই রাসূলদের পরে আমি ফিরআউন ও তার দলবলের কাছে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-কে পাঠালাম এবং তাদের সাথে আমার নিদর্শনাবলী, দলীল প্রমাণাদি ও মুজিযাসমূহও ছিল। কিন্তু ঐ পাপিষ্ঠ কওম সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য অস্বীকার করে বসে। যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য বিষয়গুলো পৌঁছে গেল, তখন তারা কোন চিন্তা না করেই বলতে লাগলো- এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। তারা যেন নিজেদের অবাধ্যতার উপর শপথই করে বসেছিল। অথচ তাদের নিজেদেরই বিশ্বাস ছিল যে, তারা যা কিছু বলছে প্রকৃতপক্ষে তা মিথ্যা ও অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। যেমন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা অস্বীকার তো করছে বটে, কিন্তু তাদের অন্তর স্বয়ং বিশ্বাস রাখছে যে, ওটা তাদের যুলুম ও অবাধ্যাচরণ। মোটকথা, মূসা (আঃ) তাদের দাবী খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন- সত্য যখন তোমাদের কাছে এসে যাচ্ছে, তখন তোমরা বলছো যে, এটা যাদু ছাড়া কিছুই নয়। অথচ যাদুকররা তো কখনো কল্যাণ ও মুক্তির মুখ দেখতে পারে না।ঐ অবাধ্যরা মূসা (আঃ)-কে বললো- হে মূসা (আঃ)! আপনি তো আমাদের কাছে এজন্যেই এসেছেন যে, আমাদেরকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম থেকে ফিরিয়ে দিবেন, অতঃপর শ্রেষ্ঠত্ব, রাজত্ব এবং বিজয় গৌরব সবই হয়ে যাবে আপনার ও আপনার ভাই হারূন (আঃ)-এর জন্যে।আল্লাহ পাক মূসা (আঃ) ও ফিরআউনের কাহিনী কয়েক জায়গায় বর্ণনা করেছেন। কেননা, এটা হচ্ছে বিস্ময়কর কাহিনী। ফিরআউন পূর্ব হতেই মূসা (আঃ) থেকে আতংকিত ছিল। কিন্তু কি আশ্চার্যজনক ব্যাপার যে, যে ফিরআউন মূসা (আঃ)-কে এতো ভয় করতো, আল্লাহ্ তা'আলা তার কাছেই তাঁকে লালিত পালিত করলেন। রাজকুমাররূপে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কাছে লালিত পালিত হতে থাকলেন। অতঃপর একটা বিপ্লব ঘটে গেল এবং এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে, তিনি ফিরআউনের কাছে আর টিকতে পারলেন না। তাকে তার নিকট থেকে পালিয়ে যেতে হলো। আল্লাহ পাক তাকে নবুওয়াত ও রিসালাত দান করে গৌরবান্বিত করলেন এবং তাকে এতো বড় সম্মান দিলেন যে, স্বয়ং তিনি তাঁর সাথে কথা বললেন। এরপর তিনি তাঁকে ঐ ফিরআউনের কাছেই নবীরূপে প্রেরণ করলেন এবং বলে দিলেন। তাকে গিয়ে বল যে, সে যেন আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং বে-দ্বীনীর পরিবর্তে দ্বীনের উপর চলে । অথচ ফিরআউন সেই সময় বিপুল ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী ছিল। যা হাক, আল্লাহ তাআলার নির্দেশক্রমে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কাছে পয়গাম নিয়ে। আসলেন। ঐ সময় তার ভাই হারূন (আঃ) ছাড়া তার আর কোন সাহায্যকারী ছিল না। ফিরআউন কিন্তু ক্ষমতার গর্বে গর্বিত হয়ে উঠলো এবং তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলো। সে এমন এক দাবী করে বসলো, যার সে মোটেই হকদার ছিল না। বানী ইসরাঈলের মুমিনদেরকে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করলো। এরূপ সংকীর্ণ পরিস্থিতিতেও মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) ফিরআউনের অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে নিলেন। একের পর এক মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে ফিরআউনের বিবাদ ও তর্ক বিতর্ক হতে থাকলো। মূসা (আঃ) এমন এমন নিদর্শন ও মু'জিযা পেশ করতে লাগলেন যে, যা দেখে হতবাক হতে হয় এবং স্বীকার করতে হয় যে, আল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কেউই এরূপ দলীল কখনো পেশ করতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফিরআউন ও তার দলবল এই শপথ করে বসলো যে, তারা কখনো মূসা (আঃ)-কে মানবে না। অবশেষে এমন শাস্তি নেমে আসলো যে, তা রদ করার ক্ষমতা কারো থাকলো না। একদিন ফিরআউন ও তার দলবলকে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হলো এবং এইভাবে ঐ অত্যাচারী কওমের মূলোচ্ছেদ হয়ে গেল।

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ

📘 Please check ayah 10:82 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

📘 ৭-৮ নং আয়াতের তাফসীর: যে দুর্ভাগা কাফিররা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়াকে অস্বীকার করে এবং তাঁর সাথে মুলাকাত হওয়াকে মোটেই বিশ্বাস করে না, শুধু পার্থিব জগতই কামনা করে এবং এই দুনিয়া নিয়েই যাদের আত্মা খুশী থাকে, তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে আলোচনা করেছেন। হাসান (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! এই কাফিররা দুনিয়াকে না শোভনীয় করেছে, না উন্নত করেছে, অথচ এই জীবনের প্রতি সন্তুষ্টও হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন রয়েছে। তারা নিজেদের জীবনের উপর মোটেই চিন্তা গবেষণা করে না। কিয়ামতের দিন এদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর এটা তাদের পার্থিব আমলের সঠিক প্রতিদানও বটে। কেননা, তারা যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সঃ) এবং পরকালকে অস্বীকার করেছে এবং যে অবাধ্যাচরণ ও অপরাধ তারা করেছে তার জন্যে তাদের উপযুক্ত শাস্তি এটাই।

فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ

📘 Please check ayah 10:82 for complete tafsir.

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ

📘 Please check ayah 10:82 for complete tafsir.

وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

📘 ৭৯-৮২ নং আয়াতের তাফসীর: মহান আল্লাহ যাদুকর ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী সূরায়ে আ’রাফে বর্ণনা করেছেন এবং সেখানে এর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। আর এই সূরায় এবং সূরায়ে তাহা ও সূরায়ে শুআরায়ও এটা বর্ণিত হয়েছে। ফিরআউন তার যাদুকরদের বাজে কথন এবং প্রতারণামূলক কলাকৌশলের মাধ্যমে মূসা (আঃ)-এর সুস্পষ্ট সত্যের মুকাবিলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সম্পূর্ণরূপে বিফল মনোরথ হয় এবং সাধারণ সমাবেশে আল্লাহ্ পাকের দলীল প্রমাণাদি ও মু'জিযাসমূহ জয়যুক্ত হয়। সমস্ত যাদুকর সিজদায় পড়ে যায় এবং বলে ওঠে “আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম। যিনি মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-এর প্রতিপালক।" ফিরআউনের তো বিশ্বাস ছিল যে, সে যাদুকরদের সাহায্যে আল্লাহর রাসূলের উপর বিজয় লাভ করবে। কিন্তু সে অকৃতকার্য হয় এবং তার জন্যে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায় । ফিরআউন নির্দেশ দিয়েছিল যে, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে যেন যাদুকরদেরকে একত্রিত করা হয়। ঐ যাদুকররা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “আপনি যে কাজ করতে চান করে ফেলেন। তাদের একথা বলার কারণ ছিল এই যে, ফিরআউন তাদের সাথে অঙ্গীকার করেছিলঃ “তোমরা যদি বিজয় লাভ করতে পার, তবে আমার নৈকট্য লাভ করবে এবং তোমাদেরকে বড় রকমের পুরস্কার দেয়া হবে।” যাদুকররা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “প্রথমে আপনি আপনার কর্মকৌশল দেখাবেন, না আমরাই প্রথমে দেখাবো?” উত্তরে মূসা (আঃ) বললেনঃ “তোমরাই প্রথমে তোমাদের কলাকৌশল প্রদর্শন কর।” এটা বলার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যাতে যাদুকররা কি পেশ করছে তা জনগণ দেখতে পারে। তারপর যেন সত্যের আগমন ঘটে এবং মিথ্যাকে মিথ্যারূপেই প্রমাণ করে। যাদুকররা তাদের যাদুর দড়িগুলো নিক্ষেপ করলো এবং জনগণের চোখে যাদু লাগিয়ে দিলো। তাদের দড়িগুলো সাপ হয়ে গেল, ফলে জনগণ ভয় পেয়ে গেল। তারা মনে করলো যে, যাদুকররা বড় রকমের যাদু পেশ করেছে। মূসা (আঃ)-ও ভয় পেয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক তখন মূসা (আঃ)-কে বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! ভয় করো না। তুমিই জয়যুক্ত হবে। তোমার লাঠিখানা তুমি মাটিতে নিক্ষেপ কর। ওটি অজগর হয়ে গিয়ে তাদের সাপগুলোকে গিলে ফেলবে। যাদুকরদের এই কর্মকৌশল তো যাদু ছাড়া কিছুই নয়। যাদুকররা কোনক্রমেই সফলতা লাভ করতে পারে না। এ অবস্থায় মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “এটা তো তোমাদের যাদুর খেলা। আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তোমাদের এ কাজকে মিথ্যা প্রমাণিত করবেন।”আল্লাহ পাক বলেন- “আল্লাহ্ ফাসাদকারীদের কাজ সম্পন্ন হতে দেন না। তিনি সত্যকে সত্যরূপেই প্রমাণ করবেন, যদিও পাপাচারীদের কাছে তা অপছন্দনীয় হয়।”ইবনে আবি সুলাইম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নিম্নের আয়াতগুলো আল্লাহ তা'আলার হুকুমে যাদুক্রিয়া থেকে আরোগ্য দানের কাজ করে থাকে। এই আয়াত পড়ে পানিতে ফুঙ্কার দিতে হবে। অতঃপর সেই পানি যাদুকৃত ব্যক্তির মাথায় ঢেলে দিতে হবে। আয়াতগুলো হচ্ছে সূরায়ে ইউনুসের নিম্নের আয়াতঃ (আরবী) পর্যন্ত। অন্য আয়াত হচ্ছেঃ (আরবী) (৭:১১৮) হতে শেষ চার আয়াত পর্যন্ত। আর (আরবী) (২০:৬৯) এই আয়াতটি।

فَمَا آمَنَ لِمُوسَىٰ إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِنْ قَوْمِهِ عَلَىٰ خَوْفٍ مِنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَنْ يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ

📘 আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মূসা (আঃ) যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী পেশ করলেন, তখন ফিরআউনের কওম ও তার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই তার উপর ঈমান আনলো। ঈমান আনয়নকারী নবযুবকদের এই ভয় ছিল যে, জোরপূর্বক তাদেরকে পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কেননা, ফিরআউন ছিল বড়ই দাম্ভিক, ধূর্ত ও উদ্ধত। তার শান-শওকত ও দবদবা ছিল খুই বেশী। তার কওম তাকে অত্যধিক ভয় করতো। বানী ইসরাঈল ছাড়া অন্যান্যদের মধ্য থেকে শুধু ফিরআউনের স্ত্রী, ফিরআউনের বংশধরের মধ্য হতে অন্য একটি লোক, তার কোষাধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী, এই অল্প সংখ্যক লোক ঈমান এনেছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) দ্বারা মূসা। (আঃ)-এর বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ঐ লোকদের সন্তানাদি উদ্দেশ্য যাদের কাছে মূসা (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং তাদের এই সন্তানদেরকে ছেড়ে তারা বহু যুগ পূর্বে মারা গিয়েছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) মুজাহিদ (রঃ)-এর অভিমত পছন্দ করে বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ফিরআউনের কওম নয়, বরং মূসা (আঃ)-এর কওমের বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। কেননা (আরবী) বা সর্বনাম যখন কারো দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় তখন তা নিকটতরের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে। এখানে নিকটতর হচ্ছে (আরবী) শব্দটি, (আরবী) শব্দটি নয়। আর এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, (আরবী) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নবযুবক লোকেরা। আর তারা ছিল বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত। প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, বানী ইসরাঈলের সবাই তো মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করেছিল এবং তাদেরকে সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল। তারা মূসা (আঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিল। পবিত্র গ্রন্থাবলী হতে তারা এই সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ফিরআউনের বন্দীত্ব থেকে মুক্তিদান করবেন এবং তার উপর তাদেরকে করবেন জয়যুক্ত। আর এ কারণেই ফিরআউন যখন এ খবর জানতে পারলো তখন থেকে সে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে লাগলো। মূসা (আঃ) যখন তার কাছে প্রচারক হয়ে আসলেন তখন সে বানী ইসরাঈলের উপর যুলুম করতে শুরু করে। তখন তারা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনার আগমনের পূর্বেও আমাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরেও আমরা অত্যাচারিত হচ্ছি।” মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “কিছুদিন সবর কর। অল্পদিনের মধ্যেই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা কি আমল কর তা তিনি দেখবেন।" কথা যখন এটাই তখন (আরবী) দ্বারা মূসা (আঃ)-এর কওম অর্থাৎ বানী ইসরাঈলকে ছাড়া আর কি উদ্দেশ্য হতে পারে? বানী ইসরাঈল ফিরআউনকে এবং নিজেদের কওমের কোন কোন লোককেও ভয় করতো যে, তারা তাদেরকে পুনরায় কাফির করে দেবে। বানী ইসরাঈলের মধ্যে কারূন ছাড়া অন্য কেউ এরূপ ছিল না যাকে তারা ভয় করতো। কারূন মূসা (আঃ)-এরই কওমের লোক ছিল। কিন্তু সে বিদ্রোহী হয়ে ফিরআউনের দলে মিলে গিয়েছিল।এখন (আরবী)-এর সর্বনামটি বানী ইসরাঈলের দিকে ফিরেছে। কিন্তু যারা বলেন যে, এই সর্বনামটি ফিরআউন ও তার প্রধানদের দিকে ফিরেছে, কেননা, তার প্রধানরাও তারই অনুসারী ছিল, অথবা ফিরআউনের পূর্বে (আরবী) শব্দটি উহ্য রয়েছে, এ জন্যে সর্বনামটি বহুবচন আনা হয়েছে এবং (আরবী) এর স্থলে (আরবী) টি বসানো হয়েছে, অর্থাৎ (আরবী) শব্দের স্থলে (আরবী) শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে, এটা কিয়াস হতে খুবই দূরের কথা। যদিও ইবনে জারীর (রঃ) এ দুটো কথাই লিখেছেন। এসব বর্ণনা এটাই প্রমাণ করে যে, বানী ইসরাঈলের সবাই মুমিন ছিল।

وَقَالَ مُوسَىٰ يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 10:86 for complete tafsir.

فَقَالُوا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 10:86 for complete tafsir.

وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

📘 ৮৪-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে বললেনযদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেই থাকো, তবে একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা কর। আল্লাহ তা'আলা ভরসাকারীদের যিম্মাদার হয়ে যান।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা'আলা ইবাদৃত ও তাওয়াক্কুলকে এক জায়গায় মিলিয়ে বলেছেন। যেমন বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তার উপর ভরসা কর।” (১১:১২৩) অন্যত্র বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তুমি বল-তিনি রহমান, আমরা তাঁর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর উপর ভরসা করেছি।” (৬৭:২৯) আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন প্রতিটি সালাতে কয়েকবার বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।” বানী ইসরাঈল মূসা (আঃ)-এর কথা মেনে নেয় এবং বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই যালিমদের লক্ষ্যস্থল বানাবেন না।” অর্থাৎ আমাদের উপর তাদেরকে সফলতা দান করবেন না। তা না হলে তারা ধারণা করবে যে, তারাই সঠিক পথে রয়েছে এবং বানী ইসরাঈল বাতিল পথে রয়েছে। ফলে তারা আমাদের উপর আরো বেশী যুলুম করবে। হে আমাদের প্রতিপালক! ফিরআউনের লোকদের হাতে আমাদের শাস্তি দিবেন না এবং নিজের শাস্তিতেও আমাদেরকে জড়িত করবেন না। নতুবা ফিরআউনের কওম বলবে যে, যদি লোকগুলো সত্যের উপরই থাকতো তবে কখনো আযাবে জড়িত হতো না এবং আমরা (ফিরাউনের কওম) তাদের উপর জয়যুক্ত হতাম না। হে আল্লাহ! আপনার রহমত ও ইহসানের মাধ্যমে আমাদেরকে এই কাফির কওম হতে মুক্তিদান করুন। এরা হলো কাফির, আর আমরা হলাম মুমিন। আমরা আপনারই উপর ভরসা রাখি।

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَنْ تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ

📘 আল্লাহ তা'আলা বানী ইসরাঈলকে ফিরআউন হতে মুক্তি দেয়ার কারণ বর্ণনায় বলেন, মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-কে আমি হুকুম করলাম- তোমরা তোমাদের কওমকে মিসরে নিয়ে যাও এবং সেখানেই বসতি স্থাপন কর। (আরবী) এর ব্যাপারে মুফাসসিরদের মতানৈক্য রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে-তোমরা নিজেদের ঘরগুলোকেই মসজিদ বানিয়ে নাও। ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, বানী ইসরাঈল ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল। তাই তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন বাড়ীতেই সালাত আদায় করে। এই নির্দেশের ব্যাপারটি ঠিক এইরূপই যে, ফিরআউন এবং তার কওমের পক্ষ থেকে কষ্ট ও বিপদ যখন খুব বেশী আসতে লাগলো, তখন খুব বেশী বেশী করে সালাত পড়ার নির্দেশ দেয়া হলো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা কর।” হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কোন ব্যাপারে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তেন, তখন তিনি সালাত শুরু করে দিতেন। এজন্যেই এই আয়াতে বলা হয়েছে- গৃহকেই মসজিদ মনে করে তোমরা সালাত আদায় করতে থাকো। আর মুমিনদেরকে সওয়াব ও সাহায্যদানের সুসংবাদ দিয়ে দাও।ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ “আমরা ফিরআউনের লোকদের সামনে প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় করতে পারবো না।” তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বাড়ীতেই সালাতের অনুমতি দেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন, বানী ইসরাঈল এই ভয় করতো যে, যদি তারা মসজিদে সালাত আদায় করে তবে ফিরআউন তাদেরকে হত্যা করবে। এজন্যেই তাদেরকে গোপনে বাড়ীতে সালাত আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে- যেন একটি অপরটির সামনে থাকে।

وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَىٰ أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ

📘 Please check ayah 10:89 for complete tafsir.

قَالَ قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

📘 ৮৮-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, ফিরআউন ও তার দলবল যখন সত্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো এবং নিজেদের ভ্রান্তি ও কুফরীর উপরই কায়েম থাকলো এবং যুলুম ও ঔদ্ধত্যপনা অবলম্বন করলো, তখন মূসা (আঃ) আল্লাহকে বললেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি ফিরআউন ও তার লোকদেরকে দুনিয়ার শান-শওকত এবং প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছেন। এর ফলে তো তারা আরো পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেবে।” (আরবী) অর্থাৎ (আরবী) -কে যবর দিয়ে পড়লে অর্থ হবে- হে আল্লাহ! আপনি ফিরআউনকে এই নিয়ামতগুলো দিয়ে রেখেছেন অথচ আপনি জানেন যে, সে ঈমান আনবে না। সুতরাং সে নিজেই পথভ্রষ্ট হবে। আর (আরবী) অর্থাৎ (আরবী)-কে পেশ দিয়ে পড়লে অর্থ হবে- হে আল্লাহ! আপনার ফিরআউনকে দেয়া নিয়ামতগুলো দেখে লোকেরা ধারণা করবে যে, আপনি থাকে ভালবাসেন। আপনি যখন তাকে সুখে শান্তিতে রেখেছেন, তখন ফল যেন এটাই দাড়াবে যে, লোকেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। সুতরাং হে আল্লাহ! তাদের ধন-সম্পদকে ধ্বংস করে দিন। যহ্হাক (রঃ), আবুল আলিয়া (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এরপরে আল্লাহ তা'আলা ফিরআউনের মালধনকে পাথরে পরিণত করেছিলেন। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “আমরা জানতে পেরেছি যে, তার ফসলও পাথরের আকার ধারণ করেছিল এবং চিনি ইত্যাদিও কুচি পাথরে পরিণত হয়েছিল।মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ) উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ)-এর সামনে সূরায়ে ইউনুস পাঠ করেন। যখন তিনি এই আয়াতে পৌঁছেন (আরবী) তখন উমার (রঃ) বলেনঃ “হে আবু হামযা! (আরবী) কি জিনিস?” আবু হামযা উত্তরে বললেনঃ “তাদের মালধন ও আসবাবপত্র পাথরে পরিণত হয়েছিল।” তখন উমার ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) স্বীয় গোলামকে বললেনঃ “থলেটি নিয়ে এসো।” সে থলেটি নিয়ে আসলো যাতে ছোলা ও ডিম রাখা ছিল। দেখা গেল যে, সেগুলো পাথরে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) এটা মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর উক্তি নকল করেছেন। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেন, যেন তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি না দেখা পর্যন্ত ঈমান আনয়ন না করে।” মূসা (আঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে ফিরআউন ও তার কওমের বিরুদ্ধে এই দুআ করেছিলেন। এই ব্যাপারে মূসা (আঃ)-এর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, তাদের মধ্যে সংশোধনের কোন যোগ্যতাই নেই। কাজেই তাদের নিকট থেকে কল্যাণের কোন আশাই করা যায় না। যেমন নূহ (আঃ) বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক! কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না। যদি আপনি তাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে থাকতে দেন, তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে বিভ্রান্তই করবে এবং তাদের শুধু দুষ্কার্যকারী ও কাফির সন্তানই ভূমিষ্ট হবে।” (৭১:২৬) এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ)-এর প্রার্থনা কবুল করে নেন এবং তার ভাই হারূন (আঃ) তাতে আমীন বলেন। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের দুজনের প্রার্থনা কবূল করা হলো এবং ফিরআউনীদের ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এ আয়াতটি এটাই প্রমাণ করছে যে, যদি মুকতাদী ইমামের সূরা ফাতিহার কিরআতের উপর আমীন বলে, তবে সেও স্বয়ং সূরায়ে ফাতিহা পাঠকারী বলে গণ্য হবে।মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ হে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)! যেমন তোমাদের প্রার্থনা কবুল করা হলো, তেমনই তোমরাও আমার হুকুমের উপর সোজা ও দৃঢ় থাকো এবং তা কার্যকরী কর। (আরবী) বলে এটাকেই। কথিত আছে যে, এই প্রার্থনার চল্লিশ বছর পর ফিরআউনকে ধ্বংস করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এই প্রার্থনার চল্লিশ দিন পরেই সে ধ্বংস হয়েছিল।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ

📘 Please check ayah 10:10 for complete tafsir.

۞ وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 10:92 for complete tafsir.

آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ

📘 Please check ayah 10:92 for complete tafsir.

فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً ۚ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ

📘 ৯০-৯২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা ফিরআউন ও তার লোক লশকরের নদীতে নিমজ্জিত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। বানী ইসরাঈল যখন মূসা (আঃ)-এর সাথে মিসর হতে যাত্রা শুরু করে তখন তাদের সংখ্যা ছিল ছয় লাখ। ফিরআউনের লোকদের মধ্যে যে কয়েকজন ঈমান এনেছিল তারা এদের সাথে ছিল না। বানী ইসরাঈল ফিরআউনের কওম কিবতীদের নিকট থেকে বহু সংখ্যক অলংকার ঋণ স্বরূপ নিয়েছিল এবং সেগুলো নিয়েই তারা মিসর হতে বেরিয়ে পড়ে। ফলে ফিরআউনের ক্রোধ খুবই বেড়ে যায়। তাই সে তার কর্মচারীদেরকে তার দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এই নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করে যে, তারা যেন একটি বিরাট বাহিনী গঠন করে। সুতরাং তার আদেশ মোতাবেক এক বিরাট বাহিনী গঠিত হয় এবং তা নিয়ে সে বানী ইসরাঈলের পশ্চাদ্ধাবন করে। আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্য ছিল এটাই। অতএব, ফিরআউনের রাজ্যে যতগুলো ধনাঢ্য ও সম্পদশালী লোক ছিল কেউই তার সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে বাদ পড়লো না। তারা সবাই ফিরআউনের সাথে বেরিয়ে পড়লো। সকালেই তারা বানী ইসরাঈলের নাগাল পেয়ে গেল। উভয় দলের মধ্যে যখন একে অপরকে দেখে নিলো, তখন মূসা (আঃ)-এর সঙ্গীরা তাকে ডাক দিয়ে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আমরা তো প্রায় ধরা পড়েই গেলাম।” এটা ছিল ঐ সময়ের ঘটনা যখন বানী ইসরাঈল নদীর তীরে পৌছে গিয়েছিল এবং ফিরআউন ও তার বাহিনী তাদের পিছনেই ছিল। উভয় দল এমন পর্যায়ে এসে পড়েছিল যে, তাদের মধ্যে প্রায় টক্কর লেগেই যাবে। মূসা (আঃ)-এর লোকেরা তাঁকে বারবার বলতে লাগলোঃ “এখন উপায় কি হবে? ফিরআউনের দলবল থেকে আমরা কিরূপে বাঁচতে পারি? সম্মুখে নদী এবং পিছনে শক্র!” মুসা (আঃ) বললেনঃ “আমাকে তো এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন নদীতে রাস্তা করে দেই। আমরা কখনো ধরা পড়বো না। আমার প্রতিপালকই আমার পরিচালক। যখন নৈরাশ্য শেষ সীমায় পৌছে গেল তখন মহান আল্লাহ নৈরাশ্যকে আশায় পরিবর্তিত করলেন। মূসা (আঃ)-কে তিনি হুকুম করলেনঃ “তোমার লাঠি দ্বারা নদীর পানিতে আঘাত কর।” মূসা (আঃ) তাই করলেন। তখন নদীর পানি পেটে গেল। পানির প্রতিটি খণ্ড এক একটি উঁচু পাহাড়ের রূপ ধারণ করলো। নদীতে বারোটি রাস্তা হয়ে গেল। প্রত্যেক দলের জন্যে হয়ে গেল একটি করে রাস্তা। নদীর মধ্যভাগের সিক্ত মাটিকে শুষ্ক হাওয়া তৎক্ষণাৎ শুকিয়ে দিল। ফলে রাস্তা চলাচলের যোগ্য হয়ে গেল। নদীর রাস্তা সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে গেল। এখন না থাকলো ধরা পড়ার ভয় এবং না থাকলো ডুবে যাওয়ার আশংকা। নদীর পানির প্রাচীরের মধ্যে জানালা হয়ে গিয়েছিল, যাতে প্রতিটি পথের লোক অন্য লোককে দেখতে পায় এবং নিশ্চিত হতে পারে যে, অন্যেরা ধ্বংস হয়ে যায়নি। এভাবে বানী ইসরাঈল নদী পার হয়ে গেল। তাদের শেষ দলটিও যখন নদী পার হয়ে গেল, তখন ফিরআউনের লোক লশকর নদীর এপারে পৌছে গেছে। ফিরআউনের এই সেনাবাহিনীতে শুধু এক লাখ কালো ঘোড়ার আরোহী ছিল। অন্যান্য রং এর অশ্বারোহী তো ছিলই। এর দ্বারা ফিরআউনের সৈন্য সংখ্যার আধিক্যের কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। ফিরআউন এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে ভীষণ আতংকিত হয়ে উঠলো এবং ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, তখন আর মুক্তি লাভের সুযোগ ছিল না। তার ভাগ্যে যা ঘটবার ছিল, তা ঘটে যাওয়ার সময় এসেই পড়েছিল। মূসা (আঃ)-এর দুআ কবুল হয়ে গিয়েছিল। জিবরাঈল (আঃ) একটি ঘোটকীর উপর সওয়ার ছিলেন। তিনি ফিরআউনের ঘোটকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করলেন। তাঁর ঘোটকীকে দেখে ফিরআউনের ঘোড়াটি চিহি চিহি শব্দ করে উঠলো। জিবরাঈল (আঃ) তাঁর ঘোটকীকে নদীতে নামিয়ে দিলেন এবং তা দেখে ঘোড়াটিও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ফিরআউন ওকে থামিয়ে রাখতে পারলো না। বাধ্য হয়ে তাকে নদীতে নামতেই হলো। সে তখন তার বীরত্ব প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তার সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করে বললোঃ “বানী ইসরাঈল আমাদের চেয়ে নদীর মধ্যে প্রবেশ করার বেশী হকদার নয়। সুতরাং তোমরা সবাই নদীতে প্রবেশ কর। রাস্তা তো বানানোই রয়েছে। তার এই উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ শুনে তার সেনাবাহিনী নদীতে নেমে পড়লো । মীকাঈল (আঃ) তাদের সবারই পিছনে ছিলেন এবং তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাদেরকে এভাবে সামনের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন। সবাই যখন নদীর মধ্যে প্রবেশ করলো এবং বানী ইসরাঈল সব পার হয়ে গেল, তখন আল্লাহ তা'আলা নদীকে পরস্পর মিলিয়ে দিলেন। এখন ফিরআউন এবং তার দলবলের কেউই বাঁচলো না। তরঙ্গ উঁচু নীচু হচ্ছিল এবং সেখানে মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফিরআউনের উপর মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। ঐ সময় সে বলে উঠলোঃ “আমি এখন ঈমান আনছি।” কিন্তু বড়ই আফসোস যে, সে এমন সময় ঈমান আনলো, যখন ঈমান আনয়নে কোনই উপকার ছিল না। আল্লাহ পাক বলেনঃ “সে যখন আমার আযাব আসতে দেখল, তখন বলে উঠলো- আমি এক আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং কুফর ও শিরক পরিহার করলাম। কিন্তু আমার শাস্তি দেখার পর ঈমান আনয়নে কোনই লাভ হয় না। আল্লাহ তা'আলার নীতি এটাই। কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।” তাই ফিরআউনের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ “তুমি এখন ঈমান আনছো? অথচ পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তুমি নাফরমানীই করছিলে এবং ফাসাদীদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছিলে।” সে লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করছিল। সে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জনগণের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। সুতরাং এখন তাকে মোটেই সাহায্য করা হবে না। আল্লাহ তা'আলা ফিরআউনের (আরবী) -এ কথাটি স্বীয় নবী (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। এটা ছিল ঐ গায়েবের কথাগুলোর অন্তর্ভুক্ত যার খবর তিনি একমাত্র তাকেই দিয়েছিলেন। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যখন ফিরআউন ঈমানের কালেমাটি মুখে উচ্চারণ করে তখনকার কথা জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেনঃ “ হে আল্লাহর নবী (সঃ)! আমি নদীর কাদা নিয়ে ফিরআউনের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম এই ভয়ে যে, হয়তোবা আল্লাহর রহমত তাঁর গযবের উপর জয়লাভ করবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে যে, জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে। বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনি যদি সেই সময় আমাকে দেখতেন, তবে দেখতে পেতেন যে, ঐ সময় আমি ফিরআউনের মুখের মধ্যে কাদা ভরে দিচ্ছিলাম এই ভয়ে যে, আল্লাহর রহমত তাকে পেয়ে বসে, সুতরাং তিনি হয়তো তাকে ক্ষমা করে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতএব, আজ আমি তোমার মৃতদেহকে উদ্ধার করবো, যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্যে উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাকো।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈলের কতকগুলো লোক ফিরআউনের মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা দরিয়াকে আদেশ করলেন যে, সে যেন ফিরআউনের পোশাক পরিহিত আত্মাহীন দেহকে যমীনের কোন টিলার উপর নিক্ষেপ করে, যাতে জনগণের কাছে ফিরআউনের মৃত্যুর সত্যতা প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ তারা যেন বুঝতে পারে যে, ওটা হচ্ছে ফিরআউনের আত্মবিহীন দেহ। মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রকৃতপক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ লোক আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলী থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে না। কথিত আছে যে, এই ধ্বংস কার্য সংঘটিত হয়েছিল আশুরার দিন (১০ই মুহাররাম)। নবী (সঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করেন তখন তিনি দেখলেন যে, ইয়াহূদীরা ঐ দিন রোযা রেখে থাকে। তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেঃ “এই দিনে মূসা (আঃ) ফিরআউনের উপর জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা ইয়াহূদীদের চাইতে এই রোযা রাখার বেশী হকদার। সুতরাং তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখবে।”

وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ فَمَا اخْتَلَفُوا حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْعِلْمُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

📘 আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নিয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাদেরকে বসবাসের জন্যে উত্তম জায়গা দান করেছি। অর্থাৎ মিসর ও সিরিয়া, যা বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটেই অবস্থিত । আল্লাহ তা'আলা যখন ফিরআউন ও তার দলবলকে ধ্বংস করে দেন। তখন তিনি মিসরের উপর মূসা (আঃ)-এর শাসন পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আর আমি সেই লোকদেরকে, যারা অতিশয় দুর্বল বিবেচিত হতো, সেই ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করে দিলাম যাতে আমি (যাহেরী ও বাতেনী) বরকত রেখেছি; আর তোমার প্রতিপালকের মঙ্গলকর অঙ্গীকার বানী ইসরাঈলের প্রতি পূর্ণ হলো তাদের ধৈর্যধারণের কারণে, আর আমি ধ্বংস করে দিলাম ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের তৈরী কারখানাসমূহ এবং যেসব সুউচ্চ প্রাসাদ তারা নির্মাণ করতে।” অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেনঃ “অবশেষে আমি তাদেরকে (ফিরআউন ও তার কওমকে) বাগানসমূহ ও ঝর্ণাসমূহ হতে বের করে দিলাম। আর ধন-ভাণ্ডারসমূহ এবং উত্তম প্রাসাদ হতেও। (আমি) এইরূপ করলাম; আর তাদের পরে বানী ইসরাঈলকে তৎসমুদয়ের মালিক করে দিলাম।” মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ “তারা ছেড়ে গিয়েছিল কতই না উদ্যান ও ঝর্ণাসমূহ!”বানী ইসরাঈল কিন্তু মূসা (আঃ)-এর কাছে বায়তুল মুকাদ্দাস শহরের জন্যে আবেদন জানায়, যা ইবরাহীম খলীল (আঃ)-এর বাসভূমি ছিল। ঐ সময় বায়তুল মুকাদ্দাস ‘আমালেকা সম্প্রদায়ের অধিকারভুক্ত ছিল। বানী ইসরাঈলকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হলে তারা অস্বীকার করে বসে। আল্লাহ পাক তখন তাদেরকে তীহ ময়দানে হারিয়ে দেন। চল্লিশ বছর ধরে তারা সেখানে উড্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যে হারূন (আঃ) ইন্তেকাল করেন এবং পরে মূসাও (আঃ) মৃত্যুমুখে পতিত হন। অতঃপর বানী ইসরাঈল ইউশা ইবেন নূন (আঃ)-এর সাথে তীহের ময়দান হতে বেরিয়ে পড়েন এবং তাঁর হাতে আল্লাহ তা'আলা বায়তুল মুকাদ্দাস বিজিত করেন। কিছুকাল এটা তার অধিকারে থাকে। তারপর ‘বাখতে নাসার’ তা দখল করে নেয়। এরপর ইউনানী রাজাদের ওর উপর আধিপত্য লাভ হয়। বহুদিন পর্যন্ত ওর উপর এদের শাসন চলতে থাকে । এই সময়ের মধ্যে আল্লাহ তা'আলা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে সেখানে পাঠিয়ে দেন। ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ)-এর সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করে এবং রটনা করে যে, তিনি জনগণের মধ্যে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করছেন। ইউনানী বাদশাহ তাকে ধরে শূলে দেয়ার ইচ্ছা করে। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় একজন হাওয়ারীকে ঈসা (আঃ) মনে করে তারা তাকে ধরে শূলে চড়িয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ তাকে তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়।” অতঃপর ঈসা (আঃ)-এর প্রায় তিনশ’ বছর পর কুসতুনতীন’ নামক একজন ইউনানী বাদশাহ খ্রীষ্টান ধর্ম ককূল করে। কিন্তু সে ছিল একজন দার্শনিক। কেউ বলে যে, ভয়ে সে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল, আবার একথাও বলা হয়েছে যে, ঈসা (আঃ)-এর ধর্মে ফিৎনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বাহানা করে সে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল। খ্রীষ্টান পাদ্রীরা তার নির্দেশক্রমে শরীয়তের নতুন নতুন আইন তৈরী করে নেয়, বিদআত ছড়িয়ে দেয়, ছোট বড় গীজা ও ইবাদতখানা নির্মাণ করে এবং প্রতিমা ও মূর্তি বানিয়ে নেয়। ঐ সময় খ্রীষ্টান ধর্ম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে থাকে। সন্যাসীত্ব ও বৈরাগ্য সৃষ্টি হয়ে গেল এবং ঈসা (আঃ)-এর সত্য ধর্মের বিরোধিতা শুরু হয়ে গেল। প্রকৃত ধর্ম শুধুমাত্র কয়েকজন ধার্মিক লোকের মধ্যেই অবশিষ্ট থাকলো। এখন এরাও বৈরাগীদের আকারে জঙ্গলে ও প্রান্তরে গীর্জা তৈরী করে থাকতে লাগলো। সিরিয়া, জাযীরা এবং রোম দেশের উপর খ্রীষ্টানদের প্রতিপ্রত্তি জমে গেল। ঐ সম্রাটই (কুতুনতীন) কুসতুনতুনিয়া (কনৃস্টান্টিনোপল) ও কামামা শহর স্থাপন করলো। বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যে বায়তুল লাহাম’ ও গীজা নির্মাণ করলো এবং হাওরানের শহর স্থাপন করলো, যেমন বুসরা ইত্যাদি। সে বড় বড় ও মজবুত অট্টালিকাসমূহ নির্মাণ করলো । এখান থেকেই ক্রুশ-পূজার সূচনা হয়, যা সুদূর প্রাচ্য পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ওখানেও গীর্জা নির্মাণ করা হয়। তারা শূকরের মাংস হালাল করে নেয়। দ্বীনের মূল ও শাখার মধ্যে অদ্ভুত অদ্ভুত বিদআত সৃষ্টি হয়। বাদশাহর নির্দেশক্রমে শরীয়তের নতুন নতুন বিধান বানিয়ে নেয়া হয়। এর ব্যাখ্যা খুবই দীর্ঘ। মোটকথা, ঐ শহরগুলোর উপর তাদের কর্তৃত্ব সাহাবীদের যুগ পর্যন্ত চলতে থাকে। অবশেষে বায়তুল মুকাদ্দাস উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর হাতে বিজিত হয়। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য। আল্লাহ পাক বলেন, আমি তাদেরকে আহার করবার জন্যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করেছি। কিন্তু মাযহাব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তারা ঐ ব্যাপারে মতভেদ করতে থাকে। অথচ মাযহাব সম্পর্কে মতভেদ সৃষ্টি করার কোনই কারণ ছিল না। আল্লাহ তাআলা তো সমস্ত কথাই অতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছিলেন।হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াহুদীরা একাত্তরটি দল বানিয়ে নিয়েছিল, আর খ্রীষ্টানরা বানিয়ে নিয়েছিল বাহাত্তরটি দল । আমার উম্মত তেহাত্তরটি দল বানিয়ে নেবে। ওগুলোর মধ্যে শুধু একটি দল মুক্তিপ্রাপ্ত হবে এবং বাকী সবগুলোই হবে জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ একটি দল কোনটি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “যার উপর আমি ও আমার সাহাবীবর্গ রয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম হাকিম (রঃ) তাঁর ‘মুসতাদরিক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তা'আলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি কিয়ামতের দিন ঐ সব বিষয়ের উপর মীমাংসা করবো, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছিল।

فَإِنْ كُنْتَ فِي شَكٍّ مِمَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَءُونَ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكَ ۚ لَقَدْ جَاءَكَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ

📘 Please check ayah 10:97 for complete tafsir.

وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ

📘 Please check ayah 10:97 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ

📘 Please check ayah 10:97 for complete tafsir.

وَلَوْ جَاءَتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ

📘 ৯৪-৯৭ নং আয়াতের তাফসীর: কাতাদা ইবনে আমা (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)! বলেছেনঃ “আমি সন্দেহও করি না এবং আমার জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজনও নেই।এই আয়াতে উম্মতে মুহাম্মাদীকে দ্বীনের উপর অটল থাকার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থ তাওরাত, ইঞ্জীলে নবী (সঃ)-এর গুণাবলীর বর্ণনা বিদ্যমান ছিল। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যারা নবী উম্মী (সঃ)-এর আনুগত্য করে, তারা এর উপর ভিত্তি করেই করে যে, তার গুণাবলীর বর্ণনা তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিখিত পেয়ে থাকে। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক তার উপর ঈমান আনয়ন করে না, অথচ তারা তার সত্যবাদিতা ও সততাকে এমনভাবে জানে ও চিনে, যেমনভাবে চিনে নিজেদের সন্তানদেরকে। তারা ইঞ্জীলের মধ্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে এবং নবী (সঃ)-এর গুণাবলী গোপন করে দেয়। হুজ্জত কায়েম হওয়ার পরেও তারা ঈমান আনে না। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “সত্যের প্রমাণাদি কায়েম হয়ে গেছে, কিন্তু যতই প্রমাণ তাদের কাছে উপস্থিত করা হাক না কেন, তারা ঐ পর্যন্ত ঈমান আনবে , যে পর্যন্ত না আল্লাহর আযাৰ অবলোকন করে। কিন্তু ঐ সময় তাদের ঈমান আনয়নে কোনই লাভ হবে না। কওমের এই পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরই মূসা (আঃ) তাদের উপর বদ দুআ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দিন এবং তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দিন। শাস্তি দেখা ছাড়া তারা ঈমান আনবে না।” অনুরূপভাবে আল্লাহ পাকের উক্তি রয়েছে- “আমি যদি তাদের উপর ফিরিশতাও অবতীর্ণ করি এবং মৃত লোকেরা তাদের সাথে কথাও বলতে থাকে, আর সমস্তই যদি তাদের কাছে জমা করে দেয়া হয়, তবুও তারা ঈমান আনবে না। তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই অজ্ঞ।

فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ آمَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّا آمَنُوا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَىٰ حِينٍ

📘 আল্লাহ তাআলা বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতদের কোন উম্মতেরই সমস্ত লোক ঈমান আনেনি, যাদের কাছে আমি নবী পাঠিয়েছিলাম। হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার পূর্বে যত নবী এসেছিল, সকলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “আফসোস বান্দাদের উপর! তাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা পি না করেছে।” আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “তাদের পূর্বে যাদের কাছেই কোন রাসূল এসেছে, তাকেই তারা যাদুকর অথবা পাগল বলেছে।” অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার পূর্বে যে গ্রামেই আমি কোন রাসূল পাঠিয়েছি, সেখানকারই স্বচ্ছল লোকেরা বলেছে- আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবো।”সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নবীদেরকে আমার সামনে পেশ করা হয়। কোন নবীর সাথে ছিল বড় বড় উম্মতের দল। আবার কোন নবীর সাথে ছিল একটিমাত্র লোক, কোন নবীর সাথে ছিল দু’টি লোক এবং কোন নবীর সাথে একটি লোকও ছিল না।” অতঃপর তিনি মূসা (আঃ)-এর উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন। তারপর তিনি নিজের উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন, যারা পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে নিয়েছিল। মোটকথা ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছাড়া কোন নবীরই কওমের সমস্ত লোক ঈমান আনেনি। ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছিল নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী। আল্লাহর আযাব দেখার পর ভয়ে তারা ঈমান এনেছিল। আল্লাহ তা'আলার আযাব হতে ভয় প্রদর্শন করে নবী ইউনুস (আঃ) নিজেও কওমের মধ্য হতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তখন ঐ লোকগুলোর খুবই দুঃখ হলো। তারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলো এবং অত্যন্ত কান্নাকাটি করলো। নিজেদের শিশু ও গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ে মাঠের দিকে গেল এবং মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলোঃ “হে আল্লাহ! আপনার নবী যে আযাবের খবর দিয়ে আমাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছেন তা দূর করে দিন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সদয় হন এবং যে আযাব সামনে এসে গিয়েছিল তা সরিয়ে নেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ইউনুস (আঃ)-এর কওম যখন ঈমান আনলো, তখন পার্থিব জীবনে আগত আযাব আমি তাদের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম এবং তাদের জীবনকাল পর্যন্ত ঐ আযাব থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম।”ইউনুস (আঃ)-এর কওমের উপর থেকে শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের আযাব সরেছিল কি পারলৌকিক আযাবও সরেছিল এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের শাস্তি সরেছিল। কেননা, এই আয়াতে শুধু এর উপরই আলোকপাত করা হয়েছে। আবার অন্য কেউ কেউ বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “আমি নবীকে এক লক্ষাধিক লোকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা ঈমান আনয়ন করে। তখন আমি একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত তাদেরকে লাভবান করি।” এখানে ঈমান শব্দটি মুতলক বা সাধারণ। এখানে কোন কয়েদ বা বাধ্যবাধকতা নেই। আর মুতলক ঈমান তো পারলৌকিক শাস্তি থেকে মুক্তিদানকারী হয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।কাতাদা (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন যে, আযাব এসে যাওয়ার পর কোন কওম ঈমান আনলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় না। কিন্তু ইউনুস (আঃ) যখন নিজের কওমকে ছেড়ে চলে গেলেন এবং ললাকেরা বুঝতে পারলো যে, এখন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না তখন তাদের অন্তরে তাওবার অনুভূতি জেগে উঠলো। তারা খারাপ কাপড় পরিধান করে নিজেদের অবস্থা খারাপ করে নিলো। অতঃপর তারা পশুগুলোর দল এবং শিশুদের দলকে পৃথক করলো। নিজেদের সাথে তারা পশুগুলোকে এবং শিশুদেরকে নিয়ে গেল। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তারা কান্নাকাটি করলো। আল্লাহ তা'আলা তাদের আন্তরিকতাপূর্ণ নিয়ত এবং তাওবার বিশুদ্ধতা দেখে এসে যাওয়া শাস্তি তাদের উপর থেকে উঠিয়ে নিলেন। ইউনুস (আঃ)-এর কওম মুসিল অঞ্চলের নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী ছিল। ইবনে মাসউদ (রাঃ) (আরবী) কে (আরবী) পড়েছেন। মোটকথা, শাস্তি তাদের মাথার উপর এমনভাবে ঘুরতে লাগলো, যেমনভাবে অন্ধকার রাত্রে মেঘখণ্ড ঘুরতে তাকে। ঐ লোকগুলো তাদের এক আলেমের কাছে গিয়ে বললোঃ “আমাদেরকে এমন একটি দুআ' লিখে দিন যার বরকতে আযাব সরে যায়।” ঐ আলেম নিম্নের দুআটি লিখে দেনঃ (আরবী) অর্থাৎ, “হে জীবিত! যখন কেউ জীবিত নেই। হে জীরিত! মৃতকে জীবিতকারী। হে জীবিত! আপনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই।” এর ফলে আযাব দূর হয়ে যায়। এ সমুদয় কাহিনী সূরায়ে সাফাতের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বর্ণিত হবে।

وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ

📘 Please check ayah 10:100 for complete tafsir.