slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo xhamster/a> jalalive/a>
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الإسراء

(Al-Isra) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

📘 সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরায়ে বাণী ইসরাঈল, সূরায়ে কাহাফ এবং সূরায়ে মারইয়াম সর্বপ্রথম, সর্বোত্তম এবং ফযীলতপূর্ণ সূরা।হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো কখনো নফল রোযা এমনভাবে পর্যায়ক্রমে রেখে যেতেন যে, আমরা মনে মনে বলতাম, সম্ভবতঃ তিনি এই পুরো মাসটি রোযার অবস্থাতেই কাটিয়ে দিবেন। আবার কখনো কখনো মোটেই রোযা রাখতেন না। শেষ পর্যন্ত আমরা ধারণা করতাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এই মাসে রোযা রাখবেনই না। তাঁর অভ্যাস ছিল এই যে, প্রত্যেক রাত্রে তিনি সূরায়ে বাণী ইসরাঈল ও সূরায়ে যুমার পাঠ করতেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তার পবিত্রতা, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি সবকিছুর উপর পুর্ণক্ষমতাবান। তার ন্যায় ক্ষমতা কারো মধ্যে নেই। তিনিই ইবাদতের যোগ্য এবং একমাত্র তিনিই সমস্ত সৃষ্টজীবের লালনপালনকারী। তিনি তাঁর বান্দা অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) একই রাত্রির একটা অংশে মক্কা শরীফের মসজিদ হতে বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যান, যা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) যুগ হতে নবীদের (আঃ) কেন্দ্রস্থল ছিল। এ কারণেই সমস্ত নবীকে (আঃ) সেখানে তাঁর পাশে একত্রিত করা হয় এবং তিনি সেখানে তাঁদেরই জায়গায় তাঁদের ইমামতি করেন। এটা একথাই প্রমাণ করে যে, বড় ইমাম ও অগ্রবর্তী নেতা তিনিই। আল্লাহর দুরূদ ও সালাম তাঁর উপর ও তাঁদের সবারই উপর বর্ষিত হোক।মহান আল্লাহ বলেনঃ এই মসজিদের চতুষ্পৰ্শ আমি ফল-ফুল, ক্ষেতখামার, বাগ-বাগিচা ইত্যাদি দ্বারা বরকতময় করে রেখেছি। আমার এই মর্যাদা সম্পন্ন নবীকে (সঃ) আমার বড় বড় নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করা-ই ছিল আমার উদ্দেশ্য, যেগুলি তিনি ঐ রাত্রে দর্শন করেছিলেন।।আল্লাহ তাআলা তাঁর মু'মিন, কাফির, বিশ্বাসকারী এবং অস্বীকারকারী সমস্ত বান্দার কথা শুনে থাকেন এবং দেখে থাকেন। প্রত্যেককে তিনি ওটাই দেন যার সে হকদার, দুনিয়াতেও এবং আখেরাতেও। মি'রাজ সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে যেগুলি এখন বর্ণনা করা হচ্ছেঃ হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে যখন কা’বাতুল্লাহ শরীফ হতে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই সময় তাঁর নিকট তিনজন ফেরেশতা আগমন করেন, তাঁর কাছে ওয়াহী করার পূর্বে। ঐ সময় তিনি বায়তুল্লাহ শরীফে শুয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম জন জিজ্ঞেস করেনঃ “ইনি এই সবের মধ্যে কে?” মধ্যজন উত্তরে বলেনঃ “ইনি এসবের মধ্যে উত্তম।” তখন সর্বশেষজন বলেনঃ “তা হলে তাঁকে নিয়ে চল।” ঐ রাত্রে এটুকুই ঘটলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে দেখতে পেলেন না। দ্বিতীয় রাত্রে আবার ঐ তিনজন ফেরেশতা আসলেন। ঘটনাক্রমে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ সময়েও ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর ঘুমন্ত অবস্থা এমনই ছিল যে, তাঁর চক্ষুদ্বয় ঘুমিয়েছিল বটে, কিন্তু তাঁর অন্তর ছিল জাগ্রত। নবীদের (আঃ) নিদ্রা এরূপই হয়ে থাকে। ঐ রাত্রে তাঁরা তাঁর সাথে কোন আলাপ আলোচনা করেন নাই। তাঁরা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে যমযম কূপের নিকট শায়িত করেন এবং হযরত জিবরাঈল (আঃ) স্বয়ং তাঁর বক্ষহতে গ্রীবা পর্যন্ত বিদীর্ণ করে দেন এবং বক্ষ ও পেটের সমস্ত জিনিস বের করে নিয়ে যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করেন।যখন খুব পরিষ্কার হয়ে যায় তখন তাঁর কাছে একটা সোনার থালা আনয়ন করা হয় যাতে বড় একটি সোনার পেয়ালা ছিল। ওটা ছিল হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ। ওটা দ্বারা তাঁর বক্ষ ও গলার শিরাগুলিকে পূর্ণ করে দেন। তারপর বক্ষকে শেলাই করে দেয়া হয়। তারপর তাঁকে দুনিয়ার আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তথাকার দরজাগুলির একটিতে করাঘাত করা হয়। ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “কে?” উত্তরে বলা হয়ঃ “জিবরাঈল (আঃ)।” আবার তাঁরা প্রশ্ন করেনঃ “আপনার সাথে কে আছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “আমার সাথে রয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।” পুনরায় তারা জিজ্ঞেস করেনঃ “তঁাকে কি ডাকাহয়েছে?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দেনঃ “হ” এতে সবাই খুবই খুশী হন এবং ‘মারহাবা’ বলে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁকে নিয়ে যান। যমীনে যে আল্লাহ তাআলা কি করতে চান তা আকাশের ফেরেশতারাও জানতে পারেন না। যে পর্যন্ত না তাদেরকে জানানো হয়। দুনিয়ার আকাশের উপর হযরত আদমের (আঃ) সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে রাসূলুল্লাহর (সঃ) পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁকে বলেনঃ “ইনি আপনার পিতা হযরত আদম (আঃ)। তাঁকে সালাম দিন।” তিনি তাঁকে সালাম দেন। হযরত আদম (আঃ) সালামের জবাব দেন এবং মারহাবা বলে অভ্যর্থনা জানান ও বলেনঃ “আপনি আমার খুবই উত্তম ছেলে। সেখানে প্রবাহিত দু'টি নহর দেখে তিনি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “এ নহর দু'টি কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এ দু'টো হলো নীল ও ফোরাতের উৎস। তারপর তাঁকে আসমানে নিয়ে যান। তিনি আর একটি নহর দেখতে পান। তাতে ছিল মনিমুক্তার প্রাসাদ এবং ওর মাটি ছিল খাটি মিশকে আম্বর। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কি নহর?” উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “এটি হচ্ছে নহরে কাওসার। এটা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্যে তৈরী করে রেখেছেন।” এরপর তাঁকে দ্বিতীয় আকাশে নিয়ে যান। তথাকার ফেরেশতাদের সাথেও অনুরূপ কথাবার্তা চলে। তারপর তাঁকে নিয়ে তৃতীয় আকাশে উঠে যান। সেখানকার ফেরেশতাদের সাথেও ঐরূপ প্রশ্ন ও উত্তরের আদান প্রদান হয় যেরূপ প্রথম ও দ্বিতীয় আকাশে হয়েছিল। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) নিয়ে চতুর্থ আকাশে উঠে যান। তথাকার ফেরেশতাগণও অনুরূপ প্রশ্ন করেন ও উত্তর পান। তারপর পঞ্চম অকাশে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও অনুরূপ কথা শোনা যায়।এরপর তাঁরা ষষ্ট আকাশে উঠে যান। সেখানেও এরূপই কথাবার্তা চলে। তারপর সপ্তম আকাশে গমন করেন এবং তথায়ও এরূপই কথাবার্তা হয়। (বর্ণনাকারী হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ প্রত্যেক আকাশে তথাকার নবীদের (আঃ) সাথে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাক্ষাৎ হয়। তিনি তাদের নাম করেছিলেন। যাঁদের নাম আমার স্মরণ আছে তারা হলেনঃ দ্বিতীয় আকাশে হযরত ইদরীস (আঃ), চতুর্থ আকাশে হযরত হারূণ (আঃ), পঞ্চম আকাশে যিনি ছিলেন তাঁর নাম আমার মনে নেই, ষষ্ট আকাশে ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং সপ্তম আকাশে ছিলেন হযরত মূসা (আঃ)। হযরত মুহাম্মদের (সঃ) উপর এবং অন্যান্য সমস্ত নবীর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) এখান হতেও উপরে উঠতে থাকেন তখন হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার ধারণা ছিল যে, আমার চেয়ে বেশী উপরে আপনি আর কাউকেও উঠাবেন না। এখন ইনি (হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। যে কত উপরে উঠাবেন তা একমাত্র আপনিই জানেন।” শেষ পর্যন্ত তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছে যান। অতঃপর তিনি আল্লাহ তাআলার অতি নিকটবর্তী হন। ফলে তাঁদের মধ্যে দু' ধনুকের ব্যবধান থাকে বা তাঁর চেয়েও কম। অতঃপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাঁর কাছে ওয়াহী করা হয়, যাতে তাঁর উম্মতের উপর প্রত্যহ দিনরাত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়। যখন তিনি সেখান হতে নেমে আসেন তখন হযরত মূসা (আঃ) তাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে আপনি কি হুকুম প্রাপ্ত হলেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “দিন রাত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায।” হযরত মূসা (আঃ) এ হুকুম শুনে বললেনঃ “এটা আপনার উম্মতের ক্ষমতার বাইরে। আপনি ফিরে যান এবং কমানোর জন্যে প্রার্থনা করুন।” তাঁর একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈলের (আঃ) দিকে পরামর্শ চাওয়ার দৃষ্টিতে তাকান এবং তিনি ইঙ্গিতে সম্মতি দান করেন। সুতরাং তিনি পুনরায় আল্লাহ তাআলার নিকট গমন করেন এবং স্বস্থানে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! হালকা করে দিন। এটা পালন করা আমার উম্মতের সাধ্য হবে না।” আল্লাহ তাআলা তখন দশ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফিরে আসলেন। হযরত মূসা (আঃ) আবার তাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “কি হলো?” জবাবে তিনি বললেনঃ “দশ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন।” একথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “যান, আরো কমিয়ে আনুন।” তিনি আবার গেলেন। আবার কম করা হলো এবং শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায থাকলো। হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে আবারও বললেনঃ “দেখুন, বাণী ইসরাঈলের মধ্যে আমি আমার জীবন কাটিয়ে এসেছি। তাদের উপর এর চেয়েও কমের নির্দেশ ছিল, তবুও তারা ওর উপর ক্ষমতা রাখে নাই। ওটা পরিত্যাগ করেছে। আপনার উম্মত তো তাদের চেয়েও দুর্বল, দেহের দিক দিয়েও, অন্তরের দিক দিয়েও এবং চক্ষু কর্ণের দিক দিয়েও। সুতরাং আপনি আবার যান এবং আল্লাহ তাআলার নিকট এটা আরো কমানোর জন্যে আবেদন করুন।” অভ্যাস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈলের (আঃ) দিকে তাকালেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে উপরে নিয়ে গেলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট আবেদন জানালেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মতের অন্তর, কর্ণ, চক্ষু এবং দেহ দুর্বল। সুতরাং দয়া করে এটা আরো কমিয়ে দিন” তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলা বললেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! “রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা (আমি আপনার নিকট হাজির আছি)।” আল্লাহ তাআলা বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আমার কথার কোন পরিবর্তন নাই। আমি যা নির্ধারণ করেছি তাই আমি উম্মুল কিতাবে লিখে দিয়েছি। পড়ার হিসেবে এটা পাচই থাকলো, কিন্তু সওয়াবের হিসেবে পঞ্চাশই রইলো।” যখন তিনি ফিরে আসলেন তখন হযরত মূসা (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “প্রার্থনা মঞ্জুর হলো কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হাঁ, কম করা হয়েছে অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্তের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পূর্ণ হয়েছে। প্রত্যেক সৎ কাজের সওয়াব দশগুণ করা হয়েছে।” হযরত মূসা (আঃ) আবার বললেনঃ “আমি বাণী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি। তারা এর চেয়ে হালকা হুকুমকেও পরিত্যাগ করেছে। সুতরাং আপনি আবার গিয়ে প্রতিপালকের কাছে এটা আরো কমানোর আবেদন করুন। এবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাব দিলেনঃ “হে কালীমুল্লাহ (আঃ)! এখন তো আমি আবার তাঁর কাছে যেতে লজ্জা পাচ্ছি।” তখন তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে। তাহলে যান ও আল্লাহর নামে শুরু করে দিন।” অতঃপর তিনি জেগে দেখেন যে, তিনি মসজিদে হারামে রয়েছেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীর কিতাবুত তাওহীদ এবং সিফাতুন্নবী (সঃ)-এর মধ্যেও রয়েছে। এই রিওয়াইয়াতটিই শুরায়েক ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু আবূ নামর (রাঃ) হতেও বর্ণিত আছে। কিন্তু নিজের স্মরণ শক্তির ত্রুটির কারণে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেন নাই)কেউ কেউ এটাকে স্বপ্নের ঘটনা বলেছেন যা এর শেষে এসেছে। এ সব। ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।এই হাদীসের “তিনি আল্লাহর অতি নিকটবর্তী হন, এমনকি তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান থাকে বা তার চেয়েও কম” এই কথাগুলিকে ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকী (রঃ) শুরায়েক নামক বর্ণনাকারীর বাড়াবাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন এবং এতে তিনি একাকী রয়েছেন। এজন্যেই কোন কোন গুরুজন বলেছেন যে, এ রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলাকে দেখেছিলেন। কিন্তু হযরত আয়েশা (রাঃ) , হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) এবং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) আয়াতগুলিকে এর উপর স্থাপন করেছেন যে, তিনি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) দেখেছিলেন। এটাই সঠিকতম উক্তি এবং ইমাম বায়হাকীর (রঃ) কথা সম্পূর্ণরূপে সত্য।অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন হযরত আবু যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি আল্লাহ তাআলাকে দেখেছেন?” তখন উত্তরে তিনি বলেনঃ “তিনি তো নূর! সুতরাং আমি কি করে তাঁকে দেখতে পারি?” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি নূর (জ্যোতি দেখেছি।” যা সূরায়ে নাজমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী।” (৫৩:৮) এর দ্বারা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে, যেমন উক্ত তিনজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। সাহাবীদের মধ্যে কেউই এই আয়াতের এই তাফসীরে তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করেন নাই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার কাছে ‘বুরাক’ আনয়ন করা হয়, যা গাধার চেয়ে উঁচু ও খচ্চরের চেয়ে নীচু ছিল। ওটা ওর এক এক কদম এতো দূরে রাখছিল যত দূর ওর দৃষ্টি যায়। আমি ওর উপর সওয়ার হলাম এবং সে আমাকে নিয়ে চললো। আমি বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে গেলাম এবং ওকে দ্বারের ঐ শিকলের সাথে বেঁধে দিলাম যেখানে নবীগণ বাধতেন। তারপর আমি মসজিদে প্রবেশ করে দু রাক'আত নামায পড়লাম। যখন সেখান থেকে বের হলাম তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে একটি পাত্রে সূরা ও একটি পাত্রে দুধ আনলেন। আমি দুধ পছন্দ করলাম। জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “আপনি ফিরত (প্রকৃতি) পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন।" তারপর উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনার মতই তিনি প্রথম আকাশে পৌঁছলেন, ওর দর উন্মুক্ত করালেন, ফেরেশতাগণ প্রশ্ন করলেন, জবাব পেলেন। প্রত্যেক আকাশেই অনুরূপ হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। প্রথম আকাশে হযরত আদমের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি মারহাবা বললেন এবং কল্যাণের জন্যে দুআ করলেন। দ্বিতীয় আকাশে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। যারা একে অপরের খালাতো ভাই ছিলেন। তাঁরা দুজনও তাঁকে মারহাবা বললেন এবং কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা করলেন। তৃতীয় আকাশে সাক্ষাৎ হলো হযরত ইউসুফের (আঃ) সাথে যাকে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। তিনিও মারহাবা বললেন ও মঙ্গলের দুআ করলেন। তারপর চতুর্থ আকাশে হযরত ইদরীসের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হলো, যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চ মর্যাদায়।” পঞ্চম আকাশে সাক্ষাৎ হয় হযরত হারূণের (আঃ) সাথে। ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসার (আঃ) সাথে। সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) বায়তুল মা'মূরে হেলান দেয়া অবস্থায় দেখতে পান। বায়তুল মা'মূর প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা গমন করে থাকেন, কিন্তু আজ যারা যান তাঁদের পালা কিয়ামত পর্যন্ত আর আসবে না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছেন, যার পাতা ছিল হাতীর কানের সমান এবং যার ফল ছিল বৃহৎ মৃৎপাত্রের মত। ওটাকে আল্লাহ তাআলার আদেশে ঢেকে রেখেছিল। ওর সৌন্দর্যের বর্ণনা কেউই দিতে পারে না। তারপর ওয়াহী হওয়া, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়া এবং হযরত মূসার (আঃ) পরামর্শক্রমে ফিরে গিয়ে কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত পৌঁছার বর্ণনা রয়েছে। তাতে এও রয়েছে যে, পরিশেষে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলা হয়ঃ “যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করে, যদি সে ওটা করতে না পারে তবুও তার জন্যে একটি নেকী লিখা হয়। আর যদি করে ফেলে তবে দশটি নেকী সে পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে কেউ যদি কোন পাপ কার্যের ইচ্ছা করে অতঃপর তা না করে তবে তার জন্যে কোন পাপ লিখা হয় না। আর যদি করে বসে তবে একটি মাত্র পাপ লিখা হয়। (এ হাদীসটি এভাবে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমেও এভাবে বর্ণিত আছে) এ হাদীস দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে, যেই রাত্রে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বায়তুল্লাহ হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয় সেই রাত্রেই মি'রাজও হয় এবং এটা সত্যও বটে এতে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই।মুসনাদে আহমদে রয়েছে যে, বুরাকের লাগামও ছিল এবং জিন বা গদীও ছিল। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সওয়ার হওয়ার সময় যখন সে ছটফট করতে থাকে তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি এটা কি করছো? আল্লাহর কসম! তোমার উপর ইতিপূর্বে এঁর চেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কখনো সওয়ার হয় নাই।” একথা শুনে বুরাক সম্পূর্ণরূপে শান্ত হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন আমাকে আমার মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আমার গমন এমন কতকগুলি লোকের পার্শ্ব দিয়ে হয় যাদের তামার নখ ছিল, যার দ্বারা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বক্ষ নুচতে ছিল।” আমি। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ “এরা কারা?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এরা হচ্ছে ওরাই যারা লোকের গোশত ভক্ষণ করতো (অর্থাৎ গীবত করতো) এবং তাদের মর্যাদার হানি করতো।”সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আমি হযরত মূসার (আঃ) কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করি তখন তাঁকে ওখানে নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায় দেখতে পাই।” হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মাসজিদুল আকসার (বায়তুল মুকাদ্দাসের চিহ্নগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতে শুরু করে দেন। তিনি বলতেই আছেন এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (রাঃ) তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি সত্য বর্ণনাই দিচ্ছেন এবং আপনি চরম সত্যবাদী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল।” হযরত আবু বকর (রাঃ) মাসজিদুল আকসা পূর্বে দেখেছিলেন।মুসনাদে বায্যারে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি শুয়েছিলাম এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং আমার দু’কাঁধের মাঝে হাত রাখেন। আমি তখন দাঁড়িয়ে গিয়ে এক গাছে বসে যাই যাতে পাখীর বাসার মত কিছু ছিল। একটিতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বসে যান। তখন ঐ গাছটি ফুলে উঠলো ও উঁচু হতে শুরু হলো, এমনকি আমি ইচ্ছা করলে আকাশ ছুঁয়ে নিতে পারতাম। আমি তো আমার চাদর ঠিক করছিলাম, কিন্তু দেখলাম যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) অত্যন্ত বিনীত অবস্থায় রয়েছেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহর মারেফাতের জ্ঞানে তিনি আমার চেয়ে উত্তম। আকাশের একটি দরজা আমার জন্যে খুলে দেয়া হলো। আমি এক যবরদস্ত ও জাঁকজমকপূর্ণ নূর দেখলাম যা পর্দার মধ্যে ছিল। আর ওর ঐদিকে ছিল ইয়াকূত ও মণিমুক্তা তারপর আমার কাছে অনেক কিছু ওয়াহী করা হয়।”দালায়েলে বায়হাকীতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীদের জামাআতে বসে ছিলেন, এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করলেন এবং অঙ্গুলি দ্বারা পিঠে ইশারা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর একটি গাছের দিকে চললেন যাতে পাখীর বাসার মত বাসা ছিল। (শেষপর্যন্ত) তাতে এও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন আমাদের দিকে নূর অবতীর্ণ হলো তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। (শেষ পর্যন্ত)।” অতঃপর তিনি বলেনঃ“ এরপর আমার কাছে ওয়াহী আসলো “নবী এবং বাদশাহ হতে চাও, না নবীও বান্দা হয়ে জান্নাতী হতে চাও?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঐভাবেই বিনয়ের সাথে পড়ে ছিলেন, ইশারায় তিনি আমাকে বললেনঃ “বিনয় অবলম্বন করুন।” আমি তখন উত্তরে বললাম :হে আল্লাহ! আমি নবী ও বান্দা হতে চাই।” (দালায়েলে বায়হাকীর এই রিওয়াইয়াত যদি সঠিক হয় তবে সম্ভবতঃ এটা মিরাজের ঘটনা না হয়ে অন্য কোন ঘটনা হবে। কেননা, এতে বায়তুল মুকাদ্দাসের কোন উল্লেখ নেই এবং আকাশের আরোহণেরও কোন কথা নেই। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ)মুসনাদে বায্যারে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলাকে দেখেছিলেন। কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটিও গারীব। (যে সহীহ হাদীসে মাত্র একজন বর্ণনাকারী থাকেন তাকে গারীব হাদীস বলা হয়)তাফসীরে ইবনু জারীরে বর্ণিত আছে যে, বুরাক যখন হযরত জিবরাঈলের (আঃ) কথা শুনে এবং রাসূলুল্লাহকে (সঃ) সওয়ার করিয়ে নিয়ে চলতে শুরু করে তখন তিনি পথের এক ধারে এক বুড়িকে দেখতে পান। এই বুড়িটি কে তা তিনি হযরত জিবরাঈলের (আঃ) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেনঃ চলুন।”আবার চলতে চলতে পথে কোন একজনকে দেখতে পান যে তাঁকে ডাকতে রয়েছে। আরো কিছু দূর গিয়ে তিনি আল্লাহর এক মাখলূখককে দেখতে পান, যে উচ্চ স্বরে বলতে রয়েছেঃ (আরবি) হযরত জিবরাঈল (আঃ) সালামের জবাব দিলেন। দ্বিতীয়বারও এইরূপই ঘটলো এবং তৃতীয়বারও এটাই ঘটলো। শেষ পর্যন্ত তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে। পৌঁছে গেলেন। সেখানে তাঁর সামনে পানি, মদ ও দুধ হাজির করা হলো। তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “আপনি ফিতরাতের (প্রকৃতির) রহস্য পেয়ে গেছেন। যদি আপনি পানির পাত্র নিয়ে পান করতেন তবে আপনার উম্মত ডুবে যেতো। পথভ্রষ্ট হয়ে যেতো।” অতঃপর রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে তাঁর যুগের পূর্ব পর্যন্ত সমস্ত নবীকে পেশ করা হলো। তিনি তাঁদের সবারই ইমামতি করলেন। ঐ রাত্রে সমস্ত নবী নামাযে তাঁর ইকতিদা করলেন। এরপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “যে বুড়িকে আপনি পথের ধারে দেখেছিলেন, তাকে যেন এজন্যেই দেখানো হয়েছিল যে, দুনিয়ার বয়স ততটুকুই বাকী আছে যতটুকু বাকী আছে এই বুড়ীর বয়স। আর যে শব্দের দিকে আপনি মনোযোগ দিয়েছিলেন সে ছিল আল্লাহর শত্রু ইবলীস। যাদের সালামের শব্দ আপনার কাছে পৌঁছেছিল তারা ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসা আঃ)।” (এবৰ্ণনাতেও গারাবাত (অস্বাভাবিকতা) ও নাকারাত বা অস্বীকৃতি রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার জ্ঞানই সবচেয়ে বেশী) অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আমি হযরত জিবরাঈলের (আঃ) সাথে বুরাকে চলি তখন এক জায়গায় তিনি আমাকে বলেনঃ “এখানে নেমে নামায আদায় করে নিন।” নামায শেষে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কোন জায়গা তা জানেন কি?” আমি উত্তরে বলিঃ না। তিনি বলেনঃ “এটা তায়্যেবা অর্থাৎ মদীনা। এটাই হচ্ছে হিজরতের জায়গা।” তারপর তিনি আমাকে আর এক জায়গায় নামায পড়ান এবং বলেনঃ “এটা হচ্ছে ভূরে সাইনা”। এখানে আল্লাহ তাআ’লাহযরত মূসার (আঃ) সাথে কথা বলেন। তারপর তিনি আমাকে আর এক স্থানে নামায পড়ান ও বলেনঃ “এটা হলো বায়তে লাহাম। এখানে হযরত ঈসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ বরেন। এরপর আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছি। সেখানে সমস্ত নবী একত্রিত হন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে ইমাম নির্বাচন করেন। আমি তাঁদের ইমামতি করি। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে আকাশে উঠে যান।” এরপর তাঁর এক এক আকাশে পৌছা এবং বিভিন্ন আকাশে বিভিন্ন নবীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন আমি সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলাম তখন আমাকে একটি নূরানী মেঘে ঢেকে নেয়। তখনই আমি সিজদায় পড়ে গেলাম।”তারপর তার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়া এবং পরে কমে যাওয়া ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। শেষে হযরত মূসার (আঃ) বর্ণনায় রয়েছেঃ “আমার উম্মতের উপর তো মাত্র দু'ওয়াক্ত নামায নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু ওটাও তারা পালন করে নাই।” তাঁর এই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত হতে আরো কমাবার জন্যে গেলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বললেনঃ “আমি তো আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার দিনই তোমার উপর ও তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে রেখেছিলাম। এটা পড়তে পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু সওয়াব হবে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান। সুতরাং তুমি ও তোমার উম্মত যেন এর রক্ষণাবেক্ষণ কর।” আমার তখন দৃঢ় প্রত্যয় হলো যে, এটাই আল্লাহ তাআলার শেষ হুকুম। অতঃপর আবার যখন আমি হযরত মূসার (আঃ) কাছে পৌছলাম তখন আবার তিনি আমাকে আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস হিসেবে এটাই ছিল আল্লাহ তাআলার অকাট্য হুকুম, তাই আমি আর তাঁর কাছে ফিরে গেলাম না।”মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমেও মিরাজের ঘটনাটির সুদীর্ঘ হাদীস রয়েছে। তাতে এও রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদের পার্শ্বে ঐ দরজার কাছে পৌঁছেন যাকে ‘বাবে মুহাম্মদ (সঃ) বলা হয়, ওখানে একটি পাথর ছিল যাতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) অঙ্গুলি লাগিয়েছিলেন, তখন তাতে ছিদ্র হয়ে যায়। সেখানে তিনি বুরাকটি বাঁধেন এবং এর পর মসজিদে প্রবেশ করেন। মসজিদের মধ্যভাগে পৌঁছলে হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি আল্লাহ তাআলার কাছে এই আকাংখা করছেন যে, তিনি আপনাকে হ্র দেখাবেন?” উত্তরে তিনি বলেন, “হ্যা” তিনি তখন বলেনঃ “তা হলে আসুন। এই যে তারা। তাদেরকে সালাম করুন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তারা সাখরার বাম পার্শ্বে বসেছিল। আমি তাদের কাছে গিয়ে সালাম করলাম। সবাই সালামের জবাব দিলো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তোমরা কে? উত্তরে তারা বললোঃ “আমরা হলাম চরিত্রবতী সুন্দরী হুর। আল্লাহর পরহেযগার ও নেককার বান্দাদের আমরা স্ত্রী। যারা পাপকার্য থেকে দুরে থাকে এবং যাদেরকে পবিত্র করে আমাদের কাছে আনয়ন করা হবে। অতঃপর আর তারা কখনো বের হবে না। তারা সদা আমাদের কাছেই অবস্থান করবে। আমাদের থেকে কখনো তারা পৃথক হবে না। চিরকাল তারা জীবিত থাকবে, কখনো মৃত্যু বরণ করবেনা।” অতঃপর আমি তাদের নিকট থেকে চলে আসলাম। সেখানে মানুষ জমা হতে শুরু করলো এবং অল্পক্ষণের মধ্যে বহু লোক জমা হয়ে গেল এবং আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। ইমামতি কে করবেন এজন্যে আমরা অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার হাত ধরে সামনে বাড়িয়ে দিলেন। আমি তাদেরকে নামায পড়ালাম। নামায শেষে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “যাদের আপনি ইমামতি করলেন তাঁরা কে তা জানেন কি? আমি জবাব দিলামঃ না। তখন তিনি বললেনঃ “আপনার এই সব মুকতাদী ছিলেন আল্লাহর নবী যাদেরকে তিনি প্রেরণ করে ছিলেন। তারপর তিনি আমার হাত ধরে অসমানের দিকে নিয়ে চললেন।” এরপর বর্ণনা আছে যে, আকাশের দরজাগুলি খুলিয়ে দেয়া হয়। ফেরেশতাগণ প্রশ্ন করেন, উত্তর পান, দরজা খুলে দেন ইত্যাদি। প্রথম আকাশে হযরত আদমের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বলেনঃ “হে আমার উত্তম পুত্র! (হে উত্তম নবী (সঃ)! আপনার আগমন শুভ হোক।” এতে চতুর্থ আকাশে হযরত ইদরীসের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হওয়ারও উল্লেখ রয়েছে। সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হওয়া এবং হযরত আদমের (আঃ) মত তাঁরও তাকে উত্তম পুত্র ও উত্তম নবী (সঃ) বলে সম্ভাষণ জানানোর বর্ণনা রয়েছে। তারপর আমাকে (নবী সঃ কে) হযরত জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে নিয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি একটি নদী দেখলাম। যাতে মণিমুক্তা, ইয়াকূত ও যবরজদের পানপাত্র ছিল এবং উত্তম ও সুন্দর রঙ-এর পাখী ছিল। আমি বললামঃ এতো খুবই সুন্দর পাখী! আমার একথার জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এটা যারা খাবে তারা আরো উত্তম।” অতঃপর তিনি বললেনঃ “এটা কোন নহর তা জানেন কি?” আমি জবাব দিলামঃ “না”। তিনি তখন বললেনঃ “এটা হচ্ছে। নহরে কাওসার। এটা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করার জন্য রেখেছেন।” তাতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের পানপাত্র ছিল যাতে ইয়াকূত ও মণিমাণিক্য জড়ানো ছিল। ওর পানি ছিল দূধের চেয়েও বেশী সাদা। আমি একটি সোনার পেয়ালা নিয়ে তা ঐ পানি দ্বারা পূর্ণ করে পান করলাম। ঐপানি ছিল মধুর চেয়েও বেশী মিষ্ট এবং মিক আম্বারের চেয়েও বেশী সুগন্ধময়। আমি যখন এর চেয়েও আরো উপরে উঠলাম তখন এক অত্যন্ত সুন্দর রঙ-এর মেঘ এসে। আমাকে ঘিরে নিলো, যাতে বিভিন্ন রঙছিল। জিবরাঈল (আঃ) তো আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং আমি আল্লাহ তাআলার সামনে সিজদায় পড়ে গেলাম।” অতঃপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। তারপর তিনি ফিরে আসেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তো কিছুই বললেন না। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) নামায হালকা করবার জন্যে তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরিয়ে পাঠালেন। মোট কথা, অনুরূপভাবে তাঁর মহান আল্লাহর কাছে বারবার যাওয়া, মেঘের মধ্যে পরিবেষ্টিত হওয়া, নামাযের ওয়াক্ত হালকা হয়ে যাওয়া, হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সাথে মিলিত হওয়া, হযরত মূসার (আঃ) ঘটনার বর্ণনা দেয়া, শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায থেকে যাওয়া ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এরপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে নিয়ে নীচে অবতরণ করেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ যে সব আকাশে আমি গিয়েছি সেখানকার ফেরেশতাগণ আনন্দ প্রকাশ করেছেন এবং হাসিমুখে আমার সাথে মিলিত হয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র একজন ফেরেস্তা হাসেন নাই। তিনি আমার সালামের জবাব দিয়েছেন এবং মারহাবা বলে অভ্যর্থনাও জানিয়েছেন বটে, কিন্তু তার মুখে আমি হাসি দেখি নাই। তিনি কে?” আর তার না হাসার কারণই বা কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “তার নাম মালিক। তিনি জাহান্নামের দারোগা। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি কোন হাস্য করেন। নাই এবং কিয়ামত পর্যন্ত হাসবেনও না। কারণ তাঁর খুশীর এটাই ছিল একটা বড় সময়।” ফিরবার পথে আমি কুরায়েশের এক যাত্রী দলকে খাদ্য সম্ভার নিয়ে যেতে দেখলাম। তাদের সাথে এমন একটি উট দেখলাম যার উপর একটি সাদা ও একটি কালো চটের বস্তা ছিল। যখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) এবং আমি ওর নিকটবর্তী হলাম তখন সে ভয় পেয়ে পড়ে গেল এবং এর ফলে সে খোঁড়া হয়ে গেল। এভাবে আমাকে আমার স্বস্থানে পৌঁছিয়ে দেয়াহলো।” সকালে তিনি জনগণের সামনে মিরাজের ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। মুশরিকরা এ খবর শুনে সরাসরি হযরত আবু বকরের (রাঃ) নিকট গমন করলো এবং তাঁকে বললোঃ “তোমার সঙ্গী কি বলছে শুনেছো কি? সে নাকি আজ রাত্রেই একমাসের পথ ভ্রমণ করে এসেছে।” উত্তরে হযরত আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ “যদি প্রকৃতই তিনি একথা বলে থাকেন তবে তিনি সত্য কথাই বলছেন। এর চেয়ে আরো বড় কথা বললেও তো আমরা তাঁকে সত্যবাদী বলেই জানবো। আমরা জানি যে, তাঁর কাছে মাঝে মাঝে আকাশের খবর এসে থাকে।মুশরিকরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বললোঃ “তুমি আমাদের কাছে তোমার সত্যবাদিতার কোন প্রমাণ পেশ করতে পার কি?” তিনি জবাবে বললেনঃ “হাঁ, পারি। আমি অমুক অমুক জায়গায় কুরায়েশদের যাত্রীদলকে দেখেছি। তাদের একটি উট, যার উপর সাদা ও কালো দু'টি বস্তা ছিল, আমাদেরকে দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং চক্কর খেয়ে পড়ে যায়, ফলে তার পা ভেঙ্গে যায়।” ঐ যাত্রীদল আগমন করলে জনগণ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ “পথে নতুন কিছু ঘটে ছিল কি?” তারা উত্তরে বললোঃ “হাঁ, ঘটেছিল। অমুক উট উমুক জায়গায় এইভাবে খোঁড়া হয়ে যায় ইত্যাদি।” বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) মিরাজের ঘটনাকে সত্য বলে স্বীকার করার কারণেও হযরত আবু বকরের (রাঃ) উপাধি হয় সিদ্দীক। জনগণ রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “আপনি তো হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, সুতরাং তাদের আকৃতির বর্ণনা দিন তো?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হাঁ বলছি। হযরত মূসা (আঃ) গোধূম বর্ণের লোক, যেমন ইদে অম্মািনের লোক হয়ে থাকে। আর হযরত ঈসার (আঃ) অবয়ব মধ্যম ধরণের এবং রঙ ছিল কিছুটা লালিমা যুক্ত। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, তাঁর চুল দিয়ে যেন পানি। ঝরে পড়ছে।” (এই বর্ণনাতেও অস্বাভাবিকতা ও অদ্ভুত বস্তুনিচয় পরিলক্ষিত হয়)মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) শুয়ে ছিলেন (কা’বা শরীফের) হাতীম’ নামক স্থানে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি সখরের উপর শুয়েছিলেন। এমন সময় আগমনকারীরা আগমন করেন। একজন অপরজনকে আদেশ করেন এবং তিনি তাঁর কাছে এসে এখান থেকে এখান। পর্যন্ত বিদীর্ণ করে দেন অর্থাৎ গলার পার্শ্ব থেকে নিয়ে নাভী পর্যন্ত। তারপর উপরে বর্ণিত হাদীসগুলির বর্ণনার মতই বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ষষ্ঠ আকাশে আমি হযরত মূসাকে (আঃ) সালাম করি এবং তিনি সালামের জবাব দেন। অতঃপর বলেনঃ “সৎ ভাই ও সৎ নবীর (সঃ) আগমন শুভ হোক।” আমি সেখান হতে আগে বেড়ে গেলে তিনি কেঁদে ফেলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আপনি কাঁদছেন কেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এই জন্যে যে, যে ছেলেটিকে আমার পরে নবী করে পাঠান হয়েছে তাঁর উম্মত আমার উম্মতের তুলনায় অধিক সংখ্যক জান্নাতে যাবে।” তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট চারটি নহর দেখেন। দুটি যাহির ও দুটি বাতিন। তিনি বলেনঃ “আমি বললামঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! এই চারটি নহর কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “বাতিনী নহর দু’টি হচ্ছে জান্নাতের নহর এবং যাহিরী নহর দুটি হলো নীল ও ফুরাত।” অতঃপর আমার সামনে বায়তুল মা'মূর’ উঁচু করা হলো। তারপর আমার সামনে মদ, দূধ ও মধুর পাত্র পেশ করা হলো। আমি দূধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এটাই হচ্ছে ‘ফিতরত’ (প্রকৃতি) যার উপর আপনি রয়েছেন ও আপনার উম্মত রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায রয়ে গেল এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ (আঃ) আবার তাঁকে আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যেতে বললেন তখন তিনি বললেনঃ “আমি তো এখন আমার প্রতিপালকের কাছে আবেদন করতে লজ্জা পাচ্ছি। এখন আমি সম্মত হয়ে গেলাম এবং এটাই স্বীকার করে নিলাম।” অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হলো। এ সময় আমি মক্কায় ছিলাম (শেষ পর্যন্ত)।” তাতে রয়েছে যে, নবী (সঃ) বলেনঃ “যখন আমি হযরত জিবরাঈলের (আঃ) সাথে দুনিয়ার আকাশে আরোহণ করলাম তখন দেখলাম যে, একটি লোক বসে রয়েছেন এবং তাঁর ডানে ও বামে বড় বড় দল রয়েছে। ডান দিকে তাকিয়ে তিনি হেসে উঠছেন এবং বাম দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলছেন। আমি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? আর তার ডানে ও বামে যারা রয়েছে তারা কারা?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত আদম (আঃ)। আর ওরা হলো তাঁর সন্তান। ডান দিকেরগুলো জান্নাতী এবং বাম দিকের গুলো জাহান্নামী। ওদেরকে দেখে তিনি খুশী হচ্ছেন এবং এদেরকে দেখে কেঁদে ফেলছেন।” এই রিওয়াইয়াতে আছে যে, ৬ষ্ঠ আকাশে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাতে আছে যে, তিনি বলেনঃ “সপ্তম আকাশ। হতে আমাকে আরো উপরে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সমান্তরালে পৌঁছে আমি কলমের লিখার শব্দ শুনতে পাই।” তাতে আছে যে, নবী (সঃ) বলেনঃ “হযরত মূসার (আঃ) পরামর্শ অনুযায়ী যখন আমি নামাযের ওয়াক্ত হালকা করাবার জন্যে আবার আল্লাহ তাআলার নিকট গমন করলাম তখন তিনি অর্ধেক মাফ করলেন। আবার গেলাম। এবারও তিনি অর্ধেক ক্ষমা করলেন, পুনরায় গেলে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত হয়।” ওতে রয়েছে যে, তিনি বলেনঃ “সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আমি জান্নাতে পৌঁছি যেখানে খাটি মণিমুক্তার তাঁবু ছিল এবং যেখানকার মাটি ছিল খাঁটি মি আম্বার।” হযরত শাকীক (রঃ) হযরত আবু যারকে (রাঃ) বলেনঃ “যদি আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) দেখতাম তবে কমপক্ষে তাঁকে একটি কথা অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম।” তখন হযরত আবু যার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “সেই কথাটি কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “তিনি আল্লাহ তাআলাকে দেখেছিলেন কিনা এই কথাটি।” একথা শুনে হযরত আবু যার (রাঃ) বলেনঃ “একথা আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমি তার নূর (আলো) দেখেছিলাম। তাকে আমি কিরূপে দেখতে পারি?” (এই পূর্ণ হাদীসটি সহীহ বুখারীর ‘কিতাবুস সালাত -এর মধ্যেও বর্ণিত হয়েছে এবং যিকরে বানী ইসরাঈলের মধ্যেও আছে। ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ মুসলিম গ্রন্থে কিতাবুল ঈমান’-এর মধ্যে এটা বর্ণনা করেছেন)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তো নূর। সুতরাং আমি তাঁকে কি করে দেখতে পারি?” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি মিরাজের ঘটনাটি যখন জনগণের কাছে বর্ণনা করি এবং কুরায়েশরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, ঐ সময় আমি হাতীমে দাঁড়িয়েছিলাম। আল্লাহ তাআলা বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার চোখের সামনে এনে ধরলেন এবং ওটাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে দিলেন। এখন তারা যে নিদর্শনগুলি সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, সেগুলির উত্তর আমি সঠিকভাবে দিয়ে যাচ্ছিলাম।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসে হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ফিরে এসে জনগণের সামনে তিনি এ ঘটনাটি বর্ণনা করলে যারা তার সাথে নামায পড়েছিল তারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কুরায়েশ কাফিরদের দল তৎক্ষণাৎ দৌড়ে হযরত আবু বকরের (রাঃ) নিকট গমন করে এবং বলেঃ “দেখো, আজ তোমার সাথী (নবী সঃ) কি এক বিস্ময়কর কথা বলছে! বলছে যে, সে নাকি এক রাত্রেই রায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছে ও ফিরে এসেছে!” একথা শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ “যদি তিনি একথা বলে থাকেন তবে সত্যিই তিনি এভাবে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তারা তখন বললোঃ “তাহলে তুমি এটাও বিশ্বাস করছো যে, সে রাত্রে বের হলো এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই সিরিয়া হতে মক্কায় ফিরে আসলো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ এর চেয়েও আরো বড় ব্যাপার আমি এর বহু পূর্ব হতেই বিশ্বাস করে আসছি। অর্থাৎ আমি এটা স্বীকার করি যে, তাঁর কাছে আকাশ হতে খবর পৌঁছে থাকে। আর এ সব খবর দেয়ার বাপরে তিনি চরম সত্যবাদী।” ঐ সময় থেকেই তাঁর উপাধি হয় আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) । (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত যার ইবনু জায়েশ (রঃ) বলেনঃ “আমি হযরত হুযাইফার (রাঃ) নিকট (একদা) আগমন করি। ঐ সময় তিনি মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। এ বর্ণনায় তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা চলতে থাকি, শেষ পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে যাই।” এরপর হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন যে, তারা দু'জন (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও হযরত জিবরাঈল (আঃ)) ভিতরে প্রবেশ করেন নাই। একথা শোনা মাত্র আমি বললামঃ এটা ভুল কথা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভিতরেও গিয়েছিলেন এবং ঐ রাত্রে তিনি সেখানে নামাযও পড়েছিলেন। আমার একথা শুনে হযরত হুযাইফা (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার নাম কি? আমি তোমাকে চিনি বটে, কিন্তু নামটা আমার মনে নেই।” উত্তরে আমি বললামঃ আমার নাম যার ইবনু জায়েশ। তিনি তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি এটা কি করে জানতে পারলে যে, (রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের ভিতরে গিয়েছিলেন)?” জবাবে আমি বললামঃ এটা কুরআন কারীমেরই খবর। তিনি তখন বললেনঃ “কুরআন কারীম হতে যে কথা বলে সে তো মুক্তি পেয়েছে! কুরআনের কোন্ আয়াতে এটা রয়েছে, পাঠ করতো?” আমি তখন (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই আয়াতের কোন শব্দের অর্থ এটা হলো যে, তিনি সেখানে নামায পড়েছিলেন? না, না। তিনি সেখানে নামায পড়েন নাই। যদি পড়তেন তবে তোমাদের উপর অনুরূপভাবে তথাকার নামায লিখে দেয়া হতো, যেমন ভাবে বায়তুল্লাহ শরীফের নামায লিখে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর শপথ! তাঁরা দু'জন বুরাকের উপরই ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্যে আকাশের দরজাগুলি খুলে দেয়া হয়। সুতরাং তারা জান্নাত ও জাহান্নাম দেখে। নেন এবং আরো দেখে নেন আখেরাতের ওয়াদাকৃত অন্যান্য সমস্ত জিনিস। তারপর ঐভাবেই ফিরে আসেন। এরপর তিনি খুব হাসলেন এবং বলতে লাগলেনঃ “মজার কথা তো এটাই যে, লোকেরা বলেঃ তিনি সেখানে বুরাক বাঁধেন যেন কোথাও পালিয়ে না যায়, অথচ দৃশ্য ও অদৃশ্যের খবর রাখেন যিনি সেই মহান আল্লাহ ঐ বুরাককে রাসূলুল্লাহর (সঃ) আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছিলেন।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ জনাব! বুরাক কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “বুরাক হলো দীর্ঘ অবয়বু বিশিষ্ট সাদা রঙ-এর একটি জন্তু, যা এক একটি পা এতো দূরে রাখে যত দূর দৃষ্টি যায়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। তবে এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, হযরত হুযাইফার (রাঃ) বর্ণিত এই হাদীসের উপর অগ্রগণ্য হচ্ছে ঐ হাদীসগুলি যেগুলি দ্বারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায পড়া সাব্যস্ত হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)একবার সাহীবগণ (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মি'রাজের ঘটনা বর্ণনা করার আবেদন জানান। তখন প্রথমতঃ তিনি (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন, এবং বলেনঃ “এশার নামাযের পর আমি মসজিদে শুয়েছিলাম এমতাবস্থায় এক আগমনকারী আগমন করে আমাকে জাগ্রত করেন। আমি উঠে বসলাম কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলাম না। তবে জানোয়ারের মত একটা কি দেখলাম এবং গভীর ভাবে দেখতেই থাকলাম। অতঃপর মসজিদ হতে বেরিয়ে দেখতে পেলাম যে, একটা বিস্ময়কর জন্তু দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাদের জন্তগুলির মধ্যে খচ্চরের সঙ্গে ওর কিছুটা সাদৃশ্য ছিল। ওর কান দুটি ছিল উপরের দিকে উথিত ওদোদুল্যমান। ওর নাম হচ্ছে বুরাক। আমার পূর্ববর্তী নবীরাও (আঃ) এরই উপর সওয়ার হয়ে এসেছেন। আমি ওরই উপর সওয়ার হয়ে চলতেই রয়েছি এমন সময় আমার ডান দিক থেকে একজন ডাক দিয়ে বললোঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমার দিকে তাকাও, আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো।” কিন্তু আমি না জবাব দিলাম, না দাঁড়ালাম। এরপর কিছু দূর গিয়েছি এমন সময় বাম দিক থেকেও ডাকের শব্দ আসলো। কিন্তু এখানেও আমি থামলাম না এবং জবাবও দিলাম না। আবার কিছু দূর অগ্রসর হয়ে দেখি যে, একটি স্ত্রীলোক দুনিয়ার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে এবং কামউদ্দীপনা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেও আমাকে বললোঃ “আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। কিন্তু আমি তার দিকে ভুক্ষেপও করলাম না এবং থামলামও না।” এরপর তাঁর বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছা, দুধের পাত্র গ্রহণ করা এবং হযরত জিবরাঈলের (আঃ) কথায় খুশী হয়ে দু’বার তাকবীর পাঠ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার চেহারায় চিন্তারভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে কেন?” (নবী সঃ বলেনঃ) আমি তখন পথের ঘটনা উঁটির কথা বর্ণনা করলাম। তিনি তখন বলতে শুরু করলেনঃ “প্রথম লোকটি ছিল ইয়াহূদী। যদি আপনি তার কথার উত্তর দিতেন এবং সেখানে দাঁড়াতেন তবে আপনার উম্মত ইয়াহুদী হয়ে যেতো। দ্বিতীয় আহ্বানকারী ছিল খৃষ্টান। যদি আপনি সেখানে থেমে তার সাথে কথা বলতেন তবে আপনার উম্মত খৃস্টান হয়ে যেতো। আর ঐ স্ত্রী লোকটি ছিল দুনিয়া। যদি আপনি সেখানে থেমে তার সাথে কথা বলতেন তবে আপনার উম্মত আখেরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে হতো।” (রাসূলুল্লাহ, সঃ বলেনঃ) অতঃপর আমি এবং হযরত জিবরাঈল (আঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলাম এবং দু’জনই দু'রাকাত করে নামায আদায় করলাম। তারপর আমাদের সামনে মি'রাজ (আরোহণের সিঁড়ি) হাজির করা হলো যাতে চড়ে বানী আদমের আত্মাসমূহ উপরে উঠে থাকে। দুনিয়া এইরূপ সুন্দর জিনিস আর কখনো দেখে নাই। তোমরা কি দেখ না যে, মরণান্মুখ ব্যক্তির চক্ষু মরণের সময় আকাশের দিকে উঠে থাকে? এটা দেখে বিস্মিত হয়েই সে ঐরূপ করে থাকে। আমরা দু’জন উপরে উঠে গেলাম। আমি ইসমাঈল নামক ফেরেস্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি দুনিয়ার আকাশের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার অধীনে সত্তর হাজার ফেরেশতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেক ফেরেশতার সঙ্গীয় লশকরী ফেরেশতাদের সংখ্যা হলো এক লাখ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমার প্রতিপালকের লস্করদেরকে শুধুমাত্র তিনিই জানেন।” হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঐ আকাশের দরজা খুলতে বললে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “কে?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “জিবরাঈল (আঃ)।” প্রশ্ন করা হলোঃ “আর কে আছেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।” পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনাকে কি তাঁর নিকট পাঠানহয়েছিল?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হা” সেখানে আমি হযরত আদমকে (আঃ) ঐ আকৃতিতে দেখলাম যে আকৃতিতে ঐ দিন ছিলেন যেই দিন আল্লাহ তাআলা তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সামনে তাঁর সন্তানদের আত্মাগুলি পেশ করা হয়। সৎ লোকদের আত্মাগুলি দেখে তিনি বলেনঃ “আত্মও পবিত্র এবং দেহও পবিত্র। একে ইল্লীনে নিয়ে যাও।” আর অসৎ লোকদের আত্মাগুলি দেখে বলেনঃ আত্মাও অপবিত্র এবং দেহও অপবিত্র। একে সিজ্জীনে নিয়ে যাও।” কিছু দূর গিয়ে দেখি যে, একটি খাঞ্চা রাখা আছে এবং তাতে অত্যন্ত উত্তম ভাজা গোশত রয়েছে আর এক দিকে রয়েছে আর একটি খাঞ্চা। তাতে আছে পচা দুর্গন্ধময় ভাজা গোশত। এমন কতকগুলি লোককে দেখলাম যারা উত্তম গোশতের কাছেও যাচ্ছে না। এবং ঐ পচা দুর্গন্ধময় ভাজা গোশত খেতে। রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ “হে জিবরাঈল (আঃ)! এই লোকগুলি কারা?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এরা হলো আপনার উম্মতের ঐ সব লোক যারা হালাল কে ছেড়ে হারামের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে।” আরো কিছু দূর অগ্রসর হয়ে দেখি যে, কতকগুলি লোকের ঠোট উটের মত। ফেরেস্তারা তাদের মুখ ফেড়ে ফেড়ে ঐ গোশত তাদের মখের মধ্যে ভরে দিচ্ছেন যা। তাদের অন্য পথ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা ভীষণ চীৎকার করছে এবং মহান আল্লাহর সামনে মিনতি করতে রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ “এরা কারা?” জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এরা আপনার উম্মতের ঐসব লোক যারা ইয়াতীমদের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করতো। যারা ইয়াতীমদের মাল অন্যায়ভাবে খায় তারা নিজেদের পেটের মধ্যে আগুন ভরে দিচ্ছে এবং অবশ্য অবশ্যই তারা জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে প্রবেশ করবে।” আরো কিছু দূর গিয়ে দেখি যে, কতকগুলি স্ত্রী লোক নিজেদের বুকের ভরে লটকানো রয়েছে এবং হায়! হায়! করতে আছে। আমার প্রশ্নের উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের ব্যভিচারিণী স্ত্রীলোক।” আর একটু অগ্রসর হয়ে দেখি যে, কতকগুলি লোকের পেট বড় বড় ঘরের মত। যখন উঠতে চাচ্ছে তখন পড়ে যাচ্ছে এবং বার বার বলতে আছেঃ “হে আল্লাহ! কিয়ামত যেন সংঘটিত না হয়।” ফিরআউনী জন্তুগুলি দ্বারা তারা পদদলিত হচ্ছে। আর তারা আল্লাহ তাআলার সামনে হা-হুতাশ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের ঐ সব লোক যারা সূদ খেতো। সূদ খোররা ঐ লোকদের মতই দাড়াবে যাদেরকে শয়তান পাগল করে রেখেছে। আরো কিছু দূর গিয়ে দেখি যে, কতকগুলি লোকের পার্শ্বদেশের গোশত কেটে কেটে ফেরেশতাগণ। তাদেরকে খাওয়াচ্ছেন। আর তাদেরকে তারা বলতে আছেন, “যেমন তোমরা তোমাদের জীবদ্দশায় তোমাদের ভাইদের গোশত খেতে তেমনই এখনো খেতে থাকো।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! এরা কারা? উত্তরে তিনি বললেনঃ “এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের ঐ সব লোক যারা অপরের দোষ অন্বেষণ করে বেড়াতো।”এরপর আমরা দ্বিতীয় আকাশে আরোহণ করলাম। সেখানে আমি একজন অত্যন্ত সুদর্শন লোককে দেখলাম। তিনি সুদর্শন লোকদের মধ্যে ঐ মর্যাদাই রাখেন যেমন মর্যাদা রয়েছে চন্দ্রের তারকারাজির উপর। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “ইনি হলেন আপনার ভাই ইউসুফ (আঃ)।” তাঁর সাথে তাঁর কওমের কিছু লোক রয়েছে। আমি তাদেরকে সালাম করলাম এবং তারা আমার সালামের জবাব দিলেন। তারপর আমরা তৃতীয় আকাশে আরোহণ করলাম। আকাশের দরজা খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) ও হযরত যাকারিয়াকে (আঃ) দেখলাম। তাদের সাথে তাঁদের কওমের কিছু লোক ছিল। আমি তাদেরকে সালাম করলাম এবং তারা আমার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর আমরা চতুর্থ আকাশে উঠলাম। সেখানে হযরত ইদ্রীসকে (আঃ) দেখলাম। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর আমরা পঞ্চম আকাশে আরোহণ করলাম। সেখানে ছিলেন হযরত হারূণ (আঃ)। তাঁর শ্মশ্রুর অর্ধেকটা সাদা ছিল এবং অর্ধেকটা কালো ছিল। তাঁর শ্মশ্রু ছিল অত্যন্ত লম্বা, তা প্রায় নাভী পর্যন্ত লটকে গিয়েছিল। আমার প্রশ্নের উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “ইনি হচ্ছেন তাঁর কওমের মধ্যে হৃদয়বান ব্যক্তি হযরত হারূণ ইবনু ইমরান (আঃ)। তাঁর সাথে তাঁর কওমের একদল লোক ছিল। তারাও আমার সালামের উত্তর দেন। তারপর আমরা আরোহণ করলাম ষষ্ঠ আকাশে। সেখানে আমার সাক্ষাৎ হলো হযরত মূসা ইবনু ইমরানের (আঃ) সঙ্গে। তিনি গোধুম বর্ণের লোক ছিলেন। তার চুল ছিল খুবই বেশী। দু’টো জামা পরলেও চুল তা ছড়িয়ে যেতো। মানুষ বলে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমার বড় মর্যাদা রয়েছে, অথচ দেখি যে, এর মর্যাদা আমার চেয়েও বেশী। আমি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, ইনি হচ্ছেন হযরত মূসা ইবনু ইমরান (রাঃ) । তার পার্শ্বেও তার কওমের কিছু লোক ছিল। তিনিও আমার সালামের জবাব দিলেন। তারপর আমরা সপ্তম আকাশে উঠলাম। সেখানে আমি আমার পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলকে (আঃ) দেখলাম। তিনি স্বীয় পৃষ্ঠ বায়তুল মা'মূরে লাগিয়ে দিয়ে বসে রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ। জিজ্ঞেস করে আমি তাঁর নামও জানতে পারলাম। আমি সালাম করলাম এবং তিনি জবাব দিলেন। আমি আমার উম্মতকে দু'ভাগে। বিভক্ত দেখলাম। অর্ধেকের কাপড় ছিল বকের মত সাদা এবং বাকী অর্ধেকের কাপড় ছিল অত্যন্ত কালো। আমি বায়তুল মামুরে গেলাম। সাদা পোশাক যুক্ত লোকগুলি সবাই আমার সাথে গেল এবং কালো পোশাকধারী লোকদেরকে আমার সাথে যেতে দেয়া হলো না। আমরা সবাই সেখানে নামায পড়লাম। তারপর সবাই সেখান হতে বেরিয়ে আসলাম। এই বায়তুল মামুরেই প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা নামায পড়ে থাকেন। কিন্তু যারা একদিন নামায পড়েছেন তাঁদের পালা কিয়ামত পর্যন্ত আসবে না। অতঃপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় উঠিয়ে নেয়া হলো। যার প্রত্যেকটি পাতা এতো বড় যে, আমার সমস্ত উম্মতকে ঢেকে ফেলবে।” তাতে একটি নহর প্রবাহিত ছিল যার নাম সালসাবীল। এর থেকে দু'টি প্রস্রবণ বের হয়েছে। একটি হলো নহরে কাওসার এবং আর একটি নহরে রহমত। আমি তাতে গোসল করলাম। আমার পূর্বাপর সমস্ত পাপ মোচন হয়ে গেল। এরপর আমাকে জান্নাতের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে আমি একটি হুর দেখলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ তুমি কার? উত্তরে সে বললোঃ “আমি হলাম হযরত যায়েদ ইবনু। হারেসার (রাঃ) সেখানে আমি নষ্ট না হওয়া পানি, স্বাদ পরিবর্তন না হওয়া দুধ, নেশাহীন সুস্বাদু মদ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মধুর নহর দেখলাম। ওর ডালিম ফল বড় বড় বালতির সমান ছিল। ওর পাখী ছিল তোমাদের এই তক্তা ও কাঠের ফালির মত। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সৎবান্দাদের জন্যে ঐ সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছেন যা কোন চক্ষু দর্শন করে নাই, কোন কর্ণ শ্রবণ করে নাই এবং কোন অন্তরে কল্পনাও জাগে নাই। অতঃপর আমার সামনে জাহান্নাম পেশ করা হলো, যেখানে ছিল আল্লাহ তাআলার ক্রোধ, তার শাস্তি এবং তাঁর অসন্তুষ্টি। যদি তাতে পাথর ও লোহ নিক্ষেপ করা হয় তবে ওগুলিকেও খেয়ে ফেলবে। এরপর আমার সামনে থেকে ওটা বন্ধ করে দেয়া হলো। আবার আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছিয়ে দেয়া হলো এবং ওটা আমাকে ঢেকে ফেললো। এখন আমার মধ্যে এবং তাঁর (হযরত জিবরাঈলের (আঃ) মধ্যে মাত্র দুটি কামান পরিমাণ দূরত্ব থাকলো, এমনকি এর চেয়েও নিকটবর্তী। প্রত্যেক পাতার উপর ফেরেশতা এসে গেলেন। এবং আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হলো। আর আমাকে বলা হলোঃ “তোমার জন্যে প্রত্যেক ভাল কাজের বিনিময়ে দশটি পূণ্য রইলো। তুমি যখন কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করবে, অথচ তা পালন করবে না, তথাপি একটি পূণ্য লিখা হবে। আর যদি করেও ফেল তবে দশটি পূর্ণ লিপিবদ্ধ হবে। পক্ষান্তরে যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা কর, কিন্তু তা না কর তবে একটিও পাপ লিখা হবে না। আর যদি করে বস তবে মাত্র একটি পাপ লিখা হবে।” তারপর হযরত মূসার (আঃ) নিকট আগমন করা এবং তার পরামর্শক্রমে বারবার আল্লাহ তাআলার নিকট গমন করা এবং নামাযের ওয়াক্তের সংখ্যা কম হওয়ার বর্ণনা রয়েছে, যেমন ইতিপূর্বে গত হয়েছে। শেষে যখন পাঁচ ওয়াক্ত বাকী থাকলো তখন ফেরেশতার মাধ্যমে ঘোষণা করা হলোঃ “আমার ফরজ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আমি আমার বান্দার উপর হাল্কা করলাম। তাকে প্রত্যেক সৎ কাজের বিনিময়ে দশটি পূণ্য দান করা হবে।” এর পরেও হযরত মূসা (আঃ) আমাকে আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমি বললামঃ এখন আমাকে আবারও যেতে লজ্জা লাগছে। অতঃপর সকালে তিনি জনগণের সামনে এই সব বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেন যে, তিনি ঐ রাত্রে বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছেছেন, তাঁকে আকাশ সমূহে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি এটা, ওটা দেখেছেন। তখন আবু জেহেল ইবনু হিশাম বলতে শুরু করেঃ “আরে দেখো, বিস্ময়কর কথা শুনো! আমরা উটকে মেরে পিটেও দীর্ঘ এক মাসে বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে থাকি।, আবার ফিরে আসতেও এক মাস লেগে যায়, আর এ বলছে যে, সে দু'মাসের পথ এক রাত্রেই অতিক্রম করেছে!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “শুন, যাওয়ার সময় আমি তোমাদের যাত্রীদলকে অমুক জায়গায় দেখেছিলাম। অমুক রয়েছে অমুক রঙ এর উটের উপর এবং তার কাছে রয়েছে এইসব আসবাবপত্র।” আবু জেহেল তখন বললোঃ খবর তো তুমি দিলে, দেখা যাক, কি হয়?” তখন তাদের মধ্যে একজন বললোঃ “আমি বায়তুল মুকাদ্দাসের অবস্থা তোমাদের চাইতে বেশী ওর ইমারত, ওর আকৃতি, পাহাড় হতে ওটা কাছাকাছি হওয়া ইত্যাদি সবই আমার জানা আছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহর (সঃ) চোখের সামনে হতে পর্দা সরিয়ে ফেললেন এবং যেমন আমার ঘরে বসে বসে জিনিসগুলি দেখে থাকি, অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে হাজির করে দেয়া হলো। তিনি বলতে লাগলেনঃ “ওর গঠনাকৃতি এই প্রকারের, ওর আকার এইরূপ এবং ওটা পাহাড় থেকে এই পরিমাণ নিকটে রয়েছে ইত্যাদি।” ঐলোকটি একথা শুনে বললোঃ “নিশ্চয়ই আপনি সত্য কথাই বলছেন।” অতঃপর সে কাফিরদের সমাবেশের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললোঃ “মুহাম্মদ (সঃ) নিজের কথায় সত্যবাদী।” কিংবা এই ধরনের কোন একটা কথা বলেছিলেন। (এই বর্ণনাটি হাফিয আবু বকর বায়হাকীর (রঃ) কিতাবু দালায়িলিন নুবওয়াহ' নামক গ্রন্থে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে)এই রিওয়াইয়াতটি আরো বহু গ্রন্থে রয়েছে। এর স্বাভাবিকতা, অস্বীকৃতি এবং দুর্বলতা সত্ত্বেও আমরা এটা বর্ণনা করলাম, এর কারণ এই যে, এতে আরো বহু হাদীসের গ্রন্থের প্রমাণাদি বিদ্যমান রয়েছে। আর এজন্যেও যে, ইমাম বায়হাকীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছেঃ হযরত আবুল আযহার ইয়াযীদ ইবনু আবি হাকীম (রঃ) বলেনঃ “একদা স্বপ্নে আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) দেখতে পাই। তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করিঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার উম্মতের মধ্যে এমন একটি লোক রয়েছেন যাকে সুফইয়ান ছাওরী (রঃ) বলা হয়, তার মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি তো নেই? উত্তরে তিনি বলেনঃ “না, তার মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি নেই।” আমি আরো বর্ণনাকারীদের নাম বর্ণনা করে জিজ্ঞেস করলামঃ তারা আপনার হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, আপনি বলেছেনঃ “এক রাত্রে আপনার মি’রাজ হয় এবং আপনি আকাশে দেখেছেন (শেষ পর্যন্ত)”? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হাঁ, এটা ঠিক কথাই বটে।” আবার আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার উম্মতের কতকগুলি লোক আপনার মিরাজের ঘটনায় অনেক বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক কথা বর্ণনা করে থাকে। তিনি বললেনঃ “হা এগুলো হচ্ছে কাহিনী কথকদের কথা।”হযরত শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) বলেনঃ “আমরা নবীকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! (দয়া করে আমাদের সামনে আপনার মিরাজের ঘটনাটি বর্ণনা করবেন কি”? উত্তরে তিনি বললেনঃ “তা হলে শুনো! আমি আমার সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কায় এশার নামায দেরীতে পড়লাম।অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে সাদা রঙ-এর একটি জন্তু আনয়ন করেন, যা গাধার চেয়ে উঁচু ও খচ্চরের চেয়ে নীচু। এরপর আমাকে বলেনঃ “এর উপর আরোহণ করুন!” জন্তুটি একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ওর কানটি ধরে মুচড়িয়ে দেন। তখনই সে শান্ত হয়ে যায়। আমি তখন ওর উপর সওয়ার হয়ে যাই।”এতে মদীনায় নামায পড়া, পরে মাদইয়ানে ঐ বৃক্ষটির পাশে নামায পড়ার কথা বর্ণিত আছে যেখানে হযরত মূসা (আঃ) থেমেছিলেন। তারপর বায়তে লাহামে নামায পড়ার বর্ণনা রয়েছে যেখানে হযরত ঈসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায পড়ার কথা রয়েছে। সেখানে পিপাসার্ত হওয়া, দূধ ও মধুর পাত্র হাজির হওয়া এবং পেট পুরে দুধ পান করার কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ “সেখানে একজন বৃদ্ধ লোক হেলান লাগিয়ে বসে ছিলেন যিনি বললেন যে, ইনি ফিতরত (প্রকৃতি) পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন এবং সুপথ প্রাপ্ত হয়েছেন। অতঃপর আমরা একটি উপত্যকায় আসলাম। সেখানে আমি জাহান্নামকে দেখলাম যা জ্বলন্ত অগ্নির আকারে ছিল। তারপর ফিরবার পথে অমুক জায়গায় আমি কুরায়েশদের যাত্রী দলকে দেখলাম যারা তাদের একটি হারানো উট খোজ করছিল। আমি তাদেরকে সালাম করলাম। তাদের কতক লোক আমার কণ্ঠস্বর চিনেও ফেললো এবং পরস্পর বলাবলি করতে লাগলোঃ “এটা তো একেবারে মুহম্মদের (সঃ) কণ্ঠস্বর।” অতঃপর সকালের পূর্বেই আমি মক্কায় আমার সহচরবৃন্দের কাছে পৌঁছে গেলাম। আমার কাছে হযরত আবূ বকর (রাঃ) আসলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ রাত্রে আপনি কোথায় ছিলেন? যেখানে যেখানে আমার ধারণা হয়েছে সেখানে সেখানে আমি আপনাকে খোঁজ করেছি, কিন্তু কোথাও খুঁজে পাই নাই।” আমি বললামঃ আজ রাত্রে তো আমি বায়তুল মক্কাদ্দাস গিয়েছি ও ফিরে এসেছি।” তিনি বললেনঃ “বায়তুল মুকাদ্দাস তো এখান থেকে এক মাসের পথের ব্যবধানে রয়েছে। আচ্ছা সেখানকার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করুন তো।” তৎক্ষণাৎ ওটাকে আমার সামনে করে দেয়া হয়, যেন আমি ওটা দেখছি। এখন আমাকে যা কিছু প্রশ্ন করা হয়, আমি দেখে তার উত্তর দিয়ে দিই। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর সত্যবাদী রাসূল (সঃ)।” কিন্তু কুরায়েশ কাফিররা বিদ্রুপ করে বলে বেড়াতে লাগলোঃ “দেখো, ইবনু আবি কাবশা’ (সঃ) বলে বেড়াচ্ছে যে, সে এক রাত্রেই বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে ফিরে এসেছে।" আমি বললামঃ শুন! আমি তোমাদের কাছে এর একটা প্রমাণ পেশ করছি। তোমাদের যাত্রীদলকে আমি অমুক জায়গায় দেখে এসেছি। তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল, যা অমুক ব্যক্তি নিয়ে এসেছে। এখন তারা এতোটা ব্যবধানে রয়েছে। এক মনযিল হবে তাদের অমুক জায়গা, দ্বিতীয় মনযিল হবে অমুক জায়গা এবং অমুক দিন তারা এখানে পৌঁছে যাবে। ঐ যাত্রী দলের সাথে সর্বপ্রথমে একটি গোধূম বর্নের উট রয়েছে। ওর উপর পড়ে রয়েছে একটি কালো স্কুল এবং আসবাবপত্রের দুটি কালো বস্তা ওর দু’দিকে বোঝাই করা আছে।” ঐ যাত্রী দলের মক্কায় আগমনের যে দিনের কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন, ঐ দিন যখন আসলো তখন দুপুরের সময় লোকেরা দৌড়িয়ে শহরের বাইরে গেল যে, দেখা যাক, তার কথা কতদূর সত্য? তারা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলো যে, যাত্রীদল আসছে এবং সত্য সত্যই এ উটটিই আগে রয়েছে। (এই হাদীসটি এইভাবে জামে তিরমিযীতে বর্ণিত রয়েছে। এই রিওয়াইয়াতই অন্যান্য কিতাবে দীর্থভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং তাতে বহু অস্বীকার্য (মুনকার) কথাও রয়েছে, যেমন বায়তুল লাহামে তাঁর নামায আদায় করা, হযরত সিদ্দীকে আকবরের (রাঃ) তাঁকে বায়তুল মুকাদ্দাসের নিদর্শন গুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা, ইত্যাদি)হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মিরাজের রাত্রে যখন জান্নাতে তশরীফ আনেন তখন একদিক হতে পায়ের চাপের শব্দ শোনা যায়। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “হে জিবরাঈল (আঃ)! এটা কে?” উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “ইনি হচ্ছেন মুআযযিন হযরত বিলাল (রাঃ) ।” রাসুলল্লাহ (সঃ) মি’রাজ হতে ফিরে এসে বলেনঃ “হে বিলাল (রাঃ) ! তুমি মুক্তি পেয়ে গেছ। আমি এরূপ এরূপ দেখেছি।” তাতে রয়েছে যে, সাক্ষাতের সময় হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “নবী উম্মীর (সঃ) আগমন শুভ হোক।” হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন গোধূম বর্ণের দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট লোক। তার মাথার চুল ছিল কান পর্যন্ত অথবা কান হতে কিছুটা উঁচু।এতে আছে যে, প্রত্যেক নবী প্রথমে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) সালাম দিয়েছিলেন। জাহান্নাম পরিদর্শনের সময় তিনি কতকগুলি লোককে দেখতে পান যে, তারা মৃতদেহ ভক্ষণ করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এরা কারা?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দিলেনঃ “যারা লোকদের গোশত ভক্ষণ করতো অর্থাৎ গীবত করতো।” সেখানেই তিনি একটি লোককে দেখতে পেলেন যে, স্বয়ং আগুনের মত লাল ছিল এবং চোখ ছিল বাঁকা ও টেরা। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “এটা কে?”উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এটাই হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে হযরত সালেহের (আঃ) উষ্ট্রীকে হত্যা করেছিল।মুসনাদে আহমদে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছিয়ে দিয়ে সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে একই রাত্রে মক্কা শরীফে পৌঁছিয়ে দেন এবং এই খবর তিনি জনগণের মধ্যে প্রচার করেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের নিদর্শনগুলি বলে দেন, তাদের যাত্রী দলের খবর প্রদান করেন তখন কতকগুলি লোক বললোঃ “এ সব কথায় আমরা তাঁকে সত্যবাদী মনে করি না।” একথা বলে তারা ইসলাম ধর্ম থেকে ফিরে যায়। এরা সবাই আবু জেহেলের সাথে নিহত হয়। আবু জেহেল বলতে শুরু করেঃ “এই লোকটি (নবী (সঃ) আমাদের যাককুম গাছের ভয় দেখাচ্ছে। খেজুর ও মাখন নিয়ে এসো এবং এ দ’টোকে মিশিয়ে খেয়ে নাও।” এ রাত্রে রাসুলল্লাহ (সঃ) দাজ্জালকে তার। প্রকৃত রূপে দেখেছিলেন, সেটা ছিল চোখের দেখা, স্বপ্নের দেখা নয়। সেখানে তিনি হযরত ঈসা (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ইবরাহীমকেও (আঃ) দেখেছিলেন। দাজ্জালের সাদৃশ্য তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, সে বিশ্রী, ম্লেচ্ছ এবং ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন। তার একটি চক্ষু এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, যেন তারকা এবং চুল এমন যেন কোন গাছের ঘন শাখা। হযরত ঈসার (আঃ) গঠন তিনি এইভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর রঙ সাদা, চুলগুলি কোঁকড়ানো এবং দেহ মধ্যমাকৃতির। আর হযরত মূসার (আঃ) দেহ গোধূম বর্ণের এবং তিনি দৃঢ় ও সুঠাম দেহের অধিকারী। হযরত ইবরাহীম (আঃ) হুবহু আমারই মত। (শেষ পর্যন্ত)।”একটি রিওয়াওয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জাহান্নামের দারোগা মালিককেও দেখেছিলেন ঐ নিদর্শনাবলীর মধ্যে যেগুলি আল্লাহ তাআলা তাকে দেখিয়েছিলেন। অতঃপর তার চাচাতো ভাই হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) পাঠ করেন (আরবি) (৩২:২৩) এই আয়াতটি। হযরত কাতাদা (রঃ) এর নিম্নরূপ তাফসীর করেছেনঃ “মূসার (আঃ) সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে তুমি সন্দেহ পোষণ করো না, আমি তাকে অর্থাৎ মূসাকে (আঃ) বাণী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্যে পাঠিয়েছিলাম।” (এই রিওয়াইয়াতটি সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে) অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মিরাজের রাত্রে এক স্থান হতে আমার কাছে এক অতি উচ্চমানের খুশবৃ’র সুগন্ধ আসছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এই খুশবু কিরূপ? হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বললেনঃ “ফিরাউনের কন্যার পরিচারিকা এবং তার সন্তানদের প্রাসাদ হতে এই সুগন্ধ আসছে। একদা এই পরিচারিকা ফিরাউনের কন্যার চুল আঁচড়াচ্ছিল। ঘটনাক্রমে তার হাত হতে চিরুণী পড়ে যায়। অকস্মাৎ তার মুখ দিয়ে বিসমিল্লাহ বেরিয়ে যায়। তখন শাহজাদী তাকে বলেঃ “আল্লাহ তো আমার আব্বা”। পরিচারিকাটি তার একথায় বললোঃ “না, বরং আল্লাহ তিনিই যিনি আমাকে, তোমাকে এবং স্বয়ং ফিরাউনকে জীবিকা দান করে থাকেন।” শাহজাদী বললোঃ “তাহলে তুমি কি আমার পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকেও তোমার প্রতিপালক স্বীকার করে থাকো?” জবাবে সে বললোঃ “হাঁ, আমার, তোমার এবং তোমার পিতার, সবারই প্রতিপালক হচ্ছেন আল্লাহ তাআলাই।” শাহজাদী এ সংবাদ তার পিতা ফিরআউনের কাছে পৌঁছিয়ে দিলো। এতে ফিরাউন ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে গেল এবং তৎক্ষণাৎ তার দরবারে তাকে ডেকে পাঠালো। সে তার কাছে হাজির হলো। তাকে সে জিজ্ঞেস করলোঃ “তুমি কি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকেও তোমার প্রতিপালক স্বীকার করে থাকো?” উত্তরে সে বললোঃ “হাঁ, আমার এবং আপনার প্রতিপালক আল্লাহ তাআ'লাই বটে।” তৎক্ষণাৎ ফিরাউন নির্দেশ দিলোঃ “তামার যে গাভীটি নির্মিত আছে ওকে খুবই গরম কর। যখন ওটা সম্পূর্ণরূপে আগুনের মত হয়ে যাবে তখন তার ছেলে মেয়েগুলিকে এক এক করে ওর উপর নিক্ষেপ কর। পরিশেষে তাকে নিজেকেও তাতে নিক্ষেপ করবে।” তার এই নিদের্শ অনুযায়ী ওটাকে গরম করা হলো এবং যখন আগুনের মত হয়ে গেল তখন তার সন্তানদেরকে একের পর এক তীতে নিক্ষেপ করতে শুরু করলো। পরিচারিকাটি বাদশাহর কাছে একটি আবেদন জানিয়ে বললোঃ “আমার এবং আমার এই সন্তানদের অস্থিগুলি একই জায়গায় নিক্ষেপ করবেন।” বাদশাহ তাকে বললোঃ “ঠিক আছে, তোমার এই আবেদন মঞ্জুর করা হলো। কারণ, আমার দায়িত্বে তোমার অনেকগুলি হক বা প্রাপ্য বাকী রয়ে গেছে।” যখন তার সমস্ত সন্তানকে তাতে নিক্ষেপ করা হয়ে গেল এবং সবাই ভষ্মে পরিণত হলো তখন তার সর্বকনিষ্ঠ শিশুটির পালা আসলো। এই শিশুটি তার মায়ের স্তনে মুখ লাগিয়ে দুধপান করছিল। ফিরাউনের সিপাহীরা শিশুটিকে যখন তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিলো তখন ঐ সতী সাধ্বী মহিলাটির চোখের সামনে শিশুটির মুখ। ফুটে গেল এবং উচ্চ স্বরে বললোঃ আম্মাজান! দুঃখ করবেন না। মোটেই আফসোস করবেন না। সত্যের উপর জীবন উৎসর্গ করাই তো হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ।” শিশুর এ কথা শুনে মায়ের মনে সবর এসে গেল। অতঃপর ঐ শিশুটিকে তাতে নিক্ষেপ করে দিলো এবং সর্বশেষে মাতাকেও তাতে ফেলে দিলো। এই সুগন্ধ তাদের বেহেৰ্তী প্রাসাদ হতেই আসছে (আল্লাহ তাদের সবারই প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই ঘটনাটি বর্ণনা করার পরেই একথাও বর্ণনা করেন যে, চারটি শিশু দোলনাতেই কথা বলছিল। একটি হচ্ছে এই শিশুটি। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ শিশুটি যে হযরত ইউসুফের (আঃ) পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করেছিল। তৃতীয় হলো ঐ শিশুটি যে আল্লাহর ওয়ালী হযরত জুবায়েজের (রাঃ) পবিত্রতার সাক্ষ্য দিয়েছিল। আর চতুর্থ হলেন হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আঃ)। (এই রিওয়াইয়াতটির সনদ ত্রুটি মুক্ত)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “মিরাজের রাত্রের সকালে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, জনগণের সামনে এ ঘটনা বর্ণনা করলেই তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।” সুতরাং তিনি দুঃখিত মনে এক প্রান্তে বসে পড়লেন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলার শত্রু আবু জেহেল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তাঁকে দেখে সে তাঁর পার্শ্বেই বসে পড়লো এবং উপহাস করে বললোঃ “কোন নতুন খবর আছে কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হাঁ, আছে।” সে তা জানতে চাইলো। তিনি বলেনঃ “ আজ রাত্রে আমাকে ভ্রমণ করানো হয়েছে।” সে প্রশ্ন করলোঃ “ কত দূর পর্যন্ত?” তিনি জবাবে বললেনঃ “বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত।” সে জিজ্ঞেস করলোঃ “ আবার এখন এখানে। বিদ্যমানও রয়েছো?” তিনি উত্তর দিলেনঃ হাঁ।” এখন ঐ কষ্টদায়ক ব্যক্তি মনে মনে বললোঃ “এখনই একে মিথ্যাবাদী বলে দেয়া ঠিক হবে না। অন্যথায় হয়তো জনসমাবেশে সে এ কথা বলবেই না।” তাই, সে তাঁকে জিজ্ঞেস করলোঃ “এই লোকটি! আমি যদি জনগণকে একত্রিত করি তবে তুমি সবারই সামনেও কি একথাই বলবে?” জবাবে তিনি বললেনঃ “কেন বলবো না? সত্য কথা গোপন করার তো কোন প্রয়োজন নেই।” তৎক্ষণাৎ সে উচ্চ স্বরে ডাক দিয়ে বললোঃ “হে বানু কাব -ঈর সন্তানরা! তোমরা এসে পড়।” সবাই তখন দৌড়ে এসে তার পাশে বসে পড়ে। এ অভিশপ্ত ব্যক্তি (আবু জেহেল) তখন তাঁকে বললোঃ “এখন তুমি তোমার কওমের সামনে এ কথা বর্ণনা কর যে কথা আমার সামনে বর্ণনা করছিলে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের সামনে বলতে শুরু করেনঃ “আজ রাত্রে আমাকে ভ্রমণ করানো হয়েছে।” সবাই জিজ্ঞেস করলোঃ “কতদূর পর্যন্ত ভ্রমণ করে এসেছো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত।” জনগণ প্রশ্ন করলোঃ “এখন আবার আমাদের মধ্যেই বিদ্যমানও রয়েছো?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হাঁ”। তাঁরা এ কথা শুনে কেউ তো হাত তালি দিতে শুরু করলো, কেউ বা অতি বিস্ময়ের সাথে নিজের হাতের উপর হাত রেখে বসে পড়লো এবং তার অত্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করতঃ সবাই একমত হয়ে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে ধারণা করলো। আবার কিছুক্ষণ পর তারা তাকে বললোঃ “আচ্ছা, আমরা তোমাকে তথাকার কতকগুলি অবস্থা ও নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, তুমি উত্তর দিতে পারবে কি?” তাদের মধ্যে এমন কতকগুলি লোকও ছিল যারা বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছিল এবং তথাকার অলিগলি সম্পর্কে ছিল পূর্ণ ওয়াকিফহাল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “কি জিজ্ঞেস করবে কর।” তারা জিজ্ঞেস করতে থাকলো এবং তিনি উত্তর দিতে থাকলেন। তিনি বলেনঃ তারা আমাকে এমন কতকগুলি সূক্ষ্ম প্রশ্ন করেছিল যেগুলি আমাকে কিছুটা হতভম্ব করে ফেলেছিল। তৎক্ষণাৎ মসজিদটিকে আমার সামনে করে দেয়া হয়। তখন আমি দেখতে ছিলাম ও বলতে ছিলাম। তোমরা এটাই মনে কর যে, মসজিদটি ছিল আকীলের বাড়ীর পার্শ্বে বা আক্কালের বাড়ীর পার্শ্বে। এটা একারণেই যে, মসজিদের কতকগুলি সিফত বা বিশেষণ আমার স্মরণ ছিল না।” তাঁর এই নিদর্শনগুলির বর্ণনার পর সবাই সমস্বরে বলে উঠলোঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুঁটিনাটি ও সঠিক বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! তিনি একটি কথাও ভুল বলেননি।” (এই হাদীসটি সুনানে নাসাঈ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থেও বিদ্যমান রয়েছে) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মি'রাজ করানো হয় তখন তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন যা সপ্তম আকাশে রয়েছে। যে জিনিস উপরে উঠে তা এখন পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর এখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর যে জিনিস অবতরণ করে তা এখন পর্যন্ত অবতারিত হয় এবং তারপর এখান থেকে গ্রহণ করা হয়। এ গাছের উপর সোনার ফড়িং ছেয়েছিল। রাসূলুল্লাহকে (সঃ) পাঁচ ওয়াক্তের নামায এবং সূর্যয়ে বাকারার শেষের আয়াতগুলি দেয়া হয় এবং এটাও দেয়া হয় যে, তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা শিরক করবে না তাদের কাবীরা গুনাহ গুলিও মাফ করে দেয়া হবে। (এই হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিম প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থেও এই রিওয়াইয়াতটি হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে মি'রাজের সুদীর্ঘ হাদীস রূপে বর্ণিত আছে। হাসান ইবনু আরফা (রঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ খণ্ডে এটা আনয়ন করেছেন। এতে দুর্বলতা রয়েছে)হযরত আবু যারবান (রঃ) বলেনঃ আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদের (রাঃ) পুত্র হযরত আবু উবাইদার (রাঃ) পার্শ্বে বসে ছিলাম, তার পাশে হযরত মুহাম্মদ ইবনু সা'দ ইবনু সা'দ ইবনু আবি অক্কাসও (রাঃ) বিদ্যমান ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ ইবনু সা'দ (রাঃ) হযরত আবু উবাইদাকে (রাঃ) বললেনঃ “আপনি মিরাজ সম্পর্কে আপনার পিতার নিকট থেকে যা শুনেছেন তা বর্ণনা করুন।” তিনি বললেনঃ “না, বরং আপনি যা আপনার পিতার নিকট থেকে শুনেছেন তা আমাদেরকে শুনিয়ে দিন।” তিনি তখন বর্ণনা করতে শুরু করলেন। তাতে এটাও রয়েছে যে, বুরাক যখন উপরের দিকে উঠতো তখন তার হাত-পা সমান হয়ে যেতো। অনুরূপভাবে যখন নীচের দিকে নামতো তখনও সমানই থাকতো, যাতে আরোহীর কোন কষ্ট না হয়। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমরা এক ব্যক্তির পার্শ্ব দিয়ে গমন করলাম যিনি ছিলেন দীর্ঘাকৃতির লোক। চুল ছিল সোজা এবং বর্ণ ছিল গোধূম। তিনি ছিলেন । এমনই যেমন ইদে শিনওয়ার গোত্রের লোক হয়ে থাকে। তিনি উচ্চ স্বরে বলতে ছিলেনঃ “আপনি তাঁকে সম্মান দিয়েছেন এবং তাঁকে মর্যাদা দান করেছেন। আমরা তাকে সালাম করলাম। তিনি উত্তর দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! ইনি কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন আহমদ (সঃ)।” তিনি তখন বললেনঃ “আরবী নবী উম্মীকে (সঃ) মারহাবা, যিনি তাঁর প্রতিপালকের রিসালাত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের উম্মতের মঙ্গল কামনা করেছেন। এরপর আমরা ফিরে আসলাম। আমি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? জবাবে তিনি বললেনঃ “ইনি হলেনঃ মূসা ইবনে ইমরান (আঃ)।” আমি আবার তাঁকে প্রশ্ন করলামঃ এরূপ ভাষায় তিনি কার সাথে কথা বলছিলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ “আপনার ব্যাপারে তিনি আল্লাহ তাআলার সাথে কথা বলেছিলেন।”আমি বললামঃ আল্লাহর সাথে এবং এই ভাষায়? তিনি জবাব দিলেনঃ “হাঁ, তার তেজস্বিতা, সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সম্যক অবগত।” তারপর আমরা একটা গাছের কাছে গেলাম যার ফলগুলি ছিল প্রদীপের মত। ঐ গাছের নীচে এক সম্ভ্রান্ত লোক বসেছিলেন, যার পার্শ্বে অনেক ছোট ছোট শিশু ছিল। হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বললেনঃ “চলুন, আপনার পিতা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) ‘সালামুন আলাইকা (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলুন।” আমরা সেখানে গিয়ে তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জবাব দিলেন। তারপর হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তিনি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তিনি জবাবে বললেনঃ “ইনি হলেন আপনার ছেলে আহমাদ (সঃ)।” তখন তিনি বললেনঃ “নবী উম্মীকে (সঃ) মারহাবা, যিনি তাঁর প্রতিপালকের পয়গাম পূর্ণভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন। আমার ভাগ্যবান ছেলের আজ রাত্রে তাঁর প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ হবে। তাঁর উম্মত সর্বশেষ উম্মত এবং সবচেয়ে দুর্বলও বটে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের উপর এমন কাজের দায়িত্বভার অর্পিত হয় যা তাদের পক্ষে সহজ। হয়।”তারপর আমরা মসজিদে আকসায় পৌঁছলাম। আমি নেমে বুরাককে ঐ হলকায় বাঁধলাম যেখানে নবীরা বাঁধতেন। তারপর আমরা মসজিদের মধ্যে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমি নবীদের পরিচয় পেলাম ও তাঁদের সাথে পরিচিত হলাম। তাঁদের কেউ নামাযে দণ্ডায়মান ছিলেন, কেউ ছিলেন রুকুতে এবং কেউ ছিলেন সিজদাতে। এরপর আমার কাছে মধু ও দুধের পাত্র আনয়ন করা হলো। আমি দুধের পাত্রটি নিয়ে তা পান করলাম। হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার ঋন্ধে হাত রেখে বললেন মুহাম্মদ (সঃ)-এর রবের পশথ! আপনি ফিাতে (প্রকৃতিতে) পৌছে গেছেন। তারপর নামাযের তাকবীর হলো এবং সকলকে আমি নামায পড়ালাম। এরপর আমরা ফিরে আসলাম।” (এর ইসনাদ দুর্বল। মনের মধ্যেও অস্বাভাবিকতা রয়েছে। যেমন নবীদের পরিচয় লাভ করার জন্যে তাঁর প্রশ্ন করা, তারপর তাঁর তাঁদের নিকট থেকে যাওয়ার পর তাঁদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যে প্রশ্নকরণ ইত্যাদি। অথচ সহীহ হাদীস সমূহে রয়েছে যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) প্রথমেই তাঁকে বলে আসছিলেন যে, ইনি হলেন অমুক নবী, যাতে সালামটা হয় পরিচিতির পর। তারপর এতে রয়েছে যে, নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বেই। অথচ বিশুদ্ধ রিওয়াইয়াত সমূহে আছে যে, তাদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল বিভিন্ন আসমানে। তারপর দ্বিতীয়বার অবতরণরত অবস্থায় ফিরবার পথে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে আগমন করেন। তাঁরাও সবাই তার সাথে ছিলেন এবং সেখানে তিনি তাঁদেরকে নামায পড়ান। তারপর বুরাকের উপর সওয়ার হয়ে তিনি মক্কা শরীফ পোঁছেন। এ সব ব্যাপারে সর্বাধিক সটিক জ্ঞানের অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ)হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসার (আঃ) সঙ্গে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাক্ষাৎ হয়। সেখানে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আলোচনা হয়। হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় আমার জানা নেই। এটা হযরত মূসাকে (আঃ) জিজ্ঞেস করুন।” তিনিও এটা না জানার খবর প্রকাশ করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এ ব্যাপারে হযরত ঈসাকে (আঃ) জিজ্ঞেস করা হোক। হযরত ঈসা (আঃ) বলেনঃ “এর সঠিক সংবাদ তো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না, তবে আমাকে এটুকু জানানো হয়েছে যে, দাজ্জাল বের হবে। এ সময় আমার হাতে থাকবে দুটি ছড়ি। সে আমাকে দেখা মাত্রই সীসার মত গলে যাবে। অবশেষে আমার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর গাছ এবং পাথরও বলে উঠবেঃ হে মুসলমান! দেখ, আমার নীচে এক কাফির লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা কর।” সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের সকলকেই ধ্বংস করে দিবেন। জনগণ প্রশান্ত মনে নিজেদের শহরে ও দেশে ফিরে যাবে। ঐ যুগেই ইয়াজুজ মাজুজ বের হবে। তারা প্রত্যেকে উঁচু স্থান হতে লাফাতে লাফাতে আসবে। তারা যা পাবে তাই ধ্বংস করে দেবে। পানি দেখলে তা পান করে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত মানুষ অসহ্য হয়ে আমার কাছে অভিযোগ করবে। আমি তখন মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবো। তিনি তাদেরকে একই সাথে ধ্বংস করে দিবেন। কিন্তু তাদের মৃতদেহের দুর্গন্ধের কারণে চলাফেরা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ সময় আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যা তাদের মৃত দেহগুলিকে বইয়ে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেবে। আমার খুব ভাল রূপেই জানা আছে যে, এরপরেই কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। যেমন পূর্ণ দিনের গর্ভবতী মহিলা জানতে পারে না যে, হয়তো সকালেই সে সন্তান প্রসব করবে, না হয় রাত্রে প্রসব করবে।” (এটা ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, যেই রাত্রে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মসজিদে হারাম হতে বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, ঐ রাত্রে তিনি যমযম কূপ ও মাকামে ইবরাহীমের (আঃ) মাঝামাঝি জায়গায় ছিলেন, এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) ডান দিক থেকে এবং হযরত মীকাঈল (আঃ) বাম দিক থেকে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি আকাশের উচ্চতম স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যান। ফিরবার সময় তিনি তাঁদের তসবীহ এবং অন্যান্যদের তসবীহ পাঠ শুনতে পান। এই রিওয়াইয়াত এই সূরারই (আরবি) (১৭:৪৪) এর আয়াতের তফসীরে আসবে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একবার জাবিয়াহ্ নামক জায়গায় ছিলেন। এ সময় বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের আলোচনা হয়। হযরত কা’বকে (রাঃ) তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার ধারণায় আমাকে সেখানে কোন জায়গায় নামায পড়া উচিত?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমাকে যখন জিজ্ঞেস করছেন তখন আমার মতে সাখরার পিছনে আপনার নামায পড়া উচিত যাতে বায়তুল মুকাদ্দাস আপনার সামনে হয়।” একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “তাহলে তুমি তো ইয়াহূদীদের সাথেই সাদৃশ্য স্থাপন করলে? আমি তো ঐ জায়গাতেই নামায পড়বো যেখানে নবী (সঃ) নামায পড়েছিলেন।” সুতরাং তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে কিবলার দিক হয়ে নামায আদায় করেন। নামায শেষে তিনি সাখরার আশ পাশের সমস্ত খড়কুটা কুড়িয়ে একত্রিত করেন এবং ওগুলি নিজের চাদরে বেঁধে বাইরে ফেলে দিতে শুরু করেন। তার দেখা দেখি জনগণও এরূপ করেন। সুতরাং ঐ দিন তিনি ইয়াহূদীদের মত সাখরার সম্মানও করলেন না যে, তারা ওর পিছনে নামাযও পড়তো, এমনকি তারা ওটাকে কিবলা বানিয়ে রেখেছিল। হযরত কা'ব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইয়াহূদী ছিলেন বলেই তিনি এই মতই পেশ করেছিলেন, যা খলীফাতুল মুসলেমীন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আবার খৃস্টানদের মত তিনি সাখরার প্রতি তাচ্ছিল্যও প্রকাশ করলেন না। তারা তো সাখরাকে খড়কুটা ফেলার জায়গা বানিয়ে নিয়েছিল। বরং স্বয়ং তিনি সেখান থেকে খড় কুটা কুড়িয়ে নিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করেন। এটা ঠিক ঐ হাদীসের সাথেই সাদৃশ্য যুক্ত যেখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা কবরের উপর বসো না এবং ঐ দিকে নামাযও পড়ো না।”মিরাজ সম্পর্কিত একটি সুদীর্ঘ ‘গারীব’ হাদীস হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) ও হযরত মীকাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) হযরত মীকাঈলকে (আঃ) বলেনঃ “আমার কাছে থালা ভর্তি যমযমের পানি নিয়ে এসো। আমি ওর দ্বারা হযরত মুহাম্মদের (সঃ) অন্তর পবিত্র করবো এবং তাঁর বক্ষ খুলে দিবো।” অতঃপর তিনি তাঁর পেট বিদীর্ণ করলেন এবং ওটা তিনবার ধৌত করলেন। তিনবারই তিনি হযরত মীকাঈলের (আঃ) আনিত পানির তশত দ্বারা তা ধুলেন। তাঁর বক্ষ খুলে দিলেন এবং ওর থেকে সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ ও কালিমা দূর করে দিলেন। আর ওটা ঈমান ও ইয়াকীন দ্বারা পূর্ণ করলেন। তাতে ইসলাম ভরে দিলেন এবং তার দু' কাধের মাঝে মহরে নুবুওয়াত স্থাপন করলেন। তারপর তাকে একটি ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে তাঁকে নিয়ে হযরত জিবরাঈল (আঃ) চলতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দেখতে পেলেন যে, এক কওম একদিকে ফসল কাটছে, অন্যদিকে ফসল গজিয়ে যাচ্ছে। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এ লোকগুলি কারা?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এরা হচ্ছে আল্লাহর পথের মুজাহিদ যাদের পুণ্য সাতশ'গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তারা যা খরচ করে তার প্রতিদান তারা পেয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা উত্তম রিযক দাতা।” তার পর তিনি এমন কওমের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যাদের মস্তক প্রস্তর দ্বারা পিষ্ট করা হচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “এ লোকগুলি কারা?” জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ এরা হচ্ছে ঐ সব লোক যাদের মাথা ফরয নামাযের সময় ভারী হয়ে যেতো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এমন কতকগুলি লোককে আমি দেখলাম যাদের সামনে ও পিছনে বস্ত্র খণ্ড লটকানো আছে এবং তারা উট ও অন্যান্য জন্তুর মত জাহান্নামের কাঁটাযুক্ত গাছ খাচ্ছে এবং দুযখের পাথর ও অঙ্গার ভক্ষণ করছে। আমি প্রশ্ন করলামঃ এরা কারা? উত্তরে তিনি (জিবরাঈল আঃ) বললেনঃ “এরা ঐ সব লোক যারা তাদের মালের যাকাত প্রদান করতো। আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেন নাই, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করতো।”এরপর আমি এমন কতকগুলি লোককে দেখলাম যাদের সামনে একটি পাতিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও উত্তম গোত রয়েছে এবং অপর একটি পাতিলে রয়েছে পচা-সড়া ও দুর্গন্ধময় গোশত। তাদেরকে ঐ উত্তম গোশত থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তারা ঐ পচা-সড়া ও দুর্গন্ধময় গোশত ভক্ষণ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এলাকগুলি কোন্ পাপ কার্য করেছিল? জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “এরা হলো ঐ সব পুরুষ লোক যারা নিজেদের হালাল স্ত্রীদেরকে ছেড়ে দিয়ে হারাম স্ত্রীদের পার্শ্বে রাত্রি যাপন করতো এবং ঐ সব স্ত্রীলোক যারা তাদের হালাল স্বামীদেরকে ছেড়ে অন্য পুরুষ লোকদের ঘরে রাত্রি কাটাতো।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) দেখেন যে, পথে একটি কাঠ রয়েছে এবং এটা প্রত্যেক কাপড়কে ছিড়ে দিচ্ছে এবং প্রত্যেক জিনিসকে যখম করছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কি? জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এটা হচ্ছে আপনার উম্মতের ঐ লোকদের দৃষ্টান্ত যারা রাস্তা ঘিরে বসে যায়। অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা লোকদেরকে ভীত করা ও আল্লাহর পথ হতে বাধা দানের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক রাস্তার উপর বসো না। (৭:৮৬)।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি দেখলাম যে, একটি লোক এক বিরাট স্তুপ জমা করেছে যা সে উঠাতে পারছে না। অথচ আরো বাড়াতে রয়েছে। আমি প্রশ্ন করলামঃ এটা কে? জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “এটা হচ্ছে আপনার উম্মতের ঐ লোক যার উপর মানুষের এতো বেশী হক বা প্রাপ্য রয়েছে যা আদায় করার ক্ষমতা তার নেই, তথাপি নিজের উপর আরো প্রাপ্য বাড়িয়ে চলেছে এবং জনগণের আমানত গ্রহণ করতেই আছে।” তারপর আমি। এমন একটি দল দেখলাম যাদের জিহ্বা ও ঠোঁট লোহার কেঁচি দ্বারা কর্তন করা হচ্ছে। একদিক কর্তিত হচ্ছে এবং অপর দিকে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, আবার ঐ দিক কর্তিত হচ্ছে। এই অবস্থায়ই অব্যাহত রয়েছে। জিজ্ঞেস করলামঃ এরা। কারা? হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বললেনঃ এরা হচ্ছে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী বক্তা ও উপদেষ্টা।” তারপর দেখি যে, একটি ছোট পাথরের ছিদ্র দিয়ে একটি বিরাট বলদ বের হচ্ছে এবং আবার তাতে ফিরে যেতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! এটা কে? জবাবে তিনি বললেনঃ “যে মখে খুব বড় বড় বুলি আওড়াতো, তারপর লজ্জিত হতো বটে, কিন্তু ওর থেকে ফিরতে পারতো না।” তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি উপত্যকায় পৌঁছেন। সেখানে অত্যন্ত সুন্দর মন মাতানো ঠাণ্ডা বাতাস এবং মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ ও আরাম ও শান্তির বরকতময় শব্দ শুনে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কি?” উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “এটা হচ্ছে। জান্নাতের শব্দ। সে বলছেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সাথে আপনি যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করুন! আমার অট্টালিকা, রেশম, মনিমুক্তা, সোনারূপা, জাম-বাটী, মধু, দুধ, মদ ইত্যাদি নিয়ামতরাজি খুব বেশী হয়ে গেছে।” তাকে তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে জবাব দেয়া হয়ঃ “প্রত্যেক মুসলমান-মুমিন নর ও নারী যে আমাকে ও আমার রাসূলদেরকে মেনে চলে, ভাল কাজ করে, আমার সাথে কাউকে শরীক করে না, আমার সমকক্ষ কাউকেও মনে করে না, তারা সবাই তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জেনে রেখো, যার অন্তরে আমার ভয় আছে সে সমস্ত ভয় থেকে রক্ষিত থাকবে। যে আমার কাছে চায় সে বঞ্চিত হয় না। যে আমাকে কর্জ দেয় (অর্থাৎ কর্জে হাসানা দেয়) তাকে আমি প্রতিদান দিয়ে থাকি। যে আমার উপর ভরসা করে আমি তার জন্যে যথেষ্ট হই। আমি সত্য মা’রূদ। আমি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। আমি ওয়াদার খেলাফ করি না। মুমিন মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাআলা কল্যাণময়। তিনি সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা।” একথা শুনে জান্নাত বললোঃ “যথেষ্ট হয়েছে। আমি খুশী হয়ে গেলাম। এরপর আমি অন্য একটি উপত্যকায় গেলাম। যেখান থেকে বড় ভয়ানক ও জঘন্য শব্দ আসছিল। আর ছিল খুবই দুর্গন্ধ। আমি এসম্পর্কে হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এটা হচ্ছে জাহান্নামের শব্দ। সে বলছেঃ “হে আমার প্রতিপালক। আপনি আমার সাথে যে, ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করুন! আমাকে তা দিয়ে দিন! আমার শৃংখল, আমার অগ্নিশিখা, আমার প্রখরতা, আমার রক্ত-পূজ এবং আমার শাস্তির আসবাবপত্র খুবই বেশী হয়ে গেছে, আমার গভীরতাও অত্যন্ত বেড়ে গেছে এবং আমার অগ্নি ভীষণ তেজ হয়ে উঠেছে। সুতরাং আমার মধ্যে যা দেয়ার আপনি ওয়াদা করেছেন তা দিয়ে দিন!” আল্লাহ তাআলা তখন তাকে বলেনঃ “প্রত্যেক মুশরিক কাফির, খবীস, বেঈমান পুরুষ ও নারী তোমার জন্যে রয়েছে।” একথা শুনে জাহান্নাম সন্তোষ প্রকাশ করলো।”রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবার চলতে থাকলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে গেলেন। নেমে তিনি সাখরার স্তম্ভে ঘোড়া বাঁধলেন এবং ভিতরে গিয়ে ফেরেশতাদের সাথে নামায আদায় করলেন। নামায শেষে তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে জিবরাঈল (আঃ)! আপনার সাথে ইনি কে?” তিনি জবাব দিলেনঃ “ ইনি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।” তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তার কাছে কি পাঠানো হয়েছিল?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ”। সবাই তখন মারহাবা বললেন এবং আরো বললেনঃ “উত্তম ভাই, অতি উত্তম প্রতিনিধি। তিনি খুবই বড় মর্যাদার সাথে এসেছেন। তারপর তার সাক্ষাৎ হলো নবীদের রূহগুলির সাথে। সবাই নিজেদের প্রতিপালকের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ “আমি আল্লাহ তাআলার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তিনি আমাকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন এবং আমাকে বড় রাজ্য দান করেছেন। আর আমার উম্মত এমনই অনুগত যে, তাদের অনুসরণ করা হয়ে থাকে। তিনিই আমাকে আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। এবং ওটাকে আমার জন্যে ঠাণ্ডা ও প্রশান্তি বানিয়েছেন।” হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “এটা আল্লাহ তাআলারই বড় মেহেরবানী যে, তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন, আমার শত্রু ফিরআউনীদেরকে ধ্বংস করেছেন, বাণী ইসরাঈলকে আমার মাধ্যমে মুক্তি দিয়েছেন এবং আমার উম্মতের মধ্যে এমন দল রেখেছেন যারা সত্যের পথ প্রদর্শক এবং ন্যায়ের সাথে বিচার মীমাংসাকারী।” তারপর হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, তিনি আমাকে বিরাট সাম্রাজ্য দান করেছেন। আমাকে দান করেছেন তিনি অলংকার তৈরীর জ্ঞান। আমার জন্যে তিনি লোহাকে নরম করে দিয়েছেন, পাহাড় পবর্তকে করেছেন অনুগত। এমনকি পাখীরাও আমার সাথে আল্লাহর তসবীহ পাঠ করতো। তিনি আমাকে দান করেছেন হিকমত ও জোরালোভাবে বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা।”এরপর হযরত সুলাইমান (আঃ) আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতে শুরু করেন। তিনি বলেনঃ “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই জন্যে যে, তিনি বায়ুকে আমার বাধ্য করে দিয়েছেন এবং শয়তানদেরকেও করেছেন আমার অনুগত। তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী বড় বড় প্রাসাদ, নকশা, পাত্র ইত্যাদি তৈরী করতো। তিনি আমাকে জীব জন্তুর ভাষা বুঝার জ্ঞান দান করেছেন। সব কিছুর উপর তিনি আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন। দানব, মানব এবং পাখীর “ লশকরকে আমার অধীনস্থ করে দিয়েছেন এবং তাঁর বহু মু'মিন বান্দাদের উপর আমাকে ফযীলত দান করেছেন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য ও রাজত্ব দান করেছেন যা আমার পরে আর কারো জন্যে শোভনীয় নয়। আর তা আবার এমন যে, তাতে অপবিত্রতার লেশমাত্র নেই এবং কোন হিসাবও নেই।অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতে শুরু করেন। তিনি বলেনঃ “তিনি আমাকে নিজের “কালেমা বানিয়েছেন এবং আমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে হযরত আদমের (আঃ) মত। তাকে তিনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করে বলেছিলেনঃ ‘হও’, আর তেমনই তিনি হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে কিতাব, হিকমত, তাওরাত, ও ইনজীল শিক্ষা দিয়েছেন। আমি মাটি দ্বারা পাখি তৈরী করতাম, তারপর তাতে ফুক মারতাম, তখন উড়ে যেতো। আমি জন্মান্ধ ও শ্বেত কুষ্ঠরোগীকে আল্লাহর হুকুমে ভাল করে দিতাম। আল্লাহর নির্দেশক্রমে আমি মৃতকে জীবিত করতাম। আমাকে তিনি উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আমাকে পবিত্র করেছেন। আমাকে ও আমার মাতাকে শয়তান থেকে রক্ষা করেছেন। শয়তান আমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারতো না।”এখন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ “আপনারা তো আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন, আমি এখন তাঁর প্রশংসা করছি। আল্লাহ তাআলার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাকে বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তিনি আমাকে সমস্ত সৃষ্ট জীবের জন্যে ভয় প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা বানিয়েছেন। তিনি আমার উপর কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সমস্ত কিছুর বর্ণনা রয়েছে। তিনি আমার উম্মতকে সমস্ত উম্মতের উপর ফযীলত দান করেছেন। তাদেরকে সকলের মঙ্গলের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে করেছেন সর্বোত্তম উম্মত। তাদেরকেই তিনি প্রথমের ও শেষের উম্মত বানিয়েছেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে আমার মধ্যকার সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ ও গ্লানি দূর করেছেন। আমার খ্যাতি তিনি সমুন্নত করেছেন এবং আমাকে তিনি শুরুকারী ও শেষকারী বানিয়েছেন।” হযরত ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! এসব কারণেই আপনি সবারই উপর ফযীলত লাভ করেছেন।ইমাম আবু জাফর রাযী (রঃ) বলেনঃ “হযরত মুহাম্মদই (সঃ) শুরুকারী অর্থাৎ কিয়ামতের দিন শাফাআত বা সুপারিশ তাঁর থেকেই শুরু হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে উপরাচ্ছাদিত তিনটি পাত্র পেশ করা হয়। পানির পাত্র হতে সামান্য পানি পান করে তা ফিরিয়ে দেন। তারপর দুধের পাত্র নিয়ে তিনি পেট পুরে দুধ পান করেন। এরপর তাঁর কাছে মদের পাত্র আনয়ন করা হয়, কিন্তু তিনি তা পান করতে অস্বীকার করেন এবং বলেনঃ “আমার পেট পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমি পরিতৃপ্ত হয়েছি।” হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “এই মদ আপনার উম্মতের জন্যে হারাম করে দেয়া হবে। যদি আপনি এর থেকে পান করতেন তবে আপনার উম্মতের মধ্যে আপনার অনুসারী খুবই কম হতো।”এরপর রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দরজা খুলতে বলা হলে প্রশ্ন হয়ঃ “কে?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দেনঃ “হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।” আবার প্রশ্ন করা হয়ঃ “তাঁর কাছে কি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে?” উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “হ” তারা তখন বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা এই উত্তম ভাই ও উত্তম প্রতিনিধিকে সন্তুষ্ট রাখুন। ইনি বড়ই উত্তম ভাই এবং খুবই ভাল প্রতিনিধি।” তৎক্ষণাৎ দরজা খুলে দেয়াহয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দেখেন যে, পূর্ণ সৃষ্টির একটি লোক রয়েছেন, যার সৃষ্টিতে কোনই ত্রুটি নেই যেমন সাধারণ লোকের সৃষ্টির মধ্যে ত্রুটি থাকে। তার ডান দিকে রয়েছে একটি দরজা যেখান দিয়ে বাতাস সুগন্ধি বয়ে আনছে। বাম দিকেও রয়েছে একটি দরজা, যেখান দিয়ে দুর্গন্ধময় বাতাস বয়ে আসছে। ডান দিকের দরজার দিকে তাকিয়ে তিনি হাসছেন এবং আনন্দিত হচ্ছেন। আর বাম দিকের দরজার দিকে তাকিয়ে তিনি কেঁদে ফেলছেন এবং দুঃখিত হচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! পূর্ণ সৃষ্টির এই বৃদ্ধ লোকটি কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন আপনার পিতা হযরত আদম (আঃ)। তার ডান দিকে রয়েছে জান্নাতের দরজা। তাঁর জান্নাতী সন্তানদেরকে দেখে তিনি খুশী হয়ে হাসছেন। আর তার বাম দিকে রয়েছে জাহান্নামের দরজা। তিনি তার জাহান্নামী সন্তানদের দেখে দুঃখিত হয়ে কেঁদে ফেলছেন।”তারপর তাকে দ্বিতীয় আকাশের উপর উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুরূপ প্রশ্নোত্তরের পর আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় সেখানে তিনি দু'জন যুবককে দেখতে পান। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পারেন যে, তাদের একজন হলেন হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আঃ) ও অপরজন হলেন হযরত ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ)। তাঁরা দুজন একে অপরের খালাতো ভাই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৃতীয় আকাশে পৌঁছেন। সেখানে তিনি হযরত ইউসুফকে (আঃ) দেখতে পান, যিনি সৌন্দর্যে অন্যান্য লোকদের উপর এমনই ফযীলত লাভ করে ছিলেন যেমন ফযীলত রয়েছে চন্দ্রের সমস্ত তারকার উপর। অনুরূপভাবে তিনি চতুর্থ আকাশে পৌঁছেন। তথায় তিনি হযরত ইদরীসকে (আঃ) দেখতে পান, যাকে আল্লাহ তাআলা মর্যাদাপূর্ণ স্থানে উঠিয়ে নিয়েছেন। অনুরূপ প্রশ্ন ও উত্তরের আদান প্রদানের পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) পঞ্চম আকাশে পৌঁছেন। দেখেন যে, একজন বসে আছেন এবং তাঁর আশে পাশে কতকগুলি লোক রয়েছেন যারা তাঁর সাথে আলাপ করছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ইনি কে?” উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “ইনি হলেন হযরত হারূণ (আঃ)। ইনি নিজের কওমের মধ্যে ছিলেন একজন হৃদয়বান ব্যক্তি। আর এই লোকগুলি হচ্ছে বাণী ইসরাঈল।” তারপর তিনি ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছেন। সেখানে তিনি হযরত মূসাকে (আঃ) দেখতে পান। তিনি তাঁর চেয়েও উপরে উঠে যান দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কাঁদার কারণ হযরত জিবরাঈলের (আঃ) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেনঃ “এঁর সম্পর্কে বানী ইসরাঈলের এই ধারণা ছিল যে, সমস্ত বানী আদমের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁরই মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। কিন্তু এখন তিনি দেখতে পেলেন যে, আল্লাহ তাআলার নিকট হযরত মুহাম্মদের (সঃ) মর্যাদাই সর্বাপেক্ষা বেশী। তাই, তিনি কেঁদে ফেললেন।”অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সপ্তম আকাশে পৌঁছেন। সেখানে তিনি এমন একটি লোককে দেখতে পান যার দাড়ীর কিছু অংশ সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি জান্নাতের দরজার উপর একটি চেয়ার লাগিয়ে বসে ছিলেন। তার পার্শ্বে আরো কিছু লোকও ছিলেন। কতকগুলি চেহারা ঔজ্জ্বল ঝকঝকে, কিন্তু কতকগুলি চেহারায় ঔজ্জ্বল্য কিছু কম ছিল এবং রঙ এ কিছুটা ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এই লোকগুলি উঠে গিয়ে নদীতে ডুব দিলো। ফলে রঙ কিছুটা পরিষ্কার হলো। তারপর আর এক নহরে তারা ডুব দিলো। এবার রঙ আরো কিছুটা পরিচ্ছন্ন হলো। এরপর তারা তৃতীয় একটি নহরে গোসল করলো। এবার তাদের উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট লোকদের সাথে মিলিত ভাবে বসে পড়লো। এখন তারা তাদের মতই হয়ে গেল। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এঁদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “বৃদ্ধ লোকটি হলেন আপনার পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)। সারা দুনিয়ার সাদা চুল সর্বপ্রথম তাঁরই দেখা যায়। ঐ উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট লোক হচ্ছে ঐ সব ঈমানদার লোক যারা মন্দ কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থেকেছে। আর যাদের চেহারায় কিছুটা কালিমা ছিল তারা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা ভাল কাজের সাথে কিছু খারাপ কাজও করেছিল তারা তাওবা করায় মহান আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। প্রথমে তারা গোসল করেছে নহরে রহমতে, দ্বিতীয় বার নহের নিয়ামতিল্লা হতে এবং তৃতীয়বার নহরে শরাবে তহূরে। এই শরাব হচ্ছে জান্নাতীদের বিশিষ্ট শরাব বা মদ।”এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন। তখন তাঁকে বলা হলোঃ “আপনার সুন্নাতের যারা অনুসরণ করবে তাদেরকে এখন পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। এর মূল থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানি, খাঁটি দুধ, নেশাহীন সুস্বাদু মদ এবং পরিষ্কার মধুর নহর প্রবাহিত রয়েছে। ঐ গাছের ছায়ায় কোন সওয়ার যদি সত্তর বছরও ভ্রমণ করে তথাপি ওর ছায়া শেষ হবেনা। ওর এক একটি পাতা এতো বড় যে, একটি উম্মতকে ঢেকে ফেলবে। মহামহিমান্বিত আল্লাহর নূর ওকে চতুর্দিক থেকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল। আর পাখীর আকৃতি বিশিষ্ট ফেরেশতারা ওটাকে ঢেকে ফেলে ছিলেন, যাঁরা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার মুহব্বতে সেখানে ছিলেন। ঐ সময় মহামহিম আল্লাহ রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথা বলেন। তিনি তাঁকে বলেনঃ “কি চাবে চাও?” উত্তরে তিনি বলেনঃ“ হে আল্লাহ! আপনি হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আপনার দোস্ত বানিয়েছেন এবং তাঁকে বড় সাম্রাজ্য দান করেছেন, হযরত মূসার (আঃ) সাথে আপনি কথা বলেছেন, হযরত দাউদকে (আঃ) দিয়েছেন বিরাট সাম্রাজ্য এবং তার জন্যে লোহাকে নরম করে দিয়েছেন, হযরত সুলাইমানকে (আঃ) আপনি দান করেছেন রাজত্ব, দানব, মানব, শয়তান ও বাতাসকে তাঁর অনুগত করে দিয়েছেন, আর তাকে এমন রাজত্ব দান করেছেন যা তাঁর পরে আর কারো জন্যে উপযুক্ত নয়, হযরত ঈসাকে (আঃ) তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার নির্দেশক্রমে আপনি তাকে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দানকারী করেছেন ও মৃতকে জীবন দানকারী বানিয়েছেন, তাঁকে ও তাঁর মাতাকে বিতাড়িত শয়তান হতে রক্ষা করেছেন, তাঁদের উপর শয়তানের কোন হাত নেই। এখন আমার সম্পর্কে কি বলবেন বলুন।” তখন বিশ্বপ্রতিপালক মহামহিমান্বিত অল্লিাহ বললেনঃ “তুমি আমার খলীল (দোস্ত)। তাওরাতে আমি তোমাকে খলীলুর রহমান’ উপাধিতে ভূষিত করেছি। তোমাকে আমি সমস্ত মানুষের নিকট ভয় প্রদর্শক ও সুসংবাদ দাতারূপে প্রেরণ করেছি। তোমার বক্ষ আমি বিদীর্ণ করেছি, তোমার বোঝা হালকা করেছি এবং তোমার যিকর সমুন্নত করেছি। যেখানে আমার যি হয় সেখানে তোমারও যিকর হয়ে থাকে। (যেমন পাঁচ বারের আযানে বলা হয়ঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। এর পরেই বলা হয়ঃ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল। যিকর দ্বারা এখানে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে) তোমার উম্মতকে আমি সর্বোত্তম উম্মত বানিয়েছি, যাদেরকে জনগণের কল্যাণের) নিমিত্তে বের করা হয়েছে। তোমার উম্মতকেও আমি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বানিয়েছি। তাদের খুৎবা জায়েয নয় যে পর্যন্ত না তারা তোমাকে আমার বান্দা ও রাসূল বলে সাক্ষ্য দেবে। আমি তোমার উম্মতের মধ্যে এমন কতকগুলি লোক রেখেছি যাদের অন্তরে তাদের কিতাবসমূহ রয়েছে। সৃষ্টি হিসেবে আমি তোমাকে সর্বপ্রথম করেছি এবং বি’ছাত হিসেবে সর্বশেষ করেছি। আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়েছি যা বারবার পাঠ করা হয়ে থাকে। (এই সাতটি আয়াত দ্বারা সূরায়ে ফাতেহাকে বুঝানো হয়েছে) এ আয়াতগুলি তোমার পূর্বে আর কাউকেও দেয়া হয় নাই। তোমাকে আমি কাওসার দান করেছি এবং ইসলামের আটটি অংশ দিয়েছি। ওগুলি হচ্ছেঃ ইসলাম, হিজরত, জিহাদ, নামায, সাদকা, রমযানের রোযা, ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ। আমি তোমাকে শুরুকারী ও শেষকারী বানিয়েছি।” সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতে। লাগলেনঃ “আমাকে আমার প্রতিপালক ছ'টি জিনিসের ফযীলত দিয়েছেন। সেগুলি হচ্ছেঃ কালামের শুরু ও শেষ আমাকে দেয়া হয়েছে, আমাকে দান করা হয়েছে জামে’ কালাম (ব্যাপক ভাবপূর্ণ কথা), সমস্ত মানুষের নিকট আমাকে সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শক রূপে প্রেরণ করা হয়েছে, এক মাসের পথের ব্যবধান থেকে শত্রুদের উপর আমার ভীতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ এক মাসের পথের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা আমার নামে সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে)। আমার জন্যে গনীমতের মাল (যুদ্ধ লব্ধ মাল) হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে কারো জন্যে হালাল ছিল না এবং আমার জন্যে সারা যমীনকে মসজিদ (সিজদার স্থান) ও অযুর স্থান বানানো হয়েছে।” তারপর রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়া এবং হযরত মূসার (আঃ) পরামর্শক্রমে আল্লাহ তাআলার কাছে নামাযের ওয়াক্ত কমাবার প্রার্থনা করা ও সর্বশেষে পাঁচ ওয়াক্ত থেকে যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে। যেমন ইতিপূর্বে গত হয়েছে। সুতরাং পড়তে পাঁচ কিন্তু সওয়াবে পঞ্চাশ। এতে তিনি খুবই খুশী হন। যাওয়ার সময় হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন কঠিন এবং আসার সময় হয়ে গেলেন অত্যন্ত কোমল ও সর্বোত্তম।অন্য কিতাবের এই হাদীসে এটাও রয়েছে যে, (আরবি) এই আয়াতেরই তাফসীরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই ঘটনা বর্ণনা করেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের একটি রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং হযরত ইবরাহীমের (আঃ) দেহাকৃতির বর্ণনা দেয়ার কথাও বর্ণিত রয়েছে। সহীহ মুসলিমের হাদীসে হাতীমে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং তাঁর সামনে ওটা প্রকাশিত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। তাতেও এই তিনজন নবীর সাথে সাক্ষাৎ করা এবং তাঁদের দৈহিক গঠনের বর্ণনা রয়েছে এবং এও আছে যে, তিনি তাদেরকে নামাযে দণ্ডায়মান পেয়েছিলেন। তিনি জাহান্নামের রক্ষক মালিককেও দেখেছিলেন এবং তিনিই প্রথমে তাঁকে সালাম করেন। ইমাম বায়হাকীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে কয়েকজন সাহাবী হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উম্মে হানীর (রাঃ) বাড়ীতে শুয়ে ছিলেন। তখন তিনি এশার নামায হতে ফারেগ (অবকাশপ্রাপ্ত) হয়েছিলেন। সেখান হতেই তাঁর মি’রাজ হয়। অতঃপর ইমাম হাকিম (রঃ) খুবই দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে শ্রেণী বিভাগ, ফেরেশতামণ্ডলী ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। কোন কিছুই আল্লাহ তাআলার শক্তির বাইরে নয়, যদি ঐ রিওয়াইয়াত সঠিক প্রমাণিত হয়ে যায়।ইমাম বায়হাকী (রঃ) এই রিওয়াইয়াত বর্ণনা করার পর বলেন যে, মক্কা শরীফ হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত গমন এবং মিরাজের ব্যাপারে এই হাদীসে পূর্ণ প্রাচুর্য রয়েছে। কিন্তু এই রিওয়াইয়াতকে অনেক ইমাম মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।ইমাম বায়হাকী (রাঃ) হযরত আয়েশার (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণনা করেছেন যে, সকালে যখন রাসূলুল্লাহ মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেন তখন বহু লোক মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যায় যারা ইতিপুর্বে ঈমান আনয়ন করেছিল। তারপর হযরত সিদ্দীকে আকবারের (রাঃ) নিকট তাদের গমন, তাঁর সত্যায়িতকরণ এবং সিদ্দীক উপাধি ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। (প্রকাশ থাকে যে, এই সুদীর্ঘ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন আবু জা'ফর রাযী। তাঁর স্মরণ শক্তি খুব ভাল নয়। এর কতকগুলি শব্দে খুবই গরীবত ও নাকরিত রয়েছে। একে দুর্বলও বলা হয়েছে। আর শুধু তারই বর্ণিত হাদীস সমালোচনা মুক্ত নয়। কথা এই যে, স্বপ্নযুক্ত হাদীসের কিছু অংশও এতে এসে গেছে আর এটাও খুব সম্ভব যে, এটা অনেকগুলি হাদীসের সমষ্টি হবে, কিংবা স্বপ্ন অথবা মিরাজ ছাড়া অন্য কোন ঘটনার রিওয়াইয়াত হবে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)স্বয়ং উম্মে হানী (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আমার বাড়ী হতেই মিরাজ করানো হয়। ঐ রাত্রে তিনি এশার নামাযের পর আমার বাড়ীতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনিও ঘুমিয়ে পড়েন এবং আমরাও সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। ফজর হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে আমরা তাঁকে জাগ্রত করি। তারপর তার সাথেই আমরা ফজরের নামায আদায় করি। এরপর তিনি বলেনঃ “হে উম্মে হানী (রাঃ) ! আমি তোমাদের সাথেই এশার নামায আদায় করেছি এবং এর মাঝে আল্লাহ তাআলা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছিয়েছেন এবং আমি সেখানে নামাযও পড়েছি।” (এই হাদীসের কালবী নামক একজন বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীস সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়। কিন্তু আবু ইয়ালা (রঃ) অন্য সনদে এটাকে খুব ফলাও করে বর্ণনা করেছেন)হযরত উম্মে হানী (রাঃ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহর (সঃ) মি’রাজ আমার এখান থেকেই হয়েছিল। আমি রাত্রে তাঁকে সব জায়গাতেই খোঁজ করি, কিন্তু কোথায়ও পাই নাই। তখন আমি ভয় পেলাম যে, না জানি হয়তো তিনি কুরায়েশদের প্রতারণায় পড়েছেন। কিন্তু পরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বর্ণনা করেনঃ “হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট আগমন করেছিলেন এবং আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে চলেন। দরজার উপর একটি জন্তু দাঁড়িয়েছিল যা খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড়। তিনি আমাকে ওর উপর সওয়ার করিয়ে দেন। অতঃপর আমরা বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে যাই। হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আমি দেখতে পাই যিনি স্বভাব চরিত্রে ও আকৃতিতে সম্পূর্ণরূপে আমার সাথেই সাদৃশ্যযুক্ত ছিলেন। হযরত মূসার (আঃ) সাথেও আমাদের দেখা হয়। যিনি ছিলেন লম্বা এবং চুল ছিল সোজা। তাঁকে দেখতে অনেকটা ইদ শানওয়ার গোত্রের লোকদের মত। অনুরূপভাবে হযরত ঈসার (আঃ) সাথেও আমার সাক্ষাৎ হয় যিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির লোক। তার দেহের রঙ ছিল সাদা লাল মিশ্রিত। তাঁকে দেখতে অনেকটা উরওয়া ইবনু মাসউদ সাকাফীর মত। দাজ্জালকেও আমি দেখতে পাই। তার একটি চক্ষু নষ্ট ছিল। তাঁকে দেখতে ঠিক কুতনা ইবনু আবিদুল উয্যার মত।” এটুকু বলার পর তিনি বলেনঃ “আচ্ছা, আমি যাই এবং যা যা দেখেছি, কুরায়েশদের নিকট বর্ণনা করবো।” আমি তখন তার কাপড়ের বর্ডার টেনে ধরলাম এবং আরয করলামঃ আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি এটা আপনার কওমের সামনে বর্ণনা করবেন না, তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে। তারা আপনার কথা মোটেই বিশ্বাস করবে না। আপনি তাদের কাছে গেলে তারা আপনার সাথে বে-আদবী করবে। কিন্তু তিনি ঝটকা মেরে তাঁর অঞ্চল আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলেন এবং সরাসরি কুরায়েশদের সমাবেশে গিয়ে সমস্ত কিছু বর্ণনা করলেন। তার একথা শুনে জুবাইর ইবনু মুতইম বলতে শুরু করলোঃ “দেখো, আজ আমরা জানতে পারলাম যে, যদি তুমি সত্যবাদী হতে তবে আমাদের মধ্যে বসে থেকে এরূপ কথা বলতে না।” একটি লোক বললোঃ “আচ্ছা বলতো, পথে আমাদের যাত্রীদলের সাথে দেখা হয়েছিল কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হাঁ, তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল যা তারা খোঁজ করছিল।” আর একজন বললোঃ “অমুক গোত্রের উটও কি রাস্তায় দেখেছিলে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হাঁ, তাদেরকেও দেখেছিলাম। তারা অমুক জায়গায় ছিল। তাদের মধ্যে লাল রং এর একটি উষ্ট্রীও ছিল যার পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাদের কাছে একটি বড় পেয়ালায় পানি ছিল যার থেকে আমি পানও করেছি। তারা বললোঃ “আচ্ছা, তাদের উটগুলির সংখ্যা বল। তাদের মধ্যে রাখাল কে ছিল?” ঐ সময়েই আল্লাহ তাআলা ঐ যাত্রীদলকে তাঁর সামনে করে দেন। সুতরাং তিনি উটগুলির সংখ্যাও বলে দেন এবং রাখালদের নামও বলে দেন। তাদের মধ্যে একজন রাখাল ছিল ইবনু আবি কুহাফা। তিনি একথাও বলে দেন যে, কাল সকালে তারা সানিয়্যাহ নামক স্থানে পৌঁছে যাবে। তখন ঐ সময় অধিকাংশ লোক পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে সানিয়্যাতে পৌঁছে গেলেন। গিয়ে দেখলো যে, সত্যি ঐ যাত্রীদল সেখানে এসে গেছে। তাদেরকে তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “তোমাদের উট হারিয়ে গিয়েছিল কি?” তারা উত্তর দিলোঃ “ঠিকই হারিয়ে গিয়েছিল বটে।” দ্বিতীয় যাত্রীদলকে তারা প্রশ্ন করলোঃ “কোন লাল রঙ এর উটের পা কি ভেঙ্গে গেছে?” তারা জবাবে বললোঃ “হাঁ, এটাও সঠিকই বটে।” আবার তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “তোমাদের কাছে একটি পানির বড় পেয়ালা ছিল কি?” জবাবে আবু বকর নামক একটি লোক বললেনঃ “হাঁ, আল্লাহর শপথ! আমি নিজেই তো ওটা রেখেছিলাম। তার থেকে না তো কেউ পানি পান করছে, না তা ফেলে দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সঃ) সত্যবাদী।” এ কথা বলেই তিনি তাঁর উপর ঈমান আনলেন। আর সেদিন তাঁর নাম সিদ্দীক রাখা হলো।এই সমুদয় হাদীস জানার পর, যে হাদীসগুলির মধ্যে সহীহও রয়েছে, হাসানও রয়েছে, দুর্বলও রয়েছে, কমপক্ষে এটুকুতো অবশ্যই জানা গেছে যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। আর এটাও জানা গেল যে, এটা শুধুমাত্র একবারই হয়, যদিও এটা বর্ণনাকারীগণ বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করেছেন এবং এতে কিছু কম বেশীও রয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। কেননা, নবীগন ছাড়া ভুল ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত কে আছে? কেউ কেউ এ ধরনের প্রত্যেক রিওয়াইয়াতকে এক একটি পৃথক ঘটনা বলেছেন। কিন্তু এ লোকগুলি বহু দূরে বেরিয়ে গেছেন এবং অসাধারণ কথা বলেছেন। তাঁরা অজানা স্থানে গমন করেছেন। তবুও তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হয় নাই পরযুগীয় কোন কোন গুরুজন অন্য আর একটি বর্ণনায় ক্রমিক তালিকা পেশ করেছেন এবং এতে তারা বেশ গর্ববোধ করেছেন। তা এই যে, একবার রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মক্কা হতে শুধু বায়তুল মুক্কাদাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়। দ্বিতীয়বার মক্কা থেকে আসমান পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়। তৃতীয়বার ভ্রমণ করানো হয় মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এবং বায়তুল মুকাদ্দাস হতে আসমান পর্যন্ত। কিন্তু এই উক্তিটিও খুবই দূরের। উক্তি এবং খুবই দুর্বল উক্তি। পূর্ব যুগীয় মনীষীদের কেউই এই উক্তি করেন। নাই। যদি এরূপ হতো তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজেই খুলে খুলে এটা বর্ণনা করতেন এবং বর্ণনাকারী তার থেকে এটা বার বার হওয়ার কথা রিওয়াইয়াত করতেন। হযরত যুহরীর (রঃ) উক্তি অনুযায়ী মিরাজের এই ঘটনাটি হিজরতের এক বছর পূর্বে ঘটেছিল। উরওয়াও (রঃ) একথাই বলেন। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এটা হিজরতের ছ'মাস পূর্বের ঘটনা। সত্য কথা যে, এটা হিজরতের ছ'মাস পূর্বের ঘটনা। সত্য কথা এটাই যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) স্বপ্নের অবস্থায় নয়, বরং জাগ্রত অবস্থায় মক্কা হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়। এ সময় তিনি বুরাকের উপর সওয়ার ছিলেন। মসজিদে কুদসের দরযার উপর তিনি বুরাকটিকে বাঁধেন এবং ভিতরে গিয়ে ওর কিবলামুখী হয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ হিসেবে দু'রাকআত নামায আদায় করেন। তারপর মিরাজ আনয়ন করা হয়, যাতে শ্রেণী বিভাগ ছিল এবং এটা সোপান হিসেবে। তাতে করে তাঁকে দুনিয়ার আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এইভাবে তাঁকে সাতটি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। প্রত্যেক আসমানে আল্লাহর নৈকট্য লাভ কারীদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। নবীদের সাথে তাদের শ্রেণী মোতাবেক সালামের আদান প্রদান হয়। ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসা কালীমুল্লাহর (আঃ) সাথে এবং সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহর (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি সমান্তরালে পৌঁছেন যেখানে তিনি ভাগ্য লিখনের কলমের শব্দ শুনতে পান। তিনি সিদরাতুল মুনতাহাকে দেখেন যেখানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ছেয়েছিল। সোনার ফড়িং এবং বিভিন্ন প্রকারের রঙ সেখানে দেখা যাচ্ছিল। ফেরেস্তাগণ কর্তৃক চারদিক ভ্রমণ করানো হয়। তৃতীয়বার ভ্রমণ করানো হয় মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এবং বায়তুল মুকাদ্দাস হতে আসমান পর্যন্ত। কিন্তু এই উক্তিটিও খুবই দূরের উক্তি এবং খুবই দুর্বল উক্তি। পূর্ব যুগীয় মনীষীদের কেউই এই উক্তি করেন নাই। যদি এরূপ হতো তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজেই খুলে খুলে এটা বর্ণনা করতেন। এবং বর্ণনাকারী তার থেকে এটা বারবার হওয়ার কথা রিওয়াইয়াত করতেন।হযরত যুহরীর (রঃ) উক্তি অনুযায়ী মিরাজের এই ঘটনাটি হিজরতের এক বছর পূর্বে ঘটেছিল। উরওয়াও (রঃ) -এ কথাই বলেন যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) স্বপ্নের অবস্থায় নয়, বরং জাগ্রত অবস্থায় মক্কা হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়। এ সময় তিনি বুরাকের উপর সওয়ার ছিলেন। মসজিদে কুদসের দরজার উপর তিনি বুরাকটিকে বাঁধেন এবং ভিতরে গিয়ে ওর কিবলামুখী হয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ হিসেবে দু'রাকআত নামায আদায় করেন। তারপর মি’রাজ আনয়ন করা হয়, যাতে শ্রেণী বিভাগ ছিল এবং এটা সোপান হিসেবে। তাতে করে তাঁকে দুনিয়ার আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এইভাবে তাঁকে সাতটি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। প্রত্যেক আসমানে আল্লাহর নৈকট্যলাভকারীদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। নবীদের সাথে তাদের শ্রেণী মোতাবেক সালামের আদান প্রদান হয়। ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসা কালীমুল্লাহর (আঃ) সাথে এবং সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহর (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি ভাগ্য লিখনের কলমের শব্দ শুনতে পান। তিনি সিদরাতুল মুনতাহাকে দেখেন যেখানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ছেয়েছিল। সোনার ফড়িং এবং বিভিন্ন প্রকারের রঙ সেখানে দেখা যাচ্ছিল। ফেরেশতাগণ চারদিক থেকে ওটাকে পরিবেষ্টন করে ছিলেন। সেখানে তিনি হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) তার আসল রূপে দেখতে পান যার ছ’শ’টি পালক ছিল। সেখানে তিনি সবুজ রঙ এর ‘ররফ” (মি’রাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যার উপর আরোহণ করেছিলেন ওটাই রফরফ) দেখেছিলেন যা আকাশের প্রান্ত সমূহকে ঢেকে রেখেছিল। তিনি বায়তুল মা'মূরের যিয়ারত করেন যা হযরত খলীলুল্লাহ (আঃ) তাতে হেলান লাগিয়ে বসেছিলেন। সেখানে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেস্তা আল্লাহর ইবাদতের জন্যে যেয়ে থাকেন। কিন্তু একদিন যে দল যান, কিয়ামত পর্যন্ত আর তাঁদের সেখানে যাওয়ার পালা পড়ে না। তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেন। এখানে পরম করুণাময় আল্লাহ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেন এবং পরে তা কমাতে কমাতে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত রেখে দেন। এটা ছিল তাঁর বিশেষ রহমত। এর দ্বারা নামাযের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজীলত স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। অতঃপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং সমস্ত নবীও (আঃ) অবতরণ করেন। সেখানে তিনি তাঁদের সকলকেই নামায পড়ান, যখন নামাযের সময় হয়ে যায়। সম্ভবতঃ ওটা ছিল ঐ দিনের ফজরের নামায। তবে কোন কোন গুরুজনের উক্তি এই যে, তিনি নবীদের ইমামতি করেছিলেন আসমানে। কিন্তু বিশুদ্ধ রিওয়াইয়াত দ্বারা এটা প্রকাশিত হয় যে, এটা বায়তুল মুকাদ্দাসের ঘটনা। কোন কোন রিওয়াইয়াতে আছে যে, যাওয়ার পথে তিনি এ নামায পড়িয়েছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্য কথা এই যে, ফিরবার পথে তিনি ইমামতি করেছিলেন, এর একটি দলীল তো এই যে, আসমান সমূহে নবীদের সঙ্গে যখন তার সাক্ষাৎ হয়, তখন প্রত্যেকের সম্পর্কেই হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “ইনি কে?” যদি আগমনের পথে বায়তুল মুকাদ্দাসেই তিনি তাঁদের ইমামতি করে থাকতেন তবে পরে তাঁদের সম্পর্কে এই জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন কি ছিল? দ্বিতীয় দলীল এই যে, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য তো উঁচুতে জনাব বারী তাআলার সামনে হাজির হওয়া। তাহলে স্পষ্টতঃ এটাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। যখন এটা হয়ে গেল এবং তাঁর উপর ও তাঁর উম্মতের উপর ঐ রাত্রে যে ফরজ নামায নির্ধারিত হওয়ার ছিল সেটাও হয়ে গেল তখন তারস্বীয় নবী ভাইদের সাথে একত্রিত হওয়ার সুযোগ হলো। আর এই নবীদের সামনে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁদের ইমামতি করতে তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তখন। তিনি তাঁদের ইমামতি করলেন। তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস হতে বুরাকে আরোহণ করে রাত্রির অন্ধকারেই ফজরের কিছু পূর্বে তিনি মক্কা শরীফে পৌঁছে গেলেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র মহান আল্লাহরই রয়েছে।এখন এটা যে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাঁর সামনে দুধ ও মধু বা দুধ ও শরাব অথবা দুধ ও পানি পেশ করা হয়, এই চারটি জিনিসই ছিল, এগুলি সম্পর্কে রিওয়াইয়াত সমূহে এটাও রয়েছে যে, এটা হচ্ছে বায়তুল মুকাদ্দাসের ঘটনা, আবার এও রয়েছে যে, এটা আসমান সমূহের ঘটনা। কিন্তু এটা হতে পারে যে, এই দুই জায়গাতেই এ জিনিসগুলি তাঁর সামনে হাজির করাহয়েছিল। কারণ, যেমন কোন আগন্তুকের সামনে আতিথ্য হিসেবে কোন জিনিস রাখা হয়, এটাও ঐরূপই ছিল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।আবার এ ব্যাপারেও লোকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই মিরাজ দেহ ও রূহ সমেত ছিল, না শুধু আধ্যাত্মিক রূপে ছিল? অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম তো এ কথাই বলেন যে, দেহ ও আত্মাসহ তাঁর মি’রাজ হয়েছিল এবং হয়েছিল আবার জাগ্রত অবস্থায়, স্বপ্নের অবস্থায় নয়। হাঁ, তবে এটা কেউ অস্বীকার করেন না যে, প্রথমে স্বপ্নে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) এই জিনিস গুলিই দেখানো হয়েছিল। তিনি স্বপ্নে যা দেখতেন অনুরূপভাবে জাগ্রত অবস্থাতেও ঐগুলি তাঁকে দেখানো হতো। এর বড় দলীল এক তো এই যে, এই ঘটনাটি বর্ণনা করার পর্বে আল্লাহ তাআলা স্বীয় পবিত্রতা বর্ণনা করেছেন। এই ধরনের বর্ণনারীতির দাবী এই যে, এরপরে যা বর্ণনা করা হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এটাকে স্বপ্নের ঘটনা মেনে নেয়া হয় তবে স্বপ্নে এ সব জিনিস দেখে নেয়া তেমন কোন গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নয় যে, তা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা পূর্বেই স্বীয় অনুগ্রহ ও ক্ষমতার প্রকাশ হিসেবে নিজের পবিত্রতা বর্ণনা করবেন। আবার এটা যদি স্বপ্নের ঘটনা হতো তবে কাফিররা এভাবে এতো তাড়াতাড়ি তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করতো না। কেননা, কেউ যদি তার স্বপ্নে দেখা কিছু বিস্ময়কর জিনিস বর্ণনা করে তবে শ্রোতাদের তার কথায় উত্তেজিত হওয়া এবং কঠিনভাবে তা অস্বীকার করার কোনই কারণ থাকে না। তা ছাড়া যে সবলোক এর পূর্বে ঈমান এনেছিল এবং তাঁর। রিসালাত কবুল করে নিয়েছিল, মিরাজের ঘটনা শুনে তাদের ইসলাম থেকে ফিরে আসার কি কারণ থাকতে পারে? এর দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি স্বপ্নের ঘটনা বর্ণনা করেন নাই। তারপর কুরআন কারীমের (আরবি) শব্দের উপর চিন্তা গবেষণা করলে বুঝা যাবে যে, (আরবি) এর প্রয়োগ দেহ ও আত্মা এই দু'এর সমষ্টির উপর হয়ে থাকে। এরপর (আরবি) আল্লাহ পাকের এই উক্তি এটাকে আরো পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, তিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রির সামান্য অংশের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই দেখাকে লোকদের পরীক্ষার কারণ বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) যদি এটা স্বপ্নই হবে তবে এতে মানুষের বড় পরীক্ষা কি এমন ছিল যে, ভবিষ্যতের হিসেবে বর্ণনা করা হতো? হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই দেখা ছিল চোখের দেখা। স্বয়ং কুরআন বলেঃ (আরবি) অর্থাৎ চক্ষু টলেও নাই এবং বিপথগামীও হয় নাই।” স্পষ্ট কথা যে, (আরবি) অর্থাৎ চক্ষু বা দৃষ্টি মানুষের সত্তার একটি বড় গুণ, শুধু আত্মা নয়। তারপর বুরাকের উপর সওয়ার করিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়াও এরই দলীল যে, এটা জাগ্রত অবস্থার ঘটনা এবং এটা তাঁর সশরীরে ভ্রমণ। শুধু রূহের জন্যে সওয়ারীর কোন প্রয়োজন ছিল না। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।অন্যেরা বলেন যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই মিরাজ ছিল শুধু আত্মর, দৈহিক নয়। মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) লিখেছেনঃ “হযরত মুআবিয়া ইবনু আবি সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহর (সঃ) দেহ অদৃশ্য হয় নাই, বরং তার মি'রাজ ছিল আত্মার, দেহের নয়।” তাঁর এই উক্তিকে অস্বীকার করা হয় নাই। কেননা, হযরত হাসান (রঃ) বলেনঃ (আরবি) এই আয়ত বর্ণিত হয়েছিল এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে খবর দিয়েছেন যে, তিনি বলেছিলেনঃ “আমি স্বপ্নে তোমাকে (হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে যবাহ করতে দেখেছি, সুতরাং তুমি চিন্তা কর, তোমার মত কি?” তারপর এই অবস্থাই থাকে। অতএব, এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, নবীদের (আঃ) কাছে জাগ্রত অবস্থায়ও ওয়াহী আসে এবং স্বপ্নেও আসে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “আমার চক্ষু ঘুমায় বটে, কিন্তু অন্তর জেগে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এ সবের মধ্যে সত্য কোনটি? তিনি জানেন এবং অনেক কিছু দেখেন। ঘুমন্ত বা জাগ্রত যে অবস্থাতেই তিনি থাকুন না কেন সবই হক ও সত্য। এটা ততা ছিল মুহাম্মদ ইবনু ইসহাকের (রঃ) উক্তি। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এটাকে বিভিন্নভাবে খণ্ডন করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা কুরআন কারীমের শব্দের সরাসরি উল্টো উক্তি। অতঃপর তিনি এর বিপরীত অনেক কিছু দলীল কায়েম করেছেন। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) সহীহ বুখারীতে বর্ণনা করেছেন) এই বর্ণনায় এক অতি উত্তম ও যবরদস্ত উপকার ঐ রিওয়াইয়াত দ্বারা হয়ে থাকে যা হাঁফিজ আবু নঈম ইসবাহানী (রঃ) কিতাবুদ দালাইলিন নবুওয়াহতে আনয়ন করেছেন। রিওয়াইয়াতটি এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন দাহইয়া ইবনু খালীফাকে (রাঃ) একটি পত্র দিয়ে দূত হিসেবে রোমক সম্রাট কায়সারের নিকট প্রেরণ করেন তখন তিনি সম্রাটের নিকট পৌঁছলে সম্রাট সিরিয়ায় অবস্থানরত আরব বণিকদেরকে তার দরবারে হাজির করেন। তাঁদের মধ্যে আবু সুফিয়ান সখর ইবনু হারব (রাঃ) ছিলেন এবং তার সাথে মক্কার অন্যান্য কাফিররাও ছিল। তারপর তিনি তাদেরকে অনেকগুলি প্রশ্ন করলেন যা সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবু সুফিয়ান (রাঃ) এই চেষ্টাই করে আসছিলেন যে, কি করে রাসূলুল্লহার (সঃ) দুর্নাম সম্রাটের সামনে প্রকাশ করা যায় যাতে তাঁর প্রতি সম্রাটের মনের কোন আকর্ষণ না থাকে। তিনি নিজেই বলেছেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) প্রতি মিথ্যা আরোপ করতে এবং তার প্রতি অপবাদ দিতে শুধুমাত্র এই ভয়েও কার্পণ্য করেছিলাম যে, যদি তাঁর প্রতি আমি কোন মিথ্যা আরোপ করি তবে আমার সঙ্গীরা এর প্রতিবাদ করবে এবং সম্রাটের কাছে আমি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়ে যাবো। আর এটা হবে আমার জন্য বড় লজ্জার কথা। তৎক্ষণাৎ আমার মনে একটা ধারণা জেগে উঠলো এবং আমি বললামঃ “হে সম্রাট! শুনুন, আমি একটি ঘটনা বর্ণনা করছি যার দ্বারা আপনার সামনে এটা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়বে যে, মুহাম্মদ (সঃ) বড়ই মিথ্যাবাদী লোক। একদিন সে বর্ণনা করেছে যে, একদা রাত্রে সে মক্কা থেকে বের হয়ে আপনার। এই মসজিদে অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে কু পর্যন্ত গিয়েছে এবং ফজরের পূর্বেই মক্কায় ফিরে এসেছে। আমার এই কথা শোনা মাত্রই বায়তুল মুকাদ্দাসের লাট পাদরী, যিনি রোমক সম্রাটের ঐ মজলিসে তাঁর পার্শ্বে অত্যন্ত সম্মানের সাথে বসেছিলেন, বলে উঠলেনঃ “এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য ঘটনা। ঐ রাত্রের ঘটনা আমার জানা আছে।” তাঁর একথা শুনে রোমক সম্রাট অত্যন্ত বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকান এবং আদবের সাথে জিজ্ঞেস করেনঃ “জনাব এটা আপনি কি করে জানলেন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “শুনুন, আমার অভ্যাস ছিল এবং এটা আমি নিজের জন্যে বাধ্যতামূলক করে নিয়েছিলাম যে, যে পর্যন্ত এই মসজিদের (বায়তুল মুকাদ্দাসের) সমস্ত দরজা। নিজের হাতে বন্ধ না করতাম সেই পর্যন্ত ঘুমাতাম না ঐ রাত্রে অভ্যাস মত দরজা বন্ধ করার জন্যে আমি দাঁড়ালাম। সমস্ত দরজা ভালরূপে বন্ধ করলাম, কিন্তু একটি দরজা বন্ধ করা আমার দ্বারা কোন ক্রমেই সম্ভব হলো না। আমি খুবই শক্তি প্রয়োগ করলাম, কিন্তু কপাট স্বস্থান হতে একটুও সরলো না। তখন আমি আমার লোকজনকে ডাক দিলাম। তারা এসে গেলে আমরা সবাই মিলে শক্তি দিলাম। কিন্তু আমাদের এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেল। আমাদের মনে হলো যে, আমরা যেন একটি পাহাড়কে ওর স্থান হতে সরাতে চাচ্ছি, কিন্তু ওটা একটুও হিলছে না বা নড়ছে না। আমি তখন একজন কাঠ মিস্ত্রীকে ডাকলাম। সে অনেকক্ষণ চেষ্টা করলো, কিন্তু পরিশেষে সেও হারমানলো এবং বললোঃ “সকালে আবার দেখা যাবে।” সুতরাং ঐরাত্রে ঐ দরজার দু'টি পাল্লা ঐভাবেই খোলা থেকে গেল। সকালেই আমি ঐ দরজা কাছে গিয়ে দেখি যে, ওর পার্শ্বে কোণায় যে একটি পাথর ছিল তাতে একটি ছিদ্র রয়েছে এবং জানা যাচ্ছে যে, ঐ রাত্রে কেউ সেখানে কোন জন্তু বেঁধে রেখেছিল,ওর চিহ্ন বিদ্যমান রয়েছে। আমি তখন বুঝে ফেললাম যে, আজ রাত্রে আমাদের এই মসজিদকে কোন নবীর জন্যে খুলে রাখা হয়েছে এবং তিনি অবশ্যই এখানে নামায পড়েছেন। এই কথা আমি আমার লোকদেরকে বুঝিয়ে বললাম।” এটা খুবই দীর্ঘ হাদীস। ফায়েদাঃ হযরত আবু খাত্তাব উমার ইবনু দাহইয়াহ (রঃ) তাঁর (আরবি) নামক গ্রন্থে হরযত আনাসের (রাঃ) বর্ণনার মাধ্যমে মিরাজের হাদীসটি আনয়ন করে ওর সম্পর্কে অতি উত্তম মন্তব্য করতঃ বলেন যে, মিরাজের হাদীসটি হলো মুতাওয়াতির। হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) , হযরত আলী (রাঃ) , হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) , হযরত আবু যার (রাঃ) , হযরত মালিক ইবনু সা’সা’ (রাঃ) , হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) , হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) , হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) , হযরত শাদ্দাস ইবনু আউস (রাঃ) , হযরত উবাই ইবনু কাব (রাঃ) হযরত আবদুর রহমান ইবনু কার (রাঃ) হযরত আবু হিব্বাহ্ (রাঃ) , হযরত আবু ইয়ালা (রঃ), হযরত হুযাইফা (রাঃ) ,হযরত বুরাইদা (রাঃ) , হযরত আবু আইয়ুব (রাঃ) , হযরত আবু উমামা (রাঃ) ,হযরত সামনা ইবনু জুনদুব (রাঃ) , হযরত আবুল খামরা’ (রাঃ) , হযরত সুহাইব রূমী (রাঃ) , হযরত উম্মে হানী (রাঃ) , হযরত আয়েশা (রাঃ) , হযরত আসমা (রাঃ) প্রভৃতি হতে মিরাজের হাদীস বর্ণিত আছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন। যদিও এগুলোর মধ্যে কতকগুলি রিওয়াইয়াত সনদের দিক দিয়ে বিশুদ্ধ নয়, তথাপি মোটের উপর সঠিকতার সাথে মিরাজের ঘটনা সাব্যস্ত করেছেন এবং মুসলমানরা সমষ্টিগতভাবে এর স্বীকারোক্তিকারী। হাঁ, তবে যিনদীক ও মুলহিদ লোকেরা এটা অস্বীকারকারী। তারা চায় যে, আল্লাহর নূরকে (দ্বীন ইসলামকে) নিজেদের মুখ দ্বারা নির্বাপিত করে, অথচ আল্লাহ নিজ নূরকে পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে ছাড়বেন, চাই কাফিররা যতই অসন্তুষ্ট হোক না কেন।

وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

📘 ৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা স্বীয় পবিত্র কিতাবের প্রশংসায় বলেন যে, এই কুরআন সুপথ প্রদর্শন করে থাকে। যে সব মু'মিন ঈমান অনুযায়ী নবীর (সঃ) ফরমানের উপর আমল করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়, তাদের জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট রয়েছে বিরাট পুরস্কার এবং সেখানে পাবে তারা অফুরন্ত নিয়ামত। পক্ষান্তরে যাদের মধ্যে ঈমান নেই তাদেরকে এই কুরআন এই খবর দেয় যে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।” (৪৫:৮)

قُلْ لَوْ أَنْتُمْ تَمْلِكُونَ خَزَائِنَ رَحْمَةِ رَبِّي إِذًا لَأَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْإِنْفَاقِ ۚ وَكَانَ الْإِنْسَانُ قَتُورًا

📘 এখানে আল্লাহ তাআলা মানব প্রকৃতির অভ্যাস বর্ণনা করছেন যে, মানুষ যদি আল্লাহ তাআলার রহমত বা দয়ার ভাণ্ডারেরও অধিকারী হয়ে যেতো, যা কখনো কিছুই কম হবার নয়, তবুও খরচ হয়ে যাবে এই ভয়ে তারা তা ধরে রাখতো। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “যদি তারা রাজ্যের কোন অংশের মালিক হয়ে যায় তবে তারা কাউকে এক কানা কড়িও দিবে না। এটাই হচ্ছে মানব প্রকৃতি। তবে হাঁ, আল্লাহর পক্ষ থেকে যারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয় এবং উত্তম তাওফীক লাভ করে তারা এই বদ অভ্যাসকে ঘৃণা করে। তারা দানশীল হয় এবং অপরের কল্যাণ সাধন করে। “মানুষ বড়ই তাড়াহুড়াকারী ও দুর্বল মনী। কষ্ট ও বিপদের সময় তারা একেবারে মুষড়ে পড়ে এবং আরাম ও সুখের সময় গর্বভরে ফুলে ওঠে। এ সময় তারা কাউকেও কিছুই দান করে না, বরং কার্পণ্য করে। তবে নামাযীরা ব্যতীত (শেষ পর্যন্ত)।” এই ধরনের আয়াত কুরআন কারীমের মধ্যে আরো বহু রয়েছে। এগুলি দ্বারা আল্লাহ তাআ’লরি ফযল ও করম এবং দান ও দয়ার পরিচয় মিলে।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার হাত। পরিপূর্ণ রয়েছে। দিন রাত্রির খরচে তা হতে কিছুই কমে যায় না। শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তিনি খরচ করে যাচ্ছেন, তথাপি তাঁর ভাণ্ডারের কিছুই কমে নাই।

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۖ فَاسْأَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ إِذْ جَاءَهُمْ فَقَالَ لَهُ فِرْعَوْنُ إِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا مُوسَىٰ مَسْحُورًا

📘 Please check ayah 17:104 for complete tafsir.

قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنْزَلَ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ بَصَائِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا فِرْعَوْنُ مَثْبُورًا

📘 Please check ayah 17:104 for complete tafsir.

فَأَرَادَ أَنْ يَسْتَفِزَّهُمْ مِنَ الْأَرْضِ فَأَغْرَقْنَاهُ وَمَنْ مَعَهُ جَمِيعًا

📘 Please check ayah 17:104 for complete tafsir.

وَقُلْنَا مِنْ بَعْدِهِ لِبَنِي إِسْرَائِيلَ اسْكُنُوا الْأَرْضَ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ الْآخِرَةِ جِئْنَا بِكُمْ لَفِيفًا

📘 ১০১-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর হযরত মূসা (আঃ) ন’টি মু'জিযা লাভ করেছিলেন যেগুলি তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার স্পষ্ট দলীল ছিল। নয় টি মু'জিযা হচ্ছেঃ লাঠি, হাত (এর ঔজ্জ্বল্য), দুর্ভিক্ষ, সমুদ্র, তুফান, ফড়িং, উকুণ, ব্যাঙ এবং রক্ত। এইগুলি বিস্তারিত বিবরণযুক্ত আয়াত সমূহ। মুহাম্মদ ইবনু কাবের (রঃ) উক্তি এই যে, মু'জিযাগুলি হলোঃ হাত উজ্জ্বল হওয়া, লাঠি সাপ হওয়া এবং পাঁচটি মু'জিযা যা সূরায়ে আ'রাফে বর্ণিত আছে, আর মাল কমে যাওয়া এবং পাথর। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রভৃতি হতে বর্ণিত আছে যে, মুজিযাগুলি ছিল তাঁর হাত, তাঁর লাঠি, দুর্ভিক্ষ, ফল হ্রাস পাওয়া, তুফান, ফড়িং, উকুণ, ব্যাঙ এবং রক্ত । এই উক্তিটিই সবচেয়ে বেশী প্রকাশমান ও স্পষ্ট, উত্তম ও দৃঢ়। হাসান বসরী (রঃ) এগুলির মধ্যে দুর্ভিক্ষ এবং ফলেরহ্রাস পাওয়াকে একটি ধরে লাঠির যাদুকরদের সাপগুলি খেয়ে ফেলাকে নবম মুজিযা বলেছেন।এই সমুদয় মু'জিযা দেখা সত্ত্বেও ফিরাউন এবং তার লোকেরা অহংকার করে এবং তাদের পাপ কার্যের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাদের অন্তরে বিশ্বাস জমে গেলেও তারা যুলুম ও বাড়াবাড়ি করে কুফরী ও ইনকারের উপরই কায়েম থেকে যায়। পূর্ববর্তী আয়াতগুলির সাথে এই আয়াতগুলির সহযোগ এই যে, যেমন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কওম তার কাছে মু'জিযা দেখতে চেয়েছিল, অনুরূপভাবে ফিরাউনও মূসার (আঃ) কাছে মু'জিযা দেখতে চেয়েছিল এবং তার সামনে সেগুলি প্রকাশিতও হয়েছিল, তবুও ঈমান তার ভাগ্যে জুটে নাই। শেষ পর্যন্ত তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তদ্রুপই তাঁর কওমও যদি মু'জিযা। আসার পরেও কাফিরই থেকে যায় তবে তাদেরকে আর অবকাশ দেয়া হবে না এবং তারাও সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। স্বয়ং ফিরাউন মু'জিযাগুলি দেখার পর হযরত মূসাকে (আঃ) যাদুকর বলে নিজেকে তাঁর থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এখানে যে নয়টি মু'জিযা’র বর্ণনা রয়েছে তা এইগুলিই এবং ঐগুলির বর্ণনা হতে (আরবি) (২৭:১০-১২) পর্যন্ত এর মধ্যে রয়েছে। এই আয়াতগুলির মধ্যে লাঠি ও হাতের বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। বাকীগুলোর বর্ণনা সূরায়ে আ’রাফে রয়েছে। এইগুলো ছাড়াও আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) আরো বহু মু'জিযা দিয়েছিলেন। যেমন তাঁর লাঠির আঘাতে একটি পাথরের মধ্য হতে বারোটি প্রস্রবণ বের হওয়া, মেঘ দ্বারা ছায়া করা, মান্ন ও সালওয়া অবতীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। এসব নিয়ামত বাণী ইসরাঈলকে মিসর শহর ছেড়ে দেয়ার পর দেয়া হয়েছিল। এই মু'জিযা গুলির বর্ণনা এখানে না দেয়ার কারণ এই যে, ফিরাউন ও তার লোকেরা এগুলো দেখে নাই। এখানে শুধু ঐ মু'জিযাগুলির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে গুলি ফিরাউন ও তার লোকেরা দেখেছিল। তারপর অবিশ্বাস করেছিল। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন ইয়াহূদী তার সঙ্গীকে বলেঃ “চল, আমরা এই নবীর (সঃ) কাছে গিয়ে তাঁকে কুরআনের এই আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, হযরত মূসার (আঃ) নয়টি মু'জিযা কি ছিল?” অপরজন তাকে বললোঃ “নবী বলো না। অন্যথায় তাঁর চারটি চোখ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ তিনি এতে গর্ববোধ করবেন।” অতঃপর তারা দুজন এসে তাঁকে প্রশ্ন করে।” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না, চুরি করো না, ব্যভিচার করো না, কাউকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, জাদু করো না, সুদ খেয়ো না, নিস্পাপ লোকদেরকে ধরে বাদশাহর কাছে নিয়ে গিয়ে হত্যা করিয়ে, সতী ও পবিত্র মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ো না অথবা বলেছেনঃ জিহাদ হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না। আর হে ইয়াহূদীগণ! তোমাদের উপর শেষ হুকুম ছিল এই যে, তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লংঘন করো না।” একথা শোনা মাত্রই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসূলুল্লাহর (সঃ) হাত পা চুমতে শুরু করে। এরপর বলেঃ “আমাদের সাক্ষ্য রইলো যে, আপনি আল্লাহর নবী।” তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ করছো না কেন?” তারা উত্তরে বললোঃ “হযরত দাউদ (আঃ) প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর বংশে যেন নবী অবশ্যই হন। আমরা ভয় করছি যে, আমরা আপনার অনুসরণ করলে ইয়াহূদীরা আমাদেরকে জীবিত রাখবে না। (এ হাদীসটি জামে তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনু মাজাতেও রয়েছে। ইমাম তিরমীযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহও বলেছেন। কিন্তু এতে কিছুটা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা এর বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু সালমার স্মরণ শক্তিতে ত্রুটি রয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে ভাল জানেন) হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে বলেনঃ “হে ফেরাউন! তোমার তো ভালরূপেই জানা আছে যে, এসব মুজিযা সত্য। এগুলোর এক একটি আমার সত্যতার উপর উজ্জ্বল দলীল। আমার ধারণা হচ্ছে যে, তুমি ধ্বংস হতে চাচ্ছ। তোমার উপর আল্লাহর লা'নত বর্ষিত হোক-এটা তুমি কামনা করছে; তুমি পরাস্ত হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে।”(আরবি) শব্দের অর্থ হলো ধ্বংস হওয়া। যেমন নিম্নের কবিতাংশে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন শয়তান পথ ভ্রষ্টতার পন্থায় যুলুম করে থাকে, তখন যে তার প্রতি আকৃষ্ট হয় সে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় (অর্থাৎ) শয়তানের বন্ধু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।”(আরবি) দ্বিতীয় কিরআতে (আরবি) রয়েছে। কিন্তু জামহূরের কিরআতে (আরবি) অর্থাৎ অক্ষরের উপর যবর দিয়েও রয়েছে। এই অর্থকেই নিম্নের আয়াতে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তাদের কাছে আমার প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ নিদর্শনসমূহ পৌঁছে যায়, তখন তারা বলে ওঠেঃ এটা তো স্পষ্ট যাদু, একথা বলে তারা অস্বীকার করে বসে, অথচ তাদের অন্তর তা বিশ্বাস করে নিয়ে ছিল, কিন্তু যুলুম ও সীমালংঘনের কারণেই তারা মানে না।” (২৭:১৩-১৪) মোট কথা, যে নিদর্শনগুলির বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেগুলি হলোঃ লাঠি, হাত, দুর্ভিক্ষ, ফলের হ্রাস প্রাপ্তি, ফড়িং, উকুণ, ব্যাঙ এবং রক্ত। এগুলো ফিরাউন ও তার কওমের জন্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে দলীল ছিল এবং এগুলো ছিল হযরত মূসার (আঃ) মু'জিযা যা তার সত্যতা এবং আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ স্বরূপ ছিল এই নতুন নিদর্শনগুলির দ্বারা উদ্দেশ্য এ আহকাম নয় যা উপরের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, ওগুলো ফিরাউন ও তার কওমের উপর হজ্জত ছিল না। কেননা, তাদের উপর হুজ্জত হওয়া এবং এই আহকামের বর্ণনার মধ্যে কোন সম্পর্কই নেই। শুধু বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু সালমার বর্ণনার কারণেই এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। আসলে তার কতকগুলি কথা অস্বীকার যোগ্য। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। খুব সম্ভব ঐ ইয়াহূদী দু’জন দশটি কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আর বর্ণনাকারীর ধারণা হয়েছিল যে, সেগুলি ঐ নয়টি নিদর্শন।ফিরাউন হযরত মূসাকে (আঃ) দেশান্তর করার ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ স্বয়ং তাকেই মাছের গ্রাস বানিয়েছিল। আর তার সমস্ত সঙ্গীকেও পানিতে নিমজ্জিত করেছিলেন। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বাণী ইসরাঈলকে বলেছিলেনঃ এখন যমীন তোমাদেরই অধিকারভুক্ত হয়ে গেল। তোমরা এখন সুখে শান্তিতে বসবাস কর এবং পানাহার করতে থাকো। এই আয়াতে রাসূলুল্লাহকেও (সঃ) চরমভাবে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, মক্কা তাঁর হাতেই বিজিত হবে। অথচ এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। তখনতো তিনি মদীনায় হিজরতই করেন নাই। বাস্তবে হয়েছিলও এটাই যে, মক্কাবাসী তাকে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার ইচ্ছা করে। যেমন কুরআন কারীমের (আরবি) (১৭:৭৬) এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) জয়যুক্ত করেন এবং মক্কার মালিক বানিয়ে দেন। আর বিজয়ীর বেশে তিনি মক্কায় আগমন করেন এবং এখানে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর ধৈর্য ও করুণা প্রদর্শন করতঃ স্বীয় প্রাণের শত্রুদেরকে সাধারণভাবে ক্ষমা করে দেন।আল্লাহ তাআলা বাণী ইসরাঈলের ন্যায় দুর্বল জাতিকে যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং তাদেরকে ফিরাউনের ন্যায় কঠোর ও অহংকারী বাদশাহর ধন দৌলত, যমীন, ফল, জমিজমা এবং ধন-ভাণ্ডারের মালিক করে দেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “বাণী ইসরাঈলকে আমি ওগুলির উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম।” (২৬:৫৯)এখানেও আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ফিরাউনের ধ্বংসের পর আমি বাণী ইসরাঈলকে বললামঃ “এখন তোমরা এখানে বসবাস কর। কিয়ামতের প্রতিশ্রুতির দিন তোমরা ও তোমাদের শত্রুরা সবাই আমার সামনে হাযির হবে। আমি তোমাদের সবকেই আমার কাছে একত্রিত করবো।

وَبِالْحَقِّ أَنْزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ ۗ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا

📘 Please check ayah 17:106 for complete tafsir.

وَقُرْآنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَىٰ مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيلًا

📘 ১০৫-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ কুরআন সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। এটা সরাসরি সত্যই বটে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় জ্ঞানের সাথে এটা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি নিজেই এর সত্যতার সাক্ষী এবং ফেরেশতারাও সাক্ষী। এতে ঐ জিনিসই রয়েছে যা তিনি নিজের জ্ঞানে অবতীর্ণ করেছেন। এর সমস্ত হুকুম-আহকাম এবং নিষেধাজ্ঞা তার পক্ষ হতেই রয়েছে। সত্যের অধিকারী যিনি তিনিই সত্যসহ এটা অবতীর্ণ করেছেন এবং সত্যসহই তোমার কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। না পথে কোন বাতিল এতে মিলিতহয়েছে, না বাতিলের এ ক্ষমতা আছে যে, এর সাথে মিশ্রিত হতে পারে। এসব হতে এই কুরআন সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত। এটা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনহতেও পাক ও পবিত্র। পূর্ণক্ষমতার অধিকারী বিশ্বস্ত ফেরেশতার মাধ্যমে এটা অবতীর্ণ হয়েছে। যে ফেরেশতা আকাশে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও নেতা। হে নবী (সঃ)! তোমার কাজ হলো মু'মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও কাফিরদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। এই কুরআনকে আমি লওহে মাহফুযের ‘বায়তুল ইয্যাহ’এর উপর অবতীর্ণ করেছি, যা প্রথম আকাশে রয়েছে। সেখান থেকে অল্প অল্প করে ঘটনা অনুযায়ী বিচ্ছিন্নভাবে তেইশ বছরে দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর দ্বিতীয় কিরআত । রয়েছে। অর্থাৎ এক একটি করে আয়াত তাফসীর ও বিশ্লেষণসহ অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে তুমি লোকদের কাছে সহজেই পৌঁছিয়ে দিতে পার এবং ধীরে ধীরে তাদেরকে শুনিয়ে দিতে সক্ষম হও। আমি এগুলিকে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করেছি।

قُلْ آمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا ۚ إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا

📘 Please check ayah 17:109 for complete tafsir.

وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا

📘 Please check ayah 17:109 for complete tafsir.

وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا ۩

📘 ১০৭-১০৯ নং আয়াতের তাফসীর মহান আল্লাহ বলেনঃ (হে কাফিরের দল!) তোমাদের ঈমান আনয়নের উপর কুরআনের সত্যতা নির্ভরশীল নয়। তোমরা একে মানো বা না-ই মানো, এতে কোন কিছু যায় আসে না। কুরআন যে নিজে আল্লাহর কালাম এবং সত্য গ্রন্থ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সদা সর্বদা প্রাচীন ও পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে এর বর্ণনা চলে আসছে। যে সব আহলে কিতাব সৎ ও আল্লাহর কিতাবের উপর আমলকারী এবং যারা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন আনয়ন করেন নাই তারা তো এই কুরআন শোনা মাত্রই আবেগ উদ্বেলিত হয়ে সিজদায়ে শুকর আদায় করে থাকেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার শুকর যে আপনি আমাদের বর্তমানেই এই রাসূলকে (সঃ) পাঠিয়েছেন এবং এই কালাম অবতীর্ণ করেছেন। আর তারা আল্লাহর পূর্ণ ও ব্যাপক শক্তির কারণে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা প্রকাশ করে থাকেন; তাঁরা জানতেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য-মিথ্যা নয়। আজ তার ওয়াদা পূর্ণ হতে দেখে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান এবং তাদের প্রতিপালকের তাসবীহ পাঠে রত থাকেন, আর তার প্রতিশ্রুতির সত্যতা স্বীকার করে নেন। তারা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের প্রতিপালকের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। ঈমান, আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) কারণে তাঁদের ঈমান, ইসলাম, হিদায়াত, তাকওয়া, এবং ভয়-ভীতি আরো বৃদ্ধি পায়। এই সংযোগ সিফাত বা বিশ্লেষণের উপর বিশ্লেষণের সংযোগ ‘যাত’ বা সত্তার উপর সত্তার সংযোগ নয়।

وَيَدْعُ الْإِنْسَانُ بِالشَّرِّ دُعَاءَهُ بِالْخَيْرِ ۖ وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا

📘 আল্লাহ তাআলা মানুষের একটা বদ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা কখনো কখনো মনভাঙ্গা ও নিরাশ হয়ে গিয়ে ভুল করে নিজের জন্যে অমঙ্গলের প্রার্থনা করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে নিজের মাল-ধন ও সন্তানসন্ততির জন্যে বদদুআ করতে লাগে। কখনো মৃত্যুর, কখনো ধ্বংসের এবং কখনো অভিশাপের দুআ করে। কিন্তু তার প্রতিপালক আল্লাহ তার নিজের চেয়েও তার উপর বেশী দয়ালু। এদিকে সে দুআ করে আর ওদিকে যদি তিনি কবুল করে নেন তবে সাথে সাথেই সে ধ্বংস হয়ে যায় (কিন্তু তিনি তা করেন না)। হাদীসেও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা নিজেদের জান ও মালের জন্যে বদ দুআ করো না। নচেৎ কবুল হওয়ার মুহূর্তে হয়তো কোন খারাপ কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়বে।” এর একমাত্র কারণ হচ্ছে মানুষের চাঞ্চল্যকর অবস্থাও দ্রুততা। মানুষ আশুরূপায়ণ কামনাকারীই বটে।এরই পরিপ্রেক্ষিতে হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) ও হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হযরত আদমের (আঃ) ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, তখন তাঁর রূহ তাঁর পায়ের নিম্নদেশ পর্যন্ত পৌঁছে নাই, অথচ তখনই তিনি দাঁড়াবার চেষ্টা করেন। রূহ মাথার দিক থেকে আসছিল। যখন নাক পর্যন্ত পৌঁছলো তখন তার হাঁচি আসলো। তিনি বললেনঃ (আরবি) (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে)। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) (হে আদম (আঃ)! তোমার প্রতিপালক তোমার প্রতি দয়া করুন!) রূহ যখন চক্ষু পর্যন্ত পৌঁছলো তখন তিনি চক্ষু খুলে দেখতে লাগলেন। তারপর যখন নীচের অঙ্গগুলিতে পৌঁছলো তখন তিনি খুশী হয়ে নিজের দিকে তাকাতে থাকলেন। তখনো পর্যন্ত পৌঁছে নাই। অথচ হাঁটার ইচ্ছা করলেন, কিন্তু হাঁটতে পারলেন না তখন দুআ করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! রাত্রির পূর্বেই যেন পায়ে রূহ্ চলে আসে!”

قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَٰنَ ۖ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا

📘 Please check ayah 17:111 for complete tafsir.

وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الذُّلِّ ۖ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا

📘 ১১০-১১১ নং আয়াতের তাফসীর কাফিররা আল্লাহ তাআলার করুণার বিশেষণে অস্বীকারকারী ছিল। তার একটি গুণবাচক নাম যে রহমান তা তারা মানতো না বা বুঝতো না। তখন আল্লাহ তাআলা নিজের জন্যে এটা সাব্যস্ত করছেন এবং বলছেনঃ এটা নয় যে, তাঁর নাম শুধু আল্লাহই হবে এবং শুধু রহমানই হবে, অন্য কিছু হবে না। বরং এ ছাড়াও তার আরো বহু উত্তম ও সুন্দর নাম রয়েছে। যে পবিত্র নামের মাধ্যমেই ইচ্ছা তাঁর কাছে প্রার্থনা কর। সূরায়ে হাশরের শেষেও তিনি তাঁর অনেক নাম বর্ণনা করেছেন।একজন মুশরিক রাসূলুল্লাহকে (সঃ) সিজদার অবস্থায় (আরবি) ও (আরবি) বলতে শুনে বলে ওঠেঃ “এই একত্ববাদীকে দেখো, দুই খোদাকে ডাকছে!” ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ নামাযে স্বর খুব উচ্চও করো না এবং খুব ক্ষীণও করো না। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কায় গোপনীয়ভাবে ছিলেন। যখন তিনি সাহাবীদেরকে নামায পড়াতেন এবং তাতে উচ্চ শব্দে কিরআত পড়তেন তখন মুশরিকরা কুরআনকে, আল্লাহকে এবং রাসূলকে (সঃ) গালি দিতো। তাই, উচ্চ শব্দে কিরআত পড়তে নিষেধ করলেন। এরপর বললেনঃ এতো ক্ষীণ স্বরেও পড়ো না যে, তোমার সাথীরাও শুনতে পায় না। বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন কর। অতঃপর যখন তিনি হিজরত করে মদীনায় আসলেন, তখন এই বিপদ কেটে গেল। তখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই কিরআত পাঠের অধিকার থাকলো। যেখানে কুরআন পাঠ করা হতো সেখান থেকে মুশরিকরা পালিয়ে যেতো কেউ শুনবার ইচ্ছা করলে লুকিয়ে ও নিজেকে বাঁচিয়ে শুনে নিতো। কিন্তু মুশরিকরা জানতে পারলে তাকে কঠিন শাস্তি দিতো। এখন খুব জোরে পড়লে মুশরিকদের গালির ভয় এবং খুবই আস্তে পড়লে যারা লুকিয়ে শুনতে চায় তারা বঞ্চিত থেকে যায়। তাই, মধ্যপথ অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়। মোট কথা, নামাযের কিরআতের ব্যাপারে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) নামাযে কিরআত খুব ক্ষীণস্বরে পাঠ করতেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমি আমার প্রতিপালকের সাথে সলা-পরামর্শ করে থাকি। তিনি আমার প্রয়োজনের খবর রাখেন।” তখন তাঁকে বলা হয়ঃ “এটা খুব উত্তম।” আর হযরত উমার (রাঃ) নামাযে কিরআত উচ্চ স্বরে পড়তেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমি শয়তানকে তাড়াই ও ঘুমন্তকে জাগ্রত করি।” তাঁকেও বলা হলোঃ “এটা খুব ভাল।” কিন্তু যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো তখন হযরত, আবু বকর (রাঃ) স্বর কিছু উঁচু করেন এবং হযরত উমার (রাঃ) স্বর কিছু ক্ষীণ করেন।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি দুআ’র ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অনুরূপভাবে সুফইয়ান ছাওরী (রঃ), মালিক (রঃ) হতে, তিনি হিশাম (রঃ) হতে, তিনি উরওয়া (রাঃ) হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি দুআ’র ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত সাঈদ ইবনু যুবাইর (রঃ), হযরত আবু আইয়া (রঃ), হযরত মাকহুল (রঃ) এবং হযরত উরওয়া ইবনু যুবাইরেরও (রঃ) এটাই উক্তি।বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখনই সালাম ফিরাতেন তখনই একজন বেদুঈন বলতোঃ “হে আল্লাহ! আমাকে উট দান করুন!” তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি উক্তি এও আছে যে, এই আয়াতটি তাশাহহুদের সম্পর্কে নাযিল হয়। এও একটি উক্তি আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ রিয়াকারী আমল করো না এবং আমল ছেড়েও দিয়ো না। আর এটাও করো না যে, উচ্চস্বরে পড়ার সময় ভাল করে পড়বে এবং ক্ষীণস্বরে পড়ার সময় মন্দ করে পড়বে।আহলে কিতাব ক্ষীণ স্বরে তাদের কিতাব পাঠ করতো এবং এরই মাঝে কোন কোন বাক্য উচ্চ স্বরে পড়তো। তখন সবাই মিলিতভাবে চীৎকার ও গোলমাল করতো। তখন তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখতে নিষেধ করে দেয়া হয় আর অন্য লোক যেমন ক্ষীণ স্বরে পড়তো তার থেকেও বাধা দেয়া হয়। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে মধ্যপথ বাতলিয়ে দেন, যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সুন্নাত বলে ঘোষণা দেন।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা কর, যাতে তাঁর সমস্তগুণ ও পবিত্রতা বিদ্যমান থাকে। এইভাবে তার প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হবে, যে, তাঁর সমস্ত নাম উত্তম ও সুন্দর, তিনি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত, তাঁর সন্তান নেই, তার কোন অংশীদার নেই, তিনি এক ও একক। তিনি অভাবমুক্ত তাঁর পিতা মাতা নেই ও সন্তানও নেই, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। তিনি এমন তুচ্ছ নন যে, তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাঁর কোন পরামর্শদাতারও প্রয়োজন নেই। বরং সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক একমাত্র তিনিই। তিনি সবারই উপর পূর্ণক্ষমতাবান এবং তিনিই সবার ব্যবস্থাপক। তিনি সৃষ্টজীবের উপর যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি এক ও অংশী বিহীন। তিনি কারো সাথে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন না এবং তিনি কারো সাহায্যেরও আশাধারী নন। তোমরা সব সময় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, পবিত্রতা ও বুযর্গী বর্ণনা করতে থাকো। আর মুশরিকরা তার উপর যে অপবাদ লেপন করে তার থেকে তিনি যে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র তা তোমরা ঘোষণা করে দাও। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা তো বলতো যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)। আর মুশরিকরা বলতোঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে হাযির আছি, আপনার কোন অংশীদার নেই, শুধু একজন অংশীদার রয়েছে, তারও মালিক আপনিই।” সে যা কিছুর মালিক তারও মালিক আপনিই।” সাবী’ মাজুসীরা বলতোঃ “যদি আল্লাহর ওয়ালীরা না থাকতো তবে তিনি একাই সমস্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না (নাঊযুবিল্লাহ)।” ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এর দ্বারা বাতিলপন্থীদের সমস্ত দাবী খণ্ডন করা হয়েছে।নবী (সঃ) তাঁর বাড়ীর ছোট বড় সকলকেও এই আয়াতটি শিখাতেন। তিনি এই আয়াতটির নাম রেখেছিলেন (আরবি) অর্থাৎ সম্মানিত আয়াত।কোন কোন হাদীসে আছে যে, যে বাড়ীতে রাত্রে এই আয়াত পাঠ করা হয় সেই বাড়ীতে কোন বিপদ আসতে এবং চুরি হতে পারে না।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “আমি একদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে বের হই। আমার হাতখানা তাঁর হাতের মধ্যে অথবা তাঁর হাতখানা আমার হাতের মধ্যে ছিল। পথে চলতে চলতে একটি লোককে তিনি অত্যন্ত দুরাবস্থায় দেখতে পান। তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার অবস্থা এমন কেন?” উত্তরে লোকটি বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! রোগ-শোক ও ক্ষয়-ক্ষতি আমার এই দূরাবস্থা ঘটিয়েছে। তিনি তখন তাকে বললেনঃ “আমি তোমাকে এমন কিছু অযীফা শিখিয়ে দেবো কি যার ফলে তোমার রোগ-শোক ও দুঃখদৈন্য সব দূর হয়ে যাবে?” উত্তরে লোকটি বললোঃ হা, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অবশ্যই বলুন। এতে বদর ও উহুদ যুদ্ধে আপনার সাথে হাযির হতে না পারার সমস্ত দুঃখ আমার দূর হয়ে যাবে।” তার একথায় নবী (সঃ) হেসে ওঠেন এবং বলেনঃ “বদরী ও উহুদী সাহাবীদের মর্যাদা তুমি কবে লাভ করবে? তুমি তো তাদের তুলনায় সম্পূর্ণ শূন্যহস্ত ও পুঁজিহীন?” তখন আমি (আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাকে যেতে দিন! বরং আমাকে ঐ অযীফাটি শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি নিম্নের দুআটি পাঠ করবেঃ (আরবি) অর্থাৎ আমি ঐ চিরঞ্জীবের ভরসা করছি যিনি মৃত্যু বরণ করেন না। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি সন্তান গ্রহণ করেন নাই।” আমি তখন এই অযীফা পাঠ করতে শুরু করে দিই কয়েকদিন অতিবাহিত হতেই আমার অবস্থা সুন্দর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে দেখে বললেনঃ “হে আবু হুরাইরা (রাঃ) ! তোমার অবস্থা কিরূপ?” আমি উত্তরে বলিঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাকে যে অযীফা শিখিয়ে দিয়েছিলেন তা আমি পাঠ করার কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বরকত লাভ করেছি। (এই হাদীসটির সনদ দুর্বল এবং এর মতনেও ‘নাকারাত' বা অস্বীকৃতি রয়েছে।হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) এটাকে নিজের কিতাবে আনয়ন করেছেন। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সঠিক জ্ঞান রয়েছে)

وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا

📘 আল্লাহ তাআলা তাঁর বড় বড় ক্ষমতার নিদর্শনাবলীর মধ্য হতে দু'টি নিদর্শনের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, দিবস ও রজনীকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে সৃষ্টি করেছেন। রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন আরামের জন্যে এবং দিবসকে সৃষ্টি করেছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। মানুষ যেন ঐ সময় কাজকর্ম করতে পারে, শিল্পকার্য ও ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে এবং ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করতে পারে। আর পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমনের ফলে মানুষ সপ্তাহ, মাস ও বছরের গণনা জানতে পারে, যাতে লেন দেন, পারস্পরিক কার্যকলাপে, ঋণে, মেয়াদের এবং ইবাদতের কাজকর্মে সুবিধা হয়। যদি সময় একটাই থাকতো তবে বড়ই কঠিন হয়ে পড়তো। সত্যি কথা এই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে শুধু রাতই রেখে দিতেন। কারো ক্ষমতা হতো না যে, সে দিন করতে পারে। আর যদি তিনি সর্বদা দিনই রেখে দিতেন তবে কার এমন ক্ষমতা ছিল যে, সে রাত্রি আনতে পারে? মহান আল্লাহর ক্ষমতার এই নিদর্শনগুলি শুনবার ও দেখবার যোগ্যই বটে। এটা একমাত্র তাঁরই রহমত যে, তিনি বিশ্রাম ও শান্তির জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন এবং দিবসকে বানিয়েছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। এ দটি পর্যায়ক্রমে একে অপরের পরে আসতে রয়েছে, যাতে কত্তজ্ঞতা প্রকাশ ও উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা পোষণকারী সফলকাম হতে পারে। তাঁরই হাতে রয়েছে পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমন। তিনি রাত্রির পর্দা দিনের উপর এবং দিনের পর্দা রাত্রির উপর চড়িয়ে থাকেন। সূর্য ও চন্দ্র তাঁরই আয়ত্বাধীনে রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের নির্দিষ্ট সময়ের উপর চলতে রয়েছে। ঐ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও চরম ক্ষমাশীল। তিনি আরামদায়ক বানিয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিজ নিজ কাজে নিযুক্ত রেখেছেন, এটা তারই নির্ধারিত পরিমাণ যিনি মহাপরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। রাত্রিকে অন্ধকার ও চন্দ্রের প্রকাশের দ্বারা চেনা যায় এবং দিবসকে আলোক ও সূর্যোদয়ের দ্বারা জানা যায়। সূর্য ও চন্দ্র উভয়ই উজ্জ্বল ও আলোকময়। কিন্তু এ দুটির প্রতিও তিনি পূর্ণ লক্ষ্য রেখেছেন যেন প্রত্যেকটিকে চিনতে পারা যায়। সূর্যকে উজ্জ্বল ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় তিনিই করেছেন। মনযিল সমূহ তিনিই নির্ধারণ করেছেন যাতে হিসাব ও বছর জানা যায়। আল্লাহ তাআলার এই সৃষ্টি সত্য (শেষ পর্যন্ত)। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “(হে নবী সঃ!) তারা তোমাকে চন্দ্রের (প্রাকৃতিক অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাও, এই চন্দ্র সময় নির্ধারক যন্ত্র বিশেষ, মানুষের জন্যে এবং হজ্জের জন্যে (শেষ পর্যন্ত)।”রাত্রির অন্ধকার সরে যায় এবং দিনের ঔজ্জ্বল্য এসে পড়ে। সূর্য দিনের লক্ষণ এবং চন্দ্র রাত্রির আলামত। আল্লাহ তাআলা চন্দ্রকে কিছু কালিমাযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তিনি রাত্রির নিদর্শন চন্দ্রকে সূর্যের তুলনায় কিছুটা অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছেন। তাতে তিনি এক প্রকারের কলংক লেপন করেছেন। ইবনুল কাওয়া (রঃ) আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলীকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “চন্দ্রের মধ্যে এই কালিমা কিরূপ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এরই বর্ণনা নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ “আমি রাত্রির নিদর্শন অর্থাৎ চন্দ্রের মধ্যে অস্পষ্টতা নিক্ষেপ করেছি (অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছি) এবং দিনের নিদর্শন অর্থাৎ সূর্যকে করেছি অধিকতর উজ্জ্বল, এটা চন্দ্র অপেক্ষা উজ্জ্বলতর এবং অনেক বড়। দিন ও রাত্রিকে আমি দু’টি নিদর্শনরূপে নির্ধারণ করেছি। তাঁর সৃষ্টিই এইরূপ।”

وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ ۖ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا

📘 Please check ayah 17:14 for complete tafsir.

اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا

📘 ১৩-১৪ নং আয়াতের তাফসীর উপরের আয়াতে সময়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যার মধ্যে মানুষ আমল করে থাকে। এখানে আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, মানুষ ভাল মন্দ যা কিছু আমল করে তা তার সাথেই সংলগ্ন হয়ে যায়। ভাল কাজের প্রতিদান ভালহবে এবং মন্দ কাজের প্রতিদান মন্দ হবে, তা পরিমাণে যতই কম হোক না কেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেই ব্যক্তি অনুপরিমাণ সৎ কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে। আর যেই ব্যক্তি অনুপরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তা তথায় দেখতে পাবে।” (৯৯: ৭-৮) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন গ্রহণকারী ফেরেস্তারা (মানুষের কার্যাবলী) গ্রহণ করতে থাকে, যারা ডানে ও বামে উপবিষ্ট আছে। সে কোন কথা মুখ হতে বের করা মাত্র তার নিকটেই একজন রক্ষক (ফেরে) প্রস্তুত রয়েছে (সে লিপিবদ্ধ করে)।” (৫০:১৭-১৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমাদের উপর নিযুক্ত রয়েছে সংরক্ষক ফেরেশতাগণ, সম্মানিত লেখকগণ, যারা তোমাদের সমুদয় কার্যকলাপ অবগত আছে।” (৮২:১০-১২) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমাদেরকে শুধু তোমাদের কৃত কর্মেরই প্রতিদান দেয়া হবে।” আর এক জায়গায় বলেনঃ “প্রত্যেক মন্দকর্মকারীকে শাস্তি দেয়া হবে।” উদ্দেশ্য এই যে, আদম সন্তানের ছোট বড়, গোপনীয়, প্রকাশ্য, ভাল, মন্দ কাজ , সকাল, সন্ধ্যা, দিন ও রাত অনবরতই লিখে নেয়া হয়।মুসনাদে আহমদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের আমলের বোঝা তার গ্রীবাদেশে রয়েছে।” ইবনু লাহীআহ বলেন যে, এমন কি ভাবী শুভাশুভের লক্ষণ গ্রহণ করাও।” (হাদীসের এই ব্যাখ্যা গারীব বা দুর্বল)মানুষের আমলের সমষ্টির কিতাবখানা (আমলনামা) কিয়ামতের দিন তার ডান হাতে দেয়া হবে অথবা বাম হাতে দেয়া হবে। সৎ লোকদেরকে তাদের। আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে এবং মন্দলোকদেরকে তাদের আমলনামা। বাম হাতে দেয়া হবে। এই আমলনামা খোলা থাকবে, যেন সে নিজে পাঠ করে এবং অন্যেরাও দেখে নেয়। তার সারা জীবনের সমস্ত আমল তাতে লিখিত থাকবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সেই দিন মানুষকে তার সমস্ত পূর্বকৃত ও পরেকৃত কার্যাবলী জানিয়ে দেয়া হবে। বরং মানুষ নিজেই নিজের অবস্থা সম্বন্ধে খুব অবহিতহবে, যদিও সে নিজের ওজরসমূহ পেশ করবে।” (১৩:১৪-১৫) ঐ সময় তাকে বলা হবেঃ তুমি ভালরূপেই জান যে, তোমার উপর জুলুম করা হবে না। এতে ওটাই লিখা আছে যা তুমি করেছে। সেই বিস্মরণ হওয়া জিনিসও স্মরণ হয়ে যাবে সেই কারণে প্রকৃতপক্ষে কোন ওযর পেশ করার সুযোগই থাকবে না। তাছাড়া সামনে কিতাব (আমলনামা) থাকবে যা সে পড়ে থাকবে। যদিও দুনিয়ায় সে মুখ ও নিরক্ষর থেকে থাকে, তথাপি সেই দিন সে পড়তে পারবে।এখানে গ্রীবাকে বিশিষ্ট করার কারণ এই যে, ওটা এমন একটা বিশেষ অংশ যাতে যে জিনিস লটকিয়ে দেয়া হয় তা ওর সাথে সংলগ্ন থাকে। কবিরাও এই ধারণা প্রকাশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, রোগ সংক্রামক হওয়া কোন কথা নয় এবং শুভাশুভ নিরূপণও কোন জিনিস নয়। প্রত্যেক মানুষের আমল তার গলার হার স্বরূপ।”আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, শুভাশুভ নিরূপণ হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের গলার হার। রাসূলুল্লাহর (সঃ) উক্তি রয়েছে যে, প্রত্যেক দিনের আমলের উপর মোহর মেরে দেয়া হয়। যখন মু'মিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তখন ফেরেস্তাগণ বলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি তো অমুককে আমল থেকে বিরত রেখেছেন?” উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ“ যার যে আমল ছিল তা বরাবর লিখেই যাও, যে পর্যন্ত না আমি তাকে সুস্থ করে তুলি অথবা তার মৃত্যু ঘটাই।”কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এই আয়াত (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আমল। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, আদম সন্তানকে সম্বোধন করে বলা হয়ঃ “হে আদম সন্তান! তোমার ডানে ও বামে ফেরে বসে রয়েছে এবং সহীফা (ক্ষুদ্র পুস্তিকা) খুলে রেখেছে। ডান দিকের ফেরেস্তারা পূণ্য লিখছে এবং বাম দিকের গুলো পাপ লিখছে। এখন তোমার ইচ্ছা, হয় তুমি বেশী পূণ্যের কাজ কর অথবা বেশী পাপের কাজ কর। তোমার মৃত্যুর পর এই দফতর জড়িয়ে নেয়া হবে এবং তোমার কবরে তোমার গ্রীবাদেশে লটকিয়ে দেয়া হবে। কিয়ামতের দিন খোলা অবস্থায় তোমার সামনে পেশ করা হবে এবং তোমাকে বলা হবেঃ “তোমার আমলনামা তুমি স্বয়ং পাঠ কর এবং তুমি নিজেই তোমার হিসাব ও বিচার কর।” আল্লাহর কসম! তিনি বড়ই ন্যায় বিচারক, যিনি তোমার কাজ কারবার তোমার উপর অর্পণ করেছেন।

مَنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেন যে, যে ব্যক্তি সৎপথ অবলম্বন করে, সত্যের অনুসরণ করে এবং নুবুওয়াতকে স্বীকার করে, এটা তার নিজের জন্যেই কল্যাণকর হয়। আর যে ব্যক্তি সত্যপথ থেকে সরে যায়, সঠিক রাস্তা থেকে। ফিরে আসে, এর শাস্তি তাকেই ভোগ করতে হবে। কাউকেও কারো পাপের কারণে পাকড়াও করা হবে না। প্রত্যেকের আমল তার সাথেই রয়েছে। এমন কেউ হবে না যে অপরের বোঝা বহন করবে। আর কুরআন কারীমে যে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “অবশ্যই তারা তাদের বোঝা বহন করবে এবং তার বোঝার সাথে। অন্য বোঝাও বহন করবে।” (২৯:১৩) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ তারা নিজেদের বোঝার সাথে ওদের বোঝাও বহন করবে যাদেরকে জেনে তারা পথভ্রষ্ট করতো।” (১৬:২৫) এই দুই বিষয়ে কোন বৈপরিত্য মনে করা ঠিক নয়। কেননা, যারা অপরকে পথভ্রষ্ট করে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার পাপ বহন করতে হবে, এটা নয় যে, যাদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয়েছে। তাদের পাপ হালকা করে তাদের বোঝা এদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আমাদের ন্যায় বিচারক আল্লাহ এইরূপ করতেই পারেন না।এরপর মহান আল্লাহ নিজের একটি রহমতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি রাসূল প্রেরণ করার পূর্বে কোন উম্মতকে শাস্তি দেন না। সূরায়ে মুলকে রয়েছেঃ “যখন জাহান্নামে (কাফিরদের) কোন একটি দল নিক্ষিপ্ত হবে তখন ওর রক্ষকগণ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের কাছে কি কোন ভয়। প্রদর্শনকারী (নবী) আগমন করেন নাই? তারা উত্তরে বলবেঃ নিশ্চয় আমাদের কাছে ভয় প্রদর্শনকারী এসেছিলেন, কিন্তু আমরা অবিশ্বাস করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ কিছুই নাযিল করেন নাই, আর তোমরা মহাভ্রমে পতিত। আছ।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “যারা কাফির, তাদেরকে দলে দলে দুখের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এমন কি যখন তারা দুষখের নিকট পৌঁছবে, তখন ওর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং ওর দ্বার রক্ষীগণ তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আগমন করেন নাই, যারা তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ তোমাদেরকে পাঠ করে শুনাতেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের এই দিবসের আগমন সম্বন্ধে ভয় প্রদর্শন করতেন? তারা উত্তরে বলবেঃ হাঁ, (এসেছিলেন, কিন্তু (আমরা অমান্য করেছিলাম, ফলে) কাফিরদের জন্যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে রইলো।” অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ “কাফিররা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়ে চীৎকার করে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নিন, আমরা আমাদের পূর্বের কৃতকর্ম ছেড়ে দিয়ে এখন ভাল কাজ করবো। তখন তাদেরকে বলা হবেঃ আমি কি তোমাদেরকে এতোটা বয়স দিই নাই যে, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করার ইচ্ছা করতে পারতে? আর আমি কি তোমাদের মধ্যে আমার রাসূল পাঠাই নাই, যে তোমাদেরকে খুবই সতর্ক করতো? এখন তোমাদেরকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে, যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।”মোট কথা, আরো বহু আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআ'লা রাসূল প্রেরণ না করে কাউকেও জাহান্নামে দেন না। সহীহ বুখারীতে (আরবি) “নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী” (৭:৫৬) এই আয়াতের তাফসীরে একটি সুদীর্ঘ হাদীস বর্ণিত আছে, যেখানে বেহেস্ত ও দুযখের বাক্যালাপ রয়েছে। তারপর রয়েছে যে, জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাখলুকের মধ্যে কারো প্রতি জুলুম করবেন না আর তিনি জাহান্নামের জন্যে এক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে ওর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। জাহান্নাম বলতে থাকবেঃ ‘আরো বেশী কিছু আছে কি? এই ব্যাপারে আলেমগণ অনেক কিছু আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা জান্নাতের ব্যাপারে রয়েছে। কেননা, জান্নাত হচ্ছে ফল বা অনুগ্রহের ঘর। আর জাহান্নাম হচ্ছে, আল বা ন্যায় বিচারের ঘর। ওযর খণ্ডন করা ও হুজ্জত প্রকাশ ছাড়া কাউকেও ওর মধ্যে প্রবিষ্ট করা হবে না। এ কারণেই হাদীসেরহাফিজদের একটি দলের ধারণা এই যে, এই ব্যাপারে বর্ণনাকারী উল্টোটা বর্ণনা করে ফেলেছেন। এর দলীল সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের ঐ রিওয়াইয়াতটি যাতে এই হাদীসেরই শেষাংশে রয়েছে যে, জাহান্নাম পূর্ণ হবে না, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা স্বীয় পা’ তাতে রেখে দিবেন। এ সময় জাহান্নাম বলবেঃ ‘যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। আর ঐ সময় ওটা পুরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং চারদিক কুঞ্চিত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কারো উপর জুলুম করেন না। হাঁ, তবে জান্নাতের জন্যে তিনি একটি নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন।বাকী থাকলো এখন এই মাসআলাটি যে, কাফিরদের যে নাবালক শিশু শৈশবেই মারা যায়, যারা পাগল অবস্থায় রয়েছে, যারা সম্পূর্ণরূপে বধির এবং যারা এমন যুগে কালাতিপাত করেছে যখন কোন নবী রাসূলের আগমন ঘটে নাই বা তারা দ্বীনের সঠিক শিক্ষা পায় নাই এবং তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে নাই এবং যারা জ্ঞানশূন্য বৃদ্ধ, এসব লোকদের হুকুম কি? এই ব্যাপারে প্রথম থেকেই মতভেদ চলে আসছে। এসম্পর্কে যেহাদীসগুলি রয়েছে সেগুলি আপনাদের সামনে বর্ণনা করছি। তারপর ইমামদের কথাগুলিও সংক্ষেপ বর্ণনা করবো ইনশা আল্লাহ। প্রথম হাদীসঃ মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, চার প্রকারের লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সাথে কথোপকথন করবে। প্রথম হলো বধির লোক, যে কিছুই শুনতে পায় না; দ্বিতীয় হলো সম্পূর্ণ নির্বোধ ও পাগল লোক, যে কিছুই জানে না। তৃতীয় হলো অত্যন্ত বৃদ্ধ, যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে। চতুর্থ হলো ঐ ব্যক্তি যে এমন যুগে জীবন যাপন করেছে যে যুগে কোন নবী আগমন করেন নাই বা কোন ধর্মীয় শিক্ষাও বিদ্যমান ছিল না। বধির লোকটি বলবেঃ “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার কানে কোন শব্দ পৌঁছে নাই।” পাগল বলবেঃ “ইসলাম এসেছিল বটে, কিন্তু আমার অবস্থা তো এই ছিল যে, শিশুরা। আমার উপর গোবর নিক্ষেপ করতো।” বৃদ্ধ বলবেঃ “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল। আমি কিছুই বুঝতাম না।” আর যে লোকটির কাছে কোন রাসূলও আসে নাই এবং সে তাঁর কোন শিক্ষাও পায়। নাই সে বলবেঃ “আমার কাছে কোন রাসূলও আসেন নাই এবং আমি কোন হকও পাই নাই। সুতরাং আমি আমল করতাম কিরূপে?” তাদের এসব কথা শুনে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ “আচ্ছা যাও, জাহান্নামে লাফিয়ে পড়।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি তারা আল্লাহর আদেশ মেনে নেয় এবং জাহান্নামে ঝাপিড়ে পড়ে তবে জাহান্নামের আগুন তাদের জন্যে ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক হয়ে যাবে।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, যারা জাহান্নামে লাফিয়ে পড়বে তাদের জন্য তা হয়ে যাবে ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক। আর যারা বিরত থাকবে তাদেরকে হুকুম অমান্যের কারণে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই হাদীসটি বর্ণনা করার পর হযরত আবু হুরাইরার (রাঃ) নিম্নের ঘোষণাটিও উল্লেখ করেছেনঃ “এর সত্যতার প্রমাণ হিসেবে তোমরা ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাআলার (আরবি) এই কালিমাও পাঠ করতে পার।” অর্থাৎ “আমি শাস্তি প্রদানকারী নই যে পর্যন্ত না রাসূল প্রেরণ করি।” দ্বিতীয় হাদীসঃ হযরত আনাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আবু হামযা (রাঃ) ! মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “তারা পাপী নয় যে, জাহান্নামে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং পূণ্যবানও নয় যে, জান্নাতে তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে।” (এ হাদীসটি হযরত আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তৃতীয় হাদীসঃ এই চার প্রকার লোকের ওযর শুনে মহান আল্লাহ বলবেনঃ “অন্যদের কাছে তো আমার রাসূল পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তোমাদেরকে এখনই বলছিঃ যাও, তোমরা জাহান্নামে চলে যাও।” আল্লাহর ফরমান শুনে। জাহান্নাম থেকেও একটি গ্রীবা উঁচু হবে। এই নির্দেশ শোনা মাত্রই সৎ প্রকৃতির লোকেরা দৌড়িয়ে গিয়ে তাতে লাফিয়ে পড়বে। আর যারা অসৎ প্রকৃতির লোক তারা বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমরা এর থেকে বাঁচবার জন্যেই তো এই ওযর পেশ করেছিলাম।” আল্লাহ তাআলা তখন বলবেনঃ “তোমরা যখন স্বয়ং আমার কথা মানছে না, তখন আমার রাসূলদের কথা কি করে মানতে? এখন। তোমাদের জন্য ফায়সালা এটাই যে, তোমরা জাহান্নামী।” আর ঐ আদেশ মান্যকারীদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা অবশাই জান্নাতী। কারণ, তোমরা আমার কথা মান্য করেছে। (এই হাদীসটি মুসনাদে আবি ইয়ালায় বর্ণিত হয়েছে) চতুর্থ হাদীসঃ রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মুসলমানদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, তারা তাদের সন্তানদের সাথেই থাকবে। অতঃপর তাঁকে মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ “তারা তাদের পিতাদের সাথে থাকবে।” তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তারা কোন আমল তো করে নাই?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “ হাঁ, তবে আল্লাহ তাআলা খুব ভাল ভাবেই জানেন।” (এ হাদীস আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) পঞ্চম হাদীসঃ বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন অজ্ঞ ও নির্বোধ লোকেরা নিজেদের বোঝা কোমরে বহন করে নিয়ে আসবে এবং আল্লাহ তাআলার সামনে ওযর পেশ করতঃ বলবেঃ “আমাদের কাছে কোন রাসূল আসেন নাই এবং আপনার কোন হুকুমও পৌঁছে নাই। এরূপ হলে আমরা মন খুলে আপনার কথা মেনে চলতাম।” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “আচ্ছা, এখন যা হুকুম করবো তা মানবে তো?” উত্তরে তারা বলবেঃ “হাঁ, অবশ্যই বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিবো।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ আচ্ছা যাও, জাহান্নামের পার্শ্বে গিয়ে তাতে প্রবেশ কর।” তারা তখন অগ্রসর হয়ে জাহান্নামের পার্শ্বে পৌঁছে যাবে। সেখানে গিয়ে যখন ওর উত্তেজনা, শব্দ এবং শাস্তি দেখবে তখন ফিরে আসবে এবং বলবেঃ “হে আল্লাহ আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন।” আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “দেখো, তোমরা অঙ্গীকার করেছো যে, আমার হুকুম মানবে, আবার এই নাফরমানী কেন?” তারা উত্তরে বলবেঃ“আচ্ছা, এবার মানবো।” অতঃপর তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নেয়া হবে। তারপর এরা ফিরে এসে বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি। আমাদের দ্বারা তো আপনার এই আদেশ মান্য করা সম্ভব নয়।” তখন প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “তোমরা নাফরমানী করেছো। সুতরাং এখন লাঞ্ছনার সাথে জাহান্নামী হয়ে যাও।” রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, প্রথমবার তারা যদি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জাহান্নামে লাফিয়ে পড়তো তবে ওর অগ্নি তাদের জন্যে ঠাণ্ডা হয়ে যেতো এবং তাদের দেহের একটি নোমও পুড়তো না। (এই হাদীসটি হাফিজ আবু বকর আহমদ ইবনু আবদিল খালেক বাযযার (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, এই হাদীসের মতন পরিচিত নয়। আবু আইয়ূব (রঃ) হতে শুধু আব্বাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং আব্বাদ (রঃ) হতে শুধু রাইহান ইবনু সাঈদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আমি (ইবনু কাসীর) বলি যে, এটাই ইবনু হাব্বান রঃ) নির্ভরযোগ্য রূপে বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন (রঃ) এবং নাসায়ী (রঃ) বলেন যে, এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। আবু দাউদ (রঃ) তাদের থেকে বর্ণনা করেন নাই। আবু হাতিম (রাঃ) বলেন যে, ইনি শায়েখ। তার মধ্যে কোন ত্রুটি নেই। তাঁর হাদীসগুলি লিখে নেয়া হয়, কিন্তু তার থেকে দলীল গ্রহণ করা হয় না) ষষ্ঠ হাদীসঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া যাহলী (রঃ) রিওয়াইয়াত এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “নবী শূন্য যুগের লোক, পাগল এবং শিশু আল্লাহ তাআলার সামনে আসবে। প্রথম জন (নবী শূন্য যুগের লোক) বলবেঃ “আমার নিকট তো আপনার কিতাবই পৌঁছে নাই।” পাগল বলবেঃ “আমার তো ভাল ও মন্দের মধ্যে পাথর্ক্য করার কোন জ্ঞানই ছিল না।” শিশু বলবেঃ “আমি তো বোধশক্তি লাভের সময়ই পাই নাই।” তৎক্ষণাৎ তাদের সামনে লেলিহান শিখাযুক্ত আগুন আনয়ন করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “এতে প্রবেশ কর।” তখন এদের মধ্যে যারা সৎকার্য সম্পাদনকারী হতো তারা তো সাথে সাথেই আদেশ পালন করবে। আর যারা এই ওযর পেশ করার পরেও হঠকারিতা করতঃ আদেশ লংঘন করবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “তোমরা আমার সামনেই যখন আমার আদেশ পালন করলে না, তখন আমার নবীদের কথা কি করে মানতে?” সপ্তম হাদীসঃ এ হাদীসটি ঐ তিন ব্যক্তির ব্যাপারে উপরোক্ত হাদীসগুলির মতই। এতে এও রয়েছে যে, যখন এরা জাহান্নামের পার্শ্বে যাবে তখন ওর থেকে এমন উঁচু হয়ে শিখা উঠবে যে, তারা মনে করবে, এটা তো সারা দুনিয়াকে জ্বালিয়ে ভগ্ন করে দিবে। এরূপ মনে করে তারা দৌড়িয়ে ফিরে আসবে। দ্বিতীয় বারও এটাই ঘটবে।তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “তোমাদের সৃষ্টির পূর্বেই তোমাদের আমল সম্পর্কে আমি অবহিত ছিলাম। আমার অবগতি থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমার অবগতি মোতাবেকই তোমরা হয়ে গেলে। সুতরাং হে জাহান্নাম! এদেরকে গ্রাস কর।” তৎক্ষণাৎ ঐ জ্বলন্ত অগ্নি তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। অষ্টম হাদীসঃ উপরে বর্ণিত লোকদের উক্তি সহ হযরত আবু হুরাইরার (রাঃ) রিওয়াইয়াত পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাঁর থেকেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু দ্বীনে ইসলামের উপরই সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী, খৃস্টান এবং মাজুসী বানিয়ে দেয়। যেমন বকরীর নিখুঁত অঙ্গ বিশিষ্ট বাচ্চার কান কাটা হয়ে থাকে। জনগণ জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি সে শৈশবেই মারা যায়?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ তাআ'লার সঠিক ও পূর্ণ অবগতি ছিল।” মুসনাদের হাদীসে রয়েছে যে, জান্নাতে মুসলমান শিশুদের দায়িত্ব হযরত ইবরাহীমের (আঃ) উপর অর্পিত রয়েছে। সহীহ মুসলিমের হাদীসে কুদসীতে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি আমার বান্দাদেরকে একত্ববাদী, একনিষ্ঠ এবং খাঁটি বানিয়েছি।” অন্য রিওয়াইয়াতে মুসলমান’ শব্দটিও রয়েছে। নবম হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের (প্রকৃতির উপর জন্ম গ্রহণ করে থাকে।” জনগণ তখন উচ্চ স্বরে তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “মুশরিকদের শিশুরাও কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “মুশরিকদের শিশুরাও।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বরকানী (রঃ) তার আল-মুসতাখরিজু আলাল বুখারী নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, মুশরিকদের শিশুদেরকে জান্নাতবাসীদের খাদেম বানানো হবে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরাণী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) দশম হাদীসঃ একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! জান্নাতে কারা কারা যাবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “শহীদ, শিশু এবং জীবন্ত প্রোথিত শিশুরা।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) আলেমদের কারো কারো মাযহাব এই, তাদের ব্যাপারে নীরবতার ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের দলীলও গত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, তারা জান্নাতী। তাঁদের দলীল হচ্ছে সহীহ বুখারীর এ হাদীসটি যা হযরত সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে গাছের নীচে দেখতে পান যার পাশে অনেক শিশু ছিল। হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “ইনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁর পাশে যে শিশুগুলি রয়েছে তারা হচ্ছে। মুসলমান ও মুশরিকদের সন্তান।” “জনগণ তখন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে মুশরিকদের সন্তানরাও কি (জান্নাতী)?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হাঁ, মুশরিকদের সন্তানরাও (জান্নাতী)।”কোন কোন আলেম বলেন যে, মুশরিকদের শিশুরা জাহান্নামী। কেননা, একটি হাদীসে রয়েছে যে, তারা তাদের পিতাদের সঙ্গে থাকবে। কেউ কেউ বলেন যে, কিয়ামতের মাঠে তাদের পরীক্ষা হয়ে যাবে। অনুগতরা জান্নাতে যাবে। আল্লাহ তাআলা নিজের পূর্ব ইলম প্রকাশ করতঃ তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন। আর কেউ কেউ তাদের অবাধ্যতার কারণে জাহান্নামে যাবে। এখানেও আল্লাহ তাআলা স্বীয় পূর্ব জ্ঞান প্রকাশ করতঃ তাদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করার নির্দেশ দিবেন। শায়েখ আবুল হাসান ইবনু ইসমাঈল আশআরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাযহাব এটাই। ইমাম বায়হাকী (রঃ) কিতাবুল ই'তেকদি' নামক গ্রন্থে এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। আরো বহু মুহাককিক আলেম ও পরীক্ষক হাফিয এটাই বলেছেন। শায়েখ আবূ উমার ইবনু আবদিল বরানমারী (রঃ) পরীক্ষার কতকগুলি রিওয়াইয়াত বর্ণনা করার পর লিখেছেন যে, এই ব্যাপারে হাদীস গুলি মযবুত নয়। সুতরাং এগুলো দ্বারা হুজ্জত সাব্যস্ত হয় না এবং আহলে ইলম এগুলো অস্বীকার করেন। কেননা, আখেরাত হচ্ছে প্রতিদানের জায়গা, আমলের জায়গা নয় এবং পরীক্ষার জায়গাও নয়। আর জাহান্নামে যাওয়ার হুকুমও মানবিক শক্তির বাইরের হুকুম এবং মহান আল্লাহর অভ্যাস এটা নয়।ইমাম সাহেবের এই উক্তিটির জবাব শুনুন! এই ব্যাপারে যে সব হাদীস এসেছে সেগুলির মধ্যে কতকগুলি তো সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ, যেমন আইম্মায়ে উলামা ব্যাখ্যা করেছেন। আর কতকগুলি হাসান এবং কতকগুলি যইফ বা দুর্বলও রয়েছে। কিন্তু এই দুর্বল হাদীসগুলিও সহীহ ও হাসান হাদীসগুলির কারণে মযবুত হয়ে যাচ্ছে। এরূপ যখন হলো তখন এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে গেল যে, এই হাদীসগুলি হুজ্জত ও দলীল হওয়ার যোগ্য। এখন বাকী থাকলো ইমাম সাহেবের এই কথাটি যে, আখেরাতে আমল ও পরীক্ষার জায়গা নয়। নিঃসন্দেহে এটা সঠিক কথা, কিন্তু এর দ্বারা এটার অস্বীকৃতি কি করে হয় যে, কিয়ামতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বে কোন হুকুম আহকাম প্রদান করা হবে না? শায়েখ আবুল হাসান আশআরী (রঃ) তো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাযহাবের আকীদায় শিশুদের পরীক্ষাকে দাখিল করেছেন। উপরন্তু (আরবি) কুরআন কারীমের এই আয়াতটি এর স্পষ্ট দলীল যে, মুনাফিক ও মুমিনের মধ্যে প্রভেদ করার জন্যে পায়ের গোছা খুলে দেয়া হবে এবং সিজদার হুকুম হবে। সহীহ হাদীস সমূহে রয়েছে যে, মু'মিনরা তো সিজদা করে নিবে, কিন্তু মুনাফিকরা উল্টো মুখে পিঠের ভরে পড়ে যাবে।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ঐ ব্যক্তির ঘটনাও রয়েছে যে ব্যক্তি সর্বশেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে। সে আল্লাহ তাআলার সাথে ওয়াদা অঙ্গীকার করবে যে, সে একটি আবেদন ছাড়া তাঁর কাছে আর কোন আবেদন করবে না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার এ আবেদন পুরো করবেন। কিন্তু তখন সে তার কৃত অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে এবং অন্য একটি আবেদন করে বসবে ইত্যাদি। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন। হে আদম। সন্তান! তুমি বড়ই অঙ্গীকার ভঙ্গকারী। আচ্ছা যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর।” তারপর ইমাম সাহেবের এ কথা বলা যে, তাদেরকে তাদের শক্তির বাইরের হুকুম অর্থাৎ জাহান্নামে লাফিয়ে পড়ার হুকুম কি করে হতে পারে? আল্লাহ তাআ’লা কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেন না। তাঁর একথাটিও হাদীসের বিশুদ্ধতায় কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। স্বয়ং ইমাম সাহেব এবং সমস্ত মুসলমান এটা স্বীকার করে যে, পুলসিরাত অতিক্রম করার হুকুম সবারই হবে যা জাহান্নামের পৃষ্ঠোপরি থাকবে। তা হবে তরবারীর চাইতেও তীক্ষ এবং চুলের চাইতেও সূক্ষ্ম। মু’মিন ওঁর উপর দিয়ে নিজেদের পুণ্যের পরিমান অনুপাতে পার হয়ে যাবে। কেউ বিদ্যুতের গতিতে পার হয়ে যাবে। কেউ পার হবে বাতাসের গতিতে, কেউ পার হবে ঘোড়ার গতিতে এবং কেউ কেউ উটের গতিতে পার হয়ে যাবে। আর কেউ কেউ পলাতকের মত, কেউ কেউ পদাতিকের মত, কেউ কেউ হাঁটু কাঁপাতে কাঁপাতে এবং কেউ কেউ কেটে কেটে জাহান্নামে পড়ে যাবে। সুতরাং সেখানে এটা যখন হবে তখন জাহান্নামে লাফিয়ে পড়ার হুকুম তো এর চেয়ে বড় কিছু নয়, বরং ওটাই এর চেয়ে বেশী বড় ও কঠিন। আরো শুনুন, হাদীসে আছে যে, দাজ্জালের সঙ্গে আগুন ও বাগান থাকবে। শারে’ আলাই হিসসালাম মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেটাকে আগুন দেখছে তার থেকে যেন পান করে। এটা তাদের জন্যে ঠাণ্ডা ও শান্তির জিনিস। সুতরাং এটা এই ঘটনার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। আরো দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেমন বাণী ইসরাঈল যখন গো বৎসের পূজা করে তখন তাদের শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন যে, তারা যেন পরস্পর একে অপরকে হত্যা করে। এক মেঘ খণ্ড এসে তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তারপর যখন তরবারী চালনা শুরু হলো তখন সকালেই মেঘ কেটে যাওয়ার পূর্বেই তাদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ নিহত হয়ে যায়। পিতা পুত্রকে এবং পুত্র পিতাকে হত্যা করে ফেলে। ঐ হুকুম কি এই হুকুমের চেয়ে ছোট ছিল? ঐ আমল কি তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত ছিল না? তাহলে তো তাদের সম্পর্কেও এটা বলে দেয়া উচিত ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কাউকেও তার সহ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেন না? এই সমুদয় বিতর্ক পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর এখন জেনে রাখুন যে, মুশরিকদের বাল্যাবস্থায় মৃত শিশুদের সম্পর্কেও বহু উক্তি রয়েছে। একটি উক্তি এই যে, তারা সব জান্নাতী। তাঁদের দলীল মিরাজ সম্পকীয় এ হাদীসটি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পার্শ্বে মুশরিক ও মুসলমানদের শিশুদেরকে দেখেছিলেন। তাঁদের আরো দলীল সনদের ঐ রিওয়াইয়াতটি যা পূর্বে গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “শিশুরা জান্নাতে যাবে।” হাঁ, তবে পরীক্ষা হওয়ার যে হাদীসগুলি বর্ণিত আছে সেগুলো বিশিষ্ট। সুতরাং যাদের সম্পর্কে রাব্বল আলামীনের জানা আছে যে, তারা অনুগত ও বাধ্য, তাদের রূহ আলামে বারাখে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পার্শ্বে রয়েছে। আর সেখানে মুসলমানদের শিশুদের রূহগুলিও রয়েছে। পক্ষান্তরে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জানেন যে, তারা হক কবুলকারী নয় তাদের বিষয়টি আল্লাহ তাআলার উপর অর্পিত। তারা কিয়ামতের দিন জাহান্নামী হবে। যেমন পরীক্ষার হাদীসগুলি দ্বারা এটা প্রকাশিত। ইমাম আশআরী (রঃ) এটা আহলে সুন্নাত হতে বর্ণনা করেছেন। এখন কেউ তো বলেন যে, এরা স্বতন্ত্রভাবে জান্নাতী। আবার অন্য কেউ কেউ বলেন যে, এরা জান্নাতীদের খাদেম। যদিও আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) এইরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ওর সনদ দুর্বল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, মুশরিকদের শিশুরাও তাদের বাপ-দাদাদের সাথে জাহান্নামে যাবে। যেমন মুসনাদ প্রভৃতি হাদীসে রয়েছে যে, তারা তাদের বাপদাদাদের অনুসারী। একথা শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “তারা কোন আমল করার সুযোগ পায় নাই তবুও কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তারা কি আমল করতো তা আল্লাহ তাআলা ভালরূপেই জানেন।হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মুসলমানদের শিশুদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা তাদের বাপ-দাদাদের সাথে থাকবে।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ মুশরিকদের হুকুম কি? জবাবে তিনি বলেনঃ “তারাও তাদের বাপ-দাদাদের সঙ্গে থাকবে।” আমি আবার প্রশ্ন করলামঃ তারা কোন আমল করে নাই তবুও? জবাবে তিনি বললেনঃ “সে কি আমল করতো তা আল্লাহ তাআলা ভালরূপেই জানেন।” (এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদে বর্ণিত হয়েছে)মুসনাদের হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশাকে (রাঃ) বলেছিলেনঃ “তুমি যদি ইচ্ছা কর তবে আমি তোমাকে তাদের ক্রন্দন ও চীৎকার ধ্বনি শোনাতে পারি।”ইমাম আহমদের (রঃ) পুত্র রিওয়াইয়াত করেছেন যে, হযরত খাদীজা’ (রাঃ) তাঁর ঐ দুই সন্তান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেন যারা অজ্ঞতার যুগে মারা গিয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা দুজন জাহান্নামী।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন দেখেন যে, একথাটি হযরত খাদীজা’র কাছে খুব কঠিন বোধ হয়েছে তখন তিনি তাকে বলেনঃ “তুমি যদি তাদের স্থান দেখতে পেতে তবে তুমি নিজেও তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতে।”এরপর হযরত খাদীজা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “যে শিশুগুলি আপনার ঔরষে জন্মগ্রহণ করেছিল (তাদের কি হবে)?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, মু'মিন এবং তাদের শিশুরা জান্নাতী এবং মুশরিক ও তাদের সন্তানরা জাহান্নামী।” অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরকে তাদের সাথে মিলিত করবো।” (এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল। এর ইসনাদে মুহাম্মদ ইবনু উছমান নামক বর্ণনাকারীর অবস্থা অজানা রয়েছে এবং তাঁর শায়েখ যাযান হযরত আলীকে (রাঃ) এখানে পান নাই। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, জীবন্ত প্রোথিতকারী এবং যাকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়েছে উভয়েই জাহান্নামী।সুনানে আবি দাউদে এই সনদটি হাসানরূপে বর্ণিত হয়েছে। হযরত সালমা ইবনু কায়েস আকাঈ (রাঃ) বলেনঃ “আমি আমার ভাইকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহর খিদমতে হাজির হলাম এবং বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের মাতা অজ্ঞতার যুগে মারা গেছেন। তিনি আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতেন এবং অতিথিপরায়ণা ছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের একটা অপ্রাপ্ত বয়স্কা বোনকে জীবন্ত কবর দিয়েছেন (তার অবস্থা কি হবে?)” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “যে এইরূপ করেছে এবং যাকে এইরূপ করা হয়েছে তারা উভয়েই জাহান্নামী।” সে যদি ইসলাম পায় এবং তা কবুল করে নেয় তবে সেটা অন্য কথা।তৃতীয় উক্তি এই যে, তাদের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করা উচিত। এক তরফাভাবে তাদের সম্পর্কে কোন ফায়সালা দেয়া উচিত নয়। তাঁরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই উক্তির উপর ভিত্তি করেই এ কথা বলেছেন যে, তাদের আমলের সঠিক ও পূর্ণ অবগতি আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মুশরিকদের সন্তানদের . ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো তখন তিনি এই ভাষাতেই উত্তর দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, তাদেরকে ‘আরাফ’ নামক স্থানে রাখা হবে। এই উক্তিরও ফল এটাই যে, তারা জান্নাতী। কেননা, আরাফ কোন বাস করার স্থান নয়। এখানে অবস্থানকারীরা শেষে বেহেশতেই যাবে। যেমন সরায়ে আ’রাফের তাফসীরে আমরা এটা বর্ণনা করেছি। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ'লাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এ সব মতভেদ তো ছিল মুশরিকদের সন্তানদের ব্যাপারে। কিন্তু মুমিনদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের বাপারে আলেমদের সর্বসম্মত মত এই যে, তারা জান্নাতী। যেমন ইমাম আহমদের (রঃ) উক্তি রয়েছে। আর এটা জনগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ হয়েও রয়েছে। আর ইনশা আল্লাহ আমাদের এই আশাও রয়েছে। কিন্তু কতকগুলি আলেম হতে বর্ণিত আছে যে, তারা তাদের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করে থাকেন এবং বলেনঃ ‘সবাই মহামহিমান্বিত আল্লাহর মর্জি ও ইচ্ছার অধীন। আহলে ফিকহ ও আহলে হাদীসের একটি দলও এদিকেই গিয়েছেন। মুআত্তায়ে ইমাম মালিকের (আরবি) এর হাদীসসমূহেও এ ধরনেরই কথা রয়েছে, তবে ইমাম মালিকের (রঃ) কোন ফায়সালা এতে নেই।পর যুগীয় মনীষীদের কারো কারো উক্তি এই যে, মুসলমানদের শিশুরা জান্নাতী এবং মুশরিকদের শিশুরা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন। ইবনু আবদিল বারর (রঃ) এটাকে এই ব্যাখ্যাতেই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কুরতুবী (রাঃ) এটাই বলেছেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।এই ব্যাপারে ঐ সব গুরুজন একটি হাদীসও আনয়ন করেছেন যে, আনসারদের একটি শিশুর জানা যায়, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আহবান করা হলে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “এই শিশুটিকে মারহাবা! এতো বেহেশতের পাখী। না সে কোন খারাপ কাজ করেছে, না সেই সময় পেয়েছে। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “এটা ছাড়া অন্য কিছুও তো হতে পারে? হে আয়েশা (রাঃ) ! জেনে রেখো যে, আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও জান্নাতীদেরকে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, অথচ তখন তারা তাদের পিতাদের পৃষ্ঠে ছিল। অনুরূপভাবে তিনি জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন এবং জাহান্নামে যারা দগ্ধিভূত হবে তাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন, অথচ তারাও তখন তাদের পিতাদের পৃষ্ঠের মধ্যে ছিল।” এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও সুনানে বর্ণিত হয়েছে। এই মাসআলাটি সহীহ দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হতে পারে না এবং লোকেরা তাদের অজ্ঞতার কারণে প্রমাণ ছাড়াই এ সম্পর্কে উক্তি করতে শুরু করে দিয়েছে, এই জন্যে আলেমদের একটি দল এই বিষয়ে কোন উক্তি করাই অপছন্দ করেছেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) , কাসিম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবি বকর (রাঃ) এবং মুহাম্মদ ইবনু হানীফা (রাঃ) প্রভৃতি তো মিম্বরে উঠে ভাষণে বলেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই উম্মতের কাজ-কর্ম সঠিক থাকবে, যে পর্যন্ত তারা শিশুদের সম্পর্কে ও তকদীর সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করবে।” (এটা ইবনু হাব্বান (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, এর দ্বারা মুশরিকদের শিশুদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করা বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য কিতাবে এই রিওয়াইয়াতটি হযরত আবদুল্লাহর (রাঃ) নিজের উক্তি দ্বারা মারফু’ রূপে বর্ণিত হয়েছে)

وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا

📘 প্রসিদ্ধ পঠন (আরবি) এরূপই রয়েছে। এখানে ‘আমর’ দ্বারা তকদীরী আমর বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে (আরবি) অর্থাৎ “সেখানে। আমার নির্ধারিত আদেশ এসে পড়ে রাত্রে অথবা দিবসে।” আল্লাহ তাআলা মন্দের হুকুম করেন না। ভাবার্থ এই যে, তারা অশ্লীল ও নির্লজ্জতার কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। আর এই কারণে তারা শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়ে। এও অর্থ করা হয়েছেঃ “আমি তাদেরকে আমার আনুগত্য করার হুকুম করে থাকি, তখন তারা মন্দ কাজে লেগে পড়ে, তখন আমার শাস্তির প্রতিশ্রুতি তাদের উপর পূর্ণ হয়ে যায়।”যাঁদের কিরআতে (আরবি) রয়েছে তাঁরা বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “আমি দুষ্ট লোকদেরকে তথাকার নেতা বানিয়ে দেই। তারা সেখানে অসৎকার্য করতে শুরু করে দেয়। অবশেষে আল্লাহর শাস্তি তাদেরকে তাদের বস্তিসহ ধ্বংস ও তচনচ করে দেয়। যেমন এক জায়গায় মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)“এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে তথাকার নেতৃস্থানীয় লোকদেরই (প্রথমতঃ) পাপে লিপ্ত করিয়েছি, যেন তারা তথায় শঠতা করতে থাকে।” (৬:১২৩)হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “আমি তাদের শত্রুদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকি এবং সেখানে তাদের হঠকারিতা শেষ সীমায় পৌঁছে যায়।”মুসনাদে আহমাদে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “উত্তম সম্পদ হচ্ছে এ জন্তু যা অধিক বাচ্চা দিয়ে থাকে। অথবা এ রাস্তা যা খেজুরের গাছ দ্বারা সজ্জিত থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, এটা একটা সাদৃশ্য। যেমন তাঁর উক্তিঃ “পাপীরা, পুরস্কার প্রাপ্ত নয়।”

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِنْ بَعْدِ نُوحٍ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا

📘 মক্কার কুরায়েশদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে কুরায়েশের দল! তোমরা জ্ঞান ও বিবেকের সাথে কাজ কর এবং আমার এই সম্মানিত রাসূলকে (সঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না এবং এভাবে নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত হয়ে যেয়ো না। তোমাদের পূর্ববর্তী হযরত নূহের (আঃ) পরযুগের লোকদের কথা চিন্তা করে দেখো যে, রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করার। থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে,হযরত নূহের (আঃ) পূর্বে হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত মানুষ দ্বীনে ইসলামের উপর ছিল। সুতরাং হে কুরায়েশরা! তোমরা তাদের অপেক্ষা বেশী সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং সংখ্যার অধিকারী নও। এতদসত্ত্বেও তোমরা নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) অবিশ্বাস করছো! কাজেই তোমরা আরো বেশী শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোন বান্দার কোন কাজ গোপন নেই। ভাল ও মন্দ সবই তাঁর কাছে প্রকাশমান। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই তিনি জানেন। প্রত্যেক আমল তিনি দেখতে রয়েছেন।

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا

📘 Please check ayah 17:19 for complete tafsir.

وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا

📘 ১৮-১৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, যেব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে তার যে সব চাহিদাই পূর্ণ হবে তা নয়। বরং তিনি যার যে চাহিদা পূর্ণ করতে চান পূর্ণ করে থাকেন। হাঁ, তবে এইরূপ লোক পরকালে সম্পূর্ণরূপে শূন্য হস্ত রয়ে যাবে। সেখানে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। সেখানে সে অত্যন্ত লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় থাকবে। কেননা, এখানে সে একথাই বলেছিল। সে ধ্বংসশীলকে চিরস্থায়ীর উপর এবং দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিল। এই জন্যেই সেখানে সে আল্লাহর করুণা হতে দূরে থাকবে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর, পরকালে যার কোন ঘর নেই। এটা ঐ ব্যক্তিই জমা করে যার কোন বিবেক বুদ্ধি নেই।” হাঁ, তবে আখেরাতের সাক্ষাৎ যে কামনা করে এবং সঠিক পন্থায় আখেরাতের কাজে লাগে এরূপ পূণ্য অর্জন করে এবং তার অন্তরেও পূর্ণ মাত্রায় আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস থাকে, শাস্তি পুরস্কার ও ওয়াদাকে সঠিক বলে মনে করে এবং বিশ্বাস রাখে, তার চেষ্টা বিফলে যাবে না আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।

وَآتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ أَلَّا تَتَّخِذُوا مِنْ دُونِي وَكِيلًا

📘 Please check ayah 17:3 for complete tafsir.

كُلًّا نُمِدُّ هَٰؤُلَاءِ وَهَٰؤُلَاءِ مِنْ عَطَاءِ رَبِّكَ ۚ وَمَا كَانَ عَطَاءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا

📘 Please check ayah 17:21 for complete tafsir.

انْظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا

📘 ২০-২১ নং আয়াতের তাফসীর অর্থাৎ এই দুই প্রকারের লোকদেরকে আমি (আল্লাহ) বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। এক প্রকার হলো তারা, যারা শুধু দুনিয়াই কামনা করে। আর দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো তারা, যারা পরকাল চায়। এদের যারা যেটা চায়, তার জন্যে সেটাই বৃদ্ধি করে থাকি। হে নবী (সঃ)! এটা তোমার প্রতিপালকের বিশেষ দান। তিনি এমন দানকারী ও এমন বিচারক যিনি কখনো জুলুম করেন না। ভাগ্যবানকে সৌভাগ্যবান এবং হতভাগ্যকে তিনি দুর্ভোগ দিয়ে থাকেন। তাঁর আহকাম কেউ খণ্ডন করতে পারে না। তোমার প্রতিপালকের দান অসাধারণ। তা কারো বন্ধ করার দ্বারা বন্ধও হয় না এবং কেউ সরাবার চেষ্টা করলে তা সরেও যায় না। তাঁর দান অফুরন্ত, তা কখনো কমে যায় না।মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘দেখো, দুনিয়ায় আমি মানুষের বিভিন্ন শ্রেণী রেখেছি। তাদের মধ্যে ধনীও আছে, ফকীরও আছে এবং মধ্যবিত্ত আছে। কেউ। বাল্যবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করছে, কেউ পূর্ণ বার্ধক্যে উপনীত হয়ে মারা যাচ্ছে, আবার কেউ এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সে মারা যাচ্ছে। শ্রেণী বিভাগের দিক দিয়ে আখেরাত দুনিয়ার চেয়েও বেড়ে রয়েছে। কেউ তো শৃংখল পরিহিত হয়ে জাহান্নামের গর্তে অবস্থান করবে এবং কেউ জান্নাতে চরম সুখে কালাতিপাত। করবে। তারা তথায় বিরাট অট্টালিকায় নিয়ামত, শান্তিতে আরামের মধ্যে থাকবে। জান্নাতীদের মধ্যেও আবার শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। এক একটি শ্রেণী ও স্তরের মধ্যে আকাশ পাতালের ব্যবধান ও তারতম্য রয়েছে। জান্নাতের মধ্যে এইরূপ একশটি শ্রেণী রয়েছে। যারা সর্বোচ্চ শ্রেণীতে অবস্থান করবে তারা ইল্লীঈনকে এমনই দেখবে যেমন তোমরা কোন উজ্জ্বল তারকাকে উচ্চাকাশে দেখে থাকো। সুতরাং আখেরাত শ্রেণী ও ফজীলতের দিক দিয়ে খুবই বড়। তিবরানীর (রঃ) হাদীসে রয়েছে যে, যে বান্দা দুনিয়ায় যে দরজা বা শ্রেণী বাড়াতে চাইবে এবং নিজের চাহিদা পূরণে সফলকাম হবে, সে তার আখেরাতের দরজা বা শ্রেণীর মান কমিয়ে দেবে এবং তার দুনিয়ার চাহিদায় সে কৃতকার্য হবে। ফলে তার আখেরাতের শ্রেণীর মান হ্রাস পাবে, যা দুনিয়ার তুলনায় অনেক বড়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন।

لَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَخْذُولًا

📘 ইবাদতের চাপ যাদের উপর রয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই আল্লাহ তাআলা এখানে সম্বোধন করেছেন। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সমস্ত উম্মতকেই তিনি সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো। তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করো না। যদি এরূপ কর তবে লাঞ্ছিত হয়ে যাবে এবং তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য সরে যাবে। এ সময় তোমাদেরকে তারই কাছে সমর্পণ করা হবে যার তোমরা ইবাদত করবে। আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ লাভ ও ক্ষতির মালিক নয়। আল্লাহ এক ও অংশীবিহীন।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ক্ষুধার্ত হয় এবং লোকদের কাছে ঐ ক্ষুধা মিটাবার জন্যে প্রার্থনা করতে চায়, আল্লাহ তার ক্ষুধা নিবারণ করেন না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে, তিনি তাকে সম্পদশালী করে দেন, তাড়াতাড়ি হোক অথবা বিলম্বেই হোক।” (এই হাদীসটি সুনানে আবি দাউদ ও জামে ও তিরমিযীতেও রয়েছে। সহীহ ও গারীব বলা হয়েছে)

۞ وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

📘 Please check ayah 17:24 for complete tafsir.

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

📘 ২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর এখানে (আরবি) শব্দের অর্থ আদেশ করা। আল্লাহ তাআলার গুরুত্বপূর্ণ আদেশ যা কখনো নড়বার নয়। তা এটাই যে, ইবাদত হবে শুধু আল্লাহর এবং পিতা-মাতার আনুগত্যে যেন তিল পরিমাণও ত্রুটি না হয়। হযরত উবাই ইবনু (রাঃ) কাব, ইবনু মাসউদ (রাঃ) এবং যহহাক ইবনু মাযাহিমের কিরআতে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। এই দুটো হুকুম একই সাথে যেমন এখানে রয়েছে, অনুরূপভাবে আরো বহু আয়াতেও রয়েছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর আমার এবং তোমার পিতামাতার।” বিশেষ করে তাদের বার্ধক্যের সময় তাদের সাথে ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ করা, কোন বড় কথা মুখ দিয়ে বের না করা, এমনকি তাদের সামনে কোন বিরক্তি সূচক কথা উচ্চারণ না করা, না এমন কোন কাজ করা যা তারা খারাপ মনে করে, বেআদবীর সাথে নিজের হাত তাদের দিকে না বাড়ানো, বরং আদব ও সম্মানের সাথে কথাবার্তা বলা, ভদ্রতার সাথে কথোপকথন করা, তারা যে কাজে সন্তুষ্ট থাকে সেই কাজ করা, তাদেরকে দুঃখ না দেয়া, তাদের সামনে বিনয় প্রকাশ করা, তাদের বার্ধক্যের সময় এবং মৃত্যুর পর তাদের জন্যে দুআ করা অবশ্য কর্তব্য। বিশেষ করে নিম্নরূপ দুআ করতে হবেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।তবে কাফিরদের জন্যে দুআ করতে মুমিনদেরকে নিষেধ করে দেয়াহয়েছে। যদিও তারা পিতা-মাতাও হয়। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করার হাদীস অনেক রয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা মিম্বরের উপর উঠে তিনবার আমীন বলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ) এসেছিলেন। এসে তিনি বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! ঐ ব্যক্তির নাক ধূলা মলিন হোক, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হয়, অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না। বলুন, আমীন।” সুতরাং আমি আমীন বললাম। আবার তিনি বললেনঃ “ঐ ব্যক্তির নাসিকা ধূলায় ধুসরিত হোক যার জীবনে রমযান মাস আসলো এবং চলেও গেল, অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। বলুন, আমীন।” আমি আমীন বললাম। পুনরায় তিনি বললেনঃ“ঐ ব্যক্তিকেও আল্লাহ ধ্বংস করুন, যে তার পিতামাতা উভয়কে পেলে অথবা কোন একজনকে পেলো, অথচ তাদের খিদমত করে জান্নাতে যেতে পারলো না; আমীন বলুন।” আমি তখন আমীন বললাম।”মুসনাদে আহমদে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমান পিতা-মাতার পিতৃহীন সন্তানদেরকে লালন-পালন করে পানাহার করায় যে পর্যন্ত না তারা ' অমুখাপেক্ষী হয়, নিঃসন্দেহে তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমান গোলামকে আযাদ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম হতে আযাদ করবেন, তার এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তাঁর এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। এই হাদীসেরই একটি সনদে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের কোন একজনকে পেলো অথচ জাহান্নামে চলে গেল, আল্লাহ তাআলা তাকে স্বীয় রহমত হতে দূর করবেন।” মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি রিওয়াইয়াতে এই তিনটির বর্ণনা একই সাথে আছে। অর্থাৎ গোলাম আযাদ করা, পিতা-মাতার খিদমত করা এবং পিতৃহীনকে লালন-পালন করা। একটি রিওয়াইয়াতে পিতামাতার সম্পর্কে এও রয়েছেঃ আল্লাহ তাকে দূর করুন এবং তাকে ধ্বংস করুন। একটি বর্ণনায় তিনবার তাকে বদ দুআ করা হয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নাম শুনে দুরূদ পাঠ না কারী ব্যক্তি, রমযান মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি এবং পিতা-মাতার খিদমত করে ও তাদেরকে সন্তুষ্ট করে বেহেশতে যেতে পারলো না এমন ব্যক্তির জন্যে রাসূলুল্লাহর (সঃ) বদুআ করা বর্ণিত হয়েছে।একজন আনসারী এসে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরেও কি তাদের সাথে। সদাচরণের কোন সুযোগ আছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, চারটি আচরণ রয়েছে। তাদের জানাযার নামায পড়া, তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখা। এটা এ আচরণ যা তুমি তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের সাথে করতে পারো। (এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে) একটি লোক এসে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি জিহাদের ইচ্ছায় আপনার খিদমতে সুসংবাদ নিয়ে এসেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার মা (বেঁচে) আছে কি?” উত্তরে সে বললোঃ “হাঁ, আছে।” তখন তিনি লোকটিকে বললেনঃ “যাও, তারই খিদমতে লেগে থাকো। বেহেশত তার পায়ের কাছে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে লোকটি দু’বার, তিনবার এই কথাটারই পুনরাবৃত্তি করে এবং রাসূলুল্লাহ ও (সঃ) এই জবাবেরই পুনরাবৃত্তি করেন। (সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনু মাজাহ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে এটা বর্ণিত আছে) বলা হয়েছেঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে অসিয়ত করেছেন, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতাদের সম্পর্কে অসিয়ত করেছেন। পরবর্তী বাক্যটিকে তিনি তিন বার বর্ণনা করে বলেনঃ তিনি তোমাদেরকে তোমাদের নিকটতম আত্মীয়দের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন, প্রথমে সর্বাপেক্ষা নিকটতমদের ব্যাপারে এবং এরপর তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে (অসিয়ত করেছেন)। (সুনানে ইবনু মাজাহ ও সুনানে আহমাদে এটা বর্ণিত আছে) নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দাতার হাত উপরে। তোমরা সদাচরণ কর তোমাদের মাতাদের সাথে। পিতাদের সাথে, বোনদের সাথে, ভাইদের সাথে এবং এরপর এর পরবর্তী নিকটতম আত্মীয়দের সাথে এইভাবে স্তরের পর স্তর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, একটি লোক তার মাতাকে পিঠে উঠিয়ে নিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল। এ সময় সে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “এখন আমি আমার মাতার হক আদায় করতে পেরেছি কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ না, এক অণু পরিমাণও নয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বাযার (রঃ) দুর্বল সনদে স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا

📘 এর দ্বারা ঐ লোকদের বুঝানো হয়েছে যাদের হঠাৎ করে পিতা-মাতাদের সাথে কোন কথা হয়ে যায় যেটা তাদের নিজের মতে কোন দোষের ও পাপের কথা নয়। তাদের নিয়্যাত ভাল বলে আল্লাহ তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে দেখেন। যারা পিতা-মাতার অনুগত এবং নামাযী, তাদের দোষত্রুটি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। বলা হয়ছে যে, (আরবি) ঐ সব লোক, যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, যারা চাশতের নামায আদায় করে থাকে তাদেরকে (আরবি) বলা হয়েছে। তাছাড়া যারা প্রত্যেক পাপ কার্যের পর তাওবা করে তাড়াতাড়ি মঙ্গলের দিকে ফিরে আসে এবং নির্জনে নিজেদের পাপের কথা স্মরণ করে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে (আরবি) বলা হয়েছে।উবায়েদ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) হচ্ছে ওরাই যারা বরাবরই কোন মজলিস হতে উঠবার সময় নিম্নরূপ দুআ পাঠ করেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার এই মজলিসে যে পাপ হয়েছে তা আপনি ক্ষমা করে দিন।”ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ উত্তম উক্তি হচ্ছে এটাই যে, (আরবি) হলো তারাই যারা গুনাহ হতে তাওবা করে অবাধ্যতা হতে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তাআলার কাছে যা অপছন্দনীয় কাজ তা পরিত্যাগ করে। যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট সেই কাজ করতে শুরু করে। এই উক্তিটিই সঠিকতম। কেননা, (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দ হতে বের হয়েছে এবং এর অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকে (আরবি) অর্থাৎ “অমুক ফিরে এসেছে।” আর যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে।” সফর হতে ফিরবার সময় বলতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের প্রতিপালকেরই প্রশংসাকারী।” (৮৯:২৫)

وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا

📘 Please check ayah 17:28 for complete tafsir.

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

📘 Please check ayah 17:28 for complete tafsir.

وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِنْ رَبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُلْ لَهُمْ قَوْلًا مَيْسُورًا

📘 ২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর পিতা-মাতার সাথে সদয় আচরণের নির্দেশ দানের পর আল্লাহ তাআলা আত্মীয়দের সাথে সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন। হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাতার সাথে সদাচরণ কর এবং পিতার সাথেও সদাচরণ কর। তারপর তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর যে বেশী নিকটবর্তী, তারপর তার সাথে যে বেশী নিকটবর্তী।” অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার জীবিকায় ও বয়সে বৃদ্ধি বা উন্নতি চায় সে যেন সদয় আচরণ করে।”মুসনাদে বায্যারে রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমাকে (রাঃ) ডেকে তাকে ফিদক (বাগানটি) দান করেন। (এই হাদীসের সনদ সঠিক নয় এবং ঘটনাটিও সত্য বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সময় ফিদক' বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) দখলেই ছিল না। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজিত হয়, এরপর ফিদক নামক বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) অধিকারভূক্ত হয়) মিসকীন ও মুসাফিরের পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বারাআতে গত হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। খরচের হুকুমের পর অপব্যয় করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করছেন। মানুষের কৃপণ হওয়াও উচিত নয় এবং অপব্যয়ী হওয়াও উচিত নয়, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অমিতব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (২৫:৬৭) তারপর আল্লাহ তাআলা অপব্যয়ের মন্দগুণের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই। (আরবি) বলা হয় অন্যায় পথে ব্যয় করাকে। কেউ যদি তার সমুদয় মাল আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেয়, তবুও তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে না। পক্ষান্তরে অল্প মালও যদি অন্যায় পথে ব্যয় করে তবুও, তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে।বানু তামীম গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি একজন সম্পদশালী লোক এবং আমার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন রয়েছে। আমি কি পন্থা অবলম্বন করবো। তা আমাকে বলে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “প্রথমে তুমি। যাকাতকে তোমার মাল হতে পৃথক করে দাও, তাহলে তোমার মাল পবিত্র হয়ে যাবে। তারপর তা হতে তোমার আত্মীয় স্বজনের উপর খরচ কর, ভিক্ষুককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং প্রতিবেশী ও মিসকীনদের উপরও খরচ কর।” সে আবার বললোঃ (আরবি) “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অল্প কথায় পূর্ণ। উদ্দেশ্যটি আমাকে বুঝিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় কর এবং বাজে খরচ করো না।” সে তখন বললোঃ । অর্থাৎ “আল্লাহ আমার জন্যে যথেষ্ট।” আচ্ছা জনাব! যখন আপনার যাকাত আদায়কারীকে আমার যাকাতের মাল প্রদান করবো তখন কি আমি আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবো। (অর্থাৎ আমার উপর আর কোন দায়িত্ব থাকবে না, (তা)?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে তাকে বললেনঃ “হাঁ, যখন তুমি আমার দূতকে তোমার যাকাতের মাল প্রদান করে দেবে তখন তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবে এবং তোমার জন্যে প্রতিদান ও পুরস্কার সাব্যস্ত হয়ে। যাবে। এখন যে এটা বদলিয়ে দেবে, এর গুনাহ তার উপরই বর্তিবে।”এখানে বলা হয়েছে যে, অপব্যয়, নির্বুদ্ধিতা, আল্লাহর আনুগত্য হতে ফিরে আসা এবং অবাধ্যতার কারণে অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই হয়ে যায়। শয়তানের মধ্যে এই বদঅভ্যাসই আছে যে, সে আল্লাহর নিয়ামতের নাশুকরী করে এবং তার আনুগত্য অস্বীকার করে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চেয়ে বসে এবং ঐ সময় তোমার হাতে কিছুই না থাকে, আর এই কারণে তোমাকে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে দিতে হয় তবে তাকে নরম কথায় বিদায় করতে হবে। যেমন বলতে হবেঃ “ভাই! এখন আমার হাতে কিছুই নেই। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে দিবেন তখন আমি। তোমার প্রাপ্য ভুলে যাবো না ইত্যাদি।”

وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا

📘 Please check ayah 17:30 for complete tafsir.

ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَبْدًا شَكُورًا

📘 ২-৩ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল হযরত মুহাম্মদের (সঃ) মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করার পর তাঁর নবী হযরত মূসার (আঃ) আলোচনা করেছেন। কুরআন কারীমে প্রায়ই এই দু’জনের বর্ণনা এক সাথে এসেছে। অনুরূপভাবে তাওরাত ও কুরআনের বর্ণনাও মিলিত ভাবে এসেছে। হযরত মূসার (আঃ) কিতাবের নাম তাওরাত। এ কিতাবটি ছিল বাণী ইসরাঈলের জন্যে পথ প্রদর্শক। তাদের উপর এই নির্দেশ ছিল যে, তারা যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও বন্ধু, সাহায্যকারী ও মা’রূদ মনে না করে। প্রত্যেক নবী আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন। এরপর তাদেরকে আল্লাহপাক বলেনঃ “হে ঐ মহান ও সম্রান্ত লোকদের সন্তানগণ! যাদেরকে আমি আমার অনুগ্রহ দ্বারা অনগহীত করেছিলাম এইভাবে যে, তাদেরকে আমি হযরত নহের (আঃ) তুফানের বিশ্বব্যাপী ধ্বংস হতে রক্ষা করেছিলাম এবং আমার প্রিয় নবী নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম, তাদের এই সন্তানদের উচিত আমার • কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। দেখো, আমি তোমাদের কাছে আমার আখেরী রাসূল হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) পাঠিয়েছি।বর্ণিত আছে যে, হযরত নূহ (আঃ) পানাহার করে, কাপড় পরিধান করে, মোট কথা সব সময় আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন। এ কারণেই তাঁকে আল্লাহ তাআলা র কৃতজ্ঞবান্দা বলা হয়েছে।মুসনাদে আহমদ প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা তাঁর ঐ বান্দাদের উপর অত্যন্ত খুশী হন যারা এক গ্রাস খাবার খেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এক চুমুক পানি পান করেও তার শুকরিয়া আদায় করে।” এও বর্ণিত আছে যে, হযরত নূহ (আঃ) সর্বাবস্থাতেই আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকেন। সহীহ্ বুখারী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, মানুষ যখন শাফাআতের জন্যে হযরত নূহের (আঃ) নিকট গমন করবে তখন তারা তাঁকে বলবেঃ “দুনিয়াবাসীর নিকট আল্লাহ তাআলা আপনাকেই সর্বপ্রথম রাসূল করে পাঠিয়েছিলেন এবং তিনি কৃতজ্ঞ বান্দারূপে আপনার নামকরণ করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্যে সুপারিশ করুন। (শেষ পর্যন্ত)।”

إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا

📘 ২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ জীবনে খরচ করার ব্যাপারে তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। কৃপণ ও হয়ো না এবং অপব্যয়ীও হয়ো না। তোমার হাত তোমার গ্রীবার সাথে বেঁধো না, অর্থাৎ এমন কৃপণ হয়ো না যে, কাউকেও কিছু দিবে না। ইয়াহূদীরাও এই বাক পদ্ধতিই ব্যবহার করতো এবং বলতো যে, আল্লাহর হাত বদ্ধ রয়েছে। তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাৎ অবতীর্ণ হোক যে, তারা কার্পণ্যের দিকে আল্লাহ তাআলার সম্পর্ক স্থাপন করতো। অথচ আল্লাহ তাআলা বড় দাতা, দয়ালু এবং পবিত্র। কার্পণ্য থেকে তিনি বহু দূরে রয়েছেন। মহান আল্লাহ কার্পণ্য থেকে নিষেধ করার পর অপব্যয় থেকেও নিষেধ করছেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা এতো মুক্ত হস্ত হয়ো না যে, সাধ্যের অতিরিক্ত দান করে ফেলবে। অতঃপর তিনি এই হুকুম দু’টির কারণ বর্ণনা করছেন যে, কৃপণতা করলে তোমরা নিন্দার পাত্র হয়ে যাবে। সবাই বলবে যে, লোকটি বড়ই কৃপণ। সুতরাং সবাই তোমার থেকে দূরে সরে থাকবে। কারণ, তারা জানে যে, তোমার কাছে দান প্রাপ্তির কোন আশা নেই। যেমন যুহায়ের ইবনু আবি সালমা তাঁর মুআল্লাকায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে মালদার হয়ে তার মাল তার কওমের উপর খরচ করতে কার্পণ্য করে, তার থেকে মানুষ অমুখাপেক্ষী হয়ে তার দুর্নাম করে থাকে।” সুতরাং কাপণ্যের কারণে মানুষ মরূপে গণ্য হয়ে যায় এবং সে মানুষের চোখের বালি হয়ে পড়ে। সবাই তাকে ভৎসনা করে থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দান খায়রাত করার ব্যপারে সীমা ছাড়িয়ে যায়, শেষে সে অসমর্থ হয়ে বসে পড়ে। তার হাত শূন্য হয়ে যায় এবং এর ফলে সে দুর্বল ও অপারগ হয়ে পড়ে। যেমন কোন জন্তু চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পথে আটকে পড়ে। (আরবি) শব্দটি সূরায়ে মুকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে ক্লান্ত হওয়া।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কৃপণ ও দাতার দৃষ্টান্ত ঐ দুই ব্যক্তির মত যাদের গায়ে বক্ষ হতে গলা পর্যন্ত দু'টি লোহার জুব্বা রয়েছে। দাতা ব্যক্তি যখন যখন খরচ করে তখন তখন ওর কড়া গুলি আলগা হয়ে যায় এবং তার হাত খুলে যায়। শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং ওর চিহ্ন মিটিয়ে দেয় আর কৃপণ ব্যক্তি যখনই খরচ করার ইচ্ছা করে তখনই তার জুব্বার কড়া গুলি আরো জড়ো হয়ে যায়। সে যতই ওটাকে প্রশস্ত করার ইচ্ছা করে ততই তা সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং কোন জায়গাই থাকে না।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আরো রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আসমা বিনতে আবি বকরকে (রাঃ) বলেনঃ “এদিকে ওদিকে আল্লাহর পথে খরচ করতে থাকো, জমা রেখো না। অন্যথায় আল্লাহ তাআলাও দান বন্ধ করে দিবেন।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ গণে গণে রেখো না, অন্যথায় আল্লাহ তাআলা ও গণে গণে বন্ধ করে দিবেন।সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আবূ হুরাইরা (রাঃ) ! তুমি আল্লাহর পথে খরচ করতে থাকো, আল্লাহ তাআলাও তোমাকে দিতে থাকবেন।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় দু’জন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করে থাকেন। একজন প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি দাতাকে প্রতিদান প্রদান করুন।” আর অন্যজন প্রার্থনা করেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কৃপণের মাল ধ্বংস করে দিন।সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ দান খয়রাতে কারো মাল কমে যায় না এবং প্রত্যেক দাতাকে আল্লাহ তাআলা সম্মানিত করে থাকেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশক্রমে অন্যদের সাথে বিনয়পূর্ণ ব্যবহার করে, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা উঁচু করে দেন।” অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা লোভ হতে বেঁচে থাকো। এই লোভ লালসাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লোভ লালসার প্রথম হুকুম হলোঃ “তুমি কার্পণ্য কর। তখন সে কার্পণ্য করে। তারপর সে বলেঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কর। সে তা-ই করে। অতঃপর সে বলেঃ ‘অসৎ কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়। এবারও সে তার কথা মতই কাজ করে।”ইমাম বায়হাকীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, মানুষ যখন দান করে তখন শয়তানের চোয়াল ভেঙ্গে যায়। মুসনাদের হাদীসে আছে যে, মধ্যম পন্থায় ব্যয়কারী কখনো দরিদ্র হয় না।এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহ তাআ'লাই হচ্ছেন তাঁর বান্দাদেরকে রিযকদাতা। তিনিই রিযক বৃদ্ধি করে থাকেন এবং তিনিই হ্রাস করে থাকেন। তিনি যাকে ইচ্ছা ধনী এবং যাকে ইচ্ছা গরীব করে থাকেন। তাঁর প্রতিটি কাজ হিকমত বা নিপূণতায় পরিপূর্ণ। তিনি ভাল রূপে জানেন কে সম্পদ লাভের যোগ্য, আর কে দরিদ্র অবস্থায় কালাতিপাত করার যোগ্য। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার কতকগুলি বান্দা এমন রয়েছে যারা দরিদ্র থাকারই যোগ্য। যদি আমি তাদেরকে ধনী করে দিই তবে তাদের দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার কতক বান্দা এমনও রন্মেছে যে, যারা সম্পদশালী হওয়ারই যোগ্য। যদি আমি তাদেরকে দরিদ্র করে ফেলি তবে তাদের দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবে। হাঁ তবে এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, কতকগুলি লোকের পক্ষে ধনের প্রাচুর্য ঢিল বা অবকাশ হিসেবে হয়ে থাকে। এবং কতকগুলি মানুষের পক্ষে দারিদ্র শাস্তি স্বরূপ হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দু'টো হতেই রক্ষা করুন!

وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ দেখো, আমি তোমাদের উপর তোমাদের পিতামাতার চেয়েও বেশী দয়ালু। একদিকে তিনি পিতা-মাতাকে নিদের্শ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাদের সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে ধন-মাল প্রদান করে। আর অন্যদিকে তাদেরকে আদেশ করছেন যে, যেন তারা তাদের সন্তানদেরকে হত্যা না করে। অজ্ঞতার যুগে মানুষ তাদের কন্যাদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে মাল প্রদান করতো না এবং তাদেরকে জীবিত রাখাও পছন্দ করতো না। এমনকি কন্যা-সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া তাদের একটা সাধারণ প্রথায় পরিণত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এই জঘন্য প্রথাকে খণ্ডন করছেন। তিনি বলেছেনঃ এটা কতই না অবাস্তব ধারণা যে, তোমরা তাদেরকে খাওয়াবে কোথা থেকে?জেনে রেখো যে, কারো জীবিকার দায়িত্ব কারো উপর নেই। সবারই জীবিকার ব্যবস্থা মহান আল্লাহই করে থাকেন। সূরায়ে আনআমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমিই তাদেরকে ও তোমাদেরকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি।” তাদের হত্যা করা মহাপাপ।(আরবি) শব্দটি অন্য পঠনে (আরবি) রয়েছে। উভয়ের একই অর্থ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে বড় পাপ। এই যে, তুমি তাঁর শরীক স্থাপন করবে, অথচ তিনি একাই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” তিনি আবার জিজ্ঞেস করেনঃ “এরপর কোনটি? তিনি জবাবে বলেনঃ “তুমি তোমার সন্তানদেরকে এই ভয়ে হত্যা করে ফেলবে যে, সে তোমার সাথে খাবে।” তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “এরপর কোনটি?” তিনি। উত্তর দেনঃ “তুমি তোমার প্রতিবেশিণীর সাথে ব্যভিচার করবে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

📘 আল্লাহ তাআলা ব্যভিচার ও ওর চতুষ্পর্শ্বের সমস্ত দুষ্কার্য হতে চরমভাবে নিষেধ করেছেন। শরীয়তে ব্যভিচারকে কাবীরা ও কঠিন পাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন যুবক রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে। ব্যভিচারের অনুমতি প্রার্থনা করে। জনগণ প্রতিবাদ করে বলেঃ “চুপ কর, কি বলছো?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলেনঃ “বসে যাও।” সে বসে গেলে তিনি তাকে বলেনঃ তুমি এই কাজ কি তোমার মায়ের জন্যে পছন্দ কর?” উত্তরে সে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন! আল্লাহর কসম! আমি কখনো এটা পছন্দ করি না।” তখন তিনি তাকে বললেনঃ “তাহলে অন্য কেউ এটাকে কি করে পছন্দ করতে পারে?” এরপর তিনি তাকে বললেনঃ “আচ্ছা, এই কাজটি তুমি। তোমার মেয়ের জন্যে পছন্দ কর কি?” লোকটি চরমভাবে এটাও অস্বীকার করলো। তিনি বললেনঃ “ঠিক এরূপই অন্য কেউই এটা তার মেয়ের জন্যে পছন্দ করে না। তারপর তিনি বললেনঃ “তুমি তোমার বোনের জন্যে এটা পছন্দ করবে কি?” অনুরূপভাবে সে এটাকেও অস্বীকার করলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এইরূপ অন্যেরাও তাদের বোনদের জন্যে এটাকে অপছন্দ করবে।” অতঃপর তিনি বললেনঃ “কেউ তোমার ফুফুর সাথে এই কাজ করুক এটা তুমি পছন্দ কর কি?” সে এটাকেও কঠিনভাবে অস্বীকার করলো। তিনি বললেনঃ “অনুরূপ ভাবে অন্যেরাও এটা পছন্দ করবে না।” এরপর তিনি। বলেনঃ “তোমার খালার জন্যে এ কাজ তুমি পছন্দ কর কি?” উত্তরে সে বলেঃ “কখনই নয়।” তিনি বললেনঃ “এইরূপ সবাই এটা অপছন্দ করে।” অতঃপর তিনি স্বীয় হস্ত মুবারক তার মস্তকের উপর স্থাপন করে দুআ করলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি এর পাপ মার্জনা করুন! এর অন্তর পবিত্র করে দিন এবং একে অপবিত্রতা হতে বাঁচিয়ে নিন!” অতঃপর তার অবস্থা এমন হলো যে, সে কোন মহিলার দিকে দৃষ্টিপাতও করতো না।ইবনু আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “শিরকের পরে ব্যভিচার হতে বড় পাপ আর কিছুই নেই যে, মানুষ তার শুক্র এমন গর্ভাশয়ে নিক্ষেপ করবে যা তার জন্যে বৈধ নয়।”

وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِي الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেন যে, শরীয়তের কোন হক ছাড়া কাউকেও হত্যা করা হারাম। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ এক হওয়া এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর রাসূল হওয়ার সাক্ষ্য প্রদান করেছে তাকে তিনটি কারণের কোন একটি ছাড়া হত্যা করা বৈধ নয়। কারণগুলি হচ্ছেঃ হয়তো সে কাউকেও হত্যা করেছে অথবা বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচার করেছে কিংবা দ্বীন হতে ফিরে গিয়ে জমাআতকে পরিত্যাগ করেছে। সুনানে রয়েছে যে, সারা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহ তাআলার নিকট একজন মুমিনের হত্যা অপেক্ষা বেশী হাকা। যদি কোন লোক কারো হাতে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তবে আল্লাহ তাআলা তার উত্তরাধিকারীদেরকে হত্যাকারীর উপর অধিকার দান করেছেন। তার উপর কিসাস (হত্যার বিনিময়ে হত্যা) লওয়া বা রক্তপণ গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দেয়া তাদের ইখতিয়ার রয়েছে। একটি বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের হুকুম কে সাধারণ হিসেবে ধরে নিয়ে হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) রাজত্বের উপর এটাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন যে, তিনি বাদশাহ হয়ে যাবেন। কেননা, হযরত উছমানের (রাঃ) ওয়ালী তিনিই ছিলেন। আর হযরত উছমান (রাঃ) শেষ পর্যায়ের জুলুমের সাথে শহীদ হয়েছিলেন। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) , হযরত আলীর (রাঃ) নিকট আবেদন জানিয়েছিলেন যে, হযরত উছমানের (রাঃ) হত্যাকারীদের উপর যেন কিসাস নেয়া হয়। কেননা, হযরত মুআবিয়াও (রাঃ) উমাইয়া বংশীয় ছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) এ ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা করছিলেন। এদিকে তিনি হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) । নিকটে আবেদন করেছিলেন যে, তিনি যেন সিরিয়াকে তাঁর হাতে সমর্পণ করেন। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হযরত আলীকে (রাঃ) পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছিলেনঃ “যে পর্যন্ত না আপনি হযরত উছমানের (রাঃ) হত্যাকারীদেরকে আমার হাতে সমর্পণ করবেন, আমি সিরিয়াকে আপনার শাসনাধীন করবো ।” সুতরাং তিনি সমস্ত সিরিয়াবাসীসহ হযরত আলীর (রাঃ) হাতে বায়আত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী কলহ শুরু হয়ে যায় এবং হযরত মুআবিয়া (রাঃ) সিরিয়ার শাসনকর্তা হয়ে যান।মু’জিমে তিবরানীতে এই রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাত্রির কথোপকথনে একবার বলেনঃ “আজ আমি তোমাদেরকে একটি কথা শুনাচ্ছি যা এমন কোন গোপনীয় কথাও নয় এবং তেমন প্রকাশ্য কথাও নয়। হযরত উছমানের (রাঃ) যা কিছু করা হয়েছে, ঐ সময় আমি তাকে নিরপেক্ষ থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহর শপথ! যদি আপনি কোন পাথরের মধ্যেও লুকিয়ে থাকেন তবুও আপনাকে বের করা হবে। কিন্তু তিনি আমার পরামর্শ গ্রহণ করেন নাই। আর একটি কথা জেনে নাও যে, আল্লাহর কসম! মুআবিয়া (রাঃ) তোমাদের উপর বাদশাহ হয়ে যাবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যে অত্যাচারিত ব্যক্তি নিহত হবে, আমি তার ওয়ারিছদেরকে তার উপর প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার দিয়েছি। এখন তারা যে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করবে, এ ব্যাপারে তারা যেন বাড়াবাড়ি না করে (শেষ পর্যন্ত)। আরো জেনে রেখো যে, এই কুরায়েশী তোমাদেরকে পারস্য ও রোমের পন্থায় উত্তেজিত করবে এবং তোমাদের উপর খৃস্টান, ইয়াহুদী ও মাজুসী দাঁড়িয়ে যাবে। ঐ সময় যে ব্যক্তি ওটা ধারণ করবে যা সুপরিচিত, সে মুক্তি পেয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি ওটা ছেড়ে দেবে এবং বড়ই আফসোস যে, তোমরা ছেড়েই দেবে, তবে তোমরা এ যুগের লোকদের মত হয়ে যাবে যে, যারা ধ্বংস প্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” এখন মহান আল্লাহ বলেনঃ ওয়ারিছদের জন্যে এটা উচিত নয় যে, হত্যার বদলে হত্যার ব্যাপারে তারা সীমালংঘন করে। যেমন তার মৃতদেহকে নাক, কান কেটে বিকৃত করা বা হত্যাকারী ছাড়া অন্যের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করা ইত্যাদি। শরীয়তে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছকে অধিকার ও ক্ষমা প্রদানের দিক দিয়ে সর্বপ্রকার সাহায্য দান করা হয়েছে।

وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ ۚ وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ ۖ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا

📘 Please check ayah 17:35 for complete tafsir.

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

📘 ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ তোমরা অসদুদ্দেশ্যে ইয়াতীম বা পিতৃহীনের মালে হেরফের করো না। তাদের বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই তাদের মাল খেয়ে ফেলার অপবিত্র নিয়ত থেকে দূরে থাকো। যার তত্ত্বাবধানে পিতৃহীন শিশু রয়েছে সে যদি স্বয়ং মালদার হয় তবে তার উচিত পিতৃহীনের মাল থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক থাকা। আর যদি সে দরিদ্র হয় তবে উত্তম ও প্রচলিত পন্থায় তা থেকে খাবে।রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু যারকে (রাঃ) বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ) । আমি তোমাকে খুবই দুর্বল দেখছি এবং তোমার জন্যে আমি ওটাই পছন্দ করছি যা নিজের জন্যে পছন্দ করে থাকি। সাবধান! তুমি কখনো দুই ব্যক্তির ওয়ালী হবে না এবং কখনো পিতৃহীনের মালের মুতাওয়াল্লী হবে না।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে) এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করো। যে প্রতিশ্রুতি ও লেনদেন হয়ে যাবে তা পালন করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করো না। জেনে রেখো যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জবাব দিহি করতে হবে। তারপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ মাপ ও ওজন সম্পর্কে সতর্ক করে বলছেনঃ তোমরা কোন কিছু মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে মেপে দেবে। মোটেই কম। করবে না। আর কোন জিনিস ওজন করে দেয়ার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেবে। এখানেও কাউকেও ঠকাবার চেষ্টা করবে না। (আরবি) এর দ্বিতীয় (আরবি) পঠন রয়েছে। মাপ ও ওজন সঠিকভাবে করলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই তোমাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে। দুনিয়াতেও এটা তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে সুনামের বিষয়, আর পরকালেও তোমাদের মুক্তির উপায়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “হে বণিকদের দল! তোমাদেরকে এমন দুটি জিনিস সমর্পণ করা হয়েছে যার কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মাপ ও ওজন (সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন হারাম জিনিসের উপর ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর ভয়ে তা ছেড়ে দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করবেন।”

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا

📘 মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমার যেটা জানা নেই সে বিষয়ে মুখ খুলো না। না জেনে কারো উপর দোষারোপ করো না এবং কাউকেও মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না, না দেখে দেখেছি’ বলো না, না শুনে শুনেছি’ বলো না এবং না জেনে জানার কথাও বলো না। কেননা, আল্লাহ তাআলার কাছে এই সব কিছুরই জবাবদিহি করতে হবে। মোট কথা, সন্দেহ ও ধারণার বশবর্তী হয়ে কিছু বলতে নিষেধ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ যেমন এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা অনেক অনুমান ও ধারণা হতে বেঁচে থাকো, কেননা, কোন কোন ধারণা পাপজনক হয়ে থাকে।” (৪৯:১২)হাদীস শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, ধারণা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যা কথা।” সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষের এ ধরনের কথা খুবই খারাপ যে, মানুষ ধারণা করে থাকে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জঘন্যতম অপবাদ এই যে, মানুষ মিথ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে কোন স্বপ্ন বানিয়ে নেয়।” অন্য একটি সহীহ হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি এরূপ স্বপ্ন নিজে বানিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন তাকে এই কষ্ট দেয়া হবে যে যেন দু’টি যবের। মধ্যে গিরা লাগিয়ে দেয়, যা তার দ্বারা কখনোই সম্ভবপরহবে না। কিয়ামতের দিন চক্ষু, কর্ণ ও হৃদয়ের কাছে কৈফিয়ত তলব করাহবে। ওষ্ঠকে জবাবদিহি করতে হবে। এখানে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) ব্যবহার করাহয়েছে। এরূপ ব্যবহার আরবদের মধ্যে বরাবরই চলে আসছে। এই ব্যবহার কবিদের কবিতার মধ্যেও রয়েছে।

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا

📘 Please check ayah 17:38 for complete tafsir.

كُلُّ ذَٰلِكَ كَانَ سَيِّئُهُ عِنْدَ رَبِّكَ مَكْرُوهًا

📘 ৩৭-৩৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে দর্পভরে ও বাবুয়ানা চালে চলতে নিষেধ করেছেন। উদ্ধত ও অহংকারী লোকদের এটা অভ্যাস। এরপর তাদেরকে নীচু করে দেখবার জন্যে আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ তুমি যতই মাথা উঁচু করে চল না কেন, তুমি পাহাড়ের উচ্চতা থেকে নীচেই থাকবে। আর যতই খট খট করে দম্ভভরে মাটির উপর দিয়ে চল না কেন, তুমি যমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না। বরং এরূপ লোকদের অবস্থা বিপরীত হয়ে থাকে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি গায়ে চাদর জড়িয়ে দর্পভরে চলছিল, এমতাবস্থায় তাকে যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত সে নীচে নামতেই আছে। কুরআন কারীমে কারূণের কাহিনী বর্ণিত আছে যে, তাকে তার প্রাসাদসহ যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে, যারা নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ। করে তাদের মর্যাদা আল্লাহ তাআলা উঁচু করে দেন। হাদীসে এসেছে যে, যারা নত হয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করে দেন। তারা নিজেদের তুচ্ছ জ্ঞান করে, আর জনগণ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করে। পক্ষান্তরে যারা নিজেদেরকে বড় মর্যাদাবান মনে করে ও অহংকার করে, তাদেরকে জনগণ অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। এমনকি তারা তাদেরকে কুকুর ও শূকর অপেক্ষাও নিকৃষ্ট মনে করে।ইমাম আবু বকর ইবনু আবিদ দুনিয়া (রাঃ) তাঁর কিতাবুল খুমূল ওয়াত তাওয়াল’ নামক গ্রন্থে এনেছেন যে, ইবনুল আহীম নামক একজন লোক খলীফা মনসরের দরবারে যাচ্ছিল। এ সময় তার পরণে ছিল রেশমী জব্বা এবং ওটা পায়ের গোছার উপর থেকে উলটিয়ে সেলাই করা ছিল যাতে নীচে থেকে কুবাও (লম্বা পোষাক বিশেষ) দেখা যায়। এভাবে সে অত্যন্ত বাবুয়ানা চালে দর্পপদক্ষেপে চলছিল। হযরত হাসান বসরী (রঃ) তাকে এ অবস্থায় দেখে তাঁর সঙ্গীদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “ঐ দেখো, ঐ যে মাথা উঁচু করে, গাল ফুলিয়ে ডাট দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভুলে গিয়ে, প্রতিপালকের আহকাম ছেড়ে দিয়ে, আল্লাহর হককে ভেঙ্গে দিয়ে পাগলদের চালে অভিশপ্ত শয়তানের সঙ্গী চলে যাচ্ছে।” তাঁর একথাগুলি ইবনুল আহীম শুনতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তখন তিনি তাকে বলেনঃ “আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কি হবে? তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা কর এবং এটা পরিত্যাগ কর। তুমি কি মহান আল্লাহর এই নিষেধাজ্ঞা শুন নাই? (আরবি) অর্থাৎ “তুমি দম্ভভরে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করো না।” (১৭:৩৭)আবেদ নাজতারী (রাঃ) হযরত আলীর (রাঃ) বংশের একজন লোককে দর্পভরে চলতে দেখে বলেনঃ “হে এই ব্যক্তি! যিনি তোমাকে এই মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর চালচলন এইরূপ ছিল না।” সে তৎক্ষণাৎ তওবা করে নেয়।হযরত ইবনু উমার (রাঃ) এইরূপ একটি লোককে দেখে বলেনঃ “এইরূপ লোকই শয়তানের ভাই হয়ে থাকে।”ইবনু আবিদ দুনিয়ার (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আমার উম্মত দর্প ও অহংকারের চালে চলবে এবং পারসিক ও রোমকদেরকে নিজেদের খিদমতে লাগিয়ে দেবে তখন আল্লাহ তাআলা এককে অপরের উপর আধিপত্য দান করবেন।(আরবি) এর দ্বিতীয় (আরবি) পঠন রয়েছে। তখন অর্থ হবেঃ “আমি তোমাদেরকে যে সব কাজ থেকে নিষেধ করেছি ঐ সব কাজ অত্যন্ত মন্দ এবং আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয়।” অর্থাৎ ‘সন্তানদেরকে হত্যা করো না’ থেকে। নিয়ে ‘দর্পভরে চলো না পর্যন্ত সমস্ত কাজ। আর (আরবি) পড়লে অর্থ হবেঃ (আরবি) হতে এখন পর্যন্ত যে হুকুম আহকাম ও নিষেধাজ্ঞার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে যত খারাপ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওগুলো সবই আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় কাজ। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।

ذَٰلِكَ مِمَّا أَوْحَىٰ إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ ۗ وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَتُلْقَىٰ فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَدْحُورًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! যে সব হুকুম আমি নাযিল করেছি সবগুলিই উত্তম গুণের অধিকারী এবং যে সব জিনিস থেকে আমি নিষেধ করেছি সেগুলি সবই জঘন্য। এসব কিছু আমি তোমার কাছে ওয়াহীর মাধ্যমে নাযিল করেছি যে, তুমি লোকদেরকে নির্দেশ দিবে এবং নিষেধ করবে। দেখো, আমার সাথে অন্য কোন মা'বূদ স্থির করবে না। অন্যথায় এমন এক সময় আসবে যখন তুমি নিজেকেই ভৎসনা করবে এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেও তুমি তিরস্কৃত হবে। আর তোমাকে সমস্ত কল্যাণ থেকে দূর করে দেয়া হবে। এই আয়াতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মাধ্যমে তাঁর উম্মতকে সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা, তিনি তো সম্পূর্ণরূপে নিস্পাপ।

وَقَضَيْنَا إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ فِي الْكِتَابِ لَتُفْسِدُنَّ فِي الْأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا

📘 Please check ayah 17:8 for complete tafsir.

أَفَأَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِينَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِنَاثًا ۚ إِنَّكُمْ لَتَقُولُونَ قَوْلًا عَظِيمًا

📘 আল্লাহ তাআলা অভিশপ্ত মুশরিকদের কথা খণ্ডন করছেন। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ এটা তোমরা খুব চমৎকার বন্টনই করলে যে, পুত্র তোমাদের আর কন্যা আল্লাহর! যাদেরকে তোমরা নিজেরা অপছন্দ কর, এমনকি জীবন্ত কবর দিতেও দ্বিধাবোধ কর না, তাদেরকেই আল্লাহর জন্যে স্থির করছো! অন্যান্য আয়াত সমূহেও তাদের এই ইতরামির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তারা বলেঃ আল্লাহর রহমানের সন্তান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের অত্যন্ত জঘন্য উক্তি। খুব সম্ভব, তাদের এই উক্তির কারণে আকাশ ফেটে পড়বে, যমিন ধ্বসে যাবে এবং পাহাড় পর্বত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে যে, আল্লাহ রহমানের সন্তান রয়েছে। অথচ তিনি এর থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। এটা তার জন্যে মোটেই শোভনীয় নয়। যমিন ও আসমানের সমস্ত সৃষ্টজীব তারই দাস। সবই তাঁর গণনার মধ্যে রয়েছে। কিয়ামতের দিন এক এক করে সবকেই তাঁর সামনে পেশ করা হবে।

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ لِيَذَّكَّرُوا وَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا نُفُورًا

📘 আল্লাহ পাক বলেনঃ এই পবিত্র কিতাবে (কুরআনে) আমি সমস্ত দৃষ্টান্ত খুলে খুলে বর্ণনা করে দিয়েছি। প্রতিশ্রুতি ও ভীতি প্রদর্শন স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে, যাতে মানুষ মন্দ কাজ ও আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু তবুও অত্যাচারী লোকেরা সত্য হতে ঘৃণা করা ও ওর থেকে দূরে পলায়নে বেড়ে চলেছে।

قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لَابْتَغَوْا إِلَىٰ ذِي الْعَرْشِ سَبِيلًا

📘 Please check ayah 17:43 for complete tafsir.

سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يَقُولُونَ عُلُوًّا كَبِيرًا

📘 ৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর যে মুশরিকরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যদেরও ইবাদত করে এবং তাদেরকে তাঁর শরীক মনে করে, আর মনে করে যে, তাদের কারণে তারা তাঁর নৈকট্য লাভ করবে তাদেরকে বলে দাওঃ তোমাদের এই বাজে ধারণার যদি কোন মূল্য থাকতো তবে তারা যাদেরকে ইচ্ছা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতো এবং যাদের জন্যে ইচ্ছা সুপারিশ করতো। তবে তো স্বয়ং এ মাবুদই তাঁর ইবাদত করতো ও তাঁর নৈকট্য অনুসন্ধান করতো। সুতরাং তোমাদের শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত করা মোটেই উচিত নয়। অন্য মা’ৰূদদের কোন প্রয়োজনই নেই যে, তারা তোমাদের মধ্যে মাধ্যম হবে। এই মাধ্যম আল্লাহ তাআলার নিকট খুবই অপছন্দনীয়। তিনি এটা অস্বীকার করছেন। তিনি তাঁর সমস্ত নবী ও রাসূলের ভাষায় এর থেকে নিষেধ করেছেন।আল্লাহর সত্তা অত্যাচারীদের বর্ণনাকৃত এই বিশেষণ হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন মা'বূদ নেই। এই মলিনতা ও অপবিত্রতা হতে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ পাক রয়েছে। তিনি এক ও অভাবমুক্ত। তিনি পিতা-মাতা ও সন্তান হতে পবিত্র। তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই।

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ۚ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

📘 সাত আকাশ, যমীন ও এগুলির অন্তর্বর্তী সমস্ত মাখলুক আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে থাকে। মুশরিকরা যে আল্লাহ তাআলার সত্তাকে বাজে ও মিথ্যা বিশেষণে বিশেষিত করছে, এর থেকে সমস্ত মাখলুক নিজেদেরকে মুক্ত ঘোষণা করছে এবং তিনি যে মা’রূদ ও প্রতিপালক এটা তারা অকপটে স্বীকার করছে। তারা এটাও স্বীকার করছে যে, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই। অস্তিত্ব বিশিষ্ট সব কিছু আল্লাহর একত্বের জীবন্ত সাক্ষী। এই নালায়েক, অযোগ্যও অপদার্থ লোকদের আল্লাহ সম্পর্কে জঘন্য উক্তিতে সারা মাখলুক কষ্টবোধ করছে। অচিরেই যেন আকাশ ফেটে যাবে, পাহাড় ভেঙে পড়বে এবং যমীন ধ্বসে যাবে।ইমাম তিবরানীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ও হযরত মীকাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মাকামে ইবরাহীম ও যমযম কূপের মধ্যবর্তী স্থান হতে নিয়ে যান। হযরত জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন ডান দিকে এবং হযরত মীকাঈল (আঃ) ছিলেন বাম দিকে। তাঁরা তাঁকে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ফিরে আসেন। তিনি বলেনঃ “আমি উচ্চাকাশে বহু তাসবীহ এর সাথে নিম্নের তাসবীহও শুনেছিঃ (আরবি) অর্থাৎ “ভয় ও প্রেমপ্রীতির পাত্র, মহান ও সর্বোচ্চ আল্লাহর পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে উচ্চাকাশ সমূহ।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ মাখলুকের মধ্যে সমস্ত কিছু তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা কীর্তণ করে থাকে। কিন্তু হে মাবন মণ্ডলী! তোমরা তাদের তদ্বীহ্ বুঝতে পার না। কেননা, তাদের ভাষা তোমাদের জানা নেই। প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জড় পদার্থ সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ্ পাঠেরত রয়েছে।হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে তারা খাদ্য খাওয়ার সময় খাদ্যের তাসবীহ শুনতে পেতেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে) হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় হস্তের মুষ্টির মধ্যে কয়েকটি পাথর নেন। আমি শুনতে পাই যে, ওগুলি মৌমাছির মত ভন্ করে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছে। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকরের (রাঃ) হাতে, হযরত উমারের (রাঃ) হাতে এবং হযরত উছমানের (রাঃ) হাতেও।” (এ হাদীসটি সহীহ ও মুসনাদগ্রন্থ সমূহে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কতকগুলি লোককে দেখেন যে, তারা তাদের উষ্ট্রী ও জন্তুগুলির উপর আরোহণরত অবস্থায় ওগুলিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এদেখে। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “সওয়ারী শান্তির সাথে গ্রহণ কর এবং উত্তমরূপে ছেড়ে দাও। ওগুলিকে পথে ও বাজারের লোকদের সাথে কথা বলার চেয়ার বানিয়ে রেখো না। জেনে রেখো যে, অনেক সওয়ারী তাদের সওয়ার চেয়েও উত্তম হয়ে থাকে।” বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যাঙকে মারতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এই কালেমাটি পাঠের পরেই কারো পূণ্যের কাজ গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। (মুসনাদে আহমাদে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে)“আলহামদু লিল্লাহ’ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কালেমা। যে এটা পাঠ করে না সে আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞ বান্দা। ‘আল্লাহু আকবর’ যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী শূন্য স্থান পূর্ণ করে থাকে। ‘সুবহানাল্লাহ’ হচ্ছে মাখলুকের তাসবীহ! যখন কেউ (আরবি) পাঠ করে তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার বান্দা আমার অনুগত হয়েছে। এবং আমাকে সবকিছু সমর্পণ করেছে।” বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রেশমী হাত ও রেশমী বোস্তামী বিশিষ্ট তায়ালিসী জুব্বা পরিধান করে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করে এবং বলতে শুরু করেঃ “এই ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উদ্দেশ্য এটা ছাড়া অন্য কিছু নয় যে, তিনি রাখালদের ছেলেদেরকে সমুন্নত করবেন এবং নেতাদের ছেলেদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তার অঞ্চল টেনে ধরে বলেনঃ “আমি তোমাকে জন্তুর পোষাক পরিহিত দেখছি না তো?” তারপর তিনি ফিরে আসেন এবং বসে পড়ে বলতে শুরু করেনঃ “হযরত নূহ (আঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় নিজের ছেলেদের ডেকে নিয়ে বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে অসিয়ত হিসেবে দু’টো কাজের হুকুম করছি এবং দু'টো কাজ থেকে নিষেধ করছি। নিষিদ্ধ কাজ দু’টি এই যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না এবং অহংকার করবে না। আর আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি এই যে, তোমরা (আরবি) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, আসমান যমীন এবং এতোদুভয়ের অন্তর্বর্তী যত কিছু রয়েছে সব গুলোকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং অন্য পাল্লায় শুধু এই কালেমাটি রাখা হয় তবে, এই কালেমাটির পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। জেনে রেখো, যদি সমস্ত আকাশ ও যমীনকে একটা বৃত্ত বানানো হয় এবং এই কালেমাটি ওর উপর রাখা হয় এটা ওকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে। দ্বিতীয় হুকুম এই যে, তোমরা (আরবি) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, এটা হচ্ছে প্রত্যেক জিনিসের নামায। আর এর কারণেই প্রত্যেককে রিযক দেয়া হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে) তাফসীরের ইবনু জারীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এসো, হযরত নূহ (আঃ) তাঁর সন্তানদেরকে যে হুকুম করেছিলেন তা আমি তোমাদের নিকট বর্ণনা করি। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎসগণ! আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি যে, তোমরা ‘সবুহানাল্লাহ’ বলতে থাকবে। এটা সমস্ত মাখলুকের তাসবীহ এবং এরই মাধ্যমে তাদেরকে রিযক দেয়া হয়।। আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে থাকে।” (বর্ণনাকারী যানদীর কারণে এই হাদীসটির ইসনাদ দুর্বল)ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, স্তম্ভ, গাছ-পালা, পানির খড়খড় শব্দ এ সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ।আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস আল্লাহর প্রশংসা পাঠ ও গুণকীর্তণে নিমগ্ন রয়েছে। ইবরাহীম (রাঃ) বলেন যে, খাদ্য ও তাসবীহ পাঠ করে থাকে। সূরায়ে হাজ্জের আয়াতও এর সাক্ষ্য প্রদান করে। মুফাসসিরগণ বলেন যে, আত্মা বিশিষ্ট সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত রয়েছে। যেমন প্রাণীসমূহ ও গাছ-পালা। একবার হযরত হাসানের (রাঃ) কাছে খাদ্যের খাঞ্চা আসলে হযরত আবু ইয়াযীদ রাকাশী (রঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আবু সাঈদ (রঃ)! খাঞ্চাও কি তাসবীহ পাঠকারী?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, তাই ছিল।” ভাবার্থ এই যে, যেই পর্যন্ত ওটা কাঁচা কাঠের আকারে ছিল সেই পর্যন্ত তাসবীহ পাঠকারী ছিল। কিন্তু যখন ওটাকে কেটে নেয়ার পর ওটা শুকিয়ে গেছে তখন তাসবীহ পাঠও শেষ হয়ে গেছে। এই উক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় নিম্নের হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য। একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় বলেনঃ “এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে বড় পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রসাব করার সময় পর্দার প্রতি খেয়াল রাখতো না। অপরজন ছিল পরোক্ষ নিন্দাকারী!” অতঃপর তিনি একটি কাঁচা ডাল নিয়ে ওকে দুভাগ করতঃ দুই কবরের উপর গেড়ে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ “সম্ভবতঃ যতক্ষণ এটা শুষ্ক না হবে ততক্ষণ এদের শাস্তি হাল্কা থাকবে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)এজন্যেই কোন কোন আলেম বলেছেন, যে যতক্ষণ এটা কাঁচা থাকবে ততক্ষণ তাসবীহ পড়বে এবং যখন শুকিয়ে যাবে তখন তাসবীহ পাঠও বন্ধ। হয়ে যাবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।আল্লাহ তাআলা বিজ্ঞানময় ও ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর পাপী বান্দাদেরকে শাস্তি দানে তাড়াতাড়ি করেন না, বরং বিলম্ব করেন এবং অবকাশ দেন। কিন্তু এরপরেও যদি সে কুফরী ও পাপাচারে লিপ্ত থেকে যায় তখন অনন্যোপায় হয়ে তাকে পাকড়াও করেন।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর ছেড়ে দেন না।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ কুরআনপাকে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যখন কোন জনপদকে তাদের অত্যাচার-অবিচারের কারণে পাকড়াও করেন, তখন এরূপই পাকড়াও হয়ে থাকে (শেষ পর্যন্ত)।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “বহু গ্রামবাসীকে আমি তাদের যুলুমরত অবস্থায় ধ্বংস করে দিয়েছি।” (২২:৪৫) হাঁ, তবে যারা পাপকার্য থেকে ফিরে আসে এবং তাওবা করে নেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করে থাকেন। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করে এবং নিজের নফসের উপর জুলুম করে, অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।” সূরায়ে ফাতিরের শেষের আয়াতগুলিতেও এই বর্ণনাই রয়েছে।

وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ حِجَابًا مَسْتُورًا

📘 Please check ayah 17:46 for complete tafsir.

وَجَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۚ وَإِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِي الْقُرْآنِ وَحْدَهُ وَلَّوْا عَلَىٰ أَدْبَارِهِمْ نُفُورًا

📘 ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কুরআন পাঠের সময় তাদের অন্তরে পর্দা পড়ে যায়। কাজেই কুরআন তাদের অন্তরে মোটেই ক্রিয়াশীল হয় না। ঐ পর্দা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এখানে (আরবি) শব্দটি (আরবি) এর অর্থবোধক। যেমন (আরবি) ও (আরবি) যথাক্রমে (আরবি) এবং (আরবি) এর অর্থবোধক। এ পর্দা যদিও বাহ্যতঃ দেখা যায় না, কিন্তু হিদায়াতের মধ্যে ও তাদের মধ্যে আল্লাহ তাআ’লী পৃথককারী হয়ে যান। মুসনাদে আবি ইয়ালা মুসিলীর মধ্যে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) সূরাটি অবতীর্ণ হয় তখন (আবু লাহাবের স্ত্রী) উম্মে জামীল একটি তীক্ষ্ণ পাথর হাতে নিয়ে এই নিন্দিত ব্যক্তিকে আমরা মানবো না’ একথা চীৎকার করে বলতে বলতে আসে। সে আরো বলেঃ তার দ্বীন আমাদের কাছে পছন্দনীয় নয়। আমরা তার ফরমানের বিরোধী। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বসে ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর পাশেই ছিলেন। তিনি তাঁকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে তো আসছে! আপনাকে দেখে ফেলবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “নিশ্চিন্ত থাকো। সে আমাকে দেখতে পাবে না।” অতঃপর তিনি তার থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরআন পাঠ শুরু করে দেন। এই আয়াতটিই তিনি পাঠ করেন। সে এসে হযরত আবু বকরকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “আমি শুনেছি যে, তোমাদের নবী (সঃ) নাকি আমার দুনমি করেছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “না, না। কা’বার প্রতিপালকের শপথ! তিনি তোমার কোন দুর্নাম বা নিন্দা করেন নাই।” সে সমস্ত কুরায়েশ জানে যে, আমি তাদের নেতার কন্যা’ একথা বলতে বলতে ফিরে গেল। (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। ঐ পর্দা তাদের অন্তরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, যার কারণে তারা কুরআন বুঝতে পারে না। তাদের কানে বধিরতা রয়েছে, যার কারণে তারা তা এমনভাবে শুনতে পায় না যাতে তাদের উপকার হয়।মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! যখন তুমি কুরআনের এ অংশ পাঠ কর যাতে আল্লাহর একত্বের বর্ণনা রয়েছে তখন তারা পলাতে শুরু করে। (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন , যেমন (আরবি) শব্দের বহু বচন এসে থাকে। আবার এও হতে পারে যে, এটা ক্রিয়া ছাড়াই ধাতুমূল রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “একক আল্লাহর বর্ণনায় বেঈমান লোকদের মন বিরক্ত হয়ে ওঠে।” মুসলমানদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পাঠ মুশরিকদের মন বিষিয়ে তোলে। ইবলীস এবং তাঁর সেনাবাহিনী এতে খুবই বিরক্ত হতো ও এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তাদের বিপরীত। তিনি চান তার এই কালেমাকে সমুন্নত করতঃ এটাকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে। এটা এমন একটি কালেমা যে, এর উক্তিকারী সফলকাম হয় এবং এর উপর আমলকারী সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। দেখো, এই উপদ্বীপের অবস্থা তোমাদের চোখের সামনে রয়েছে, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত এই পবিত্র কালেমা ছড়িয়ে পড়েছে। একথাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা শয়তানদের পলায়নকে বুঝানো হয়েছে। একথাও সঠিকই বটে যে, আল্লাহ তাআলার যিকর হতে, আযান হতে এবং কুরআন পাঠ হতে শয়তান পলায়ন করে থাকে। কিন্তু এই আয়াতের এই তাফসীর করা গারাবাত বা দুর্বলতা মুক্ত নয়।

نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُونَ بِهِ إِذْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ وَإِذْ هُمْ نَجْوَىٰ إِذْ يَقُولُ الظَّالِمُونَ إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًا مَسْحُورًا

📘 Please check ayah 17:48 for complete tafsir.

انْظُرْ كَيْفَ ضَرَبُوا لَكَ الْأَمْثَالَ فَضَلُّوا فَلَا يَسْتَطِيعُونَ سَبِيلًا

📘 ৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেনঃ কাফির নেতৃবর্গ পরম্পর কথা বানিয়ে নিতো, সেটাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) জানিয়ে দিচ্ছেন। তিনি স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! যখন তুমি কুরআন পাঠে নিমগ্ন থাকো তখন এই কাফির ও মুশরিকদের দল চুপে চুপে পরস্পর বলাবলি করেঃ এর উপর কেউ যাদু করেছে। ভাবার্থ এও হতে পারে? এতো একজন মানুষ, যে পানাহারের মুখাপেক্ষী। যদিও এই শব্দটি এই অর্থে কবিতাতেও এসেছে এবং ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এটাকে সঠিকও বলেছেন, কিন্তু এতে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই স্থলে তাদের একথা বলার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, স্বয়ং এ ব্যক্তি যার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে কেউ কি আছে যে, তাকে এই সময় কিছু পড়িয়ে যায়? কাফিররা তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা প্রকাশ করতো। কেউ বলতো যে, তিনি কবি। কেউ বলতো যাদুকর এবং কেউ বলতো পাগল। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলনেঃ দেখো, কিভাবে এরা বিভ্রান্ত হচ্ছে! তারা সত্যের দিকে আসতেই পারছে না। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখে আল্লাহর কালাম শুনবার উদ্দেশ্যে রাত্রিকালে আবু সুফিয়ান ইবনু হারব, আবু জেহেল ইবনু হিশাম এবং আখনাস ইবনু শুরায়েক নিজ নিজ ঘর হতে বেরিয়ে আসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের ঘরে রাত্রের নামায (তাহাজ্জদ) পড়ছিলেন। এই তিন ব্যক্তি চুপে চুপে। এদিকে ওদিকে বসে পড়ে। তাদের একের অপরের কোন খবর ছিল না। রাত্রি পর্যন্ত তারা শুনতে থাকে। ফজর হয়ে গেলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। ঘটনাক্রমে পথে তাদের পরপরে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। তখন তারা একে অপরকে তিরস্কার করে বলেঃ “আমাদের এরূপ করা উচিত নয়। নতুবা সব লোক তাঁরই হয়ে যাবে।” কিন্তু পরবর্তী রাত্রেও আবার ঐ তিন জনই আসে এবং নিজ নিজ জায়গায় বসে গিয়ে কুরআন শুনতে শুনতে রাত্রি কাটিয়ে দেয়। ফজরের সময় তারা চলে যায়। পথে আবার তাদের মিলন ঘটে। আবার তারা পূর্ব রাত্রির কথার পুনরাবৃত্তি করে। তৃতীয় রাত্রেও এরূপই ঘটে। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “এসো, আমরা অঙ্গীকার করি যে, এরপর আমরা এভাবে কখনোই আসবো না।” এভাবে আহদ ও অঙ্গীকার করে তারা পৃথক হয়ে যায়। সকালে আখনাস তার লাঠি ধরে আবু সুফিয়ানের (রাঃ) বাড়ীতে যায় এবং বলেঃ “হে আবূ হানযালা’! বলতো, মুহাম্মদের (সঃ) ব্যাপারে তোমার মত কি?” আবু সূফিয়ান (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আবু সালারা! আমি কুরআনের যে আয়াতগুলি শুনেছি সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিরই ভাবার্থ। আমি বুঝেছি। কিন্তু বহু আয়াতের অর্থ আমি বুঝতে পারিনি।” আখনাস বললোঃ “আমার অবস্থাও তাই।” এখান থেকে বিদায় হয়ে আখনাস আবু জেহেলের কাছে গেল এবং তাকেও অনুরূপ প্রশ্ন করলো। তখন আবূ জেহেল বললোঃ “শুন, শরাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপার নিয়ে আবদে মানাফের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের ঝগড়া চলে আসছে। তারা মানুষকে সওয়ারী দান করেছে, তাদের দেখা দেখি আমরাও মানুষকে সওয়ারীর জন্তু দান করেছি। তারা জনগণের সাথে সদাচরণ করেছে এবং তাদেরকে পুরস্কার দিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরাও তাদের পিছনে থাকা পছন্দ করি নাই। এসব কাজে যখন তারা ও আমরা সমান হয়ে গেলাম এবং কোন ক্রমেই তারা আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারলো না তখন হঠাৎ করে তারা বলে বসলো যে, তাদের মধ্যে নুবুওয়াত রয়েছে। তাদের মধ্যে এমন একটি লোক রয়েছে যার কাছে নাকি আকাশ থেকে ওয়াহী এসে থাকে। এখন তুমি বলতো, আমরা কি করে একে মানতে পারি? আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো এর উপর ঈমান আনবো না এবং কখনো তাকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করবো না।” এ সময় আখনাস তাকে ছেড়ে যায়। (এ ঘটনাটি ‘সীরাত ইবনু ইসহাক’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে)

وَقَالُوا أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا

📘 Please check ayah 17:52 for complete tafsir.

فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًا مَفْعُولًا

📘 Please check ayah 17:8 for complete tafsir.

۞ قُلْ كُونُوا حِجَارَةً أَوْ حَدِيدًا

📘 Please check ayah 17:52 for complete tafsir.

أَوْ خَلْقًا مِمَّا يَكْبُرُ فِي صُدُورِكُمْ ۚ فَسَيَقُولُونَ مَنْ يُعِيدُنَا ۖ قُلِ الَّذِي فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ فَسَيُنْغِضُونَ إِلَيْكَ رُءُوسَهُمْ وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هُوَ ۖ قُلْ عَسَىٰ أَنْ يَكُونَ قَرِيبًا

📘 Please check ayah 17:52 for complete tafsir.

يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِ وَتَظُنُّونَ إِنْ لَبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا

📘 ৪৯-৫২ নং আয়াতের তাফসীর কাফির, যারা কিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানকে অসম্ভব মনে করতো, তারা অস্বীকারের উদ্দেশ্য নিয়ে জিজ্ঞেস করতোঃ আমরা অস্থি ও মাটি হয়ে যাওয়ার পরেও কি আমাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে?সুরায়ে নাযিআ’তে এই অস্বীকারকারীদের উক্তি নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছেঃ “আমরা কি আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবো? তবে কি আমরা যখন চুর্ণ-বিচূর্ণ হাড়ে পরিণত হয়ে যাবে তখন (পুনর্জীবনে) প্রত্যাবর্তিত হবো? বলতে লাগলোঃ এমতাবস্থায় এই প্রত্যাবর্তন (আমাদের জন্যে) বড়ই ক্ষতিকর হবে।” সূরায়ে ইয়াসীনে রয়েছেঃ “সে আমার সম্বন্ধে এক অভিনব বিষয় বর্ণনা করলো এবং নিজের মূল সৃষ্টিকে ভুলে গেল; সে বলেঃ কে জীবিত করবে এই হাড়গুলিকে, যখন তা পচে গেল?” সুতরাং তাদেরকে উত্তর দেয়া হচ্ছেঃ হাড় তো দূরের কথা, তোমরা পাথর হয়ে যাও বা লোহা হয়ে যাও অথবা এর চেয়ে শক্ত জিনিস হয়ে যাও, যেমন পাহাড় বা যমীন অথবা আসমান, এমনকি তোমরা যদি স্বয়ং মৃত্যুও হয়ে যাও, তবুও তোমাদেরকে পূনরুজ্জীবিত করা আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই সহজ। তোমরা যাই হয়ে যাও না কেন, পুনরুত্থিত হবেই।হাদীসে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে মৃত্যুকে নেকড়ে বাঘের আকারে আনয়ন করা হবে এবং জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসী উভয় দলকেই বলা হবেঃ “তোমরা একে চিনো কি?” সবাই সমস্বরে বলে উঠবেঃ “হাঁ, চিনি।” তারপর ওকে যবাহ করে দেয়া হবে। তারপর ঘোষণা করা হবেঃ “জান্নাতী লোকেরা! এখন থেকে তোমাদের চিরস্থায়ী জীবন হয়ে গেল, আর মৃত্যু হবে না। হে জাহান্নামী লোকেরা! আজ থেকে তোমাদের জীবন চিরস্থায়ী হয়ে গেল, আর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না।”এখানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তারা (কাফির ও মুশরিকরা) জিজ্ঞেস করেঃ “আচ্ছা, আমরা যখন অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবো, অথবা পাথর ও লোহা হয়ে যাবো, বা এমন কিছু হয়ে যাবো যা খুবই শক্ত, তখন কে এমন আছে যে, আমাদেরকে নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরুত্থিত করবে? হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের এই প্রশ্ন ও বাজে প্রতিবাদের জবাবে তাদেরকে বুঝিয়ে বলঃ তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন তিনিই যিনি তোমাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন যখন তোমরা কিছুই ছিলে না। তাহলে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে কঠিন হতে পারে কি? না, বরং এটা তাঁর পক্ষে খুবই সহজ, তোমরা যা কিছুই হয়ে যাও না কেন। এই উত্তরে। তারা সম্পূর্ণরূপে নির্বাক হয়ে যাবে বটে, কিন্তু এর পরেও তারাহঠকারিতা ও দুষ্টামি হতে বিরত থাকবে না এবং তাদের বদ আকীদা পরিত্যাগ করবে না। বরং তারা উপহাসের ছলে মাথা নাড়তে নাড়তে বলবেঃ “আচ্ছা, এটা হবে কখন? যদি সত্যবাদী হও তবে এর নির্দিষ্ট সময় বলে দাও?” বেঈমানদের অভ্যাস এই যে, তারা সব কাজেই তাড়াহুড়া করে থাকে। এই সময় অতি নিকটবর্তী। তোমরা এজন্যে অপেক্ষা করতে থাকো। এটা যে, আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যা আসবার তা আসবেই এটা মনে করে নাও। আল্লাহ তাআলার একটা শব্দের সাথে সাথেই তোমর যমীন হতে বের হয়ে পড়বে। চোখের পলক ফেলার সময় পরিমাণও বিলম্ব হবে না। আল্লাহর নির্দেশের সাথে সাথেই তোমাদের দ্বারা হাশরের ময়দান পূর্ণ হয়ে যাবে। কবর হতে উঠে আল্লাহর প্রশংসা করতঃ তাঁর নির্দেশ পালনে তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। প্রশংসার যোগ্য তিনিই; তোমরা তাঁর হুকুম ও ইচ্ছার বাইরে নও।হাদীসে এসেছে যে, যারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে তাদের জন্যে তাদের কবরে কোন ভয় ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হবে না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি যেন তাদেরকে দেখতে রয়েছি যে, তারা কবর থেকে উঠতে রয়েছে। তারা মাথা হতে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পাঠ করতে করতে উঠে দাঁড়াবে এবং বলবেঃ “আল্লাহরই সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদের দুঃখ দুর। করেছেন।” সূরায়ে ফাতিরের তাফসীরে এই বর্ণনা আসবে ইনশা-আল্লাহ। ঐ সময় মানুষের বিশ্বাস হবে যে, তারা খুব অল্প সময় দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। যেন তারা সকালে বা সন্ধ্যায় দুনিয়ায় থেকেছে। কেউ বলবে দশ দিন, কেউ বলবে একদিন এবং কেউ মনে করবে মাত্র এক ঘন্টা। প্রশ্নের উত্তরে তারা একথাই বলবেঃ “আমরা একদিন বা একদিনের কিছু কম সময় অবস্থান করেছি।” আর একথা তারা শপথ করে বলবে। অনুরূপভাবে তারা দুনিয়াতেও মিথ্যা কথার উপর কসম খেতো।

وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে বলে দাও যে, তারা যেন উত্তম ভাষায়, সুবাক্যে এবং ভদ্রতার সাথে কথা বলে। অন্যথায় শয়তান তাদের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি ও ফাটল ধরাবার চেষ্টা করবে। ফলে তাদের পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়ে যাবে। এজন্যেই হাদীসে রয়েছে যে, মুসলমান ভাই এর দিকে। কোন অস্ত্রের দ্বারা ইশারা করাও হারাম। কেননা, হয়তো, শয়তান ওটা তার গায়ে লাগিয়ে দেবে এবং এর ফলে সে জাহান্নামী হয়ে যাবে। (এ হাদীস মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে) বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সমাবেশে জনগণকে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ “সমস্ত মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কারো উপর জুলুম করবে না এবং কেউ কারো মর্যাদার হানি করবে না।” অতঃপর তিনি স্বীয় বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ “তাকওয়া এখানে।” একথা তিনি তিনবার বলেন। তারপর তিনি বলেনঃ “যে দুই ব্যক্তি পরস্পর দ্বীনী বন্ধু হিসেবে রয়েছে, অতঃপর তাদের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি হয়ে যায়, এখন তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই প্রভেদের কথা বর্ণনা করবে সে মন্দ, বদতর এবং চরম দুষ্ট।” (এ হাদীসটি ‘মুসনাদ গ্রন্থে রয়েছে)

رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِكُمْ ۖ إِنْ يَشَأْ يَرْحَمْكُمْ أَوْ إِنْ يَشَأْ يُعَذِّبْكُمْ ۚ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ وَكِيلًا

📘 Please check ayah 17:55 for complete tafsir.

وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِمَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَىٰ بَعْضٍ ۖ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

📘 ৫৪-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ) ও মু'মিনদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কারা হিদায়াত লাভের যোগ্য তা তোমাদের প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন। তিনি যার উপর চান দয়া করে থাকেন, নিজের আনুগত্যের তাওফীক দেন এবং নিজের দিকে আকৃষ্ট করেন। পক্ষান্তরে যাকে চান দুষ্কর্যের উপর পাকড়াও করেন এবং শাস্তি দেন। হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক তোমাকে তাদের উপর দায়িত্বশীল করেন নাই। তোমার কাজ হচ্ছে শুধু তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। যারা তোমাকে মেনে চলবে তারা। জান্নাতে যাবে এবং যারা মানবে না তারা জাহান্নামী হবে। তোমার প্রতিপালক যমীন ও আসমানের সমস্ত দানব, মানব ও ফেরেশতার খবর রাখেন এবং প্রত্যেকের মর্যাদা সম্পর্কেও তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদা দান করেছেন। মর্যাদার দিক দিয়ে নবীদের মধ্যে শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে। কেউ আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন এবং কারো অন্য দিক দিয়ে মর্যাদা রয়েছে। একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে নবীদের উপর ফযীলত দিয়ো না।” এর উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ শুধু গোড়ামীর কারণে ফযীলত কায়েম করা। এর দ্বারা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ফযীলত অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। যে নবীর যে মর্যাদা দলীলের দ্বারা প্রমাণিত তা মেনে নেয়া ওয়াজিব। সমস্ত নবীর উপর যে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মর্যাদা রয়েছে এটা অনস্বীকার্য। আবার রাসূলদের মধ্যে স্থির প্রতিজ্ঞা পাঁচজন রাসূল বেশী মর্যাদাবান। তাঁরা হলেনঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ)। এই পাঁচজন রাসূলের নাম সূরায়ে আহযাবে বর্ণিত আছে। সুরায়ে শুরা (আরবি) এর এই আয়াতেও এই পাঁচজন রাসূলের নাম বিদ্যমান রয়েছে। এটাও যেমন সমস্ত উম্মত মেনে থাকে, অনুরূপভাবে এটাও সর্বজন স্বীকৃত যে, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তার পর হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এঁর পর হলেন হযরত মূসা (আঃ), যেমন এটা প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। আমরা এর দলীল গুলো অন্য জায়গায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীক প্রদানকারী।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি দাউদকে (আঃ) যবুর প্রদান করেছিলাম। এটাও তার মর্যাদা ও আভিজাত্যের দলীল। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত দাউদের (আঃ) উপর কুরআনকে (যনূরকে) এতো সহজ করে দেয়া হয়েছিল যে, জন্তুর উপর জিন কষতে যেটুকু সময় লাগে ঐটুকু সময়ের মধ্যেই তিনি কুরআন (যনূর) পড়ে নিতেন।”

قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا

📘 Please check ayah 17:57 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا

📘 ৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেছেনঃ হে নবী (সঃ)! যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের ইবাদত করে তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা তাদেরকে খুব ভাল করে আহবান করতঃ দেখে নাও যে, তারা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে কি না তাদের এই শক্তি আছে যে, তোমাদের কষ্ট কিছু লাঘব করে? জেনে রেখো যে, তাদের কোনই ক্ষমতা নেই। ব্যাপক ক্ষমতাবান একমাত্র আল্লাহ। তিনি এক। তিনিই সবার সৃষ্টিকর্তা এবং হুকুম দাতা একমাত্র তিনিই। এই মুশরিকরা বলতো যে, তারা ফেরেশতাদের হযরত ঈসার (আঃ) -এবং হযরত উযায়েরের (আঃ) ইবাদত করে। তাই মহান আল্লাহ তাদেরকে বলেনঃ তোমরা যাদের ইবাদত কর তারা নিজেরাই তো আল্লাহর নৈকট্য অনুসন্ধান করে।সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই মুশরিকরা যে জ্বিনদের ইবাদত করতো তারা নিজেরাই মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরা এখন পর্যন্ত নিজেদের কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।”এ জন্যেই তাদেরকে সতর্ক করে বলা হচ্ছেঃ তোমাদের মা’বূদরা নিজেরাই আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, এই জ্বিনেরা ফেরেশতাদের একটি শ্ৰেণীভূক্ত ছিল। হযরত ঈসা (আঃ), হযরত মরিয়ম (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ), সূর্য, চন্দ্র এবং ফেরেশতা সবাই আল্লাহর নৈকট্যের অনুসন্ধিৎসু।ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, সঠিক ভাবার্থ হচ্ছেঃ এই মুশরিকরা যে। জ্বিনদের ইবাদত করতো এই আয়াতে তারাই উদ্দেশ্য। কেননা, হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতির যুগতো শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং ফেরেশতারা পূর্ব হতেই আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মশগুল থাকতেন। সুতরাং এখানে জ্বিনেরাই উদ্দেশ্য। (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে নৈকট্য, যেমন কাতাদা (রঃ) বলেছেন। এই বুযুর্গদের একমাত্র চিন্তা ছিল যে, কে বেশী আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে পারেন? তারা আল্লাহর করুণার আকাংখী এবং তাঁর শাস্তি হতে ভীত সন্ত্রস্ত। বাস্তবিক এ দুটো ছাড়া ইবাদত পূর্ণ হয় না। ভয় পাপ থেকে বিরত রাখে এবং আশা-আকাংখা আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করে। প্রকৃতপক্ষেই তার শাস্তি ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার যোগ্য। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন!

وَإِنْ مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا

📘 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ সেই লিখিত বস্তু যা লাওহে মাহফুযে লিখে দেয়া হয়েছে, সেই হুকুম যা জারি করে দেয়া হয়েছে, এটা অনুযায়ী পাপীদের জনপদগুলি নিশ্চয়ই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বা ধ্বংসের কাছাকাছি হবে। এটা হবে তাদের পাপের কারণে। আমার পক্ষ থেকে এটা কোন জুলুম নয়। বরং এটা হবে তাদের কর্মেরই ফল হিসেবে। এটা তাদের কৃতকর্মেরই শাস্তি, আমার আয়াত সমূহ এবং আমার রাসুলদের সাথে ঔদ্ধত্যপনা ও হঠকারিতা করারই পরিণাম।

وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآيَاتِ إِلَّا أَنْ كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ ۚ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا ۚ وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا

📘 রাসূলুল্লাহর (সঃ) যুগে কাফিররা তাকে বলেছিলঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আপনার পূর্ববর্তী নবীদের কারো অনুগত ছিল বাতাস, কেউ মৃতকে জীবিত করতেন ইত্যাদি। আপনি যদি চান যে, আমরাও আপনার উপর ঈমান আনয়ন করি তবে আপনি এই সাফা পাহাড়টিকে সোনার পাহাড় করে দিন। তাহলে আমরা আপনার সত্যাবাদীতা স্বীকার করে নেবো।” ঐ সময় রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপর ওয়াহী আসলোঃ “হে নবী (সঃ)! যদি তোমারও এই আকাংখা হয় যে, আমি একে সোনা করি দেই তবে এখনই আমি এটাকে সোনা করে দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখবে যে, এর পরেও যদি এরা ঈমান আনয়ন না করে তবে আর তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে না। সাথে সাথেই শাস্তি নেমে আসবে এবং এদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। আর যদি তুমি তাদেরকে অবকাশ দেয়া ও চিন্তা করার সুযোগ দেয়া পছন্দ কর তবে আমি তা-ই করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হে আল্লাহ! তাদেরকে বাকী রাখলেই আমি খুশী হবো।” মুসনাদে আরো এটুকু বেশী আছে যে, তারা বলেছিলঃ ‘বাকী’র অন্যান্য পাহাড়গুলি এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হোক, যাতে আমরা এখানে চাষাবাদ করতে পারি (শেষ পর্যন্ত)।”অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেন, তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং বলেনঃ “আপনার প্রতিপালক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, যদি আপনি চান তবে সকালেই এই পাহাড়টিকে সোনা বানিয়ে দিবেন। কিন্তু এর পরেও যদি তাদের মধ্যে কেউই ঈমান না আনে তবে তাদেরকে এমন শাস্তি দেয়া হবে যা ইতিপূর্বে কাউকেও দেয়া হয় নাই। আর যদি আপনি চান তবে তিনি তাদের জন্যে তাওবা ও রহমতের দরজা খুলে রাখবেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়টিই গ্রহণ করেন। মুসনাদে আবি ইয়ালায় বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন আল্লাহ তাআলার এই নিদের্শ পালন করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) “জাবালে আবি কুরায়েশ’-এর উপর আরোহণ করে বলে ওঠেনঃ “হে আবদে মানাফ! আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শনকারী।” এই শব্দ শোনা মাত্রই কুরায়েশরা সেখানে একত্রিত হয়ে যায়। অতঃপর তারা তাঁকে বলেঃ “শুনুন, আপনি নবুওয়াতের দাবীদার। হযরত সুলাইমানের (আঃ) অনুগত ছিল বাতাস। হযরত মূসার (আঃ) বাধ্য ছিল সমুদ্র। হযরত ঈসা (আঃ) মৃতকে জীবিত করতেন। আপনিও যখন একজন নবী তখন এই পাহাড়টিকে এখান থেকে সরিয়ে দিয়ে এই জায়গাকে চাষের উপযুক্ত করে তুলুনঃ যাতে আমরা এখানে কৃষিকার্য করতে পারি। এটা না হলে আমাদের মৃতদেরকে জীবিত করার জন্যে আপনার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করুন যাতে আমরা ও তারা মিলিত হয়ে কথাবার্তা বলতে পারি। যদি এটা না হয় তবে এই পাহাড়টিকে সোনা বানিয়ে দিন যাতে আমরা শীত ও গ্রীষ্মের সফর থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।” তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রতি ওয়াহী নাযিল হতে শুরু হয়। এটা শেষ হলে তিনি তাদেরকে বলেনঃ “যাঁর হাতে আমার প্রাণ। রয়েছে তাঁর শপথ! তোমরা আমার কাছে যা কিছু চেয়েছিলে ওগুলো হয়ে যাওয়া এবং এর পরেও ঈমান না আনলে রহমতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা তোমাদের জন্যে রহমতের দরজা খোলা থাকা, যাতে তোমরা ঈমান ও ইসলাম আনয়নের পর আল্লাহর রহমত জমা করে নাও, এ দুটোর মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার আমাকে অধিকার দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের জন্যে রহমতের দরজা খোলা থাকাকেই পছন্দ করেছি। কেননা, প্রথম অবস্থায় তোমরা ঈমান না আনলে তোমাদের উপর এমন শাস্তি অবতীর্ণ হতো যা তোমাদের পূর্বে আর কারো উপর অবর্তীণ হয় নাই। তাই আমি ভয় পেয়ে গিয়ে দ্বিতীয়টি গ্রহণ করেছি।” তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। আর (আরবি) এই আয়াতও অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ নিদর্শনগুলি পাঠাতে এবং তাদের আকাংখিত মু'জিযা’গুলি দেখাতে আমার অপারগতা নেই; বরং এগুলো আমার কাছে খুবই সহজ। তোমার কওম যেগুলি দেখতে চাচ্ছে আমি সেগুলি তাদেরকে দেখিয়ে দিতাম। কিন্তু ঐ অবস্থায় তারা ঈমান না আনলে তারা আমার শাস্তির কবলে পতিত হতো। পূর্ববর্তী লোকদের কথা চিন্তা কর, তারা এতেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।সূরায়ে মায়েদায় রয়েছেঃ “আমি এই খাদ্য তোমাদের উপর অবতীর্ণ করবো, অনন্তর তোমাদের মধ্যে যে এর পর অকৃতজ্ঞ হবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো যে, বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐ শাস্তি আর কাউকেও দিবো না।”সামূদদেরকে দেখো যে, তারা একটি বিশেষ পাথরের মধ্য হতে একটি উষ্ট্রী বের হওয়া দেখতে চাইলো। হযরত সালেহের (আঃ) প্রার্থনায় তা বের হলো। কিন্তু তবুও তারা মানলো না। তারা উষ্ট্রীর পা কেটে ফেললো এবং নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। এরপর তাদেরকে তিন দিনের অবকাশ দেয়া হলো। তাদের ঐ উষ্ট্রীটিও আল্লাহ তাআলার একত্বের একটি নিদর্শন ছিল এবং তাঁর রাসূলের সত্যবাদিতার একটি চিহ্ন ছিল। কিন্তু ঐ লোকগুলি এর পরেও কুফরী করে এবং ওর পানি বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ওকে হত্যা করে ফেলে। এরই শাস্তি হিসেবে তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকেই ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর কাছে তারা পাকড়াও হয়। এই আয়াতগুলি শুধু ধমকের জন্যেই অবতীর্ণ হয় যাতে তারা উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে।হযরত ইবনু মাসউদের (রাঃ) যুগে কুফায় ভূমিকম্প হয়। তখন তিনি জনগণকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা চান যে, তোমরা তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়। অনতিবিলম্বে তোমাদের তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করা উচিত।” হযরত উমারের (রাঃ) যুগে মদীনায় কয়েকবার ঝটকা বা টান অনুভূত হয়। তখন তিনি জনগণকে বলেনঃ “আল্লাহর কসম! অবশ্যই তোমাদের দ্বারা নতুন কিছু। (অন্যায়) সংঘটিত হয়েছে। এর পর যদি তোমাদের দ্বারা এইরূপ কিছু ঘটে, তবে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবো।”সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সূর্য। ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু'টি নিদর্শন। এগুলিতে কারো মরণ ও জীবনের কারণে গ্রহণ লাগে না বরং আল্লাহ তাআলা এগুলির মাধ্যমে মানুষকে ভয় দেখিয়ে থাকেন। সুতরাং যখন তোমরা এইরূপ দেখবে তখন আল্লাহর যিকর, দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনার দিকে ঝুঁকে পড়বে। হে মুহাম্মদের (সঃ) উম্মত! আল্লাহর কসম! আল্লাহ তাআলা অপেক্ষা অধিক লজ্জা ও মর্যাদাবোধ আর কারো নেই যে, তাঁর বান্দা ও বান্দী ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। হে উম্মতে মুহাম্মদী (সঃ)! আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি যদি তা তোমরা জানতে তবে তোমরা হাসতে কম ও কাঁদতে বেশী।”

ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا

📘 Please check ayah 17:8 for complete tafsir.

وَإِذْ قُلْنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِالنَّاسِ ۚ وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا

📘 মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে (সঃ) দ্বীনের তাবলীগের কাজে উৎসাহিত করছেন এবং তাঁকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলছেন যে, সমস্ত লোক তাঁরই ক্ষমতাধীন। তিনি সবারই উপর জয়যুক্ত। সবাই তার অধীনস্থ। কাজেই হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক তোমাকে এই সব কাফির ও মুশরিক থেকে রক্ষা করবেন। আমি তোমাকে যা দেখিয়েছি তা জনগণের জন্যে একটা স্পষ্ট পরীক্ষা। এই দেখানো ছিল মিরাজের রাত্রির সাথে সম্পর্কিত, যা তিনি স্বচক্ষে দেখছিলেন। আর ঘৃণ্য ও অভিশপ্ত বৃক্ষ দ্বারা ‘যাককুম’ বৃক্ষকে বুঝানোহয়েছে। বহু তাবিঈ এবং হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই দেখানো ছিল চোখকে দেখানো, যা মিরাজের রাত্রে দেখানোহয়েছিল। মিরাজের হাদীসগুলি খুবই বিস্তারিতভাবে এই সূরার শুরুতে আমরা বর্ণনা করেছি। এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, মিরাজের ঘটনা শুনে বহু মুসলমান ধর্মত্যাগী হয়ে যায় এবং সত্য হতে ফিরে আসে। কেননা, তাদের জ্ঞানে এটা ধরে নাই। তাই, তারা অজ্ঞতা। বশতঃ এটাকে মিথ্যা মনে করে এবং দ্বীনকে ছেড়ে দেয়। অপরপক্ষে যাদের ঈমান ছিল পূর্ণ, তাদের ঈমান এতে আরো বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্বাস দৃঢ় হয়, স্থৈর্য ও স্থিরতায় তারা বেড়ে যায়। সুতরাং আল্লাহ তাআলা এই ঘটনাকে জনগণের পরীক্ষার একটা মাধ্যম করে দেন।রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন খবর দেন এবং কুরআন কারীমের আয়াত অবতীর্ণ হয় যে, জাহান্নামীদেরকে যাককুম বৃক্ষ খাওয়ানো হবে, আর তিনি স্বয়ং এ গাছ দেখে এসেছেন, তখন অভিশপ্ত আয়ূ জেহেল বিদ্রুপের ছলে বলতে লাগলোঃ “খেজুর ও মাখন নিয়ে এসো এবং ওরই যাককূম তৈরী কর অর্থাৎ, এ দুটোকে মিশ্রিত করে খেয়ে নাও। এটাই যাককুম। সুতরাং এই খাদ্যে ভয় পাওয়ার কি আছে?” এভাবে সে ও অন্যান্য কাফিররা এটাকে অবিশ্বাস করে। একটি উক্তি এও আছে যে, এর দ্বারা বানু উমাইয়াকে বুঝানো হয়েছে। কিন্ত এ উক্তিটি খুবই দুর্বল। প্রথম উক্তিটির উক্তিকারী ঐ সব মুফাসসির রয়েছেন যারা এই আয়াতকে মিরাজের ব্যাপারে অবতারিত বলে মেনে থাকেন। যেমন হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) , হযরত মাসরূক (রাঃ) হযরত আবু মালিক (রাঃ) ও হযরত হাসান বসরী (রঃ) প্রভৃতি।হযরত সাহল ইবনু সাঈদ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অমুক গোত্রীয় লোকদেরকে তাঁর মিম্বরের উপর বানরের মত নাচতে দেখে খুবই দুঃখিত হন। তারপর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে কখনো পূর্ণ হাস্যে হাস্য করতে দেখা যায় নাই। এই আয়াতে ঐ দিকেই ইশারা করা হয়েছে। (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সনদটি খুবই দুর্বল। মুহাম্মদ ইবনু হাসান ইবনু যিয়াদ পরিত্যক্ত এবং তার ইসনাদও সম্পূর্ণরূপে দুর্বল। স্বয়ং ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) পছন্দনীয় উক্তিও এটাই যে, এর দ্বারা মি'রাজের রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে এবং গাছটি হচ্ছে যাককূম গাছ। কেননা, তাফসীরকারগণ এতে একমত) মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি কাফিরদেরকে শাস্তি ইত্যাদি দ্বারা ভয় প্রদর্শন করছি। কিন্তু তারা তাদের হঠকারিতা ও বেঈমানীতে বেড়েই চলেছে।

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا

📘 Please check ayah 17:62 for complete tafsir.

قَالَ أَرَأَيْتَكَ هَٰذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلَّا قَلِيلًا

📘 ৬১-৬২ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইবলীসের প্রাচীন শত্রুতা সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে বলছেনঃ “দেখো, এই শয়তান তোমাদের পিতা হযরত আদমের (আঃ) প্রকাশ্য শত্রু ছিল। তার সন্তানরা অনুরূপ ভাবে বরাবরই তোমাদের শত্রু। সিজদার নির্দেশ শুনে সমস্ত ফেরেশতা বিনা বাক্য ব্যয়ে হযরত আদমের (আঃ) সামনে মাথা নত করে। কিন্তু ইবলীস গর্ব প্রকাশ করে এবং তাঁকে তুচ্ছ জ্ঞানে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানায়।” সে বলেঃ “যাকে আপনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন তার সামনে আমার মাথা নত হবে এটা অসম্ভব। আমি তো তার চেয়ে উত্তম। আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দ্বারা, আর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দ্বারা। অতঃপর সে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর সামনে সম্পর্ধা দেখিয়ে বলেঃ আচ্ছা, আপনি যে আদমকে (আঃ) আমার উপর মর্যাদা দান করলেন তাতে কি হলো? জেনে রাখুন যে, আমি তাঁর সন্তানদেরকে ধ্বংস করে ছাড়বো। তাদের সকলকেই আমি আমার অনুগত বানিয়ে নিবো এবং তাদের কে পথভ্রষ্ট করবো। অল্প কিছুলোক আমার ফাঁদ থেকে ছুটে যাবে বটে, কিন্তু অধিকাংশকেই আমি ধ্বংস করে ফেলবো।

قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَوْفُورًا

📘 Please check ayah 17:65 for complete tafsir.

وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا

📘 Please check ayah 17:65 for complete tafsir.

إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ ۚ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ وَكِيلًا

📘 ৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর ইবলীস আল্লাহ তাআলার কাছে অবকাশ চায়, তিনি তা মঞ্জুর করে নেন। ইরশাদ হয়ঃ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোকে অবকাশ দেয়া হলো। তোর ও তোর অনুসারীদের দুষ্কর্যের প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম, যা পূর্ণ শাস্তি। তোর আহবান দ্বারা তুই যাকে পারিস বিভ্রান্ত কর অর্থাৎ গান, তামাশা দ্বারা তাদেরকে বিপথগামী করতে থাক। যে কোন শব্দ আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে সেটাই শয়তানী শব্দ। অনুরূপভাবে তুই তোর পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা যার উপর পারিস আক্রমণ চালা। শব্দটি শব্দের বহুবচন। যেমন শব্দের বহুবচন এবং শব্দের বহু বচন এসে থাকে। ভাবার্থ হচ্ছেঃ হে শয়তান! তোর সাধ্যমত তুই তাদের উপর তোর আধিপত্য ও ক্ষমতা প্রয়োগ কর। এটা হলো আমরে কী, নিদের্শ সূচক আমর নয়। শয়তানদের অভ্যাস এটাই যে, তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করতে থাকে। তাদেরকে পাপকার্যে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতার কাজে যে ব্যক্তি সওয়ারীর উপর চলে বা পদব্রজে চলে সে শয়তানের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত। এইরূপ মানবও রয়েছে এবং দানবও রয়েছে; যারা শয়তানের অনুগত। যখন কারো উপর শব্দ উঠানো হয় বা কাউকে আহবান করা হয় তখন আরববাসী বলেঃ (আরবি) অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি অমুক ব্যক্তিকে সশব্দে আহবান করেছে। আল্লাহ তাআলার এই নিদের্শ এখানে এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এটা ঘোড়া দৌড়ের ‘জালব’ নয়। ওটাও এর থেকেই নির্গত হয়েছে (আরবি) শব্দটিও এর থেকেই বের হয়েছে। অর্থাৎ শব্দ উচ্চ হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে ইবলীস! তুই তাদের ধন-মালে ও সন্তানসন্ততিতেও শরীক থাক। অর্থাৎ তুই তাদেরকে তাদের মাল আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে খরচ করাতে থাক। যেমন তারা সূদ খাবে, হারাম উপায়ে মাল জমা করবে এবং হারাম কাজে তা ব্যয় করবে। হালাল জন্তুগুলিকে তারা হারাম করে নেবে ইত্যাদি। আর সন্তান সন্ততিতে তার শরীক হওয়ার অর্থ হলোঃ যেমন ব্যভিচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হওয়া, বাল্যকালে অজ্ঞতা বশতঃ পিতা-মাতারা তাদের সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা, তাদের ইয়াহূদী, খৃস্টান, মাজুসী ইত্যাদি বানিয়ে দেয় সন্তানদের নাম আবদুল হারিস, আবদুশশামস, আবদে ফুলান (অমুকের দাস) ইত্যাদি রাখা। মোট কথা, যে কোন ভাবে শয়তানকে তাতে সঙ্গী করে নিলো। এটাই হচ্ছে সন্তান-সন্ততিতে শয়তানের শরীক হওয়া।সহীহ মুসিলমে বর্ণিত আছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি আমার বন্দাদেরকে একনিষ্ঠ একত্ববাদী করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান এসে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে দেয় এবং হালাল জিনিসগুলিকে তারা হারাম বানিয়ে নেয়।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন যেন সে পাঠ করেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনি শয়তান হতে রক্ষা করুন এবং তাকেও শয়তান হতে রক্ষা করুন যা আপনি আমাদেরকে দান করবেন।” এর ফলে যদি কোন সন্তান আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে টিকে যায়, তবে শয়তান কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে শয়তান! যা, তুই তাদেরকে মিথ্যা ওয়াদা-অঙ্গীকার দিতে থাক। কিয়ামতের দিন এই শয়তান তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ “আল্লাহ তাআলার ওয়াদা ছিল সব সত্য, আর আমার ওয়াদা ছিল সব মিথ্যা।” তারপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমীর মু'মিন বান্দারা আমার রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। আমি তাদেরকে বিতাড়িত শয়তান হতে রক্ষা করতে। থাকবো। আল্লাহর কর্মবিধান, তাঁর হিফাযত, তাঁর সাহায্য এবং তার পৃষ্ঠপোষকতা তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্যে যথেষ্ট।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘মু'মিন শয়তানকে এমনভাবে আয়ত্তাধীন করে ফেলে যেমন কেউ কোন জন্তুকে লাগাম লাগিয়ে দিয়ে আয়ত্তাধীন করে থাকে।”

رَبُّكُمُ الَّذِي يُزْجِي لَكُمُ الْفُلْكَ فِي الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا

📘 আল্লাহ তাআলা নিজের ইহসান ও অনুগ্রহের কথা বলছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের সুবিধার্থে এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সহজ করণার্থে সমুদ্রে জলযান পরিচালিত করেছেন। তাঁর ফযল ও করম এবং স্নেহ ও দয়ার এটাও একটা নিদর্শন যে, তাঁর বান্দারা বহু দূর দেশে যাতায়াত করতে পারছে এবং আল্লাহর অনুগ্রই অর্থাৎ নিজেদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারছে।

وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُونَ إِلَّا إِيَّاهُ ۖ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ ۚ وَكَانَ الْإِنْسَانُ كَفُورًا

📘 আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা বলছেনঃ বান্দা বিপদের সময় তো আন্তরিকতার সাথে তাদের প্রতিপালকের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং অনুনয় বিনয়ের সূরে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করে থাকে। কিন্তু যখনই মহান আল্লাহ তাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তখনই সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মক্কা বিজয়ের সময় যখন আবু জেহেলের পুত্র ইকরামা (রাঃ) আবিসিনিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছায় বেরিয়ে পড়েন এবং একটি নৌকায় আরোহণ করেন তখন ঘটনাক্রমে সমুদ্রে ঝড় তুফান শুরু হয়ে যায় এবং প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে পাতার মত হেলাতে থাকে। ঐ সময় ঐ নৌকায় যত কাফির ছিল তারা একে অপরকে বলতে থাকেঃ “এই সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কোনই উপকার করতে পারবে না। সুতরাং এসো, আমরা তাকেই ডাকি।” তৎক্ষণাৎ ইকরামার (রাঃ) মনে খেয়াল জাগলো যে, সমুদ্রে যখন একমাত্র তিনিই উপকার করতে পারেন ,তখন এটা স্পষ্ট কথা যে, স্থলেও তিনি উপকারে লাগবেন। তখন তিনি প্রার্থনা করতে লাগেনঃ “হে আল্লাহ! আমি অঙ্গীকার করছি যে, যদি আপনি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তবে আমি সরাসরি গিয়ে মুহাম্মদের (সঃ) হাতে হাত দিবো। নিশ্চয়ই তিনি আমার উপর দয়া করবেন।” অতঃপর সমুদ্র পার হয়েই তিনি সরাসরি রাসূলুল্লাহর (সঃ) খিদমতে গিয়ে হাজির হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে তিনি ইসলামের একজন বড় বীর পুরুষরূপে খ্যাতি লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন ও তাঁকে সন্তুষ্ট রাখুন।তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের অভ্যাস তো এই যে, সমুদ্রে যখন তোমরা বিপদে পতিত হও, তখন আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবূদদেরকে তোমরা ভুলে যাও এবং আন্তরিকতার সাথে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে থাকো। কিন্তু যখনই তিনি ঐ বিপদ সরিয়ে দেন তখনই তোমরা আবার অন্যদের কাছে প্রার্থনা শুরু করে দাও। সত্যি মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ যে, সে আল্লাহর নিয়ামত রাশির কথা ভুলে যায়, এমন কি অস্বীকার করে বসে। হাঁ, তবে আল্লাহ তাআ’লা যাকে বাঁচিয়ে নেন ও ভাল হওয়ার তাওফীক দান করেন সে ভাল হয়ে যায়।”

أَفَأَمِنْتُمْ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ أَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوا لَكُمْ وَكِيلًا

📘 বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে গিয়ে বলছেনঃ যে আল্লাহ তোমাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারতেন তিনি কি তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম নন? নিশ্চয়ই তিনি সক্ষম। তাহলে সমুদ্রে তো তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডেকে থাকো। আবার এখানে তাঁর সাথে অন্যদেরকে শরীক করছো, এটা কত বড়ই না অবিচার! তিনি তো তোমাদেরকে তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করে ধ্বংস করতে পারেন, যেমন হযরত লূতের (আঃ) কওমের উপর বর্ষিত হয়েছিল? যার বর্ণনা স্বয়ং কুরআন কারীমের মধ্যে কয়েক জায়গায় রয়েছে।সূরায়ে মুলকে রয়েছেঃ “তোমরা কি তার হতে যিনি আসমানে রয়েছেন নিশ্চিন্ত রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে ধ্বসিয়ে দেন, অতঃপর ঐ যমীন থর থর করতে থাকে? নাকি তোমরা নির্ভয় হয়ে গেছে এটা হতে যে, যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি এক প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করে দেন? সূতরাং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে যে, আমার ভয় প্রদর্শন কিরূপ ছিল।”এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ঐ সময় তোমরা পাবে না কোন সাহায্যকারী, বন্ধু, কর্মবিধায়ক এবং রক্ষক।

أَمْ أَمِنْتُمْ أَنْ يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَىٰ فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِنَ الرِّيحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ۙ ثُمَّ لَا تَجِدُوا لَكُمْ عَلَيْنَا بِهِ تَبِيعًا

📘 মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (সঃ) অস্বীকারকারীর দল! সমুদ্রে তোমরা আমার তাওহীদের স্বীকারোক্তি করে পার হয়ে এসেছে। এসেই আবার অস্বীকার করে বসেছো। তাহলে এটা কি হতে পারে না যে, তোমরা পুনরায় সামুদ্রিক সফর করবে এবং আবার প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত হয়ে তোমাদের নৌকাকে উলটিয়ে দিবে এবং তোমরা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে যাবে? আর এইভাবে তোমরা তোমাদের কুফরীর স্বাদ গ্রহণ করবে? এরপর তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না। আর তোমরা এমন কাউকেও পাবে না যারা তোমাদের জন্য আমার উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে। আমার পশ্চাদ্ধাবনের ক্ষমতা কারো নেই। কার ক্ষমতা যে, আমার কাজের উপর অঙ্গুলি উত্তোলন করে।

إِنْ أَحْسَنْتُمْ أَحْسَنْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ ۖ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا ۚ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ الْآخِرَةِ لِيَسُوءُوا وُجُوهَكُمْ وَلِيَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ كَمَا دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَلِيُتَبِّرُوا مَا عَلَوْا تَتْبِيرًا

📘 Please check ayah 17:8 for complete tafsir.

۞ وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا

📘 ইবনু আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ফেরেস্তাগণ বলেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন এবং বান্ আদমেরও সৃষ্টিকর্তা আপনিই। তাদেরকে আপনি খাদ্য ও পানীয় দান করেন। তারা কাপড় পরিধান করে থাকে, বিয়ে শাদী করে, তাদের জন্যে সওয়ারী রয়েছে এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে তারা সুখ ও আরাম ভোগ করছে। আমরা এগুলো হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত রয়েছি। ভাল কথা, দুনিয়ায় যখন তাদের জন্যে এগুলো রয়েছে তখন আখেরাতে আমাদেরকে এগুলো দান করুন!” তাঁদের এই প্রার্থনার জবাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ “যাকে আমি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি এবং যার মধ্যে নিজের রূহ ফুকে দিয়েছি তার সমকক্ষ আমি ওদেরকে করবো না যাদেরকে আমি বলেছিঃ ‘হও’ আর তেমনই হয়ে গেছে।”তিবরাণী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে আদম সন্তান অপেক্ষা বেশী মর্যাদাবান আর কেউই হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ফেরেশতারাও নয়?”উত্তরে বলেনঃ “না, ফেরেশতারাও নয়। তারা তো বাধ্য, যেমন সূর্য ও চন্দ্র।” (এই রিওয়াইয়াতটি খুবই গরীব বা দুর্বল)

يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ ۖ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَٰئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا

📘 Please check ayah 17:72 for complete tafsir.

وَمَنْ كَانَ فِي هَٰذِهِ أَعْمَىٰ فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلًا

📘 ৭১-৭২ নং আয়াতের তাফসীর এখানে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য নবী। প্রত্যেক উম্মতকে কিয়ামতের দিন তাদের নবীসহ ডাকা হবে যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “প্রত্যেক উম্মতেরই রাসূল রয়েছে, যখন তাদের রাসূল আসবে তখন তাদের ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” (১০:৪৭) পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষীর উক্তি রয়েছে যে, এতে আহলে হাদীসের খুবই বড় মর্যাদা রয়েছে। কেননা, তাঁদের ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। ইবনু যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এখানে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর কিতাব যা তাদের শরীয়তের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই তাফসীরকে খুবই পছন্দ করেছেন এবং এটাকেই মনোনীত বলেছেন। মজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের কিতাব। সম্ভবতঃ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর আহকামের কিতাব অথবা আমলনামা অর্থ নিয়েছেন। আবুল আলিয়া (রঃ), হাসান (রঃ) এবং যহহাক ও (রঃ) এটাই বলেন। আর এটাই বেশী প্রাধান্য প্রাপ্ত উক্তি। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ আমি প্রত্যেক বিষয়কে এক সমুজ্জ্বল কিতাবে সংরক্ষিত করে রেখেছি।” (৩৬:১২) অন্য আয়াতে আছেঃ(আরবি) অর্থাৎ “কিতাব অর্থাৎ আমলনামা মধ্যস্থলে রেখে দেয়া হবে, এ সময় তুমি দেখবে যে, পাপীরা ওর মধ্যে লিখিত বিষয় দেখে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।” (১৮:৪৯) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “প্রত্যেক উম্মতকে তুমি হাঁটুর ভরে পড়ে থাকতে দেখবে, প্রত্যেক উম্মতকে তার কিতাবের দিকে ডাকা হবে, (এবং বলা হবেঃ) আজ তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। এটাই হচ্ছে। আমার কিতাব যা তোমাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে, তোমরা যা কিছু করতে আমি বরাবরই তা লিখে রাখতাম।” এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এই তাফসীর প্রথম তাফসীরের বিপরীত নয়। একদিকে আমলনামা হাতে থাকবে, অপর দিকে স্বয়ং নবী সামনে বিদ্যমান থাকবেন। যেমন কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যমীন স্বীয় প্রতিপালকের নূরে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আমলনামা রেখে দেয়া হবে এবং নবীদেরকে ও সাক্ষীদেরকে হাজির করে দেয়া হবে।” (৩৯:৬৯) অন্য একটি আয়াতে আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “ঐ সময়েই বা কি অবস্থা হবে? যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে এক একজন সাক্ষী উপস্থাপিত করবো এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবো।” (৪:৪১) কিন্তু এখানে ইমাম দ্বারা আমলনামাই উদ্দেশ্য। এজন্যেই এরপরেই আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যাদেরকে দক্ষিণ হস্তে তাদের আমলনামা দেয়া হবে তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে। এমন কি খুশীতে অন্যদেরকেও দেখাবে ও পাঠ করাবে। এরই আরো বর্ণনা সূরায়ে তে রয়েছে। দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ লম্বা সুতা যা খেজুরের আঁটির মধ্যে থাকে। বাযার (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ “একটি লোককে ডেকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়াহবে। তখন তার দেহ বেড়ে যাবে, চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং মাথায় উজ্জ্বলহীরার মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে। সে তার দলীয় লোকদের দিকে এগিয়ে যাবে। তারা তাকে ঐ অবস্থায় আসতে দেখে সবাই আকাংখা করে বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমাদেরকেও এটা দান করুন এবং আমাদেরকে এতে বরকত দিন।” ঐ লোকটি তাদের কাছে এসেই বলবেঃ “তোমরা আনন্দিত হও। তোমাদের প্রত্যেককেও এটা দেয়া হবে।” কিন্তু কাফিরের চেহারা কালো ও মলিন হয়ে যাবে এবং তারও দেহ বেড়ে যাবে। তাকে দেখে তার সঙ্গীরা বলবেঃ “আমরা তার থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, তার দুষ্কৃতি থেকে আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাকে আমাদের কাছে আনয়ন করবেন না।” ইতিমধ্যে সে সেখানে চলে আসবে। তারা তখন তাকে বলবেঃ “আল্লাহ তোমাকে অপদস্থ করুন।” সে জবাবে তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করুন! এটা আল্লাহর মার। এটা তোমাদের সবারই জন্যে অবধারিত রয়েছে।”এই দুনিয়ায় যারা আল্লাহ তাআলার আয়াত সমূহ হতে, তাঁর কিতাব হতে এবং তাঁর হিদায়াতের পথ হতে চক্ষু ফিরিয়ে নিয়েছে, পরকালে বাস্তবপক্ষেই তারা অন্ধ হয়ে যাবে এবং দুনিয়ার চেয়েও বেশী পথভ্রষ্ট হবে। আমরা এর থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

وَإِنْ كَادُوا لَيَفْتِنُونَكَ عَنِ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهُ ۖ وَإِذًا لَاتَّخَذُوكَ خَلِيلًا

📘 Please check ayah 17:75 for complete tafsir.

وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا

📘 Please check ayah 17:75 for complete tafsir.

إِذًا لَأَذَقْنَاكَ ضِعْفَ الْحَيَاةِ وَضِعْفَ الْمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيرًا

📘 ৭৩-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা চক্রান্তকারী ও পাপীদের চালাকি ও চক্রান্ত হতে স্বীয় রাসূলকে (সঃ) সর্বদা রক্ষা করেছেন। তাঁকে তিনি রেখেছেন নিস্পাপ ও স্থির। তিনি নিজেই তার সাহায্যকারী ও অভিভাবক রয়েছেন। সর্বদা তিনি তাঁকে নিজের হিফাযতে ও তত্ত্বাবধানে রেখেছেন। তাঁর দ্বীনকে তিনি দুনিয়ার সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত রেখেছেন। তার শত্রুদের উঁচু বক্র বাসনাকে নীচু করে দিয়েছেন। পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত তাঁর কালেমাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই দু'টি আয়াতে এরই বর্ণনা রয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলের (সঃ) উপর অসংখ্য দরূদও সালাম বর্ষন করতে থাকুন। আমীন!

وَإِنْ كَادُوا لَيَسْتَفِزُّونَكَ مِنَ الْأَرْضِ لِيُخْرِجُوكَ مِنْهَا ۖ وَإِذًا لَا يَلْبَثُونَ خِلَافَكَ إِلَّا قَلِيلًا

📘 Please check ayah 17:77 for complete tafsir.

سُنَّةَ مَنْ قَدْ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُسُلِنَا ۖ وَلَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلًا

📘 ৭৬-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলেছিলঃ “আপনার শাম দেশে (সিরিয়ায়) চলে যাওয়া উচিত। ওটাই হচ্ছে নবীদের দেশ। আপনার উচিত এই মদীনার শহরকে ছেড়ে দেয়া।” ঐ সময় এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। একথাও বলা হয়েছে যে, তাবুকের ব্যাপারে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ইয়াহুদীরা যে তাঁকে বলেছিলঃ “আপনার শাম দেশে চলে যাওয়া উচিত। কেননা, ওটাই হচ্ছে নবীদের বাসভূমি ও হাশরের যমীন। আপনি যদি সত্য নবী হন তবে সেখানে চলে যান। কিছুকাল তিনি তাদের এই কথাকে সত্য মনে করেই ছিলেন। তাবুকের যুদ্ধ দ্বারা তাঁর নিয়ত এটাই ছিল। কিন্তু তাঁবুকে পৌঁছার সাথে সাথেই সূরায়ে বাণী ইসরাঈলের এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) মদীনায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর বলেনঃ “মৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে এই মদীনাতেই থাকতে হবে এবং এখান থেকেই দ্বিতীয়বার উঠতে হবে।” কিন্তু এর সনদ ও সমালোচনা মুক্ত নয়। আর এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, এই ঘটনাটি সঠিক নয়। (কিন্তু এটা দুর্বল উক্তি। কেননা, এইটি মক্কী আয়াত। আর মদীনা নবীর (সঃ) বাসভূমি পরে হয়েছিল)তাঁবুকের যুদ্ধ ইয়াহুদীদের উপরোক্ত কথা বলার কারণে সংঘটিত হয় নাই; বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ বিদ্যমান রয়েছে। তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আশে পাশের কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর।” (৯:১২৩) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “যারা আল্লাহর উপর এবং কিয়ামতের উপর বিশ্বাস করে না এবং তাঁর রাসূলের হারামকৃত জিনিসকে হারাম মনে করে না ও সত্যকে কবুল করে না এইরূপ আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর, যে পর্যন্ত না তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জিযিয়াকর দিতে সম্মত হয়। এই যুদ্ধের আরো কারণ ছিল এই যে, যে সব সাহাবী (রাঃ) মূতার যুদ্ধে শহীদ হয়ে ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছা করেছিলেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। যদি উপরোক্ত ঘটনা সঠিক হয় তবে ওরই উপর ঐ হাদীসকে স্থাপন করা হবে যাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মক্কা, মদীনা ও সিরিয়ায় কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ওয়ালীদ (রঃ) তো এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, সিরিয়া দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসকে বুঝানো হয়ে থাকে। তাহলে সিরিয়া দ্বারা তাবুককে বুঝাবে না কেন? এরূপ বুঝানো তো সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ও সঠিক। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। একটি উক্তি এও আছে যে, এর দ্বারা কাফিরদের এ সংকল্পকে বুঝানো হয়েছে, যে সংকল্প তারা মক্কা হতে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) তাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে করেছিল। আর এটা হয়েছিলও বটে। যখন তারা তাঁকে মক্কা থেকে বিদায় করে দেয়, তারপর তারাও সেখানে বেশী দিন অতিবাহিত করতে পারে নাই। ইতিমধ্যেই আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) তাদের উপর জয়যুক্ত করেন। মাত্র দেড় বছর পরেই বিনা প্রস্তুতি ও ঘোষণাতেই আকস্মিকভাবে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে যায় এবং তাতে কাফিরদের ও কুফরীর মাজা ভেঙ্গে পড়ে। তাদের শরীফ ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা কচুকাটা হয়। তাদের শান শওকত মাটির সাথে মিশে যায়। তাদের বড় বড় নেতারা বন্দী হয় তাই, মহান আল্লাহ বলেনঃ এই অভ্যাস প্রথম যুগ থেকেই চলে আসছে। পূর্ববর্তী রাসূলদের সাথেও এইরূপ ব্যবহার করা হয়েছিল যে, কাফিররা যখন তাদেরকে ত্যক্ত বিরক্ত করে এবং দেশান্তর করে দেয় তখন তারাও রক্ষা পায় নাই। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দেন। তবে আমাদের রাসূল (সঃ) ছিলেন রহমত ও করুণার রাসূল, ফলে কোন সাধারণ আসমানী আযাব ঐ কাফিরদের উপর আসে নাই। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)! আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা। অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।” (৮:৩৩)

أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا

📘 Please check ayah 17:79 for complete tafsir.

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَىٰ أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا

📘 ৭৮-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা নামাযের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার নির্দেশ দিচ্ছেন শব্দ দ্বারা সূর্য অস্তমিত হওয়া বা হেলে পড়া উদ্দেশ্য। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) সূর্য হেলে পড়া অর্থই পছন্দ করেছেন। অধিকাংশ তাফসীরকারেরও উক্তি এটাই। হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সঙ্গীয় কয়েকজন সাহাবীর (রাঃ) সাথে দাওয়াতের খাদ্য খাই। সূর্য হেলে পড়ার পর তারা আমার এখান থেকে বিদায় হন। হযরত আবু বকরকে (রাঃ) তিনি বলেনঃ “চল, এটাই হচ্ছে সূর্য হেলে পড়ার সময়।” সুতরাং পাঁচ নামাযের সময়েরই বর্ণনা (আরবি) এই আয়াতে রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে অন্ধকার। যারা বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে সূর্য অস্তমিত হওয়া, তাঁদের মতে এতে যুহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাযের বর্ণনা আছে। আর ফজরের বর্ণনা রয়েছে। এর মধ্যে। হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কথা ও কাজের এই ধারাবাহিকতা হতে পাচ নামাযের সময় সাব্যস্ত আছে এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, মুসলমানরা এখন পর্যন্ত এর উপরই রয়েছে। প্রত্যেক পরবর্তী যুগের লোক পূর্ববর্তী যুগের লোকদের হতে বরাবরই এটা গ্রহণ করে আসছে। যেমন এই মাসআলাগুলির বর্ণনার জায়গায় এর বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে।ফজরের কুরআন পাঠের সময় দিন ও রাত্রির ফেরেশতাগণ এসে থাকেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তির নামাযের উপর জামাআতের নামাযের পূন্য পঁচিশ গুণ বেশী। ফজরের নামাযের সময় দিন ও রাত্রির ফেরেশতাগণ একত্রিত হন। এটা বর্ণনা করার পর এই হাদীসের বর্ণনাকারীহযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা কুরআনের এই আয়াতটি পড়ে নাও।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রাত্রি ও দিনের ফেরেশতা তোমাদের কাছে পর্যায়ক্রমে আসতে রয়েছেন। ফজর ও আসরের সময় তাঁদের (উভয় দলের) মিলন ঘটে যায়। তোমাদের মধ্যে ফেরেশতাদের যে দলটি রাত্রি অতিবাহিত করেন তাঁরা যখন আকাশে উঠে যান তখন আল্লাহ তাআলার খবর রাখা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা আমার বান্দাদের কে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছে।?” তাঁরা উত্তরে বলেনঃ “আমরা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেখি যে, তাঁরা নামাযে রয়েছে, ফিরে আসার সময়েও তাদেরকে নামাযের অবস্থাতেই ছেড়ে এসেছি।”হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, এই প্রহরী ফেরেশতারা ফজরের নামাযে একত্রিত হন। তারপর একদল আকাশে উঠে যান এবং অপর দল রয়ে যান। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা স্বয়ং অবতরণ করেন এবং বলেনঃ “এমন কেউ আছে, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? কে আছে, যে আমার কাছে চাবে এবং আমি তাকে দেবো? কে আছে, যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে এবং আমি তার প্রার্থনা কবূল করবো?” শেষ পর্যন্ত ফজর হয়ে যায়। সুতরাং আল্লাহ তাআলা এ সময় বিদ্যমান থাকেন এবং রাত্রির ও দিনের ফেরেশতারাও একত্রিত হন।এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) তাহাজ্জুদ নামাযের নির্দেশ দিচ্ছেন, ফরয নামাযের নির্দেশ তো রয়েছেই। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ফরয নামাযের পরে কোন নামায উত্তম?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাহাজ্জুদের নামায।” তাহাজ্জুদ বলা হয় রাত্রে ঘুম থেকে উঠে আদায়কৃত নামাযকে। তাফসীরকারদের তাফসীরে এবং হাদীসে ও অভিধানে এটা বিদ্যমান রয়েছে। আর রাসূলুল্লাহর (সঃ) অভ্যাসও ছিল এটাই যে, তিনি ঘুম হতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তেন। যেমন এটা স্বস্থানে বিদ্যমান রয়েছে। তবে হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এশার পরে যে নামায পড়া হয় ওটাই তাহাজ্জুদের নামায। খুব সম্ভব তার এই উক্তিরও উদ্দেশ্য হচ্ছে এশার পরে ঘুমানোর পর জেগে উঠে যে নামায পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের নামায।অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ হে নবী (সঃ)! এটা তোমার একটা অতিরিক্ত কর্তব্য। কেউ কেউ তো বলেন যে, তাহাজ্জুদের নামায অন্যদের জন্যে নয়। বরং শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপর ফরয ছিল। অন্য কেউ বলেনঃ এই বিশেষত্বের কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) পূর্বের ও পরের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। আর উম্মতেরা এটা পালন করলে তাদের গুনাহ দূর হয়ে যায়।এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি আমার এই নির্দেশ পালন করলে আমি তোমাকে এমন স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবো যেখানে প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে সমস্ত সৃষ্টজীব তোমার প্রশংসা করবে আর স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তাও প্রশংসা করবেন। বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতের শাফাআতের জন্যে এই মাকামে মাহমূদে যাবেন, যাতে সেই দিনের ভয়াবহতা থেকে তিনি তাঁর উম্মতের মনে শান্তি আনয়ন করতে পারেন। হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন যে, সমস্ত মানুষকে একই ময়দানে একত্রিত করা হবে, ঘোষণাকারী তার ঘোষণা তাদেরকে শুনিয়ে দিবেন। ফলে তাদের চক্ষু খুলে যাবে এবং তারা উলঙ্গ পায়ে ও উলঙ্গ দেহে থাকবে, যেমন ভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সবাই দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলার অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না। শব্দ আসবেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তিনি উত্তরে বলবেনঃ “লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা’ হে আমার প্রতিপালক! সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে, অকল্যাণ আপনার পক্ষ থেকে নয়। সুপথ প্রাপ্ত সেই যাকে আপনি সুপথ দেখিয়েছেন। আপনার দাস আপনার সামনে বিদ্যমান। সে আপনার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এবং আপনার দিকেও ঝুঁকে পড়েছে। আপনার দয়া ছাড়া কেউ আপনার পাকড়াও হতে রক্ষা পাবে না। আপনার দরবার ছাড়া আর কোন আশ্রয় স্থল নেই। আপনি কল্যাণময় ও সমুচ্চ। হে রাব্দুল বায়েত! আপনি পবিত্র।” এটাই হলো মাকামে মাহমূদ, যার উল্লেখ আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে করেছেন। এই স্থানই হচ্ছে শাফাআতের স্থান। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যমীন হতে বের হবেন রাসূলুল্লাহ (সঃ); সর্বপ্রথম শাফাআত তিনিই করবেন। আহলুল ইলম বলেন যে, এটাই মাকামে মাহমূদ, যার ওয়াদা আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীর (সঃ) সাথে করেছেন। নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহর (সঃ) বহু এমন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে যাতে তার অংশীদার কেউ হবে না। সেই দিন বহু বুযর্গ ব্যক্তি এমন থাকবেন যারা তার সমকক্ষতা লাভ করতে পারবেন না। সর্বপ্রথম তাঁরই যমীনের কবর ফেটে যাবে এবং তিনি সওয়ারীর উপর আরোহণ করে হাশরের ময়দানের দিকে যাবেন। তাঁর কাছে একটা পতাকা থাকবে যার নীচে হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে সবাই থাকবেন। তাঁকে হাউজে কাওসার দান করা হবে যার উপর সবচেয়ে বেশী লোক জমায়েত হবে। শাফাআতের জন্যে মানুষ হযরত আদম (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসার (আঃ) কাছে যাবে, কিন্তু তারা সবাই অস্বীকার করবেন। শেষ পর্যন্ত তারাহযরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছে সুপারিশের জন্যে আসবে। তিনি সম্মত হয়ে যাবেন, যেমন বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হাদীস সমূহ আসছে ইনশাআল্লাহ।যাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার হুকুম হয়ে গিয়ে থাকবে, তাদের ব্যাপারে তিনি সুপারিশ করবেন। অতঃপর তাদেরকে তার সুপারিশের কারণে ফিরিয়ে আনা হবে। সর্বপ্রথম তাঁর উম্মতেরই ফায়সালা করা হবে। তিনিই নিজের উম্মতসহ সর্বপ্রথম পুলসিরাত পার হবেন। জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনিই হবেন প্রথম সুপারিশকারী। যেমন এটা সহীহ মুসলিমের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।সূর বা শিঙ্গার ফুৎকার দেয়ার হাদীসে আছে যে, মু'মিনেরা তাঁরই সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাতে যাবে। সর্বপ্রথম তিনিই জান্নাতে যাবেন এবং তার উম্মত অন্যান্য উম্মতদের পূর্বে জান্নাতে যাবে। তার শাফাআতের কারণে নিম্নশ্রেণীর জান্নাতীরা উচ্চ শ্রেণীর জান্নাত লাভ করবে। ওয়াসীলা'-এর অধিকারী তিনিই, যা জান্নাতের সর্বোচ্চ মনযিল। এটা তিনি ছাড়া আর কেউই লাভ করবে না। এটা সঠিক কথা যে, আল্লাহ তাআলার নির্দেশক্রমে পাপীদের জন্যে শাফাআত ফেরেতাগণই করবেন এবং নবীরাও করবেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহর (সঃ) শাফাআ'ত এতোবেশী লোকের ব্যাপারে হবে যাদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। এই ব্যাপারে তাঁর সমকক্ষ আর কেউই কিতাবুস সীরাতের শেষাংশে বাবুল খাসায়েসের মধ্যে অমি এটাকে খুব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। এখন মাকামে মাহমূদের ব্যাপারে যে হাদীস সমূহ রয়েছে সেগুলি বর্ণনা করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সাহায্য করুন! সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ “কিয়ামতের দিন মানুষ হাঁটুর ভরে পড়ে থাকবে। প্রত্যেক উম্মত তাদের নবীর পিছনে থাকবে। তারা বলবেঃ “হে অমুক! আমাদের জন্য সুপারিশ করুন!” শেষ পর্যন্ত শাফাআতের দায়িত্ব হযরত মুহাম্মদের (সঃ) উপর অর্পিত হবে। সুতরাং এটা হচ্ছে ওটাই যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে মাকামে মাহমূদে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সূর্য খুবই নিকটে হবে, এমনকি ঘর্ম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। ঐ সময় মানুষ সুপারিশের জন্যে হযরত আদমের (আঃ) নিকট গমন করবে। কিন্তু তিনি পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করবেন। তারপর তারা হযরত মূসার (আঃ) কাছে যাবে। তিনি উত্তরে বলবেনঃ “আমি এর যোগ্য নই।” তারা তখন হযরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছে যাবে এবং তাঁকে সুপারিশের জন্যে অনুরোধ জানাবে। তিনি মাখলুকের শাফাআতের জন্যে অগ্রসর হবেন এবং জান্নাতের দরজার পাল্লা ধরে নিবেন। সুতরাং ঐ দিন আল্লাহ তাআলা তাঁকে মাকামে মাহমূদে পোঁছিয়ে দিবেন। সহীহ বুখারীতে এই রিওয়াইয়াতের শেষাংশে এও রয়েছে যে, হাশরের ময়দানের সমস্ত লোক সেই সময় তার প্রশংসা করবে।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনে (আরবি) এই দুআটি পাঠ করে না, কিয়ামতের দিন তার জন্যে আমার শাফাআত হালাল হবে না।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমি নবীদের ইমাম, তাঁদের খতীব এবং তাঁদের সুপারিশকারী হবো। আমি যা কিছু বলছি তা ফখর হিসেবে বলছি না।” এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযীও এনেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। সুনানে ইবনু মাজাহতেও এটা বর্ণিত হয়েছে। হযরত উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত ঐ হাদীসটি গত হয়ে গেছে যাতে কুরআনকে সাত কিরআতে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের শেষাংশে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন। হে আমার মাবুদ! আমার উম্মতকে মাফ করে দিন! তৃতীয় দুআ’টি আমি ঐ দিনের জন্যে উঠিয়ে রেখেছি যেই দিন সমস্ত মাখলুক আমার দিকেই ঝুঁকে পড়বে, এমন কি হযরত ইবরাহীম (আঃ)।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, মু'মিনরা কিয়ামতের দিন একত্রিত হবে। তারপর তাদের অন্তরে ধারণা সৃষ্টি করা হবে যে, তাদের কারো কাছে সুপারিশের জন্যে যাওয়া উচিত, যার সুপারিশের ফলে তারা ঐ ভয়াবহ স্থানে শান্তি লাভ করতে পারে। একথা মনে করে তারা হযরত আদমের (আঃ) কাছে যাবে এবং তাঁকে বলবেঃ “হে আদম (আঃ)! আপনি সমস্ত মানুষের পিতা। আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিজের হাতে সষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সমস্ত জিনিসের নাম শিখিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের সুপারিশের জন্যে গমন করুন। যাতে আমরা এই জায়গায় শান্তি লাভ করতে পারি।” তখন উত্তরে তিনি বলবেনঃ “আমি এর যোগ্য নই।” এ সময় তাঁর নিজের পাপের কথা স্মরণ হবে এবং তিনি লজ্জিত হয়ে যাবেন তাই, তিনি তাদেরকে বলবেনঃ “তোমরা হযরত নূহের (অঃ), কাছে যাও। তিনি আল্লাহর প্রথম রাসূল যাকে তিনি পৃথিবীবাসীর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। তারা তখন তার কাছে আসবে। কিন্তু তাঁর কাছেও এই জবাবই পাবেন যে, তিনি এর যোগ্য নন। তাঁরও নিজের পাপের কথা স্মরণ হয়ে যাবে যে, তিনি আল্লাহর কাছে এমন প্রার্থনা করেছিলেন, যে বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল না। (হযরত নূহ (আঃ) তাঁর কাফির পুত্রের প্রাণ রক্ষার জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। ঐ সময় আল্লাহ তাকে ধমক দিয়েছিলেন। এখানে ঐদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে) তাই তিনি এ সময় লজ্জাবোধ করবেন। তাদেরকে তিনি বলবেনঃ “তোমরা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কাছে যাও।” তারা তাঁর কাছে গেলে তিনি বলবেনঃ “আমি এর যোগ্য নই। তোমরা হযরত মুসার (আঃ) কাছে যাও। তাঁর সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাঁকে তাওরাত দান করেছেন।” তখন লোকেরাহযরত মূসার (আঃ) কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ “আমার মধ্যে এ যোগ্যতা কোথায়?” অতঃপর তার ঐ পাপের কথা স্মরণ হয়ে যাবে যে, তিনি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন, অথচ এ হত্যা কোন নিহত ব্যক্তির কিসাস বা প্রতিশোধ গ্রহণ হিসেবে ছিল না। এই কারণে তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে যেতে লজ্জা পাবেন এবং তাদেরকে বলবেনঃ “তোমরা হযরত ঈসার (আঃ) কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বান্দা, তার কালেমা এবং তাঁর রূহ।” তারা তখন তাঁর কাছে আসবে। কিন্তু তিনি বলবেনঃ “আমি এর যোগ্যতা রাখি না। তোমরা হযরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছে যাও। তার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “অতঃপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন দাঁড়িয়ে যাবো এবং আমার প্রতিপালকের কাছে শাফাআতের অনুমতি চাইবো। আমি তাঁকে দেখা মাত্রই সিজদায় পড়ে যাবো। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা, আমি সিজদায় পড়েই থাকবো। অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি মাথা উঠাও। বল, তোমার কথা শোনা হবে। শাফাআত কর, কবুল করা হবে। তুমি যা চাও, দেয়া হবে।” আমি তখন মাথা উঠাবো এবং আল্লাহর এসব প্রশংসা করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। তারপর আমি সুপারিশ পেশ করবো। তখন আমাকে একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। আমি ঐ সীমার মধ্যের লোকদেরকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে আসবো। দ্বিতীয়বার জনাব বারী তাআলার দরবারে হাযির হয়ে তাঁকে দর্শন করতঃ সিজদায় পড়ে যাবো। তাঁর ইচ্ছামত তিনি আমাকে সিজদায় থাকতে দিবেন। তারপর বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ); মাথা উঠাও বল, শোনা হবে চাও, দেয়া হবে শাফাআত কর, ককূল করা হবে। তারপর আমি মাথা উঠিয়ে আমার প্রতিপালকের ঐ প্রশংসা করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফাআত করবো। এবারও আমার জন্যে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। আমি তাদেরকেও জান্নাতে পৌঁছিয়ে আসবো। তৃতীবার আবার ফিরে যাবো। আমার প্রতিপালককে দেখা মাত্রই সিজদায় পড়ে যাবো। যতক্ষণ তিনি চাইবেন, ঐ অবস্থাতেই আমি পড়ে থাকবে। তারপর বলাহবেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! মাথা উঠাও। কথা বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে এবং সুপারিশ কর, ককূল করা হবে। আমি তখন আমাকে তার শেখানো প্রশংসা দ্বারা তাঁর প্রশংসা করবো। তারপর সুপারিশ করবো। এবারও আমার জন্যে একটা সীমা বেঁধে দেয়া হবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসবো। চতুর্থবার আবার আমি ফিরে যাবো এবং বলবোঃ “হে বিশ্বপ্রতিপালক! এখন তো শুধু তারাই বাকী রয়েছে। যাদেরকে কুরআন আটকিয়ে দিয়েছে।” তিনি বলবেনঃ “এমন প্রত্যেক ব্যক্তি জাহান্নাম হতে বেরিয়ে আসবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করেছে এবং তার অন্তরে গমের দানা পরিমাণও ঈমান আছে।” অতঃপর এই ধরনের লোকদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করেছে এবং তাদের অন্তরে এক অনু-পরমাণু পরিমাণও ঈমান আছে।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মত পুলসিরাত পার হতে থাকবে, আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখতে থাকবো। এমন সময় হযরত ঈসা (আঃ) আমার কাছে এসে বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! নবীদের দল আপনার কাছে কিছু চাচ্ছেন এবং তারা সব একত্রিত রয়েছেন। তারা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করছেন যে, তিনি যেন যেখানেই ইচ্ছা সমস্ত উম্মতকে পৃথক পৃথক করে দেন। এই সময় তাঁরা অত্যন্ত চিন্তিত রয়েছেন। সমস্ত মাখলুক ঘর্মের মধ্যে এমনভাবে ডুবে রয়েছে যে, যেন তাদেরকে ঘামের লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়েছে। মুমিনের উপর এটা যেন শ্লেষ্ম স্বরূপ; কিন্তু কাফিরের উপর এটা মৃত্যু তুল্য।” আমি তাঁকে বলবোঃ থামুন, আসছি। তারপর আমি গিয়ে আরশের নীচে দাঁড়িয়ে যাবো এবং আমি এমন সম্মান ও মর্যাদা লাভ করবো যা কোন সম্মানিত ফেরেশতা এবং কোন প্রেরিত নবীও লাভ করতে পারবেন না। তারপর আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বলবেনঃ তুমি মুহাম্মদের (সঃ) কাছে যাও এবং তাঁকে মাথা উঠাতে বল। তিনি যা চাবেন, সুপারিশ করলে তাঁর সুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমাকে আমার উম্মতের জন্যে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে এবং বলা হবে যে, আমি যেন প্রতি নিরানব্বই হতে একজনকে বের করে আনি। আমি তখন বার বার আমার প্রতিপালকের নিকট যাতায়াত করবো এবং প্রত্যেক বারই সুপারিশ করতে থাকবো। শেষ পর্যন্ত মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! যাও, আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে যে মাত্র একদিনও আন্তরিকতার সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদান করেছে এবং ওরই উপর মৃত্যু বরণ করেছে, তাকেও জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসো।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত বারীদা (রাঃ) একদা হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) নিকট গমন করেন। ঐ সময় একটি লোক তার সাথে কিছু কথা বলছিল। হযরত বারীদাও (রাঃ) কিছু বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তাঁর ধারণা ছিল যে, প্রথম ব্যক্তি যে কথা বলছিল, হযরত বারীদাও (রাঃ) ঐ কথাই বলবেন। হযরত বারীদা (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলার কাছে আমি আশা রাখি যে, যমীনে যত গাছ ও কংকর রয়েছে, ওগুলির সংখ্যা বরাবর লোকের জন্যে সুপারিশ করার অনুমতি আমি লাভ করবো।” সুতরাং হে মুআবিয়া (রাঃ) ! আপনার তো এই আশা আছে, আর হযরত আলী (রাঃ) কি এর থেকে নিরাশ হবেন?”মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, মুলাইকার দুই ছেলে রাসূলুল্লাহর (সঃ) দরবারে হাজির হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের মাতা আমাদের পিতার খুবই সম্মান করতেন। শিশুদের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহশীলা। অতিথিদের আতিথেয়তার ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই যত্নবতী। কিন্তু অজ্ঞতার যুগে তিনি তাঁর কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত প্রোথিত করতেন। (তার পরিণাম কি হবে?)।”রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “সে তো জাহান্নামে চলে গেছে। তারা দু'ভাই রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখে এ জবাব শুনে দুঃখিত মনে ফিরে যাচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে ফিরিয়ে ডাকেন তারা ফিরে আসে। এ সময় তাদের চেহারায় আনন্দের ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তারা ধারণা করেছিল যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের মাতার ব্যাপারে কোন ভাল কথাই বলবেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আমার মা এবং তোমাদের মা এক সাথেই রয়েছে।” একথা শুনে একজন মুনাফিক বললোঃ “এতে তাদের মাতার উপকার কি হলো? আমরা তার পিছনে যাচ্ছি।” রাসূলুল্লাহকে (সঃ) সবচেয়ে বেশী প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত একজন আনসারী প্রশ্ন করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এর ব্যাপারে বা এ দু’জনের ব্যাপারে ওয়াদা করেছেন কি?” রাসুলুল্লাহ (সঃ) বুঝে নিলেন যে, সে কিছু শুনেছে। তিনি বললেনঃ “না আমার প্রতিপালক চেয়েছেন, না আমাকে এই ব্যাপারে কোন লোভ দিয়েছেন। জেনে রেখো যে, কিয়ামতের দিন আমাকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।” আনসারী জিজ্ঞেস করলেনঃ “ওটা কি স্থান?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এটা ঐ সময়, যখন তোমাদেরকে উলঙ্গ পায়ে ও উলঙ্গ দেহে ও খৎনাহীন অবস্থায় আনয়ন করা হবে। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) কাপড় পরানো হবে। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “আমার খলীল (দোস্তকে কাপড় পরিয়ে দাও।” তখন সাদা রং-এর দু’টি চাদর তাঁকে পরানো হবে। তিনি আরশের দিকে মুখ করে বসে পড়বেন। তার পর আমার পোষাক আনয়ন করা হবে। আমি তাঁর ডানদিকে ঐ জায়গায় দাঁড়াবো যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত লোক তা দেখে ঈর্ষা করবে। আর কাওসার থেকে নিয়ে হাউজ পর্যন্ত তাদের জন্যে খুলে দেয়া হবে।” মুনাফেক একথা শুনে বলতে লাগলোঃ “পানি প্রবাহিত হওয়ার জন্যে তো মাটি ও কংকরের প্রয়োজন?” তিনি উত্তরে বলবেনঃ “হাঁ, ওর মাটি হলো মুশকে আম্বার এবং কংকর হলো মনিমুক্তা।” সে বললোঃ “আমরা তো এরূপ কখনো শুনি নাই। আচ্ছা, পানির ধারে তো গাছ থাকারও প্রয়োজন রয়েছে?” আনসারী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেখানে গাছও থাকবে কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হাঁ, সোনার শাখা বিশিষ্ট গাছ থাকবে।” মুনাফিক বললোঃ এরূপ কথা তো আমরা কখনো শুনি নাই? আচ্ছা, গাছে তো পাতা ও ফলও থাকতে হবে?” আনসারী জিজ্ঞেস করলেনঃ “ঐ গাছগুলিতে ফলও থাকবে কি?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হাঁ, নানা প্রকারের মণিমুক্তা (হবে ওর ফল)। ওর পানি হবে দুধ অপেক্ষাও বেশী সাদা এবং মধু অপেক্ষা বেশী মিষ্ট। ওর থেকে এক চুমুক যে পান করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না এবং যে তার থেকে বঞ্চিত থাকবে সে কখনো পরিতৃপ্ত হবে না।”আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা। শাফাআতের অনুমতি দিবেন। তখন রূহল কুক্স হযরত জিবরাঈল (আঃ) দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপর দাঁড়াবেন হযরত ইবরাহীম (আঃ), তারপর হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) দাঁড়াবেন। এরপর তোমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পঁড়িয়ে যাবেন। তাঁর চেয়ে বেশী কারো শাফাআত হবে না। এটাই হলো মাকামে মাহমূদ, যার বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ আমি আমার উম্মতসহ একটি টিলার উপর দাঁড়িয়ে যাবো। আল্লাহ তাআলা আমাকে একটি সবুজ রং এর ‘হুল্লা’ (পোষাক বিশেষ) পরিধান করবেন। তারপর আমাকে অনুমতি দেয়া হবে এবং আমি যা বলতে চাবো, বলবো। এটাই মাকামে মাহমূদ।”মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমাকে সিজদা করার অনুমতি দেয়া হবে। আর আমাকেই সর্বপ্রথম মাথা উঠাবারও অনুমতি দান করা হবে। আমি আমার সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে তাকিয়ে অন্যান্য উম্মতদের মধ্য হতে আমার উম্মতকে চিনে নিবো।” তখন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হযরত নূহের (আঃ) সময় পর্যন্ত যত উম্মত রয়েছে তাদের মধ্য থেকে আপনার উম্মতকে আপনি কি করে চিনতে পারবেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “অযুর কারণে তাদের হাত, পা এবং চেহারায় ঔজ্জ্বল্য দেখা দেবে। তারা ছাড়া আর কেউ এরূপ হবে না। তাছাড়া এভাবেও আমি তাদেরকে চিনতে পারবো যে, তাদের আমলনামা তার ডান হাতে প্রাপ্ত হবে। আরো পরিচয় এই যে, তাদের সন্তানরা তাদের আগে আগে চলতে ফিরতে থাকবে।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে একদা গোশত আনয়ন করা হয়। তিনি কাঁধের গোশত খুবই ভালবাসতেন বলে ঐ গোশতই তাকে দেয়া হয়। তিনি ওর থেকে গোশত ভেঙ্গে ভেঙ্গে খেতে লাগলেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের নেতা আমিই হবো। আল্লাহ তাআলার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষকে একই মাঠে জমা করা হবে। ঘোষণাকারী তাদেরকে ঘোষণা শুনিয়ে দিবেন। তাদের চক্ষুগুলি উপরের দিকে উঠে যাবে। সূর্য খুবই নিকটে আসবে এবং মানুষ এতো কঠিন দুঃখ ও চিন্তার মধ্যে জড়িত হয়ে পড়বে যে, তা সহ্য করার মত নয়। এ সময় তারা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “আমরা তো ভীষণ বিপদে জড়িয়ে পড়েছি। চল, কাউকে বলে কয়ে সুপারিশী বানিয়ে নিই এবং তাঁকে আল্লাহ তাআলার নিকট পাঠিয়ে দিই।” এইভাবে পরামর্শে একমত হয়ে তারা হযরত আদমের (আঃ) কাছে যাবে এবং তাঁকে বলবেঃ “আপনি সমস্ত মানুষের পিতা। আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে নিজের রূহ ফুকে দিয়েছেন। আর ফেরেশতাদেরকে আপনার সামনে হুকুম দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছেন। আপনি কি আমাদের দুরবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্যে প্রতিপালকের নিকট শাফাআত করুন।” হযরত আদম (আঃ) উত্তরে বলবেনঃ “আজ আমার প্রতিপালক এতো রাগান্বিত রয়েছেন যে, এর পূর্বে তিনি কখনো এতো রাগান্বিত হন নাই এবং এর পরেও কখনো এতো রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি গাছ থেকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমার দ্বারা তাঁর অবাধ্যাচরণ হয়ে গেছে। আমি আজ নিজের চিন্তাতেই ব্যাকুল রয়েছি। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও।” তারা তখন হযরত নূহের (আঃ) কাছে যাবে এবং বলবেঃ “হে নূহ (আঃ)! আপনাকে আল্লাহ তাআলা। দুনিয়াবাসীর কাছে সর্বপ্রথম রাসূল করে পাঠিয়েছিলেন। আপনাকে তিনি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা নামে আখ্যায়িত করেছেন। আপনি আমাদের জন্যে প্রতিপালকের কাছে শাফাআত করুন! আমরা কি ভীষণ বিপদের মধ্যে রয়েছি তা তো। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন?” হযরত নূহ (আঃ) জবাবে বলবেনঃ “আজ তো আমার প্রতিপালক এতো ক্রোধান্বিত রয়েছেন যে, ইতিপূর্বে তিনি কখনো এতো বেশী রাগান্বিত হন নাই এবং এর পরেও এতো বেশী ক্রোধান্বিত হবেন না। আমার জন্যে একটি প্রার্থনা ছিল যা আমি আমার কওমের বিরুদ্ধে করেছিলাম। আজ তো আমি নিজেই নফসী! নফসী! করতে রয়েছি। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা এখন হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কাছে যাও।” তারা তখন হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কাছে যাবে এবং তাঁকে বলবেঃ “আপনি আল্লাহর নবী ও তাঁর বন্ধু। আপনি কি আমাদের এই দুরবস্থা দেখছেন না?” হযরত ইবরাহীম (আঃ) উত্তরে বলবেনঃ “আজ আমার প্রতিপালক ভীষণ রাগান্বিত রয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি কখনো এতো বেশী রাগান্বিত হন নাই এবং এর পরেও কখনো এতো বেশী রাগান্বিত হবেন না।” তারপর তাঁর নিজের একটা মিথ্যা কথা বলা স্মরণ হয়ে যাবে এবং তিনি নফসী! নফসী! করতে শুরু করবেন এবং বলবেনঃ “তোমরা হযরত মূসার (আঃ) কাছে যাও।” তারা তখন হযরত মূসার (আঃ) কাছে যাবে এবং তাঁকে বলবেঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি আপনার সাথে কথা বলেছিলেন। আপনি আমাদের প্রতিপালকের কাছে গিয়ে আমাদের জন্যে সুপারিশ করুন! দেখেন তো আমরা কি দুরবস্থায় রয়েছি?” তিনি জবাব দিবেনঃ “আজতো আমার প্রতিপালক কঠিন বিরক্ত হয়ে রয়েছেন। ইতিপূর্বে কখনো তিনি এতো বেশী বিরক্ত হননি এবং এর পরে হবেনও না আমি একবার তাঁর বিনা হুকুমে একটি লোককে মেরে ফেলেছিলাম। কাজেই আমি আজ নিজের চিন্তাতেই ব্যাকুল রয়েছি। সুতরাং তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও এবং অন্য কারো কাছে যাও। তোমরাহযরত ঈসার (আঃ)! কাছে যাও।” তারা তখন বলবেঃ “হে ঈসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসূল, তাঁর কালেমা এবং তাঁর রূহ! যা তিনি হযরত মরিয়মের (আঃ) প্রতি প্রেরণ করেছিলেন। শৈশবে দোলনাতেই আপনি কথা বলেছিলেন। আপনি আমাদের জন্যে প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন! আমরা যে কত উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছি তাতো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন?”হযরত ঈসা (আঃ) উত্তর দিবেনঃ “আমার প্রতিপালক আজ খুবই রাগান্বিত রয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি কখনো এতো বেশী রাগান্বিত হন নাই এবং এরপরে আর কখনো এতো বেশী ক্রোধান্বিত হবেন না। তিনিও নফসী! নফসী! করতে থাকবেন। কিন্তু তিনি নিজের কোন পাপের কথা উল্লেখ করবেন না। অতঃপর তিনি তাদেরকে বলবেনঃ “তোমরা হযরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছে চলে যাও।” তারা তখন তার কাছে আসবে এবং বলবেঃ “আপনি সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্যে শাফাআত করুন! আমরা যে কি কঠিন বিপদের মধ্যে জড়িত হয়ে পড়েছি তা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন?” আমি তখন দাঁড়িয়ে যাবো এবং আরশের নীচে এসে আমার মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের সামনে সিজদায় পড়ে যাবো। তারপর আল্লাহ তাআলা আমার উপর তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তণের ঐ সব শব্দ খুলে দিবেন যা আমার পূর্বে আর কারো কাছে খুলেন নাই। অতঃপর তিনি আমাকে সম্বোধন করে বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তোমার মস্তক উত্তোলন কর। চাও, তোমাকে দেয়া হবে এবং শাফাআত কর, কবুল করা হবে।” আমি তখন সিজদ্দা হতে আমার মস্তক উত্তোলন করবো এবং বলবোঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত (এর কি হবে!) হে আমার রব! আমার উম্মত (এর কি অবস্থা হবে!), হে আল্লাহ! আমার উম্মত (কে রক্ষা করুন। তখন তিনি আমাকে বলবেনঃ “যাও, তোমার উম্মতের ঐ লোকদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাও যাদের কোন হিসাব নেই। তাদেরকে জান্নাতের ডান দিকের দরজা দিয়ে পৌঁছিয়ে দাও। তবে অন্য সব দরজা দিয়ে যেতেও কোন বাধা নেই। যার হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! জান্নাতের দুটি চৌকাঠের মধ্যে এতো দূর ব্যবধান রয়েছে যতদূর ব্যবধান রয়েছে মক্কা ও হুমায়েরের মধ্যে অথবা মক্কা ও বসরার মধ্যে। (এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত আছে) সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন। আদম সন্তানদের নেতা আমিই হবো। ঐ দিন সর্বপ্রথম আমারই কবরের যমীন ফেটে যাবে। আমিই হবো প্রথম শাফাআতকারী এবং আমার শাফাআতই প্রথম কবুল করা হবে।”ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) এই আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “এটা শাফাআত।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাকামে মাহমুদ হলো এ স্থান যেখানে আমি আমার উম্মতের জন্যে শাফাআত করবো।”মুসনাদে আবদির রায্যাকে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যমীনকে চামড়ার মত টেনে নিবেন। এমনকি প্রত্যেক মানুষের জন্যে শুধু দুটি পা রাখার জায়গা থাকবে। সর্বপ্রথম আমাকে তলব করা হবে। আমি গিয়ে দেখতে পাবো যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহ রহমান তাবারাকা ওয়া তাআ'লার ডান দিকে রয়েছেন। আল্লাহর শপথ! এর পূর্বে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহ তাআলাকে কখনো দেখেন নাই। আমি বলবোঃ হে আল্লাহ! এই ফেরেশতা আমাকে বলেছিলেন যে, আপনি তাঁকে আমার নিকট পাঠিয়েছিলেন? মহামহিমান্বিত আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ “হাঁ, সে সত্য কথাই বলেছে।” আমি তখন একথা বলে শাফাআত শুরু করবো যে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দারা যমীনের বিভিন্ন অংশে আপনার ইবাদত করেছে। তিনি বলেন যে, এটাই মাকামে মাহমুদ। (এই হাদীসটি মুরসাল)

عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَنْ يَرْحَمَكُمْ ۚ وَإِنْ عُدْتُمْ عُدْنَا ۘ وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ حَصِيرًا

📘 ৪-৮ নং আয়াতের তাফসীর বাণী ইসরাঈলের উপর যে, কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল তাতেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে প্রথম থেকেই খবর দিয়েছিলেন যে, তারা যমীনে দু'বার হঠকারিতা করবে এবং ঔদ্ধত্যপণা দেখাবে এবং কঠিন হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। সুতরাং এখানে (আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে নির্ধারণ করা এবং প্রথম থেকেই খবর দিয়ে দেয়। যেমন (আরবি) (১৫:৬৬) এই আয়াতে (আরবি) এর অর্থ এটাই। আল্লাহপাক বলেনঃ তাদের প্রথম হাঙ্গামার সময় আমি আমার মাখলুকের মধ্য হতে ঐ লোকদের আধিপত্য তাদের উপর স্থাপন করি যারা খুব বড় যোদ্ধা এবং বড় বড় যুদ্ধাস্ত্রের অধিকারী। তারা তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, তাদের শহর দখল করে নেয় এবং লুটপাট করে তাদের ঘর গুলিকে শূন্য করে দিয়ে নির্ভয়ে ও নির্বিবাদে ফিরে যায়। আল্লাহ তাআলার ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারও ছিল। কথিত আছে যে, তারা ছিল বাদশাহ জালুতের সেনাবাহিনী। তারপর আল্লাহ তাআলা বাণী ইসরাঈলকে সাহায্য করেন এবং তারা হযরত তালূতের মাধ্যমে আবার জা’তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। হযরত দাউদ (আঃ) বাদশাহ জালূতকে হত্যা করেন।এটাও বলা হয়েছে যে, মূসিলের বাদশাহ সাখারীব এবং তার সেনাবাহিনী বাণী ইসরাঈলের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন যে, বাবেলের বাখতে নাসর তাদেরকে আক্রমণ করেছিল। ইবনু আবি হাতিম (রঃ) এখানে একটি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, এই লোকটি (বাখতে নাসর) কিভাবে ধীরে ধীরে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছিল। প্রথমে সে একজন ভিক্ষুক ছিল। ভিক্ষা করে সে কালাতিপাত করতো। পরে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সে জয় করে ফেলে এবং সেখানে নৃশংস ভাবে সে বাণী ইসরাঈলকে হত্যা করে।ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে একটি সুদীর্ঘ মার’ হাদীস বর্ণনা করেছেন যা মাওযূ' (বানানো) ছাড়া কিছুই নয়। ওটা মাওযূ' হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেমন করে ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) এই মাও’ হাদীস আনয়ন করেছেন। আমার উস্তাদ শায়েখ হাফিয আ’ল্লামা আবুল হাজ্জাজ (রঃ) এই হাদীসটির মাওযূ হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং কিতাবের হা’শিয়াতেও অনেক রিওয়াইয়াত রয়েছে, কিন্তু আমরা অযথা ওগুলো আনয়ন করে আমাদের কিতাবের কলেবর বৃদ্ধি করতে চাইনে। কেননা, এগুলির কিছু কিছু তো মাওযূ' আর কতকগুলি এরূপ না হলেও ওগুলো আনয়নে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তাআলার কিতাবই আমাদেরকে অন্যান্য কিতাব থেকে বেপরোয়া করেছে। আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) হাদীস সমূহ আমাদেরকে ঐ সব কিতাবের মুখাপেক্ষী করেনি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।ভাবার্থ শুধু এটাই যে, বাণী ইসরাঈলের ঔদ্ধত্যপণা ও হঠকারিতার সময় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের শত্রুদের আধিপত্য স্থাপন করেন, তাদেরকে উত্তমরূপে তাদের দুষ্কার্যের মজা চাখিয়ে দেন। ফলে তাদের দুর্গতির কোন শেষ থাকে নাই। তারা তাদের শিশু সন্তানদের কচু কাটা করে। তারা তাদেরকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করে যে, তাদের ঘরেই তারা প্রবেশ করে এবং তাদের সর্বনাশ সাধন করে এবং তাদের হঠকারিতার পূর্ণ শাস্তি দেয়।বাণী ইসরাঈলও কিন্তু জুলুম ও বাড়াবাড়ী করতে এতটুকুও ত্রুটি করে নাই। সাধারণ লোক তো দুরের কথা, নবীদেরকে হত্যা করতেও তারা ছাড়ে নাই। বহু আলেমকেও তারা হত্যা করে ফেলেছিল। বাখতে নাসর সিরিয়ার উপর আধিপত্য লাভ করে। সে বায়তুল মুকাদ্দাসকে ধ্বংস করে দেয়, তথাকার অধিবাসীদেরকে হত্যা করে। তারপর সে দামেশকে পৌঁছে। সেখানে সে দেখে যে, একটি কঠিন পাথরের উপর রক্ত উৎসারিত হচ্ছে। সে জিজ্ঞেস করেঃ “এটা কি?” জনগণ উত্তরে বলেনঃ “এই খুন বা রক্ত বরাবরই উৎসারিত হতেই থাকে, কোন সময়েই বন্ধ হয় না।”সে তখন সেখানেই সাধারণ হত্যা শুরু করে দেয়। সত্তর হাজার মুসলমান তার হাতে নৃশংসভাবে নিহত হয়। এ সময় ঐ রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। সে। আলেমদেরকে, হাফেজদেরকে এবং সমস্ত সম্মানিত লোককে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। সেখানে তাওরাতের কোন হাফিজ বাকী থাকেন নাই। তারপর সে বন্দী করতে শুরু করে। এ বন্দীদের মধ্যে নবীদের ছেলেরাও ছিলেন। মোট কথা, এক ভয়াবহ হাঙ্গামা হয়ে যায়। কিন্তু সহীহ রিওয়াইয়াত দ্বারা অথবা সহীহ’র কাছাকাছি রিওয়াইয়াত দ্বারা কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, তাই আমরা এগুলো ছেড়ে দিয়েছি। এইসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা সৎ কাজ করে তারা নিজেদেরই লাভ করে, আর যারা খারাপ করে তারাও নিজেদেরই ক্ষতি করে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ভাল কাজ করে তা সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, পক্ষান্তরে যে খারাপ কাজ করে ওর ফল তাকেই ভোগ করতে হয়।”তারপর যখন দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতির সময় আসলো এবং পুনরায় বাণী ইসরাঈল আল্লাহ তাআলার অবাধ্যাচরণ ও মন্দ কাজে উঠে পড়ে লেগে গেল, আর নির্লজ্জভাবে জুলুম করতে শুরু করে দিলো, তখন আবার শত্রুরা তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। তারা তাদের চেহারা বদলিয়ে এবং যেভাবে পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদকে নিজেদের দখলে এনে ফেলেছিল, আবারও তাই করলো। সাধ্যমত তারা সব কিছুরই সর্বনাশ সাধন করলো সুতরাং আল্লাহ তাআলার দ্বিতীয় ওয়াদাও পূর্ণ হয়ে গেল।মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের প্রতিপালক তো পরম দয়ালু বটেই। সুতরাং তার থেকে নিরাশ হওয়া মোটেই শোভনীয় নয়। খুব সম্ভব, তিনি পুনরায় তোমাদের শত্রুদেরকে তোমাদের পদানত করে দিবেন। হাঁ, তবে তোমাদের এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, আবারও যদি তোমরা তোমাদের পূর্ব আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তবে তিনিও তার আচরণের পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এতো হলো পার্থিব শাস্তি। এখনো পরকালের ভীষণ ও চিরস্থায়ী শাস্তি বাকী রয়েছে। জাহান্নাম কাফিরদের কয়েদখানা, যেখান থেকে তারা বের হতেও পারবে না এবং পালাতেও পারবে না। সব সময় তাদেরকে এ শাস্তির মধ্যে। পড়ে থাকতে হবে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ আবার তারা মস্তক উত্তোলন। করে, আল্লাহর ফরমানকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায়। ফলে আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদের (সঃ) উম্মতকে তাদের উপর বিজয়ী করে দেন এবং লাঞ্ছিত অবস্থায় তাদেরকে জিযিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের অধীনে থাকতে হয়।

وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا

📘 Please check ayah 17:81 for complete tafsir.

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

📘 ৮০-৮১ নং আয়াতের তাফসীর হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) মক্কায় ছিলেন, অতঃপর তাঁর প্রতি হিজরতের হুকুম হয় এবং এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি হাসান সহীহবলেছেন) হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ মক্কার কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) হত্যা করার অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার কিংবা বন্দী করার পরামর্শ করে। তখন আল্লাহ তাআলা মক্কাবাসীকে তাদের দুষ্কর্যের স্বাদ গ্রহণ করাবার ইচ্ছা করেন এবং স্বীয় নবীকে (সঃ) মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। এই আয়াতে এরই বর্ণনা রয়েছে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে মক্কা হতে বের হওয়া ও মদীনায় প্রবেশ করা। এই উক্তিটিই সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ।ইবনু আইয়ায (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, শুভ ও সন্তোষজনক ভাবে প্রবেশ দ্বারা মৃত্যু এবং শুভ ও সন্তোষজনকভাবে বের হওয়ার দ্বারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো উক্তি রয়েছে, কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এটাকেই গ্রহণ করেছেন।এরপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “বিজয় লাভ ও সাহায্যের জন্যে আমারই নিকট প্রার্থনা কর। এই প্রার্থনার কারণে আল্লাহ তাআলা পারস্য ও রোম দেশ বিজয় এবং সম্মান প্রদানের ওয়াদা করেন। এটা তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) জানতেই পেরেছিলেন যে, বিজয় লাভ ছাড়া দ্বীনের প্রচার, প্রসার এবং শক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। এ জন্যেই তিনি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য ও বিজয় কামনা করেছিলেন যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব, তাঁর হুদৃদ, শরীয়তের কর্তব্যসমূহ এবং দ্বীনের প্রতিষ্ঠা চালু করতে পারেন। এই বিজয় দানও আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ রহমত। এটা না হলে একে অপরকে খেয়ে ফেলতো এবং সবল দুর্বলকে শিকার করে নিতো। কেউ কেউ বলেছেন যে, ‘সুলতান নাসীর' দ্বারা স্পষ্ট দলীল’ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী উত্তম। কেননা, সত্যের সাথে বিজয় ও শক্তিও জরুরী। যাতে সত্যের বিরোধীরা জব্দ থাকে। এই জন্যেই আল্লাহ তাআলা লোহা অবতীর্ণ করার অনুগ্রহকে কুরআন কারীমে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন।একটি হাদীসে আছে যে, “সালতানাত বা রাজত্বের কারণে আল্লাহ তাআলা এমন বহু মন্দ কার্য বন্ধ করে দেন যা শুধুমাত্র কুরআনের মাধ্যমে বন্ধ করা যেতো না। এটা চরম সত্য কথা যে, কুরআন কারীমের উপদেশাবলী, ওর ওয়াদা, ভীতি প্রদর্শন তাদেরকে তাদের দুষ্কার্য হতে সরাতে পারতো না। কিন্তু ইসলামী শক্তি দেখে ভীত হয়ে তারা দুষ্কার্য হতে বিরত থাকে।এরপর কাফিরদের সতর্ক করা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সত্যের আগমন ঘটেছে, যাতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। কুরআন,ঈমান এবং লাভজনক সত্য ইলম আল্লাহর পক্ষ হতে এসে গেছে এবং কুফরী ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়েছে। ওটা সত্যের মুকাবিলায় হাত পা হীন দুর্বল সাব্যস্ত হয়েছে। হক। বাতিলের মস্তক চূণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। তাই বাতিলের কোন অস্তিত্বই নেই।সহীহ বুখরীতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কায় (বিজয়ী বেশে। প্রবেশ করেন। সেই সময় বায়তুল্লাহর আশে পাশে তিনশ ষাটটি প্রতিমা ছিল। তিনি তাঁর হাতের লাঠিটি দ্বারা ওগুলিকে আঘাত করেছিলেন এবং মুখে এই আয়াতটি উচ্চারণ করেছিলেন। অর্থাৎ “সত্যের আগমন ঘটেছে এবং মিথ্যা বিদূরিত হয়েছে, মিথ্যা বিদূরিত হয়েই থাকে।”মুসনাদে আবি ইয়ালায় বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে মক্কায় আগমন করি। ঐ সময় বায়তুল্লাহর আশে পাশে তিন শ ষাটটি মূর্তি ছিল, যেগুলির পূজা অর্চনা করা হতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিলেনঃ “এগুলিকে উপুড় করে ফেলে দাও।” অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।”

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا

📘 যে কিতাবে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই, মহান আল্লাহ তাঁর সেই কিতাব সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন ঈমানদারদের অন্তরের রোগসমূহের জন্যে উপশান্তি স্বরূপ। সন্দেহ, কপটতা, শিরক, বক্রতা, মিথ্যার সংযোগ ইত্যাদি সব কিছু এর মাধ্যমে বিদূরিত হয়। ঈমান, হিকমত, কল্যাণ, করুণা, সৎকার্যের প্রতি উৎসাহ ইত্যাদি -এর দ্বারা লাভ করা যায়। যে কেউই এর উপর ঈমান আনবে, একে সত্য মনে করে এর অনুসরণ করবে, এ কুরআন তাকে আল্লাহর রহমতের নীচে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে। পক্ষান্তরে, যে অত্যচারী হবে এবং একে অস্বীকার করবে সে আল্লাহর থেকে দূরে সরে পড়বে। কুরআন শুনে তার কুফরী আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং এই বিপদ স্বয়ং কাফিরের পক্ষ থেকে তার কুফরীর কারণেই ঘটে থাকে, কুরআনের পক্ষ থেকে নয়। এতে সরাসরি রহমত ও উপশান্তি। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ!) তুমি বলে দাওঃ এটা (কুরআন) মু'মিনদের জন্যে হিদায়াত ও উপশান্তি, আর বেঈমানদের কর্ণে বধিরতা ও চোখে অন্ধত্ব রয়েছে, এদেরকে তো বহু দূর থেকে ডাক দেয়া হয়ে থাকে।” (৪১:৪৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃঅর্থাৎ “যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন একদল প্রশ্ন করতে শুরু করে দেয়ঃ এটা তোমাদের কারো ঈমান বর্ধিত করেছে কি? জেনে রেখো যে, এতে ঈমানদারদের ঈমান তো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং তারা আনন্দিত ও প্রফুল্ল হয়, আর যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তাদের মলিনতা আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে।” (৯:১২৪-১২৫) এই বিষয়ের আরো আয়াত রয়েছে। মোট কথা, মু’মিন এই পবিত্র কিতাব শুনে উপকার লাভ করে থাকে। সে একে মুখস্থ করে এবং মনে রাখে। আর অবিবেচক লোক এর দ্বারা কোন উপকারও পায় না, একে মুখস্থও করে না। এর রক্ষণা বেক্ষণাও করে না। আল্লাহ একে উপশান্তি ও রহমত বানিয়েছেন শুধু মাত্র মুমিনদের জন্যে।

وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَىٰ بِجَانِبِهِ ۖ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَئُوسًا

📘 Please check ayah 17:84 for complete tafsir.

قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَىٰ شَاكِلَتِهِ فَرَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ أَهْدَىٰ سَبِيلًا

📘 ৮৩-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর ভাল ও মন্দ কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে মানুষের যে অভ্যাস রয়েছে, কুরআন কারীমের এই আয়াতে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মানুষের অভ্যাস এই যে, সে মাল, দৈহিক সুস্থতা, বিজয়, জীবিকা, সাহায্য, পৃষ্ঠপোষকতা, স্বচ্ছলতা এবং সুখ শান্তি পেলেই চক্ষু ফিরিয়ে নেয় এবং আল্লাহ হতে দূরে সরে পড়ে। দেখে মনে হয় যেন সে কখনো বিপদে পড়ে নাই বা পড়বেও না।পক্ষান্তরে যখন তার উপর কষ্ট ও বিপদ-আপদ এসে পড়ে তখন সে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং মনে করে যে, সে আর কখনো কল্যাণ, মুক্তি ও সুখ-শান্তি লাভ করবেই না। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন আমি মানুষকে আমার করুণার স্বাদ গ্রহণ করাই, অতঃপর তা তার থেকে টেনে নিই, তখন সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর যদি তাকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করার পর আমি তাকে নিয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করাই, তখন সে বলেঃ বিপদ-আপদ আমা থেকে দূর হয়ে গেছে, তখন সে আনন্দিত ও অহংকারী হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে ও সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।” (১১:৯-১১)আল্লাহ পাক বলেনঃ প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে চলার পথে কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। এতে মুশরিকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। তারা যে নীতির উপর কাজ করে যাচ্ছে এবং ওটাকেই সঠিক মনে করছে, কিন্তু এটা যে, সঠিক পন্থা নয় তা তারা আল্লাহ তাআলার কাছে গিয়ে জানতে পারবে। তারা যে পথে রয়েছে। তা যে কত বড় বিপজ্জনক পথ তা সেইদিন তারা বুঝতে পারবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি বেঈমানদেরকে বলে দাওঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা নিজের জায়গায় কাজ করে যাও (শেষ পর্যন্ত)।” প্রতিদানের সময় এটা নয়, এটা হবে কিয়ামতের দিন। সেই দিনই হবে পাপ ও পূণ্যের পার্থক্য। ঐদিন সবাই নিজনিজ কৃতকর্মের প্রতিদান পেয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছুই গোপন নেই।

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا

📘 সহীহ বুখারী প্রভৃতি সহীহ হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনার জমির উপর দিয়ে চলছিলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। আমি তাঁর সঙ্গী ছিলাম। ইয়াহুদীদের একটি দল তাকে দেখে পরষ্পর বলাবলি করেঃ “এসো, আমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করি।” কেউ বলে যে, ঠিক আছে, আবার কেউ বাধা দেয়। কেউ কেউ বলেঃ “এতে আমাদের কি লাভ?” আবার কেউ কেউ বলেঃ “তিনি হয়তো এমন উত্তর দিবেন যা তোমাদের বিপরীত হবে। সুতরাং যেতে দাও, প্রশ্ন করার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত তারা এসে প্রশ্ন করেই বসলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বুঝে নিলাম যে, তাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। আমি নীরবে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন।”এদ্বারা বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এটি মাদানী আয়াত। অথচ সম্পূর্ণ সূরাটি মক্কী। কিন্তু হতে পারে যে, মক্কায় অবতারিত আয়াত দ্বারাই এই স্থলে মদীনার ইয়াহূদীদেরকে জবাব দেয়ার ওয়াহী হয়েছিল কিংবা এও হতে পারে যে, দ্বিতীয়বার এই আয়াতটিই অবতীর্ণ হয়েছিল। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়াইয়াত দ্বারাও এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া বুঝা যায়।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশেরা ইয়াহুদীদের কাছে আবেদন করেছিলঃ এমন একটি কঠিন প্রশ্ন আমাদেরকে বলে দাও যা আমরা মুহাম্মদকে (সঃ) জিজ্ঞেস করতে পারি।” তারা তখন এই প্রশ্নটাই বলে দেয়। তারই জবাবে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন এই উদ্ধতরা (ইয়াহূদীরা) বলতে শুরু করেঃ “আমাদের বড় জ্ঞান রয়েছে। আমরা তাওরাত লভি করেছি এবং যার কাছে তাওরাত আছে সে বহু কিছু কল্যাণ লাভ করেছে।” তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “বলঃ প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে সমুদ্র যদি কালিহয় তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- সাহায্যার্থে এর মত আরেকটি সমুদ্র আনলেও।” (১৮:১০৯)।ইকরামা (রাঃ) হতে ইয়াহুদীদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া এবং তাদের ঐ অপছন্দনীয় কথার প্রতিবাদে নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া বর্ণিত আছে। আয়াতটি হচ্ছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “সমগ্রজগতে যত বৃক্ষ রয়েছে, যদি তা সমস্তই কলম হয়, আর এই যে সমুদ্র রয়েছে, এটা ছাড়া এইরূপ আরো সাতটি সমুদ্র (কালির স্থল) হয়, তবুও আল্লাহর (গুণাবলীর) বাক্যসমূহ সমাপ্ত হবে না।” (৩১:২৭) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাহান্নাম হতে রক্ষাকারী তাওরাতের জ্ঞান একটা বড় বিষয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এটা অতি নগণ্য।ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। যখন নবী (সঃ) হিজরত করে মদীনায় আসেন তখন মদীনার ইয়াহূদী আলেমরা তাঁর কাছে এসে বলেঃ “আমরা শুনেছি যে, আপনি বলে থাকেন? ‘তোমাদেরকে তো অতি সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে এটার দ্বারা কি উদ্দেশ্য আপনার কওম, না আমরা?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তোমরাও এবং তারাও।” তারা তখন বললোঃ “আপনি তো স্বয়ং কুরআনে পাঠ করে থাকেন যে, আমাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছে এবং কুরআনে এও রয়েছে যে, তাওরাতে সব কিছুরই বর্ণনা রয়েছে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের একথার উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এটাও অতি নগণ্য। হাঁ, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে এটুকু জ্ঞান দিয়েছেন যে, যদি তোমরা এর উপর আমল কর তবে তোমরা অনেক কিছু উপকার লাভ করবে।” তখন (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করে যে, দেহের সাথে রূহের শাস্তি কেন হয়? ওটা তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এসেছে? এই ব্যাপারে তার উপর কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয় নাই বলে তিনি তাদেরকে কোন জবাব দেন নাই। তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এটা শুনে ইয়াহূদীরা তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “এর খবর আপনাকে কে দিলো?” তিনি। জবাবে বলেনঃ হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এ খবর নিয়ে এসেছিলেন। তারা তখন বলতে শুরু করলোঃ “জিবরাঈল (আঃ) তো আমাদের শত্রু।” তাদের এই কথার প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি বলঃ যে ব্যক্তি শত্রুতা রাখে জিবরাঈলের (আঃ) সাথে (সে রাখুক), সে পৌঁছিয়েছে এই কুরআনকে তোমার অন্তকরণ পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমে যে অবস্থায় তা স্বীয় পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে, আর হিদায়াত করছে ও সুসংবাদ দিচ্ছে মু'মিনদেরকে। যে ব্যক্তি শত্রু হয় আল্লাহর এবং তাঁর ফেরেশতাদের তাঁর রাসূলদের, জিবরাঈলের (আঃ) এবং মীকাঈলের (আঃ) আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু।” (২:৯৭-৯৮) একটা উক্তি এও আছে যে, এখানে ‘রূহ' দ্বারা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। এও একটা উক্তি যে, এর দ্বারা এমন বিরাট শান শওকত পূর্ণ ফেরেতাকে বুঝানো হয়েছে যিনি একাই সমস্ত মাখলুকের সমান। একটি হাদীসে এও আছে যে, আল্লাহ তাআলার এক ফেরেস্তা এমনও রয়েছেন যে, যদি তাঁকে সাত যমিন ও সাত আসমান একটা গ্রাস করতে বলা হয় তবে তিনি তাই করবেন (অর্থাৎ একগ্রাসে সমস্ত খেয়ে ফেলবেন)। তাঁর তাসবীহ হলো নিম্নরূপ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন।” (এই হাদীসটি গরীব বা দুর্বল, এমনকি মুনকার বা অস্বীকৃত)হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন ফেরেশতা এমন রয়েছেন। যার সত্তর হাজার মুখ রয়েছে, প্রত্যেক মুখে সত্তর হাজার জিহ্বা রয়েছে’ প্রত্যেক জিহ্বায় আছে সত্তর হাজার ভাষা। তিনি এই সমুদয় ভাষায় আল্লাহ তাআ’লার তাসবীহ পাঠ করে থাকেন। তাঁর প্রত্যেক তাসবীহতে আল্লাহ একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করে থাকেন, যিনি অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন কাটিয়ে দেবেন। (এ ‘আসার’ টিও বড়ই বিস্ময়কর ও গারীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ'লাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী) সুহাইলীর (রঃ) রিওয়াইয়াতে তো রয়েছে যে, ঐ ফেরেশতার এক লক্ষটি মাথা আছে, প্রত্যেক মাথায় এক লক্ষটি মুখ আছে ,প্রত্যেক মুখে রয়েছে একলক্ষটি ভাষা। বিভিন্ন ভাষায় তিনি আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা ঘোষণা করে থাকেন।এটাও আছে যে, এর দ্বারা ফেরেশতাদের ঐ দলটিকে বুঝানো হয়েছে যারা মানুষের আকৃতিতে রয়েছেন। একটি উক্তি এটাও আছে যে, এর দ্বারা এ ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা অন্যান্য ফেরেশতাদেরকে দেখতে পান, কিন্তু অন্যান্য ফেরেশতারা তাদেরকে দেখতে পান না। সুতরাং এই ফেরেশতারা অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছে সেই রূপ যেই রূপ আমাদের কাছে এই ফেরেশতাগণ।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ “তুমি তাদেরকে জবাবে বলে দাওঃ রূহ্ আমার প্রতিপালকের আদেশে ঘটিত। এর জ্ঞান একমাত্র তাঁরই আছে, আর কারো নেই। তোমাদেরকে যে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তা আল্লাহ তাআলারই দেয়া জ্ঞান। সুতরাং তোমাদের এই জ্ঞান খুবই সীমিত।” সৃষ্টজীবের শুধু ঐ জ্ঞানই রয়েছে যে জ্ঞান তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খি (আঃ)-এর ঘটনায় আসছে যে, যখন এই দুই বুর্যগ ব্যক্তি নৌকার উপর সওয়ার হয়ে ছিলেন সেই সময় একটি পাখী নৌকার তক্তায় বসে নিজের চঞ্চটি পানিতে ডুবিয়ে উড়ে যায়। তখন হযরত খি (আঃ) বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনার, আমার এবং সমস্ত সৃষ্ট জীবের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এতটুকুই যতটুকু পানি নিয়ে এই পাখীটি উড়ে গেল।” কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইয়াহুদীদেরকে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন নাই। কেননা, তারা অস্বীকার করা ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়েই এ প্রশ্ন করে ছিল। এটাও বলা হয়েছে যে, জবাব হয়ে গেছে। ভাবার্থ এই যে, রূহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত। তোমাদের এ ব্যাপারে মাথা না ঘামানোই উচিত। তোমরা জানতেই পারছো যে, এটা জানবার প্রকৃতিগত ও দর্শনগত কোন পথ নেই, বরং এটা শরীয়তের ব্যাপার। সুতরাং তোমরা শরীয়তকে কবুল করে নাও। কিন্তু আমরা তো এই পন্থাটিকে বিপদমুক্ত দেখছি। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।অতঃপর সুহাইলী (রঃ) আলেমদের মতভেদ বর্ণনা করেছেন যে, রূহ কি নফস, না অন্য কিছু? এটাকে এভাবে প্রমাণিত করা হয়েছে যে, রূহ দেহের মধ্যে বাতাসের মত চালু রয়েছে এবং এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম জিনিস, যেমন গাছের শিরায় পানি উঠে থাকে। তার ফেরেশতা যে রূহ মায়ের পেটের বাচ্চার মধ্যে ফুকে থাকেন তা দেহের সাথে মিলিত হওয়া মাত্রই নফস হয়ে যায়। এর সাহায্যে ওটা ভাল মন্দ গুণ নিজের মধ্যে লাভ করে থাকে। হয় আল্লাহর যিকরের সাথে প্রশান্তি আনয়নকারী হয়ে যায়, না হয় মন্দ কার্যের হুকুম দাতা হয়ে যায়। যেমন পানি গাছের জীবন। ওটা গাছের সাথে মিলিত হওয়ার কারণে একটা বিশেষ জিনিস নিজের মধ্যে পয়দা করে নেয়। আঙ্গুর সৃষ্ট হয়, অতঃপর ওর পানি বের করা হয় অথবা মদ তৈরী করা হয়। সুতরাং ঐ আসল পানি অন্য রূপ ধারণ করেছে। এখন ওটাকে আসল পানি বলা যেতে পারে না। অনুরূপভাবে দেহের সাথে মিলিত হওয়ার পর রূহকে আসল রূহ বলা যাবে না এবং নফস ও বলা যাবে না। মোট কথা, রূহ হলো নফস ও মাদ্দার (মূল পদার্থের মূল। আর নফস হলো রূহের এবং ওর দেহের সাথে সংযুক্ত হওয়ার দ্বারা যা হয় সেটাই। সুতরাং রূহটাই নফস। কিন্তু একদিক দিয়ে নয়, বরং সবদিক দিয়েই। এতো হলো মন ভুলানো কথা, কিন্তু এর হাকীকতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। মানুষ এ ব্যাপারে অনেক কিছু বলেছেন এবং এর উপর বড় বড় স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন।

وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِهِ عَلَيْنَا وَكِيلًا

📘 Please check ayah 17:89 for complete tafsir.

إِلَّا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ ۚ إِنَّ فَضْلَهُ كَانَ عَلَيْكَ كَبِيرًا

📘 Please check ayah 17:89 for complete tafsir.

قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَىٰ أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَٰذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا

📘 Please check ayah 17:89 for complete tafsir.

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا لِلنَّاسِ فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ فَأَبَىٰ أَكْثَرُ النَّاسِ إِلَّا كُفُورًا

📘 ৮৬-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা নিজের ঐ বড় অনুগ্রহ ও ব্যাপক নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছে না যে, নিয়ামত তিনি তাঁর প্রিয় রাসূল (সঃ) এর উপর নাযিল করেছেন। অর্থাৎ তিনি তার উপর ঐ পবিত্র কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যার মধ্যে কখনো কোন মিথ্যা মিশ্রণ অসম্ভব। তিনি ইচ্ছা করলে এই ওয়াহীকে প্রত্যাহারও করতে পারতেন। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, শেষ যুগে সিরিয়ার দিক থেকে এক লাল বায়ু প্রবাহিত হবে। ঐ সময় কুরআনের পাতা থেকে এবং হাফিযদের অন্তর হতে কুরআন ছিনিয়ে নেয়া হবে। এক হরফ বা অক্ষরও বাকী থাকবে না। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।এরপর মহান আল্লাহ নিজের ফল ও করম এবং অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তার এই পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্বের এক বড় প্রমাণ হচ্ছেঃ সমস্ত মাখলুক এর মুকাবিলা করতে অপারগ হয়ে গেছে। কারো ক্ষমতা নেই, এর মত ভাষা প্রয়োগ করতে পারে। আল্লাহ তাআ'লা নিজে যেমন নযীর বিহীন ও তুলনা বিহীন, অনুরূপভাবে তাঁর কালামও অতুলনীয়। ইবনু ইসহাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একবার ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে বলেঃ “আমরাও এই কুরআনের মত কালাম বানাতে পারি।” এ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (কিন্তু আমরা এটা মানতে পারি না। কেননা, এই সূরাটি মক্কী সূরা। আর এর সমস্ত বর্ণনা কুরায়েশদের সম্পর্কেই রয়েছে এবং তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। মক্কায় ইয়াহুদীর সাথে নবীর (সঃ) মিলন ঘটে নাই। মদীনায় এসে তাদের সাথে মিলন হয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানান) মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি এই পবিত্র কিতাবে সর্বপ্রকারের দলীল বর্ণনা করে সত্যকে প্রকাশ করে দিয়েছি এবং সমস্ত বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। এতদসত্ত্বেও অধিকাংশ লোক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করতে রয়েছে এবং সত্যকে প্রত্যাখ্যান করছে। আর তারা আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে।”

إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا

📘 Please check ayah 17:10 for complete tafsir.

وَقَالُوا لَنْ نُؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الْأَرْضِ يَنْبُوعًا

📘 Please check ayah 17:93 for complete tafsir.

أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الْأَنْهَارَ خِلَالَهَا تَفْجِيرًا

📘 Please check ayah 17:93 for complete tafsir.

أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِيَ بِاللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ قَبِيلًا

📘 Please check ayah 17:93 for complete tafsir.

أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِنْ زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَىٰ فِي السَّمَاءِ وَلَنْ نُؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّىٰ تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَقْرَؤُهُ ۗ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلَّا بَشَرًا رَسُولًا

📘 ৯০-৯৩ নং আয়াতের তাফসীর হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, রাবীআ’র দুই ছেলে উৎবা ও শায়বা আবু সুফিয়ান ইবনু হারব, বান্ আবদিন্দার গোত্রের দু'টি লোক, বান্ আসাদ গোত্রের আবু নজিতারী, আসওয়াদ ইবনু মুত্তালিব ইবনু আসদ, নাওমা, ইবনু আসওয়াদ, ওয়ালী ইবনু মুগীরা, আবু জেহেল ইবনু হিশাম, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই, উমাইয়া, উমাইয়া ইবনু আস ইবনু অয়েল এবং হাজ্জাজের দুই পুত্র এরা সবাই বা এদের মধ্যে কিছু লোক সূর্যাস্তের পরে কাবা ঘরের পিছনে একত্রিত হয় এবং পরম্পর বলাবলি করেঃ “কাউকে পাঠিয়ে মুহাম্মদকে (সঃ) ডাকিয়ে নাও তার সাথে আজ আলাপ আলোচনা করে একটা ফায়সালা করে নেয়া যাক, যাতে কোন ওযর বাকী না থাকে। সুতরাং দূত রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে গিয়ে খবর দিলোঃ “আপনার কওমের সম্রান্ত লোকেরা একত্রিত হয়েছেন এবং তাদের কাছে আপনার উপস্থিত কামনা করেছেন।” দূতের একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ধারণা করলেন যে, সম্ভবতঃ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সঠিক বোধশক্তি প্রদান করেছেন, কাজেই তারা হয়তো সত্য পথে চলে আসবে। তাই, তিনি কালবিলম্ব না করে তাদের কাছে গমন করলেন। তাঁকে দেখেই তারা সমস্বরে বলে উঠলো “দেখো আজ আমরা তোমার সামনে যুক্তি প্রমাণ পূরো করে দিচ্ছি যাতে আমাদের উপর কোন অভিযোগ না আসে। এজন্যেই আমরা তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আল্লাহর কসম! তুমি আমাদের উপর যত বড় বিপদ চাপিয়ে দিয়েছো এতো বড় বিপদ কেউ কখনো তার কওমের উপর চাপায় নাই। তুমি আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে গালি দিচ্ছ, আমাদের দ্বীনকে মন্দ বলছো, আমাদের বড়দেরকে নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করছো, আমাদের মা'বুদ বা উপাস্যদেরকে খারাপ বলছো এবং আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে গৃহ যুদ্ধের সূত্রপাত করছো। আল্লাহর শপথ! তুমি আমাদের অকল্যাণ সাধনে বিন্দুমাত্র ত্রুটি কর নাই। এখন পরিষ্কার ভাবে শুনে নাও এবং বুঝে সুঝে জবাব দাও। এসব করার পিছনে মাল জমা করা যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তবে আমরা এজন্যে প্রস্তুত আছি। আমরা তোমাকে এমন মালদার বানিয়ে দেবো যে, আমাদের মধ্যে তোমার সমান ধনী আর কেউ থাকবে না। আর যদি নেতৃত্ব করা তোমার উদ্দেশ্য হয় তবে এজন্যেও আমরা তৈরী আছি। আমরা তোমারই হাতে নেতৃত্ব দান করবো এবং আমরা তোমার অধীনতা স্বীকার করে নেবো। যদি বাদশাহ হওয়ার তোমার ইচ্ছা থাকে তবে বল, আমরা তোমার বাদশাহীর ঘোষণা করছি। আর যদি আসলে তোমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে থাকে বা তোমাকে জ্বিনে। ধরে থাকে, তবে এ ক্ষেত্রেও আমরা প্রস্তুত আছি যে, টাকা পয়সা খরচ করে তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। এতে হয় তুমি আরোগ্য লাভ করবে, না হয় আমাদেরকে অপারগ মনে করা হবে। তাদের এসব কথা শুনে নবীদের নেতা, পাপীদের শাফাআতকারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আমার মস্তিষ্ক বিকৃতিও ঘটে নাই, আমি এই রিসালাতের মাধ্যমে ধনী হতেও চাই না, আমার নেতৃত্বেরও লোভ নেই এবং আমি বাদশাহ হতেও চাই না। বরং আল্লাহ তাআলা আমাকে তোমাদের সকলের নিকট রাসূল করে পাঠিয়েছেন এবং আমার উপর তাঁর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আমাকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাদেরকে (জান্নাতের সুসংবাদ দান করি এবং (জাহান্নাম হতে) ভয় প্রদর্শনকারী। আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি। তোমরা যদি এটা কবুল করে নাও তবে উভয় জগতেই সুখের অধিকারী হবে। আর যদি না মানেনা, তবে আমি ধৈর্য ধারণ করবো, শেষ পর্যন্ত মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সত্য ফায়সালা করবেন।”রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই জবাব শুনে কওমের নেতারা বললোঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমাদের এই প্রস্তাবগুলির একটিও যদি তুমি সমর্থন না কর তবে শুনো! তুমি তো নিজেও জান যে, আমাদের মত সংকীর্ণ শহর আর কারো নেই। আর আমাদের মত কম মালও আর কোন কওমের নেই এবং আমাদের মত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এতো কম রুজীও কোন কওম অর্জন করে না। তুমি যখন বলছো যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে স্বীয় রিসালাত দিয়ে পাঠিয়েছেন তখন তাঁর নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন এই পাহাড় আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেন, যাতে আমাদের অঞ্চলটি প্রশস্ত হয়ে যায়, শহরটিও বড় হয়, তাতে নহর ও প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়, যেমন সিরিয়া ও ইরাকে রয়েছে। আর এটাও প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন আমাদের মৃত বাপ-দাদাদেরকে জীবিত করে দেন এবং তাদের মধ্যে কুসাই ইবনু কিলাব যেন অবশ্যই থাকেন। তিনি আমাদের মধ্যে একজন সম্ভ্রান্ত ও সত্যবাদী লোক ছিলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করবো, তিনি তোমাদের সম্পর্কে যা বলবেন তাতে আমাদের মনে তৃপ্তি আসবে। যদি তুমি এটা করে দিতে পারো তবে আমরা খাটি অন্তরে তোমার প্রতি ঈমান আনবো এবং তোমার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেবো।” তিনি। বললেনঃ “এগুলো নিয়ে আমাকে পাঠানো হয় নাই। এগুলো কোনটিই আমার শক্তির মধ্যে নয়। আমি তো শুধু আল্লাহ তাআলার কথাগুলি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে এসেছি। তোমরা কবুল করলে উভয় জগতে সুখী হবে। এবং কবুল না করলে আমি ধৈর্য ধরবো এবং মহান আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা করবো। তিনি আমার ও তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন।” তারা তখন বললোঃ “আচ্ছা, তুমি এটাও পারবে না, তা হলে আমরা স্বয়ং তোমার জন্যে এটাই বিবেচনা করছি যে, তুমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন তোমার কাছে কোন ফেরেশতা প্রেরণ করেন যিনি তোমার কথাকে সত্যায়িত করে তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে উত্তর দেন। আর তাকে বলে তোমার নিজের জন্যে বাগ-বাগিচা, ধনভাণ্ডার এবং সোনা রূপার অট্টালিকা তৈরী করে নাও। যাতে তোমার অবস্থা সুন্দর ও পরিপাটী হয়ে যায় এবং তোমাকে খাদ্যের সন্ধানে আমাদের মত বাজার ঘুরে বেড়াতে না হয়। এটাও যদি হয়ে যায় তবে আমরা স্বীকার করে নিবো যে, সত্যি আল্লাহ তাআলার কাছে তোমার মর্যাদা রয়েছে এবং বাস্তবিকই তুমি আল্লাহর রাসূল।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “না আমি এগুলো করবো, না এগুলোর জন্যে আমার প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা জানাবো এবং না আমি এজন্যে প্রেরিত হয়েছি। আল্লাহ তাআলা আমাকে সুসংবাদ দাতা ও ভয়প্রদর্শক বানিয়েছেন, এ ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা যদি মেনে নাও তবে উভয় জগতে নিজেদের কল্যাণ আনয়ন করবে এবং না মানলে ঠিক আছে, দেখি আমার প্রতিপালক আমার ও তোমাদের মধ্যে কি ফায়সালা করেন। তারা বললোঃ “তা হলে আমরা বলছি যে, যাও! তোমার প্রতিপালককে বলে আমাদের উপর আকাশ নিক্ষেপ করিয়ে নাও; তুমি তো বলছোই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে এইরূপ করবেন। কাজেই আমরা বলছি যে, এটাই করিয়ে নাও, বিলম্ব করো না।” তিনি জবাবে বললেনঃ “এটা আল্লাহর অধিকারের ব্যাপার। তিনি যা চান তা করেন। যা চান না করেন না।” মুশরিকরা তখন বললোঃ “দেখো, আল্লাহ তাআলার কি এটা জানা ছিল না যে, আমরা এ সময়ে তোমার কাছে বসবো এবং তোমাকে এ সবগুলো করতে বলবো? সুতরাং তাঁর তো উচিত ছিল এগুলো তোমাকে পূর্বে অবহিত করা? আর এটাও তাঁর বলে দেয়া উচিত ছিল যে, তোমাকে কি জবাব দিতে হবে? আর যদি আমরা না মানি তবে আমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে? দেখো, আমরা শুনেছি যে, ইয়ামামার রহমান নামক একটি লোক তোমাকে এগুলো শিখিয়ে যায়। আল্লাহর কসম! আমরা। তো রহমানের উপর ঈমান আনবো না। আমরা তাকে মানবো এটা অসম্ভব। আমরা তোমার ব্যাপারে নিজেদেরকে দোষমুক্ত করেছিলাম। যা বলার ও শোনার ছিল তা সব কিছুই হয়ে গেল। তুমি তো আমাদের সুবিবেচনাপূর্ণ কথা মানলে না। সুতরাং এখন থেকে তুমি সাবধান থাকবে। তোমাকে একাজে আমরা মুক্ত ছেড়ে দিতে পারি না। হয় তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, না হয় আমরাই তোমাকে ধ্বংস করে দেবো।” কেউ কেউ বললোঃ “আমরা তো ফেরেশতাদেরকে পূজা করে থাকি, যারা আল্লাহর কন্যা (নাউযুবিল্লাহ)।” অন্য কেউ কেউ বললোঃ “যে পর্যন্ত তুমি আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেস্তাদেরকে সরাসরি আমাদের কাছে হাযির না করবে, আমরা ঈমান আনবো না।” অতঃপর মজলিস ভেঙ্গে গেল। আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়া ইবনু মুগীরা ইবনু আবিল্লাহ ইবনু মাখমুগ, যে তার ফুফু আতেফা বিতে আবদুল মুত্তালিবের ছেলে ছিল, তার সাথে রয়ে গেল। তার ফুফাতো ভাই তাকে বললোঃ “দেখো, এটা তো খুবই অন্যায় হলো যে, তোমার কওম যা বললো তুমি সেটাও স্বীকার করলে না এবং তারা যা চাইলো তুমি সেটাও করতে পারলে না? তারপর তুমি তাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছিলে, ওটা তারা চাইলো, কিন্তু সেটাও তুমি করলে না? এখন, আল্লাহর কসম! আমিও তো তোমার উপর ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না তুমি সিঁড়ি লাগিয়ে আকাশে আরোহণ করতঃ সেখান থেকে কোন কিতাব আনবে ও চার জন ফেরেস্তাকে সাক্ষী হিসেবে তোমার সাথে আনয়ন করবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই সমুদয় কথায় চরমভাবে দুঃখিত। হয়েছিলেন। তিনি বড়ই আশা নিয়ে এসেছিলেন যে, হয়তো তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁর কথা মেনে নেবে। কিন্তু যখন তিনি তাদের ঔদ্ধত্যপনা দেখলেন এবং লক্ষ্য করলেন যে, তারা ঈমান থেকে বহু দূরে সরে গেছে। তখন তিনি অত্যন্ত দুঃখিত মনে বাড়ী ফিরে আসলেন।কথা হলো এই যে, তাদের এ সব কথার এক মাত্র উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহকে (সঃ) খাটো করে দেয়া এবং তাঁকে লা-জবাব করা। ঈমান। আনয়নের উদ্দেশ্য তাদের মোটেই ছিল না। যদি সত্যিই ঈমান আনয়নের উদ্দেশ্যে তারা এই প্রশ্নগুলি করে থাকতো তবে খুব সম্ভব আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এই মু'জিযাগুলি দেখিয়ে দিতেন। কেননা, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলা হয়েছিলঃ “যদি তুমি চাও তবে এরা যা চাচ্ছে। আমি তা দেখিয়ে দেই। কিন্তু জেনে রেখো যে, এর পরেও যদি তারা ঈমান না আনে তবে আমি তাদেরকে এমন শিক্ষামূলক শাস্তি দেবো যা কখনো কাউকেও দিই নাই। আর যদি তুমি চাও তবে আমি তাদের জন্য তাওবা ও রহমতের দরজা খুলে রাখি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়টিই পছন্দ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর অসংখ্য দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন! (আরবি) (১৭:৫৯) ও (আরবি) (২৫:৯) এই আয়াত দ্বয়ে রয়েছে যে, এই সব কিছুরই ক্ষমতা তার রয়েছে এবং সবই তিনি করতে পারেন। কিন্তু এগুলো বন্ধ রাখার কারণ এই যে, এগুলো প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরেও যারা ঈমান আনবে না তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিবেন না। বরং এমন শাস্তি প্রদান করবেন যা পূর্বে কখনো করেন নাই।আল্লাহ তাআলা এই কাফিরদেরকে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন এবং তাদের শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নাম।তাদের আবেদন ছিল যে, আরব মরু ভূমিতে যেন নদী-নালা প্রবাহিত হয় বা প্রস্রবণের ব্যবস্থা হয়ে যায় ইত্যাদি। এটা স্পষ্ট কথা যে, ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআলার কাছে এগুলোর কোনটিই কঠিন নয়। সবকিছুই তাঁর ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তিনি শুধু আদেশ করলেই হয়ে যায়। কিন্তু তিনি পূর্ণরূপে অবগত রয়েছেন যে, ঐ সব নিদর্শন দেখেও ঐ কাফিররা ঈমান আনবে না। যেমন এক জায়গায় তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় যাদের জন্যে তোমার প্রতিপালকের আযাবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে গেছে তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের কাছে সমস্ত নিদর্শন এসে পড়ে, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।” (১০:৯৬-৯৭) অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তাদের চাহিদা অনুযায়ী যদি আমি তাদের উপর ফেরেতাও অবতীর্ণ করি এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথাও বলে, শুধু এটা নয়, বরং অদৃশ্যের সমস্ত কিছুই যদি তাদের সামনে খোলাখুলি। ভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তবুও এই কাফিররা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তার উপর ঈমান আনবে না। তাদের অধিকাংশ অজ্ঞ।” ঐ কাফিররা নিজেদের জন্যে নদী-নালা চাওয়ার পর নবীকে (সঃ) বললোঃ আচ্ছা, তোমার জন্যে বাগ-বাগিচা ও নদী নালা হয়ে যাক। তারপর বললোঃ এটাও যদি না হয় তবে তুমি তো বলছো যে, কিয়ামতের দিন আকাশ ফেটে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে, তাহলে আজই আমাদের উপর ওর টুকরাগুলি নিক্ষেপ করা হোক? তারা নিজেরাও আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনাই করেছিলঃ “হে আল্লাহ! এ সব যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়ে থাকে তবে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ কর (শেষ পর্যন্ত)।”হযরত শুআ’ইবের (আঃ) কওমও এই ইচ্ছাই পোষণ করেছিল, যার ফলে তাদের উপর সায়েবানের দিনের শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের নবী (সঃ) ছিলেন বিশ্ব শান্তির দূত এবং তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! তাদেরকে ধ্বংস হতে রক্ষা করুন! এরা ঈমান আনয়ন করবে, একত্ববাদে বিশ্বাসী হবে এবং শিরক পরিত্যাগ করবে।” আল্লাহ পাক তাঁর এ প্রার্থনা ককূল করেছিলেন। তাই, তিনি তাদের উপর আযাব নাযিল করনে নাই। পরে তাদের অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। এমনকি আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়া, যে শেষে রাসুলুল্লাহর (সঃ) সাথে যাওয়ার পথে তাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল এবং ঈমান না আনার শপথ গ্রহণ করেছিল, সেও ইসলাম গ্রহণ করে নিজের জীবনকে ধন্য করে নেয়।(আরবি) শব্দ দ্বারা স্বর্ণকে বুঝানো হয়েছে। এমনকি হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের (রাঃ) কিরআতে (আরবি) রয়েছে।কাফিরদের আরো আবেদন ছিল এই যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) যেন সোনার ঘর হয়ে যায়, অথবা তাদের চোখের সামনে যেন তিনি সিঁড়ি লাগিয়ে আকাশে উঠে যান এবং সেখান থেকে কোন কিতাব নিয়ে আসেন যা প্রত্যেকের নামের আলাদা আলাদা কিতাব হয়। রাতারাতি যেন ঐ পর্চাগুলো তাদের শিয়রে পৌঁছে যায় এবং ওগুলির উপর তাদের নাম লিপিবদ্ধ থাকে। তাদের এই কথার উত্তরে মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে (সঃ) বলেনঃ “তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, আল্লাহর সামনে কারো কিছুই খাটবে না। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যের মালিক নিজেই। তিনি যা চাবেন করবেন যা চাবেন না করবেন না। তোমাদের মুখের চাওয়ার জিনিসগুলো প্রকাশ করা বা না করার অধিকার তাঁর। আমি তো শুধু আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্যেই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। আল্লাহ তাআলার আহকাম আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এখন তোমরা যা কিছু চেয়েছো সেগুলি আল্লাহর ক্ষমতার জিনিস। আমার সাধ্য নেই যে, এগুলি আমি তোমাদের নিকট আনয়ন করি।। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মক্কা ভূমি সম্পর্কে আমাকে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেনঃ “তুমি চাইলে আমি এটাকে সোনা বানিয়ে দিতে পারি।” আমি বললামঃ “হে আমার প্রতিপালক! না, এটা চাই না। আমি তো চাই যে, একদিন পেট পুরে খাবো এবং আর একদিন না খেয়ে থাকবো। যেই দিন না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবো সেই দিন অত্যন্ত বিনয়ের সাথে খুব বেশী বেশী আপনাকে স্মরণ করবো। আর যেই দিন পেট পুরে খাবো সেই দিন আপনার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো।” (জামে তিরমিযীতেও এ হাদীসটি রয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে দুর্বল বলেছেন)

وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ إِلَّا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَسُولًا

📘 Please check ayah 17:95 for complete tafsir.

قُلْ لَوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِنَ السَّمَاءِ مَلَكًا رَسُولًا

📘 ৯৪-৯৫ নং আয়াতের তাফসীর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অধিকাংশ লোক ঈমান আনয়ন হতে এবং রাসূলদের আনুগত্য হতে একারণেই বিরত থাকছে যে, কোন মানুষ যে আল্লাহর রাসূল হতে পারেন এটা তাদের বোধগম্যই হয় না, এতে তারা অত্যন্ত বিস্মিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে। তারা পরিষ্কারভাবে বলে দেয়ঃ “একজন মানুষ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করবে?” ফিরাউন ও তার কওম একথাই বলেছিলঃ “আমরা আমাদের মতই দু'টি মানুষের উপর কি করে ঈমান আনতে পারি? বিশেষ করে ঐ অবস্থায় যে, তাদের কওমের সমস্ত লোক আমাদেরই অধীনে রয়েছে?” একথাই অন্যান্য উম্মতেরাও নিজ নিজ যামানার নবীদেরকে বলেছিলঃ “তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ। তোমরা তো এটা ছাড়া আর কিছুই করছো না যে, আমাদেরকে আমাদের বড়দের মা’ৰূদের থেকে বিভ্রান্ত করছো। আচ্ছা, কোন বিরাট নিদর্শন পেশ কর দেখি?” এ বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে। এরপর মহান আল্লাহ নিজের স্নেহ, দয়া এবং মানুষের মধ্য হতেই রাসূল পাঠানোর কারণ বর্ণনা করেছেন এবং এর নিপূণতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেনঃ ফেরশতারা যদি রিসালাতের কাজ চালাতো, তবে না তোমরা তাদের কাছে উঠা-বসা করতে পারতে, ভালভাবে তাদের কথা বুঝতে পারতে। মানবীয় রাসূল তোমাদেরই শ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকে বলেই তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করতে পার, তাদের আচার আচরণ দেখতে পার এবং তাদের সাথে মিলেজুলে নিজেদের ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পার। আর তাদের আমল দেখে নিজেরা শিখে নিতে সক্ষম হও। যেমন আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) (৩:১৬৪) (আরবি) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবি) (৯:১২৮) অন্য আর এক স্থানে রয়েছেঃ (আরবি) (২:১৫১)সবগুলিরই ভাবার্থ হচ্ছেঃ “এটাতো আল্লাহ তাআলার এক বড় অনগ্রহ যে, তিনি তোমাদেরই মধ্য হতে রাসূল পাঠিয়েছেন। সে তোমাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনিয়ে থাকে, তোমাদেরকে (পাপ থেকে) পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা জানতে না তা তোমাদেরকে শিখিয়ে থাকে। সুতরাং আমাকে খুব বেশী বেশী স্মরণ করা তোমাদের উচিত, তা হলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। তোমাদের উচিত আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং অকৃতজ্ঞ না হওয়া” এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ অবশ্যই আমি কোন ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম। কিন্তু তোমরা নিজেরা মানুষ এই যৌক্তিকতাতেই মানুষের মধ্য হতেই আমি রাসূল পাঠিয়েছি।

قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا

📘 আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এই কাফিদেরকে বলে দাও আমার সত্যতার ব্যাপারে আমি অন্য কোন সাক্ষী খোজ করবো কেন? আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। আমি যদি তাঁর পবিত্র সত্তার উপর অপবাদ আরোপ করে থাকি তবে তিনি আমার উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। যেমন কুরআন কারীমের সূরায়ে আল-হাক্কাহতে রয়েছেঃ “যদি সে (নবী সঃ) আমার উপর কোন (মিথ্যা) আরোপ করতো, তবে আমি তার ডান হাত (দৃঢ়ভাবে) ধরতাম; অতঃপর তার প্রাণ শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তার এই শাস্তি হতে রক্ষাকারী হতো না।” এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর কোন বান্দার অবস্থা গোপন নেই। কারা ইনআম, ইহসান, হিদায়াত ও স্নেহ পাওয়ার যোগ্য এবং কারা পথ ভ্রষ্ট ও হতভাগ্য হওয়ার যোগ্য তা আল্লাহ তাআলা ভালভাবেই জানেন।

وَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِهِ ۖ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا ۖ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا

📘 আল্লাহ তাআলা এখানে এই বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সমস্ত সৃষ্ট জীবের সব ব্যবস্থাপনা শুধু তাঁর হাতেই রয়েছে। তাঁর কোন হুকুম টলে না। তিনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে হাশরের ময়দানে। মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করবো। রাসুলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “এটা কি করে হতে পারে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যিনি পায়ের ভরে চালিয়ে থাকেন তিনি মাথার ভরেও চালাতে পারবেন।” মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত আবু যার (রাঃ) দণ্ডায়মান অবস্থায় তাঁর গোত্রীয় লোকদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে বানূ গিফার গোত্রের লোক সকল! আর শপথ করো না। সত্যবাদী ও সত্যায়িত রাসূল (সঃ) আমাকে শুনিয়েছেনঃ “লোকদেরকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে হাশরের ময়দানে আনয়ন করা হবে। এক শ্রেণীর লোক পানাহারকারী ও পোশাক পরিধানকারী হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক চলতে ও দৌড়াতে থাকবে এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোককে ফেরেশতারা মুখের ভরে টেনে জাহান্নামের সামনে একত্রিত করবে।” জনগণ জিজ্ঞেস করলোঃ “দুই শ্রেণীর লোকদেরতো আমরা বুঝতে পারলাম। কিন্তু যারা চলবে ও দৌড়াবে তাদেরকে যে বুঝতে পারলাম না? তিনি জবাবে বললেনঃ “সওয়ারীর উপর বিপদ এসে যাবে। এমন কি প্রত্যেক লোক তার সুন্দর বাগের বিনিময়ে জিন বা গদী বিশিষ্ট উষ্ট্রী ক্রয় করতে চাইবে। কিন্তু পাবে না। তারা এ সময় অন্ধ, মূক, বধির হয়ে যাবে। মোট কথা, তাদের বিভিন্ন অবস্থা হবে। পাপের পরিমাণ অনুযায়ী তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। দুনিয়ায় তারা ছিল সত্য হতে বধির, অন্ধ ও বোবা। আজ কঠিন প্রয়োজন ও অভাবের দিনে তারা সত্য সত্যই অন্ধ, বধির ও বোবা হয়ে যাবে। তাদের প্রকৃত ঠিকানা ও ঘোরা ফেরার জায়গা হবে জাহান্নাম।” প্রবল পরাক্রম আল্লাহ বলেনঃ জাহান্নাম যখন স্তিমিত হবে তখন ওর অগ্নি তাদের জন্যে প্রজ্জ্বলিত করে দেয়া হবে। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা শান্তির স্বাদ গ্রহণ কর, শাস্তি ছাড়া তোমাদের আর কিছুই বৃদ্ধি করা হবে না। (৭৮:৩০)।

ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُمْ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا وَقَالُوا أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا

📘 Please check ayah 17:99 for complete tafsir.

۞ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ قَادِرٌ عَلَىٰ أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ أَجَلًا لَا رَيْبَ فِيهِ فَأَبَى الظَّالِمُونَ إِلَّا كُفُورًا

📘 ৯৮-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অস্বীকারকারীদের যে শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা ওরই যোগ্য ছিল। তারা আমার দলীল প্রমাণাদিকে মিথ্যা মনে করতো এবং পরিষ্কারভাবে বলতোঃ আমরা পচা অস্থিতে পরিণত হওয়ার পরেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হবো? এটাতো আমাদের জ্ঞানে ধরে না। তাদের এই প্রশ্নের জবাবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ একটি দলীল এই পেশ করেছেন যে, বিরাট আসমানকে বিনা নমুনাতেই প্রথমবার সৃষ্টি করতে পেরেছেন, যার প্রবল ক্ষমতা এই উচ্চ ও প্রশস্ত এবং কঠিন মাখলুককে সৃষ্টি করতে অপারগ হয় নাই, তিনি কি তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে অপারগ হয়ে যাবেন? আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা তোমাদের সৃষ্টি অপেক্ষা অনেক কঠিন ছিল। এগুলি সৃষ্টি করতে তিনি যখন ক্লান্ত ও অপারগ হন নাই, তিনি মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করতে অপারগ হয়ে যাবেন? আসমান ও যমীনের যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনি কি মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? অবশ্যই তিনি সক্ষম। তিনি মহাস্রষ্টা, অতিশয় জ্ঞানী। যখন তিনি কোন বস্তুকে (সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তার দস্তুর এই যে, তিনি এ বস্তুকে বলেনঃ হয়ে যা, তেমনি তা হয়ে যায়। বস্তুর অস্তিত্বের জন্যে তার হুকুমই যথেষ্ট। কিয়ামতের দিন তিনি মানুষকে দ্বিতীয় বার নতুন ভাবে সৃষ্টি অবশ্যই করবেন। তিনি তাদেরকে কবর হতে বের করার ও পুনরুজ্জীবিত করার সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। এ সময় এগুলো সবই হয়ে যাবে। এখানে কিছুটা বিলম্বের কারণ হচ্ছে শুধু ঐ সময়কে পুর্ণ করা। বড়ই আফসোসের বিষয় এই যে, এতো স্পষ্ট ও প্রকাশমান দলীলের পরেও মানুষ কুফরী ও ভ্রান্তিকে পরিত্যাগ করে না।